কসম

৪১০৮। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা তোমাদের বাপ-দাদাদের নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। উমার (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি যখন থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি, আর তখন থেকে কখনও সে নামে কখনি কসম করিনি। নিজের পক্ষ থেকেও নয় অপরের উদ্বৃতি দিয়েও নয়।

৪১০৯। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) এর এর সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। অবশ্য উকায়ল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বর্নিত আছে যে আমি আর সে নামে কসম করিনি যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। আর ঐ নামের কসমের উচ্চারণও করিনি। তবে তিনি নিজের পক্ষ থেকে এবং অপরের উদ্বৃতি দিয়েও কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪১১০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা উমার (রাঃ) কে তাঁর পিতার নামে শপথ করতে শুনলেন। পরবর্তী অংশ ইউনুস ও মামার (রহঃ)-এর বর্ণনার অনুসারে বর্ণনা করেন।

৪১১১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক কাফেলায় উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে পেলেন। উমার (রাঃ) তখন তার পিতার নামে শপথ করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সন্মোধন করে বললেনঃ সাবধান! আল্লাহ তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করতে তোমাদের নিষেধ করেছেন। সুতরাং যে কেউ কসম খেতে চায়- সে যেন আল্লাহর নামে কসম খায় অথবা সে যেন চুপ থাকে।

৪১১২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না,ইয়াহইয়া, বিশর ইবনু হিলাল, আবূ কুরায়ব, ইবনু আবূ উমার, ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু রাফি (রহঃ) তারা সকলেই ইবনু উমার (রহঃ) থেকে অনুরুপ ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।

৪১১৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শপথ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর নাম ব্যতীত শপথ না করে। কুরায়শরা তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করতো। কাজেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার নামের উপর শপথ করো না।

৪১১৪। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কসম করে এবং সে কসম খেতে গিয়ে বলে, লাতের কসম, সে যেন এর পরপরই বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আর যে ব্যক্তি তার সাথীকে বলে, এসো, তোমার সাথে জুয়া খেলি, সে যেন এর সাথে সাথেই কিছু সাদাকা করে দেয়।

৪১১৫। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। আর মামার (রহঃ) এর হাদীস ইউনূস (রহঃ) এর হাদীসের অনুরুপ। তবে মামার বলেছেনঃ সে যেন কোন কিছু সাদাকা করে দেয়। আর আওযাঈর হাদীসে আছে,। যে লাত ও মানাত- এর শপথ করবে। আবূল হুসায়ন মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ, এ কথাটি অর্থাৎ তার কথা ‘তুমি এসো, তোমার সাথে আমি জুয়া খেলি, তবে সে যেন সাথে সাথে সাদাকা দেয়’ ব্যতীত অন্য কেউই বর্ণনা করেনি। ইমাম মুসলিম (রহঃ) আরো বলেনঃ, যুহরীর নিকট উত্তম সনদের প্রায় নব্বইটি হাদীস আছে, যা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যাতে আর কেঊ শরীক নেহ।

৪১১৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুর রহমশি ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দেবতার নামে ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে কসম করো না।

৪১১৭। খালফ ইবনু হিশাম, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) আবূ মূসা আশ-আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি আশআরী গোত্রের কয়েকজন লোককে নিয়ে সাওয়ারী চাওয়ার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসি তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না! আর আমার কাছে এমন কিছু নেই যাতে আমি তোমাদের সাওয়ার করাতে পারি। আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) বললেন, আমরা অপেক্ষা করলাম, যতক্ষন আল্লাহর ইচ্ছা ছিলা তারপর তার কাছে কিছু উট আসে। তিনি আমাদেরকে তিনটি সা’দ! কূঁজ বিশিষ্ট উট দেওয়ার হুকুম করেন। যখন আমরা (তা নিয়ে) চলে আসি। তখন আমরা বললাম, রাবী বলেনঃ, আমরা অথবা বলেছেনঃ আমাদের একে অপরকে বললেনঃ, এতে আল্লাহ তাআলা আমাদের কল্যাণ করবেন না। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাওয়ারী চাইতে এসেছিলাম। তখন তিনি কসম করেছিলেন যে, আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। এরপর সাওয়ারী আমাদের দিলেন। এরপর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁর কসমের কথা অবগত করালেন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের সাওয়ারী দেইনি; বরং আল্লাহ তোমাদের সাওয়ারী দিয়েছেন। আর আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ আমি যখনই কোন বিষয়ের উপর কসম করি এরপর যদি এর তূলনায় (বিপরীতটিকে) উত্তম মনে করি, তবে আমি আমার কসমের কাফফারা দিয়ে দিব এবং যা উত্তম তাই করবো।

৪১১৮। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমার সাথীরা তাদের জন্য সাওয়ারী চাইতে আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠায়, যখন তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ‘জায়শুল উসরা’, অর্থাৎ তাবুকের যূদ্ধের জন্য সমবেত হয়েছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমার সঙ্গীরা আমাকে আপনার নিকট তাদেরকে সাওয়ারী দেয়ার জন্য পাঠিয়েছে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কোন বাহন দিব না। আর যখন আমি তাবু সঙ্গে সাক্ষাৎ করি তখন তিনি ষ্ক্রোধাবিত ছিলেন, অথচ আমি বুঝতে পারিনি। আমি চিন্তিত মনে ফিরে আসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসম্মতির কারণে এবং এই ভয়ে যে, সম্ভবত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উপর মনে মনে ক্রোধানিত হয়েছেন। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট চলে আসি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেনঃ,-তা তাদের জানাই। অল্পক্ষণের বেশি দেরি করি নাই, হঠাৎ শুনতে পাই যে, বিলাল (রাঃ) ডাক দিচ্ছেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি উত্তর দিলাম। তিনি বললেনঃ, চলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসি, তখন তিনি বললেনঃ এ জোড়া নাও, এ জোড়া নাও এবং এ জোড়া নাও। তিনি উট সম্পর্কে বললেনঃ, যা তিনি তখনই সা’দর কাছ থেকে কিনেছিলেন। এবং এগুলো নিয়ে তোমার সাথীদের কাছে যাও আর বলো যে, আল্লাহ অথবা বলেনঃ, আল্লাহর রাসুল তোমাদের এগুলো বাহনের জন্য দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা এর উপর আরোহণ করো। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ, আমি এগুলি নিয়ে আমার সাথীদের নিকট আসি এবং বলি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তোমাদের বাহন হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ছাড়বো না, যতক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ আমার সাথে সেই ব্যক্তির নিকট না যায়, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শোনেছে, যখন আমি তার নিকট তোমাদের জন্য (বাহন) চেয়েছিলাম এবং তিনি প্রথমবারে নিষেধ করেন এবং পরে আমাকে তা প্রদান করেন। তোমরা ধারণা করোনা যে, আমি তোমাদের এমন কথা বলেছি যা তিনি বলেনঃনি। তারা আমাকে বললেনঃ, আল্লাহর কসম! আপনি আমাদের নিকট অবশ্যই সত্যবাদী। আর আপনি যা চাইছেন তাও আমরা অবশ্যই করবো। তারপর আবূ মূসা (রাঃ) তাদের মধ্য থেকে করেকজনকে সাথে নিযে ঐসব লোকদের নিকটে এলেন যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা এবং তাদের দিতে তার নিষেধাজ্ঞা শুনেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাঁর দেওয়া প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তারা তাদের কাছে হুবহু সেই বর্ণনাই দিলেন যা আবূ মূসা (রাঃ) তাদের কাছে- বর্ণনা করেছিলেন।

৪১১৯। রাবী আতাকী (রহঃ) যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেচী, আমরা আবূ মূসা (রহঃ) এর নিকটে ছিলাম। তাঁর (খানার) দস্তরখান নিয়ে আসতে বললেনঃ। তাতে মুরগীর গোস্ত ছিল। ইত্যবসরে তায়মুলাহ গোত্রের লাল বর্ণের এক লোক উপস্থিত হয়। যে গোলাম বা নও মুসলিম সদৃশ ছিল। আবূ মূসা (রাঃ) তাকে বললেনঃ, এসো। সে ইতস্তত করে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ, এসো। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা খেতে দেখেছি। লোকটি বললো, আমি একে এমন কিছু খেতে দেখেছি যাতে আমার ঘৃণা হয়, তাই আমি কসম – করেছি যে, তা আর খাবো না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেনঃ, এসো, এ ব্যাপারে আমি তোমাকে একটি হাদীস বলছি। আমি একবার আশ আরী গোত্রের কতিপয় লোকের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাওয়ারী চাইতে আসি। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না। আর তোমাদের দেওয়ার মত সাওয়ারীও আমার কাছে নাই। তারপর যতক্ষন আল্লাহর মরযি হয়, আমরা অপেক্ষা করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে কিছু গনীমতের উট আসে। তিনি আমাকে ডেকে পাঠান এবং সাদা কূঁজ বিশিষ্ট পাঁচটি উট আমাদের দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। যখন আমরা চললাম তখন আমাদের একে অন্যকে বললেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার কসম সমন্ধে গাফিল রেখেছি, আমাদের বরকত হবে না। তখন আমরা তার নিকট ফিরে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ!আমরা আপনার নিকট সাওয়ারী চাইতে এসেছিলাম। আর আপনি আমাদেরকে সাওয়ারী না দেয়ার কসম করেছিলেন এবং তারপর আপনি আমাদের সাওয়ারী দিয়ে দিয়েছিলেন। আপনি কি তা ভুলে গেছেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ, আমি যখনই কোন কসম করি, তারপর তার বিপরীতটিকে উত্তম মনে করি তখন আমি উত্তমটই করি এবং কসম থেকে হালাল হয়ে যাই অর্থাৎ কাফফারা আদায় করি। সূতরাং তোমরা যাও, কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সাওয়ারী দান করেছেন।

৪১২০। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ‘জারম’ এর এই গোত্র। এবং আশ আরীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। একবার আমরা আবূ মূসা আশ আরীর নিকটে ছিলাম। তখন তাঁর সামনে খাদ্য উপস্থিত করা হলো, যার মধ্যে মুরগির গোস্তও ছিল। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪১২১। আলী ইবনু হুজর সা’দী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমারঁ ও আবূ বাকুর ইবনু ইসহাক (রহঃ) যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা আবূ মূসার নিকটে ছিলাম। অতঃপর সকলেই হাম্মাদ ইবনু যায়িদের হাদীসের মর্মানূসারে ঘটনা বর্ণনা করেন।

৪১২২। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) যাহদাম জারমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আবূ মূসা (রহঃ) এর নিকট গমন করি। তখন তিনি মুরগির গোশত খাচ্ছিলেন। তিনি হাদীসের পরবর্তী অংশ উক্ত বর্ণনাকারীদের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর কসম! আমি তা ভুলে যাইনি।

৪১২৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সাওয়ারী চাইতে উপস্থিত হই। তিনি বললেনঃ আমার নিকট এমন কিছু- নাই যা তোমাদেরকে সাওয়ারী হিসেবে দিতে পারি। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো মিশ্রিত সাদা কূঁজ বিশিষ্ট তিনটি উট আমাদের নিকট পাঠান। আমরা আলোচনা করলাম যে, সাওয়ারী চাওয়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিলাম। তখন তিনি কসম খেয়েছিলেন যে, তিনি আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। এরপর আমরা তাঁর নিকট গিয়ে তাকে কসমের কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ আমি কোন বিষয়ের উপর কসম করলে তার বিপরীত কাজ যদি উত্তম দেখি তবে সে উত্তমটি করি।

৪১২৪। মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল আঁলা তামীম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা পদাতিক ছিলাম। তাই আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে সাওয়ারী চাইতে এলাম। এরপর জারীরের হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেন।

৪১২৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গভীর রাত পর্যন্ত দেরী করে। এরপর তার গৃহে গিয়ে দেখে যে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী তার খাবার নিয়ে এলে সে সন্তানদের কারণে কসম করলো যে সে খাবে না। পরে তার ভাবান্তর ঘটলো এবং সে খেয়ে নিল। এরপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসে ও তাঁকে উক্ত ঘটনা বলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম খায়, পরে তার বিপরীতটিকে তা থেকে উত্তম মনে করে, সে যেন তা করে ফেলে এবং নিজের কসমের কাফফারা দেয়।

৪১২৬। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে কসম করে, পরে তার বিপরীতটিকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন তার কসমের কাফফারা দেয় এবং ঐ কাজটি করে ফেলে।

৪১২৭। যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের উপর কসম করে, পরে বিপরীতটিকে তার চেয়ে উত্তম মনে করে, তবে সে যেন সেই উত্তম বিষয়কে কার্যে পরিণত করে এবং কসমের কাফফারা আদায় করে।

৪১২৮। কাসিম ইবনু যাকায়িয়া (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ) এর সূত্রে উক্ত সনদে মালিক বর্ণিত হাদীসের মর্মানূরুপ বর্ণনা করেন। তবে এতে আছে, ‘সে যেন তার কসমের কাফফারা দেয় এবং তাই করে যা উত্তম।

৪১২৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) তামীম ইবনু তারফা (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একজন যাঞ্ছাকারী আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) এর নিকট এলো। সে একজন দাসের মূল্য কিংবা দাসের মূল্যের কিছু অংশ সাহায্য করার প্রার্থনা জানায়। তিনি বললেনঃ, একটা বর্ম ও লোহার টূপি ব্যতীত আমার নিকট তোমাকে দেওয়ার মত আর কিছুই নেই। আমি আমার ঘরে লিখে দিচ্ছি যেন তারা এ দুটি তোমাকে দিয়ে দেয়। রাবী বলেনঃ, সে ব্যক্তি এতে রাজি হলো না। আদী এতে ক্রোধাম্বিত হয়ে বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে দিব না। পরে লোকটি রাযি হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ জেনে রাখ, আল্লাহর কসম! আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে না শুনতাম যে, যে ব্যক্তি কোন ব্যাপারে কসম করে, অতঃপর তা অপেক্ষা বেশি আল্লাহর ভয় সম্পন্ন বিষয় দেখে, তবে সে যেন তাকওয়াপূর্ণ বিষয়টই করে, তাহলে আমি আমার কসম প্রত্যাহার করতাম না।

৪১৩০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কসম করে, এরপর তার বিপরীতকে উত্তম মনে কবে, তবে সে যেন উত্তমটই করে, এবং কসম পরিত্যাগ করে।

৪১৩১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু তারিফ বাজালী (রহঃ) আদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ কসম করে, এরপর তার চেয়ে উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন তার কাফফারা আদায় করে এবং তাই যেন করে যা উত্তম।

৪১৩২। মুহাম্মদ ইবনু তারীফ (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উক্ত হাঁদীসের অনুরুপ বলতে শুনেছি।

৪১৩৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তার নিকট এক ব্যক্তি এসে একশ দিরহামের সাওয়াল করে। তিনি বললেনঃ, তুমি আমার নিকট একশ দিরহাম সওয়াল করছ! অথচ আমি হাতিমের বেটা। আল্লাহর কসম! তোমাকে আমি দান করব না। এরপর তিনি বললেনঃ, আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে না শোনতাম যে, যে ব্যক্তি কসম করে, পরে তদপেক্ষা উত্তম কিছু দেখে, তবে সে যেন সেই উত্তমটই পালন করে।

৪১৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার নিকট সাওয়াল করে। এরপর উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন এবং অতিরিক্ত বলেছেনঃ যে, আমার দান থেকে চারশ তোমার জন্য।

৪১৩৫। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদর রহমান ইবনু সামূরাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আব্দুর রহমান ইবনু সামুরাহ! তুমি শাসন ক্ষমতা চেয়ো না। কারণ, যদি তোমাকে চাওয়ার কারণে তা দেওয়া হয়, তবে তার দায়িত্ব, তোমার উপর বর্তাবে। আর চাওয়া ব্যতীত তোমাকে তা অর্পণ করা হলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর যখন তুমি কোন কাজের উপর কসম কর; তারপর তার বিপরীত কাজকে তুমি উত্তম মনে কর, তবে তুমি তোমার কসমের কাফফারা আদায় কর এবং যা উত্তম তা পালন কর। আবূ আহমাদ আল জানদী জারীর ইবনু হাযিম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

৪১৩৬। আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ কামিল জাহদারী, ওয়াবদুল্লাহ ইবনু মুয়ায ও উকবা ইবনু মুকাররম আম্মী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে মুতামির তাঁর পিতা সূত্রে বর্ণিত হাদীসে শাসন ক্ষমতার, (ইমারাত) কথা উল্লেখ নেই।

৪১৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মোমার কসম ঐ উদ্দেশ্যের উপর ধরা হবে, যে উদ্দেশ্যের ওপর তোমার কসম গ্রহণকারী তোমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। আমর বলেনঃ এ ভাবে যে, তোমার কসম গ্রহণকারী যে উদ্দেশ্যে তোমাকে সত্যবাদী বিশ্বাস করে।

৪১৩৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসম গ্রহীতার নিয়্যাতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪১৩৯। আবূ রাবী আতাকী ও আবূ কামিল জাহদারী ও ফোযায়েল ইবনু হুসাইন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুলায়মান (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ষাটজন সহধর্মিনা ছিলো। একদা তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি অদ্যর রজনীতে সকল স্ত্রীর কাছেই গমন করবো। অর্থাৎ সহবাস করবো। অতএব, প্রত্যেকেই গর্ভবতী হবে এবং প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা (ভবিষ্যতে) আল্লাহর পথে অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করবে। কিন্তু পরিশেষে একজনস্ত্রী ব্যতীত আর কেউই গর্ভবতী হননি। এরপর তিনি অর্দ্ব মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) একটি সন্তান প্রসব করলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করতেন, যারা প্রত্যেকেই অশ্বারোহী সৈনিক হিসেবে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতেন।

৪১৪০। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে একদা আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুলায়মান ইবনু দাঊদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেনঃ অবশ্যই আমি আজ রাত সত্তরজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যেকের এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা ভবিষ্যতে আল্লা হর পথে যূদ্ধ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী অথবা কোন ফিরিশতা তাঁকে বললেনঃ যে, আপনি ইনশা আল্লাহ বলুন! কিন্তু তিনি তা ভুলে যাওয়ার কারণে তা বলেননি। অতএব, তাঁর ন্ত্রীদের, মধ্য হতে একজন ব্যতীত অন্য কেউ সন্তান প্রসব করেননি। আর তিনি যে সন্তানটি প্রসব করলেন, তাও আবার অপূর্ণাঙ্গ। রাসুসুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেনঃ যদি তিনি ইনশা আল্লাহ বলতেন, তবে তিনি শপথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর তিনি তখন স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনে সফলকাম হতেন।

৪১৪১। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরাররা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৪২। আবদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সুলায়মান ইবনু দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি অদ্য রজনীতে সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাব। এতে তাদের প্রত্যেকেই এমন সব সন্তান প্রসব করবে যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। তখন তাকে বলা হল যে, আপনি ইনশা আল্লাহ- বলুন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। এরপর তিনি তাদের সাথে সহবাস করলেন। কিন্তু তাদের মধ্য হতে কেবলমাত্র একজন স্ত্রীর একটি অর্ধ মানবাকৃতির (অপূর্ণাঙ্গ) সন্তান প্রসব করা ব্যতীত আর কোন স্ত্রী কোন সন্তান প্রসব করেননি। রাবী বলেনঃ যে, এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ- বলতেন, তবে তিনি পথ ভঙ্গকারী হতেন না। আর উদ্দেশ্য পূরণে তিনি সফলকাম হতেন।

৪১৪৩। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা সূলায়মান ইবনু দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি অদ্য রজনীতে নব্বইজন স্ত্রীর প্রত্যেকের কাছে যাবো। এতে তারা অশ্বারোহী সৈনিক হওয়ার যোগ্যতা সস্পন্ন এমন সন্তান প্রসব করবে যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। তখন তাঁর কোন সাথী তাঁকে বললেনঃ, আপনি ইনশা আল্লাহ- বলুন। কিন্তু তিনি ইনশা আল্লাহ বলেননি। এরপর তিনি সকল স্ত্রীর সঙ্গেই সহবাস করলেন। কিন্তু মাত্র একজন স্ত্রী ব্যতীত আর কোন স্ত্রী গর্ভবতী হলেন না। তিনি যে সন্তানটি প্রসব করলেন তাও ছিল অপূর্ণাঙ্গ। সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন, যদি তিনি তখন ইনশা আল্লাহ- বলতেন, (তবে তারা সকলেই এমন সব যোগ্যতা সম্পন্ন অশ্বারোহী সৈনিক সন্তান জন্ম দিতেন) যারা-সকলেই (ভবিষ্যতে) অশ্বারোহী সৈনিক হয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতো।

৪১৪৪। সোওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি কিছু শাব্দিক পরিবর্তন করে বলেছেনঃ যে- প্রত্যেক স্ত্রী এমন সব সন্তান প্রসব করবে, যারা ভবিষ্যতে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে।

৪১৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর কসম তোমাদের কারো স্বীয় পরিবারের সাথে (কোন বিষইয়ে) আল্লাহর নামে কসম করে এটা পূনরাবৃত্তি করা বা এর উপর স্থির থাকা অধীক গুনাহের কারণ বলে বিবেচিত হবে। কসম করে আল্লাহর কতৃকি নির্ধারিত (শপথ ভঙ্গের) কাফফারা আদায় করার তুলনায়।

৪১৪৬। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দামী মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি (ইসলামপূর্ব) জাহেলিয়াতের যুগে মাসজিদুল হারামে এক রাত ‘ইতিকাফ’ করার মানত করেছিলাম। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর।

৪১৪৭। আবূ সাঈদ আশাজ্জ, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু আলা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) সকলেই উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করে বলেনঃ যে, তাঁদের মধ্য হতে হাফস (রাঃ) . উমর (রাঃ) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আবূ উমামা এবং সাকিফী (রাঃ) উভয়ের বর্ণিত হাদীসে (এক রাত্রির ইতিকাফের) কথা উল্লেখ আছে। আর শুবা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসে (তিনি তাঁর উপর একদিনের ইতিকাফ করা স্হির করে নিয়েছিলেন)। উল্লেখিত হাফন (রাঃ)-এর বর্নিত হাদীসে একদিন এবং এক রাত্রির কথা উল্লেখ নেই।

৪১৪৮। আবূ তাহির (রহঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর জইররানা নামক স্থানে অবস্থান কালে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি অজ্ঞতার যুগে মাসজিদুল হারামে একদিন ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? তখন তিনি বললেনঃ যাও এবং একদিন ইতিকাফ করে নাও। বর্ণণাকারী বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের (গনীমতের) এক-পঞ্চমাংশ থেকে একটি দাসী প্রদান করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধ বন্দিদের মুক্ত করে দেন- তখন উমার(রাঃ) তাদের কলরব শুনতে পান। তারা বলাবলি করছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। উমর (রাঃ) (পুত্র আবদুল্লাহ) (রাঃ)- কে বললেন, ব্যাপার কি? তখন তারা বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ বন্দীদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে আবদুল্লাহ! ঐ দাসীটির কাছে যাও এবং তাকে মুক্ত করে দাও।

৪১৪৯। আব্বাদ ইবনু হুমাইদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এলেন-তখন উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর জাহেলী যুগের একদিনের ইতিকাফ করার মানত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর জারীর ইবনু হামিম (রাঃ)-এর হাদীসের মর্মানুরুপ হাদীসটি উল্লেখ করেন।

৪১৫০। আহমাদ ইবনু আবদাতূদ্দাবী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ ইবনু উমার (রাঃ) এর নিকট জি’ইররানা থেকে প্রত্যবর্তনের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উমরা, করার কথা উল্লেখ করা হল। তখন সেখান থেকে তিনি উমরা করেননি। বর্ণনাকারী বলেনযে উমর (রাঃ) জাহেলী যুগে একরাত্রি ইতিকাফ করার মানত করেছিলেন। এরপর জায়ীর ইবনু হাযিম ও মামার সূত্রে আইউব থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৪১৫১। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী ইয়াহইয়া ইবনু খালাফ (রহঃ) উভয়েই নাফি (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মানত স্পম্পর্কে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর উভয়ের বর্ণিত হাদীসে সকলেই (একদিনের ইতিকাফ) কথাটি বর্ননা করেছেন।

৪১৫২। আবূ কামিল ফূযাইল ইবনু হুসাইন জাহদারী (রহঃ) আবূ উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি একদা ইবনু উমার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে দেখি যে, তিনি একজন ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়েছেন বা বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, তিনি মাটি থেকে একটি কাঠিঁ অথবা অন্য কোন বস্তু ধারণ করে বললেনঃ, তাকে আযাদ করার মধ্যে তার সমতূল্য পুণ্যও নেই। কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আপন ক্রীতদাসকে চপেটাঘাত করল অথবা প্রহার করল, এর কাফফারা হল তাকে আযাদ করে দেয়া।

৪১৫৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) যাযান (রহঃ) থেকে-বর্ণিত যে, ইবনু উমার (রাঃ) তার এক গোলামকে ডাকালেন। এরপর তার পৃষ্ঠদেশে (প্রহারের) দাগ দেখতে পেলেন। তিনি তাকে বললেনঃ তুমি কি এতে ব্যথা অনুভব করছ? সে বলল না। তখন তিনি বললেন, তুমি মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি মাটি থেকে কোন বস্তু ধারণ করে বললেন, তাকে আযাদ করার মধ্যে এতটুকু পুণ্যও মেলেনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি আপন গোলামকে বিনা অপরাধে প্রহার করস কিংবা চপেটাঘাত করল, এর কাফফারা হল তাকে মূক্ত করে দেয়া।

৪১৫৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উভয়ই সুফায়ান (রহঃ) এর সূত্রে ইবনু মাহদী (রহঃ)- এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন যে, এতে (বিনা অপরাধে) কথাটি উল্লেখ আছে। আর ওয়াকী (রহঃ) কতৃক বর্ণিত হাদীসে (যে ব্যক্তি তার গোলামকে চপটাঘাত করল) বাক্যটির উল্লেখ আছে। তিনি তাঁর হাদীসে (অপরাধের শাস্তি) কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪১৫৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নূমাইর (রহঃ) মুয়াবিয়া ইবনু সোওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে একদা আমি আমাদের এক গোলামকে চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি পলায়ন করলাম এবং যোহরের সালাতের পূর্বক্ষণে ফিরে এলাম। আমি আমার পিতার পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি তাকে এবং আমাকে ডাকালেন। গোলামকে বললেনঃ, তুমি তার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কর। পরিশেষে সে ক্ষমা করে দিল। এরপর তিনি বললেনঃ, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়কালে বনী মূকাররেন পৌত্রের অন্তভুক্ত ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি গোলাম ছিল। একদা আমাদের কোন একজন তাকে চপেটাঘাত করল এবং এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌছল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে মুক্ত করে দাও। তারা বলল, সে ব্যতীত আমাদের অন্য কোন গোলাম নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা তার কাছ হতে সেবা গ্রহণ করতে থাক, যখনই তোমরা তার থেকে মূখাপেক্ষীহীন হবে তখনই তোমরা তাকে মূক্ত করে দিবে।

৪১৫৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, এক বৃদ্ধ তার চাকরকে তড়িঘড়ি করে চপোটাঘাত করল। সুওয়ায়েদ ইবনু মুকাররেন (রহঃ) তাকে বললেনঃ, আপনি প্রহারে অক্ষম হলেও আপনার রাগ কাজ করেছে। আপনি আমাকে বনী মুকাররেন গোত্রের সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সপ্তম লোক হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত অন্য কোন গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে আযাদ করে দিতে।

৪১৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমরা নোমান ইবনু মুকাররিন (রহঃ) এর ভাই সোওয়াইদ ইবনু মুকাররেন (রহঃ) এর বাড়িতে কাপড় বিক্রি করছিলাম। এমন সময় একজন দাসী বেরিয়ে এসে আমাদের একজন লোকের সাথে তর্ক করল। তখন সে তাকে একটি চপোটাঘাত মারল। এতে সোওয়াইদ (রাঃ) বাগান্বিত হলেন। তখন ইবনু ইদ্রীস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪১৫৮। আব্দুল ওয়ারেস ইবনু আব্দুল সামাদ (রহঃ) সোওয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার একজন দাসী ছিল। জনৈক ব্যক্তি একদা তাকে এক চপোটাঘাত মারল। তখন সোয়াইদ (রাঃ) তাকে বললেনঃ, তুমি কি জাননা যে, চেহারায় চপোটাঘাত করা নিষিদ্ধ? সে তখন বলল, নিশ্চয়ই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ যে, আমি আমার সাত ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থাকি। আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত আর কোন গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকরে এক ব্যক্তি! তাকে চপোটাঘাত করল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য।

৪১৫৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদার (রাঃ) এরপর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? অতঃপর আবদূস সামাদ (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪১৬০। আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) আবূ মাসউদ বাদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদ! আমি আমার এক ক্রীতদাসকে বেত্রাঘাত করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছনে থেকে একটি শব্দ শুনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো! রাগের কারণে শব্দটি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না! বর্ণনাকারী বলেনঃ, যখন তিনি আমার নিকটে এলেন-হঠাৎ দেখতে পেলাম, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তিনি বলছেনঃ হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো, হে আবূ মাসঊদ! তুমি জেনে রেখো! বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর আমি বেতটি আমার হাত থেকে ফেলে দিলাম। এরপর বললেনঃ, হে আবূ মাসউদ! তুমি জেনে রেখো যে, এই দাসের উপর তোমার ক্ষমতার চেয়ে তোমার উপর আল্লাহ তাআলা অধিক ক্ষমতাবান। বর্ননাকারী বলেনঃ, আমি বললাম, এরপর কখনও কোন কৃতদাসকে আমি প্রহার করবো না।

৪১৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সকলেই আ’মাশ (রহঃ) সূত্রে আব্দুল ওয়াহেদ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীসে (তাঁর ভয়ে আমার হাত থেকে বেতটি পড়ে গেল) এই বাক্যটি অতিরিক্ত সংযোজিত হয়েছে।

৪১৬২। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুু-আলা (রহঃ) আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। হঠাৎ আমার পিছন দিক থেকে একটি শব্দ শুনলাম, হে আবূ মাসউদ! জেনে রেখো, তুমি তার ওপর যেরুপ ক্ষমতাবান, আল্লাহ তা’আলা তোমার ওপর এর চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। হঠাৎ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে আল্লাহর ওয়াস্তে আযাদ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাবধান! যদি তুমি তা না করতে তাহলে অবশ্যই দোযখ তোমাকে গ্রাস করতো। কিংবা (রাবীর সন্দেহ) দোযখ তোমাকে অবশ্যই-স্পর্শ করতো।

৪১৬৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রাঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদা তার গোলামকে প্রহার করছিলেন। তখন সে বলতে লাগলো আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তখনও তিনি তাকে প্রহার করছিলেন। এরপর সে বলল, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাই। তখন তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর শপথ! তুমি তার উপর যতটুকু ক্ষমতাবান, আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর তার চেয়ে অধিক ক্ষমতাবান। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি তাকে মুক্ত করেছেন।

৪১৬৪। বিশর ইবনু খালিদ উক্ত হাদীসটি শুবা (রহঃ) থেকে এই একই সুত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই, আমি আল্লাহর রাসূলের কাছে সাহায্য চাই) এই বাক্যটির উল্লেখ করেননি।

৪১৬৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আপন গোলামকে ব্যাভিচারের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করল, কিয়ামত দিবসে তার ওপর এই মিথ্যা অভিযোগের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু সে যদি সত্যই অপরাধী হয় (তবে অভিযোগীকারী আর শাস্তি পাবে না)।

৪১৬৬। আবূ কুরায়ব যুহায়র ইবনু হারব (রাঃ) উভয়ে ফূযায়ল ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) থেকে একই সুত্রে বর্ণনা করেছেন।। আর তাদের উভয়ের হাদীসে (তাওবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একথা বলতে শুনেছি) এর উল্লেখ আছে।

৪১৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মারুর ইবনু সোওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমার ‘রাবাযাহ’ নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ) এর নিকট দিয়ে গমন করছিলাম। তখন তার গায়ে একটি চাঁদর ছিল এবং তাঁর গোলামের ওপরও অনুরুপ একটি চাঁদর ছিল। তখন আমরা বললাম, হে আবূ যার (রাঃ)! যদি আপনি উভয়টি একত্রিত করতেন, তাহলে দুটি চাঁদর হতো। তিনি বললেনঃ, আমার মধ্যে এবং আমার ভাই সম্পর্কীয় ব্যক্তিটির মধ্যে কিছু কথা আছে। তার মা অনারব। একদা আমি তার মাকে উল্লেখ করে তাকে তিরস্কার করলাম। তখন সে আমার বিরুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নালিশ করল। এরপর যখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম-তখন তিনি বললেনঃ, হে আবূ যার! তুমি এমন ব্যক্তি, যারমধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে ব্যক্তি মানুষদেরকে গালি দেয় তার প্রতি উত্তরে তা-রাও তার পিতা মাতাকে উল্লেখ করে গালি দেয়া স্বাভাবিক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ যার! তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড এখনও বিদ্যমান। তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্হ করেছেন। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যেমন পোশাক পরবে তাদেরকেও তা পরারে। তোমরা তাদের উপর এমন কোন কাজের ভার চাপিয়ে দিবেনা, যা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। যদি তোমরা তাদেরকে কোন কাজে কষ্ট দাও, তাহলে একাজে তাদের সাহায্যও করো।

৪১৬৮। আহমাদ ইবনু ইউনূস, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সকলেই আ’মাশ (রহঃ) থেকে এই একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তিনি যুহায়র ও আবূ মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হাদীসে তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান” এই কথার পর কিছু অতিরিক্ত সংযোগ করেছেন। তিনি বলেনঃ, আমি বললাম, তা কি আমার বৃদ্ধ বয়সে হবে? তিনি বলেনঃ, হ্যা। আর আবূ মুয়াবিয়ার বর্ণনায় আছে-হ্যা, তোমার বৃদ্ধ বয়সের সময়ে। আর ঈসা (রহঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যদি তুমি তাকে সাধ্যাতীত কোন কর্ম করতে দাও, যা সে করতে অক্ষম, তবে তাকে বিক্রি করে দাও। আর যুহায়র (রহঃ) এর হাদীসে আছে “অতএব-, তুমি তাকে তখন সাহায্যও করবে”। আবূ মুয়াবিয়ার (রাঃ) হাদীসে “তুমি তাকে বিক্রি করে দাও” অথবা “সাহায্য কর” কোন কথার উল্লেখ নেই। তুমি তাকে এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না, যা করতে সে অক্ষম” একথা দ্বারাই হাদীস শেষ করা হয়েছে।

৪১৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মারুর ইবনু সোওয়াইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আমি আবূ যার (রাঃ) কে দেখতে পেলাম যে, তাঁর গায়ে একটি চাঁদর এবং তাঁর গোলামের গায়েও অনুরুপ একটি চাঁদর রয়েছে। তখন আমি এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় এক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিল। তখন সে ব্যক্তি তার মাকে উল্লেখ করে গালি দিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তাঁর কাছে ঐ ঘটনা বর্ণনা করলো, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীমবললেনঃ নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে অজ্ঞতা যুগের কর্মকাণ্ড বিদ্যমান। তারা তোমাদের ভাই, তোমাদের গোলাম। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্হ করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির অধীনে তার কোন ভাই থাকে তার উচিত তাকে এমন খাদ্য দেওয়া যা সে নিজে খায় এবং এমন পরিচ্ছদ দেওয়া যা সে নিজে পরিধান করে। আর তোমরা তাদের উপর এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না যা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়। আর, যদি তোমরা তাদেরকে সাধ্যতীত কাজ দাও তবে তোমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতাও করো।

৪১৭০। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ কৃতদাসের জন্যে খানা-পিনা ও পোশাক-পরিচ্ছেদের ব্যবস্হা করা মনিবের কর্তব্য। তার সাধ্যাতীত কোন কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেয়া যাবে না।

৪১৭১। কা’নাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন গোলাম খাবার রান্না করে তার মনিবের কাছে নিয়ে আসে এমন খাবার যার তাপ ও শোয়া সে সহ্য করেছে, তখন তার উচিত হবে তাকে কাছে বসিয়ে তা থেকে কিছু খাবার প্রদান করা। আর যদি খাবারের পরিমাণ অতি অল্প হয়, তবে সে যেন তার হাতে অন্তত এক-গ্নাস অথবা দুগ্লাস খাবার প্রদান করে। বর্ণনাকারী দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ যে,’য়ুকলাতান আও য়ুকুলাতাইন’ এর অর্থ ‘লুকমা ও লিকমাতাইন’–এক রকমা অথবা দু-লুকমা।

৪১৭২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন গোলাম যখন আন্তরিকতার সাথে তার মনিবের কাজ করে (মনিবের কল্যাণ কামনা করে)এবং আল্লাহ্‌র ইবাদতেও উত্তমরূপে সমাধা করে- তখন তার জন্য পুরস্কার দুই গুণ।

৪১৭৩। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর আবূ শায়বা ও হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিক (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৭৪। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৎ গোলামের জন্যে দুটি পূরস্কার রয়েছে। সেই মহান আল্লাহর শপথ। যার হাতে আবূ হুরায়রার জীবন, যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করা, হজ্জ করা এবং আমার মায়ের সেবা করা অধিক পূণ্যের বিষয় না হতো, তবে গোলাম অবস্হায় মৃত্যু বরণকেই আমি অধিক পছন্দ করতাম। বর্ণনাকারী বলেনঃ, আমরা জানতে পারলাম যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) হজ্জে গমন করেননি তাঁর মায়ের মৃত্যুর আগে। কেননা, তিনি সর্বদা তাঁর সাহচর্যে থেকে সেবা করতেন। বর্ননাকারী আবূ তাহের তাঁর বর্ণিত হাদীসে “(সৎ গোলামের জন্যে) কথাটির উল্লেখ করেছেন। কিন্তু (ক্রীতদাস) শব্দটি তিনি উল্লেখ করেননি।

৪১৭৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (আমাদের কাছে সংবাদ পৌছছে থেকে নিয়ে এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি)

৪১৭৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গোলাম আল্লাহর হক এবং তার মনিবের হক আদায় করল, তার জন্য দুটি পূরস্কার রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, আমি হাদীসটি কা’ব (রাঃ) নিকট বর্ণনা করলাম তখন কা’ব (রাঃ) বললেনঃ, কিয়ামত দিবসে তার ওপর কোন হিসাব নেই এবং ঐ মুমিনের ওপরও কোন হিসাব নেই যার সম্পদ কম। উপরোক্ত হাদীস যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪১৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ গোলামের জন্য কতইনা উত্তম পূরস্কার রয়েছে, যে উত্তমরুপে ইবাদত করে মৃত্যু বরণ করেছে এবং আপন মনিবের উত্তম সেবা করেছে, তার জন্য কতইনা উত্তম প্রতিদান রয়েছে।

৪১৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কয়েক শরীকের মালিকানাধীণ কোন-গোলামের নিজ অংশ যে ব্যক্তি আযাদ করে দিল আর তার কাছে এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যা দ্বারা সে ঐ গোলামের সম্পূর্ন মূল্য ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিশোধ করতে সক্ষম তখন সে যেন অন্যন্য অংশীদারদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করে দেয় এবং নিজ দায়িত্বে তাকে সম্পূর্ণভাবে আযাদ করে দেয়। অন্যথায় সে যে অংশ আযাদ করল, তাই শুধূ আযাদ হবে।

৪১৭৯। ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন গোলামের (মালিকানা হবে তার) নিজ অংশ আযাদ করে দিল, তা কর্তব্য হবে সম্পূর্ণ গোলাম আযাদ করে দেয়া, যদি তার কাছে সম্পূর্ণ গোলামের মূল্য পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান থাকে। আর যদি তার সম্পদ বিদ্যমান না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল, তাই (শুধু) আযাদ হবে।

৪১৮০। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করে দেয় এবং তার কাছে গোলামের সম্পূর্ণ মূল্যের পরিমাণ সম্পদও থাকে তখন ন্যায়সঙ্গতভাবে গোলামও মূল্য নিরূপণ করা হবে এবং সকলের পাওনা পরিশোধ করে তাকে সম্পূর্ণ আযাদ করে দেবে। অন্যথা সে যে অংশ আযাদ করল তাই (শুধু) আযাদ হবে।

৪১৮১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহামদ ইবনু রুহম, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না, আবূ রাবী-, আবূ কামিল, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসুর, মুহাম্মদ ইবনু রাফি, হারুন ইবনু সাঈদ আইলী (রহঃ) সকলেই ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাদের বর্ণিত হাদীসে (আর যদি তার কাছে প্রচুর সম্পদ বিদ্যমান না থাকে, তবে সে যে অংশ আযাদ করল তাই শুধূ আযাদ হবে) এইরুপ বাক্যের উল্লেখ করেছেন। আর তারা এ-কথাও বলেছেন যে, আমরা জানিনা যে, প্রকৃতপক্ষেই এই শব্দগুলো হাদীসের অন্তভুক্ত না বর্ননাকারী নাফি (রহঃ) নিজের পক্ষ হতেই এই গুলো বলেছেন। উল্লিখিত বর্ণনাকারীদের কারো বর্ণনায় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলতে শুনিনি একমাত্র লাইস ইবনু সা’দ এর হাদীস ব্যতিত।

৪১৮২। আমর আন- নাকিদ ও ইবনু আবী উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশীদারিত্ব আছে, তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে কমবেশি করা ব্যতীত তার মূল্য নিরূপণ করা হবে। এরপর তার সম্পদ হতে তাকে মুক্ত করে দেয়া উচিত, যদি সে সচ্ছল হয়।

৪১৮৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথভাবে ক্রয় করা কোন গোলামের নিজ অংশ আযাদ করল, বাকী অংশটূকু তার সম্পদ থেকে আযাদ করে দেয়া কর্তব্য, যদি তার এমন সস্পদ থাকে যদ্বারা গোলামের মূল্য পরিশাধ করা যায়।

৪১৮৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উভয়েই আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ দু-ব্যক্তির অংশীদারিত্বে কোন গোলামের একজন মালিক যদি তার অংশ আযাদ করে দেয়, তবে সে (অপরের অংশের) যামিন হবে।

৪১৮৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সূত্রে হাদীসটি একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, যদি কেউ কোন গোলামের এক অংশ আযাদ করল, সে স্বাধীন হবে তার মাল থেকেই। (অর্থাৎ নিজ দায়িত্বে স্বীয় সম্পদ দ্বারা তাকে সম্পূর্ণ আজাদ করে দেয়া তার কর্তব্য)।

৪১৮৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর ঈসা (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে -এরপর যে অংশ আযাদ হয়নি সে অংশ আযাদ করানোর চেষ্টা করবে, কিন্তু তার উপর কোন কঠোরতা আরোপ করা যাবে- না বর্ণিত রয়েছে।

৪১৮৮। আলী ইবনু হুজর সা’দী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে নিজের ছয়জন গোলামকে আযাদ করল অথচ তারা ব্যতীত তার আর কোন সম্পদও হিল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকালেন এবং তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করলেন। তারপর তাদের মাঝে লটারী করে দু-জনকে সম্পৃর্ণভাবে আযাদ করলেন এবং বাকী চারজনকে গোলাম বানিয়ে রাখলেন। আর তার প্রতি (মুতের প্রতি) কঠোর ভাষা প্রয়োগ করলেন।

৪১৮৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর হাম্মাদ (রহঃ) – এর বর্ণিত হাদীসটি ইবনু উলাইয়া (রহঃ) – এর হাদীসের অনুরূপ। আর সাকাফী (রহঃ) -এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, “আনসারী এক লোক তাঁর মৃত্যুকালে ওয়াসিয়াত করলেন এবং (সে ওয়াসিয়াত) তাঁর ছয়জন গোলামকে আযাদ করলেন”।

৪১৯০। মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল দারীর ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) উভয়ে ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) সূত্রে নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু উলাইয়া (রহঃ) ও হাম্মাদ (রহঃ)- এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৪১৯১। আবূ রাবী সূলায়মান ইবনু দাউদ আতাকী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আনসারী একজন লোক তাঁর গোলামকে এইশর্তে আযাদ করল যে, তুমি আমার মৃত্যুর পর স্বাধীন। সে গৌলাম ব্যতিত তার আর কোন সম্পদও ছিলনা। এই সংবাদ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছল। তখন তিনি বললেনঃ কে আছ যে, তাকে আমার নিকট হতে ক্রয় করবে। তখন নূয়াঈম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আটশ” দিরহামের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ অর্থ আনসারীকে দিয়েছিলেন। আমর (রহঃ) বলেনঃ, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে (রাঃ) বলতে শুনেছি যে, সে ছিল একজন কিবতী গোলাম। সে (আবদুল্লাহ ইবনু যুবাহার (রাঃ) এর খিলাফতের) প্রথম বছর মৃত্যুবরণ করেছে।

৪১৯২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, আনসারী এক লোক তার গোলামকে এই বলে আযাদ করল যে, আমার মৃত্যুর পর তুমি স্বাধীন। কিন্তু সে গোলাম ব্যতীত তার আর কোন সম্পদ ছিস না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিক্রি করেছেন। জাবির (রাঃ) বলেনঃ যে, ইবনু নাহহাম (রাঃ) তাকে ক্রয় করলো। সে ছিল একজন কিবতি গোলাম। ইবনু যুবায়র (রা-) এর খিলাফত কালের প্রথম বছর সে ইন্তেকাল করে।

৪১৯৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে “মুদাব্বার” সম্পর্কে হাম্মাদ (রহঃ) কতৃক আমর ইবনু দ্বীনারের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪১৯৪। কুতায়বা, আবদুল্লাহ ইবনু হাশেম ও আবূ গাসসান মিসমাঈ (রহঃ) সকলই-নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাম্মাদ (রহঃ) এবং ইবনু উয়ায়না (রাঃ) কর্তৃক আমর (রাঃ) ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪১৯৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইয়াহইয়া এবং রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভযেই বলেছেনঃ, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল মুহাসিয়া ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) ও ইবনু যায়িদ (রাঃ) বাড়ী থেকে বের হয়ে খায়বার পর্যন্ত এলেন। এরপর সেখান থেকে উভয়েই পৃথক হয়ে গেলন। তারপর হঠাৎ মুহায়্যিাসা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সাহলকে একস্থানে নিহত অবস্হায় পেলেন। তখন তিনি তাঁকে দাফন করলেন। এরপর তিনি এবং হুওয়ায়্যসা ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান ইবনু সাহল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করলেন। আর তিনি হিলেন দলের সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি। আবদুর রহমান (রাঃ) তার উভয় সাথীর অগ্রে কথা বলার জন্য অগ্রসর হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সেই কথা বলার জন্য এগিয়ে এসো। সূতরাং তিনি চুপ করে গেলেন এবং তার সঙ্গীদ্বয় কথা বললেনঃ আর তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের দুজনের সাথে কথা বললেনঃ। তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ)-এর নিহত হবার সম্পর্কে আলোচনা করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা কি এ ব্যাপারে পঞ্চাশবার হলফ (শপখ) করতে পারবে তা হলে তোমরা তোমাদের সঙ্গী অথবা নিহত ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকার (কিসাস অথবা দিয়্যাত) দাবী করতে পারবে। প্রতি উত্তরে তারা বলল, আমরা কিভাবে এ ব্যাপারে হলফ (শপথ) করবো আমরাতো সেখানে তখন উপস্থিত ছিলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তা-হলে ইয়াহুদীরা পঞ্চাশবার হলফ করে তোমাদের দাবী নাকচ করে দিবে। তাঁরা তখন বলল, আমরা কিভাবে কাফির সম্প্রদায়ের হলফ গ্রহণ করে নেব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ অবস্থা অবলোকন করলেন, তখন তার দিয়্যাত” দিলেন।

৪১৯৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার কাওয়ারিরী (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা এবং রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) উভয়েই খায়বারের দিকে গমন করলেন। তালা সেখানের এক খেজুর বাগানের নিকট থেকে পৃথক হয়ে গেলন। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) তথায় নিহত হলেন। (এই খুনের জন্য) তারা ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে অভিযূক্ত করলেন। এরপর তার ভাই আবদূর রহমান এবং চাচাত ভাই হুওয়ায়্যিসা ও মুহায়্যিনা (রাঃ), নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আগমন করলেন। আবদূর রহমান (রাঃ) তার ভাই এর ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। আর তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়োজেষ্ঠকে সম্মান দাও। অথবা বললেনঃ, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরই কথা শুরু করা উচিত। তখন তাঁরা দুজনে তাদের সাথীদের ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের কোন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে আমাদের মধ্য থেকে কাউকে পঞ্চাশ বার হলফ করে বলতে হবে, তাহলে তার দিয়্যাত প্রদান করা হবে। তখন তারা বলল, ব্যাপারটি এমন যে, আমরা তথায় তখন উপস্থিত ছিলাম না। এমতবস্হায় আমরা কিকরে হলফ করে বলবো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে হয় ইহুদিদের মধ্য থেকে কেউ পঞ্চাশ বার হলফ করে তোমাদর খুনের দাবী নাকোচ করে দেবে। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাতো কাফির সম্প্রদায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহতের দিয়্যাত আদায় কতে দিলেন। সাহল কলেন, এরপর একদা আমি তাদের উটরাখার স্থানে প্রবেশ করলাম। তখন ঐ উটের মধ্য হতে একটি উটনী আমাকে তার পা দ্বারা লাথি মারল। হাম্মাদ (রহঃ) এই হাদীস-বর্ণনা করেছেন- অথবা এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪১৯৭। আল-কাওয়ারিরী (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। আর তিনি (তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- হতে তাঁর নিজের পক্ষ হতে দিয়্যাত আদায় করে দেন) এই কথা বলেছেন বলেন। কিন্তু তাঁর বর্ণিত হাদীসে উটনী আমাকে লাথি মারল) একথা বলেননি।

৪১৯৮। আমর আন নাকিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে তাঁদের অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেন।

৪১৯৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) বুশায়র ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বনূ হারিসা গোত্রের আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ইবনু যায়িদ আনসারী ও মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ আনসারী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে খায়বারে গমন করেন। সেখানকার অধিবাসী ছিল ইয়াহুদী সরদায়। (তখন ইয়াহুদী ও মুসলমানদের) চুক্তি বলবৎ ছিল। কোন প্রয়োজনের তাকিদে তারা তখন সেখান থেকে উভয়েই পৃথক হয়ে গেলেন। এরপর আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) নিহত হলেন। তাকে একটি হাউযের মধ্যে নিহত অবস্হায় পাওয়া গেল। তখন তাঁরসাথী তাকে দাফন করলেন। এরপর তিনি মদিনায় ফিরে এলেন। নিহত ব্যক্তির ভাই আবদুর রহমান ইবনু সাহল, মুহায়্যিসা ও হুওয়ায়্যিনা (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর মৃত্যুর ঘটনা এবং যে স্থানে নিহত হন সবই বর্ণনা করলেন। বুশাইর (রাঃ) ধারণা করেছেন যে, তিনি এমন ব্যক্তির নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গ লাভ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা এ ব্যাপারে পঞ্চাশবার হলফ করে বলবে, তাহলে তোমরা তোমাদের নিহত ব্যক্তির অথবা তোমাদের সাথীর দিয়্যাতের (খুনের জরিমানা) হকদার হবে। তারা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো তখন সেখানে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না এবং উপস্থিতও ছিলাম না। তিনি ধারণা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা পঞ্চাশবার এ ব্যাপারে হলফ করে তোমাদের খুনের দাষী নাকচ করে দেবে। তখন তারা বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে একটি কাফের সম্প্রদায়ের হলফ গ্রহণ করতে পারি? বুশায়রা (রাঃ) ধারণা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের পক্ষ হতে তার দিয়্যাত – আদায় করে দেন।

৪২০০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বুশায়র ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বানূ হারিসা গোত্রের এক আনসারী ব্যক্তি যাকে আবদুল্লাহ ইবনু সাহল ইবনু যায়িদ নামে ডাকা হতো, সে এবং তার এক চাচাতো ভাই-যাকে মূহায়্যিনা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়িদ নামে ডাকা হতো এর পরবর্তী হাদীসের অংশটূকু লাইস (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন এবং তার হাদীসের শেষকথাঃ (তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার দিয়্যাত- আদায় করেছেন) পর্যন্ত বর্ণনা করেন। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেনঃ, আমার নিকট বুশায়র ইবনু ইয়াসা (রাঃ) বর্ননা করেছেন, তিনি বলেনঃ, সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, “নিশ্চয় ফরয হিসেবে আদায়কৃত ঐ সমস্ত দিয়্যাতের- উট রাখার স্থানে একটি উটনী আমাকে লাথি মেরেছিল।

৪২০১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- তাদের মধ্য হতে একদল লোক খায়বারের দিকে গমন করল। এরপর তারা সেখান হতে পৃথক হয়ে গেল। তারপর তারা তাদের একজনকে নিহত অবস্হায় পেল। এভাবে হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ননা করেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুনের বদলা (দিয়্যাত) বাতিল হয়ে যাওয়াকে অপছন্দ মনে করলেন। অতএব, তিনি সাদাকার উট থেকে একশ- উট দিয়্যাত, হিসেবে প্রদান করলেন।

৪২০২। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার সফাদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের অন্তর্গত আবদুল্লাহ ইবনু সাহল এবং মুহায়্যিসা (রাঃ) উভয়েই খায়বারের দিকে গমন করলেন দুর্গম পথ দিয়ে। এরপর জনৈক ব্যক্তি মুহায়্যিসা (রাঃ) এর নিকট এসে খবর দিল যে, আবদুল্লাহ ইবনু সাহল (রাঃ) নিহত হয়েছেন এবং তাকে একটি নর্দমা অথবা কুপেরঁ মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে। সুতরাং তিনি তথাকার ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বললেনঃ, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তোমরা তাকে হত্যা করেছ। তখন তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলল, আমরা তাঁকে হত্যা করিনি। এরপর তিনি ম্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে এলেন এবং তাদের কাছে ঐ ঘটনা বর্ননা করলেন। পরিশেষে তিনি এবং তার বড় ভাই হুওয়ায়্যিসা ও আবদূর রহমান ইবনু সাহল (রাঃ) (নাবীজীর কাছে) আগমন করলেন। এরপর মুহায়্যিনা (রাঃ) কথা বলার জন্য অগ্রসর হলেন, যিনি (নিহত ব্যক্তির সঙ্গে) খায়বারে ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহায়্যিসা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ, বড় জন! বড় জন! অর্থাৎ বয়স্ক ব্যক্তির কথা বলা চাই। তখন মুওয়ায়্যিসা (রাঃ) কথাবার্তা বললেনঃ, এরপর মুহায়্যিসা (রাঃ)বললেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলঁলেনঃ হয়ত তারা তোমাদের সাথীর খুনের বদলা (দিয়্যাত) আদায় করে দিবে অথবা যুদ্বের জন্য প্রস্তুত হবে। তারা লিখল যে, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমরা তাকে হত্যা করিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুওয়ায়্যিসা, মুহায়্যিসা এবং আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেনঃ তোমরা কি এ ব্যাপারে হলফ করে তোমাদের সাথীর খুনের রক্তপণ আদায়ের হকদার হতে সক্ষম হবে? তাবা বলল, না। তখন তিনি বললেনঃ তাহলে ইয়াহুদীরা তোমাদের কাছে হলফ করে বলুক। তারা তখন বলল, তারাতো (ইয়াহুদী) মুসলমান নয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হতে তার “দিয়্যাত” (খুনের বদলা) আদায় করে দিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একশ উঠ প্রদান করলেন এবং ঐগুলো তাদের বাড়ীতে পৌছিয়ে দেয়া হল। সাহল (রাঃ) বলেনঃ, ঐগুলোর মধ্য হতে একটি লাল রংগের উটনী আমাকে লাথি মেরেছিল।

৪২০৩। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন আনসারী সাহাবার নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপারে হলফ করে, বলা ‘কাসামা’ যা জাহেলী যূগে প্রচলিত ছিল তা পুর্বের ন্যায় বলবৎ রেখেছেন।

৪২০৪। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু শিহাব থেকে একই সূত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং অতিরিক্ত একথা বর্ণনা করেছেন যেঃ (এবং রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর দ্বারা আনসারী লোকদের একজন নিহত ব্যক্তির ব্যাপারে নিষ্পতি করেছিলেন, যা তারা ইয়াহুদীদের উপর (হত্যার) দাবী উত্থাপন করেছিল।

৪২০৫। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) আনসারী লোকদের সূত্রে নযী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু জুরাইজ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪২০৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উরায়না- গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক মদিনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলা (সেখানের আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায়) তারা অসুস্হ হয়ে পড়ল। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ তোমরা ইচ্ছে করলে ঐ সব সাদাকার উটের কাছে গমন করতে পার এবং তার দুধ ও মূত্র পান করতে পার। তারা তাই করল এবং এতে তারা সুস্হ হয়ে গেল। এরপর তারা রাখালদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং তাদেরকে হত্যা করল। পরিশেষে তারা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগঁ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাল সম্পদ নিয়ে পলায়ন করল। এই সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। তখন তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদেরকে পাকড়াও করল। এরপর তাদের হাত-পা কেটে দিল এবং তাদের চোখ উপড়ে ফেলল এবং তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করল। এভাবে তারা মারা গেল। ৪২০৭। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাববাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আট জনের একটি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করল। অতঃপর তারা ইসলামের ওপর বাইআত গ্রহণ করল। কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তাদের শরীর অসুস্হ হায় গেল। তখন তারা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে-গমন করে উটের মূত্র এবং দুধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী হ্যা। এরপর বের হয়ে গেল এবং এর মূত্র ও দুধ পান করল। এতে তারা সুস্হ্য হয়ে গেল। অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে গেল। এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাঁরা তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। তাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হল। তখন তাদের হাত-পা কর্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলো। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।

৪২০৭। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাববাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আট জনের একটি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করল। অতঃপর তারা ইসলামের ওপর বাইআত গ্রহণ করল। কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তাদের শরীর অসুস্হ হায় গেল। তখন তারা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে-গমন করে উটের মূত্র এবং দুধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী হ্যা। এরপর বের হয়ে গেল এবং এর মূত্র ও দুধ পান করল। এতে তারা সুস্হ্য হয়ে গেল। অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে গেল। এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাঁরা তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। তাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হল। তখন তাদের হাত-পা কর্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলো। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।

৪২০৮। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট “উকল” অথবা “উবায়না” সম্প্রদায়ের একদল লোক এল। মদিনার আবহাওয়া তাদের , (বসবাসের) জন্য অনুপযোগী হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে “লিকাহর” (দুগ্নবতী উটনীর) নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে আরো নির্দেশ দিলেন এর মূত্র ও দুধ পান করার জন্য। এই হাদীসটি হাজ্জাজ ইবনু আবূ উসমানের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ অর্থে বর্ণিত হয়েছে রাবী বলেনঃ যে, এবং তাদের চক্ষুসমূহ উপড়ে ফেলা হল আর তারা রৌদ্রে নিক্ষিপ্ত হল। তারা পানি পান করতে চাইল, কিন্তু তাদেরকে পানি পান করানো হল না।

৪২০৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আহমাদ ইবনু উসমান নাওফেলী (রহঃ) আবূ কিনাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, একদা আমি উমার ইবনু আবদুল আযীয (রাঃ) এর পিছনে বসাছিলাম। তিনি জনগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা *কাসামাত” (খুনের ব্যাপারে হলফ করা) সম্পর্কে কি বল? আন্নাসাহ (রাঃ) বললেনঃ আমাদের কাছে আনাস ইরন মালিক (রাঃ) এমন এমন হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি বললাম, আনাস (রাঃ) বিশেষ করে আমাকে হাদীস টি বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একদল লোক আগমন করল। এরপর আনাস আইউব এবং হাজ্জাজ এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেনঃ, আমি যখন হাদীসের বর্ণনা শেষ করলাম, তখন আন্নাসাহ (রাঃ) সূবহানাল্লাহ বললেনঃ। (অর্থাৎ আশ্চর্যান্বিত হলেন।) আবূ কিলাবা (রহঃ) বর্ণনা করে বলেনঃ, আমি তখন বললাম, হে আন্নাসাহ! আপনি কি আমার উপর মিথ্যার অভিযোগ আনলেন? তখন তিনি বললেনঃ, না। আমার কাছে আনাস (রাঃ) এরুপেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। হে সিরিয়াবাসী! তোমরা সর্বদাই কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তোমাদের মাঝে এই লোক বিদ্যমান থাকবেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) তার মত লোক তোমাদের মাঝে অবস্হান করবেন। (অর্থাৎ এ দ্বারা তিনি আবূ কিলাবরে স্বরণশক্তির প্রশংসা করলেন।)

৪২১০। হাসান ইবনু আবূ শুয়ায়েব হাররানী, আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারেমী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ‘উকল’ সম্প্রদায়ের আটজন লোক এল এরপর তিনি পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তার বর্ণিত হাদীসে তিনি শুধু “তাদেরকে তিনি দাগ দেননি” এই কথাটূকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।

৪২১১। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ‘উরায়না’ গোত্রের একদল লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করল। এরপর তারা ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাঁর কাছে বায়আত গ্রহন করল। মদিনায় অবস্থান কালে তাদের বুদ্ধির বিভ্রাট ঘটল। ‘আল মুম’ শব্দের অর্থ ‘আল বিরসাত’ মাথার রোগ, কিংবা হার্টের রোগ অথবা উদুরী রোগ। এরপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের বর্ননাকারীদের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। শুধূ এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, তার কাছে তখন বিশজনের মত আনসারী যুবক ছিল। তাদেরকে তিনি ওদের নিকট প্রেরন করলেন এবং তাদের সঙ্গে একজন এমন অতিরিক্ত লোক-প্রেরণ করলেন। যিনি তাদের পদচিহ্ন দেখে গন্তব্য স্থল নির্ণয়ে সক্ষম।

৪২১২। হাদ্দাব ইবনু খালিদ, ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হাম্মাম এর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, উরায়না গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করল। আর সাঈদ (রাঃ) এর হাদীসে ‘উকল’ এবং -উরায়না” এর কথা উল্লেখ আছে। এরপর তিনি উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪২১৩। ফাযল ইবনু সাহল আরাজ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ লোকদের চোখে গরম লোহা ঢুকিয়ে দেন। কেননা তারা রাখালদের চক্ষু সমূহে গরম লোহা ঢূকিয়ে দিয়েছিলেন।

৪২১৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা এক ইয়াহুদী একটি মেয়েকে কয়েকটি রুপার টূকরা অর্থাৎ রুপার গহনার জন্য হত্যা করল। সে তাকে হত্যা করেছিল পাথর দ্বারা। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তাকে এমন অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হল যে, তখনও তার জীবন অবশিষ্ট ছিল। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে কি অমুক ব্যক্তি মেয়েছে? সে তখন মাথা নেড়ে উত্তর দিল, না। এরপর তিনি তাকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসা করলেন, তখনও সে মাথা নেড়ে উত্তর দিল, না। আবার তিনি তাকে তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করলেন, তখন সে মাথা নেড়ে বলল, হ্যা এবং ইঙ্গিত করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহুদীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে খূন করার কথা স্বীকার করল) তখন তাকে তিনি দু-পাথরের মাঝে চাপা দিয়ে হত্যা করলেন।

৪২১৫। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী ও আবূ কুরায়র (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। আর ইবনু ইদ্রীসের বর্ণিত হাদীসে উল্লেথ আছে যে, (তখন তিনি তার মাথা দুপাথরের মাঝে রেখে পিষে দিলেন)।

৪২১৬। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ইয়াহুদী ব্যাক্তি কোন এক আনাসারী মেয়েকে তার গলার হারের জন্য হত্যা করল। এরপর তাকে একটি কুপে ফেলে দিল এবং তার মাথা পাথর দ্বারা পিষে দিল। এরপর তাকে পাকড়াও করা হল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হল। তিনি নির্দেশ দিলেন, তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করার জন্য, যতক্ষন না তার মৃত্যু হয়। তখন তার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করা হল। অবশেষে সে মারা গেল।

৪২১৭। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

৪২১৮। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু যানিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একদা এক মহিলাকে এমন অবস্হায় পাওয়া গেল যে, তার মাথা দু-পাথরের মাঝে রেখে পিষে দেয়া হয়েছে তখন তারা (পরিবারের লোকেরা) তাকে জিজ্ঞাসা করল, কে তোমাকে এমন করেছে, অমুক- অমূক ব্যক্তি-? এভাবে (জিজ্ঞাসা করতে করতে) তারা এক ইয়াহুদীর নাম উল্লেখ করল। তখন সে মাথা নেড়ে (হ্যা-সূচক) উত্তর দিল। তখন ইয়াহুদীকে পাকাড়াও করা হল। সে তা স্বীকার করল। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথা পাথর দ্বারা নিস্পেষণের নির্দেশ দিলেন।

৪২১৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ইয়ালা ইবনু মুনইয়া অথবা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) এক ব্যক্তির সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল। তখন একজন অপর জনের হাতে দাঁত দিয়ে কামড় দিল। সে তখন আপন হাত তার মুখ থেকে সজোরে টেনে আনল তখন তার একটি দাঁত খসে গেল। ইবনু মূসান্না (একটি স্হলে) দুটি দাঁত বলেছেনঃ উভয়েই তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে নালিশ করল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি এমনভাবে দাঁতে কামড় দিলে যেমন ভাবে উটে কামড় দেয়! তবে এর জন্য কোন (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ নাই।

৪২২০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু ইয়ালা (রহঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪২২১। আবূ গাসসান মাসমাঈ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যাক্তির হাতে কামড়িয়ে ধরল। তখন সে সজোরে তার হাত টেনে নিল। এতে সে ব্যক্তির দাঁত পড়ে গেল। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মুকাদ্দমা দায়ের করা হল। তখন তিনি তা নাকচ করে দেন এবং বলেনঃ, তুমি তো প্রতিপক্ষের গোশত খেতে চেয়েছিলে।

৪২২২। আবূ গাসসান মাসমাঈ (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা ইবনু মুনইয়া (রাঃ) এর এক শ্রমিকের হাত জনৈক ব্যাক্তি কামড়িয়ে দিল। তখন সে সজোরে তার হাত টেনে নিল। এতে সে ব্যক্তির দাত পড়ে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ব্যাপারে মুকাদ্দমা দায়ের করল। তখন তিনি তা নাকচ করেছেন এবং বলেনঃ যে, তুমি তো তার হাত এমনভাবে চবন করতে চেয়েছিলে যেমন ভাবে উট চর্বন করে।

৪২২৩। আহমাদ ইবনু উসমান নাওফেলী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি; অপর এক ব্যক্তির হাতে-কামড়িয়ে ধরল। সে তখন তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার একটি দাত অথবা দুটি দাত পড়ে গেল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ ব্যাপারে নালিশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার কাছে কি চাও তুমি কি চাও যে, আমি তাকে নির্দেশ করবো রার হাত তোমার মূখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেবে, আর তুমি তা চর্বন করবে? যেমন উট চর্বন করে থাকে। তুমি ইচ্ছে করলে তোমার হাত তার মুখের মধ্যে প্রবেশ কয়িয়ে দিতে পার, সে তখন তা দাতে কর্তন করবে, এরপর তুমিও তা সজোরে টেনে নিও।

৪২২৪। শায়বান ইবনুু- ফাররুখ (রহঃ) ইয়ালা ইবনু মূনইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন এক ব্যক্তি এসে নালিশ করল- যে অপর এক ব্যক্তির হাতে কামড় দিয়েছিল। সে যখন তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার দুটি দাত পড়ে গেল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি দাঁত দ্বারা কামড় দিয়েছিল তার দাত পড়ে গেল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এই অভিযোগ নাকচ করেদিলেন এবং বললেনঃ তুমি তার হাত এমনভাবে চর্বন করতে চেয়েছিলে যেমন উট চর্বন করে থাকে।

৪২২৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তাবুকের যুদ্ধ করেছি। বর্ননাকারী বলেনঃ, ইয়ালা বলতেন, ঐ যুদ্ধ আমার নিকট একটি নির্ভরযোগ্য (পূণ্যের) কাজ ছিল। আতা (র-) সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইয়াল! (রাঃ) বলেছেনঃ, আমার একজন শ্রমিক ছিল সে এবং অপর এক ব্যক্তি পরস্পর সংঘর্যে লিপ্ত হল। এতে একজন অপরজনের হাতে কামড় দিল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তাদের দু-জনের মধ্যে কে অন্যের হাতে কামড় দিয়েছিল তা সাফওয়ান (রাঃ) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তির হাতে কামড় দিয়েছিল ব্যক্তি কামড় দাতার মুখ থেকে তার হাত সজোরে টেনে নিল। এতে তার একটি বা দুটি দাঁত পড়ে গেল। তখন উভয়েই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে অভিযোগ পেশ করল, তখন তিনি দাঁত পড়ে যাওয়ায় অভিযোগ নাকচ করে দিলেন।

৪২২৬। আমার ইবনু যুরারা (রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রহঃ) থেকে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২২৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ)- থেকে বর্ণিত যে, রাবী (রাঃ)-এর ভগ্নি হারিসার মাতা জনৈক ব্যক্তিকে আহত করল। এ ব্যাপারে তারা (তার আত্নীয়য়েরা) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নালিশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল কিসাস! আল কিসাস! অর্থাৎ এতে- কিসাস আরোপিত হবে। তখন উম্মে রাবী বললেনঃ এ হে আল্লাহর রাসুল! অমুকের (উম্মে হারিসারা) নিকট হতে কি কিসাস নেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তাঁর নিকট হতে কিসাস না নেয়া হোক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! (অর্থাৎ আশ্চার্যান্বিত হয়ে বললেনঃ) হে উম্মু রাবী! কিসাস নেয়া তো আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ। তিনি বললেনঃ, জী না। আল্লাহর শপথ নিয়ে আরয করছি, তার নিকট হতে কখনও কিসাস (বদলা) না নেয়া হোক। বর্ণনা-কারী বলেনঃ, তিনি বারবার একথা বলতেছিলেন। পরিশেষে আহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ নিতে সম্মত হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর বান্দাগণের মখ্যে এমনও লোক আছেন, যদি সে আল্লাহর নামে শপথ করে কোন কথা বলে তখন আল্লাহ তায়ালা তা সত্যে পরিণত করেন।

৪২২৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ নয়, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। কিন্তু তিনটি কাজের যে কোন একটি করলে (তা বৈধ)। ১। বিবাহিত ব্যক্তি ব্যাভিচারে লিপ্ত হলে; ২। জীবনের বিনিময়ে জীবন, অর্থাৎ কাউকে খুন করলে; ৩। এবং স্বীয় ধর্ম পরিত্যাগ কারী যে (মুসলমানদের) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

৪২২৯। ইবনু নুমায়র, ইবনু আবূ উমার, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অররুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৩০। আহমাদ ইবনু হাম্বল ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাড়িয়ে বললেনঃ সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই; এমন কোন মুসঁলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা বৈধ নয় যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। কিন্তু-তিন প্রকার ব্যক্তি ব্যতীত- ১ যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে এবং মুসলমানদের দল পরিত্যাগকারী হয়। ২ বিবাহিত ব্যভিচারী এবং ৩ জীবনের বিনিময়ে জীবন। অর্থাৎ কিসাস গ্রহন। আমাশ (রহঃ) বলেনঃ যে, আমি ইবরাহীমের নিকট হাদীসটি বর্ণনা করলাম, তিনিও আসওয়াদ (রহঃ) এর সূত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪২৩১। হাজ্জাজ ইবনু শায়ের ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) থেকে উভয় সনদে সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার বর্ণিত হাদীসে (সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই) এ কথার উল্লেখ করেননি।

৪২৩২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোন ব্যাক্তি অত্যাচারিত হয়ে নিহত হয়, তবে সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রথম পূত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়। কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।

৪২৩৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে জারীর এবং ইসহাক (রহঃ) এর হাদীসে (কেননা সে খুনের প্রথা প্রচলন করেছে) এই কথার উল্লেখ আছে। কিন্তু প্রথম-কথাটির উল্লেখ নেই।

৪২৩৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) -থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম খুনের (বিচার করা হবে।

৪২৩৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায, ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব, বিশর ইবনু খালিদ, ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তাদের কেউ কেউ শুবা (রহঃ) থেকে (বিচার করা হবে) কথাটি বর্ণনা করেছেন। আর কেউ কেউ (মানুষের মাঝে হুকুম (বিচার) করা হবে) বর্ণনা করেছেন।

৪২৩৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) এহাঁ সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সময় অতিবাহিত হয়ে পূর্বাবস্হায় ফিরে এসেছে, যে অবস্হায় আল্লাহ তাআলা আকাশসমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এক বছর হয় বার মাসে, তম্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। (অর্থাৎ তাতে যুদ্ধ বিগ্রহ করা হারাম) এর তিন মাস হল ক্রমাগত- ১ যূল কাদা, ২ যূল হাজ্জ (হজ্জ)াহ এবং ৩ মুহাররাম। আর রজবও নিষিদ্ধ মাস, যা জামাদিউস সানী এবং শাঁবানের মাঝে অবস্হিত। এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন মাস আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। আমরা ভাবলাম যে, তিনি হয়ত এই মাসের নতুন কোননাম বলবেন। এরপর তিনি বলেলেনঃ এ কি “যিল হাজ্জ (হজ্জ)” মাস নয়? আমরা বললাম, জী- হ্যা। তিনি বললেনঃ এ কোন শহর। আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত আছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ, তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এতে আমরা শারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অপর কোন নাম রাখবেন। বললেনঃ এ কি (মক্কা) নগর নয়। আমরা বললাম, জী-হ্যা। তিনি বললেনঃ এ কোন দিন? আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তঁরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অন্য কোন নাম বলবেন। তিনি বললেনঃ এ কি ইয়াওমুন্নাহারা (ঈদুল আযহার দিন) নয়? আমরা বললামঃ জী-হ্যা ইয়া রাসুলুল্লাহ। তিনি বললেনঃ তোমাদের জান ও মাল এবং রাবী মুহাম্মাদ বলেনঃ, আমি ধারণা করি এর সাথে তিনি তোমাদের মান সম্ভ্রম একত্র যূক্ত করে বললেনঃ এহলো তেমন মর্যদাপূর্ণ যেমন তোমাদের কাছে আজকার দিবস, এই নগর এবং এই মাসও পবিত্র। তোমরা অতি সত্তরই তোমাদের প্রভুর সাথে হবে। তখন তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। অতএব, তোমরা আমার পরে পথভ্রষ্ট হয়ে একে অন্যের সাথে ঝগড়া ফাসা’দ লিপ্ত হয়ো না। সাবধান! তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগন অবশ্যই অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এই বাণী পৌছে দিবে। সম্ভবতঃ উপস্থিত ব্যক্তিগণ, যাদের কাছে আমার বানা পৌছে দিবে- তাঁরা হয়ত এখানকার শ্রোতাদের চেয়ে অধিকতর সংরক্ষণকারী হবে। এরপর তিনি বললেনঃ সাবধান! আমি কি আল্লাহর নির্দেশ পৌছে দেইনি? ইবনু হাবীব তাঁর বর্ণনায় (রজব নিষিদ্ধ মাস) বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকরা (রাঃ) এর অপর বর্ননায়ঃ (তোমরা আমার পরে ধর্মান্তরিত হয়ো না) বর্ণিত হয়েছে।

৪২৩৭। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ বাকরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন ঐদিন (ইয়াওমুন্নাহার) উপস্থিত হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উটের উপর আরোহন করলেন। এক ব্যক্তি তার উটের লাগাম ধরে রেখেছিল। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান যে, আজ কোন দিন। তারা বললেনঃ, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়ত এ নাম ব্যতীত অপর কোন নাম বলবেন। এরপর তিনি বললেনঃ আজকের দিন কি ইয়াওমুন্নাহারের নয়? আমরা বললাম, জি-হ্যা, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি বললেনঃ এটা কোন মাস। আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ একি যিলহাজ্জ মাস নয়?- আমরা বললাম, জী-হ্যা, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ এ কোন শহর আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই অধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এতে আমরা ধারনা করলাম যে, তিনি হয়ত এর অন্য কোন নাম বলবেন। এরপর বললেনঃ এ কি (মক্কা) শহর নয়। আমরা বললাম, জী-হ্যা, হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের জান-মাল এবং মাল-সম্ভ্রম (বিনষ্ট করা) তোমাদের উপর এরুপ হারাম, যে রুপ তোমাদের জন্য আজকের দিন, এই মাস এবং এই নগরের পবিত্রতা বিনষ্ট করা হরোম। তোমাদের উপস্থিত ব্যক্তিগণ অনুপস্হিত ব্যক্তিদের কাছে আমার এ বানী অবশ্যই পৌছে দিবে। এরপর তিনি কাল ও সাদা রুং-মিশ্রিত দুটি ছাগলের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং দুটি যবেহ করলেন ও যবেহকৃত ছাগলের এক অংশ আমাদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন।

৪২৩৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, যখন সেই দিন (ইয়াওমুন্নাহারের দিন) উপস্থিত হল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটের উপর উপবিষ্ট হলেন। রাবী বলেনঃ, এক ব্যক্তি তার লাগাম ধরে রেখেছিল। রাবীর সন্দেহ ‘যামাম’ শব্দের পরিবর্তে ‘খাতাম’ (লাগাম) শব্দ বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি ইয়াযিদ ইবনু যুরায় (রাঃ) এর হাদাসের অনুরুপ হাদাস বর্ননা করেন।

৪২৩৯। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন, মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, ইয়াওমুন্নাহার- অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিন আমাদের সামনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণ বললেনঃ আজ কোন দিন। এরপর বর্ণনাকারীগণ, ইবনু আউনের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করলেন। কিন্তু তারা (তেরমাদের মানসমম্ভ্রম) এই শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং (অতঃপর তিনি দুটি ছাগলের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন) এবং এর পরবর্তী অংশটূকুও উল্লেখ করেননি। আর তিনি তাঁর বর্ণিত হাদীসে -তোমাদের এই দিন, এই মাস এবং এই শহারর পবিত্রতার ন্যায়- থেকে নিয়ে- (যেদিন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। সাবধান! আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বানী পৌছে দিয়েছি:- তখন সকলেই বললো, হ্যা, তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ!আপনি সাক্ষী থাকুন) এই পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।

৪২৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায আম্বারী (রহঃ) আলকামা ইবনু ওয়ায়েল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা তাঁকে বর্ণনা করেছেন, আমি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসেছিলাম। এমন সময় অপর এক ব্যক্তিকে চামড়ার দরি দিয়ে বেঁধে টেনে নিয়ে একটি লোক আগমন করল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এই ব্যক্তি আমার ভাইকে হত্যা করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে হত্যা করেছ? (তখন সে বলল, যদি সে উহা স্বীকার না করতো, তবে আমি তার উপর সাক্ষী দাড় করতাম।) সে তখন বলল, হাঁ আমি তাকে হত্যা করেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি তাকে কিভাবে হত্যা করেছ? সে বলল, আমি এবং সে বৃক্ষের পত্র সংগ্রহ করছিলাম। এমন সময় সে আমাকে গালি দিল। এতে আমার রাগ চড়ে গেল। তখন আমি কুঠার দ্বারা তার মাথায় আঘাত করলাম। এভাবে আমি তাকে হত্যা করেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার কি এমন কোন সস্পদ আছে যদ্বারা ‘দিয়্যাত’ (রক্তপণ) আদায় করতে পারবে। তখন সে বলল, আমার কাছে একটি কম্বল ও কুঠার ব্যতীত আর কিছুই নেই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা কি তোমাকে-মূক্ত করিয়ে নেবে? সে বলল, আমার সম্প্রদায়ের কাছে আমার এতখানি মর্যাদা নেই। অতএব, তিনি তার বন্ধনের দড়ি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসের দিকে নিক্ষেপ করে দিলেন এবং বললেনঃ তুমি তোমার সাথীকে ধরে রাখ। সে তাকে নিয়ে চলল। যখন সে পিছনের দিকে ফিরল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে তাকে হত্যা করে- তবে সেও তার সমকক্ষ হয়ে গেল। এ কথা শোনে-সে ফিরে এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি শুনলাম, আপনি বলেছেনঃ “যদি সে তাকে হত্যা করে তবে সে তার সমকক্ষ হয়ে যাবে।, আমি তো তাকে আপনার নির্দেশেই ধরে এনেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি এ চাওনা যে, সে তোমার এবং তোমার ভাইয়ের পাপের বোঝা গ্রহন করুক। তখন সে বলল, তাই কি হবে? তিনি বললেনঃ হাঁ। তখন সে বলল, যদি তাই হয়, (তবে ভাল)। এই বলে সে তার বন্ধনের দড়ি-নিক্ষেপ করল এবং তাকে মুক্ত করে দিল।

৪২৪১। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ওয়ায়েলে (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এই ব্যক্তিকে হাযির করা হল, যে অপর এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ছিল। তখন তিনি নিতে ব্যক্তির ওয়ারিসকে তার কাছে হতে কিসাস গ্রহনের অনুমতি দিলেন। তখন সে তাকে চলল এমন অবস্থায় যে, তার গলায় একটি চামড়ার দড়ি ছিল, যদ্বারা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। যখন সে ফিরে যাচ্ছিল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হত্যাকারীও নিতে ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামী। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন এক ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির সাথে গিয়ে মিলিত হল এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বানী জানাল। সে তখন হত্যাকারীকে ছেড়ে দিল। ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) বলেনঃ, আমি এই ঘটনা হাবীব ইবনু সাবিত (রহঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমাকে ইবনু আশওয়া (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাকে (ইতিপূর্বে) বলেছিলেন, কিন্তু সে তা অস্বীকার করেছিল।

৪২৪২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হোযাইল গোত্রের দু-জন মহিলা একে অপরের প্রতি তীর নিক্ষেপ করল তাতে আহত মহিলার গর্ভপাত হয়ে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে (দন্ড স্বরুপ) একটি গোলাম অথবা একটি দাসী আযাদ করে দেওয়ার হুকুম দিলেন।

৪২৪৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ লিহইয়ান গোত্রের এক মহিলার গর্ভপাত ঘটিয়ে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি একটি গোলাম অথবা একটি দাসী প্রদানের নির্দেশ দেন। এরপর যে মহিলাকে (ক্ষতিপূরণ হিসেবে) গোলাম প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে মরে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায়সালা দিলেন যে, তার পবিত্যক্ত সম্পদ তার সন্তান ও স্বামী পাবে। আর হত্যাকারীর ওয়ারিসগণের উপর দিয়াত প্রদানের হুকুম আরোপিত হবে।

৪২৪৪। আবূ তাহির হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজায়বী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হুযাইল গোত্রের দু-জন মহিলা পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এতে একজন অপরজনকে পাথর দ্বারা আঘাত করল। এর দ্বারা সে মহিলা ও তার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলল। তখন নিহত মহিলার ওয়ারিসগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে নালিশ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুকুম দিলেন যে, সন্তানের দিয়্যাত হল একটি দাস কিংবা-দাসী প্রদান করা। নিহত মহিলার দিয়াত হত্যাকারী মহিলার ওয়ারিসগণের উপর আরোপিত হবে। আর (নিহত) মহিলার ওয়ারিস হরে তার সন্তান এবং যে সব লোক তার সঙ্গে বসবাস করে। হামাল ইবনু নাবেগাতুল হুযালী (রাঃ) বললেনঃ, হে আল্লাহর রাসুল! আমলা কিভাবে এর ক্ষতিপূরন প্রদান করবো, যে পান করেনি, খায়নি, কথা বলেনি এবং শব্দও করেনি? সে তো এল আর গেল। এ বাতিলযোগ্য। এমন ছন্দ্য যুক্ত বাক্য বলার কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ যেন গনকদের ভাই।

৪২৪৫। ইবনু ইবনু হুমাইদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ দু-জন মহিলা পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হল। এরপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। কিন্তু রাবী তাতে (নিহত মহিলার ওয়ারিশ হবে। তার সন্তান তার সঙ্গে যারা বসবাস করে) এ কথা উল্লেখ করেননি। বরং তিনি উল্লেখ করেছেন, (তখন কোন ব্যক্তি বলল, আমরা কিভারে এর ক্ষতিপূরণ দেব)। আর রাবী তার বর্ণনায় হামাল ইবনু মালিকের নামও উল্লেখ করেন নি।

৪২৪৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, এক মহিলা তার সতীনকে কুড়ে ঘরের খুটি দ্বারা আঘাত করল। সে ছিল গর্ডবতী মহিলা। (আঘাতকারী মহিলা আঘাত দিয়ে) তাকে মেরে ফেলল। বর্ণনাকারী বলেনঃ যে, তাদের একজন ছিল লিহইয়ান গোত্রের মহিলা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যাকারী মহিলার ওয়ারিসগণের ওপর নিহত মহিলার হত্যার (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং গর্ভে নিহত হওয়ার জন্য একটি দাস (ক্ষতিপূরণ হিসেবে) প্রদানের হুকুম দিলেন। তখন হত্যাকারী মহিলারার গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বলল, আমরা এমনর শিশুর কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেব? যে খায়নি পান করেনি এবং কোন শব্দও করেনি। সে তো এল আর গেল। এই বাতিল যোগ্য। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যেন বেদূঈনের মত ছন্দমুক্ত বাক্যে কথা বলল। বর্ণনাকারী বলেনঃ, এরপর তিনি তাদের উপর (দিয়্যাত) ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দিলেন।

৪২৪৭। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একজন মহিলা তার সতীনকে তাবুর দিয়ে মেরে ফেলল। এই মুকদ্দমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দায়ের করা হল। তখন তিনি হত্যাকারী মহিলার বংশধরদের উপর দিয়্যাত প্রদানের নির্দেশ দিলেন। নিহত মহিলাটি ছিল গর্ভবতী। অতএব, তিনি গর্ভের বাচ্চার জন্য (দিয়্যাত হিসেবে) একটি দাস প্রদানের নির্দেশ দিলেন। খায়নি, পদ্রন করেনি এবং কোন শব্দও করেনি? এ বাতিলযোগ্য, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতো বেদূঈনদের ছন্দযুক্ত কথার মত একটি কথা।

৪২৪৮। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) মানসুর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে জারীর এবং মুফাসযান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪২৪৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মানসুর (রহঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন এবং সে গর্ভপাত ঘটিয়েছিল। তখন এই ঘটনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থাপণ করা হল। তিনি এতে একটি গোলাম (দিয়্যাত হিসেবে) প্রদানের জন্য হত্যাকারী মহিলার অভিভাবকের প্রতি নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তিনি তার বর্ণিত হাদীসে (মহিলার দিয়াত) কথাটি উল্লেখ করেননি।

৪২৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জনগণের কাছে একবার মহিলার গর্ভের সন্তান হত্যার ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তখন মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একদা উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি এ অপরাধের কারণে একটি দাস অথবা দাসী প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। রাবী বলেনঃ, তখন উমার (রহঃ) মুগীরা (রাঃ)-কে বললেনঃ, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে সাক্ষ্য প্রদানকারী একজন লোক আনয়ন করুন। বর্ণনাকারী বলেনঃ- যে, তখন তার স্বপক্ষে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) সাক্ষ্য প্রদান করলেন।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: কসম
কসম
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/kosom.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/kosom.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy