৪৩৭০।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি”
(রাঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যূদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের
দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেনঃ, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (প্রথা)
ইসলামের প্রারম্ভিক যুগেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ
মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্হয়ে যে, তারা তা জানতে পারেনি। তাদের পশুদের পানি পান
করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের ষোদ্ধাদের হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের বন্দী করলেন।
আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেনঃ যে, আমার ধারণা
হল, তিনি
বলেছেনঃ) . জুওয়ায়রিয়া বিনত হারেস (রাঃ) বর্ণনাকারী বলেনঃ, এই হাদীস
আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি তখন সেই সেনাদলে ছিলেন।
৪৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু আউন (রহঃ) থেকে এই একই সুত্রে
উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি জুওয়াররিযা বিনত হারেস (রহঃ)
এর নাম সরাসরি উল্লেখ করেছেন এবং তার বর্ননায় তিনি সন্দেহজনক বর্ণনা করেননি।
৪৩৭২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম
(রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন কোন সেনাবাহিনী কিংবা সেনাদলের উপর আমীর নিমুক্ত করতেন তখন বিশেষ করে তাকে
আল্লাহ ভীতি অবলম্বনের এবং তার সঙ্গী মুসলমানদের প্রতি কল্যাণজনক আচরণ করার উপদেশ
দিতেন। আর (বিদায়লগ্নে) বলতেন, যুদ্ধ করো আল্লাহর নামে, আল্লাহ
রাস্তায়। লড়াই কর তাদের বিরুদ্ধে যারা আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ব করেছে। যুদ্ধ চালিয়ে
যাও, তবে
গনীমতের মালের খিয়ানত করবে না, চুক্তি ভঙ্গ করবে না, শক্র
পক্ষের অঙ্গ বিকৃতি করবে না। শিশুদেরকে হত্যা করবে না। যখন তুমি মুশরিক শক্রর
সন্মুখীন হবে, তখন
তাকে তিনটি বিষয় বা আচরণের প্রতি আহবান জানাবে। তারা এগুলোর মধ্য থেকে যেটই গ্রহণ
করে, তুমি
তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে। প্রথমে
তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দিবে। যদি তারা তোমার এই আহবানে সাড়া দেয়, তবে তুমি
তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে-নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবো এরুপর
তুমি তাদের স্বগূহ ত্যাগ করে মুহাজিরদের এলাকায় চলে যাওযার আহবান জানাবে। এবং
তাদের জানিয়ে দিবে যে,
যদি তারা তা কার্যকরী করে, তবে মুহাজিরদের জন্য যে সব লাভ-লোকসান ও
দায়দায়িত্ব রয়েছে, তা
তাদের উপর কার্যকরী হবে। আর যদি তারা স্বগৃহ ত্যাগ করতে অস্বীকার করে, তবে তাদের
জানিয়ে দেবে যে, তারা
সাধারণ বেদুঈন মুসলমানদের মত গণ্য হবে। তাদের উপর আল্লাহর সেই বিধান কার্যকরী হবে, যা সাধারণ
মুসলমানদের উপর কার্যকরী হয়ঁ এবং তারা গনীমত ও ফায় থেকে কিছু পাবে না। অবশ্য
মুসলমানের সঙ্গে শামিল হয়ে যুদ্ধ করলে তার অংশীদার হবে। আর যদি তারা ইসলাম গ্রহণ
করতে অস্বীকার করে তবে তাদের কাছে জিযিয়া, প্রদানের দাবী জানাবে। যদি তারা তা গ্রহণ করে
নেয়, তবে
তুমি তাদের তরফ থেকে তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ“ থেকে বিরত থাকবে। আর
যদি তারা এ দাবী না মানে তবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
ঝাপিয়ে পড়। আর যদি তোমরা কোন দুর্গবাসীকে অবরোধ কর এবং তারা যদি তোমার কাছে
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মাদারী চায়, তবে তুমি তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের
যিম্মাদারী মেনে নিবে না। বরং তাদেরকে তোমার এবং তোমার সাথীদের যিম্মাদারীতে
রাখবে। কেননা যদি তোমাদের ও তোমাদের সাথীদের যিম্মাদারী ভঙ্গ করে, তবে তা
আল্লাহ ও তার রাসূলের যিলাদারী ভঙ্গের চাইতে কম গুরুতর। আর যদি তোমরা কোন
দুর্গের-অধিবার্সীদেরকে অবরোধ কর, তখন যদি তারা তোমাদের কাছে আল্লাহর নির্দেশ
মুতাবিক অবতরণ করতে চায় তবে- তোমবা তাদের কে আল্লাহর হুকুমের উপর অবতরন করতে দিবে
না, বরং
তুমি তাদেরকে তোমার সিদ্ধান্তের উপর অবতরণ করতে দেবে। কেননা তোমার জানা নেই যে, তুমি তাদের
মাঝে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে পারবে কি না? আবদূর রহমান (রহঃ) এই হাদীস কিংবা এই হাদীসের
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইসহাক (রহঃ)-তাঁর বর্ণিত হার্দীসের শেষাংশে ইয়াহইয়া
ইবনু আদম (রহঃ) সুত্রে কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমি এই
হাদীসটি মুকাতিল ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) এর কাছে বর্ণনা করেছি। তখন তিনি ইয়াহইয়া
(রহঃ) অর্থাৎ আ লকামা (রহঃ) এর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ যে, তিনি তা
বর্ণনা করেছেন ইবনু হায়্যানের উদ্দেশ্যে। অতএব তিনি বলেনঃ যে, মুসলিম
ইবনু হায়সাম (রহঃ),
নুমান ইবনু মুকাররিন (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৩৭৩। হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সেনাপতিকে অথবা সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করতেন, তখন তাঁকে
ডেকে কিছু উপদেশ দিয়ে দিতেন। অতঃপর তিনি সুফিয়ান (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থ
অনুসারে অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৩৭৪। ইবরাহীম (রহঃ) ও শুবা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৩৭৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার কোন সাহাবীকে কোন কাজে প্রেরণ করতেন, তখন তাকে
বলে দিতেন, তোমরা
লোকদেরকে শুভ সংবাদ দেবে; ঘৃণা-বিদ্ব্যেষ ছড়ারে না, সহজ পন্থা
অবলম্বন করবে; কঠিন
পন্থা পরিহার করবে।
৪৩৭৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা (রহঃ) তার দাদা থেকে
বর্নিত করেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এবং মু’আয (রাঃ)-কে যখন ইয়ামানে পাঠান তখন
উপদেশ দিলেন তোমরা উভয়েই (সেখানে) সহজ পন্হা অবলম্বন করবে, কঠিন পন্থা
আরোপ করবে না, সুসংবাদ
দেবে, হিংসা-বিদ্ব্যেষ
ছড়াবে না, সম্মিলিতভাবে
কাজ করবে এবং মতবিরোধ করবে না।
৪৩৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সাঈদ ইবনু আবূ বুরদাহ
(রহঃ) এর দাদার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত শু’বা
(রহঃ) এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। কিন্তু যায়িদ ইবনু আবূ উনায়সা (রহঃ) এর
হাদীসে এবং সম্মিলিতভাবে কাজ করবে, মতবিরোধ করবে না” এ কথার উল্লেখ নেই।
৪৩৭৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ
ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ, সহজভাবে কাজ করবে, কঠিনতা
আরোপ করবে না, শাস্তি
প্রদান করবে এবং ঘৃণা-বিদ্ব্যেষ ছড়াবে না।
৪৩৭৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, উবায়দুল্লাহ
ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদূল্লাহ ইবনু নূমাইর (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা কিয়ামত
দিবসে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলকে একত্রিত করবেন, তখন প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য পৃথক
পতাকা উত্তীর্ন করা হবে এবং বলা হবে যে, এটি অমুকের পূত্র অমুকের অঙ্গীকার ভঙ্গের
প্রতীক।
৪৩৮০। আবূ রাবী আতাকী ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারেমী (রহঃ) ইবনু উমর
(রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
৪৩৮১। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ নিশ্চয়ই অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা
উত্তীর্ন করবেন। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।
৪৩৮২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক
অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে।
৪৩৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর
জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের
বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা।
৪৩৮৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) শু’বা (রাঃ) থেকে
একই সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আবদুল রহমান (রাঃ)-এর হাদীসে বলা হবে যে, “এটি অমুকের
বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক” কথাটির উল্লেখ নেই।
৪৩৮৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার -ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত
দিবসে একটি পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাকে চেনা যাবে। তখন বলা হবে যে, এটি অমুকের
বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক।
৪৩৮৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ – প্রত্যেক অঙ্গীকার
ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত দিবসে একটি পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাকে চেনা যাবে।
৪৩৮৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর
নিতরের পার্শে একটি পতাকা থাকবে।
৪৩৮৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামত
দিবসে একটি পতাকা থাকবে আর তা তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উচু করা হবে।
সাবধান! জনগণের শাসক হয়েও যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক আর নেই।
৪৩৮৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী, আমর আন নাফিদ ও যুবায়র ইবনু হারব (রহঃ) জাবির
(রাঃ)থেকে বর্নিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কৌশলের নামই যুদ্ধ।
৪৩৯০। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু সাহম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কৌশলই হল যুদ্ধ।
৪৩৯১। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শক্রর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
করো না আর যখন মুখোমুখি হয়ে পড় তখন ধৈর্যধারণ করবে।
৪৩৯২। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূল নাযর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবা দের, মধ্য থেকে আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি, যার নাম
ছিল আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা, তার চিঠি থেকে বর্ণনা করেছেন। এ চিঠি তিনি
লিখেছিলেন, উমার
ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট, যখন তিনি হাররিয়া অভিযানে যাচ্ছিলেন। এতে তিনি
তাকে অবহিত করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন এক অভিযানে যখন দুশমনের –
সম্মূর্খীন হলেন তখন অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে যখন সুর্য ঢলে পড়ল তখন তিনি
সঙ্গীদের মধ্যে দাড়িয়ে বললেনঃ হে লোকজন! তোমরা শক্রর মুখোমুখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
করো না। বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা কর। আর যখন তোমরা শক্রর সামনাসামনি
হয়ে যাও তখন ধৈর্য ধারণ করবে। আর জেনে রেখো যে ১ জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে। উারপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে দু’আ করলেন, ইয়া
আল্লাহ! তুমি কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুদলকে
পরাভূতকারী। তুমি তাদের পরাজিত কর এবং তাদের উপর আমাদের সাহায্য কর।
৪৩৯৩। সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলোন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে এভাবে দুআ করলেন যে, হে আল্লাহ!
তুমি কিতাব নাযিলকারী,
দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। তুমি সম্মিলিত বাহিলীকে পরাজিত করে দাও। হে আল্লাহ!
তুমি তাদের পরাস্ত করে দাও এবং তাদের ভীত কস্পিত করে দাও।
৪৩৯৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে দুআ করলেন পরবর্তী অংশ উল্লিখিত খালিদের
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ হাদীস ‘আহ যামহুম’ এর পরিবর্তে, ‘হা যামুল
আহযাব’ শক্র সৈন্যদের পরাস্তকারী বর্ণনা করেছেন। আর তিনি হে আল্লাহ” শব্দটির
উল্লেখ করেননি।
৪৩৯৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে
বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু আবূ উমার (রহঃ) তার বর্ণনা “মেঘমালা পরিচালনাকারী”
বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
৪৩৯৬। হাজ্জাজ ইবনু শায়ের (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদের যুদ্ধের দিন বলেছিলেন, হে আল্লাহ!
তুমি যদি চাও (এ সেনাদল ধ্বংস হোক) তা হলে পৃথিবীতে তোমার ইবাদত করা হবে না।
৪৩৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কোন এক যুদ্ধে একজন মহিলাকে নিহত অবস্হায় পাওয়া গেল। তখন তিনি নারী ও শিশুদের
হত্যা করতে নিষেধ করেন।
৪৩৯৮। কোন এক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত অবস্হায় পাওয়া গেল। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী ও শিশুদের হত্যাকরতে নিষেধ করেন।
৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসূর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) সাব ইবনু
জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জিজ্ঞাসা করা হলো, মুশরিকদের
শিশু সন্তান সম্পর্কে,
যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিক
যোদ্ধাদের) অন্তর্ভুক্ত।
৪৪০০। আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) সাব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমরা-রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণে মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে
ফেলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তারাও
তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) অন্তর্গত।
৪৪০১। মুহাস্মদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) সাব ইবনু জছছামা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হলো,যদি
অশ্বারোহীগণ রাতের আধারে আক্রমণ চালায় এবং-তাতে শিশু মারা যায়, (তবে কি
হবে)? তখন
তিনি বললেনঃ তারাও তাদের পিতাদের অন্তর্গত।
৪৪০২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কেটে দিলেন। সে বাগানের নাম
ছিল বুওয়ারা। কুতায়বা এবং ইবনু রুমহ (রহঃ) উভয়েই তাঁদের হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা
করেছেন। -এরপর মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন: ”তোমরা যে সব খেজুর বৃক্ষ কেটে
ফেলেছো কিংবা তার মুলের উপর খাড়া রেখেছো, সবই ছিল আল্লাহর নির্দেশে, যাতে তিনি
অবাধ্যদের লাঞ্ছিত করেন।”
৪৪০৩। সাঈদ ইবনু মনসূর (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান কেটেছিলেন এবং জ্বালিয়ে
দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে কবি হাসসান (রাঃ) বলেন, ‘বনী লুওয়াই (অর্থাৎ কোরায়শ) এর সর্দারদের কাছে
বুওয়ায়রায় আগুনের লেলিহান শিখা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে।” আর এ স্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই
আয়াত:(অর্থ) তোমরা যে সব খেজুর গাছ কেটেছো অথবা তা কাণ্ডের উপর রেখে দিয়েছো শেষ
পর্যন্ত।
৪৪০৪। সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযীর গোত্রের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে
দিয়েছিলেন।
৪৪০৫। আবূ কুরাইব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম
ইবনু মূসাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল হাদীস আমাদের বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে এটি অন্যতম যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- নাবীগণের মধ্যে কোন এক নাবী জিহাদে রওনা
দিলেন। তিনি তার কাওমকে বললেনঃ, এমন লোক যেন আমার সাথে অভিযানে না আসে, যে ব্যক্তি
সদ্য বিবাহ করেছে এবং বাসর যাপনে ইচ্ছুক; কিন্তু এখনো তা সস্পন্ন করেনি। সেই ব্যক্তি যে
গৃহ নির্মাণ করেছে এবং তখনও তার ছাদ দেয়নি এবং সে ব্যক্তি যে গর্ভবতী ছাগল বা পশু
খরিদ করেছে এবং সেগুলোর বাচ্চা প্রসবের অপেক্ষায় আছে। রাবী বলেনঃ, তারপর তিনি
জিহাদে গমন করেন এবং আসরের সালাতের সময় কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের
নিকটবর্তী এক গ্রামে পৌঁছেন। তখন তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমিও আদিষ্ট এরং
আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! তুমি একে আমার জন্য কিছুক্ষণ থামিয়ে রাখ। সূর্য থামিয়ে
দেওয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে বিজয় প্রদান করলেন। রাবী বলেনঃ তারা গনীমতের মাল
একত্রিত করলো। তখন তা খাওয়ার জন্য আগুন এগিয়ে এল। কিন্তু অগ্নি তা খেতে অস্বীকার
করল। তখন সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তোমাদের
মধ্যে আত্নসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমাদের প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে আমার কাছে
বায়আত করবে। তখন তারা তার কাছে বায়আত করলো। এতে একব্যক্তির হাত নাবীর হাতের সাথে
লেগে গেল। তখন তিনি বললেনঃ, তোমাদের মধ্যে আত্নসাৎকারী রয়েছে। কাজেই
তোমাদের গোত্রের লোকেরা আমার কাছে বায়আত করুক। অতঃপর তার ঐ গোত্রের লোকেরা বায়আত
করলো। রাবী বলেনঃ,
তখন নাবী (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাত বা তিন ব্যক্তির হাতের সাথে লেগে গেল।
তখন তিনি বললেনঃ, তোমাদের
মধ্যে আত্মসাৎকারী রয়েছে। তোমরা আত্নসাৎ করেছ। রাবী বলেনঃ, তারপর তারা
নাবীর কাছে একটি গাভীর মাথার পরিমাণ স্বর্ণখণ্ড বের করে দিল। তখন তারা সেটিও ঐ
সম্পদের সাথে রাখল। তারপর আগুন এগিয়ে এসে তা খেয়ে ফেলল। আমাদের পূর্বে কারো জন্য
গনীমতের মাল হালাল ছিল না। আল্লাহ তা-আলা আমাদের দূর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের
জন্য তা হালাল করে দিলেন।
৪৪০৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, আমার
পিতা যুদ্ধলব্ধ সস্পদের এক পঞ্চমাংশ চূতে কিছু বস্তু নিয়ে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলেনঃ, এটি আমাকে দান করুন। তিনি অস্বীকার করেন। তখন
আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেনঃ “তারা আপনার কাছে যুদ্ধলব্ধ দ্রব্য সরুন্ধে জিজ্ঞাসা
করে, আপনি
বলে দিন, যুদ্ধলব্ধ
দ্রব্য সম্ভার আল্লাহ ও রাসূলের শেষ পর্যন্ত।
৪৪০৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমার
সম্বন্ধে চারটি আয়াত নাযিল হয়েছে। আমি একটি তলোয়ার পেলাম। এরপর তিনি সেটি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে এসে বললো, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি এটি রেখে দাও। তারপর আবার
দাড়িয়ে বললেনঃ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! এটি আমাকে দিয়ে দিন। তখনও তিনি বললেনঃ, এটি রেখে দাও। তারপর আবার দাড়িয়ে বললেনঃ, ইয়া
রাসুলল্লাহ! এটি আমাকে দিয়ে দিন। আমি কি সে ব্যক্তির স্থলে গণ্য হবো, যে
দ্রব্যটি ব্যবহারের ব্যাপারে মুখাপেক্ষীহীন নয়?। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি এটি যেখান থেকে নিয়েছ সেখানে রেখে দাও। এরপর এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) তারা
আপনাকে যুদ্ধ লব্ধ দ্রব্যসম্ভার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, যুদ্ধলব্দ
সম্পদ আল্লাহ ও রাসূলের জন্য।
৪৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি সেনাদল নাজদের দিকে পাঠান। তন্মধ্যে
আমিও ছিলাম। তারা সেখানে অনেক উট গনীমত হিসাবে লাভ করল। প্রত্যেকের অংশে বারটি করে
অথবা এগারটি করে উট পড়ল এবং প্রত্যেককেই একটি করে উট দেওয়া হল।
৪৪০৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সেনাদল প্রেরণ করেন এবং তাদের
মধ্যে ইবনু উমার (রাঃ) ও ছিলেন। যূদ্ধলব্ধ সম্পদের বন্টনে তাদের ভাগে পড়ল বারটি
করে উট। আর তা ছাড়া অতিরিক্তও একটি উট করে দেয়া হল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করেননি।
৪৪১০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সেনাদল প্রেরণ করেনা আর আমিও এতে
গিয়ে ছিলাম। আমরা বহু উট এবং ছাগল পেলাম। আমাদের প্রত্যেকের অংশে বারটি করে উট পড়ল
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেককে আরো একটি করে
অতিরিক্ত উট প্রদান করলেন।
৪৪১১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেন।
৪৪১২। আবূ রাবী,
আবূ কামিল ও ইবনু মুছান্না (রহঃ) ইবনু আওন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি নফল
সম্পর্কে জানতে চেয়ে নাফি (রাঃ) এর কাছে লিখলাম। তিনি উত্তরে আমাকে লিখলেন যে, ইবনু উমার
(রাঃ) একটি সেনাদলে ছিলেন। ইবনু রাফি ও হারান ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) তারা সকলেই
নাফির (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৪১৩। সুরাইজ ইবনু ইউনুস ও আমর আবূ নাকিদ (রহঃ) সালেম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে, তিনি
বলেছেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অতিরিক্ত এক পঞ্চমাংশ থেকে নফল দান করেন।
অতএব, আমাদের
ভাগে একটি শারিফ- মিললো। শারিফ- মানে বড় ধরনের বয়স্ক উট।
৪৪১৪। হান্নাদ ইবনু সারী, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ক্ষুদ্র সেনাদলের মাঝে যূদ্ধলব্ধ মালামাল বন্টন করেন। অতঃপর ইবনু রাজা এর অনুরুপ
হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৪১৫। আবদুল মালিক ইবনু শুয়াব ইবনু লাইস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুদ্র সেনাদলে যে সব সৈনিককে প্রেরণ করতেন, তাদের কেনি
কোন সময় সাধারণ লোকদের অংশের চেয়েও কিছু অতিরিক্ত বিশেষভাবে প্রদান করতেন। আর সব
অর্জিত গনীমাতের মালের উপরই একপঞ্চ মাংশ বের করা ওয়াজিব।
৪৪১৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ তাহির (রহঃ) আবূ
কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা হুইনের যুদ্ধের বছর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সাথে বের হলাম। আমরা যখন শক্রদের মুখামুখি
হলাম তখন মুসলমানদের মধ্যে ছুটাছুটি আরম্ভ হল। এ সময় আমি একজন মুশরিককে দেখতে
পেলাম যে, সে
একজন মূসলমানের উপর চড়ে বসেছে। তখন আমি একটু ঘুরে এসে তার পিছন দিক দিয়ে তার
কাঁধের উপর আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে আমাকে এমনভাবে চেপে ধরল যে, আমি এতে
মৃত্যুর গন্ধ পেলাম। এপর সে মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি উমর
ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে মিলিত হলাম। তিনি বললেনঃ, লোকদের কী
হয়েছে আমি বললাম এ আল্লাহর ব্যাপার (ইচ্ছা)। তারপর (পলায়নপর) লোকেরা এল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন (যুদ্ধ ক্ষেত্রে) বসেছিলেন। তিনি
বললেনঃ, যে
মুসলিম সৈন্য অপর কোন শক্র সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং এতে তার প্রমান আছে, তবে তার
(পরিত্যক্ত) সম্পদ তারই (হত্যাকারী মুজাহিদেরই প্রাপ্য)। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তখন আমি
দাড়ালাম এবং বললাম,
আমার জন্যে কে সাক্ষ্য দেবে তারপর আমি বসে পড়লাম। তারপর তিনি আমার সেরুপ কথা
বললেনঃ, আমি
দাঁড়ালাম এবং বললাম কে আমার জন্যে সাক্ষ্য দেবে? এবং আমি বসে পড়লাম। তিনি তৃতীয়বারও ঐরুপ
বললেনঃ। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তা শুনে আমি (আবার) দণ্ডায়মান হলাম। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ কাতাদা! তোমার কি হয়েছে। আমি তখন তার
কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (আবূ কাতাদা) সত্য বলেছেনঃ। ঐ
নিহত ব্যক্তির (পরিত্যক্ত) সম্পদ আমার কাছে রক্ষিত আছে। আপনি তার হক আমাকে দেওয়া
এর ব্যাপারে তাঁকে রাজি করিয়ে দেন। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেনঃ, না, আল্লাহর
কসম! তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহ সমুহের মধ্য হতে কোন এক সিংহ (যোদ্ধা) আল্লাহ ও
তাঁর রাসূলের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, তার প্রাপ্য সম্পদ যেন তোমাকে প্রদানের জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনস্হ না করেন। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (আবূ বাকর) ঠিকই বলেছেনঃ। সূতরাং তিনি
তাঁকে (আবূ কাতাদাকেই) তা প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তাকে আমাকেই দিলে। আবূ
কাতাদা (রাঃ) বললেনঃ,
আমি তা থেকে লৌহ বর্মটি বিক্রি করলাম এবং তা দিয়ে বনী সালামার মহল্লায় একটি
ফলের বাগান খরিদ করলাম। এই ছিল আমার ইসলামী জীবনের প্রথম অর্জিত সম্পদ। লাইস (রহঃ)
এর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, আবূ বকর (রাঃ) বলেছেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন আল্লাহর সিংহ সমূহের মধ্য থেকে কোন এক সিংহকে
বাদ দিয়ে তা কুরাইশের কোন শৃগালকে (কাপুরুষকে) প্রদান না করেন।
৪৪১৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
আমি বদরের দিন যুদ্ধ সারিতে অবস্হান করছিলাম। এমন সময় আমি ডান ও বাম দিকে
তাকিয়ে দেখি যে, আমি
দু’জন আনসারী অল্প বয়সী কিশোরের মাঝে আছি। আমি তখন আশা করেছিলাম, যদি আমি
দু’জন শক্তিশালী যুবকের মাঝে থাকতাম। এমন সময় তাদের একজন আমাকে ইঙ্গিতে বলল, হে আমার
চাচা! আপনি কি আবূ জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যা। তবে তাকে তোমার কী প্রয়োজন, হে
ভ্রাতুষ্পূত্র? সে
বলল, আমি
সংবাদ জেনেছি যে, সে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে গালাগালি করে। সেই আল্লাহর শপথ!
যার হাতে আমার জীবন,
যদি আমি তাকে দেখতে পাই তবে অবশ্যই তাকে ছেড়ে দিব না, যতক্ষন না
আমাদের দূজনের থেকে যার মৃত্যু পুর্বে হওয়া অবধারিত তার মৃত্যু হয়। বর্ণনাকারী
বলেনঃ, কিশোরের
এই কথা শুনে আমি আাচর্যাম্বিত হলাম। তারপর অপর কিশোর আমার দিকে ইঙ্গিত করে অনুরুপ
কথা বলল। পরে বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি, হঠাৎ আমি দেখলাম,আবূ জাহেল লোকদের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, আমি তখন
কিশোর দু-জনকে বললাম,
এই সেই যার ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসা করেছ। তারা উভয়ে দৌড়ে গিয়ে
তাদের তলোয়ার দ্বারা তাকে আঘাত করলো এবং হত্যা করে ফেললো। অতঃপর উভয়েই ফিরে এসে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এই ঘটনার সংবাদ দিল। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে কে হত্যা
করেছে তাদের প্রত্যেকেই বলল, আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের তলোয়ার কি পরিস্কার করে ফেলেছ? তারা তখন
বললো, না।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের তলোয়ার পরীক্ষা করে দেখলেন।
তারপর বললেনঃ তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ। অতএব, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মূয়ায ইবনু আমর ইবনু জামোহকে পরিত্যক্ত সম্পদ প্রদানের নির্দেশ দেন। আর সেই
ব্যক্তি হলেন, মুয়ায
ইবনু আমর ইবনু জামোহ এবং মুয়ায ইবনু আফরা (রাঃ)।
৪৪১৮। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
সূমাইর গোত্রের এক ব্যক্তি শক্র পক্ষের এক ব্যক্তিকে হত্যা করছেন এবং তার
পরিত্যক্ত সম্পদ নিতে চাইছেন। কিন্তু তাদের সেনাপতি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) তাকে
নিষেধ করলেন। তারপর আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং ঐ ঘটনার সংবাদ দিলেন। তখন তিনি খালিদ (রাঃ) কে
জিজ্ঞেস করলেন, কেন
তুমি (নিহত ব্যক্তির) সম্পদ তাকে দিলে না। খালিদ (রাঃ) বললেনঃ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ আমি তার প্রচুর সম্পদ পেয়েছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ,
তাকে তা দিয়ে দাও। তারপর খাঁলেদ (রাঃ) আউফ (রাঃ) এর কাছ দিয়ে গেলেন এবং তাঁর
চাঁদর ধরে টান দিয়ে বললেনঃ, আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা বর্ণনা করেছিলাম, তাই কি হয়নি? অতএব, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা
শুনতে পেলেন। এতে তিনি রাগাম্বিত হলেন। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ,
হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে না। হে খালিদ! তুমি তাকে তা দেবে ,না। তোমরা
কি আমার নেতাদের পরিত্যাগ করবে। নিশ্চয়ই তোমাদের এবং তাদের দৃষ্টান্ত এমন, যেমন কোন
ব্যক্তি উট কিংবা ছাগল চরাতে মনস্হ করলো। এবং মাঠে নিয়ে চরালো। তারপর পিপাসার সময়
পানি পান করাণৌর জন্য জনাশয়ে গেল। পরিস্কার পানি পান করতে শুরু করল এবং ঘোলাটে
পানি পরিত্যাগ করলো। অতঃপর এমনিভাবে পরিস্কার তোমাদের জন্য এবং অপরিস্কার তোমাদের
নেতাদের উপর।
৪৪১৯। যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) আউফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যায়িদ ইবনু
হারেসা (রাঃ)এর সঙ্গে যারা মুতার যুদ্ধে গমন করেছিলেন, তন্মধ্যে
আমিও ছিলাম। ইয়ামানের একজন সাহায্যকারীও আমার সাথী হল। এরপর তিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
তবে তিনি হাদীসে বলেছেনঃ যে, আউফ (রাঃ) বলেনঃ, অতঃপর আমি বললাম, হে খালিদ! তুমি কি জাননা যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শক্র থেকে নেওয়া সম্পদ হত্যাকারীর মুজাহিদের
প্রাপ্য বলে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেনঃ, হাঁ, কিন্তু এই সম্পদ আমার কাছে অধিক মনে হল। (তাই
আমি নিষেধ করেছিলাম।)
৪৪২০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হাওয়াযেন গোত্রেরা সঙ্গে
যূদ্ধে ছিলাম। একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে
সকালের খাওয়ায় সামিল ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি লাল রঙের উটে চড়ে এসে একে বসাল
এবং তার কোমর থেকে একটি চামড়ার রশি বের করে এর দ্বারা সে তার উটকে বাঁধলো। এরপর
সে এসে লোকদের সাথে খানা -খেতে লাগল এবং এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো (শুপ্তচর)।
আমাদের মধ্যে দূর্বল লোকও ছিল। সাওয়ারীও কম ছিল। আমাদের কেউ কেউ পায়ে হেঁটে চলছিল।
এমন সময় সে ব্যক্তি দ্রুত গতিতে নিজের উটের কাছে এসে এর রশি খূললো। এরপর একে
বসিয়ে এর উপর সাওয়ার হল তারপর উটকৈ হাকালো এবং উট তাকে নিয়ে ছুটল। তখন এক ব্যক্তি
একটি ধূসর বর্ণের উটনীর উপর আরোহণ করে তার পশ্চাঁদ্ধাবন করলো। সালামা (রাঃ) বলেনঃ, আমি বের
হয়ে দৌড় দিলাম। প্রথমত আমি উটনীর পিছনে গিয়ে পৌছলাম। এরপর আমি আরও অগ্রসর হয়ে সে
উটের পশ্চাতে পৌছলাম। অতঃপর আরও অগ্রসর হয়ে আমি উটনীর লাগাম ধরে ফেললাম। এবং আমি
একে বসালাম। যখন উটটি তার হাটূ মাটিতে রাখল, তখন আমি তলোয়ার বের করে লোকটির মাথায় আঘাত
করলাম। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। এরপর আমি উটটি টেনে নিয়ে এলাম। এর উপর ঐ ব্যক্তির
আসবাব পত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম লোকজন সহ আমাকে আগায়ে নিলেন। তিনি বললেনঃ কে এই লোকটিকে হত্যা করেছে? লোকেরা
বলল, ইবনু
আকওয়া। তিনি বললেনঃ (নিহত ব্যক্তির) থেকে আনা সমুদয় সম্পদ আকওয়ার পূত্র সালামার
জন্য।
৪৪২১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সালামা (রাঃ) বলেনঃ, আমরা
ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন
যখন আমাদের এবং পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ
বাকর (রাঃ) আমাদেরকে রাতের শেষের দিকে সেখানে অবতরণের নির্দেশ দিলেন। সূতরাং আমরা
রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন
এবং পানি পর্যন্ত পৌছালেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন। আমি
লোকদের একটি দলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যাদের মধ্যে শিশু? ও নারী
রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তোবা আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের
ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি
তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফহযারার একজন
মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা।
আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) মহিলার কন্যাটি
আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন। এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র
উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি
বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! তাকে আমার খবুই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি।
পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ
তোমার পিতার কল্যাণ করুন।” তখন আমি বললাম, -ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম!
আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ
কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলমান বন্দীকে মুক্ত করে আনলেন, যারা
মক্কায় ইতিপর্বে বন্দী ছিল।
৪৪২২। আহমাদ ইবনু হাম্বল ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মূসাব্বেহ
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে সব হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে একটি হল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ভোমরা যে কোন জন পদে উপনিত
হয়ে অবস্থান করবে, সেখান
থেকে (প্রাপ্ত ফাই-এর) এক অংশ পাবে। আর যে (অর্থাৎ যুদ্ধ করবে) তবে তার (সম্পদের)
এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। আর অবশিষ্ট সম্পদ তোমাদের জন্য।
৪৪২৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, আবূ বাকর
ইবনু আবূ শায়রা ও ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ-, বনী নাযীর
গোত্রের সস্পদ সে মালের অন্তর্গত যা আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বিনা যূদ্ধে প্রদান করেন। মুসলমানরা ঘোড়া এঘং উট হাঁকিয়ে যুদ্ধ
করেনি। অতএব, এই
সম্পদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সুতরাং
তিনি তা থেকে স্বীয় পরিবারের এক বছরের ভরণ-পোষণের খরচ এবং অবশিষ্ট সম্পদ যুদ্ধের
ঘোড়া এবং প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় খাতে ও এক অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করেন।
৪৪২৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) যহহরী (রহঃ) থেকে উল্লিখিত হাদীস একই সুত্রে
বর্ণনা করেছেন।
৪৪২৫। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসম যুবায়ী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। মালিক ইবনু আউস (রাঃ) তাঁকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, উমার ইবনু
খাত্তাব (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। বেলা উঠে গেলে আমি তাঁর নিকট এলাম। তখন আমি
তাকে তার বাসস্থানে খাটের উপর বসা অবস্থায় পেলাম। তাতে চাটাই ছাড়া আর কোন বিছানা
ছিলনা। তিনি চামড়ার একটি বালিশের উপর হেলান দিয়ে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন তিনি আমাকে
বললেনঃ, হে
মালে! অর্থাৎ হে আবদুল মালিক)। তোমার সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের লোকজন আমার
কাছে দ্রুত এলো, আমি
তাদেরকে কিছু দেওয়ার মনস্হ করেছি। তুমি তা গ্রহণ কর এবং তাদের মধ্যে বণ্টন করে
দাও। অতএব, আমি
বললাম, আপনি
যদি এর নির্দেশ আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে দিতেন, তা হলে ভালো হতো। তখন তিনি বললেনঃ, হে মালে
(অর্থাৎ হে মালিক),
তুমি তা গ্রহণ কর। এমন সময় ইয়ারফা (রহঃ) তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, হে আমীরুল
মুমিনীন! আপনার সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন উসমান, আব্দুর রহমান ইবনু আউফ, যুবাইর এবং
সা’দ। তখন উমর বললেনঃ,
হ্যা-তাদেরকে আসতে দাও। তখন সকলেই প্রবেশ করলেন। এরপর পূনরায় ইয়ারফা আগমন
করলো এবং বলল, আব্বাস
এবং আলী (রাঃ) আপনার সাক্ষাতের-অপেক্ষায় আছেন। তখন তিনি বললেনঃ, হ্যা –
তাদেরকেও আসতে দাও। এরপর আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার মধ্যে এবং এই
মিথ্যাবাদী, পানা, প্রতারক ও
বিশ্বাসঘাতকের মধ্যে মীমাংসা করে দিন। তখন লোকেরা বললো, হ্যা – হে
আমীরুল মুমিনীন! তাদের মধ্যে বিযয়টি নিস্পত্তি করে দিন-এবং তাকেও নিস্কৃতি দিন।
অতএব, মালিক
ইবনু আউস (রাঃ) বললেনঃ, আমার ধারণা হল মে, তারা দু”জন
অর্থাৎ আলী এবং আব্বাস (রাঃ) তাদেরকে পূর্বাহ্নে পাঠিয়ে ছিলেন এ ব্যাপারটির জন্যেই, যেন তাঁরা
উমরকে ব্যপারটি বুঝিয়ে নিস্পত্তি করে দেন। উমার বললেনঃ, আপনাবা
আরেকটূ অপেক্ষা করুন। আমি আপনাদের সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যার
নির্দেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্হিত। আপনাদের কি জানা নেই যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা (নাবীগণ) কাউকে ওয়ারিস বানিয়ে যাই না, আমরা যা
রেখে যাই তা হবে সাদাকা। তখন তারা বললেনঃ, হ্যা-আমরা তা জানি। এবার আলী এবং আব্বাস (রাঃ)
এর দিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ, আমি আপনাদের উভয়কে সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে
বলছি, যার
নির্দেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্হিত-। আপনারা কি অবগত নন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা (নাবী (সম্প্রদায়) কাউকে উত্তরাধিকার
করে যাই না। আমরা যা রেখে যাই, তা হবে সাদাকা। তখন তারা উভয়েই বললেনঃ, হ্যা। আমরা
তা জানি। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ, আল্লাহ তা-আলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বিশেষ ধরনের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছেন, যা তিনি
ব্যতীত অন্য কাউকে প্রদান করেননি। তিনি বলেনঃ, “আল্লাহ তায়ালা জনপদ বা নগরবাসীর নিকট থেকে
স্বীয় রাসূলকে যা প্রদান করেছেন-তা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের জন্য। আমার জানা নেই যে, এ পঠিত
আয়াতের – পুর্বেও কোন আয়াত পাঠ করেছিলেন কিনা“? অতঃপর উমর (রাঃ) বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো তোমাদেরকে বনী নাযীর গোত্র থেকে প্রাপ্ত সস্পদ
বল্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহর শপথ! তিনি সম্পদকে নিজের জন্য সংরক্ষিত- করে যাননি। আর
তিনি এমনও করেননি যে,
নিজে সস্পদ নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তা দেননি। পরিশেষে যে “সম্পদ রইল তা থেকে
আপন পরিবারের এক বছরের ভরণ পোষণের খরচ রেখে অবশিষ্ট সস্পদ বায়তুল মালে জমা দেন।
এরপর উমর (রাঃ) বললেনঃ, আপনাদেরকে সে মহান আল্লাহর কসম করে বলছি, যার
নির্দেশে আকাশ ও পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থান। আপনারা কি সে সব কথা অবগত আছেন। তখন
তারা বলেনঃ, হ্যা-আমরা
তা জানি। এরপর তিনি আব্বাস এবং আলী (রাঃ) উভয়কে অনুরুপ শপথ প্রদান করলেন, যেরুপ তিনি
ইতিপুর্বে আগত সম্প্রদায়ের লোকদেরকে প্রদান করেছিলেন। বললেনঃ, আপনারা
উভয়ই কি এসব কথা জানেন। তখন তাঁরা উভয়েই বললেনঃ,হ্যা। অতঃপর উমর-(রাঃ) বললেনঃ, যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হল তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ যে, আমিই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়ালী। আর আপনারা উভয়েই এসেছেন, আপনি আপনার
ভাতিজা থেকে মীরাস দাবী করতে। আর আপনি এসেছেন, আপনার স্ত্রী (ফাতেমার) পিতা থেকে মীরাস গ্রহণ
করতে। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ (আমাদের নাবীগণের) সম্পতিতে কোন অরূশীদারিত্ব নেই। আমরা যা পরিত্যাগ করে
যাই তা হবে সাদাকা। আপনারা উভয়েই তো তাকে মিথ্যাবাদী, অপরাধী, বিশ্বাসঘাতক
এবং খিয়ানতকারী মনে করছেন। প্রকৃতপক্ষে নিশ্চয়ই তিনি (আধু বাকর সিদীক (রাঃ)
সত্যবাদী, পূণ্যবান, সত্যপথ
প্রদর্শক এবং সত্যের অনুসারী ছিলেন। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) ইন্তেকাল করলেন। তখন আমি
ওয়ালী হলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর। সুতরাং আপনারা উভয়েই
আমাকেও তার মত মিথ্যাবাদী, পানা, বিশ্বাসঘাতক এবং খেয়ানতকারী মনে করছেন। আল্লাহ
অবগত আছেন যে, নিশ্চয়ই
আমি সত্যবাদী, পূণ্যবান, সত্য
পথ-প্রদর্শক অখং সত্যের অনুসারী। আমি সে সম্পদেরও অলী বা অভিভাবক। অতঃপর আপনি এবং
ইনি এসেছেন। আপনারা উভয়েই এক এবং আপনাদের দাবীও এক। সুতরাং আপনারা বলছেন যে, এসব আমাদের
কাছে দিয়ে দিন। আমি বলি-যদি আপনারা চান, তবে আমি তা আপনাদেরকে দিয়ে দেব এই শর্তে যে, আপনারা এই
সম্পদ দ্বারা সে কাজ করবেন, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
করতেন। অতএব, আপনারা
এ শর্তে আমার নিকট থেকে তা ‘গ্রহণ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) বললেনঃ, আমার কথা
কি যথার্থ? তখন
উভয়েই বললেনঃ,হ্যা।
উমর (রাঃ) বললেনঃ, তারপরও
আপনারা দু-জন আমার কাছে এসেছেন, আপনাদের মাঝে (সম্পদের) মীমাংসা করে দেয়ার
জন্য। আল্লাহর কসম। আমি আপনাদের উভয়ের মাঝে এ ব্যতীত আর কোন মীমাংসা করতে পারবো না
কিয়ামত পর্যন্ত। আর যদি আপনারা এতে অপারগ হন, তবে তা আপনারা আমার কাছে ফেরৎ দিন।
৪৪২৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু রাফি- ও আবূ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদছান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ, উমর ইবনু
খাত্তাব (রাঃ) আমাকে -ডেকে পাঠালেন। এরপর বললেনঃ, তোমার সম্প্রদায়ের-কতিপয় পরিবারের লোক আমার
কাছে উপস্থিত হল। তারপর মালিক (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তার
হাদীসে রয়েছে যে, তিনি
তাঁর পরিবারের জন্য তা থেকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন। অনেক সময় মা”মার (রহঃ)
বলেছেনঃ যে, তার
পরিব্যরের জন্য তা থেকে এক বছরের খোরাকী রেখে দিতেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ বায়তুল
মালে জমা দিতেন।
৪৪২৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হলে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরর সহধর্মিনাগণ উসমান (রাঃ)-কে আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট পাঠাতে
মনস্হ করলেন, যেন
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে তাদের মীরাস তলব
করেন। তখন আয়িশা (রাঃ) তাদের বললেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি একথা
বলে যাননি যে, আমরা
(নাবীগণ) সম্পর্তিতে কাউকে ওয়ারিস করে যাই না। আমরা যা রেখে যাই-তা হবে সাদাকা।
৪৪২৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ফাতিমা
বিনত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর এর নিকট লোক পাঠালেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্পদ থেকে তার প্রাপ্য মীরাস এর দাবী করে, যা আল্লাহ
তা-আলা তাকে মদিনা ও ফিদাক-এর ফাই এবং খায়বারের অবশিষ্ট এক পঞ্চমাংশ থেকে প্রদান
করেছিলেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলে গিয়েছেনঃ আমরা আমাদের (নাবীগণের) পরিত্যক্ত সম্পতিতে কাউকে ওয়ারিশ করে যাই না।
আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদাকা। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
পরিবারবর্প তা থেকে জীবিকা গ্রহণ করবেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়কালে সাদাকার যে অবস্হা চার চালু, তা আমি
পরিবর্তন করব না। আর এতে আমি নিশ্চয়ই সে কাজ করবো, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তিনি করে গিয়েছেন। অতএব, আবূ বাকর (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে তা থেকে কিছু
প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। সুতরাং ফাতিমা (রাঃ) এতে রাগাম্বিত হয়ে তাঁকে
পরিত্যাগ করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কোন কথা বলেননি। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। এরপর
যখন ইণতিকাল করলেন তখন তাঁর স্বামী আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাকে রাতে দাফন করলেন
এবং ফাতিমা-এর মৃত্যু সংবাদ পর্যন্ত আবূ বাকবু (রাঃ),-কে দেননি।
আলী (রাঃ) তাঁর জানাযার সালাত আদায় করলেন। ফাতিমা (রাঃ)-এর জীবিতকাল পর্যন্ত আলী
(রাঃ)-এর প্রতি জনগণের বিশেষ মর্যাদাবোধ ছিল। এরপর যখন তাঁর ইন্তেকাল হল তখন
লোকের চেহারায় অন্যভাব দেখতে পেলেন। অতএব, আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে মীমাংসা করে, তার বায়আত
গ্রহণের প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন। কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল কিন্তু তখনও তিনি তার
বায়আত করেননি। তারপর আলী (রাঃ), আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট লোক পাঠিয়ে সংবাদ দিলেন
যে, আপনি
একাকী আমার -সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। কিন্তু আপনার সাথে অন্য কাউকে আনাবেন না। কেননা
তিনি উমার (রাঃ)-এর আগমনকে অপছন্দ করছিলেন। উমর (রাঃ) আবূ বকরকে বললেনঃ, আল্লাহর
কসম! আপনি একাকী তাঁদের কাছে যাবেন না। আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ, আমি আশংকা
যে, তারা
আমার সাথে কিছু করবেন। আল্লাহর কসম! আমি একাকীই যাব। পরিশেষে আবূ বাকর (রাঃ)
তাঁদের কাছে গেলেন। এরপর আলী ইবনু আবূ তালেব (রাঃ) তাশাহুদ তাওহীদ ও রিসালাতের
সাক্ষ্য বানী পাঠ করলেন, তারপর বললেনঃ, হে আবূ বাকর! আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ তা’আলা
আপনাকে যে সম্মান প্রদান করেছেন, তা আমরা জানি। আর আল্লাহ তা আলা আপনাকে যে
নিয়ামত প্রদান করেছেন,
তাতে আমার কোন ঈর্ষা নেই। কিন্তু আপনি আমাদের উপেক্ষা করে খিলাফতের দায়িত্বভার
গ্রহণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্নীয়তার কারণে
আমরা মনে করতাম যে,
আমাদেরও অধিকার আছে। আবূ বাকরের সঙ্গে তিনি আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে
আবূ বাকর (রাঃ) এর দুচোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হল। এরপর যখন আবূ বাকর (রাঃ) কথা
বলতে শুরু করলেন, তখন
তিনি বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ করে বলছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আত্নীয়তার প্রতি সৌজন্যমূলক ব্যবহার আমার আত্নীয়তার প্রতি
সৌজন্য প্রকাশের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমার এবং আপনাদের মধ্যে এই
সম্পদ নিয়ে যে দন্দ শুরু হয়েছে তাতে আমি সত্য পরিহার করব না। আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এতে যা করতে দেখেছি তা আমি পরিত্যাগ করব না।
এরপর আলী (রাঃ), আবূ
বাকর (রাঃ)-কে বললেনঃ যে, আমি বায়আতের জন্য আপনাকে আজ বিকেল বেলায় কথা
দিলাম। যখন আবূ বাকর (রাঃ) যূহরের সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহন করলেন
এবং তাশাহুদ পাঠ করলেন। এরপর তিনি আলী (রাঃ) ”এর ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তার বায়-আত
গ্রহণে বিলম্ভ ও এ বিষয়ে তাঁর ওযর বর্ণনা করে ন, যা তার কাছে বর্ণনা করা হয়েছিল। এরপর তিনি
আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তাশাহুদ পাঠ
করলেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর মহত্ত্ব বর্ণনা করলেন। আর তিনি ব্যক্ত করলেন যে, তিনি যা
করেছেন, তার
কারণ আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা কিংবা আল্লাহ তা’আলা তাকে যে সম্মান
দিয়েছেন তার প্রতি অস্বীকৃতি নয়; বরং আমরা মনে করতাম যে, খিলাফতের
মধ্যে আমাদেরও অংশ আছে। কিন্তু আবূ বাকর (রাঃ) আমাদের উপেক্ষা করে এ কাজের
দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এতে আমরা মনক্ষুর্ণ হয়েছি। এ কথা শুনে মুসলিমগণ আনন্দিত
হলেন এবং তাঁরা বললেনঃ যে, আপনি তবে ঠিকই করেছেন। যখন তখন তিনি কল্যাণের
প্রতি ফিরে এলেন অর্থাৎ তখন মনোমালিন্যের অবসান হলো এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর বায়আত
গ্রহণ করা হলো, তখন
থেকে মুসলিমগণ আলী (রাঃ) এর সংস্পর্শে আসতে লাগলেন।
৪৪২৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
ফাতিমা এবং আব্বাস (রাঃ) উভয়েই আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট আগমন করলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুত্রে তাদের প্রাপ্য মীরাসের দাবী নিয়ে। তারা
উভয়েই তখন ফেদাকের ভূমি এবং খায়বারের অংশের দাবী জানালেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) উভয়কে
বললেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি তিনি এরপর যুহরী
(রহঃ) থেকে উকায়ল কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করলেন।
কিন্তু তিনি এতে বর্ণনা করলেন যে, এরপর আলী (রাঃ) দাড়ালেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) এর
যোগ্যতা ও মর্যাদা বর্ননা করলেন এবং তার সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণের কথা বললেনঃ।
এরপর তিনি আবূ বাকর (রাঃ) এর কাছে গেলেন এবং তার কাছে বায়আত গ্রহণ করলেন। তারপর
জনগণ আলী-এর নিকট এসে বললেনঃ, আপনি ঠিকই করেছেন, আপনি ভালই
করেছেন। যখন আলী (রাঃ) কল্যাণকর ব্যবস্হার নিকটবর্তী হলেন, তখন
লোকজনও তার সংস্পর্শে আসতে লাগলো।
৪৪৩০। ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইরন হারব ও হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী
(রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আবূ বাকর (রাঃ) এর নিকট রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিত্যক্ত সম্পতির যা আল্লাহ তাঁকে দিয়েছেন
নিজের প্রাপ্য অংশ দাবী করেন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) তাকে বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা (নাবীগণ) সস্পত্তিতে কাউকে ওয়ারিস
করে যাই না। আমরা যা রেখে যাই তা হরে সাদাকা। আয়িশা (রাঃ) – বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পর ফাতিমা (রাঃ) ছয়মাস জীবিত
ছিলেন। ফতিমা (রাঃ) আবূ ঝকর (রাঃ) এর নিকট তার সেই প্রাপ্য অংশ চেয়েছিলেন-যা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার, ফিদাক এবং মদিনার (সাদাকা) দান থেকে রেখে
গিয়েছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে তা প্রদান করতে অস্বীকার করলেন এবং বললেনঃ, আমি এমন
কাজ পরিত্যাগ করব না যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতেন। আমি ভয়
করি যে, যদি
তার কোন কাজ পরিত্যাগ করি, তবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো। তবে মদিনার (সাদাকার-)
দানে মাল উমার (রাঃ) তাঁর সময়ে আলী এবং আব্বাসকে প্রদান করেছিলেন। কিন্তু আলী
(রাঃ) একাকীই সে সম্পদ অধিকার করে নেন। আর খায়বার এবং ফিদাকের সম্পদ উমর (রাঃ)
নিজের দায়িত্বে রাখলেন এবং বললেনঃ, এ ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর প্রয়োজন মেটানোর জন্য এবং অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ কাজে ব্যয়ের জন্য।
এ দুটো সস্পদের দায়িত্ব থাকে মুসলমানদের আমীরের উপর। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এই উভয়
সম্পদের বণ্টন ব্যবস্হা আজ পর্যন্ত তদ্রুপই আছে।
৪৪৩১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরিত্যক্ত সম্পদের এক দিনারও বন্টিত
হবে না। আমি যা রেখে যাই তা থেকে আমার ন্ত্রীগণের ব্যয় নির্বাহ এবং রাষ্ট্রীয়
পরিচালকের বেতন ভাতার পর যা অবশিষ্ট থাকবে- তা হবে সাদাকা বা দান।
৪৪৩২। মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) “আরয যিনাদ থেকে এই সনদে উল্লিখিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ননা করেন।
৪৪৩৩। ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমরা কাউকে উত্তরাধিকারী করে যাই
না। আমরা যা রেখে যাই তা হবে সাদাকা বা দান।
৪৪৩৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুদ্ধলব্ধ সম্পদের মধ্যে অশ্বারোহী সৈনিকের জন্য দুঅংশ এবং পদাতিক সৈনিকের জন্য এক
অংশ বণ্টন করেন।
৪৪৩৫। ইবনু নুমায়র (রহঃ) এই একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
কিন্তু তিনি (গনীমতের সম্পদে) কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৩৬। হান্নাদ ইবনু সারী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, বদরের যুদ্ধের দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন, দেখলেন যে, তারা সংখ্যায় এক হাজার ছিল। আর তাঁর সাহাবী
ছিলেন তিনশ” তের জন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হলেন, এরপর দুহাত
উচু)করে উচ্চস্বরে আপন প্রভুর কাছে দু’আ করতে লাগলেন, হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছ আমার জন্য তা পূরণ করা হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যা
প্রদানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ, তা প্রদান করা হে আল্লাহ! যদি মুসলিমদের এই
ক্ষুদ্র সেনাদল ধ্বংস করে দাও তবে পৃথিবীতে তোমার ইবাদত করার মত আর কেউ থাকবে না।
তিনি এমনিভাবে দু-হাত উচু করে কিবলামুখী হয়ে প্রভুর কাছে অনর্গল উচ্চস্বরে দুআ
করতে ছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাঁদর পড়ে গেল। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) তার
কাছে এসে তার চারদ খানা তাঁর কাঁধে পূনরায় তুলে দিলেন। তারপর তাঁর পিছন দিক থেকে
তাকে জড়িয়ে ধরে বললেনঃ, হে আল্লাহর নাবী! আপনার এতটুকু দুআই যথেষ্ট।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন, তা অচিরেই পূর্ণ করবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ – (স্বরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের প্রতি পালকের নিকট সাহায্য
প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি
তোমাদেরকে এক হাজার ফিরিশতা দ্বারা সাহায্য করবো যারা একের পর এক আসবে)। আবূ
হুমায়ল বর্ণনা করেন যে, আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ যে, সে দিন
একজন মুসলমান সৈনিক তার সামনের একজন মুশরিকের পিছনে ধাওয়া করছিলেন। এমন সময় তিনি
তাঁর উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ শুনতে পেলেন এবং তার উপর দিকে অশ্বারোহীর
ধ্বনি শুনতে পেলেন। তিনি বলতে ছিলেন, হে হায়মুম, (ফিরিশতার ঘোড়ার নাম) সা মনের দিকে অগ্রসর হও।
তখন তিনি তার সামনের মুশরিক ব্যক্তির প্রতি তাকিয়ে দেখলেন যে, সে চিৎ হয়ে
পড়ে আছে। এরপর দৃষ্টি করে দেখেন যে, তার নাক-ক্ষতযুক্ত এবং তার মুখমন্ডল
আঘাতপ্রাপ্ত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছো আহত স্হানগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে
(বেত্রের বিষাক্ততায়)। এরপর আনসারী ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে যাবতীয় ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেনঃ, হাঁ-তুমি
ঠিকই বলেছ। এই সাহায্য আকাশ-থেকে এসেছে। পরিশেষে সেদিন মুসলিমগণ সত্তর জন কাফিরকে
হত্যা এবং সত্তর জনকে বন্দী করলেন। “আবূ যুমায়ল বলেনঃ যে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা
করেছেন, যখন
যূদ্ধ বন্দীদেরকে আটক করা হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঐ সব যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে আবূ বাকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) এর পরামর্শ
চাইলেন। আবূ বাকর (রাঃ) বললেনঃ, হে আল্লাহর নাবী! তারা তো আমাদের চাচাতো ভাই
এবং সূগোত্রীয়। আমি উচিত মনে করি যে, তাদের নিকট থেকে আপনি মুক্তিপণ গ্রহণ করুন। এতে
কাফিরদের উপর আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ইসলাম
গ্রহণের তাওফীক দিবেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, হে ইবনুল
খাত্তাব! এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? উমর (রাঃ) বললেনঃ, তখন আমি
বললাম, আল্লাহর
কসম! ইয়া রাসুলুল্লাহ!আবূ বাকর যা উচিত মনে করেন আমি তা উচিত মনে করি না। আমি উচিত
মনে করি যে, আপনি
তাদেরকে আমাদের হস্তগত করুন। আমরা তাদের গর্দান উড়িয়ে দেব। আর আকিল-কে আলী-এর
হস্তগত করুন। তিনি তার শিরোচ্ছেদ করবেন। আর আমার বংশের অমুককে আমার কাছে অর্পণ
করুন, আমি
তার শিরোচ্ছেদ করবো। কেননা তারা হল কাফিরদের মর্যাদাশালী নেতৃস্হানীয়
ব্যক্তিবর্গ। অতএব,
আবূ বাকর (রাঃ) যা বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সেটাই পছন্দ করলেন এবং আমি যা বললাম, তা তিনি পছন্দ করেননি। পরের দিন যখন আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম, তখন দেখি
যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বাকর (রাঃ) উভয়েই বসে কাঁদছেন। আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমাকে বলুন, আপনি এবং আপনার সাথী কেন কাঁদছেন? যদি আমার
মধ্যে কান্নার ভাব জাগে তাহলে আমিও কাঁদবো। আর যদি আমার কান্না না আসে তবে
আপনাদের কাদার কারণে আমিও কান্নার ভান করবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ,
ফিদয়া গ্রহণের কারনে তোমার সাথীদের উপর সমাগত বিপদের কথা স্বরণ করে আমি
কাঁদছি। আমার নিকট তাদের শাস্তি পেশ করা হল-এই বৃক্ষ থেকেও নিকটে। বৃক্ষটি ছিল
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটবর্তী। (একটি বৃক্ষের দিকে লক্ষ্য
করে বললেনঃ, এ
বৃক্ষের চাইতেও কাছে তোমাদের উপর সমাগত আযাব আমাকে দেখানো হয়েছে।) অতঃপর আল্লাহ
তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন। দেশে ব্যাপকভাবে শক্রকে পরাভূত
না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নাবীর জন্য সঙ্গত নয় যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা
বৈধ ও উত্তম বলে তোমরা ভোগ কর”। (৪– ৬৭-৬৯) এর ফলে আল্লাহ তাআলা – তাঁদের জন্য
মালে গনীমত হালাল করে দেন।
৪৪৩৭। কুতায়রা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক অশ্বারোহী সৈান্যকে “নাজদ এর দিকে
প্রেরণ করেন। অতঃপর বনূ হানীফা গোত্রের এক ব্যক্তিকে তারা ধরে নিয়ে এল। তার নাম
ছিল-ছুমামা ইবনু উছাল। তিনি ইয়ামামা বাসীদের নেতা ছিলেন। তাঁরা মসজিদের একটি ঘরে
সাথে তাকে বেঁধে রাখলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
কাছে এলেন এবং বললেনঃ,
হে ছুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে।
আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন, যাকে হত্যা করা বৈধ। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনার
অনুগ্রহ হবে কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আপনি সম্পদ চান, তবে আপনাকে
তাই দেওয়া হবে, যা
আপনি চাইবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কে পরের দিন পর্যন্ত
সময় দিলেন। তারপর পরের দিনও তিনি বললেনঃ, হে ছুমামা! তোমার নিকট কি আছে? তিনি
বললেনঁ, আমার
নিকট তাই আছে যা আপনার কাছে বলে দিয়েছি। যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনার
অনুগ্রহ হবে এক-কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আমাকে হত্যা করেন, তবে আপনি
একজন সম্মানি ব্যাক্তিকেই। তিনি বললেনঃ হে ছুমামা! তোমার নিকট কি আছে? তিনি বললেন, আমার নিকট
তাই আছে যা আমি আপনাকে ইতিপূর্বে বলেছি। যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তবে আপনি
অনুগ্রহ করবেন একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর। আর যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তবে হত্যার
উপযৃক্ত ব্যক্তিকেই হত্যা করবেন। আর যদি আপনি সস্পদ চান, তবে বলুন
তাই দেওয়া হবে যা আপনি চাইবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তোমরা ছুমামাকে ছেড়ে দাও। তারপর তিনি মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বৃক্ষের নিকট
গমন করলেন। সেখানে তিনি গোসল করলেন। এরপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেনঃ, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও তার রাসূল। হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর
শপথ! পৃথিবীতে আপনার চেহারার চাইতে অধিক বৈরী চেহারা আমার নিকট আর ছিলনা। আর এখন
সকল মানুষের চেহারা থেকে আপনার চেহারাই আমার নিকট অধিক প্রিয়। আল্লাহর শপথ! আপনার
ধর্ম থেকে অধিক বৈরী ধর্ম আমার কাছে আর ছিলনা। আর এখন আপনার ধর্মই আমার নিকট সকল
ধর্ম থেকে অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম! আপনার জনপদ থেকে অধিক বৈরী জনপদ আমার কাছে
ছিলনা। আর এখন আপনার জনপদই আমার নিকট সকল জনপদের চাইতে অধিক প্রিয়। আপনার
অশ্বারোহী সৈনিকেরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছো অথচ আমি তখন উমরা করার মনস্হ করেছিলাম।
এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? এরপর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে সুসংবাদ দিলেন এবং উমরা করার নির্দেশ দিলেন। এরপর যখন তিনি মক্কায়
প্রত্যাবর্তন করলেন,
তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বললো, তুমি কি ধর্মান্তরিত হয়েছ? তখন তিনি
বললেনঃ, না।
বরং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি
আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে একটি গমের দানাও তোমাদের কাছে পৌছবে না, যতক্ষন না
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে সম্মতি দেন।
৪৪৩৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈনিক প্রেরণ করলেন ঁনাজদ-
প্রদেশের দিকে। তারা এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে এল, যার নাম ছিল ছিল ইবনু আছাল হানাফী। তিনি ছিলেন
ইয়ামামা বাসীদের- নেতা। এরপর তিনি লাইস (রহঃ) এর অনুরুপ বর্ণনা করেন। বিন্তু তিনি
বলেছেনঃ, (যদি
আপনি আমাকে হত্যা করেন, তবে খুনের উপযুক্ত ব্যক্তিকেই হত্যা করবেন )।
৪৪৩৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমরা
মসজিদে বসা ছিলাম। হঠাৎ আমাদের দিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বেরিয়ে এলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা ইয়াহুদীদের দিকে গমন কর। সুতরাং আমরা তার
সংগে বের হলাম। পরিশেষে তাদের কাছে এলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দণ্ডায়মান হলেন এবং তাদেরকে (ধর্মের দিকে) আহবান করে বললেনঃ, হে ইয়াহুদী
সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবূল
কাসেম! নিশ্চয়ই আপনি (আল্লাহর নির্দেশ) প্রচার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ আমি একথাই শুনতে চেয়েছি। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ, তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে
শান্তিতে থাকতে পারবে। তখন তারা বলল, হে আবূল কাসেম! নিশ্চই আপনি প্রচার করেছেন।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তাই চেয়েছিলাম। এরপর
তৃতীয়বার তিনি তাদেরকে বললেনঃ, তোমরা জেনে রেখো! নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার
রাসূলের। আর আমার ইচ্ছা যে, তোমাদেরকে আমি এই ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার করবো।
অতএব, তোমাদের
মধ্য হতে যদি কারো কিছু মালামাল থাকে- তাহলে সে যেন তা দান করে দেয়। নতুবা জেনে
রেখো যে, সমগ্র
ভূ-মণ্ডল আল্লাহ ও তার রাসুলের।
৪৪৪০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, বনূ
নাযীর এবং বনূ কুরায়যা গোত্রদ্বয়ের ইয়াহুদীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বনূ নাযীরকে দেশান্তর করেন। এবং বনূ কুরায়যাকে সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি
তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। পরিশেষে বনূ কুরায়যাও যুদ্ধ করল। ফলে তিনি
তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করলেন এবং তাদের নারী, শিশু ও সম্পদ সমগ্র মুসলমানদের মাঝে বণ্টন করে
দিলেন। কিন্তু তাদের কিছু সংখ্যক লোক যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিল তাদেরকে তিনি-নিরাপত্তা প্রদান করেন। তখন তারা
মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার সকল
ইয়াহুদীকে দেশান্তর করেন। বনূ কায়নূকা গোত্রের (আবদুল্লাহ ইবনু সালামের ইয়াহুদী বংশধর), বনূ
ছারেছার ইয়াহুদী এবং মদিনায় বসবাসরত সকল হয় ইহুদীকেই দেশ থেকে বহিষ্কার করেন।
৪৪৪১। আবূ তাহির (রহঃ) মূসা (রহঃ) থেকে এ সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। আর ইবনু
শুরাইজ (রহঃ) এর হাদীসটি অনেক সূত্রে বর্ণিত এবং সেটিই পূর্ণাঙ্গ।
৪৪৪২। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) বলেনঃ, আমার
কাছে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে
আরব উপ-দ্বীপ থেকে বহিস্কার করবো। পরিশেষে মুসলমানব্যতীত অন্য কাউকে এখানে থাকতে
দেবো না।
৪৪৪৩। যুহায়র ইবনু হারব ও সালামা ইবনু শাবীব উভয়েই আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে এ
সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৪৪৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ, বনূ
কুরাইযার অবরুদ্ধ লোকেরা সা’দ ইবনু মুয়ায (রাঃ) এর নির্দেশ মেনে নিতে সম্মত হল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালেন।
সূতরাং তিনি একটি গাধার উপর আরোহণ করে আগমন করলেন। যখন তিনি মসজিদের নিকটবর্তী
হলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদেরকে বললেনঃ তোমরা-তোমাদের
নেতার অথবা বললেনঃ,
উত্তম ব্যক্তির সম্মানার্থে দণ্ডায়মান হও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সমস্ত অবরুদ্ধ দুর্গবাসীরা তোমার নির্দেশ মান্য করতে সম্মত
হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ, তাদের মধ্যকার যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক)
লোকদেরকে হত্যা করা হউক এবং তাদের নারী ও শিশুদেরকে বন্দী করা হউক। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী
বিচার করেছেন। বর্ণনাকারী ইবনু মূসান্না (রহঃ) কোন কোন সময় বলেছেনঃ তেমি রাজাধিরাজ
আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ- কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৪৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শুবা (রহঃ)-এর থেকে এ সুত্রে বর্ণনা করেছেন। আর
তিনি এ কথাটূকু তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ-
নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছে”। আর একবার বলেছেনঃ, তুমি রাজাধিরাজ
আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী বিচার করেছ”।
৪৪৪৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, খন্দকের যুদ্ধের দিন সা’দ (রাঃ) আঘাত প্রাপ্ত
হলেন। কুরাইশের ইবনুল আরিকা নামক এক ব্যক্তি তাঁর শিরায় তীর নিক্ষেপ করেছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ (রাঃ)-এর জন্যে মসজিদে একটি তাবু
স্হাপন করে দিলেন, যেন
নিকট থেকে তাকে দেখাশোনা করা যায়। যখন তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন অস্ত্র রেখে সবেমাত্র গোসলের
কাজ সমাপ্ত করেছেন। এমন সময় জীবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আগমন করলেন, স্বীয় মাথা
থেকে ধূলিবালি ঝড়তে ঝাড়তে। এরপর বললেনঃ, আপনি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর শড়াথ! আমরা
তো অস্ত্র রাখিনি। তাদের দিকে গমন করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ,
কোন দিকে- তখন তিনি বনূ কুরাইযার দি কে ইঙ্গিত করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করলেন। তারা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশে দুর্গ থেকে অবতরণ করলো। তারপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিচারের ভার (তাদের নেতা) সা’দ
(রাঃ)-এর উপর অর্পন করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেনঃ, আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে, তাদের
মধ্যে যুদ্ধের উপযুক্ত (যুবক) লোকদেরকে হত্যা করা হউক, নারী ও
শিশুদেরকে বন্দী করা হউক এবং তাদের সম্পদ সমূহ বণ্টন করা হউক।
৪৪৪৭। আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার পিতা
বলেছেনঃ আমাকে খবর দেওয়া হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা অনুযায়ী বিচার করেছ।
৪৪৪৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা’দ (রাঃ)
বলেছেনঃ, তঁরে
আঘাত শুকিয়ে গেল এবং তিনি ক্রমান্নয়ে সুস্হ হয়ে উঠলেন। তখন তিনি বললেনঃ, হে আল্লাহ!
আপনি জানেন , আমার
নিকট আপনার রাসুলকে যে সম্প্রদায় অস্বীকার করেছে, তাঁকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে তাদের বিরুদ্ধে
আপনার পথে যুদ্ধ করার চাইতে অধিক পছন্দনীয় বিষয় আর নেই। হে আল্লাহ! যদি কুরাইশদের
সাথে যুদ্ধ করা এখনও বাকী থাকে তবে আপনি আমাকে জীবিত রাখূন, যেন আমি
আপনার পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি। হে আল্লাহ! আমি মনে করি যে, আমাদের এবং
তাদের মধ্যে আপনি যুদ্ধ সমাপ্ত করেছেন। যদি তাই হয়, তবে আপনি আমার এই ক্ষতস্হান খুলে দিন এবং এতেই
আমাকে শাহাদত নসীব করুন। তার ক্ষতস্হান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনূ
গিফারের একটি তাবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহের কারণে তারা ঘাবড়িয়ে গেল। তখন
তারা বলল, হে
তাবুবাসী! তোমাদের দিক থেকে এ কি আসছে আাচর্যের ব্যপার যে, সা’দ
(রাঃ)-এর ক্ষতস্থান থেকে তখন রক্ত প্রবাহিত হতোছিল এবং এতেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
৪৪৪৯। আলী ইবনু হাসান ইবনু সুলায়মান কুফী হিশাম (রহঃ) থেকে একই সুত্রে
উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এইটূকু ব্যতিক্রম বলেছেনঃ যে, “সেই রাত
থেকেই রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো এভাবে অনবরতঃ রক্ত প্রবাহিত হল। অবশেষে তিনি মারা
যান। তিনি তার হাদীসে অহরো কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। এ সম্পকে একজন কাব বলেনঃ
হে সা’দ ইবনু মুয়াযা তোমার ব্যাপারে বনূ কুরায়যা এবং বনূ নাযীর কি করেছে। তোমার
জীবনের শপথ! সা’দ ইবনু মুয়াযের যে প্রভাতে তোমরা তার জন্য কষ্টানূভব করছিলে, সে আজ
নিশ্চপ। (হে আউস সম্প্রদায়) তোমরা তোমাদের ভোগগুলো খালি রেখে দিয়েছ তাতে আজ কোন
কিছু নেই। অর্থাৎ তোমাদের অধপতন হয়েছে। অথচ তোমাদের বিপক্ষের (খাজরাজ) সম্প্রদায়ের
ডেগগুলো গরম তা টগবগ করছে অর্থাৎ তারা আজ প্রভাবশালী ধনী। সভ্রান্ত আবূ হুবাব
বলেছিলেন, তোমরা
বনূ কায়নূকা গোত্র কে অবস্হান করতে দাও, তাদেরকে যেতে দিওনা। আবূ তারা তাদের শহরে
নিস্তব্ধ পাথর”।
৪৪৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যুবাঈ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাবের যুদ্ধ থেকে
প্রত্যাবর্তন করলেন-তখন তিনি আমাদের মাঝে ঘোষনা দিলেন যে, কেউ যেন
যুহরের সালাত আদায় না করে, যতক্ষন না বনী কুরায়যার মহল্লায় গিয়ে পৌছবে।
তখন কিছু সংখ্যক লোক যুহরের সালাতের সময় চলে যাওয়ার ভয় করলেন। এবং তারা বনূ কুরায়যা
গোত্রে পৌছার পর সালাত আদায় করলেন। আর অন্যরা বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে স্থানে সালাত আদায় করতে- বলেছেনঃ সে
স্হান ব্যতীত আমরা সালাত আদায় করব না, যদিও সময় চলে যায়। রাবী বলেনঃ, এ ঘটনা
শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ দু”দলের কারো প্রতি রাগাম্বিত
হন নি।
৪৪৫১। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, যখন
মুহাজিরগণ মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের হাতে কোন কিছুই ছিল না। (তারা
ছিলেন তখন সম্পূর্ন নিঃসূ) আর আনসারগণ ছিলেন জমা-জমির মালিক। তখন আনসারগণ
মুহাজিরদেরকে তাদের খেজুর বাগানের অর্ধেক এই শর্তে বণ্টন করে দেন যে, প্রতি বছর
বাগানে মুহাজিরগণ পরিশ্রম ও পরিচর্যা করে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাদের দেবেন। আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মাতা উম্মে সূনাইম, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার মাতা ছিলেন। আর
আবদুল্লাহ ছিলেন আনাসের বৈপিত্রেয় ভাই। আনাসের মাতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর একটি খেজুর গাছ দান করেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহা দিলেন তার আযাদকৃত দাসী উমে আয়মানকে। যিনি উসামা ইবনু
যায়েদের মাতা ছিলেন। ইবনু শিহাব (রাঃ) বলেনঃ, আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) খবর দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বারের যূদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন
করলেন তখন মুহাজিরগন আনসারদেরকে তাদের দানকৃত ফলের বাগানসমূহ প্রত্যার্পণ করে দেন।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার মাতাকে তার দানকৃত বাগান
ফেরত দেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়মানকে তার পরিবর্তে
নিজের বাগানের এক অংশ প্রদান করেন। ইবনু শিহাব (রাঃ) বলেনঃ ওযে, উম্মে
আয়মান-যিনি উসামা ইবনু যায়েদের মাতা ছিলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিবের দাসী
ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিতার ইন্তেকালের পর আমেনা
(রাঃ) গর্ভ হতে। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ভূমিষ্ট হন তখন
উম্মে আয়মান তাঁকে বড় হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করেন। এরপর তিনি তাঁকে আযাদ করে দেন।
পরবর্তীতে যায়েদ ইবনু হারেছার সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেন। তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পাচ মাস পর ইন্তেকাল করেন।
৪৪৫২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হামিদ ইবনু উমর আল বাকরারী ও মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল আলা কাহাসী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করেন) তখন এক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে নিজ নিজ ভূমির কিছু খেজুর দান করেছেন। যখন বনূ কুরায়যা এবং বনূ
নাযীর গোত্রদ্বয়ের উপর তার বিজয় প্রতিষ্ঠিত হলে তখন তিনি তাদের প্রত্যেকের কাছে
প্রত্যর্পণ করতে লাগলেন ঐসব গাছ, যা- তারা তাকে প্রদান করেছিলেন। আনাস (রাঃ)
বলেনঃ, আমার
পরিবারের লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যা দিয়েছিলেন তা
অথবা তার অংশ বিশেষ তাঁর নিকট হতে চেয়ে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন। অথচ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে আয়মানকে তা দিয়ে দিয়েছিলেন।- এ অবস্হায় আমি
তাঁর কাছে এসে যখন তা চাইলাম, তখন তিনি তা আমাকে দিয়ে দিলেন। এ সময় উম্মে
(রাঃ) আয়মান সেখানে এলেন এবং আমার গলায় কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ও বললেনঃ, আল্লাহর
কসম! আমি তোমাকে তা দেবোনা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে
উম্মে আয়মন! আপনি তাকে ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এই এই সম্পদ প্রদান করছি। তখন তিনি
বললেনঃ, কখনো
না। সেই আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, আপনাকে এই এই সম্পদ প্রদান করছি (আপনি তাকে
ছেড়ে দিন)। পরিশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে আয়মনকে ঐ সম্পদের
দশশুন কিংবা দশগুণের কাছাকাছি প্রদান করেন।
৪৪৫৩। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মূগাফফাল (রাঃ) বলেনঃ, আমি খায়বার
যুদ্ধের সময় চর্বিভর্তি একটি চামড়ার থলে পেলাম। আমি তা ভুলে নিলাম এবং বললাম, এর থেকে
আমি কাউকে কিছু দেবনা। তিনি বলেনঃ, আমি হঠাৎ পিছন ফিরে দৃষ্টিপাত করে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলাম, (আমার কথা শুনে) তিনি মৃদু হাসছেন।
৪৪৫৪। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার আবদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
খায়বারের যুদ্ধের সময় আমাদের দিকে কে যেন একটি থলে নিক্ষেপ করল, তাতে খাদ্য
ও চর্বি ভর্তি ছিল। আমি ঝাঁপিযে পড়লাম তা তুলে নেওয়ার জন্য। হঠাৎ পিছন ফিরে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে দেখে
লজ্জিত হলাম।
৪৪৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না (রহঃ) থেকে একহ সুত্রে হাদীস বর্ননা করেছেন।
কিন্তু তিনি (চর্বির থলে) কথাটি বলেনঃ এবং (খাদ্যের) কথা উল্লেখ করেননি।
৪৪৫৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, ইবনু আবূ উমর, মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) মুখোমুখি (সরাসরি) এ হাদীস
অবহিত করেছেন। যখন আমার মধ্যে এবং রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর
মধ্যে (হুদায়বিয়ার) সন্ধির কার্যকর ছিল (ষষ্ঠ হিজরীতে) তখন আমি (সফরে) বের হলাম।
যখন আমি শাম দেশে উপস্থিত হলাম, তখন রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম- এর প্রেরিত একটি পত্র হিরাকল (হিরাকলিয়াস) বাদশাহর নিকট পৌঁছল। দিহইয়া
আল-কালবী (রাঃ) (দূত) এই পত্র নিয়ে গিয়েছিলন। তিনি সেই পত্র ‘বুসরার’ প্রধান
শাসনকর্তাকে প্রদান করেন। এরপর বুসরার প্রধান, হিরাকল বাদশাহর নিকট পত্রটি হস্তান্তর করেন।
তখন হিরাকল বাদশাহ বললেন, এখানে ঐ লোকটির (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম- এর) সম্প্রদায়ের কোন লোক আছে কি, যিনি নিজেকে নাবী বলে দাবী করেছেন? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন
কুরায়শদের এক দল লোকের সঙ্গে আমাকেও ডাকা হল। এরপর আমরা হিরাকল বাদশাহর দরবারে
প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে তার সম্মুখেই বসান হল। তখন তিনি জিজ্ঞাস করলেন, যিনি নাবী
দাবী করছেন আত্মীয়তার দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে অধিক নিকটবর্তী? তখন আবূ
সুফিয়ান বললেন, আমি।
তখন তাঁরা আমাকে বাদশাহর সামনেই বসালেন এবং আমার সঙ্গীদেরকে আমার পিছনে বসালেন।
এরপর তিনি তার দোভাষীকে ডাকলেন এবং তাকে বললেন, “আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে বলে দাও যে, আমি তাকে
(আবূ সুফিয়ানকে)ঐ লোকটি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করব, যিনি নিজেকে নাবী বলে দাবী করছেন। যদি তিনি
(আবূ সুফিয়ান) আমার নিকট মিথ্যা কথা বলেন, তবে আপনারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে ঘোষণা দেবেন।
তখন আবূ সুফিয়ান বলেন,
আল্লাহ্র সপথ! যদি আমার এই ভয় না হত যে, মিথ্যা বললে তা আমার নামে উদ্ধৃত হতে থাকবে তবে
নিশ্চয়ই (তাঁর সম্পর্কে) মিথ্যা কথা বলতাম। অতঃপর বাদশাহ তার দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে
(আবূ সুফিয়ানকে) জিজ্ঞাস কর, আপনাদের মাঝে ঐ লোকটির বংশ পরিচয় কেমন? আমি বললাম, তিনি
আমাদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এরপর তিনি বললেন,তাঁর পিতৃ পুরুষদের মধ্যে কি কেউ কখনও বাদশাহ
ছিলেন? আমি
বললাম, না।
এরপর তিনি জিজ্ঞাস করলেন, আপনারা কি কখনও তাঁকে এ কথা বলার পূর্বে, যা তিনি
বলেছেন, মিথ্যা
বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন? আমি বললাম না। তিনি আবার বললেন, সমাজের কোন
শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসরন করে? সম্ভ্রান্ত প্রভাবশালীরা, না
দুর্বলেরা? আমি
বললাম, (সম্ভ্রান্ত
ব্যক্তিরা নয়); বরং
দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা। তিনি বললেন, তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, না কমছে? আমি বললাম, (কমছে না), বরং
(দিনদিন) বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর তিনি বললেন, যে সব লোক তাঁর ধর্মে প্রবেশ করছে তারা কি
পরবর্তীতে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হচ্ছে? আমি বললাম, না। এরপর
তিনি বললেন, আপনারা
কি কখনও তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনাদের
এবং তাঁর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধের ফলাফল কিরুপ? আমি বললাম, আমাদের এবং তাঁর মাঝে যুদ্ধের অবস্থা পালাবদল
হচ্ছে। কখনও তিনি বিজয়ী হন এবং কখনও বা আমরা বিজয়ী হই। সমরাট হিরাকল বললেন, তিনি কি
(কখনও সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে) বিশ্বাস ভঙ্গ করেন? আমি বললাম না। কিন্তু আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে
একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা (পর্যন্ত সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ আছি)। আমরা জানি না যে, পরিশেষে
তিনি তাতে কী করবেন। আবূ সুফিয়ান বললেন, আল্লাহ্র শপথ! (প্রশ্ন উত্তরে) আমার পক্ষ হতে
একথাটি ছাড়া অন্য কোন দ্বিধামূলক কথা সংযোগ করা সম্ভব হয়নি।এরপর সমরাট হিরাকল
বললেন, (আপনাদের
দেশে) তাঁর (নবুওয়াত দাবীর) পূর্বে কি কোন ব্যক্তি কখনও এরূপ দাবী করেছে? আমি বললাম, না। এরপর
সমরাট হিরাকল তার দোভাষীকে বললেন, আমি তাকে (আবূ সুফিয়ানকে) বলে দাও যে, আমি আপনাকে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
তাঁর (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর) বংশ পরিচয় সম্পর্কে। আপনি
তখন বলেছিলেন যে, তিনি
সম্ভ্রান্ত বংশীয়। এমনিভাবে রাসূলগণ তাদের সম্প্রদায়ের উত্তম বংশে প্রেরিত হয়ে
থাকেন। এরপরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁর পিতৃ পুরুষগণের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলন? আপনি প্রতি
উত্তরে বলেছিলেন, না।
আমি মনে মনে বললাম যে,
যদি তাঁর পিতৃপুরুষগণের মধ্যে হতে কেউ বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি
মনে করতাম যে, হয়তবা
তিনি তাঁর পিতৃপুরুষের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চান। তারপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাস
করেছিলাম, তাঁর
অনুসারী কি দুর্বল শ্রেণীর লোক , না সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর লোক? আপনি
বলেছিলেন , দুর্বল
শ্রেণীর লোক(আমি বলছি,)
তারাই রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে। এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, যে তিনি
(নবুওয়াতের) যে কথা বলছেন এর পূর্বে কি আপনারা তাঁকে কখনও মিথ্যার অভিযোগে
অভিযুক্ত করেছেন? আপনি
বলেছিলেন যে, না।
এতে আমি বুঝতে পারলাম,
যে ব্যক্তি (জাগতিক ব্যপারে) মানুষের সাথে মিথ্যা বলেন না, তিনি কি
কারনে আল্লাহ্র উপর মিথ্যারোপ করতে যাবেন? এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, কোন
ব্যাক্তি কি তাঁর ধর্ম গ্রহন করার পর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর ধর্ম পরিত্যাগ
করেছে? আপনি
বলেছিলেন, না।
ঈমানের প্রকৃত অবস্থা এটাই। যখন অন্তরের অন্তস্থলে একবার তা সংমিশ্রিত হয় (তখন
সেখানেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে)। এরপর আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম, তাঁর
অনুগামীদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে, না কমছে? আপনি বলেছিলেন, তারা সংখায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই হল ঈমানের পকৃত
অবস্থা। তা বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে পূর্ণতা লাভ করে। এরপর আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম, আপনারা
কি তাঁর সঙ্গে কোন যুদ্ধ করেছেন? আপনি বলেছিলেন ,হ্যাঁ, আপনারা তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন। তবে আপনাদের
মাঝে ও তাঁর মাঝে-যুদ্ধের অবস্থা হল পালাবদলের মত। কখনও তিনি বিজয়ী হন, আবার কখনও
আপনারা বিজয়ী হন। এভাবে রাসূলগণকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। পরিণামে তাঁরাই বিজয়ী
হয়ে থাকেন। এরপর আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কি কখনও (কোন সন্ধির)চুক্তি ভঙ্গ করেন? আপনি
বলেছিলেন, তিনি
কোন চুক্তিভঙ্গ করেন না, এভাবে রাসূলগণ কখনও কোন চুক্তি ভঙ্গ করেন না।আর
আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম যে, তাঁর এই কথা (নবুওতের কথা) বলার পূর্বে কি কোন
ব্যক্তি অনুরূপ কথা বলেছেন? আপনি বলেছিলেন যে, না। আমি তা
এ কারনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ,যদি তাঁর পূর্বে কেউ এরূপ দাবী করে থাকতো , তবে আমি
মনে করতাম যে, সে
ব্যক্তি তাঁর পূর্বে যে কথা বলা হয়েছিল তার অনুকরণ করেছে। রাবী বলেন এরপর হিরাকল
জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি
আপনাদের কি করতে আদেশ করেন? আমি(আবূ সুফিয়ান) বললাম, তিনি
আমাদেরকে সালাত আদায় করতে, যাকাত দিতে, আত্মীয় সমন্ধ অটুট রাখতে (নিকট আত্মীয় ও হকদার
ব্যক্তিদের প্রতি সদ্ব্যব্যবহার করতে) এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করতে(অবৈধ ও
অসৌজন্যমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে) আদেশ করে থাকেন। তিনি(বাদশাহ হিরাকল) বললেন, আপনি তাঁর
সম্পর্কে যা বললেন তাঁর অবস্থা যদি ঠিক তাই হয় তবে তিনি অবশ্যই নাবী। আমি জানতাম
যে, একজন
নাবীর আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু আমি ধারণা করিনি যে, তিনি আপনাদের থেকে হবেন। যদি আমি জানতাম যে, আমি তাঁর
নিকট নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারবো? তবে নিশ্চয়ই আমি তাঁর মুবারক পদদ্বয় ধুইয়ে
দিতাম। (জেনে রেখো) নিশ্চয়ই তাঁর রাজত্ব আমার দু’পায়ের নীচ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এরপর
তিনি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর চিঠিটি তলব করলেন এবং তা পাঠ
(করার আদেশ) করলেন। এতে ছিল – “দয়াবান দয়ালু আল্লাহ্র নামে! এটা মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর পক্ষ থেকে রোমের প্রধান ব্যক্তি
হিরাকল এর প্রতি। সালাম সেই ব্যক্তির উপর, যিনি(হিদায়াতের) সঠিক পথ অনুসরন করেন। অতঃপর
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে ইসলামের আহবান জানাচ্ছি। ইসলাম গ্রহন করুন, নিরাপদ
থাকবেন। আপনি মুসলমান হউন, আল্লাহ্ আপনাকে আপনার প্রতিদান দ্বিগুণ করে
দান করবেন। আর যদি আপনি (ইসলাম থেকে) বিমুখ থাকেন, তবে নিশ্চয়ই প্রজাদের পাপ আপনার উপর আরোপিত
হবে। “হে আহলে কিতাব! তোমরা এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যে আমরা
আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করব না, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক করব না, যদি তারা
মুখ ফিরিয়ে নেয় (অবাধ্য হয়) তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম” এরপর তিনি পত্র
পাঠ শেষ করলে তাঁর নিকটে শোরগোল এবং হৈ চৈ হতে লাগল। এদিকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসার
নির্দেশ দেয়া হল। আমরা বেরিয়ে এলাম। আবূ সুফিয়ান বলেন, আমরা যখন
বেরিয়ে এলাম তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবূ কাবাশার পুত্রের ব্যপারটি অত্যন্ত সুদৃঢ়
হয়েছে। বনী আসফার(লাল চামড়াদের) বাদশাহও তাঁকে ভয় করছে। অবশেষে এক সময় আল্লাহ্
তা’আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন।
৪৪৫৭। হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই একই
সুত্রে উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, “যখন আল্লাহ
তা-আলা রোম সমরাট (কায়সার) দ্বারা পারস্যের সেনাদলকে পরাজিত করলেন, তখন তিনি
এই বিজয়ের জন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে *হেমস- থেকে ইলিয়া” (বায়তুল
মুকাদ্দাস) পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যান আর তিনি এই হাদীসে “এই পত্র মুহাম্মদ আল্লাহর
বান্দা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে” এবং ‘অরিসিন’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইয়ুরাউসিন’ শব্দ
বলেছেনঃ। আর তিনি ‘দায়াইয়াতুল ইসলাম’ শব্দের পরিবর্তে শব্দ ‘দা ইয়াতুল ইসলাম’
বর্ণনা করেছেন।
৪৪৫৮। ইউসুফ ইবনু হাম্মাদ মুয়ায়ী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসরাঁ (পারস্যের সমরাট), কায়সার-
(রোমের -সমরাট) ও নাজ্জাশী এবং অন্যান্যৃ প্রভাবশালী শাসকগণের নিকট পত্র লিখেন, যাতে তিনি
তাদের আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেন। ইনি সে নাজ্জাশী নন, যার জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন।
৪৪৫৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রাযী (রহঃ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। কিন্তু তিনি একথা
বলেননি যে, “তিনি
সেই নাজ্জাশী নন , যার
জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন।
৪৪৬০। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা
করেছেন। কিন্তু তিনি একথা উল্লেখ করেননি যে,”তিনি সেই নাজ্জাশী নন, যার
জানাযার সালাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন।”
৪৪৬১। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে
ছিলাম। আমি এবং আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস ইবনু , আবদুল মুত্তালিব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একেবারে সঙ্গেই ছিলাম। আমরা কখনও তাঁর থেকে পৃথক হইনি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা বর্ণের খচ্চরের উপর আরোহণ
করেছিলেন। সে খচ্চরটি ফারওয়া ইবনু নূফাসা হুযামী তাঁকে হাদিয়া সূরুপ দিয়েছিলেন।
(উহাকে দ্যু-বুদুল নামে ডাকা হতো।) যখন মুসলমান এবং কাফির পরস্পর সম্মূখ যুদ্ধে
লিপ্ত হল তখন মুসলমানগণ (যুদ্ধের এক পর্যায়ে) পাশ্চাৎ-দিকে পলায়ন করতে লাগলেন। আর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পায়ের গোড়ালী দিয়ে নিজের
খচ্চরকে আঘাত করে কাফিরদের দিকে ধাবিত করছিলেন। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ, আমি তার
খচ্চরের লাগাম ধরে রেখে ছিলাম এবং একে থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম যেন দ্রুত
গতিতে অগ্রসর হতে না পারে। আর আবূ সুফইয়ান (রাঃ) তাঁর খচ্চরের ‘রেকাব’ (হাউদাজের
বন্ধনের পটি) ধরে রেখেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ হে আব্বাস! আসহাবে সামুরাকে আহবান কর। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ, আর তিনি
ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী ব্যক্তি। তখন আমি উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললাম, হে আসহাবে
সামুরা! তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তিনি বলেনঃ, আল্লাহর কসম! তা শোনামাত্র তাঁরা এমনভাবে
প্রত্যাবর্তন করতে)শুরু করলেন যেমনভাবে গাভী তার বাচ্চার আওয়াজ শুনে দ্রুত দৌড়ে
আসে। এবং তারা বলতে লাগলো, আমরা আপনার নিকট হাযির, আমরা আপনার
নিকট হাযির। রাবী বলেনঃ, এরপর তারা কাফিরদের সাথে পূনরায় যুদ্ধে লিপ্ত
হন। তিনি আনসারদেরকেও এমনিভাবে আহবান করলেন যে, হে আনসারগণ! রাবী বলেনঃ, এরপর আহবান
সমাপ্ত করা হল বনী হারেস ইবনু খাযরাযের মাধ্যমে (তাঁরা আহবান করলেন, হে বনী
হারেস ইবনুল খাযরাজ।) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খচ্চরের
উপর আরোহণ অবস্হায় আপন গর্দান উচু করে তাদের যুদ্ধের অবস্হা অবলোকন করেন। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটাই হল যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ
চরম মুহূর্ত। রাবী বলেনঃ, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কয়েকটি পাথরের টূকরা হাতে নিলেন। এবং এগুলি তিনি বিধর্মীদের মুখের উপর
ছুড়ে মারলেন। এরপর বললেনঃ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে। আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ, আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধের অবস্হান পরিদর্শন
করতে গিয়ে ,দেখলাম
যে, যথারীতি
যুদ্ধ চলছে-। এমন সময় তিনি পাথরের টূকরোগুলো নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহর শপথ! তখন
হঠাৎ দেখি যে, কাফিরদের
শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল এবং তাদের যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল।
৪৪৬২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু রাফে ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
যুহরী (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি
-ফারওয়া ইবনু নু-য়ামা জুযামী- কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ যে, তারা
পরাজিত হয়েছে, কাবার
রবের কসম! তারা পরাজিত হয়েছে কাবার রবের কঁসম” তিনি তাঁর হাদীসে একথাটিও অতিরিক্ত
বর্ণনা করেছেন যে,
“অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পরাজিত করলেন”। রাবী বলেনঃ, আমি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের পিছন থেকে দেখলাম যে, তিনি স্বীয়
খচ্চরের উপর থেকে নিজ পায়ের গোড়ালী দিয়ে একে আঘাত করছিলেন। (দ্রুত গতিতে চলার
জন্য।)
৪৪৬৩। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
হুনাইনের যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলাম। এরপর
তিনি উল্লিখিত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে ইউনূস এবং মামার (রাঃ) বর্ণিত হাদীস
বর্ণনার দিক দিয়ে অধিক বিস্তারিত এবং পরিপূর্ন।
৪৪৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, জনৈক
ব্যক্তি বারা (রাঃ) কে বললেনঃ, হে আবূ উমারা! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পলায়ন
করেছিলেন। তিনি বললেনঃ, না। আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। বরং তাঁর কয়েকজন হালকা পাতলা, চালাকচতূর
তরুণ সাথী, যাদের
কোন অস্ত্র কিংবা বড় ধরনের-কোন হাতিযারও ছিলনা, তাঁরা সরে পড়েন। তাঁরা এমন একদল তীরান্দাযের
মোকাবিলা করছিলেন,
যাদের তীরের লক্ষ্যস্হল ব্যর্থ হবার নয়। তারা ছিল হাওয়াযেন ও নযর গোত্রের লোক।
তারা এমনভাবে তীর যে,
লক্ষ্যস্হল ব্যর্থ হওয়ার ছিলনা। তখন তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর দিকে এগিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে
সময় তার সাদা রঙের খচ্চরের উপর ছিলেন। আর আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস ইবনু আবদুল
মুত্তালিব (রাঃ) একে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে
সাহায্য চাইলেন। রাবী বলেনঃ, যেন তিনি বলেছিলেন: আমি অবশ্যই নাবী, একথা
মিথ্যা নয়। আমি ইবনু আবদুল মুত্তালিব। তারপর তিনি ম্বীয় সেনাদলকে শ্রেনীবদ্ধ
করলেন।
৪৪৬৫। আহমাদ ইবনু জানাব মিসসিসী (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি বারা (রাঃ) এর নিকট এসে বললো, আপনারা কি হুনাইনের দিনে পলায়ন করেছিলেন! তখন
তিনি বললেনঃ, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। কিন্তু কিছু সংখ্যক
চালার্কচতূর হালকাপাতলা লোক হুযাওয়ায়েন গোত্রের দিকে গিয়েছিল। আর তারা ছিল
তীরন্দায সম্প্রদায়। তারা তাদের প্রতি তীর ছুড়লো, যেন সেগুলো পঙ্গপালের পায়ের মত। তখন তারা পিছন
দিকে ছুটে গেল। আর লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
এগিয়ে এলো। আবূ সুফিয়ান ইবনু হারেস (রাঃ) তাঁর খচ্চর টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি
অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দুআ করলেন এবং তিনি বললেনঃ আমি অবশ্যই
আল্লাহর নাবী, একথা
মিথ্যে নয়। আমি ইবনু আবদূল মুত্তালিব। “ইয়া আল্লাহ! আপনার সাহায্য নাযিল করুন”।
বারা (রাঃ) বললেনঃ,
আল্লাহর কসম! যুদ্ধের-উত্তেজনা যখন ঘোরতর হয়ে উঠল, তখন আমরা
তার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করতাম। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে বীরপুরুষ তিনই যাকে যুদ্ধে তাঁর
সামনে রাখা হয়, অর্থাৎ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৪৪৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু মুছান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
আমি বারা (রাঃ) এর কাছে শুনেছি, বনী কায়েসের এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনারা কি
হুনাইনের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পলায়ন করেছিলেন? তখন বারা
(রাঃ) বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই পলায়ন করেননি। (তবে ব্যাপার এ ছিল যে,) হাওয়াযেন
গোত্রের লোকেরা দক্ষ তীরান্দায ছিল। আমরা যখন তাদেঁর উপর আক্রমণ করলাম তখন তারা
পলায়ন করলো। এমন সময় আমরা গনীম তের মালের দিকে ঝুঁকে পড়লাম। তখন তারা ফিরে এসে
আমাদের উপর অতর্কিতে তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সাদা বর্শের খাচ্চরের উপর দেখতে পেলাম। আর আবূ সূফিয়ান
ইবনু হারেস (রাঃ) এর লাগাম ধরে রেখেছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলছিলেনঃ আমি অবশ্যই নাবী, একথা মিথ্যে নয়। আমি ইবনু আবদুল মুত্তালিব।
৪৪৬৭। যুহাইর ইবনু হারব মুহাম্মদ ইবনু মুছান্না ও আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ বারা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, হে আবূ
উমারা! তারপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন। এই হাদীস ছিল তাঁদের বর্ণিত হাদীস থেকে
সংক্ষিপ্ত। আর তাদের হাদীস ছিল পূর্ন।
৪৪৬৮। যুহায়র ইবনু হারব সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা
হুনাইনের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থেকে যূদ্ধ
করেছি। যখন আমরা শক্রদের সন্মুখীন হলাম, তখন এ পর্যায়ে আমি অগ্রসর হয়ে একটি টিলার উপর
আরোহণ করলাম। তখন শক্রদলের এক ব্যক্তি আমারঁ-মোকাবিলায় অগ্রসর হল। আমিএকটি তীর
নিক্ষেপ করলাম, তখন
সে আমার থেকে আত্নগোপন করল। আমি তখন বুঝতে পারিনি তার ব্যাপারটি কী হয়েছে। তারপর
যখন শক্রদলের প্রতি লক্ষ্য করলাম- তখন দেখতে পেলাম যে- তারা অপর এক টিলায় আরোহণ
করেছে। তারপর তারা এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথীরা সামনাসামনি
হলো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবাগণ পিছনে সরে পড়তে লাগল।
আমি পরাজিত অবস্হায় প্রত্যাবর্তন করলাম। তখন আমার পরিধানে ছিল দূটি চাঁদর।
তম্মধ্যে একটি চাঁদর ছিল বাঁধা অবস্হায় এবং অপরটি ছিল খোলা। এক, পর্যায়ে
আমার চোক খুলে গেল। তখন আমি সে দুটি একত্র করলাম। এবং পরাজিত অবস্হায় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ দিয়ে গমন করলাম। আর তিনি তখন তাঁর সাদা রং
এর খচ্চরের উপর আরোহিত ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ, ইবনুল
আকওয়া সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করেছে। এরপর শক্ররা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ঘিরে ফেললো। তখন তিনি স্বীয় খচ্চর থেকে অবতরণ
করলেন। তারপর এক মূষ্টি মাটি যমিন থেকে তুলে নিলেন। এরপর তাদের মুখমন্ডলে তা
নিক্ষেপ করলেন এবং বললেনঃ, তাদের মুখমন্ডল বিকৃত হয়ে গেছে। এরপর তাদের সকল
মানুষের , দু-চোখ-ই
সেএক মুষ্টি মাটির ধুলায় ভরে গেল। তারা পাচাৎ দিকে পলায়ন করলো। আল্লাহ তা’আলা এ
দ্বারাই তাদেরকে পরাস্ত করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গনীমতের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।
৪৪৬৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তায়েফ বাসীকে অবরোধ করলেন এবং এতে তিনি তাদের কাছ,থেকে কিছু পেলেন না। এরপর তিনি বললেনঃ, ইনশা
আল্লাহ আমরা প্রত্যাবর্তন করবো। তখন তাঁর সাহাবীগণ বললেনঃ, আমরা কি
প্রত্যাবর্তন করবো অথচ আমরা তায়িফ জয় করলাম না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেনঃ, আগামীকাল সকালে তোমরা যুদ্ধ কর। সূতরাং তারা
পরবর্তী দিন সকালে যুদ্ধ করল এবং অনেকেই আহত হলো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা আগামীকাল প্রত্যাবর্তন করবো। রাবী বলেনঃ, এতে তাঁরা
খুশি হলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁসলেন।
৪৪৭০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যখন আবূ সুফিয়ানের (মদিনায়) আগ্রাভিযানের
সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবূ বকর (রাঃ) এ
ব্যাপারে কথা বললেনঃ, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর
দিলেন না। এরপর উমর (রাঃ) কথা বললেনঃ। তিনি তার কথারও কোন উত্তর দিলেন না। পরিশেষে
সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেনঃ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের জবাব?-প্রত্যাশা
করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে
আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের
ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেনঃ, তবে-নিশ্চয়ই
আমরা যেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে ঁবারকুল গামাদ- পর্যন্ত পৌছার
জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুসলমানদেরকে আহবান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মিলীত
হলেন। আর সাহাবীগণের সামনে সেখান কুরাইশের সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী
হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবূ
সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেনঃ তখন সে বলতে লাগলো, আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোন কিছু জানা নেই।
তবে আবূ জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবনু খালফ তো-উপাস্থিত আছে।
যখন সে এরুপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্হায় সে বলল, হ্যা, আমি
আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা
পূনরায় আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন
সে বলল, আবূ সুফিয়ান জনগণের মাঝে
উপস্তিত আছেন। যখন সে পূনরায় এ একই কথা বলল, তখন
তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন
তিনি এ অবস্হা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর
বললেনঃ, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে
আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য
কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেনঃ, এ
স্হান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্হল। বর্ণনাকারী বলেনঃ -যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে
স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই
তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম
হয়নি।
৪৪৭১। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ রাবা (রহঃ) বলেনঃ, আমি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে (যার মধ্যে আবূ
হুরায়রা (রাঃ) ও ছিলেন) মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। সেই সময় ছিল রামাযান মাস।
তখন তাঁরা একে অন্যের জন্য খানা পাকাতেন। আবূ হুরায়রা-(রাঃ) অধিকাংশ সময় আমাদেরকে
তাঁর বাসস্থানে দাওয়াত করতেন। সুতরাং একদিন আমি তাঁকে বললাম, আমিও খানা তৈয়ার করবো এবং সলকেই আমার বাসস্থানে-দাওয়াত
করবো। আমি খানা তৈরীর নির্দেশ দিলাম। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে আমি বিকালে
সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আজ রাতে আমার বাসায় আপনার
দাওয়াত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ, আপনি
আজ আমার-পূর্বেই দাওয়াত দিয়ে দিলেন, আমি
বললাম, হ্যা। আমি সকলকেই দাওয়াত করলাম।
তখন আবূ হুরায়রা-(রাঃ) বললেনঃ, হে আনসার- সম্প্রদায়! আমি কি
তোমাদেরকে তোমাদের সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ননা করবে না? তারপর তিনি মক্কা বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু
করলেন। তিনি বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে অগ্রসর হলেন এবং পরিশেষে তিনি তথায় উপনীত হলেন।
এরপর যুবাইরকে মক্কার একদিকে এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে অপর দিকে প্রেরণ করলেন। আর
আবূ উবায়দা (রাঃ) কে সেইসব লোকদের উপর নেতা বানিয়ে পাঠালেন যাদের কাছে লৌহ বর্ম
ছিলনা। তারা উপত্যকা-র ভিতরের পথ অবলম্বন করে চললেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একটি ছোট সেনাদলের মধ্যে। তিনি তাকালেন এবং আমাকে দেখে
বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! আমি- বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি উপস্থিত। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিক্বট আনসার ব্যতীত আর কেউ যেন
না আসে। শায়বান ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তারপর তিনি বললেনঃ আনসারদেরকে আহবান কর।
বর্ণনাকারী বলেনঃ –এরপর আনসারগণ তার চারপাশে জমায়েত হলেন। এদিকে কুরাইশগণও তাদের
বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং অনুগতদেরকে একত্রিত করলো। এরপর তারা বলল, আমরা তাদেরকে আগে প্রেরণ করব। যদি তাদের- ভাগে
কিছু জুটে, তবে আমরাও তো তাদের সঙ্গেই
আছি। আর যদি তারা বিপদের সম্মুখীন হয় তবে তারা আমাদের কাছে যা চাইবে, তাই দিয়ে দেব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেনঃ, তোমরা
কি কুরাইশের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং তাদের অনুগতদেরকে দেখতে পাচ্ছ। এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- তাঁর এবং হাত আপন হাতের উপর রেখে
ইঙ্গিত করলেন, (মক্কার পথে যারা তোমাদের
বাধা দেয় তোমরা তাদের খতমঁ করে দিবে।) এরপর বললেনঃ অবশেষে সাফা পাহাড়ে তোমরা আমার
সঙ্গে মিলিত হবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমরা
অগ্রসর হতে লাগলাম। আমাদের মধ্য হতে কেউ যাকে কতল করতে চেয়েছে তাকে কতল করেছে। তাই
তাদের মধ্য হতে কেউই আমাদের উপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তখন আবূ সুফিয়ান এসে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আজ কুরাইশ সম্প্রদায়ের রক্ত হালাল করে-দেওয়া হয়েছে। আজকের পরে আর কোন কুরাইশের
অস্তিত্ব থাকবেনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে
সে-নিরাপদ। সূতরাং আনসারগণ একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগল যে, লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম স্বদেশের অনুপ্রেরণ এবং স্বদেশ প্রেমে পেয়ে বসেছে। আবূ হুতায়রা (রাঃ)
বলেনঃ যে, তখনই ওহী অবতীর্ণ হল। যখন
ওহী অবতীর্ণ হতো তখন তা আমাদের নিকট গোপন থাকত না। ঐ সময় কারো সাধ্য হতোনা যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর দিকে চোখ তোলে দেখে, যতক্ষন না ওহী শেষ হতো।
এরপর যখন ওহি শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হেঁ আনসার সম্প্রদায়! তারা বললঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার কাছে উপস্থিত। তখন
তিনি বললেনঃ তোমরা কি বলেছ, যে, লোকটিকে স্বদেশের অনুপ্রেরণায় পেয়ে বসেছে”। তখন
তারা বললেন, এ রকম কিছু হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনও না। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর
বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসুল। আমি আল্লহর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগ করে তোমাদের
কাছে গিয়েছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের সাথে। তারা কাঁদতে কাদতে নাবী- সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে অগ্রসর হলেন এবং কাদতে লাগলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যা বলেছিলাম, তা ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আমাদের
ভালবাসা ও দূর্বলতার কারণে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল
তোমাদের বক্তব্য-বিশ্বাস করেন এবং তোমাদের ওযর গ্রহণ করলেন। বর্ননাকারী বলেনঃ এরপর
মক্কার জনগণ আবূ সুফিয়ানের বাড়ীর দিকে চলে গেল- (জীবন রক্ষার জন্যে) আর অন্যান্য
মানুষ আপন ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে রইল এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘আসওয়াদ’ এর নিকটবর্তী হয়ে একে চুম্বন এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ
করলেন। এরুপর তিনি বায়তুল্লাহর পাশ্বে রক্ষিত একটি মূত্যির নিকটবর্তি হলেন, যাকে তারা উপাসনা করতো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে তখন একটি ধনুক ছিল, তিনি এর এক প্রান্তে ধরে রেখেছিলেন। যখন তিনি
মূর্তিটির নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি তা দ্বারা এর চোখে খুচাতে লাগলেন এবং বললেনঃ, “সত্য আগমন করেছে এবং বাতিল (মিথ্যা) চলে
গিয়েছে।” এরপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু শেষে তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করলেন।
এরপর তাতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে চেয়ে দেখলেন এবং দুহাত উচু করে আলাহর
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তার যা পার্থনা করার তাই প্রার্থনা করলেন।
৪৪৭২। উবায়দুল্লাহ ইবনু
হাশিম (রহঃ) সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে এই হাদীসটি বর্ননা করেছেন।
তবে তার হাদীসে অতিরিক্ত কথা উল্লেখ রয়েছে যে, তারপর
তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ইশারা করে বললেনঃ তোমরা তাদেরকে খতম করে দাও।
এতে আরো উল্লেখ রয়েছে সে, তখনঁ তারা বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা এ রকম কিছু বলেছি। তখন
তিনি বললেনঃ, তাহলে আমার-নামের কী আর
থাকবে। সুতরাং এমনটি কখনো হবে না। আমিতো আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
৪৪৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর
রহমান দীরেমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, আমরা ভ্রমন করে মুয়াবিয়া ইবনু আবূ সূফিয়ান
(রাঃ) এর নিকট গেলাম। আমাদের মধ্যে তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও ছিলেন। প্রত্যেকেই এক
দিন তার সাথীর জন্য খাবার তৈয়ার করতে হয় একদিন আমার পালা আসল। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আজতো আমার পালা! অতএব, সকালেই আমার বাসস্থানে এলেন, “তখনও খানা পাকানো শেষ হয় নাই। তখন আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আপনি যদি আমাদেরকে খানা
পাকানোর পূর্ব পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন হাদীস
বর্ণনা করতেন! (তবে ভাল হতো) অতএব, বললেনঃ
আমরা মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে
ছিলাম। তখন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে ডানদিকের বাহিনীর এবং যুবাইর (রাঃ)-কে বাম
দিকের বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করলেন। আবূ উবায়দা (রাঃ)-কে পদাতিক বাহিনীর
সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করলেন প্রান্তর অতিক্রম করার জন্য। এরপর তিনি বললেনঃ, হে আবূ হুরায়রা! আনসারদেরকে আমার কাছে আসার
জন্য আহবান কর। অতএব আমি তাদেরকে আহবান করলাম। এরপর তাঁরা দ্রুত আসলেন। তখন তিনি
বললেনঃ হে আনসারগণ! তোমরা কি কুরাইশের দলের লোক দেখতে পাচ্ছ। প্রতি উত্তরে তারা
বললেনঃ, হ্যা। অতএব তিনি বললেনঃ, আগামীকাল যখন তোমরা (যূদ্ধক্ষেত্রে) তাদের
মোকাবিলা করবে তখন তাদেরকে সম্পুর্ন নির্মূল করে দেবে। তারপর তাঁর ডান হাত বাম
হাতের উপর রেখে ইঙ্গিতে বললেনঃ তাদেরকে সমূলে বিনষ্ট করে দেবে। তারপর বললেনঃ আমার
সাথে তোমাদের একহবার স্হান সাফা পাহাড়। বর্ণনাকারী বলেনঃ, সেদিন যে কোন বিধর্মী আনসারদের লক্ষ্যস্হলে
পড়েছে, তাকেই তারা নির্মুল করেছে।
এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন।
যখন আনসারগণ তথীয় উপনীত হয়ে সাফা পাহাড় ঘিরে ফেললো, ইত্যবসরে
আবূ সুফিয়ান এলেন এবং বললেনঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
কুরাইশদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে আর কোন কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করবে
সে নিরাপদ। যে অস্ত্র ফেলে দিবে সেও নিরাপদ এবং যে স্বীয় গৃহের দরজা বন্ধ করে
রাখবে সেও নিরাপদ। তখন আনসারগণ বলাবলি করছিল যে, এ
লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা
এবং স্বদেশের অনুরাগে পেয়ে বসেছে। এমতাবস্হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হল। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরাই কি বলেছিলে যে, “ এ লোকটিকে (. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেছো বসেছে।”
সাবধান! তোমরা কি জানা আমার নাম কি-! কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। আমি হলাম
মুহাম্মাদ, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর
রাসুল। আমি আল্লাহর নির্দেশেই তোমাদের কাছে হিজরত করেছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের
জীবনও মরণের সাথে সস্পৃক্ত। তখন তাঁরা বললো, আল্লাহর
শপথ! আমরা একথা বলেছিলাম আল্লাহ ও তার রীসূলের প্রতি দুর্বলতার কারণে। (যেন তিনি
আমা দেরকে ছেড়ে না যান।) নিশ্চয়ই ,আল্লাহ
ও তাঁর রাসুল তোমাদের সত্য বলেছেণ করেছেন এবং তোমাদের ওযর কবুল করেছেন।
৪৪৭৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, আমর আবূ-নাকিদ ও ইবনু আবূ
উমার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে
একটি ছড়ি ছিল তিনি তা দিয়ে ম্যূর্তি গুলোকে খুচা দিতে ছিলেন এবং বলছিলেনঃ সত্য
এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; মিথ্যাতো বিলুপ্ত হবারই।
(১৭- ১) সত্য এসেছে এবং অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃজন করতে না পারি পূনরাবৃত্তি
করতে। (৩৪-৪৯) ইবনু আবূ ইমার (রহঃ) ‘ইয়াওমুল ফাতহি’ (বিজয়ের দিন) কথাটি-অতিরিক্ত
বর্ণনা করেছেন।
৪৪৭৫। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে এ সনদে উন্নিখিত
হাদীস, আযাতের শেষে (বিলুপ্ত হবারই)
পর্যন্ত বর্ননা করেছেন। কিন্তু তিনি অপর আয়াতটি বর্ণনা করেননি। আর তিনি (মূর্তি, পূজার বেদী) শব্দের পরিবর্তে (মূর্তি) শব্দ
ব্যবহার করেছেন।
৪৪৭৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুতী (রহঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলতে শুনেছি যে, আজকের দিনের পর কিয়ামত পর্যন্ত কুরাইশজাতিকে
(ধর্মত্যাগের অপরাধে ও যুদ্ধে) হত্যা করা হবে না।
৪৪৭৭। ইবনু নুমাইর (রহঃ)
যাকারিয়া (রহঃ) থেকে এ তে উল্লিখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি বর্ণনা
করেছেন যে, কুরাইশদের মধ্য থেকে কোন
“আসী” ইসলাম গ্রহণ করে নি, মুতি ব্যতীত তার নাম ছিল
“আসী” (অবাধ্য)। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম
রাখলেন মূতী (অনুগত)।
৪৪৭৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মুয়ায আম্বরী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হুদাইবিয়া দিবসে আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকদের মধ্যে সন্ধি পত্র লিপিবদ্ধ করলেন, ঁঁএই সন্ধিটি”- লিখিয়েছেন মুহাম্মাদ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন তারা বললো, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
কথাটি লেখবেন না। যদি আমরা , রাসুলুল্লাহ বিশ্বাস
করতাম-যে, আপনি আল্লাহর রাসুল, তবে তো আপনার সাথে আমরা যুদ্ধ করতাম না। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আলী
(রাঃ) কে বললেনঃ, এ অংশটি মুছে দাও। তখন আলী
বললেনঃ, আমি তা মুছবার লোক নই। এরপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই নিজ-হাতে তা মুছে দেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ, সন্ধির একটি শর্ত এ ছিল যে, তারা মক্কায় প্রবেশ করে তিন দিন অবস্থান করতে
পারবে এহাং তখন তাঁরা কোন অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা। কিন্তু খাপেবদ্ধ
তলোয়ার “নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। আমি আবূ ইসহাককে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘যালবানুসসালাহ’ এর অর্থ কি? তিনি তখন বলেনঃ, এর
অর্থ খাপ এবং এর মধ্যে যা থাকে।
৪৪৭৯। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনুু, বাশশার (রহঃ) বারা ইবনু আযিব
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়া বাসীদের মধ্যে সন্ধি করলেন, আলী (রাঃ) উভয়ের মধ্যে একটি সন্ধিপত্র লিখলেন।
তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) লিখলেন, মুহাম্মাদ রাসুল, তারপর মুয়ায বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেন। তবে তিনি তার হাদীসে ‘মা কাতিব’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৮০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী ও আহমাদ ইবনু জানাব মিসসিসী (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহ শরীফের নিকট বাধাগ্রস্ত হলেন, তখন মক্কাবাসীরা এমর্মে তার সঙ্গে সন্ধি করলো
যে, (পরবর্তী বছর) তিনি মক্কায় প্রবেশ করবে এবং
সেখানে তিনদিন অবস্থান করবেন এবং কোষবদ্ধ তরবারী ছাড়া আর কিছু নিয়ে সেখানে ঢুকবেন
না এবং কোন অধিবাসীকে নিয়ে মক্কা থেকে বেরুবেন না। পক্ষান্তরে তার সাথীদের কেউ যদি
সেখানে যেতে চায়, তবে তাকে বারণ করবেন “না।
তখন তিনি আলী (রাঃ) কে বললেনঃ আমাদের মধ্যকার শর্তগুলো এভাবে লিখে নাও
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” এ হচ্ছে সেই সন্ধি যা মুহাম্মামদ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুড়ান্ত করেছেন। তখন মুশরিকরা তাঁকে বললো, আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূলই জানতাম তবে
আপনার অনুসরণই করতাম, বরং লিখুন, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ তখন তিনি আলী
(রাঃ)-কে তা মুছে ফেলতে নির্দেশ দিলেন। আলী (রাঃ) বললেনঃ, আল্লাহর কসম! আমি তা মুছতে পারবনা। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হাল আমাকেই তার স্থান
দেখিয়ে দাও। তিনি সে স্হান দেখিয়ে দিলেন আর তিনি তা (স্বহস্তে) মূছে ফেললেন এবং
লিখলেন মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ তারপর (পরের বছর তিনি সাহাবাদের নিয়ে তাশরীফ
আনলেন) সেখানে তিনি তিনদিন অবস্হান করলেন। যখন তৃতীয় দিন সমাগত হলো, তখন তারা আলী (রাঃ)-কে বললে। এটা হচ্ছে তোমার
সাথীর শর্তের, স্হিরকৃত শেষ দিবস। তাঁকে
বেরিয়ে যেতে বলে দাও। তখন তিনি তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করলেন। তিনি বললেনঃ, হাঁ। এরপর তিনি বেরিয়ে গেলেন। ইবনু জানাব ‘বা
ইয়ানাকা’ এর স্থলে ‘তা বি আনাকা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
৪৪৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরাইশরা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সন্ধি করল। তাদের মধ্যে সূহায়ল ইবনু
আমর ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বললেনঃ লিখ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম সুহায়ল বললো, কি
বিসমিল্লাহ? আমরা তো জানিনা বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম কী! তবে আমরা যা জানি বইসমিকা আল্লাহুম্মা, তাই লিখ। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লিখ, মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তখন তারা বলে উঠলেন, আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূলই জানতাম, তাহলে তো আমরা আপনার অনুসরণই করতাম। আর আপনি
আপনার নাম এবং আপনার পিতার নাম লিখূন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ লিখ, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহর
পক্ষ থেকে। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এ মর্মে শর্ত আরোপ
করলো যে, যারা আপনাদের নিকট থেকে চলে
আসবে, আমরা তাকে ফেরৎ পাঠাবোনা, কিন্তু আমাদের কেউ যদি আপনাদের নিকট চলে যায়, তবে আপনারা তাকে অবশ্যই ফেরৎ পাঠাবেন। তখন
সাহাবাগণ বললেনঃ, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি
এরুপ লিখবো! জবাবে তিনি বললেনঃ, হাঁ। আমাদের মধ্য থেকে কেউ
যদি তাদের কাছে-যায় তবে আল্লাহই তাকে (রহমত থেকে) সরিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের মধ্য
থেকে যে আমাদের কাছে আসবে (তাকে ফেরত দিলেও) আল্লাহ অচিরেই তার কোন ব্যাবস্হা ও
পথ বের করে দিবেন।
৪৪৮২। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও-ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূল ওয়ায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) সিফফিন দিবসে উঠে
দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ, হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের
অভিযূক্ত মনে করবে। আমরা হুদায়বিয়ার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমরা এটিকে যুদ্ধ মনে করলে সেদিন অবশ্যই আমরা যুদ্ধ
করতাম। এটা হচ্ছে সেই সন্ধির কথা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং মুশরিকদের মধ্যে হয়েছিল। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি সত্যের উপর নই- আর
তারা বাতিলের উপর নয় তিনি বললেনঃ হাঁ তাই।” তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের নিহতরা কি জান্নাতী এবং তাদের নিহতরা কি
জাহান্নামী নয়-?। তিনি বললেনঃ হাঁ। তখন তিনি
বললেনঃ, তাহলে কী কারণে আমরা দ্বীনের
ব্যাপারে যিল্লাতি মেনে নিয়ে ফিরে যাবো, অথচ
এখনো এ ব্যাপারে তাদের ও আমাদের মধ্যে আল্লাহর কোন ফয়সালা আসেনি! তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে খাত্তাব তনয়! নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর
রাসুল। আর তিনি অবশ্যই কখনো আমাকে বিনাশ করবেন না। রাবী বলেনঃ, তখন উমার (রাঃ) চলে গেলেন। ক্রোধে ধৈর্যধারণ
করতে পারছিলেন না। তাই আবূ বাকরের কাছে এলেন এবং তাঁকে বললেনঃ, হে আবূ বাকর! আমরা কি হকের উপর এবং তারা কি
বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেনঃ, অবশ্যই। আবার তিনি বললেনঃ, “আমাদের নিহতরা কি জান্নাতী আর তাদের নিহতরা কি
জাহান্নামী নয়? বললেনঃ, নিশ্চয়ই। তখন তিনি বললেনঃ “তা হলে কি কারণে
আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে যিল্লাতি নিয়ে ফিরে যাবো, অথচ এখনো এব্যাপারে আমাদের এবং তাদের–মধ্যে
আল্লাহ কোন ফয়সালা দেননি! তখন তিনি বললেনঃ, হে
খাত্তাব তনয়! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ
কখনও তাঁর বিনাশ করবেন না। রাবী বলেন, এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে কুরআন
অবতীর্ণ হলো। তখন তিনি উমারকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর সন্মূখে তা পাঠ করলে তখন তিনি
বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই কি
বিজয়া। তিনি বললেনঃ- হ্যা। তখন তাঁর অন্তর শান্ত হল এবং তিনি ফিরে গেলেন।
৪৪৮৩। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনুুূল “আনা ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমাইর (রহঃ) শকীক (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, সিফফীন দিবসে সাহল ইবনু
হুনায়ফ (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি হে
লোক সকল! তোমাদের নিঁজেদের অভিমতকে অভিযুক্ত মনে করবে। আল্লাহর কসম! আমি আবূ
জান্দালের সে দিনটি প্রত্যক্ষ করেছি। যদি আমার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ প্রত্যাখ্যান করার সাধ্য থাকতো, তরে
অবশ্যই তা প্রত্যাখ্যান করতাম। আল্লাহর কসম! যখন আমরা কখনো কোন ভীষণ আমাদের জনা
বোধগম্য ছিল। কিন্তু তোমাদের এ ব্যপারটির কথা তার বিপরীত। ইবনু নুমায়র তার বর্ণনায়
(কোন ব্যাপারে) কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪৪৮৪। উসমরন ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ্ব (রহঃ) আমাশ (রহঃ)
থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করতেন। তবে তাদের হাদীসে (আমাদের ঘাবড়িয়ে দেয়) উল্লেখ
রয়েছে।
৪৪৮৫। ইবরাহীম ইবনু সাঈদ
জাওহারী (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি সাহল ইবনুু-হুনায়ফ (রাঃ) কে সিফফীনে বলতে
শুনে ছি, তোমরা তোমাদের নিজেদের মতকে
তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অভিযুক্ত মনে করবে। কারণ, আমি
আবূ জান্দলের দিনটি প্রত্যক্ষ করেছি। যদি আমার সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সীমা লংঘনের সামর্থ্য থাকতো (তবে তাই করতাম, এখন ব্যাপার এত সঙ্গীন হয়ে দাড়িয়েছে যে,) আমরা এক-দিকের ছিদ্রবন্ধ করলে অন্য দিকের ছিদ্র
ফূটে উঠে।
৪৪৮৬। নূসর ইবনু আলী জাহযামী
(রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁদের বলেছেনঃ হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যবর্তনের সময় যখন এ আয়াত
নায়িল হলোঃ “নিশ্চয়ই আমি তোমাকে সূস্পষ্ট- বিজয়, যেন
আল্লাহ তোমার ক্রটি সমূহ মার্জনা করেন মহা সাফল্য” পর্যন্ত (৪৮-১৪) তখন তাদের সব
দুঃখ বেদনা ক্ষোভে পূর্ন ছিলো। আর হুদায়বিয়াতেই (কুরবানীর) পশুগুলো কুরবানী করা
হয়েছিলো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল হয়েছে, যা সমগ্র দুনিয়া থেকে আমার কাছে অধিক প্রিয়।
৪৪৮৭। আসিফ ইবনুুনা নাযার
জায়মী (রহঃ) ইবনু মূসান্না , অধিদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস
(রাঃ) ও ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) এর হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্নিত রয়েছে।
৪৪৮৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, “আমাকে বদর যুদ্ধে যোগদান থেকে এছাড়া অন্য কিছু
বিরত রাখেনি যে, আমি এবং আমার পিতা হুসায়ল ঘর
থেকে বেরিয়েছিলাম। এমন সময় কোরায়শ কাফির আমাদের ধরে বসে এবং বলে যে , তোমরা অবশ্যই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কাছে-যেতে মনস্হ করেছেন। জবাবে আমরা বললাম, আমরা তার কাছে যেতে চাইনা বরং আমরা মদিনায়
(ফিরে) যেতে চাই। তখন তারা আল্লাহর নামে আমাদের নিকট অঙ্গীকার নিল যে, আমরা অবশ্যই মদিনায় ফিরে যহবো এবং তাঁর সাথে
মিলিত হয়ে যুদ্ধ করবো না। তারপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলাম এবং সে সংবাদ তাকে জানালাম। তখন তিনি বললেনঃ, তোমরা ফিরে যাও। আমরা তাদের কৃত ওয়াদা পুর্ণ
করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবো।
৪৪৮৯। যুহায়র ইবনু হারব ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবরাহীম তায়মীর পিতা থেকে
বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ যে, আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-এর কাছে
ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো, হায়, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে পেতাম, তবে তাঁর সঙ্গে মিলে একত্রে
যুদ্ধ করতাম এবং-তাতে কোনরুপ পিছপা হতাম না।” হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ, হয়তো তা তুমি তাই করতে কিন্তু আমি তো আহযাবের
রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। (-সে রাতে”)
প্রচন্ড বায়ু ও তীব্র শীত আনাদের কাবু করে ফেলেছিল। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোযণা করলেন, ও
হে! এমন কেউ আছে কি? যে আমাকে শক্রর খবর এনে দেবে
আল্লাহর তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে (মর্যাদার আসনে) রাখবেন? – আমরা তখন চুপ করে রইলাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ
তার সে আহবানে নাড়া দেয়নি। তিনি আবার বললেনঃ, “ও
হে! এমন কোন ব্যক্তি আছে কি” যে আমাকে শক্রপক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে
রাখবেন” এবারও আমরা চুপ রইলাম আর আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর আহবানে সাড়া দেয়নিঁ। তিনি
আবার ঘোষণা করলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি যে
আমাকে শক্র পক্ষের খবর এনে দেবে , আল্লাহ তা’আলা তাকে কিয়ামতের
দিন তাকে আমার সঙ্গে রাখবেন এবারও আমরা চুপ করে রইলাম এবং আমাদের কেউ তাঁর আহবানে
সাড়া দেয়নি। এবার তিনি বললেনঃ হে হুযায়ফা ওঠো এবং তুমি শক্র পক্ষের খবর আমাদের এনে
দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এবারা আমার নাম ধরেই ডাক
দিলেন, তাই উঠা ছাড়া আমার আর কোন
উপায় ছিলনা। এবার তিনি বললেনঃ “শক্রপক্ষের খবর আমাকে এনে দাও, কিন্তু সাবধান তাদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত
করোনা। তারপর আমি যখন তাঁর নিকট থেকে প্রস্হান করলাম, তখন মনে মনে আমি যেন উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে
চলেছি। এভাবে আমি তাদের (শক্রপক্ষের) নিকটে পৌছে গেলাম। তখন আমি লক্ষ্য করলাম আবূ
সুফিয়ান আগুনের দ্বারা তাঁর পিঠে ছেক দিচ্ছেন। আমি তখন একটি তীর ভুলে ধনুকে সংযোজন
করলাম এবং তা নিক্ষেপ করতে মনস্হ করলাম এমন সময় আমার মনে পড়ে গেল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলে দিয়েছেন, “তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে
ক্ষেপিয়ে-তূলোনা। আমি যদি তখন তীর নিক্ষেপ করতাম তবে তীর নির্ঘাৎ লক্ষ্যভেদ করতো।
অগত্যা আমি ফিরে আসলাম এবং ফিরে আসার সময়ও উষ্ণতার মধ্য দিয়ে অতিক্রমের মতো
উষ্ণতা “ অনুভব করলাম। তারপর যখন ফিরে এলাম, তখন
প্রতিপক্ষের খবর তাঁকে প্রদান করলাম। আমার দায়িত্ব পালন , করে অবসর হতেই আবার আমি শীতের তীব্রতা অনুভব
করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অতিরিক্ত একটি “কবুল
দিয়ে আমাকে আবৃত করে দিলেন যা তিনি সাধারণত সালাত আদায়ের সময় গায়ে দিতেন। তারপর
আমি ভোর পর্যন্ত একটানা নিদ্রায় আচ্ছন্ন রইলাম। যখন ভোর হল তখন তিনি বললেনঃ হে
গভীর নিদ্রামগ্ন! এখন উঠে পড়ো।
৪৪৯০। হাদ্দাব ইবনু খালিদ
আযদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ওহুদ যুদ্ধের দিন কেবল সাতজন আনসার ও দুজন
কোরায়শ (মুহাজির)সাথীসহ (শক্রবাহিনী কর্তুক) অবরুদ্ধ হইয়ে পড়েন এবং তা তাকে
(চতূর্দিক থেকে) বেষ্টন করে ফেলে তিনি বললেনঃ কে আমার পক্ষ থেকে শক্রদের প্রতিহত
করবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত।
অথবা বললেনঃ সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে। তখন আনসারদের মধ্যকার একব্যক্তি অগ্রসর
হয়ে যুদ্ধ শুরু করল এবং পরিশেষে শহীদ হন। তারপর পুনরায় তারা তাঁকে বেষ্টন করে
ফেলনো এবং অনুরুপভাবে লড়াই করতে করতে তাঁদের সাতজনই শহীদ হলো। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমরা (কুরায়শর।)
সঙ্গীদের প্রতি সুবিচার করিনি। (আমরা বেঁচে রইলাম, অথচ
তারা শহীদ হলেন।)
৪৪৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহুদ যুদ্ধের দিন আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি
বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (পবিত্র) মুখমন্ডল যখম করা হয়, তার
‘রুবাই’ দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং তার মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে হকে যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) রক্ত ধুয়ে
দিচ্ছিলেন এবং আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ঢাল দিয়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। ফাতিমা
(রাঃ) যখন দেখলেন যে, তাতে রক্তপড়া আরো বেশী
বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তিনি একটি মাদ্যুর খন্ড
পোড়ালেন এবং ছাই হয়ে গেলে তা যখমের উপর চেপে ধরলেন। এতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
৪৪৯২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। সাহল ইবনু সাঈদ (রাঃ) কে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর -আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন
তিনি বললেনঃ, আল্লাহর কসম! আমি সম্যকভাবে
জানি, কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যখম ধুয়ে দিচ্ছিলেন, কে
পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন এবং কিসের দ্বারা তাঁর চিকিৎসা করা হয়েছিল। তারপর তিনি আবদুল
আযীযের মাধ্যমে বর্ণিত পূর্ববর্তী হাদীসের অনুররূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তাঁর
বর্ণনায় এ পার্থক্য রয়েছেঃ “তার মুখমন্ডল যখম করা হয় এবং ‘হাশমাত’ এর স্থলে
‘কাসরাত’ শব্দ ব্যাবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
আহত হওয়া সংক্রান্ত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি সামান্য শাব্দিক পরিবর্তন
সহ অন্য সুত্রেও বর্ণিত হয়েছে।
৪৪৯৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার সকলেই ইবনু উয়ায়না থেকে এবং আমর
ইবনু সাওয়াদ আমেরী, মুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী
সকলেই ইবনু হাযেম সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু হিলাল এর
হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখমন্ডলের আঘাত লেগে ছিল। আর মূতাররফ এর হাদীসে আছে তার
মুখমন্ডলে যখম হয়েছিল।
৪৪৯৪। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ওহুদ
দিবসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রুবাই দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তার মাথায় আঘাত করা হয় এবং তিনি তার শরীর থেকে
রক্ত মুছতে মুছতে বলছিলেন, সে জাতি কিভাবে সাফল্য অর্জন
করবে, যারা তাদের নাবীকে আহত করলো
এবং তাঁর সন্মুখের দুটি দাত ভেঙ্গে দিল অথচ তিনি তাদের আল্লাহর দিকে আহবান
জানাচ্ছিলেন? তখন আল্লাহ তা’আলা আয়াত
নাযিল করলেনঃ হে রাসুল! এ ব্যাপারে আপনার করনিয় নেই। (আল ইমরানঃ ১২৮)
৪৪৯৫। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দিখতে পাচ্ছি যে, তিনি এমন একজন নাবীর কথা
কাহিনীরুপে বর্ণনা করছেন, যাকে তাঁর সম্প্রদায়ের
লোকজন আঘাত করেছে। আর তিনি তাঁর নিজের কপাল থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, “প্রভু! আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা কর, কেন না তারা যে বুঝে না। আমাশ (রাঃ) থেকে
সামান্য পার্থক্য সহ অন্য সুত্রেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৪৯৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি তার কপাল থেকে রক্ত মুছছিলেন।
৪৪৯৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফে
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন এর মধ্যে তিনি-এটিও বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ “সে সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহর রোষ প্রচন্ড হয়, যারা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি এরুপ আচরণ করে”। একথা বলতে বলতে তিনি তার সম্মুখের-দুটি
(ভগ্ন) দাঁতের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেনঃ- মহামহিম আল্লাহর রোষ তার উপরও প্রচন্ড হয়, যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পথে হত্যা করেন।
৪৪৯৮। আবদুল্লাহ ইবনু উমর
ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান জুফি (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তূল্লাহ শরীফের নিকট সালাত আদায় করছিলেন। আবূ
জাফর ও তার সাথীরা অদুরে উপবিষ্ট ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিলো।
আবূ জাফর বলল কে, অমুক গোত্রের উটের
(-নাড়িভূড়িসহ) জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মাদ যখন সিজদায় যারে, তখন তার দুই কাঁদের মধ্যবর্তী স্থানে তা রেখে
দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে
হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়ালো এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন তার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে তা রেখে দিল।
তখন তারা হাসাহাসি করতে লাগলো এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগলো আর আমি তখন
দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশাই রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাচ্ছিলেন না। অবশেষে একব্যক্তি
পিয়ে ফাতিমাকে খবর দিল। ফাতিমা তৎক্ষনাৎ আসলেন। আরা তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তাঁর
উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে বকা দিতে থাকেন। তারপর যখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত সম্পন্ন করলেন তখন উচ্চঃসূরে তাদেরকে
বদ দু’আ দিলেন আর তিনি যখন দুঃআ করতেন (সাধারণভঃ) তিনবার করতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা
করতেন তখন তিনি তিনবার করতেন। তারপর তিনি তিন তিনবার বললেনঃ “ইয়া আল্লাহ! তোমার
উপরেই কোরেশদের বিচারের ভার ন্যস্ত করলাম। যখন তারা তার আওয়ায শুনতে পেল তখন তাদের
হাসি চলে গেল এবং তারা তার বদ দুআয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ, হে আল্লাহ! আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উৎবা ইবনু রাবীআ, শায়বা
ইবনু রাবীআ , ওলীদ ইবনু উকবা, উমাইয়া ইবনু খালফ ও উক্ববা ইবনু আবূ-মুআইতের
শাস্তির ভার তোমার উর্পর ন্যস্ত। রাবী বলেনঃ তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ
করেছিলেন। আমি তা স্বরণ রাখতে পারিনি। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে
পবিত্র সত্তা সত্যসহ রাসুলরুপে প্রেরণ করেছেন, তার
কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বদরের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি।
তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বদরের একটি কাটা কুপে নিক্ষেপ করা হয়। আবূ ইসহাক বলেনঃ, ওলীদ ইবনু উকবার নাম এখানে ভুলে উক্ত হয়েছে।
৪৪৯৯। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত ছিলেন এবং তার আশেপাশে
কুরায়শের কিছু লোকজন জড়ো হলো। এমন সময় উকবা ইবনু আবূ মুআইত (উটনীর নাড়িভূড়িসহ)
জরায়ু নিয়ে এল। এবং তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠের উপর
নিক্ষেপ করলো। তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। তারপর ফাতিমা আসলেন এবং তা তার পিঠ
থেকে সরিয়ে দিলেন এবং যে ব্যক্তি তা করেছে, তাকে
বদ দুআ করলেন। তখন তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেনঃ ইয়া আল্লাহ!।
তোমার উপরই কুরাইশ সম্প্রদায়ের আবূ জাহল ইবনু হিশাম, উকবা ইবনু রাবীআ , শায়বা ইবনু রাবীআ , উকবা ইবনু আবূ মুআইত, উমাইয়া ইবনু খালফ অথবা উবাই ইবনু খালফ এদের
বিচারের ভার ন্যস্ত। তবে রাবী শুবা (শেষের দুই নামের) কোনটি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, সে
(ব্যাপারে) সন্দেহ করেন। লাবী বলেনঃ, এরপর
আমি বদরের দিন তাদের দেখেছি যে, তারা সকলে নিহত হয়েছে এবং
একটি কুপে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কেবল উমাইয়া ক উবাই এর লাশ বাদ ছিল। কেননা তার লাশ
জোড়ায় জোড়ায় কেটে ফেলা হয়েছিল বিধায় কুপে নিক্ষেপ করা হয়নি।
৪৫০০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। রাবী সুফিয়ান
(রহঃ) বাড়িয়ে বলেছেনঃ, “এবং তিনি তিনবার বলা পছন্দ
করতেন। তিনি বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! কুরাইশের (এদের)
বিচারের ভার তোমার উপর ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ! কুরাইশদের বিচারের ভার তোমার উপর
ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ! কুরায়শের বিচারের-ভার তোমার উপরই ন্যস্ত। এভাবে তিনবার ইনি
বলেনঃ, এবং এদের মধ্যে ওলীদ ইবনু
উতবা ও উমাইয়া ইবনু খালফের কথা উল্লেখ করেন এবং তাতে কোনরুপ সন্দেহ প্রকাশ করেননি।
রাবী আবূ ইসহাক বলেনঃ, আমি সপ্তম (অভিশপ্ত)
ব্যক্তির নাম ভুলে গেছি।
৪৫০১। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বায়তুল্লাহর দিকে মূখ করে কুরাইশের ছয়
ব্যক্তির জন্য বদ দুআ করলেন। তাদের মধ্যে আবূ জাহল, উমাইয়া, ইবনু খালফ, উতবা
ইবনু রবীআ , শায়বা ইবনু রাবীআ, উকবা ইবনু আবূ মুআইত রয়েছে। আল্লাহর কসম করে
বলছি আমি তাদের কর্তিত শব-দেহগুলো, বদরে
দেখেছি! সূর্যতাপ তাদের বিকৃত করে ফেলেছিল। আর সেই দিনটিও ছিল অত্যন্ত গরমের।
৪৫০২। আবূ তাহিতু আহমাদ ইবনু
আমর ইবনু সারহ, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর
ইবনু সাওয়াদ আমেরী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার জীবনে কি
ওহুদ দিবসের চাইতেও কঠোরতর কোন দিন এসেছে? তিনি-বললেনঃ, তোমার সম্প্রদায়ের হাতে আকাবার দিন যে নিগ্রহের
সন্মুক্ষিন হয়েছি, তা এর চাইড়েও কঠোরতর ছিল।
যখন আমি (আল্লাহর পানে দাওয়াত-দিতে গিয়ে ইবনু আদিয়া লাইস ইবনু আব দে কেলালের কাছে
নিজেকে পেশ করেছিলাম। কিন্তু সে আমার ডাকে আশানূরুপ সাড়া দেয়নি। তখন আমি অত্যন্ত
বিষন্ন অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং কারনূস ছাআলিব নামক স্থানে না পৌছা
পর্যন্ত আমি সম্বিৎ ফিরে পাইনি। তারপর যখন আমি মাথা উঠলাম তখন দেখি, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়াপাত করছে এবং এর মধ্যে
জিবাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দিখতে পেলাম। আমাকে ডাক দিয়ে বললেনঃ, মহা মহিমানিত আল্লাহ আপনার প্রতি আপনার
সম্প্রদায়ের উক্তি এবং আপনার বিরুদ্ধে তাদের উত্তরও শুনেছেন এখং তিনি আপনার নিকট
পাহাড়ের ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার সম্প্রদায়ের
লোকজনের ব্যাপারে যেরুপ ইচ্ছা সেরুপ আদেশ তাঁকে করেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতাও আমাকে
ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেনঃ, ইয়া
মুহাম্মাদ! আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের উক্তি আল্লাহ তা’আলা শুনেছেন।
আর আমি হা-নাম পাহাড়ের (তত্ত্বাবধানকারী) ফিরিশতা। আপনার রব আপনার কাছে আমাকে
এজন্যে পাঠিয়েছেন যেন আপনি আপনার ইচ্ছামত আমাকে নির্দেশ দেন। (আপনি বললে) আমি এ
পাহাড় দুটিকে তাদের উপর চাপা দিয়ে দিব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি বরং আশা করছি যে, আল্লাহ
তাআলা হয়তো এদের ঔরস থেকেই এমন বংশধরদের জন্ম
দিবেন, যারা তার সঙ্গে কিছু-কে শরীক
না করে এক আল্লাহর ইবাদত করবে।
৪৫০৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জুন্দব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
–এর একটি অঙ্গূলি কোন একটি অভিযানে রক্তাক্ত হয়। তখন তিনি (উক্ত অঙ্গূলিকে লক্ষ্য
করে) বললেনঃ তুমি তো অঙ্গলি ছাড়া কিছু নও, তুমি
আহত হয়েছ এবং তুমি যে কষ্ট পেয়েছ, তা আল্লাহর পথেই গন্য।
৪৫০৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু কায়েস (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা
করেন। তাতে রাবী আরও বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন
এক গুহায় ছিলেন, তখন তার আঙ্গূলের যখম হয়।
৪৫০৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আসওয়াদ ইবনু কায়েস থেকে বর্ণিত যে, তিনি
জুন্দুব (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, জিব্রাইল
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসতে
বিলম্ভ করেন। এতে মুশরিকরা বলতে লাগলো, মুহাম্মাদ
পরিত্যক্ত হয়েছেন। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন, “শপথ
পূর্বাহ্ণের , শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝূম, তোমার
প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরুপও হন নি।”
৪৫০৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফে (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু কায়েস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পিড়িত হন বিধায় দুই বা তিন রাত্রি জাগতে পারেন নি (তাহাজ্জুদের জন্য)।
তখন একটি মহিলা এসে বললো, “মুহাম্মাদ, আশা করি, এবার
তোমার শয়তান তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে কেননা, দুই
বা তিন রাত যাবৎ তোমার নিকটে তার আগমন লক্ষ্য” করছিনা।” তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল
করলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন
তা হয় নিঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে
পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি নারাজও হননি।”
৪৫০৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও
ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ)
থেকে উভয়ে উক্ত সনদে আসওয়াদ ইবনু কায়েস থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫০৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী মুহাম্মাদ ইবনু রাফে ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রহঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি গাধায় আরোহণ করলেন যার উপর জ্বীন (বসার গদি) ছিল এবং তার নীচে
একটি ফদকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পাশ্চাতে উসামা (রাঃ) কে বসালেন। বনী হারিস
ইবনু খাযরায গোত্রের এলাকায় তিনি সাঈদ ইবনু উবাদা (রাঃ) কে (অসুস্হ অবস্থায়)
দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি সমাবেশ অতিক্রম
করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক পৌত্তলিক ও ইয়াহুদীরা একত্রে বসা ছিল।
তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাইও ছিল এবং মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ও
ছিলেন। যখন মজলিসটি সাওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন
আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার নাক চাঁদর দিয়ে ঢেকে নিল। এরপর বলল, আপনারা আমাদের উপর ধ্যূলিঁ উঠাবেন না। তখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং
নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। এবং তাদের সম্মুখে কোরআন শরীফ
তিলাওয়াত করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই বলে উঠলো, ওহে
লোক! আপনি যা বলছে, তা যদি সত্যও হয় তবে এর
চাইতে উত্তম আর কিছুই নয়, তবে আমাদের মজলিসে এসে আপনি
আমাদের কষ্ট দিবেন না। আপনি আপনার বাসস্থানে ফিরে যান। সেখানে আমাদের মধ্যকার যে
ব্যক্তি যায় , তার কাছে আপনি এসব উপদেশ
বিতরন করবেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বলে উঠলেন, (ইয়া রাসুলুল্লাহ) আমাদের মজলিসে (যতখূশী ইচ্ছা)
ধুলি উড়াবেন। কেননা, আমরা তা পছন্দ করি। তখন
মুসলিম, মুশরিক, ইয়াহুদীরা পরস্পরে বাদানূবাদ ও গালাগালিভে
লিপ্ত হয়ে পড়ে। এমন কি রীতিমত একটা দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিবৃত করতে লাগলেন। তারপর তাঁর বাহনে সাওয়ার হয়ে সা’দ
ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর বাড়ীতে গিয়ে প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ, আয় সা’দ! তুমি কি শোননি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই
কী বলেছে? সে এরুপ এরুপ উক্তি করেছে।
সা’দ (রাঃ) বললেনঃ, একে ক্ষমা করে দেন ইয়া
রাসুলুল্লাহ! এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ যে মর্যাদা দিয়েছেন, তা তো দিয়েছনই। (কিন্তু তার ব্যাপার!) এই
জনপদের লোকজন করেছিল যে, তাকে রাজ মুকুট ও পাগড়ী
পরাবে। (অর্থাৎ তাকে তাদের বাদশাহ বানাবে) কিন্তু আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যে সত্য
দান করেছেন, তা দিয়ে যখন আল্লাহ তায়াআলা
তার আকাঙ্খা ঠুকরে দিলেন, তাতে সে বিদ্বিষ্ট হয়ে পড়ে।
তাই সে এরুপ আচরণ করেছে যা আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে মার্জনা করে দিলেন।
৪৫০৯। মুহাম্মদ ইবনু রাফে
(রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর সুত্রে এ ,সনদে
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে এতটুকু বর্ধিত
উল্লেখ করেছেন, এটা আবদুল্লাহ (বাহ্যতঃ)
ইসলাম গ্রহনের পুর্বের কথা।
৪৫১০। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আঁলা
কায়সী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলা হলো, (ইয়া রাসুলল্লাহ) যদি আপনি
আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কাছে যেতেন! তিনি তখন একটি গাধায় চড়ে তার কাছে রওনা হলেন।
একদল মুসলমানও তার সঙ্গে গেলেন। তাদের পথে পড়লো একটি লোনা ঊষর ভূমি। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন, তখন সে বললো, আমার
কাছ থেকে দুরে থাকবেন। আল্লাহর কসম! আপনার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে বিরক্ত করেছে।
রাবী বলেনঃ, তখন আনসারদের একজন উঠে
(তৎক্ষণাৎ) জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গাধার গন্ধ তোমার দুর্গন্ধের চাইতে অনেক
উত্তম।” রাবী বলেনঃ, তখন আবদুল্লাহর সম্প্রদায়ের
একব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাবী বলেনঃ, তারপর
উভয় পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাবী বলেনঃ, তখন
তাদের মধ্যে লাঠি, হাত ও জুতার দ্বারা মারামারি
লেগে গেল। তারপর আমরা জানতে পারলাম তাদের উদ্দেশ্য কুরআনের আয়াতঃ “যদি ঈমানদারদের
দুটি দল পরস্পরে হানাহানিতে লিপ্ত হয়, তবে
তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দাও।” নাযিল হয়েছে।
৪৫১১। আলী ইবনু হুজর সা’দী
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, (বদর যুদ্ধের দিন)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ জাহলের কী হলো। কে আমাদের জানাবে। তখন ইবনু মাসউদ
বেরিয়ে গেলেন এবং (যুদ্ধক্ষেত্রে) গিয়ে দেখলেন, আফরা
এর দুই পূত্র তাকে এমনি আঘাত করেছে যে,সে
ঠান্ডা হয়ে গেছে। রাবী বলেনঃ, তখন ইবনু মাসউদ তার নাড়িতে
ধরে বললেনঃ, তুমি কি আবূ জাহল? সে বললো, তার
চাইতেও উত্তম কাউকে তোমরা হত্যা করেছ অথবা সে বললো, যাকে
তার সম্প্রদায়ের লোকেরা হত্যা করেছে?” রাবী
বলেনঃ, আবূ মিজলায (রহঃ) বলেছেনঃ, আবূ জাহল বলেছে হায়! চাষা ছাড়া অন্য কেউ যদি
আমাকে হত্যা করতো।
৪৫১২। হামিদ ইবনু উমর
বাকরাভী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি বলেনঃ, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছিলেনঃ “আবূ জাহল কি করলো, তাকে আমার পক্ষ থেকে জেনে
আসবে ”অতঃপর তিনি ইবনু উলায়্যা ও আবূ মিজনায (রহঃ)-এর অনুরুপ হাদীসটি বর্ননা
করেছেন, যেমন ইসমাঈল (রহঃ)বর্ণনা
করেছেন।
৪৫১৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রাহমান ইবনু মিসওয়ার যুহরী (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কাব ইবনু আশরাফের (নিধনের) জন্য কে আছ? কেননা, সে
আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিয়েছে। তখন
মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেনঃ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি কি চান যে,-আমি তাকে হত্যা করি! তিনি
বললেনঃ, হাঁ। তিনি বললেনঃ, তবে আমাকে (প্রয়োজনমত যা ইচ্ছা) বলার অনুমতি
দিন। তিনি বললেনঃ, বলো। তারপর তিনি তার কাছে
এলেন। তিনি (কথা প্রসঙ্গে তাদের পূর্বেকার) পারস্পরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেন
এবং বললেনঃ, “এ ব্যক্তি তো (অর্থাৎ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকা উসূল করতে চায় এবং সে আমাদের অতিষ্ঠ করে
তুলেছে।” সে যখন তা শুনতে পেলো, তখন বললো, আরো অপেক্ষা কর। আল্লাহর কসম, সে তোমাদের কষ্ট দেবেই। তখন তিনি বললেনঃ, আমরা সবে মাত্র তাঁর অনুসারী হয়েছি। তাই
ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে গড়ায় তা না দেখে এ মুহূত্বেই তাকে ত্যাগ করাটাও
সমীচীন মনে করছিনা। এখন আমি চাই তুমি আমাকে কিছু ধার দাও। সে বললো, তুমি আমার কাছে কী বন্ধক রাখবে তিনি বললেনঃ, তুমি কি চাও সে বললো, তোমাদের রমনীদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি
বললেনঃ, “তুমি হলে আরবের সবচাইতে
সুন্দর পূরুষ। তোমার কাছে কি বন্ধক রাখবো আমাদের রমনীদের তখন সে বললো, তা হলে তোমাদের সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক
রাখ।” জবাবে তিনি বললেনঃ, “আমাদের কারো সন্তানকে এ বলে
গালি দেয়া হবে যে-, তাকে মাত্র দুই ওসাক (৫মণ
আড়াই সের পরিমাণ) খেজুরের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। আমরা বরং তোমার কাছে
যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখবো। সে বললো, ঠিক
আছে।”, তখন তার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হলেন
যে, হারিস, আবূ
আবস ইবনু জাবির ও আববাদ ইবনু বিশর সহ তার কাছে আসবেন। তারপর রাতের বেলা তারা তার
কাছে আসলেন এবং তাকে ডাকলেন। সে তাদের কাছে-নেমে এল। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বলেনঃ, রাবী আম্মার ব্যতীত অন্য রাবী বলেনঃ, তখন তার স্ত্রী তাকে বললো, আমি এমন একটি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি তা যেন খূনের
স্বর। সে বলছেন, এ হচ্ছে মুহাম্মাদ আর তার
দুধ ভাই আবূ নাইয়েলা। চিন্তিত লোককে যদি রাতের বেলা বর্শার মুখে ডাকা হয় তবুও সে
ডাকে সে সাড়া দেয়।। মুহাম্মাদ (তার সঙ্গীদের) বললেনঃ, সে যখন আসবে, তখন
আমি তার শির লক্ষ্য করে আমার হাত বাড়াবো। যখন আমি তা ভালমতো ধরে নেবো, তখন তোমরা তোমাদের কাজ সেরে নেবে। তিনি বলেনঃ, তারপর সে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে নীচে নেমে এল। তারা
বললেনঃ, আমরা তোমার নিকট থেকে অতি
সুঘ্রাণ পাচ্ছি। সে বললো, হাঁ আমার স্ত্রী অমুক হচ্ছেন
আরবের সর্বাধিক সুগন্ধ পছন্দ মহিলা। তখন তিনি বললেনঃ, “আমাকে তা থেকে একটু সুবাস নিতে অনুমতি দিবেন।
তখন সে বললো, হ্যা। তখন তার মাথা শুকলেন।
তারপর আবার শুকলেন। এরপর পূনরায় বললেনঃ, আমাকে
কি আবারও একটু ঘ্রাণ নিতে দিবেন একথা বলে তিনি তার মাথা শক্ত করে ধরে না সাথীদের
বললেনঃ, তোমরা সেরে ফেল। তিনি বলেনঃ, তখন তাঁরা তাকে কতল করে ফেললো।
৪৫১৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধে যাত্রা করেন। আমরা সেদিন তাঁর সঙ্গে সকালের
সালাত (ফজর) অন্ধকারে আদায় করি। তারপর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন এবং আবূ তালহা (রাঃ) ও তার সাওয়ারীতে চড়লেন।
আর আমি (আরোহী) ছিলাম আবূ তালহার পশ্চাতে। আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম খায়বরের গলিপথে চললেন। (আমরা এত পাশাপাশি পথ চলছিলাম যে) আমার আল্লাহর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরা স্পর্শ করেছিলো। এমন সময় আল্লাহর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর লুঙ্গি তাঁর উরুদেশ থেকে সরে গেল। আর আমি
আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরুর শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি
যখন খায়বরের জনপদে প্রবেশ করলেন, তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার, খায়বর- ধ্বংস হলো। আমরা যখন কোন কাওমের
আঙ্গিনায় পৌছি, তখন যাদের সতর্ক করা হয়েছে, তাদের সকাল অশুভ হয়ে যায়। তিনি একথা তিনবার
বললেনঃ। রাবী বলেনঃ, লোকজন তাদের কাজকর্মে
বেরিয়ে গেল। তারা বলে উঠলো, “মুহাম্মাদ (এসে পড়েছেন
দেখছি)”। রাবী আবদুল আযীয বলেনঃ, আমাদের কোন কোন সঙ্গী বললেনঃ, আর তাঁর পঞ্চবাহিনীও। রাবী বলেনঃ, আমরা প্রভাব বিস্তার করে তা জয় করে নিলাম।
৪৫১৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, খায়বরের
যুদ্ধের দিন আমি আবূ তালহার পিছনে (একই ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার) ছিলাম। আমার দুপো
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর পদদ্বয়কে স্পর্শ করছিল। রাবী
বলেনঃ, সুর্যোদয়ের সময় আমরা সেখানে
এলাম। তখন লোকজন তাদের পশুগুলি সবেমাত্র ঘর থেকে বের করেছে এবং তারা তাদের কোদাল, কুড়াল, জাবিল
নিয়ে (কাজের জন্য) বেরিয়ে পড়েছে। তখন তারা (সবিনয়ে) বললো, “মুহাম্মাদ এবং পঞ্চবাহিনী! রাবী বলেনঃ, আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খায়বর ধ্বংস হলো। আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন
সতর্ককৃতদের সকাল অশুভ হয়ে যায়। রাবী বলেনঃ, মহান
আল্লাহ তা আলা তাদের ধ্বংস করে দিলেন।
৪৫১৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন খায়বরে এলেন, তখন বললেনঃ, আমরা যখন কোন কাওমের আঙ্গিনায় পৌছি, তখন সতর্ককৃতদের সকাল অশুভ হয়ে যায়।
৪৫১৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বর অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলা (এ অভিযানে) বেরিয়ে
ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি (আমার ভাই) আমের ইবনু আকওয়াড়ী (রাঃ)-কে বললোঃ ওহে! তুমি কি
তোমার রণ সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু কবিতা শুনাবে না?– আমের (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী
থেকে অবতরন করে সকলকে শুনিয়ে জানিয়ে তার হুদী সঙ্গীত আবৃতি করতে করতে লোকদেরকে
হাকিয়ে নিয়ে চললেন। “ইয়া আল্লাহ! আপনি না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা ও সালাত আদায় করতাম না। তার সঙ্গীত
ছিল এইঃ আপনার জন্য আমাদের জান কোরবান, আমাদের
পিছনের সকল অপরাধ আপনি মাফ করে দিন, যতদিন
আমরা আপনার আনুগত্য করব। শক্রর সন্মুখিন হলে আমাদের পা অটল রাখুন। আমাদের উপর
শান্তি বর্ষণ করুন। যখন আমাদের ডাকা হয় আমরা উপস্থিত হই এবং তারাই চীৎকার করে
আমাদের বিরুদ্ধে লোক জমা করে।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ, “এ চালকটি কে? সাহাবীগণ বললেনঃ, আমের-।
তিনি বললেনঃ, আল্লাহ তার প্রতি রহমত করুন।, তখন কাওমের একব্যক্তি বলল, তার জন্যে তো শাহাদত অবধারিত হয়ে গেছে, ইয়া রাসুলুল্লাহ!আমাদের যদি তাঁর দ্বারা আরো
উপকৃত করতেন, (তবে ভাল হত)। রাবী বলেনঃ, তারপর আমরা খায়বরে আসলাম এবং তাদের অবরোধ
করলাম। (অবরোধ শুরু হল) এমন কি আমাদের দারুন খাদ্যাভাব দেখা দিল। তারপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়াআলা
তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করেছেন। তারপর বিজয়ের দিন যখন লোকদের সন্ধ্যা হলো
তখন তারা বহু স্থানে আশুন জালালো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেঃ এ আগুন কিসের? কিসের উপর (কি রান্না করার
জন্যে) লোকজন এ আগুন জ্বালিয়েছে? তারা বললেনঃ, গোশতের উপরে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিসের গোশত
তারা বললেনঃ, গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো ফেলে দাও আর রান্নার
পাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেল। এক ব্যক্তি বলল, তারা
কি এগুলো ফেলে দেবে এবং রান্নার পাত্রগুলো ধুয়ে ফেলবে? তিনি বললেনঃ তা হতে পারে। রাবী বলেনঃ, এরপর যখন লোকজন (যুদ্ধের জন্য) সারিবদ্ধ হল, আমেরের তরবারীখানা ছিল খাটো। তিনি জনৈক
ইয়াহুদীর পায়ের নলা লক্ষ্য করে যেই আঘাত করলেন, অমনি
তরবারির ধারাল দিক তার নিজ হাটূতে এসে লাগলো। এতে আমের শহীদ হলেন। রাবী বলেনঃ, তারপর যখন লোকজন (খায়বর থেকে) ফিরে এলো, তখন সালামা আমার হাত ধরে বললেনঃ, (রাবী বললেনঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে নির্বাক অবস্হায় দেখতে পেলেন, তখন
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, “আমার
পিতামাতা আপনার জন্যে কুরবান হোক! লোকজনের ধারণা আমের (আত্নহত্যা) করে তাঁর (সারা
জীবনের) আমল বরবাদ ,করে দিয়েছেন।” তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন, তা কে বলেছে? আমি বললাম, অমুক
অমুক এবং উসায়দ ইবনু হুযায়র আনসারী। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে এরুপ বলেছে, সে যথার্থ বলেনি। অবশ্যই তার
(আমেরের) জন্যে দূটি পূরস্কার রয়েছে। তখন তিনি তার দুটি আঙ্গুল একত্রি করলেন (এবং
বললেনঃ), সে (আল্লাহর রাস্তায়)
সত্যিকার যোদ্ধা ও মুজাহিদ। খুব কম আরবই তাঁর মতো চলেছে (বীরত্বের সাথে যুদ্ধ
করেছে)। কুতায়বা এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মাদের সাথে দুটি শব্দে দ্বিমত করেছেন। ইবনু
আব্বাদ (রহঃ)-এর রেওয়ায়েতে ‘অলকিনু সিক্কিনা আলাইনা’ স্হলে ‘অলকুসাকিনা আলাইনা’
উল্লেখ রয়েছে।
৪৫১৮। আবূ তাহির (রহঃ)
সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, খায়বরের
যুদ্ধের দিন আমার ভাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থেকে
বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেরৃ। তাঁর তরবারী ফিরে-এসে স্বয়ং তাঁকেই নিহত করে। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ তার ব্যাপারে নানা
মন্তব্য করতে থাকেন এবং তার শাহাদাতের ব্যাপারে সন্দেহ করেন। তাঁরা বলাবলি করেন যে, সে এমন লোক, যে
তার নিজ অস্রের আঘাতে মারা গেছে। আর তারা তার কোন কোন ব্যাপারেও সন্দেহ করেন।
সালামা বলেনঃ, তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তাঁর কবিতার কয়েকটি পংক্তি আবৃতি
করি।”রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। উমর ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ) তখন বলেনঃ উঠলেন, আমি জানি, তুমি কি বলবে। রাবী বলেনঃ, তারপর আমি আবৃত্তি করলাম:“ইয়া আল্লাহ! আপনি না
হলে, আমরা হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা দিতাম না এবং সালাত আদায় করতাম
না।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যথার্থই
বলেছেনঃ। তখন আমি আবৃতি করে চললামঃ “আমাদের প্রশাস্তি দান করুন এবং শত্রুর
-সন্মুর্খীন হলে আমাদের পা অটল রাখুন। মুশরিকরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহী হল। যখন
আমি আমার কবিতা আবৃতি শেষ করলাম, তখন বললেনঃ এ কবিতাটি কে
রচনা করেছে? আমি বললাম, আমার ভাই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তাঁর প্রতি সদয় হোন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিছু লোক তার প্রতি আল্লাহর
রহমত বর্ষনে দ্বিধাগ্রস্ত! তারা বলেনঃ, সে
এমন লোক, যে তার নিজ অস্ত্রের আঘাতে
মারা গেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, সে জিহাদ করতে করতে মুজাহিদের মত মরেছে। রাবী
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ, তারপর আমি সালামার এক
পূত্রকে প্রশ্ন করলে তিনি আমাকে তার পিতার সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে
ব্যতিক্রম এতটুকু যে, তিনি বলেনঃ, আমি যখন বললাম, কোন
কোন লোক তাঁর প্রতি ,রহমত বর্ষণে দ্বিধাগ্রস্ত, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারা মিথ্যা। বলেছেনঃ। সে জিহাদ করতে করতে মুজাহিদের মত মারা
গেছে। তার দুটি পুরস্কার এজন্যে নির্ধারিত রয়েছে। এবং তিনি তখন তার দুটি অঙ্গুলি
দ্বার ইশারা করলেন।
৪৫১৯। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খন্দকের যুদ্ধের দিন আমাদের সঙ্গে একত্রে মাটি বহন করেন। মাটি তার পেটের শুভ্রতাকে
আচ্ছা করে ফেলে। আর তখন তিনি আবৃতি করছিলেনঃ আল্লাহর কসম! আপনি না হলে আমরা
হেদায়াত পেতাম না, সাদাকা দিতাম না এবং সালাতও
আদায় করতাম না। আমাদের প্রশান্তি দান করুন, আর
তারাতো বিদ্রোহী দল আমাদের বিরুদ্ধে। আবার কখনও কখনও বলছিলেনঃ সর্দারেরা আমাদের
মানতে অস্বীকার করল, তারা যখন ফিতনা চাইল, তখন আমরা অস্বীকার করলাম।,- আর তা উচ্চারণের সময় তিনি তাঁর সুর উচ্চ
করছিলেন।
৪৫২০। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি বারা” (রাঃ)-কে অনুরুপ বলতে শুনেছি। তবে
তিনি বলেনঃ যে, সর্দারেরা আমাদের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করল।
৪৫২১। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা কা-নাবী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বললেন, আমরা
তখন পরিখা (খন্দক) খনন করছিলাম এবং কাঁধে করে মাটি স্হানান্তরিত করছিলাম। তিনি
বললেনঃ, “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের সুখ
ছাড়া সুখ নেই, মুহাজিরও আনসারদের আপনি
ক্ষমা করুন।”
৪৫২২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছিলেন, “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের সূখ
ছাড়া সুখ নেই। আপনি ক্ষমা করে দিন আনসার ও মুহাজিরদের।
৪৫২৩। ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর অন্য রেওয়ায়েতে আছে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেনঃ”ইয়া আল্লাহ! সুখতো (কেবল) আখিরাতের সুখই।
শুবা (রাঃ) বলেনঃ, অথবা তিনি বলেছেনঃ ইয়া !
আল্লাহ! আখিরাতের সূখ ছাড়া কোন সূখ নেই। আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি দয়া করুন।
৪৫২৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তাঁরা (সেদিন) সমবেত সুরে গাইতে ছিলেন এবং
তাদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। তাঁরা
বলছিলেনঃ”ইয়া আল্লাহ! মঙ্গল সমূহের মঙ্গল তো আখিরাতে। আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য
করুন।”
৪৫২৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ খন্দকের দিন বলছিলেনঃ “আমরা সেই লোক
যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে বায়আত হয়েছি। আর ইসলামের
উপ রই আছি। রাবী মুহাম্মদ (রাঃ) সন্দেহ করে বলেনঃ, অথবা
বলেছিলেনঃ ”জিহাদের উপরই আছি সর্বদা। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলছিলেনঃ ইয়া আল্লাহ! সকল মঙ্গল তো আখিরাতের মঙ্গল। আনসারদের এবং মুহাজিরদের ক্ষমা
করুন।”
৪৫২৬। কুতাহাবা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের আযানের আগেই বের
হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূধের উঠনি তখন
যু-কারদে (চারণ ভূমিতে) চরাচ্ছিল। তখন আর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর গোলাম আমার
সাথে সাক্ষাৎ করে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুধের উটনী সমুহকে নিয়ে গেছে। আমি সিজ্ঞাসা করলাম, কে সেগুলো নিয়ে গেছে সে বলল, গাতফান গোত্রের লোকেরা। রাবী বলেনঃ তখন আমি
উচ্চস্বরে তিনবার হাক দিলাম; সাহায্য চাই, সাহায্য। রাবী (সালামা ইবনু আকওয়া) বলেনঃ, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী সবাইকে আমি
আমার সে হাক শুনালাম তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম এবং যু-কারদের গিয়ে তাদের
(লুটেরাদের)-কে পেলাম। তখন তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিলাম। তখন আমি তীর
নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ তীরন্দাজ। আর তখন আমি বীরত্ব সূচক
কবিতা আবৃতি করছিলাম, আমি আকওয়ার পূত্র, আজ দূষ্টদের ধ্বংসের দিন। (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)। আমি
আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কখিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি দুধের
উটঠূনী সমূহ মুক্ত করলাম এমনকি আমি তাদের বিশটি চাঁদরও নিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন-আমি বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে
রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার
আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আকওয়া, এ সময় যা নেওয়ার ছিল তুমি তা
নিয়েছ। এবার ছেড়ে দাও। রাবী বলেনঃ তারপর আমরা ফিরে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁরই উঠিনি পিছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর আমরা মদিনায়
পৌছলাম।
৪৫২৬। কুতাইবা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের আযানের আগেই বের
হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূধের উঠনি তখন
যু-কারদে (চারণ ভূমিতে) চরাচ্ছিল। তখন আর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর গোলাম আমার
সাথে সাক্ষাৎ করে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুধের উটনী সমুহকে নিয়ে গেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে সেগুলো নিয়ে গেছে সে বলল, গাতফান গোত্রের লোকেরা। রাবী বলেনঃ তখন আমি
উচ্চস্বরে তিনবার হাক দিলাম; সাহায্য চাই, সাহায্য। রাবী (সালামা ইবনু আকওয়া) বলেনঃ, মদিনার উভয় প্রান্তের মধ্যবর্তী সবাইকে আমি
আমার সে হাক শুনালাম তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম এবং যু-কারদের গিয়ে তাদের
(লুটেরাদের)-কে পেলাম। তখন তারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছিলাম। তখন আমি তীর
নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। আমি ছিলাম একজন (দক্ষ তীরন্দাজ। আর তখন আমি বীরত্ব সূচক
কবিতা আবৃতি করছিলাম, আমি আকওয়ার পূত্র, আজ দূষ্টদের ধ্বংসের দিন। (কিংবা আজ তার দিন, যে শৈশব থেকে যুদ্ধের স্তন্য পান করেছে)। আমি
আমার তীর নিক্ষেপ ও বীরত্বব্যঞ্জক কবিতা আবৃতি করতে থাকলাম। অবশেষে আমি দুধের
উটনীসমূহ মুক্ত করলাম এমনকি আমি তাদের বিশটি চাঁদরও নিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকজন এসে পড়লেন। তখন-আমি বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তাদের পানির পথ রুদ্ধ করে
রেখেছি, তাই তারা পিপাসার্ত। এবার
আপনি একটি বাহিনী প্রেরণ করুন। তখন (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আকওয়া, এ সময় যা নেওয়ার ছিল তুমি তা
নিয়েছ। এবার ছেড়ে দাও। রাবী বলেনঃ তারপর আমরা ফিরে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁরই উঠিনি পিছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর আমরা মদিনায় পৌছলাম।
৪৫২৭ আবূ বাকর ইবনু শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহিম ও
আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ইয়াস ইবনু সালামা (রাঃ) সুত্রে তাঁর
পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হুদায়বিয়ায় পৌঁছলাম। তখন সংখ্যায় আমরা
চৌদ্দশ। তদুপরি সেখানে ছিল পঞ্চাশটি বকরী, যাদের
পানি পানের জন্য পর্যাপ্ত পানি ছিল না। রাবী বলেন, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুয়ার কিনারায় বসলেন এবং দু’আ করলেন
অথবা তাতে থুথু দিলেন। রাবী বলেন, আর অমনি পানি উথলে উঠলো। তখন
আমরাও পানি পান করলাম এবং পশুদের পানি পান করালাম। রাবী বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের বায়আতের জন্য গাছ তলায় ডাকলেন। রাবী বলেন, তারপর লোকদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি বায়আত হলাম।
তারপর একে একে অন্যান্য লোকেরাও বায়আত হল। তিনি যখন বায়আত গ্রহন করতে করতে লোকজনের
মধ্যবর্তী স্থানে (অর্থাৎ অর্ধ পরিমানে) পৌঁছলেন, তখন
বললেন, হে সালামা! তুমি বায়আত হও।
রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, লোকদের মধ্যে প্রথমেই আমি বায়াআত হয়েছি ইয়া
রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, আবারও হও না! রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে অস্ত্রহীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি “জাহাদ” বা “দ্বারাবা” (ঢাল) দান করলেন। তিনি যখন বায়আত
করতে করতে লোকদের শেষপ্রান্তে পৌঁছলেন এবং বললেন, তুমি
কি আমার কাছে বায়আত হবে না, হে সালামা! রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি তো লোকদের মধ্যে প্রথমভাগে এবং মধ্যভাগে (দু দু’বার) আপনার কাছে
বায়আত হয়েছি। তিনি বললেন, আবারও হও না! তখন আমি
তৃতীয়বার বায়আত হলাম। এরপর তিনি আমাকে বললেন, হে
সালামা! তোমার সেই ঢালটি কোথায় যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম? রাবী (সালামা) বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার চাচা আমিরের আমার সাথে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় আমার দেখা হল আর আমি
তাকে তা দিয়ে দিয়েছি। রাবী বলেন, এতে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি দেখছি পূর্ববর্তীযুগের সেই লোকদের মত, যে বলেছিল, হে
আল্লাহ্! আমি এমন একজন বন্ধু চাই, যে
আমার প্রানের চাইতেও আমার নিকট অধিক প্রিয় হবে। এরপরে মুশরিকরা আমাদের কাছে
প্রস্তাব পাঠালো। আমাদের একপক্ষের লোকজন অন্যপক্ষের শিবিরে যাতায়াত করতে লাগলো এবং
শেষ পর্যন্ত আমরা উভয় পক্ষ পরস্পরে সন্ধিবদ্ধ হলাম। রাবী [সালাম (রাঃ)] বলেন, আমি তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহর খেদমতে নিয়োজিত
ছিলাম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম এবং তাঁর পিঠ মালিশ করতাম (আছড়ে দিতাম)
এবং তাঁর অন্যান্য খিদমত করতাম। আমি তাও ওখানে খাওয়া দাওয়া করতাম। নিজের পরিবার
পরিজন ও ধন সম্পদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসুলের রাহে মুহাজির
হয়েছিলাম। রাবী বলেন, তারপর যখন আমরা ও
মক্কাবাসীরা সন্ধিতে আবদ্ধ হলাম এবং আমাদের একপক্ষ অপর পক্ষের সাথে মেলামেশা করতে
লাগ্লাম তখন আমি একটি গাছতলায় গিয়ে তাঁর নিচের কাঁটা প্রভৃতি পরিস্কার করে তাঁর
গোঁড়ায় একটু শুয়ে পড়ি। এমন সময় মক্কাবাসী চারজন মুশরিক এসে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অপ্রীতিকর কথা বলতে লাগলো। আমার কাছে
ওদের কথাবার্তা অত্যন্ত খারাপ লাগলো এবং আমি স্থান পরিবর্তন করে আর একটি গাছের
তলায় চলে গেলাম। তারা তাদের অস্ত্র গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল। এমন সময়
প্রান্তরের নিম্নাঞ্চল থেকে কে যেন চিৎকার করে বলল, হে
মুহাজিরগণ! সাহায্য! ইবনু যুনায়ম নিহত হয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার তরবারী উঠিয়ে
ধরলাম এবং ঐ চারজনের উপর আক্রমন চালালাম। তখন তারা ঘুমিয়ে ছিল। আমি তাদের
অস্ত্রগুলি হস্তগত করলাম এবং তা আটি বেঁধে আমার হাতে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, যে
মহান সত্তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মানিত করেছেন তাঁর কসম!
তোমাদের মধ্যে কেউ যদি মাথা তুলে, তবে তাঁর সেই অঙ্গে আঘাত
(করে বিচ্ছিন্ন) করব যেখানে তাঁর চোখদুটি রয়েছে (অর্থাৎ ঘাড়ে)। রাবী বলেন, তারপর তাদেরকে আমি হাকিয়ে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, এমন সময় আমার চাচা আমির ‘আবালাত’ গোত্রের
একজনকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এসেছেন। তাকে বলা
হত মিকরায। সে ছিল আঘাত নিরোধক বস্ত্রাকৃত একটি ঘোড়ায় আসীন। আর তাঁর সাথে সত্তরজন
মুশরিক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে তাকালেন এবং
বললেনঃ “ওদেরকে ছেড়ে দাও, যাতে অপকর্মের সূচনা ওদের
পক্ষ থেকেই হয় এবং পুনরাবৃত্তিও তারাই করে” একথা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ষমা করে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “সেই
পবিত্র সত্তা যিনি মক্কাপ্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে
তাদের উপর থেকে বিরত রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর”। রাবী বলেন, তারপর মদিনায় প্রত্যাবর্তনের জন্য বেরিয়ে
পড়লাম। পথে এমন একটি মঞ্জিলে আমরা অবতরন করলাম যেখানে আমদের ও লিহয়ান গোত্রের
মধ্যে কেবল একটি পাহাড়ের ব্যবধান ছিল। আর তারা ছিল মুশরিক। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ব্যাক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন, যে ব্যাক্তি রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও তাঁর সাহাবীদের পক্ষ থেকে খবরদারীর জন্য পাহাড়ের উপরে আরোহণ করবে। সালামা বলেন, সে রাতে আমি দুই কি তিনবার ঐ পাহাড়ে আরোহণ
করেছিলাম। তারপর আমরা মদিনায় এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর গোলাম রাবাহকে দিয়ে তাঁর উটগুলি পাঠালেন। আর আমিও তালহা (রাঃ) এর ঘোড়ায় চলে
তাঁর সাথে সাথে উটগুলি চারণ ভুমির দিকে নিয়ে গেলাম সেতাকে ঘাস পানি খাওয়ানোর জন্য।
যখন আমাদের ভোর হল, আব্দুর রহমান ফাজারী চড়াও
হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (বিচরনকৃত) সমস্ত উট ছিনিয়ে
নিয়ে গেল এবং তাঁর রাখালকে হত্যা করল। আমি তখন রাবাহকে বললাম, হে রাবাহ! লও এই ঘোড়া নিয়ে তুমি তালহা ইবনু
উবায়দুল্লাহকে পৌঁছে দিও আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ
দাও যে, মুশরিকেরা তাঁর চারণ ভুমির
উটগুলো লুটে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, তখন
আমি একটি টিলার উপর দাঁড়ালাম। তারপর মদিনার দিকে মুখ করে তিনবার হাক দিলাম, ইয়া সাবাহা! (ভোরের আক্রমণ) তারপর আমি
লুটেরাদের পিছু ধাওয়া করলাম এবং তাদের উপর তীর নিক্ষেপ করতে লাগলাম। আর আমি মুখে
এই চরন উচ্চারন করছিলাম, “আমি আকওয়ার পুত্র, আজ সেই দিন, আজ
ইতরকে (শায়েস্তা করার) দিন। আজকে কেমন মায়ের দুধ (খেয়েছ তা স্মরণের দিন)”। তখন আমি
তাদের যে কাউকে পেয়েছি, তাঁর উপর এরকমভাবে তীর
নিক্ষেপ করেছি যে, তীরের অগ্রভাগ তাঁর কাঁধের
কোমল হাড় ছেদ করে বেরিয়েছে। তিনি বলেন, আমি
বলতে লাগলাম, এ আঘাত নাও, আমি আকওয়ার পুত্র, আজ ইতরের দিন (দুধপান স্মরণের দিন)। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং
ঘায়েল করতে লাগলাম এবং যখনই কোন ঘোড়সওয়ার আমার দিকে ফিরত তখনই আমি গাছের আড়ালে এসে
তাঁর গোঁড়ায় বসে তাঁর প্রতি তীর নিক্ষেপ করতাম আর তাকে জখম করে ফেলতাম। অবশেষে যখন
তারা পাহাড়ের সংকীর্ণ পথে আসে এবং তারা সে সংকীর্ণ পথে ঢোকে আমি তখন পাহাড়ের উপর
উঠে সেখান থেকে (অবিরাম) তাদের উপর পাথর গড়িয়ে দিতে থাকলাম। তিনি বলেন, এভাবে আমি তাদের পশ্চাঁদ্ধবন করতে থাকলাম যে
পর্যন্ত না আল্লাহর সৃষ্ট উটগুলোর প্রতিটি উট যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর ভারবাহী রুপে ছিল তা আমার পিছনে রেখে না যায়। তারা এগুলি আমার আওতায়
ফেলে চলে গেল। তারপরও আমি তাদের অনুসরণ করে তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম।
এমনকি তারা ত্রিশটির বেশি চাঁদর এবং ত্রিশটি বল্লম নিজেদের বোঝা হালকা করার
উদ্দেশ্য ফেলে গেল। তারা যে সব বস্তু ফেলে যাচ্ছিল আমি তাঁর প্রত্যেকটিকে পাথর
দিয়ে চিহ্নিত করে যাচ্ছিলাম, যাতে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ তা চিনতে পারেন। অবশেষে তারা
পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে পৌঁছল। এমন সময় বদর ফাজারির পুত্র এসে থাদের
সাথে মিলিত হল। এবার তারা সকলে মিলে সকালের খাবার খেতে বসল। আমি পাহাড়ের একটি শৃঙ্গে বসে পড়লাম। তখন সে
ফাজারি বলল, ঐ যে লোকটাকে দেখছি সে কে? তারা বলল, লোকটির
হাতে আমরা অনেক দুর্ভোগ পোহায়েছি। আল্লাহর কসম! সেই রাতের আধার থেকে নিয়ে এ
পর্যন্ত লোকটা আমাদের পিছন থেকে সরছে না, সে
আমাদের প্রতি (অবিরাম) তীর নিক্ষেপ করেছে, এমনকি
আমাদের যথাসর্বস্ব সে কেড়ে নিয়েছে। তখন সে বলল, তোমাদের
মধ্যকার চারজন উঠে গিয়ে তাঁর উপর চড়াও হও। তখন তাদের চার ব্যাক্তি পাহাড়ে উঠে আমার
দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তারপর তারা যখন আমার কথা শোনার মত নিকটবর্তী স্থানে এসে
পৌঁছল, তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, তোমরা
কি আমাকে চেন? তারা বলল, না। তিনি বলেন, আমি
বললাম, আমি সালামা ইবনু আকওয়া। কসম
সেই পবিত্র স্বত্বার, যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সম্মানিত করেছেন। আমি তোমাদের যাকেই পেতে চাইব (লক্ষ্য
বানাব) তাকে ধরে ফেলব। কিন্তু তোমাদের কেউ চাইলেই আমাকে ধরতে পারবে না। তখন তাদের
একজন বলল, আমিও তাই মনে করি। তিনি বলেন, তারপর তারা ফিরে গেল। আর আমি সেই স্থানেই বসে
রইলাম। অবশেষে আমি গাছ গাছালির মাঝ দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম –এর অশ্বারোহীদের অগ্রসর হতে দেখলাম। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আখারাম আসা’দী।
তাঁর পিছনে আবূ কাতাদা আনসারী। তাঁর পিছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, আমি তখন আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরলাম। তিনি বলেন, তখন তারা (শত্রুরা) পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে
গেল। আমি বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে সতর্ক
থাকবে। তারা যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ এসে
মিলিত হওয়ার পূর্বেই তোমাদের বিচ্ছিন্ন করে না ফেলে। আখারাম বললেন, যে সালামা! তুমি যদি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিনের
প্রতি বিশ্বাসী হও এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে সত্য মনে কর তবে আমার এবং শাহাদতের
মধ্যে অন্তরায় সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তখন
আমি তাঁর পথ ছেড়ে দিলাম। তখন তিনি আব্দুর রহমানের সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হলেন।
আখরাম আব্দুর রহমানের ঘোড়াকে আহত করলেন, আর
আব্দুর রহমান বর্শার আঘাতে তাকে কতল করে দিল এবং আখরামের ঘোড়ার উপর চড়ে বসল।
ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোড়সওয়ার আবূ কাতাদা
(রাঃ) এসে পৌঁছলেন। তিনি আব্দুর রহমানকে বর্শার আঘাতে হত্যা করলেন। সেই পবিত্র
সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মর্যাদা মণ্ডিত
করেছেন, আমি তখন এতই দ্রুতগতিতে
তাদের পিছু ধাওয়া করে যাচ্ছিলাম যে, আর
পিছনে (অনেক দূর পর্যন্ত) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন
সাহাবীকেই দেখতে পেলাম না, এমনকি তাদের ঘোড়ার খুরের
ধুলিও আমার দৃষ্টিগোচর হোল না। এভাবে চলতে চলতে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তারা এমন
একটি গিরি পথে উপনীত হল যেখানে যু-কারাদ নামক একটি প্রস্রবণ রয়েছে। অত্যন্ত
তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তারা পানি পান করতে অবতরন করল। তখন তারা আমাকে তাদের পিছু ধাওয়া
করে দৌড়ে আসতে দেখতে পেল। এক জায়গায় পানি পান করার পূর্বেই আমি সেখান থেকে তাদেরকে
তাড়িয়ে দিলাম। তখন তারা পাহাড়ের একটি ঢালু উপত্যকার দিকে দৌড়াতে লাগলো আর আমিও
তাদের পিছু ধাওয়া করতে লাগলাম। আমি তাদের যে কোন একজনের নিকটবর্তী হলে তাঁর কাঁধের
অস্তিতে তীর নিক্ষেপ করে বললাম, আমি আকওয়ার পুত্র, ইতরদের (বোঝাবার) দিন আজ (দুধপান স্মরণের দিন)।
সে তখন বলল, তাঁর মা (পুত্র হারা হয়ে)
তাঁর জন্য কাদুক-তুমি কি সে আকওয়া যে আমাদের সেই ভোর থেকে অতিষ্ঠ করে রেখেছ? আমি বললাম হ্যাঁ, তোমার
জানের দুশমন, (আমি) সেই তোমার ভোরবেলার
আকওয়াই। তিনি বলেন, অতঃপর তারা দুটি ক্লান্ত
ঘোড়া উপত্যকায় ছেড়ে চলে গেল। তিনি বলেন, তখন
আমি ঐ দুটোকে হাকিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে
এলাম। তিনি বলেন, সেখানে একটি অল্প দুধভর্তি
‘সাতীহা’ (চামড়ার তৈরি পাত্র) এবং একটি পানিভর্তি সাতীহা নিয়ে এসে আমির আমার সাথে
মিলিত হলেন। আমি তখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম এবং (দুধ) পান করলাম। তারপর এমন
অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম যখন তিনি ঐ
পানির কাছে ছিলেন, যা থেকে আমি ওদেরকে তাড়িয়ে
দিয়েছিলাম। এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমস্ত উট ও
মুশরিকদের নিকট থেকে আমার ছিনিয়ে আনা সব কিছু বর্শা ও চাঁদর প্রভৃতি হস্তগত
করেছেন। তখন বিলাল, লোকদের কাছে থেকে আমার
উদ্ধারকৃত একটি উট জবাই করেছেন এবং তাঁর কলিজা ও কুজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য ভুনছিলেন। তিনি বলেন, আমি
বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে
সুযোগ দিন, আমি আমাদের লোকদের থেকে একশ
জনকে বাছাই করে নিয়ে সেই দুশমনদের পিছু ধাওয়া করি যাতে তাদের সকলকে এমনিভাবে হত্যা
করব যে, তাদের খবর বয়ে নিয়ে যাওয়ার
মত একটি লোকও অবশিষ্ট থাকবেনা। তিনি বলেন, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হাসলেন যে, চুলার আগুনের আভায় তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি
প্রকাশ পেল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সালামা! তুমি কি মনে কর যে, তুমি তা-ই করবে? আমি
বললাম হ্যাঁ, সেই পবিত্র সত্তার শপথ! যিনি
আপনাকে সম্মানিত করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, এতক্ষণে তো তারা গাতফান পল্লিতে আতিথ্য ভোগ
করছে। তিনি বলেন, পরে গাতফান গোত্রের একটি লোক
এল, সে বলল, অমুক
তাদের জন্য একটি উট জবেহ করেছে। তারা যখন তাঁর চামড়া ছড়াচ্ছিল তখন তারা ধুলোরাশি
উড়তে দেখতে পায়। তখন তারা বলে উঠল ওরা (আকওয়া ও তাঁর বাহিনী) তোমাদের নিকট এসে
পড়েছে। তখন তারা পালিয়ে যায়। এরপর আমাদের ভোর হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের আজকের সেরা অশ্বারোহী
হচ্ছে আবূ কাতাদা আর আমাদের সেরা পদাতিক হচ্ছে সালামা। তিনি বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে অশ্বারোহী ও পদাতিক হিসাবে গণিমতের দুই অংশ দিলেন। আমাকে তিনি
একত্রে দুই অংশ দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
মদিনায় প্রত্যাবর্তন কালে আমাকে তাঁর সাথে তাঁর উটনী ‘আদবার’ পিছনে বসিয়ে নিলেন।
তিনি বলেন, তারপর যখন আমরা পথ অতিক্রম
করছিলাম, এমন সময় আনসারের এমন এক
ব্যাক্তি যাকে দৌড়ে কেউ পরাজিত করতে পারতো না, সে
বলতে লাগলোঃ কেউ কি আছে যে, মদিনায় সর্বপ্রথম পৌছার
ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করবে? এ কথাটি সে বারবার বলছিল।
তিনি বলেন, যখন আমি তাঁর এ
(চ্যালেঞ্জমূলক) কথাটি শুনলাম, তখন বললাম, তুমি কি কোন সম্মানিত লোককে সম্মান দিতে জানো
না বা কোন ভদ্রলোককেই পরোয়া করবে না? সে
বলল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাতিত অন্য কাউকে নয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান, আপনি
আমায় ঐ ব্যাক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি দিন। তখন তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছা
হলে। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, চল! ধর। তারপর আমি লাফ দিয়ে নিচে দৌড় দিলাম।
তারপর এক বা দুই টিলা অতিক্রম করার দূরত্বে রইলাম তখন পর্যন্ত আমার দম নিয়ন্ত্রনে
রেখে তাঁর পছু পিছু দৌড় দিলাম। আরও দুই এক টিলা পর্যন্ত ধীরগতিতে চলার পর সাজোরে
দৌড় দিয়ে তাঁর নিকট পৌঁছে গেলাম এবং তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘুষি মেরে
বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! তুমি হেরে
গেছ। তখন সে বলল, আমিও তাই মনে করছি। তিনি
বলেন, অতএব আমি তাঁর পূর্বেই
মদিনায় পৌঁছে গেলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর আমরা
তিনরাতের অধিক মদিনায় থাকতে পারিনি। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা খায়বারের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। তিনি বলেন, তখন আমার চাচা আমির (রাঃ) প্রেরণামূলক কবিতা
আবৃতি করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না, সাদাকাও দিতাম না আর সালাতও আদায় করতাম না।
আমরা আপনার অনুগ্রহ থেকে কখনও বেপরওয়া হতে পারি না, তাই
আপনি আমাদের কদম দৃঢ় রাখুন, যখন আমরা শত্রুদের সম্মুখীন
হই এবং আপনি আমাদের প্রতি প্রশান্তি বর্ষণ করুন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাক্তি কে? তিনি
বললেন, আমি আমির। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার
রব তোমাকে ক্ষমা করুন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো জন্য বিশেষভাবে দু’আ করতেন সে শহীদ হত। তিনি বলেন, তখন নিজ উটে বসা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) দূর
থেকে আওয়াজ করে বললেন, ইয়া নাবী আল্লাহ্! আমিরকে
দিয়ে যদি না আমাদের আরো উপকার করতেন? তিনি
বলেন, তারপর যখন আমরা খায়বারে
উপস্থিত হলাম, তখন খায়বার অধিপতি মুরাহহাব
(মারহাব) তরবারি দোলাতে দোলাতে বেরিয়ে এল এবং বলল, “খায়বার
জানে যে, আমি মুরাহহাব, পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, অভিজ্ঞতাপূর্ণ এক বীরপুরুষ। রাবী বলেন, আমার চাচা আমির (রাঃ) কবিতা আবৃতি করতে করতে
বললেন, “খায়বার জানে যে, আমি আমির অস্ত্রে শস্ত্রে সুসজ্জিত যুদ্ধে
অবতীর্ণ বীর বাহাদুর নির্ভীক ব্যাক্তি”। রাবী বলেন, তারপর
তাদের মধ্যে আঘাত বিনিময় হল। আমির (রাঃ) নিচে থেকে যখন তাকে আঘাত করতে চাইলেন, তখন তা ফিরে এসে তাঁর নিজের উপরই লাগল। আর তাতে
তাঁর পায়ের গোছার সংযোগ শিরা কেটে গিয়ে মৃত্যু হল। (রাবী) সালামা (রাঃ) বলেন, তখন আমি বেরোলাম। নাবী কারিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবীকে বলাবলি করতে শুনলাম যে, আমিরের আমল বরবার হয়ে গেছে, সে আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি কাঁদতে কাঁদতে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমিরের আমলগুলি কি বরবার হয়ে
গেল? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (একথা) কে বলেছে? রাবী
বলেন, আমি বললাম, আপনারই কয়েকজন সাহাবী। তিনি বললেন, যারা এরুপ বলেছে তারা মিথ্যা বলেছে এবং তাঁর
প্রতিদান সে দু’বার পাবে। তারপর তিনি আমাকে আলী (রাঃ) এর নিকটে পাঠালেন। তখন তিনি
চক্ষুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আমি এমন এক ব্যাক্তিকে (আজ) পতাকা সমর্পণ করব, যে
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে এবং (অথবা বলেলন)
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, তারপর
আমি আলী (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তখন তাঁর চোখ ব্যাথাগ্রস্থ হল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে থুথু দিলেন আর তাতেই তিনি সুস্থ হলেন।
তখন তিনি তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। এবারো মুরাহহাব বেরিয়ে এল এবং কবিতা আওড়াতে লাগল
“ খায়বার জানে যে, আমি মুরাহহাব, যুদ্ধের অস্ত্রে সজ্জিত এক অভিজ্ঞতাপূর্ণ বীর
বাহাদুর ব্যাক্তি। যখন যুদ্ধ তাঁর লেলিহান শিখা নিয়ে অগ্রসর হয়, তখন আলী (রাঃ) বললেন, “আমি সে ব্যাক্তি যাকে আমার মা ‘হায়দর’ (সিংহ)
নাম রেখেছেন, যার দর্শন বন্য সিংহের মত
ভয়ঙ্কর। আমি তাদের (দুশমনদের) প্রতিদান দেই বড় বড় পাত্র দিয়ে (অর্থাৎ তাদের
অবলীলায়) হত্যা করি”। এরপর তিনি মুরাহহাবের মাথায় তলোয়ার মারলেন এবং তাকে হত্যা
করলেন। তারপর তারই হাতে (খায়বার) বিজয় হল। ইবরাহিম ইকরামা ইবনু আম্মার সুত্রেও এই
হাদিস সুদীর্ঘরুপে বর্ণনা করেছেন।
৪৫২৮। আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী
সুলামী (রহঃ) ইকরামা ইবনু আম্মার (রাঃ)-এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫২৯। আমর ইবনু মুহাম্মাদ
নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসীদের
মধ্য থেকে সশস্র আশি ব্যক্তি একদা অতর্কিতে তানঈম পাহাড় থেকে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে অবতরণ করে তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণের অসতর্কতার সুযোগ নিবে। তিনি
তাদের বিনা যুদ্ধে বন্দী করলেন, এরপর তাদের জীবিত ছেড়ে
দিলেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ (তিনি সেই পবিত্র সত্তা যিনি মক্কা
প্রান্তরে তাদের হাতকে তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাতকে তাদের উপর থেকে বিরত
রেখেছেন তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর।
৪৫৩০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (তার
মা) উম্মে সুলাইম হুনাইনের যুদ্ধের দিন একটি খঞ্জর ধারন করেছিলেন, আর তিনি তার সঙ্গে ছিলেন (তাঁর স্বামী)। আবূ
তালহা তাঁকে দেখতে পেয়ে বলেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইনি উম্মে
সূলাইম। আর তার সাথে একটি খঞ্জর রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এ খঞ্জর কিসের জন্য? তিনি
বললেনঃ, এটা এজন্য নিয়েছি যদি কোন
বিধর্মী মূশরিক আমার কাছাকাছি আসে, তবে
এদিয়ে আমি তার পেট চিরে ফেলবো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাসতে লাগলেন। তখন তিনি (উম্মে সুলাইম)-বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! (মক্কা বিজয়ের দিন) আমাদের ছাড়া যারা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে এবং পরাজয়ের
মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাদের -হত্যা করে ফেলুন। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে, উম্মে সুলাইম! প্রবল প্রতান্বিত ও মহামান্বিত
আল্লাহই (মুশরিকদের বিরুদ্ধে) যথেষ্ট। তিনি (আমাদের প্রতি) সদয় রয়েছেন। মুহাম্মাদ
ইবনু হাতিম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত উম্মে সুলাইমের কাহিনী বর্ণনা
প্রসঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৪৫৩১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উম্মে সূলাইম ও আনসার কতিপয় মহিলাকে তার সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে
যেতেন। তারা আহতদের পানি পান করাতেন এবং তাদের সুস্রশা করতেন।
৪৫৩২। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর
রহমান দারেমী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ, ওহুদ যুদ্ধের দিন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কতিপয় লোক
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আড়াল করে রেখেছিলেন। আর আবূ তালহা (রাঃ)
ছিলেন একজন অতি দক্ষ তীরন্দাজ। সেদিন (যুদ্ধে) তিনি দুই বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে
ফেলেন। রাবী বলেনঃ, যখনই কোন ব্যক্তি তীর ভর্তি
তূনীর নিয়ে পাশ দিয়ে যেতো, তখনই তিনি (রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন, এগুলো
আবূ তালহার জন্য রেখে যাও। রাবী বলেনঃ, যখনই
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে লোকজনের প্রতি তাকাতেন, তখনই আবূ তালহা (রাঃ) বলে উঠতেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনার জন্য আমার পিতামাতা
কোরবান! আপনি মাথা উঠাবেন না; এমন না হয় শক্র পক্ষের তীর
এসে আপনার গায়ে লাগে। আপনার সীনা রক্ষার্থে আমার সীনা নিবেদিত। আবূ তালহা বলেনঃ, আমি (সেদিন) আবূ বাকর তনয়া আয়িশা ও উম্মে
সুলায়মকে এমন অবস্হায় দেখেছি, তারা তাদের পিঠে পানির মশক
বয়ে আনছিলেন। তখন তারা এমনভাবে কাপড় গুছিয়ে চলছিলেন যে,”আমি তাদের নলীর খাড়ু দেখতে পাচ্ছিলাম। তারা
আহতদের মূখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তারা আবার গিয়ে মশক ভরে পনি এনে আহতদের মূখে
পানি দিচ্ছিলেন। ”আবূ তালহার হাত থেকে সেদিন তন্দ্রার ঘোরে দুবার বা তিনবার
তলোয়ার পড়ে যায়।
৪৫৩৩। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু হরমুয (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজদা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে পাচটি
ব্যাপারে প্রশ্ন করে পত্র লিখলেন। তখন ইবনুু, আব্বাস
(রাঃ) বললেনঃ, যদি আমি ইলম গোপনকারীর হওয়ার
আশংকা না করতাম তা হলে আমি তার কাছে জবাব লিখতাম না। নাজদ সে পত্রে তাকে লিখেছিলেন, হামদ ও সালাতের পর আমাকে অবহিত করুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
মহিলাদেরকে নিয়ে যুদ্ধযাত্রা করতেন! তিনি তাদেরকে কি গনীমতের ভাগ দিতেন কি? শত্রুপক্ষের বালকদেরকে হত্যা করতেন? আর কখন ইয়াতীমের ইয়াতীমদের অবসান ঘটে”? আর গনীমতের এক পঞ্চমাংশের হকদার কারা? জবাবে ইবনু আনবাস (রাঃ) লিখলেন, তুমি আমাকে লিখিত প্রশ্ন করেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
মহিলাদেরকে নিয়ে যূদ্ধযাত্রা করতেন”? হ্যা, তিনি তাদেরকে নিয়ে যুদ্ধ যাত্রা করতেন এবং
তাঁরা আহতদের সেবা-শ্রস্রুষা করতেন এবং গনীমতের মাল থেকে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হতো, কিন্তু গনীমতের ভাগ তাদের জন্য বরাদ্দ করা হতো
না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও বালকদের হত্যা করতেন না।
সুতরাং তুমিও বালকদেরকে হত্যা করবে না। আর তোমার লিপিতে আমাকে এও প্রশ্ন করেছে যে, কখন ইয়াতীমের ইয়াতীমদের অবসান হয়? আমার জীবনের শপথ! অনেক সময় কোন ব্যক্তির দাড়ি
গজিয়ে যায়; অথচ সে তার নিজের হক গ্রহণে
দূর্বল থাকে এবং অন্য কারো হক দানের বেলায়ও কাল থাকে। সুতরাং যখন সে লোকদের মতো
নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারে তখনই তার ইয়াতীমদের অবসান ঘটে। আর তুমি লিখেছ, খূমুস কাদের প্রাপ্য আমবা বলি, তা আমাদের (আহলে বাইতদের) জন্যই, কিন্তু আমাদের গোত্রের লোকেরা (বনূ উমাইয়া) তা
অস্বীকার করছে।
৪৫৩৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু হরমুয (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজদা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রা,)-কে কয়েকটি ব্যাপারে প্রশ্ন করে পত্র লিখেন।
পরবর্তী অংশ সুলায়মান ইবনু বিনালের হাদীসের অনুরুপ। তবে হাতীমের এ হাদীসে রয়েছে যে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালকদেরকে হত্যা করতেন না। সুতরাং
তুমিও বালকদেরকে হত্যা করবে না। তবে যদি তুমি তা জানতে পারো, যে সেই বালক সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন, যাকে তিনি হত্যা করছিলেন, তবে স্বতন্ত্র কথা এ হাদীসের একজন রাবী ইসহাক
(রহঃ) তাঁর বর্ণনায় সূত্র এতটুকু বাড়িয়েছেন- আর যদি তুমি বেছে বের করতে পারো
মুমিনকে, তবে তুমি কাফিরকে হত্যা করবে
এবং মুমিনকে ছেড়ে দেবে।
৪৫৩৫। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইয়াযীদ ইবনু হরমুয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে, নাজদা ইবনু আমর হারুরী ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর
নিকট পত্র লিখে জানতে চাইলেন, জিহাদে উপস্থিত গোলাম ও
মহিলাদের গনীমতের অংশ দেওয়া হবে কি? আর
(শক্রপক্ষের) বালকদের হত্যা সম্পর্কে এবং ইয়াতীম সম্পর্কে যে, কখন তার ইয়াতীমতের অবস্থান ঘটবে-! এবং যাবিল
কুরবা- বা নিকটাত্নীয় কারা? তখন তিনি ইয়াযিদকে বললেনঃ, তুমি তাকে লিখ, (আমি
যদি না লিখি) তার নির্বুদ্ধিতায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে আমি তাকে পত্র লিখাতাম
না। লিখ তুমি আমাকে লিখেছো এ প্রশ্ন করে সে, যারা
জিহাদে যোগ দিয়েছে এমন নারী এবং গোলামকে কি গনীমতের কিছু দেওয়া-হবে তাদের
(নির্ধারিত) কিছুই দেওয়া হবে না। তবে সবার কাছ থেকে কিছু কিছু নিয়ে (বখশীশরুপে)
দেওয়া হবে। তুমি আমাকে প্রশ্ন করে লিখেছ বালকদের হত্যা সম্পর্কে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাদেরকে হত্যা করেননি এবং তুমিও তাদেরকে
হত্যা করবে না। তবে (তা স্বতন্ত্র কথা), যদি
তুমি তাদের ব্যাপারে তা জানতে পারো যা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গী (খিযির
আ) জানতে পেরেছিলেন, যে ছেলেটিকে তিনি হত্যা
করেছিলেন, তার সম্পর্কে। তার ইয়াতীম
নাম ঘুচবেনা যতক্ষণ না সে বালিগ হবে এবং তার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা পরিলক্ষিত হবে। আর
তুমি আমাকে -যাবিল কুরবা-, সন্মন্ধে প্রশ্ন করে লিখেছ
যে, তারা কারা? আমরা
মনে করি, আমরাই তারা। কিন্তু আমাদের
লোকেরা তা অস্বীকার করেছে।
৪৫৩৬। আবদুর রহমান ইবনু
বাশশার আবদী (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু হরমূয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাজদা (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পত্র লিখেন এবং অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ ইসহাক
বলেনঃ, সুফিয়ান (রহঃ) অনুরুপ হাদীস
বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
৪৫৩৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ইয়াযীদ
ইবনু হরমুযকে আমি এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইয়াযীদ ইবনু
হরমুয থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাজদা ইবনু আমের ইবনু আব্বাস
(রাঃ)-কে পত্র লিখেন। রাবী বলেনঃ, ইবনু আব্বাস (রাঃ) যখন তাঁর
পত্রখানি পাঠ করেন এবং যখন তিনি তার জবাব লিখেন তখন আমি তার ইবনু আব্বাস) সামনেই
উপস্থিত ছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ, যদি
সে (অপকর্মের) দুর্নামে পতিত হবে বলে আশংকা না করতাম তবে আমি তার কাছে জবাব লিখতাম
না। তার চোখ কোন দিন না জুড়াক। রাবী বলেনঃ, তারপর
তিনি তাকে লিখলেন, তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ, আল্লাহ (গনীমতের অংশ সংক্রান্ত আয়াতে) যাদের
সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সে
ঘনিষ্ঠজন কারা? আমরা মনে করি, আমরাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সেই ঘনিষ্ঠজন। তিনি আমাদের গোত্রের লোকেরা তা অস্বীকার করো আর
তুমি ইয়াতীম সম্পর্কে প্রশ্ন করেছ যে, কখন
তার ইয়াতীমত্বের অবসান ঘটে? যখন সে বিনাহযোগ্য হয়, তার মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনা পরিলক্ষিত হয় এবং তার
সস্পদ তার কাছে প্রত্যার্পণ করা হয়, তখন
তার ইয়াতীমদের অবসান ঘটে। আর তুমি প্রশ্ন করেছে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুশরিকদের কোন ছেলে সন্তানকে হত্যা করতেন-? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোন দিন তাদের ছেলে সন্তানদের কাউকে হত্যা করেননি। সুতরাং তুমিও তাদের কাউকে
হত্যা কররে না। অবশ্য যদি তুমি অবগত হও, যা
অবগত হয়েছিলেন খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে বালকটির সম্পর্কে যখন তিনি তাকে
হত্যা করেন। আর তুমি প্রশ্ন করেছ, নারী ও গোলাম সম্পর্কে, যখন তারা যুদ্ধে উপস্থিত থাকে, তাদের জন্য নির্ধারিত অংশ নেই। তরে লোকদের গনীমাতের
মাল থেকে তারা বখশীশ পায়।
৪৫৩৮। আবূ কুরায়েব (রহঃ)
ইয়াযিদ ইবনু হরমুয (রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাজদা
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে লিখেছিলেন, রাবী এ হাদীসের কিছু অংশ
রেওয়ায়েত করেছেন। তবে তাঁদের হাদীস সমুহের মতো তিনি কাহিনী পুরোপুরি বর্ণনা
করেননি।
৪৫৩৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা আনসারীয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁদের শিবিরের পশ্চাতে ,অবস্থান করতাম। তাদের খাবার তৈরী করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের
সেবা-শ্রস্রুষা করতাম।
৪৫৪০। আমর আন নাকিদ (রহঃ)
হিশাম ইবনু হাসসান (রহঃ)-এর সুত্রেও হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫৪১। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) লোকজনকে নিয়ে
ইস্তিস্কার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি দুকআত সালাত আদায় করলেন, এরপর বৃষ্টির জন্যে দূআ করলেন। রাবী বলেনঃ, সেদিন আমি যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ)এর সঙ্গে
সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলেনঃ, আমার এবং তাঁর মাঝখানে একজন
ছাড়া কোন লোক ছিলনা। অথবা তিনি বলেছেনঃ, আমার
এবং তার মাঝখানে কেবল একজন লোক ছিলেন, আমি
তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতগুলো যুদ্ধ করেছেন? তিনি
বললেনঃ, ঊনিশটি তখন আমি বললাম, আপনি তার সঙ্গে কত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বললেনঃ! সতেরটি যুদ্ধে। রাবী বলেন, তখন
আমি প্রশ্ন করলাম, সর্ব প্রথম তিনি কোন যুদ্ধটি
করেছেন? তিনি বললেন, যাতুল-উসায়র বা যাতুল উশায়র।
৪৫৪২। আবূ বাকর ইবনু শায়বা
(রহঃ) যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশটি যুদ্ধ করেছেন। হিজরতের পর একটি-মাত্র
হজ্জ-করে ছিলেন, যেটি ছাড়া আর কোন হজ্জ
করেননি তা হল বিদায় হজ্জ।
৪৫৪৩। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ঊনিশটি যুদ্ধ করেছি। জাবির
(রা-) বলেনঃ, আমি বদর ও ওহুদ যুদ্ধে অংশ
গ্রহণ করতে পারিনি। আমার পিতা আমাকে তা থেকে বিরত রেখেছিলেন। তারপর যখন ওহুদ
যুদ্ধে (আমার পিতা) আবদুল্লাহ (রাঃ) শহীদ হলেন তারপর থেকে আমি আর কখনো কোন যুদ্ধে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পশ্চাৎপদ হইনি।
৪৫৪৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ জারমী (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঊনিশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তমধো আটটিতে তিনি সস্ক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন। রাবী আবূ
বকর -তন্মধ্যে, শব্দটি বলেন নি এবং তিনি
তাঁর বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু বুরায়না আমার কাছে বর্ণনা করেছেন” বলে উল্লেখ করেছেন।
৪৫৪৫। আহমাদ ইবনু হাম্বল
(রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ষোলটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
৪৫৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাস
(রহঃ) সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করি। তিনি যতগুলি অভিযানে সৈন্য প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে নয়টিতে আমি অংশ’গ্রহণ
করি। একবার আমাদের সেনাপতি ছিলেন আবূ বকর (রাঃ) আর একবার আমাদের সেনাপতি ছিলেন
উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)।
৪৫৪৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) হাতিম (রহঃ) এ হাদীসটি উল্লেখিত সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি
তাঁর বর্ণনায় উভয় ধরনের সাতটি অভিযানের সংখ্যা বলেছেন।
৪৫৪৮। আবূ আমির আবদুল্লাহ
ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধ অভিযানে বের হলাম। আমাদের
প্রতি ছয়জনের মধ্যে ছিল একটি উট, যার উপর আমরা পালাক্রমে
সাওয়ার হতাম। তিনি বলেনঃ, এতে আমাদের পা ক্ষত-বিক্ষত
হয়ে যায়। আমার দুপা এতই বিক্ষত হয়েছে যে, আমার
পায়ের নখগুলো উপড়ে পড়ে যায়। তাই আমরা আমাদের পায়ে পট্টী -বেধেছিলাম। এ কারণে এ
অভিযান যাড়ূর-রিকা- (কাপড়ের টুকরা,) নামে
অভিহিত হই। যেহেতু আমরা আমাদের পা কাপড়ের টূকরা দিয়ে পেঁচিয়ে ছিলাম। আবূ বুরদাহ
(রাঃ) বলেনঃ, আবূ মূসা (রাঃ) এ হাদীসটি
একবার বর্ণনা করার পর পূনরায় বর্ণনা করা পছন্দ করেননি। রাবী বলেনঃ, এ দ্বারা তার আমলের প্রকাশ পায় বলে তিনি তা
উল্লেখ করা পছন্দ করেননি। আবূ উসামা বলেনঃ, বুরায়দ
ছাড়া এ হাদীসের অন্য রাবী একথা বলেছেনঃ, “আল্লাহ
তার প্রতিদান দিবেন”।
৪৫৪৯। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। যখন তিনি ‘হাররাতুল ওবারা’ নামক স্থানে পৌছলেন, তখন এমন এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলো, যে থেকে তার শৌর্য-বীর্য ও সাহসিকতার জন্য মশহুর ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ তাকে দেখতে পেয়ে অত্যান্ত আনন্দিত হলেন। সে যখন সাক্ষাৎ করলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললো, আমি আপনার সঙ্গে যেতে এবং আপনার সঙ্গে (গনীমত) পেতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ, তখন লোকটি চলে গেল। যখন আমরা ‘শাজারায়’ উপনীত হলাম, তখন সে ব্যক্তি তার সঙ্গে দেখা করলো এবং তার পূর্বের কথার পূনরোক্তি করলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পূর্বের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং বললেনঃ, তুমি ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য গ্রহণ করব না। এবারও সে চলে গেল। তারপর সে আবার বায়দা-তে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমবারের মত জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস পোষণ কর? সে বললো, জ্বী হ্যা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ, এখন (আমাদের সাথে) চল।