মুসাফিরের সালাত ও কসর

১৪৪৩ ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুকিম ও মূসা ফির অবস্থায় সালাত দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের সালাত ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের সালাতে বৃদ্ধি করা হল।

১৪৪৪ আবূ তাহির (রহঃ) ও হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহ্‌ যখন সালাত ফরয করেছিলেন, তখন দু’রাকাত ফরয করেছিলেন। এরপর মুকিমের সালাত পুরা করেন (চার রাক’আত) কিন্তু সফরের সালাত প্রথম অবস্থায় রাখা হয়।

১৪৪৫ আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সালাত প্রথমে দু রাক’আত ফরয করা হয়েছিল, এরপর সফরের সালাত ঠিক রাখা হল এবং মূকিমের সালাত পুরা করা হল। যুহুরি (রহঃ) বলেন, আমি উরওয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম আয়িশা (রাঃ)- যে সফরে সালাত পূর্ণ করেন এর কারন কি? তিনি বললেন, তিনি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা অবলম্বন করেছেন, যেমনভাবে উসমান (রাঃ) ব্যাখ্যা অবলম্বন করেছিলেন।

১৪৪৬ আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বললাম, (আল্লাহ তা’আলা বলেছেন) “যদি তোমরা ভয় পাও যে, কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে, তরে সালাত সংক্ষেপ করে পড়াতে কোন দোষ নেই” কিন্তু এখন তো লোকেরা নিরাপদ। উমর (রাঃ) বললেন, বিষয়টি আমাকেও বিষ্মিত করেছে, যা তোমাকে বিষ্মিত করেছিল। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম ও এর জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি একটি সাদাকা। তোমরা তাঁর সাদাকাটি গ্রহণ কর।

১৪৪৭ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আল মুকাদ্দামী ইয়া”না ইবনু উমায়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর কাছে ইবনু ইদরীসের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছিলাম।

১৪৪৮ ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ), সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ), আবূর রবী (রহঃ) ও কতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) …ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নাবীর ভাষায় মুকীমের জন্য চার রাকআত মুসাফিরের জন্য দু’রাকআত এবং শংকিত অবস্হায় এক রাক’আত সালাত ফরয করেছেন।

১৪৪৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রা-) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের নাবীর ভাষায় মুসাফিরের উপর দু-রাক’আত , মুকীমের উপর চার রাকআত এবং ভয়ের অবস্হায় এক রাকআত সালাত ফরয করেছেন।

১৪৫০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মূসা ইবনু সালামা আল-হুযালী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যখন মক্কায় থাকি এবং ইমামের সঙ্গে সালাত আদায়ের সুযোগ না পাই, তখন কিরুপ সালাত আদায় করব? তিনি বললেন, দু-রাক’আত। এটই আবূল কাসিম [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ]-এর সূন্নাত।

১৪৫১ মুহাম্মাদ ইবনু মিনহাল আদ-দারীর (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১৪৫২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) ঈসা ইবনু হাফস ইবনু আসিম ইবনু উমর ইবনুল খাত্তাব তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কার রাস্তায় আমি ইবনু উমরের সঙ্গে সহচর হলাম। তার পর তিনি তাঁর মনযিলে এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাদের যুহরের সালাত দু- রাকআত পড়ালেন। এরপর তিনি সামনে অগ্রসর হলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে অগ্রসর হলাম। তারপর তিনি তাঁর মনযিলে এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে বসলাম। এরপর যে স্থানে তিনি সালাত আদায় করেছিলেন, সে স্থানের প্রতি দৃষ্টি পড়লে তিনি দেখলেন, কিছু লোক দাঁড়ান। তিনি বললেন, তারা সেখানে কি করছে? আমি বললাম, তারা নফল সালাত আদায় করছে তিনি বললেন, আমি যদি নফল আদায় করতাম তাহলে আমি আমার সালাত (ফরয)-কেই পূর্ণ করতাম। হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সফরে থেকেছি। কিন্তু ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি দু- রাকআতের অতিরিক্ত আদায় করেননি। আমি আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গেও থেকেছি, তিনিও তাঁর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত দু-রাক’আতের অতিরিক্ত আদায় করেননি। আমি উমর (রা-)-এর সঙ্গেও ছিলাম। তিনিও ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত দু-রাকআতের অতিরিক্ত পড়েননি। আমি উসমান (রাঃ)-এরও সঙ্গে ছিলাম। তিনিও ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত দু-রাকআতের অতিরিক্ত আদায় করেননি। আর আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” (৩৩/২১)

১৪৫৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হাফস ইবনু আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর কাছে সফরে সুন্নাত সালাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সফরে ছিলাম, কিন্তু তাকে কখনো সুন্নাত আদায় করতে দেখি নাই। যদি আমি সুন্নাত পড়তাম তাহলে আমি (ফরয) সালাতকেঁই পূর্ণভাবে আদায় করতাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে রয়েছে তোম্যদের জন্য উত্তম আদর্শ। (৩৩/২১)

১৪৫৪ খালফ ইবনু হিশাম আবূর রাবী আয যাহরানী (রহঃ), কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-মদিনায় যুহরের সালাত চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলায়ফায় আসরের সালাত দু’রাকআত আদায় করেন।

১৪৫৫ সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মদিনায় যুহরের সালাত চার রাক’আত আদায় করেছি। আর যুল-হুলায়ফায় তাঁর সঙ্গে আসরের সালাত দু রাক’আত পড়েছি।

১৪৫৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইয়াহিয়া ইবনু ইযায়ীদ আল হুনাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট সালাত কসর করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের উদ্দেশ্যে তিন মাইল অথবা রাবী শুবার সন্দেহ তিনি তিন ফারসাখ পথ অতিক্রম করতেন, তখনই দু’রাকআত পড়তেন।

১৪৫৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ), যুহায়র ইবনু নূফায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সুরাহবিল ইবনুল সিমৃত (রহঃ)-এর সঙ্গে একটি গ্রামের দিকে রওনা দিলাম, যা সতের বা আঠার মাইলের মাথায় অবস্থিত। তারপর তিনি দু-রাকআত সালাত পড়লেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি উমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি যুল হুলায়ফায় দু-রাকআত পড়েছেন। এ বিষয়ে তাঁকে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যে এরুপ করতে দেখেছি, সেরুপই করছি।

১৪৫৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বার সূত্রে উক্ত সনদে (হাদীস) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, ইবনু সিমৃত থেকে তিনি শুরু াহবীলের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি যে গ্রামটিতে গিয়েছিলেন, সেটি ছিল হিমসের অন্তর্ভুক্ত রাউমাইন সেটি আঠার মাইলের শেষ প্রাস্তে অবস্হিত।

১৪৫৯ ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মদিনা- থেকে মক্কার দিকে রওনা দিলাম। সেই সফরে তিনি মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু- রাকআত দু’রাকআত করে সালাত আদায় করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি মক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন দশ দিন।

১৪৬০ কুতায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে হুশায়মের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৪৬১ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্য মদিনা থেকে বের হলাম। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনূরুপ বর্ণনা করেন।

১৪৬২ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি তাঁর বর্ণনায় হাজ্জের (হজ্জ) কথা উল্লেখ করেননি।

১৪৬৩ হারামালা ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনা ও অন্যান্য জায়গায় মুসাফিরের সালাত হিসেরে দু-রাকআত সালাত আদায় করেন। আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) ও দু রাকআত পড়েন। উসমান (রাঃ) তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে দু রাকআত পড়েন। পরে তিনি চার রাকআত পুরো আদায় করেন।

১৪৬৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ), ইসহাক ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বর্ণনায় মিনার কথা উল্লেখ করেছেন কিন্তু (অন্যান্য স্থানে) শব্দটি উল্লেখ করেননি।

১৪৬৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দু-রাকআত সালাত আদায় করেছেন। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এবং আবূ বাকরের পর উমর (রাঃ) দু রাকআত সালাত আদায় করেছেন। উসমান (রাঃ)তার খিলাফতের প্রথম দিকে দু রাকঃআত পড়েছেন। পরবর্তী সময় উসমান (রাঃ) চার রাকঃআত সালাত আদায় করেছেন। ইবনু উমর (রাঃ) যখন ইমামের সঙ্গে পড়তেন, তখন চার রাকআত পড়তেন, যখন একাকী পড়তেন তখন দু-রাকঃআত পড়তেন।

১৪৬৬ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

১৪৬৭ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় মুসাফিরের সালাত আদায় করেন। আর আবূ বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) (তার খিলাফতের) ৮ বছর অথবা ৬ বছর পর্যন্ত সফরের সালাত আদায় করেন। হাফস (রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) মিনায় দু-রাকআত পড়তেন। তারপর বিছানায় ফিরে আসতেন। আমি বললাম হে চাচাজান! আপনি যদি এরপর আরো দু-রাক’আত পড়তেন (তাহলে ভাল হতো)। তিনি বললেন, আমি যদি তা করতাম, তাহলে ফরয সালাতই পূর্ণ করতাম।

১৪৬৮ ইয়াহয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁরা এ হাদীসে মিনার কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু “সফরে সালাত আদায় করেন”,- বাক্যটি উল্লেখ করেছেন।

১৪৬৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) বলেন আমি আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে শুনেছি। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) মিনায় আমাদের নিয়ে চার রাকআত সালাত আদায় করেছেন। এই কথাটি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট বলা হলে, তিনি “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন”- পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নিনায় দু-রাকঃআত সালাত আদায় করেছি, আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় দু-রাকঃআত সালাত আদায় করেছি। উমর (রাঃ)-এর সঙ্গেও মিনায় দু-রাকঃআত সালাত আদায় করেছি। চার রাকঃআতের স্হলে আমার ভাগ্যে দু-রাকঃআতই গ্রহণযোগ্য। (হোক এ ই আমার কাম্য)

১৪৭০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ), উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), ইসহাক (রহঃ) ও ইবনু খাশরাম (রহঃ) আতমাশ (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৪৭১ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ও কুতায়বা (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মিনায় দু- রাকআত সালাত আদায় করেছি। অথচ সে সময় লোকজন সর্বাধিক নিরাপদ ছিল।

১৪৭২ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহাব খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে মিনায় সালাত আদায় করেছি। সে সময় বহু লোকের সমাগম ছিল। তিনি বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) দু’রাকআত সালাত আদায় করেছেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, হারিসা ইবনু ওয়াহাব আল-খুযাঈ- (রহঃ) ছিলেন উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনুল খাত্তাবের বৈপত্রিয় ভাই।

১৪৭৩ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবনু উমর (রাঃ) ঠান্ডা ও ঝড়ের রাতে আযান দেন। পরে বলেন, “তোমরা (নিজ নিজ) মনযিলে সালাত আদায় করে নাও”।

১৪৭৪ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ঠাণ্ডা ও ঝড় বৃষ্টির রাতে আযান দেন এবং তিনি তাঁর আযানের শেষে বলেন, ‘তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে নাও। তারপর বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ঠাণ্ডা ও বাদলা রাতে মুয়াযযিনকে নির্দেশ দিতেন, সে যেন বলে দেয় যে, তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে ফেল।

১৪৭৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। এরপর উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন এবং বলেন, “তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে নাও নিজ নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করে নাও”। কথাটি ইবনু উমর (রাঃ)-এর উক্তি হিসেবে তা দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়নি।

১৪৭৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ও আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম। তারপর আমরা বৃষ্টিতে পড়লাম; তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা, সে নিজ অবস্থানে সালাত আদায় করতে পারে।

১৪৭৭ আলী ইবনু হুজর আল সা’দী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বৃষ্টির দিনে তাঁর মুয়াযযিনকে বললেন, যখন আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- বলবে, তারপর হাইয়্যা আলাল সালাহ” (“সালাতের দিকে আস–) না বলে বলবে যে, তোমরা তোমাদের ঘরে ঘরে সালাত আদায় কর। এই আদেশ ভুলা লোকেরা যেন না পছন্দ করল। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমরা কি তাতে বিস্মিত হচ্ছ? এটি তা তো তিনই করেছেন যিনি আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। যদিও জুমু’আর সালাত ফরয, তথাপি আমি তোমাদের কষ্টে ফেলা পছন্দ করি না যে, তোমরা কাদাযূক্ত পিছলা পথ হেঁটে আসবে।

১৪৭৮ আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কাদা পানির দিনে আমাদের খুতবা দিয়েছেন। অতঃপর ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর বর্ণনায় জুমু-আ শব্দটি উল্লেখ করেননি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এই কাজ তো তিনই করেছেন, যিনি আমার চাইতে উত্তম অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবূ কামিল, আসিমের সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনু হারিস থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১৪৭৯ আবূর রাবী আতাকা যাহরানী (রহঃ) উক্ত সনদে আয়্যুব ও আসিম আহওয়াল (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি উক্ত হাদীসে অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথবটি উল্লেখ করেননি।

১৪৮০ ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর মুয়াযযিন বৃষ্টির দিন জুমুআর দিবসে আযান দেন, তারপর তিনি ইবনু উলায়্যার অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং বললেন, তোমাদের পিচ্ছিল কর্দমের মধ্যে হেঁটে আসা আমি তা পছন্দ করিনি।

১৪৮১ আবদ ইবনু হুমায়দ আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ষণ মুখর জুমূঃআর দিনে তাঁর মুয়াযযিনকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন। মা’মারের হাদীসে রয়েছে দিনে জুম্মার দিবসে উক্ত বর্ণনাকারীর অনুরুপ এবং মা’মারের হাদীসে এও রয়েছে, “তা করেছেন আমার চাইতে উত্তম ব্যাক্তি অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

১৪৮২ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) জুমুআর দিবসে বৃষ্টির দিনে তার মুয়াযযিনকে নির্দেশ দেন। তার পূর্বোক্ত বর্ণনাকারীদের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১৪৮৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উষ্ট্রের পিঠে নফল সালাত আদায় করতেন, উষ্ট্রের মুখ যে দিকেই থাক না কেন।

১৪৮৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উষ্টীর পিঠে সালাত আদায় করতেন, উষ্টী যে দিকেই মুখ করে চলুক।

১৪৮৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মর্দ্বীনায় আসছিলেন, তখন তার সাওয়ারীর উপর সালাত আদায় করেছেন, যে দিকেই তাঁর মুখ ছিল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন- এ বিষয়ে নাযিল হয়ঃ অর্থাৎ “যে দিকেই তোমরা মুখ ফিরাও না কেন সে দিকই আল্লাহর দিক”।

১৪৮৬ আবূ কুরায়ব (রহঃ), ইবনু নুমায়র (রহঃ), আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে পুর্বের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু মুবারক ও ইবনু আবূ যায়দা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে এইরুপ আছে যে, অতঃপর ইবনু উমর (রাঃ) তিলাওয়াত করেন, এবং তিনি বলেন, এই বিষয়েই আয়াতটি নাযিল হয়েছে।

১৪৮৭ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে গাধার উপরে সালাত আদায় করতে দেখেছি যখন তিনি খায়বারের দিকে মুখ করেছিলেন।

১৪৮৮ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) সাঈদ ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমরের সঙ্গে মক্কার পথে যাচ্ছিলাম। সাঈদ (রাঃ) বলেন, যখন ভোর হওয়ার আশংকা করলাম, তখন আমি সাওয়ারী থেকে নেমে বিতর সালাত আদায় করলাম। তারপর ইবনু উমরের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ফজর হওয়ার আশংকায় আমি নেমে বিতরের সালাত আদায় করেছি। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে কি তোমার জন্য আদর্শ নেই-”? আমি বললাম, হাঁ, আল্লাহর শপথ। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর বসে বিতর আদায় করতেন।

১৪৮৯ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারীর উপর সালাত আদায় করতেন, যে দিকেই সে তাঁকে নিয়ে চলূক সে দিকে। আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) তাই করতেন।

১৪৯০ ঈসা ইবনু হাম্মাদ মিসরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারীর উপর বসে বিতর আদায় করতেন।

১৪৯১ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারীর উপর বসে নফল আদায় করতেন, যে দিকেই সে মুখ করুক সে দিকে এবং বিতর ও তার উপর বসে আদায় করতেন। তবে ফরয সালাত সাওয়ারীর উপর বসে আদায় করতেন না।

১৪৯২ আমর ইবনু সাওয়াদ ও হারামালা (রহঃ) আমির ইবনু রাবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সফর অবস্হায় রাতে সাওয়ারীর পিঠে বসে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। যে দিকেই সে মুখ করুক না কেন।

১৪৯৩ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যখন সিরিয়া থেকে আসলেন তখন আমরা তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন তাঁকে দেখলাম যে, তিনি গাধার উপর বসে সালাত আদায় করেছেন এবং তাঁর মুখ ছিল এই দিকে। (রাবী হাম্মাম ইঙ্গিত করলেন, কিবলার বাঁ দিকে) তখন আমি তাকে বললাম, আমি আপনাকে কিবলার বিপরীত মুখী সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি বললেন, আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা করতে না দেখতাম, তবে আমিও তা করতাম না।

১৪৯৪ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যখন সফরে তাড়াহুড়ো থাকত তখন মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন।

১৪৯৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ)-এর যখন তাড়াহুড়া থাকত তখন পশ্চিমাকাশের লালিমা অস্তমিত হওয়ার পর মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করতেন এবং বলতেন, তাড়াহুড়ার সফরের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন।

১৪৯৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) , কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আমর ইবনু নাকীদ (রহঃ) সালিমের পিতা ইবনু উমর) থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- দেখে ছি, যখন তাঁর সফরে তাড়াহুড়া থাকত, তখন তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন।

১৪৯৭ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, যখন তাঁর সফরে হাড়াহুড়ো থাকত তখন মাগরিবের সালাত দেরীতে আদায় করতেন। পরে মাগরিব ও ইশা। একত্রে আদায় করতেন।

১৪৯৮ কুতায়বা ইবনু যাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় সফর করতেন, তখন যুহরের সালাত আসরের ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ভ করতেন। তারপর অবতরণ করে এ দুই সালাত একত্রে আদায় করতেন। আর যদি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রওনা দিতেন, তখন যুহুরের সালাত আদায় করে সাওয়ার হতেন।

১৪৯৯ আমর ইবনু নাকিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর অবস্হায় দুই সালাত একত্রে আদায় করার ইচ্ছা করতেন, তখন যুহরের সালাত আসরের প্রথম ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত বিলম্ভ করতেন। এরপর উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন।

১৫০০ আবূ তাহির ও আমর ইবনু নাওয়াদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যখন সফরে তাড়াহুড়ো থাকত, তখন তিনি যুহরের সালাত আসরের প্রথম ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত-বিলম্ভ করতেন। তারপর উভয় সালাত একত্রে আদায় করতেন। মাগরিবের সালাতে বিলম্ভ করতেন এমনকি লালিমা অন্তমিত হওয়ার সময় হলে মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন।

১৫০১ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ভয়-ভীতি ও সফর ছাড়াই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের সালাত এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন।

১৫০২ আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ও আওন ইবনু সাল্লাম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অথবা ভয়-ভীতি ছাড়াই মদিনায় যুহর ও আসরের সালাত একত্রে আদায় করেছেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদকে জিজ্ঞাসা করলাম কেন এইরুপ করলেন? তিনি বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছ, আমিও তেমনি ইবনু আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্য ছিল, তার উম্মাতের কেউ যেন কষ্টে না পড়ে।

১৫০৩ ইয়াহিয়া ইবনু হাবীব হারীসি (রহঃ) সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্বে সফরকালে যুহর ও আসর এবং মাগরিব ইশা একত্রে আদায় করেন।১ সাঈদ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাঁকে তা করতে কিসে উদ্বুদ্ধ করেছিল? তিনি বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য তার উম্মাত যেন কষ্টে না পড়ে।

১৫০৪ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা তাবুকের যুদ্বে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হই। সে সময় তিনি যুহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেন।

১৫০৫ ইয়াহিয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্ধের সময় যুহুর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তার এইরুপ করার কারণ কি? তিনি বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর উম্মাত যেন কষ্টে না পড়ে।

১৫০৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন প্রকার ভয়-ভীতি বা বৃষ্টি-বাদলা ছাড়াই মদিনায় যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। ওয়াকী’ বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাবী বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন তিনি এইরুপ করলেন? তিনি বললেন, যেন তাঁর উম্মাতের কোন কষ্ট না হয়। আবূ মু’আবিয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল, এইরুপ করার উদ্দেশ্য কি? তিনি বললেন, তাঁর উদ্দেশ্য তাঁর উম্মাতের যাতে কোন কষ্ট না হয়।

১৫০৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আট রাকআত একত্রে এবং সাত রাক’আত একত্রে আদায় করেছি। আমি বললাম হে আবূ শা’সা! আমার মনে হয়, তিনি যুহরের সালাত বিলম্বে এবং আসরের সালাত ত্বরানিত করেছেন। অনুরুপভাবে মাগরিবের সালাত বিলম্ব করে এবং ইশার সালাত ত্বরান্বিত করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমিও তাই মনে করি।

১৫০৮ আবূর রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আট রাকআত ও সাত রাক’আত অর্থাৎ যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন।

১৫০৯ আবূর রাবী আয যাহরানী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক দিন ইবনু আব্বাস (রাঃ) আসরের পরে আমাদের খূতবা দেন এমন কি সূর্য-ড়ূবে গেল এবং তারকা সমূহ প্রকাশ পেল। লোকেরা বলতে লাগল, আস সালাত, আল সালাত। বনী তামীমের এক ব্যাক্তি তার দিকে এগিয়ে এসে অন্য দিকে না তাকিয়ে অবিরাম বলতে লাগল, আল সালাত, আল সালাত। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক, তুমি আমাকে সুন্নাতের শিক্ষা দিচ্ছ? তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি যে, তিনি যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) বলেন, তা শুনে আমার অন্তরে কিছু খটকা লাগল। তারপর আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি ইবনু আব্বাসের বিবরণটির সত্যতা স্বীকার করলেন।

১৫১০ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক উকায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলেন- আল সালাত, তিনি নীরব রইলেন। সে আবার বলল, আল সালাত। তিনি নীরব রইলেন। লোকটি আবার বলল, আস সালাত। তিনি এবারও নীরব রইলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি আমাকে সালাত শিক্ষা দিচ্ছ? আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় দুই সালাত একত্রে আদায় করতাম।

১৫১১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউই যেন শয়তানকে নিজে থেকে কোন অংশ না দেয়। অর্থাৎ কেউ যেন মনে না করে যে, (সালাত শেষে) কেবল ডান দিকে ফিরা তার উপর ওয়াজিব। আমি অনেক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম দিকে ফিরতেও দেখেছি।

১৫১২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫১৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুদ্দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, সালাত শেষে আমি কিভাবে ফিরব? ডান দিকে না বাম দিকে? তিনি বললেন, আমি বেশীর ভাগ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ডান দিকে ফিরতে দেখেছি।

১৫১৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে ডান দিকে ফিরতেন।

১৫১৫ আবূ কুরায়ব (রহঃ) আল বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত আদায় করতাম, তখন তার ডান পাশে থাকাই পছন্দ করতাম, যেন তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরান। রাবী বলেন, আমি তাঁকে এ দু’আ বলতে শুনেছি: অর্থ–“হে রব! আমাকে তোমার সে দিনের আযাব থেকে বাচাও, যে দিন তুমি তোমার বান্দাদের উত্থিত করবে কিংবা (তিনি বলেছেন) একত্রিত করবে”।

১৫১৬ আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মিস আর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার বর্ণনায় (যেন তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরান) উল্লেখ করেননি।

১৫১৭ আহমাদ ইবনু হানুল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইকামত দেওয়া হয়, তখন ফরয ব্যতীত অন্য সালাত নেই।

১৫১৮ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ও ইবনু রাফিঁ (রহঃ) ওয়ারাকা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

১৫১৯ ইয়াহিয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের ইকামত দেওয়া হয়, তখন ফরয ব্যাতীত জন্য কোন সালাত নেই।

১৫২০ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যাকারিয়া ইবনু ইসহাক (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫২১ হাসান আল হুলওয়ানি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। রাবী হামীদ (রহঃ) বলেন, আমি আমরের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি আমার কাছে এই হাদীস বর্ণনা করেন, কিন্তু মারফু’রুপে বর্ণনা করেননি।

১৫২২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী (রহঃ)আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু যুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির পাশ দিয়ে আসছিলেন, সে সালাত আদায় করছিল। তখন ফজরের সালাতে ইকামত দেওয়া হয়েছে তিনি তার সঙ্গে কিছু কথা বললেন। কি বলেছেন, আমরা তা জানি না। আমরা যখন সালাত শেষ করলাম তখন আমরা তাঁকে ঘিরে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কি বলেছেন? সে বলল, তিনি আমাকে বলেছেন, মনে হচ্ছে, তোমাদের কেউ ফজরের সালাত চার রাকআত আদায় করছে?- কানাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু যুহায়না (রহঃ) তার পিতা থেকে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেছেন যে, ‘তার পিতা থেকে’ কথাটি এ হাদীসে ভুল।

১৫২৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু বুহায়না (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফজরের সালাতে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন যে, এক ব্যাক্তি সালাত আদায় করয়ে মুয়াযযিন তখনো তাকবীর দিচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন, তুমি কি ফজরের সালাত চার রাকআত আদায় করছ?

১৫২৪ আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) , হামিদ ইবনু উমর বাকরাবী (রহঃ) , ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সারজাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। লোকটি মসজিদের কোনায় দু রাকআত সালাত আদায় করে রাসুলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে শামিল হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে ওমুক! তুমি এ দু-সালাতের মধ্যে কোনটিকে (আসল) গন্য করেছ? যা তুমি একাকী পড়লে তা না, যা আমাদের সাথে পড়লে তা?

১৫২৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন বলবে ইয়া আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন। যখন বের হয়ে যাব, তখন বলবে-আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থী।

১৫২৬ হামিদ ইবনু উমর বাকরাবী (রহঃ) আবূ উসায়দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫২৭ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ), কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন বসার আগে দু-রাক’আত সালাত আদায় করবে।

১৫২৮ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে গেলাম তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ও বসে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, বসার আগে দু-রাক’আত সালাত আদায় করা থেকে তোমাকে কিসে বিরত রাখল? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে বসা দেখলাম এবং লোকেরাও বসা ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু-রাকআত সালাত আদায়ের আগে বসবে না।

১৫২৯ আহমাদ ইবনু জাওয়াস আল হানাফী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমার পাওনা ছিল, তিনি আমাকে তো পরিশোধ করলেন এবং কিছু বেশী দিলেন। আমি মসজিদে তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, তুমি দু-রাক’আত সালাত আদায় কর।

১৫৩০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট থেকে উট খরিদ করলেন। আমি যখন মদিনায় আসলাম তখন তিনি আমাকে মসজিদে যাওয়ার আদেশ দিলেন এবং বললেন, দু রাকআত সালাত আদায় কর।

১৫৩১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কোন এক যুদ্ধে বের হলাম। আমার উট পথ চলতে বিলম্ভ করল। এমনকি পথ চলতে অক্ষম হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগেই পৌছে গেলেন, আর আমি পরদিন সকালে পৌহুলাম। আমি আমি মসজিদে আসলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদের দরজায় দেখতে পেলাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি পৌছেছ? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, উট রেখে মসজিদে আস এবং দু-রাক’আত সালাত আদায় করো। তখন আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং দু- রাকআত সালাত আদায় করে ফিরে এলাম।

১৫৩২ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে পূর্বাহ্নে মদিনায় প্রবেশ করতেন। প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং দু রাকআত সালাত আদায় করে বসতেন।

১৫৩৩ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি . আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি পূর্বাহ্নে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, না, কিন্তু সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করলে আদায় করতেন।

১৫৩৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি দু’হার সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু সফর থেকে ফিরে এলে (আদায় করতেন)।

১৫৩৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দু-হার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো সালাত আদায় করতে দেখিনি। কিন্তু আমি তা আদায় করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন কাজ পছন্দ করতেন; কিন্তু পাছে লোকেরা তা আকড়ে ধরবে এবং তাদের উপর তা ফরয হয়ে পড়বে এ আশংকায় তা ছেড়ে দিতেন।

১৫৩৬ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-হার সালাত কত রাকঃআত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকঃআত। ইচ্ছে হলে বেশীও পড়তেন।

১৫৩৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইয়াযীদের সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন

১৫৩৮ ইয়াহিয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-হার সালাত চার রাকআত আদায় করতেন। আল্লাহর ইচ্ছায় বেশীও পড়তেন।

১৫৩৯ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে উক্ত সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৪০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবূ নায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-হার সালাত আদায় করতে দেখেছেন বলে উম্মে হানী (রাঃ) ব্যতীত কেউ আমাকে বলেন নি। তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে আসেন এবং আট রাকআত সালাত আদায় করেন। আমি আর কখনও তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত সালাত আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকু ও সিজদা ঠিক মতো আদায় করেছিলেন। তবে ইবনু বাশশার (রহঃ) তার বর্ণনা , শব্দটি উল্লেখ করেননি।

১৫৪১ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল-মুরাদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করতাম এবং কৌতূহলী হতাম যাতে এমন কাউকে পাই যে আমাকে বলে দেবে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-হার সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) ব্যতীত আর কাউকে এই বিষয়ে রিওয়ায়াত বর্ণনাকারী আমি পাইনি। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন পূর্বাহ্নে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং একটি কাপড় এনে তাঁর জন্য পর্দা করা হল। তিনি গোসল করলেন এবং দাঁড়িয়ে আট রাকঃআত সালাত আদায় করলেন। আমি জানি না, তাঁর সালাতে দাড়ান, অথবা তার রুকু” অথবা তার সিজদা কোনটা দীর্ঘ ছিল। এর প্রত্যেকটই প্রায় সমান ছিল। তিনি বলেন, এর পূর্বে বা পরে তাঁকে আর দু-হার সালাত আদায় করতে দেখি নি। রাবী আল মুরাদী বলেছেন। কিন্তু বলেন নি।

১৫৪২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ মুররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উম্মে হানী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম এবং আমি তাঁকে গোসল করতে পেলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। আমি সালাম দিলাম! তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি জবাব দিলাম, উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! তারপর তিনি গোসল সেরে দাড়িয়ে আট রাকআত সালাত আদায় করলেন। তখন তিনি একই কাপড় জড়িয়ে ছিলেন। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সহোদর আলী ইবনু আবূ তালিব, হুরায়রার পূত্র অমুককে কতল করার সংকল্প করেছে, যাকে আমি নিরাপত্তা দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বললেন, এ ছিল চাশতের সময়।

১৫৪৩ হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) উম্মে হানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে একটি কাপড় পরে আট রাকআত সালাত আদায় করেন। তিনি সে কাপড়ের দু’আচল বিপরীত দিকে জড়িয়ে ছিলেন।

১৫৪৪ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আদ যুবাঈ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার উপর একটি সাদাকা রয়েছে। প্রতি সূবহানাল্লাহ সাদাকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সাদাকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাদাকা, প্রতি আল্লাহ আল্লাহ সাদাকা, আমর বিল মারুফফ (সৎকাজের আদেশ) সাদাকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সাদাকা। অবশ্য চাশতের সময় দু রাকআত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।

১৫৪৫ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ)।… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা, চাশতের দু-রাকআত সালাত আদায় করা এবং নিন্দ্রা যাওয়ার আগে যেন আমি বিতর সালাত আদায় করে নেই।

১৫৪৬ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাসশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৪৭ সুলায়মান ইবনু মাবাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বন্ধু আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর আবূ উসমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১৫৪৮ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার দোস্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি বিষয়ের উপদেশ দিয়েছেন। যতদিন আমি জীবিত থাকব, ততদিন তা ছাড়ব না। প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখা, চাশতের সালাত আদায় করা এবং বিতর আদায় না করা পর্যন্ত যেন আমি নিদ্রায় না যাই।

১৫৪৯ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, মুয়াযযিন যখন ফজরের আযান দিয়ে নীরব হয়ে যেতেন এবং ভোর প্রকাশ হয়ে যেত, তখন ফজরের ইকামতের আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।

১৫৫০ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ), কুতায়বা ইবনু রুমহ, যূহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ), নাফি’ (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে মালিকের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৫১ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় হলে সংক্ষিপ্ত দু’রাকঃআত ছাড়া অন্য কোন সালাত আদায় করতেন না।

১৫৫২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৫৩ মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের আলো প্রকাশ হওয়ার পর দু- রাকআত সালাত আদায় করতেন।

১৫৫৪ আমরুন নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান শুনার পর ফজরের দু- রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন এবং তা সংক্ষিপ্ত করতেন।

১৫৫৫ আলী ইবনু হুজর, আবূ কুরায়ব, আবূ বাকর ও আমর ইবনু নাকিদ (রহঃ) হিশাম (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। আবূ উসামা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে (যখন ফজর হত) বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে।

১৫৫৬ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন।

১৫৫৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’রাকাআত (সুন্নাত) পড়তেন যে, আমি মনে মনে বলতাম, তিনি উভয় রাকঃআতে সূরা ফাড়িহা পড়েছেন।

১৫৫৮ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ফজর হতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু- রাকআত সালাত আদায় করতেন। আমি মনে মনে বলতাম তিনি উভয় রাকঃআতে শুধু! ফাতিহা পড়েছেন।

১৫৫৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের দু রাক’আত সুন্নাত ব্যতীত অন্য কোন নফল সালাতের প্রতি এত বেশী সর্বদা খেয়াল করতে দেখিনি।

১৫৬০ আবূ বাকর ইবনু শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু- রাকআত সুন্নাত সালাতের জন্য যতটা ব্যস্ত হতেন, অন্য কোন নফল সালাতের জন্য ততটা ব্যস্ত হতে আমি তাঁকে দেখিনি।

১৫৬১ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ গুবারী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফজরে দুঁ-রাকআত (সুন্নাত) দুনিয়া এবং দুনিয়ার সকল কিছু চাইতে উত্তম।

১৫৬২ ইয়াহিয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত আসার পরে দু-রাকআত সুন্নাত সম্পর্কে বলেছেন যে,-তা আমার নিকট দুনিয়ার সকল কিছুর চাইতে শ্রেয়।

১৫৬৩ মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নাত দু-রাকঃআতে কুল ইয়াআইউ হাল কাফিরুন এবং কুল হু আল্লাহু আহাদ পাঠ করতেন।

১৫৬৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’রাক’আত সুন্নাত সালাতের প্রথম রাক’আতে কুলু আমান্না বিল্লাহি আয়াতটি পাঠ করতে এবং দ্বিতীয় রাক’আতে আমান্না বিল্লাহি অয়া আশহাদু বিয়ান্না মুসলিমিন আয়াতটি পাঠ করতেন।

১৫৬৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নাত সালাতের প্রথম রাক’আতে কুলু আমান্না বিল্লাহি ওমা উঞ্জিলা ইলায়না দ্বিতীয় রাক’আতে সূরা আলে ইমরানের তাআলা লাও ইলা কাইমাতি পাঠ করতেন।

১৫৬৬ আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে মারওয়ান ফাজারী (রহঃ)’র অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৬৭ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আমর ইবনু আউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনবাসা ইবনু আবূ সুফিয়ান (রহঃ) তাঁর সেই রোগের সময় যেই রোগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন একটি হাদীস বর্ণনা করেন, যা বড়ই আনন্দদায়ক। তিনি বলেন, উম্মে হাবীবা (রাঃ) বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যাক্তি দিবা-এরাত্র বার রাক’আত (সূ-ন্নাত) সালাত আদায় করবে তার প্রতিদানে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) বলেন, যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছি তখন থেকে এই সালাত গুলো কখনো ছাড়িনি। আবূ বাসা (রহঃ) বলেন, আমি উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে একথা শুনেছি, তখন থেকে আমিও তা ছাড়িনি। আমর ইবনু আউস (রহঃ) বলেন, আমি যখন থেকে আববাসার নিকট থেকে এ কথা শুনেছি, তখন থেকে এই সালাত গুলো ছাড়িনি। নূমান ইবনু সালিম (রহঃ) বলেন, আমি যখন আমর ইবনু আউস (রহঃ) থেকে এগুলোর কথা শুনেছি, তখন থেকে সেই সালাত আমিও ছাড়িনি।

১৫৬৮ আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) নূমান ইবনু সালিম (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যাক্তি দিনে বার রাক’আত অতিরিক্ত (নিয়মিত) সালাত আদায় করবে, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর বানানো হবে।

১৫৬৯ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যে কোন মুসলিম বান্দা দৈনিক ফরয ব্যতীত বার রাক’আত সালাত আল্লাহর উদ্দেশ্যে আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন অথবা বলেছেন, জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর তৈরী করা হবে। উম্মে হাবীবা (রাঃ) বলেন, এর পর থেকে আমি এই সালাত নিয়মিত আদায় করে আসছি। বর্ণনাকারী আমর (রহঃ) বলেন, এরপর থেকে আমিও এ সালাত নিয়মিত আদায় করে আসছি। নুমান (রহঃ) ও অনুরুপ বলেছেন ।

১৫৭০ আবদুর রহমান ইবনু বিশর ও আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম আল আবদী (রহঃ) উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলিম বান্দা উত্তমরুপে ওযু করে দৈনিক আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই সালাত আদায় করে পরবর্তী অংশ পূ-এর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৫৭১ যুহাহার ইবনু হারব, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুহরের পূর্বে দু-রাকআত ও তার পরে দু-রাক’আত, মাগরিবের পরে দু-রাকআত, ইশার পরে দু-রাক’আত এবং জুম্মার পরে দু-রাক’আত সালাত আদায় করেছি। আর মাগরিব, ইশা, জুম্মার (দু-রাকআত) সালাত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তাঁর ঘরেই আদায় করেছি।

১৫৭২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত অর্থাৎ তাঁর নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যুহরের আগে আমার ঘরে চার রাকআত সালাত আদায় করতেন। এরপর বেরিয়ে গিয়ে লোকদের নিয়ে (যুহর) সালাত জামাতে আদায় করতেন। তারপর ঘরে এসে দু রাকআত আদায় করতেন। আর তিনি লোকদের নিয়ে মাগরিব সালাত আদায় করতেন। এরপর ঘরে এসে দু-রাকআত সালাত আদায় করতেন। আর ইশা’র সালাত লোকদের নিয়ে আদায় করতেন। তারপর আমার ঘরে এসে দু-রাকআত পড়তেন এবং তিনি রাতের বেলা নয় রাক’আত সালাত আদায় করতেন, যার মাঝে বিতরও রয়েছে। রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে তিনি সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘরাত বসে সালাত আদায় করতেন। আর তাঁর অভ্যাস ছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিরাআত পাঠ করলে রুকু ও সিজদাও তিনি দাঁড়ানো অবস্হায় থেকে আদায় করতেন, আর যখন বসে কির’আত পাঠ করতেন তখন বসেই রুকু ও সিজদা আদায় করতেন এবং ফজর উদিত হওয়ার পর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৫৭৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘরাত পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (কিরাঃআত) আদায় করতেন তখন রুকু দাড়ানো অবস্থায় থেকে করতেন আর বসে সালাত আদায় করার সময় রুকুও বসা অবস্হায় করতেন।

১৫৭৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি পারস্য দেশে অসুস্হ অবস্হায় ছিলাম। তখন আমি বসে সালাত আদায় করলাম। পরে আয়িশা (রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন পরবর্তী অংশ পূর্বোক্ত হাদীস অনুসারে বর্ণনা করেছেন। ১৫৭৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আন-উকায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি দীর্ঘরাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘরাত পর্যন্ত বসে সালাত আদায় করতেন। যখন দাঁড়িয়ে কিরাঃআত পাঠ করতেন তখন দাঁড়ানো অবস্হায় থেকে রুকু করতেন আর বসে কিরাঃআত পাঠ করলে রুকু ও বসা অবস্হায় থেকেই করতেন।

১৫৭৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক আল উকায়লী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে এবং উপবিষ্ট অবস্থায় বহু সালাত আদায় করতেন। দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে দাড়ানো থেকেই করতেন এবং উপবেশন করে সালাত আদায় করলে উপবিষ্ট অবস্হায় থেকে রুকু করতেন।

১৫৭৭ আবূর রাবী যাহরানী, হাসান ইবনুল রাবী , আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শব্দ যুহায়রের আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সালাতের কোন অংশেই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বসে কিরাঃআত পাঠ করতে দেখি নি। অবশেষে যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন, তখন বসে কিরা”আত পাঠ করতেন এবং যখন সে সূরার ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সেগুলো পাঠ করার পরে রুকু করতেন।

১৫৭৮ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করতেন এবং উপবিষ্ট অবস্হায় কিরাঃআত পাঠ করতেন। যখন ত্রিশ কিম্বা চল্লিশ আয়াতের পরিমাণ তার কিরাআত বাকী থাকত তখন তিনি দাড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্হায় তা পাঠ করতেন। তারপর রুকু করতেন ও পরে সিজদায় যেতেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ করতেন।

১৫৭৮ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করতেন এবং উপবিষ্ট অবস্হায় কির’আত পাঠ করতেন। যখন ত্রিশ কিম্বা চল্লিশ আয়াতের পরিমাণ তার কিরাআত বাকী থাকত তখন তিনি দাড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্হায় তা পাঠ করতেন। তারপর রুকু করতেন ও পরে সিজদায় যেতেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ করতেন।

১৫৭৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা অবস্হায় কির’আত পাঠ করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন কোন লোকের চল্লিশ আয়াত পাঠ করার পরিমাণ সময় দাঁড়াতেন।

১৫৮০ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উপবিষ্ট অবস্হায় সালাত আদায় করতেন, তখন সে দু-রাকঃআতে কিরুপ করতেন? তিনি বললেন, সে দু- রাকাঃআতে তিনি কির’আত পাঠ করতেন। যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন দাড়িয়ে যেতেন, এরপর রুকু করতেন।

১৫৮১ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বসে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন হ্যা, লোক সমাজ যখন তাঁকে ভারাক্রান্ত করে ফেলেছিল।

১৫৮২ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১৫৮৩ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও হারন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত করেননি যতক্ষন না তাঁর অধিকাংশ সালাত উপবিষ্ট অবস্হায় আদায় হয়েছে।

১৫৮৪ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও হাসান হালওয়ানী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বয়স হয়ে গেলে এবং তার শরীর ভারী হয়ে গেলে তাঁর অধিকাংশ সালাত বসা অবস্হায় আদায় করতেন।

১৫৮৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বসে নফল সালাত আদায় করতে দেখি নি। অবশেষে তার ওফাতের এক বছর আগে থেকে নফল সালাত বসে আদায় করতেন এবং যে-সূরা পাঠ করতেন তা এতই তারতীলের সাথে (স্পষ্টভাবে পাঠ করতেন যে, তা তার চেয়ে দীর্ঘ সূরার চাইতেও দীর্ঘ হয়ে যেত।

১৫৮৬ আবূ তাহির, হারামালা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ দু’জন (ইসহাক ও আবদ) বলেছেন, “এক বছর অথবা দু-বছর-”।

১৫৮৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বসে সালাত আদায় না করা পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হয়নি।

১৫৮৮ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদূল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এ হাদীস শোনান হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বসে কারো সালাত অর্ধেক সালাত।” আমর (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসে সালাত আদায় করতে পেলাম। তখন তার মাথায় হাত রাখলাম। তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! কি ব্যাপার? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে হাদীস শোনানো হয়েছে যে, আপনি বলেছেন যে, উপবিষ্ট অবস্হায় কারও সালাত আদায় করা সালাতের অর্ধেকের সমান। অথচ আপনি বসে সালাত আদায় করছেন? তিনি বললেন, হাঁ (আমি তাই বলেছি) কিন্তু আমি তো তোমাদের কারো মত নই।

১৫৮৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শু’বা থেকে এবং মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উভয়ে মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে শু’বা (রহঃ)-এর রিওয়ায়েতে রয়েছে- আবূ ইয়াহিয়া আল-আরাজ থেকে ।

১৫৯০ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন, এর মধ্যে এক রাকআত বিতর হিসেবে আদায় করতেন। এ সালাত শেষ করে তিনি ডান পার্শে শুইতেন। অবশেষে মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু রাকআত ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করতেন।

১৫৯১ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইশা-এর সালাত যাকে লোকেরা -আতামা, নামে অভিহিত করে থাকে-থেকে অবসর হওয়ার পর হতে ফজর পর্যন্ত – সময়ের মাঝে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং প্রতি দু-রাকঃআতের মাঝে (শেষে) সালাম ফিরাতেন। আর বিতর করতেন এক রাকআত। পরে ফজর সালাতের (আযান) থেকে মুয়াযযিন নীরব হলে এবং ফজর এর ওয়াক্ত তার কাছে পুর্ণ উদ্ভাসিত হয়ে উঠলে এবং মুয়াযযিন তার কাছে এলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তারপর ইকামতের জন্য মুয়াযযিন তার কাছে আসা পর্যন্ত তিনি ডানপার্শের উপর শুয়ে থাকতেন।

১৫৯২ হারামালা (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে পূর্বোক্ত সনদে অনুরুপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে হারামালা (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় “তার কাছে ফজর উদ্ভাসিত হলে এবং মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলে– উল্লেখ করেননি। সেরুপ ইকামত এর কথাও উল্লেখ করেননি। হাদীসের অবশিষ্টাংশ পূর্ববর্তী আমর (রাঃ)-এর হাদীসের অবিকল অনুরুপ।

১৫৯৩ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাচ রাক’আত দিয়ে তিনি বিতর আদায় করতেন এর শেষে ব্যতীত কখনও বসতেন না।

১৫৯৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

১৫৯৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতের বেলা) ফজরের দু’রাকআত (সুন্নাত) সহ তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৫৯৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদূর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রমযানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কিরুপ ছিল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযান ছাড়াও এগার রাকআতের অধিক পড়তেন না। চার রাকআত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সন্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই, তারপর চার রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সন্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর তিনি তিন রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘূমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না।

১৫৯৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি তের রাকআত সালাত আদায় করতেন। আট রাক’আত সালাত আদায় করতেন, তারপর বিতর। পরে বসে দু-রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং যখন করার ইচ্ছা করতেন তখন উঠে রুকু করতেন। তারপর আযান ও ইকামতের মাঝে দু-রাকআত আদায় করতেন।

১৫৯৮ যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াহিয়া ইবনু বিশর হারীরী (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, পূর্ববর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এদের দু’জনের হাদীসে রয়েছে নয় রাক’আত আদায় করতেন দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে বিতরও রয়েছে।

১৫৯৯ আমর ইবনু নাকিদ (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আম্মাজান! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করতন। তিনি বললেন, তাঁর সালাত ছিল রমযান এবং অরমযানের রাতের রেলায় তের রাক’আত। এর মধ্যে ফজরের দু’রাক’আত (সুন্নাত) ও রয়েছে।

১৬০০ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত ছিল দশ রাক’আত এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফজরের দু- রাকআত (সূন্নাত) ও আদায় করতেন। এই হল তের রাক’আত।

১৬০১ আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) কে ঐ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যাতে আয়িশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের বর্ণনা দিয়েছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাতের প্রথম অংশে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন এবং শেষ অংশে জাগতেন। পরে তাঁর ন্ত্রীর প্রতি তাঁর “প্রয়োজন- থাকলে তা পূরণ করতেন এবং ঘুমিয়ে পড়তেন প্রথম আযানের সময় হয়ে গেলে আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, ত্বরিত উঠে পড়তেন। আল্লাহর কসম! তিনি বলেন নিযে, উঠে পড়তেন। তারপর তিনি নিজের গায়ে পানি ঢেলে দিতেন। আল্লাহর কসম, আয়িশা (রাঃ) বলেন, নিজে তিনি গোসল করেছেন। কিন্তু আমি তাঁর কথার উদ্দোশ্য বুঝে ফেলি। আর তিনি জুনুবি না থাকলে সালাতের জন্য মানুষ যেমন ওযু করে তেমন ওযু করতেন। এরপর দূ”রাকআত সালাত আদায় করতেন।

১৬০২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা সালাত আদায় করতেন। আর তার শেষ সালাত হত বিতর।

১৬০৩ হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আমল সষ্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি সর্বদা আমল করা পছন্দ করতেন। মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কোন সময় (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, যখন (মোরগের) ডাক শুনতেন তখন উঠে সালাত আদায় করতেন।

১৬০৪ আবূ কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ঘরে অথবা (তিনি বলেছেন) আমার কাছে -এরাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ঘুমন্ত অবস্হা ছাড়া পাইনি। (অর্থাৎ সে সময়ই তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেন)।

১৬০৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, নাসর ইবনু আলী ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের দু’রাক’আত (সূন্নাত) সালাত আদায় করতেন, তখন আমি সজাগ থাকলে আমার সঙ্গে কথা বলতেন, অন্যথায় কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন।

১৬০৬ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

১৬০৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত আদায় করতেন। বিতর আদায় করার সময় হলে বলতেন, হে আয়িশা। উঠ বিতর আদায় কর।

১৬০৮ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাঁর সালাত আদায় করতেন এবং তাঁর সামনে আড়া আড়ি ভাবে (শুয়ে) থাকতেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কেবল বিতর বাকী থাকত, তখন তাঁকে জাগাতেন। তিনি বিতর আদায় করে নিতেন।

১৬০৯ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন। তবে শেষ দিকে তাঁর বিতর আদায়ের অভ্যাস ছিল সাহরীর সময়।

১৬১০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন রাতের প্রথম অংশে, মাঝরাতে এবং শেষ রাতে। শেষ পর্যায়ে তার বিতরের অভ্যাস ছিল সাহরীর সময়।

১৬১১ আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের সব অংশেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন। পরে তাঁর বিতর উপনীত হয়েছে রাতের শেষ ভাগে।

১৬১২ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না আনাযী (রহঃ) যুরারা (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, সা’দ ইবনু হিশাম ইবনু আমির (রহঃ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ইচ্ছা করে মদিনায় এলেন এবং সেখানে তাঁর একটি সম্পত্তি বিক্রি করে তা যূদ্ধাস্ত্র ও ঘোড়া সংগ্রহে ব্যয় করার এবং মৃত্যু পর্যন্ত রোমানদের বিরীদ্ধে জিহাদে আত্ননিয়োগ করার সংকল্প করলেন। মদিনায় আসার পর মদিনাবাসী কিছু লোকের সাথে সাক্ষাত হরে তাঁরা ঐ কাজ করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁকে জানালেন যে, ছয় জনের একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় এরুপ ইচ্ছা করেছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিষেধ করেন এবং বলেন, “আমার মধ্যে তোমাদের জন্য কি কোন আদর্শ নেই-“? মদিনাবাসীরা তাঁকে এ ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি নিজের স্ত্রীর সাথে –রাজঃআত, (পুনরায় স্ত্রীতে বরণ) করলেন। কেননা তিনি তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর এ রাজআতের ব্যাপারে সাক্ষীও রাখলেন। এরপর তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর- সম্পর্কে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বিজ্ঞ ব্যাক্তি সম্পর্কেকি তোমাকে বলে দিব না? তিনি বললেন, তিনি কে? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তিনি আয়িশা (রাঃ)। তাঁর কাছে গিয়ে তুমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে পরে আমার কাছে এসে তোমাকে দেওয়া তার জবাব সম্পর্কে অবহিত করবে। আমি তখন তাঁর কাছে রওয়ানা হলাম। আর হাফীম ইবনু আফলাহ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে আমার সঙ্গে আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন, আমি তো তাঁর নিকট যাই না। কেননা (বিবাদমান) দু’দল সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি তাতে অংশগ্রহণ না করতে অস্বীকার করেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, তখন আমি তাঁকে কসম দিলাম। তখন তিনি তৈয়ার হলেন। আমরা আয়িশা (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে চললাম এবং তাঁর কাছে গিয়ে অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাদের অনুমতি দিলেন। আমরা তাঁর ঘরে প্রষেশ করলে তিনি বললেন, হাকীম না কি? তিনি তাঁকে চিনে ফেলেছিলেন। উত্তরে হাকীম (রাঃ) বললেন, হ্যা। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমার সঙ্গে কে? হাকীম (রাঃ) বললেন, সা’দ ইবনু হিশাম। আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন হিশাম? হাকীম (রাঃ) বললেন, ইবনু আমির। তখন আয়িশা (রাঃ) তাঁর জন্য রহমতের দুআ করলেন এবং তাঁর সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করলেন। রাবী কাতাদা (রহঃ) বলেছেন, আমির (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। আমি (সা’দ) বললাম, হে, উম্মুল মুমিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আখলাক সম্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র তো ছিল আলকুরআনই। সা’দ (রাঃ) বলেন, তখন আমার ইচ্ছে ছিল যে, উঠে যাই এবং মৃত্যু পর্যন্ত কাউকে কোন বিষয় জিজ্ঞাসা করব না। পরে আবার মনে হল (আরো কিছু জিজ্ঞাসা করি) তাই আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাতের ইবাদত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন! তিনি বললেন, তুমি কি সূরা “ইয়া আয়্যুহাল মুযৃযামিল পড় না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ এ সূরার প্রথমাংশ (ইবাদত) রাত্রি জাগরণ ফরয করে দিয়েছিলেন। তখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ এক বছর যাবত (তাহাজ্জুদের জন্য) রাত্রি জাগরণ করলেন। আর আল্লাহ তা’আলা এ সূরার শেষ অংশ বার মাস পর্যন্ত আসমানে রুখে রাখেন। অবশেষে এ সূরার শেষ অংশ নাযিল করে সহজ করে দিলেন। ফলে রাত্রি জাগরণ ফরয হওয়ার পরে নফলে পরিণত হয়। সা’দ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, উাম্মুল হে মুমিনীন! আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিতর সম্পর্কে অবহিত করুন! তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য তাঁর মিসওয়াক ও ওযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। রাতের যে সময় আল্লাহর ইচ্ছা হত তাকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি তখন মিসওয়াক ও ওযু করতেন এবং নয় রাক’আত সালাত আদায় করতেন। তিনি এর মাঝে আর বসতেন না অষ্টম রাক’আত ব্যতীত। তখন তিনি আল্লাহর যিকর করতেন, তাঁর হামদ করতেন এবং তাঁর কাছে দু’আ করতেন। তারপর সালাম না করেই উঠে পড়তেন এবং নবম রাক’আত আদায় করে বসতেন এবং আল্লাহর যিকির ও তাঁর হামদ ও তাঁর কাছে দুআ করতেন। পরে এমন ভাবে সালাম বলতেন যা – আমরা শুনতে পেতাম। সালাম করার পরে বসে দু’রাকআত সালাত আদায় করতেন। বৎস, এ হল মোট এগার রাকআত। পরে যখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বায়ো বৃদ্ধ হয়ে গেলেন এবং তিনি স্থুলদেহী হয়ে গেলেন, তখন সাত রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর শেষ দু-রাক”আতে তাঁর আগের আমলের অনুরুপ আমল করতেন। বৎস, এভাবে হল নয় রাক’আত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সালাত আদায় করতেন তখন তাতে স্হায়িত্ব রক্ষা করা পছন্দ করতেন। আর কখনো নিদ্রা বা কোন ব্যাধি তাঁর রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে তাঁকে সংঘাত ঘটালে দিনের বেলা বার রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন। আর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পূর্ণ কুরআন পড়েছেন বলে আমার জানা নেই এবং তিনি ভোর পর্যন্ত সারা রাত সালাত আদায় করেননি এবং রমযান ব্যতীত অন্য কোন পূর্ণ মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেননি। সা’দ (রহঃ) বলেন, পরে আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, ঠিকই বলেছেন। আমি যদি তাঁর নিকটবতী তম, অথবা বললেন, আমি যদি তাঁর সঙ্গে যেতাম তাহলে অবশ্যই আমি তাঁর কাছে গিয়ে সরাসরি তার মুখে এ হাদীস শুনতাম। স্যাদ (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, তাঁর কাছে যান না, তবে তাঁর হাদীস আমি আপনাকে শোনাতাম না।

১৬১৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সাহদ ইবনু হিশাম (রহঃ)থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পরে তাঁর সম্পতি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে মদিনা অভিমুখে চললেন পরবতীঁ অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৬১৪ আবূ বাকুর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর কাছে গিয়ে তাকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। এরপর ঘটনা সহকারে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর তাতে তিনি বলেছেন, আয়িশা (রাঃ) বলেন, কোন হিশাম? আমি বললাম, ইবনু আমির। তিনি বললেন, আমির ভালো লোক ছিলেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছে।

১৬১৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) যুরারা ইবনু আওফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, তিনি তাঁর ন্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। এরপর রাবী সাঈদ (রহঃ)-এর হাদীসের মর্মানূযায়ী বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে রয়েছে আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন হিশাম? তিনি বললেন, ইবনু আমিরা আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি ভালো লোক ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উহুদ যূদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাতে আরো রয়েছে হাকীম ইবনু আফনাহ (রাঃ) বললেন, আচ্ছা! আমি যদি জানতাম যে, তুমি তাঁর কাছে যাও না তরে আমি তোমাকে তার হাদীস বলতাম না।

১৬১৬ সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন অসুস্হতা বা অন্য কোন কারণে যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সালাত ছুটে যেত, তবে তিনি দিনের বেলা বার রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন।

১৬১৭ আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,-এরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন আমল করতেন তখন নিয়মিত করতেন আর যখন রাতের বেলা নিদ্রা মগ্ন হয়ে পড়তেন কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন দিনের বেলা বার রাকআত সালাত আদায় করে নিতেন। আয়িশা (রাঃ)-বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোন রাতে ভোর পর্যন্ত রাত্রি জাগরণ করতে এবং রমযান ব্যতীত কোন মাসে লাগাতার সিয়াম পালন করতে দেখিনি।

১৬১৮ হারুন ইবনু মাঁরুফ, আবূ তাহিল ও হারামালা (রহঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্ত তার নিয়মিত ওয়াযীফা বা তার অংশ বিশেষ আদায় করতে না পেরে ঘুমিয়ে পড়ল এবং পরে ফজর সালাত ও যুহর সালাতের মধ্যবর্তী সময় তা পড়ে নিল তবে তার জন্য তেমনই লিপিবদ্ধ করা হরে যেন সে তা রাতেই পড়েছে।

১৬১৯ যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) কাসিম আশ শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) একদল লোককে ‘দুহা’- সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, ওহে! এরা তো জানে না যে, এ সময় ছাড়া অন্য সময় সালাত আদায় করাই বেশী ফযীলতের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আল্লাহর দিকে ধাবিত অনুগত প্রেমিকদের সালাতের ওয়াক্ত উট শাবকের পায়ে গরম সেকা লাগার সময় হয়ে থাকে।

১৬২০ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা বাসীদের ওখানে গেলেন, তখন তারা সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, আল্লাহ প্রেমিকদের সালাতের সময় হল যখন উট শাবকের পায়ে উত্তাপ লাগে (অর্থাৎ মাটি গরম হয়ে যায়)।

১৬২১ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলা তিনি বললেন, রাতের সালাত দু-রাকআত দু- রাকআত পরে যখন তোমাদের কেউ ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তখন এক রাকাআত সালাত আদায় করবে যা তার সালাতে বিতর করে দেবে।

১৬২২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে ওনেছেন। অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে অন্য সনদে যুহুরি (রহঃ)-সালিম (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, ব্যাক্তি রাতের সালাত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, দুই দুই (রাকঁআত) পরে যখন তুমি সুবহ (ভোর) হয়ে যাওয়ার আশংকা কর তখন এক রাক’আত দিয়ে বিতর করে নেবে।

১৬২৩ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (র। আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (সালাতুল লায়ল) -এরাতের সালাত কি রকম? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাকআত)। যখন তুমি ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাক’আত দিয়ে বিতর করে নেবে।

১৬২৪ আবূর রাবী যাহরানী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করল, তখন আমি ছিলাম তার ও প্রশ্ন কারীর মাঝে। সে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! রাতের সালাত কি কিরুপ? তিনি বললেন, দুই দুই রাকআত করে। পরে যখন তুমি ভোর হওয়ার আশংকা করবে তখন এক রাক’আত সালাত আদায় করবে এবং বিতরকে তোমার শেষ সালাত বানাবে। পরে সেই বছরের শেষে এক ব্যাক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল, আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সে অবস্থানে ছিলাম। তবে আমি জানি না যে, এই প্রশ্নকারী সে ব্যাক্তই ছিল না অন্য কোন লোক। এবারও তিনি তাকে অনুরুপ উত্তর দিলেন। “

১৬২৫ আবূ কামিল, মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ শুবারী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল দু-জনই পূর্বানূরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে “পরের বছরের মাথায় এক ব্যাক্তি তাকে প্রশ্ন করল-” এবং এর পরবর্তী বিবরণ তাঁদের দু-জনের হাদীসে নেই।

১৬২৬ হারূন ইবনু মারুফ, সূরায়হ ইবনু ইউনূস ও আবূ কুরায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভোর হওয়ার আগেই বিতর আদায় করে নাও,

১৬২৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি রাতে সালাত আদায় করে সে যেন বিতরকে তার শেষ সালাত বানায়। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদেশ করতেন।

১৬২৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রাতের শেষ সালাত বিতরকে করে নিও।

১৬২৯ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, রাতের বেলা যে ব্যাক্তি সালাত আদায় করবে সে যেন ভোরের আগে বিতরকে শেষ সালাত করে নেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের এরূপ নির্দেশ দিতেন।

১৬৩০ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিতর হল এক রাকআত রাতের শেষ ভাগে।

১৬৩১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু মিজলায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বিতর রাতের শেষ ভাগের এক রাক’আত।

১৬৩২ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মিজলায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেও জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, রাতের শেষ ভাগে এক রাকআত।

১৬৩৩ আবূ কুরায়ব ও হায়ীন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি রাতের সালাতকে কি রুপে বিতর করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সালাত আদায় করতে চায়, সে যেন দুই দুই (রাকআত) করে সালাত আদায় করে। যখন ভোর হয় বলে অনুভব করবে, তখন যেন এক রাক’আত আদায় করে নেয়। এটি সে যে সালাত আদায় করেছে, তা বিতর বানিয়ে দেবে। আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রয়েছে, তিনি ইবনু উমর বলেন নি।

১৬৩৪ খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ কামিল (রহঃ)- আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, ভোরের সালাতের আগের দু-রাকআত সম্পর্কে আপনার কি অভিমত, আমি কি তাতে কির’আত দীর্ঘ করব? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে দুই দুই (রাক’আত) করে সালাত আদায় করতেন এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমি তো এ বিষয় আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেন, তুমি তো স্থলবুদ্ধির লোক। তুমি কি আমাকে পূরো হাদীস বলার অবকাশ দিবে না? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে দুই দুই (রাকআত) সালাত আদায় করতেন এবং এক রাকআত দিয়ে বিতর করতেন এবং ফজরের আগে দু- রাকআত সূন্নাত এত দ্রুত আদায় করতেন যেন আযান অর্থাৎ ইকামত তাঁর কানে বাজছে। খালফ (রহঃ) তাঁর রিওয়ায়াতে ফজরের আগের দু-রাক’আত সম্পর্কে কি অভিমত বলেছেন, সালাত- শব্দ উল্লেখ করেননি।

১৬৩৫ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ)-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম পূর্বোক্ত রিওয়ায়াতের অনুরুপ। তিনি একটু অতিরিক্ত বলেছেন, ‘রাতের শেষ ভাগে এক রাকআত দিয়ে বিতর আদায় করতেন’। তাতে আরো রয়েছে, বাঃ বাঃ তুমি তো বড় স্হুলবুদ্ধির লোক’।

১৬৩৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের সালাত দুই দুই (রাকঁআত); পরে যখন তুমি দেখবে যে, সুবহ সা’দিক তোমাকে পেয়ে বসেছে তখন তুমি এক (রাক’আত) দিয়ে বিতর আদায় করে নেবে। তখন ইবনু উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, দুই দুই কি? তিনি! বললেন, প্রতি দুই রাকআতে তুমি সালাম ফিরাবে।

১৬৩৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভোর হওয়ার আগেই তোমরা বিতর আদায় করে নেবে।

১৬৩৮ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, সূবহ সা’দিক-এর আগে বিতর আদায় করবে।

১৬৩৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আশংকা থাকে যে, শেষ রাতে সে উঠতে পারবে না সে যেন প্রথম রাতেই বিতর আদায় করে নেয়। আর যে ব্যাক্তি শেষ রাতে উঠতে পারবে বলে আশা রাখিে সে যেন রাতের শেষ লাগে বিতর আদায় করে। কেননা শেষ রাতের সালাত রহমতের ফিরিশতার উপস্থিতির কাল এবং তাই অতি উত্তম। রাবী আবূ মুআবিয়া (রহঃ) মাশহুরাতু শব্দের স্থলে মাহখুরাতু শব্দ বলেছেন।

১৬৪০ সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমাদের যার আশংকা হবে যে, শেষ রাতে সে উঠতে পারবে না, সে যেন বিতর আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। আর যে রাতে ওঠার ব্যাপারে আস্হাবান সে যেন শেষরাতে বিতর আদায় করে। কেননা শেষরাতের কির’আত (ফিরিশতাদের) উপস্থিতির সময় এবং তা অতি উত্তম।

১৬৪১ আযদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতি উত্তম সালাত সময় দাঁড়ান (অর্থাৎ লম্বা কিরাঃআতের সালাত)।

১৬৪২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞানা করা হল কোন সালাত উত্তম? তিনি বললেন, দীর্ঘ সময় দাড়ান।

১৬৪৩ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, রাত্রিকালে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলমান ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্হায় যদি সময়টির আনুকুল্য পায় তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। আর তা রয়েছে প্রতি রাতে।

১৬৪৪ সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) …জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের এমন একটি ক্ষণ রয়েছে যে, কোন মুসলমান বান্দা আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণের প্রার্থনা রত অবস্হায় সে সময়টি পেয়ে গেলে আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই দান করবেন।

১৬৪৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব; কে আছে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব, কে আছে আমার কাছে মাগফিরাত কামনা করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব।

১৬৪৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি রাতে যখন রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন আর তিনি বলতে থাকেন, আমিই বাদশাহ। কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আছে – যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দিয়ে দেব; কে আছে এমন যে, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ফজর উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই চলতে থাকে।

১৬৪৭ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের অর্ধেক কিংবা দুই তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা নিকটবতীঁ আসমামে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছে কি কোন প্রার্থনা তাকে প্রদান করা হবে, আছে কি কোন দুআকারী? তার দু’আ কবুল করা হবে; জাছে কি কোন ক্ষমা প্রাথীঁ? তাকে ক্ষমা কর দেয়া হবে; এরুপ চলতে থাকে ভোর প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত।

১৬৪৮ হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) ইবনু মারজানা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের আধা আধির সময় কিংবা রাতের শেষ ভাগের সময় মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কিংবা কে আমার কাছে প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দিয়ে দেব। অতঃপর বলতে থাকেন, কে আছে করয দেবে এমন সত্তাকে যিনি নিঃস্ব নন এবং যিনি ষুলুম করেন না। মুসলিম (রহঃ) বলেছেন, ইবনু মারাজানা হচ্ছেন সাঈদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) এবং মারজানা (রাঃ) হলেন তাঁর মাতা।

১৬৪৯ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) সা’দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) উপরোক্ত সনদে বর্ণিত এবং তিনি বর্ণনা করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর দু- হাত প্রসারিত করে বলতে থাকেন, কে আছে করয দেবে এমন সত্তাকে যিনি নিঃস্ব নন এবং যিনি যুলুম করেন না।

১৬৫০ আবূ শায়বার পূত্র উসমান ও আবূ বাকর এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেলে তিনি নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বলেন, কেউ কি আছে মাগফিরাতকামী? কেউ কি আছে তাওবাকারী? কেউ কি আছে প্রার্থনাকারী? কেউ কি আছে দুআকারী? এরুপ বলতে থাকেন ফজর উদ্ভাসিত হওয়া পর্যন্ত।

১৬৫১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা সূত্রে ইসহাক (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে মানসূর (রহঃ) বর্ণিত আবূ ইসহাক (রহঃ) এর হাদীসটি অধিক পূর্ণাঙ্গ ও অধিক বিবরণ সম্বলিত।

১৬৫২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে (সাওয়াব প্রাপ্তির বিশ্বাস নিয়ে)রমযানে তারাবীহ ইত্যাদির জন্য রাত্রি জাগরণ করে , তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

১৬৫৩ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে রাত্রি জাগরণের জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ না দিয়ে তাদের উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সাথে রমযানে রাত্রি জাগরণ করবে তার বিগত গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় আর বিষয়টি এরুপই ছিল। পরে আবূ বাকর (রাঃ) এর খিলাফত যুগে অবস্হা অনুরুপ থাকে, উমর (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও অবস্হা অনুরুপ অবস্থায় ছিল।

১৬৫৪ ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি লায়লাতুল কাদরে ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রাত জাগরণ (ইবাদত) করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

১৬৫৫ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি লায়লাতুল কাদরে রাত জাগরণ করে রাবী বলেন, আমার ধারনা যে তিনি বলেছেন, ঈমান ও সাওয়াবের আশায় তবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।

১৬৫৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন তাঁর সঙ্গে লোকজন সালাত আদায় করল। এরুপ সময় আগামী রাতে তিনি সালাত আদায় করলেন এতে বহু লোক হল। পরে কিংবা চতূর্থ রাতেও তাঁরা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দিকে বের হলেন না। পরে সকালে তিনি বললেন, তোমরা যা করেছ তা তো আমি দেখেছি। তোমাদের কাছে বের হয়ে আসতে আমাকে শুধু এ ই বাধা দিয়েছে যে, আমি আশংকা কছিলাম যে, সে সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যেতে পারে। এ ঘটনা রমযানের।

১৬৫৭ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য রাতে বেরিয়ে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। তখন একদল লোক তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল এবং সকালে লোকেরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করল। ফলে তাদের চাইতে অনেক বেশী লোক সমবেত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় রাতে বের হলেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল। এদিন সকালেও লোকেরা বিষয়টি অহলচনা করতে থাকল। এতে রাতে মসজিদের লোক সংখ্যা আরো বেশী হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করল। চতুর্থ রানে মসজিদ লোকদের স্হান সংকুলানে অক্ষম হল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে বের হলেন না। তখন তাদের মাঝে কিছু লোক বলতে লাগল, সালাত! সালাত! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও তাদের কাছে বের হলেন না। অবশেষে ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন। ফজরের সালাত আদায় করার পরে লোকদের দিকে মুখ করলেন এবং তাশদিদ পাঠের পরে বললেন, তারপর আজ রাতে তোমাদের অবস্হা আমার কাছে গোপন থাকে নি। তবে আমার আশংকা হয়েছিল যে, রাতের (তারাবীহ) সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায়; আর তোমরা তা পাননে অক্ষম হও।

১৬৫৮ মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাযী (রহঃ) …উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যখন তাকে বলা হব যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি সারা বছর (ইবাদতে) রাত্রি জাগরণ করবে সে শবে-কাদর পাবে; তখন উবাই (রাঃ) বললেন, সেই আল্লাহর কসম তিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। তা অবশ্যই রমযানে রয়েছে। তিনি কসম করে বলেছিলেন এবং তিনি কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই কসম করে বলেছিলেন। আবার তিনি আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন, ভাল করেই জানি যে, সেটি কোন রাত; সেটি হল সে রাত যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হুকুম করেছিলেন। যে রাতের ভোর হয়, সাতাশে রমযান। আর সে রাতের আলামত হল এই যে, দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জল হয়ে তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না।

১৬৫৯ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ)উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি লায়লাতুল কাদর সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তা অবশ্যই জানি এবং আমার অধিক ধারণা যে, সেই রাত যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর রাসুল আমাদের আদেশ দিয়েছিলেন, সে টি সাতাশের রাত। রাবী শুবা এ বাক্যে সন্দেহ পোষণ করছেন -তা সেই রাত যে রাত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার এক সঙ্গী আমাকে তাঁর কাছ থেকে একথাটি বর্ণনা করেছেন।

১৬৬০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ)শুবা (রহঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে শুবা (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং পরবর্তী বাক্যটি তিনি উল্লেখ করেননি।

১৬৬১ আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম হায়্যান আন-আবদী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনার ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। রাতের বেলা এক সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে নিজের প্রয়োজন সমাধা করলেন। তারপর নিজের হাত মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে (পানির) মশকের কাছে গিয়ে বন্ধন খূললেন। তারপর দুই ওযুর মাঝামাঝি ওযু করলেন। অতিরিক্ত পানি খরচ করলেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ ওযু করলেন। তারপর দাড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। আমি জেগে মোড়ামুড়ি দিলাম। যেহেতু জেগে জেগে তাঁকে লক্ষ্য করছিলাম, তা তিনি বুঝে ফেলেন। একথা আমি ভাল মনে করি নি। এরপর আমি ওযু করলাম। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে হাতে ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে আনলেন। -এরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) তের রাকআত হল। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং ঘুমিয়ে নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘূমাল তাঁর নাক ডাকত।(১) তখন বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সালাতের সময় হওয়ার খবর দিলেন। তিনি উঠে সালাত আদায় করলেন এবং ওযু করলেন না। (এ রাতে) তাঁর দু’আর মধ্যে ছিল অর্থাৎ …’ইয়া আল্লাহ! আমার কলবে নূর পয়দা করুন, আমার দৃষ্টিতে নূর দান করুন, আমার শ্রবণ শক্তিতে নুর দান করুন, আমার ডানদিকে নূর, আমার বামদিকে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আমার সামনে নূর, আমার পিছনে নূর এবং বিরাট নূর দান করুন। রাবী কুরায়ব (রহঃ) বলেন, আরও সাতটি বিষয় যা আমার অন্তরে রয়েছে। সালামা ইবনু কুহায়ল বলেন, এরপর আমি আব্বাস পরিবারের কোন একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলে তিনি ঐ বিষয়গুলো আমাকে বর্ণনা করলেন। আমার শিরায়, আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে এবং আমার বুকে…আরও দুটি বিষয় বললেন।

১৬৬২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে একবার রাত্রি যাপন করেন। তিনি বলেন, আমি বিছানার প্রস্হে শয়ন করলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্ত্রী (মায়মুনা) শয়ন করলেন তার দৈর্ঘে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। রাতের অর্ধেক হবে অথবা তার কিছু আগে বা কিছু পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগলেন এবং নিজের হাতে তাঁর চেহারা মুবারক থেকে ঘূমের আমেজ মুছতে লাগলেন। তারপর সূরা আলে ইমরালের শেষ দশ আয়াত পড়লেন। তারপর একটি লটকিয়ে রাখা মাশকের কাছে গিয়ে তাঁর থেকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত শুরু করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে তেমনই করলাম যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন। পরে আমি গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার মাথায় রাখলেন এবং আমার কান ধরে তা মলতে লাগলেন। তখন তিনি দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর দু-রাকআত তারপর দু- রাকআত তারপর দু-রাকআত তারপর দু-রাকআত তারপর বিতর আদায় করলেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলেন। তিনি উঠে সংক্ষিপ্ত দু-রাকআত সালাত (ফজরের সূন্নাত) আদায় করলেন। এরপর বের হয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন।

১৬৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা মুরাদী (রহঃ)উক্ত সনদে মাখরামা ইবনু সুলায়মান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এতে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন, তিনি পানির মশক ঝূলিয়ে রাখার খুঁটির কাছে গেলেন এবং মিসওয়াক করলেন ও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন-এবং পূর্ণাঙ্গ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তবে পানি পরিমাণে কমই ঢাললেন। তারপর আমাকে নাড়া দিয়ে আমি উঠে পড়লাম। হাদীসে বাকী অংশ মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।

১৬৬৪ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে শুইলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ রাতে তার ঘরে ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার পরে সালাতে দাড়ালেন। আমি গিয়ে তাঁর বামপাশে দাড়ালাম। তখন তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। তিনি সে রাতে তের রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে পড়লেন এমন কি নাক ডাকতে লাগলেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে সাধারণত নাক ডাকতেন। এরপর মুয়াযযিন তাঁর নিকটে এলে তিনি বের হয়ে সালাত আদায় করলেন আর তিনি অযূ করলেন না। রাবী আমর (রহঃ) বলেন, পরে আমি বুকায়র ইবনু আশাজ্জ (রহঃ)-কে এ হাদীস গুনালে তিনি বললেন, কুরায়ব (রহঃ) আমাকে এরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৬৬৫ মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ (রহঃ)ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মুনা বিনত হারিস (রাঃ)এর ঘরে এক রাত্রি যাপন করলাম এবং আমি তাঁকে বলে রাখলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উঠেন তখন আমাকে জাগিয়ে দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে (সালাত) দাঁড়ালেন। তখন আমি তার বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে এলেন। এরপর আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেই তিনি আমার কানের লতি ধরতেন (ধরে মোচড় দিতেন) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি তখন এগার রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর হাটূ খাড়া করে দু-হাত নিয়ে জড়িয়ে বসলেন। অবশেষে আমি তার ঘুমন্ত অবস্হায় শ্বাসের আওয়াজ শুনতে লাগলাম। পরে ফজর প্রকাশ পেলে তিনি সংক্ষিপ্ত দু”রাক’আত (সালাত) আদায় করলেন।

১৬৬৬ ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাতে ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে উঠে একটি লটকানো পূরানো মশক থেকে হালকাভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। বর্ণনাকারী কুরায়াব (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁর স্বল্পতা ও হালকা ভাবের ব্যাখ্যা দিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে দাঁড়ালাম এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরুপ করেছিলেন আমি সেরুপ করলাম। তারপর এসে তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে পিছন দিক দিযে ঘুরিয়ে আমাকে তাঁর ডানপাশে নিলেন। তারপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন এবং ঘুমিয়ে নাক ডাকতে লাগলেন। এরপর বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁকে সালাতের (সময় হওয়ার) খবর দেন। তখন তিনি বের হয়ে গিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন এবং অযূ করেননি। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপার (ঘূমে অযূ ভঙ্গ না হওয়া) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাস কেননা, আমাদের কাছে হাদীস পৌছেছে যে, তাঁর দু- চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু তা (রহঃ)কালব- নিদ্রা যায় না।

১৬৬৭ মুহামাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর ঘরে আমি রাত্রে ছিলাম। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি প্রকারে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে পেশাব করলেন, তারপর হাত-মুখ ধুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে উঠে মশকের কাছে গিয়ে তার বাধন খুলে তারপর পাত্রে পানি ঢেলে নিলেন। তিনি হাত দিয়ে মশকটি পাত্রের উপরে কাত করে ধরলেন। তারপর দুই ওযুর মাঝামাঝি উত্তমরুপে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমি এসে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। আমি দাঁড়ালাম তাঁর বামপাশে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত তের রাকআত পড়লেন। এর পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এমনকি নাক ডাকতে লাগলেন। আমরা তাঁর নাকের আওয়াজ শুনে তাঁর ঘুমিয়ে পড়া বুঝতে পারতাম। তিনি তাঁর সালাতের মধ্যে অথবা (রাবী বলেন) তাঁর সিজদায় বলতে লাগলেন ইয়া আল্লাহ! আমার কলবে নূর দান করুন, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর এবং আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর, আমরা পিছনে নূর আমার উপরে নূর , এবং আমার নিচে নূর দান করুন এবং আমাকে দান করুন অথবা তিনি বলেছিলেন – আমাকে নূরে পরিণত করুন।,

১৬৬৮ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। অতঃপর গুনদার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে, এতে তিনি বলেন, “আমাকে নূরে পরিণত করুন,-। এ রিওয়ায়াতে সন্দেহ নেই।

১৬৬৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। এরপর পূর্ণ ঘটনার বিবরণ দেন। এতে হাত- মুখ ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। তবে বলেছেন, তারপর মশকের কাছে গিয়ে তার বাঁধন খুললেন এবং দুই উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মাঝামাঝি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। দ্বিতীয়বার উঠে মশকের কাছে গেলেন এবং তার বাধন খুলে অযূ করলেন ঐ উযূ (ওজু/অজু/অযু)র মতই। আর তিনি আমাকে এতে বলেছেন, “আমাকে বিরাট নূর দান করুন।” এ বর্ণনায় “আমাকে নূরে পরিণত করুন” এ কথা উল্লেখ করেননি।

১৬৭০ আবূ তাহির (রহঃ) কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে রাত্রি যাপন করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘূম থেকে উঠে মশকের দিকে গেলেন এবং তা থেকে (পানি) ঢেলে অযূ করলেন। পানি খুব বেশী ব্যবহার করেননি এবং অযূতেও কোন ক্রটি করেনঁ নি। এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। আর এতে রয়েছে যে, তিনি বলেছেন, সে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনিশটি বাক্যের দ্বারা দুআ করলেন। সালামা (রহঃ) বলেন, কুরায়ব (রহঃ) আমাকে সে গুলোর বিবরণ দিয়েছিলেন, আমি তার বারটি মুখস্ত রেখেছি এবং বাকীগুলো ভুলে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, “ইয়া আল্লাহ! আমাকে আমার হৃদয়ে নূর দিয়ে দিন, আমার জিহবায় নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর দিন, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার সামনে নূর এবং আমার পিছনে নূর দিন এবং আমার অন্তরে নূর প্রদান করুন এবং আমাকে নূর দান করুন”।

১৬৭১ আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়মূনা (রাঃ) কাছে অবস্হান করার রাতে আমি তাঁর (মায়মুনা) ঘরে রাত্রি যাপন করলাম – যাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের সালাত কেমন হয় তা আমি প্রত্যক্ষ করতে পারি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় কথা বললেন। তারপর শুয়ে পড়লেন। এরপর তিনি পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে রয়েছে এরপর উঠে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন ও মিসওয়াক করলেন।

১৬৭২ ওয়াসিল ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ)আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি (এক রাতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শয়ন করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক করলেন ও ওযু করলেন। তখন তিনি পাঠ করছিলেন- (আকাশ মন্ডল ও সৃষ্টিতে দিন ও রাতের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য, — (৩৪-১৯০) এই আয়াতগুলো থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তারপর দাড়িয়ে দু- রাক’আত সালাত আদায় করলেন এবং তাতে কিয়াম, রুকু ও সিজদা দীর্ঘায়িত করলেন। তা শেষ করে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডাকতে লাগলেন। এভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকআত আদায় করলেন প্রতিবারে মিসওয়াক ও উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন এবং ঐ আয়াতসমূহ পাঠ করেন। এরপর তিন রাক’আত বিতর আদায় করলেন। তখন মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি সালাতের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি তখন বলছিলেন, “ইয়া আল্লাহ! দান করুন আমার ক্বলবে নূর, আমার জিহবায় নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে নূর, পিছনে নূর, সন্মুখে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নিচে নূর, আয় আল্লাহ! আমাকে নূর দিয়ে দিন।

১৬৭৩ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মুনার কাছে এক রাত যাপন করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতের নফল সালাতের জন্য উঠলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের কাছে গিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর দাড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন যখন তাকে ঐ সব করতে দেখলাম আমিও উঠলাম এবং মশক থেকে (পানি নিয়ে) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। এর পরে তার বামপাশে দাড়ালাম। তিনি তখন তার পিছন দিয়ে আমাকে ডানপাশে নিয়ে এলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম- এ-কি নফল সালাতের ব্যাপারে? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যা।

১৬৭৪ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ)আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্বাস (রাঃ) আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পাঠালেন, তিনি তখন আমার খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। সে রাতে আমি তাঁর সঙ্গে থাকলাম। রাতের এক অংশে উঠে তিনি সালাত আদায় করতে লাগলেন। আমি তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি নিজের পিঠের পিছন থেকে আমাকে ধরে তাঁর ডানপাশে বের করে দিলেন।

১৬৭৫ ইবনু নুমায়র (র। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে আমি রাত যাপন করলা। (পরবতীঁ অংশ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এবং কায়স ইবনু সা’দ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।

১৬৭৬ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাক’আত সালাত আদায় করতেন।

১৬৭৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)।…যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, তারপর দু’ রাকআত সালাত আদায় করলেন যা তার পূর্ববর্তী রাকআতের চেয়ে কম । তারপর দু-রাক’আত সালাত আদায় করলেন যা তার পূর্ববর্তী দু’রাকআতের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর দু- রাক’আত সালাত আদায় – করবেন যা ছিল পূর্ববর্তী দু’রাকআতের চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাকআত।

১৬৭৮ হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি (পানির) ঘাটে পৌহুলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে, জাবির! তুমি কি উঠকে ঘাটে নামাবে না? আমি বললাম । জাবির (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করলেন এবং আমি (উটকে) ঘাটে নামালাম। জাবির (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি নিজের প্রাকৃতিক প্রয়োজনে (পেশাব করতে) গেলেন। আমি তার জন্য অযূর পানি ঠিক করে রাখলাম। জাবির (রাঃ) বলেন, তিনি এসে অযূ করলেন, দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে লাগলেন। তখন তিনি এক কাপড় পরিহিত ছিলেন যার দু’প্রান্ত বিপরীত দিকে জড়িয়ে ছিলেন। আমি তাঁর পিছনে দাঁড়লাম। তিনি আমার হাতে ধরে তাঁর ডানপাশে দাড় করিয়ে দিলেন।

১৬৭৯ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ)।…আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন – রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে উঠতেন তখন সংক্ষিপ্ত দু’রাকআত দিয়ে তাঁর সালাত আরম্ভ করতেন।

১৬৮০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে ওঠে তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত দু’রাকআত দিয়ে সালাত শুরু করে।

১৬৮১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝরাতে যখন সালাতের উদ্দেশ্যে উঠতেন তখন (এ দুআ) বলতে। “ইয়া আল্লাহ! আপনারই জন্য যাবর্তীয় হামদ, আপনই আসমান যমীনের নূর (জ্যোতি), আপনারই সকল হামদ, আপনই আসমান যমীনের রক্ষক, আপনারই জন্য সকল হামদ, আপনি আসমান যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে সে সবের রব। আপনই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার বানী সত্য, আপনার সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পণ করছি, আপনার প্রতি ঈমান স্থাপন করছি, আপনারই উপর ভরসা করছি, আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, আপনারই প্রদত্ত সত্য প্রমাণ নিয়ে দুশমনের মুকাবিলা করছি, আপনারই কাছে ফয়সালা ন্যস্ত করছি। তাই আমার যা কিছু পুর্বাপর এবং গোপন ও প্রকাশ্য, সে সকল ক্ষমা করুন। মাবুদ আপনি ব্যতীত আমার কোন ইলাহ নেই-।

১৬৮২ আমরুন নাকিদ, ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তবে এ সনদে উর্ধতন রাবী জুরায়জ (রহঃ)-এর হাদীসের শব্দ, ভাষা পূর্ববর্তী সনদের মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। শব্দে তাদের বর্ণনা ব্যবধান রয়েছে। মালিকের শব্দের স্হলে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেছেন আর স্হলে বলেছেন তবে ইবনু উয়ায়না (রহঃ)-এর হাদীসে কিছু অধিক বিবরণ রয়েছে এবং কয়েকটি শব্দে মালিক ও ইবনু জুরায়জ (রহঃ)-এর সাথে তাঁর বর্ণনায় বিরোধ রয়েছে।

১৬৮৩ শায়বান ইবনু ফাররুখ (র-। ইবনু আব্বাস (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর শব্দ ভাষ্য পূর্বোল্লিখিতগণের ভাষ্যের কাছাকাছি।

১৬৮৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ মান রাকাশী (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুল রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ)-কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নাবীরাতে যখন উঠতেন তখন কি দিয়ে (কোন দুআ পড়ে) তিনি তাঁর সালাত আরম্ভ করতেন। তিনি বলেন, তিনি যখন রাতে উঠতেন তখন সালাত শুরু করতেন “ইয়া আল্লাহ! জিবরাইল, মীকাইল ও ইসরাফিল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতিপালক আসমান সমূহ ও যমীনের সৃজনকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞাতা আপনই মীমাংসা করবেন আপনার বান্দাদের মাঝে সে বিষয় যাতে তারা মতবিরোধ করছিল। আপনি আমাকে হিদায়াত ও সঠিক পথ প্রদর্শন করুন, সত্য ন্যায়ের বিরোধিত বিষয়ে আপনার হুকুমে, আপনই হিদায়াত করেন যাকে ইচ্ছা হয় সরল পথের দিকে।”

১৬৮৫ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন এ মর্মে যে, তিনি যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন বলতেন (ইয়া আল্লাহ।) অভিমুখী করলাম একনিষ্ঠ হয়ে আমার চেহারা সে সত্তার দিকে যিনি আসমান সমূহ ও যমীনসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার ইবাদত ও কুরবানী এবং আমার হায়াত ও মাওত রাব্বূল আলামীন (বিশ্ব প্রতিপালক) আল্লাহর জন্য যার কোন শরীক নেই। আর আমি এ বিষয় আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের একজন। ইয়া আল্লাহ! আপনই বাদশাহ, আপনি ব্যতীত ইলাহ নেই, আমার প্রতিপালক এবং আমি আপনার বান্দা। আমি নিজের উপর যুলুম করেছি এবং আমার অপরাধ আমি স্বীকার করছি। অতএব আমাকে আমার সব গোনাহ মাফে করে দিন। আপনি ব্যতীত আর কেউই তো ক্ষমাকারী নেই এবং আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত রুকন। আপনি ব্যতীত কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে পরিচালিত করতে পারে না এবং মন্দ চরিত্র থেকে আমাকে দুরে নিন। মন্দ চরিত্রগুলো আপনি ব্যতীত কেউ আমা থেকে সরাতে পারে না। আপনার দরবারে আমি হাযির! আনুগত্য আপনারই জন্য নিবেদিত! সকল কল্যাণ আপনারই হাতে, অকল্যান আপনার প্রতি সম্পৃক্ত নয়। আমি আপনার উপর নির্ভরশীল এবং আপনার দিকেই রজ্জু হই। আপনি বরকতময়, আপনি মহামহিম, আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করছি, আপনার জন্য বিনীত। আমার কান, আমার চোখ, আমার অস্হি-মজ্জা এবং আমার শিরাঃউপশিরা। আর যখন থেকে উঠতেন তখন বলতেন, ইয়া আল্লাহ! আমাদের রব, আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান সমুহের মধ্যবর্তি ও যমীন এবং দু-য়ের মধ্যবর্তি আকাশ ভর্তি এবং এরপর আপনি যা কিছু ইচ্ছা করবেন তাও ভর্ভি। আর তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন বলতেন, ইয়া আল্লাহ! আপনারই জন্য সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান আনছি। আমার চেহারা সিজদাবনত সে সত্তার জন্য যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, তার আকৃতি দান করেছেন, তার মধ্যে কোন ও চোখ ফূটিয়েছেন, কতই মহান বরকতময় আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। তারপর তাশাহুদও সালামের মাঝে সর্বশেষ এ দুআ পাঠ করতেন। ইয়া আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমার পূর্ববর্তী গোনাহ এবং পরবর্তী গোনাহ এবং যা আমি গোপন করেছি ও যা আমি প্রকাশ্যে করেছি এবং যা আমি সীমালঙ্ঘন করেছি এবং সে সকল অপরাধ যা আপনি আমার চেয়ে অধিক অবগত। আপনি এ বিষয়ে এগিয়ে দেওয়ার ও পিছিয়ে দেওয়ার মালিক। আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই।

১৬৮৬ যুহায়র ইবনু হারব এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আরাজ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। এতে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলার পরে তিনি বলতেন, আমি অভিমূখী করলাম আমার চেহারা, তিনি আরো বলেছেন, এবং আমি প্রথম মুসলমান”। রাবী বলেছেন, রুকু থেকে মাথা তুলবার সময় তিনি বলতেন, আল্লাহ শুনেন তার কথা যে তার হামদ করে। আয় আমাদের রব! আর আপনার জন্য সকল প্রশংসা। তারপর বলেন, সালাম করতেন তখন বলতেন, ইয়া আল্লাহ! ক্ষমা করুন আমার পূর্ববর্তী গোনাহ শেষ পর্যন্ত, এতে তিনি তাশাহুদও সালামের মধ্যবর্তীর কথা উল্লেখ করেননি।

১৬৮৭ আবূ বাকর ইবনু শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু নুমায়র (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি সুরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে করলাম সম্ভবত এক শত আয়াতের মাথায় রুকু করবেন। কিন্তু তিনি অগ্রসর হয়ে গেলেন। তখন আমি ভাবলাম, তিনি সূরা বাকারা দিয়ে সালাত পূর্ণ করবেন। কিন্তু তিনি সূরা নিসা আরম্ভ করলেন এবং তাও পড়ে আলে ইমরান শুরু করে তাও পড়ে ফেললেন। তিনি ধীর-তার সাথে পাঠ করে যাচ্ছিলেন। যখন তাসবীহ যুক্ত কোনঁ আয়াতে উপনীত হতেন তখন তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করতেন এবং যখন প্রার্থনার যকোন আয়াতে উপনীত হতেন তখন তিনি প্রার্থনা করে নিতেন। আর যখন (আল্লাহর কাছে) আশ্রয় গ্রহণের আয়াতে পৌছতেন তখন (আল্লাহর কাছে) পানাহ চাইতেন। তারপর রুকু করলেন এবং রুকুতে আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি, বলতে থাকেন। তার রুকু ছিল প্রায় তার দাড়ানোর সমান (দীর্ঘ)। এরপর বললেন, – যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শোনেন। তারপর দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকলেন রুকুতে যতক্ষন ছিলেন তার কাছাকাছি। তারপর সিজদা করলেন এবং আমার সুমহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি, বললেন। তর্দূর সিজদার পরিমাণ ছিল তার দাঁড়ানোর কাছাকাছি। বর্ণনাকারী বলেন, জারীর (রহঃ)-এর হাদীসে অতিরিক্ত রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, তিনি তা শোনেন আমাদের প্রতিপালক! আপনারই জন্য সকল প্রশংসা।

১৬৮৮ উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ) এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে (রাতের) সালাত আদায় করছিলাম। তিনি এত দীর্ঘ করলেন যে, আমার মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল। বর্ণনাকারী আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল কি মন্দ ইচ্ছা উদিত হচ্ছিল? তিনি বললেন- আমি ইচ্ছা করছিলাম যে, আমি বসে পড়ব এবং তাঁকে (তাঁর ইকতিদা) ছেড়ে দেব।

১৬৮৯ ইসমাঈল ইবনু খলিল ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আঁমাশ (রহঃ) সুত্রে পুর্বোক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৬৯০ উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক (রহঃ) আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এমন একজন লোকের কথা আলোচনা করা হল যে ভোর পর্যন্ত রাত ভর ঘুমিয়ে থাকে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ও এমন ব্যাক্তি যার কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে অথবা বললেন, দু-কানে।

১৬৯১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবীরাত্রের বেলা তাঁর ও ফাতিমা (রাঃ)-এর গৃহে আসলেন এবং বললেন, তোমরা কি সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করছ না? [আলী (রাঃ) বলেন] আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের আত্না আল্লাহর কব্জায়, তাই তিনি যখন আমাদের উঠাবার ইচ্ছা করেন, তখন উঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে চলে গেলেন, যখন আমি তাকে এ কথা বলি। আর তার একার যাওয়ার সময় আমি শুনতে পেলাম তিনি নিজের রানে হাত মারছেন এবং বলছেন- “-মানুষ অধিকংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়– (সুরা কাহফ:১৮-৫৪)

১৬৯২ আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথার তিনটি গিট দেয়- যখন সে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতি গিটে এ ওয়াস ওয়াসা যে, তোমার সামনে দীর্ঘ রাত যখন সে যখন জেগে উঠে আল্লাহর নাম লয় তখন একটি গিঁট খুলে যায় যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে তখন দুটি গিট খুলে যায়। আর যখন সালাত আদায় করে তখন সবকটি গিটই খুলে যায়। ফলে সে উৎফূল্ল ও আনন্দিত মলে ভোর করে। অন্যথায় সে ভোর করে বিমর্ষ মনে ও আলসে অবস্হায় হয়ে।

১৬৯৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলন, তোমাদের সালাতের কিছু অংশ তোমাদের ঘরে (আদায়ের জন্য) নির্ধারিত করবে এবং সে (ঘর) গুলোকে কবর বানাবে না।

১৬৯৪ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা নিজেদের ঘরে সালাত আদায় করবে এবং সে গুলোকে কবর বানিও না।

১৬৯৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন তার মসজিদের (ফরয) সালাত সমাধা করে, তখন সে যেন তার ঘরের জন্য তার সালাতের একটি অংশ নির্দিষ্ট করে। কেননা, তার সালাতের কারণে আল্লাহ তার ঘরে বরকত দান করবেন।

১৬৯৬ আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ’আরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় না, তার দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের।

১৬৯৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের ঘর গুলোকে কবরস্হান বানিও না। যে-ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পলায়ন করে।

১৬৯৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ)যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চাটাই কিংবা একটি মাদূর দিয়ে (মসজিদে) একটি ছোট্ট “হুজরাঃ তৈরী করলেন। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সেখানে সালাত আদায় করতে লাগলেন। রাবী বলেন, তখন কিছু লোক তাঁকে খোজ করে সেখানে সমবেত হল। তারা তার সংগে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে এসেছিল। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আর এক রাতে তারা এসে উপস্থিত হল, কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে বের হয়ে আসতে বিলম্ব করতে লাগলেন এবং তাদের কাছে বের হলেন না। তখন লোকেরা তাদের আওয়াজ উচু করল এবং (হুজরার) দরজায় কংকর মারল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুষ্ট হয়ে তাদের কাছে বের হয়ে এলেন। তিনি তাদের বললেন, তোমাদের কর্ম তো তোমরা চালাতে থাকলে, এমন কি আমার ধারণা হল যে, তা (রাতের সালাত) অচিরেই তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হতে পারে। সুতরাং তোমরা তোমাদের বাড়ী ঘরে সালাত আদায় করবে। কেননা, ফরয সালাত ব্যতিরেকে মানুষের উত্তম সালাত (যা) তার ঘরে আদায় করা হয়।

১৬৯৯ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদূর দিয়ে মসজিদে একটি-হুজরা তৈরী করেন এবং তিনি কয়েক রাত সেখানে সালাত আদায় করেন অবশেষে তাঁর কাছে কিছু লোক সমবেত হল। অতঃপর পূর্বানুরুপ উল্লেখ করেছেন। এ রিওয়ায়াতে অধিক বলেছেন, আর তোমাদের উপরে তা ফরয করে দেয়া হলে তোমরা তা পালন করতে না।

১৭০০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি মাদুর ছিল, যা দিয়ে রাতের বেলা তিনি হুজরাঃ বানিয়ে নিতেন এবং সেখানে সালাত আদায় করতেন। লোকেরা ও তাঁর সালাতের সংগে (মুকতাদী হয়ে) সালাত আদায় করতে লাগল। আর দিনের বেলা তিনি সেটা বিছিয়ে দিতেন। এক রাতে তারা উদগ্রীবতার সাথে সালাতের জন্য ফিরে এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, “লোক সকল, তোমরা এমন আমল গ্রহণ করবে যদ্দুর করার তোমরা সামর্থ রাখ। কেননা, আল্লাহ নিশ্চয়ই (সাওয়াব দানে) ক্লান্তিবোধ করবেন না; অথচ অবশেষে তোমরাই (আমল করতে করতে) ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর নিকট সমধিক প্রিয় আমল হল যা নিয়মিত পালিত হয়- যদিও তা কম হয়। আর (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবার পরিজন কোন আমল শুরু করলে তাকে তারা স্থায়ি রুপ দিয়ে দিত।

১৭০১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) সুত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল- আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, যা স্হায়ী ও নিয়মিত যদি ও তা (পরিমাণে) কম হয়।

১৭০২ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উষ্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আমল কোন প্রকৃতির ছিল? তিনি কি নিজের জন্য কোন দিন বিশেষভাবে নির্ধারিত করতেন? তিনি বললেন, না; তার আমল ছিল নিয়মানুবর্তিতা সস্পন্ন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা সামর্থ ছিলেন তোমাদের মাঝে কে তা করতে সমর্থ হবে?

১৭০৩ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল অধিক নিয়মানুবর্তিতা সস্পন্ন আমল যদিও তা স্বল্প হয়। আর আয়িশা (রাঃ) যখন কোন আমল শুরু করতেন তখন তাকে স্হায়িত্ব দানে অভ্যস্থ ছিলেন।

১৭০৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং তখন দুই থামের মাঝে একটি রশি টানানো ছিল। তা দেখতে পেয়ে তিনি বললেন এটি কি? তারা বলল যায়নাবের সে সালাত আদায় করতে থাকে। যখন অলসতা কিংবা দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভব করেন তখন ঐ রশির সাথে নিজেকে আটকে রাখেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটি খূলে দাও! তোমাদের যে কেউ তার উদ্যম ও ,ফূর্তি পরিমাণ সালাত আদায় করবে। যখন অলসতা ও ক্লাড়ি অনুভব করবে এখন বসে পড়বে। যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসে বসে পড়বে স্হলে সে যেন বসে পড়ে রয়েছে।

১৭০৫ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

১৭০৬ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু সালামা মুরাদী (রহঃ) উরওয়া ইবনু মুবায়র (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) খবর দিয়েছেন যে, হাওলা বিনত তূয়ায়ত ইবনু হাবীব ইবনু আসা’দ ইবনু আবদুল উযযা তাঁর (আয়িশা) নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার কাছে ছিলেন। (আয়িশা (রাঃ) বলেন,) আমি বললাম, “এ হতে হাওলা বিনতে তুয়ায়ত, লোকেরা বলে যে, সে রাতে ঘূমায় না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন রাতে ঘূমায় না।” এমন আমল তোমরা গ্রহণ কর যাতে তোমরা সামর্থ হবে। কেননা, আল্লাহ তো (সাওয়াব দানে) বিরক্ত হবেন না অবশেষে তোমরাই (পরিমাণে বেশি আমল সস্পাদনে) বিরক্ত হয়ে পড়বে।

১৭০৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব এবং যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আগমন করলেন, তখন আমার কাছে একটি মেয়ে লোক ছিল। তিনি বললেন, এটি কে? আমি বললাম, এ এক নারী, যে রাতে ঘুমায় না, সালাত আদায় করতে থাকে। তিনি বললেন, তোমরা এমন আমল “গ্রহণ করবে যা পালনে তোমাদের সামর্থ রয়েছে। কেননা, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো (সাওয়াব দানে) ক্লান্ত বিরক্ত হবেন না, ততক্ষনে তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় দ্বীন ছিল যার পালনকারী তাতে নিয়মানূবর্তিতা রক্ষা করত। আবূ উসামা (রহঃ) (প্রথম সনদ) এর হাদীসে রয়েছে, সে ছিল বনূ আসা’দ গোত্রের এক নারী!

১৭০৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নূমায়ার , আবূ কুরায়ব এবং কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন শুয়ে পড়ে যাতে তার ঘূম চলে যায়। কেননা, তোমাদের কেউ যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে সালাত আদায় করবে তখন এমন হতে পারে যে, সে ইসতিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাইবে, অথচ সে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (দূ’আ করতে গিয়ে বদ দু’আ করে ফেলবে।)

১৭০৯ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এটি হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের কাছে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন, যার একটি এই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে জেগে উঠে এবং কুরআন তার জিহবায় জড়িয়ে যেতে থাকে এবং কি বলছে তা বুঝতে পারে না, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: মুসাফিরের সালাত ও কসর
মুসাফিরের সালাত ও কসর
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/musafirsalat.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/musafirsalat.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy