৫৪৬১। উক্ববা ইবনু মুকরাম ও মুহাম্মাদ ইবনু মারযূক (রহঃ) আবূ ইসায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যক্তি পথচারীকে, পথচারী ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে সালাম করবে।
৫৪৬২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহার
পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা (বাড়ির সামনের খোলা) আংগিনায়
বসে কথাবার্তা বলছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং
আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, রাস্তা-ঘাটে বৈঠক-মজলিস করা তোমাদের অভ্যাস
কেন? রাস্তাঘাটে
মজলিস-বৈঠক করা তোমরা বর্জন করবে। আমরা বললাম আমরা তো বসেছি কোনও অসুবিধা করার
উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। আমরা বসে আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তা বলছি। তিনি বললেন, যদি তা না
করে না পার, তা
হলে রাস্তার হক আদায় করবে। আর তা হলো তিনি অবনত রাখা, সালামের
জবাব দেওয়া এবং উত্তম কথা বলা।
৫৪৬৩। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকবে। তারা বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। সেখানে আমরা কথা বার্তা বলি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একান্তই যদি তোমাদের বসতে হয়, তাহলে
তোমার রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, রাস্তার হক কি? তিনি ইরশাদ করলেন, দৃষ্টি
অবনত রাখা, (কাউকে)
কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের আদেশ করা ও
মন্দকাজে নিষেধ করা।
৫৪৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম
(রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৬৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা- (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলমানের প্রতি অপর
মুসলমানের হক পাঁচটি। অন্য সুত্রে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি
বিষয় মুসলমানের জন্য তার ভাইয়ের ব্যাপারে ওয়াজিবঃ ১ সালামের জবাব দেওয়া, ২
হাঁচিদাতাকে (তার আলহামদু লিল্লাহ বলার জবাবে) রহমতের দুআ করা, ৩ দাওয়াত
কবুল করা, ৪
অসুস্হকে দেখতে যাওয়া এবং ৫ জানাযার সাথে গমন করা। (রাবী) আবদুর রাযযাক (রহঃ)
বলেনঃ মা’মার (রহঃ) এ হাদীস থেকে মূরসাল হিসেবে বর্ণনা করতেন, এরপর ইবনু
মূসায়্যাব (রহঃ) সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে পূর্ণ সনদে বর্ণনা করেছেন।
৫৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানের প্রতি মুসলমানের হক ছয়টি।
জিজ্ঞাসা করা হল, সেগুলো
কী, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! ইরশাদ করলেন (সেগুলো হলোঃ)১ তার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম
করবে, ২
তোমাকে দাওযাত করলে তা তুমি গ্রহণ করবে, ৩ সে তোমার কাছে সৎ পরামর্শ চাইলে, তুমি তাকে
সৎ পরামর্শ দিবে, ৪
সে দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে, তার জন্য তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) রহমতের
দুআ করবে, ৫
সে অসুস্হ হলে তার সেবা-শশ্রুষা করবে এবং ৬ সে মারা গেলে তার (জানাযার) সঙ্গে
যাবে।
৫৪৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আহলে কিতাবের কেউ তোমাদের সালাম করলে
তোমরা (শুধু এতটুকু) বলবে, ‘ওয়া আলাইকুম” (তোমাদের প্রতিও)।
৫৪৬৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইয়াহইয়া ইবনু হাযীব, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাসশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে জিজ্ঞাসা করলেন,
আহলে কিতাবরা আমাদের সালাম করে থাকে, আমরা কিভাবে তাদের জবাব দিব? তিনি বললেন, তোমরা
বলবেঃ “ওয়া আলাইকুম।
৫৪৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও
ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ ইয়াহুদীরা যখন তোমাদের প্রতি সালাম
করে, তখন
কেউ বলে “আসসামু আলাইকুম” (তোমাদের মরন হোক)। তখন তুমি বলবে, “ওয়া
আলাইকা” (তোমারও হোক)।
৫৪৭০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি
বলেছেনঃ তখন তোমরা বলবে, “ওয়া আলাইকুম”।
৫৪৭১। আমরুন-নাকিদ ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন একদল ইয়াহুদী রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
(সাক্ষাতের) অনুমতি চাইল। তারা তখন বলল, ‘আসসামু আলাইকুম’ (তোমাদের মরণ হোক)! তখন আয়িশা
(রাঃ) বললেন, ‘বাল
আলাইকুমুসসালামু অললানাতু’ (বরং তোমাদের উপরে মরণ ও অভিশাপ বর্ষিত হোক)! তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা! আল্লাহ তা’আলা সব বিষয়ে উদারতা পছন্দ
করেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আপনি কি তাদের উক্তি শোনেন নি? তিনি বললেন, আমিও তো
বলে দিয়েছি “ওয়া আলাইকুম” (তোমাদের উপরেও)।
৫৪৭২। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরী (রহঃ) থেকে
উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে এ দু’জনের বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো বলেছি “আলাইকুম” (তোমাদের উপরে)
তারা ‘অ’ অব্যয়টির উল্লেখ করেননি।
৫৪৭৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কয়েকজন ইয়াহুদী এল। তারা বলল- ‘আসসামু
আলাইকা ইয়া আবাল কাসাম’ (হে আবূ কাসিম! তোমার মরণ হোক)। তিনি বললেন, ‘অ আলাইকুম’
(তোমাদের উপরেও)। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম- ‘বাল আলাইকুমুসসামু অজজামু ’ বরং
তোমাদের মরণ ও দূর্নাম হোক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা!
তুমি কঠোর বাক্য প্রয়োগকারিনা হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শোনেন নি? তিনি বললেন, তারা যা
বলেছিল, তাই
কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি বলেছিঃ “ওয়া আলাইকুম’ (তোমাদের উপরেও)।
৫৫৭৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ) উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
তবে তিনি বলেছেনঃ আয়িশা (রাঃ) তাদের দূরভিসন্ধি ধরে ফেললেন এবং তাদের গালি দিলেন।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থামো, হে আয়িশা!
কেননা আল্লাহ তা’আলা অম্লীলতা ও অম্লীল পরায়ণতা পছন্দ করেন না। তিনি বর্ধিত
রিওয়ায়াত করেছেন, তখন
মহা মইমাম্বিত আল্লাহ নাযিল করলেনঃ আর যখন তারা (ইয়াহুদীরা) আপনার কাছে আসে, তখন তারা
আপনাকে এমন (বাক্য বলে) অভিবাদন করে, যেমন (বাক্য দিয়ে) আল্লাহও আপনাকে অভিবাদন
করেননি আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৫৪৭৫। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
ইয়াহুদীদের কয়েকজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম
করল তারা বলল!আসসামু আলাইকা ইয়া আবাল কাসিম, তিনি বললেনঃ “ওয়া আলাইকুম, তখন আয়িশা
(রাঃ) বললেন, তখন
তিনি রেগে গিয়েছিলেন তারা কি। বলল, আপনি কি শোনেন না? তিনি
বললেনঃ হ্যা, শুনেছি
এবং তাদের উপর তা ফিরিয়ে দিয়েছি, আর তাদের বিরুদ্ধে আমাদের (দুআ) কবুল হয়। অথচ
আমাদের বিরুদ্ধে তাদের (দুআ) কবুল হয় না।
৫৪৭৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী নাসারাদের আগে সালাম দিও না। আর
তাদের কাউকে পথে দেখলে তাকে তার সংকীর্ণ অংশে (চলতে) বাধ্য কর।
৫৪৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব
ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ওয়াকী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে-যখন তোমরা ইয়াহুদীদের
দেখতে পাবে। আর শুবা (রহঃ) থেকে গৃহীত ইবনু জাফর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- তিনি
আহলে কিতাব সম্পর্কে বলেছেন। এবং জারীর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যেখন তোমরা
তাদের দেখতে পাবে তিনি মুশরিকদের কোন দলের নাম নির্দেশ করেননি।
৫৪৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিশোরদের কাছ দিয়ে (পথ) অতিক্রম করলেন, তখন তিনি
তাদের সালাম করলেন। ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) সাইয়ার (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত সনদে
হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৭৯। আমর ইবনু আলী ও মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) সাইয়্যার (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি সাবিত বুনানী (রহঃ) এর সঙ্গে পথ চলছিলাম। তিনি একদল বালকের পাশ
দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সালাম করলেন এবং (তখন সাবিত (রহঃ) হাদীস রিওয়াত করলেন যে, তিনি আনাস
(রাঃ)-এর সঙ্গে পদব্রজে চলছিলেন তিনি। (আনাস) একদল বালকের পাশ দিয়ে গেলেন এবং
তাদের সালাম করলেন,
আনাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি (একবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পদব্রজে চলছিলেন, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)বালকদের কাছ দিয়ে চললেন এবং তাদের সালাম করলেন।
৫৪৮০। আবূ কামিল জাহদারী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার কাছে
তোমার জন্য প্রবেশের অনুমতি হল পর্দা তুলে রাখা এবং (হুজরায়) আমার আলাপচারিতা
শুনতে পাওয়া। যতক্ষন না আমি তোমাকে নিষেধ করি।
৫৪৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ
রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৮২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমাদের উপরে পর্দার বিধান আরোপের পর সাওদা (রাঃ) তার প্রাকৃতিক
প্রয়োজনে বের হলেন,
ছিলেন স্হুলদেহী,
দেহাকৃতিতে তিনি নাবীদের (নবীদের) ঊধের্ব থাকতেন; যারা তাঁকে
চিনে, তাদের
কাছে নিজেকে লূকাতে পারতেন না। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে দেখতে পেয়ে
বললেন, হে
সাওদা! আল্লাহর কসম! তুমি আমাদের কাছে লূকাতে পারবে না। ভেবে দেখ, কেমন করে
তুমি বের হচ্ছ? আয়িশা
(রাঃ) বলেনঃ একথা শুনে তিনি উল্টা ফিরে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন এবং রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন। তাঁর হাতে তখন
গোশতযূক্ত একখানা হাড় ছিল। সাওদা (রাঃ) কে পড়ে বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি বের হয়েছিলাম, উমার আমাকে এই এই কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ
তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি ওহী নাযিল করেন। তারপর তাঁর উপর থেকে (ওহীর) অবস্হার
অবসান হয়। আর তখনও হাড়টি তাঁর হাতে ছিল, তা তিনি রেখে দেননি। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ
তোমাদের প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে (এ বর্ননা আবূ কুরায়ব-এর)। আর আবূ
বাকর (রহঃ) বর্ণিত রিওয়াতে রয়েছে, তাঁর দেহ মহিলাদের ঊধের্ব থাকত। ”আবূ বাকর
(রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে অধিক রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাবী হিশাম (রহঃ) বলেছেনঃ “প্রয়োজন” অর্থাৎ
পায়খানার হাজত।
৫৪৮৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন, তিনি
বলেছেন, তিনি
ছিলেন এমন এক মহিলা যার দেহ লোকদের ঊধের্ব থাকত। তিনি (আরও) বলেছেনঃ আর তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের আহার গ্রহণ করছিলেন। সুওয়ায়দ
ইবনু সাঈদ হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৪৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের
বেলা মোনাসি”-এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। – (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু
খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতেন, আপনার
স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যামআ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার
(রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন- হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান
নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় তিনি এরুপ করলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তখন
আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
৫৪৮৫। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫৪৮৬। ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর, ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সাবধান! কেনি পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে
না; তবে
যদি সে তার স্বামী হয় অথবা মুহরিম হয়।
৫৪৮৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! স্ত্রীলোকদের (আজলাবিয়াহ) কাছে
তোমরা প্রবেশ করবে না। তখন আনসারীদের এক ব্যক্তি বলল, দেবর
সমন্ধে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, দেবর তো মৃত্যু।
৫৪৮৮। আবূ তাহির (রহঃ) ইয়াযীদ আবূ হাবীব (রহঃ) থেকে উল্লখিত সনদে অনুরুপ হাদীস
বর্ননা করেছেন।
৫৪৮৯। আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু ওহাব (রহঃ) বলেনঃ লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ)-কে আমি
বলতে শুনেছি যে, ‘আল
হাম্বু’ শব্দের অর্থ ম্বামীর ভাই (দেবর-ভাশুর) এবং স্বামীর আত্নীয়দের মাঝে তার
(স্বামীর ভাইয়ের) সমপর্যায়ের চাচাত ভাই প্রভৃতি।
৫৪৯০। হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ)
আবদুর রহমান ইবনু জুবায়র (রাঃ)-কে হাদীস শুনিয়েছেন যে, বনূ হাশিম
গোত্রের একদল লোক আসমা বিনত উমায়স (রাঃ)-এর কাছে এল। তখন আবূ বাকর সিদ্দীক
(রাঃ)-ও (ঘরে) ঢুকলেন। তখন তিনি আসমা (রাঃ) তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তাদের দেখতে পেয়ে ঐ
বিষয়টি (অনুমতিবিহীন প্রবেশ) তিনি অপছন্দ করলেন। তিনি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আলোচনা করলেন এবং (একথাও) বললেন, অকল্যাণের
কিছুই দেখিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ নিশ্চয়ই
তাকে এ থেকে নির্দোষ রেখেছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার আজকের এ দিনের পরে কোন পূরুষ তার সাথে আর
একজন পূরুষ কিংবা দুজন ব্যতীত কোন এমন স্ত্রীর কাছে প্রবেশ করবে না যার স্বামী
অনুপস্হিত।
৫৪৯১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কাণনাব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীগণের কোন একজনের সঙ্গে ছিলেন, তখন তাঁর
কাছ দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তিনি তাকে ডাকলেন সে (কাছে) এলে বললেন ওহে, এ হচ্ছে
আমার অমুক সহধর্মিনা। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অন্য কারো ব্যাপারে আমি
কুধারণা করলেও হয়ত করতাম, কিন্তু আপনার ব্যাপারে তো কুধারণা করতাম না।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের রক্ত
প্রবাহের শিরায় শিরায় চলাচল করে থাকে।
৫৪৯২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রাঃ) (শব্দ বর্ণনায় তারা উভয়ে
কাছাকাছি) সাফইয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্হায় ছিলেন। আমি রাতের বেলা তাঁর
সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলাম। (কিছু সময়) তাঁর সঙ্গে কথা বললাম, তারপর ফিরে
যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। তিনিও আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য আমার সাথে উঠে দাড়ালেন।
(রাবী বলেনঃ) তখন তার সাফিয়্যা (রাঃ) -এর বাসস্হান ছিল। উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর
বাড়িতে। তখন (সেখানে দিয়ে) আনসারীদের এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তারা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (এক মহিলার সাথে) দেখতে পেয়ে দ্রুত যেতে লাগল।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দুজন ধীরে চল। এ
কিন্তু সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (আমার স্ত্রী। তারা দুজন বলল, সুবহানাল্লাহ!
ইয়া রাসুলুল্লাহ (আমরা তো কিছু মনে করিনি)! তিনি বললেনঃ শয়তান মানুষের শিরায় শিরায়
চলাচল করে। আর আমি শংকিত হলাম যে, সে তোমাদের উভয়ের অন্তরে কোন কুধারণা কিংবা
(বর্ণনা সন্দেহ) এ জাতীয় কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান
আাবু-দারিমী (রহঃ) আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা সাফিয়্যা (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রমযানের
শেষ দশকে মসজিদে (নববীতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
ইতিকাঁফকালে তিনি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে কিছু সময় কথাবার্তা
বললেন, এরপর
ফিরে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও তাঁকে
বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন । এরপর (পৃর্ববর্তী হাদীসের রাবী) মামোর (রহঃ) বর্ণিত
হাদীসের মর্মানূযায়ী হাদীস উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শয়তান মানুষের রক্ত প্রবাহেরশিরায় শিরায়
পৌছে “চলে” কুপ্রবাহিত “ হয়” বলেননি (বরং তিনি এ রিওয়ায়াত ‘ইয়াবলুগু
মাব্লাগাদদাম’ বলেছেন,
তিনি ‘ইয়াজরি’ বলেননি।
৫৪৯৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে
সাহাবীগণের এক জামাআত। এ সময় তিনজনের একটি দল আসতে লাগলো। এদে দাজন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে এগিয়ে এল, আর একজন চলে গেল। রাবী বলেনঃ তারা দুজন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে থেমে গেল। তারপর তাদের একজন
সমাবেশের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়ে সেখানে বসে গেল, দ্বিতীয়জন
তাদের (মজলিসের) পিছনে বসল আর ব্যক্তি পেছনে ফিরে যেতে লাগল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মজলিস থেকে) ফারেগ হলে বললেন, শোন!
তিনজনের ক্ষুদে দলটি সম্পর্কে কি আমি তোমাদের খবর দিব না? তাদের একজন
তো আল্লাহর নিকটে আশ্রয় নিল, আল্লাহ তাআলা তাকে আশ্রয় দিলেন। আর একজন
লজ্জা-সংকোচ করল, আল্লাহ
তার লজ্জা-(এর মর্যাদা) রক্ষা করলেন। আর তৃতীয়জন ফিরে গেল, আল্লাহ
তায়াআলাও তার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন।
৫৪৯৪। আহমদ ইবনু মুনযির ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর
(রহঃ) থেকে বর্ণিত যে,
ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা (রহঃ) এ সনদে তার কাছে অনুরুপ অর্থের
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৪৯৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) ইবনু
উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে- তিনি
বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো কোন মানুষকে তার বসার স্হান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে
না।
৫৪৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু
মূসান্না ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেনঃ কোন মানুষ কোন মানুষকে তার বৈঠক থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে না। বরং
তোমরা (বলবে) গুজায়েশ করে দাও, জায়গা করে দাও।
৫৪৯৭। আবূ রবী,
আবূ কামিল, ইয়াহইয়া
ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্বোক্ত হাদীসের রাবী) লায়স (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এদের বর্ণিত হাদীসে এরা এরং তোমরা গুঞ্জায়েশ করে দাও, জায়গা করে
দাও, (কথাটি)
উল্লেখ করেননি। আর (তৃতীয় সনদের) রাবী ইবনু জুরায়জ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমি নাফিকে
জিজ্ঞাসা করলাম-(এ বিধান) কি জুমআর দিনের জন্য? তিনি বললেন, জুমআ ও অন্যান্য (সব) দিনের জন্য।
৫৪৯৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইকে তার বসার স্হান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসবে না। আর
ইবনু উমার (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, কোন ব্যক্তি তাঁর জন্য নিজের বসার জায়গা থেকে
উঠে গেলেও সেখানে বসতেন না।
৫৪৯৯। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদূর রাজ্জাক ও মামার (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে
অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৫৫০০। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমআর দিনে (মসজিদের কাতার
থেকে) তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার বসার স্থানে বসবে না বরং সে বলবে জায়গা করে দিন।
৫৫০১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ- যখন (তার আসন থেকে)
(সাময়িকভাবে) উঠে যায় এ বর্ণনা কুতায়বা (রহঃ)-এর ঊধর্বতন রাবী আব্দুল আযীয
(রহঃ)-এর এবং অপর ঊধর্বতন রাবী আবূ আওয়ানা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, যে ব্যক্তি
তার আসন ছেড়ে উঠে যায়,
তারপর সেখানে ফিরে আসে, তা হলে সে সেই স্থানের অধিক হকদার।
৫৫০২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) উম্মে
সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক হিজড়া তার কাছে (বসা) ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছিলেন। সে উম্মে সালামা (রাঃ)-র ভাইকে বলতে
লাগল- হে আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া! আল্লাহ তাআলা যদি আগামী দিনে আপনাদেরেকে
‘তায়িফ’ বিজয়ী করেন,
তাহলে আপনাকে আমি গায়লান-কুমারীকে দেখাবো, সে ‘চারটি নিয়ে সামনে আসে আর ‘আটটি নিয়ে পিছনে
ফিরে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ ধরনের কথা বলতে শুনে
বললেন এ যেন তোমাদের কাছে আর প্রবেশ না করে।
৫৫০৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক হিজড়া
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগনের কাছে প্রবেশ করত। লোকেরা তাকে
যৌন কামনা রহিত (অনভিজ্ঞ)-দের অন্তর্ভুক্ত মনে করত। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন সে তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে ছিল আর সে এক
নারীর (দেহ সৌষ্ঠবের) বিবরণ দিয়ে বলছিল, যেখন সামনে এগিয়ে আসে তখন চার (ভাজ) নিয়ে এগিয়ে
আসে এবং যখন ফিরে, তখন
আটটি নিয়ে ফিরে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ তো
দেখছি এখানকার (নারী রহস্যের) বিষয়াদি বুঝে শুনে। সে যেন তোমাদের কাছে কখনো
প্রবেশ না করে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর তারা তার থেকে পর্দা করতেন।
৫৫০৪। মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আবূ কুরায়ব (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন যুবায়র (রাঃ) আমাকে বিয়ে করলেন, তখন ঘোড়াটি ছাড়া কোন সম্পদ কোন গোলাম এবং অন্য
কিছু পৃথিবীতে তার ছিল না। তিনি বলেনঃ আমি তার ঘোড়াটাকে ঘাস দিতাম তার সাংসারিক
কাজকর্মও আঞ্জাম দিতাম। আমি তার পরিচর্যা করতাম, তার পানিবাহী উটের জন্য খেজুর বীচি কুটতাম, তাকে ঘাস
দিতাম, পানি
নিয়ে আসতাম, তার
ডোল ইত্যাদি মেরামত করতাম এবং (রুটির) আটা মাখতাম। কিন্তু আমি ভাল রুটি পাকাতে
পারতাম না। তাই আমার কয়েকজন আনসারী পড়শী আমাকে রুটি পাকিয়ে দিত। তারা ছিল নিঃসূ, নারী। আমি
যুবায়র-এর জমি থেকে,
যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জায়গীররুপে দিয়েছেলেন, খেজুর
(কুড়িয়ে) আমার মাথায় করে বয়ে আনতাম। সে (জমি) ছিল এক ক্রোশের দুই-তৃতীয়াংশ (প্রায়
পৌনে দু’মাইল) দুরে। তিনি বলেনঃ আমি একদিন আসছিলাম আর (বিচীর বোঝা) আমার মাথায়
ছিল। (পথে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষাত পেলাম, তখন তাঁর
সঙ্গে তাঁর সাহাবীগণের একটি ছেটি জামাআত ছিল। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং (তাঁর বাহন
উটটিকে বসাবার জন্য) ইখ ইখ (শব্দ) করলেন যাতে আমাকে তাঁর পেছনে তুলে নিতে পারেন।
তিনি আসমা (রাঃ) বলেন আমি লজ্জাবোধ করলাম আর আমি ছিলাম তোমার যূবায়র (রাঃ)-এর
আত্নমর্যাদাবোধ সম্পর্কে অবগত। তিনি যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহর
কসম! তোমার মাথায় করে বীটি বয়ে আনাটা (আমার কাছে) তার সঙ্গে তোমার আরোহণের
চাইতে অধিক কঠিন (ও কষ্টকর)। তিনি বলেনঃ এরপরে (পিতা)আবূ বাকর (রাঃ)আমার কাছে একটি
খাদিম পাঠিয়ে দিলেন। ঘোড়াটি দেখাশুনার কাজে সে আমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে গেল। সে যেন
আমাকে এ দায়িত্ব থেকে আযাদ করেছিল।
৫৫০৫। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ আল গুবারী (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে
বর্ণনা করেন যে, আসমা
(রাঃ) বলেছেন, আমি
সাংসারিক কাজে যুবায়র (রাঃ)-এর খিদমত করতাম। তার একটি ঘোড়া ছিল। আমি (তার পরিচর্যা
করতাম। ঘোড়াটির পরিচর্যা করার চাইতে কোন কাজ আমার কাছে কঠিনতর ছিল না। আমি তার
জন্য ঘাস সংগ্রহ করতাম তার দেখাশুনা ও সেবা-পরিচর্যা করতে থাকতাম। রাবী বলেন এরপর
একটি খাদিমা পেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু
যুদ্ধবন্দী এলে তিনি তাকে একটি খাদিমা দিলেন। তিনি আসমা (রাঃ) বলেনঃ সে (খাদিমা)
ঘোড়ার পরিচর্যায় আমার পক্ষে যথেষ্ট হল এবং আমি দায়িত্বমুক্ত হলাম। সে সময় এক
ব্যক্তি আমার কাছে এসে বলল, হে আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক, আপনার
বাড়ির ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, আমি
তোমাকে অনুমতি দিয়ে ফেললে যুবায়র (রাঃ) (হয়ত) তা প্রত্যাখ্যান করবেন। তাই এক কাজ
কর, যুবায়র
(রাঃ) উপস্থিত থাকা অবস্থায় তুমি এসে আমার কাছে আবেদন করবে। যথাসময় এসে সে বলল, হে
আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাব-গ্রস্ত লোক, আপনার বাড়ির ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার ইরাদা
করেছি। তিনি বললেনঃ আমার বাড়ি ছাড়া তোমার জন্য মদিনায় আর কোন জায়গা নেই (কি)? তখন যুবায়র
(রাঃ) তাকে বললেন, একটা
অভাবী লোককে বেচাকেনা করতে দিতে তুমি বাধ সাধছ কেন? এরপর সে (সেখানে) বেচাকেনা করে (বেশকিছু)
উপার্জন করল। আমি খাদিমাটি তার কাছে বেচে দিলাম। এ সময় যুবায়র (রাঃ) আমার কাছে প্রবেশ
করল তখনও তার (বিক্রয়লব্ধ) মূল্য আমার কোলের উপর ছিল। সে বলল ওগুলো আমাকে হেবা
করে দাও। তিনি বলেনঃ (আমি বললাম), আমি ওগুলো সদকা করে দিয়েছি।
৫৫০৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তিনজন থাকবে, তখন একজনকে
বাদ দিয়ে দু-জনে কানে কানে কথা বলবে না।
৫৫০৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, উবায়দুল্লাহ
ইবনু সাঈদ, কুতায়বা, ইবনু রুমহ ,আবূ রবী,আবূ কামিল, ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানূযায়ী বর্ণিত হয়েছে।
৫৫০৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হান্নাদ ইবনু সারী, যুহায়র
ইবনু হারব, উসমান
ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দুজন
আর একজনকে বাদ দিয়ে একজন কথা বলবে না, যতক্ষন না অন্য লোকদের সাথে মিশে যাও। এ কারণে
যে, তাহলে
তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিবে।
৫৫০৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু
নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দু জন
তাদের সাথীকে বাদ দিয়ে কানাঘূষা করবে না, (কারণ) তা-তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলবে।
৫৫১০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আল আমাশ (রহঃ) সুত্রে
উল্লেখিত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৫১১। ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম অসুস্হ হয়ে পড়লে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দুআ পড়ে তাকে ফুঁকে
দিলেনঃ (অর্থাৎ) আল্লাহর নামে, তিনি আপনাকে (রোগ) মুক্ত করুন, সব রোগ হতে
আপনাকে নিরাময় করুন,
আর হিংসূকের অনিষ্ট হাত-যখন সে হিংসা করে আর সব বদ নযরওয়ালার অনিষ্ট হতে।
৫৫১২। বিশর ইবনু হিলাল সাওওয়াফ (রহঃ) সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জিবরীল
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, ইয়া
মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্হতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যা। তিনি (জিবরীল) বললেনঃ আল্লাহর নামে
আপনাকে ঝাড়-ফুক করছি- সে সব অনিষ্ট থেকে, যা দ্বারাপনাকে কষ্ট দেয়, সব আত্মায়
অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নযর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর
নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি।
৫৫১৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মূসাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ এ হল সে সব (হাদীস), যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি
হাদীস উল্লেখ করেন। সে সবের একটি হল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরও বলেছেনঃ বদ নযরের বিরুপ প্রতিক্রিয়া বাস্তব।
৫৫১৪। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারমী, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আহমদইবনু খিরাশ (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেনঃ ‘বদ নযর-এর প্রতিক্রিয়া বাস্তব। -তাকদীরকে অতিক্রমকারী কোন কিছু যদি
থাকত, তাহল
বদ নযর, অবশ্যই
তাকে অতিক্রম করতে পারত। আর তোমাদের (বদ নযরওয়ানা ব্যক্তিদের)-কে গোসল করতে বলা
হলে তোমরা গোসল করবে।
৫৫১৫। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লাবীদ ইবনু আসামা
নামে বনূ যুরায়ক গোত্রের এক ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে যাদু করল। তিনি বলেনঃ এ যাদুর ক্রিয়ায় এমনও হতো যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেয়াল হতো যে কোন (পার্থিব) বিষয় তিনি করছেন, অথচ
(বাস্তবে) তিনি তা করছিলেন না। অবশেষে একদিনে অথবা এক রাতে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেনঃ পূনরায় দু’আ করলেন এবং পূনরায় দুআ
করলেন। এরপর বললেনঃ হে আয়িশা, তুমি কি বিঝতে পেরেছো যে, আল্লাহ
আমাকে সে বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন, যে বিষয়ে আমি তার কাছে সমাধান চেয়েছিলাম? (তা এভাবে
যে) (দুজন ফিরিশতা) দুব্যক্তি (রূপে) আমার কাছে এল। তাদের একজন আমার মাথার কাছে
এবং অন্য জন আমার পায়ের কাছে বসল। তারপর আমার মাথার কাছের ব্যক্তি পায়ের কাছের
ব্যক্তিকে কিংবা আমার পায়ের কাছের লোকটি আমার মাথার কাছের লোকটিকে বলল, লোকটির
রোগ কি? অপরজন
বলল, যাদু
গ্রস্ত-। (প্রথমজন) বলল, কে তাকে যাদু করেছে? (দ্বিতীয়জন)
বলল, লাবীদ
ইবনু আসলান। (প্রথমজন) বলল, কোন জিনিসে? (দ্বিতীয়জন) বলল (আচড়ানোকালে চিরুণির সাথে) উঠা
চুল,তিনি
(আরও) বলল, নর
খেজুরের ফূলের আবরনিতে। (প্রথমজন) বলল, তা কোথায়? (দ্বিতীয়জন) বলল- ‘যী-আরওয়ান কুপে’। তিনি আয়িশা
(রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের কয়েকজনকে
সাথে নিয়ে সেখানে গেলেন। এরপর (ফিরে এসে) বললেন, হে আয়িশা, আল্লাহর কসম! সে (কুপের) পানি যেন মেহেদীপাতা
ভিজানো, (পানি)।
আর সেখানকার খেজুর গাছ যেন শয়তানের মাথা। তিনি বলেনঃ তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! তাঠহলে আপনি তা (জনসমক্ষে) পূড়ে ফেললেন না কেন? তিনি বললেন, না, (আমি তা
সমীচিন মনে করিনি)। কারণ, আমাকে তো আল্লাহ আরোগ্য করেছেন আর মানুষকে কোন
অকল্যাণে উত্তেজিত করা আমি অপছন্দ করি। আমি সে বিষয়ে হুকুম দিলে তা দাফন করে দেওয়া
হয়েছে।
৫৫১৬। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যাদু করা হিয়েছিল। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এ হাদীসটি
পুর্ণ বিবরণসহ (পূর্বোক্ত) ইবনু নুমায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী রিওয়ায়াত
করেছেন। তাতে তিনি এও বলেছেন, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুয়ার কাছে গেলেন এবং সেটির (চার) দিকে নযর করলেন। সেখানে খেজুর গাছ
ছিল। তিনি আয়িশা (রাঃ) আরও বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ তা হলে আপনি তা (জনসমক্ষে) বের
করে ফেলেন। তিনি আবূ কুরায়ব (রহঃ) তা হলে আপনি তা পূড়ে ফেললেন না কেন? অংশটি
রিওয়ায়াত করেননি এবং আমি হুকুম দিলে তা দাফন করে দেওয়া হল, (কথাটিও)
উল্লেখ করেননি।
৫৫১৭। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহুদী
মহিলারা সুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বিষ মেশানো বকরীর
গোশস্ত নিয়ে এল। তিনি তা থেকে (কিছু) খেলেন। পরে তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। তিনি তাকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি আপনাকে
মেরে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে কিংবা তিনি
বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি
তাকে কতল- করে ফেলব?
তিনি বললেন, না।
রাবী বলেনঃ এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আলজিভ ও
তালূতে (তার ক্রিয়া) আমি প্রত্যক্ষ করতাম।
৫৫১৮। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, এক ইয়াহুদী মহিলা গোশতে বিষ মিশিয়ে তা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এল (পূর্বোক্ত
রিওয়ায়াতের) রাবী খালিদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানাযায়ী হাদীস রিওয়াত করেছেন।
৫৫১৯। যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমাদের কোন লোক অসুস্হ হলে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত মূবারক দিয়ে তাকে মুছে দিতেন, এরপর
বলতেনঃ অর্থাৎ সঙ্কট দূর করে দিন, হে মানুষের-প্রতিপালকঁ! তার শিফা ও নিরাময় করুন, আপনই
নিরাময়কারী। আপনার শিফা ও নিরাময় ব্যতীত আর কোন (বাস্তব নির্ভরযোগ্য) শিফা নেই।
এমন নিরাময় করুন যার পর কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে। পরে যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্হ হলেন এবং রোগভারে অবসন্ন হলেন, তখন আমি
তাঁর হাত তুলে ধরলাম যাতে তিনি যেমন করতেন, আমিও তেমন করে (মুছে) দিতে পারি। কিন্তু তিনি
আমার হাত থেকে তার হাত টেনে (ছাড়িয়ে) নিলেন এবং পরে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমাকে
ক্ষমা করুন এবং আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মুলাকাত করিয়ে দিন! তিনি (আয়িশা (রাঃ)
বলেনঃ আমি লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম যে, তাঁর ওফাত হয়ে গেছে।
৫৫২০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, বিশর ইবনু
খালিদ, ইবনু
বাশশার, আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে জারীর
(রহঃ)-এর সনদে বর্ণিত। তবে বুশায়ম ও শুবা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি তার
হাত দিয়ে তাকে (রোগীকে) মুছে দিতেন। আর (সূফিয়ান) সাওরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে,-তিনি তাঁর
ডোন হাত দিয়ে তাকে মুছে দিতেন। আর সুফিয়ান (রহঃ)-এর মাধ্যমে আ’মাশ (রহঃ) গৃহীত
ইয়াহইয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের শেষে রাবী বলেছেনঃ পরে আমি এ হাদীস মানসুর (রহঃ)-কে
শুনালে তিনি ইবরাহীম তিনি মাসরুক (রহঃ) ও আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত
করে আমাকে শুনালেন।
৫৫২১। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীকে দেখতে গেলে বলতেনঃ অর্থাৎ সঙ্কট দূর
করে দিন হে মানুষেঁর প্রতিপালক তাঁর উপশম করুন, আপনই উপশমকারী। আপনার শিফা ব্যতীত কোন শিফা নেই
এমন শিফা, যা
কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখে না।
৫৫২২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন রোগীর কাছে
গেলে তার জন্য দুআ করতেন। তিনি বলতেনঃ বিপদ সঙ্কট দূর করে দিন হে মানুষের
প্রতিপালক! আর নিঁরাময় করুন আপনই নিরাময়কারী, আপনি শিফা ব্যতীত কোন শিফা নেই; এমন নিরাময়
করুন যা কোন রোগ-ব্যাধি অবশিষ্ট রাখে না। তবে আবূ বাকর (রহঃ) বর্ণিত রিওয়ায়াত
রয়েছে, তার
জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন। এছাড়া তিনি বলেছেন- আর আপনই নিরাময়কারী।
৫৫২৩। কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বর্ণনা (উপরোল্লেখিত) আবূ আওয়ানা
এবং জারীর ( (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।
৫৫২৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন- অর্থাৎ মানুষের
প্রতিপালক, বিপদ-সঙ্কট
দুর করে দিন; আপনার
হাতেই রয়েছে উপশম। আপনি ব্যতীত আর কেউ-ই (বিপদ) দূরকারী নেই।
৫৫২৫। আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত
সনদে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫২৬। সূরায়জ ইবনু ইউনূস ও ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারবর্গের
কেউ অসুস্হ হয়ে পড়লে তিনি ‘মুআববিযাত সূরাগুলো’ পড়ে তাকে ফু দিতেন। পরে তিনি যখন
মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি তাকে ফি দিতে লাগলাম এবং তার-ই হাত
দিয়ে তাঁর শরীর মুছে দিতে লাগলাম। কারণ আমার হাতের চেয়ে তাঁর হাত ছাড়া অধিক বরকত
পূর্ণা আর ইয়াইয়া ইবনু আইউবের বর্ণনায় ‘বিমুইয়্যাযাতি’ আছে।
৫৫২৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্হ হয়ে পড়লে তিনি মুআববিযাত, পাঠ করে
নিজ শরীরে দম করতেন। তার ব্যাধি কঠিন হয়ে দাড়ালে আমি তা পাঠ করে তাঁর হাত দিয়ে
তাঁর শরীর মুছে দিতাম ঐ হাতের বরকতের আশায়।
৫৫২৮। আবূ তাহির,
হারামালা, আবদ
ইবনু হুমায়দ, মুহাম্মাদ
ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, উকবা ইবনু মাকরাম ও আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী
(রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে মালিকের সনদে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে
মালিকের হাদীস ব্যতীত তাদের কারো হাদীসে -তাঁর হাতের বরকতের আশায়- কথাটি নেই।
ইউনূস (রহঃ) ও যিয়াদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্হ
হয়ে পড়লে নিজেকে মুআব্বিযাত- দিয়ে দম করতেন এবং এবং নিজের হাতে নিজের শরীর মুছতেন।
৫৫২৯। আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
আয়িশা (রাঃ)-কে ঝাড়-ফুক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদের একটি পরিবারকে যে কোন বিষধর প্রানীর
বিষ থেকে মুক্তির জন্য ঝাড়-ফুক করা অনুমতি দিয়েছেন।
৫৫৩০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীদের একটি পরিবারের লোকদের
বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া থেকে আরোগ্যলাভের জন্য ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন।
৫৫৩১। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ম করে ছিলেন যে, মানুষ তার
(দেহের) কোন অংশে অসুস্হতা বোধ করলে কিংবা তাতে কোন ফোঁড়া বা জখম (হয়ে) থাকলে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আঙ্গূল দিয়ে এভাবে করতেন (একথা
বলে এভাবে করার রুপ বুঝাবার জন্য) রাবী সুফিয়ান (রহঃ) তার শাহাদাত আঙ্গূলটি মাটিতে
রাখতেন এরপর তা ভুলে নিতেন এবং তখন এ দুঁআ পড়তেনঃ অথাৎ আল্লাহর নামে- আমাদের
যমীনের মাটি আমাদের কারো লালার সাথে (মিলিয়ে) আমাদের প্রতিপালকের হুকুমে তা দিয়ে
আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে (মালিশ করছি)। তবে ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
(তাঁর রিওয়ায়াতে) বলেছেন, তিনি আরোগ্য প্রদান করা হয়। আর যুহায়র (রহঃ)
বলেছেন, তিনি
আমাদের রোগীর আরোগ্য প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে।
৫৫৩২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুবায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নযর লাগা থেকে (রক্ষা
পাওয়ার জন্য) ঝাড়-ফুক করার হুকুম করতেন।
৫৫৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) মিস আর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত
সনদে অনুরুপ হাসীদ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৩৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নযর থেকে (রক্ষার জন্য) ঝাড়-ফুক করার
হুকুম করতেন।
৫৫৩৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে ঝাড়-ফুঁক বিষয়ে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বিষাক্ত প্রানীর বিষক্রিয়া, বিষফোঁড়া ও নযর লাগা থেকে (রক্ষার জন্য)
ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৫৫৩৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নযর লাগা, বিষাক্ত
প্রানীর বিষক্রিয়া ও বিষাক্ত পার্শঘা থেকে (রক্ষা পাওয়ার জন্য) ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি
দিয়েছেন।
৫৫৩৭। আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সহধর্মিনা উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার সহধর্মিনা উম্মে সালমা- (রাঃ)-এর ঘরে একটি বালিকার চেহারায় (কাল বা হলুদ) দাগ
দেখে বললেন, তার
আসীব লেগেছে, তার
জন্য ঝাড়-ফুক কর। অর্থাৎ তার চেহারায় হলুদ বর্ণ ছিল।
৫৫৩৮। উকবা ইবনু মুকরাম আম্মি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযম পরিবারকে সাপের ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দেন এবং
আসমা বিনত উমায়স (রাঃ)-কে বললেন, আমার কি লে যে, আমার ভাই জাফর (রাঃ)-এর সন্তানদের কৃশকায় দেখতে
পাচ্ছি? তারা
কি অভাবগ্রস্ত হয়েছে?
তিনি (আসমা) বললেন, না, তবে তাদের উপর দ্রুত নযর লাগে। তিনি বললেনঃ
তুমি তাদের ঝেড়ে দাও। তিনি বললেন, তখন আমি তাঁর কাছে (দুআটি) পেশ করলাম। তিনি
বললেন, (ঠিক
আছে) তুমি তাদের ঝেড়ে দাও।
৫৫৩৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ আমরকে সাপের
ঝাড়-ফুঁকের অনমুতি দেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) আরও বলেছেন, আমি জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে আরও বলতে শুনেছি যে, একটি বিচ্ছু আমাদের এক ব্যক্তিকে দংশন করল।
আমরা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন এব
ব্যক্তি বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি (তাকে) ঝেড়ে দই? তিনি বললেন, তোমাদের যে কোন ব্যক্তি যদি তার ভাইয়ের (কোনও)
উপকার করতে পারে, সে
যেন (তা) করে।
৫৫৪০। সা’দ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) (থেকে) উল্লেখিত সনদে
অনুরুপ হাদীস রিওযায়াত করেন। তবে তিনি বলেছেন, তখন লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আমি তাকে ঝাড়-ফুক করি?
তিনি (শুধু) ঝাড়-ফুক করি- বলেন নি (বরং তাকে- শব্দটিও বলেছেন)।
৫৫৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার একজন মামা ছিলেন, যিনি বিচ্ছুর কামড়ে মন্ত্র করতেন। এ সময়
(একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মন্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
দিলেন। তখন তিনি (আমার মামা) তার দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি মন্ত্র নিষেধ করে
দিয়েছেন আমি তো বিচ্ছুর (কামড়ে) মন্ত্র করে থাকি? তিনি বললেন, তোমাদের যে কোন লোক তার ভাইয়ের কোন উপকার করতে
সক্ষম হলে সে যেন তা করে।
৫৫৪২। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৫৪৩। আবূ কুসায়ব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক সময়) মন্ত্র নিষেধ করে দিলেন। তখন আমর ইবনু
হাযম গোষ্ঠীর লোকেরা এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে একটি মন্ত্র ছিল, যা দিয়ে
আমরা বিচ্ছুর কামড়ে মন্ত্র করতাম। আর আপনি তো মন্ত্র নিষেধ করে দিয়েছেন। রাবী
জাবির (রাঃ) বলেনঃ তারা তা তাঁর কাছে পেশ করল। তখন তিনি বললেন, কোন
অসুবিধা দেখতে পাচ্ছি না। তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হলে সে
যেন তার উপকার করে।
৫৫৪৪। আবূ তাহির (রহঃ) আওফ ইবনু মালিক আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমরা জাহেলী যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র (দিয়ে ঝাড়-ফুঁক) করতাম। তাই আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে বিষয়ে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেন, তোমাদের
মন্ত্রগুলো আমার কাছে পেশ করতে থাকবে, মন্ত্রে কোন আপত্তি নেই যদি না তাতে কোন শিরক
(জাতীয় কথা) থাকে।
৫৫৪৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবী কোন এক সফরে ছিলেন! তারা কোন
একটি আরব গোত্রের বসতির কাছ দিয়ে পথ অতিক্রমকালে তাদের কাছে আতিথেয়তার কথা বললেন।
তারা তাদের মেহমানদারী করল না। পরে তারা তাদের বলল, তোমাদের দলে কি কোন মন্ত্র বিশেষজ্ঞ আছে? কারণ বসতির
সর্দার সাপে দংশিত হয়েছে কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ, তারা বলল) বিপদাক্রান্ত হয়েছে। তখন এক ব্যক্তি
বলল, হ্যা।
পরে সে তার কাছে গিয়ে সূরা ফাতিহা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করল। ফলে লোকটি ভাল হয়ে গেল এবং
ঝাড়-ফুঁককারীকে ছাগলের একটি ছোট পাল দেওয়া হলো। সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল আর
সে বলল, যতক্ষন
না তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উল্লেখ না করি (ততক্ষন
গ্রহণ করতে পারি না)। পরে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে
বিষয়টি তাঁর কাছে বর্ণনা করল, সে বলল, ইযা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম! আমি ফাতিহাতুল কিতাব ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে ঝাড়-ফুঁক
করিনি। তখন তিনি মৃদু হাসলেন এবং বললেন, তুমি কি করে জানলে যে, তা দিয়ে
ঝাড়-ফুক করা যায়? এরপর
বললেন, তাদের
কাছ থেকে তা নিয়ে নাও এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রাখবে।
৫৫৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ বিশর (রহঃ) থেকে
উল্লেখিত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে (ওঝা) উম্মুল কুরআন- সূরা ফাতিহা পড়তে লাগল
এবং তার থু থু জমা করে থু দিতে লাগল। ফলে লোকটি ভাল হয়ে গেল।
৫৫৪৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমরা একটি মনযিলে অবতরণ করলাম। তখন আমাদের কাছে একটি স্ত্রীলোক এসে বলল, মহল্লার
সর্দার সর্প-দংশিত হয়েছে, তোমাদের মাঝে কি কোন ঝাড়-ফুঁককারী আছে? তখন আমাদের
এক ব্যক্তি উঠে তার সঙ্গে গেল, সে উত্তম ঝাড়-ফু করতে পারে বলে আমাদের ধারণা
ছিল না। সে সূরা ফাতিহা দিয়ে তাকে ঝাড়-ফু করল। তাতে সে ভাল হয়ে গেল। তখন তারা তাকে
একপাল ছাগল দিল এবং আমাদের দুধপান করাল। আমরা বললাম, তুমি কি উত্তম ঝাড়-ফু করতে? সে বলল, আমি তো
সূরা ফাতিহা ছাড়া আর কিছু দিয়ে তাকে ঝাড়-ফু করিনি। রাবী বলেনঃ তখন আমি বললাম, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে না যাওয়া পর্যন্ত ঐ
ছাগলগুলিকে এখান থেকে নিয়ে যেও না। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তার কাছে তার উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, সে কি করে
বুঝল যে, এ
সুরাটি দিয়ে ঝাড়-ফু করা যায়? তোমরা ছাগলগুলো ভাগ করে নাও এবং আমার জন্যও
তোমাদের সঙ্গে একটি ভাগ রেখ।
৫৫৪৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হিশাম (রহঃ) এ সনদে অনুরুপ হাদিস বর্ণনা
করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তখন তাঁর সাথে আমাদের এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়াল, আমরা যাকে
ঝাড় ফুঁক বিষয়ে তেমন কিছু (পারদর্শী) ধারনা করতাম না।
৫৫৪৯। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল আস সাকাফী
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটি ব্যথার কথা বললেন, যা তিনি মুসলমান হওয়ার সময় থেকে তার শরীরে
অনুভব করছো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার
শরীরের যে অংশ বেদনাক্রান্ত হয়, তার উপরে তোমার হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ
বলবে এবং সাতবার বলবেঃ ‘অর্থাৎ আল্লাহ এবং তাঁর কুদরতের শরণাপন্ন হচ্ছি-যা আমি
অনুভব করি এবং যা আশঙ্কা করি, তার অকল্যাণ থেকে।
৫৫৫০। ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ আল বাহিলী (রহঃ) আবূল আলা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উসমান ইবনু
আবূল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! শয়তান আমার এবং আমার সালাত ও কিরআতের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে তা আমার
জন্য এলোমেলো করে দেয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটা
এক (প্রকারের) শয়তান যার নাম ‘খিনযিব’। যখন তুমি তার উপস্থিতি অনুভব করবে তখন
(আউযুবিল্লাহ পড়ে) তার কবল থেকে আল্লাহর নামে আশ্রয় নিয়ে তিনবার তোমার বামদিকে থু
থু নিক্ষেপ করবে। তিনি বলেনঃ পরে আমি তা করলে আল্লাহ আমা থেকে তা দূর করে দিলেন।
৫৫৫১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উসমান ইবনু
আবূল আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন। এরপর অমূরুপ (হাদীস) উল্লেখ করেছেন, তবে সালিম
ইবনু নূহ ‘তিনবার’ -এর কথা উল্লেখ করেননি।
৫৫৫২। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল আল সাকাফী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তারপর তাঁদের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস উল্লেখ করেছেন।
৫৫৫৩। হারুন ইবনু মারুফ, আবূ তাহির ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) জাবির (রাঃ)
সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি
বলেছেনঃ প্রতিটি রোগের উযূ (ওজু/অজু/অযু)ধ রয়েছে। সূতরাং রোগে যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ
করা হলে মহান ও গৌরবময় আল্লাহর হুকুমে রোগ নিরাময় হয়।
৫৫৫৪। হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) আসিম ইবনু উমার ইবনু কাতাদা (রহঃ)
বর্ণনা করেন যে, জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আল মুকাননা (রহঃ)-কে রোগ শয্যায় দেখতে গেলেন। একটু পরে তিনি
বললেন, তুমি
শিংগা না লাগানো পর্যন্ত আমি উঠব না। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তাতে নিরাময় রয়েছে।
৫৫৫৫। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আসিম ইবনু উমার ইবনু কাতাদা (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের কাছে আমাদের পরিবারে এলেন, তখন এক
ব্যক্তি খূজলী-পাঁচড়ায় কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ) তিনি বললেন, যখমে
অসুস্হ হয়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি অসুস্হতাবোধ করছ? সে বলল-
আমার খোস-পাঁচড়া আমার জন্য কঠিন রুপ ধারণ করেছে। তিনি তখন (খাদিমকে) বললেন, হে কিশোর!
আমার কাছে একজন শিংগা প্রয়োগকারী (বৈদ্য) ডেকে আন। তখন সে (রোগী) তাঁকে বলল, শিংগা
প্রয়োগকারী (বৈদ্য) দিয়ে আপনি কি করবেন, হে আবূ আবদুল্লাহ? তিনি বললেন, আমি তাতে
একটি শিংগার নল লাগাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর কসম! মাছি আমার গায়ে বসলে অথবা কাপড়ের
ঘষা আমার গায়ে লাগলে তাই আমাকে কষ্ট দেয় এবং আমার জন্য অসহ্য হয়ে পড়ে (তা হলে
শিংগার ব্যথা কী করে সইব)? পরে তিনি যখন ঐ বিষয়ে তার অসহিষ্ণুতা দেখলেন
তখন বললেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি যে, তোমাদের
উযূ (ওজু/অজু/অযু)ধ পত্রের কোন কিছুতে যদি কল্যাণ থেকে থাকে, তা হলে তা
শিংগার নল কিংবা মধুর শরবত পান কিংবা আগুনের সেঁকে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আরও) বলেছেনঃ (একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে) আমি
পোড়ানো বা লোহার দাগ লাগিয়ে চিকিৎসা করা পছন্দ করি না। রাবী বলেনঃ সে একজন
শিংগাবিদ বৈদ্য) নিয়ে এল, সে তার শিংগা লাগাল। ফলে তার বেদনানূভূতি দূর
হয়ে গেল।
৫৫৫৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, উম্মু
সালমা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শিংগা লাগাবার
ব্যাপারে অনুমতি চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
শিংগা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য আবূ তায়বা (রাঃ)-কে হুকুম করলেন। রাবী বলেনঃ আমার ধারণা
হয় যে, তিনি
(ঊধর্বতন রাবী) বলেছেন যে, তিনি ছিলেন তাঁর দুধভাই কিংবা তিনি বলেছেন, সে
অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর ছিল।
৫৫৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উবাই ইবনু কাব (রাঃ) -এর কাছে একজন চিকিৎসক পাঠালেন। সে তার একটি ধমনী কেটে দিল, পরে লৌহা
পুড়িয়ে (রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য) তাতে দাগ দিয়ে দিল।
৫৫৫৮। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে
উল্লিখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি ‘সে তাঁর একটি ধমনী কেটে দিল’
কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৫৫৯। বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ সুফিয়ান (রহঃ) বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছি যে, খন্দক
বুদ্ধে উবাই (রাঃ)-এর হাত (অথবা পা)-এর প্রধান ধমনীতে তীর বিদ্ধ হলো, তাই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লোহা পুড়িয়ে দাগ দিলেন।
৫৫৬০। আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর প্রধান রগে তীর বিদ্ধ হলো। রাবী বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজ হাতে একটি তীর ফলক দিয়ে তার
রগ কেটে দাগ দিয়ে দিলেন। পরে তা ফূলে উঠলে দ্বিতীয়বার দাগ দিয়ে দিলেন।
৫৫৬১। আহমদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর দারিমী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) শিংগা নিলেন এবং
শিংগা প্রয়োগকারীকে তার পারিশ্রমিক দিলেন। আর একবার নাকে ওষুধের ফোটা নিলেন।
৫৫৬২। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমর ইবনু আমির আনসারী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা নিয়েছিলেন আর তিনি (যথারীতি মজুরিও
দিয়েছিলেন কারণ, তিনি) পারিশ্রমিকের ব্যাপারে
কারো প্রতি যুলুম করতেন না।
৫৫৬৩। যুহায়র ইবনু হারব ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ জ্বর হল
জাহান্নামের তাপ, অতএব পানি দিয়ে তাকে ঠাণ্ডা
কর।
৫৫৬৪। ইবনু নুমায়র ও আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রহঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জ্বরের তীব্রতার জাহান্নামের তাপ থেকে।
তাই পানি দিয়ে তোমরা তাকে ঠাণ্ডা করবে।
৫৫৬৫। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই
তাকে পানি দিয়ে নিভিয়ে দাও।
৫৫৬৬। আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু হাকাম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই
তাকে পানি দিয়ে স্তিমিত করে দাও।
৫৫৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা
ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের তাপসঞ্জাত; তাই
তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।
৫৫৬৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনূরুপ বর্ণনা করেন।
৫৫৬৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার
কাছে জ্বরগ্রস্ত কোন স্ত্রীলোককে নিয়ে আসা হলে তিনি পানি আনতে বলতেন। পরে তা তার
বক্ষদেশে ঢেলে দিতেন এবং বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তাকে পানি দিয়ে ঠান্ডা কর। তিনি আরও বলেছেন, তা জাহান্নামের তাপসঞ্জাত।
৫৫৭০। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
হিশাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস বর্ণনা করেন। তবে আবূ কুরায়ব (রহঃ)-এর
ঊধর্বতন রাবী ইবনু নুমায়র (রহঃ) বর্নিত হাদীসে রয়েছে, ‘তার (রোগিনা) ও তার কামিসের গিরেবানের মাঝে
পানি ঢেলে দিতেন’ আর (অপর ঊধর্বতন রাবী) উসামা (রাঃ)-এর হাদীসে জ্বর জাহান্নামের
তাপসঞ্জাত’ কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি। আবূ আহমাদ বলেনঃ ইবরাহীমইবনু সুফিয়ান বলেনঃ
আমাদের কাছে হাসান ইবনু বিশর হাদীস বর্ণনা করেছেন, (তিনি
বলেন) আমাদের এই সূত্রে আবূ উসামা হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৫৭১। হান্নাদ ইবনু সারী
(রহঃ) আবায়া ইবনু রিফাআ (রহঃ) সুত্রেতার দাদা রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের প্রচণ্ড তাপের অংশ, তাই তোমরা তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর।
৫৫৭২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ও আবূ বকর ইবনু
নাফি (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি
বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের তাপ থেকে (উড়ে)। তাই তোমাদের
উপর থেকে তাকে পানি দিয়ে ঠাণ্ডা কর যা তবে রাবী আবূ বাকর (রাঃ) তোমাদের উপর থেকে
উল্লেখ করেননি।
৫৫৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর অসুস্হতাকালে তাঁর মুখে ঔষুধ ঢেলে দিলাম; তিনি তখন ইশারা করলেন যে, আমার মুখে ওষুধ ঢেলো না। আমরা বললাম, এটা ওষুধের প্রতি রোগীর বিতৃষ্ণার ফল। পরে যখন
তিনি সচেতন হলেন, তখন বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের মুখে ওষুধ ঢেলে দেওয়া হবে-
তবে আব্বাস ব্যতীত; কারণ তিনি তোমাদের শরীক
ছিলেন না।
৫৫৭৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামিমী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র
ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) উকাশা ইবনু মিহসান-এর বোন উম্মে কায়স বিনত
মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার এক ছেলেকে নিয়ে, যে তখনও (সাধারণ) খাবার গ্রহণের বয়সে পৌছেনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম বাচ্চাটি তাঁর গায়ে
পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং তা ছিঁটিয়ে দিলেন। তিনি বলেনঃ আর একবার আমি
আমার (এক) ছেলেকে নিয়ে তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম- যার গলদেশে ব্যথার কারণে আমি তার
(নাসারন্ধ্রে পাকালো ন্যাকড়া দিয়ে) প্রদাহ নিরাময়ের ব্যবস্হা করেছিলাম। তিনি বললেন, ন্যাকড়ার এ প্রক্রিয়ায় তোমাদের সন্তানদের
গলদেশের ব্যথার চিকিৎসা কর কেন? তোমরা (বরং) হিন্দুস্থানী
চন্দন ব্যবহার করবে। কেননা তাতে সাতটি (রোগের) উপশম রয়েছে। তার মধ্যে একটি ‘গলা
ব্যথায় নাকে চন্দনের প্রলেপ দেওয়া হবে, আর
চোয়ালের এক পাশ দিয়ে প্রয়োগ করবে।
৫৫৭৫। হারামালা ইয়াহইয়া
(রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উকবা ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়য়াত গ্রহণ কারিনা প্রাথমিক পর্যায়ের মুহাজির নারীগণের
অন্যতমা। আর তিনি হলেন বনূ আসা’দ ইবনু খুযায়মা-র অন্যতম সদস্য উকাশা ইবনু মিহসান
(রাঃ)-এর বোন। রাবী বলেনঃ তিনি (উম্মে কায়স) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তিনি তার একটি ছেলেকে নিয়ে, যে তখনও (সাধারণ) খাবার খাওয়ার বয়সে পৌছেনি-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন, আর তখন তিনি পাকানো ন্যাকড়া নাসারন্ধ্রে হকিয়ে
ঐ ছেলেটির গলা ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্হা করে রেখেছিলেন। রাবী ইউনূস (রহঃ) বলেনঃ
‘আলাকাতি’ অর্থ ‘গামাযাত’ অর্থাৎ গলদেশে ব্যথা বা রক্ত জমার আশঙ্কায় নাসিকারন্ধ্রে
ন্যাকড়া ঢুকিয়ে নিরাময়ের ব্যাবস্হা করেছিলেন। তিনি বলেনঃ তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পাকানো ন্যাকড়া ঢুকিয়ে তোমাদের
সন্তানদের নিরাময়ের ব্যবস্থা কর কেন? তোমরা
(বরং) এ ভারতীয় চন্দন ব্যবহার করবে, কারণ
তাতে অবশ্যই সাতটি (রোগের) ওষুধ রয়েছে। তার মধ্যে একটি। রাবী উবায়দুল্লাহ বলেনঃ
তিনি আমাকে আরও খবর দিলেন যে, তার ঐ ছেলেটি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোলে পেশাব করে দিল। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু পানি নিয়ে আসতে বললেন এবং তা তার পেশাবের
উপরে ঢেলে দিলেন, তবে একেবারে পূর্ণাঙ্গরুপে
তা ধুলেন না।
৫৫৭৬। মুহাম্মদ ইবনু রুমহ
ইবনু মুহাজির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, কালজিরায় প্রতিটি রোগের
উপশম রয়েছে- তবে ‘আলসাম’ থেকে নয় আর। আবূ-সাম- হল মৃত্যু। আর ‘হাব্বাতুস সাওদা’ হল
(স্হানীয় ভাষায়) শূনীস (অর্থাৎ কালজিরা)। আবূ তাহির, হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যূহায়র
ইবনু হারব ইবনু আবূ উমার, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ
ইবনু আবদুর রহমান আাদ-দারিমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্বোল্লিখিত) উকায়ল (রহঃ)-এর হাদীসের
অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে (দ্বিতীয় সনদে) সুফিয়ান (রহঃ) ও (প্রথম সনদে)
ইউনুস (রহঃ)-এর হাদীসে হোব্বাতূস সাওদা রয়েছে। (তার ব্যাখ্যায়) তিনি ‘শুনীয’
বলেননি।
৫৫৭৭। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত্যু ব্যতীত এমন কোনও রোগ নেই কালজিরায়
যার শিফা নেই।
৫৫৭৮। আবদুল মালিক ইবনু
শুয়ায়ব ইবনু লাইস ইবনু সা’দ (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তার নিয়ম ছিল, যখন
তার পরিবারের কোন লোক মারা যেত এবং সে উপলক্ষে মহিলাগণ সমবেত হতো, পরে পরিবারের লোক ও বিশিষ্ট (আত্নীয়) ব্যতীত
অন্যরা চলে যেত, তখন তিনি এক ডেকচি ‘তালবীনা’
রান্না করার নির্দেশ দিতেন। তা রান্না করা হতোঃ তারপর ‘সারীদ’ তৈরি করে তালবীনা
তার ওপর ঢেলে দেওয়া হতো। এরপর তিনি বলতেন, এটা
থেকে আহার কর। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে
শুনেছি তালবীনা রোগীর অন্তর প্রশান্ত করে এবং দুঃখ কিছুটা প্রশমিত করে।
৫৫৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক
ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমার ভাইয়ের দাস্ত হচ্ছে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধুপান করাও। সে তাকে মধুপান করান পরে
এসে বলল, আমি তাকে মধুপান করিয়েছি
কিন্তু তার দাস্ত আরও বেড়ে গেছে। তিনি এভাবে তাকে তিনবার বললেন। তারপর লোকটি
চতুর্থবার এসে বললে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধুপান
করাও। লোকটি বলল, মধুপান করিয়েছি কিন্তু দাস্ত
বেড়ে যাচেছ। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহই
সত্য বলেছেন, তোমার ভাইয়ের পেটে অভিযোগ
সত্য নয়। তারপর আবার তাকে পান করালে সে ভাল হয়ে গেল। আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই জনৈক ব্যক্তি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমার ভাইয়ের পেট খারাপ হয়েছে অতঃপর তিনি তাকে
বললেন, ওকে মধুপান করাও। এটি শুবার
হাদীসের অর্থে বর্ণিত।
৫৫৮০। ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার পিতা সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে
উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে এ মর্মে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছেন যে, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্লেগ সম্পর্কে কি শুনেছেন? তখন
উসামা (রাঃ) বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ
একটি শাস্তি যা বনী ইসরাঈল কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ) তোমাদের পুর্বে যারা ছিল তাদের
উপরে পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং তোমরা কোন এনাকায় প্লেগের কথা শুনলে সেখানে যেও না। আর
কোন এলাকায় প্লেগ দেখা দিলে এবং তোমরা সেখানে অবস্হানরত থাকলে সেখান থেকে পলায়ন
করবে না। রাবী আবূ নাযর (রহঃ) বলেছেনঃ শুধু পলায়নের উদ্দেশ্যে সে স্হান ত্যাগ করো
না।
৫৫৮১। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কা’নাব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্লেগ আযাবের আলামত। মহীয়ান গরীয়ান
আল্লাহ্ পাক তা দিয়ে তাঁর বান্দাদের কিছু লোককে বিপদ্গ্রস্থ করেন। সুতরাং কোন
এলাকায় এর প্রাদুর্ভাবের সংবাদ পেলে তোমরা সেখানে যেও না। আর তোমরা কোন এলাকায়
অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ দেখা দিলে সেখান থেকে পলায়ন করবে না। এ বর্ণনা কা’নাব এর, আর কুতায়বা (রহঃ) এর বর্ণনাও অনুরুপ।
৫৫৮২। মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ প্লেগ একটি আযাব, যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে কিংবা বণী
ইসরাইলের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অতএব কোন এলাকায় তা দেখা দিলে তা থেকে পলায়নের
উদ্দেশে সে এলাকা ত্যাগ করো না। আর কোন এলাকায় প্লেগ দেখা দিলে সেখানে প্রবেশ করো
না।
৫৫৮৩। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস
(রাঃ) কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) বললেন, আমি সে বিষয়ে তোমাকে অভিত করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তা একটি আযাব কিংবা একটি
শাস্তি যা আল্লাহ্ পাক বনী ইসরাইলের একটি উপদল কিংবা তামদের পূর্ববর্তী কোন একদল
লোকের উপরে পাঠিয়েছিলেন। সুতরাং কোন এলাকায় তাঁর কথা শুনলে সেখানে তাঁর উপরে
(প্লেগকে পরোয়া না করে) তোমরা প্রবেশ কর না, আর
কোন এলাকায় তোমাদের উপরে তা এসে পড়লে সেখান থেকে পলায়নের উদ্দেশ্যে বের হয়ো না।
৫৫৮৪। আবূ রবী সুলায়মান ইবনু
দাউদ, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর
ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এর সনদে তাঁর
বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ হাদিস রিওয়ায়েত করেছেন।
৫৫৮৫। আবূ তাহির আহমদ ইবনু
আমর ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)সূত্রে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ এ ব্যধি বা নাড়া একটি মহামারী যা
দিয়ে তোমাদের পূর্বেকার কতক উম্মাতকে আযাব দেয়া হয়েছে। পরে তা পৃথিবীতে (বিদ্যমান)
রয়ে গেছে। তাই এক সময় তা চলে যায়, আর এক সময় তা এসে পড়ো
সুতরাং যে ব্যক্তি কোন এলাকায় তার কথা শুনতে পায় সে যেন কিছুতেই সেখানে না যায়, আর যে ব্যাক্তি কোথাও থাকা অবস্হায় সেখানে তা
এসে পড়ে, সেখান থেকে যেন সে (যেন)
পলায়ন না করে।
৫৫৮৬। আবূ কামিল জাহদারী
(রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনূস (রহঃ)-এর সনদে তাঁর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস
রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৮৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) হাবীব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা মদিনায় অবস্হান করছিলাম।
তখন আমার কাছে খবর পৌছল যে, কুফায় প্লেগ দেখা দিয়েছে।
তখন আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) প্রমুখ আমাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যখন কোন এলাকায় থাকবে, সেখানে তা দেখা দিলে সেখান থেকে বের হয়ো না। আর
যদি তোমার কাছে সংবাদ পৌছে যে, তা কোন এলাকায় রয়েছে, তা হলে সেখানে যেও না। রাবী বলেনঃ আমি বললাম, এ রিওয়ায়াত কার তরফ থেকে? তাঁরা বললেন, আমির
ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে তিনি তা বর্ণনা করে থাকেন। রাবী বলেনঃ তখন আমি তাঁর কাছে
গেলাম। তারা বলল, তিনি বাড়িতে নেই। তখন আমি
তার ভাই ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি
বললেন, উসামা (রাঃ) যখন সা’দকে
হাদীস শোনাচ্ছিলেন, তখন আমি হাযির ছিলাম। তিনি
বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে উনেছি। এ ব্যাধি একটি মহামারী কিংবা একটি
আযাব কিংবা আযাবের অবশিষ্টাংশ- যা দিয়ে তোমাদের পুর্বেকার কতক লোককে শাস্তি দেয়া
হয়েছিল। সুতরাং কোন এলাকায় তোমাদের অবস্হানকালে যদি তা থাকে, তখন সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না। আর যদি
তোমাদের কাছে সংবাদ পৌছে যে, তা কোন এলাকায় রয়েছে, তাহলে সেখানে যেও না। হাবীব (রহঃ) বলেনঃ তখন
আমি ইবরাহীম (রহঃ)-কে বললাম, আপনি কি শুনেছেন যখন উসামা
(রাঃ) সা’দ (রাঃ)-এর কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন, আর
তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেননি? বললেনঃ হ্যা।
৫৫৮৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয
(রহঃ) শুবা (রহঃ) এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি হাদীসের প্রারম্ভে আতা
ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সস্পর্কিত বিবরণ বিবৃত করেননি।
৫৫৮৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) খুযায়মা ইবনু সাবিত (রাঃ) ও উসামা ইবনু যায়দ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ এরপর শু’বা (রহঃ)-এর হাদীসের মর্মানূযায়ী হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৯০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। বলেনঃ উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) ও সা’দ (রাঃ) বসে বসে কথা বলছিলেন। তাঁসা
দুজন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (পূর্বোল্লেখিত) রাবীদের হাদীসের ন্যায়। ওয়াহব ইবনু
বাকিয়্যা (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু সা’দ ইবনু মালিক (রহঃ) তাঁর পিতা (সা’দ) সুত্রে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোল্লেখিত রাবীদের হাদীসের
অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৫৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) শাম-এর দিকে রওয়ানা হলেন। ‘সারগ’
পর্যন্ত পৌছলে আজনাদ অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ
(রাঃ) ও তাঁর সহকর্মীগণ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তখন তাঁরা খবর দিলেন যে, শামে মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছে। ইবনু আব্বাস
(রাঃ) বলেনঃ তখন উমার (রাঃ) বললেন, প্রথম
যুগের মুহাজিরদের আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলে তিনি তাঁদের পরামর্শ
চাইলেন এবং তাঁদের খবর দিলেন যে শামে মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁরা দ্বিধাবিভক্ত
হয়ে পড়লেন। তাঁদের কেউ কেউ বললেন, আপনি একটা বিশেষ কাজের
উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, তাই আমরা আপনার ফিরে যাওয়া
যুক্তিতে মনে করি না। আর কেউ কেউ বললেন, আপনার
সাথে রয়েছে প্রবীণ ব্যক্তি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সাহাবীগণ। তাই আমরা তাঁদেরকে এ মহামারীর মুখে এগিয়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি না।
তিনি বললেন, আপনারা উঠূন। এরপর বললেন, আনসারীদের আমার কাছে ডেকে আন। আমি তাঁদেরকে
তাঁর কাছে ডেকে আনলে তিনি তাঁদের কাছেও পরামর্শ চাইলেন। তাঁরা মুহাজিরদের পথ
অনুসরণ করলেন এবং মুহাজিরগণের ন্যায় তাঁদের মধ্যেও মতপার্থক্য হল। তিনি বললেন, আপনারা উঠূন! এরপর বললেন, (মক্কা) বিজয়ের আগে হিজরতকারী কুরায়শের
মুরব্বীদের যারা এখানে রয়েছেন, তাঁদের আমার কাছে ডেকে আন।
আমি তাদের ডেকে আনলাম। তাঁদের দুজেনও কিন্তু দ্বিমত পোষণ করলেন না। তাঁরা (সকলেই)
বললেন, আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি যে, আপনি লোকদের নিয়ে ফিরে যান এবং তাঁদেরকে এ
মহামারীর মুখে এগিয়ে দিবেন না। তখন উমার (রাঃ) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, আমি ফজর পর্যন্ত সওয়ারীর উপর থাকবো, তোমরাও ফজর পর্যন্ত সওয়ারীর উপর অবস্হান কর।
তখন আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর
তাকদীর থেকে পলায়ন করে? তখন উমার (রাঃ) বললেন, হে আবূ উবায়দা! তুমি ভিন্ন অন্য কেউ এ কথা বললে
(রাবী বলেন) উমার (রাঃ) তাঁর বিরুদ্ধাচরণ অপছন্দ করতেন (তিনি বললেন) হ্যা, আমরা আল্লাহর তাকদীর থেকে আল্লাহরই তাকদীরের
দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হওয়ার পর
দেখ যে, দুটি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল অপরটি শূন্য। সে ক্ষেত্রে
তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে
আল্লাহর তাকদীরেই সেখানে চরাবে, আর যদি তৃণশূন্য প্রান্তরে-
চরাও, তাহলেও আল্লাহর তাকদীরেই
সেখানে চরাবে। রাবী বলেনঃ এ সময় আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্হিত
ছিলেন। তিনি বলেনঃ এ বিষয়ে আমার কাছে (হাদীসের) ইলম রয়েছে। আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যখন
তোমরা কোন এলাকায় এর সংবাদ শুনতে পাও, তখন
তার উপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যেয়ো না। আর যখন কোন দেশে তোমাদের সেখানে থাকা
অবস্হায় দেখা দেয়, তখন তা থেকে পলায়ন করে
বেরিয়ে পড়ো না। রাবী বলেনঃ তখন উমার (রাঃ)আল্লাহর হামদ করলেন। তারপর চলে গেলেন।
৫৫৯২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
মামার (রহঃ) উক্ত সনদে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। মামার
(রহঃ)-এর হাদীসে অধিক বলেছেনঃ রাবী বলেন মামার (রাঃ) আবূ ঊবায়দাকে আরো বললেন, বল তো, সে
যদি তৃনশূন্য প্রান্তরে চরায় আর সবুজ শ্যামল প্রান্তর বর্জন করে, তা হলে তুমি কি তাকে অক্ষম সাব্যস্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যা।
তিনি বললেন, তা হলে এবার চল। রাবী বলেনঃ
পরে সফর করে মদিনায় উপনীত হয়ে তিনি বললেন, এটি
অবস্হানস্হল কিংবা তিনি বললেন, ইনশা আল্লাহ এটই অবতরণ
স্হান। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উল্লেখিত
সুত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ তবে তিনি বলেছেন নিশ্চয়ই আবদুল্লাহ ইবনু হারিস তাকে
হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাদুল্লাহ’ বলেন নি।
৫৫৯৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবীআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমার (রাঃ) শামের সফরে বের হলেন, ‘সারাগ’ পর্যন্ত গেলে তাঁর কাছে (সংবাদ) পৌছল যে, শামে মহামারী দেখা দিয়েছেন। তখন আব্দুর রাহমান
ইবনু আওফ (রাঃ)তাকে খবর দিলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন এলাকায় মহামারীর (সংবাদ) শুনবে, তখন এর উপরে এগিয়ে যাবে না। আর যখন কোন এনাকায়
তা দেখা দিবে, তিনি যখন তোমরা সেখানে রয়েছ, তখন তা থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। এর পরে
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সারাগ থেকে ফিরে গেলেন। সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার)
(রাঃ) থেকে ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, আব্দুর
রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুসরণে উমার (রাঃ) লোকদের নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন।
৫৫৯৪। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (এ হাদীস সে সময়ের) যখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ)
ও পাখির কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তা হলে সে উট পালের অবস্হা কি, যা কোন বালূকাময় ভূমিতে থাকে যা নিরোগ, সবল। তারপর সেখানে পাচড়া আক্রান্ত (কোন) উট এসে
তাদের মাঝে ঢুকে পড়ে তাদের সবশুলিকে পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? তিনি বললেন, তা
হলে প্রথম (উট)-টিকে কে সংক্রমিত করেছিল?
৫৫৯৫। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও
হাসান হুলওয়ানী ও আবূ সালামা ইবনু আন্দুর রাহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট ও পাখির কুলক্ষণ-এর
অস্তিত্ব নেই। তখন এক বেদুঈন আরব বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! রাবী ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৫৫৯৬। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর
রাহমান দারিমী, সিনান ইবনু আবূ সিনান দুআলী
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। তখন এক বেদুঈন আরব দাঁড়াল, এর পরের অংশ ইউনূস ও সালিহ (রহঃ)-এর হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। (পূর্বোক্ত সনদে) যুহরী (রহঃ) বলেনঃ সাইব ইবনু ইয়াযীদ ইবনু
উখত নামির (রহঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, ক্ষুধায়
পেট কামড়ানো কীট এবং পাখির কুলক্ষণের অস্তিত্ব নেই।
৫৫৯৭। আবূ তাহির ও হারামালা
(রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর অন্তিত্ব) নেই। তিনি আরও বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ অসুস্হ উটপালের মালিক (অসুস্হ উটগুলিকে) সুস্হ উটপালের মালিকের (উটের)
কাছে আনবে না। আবূ সালামা (রহঃ) বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ দুংটি হাদীস
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন। পরে আবূ হুরায়রা
(রাঃ) তাঁর (প্রথম হাদীসের) ‘সংক্রমণ নেই’ বলা থেকে নীরব থাকেন এবং অসুস্হ উটপালের
মালিক সুস্হ উটপালের মালিকের কাছে আনবেনা-এর বর্ণনায় দূঢ় থাকেন। রাবী বলেনঃ
(একদিন) হারিস ইবনু আবূ যুবাব (রহঃ), তিনি
আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর চাচাত ভাই, বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি তে শুনতে পেতাম যে, আপনি এ হাদীসের সাথে আরও একটি হাদীস আমাদের
কাছে রিওয়াত করতেন যা বর্ণনায় আপনি এখন নীরব থাকছেন। আপনি বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সংক্রমণ নেই-। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) অস্বীকার করলেন এবং বললেন,!অসুস্হ পালের মালিক সুস্হপালের মালিকের কাছে
নিয়ে যাবে না। তখন হারিস (রহঃ) এ ব্যাপারে তাঁর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। ফলে আবূ
হুরায়রা (রাঃ) রাগাম্বিত হয়ে হাবশী ভাষায় কিছু বললেন। তিনি হাবিস (রহঃ)-কে বললেন, তুমি কি বুঝতে পেরেছো, আমি কি বলেছি? তিনি
বললেন, না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, আমি
অস্বীকার করছি। আবূ সালামা (রহঃ) বলেনঃ আমার জীবনের শপথ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অবশ্যই
আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সংক্রমণ নেই। এখন আমি জানি না যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) ভুলে গেলেন, নাকি একটি অপরটিকে রহিত করে দিয়েছে।
৫৫৯৮। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর বাস্তবতা) নেই। ঐ সাথে রিওয়ায়াত করতেন পালের মালিক (তার)
অসুস্হ উট অন্য মালিকের সুস্হ উটপালের কাছে নিয়ে আসবে না। বাকী অংশ রাবী ইউনূস
(রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।
৫৫৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর
রাহমান দারিমী (রহঃ) যুহরী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত সনদে
অনুরূঁপ বর্ণনা করেছেন।
৫৬০০। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়রা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক
ব্যধি, কুলক্ষণে পেঁচা, নক্ষত্র (প্রভাবে বর্ষণ) ও (ক্ষুধায় পেট
কামড়ানো) কীট-এর অস্তিত্ব নেই।
৫৬০১। আহমাদ ইবনু ইউনুস ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যধি কুলক্ষণ ও (মাঠে-প্রান্তরে
পথ ভূলানো বিভিন্ন পশারী) ভূত-প্রেত (-এর অস্তিত্ব) নেই।
৫৬০২। আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম
ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, পথ
ভূলানো ভূত (এর অস্তিত্ব) নেই।
৫৬০৩। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, সংক্রামক ব্যধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট ও পথ ভুলানো ভূত (-এর
অস্তিত্ব) নেই। (রাবী বলেন) আমি আবূ যুবায়র (রহঃ)-কে তাঁর ছাত্রদের কাছে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী ‘আলা সাফারা’ -এর ব্যাখ্যা দিতে শুনেছি।
আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেন, ‘আস সাফারা’ হল ‘দাওয়াব্বাল
বাতনু’ পেটের কীট। জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল কি রকম? তিনি বললেন, কথিত
পেটের কীটসমুহ। রাবী বলেনঃ তিনি ‘আল গুলা’ -এর ব্যাখ্যা দেন নি। আবূ যুবায়র (রহঃ)
বলেছেন তা সে সব ভূত-প্রেত যারা নানারুপ ধরে মানুষকে পথ ভুলায়।
৫৬০৪। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি
কোন কুলক্ষণ নেই। তবে তার মধ্যে উত্তম হল ফাল- শুভলক্ষণ। বলা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ‘ফাল- কি? তিনি বললেন, (যেমন)
উত্তম কোন কিছু, যা তোমাদের কেউ শুনতে পায়।
৫৬০৫। আবদুল মালিক ইবনু
শুআয়ব ইবনু লায়স ও আবদুল্লাহ ইবনু আবরে রাহমান দারিমী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে
উল্লিখিত সনদে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী উকায়ল (রহঃ)-এর হাদীসে
রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি ‘আমি শুনেছি’ বলেন নি।
আর রাবী শুআয়ব (রহঃ) তাঁর হাদীসে বলেছেন, ‘নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ -কে আমি বলতে শুনেছি , যেরুপ মামার (রহঃ) বলেছেন।
৫৬০৬। হাদ্দাব ইবনু খালিদ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রমন ও কুলক্ষণ নেই, তবে
ফাল ও শুভ লক্ষণ(অর্থাৎ সুন্দরশব্দ ও উত্তম কথা) আমাকে আনন্দিত করে।
৫৬০৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সংক্রমণ ও কুলক্ষণে (-এয় বৈধতা) নেই।
তবে ফাল ও সূলক্ষণ আমাকে আনন্দ দেয়। রাবী বলেনঃ তখন বলা হল, ফাল কী? তিনি
বললেন, উত্তম কথা।
৫৬০৮। হাজ্জাজ ইবনু শাইব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ নেই। আর আমি
ভাল ফাল পছন্দ করি।
৫৬০৯। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সংক্রমণ, পেঁচা ও কুলক্ষণ (বিশ্বাসের বৈধতা) নেই। আর আমি
ভাল ফাল- পছন্দ করি।
৫৬১০। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শুভাশুভ রয়েছে ঘর, নারী ও ঘোড়ায়।
৫৬১১। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ সংক্রমণ ও অশুভ নেই; তবে (ওভ) অশুভ রয়েছে তিনটি
বিষয়ে, স্ত্রী, ঘোড়া ও গৃহে।
৫৬১২। ইবনু আবূ উমার (রাঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর দুই পূত্র সালিম ও হামযা (রহঃ) তাঁদের পিতা সূত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াহইয়া, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, আবদুল
মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
আবদুর রাহমান দারিমী (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা সূত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে ওভাশুভ বিষয়ে রাবী মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন। রাবী ইউনুস ইবনু ইয়াযীদ ব্যতিরেকে ঐদের কেউ ইবনু উমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে
‘সংক্রমণ ও অশুভ- উল্লেখ করেননি।
৫৬১৩। আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু হাকাম (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ কোন কিছুতে
অশুভ কিছু যদি থাকে, তা হবে ঘোড়া, বাড়ি ও নারী।
৫৬১৪। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) শুবা (রহঃ) উল্লিখিত সনদে অনুরুপ হাদীস রিওযায়াত করেছেন। তবে তিনি ‘হাক্কু’
শব্দটি বলেন নি।
৫৬১৫। আবূ বাকর ইবনু ইসহাক
(রহঃ) হামযা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে তাঁর পিতা থেকে রিওয়াত করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ শুভাশুভ যদি কোন কিছুতে থেকে থাকে, তা
হলে রয়েছে ঘোড়া, বাসস্হান ও স্ত্রীর মধ্যে।
৫৬১৬। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কা’নাব সাহল ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি থাকে তা হলে স্ত্রী, ঘোড়া ও বাসস্থানে অর্থাৎ শুভাশুভ।
৫৬১৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৬১৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যদি কোন কিছুতে (শুভাশুভ) থেকে থাকে, তা
হলে আবাস, খাদিম ও ঘোড়ায়।
৫৬১৯। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) মুআবিয়া ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কতক ব্যা
পার আমরা জাহিলী যুগে করতাম, আমরা জ্যোতিষদের কাছে যেতাম।
তিনি বললেন, আর জ্যোতিষের কাছে যেয়ো
না। আমি বললাম, আমরা (বিভিন্ন উপায়ে) শুভাশুভ
গ্রহণ করতাম। তিনি বললেন, তা এমন একটি ব্যাপার, যা তোমাদের কেউ কেউ তার অন্তরে অনুভব করে, তা যেন তোমাদের (কাজকর্ম থেকে) বিরত না রাখে।
৫৬২০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইউনূস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন। তবে রাবী মালিক (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে শুভাশুভ, উল্লেখ করেছেন। তাতে ‘জ্যোতিষীর’ কথা উল্লেখ
নেই।
৫৬২১। মুহাম্মাদ ইবনু
সাব্বাহ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মুআবিয়া ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, মুআবিয়া
(রাঃ) থেকে আবূ সালামা (রহঃ) সুত্রে যূহরী (রহঃ)-এর অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে
ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) অতিরিক্ত বলেছেন, আমি
(মুআবিয়া) বললাম, আমাদের মাঝে কতক লোক আছে, যারা রেখা অঙ্কন (ভাগ্য নির্ণয়) করে থাকে। তিনি
বললেন, নাবীগণের মাঝে একজন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখা অঙ্কন (ভাগ্য নির্ণয়) করতেন। অতএব যার রেখা
তাঁর (রেখার অনুরুপ) হবে, তা সেরুপই (সত্যই)।
৫৬২২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! জ্যোতিষ কোন বিষয়ে আমাদের (কোন) কথা বলত, পরে তা আমরা বাস্তবে প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি
বললেন, সেটি একটি বাস্তব সত্য কথা, যা কোন জ্বীন ছিনতাই করে এনে তা তার দোসর
ঠাকুরের কানে ঢূকিয়ে দিত, আর সে তার সাথে একশটি
অবাস্তব মিথ্যা বাড়িয়ে দিত।
৫৬২৩। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) উরওয়া (রাঃ) বলতেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, একদল লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কাছে জ্যোতিষদের বিষয় জিজ্ঞাসা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের বললেন, ওরা (বাস্তব)এর উপরে
(প্রতিষ্ঠিত) নয়। তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারা অনেক
সময় কোন বিষয় (আগাম) কথা বলে, যা বাস্তব হয়ে যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঐ (একটি) কথা বাস্তব সত্যের
অন্তভুক্ত, যা জ্বীন্নরা চুরি করে আনে
এবং মুরগীর মত কুট কুট করে তা তার দোসরের কানে ঢেলে দেয়। পরে তারা তার সাথে একশটিরও
অধিক মিথ্যা মিশিয়ে নেয়।
৫৬২৪। আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু
শিহাব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে যুহরী (রহঃ) থেকে মাকিল (রহঃ)-এর অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫৬২৫। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মাঝে আনসারদের এক ব্যক্তি আমাকে খবর
দিয়েছেনঃ যে, তাঁরা এক রাতে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একটি তারকা
নিক্ষিপ্ত হল, ফলে তা জ্বলে উঠল। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ ধরনের (তারকা) নিক্ষিপ্ত হলে জাহেলী যুগে
তোমরা কি বলতে? তারা বলল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই সমধিক অবগত। আমরা বলতাম, আজ রাতে কোন মহান ব্যক্তির জনা হল (এবং কোন
মহান ব্যক্তি মারা গেলেন)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তবে জেনে রাখ যে, তা কারো মৃত্যু কিংবা কারো
জন্মের কারণে নিক্ষিপ্ত হয় না; বরকতময় ও মহান নামের অধিকারী
আমাদের রব যখন কোন বিষয়ের ফায়সালা দেন, তখন
আরশ বহনকারী ফিরিশ্তারা তাসবীহ পাঠ করে। তারপর তাসবীহ পাঠ করে সে অহসমানের
ফিরিশতারা, যারা তাদের নিকটবর্তী; অবশেষে তাসবীহ পাঠ এ নিকটবর্তী (দুনিয়ার)
আসমানের বাসিন্দাদের পর্যন্ত পৌছে। তারপর আরশ বহনকারী (ফিরিশতা)-দের নিকটবর্তী
যারা তারা আরশ বহনকারীদের বলে, তোমাদের প্রতিপালক কি ইরশাদ
করলেন? তখন তাদের যা বলেছেন, তারা সে খবর সরবরাহ করে। (রাবী বলেন) বললেনঃ
পরে আসমানসমূহের বাসিন্দ্বারা একে অপরকে খবর আদান প্রদান করে। অবশেষে এই নিকটবর্তী
আসমানে খবর পৌছে। তখন জ্বীনেরা অতর্কিতে গোপন সংবাদটি শুনে নেয় এবং তাদের দোসর
জ্যোতিষীদের কাছে পৌছিয়ে দেয়, আর তা বাড়িয়ে বুড়িয়ে দেয়।
ফলে যা তারা যথাযথভাবে নিয়ে আসতে পারে, তাই
ঠিক হয়; কিন্তু তারা তাতে সন্নিবিষ্ট
ও সংযোজিত করে।
৫৬২৬। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির, হারামালা
ও সালামা ইবনু সাবীব (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে ইউনূস
(রহঃ) বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
থেকে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনসার সাহাবীগণের কয়েক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন। আর আওয়াঈ
(রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তবে তাতে তারা সন্নিবিষ্ট ও
সংযোজিত করে দেয়। আর ইউনূস (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, এতে
তারা বৃদ্ধি ও অতিরঞ্জিত করে। ইউনূস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বাড়িয়ে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ অবশেষে যখন তাদের
অন্তর থেকে সন্ত্রস্ততা বিদূরীত করে দেয়া হয়, তখন
তারা বলে, তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? তারা বলে, ঠিকই
বলেছেন। আর মাকিল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আওযাঈ (রহঃ) যেমন বলেছেন, কিন্তু তারা তাতে সন্নিবিষ্ট করে ও সংযোজিত করে
রয়েছে।
৫৬২৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না আনাযী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সহধর্মিনা
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি
আবূরাফ (গণকের) কাছে গেল এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, চল্লিশ রাত তার কোন সালাত কবুল করা হয় না।