৩৫২০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) নাফি- (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়কালে তিনি ইবনু উমর) তঁরে স্ত্রীকে হায়িয অবস্হায় তালাক দিলেন। তখন উমর (রাঃ)-এ বিষয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাকে (আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে) আদেশ কর, যেন সে তাকে (স্ত্রীকে) রাজআত করে (পন স্ত্রী রুপে গ্রহণ করে) নেয়। অতঃপর তার (হায়েয হতে) পবিত্র হওয়ার পরে পূনঃ হায়িয এবং তার পরে পূন পবিত্র (হলে) হওয়া পর্যন্ত তাকে স্হিতাবস্হায় রেখে দেয়। এর পরপরবর্তী সময় তার ইচ্ছা হলে তাকে (স্ত্রী রুপে) রেখে দিবে। আর ইচ্ছা হলে সহবাসের পূর্বে তাকে তালাক দিবে। এটা হল সে ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ আদেশ করেছেন।
৩৫২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ও ইবনু রুমহ (রহঃ) নাফি (রহঃ) সূত্রে
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
তাঁর এক স্ত্রীকে হায়েয অবস্হায় এক তালাক দিয়ে দেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হুকুম দিলেন যেন সে স্ত্রীকে রাজাআত করে নেয়। অতঃপর পবিত্র
হওয়ার পরে পূনঃ আর একটি হায়িয হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের কাছে রেখে দিবে। এরপর তার
(এ পরবর্তী) হায়িয হতে পবিত্র হওযা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। তখন যদি তাকে তানাক
দেওয়ার ইচ্ছা হয় তবে পবিত্র হওয়ার সময় তার সংগে সহবাস করার আগে তাকে তালাক দিবে।
এটাই হল সে ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্ত্রীদের তালাক প্রদানের আদেশ আল্লাহ
দিয়েছেন। ইবনু রুমহ (রহঃ) তার রিওয়ায়াতে অধিক বলেছেন- এবং এ প্রসংগে জিজ্ঞাসিত হলে
আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের (প্রশ্নকর্তাদের) যে কাউকে বলতেনঃ দেখ, তুমি তোমার স্ত্রীকে (যতক্ষন) একবার কিংবা
দুইবার তালাক দিলে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরুপ
(রাজআত) করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তুমি তাকে তিন তালাক দিয়ে দিলে তবে সে (স্ত্রী
তোমার জন্য হারাম হয়ে যাবে- যতক্ষন না তুমি ব্যতীত অন্য কাউকে সে বিয়ে করে। আর তোমার
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তোমাকে বিধান দিয়েছিলেন তাতে তুমি তার
প্রতি অবাধ্যতা দেখালে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেনঃ রাবী লায়স (রহঃ) (কুতায়বা
প্রমুখের শায়খ) তার -একটি তালাক, কথাটি স্পষ্ট করে দিয়ে উত্তম
কাজ করেছেন।
৩৫২২। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) নাফি (রহঃ) সূত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমি আমার স্ত্রী কে তালাক দিলাম, তখন সে ঋতুমতী ছিল। উমর (রাঃ) বিষয়টি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আলোচনা করলে তিনি বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তাকে রাজআত (পূনঃ গ্রহণ)
করে। তারপর পবিত্র হয়ে পূনরায় আর একটি মাসিকে -ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত তাকে
স্হিতাবস্তায় রেখে দিবে। পরে যখন পবিত্র হবে তখন তার সঙ্গে সহবাস করার আগে (সহবাস
মুক্ত কালে) তাকে তালাক দিবে কিংবা তাকে (স্ত্রী রুপে) রেখে দিবে। কেননা, এটাই হল সে ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেখে
স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন। রাবী উবায়দুল্লাহ (রহঃ)
বলেন, আমি শায়খ নাফি (রহঃ)-কে
বললাম, ধার্য করা হল।
৩৫২৩। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন। তবে নাফি (রহঃ)-এর উদ্দেশ্যে উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর বক্তব্যটি এতে উল্লিখিত
হয়নি। এছাড়া ইবনু মূসান্না (রাঃ) তার রিওয়ায়াতে বলেছেন ‘ফাল ইয়ার যিহা’ এবং আবূ
বকর (রহঃ) বলেছেনঃ ‘ফাল ইয়ুরা যি হা’ (শব্দদ্বয় প্রত্যাহার করা অর্থে সমার্থাক)।
৩৫২৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) নাফি (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবনু
উমর (রাঃ) তাঁর স্ত্রীকে তার ঋতুকালীন অবস্হায় তালাক দিলেন। তখন উমর (রাঃ) নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (এ বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করলে তাকে ইবনু উমরকে)
হুকুম দিলেন যে, স্ত্রীকে সে রাজআত (পনূ
গ্রহণ) করে নিবে। এরপর তাকে অপর একটি ঋতুতে ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দিবে। অতঃপর
(ঋতু হতে) পবিত্র হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে। পরে তার তিনি সঙ্গে সহবাস করার
আগেই তাকে তালাক দিবে। এটাই হল সেই ইদ্দত যার প্রতি লক্ষ্য রেকে স্ত্রীদের তালাক
দেওয়ার জন্য মহামহীয়ান আল্লাহ হুকুম করেছেন। রাবী (নাফি) বলেন, পরবর্তীতে স্ত্রীর হায়িয অবস্হায় তালাক
প্রদানকারী পুরুষ (এর মাসঁআলা) সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে ইবনু উমর (রাঃ)
বলতেন, যদি নাফি তুমি তাকে এক কিংবা
দুই তালাক দিয়ে থাক, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হুকুম দিয়েছেন যে, সে
তাকে রাজআত করে নিবে। তারপর আর একটি হায়িযে ঋতুমতী হওয়া পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে, এরপর পবিত্রতা (শেষ) পর্যন্ত তাকে অবকাশ দিবে।
অতঃপর স্পর্শ (সহবাস) করার আগেই তালাক দিবে (যদি ইচ্ছা কর)। আর যদি নাকি তুমি তাকে
তিন তালাক দিয়ে থাক তবে তুমি তোমার প্রতিপালকের অবাধ্য হয়েছ- তোমার স্ত্রীকে
তালাক দেওয়ার ব্যাপারে তিনি তোমাকে যে আদেশ প্রদান করেছেন সে ব্যাপারে এবং সে
স্ত্রী তোমার সংগ হতে বিচ্ছিন্ন (বাইন) হয়ে গিয়েছে।
৩৫২৫। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, ইবনু
উমর (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক
দিলাম- তখন সে ঋতুমতী ছিল। উমর (রাঃ) তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নিকট উল্লেখ করলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগাম্বিত
হলেন। পরে বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তাকে
রাজআত করে নেয়- যতক্ষন না যে হায়িয কালে তাকে তালাক দিয়েছে সেটি ব্যতীত আর একটি
হায়িযে সে ঋতুমতী হয়। তখন যদি তাকে তালাক দেওয়া তার মনঃপুত হয় তবে যেন তার হায়িয
থেকে পবিত্র হওয়া অবস্থায় তার সঙ্গে সহবাস করার আগে তাকে তালাক দেয়। তিনি আরো
বললেন, এটই হল ইদ্দতের (সময়
নির্ণয়ের) জন্য তালাক প্রদান যেমন আল্লাহ হুকুম করেছেন। (সালিম বলেন) আবদুল্লাহ
(রাঃ) তাকে এক তালাক দিয়েছিলেন। সেটি তার তালাক গণনা করা হল (অর্থাৎ এক তালাক ধরা
হল) এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ অনুসারে
আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে (স্ত্রীকে রাজআত করে নিয়েছিলেন)।
৩৫২৬। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) (পূর্বোক্ত সনদের ন্যায়) যুহরী (রহঃ) সুত্রে ঐ সনদে বর্ণিত। তবে এতে রাবী
(সরাসরি ইবনু উমরের উক্তি উদৃত করে) বলেছেন যে, ইবনু
উমর (রাঃ) বলেছেন, পরে আমি তাকে রাজআত করে
নিলাম এবং তাকে যে তালাকটি দিয়েছিলাম তা তার জন্য (একটি) তালাকরুপে হিসাব করা হল।
৩৫২৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু
নুমায়র (রহঃ) সালিম (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজের স্ত্রীকে তার হায়িযা অবস্হায় তালাক
দিলেন। তখন উমর (রাঃ) বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সকাশে
আলোচনা করলেন। তিনি বললেন- তাকে আদেশ কর যেন সে তাকে রাজ-আত করে নেয়। পরে যেন তাকে
তূহর (পবিত্র) অবস্হায় কিংবা গর্ভাবস্থায় (অবস্হা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে) তালাক
দেয়।
৩৫২৮। আহমাদ ইবনু উসমান ইবনু
হাকীম আওদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) সম্পর্কে
বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজের স্ত্রীকে যখন সে
হায়ি য অবস্হায় ছিল তালাক দিলেন। তখন উমর (রাঃ) এ বিষয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তাকে
হুকুম কর যেন সে তাকে (স্ত্রীকে) রাজআত করে নেয়। অবশেষে সে আর একটি হায়িযে ঋতুমতী
হওয়ার পরে আবার পবিত্র হলে, তখন তাকে তালাক দিবে কিংবা
(স্ত্রী রুপে) রেখে দিবে।
৩৫২৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী
(রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বিশ বছর আমি এ অবস্হায় অবস্হান করলাম যে, আমি অবিশ্বস্ত মনে করি না এমন লোক আমাকে এ
মর্মে হাদীস শোনাচ্ছিল যে, ইবনু উমর (রাঃ) তাঁর স্ত্রীর
হায়িয অবইায় তাকে তিন তালাক দেওয়ার পরে তাকে রাজঁআত করে নেওয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট
হয়েছিলেন। আমি এ বর্ণনাকারীদের প্রতি অনাস্থা ও সন্দেহ পোষণ করছিলাম না অথচ আমি
ছিলাম প্রকৃত হাদীসের পরিচয় লাভে বঞ্চিত। অবশেষে আমি আবূ গাল্লাব ইউনুস ইবনু শুয়র
আল বাহিলী (রহঃ)-এর সংগে সাক্ষাত করলাম। তিনি ছিলেন স্থিরমতি-অস্হা ভাজন। তিনি
আমাকে হাদীস বর্ণনা করলেন যে, তিনি (নিজে) ইবনু উমর
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ইবনু উমর) তাঁকে হাদীস বর্ণনা করলেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে তার হায়িয -চলাকালে এক
তালাক দিয়েছিলেন। তখন তাকে রাজআত করে নেওয়ার জন্য তিনি আদিষ্ট হলেন। তিনি (আবূ
গাল্লাব) বলেছেন, তবে আর কি! যদি নাকি তিনি
ইবনু উমর) অপারগ হয়ে থাকেন ও নির্ধুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। (তাতে কার কি আসে
যায়)!
৩৫৩০। আবূর রাবী ও কুতায়বা
(রহঃ) (পূর্বোক্ত সনদের রাবী) আয়্যুব (রহঃ)-এর সুত্রে ঐ সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন। তবে তিনি বলেছেন উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে হুকুম করলেন।
৩৫৩১। আবদুল ওয়ারিস ইবনু
আবদুস সামাদ (রহঃ) আয়্যুব (রহঃ)-এর সুত্রে এ সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। এ সনদের হাদীসে
রাবী বলেছেন, পরে উমর (রাঃ)-এ বিষয়ে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে পুনগ্রহণ করে নেওয়ার
জন্য তাঁর ইবনু উমরের) প্রতি আদেশ প্রদান করলেন। যাতে অবশেষে তাকে (স্ত্রীকে)
সহবাসবিহীন তূহর (পবিত্র) অবস্হায় তালাক দিতে পারে। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বললেন, তার (স্ত্রীর) ইদ্দত – (এর
সময়) এর পূর্ব ভাগে (আগমন কালে) তাকে তালাক দিবে।
৩৫৩২। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম
আদু দাওরাকী (রহঃ) (মুহাম্মদ ইবনু সীরীন সুত্রে) ইউনুস ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে
বললাম: এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর হায়িয অবস্হায় তাকে তালাক দিল। তিনি বললেন, তুমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে জান কি সে
তাঁর স্ত্রীকে হায়িয অবস্হায় তালাক দিয়েছিল? তখন
উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে হুকুম
করলেন যে, সে ইবনু উমর) তাকে (স্ত্রী
রাজাআত করে নিবে। এরপর তার ইদ্দতের (নিশ্চয়ইতাযূক্ত সময়ের) প্রতীক্ষায় থাকবে।
ইউনূস (রহঃ) বলেন, তখন আমি তাকে ইবনু উমরকে)
বললাম, কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে
হায়িয অবস্হায় তালাক দিবে তখন ঐ তালাকটি হিসাবে গণনা করা হবে কি? তিনি বললেনঃ তবে আর কি যদি নাকি সে অক্ষম হয়
গিয়ে থাকে কিংবা বোকামী করে থাকে (তাহলে কি তার একাজের পরিণতি দেখা দিবে না)?
৩৫৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার
স্ত্রীকে তালাক দিলাম- তখন সে হায়িয অবস্হায় ছিল। তখন উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে তাঁর কাছে বিষয়টি আলোচনা করলেন। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যেন তাকে রাজআত করে নেয়। পরে যখন সে
(হায়িয হতে) পবিত্র হবে তখন ইচ্ছা করলে তাকে তালাক দিরে। রাবী ইউনূস (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) -কে বললাম, সে (তালাক টি কি হিসাব করা হবে? তিনি বললেন, কোন
বিষয় তাকে বাধা দিবে- বলত যদি সে অপারগ হয়ে থাকে এবং আহাম্মকি করে থাকে।
৩৫৩৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস ইবনু (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
উমর (রাঃ)-কে তার সে স্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাকে তিনি তালাক দিয়েছিলেন।
তিনি বললেন, তাকে আমি তালাক দিয়েছিলাম-
যখন সে হায়িয অবস্হায় ছিল। আমি বিষয়টি উমার (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি তা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আদেশ কর সে যেন তার
স্ত্রীকে পূনঃগ্রহণ করে নেয়। পরে যখন সে পাক হবে তখন যেন সে (ইচ্ছা করলে) তার পাক
অবস্হায় তাকে তালাক দেয়। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি
তাকে বললাম, তবে কি হায়িয অবস্হায়
প্রদত্ত তালাকটি কি আপনি হিসাবে ধরবেন? তিনি
বললেন, আমি কেন সেটা গণনায় ধরবো না? যদি আমি অক্ষম হই অথবা নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করি
(তাহলে কি আমার এ কাজ গণনায় আসবে না)?
৩৫৩৫। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে হায়িয অবস্হায় তালাক দই। উমর
(রাঃ) বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন, তাঁকে আদেশ কর সে যেন তার স্ত্রীকে রাজআত করে।
পরে যখন সে পবিত্র হবে তখন ষেন সে (ইচ্ছা করলে) তাকে পবিত্র অবস্হায় তালাক দেয়।
আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বললাম, তবে কি হায়িয অবস্হায়
প্রদত্ত তালাকটি কি আপনি হিসাবে ধরবেন? তিনি
বললেনঃ তবে কী করব।
৩৫৩৬। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও
আব্দুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) (পূর্বোক্ত সনদের ন্যায়) শুবা (রহঃ) সূত্রে এ সনদে
রিওয়ায়াত করেছেন। তরে এ দু-জনের হাদীসে ‘ইয়ুরা যিয়ুহা’ স্হলে ‘লইয়ুরযিয়ু হা’ রয়েছে
এবং এদের হাদীসে আরো রয়েছে যে, আনাস (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি
কি সেটি হিসাবে ধরবেন? তিনি বললেন, তবে আর কি হবে?
৩৫৩৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) ইবনু তাঊস (রহঃ)-এর পিতা (তাঊস) সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি স্ত্রীকে হায়িয অবস্হায় তালাক প্রদানকারী
পুরুষ (এর মাসআনা) সম্পর্কে ইবনু উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসিত হতে বললেন। তখন ইবনু উমর
(রাঃ) বললেন, তুমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর কে
জান কি? লোকটি বলল, হাঁ। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, সে তো তার স্ত্রীকে হায়িয অবস্হায় তালাক
দিয়েছিলেন। তখন উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে তাকে
সংবাদ অবহিত করলে তিনি তাকে (স্ত্রীকে) পূনঃগ্রহণ করে নেওয়ার জন্য তাঁকে আ দেশ
প্রদান করলেন। ইবনু তাঊস (রহঃ) বলেন, আমি
তাঁকে (পিতাকে) এর অধিক বলতে শুনি নি।
৩৫৩৮। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) আবূ যুবায়র সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আযযার
মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) আবদুর রহমান ইবনু আয়মান (রহঃ)-কে ইবনু উমর (রাঃ)-এর কাছে
প্রশ্ন করতে শুনলেন, আবূ যুবায়র তখন শুনছিলেন- যে
ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার হায়িয অবস্হায় তালাক দিল তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
যুগে ইবনু উমর (রাঃ) তার স্ত্রীকে তালাক দিল যখন সে ঋতুমতী ছিল।। উমর (রাঃ) এ
বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি
বললেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
তার স্ত্রীর হায়িয অবস্হায় তাকে তালাক দিয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে বললেন, সে যেন তাকে পূনঃগ্রহণ করে
নেয়। সুতরাং (এভাবে) তিনি তাকে (স্ত্রীকে) ফিরিয়ে নিলেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আরো বললেন, যখন
(হায়েয হতে) পবিত্র হয়ে যাবে তখন (ইচ্ছে করলে) যেন অবুক দেয় কিংবা রেখে দেয়। ইবনু
উমর (রাঃ) বলেন, এবং (এ সময়)নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেনঃ (হে নাবী! তোমরা যখন তোমাদের
স্ত্রীদের তালাক করার ইচ্ছা করবেন তাদের তালাক দিও তাদের ইদ্দতের (সময় আগমনের)
অগ্রভাগে (সূরা আত তালাকঃ ১)।
৩৫৩৯। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত বর্ণনায় ন্যায়
রিওয়ায়াতে করেছেন।
৩৫৪০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ যুবায়র সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি
উরওয়া (রহঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুর রহমান ইবনু আয়মান (রাঃ)-কে ইবনু উমর (রাঃ)-এর
নিকট জিজ্ঞাসা করতে শুনেছেন-আবূ যুবায়র তখন শুনছিলেন- (পূর্বোক্ত হারুন ইবনু
আবদুল্লাহ প্রথম সনদের উর্ধতন) রাবী হাজ্জাজ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন। এবং তাতে তিনি অধিক তথ্য রয়েছে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, “উরওয়ার মাওনা বলে রাবী বিচ্যুতির শিকার হয়েছেন।
মূলত হবে আয যার মাওলা।
৩৫৪১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর যুগে ও উমর (রাঃ)-এর খিলাফতের প্রথম দুই বছর পর্যন্ত
তিন তালাক এক তালাক সাব্যস্ত হল। পরে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)বললেন, লোকেরা একটি বিষয়ে অতি ব্যস্ততা দেখিয়েছে যাতে
তাদের জন্য ধৈর্যের (ও সুযোগ গ্রহণের)অবকাশ ছিল। এখন যদি বিষয়টি তাদের জন্য
কার্যকর সাব্যস্ত করে (তবে তা-ই কল্যাণকর হবে।) সুতরাং তিনি তা তাদের জন্য
বাস্তবায়িত ও কার্যকর সাব্যস্ত করলেন।
৩৫৪২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) তাঊস (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ সাহবা (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ)-কে বললেন, আপনার সেই সব (বিরল ও অভিনব
প্রকৃতির হাদীস) হতে কিছু উপস্হাপন করুন না! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) এর যুগে তিন তালাক কি এক (তালাক ছিলনা? তিনি বললেন, তো
ছিলোতো-; পরে যখন উমর (রাঃ)-এর যুগে
লোকেরা বেধড়ক ও উপর্যপরি তালাক দিতে লাগল তখন উমর (রাঃ) সেটিকে (অর্থাৎ তিন
তালাকের যথার্থ বিধি) তাদের জন্য কার্যকর করলেন।
৩৫৪৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূস সাহবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)-এর সময়ে কি তিনি তালাককে এক তালাক ধরতেন? তিনি বলেন, হাঁ
এরুপই ছিল। তবে উমর (রাঃ)-এর যমানায় লোকেরা বেধড়ক ও উপর্যপরি তালাক দিতে লাগল।
তারপর তিনি সেটিকে যথার্থভাবে কার্যকর করেন (অর্থাৎ তিন তালাকে পরিণত করেন।)
৩৫৪৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) হিশাম দাশতাওয়াই (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) সাঈদ ইবনু
জ্যুায়র (রহঃ) সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে (লিখিতরুপে) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (সাঈদ) বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম
করা সম্বন্ধে বলতেন যে, তা কসম (ইয়ামীন) সাব্যস্ত
হবে, তার কাফফারা আদায় করবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) (এ
প্রসংগে) আরো বলেছেন, (পবিত্র কুরআনের) (আয়াত
উদ্ধৃত করে-) “তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে
রয়েছে উত্তম আদর্শ। “ (সূরা আহযাবঃ ২১)।
৩৫৪৫। ইয়াহইয়া ইবনু বিশর
হারীরী (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম
(ঘোষণা) করলে তা কসম সাব্যস্ত হবে, তাবু
কাফফারা আদায় করবে। তিনি আরো বলেছেনঃ (পবিত্র কুরআনের) (আয়াত উল্লেখ করে)
“তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম
আদর্শ। “ (সূরা আহযাবঃ ২১)।
৩৫৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে এ মর্মে হাদীসের খবর
প্রদান করতে শুনেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (অগ্রসর পরবর্তী সময় হুজরা সমূহে আবর্তন কালে) যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ)
-এর গৃহে অবস্হান করে সেখানে মধূ পান করেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি ও হাফসা মিলে এ রুপ যুক্তি- পরামর্শ করলাম
যে, আমাদের দু-জনের মাঝে যার কাছেই নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রথমে) আগমন করবেন সে বলবে- আমি আপনার মুখে
মাগাফীর -এর দুর্গন্ধ পাচ্ছি আপনি মাগাফীর খেয়েছেন।” পরে এদের কোন একজনের কাছে
গেলে সে তাকে অনুরুপ বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং আমি তো যায়নাব বিনত জাহশের ঘরে মধূ পান
করেছি এবং পুনরায় কখনো পান করব না। তখন নাযিল হলঃ- (হে নাবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা
বৈধ করেছেন, আপনি তা হারাম করছেন কেন? আপনি আপনার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনা করছেন।
আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালা আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্হা করেছেন।
আল্লাহ তাদের সহায়; তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। স্বরণ কর-নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের একজনকে গোপনে কিছু বলেছিলেন। অতঃপর যখন সে তা অন্যকে
বলে দিয়েছে এবং আল্লাহ নাবীকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন
নাবী-এ বিষয় কিছু ব্যক্ত করলেন; কিছু অব্যক্ত রাখলেন। যখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তার সে স্ত্রীকে জানালেন তখন সে বলল, কে আপনাকে তা অবহিত করল? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে অবহিত করেছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, সম্যক অবগত। যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে
আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যেহেতু তোমাদের হৃদয় ঝুঁকে
পড়েছে- আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন” (সূরা আত তাহরীমঃ ১ ৪) এতে যদি তোমরা উভয়
তাওবা কর (অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর) দ্বারা আয়িশা ও হাফসা (রাঃ)
উদ্দেশ্য। এবং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের একজনকে তিনি
গোপনে কিছু বলেছিলেন”- দ্বারা “বরং আমি মধুপান করেছি এবং আর কখনো পান করবো না
উদ্দেশ্য-”।
৩৫৪৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ
(রহঃ) আলা ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) (আবূ উসামা সূত্রে) হিশামের পিতা (উরওয়া)
সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণানা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্ট দ্রব (হালুয়া) ও মধু পছন্দ করতেন। তার নিয়ম
হচ্ছিল আসরের সালাত আদায়ের পরে স্ত্রীদের ঘরে ঘরে এক চক্কর গিয়ে আসতেন এবং তাদের
সান্নিধ্য- সন্নিকটে গমন করতেন। এভাবে তিনি হাফসা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং তার
কাছে স্বাভাবিক-ভাবে আবদ্ধ থাকার সময়ের চেয়ে অধিক সময় আবদ্ধ রইলেন। আমি (আয়িশা) এ
বিষয় জিজ্ঞাসা করলে আমাকে বলা হল- তাকে (হাফসাকে) তার গোত্রের কোন মহিলা এক পাত্র
মধু হাদিয়া দিয়েছিল। তাই সে তা থেকে কিছু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে পান করিয়ে ছিল। (আয়িশা বলেন,) আমি বললাম, ওহে! আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাঁর জন্য
কৌশলের ফাদ পাতব। আমি বিষয়টি সাওদা (হাফসা)-এর সংগে আলোচনা করলাম এবং তাঁকে বললাম, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে আগমন করলে তিনি তো তোমার সন্নিকটে
আসবেন, তখন তুমি তাঁকে বলবে, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি মাগাফীর খেয়েছেন। তখন
তিনি তো তোমাকে বলবেন- না, তখন তুমি তাঁকে বলবে, “(তবে) এ দুর্গন্ধ কিসের?- আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট হতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে- এটা ছিল তাঁর কাছে অতি অসহনীয় বিষয়। তখন তিনি
তোমাকে বলবেন- হাফসা আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। তুমি তখন তাকে বলবে, ‘ঐ মধুর মৌমাছি-উরফূত (গাছের কষ) ঢ়ুবেছে।” আর
আমিও তাঁকে এভাবেই বলব। আর তুমিও হে সাফিয়্যা! তাই বলবে। পরে যখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওদা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন- আয়িশা (রাঃ) বলেন, সাওদা (রাঃ)-এর বর্ণনা- “কসম সে সত্তার যিনি
ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই! তুমি আমাকে যা কিছু বলেছিলে তা তাঁর কাছে প্রকাশ করেই
দিচ্ছিলাম প্রায়- তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দরজায়- তোমার ভয়
(তা আর করা হল না)। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
নিকটবর্তীহলে সে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! আপনি
মাগাফীর খেয়েছেন কি? তিনি বললেন, না,।
সে (সাওদা) বলল, “তবে এ ঘ্রাণ কিসের? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাফসা আমাকে মধুর শরবত পান করিয়েছে। সাওদা বলল, (তবে-তাই) তার মৌমাছি উরফূত চুষেছে।” পরে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আগমন করলে আমিও তাঁকে অনুরুপ বললাম।
অতঃপর সাফইয়্যা (রাঃ)-এর কাছে গেলে সেও অনুরুপ বলল। পরে (আবার) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসা-এর নিকট গেলে সে বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি কি আপনাকে তা পান করতে দিব না? নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তার
প্রতি আমার কোন চাহিদা নেই।” আয়িশা বলেন, সাওদা
(রাঃ) বলতে লাগল, আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে
(একটি প্রিয় পানীয় হতে) বঞ্চিত করে দিয়েছি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, চুপ থাক। (ইমাম মুসলিম-এর শাগরিদ) আধু ইসহাক
ইবরাহীম (গ্রন্থকার হতে এ গ্রন্থের রিওয়ায়াতকারী) বলেন, হাসান ইবনু বিশর (রহঃ)আবূ উসামা (রহঃ) সুত্রে
আমাকে অবিকল এ হাদীস শুনিয়েছেন। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ)
সুত্রে ঐ সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৩৫৪৮। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া জায়বী (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুল রহমান ইবনু আওফ (রহঃ) সূত্রে
বর্ণনা করেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর স্ত্রীদের ইখতিয়ার প্রদানে আদিষ্ট হলে বিষয়টি আমাকে দিয়ে সুচনা করলেন। তিনি
বললেন, আমি তোমার কাছে একটি বিষয়
উপাস্হান করছি, তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে
পরামর্শ না করা পর্যন্ত তুমি তাতে তাড়াহুড়া না করলে তোমার কোন লোকসান হবে না।”
আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিশ্চিত অবগত ছিলেন যে, আমার
মা-বাপ আমাকে তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাবার পরামর্শ দিতে প্রস্তুত হবেন না। আয়িশা
(রাঃ) বলেন, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইখতিয়ারের বিষয়ের বিবরণ প্রদানে) বললেন, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ , (হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলে দিন! তোমরা
যদি পার্থিব জীবন ও তার অন্বেষণ কামনা কর,তবে
এসো আমি তোমাদের ভোগ-সামগ্রীর ব্যবস্হা করে দিব এবং সৌজন্যর সঙ্গে তোমাদের বিদায়
দিব। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাত কামনা
কর তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত
রেখেছেন”। (সূরা আহযাবঃ ২৮-২৯)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
বললামঃ এ ব্যাপারে আবার আমার মা- বাপের সঙ্গে পরামর্শ করব? আমি তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল ও আখিরাতকেই
ইখতিয়ার করছি। তিনি বলেন, পরে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অন্যান্য স্ত্রীগণ তেমনই করেন যেমন আমি
করেছিলাম।
৩৫৪৯। সূরায়জ ইবনু ইউনূস
(রহঃ) মূআযা আদাবিয়্যা (রহঃ) সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আপনি তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে যাকে ইচ্ছা দুরে
সরিয়ে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্হান দিতে পারেন” (সূরা আহযাবঃ ৫১)
আয়াত নাযিল হওয়ার পরে (ও) আমাদের কোন এক স্ত্রীর পালার দিনে (অন্যদের জন্য) আমাদের
নিকট হতে অনুমতি চাইতেন। তখন মুআযা (রহঃ) তাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনার নিকট অনুমতি চাইলে আপনি তাঁকে কি বলতেন? তিনি
বললেন, আমি বলতাম:এ বিষয়টি আমার
অধিকারে থাকলে তো কাউকে আমি আমার উপর অগ্রাধিকার দিতাম না। (অর্থাৎ অনুমতি
প্রার্থনার বিষয়টি অধিকারমূলক ছিল না। বরং তা ছিল নৈতিক ও রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সৌজন্যমূলক আচরণ মাত্র। সুতরাং সেখানে অনুমতি
না দেওয়ার অবকাশ ছিল না। অন্যথায় আমি অনুমতি প্রদানে রাজী হতাম না।
৩৫৫০। হাসান ইবনু ঈসা (রহঃ)
আসিম (রহঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৩৫৫১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদিগকে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা উহা
তালাক মনে করি নি।
৩৫৫২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
স্ত্রীকে ইখতিয়ার প্রদানে আমার কোন পরোয়া নেই- একবার শতবার কিংবা হাজারবার যদি সে
আমাকে পছন্দ করে থাকে। আর আমি আয়িশা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদিগকে ইখৃতিয়ার প্রদান করেছিলেন। এতে কি তালাক হয়ে গিয়েছে? (না এতে তালাক হয় নি)।
৩৫৫৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন।
কিন্তু তা (ইখতিয়ার প্রদান করা) তালাক বলে গণ্য হয় নি।
৩৫৫৪। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদিগকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। এরপর আমরা
তাঁকে গ্রহণ করলাম। এটা আমাদের উপর তালাক বলে গন্য হয় নি।
৩৫৫৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদিগকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। এরপর আমরা তাকে
গ্রহণ করলাম। এটা আমাদের উপর তালাক বলে গণ্য হয় নি।
৩৫৫৬। আবূর রাবী যাহরানী
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে আসওয়াদ (রহঃ)-এর সুত্রে মাসরুক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৩৫৫৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে উপস্হিতির অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তার দরজায়
অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়
নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে
প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি
অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চিন্তিত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তার
চতূপার্শে তাঁর সহধর্মিনীগণ উপবিষ্টা ছিলেন। তিনি (বর্ণানাকারী জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই
আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে।
এপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি যদি
খারিজার কন্যাকে (উমর (রাঃ)-এর স্ত্রী আমার কাছে খোরপোষ তলব করতে দেখতেন তাহলে
(তৎক্ষণাৎ) আপনি তাঁর দিকে অগ্রসর হয়ে তার স্কন্ধে আঘাত করতেন। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতূপার্শে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ তারা
আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। অমনি আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর দিকে ছুটলেন এবং
তাঁর গর্দানে আঘাত করলেন। উমর (রাঃ) ও গেলেন এবং হাফসা (রাঃ)-এর দিকে অগ্রসর হয়ে
তাঁর ঘাড়ে আঘাত করলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছে যা তাঁর
কাছে নেই। তখন তাঁরা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাঁর কাছে নেই।
এরপর তিনি তাঁদের (তাঁর সহধর্মিনীগণের) থেকে একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন।
এপর তাঁর প্রতি এই আয়াত নাযিল হল- (অর্থ) হে নাবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে
দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা
কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের
ভোগ-বিলাসে ব্যবস্হা করে দই এবং সৌজনের সাথে তোমাদের বিদায় করে দই। আর যদি তোমরা
আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালকে কামনা
কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান
প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (আহযাবঃ ২৮ ২৯) তিনি (জাবির রা) বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি
বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমার কাছে
একটি (শুরত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে
পরামশ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে বিষয়টা (আমিজানতে পারি)? তখন তিনি তার কাছে এই আয়াত তিলাওয়াত করে
শোনালেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার
ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর
রাসুল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার সকাশে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য
সহধর্মিনীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাদের যে কেউ সে বিষয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি
অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপ কারী ও-অত্যাচারী রুপে নয়
বরং সহজ পন্হায় (শিক্ষাদানকারী) হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
৩৫৫৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
সহধর্মিনীগন থেকে সাময়িকভাবে পৃথক হয়ে গেলেন, তখন
আমি মসজিদে নব্বীতে প্রবেশ করলাম। আমি দেখতে পেলাম লোকেরা হাতে কংকর নিযে
নাড়াচ্ছিল করছে (যা দুশ্চিন্তার সময় স্বাভাবিকভাবে ঘটে থাকে)। তাঁরা বলাবলি করছিল
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা ছিল তাঁদের উপর পর্দার নির্দেশ
আসার পূর্বেকার। উমর (রাঃ) বললেন, আমি আজই প্রকৃত ঘটনা জেনে
নিব। তাই আমি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকটে গেলাম। আমি তাকে বললাম, হে আবূ বকর তনয়া! তোমার অবস্হা কি এই পর্যায়ে
নেমে গিয়েছে যে, তুমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কষ্ট দিচ্ছ? তিনি
বললেন, হে খাত্তাবের পূত্র! আমার
ব্যাপার নিয়ে আপনি মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? আগে
নিজের ঘরের খবর নিন। তিনি বলেন, তখনই আমি হাফসা বিনত উমর
(রাঃ)-এর কাছে এলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে
হাফসা! তোমার অবস্হা এই পর্যায়ে গড়িয়েছে যে, তুমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কষ্ট দিচ্ছ? আল্লাহর কসম! আমি জানতে পেরেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তোমাকে ভালবাসেন না। আর আমি না হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অবশ্যই তোমাকে তালাক দিয়ে দিতেন। একথা শুনে তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন
আমি তাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আছেন? সে (হাফসা রা) বলল, তিনি ঐ উচু ঠোঙে অবস্থান করছেন। আমি সেখানে
প্রবেশের চেষ্টা করলাম। তখন আমি দেখতে পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চৌকাঠটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ড দিয়ে নির্মিত
যা দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠানামা করতেন। আমি রাবাহকে
ডাকলাম এলুং বললাম, হে রাবাহ! আমার জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে প্রবেশের অনুমতিনিয়ে
এসো। তখন রাবাহ কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করল। এরপর আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে
কিছুই বলল না। তখন আমি বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। এরপর
রাবহা কামরার দিকে দৃষ্টিপাত করল এবং আমার দিকে ফিরে তাকাল। কিন্তু সে এবার ও কিছূ
বলল না। তখন আমি উচ্চস্বরে বললাম, হে রাবাহ! তুমি আমার জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে এসো। সে
সময় আমি ভেবেছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত ধারণা করছেন আমি আমার কন্যা হাফসার কারণেই এখানে এসেছি।
আল্লাহ কসম! যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গর্দান উড়িয়ে
দিবার নির্দেশ দিতেন তাহলে আমি অবশ্যই তার গর্দান উড়িয়ে দিতাম। এ সব কথা আমি
উচ্চস্বরেই বলছিলাম। তখন সে (রাবাহ) আমাকে ইশারায় উপরে উঠতে বলল। তখন আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করলাম। সে সময় তিনি
খেজুর পত্র নির্মিত একটি চাটাইয়ের উপর কাত হয়ে শোয়াছিলেন। আমি সেখানে বসে পড়লাম।
তিনি তার চাঁদরখানি তার শরীরের উপরে টেনে দিলেন। তখন এটি ছাড়া তার পরনে অন্য কোন কাপড়
ছিল না আর বাহুতে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি স্বচক্ষে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামানাদির দিকে তাকালাম। আমি সেখানে একটি
পাত্রে এক সা (সাড়ে তিন কেজি পরিমাণ) এর কাছাকাছি কয়েক মুঠো যব দেখতে পেলাম।
অনুরুপ সলমের কিছু পাতা (এক প্রকার গাছের পাতা যা দিয়ে চামড়ায় রং করা হয়।) কামরার
এক কোণায় পড়ে আছে দেখলাম। আরও দেখতে পেলাম ঝূলন্ত একখানা চামড়া যা পাকানো ছিল না।
তখন তিনি বলেন, এই সব দেখে আমার দুই চোখ
অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাত্তাবের পূত্র! কিসের তোমার কান্না পেয়েছে? আমি বললাম, হে
আল্লাহর নাবী! কেন আমি কাঁদব না। এই যে চাটাই আপনার শরীরের পার্শ্বদেশে দাগ বসিয়ে
দিয়েছে। আর এই হচ্ছে আপনার কোষাগার। এখানে সামান্য কিছু যা দেখলাম তা ছাড়া তো আর
কিছুই নেই। পক্ষান্তরে ঐ যে রোমক বাদশাহ ও পারস্য সমরটি, কত বিলাস বাসনে ফলমূল ও ঝরণাঁয় পরিবেষ্টিত হয়ে
আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন করয়ে আর আপনি হলেন আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তি।
আর আপনার কোষাগার হচ্ছে এই! তখন তিনি বললেন, হে
খাত্তাব তনয়! তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, আমাদের
জন্য রয়েছে আখিরাত আর তাদের জন্য দুনিয়া (পার্থিব ভোগ বিলাস) আমি বললাম, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। এরপর উমর (রাঃ) বলেন, যখন আমিতার সকাশে উপড়ী চূই তখন থেকেই আমিতার
চেহারায় গোসসার ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সহধর্মিনীগণের কোন
আচরণ আপনার মনোকষ্টের কারণ হয়েছে কি? আপনি
যদি তাঁদের তিনি তালাক প্রদান করে থাকেন (তাতে আপনার কিছু আসে যায় না)
সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার সংগে আছেন। তার সকল ফিরিশতা, জিবরীল, মীকাঈল, আমি, আবূ
বকর (রাঃ) সহ সকল ঈমানদার আপনার সঙ্গে আছেন। তিনি (উমর (রাঃ) বলেন, আল-হামদুলিল্লাহ, আমি
যখনই কোন কথা বলি তাতে প্রায়ই আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ
আমার কথা সত্য প্রমাণিত করবেন। তখন ইখতিয়ার সম্পর্কিত এই আয়াত নাযিল হলঃ “ যদি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সকলকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে তাঁ
প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে তাকে তোমাদের চাইতে উৎকৃষ্টতর সহধর্মিনী দিবেন।”
(সূরা আততাহরীমঃ ৫)। “আর তোমরা দুইজন যদি নাবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা কর তবে
জেনে রাখ, আল্লাহ, জিবরীল, সৎকর্মপরায়ণ
ঈমানদারগণ তার সাহায্যকারী। অধিক ফিয়িশতারাও তার সাহায্যের জন্য সদা তৎপর। (সূরা
তাহরীমঃ ৪)। আয়িশা বিনত আবূ বকর (রাঃ) ও হাফসা (বিনত উমর) (রাঃ) এই দজন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সহধর্মিনীগণের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে
আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি
তাঁদের তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে
পেলাম মুসলমানরা (চিন্তাযুক্ত হয়ে) মাটির কংকর মারছে এবং বলছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এখন আমি কি তাদের কাছে গিয়ে জানিয়ে দিব
যে- আপনি আপনার সহধর্মিনীদের তালাক দেননি? তিনি
বললেন- হাঁ তোমার মনে চাইলে। এভাবে আমি তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে লাগলাম। পরিশেষে
দেখলাম তার চেহারা থেকে গোসসার ছাপ একেবারে মুছে গেছে এবং তিনি এমনভাবে হাসি দিলেন
যে, তার দাঁত দেখা গেল। তাঁর দাত ছিল সকলের চাইতে
সুন্দর। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে নিচে নেমে এলেন এবং
আমিও খেজুরগাছের কাণ্ড নির্মিত (সিঁড়ির) কাষ্ঠ ধরে নিচে নেমে এলাম। তবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে নিচে নামলেন যেন তিনি সমতল
যমীনে হাটছেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে কাণ্ডটি স্পর্শ করেননি। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো এই বালাখানায়
ঊনত্রিশ দিন অবস্হান করছেন। তিনি বললেন, মাস
ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে। এরপর আমি মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলাম, তিনি তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক দেননি। তখন এই
আয়াত নাযিল হল- “যখন শাস্তি কিংবা ভয়ের কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা
প্রচার করে দেয়। যদি তারা বিষয়টি আল্লাহর রাসুল এবং নেতৃত্ব স্হানীয় ব্যক্তিদের
নিকট উপস্হাপন করত তাহলে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধানী তারা এর যথার্থতা
নিরুপণ করতে সক্ষম হত। মোটকথা আমি (উমর (রাঃ) এই বিষয়টির সঠিক তথ্য নির্ণয়ে সক্ষম
হয়েছিলাম। তখন আল্লাহ তায়াআলা ইখতিয়ার সস্পর্কিত আয়াত নাযিল করেন।
৩৫৫৯। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ এক বছর যাবত ইচ্ছা পোষণ করে আসছিলাম
যে, একটি আয়াত সম্পর্কে উমর উবনুল খাত্তাব
(রাঃ)”-কে জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু আমি তার গাম্ভ্রীর্যের কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে
সাহস পাইনি। একবার তিনি হজ্জ পালনের জন্য রওনা হলেন, আমিও
তার সংগে বেরিয়ে পড়লাম। যখন আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলছিলাম এই সময় তিনি
(প্রকৃতির) প্রয়োজনে পিলগাছের ঝোঁপের দিকে গেলেন। আমি তাঁর অপেক্ষায় দাড়িয়ে
রইলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজন পূরণ করে ফিরে এলেন। এরপর আমি তাঁর সংগে রওনা করলাম। (এক
মওকা পেয়ে) আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনীগণের মধ্যে থেকে কোন
দু-জন তাঁর অপ্রিয় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করেছিল? তিনি
বললেন, তারা ছিল হাফসা (রাঃ) ও
আয়িশা (রাঃ)। (আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি
তাঁকে (উমর (রাঃ)-কে)বললামঃ আল্লাহর কসম! তিনি এক বছর যাবত এই বিষয়টি সম্পর্কে
আপনাকে জিজ্ঞাসা করব বলে মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করে আসাছিলাম, কিন্তু আপনার ভয়ের কারণে সাহস পাইনি। তিনি (উমর
রা) বললেন, কখনো এরুপ করবে না বরং আমার
কাছে কোন বিষয়ের জ্ঞান আছে বলে তোমার ধারণা হলে তুমি অবশ্যই সে সম্পর্কে আমার
কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে। যদি তা আমার জানা থাকে তাহলে তোমাকে অবহিত করবই।
রাবী (আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন
উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! জাহিলিয়া যুগে
আমরা নারী জাতির জন্য কোন অধিকার স্বীকার করতাম না। এরপর আল্লাহ তাদের অধিকার
সম্পর্কে যা অবতীর্ণ করার অবতীর্ণ করলেন এবং তাদের জন্য যা পালা নির্ধারণের ছিল তা
নির্ধারণ করে দিলেন। তিনি বলেন আমি কোন একদিন এক বিষয়ে চিন্তা করছিলাম। এমন সময়
আমার স্ত্রী আমার কাছে এসে বলল, আপনি যদি এরুপ এরুপ করতেন তাহলে
বেশ ভাল হত। আমি তাকে বললাম, তোমার কি হয়েছে? তুমি এখানে এলে কেন? আমি যে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি তাতে তুমি নাক
গলাচ্ছ কেন? তখন সে বলল, হে খাত্তাবের পূত্র! আপনি তো আমাকে মুখ খুলতেই
দিচ্ছেন না, কী আশ্চর্য অথচ আপনার
(স্নেহের) কন্যাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে প্রতি
উত্তর করে, যার ফলে তিনি সারা দিন
রাগাম্বিত অবস্হায় অতিবাহিত করেন। উমর (রাঃ) বলেন, এরপর
আমি (তড়িঘড়ি) আমার চাঁদর গুটিয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম এবং সোজা হাফসার কাছে
পৌছিলাম। আমি তাঁকে বললাম, হে আমার কন্যা! তুমি নাকি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথার প্রতি উত্তর করে থাক, যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সারা দিন রাগাম্বিত থাকেন? হাফসা
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা সত্যই তার
কথার প্রতি উত্তর দিয়ে থাকি। তখন আমি বললাম, জেনে
রাখ! আমি তোমাকে আল্লাহর শাস্তির ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
অসন্তুষ্টির ভীতি প্রদর্শন করছি। হে আমার কন্যা! ঐ মেয়েটি যেন তোমাকে ধোকায় ফেলতে
না পারে যাকে তাঁর সৌন্দর্য ও তার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর অনুরাগ গর্বিত করে ফেলেছে (এর দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে বুঝাতে
চেয়েছেন)। এরপর আমি সেখানে থেকে বেরিয়ে উমু সালামা (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁর সাথে
আমার আত্নীয়তার সস্পর্ক ছিল। আমি তাঁর সংগে কথা বললাম। তখন উম্মু সালামা (রাঃ)
আমাকে বললেন, কী আশ্চার্য হে খাত্তাবের
পূত্র! তুমি সব কিছুতেই দখল নিতে চাচ্ছ? এমন
কি তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সহধর্মিনীগণের
মধ্যকার বিষয়ে দখল নিতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, এই বিষয়ে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর কথা আমাকে
এমনভাবে জব্দ করল যে, আমি হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। তাই
আমি তার নিকট হতে কেটে পড়লাম। এদিকে আমার একজন আনসারী বন্ধু ছিলেন আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মজলিসে অনুপস্হিত থাকলে তিনি আমাকে জানাতেন এবং
তিনি তাঁর মজলিসে অনুপস্হিত থাকলে আমি তার কাছে এসে তাকে (আলোচ্য বিষয়ে) জানাতাম।
সে সময়ে আমরা জনৈক গাসসানী বাদশার আক্রমণের আশংকা করছিলাম। কারণ তখন আমাদের মাঝে
সংবাদ (শুজব) ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সে আমাদের উপর হামলার
পাঁয়তার করছে তাই ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তায় আমাদের অন্তর ছিল আচছন্ন। ইত্যবসরে আমার
আনসারী বন্ধুটি এসে দরজা খটখটাতে লাগলেন এবং বললেন, খুলে
দিন, খূলে দিন! আমি বললাম, তাহলে গাসসানীরা কি এসেই পড়ল। তিনি (আমার
আনসারী বন্ধুটি) বললেন, (না, গাসসানীরা আসে নি) তঁবে তার চাইতে ও সাংঘাতিক
কিছু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীগণকে তালাক
দিয়েছেন। উমর (রাঃ)বললেন, তখন আমি বললাম, হাফসা ও আয়িশার নাক ধূলোয় মলিন হোক। এরপর আমি আমার
কাপড় চোপড় পরিধান করলাম এবং ঘর থেকে বেরিয়ে সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে তাঁর বালাখানায় দেখতে পেলাম। সেটা ছিল এমন ছাদযূক্ত কামরা যাতে খেজুর কাণ্ড
নির্মিত সিড়ি বেয়ে উঠতে হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক
কৃষ্ণকায় গূহাভৃত্য সেই কামরার দরজায় বসা ছিল। তখন আমি তাকে বললাম, আমি উমর। আমাকে অনুমতি এনে দাও। সে অনুমতি নিয়ে
এলে আমি ভিতরে প্রবেশ করে এই ঘটনা বিশদভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে খূলে বললাম। আমি যখন উম্মূ সালামা (রাঃ)-এর ঘটনা পর্যন্ত
পোঁলাম, তখন তিনি মুচকি হাসি দিলেন।
তিনি তখন একটি সাদামাটা চাটাইয়ের উপর (কাত হয়ে শায়িত) ছিলেন, তাঁর ও চাটাইয়ের মাঝখানে অন্য কিছুই ছিল না।
তাঁর মাথার নিচে ছিল চামড়ার তৈরি একটি বালিশ যার মধ্যে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিল।
তাঁর পায়ের কাছে ছিল স্তৃপকৃত সলম গাছের কিছু পাতা এবং শিয়রের কাছে ঝূলন্ত ছিল
একটি কাঁচা চামড়া। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শরীরের
পার্ঘদেশে চাটাই-এর দাগ দেখতে পেলাম, এতে
আমি কাদলাম। তিনি বললেন, (হে খাত্তাব তনয়) তুমি কাঁদছ-
কেন? তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! পারস্য সমরাট ও রোমক সমরটি কত বিনাসব্যসনে কাটাচ্ছে আর আপনি হলেন, আল্লাহর রাসুল, (আপনার
অবস্হা এই)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে উমর) তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নয় যে, তাদের জন্য কেবল দুনিয়া (পার্থিব ভোগ-বিলাস) আর
তোমার জন্য রয়েছে আখিরাত (চিরস্হায়ী সুখ শান্তি)।
৩৫৬০। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে রওনা হয়ে যখন মোররায
যাহরান- নামক স্হানে পৌছলাম, তখন তিনি বিস্তারিতভাবে
হাদীস বর্ণনা করেন। সূলায়মান ইবনু বিলাল বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। অবশ্য তিনি ইবনু
আব্বাস রা) বলেনঃ আমি (উমর (রাঃ)-কে বললাম, সেই
দুজন মহিলার ঘটনা আমাকে বলবেন কি? তিনি বললেন, তারা ছিল হাফসা ও উম্মু সালামা (রাঃ)। তিনি তার
বর্ণনায় আরও উল্লেখ করেন যে, এরপর আমি (রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) হুজরায় দিকে এলাম তখন সব ঘরেই কান্নাকাটি অব্যাহত ছিল। তিনি
আরও উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের সঙ্গে একমাস ঈলা করেছিলেন। যখন ঊনত্রিশ দিন
অতিবাহিত হয়ে গেল। তখন তিনি তাদের কাছে ফিরে এলেন।
৩৫৬১। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (দীর্ঘদিন যাবত) মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করে
আসাছিলাম যে, ঐ দু-জন মহিলা সম্পর্কে উমর
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করব যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর
অপ্রিয় কাজে একে অপরকে সহযোগিতা দান করছিল। আমি একটি বছর অপেক্ষা করলাম কিন্তু আমি
তাকে জিজ্ঞাসা করার মওকা পেলাম না। শেষ পর্যন্ত মক্কায় রওনা হওয়ার পথে আমি তার সফর
সঙ্গী হলাম। পদ যাত্রায় তিনি যখন মাররাহ যাহরান- নামক স্হানে পৌছলেন তখন তিনি তার
প্রযোজন পূরণের (ইসতিনজা ইত্যাদির জন্য) ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। এরপর তিনি বললেন, আমাকে এক বদনা পানি দাও। আমি এক বদনা পানি সহ
তার কাছে উপস্থিত হলাম। যখন তিনি হাজত সমাধা করে ফিরে এলেন তখন আমি (উযুর) পানি
ঢেলে দেওয়ার জন্য তার কাছে গেলাম। তখন আমি সেই প্রশ্নের কথা স্বরণে আনলাম। এরপর
আমি তাকে বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! সেই
মহিলা দু-জন কারা ছিল? তখন আমার কথা শেষ না হতেই
তিনি বললেন, সে দু-জন ছিল আয়িশা (রাঃ) ও
হাফসা (রাঃ)।
৩৫৬২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
স্ত্রীগণের মধ্যে থেকে যে দু-জন মহিলা সম্পর্কে উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করার জন্য
বহুদিন যাবত আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলাম যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের
দু-জনের হৃদয় অন্যায় প্রবণ হয়েছে মনে করে তোমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে
আস তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন”। (সূরা আততাহরীমঃ ৪) পরিশেষে উমর (রাঃ) হজ্জ
পালনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমিও হজ্জ পালনের জন্য তাঁর সফর সংগী হলাম।
এরপর (হজ্জ সমাপন করে ফেরার পথে) আমরা কোন এক রাস্তা দিয়ে চলার সময় উমর (রাঃ) এক পা্র্শে
মোড় নিলেন। আমিও পানির বদনাসহ তাঁর সংগে রাস্তার পার্শে গেলাম। তিনি তাঁর হাজত
পূরণ করলেন এবং আমার কাছে এলেন। আমি তাঁর উভয় হাতে পানি ঢাললাম, তিনি উযু করে নিলেন। তখন আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের সে দুজন মহিলা কারা ছিলো যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ
বলেছেনঃ তোমাদের দু-জনের হৃদয় অন্যায় প্রবণ হয়েছে মনে করে তোমরা যদি অনুতপ্ত হয়ে
আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন।” (তাহরীমঃ ৪)।
উমর (রাঃ)বললেন, হে ইবনু আব্বাস! এভো তোমার
জন্য আশ্চর্যের বিষয় বলে মনে হচ্ছেঃ (তুমি এত বিলম্বে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে কেন?) যুহরী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! তিনি (উমর রা) জিজ্ঞাসিত বিষয়টি
ইবনু আব্বাসের এ বিষয়ে বিলম্বে প্রশ্ন করাকে) অপছন্দ করলেও তা বর্ণনা করতে কিছুই
গোপন করলেন না। তিনি বললেন, তাঁরা দুজন ছিল হাফসা ও
আয়িশা (রাঃ)। এরপর তিনি ঘটনার বিবরণ দিতে লাগলেন। তিনি বললেন, আমরা কুরায়শ বংশের লোকেরা (জাহিলিয়া যুগে)
আমাদের স্ত্রীদের উপর প্রভূত্ব করে চলত। যখন আমরা মদিনায় এলাম তখন এমন লোকদের
দেখতে পেলাম যাদের উপর তাদের স্ত্রীরা প্রভাব বিস্তার করছিল। এমনি পরিবেশে আমাদের
নারীরা তাদের (মদিনাবাসীদের) নারীদের অভ্যাস রপ্ত করতে শুরু করে দেয়। তিনি বলেন, সে সময় মদিনার উচ্চভূমির অধিবাসী বনূ উমায়্যা
ইবনু যায়িদের বংশধরদের মধ্যে আমার বসতবাটি ছিল। এরপর একদিন আমি আমার স্ত্রীর উপর
রাগাম্বিত হলাম। সে আমার কথার প্রতি উত্তর করতে লাগল। আমি আমার সঙ্গে তার প্রতি
উত্তর করাকে খুবই অপ্রিয় মনে করলাম। সে বলল, আপনার
সংগে আমার কথার প্রতি উত্তর করাকে অপছন্দ করছিলেন কেন? আল্লাহর কসম! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণও তো তাঁর সঙ্গে কথার প্রতি উত্তর করে থাকে। এমনকি তিনি
তাঁদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে। তখন আমি রওনা করে (আমার
মেয়ে) হাফসার কাছে চলে এলাম। এরপর আমি তাকে বললাম, তুমি
কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে প্রতি উত্তর কর? সে বলল, হ্যা।
আমি বললাম, তোমাদের মধ্যে কি কেউ তাকে
সারা দিন রাত বিচ্ছিন্ন করে রাখে? সে বলল, হাঁ। আমি বললাম, তোমাদের
যে কেউ এরুপ আচরণ করে সে আসলেই দূর্ভাগা ও ক্ষতিগ্রস্ত। তোমাদের মধ্যে কি কেউ
বিপদতে ও নিরাপদ হতে পারে যদি আল্লাহতাঁর রাসূলের ক্রোধের কারণে ক্রুদ্ধ হন। এরুপ
হলে তো তার ধ্বংস অনিবার্য। তুমি কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সংগে তাঁর কথার প্রতি উত্তর লিপ্ত হয়ো না এবং তাঁর কাছে কোন কিছু
দাবী করবে না, তোমার মনে যা চায় তা আমার
কাছে চাইবে। তোমার সতীন তোমার চাইতে অধিকতর সুন্দরী এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট তোমার তুলনায় অধিকতর প্রিয়পাত্রি। সে যেণ তোমায় ধোকায় পতিত
না করে ফেলে। এর দ্বারা তিনি (উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-কে বুঝাতে চাইছেন। তিনি বলেন, আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী ছিলেন। আমরা দুই
বন্ধু পালাক্রমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (তাঁর
মজলিসে) যেতাম। একদিন তিনি উপস্হিত থাকতেন অপরদিন আমি উপস্হিত হতাম। এভাবে ইবনু
তিনি আমাকে ওহী ইত্যাদির খবর দিতেন আমিও অনুরুপ খবর তাকে পৌছাতাম। সে সময় আমরা বেশ
করে আলোচনা করতে ছিলাম যে, গাসসানী বাদশাহ নাকি আমাদের
সঙ্গে যুদ্ধ করা জন্য ঘোড়ার ক্ষুরে নাল লাগাচ্ছে। একদিন আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলেন এবং ইশার সময় (রাত্রিকালে) আমার
কাছে (ফিরে) এলেন। তিনি এসে আমার ঘরের দরজা খটখটালেন এবং আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর
ডাক শুনে তার কাছে ছুটে এলাম। তিনি বললেন, একটি
বিরাট কাণ্ড ঘটে গেছে। আমি বললাম, সে কি? গাসসানীরা তাহলে এসে গেছে নাকি? তিনি বললেনঃ না, তারা
আসেনি বরং ব্যাপার তার চাইতেও সাংঘাতিক ও দীর্ঘতর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনীদের তালাক দিয়েছেন। তখন আমি বললাম, হাফসা হতাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি পূর্ন
থেকেই ধারণা পোষণ করে আসছিলাম যে, এমন একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
এরপর আমি ফজরের সালাত আদায় করে প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় পরিধান করলাম। আমি ঘর থেকে
বেরিয়ে সরাসরি হাফসার কাছে উপস্থিত হলাম। তখন সে কাঁদছিল। আমি বললাম, রাসুলল্লাহ (রহঃ) কি তোমাদেরকে তালাক দিয়েছেন।
সে (শ্বাসরুদ্ধ করে) বলল, আমি জানি না। তবে তিনি তাঁর
ঐ বালাখানায় নির্জনবাস করছেন। আমি তাঁর কৃষ্ণকায় গূহভৃত্যের কাছে এলাম। এরপর সে
ভিতরে প্রবেশ করল এবং বেরিয়ে এসে আমার দিকে তাকাল। এরপর সে বলল, আমিতার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কাছে আপনার কথা উত্থাপন করেছি কিন্তু তিনি নীরব আছেন। (কিছুই বলছেন
না)। তারপর আমি চলে এলাম এবং মিম্বরের কাছে এসে বসে পড়লাম। তখন আমি দেখতে পেলাম
সেখানে একদল লোক বসা আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। আমি খানিকটা
বসলাম। এরপর আমার মনের প্রবল আকঙ্খা আমার উপর প্রভাব বিস্তার করল। তখন আমি সেই
গৃহভৃত্যটির কাছে চলে এলাম এবং তাকে বললাম, উমরের
জন্য ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে এসো। সে ভেতরে প্রবেশ করল এবং বেরিয়ে এসে আমাকে
বলল, আপনি আপনার বিষয়টি তাঁর সামনে উত্তাপন করেছি
কিন্তু তিনি নীরব আছেন। আমি তখন পিছনে ফিরে চললাম অমনি সে গূহভৃত্যটি আমাকে ডাক
দিয়ে বলল, আপনি প্রবেশ করুন; তিনি আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। আমি ভিতরে প্রবেশ
করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম দিলাম। আমি দেখতে পেলাম, তিনি খেজুর পাতার তৈরি একটি চাটাই এর উপর হেলান
দিয়ে আরাম করছেন যা তাঁর পার্বদেশে দাগ বসিয়ে দিয়েছে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আপনার সহধর্মিনীগণকে
তালাক দিয়েছেন? তিনি তাঁর মাথা উচিয়ে আমার
প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন, না। আমি বললাম, আল্লাহ আল্লাহ। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি বিষয়টি ভেবে দেখূনঃ আমরা যখন মদিনায় এলাম তখন দেখতে পেলাম, এখানকার পূরুষ লোকদের উপর তাদের স্ত্রীরা
প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এতে তাদের দেখাদেখি আমাদের স্ত্রীরাও তাদের অভ্যাস রপ্ত
করতে শুর করে দিয়েছে। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত হলাম। অমনি সে আমার
কথার প্রতি উত্তর শুরু করে দিল। আমি তার প্রতি উত্তর করাকে খুবই খারাপ মনে করলাম।
সে বলে ফেলল- আপনার সংগে প্রতি উত্তর করাকে আপনি এত খারাপ মনে করছেন কেন? আল্লাহর কসম! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণও তো তাঁর কথার প্রতি উত্তর করে থাকে, এমনকি তাদের কেউ কেউ তাঁকে সারা দিন রাত
বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি বললাম, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন আচরন
করলে সে হতভাগ্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে থেকে কারো উপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হওয়ার কারণে যদি আল্লাহ ক্রদ্ধ হয়ে যান
তাহলে তার পতন ও ধ্বংস অনিবার্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মৃদু সূরে হেসে উঠলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমি হাফসার
কাছে গিয়ে তাকে বলে দিয়েছি যে, তোমার সতীন সৌন্দর্যে
তোমার তূলনায় অগ্রগামিনী এবং রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে
তোমার চাইতে অধিকতর আদরিনী- তা যেন তোমাকে ধোকার জালে আবদ্ধা করতে না পারে। এতে
আবার তিনি মুচকি হাসি দিলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার সংগে একান্তে আলাপ করতে চাই। তিনি বললেনঃ হাঁ, করতে পার। তারপর আমি বললাম এবং মাথা উঠিয়ে তাঁর
কোঠার (এদিক ওদিক) তাকিয়ে দেখলাম। আল্লাহর কসম! আমি সেখানে তিনখানি চামড়া ব্যতীত
নয়ন জুড়ানো তেমন কিছু দেখতে পাইনি। আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আপনার উম্মাতকে প্রাচুর্য দান
করেন। পারসিক ও রোমাকদের তো বৈষয়িক সুখ সমৃদ্ধি দান করা হয়েছে অথচ তারা আল্লাহর
ইবাদত (আনুগত্য) করে না। তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, -হে খাত্তাবের পূত্র! তুমি কি সন্দেহের জালে
আবদ্ধ আছ। আসলে তারা তো এমন সম্প্রদায় যাদের পার্থিব জীবনে ক্ষণিকের তরে সুখ
সমৃদ্ধি দান করা হয়েছে। আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি তাঁর সহধর্মিনীগণের আচরণে
ক্ষুদ্ধ হয়ে কসম করেছিলেন যে, তিনি একমাস তাদের সংগে
একত্রে অতিবাহিত করবেন না। শেষাবধি আল্লাহতাকে এই আচরণের জন্য তিরষ্কার করেন।
যুহরী (রহঃ) বলেন, উলওয়া (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর
সুত্রে আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যখন ঊনত্রিশ
দিন অতিবাহিত হল তখন প্রথমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট
আসলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো
কসম করেছিলেন একমাস পর্যন্ত আমাদের কাছে আসবেন না অথচ ঊনত্রিশ দিন পরই আপনি আমাদের
কাছে ফিরে এলেন। আমি এই দিনগুলো হিসেব করে রেখেছিলাম। তিনি বললেন মাস ঊনত্রিশ
দিনেও হয়। এরপর তিনি বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমাকে একটি
বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, সে সম্পর্কে তোমার পিতামাতার
সঙ্গে পরামর্শ না করে তাড়াতাড়ি উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তখন তিনি আমাকে এই আয়াত
তিলাওয়াত করে শোনালেনঃ হে নাবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও এর ভূষণ কামনা কর
তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ বিলাসের উপকরণের ব্যবস্হা করে দিব এবং সৌজন্যর সাথে
তোমাদের বিদায় করে দই। আর যদি তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসুল ও পরকাল কামনা কর তবে
তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণা আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন”।
(সূরা আহযাবঃ ২৮,২৯)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এটা নির্ঘাত সত্য যে, আমার পিতামাতা কর্শিনকালেও আমাকে তাঁর
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দিবেন
না। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! এ বিষয়ে কি আমি আমার পিতামাতার
সাথে পরামর্শ করতে যাব? নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকাল কামনা করি। মামার (রহঃ)
বলেন, আয়্যুব আমাকে জানিয়েছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, (ইয়া রাসুলুল্লাহ) আপনি আপনার অন্যান্য
সহধর্মিনীগনের কাছে বলবেন না যে, আমি আপনাকেই ইখতিয়ার করে
নিয়েছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহ আমকে মূবাল্লিগ (সত্যপ্রচারক) রুপে
প্রেরণ করেছেন, বিপদে নিক্ষেপকারীরুপে পাঠান
নি।
৩৫৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ আমর ইবনু হাফস (রাঃ) (তার স্বামী)
অনুপস্থিতিতে তাকে বায়েন তালাক দেন। এরপর সামান্য পরিমাণ যবসহ উকীলকে তার কাছে
পাঠিয়ে দেন। এতে তিনি (ফাতিমা (রাঃ)তার উপর ভীষণভাবে অন্তুষ্ট হন। সে (উকীল) বলল, আল্লাহর কসম! তোমাকে (খোরপোষরুপে) কোন কিছু
দেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। তখন তিনি (ফাতিমা বিনত কায়স রা) রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপিস্থিত হয়ে তাঁর নিকট সব খুলে বলঁলেন। (তার কথা উরে)
তিনি বললেন, তোমার জন্য তার (তোমার
স্বামী আবূ আমর ইবনু হাফস রা-এর) দায়িত্বে কোন খোরপোষ নেই। এরপর তিনি তাকে
উম্মু শারীকের ঘরে গিয়ে ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি এও বললেন সে মহিলা
(উম্মু শারীক) এমন একজন স্ত্রীলোক যার কাছে আমার সাহাবীগণ যাতায়াত করে থাকেন। তুমি
বরং ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-এর বাড়ীতে গিয়ে ইদ্দত পালনকরতে থাক। কেননা সে একজন
অন্ধ মানূষ। সেখানে প্রয়োজনবোধে তুমি তোমার পরিধানের বস্তুখুলে রাখতে পারবে। ইদ্দত
পূর্ণ হলে তুমি আমাকে জানাবে। তিনি বলেন, যখন
আমার ইদ্দত পূর্ণ হল তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
জানানাম যে, মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান
(রাঃ) ও আবূ জাহম (রাঃ) আমাকে বিবাহের পায়গাম পাঠিয়েছেন। তখন রাসুলল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ জাহাম এমন লোক যে তার কাঁধ থেকে লাঠি
নামিয়ে রাখে না। আর মুআবিয়া তো কপর্দকহীন গরীব মানুষ। তুমি উসামা ইবনু যায়িদের
সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও। কিন্তু আমি তাঁকে পছন্দ করলাম না। এরপর তিনি আবার
বললেন, তুমি উসামাকে বিয়ে কর। তখন
আমি তার সংগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। আল্লাহ এতে (তার ঘরে) আমাকে বিরাট কল্যাণ
দান করলেন। আর আমি ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হলাম।
৩৫৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
জীবদ্দশায় তার স্বামী তাকে তালাক দেন। এরপর তার স্বামী তার জন্য (ইদ্দতকালীন সময়ের
ব্যয় নির্বাহের জন্য) সামান্য পরিমাণ খোরপোষ দিয়েছিলেন। তিনি তা দেখে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই (এই বিষয়টি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৃষ্টি গোচরে আনব। যদি খোরপোষ
আমার প্রাপ্য হয় তবে তা আমি এই পরিমাণ উসূল করব। যাতে সুচারড়ভাবে আমার প্রয়োজন
পূরণ হয়। আর যদি খোরপোষ আমার প্রাপ্য না-ই হয় তাহলে আমি তার নিকট থেকে কিছুই
গ্রহণ করব না। তিনি বলেন, এরপর আমি বিষয়টি রাসুলল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উত্থাপন করলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই, বাসস্হানও নেই।
৩৫৬৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-কে (তার স্বামির তালাক সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি
আমাকে জানালেন যে, তার মাখযুমী স্বামী তাকে
তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তাকে খোরপৌষ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি
সেখান থেকে সরে পড় এবং ইবনু উম্মূ মাকতূমের ঘরে গিয়ে তার কাছে অবস্হান কর। কারণ
একজন অন্ধ মানুষ। সেখানে তুমি প্রয়োজনবোধে তোমার গাত্রবস্ত্র খুলে রাখতে পারবে।
৩৫৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) দাহহাক ইবনু কায়সের ভগ্নী ফাঁতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার স্বামী আবূ হাফস ইবনু মুগীরা (রাঃ) তাকে
একত্রে তিন তালাক প্রদান করেন। এরপর তিনি ইয়ামন চলে যান। তখন তার (আবূ আমরের)
পরিবারের লোকজন তাকে (ফাতিমাকে) বলল, তোমার
জন্য আমাদের দায়িত্বে কোন খোরপোষ নেই। এরপর খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)একদল লোকসহ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে এলেন। তখন তিনি মায়মুনা (রাঃ)-এর
ঘরে অবস্হান করছিলেন। তারা বললেন, (ইয়া রাসুলল্লাহা) আবূ হাফস
তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছেন। এখন তার স্ত্রী কি খোরপোষ পাবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ না, তার জন্য কোন খোরপোষ নেই।
তার উপর ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। তিনি তাকে বলে পাঠালেন যে, তুমি আমাকে না জানিয়ে বিবাহের ব্যাপারে কোন
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। তিনি তাকে ইদ্দত পালনের জন্য উম্মু শারীকের ঘরে যাওয়ার
নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি তাকে লোক মারফত জানিয়ে দিলেন যে, উম্মূ শারীক এমন একজন মহিলা যার কাছে প্রাথমিক
হিজরতকারী সাহাবীগণ আসা যাওয়া করে থাকেন। সুতরাং তুমি অন্ধ ইবনু উম্মু মাকতূমের
ঘরে চলে যাও। কারণ সেখানে তুমি প্রয়োজনবোধে তোমার দোপাট্টা (ওড়না) নামিয়ে রাখলে সে
তোমাকে দেখতে পাবে না। যখন তার ইদ্দত পূর্ণ হলে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ)-এর সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দিয়ে
দিলেন।
৩৫৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু হুজর ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
বনু মাখযুমের জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী ছিলাম। তিনি আমাকে বায়িন তালাক দিলেন তখন আমি
তার পরিবার পরিজনের কাছে লোক পাঠিয়ে খোরপোষের দাবী জানানাম। এরপর তারা (বর্ণনাকারীত্রয়)আবূ
সালমার সুত্রে ইয়াহইয়া ইবনুু- কাসীরের হাদীসের অনুবাপ বর্ণনা করে গেলেন। তবে
মুহাম্মদ ইবনু আমর বর্ণিত হাদীসে “আমাকে বাদ দিয়ে তুমি তোমার সম্পর্কে কোন
সিদ্ধান্ত নিও না” বলে উল্লেখ রয়েছে।
৩৫৬৮। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আবূ আমর ইবনু হাফস ইবনু মুগীরা (রাঃ)-এর
স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাকে চুড়ান্ত তিন তালাক দিলেন। তখন তিনি (ফাতিমা বিনত কায়স
রা)ভাবলেন যে, রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে যাবেন এবং তার স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র অবস্হানের ব্যাপারে
তাঁর নিকট থেকে সিদ্ধান্ত জেনে নিবেন। তিনি (রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)নির্দেশ দিলেন যে, তুমি অন্ধ ইবনু উম্মু
মাকতূমের ঘরে চলে যাও। মারওয়ান (উমাইয়্যা গভর্নর) তালাকপ্রাপ্তা মহিলার (স্বামীর)
ঘর থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে তার উম্মু সালামার) বর্ণনার সত্যতা অস্বীকার করেন।
উরওয়া বলেন, আয়িশা (রাঃ) ও ফাতিমা বিনত
কায়সের বিষয়টি (স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্হান করা) প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৩৫৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) এই সনদে উরওয়ার উক্তিসহ বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) ফাতিমার উক্ত ঘটনা অস্বীকার
করেছেন।
৩৫৭০। ইসহহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) উবায়দূল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
আছে যে, আবূ আমর ইবনু হাফস ইবনু
মুগীরা (রাঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে ইয়ামানে গমন করেন। এরপর তিনি তার
স্ত্রী ফাতিমা বিনত কায়সকে অবশিষ্ট এক তালাকের কথা বলে পাঠালেন (তালাক আগেই
দিয়েছিলেন)। তিনি হারিস ইবনু হিশাম ও আবূ রাবীআকে নিজের পক্ষ থেকে তার (স্ত্রীকে)
খোরপোষ হিসেবে কিছু দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দু”জন তাকে (ফাতিমাকে)
বললেন,আল্লাহর কসম! তোমার জন্য কোন
খোরপোষ নেই। তবে তুমি গর্ভবতী হলে ভিন্ন কথা। এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন এবং তাদের দু-জনের উক্তি সম্পর্কে তাকে অবহিত করলেন। তখন
তিনি তাকে বললেন, তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই।
এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে স্বামীর ঘরে ছেড়ে অন্যত্র
চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কোথায় যাব? তিনি বললেন, ইবনু
উম্মু মাকতূমের কাছে চলে যাও। সে অন্ধ মানুষ। তুমি প্রয়োজনবোধে তার নিকট গাত্র
বরন্ন খুলতে পারবে এবং সে তোমাকে দেখতে পাবে না। এরপর যখন তার ইদ্দত পূর্ণ হল তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উসামা ইবনু যায়িদের সংগে বিয়ে দিয়ে
দিলেন। পরবর্তীকালে (উমায়্যা গভর্নর) মারওয়ান এই হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করার উদ্দেশ্য কাবীসা ইবনু যুওয়াবকে তার কাছে পাঠান। তখন তিনি তার (কাবীনার) কাছে
এই হাদীস বর্ণনা করেন। এই খবর শুনে) মারওয়ান বললেন, একজন
মহিলা ছাড়া অন্য কারো কাছে আমার এই হাদীস শুনিনি। আমরা (এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও
বিশুদ্ধ মত গ্রহণ করব যার উপর আমরা মুসলিম জনসাধারণকে পেয়েছি। ফাতিমা বিনত কায়স
(রাঃ)-এর নিকট মারওয়ানের মন্তব্য পোঁছলে তিনি বলেন, আমার
ও তোমাদের মধ্য কুরআনই চুড়ান্ত মীমাংসাকারী। আল্লাহ বলেছেনঃ না তোমরা তাদেরকে
তাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ো না”। তিনি বলেন, এই
আয়াত সে সব মহিলাদের জন্য প্রযোজ্য যাদের জন্য রাজআতের অধিকার আছে। তাই তিন
তানাকের পর নতুন করে আর কি থাকতে পারে? এরপর
তোমার কী করে বলতে পার যে, যে মহিলা গর্ভবতী নয় তার
জন্য কোন খোরপোষ নেই? এরপরও তোমরা তাকে কিসের
ভিত্তিতে তোমাদের ঘরে আটক করে রাখবে?
৩৫৭১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
তার (ফাতিমা বিনত কায়স) কাছে গেলাম এবং তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, তার স্বামী তাকে বায়েন তালাক দিলেন। তিনি বলেন, এরপর আমি বাসস্হান ও খোরপোষের জন্য তার
বিরুদ্ধে রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বিচার প্রার্থী হলাম।
তিনি বলেন, কিন্তু আমার পক্ষে বাসস্হান
ও খোরপোষের রায় দেননি। উপরন্তু তিনি আমাকে ইবনু উম্মু মাকতূমের ঘরে ইদ্দত পালনের
নির্দেশ দিলেন।
৩৫৭২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) শা বী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। এরপর পূর্বোক্ত হার্দীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেন।
৩৫৭৩। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
(রহঃ) শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
ফাতিমা বিনত কায়সের কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাদেরকে ইবনু তাবা নামক টাটকা খেজুর
দ্বারা আপ্যায়িত করলেন এবং গম ও সূলত ছাতুর শরবত পান করালেন। এরপর আমি তাকে তিন
তালাকপ্রাপ্তা মহিলা। সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সে
ইদ্দত পালন করবে কোথায়? তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছিলেন। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে ইদ্দত
পালনের অনুমতি দিলেন।
৩৫৭৪। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিন তালাক প্রাপ্ত মহিলা সম্পর্কে বর্নিত। তিনি (নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তার
জন্য বাসস্হান ও খোরপোষ কোনটাই নেই।
৩৫৭৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিলেন। এতে আমি
তার ঘর থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম। এক পর্যায়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, তুমি
তোমার চাচাত ভাই আমর ইবনু উম্মু মাকতূমের বাড়ীতে চলে যাও এবং তাঁর ঘরেই ইদ্দত পালন
করতে থাক।
৩৫৭৬। মুহাম্মদ ইবনু আমর
ইবনু জাবালা (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদের সংগে সেখানকার বড়
মসজিদে বসা ছিলম। শাবী ও আমাদের সংগে ছিলেন। তিনি ফাতিমা বিনত কায়স বর্ণিত হাদীস
প্রসঙ্গে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বাসস্হান ও খোরপোষের সিদ্ধান্ত দেননি। তখন আসওয়াদ তার
হাতে এক মুঠো কংকর নিয়ে শাবীর দিকে নিক্ষেপ করলেন। এরপর বললেন, সর্বনাশ! তুমি এমন ধরনের হাদীস বর্ণনা করছ? (অথচ) উমর (রাঃ)বলেছেন, আমরা আল্লাহর কিতাব এবং আমাদের নাবীর সুন্নাত
এমন একজন মহিলার উক্তির কারণে ছেড়ে দিতে পারি না। আমরা জানি না, সে স্বরণ রাখতে পেরেছে অথবা ভূলে আল্লাহ তাআলা
বলেছেনঃ “তোমরা তাদেরকে তাদের বাসগৃহ থেকে বহিস্কার করে দিয়ো না এবং তারাও যেন ঘর
থেকে বের না হয়। তবে তারা স্পষ্ট কোন অশ্লীলতায় লিপ্ত হলে ভিন্ন কথা।” (সূরা
তালাক:১)।
৩৫৭৭। আহমাদ ইবনু আবদা
যাব্বি (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে আবূ আহমাদ আম্মার ইবনু রুযায়ক সত্রে
বর্ণিত হাদীসের সে ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
৩৫৭৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ বকর ইবনু আবূ জাহম ইবনু সুখায়র আদাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি ফাতিমা বিনত কায়স
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাক
দিয়েছিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বাসস্থান ও
খোরপোষের অধিকার দেননি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তোমার
ইদ্দত পূর্ণ হলে তুমি আমাকে জানাবে। এরপর আমি তাঁকে ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার কথা
জানালাম। তখন মুআবিয়া (রাঃ),আবূ জাহম (রাঃ) ও উসামা
(রাঃ) তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ মুআবিয়া তো একজন গরীব মানুষ, তার
কাছে কোন ধন সম্পদ নাই। আবূ জাহম সে তো স্ত্রীদের প্রহার কারী। তবে উসামা তাকে
স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পার। তার পর তিনি হাতের ইশারায় বললেন, উসামা তো এরুপ এরুপ। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করাই তোমার
জন্য কল্যাণকর। তিনি বলেন, তখন আমি তার সঙ্গে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। (আল্লাহ আমাকে প্রাচুর্যও বিত্তবৈভবে পরিপূর্ণ করে দিলেন) ফলে
আমি ঈর্ষার কেন্দ্রে পরিণত হলাম।
৩৫৭৯। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ বকর ইবনু আবূ জাহম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ফাতিমা বিনত কায়সকে বলতে শুনেছি যে, আমার সামী আবূ আমর হাফস ইবনু মুগীরা (রাঃ)
আয়্যাম ইবনু আবূ রাবী আকে আমার নিকটে আমাকে তালাক দেওয়ার সংবাদ দিয়ে পাঠান। তিনি
তার সাথে আমার খোরপোষের জন্য পাঁচ সা” (এক ছা সাড়ে তিন কেজির সমান) খেজুর এবং পাঁচ
সা, যব পাঠিয়ে দেন। তখন আমি তাকে। বললাম, আমার জন্য কি খোরপোষ এই পরিমাণ? আমি তোমাদের ঘরে ইদ্দত পালন করব না। (আয়্যাশ)
বললেন, না তা হতে পারে না। তিনি
(ফাতিমা) বললেন,আমি তখন কাপড় চোপড় পরিধান
করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, সে তোমাকে কত তালাক দিয়েছে? আমি বললাম,তিন
তালাক। তিনি বললেন, সে (আয়্যাশ) ঠিকই বলেছে।
তোমার জন্য কোন খোরপোষ নেই। তুমি তোমার চাচাতো ভাই ইবনু উম্মু মাকতূমের ঘরে গিয়ে
ইদ্দত পালন কর। সে একজন অন্ধ মানুষ। তুমি প্রয়োজনবোধে তার কাছে কাপড় চোপড় খুলে
রাখতে পারবে। এরপর তোমার ইদ্দত পূর্ণ হলে তুমি আমাকে জানাবে। তিনি (ফাতিম বিনত
কায়স (রাঃ) বলেন- আমার ইদ্দতকাল অতিবাহিত হলে বেশ কয়েকজন লোক আমার কাছে বিয়ের
পায়গাম পাঠালেন। তার মধ্যে মুআবিয়া ও আবূ জাহমও ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুআবিয়া তে! একজন গরীব মানুষ, নগণ্য সম্পদের অধিকারী আর আবূ জাহম তো নারীদের
প্রতি কঠোর (অথবা বলেন) সে স্ত্রীদের লাঠিপেটা করে অথবা এরুপ কিছু বললেন। তবে
উসামা ইবনু যায়িদকেই গ্রহণ কর তোমার জন্য উচিত হবে।
৩৫৮০। ইসহাক ইবনু মাননূর
(রহঃ) আবূ বকর ইবনু আবূ জাহম (রাঃ) বলেন, আমি
এবং আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ফাতিমা বিনত কায়সের কাছে গেলাম। এরপর আমরা তকে
(তার তালাক সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি
আবূ আমর হাফস ইবনু মুগীরার স্ত্রী ছিলাম। একবার তিনি নাজরানের যুদ্ধে রওনা হয়ে
গেলেন। এরপর আবূ বকর ইবনু আবূ জাহম (রাঃ)ইবনু মাহদী বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেন। তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশি উল্লেখ করেছেন যে, ঁতিনি (ফাতিমা বিনত কায়স) বলেন, আর আমি তাকে বিয়ে করলাম। এরপর আল্লাহ ইবনু
যায়িদের দ্বারা আমাকে সম্মানিত করলেন এবং আমাকে তার মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত
করলেন।
৩৫৮১। উবয়দুল্লাহু ইবনু
মু’আয আম্বারী (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদল্লহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর শাসনামলে আমি এবং
আবূ সালমা (রাঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন- তিনি আমাদিগকে
সুফিয়ানের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করে বললেন যে, তার
স্বামী তাকে বায়িন তালাক দিয়েছেন।
৩৫৮২। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানি (রহঃ) ফাতিমা বিনতে কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিলেন। এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য বাসস্হান এবং খোরপোষের
ফয়সালা দেননি।
৩৫৮৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
হিশাম (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনুল আতস (রাঃ) আব্দুর
রহমান ইবনু হাকওমের কন্যাকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি তাকে তিন তালাক দেন এবং তাকে তার
থেকে বের করে দেন। উরওয়া (রহঃ) এত তাদের ভৎসনা করেন। তারা বললেন, ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) ও তো ঘর থেকে বের
হয়েছিলেন। উরওয়া বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে
এলাম এবং তাঁর কাছে এই ঘটনা উপস্হাপন করলাম। তিনি বললেন, ফাতিমা বিনত কায়সের জন্য কোন কল্যাণ নেই যে, সে এই হাদীস বর্ণনা করবে।
৩৫৮৪। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার স্বামী আমাকে
তিন তালাক দিয়েছেন, আমার আশংকা হয় যে, তিনি আমার উপর চড়াও হবেন। তখন তিনি তাকে
অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং তিনি চলে গেলেন।
৩৫৮৫। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা
বিনত কায়সের জন্য একথা বলায় কোন কল্যাণ নেই যে, তিন
তালাকপ্রাপ্তা মহিলার জন্য বাসস্হান ও খোরপোষ নেই।
৩৫৮৬। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উরওয়া ইবনু যুবায়র আয়িশা (রাঃ)-কে বললেন, হাকওমের অমুক মেয়েটির সম্পর্কে আপনি কি অবহিত
নন যে, তার স্বামী তাকে বায়িন তালাক
দিয়েছেন? এরপর সে ঘর থেকে বের হয়েছে।
তিনি বললেন, আপনি কি ফাতিমার উক্তি শুনেন
নি? তখন তিনি (উরওয়ার) বললেন, তার উক্তি বর্ণনার মধ্যে তার জন্য কোন কল্যাণ
নেই।
৩৫৮৭। সা’দ ইবনু হাতিম ইবনু
মায়মুন ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমার খালা তালাকপ্রাপ্তা হন।
এরপর তিনি তাঁর (খেজুর বাগানের) খেজুর পাড়ার ইচ্ছা করলেন। জনৈক ব্যক্তি তাকে বাইরে
যেতে বাঁধা দিলেন। তখন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “বললেন, হাঁ
তুমি তোমার বাগানের খেজুর পাড়ার জন্য বাইরে যেতে পার। কারণ সম্ভবত তা থেকে অন্যদের
সাদাকা করবে অথবা অন্য কোন ভাল কাজ করবে।
৩৫৮৮। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম যুহরীকে নির্দেশ দিয়ে
লিখলেন যে, তিনি যেন সূবায়-বা বিনত
হারিস আসনামীর কাছে চলে যান। এরপর তাকে তার হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। যখন
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফাতওয়া চাইছিলেন এবং
তিনি তাকে যা বলেছিলেন তখন উমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাকে লিখে পাঠালেন যে, সুবায়-আ তাকে জানিয়েছেন- তিনি বনু আমির ইবনু
লুঈ গোত্রের সা’দ ইবনু খাওলার স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বাদরী সাহাবী এবং বিদায়
হজ্জের সময় ওফাত পান। সে সময়ে তিনি গর্ভবতী ছিলেন। তার স্বামীর ইন্তেকালের
অব্যবহিত পরেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। এরপর যখন তিনি নিফাস থেকে পবিত্র হলেন, তখন বিবাহের পয়গামদাতাদের জন্য সাজসজ্জা করতে
লাগলেন। তখন বনূ আবদান দার গোত্রের আবূ সানাবিল ইবনু বা-কাক নামক জনৈক ব্যক্তি
তাঁর কাছে এলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, মতলব
কি? আমি তোমাকে সাজসজ্জা করতে দেখতে পাচ্ছি! সম্ভবত
তুমি বিবাহ প্রত্যাশী? আল্লাহর কসম! চার মাস দশদিন
অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি বিয়ে করতে পারবে না। সুবায়-আ বললেন, যখন সে লোকটি আমাকে একথা বলল, তখন কাপড় চোপড় পরিধান করে সন্ধ্যাবেলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে,চলে এলাম। এরপর আমি তাঁকে সে বিষয়ে জানিয়ে
দিলাম। তিনি আমাকে জানিয়ে দিলেন যে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই আমার ইদ্দত
পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তিনি আমাকে আরও নির্দেশ দিলেন যে, আমি
ইচ্ছা করলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই প্রমূতির জন্য
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে আমি দুষনীয় মনে করি না। যদিও সে তখন নিফাসের ইদ্দত
পালনরত থাকে। তবে নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পূর্বে স্বামী যেন স্ত্রীর সাথে সহবাস
না করে।
৩৫৮৯। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না আনাযী (রহঃ) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) ও ইবনু
অব্বাস (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে সমবেত হলেন। তারা এমন একজন মহিলার কথা
আলোচনা করছিলেন যিনি তাঁর স্বামীর ইন্তেকালের কয়েক দিন পরেই সন্তান প্রসব করেছেন।
তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তার ইদ্দত হবে দুটির মধ্যে
দীর্ঘতরটি। আবূ সালামা (রাঃ) বললেন,তার
ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দু-জনে বিতর্ক শুরু করে দিলেন।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি আমার ভাতিজা আবূ সালামার পক্ষে। এরপর তারা
সবাই ইবনু আব্বাসের মুক্তদাস কুরায়বকে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর কাছে উক্ত বিষয়ে
জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠালেন। সে তাদের কাছে এসে বললো যে, উম্মু সালামা (রাঃ) বলেছেন, সূবায়-আ আসলামিয়া তার স্বামীর ইন্তেকালের কয়েক
রাত পরই সন্তান প্রসব করেন এবং তিনি সে বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্হাপন করেন। তখন তিনি তাকে বিবাহ করার অনুমতি দেন।
৩৫৯০। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ)
ইয়াহিয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে লায়স (রহঃ)
বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে তারা সবাই উম্মু সালমার কাছে সংবাদ পাঠালেনঁ এবং তিনি
(লায়স) কুরায়বের নাম উল্লেখ করেননি।
৩৫৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) হুমায়দ ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়নাব বিনত আবূ সালামা (রাঃ) তাকে এই তিনটি
হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি (হুমায়দ ইবনু নাফি)বলেন, (১)
যায়নাব (রাঃ)বলেছেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী উম্মু হাবীবা (রাঃ)-এর পিতা আবূ সুফিয়ান ইন্তেকাল
করেন তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম। আমি দেখতে পেলাম যে, উম্মু
হাবীবা (রাঃ) হলদে বর্ণের মিশ্রিত সুগন্ধি আনালেন অথবা অন্য কোন প্রসাধনী চেয়ে
পাঠালেন। এরপর তা থেকে একটি বালিকাকে নিজ হাতে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তিনি তার দুই
কপালে হাত মুছে নিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর
কসম! আমার সুগন্ধি ব্যবহারের কোন প্রয়োজন ছিলনা। তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরে দাড়িয়ে বলতে শুনেছি যে, যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান)রাখে সে যেন তার
কোন আত্নীয়ের মৃত্যু তে তিন দিনের বেশী শোক পালন করা হালাল নয়। তবে বিধবা স্ত্রী
তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশদিন শোক পালন করতে পারবে। যায়নাব (রাঃ) বলেন, এরপর আমি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সংধর্মিনা) যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। সে সময় তার ভাই ইন্তেকাল
করেছিলেন। আমি দেখলাম, তিনি ও সুগন্ধি চেয়ে পাঠালেন
এবং তার থেকে স্পর্শ করলেন। এরপর বললেন, আল্লাহর
কসম! আমার সুগন্ধি ব্যবহারের কোন প্রয়োজন ছিল না তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি যে, যে মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে তার জন্য
মৃত ব্যক্তির জন্য তিনদিনের অধিক শোক পালন করা হালাল নয়। তবে স্বামীর মৃত্যুতে
চার মাস দশদিন শোক পালন করা যাবে। এরপর যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমি আমার মা উম্মূসালামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি
যে, একবার এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার কন্যাকে রেখে তার স্বামী ইন্তেকাল করেছেন। তার (শোক পালন করতে
গিয়ে) চোখে অসুখ হয়েছে। এ অবস্হায় আমরা কি তার চোখে সুরমা ব্যাবহার করতে পারি? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। এরপর সে দুই কি তিনবার জিজ্ঞাসা করল। প্রতিবারই তিনি বললেন, না-। এরপর তিনি বললেন- তার ইদ্দত তো চার মাস
দশদিন। অথচ জাহিলিয়্যা যুগে তোমাদের একজন মহিলা বছরান্তে উটের বিষ্ঠা নিক্ষেপ করত।
হুমায়দ (রাঃ) বলেন, আমি এ যায়নাবকে বললাম, এ যাবৎ উটের বিষ্ঠা নিক্ষেপ করবে তাৎপর্য কি
ছিল? তখন যায়নাব (রাঃ) বললেন, সে কালে কোন স্বামী ইন্তেকাল করলে তাকে একটি
সংকীর্ণ কক্ষে (কুঠূরিতে) প্রবেশ করতে হত। ছিড়ে-ফারা কাপড় চোপড় পরিধান করতে হত। সে
কোন প্রসাধনী দ্রব্য স্পর্শ করতে পারত না কিংবা অন্য কোন সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যবহার করত না।
এমনিভাবে একটি বছর কেটে যেত। এরপর তার সামনে আনা তে গাধা বকরী কিংবা পাখী জাতীয়
কোন প্রানী এবং সে ঐ প্রানীকে স্পর্শ করে ইদ্দত পূর্ণ করত। সে যে প্রানীকে স্পর্শ
করত তা খুব কমই বাঁচত। এরপর সে ঐ সংকীর্ণ থেকে বের হয়ে আসত। তখন তার হাতে উটের
বিষ্ঠা দেওয়া হত এবং সে তা মারত। এরপর সে তার পছন্দসই প্রসাধনী সূগন্ধি ইত্যাদি
ব্যবহারের প্রতি মনযোগী হত।
৩৫৯২। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) হুমায়দ ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে বণিত। তিনি বলেন, আমি যায়নাব বিনত উম্মু সালামাকে বলতে শুনেছি যে, উম্মু হাবীবা (রাঃ)-এর একজন নিকট আত্নীয়
ইন্তেকাল করেন। এপর তিনি হলুদ বর্ণের সুগন্ধি চেয়ে পাঠান এবং তার তার দুই বাহুতে
মেখে নিলেন। এরপর বললেন, আমি তা এ জন্য করলাম যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের
প্রতি ঈমান রাখে তার পক্ষে কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশী শোক পালন করা হানাল নয়।
তবে স্বামীর মৃত্যুতে চারমাস দশদিন শোক পালন করা যাবে। আর যায়নাব (রাঃ) এই
হাদীসখানা তার মা (উম্মু সালামা (রাঃ) এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সহধর্মিনা যায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৩৫৯৩। মুহাম্মদ ইবনুল
মূসান্না (রহঃ) হুমায়দ ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যায়নাব বিনত উম্মু সালামাকে তার মায়ের
সুত্রে বলতে শুনেছি যে, এক মহিলার স্বামী মারা গেল।
লোকেরা তার চোখের ব্যাপারে আশংকাবোধ করল। তখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে এলেন। তারা তাঁর কাছে মহিলার চোখে সূরমা ব্যবহারের অনুমতি চাইল। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহিলিয়্যা যুগে স্বামীর মৃত্যুতে
তোমাদের কেউ কেউ সাদা-মাটা কাপড় চোপড় কিংবা ছিড়ে-ফাড়া বস্ত্র পরিধান করে একটি
সংকীর্ণ কক্ষে পূরো এক বছর (ইদ্দত পালনের জন্য) অতিবাহিত করত। এরপর কোন কুকুর তার
নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে সে উটের বিষ্ঠা নিক্ষেপ করে বাইরে বের হায় পড়ত। এই
কুসংস্কারের পরিবর্তে চার মাস দশদিন পর্যন্ত প্রতীক্ষা করতে তোমরা কি সক্ষম হবে না?
৩৫৯৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) হুমায়দ ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি চোখে সূরমা ব্যবহার
সংক্রান্ত উম্মু সালামা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনাগণের মধ্যে থেকে কোন একজনের বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছেন।
তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন- “মুহাম্মদ ইবনু জাফর (রহঃ)
বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। যায়নাব তার নাম উল্লেখ করেননি।”
৩৫৯৫। আবূ বাকর ইবনু শায়বা ও
আমরুনূ নাকিদ (রহঃ) হুমায়দ ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যায়নাব বিনত আবূ
সালমাকে উম্মু সালামা ও উম্মু হাবীবা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা শুনেছেন। তারা
উল্লেখ করেন যে, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তিনি তার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) কাছে উত্থাপন করলেন যে, আমরা
মেয়ের স্বামী মারা গিয়েছে। (তার শোক পালন করতে গিয়ে) তার চোখে অসুখ হয়েছে। সে এখন
তার চোখে সূরমা ব্যবহার করতে চায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম (জহিলিয়্যা যুগে স্বামীর মৃত্যুতে) তোমাদের কেউ এক বছর পর্যন্ত উটের
বিষ্টা নিক্ষেপ করত। আর এখন তো মাত্র চার মাস দশ দিন।
৩৫৯৬। আমরুন নাকিদ ও ইবনু
আবূ উমর (রহঃ) যায়নাব বিনত আবূ সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সহধর্মিনী হাবীবা (রাঃ)-এর কাছে তার পিতা আবূ সুফিয়ানের ইন্তেকালের খবর পৌছল তখন
তৃতীয় দিনে তিনি হলুদ বর্ণের সুগদ্ধি চেয়ে পাঠালেন এবং তার দুই হাত গায়ে ভাল করে
তা মেখে নিলেন। আর বললেন, আমার এর কোন প্রয়োজন ছিল
না। তবে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস রাখে তার
পক্ষে কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল নয়। তবে স্বামীর মৃত্যুর
ব্যাপারটি স্বতন্ত্র। কেননা সে তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন শোক পালন
করবে।
৩৫৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ও ইবনু রুমহ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) কিংবা
আয়িশা (বা) থেকে পৃখকভাবে অথবা তাদের দু-জন থেকে যৌথভাবে বর্ণিত ষে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যে মহিলা আল্লাহ ও শেষবিচার
দিবসের প্রতি ঈমান রাখে কিংবা যে মহিলা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে তার
পক্ষে কোন মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন করা হালাল নয়। তরে তার সামীর
মূত্যুতে শোক পালন করবে।
৩৫৯৮। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে লায়স বর্ণিত হাদীসে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৩৫৯৯। আবূ গাসসান মিসমায়ী ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সাফিয়্যা বিনত আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী উমরের কন্যা হাফসা (রাঃ) নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। রাবী কর্তৃক বর্ণিত এ বর্ণনাটি
লায়স ও ইবনু দ্বীনার বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। তবে তার বর্ণনায় এতটুকু বেশি উল্লেখ
আছে “কারণ সে তার (স্বামীর) জন্য চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।”
৩৬০০। আবূর রাবী (রহঃ)
সাফিয়্যা বিনত আবূ উবায়দ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈক
সহধর্মিনী সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তাদের বর্ণিত
হাদীসের অনুরুপ।
৩৬০১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে মহিলা আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসের প্রতি ঈমান
রাখে সে যেন তার কোন মৃতের জন্য তিন দিনের অধিক শোক পালন না করে। তবে তার স্বামীর
মৃত্যুতে শোক পালন করবে।
৩৬০২। হাসান ইবনু রাবী (রহঃ)
উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলা তার কোন মৃতের জন্য তিন দিনের
বেশী শোক পালন করবে না। তবে তার স্বামীর মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত শোক
পালন করবে। এই সময় সীমায় ইদ্দতের মেয়াদকালে) সে রঙীন কাপড় চোপড় পরিধান করবে না।
তবে কালো রঙে রঞ্জিত চাঁদর পরিধান করতে পারবে। সে চোখে সুরমা লাগাবে না এবং কোন
সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং সে হায়িয থেকে পবিত্র হলে (পবিত্রতার নির্দশন স্বরুপ)
কুসূত ও আযফার নামক সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে।
৩৬০৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) এ সনদে হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমরুন নাকিদ ও ইয়াযীদ ইবনু হারুন
(রহঃ) বলেন, সে তার হায়িয থেকে পবিত্র
হওয়ার পর কুলত ও আযফার নামক সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাররে।
৩৬০৪। আবূর রাবী যাহরানী
(রহঃ) উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদিগকে
কোন মৃতের জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তরে স্বামীর
মৃত্যুতে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত শোক পালনের নিয়ম ছিল। আমরা চোখে (ইদ্দতকালীন)
সময়ে সুরমা লাগাতাম না, কোন প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য
ব্যবহার করতাম না এবং রঙীন কাপড়-চোপড় পরতাম না। তবে আমাদের মধ্য থেকে কোন মহিলা
যখন হায়িয থেকে পবিত্র হয়ে গোসল করত তখন দুর্গন্ধ দূর করার জন্য তাকে কুসৃত ও
আযফার নামক সুগন্ধি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হত।