তওবা

৬৭০০। সওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেনঃ আমার প্রতি বান্দার ধারণা মুতাবিক আমি তার সঙ্গে আচরণ করি। সে যেখানেই আমাকে স্বরন করে আমি তার সঙ্গে আছি। মরু বিয়াবানে তোমাদের কেউ হারানো পশু? পাওয়ার পর যে খূশী হয় আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবার পর এর থেকেও অধিক খুশী হল। যদি কেউ এক বিঘত পরিমাণ আমার দিকে এগিয়ে আসে তবে আমি তার প্রতি একহাত এগিয়ে যাই। যদি কেউ একহাত পরিমাণ আমার দিকে এগিয়ে আসে, তবে আমি এক গজ পরিমাণ তার দিকে এগিয়ে যাই। যদি কেউ আমার দিকে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।

৬৭০১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কালোব কানাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি হারানো পশু পাওয়ার পর যে পরিমাণ খুশী হয়, তোমাদের তাওবার পর আল্লাহ তাআলা এর চেয়েও অধিক খুশী হন।

৬৭০২। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুনুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭০৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হারিস ইবনু সূওয়ায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) অসুস্হ ছিলেন। তার শশ্রুষা করার জন্য একদা আমি তাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি আমাকে দুটি হাদীস শোনালেন। একটি নিজের পক্ষ থেকে এবং অপরটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে একথা বলতে জনেছি যে, আল্লাহ তাআলা তার মুমিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি ছায়া-পানিহীন আশংকাপূর্ণ অরণ্যে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সাথে থাকে পানাহার সামগ্রী বহনকারী একটি সাওয়ারী। তারপর ঘুম থেকে জেগে দেখে যে, সাওয়ারীটি সেখানে নেই। এরপর সে সেটি তালাশ করতে করতে পিপাসার্ত হয়ে পড়ে এবং বলে, আমি আমার আগের জায়গায়ই ফিরে যাব এবং ঘূমাতে ঘূমাতে মরে যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যূর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সাওয়ারীটি তার শিয়রের পাশ্বেই। (সাওয়ারী এবং পানাহার সামগ্রী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ খুশী হয়, মুমিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ এর চেয়েও অধিক আনন্দিত হন।

৬৭০৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উক্ত-সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর হাদীসে রয়েছে মরুভূমির সে লোকটির চেয়েও অধিক খুশী হন।

৬৭০৫। ইসহাক ইবনু মনসূর (রহঃ) উমারা ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হারিস ইবনু সুওয়ায়দকে একথা বলতে শুনেছি যে, আবদুল্লাহ আমার নিকট দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এবং অপরটি তার নিজের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তার মুমিন বান্দার তাওবার কারণে অধিকতর আনন্দিত হন। জারীরের হাদীসের অনুরুপ।

৬৭০৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) সিমাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) খোতবা দিতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ তার বান্দার তাওবার কারণে ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিকতর খূশী হল, যে তার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও এর বোচকা একটি উটের উপর তুলে দিয়ে চলতে থাকে এবং অবশেষে এক মরুদ্যানে উপস্থিত হয়। তখন দুপূর হয়ে যায়। তখন সে নেমে বৃক্ষের নীচে দিবা নিদ্রা যায়। সে ঘোর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং তার উটটি চলে যায়। সে জাগ্রত হয়ে ঐ টিলায় দৌড়ে গেল, কিন্তু সে দেখতে পেলনা। এরপর সে অপর টিলায় দৌড়ে গেল কিন্তু সেখানেও সে কিছু দেখতে পেল না। তারপর সে তৃতীয় এক টিলায় দৌড়ে যায়, কিন্তু ওখানেও সে কিছু দেখতে পেল না। অবশেষে সে যেখানে ঘুমিয়ে ছিল সেখানে এসে বসে থাকে। এ সময় হঠাৎ হাটতে হাটতে উঠটি তার নিকট চলে আসে। অমনি সে তার হাতে এর লাগাম চেপে ধরে। আল্লাহ তার মুমিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ উট প্রাপ্ত ব্যক্তির থেকেও অধিক আনন্দিত হল। বর্ণনাকারী সিমাক (রহঃ) বলেন, শাবী (রহঃ) বলেছেন, নুমান এ হাদীসটি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -থেকে মারফু” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে আমি নুমান (রাঃ)-কে হাদীসটি মারফুভাবে বর্ণনা করতে শুনিনি।

৬৭০৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও জাফর ইবনু হুমায়দ (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এ সন্মন্ধে তোমরা কী মনে কর যে, এক ব্যক্তি, যার কাছে পানাহারের -কোন বস্তু নেই, এমন মরু বিয়াবানে উট চলে যায় এবং এর লাগাম মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলতে থাকে, অথচ এর উপর রয়েছে সে ব্যক্তির পানাহারের সামগ্রী। তখন সে তা তালাশ করে ক্লান্ত হয়ে যায়। আর এ সময় উক্ত সাওয়ারী কোন বৃক্ষের নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় যদি এর লাগাম উক্ত বৃক্ষের কান্ডের সাথে আটকে যায়, আর অটিকানী অবস্হায় যদি সে সেটি পেয়ে যায়, তাহলে এ ব্যক্তি কি পরিমাণ আনন্দিত হবে? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সে খুবই আনন্দিত হবো তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে-সাওয়ারী প্রাপ্ত উক্ত-ব্যক্তির চেয়েও আল্লাহ অধিকতর আনন্দিত হল। জাফর (রহঃ) ‘আয়াদু আন আয়াদ’ এর স্হলে ‘আয়াদু আন আবিহি’ বর্ণনা করেছেন।

৬৭০৮। মুহম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর নিকট তাওবা করে তখন তিনি ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিক খুশী হন যে মরুবিয়াবানে নিজ সাওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তার সাওয়ারিটি তার থেকে হারিয়ে গেল। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি বৃক্ষের ছায়ায় এসে বিশ্রাম করে এবং তার সাওয়ারী সমন্ধে সস্পূর্ণরুপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্হায় হঠাৎ সাওয়ারীটি তার সামনে এসে দাড়ায়। অমনই সে উহার লাগাম ধরে ফেলে। তারপর সে আনন্দের আতিশয্যে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দের আতিশয্যে সে ভুল করে ফেলেছে।

৬৭০৯। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা নিজ বান্দার তাওবার কারণে তোমাদের ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিক আনন্দিত হল, যে জেগেই তার ঐ উটটি পেয়ে যায়, যা সে মরু-বিয়াবানে হারিয়ে ফেলেছিল। আহমাদ ইবনু সাঈদ দারেমী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭১০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর মৃত্যূ উপস্থিত হলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শ্রুত একটি হাদীস আমি তোমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে একথা বলতে শুনেছি যে, যদি তোমরা গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ তায়ালা এমন মাখলূক সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করতো এবং আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।

৬৭১১। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের এমন কোন গুনাহ না থাকতো যা আল্লাহ ক্ষমা করে দেন, তবে আল্লাহ অবশ্যই এমন কাওম সৃষ্টি করতেন যাদের গুনাহ হতো এবং তিনি তা ক্ষমা করে দিতেন।

৬৭১২। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাঁণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, যদি তোমরা- গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের ধ্বংস করে এমন কাওম সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং তিনি তাদের ক্ষমা করে দিতেন।

৬৭১৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতান ইবনু নুসায়র (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাতিব হানযালা আল উসায়দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ, হে হানযালা? তিনি বলেন, উত্তরে আমি বললাম, হানযালা তো মুনাফিক হয়ে পড়েছে। তখন তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ তুমি কি বলছ? হানযানা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট বসি, অবস্হান করি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্বরণ করিয়ে দেন, যেন চোখ দিয়ে আমরা উভয়টি প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দরবার থেকে বের হয়ে নিজেদের ন্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মাঝে ডুবে যাই তখন আমরা এর অনেক কিছু ভুলে যাই। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমারও তো এই অবস্থা। তারপর আমি এবং আবূ বাকর (রাঃ) রওনা হলাম এবং আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! হানযানা মুনাফিক হয়ে গিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা কী-? আমি বললাম, আমরা আপনার নিকট থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্বরণ করিয়ে দেন, যেন আমরা তা প্রত্যক্ষ দেখতে পাই। কিন্তু এরপর আমরা যখন আপনার কাছ থেকে বের হই এবং ন্ত্রী-সন্তান সন্ততি ও ধন-সম্পদের মাঝে যাই তখন আমরা এর অনেক কিছু ভূলে যাই। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ আমি তার শপথ করে বলছি! আমার নিকট থাকা কালে তোমাদের যে হাল হয়, যদি তোমরা সর্বদা এ অবস্থায় অবিচল থাকতে এবং সর্বদা আল্লাহর যিকরে মশগুল থাকতে তবে অবশ্যই ফিরিশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের রাস্তায় তোমাদের সাথে মূসাফাহা করতো। কিন্তু হে হানযানা-! এক ঘণ্টা (আল্লাহর স্মরণে) আর এক ঘণ্টা (পার্থিব) ব্যয় করবে। কথাটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার বললেন।

৬৭১৪। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) হানযালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট ছিলাম। তিনি আমাদের উপদেশ দিলেন এবং জাহান্নামের কথা স্বরন করিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি বাড়ীতে আসলাম এবং ছেলে-মেয়েদের সাথে হাসি-তামাশা করলাম এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করলাম। এরপর আমি বাড়ি থেকে বের হলাম। অমনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। আমি তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, আমিও তো এরুপ করি, যেমন তুমি বললে। তারপর আমরা উভয়ই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! হানযালা তো মুনাফিক হয়ে গিয়েছে। তিনি বললেনঃ তা কী? তখন আমি আমার পূরা অবস্হা বর্ণনা করলাম। এরপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আমিও তো এরুপ করি যেমন হানযালা করেছে। তিনি বললেন, হে হানযাহল! কিছু সময় আল্লাহর স্বরণের জন্য এবং কিছু সময় পার্থিব কাজের জন্য। ওয়ায-নসীহতের সময় তোমাদের হৃদয় যেমন থাকে, সর্বদাই যদি তা এ অবস্হায় থাকতো তবে ফিরিশতাগণ অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে মূসাফাহা করতো। এমনকি পথে ঘাটে তারা তোমাদের সালাম করতো।

৬৭১৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কাতিব হানযালা তায়মী উসায়দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট ছিলাম। তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্বরন করিয়ে দিলেন। তারপর সুফিয়ান (রাঃ) হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭১৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মাখলূক সৃষ্টির পর আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ করেন এবং তা তাঁর কাছে আরশের উপরে রয়েছে। (তিনি বলেন) আমার গযবের চেয়ে আমার রহমতের প্রাধান্য রয়েছে।

৬৭১৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমার গযবের চেয়ে আমার রহমত অগ্রগামী হয়েছে।

৬৭১৮। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মাখলূক সৃষ্টির পর আল্লাহ তাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তা তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি (তাতে তিনি লিপিবদ্ধ করেন আমার গযব অপেক্ষা আমার রহমতের প্রাধান্য রয়েছে।

৬৭১৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তাঁর রহমতকে একশ–ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের নিকট রেখেছেন এবং একভাগ পৃথিবীতে নাযিল করেছেন। রহমতের এ অংশ থেকেই সৃষ্টজীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়া করে, এমনকি প্রানী পর্যন্ত; এ কারণেই স্বীয় ক্ষুর নিজ সন্তানাদির গায়ে লাগবে, এ ভয়ে তা উঠিয়ে নেয়।

৬৭২০। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হাজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা একশ ভাগ রহমত সৃষ্টি করে একভাগ সৃষ্টির মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন এবং নিরানব্বই ভাগ নিজের নিকট গোপন রেখেছেন।

৬৭২১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর একশ- ভাগ রহমত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহমত জ্বীন, ইনসান, চতুস্পদজন্তু ও কীট-পতঙ্গের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন। এ এক ভাগ রহমতের কারণেই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অপরের প্রতি অনুগ্রহ করে এবং এ এক ভাগ রহমতের ভিত্তিতেই বন্য পশু নিজ সন্তানের প্রতি অনুগ্রহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। মহান আল্লাহ তার একশ ভাগ রহমতের নিরানব্বই ভাগ রহমত নিজের নিকট রেখে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন স্বীয় বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করবেন।

৬৭২২। হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার একশ ভাগ রহমত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহমতের দ্বারাই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করে। বাকী নিরানব্বই ভাগ রহমত রাখা হয়েছে কিয়ামত দিবসের জন্য।

৬৭২৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রাঃ) মুতামিরের পিতা থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৭২৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালমান (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন আল্লাহ তাআলা একশ- রহমত সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকটি রহমত আকাশ ও পৃথিবীর দূরত্বের সমপরিমাণ। এ একশ- রহমত হতে একভাগ রহমত পৃথিবীর জন্য নির্ধারণ করেছেন। এর কারণেই মা সন্তানের প্রতি দয়া করে এবং বন্য পশু ও পাখীরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে। অবশেষে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা এ রহমত দ্বারা পূর্ণ করবেন।

৬৭২৫। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী এবং মুহাম্মদ ইবনু সাহল তায়মী (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা কয়েকজন কয়েদী নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলেন। কয়েদীদের মধ্যে থেকে একজন মহিলা কেবলই খোজাখুঁজি করছিল যে সে বন্দীদের মাঝে কোন শিশুকে পাওয়া মাত্র তাকে কোলে নিয়ে পেটের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাতো। এ দেখে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ স্ত্রীলোকটি কি তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে রাজি হবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর কসম! সে কখনো তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সন্তানের প্রতি এ স্ত্রীলোকটির দয়া থেকেও আল্লাহ অধিক দয়ালু।

৬৭২৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট যে পরিমাণ আযাব ও শাস্তি রয়েছে, যদি তা মুমিনগণ জানতো তবে কেউ তাঁর নিকট জান্নাত কামনা করতো না। অনুরুপভাবে আল্লাহর নিকট যে পরিমাণ রহমত আছে, কাফিররা যদি তা জানতো তবে কেউ তার জান্নাত হতে নিরাশ হতো না।

৬৭২৭। মুহাম্মাদ ইবনু মারযুক বিনতে মাহদী ইবনু মায়মূন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি যে জীবনে কখনো কোন পূণ্যের কাজ করেনি, মৃত্যু র সময় তার পরিবার পরিজনকে ডেকে বলল, মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে পুড়ে ভষ্মীভূত করে উহার অর্ধাংশ স্হলে এবং অর্ধাংশ পানিতে উড়িয়ে দিবে। কারণ আল্লাহর শপথ! আল্লাহ যদি আমাকে-ধরতে পারেন তবে তিনি আমাকে এমন শান্তি দিবেন যা দূনিয়ার অন্য কাউকে তিনি কখনো দেন নি। তারপর লোকটি যখন মারা গেল তখন তার পরিবারের লোকেরা সে যেরুপ নির্দেশ দিয়েছিল সেরুপ করল। তখন আল্লাহ তা’আলা স্হল ভাগকে নির্দেশ দিলে সে তার মধ্যস্হিত সবকিছু (ছাই) একত্রিত করে দিল। এরপর জলভাগকে নির্দেশ দিলেন। সেও তার মধ্যঙ্ক্ষি সব কিছু একত্রিত করে দিল। তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এমন করলে কেন? সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনার ভয়ে। আপনি তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

৬৭২৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার নিজের প্রতি যুলম করেছে। এরপর মৃত্যু মুখে পতিত হয়ে সে তার সন্তানদেরকে অসিয়্যাত করল এবং বলল, আমি মরে যাওয়ার পর তোমরা আমাকে আগুনে পূড়িয়ে ছাইকে উত্তমরুপে পিষবে। তারপর আমাকে সমুদ্রের মাঝে বায়ুতে উড়িয়ে দিবে। আল্লাহর কসম! আল্লাহ যদি আমাকে পান, তবে অবশ্যই তিনি আমাকে এমন শাস্তি দিবেন, যা তিনি আর কাউকে দেননি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সন্তানগণ তার সাথে অনুরুপ আচরণ করল। এরপর আল্লাহ তা’আলা মাটিকে বললেন, তুমি তার যে ছাই গ্রাস করেছ তা একত্রিত করে দাও। ফলে সে সোজা দাড়িয়ে গেল। এ সময় আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কাজ করার ব্যাপারে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে? উত্তরে সে বলল, আপনার ভয়ে। তারপর এ কথার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। অপর এক সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন এক স্ত্রীলোক বিড়ালের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল; কিন্তু তাকে কোন খাদ্য প্রদান করেনি এবং জমি থেকে কীট পতঙ্গ খাবার জন্য তাকে ছেড়েও দেয়নি। এমনিভাবে বিড়ালটি মরে যায়। যুহরী (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদীস দুটো এ জন্যই বয়ান করা হয়েছে, যেন মানুষ আমল বর্জন করে আল্লাহর উপর নির্ভর করে বসে না থাকে এবং যেন মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ না হয়ে যায়।

৬৭২৯। আবূ রাবী সুলায়মান, ইবনু দাঊদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে একথা বলতে শুনেছি যে, জনৈক বান্দা তার নিজের আত্নার প্রতি যুলুম করেছে। তারপর তিনি মাঁমারের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বিড়ালের ঘটনা মহিলা সম্পর্কিত হাদীসটির উল্লেখ এখানে নেই। তবে যুবায়দী (রহঃ)-এর হাদীসে আছে, এরপর আল্লাহ তাআলা -যারা তার শরীরের অংশ গ্রাস করেছে, তাদের বললেন, তার যে যে অংশ তোমরা গ্রাস করেছ, তা একত্রিত করে দাও।

৬৭৩০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পূর্ববতী যমানায় এক ব্যক্তি ছিল। আল্লাহ তাকে বহু সন্তান এবং প্রহব ধন-সম্পদ দিয়েছিলেন। সে তার সন্তানদের বলল, আমি যা তোমাদের নির্দেশ দিব হয়তো অবশ্যই তোমরা তা পূর্ণ করবে অথবা আমি অন্য কাউকে আমার সস্পটিদের উত্তরাধিকার করে দিব। আমি মরে গেলে আমাকে জ্বলন্ত অগ্নিতে দগ্ধ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার স্বরন হয় যে, সে এও বলেছে যে, তারপর পিষে আমাকে বাতাসে উড়িয়ে দিবে। কেননা আল্লাহর নিকট অগ্রে আমি কোন নেকী প্রেরণ করিনি। আল্লাহ তা’আলা আমাকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাশালী। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এ বিষয়ে সে তার সন্তানদের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করল। তারপর তারা তার পিতার ব্যাপারে সেরুপ করল। আমার প্রতিপালকের শপথ! তারপর আল্লাহ তা’আলা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কাজ করার ব্যাপারে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে? সে বলল, আপনার ভয়। এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে অনুর বেশি শাস্তি দেননি।

৬৭৩১। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) কাতাদা, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, শায়বান ইবনু আবদুর রহমান ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তারা সকলেই শুবার সনদের মত উক্ত হাদীসটি শুবার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে ‘রাশিহুল্লাহ’-এর স্হলে ‘রাগসিহি’-(আল্লাহ তাকে দান করেছেন) বর্ণিত আছে। এবং তায়মীর হাদীসের মধ্যে ‘লাম ইব” এর স্হলে ‘ইনদাআল্লাহুল খাইরা’-বর্ণিত আছে। কাতাদা (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, সে আল্লাহর নিকট কোন কিছু সঞ্চয় করেনি। শায়বানের হাদীসে আছে,’মা ইবতারু ইনদাল্লাহিল খাইর ’ এবং আবূ আওয়ানার হাদীসে আছে ‘মা ইমতারু ইনদাল্লাহিল খাইর’-তা ‘মীম’ এর সাথে।

৬৭৩২। আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক বান্দা গুনাহ করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে, গুনাহ ক্ষমা করেন এবং শুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। এ কথা বলার পর সে পূনরায় গুনাহ করল এবং বলল, হে আমার মনিব! আমার গুনাহ মাফ করে দাও। এরপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রতিপালক আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর সে আবারও গুনাহ করে বলল, হে আমার রব! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও। একথা শুনে আল্লাহ তাআলা আবারও বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে তার একজন মালিক আছে, যিনি বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং গুনাহের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর। আমি তোমার গুনাহ মাফে করে দিয়েছি। বর্ননাকারী আবদুল আ’লা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল কর” কথাটি আল্লাহ তাআলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না। আবূ আহমাদ (রহঃ) আব্দুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ মিসরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭৩৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে -এক ব্যক্তি গুনাহ করল- এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। এরপর রাবী হাম্মাদ ইবনু সালামার অনুরুপ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে “আযনাবা জানবান”-কথাটি তিনবার বর্ণিত আছে এবং তৃতীয়বারের পর রয়েছে- আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। , সূতরাং এখন সে যা ইচ্ছা তাই আমল করুক। ,

৬৭৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, রাতে আল্লাহ তাআলা তার স্বীয় করুণার হস্ত সম্প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার প্রতি ধাবিত হয়ে তার নিকট তাওবা করে। অনুরুপভাবে দিবসে তিনি তার স্বীয় হল সম্প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধী তার প্রতি ধাবিত হয় ও তার- নিকট তাওবা করে। এমনিভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত।

৬৭৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৭৩৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর তূলনায় আত্মু প্রশংসা অধিক পছন্দকারী কেউ নেই। এ কারণেই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন। অনুরুপভাবে আল্লাহর তূলনায় অধিক আত্ম মর্যাদাবোধ সম্পন্নও কোন সত্তা নেই। এ কারণেই প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সমস্ত অশ্লীলতাকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

৬৭৩৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর থেকে অধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কোন সত্তা নেই। এ কারণেই প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সমস্ত অশ্লীলতাকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন এবং আল্লাহ তা’আলা থেকে আত্নপ্রশংসা অধিক পছন্দকারীও আর কোন সত্তা নেই।

৬৭৩৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহর তুলনায় অধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কোন সত্তা নেই। এ জন্যই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্ত অশ্লীলতাকে তিনি হারাম করে দিয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ থেকে অধিক আত্নপ্রশংসা পছন্দকারীও কেউ নেই। এ কারণেই তিনি তাঁর নিজ সত্তার প্রশংসা করেছেন।

৬৭৩৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর তুলনায় অধিক আত্নপ্রশংসা পছন্দকারী কেউ নাই। এ জন্যই তিনি তার নিজ সত্তার প্রশংসা করেছেন। অনুরুপভাবে আল্লাহর তুলনায় অধিক আত্ন-মর্যাদাবোধ সস্পূর্ন কোন ব্যক্তি নেই। এ কারণেই তিনি সমস্ত অশ্নীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহর তুলনায় অধিক পরিমাণে ওযর গ্রহণকারীও আর কোন সত্তা নেই। এ কারণেই তিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং রাসুল প্রেরণ করেছেন।

৬৭৪০। আমর নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা স্বীয় আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মুমিনগণও নিজ আত্নমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্নমর্যাদায় আঘাত আসে যখন মুমিন আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে এগিয়ে যায়। ইয়াহইয়া (রহঃ) আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর থেকে অধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কোন সত্তা নেই।

৬৭৪১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাজ্জাজের বর্ণনার অনূরুপ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়ায়েতের মধ্যে আসমা (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ নেই।

৬৭৪২। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা থেকে অধিক আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন কেউ নেই।

৬৭৪৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিন মুমিনের জন্য আত্মমর্যাদা রক্ষা করে। আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন।

৬৭৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আলাআ (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেছেন।

৬৭৪৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, জনৈক ব্যক্তি এক স্ত্রীলোককে চুম্বন করে ফেলে। এরপর সে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে এ কথা উল্লেখ করল। রাবী বলেন, তখন নাযিল হলঃ সালাত কায়িম করবে দিবসের দুই প্রান্তে রজনীর কিছু অংশে। সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্ম মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে ইহা তাদের জন্য এক উপদেশ। “ বর্ণণীকারী বলেন, তারপর লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! এ হুকুম কি একমাত্র আমার জন্য? তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের যে কেউ আমল করবে তার জন্যও।

৬৭৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, সে এক মহিলাকে চুমু দিয়েছে বা হস্ত দ্বারা স্পর্শ করেছে অথবা তেমন কিছু করেছে। এ বলে সে এর কাফফারা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে জানতে চাইছে। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করলেন। পরবর্তী অংশ ইয়াযীদের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭৪৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুলায়মান তায়মী (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া ব্যতীত এক স্ত্রীলোকের সাথে কিছু আচরণ করল। তারপর সে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) -এর নিকট আসল। উমার (রাঃ) তার এ কাজটিকে শুরুতর অপরাধ মনে করলেন। এরপর সে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট আসল। তিনিও এ কাজটিকে গুরততর অপরাধ মনে করলেন। অবশেষে সে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট আসল। তারপর বর্ণনাকারী হাদীসটি ইয়াযীদ এবং মুতামির (রাঃ) -এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৭৪৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) !মদ্বীনার এক প্রান্তে এক স্ত্রীলোককে আমি উপভোগ করেছি। সহবাস ব্যতিরেকে তার সাথে আমি মিলিত হয়েছি। আমিই সেই ব্যক্তি। আপনি আমার সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা ফয়সালা দিন। তখন উমার (রাঃ) তাকে বললেনঃ আল্লাহ তোমার অপরাধ গোপন রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার নিজের ব্যাপারটি গোপন রাখতে! বর্ণনাকারী বলেন, কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আর কোন উত্তর দেননি। তারপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে তার পশ্চাতে পাঠালেন। সে তাকে ডেকে আনল। তিনি তার সামনে এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সালাত কায়িম করবে দিবসের দুই প্রান্তে এবং রজনীর কিছু অংশে। সৎকর্ম নিশ্চয়ই অসৎকর্মকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ হল তাদের জন্য এক উপদেশ। ” তখন লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নাবী! এ হুকুম কি তার জন্য খাস? উত্তরে তিনি বললেনঃ না, বরং সমস্ত মামুষের জন্যই এ হুকুম প্রযোজ্য।

৬৭৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আবূল আহওয়াসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে আছে, তখন মুআয (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! এ হুকুম কি শুধু তার জন্য, না আমাদের সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য? উত্তরে তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

৬৭৫০। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি হদ্দ- কায়িম হওয়ার যোগ্য কাজ করে ফেলেছি। সূতরাং আপনি আমার উপর তো- কায়িম করুন। রাবী বলেন, তখন সালাতের ওয়াক্ত হল এবং লোকটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে সালাত আদায় করল। সালাত পৃরা হয়ে গেলে লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ! আমার উপর হদ্দ- কায়েম হওয়ার মত অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আল কুরআনের বিধান অনুসারে আমার উপর শাস্তি কায়িম করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি আমাদের সঙ্গে সালাতে ছিলে? লোকটি বলল, হ্যা। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাকে ক্ষমা করা হয়েছে।

৬৭৫১। নাসর ইবনু আলী জাহযামী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন এবং আমরা তাঁর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! হদ্দ কায়িম হওয়ার অপরাধ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমার উপর তিনি কায়িম করুন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুপ করে রইলেন। সে পূনরায় বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)!আমার দ্বারা হদ্দ- কায়িম করার মত অপরাধ হয়ে গেছে। সূতরাং আপনি আমার উপর হদ্দ- কায়িম করুন। এবারও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুপ করে রইলেন। লোকটি তৃতীয়বার অনুরুপ বলল। এমতাবস্হায় সালাত শুরু হল। সালাত শেষ হয়ে গেলে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে এলেন। রাবী আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, লোকটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর অনুসরণ করতে লাগল। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকটিকে কি উত্তর দেন তা দেখার জন্য সালাত শেষে ফিরে এলে আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। এরপর প্রশ্নকারী লোকটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট গিয়ে আবার বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি আমার উপর ‘হদ্দ- হওয়ার মত অপরাধ করে ফেলেছি। সূতরাং আমার উপর কায়িম করুন। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তুমি কি উত্তমরুপে উযু করোনি? সে বলল, হ্যা, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি আমাদের সঙ্গে সালাতঁ আদায় করোনি? সে বলল, হা, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমার হদ্দ ক্ষমা করে দিয়েছেন, অথবা বললেনঃ তিনি তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।

৬৭৫২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিলো। সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করার পর জিজ্ঞাসা করল, এ পৃথিবীতে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি কে? তাকে এক রাহিবের সন্ধান দেওয়া হয়। সে তার কাছে এসে বলল, যে, সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা। করেছো এমতাবস্হায় তার জন্য কি তাওবা আছে? রাহিব বলল, না। তখন সে রাহিবকেও হত্যা করে ফেলল। অতএব সে রাহিবের হত্যা দ্বারা একশ পূর্ণ করল। তারপর সে আবার প্রশ্ন করল এ পৃথিবীতে সর্বাধিক জ্ঞানী কে? তখন তাকে এক আলিম ব্যক্তির সন্ধান দেওয়া হল। সে আলিমকে সে বলল যে, সে একশ- ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবা আছে? আলিম ব্যক্তি বললেন, হাঁ। কে অন্তরায় হতে পারে এ ব্যক্তি ও তাওবার মধ্যে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কতিপয় লোক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে মশশুল হয়ে যাও। নিজের দেশে আর কখনো ফিরে যেয়োনা। কেননা এ দেশটি বড় মন্দ। তারপর সে চলতে লাগল। এমন কি যখন সে অর্ধ পথে পৌছে তখন তার মৃত্যূ এল। এরপর রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতার মধ্যে তার সম্পর্কে ঝগড়া লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতারা বললেন, সে অন্তরের আবেগ নিয়ে আল্লাহর দিকে তাওবার জন্য ধাবিত হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, সে তো কখনো কোন নেক আমল করেনি। এ সময় মানুষের সুরতে এক ফিরিশতা এলেন। তারা তাকেতাদের মধ্যে মীমাংসাকারী নির্ধারণ করলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমরা উভয় স্থান মেপে নাও। উভয় স্থানের মধ্যে যে স্থানের দিকে সে অধিক নিকটবর্তীঃ হবে তাকে সে স্থানেরই গণ্য করা হবে। তারা মাপলেন। তখন তাঁরা তাকে উদ্দিষ্ট স্থানের অধিক নিকটবর্তী পেলেন। তখন রহমতের ফিরিশতা তাকে কবজ করে নিলেন। কাদাতা (রহঃ) বলেন, হাসান (রহঃ) বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এল, তখন সে বুকের উপর ভর দিয়ে কিছু এগিয়ে গেল।

৬৭৫৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আবূ বারী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এক ব্যক্তি নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করে জিজ্ঞাসা করে বেড়াতে লাগল, তার কি তাওবা আছে? অবশেষে সে এক পাদরীর নিকট এসে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। পাদরী বলল, তোমার জন্য তাওবা নেই। তখন সে পাদরীকে মেরে ফেলল। এরপর সে আবারো লোকদের জিজ্ঞাসা করতে লাগল। তারপর সে এক জনপদ থেকে অন্য জনপদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল যেখানে কিছু নেক লোকের বসবাস ছিলো। রাস্তার এক অংশে তাকে মৃত্যু পেয়ে বসল। তখন সে বুকের উপর ভর করে সামনের দিকে অগ্রসর হলে। তারপর সে মারা গেল। তখন রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতা তার সম্পর্কে বিবাদে লিপ্ত হল। তখন দেখা গেল যে, সে নেক লোকদের জনপদের দিকে এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী রয়েছে। তাই তাকে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হল।

৬৭৫৪। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) কাতাদা (রাঃ)-এর সূত্রে মু’আয ইবনু মূআযের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে যে, তখন আল্লাহ এ ভূমির প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যেন তা হয়ে যায় এবং ঐ ভূমির প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন যেন তা নিকটবর্তী হয়ে যায়।

৬৭৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলমানকে এক এক জন খ্রীষ্টান বা ইয়াহুদী দিয়ে বলবেন, এ হচ্ছে তোমার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিপণ।

৬৭৫৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখনই কোন মুসলমান মারা যায় তখন আল্লাহ তার স্থলে একজন ইয়াহুদী বা খ্রীষ্টান ব্যক্তিকে জাহান্নামে দাখিল করেন। তারপর উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ)-কে ঐ আল্লাহর কসম দিয়ে তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার পিতা কি সত্যই এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনে তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি কসম খেয়ে বললেন, হ্যা, নিশ্চয়ই। বর্ণনাকারী বলেন, “উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) তাকে কসম দিয়েছেন এবং আউন এর কথাটি অস্বীকার করেননি। ” এ কথাটি সাঈদ আমার নিকট বর্ণনা করেনি।

৬৭৫৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে এ সনদে আফফানের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে রয়েছে আউন উকবার পুত্র।

৬৭৫৮। মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কতিপয় মুসলমান পাহাড় সমান গুনাহ নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে আসবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। আর তা ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদের উপর দিয়ে দিবেন। বর্ণনাকারী হাদীসের শেষোক্ত কথাটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রাবী আবূ রাওহ (রহঃ) বলেন, কার পক্ষ থেকে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আবূ বুরদা (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার পিতা এ হাদীসটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সরাসরি শুনে তোমার নিকট বর্ননা করেছে কি! আমি বললাম, হাঁ।

৬৭৫৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু মুহরিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, নাজওয়া (আল্লাহ ও বান্দার গোপন কথা) সম্পর্কে আপনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে কিরুপ শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামত দিবসে মুমিনদের তাদের রবের নিকটবর্তী করা হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা তার উপর পর্দা ঢেলে দিবেন। এবং তার গুনাহ সম্পর্কে তার থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি তোমার গুনাহ জান কি? সে বলবে, আয় রব! আমি জানি। তারপর তিনি বলবেন, তোমার এ গুনাহ দুনিয়ায় আমি গোপন রেখেছিলাম। আজ তোমার এ গুনাহ গুলিকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারপর তার নেকীর আমলনামা তার নিকট দেওয়া হবে। এরপর কাফির ও মুনাফিক লোকদেরকে উপস্থিত সমস্ত মানুষের সামনে ডেকে ঘোষণা দেওয়া হবে, এরাই তারা যারা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করেছে।

৬৭৬০। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) উমাইয়ার আযাদকৃত গোলাম ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাবুকের অভিযানে রওয়ানা হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সিরিয়ার আরব খ্রীষ্টান ও রোমকরা। ইবনু শিহাব বলেন, আমাকে আবদুর রহমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রহঃ) বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু কাব বলেছেন, কাব ইবনু মালিক (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তানদের মধ্যে তিনি ছিলেন তার চালক। আমি কাব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার ইতিবৃত্ত নিজ মুখে বর্ণনা করতে শুনেছি। কাব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যত যুদ্ধ করেছেন তাবুক যুদ্ধ ব্যতীত এর সব কটির মধ্যেই আমি তাঁর সঙ্গে শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধে আমি তাঁর সাথে শরীক হতে পারিনি। আর যারা পশ্চাতে রয়েছে তাদের কাউকেও অভিযুক্ত করেননি। তখন তো রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলমানগণ শুধুমাত্র কুরায়শ কাফিলার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা মুসলমান ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে সমবেত করে দেন। আকাবার রাত্রে যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলেন, সে রাত্রে আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। বদর যুদ্ধ যদিও মানুষের নিকট সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, তথাপি আকাবা রজনীর পরিবর্তে বদর মুদ্ধে শরীক হওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় নয়। তাবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার ব্যাপারে আমার ঘটনা হচ্ছে এই যে, যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে এমনকি দুঁটি সাওয়ারী আমি আর কখনো একত্রে জমা করতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দুঁটি সাওয়ারীর অধিকারী ছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ অভিযানে যান প্রচন্ড গরমের কালে। সফর ছিল মরু প্রান্তরের। বহু সংখ্যক শক্রর সন্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলমানদের সামনে খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। যুদ্ধের গতিবিধি সম্পর্কেও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে জানিয়ে দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে মুসঁলমানের সংখ্যা ছিল অনেক এবং তাদের নাম লিপিবদ্ধ ছিল না কোন সংরক্ষণকারী কিতাবে অর্থাৎ রেজিষ্টারে। কাব বলেন, সুতরাং যে ব্যক্তি অনুরুপ থাকতে ইচ্ছা করে সে কমপক্ষে এ ধারণা করতে পারত যে, তার অনুপস্হিতি গোপন থাকবে, যতক্ষন না আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্পর্কে ওহী নাযিল হয়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট। অবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও মুসলমানগণ যুদ্বের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিলেন। আমিও তাঁদের সাথে যুদ্ধে শরীক হওয়ার জন্য প্রস্ততি গ্রহণের লক্ষ্যে বাড়ী থেকে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই ইচ্ছা করি। আমার ব্যাপার এভাবেই চলতে লাগল। এদিকে লোকজন বাস্তব প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যূষে রওয়ানা হলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিমগণও রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতই গ্রহণ করলামনা। পরদিন সকালে আমি বের হলাম। কিন্তু কোন প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই ফিরে এলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহেদ্বীনের দল বহু দুরে চলে যায়। তখন আমি ভাবতে লাগনাম যে, আমিও রওয়ানা হয়ে তাদের সাথে মিলিত হয়ে যাই। আফসোস! আমি যদি তাই করতাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে তা ছিলনা। পরবর্তী অবস্হা হল এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন রাস্তায় বের হতাম তখন এ ব্যাপার আমাকে ব্যথিত করত যে, আমি অনুসরনীয় কাউকে দেখতে পেতাম না, শুধু এমন লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তাআলা মাযের হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবুক পৌছার পূর্বে রাস্তায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবুক পৌছার পর লোকদের মাঝে বসা অবস্হায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, কাংব ইবনু মালিক কি করছে? তখন বনূসালমা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তার লালজোড়া এবং তার ডানবাঁয়ের প্রতি দৃষ্টি তাকে বিরত রেখেছে। তখন মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বললেন, তুমি বড় মন্দ কথা বলছ। ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহর কসম! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নীরব রইলেন। ইতোমধ্যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুভ্র বসন পরিহিত এক ব্যক্তিকে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বললেন, আবূ খায়সামাই হবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সাহাবী আবূ খায়সামা (রাঃ) আর তিনি সে ব্যক্তি যিনি এক সা খেজুর সাদাকা করেছিলেন যার উপর মুশরিকরা ভৎসনা করেছিল। কাব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাবুক থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌছার পর আমার উপর চিন্তার বোঝা নেমে এল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে আমি তার ক্রোধ থেকে বাচতে পারি। আর এ ব্যাপারে আমি বুদ্ধিমান আপন জনেরও সাহায্য নিতে লাগলাম। অবশেষে যখন আমাকে বলা হল যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পৌছেই তখন আমার অন্তর থেকে সমস্ত বাড়িল কল্পনা দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি অনুভব করলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তার কাছ থেকে অব্যাহতি পাবনা। তাই আমি তার কাছে সত্য বলারই সংকল্প করে নিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভোর বেলা সফর থেকে আগমন করলেনঃ তাঁর অভ্যাস ছিল, সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে তিনি মসজিদে আসতেন এবং তথায় দু-রাক’আত (সালাত) আদায় করে মানুষের সাথে সাক্ষাতের জন্য বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তারা এসে উযূ (ওজু/অজু/অযু)হাত পেশ করতে শুরু করল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সকল লোক সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের প্রকাশ্য উযূ (ওজু/অজু/অযু)হাত গ্রহণ করলেন এবং তাদের থেকে বায়াআত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আর তাদের অন্তভুক্ত অবস্থায় আল্লাহর উপর ন্যস্ত করলেন। অবশেষে আমি উপড়ী হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ ব্যক্তির হাসির ন্যায় মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি বললেন, এস। আমি এসে তাঁর সামনে বসলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে পশ্চাতে রেখেছিল? তুমি কি সাওয়ারী ক্রয় করনি! তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদার মানূষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখতেন যে- অবশ্যই আমি কোন ওযর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেঁচে যেতাম। কারণ আমাকে তর্কের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমার বিশ্বাস, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলে আপনাকে আমার প্রতি রাযী করে নেই, তবে অচিরেই আল্লাহ তা*আলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিবেন। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি কল্যাণজনক পরিণামের আশা রাখিি। আল্লাহর কসম! আমার কোন ওযর ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার (অভিযান) থেকে পিছনে থাকার সময়ের তুলনায় কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ও অধিক প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলাম না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই এ ব্যক্তি সত্য কথা বলেছে। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি চলে হলও, যতক্ষননা আল্লাহ তোমার সমন্ধে ফয়সালা দেন। তারপর আমি উঠে গেলাম। তখন বনূ সালমা গোত্রের কতিপয় লোক দৌড়িয়ে আমার কাছে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতোপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করতে কি তুমি অপারগ ছিলে? অতএব, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর ইস্তিগফারই তোমার গুনাহের জন্য যথেষ্ট হতো। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভৎসনা করতে লাগল যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট আবার গিয়ে আমার নিজের উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মত আর কারো এমন অবস্হা হয়েছে কি? তারা বলল, হাঁ, আরো দুই জন তোমার মত করেছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অনুরুপ বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলল, তারা হলেন, মুররা ইবনু রাবী আ আমিরী এবং সুহাল ইবনু উমায়্যা ওয়াকিফী (রাঃ)। কাব বলেন, তারা আমার নিকট এমন দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, যারা ছিলেন নেককার, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী। ঐরা দুইজনই ছিলেন অনুসরণযোগ্য। কাব (রাঃ) বলেন, যখন তারা ঐ দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করল, তখন আমি চলে গেলাম। এদিকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যারা যুদ্বে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলমানদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করল অথবা বলেছেনঃ, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি যমীনও যেন পরিবর্তিত হয়ে গেল, (মনে হল) যে তুমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত্র কাটানাম। আর আমার দুই সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তারা নিজ নিজ ঘরে চুপচাপ বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মধ্যে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, সালাতে শরীক হতাম এবং বাজারেও ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কোন কথা বলতো না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত আদায়ের পর নিজ স্থানে বসা ছিলেন, এমতাবস্হায় আমি তার নিকট এলাম, তাকে সালাম করলাম এবং মনে মনে ভাবলাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তার ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তার দিকে তাকালাম। যখন আমি সালাতে মশগুল হতাম তখন তিনি আমার প্রতি নযর দেন। কিস্তু আমি যখন তার দিকে তাকাই তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমার প্রতি মুসলমানদের এ কঠোর আচরণ যখন হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবূ কাতাদা (রাঃ)-এর বাগানের প্রাচীরের উপর উঠলম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি। উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন উত্তর দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ কাতাদা! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ভালবাসি তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবারো আমি তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দুনয়ন দিয়ে অশ্রু পড়তে লাগল। অবশেষে পিছন ফিরে আমি আবার দেয়ালের উপর চড়লাম। তারপর আমি কোন একদিন মদ্বীনার বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম- এ সময় মদ্বীনার বাজারে শাক-সব্জি বিক্রির উদ্দেশ্যে আগত সিরিয়ার ফৃষকদের মধ্য থেকে একজন বলতে লাগল, আমাকে কা”ব ইবনু মালিকের ঠিকানা বলতে পারে এমন কোন ব্যক্তি আছে কি? লোকেরা ইশারায় আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার নিকট আসল এবং গাসশান সমরাটের পক্ষ হতে আমাকে একটি পত্র দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পাঠ করলাম। এতে লেখা ছিল, আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সঙ্গী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি যুলূম করয়ে অথচ আল্লাহ পাক তোমাকে নীচু ঘরে জন্য দেননি এবং ধ্বংসাত্নক স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের নিকট চলে এসো। আমরা তোমার সহযোগিতা করবো। ” এ পত্র পাঠ মাত্র আমি বললাম এও আরেক ধরনের পরীক্ষা। তখন এ পত্রটি নিয়ে আমি উনানের নিকট গেলাম এবং উহা আগুনে জ্বালিয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু এদিকে কোন ওহী আসছে না। এমতাবস্হায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এক বার্তাবাহক আমার নিকট এসে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে তোমার স্ত্রী হতে দূর হয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বললেন, না তালাক দিতে হবে না। বরং তুমি তার থেকে পৃথক হয়ে যাও এবং তার সাথে সহবাস করো না। তিনি বলেন, আমার অন্য সঙ্গীদের নিকটও অনুরুপ বার্তা প্রেরণ করা হল। কা”ব (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কোন ফয়সালা না করেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করবে। কাব (রাঃ) বলেন, তারপর হিলাল ইবনু উমায়্যা (রাঃ)-এর ন্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -যার নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! হিলাল ইবনু উমায়্যা একজন বৃদ্ধ-বেকার ব্যক্তি। তার কোন খাদিম নেই। যদি আমি তার খিদমত করি, আপনি কি তা অপছন্দ করেন? তিনি বললেন, না, আমি খিদমতকে অপছন্দ করিনা। তবে সে তোমার সাথে সহবাস করতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল (রাঃ)-এর ন্ত্রী বললেন, আল্লাহর কসম! কোন কাজের ব্যাপারেই তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি সে কেঁদেই দিনাতিপাত করছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ কেউ বললেন, আচ্ছা তুমিও যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনু উমায়্যার ন্ত্রীকে তার স্বামীর খিদমতের অনুমতি দিয়েছেন। কাব বলেন, আমি বললাম, আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুষাতি প্রার্থনা করলে না জানি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন থেকে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়। কাব বলেন, পঞ্চাশতম রাতের ফজরের সালাত আমি আমারর গৃহের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্হায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ আমার জান আমার মধ্যে। “গুটিয়ে গেছে এবং প্রশস্ত পৃথিবী আমার কাছে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর আওয়াজ শুনলাম, সালা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উচ্চস্বরে বলছেন, সে কাব ইবনু মালিক! তোমার জন্য সুসংবাদ। কাব বলেন, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম এবং আমি বুঝতে পারনাম যে, প্রশস্ততা এসে গেছে। কাব বলেন, এদিকে ফজরের সালাতের পর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন। তখনই লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ছুটে গেলেন এবং আমার সাথীদ্বয়কে খুশখবরী পৌছানৌর জন্য কয়েকজন লোক তাদের নিকট গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর সাওয়ার হয়ে রওনা হলেন এবং আসলাম গোত্রের আর এক ব্যক্তিও রওনা হলেন। আর তিনি পাহাড়ের উপর আরোহণ করে ঘোষণা দিলেন। আর অশ্বের চেয়েও আওয়াজের গতি আরোদ্রুত। তারপর যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম তিনি আমার নিকট আসলে আমি আমার পরিধেয় বস্ত্র দু-টো সুসংবাদের পূরক্সার স্বরুপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন ঐ দু-টো কাপড় ব্যতীত আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দু-টো কাপড় ধার নিয়ে পরিধান করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আমি রওনা দিলাম। আমার তাওবা কবুলের মূবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ-করতে লাগল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর ক্ষমা তোমার জন্য মূবারক হোক। এমতাবস্হায় আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখলাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তালহা ইবনু উবায়দূল্লাহ (রাঃ) দাড়ালেন এবং দৌড়ে এসে আমার সাথে মূসাফাহা করলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ (আমাকে দেখে) দাঁড়াননি। রাবী বলেন, কাব তালহার এ সদাচরণের কথা ভুলেননি। কাব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তারপর আমি যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে সালাম করলাম তখন তাঁর চেহারা খূশীতে চমকাতে ছিলো। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্য এ মুবারক দিনটির সুসংবাদ। কাঁব (রাঃ) বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি আপনার পক্ষ থেকে, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! না মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই তিনি বললেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন খূশী হতেন, তখন তাঁর চেহারা মুনারক এমনভাবে প্রদীপ্ত হতো যেন তা এক খণ্ড চাঁদ। কাব (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর চেহারা দেখেই তা বুঝতে পারতাম। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর সামনে বসলাম তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমার তাওবার শুকরিয়া হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদাকা স্বরুপ দান করে আমার সমস্ত মাল থেকে মুক্ত হতে চাই। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিছু মাল তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। এই তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, তাহলে আমি খায়বরে প্রাপ্ত অংশটুকু রেখে দিব। কাব (রাঃ) বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সত্য কথাই আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবিত থাকি আমি সত্য ছাড়া বলবনা। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে সে সত্য কথা বলার পর, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন; আল্লাহ তায়াআলা আর কোন মুসলিম ব্যক্তির প্রতি এরুপ করেছেন বলে আমি জানিনা। আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি ইচ্ছাকৃতভাবে আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার আশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তাঁআলা আমাকে মিথ্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। কাব (রাঃ) বলেন, আমার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেছিলেনঃ “আল্লাহ অনুগ্রহ পরায়ণ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুগমন করেছিলো সংকটকালে, এমনকি যখন তাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিলো। পরে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়া-পরম দয়ালু এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্হগিত রাখা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তূত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য উহা সংকুচিত হয়েছিলো এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিলো এবং তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্হল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহ পরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবা করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবাঃ ১১৭-১১৯) কাব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট সেদিন সত্য কথা বলার কারণে আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, অনুরুপ অনুগ্রহ ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি আর কখনো করেননি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে অবশ্যই আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম, যেমন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মিথ্যাবাদীগণ। ওহী অবতরণ কালে আল্লাহ মিথ্যা বাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেনঃ তোমরা তাদের নিকট ফিরে এলে তারা আল্লাহর শপথ করবে, যেন তোমরা তাদের উপেক্ষা করা সুতরাং তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরুপ জাহান্নাম তাদের আবাস স্হল। তারা তোমাদের নিকট হলফ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক (সত্যত্যাগী) লোকদের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (সূরা তাওবাঃ ৯৫ ও ৯৬) কা ব (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট শপথ করার পর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বায়আত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের বিষয়টিকে বিলম্বিত করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে ফয়সালা আসা পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের বিষয়টিকে স্হগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তায়াআলা বলেছেনঃ আর তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্হগিত রাখা হয়েছিল। “যুদ্ধ হতে আমাদের পেছনে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তূক “আমাদের বিষয়টিকে স্হগিত রাখা। ” ঐ সমস্ত লোকদের তুলনায় যারা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সান্মুখে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিলো অতঃপর তিনি তা কবুল করেছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর সুত্রে যুহরী (রহঃ)-এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৭৬১। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাবার পর কাব (রাঃ)-কে টেনে নিতেন, বলেছেন, তাবুক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে শরীক না হয়ে গৃহে বসে থাকার সময় কাবে ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি একথা বলতে শুনেছি। অতঃপর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে দিকে যুদ্ধ করার জন্য যেতেন সাধারণতঃ তিনি আলোচনায় ঐ জায়গার কথা উল্লেখ না করে অন্য জায়গার কথা উল্লেখ করতেন। তবে এ যুদ্ধের কথা পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছিলেন। যুহরীর ভ্রাতুস্পূত্রের এ হাদীসের মধ্যে আবূ খায়সামার কথা এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা উল্লেখ নেই।

৬৭৬২। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। কাব (রাঃ) চক্ষু রোগে আকান্ত হবার পর উবায়দুল্লাহ তাঁকে টেনে নিয়ে যেতেন। উবায়দুল্লাহ (রাঃ) তার কাওমের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহাবীদের হাদীস অধিক সংরক্ষণকারী ছিলেন। তিনি বলেন যে, তিন ব্যক্তির তাওবা আল্লাহ করুল করেছিলেন, আমার পিতা কাব ইবনু মালিক (রাঃ) ঐ তিন ব্যক্তির একজন ছিলেন। আমি তাকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যত যুদ্ধ করেছেন এর মধ্যে তিনি দুটি ব্যতীত আর কোন যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে পেছনে থাকেননি। তারপর তিনি আগের অনুরুপ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সৈন্য সামন্ত নিয়ে এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংখ্যা দশ হাজারের চেয়েও অধিক ছিল। কোন তালিকায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা সম্ভব ছিল না।

৬৭৬৩। হিব্বান ইবনু মূসা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী, মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসায়্যাব, উরওয়া ইবনু যুবায়র, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস এবং উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উকবা ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা সকলেই আয়িশা (রাঃ)-এর ঐ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, অপবাদ রটনাকারীরা তাঁর ব্যাপারে যে অপবাদ রটনা করে বলোছিল। তারপর রটানো অপবাদ থেকে আল্লাহ তাকে নির্দোষ ঘোষণা করলেন। বর্ণনাকারী যুহরী (রহঃ) বলেন, তারা সকলেই আমার নিকট হাদীসের এক এক অংশ বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ অন্যের তুলনায় উক্ত হাদীসের কঠোর হাফিয ছিলেন এবং তা উত্তমরুপে বর্ণনা করতে সক্ষম ছিলেন। তারা আমার নিকট যা বর্ণনা করেছেন, তাদের প্রত্যেকের বর্ণনা আমি যথাযথভাবে মুখস্হ করে রেখেছি। একের হাদীস অন্যের হাদীসকে সত্যায়িত করে। তারা সকলেই আলোচনা করেছেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সহধর্মিনা আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের মাঝে লটারী দিতেন। যার নাম আসত তাকেই তিনি তাঁর সঙ্গে সফরে নিতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এক যুদ্ধ-সফরের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লটারী দিলেন এবং এতে আমার নাম উঠল। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে সে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। পর্দার হুকুম নাযিল হবার পর এ যূদ্ধে আমি অংশ গ্রহন করেছিলাম। সাওয়ারী অবস্হায় আমি হাওদার ভিতরে থাকতাম এবং অবতরণ কালেও হাওদার ভিতর থাকতাম। পরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুদ্ধ থেকে অব্যাহতির পর প্রত্যাবর্তন করে মদ্বীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌছার পর এক রাত্রে তিনি রওয়ানা হবার নির্দেশ দিলেন। লোকজন যখন রওয়ানা হবার ব্যাপারে ঘোষণা দিল, তখন আমি পথ চলতে লাগলাম; এমনকি আমি সৈন্যদেরকে ছাড়িয়ে চলে গেলাম। এরপর আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন (প্রস্রাব পায়খানা) সেরে সাওয়ারীর নিকট এলাম এবং স্বীয় বুকে হাত দিয়ে দেখলাম, তিনি পুতির তৈরী আমার হারটি হারিয়ে গিয়েছে। তাই পূর্বস্থানে ফিরে গিয়ে আমি আমার হারটি তালাশ করলাম। এতে আমার বিলম্ব হয়ে গেল। এদিকে হাওদা বহনকারী লোকজন এসে হাওদা উঠিয়ে আমায় বহনকারী উটের উপর রেখে দিল। তারা মনে করেছিল আমি হাওদার ভিতরেই আছি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখনকার মহিলারা হালকা-পাতলা গড়নেরই হতো। না অধিক ভারী, না অধিক মোটা। কারণ তারা কম খাবার খেত। তাই উত্তোলনকালে হাওদার ওযন তাদের নিকট সাধারণ অবস্হা থেকে ব্যতিক্রম মনে । অধিকন্তু তখন আমি অল্প বয়স্কা ছিলাম। অবশেষে লোকেরা উট দাঁড় করিয়ে পথ চলতে আরম্ব করে দিল। সৈন্যদের রওয়ানা হয়ে যাবার পর আমি আমার হার পেলাম। তারপর আমি পূর্ববর্তী স্থানে ফিরে এসে দেখলাম, তথায় কোন জন-মানুষের আওয়াজ নেই আর সাড়া দেওয়ার মত কোন ব্যক্তিও তথায় নেই। তখন আমি ইচ্ছা করলাম, আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখনেই বসে থাকব এবং আমি ভাবলাম, লোকেরা যখন খুঁজে আমাকে পাবে না তখন অবশ্যই তারা আমার সন্ধানে আমার নিকট ফিরে আসবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার জায়গায়, উপবিষ্ট অবস্হায় আমার ঘূম এল আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফওয়ান ইবনু মুয়াত্তাল আবূ সুলামী -আয যাকওয়ানী নামক এক ব্যক্তি ছিল। আরামের উদ্দেশ্যে সৈন্যদের পেছনে শেষ রাত্রে সে আগের জায়গায়ই রয়ে গিয়েছিল। পরে সে রওয়ানা হয়ে প্রত্যূষে আমার স্থানে পৌছল। দূর থেকে সে একটি মানব দেহ দেখতে পেয়ে আমার নিকট এছেন এবং আমাকে দেখে সে চিনে ফেলল। কেননা পর্দার হুকুম নাযিল হওযার পূর্বে সে আমাকে দেখেছিল। আমাকে চিনে সে “ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিঊন” পড়লে তাঁর ইন্না লিল্লাহ এর আওয়াজে আমার ঘূম ভেঙ্গে গেল। তৎক্ষনাৎ আমি আমার চ্যদর দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে নিলাম। আল্লাহর কসম! সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি এবং “ইন্না লিল্লাহ” পাঠ ছাড়া তার কোন কথাই আমি শুনিনি। তারপর সে তার উট বসিয়ে স্বীয় হস্ত বিছিয়ে দিলে আমি তার উটের পৃষ্ঠে উঠলাম। আর সে পায়ে হেঁটে আমাকে সহ উট হাকিয়ে চলল। যেতে যেতে আমরা সৈন্য দলের নিকট গিয়ে পৌছলাম। তখন তারা দ্বিপ্রহরের প্রচণ্ড রোদের মাঝে সাওয়ারী থেকে অবতরণ করে ভূমিতে অবস্হান করছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার বিষয়ে যারা ধ্বংস হবার তারা ধ্বংস হয়ে গেল। এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সাহল। অবশেষে আমরা মদ্বীনায় পৌছলাম। মদ্বীনায় পৌছার পর এক মাস পর্যন্ত আমি অসুস্হ ছিলাম। এদিকে মদ্বীনার লোকজন অপবাদ রটনাকারীদের কথা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে লাগল। এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতে পারিনি। তবে এ রুগ্ন অবস্হায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর পক্ষ থেকে পূর্বের ন্যায় স্নেহ না পাওয়ার ফলে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল-। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গৃহে প্রবেশ করে কেবল সালাম করে বলতেন, এ মহিলা কেমন আছে? এ আচরণ আমাকে সন্দিহান করে তুলল। আমি সে (মন্দ) বিষয়টি সমন্ধে জানতাম না। তারপর রোগ মুক্ত হবার পর আমি বের হলাম। আমার সাথে মিসতাহ এর আলাও মানাসি প্রান্তরের দিকে। সেটি ছিল আমাদের শৌচাগার। আমরা রাত্রে বের হতাম এবং রাত্রেই চলে আসতাম। এ হল আমাদের ঘরের কাছে শৌচাগর নির্মাণের পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনা। তখন আগের দিনের আরব লোকদের মত ময়দানে গিয়ে আমরা শৌচকার্য সারতাম। আর আমরা গৃহকোণে শৌচাগার নির্মাণ করা অপছন্দ করতাম। একদা আমি এবং মিসতাহ-এর আমী যেতে লাগলাম। সে ছিল আবূ রুহম ইবনু মুত্তালিব ইবনু আবদ মান্নাফের কন্যা এবং তার মা ছিলেন আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খালা সাখর ইবনু আমির এর কন্যা। তার সন্তানের নাম ছিল মিসতাহ ইবনু উসাসা ইবনু আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব। মোটকথা, আমি ও বিনতি আবূ রহম (মিসতাহ-এর আম্মা।) নিজ নিজ শৌচকার্য সেরে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হলাম। এমন সময় মিসতাহ-এর আম্মা নিজ চাঁদরে পেঁচ খেয়ে হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর সে বলে উঠে মিসতাহ ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, তুমি অন্যায় কথা বলেছ। তুমি কি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে মন্দ বকছ? সে বলল, হে অবলা নারী! মিসতাহ কি বলেছে তুমি কি শোননি? আমি বললাম, সে কি বলেছে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর সে অপবাদ রটনাকারীরা কি বলেছে, সে সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিল। এতে আমার রোগ কয়েক গুন বেড়ে গেল। আমি যখন বাড়ীতে ফিরে এলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার গৃহে প্রবেশ করে আমাকে সালাম করলেন এবং বললেন, এই মহিলা কেমন আছে? তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মায়ের বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি আমার বাবা-মায়ের বাড়ী গিয়ে এ বিষয়টির অনুসন্ধান করার ইচ্ছা করেছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার মাতা-পিতার নিকট চলে এলাম। তারপর আমি আমার আম্মাকে বললাম, আব্বা জান! লোকেরা কী কথা বলছে? তিনি বললেন, মা! এদিকে কান দিয়োনা এবং একে খারাপ মনে করো না। আল্লাহর কসম! কারো যদি কোন সুন্দরী ন্ত্রী থাকে ও সে তাকে ভালবাসে আর ঐ মহিলার কোন সতীনও থাকে তবে সতীনরা তার দোষচর্চা করবেনা এরুপ খুব কমই হয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমি বললাম, সূবহানাল্লাহ! লোকেরা এ কথা রটাতে আরম্ভ করেছে? তারপর কেঁদে কেঁদে আমি সারা রাত্র কাটালাম। এমনকি ভোরেও আর অশ্রু বন্ধ হলো না। আমি ঘূমোতে পারিনি। সকালেও আমি কাঁদছিলাম। এদিকে আমাকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এবং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-কে ডাকলেন। তখন ওয়াহী স্হগিত ছিল। তিনি বলেন, উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর বিবীদের সতীত্ব এবং তাদের সাথে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর ভালবাসা সম্পর্কে যা জানতেন সে দিকেই তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে ইঙ্গিত দিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আয়িশা আপনার স্ত্রী, ভাল ব্যতীত তাঁর সমন্ধে কোন কথাই আমাদের জানা নেই। আর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তো আপনার উপর কোন সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। সর্বোপরি আয়িশা (রাঃ) ছাড়াও বহু ন্ত্রীলোক আছে। আপনি যদি দাসী (বারীরা) কে জিজ্ঞাসা করেন তবে সে সত্য বলে দিবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বারীরা (রাঃ) কে ডেকে বললেন, হে বারীরা! সন্দেহমূলক কোন কাজে আয়িশাকে তুমি কখনো দেখেছ কি? বারীরা (রাঃ) তাঁকে বললেন, ঐ সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য পয়গাম্বর হিসাবে প্রেরণ করেছেন, আমি যদি তার মাঝে কোন কিছু দেখতাম তবে অবশ্যই এর দোষ আমি বর্ণনা করতাম। তবে সে একজন অল্প বয়স্কা মেয়ে। পরিবারের জন্য আটার খামীর রেখেই সে ঘুমিয়ে পড়তো আর বকরী এসে তা খেয়ে ফেলতো। এ দোষ ব্যতীত অধিক কোন দোষ আয়িশার মধ্যে আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বরে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল থেকে প্রতিশোধ কামনা করলেন। তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আমার পরিবার সম্পর্কে যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে কষ্টদায়ক বাক্যের সংবাদ আমার নিকট পৌছেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত কোন ব্যক্তি এখানে আছে কি? আমি তো আমার পরিবার সম্পর্কে ভাল ব্যতীত অন্য কোন কথা জানিনা এবং যে ব্যক্তি সম্পর্কে তারা অপবাদ রটনা করছে তাকেও আমি নেক্বকার বলেই জানি। সে তো আমাকে ব্যতীত আমার গৃহে কখনো প্রবেশ করতো না। এ কথা শুনে মা’ন ইবনু মু’আয আনসারী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি আপনার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব। অপবাদ রটনাকারী ব্যক্তি যদি আউস গোত্রের হয় তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেব। আর যদি সে আমাদের ভ্রাতা খাযরাজ গোত্রের হয় তবে আপনি আমাদের নির্দেশ দিন। আমরা আপনার নির্দেশ পালন করব। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন খাযরাজ সর্দার সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) দাঁড়ালেন। তিনি একজন নেককার লোক ছিলেন। তবে তখন বংশীয় অহমিকা তাকে ক্রোধে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। তাই তিনি সা’দ ইবনু মু’আয কে বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি তাকে হত্যা করো না। তুমি তাকে হত্যা করতে পারবেনা। একথা শুনে সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) দাড়িয়ে মা’ন ইবনু উবাদা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। অবশ্যই তুমি মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষে কথা বলছো। এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্রের লোকেরা পরস্পর উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প করে বসলো। অথচ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখনও তাদের সামনে মিম্বরে দাঁড়াণৌ অবস্হায় ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে থামিয়ে শান্ত করলেন। তারা চুপ হলো এবং তিনি নিজেও আর কোন কথা বললেন না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, সেদিন আমি সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। অবিরত ধারায় আমার অশ্রুপাত হচ্ছিল। রাত্রে একটুও আমার ঘূম আসল না। অতঃপর রাতেও আমি কেঁদে কাটালাম। এরাতেও অবিরত আমার অশ্রুপাত হল এবং একটুকুও ঘূমাতে পারলাম না। এ দেখে আমার আব্বা-আম্মা মনে করছিলেন যে, কান্নায় আমার হৃদপিন্ড বিদীর্ন হয়ে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম, আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। এমতাবস্হায় একজন আনসার স্ত্রীলোক আমার নিকট আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে এসে বসে কাঁদতে লাগল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের যখন এ অবস্হা এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট প্রবেশ করলেন এবং আমাদেরকে সালাম করে বসলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অথচ আমার সমন্ধে যা বলাবলি হচ্ছে তারপর থেকে তিনি আমার কাছে বসেননি। এভাবে এক মাস চলে গেল। আমার বিষয়ে তার নিকট কোন ওহী এল না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে তাশাহুদ পাঠ করলেন। তারপর বললেন, যা হোক হে আয়িশা! তোমার সম্পর্কে আমার নিকট এমন এমন সংবাদ পৌছেছে। যদি তুমি এ ব্যাপারে নিস্পাপ এবং পবিত্র হও তবে আল্লাহ তাআলা তোমার পবিত্রতার ব্যাপারে ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন গুনাহ হয়ে থাকে তবে তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তাওবা করলে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তার কথা শেষ করলেন, তখন আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি এরপর আর এক ফোটা অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। এরপর আমি আমার পিতাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা বললেন, আমার পক্ষ থেকে তার জবাব দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কি জবাব দিব, আমি তা জানি না। তারপর আমি আমার আম্মাকে বললাম, আমার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে জবাব দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে কি জবাব দিব, আমি তা জানি না। আমি বললাম, তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআন শরীফও বেশী পড়তে পারতাম না। এ অবস্হা দেখে আমিই তখন বললাম, আল্লাহর কসম! আমি জানি, আপনারা এ অপবাদের কথা শুনেছেন, মনে তা গেঁখে গিয়েছে এবং আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। সুতরাং এখন যদি আমি বলি, আমি নিস্কুলুষ তবে এ বিষয়ে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি স্বীকার করি, যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি নিস্পাপ, তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম! আমার ও আপনাদের জন্য (নাবী) ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিতার কথার উদাহরণ ব্যতীত অন্য কোন উদাহরণ আমি খুজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন, “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছো সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার আশ্রয়স্হল। ” এ কথা বলে আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম এবং বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো ঐ মুহুর্তেও জানেন যে, আমি অবশ্যই নিষ্পাপ এবং অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিবেন। তবে আল্লাহর কসম! আমি ধারণা করলাম যে, আল্লাহ আমার এ বিষয়ে ওয়াহী নাযিল করবেন, যা পঠিত হবে। কেননা পঠিত হবার মত আল্লাহ কর্তৃক আমার সমন্ধে কোন আয়াত নাযিল করা থেকে আমার অবস্হা অধিক নিম্নমানের। তবে আমি আশা করেছিলাম যে, স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এমন কোন বিষয় দেখাণৌ হবে যার দ্বারা আল্লাহ তা’আলা আমার পবিত্রতা জানিয়ে দিবেন। আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখনো তাঁর স্হান ছেড়ে উঠেননি এবং বাড়ীর লোকও কেউ বাইরে যায়নি। এ সময় আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাবীর উপর ওয়াহী নাযিল করেন। ওয়াহী নাযিলের সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর উপর যে কষ্টকর অবস্হা দেখা দিত সে অবস্হা দেখা দিলো। এমনকি তার প্রতি নাযিলকৃত বানার ওযনের কারণে প্রচণ্ড শীতের দিনেও তার দেহ থেকে মূক্তার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়তো। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এ কষ্টকর অবস্হা চলে গেলে তিনি হাসতে লাগলেন এবং প্রথমে যে কথাটি বললেন তা হলোঃ হে আয়িশা! খোশ খবরী গ্রহণ কর। আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। এ কথা শুনে আমার আম্মী আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আমি তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো না এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো প্রশংসা করবো না। তিনই আমার পবিত্রতা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা আমার পবিত্রতা সন্মন্ধে দশটি আয়াত (সূরাঃ ১১-২১) নাযিল করেছেন। ‘যারা অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল একে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করোনা; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ” আয়িশা (রাঃ) বলেন, আত্নীয় বন্ধন ও দারিদ্র্যের কারণে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) মিসতাহকে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। কিন্ত্বু আয়িশা সম্পর্কে সে যা বলেছিল সে কারণে আবূ বকর (রাঃ) কসম করে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক সাহায্য দিবনা। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা দান করবেনা আত্নীয় স্বজনকে । তোমরা কি চাওনা যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করেন–, পর্যন্ত। হাব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেছেন, আল কুরআনের মাঝে এ আয়াত বড়ই আশাব্যঞ্জক। তারপর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই পছন্দ করি যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ (রাঃ)-এর জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন তা পূনরায় ব্যয় করতে আরম্ভ করলেন। আর বললেন, তাকে আমি এ অর্থ দেওয়া কখনো বন্ধ করবো না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সহধর্মিনা যয়নাব বিনত জাহশ (রহঃ)-কে আমার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি যয়নাবকে বলেছিলেন, তুমি আয়িশা সম্পর্কে কি জানো বা দেখেছো? উত্তরে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি আমার কান ও চোখকে রক্ষা করেছি। আল্লাহর কসম! তাঁর সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া কিছুই জানিনা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সহধর্মিনাদের মধ্যে তিনি সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ ভীতির দ্বারা আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। অথচ তার বোন হামানা বিনত জাহশ তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে বিবাদ-বিতণ্ডা করে, আর এভাবে সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে যায়। রাবী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, ঐ লোকদের কাছ থেকে আমার নিকট যা পৌছেছে তা এই হাদীস। তবে রাবী ইউনূসের হাদীসের মধ্যে রয়েছে, গোত্রীয় অহমিকা তাকে উত্তেজিত করে। ,

৬৭৬৪। আবূ রাবী আল আতাকী (রহঃ) অন্য সনদে হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রাঃ) যুহরী (রহঃ) হতে ইউনূস এবং মাহমারের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী হুলায়জের হাদীসে আছে, গোত্রীয় অহমিকা তাকে মূর্খতা সূলভ আচরণ করতে উৎসাহিত করেছিল। মামার তাঁর বর্ণনায় যেমন বলেছেন। আর সালিহের হাদীসের মধ্যে ইউনূসের বর্ণনার মত এতে রয়েছে অর্থাৎ গোত্রী অহমিকা তাকে উসকিয়ে দিল। , সালিহের হাদীসে এও রয়েছে যে, উরওয়া (রহঃ) বলেন, যুহরী (রাঃ) হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গাল-মন্দ বলার বিষয়টিকে অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখতেন। তিনি বলতেন, হাসসান তো নিম্নোক্ত কবিতা আবৃতি করেছেন, “আমার পিতা-মাতা, আমার ইজ্জত সব কিছুই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইজ্জত-সম্মানের জন্য রক্ষা কবচ। ” এতে অতিরিক্ত এও রয়েছে যে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হয়েছে তিনি বলতেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আমি কখনো কোন মহিলার-আবরণ উন্মোচন করিনি। অতঃপর তিনি আল্লাহর, পথে শহীদ হন।

৬৭৬৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনুল আঁলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার ব্যাপারে লোকেরা যখন কুৎসা রটাতে আরম্ভ করল, যা আমি জানিনা, তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাষণ দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে তাশাহহুদ পাঠ করলেন এবং আল্লাহর শানের উপযুক্ত শব্দের মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন অতঃপর যারা আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ রটাচ্ছে তাদের সমন্ধে তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর কসম! আমি আমার ন্ত্রী সমন্ধে মন্দ কোন কিছু জানিনা এবং তারা যার ব্যাপারে অপবাদ রটাচ্ছে তাঁর সম্বন্ধেও খারাপ কিছু আমি জানিনা। আমার অনুপস্হিতিতে সে আমার গৃহে কখনো প্রবেশ করেনি এবং আমি যখন সফরে বের হয়েছি সেও তখন আমার সাথে সফরে বের হয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ কাহিনী সহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার গৃহে প্রবেশ করে আমার বাঁদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তখন সে বললো, আল্লাহর কসম! আয়িশা (রাঃ) এর মধ্যে আমি কোন দোষ দেখিনি। তবে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন, আর বকরী এসে মথিত আটা খেয়ে ফেলতো। অথবা বললেন, খামীর খেয়ে ফেলতো। বর্ণনাকারী হিশাম এতে সন্দেহ করেছেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কোন সাহাবী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, তুমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে সত্য কথা বল। এমনকি তাঁরা তার সামনে ঘটনা তুলে ধরলেন। তখন বারীরা বললেন, সূবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! স্বর্ণকার খাটি স্বর্ণের টুকরা সমন্ধে যেমন জানে আমিও আয়িশা সম্পর্কে সেরুপ জানি। যে ব্যক্তি সন্মন্ধে এ অপবাদ রটানো হচ্ছিল তার নিকট এ সংবাদ পৌছার পর তিনিও বললেন, সূবহানাল্লাহা আল্লাহর কসম! কোন মহিলার আবরণ আমি কখনো উন্মোচন করিনি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শহীদ হন। এতে আরো অতিরিক্ত রয়েছে যে, অপবাদ রটনাকারীদের মধ্যে ছিলেন মিসতাহ, হামনা ও হাসসান। আর মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনু উবাই সে ছিল ঐ ব্যক্তি যে খুঁজে খুজে বের করে এসব একত্রিত করতো। সে এবং হামনাই এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

৬৭৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উম্মে ওয়ালাদের সাথে এক ব্যক্তির প্রতি অতিযোগ উন্থাপিত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে বললেন, যাও। তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আলী (রাঃ) তার নিকট গিয়ে দেখলেন, সে কুপের মধ্যে শরীর শীতল করছে। আলী (রাঃ) তাকে বললেন, বেরিয়ে আস। সে আলী (রাঃ)-এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তিনি তাকে বের করলেন এবং দেখলেন, তার পূরুষাঙ্গ সমূলে কর্তিত, তার লিঙ্গ নেই। তখন আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সে তো লিঙ্গ কর্তিত-তার তো লিঙ্গ নেই।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: তওবা
তওবা
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/repentance.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/repentance.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy