বিবাহ

৩২৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) আলকামা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় পৌছলাম। এ সময় উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) এসে তাঁর সাথে মিলিত হলেন। তখন তিনি তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলেন। উসমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ আব্দুর রহমান! আমরা কি আপনার সঙ্গে এমন একটি যুবতী মেয়ের বিয়ে দেব না যে হয়ত আপনার অতীতের কিছু স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিবে? রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, আপনি যদি একথা বলেন তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ ”হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে দাম্পত্য জীবনের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। কারন তা (বিবাহ) দৃষ্টি নিচ করে এবং লজ্জাস্হানকে সুরক্ষিত করে। আর যে সক্ষম নয় তার সিয়াম পালন করা উচিৎ। কারণ তা তার জন্য যৌন কামনা দমনকারী।

৩২৬৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আলকামা (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এ সাথে মিনায় ছিলাম। এ সময় উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাত করলেন। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ হে আবূ আব্দুর রহমান! এখানে আসুন। রাবী বলেন, তিনি তাকে একান্তে ডেকে নিলেন এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন দেখলেন গোপনীয়তার কোন প্রয়োজন নেই তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আলকামা! আস, তখন আমি তাদের সাথে যোগ দিলাম। উসমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আমরা কি তোমাকে একটি কুমারী মেয়ের সাথে বিবাহ দিব না, হয়ত সে তোমার অতীত ,স্মৃতি স্বরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আপনি যদি তাই বলেন অবশিষ্ট বর্ণনা আবূ মুআবিয়ার হাদীসের অনুরুপ।

৩২৭০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ হে যূব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্হানকে সংরক্ষণ করে। আর যে (ভরণপোষণে) সমর্থ না হয়, তাকে অবশ্যই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে। কারণ তা তার যৌবন কামনা দমনকারী।

৩২৭১। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচা আলকামা ও আল আসওয়াদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর নিকট গেলাম। এ সময় আমি যুবক ছিলাম। তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করলেন। আমি বুঝতে পারলাম যে তিনি আমাকে লক্ষ্য করেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। এই বর্ণনায় আরো আছে, “অতঃপর আমি বিয়ে করতে আর বিলম্ব করি নি।”

৩২৭২। আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর নিকট গেলাম এবং আমি ছিলাম দলের মধ্যে সব চাইতে তরুণ। উপরের হাদীসের অনুরুপ। তবে এই সূত্রে “অতঃপর আমি বিয়ে করতে আর বিলম্ব করি নি” কথাটুকু উল্লেখ নাই।

৩২৭৩। আবূ বকর ইবনু নাফি আন-আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনীদের নিকট তাঁর গোপন ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ বললেন, আমি কখনও বিয়ে করব না, কেউ বললেন, আমি কখনও গোশত খাব না, কেউ বললেন, আমি কখনও বিছানায় ঘূমাব না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান করলেন এবং বললেনঃ “লোকদের কি হল যে, তারা এরুপ এরুপ বলছে? অথচ আমি তো সালাত ও আদায় করি আবার নিদ্রাও যাই, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি এবং ইফতারও করি এবং বিয়েও করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সূন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার কেউ নয়।”

৩২৭৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ওআবূ কুরায়ব (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মাযঊন (রাঃ)-এর কৌমার্যব্রত (অবিবাহিত জীবন যাপন) অবলম্বনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন, তবে আমরা নিজেদের খোজা করে নিতাম।

৩২৭৫। আবূ ইমরান মুহাম্মদ ইবনু জাফর (রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস) (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি- উসমান ইবনু মাযঊন (রাঃ)-এর কৌমার্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব। (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক) প্রত্যাখ্যাত হয়। তাকে অনুমতি দেওয়া হলে আমরা অবশ্যই নিজেদের খোজা করে নিতাম।

৩২৭৬। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, উসমান ইবনু মাযঊন (রাঃ) কৌমার্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (তা করতে) নিষেধ করে দেন। তিনি যদি তাঁকে অনুমতি দিতেন তবে অবশ্যই আমরা নিজেদের খোজা করে নিতাম।

৩২৭৭। আমর ইবনু আলী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে দেখলেন। তখন তিনি তার স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তার একটি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন পূরণ করলেন। তারপর বের হয়ে সাহাবীদের নিকট এসে তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোক সামনে আসে শয়তানের বেশে এবং ফিরে যায় শয়তানের বেশে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেয়।

৩২৭৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্ত্রীলোক দেখলেন উপরের হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে আছেঃ তিনি নিজ স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)-এর নিকট এলেন, তখন তিনি একটি চামড়া পাকা করছিলেন এবং “সে শয়তানের বেশে চলে যায়” উল্লেখ নাই।

৩২৭৯। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যখন তোমাদের কাউকে কোন স্ত্রীলোক মুগ্ধ করে এবং তা তার মনকে প্রলূব্ধ করে তখন সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে এবং তার সাথে সংগম করে। এতে তার মনে যা আছে তা দূর করে।

৩২৮০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আল হামদানী (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতাম এবং আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। আমরা বললাম, আমরা কি খাসী হবোনা? তিনি আমাদের তা থেকে নিষেধ করলেন। তারপর তিনি পরিধেয় বস্ত্র দানের বিনিময়ে আমাদের নির্দিষ্ট কালের জন্য নারীদের বিবাহ করার রুখসত দিলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ (রাঃ) পাঠ করলেনঃ হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সেই সমুদয়কে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালংঘন করো না আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা মায়িদাঃ ৮৭)

৩২৮১। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে এই সনদে উপরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তারপর তিনি উক্ত আয়াত পাঠ করলেন। তিনি বলেন নি যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) পড়েছেন।

৩২৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এই সূত্রে উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। এতে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা ছিলাম যুবক। তাই আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি খাসী হব না? এতে জিহাদ শব্দের উল্লেখ নাই।

৩২৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) ও সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, আমাদের সামনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষক বেরিয়ে এসে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মুতআ বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছেন।

৩২৮৪। উমায়্যা ইবনু বিসতাম আল আয়শী (রহঃ) সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং আমাদের মুতআর (সাময়িক বিবাহের) অনুমতি দিলেন।

৩২৮৫। হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) আতা (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) উমরা পালন করতে এলেন। তখন আমরা তাঁর আবাসে তাঁর নিকট গেলাম। লোকেরা তাঁর নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেসা করল। অতঃপর তারা মুতআ সম্পর্কে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, হ্যা, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) এর যুগে মুতআ (বিবাহ) করেছি।

৩২৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমরা এক মুঠো খেজুর অথবা ময়দার বিনিময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর যুগে মুতআ বিবাহ করতাম। শেষ পর্যন্ত উমর (রাঃ)আমর ইবনু হুরায়সের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তা নিষিদ্ধ করেছেন।

৩২৮৭। হামিদ ইবনু উমর বাকরাবী (রহঃ) আবূ নাদরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু মুবায়স (রাঃ) দুই প্রকারের মুতআ (তামাত্তু হজ্জ ও মুতআ বিবাহ) নিয়ে পরস্পর মতবিরোধ করেছেন। তখন জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপস্থিতে দুই প্রকারের মুতআই করেছি। অতঃপর উমর (রাঃ) আমাদের এই উভয়টই করতে নিষেধ করলেন। অতএব আমরা তা আর করি নি।

৩২৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আঁয়্যাশ ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (পিতা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – আওতাস যুদ্ধের বছর তিন তিনের জন্য মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন। তারপর তিনি তা নিষিদ্ধ করেন।

৩২৮৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা আল-জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতা সাবরা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুত-আর অনুমতি দিলেন। তারপর আমিও অপর এক ব্যক্তি বনূ আমির গোত্রের একটি মহিলার নিকট গেলাম। সে ছিল দেখতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট তরুণ উষ্ট্রীর ন্যায়। আমরা নিজেদেরকে তার নিকট (মুতআ বিবাহের জন্য) পেশ করলাম। সে বলল, আমাকে কি দেবে? আমি বললাম, আমার চাঁদর। আমার সাথীও বলল, আমার চাঁদর। আমার চাঁদরের তুলনায় আমার সংগীর চাঁদরটি ছিল উৎকৃষ্টতর; কিন্তু আমি ছিলাম তুলনায় কম বয়সের যূবক। সে যখন আমার সংগীর চাঁদরের প্রতি তাকায় তখন তা তার পছন্দ হয় এবং বলল, তুমি এবং তোমার চাঁদরই আমার জন্য যথেষ্ট। অতএব আমি তার সাথে তিন দিন অতিবাহিত করলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারো কাছে মুতআ বিবাহের সুত্রে কোন স্ত্রী লোক থাকলে সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (ত্যাগ করে)।

৩২৯০। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁর পিতা মক্কা বিজয়াভিযান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমরা তথায় ১৫ দিন অর্থাৎ পূর্ণ ১৩ দিন এবং এক দিন ও এক রাত অবস্হান করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুতআর অনুমতি দিলেন। তখন আমিও আমার গোত্রের এক ব্যক্তি বেরিয়ে পড়লাম। আমি তার তুলনায় আকর্ষনীয় চেহারার অধিকারী ছিলাম এবং সে ছিল প্রায় কুতসিত। আমাদের উভয়ের সাথে একটি করে চাঁদর ছিল। আমার চাঁদরটি ছিল পূরাতন এবং আমার চাচাতো ভাইয়ের চাঁদরটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। অবশেষে আমরা মক্কার নিম্নভূমিতে অথবা উচ্চভূমিতে পৌছে একটি যুবতী মেয়ের সাক্ষাত পেলাম, যাকে দেখতে অনেকটা উঠতি বয়সের চালক এবং লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট উষ্ট্রীর মত। আমরা প্রস্তাব দিলাম, আমাদের দু-জনের কারো সাথে তোমার মুতআ বিবাহ কি সম্ভব? সে বলল, তোমরা কী বিনিময় দিবে? তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ চাঁদর মেলে ধরল। সে তাদের উভয়ের দিকে তাকাতে লাগল। আমার সংগীও তার দিকে তাকাল। যখন স্ত্রীলোকটি এর দিকে তাকায় বলল, তার এই চাঁদর পূরাতন এবং আমার চাঁদর একেবারে নতূন। স্ত্রীলোকটি তিনবার কি চারবার বলল , তার চাঁদরটি গ্রহণে কোন ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি তকে মুতআ বিবাহ করলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হারাম ঘোষণা না করা পর্যন্ত ফিরে আসি নি।

৩২৯১। আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর দ্বারামী (রহঃ) সাবরা জুহানী (রাঃ) বলেন, আমরা মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মক্কায় রওনা হলাম বাকী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে রয়েছে, স্ত্রীলোকটি বলল, “এটা কি ঠিক হবে”? তার চাঁদরটি পুরাতন এবং ছিড়ে গেছে।”

৩২৯২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) সাবরা (রাঃ) বলেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু অচিরেই আল্লাহ তাআলা তা হারাম করেছেন, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। অতএব যার নিকট এই ধরনের বিবাহ সূত্রে কোন স্ত্রীলোক আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয়। আর তোমরা তাদের যা কিছু দিয়েছ তা কেড়ে রেখে দিও না।

৩২৯৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল আযীয ইবনু উমর (রহঃ) থেকে এই সুত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, সাবরা জুহানী (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (কাবার) দরজা ও রুকনের মাঝে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি বাকী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

৩২৯৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আব্দুল মালিক ইবনু রাবী ইবনু সাবরা জুহানী (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমাদের মক্কায় প্রবেশ কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুতআ বিবাহের অনুমতি দান করেন। তিনি আমাদের তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (নারী সঙ্গ ত্যাগ করে) বের হয়ে আসি নি।

৩২৯৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সাবরা ইবনু মাবাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর তাঁর সাহাবীগণকে ন্ত্রীলোকদের সাথে মুতআর অনুমতি দেন। সাবরা (রাঃ) বলেন, তখন আমি এবং সূলায়ম গোত্রের আমার এক সাথী বের হয়ে পড়লাম এবং শেষ পর্যন্ত আমির গোত্রের এক যূবতীকে পেয়ে গেলাম। সে জোয়ান উষ্ট্রীর ন্যায়। আমরা তার নিকট মুত”আ বিবাহের প্রস্তাব দিলাম এবং আমাদের চাঁদর তার সামনে পেশ করলাম। তখন সে তাকিয়ে দেখল এবং আমাকে আমার সংগীর তুলনায় সুন্দর দেখতে পেল, অপরদিকে আমার চাঁদরের তুলনায় আমার সংগীর চাঁদর উৎকৃষ্টতর দেখল। সে মনে মনে কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর আমার সংগীর চাইতে আমাকে অগ্রাধিকার দিল। তারা আমাদের সাথে তিন দিনের মুত”আ করল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিদায় করে দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন।

৩২৯৬। আমরুন নাকিদ (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুত’আ (বিবাহ) করতে নিষেধ করেছেন।

৩২৯৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন মুত’আ নিষিদ্ধ করেন।

৩২৯৮। হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের কালে ন্ত্রীলোকদের সাথে মুতআ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর পিতা দুটি লাল চাঁদরের বিনিময়ে মুত’আ করেছিলেন।

৩২৯৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) মক্কায় (ভাষণ দিতে) দাড়িয়ে বললেন, কিছু লোক এমন আছে আল্লাহ যেমন তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন তেমনি অন্তরকেও অন্ধ করে দিন। তারা মুতআর পক্ষে ফাতওয়া দেয়। একথা বলে তিনি এক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সে ব্যক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ)। তাঁকে ডেকে বললেন, তুমি একটি অসত্য ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি। আমার জীবনের শপথ! ইমামুল মুত্তাকীন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মুতআ প্রচলিত ছিল। ইবনু যুবায়র (রাঃ)তাকে বললেন, আপনি নিজে একবার করে দেখুন। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি তা (মুতআ) করেন তাহলে আপনার জন্য নির্ধারিত পাথর দিয়েই আপনাকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করব। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, খালিদ ইবনুল মুহাজির ইবনু সায়ফূল্লাহ (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, এক ব্যক্তির নিকট বসাছিলেন। এই সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে মুতআ সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করে। তিনি তাকে মুতআর অনুমতি দিলেন। ইবনু আবূ উমরা আনসারী (রাঃ) তাকে বললেন, থামুন। সে বলল, কেন? আল্লাহর শপথ! ইমামুল মুত্তাকীন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তা করা হত। ইবনু আবূ উমরা (রাঃ)বললেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নিরুপায় অবস্হায় তার অনুমতি ছিল (যেমন নিরুপায় অবস্হায়) মৃত জীব, রক্ত ও শুকরের (গোশত ভক্ষণের) ন্যায়। অতঃপর আল্লাহ তার দ্বীনকে শক্তিশালী এবং সুদৃড় করলেন এবং তা নিষিদ্ধ করলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাবী ইবনু সাবরা জুহানী আমাকে জানিয়েছেন যে, তাঁর পিতা বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমি দুটি লাল চাঁদরের বিনিময়ে আমির গোত্রের একটি স্ত্রীলোকের সাথে মুতআ করেছিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুতআ করতে নিষেধ করেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) আরও বলেন, আমি রাবী ইবনু সাবরাকে উমর ইবনু আবদুল আযীয (রাঃ)-এর নিকট তা বর্ণনা করতে শুনেছি, আমি তখন (সেখানে) বসাছিলাম।

৩৩০০। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) রাবী ইবনু সাবরা জুতানী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতআ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন, সাবধান! আজকের এই দিন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মুত’আ হারাম। যে কেউ মুতআ বাবদ যা কিছু দিয়েছে, সে যেন তা ফিরত না নেয়।

৩৩০১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন মুতআ ও গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩০২। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আদ-দুবাঈ (রহঃ) মালিক (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। এই সুত্রে আছে, মুহাম্মাদ ইবনু আলী বলেন, তিনি আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলতে শুনেছেনঃ তুমি তো সৎপথ থেকে বিচ্যুত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন উক্ত হাদীসের অনুরুপ।

৩৩০৩। আবূ বকর আবূ শায়বা, নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্বের দিন মুতআ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩০৪। মুহাম্মদ আবদুল্লাহ নুমায়র (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি শুনতে পেলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) নারীদের সাথে মুতআর ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। আলী (রাঃ) বললেন, থাম, হে ইবনু আব্বাস। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন মুতআ ও গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩০৫। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে লক্ষ্য করে আলী (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ষুদ্বের দিন মুতাআ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩০৬। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোক ও তার ফূফূকে এবং কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে একত্র (একত্রে বিবাহ) করা যাবে না।

৩৩০৭। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারজন মহিলা গ্রহণের ব্যাপারে এ নিষেধাজ্ঞা করেছেন যে, তাদের যেন কোন স্ত্রীলোকও তার ফূফূকে এবং কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে একত্র করা না হয়।

৩৩০৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ভাইঝির উপর তার ফূফূকে বিবাহ করা যাবে না। অনুরুপভাবে খালার উপর বোন বিবাহ করা যাবে না।

৩৩০৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মহিলা ও তার ফূফূকে এবং কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। রাবী শিহাব (রহঃ) বলেন, আমরা মনে করি, পিতার খালা ও পিতার ফূফূ এ পর্যায়ের।

৩৩১০। আবূ মান রাকাশী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মহিলাকে বিবাহ করা যাবে না তার ফূফূর উপরে।

৩৩১১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

৩৩১২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়, তার ভাইয়ের দরদাম করার উপর দিয়ে দরদাম না করে। উপরের তার ভাই ঝিকে এবং খালার উপরে তার বোন ঝিকে বিবাহ করা যাবে না। কোন স্ত্রীলোক যখন নিজের পাত্র ভরে নেওয়ার জন্য তার বোনের (অন্য স্ত্রী লোকের) তালাক দাবী না করে, বরং সে বিবাহ করুক। কারণ আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, সে তা পাবেই।

৩৩১৩। মুহরিয ইবনু আওন ইবনু আবূ আওন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফূফূর উপরে তার ভাইঝিকে এবং খালার উপর তার বোন ঝিকে বিবাহ করতে এবং কোন মহিলা তার নিজের পাত্র পূর্ণ করার জন্য তার বোনকে তালাকের দাবী করতে নিষেধ করেছেন। কারণ আল্লাহই তার রিযিকদাতা।

৩৩১৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কোন মহিলা ও তার ফূফূকে একত্র করতে এবং কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্র করতে।

৩৩১৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।

৩৩১৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নূবাই ইবনু ওয়হব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) শায়বা ইবনু জুবায়রের কন্যার সাথে নিজ পূত্র তালহার বিবাহ দেওয়ার মনস্হ করলেন। অতএব তিনি উসমান (রাঃ) এর পূত্র আবানের কাছে লোক পাঠালেন (তাকে বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য)। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। আর তিনি এ সময় আমীরুল হাজ্জ (হজ্জ) ছিলেন। আবান বলেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (হজ্জ বা উমরা পালনের উদ্দেশ্যে) ইহরামধারী ব্যক্তি নিজেও বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না।

৩৩১৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) নূবাইহ ইবনু ওয়হব (রহঃ) বলেন, উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু মামার আমাকে আবান ইবনু উসমানের নিকট পাঠালেন এবং উদ্দেশ্যে যে, তিনি নিজ পূত্রের সাথে শায়বা ইবনু উসমানের কন্যার বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার মনস্হ করেছিলেন। তিনি (আবান) তখন হজ্জের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো তাকে বেদুঈনের মত আচরণ করতে দেখেছি। ‘কারন (এটাতো সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার যে,) ইহরাম বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি না বিবাহ করতে পারে, না বিবাহ করাতে পারে। ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর এ হাদীস উসমান (রাঃ)আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

৩৩১৮। আবূ গাসসান মিসমাঈ ও আবূল খাত্তাব যিয়াদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি না বিবাহ করবে, না বিবাহ করাবে, আর না বিবাহের প্রস্তাব ও দিবে।

৩৩১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি বিবাহ করবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না।

৩৩২০। আব্দুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) নুবাইহ ইবনু ওয়হব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু মামার হজ্জের মৌসুমে শায়বা ইবনু জুবায়রের কন্যার সাথে নিজ পূত্র তালহার বিবাহ দেওয়ার মনস্হ করলেন। এ সময় আবান ইবনু উসমান ছিলেন আমীরুল হাজ্জ (হজ্জ)। অতএব তিনি (উমর) তার নিকট এই কথা বলে পাঠালেন, আমি তালহা ইবনু উমরের বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেছি। অতএব আমি বিবাহ অনুষ্ঠানে আপনার উপস্হিতি কামনা করি। আবান (রহঃ) তাঁকে বললেন, আমি তো তোমাকে নির্বোধ ইরাকীর মত আচরণ করতে দেখছি। নিশ্চিত আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইহরামধারী ব্যক্তি বিবাহ করবে না।

৩৩২১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও ইসহাক হানযালী (রহঃ) আবূ শ্বাসাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম অবস্হায় (মায়মুনাকে) বিবাহ করেছেন। ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় আরো আছে: আমি ইবনু নুমায়র) যুহরীর নিকট এই হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আমাকে ইয়াযীদ ইবনুল আসাম অবহিত করেছেন যে, ইহরামতে অবস্হায় তাকে বিবাহ করেছেন।’

৩৩২২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের অবস্হায় মায়মুনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন।

৩৩২৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনুল আসাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হারিসের কন্যা মায়মুনা (রাঃ)আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম মুক্ত অবস্হায় তাকে বিবাহ করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি ছিলেন আমার খালা এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) এরও খালা।

৩৩২৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন অন্যের দামাদামীর উপর দর বাড়িয়ে না বলে এবং অন্যের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।

৩৩২৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের দর দামের উপর দরদাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। তবে সে অনুমতি দিলে (তা জায়িয)।

৩৩২৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে (এ হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে)।

৩৩২৭। আবূ কামিল (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে এই সুত্রে (অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে)।

৩৩২৮। আমরুন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন- গ্রামের লোকদের পক্ষ থেকে পণ্য দ্রব্য শহরের লোকদের বিক্রয় করে দিতে, অথবা কৃত্রিম ক্রেতা সেজে দাম বাড়িয়ে বলতে, একজনের বিয়ের প্রস্তাবের উপর অপরজনের প্রস্তাব দিতে, একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের দরদাম করার উপর অপরজনের দরদাম করতে এবং কোন স্ত্রীলোককে তার বোনের পাত্র পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে তার তালাক দাবী করতে। আমরের বর্ণনায় আরো আছেঃ ‘একজনের দর করার উপর অপরজনকে দর বাড়িয়ে বলতে।,’

৩৩২৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ক্রয়ের ইচ্ছানা থাকলে দালালী করার উদ্দেশ্যে) দাম বাড়িয়ে বলবে না, কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রয় না করে, কোন ব্যক্তি যেন তার ভাই এর বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় এবং রেহান স্ত্রীলোক যেন নিজের পাত্র পূর্ন করার জন্য অপর স্ত্রীলোকের তালাক দাবী না করে।

৩৩৩০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এই সনদের অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে মামারের বর্ণনায় আছেঃ ‘কোন ব্যক্তি যেন ক্রয়-বিক্রয়ে তার ভাইয়ের দামের উপ দিয়ে দাম বাড়িয়ে না বলে।’

৩৩৩১। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।

৩৩৩২। আহমাদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। কিন্তু এরা বলেন, ‘তার ভাইয়ের দামের উপর’ তার ভাইযের প্রস্তাবের উপর-।

৩৩৩৩। আবূ তাহির (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) মিম্বরের উপর দাড়িয়ে বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ব্যক্তি ভাই। অতএব মুমিনের জন্য তার ভাইয়ের দামের উপর দাম বলা এবং তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেওয়া হালাল নয়। তবে সে (নিজের প্রস্তাব) প্রত্যাহার করলে স্বতন্ত্র কথা।

৩৩৩৪। ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিযিদ্ধ করেছেন। শিগার হল-কোন ব্যক্তি কর্তূক তার কন্যাকে অপর ব্যক্তির নিকট এই শর্তে বিবাহ দেওয়া যে, শেষোক্ত ব্যক্তি তার কন্যাকে প্রথমোক্ত ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিবে এবং তাদের মধ্যে মাহর দেওয়া হবে না।

৩৩৩৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে উবায়দুল্লাহর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেনঃ আমি নাফি (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, শিগার কি?

৩৩৩৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩৩৭। মুহাম্মদ ইবনু রাফিঁ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘ইসলামে শিগার নাই।’

৩৩৩৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় আরো আছে শিগার এই যে, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলে তোমার কন্যাকে আমার সাথে বিবাহ দাও এবং আমিও আমার কন্যাকে তোমার সাথে বিবাহ দিব। তোমার বোনকে আমার সাথে বিবাহ দাও, আমিও তোমার সাথে আমার বোনকে বিবাহ দিব।’

৩৩৩৯। আবূ কুরায়ব (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে ইবনু নুমায়রের অতিরিক্ত বর্ণনা উল্লেখিত হয় নি।

৩৩৪০। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৩৪১। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বলেছেনঃ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে- তা হচ্ছে সেই শর্ত যার মাধ্যমে তোমরা (স্ত্রীদের) লজ্জাস্হান বৈধ করে নিয়েছ।’ হাদীসের মূল পাঠে উদ্বৃত শব্দাবলী আবূ বকর ও ইবনু মূসান্নার বর্ণনা থেকে গৃহীত। তবে ইবনু মূসান্নার বর্ণনায় শর্তাবর্লী উল্লেখ আছে।

৩৩৪২। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীকে তার সম্মতি না নিয়ে বিবাহ দেওয়া যাবে না। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তার (কুমারীর) সম্মতি কিভাবে নেওয়া যাবে? তিনি বললেনঃ সে নীরব থাকলে।

৩৩৪৩। যুহায়র ইবনু হারব, ইবরাহীম ইবনু মূসা, আমরুনূ নাকিদ, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান সকলেই ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এই সনদে হিশামের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। হিশাম, শায়বান ও মুআবিয়া ইবনু সাল্লাম- এ হাদীসে তাদের শব্দ অভিন্ন।

৩৩৪৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আশিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলামঃ যে মেয়েকে তার অবিভাবক বিবাহ দেয়, তার-নিকট থেকেও সম্মতি নিতে হবে কি না? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ হ্যা তার সম্মতিনিতে হবে। আশিয়া (রাঃ) বলেন, আমি তাকে পূনর্বার বললাম, সে তো লজ্জায় পড়বে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার নীরবতাই তার সম্মতি।

৩৩৪৫। সাঈদ ইবনু মানসূর ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতা তার (নিজের বিবাহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে) নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হকদার। কুমারীকে তার থেকে তার ব্যাপারে অনুমতি নিতে হবে, তার নীরবতাই তার সন্মতি।

৩৩৪৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ব বিবহিতা তার নিজের ব্যাপারে তার অভিভাবকের তুলনায় অধিক কর্তৃত্ব সম্পন্ন এবং কুমারীর সম্মতি নিতে হবে। নীরবতাই তার সম্মতি।

৩৩৪৭। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে এই সূত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। এই সুত্রে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুর্ব বিবাহিত তার নিজের (বিবাহের) ব্যাপারে তার অতিভাবকের তুলনায় অধিক কতৃঁত্ব সম্পন্ন এবং পিতা কুমারী কন্যার নিজের ব্যাপারে তার সম্মতি নিবে। নীরবতাই তার সম্মতি। কখনও তিনি বলেছেনঃ তার নীরবতাই তার সম্মতি।

৩৩৪৮। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আশিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেছেন, আমার বয়স তখন ছয় বছর। তিনি আমাকে নিয়ে বাসর ঘরে যান, তখন আমার বয়স নয় বছর। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাত করে মদিনায় পৌছার পর আমি একমাস যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম এবং আমার মাথার চুল পড়ে গিয়ে কানের কাছে (কিছু) থাকে। (আমার মা) উম্মে রুমান আমার নিকট এলেন, আমি তখন একটি দোলনার উপরে ছিলাম এবং আমার কাছে আমার খেলার সাথীরাও ছিল। তিনি আমাকে উচচস্বরে ডাকলেন, আমি তার নিকট গেলাম। আমি বুঝতে পারি নি যে, তিনি আমাকে নিয়ে কি করবেন। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে দরজায় নিয়ে দাঁড় করালেন। আমি তখন বলছিলাম, আহ, আহ। অবশেষে আমার উদ্বেগ সত্যি হল। আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আনসার মহিলাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলে আমার কল্যাণ ও রহমতের জন্য দুআ করলেন এবং আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। তিনি (মা) আমাকে তাঁদের নিকট সোপর্দ করলেন। তাঁরা আমার মাথা ধূয়ে দিলেন এবং আমাকে সুসজ্জিত করলেন। আমি কোন কিছুতে তীত শংকিত হইনি। তাবুতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং তারা আমাকে তাঁর নিকট সোপর্দ করলেন।

৩৩৪৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ছয় বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিবাহ করেন এবং আমার নয় বছর বয়সে তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করেন।

৩৩৫০। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আায়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তার সাত বছর বয়সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। তাকে নয় বছর বয়সে তাঁর ঘরে বধূবেশে নেওয়া হয় এবং তার সঙ্গে তাঁর খেলার পূতূলগুলোও ছিল। তাঁর আঠার বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন।

৩৩৫১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তার ছয় বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন, তার নয় বছর বয়সে তিনি তাকে নিয়ে বাসর যাপন করেন এবং আঠার বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

৩৩৫২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসে আমার সহিত প্রথম মিলিত হন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন স্ত্রী তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক সম্ভোগ্য ছিলেন? আয়িশা (রাঃ) তার বংশের মেয়েদের শাওয়াল মাসে বাসর ঘরে পাঠানো উত্তম মনে করতেন।

৩৩৫৩। ইবনু নুমায়র (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সূত্রে আয়িশা (রাঃ)-এর কর্মপন্থা উল্লেখিত হয় নি।

৩৩৫৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্হিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তিতার নিকট এসে তাকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি তাকে একবার দেখেছ? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ যাও! তুমি তাকে এক নযর দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছুটা ক্রটি আছে।

৩৩৫৫। ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জনৈক ব্যক্তি উপস্হিত হয়ে বলল, আমি জনৈকা আনসারী মহিলা বিবাহ করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি দেখে নিয়েছিলে? কেননা আনসারদের চোখে ক্রটি থাকে। লোকটি বললো, আমি তাকে দেখে নিয়েছি। তিনি বললেন, কি পরিমাণ বিনিময়ে তুমি তাকে বিবাহ করেছ? লোকটি বললো, চার উকিয়ার বিনিময়ে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, চার উকিয়ার বিনিময়ে? মনে হয় তোমরা পাহাড়ের পার্শ্বদেশ থেকে রৌপ্য তুলে এনে থাক। আমাদের নিকট এমন কিছু নেই যা দিয়ে তোমাকে দান করতে পারি। তবে আমি তোমাকে শীঘ্রই একটি ষূদ্ধাভিযানে পাঠিয়ে দিচ্ছি যার লব্ধ গনীমাত থেকে তুমি একাংশ লাভ করতে পারবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বনু আবসের বিরুদ্ধে একটি অভিযান দল প্রেরণ করেন যার সাথে তিনি ঐ লোকটিকে পাঠিয়ে দেন।

৩৩৫৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ আস-সাকাফী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি নিজকে আপনার জন্য হিবা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে লক্ষ্য করলেন এবং দৃষ্টি উপরের দিকে উঠিয়ে নিচে নামালেন। তারপর তিনি তাঁর শির মুবারক নত করলেন। মাহিলা যখন বুঝতে পারল যে, তার সমন্ধে কোন সিদ্ধাতে পৌছেন নি, তখন সে বসে পড়ল। তারপর জনৈক সাহাবী দাঁড়িয়ে আরয কল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সাহাবী বললেন, না, আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, তুমি বাড়ী যাও দেখ, কোন কিছু পাও কিনা। সাহাবী বাড়ী গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, আমি বাড়ীতে কোন কিছুই পাই নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দেখ, লোহার আংটি হলেও (পাও কিনা)। সাহাবী আবার গেল এবং ফিরে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি লোহার একটি আংটিও পাই নি। তবে আমার এ লূংগীটি আছে। (বর্ণনাকারী) সাহল (রাঃ) বলেন, তার চাঁদরও ছিল না এর অর্ধেক তার জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার লুঙ্গি দ্বারা কি করবে? তা যদি তুমি পর তাহলে স্ত্রীর জন্য সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। আর যদি সে তা পরিধান করে তাহলে (তোমার জন্য) সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। এরপর সে ব্যক্তি বসে রইল। অনেক ক্ষণ বসার পর উঠে গেলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে ডেকে পাঠালেন। যখন সে এল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কুরআনের কোন অংশ তোমার জানা আছে? উত্তরে সে বললঃ অমুক সূরা, অমুক সূরা আমার জানা আছে। এভাবে সে সূরাগুলোর সংখ্যা বলে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি এগুলো মুখস্ত পাঠ করতে পার? সাহাবী বলল, হ্যা। তিনি বললেন, যাও তোমাকে এসব সূরার কারণে এই মহিলাকে তোমার অধিকারে দিয়ে দিলাম। এ হল ইবনু আবূ হাযিমের বর্ণনা। আর ইয়াকুবের বর্ণনা শব্দের দিকে দিয়ে এর কাছাকাছি।

৩৩৫৭। খালফ ইবনু হিশাম, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) সূত্রে সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য কেউ কেউ এক অপর থেকে নাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। তবে যায়িদার হাদীসে রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যাও, আমি তোমার সাথে একে বিবাহ দিলাম। তুমি তাকে কুরআন শিক্ষা দাও।’

৩৩৫৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুল রহমান (রহঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবাহে মাহর কি পরিমাণ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর বিবিগণের মাহরের পরিমাণ ছিল বার উকিয়া ও এক নাশ। তিনি বললেন, তুমি কি জান এক নাশ এর পরিমাণ কতটুকু? আমি বললাম, না-। তিনি বললেন, এক নাশ এর পরিমাণ হল আধা উকিয়া। সুতরাং মোট হল পাচ শত দিরহাম। এই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণের মাহর।

৬৩৫৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আকুব রাবী, সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল রহমান ইবনু আঊফ (রাঃ)-এর কাপড়ে হলুদ রং দেখে বললেন, এ কি? তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি এক নওয়াত ওযনের সোনার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দন করুন, তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি বকরী দ্বারা হয়।

৩৩৬০। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ শুবারী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের সোনার বিনিময়ে বিবাহ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘তুমি ওলীমা কর, যদি তা একটি বকরী দ্বারাও হয়।’

৩৩৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের সোনার বিনিময়ে এক মাহিলাকে বিবাহ করেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ‘তুমি ওলীমা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।’

৩৩৬২। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না, মুহাম্মদ ইবনু রাফি , হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও আহমাদ ইবনু খারাশ (রহঃ) শুবা সুত্রে হুমায়দ থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে ওয়াহবের হাদীসের রয়েছে, আবদুর রহমান (রাঃ) বললেনঃ আমি এক মহিলাকে বিবাহ করেছি।

৩৩৬৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারায় বাসর যাপনের প্রফূল্লতা দেখতে পেলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি এক আনসার মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে! কি পরিমাণ মাহর দিয়েছ? আমি বললাম, এ নওয়াত। ইসহাক (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে: স্বর্নের।

৩৩৬৪। ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আব্দুর রহমান (রাঃ) এক নওয়াত ওযনের স্বর্ণের ইকরার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেন।

৩৩৬৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তবে এতে রয়েছে, তিনি বললেনঃ আবদূর রহমান ইবনু আউফের সন্তানদের একজন বলেছেনঃ স্বর্ণের।

৩৩৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে যান। বর্ণনাকারী বলেন আমরা খায়বারের কাছে অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ তালহা (রাঃ) সাওয়ার হলেন। আমি ছিলাম আবূ তালহা (রাঃ)-এর রাদীফ (তাঁর বাহনে তার পশ্চাতে উপবিষ্ট) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের গলি দিয়ে রওনা দিলেন। এ সময় আমার হাটূ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উকদেশ স্পর্শ করছিল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরু থেকে লুঙ্গী সরে যাচ্ছিল। আর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উকর শুভ্রতা দেখছিলাম। যখন তিনি বস্তীতে প্রবেশ করলেন তখন বললেন, আল্লাহ আল্লাহ, খায়বার ধ্বংস হউক। বস্তুত আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ক কৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দা’ একথা তিনি তিনবার বলেন। বর্ণনাকারী বলেন ঐ সময় লোকজন তাদের কাজে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো, মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসেছেন)। বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন উস্তাদ বলেছেন, পুরা বাহিনী সহ বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বার জয় করলাম, এবং বন্দীদের একত্রিত করা হল। তখন দাহিয়া (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কায়েদীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ যাও- একজন দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই কে নিয়ে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, ইয়া নাবী আল্লাহ! আপনি বনু কুরায়যা ও বনু নযীরের সর্দার হুযাইনের কন্যা সাফিয়্যা কে দাহিয়াকে দিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র আপনারই উপযুক্ত হতে পারে। তিনি বললেন, তাকে সাফিয়্যাসহ ডাক। তারপর দাহিয়া (রাঃ) সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি দাহিয়া (রাঃ)-কে বললেন, তুমি সাফিয়্যা ব্যতীত কয়েদীদের মধ্য থেকে অন্য কোন দাসী নিয়ে নাও। বর্ণনাকারী বলেন তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। আনাসকে লক্ষ্য করে সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আবূ হামযা! তিনি তাঁকে কী মাহর দিলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সত্তাকে মুক্তি দান করেন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে বিবাহ করেন। তারপর তিনি যখন (ফেরার) পথে ছিলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন এবং রাতে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর উদযাপনের পর ভোর হলে তিনি ঘোষণা করলেন, যার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে যেন উপস্হিত হয়। আর তিনি চামড়ার বড় দস্তরখান বিছালেন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে কেউ পানীয়, কেউ খেজুর ও কেউ ঘি নিয়ে হাযির হল। তারপর এসব মিলিয়ে তারা হায়স তৈরী করেন। আর তাই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওলীমা।

৩৩৬৭। আবূর রাবী যাহরানী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ শুবারী, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু রফি (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তার আযাদীকে মাহর ধার্য করলেন। অপর এক হাদীসে মু’আয তাঁর পিতা থেকে বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর আযাদীকে মাহর ধার্য করেন।’

৩৩৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে তার দাসী আযাদ করে তাকে বিয়ে করে তার জন্য রয়েছে দ্বিশুণ সাওয়াব।

৩৩৬৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধে আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর পিছনে সাওয়ার ছিলাম। আমার পা তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কদম মুবারক স্পর্শ করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সূর্যোদয়ের সময় খায়বারবাসীদের নিকট পৌছলাম। তারা তখন চতূস্পদ জন্তু, কোদাল, বস্তা ও রশি নিয়ে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পঞ্চবার ছিল (পূর্ণ বাহিনী) নিয়ে এসে গেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন শক্র দলের আংগিনায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃত লোকদের প্রভাত হয় মন্দা বর্ণনাকারী বলেন, (ঐ অভিযানে) আল্লাহ তাদের পরাজিত করেছেন। দাহিয়া (রাঃ)-এর ভাগে পড়ে সুন্দরী দাস। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাতজন দাসের বিনিময়ে সে দাসীকে খরীদ করে নেন। অতঃপর তাকে উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর হাওয়ালা করেন যাতে তিনি তাঁকে ঠিকঠাক করে প্রস্তুত করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাবী একথাও বলেছেন, সে যেন তাঁর ঘরে ইদ্দত পুর্ণ করে। তিনি ছিলেন হুয়াইর কন্যা সাফিয়্যা। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর, পানীয় ও ঘি দিয়ে তার ওলীমা করলেন। এ উদ্দেশ্যে যমীনের কিছু অংশ গর্ত আকারের করে তাতে চামড়ার বড় দস্তরখান বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতেই পানীয় ও ঘি রাখা হয়। সকলেই তা নিয়ে সাথে আহার করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বলতে লাগলঃ আমরা জানি না, তিনি তাকে বিবাহ করলেন, না উম্মু ওলাদ (দাসী) রুপে গ্রহণ করলেন। আবার কয়েকজন বলতে লাগল, যদি তিনি তার পর্দার ব্যবস্হা না করেন তবে তার উম্মু ওলাদ। তিনি যখন বাহনে সাওয়ার হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তার জন্য পর্দার ব্যবস্হা করলেন। এরপর সাফিয়্যা (রাঃ) উটের পিছনের দিকে বসলেন। তখন লোকেরা জানতে পারল যে, তিনি তাঁকে বিবাহ করেছেন। সাহাবীগণ যখন মদিনার নিকটবর্তী হলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দ্রুত অগ্রসর হতে থাকলেন এবং আমরাও দ্রুত চললাম। তখন নাবীজীর আসবাব উটনীটি হোচট খেয়ে যমীনে পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমীনে পড়ে যান এবং সাফিয়্যা (রাঃ) ও পড়ে যান। তিনি দাড়িয়ে সাফিয়্যা (রাঃ)-কে পর্দার দ্বারা আবৃত করে দেন। এ দেখে কতিপয় মহিলা বলতে লাগল, ইয়াহুদী মাহিলাকে আল্লাহ তার রহমত থেকে বঞ্চিত করুন। বর্ণনাকারী বলেন আমি বললাম, হে আবূ হামযা! সত্যই কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনী থেকে যমীনে পড়ে গিয়েছিলেন? তিনি শপথ করে বললেন, হাঁ। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নিজে যায়নাব (রাঃ)-এর ওলীমা অনুষ্ঠানে ছিলাম। সে অনুষ্ঠানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের তৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত আহার করিয়ে ছিলেন। সেই ওলীমার দাওয়াত দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন ওলীমার কাজ শেষ করে উঠলেন আমিও তাঁর পিছনে চললাম। তখনও দুজন লোক ঘরে কথা বার্তায় ব্যস্ত রইল, তারা বের হলেন না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেককেই ‘আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গৃহবাসী! তোমরা কেমন আছ? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেন, ‘আমরা ভাল আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কেমন আছেন? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেন, ‘আমরা ভাল আছি, ইয়া রাসুলুল্লাহ; আপনি আপনার নব পরিনীতাকে কেমন পেয়েছেন? বললেন, ভালই। তিনি যখন এ কাজ শেষ করে ফিরে এলেন আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন তিনি দরজার কাছে এলেন দেখলেন যে, সে দু-জন আলোচনায় রত আছে। তারা তাঁকে ফিরে যেতে দেখে উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে নেই, ঘর থেকে ঐ দু’জন লোকের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমি তাঁকে জানিয়ে ছিলাম, না এ ব্যাপারে তার উপর ওহী নাযিল হয়েছিল। তিনি আবার ফিরে এলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন দরযার চৌকাঠে পা রাখলেন তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, আর আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ন করেনঃ- ‘তোমরা নাবীর ঘরে তার বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে না।’

৩৩৭০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ইবনু হায়্যান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাফিয়্যা (রাঃ) দাহিয়া (রাঃ)-এর ভাগে পড়েন। লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তাঁর প্রশংসা করে বলতে লাগলো, আমরা কয়েদীদের মধ্যে তাঁর কোন দেখি নি। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তিনি দাহিয়াকে ডেকে পাঠালেন এবং সাফিয়্যার বদলে তাকে যা তিনি চাইলে তা দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি সাফিয়্যাকে আমার মায়ের হাওয়ালা করলেন এবং বললেন, তুমি তাকে (সাজিয়ে) ঠিকঠাক করে দাও। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বের হয়ে পড়লেন। যখন ছেড়ে আসলেন তখন অবতরণ করলেন। তারপর সাফিয়্যার উপর একটি তাঁবু খাটিয়ে দিলেন। ভোরে উঠে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার কাছে উদ্বৃত্ত খাদ্য আছে সে যেন তা আমার কাছে নিয়ে আসে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকজন তার উব্বৃত্ত খেজুর এবং উদ্ধুত্ত ছাতু আনতে লাগল। এমনকি এগুলোর একটি স্তুপ পরিমাণ জমা করে হায়স তৈরী করল তারপর সকলে হায়স থেকে খেতে লাগল এবং বৃষ্টির পানির হাউয থেকে তারা পানি পান করতে লাগল। বর্ণনাকারী (সাবিত) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেন, তাই ছিল . সাফিয়্যা (রাঃ)-এর ওলীমা। তিনি বলেন, তারপর আমরা এরপর রওনা দিলাম এবং যখন মদিনার প্রাচীরগুলো দেখতে পেলাম তখন মদিনার জন্য আমাদের মন উৎফূল্ল হয়ে উঠলো। আমরা আমাদের সাওয়ারীগুলোকে দ্রুত চালনা করলাম এবং তিনি ও তাঁর সাওয়ারীকে দ্রুত চালালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সাফিয়্যা তার পিছনে তার সাথে সাওয়ার করে গিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উটনী হোচট খায়। ফলে তিনি ও সাফিয়্যা পড়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা কেউ তাঁর ও সাফিয়্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাকে আবৃত করলেন। তিনি বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা মদিনায় প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপরাপর সহধর্মিনীগণ বের হয়ে সাফিয়্যাকে একজন আর একজনকে দেখাতে লাগলেন এবং তাঁর মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে আফসোস করতে লাগলেন।

৩৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যয়নাব (রাঃ)-এর ইদ্দত পূর্ণ হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি যয়নাবের নিকট আমার কথা উল্লেখ কর। আনাস (রাঃ) বলেন, যায়িদ (রাঃ) রওনা হলেন এবং তাঁর নিকট গেলেন। তখন তিনি আটার খামির করছিলেন। যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমি যখন তাঁকে দেখলাম তাঁর মর্যাদা আমার অন্তরে এমনভাবে জাগ্রত হল যে, আমি তার প্রতি তাকাতে পারলাম না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে স্বরণ করেছেন। তাই আমি তাঁর দিকে পিঠ ফিরে দাঁড়ালাম এবং পিছনের দিকে সরে পড়লাম। এরপর বললাম, হে যয়নাব!রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে স্বরণ করে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে কিছুই করব না যে পর্যন্ত না আমি আমার রবের কাছ থেকে নির্দেশ লাভ না করি। এরপর তিনি তার সালাতের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এদিকে কুরআন নাযিল হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যয়নাবের বিনা অনুমতিতেই তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা দেখেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যয়নাবের সেই বিবাহ উপলক্ষে) দুপূর বেলায় আমাদের গোশত খাইয়েছেন। খাওয়া দাওয়ার পর লোকেরা বের হয়ে গেল কিন্তু কয়েকজন লোক খাওয়ার পর আলাপে মশগুল থাকল। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পড়লেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর বিবিগণের ঘরে ঘরে উপস্হিত হয়ে তাঁদের সালাম করতে লাগলেন। আর বিবিগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার এ স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মনে নেই, (আলাপরত) সে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমিই তাঁকে জানিয়ে ছিলাম না তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তারপর তিনি চললেন এবং সে ঘরে প্রবেশ করলেন আমিও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার বিধান নাযিল হল। আনাস (রাঃ) বলেন, লোকদের উপদেশ দিলেন দেওয়ার যা ছিল। ইবনু রাফি তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করতে গিয়ে এ আয়াত উল্লেখ করেনঃ (অর্থ) ‘তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবী গৃহে প্রবেশ করবে না কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সং-কোচবোধ করেন না।’

৩৩৭২। আবূর রাবী যাহরানী, আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন ও কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মহিলার জন্য-আবূ কামিল বলেন, তাঁর কোন স্ত্রীর জন্য সেরুপ ওলীমা করতে দেখি নি যেমন ওলীমা করেছেন যয়নাবের জন্য। তার জন্য তিনি একটি বকরী যবাই করেছেন।

৩৩৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওযাদ ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়নাব (রাঃ)-এর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত অধিক পরিমাণ অথবা উত্তমভাবে ওলীমা করেছিলেন যা তিনি তাঁর সহধার্মিনীদের জন্য কারো জন্য করেননি। সাবিত বুনানী জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কী দিয়ে ওলীমা করেছিলেন? তিনি (আনাস (রাঃ) বললেনঃ সবজি তিনি কটি ও গোশত খাওয়ালেন। এমনকি তারা উদ্বৃত্ত রেখে গেল।

৩৩৭৪। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী, আসিম ইবনু নযর তায়মী এবং মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন তিনি লোকদের দাওয়াত করেন। তারা খাওয়া-দাওয়া করে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন দাঁড়াতে উদ্যত হলেন তবুও তারা উঠল না। এরুপ দেখে তিনি উঠে গেলেন। তারা উঠে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে যারা উঠবার তারা উঠে গেল। আসিম ও ইবনু আবদুল আ’লার বর্ননায় অতিরিক্ত রয়েছে- আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তিনজন লোক ঘরে বসে রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য এসে দেখতে পান যে, কয়েকজন লোক বসে আছে। এরপর তারাও উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এসে তাদের চলে যাবার সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি এসে প্রবেশ করবেন। আমিও তার সঙ্গে প্রবেশ করতে অগ্রসর হলাম। এ সময় তিনি আনীর ও তাঁর মাঝখানে পর্দা ঝূলিয়ে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আর আল্লাহ তাকআলা নাযিল করেনঃ ‘তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নাবীগৃহে প্রবেশ করবে না – আল্লাহর দৃষ্টিতে ইহা শুরু তর অপরাধ’।

৩৩৭৫। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি পর্দার হুকুম সংক্রান্ত ঘটনা সম্পর্কে সবার চাইতে বেশী অবগত। এ ব্যাপারে উবাই ইবনু কাব (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনত জাহশের স্বামী হন। তিনি বলেন, তাঁকে বিবাহ করেন মদিনায়া এ উপলক্ষে তিনি দ্বিপ্রহরের সময় খাওয়ার জন্য লোকদের দাওয়াত দেনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন এবং তারা তার সঙ্গে বসল। লোকদের যারা উঠে যাবার উঠে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠলেন এবং রওনা হলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে চলতে থাকলাম। তিনি আশিয়া (রাঃ)-এর হুজরায় পৌছলেন। যখন তিনি ধারণা করলেন যে, তারা (উপবিষ্ট লোকজন) বেরিয়ে গেছে তখন তিনি ফিরে এলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। দেখা গেল তখন তারা তাদের জায়গায় বসা আছে। তখন তিনি ফিরে গেলেন এবং আমি ও তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বার ফিরে গেলাম। তিনি আশিয়া (রাঃ)-এর হুজরায় পোঁছলেন। আবার তিনি যয়নাবের ঘরের দিকে ফিরলেন। দেখা গেল লোকেরা চলে গেছে। তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার আয়াত অবতীর্ন হয়।

৩৩৭৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যয়নাব বিনত জাহশকে) বিবাহ করেন এবং তাঁর সহধর্মিনীর কাছে গেলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হায়স তৈরী করেছিলেন এবং তা একখানি ছোট পাত্রে রেখে আমাকে বললেন, হে আনাস! ইহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাও এবং তাঁকে বল, ইহা আমার মা আপনার খিদমতে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে সালাম পৌছিয়েছেন। (আরও বলো যে) তিনি বলেছেনঃ- ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ সামান্য (হায়স) আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে (দেওয়া হল)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি হায়স নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ এ সামান্য (হায়স) আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে দেওয়া হল। তিনি বললেন, ইহা রাখ। তারপর বললেন; তুমি যাও, অমুক অমুক অমুককে দাওয়াত দাও এবং সেসব লোককেও যাদের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে। এ বলে, তিনি লোকদের নাম বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তখন বর্ণিত লোকদের দাওয়াত দিলাম এবং তাদেরও যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। সাবিত (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, (আমন্ত্রিত লোকদের) সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সার) পাত্রটি নিয়ে এসো। আনাস (রাঃ) বলেন, দাওয়াত প্রাপ্ত লোকজন এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরে ও উহার চতূপার্ষে ভীড় করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ- তোমরা দশ দশ জন করে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকেই পাত্র থেকে নিজের সামনের স্হান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর। আনাস (রাঃ) বললেন, সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন। তিনি বলেন, একদল গেল আরেক দল প্রবেশ করল। এভাবে সকলে খাবার কাজ সেরে নিল। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সার পাত্র) উঠাও। তিনি বলেন, এরপর আমি পাত্রটি তুলে নিলাম। পাত্রটি রাখার সময় এতে খাদ্য বেশী ছিল কি না সেটি উঠাবার সময় তা আমি বুঝতে পারি নি। আনাস (রাঃ) বলেন, তাদের কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখানে) বসা ছিলেন এবং তাঁর সহধর্মিনী (যায়নাব) দেয়াল মুখী হয়ে পিছনে ফিরে রইলেন। তাদের উপস্হিতি তার কাছে কষ্টকর মনে হল। তারপর তিনি তাঁর অন্যান্য বিবিদের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনি এলেন। তাঁরা যখন দেখল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসেছেন, তারা বুঝতে পান যে, তাদের অবস্হিতি তাঁর জন্য কষ্টকর হয়েছে। আনাস (রাঃ) বলন, তখন তারা তাড়াতাড়ি দরযার দিকে এগিয়ে গেল এবং সবাই বেরিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং পর্দা টেনে দিলেন এবং পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলেন। আমি ঘরে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি আমার কাছে ফিরে এলেন। তখন এই আয়াত নাযিল হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আয়াত লোকদের কাছে পাঠ করলেন (অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুভের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য নাবীর গৃহে প্রবেশ করবে না, তবে তোমাদের আহবান করলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং আহারের পর তোমরা চলে যাবে এবং কথাবার্তায় মশশুল হয়ে পড়বেনা। কারণ তোমাদের এ আচরণ নাবীকে কষ্ট দেয়’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। রাবী জাদ (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি লোকদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এ আয়াতের প্রতি অনুগত হওয়ার জন্য। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণকে পর্দার আড়ালে নেওয়া হল।

৩৩৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাবকে বিবাহ করলেন তখন উস্মু সূলায়ম (রাঃ) পাথরের একটি পাত্রে তাঁর জন্য হায়স পাঠালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যাও, মুসলিমদের মধ্যে যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে আমার পক্ষ থেকে দাওয়াত দাও। তারপর যার সাথে সাক্ষাৎ হল আমি তাকে দাওয়াত দিলাম। তারা তাঁর কাছে আসতে শুরু করল এবং খেয়ে চলে যেতে লাগল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত খাদ্যের উপর রাখলেন এবং তাতে দুআ পড়লেন। এতে আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি যা পাঠ করার তা পড়লেন। যারই সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তাকেই দাওয়াত দিতে বাদ দেইনি। সকলেই খেল এবং তৃপ্ত হল। তারা বেরিয়ে গেল কিন্তু তাদের একদল রয়ে গেল। তারা তাঁর সেখানে দীর্ঘালাপে লিপ্ত রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কিছু বলতে লজ্জাবোধ করছিলেন। তাই তিনি নিজেই বেরিয়ে গেলেন এবং তাদের ঘরে রেখে গেলেন। তখন আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেন-(অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে আহার্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না। কাতাদা (রহঃ) বলেন, তোমরা অ্যহার্য প্রস্তুতির সময়েরৃ যদি অপেক্ষা না কর তবে তোমাদের আহবান করলে তোমরা প্রবেশ করবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হীদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।’ (৩৩- ৫৩)।

৩৩৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন ঐ দাওয়াতে সাড়া দেয়।

৩৩৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন তা কবুল করে। (রাবী) খালিদ (রহঃ) বলেন, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) একে বিবাহের ওলীমা বলে গ্রহণ করেছেন।

৩৩৮০। ইবনু হুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কাউকে বিবাহের ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তা কবুল করে।

৩৩৮১। আবূর রাবী ও আবূ কামিল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হলে তাতে সাড়া দিবে।

৩৩৮২। মুহাম্মদ ইবনু রাফিঁ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার ভাইকে দাওয়াত দেয় সে যেন তার দাওয়াতে সাড়া দেয়, অনুষ্ঠানই হউক বা সে রকম (অন্য কোন অনুষ্ঠান)।

৩৩৮৩। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কাউকে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে অথবা এ ধরনের অন্য কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়, সে যেন সাড়া দেয়।

৩৩৮৪। হুমায়দ ইবনু মাসআদাবা বাহিলী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যখন তোমাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয় তখন তোমরা দাওয়াতে আসবে।’

৩৩৮৫। হারুন ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এ দাওয়াতে সাড়া দিবে যখন তোমাদেরকে তার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বিবাহের দাওয়াতে বা বিয়ে ছাড়া অন্য যে কোন দাওয়াতে আসতেন। এমনকি তিনি সায়িম অবস্হায়ও (দাওয়াতে আসতেন)।

৩৩৮৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের বকরীর পায়া খাওয়ার দাওয়াত দেওয়া হয় তখন তোমরা তাতে সাড়া দিও।

৩৩৮৭। মুহাম্মদ ইবনু মাসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন দাওয়াতে সাড়া দেয়। তারপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে। ইবনু মূসান্না (রহঃ) তার বর্ণনায় ‘পানাহারের দিকে কথাটি উল্লেখ করেন নি।

৩৩৮৮। ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৩৮৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে সায়িম হয় তাহলে সে (ওখানে গিয়ে) দুঃআ সালাত রত থাকবে। আর যদি সায়িম না হয় তাহলে সে আহার করবে।

৩৩৯০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, সে ওলীমার খাদ্য কতই না মন্দ যা খাওয়ার জন্য কেবল ধনীদের দাওয়াত দেওয়া হয় আর গরীবদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয় বলে তারা তাতে যোগ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি দাওয়াতে সাড়া দেয় না আল্লাহ তায়াআলা ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাফরমানী করল।

৩৩৯১। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আবূ বকর! ‘এই যে হাদীস- সেব চাইতে মন্দ খাদ্য ধনীদের খাদ্য–এ সম্পর্কে আপনার কি মত? শুনে তিনি হাসলেন এবং বললেন, না ধনীদের খাদ্য সব চাইতে মন্দ খাদ্য নয়। সুফিয়ান (রহঃ) বললেন, আমার পিতা যেহেতূ ধনী লোক ছিলেন এ জন্য এ হাদীস খানি আমাকে ঘাবড়িয়ে তুলেছিল, যখন আমি তা শুনতে পেলাম। তাই আমি এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করি। (ইমাম) যুহরী (রহঃ) উত্তর দিলেন, আমার নিকট আবদুল রহমান আরাজ (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, ওলীমার খাদ্য সবচাইতে নিকৃষ্ট খাদ্য। অতঃপর মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন।

৩৩৯২। মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিকৃষ্ট খাদ্য হলো ওলীমার খাদ্য। মালিক এর হাদীসের অনুরুপ।

৩৩৯৩। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে অনুরুপ বর্ণিত।

৩৩৯৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিকৃষ্টতম খাদ্য হল ওলীমার খাদ্য যেখানে আগমনকারীদের বাধা দেওয়া হয়। আর অনিচ্ছাকদের দাওয়াত দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি দাওয়াতে সাড়া দেয় না সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী করল।

৩৩৯৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থোকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা আ এর স্ত্রী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমি রিফা’আর নিকট ছিলাম। সে আমাকে তালাক দিয়েছে পূর্ণ তালাক। তারপর আমি আবদুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিবাহ করি। তার কাছে রয়েছে কাপড়ের বণিকের মত। এত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি হাসলেন এবং বললেন, তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, (তা হয় না) যে পর্যন্ত না তুমি তার রসস্বাদন করবে এবং সে তোমার রসাস্বাদন করবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তাঁর কাছে এবং খালিদ ইবনু সাঈদ (রাঃ) ছিলেন দরযায়। তিনি (প্রবেশের) অনুমতির অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ডাক দিয়ে বললেন, হে আবূ বকর! আপনি কি শুনেন না এই মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উচ্চ স্বরে কি কথা বলছেন।

৩৩৯৬। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) তাকে সংবাদ দিয়েছে যে, রিফাআ কুরাবী (রাঃ) তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং সে তাকে পূরাপূরি তালাক দিয়ে দেয়। তারপর সে স্ত্রী লোকটি আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ করে। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে ছিলো রিফাআর অধীনে। সে তাকে পূরোপুরি এতিন দিন তালাক দেয়। অতঃপর সে আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ করে। আল্লাহর কসম, তার সাথে তো রয়েছে কাপড়ের ঝালরের মত। এ বলে মহিলা তার উড়নার আচল ধরে দেখাল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সম্ভবত রিফা-আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না তা হয় না, যতক্ষন না সে তোমার রসাসা’দন করে এবং তুমি তার রসাসা’দন কর। আবূ বকর (রাঃ) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বসাছিলেন। আর খালিদ ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রাঃ) ছিলেন হুজরার দরযায় বসা। তাকে (ঘরে প্রবেশ করার) অনুমতি দেওয়া হয় নি। রাবী বলেন, তখন খালিদ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, আপনি কেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তার এ সব কথা প্রকাশ করা থেকে বারণ করছেন না?

৩৩৯৭। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রিফা’আ কুরাযী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। এরপর সে আব্দুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিয়ে করে। তারপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! রিফাআ তাকে পূরোপুরি তিন তালাক দিয়ে দেয়। এরপর ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।

৩৩৯৮। মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আয়িশা থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় যাকে একজন বিবাহ করে, অতঃপর সে তাকে তালাক দেয়। এরপর সে মহিলা আরেক জনকে বিয়ে করে। কিন্তু সে তার সাথে সংগমের আগেই তালাক দেয়। এমতাবস্হায় উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে কি? তিনি বললেনঃ না, যে পর্যন্ত না সে ঐ স্ত্রীর রসাস্বাদন করে।

৩৩৯৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মুআবিয়া সহ সকলেই হিশাম (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেন।

৩৪০০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়। তারপর অন্য একজন তাকে বিয়ে করে। এরপর সে তাকে সংগমের আগেই তালাক দিয়ে দেয়। পরে প্রথম স্বামী তাকে বিয়ে করতে চায় এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বললেনঃ না, তা হবে না যে পর্যন্ত না তারা একে অন্যের রসাস্বাদন করবে, যেভাবে প্রথম স্বামী রসাস্বাদন করেছিল।

৩৪০১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া অর্থাৎ ইবনু সাঈদ সহ সকলেই উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। উবায়দুল্লাহ সুত্রে ইয়াহইয়ার হাদীসে বলেন যে, কাসিম আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

৩৪০২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলতে চায় সে যেন বলে (অর্থঃ) ‘বিসমিল্লাহ হে আল্লাহ! আমাদের শয়তান থেকে রক্ষা করুন, আর আমাদের যা তুমি দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দুরে রুখবে’। কেননা এ মিলনে তাদের ভাগ্যে যদি কোন সন্তান হয় তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না।

৩৪০৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে ইবনু নুমায়র তাঁর পিতা থেকে। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুর রাযযাক (রহঃ) থেকে, সকলেই সাওরী (রহঃ) থেকে রিওয়ায়াত করেন- তারা উভয়ে মানসূর থেকে জারীরের হাদীসের মর্মানুযায়ী, তবে শুবা তার হাদীসে ‘বিসমিল্লাহ এর উল্লেখ করেননি এবং সাওরী সুত্রে আব্দুর রাযযাক এর রিওয়ায়াতে ‘বিসমিল্লাহ রয়েছে। আর ইবনু নুমায়র এর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, মানসূর বলেছেন, আমি মনে করি তিনি বলেছেন, বিসমিল্লাহ।

৩৪০৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বরক ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইয়াহুদীরা বলত, কোন লোকে স্ত্রীর পিছন দিক থেকে তার যোনি দ্বারে সংগম করলে এতে সন্তান টেরা চক্ষু বিশিষ্ট হবে। এ প্রসঙ্গে নাযিল হয় অর্থাৎ স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভারে ইচ্ছা গমন করতে পার।

৩৪০৫। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়াহুদীরা বলত যে, স্ত্রীর পিছন দিক থেকে যোনী দারে যদি সঙ্গম করা হয় এবং এতে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার সন্তান হবে টেরা চক্ষু বিশিষ্টা রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে নাযিল হয় স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র, অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার।

৩৪০৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদস সামাদ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, হায়ীন ইবনু আবদুল্লাহ,আবূ মাআন রাকাশী ও সূলায়মান ইবনু মা’বাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে যুহরী সুত্রে বর্ণিত। নুমান অতিরিক্ত বলেছেন, স্বামী ইচ্ছে করলে উপুড় করে, ইচ্ছা করলে উপুড় না করে তবে একই দারে হতে হবে।

৩৪০৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, স্বামীর বিছানা পরিহার করে কোন স্ত্রী রাত্রি যাপন করলে ফজর পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার প্রতি লানত করতে থাকে।

৩৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) শুবা (রহঃ) সুত্রে এই সনদের বর্ণনায় বলেছেন, ফিরে না আসা পর্যন্ত কথার উল্লেখ আছে।

৩৪০৯। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসম সেই সত্তার যার হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহবান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টিনা হয়, ততক্ষন আসমানবাসী তার প্রতি অন্তুষ্ট থাকে।

৩৪১০। আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবানকরে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফিরিতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লানত করতে থাকে।

৩৪১১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সে ব্যাক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, তারপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়।

৩৪১২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানত খিয়ানতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। এরপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। ইবনু নুমায়র বলেন, ‘ইন্না মিন আযিম’ স্হলে ‘মিন আযিম’ হবে।

৩৪১৩। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু মাহায়রিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ সাঈদ! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আযল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনে ছেন? তিনি বললেনঃ হ্যা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বনূ মত্তালিকের যুদ্ধ করছি। সে যুদ্ধে আমরা অনেক ভাল ভাল আর সুন্দরী বাঁদী হিসেবে লাভ করি। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সংস্পর্শ বর্জিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্হায় আমরা বাদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং আযল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্হিত রয়েছেন। তাঁর নিকট আমরা এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করব না! তাই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ পাক কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই।

৩৪১৪। বনূ হাশিমের মুক্ত দাস মুহাম্মাদ ইবনু ফারাজ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাববান (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রাবী আর হাদীসের মর্মানূযায়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সে হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – বলেছেনঃ ‘কেননা আল্লাহ তা-আলা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যত মাখলূক সৃষ্টি করবেন তা লিখে দিয়েছেন।

৩৪১৫। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমান যুবায়ী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কিছু সংখ্যক যুদ্ধ বন্দিনী লাভ করেছিলাম। (তাদের সাথে) আমবা আযল করছিলাম। এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের বললেন, অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। (বিনয় প্রকাশ করে বললেন) বস্তুত কিয়ামত পর্যন্ত যত প্রান সৃষ্টি হওয়ার তা সৃষ্টি হবেই।

৩৪১৬। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) মাঁবাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) সুত্রে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (আনাস ইবনু সীরীন) বলেন, আমি তাকে (মাবাদ ইবনু সীরীন) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। তিনি বলেন, এটানা করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, এটা হল তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত।

৩৪১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতীম (রহঃ) শু’বা (রহঃ)-এর সূত্রে আনাস ইবনু (রহঃ) থেকে অনুরুপ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন তবে তাদের হাদীসে রয়েছে- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযল সম্পর্কে বলেছেনঃ এ কাজ না করবে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এটা তাকদীরের অন্তর্গত। রাবী বাহযের বর্ণনায় রয়েছে যে, শু’বা (রহঃ) বলেছেনঃ আমি তাকে (আনাস ইবনু সীরীন) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যা।

৩৪১৮। আবূর রাবী যাহরানী ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এ হল তাকদীরের অন্তভুক্ত। মুহাম্মদ (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উক্তি ‘লা আলাইকুম- তোমাদের কোন ক্ষতি নেই- নিষেধাজ্ঞারই নিকটবর্তী।

৩৪১৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আযল সম্পর্কে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা তা কেন করতে চাও? তারা বলল, এমন লোক আছে যার স্ত্রী সন্তানকে দুধ পান করায় সে তার সঙ্গে সংগত হয়। অথচ এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে পছন্দ করে না। আবার কোন লোকের দাসী আছে, সে তার সঙ্গে সংগত হন কিন্তু এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে অপছন্দ করে। তিনি বললেন, ‘তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তা তাকদীরের উপর নির্ভরশীল। ইবনু আওন (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস হাসান (রহঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, এ হল সতর্কবানী স্বরুপ।

৩৪২০। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) ইবনু আওন (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ সুত্রে ইবরাহিমকে হাদীস বর্ণনা করেছি অর্থাৎ আযল সম্পর্কে। তিনি বলেন, আব্দুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৪২১। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) মাবাদ ইবনু (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে আযল সম্পর্কে কোন আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ এ বলে তিনি বর্ণিত ইবনু আওনের হা দীসের ন্যায় পর্যন্ত বর্ণনা করেন।

৩৪২২। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আযল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উল্লেখ করা হল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কেন এ কাজ করে-তিনি এ ব্যাপারে একথা বলেন নি, ‘তোমাদের কেউ যেন এ কাজ না করে। কোন সৃষ্টি জীব নেই যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেননি।’

৩৪২৩। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেনঃ সব পানিতেই সন্তান পয়দা হয় না। মূলত আল্লাহ যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন তখন কোন কিছুই তাকে বাধা দিতে পারে না।

৩৪২৪। আহমাদ ইবনু মুনযিল বাসরী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৩৪২৫। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমার একটি দাসী আছে যে আমাদের খিদমত ও পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। আমি তার নিকট আসা যাওয়া করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছে করলে তার সাথে আযল করতে পার। তবে তার তাকদীরে সন্তান থাকলে তা তার মাধ্যমে আসবেই। কিছু দিন অতিবাহিত করল তারপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, দাসীটি গর্ভবতী হয়েছে। তিনি বললেন, আমি তোমাকে এ মর্মে জানিয়ে ছিলাম যে, তার তাকদীরে যা আছে তা আসবেই।

৩৪২৬। সাঈদ ইবনু আমর আশ আসী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, আমার একটি দাসী আছে। আমি তার সাথে আযল করে থাকি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ কাজ আল্লাহর ইচ্ছা কিছুতেই প্রতিহত করতে পারে না। রাবী বলেন, এরপর সে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! যে দাসীটির কথা আপনার কাছে উল্লেখ করেছিলাম সে গর্ভবতী হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসুল।’

৩৪২৭। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে এসে সুফিয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেন।

৩৪২৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আযল করতাম আর কুরআনও নাযিল হত। এর উপর ইসহাক আরো বাড়িয়ে বলেছেন যে, সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, এতে যদি নিষেধ করার মতো কিছু থাকত, তরে কুরআন তা নিষেধ করে দিত।

৩৪২৯। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যমানায় আযল করতাম।’

৩৪৩০। আবূ গাসসান মিসমায়ী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যমানায় আযল কর তাম। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলে এ থেকে তিনি নিষেধ করেননি।

৩৪৩১। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা আসন্ন প্রসবা জনৈকা গর্ভবতী দাসীকে তাঁবুর দরজায় আনা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত ঐ ব্যক্তি তার সাথে সংগম করতে চায়। লোকেরা বলল, হ্যা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি মনে করেছি, তাকে এমন লানত দই, যে লানতসহ সে কবরে প্রবেশ করে। কিভাবে সে তাকে দাসীর গর্ভস্হ সন্তানকে ওয়ারিস বানাবে অথচ তা তার জন্য বৈধ নয়? কেমন করে সে তাকে (সন্তানকে) খাদিম বানাবে অথচ সে তার জন্য বৈধ নয়।

৩৪৩২। আবূ বকর ইবনু শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে বর্ণিত।

৩৪৩৩। খালফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জুদামা বিনত ওয়াহাব আসা’দিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, আমি স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সংগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যবাসী লোকেরাও তা করে থাকে, অথচ তাতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। খালফ তার সনদ বর্ণনায় বলেছেন যে, জাদামা আসদিয়া থেকে বর্ণিত। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, বিশুদ্ধ হল জুদামা যা ইয়াইয়া তার বর্ণনায় বলেছেন।

৩৪৩৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) উকাশার ভগ্নি জুদামা বিনত ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে হাযির হলাম। তিনি তখন বলছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী মহিলার সাথে সংগম করা নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এমতাবস্হায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্হার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে, তারা তাদের স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সংগম করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান সন্ততির কোন রুপ ক্ষতি করে না। তারপর লোকেরা তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হল গোপন হত্যা। রাবী উবায়দুল্লাহ তার বর্ণনায় সুত্রে আয়াতটুকুও উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ ‘যখন জীবন্ত সমাধিস্হ কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে’ (৮১—৮- ৯)

৩৪৩৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জুদামা বিনত ওয়াহব আসা’দিয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। (এরপর) সাঈদ ইবনু আবূআয়্যুব (রহঃ) থেকে বর্ণিত আযল ও গিলা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে (গিনার পরিবর্তে) -গিয়াল- উল্লেখ করেন।

৩৪৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে আযল করে থাকি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এ কাজ কেন কর? লোকটি বলল, আমি তার সন্তানের ক্ষতির আশংকা করি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এ কাজ ক্ষতিকর হত তাহলে তা পারস্য ও রোমবাসীদেরকেও ক্ষতিসাধন করতা রাবী যুহায়র তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, এ কাজ (আযল) যদি এ উদ্দেশ্যেই হয় তাহলে তা করা সঠিক নয়। কেননা তা পারস্য ও রোমবাসীদের কোন প্রাকার ক্ষতি করে নি।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: বিবাহ
বিবাহ
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/merriage.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/merriage.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy