৪৫৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জনগণ প্রশাসনিক ব্যাপারে কোরেশদের অনুসারী। মুসলিমরা তাদের মুসলমানদের এবং কাফেররা তাঁদের কাফেরদের অনুসারী।
৪৫৫১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফে” (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে সকল হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন তন্মধ্যে একটি হল যে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন এই ব্যাপারে কোরেশদের অনুসারী
মুসলিমরা মুসলিমদের অনুসারী এবং কাফেররা কাফেরদের অনুসারী।
৪৫৫২। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
লোকজন ভাল-মন্দ উভয় ব্যাপারেই কোরেশদের অনুসারী।
৪৫৫৩। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ কর্তূত্ব সর্বদা কোরায়শদের মধ্যেই
থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত দুনিয়ার দুটি লোকও বেচে থাকবে।
৪৫৫৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও রিফাই ইবনু হায়সাম ওয়াসেতী (রহঃ) সামুরা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ,
আমি আমার পিতার সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম।
তখন আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, শাসন ক্ষমতার ব্যাপারটা চলতে থাকবে যতক্ষন না
উম্মাতের মধ্যে বারজন খলীফা অতিবাহিত হবেন। তারপর তিনি অস্ফুট আওয়াজে কিছু-বললেনঃ, যা আমি
শুনতে পেলাম না। তখন আমি আমার-পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বললেন? তিনি বললেনঃ যে, তিনি বলেছেনঃ, তাদের সকলেই হবে কোরায়েশ বংশোধর।
৪৫৫৫। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মুসলিম শাসন থাকবে যতক্ষন না তাদের মধ্যে বারজন
শাসক শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। জাবির (রহঃ) বলেনঃ, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো
কিছু কথা বললেনঃ, যা
আমি শুনতে পাইনি। তাই আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন কি বলেছেন? তিনি বললেনঃ বলেছেন সবাই কোরায়শ বংশধর হবে।
৪৫৫৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি তাতে লোকদের মধ্যে শাসন
ক্ষমতা অব্যাহত গতিতে চলতে থাকবে কথাটির উল্লেখ করেননি।
৪৫৫৭। হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, বারজন
খলীফা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম প্রবল পরাক্রান্ত অবস্হায় চলতে থাকবে। তারপর
তিনি যে কি বললেনঃ,
আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন? তিনি বললেনঃ, বলেছেনঃ, তাদের সকলেই হবে কোরায়েশ বংশের।
৪৫৫৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ, প্রশাসন পরাক্রমশালী থাকবে বারজন খলীফা
পর্যন্ত। রাবী বলেনঃ,
তারপর তিনি কিছু বললেনঃ, যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি আমার
পিতাকে-জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
বললেন? তিনি
বললেনঃ, বলেছেনঃ
তাঁদের সকলেই হবে কোরায়শ থেকে।
৪৫৫৯। নসর ইবনু আলী জাহযামী আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। আমার সাথে আমার পিতাও ছিলেন। আমি তখন তাকে বলতে শুনলাম, এ ধর্ম
পরাক্রান্ত, সংরক্ষিত
থাকবে বারজন খলীফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। তারপর তিনি কোন কথা বললেনঃ, লোকজনের
কথাবার্তার দরুন আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে বললাম, তিনি কি
বললেন? তিনি
বললেনঃ, বলেছেনঃ, তাদের
সকলেই হবে কোরায়েশ বংশের লোক।
৪৫৬০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আমর ইবনু সা’দ ইবনু
আবূ ওয়াক্কাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) এর নিকট আমার
গোলাম নাফি’ মারফত পত্র পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কিছু সম্পর্কে অবহিত করুন যা
আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছেন। রাবী বলেনঃ, তিনি আমাকে
লিখলেন: জুমার দিন সন্ধ্যায় যে দিন (মায়েজ) আসলামীকে রজম করা হয়, সেদিন আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, এ দিন
অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতক্ষন কিয়ামত কায়েম হয় অথবা তোমরা বারজন খলীফা
কর্তৃক শ্বাসিত হও,
ঐদের সকলেই হবে কোরায়শ থেকে। আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, মুসলমানদের
একটি ছোট দল জয় করবে শ্বেতভবন যা কিসরা কিংবা কিসরা বংশের মহল। আমি আরও বলতে
শুনেছি, “কিয়ামতের
প্রাক্কালে অনেক মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে।” আমি তাঁকে
আরও বলতে শুনেছি তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং
তার পরিবারস্হ লোকজনকে দিয়ে ব্যয় শুরু করবে।” আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি, “হাওযে
(কাওসারে) আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো।”
৪৫৬১। মূহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আমর ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি
ইবনু সামুরা আদবীর নিকট চিঠি পাঠান যে, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন তা বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি পরবর্তী অংশ হাতীমের
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৫৬২। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, আমার
পিতা যখন আহত হলেন তখন আমি তার কাছে গিয়ে হাযির হলাম। লোকজন তাঁর প্রশংসা করল
তারপর বললো, আল্লাহ
আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন! তিনি তখন বললেনঃ, আমি আশাবাদী ও সন্ত্রস্ত। তখন লোকেরা বললো, আপনি কাউকে
খলীফা মনোনীত করে যান। তখন তিনি বললেনঃ, আমি কি জীবিত ও মৃত উভয় অবস্হায়ই তোমাদের
বোঝা বহন করব? আমার
আকাংখা খিলাফতের ব্যাপারে আমার ভাগ্যে শুধু নিস্কৃতি জুটুক। আমার উপর কোন অভিযোগও
অর্পিত না হোক, আর
আমি লাভবানও না হই। আমি যদি কাউকে খলীফা মনোনীত করি (তবে তার দৃষ্টান্ত আছে) কেননা, আমার চাইতে
যিনি উত্তম ছিলেন তিনি (অর্থাৎ আবূ বাকর (রাঃ) খলীফা মনোনীত করে গিয়েছেন, আর যদি আমি
তোমাদের (খলীফা মনোনীত করা ছাড়াই) ছেড়ে যাই, তবে আমার উত্তম যিনি ছিলেন (অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন। রাবী আবদুল্লাহ ইবনু
উমার) বলেনঃ তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা উল্লেখ
করলেন তখনই আমি বুঝে গেলাম যে, তিনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না।
৪৫৬৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মদ রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি হাফসা (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন
তিনি বললেনঃ, তুমি
কি জান যে, তোমার
পিতা কাউকে খলীফা মনোনীত করছেন না-। আমি বললাম, তিনি এমনটা করবেন না। তিনি বললেনঃ, তিনি তাই
করবেন। ইবনু উমার (রাঃ) বললেনঃ, তখন আমি এ মর্মে শপথ করলাম যে, আমি অবশ্যই
এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলাপ করবো। এরপর আমি নীরব থাকলাম। পরের দিন ভোর পর্যন্ত
আমি তাঁর সঙ্গে তা আলাপ করলাম। রাবী বলেনঃ, আমার মনে হলো যেন, আমি আমার
শপথের পাহাড় বহন করেছি। অবশেষে আমি ফিরে এলাম এবং তাঁর (অর্থাৎ . উমার (রাঃ) এর
কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে “ লোকদের অবস্হা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমি
তাকে তা অবহিত করলাম। তারপর আমি তাঁকে বললাম, আমি লোকজনকে একটি কথা বনাবলি করতে শুনে আমি তা
আপনাকে বলবো বলে শপথ করেছি। লোকেরা বলছে যে, আপনি কাউকে খলীফা মনোনীত করবেন না। অথচ আপনার
যদি কোন উট-রাখাল বা ছাগল রাখাল- থাকে আর সে তার পাল পরিত্যাগ করে আপনার কাছে চলে
আসে, তা
হলে আপনি মনে করবেন যে, সে পশুপালের সর্বনাশ করেছে। মানুষের
রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারটি তার চাইতেও গুরুতর। আমার কথা তার অন্তরে রেখাপাত করলো
এবং তিনি কিছুক্ষণ মাথা নত করে রইলেন। তারপর মাথা তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ, অবশ্যই
মহিমান্বিত ও গৌরব মণ্ডিত আল্লাহ তাঁর দ্বীনের হিফাযত করবেন। আমি যদি কাউকে খলীফা
মনোনীত না করি তবে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তো
কাউকে খলীফা মনোনীত করে যাননি। আর যদি আমি কাউকে খলীফা মনোনীত করি তবে আবূ বাকর
(রাঃ) খলীফা মনোনীত করে গেছেন। তিনি বলেনঃ, আল্লাহর কসম! তিনি যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর (রাঃ) এর কথা উল্লেখ করলেন, তখনই আমি
বুঝে ফেলি যে, তিনি
আর কাউকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সমকক্ষ করবেন না এবং তিনি
কাউকে খলীফাও মনোনীত করবেন না
৪৫৬৪। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদূর রাহমান ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ, হে, আবদুর
রাহমান! তুমি শাসন ক্ষমতা চাইবে না। কেননা, যদি তুমি তোমার চাওয়ার মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হও, তবে তার
দায়িত্ব তোমার উপর ন্যস্ত হবে। আর যদি তুমি চাওয়া ব্যতীত তা প্রাপ্ত হও, তবে এ
ব্যাপারে তুমি (আল্লাহর তরফ থেকে) সাহায্য পাবে।
৪৫৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ কামিল
জাহদারী (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) এর সুত্রেও অনুরুপ হাদীস বর্ণিত
হয়েছে।
৪৫৬৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, (একদা) আমি এবং আমার দু-চাচাত ভাই নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলাম। ঐ দুই ব্যক্তির একজন বললো, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সমস্ত রাজ্যের কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন তার
কতেক অংশে আমাদেরকে আমীর নিযুক্ত করুন। অপরজনও অনুরুপ বললো। তখন তিনি বললেনঃ
আল্লাহর কসম! আমরা এমন কাউকে নের্তৃত্বে আসীন করিনা, যে তার জন্য প্রার্থী হয় এবং যে তার জন্য লালায়িত
হয়।
৪৫৬৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ (একদা) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার সাথে আশআরী বংশের দু-জন লোক ছিল। তাদের একজন আমার
ডানে অপর জন আমার বামে ছিল। তাদের দু-জনই (পদে) নিযুক্তি প্রার্থনা করলো। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মেসওয়াক করছিলেন। তখন তিনি (আমাকে লক্ষ্য করে
বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস! তুমি কি বল? তিনি বলেনঃ, আমি বললাম, যে পবিত্র
সত্তা আপনাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে পাঠিয়েছেন, তার কসম!
তাদের অন্তরে যে কি রয়েছে সে সম্পর্কে তারা আমাকে মোটেও অবহিত করেনি, “ আর আমি
মোটেও টের পাইনি যে,
তারা আপনার কাছে (পদে) নিযূক্তি প্রার্থনা করবে। রাবী বলেনঃ, আমি যেন
(স্পষ্টই) তাঁর ওষ্ঠ মোবারকের নীচে মেসওয়াক দেখতে পাচ্ছি তখন তিনি বললেনঃ আমরা
আমাদের কোন কাজে কখনো এমন লোককে নিযূক্তি প্রদান করিনা- যে তার জন্য লালায়িত।
বরং তুমি যাও হে আবূ মূসা অথবা তিনি বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস! এবং তাঁকে
ইয়েমেনের গভর্ণর করে পাঠালেন। এরপর তিনি মুয়ায ইবনু জাবালকে তাঁর সাহায্যার্থে
পাঠালেন। তিনি (মূয়ায) যখন তার (আবূ মূসার) নিকট গিয়ে পৌছলেন, তখন তিনি
বললেনঃ অবতরণ করুন এবং সাথে সাথে তিনি একটি আসন পেতে দিলেন। তখন তার নিকট হাত পা
বাঁধা অবস্হায় একটি লোক ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন:এ লোকটি কে? জবাবে তিনি
বললেনঃ, লোকটি
প্রথমে ইয়াহুদী ছিল,
তারপর সে ইসলাম গ্রহণ করো এরপর সে আবার তার বাতিল ধর্মে ফিরে যায় এবং ইয়াহুদী
হয়ে যায়। মুয়ায (রাঃ) বললেনঃ, যতক্ষন আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর বিধান অনুসারে, তাকে হত্যা করা না হবে, ততক্ষন আমি
বসবো না। এরুপ তারা তিনবার বলাবলি করলেন। এরপর তিনি তাকে হত্যার নির্দেশ দিলেন-
এবং তাকে হত্যা করা হলো। তারপর তারা রাত্রি জাগরণ (তাহাজ্জুদ) সম্পর্কে পরস্পরের
আলাপ আলোচনা করলেন। তাদের দুজনের মধ্যে মু’আয (রাঃ) বললেনঃ- আমার অবস্হা হচ্ছে এই
যে, আমি
(রাত্রির কতক অংশে) নিদ্রাও যাই আবার (কতক অংশে) ইবাদতে জাগারণও করি, এবং আমার
নিদ্রায়ও সেরুপ সাওয়াবই প্রত্যাশা করি যেরুপ সাওয়াব প্রত্যাশা করি আমার জাগরগ ও
ইবাদতে।
৪৫৬৮। আবদুল মালিক ইবনু শুআইব ইবনু লাইস (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
আরয করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমাকে এ নিযূক্তি (প্রশাসক পদে) প্রদান করবেন।
রাবী বলেনঃ, তিনি
তখন তার পবিত্র হাতে আমার কাঁধে আঘাত করে বললেনঃ হে আবূ যার! তুমি দূর্বল অথচ এটা
হচ্ছে একটা আমানতী। আর কিয়ামতের দিন এ হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এর হক
পুরোপুরি আদায় করবে তার কথা স্বতন্ত্র।
৪৫৬৯। যুহায়র ইবনু হারব এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে লক্ষ্য করে) বললেনঃ হে আবূ যার! আমি দেখছি
তুমি দূর্বল আর আমি তোমার জন্য তাই পছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য পছন্দ করি। কোন দুই ব্যক্তির
উপরও কর্তৃত্বেতের দায়িত্ব গ্রহণ করোনা এবং ইয়াতীমের সম্পদের মুতাওয়াল্লীও (পারত
পক্ষে) হতে যেয়ো না।
৪৫৭০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ন্যায় বিচারকগণ (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকটে নূরের মিম্বর সমূহে
মহিমান্বিত দয়ার প্রভূর ডানপার্বে উপবিষ্ট থাকবেন। আর উভয় হাতই ডান হাত (অর্থাৎ
সমান মহিমান্বিত)। সেই ন্যায়পরায়ণ হচ্ছে ঐ সব লোক, যারা তাদের শাসনকার্যে তাদের পরিবার পরিজনের
ব্যাপারে এবং তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব সমূহের ব্যাপারে সূবিচার করে।
৪৫৭১। হারশি ইবনু সাঈদ আয়েলী (রহঃ) আবদুল রহমান ইবনু শুমাসাহ (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
আমি একদা আয়িশা (রাঃ) এর নিকট কোন এক ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য গেলাম। তখন
তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কোথাকার লোক? আমি জবাব দিলাম, আমি একজন মিসরবাসী। তখন তিনি আবার জিজ্ঞাসা
করলেন তোমাদের সেই গূহ যুদ্ধকালীন গভর্ণর (মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর) কেমন লোক
ছিলেন? রাবী
বলেনঃ, আমরা
তো- তার নিকট থেকে কোন অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা লাভ করিনি। যদি আমাদের কোন ব্যক্তির
উট মারা যেতো তিনি তাকে উট দিতেন। গোলাম মারা গেলে গোলাম দিতেন- কারো জীবিকার
প্রয়োজন হলে তিনি তাকে জীবিকা প্রদান করতেন। তখন তিনি বললেনঃ আমার সহোদর মুহাম্মাদ
ইবনু আবূ বকরের সাথে যে ব্যাবহার করা হয়েছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে আমার এই ঘরে যা বলতে শুনেছি তা তোমাকে অবহিত করা থেকে আমাকে বিরত
রাখতে পারছিনা (তিনি বলেছিলেন) হে আল্লাহ! যে আমার উম্মাতের কোনরুপ কর্তৃত্ব ভার
লাভ করে এবং তাদের প্রতি রুঢ় আচরণ করে তুমি তার প্রতি রুঢ় হও, আর যে আমার
উম্মাতের উপর কোনরুপ কর্তৃত্ব ভার লাভ করে তাদের প্রতি নমর আচরণ করে তুমি তার
প্রতি নমর ও সদয় হও।
৪৫৭২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫৭৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমূহ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-এর
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তোমাদের
প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্হ্যদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। আমীর বা নেতা তার অধীনস্হ লোকদের উপর দায়িত্ববান এবং সে তাদের সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্ববান এবং সেঁ
তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের উপর দায়িত্ববান- সে
সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। গোলাম তার মুনিবের মাল সস্পদের উপর দায়িত্ববান, সে
সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ওহে! তোমাদের প্রত্যেকেই (স্ব-স্ব স্থানে) এক এক জন
দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৪৫৭৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ইবনু নুমায়র, ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ সকলেই
উবাযুদুল্লাহ ইবনু উমার থেকে অন্য সনদে আবূ রাবী ও আবূ কামিল, যূহায়র
ইবনু হারব মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই নাফি” (রহঃ)-এর
সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৫৭৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইযুব, কুতায়বা
ইবনু সাঈদ, ইবনু
হুজর ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে আমি বলতে শুনেছি,
তারপর নাফি (রহঃ) সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদী সের মর্মানূযায়ী
বর্ণনা করতে শুনেছি। যুহরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেনঃ আমার মনে হয় নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষ তার পৈত্রিক সম্পদের উপর দায়িত্ববান এবং
সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
৪৫৭৬। আহমদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওহহাব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর
সুত্রে এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৪৫৭৭। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) হাসান (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, উবায়দুল্লাহ
ইবনু যিয়াদ মাকিল ইবনু ইয়াসার মুযানীকে তাঁর মৃত্যুরোগে আক্রান্ত অবস্হায় দেখতে
যান। তখন মা’কিল তাকে বলেনঃ আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে আমার শ্রুত হাদীস বর্ণনা করবো। যদি আমি জানতাম যে, আমার আরও
আয়ু আছে তবে আমি তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে বান্দাকে আল্লাহু কোন প্রজাকুলের উপর
দায়িত্বশীল করেছেন অথচ সে যখন মারা যায় তখনও সে তার প্রজাকুলের প্রতি প্রতারণাকারী
থাকে তবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দেন।
৪৫৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু
যিয়াদ (রহঃ) মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-এর কাছে উপনীত হলেন। তিনি তখন শুরু তর পিড়ায়
ভূগছেন। তারপর আবূল আশহাব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের -অনুরুপ বর্ণনা করেন। রাবী
অতিরিক্ত এও বলেছেনঃ,
আপনি আজকের আগে এ হাদীস আমার কাছে ব্যক্ত করেননি কেন? তিনি বলেনঃ, আমি পূর্বে
তোমার কাছে ব্যক্ত করিনি, অথবা বলেছেন আমি তা তোমার কাছে ব্যক্ত করতে
চাইনি।
৪৫৭৯। আবূ গাসসান মিসমাঈ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
(রহঃ) আবূ মালীহ (রাঃ) থেকে রর্ণিত যে, উবায়ধূল্লাহ ইবনু যিয়াদ মাকিল (রহঃ) ইবনু
ইয়াসার (রাঃ)-এর পিড়িত অবস্হায় তার কাছে যান। তখন মাকিল (রাঃ) তাঁকে লক্ষ্য করে
বলৃলেন, আমি
এমন একটা হাদীস তোমার কাছে বর্ণনা করবো যে, যদি আমি মৃত্যুর মুখোমুখি না হতাম তবে তোমার
কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে
শুনেছি, এমন
আমীর যার উপর মুসলিমদের শাসনভার অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টিত
না হয় বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাকে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
না।
৪৫৮০। উকবা ইবনু মুকাররাম আম্মী (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মা’কিল
ইবনু ইয়াসার (রাঃ) পিড়িত হলেন। তখন উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রাঃ) তাঁর রোগ শয্যায়
দেখতে যান। অবশিষ্ট অংশ মা’কিল- থেকে হাসান বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
৪৫৮১। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈক সাহাবী আয়েব ইবনু আমর (রাঃ) একদা
উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়ার (রহঃ)-এর কাছে গেলেন। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন, বৎস! আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি নিকৃষ্টতম রাখাল
হচ্ছে অত্যাচারী শাসক। তুমি তাদের অন্তর্তুক্ত হওয়া থেকে সাবধান থাকবে। তখন সে
বললো, বসে
পড়! তুমি হচ্ছো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের ভূষি স্বরুপ।
জবাবে তিনি বললেনঃ,
তাঁদের মধ্যেও কি ভূষি রয়েছে? ভূষি তো তাদের পরবর্তীদের এবং অন্যান্যদের
মধ্যে।
৪৫৮২। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালেন
এবং গনীমতের মাল আত্নসাত প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন। তিনি এর উপর যথেষ্ট শুরু ত্ব
আরোপ করলেন। তারপর বললেনঃ আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামত দিবসে যেন এমন অবস্থায়
উপস্থিত না পাই যে,
চিৎকাররত উট তার ঘাড়ের উপর সাওযার আর সে ফরিয়াদ করছে, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন! যখন আমি বলবো: তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার
ক্ষমতা নেই। আমি (এর পূর্বেও) তোমাকে (এ ব্যাপারে) জানিয়ে ছিলাম। আমি তোমাদের
কাউকে কিয়ামতের দিন যেন এমন অবস্হায় উপাস্থিত না পাই যে, চিৎকাররত
ঘোড়া তার কাঁধের উপর সাওয়ার আর সে ফরিয়াদ করছে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। তখন আমি
বলবোঃ তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই, আমি তো (এর পূর্বে) তোমাকে (এ ব্যাপারে)
জানিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাদের কাউকে যেন কিয়ামত দিবসে এমন অবস্হায় উপস্থিত না পাই যে, কোন
আর্তনাদরত ব্যক্তিকে সে বয়ে নিয়ে আসছে আর ফরিয়াদ করবে, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি বলবোঃ তোমার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র
কিছু করার নেই। আর আমি (ইতিপূর্বেই তা) তোমার নিকট প্রচার করেছি। আমি তোমাদের
কাউকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্হায় যেন উপস্থিত না পাই যে, তার ঘাড়ের
উপর পতপত করে কাপড় উড়ছে আর সে ফরিয়াদ করছে, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি
বলবো যে, তোমার
ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। আমি তো (ইতি পুর্বেই তা) তোমাকে জানিয়ে রেখেছি। আর
এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের
দিন তোমাদের মধ্যকার কাউকে এ অবস্হায় পাই যে, তার ঘাড়ে স্বর্ণ, রৌপ্য নিয়ে আসবে আর ফরিয়াদ করবে, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আর আমি” বলবোঃ আমার তোমাকে সাহায্য করার কোন
সাধ্য নেই, আমি
তো (পূর্বেই সে বিষয়ে) তোমাকে অবহিত করে এসেছি।
৪৫৮৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে ইসমাঈল (রহঃ)-এর সুত্রে আবূ হাইয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেন।
৪৫৮৪। আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু শাখর দারেমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল আত্নসাত করণ এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে
উল্লেখ করেন। এভাবে তিনি পূর্ণ হাসীস বর্ণনা করেন।
৪৫৮৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাসান ইবনু খাওয়াশ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত রাবীদের বর্নিত হাদাসের অনুরুপ, বর্ননা
করেন।
৪৫৮৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ-শায়বা, আমর নাকিদ (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ
হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসা’দ
গোত্রের জনৈক ব্যক্তিকে কর্মচারী নিযুক্ত করলেন- যাকে ইবনুল রৎবিয়া নামে অভিহিত
করা হতো। রাবী আমর ও ইবনু আবূ উমার বলেনঃ, সাদাকাত উসূলের জন্য। যখন সে ব্যক্তি ফিরে এলো
তখন সে বললো, এটা
আপনাদের (অর্থাৎ বায়তুল মালের) এবং ওটা আমাকে উপটোকন হিসেবে দেয়া হয়েছে। রাবী
বলেনঃ, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর
প্রশংসা করার পর বললেনঃ সে কর্মচারীর কি হলো, যাকে আমি (তহশীলদার রুপে) প্রেরণ করি, আর সে বলে!
ওটা আপনাদের আর এটা আমাকে উপটোকন দেয়া হয়েছে। সে তার পিতার বা মাতার ঘরে বসে থেকে
দেখে না কেন যে তাকে উপটোকন দেয়া হয় কিনা? মুহাম্মাদের প্রাণ যে পবিত্র সত্তার হাতে তাঁর
কসম! যে, কেউ
এরুপ সম্পদের কিছুমাত্র কুক্ষিগত করবে, কিয়ামতের দিন তাই সে তার ঘাড়ে বহন করে নিয়ে
আসবে। তার ঘাড়ের উপর চিৎকার রত উট হবে অথবা হাম্বা-হাম্বারত গাভী হবে অথবা
চিৎকাররত বকরী হবে। তারপর তিনি দুহাত ঊধর্ব দিকে উঠালেন, এমন কি তার
বগল মুবারকের শুভ্রতা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি
তোমার নির্দেশ পৌছিয়ে দিয়েছি একথা তিনি দু-বার বললেন।
৪৫৮৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ রমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের ইবনুল লুৎবিয়া নামক এক
ব্যক্তিকে সাদাকা উসুলের উদ্দেশ্য কর্মচারী নিয়োগ করেন। সে যখন (সাদাকার উসূল কৃত)
মালামাল নিয়ে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অর্পণ করলো, তখন সে
বললো, এগুলো
হচ্ছে আপনাদের, আর
ওটা আমাকে উপটোকন স্বরুপ দেয়া হয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তুমি তোমার পিতা-মাতার ঘরে বসে থেকে দেখলে না কেউ তোমার জন্য উপটোকনাদি
প্রেরিত হয় কিনা? তারপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিতে দাড়ালেন। এরপর রাবী সুফিয়ান (রহঃ)
বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ননা দেন।
৪৫৮৮। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে বনূ
সূলাইম গোত্রের সাদাকা উসূল করার জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করেন। লোকটিকে ইবনু
উৎবিয়া বলে ডাকা হতো। যখন সে (কাজ সস্পাদন করে) আসলো, তখন তিনি
তার হিসাব-নিকাশ চাইলেন। সে বলছেন এগুলো হচ্ছে আপনাদের মাল আর ওটা (আমাকে প্রদত্ত)
উপটোকন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার
পিতামাতার ঘরে বসে থাকলেন না কেন? তোমার উপটোকন এসে পৌছে যেতো যদি তুমি সত্যবাদী
হওঁ। তারপর আমাদেরকে লক্ষ্য করে খূৎবা দিলেন। তাতে আল্লাহর প্রশংসা করে বললেনঃ আমি
তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তিকে কোন কাজে নিযুক্ত করি যার দায়িত্ব আল্লাহ আমার উপর
বর্তিয়েছেন। তারপর সে (কর্ম সম্পাদন করে) এসে বলে, এটা আপনাদের মাল আর এটা আমাকে উপটোকন স্বরুপ
দেয়া হয়েছে। সে কেন তার পিতামাতার ঘরে বসে রইলো না। তার উপটোকন সেখানে তার কাছে
এসে পৌছতো, যদি
সে সত্যবাদী হয়ে থাকে। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যকার যে কেউ তার প্রাপ্য
ব্যতিরেকে সে সব সম্পদের অংশবিশেষও কুক্ষ্ণিগত করবে, কিয়ামতের দিন সে তা বহন করে, আল্লাহ
তায়াআলার সমীপে উপস্থিত হবে। তোমাদের মধ্যকার যে কেউ চিৎকাররত উট, গাভী বা
বকরী বহন করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে,”-আমি তাকে সম্যক চিনতে পারবো। তারপর তিনি দু-হাত
এমনিভাবে ঊধের্ব তূললেন যে তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা গেল। তিনি বলছিলেনঃ হে
আল্লাহ! আমি কি (তোমার নির্দেশ) পৌছিয়ে দিয়েছি! (রাবী বলেনঃ, সে
দৃশ্যটি) আমার চোখ দেখেছে এবং সে বক্তব্য আমার কান শুনেছে।
৪৫৮৯। আবূ কুরাইব,
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) বলেনঃ, সুফিয়ান
(রহঃ) সুত্রে হিসাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদেও উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত আছে। আবওদা
ইবনু নুমায়ের (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে আবূ উসামা (রহঃ) এর বর্ণনার অনুরুপ উল্লেখ
আছে যে “সে যখন এলো তখন তার থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসাব
নিলেন। ইবনু নূমায়ের (রহঃ) এর হাদীসে বর্ণিত আছে তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহর
কসম! যার হাতে আমার প্রাণ তোমাদের মধ্যে এর কিছুই আত্মসাৎ করে না। সুফিয়ান (রহঃ)
বলেনঃ আমার দুটি চোখ দেখেছে, আমার দুটি কান শুনেছে। যমুয়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ)
কে তোমরা জিজ্ঞাসা কর, কেননা তিনি তখন আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন।
৪৫৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে সাদাকা উসূলের জন্য কর্মচারী নিমুক্ত
করেন। সে প্রচুর মাল নিয়ে আসলো আর বলতে লাগলো যে এটা আপনাদের আর ওটা আমাকে
উপটোকন দেয়া হয়েছে। তারপর রাবী অনুরুপ বর্ণনা করেন। রাবী উরওয়া (রাঃ) বলেনঃ, আমি আবূ
হুমায়দ সা’দী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি নিজে কি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে শুনেছেন? জবাবে তিনি বললেনঃ তাঁর পবিত্র মুখ থেকে সরাসরি
আমার কানে শুনেছি।
৪৫৯১। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আদী ইবনু উমাইরা আলকিন্দী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে
শুনেছি। আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে তহশীলদার নিযুক্ত করি, আর সে একটি
সূঁচ পরিমান বা তার চাইতেও স্বল্প মাল আমাদের নিকট গোপন করে, তাই আত্নসাত
বলে গণ্য হবে এবং তা নিয়েই কিয়ামতের দিন সে উপস্থিত হবে। রাবী বলেনঃ, তখন একজন
কৃষ্ণকায় আনসারী (সাহাবী) তাঁর দিকে অগ্রসর হালন আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি তিনি
আরয করলেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার দায়িত্বভার আপনি বুঝে নিন। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? তিনি আরয
করলেন, আমি
আপনাকে এরুপ এরুপ (কঠিন ভাষা) বলতে শুনেছি। তখন তিনি বললেনঃ আমি এখনও বলছি, তোমাদের
মধ্যকার যাকেই আমি কর্মচারী নিযুক্ত করি আর সে অল্প বিস্তর যা-ই উসূল করে এনে
হাযির করে, তারপর
তাকে যাই দেয়া হয় তাই গ্রহণ করে এবং যা থেকে বারণ করা হয় তা থেকে বিরত থাকে (তার
জন্য ভয়ের কারণ নেই)।
৪৫৯২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)
ইসমাঈল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৫৮৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আদী ইবনু আমীর আলকিন্দী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অনুরুপ বলতে শুনেছি।
৪৫৯৪। যুহায়র ইবনু হারব ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু জুবায়জ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (মহান আল্লাহর নামে) হে ঈমাদারগণ! আল্লাহ- ও রাসুল এবং তোমাদের
মধ্যকার শাসকের আনুগত্য করবে”- আয়াত খানা আব্দুরসাহ ইবনু হুযায়ফা ইবনু কায়েস ইবনু
আদী নাহমী (রাঃ)-এর শানে নাযিল হয়েছে। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে একটি সামরিক অতিযানে প্রেরণ করেছিলেন। ইয়ালা ইবনু মুসলিম, সাঈদ ইবনু
জুবায়রের সুত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে এ হাদীস খানা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন।
৪৫৯৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য
করলো, সে
আল্লাহর আনুগত্য করলো আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো। যে
ব্যক্তি-আমীরের আনুগত্য করে সে আমারই আনুগত্য করলো আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা
করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো।
৪৫৯৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে তিনি যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো
অংশটূকু উল্লেখ করেননি।
৪৫৯৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি। বলেনঃ যে আমার আনুগত্য করলো, সে
আল্লাহরই আনুগত্য করলো। আর যে আমার অবাধ্যতা করলো সে আল্লাহরই অবাধ্যতা করলো। আর
যে ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের আনুগত্য করলো সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে
ব্যক্তি আমার নিযুক্ত আমীরের অবাধ্যতা করলো সে আমারই অবাধ্যতা করলো।
৪৫৯৮। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৪৫৯৯। আবূ কামিল জাহদারী উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায, মুহাম্মাদ
ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রাবী গণের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৬০০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
৪৬০১। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে এ হাদীসে আমীরী শব্দ স্থলে আমীর শব্দ
উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরুপ ভাবে হাম্মাম (রহঃ) এর সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত আছে।
৪৬০২। সাঈদ ইবনু মনসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি অবশ্যই আমীরের কথা
শুনবে এবং মানবে তোমার সংকট কালেও সাচ্ছন্দ্যের সময়, অনুরাগ ও
বিরাগে এবং যখন তোমার উপর অন্যকে অগ্নাধিকার দেয়া হচ্ছে তখনও।
৪৬০৩। বাকর ইবনু আবূ শায়রা ও আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার পরম বন্ধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন। আমি যেন (আমীরের নির্দেশ) শুনি ও মানি যদি
আমীর হাত পা কাটা গোলামও হয়।
৪৬০৪। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) বর্ণিত রেওয়ায়েতে আছে “হাত-পা কাটা কাফ্রী
গোলামও যদি আমীর হয়।
৪৬০৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে “হাত পা কাটা গোলাম”।
৪৬০৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
আমার দাদী থেকে শুনেছি, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
বিদায় হজ্জের ভাষণদান কালে তাকে বলতে শুনেছেনঃ যদি তোমাদের উপর একজন গোলামকেও
কর্মকর্তা নিযূক্ত করা হয় আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুসারে পরিচালনা করে, তবে তোমরা
তার কথা শুনবে এবং মানবে”।
৪৬০৭। ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে “কাফ্রী গোলাম”
শব্দটি আছে।
৪৬০৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বার বর্ণনায় আছে “হাত পা কাটা হাবশী গোলাম”।
৪৬০৯। আব্দুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) বর্ণিত রেওয়াতে “হাত-পা কাটা হাবশী
শব্দদ্বয়ের উল্লেখ নেই। তাতে বর্ধিত বর্ণনা এতটুকু আছে। তিনি (বর্ণনাকারিনী
ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়নের দাদী) মিনায় ও আরাফাতে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে এরুপ বলতে শুনেছেন।
৪৬১০। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন এর দাদী উম্মুল হুসায়ন
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী ইয়াহইয়া ইবনুু-হুসাইন বলেনঃ যে, আমি তাকে
বলতে শুনেছি আমি বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে
হজ্জ আদায় করি। তিনি (রাবী) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন
অনেক কথাই বলেছিলেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদি তোমাদের উপর কোন হাত পা কাটা গোলামকেও
আমীর নিযূক্ত করা হয় (ইয়াহইয়া ইবনু হুসাইন বলেনঃ)- আমার ধারণা হয় তিনি (দাদী আরও)
বলেছেনঃ- কালো (অর্থাৎ কৃষ্ণকায় হাবশী গোলাম) আর সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব
অনুসারে পরিচালিত করে তবে তোমরা তার কথা শুনবে এবং মানবে।
৪৬১১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য পালনীয়
কর্তব্য হচ্ছে। শোনা ও মানা তার প্রতিটি প্রিয় ও অপ্রিয় ব্যাপারে-যাবৎ না তাকে
আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ করা হয়। যদি আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ তাকে দেয়া হয় তা
হলে তা শুনতে হবে না,
মানতে হবে না।
৪৬১২। যুহায়র ইবনু হারব, এবং মুহামবিন মূসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)
উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬১৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ
করেন এবং এক ব্যক্তিকে তার আমীর নিযুক্ত করে দেন। সে একটা অঁগুন প্রজ্জলিত করলো
এবং তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দিতে নির্দেশ দিল। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হলো এবং
অপর একদল বললো, আমরা
(ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তো) আগুন থেকেই আত্নরক্ষা করেছি। (সূতরাং অণ্ডিনে ঝাপ
দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা) যথা সঁময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
দরবারে সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো। তখন তিনি যারা আগুনে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হয়েছিল
তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তখন তোমরা যদি সত্যি সত্যি আগুনে ঝাঁপ দিতে তবে
কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাতেই অবস্হান করতে। পক্ষান্তরে অপরদলকে লক্ষ্য করে তিনি উত্তম কথা
বললেনঃ। তিনি বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবলই সৎ কাজে।
৪৬১৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হাবর এবং আবূ সাঈদ আশাজ (রহঃ) আলী
(রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোন এক অভিযানে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং জনৈক আনসারীকে তাদের আমীর নিযুক্ত
করে দিলেন। তাদেরকে তার কথা শুনতে ও আনুগত্য করতে আদেশ করলেন। তারপর কোন ব্যাপারে
তারা তাকে রাগিয়ে তুলল। সে তখন বললো, আমার জন্য কাঠ কুড়িয়ে এনে একত্রিত করো। তারা তা
করলো। এরপর সে বললো,
আগুন প্রজ্জ্বলিত কর। তখন তারা আগুন প্রজ্জ্বলিত করল তারপর সে বললো, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার কথা শুনতে এবং আমার আনুগত্য
করতে নির্দেশ দেননি?
তারা বললো, জী
হ্যা। তখন সে বললো,
তাহলে তোমরা এবারও এ আগুনে ঝাপ দাও। তখন তারা পরস্পরে পরস্পরের দিকে তাকাতে
শুরু করলো। তারপর তারা জবাব দিলো- আমরা তো এ আগুন থেকে বাঁচাবার জন্যই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্বরণ নিয়েছি। তারা আগুনে ঝাপ
দিলেন না। তার ক্রোধ প্রশমিত হলো এবং আগুন নিভিয়ে দেয়া হলো। তারপর যখন তারা ফিরে
এলো এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রসঙ্গটি বর্ণনা করলো তখন
তিনি বললেনঃ যদি তারা তখন আগুনে ঝাঁপ দিতো, তা হলো আর বেরোতে পারতো না। আনুগত্য কেবল
পূণ্য কাজে।
৪৬১৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আতমাশ (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
৪৬১৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত হলাম এ মর্মে যে, আমরা শুনবো
ও মানবো, সংকটের
সময় ও সাচ্ছন্দের সময়,
অনুরাগে ও বিরাগে এবং আমাদের উপর অন্যদের প্রধান্য দিলেও। আর এ মর্মে যে, আমরা যোগ্য
ব্যক্তির নেতৃত্ব বরণ করে নিতে কোনরুপ কোন্দল করবো না। আর এ মর্মে যে, আমরা
যেখানেই থাকবো হক কথা বলব। আল্লাহর ব্যাপারে কোন ভৎসনাকারীর ভৎসনাকে ভয় করবো না।
৪৬১৭। ইবনু নুমায়র (রহঃ) উবাদা ইবনু ওলীদের হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
৪৬১৮। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
বলেছেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত হই। এরপর
ইবনু ইদ্রীস-এর হাদীসে অনুলীপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬১৯। আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওহাব ইবনু মুসলিম (রহঃ) নাদা ইবনু আবূ
উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ, আমরা উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর খেদমতে গেলাম।
তখন তিনি রোগগ্রস্ত। আমরা আরয করলাম, আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আমাদেরকে এমন কোন
হাদীস বলুন- যদ্দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে উপকৃত করবেন; যা আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে শুনেছেন। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা বায়আত হলাম। তিনি তখন আমাদেরকে যে শপথ গ্রহণ
করি তার মধ্যে ছিল- আমরা শুনবো ও মানবো, আমাদের অনুরাগেও বিরাগে, আমাদের
সংকটে ও সাচ্ছন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রধান্য দিলেও এবং যোগ্যপাত্রের সাথে
আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না। তিনি বলেনঃ- যাবৎ না তোমরা তার মধ্যে
প্রকাশ্য কুফর দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর
সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।
৪৬২০। ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ইমাম বা শাসক ঢাল স্বরুপ। তার নেতৃতে যুদ্ধ করা
হয় এবং দুশমনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওযা যায় সে যদি তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি ও ন্যায়
বিচারের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচাননা করে, তবে তার জন্য সে পূরস্কৃত হবেন। আর যদি
শানকার্যে এর অন্যথা করেন তবে সে পাপের জন্য দায়ী হবে।
৪৬২১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হাসেম (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ, আমি আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে পাঁচ বছর অবস্থান করেছি। আমি তার কাছে শুনেছি, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনি ইসরাঈলদের উপর রাজত্ব করতেন নাবীগণ।
তাদের মধ্যকার একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করলে অপর একজন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্হলাভিষিক্ত হতেন। আমার পরে আর কোন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেই বরং খলীফাগণ হবেন এবং তারা সংখ্যায়
প্রচুর হবেন। তখন সাহাবীগণ বললেনঃ তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কি নির্দেশ
দেন? তিনি
বললেনঃ যার হাতে প্রথম বায়ঁআত বা আনুগত্যের শপথ করবে, তারই
আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাঁদের হক প্রদান করবে, তিনি তাদেরকে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
৪৬২২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা এবং আবদুল্লাহ ইবনু বায়রাদ আশআরী (রহঃ) হাসান
ইবনু ফারাত (রহঃ) সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৬২৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজু, আবূ কুরাইব, ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আলী ইবনু
খাশরাম ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে স্বজনপ্রীতি ও
তোমাদের অপছন্দীয় অনেক ঘটনাই ঘটবে। তখন সা হাবাগণ বললেনঃ, আমাদের
মধ্যকার যারা তা পাবে তাঁদের ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি
বললেনঃ তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব তোমরা পালন করে যাবে, আর তোমাদের
প্রাপ্য হকের জন্য তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।
৪৬২৪। যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদূর রহমান ইবনু আবদে
রাব্বিল কাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি একদা মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ
ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) কা’বার ছায়ায় বসেছিলেন। লোকজন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরেছিল।
আমি তাদের নিকট গেলাম এবং তার পাশেই বসে পড়লাম। তখন তিনি বললেনঃ, কোন সফরে
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমরা একটি মনযিল
অবতরণ করলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ তখন তার তাবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর
ছুড়ছিল, কেউ
তার পশুরপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নকীব হাক দিল নামায প্রস্তুত! তখন আমরা গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর পাশে সমবেত হলাম। তিনি বললেনঃ আমার এমন কোন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিবাহিত হননি যার উপর এ দায়িত্ব বর্তায়নি যে, তিনি তাদের
জন্য যে মঙ্গলজনক ব্যাপার জানতে পেরেছেন তা উম্মাতদেরকে বাৎলে দেননি এবং তিনি তার
জন্য যে অনিষ্টকর ব্যাপার জানতে পেরেছেন সে ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করেননি। আর
তোমাদের এই উম্মাত (উম্মাতে মুহাম্মদ) এর প্রথম অংশে তার মঙ্গল নিহীত এবং এর শেষ
অংশ অচিরেই নানাবিধ পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের এবং এমন সব ব্যাপারে সম্মুর্খীন হবে, যা
তোমাদের নিকট অপছন্দনীয় হবে। এমন সব বিপর্যয় একাধিক্রমে আসতে থাকবে যে, একটি
অপরটিকে লঘূরত প্রতিপন্ন করবে। একচি বিপর্যয় আসবে তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে- এটা
আমার জন্য প্রাণান্তকর, তারপর যখন তা দূর হয়ে অপর বিপর্যয়টি আসবে তখন
মুমিন ব্যক্তি বলবে প্রাণান্তরক তো হচ্ছে এটা, এটা। সুতরাং, যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে দুরে থাকতে চায় এবং
জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়- তার মৃত্যু যেন এমন অবস্হায় আসে যে, সে আল্লাহর
ও আখিরাতের দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমনি আচরণ করে যে আচরণ
সে তার নিজের জন্য পছন্দ করে। আর যে ব্যক্তি কোন ইমাম (বা নেতার) এর হাতে বায়আত
হয়-আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে তার হাতে হাত দিয়ে এবং অন্তরে সে ইচ্ছা পোষণ করে তবে
সে যেন সাধ্যানুসারে তার আনুগত্য করে যায়। তারপর যদি অপর কেউ তার সাথে (নের্তৃত্ব
লাভের অভিলাষে) ঝগড়ায় প্রবৃত্ত হয় তবে ঐ পরবর্তী জনের গর্দান উড়িয়ে দেবে। (রাবী
বলেনঃ) তখন আমি তার নিকটে- ঘেঁষলাম এবং তাকে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি সত্যই আপনি
(নিজ কানে) কি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে
শুনেছেন তখন তিনি তার দু-কান ও অন্তঃকরণের দিকে দুহাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ আমার
দু”কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তকরণ তা সংরক্ষণ করেছে। তখন আমি তাকে লক্ষ্য করে
বললাম, ঐ
যে আপনার চাচাতো ভাই মূয়াবিয়া (আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হন) তিনি আমাদেরকেঁ
আদেশ দেন যেন আমরা আমাদের পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করি আর নিজেদের মধ্যে
পরস্পরে হানাহানি করি অথচ মহিমানিত ও প্রতাপালিত আল্লাহ বলেছেনঃ হে ঈমানদারগণ!
তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, ব্যবসা সূত্রে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে
চাড়া এবং তোমরা পরস্পরে হানাহানি করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত
দয়াশীল। রাবী বলেনঃ,
তখন তিনি কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলেন। তারপর বললেনঃ, আল্লাহর
আনুগত্যের ব্যাপার সমূহে তুমি তার আনুগত্য করবে এবং প্রতাপালিত ও মহিমান্বিত
আল্লাহর অবাধ্যতার ব্যাপারসমূহে তার অবাধ্যতা করবে।
৪৬২৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা ইবনু নুমায়র,আবূ সাঈদ আশাজু ও আবূ কুরাইব (রহঃ) আমাশ (রহঃ)
থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬২৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আবদে রাব্বিল কা’বা সায়িদী
(রহঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি একদল লোককে কাবার নিকট দেখলাম। এর
পরবর্তীতে আমাশ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬২৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উসায়েদ ইবনু
হুযায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত “যে, জনৈক আনসার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে একাভে সাক্ষাৎ করলো এবং বললো আপনি ওমুককে যেভাবে কর্মচারী
নিযৃক্ত করেছেন, সেভাবে
আমাকেও কি কর্মচারী নিয়োগ করবেন না? তখন তিনি বললেনঃ, আমার পরে তোমরা অনেক পক্ষপাতিত্ব দেখবে তখন
তোমরা ধৈর্যধারণ করবে যাবৎনা তোমরা হাওযে (কাওসারে) আমার সাথে মিলিত হও।
৪৬২৮। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) উসায়েদ ইবনু বুযায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, জনৈক
আনসার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করল।
এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। হাদীসখানা উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয
(রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকেও উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একান্তে মিলিত হলেন উল্লেখ করেননি।
৪৬২৯। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ওয়ায়েল হাযরামী
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সালামা ইবনু ইয়াযিদ আন জুফী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ মর্মে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাদের উপর এমন সাসকের শাসন
প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তারা
তাদের হক তো আমাদের কাছে দাবী করে কিন্তু আমাদের হক তারা দেয়না। এমতাবস্হায় আপনি
আমাদেরকে কি করতে বলেনঃ তিনি তার উত্তর এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবার তাকে প্রশ্ন করলেন, আর তিনি
এড়িয়ে গেলেন। এভাবে প্রশ্নকারী দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারও একই প্রশ্নের পূনরাবৃত্তি
করলেন। তখন আশআস কায়েস (রাঃ) তাকে (সালামাকে) টান দিলেন এবং “বললেনঃ, তোমরা
শুনবে এবং মানবে। কেননা তাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তাদের উপর বর্তাবে আর
তোমাদের উপর আরোপিত দায়িত্বের বোঝা তোমাদের উপর বর্তাবে।
৪৬৩০। আবূ বাকর আবূ শায়বা (রহঃ) সিমাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেন।
৪৬৩১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ ইদ্রীস খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ, আমি
হুযায়ফা ইবনু ইয়ামাল (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কল্যাণের বিষয়ে প্রশ্ন করতো আর আমি তাঁর নিকট প্রশ্ন করতাম
অকল্যাণ সম্পর্কে এই ভয়ে-পাছে না তা আমাকে পেয়ে বসে। তাই আমি একদা প্রশ্ন করলাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমরা ছিলাম অজ্ঞতা ও অমঙ্গলের মধ্যে। তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য এই
কল্যাণ প্রদান করলেন। এ মঙ্গলের পরও কি কোন অমঙ্গল আছে? তিনি
বললেনঃ হ্যা। তারপর আমি বললাম, ঐ অমঙ্গলের পর কি আবার মঙ্গল আছে? তিনি
বললেনঃ হ্যা, তবে
তাতে কলুষ আছে। আমি বললাম, কি সে কলুষ? তিনি বললেনঃ তখন এমন একদললোকের উদ্ভব হবে-যারা
আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতি- অবলম্বন করবে, আমার প্রদর্শিত
হেদায়েতের পথ ছেড়ে অন্যত্র হেদায়েত ও পথের দিশা খুজবে। তাদের মধ্যে ভাল মন্দ
উভয়টাই থাকবে। তখন-আমি আরয করলাম, এ মঙ্গলের পর কি কোন মঙ্গল আছে? তিনি
বললেনঃ, হ্যা, জাহান্নামের
দরজার দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব হবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা তাতে
নিক্ষেপ করবে। আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাদের পরিচয় ব্যক্ত করুন।
তিনি বললেনঃ হ্যা, তাদের
বর্ণ বা ধরন-ধারণ হবে আমাদের মতো এবং তারা আমাদেরই ভাষায় কথা বলবে। তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্হিতির সম্মুর্খীন হই তবে আমাদেরকে আপনি কি করতে
বলেনঃ? তিনি
বললেনঃ তোমরা মুসলমানদের জামায়াত ও ইমামের সাথে আকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের
কোন জামায়াত বা ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে সব ফের্কা থেকে তুমি
আলাদা থাকবে-যদিও তুমি একটি বৃক্ষকে দাত দিয়ে আচঁড়ে থাক এবং এ অবস্হায়ই মৃত্যু
তোমার লাগাল পায়।
৪৬৩২। মুহাম্মাদ ইবনু সাহল ইবনু আসকার তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান
দারেমী (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান -(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ-আমি আরয করলাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমরা ছিলাম অমঙ্গলের মধ্যে; তারপর আল্লাহ আমাদের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসলেন।
আমরা তাতে অবস্থান করছি। এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি
বললেনঃ হ্যা। আমি বললাম এ মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি
বললেনঃ হাঁ, আমি
বললাম, এ
মঙ্গলের পিছনে কি আবার কোন অমঙ্গল আছে? তিনি বললেনঃ হাঁ, আমি বললাম, তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ, আমার পরে এমন সব নেতার উদ্ভব হবে, যারা আমার
হেদায়েতে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং সুন্নাতও তারা অবলম্বন করবে না। তাদের মধ্যে
এমন সব লোকের উদ্ভব হবে, যাদের অন্তঃকরণ হবে মানব দেহে শয়তানের
অন্তঃকরণ। রাবী বলেনঃ,
তখন আমি বললাম: তখন আমরা কি করবো ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমরা সে পরিস্থিতীর
সম্মুর্খীন হই? বললেনঃ
তুমি শুনবে এবং মানবে যদি তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সস্পদ কেড়েও
নেয়া হয়, তবুও
তুমি শুনবে এবং মানবে।
৪৬৩৩। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং
জামায়াত থেকে বের হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন
নের্তৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে গোত্রপ্রীতির জন্য যুদ্ধ হয় অথবা গোত্রের দিকে
আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার
থাকেনা।) আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। সে ব্যক্তি আমার
উম্মাতের ভাল মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করেছে মুমিনকেও রেহাই দেয়না এবং যার
সাথে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে না, সে আমার
কেউ নয় আমিও তার কেউ নই।
৪৬৩৪। উবায়দুল্লাহ উমার কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর হাদীস বর্ণিত
আছে।
৪৬৩৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে
বেরিয়ে গেল এসুং জামায়াত থেকে বের হয়ে গেল এবং মৃত্যুবরণ করলো, সে
জাহেলিয়াতে মৃত্যুবরণ করলো। এবং যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃতের পতাকাতলে যুদ্ধ করে
গোত্রের টানে ক্রুদ্ধ হয় এবং গোত্র প্রীতির জন্যেই যুদ্ধ করে সে আমার উম্মাত নয়।
আর যে ব্যক্তি আমার উম্মাত থেকে বেরিয়ে আমার উম্মাতেরই নেককারও বদকার সকলের গর্দান
কাটে, মুমিনদেরকেও
রেহাই দেয়না এবং যার সাথে অঙ্গীকার বদ্ধ হয় তার অঙ্গীকারও পালন করে না- সে আমার
উম্মাত নয়।
৪৬৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং ইবনু বাশশার ও এ হাদীস রেওয়াত করেছেন।
কিন্তু ইবনু মূসান্না তাঁর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে ইবনু বাশশার তার বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। যা উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৪৬৩৭। হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার আমীরের মধ্যে এমন কোন
ব্যাপার প্রত্যক্ষ করে, যা সে অপছন্দ করে তঁবে সে যেন ধৈর্যধারণ করে, কেননা যে
ব্যক্তি জামায়াত থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সরে গেল এবং এ অবস্হায় মৃত্যুবরণ করল সে
জাহেলিয়তের মৃত্যুই বরণ করলো।
৪৬৩৮। ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার আমীরের কোন কার্যকলাপ
অপছন্দ করে, তার
উচিত ধৈর্যধারণ করা। কেননা এমন কেউ নেই যে সুলতান থেকে (তার আনুগত্য থেকে) বেরিয়ে
গিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ সরে যাবে এবং তারপর এ-অবস্হায় মৃত্যুবরণ করবে, আর তার
মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।
৪৬৩৯। হুরায়ম ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) জুনদব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্র
প্রীতির দিকে আহবান জানায় এবং গোত্রপ্রীতির কারণেই সাহায্য করে তার মৃত্যু
জাহেলিয়াতের মৃত্যু।
৪৬৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বরী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, আবদুল্লাহইবনু
উমার (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মু-তীন (রাঃ)-এর নিকট এলেন তখন হারবা (হৃদয় বিদারক)-এর
ঘটনা ঘটেছে এবং যুগটা ছিল ইয়াযিদ ইবনু মুয়াবিয়ার যুগ। তখন তিনি ইবনু মুতী) বললেন, আবূ আবদুর
রহমানের জন্য বিছানা পেতে দাও। তখন বললেন, আমি তোমার কাছে বসতে আসিনি, এসেছি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যে হাদীস শুনেছি তা তোমাকে
শুনাতে। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে হাত শুটিয়ে
নিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে কিয়ামতের দিন দলিল বিহীন অবস্থায় আল্লাহর সাথে মিলিত হবে।
আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো আর তার ঘাড়ে আনুগভ্যের কোন শিকল নেই তার মৃত্যু
জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।
৪৬৪১। ইবনু নুমায়র (রহঃ) সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত আছে।
৪৬৪২। আমর ইবনু আলী (রহঃ) থেকেও নাফি (রহঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরুপ হাদীস
বর্ণিত আছে।
৪৬৪৩। আবূ বকর ইবনু নাফি ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আরফাজা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে
শুনেছি, অচিরেই
নানা প্রকার ফিৎনা-ফাসা’দর উদ্ভব হবে। যে ব্যাক্তি সংঘবদ্ধ উম্মাতের মধ্যে
বিশৃংখলা সৃষ্টির প্রয়াস পাবে, তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দেবে, চাই সে যে
কেউ হোক না কেন।
৪৬৪৪। আহমাদ ইবনু খিরাশ, কাসিম ইবনু যাকারিয়া ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, হাজ্জাজ
ইবনু আরফাজা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তবে তাতে ‘জামিয়ু’ শব্দের স্হলে ‘জামিয়্যান’
ব্যবহত হয়েছে এবং বা গর্দান মারবে স্হলে তাকে হত্যা করবে” ব্যবহীত হয়েছে।
৪৬৪৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আরফাজা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমাদের এক
নেতার অধীনেঁ সংঘবদ্ধ থাকা অবস্হায় যে ব্যক্তি এসে তোমাদের শক্তি খর্ব করতে উদ্যত
হয় অথবা তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় তাকে তোমরা হত্যা করবে।
৪৬৪৬। ওহাব ইবনু বাকিযা ওয়াসেতী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দুই খলীফার জন্য বায়আত গ্রহণ করা হয়
তবে তাদের শেষোক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করবে।
৪৬৪৭। হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) উম্মে সালাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই এমন কতক আমীরের উদ্ভব ঘটবে তোমরা
তাদের চিনতে পারবে এবং অপছন্দ করবে যেজন তাদের স্বরুপ চিনল সে মুক্তি পেল এবং যেজন
তাদের অপছন্দ করল-নিরাপদ হল। কিন্তু যেজন তাদের পছন্দ করল এবং অনুরসরণ করল (সে
ক্ষিতিগ্রস্ত হল)। লোকেরা জানতে চাইল আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, যতক্ষন তারা সালাত আদায়কারী থাকবে।
৪৬৪৮। আবূ গাসসান মিসমায়ী-ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরব সহধর্মিনী উম্মে সালামা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তোমাদের উপর এরুপ তখন আমীর কর্তৃতু করবে তোমরা
তাদের চিনতে পারবে এবং অপছন্দ করবে। যেজন তাদের অপছন্দ করল সে মুক্তি পেল এবং যে
প্রত্যাখ্যান করল সে নিরাপদ হল। কিন্তু যেজন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকল এবং
অনুস্মরণ করল (সে ক্ষতিগ্রস্ত হল।) লোকেরা – জানতে চাইল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? তিনি বললেনঃ না-যতক্ষন তারা সালাত আদায়কারী
থাকবে। (অপছন্দ করল) অর্থাৎ যেজন অন্তর থেকে তাদের অপছন্দ করল এবং অন্তর থেকে
প্রত্যাখ্যান করলো।
৪৬৪৯। আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
তবে এই হাদীসে “কারা” স্হলে ‘য়্যুঙ্কুর’ এবং ‘ওনকুর’ শব্দের স্হলে “কারাহ” রয়েছে।
৪৬৫০। হানান ইবনু রাবী
বাজালী (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ এরপর রাবী ইবনু মুবারক পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করে যান। তবে তিনি
ঐ হাদীসে উল্লেখিত ‘মান রাদিয়া অ তাবিয়্যিন ’ ব্যক্যাংশ উল্লেখ করেননি।
৪৬৫১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সর্বোত্তম নেতা হচ্ছে তারাই যাদেরকে তোমরা ভালবাস আর
তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তারা তোমাদের জন্য দোয়া করে তোমরাও তাদের জন্য দোয়া
কর। পক্ষান্তরে তোমাদের নিকৃষ্ট নেতা রয়েছে তারাই যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর আর তারাও
তোমাদেরকে ঘূণা করে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও আর তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। বলা
হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি তারেদকে তরবারি
দ্বারা প্রতিহত করবো না? তখন তিনি বললেনঃ না যতক্ষন
পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। আর যখন তোমাদের শাসকদের মধ্যে
কোনরুপ অপছন্দনীয় কাজ প্রত্যক্ষ করবে; তখন
তোমরা তাদের সে কাজকে ঘৃণা করবে কিন্তু তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে না।
৪৬৫২। দাঊদ ইবনু রুশায়দ
(রহঃ) আওফ ইবনু মালিক আশজায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের সর্বোত্তম নেতা
হচ্ছে তারা যারা তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমরাও তাদেরকে ভালবাসো। তাদের জন্য
তোমরা দোয়া কর এবং তারাও তোমাদের জন্যনা দোয়া করেন। এবং তোমাদের নিকৃষ্টতম নেতা
হচ্ছে তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং যারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে এবং তোমরা
তাদেরকে অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ দেয়। সাহাবীগণ বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ সময় আমরা কি তাদেরকে
প্রতিহত করবো না? তিনি বললেনঃ না যাবৎ তারা
তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে, বললেনঃ, না, যাবৎ
তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে। তবে যার উপর কোন শাসক নিয়োগ করা হবে আর সে
তাকে আল্লাহর কোন নাফরমানী করতে দেখবে তখন ঐ শাসক যতক্ষন আল্লাহর নাফরমানীতে থাকবে
ততক্ষন তাকে ঘৃণা করতে থাকবে কিন্তু আনুগত্যের- হাত শুটিয়ে নেবে না। এ হাদীসের
একজন রাবী ইবনু জারীর (রহঃ) বলেনঃ, আমি
আমার কাছে এ হাদীস বর্ণনাকারী কারযাকে এ হাদীস বর্ণনা কালে বললাম, আল্লাহর কসম! হে আবূ মিকদাম-! সত্যই কি আপনি
মুসলিম ইবনু কারযাকে আওফ ইবনু মালিক-(রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হতে বলতে শুনেছেন? রাবী
বলেনঃ, তখন তিনি তার হাঁটুর উপর ভর
করে কিবলামুখী হয়ে গেলেন এবং বললেনঃ সেই আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই
আমি নিশ্চয়ই মুসলিম ইবনু কারযাকে বলতে শুনেছি, তিনি
বলেছেনঃ, আমি আওফ (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছি, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি।
৪৬৫৩। ইসহাক ইবনু মূসা
আনসারী (রহঃ) আওফ ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে অনুরুপ হাদাস বর্ননা করেছেন।
৪৬৫৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হুদাইবিয়ার দিন
আমরা।-ছিলাম চোদ্দশ, আমরা তার (রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) হাতে বায়আত হলাম। আর উমার (রাঃ) তাঁর হাত ধরে
(বায়আত গ্রহণ করেছিলেন) সামূরা নামক গাছের তলে এবং তিনি বলেছেনঃ, আমরা এ মর্মে তার হাতে বায়আত হলাম যে, আমরা পলায়ন করবো না। কিন্তু আমরা মৃত্যুবরণ
করবো” এ শপথ গ্রহণ করিনি।
৪৬৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর হাতে মৃত্যুর শপথ গ্রহণ করিনি, আমরা তো তাঁর কাছে এ মর্মে
শপথ করি যে, আমরা পলায়ন করবো না।
৪৬৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতেম
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির (রাঃ)-কে শুনতে পেলেন যে তাঁকে এ
মর্মে জিজ্ঞাসা করা হল, হুদাইবিয়ার দিন সাহাবীদের সংখ্যা
কত ছিলঁ? তিনি বললেনঃ আমরা সংখ্যায়
ছিলাম চৌদ্দশ। আমরা তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) হাতে
বায়আত হলাম, আর উমার (রাঃ) তার হাতে ধরে
(বায়আত হয়েছিলেন) সামূরা নামক গাছের তলে। আদ্দ ইবনু কায়েস আনসারী ছাড়া আমরা সকলেই
সেদিন তাঁর হাতে বায়আত হয়েছিলাম। আর সে তাঁর উটের পেটের নীচে আত্নগোপন করে
বসেছিল।
৪৬৫৭। ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার
(রহঃ) আবূ যূবায়ের (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির (রাঃ)-এর নিকট শুনতে পেলেন, তাকে এ মর্মে জিজ্ঞাসা করা হল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুল-হুলাইফা নামক স্থানে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন
কি? তিনি বললেনঃ না, তবে
সেখানে তিনি সালাত আদায় করেছেন, আর হুদাইবিয়ার গাছের নিকট
ব্যতীত অন্য কোন গাছের নিকট বায়আত গ্রহণ করেননি। রাবী ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেনঃ
আবূ যুবায়র (রহঃ) আমাকে বলেছেনঃ তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হুদাইবিয়ার কুপের নিকট দোয়া করেছিলেন।
৪৬৫৮। সাঈদ ইবনু আমর আশআসী, সুয়াইদ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, হুদাইবিয়ার
দিনে-আমরা (সংখ্যায়) ছিলাম চৌদ্দশ, তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ আজকের দিন তোমরা
গোটা বিশ্ববাসীর মধ্যে সর্বোত্তম। জাবির (রাঃ) বলে, যদি
আমি দেখতে পারতাম “তবে তোমাদেরকে অবশ্যই সেই গাছটির জায়গা দেখিয়ে দিতাম।
৪৬৫৯। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সালিম ইবনু আবূ জাআদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে গাছ তলায়
সেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচরদের (সংখ্যা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করলাম, তখন তিনি বললেনঃ, আমরা যদি (সেদিন) এক লাখও হতাম তবুও
(হুদাইবিয়ার কুপের পানি) আমাদের জন্য যথেষ্ট হতো। আমরা সংখ্যায় ছিলাম পনের শ’।
৪৬৬০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নূমাইর ও রিফাআ ইবনু
হাইসাম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা
যদি সংখ্যায় এক লাখও হতাম তবুও অবশ্যই আমাদের জন্য (হুদাইবিয়ার কুপের সে বরকত
প্রাপ্ত পানি) যথেষ্ট হতো, আমরা সংখ্যায় ছিলাম পনের শ।
৪৬৬১। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
ও ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) সালিম ইবনু আবূ জাআদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ, আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, সেদিন আপনারা সংখ্যায় কতজন ছিলেন? তিনি বললেনঃ চৌদ্দশ।
৪৬৬২। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ বৃক্ষতলে
বায়আত খগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা ছিল তেরশ আসলাম গোত্রীয় লোকদের সংখ্যা- ছিল
মুহাজিরদের এক অষ্টমাংশ।
৪৬৬৩। ইবনু মূসান্না ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শুবা (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি নিজেকে বৃক্ষ দিবসে দেখেছি (আমি তথায়
উপস্থিত ছিলাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন লোকদের বায়আত গ্রহণ
করছিলেন আর আমি তাঁর মাথার উপর থেকে বৃক্ষের একটি ডাল সরিয়ে রেখেছিলাম। আমরা তখন
সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ”। রাবী বলেনঃ, আমরা
তার কাছে মৃত্যুর বায়আত গ্রহণ করিনি, বরং
আমরা পালাবো না সে শপথ গ্রহণ করেছিলাম।
৪৬৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইউনূস (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৬৬৬। হামিদ ইবনু উমার (রহঃ)
সাঈদ ইবনু মূসাইয়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলে আমার আব্বা সে বায়আত গ্রহণকারীদের
মধ্যে ছিলেন, যারা সেদিন বৃক্ষতলায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পবিত্র হাতে বায়আত গ্রহণ
করেছিলেন। তিনি বলেনঃ, পরবর্তী বছর যখন আমরা হজ্জ
করতে এসে সেখানে গেলাম তখন সে স্হানটি আমাদের নিকট অস্পষ্ট হয়ে গেল যদি তোমাদের
কাছে সে স্হানটিস্পষ্ট হয়ে থাকে তবে তোমরাই ভাল জান।
৪৬৬৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসাইয়েব (রাঃ)-এর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বৃক্ষবক্ষে (হুদাইবিয়ার বছর) তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলেন। তিনি বলেনঃ, পরবর্তী
বছর তারা সে স্হানটির অবস্থান ভুলে যান।
৪৬৬৮। হাজ্জাজ ইবনু শায়ের ও
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসাইয়েব (রহঃ) তার পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেনঃ, আমি সেই স্হানটি দেখেছি, কিন্তু পরে যখন সেখানে গেলাম, তখন আর তা চিনতে পারলাম না।
৪৬৬৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি সালামা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হুদাইবিয়ার দিন আপনারা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে কিসের শপথ গ্রহণ করেছিলেন! তিনি বললেনঃ
মৃত্যুর।
৪৬৭০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) সালামা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৬৭১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা জনৈক আগন্তক তার কাছে আসলো এবং বললো-ইনি
ছিলেন হানযালার পূত্র। তিনি লোকের নিকট থেকে বায়আত নিচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের বায়আত তিনি বললেনঃ, মৃত্যুর বায়আত। তিনি বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরপরে আমরা আর কারো হাতে বায়আত নেবো না।
৪৬৭২। কুতাহাবা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
একদা হাজ্জাজের দরবারে উপনীত হলেন। সে বললো, হে
আকওয়ার পূত্র! তুমি কি ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হয়ে মরুবাস শুরু করেছ। তিনি বললেনঃ, না বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -ই আমাকে মরুবাসের (বেদুইনের জীবন যাপনের) অনুমতি দিয়েছেন।
৪৬৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু সাববাহ
আবূ জাফর (রহঃ) মুজাশে ইবনু মাসউদ সূলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর খিদমতে তাঁর নিকট হিজরতের বায়আত গ্রহণের উদ্দেশ্যে এলাম। তখন তিনি বললেনঃ, হিজরতের দিন অতিক্রান্ত, তার অধিকারীরা ইতিমধ্যেই তা করে ফেলেছে। (সে
ফযীলত আর কেউ পাবার অবকাশ নেই) তবে ইসলাম, জিহাদ
ও পূণ্যের উপর অটল থাকার বায়আত হতে পারে।
৪৬৭৪। সূয়ায়েদ ইবনু সাঈদ
(রহঃ) মুজাশে ইবনু মাসউদ সূলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি আমার ভাই আবূ মা’বাদ (রাঃ) কে নিয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এলাম। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তাকে হিজরতের বায়আত
করান। তিনি তখন বললেনঃ হিজরতের দিন অতিক্রান্ত, তার
যোগ্য পাত্ররা সে সুযোগ নিয়ে নিয়েছে। আমি বললাম, তা
হলে এখন কিসের উপর বায়আত নিবেন। তিনি বললেনঃ ইসলাম, জিহাদ
ও পূণ্যের বায় আত হতে পারে। আনু উসমান (রহঃ) বলেন, আমি
আবূ মা-বাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে মুজাশে (রহঃ)-এর কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ, সে যথাযথ বলেছে।
৪৬৭৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) এই সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেনঃ, আমি তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি বললেনঃ, মুজাশে
যথার্থ বলেছে আর তিনি আবূ মাবাদের নাম রেওয়ায়েতে উল্লেখ করেননি।
৪৬৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয় দিবসে মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেনঃ, আর হিজরত নেই (হিজরতের অবকাশ বাকী নেই) বরং এখন
আছে জিহাদ আর নেক-নিয়্যাত। আর যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য আহবান জানানো
হয় তখন তোমরা (জিহাদের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে যাও।
৪৬৭৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইসহাক ইবনু মানসুর, ইবনু রাফি, আব্দ
ইবনু হুমাইদ (রহঃ) মনসূর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তখন তিনি বললেনঃ বিজয়ের পর আর
হিজরত নেই, তবে জিহাদ ও নিয়্যত রয়েছে।
যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার-জন্য আহবান জানানো হয় তখন তোমরা বের হয়ে যাও।
৪৬৭৯। আবূ বাকর ইবনু খালাদ
বাহিলী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে একদা জনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হিজরত সম্পর্কে প্রশ্ন করলো-তিনি বললেনঃ ও
হে! তোমার জন্য আফসূস! হিজরতের অবস্হা তো কঠিন ব্যাপার। তোমার কাছে কি উট আছে? সে বললো হ্যা। তিনি বললেনঃ, তুমি কি তার যাকাত দিয়ে থাকো? সে বললো, হ্যা।
তিনি বললেনঃ তুমি দরিয়ার ওপার থেকেই আমল করে যাও, কেননা
আল্লাহ তাআলা তোমার কোন আমল নিস্ফল হতে দিবেন না।
৪৬৮০। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর
রহমান (রহঃ) আওয়াযী (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি
(আবদুল্লাহ) বলেনঃ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার কোন
আমল নিষ্ফল হতে দিবেন না। তিনি এ হাদীসে আরও বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি পানি পান করানোর দিন
ওগুলোকে দোহন করে থাকো? তিনি জবাব দিলেন হ্যা।
৪৬৮১। আবূ তাহির আহমাদ আমর
ইবনু সারহ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, মুমিন মহিলাগণ যখন হিজরত করে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে (মদিনায়) আসতেন। তখন আল্লাহ
তা’আলার বানীঃ অনুযায়ী পরীক্ষা করা হতো। (সে বানা হচ্ছে) হে নাবী, যখন মুমিন মহিলাগণ আপনার কাছে এ মর্মে বায়আত
হতে আসে যে তারা আল্লাহর সাথে অপর কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবেনা, ব্যভিচার
করবে না তিনি আয়াতের শেষ পর্যন্ত। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ, মুমিন মহিলাদের যে কেউ এ সব অঙ্গীকারে আবদ্ধ
হতো এতেই তারা বায়আতের অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে বলে গণ্য হতো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখন তারা মৌখিকভাবে এসব অঙ্গীকার করতো
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলতেনঃ তোমরা চলে যাও, তোমাদেরকে বায়আত করে নিয়েছি। আল্লাহর কসম!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হাত কোন দিন কোন (বেগানা)
মহিলার হাতকে স্পর্শ করেননি-তবে তিনি মৌখিকভাবে বায়আত গ্রহণ করতেন। আয়িশা (রাঃ)
বলেনঃ, আল্লাহর কসম! আল্লাহর
নির্দেশিত পন্থা ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিন
মহিলাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেননি। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর হাত কোন দিন কোন (বেগানা) মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের
পরই তিনি মৌখিকভাবে বলে দিতেন, তোমাদের বায়আত গ্রহণ করলাম।
৪৬৮২। হারুন ইবনু সাঈদ আয়েলী
ও আবূ তাহির (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আয়িশা
(রাঃ) তাঁকে মহিলাদের বায়আত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কোন দিন তার হাত দিয়ে কোন (বেগানা) মহিলাকে স্পর্শ করেননি, তবে তিনি মৌখিকভাবে তাদের বায়আত গ্রহণ করতেন।
আর তখন তিনি তাদের মৌখিক অঙ্গীকার নিয়ে নিতেন তখন (মুখেই) বলে দিতেন, এবার চলে যেতে পার, আমি তোমাদের বায়আত নিয়েছি।
৪৬৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুসরণ ও অনুকরণের (আনুগত্যের) বায়আত
গ্রহণ করতাম। তিনি আমাদেরকে বলে দিতেন, যতাদূর
তোমাদের সাধ্যে কুলাবে (তা করবে)।
৪৬৮৪। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উহুদ দিবসে (যুদ্ধে) আমাকে (যোদ্ধাদের সারিতে) পর্যবেক্ষণ করলেন তখন আমার বয়স
চোদ্দ বছর। তিনি আমাকে (যুদ্ধের জন্য) অনুমতি দিলেন না। খন্দকের দিন তিনি আমাকে
পর্যবেক্ষণ করলেন, তখন আমার বয়স পনের বছর। তিনি
আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দিলেন। নাফি বলেন, আমি
উমর ইবনু আবদুল আজিজ (রহঃ) এর কাছে উপস্থিত হয়ে এ হাদিস তাঁর কাছে বর্ণনা করলাম।
তিনি তখন খলিফা ছিলেন, তিনি বললেন এটাই হচ্ছে
অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কের সীমারেখা। তিনি তাঁর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের
নিকট এই মর্মে ফরমান পাঠালেন, তারা যেন পনের বছর বয়সের
লোকদের (পূর্ণ) ভাতা প্রদান করেন এবং তাঁর নিচের বয়সের যারা, তাদেরকে পরিবারের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরুপে
গণ্য করেন।
৪৬৮৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে উক্ত সূত্রে এ হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।
তবে তাদের বর্ণিত হাদীসে আছে, আমি তখন চৌদ্দ বছরের।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ছোট বলে গণ্য করলেন।
৪৬৮৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ শত্রু এলাকায় কুরআন শরীফ নিয়ে
ভ্রমণ করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৪৬৮৭। কুতায়বা ও ইবনু রুমহ
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শক্র দেশে কুরআন নিয়ে ভ্রমণ করতে নিষেধ করতেন এই ভয়ে যে, পাছে তা শক্রদের হাতে পড়ে যায়।
৪৬৮৮। আবূর রাবী আতাকী ও আবূ
কামেল (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কুরআন শরীফ নিয়ে ভ্রমণ করবে না, কেননা শক্র থেকে আমি নিরাপদ মনে করিনা। রাবী
আইউব (বা) বলেনঃ, শক্ররা হস্তগত করে তোমাদের
সাথে তা নিয়ে বাদানূবাদে প্রবৃত্ত হতে পারে।
৪৬৮৯। যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ উমার ও ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার
(রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসের মধ্যবর্তী
রাবী ইবনু ওলাইয়া ও সাকাফীর বর্ণনায় “ফা আন্নি আখাফ” এবং আমি আশংকা করি রয়েছে। আর
সনদের অন্য সুত্রের মধ্যবর্তী রাবী সুফিয়ান ও যাহহাক ইবনু উসমানের বর্ণনায় “দুশমন
পেয়ে বসে এই আশংকায়”- কথাটি রয়েছে।
৪৬৯০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়া সমূহের দৌড়ের
প্রতিযোগিতার ব্যবস্হা করেন। হাফইয়া থেকে সানিয়াতূল বিদা পর্যন্ত। আর যে ঘোড়াগুলির
প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি সেগুলির দৌড়ের প্রতিযোগিতার ব্যবস্হা করান সানিয়া থেকে
মসজিদে বনূ যুবায়ক পর্যন্ত। ইবনু উমার (রাঃ) ও ছিলেন সে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ
কারীদের মধ্যে অন্যতম।
৪৬৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, কুতাইবা ইবনু সাঈদ, খালফ ইবনু হিশাম, আবূর
রাবী, আবূ কামিল যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র, আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আলী ইবনু হুজর আহমাদ ইবনু আবদা, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মদ
ইবনু রাফি, হারুন ইবনু সাঈ আইলী (রহঃ)
সকলেই নাফি (রহঃ) সুত্রে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে -পূর্ববতী হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে হাম্মাদ ও ইবনু উলায়্যা সুত্রে আইউব (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এতটুকু বেশী
বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ইবনু উমার) বলেনঃ আমি
সে প্রতিযোগিতায় প্রথম হই এবং আমার ঘোড়াটি আমাকে নিয়ে লাফিয়ে মসজিদে উঠে যায়।
৪৬৯২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে মঙ্গল কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
৪৬৯৩। কুতায়বা, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুু, নূমায়র, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও হারুন ইবনু সাঈদ আইলী
(রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিক
(রহঃ) এ হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬৯৪। নাসর ইবনু আলী জাহযামী
ও সালিহ ইবনু হাতিম, ইবনু ওরদান (রহঃ) জারীর ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটি
ঘোড়ার ললাটের কেশ বিন্যাস করতে দেখলাম আর তিনি তখন বলছিলেনঃ ঘোড়ার লনাটে কিয়ামত
পর্যন্ত মঙ্গল নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদান ও গনীমত।
৪৬৯৫। যুহায়র ইবনু হারব ও
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৬৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) উরওয়া আল বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে কিয়ামতের দিন পর্যস্ত মঙ্গল নিহিত আছে। আর তা হল প্রতিদান ও
গনীমত।
৪৬৯৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) উরওয়া বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মঙ্গল গ্রথিত রাখা হয়েছে ঘোড়ার ললাটের সাথে। রাবী বলেনঃ, তখন তাকে বলা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিসের দ্বারা? সাওয়াব এবং গনীমত কিয়ামত দিবস পর্যন্ত।
৪৬৯৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) হুসাইন (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেন, তবে
তিনি উরওয়া ইরন যাদ- উল্লেখ করেছেন।
৪৬৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
উরওয়া আল বারিকী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। এ
সনদের রাবী শাবীব ইবনু গারকাদা) সাওয়াব ও গনীমতের কথা উল্লেখ করেননি। (বলে আবূল
আহওয়াসের বর্ণনায় আছে।) আর আবূ সুফিয়ানের বর্ণনায় রয়েছে যে, শাবীব ইবনু গারকাদ উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) থেকে
শুনেছেন তিনি শুনেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে।
৪৭০০। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) উরওয়া ইবনু জাদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাতে তিনি সাওয়াব ও
গনামতের উল্লেখ করেননি।
৪৭০১। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ বরকত রয়েছে ঘোড়ার ললাটে।
৪৭০২। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
(রহঃ) আবূ তাইয়াহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করতে বলেছেন।
৪৭০৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ যূরাআ (রহঃ) আবূ
ঢূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম শিকাল ঘোড়া পছন্দ করতেন না।
৪৭০৪। মুহাম্মদ ইবনু নুমায়র
ও আবদূর রাহমান ইবনু বিশর (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। সুফিয়ান (রহঃ)-এর
সূত্রে বর্ণিত রেওয়ায়েতে বর্ধিত এতটুকু আছে এবং শিকাল হচ্ছে ঘোড়ার ডান পায়ে ও বাম
হাতে (আগের পায়ে)অথবা ডান হাত ও বাম পায়ে শ্বেত বর্ণ হওয়া।
৪৭০৫। মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশারও ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৪৭০৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির দায়িত্ব
স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন। যে ব্যক্তি তারই রাস্তায় বের হয়। আমারই রাস্থায় জিহাদ, আমার প্রতি ঈমনি এবং আমার রাসূলের প্রতি দৃঢ়
বিশ্বাসই তাকে ঘর থেকে বের করে তখন আমারই যিম্মায় যে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবো-নতুবা সে
তার যে-বাসস্থান থেকে বেরিয়ে ছিল, তার প্রাপ্য সাওয়াব গনীমত সহ
তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনবো। কসম সে পবিত্র সত্তা যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহ
রাস্থায় যে যখমই হয় না কেন, কিয়ামতের দিন সে ঠিক যখম
অবস্হায়ই আসবে; তার বর্ণ হবে রক্ত বর্ণ আর ঘ্রাণ
হবে কস্তুরীর। কসম সেই পবিত্র সত্তার যার হাতে মূহাম্মাদের প্রাণ! যদি মুসলমানদের
জন্য কষ্টকর না হতো-তবে আমি কখনো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অভিযানে লিপ্ত দলে
যোগদান না করে ঘরে বসে থাকতাম না। কিন্তু আমার কাছে এমন সামর্থ নেই যে, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন তাদের সকলকে
বাহন দান করবো, আর তাদের নিজেদেরও সে সঙ্গতি
নেই যে, নিজেরাই নিজেদের বাহন নিয়ে
বের হবে। আর তাদের জন্যে এটা খুবই কষ্টকর হবে যে, আমি
যুদ্ধে বেরোবার পর আমার সঙ্গে না গিয়ে পিছনে পড়ে থাকবে। কসম সে পবিত্র সত্তার যার
হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আমার একান্ত ইচ্ছা হয় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করি আর তাতে
শহীদ হই, তারপর আবার জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই, আবারও
জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই।
৪৭০৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) উমারা (রহঃ)-এর সুত্রে এ সনদে উক্ত “ হাদীস বর্ননা
করেছেন।
৪৭০৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ সে
ব্যক্তির দায়িত্ব নিয়েছেন, যে তারই রাস্তায় জিহাদ করে, তাকে ঘর থেকে বের করে কেবল তারই জিহাদ আর তারই
কালেমায় বিশ্বাস। সে দায়িত্বটি হচ্ছে, হয়
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, না হয় তার প্রাপ্য সাওয়াব ও
গনীমত সহ সেই স্থানে ফিরিয়ে আনবেন-যেখান থেকে সে (জিহাদে) বেরিয়েছিল।
৪৭০৯। আমর আন নাকিদ ও যূহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ এম্ন কেউ নেই
যে আল্লাহর রাস্থায় যখম হয় আর আল্লাহই সম্যক জানেন, কে
তাঁর রাস্তায় যখম হবে সে কিয়ামতের দিন এরুপ অবস্হায় আসবে যে, তার যখম দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হবে, তার রং হবে রক্তের কিন্তু সূবাস হবে কস্তুরীর
সূবাস।
৪৭১০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি-
(রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেসব হাদীস বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে একটি হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় মুসলমান যে যখমেই আক্রান্ত হয়, কিয়ামতের দিন তা ঠিক যখন আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল
সে রুপ হবে; রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে-যার
রং রক্তেরই রং হবে আর সুবাস হবে কস্তুরীর সূবাস। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাম্মাদের প্রাণ যার হাতে সেই সত্তার কসম! যদি
মুমিনদের জন্য কষ্টকর না হতো তবে আমি কোন সেনাদলের যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে
বের হয় তাদের পিছনে বসে থাকতাম না-কিন্তু আমার সে সামর্থ নেই- যা দিয়ে আমি তাদের
সকলকে বাহন দিতে পারি, আর না তাদেরই সে সামর্থ আছে
যে, (নিজ থেকে বাহন নিয়ে যুদ্ধ যাত্রাকালে) আমার
অনুসরণ করবে, আর আমার যুদ্ধ অতিযানে বের
হয়ে যাওয়ার পর ঘরে বসে থাকতে তাদের মন চাইবে না।
৪৭১১। ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যদি মূমিনের জন্যে কষ্টকর না- হতো, তবে (যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে) আমি কোন সেনাদলের
পিছনে বসে থাকতাম না। পরবর্তী অংশ উপরোক্ত বর্ননাকারীদের অনুরুপ আর এ সনদে বর্ণিত
আছে সে কসম সেই পবিত্র সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ আমি মনে প্রাণে কামনা করি আমি
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হই, তারপর জীবন লাভ করি। আবূ
যূরাআ কর্তৃক আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
৪৭১২। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও
ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্যে কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি পছন্দ করতাম যেন কোন সেনাদলের পিছনে
থেকে না যাই। পরবর্তী অংশ পুর্ববর্তীদের হাদীসের অনুরুপ।
৪৭১৩। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা সে ব্যক্তির দায়িত্ব
নিয়েছেন যে তার রাস্তায় বের হয়ে যায়। এ উক্তি পর্যন্ত কোন সেনাদলের যে দল আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে তার পিছনে থাকতাম না।
৪৭১৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এমন কেউ নেই যে মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব রয়েছে
আর সে দুনিয়ার ফিরে আসতে অনূরোধ করে-যদিও বা গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছু
তারই হয় তবূও-শহীদ ছাড়া; সে কামনা করবে ফিরে আসতে যেন
আবার দুনিয়ায় শহীদ হতে পারে। তা এ জন্যে যে, সে
শাহাদতের ফযীলত প্রত্যক্ষ করেছেন।
৪৭১৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ এমন কেউ নেই যে
জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ তারপর দুনিয়ায় ফিরে আসাটা পছন্দ করবে-যদিও বা গোটা
দুনিয়ার সবকিছু তারই হয়, কেবল শহীদ ছাড়া; কেননা সে কামনা করবে যেন ফিরে আসে এবং দশবার
শহীদ হয়-তা এ জন্যে যে, সে মর্যাদা প্রত্যক্ষ করেছে।
৪৭১৬। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের তূল্য আর কি আছে? তিনি বললেনঃ কেউ তা লাভ করতে পারবে না। রাবী
বলেনঃ প্রশ্নকারীরা কথাটা দুবার বা তিনবার করে ফিরিয়ে বললেনঃ প্রত্যেকবারই তিনি
বললেনঃ কেউ তা পারবে না। তৃতীয়বার তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর
দৃষ্টান্ত হচ্ছে অহরহ সিয়াম পালনকারী, কিয়ামকারী, সালাতে দণ্ডায়মান, আল্লাহর আয়াতের পূর্ণ অনুগত-সিয়ামে বা কিয়ামে
যে ক্লান্তিবোধ করে না এমন ব্যক্তির মত যতক্ষন না আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ তা
থেকে প্রত্যাবর্তন করে।
৪৭১৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) সূহায়ল (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪৭১৮। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানী (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর মিম্বায়ের নিকটেই ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো ইসলাম গ্রহণের পর
আমি আর কোন সৎ কাজই না করি তাতে আমার কোন পরওয়া নেই-তবে আমি হাজীদেরকে পানি পান
করাব। অপর একজন বলে উঠলো-মুসলমান হওয়ার পর আমি আর কোন সৎ কাজই না করি তাতে আমার
কোন পরোয়া নেই, তবে আমি মসজিদুল হারামের
মেরামত প্রভৃতি করে যাবে। অপর একজন বলে উঠলো-আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ তোমরা যা যা
বলেছেনঃ তার চাইতে উত্তম। তখন উমার (রাঃ) তাদেরকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বরের সামনে তোমরা চেঁচামেচি করো না। সেটা
ছিল জুমআর দিন। বরং যখন জুমআর সালাত হয়ে যাবে, তখন
আমি তাঁর নিকটে গিয়ে তোমরা যে ব্যাপারে বাদানুবাদ করছো, তা জিজ্ঞাসা করে নেবো, তখন আল্লাহ তাআলা (সেঁই প্রেক্ষিতে) নাযিল
করলেনঃ যারা হাজীদের পানি সরবরাহ করে এবং মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষন করে তোমরা
কি তাদেরকে ওদের সমজ্ঞান কর, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান
আনে (৯-১৯)।
৪৭১৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর
রাহমান দারেমী (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মিনুরের কাছে ছিলাম বাকী হাদীস আবূ তাওবা এর হাদীসের অনুরুপ।
৪৭২০। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া এবং তার
মধ্যে সব কিছু আছে, সে সবের চাইতে উত্তম।
৪৭২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে সে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল ব্যয় করে, তা দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে সে সবের
চাইতেও উত্তম।
৪৭২২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর রাহে একটি সকাল অথবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া
এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সবের চাইতেও উত্তম।
৪৭২৩। ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি না আমার উম্মাতের কতিপয় লোক হতো
এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি আরও বলেনঃ, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাহে-একটি সকাল অথবা একটি
বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সে সবের চাইতেও উত্তম।
৪৭২৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি সকাল অথবা একটি বিকাল আল্লাহর রাহে
অতিবাহিত করা ঐ-সব বস্তুর চাইতে উত্তম যে গুলোর উপর সূর্য উদিত হয়ে থাকে এবং
অস্তমিত হয়।
৪৭২৫। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) আবূ আইউব অনিসারী (রাঃ) বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ – সম্পূর্ণ অনুরুপ।
৪৭২৬। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব
(প্রতিপালক) রুপে, ইসলামকে দ্বীনরুপে এবং
মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নাবীরুপে গ্রহণ করে
সন্তুষ্ট, তার জন্যে জান্নাত অবধারিত
হয়ে গেল। আবূ সাঈদ (রাঃ) তাতে চমকিত হয়ে গেলেন তিনি বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জন্যে কথাটি আবার বলুন।
তিনি তাই করলেন, তারপর বললেনঃ আর একটি আমল
এমন রয়েছে-যদ্বারা বান্দা এমন একশটি মর্যাদার স্তর লাভ করবে যার দুটো স্তরের
মধ্যে ব্যবধানন হবে আসমান ও যমীনের ব্যবধানের তূল্য। তখন তিনি বললেনঃ ঐ আমলটি কি
ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ!
৪৭২৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করেছেন যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)একদা তাদের মধ্যে দাড়ালেন এবং তাদের কাছে বর্ণনা
করলেন যে, আল্লাহর রাহে জিহাদ এবং
আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, আপনি কি মনে করেন যে, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত হই তা হলে আমার সকল
পাপ মোচন হয়ে যাবে? তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হ্যা- যদি তুমি ধৈর্য্যশীল, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না
করে শক্রর মুখোমুখি অবস্হায় নিহত হও। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি বললে হে! তখন সে ব্যক্তি (আবার) বললোঃ আপনি কি মনে
করেন, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত
হই তা হলে আমার সকল গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে? তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হাঁ তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী, সাওয়াবের আশায় আশান্বিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন না
করে শক্রর মুখোমুখি অবস্হায় নিহত হও, অবশ্য
ঝণের কথা আলাদা। কেননা, জিব্রাঈল (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আমাকে একথা বলেছেনঃ
৪৭২৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে আরয করলো, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাহে নিহত হই লাইসের হাদীসের
অনুরুপ।
৪৭২৯। সাঈদ ইবনু মানসূর ও
মুহাম্মাদ ইবনু আজলান (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো, তিনি তখন মিম্বরের উপর
উপবিষ্ট ছিলেন। সে ব্যক্তি বললোঃ আপনি কি মনে করেন, আমি
যদি আমার তরবারী দ্বারা নিহত হই বাকী অংশ মাকবুরীর হাদীসের অনুরুপ।
৪৭৩০। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ইবনু সালিহ মিসরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ ঋণ ছাড়া শহীদের সকল শুনাহই মাফ করে দেওয়া হবে।
৪৭৩১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর
রাস্তায় শহীদ হওয়া ঝণ ছাড়া সব কিছু মাফ করিয়ে দেয়।
৪৭৩২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ, আমি
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ)-কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাতে আল্লাহ
বলেনঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করোনা বরং তাঁরা
জীবিত তাঁদের প্রতিপালকের কাছ থেকে তারা জীবিকা প্রাপ্ত। (৩-১৬৯।) আবদুল্লাহ (রাঃ)
বলেনঃ, আমি এ আয়াত সম্পর্কে
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে) জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন তিনি
বললেনঃ তাদের রুহসমুহ সবুজ পাখীর পেটে রক্ষিত থাকে-যা আরশের সাথে ঝূলন্ত দীপাধারে
বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করো অবশেষে সেই
দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রভূ তাদের দিকে তাকালেন এবং জিজ্ঞাসা
করলেনঃ তোমাদের কি কোন আকাংখা আছে? জবাবে
তারা বললোঃ আমাদের আর কি আকাংখা থাকতে পারে আমরা তো যথেচ্ছভাবে জান্নাতে বিচরণ
করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে এরুপ তিন তিনবার করলেন। যখন তারা দেখলো, জবাব না প্রশ্ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না তখন তারা
বললোঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আকাংখা হয় যদি আমাদের রুহ গুলোকে আমাদের
দেহসমূহে ফিরিয়ে দিতেন আর পুনরায় আমরা তোমারই পথে নিহত হতে পারতাম। যখন
পরোয়ারদিগার দেখলেন, তাদের আর কোন প্রয়োজনই
অবশিষ্ট নাই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হলো
(আর প্রশ্ন করা হলো না।)
৪৭৩৩। মানসূর ইবনু আবূ
মুজাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললো, সর্বোত্তম লোক কে? তিনি বললেনঃ সে ব্যক্তি যে তার জান ও মাল দিয়ে
আল্লাহর” রাহে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বললো, তারপর
কে? তিনি বললেনঃ যে মুমিন কোন পাহাড়ী উপত্যাকায়
নির্জনে বসে তার প্রতিপালকের ইবাদত করে এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকজনকে বাঁচায়।
৪৭৩৪। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ,-এক
ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সর্বোত্তম
ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ ঐ ব্যক্তি যে
তার জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করে। সে ব্যক্তি বললো, তারপর কে? তিনি
বললেনঃ তারপর হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন নিভৃত উপত্যকায়
তার প্রতিপালকের ইবাদতে প্রবিষ্ট থাকে এবং লোকজনকে তার নিজ অনিষ্ট থেকে বাচায়।
৪৭৩৫। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর
রাহমান দারেমী (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ উপত্যকায় অবস্হানকারী লোক , তারপর
‘ঐ ব্যক্তি- তিনি বলেননি।
৪৭৩৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম জীবন হল সে ব্যক্তির জীবন যে
আল্লাহর রাহে জিহাদের জন্যে ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। শক্রর উপস্থিতি ও শত্রুর দিকে
ধাবমান হওয়ার আওয়ায শুনামাত্র ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে যথাস্থানে
সে শক্র নিধন শাহাদতের সন্ধ্যান করে। অথবা ঐ লোকের জীবনই উত্তম যে ছাগপাল নিয়ে
কোন পাহাড় চুড়ায় বা (নির্জন) উপত্যকায় বসবাস করে আর যথারীতি সালাত আদায় করে, যাকাত দান করে এবং মৃত্যু তার প্রভূর ইবাদতে
নিমগ্ন থাকে। লোকটি কেবল মঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে।
৪৭৩৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি (কুতায়বা)
বলেছেনঃ, বাজা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
বাদর। তিনি বলেছেনঃ ‘ফি শু’বাতিন মিন হাযিহিস সায়াব’ ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে ভিন্ন
রকম বর্ণনা।
৪৭৩৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারর ও আবূ
কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। এতে রয়েছেঃ ‘ফি
শি’বিন মিনাশ শিয়াব’।
৪৭৩৯। মুহাম্মাদ ইবনু আর
উমার মাক্কী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা ঐ দু-ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে হাসেন যাদের একজন অপরজনকে হত্যা
করবে অথচ উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেনঃ, তা কেমন করে হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি বললেনঃ
এক ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদ করে শহীদ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর
প্রতি সদয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে ফেলবে এবং সেও আল্লাহর
রাহে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করবে।
৪৭৪০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারর ও আবূ
কুরায়ব (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৪৭৪১। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) হাম্মাদ ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেকগুলো হাদীস বর্ণণা করেন
তন্মধ্যে এটিও ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআ’লা এমন দু-ব্যক্তির জন্য হাসবেন যাদের একজন
অপরজনকে হত্যা করবে অথচ তাদের উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, তা কেমন করে হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি বললেনঃ
এক জন নিহত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারপর
আল্লাহ অপরজনের প্রতিও সদয় হবেন এবং তাকেও ইসলামের হেদায়েত দান করবেন। তারপর সেও
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে এবং শহীদ হয়ে যাবে।
৪৭৪২। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আইউব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাফির এবং
তার হত্যাকারী (মুমিন) কখনও জাহান্নামে একত্রিত হবে না।
৪৭৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন দু-ব্যাক্তি জাহান্নামে একত্রিত হবে
না যে একের উপস্থিতি অন্যকে বিরত করে। তখন প্রশ্ন করা হলোঃ কারা এ দু-ব্যক্তি ইয়া
রাসুলুল্লাহ বললেনঃ সে মুমিন ব্যক্তি যে কোন কাফেরকে হত্যা করেছে তারপর নিজে সঠিক
পথে চলেছে।
৪৭৪৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযাল (রহঃ) আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা এক ব্যক্তি একটি উটনী লাগামসহ নিয়ে এসে
বললো, এটা আল্লাহর রাহে (দান
করলাম)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর বিনিময়ে
কিয়ামতের দিন তুমি সাতশ- উটনী লাভ করবে যার প্রত্যেকটি লাগামসহ হবে।
৪৭৪৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন।
৪৭৪৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ উমার
(রহঃ) আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেনঃ, “আমার বাহন হালাক হয়ে গেছে, আপনি আমাকে একটি বাহন প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ
আমার কাছে তো তা নেই। সে সময় এক ব্যক্তি বললো, আমি
এমন এক ব্যক্তিরু সন্ধান তাকে দিলাম যে তাকে বাহন দিতে পারে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন উত্তম আমলের পথ প্রদর্শন
করে, তার জন্য আমলকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে।
৪৭৪৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, বিশর ইবনু খালিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আমাশ
(রহঃ) উক্ত সনদে বর্ননা করেন।
৪৭৪৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসলাম গোত্রের জনৈক যুবক বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি,যুদ্ধে যেতে চাই, অথচ
আমার কাছে যুদ্ধোপকরণ নেই। তখন তিনি বললেনঃ অমুকের কাছে যাও, সে যুদ্ধের জন্য সজ্জিত হয়েছিল কিন্তু পরে , রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন সে ব্যক্তি তার কাছে
গেল এবং বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম বলেছেনঃ এবং বলেছেনঃ, আপনি যেন সে সব যুদ্ধ সামগ্রী আমাকে দিয়ে দেন
যাদ্বারা আপনি নিজে সজ্জিত হয়েছিলেন। তখন সে ব্যক্তি (সম্ভবত, তার ন্ত্রীকে লক্ষ্য করে) বলছেন, হে অমূক! আমি যে যূদ্ধোপকরণে সজ্জিত হয়োছিলাম
তা একে দিয়ে দাও এবং তার মধ্য থেকে কিছুই রেখে দিওনা। আল্লাহর কসম! তার-সামান্যতম
অংশও যেন তুমি রেখে না দাও তাহলে আল্লাহ তাতে তোমাকে বরকত দান করবেন।
৪৭৪৯। সাঈদ ইবনু মাসূর ও আবূ
তাহির (রহঃ) যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে আল্লাহর রাস্থায় কোন গাজীকে যূদ্ধোপকরণে সজ্জিত করে দিল, সেও জিহাদ করলো, যে
ব্যক্তি কোন গাজীর অনুপস্হিতে তার পরিবারবর্গের দেখাশোনা করলো, সেও জিহাদই করলো।
৪৭৫০। আবূ রাবী যাহ-রানী
(রহঃ) যায়িদ ইবনু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনে: যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদকারী কোন গাজীকে যূদ্ধোপকরণে সজ্জিত করে
দিল সেও জিহাদই করলো, আর যে ব্যক্তি কোন গাজীর
অনুপস্থিতিতেই তার পরিবারবর্গের- দেখাশোনা করলো, সেও
জিহাদই করলো।
৪৭৫১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযায়েল বংশের অন্তর্ভুক্ত বনূ লিহইয়ান
গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তখন তিনি বলেনঃ প্রতি দুব্যক্তির একজন
যেন বাহিলীতে যোগদান করে কিন্তু সাওয়াব তারা দু-জনেই লাভ করবে।
৪৭৫২। ইসহাক ইবনু মানসুর
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। বাকী হাদীস পূর্বরুপ।
৪৭৫৩। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৫৪। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ
করলেন। তখন তিনি বললেনঃ প্রতি দুব্যক্তির মধ্যে একজন অবশ্যই যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়া
উচিত তারপর ইনি বাড়ীতে অবস্হানকারীদেরকে বললেনঃ তোমাদের মধ্যকার যে কেউ যুদ্ধে
গমনকারীর পরিবার পরিজন ও তা সহায়-সস্পদের দেখাশুনা করবে সেও যুদ্ধে গমনকারীর অর্ধেক
সাওয়াব লাভ করবে।
৪৭৫৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) যুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, মুজাহিদদের
রমনীদের পবিত্রতা বাড়ীতে অবস্থানকারীদের জন্যে তাদের মায়েদেরে পবিত্রতার তূল্য।
বাড়ীতে অবস্থানকারী ষে ব্যাক্তই কোন মুজাহিদের পক্ষে তার পরিবার বর্গের দেখাশোনার
দায়িত্বে থাকে এবং তাতে সে কোনরুপ খেয়ানত বা বিশ্বাসভঙ্গ করে, কিয়ামতের দিন সেই মুজাহিদকে তার সন্মুখে দাড়
করানো হরে এবং সে তার খেয়ানতকারীর নেক আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছে নিয়ে যাবে।
তোমাদের ধারণা কি? (অর্থাৎ সে কি আর কম নেবে? সমুদয় সাওয়াবই সে কেড়ে নিয়ে যাবে।)
৪৭৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বাকী অংশ সাওরী (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।
৪৭৫৭। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আলকামা ইবনু মারসা’দ (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস রেওয়ায়েত করেন তিনি আরও
রেওয়ায়েত করেন যে, মুজাহিদকে বলা হবে তুমি তার
নেক আমল থেকে যে পরিমাণ ইচ্ছা কর নিয়ে যাও। এ কথাটি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমাদের কি ধারণা (মুজাহিদ কি
তখন তার কোন সাওয়াব আর বাকী রাখবে?)।
৪৭৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বারা (রাঃ)-কে কুরআন শরীফের আয়াতঃ
“মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা সমান নয়।”
সম্পর্কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদ (রাঃ) কে একটি হাড় নিয়ে আসতে আদেশ করলেন এবং তিনি-তাতে তা
লিখলেন। তখন ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ) তাঁর (অন্ধত্বের) ওযর সম্পর্কে অমুযোগ
করলেন। এ প্রসঙ্গে নাযিল হলো: মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নহে অথচ ঘরে বসে থাকে
তারা সমান নয়।” শুবা (রহঃ) বলেনঃ, আমার কাছে সা’দ ইবনু ইবরাহীম
বর্ণনা করেছেন জনৈক ব্যক্তি সুত্রে তিনি যায়িদ (রহঃ) থেকে এ আয়াত সম্পর্কে “ যারা
বসে থাকে তারা সমান নয়।” বাকী হাদীস বারা (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ। ইবনু বাশশার
তাঁর বর্ণনায় বলেছেনঃ, সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
তাঁর পিতা থেকে তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে তিনি যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে।
৪৭৫৯। আবূ কুরায়ব (রহঃ) বারা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন ‘লা ইয়াস তাবিল’ আয়াত
নাযিল হলো, তখন ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)
সে ব্যাপারে তার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) সঙ্গে আলাপ
করলেন। তখন নাযীল হলোঃ অর্থাৎ যাদের কোন ওযর নেই।
৪৭৬০। সাঈদ ইবনু আমর আশজাসী
ও সুয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এক ব্যাক্তি; (এসে)
বললো, আমি যদি নিহত হই তবে কোথায়
থাকবো ইয়া রাসুলুল্লাহ! জবাবে তিনি বললেনঃ জান্নাতে। লোকটি তখন তার হাতের খেজুর
গুলো ফেলে দিয়ে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো অবশেষে শহীদ হলো। সুয়াইদ (রহঃ)-এর বর্ণনায়
আছে:ওহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো।
৪৭৬১। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, বনূ
নাবীতের এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলো। তিনি বলেনঃ, আহমাদ ইবনু জানাব মিসসীসী (রহঃ) বারা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আনসারদের অন্তর্ভুক্ত একটি
কবীলা-বনূ নাবীতের এক ব্যক্তি আসলো এবং বললো, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই
এবং আপনি তাঁর বান্দা ও রাসুল। তারপর সে অগ্রসর হলো এবং যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলো। এমন
কি শেষ পর্যন্ত সে শহীদ হলো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে
খুবই সহজ কাজ করলো তবে তাঁকে প্রচুর সাওয়াব দেওয়া হয়েছে।
৪৭৬২। আবূ বাকর ইবনু নাযর
ইবনু আবূ নাযর, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বুসায়সা (রাঃ)-কে আবূ সুফিয়ানের বাণিজ্যিক কাফিলার গতিবিধি লক্ষ্য করার
জন্যে প্রেরণ করেন। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। তখন আমি ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া ঘরে আর কেউই ছিলোনা। রাবী বলেনঃ আমি স্বরণ করতে পাচ্ছিনা, তিনি (আনাস) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কোন সহধর্মিনার না আমার কথাও বলছেন কিনা। এরপর সমুদয় ঘটনা বর্ণনা
করলেন। বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং লেকাজনকে লক্ষ্য করে তিনি বললেনঃ আমি দুশমনের
খোঁজে বের হচ্ছি। যার সাওয়ারী মউযূ (ওজু/অজু/অযু)দ আছে সে যেন আমাদের সঙ্গে
সাওয়ার হযে যায়। তখন কিছুলোক মদিনার উপরাঞ্চল থেকে তাদের সাওয়ারী নিয়ে আসার অনুমতি
চাইলেন। তখন তিনি বললেনঃ না, কেবল যাদের সাওয়ারী প্রস্তুত
আছে তারাই যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ
রওয়ানা করলেন এবং মুশরিকদের সাথে বদরে গিয়ে উপনীত হলেন। এর পরপরই মুশরিকরা এসে
পৌছাল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন
কোন ব্যাপারে আমার অগ্রবতী না হয়, যতক্ষন না আমি তার সামনে
থাকি। এরপর মুশরিকরা নিকটবর্তী হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও-যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের
প্রশস্ততার মত। রাবী বলেনঃ, উমায়র ইবনু ইমাম আনসারী
(রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন , ইয়া রাসুলুল্লাহ! জান্নাতের
প্রশস্ততা কি আসমান ও যমীনের প্রশস্ততার ন্যায়? তিনি
বললেনঃ হ্যা। উমায়র বলে উঠলেন, সাবাস সাবাস, কি। চমৎকার! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাবাস, সাবাস বলতে তোমাকে কিসে
উদ্বৃদ্ধ করলো হে? তিনি বললেনঃ ইয়া
রাসুলুল্লাহ! বরং আল্লাহর কসম! আমি তার অধিবাসী হওয়ার আশায়ই এরুপ বলছি। তখন তিনি
বললেনঃ তুমি নিশ্চয়ই তার অধিবাসী (হবে)। রাবী বলেনঃ, তারপর
তিনি তাঁর তৃণ থেকে কয়েকটি খেজুর বের করলেন এবং তা খেতে লাগলেন। তারপর বললেনঃ, আমি যদি এ খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত
বেঁচে যাই তবে তাও হবে এক দীর্ঘ জীবন। রাবী বলেনঃ, তারপর
তাঁর কাছে রক্ষিত খেজুরগুলো তিনি ফেলে দিলেন তারপর যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন এমন কি
শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন।
৪৭৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস (রহঃ) বলেনঃ আমি আমার
পিতাকে বলতে শুনেছি, আর তিনি ছিলেন তখন শক্রর
মুখোমুখি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই জান্নাত
রয়েছে তরবারীর ছায়ায়। তখন আলুথালু এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো এবং বললো, হে আবূ মূসা! আপনি কি নিজে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ, হাঁ।
তখন সে ব্যক্তি তার সাথীবর্গের কাছে ফিরে গেলো। তারপর বললো, আমি তোমাদেরকে (বিদায়ী) সালাম জানাচ্ছি। এরপর
সে তার তরবারীর কোষ ভেঙ্গে ফেলে তা দুরে নিক্ষেপ করলো। তারপর নিজ তরবারীসহ
শক্রদের কাছে গিয়ে উপনীত হলো। এবং তা দিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেল।
৪৭৬৪। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, কতিপয়
লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললো, আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক দিন যারা আনাদেরকে
কুরআন এবং সুন্নাহ শিক্ষ দিবেন। তখন তিনি আনসারদের সত্তর ব্যক্তিকে তাদের সাথে
পূরণ করলেন। তেদেরকে কুরা (ক্বারী সমাজ) বলা হতো। ঐদের মধ্যে আমার মামা হারামও
ছিলেনা তারা কুরআন তিলওযাত করতেন এবং রাত্রে এর অর্থ অনুধাবন ও শিক্ষায় অতিবাহিত
করতেন আর দিনের বেলায় জলাশয়ে গিয়ে পানি এন মসজিদে রাখতেন এবং কাঠ সংগ্রহ করে তা
বিক্রী করে বিক্রী লব্ধ অর্থে সুফফা বাসীগণ এবং নিঃস্ব ফকীরদের জন্যে আহার্য্য
সামগ্রী ক্রয় করতেন। যাদেরকেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে
পাঠিয়েছিলেন। ওরা রাস্তায়ই তাদের উপর আক্রমণ করলো এবং তারা গন্তব্যস্থলে পূর্বে
তাদেরকে হত্যা করলো। তখন তাঁরা বললেনঃ, হে
আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের নাবীর কাছে সংবাদ পৌছিয়ে দিন যে আমরা তোমার
সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এবং তোমার প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছি আর তুমিও আমাদের প্রতি
সন্তুষ্ট রয়েছো। তিনি রাবী বলেনঃ, এক ব্যক্তি আনাস (রাঃ)-এর
মামা হারাম (রাঃ)-এর পিছন দিক দিয়ে এসে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করে জান বের করে নিল
হারাম (রহঃ) বলে উঠলেন, কাবার প্রভূর কসম! আমি
সাফল্য মন্ডিত হয়েছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের ভাইগণ নিহত হয়েছেন। আর অতিম মূহর্তে তারা বলেছেনঃ, হে আল্লাহ আমাদের নাবীকে সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা তোমার সন্নিধানে পৌছে গিয়েছি এ অবস্হায়
যে, আমরা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট আর তুমিও আমাদের
প্রতি সন্তুষ্ট।
৪৭৬৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আনাস (বা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরে
যে চাচার নামানূসারে আমার নামকরণ করা হয়েছে সেই জানাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। রাবী
বলেনঃ, এটা ছিল তার জন্যে অত্যন্ত
বেদনাদায়ক। তিনি (প্রায়ই) বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যে যুদ্ধটি করেছিলেন, তাতে
আমি শরীক হতে পারলাম না। এরপর যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে তাঁর কোন যুদ্ধ প্রত্যক্ষ
করার সুযোগ দান করেন তা হলে আমি কি করি তা আল্লাহ দেখবেন। রাবী বলেনঃ, এর বেশী কিছু বলতে তিনি ভয় পেতেন। তারপর ওহুদের
যুদ্ধের দিন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধে
অংশ গ্রহণ করেন। সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) যখন অগ্রসর হলেন তখন আনাস (রাঃ) তাকে
লক্ষ্য করে বললেনঃ, হে আবূ আমর! কোথায় (যাচ্ছ)? আহা, জান্নাতের
ঘ্রাণ আমি ওহুদ প্রান্ত থেকে পাচ্ছি রাবী বলেনঃ-, তারপর
তিনি কাফিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীণ হলেন এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেলেন।
তারপর তার শবদেহে আশিটিরও অধিক তরবারী, বর্শা
ও তীরের আঘাত পাওয়া যায়। রাবী আনাস (রাঃ) বলেনঃ, তার
বোন এবং আমার ফূফূ রাবীয়া বিনত নযর (রাঃ) বলেনঃ, (শহীদের
ক্ষম-বিক্ষত দেহের) কেবল তার আঙ্গুলের জোড়া দেখেই তাকে আমি সনাক্ত করেছি। -(অন্য
কোন পরিচয়ই অবশিষ্ট ছিল না।) তখন আয়াত নাযিল হলোঃ এরা হচ্ছে সে সব ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পালন করে
দেখিয়েছে। তাদের কেউ অঙ্গীকার ইতিমধ্যেই পূরণ করে ফেলেছে আর কেউ তার প্রতীক্ষায়
রয়েছে। তারা মোটেই পরিবর্তিত হয়নি। রাবী বলেনঃ, সাহাবীগণ
মনে করতেন যে এ আয়াতখানা তার এবং তার সঙ্গী-সাথীদের ব্যাপারেই নামিল হয়েছিল।
৪৭৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাসশার (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ, জনৈক
বেদুঈন ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে উপস্হিত হয়ে আরয
করলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ এক ব্যক্তি
গনীমত লাভের জন্য যুদ্ধ করে, অন্য এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে
স্বরনীয় হওয়ার জন্যে। আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে (বীরত্ব) নিজের উচ্চমর্যাদা
প্রদর্শনের জন্যে। এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাহে বলে গণ্য হবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমা সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে সে
ব্যক্তই আল্লাহর রাহে (যুদ্ধ করে)।
৪৭৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ)
আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদাঁ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করা হলো, যে ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি গোত্রের সার্থ যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে।
এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাহে যূদ্ধ (বলে গণ্য হবে?) তখন (জবাবে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হবে, (কেবল) সেই আল্লাহর রাহে (বলে গণ্য হবে।)
৪৭৬৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম এবং আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের মধ্যেকার এক
ব্যক্তিবীরত্ব প্রদর্শনের জন্য লড়াই করে তার অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৪৭৬৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা
জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ
সম্পর্কে প্রশ্ন করলো তখন সে ব্যক্তি বললো, এক
ব্যক্তি ক্রোধের বশে যুদ্ধ করে এবং গোত্রের টানে যুদ্ধ করে। তখন তিনি তার দিকে
মাথা তুলে তাকালেন। তার এ মাথা তোলা শুধু এজন্যেই ছিল যে সে লোকটি দাঁড়ানো
অবস্হায় ছিল। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এ জন্যে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বানী সমুন্নত হবে, কেবল সেই আল্লাহর রাহে (যুদ্ধ করে)।
৪৭৭০। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল
হারেসী (রহঃ) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা লোকজন যখন
আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিলো, তখন
সিরিয়াবাসী নাতিল (রহঃ) বললেনঃ হে শায়খ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে এনেছেন এমন একখানা হাদীস আমাদেরকে শুনান। হ্যা, শুনাবো। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার
বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ
হয়েছিল। তাঁকে হাযির করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নিয়ামত রাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে
তাঁর সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা’আলা
বলবেন: এর বিনিময়ে কি আমল করেছিলে? সে
বলবে, আমি তোমারই রাহে যুদ্ধ
করেছি এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তুমি মিথ্যা
বলেছেনঃ। তুমি বরং এ জন্যেই যুদ্ধ করেছিলে-যাতে লোকে তোমাকে বলে-তুমি বীর। তা বলা
হয়েছে এরপর নির্দেশ দেওয়া হবে। সে মতে তাকে উপূড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে-যে জ্ঞান অর্জন
ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন শরীফ অধ্যায়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ
তা’আলা তার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি
তার স্বীকারোক্তিও করবে) তখন আল্লাহ তাঁআলা বলবেন: এত বড় নিয়ামত পেয়ে বিনিময়ে
তুমি কি করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি
এবং তোমারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যায়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তায়ালা
বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলেছেনঃ। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্যে-যাতে লোকে
তোমাকে জ্ঞানী বলেনঃ। কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এ জন্যে-যাতে লোকে বলে-সে একজন
ক্বারী। তা বলা হয়েছে! তারপর নির্দেশ দেওয়া হবে এর মতে তাকেও উপূড় করে হেঁচড়িয়ে
নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার
হবে-যাকে আল্লাহ তা’আলা স্বচ্ছলতা এবং সর্ববিধ সম্পদ বৈভ দান করেছেন। তাকে হাযির
করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নিয়ামত সমূহের কথা তাঁকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (এবং
স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেনঃ “এ সব নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি
আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই যাতে সস্পদ ব্যয়
তুমি পছন্দ কর অথচ আমি সে খাতে তোমার সন্তুষ্টির জন্যে করিনি। তখন আল্লাহ তা’আলা
বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি বরং এ জন্যে তা করেছিলে-যাতে লোকে তোমাকে
“দানাবীরঁ” বলে অবিহিত করে। তা বলা হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেওয়া হবে-সে মতে তাকেও
উপূড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
৪৭৭১। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার থেকে হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বর্ননায়
“তাফাররাকা” এর স্হলে “তাফাররাজা” এবং “নাতিল আহলিশ শাম” এর স্হলে “নাতিরশ শাম”
বলে উল্লেখ করেছেন। অবশিষ্ট হাদীস খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৪৭৭২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বাহিনী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করলো এবং
তাতে গনামত লাভ করলো তারা এ দুনিয়াতেই আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময় নগদ পেয়ে গেল।
তাদের জন্য কেবল এক-তৃতীয়াংশ বিনিময় অবশিষ্ট রইলো। আর যে বাহিনী কোন গনীমত লাভ
করলোনা, তাদের পুর্ণ বিনিময়ই পাওনা
রয়ে গেল।
৪৭৭৩। মুহাম্মদ ইবনু সাহল
তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই বাহিনী মাত্রই যারা আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ করলো এবং গনীমত লাভ করলো, তারপর নিরাপদে প্রত্যাবর্তন
করলো তাঁরা আখিরাতের দুই-তৃতীয়াংশ বিনিময়ই নগদ পেয়ে গেল। আর যারা খালি হাতে বা
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো, তাদের
পুরো বিনিময়ই পাওনা রয়ে গেল।
৪৭৭৪। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ প্রত্যেকটি আমলের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোন ব্যক্তি কেবল তাই
লাভ করবে-যা সে নিয়্যাত করেছে। যার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসূলর উদ্দেশ্যে, তার হিযরত আল্লাহর ও রাসূলের উদ্দেশ্য হিজরত
বলে গণ্য হবে, আর যার হিজরত পার্থিব কোন
লাভ বা কোন মহিলার পাণি গ্রহণের উদ্দেশ্যে হবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যের হিজরত
বলেই গণ্য হবে।
৪৭৭৫। মুহাম্মদ ইবনু রুমহ, আবূ রাবী আতাকী, মুহাম্মাদ
ইবনু মুনান্না, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মদ ইবনু আলা হামদানী ও ইবনু আবূ উমার
(রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আমি
উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে মিম্বরে উপবিষ্ট অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বরাতে বলতে শুনেছি।
৪৭৭৬। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের আকাংখা করে আল্লাহ তাকে তা
(অর্থাৎ তার সাওয়াব) দিয়ে থাকেন-যদিও সে শাহাদাত লাভের সুযোগ না পায়।
৪৭৭৭। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে
শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন-যদিও বা সে আপন শয্যায় মৃত্যুবরণ করে।
৪৭৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর
রাহমান ইবনু সাহম আন্তাকী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কোনদিন জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার
মনে কোন দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যু বরণ
করলো। আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেনঃ, আমাদের
মত হলো হুকুম একান্তই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগের জন্য
প্রযোজ্য।
৪৭৭৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা
আমরা কোন এক যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন
তিনি বললেনঃ মদিনার এমন কতিপয় লোক রয়েছে-যারা তোমাদের প্রতিটি পথ চলার এবং প্রান্তর
অতিক্রমকালে তোমাদেরই সঙ্গে রয়েছে। (সায়াব লাভের বেলায়)। রোগ ব্যাধি তাদেরকে আটকে
রেখেছে।
৪৭৮০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আমাশ (রহঃ) থেকে এ হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন। তবে ওকী (রহঃ) এর বর্ননায় আছে “তাঁরা
সাওয়াবে তোমাদে সঙ্গে শরীক রয়েছে।”
৪৭৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ)-এর ঘরে যেতেন। তিনি তাকে আপ্যায়িত
করতেন। উম্মে হারাম (রাঃ) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর
ন্ত্রী। একদা তিনি তাঁর ঘরে গেলেন এবং তিনি তাকে (চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী)
আপ্যায়িত করলেন। তারপর তিনি তাঁর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মাথার উকুন দেখতে লাগলেন এবং এ অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন তিনি হাসছিলেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেনঃ, আমি তখন বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ আপনার হাসবার কারণ কি! তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের এমন কিছু সংখ্যক
লোককে আমার সন্মুখে পেশ করা হলো, যারা
আল্লাহর রাহের যোদ্ধারুপে রাজা-বাদশাহ হিসাবে সাগর পৃষ্ঠে সিংহাসনে আসীন হবেন।
অথবা বলেছেনঃ, রাজা-বাদশাহর মত সিংহাসনে
আসীন হবেন। রাবী সন্দেহপোষণ করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাক্যটি বলেছেনঃ। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেনঃ, তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল
করেনা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্যে দোয় করলেন।
এরপর তিনি মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। আবার জেগে হাসতে লাগলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আ-পনাকে কিসে হাসাচ্ছে ইয়া রাসুলুল্লাহ তিনি
বললেনঃ আমার উম্মাতের কিছু সংখ্যক লোককে আমার সন্মুখে পেশ করা হয়, আল্লাহর রাহের যোদ্ধারুপে পূর্বের বাক্যের
অনুরুপ। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি
আল্লাহর কাছে দোয়া করুন তিনি যেন আমাকেও তাদের সঙ্গে শামিল করেন। তিনি বললেনঃ
তুমি হবে তাদের প্রথম সারির একজন। তারপর উসো হারাম বিনত মিলহান (রাঃ)-এর আমলে
সত্যিসত্যি সমূদ্রপৃষ্ঠে (সাইপ্রাসের যুদ্ধ উপলক্ষে) আরোহণ করেন এবং সমুদ্র থেকে
গমণকালে সাওয়ারা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
৪৭৮২। খালফ ইবনু হিশাম (রহঃ)
আনাস (রাঃ)-এর খালা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে এলেন এবং আমাদের এখানেই মধ্যাহ্ন
বিশ্রাম করলেন। তারপর তিনি যখন জাগলেন তখন হাসছিলেন, আমি
বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার
হাসবার কারণ কি? আপনার প্রতি আমার পিতামাতা
কুরবান হোক। তখন জবাবে তিনি বললেনঃ আমাকে (স্বপ্নে) দেখানো হলো যে, আমার উম্মাতের মধ্যকার একদল লোক
রাজা-বাদশাহদের সিংহাসনে আরোহণের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠে আরোহণ করবে। তখন আমি আরয করলাম, আপনি আমার জন্য দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে
তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তুমি তাদের মধ্যে শামিল থাকবে। তারপর তিনি শুয়ে
পড়েন এবং পূনরায় জাগ্রত হয়ে আবারও হাসতে থাকেন। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম
তিনি পুর্বের ন্যায় জবাব দিলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি
আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমাকে তাদের সঙ্গে শামিল রাখেন। তিনি বললেনঃ তুমি হবে
তাদের প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত। রাবী বলেনঃ, তারপর
পরবর্তীকালে উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) তাকে বিয়ে করেন। তিনি সমুদ্রযুদ্ধে যাত্রা
করেন এবং তাকেও সঙ্গে নিয়ে যান। যখন তিনি ফিরে আসছিলেন তখন একচি খচ্চর তাঁর সামনে
আনা হলো। তিনি তাতে আরোহণ করলেন তখন খচ্চরটি তাঁকে নীচে ফেলে দেয়। তাতে তার ঘাড়
ভেঙ্গে যায়। (এবং এভাবে তিনি শহীদ হন।)।
৪৭৮৩। মুহাম্মদ ইবনু রুমহ
ইবনু মুহাজির ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন এবং মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করলেন তারপর মুচকি হাসতে
হাসতে জাগলেন। তিনি বলেনঃ, আমি তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার হাসবার কারণ কি? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোককে আমার
সন্মুখে পেশ করা হলো যারা ঐ সবুজ সাগরের পিঠে আরোহণ করবে । তারপর হাম্মাদ ইবনু
যাযুদের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৪৭৮৪। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আনাসের খালা বিনত মিলহানের কাছে এলেন। এবং তাঁকে কাছে বিশ্রাম “গ্রহণ করলেন। তারপর
ইসহাক ইবনু আবূ তালহা ও মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (রহঃ)-এর হাদীসের
অনুরুপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
৪৭৮৫। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর
রাহমান ইবনু বাহরাম দারেমী (রহঃ) সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, একটি দিবস ও একটি রাতের
সীমান্ত প্রহরা একমাস সিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চাইতেও উত্তম। আর যদি এ
অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাতে তার এ আমলের সাওয়াব
জারী থাকবে। এবং তার (শহীদ-লাভ) রিযক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে ব্যক্তি ফিতনাসমূহ
থেকে নিরাপদে থাকবে।
৪৭৮৬। আবূত তাহির (রহঃ)
সালমান আল খায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লায়সের হাদীসের অনুরুপ হার্দীস
বর্ণনা করেছেন।।
৪৭৮৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একব্যক্তি পথ চলাকালে একটি কাঁটাযুক্ত গাছের
ডাল রাস্তায় পেয়ে তা সরিয়ে দিল, তখন আল্লাহ তা’আলা তার
প্রতিদানে তাকে মার্জনা করে দিলেন। তিনি আরও বললেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার ১। প্লেগ
গ্রস্থ ২। উদরাময় গ্রস্থ ৩। ড়ূবন্ত ৪। কোন কিছু চাপা পড়ে মৃতব্যক্তি এবং ৫।
আল্লাহর রাহে (প্রাণদানকারী) শহীদ।
৪৭৮৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যকার কাদেরকে শহীদ বলে
গণ্য কর? তারা বললেনঃ, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত
হয় সেই তো শহীদ।” তিনি বললেনঃ তবে তা আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে।
তখন তারা বললেনঃ, তা হলে তারা কারা ইয়া
রাসুলুল্লাহ! বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ রাহে নিহত হয় সে শহীদ। ষে ব্যক্তি আল্লাহর
রাহে মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ। যে ব্যক্তি প্লেগে মারা যায় সে শহীদ যে ব্যক্তি
উদরাময়ে মারা যায় সেও শহীদ। ইবনু মিকসাম (রহঃ) বলেনঃ, আমি তোমার পিতার উপর এ হাদীসের ব্যাপারে
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আরও বলেছেন, এবং পানিতে ডূবে মারা যায় এমন ব্যক্তিও শহীদ।
৪৭৮৯। আবদুল হামিদ ইবনু বয়ান
ওয়াসেতী (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ)-এর সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। সুহায়ল (রহঃ) বলেনঃ, উবায়দুল্লাহ ইবনু মিকসাস (রহঃ)বলেনঃ, আমি তোমার ভাইয়ের উপর এ হাদীসের ব্যাপারে
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি তাতে বাড়তি এতটুকুও
বলেছেনঃ, যে ব্যক্তি পানিতে ডূবে
মরলো সেও শহীদ।
৪৭৯০। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) অপর সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা করে বর্ধিত এতটুকু বলেছেনঃ, যে ব্যক্তি ড়ূবে মরলো- সেও শহীদ।
৪৭৯১। হামিদ ইবনু উমার আল
বাকরাভী (রহঃ) হাফসা বিনত সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ, আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়াহইয়া
ইবনু আবূ আমরা কিসে মারা গেলেন? আমি বললাম, প্লেগ গ্রস্হ হয়ে। তিনি তাকে বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ প্লেগ হচ্ছে প্রত্যেকটি মুসলিম ব্যক্তির জন্যে শাহাদত স্বরুপ।
৪৭৯২। ওয়ালীদ ইবনু শুজা
(রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৯৩। হারুন ইবনু মারুফ
(রহঃ) উকবা ইবনু আমর (রাঃ) বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বারের উপর আসীন অবস্হায় আমি বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালার বানীঃ “এবং তোমরা তাদের
মোকাবেলায় শক্তি সঞ্চয় করে রাখো।” জেনে রাখো, শক্তি
হচ্ছে তীরন্দাযী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে
তীরন্দাযী, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে
তীরন্দাযী।
৪৭৯৪। হারুন ইবনু মারুফ
(রহঃ) উকবা ইবনু আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে আমি বলতে শুনেছি, অচিরেই অনেক ভূ-খন্ড তোমাদের
পদানত হবে। আর শক্রদের মোকাবেলায় আল্লাহই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবেন। তোমাদের কোন
ব্যক্তি যেন তীর নিক্ষেপের খেলার অভ্যাস ত্যাগ না করে।
৪৭৯৫। দাঊদ ইবনু রাশায়দ
(রহঃ) উকবা ইবনু আমের (রাঃ) এর বরাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৭৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ
ইবনু মুহাজির (রহঃ) ফুকায়ম লাখমী (রহঃ) একদা উকবা ইবনু আমের (রাঃ)-কে বললেনঃ, দুই লক্ষ্যস্হলের মধ্যে বারবার আনাগোনার মধ্যে
এই বৃদ্ধ বয়সে নিশ্চয়ই আপনার কষ্ট হয়ে থাকবে। তিনি বললেনঃ, আমি যদি একটি কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে না শুনতাম, তবে
এ কষ্টটূকু করতাম না। রাবী হারিছ বলেনঃ, আমি
ইবনু শামাসাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, সে কথাটি কি? তিনি বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ, যে
ব্যক্তি তীর পরিচালনা শিখলো তারপর তার অভ্যাস ছেড়ে দিল সে আমাদের কেউ না। অথবা
তিনি বলেছেনঃ সে পাপ করলো।
৪৭৯৭। সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূর রাবী আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল লোক সর্বদাই হকের
উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করে কেউ তাদের কোন অনিষ্ট করতে পারবে
না। এমন কি এভাবে আল্লাহর আদেশ অর্থাৎ কিয়ামত এসে পড়বে আর তারা যেমনটি ছিল তেমনটই
থাকবে। কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে আর তারা তেমনি থাকবে- অংশটূকু নেই।
৪৭৯৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নুমায়র ও ইবনু আবূ উমর
(রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একদল লোক
সর্বদাই মানব জাতির উপর বিজয়ী থাকবে। এমন কি এভাবে তাদের কাছে আল্লাহর আদেশ এসে
পড়বে তাদের বিজয়ী থাকাবস্হায়।
৪৭৯৯। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। মারওয়ানের হাদীসের সস্পূর্ণ অনুরুপ।
৪৮০০। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ
দ্বীন (ইসলাম) সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানদের একটি দল এর পক্ষে লড়তে থাকবে কিয়ামত
পর্যন্ত।
৪৮০১। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি, আমার উাম্মাতের একটি জামায়াত
সর্বদাই সত্যের স্বপক্ষে লড়তে থাকবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত।
৪৮০২। মানসূর ইবনু আবূ
মুযাহিম (রহঃ) উমায়র ইবনু হানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি মূয়াবিয়া (রাঃ) কে মিম্বরের উপর আসীন
অবস্হায় বলতে শুনেছি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে
শুনেছি যে, আমার উম্মাতের একটি জামায়াত
আল্লাহর আদেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যারা তাদের সঙ্গ ত্যাগ করবে বা বিরোধিতা
করবে, তারা তাদের কোনই অনিষ্ট সাধন
করতে পারবে না। এভাবে আল্লাহর আদেশ তথা কিয়ামত , এসে
পড়বে আর তারা তখনও লোকের উপর বিজয়ী থাকবে।”
৪৮০৩। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) ইয়াযিদ ইবনু আসাম বলেনঃ, আমি মুয়াবিয়া ইবনু আবূ
সুফিয়ান (রাঃ)-কে এমন একটি হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা
করতে শুনেছি যা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরাতে অন্য কোন হাদীস
মিম্বরের উপর থেকে বলতে তাঁকে আমি শুনিনি। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে
দ্বীনের বুৎপত্তি দিয়ে থাকেন এবং মূসলমানদের একটি দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে
লড়াই করবে। যারা তাদের প্রতি বিরুপ ভাব পোষণ করবে তাদের বিরুদ্ধে থাকায় তারা
তাদের উপর বিজয়ী থাকবে। কিয়ামত অবধি এভাবে চলতে থাকবে।
৪৮০৪। আহমাদ ইবনু আবদূর
রাহমান ইবনু ওহাব (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু শামাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি মাসলামা ইবনু মুখাল্লাদ (রাঃ)-এর কাছে
বসা ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ, কিয়ামত
কেবল তখনই কায়েম হবে যখন নিকৃষ্টতম লোকরা থাকবে-ওরা জাহেলিয়াৎ সম্প্রদায়ের লোকদের
চাইতেও নিকৃষ্টতর হবে। তারা আল্লাহর কাছে যে বস্তুর জন্যই দোয়া করবে তিনি তা
প্রত্যাখান করবেন। তারা যখন এ আলোচনায় ছিলেন এমন সময় উকনা ইবনু আমির (রাঃ) সেখানে
এলেন। তখন মাসলামা (রাঃ) বললেনঃ, হে উকবা, শুনুন, আবদুল্লাহ
কি বলেছেন? তখন উকবা (রাঃ) বললেনঃ, তিনি তা ভাল জানেন। তবে আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আমার
উম্মাতের একটি দল আল্লাহর বিধানের
উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়ে যাবে। তারা তাদের শক্রদের মোকাবিলায় অত্যন্ত বজ্র কঠোর
হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোন অনিষ্ট করতে
পারবে না। এভাবে চলতে চলতে তাদের নিকট কিয়ামত এসে যাবে আর তাঁর এর উপরই প্রতিষ্ঠিত
থাকবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেনঃ, হাঁ। তারপর আল্লাহ একটি বায়ু
প্রবাহ প্রেরণ করবেন, সে বায়ু প্রবাহটি হবে কারীর
সূঘ্রাণের ন্যায়। এবং তার পরশ হবে রেশমের পরশের মত। সে বায়ু এমন একটি লোককেও
অবশিষ্ট রাখবে না যার অন্তরে একটি দানা পরিমাণ ঈসান থাকবে। তাদের সকলকে তা কবজ করে
নেবে। তারপর কেবল নিকৃষ্টতম লোকগুলই বাকী থাকবে এবং তাদের উপরই কিয়ামত কায়েম হবে।
৪৮০৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশ্চিম দেশীয়রা বরাবর হকের উপর প্রতিষ্টিত থাকবে কিয়ামত
পর্যন্ত।
৪৮০৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা উর্বরতুমি দিয়ে চলাচল কর তখন উটকে ভূমি থেকে তার
পাওনা আদায় করতে দিও। আর যখন দূর্ভিক্ষগ্রস্ত ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর তখন
তাড়াতাড়ি পথ অতিক্রম করবে এবং যখন কোথাও রাত্রি যাপনের জন্যে অবতরণ করবে তখন
রাস্তায়-মঞ্জিল করবে না। কেননা তা হচ্ছে জন্তুদের রাতে চলার পথ এবং ছোট ছোট
অনিষ্টকর প্রানীদের রাত্রিকালীন আশ্রয়স্হল।
৪৮০৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন উর্বর ভূমি দিয়ে পথ অতিক্রম কর
তখন উটকে ভূমি থেকে তার পাওনা দাও। আর যখন দুর্ভিক্ষগ্রস্ত বা অনুর্বর ভূমি দিয়ে
পথ অতিক্রম কর তখন তাড়া-তাড়ি তাদের মগজ (চলার শক্তি) বাকী থাকতে তা অতিক্রম করে
যাও। আর যখন রাত্রি যাপনের জন্যে কোথাও অবতরণ কর তখন পথ থেকে সরে থাকবে। কেননা তা
হচ্ছে জীবজন্তু ও সাপ বিচ্ছু ইত্যাদির রাত্রি বেলার আশ্রয়স্হল।
৪৮০৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব, ইসমাঈল ইবনু আবূ উরায়স, আবূ মুসআব যূহরী, মানসুর
ইবনু আবূ মুযাহিম, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সফর ক্লেশের অংশ, তা তোমাদের কোন ব্যক্তিকে
(অর্থাৎ যে কাউকে) তার নিদ্রা ও পানাহারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। সুতরাং তোমাদের কাজ
সমাপ্ত হয়ে গেলেই সে যেন তাড়াতাড়ি করে তার পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যায়। রাবী
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) বলেনঃ, আমি
(রাবী) মালিককে বললাম, সূমাই কি আপনাকে আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বর্ণিত এ হাদীস খানা বর্ণনা করেছেন? তখন
তিনি বললেনঃ, হ্যা।
৪৮০৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো (গভীর) রাতে (সফর থেকে ঘরে) পরিবারবর্গের
নিকট আসতেন না; বরং সকালে বা সন্ধ্যায়
তাঁদের কাছে আসতেন।
৪৮১০। যূহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে, তবে এতে ‘লা ইয়াতরিকু’ এর
স্হলে ‘লা ইয়াদখুলু’ বর্ননা করেছেন।
৪৮১১। ইসমাঈল ইবনু সালিম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমরা এক অভিযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। তারপর আমরা যখন মদিনায় আসলাম এবং ঘরে ফিরতে
উদ্যত হলাম তখন তিনি বললেনঃ একটু অপেক্ষা কর, আমরা
রাতে বা সন্ধ্যায় বাড়ীতে প্রবেশ করবো এতে যাদের সহধর্মিনাদের চুল অবিন্যস্ত তারা
নিজেদের চুল বিন্যস্ত করে নিবে এবং যাদের স্বামী প্রবাসে ছিল তারা গুপ্তাঙ্গের
লৌমরাশি পরিস্কার করার অবকাশ পায়।
৪৮১২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন ব্যক্তি রাতের বেলা সফর থেকে ফিরে তখন সে যেন রাতের
আগুন্তকের মতো অতর্কিতে পরিবারবর্গের কাছে গিয়ে উপস্থিতনা হয়-যাতে দীর্ঘকাল
অনুপস্হিত সামীর স্ত্রী তার শুপ্তাঙ্গের লোম পরিস্কার করার এবং এলোবেশিনী তার কেশ
বিন্যাস করার সুযোগ পায়।
৪৮১৩। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
(রহঃ) সাইয়ার (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৪৮১৪। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন কোন ব্যক্তি সফরের পর বাড়ী ফিরে তখন রাতের
অপ্রত্যাশিত আগুন্তকের মতো পরিবারের কাছে উপস্থিত হতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন।
৪৮১৫। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
(রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।
৪৮১৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, কোন
ব্যক্তি রাতের বেলা অতর্কিতে ঘরে ফিরে তার ন্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করতে কিংবা
দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ
করেছেন।
৪৮১৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণিত। আব্দুর রাহমান (রহঃ) বলেনঃ
সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেনঃ, “তাদের প্রতি সন্দেহ পোষণ ও
দোষক্রটি অনুসন্ধান প্রসংগটি” হাদীসে আছে কি না তা আমার জানা নেই।
৪৮১৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অতর্কিতে রাত্রিতে ঘরে ফিরা মাকরুহ হওয়া সংক্রান্ত কথা রিওয়াত
করেছেন। তবে তিনি তাদের প্রতি সন্দেহ পোষন ও দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান বাক্যটি উল্লেখ
করেননি।