অপরাধের শাস্তি

৪২৫১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দ্বীনারের এক চতূর্থাংশ এবং এর অধিক পরিমাণ মূল্যের মাল চুরির অপরাধে চোরের হাত কর্তন করতেন।

৪২৫২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৫৩। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ ও ওয়ালীদ ইবনু শুজা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক দ্বীনারের এক চতুর্থাংশ, এবং এর অধিক মুল্যের মালচুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবেনা।

৪২৫৪। আবূ তাহির (রহঃ) হারুন ইবনু সাঈদ আইলী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, এক দ্বীনারের চার ভাগের একাংশ এবং এর অধিক মূল্যের সম্পদ চুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।

৪২৫৫। বিশর ইবনু হাকাম আবদী (রহঃ) আয়েমা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, এক দ্বীনারের চার ভাগের এক ভাগ এবং এর অধিক মূল্যের মালচুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।

৪২৫৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একটি ঢালের মূল্যের কম সম্পদ চুরির অপরাধে চোরের হাত কর্তন করা হতো না। “হাজফাহ” বা “উরস” উভয় শব্দের অর্থই আত্মরক্ষার মূল্যবান ঢাল।

৪৩৫৮। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে একই উল্লেখিত সূমাইদ রাওয়াসী বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবদুর রহীম ও আবূ উসামার (রহঃ) এর হাদীসে (তা তখনকার দিনে মূল্যবান বস্তু) এটূকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।

৪২৫৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবকটি ঢাল চুরির অপরাধে এক চোরের হাত কর্তন করেন। ঢালটির মূল্য ছিল তিন দিরহাম।

৪২৬০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু রুমহ, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, আবূ রাবীআ কামিল, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারেমী, ইবনু রাফি ও আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত মালিক (রাঃ) এর -হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ (উহার মূল্য) শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং কেউ কেউ (উহার মূল্য তিন দিরহাম) উল্লেখ করেছেন।

৪২৬১। বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বঁলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেন সে চোরের ওপর, যে একটি ডিম (বা ড়িমের মূল্যের পরিমাণ বস্তু) চুরি করল। এতে তার হাত কাটা যাবে। আর যে ব্যক্তি একটি দড়ি (কিংবা দড়ির সম ম্যূল্যর পরিমাণ বস্তু) চুরি করল, তারও হাত কাটা যাবে।

৪২৬২। আমর আননাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাস (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (যদিও সে দড়ি চুরি করে এবং ডিম চুরি করে) কথাটি অতিরিক্ত বর্ননা করেছেন।

৪২৬৩। কুতায়বা ও মুহামাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মাখযোমী গোত্রের একজন -মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেনঃ, এ ব্যাপারে উসামা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত হদের ব্যপারে শুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল!তোমাদের পৃর্ববর্তি উম্মাতগন ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদ ও যদি চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম। ইবনু রুমহ (রহঃ) বর্ণিত অপর এক হাদীসে ‘নিশ্চয়ই তোমাদের-পূর্বব্ররতীগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে- বাক্যটি অতিরিক্ত বর্নিত রয়েছে।

৪২৬৪। থেকে বর্নিত যে, কুরাইশরা এক মহিলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো, যে মহিলাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় মক্কা বিজরের সময় চুরি করেছিল। তখন তারা বলল, এ ব্যাপারে কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কথা, (সুপারিশ) বলবে? তখন তাঁরা বলল, এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রিয় পাত্র উসামা ব্যতীত আর কার হিম্মাত আছে। অতএব তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল। এ ব্যাপারে উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) কথোপকথন করলেন। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ এর ব্যাপ্যরে সুপারিশ করতে চাও? তখন উসামা (রাঃ) বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন। যখন সন্ধ্যা হল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়মান হয়ে এক ভাষণ দিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করলেন,এ অতঃপর বললেনঃ তোমাদের পূর্বের উম্মাতগণকে ধ্বংস করা হয়েছে এই জন্য যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দূর্বল লোকচুরি করতো, তখন- তার উপর হদ, প্রয়োগ করতো। সেই মহান আল্লাহর কসম। যারকুদরতী হাতে আমার জীবন! যদি মুহাম্মদ বিনতে ফাতিমা (রাঃ)ও চুরি করাতো, তবে অবশ্যই আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম। এরপর তিনি যে মহিলা চুরি করেছিল তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তার – হাত কেটে দেয়া হল। ইউনূস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর সে মহিলা খাটিভাবে তাওবা করল এবং এরপরে তার বিয়ে হলো। আয়িশা (রাঃ) -বলেনঃ, এই ঘটনার পর ঐ মহিলা প্রায়ই আমার কাছে – আসতো। তার কোন প্রয়োজন থাকলে আমি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তুলে ধরতাম।

৪২৬৫। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতা তিনি বলেন, এক মাখযুমী মহিলা বিভিন্ন দ্রব্য ধার নিত অতঃপর সে তা অস্বীকার করতো। এতে নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। এরপর সেই মহিলার পরিবারবর্গ উসামা (রাঃ) এর কাছে এসে এ ব্যাপারে কথোপকথন করলো। তিনি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বললেন। অতঃপর তিনি লাইস ও ইউনুস (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪২৬৬। সালামা ইবনু শারীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক মাখযুমী মহিলা চুরি করল। অতঃপর তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীণী উম্মে সালামার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ যদি ফাতিমা (রাঃ)ও চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর মহিলাটির হাত কেটে দেয়া হল।

৪২৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) উবাদাহ ইবুন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর, তেচমরা আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে গ্রহণ কর যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁআলা মহিলাদের জন্য একটি পথ বের করে দিয়েছেন। যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন কূমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে একশ- বেত্রাঘাত কর এবং এ বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে- তবে তাদেরকে প্রথমত একশ- বেত্রাঘাত করবে এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।

৪২৩৮। আমর আন নাকিদ (রহঃ) মনসুর (রহঃ) থেকে সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও মূসান্না (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হতো, তখন তাঁকে ক্লান্ত মনে হতো এবং তার মুখমণ্ডলে ক্লান্তির চিহ্ন পরিস্ফুট হত। বর্ণনাকারী বলেনঃ একদা যখন তাঁর ওপর ওহী অবতীর্ণ হলো তখন তাঁর অবস্হা ঐরুপ হল। এরপর যখন ওহী বন্ধ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার কাছে হতে গ্রহণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মহিলাদের জন্য একটি পথ বের করে দিয়েছেন। যদি কোন বিবাহিত পুরুষ কোন বিবাহিতা মহিলার সাথে এবং কোন অবিবাহিত পুরুষ কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে, তবে বিবাহিত ব্যক্তিকে একশ- বেত্রাঘাত করবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবে। আর অবিবাহিত পুরুষ মহিলাকে একশ বেত্রাঘাত করবে, এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য নির্বাসন দেবে।

৪২৭০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে একই সুত্রে হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন। কিন্তু তাদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসে (অবিবাহিত (পুরাষ বা মহিলা-কে বেত্রাঘাত করা হবে এবং নির্বাসন দেয়া হবে। আর বিবাহিত (পুরুষ বা মহিলা-কে প্রথমত বেত্রাঘাত করা হবে এরপর পাথর মেরে হত্যা করা হবে)। (এক বছর এবং একশ-) এই কথাটি তার হাদীসে উল্লেখ করেন নি।

৪২৭১। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসাঅবস্থায় বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে (ব্যাভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, কারণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সূতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বয়ায়ন করেছেন। তাঁর পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ একথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাচ্ছিনা। তখন আল্লাহ কর্তুক নাযিলকৃত এই ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যাভিচারের শাস্তি (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা,)-এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে।

৪২৭২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা যূহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪২৭৩। আবদুল মালিক ইবনু শুয়াইব ইবনু লায়িস ইবনু সা’দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- মুসলমানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এল। তখন তিনি মসজিদের মধ্যে ছিলেন। সে তখন উচ্চস্বরে বলল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ব্যভিচার করেছি। তখন তিনি তার থেকে মুবারক মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে তখন তিনি যে দিকে চেহারা মুবারক ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন সে দিকে গিয়ে তাঁকে বলল, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ব্যাভিচার করেছি। তখনও তিনি তার থেকে মুবারক মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এইভাবে সে চারবার পর্যন্ত স্বীকারোক্তি করল! এরপর সে যখন চারবার নিজের উপর সাক্ষ্য দিল- তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকালেন এবং বললেনঃ, তোমার মধ্যে কি পাগলামী আছে সে বলল, না। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি বিবাহিত? সে বলল, হ্যা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং পাথর নিক্ষেপঁকরে হত্যা কর। ইবনু শিহাব (রাঃ) বলেনঃ, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে যিনি হাদীস শ্রবণ করেছেন তিনি আমার কাছে বলেনঃ যে, জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ, পাথর নিক্ষেপকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা তখন তাকে ঈদগাহে পাথর নিক্ষেপ করলাম। যখন তার উপর পাথর পতিত হতে লাগল তখন সে পলায়ন করল। তখন আমরা তাকে “হাররা” নামক স্থানে ধরে ফেললাম। এরপর তাকে আমরা পাথর মেরে হত্যা করলাম। মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ যে, লায়স (রহঃ) ইবনু শিহাব থেকেও একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকেও এই একই সুত্রে হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর উভয়ের বর্ণিত হাদীসে ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ যে, আমাকে এক ব্যক্তি হাদীস বর্ননা করেছেন, যিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে হাদীস শ্রবণ করেছেন, যেমন উল্লেখ করেছেন উকায়ল (রাঃ)।

৪২৭৪। আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪২৭৫। আবূ কামেল ফুযাইল ইবনু হুসাইন জাহদারী (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃআমি মায়েয ইবনু মালিক (রাঃ) কে দেখলাম, যখন তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হল, তিনি ছিলেন বেঁটে প্রকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী তার গায়ে কোন চাঁদর ছিল না। তিনি নিজেই চার বার স্বীকারোক্তি করলেন যে, তিনি ব্যভিচার করেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি হয়ত (শুধু চুম্বন দিয়েছ অথবা স্পর্শ করেছ) তখন তিনি উত্তরে বললেনঃ, না, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই এই হতভাগা ব্যাভিচার করেছে। পরিশেষে তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি এক ভাষণ প্রদান করে বললেনঃ সাবধান! আমরা যখন আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে গমন করি, তখন কেউ কেউ পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের ন্যায় আওয়ায করে (অর্থাৎ ছাগল যেমন সঙ্গমের সময় উচ্চস্বরে আওয়ায করে তদ্রুপ) আর তাদেরকে সে অল্প দুধ দেয়। (অর্থাৎ সঙ্গম করে, দুধের অর্থ বীর্য) আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহ আমাকে এই শ্রেনীর কোন লোকের উপর ক্ষমতা প্রদান করেন, তবে আমি তা কে অবশ্যই শাস্তি দেব। (যেন অন্যেরা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।)

৪২৭৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তিকে আনালেন। তিনি ছিলেন বেঁটে প্রকৃতির, চুল ছিল অবিন্যস্ত এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। তার গায়ে ছিল একটি চাঁদর। তিনি ব্যভিচার করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-বার তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করলেন। এরপর তার প্রতি তিনি নির্দেশ জারি করলেন। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা জেনে রেখো; আমরা যখনই আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হতাম তখন তোমাদের মধ্য হতে কেউ না কেউ পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের ন্যায় আওয়ায করে। সে তখন কোন নারীকে অল্প দুধ প্রদান করে। (অর্থাৎ ব্যভিচার করে) নিশ্চয়ই আল্লাহ যদি আমাকে তাদের কারো উপর ক্ষমতা প্রদান করেন, তবে আমি তাকে এমন শাস্তি প্রদান করবো যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমি এই হার্দীসই সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির স্বীকারোক্তি চারবার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

৪২৭৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উভয়েই জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু জাফর (রাঃ) এর হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। আর শাবাব (রাঃ) ও তাঁর বানী )- (তিনি তার স্বীকারোক্তি দু-বার প্রত্যাখ্যান করেন) এর সাথে মতৈক্য প্রকাশ করেছেন। আবূ আমির (রাঃ) এর অপর এক হাদীসে (তিনি তাঁর স্বীকারোক্তি দুঁবার অথবা তিনবার প্রত্যাক্ষান করেছেন) বর্ণিত হয়েছে।

৪২৭৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়েয ইবনু মালিক (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সম্পর্কে আমার কাছে যে সংবাদ পৌছেছে তা, কি সত্য? তিনি বললেনঃ আমার সম্পর্কে আপনার কাছে কি সংবধি পৌছেছে। তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে সংবাদ পৌচেছে যে, তুমি অমূক বংশের কোন এক দাসীর সঙ্গে ব্যাভিচার করেছ। তিনি উত্তরে বললেনঃ, হ্যা। এরপরে তিনি এ ব্যাপারে চারবার সাক্ষ্য দিলেন অর্থাৎ স্বীকারোক্তি করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিনির্দেশ জারি করলেন এবং তাঁকে তখন পাথর মারা হল।

৪২৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আসলাম গোত্রের মায়েয ইবনু মালিক নামক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আমি তো এক অশ্লীল কাজ করে বসেছি। অতএব, এর জন্য আমার উপর শরীয়াতের বিধান প্রয়োগ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই স্বীকারোক্তি কয়েকবার প্রর্তাখ্যান করলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তিনি ঐ ব্যক্তির স্বগোত্রীয় লোকের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা বলল, আমরা তো তার সমন্ধে কোন খারাপ জানিনা। এ কিন্তু হঠাৎ করেই সে এমন মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সে এখন ভাবছে যে, তার প্রতি হদ শরীয়াতের বিধান প্রয়োগ ব্যতীত তার আর কোন নিস্কৃতি নেই। বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, তখন সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এল। তখন তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপের জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমরা তখন তাকে বাকীউল গারকাদ” নামক স্থানে নিয়ে চললাম। আমরা তাকে বন্ধনমুক্ত করলাম না এবং মাটিতে পুঁতলামও না। এরপর আমরা তাকে হাড়, মৃত্তিকা ঢিলা এবং ইট মারতে শুরু করলাম। হঠাৎ সে দৌড়ে পালাল। আমরাও তার পিছনে ছুটলাম। অবশেষে সে “হাররা”, নামক স্থানে উপনীত হল। আমরা তথায় তাকে ধরলাম এবং পাথর নিক্ষেপ করলাম। পরিশেষে সে নিশ্চল হয়ে গেল অর্থাৎ মরে গেল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বলার উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হলেন এবং বললেনঃ আমরা যখনই আল্লাহর পথে কোন যুদ্ধে গমন করি তখন কোন না কোন ব্যক্তি আমাদের পরিবার পরিজনদের মাঝে থেকে যায় এবং ছাগলের শব্দের ন্যায় আওয়ায করে। আমার উপর কর্তব্য হল যদি এমন কোন ব্যক্তিকে আমার কাছে আনা হয়,- যে ঐরুপ কাজ করেছে, তবে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবো। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তিনি তার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করেননি এবং কোনও গালি দেননি।

৪২৮০। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) দাউদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের মর্মার্থ বর্ণনা করেন। তিনি তার হাদীসে উল্লেখ করেন যে, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যাবেলায় দণ্ডায়মাল হলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা শেষে বললেনঃ, তাদের কি পরিণতি হবে যখন আমরা যূদ্ধে গমন করি তখন তাদের কেউ কেউ আমাদের পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের শব্দের ন্যায় আওয়ায করে। (অর্থাৎ দুষ্কার্য করে।) কিন্তু তার বর্ণনায় -আমাদের পরিবারবর্গের মর্ধ্যে কথাটি বর্ণনা করেননি।

৪২৮১। সুরাইজ ইবনু ইউনুস ও আবূ বাকুর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) দাউদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অংশ বিশেষ বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে (অতএব, সে তিনবার ব্যাভিচারের স্বীকারোক্তি করেছে) একথা উল্লেখ রয়েছে।

৪২৮২। মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) সুলায়মান ইবনু বুরায়েদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মায়েয ইবনু মালিক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে পধিত্র করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, তোমার দুর্ভাগ্য। তুমি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবা কর। বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, লোকটি অল্পদূর চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো। এরপর বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মতই কথা বললেনঃ, যখন চতুর্থবার মায়েয একই কথা বললো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ কোন (বিষয়ে আমি তোমাকে পবিত্র করবো? তখন সে বললো, ব্যাভিচার হতে। সূতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (সঙ্গী সাথীদের নিকট) জিজ্ঞাসা করলেন, তার মধ্যে কি কোন পাগলামী আছে। তখন তাঁকে জানানো হল যে, সে পাগল নয়। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে মদ্যপান করেছে। তখন এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হল এবং তার মুখ শুকে দেখল, সে তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পেল না। বর্ণনাকারী র্রলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ব্যভিচার করেছ? প্রতি উত্তরে সে বললো, জী হ্যা। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি (ব্যভিচারের শস্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। এরপর ত্যকে পাথর নিক্ষেপ করা হল। সূতরাং এ ব্যাপারে জনগণ দু-দলে বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বলতে লাগল, নিশ্চয়ই সে (মায়েয) ধ্বংস হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই তার পাপ কার্যত তাকে ঘিরে ফেলেছে। দ্বিতীয় দল বলতে লাগল, মায়েয এর তাওবার চেয়ে উত্তম (তাওবার অনুশোচনা) আর হয় না। সে প্রথমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আগমন করলো এবং নিজের হাত তার হাতের উপর রাখলো। এরপর বললো আমাকে পাথর দ্বারা হত্যা করুন। বর্ণনা কারী বলেনঃ যে, “দু-তিন দিন পর্যন্ত মানুষ কেবল এ কথাই বলাবলি করছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন এবং তিনি দেখলেন যে, সাহাবাগণ বসে আছে। তিনি প্রথমে সালাম দিলেন, এরপর বসলেন এবং বললেনঃ, তোমরা মায়েয- ইবনু মালিক এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তখন তারা বললেনঃ আল্লাহ মায়েয ইবনু মালিককে ক্ষমা কনুন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, সে এমনভারে -তাওবা- করেছে, যদি তার কোন সম্প্রদায়ের লোকদের মাঝে বর্নিত হয় তবে সকলের- জন্যহ তা যথেষ্ট হবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ- এরপর তার নিকট আযদ গোত্রের গামিদ পরিবারের এক মহিলা আগমন করলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন বললেনঃ, তোমার দুর্ভাগ্য। তিনি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবা কর। তখন মহিলা বললো, আপনি ইচ্ছা করছেন যে, আমাকেও আপনি তেমনিভাবে ফিরিয়ে দিবেন- যেমনিভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মরয়েয ইবনু মালিককে? তখন তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে। মহিলা বললঃ আমি ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী হয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি স্বেচ্ছায় তা করেছ। সে প্রতি উত্তরে বলল, জী হ্যা। তখন তিনি তাকে বললেনঃ, তোমার গর্ভের সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেনঃ সে, এক আননারী ব্যক্তি তার গর্ভের সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত তার দায়িত্ব গ্রহণ করল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, কিছুদিন পর ঐ ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলছেন, গামেদীয় মাহিলা তার সন্তান প্রসব করেছে। তখন তিনি বললেনঃ, এমতাবস্থায় তার ছোট শিশু সন্তানকে রেখে আমি তাকে রজম করতে পারিনা। কেননা তার শিশু সন্তানাকে দুধ পান করানোর মত কেউ নেই। তখন এক আনসারী লোক দাড়িয়ে বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুল! আমি তার দুধপান করানোর দায়িত্ব নিলাম। তখন তিনি তাকে পাথর-নিক্ষেপ করে হত্যা করলেন।

৪২৮৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মায়েয ইবনু মালিক আসলামী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করলো। অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই আমি আমার আত্নার উপর জুলুম করেছি এবং ব্যাভিচার করেছি। আমি আশা করি যে আপনি আমাকে পবিত্র করবেন। তখন তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার তাঁর কাছে আগমন করলো এবং বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ব্যভিচার করেছি। তখন দ্বিতীয়বারও তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায়ের লোকের কাছে প্রেরণ করলেন। তারা সেখানে গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি মনে করেন যে, তার বুদ্ধির বিভ্রাট ঘটেছে এবং সে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়েছে। তারা প্রতি উত্তরে বললেনঃ, আমরা তো তার বুদ্ধির বিভ্রাট সম্পর্কে কোন কিছু জানিনা। আমরা তো জানি যে, সে সম্পূর্ন সুস্হ প্রকৃতির। এরপর মায়েয তৃতীয়বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আগমন করলো। তখন তিনি আবারও একজন লোককে তার গোত্রের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরণ করলেন। তখনও তারা তাকে জানালো যে, আমরা তার সম্পর্কে খারাপ কোন কিছু জানি না এবং তার বুদ্ধিরও কোন বিভ্রাট ঘটেনি। এরপর যখন চতুর্থবার সে আমগন করলো, তখন তার জন্য একটি গর্ত খনন করা হল এবং তার প্রতি (ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ প্রদান করলেন। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর গামেদী এক মহিলা আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লার রাসুল! আমি ব্যভিচার করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন তিনি তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন।-পরবর্তী দিন আবার ঐ মহিলা আগমন করলো এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আপনি কি আমাকে ঐভাবে ফিরিয়ে দিতে চান, যেমন ভাবে আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মায়েযকে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি গর্ডবতী। তখন তিনি বললেনঃ তুমি যদি ফিরে যেতে না চাও, তবে আপাততঃ এখনকার মত চলে যাও এবং প্রসবকাল সময় পর্যন্ত অপেক্ষা কর। রাবী বলেনঃ এরপর যখন সে সন্তান প্রসব করল- তখন তিনি সন্তানকে এক টূকরা কাপড়ের মধ্যে নিয়ে তাঁর কাছে আগমন করলেন এবং বললেনঃ এই সন্তান আমি প্রসব করেছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যাও তাকে (সন্তানকে) দুধ পান করাও গিয়ে। দুধপান করানোর সময় উত্তীর্ণ হলে পরে এসো। এরপর যখন তার দুধপান করানোর সময় শেষ হল তখন ঐ মহিলা শিশু সন্তানটিকে নিয়ে তার কাছে আগমন করলো এমন অবস্হায় যে, শিশুটির হাতে এক টূকরা রুটি ছিল। এরপর বললো, হে আল্লাহর নাবী! এইভো সেই শিশু -যাকে আমি দুধপান করানোর কাজ শেষ করেছি। সে এখন খাদ্য খায়। তখন শিশু সন্তানটিকে তিনি কোন একজন মুসলমানকে প্রদান করলেন। এরপর তার প্রতি (ব্যভিচারের শাস্তি) প্রদানের নির্দেশ দিলেন। মহিলার বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করানো হল এরপর জনগণকে (তার প্রতি পাথর নিক্ষেপের) নির্দেশ দিলেন। তারা তখন তাকে পাথর মারতে শুরু করল। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) একটি- পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করলেন, তাতে রক্ত ছিটকে পড়লো খালিদ (রাঃ) এর মুখমণ্ডলে। তখন তিনি মহিলাকে গালি দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গালি শুনতে পেলেন। তিনি বললেনঁ, সাবধান! হে খালিদ! সেই মহান আল্লাহর শপথ, যার হস্তে আমার জীবন, জেনে রেখো! নিশ্চয়ই সে এমন তাওবা করেছে, যদি কোন ‘হক্কুল ইইবাদ’ বিনষ্টকারী ব্যক্তিও এমন তাওবা করতো- তবে তারও ক্ষমা হয়ে যেতো। এরপর তার জানাযার সালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি তার জানাযায় সালাত আদায় করলেন। এরপর তাকে দাফন করা হলো।

৪২৮৪। আবূ গাসসান মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ মিসমাঈ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করল। সে বলল, হে আল্লাহর নাবী! আমি -হদ্দ- (শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি) এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বললেন, তাকে ভালভাবে সংরক্ষণ করে রেখো। অনন্তর সে যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করলো। এরপর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি (শাস্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাঁধা হল। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হল। অনন্তর তিনি তার উপর (সালাত) আদায় করলেন। তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ, হে আল্লাহর নাবী! আপনি তার (জানাযার) সালাত আদায় করলেন অথচ সে তো ব্যাভিচার করেছিল! তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তাওবা করেছে, যদি তা মদিনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে অধিক উত্তম তাওবাকারী কখনও দেখেছো। সেতো নিজের জীবন আল্লাহর ওয়াস্তে প্রদান করেছে।

৪২৮৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসির (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪২৮৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা এবং যায়িদ ইবনু খালিদ জুনানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেনঃ এক বেদূঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটটি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি অনুমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব অনুসারে হুকুম প্রদান করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ অপর এক ব্যক্তি যে তার চেযে অধিক বুদ্ধিমান ছিল বলল, হা, আপনি আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করুন, তবে এর আগে আমাকে (কথা বলার) অনুমতি প্রদান করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ, বলো। লোকটি বললো, আমার এক ছেলে ঐ ব্যক্তির বাড়িতে চাকর ছিল। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যাভিচার করেছে। অতএব, আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আমার ছেলের উপর রজম (পাথর নিক্ষেপ) এর শাস্তি আরোপিত হবে। সুতরাং আমি উহার বিনিময় প্রদান করলাম একশ, ছাগল ও একটি দাসী। এরপর আমি এ ব্যাপারে আলেমগণের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তারা আমাকে বললেনঃ যে, আমার ছেলের উপর একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছর কাল নির্বাসনের হুকুম বলবৎ হবে। আর ঐ মহিলার উপর রজম (পাথর নিক্ষেপ) এর হুকুম কার্যকর হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ, সেই মহান সত্তার শপথ! যার হস্তে আমার জীবন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে নিস্পত্তি করে দেব। সুতরাং দাসী এবং ছাগল প্রত্যাখ্যাত হবে। (অর্থাৎ এগুলো তুমি ফিরিয়ে নেবে)। আর তোমার ছেলের উপর একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসনের হুকুম কার্যকর হবে। হে উলাইস (রাঃ) (একজন সাহাবা) তুমি আগামীকাল প্রতূষ্যে ঐ মহিলার কাছে গমন করবে (এবং ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবে।) যদি সে তা স্বীকার করে তবে তাকে রজম (পাথর নিক্ষেপ) করে হত্যা করবে। রাবী বলেনঃ পরদিন প্রতুষ্যে তিনি মহিলার কাছে গেলেন (এবং এ ব্যাপারে “জিজ্ঞাসা করলেন।) সে তা স্বীকার করলো। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলার প্রতি শরীয়তের হুকুম কার্যকর করার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে পাথর মারা হল।

৪২৮৭। আবূ তাহির, হারামালা, আমর আন নাকিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪২৮৮। হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন ইয়াহুদী পুরুষ এবং একজন ইয়াহুদী মহিলাকে আনা হল, যারা উভয়েই ব্যভিচার করেছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ, তোমরা তাওরাত কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি কি পেয়েছ? তারা বলল, এতে আমরা উভয়ের মুখমন্ডলে কালি লাগিয়ে দেই এবং উভয়কে বিপরীতমুখী করে উটের উপর আরোহণ করায়ে পরিভ্রমণ করাই। (এই হল তাওরাত বর্ণিত শাস্তি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে তোমরা তাওরাত কিতাব আনয়ন কর, যদি তোমরা এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাক। তারা তখন তাওরাত কিতাব নিয়ে এল এবং পাঠ করতে শুরু করল। যখন (ব্যভিচারের শাস্তি) এর নিকট বর্তি হল তখন যে যুবকটি তাওরাতঁ পাঠ করছিল সে আপন-হাত (পাথর নিক্ষেপের আয়াত) এর উপর রেখে দিল। এবং রক্ষিত হাতের অগ্রাচাতের অংশ পাঠ করলো। তিনি তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ), যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন, তাকে লক্ষ্য করে বললেন আপনি তাকে নির্দেশ করুন সে যেন আপন হাত উঠিয়ে ফেলে। সে তার হাত উঠিয়ে নিল। হঠাৎ দেখা গেল যে, এর নিচেই (পাখর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। উভয়কে পাথর মারাহতো। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ যে, যারা উভয়কে পাথর মেরেছিল, আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমি দেখতে পেলাম যে, পুরুষটি মহিলাটিকে পাথরের-আঘাত থেথে রক্ষা করার চেষ্টা করছে (অর্থাৎ ভালবাসার আকর্ষণে নিজেই পাথরের আঘাত গ্রহণ করছিল)।

৪২৮৯। যুহাযর ইবনু হাবব ও আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-জন ইয়াহুদীকে ব্যভিচারের কারণে রজম (পাথর নিক্ষেপ) করেন। তন্মধ্যে একজন ছিল পুরুষ এবং অপরজন মহিলা, যারা উভয়েই ব্যভিচার-করেছিল। ইয়াহুদীরা উভয়কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এল। এরপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪২৯০। আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়াহুদীগণ তাদের একজন পূরুষ ও মহিলাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এলো-যারা ব্যাভিচার করেছিল। অতঃপর উবায়দুল্লাহ (রহঃ) কর্তৃক নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪২৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখ একজন ইয়াহুদীকে কালি মাখা এবং বেত্রাঘাত কৃত অবস্হায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেনঃ, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরুপই পেয়েছে? তারা বলল, হ্যা। এরপর তাদের মধ্য হতে একজন আলিম (পাদরী) ব্যক্তিকে ডাকালেন এবং বললেনঃ, তোমাকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যাভিচারীর এরুপই পেয়েছ। তখন ইয়াহুদী আলিম ব্যক্তি বললেনঃ, না। তিনি আরো বললেনঃ, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে, এভাবে না বলতেন তরে আমি আপনাকে জানাতাম না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম (পাথর নিক্ষেপ করা)। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্মানীত ব্যক্তিদের মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোন সম্ভ্রান্ত লোককে পেতাম, তখন তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোন দুর্বল ব্যক্তিকে পাকড়াও- করতাম তখন তার উপর শরীয়াতের প্রকৃত শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হবে। সূতরাং আমরা ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্রাঘাত করাকেই গ্রহন করেনিলাম, পাথর নিক্ষেপের পরিবর্তে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ ‘রজম’ বাস্তবায়িত করলাম যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সূতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে ঐ ইয়াহুদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এই আয়াত হে রাসুল! যারা কাজে দ্রুতগামী তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। যদি তোমরা রা প্রদত্ত হও, তবে তা ধারণ কর পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা (ইয়াহুদীরা) বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গমন করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে- কালি লাগালো এবং বেত্রাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন, তবে তোমরা তা কার্যকর করবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে। আল্লাহ তাআলা (এই মর্মে) আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ ‘যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির (অস্বীকারকারী) সম্প্রদায়। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াঁত অনুসারে বিচার করে না তারাই- হলো অত্যচারী দল”। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো সীমালংঘনকারী দল। এই সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়।

৪২৯২। ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে “তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ প্রদান করলেন, এরপর (ঐ ইয়াহুদীকে)পাথর মারা হল” পর্যন্ত অনুরুপ বর্ননা করেন। এরপরে বর্ণিত আয়াত সমূহ তিনি উল্লেখ করেন নাই।

৪২৯৩। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের একজন পূরুষ এবং একজন ইয়াহুদী পূরুষ ও মহিলার প্রতি (ব্যভিচারের জন্য) পাথর নিক্ষেপ করার শাস্তি কার্যকর করেন।

৪২৯৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রাঃ) থেকে একই সূত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি “এবং একজন মহিলা এই শব্দটি উল্লেখ করেন।

৪২৯৫। আবূল কামেল জাহদারী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ ইসহাক শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি (ব্যভিচারের জন্য) পাথর মেরেছেন। তিনি বললেনঃ, হ্যা। আমি বললাম, সূরা নূর অবতীর্ণ হওয়ার পুর্বে, না পরে? তখন তিনি বললেনঃ, আমি তা জানি না। ৪২৯৬। ঈসা ইবনু হাম্মাদ মিসরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যদি তোমাদের কোন দাসী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার কার্য প্রকাশ পায় তবে তাকে শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি অনুযায়ী বেত্রাঘাত করবে এবং তাকে কোন প্রকার ভৎসনা করবে না। এরপর যদি দ্বিতীয়বার সে ব্যাভিচার করে, তবে তাকে শরীয়াত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি বেত্রাঘাত করবে এবং তাকে কোন প্রদার ধমক দিবে না। এরপর যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার কার্য প্রকাশ পায়। তবে তাকে বিক্রি করে দেবে, চুলের দড়ি পরিমাণ মূল্যে হলেও। (অর্থাৎ অতি কম মূল্য হলেও।)

৪২৯৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আবদ ইবনু হুমায়দ, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, হান্নাদ ইবনু সারী আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দাসীর বেত্রাঘাত সম্পর্কে বর্ণিত যে, যখন সে পরপর তিনবার ব্যভিচার করে, এরপর চতূর্থবারে তাকে বিক্রি করে দেবে”।

৪২৯৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আবদ ইবনু হুমায়দ, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, হান্নাদ ইবনু সারী আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দাসীর বেত্রাঘাত সম্পর্কে বর্ণিত যে, যখন সে পরপর তিনবার ব্যভিচার করে, এরপর চতূর্থবারে তাকে বিক্রি করে দেবে”।

৪২৯৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসিত হলেন যখন কোন অবিবাহিত দাসী ব্যভিচার করে এর হুকুম সম্পর্কে। তখন তিনি বললেনঃ, যদি সে ব্যাভিচার করে তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবার যদি সে ব্যভিচার করে তবে আবারও বেত্রাঘাত করবে। এরপরও যদি সে ব্যভিচার করে তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে এবং পরিশেষে তাকে বিক্রি করে দেবে, যদি একটি দড়ির মূল্য পরিমাণ মুল্যও হয়। ইবনু শিহাব (সন্দেহ সূচক) বর্ণনা করেছেন যে, আমি জানি না (বিক্রি করার নির্দেশটি কি তৃতীয় বারের পরে, না চতূর্থ বারের পরে)। কানাবী (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেনঃ যে, ইবনু শিহাব (রহঃ) (দড়ি) বলেছেনঃ।

৪২৯৯। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও যায়িদ ইবনু খালেদ জুহানী (রাঃ) থে কে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলেন, এ হাদীস তাদের উভয়ের বর্ণিত উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ। আর তিনি ইবনু শিহাবের কথা (দড়ি) একথা উল্লেখ করেননি।

৪৩০০। আমর আন নাকিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর তাদের উভয়ের হাদীসে দাসী বিক্রি সম্পর্কে (তৃতীয়বারে অথবা চতুর্থবারে) একথায় সন্দেহ সূচক বর্ণনা করেছেন।

৪৩০১। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দামী (রহঃ) আবূ আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আলী (রাঃ) এক ভাষণে বললেনঃ, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের (ব্যাভিচারী) দাস-দাসীদের উপর শরীয়তের হুকুম হদ্দ কার্যকর কর, তারা-বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক দাসী ব্যভিচার করেছিল। সুতরাং তিনি তাকে বেত্রাঘাত কবার জন্য আমাকে নির্দেশ দিলেন। সে তখন (নিফাস) সদ্য প্রসূতি অবস্হায় ছিল। আমি তখন ভয় করলাম যে, এমতাবস্হায় যদি আমি তাকে বেত্রাঘাত করি- তবে হয়ত তাকে মেরেই ফেলবো। এই ঘটনা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেনঃ, তুমি ভালই করেছ।

৪৩০২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সুদ্দী (রাঃ) থেকে একই সুত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের মধ্যকার বিবাহিত এবং অবিবাহিত একথার উল্লেখ করেননি। তাঁর বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “তুমি তাকে ছেড়ে দাও, যতক্ষন না সে নিফাস থেকে পবিত্র হয়।

৪৩০৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একদিন একজন মদ্যপকে হাযির করা হলো। তখন তিনি দুঁটি খেজুরের ডাল দিয়ে চল্লিশ বারের মত তাকে বেত্রাঘাত করলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ, যে আবূ বাকর (রাঃ) ও (তার খিলাফত আমলে) তাই করেন। পরে যখন উমার (রাঃ) খালীফা হলেন, তিনি এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ চাইলেন। তখন আব্দুর রহমান (রাঃ) বললেনঃ, অপরাধের দন্ড কম পক্ষে আশি বেত্রাঘাত হওয়া চাই। তাই উমার (রাঃ) এরই নির্দেশ দিলেন।

৪৩০৪। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীবুল হারেসী (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যক্তিকে আনা হল অতঃপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪৩০৫। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্যপানে খেজুরের ডাল ও স্যান্ডেল দ্বারা প্রহার করেছেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর আমলে) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেছেন। উমার (রাঃ) এর খিলাফত কালে মানুষের সমৃদ্ধি এলে তারা প্রচুর পানি ও ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস আরম্ভ করলো। তিনি তাদেরকে বললেনঃ, মদ্যপানের বেত্রাঘাত সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কি? আবদুল রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) বললেনঃ, এ ব্যাপারে আমি মনে করি যে, আপনি সর্বনিম্ন দন্ড নির্ধারণ করুন। তারপর উমার (রাঃ), মদ্যপানের দণ্ডে আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন।

৪৩০৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪৩০৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্য পানের অপরাধে জুতা এবং খেজুরের ঢাল দ্বারা চল্লিশটি আঘাত করতেন। অতঃপর উল্লিখিত হাদীস বর্ণনাকারীদ্বয়ের অনুরুপ বর্ণনা করেন। আর তিনি পতীনি ও বসতি”(কথাটির উল্লেখ করেননি।

৪৩০৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, আলী ইবনু হুজর ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) শব্দ তাঁরই, হুসাইন ইবনু মুনযির আবূ হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদকে তাঁর কাছে আনা হল। সে ফজরের দু-রাকাআত সালাত আদায় করে বলেছেন, আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে আরো অধিক রাকআত আদায় করবো। তখন দুব্যক্তি ওয়ালীদের উপর সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল ইমরান। সে বলল, ঐ মদ খেয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষী দিল যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে (মদ্যপানের কারণে)। তখন উসমান (রাঃ) বললেনঃ সে মদ খাওয়ার” পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বললেনঃ, হে আলী (রাঃ) আপনি উঠূন এবং তাকে বেত্রাঘাত করুন। তখন আলী হাসান (রাঃ) কে বললেনঃ; হে হাসান! তুমি উঠ এবং তাকে বেত্রাঘাত করা হাসান (রাঃ) বললেনঃ, যে ক্ষমতার সা’দ ভোগ করেছে সেই তার তিক্ততা ভোগ করুক। এতে যেন আলী (রাঃ) তার প্রতি মনঃক্ষুন্ন হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ, হে আবদুল্লাহ ইবনু জাঁফর! তুমি উঠ এবং তাকে দুররা মার। তিনি তাকে দূররা মারলেন। আর আলী (রাঃ) তা গণনা করলেন। যখন চল্লিশটি দূররা মেরেছেন এবং আবূ বাকর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফত কালে চল্লিশটি দুররা মেরেছেন। আর উমার (রাঃ) (তার খিলাফত কালে) আশিটি দুররা মেরেছেন। আর এতদ্বভয় সংখ্যার প্রতিটই সুন্নাত। তবে এটি (শেষোক্তটি) আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। আলী ইবনু হুজর (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। ইসমাঈল (রহঃ) বলেনঃ যে, আমি তা দানাজ থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু তা আমার মনে নেই।

৪৩০৯। মুহাম্মাদ ইবনু মিনহালুদ্দারীর (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেনঃ কোন অপরাধীর উপর হদ্দ (শরীয়াতের শাস্তি) প্রয়োগে যদি সে মারা যায় তাতে আমি ব্যথিত হই। কিন্তু মদ্যপায়ীর শাস্তি প্রদানে আমি ভীত। কেননা, এতে যদি সে মারা যায় তবে আমি তার দিয়্যাত- (ক্ষতিপূরণ) প্রদান করবো। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কোন কিছু বলে যাননি।

৪৩১০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে একই সূত্রে উল্লিখিত র্হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪৩১১। আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ বুরদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কাউকে যেন আল্লাহ কর্তৃক-নির্ধারিত অপরাধের নির্দিষ্ট শাস্তি ব্যতীত দশ বেত্রাঘাতের অধিক বেত্রাঘাত না করা হয়।

৪৩১২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমরা কোন এক বৈঠকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ যে, তোমরা আমার কাছে এ বলে বায়আত গ্রহণ কর যে, তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ব্যভিচার করবে না, চুরি করবেনা এবং কাউকে হত্যা করবেনা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। কিন্তু ন্যায়সঙ্গতভাবে (অর্থাৎ কিসাস হিসাবে অথবা হত্যাযোগ্য কোন অপরাধে)। অতএব, তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তা পূর্ণ করবে, সে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাবে। আর যদি কেউ উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হায় শাস্তি ভৌগ করে, তবে তাই তার জন্য কাফফা-রা (বদলা) হয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যক্তি উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয় অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তা গোপন রাখেন, তবে বিষয়টি মহান আল্লাহর ইখতিয়ারে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন।

৪৩১৩। আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তিনি তার হাদীসে শুধু এটূকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “অতএব, তিনি আমাদের কাছে সূরা নিসার আয়াত (অর্থ)৪ তারা -যেন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে শেষ, আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন।”

৪৩১৪। ইসমাইল ইবনু সালিম (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে অনুরুপ অঙ্গীকার নিলেন, যেরুপ অঙ্গীকার নিয়েছেন মুহাম্মাদের থেকে যেন আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করি, চুরি না করি, ব্যভিচার না করি, আমাদের সন্তানদেরকে হত্যা না করি এবং একে অপরের অনিষ্ট না করি। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তা পূর্ণ করবে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে পাবে। আর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন কোন অপরাধ করে যাতে (হদ্দ) শরীয়তের শাস্তি অত্যাবশ্যকীয় হক, অতঃপর তার উপর সেই শাস্তি কার্যকরী হয়, তবে তা তার অপরাধের কাফফারা (বদলা) হয়ে যাবে। আর -যে ব্যক্তির পাপ কার্য আল্লাহ গোপন রাখলেন, তার বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারে। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তাকে শাস্তি দিবেন। আর যদি ইচ্ছে করেন তবে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

৪৩১৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) উভয়ে উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ, আমি সে সব তত্তাবধায়ক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলাম, যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত করেছিল। আমরা শপথ নিলাম যে, আমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করবো না, ব্যভিচার করবো না, চুরি করবো না, কাউকে হত্যা করবো না- যা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু ন্যায় সঙ্গত ভাবে। (অর্থাৎ কিসাস- বা-হদ্দ- এর মাধ্যমে।) এবং ডাকাতি করবো না ও কোন প্রকার নিষিদ্ধ কর্মও করবো না। যদি আমরা ঐরুপ কার্যাবলী করতে পারি তবে আমাদের জান্নাত মিলবে। আর যদি আমরা উল্লিখিত অপরাধের কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফায়সালা আল্লাহর কাছেই। ইবনু রুমহ বলেনঃ, এর ফায়সালা মহান আল্লাহর কাছেই।

৪৩১৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূঁ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পশুর আঘাত ক্ষমাযোগ্য, কুপে নিপতিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির – ক্ষতি-ক্ষমাযোগ্য এবং খনিতে নিপতিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতি ক্ষমাযোগ্য। (অর্থাৎ ঐসব কারণে যদি কেউ আহত বা নিহত হয়, তবে এতে কোন “দিয়্যাত” বা ক্ষতিপূরণ নেই) আর গুপ্তধন অথবা খনিজ পদার্থ প্রতিত এক পঞ্চমাংশ নির্ধারিত।

৪৩১৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি- (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে লাইস (রহঃ) এর সূত্র অনুসারে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস -বর্ণনা করেছেন।

৪৩১৮। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪৩১৯। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কুপের মধ্যে পতিত হয়ে-কেউ আহত বা নিহত হলে তা ক্ষমারযোগ্য, খনিতে আহত হলে তাও ক্ষমারযোগ্য এবং পশুর আক্রমণে আহত হলেও তা ক্ষমারযোগ্য। আর খনিতে অথবা গুপ্তধন -প্রাপ্তিতে এক পঞ্চমাংশ নির্ধারিত।

৪৩২০। আবদুল রাহমান ইবনু সালাম, উবায়দুল্লাহ ইবনুু-মুয়ায, ইবনু বাশশার (রহঃ) সকলই আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: অপরাধের শাস্তি
অপরাধের শাস্তি
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/punishment.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/punishment.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy