সদ্ব্যবহার,আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা

৬২৬৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ইবনু জামীল ইবনু তারীফ সাকাফী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলুল্লাহ!মানুষের মধ্যে আমার সদ্য ব্যবহারের যোগ্য ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেনঃ এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। আর কুতায়বা বর্ণিত হাদীসে “আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে”- এর উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর বর্ণনায় মানুষ শব্দটি উল্লেখ করেননি।

৬২৭০। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মানুষের মধ্যে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে? তিনি বললেন তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপরও তোমার মা। এরপর তোমার পিতা। এরপর তোমার নিকটবর্তী জন। এরপর তোমার নিকটবর্তী জন।

৬২৭১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো। এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন। এতে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন, এরপর সে বলল, হ্যা। এরপর তোমার পিতা! তুমি অবশ্যই অবগত হবে।

৬২৭২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) ইবনু শুবরমা (রহঃ) থেকে এই সনদে উহায়ব বর্ণিত হাদীসে (সর্বাপেক্ষা সদ্ব্যবহার যোগ্য কে-?) উল্লেখ রয়েছে। আর মুহাম্মাদ ইবনু তালহার হাদীসে মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা বেশী হকদার কে রয়েছে। এরপর তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৬২৭৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো। এরপর সে তাঁর কাছে জিহাদে অংশ গ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছে? সে বলল হাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তাদের উভয়ের সন্তষ্টি অর্জনের চেষ্টা কর।

৬২৭৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবূল আব্বাস (রহঃ) বলেন যে, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসল। এরপর রাবী আগের মত উল্লেখ করেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ আবূল আব্বাসের নাম সায়িব ইবনু ফাররুখ মাক্কী (রহঃ)।

৩২৭৫। আবূ কুরায়ব (রহঃ) অন্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আরেক সূত্রে কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) হাবীব (রহঃ)-এর সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ননা করেন।

৬২৭৬। সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুুূল আস (রাঃ) খেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপ নার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। আর আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বললেনঃ তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আ ছে কি? সে বলল, হাঁ উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাঙ্খা করছ? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মাতা-পিতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দূ-জনের সংগে সদাচরণ কর।

৬২৭৭। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আ বু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতা তিনি বলেন, হুরায়জ (বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি) তার ইবাদতখানায় ইবাদতে মশণ্ডল থাকতেন। (একবার) তাঁর মাতা তাঁর কাছে এলেন। হুমায়দ (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে আবূ রাফি এমন আকারে ব্যক্ত করেন, যেমন ভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের ডাকের আকার আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে ব্যক্ত করেছেন। কিরুপ তাঁর হাত তাঁর এর উপর হাত রাখছিলেন। এরপর তাঁর দিকে মাথা উচু করে তাকে ডাকছিলেন। বললেন, হে জুরায়জ! আমি -তোমার মা, আমার সাথে কথা বল। এই কথা এমন অবস্থায় বলছিলেন, যখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! (একদিকে) আমার মা আর (অপর দিকে) আমার সালাত (আমি কী করি।)”। রাবী বলেন-অবশেষে তিনি তাঁর সালাতকে অগ্রাধিকার দিলেন। এবং তার মা ফিরে গেলেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার আসলেন এবং বললেন, হে জুরায়জ! আমি তোমার মা, তুমি আমার সংগে কথা বল। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ! আমার মা, আমার সালাত। তখন তিনি তাঁর সালাতে মশগুল রইলেন। তখন তাঁর মা বললেন, হে আল্লাহ! এই জুরায়জ আমারই ছেলে। আমি তার সংগে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। সে আমার সংগে কথা বলতে অস্বীকার করল। হে আল্লাহ! তার মৃত্যূ দিয়ো না, যে পর্যন্ত না তাকে ব্যভিচারিনা না দেখাও। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তাঁর মাতা তার বিরুদ্ধে অন্য কোন বিপদের জন্য বদ দুআ করতেন তাহলে অবশ্যই সেই বিপদে পতিত হত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এক মেষ রাখাল জুরায়জের ইবাদত খানায় (মাঝে মাঝে) আশ্রয় নিত। তিনি বলেন, এরপর গ্রাম থেকে এক মহিলা বের হয়েছিল। উক্ত রাখাল তার সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হয়। এতে মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে এবং একটি পূত্র সন্তান জন্ম দেয়। তখন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, এই (সন্তান) কোথা থেকে? সে উত্তর দিল, এই ইবাদতখানায় যে বাস করে, তার থেকে। তিনি বলেন, এরপর তারা শাবল-কোদাল ইত্যাদি নিয়ে এল এবং চীৎকার করে ডাক দিল। তখন জুরায়জ সালাতে মশগুল ছিলেন। কাজেই তিনি তাদের সাথে কথা বললেন না। তিনি বলেন, এরপর তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করতে লাগল। তিনি এ অবস্হা দেখে নীচে নেমে এলেনা এরপর তারা বলল, এই মহিলাকে জিজ্ঞাসা কর (সে কী বলছে)। তিনি বলেন, তখন জুরায়জ মুচকী হেসে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, তোমার পিতা কে”? তখন শিশুটি বলল, আমার পিতা সেই মেষ রাখাল। যখন তারা সে শিশুটির মুখে একথা শুনতে পেল তখন তারা বলল, (হে দরবেশ) আমরা তোমার ইবাদতখানার (গীর্জার) যেটুকু ভেঙ্গে ফেলেছি তা সোনা-রূপা দিয়ে পূনঃনির্মাণ করে দেব। তিনি বললেন, না; বরং তোমরা মাটি দ্বারাই পূর্বের ন্যায় তা নির্মাণ করে দাও। এরপর তিনি তার ইবাদতগাহে উঠে বসলেন।

৬২৭৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনজন ব্যতীত কেউ দোলনায় কথা বলেনি। তার মধ্যে একজন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম), আরেকজন জুরায়জ সম্পর্কিত শিশু। জুরায়জ ছিলেন একজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি। তিনি একটি ইবাদতখানা তৈরী করে সেখানে অবস্হান করতেন। তখন তার কাছে তার মা আসলেন। তিনি সে সময় সালাতে মশগুল ছিলেন। মা ডাকলেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বলতে লাগলেন, হে পরওয়ারদিগার! (একদিকে) আমার মা ও (অপর দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মশগুল রইলেন। মা ফিরে গেলেন। পরের দিন তিনি আবার তার কাছে আসলেন। তখনও তিনি সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বললেন, হে জুরায়জ! তখন তিনি (মনে মনে) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! একদিকে আমার মা (আমাকে ডাকছেন) আর (অন্য দিকে) আমার সালাত। এরপর তিনি সালাতে মশগুল রইলেন। তখন মা বললেন, হে আল্লাহ! বদকার স্ত্রীলোকের সন্মূখিন হওয়ার আগে তুমি তার মৃত্যু দিয়ো না। এরপর বনূ ইসরাঈলদের মধ্যে জুরায়জ ও তার ইবাদত সম্পর্কে আলোচনা হতে লাগল। (বনী ইসরাঈলের মধ্যে) সৌন্দর্য উপমেয় এক দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। সে বলল, যদি তোমরা চাও তাহলে আমি তোমাদের সামনে তাকে (জুরায়জকে) ফিতনায় ফেলতে পারি। তিনি বলেন, এরপর সে জুরায়জের সামনে নিজেকে পেশ করে। কিন্ত্বু জুরায়জ তার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। অবশেষে সে এক মেষ রাখালের কাছে এল। সে জুরায়জের ইবাদতখানায় আশ্রয় নিত। সে তাকে নিজের দিকে প্রলূব্ধ করল। সে (রাখাল) তার উপর উপগত হল। এতে সে গর্তবতী হয়ে গেল। যখন সে সন্তান প্রসব করল তখন বলে দিল যে, এই সন্তান জুরায়জের। লোকেরা (একথা শুনে) তার কাছে এসে জড়ো হল এবং তাঁকে নীচে নেমে আসতে বাধ্য করল এবং তারা তার ইবাদতখানা ধ্বংস করে দিল আর তাকে প্রহার করতে লাগল। তখন তিনি (জুরায়জ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের ব্যাপার কী? তারা বলল, তুমি তো এই দূশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের সাথে ব্যাবিচার করেছ এবং তোমার পক্ষ থেকে সে সন্তান প্রসব করেছো তখন তিনি বললেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটি নিয়ে এলো। এরপর তিনি বললেন, আমাকে একটু অবকাশ দাও, আমি সালাত আদায় করে নেই। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং সালাত শেষে কাছে এলেন। এরপর তিনি শিশুটির পেটে টোকা দিয়ে বললেন হে বৎস! তোমার পিতা কে? সে উত্তর করল। অমুক রাখাইল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন লোকেরা জেরায়জের দিকে এগিয়ে আসল এবং তাঁকে চুম্বন করতে এবং তাঁর পায়ে হাত বুলাতে লাগল। এরপর বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানা স্বর্ণ দ্বারা নির্মাণ করে দেব। তিনি বললেন, না বরং পুনরায় মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও, যেমন ছিল। লোকেরা তাই করল। একদা এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। তখন উত্তম পোষাকে সজ্জিত এক লোক একটি হৃষ্টপূষ্ট সাওয়ারীর উপর সাওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিয়ে দাও। তখন শিশুটি মাতৃস্তন ছেড়ে তার প্রতি লক্ষ্য করে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না।” এরপর সে আবার স্তনের দিকে ফিরে দুধ পান করতে লাগল। রাবী বলেন, মনে হয় যেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এখনো দেখছি যে, তিনি তার শাহাদাত অঙ্গুলি নিজ মুখে দিয়ে তা চুষে সেই শিশুটির দুধ পানের দৃশ্য দেখাচ্ছেন। এরপর বর্ণনা করলেন যে, কিছু লোক একজন যূবতীকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাকে তারা প্রহার করছিল এবং “ বলাবলি করছিল যে, তুই যিনা করেছিস আর তুই চুরি করেছিস। আর সে বলছিল, আল্লাহরই উপর আমার ভরসা; আর তিনি উত্তম কর্ম বিধায়ক। তখন তার মা বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার পূত্রকে এর (দাসীর) মত বানিও না। তখন শিশুটি দুধপান ছেড়ে তার (দাসীর) প্রতি লক্ষ্য করে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর (এই দাসীর) মত বানিয়ে দাও।” সে সময় মা ও পূত্রের মধ্যে আলাপ হল। তখন মা বলল, ঠাণ্ডা পড়ুক (এ কেমন কথা)। সুদর্শন এক ব্যক্তি যাচ্ছিল তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে এর মত বানিও-”। এরপর তুমি বললে হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এর মত বানিও না”। এরপর লোকেরা এই দাসীকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তারা তাকে প্রহার করছিল এবং বলছিল, যিনা করেছিস এবং চুরি করেছিস। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে তার মত বানিও না। আর তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানাও। সে বলল, সেই আরোহী ব্যক্তি ছিল অত্যাচারী। তাই আমি বলেছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিও না। আর যে দাসীকে ওরা বলছিল, তুই যিনা করেছিস। আসলে সে ব্যভিচারে লিপ্ত না এবং বলেছিল, চুরি করেছিস, অথচ সে চুরি করেনি। তাই আমি বললাম, “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তার মত বানিয়ে দাও”।

৬২৭৯। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, আবার সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলীন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলীন যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যাবস্হায় পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করল না।

৬২৮০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধুলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক, আবার তার নাক ধূলিমলীন হোক। জিজ্ঞাসা করা লে, কার ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্হায় পেল, এর পরও সে জান্নাতে প্রবেশ করল না।

৬২৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার নাক ধূলিমলীন হোক-কথাটি তিনবার বলেছেন। এরপর তিনি উক্ত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৬২৮২। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা মূসাযযমার এক রাস্তায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর সংগে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হল। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে সাওয়ার হতেন সে গাধা তাকে সাওয়ারীর জন্য দিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথার পাগড়ী তাকে দান করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এত দেওয়ার প্রয়োজন কী ছিল) তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, এই ব্যক্তির পিতা উমর ইবনুল খাজব (রাঃ)-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুর সংগে আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।

৬২৮৩। আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম সা’দ্ধব্যাবহার হল পিতার বন্ধুর সংগে সম্পর্ক বজায় রাখা।

৬২৮৪। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি মক্কা অভিমুখে রওনা হতেন তখন তাঁর সংগে একটি গাধা থাকত। উটের সাওয়ারীতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য তাতে আরোহণ করতেন। আর তাঁর সাথে একটি পাগড়ী থাকত, যা দিয়ে তিনি মাথা বেঁধে নিতেন। একদা তিনি উক্ত গাধায় আরোহণ করে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর পাশ দিয়ে একজন বেদুঈন অতিক্রম করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও? সে বলল, হ্যা। তখন তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, এতে আরোহণ কর। তিনি তাকে পাগড়ীটিও দান করলেন এবং বললেন, এটি দ্বারা তোমার মাথা বেঁধে নাও। তখন তাঁর সংগীদের কেউ কেউ তাকে বললেন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আপনি এই বেদুইনকে গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর সাওয়ার হয়ে আপনি স্বস্তি লাভ করতেন এবং পাগড়ীটিও দান করলেন, যার দ্বারা আপনার মাথা বাঁধতেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার হল কোন ব্যক্তির পিতার ইন্তেকালের পর তার বন্ধু-বান্ধবের সংগে সদ্ভাব রাখা। আর এই বেদুঈনের পিতা ছিলেন উমর (রাঃ) -এর অন্তরঙ্গ বন্ধু।

৬২৮৫। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) নাওয়াস ইবনু সামআন আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তখন উত্তর দিলেন, পূণ্য হচ্ছে সচ্চরিত্র। আর পাপ হচ্ছে যা তোমার অন্তরে খটকা করে এবং লোকে তা জানূক তা তুমি অপছন্দ কর।

৬২৮৬। হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদ্বীনা মুনাওয়ারাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে এক বছর অবস্হান করি। আর একটি মাত্র কারণ আমাকে হিজরত থেকে বিরত রাখে। তা হল দ্বীনের ব্যাপারে সাওয়াল করার সুযোগ। আমাদের কেউ যখন হিজরত করে আসতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করতো না। তিনি বলেন, অতএব আমি তাঁকে পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেনঃ সদাচারণই পূণ্য আর যা তোমার অন্তরে খটকা সৃষ্টি করে এবং তুমি যা লোক সন্মুখে প্রকাশ করতে অপছন্দ কর, তাই পাপ।

৬২৮৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ইবনু জামীল ইবনু তারীফ ইবনু আবদুল্লাহ সাকাফী ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যখন মাখলুক সৃষ্টি করে তা সমাপ্ত করলেন, তখন “রেহম” দণ্ডায়মান হল এবং বলল, এ হচ্ছে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কারীর স্থান। বললেনঃ হ্যা। তুমি কি এতে পরিতুষ্ট নও যে, যে তোমাকে সংযুক্ত রাখবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব, আর যে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে, আমিও তাকে আলাদা করে দেব? তখন সে বলল, হ্যা। তিনি বললেন, তোমার জন্য তাই হবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তোমরা চাও তাহলে তিলাওয়াত করতে পার?, তোমরা কি অস্বীকার করতে পারবে যে, তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ফাসা’দ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদের আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেবে, এরাই তারা-যাদের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। এরপর তিনি তাদের বধির করে দিয়েছেন। ও তাদের চক্ষুসমূহ দৃষ্টিহীন করে দিয়েছেন। তারা কি কুরআন সম্পর্কে অতি নিবেশ সহকারে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তর, তালাবদ্ধ।

৬২৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রেহম আল্লাহর আরশের সাথে ঝূলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক রাখবেন। আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।

৩২৮৯। যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) যুহায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ইবনু আবূ উমর (রাঃ) সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করেন, অর্থাৎ আত্নীয়তা ছিন্নকারী।

৬২৯০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা দুবায়য়ি (রহঃ) জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

৬২৯১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যূহরীর সুত্রে এই সনদে তার অনুরুপ বর্ণিত আছে। আর তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

৬২৯২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজায়বী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে জনেছি, যে আগ্রহের সাথে তার জীবিকার প্রশস্ততা চায় কিংবা দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন তার আত্নীয়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।

৬২৯৩। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার জীবিকার প্রশস্ততা চায় এবং সে দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন তার আত্নীয়দের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।

৬২৯৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আত্নীয় পরিজন আছেন। আমি তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করি; কিস্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি; কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সঙ্গে উদার ব্যবহার করি আর তারা আমার সঙ্গে মূর্খসূলব আচরণ করে। তখন তিনি বললেনঃ তুমি যা বললে, যদি প্রকৃত অবস্হা তাই হয় তাহলে তুমি যেন তাদের উপর জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফিরিশতা) থাকবে, যতক্ষন তুমি এই অবস্থায় বহাল থাকবে।

৬২৯৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা করবে না, বিদ্বেষ করবে না এবং পরস্পর পশ্চাতে শত্রুতা করবে না। তোমরা সবই আল্লাহ্‌র বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে আর কোন মুসলমান ব্যক্তির পক্ষে তার ভাই এর সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা পরিত্যাগ করা হালাল নয়।

৬২৯৬। হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক(রাঃ)- এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিকের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত।

৬২৯৭। যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ উমর ও আমর নাকিদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণিত। তবে ইবনু উয়ায়না (আরবি লিখা আছে) (এবং তোমরা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করো না) অধিক বলেছেন।

৬২৯৮। আবূ কামিল মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে যুহরী সূত্রে ইয়াযীদের বর্ণনা, যুহরী থেকে সুফিয়ানের বর্ণনার অনুরূপ। তিনি চারটি বিষয় একত্রে উল্লেখ করেছেন। আর আবদুর রাযযাক (রহঃ) – এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে , (আরবি লিখা আছে) (তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করবে না, পরস্পর পশ্চাতে শত্রুটা করবে না)।

৬২৯৯। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ)- এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা একে অপরের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে না এবং তোমরা আল্লাহ্‌র বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে। আলী ইবনু নাসর জাহযামী (রহঃ)শু’বা (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি অধিক বলেছেন, (আরবি লিখা আছে) (যে ভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের আদেশ করেছেন)।

৬৩০০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাই এর সঙ্গে তিন দিনের বেশী সম্পর্ক চ্ছিন্ন রাখা হালাল নয়। একজন এই দিকে মুখ ফিরিয়ে, অন্যজন ঐ দিকে ঘাড় বাকিয়ে থাকে। আর তাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে প্রথমে সালাম করে।

৬৩০১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) অন্য সূত্রে হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আরেক সুত্রে হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ (রহঃ) অন্য সূত্রে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আরদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সবাই যুহরী (রাঃ) থেকে মালিকের সনদে ও তাঁর হাদহসের অনুরুপ বর্ননা করেন। তবে তার বক্তব্য ‘ফায়ুরিদু হাযা অয়ুরিদু হাযা’ এর পরিবর্তে মালিক ব্যতীত সকলেই বর্ণনা করেন-‘ফায়াসুদ্দু হাযা অয়াসুদ্দু হাযা’।

৬৩০২। মুহাম্মাদ ইবনু নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদারের জন্য তার ভাইকে তিন দিনের বেশী পরিত্যাগ করা হালাল নয়।

৬৩০৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন দিনের পরে হিজরত (পরিত্যাগ) বৈধ নয়।

৬৩০৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অনুমান করা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা। আর তোমরা ছিদ্রানেষ্বণ করো না, সুপ্তদোষ অনুসন্ধান করো না, তোমরা পরস্পর লিপ্সা করো না, পরস্পর বিদ্ধেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না; পরস্পরে পশ্চাতে শক্রতা করো না বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক।

৬৩০৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সম্পর্ক ছিন্ন করো না। একে অন্যের পেছনে শক্রতা করো না, একে অন্যের ছিদ্রানেষ্বণ করো না, অন্যের বেচা-কেনার উপর তুমি বেচা-কেনার চেষ্টা করো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক।

৬৩০৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা করবে না, একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, ছিদ্রান্বেষণ করবে না, শুপ্ত দোষ অনুসন্ধান করো না এবং পরস্পরে ধোঁকাবাজী করবে না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক।

৬৩০৭। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আলী ইবনু নাসর জাহযামী (রহঃ) আঁমাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত যে, তোমরা একে অপরের সঙ্গে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করো না, একে অপরের পেছনে শক্রতা করো না, পরস্পরে বিদ্ধেষ পোষণ করো না। আর তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক, যেমন আল্লাহ তা-আলা তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

৬৩০৮। আহমাদ ইবনু সাঈদ দারেমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে অন্যের পেছনে শক্রতায় লিপ্ত হয়ো না, পরস্পরে লিপ্সা করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক।

৬৩০৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা পরস্পরে হিংসা পোষণ করবে না, পরস্পর ধোঁকাবাজী করো না, পরস্পর বিদেষ পোষন-করো না একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে পশ্চাতে শক্রতা করো না এবং একের বেচাকেনার উপর অন্যে বেচা-কেনার চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাক। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুলূম করবে না, তাকে অপদস্হ করবে না এবং হেয় করবে না। তাকওয়া এইখানে, এই কথা বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার তার সীনার প্রতি ইশারা করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় করে। কোন মুসলমানের উপর প্রত্যেক মুসলমানের জান-মাল ও ইজ্জত-আবরু হারাম।

৬৩১০। আবূ তাহির-আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরপর উসামা ইবনু যায়িদ দাঊদের হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন। তরে এই বর্ণনায় তিনি কিছুটা কমবেশী করেছেন। তারা উভয়ে যেটুকু অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর ও বাহ্যিক আকৃতির প্রতি নযর করেন না বরং তিনি তোমাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। আর তিনি তাঁর আংগুলের দ্বারা স্বীয় বুকের দিকে ইশারা করেন।

৬৩১১। আমর নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি নযর করেন না; বরং তিনি নযর করেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।

৬৩১২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ উনূক্ত করা হয়। এরপর এমন সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্হাপন করে না। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শক্রতা বিদ্যমান। এরপর বলা হবে, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দুজনকে আপোষ রফা করার জন্য অবকাশ দাও, এই দু-জনকে আপোষ রফার জন্য অবকাশ দাও। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) অন্য সূত্রে কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আহমাদ ইবনু আবাদাহ দাবইয়্যু (রহঃ)সুহায়ল (রাঃ)-এর পিতার সুত্রে মালিকের সনদে তার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে দ্বারাওয়ার্দী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ইবনু আবাদাহ এর বর্ননায় তিনি তা “কিন্তু সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী দুই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হবে না– উল্লেখ আছে। আর কুতায়বা, (রহঃ) বলেছেন, (তবে সম্পর্ক পরিত্যাগকারী দুজনকে ক্ষমা করা হবে না)।

৬৩১৩। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) মারফূ সনদে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বৃহস্প্রতিবার ও সোমবার আমলের ফিরিশ্তি পেশ করা হয়। তখন আল্লাহ জাল্লা শানূহু সেদিন প্রত্যেক এমন বান্দাকে ক্ষমা করেন, যারা তার সংগে কোন কিছুকে শরীক করে না। তবে এমন ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই ও তার মধ্যে শক্রতা আছে। তখন বলা হবে, এই দু-জনকে অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে ফিরে আসে, এই দাজনকে অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে ফিরে আসে।

৬৩১৪। আবূ তাহির ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মানুষের আমলের ফেরেশতা সপ্তাহে দু-বার সোমবার ও বৃহস্পতিবার পেশ করা হয়। এরপর প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাই-এর সাথে তার শক্রতা আছে। তখন বলা হবে, এই দুজনকে বর্জন কর অথবা অবকাশ দাও যতক্ষন না তারা আপোষের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।

৬৩১৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসা স্হাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।

৬৩১৬। আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার ভাইকে দেখার জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তাআলা তার জন্য রাস্তায় একজন ফিরিশতা মোতায়েন করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফিরিশতার কাছে পৌছল, তখন ফিরিশতা জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইরাদা করেছ? সে বলল, আমি এই গ্রামে আমার এক ভাইকে দেখার জন্য যেতে চাই। ফিরিশতা বললেন, তার কাছে কি তোমার কোন অনুগ্রহ আছে, যা তুমি আরো বৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালবাসি। ফিরিশতা বললেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ পয়গাম নিয়ে এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাকে তাঁরই জন্য ভালবেসেছ।

৬৩১৭। সাঈদ ইবনু মানসুর ও আবূ রাবী (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ রাবী বলেছেন, তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। হাদীসে রয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগীর সেবা শুশ্রুষাকারী বেহেশতের ফলমূলে অবস্হান করে, যতক্ষন পর্যন্ত সে না ফিরে আসে।

৬৩১৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন রোগীর সেবা-শুশ্রুষা করে সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফলমূলে অবস্হান করে।

৬৩১৯। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলমান তার মুসলমান ভাই এর রোগ সেবায় নিয়োজিত হয় তখন সে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত জান্নাতের ফলমূলে অবস্হান করে।

৬৩২০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন রোগীর সেবা করে, সে জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করতে থাকে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (জান্নাতের ফলমূলে অবস্হান করা) কী? তিনি বললেন, এর ফলমূল সংগ্রহ করা।

৬৩২১। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আসিম আহওয়াল (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণনা করেছেন।

৬৩২২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানূহু কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্হ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্হ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়োছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কি করে তোমাকে আহার করাতে পারি! তুমি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিল? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমাকে পান করাব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে পেতে।

৬৩২৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাইতে অধিকতর রোগ যন্ত্রনার তীব্রতা অন্য কোন ব্যক্তির উপর দেখিনি। উসমানের বর্ননায় ‘আল অযায়ু’ এর স্হলে ‘অযাআ’ উল্লেখ আছে।

৬৩২৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার, বিশর ইবনু খালিদ, আবূ বকর ইবনু নাফি ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আমাশ থেকে জারীরের সনদে তার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩২৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি ছিলেন জ্বরাক্রান্ত। আমি তাঁকে আমার হাতে স্পর্শ করে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো ভীষণভাবে জ্বরাক্রান্ত। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, আমি এমন জ্বরাক্রান্ত হয়েছি, যেমন তোমদের দু-জনের হয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমি বললাম, এ কারণেই আপনার জন্য দ্বিগুন পুরস্কার। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তির জ্বর কিংবা অন্য কোন কারণে বিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা এমনভাবে তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন যেভাবে বৃক্ষাদি পাতা ঝরায়। তবে যুহায়র বর্ণিত হাদীসে আমি আমার হাতে তাকে স্পর্শ করি অংশটুকু নেই।

৬৩২৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আ’মাশ থেকে জারীর (রাঃ)-এর সনদে তাঁর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। আর আবূ মু*আবিয়া (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে, তিনি বলেন, “হ্যা, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, পৃথিবীতে এমন কোন মুসলমান নেই, (শেষ পর্যন্ত)।

৬৩২৭। যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কতিপয় কুরায়শী যুবক আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গেলঁ। তখন তিনি মিনায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় তারা হাসছিল। আয়িশা (রাঃ) বললেন, কিসে তোমাদের হাসাচ্ছে? তারা বলল, অমুক ব্যক্তি তার রশির উপর পড়ে গেছে ফলে তার ঘাড় কিংবা চোখ নিষ্পিষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি বললেন, তোমরা হেসো না। কেননা আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলমানের গায়ে কাটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চাইতে অধিক কোন আঘাত লাগে, তার পরিবর্তে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

৬৩২৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব ও ইসহাক-হানযালী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদার ব্যক্তির গায়ে একটি কাটার আঘাত কিংবা তার চাইতে অধিক কোন আঘাত লাগলে আল্লাহ তা’আলা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন কিংবা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেন।

৬৩২৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ঈমানদার ব্যক্তির শরীরে একটি কাঁটা বিদ্ধ হলে কিংবা তার চাইতে বড় কোন মুসীবত আপতিত হলে তার বদলে আল্লাহ তায়ালা তার একটি গোনাহ মাফ করে দিবেন।

৬৩৩০। আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশামের সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩৩১। আবূ তাহির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তার বিনিময়ে তার গোনাহের কাফফারা হয়ে যায়, এমনকি ক্ষুদ্রতর কোন কাঁটা বিদ্ধ হলেও।

৬৩৩২। আবূ তাহির (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোন বিপদ আপতিত হলে, এমন কি একটি কাঁটা বিদ্ধ হলে, তার বিনিময়ে তার গোনা হরাস করা হয় কিংবা তার গোনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। ইয়াযীদ স্বরন রাখতে পারেননি যে, উরওয়া (রহঃ) কোন শব্দটি উল্লেখ করেছেন।

৬৩৩৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ঈমানদার ব্যক্তির উপর কোন বিপদ আপতিত হলে, এমনকি কোন কাঁটা বিঁধলেও তার বিনিময়ে তাকে একটি সাওয়াব দেওয়া হয়। কিংবা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

৬৩৩৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব আবূ সাঈদ খূদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, কোন ঈমানদার ব্যক্তির এমন কোন ব্যথা-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ পৌছেনা, এমনকি দূর্ভাবনা পর্যন্ত, যার বিনিময়ে তার কোন গোনাহমাফ করা হয় না।

৬৩৩৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত (যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে ,তার প্রতিফল সে ভোগ করবে) অবতীর্ণ হল তখন কতক মুসলমাল ভয়ানক দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা মধ্যম পন্হা অবলম্বন কর এবং সঠিক পন্হা ইখতিয়ার কর। একজন মুসলমান তার প্রত্যেকটি বিপদের বিনিময়ে এমনকি সে আছাড় খেলে কিংবা তার শরীরে কোন কাঁটা বিদ্ধ হলেও তাতে তার (গোনাহের) কাফফারা হয়ে যায়। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ মুহাইসিন ছিলেন মক্কার অধিবাসী উমর ইবনু আবদুর রহমান ইবনু মুহীসিন।

৬৩৩৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন উম্মু সায়িব কিংবা উম্মূল মূসায়্যিব (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কি হয়েছে হে উম্মু সায়িব অথবা উযুল মুনায়্যিব! কাদছ কেন? তিনি বললেন, ভীষণ জ্বর, একে আল্লাহ বর্ধিত না করুন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি জ্বরকে গালি দিয়ো না। জ্বর আদম সন্তানের গোনাহসমূহ মোচন করে দেয়, যেভাবে হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে দেয়।

৬৩৩৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) আতা ইবনু রাবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে এক জান্নাতী মহিলার কথা বলবো? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, এই কৃষ্ণকায় মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলেছিল, আমি মৃগীরোগে আক্রান্ত হই এবং এই অবস্হায় আমি বিবস্ত্র হয়ে পড়ি। তাই আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুঃআ করুন। তিনি বললেন, যদি তুমি চাও, ধৈর্য ধারণ কর। তাহলে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যদি তুমি চাও তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি যেন তিনি তোমাকে নিরাময় করে দেন। তখন সে বলল, আমি ধৈর্য ধারণ করব। তবে আমি যে সে অবস্হায় ছতর খুলে ফেলি! কাজেই আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমি ছতর খুলে না ফেলি। তখন তিনি তার জন্য দুআ করলেন।

৬৩৩৮। আবদুল্লাহ ইবনু আবদন্ন রহমান ইবনু বাহরাম দারেমী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ওহে আমার বান্দ্বারা! আমি আমার নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। কাজেই তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দ্বারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হিদায়াত চাইলে আমি তোমাদের হিদায়াত দান করব। হে আমার বান্দ্বারা! তোমরা সবাই ক্ষুদার্ত, আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার্য চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দ্বারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন উলঙ্গ আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দ্বারা! তোমরা রাতদিন গোনাহ করে থাক। আর আমিই সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কছে মাগফিরাত কামনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দ্বারা! তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হতে পারি। হে আমার বান্দ্বারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের মানুষ ও জ্বীন জাতি তোমাদের মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশী ভয় পায়, তোমরা সত্যই যদি তার মত হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব একটুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দ্বারা! তোমাদের আদি, তোমাদের অন্ত, তোমাদের সকল মানুষ, সকল জ্বিন জাতি তোমাদের মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ তার মত হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হরাস পাবে না। হে আমার বান্দ্বারা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জ্বীন যদি কোন মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে চাও আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহলে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী ঘাটতি হবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সুচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু ঘাটতি হয়। হে আমার বান্দ্বারা! আমি তোমাদের আমলই তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রাখি। এরপর পূরোপুরিভাবে তার বিনিময় দান করে থাকি। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণ লাভ করে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে তা ব্যতীত অন্য কিছু পায়, তবে সে যেন নিজকেই দোষারোপ করে। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আবূ ইদরীস খাওলানী (রহঃ) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন তখন তিনি দুহাটুর উপর ভর দিয়ে বসতেন। আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) সাঈদ ইবনু আবদুল আযীয (রাঃ) এই সনদে বর্ণনা করেন। তবে মারওয়ান তাদের উভয়ের কাছে পরিপূর্ন হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, বিশর (রহঃ)-এর পূত্রদ্বয় হাসান ও হুসায়ন এবং মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া বলেছেনঃ আমাদের কাছে আবূ মুসহির এই হাদীসটি পূরোপূরি বর্ণনা করেছেন।

৬৩৩৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তার মইমাম্বিত পরওয়ার দিগার ইরশাদ করেন, আমি আমার নিজের উপর ও বান্দাদের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যুলূম করো না। এরপর রাবী হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর আবূ ইদরীস (রহঃ) বর্ণিত যে হাদীস আমরা বিবৃত করেছি তা এর চাইতে পা।

৬৩৪০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কাঁনাব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যুলুমকে ভয় কর। কেননা কিয়ামত দিবসে যুলুম অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা লোভ-লালসা থেকে সাবধান থেকো।। কেননা এই লোভ-লালসাই তোমাদের পুর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। এই লৌভ-লালসা তাদের খূন-খারাবী ও রক্তপাতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারাম বস্তুসমূহ হালাল জ্ঞান করতে প্রলুব্ধ করেছে।

৬৩৪১। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই যুলুম কিয়ামত দিবসে অন্ধকারে পরিণত হবে।

৬৩৪২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করে না এবং তাকে দূশমনের হাতে সোপর্দও করে না। যে ব্যক্তি তার ভাই -এর অভাব পূরণ করবে আল্লাহ তার অভাব দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার বিনিময়ে কিয়ামত দিবসে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষক্রটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত দিবসে তার দোষক্রটি গোপন রাখবেন।

৬৩৪৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাব গ্রস্ত কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সেই তো অভাবগ্রস্ত। তখন তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই প্রকৃত অভাবগ্রস্ত, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এই অবস্হায় আসবে যে, একে গালি দিয়েছে- একে অপবাদ দিয়েছে, এর সম্পদ ভোগ করেছে, একে হত্যা করেছে ও একে মেরেছে। এরপর একে তার নেক আমল থেকে দেওয়া হবে, একে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর পাওনাদারের হক তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না গেলে ঝণের বিনিময়ে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতিনিক্ষেপ করা হবে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

৬৩৪৪। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা চুকিয়ে দিতে হবে। এমনকি শিং বিশিষ্ট বকরীকে শিং বিহীন বকরীর সামনে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উপস্থিত করা হবে।

৬৩৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ যালিমকে অবকাশ দেন। এরপর তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তাকে ছাড়বেন না। এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন, “এভাবেই তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও যখন কোন যালিম জনপদবাসীকে তিনি পাকড়াও করেন। নিশ্চয়ই তার পাকড়াও অত্যন্ত মর্মান্তিক, কঠোর।

৬৩৪৬। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরদের দু-টি গোলাম মারামারি কর ছিল। তখন মুহাজির গোলাম এ বলে ডাক হে মুহাজিরগণ! এবং আনসারী গোলামও ডাকল হে আনসারগণ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং বললেনঃ এ কী ব্যাপার, জাহিলি যুগের লোকদের মত হাঁক-ডাক করছ? তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! না, দুটিগোলাম ঝগড়া করেছে। তাদের একজন অপরজনের নিতম্বে আঘাত করেছে। তখন তিনি বললেনঃ এতো মামুলী ব্যাপার। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত যেন সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে, সে যালিম হোক কিংবা মাযলূম। যদি সে যালিম হয় তাহলে তাকে (যূলূম থেকে) বিরত রাখবে। এই হচ্ছে তার জন্য সাহায্য। আর যদি সে মাযলূম হয় তাহলে তাকে সাহায্য করবে।

৬৩৪৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, আহমাদ ইবনু আবাদা দাব্বিয়্যু ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সুফিয়ষূন ইবনুুউয়ায়না (রহঃ) বলেন যে, আমর (রহঃ) জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমরা এক যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে ছিলাম। তখন একজন মুহাজির একজন আনসারের নিতম্বে আঘাত করেছিল। সে সময় আনসারী চীৎকার করে বলল, হে আনসার! আর মুহাজির ব্যক্তি ডাক দিল, হে মুহাজিরগণ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কী ব্যাপার! জাহিলিয়্যা যুগের মত হাঁক-ডাক কেন? তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! একজন মুহাজির একজন আনসারকে থাপ্পড় মেরেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এরুপ কথাবার্তা ছেড়ে দাও। কেননা, এ-তো ন্যাক্কারজনক। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই শুনে বলল, তারা কি এরুপ কাণ্ড ঘটিয়েছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদ্বীনায় ফিরে গেলে সেখানকার সবলরা অবশ্যই দুর্বলকে বহিস্কৃত করে দেবে। উমর (রাঃ) বললেন, (ইয়া রাসুলুল্লাহ!) আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মূসাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন তিনি বললেন, একে ছেড়ে দাও, যাতে লোকেরা বলাবলি না করে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের কতল করেন।

৬৩৪৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইসহাক ইবনু মানসূর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফিঁ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মুদাজির একজন আনসারীকে থাপ্পড় মেরেছিল। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং তার কাছে প্রতিশোধ চাইল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা ছেড়ে দাও। কেননা, এ-তো নোংরা কাজ। ইবনু মানসূর আমর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, তিনি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন।

৬৩৪৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ আমির আশআরী, আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মুমিন অপর মুমিনের ভাইর জন্য একটি ইমারত সদৃশ, যার এক অংশ আরেক অংশকে মযবুত করে।

৬৩৫০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনদের দৃষ্টান্ত তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও হামদরদীর দিক দিয়ে একটি মানব দেহের মত। যখন তার একটি অঙ্গ অসুস্হ হয় তখন তার সমগ্র দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।

৬৩৫১। ইসহাক হানযালী (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

৬৩৫২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) নূ’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন সম্প্রদায় এক ব্যক্তির ন্যায়। যখন তার মাথায় অসুস্হতা দেখা দেয় তখন সমগ্র দেহই তাপ ও অনিদায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

৬৩৫৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সমস্ত মুসলমান এক ব্যক্তির মত। যদি তার চক্ষু পীড়িত হয় তবে তার সমগ্র দেহ অসুস্হ হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা অসুস্হ হয় তাহলে সমগ্র শরীরই অসুস্হ হয়ে পড়ে।

৬৩৫৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩৫৫। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু-ব্যক্তি যখন গালি-গালাজে লিপ্ত হয় তখন তাদের উভয়ের গোনাহ তার উপরই বর্তাবে, যে প্রথমে শুরু করেছে; যতক্ষন না মাযলূম সীমালংঘন করে।

৬৩৫৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাদাকা করাতে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।

৬৩৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস! তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, (গীবত হল) তোমার ভাই -এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই -এর মধ্যে থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।

৬৩৫৮। উমাইয়া ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ দুনিয়াতে যে বান্দার দোষ-ক্রটি গোপন রেখেছেন, কিয়ামাত দিবসেও তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখবেন।

৬৩৫৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা যদি অপর কারোর দোষ-ক্রটি দুনিয়াতে গোপন রাখে আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ক্রটি কিয়ামত দিবসে গোপন রাখবেন।

৬৩৬০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে আসার অনুমতি দাও। সে তো বংশের কুসন্তান, তার গোত্রের সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক। সে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করল তখন তিনি তার সংগে নমর ভাষায় কথা বললেন। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো তার সমন্ধে যা বলার বললেন। এরপর তার সাথে নমর ভাষায় কথা বললেন? তিনি বললেন, হে আয়িশা! কিয়ামতের দিনে আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তি নিকৃষ্ট স্তরের বলে গণ্য হবে, যাকে লোকজন তার দুর্ব্যবহারের জন্য পরিত্যাগ করে।

৬৩৬১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু মূনকাদির থেকে এই সনদে এ মর্মে বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনায় পার্থক্য এতটুকু যে, তিনি ‘ফালা বিয়সা ইবনু আশিরি লিলআখির’ এর স্হলে (গোভ্রের সর্বাপেক্ষা মন্দ ভাই এবং এই বেটা বংশের কুসন্তান) বলেছেন।

৬৩৬২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নমরতা থেকে বঞ্চিত সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।

৬৩৬৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) প্রমুখ জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি নমরতা থেকে বঞ্চিত সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।

৬৩৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নমরতা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কিংবা বলেছেন, যে ব্যক্তি নমরতা থেকে বঞ্চিত হবে সে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে।

৬৩৬৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজায়বী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়িশা, আল্লাহ তা’আলা নমর ব্যবহারকারী। তিনি নমরতা পছন্দ করেন। তিনি নমরতার জন্য এমন কিছু দান করেন যা কঠোরতার জন্য দান করেন না; আর অন্য কোন কিছুর জন্যও তা দান করেন না।

৬৩৬৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বরী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মির্ণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নমরতা যে কোন বিষয়কে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে। আর যেকোন বিষয় থেকে নমরতা বিদূরিত হলে তাকে কলূষিত করে।

৬৩৬৭। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা মিকদাম ইবনু শুরায়হ ইবনু হানী (রহঃ)-কে এই সনদে বর্ণনা করতে শুনেছেন। তিনি তাঁর হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) একটি উটের পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন। উটটি ছিল কঠোর স্বভাবের। তাই তিনি তাকে শক্তভাবে ফিরাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার উচিত নমর ব্যবহার করা। পরবর্তী অংশ রাবী উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৬৩৬৮। আবূ বকর আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে ছিলেন। সে সময় এক আনসার মহিলা একটি উষ্ট্রীর পিঠে সাওয়ার ছিলেন। তিনি তার (আচরণে) বিরক্ত হয়ে তার উপর লানত করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বললেনঃ এর উপরে যা আছে তা নিয়ে নাও এবং একে ছেড়ে দাও। কেননা, সে তো অভিশপ্ত হয়ে পড়েছে। তখন ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি যেন সেই উষ্ট্রীটি এখনও দেখছি, যে মানুষের মাঝে হাঁটছে; অথচ কেউ তার প্রতি লক্ষ্য করছে না।

৬৩৬৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ রাবী ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) ইসমাঈলের সনদে আইউব থেকে তাঁর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসে ইমরান বলেছেন, (আমি যেন সেই মেটো রং এর উষ্ঠ্রীটি এখানো দেখতে পাচ্ছি) আর সাকাফী (রহঃ) বর্নিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এর উপর যা-কিছু আছে তা নামিয়ে ফেল এবং তাকে খালি করে দাও। কেননা সে তো অভিশপ্ত।

৬৩৭০। আবূ কামিল জাহদারী ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আবূ বারযাহ আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একটি বালিকা একটি উষ্ঠ্রীর উপর আরোহিত ছিল। সেটির উপরে তার গোত্রের কিছু মালামাল ছিল। হঠাৎ সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেল এবং তাদের প্রতি রশি টেনে বালিকাটি বলল, (উট চালনার শব্দ) হে আল্লাহ! এর উপর লানত বর্ষণ করুন-। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে উটনীর উপর লানত করা হয়েছে, সেটি যেন আমাদের সংগে না থাকে।

৬৩৭১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও সুলায়মাল তায়মী (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। আর তিনি মুঁতামির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এইটুকু বাড়িয়ে বলেছেন, “আল্লাহর কসম! আমাদের সংগে যেন সেই উষ্ঠ্রী না থাকে, যার উপর আল্লাহর তরফ থেকে অভিশাপ বর্ষণ করা হয়েছে, কিংবা তিনি যেভাবে বলেছেন।

৬৩৭২। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন সিদ্দীকের পক্ষে লানতকারী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আলা ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩৭৩। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান উম্মু দারদা (রাঃ)-এর কাছে তার নিজের পক্ষ থেকে কিছু গৃহ নির্মাণ সামগ্রী পাঠালেন। এক রাতে আবদুল মালিক নিদ্রা থেকে জেগে তার খাদিমকে ডাকলেন। সে তার কাছে আসতে দেরী করে ফেলল। এতে তিনি তাকে লানত করলেন। রাত পোহালে পর উম্মু দারদা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি শুনলাম যখন আপনি রাতে আপনার খাদিমকে ডেকেছিলেন তখন তাকে অভিশাপ দিয়েছেন?। এরপর তিনি বললেন, আমি আবূ দারদা (রাঃ)-কে বলতে জনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লানতকারীরা কিয়ামত দিবসে সুপারিশকারী কিংবা সাক্ষ্যদাতা হতে পারবে না।

৬৩৭৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ গাসসান মিসমাঈ ও আসিম ইবনুুনাযর তায়মী যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে এই সনদে হাফস ইবনু মায়সারা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩৭৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, লানতকারীরা কিয়ামত দিবসে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবে না।

৬৩৭৬। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি মুশরিকদের বাদ দুআ করুন। তিনি বললেনঃ আমি তো লানতকারী রুপে প্রেরিত হইনি; বরং প্রেরিত হয়েছি রহমত স্বরুপ।

৬৩৭৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দুজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এণৌ। তারা তাঁর সঙ্গে কোন বিষয়ে আলোচনা করল। তা কী ছিল, আমি জানি না। এরপর তারা তাঁকে রাগাবিত করেছিল। তিনি তাদের উভয়কে লানত করলেন এবং তিরস্কার করলেন। যখন তারা বের হয়ে গেল আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সবাই আপনার কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করল। আর এরা দুজনে কিছুই পাবে না। তিনি বললেনঃ সে কী ব্যাপার! তিনি (আয়িশা-রা) বললেন, আপনি তো তাদের উভয়কে লানত দিয়েছেন এবং তিরস্কার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি জান আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কী কথা হয়েছে? আমি বলেছিললামঃ হে আল্লাহ! আমি একজন মানুষ। আমি কোন মুসলমানকে লানত করলে কিংবা তিরস্কার করলে তা তুমি তার জন্য পবিত্রতা ও পূরস্কার বানিয়ে দিও।

৬৩৭৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব, আলী ইবনু হুজর সা’দ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে এই সনদে জারীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি ঈসা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বলেন, এরপর তারা তার সঙ্গে একাত্তে মিলিত হলেন, তখন তিনি তাদের উভয়কে তিরস্কার করলেন এবং তাদের লানত দিয়ে বের করে দিলেন।

৬৩৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তো একজন মানুষ। সূতরাং আমি কোন মুসলমানকে গালি দিলে কিংবা তাকে লা-নত করলে অথবা মারলে তখন তুমি তার জন্য তা পবিত্রতা ও রহমত বানিয়ে দিও।

৬৩৮০। ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তার হাদীসে ‘রহমাতা’-এর স্হলে ‘রাকাতাঅ ও আযরান ’-উল্লেখিত হয়েছে।

৬৩৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু ইবরাহীম আ’মাশ (রহঃ) থেকে আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে ঈসা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে (বানিয়ে দাও) উল্লেখ আছে। আর আবূ হুরায়রা এর হাদীসে (পুরস্কার) কথাটির উল্লেখ রয়েছে। জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে (বানিয়ে দাও রহমত) কথাটির উল্লেখ আছে।

৬৩৮২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট থেকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছি, তুমি কখনো তার খিলাফ করো না। আমি তো একজন মানুষ। সূতরাং আমি কোন মুমিন ব্যক্তিকে কষ্ট দিলে, গালি দিলে, লানত করলে, তাকে কোড়া লাগালে তুমি তা তার জন্য রহমত, পবিত্রতা ও নৈকট্য বানিয়ে দাও, যার দ্বারা সে কিযামত দিবসে তোমার নৈকট্য লাভ করতে পারে।

৬৩৮৩। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) এই সনদে তার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। পার্থক্য এইটুকু যে, তিনি বলেছেন,(কিংবা আমি কোড়া-মেরেছি) আবূ যিনাদ (রহঃ) বলেন, এই শব্দটি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর পরিভাষা মাত্র। আসলে এর অর্থ”(অর্থাৎ আমি তাকে শাস্তি দিয়েছি)।

৬৩৮৪। সুলায়মান ইবনু মাবাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৩৮৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) নাসরিদের আযাদকৃত গোলাম সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) – কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে বলতে শুনেছি ঃ “হে আল্লাহ্‌! মুহাম্মাদ তো একজন মানুষ। তিনি রাগান্বিত হন যেভাবে একজন মানুষ রাগান্বিত হয়। আর আমি আপনার কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি গ্রহন করছি, (আমার আশা) আপনি কখনো তার বিপরীত করবেন না। সুতরাং কোন মু’মিনকে আমি কষ্ট দিলে কিংবা তাকে গালি দিলে অথবা তাকে কোড়া লাগালে তা আপনি তার জন্য কাফফারা ও নৈকট্য (লাভের ওসীলা) বানিয়ে দিন, যার দ্বারা কিয়ামত দিবসে সে আপনার নৈকট্য দান করবেন।”

৬৩৮৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে বলতে শুনেছেন যে, “হে আল্লাহ্‌! আমি কোন ইমানদার বান্দাকে তিরস্কার করলে তুমি তা তার জন্য কিয়ামত দিবসে তোমার নৈকট্য (লাভের মাধ্যম) বানিয়ে দিও। ”

৬৩৮৭। যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে বলতে শুনেছি যে, “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট থেকে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করছি, (আমার আশা ও বিশ্বাস যে,) আপনি কখনো তার বিপরীত করবেন না। (এ মর্মে যে,) আমি কোন মু’মিন ব্যক্তিকে তিরস্কার করলে কিংবা চাবুক মারলে আপনি তার জন্য তা কিয়ামত দিবসে কাফফারা বানিয়ে দিন।”

৬৩৮৮। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি তো একজন মানুষ। আমি আমার প্রতিপালকের সঙ্গে শর্ত (প্রতিশ্রুতি) বদ্ধ হয়েছি যে, কোন মুসলমান বান্দাকে আমি ভৎসনা করলে কিংবা তিরস্কার করলে তা যেন তার জন্য পবিত্রতা ও প্রতিদান (হিসাবে গণ্য) হয়।

৬৩৮৯। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ মা’আন রাকাশী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) – এর মাতা উম্মু সুলায়মের কাছে একটি ইয়াতিম বালিকা ছিল। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেনঃ এই মেয়ে , তুমি তো বেশ বড় হয়েছ ; তবে (আমার বয়স বড় না হোক) তুমি দীর্ঘজীবী না হও। তখন ইয়াতীম বালিকাটি উম্মু সুলায়মের কাছে ফিরে গেল। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন , তোমার কী হয়েছে? ওহে আমার পিচ্চি মিষ্টি মেয়ে! মেয়েটি বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ দু’আ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ আমার বয়স যেন বড় না হয় (আমি দীর্ঘজীবী না হই)। সুতরাং এখন থেকে আমি আর বয়সে বড় হব না। অথবা সে (আরবি লিখা) এর স্থলে (আরবি লিখা) (আমার চুল) বলেছিল। একথা শুনে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাড়াতাড়ি ওড়না পরে বেরিয়ে পড়েন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তাঁকে (লক্ষ করে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- বললেন, কী ব্যাপার, হে উম্মু সুলায়ম! তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আমার ইয়াতীম বালিকাটিকে বদ দু’আ করেছেন? তিনি বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তা কি? (কিসের বদ দু’আ?) উম্মু সুলায়ম বললেন, সে তো বলছে যে, আপনি তাকে বদ দু’আ করেছেন যেন তার বয়স না বাড়ে কিংবা তার চুল বৃদ্ধি না পায়। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকী হাসি দিয়ে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি কি জাননা যে, আমার প্রতিপালকের সঙ্গে এই মর্মে আমি শর্ত (প্রতিশ্রুতি) বদ্ধ হয়েছি এবং আমি বলেছি যে, আমি তো একজন মানুষ। মানুষ যাতে সন্তুষ্ট হয় আমিও তাতে সন্তুষ্ট হই। আমিও অসন্তুস্ত হই যে ভাবে মানুষ রাগান্বিত হয়ে থাকে। সুতরাং আমি আমার উম্মাতের কোন ব্যক্তি কে বদ দু’আ করলে সে যদি তার যোগ্য না হয় তাহলে তা তার জন্য পবিত্রতা, আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্যের মাধ্যম বানিয়ে দিন, যা তাকে কিয়ামত দিবসে সে আপনার নৈকট্য লাভ করিয়ে দিবে। আবূ মাআন (রহঃ) উল্লেখিত তার হাদীসে তিন জায়গায় (আরবি লিখা – এর স্থলে) (আরবি লিখা) (তাসগীর) রুপে উল্লেখ করেছেন, (যার অর্থ ছোট ইয়াতীম বালিকা)।

৬৩৯০। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না আনাযী ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি বালকদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এলেন। সে সময় আমি একটি দরজার আড়ালে আত্মগোপন করলাম। তিনি বলেন, তিনি আমাকে (আদর করে) কাঁধে থাপ্পড় দিলেন এবং বললেন, যাও, মুআবিয়াকে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি বলেন, তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, তিনি আহার করেছেন। (আমি ফিরে এলে) তিনি বলেন, এরপর তিনি আমাকে আবার বললেন, যাও, মুয়াবিআকে আমার কাছে ডেকে আন। তখন আমি তার কাছে গেলাম এবং (ফিরে এসে) বললাম, তিনি আহার করেছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ যেন তার উদর পূর্তি না করেন। ইবনুল মূসান্না (রহঃ) বলেন, আমি উমায়্যাকে বললাম, (আরবি লিখা)- এর অর্থ কি? তিনি বললেন, (আরবি লিখা) অর্থাৎ তিনি আমাকে (আদর করে) কাঁধে চাপড় দিলেন।

৬৩৯১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হামযা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) – কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি বালকদের সঙ্গে খেলছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এলেন। তখন আমি তাঁর থেকে আত্মগোপন করলাম। এরপর তিনি তার অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৬৩৯২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মন্দ দুই চেহারা বিশিষ্ট ব্যক্তি। সে এই দলের কাছে এক চেহারায় আসলে অন্য দলের কাছে অন্য চেহারায় যায়।

৬৩৯৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ও ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা মন্দ মানুষ সেই, যে দুই চেহারা বিশিষ্ট, একদলের কাছে এক মুখী হয়ে আসে ও অন্য দলের কাছে আরেক মুখী হয়ে যায়।

৬৩৯৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক হিসেবে দুই চেহারা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখতে পাবে; যে এই দলের কাছে এক চেহাসা নিয়ে আসবে, ঐ দলের কাছে অন্য চেহারা নিয়ে যাবে।

৬৩৯৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) হিজরত কারিনীদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে প্রথম বায়ঁআত গ্রহণকারীদের অন্যতমা উম্মু কুলসূম বিনত উকবা ইবনু মূঈত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মাঝে আপোষ মীমাংসা করে দেয়। সে কল্যাণের জন্যই বলে এবং কল্যাণের জন্যই চোগলখুরী করে। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি। যুদ্ধ ক্ষেত্রে, লোকদের মাঝে আপোষ-মীমাংসার জন্য, স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর কথার ও স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর কথা প্রসঙ্গে।

৬৩৯৬। আমর নাকিদ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। সালিহ বর্ণিত হাদীসে একটু পার্থক্য রয়েছে। রাবী বলেন, আর লোকেরা যা বলে তাতে তাঁর অন্য কিছু অনুমতি দানের কথা আমি শুনিনি তিনটি ব্যতীত, যা ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর উক্তি রুপে ইউনূস (রহঃ) বর্ণনা করেছেন।

৬৩৯৭। আমর নাকিদ (রহঃ) যুহরী (রাঃ) থেকে এই সনদে তার উক্তি (কল্যাণের খাতিরেই চোগলখুরী করে) পর্যন্ত বর্ণিত আছে। এর পরের অংশ তিনি উল্লেখ করেননি।

৬৩৯৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেছেনঃ সাবধান! আমি তোমাদের জানাচ্ছি চোগলখুরী কী? এ হচ্ছে কুৎসা রটনা করা, যাতে মানুষের মাঝে বৈরিতার সৃষ্টি হয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি সত্য কথা বলতে বলতে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়; আবার কেউ মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।

৬৩৯৯। যুহায়ব ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্যবাদিতা নেকীর দিকে পথ প্রদর্শন করে আর নেকী জান্নাতের পথের নির্দেশ দেয়। কোন মানুষ সত্য কথা রপ্ত করতে থাকলে অবশেষে আল্লাহর কাছে (সত্যবাদী) হিসেবে (তার নাম) লিপিবদ্ধ হয়। আর মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে এবং জাহান্নামের দিকে পথ দেখায়। কোন মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে এমনকি আল্লাহর কাছে (তার নাম) মিথ্যাবাদীরুপে লিপিবদ্ধ করা হল।

৬৪০০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও হান্নাদ ইবনু সাররী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্যবাদিতা তো নেকী; আর নেকী জান্নাতের পথ প্রদর্শন করে। কোন বান্দা সত্যের সংকল্প করলে অবশেষে সত্যবাদী হিসাবে তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। আর মিথ্যা তো পাপ এবং পাপ জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। আর কোন -বানা মিথ্যা সংকল্প করলে অবশেষে তার নাম মিথ্যাবদী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার বর্ণিত হাদীস বলেছেন।

৬৪০১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সত্য আকড়িয়ে ধর। তোমাদের একান্ত কর্তব্য কেননা সততা নেকীর দিকে পরিচালিত করে, আর নেকী জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। কোন ব্যক্তি সর্বদা সত্য বলার অভ্যাস রপ্ত করলে ও সত্যের উপর সংকল্পবদ্ধ হলে আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদীরুপে লিপিবদ্ধ হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে সাবধান থাক! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে পরিচালিত করে। আর পাপ নিশ্চিত (জ্যহান্নামের) অগ্নির দিকে পরিচালিত করে। কোন ব্যক্তি মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে এবং মিথ্যার উপর সংকল্পবদ্ধ হলে তার নাম আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদীরুপে লিপিবদ্ধ হয়।

৬৪০২। মিনজাব ইবনুল হারিস তামিমী (রহঃ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আমাশ থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ঈসা (রহঃ)-এর হাদীসে সত্যের উপর সংকল্পবদ্ধ হয় এবং মিথ্যার উপর সংকল্পবদ্ধ হয় উল্লেখ করেননি। আর ইবনু মাসহার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে অবশেষে আল্লাহ তাকে লিখে দিবেন কথাটির উল্লেখ রয়েছে।

৬৪০৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবী শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যে কাকে নিঃসন্তান বলে গণ্য কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা যার সন্তান হয় না তাকেই নিঃসন্তান মনে করি। বললেনঃ- সে ব্যক্তি নিঃসন্তান নয়। বরং সেই ব্যক্তই নিঃসন্তান, যে তার কোন সন্তান আগে পাঠায়নি (অর্থাৎ যার জীবদ্দশায় তার সন্তান মৃত্যূবরণ করেনি)। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যে কাকে পালোয়ান বলে গণ্য কর? আমরা বললাম, যাকে লোকেরা কুস্তিতে হারাতে পারে না। তিনি বললেনঃ তা নয়; বরং (প্রকৃত বীর সেই) যে ক্রোধের সময় নিজেকে বশে রাখতে পারে।

৬৪০৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে এই সনদে তার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪০৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি প্রকৃত বীর নয়, যে কুস্তিতে বিজয়ী হয় এবং প্রকৃত বীর সেই; যে ক্রোধের সময় নিজেকে বশে রাখতে পারে।

৬৪০৬। হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ সেই ব্যক্তি প্রকৃত বীর নয়, যে কুস্তিতে বিজয়ী হয়। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে প্রকৃত বীর কে? তিনি বললেনঃ প্রকৃত বীর সেই , যে ক্রোধের সময় নিজেকে বশে রাখতে পারে।

৬৪০৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) সুলায়মান ইবনু সারদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে দু-ব্যক্তি ঝগড়া-ঝাটিতে প্রবৃত্ত হল। তখন তাদের একজনের দু-চক্ষু (রাগে) লাল হয়ে গেল এবং তার শিরা-উপশিরা খাড়া হয়ে গেল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে তার ক্রোধ দুর হয়ে যায়। আর তা হচ্ছে (আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই)। (এ কথা শুনে) সে ব্যক্তি বঁলল, আপনি কি আমাকে পাগল ভেবেছেন ইবনুল আতনা (রহঃ) বলেন, এরপর তিনি বললেন, তুমি কী মনে করছ? আর তিনি “লোকটি” শব্দটি উল্লেখ করেননি।

৬৪০৯। নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) সুলায়মান ইবনু সারদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দু-ব্যক্তি মারামারি করতে উদ্যত হল। তাদের একজন ভয়ানক ক্রোধানিত হন এবং তার চেহারা রাগে লাল হয়ে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি নযর করে বললেনঃ আমি এমন একটি কালেমা জানি যা পাঠ করলে তা (ক্রোধ) তার থেকে চলে যায়। (আর তা হল) আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তখন যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা শুনেছেন, তাদের মধ্য থেকে একজন সেই ব্যক্তির দিকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি কি জান, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাত্র কী বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ অবশ্যই আমি এমন একটি কালেমা জানি, তা যদি সে পাঠ করত তাহলে তার থেকে তা (গোসসা) চলে যেত। (আর তা এই -আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর পানাহ চাইঁ” তখন সে ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি কি আমাকে পাগল মনে করছ?

৬৪১০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪১১। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে যখন আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর আকৃতি দান করেন। তখন তিনি তাকে তাঁর ইচ্ছা ছেড়ে দিলেন। আর ইবলীস তার চতুর্দিকে ঘূরাফেরা করতে এবং দেখতে লাগল যে, জ্বীনিশটি কি? সে যখন দেখতে পেল, তা শূন্য পাত্র তখন বুঝল যে, (আল্লাহ) তাকে এমন এক মাখলূক রুপে করেছেন, যে নিজকে বশে রাখতে পারে না।

৬৪১২। আবূ বকর ইবনু নাফি’ (রহঃ) হাম্মাদ এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪১৩। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ তার ভাই এর সঙ্গে মারামারি করে তখন সে যেন তার চেহারায় না মারে।

৬৪১৪। আমর নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কাউকে মারে।

৬৪১৫। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন প্রহার করে তখন সে যেন চেহারা পরহেয করে (চেহারায় আঘাত না করে)।

৬৪১৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইকে প্রহার করে তাহলে সে যেন তার মুখমণ্ডলে আঘাত না করে।

৬৪১৭। নাসর ইবনু আলী আল যাহযামী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আর ইবনু হাতিম বর্ণিত হাদীসেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন তার ভাইকে প্রহার করে সে যেন তার চেহারা বাচিয়ে রাখে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।

৬৪১৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইকে প্রহার করে, সে যেন তার চেহারা বাচিয়ে রাখে।

৬৪১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার সিরিয়ায় কয়েকজন লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সূর্য তাপে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল এবং তাদের মাথার উপর গরম তৈল ঢালা হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এ কী ব্যাপরে! তাকে বলা হল যে, খাজনার জন্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তখন তিনি বললেন, সাবধান! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সব লোকদের শাস্তি দিবেন, যারা দুনিয়াতে মানুষকে (না হক) শাস্তি দেয়।

৬৪২০। আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশামের পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হিশাম ইবনু হাকীম ইবনু হিযাম সিরিয়ার কৃষকদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। এদের তীব্র রৌদ্রতাপে দাঁড় করানো হয়েছিল। তিনি বললেন এদের কী হয়েছে? তারা বলল, জিযয়ার জন্য এদের পাকড়াও করা হয়েছে। তখন হিশাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি দিবেন যারা পৃথিবীতে (অন্যায়ভাবে) মানুষকে শাস্তি দেয়।

৬৪২১। আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি জারীর বর্ণিত হাদীসে এইটুকু অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেছেন, সে সময় ফিলিস্তীনে তাদের শাসক (গভর্নর) ছিলেন উমায়র ইবনু সা’দ। তিনি তাঁর কাছে যান এবং তার সংগে কথাবার্তা বলেন। এরপর তিনি তাদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

৬৪২২। আবূ তাহির (রহঃ) হিশম ইবনু হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এলাকার আমীরকে দেখতে পান যে, তিনি জিষয়া আদায়ের জন্য কৃষকদের রৌদ্রতাপে শাস্তি দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, এ কী! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সেসব লোকদের শাস্তি দিবেন, যারা দুনিয়াতে মনুষকে (না হক) শাস্তি দেয়।

৬৪২৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ রাবী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি বর্শাফলকসহ মসজিদে এসেছিলেন। সে এগুলোর ধারালো দিক বের করে রেখেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ধারালো দিক আকড়ে রাখার জন্য নির্দেশ দিলেন, যাতে কোন মুসলমান আঘাত না পায়।

৬৪২৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন যে, এক ব্যক্তি তীরসহ মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এর ধারালো দিকটা আকড়ে ধরে রেখো।

৬৪২৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) -এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি মসজিদে তীর বন্টন করছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এর ধারালো দিকটা আগলে রেখে চলার নির্দেশ দেন। ইবনু রুমহ (রহঃ) বলেন, সে তীর (বর্শা) সাদাকা করছিল।

৬৪২৬। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তার হাতে বর্শা নিয়ে কোন মজলিসে কিংবা বাজারে প্রবেশ করে-তাহলে সে যেন এর ধারালো দিকটা আগলে রাখে। এরপরও যেন সে তার ধারালো দিকটা আগলে রাখে। এরপরও যেন সে তার ধারালো দিকটা আগলে রাখে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা একে অপরের উপর বর্শা নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত মৃত্যূকে আলিঙ্গন করবো।

৬৪২৭। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ আরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন হাতে বর্শা নিয়ে আমাদের মসজিদে আসে কিংবা আমাদের বাজারে গমন করে সে যেন এর ধারালো দিকটা নিজের হাতের তালূ দ্বারা আগলে রাখে। নয়তো তা দ্বারা কোন মুসলমানের (দেহে)আঘাত লাগতে পারে। অথবা তিনি বলেছেন, সে যেন তার ধারালো অংশ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩৪২৮। আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই-এর প্রতি (লৌহ নির্মিত) অস্ত্র উত্তলোন করে সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তাকে লানত করতে থাকে যদিও তার ভাই বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় হয়।

৬৪২৯। আবূ বকর ইবনু আবূ-শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪৩০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমদের মধ্যে কেউ যেন তরবারী উচিয়ে তার ভাই এর প্রতি ইশারা না করে। কেননা, তোমরা জান না, শয়তান তার হাতে ভর করে তাকে জাহান্নামের গর্তে নিক্ষেপ করবে।

৬৪৩১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন সে রাস্তার উপর একটি কাটাযুক্ত বৃক্ষের ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তার এই ভাল কাজটি পছন্দ করেন এবং তাকে (তার গুনাহ) ক্ষমা করে দিলেন।

৬৪৩২। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলার সময় একটি কাটাযুক্ত বৃক্ষের শাখা দেখে বলে, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই মুসলমানদের যাতায়াতের পথ থেকে এটা সরিয়ে ফেলব, যাতে তাদের রেষান কষ্ট না হয়। এরপর সে জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করে।

৬৪৩৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জান্নাতে এক ব্যক্তিকে একটি বৃক্ষে আনন্দ উপভোগ করতে দেখেছি। এই বৃক্ষটি সে রাস্তার উপর থেকে অপসারণ করেছিল যেটি লোকদের কষ্ট দিত।

৬৪৩৪। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি বৃক্ষ মুসলমানদের (রাস্তা অতিক্রম করার সময়) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি এসে সেটি কেটে ফেলে, এরপর সে জান্নাতে প্রবেশ করে।

৬৪৩৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাকে এমন একটি জিনিস শিক্ষা দিন, যার দ্বারা উপকৃত হতে পারি। তিনি বললেনঃ মুসলমানদের যাতায়াতের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিবে।

৬৪৩৬। ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ বারযাহ আস লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি জানিনা, হয়ত আপনি চলে যাবেন (ইন্তেকাল করবেন) আর আমি বেঁচে থাকব। কাজেই আমাকে এমন কিছু পাথেয় দিয়ে যান যা দ্বারা আ ল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটি কররে, এটি করবে। আবূ বকর (রাঃ) তা বিস্মৃত হয়ে গেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলবে।

৬৪৩৭। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা ইবনু উবায়দ দাবিয়্যু (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে একটি স্ত্রীলোককে শাস্তি দেওয়া হয়। এই বিড়ালটি সে বেঁধে রাখে। অবশেষে সেটি মারা যায়। এরপর সে স্ত্রীলোকটি জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে উক্ত বিড়ালটিকে বন্দী অবস্হায় খাবারও দেয়নি, পানিও পান করায়নি, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের কীট-পতঙ্গ খেয়ে সেটাকে বাচার সূযোগও দেয়নি।

৬৪৩৮। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়াহ ইবনু খালিদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুওয়ায়রিয়া বর্ণিত হাদীসের অর্থের অনূরুপ বর্ণনা করেছেন। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি স্ত্রীলোককে একটি বিড়ালের জন্য আযাব দেওয়া হয়। সে এটিকে বেঁধে রাখে এবং এটিকে খাবারও দেয়নি এবং পানিও পান করায়নি; এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের কীট-পতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য তাকে বন্ধন মুক্তও করেনি।

৬৪৩৯। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪৪০। ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। এরপর তিনি এরুপ বেশ কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একটি স্ত্রীলোক একটি বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার দরুণ জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে এটিকে শক্ত করে বেঁধে রাখে এবং বন্দী দশায় সে এটিকে খাবার দেয়নি, পানীয় দেয়নি এবং তাকে বন্ধনমুক্ত করে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বাচতে পারে। অবশেষে পিপাসায় (কাতর হয়ে) মারা যায়।

৬৪৪১। আহমাদ ইবনু ইউসূফ ইযদী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইজ্জত সম্মান আল্লাহর ভূষণ এবং অহংকার তাঁর চাঁদর। যে ব্যক্তি এই ব্যাপারে আমার সংগে ঝগড়ায় অবতীর্ণ হবে আমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দিব।

৬৪৪২। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না। আর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ সে ব্যক্তি কে যে কসম খেয়ে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করবো না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তার কাজ (কসম) কে, ব্যর্থ করে দিলাম, কিংবা তিনি যেমন বলেছেন।

৬৪৪৩। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন অনেক আলুথালূ কেশধারী মলিন চেহারা বিশিষ্ট নিগৃহীত অধঃপতিত ব্যক্তি রয়েছে, যারা আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা সত্যে পরিণত করে দেন।

৬৪৪৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনুল আলো ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন-ব্যক্তি বলে, মানূষ ধ্বংস হোক তাহলে সে সর্বাপেক্ষা অধিক ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি জানিনা যে,তিনি ‘আহলাকাহুম’ সে তাদের ধ্বংস করেছে বলেছেন, না “আহলুকুহুম” তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেছেন।

৬৪৪৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সুহায়ল (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪৪৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এমনভাবে জোর দিয়ে নির্দেশ দেন যে, আমি ধারণা করছিলাম তিনি সম্ভবত তাকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।

৬৪৪৭। আমর নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪৪৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারিরী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এমনভাবে নির্দেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ধারণা করছিলাম তিনি সম্ভবত তাকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন।

৬৪৪৯। আবূ কামিল জাহদারী ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যার! যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তখন তাতে পানি (শুরুওয়া) বেশী দিও এবং প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রেখো।

৬৪৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )আমাকে অসীয়াত করেছেন, যখন তুমি তরকারী রান্না কর তখন তাতে পানি বেশী করে দিবে। এরপর তুমি তোমার প্রতিবেশীর পরিজনের প্রতি দৃষ্টি রাখবে। এরপর তা থেকে তাদের গৃহে কিছু সৌজন্যমূলক পৌছিয়ে দিও।

৬৪৫১। আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ কোন কিছু দান করাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, এমনকি (অপারগতায়) তোমার ভাইয়ের সাখে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাকেও।

৬৪৫২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কোন ব্যক্তি প্রয়োজন নিয়ে এলে তিনি তাঁর সংগীদের বলতেন, তোমরা এর জন্য সুপারিশ কর, তাহলে সাওয়াব পাবে। আর আল্লাহ তার নাবীর মুখে এমন সমাধান দেন যা তিনি পছন্দ করেন।

৬৪৫৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৎ সাথী ও মন্দ সাথীর উপমা মিশকধারী ও অগ্নিকুণ্ডে ফূৎকার দানকারীর (কামারের) মত। মিশকধারী (বিক্রেতা) হয়ত তোমাকে কিছু দিবে (সুগন্ধি নেওয়ার জন্যহাতে কিছুটা লাগিয়ে দেবে) অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছুটা খরিদ করবে পারতে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর অগ্নিকুণ্ডে ফুকদানকারী হয়ত তোমার কাপড় পূড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।

৬৪৫৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাহহায, আবদুল্লাহ ইন আব্দুর রহমান ইবনু বাহরাম ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার কাছে একটি ন্ত্রীলোক এল। তখন তার সংগে তার দুটি মেয়ে ছিল। সে আমার কাছে কিছু চাইল। সে একটি খেজুর ছাড়া আমার কাছে কিছু পেলনা। আমি সেই খেজুরটই তাকে দিলাম। সে সেটি নিয়ে তা তার দু-মেয়ের মধ্যে ভাগ করে দিল। নিজে তা থেকে কিছুই খেলনা। এরপর সে উঠে চলে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলে তাঁর কাছে আমি ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কন্যা সন্তান লালন পালনের পবীক্ষায় নিঃপতিত হয় আর তাদের সংগে সে সদ্ব্যবহার করে, তার জন্য এরা জাহান্নামের পর্দা হবে।

৬৪৫৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক দুঃস্হ মহিলা তার দুটি কন্যা সন্তানসহ আমার কাছে এল। আমি তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে কন্যাদ্বয়ের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখে তুলেদিল। ইত্যবসরে কন্যা দু-টি এই খেজুরটিও খেতে চাইল। সে তখন নিজে খাওয়ার জন্য যে খেজুরটি মুখে তুলেছিলো সেটি তাদের দুইজনের মধ্যে ভাগ করে দিল। তার এ ব্যাপার আমাকে অবাক করে দিল। পরে আমি সে যা করেছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এই কারণে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছেন অথবা তিনি তাকে এই কারণে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিয়েছেন।

৬৪৫৬। বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানকে বালিগ হওয়া পর্যন্ত লালনপালন করে, কিয়ামত দিবসে সে ও আমি এমন অবস্হায় আসব, এই বলে তিনি তার হাতের আংগুল গুলো একত্র করলেন।

৬৪৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন মুসলমান ব্যক্তির তিনটি সন্তান মারা গেলে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবেনা, কসম বাস্তবায়নের জন্য যা প্রয়োজন তা ব্যতীত।

৬৪৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) যুহরী (রহঃ) মালিকের সনদে তার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে- সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, কসম বাস্তবায়ন ব্যতীত।

৬৪৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় আনসারী মহিলাদের লক্ষ্য করে বলেছেনঃ তোমাদের কারো তিনটি সন্তান মারা গেলে সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণ করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক মহিলা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! দু-জন মারা গেলে তিনি বললেন, দু-জন হলেও।

৬৪৬০। আবূ কামিল জাহদারী ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পূরুষ লোকেরাই আপনার কথাবার্তা (হাদীস) শুনে থাকে। সুতরাং আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদের (নারী সমাজের) জন্য একটি দিন নির্ধারিত করে দিন, যে দিন আমরা আপনার কাছে সমবেত হব এবং আল্লাহ আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমাদের শেখাবেন। তিনি বললেনঃ বেশ তো, অমুক অমুক দিন তোমরা একত্র হবে। তারা (নির্ধারিত দিনে) সমবেত হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন স্ত্রীলোক তার জীবদ্দশায় তিনটি সন্তান আগাম পাঠালে অর্থাৎ তিনটি সন্তান মারা গেলে সেই সন্তানরা কিয়ামত দিবসে পর্দা হিসেবে গণ্য হবে। তখন এক মহিলা বলল, দুজন, দুজন, দুজন হলে (কি হুকুম)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, দুজন হলেও, দুজন হলেও, দু জন হলেও।

৬৪৬১। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইসবাহানী (রহঃ) এই সনদে তার মর্মার্থের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন তাবে তারা সবাই আবদুর রহমান ইবনু ইসবাহানী (রহঃ) থেকে এইটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আবূ হাযিমকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বলতে শুনেছেন, এমন তিনটি সন্তান যারা বায়োপ্রাপ্ত।

৬৪৬২। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রাঃ) আবূ হাসসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে বললাম, আমার দুটি পুত্র সন্তান মারা গিয়েছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তরফ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করবেন, যাতে আমরা মৃতদের সম্পর্কে আমাদের অন্তরে সান্ত্বনা পেতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেন, হ্যা, তাদের জন্য তাদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতি তূল্য। তাদের কেউ কেউ তার পিতার সংগে মিলিত হবে, অথবা তিনি বলেছেন পিতামাতা উভয়ের সংগে মিলিত হবে। এরপর তার পরিধানের বস্ত্র কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের অনুচল ধরছি। এরপর আর পরিত্যাগ করবেনা, অথবা তিনি বলেছেন, আল্লাহ তাকে তার বাপ-মা সহ জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত ছাড়বেনা। সওয়ায়দ (রহঃ) -এর বর্ণনায় আবূ সলীল আমাদিগকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, উল্লেখ আছে। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) তায়মী (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কিছু শুনেছেন যা আমাদের মৃতদের সম্পর্কে আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেবেই তিনি বললেনঃ হ্যা।

৬৪৬৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ্ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একজন স্ত্রীলোক তার একটি পূত্র সন্তান নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া নাবী আল্লাহ! আপনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। আমি তিনটি সন্তান দাফন করেছি। তখন তিনি বললেন, তুমি তিনটি সন্তান কবরস্হ করেছ? সে বলল, হ্যা। তিনি বললেনঃ তুমি তো অবশ্যই জাহান্নাম থেকে একটি মযবুত দেয়াল নির্মাণ করেছ। তাদের মধ্য থেকে উমর ইবনু হাফস তার দাদার সুত্রে বর্ণনা করেছেন। অবশিষ্টরা তালক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা দাদার উল্লেখ করেননি।

৬৪৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুবায়র ইবনু হারব আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক তার একটি পূত্র সন্তান নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে অসুস্হ এবং তার ব্যাপারে আশংকা করছি। আর আমি তিনটি সন্তান দাফন করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি জাহান্নাম থেকে একটি মযবুত প্রাচীর নির্মাণ করেছ। যুহায়র (রহঃ) তালক থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি কুনিয়াত উল্লেখ করেননি।

৬৪৬৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে ডেকে পাঠান এবং বলেন, আমি অমূককে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। তিনি বলেন, তখন জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ভালবাসেন। এরপর তিনি আসমানে ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লহ অমুককে ভালবাসেন, সুতরাং আপনারাও তাকে ভালবাসূন। তখন আসমানের অধিবাসীরা তাকে ভালবাসে। তিনি বলেন, এরপর পৃথিবীবাসীর অন্তরে সে মকবুল বান্দা হিসেবে গণ্য হয়। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দার উপর রাগান্বিত হল তখন জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে ডেকে পাঠান এবং বলেন, আমি অমুক বান্দার উপর রাগান্বিত, তুমিও তার সংগে নাখোশ হও। বলেন, তখন জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রতি ক্রোধাম্বিত হন। এরপর তিনি আসমানের অধিবাসীদের প্রতি ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অমুকের উপর ক্রোধানিত। সুতরাং আপনারাও তার প্রতি দুশমনি করুন। বলেন, তখন তারা তার প্রতি শক্রতা পোষণ করে। এরপর পৃথিবীবাসীর অন্তরে তার প্রতি শক্রতা পোষণ বদ্ধমূল হয়ে যায়।

৬৪৬৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুহায়ল (রাঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত। তবে ইবনুল মূসায়্যাব (রহঃ) -এর হাদীসে -নাখোশ শব্দটির উল্লেখ নেই।

৬৪৬৭। আমর নাকিদ (রহঃ) আবূ সালিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আরাফাতের মাঠে অবস্থান করছিলাম। তখন আমীরুল হাজ্জ উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এলেন। লোকেরা তাঁকে দেখার জন্য দাড়িয়ে গেল। তখন আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আব্বাজান! আমার মনে হয়, আল্লাহ তা’আলা উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) -কে ভালবাসেন। তিনি বলেন, সে কিন্তু অর্থাৎ তুমি কিভাবে বুঝলে? আমি বললাম, এ কারণে যে, মানুষের অন্তরে তার ভালবাসা বদ্ধমূল হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তোমার বাবার কসম! আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। এরপর তিনি সুহায়ল (রাঃ) থেকে জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬৪৬৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মাসমূহ স্বভাবজাত সা’দৃশ্যের সংগে সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে যারা পরস্পরকে চিনে তারা পৃথবীতে পরস্পরে সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যারা সেখানে পৃথক ছিল তারা এখানেও আলাদা থাকে।

৬৪৬৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফু সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, মানুষের উপমা হচ্ছে স্বর্ণ ও রৌপ্যের খনির মত। জাহিলিয়া যুগে যারা সর্বোত্তম ছিলেন তারা ইসলামী যুগেও সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হবেন, যখন তারা সূক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন (দ্বীনের সমঝদার হয়ে থাকেন) আর আত্মাসমূহ স্বভাবজাত কারণে পৃথক পৃথক। সেখানে যে সব আত্না পরস্পরে পরিচিত ছিল দুনিয়াতে সেগুলো সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ; আর সেখানে যেগুলো অপরিচিত ছিল, এখানেও তারা অপরিচিত।

৬৪৭০। আবদুল্লাহ ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ কিয়ামতের জন্য কি পাথেয় সঞ্চয় করেছ? সে বলল, আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালবাসা। তিনি বললেনঃ তাম তারই সংগী হবে যাকে তুমি ভালবাস।

৬৪৭১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? তিনি বললেনঃ তুমি তার জন্য কি সঞ্চয় করেছ? তখন সে বেশী কিছু উল্লেখ করতে পারল না। তিনি বলেন, কিন্তু সে বলল, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসি। তিনি বললেন, তুমি তার সংগেই উঠবে যাকে তুমি ভালবাস। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল। এরপর তার অনুরুপ (বর্ণিত)। তবে এই বর্ণনায় এতটুকু পার্থক্য রয়েছে বেদুঈনটি বলল, আমি কিয়ামতের জন্য বড় ধরণের কোন সম্বল যোগাড় করিনি, যার উপর আত্মপ্রসা’দ লাভ করতে পারি।

৬৪৭২। আবূ রাবী আতাকী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? তিনি বললেনঃ তুমি সেদিনের জন্য কি পাখেয় সঞ্চয় করেছ? সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালবাসা। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুমি তার সংগে উঠবে যাকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, ইসলাম গ্রহনের পরে আমলা এত বেশী খূশী হইনি যতটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বানীঃ তুমি তার সংগেই থাকবে যাকে তুমি ভালবাস” দ্বারা আনন্দ লাভ করেছি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহ, তার রাসুল, আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) -কে ভালবাসি। সুতরাং আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে আমি তাদের সংগে থাকব, যদিও আমি তাদের মত আমল করতে পারব।

৬৪৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ শুবারী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তবে জাফর ইবনু সূলায়মান আনাসের উক্তি আমি ভালবাসি এবং তার পরবর্তী অংশ” উল্লেখ করেননি।

৬৪৭৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ে মসজিদে নববী থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন মসজিদের দরযায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কিয়ামতের জন্য কি পাথেয় সঞ্চয় করেছ? বলেন, তখন লোকটি চুপ-রইল। এরপর সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সালাত, সিয়াম ও সাদাকা-খয়রাত সঞ্চয় করিনি। তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি তার সংগেই থাকবে যাকে তুমি ভালবাস।

৬৪৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল আযীয ইয়াশকারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার অনুরুপ বর্ণিত।

৬৪৭৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে এই হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।

৬৪৭৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল। এরপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলল, সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী ধারণা পোষণ করেন, যে একটি কাওমকে ভালবাসে অথচ সে তাদের সাথে সম্পূক্ত হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে যাকে ভালবাসে সে তার সাথেই থাকবে।

৬৪৭৮। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৪৭৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল। এরপর তিনি আমাশ (রহঃ) সুত্রে জারীর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনূরুপ উল্লেখ করেন।

৬৪৮০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবূ রাবী-, আবূ কামিল জাহদারী, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরয করা হল, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কি অভিমত, যে নেক আমল করে এবং লোকেরা তার প্রশংসা করে? তিনি বললেন, এতো মুমিন ব্যক্তির জন্য তা ক্ষণিক সুসংবাদ।

৬৪৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) অন্য সুত্রে ইসহাক (রহঃ) হাম্মাদ ইবনু যায়িদের সনদে আবূ ইমরান জাওনী (রহঃ) থেকে তার অনুরুপ বর্ণিত। আবদুল সামাদ (রহঃ) ব্যতীত শুবার সূত্রে অন্যান্যদের হাদীসে এবং লোকেরা এর জন্য তাকে ভালবাসে- উল্লেখ আছে। আর আবদুস সামাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে হাম্মাদ যেভাবে বলেছেন তদ্রূপ লোকেরা তার প্রশংসা করে- উল্লেখ রয়েছে।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: সদ্ব্যবহার,আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
সদ্ব্যবহার,আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/protectingkinshiprelationships.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/protectingkinshiprelationships.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy