কুরবানি

৪৯০৪। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জুন্দাব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদুল আযহায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি (সব কিছুর আগে) অন্য কোন কাজ না করে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে সালাম ফিরিয়ে তিনি কুরবানীর গোশত দেখতে পেলেন, যা তাঁর সালাত সম্পন্ন (আদায়ের) করার পূর্বেই যবেহ করা হয়েছিল। তখন তিনি বললেনঃ, যে ব্যক্তি সালাত আদায়ের পুর্বে (অথবা বললেন, আমাদের সালাত আদায়ের পূর্বে) তার কুরবানীর পশু যবেহ করেছে, সে যেন এর স্হলে অন্য একটি পশু যবেহ করে। আর যে ব্যক্তি যবেহ করেনি সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে (বিসমিল্লাহ বলে) যবেহ করে।

৪৯০৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জুন্দাব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ঈদুল আযহায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি লোকদের সাথে সালাত সম্পন্ন করে একটি বকরী দেখতে পেলেন, যা পূর্বেই যবেহ করা হয়েছে। তখন বললেনঃ সালাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ “করেছে, সে যেন এর স্হলে অন্য একটি বকরী যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবেহ করে।

৪৯০৬। কুতায়বা-ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এবং তাঁরা আবূল আহওয়াস (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৪৯০৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) জুন্দাব বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ, আমি সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, যখন তিনি আযহার সালাত আদায় করেন। পরে তিনি খুতবা দিতে গিয়ে বলেনঃ, যে ব্যক্তি সালাত আদাযের পূর্বে যবেহ করেছে সে যেন এর স্হলে পুনরায় যবেহ করে। আর যে যবেহ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহর নামে যবেহ করে।

৪৯০৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৪৯০৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার মামা আবূ বুরদা (রাঃ) সালাতের পূর্বে কুরবানী করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটা গোশতের বকরী। তিনি বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমার নিকট ছয় মাসের একটি বকরীর বাচ্চা আছে। তিনি বললেনঃ সেটি যবেহ কর। তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য তা ঠিক হবে না। এরপর তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবেহ করলো, সে কেবল নিজের জন্যই যবেহ করলো। আর যে ব্যক্তি সালাতের পর যবেহ করলো, তার কুরবানী পূর্ণ হয়ে গেল এবং সে মুসলমানদের তরীকা অনুযায়ী কাজ করলো।

৪৯১০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার মামা আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর যবেহ এর আগে যবেহ করলেন এবং বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজকের দিনে গোশত তলব করা ভাল নয়। তাই আমি আমার পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও নিজ গৃহের লোকদেরকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি কুরবানী করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি পুনরায় কুরবানী কর। তিনি বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার নিকট একটি ছোট বকরী আছে যা দুধের বয়স অতিক্রম করেছে, যেটি গোশতের দুটি বকরীর চাইতেও উত্তম। তিনি বললেনঃ এটই তোমার উত্তম কুরবানী হবে। আর তুমি ছাড়া অন্য কারো জন্য ছয় মাসের বকরী যথেষ্ট হবে না।

৪৯১১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, (একদা) কুরবানীর দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা (ভাষণ) দিলেন এবং বললেনঃ সালাত আদায়ের পূর্বে কেউ কুরবানী করবে না। বারা (রাঃ) বলেনঃ, এরপর আমার মামা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আজকের দিনে তো গোশত তলব করা ভাল নয়। এরপর বর্ণনাকারী ছিলাম হুশায়ম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৪৯১২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের মত সালাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের ন্যায় কুরবানী করে, সে যেন সালাতের পূর্বে কুরবানী না করে। পরে আমার মামা বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো আমার ছেলের পক্ষ থেকে কুরবানী করে ফেলেছি! তিনি বললেনঃ সেটা তো এমন জিনিস, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য তাড়াহুড়া করে (যবেহ করে) ফেলেছ। তিনি বললেন, আমার নিকট একটি বকরীর বাচ্চা আছে, যা দুটি বকরীর চাইতেও উত্তম। তিনি বললেনঃ তুমি সেটা কুরবানী কর। কেননা, সেটাই তোমার উত্তম কুরবানী হবে।

৪৯১৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত আদায় করা। এরপর আমরা ফিরে যাব এবং কুরবানী করব। যে ব্যক্তি এভাবে করলো সে আমাদের সূন্নাত পালন করলো। আর যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে জবেহ করলো, সেটা কেবল গোশত হলো, যা সে নিজের পরিবারের জন্য আগাম ব্যবস্হা করলো, কুরবানীর কিছুই হলো না। আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) আগেই জবেহ করে ফেলেছিলেন। তাই তিনি বললেনঃ, আমার নিকট একটি ছয়মাসের বকরীর বাচ্চা আছে যা এক বছরের বকরীর চাইতেও উৎকৃষ্ট হিস্টপুষ্ট। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সেটি কুরবানী কর। তোমার পরে আর কারো জন্য এটা যথেষ্ট হবে না।

৪৯১৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারা-ইবনু আযিব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – থেকে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৪৯১৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, হান্নাদ ইবনু সারী, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাতের পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন এবং এরপর বর্ণনাকারী উপরিল্লিখিত বর্ণনাকারীদের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৪৯১৬। আহমাদ ইবনু সাঈদ আল দ্বারামী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। তিনি এতে বললেনঃ সালাতের পূর্বে কেউ যেন কুরবানী না করে। এক ব্যক্তি বললো, আমার নিকট একটি বকরীর বাচ্চা আছে যা অল্প দিন পূর্বে দুধ ছেড়েছে, যেটি গোশতের দুটি বকরীর চাইতে উত্তম হৃষ্টপূষ্ট। তিনি বললেনঃ, ওটা কুরবানী কর। তোমার পর অন্য কারো জন্য এরুপ ছমাসের বাচ্চা (কুরবানী করা) যথেষ্ট হবে না।

৪৯১৭। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ বুরদা (রাঃ) সালাতের পূর্বে জবেহ (কুরবানী) করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর পরিবর্তে আরেকটি কুরবানী কর। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কাছে কেবল একটি ছ’মাসের বকরীর বাচ্চা আছে। শু’বা (রহঃ) বলেনঃ মনে হয় তিনি বলেছেন, সেটা এক বছরের বাচ্চার চাইতেও উত্তম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেটির স্থানে এটি কুরবানী কর। আর তোমার পর অন্য কারো জন্য এটা যথেষ্ট হবে না।

৪৯১৮। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্নাও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি এটা এক বছরের বাচ্চার চাইতেও উত্তম এ বাক্যের বর্ননায় সন্দেহের উল্লেখ করেন নি।

৪৯১৯। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করেছে, সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজকের দিনে তো গোশত খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকেই এ সময় সে তার প্রতিবেশীদের প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথাকে সত্য মনে করলেন। সে আরো বললো, আমার নিকট একটি ছ’মাসের বকরীর বাচ্চা আছে, যেটি গোশতের দুটি বকরীর চাইতেও ভাল, আমি কি সেটি কুরবানী করব? আনাস (রাঃ) বলেনঃ পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। আমার জানা নাই, এ অনুমতি এ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্যে ছিল কি না। আনাস (রাঃ) আরো বলেনঃ (খুতবার পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি দুম্বার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং সে দুটি যবেহ করলেন। আর লোকজন বকরীগুলোর প্রতি এগিয়ে গেল এবং সেগুলো বন্টন করে যবেহ করলো।

৪৯২০। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ আন-গুবারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন, এরপর খুতবা দিলেন এবং যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে কুরবানী করেছে তাকে পূনরায় কুরবানী করার আদেশ দিলেন। এরপর বর্ণনাকারী ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।

৪৯২১। যিয়াদ ইবনু ইয়াহইয়া হাসনানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। এরপর গোশতের গন্ধ পেয়ে (সালাতের পূর্বে কুরবানী করতে নিষেধ করলেন। তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সালাতের আগে যবেহ করেছে, সে যেন পূনরায় যবেহ করে। এরপর বর্ণনাকারী ইবনু উলায়্যা ও হাম্মাদ (রহঃ)-এর অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৪৯২২। আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কমপক্ষে এক বছরের পশু (বকরী) কুরবানী করবে। তবে এটা তোমাদের জন্য দুস্কর হলে তোমরা ছমাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার।

৪৯২৩। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন মদিনায় আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। অতঃপর কিছু লোক এ মনে করে আগেই কুরবানী করে ফেললো যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত কুরবানী করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা-তাঁর আগে কুরবানী করেছেন তাদেরকে পূনরায় আর একটি কুরবানী করার নির্দেশ দেন। আর তিনি নির্দেশ দিলেন, কেউ যেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুরবানী করার পুর্বে কুরবানী না করে।

৪৯২৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের মাঝে কুরবানীর পশু বণ্টন করার জন্য তাকে কিছু বক্বরী দিলেন। একটি বাচ্চা (ছ’মাসের) অবশিষ্ট থেকে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করলে তিনি বললেনঃ, তুমি এটা কুরবানী কর। কুতায়বা (রহঃ) ‘আসহাবিহি’ শব্দের স্হলে ‘সাহাবাতিহি’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।

৪৯২৫। আবূ বাকর ইবনুু-আবূ শায়বা (রহঃ) উকবা ইবনু শায়বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাঁদের মাঝে কুরবানীর পশু বন্টন করলে আমার ভাগে একটি ছমাসের ছাগল পড়ে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো ছঁমাসের একটি বাচ্চা পেয়েছি-। তিনি বললেনঃ তা-ই কুরবানী কর।

৪৯২৬। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল লাহমান আদ দারিমী (রহঃ) উকবা ইবনু আমির জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণের মাঝে কুরবানীর পশু বঁণ্টন করেন। এরপর রাবী উল্লেখিত অর্থের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪৯২৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো চিত্রা রং এর দুটি দূম্বা নিজ হাতে যবেহ করেন। তিনি ‘বিসমিল্লাহি’ পড়েন, “আল্লাহ আল্লাহ” বলেনঃ এবং (যবাহকালে) তাঁর একখানা পা মুবারক দুম্বা দুটির গর্দানের পাশে রাখেন।

৪৯২৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু শিং ওয়ালা সাদা কালো বর্ণের দুটি দুম্বা কুরবানী করেন। তিনি আরও বলেনঃ, আমি তাঁকে দুম্বা দুটি নিজ হাতে যবেহ করতে দেখেছি। আরও দেখেছি, তিনিও দুটির কাঁধের পাশে নীজ পা মুবারাক দিয়ে চেপে রাখেন এবং “বিসমিল্লাহ”- ও “আল্লাহ আকবর” বলেন।

৪৯২৯। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করেন। বর্ণনাকারী পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। শুবা (রহঃ) বলেনঃ, আমি কাতাদাকে বললাম, আপনি কি আনাস (রাঃ) থেঁকে হাদীসটি শুনেছেন তিনি বললেনঃ, হ্যা (শুনেছি)।

৪৯৩০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, আমি তাঁকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলতেও শুনেছি।

৪৯৩১। হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানী করার জন্য দুটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা আনতে আদেশ দেন-যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে উইতো (অর্থাৎ পেটের নিম্নাংশ কালো ছিল) এবং কালোর মধ্য দিয়ে দেখতো (অর্থাৎ চোখের চতূর্দিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে বললেনঃ, -ছুরিটি নিয়ে এসো। এরপর বলেনঃ, তিনি ওটা পাথরে ধার দাও। আমি ধার দিলাম। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। এরপর সেটা যবেহ করলেন এবং বললেনঃ- (অর্থঃ আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তার উম্মাতের পক্ষ থেকে এটা কবুল করে নাও।) এরপর এটা কুরবানী করেন।

৪৯৩২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা আগামীকাল শক্রর সাথে মূকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সাথে কোন ছুরি নাই। তিনি বললেনঃ, তাড়াতাড়ি অথবা ভালভাবে দেখে বলিষ্ঠভাবে যবেহ করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে, যার উপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তা (দিয়ে যবেহকৃত জন্তু) খাও। তবে তা যেন দাঁত ও নখ না হয়। আমি তোমাদের নিকট এর কারণ বর্ণনা করছি। দাত হলো হাড় বিশেষ, আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমরা গনীমতের কিছু উট ও বকরী পেলাম। তন্মধ্যে হতে একটি উট ছুটে গেলে জনৈক ব্যক্তি তীর মেরে সেটাকে আটকি য়ে ফেললো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসব উটের মধ্যেও বন্য জন্তুর মতো স্বভাব আছে। সুতরাং এগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি যদি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায় তবে তার সাথে এরুপ আচরণই করবে।

৪৯৩৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা তোমার অন্তর্গত “যুলহুলায়ফা” নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। সেখানে আমরা বকরী ও উট পেলাম। কিছু লোক তাড়াতাড়ি করে ডেগের মধ্যে এগুনোর গোশত জোশ দিতে লাগলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলে ডেগগুলো উল্টিয়ে দেওয়া হলো। এরপর একটি উট দশটি ছাগলের সমান গন্য করা হলো। বর্ণনাকারী হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।

৪৯৩৪। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) রাফিঁ ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা আগামীকাল শক্রর সাথে মূকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সাথে কোন ছুরি নাই। (ধারাল) বাঁশ দ্বারা যবেহ করবো? বর্ণনাকারী ইসমাঈল পূর্ণ ঘটনাসহ হাদীসটি উল্লেখ করেন। তিনি (রাফি (রাঃ) আরও বলেনঃ, উক্ত উটগুলোর মধ্য থেকে -একটি উট ছুটে গেলে আঁমরা তীর নিক্ষেপ করে সেটাকে আটকিয়ে দিলাম। কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) সাঈদ ইবনু মাসরুক (রহঃ) থেকে উপরোক্ত। সনদে হাদীসটির শেষ পর্যন্ত পূর্ণরুপে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে তিনি আমাদের সথে ছুরি নাই, আমরা কি বাশ দ্বারা যবেহ করবো- রাফি -এর এ উক্তিটি উল্লেখ করেন।

৪৯৩৫। মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ) রাফিঁ ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আগামীকাল দুশমনদের সাথে মূকাবিলা করবো, অথচ আমাদের নিকট কোন ছুরি নাই। শু’বা শেষ পর্যন্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ কথাটি উল্লেখ করেননি, “কিছু-লোক তাড়াতাড়ি করে, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে সেগুলো উল্টিয়ে দেওয়া হয়। তবে(এ অংশটি ছাড়া) তিনি সমস্ত ঘটনাই উল্লেখ করেছেন।

৪৯৩৬। আবদুল জাববার ইবনু আলা (রহঃ) আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খূৎবার পূর্বে সালাত আদায় করলেন এবং বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তিনদিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।

৪৯৩৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -এর সঙ্গে ঈদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেনঃ,পরবর্তী সময় আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি খুৎবার পূর্বে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। এরপর জনগণের উদ্দেশ্যে খুতবা দেন। (খুতবায়) তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিনের পর কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে তোমাদের নিষেধ করেছেন। সুতরাং তোমরা তা খেয়ো না।

৪৯৩৮। যুহায়র ইবনু হারব, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ, যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪৯৩৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কেউ যেন কুরবানীর গোশত তিনদিনের পরে না খায়।

৪৯৪০। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪৯৪১। ইবনু আবূ উমার ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিনের উপরে কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। সালিম (রহঃ) বলেনঃ, এ জন্য ইবনু উমার (রাঃ) তিনদিনের উপর কুরবানীর গোশত খেতেন না। ইবনু আবূ উমার তিনদিনের পর কথাটি উল্লেখ করেন।

৪৯৪২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াকিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) বলেনঃ, আমি বিষয়টি আমরা (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ, ইবনু ওয়াকিদ সত্যই বলেছেনঃ। আমি আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যূগে আযহার সময় বেদুঈনদের কিছু পরিবার দুর্বল হয়ে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তিনদিনের পরিমাণ জমা রেখে অবশিষ্ট গোশতগুলো সা’দকা করে দাও। পরবর্তী সময়ে লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ লোকেরা তো কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে পাত্র তৈরী করছে এবং তার মধ্যে চর্বি গলাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাতে কি হয়েছে? তারা বললো, আপনই তো তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। আমি তো বেদুঈনদের দুরবস্হা দেখে একথা বলে ছিলাম। সুতরাং এখন তোমরা খেতে পার, জমা করে রাখতে পার এবং সাদাকা করতে পার।

৪৯৪৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি তিনদিনের উপর কুরবানীর গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। আবার পরবর্তী সময়ে বলেছেনঃ, এখন তোমরা খেতে পার, পাথেয় হিসাবে ব্যবহার করতে পার এবং জমা করে রাখতে পার।

৪৯৪৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি-বলেনঃ, আমরা মিনায় তিনদিনের অধিক উটের গোশত খেতাম না। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিয়ে বললেনঃ তোমরা খেতে পার এবং পাথেয় হিসাবে রাখতে পার। ইবনু জুরায়জ বলেনঃ) আমি আতাকে বললাম, জাবির (রাঃ) কি মদিনায় আগমন করার পূর্ব পর্যন্ত কথাটি বলেছেন? তিনি বললেন, হাঁ।

৪৯৪৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা তিনদিনের বেশী কুরবানীর গোশত সঞ্চয় করে রাখতাম না। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিনের বেশী এ থেকে খাওয়ার এবং পাথেয় হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেন।

৪৯৪৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা রাসুলের যুগে মদিনায় কুরবানীর গোশত তিন দিনেরও বেশী খেতাম।

৪৯৪৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে মদিনাবাসী! তোমরা যেন তিনদিনের বেশী কুরবানীর গোশত না খাও। ইবনু মূসান্না (রহঃ) – (তিনদিন) শব্দ উল্লেখ করেছেন। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অভিযোগ (আপত্তি) করলো যে, তাদের স্ত্রী-পুত্র, কর্মচারী ও খাদিম রয়েছে। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ। ইবনু মূসান্না (রহঃ) বলেনঃ, আবদুল আলা (রহঃ) সন্দেহ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শব্দ বলেছেনঃ না।

৪৯৪৮। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী করবে, সে যেন তিন রাতের পর তার ঘরে কুরবানীর কিছু সঞ্চিত না রাখে। আগামী বছর যখন সমাগত হলো, তখন লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা কি গত বছরের মত করবো? তিনি বললেনঃ, না। সে বছর তো মানুষ খুব কষ্টে ছিল, তাই আমি চেয়েছিলাম যাতে সকলের নিকট (গোশত) পৌছে যায়।

৪৯৪৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কুরবানীর পশু যবেহ করলেন। এরপর বললেনঃ, হে সাওবান! এর গোশত ভালভাবে সংরক্ষণ কর। এরপর থেকে তিনি মদিনায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত আমি তাঁকে উক্ত গোশত থেকে আহার করাতে থাকি।

৪৯৫০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইবরাহিম-হানযালী (রহঃ) মুআবিয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

৪৯৫১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ক্রীতদাস সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের সময় আমাকে বললেনঃ এ গোশত ভাল করে রেখে দাও। আমি ভাল করে রেখে দিলাম। তিনি মদিনায় পৌছা পর্যন্ত এ গোশত খেতে থাকেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান আদ দারিমী (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু হামযা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি বিদায় হজ্জের সময়- কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪৯৫২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কবর যিয়ারত থেকে তোমাদের নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। আর আমি তোমাদের তিনদিনের অধিক কুরবানীর গোশত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা নিজেদের প্রয়োজন অনুপাতে সঞ্চয় করে রাখতে পার। আমি আরো তোমাদের নিষেধ করেছিলাম চামড়া নির্মিত পাত্র ছাড়া অন্যান্য সকল পাত্রে তৈরি নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) থেকে, এখন তোমরা যে কোন পাত্র থেকেই পান -করতে পারো। তবে যা নেশা সৃষ্টি করে তা পান করো না।

৪৯৫৩। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আাম তোমাদের নিষেধ করেছিলাম । এরপর বর্ণনাকারী আবূ সিনানের হাদীসের অনুরুপ অর্থে রিওয়ায়াত করেন।

৪৯৫৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ, ফারা ও -আতীরা (রজব মাসের প্রথম দশদিনে যবেহকৃত পশু) বলতে (ইসলামে) কিছু নাই। ইবনু রাফি (রহঃ) তার রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন-ফারা হালা প্রথম বাচ্চা, যা তারা যবেহ করতো।

৪৯৫৫। ইবনু আবূ উমার আলমাক্কী (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখনঁ (যুলহাজ্জ (হজ্জ) মাসের) প্রথম দশদিন উপস্তিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে। যেন তার চুল ও নখের কিছূ স্পর্শ না করে। সুফিয়ান (রহঃ)-কে বলা হলো, কেউ কেউ তো হাদীসটিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে না। তিনি বললেনঃ, আমি কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করি।

৪৯৫৬। ইসহাক ইবরাহীম (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন প্রথম দশদিন উপস্থিত হয় আর কারো নিকট কুরবানীর পশু উপস্থিত থাকে, যা সে যবেহ করার নিয়ত রাখে, তবে সে যেন তার চুল না ছাঁটে এবং নখ না কাটে।

৪৯৫৭। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ -দেখতে পাচ্ছ আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে চুল তার নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।

৪৯৫৮। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম হাশিমী (রহঃ) উমার অথবা আমর ইবনু মুসলিম থেকে এ সনদে অনুরুপ রিওসায়াত করেছেন।

৪৯৫৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয আম্বারী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির নিকট কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জ এর নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।

৪৯৬০। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) আমর ইবনু মুসলিম ইবনু আলার আন-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ, আমরা হাম্মামে (গোসলখানা) ছিলাম কুরবানীর ঈদের কয়েকদিন পূর্বে কিছু লোক চুল দ্বারা নাভির নিচের পশম পরিস্কার করলো। হাম্মামে উপস্তিত লোকদের একজন বললেনঃ, সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রাঃ) তা নিষেধ করেছেন:পরে আমি সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বিষয়টি তাকে অবহিত করলাম। তিনি বললেনঃ, হে ভাতিজা! এ হাদীসটি তো মানুষ ভুলে গিয়েছে এবং ছেড়ে দইয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মির্ণী উম্মু সালামা (রাঃ) আমার নিকট হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) থেকে মূআয (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের সমার্থক শব্দাবলী বর্ণনা করেন।

৪৯৬১। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আহমাদ ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আখী ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীসের সমার্থক।

৪৯৬২। যুহায়র ইবনু হারব ও সূরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ তুফায়ল আমির ইবনু ওয়াসিলা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি ভাঁর কাছে এসে বললো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে গোপনে কি বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেনঃ, তিনি রেগে গেলেন এবং বনালেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের নিকট থেকে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেনঃ। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর লোকটি বললো- হে আমীরুল মুমিনীন! সে চারটি কথা কি! তিনি বললেনঃ ১ যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে লানত করে, আল্লাহ তাকে লানত করেন ২- যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করে আল্লাহ তার উপরও লানত করেন ৩ ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ লানত করেন, যে কোন বিদআতী ব্যক্তিকে আশ্রয় দেয় এবং ৪- যে ব্যক্তি যমীনের (সীমানার) চিহ্ন সমূহ পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ লানত করেন।

৪৯৬৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ তুফায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা আলী (রাঃ)-কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে গোপনে যা বলেছেনঃ, সে বিষয়ে আমাদের কিছু অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ, মানুষের কাছে গোপন রেখেছেন এমন কিছু তিনি আমার কাছে একান্তে বলেননি। তবে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করে আল্লাহ তাকে লানত করেন; যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, আল্লাহ তাকে লানত করেন; যে ব্যক্তি আপন পিতামাতাকে লানত করে “আল্লাহ তাকে লানত করেন এবং যে ব্যক্তি চিহ্নসমূহ (যমীনের) পরিবর্তন করে, আল্লাহ তাকে লানত করেন।

৪৯৬৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা-হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাদের কাছে বিশেষভাবে কিছু বলে গেছেন। তিনি বললেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করেননি এমন কোন বিষযে আমাদেরকে বিশেষভাবে কিছু বলে যাননি, একমাত্র আমার তরবারীর এ খাপটিতে যা আছে তা ছাড়া। বর্ণনাকারী বলেনঃ,- এরপর তিনি একটি সহীফা বের করলেন, যাতে লেখা ছিল-আল্লাহ লানত করেন সে ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করে, আল্লাহ লানত করেন সেঁ ব্যক্তিকে, যে যমীনের চিহ্নসমূহ চুরি করে, আল্লাহ লানত করেন সে ব্যক্তিকে, যে তার পিতাকে লানত করে। আল্লাহ লানত করেন সে ব্যক্তিকে, যে কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: কুরবানি
কুরবানি
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/qurbani.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/qurbani.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy