১৫টি আমল করুন ইনশাল্লাহ বরকত নেমে আসবে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে

আল্লাহর পক্ষ থেকে যার প্রতি বরকত নেমে আসে, তা পরিমাণে কম হলেও অনেক বেশি উপকারি। তা হতে পারে সন্তান-সন্তুতি, সম্পদ, আমল, রুটি রোজগার ইত্যাদি। কিন্ত কী কাজ করলে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি বরকত বা কল্যাণ দান করবেন? আল্লাহর দেয়া বরকত যদিও খালি চোখে দেখা যায়না কিন্তু তা অনুভব করা যায়। কোরআন-সুন্নার আমল হতে পারে জীবনে বরকত লাভের চাবিকাঠি। যেমন:
 
১) ঈমান ও তাকওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন (তাকে ভয়) করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও দুনিয়ার নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ [সুরা আরাফ : আয়াত ৯৬]

২) যে কোনো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
বান্দা যখন সব কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে, তখন শয়তান সব কাজ থেকে মাহরুম হয়। আর আল্লাহ তাআলা সব কাজেই বরকত দান করেন। যেমন, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ৬ জন সাহাবী নিয়ে খাবার খেতে বসলেন। এমন সময় একজন বেদুঈন এসে দু’গ্ৰাসে সব খাবার খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করত তাহলে তোমাদের সবার জন্য তা যথেষ্ট হতো। [শামায়েলে তিরমিজি-১৪২, ইবনে মাজাহ-৩২৬৪, মুসনাদে আহমাদ-২৫১৪৯, হাদিসগুলির মান সহীহ]

৩) কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো
কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো খুবই জরুরি। কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন গড়া। যে যতবেশি কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াবে তার জন্য ততবেশি বরকত নেমে আসবে। যে ঘরে কুরআন তেলাওয়াত হবে, কুরআনের চর্চা হবে, কুরআনের ওপর আমল করা হবে, সে ঘরেই নেমে আসবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও কল্যাণ। আল্লাহ কোরআনে বলেন, “এটি এমন একটি কিতাব, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।” [সুরা আনআম : আয়াত ১৫৫] অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, “এ কুরআন এমন কিতাব, যা আমি নাজিল করেছি; বরকতময়, আগের গ্রন্থের সত্যতা প্রমাণকারী এবং যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন। যারা পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার স্বীয় নামাজ সংরক্ষণ করে।” [সুরা আনআম: আয়াত ৯২] আল্লাহ আবারো বলেন, “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ গ্রহণ করে উপদেশ।’’ [সূরা সোয়াদ: ২৯]

৪) রমজানের সেহরী
রামজান মাসের সেহরীতে বরকত আছে। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা যুহায়র ইবনু হারব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেহরী খাও সেহরীতে বরকত রয়েছে’। [সহীহ মুসলিম-২৪২০]

৫) দান খয়রাত
আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করলে তিনি সে সম্পদে সীমাহীন বরকত দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” [সূরা বাকারা-২৬১] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহু গুণে এটাকে বৃদ্ধি করবেন তার জন্য। আর তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।” [সূরা হাদীদ-আয়াত-১১] অন্য আয়অতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।” [সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯]

৬) আত্মীয়তার সম্পর্ক
আত্মীয়তার সম্পর্ক আপনজনের মধ্যে সুসম্পর্ক-সম্প্রীতি, ধন-সম্পদের মধ্যে বরকত এবং হায়াতে দীর্ঘজীবি হওয়ার উপলক্ষ্য হয়। আত্মীয়-স্বজন বলতে মা-বাবা, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। যেমন, ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি: যে লোক তার রিযক প্রাপ্তি করতে এবং আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। [সহীহ বুখারী-৫৫৯, ইফা.]

৭) সকালবেলা কাজ শুরু করা
ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পার্থিব সকল কাজে সাফল্য ও অগ্রগতি লাভের জন্য ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার জুড়ি নেই। ভোররাতে বা দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি কল্যাণ থাকে। শুধু ইবাদত-বন্দেগিই নয়, সাধারণ কাজের জন্যও সবচেয়ে যথাযোগ্য ও বরকতপূর্ণ সময় এটি।
সাখর আল-গামিদী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রাঃ) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। [আবু দাউদ (তাহকিককৃত)-২৬০৬] সকালবেলার ঘুম অনেক সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনুরূপভাবে সফলতা অর্জনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। হজরত ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসুল (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলেন, তখন আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিলেন এবং বললেন, মা মণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। ’ [আত-তারগিব, হাদিস নং : ২৬১] সকালবেলার সময়টা আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় যে, তিনি এ সময়ের শপথ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শপথ প্রভাতকালের, যখন তা আলোকোজ্জ্বল হয়। নিশ্চয় জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদগুলোর অন্যতম। ’ [সুরা : মুদ্দাসিসর, আয়াত : ৩৩-৩৫] অন্য আয়াতে আল্লাহ বরেন, ‘শপথ তাদের, যারা অভিযান বের করে প্রভাতকালে। ’ [সুরা : আদিআত, আয়াত নং : ০৩]

৮) নামাজ
নামাজ এমনই একটি আমল ও ইবাদত যার মাধ্যমে পরিবারে কল্যাণ ও বরকত আসে। যে সকল পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে আল্লাহর রহমত তাদের মূখোমুখী থাকে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ঐ সকল ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজ খুশু-খুযুর সাথে আদায় করে।’ [সূরা মুমিনূন:১-২]। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিঃসন্দেহে নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” -সূরা আনকাবুত: ৪৫] মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবরে পরিণত করবে না’। [সহীহ বুখারী-৪২০] কিন্তু এ নামাজ হবে সুন্নত বা নফল, ফরজ নামাজ নয়।

৯) আল্লাহর উপর ভরসা করা
ইসলামের নির্ভেজাল শর্তই হচ্ছে আল্লাহর উপর ভরসা করা। বরকত লাভের অন্যতম চাবি বা আমল হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিন যত বেশি আল্লাহর ওপর ভরসা করবে ততবেশি তাকে সাহায্য করবেন। আল্লাহর উপর ভসরাকারী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে কারণ ও মাধ্যম গ্রহণের পর ঐ বিষয়গুলো আল্লাহর দিকে বৈধ পন্থায় সোপর্দ করে এবং তার তাওফিক কামনা করে। তাদের ব্যাপারে কুরআনে অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন, যেমন, “তোমরা যদি প্রকৃতই মুমিন হয়ে থাক, তাহলে একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা কর।” [সূরা মায়িদা : আয়াত ২৩] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করে থাকেন তবে কেউ তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সহায়তা না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবেন? মুনিদের শুধুমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভর করা উচিত।” [ইমরান : আয়াত ১৬০] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” [সূরা তালাক, আয়াত-৩] এভাবে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা ঈমান ও ইবাদতের সঙ্গে তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর ওপর ভরসা করার প্রতি জোর নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন-[সুরা : হুদ, আয়াত : ১২৩; সুরা : মুলক, আয়াত : ২৯; সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৯ ইত্যাদি।]
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেইরূপ রুযী দান করবেন যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে।’’[তিরমিজি-২৩৪৪, ইবনু মাজাহ ৪১৬৪, আহমাদ ২০৫, ৩৭২ মান হাসান]
ইসহাক (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক- যারা ঝাড়ফুকের শরণাপন্ন হয় না, কুযাত্রা মানে না এবং নিজেদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে…’। [সহীহ বুখারী-৬০২৮]

১০) বেশি বেশি ইসতেগফার করা
ইস্তিগফার মানে তওবা, ক্ষমা চাওয়া; ফিরে আসা বা ফিরে যাওয়া, প্রত্যাবর্তন করা, বিরত হওয়া। প্রথম মানুষ প্রথম ভুল করেছেন। সকল মানুষ ভুলকারী, তাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হলো তওবাকারী। জীবনে বরকত লাভের অন্যতম আমল হলো বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। এর কোনো হিসাব বা সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করে করা যাবে না। বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই ইসতেগফার করা। যেমন:
আসতাগফিরুল্লাহ’, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’…, অথবা
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইহি’, অথবা
রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুর গাফুর’, অথবা
আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহ হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়াতুবু ইলাইহি’।
আল্লাহ তা’আলা নুহ আলাইহিস সালামের ইসতেগফারের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। যে ইসতেগফারের মাধ্যমে পাওয়া যায় অসংখ্য বরকত। আল্লাহ তাআলা বলেন, “অতপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” [সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২]
যে ব্যক্তি সর্বদা ইস্তিগফার করতে থাকে, আল্লাহ তায়ালা তাকে সংকট থেকে মুক্তির পথ করে দেন। যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে প্রশস্ততা ও প্রশান্তি দান করেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দান করেন’। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৫১৮, মুস্তাদরাকে হাকিম-৭৬৭৭]
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সৎকর্ম ব্যতীত অন্য কিছু আয়ুস্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।” [ইবনে মাজাহ-৪০২২, মান: হাসান] অতএব রিজিকের বরকতের জন্য পাপমুক্ত থাকা আবশ্যক। পাপমুক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার। ইস্তিগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন। ফলে তার রিজিকের অভাবও দূর হয়ে যায়।

১১) বেশি বেশি ওমরা ও হজ্জ্ব করা
সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি ওমরা ও হজ্জ্ব করলে রিজেকে বরকত হয়। যেমন, ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা হজ্জকে উমরাহ ও উমরাহকে হজ্জের অনুগামী কর। (অর্থাৎ হজ্জ করলে উমরাহ ও উমরাহ করলে হজ্জ কর।) কারণ, হজ্জ ও উমরাহ উভয়েই দারিদ্র ও পাপরাশিকে সেইরূপ দূরীভূত করে যেরূপ (কামারের) হাপর লোহার ময়লাকে দূরীভূত করে ফেলে। [নাসাঈ ২৬৩০-২৬৩১, মান সহীহ]

১২) সময়মত বিয়ে করা
বিয়ের মাধ্যমে জীবনে বরকত ও প্রাচুর্য নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ [সুরা : নূর, আয়াত : ৩২]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্‌র দায়িত্বে: আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদকারী, এমন মুকাতাব দাস (মালিককে নিজের মূল্য পরিশোধ করে স্বাধীন হতে ইচ্ছুক) যে মূল্য পরিশোধ করতে ইচ্ছুক এবং এমন বিবাহকারী যে চরিত্র রক্ষা করতে ইচ্ছুক।” [তিরমিজি-১৬৫৫, ইবনের মাজাহ-২৫১৮মান হাসান]

১৩) দরুদ শরীফ পাঠ করা
আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের কাছে তাশরীফ আনলেন। তখন তাঁর চেহারায় বড় হাসি-খুশী ভাব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমার নিকট জিবরীল (আঃ) এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার রব বলেছেন, আপনি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আপনার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে আমি তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবো? আর আপনার উম্মাতের কোন ব্যক্তি আপনার ওপর একবার সালাম পাঠালে আমি তার উপর দশবার সালাম পাঠাবো?’ [নাসায়ী ১২৮৩, মিশকাত শরীফ-৯২৮ মান: হাসান সহীহ] “দরুদ শরীফ পাঠ করলে সহজে দোয়া কবুল হয়ে যায়। হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, দুআ আকাশ যমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি যতক্ষণ তুমি দুরূদ পাঠ না কর ততক্ষণ তার কিছুই উপরে উঠে না।’ [তিরমিজী শরিফ (তাহহিককৃত-৪৮৬]।

১৪) সালামের ব্যাপক প্রচলন করা
পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ সালামের ব্যাপক প্রচলন করা বরকত লাভের অন্যতম মাধ্যম। পরিপূর্ণ সালাম হলো-
আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’
অর্থ : ‘আপনার উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’
যারা নিয়মিত বেশি বেশি সালামের ব্যাপক প্রচালন করার চেষ্টা করেন। ঠিক সালামের উত্তরদানকারী ব্যক্তিও ঠিক একই দোয়া করেন- ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’- আপনার ওপরও শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল হোক।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহজ এ আমলগুলোর মাধ্যমে বেশি বেশি বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত আমলগুলো নিয়মিত বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

১৫) দু’আ
দোয়ার মাধ্যমে তাকদির (ভাগ্য) পরিবর্তন হয়। তবে সুদের খাতায় নাম লিখে, ঘুস খেয়ে কেয়ামত পর্যন্ত দোয়া করলেও কবুল হবে না। দোয়া হলো ইবাদতের মূল। দোয়ার মাধ্যমেই ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তার মানে, দু’আ কবুলের পূর্ব শর্ত হল হালাল ভক্ষণ।
সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'আ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। [তিরমিজি-২১৩৯, তাহহিককৃত, মান সহীহ]
সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবল সৎ কর্মই আয়ু বৃদ্ধি করে এবং দুআ ব্যতীত অন্য কিছুতে তাকদীর রদ হয় না। মানুষের অসৎ কর্মই তাকে রিয্ক বঞ্চিত করে। [সুনানে ইবনে মাজাহ-৯০ ৪০২২, মান সহীহ]

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: ১৫টি আমল করুন ইনশাল্লাহ বরকত নেমে আসবে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে
১৫টি আমল করুন ইনশাল্লাহ বরকত নেমে আসবে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2021/07/baraka.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2021/07/baraka.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy