৪০৫৮। আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তির কিছু অর্থ সস্পদ রয়েছে, আর সে এ সম্পর্কে ওসিয়াত করতে চায়, সেই মুসলিম ব্যক্তির জন্য সমীচীন নয় যে, সে দু’রাত অতিবাহিত করবে অথচ তার কাছে ওসিয়াত লিখিত থাকবে না।
৪০৫৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) উবায়দুল্লাহ থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে
আছে তাঁরা বলেছেনঃ, তার কাছে কিছু আছে, যাতে সে ওসিয়াত করতে পারে। তাঁরা এ কথা বলেনঃনি
যে সে চায় তাতে ওসিয়াত করতে।
৪০৬০। আবূ কামিল জাহদারী
(রহঃ) আরো বিভিন্ন সূত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উবায়দুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। আর তারা
সবাই এভাবে বলেছেনঃ যে তার কাছে এমন সস্পদ আছে, যাতে
সে ওসিয়াত করতে পারে। কিন্তু আইউব (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ, সে
উহাতে ওসিয়াত করতে চায়। উবায়দূলাহ থেকে ইয়াহইয়ার বর্ণনার মতই।
৪০৬১। হারুন ইবনু মারুফ
(রহঃ) সালিম (রহঃ) এর সুত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির এ
অধিকার নেই যে, তার কাছে এমন সস্পদ আছে যাতে
সে ওসিয়াত করতে পারে তিন রাত অভিবাহিত করবে। অথচ তার ওসিয়াত তার কাছে লিখিত থাকবে
না। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর এক রাতও আমার উপর অতিবাহিত যে, আমার ওসিয়াত আমার কাছে ছিল না।
৪০৬২। আবূ তাহির ও হারামালা, আবদুল মালিক ইবনু শোয়ায়ব, ইবনু লায়স, ইবনু
আবূ উমার আবদ ইবনু উমার (রহঃ) সকলেই যুহরী (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে আমর ইবনু হারিস
এর হাদী সের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪০৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, বিদায়
হজ্জের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন; এমন রোগের সময় যাতে আমি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছে
গিয়েছিলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! রোগের কারনে
আমার কি অবস্হা হয়েছে, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন? আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি, অথচ একটি মাত্র কন্যা সন্তান ব্যতীত আমার আর
কোন ওয়ারিস নাই। সুতরাং আমি আমার সস্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সাদাকা করতে পারি কি? তিনি বললেনঃ, না।
আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক মাল সাদাকা
করতে পারি? তিনি বললেনঃ, না। বরং এক তৃয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও বেশি।
তোমার ওয়ারিসদের অভাবমূক্ত অবস্থায় রেখে যাওয়া তোমার জন্য উত্তম, এই অবস্হা থেকে যে, তাদের তুমি অভাবগ্রস্ত অবস্থায় ছেড়ে যাবে যে, তারা মানূষের নিকট হাত পাতবে। আর আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যা কিছুই খরচ কর তার উপর তোমাকে প্রতিদান দেয়া হবে।
এমন কি, সে লোক মাটির বিনিময়েও যা
তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে। আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি তোমার সাথীদের পর তাদের পিছনে রয়ে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃ, তুমি কখনও পিছনে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
কোন আমল করবে না কিন্তু তার দ্বারা তোমার সাম্মান ও মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। আর
সম্ভবত তুমি পরবর্তীতেও থাকবে অর্থাৎ দীর্ঘায়ু লাভ করবে। এমনকি বহু সম্প্রদায়
তোমার দ্বারা লাভবান হবে এবং বহু লোক তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (নাবীজী
দু’আ করলেন।) ইয়া আল্লাহ! আমার সাথীদের হিজরত অক্ষুন্ন রাখূন এবং তাদেরকে পাশ্চাতে
ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু সা’দ ইবনু খাওলার জন্য আফসোস! রাবী বলেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কারন, তিনি মক্কায় মৃত্যুবরন
করেছিলেন।
৪০৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ তাহির, হারামালা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সহ
সকলেই যুহরীর সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুসুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০৬৫। ইসহাক ইবনু মাসুর
(রহঃ) সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রোগের খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমার নিকট আগমন
করেন। তারপর যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন। এবং সা’দ ইবনু খাওলার
প্রসঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তির উল্লেখ নাই। তবে এতে একথা
রয়েছে, যে ব্যক্তি যথা থেকে হিজরত
করেছে তথায় মৃত্যুবরণ করুক, এটা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেন না।
৪০৬৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ, আমি একবার পিড়িত হয়ে পড়ি এবং নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সংবাদ পাঠাই। (তিনি আসলেন) আমি বললাম, আমার সম্পত্তি যে পরিমাণ ইচ্ছা বন্টন করার
অনুমতি দান করুন। তিনি অসম্মতি জানালেন। আমি বললাম, তা
হলে অর্ধেক! তিনি তাও অস্বীকার করলেন। আমি বললাম, তাহলে
এক-তৃতীয়াংশ? রাবী বলেনঃ, এক-তৃর্তীয়াংশ। বলার পর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকেন। রাবী বলেনঃ, এরপর
থেকে এক তৃতীয়াংশ বৈধ হয়ে যায়।
৪০৬৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সিমাক (রহঃ)এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ননা করেন।
তবে তিনি এরপর থেকে এক তৃতীয়াংশ বৈধ হয়ে যায় কথাটি উল্লেখ করেননি।
৪০৬৮। কাসিম ইবনু যাকারিয়া
(রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) এর সুত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
অসুস্হতার খোজখবর নিতে এলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি
কি আমার সমস্ত সম্পদ ওসিয়াত করে যাব। তিনি বললেনঃ, না।
আমি বললাম, তা হলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ, না।
আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ? তিনি বললেনঃ, হ্যা
এবং বললেনঃ এক-তৃতীয়াংশ অনেক।
৪০৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
উমার মাক্কী (রহঃ) সা-দ (রাঃ) এর তিন পূত্র তাদের পিতার থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সা’দর অসুখ দেখার জন্য তাঁর কাছে আসেন। সা’দ (রাঃ) কেঁদে ফেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তুমি কেন কাদছ? তিনি বললেনঃ, আমি
ভয় পাচ্ছি, যে স্হান থেকে হিজরত করেছি, সেথায় না আমি মারা যাই; যেমনিভাবে মারা গিয়েছেন সা’দ ইবনু খাওলা (রাঃ)।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, ইয়া
আল্লাহ! সা’দকে শিফা দান করুন। সা’দ (রাঃ) বললেনঃ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার প্রচুর সম্পদ আছে। আর একমাত্র কন্যাই আমার ওয়ারিস। তবে কি আমার
সমুদয় সম্পদ ওসিয়াত করতে পারি? তিনি বললেনঃ, না। সা’দ (রাঃ) বললেনঃ, তবে কি দুই-তৃতীয়াংশ তিনি বললেনঃ, না। সা’দ (রাঃ) বললেনঃ, তা হলে অর্ধেক? তিনি
বললেনঃ, না। সা’দ বললেনঃ, তাহলে এক তৃতীয়াংশ তিনি বললেনঃ, হ্যা, এক
তৃতীয়াংশ। আর এক তৃতীয়াংশই অনেক। তোমার সস্পদ থেকে তুমি যা সাদাকা কর তা তো
সাদাকাই। এবং তোমার পরিবারের জন্য যা খরচ কর তাও সাদাকা আর তোমার মাল থেকে তোমার
স্ত্রী যা খায় তাও সাদাকা। তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও, অথবা বলেছেন সানন্দে রেখে যাও, তবে তা তাদের মানুষের নিকট হাতপাতা অবস্হায়
রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। আর একথা বলতে তিনি আপন হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন।
৪০৭০। আবূ রাবী আতাকী (রহঃ)
সা’দ (রহঃ) এর তিন পূত্র থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেছেনঃ সা’দ (রাঃ) মক্কায়
রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোজ খবর
নেওয়ার জন্য তাঁর নিকট আসেন। পরবর্তী অংশ সাকাকার হাদাসের অনুরুপ।
৪০৭১। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার নিকট সা’দ ইবনু মালিকের তিন পুত্র বর্ণনা
করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খোজ খবর নেওয়ার জন্য তার নিকট গমন করেন।
পরবর্তী অংশ আমর ইবনু সাঈদ সুত্রে বর্ণিত হুমায়দ হিময়ারীর (রহঃ) হাদীসের অনুরুপ।
৪০৭২। ইবরাহীম ইবনু মূসা
রাযী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও
আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, হায়! লোকজন যদি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এক
চতূর্থাংশ করতো। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক তৃতীয়াংশ এবং এক-তৃতীয়াংশই বেশী। ওকীর হাদীসে আছে
বৃহৎ বা বেশি।
৪০৭৩। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলো, আমার
পিতা মারা গিয়েছেন। এবং তিনি কিছু সম্পদ রেখে গেছেন। কিন্তু ওসিয়াত করেননি।
তারপক্ষ থেকে সাদাকা করা হলে কি তার শুনাহ মাফ হবে তিনি বললেনঃ, হ্যা।
৪০৭৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বললো, আমার মা হঠাৎ মারা গেলেন।
তার প্রতি আমার ধারণা এই যে, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন
তবে সাদাকা করতেন। আমি যদি তার পক্ষে সাদাকা করি, তবে
কি আমার এ কাজের কোন সাওয়াব হবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, হ্যা।
৪০৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মা
অকমিৎ মারা গেছেন এবং কোন ওসিয়াত করেননি। তার প্রতি আমার ধারণা যে, যদি তিনি কথা বলার সূযোগ পেতেন তবে সাদাকা
করতেন। আমি যদি তার পক্ষে সাদাকা করি, তবে
কি তিনি সওয়াব পাবেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ হ্যা।
৪০৭৬। আবূ কুরায়ব হাকাম ইবনু
মূসা, উমাইয়া ইবনু বিসতাম ও আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এ সকল সুত্রে হিশাম ইবনু উরওয়া (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে
হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে উসামা ও রাওহ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, আমার কি সাওয়াব হবে? যেমন বলেছেনঃ, ইয়াহইয়া
ইবনু সাঈদ। আর শুআয়ব ও জাফর (রহঃ) এর বর্ণনায় আছে, তার
কি সাওয়াব হবে? যেমন রিয়েছে ইবনু বিশর
রিওয়ায়াতে।
৪০৭৭। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও
কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায় তখন তিন প্রকার আমল
ব্যতীত তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। ১ সাদাকায়ে জারিয়া অথবা ২ এমন ইলম যার দ্বারা
উপকার সাধিত হয় অথবা ৩ নেককার সন্তান যে তার জন্য দু’আ করতে থাকে।
৪০৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, উমর (রাঃ) খায়বারে একখন্ড জমি লাভ করেন। তখন এ
সম্পর্কে পরামর্শের জন্য তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসেন
এবং বলেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি
খায়বারে এমন একখন্ড জমি লাভ করেছি যে, এর
চেয়ে উৎকৃষ্টতর সস্পদ আমি কখনও লাভ করিনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কি নির্দেশ দেন।
তিনি বললেনঃ, তুমি যদি চাও, তবে তার মূল মালিকানা আটকিয়ে রেখে উহা সাদাকা
করতে পার। রাবী বলেনঃ, তারপর উমার (রাঃ) তা সাদাকা
করে দেন এই শর্তে যে, এর মূলসত্ত বিক্রি করা যাবে
না, খরিদ করা যাবে না, উত্তরাধিকার সূএে লাভ করা যাবে না এবং দানও করা
যাবে না। সুতরাং উমার (রাঃ)-এর আয় দরিদ্র, আত্নীয়, দাস মুক্তি, জিহাদ, পথিক ও মেহমানের উদ্দেশ্যে সাদাকা করে দেন।
অবশ্য যে ব্যক্তি এর তত্তাবধায়ক হবে তার জন্য এর থেকে যুক্তি সঙ্গত পরিমান খাওয়া
বা কোন বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানো দোষনীয় হবে না, যদি
সে এর থেকে সঞ্চয়কারী না হয়। রাবী বলেনঃ, আমি
এ হাদীসটি মুহাম্মদ (রহঃ) এর কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে যখন এ স্থানে পৌছি, ‘গাইরিমুতামাউ্যালুন ফি’ (যদি সে এর থেকে
সঞ্চয়কারী না হয়,) তখন মুহাম্মদ (রহঃ) বললেনঃ
‘গাইরি মুতাসসালিন মালা’ (সম্পদ সঞ্চয়কারী হবে না।) ইবনু আওন (রহঃ) বলেনঃ এই কিতাব
যিনি পড়েছেন তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, ‘গাইরা
মুতাসসাল মালা’ এ স্হলে রয়েছে তা ‘গাইরা মুতাসসাল মালান’।
৪০৭৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইসহাক ও মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু আওন (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু আবূ
যায়িদ ও আযহার (রহঃ)-এর হাদীস এ পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে যে, ‘অথবা কোন বন্ধু বান্ধবকে খাওয়ায় এতে সঞ্চয়কারী
না হয়ে’, পরের অংশ তিনি উল্লেখ
করেননি। আর ইবনু আদী (রহঃ) এর হাদীসে তাই আছে, যা
সুলায়ম (রহঃ) উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ‘অতঃপর আমি এই হাদীসটি মুহাম্মদ (রহঃ) এর নিকট
বর্ননা করি শেষ পর্যন্ত।’
৪০৮০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
খায়বারের এনাকায় একখন্ড জমি লাভ করি। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলি, আমি এমন একখন্ড জমি লাভ
করেছি, যার চেয়ে অধিক প্রিয় এবং
আমার কাছে উৎকৃষ্ট কোন মাল আর পাইনি। রাবী এ হাদীসে পরবর্তী অংশ অন্যান্যের অনুরুপ
বর্ননা করেন। তবে তিনি একথা উল্লেখ করেননি যে, অতঃপর
আমি মুহামদ (রহঃ) এর নিকট বর্ণনা করি এবং এর পরের টূকু।
৪০৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) তালহা ইবনু মূসাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) কে জিজ্ঞাস
করলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ওসিয়াত করেছিলেন? তিনি
বললেনঃ, না। আমি বললাম, তাহলে কেন মুসলমানদের উপর ওসিয়াত ফরয করা হলো? অথবা বললেনঃ, কিভাবে
তাদেরকে ওসিয়াতের হুকুম দেয়া হলো? তিনি বললেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওসিয়াত
করেছেন, আল্লাহ তাআলার কিতাব
সম্পর্কে (আমল করতে)।
৪০৮২। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) মালিক ইবনু মিগওয়াল (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ
বর্ননা করেছেন। অবশ্য ওকী (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে। আমি বললাম, তা হলে কি করে মানুষকে ওসিয়াতের হুকুম করা হলো? আর ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, আমি বললাম, কিভাবে
মুসলমানের উপর ওসিয়াত ফরয করা হলো।
৪০৮৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দ্বীনার! দিরহাম, বকরী
বা উট রেখে যাননি এবং কোন কিছুর ওসিয়াত করেননি।
৪০৮৪। যুহায়র ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তারা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উল্লেখ করেন যে, আলী (রাঃ) তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর ওসী ছিলেন। তিনি বললেনঃ, কখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ওসিয়াত করেছেন! আমি তো তাকে
(নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) আমার বুকে ভর দিয়ে রেখেছিলাম, অথবা বলেছেনঃ, আমার
কোলে তখন তিনি একটি রেকাব চাইলেন, এরপর আমার কোলে ঢলে পড়েন।
আমি বুঝতেও পারিনি যে, তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি
কখন তাকে ওসিয়াত করলেন?
৪০৮৬। সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন নাকিদ (রহঃ)
সাঈদ ইবনু শুয়ার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ, বৃহস্পতিবার দিন, হায়রে বৃহস্পতিবার দিন! এই বলে তিনি কেঁদে
ফেলেন, এমনকি তার অশ্রু ঝরায় কংকর
ভিজে যায়। আমি বললাম, হে আবূ আব্বাস!
বৃহস্পতিবারের দিনের ব্যাপার কী? তিনি বললেনঃ, সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাড়া বৃদ্ধি পায়। তখন তিনি বললেনঃ, আমার
নিকট এসো, আমি তোমাদের এমন একটি লিপি
লিখে দই, যাতে আমার পরে তোমরা আর
পথভ্রষ্ট হবে না। তখন উপস্থিত সাহাবাগণ পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হলেন। অথচ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তর্কবিতর্ক করা উচিত নয়। তার। বললেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
অবস্হা কী হলো? তিনিও কি অর্থহীন কথা
বলেছেনঃ? কখনও নয়। তোমরা তাঁর কথা বুঝার
চেষ্টা কর। রাবী বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তোমরা আমাকে বিতর্ক থেকে
মুক্ত থাকতে দাও। কেননা আমি যে অবস্হায় আছি তাই উত্তম। আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে
ওসিয়াত করছি, মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ
থেকে বহিস্কার কর। প্রতিনিধি দলকে উপটৌকন দাও, যেমন
আমি তাদেরকে উপটৌকন দিতাম। রাবী বলেনঃ, ইবনু
আব্বাস (রাঃ) তৃতীয়টা থেকে নীরব থাকেন অথবা তিনি বলেছেনঃ কিন্তু তা ভুলে গিয়েছি।
আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেনঃ, হাসান ইবনু বিশর (রহঃ)
সুফিয়ান (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৪০৮৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একদা বলেনঃ, বৃহস্পতিবার দিন, আর
কি সে বৃহস্পতিবার দিন! এরপরতার অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকো এমন কি, আমি দেখলাম যে, তাঁর
উভয় গণ্ডের উপরে যেন মুক্তার লহরী। রাবী বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, আমার
নিকট হাড় ও দোয়াত নিয়ে আস, অথবা বলেছেনঃ, কাঠ ফলক ও দোয়াত। আমি তোমাদের এমন একটা কিতাব
লিখে দিব যে, এরপর আর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে
না। অতঃপর তারা বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থহীন কথা বলেছেন?
৪০৮৮। মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং ঘরে বেশ লোক উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উমরে
ইবনুু! খাত্তাবও ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসো, আমি তোমাদের এক কিতাব লিখে দই। এরপরে আর তোমরা
পথভ্রষ্ট হবে না। উমার (রাঃ) বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তোমাদের কাছে
কুরআন বর্তমান আছে। আল্লাহর কিতাব আমাদের জন্য যথেষ্ট। তখন ঘরের লোকজনের মধ্যে
বিতর্ক শুরু হয় এবং তারা ঝগড়ায় লিপ্ত হন। তাদের কেউ কেউ বলেনঃ, তোমরা (কাগজ) কাছে নিয়ে এসো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের এমন এক কিতাব লিখে দিবেন, যারপরে আর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আর কেউ কেউ
সে কথাই বলেনঃ, যা উমার (রাঃ) বলেছেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যখন তাদের এ ঝগড়া ও কথা
কাটাকাটি বৃদ্ধি পায়, তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তোমরা
উঠে যাও। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ, এরপর
থেকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) আক্ষেপ করে বলতেন, বিপদ
কত বড় বিপদ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের জন্য সেই কিতাব
লিখে দেওয়ার