৭১৪৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত স্বরুপ।
৭১৫০।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীয়া অঞ্চল হতে মদ্বীনায় আসার পথে এক
বাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উভয়
পার্শে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার
নিকট পৌছলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের বিনিময়ে উহা নিতে
আগ্রহী। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই এবং
এটি নিয়ে আমরা কি করব?
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিনা পয়সায় তোমরা কি
উহা নিতে আগ্রহী? তারা
বললেন, এ
যদি জীবিত তে তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর কান হচ্ছে ক্ষুদ্র ,ক্ষুদ্র।
আর এখন তো উহা মৃত,
কিভাবে আমরা তা গ্রহণ করব? এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ তোমাদের নিকট যতটা তুচ্ছ, আল্লাহর
নিকট দুনিয়া এর চেয়েও অধিক তুচ্ছ।
৭১৫১।
মুহাম্মদ ইবনু মুনান্না আনাযী ও ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর আরা সামী (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। তবে সাকাফীর হাদীসের মধ্যে অতিরিক্ত এ কথা বর্ণিত রয়েছে যে, এটি যদি
জীবিতও হত, তবুও
ক্ষুদ্র কান একটি দোষনীয় ব্যাপার।
৭১৫২।
হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) মুতাররিফ (রাঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলাম। তখন তিনি ‘আল হাকুমুত্তা
কাছুর’ পাঠ করছিলেন। তিনি বলেন, আদম সন্তানগণ বলে, আমার মাল
আমার মাল। বস্তুতঃ হে,
আদম সন্তান! তোমার মাল উহাই যা তুমি খেয়েছো ও শেষ করে দিয়েছে, পরিধান
করেছ ও পূরাতন করে ফেলেছ এবং দান করেছ ও অব্যাহত রেখেছ।
৭১৫৩।
মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (অন্য সনদে) ইবনু মুসান্না (রহঃ) মুতাররিফ
(রাঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নিকট গেলাম। অতঃপর তিনি হাম্মামের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১৫৪।
সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বান্দাগণ বলে, আমার মাল আমার মাল। অথচ তিনটই হল তার মাল, যা সে
ভক্ষণ করল এবং শেষ করে দিল। অথবা যা সে পরিধান করল এবং পূরাতন করে দিল। কিংবা যা
সে দান করল এবং সঞ্চয় করল। এ ছাড়া বাকীগুলো শেষ হয়ে যাবে এবং মানুষের জন্য রেখে
যেতে হবে। আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আলা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে এ সনদে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১৫৫।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিনটি বস্তু মৃত
ব্যক্তির সঙ্গীরুপে তার সাথে যায়। দুটি তো ফিরে আসে এবং একটি তার সঙ্গে থেকে যায়।
সঙ্গে গমন করে আত্নীয় স্বজন ধন-সম্পদ এবং তার আমল। তার জাতি গোষ্ঠী ও মাল-দৌলত
ফিরে আসে আর থেকে যায় শুধু আমল।
৭১৫৬।
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বনূ আমের ইবনু লূওয়াই এর চুক্তিবদ্ধ
মিত্র আমর ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনুল জাবরাহ (রাঃ) কে বাহরাইনে জিযিয়া
আদায় করতে পাঠিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনবাসীদের
সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের জন্য আলা ইবনু হাযরামী (রাঃ) কে শাসনকর্তা নিযুক্ত
করেছিলেন। তারপর আবূ উবায়দা (রাঃ) বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে এলে, আনসার
সাহাবীগণতার আগমন খবর শুনলো, এরপর তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সালাতান্তে মুখ ফিরিয়ে বসলে তারা তাঁর নিকট হাযির হলো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে
হচ্ছে আবূ উবায়দা বাহরাইন থেকে কিছু নিয়ে এসেছে, এ খবর তোমরা শুনেছ? তারা বললেন, জী হাঁ, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তা তোমাদেরকে খুশী
করবে আশা রাখি। আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে এ ভয় আমি করিনা। আমি
তোমাদের সম্পর্কে এ ভয় করি যে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববতীদের উপর দুনিয়া
প্রশস্ত হয়ে গিয়েছিল,
তেমনিভাবে তোমাদের উপরও দুনিয়া প্রশস্ত হয়ে যাবে। অতঃপর তোমরা তেমনি
প্রতিযোগিতা করবে যেমন করে তারা প্রতিযোগিতা করেছে। অবশেষে তোমাদেরকেও ধ্বংস
করে দিবে যেমনিভাবে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
৭১৫৭।
হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (অন্য সনদে) আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারেমী
(রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনুসের সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সালিহ
(রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে ‘অ তুহলিকুকুম কামা আহ লাকাত হুম’ -এর স্হলে ‘অ তুলহিকুম
কামা’ অবশেষে তোমাদেরকে তাদের মতই গাফিল করে দিবে। কথাটি বর্ণিত আছে।
৭১৫৮।
আমর ইবনু আস সাওয়াদ আমেরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুুূল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন রোম ও পারস্য বিজিত হবে
তখন তোমরা কি বলবে?
জবাবে আবদূর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে যেরুপ নির্দেশ দিবেন আমরা তাই
বলব। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অন্য কিছু কি বলবে না? তখন তোমরা
পরস্পর ঈর্ষা করবে,
তারপর হিংসা করবে অতঃপর সম্পর্ক ছিন্ন করবে, এরপর শক্রতা করবে। অথবা এরুপ কিছু কথা বলেছেন।
অতঃপর তোমরা নিঃস্ব মুহাজির লোকদের নিকট যাবে এবং এক জনকে অপরের শাসক নিয়োগ করবে।
৭১৫৯।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ যদি মাল ও আকৃতির
দিক থেকে তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি করে তবে সে যেন সঙ্গে সঙ্গে
তার তুলনায় নিম্নস্তরের ব্যক্তিদের প্রতি লক্ষ্য করে, যাদের উপর
তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
৭১৬০।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ যিনাদের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭১৬১।
যুবায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ তোমাদের তুলনায় নিম্নস্তরের লোকদের প্রতি নযর কর। তবে তোমাদের তুলনায় উপরের
স্তরের লোকদের প্রতি নযর করো না। কেননা আল্লাহর নিয়ামতকে তুচ্ছ না ভাবার এটাই
উত্তম পন্থা। আবূ মুআবিয়ার বর্ণনায় ‘আলাইকুম’ শব্দটি অতিরিক্ত বর্নিত আছে।
৭১৬২।
শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ছিল
কুষ্ঠরোগী, দ্বিতীয়
জন টাক মাথা এবং তৃতীয় জন অন্ধ। আল্লাহ তা’আলা এ তিনজনকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা
করলেন। তাই তিনি তাদের নিকট একজন ফিরিশতা পাঠালেন। ফিরিশতা প্রথমে কুষ্ঠরোগীর
কাছে আসলেন এবং বললেন,
তোমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তৃ কি? সে বলল, উত্তম রং, উত্তম চর্ম এবং আমার থেকে যেন এ ব্যাধি নিরাময়
হয়ে যায়, যার
কারণে লোকেরা আমাকে ঘৃণা করে। অতঃপর ফিরিশতা তার শরীরে হাত বুলালেন। এতে তার এ
কুৎসিত ব্যাধি নিরাময় হল এবং তাকে উত্তম রং ও উত্তম চর্ম প্রদান করা হল। ফিরিশতা
আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নিকট প্রিয় মাল কি? সে বলল, উট বা
গাভী। বর্ণনাকারী ইসহাক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে কুষ্ঠরোগী বা টাক মাথা তাদের
একজন বলল, উট
আর অপর জন বলল গাভী। অতঃপর তাকে গর্ভবতী উষ্ট্রী প্রদান করা হল এবং বললেন, আল্লাহ
তোমাকে এতে বরকত দান করুন। এরপর ফিরিশতা টাক মাথা ব্যক্তির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস
করলেন, তোমার
নিকট অধিক প্রিয় বস্তু কি? সে বলল, সুন্দর চুল এবং আমার থেকে যেন এই ব্যাধি নিরাময়
হয়ে যায় যার কারণে লোকেরা আমাকে ঘৃণা করয়ে ফিরিশতা তার শরীরে হাত বুলালে তার
ব্যাধি নিরাময় হয়ে যায়। অতঃপর তাকে প্রদান করা হয় সুন্দর চুল। পুনঃরায় ফিরিশতা
তাকে প্রশ্ন করলেন যে,
কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে বলল, গাভী। অতঃপর তাকে গর্ভবতী গাভী দান করা হল এবং
ফিরিশতা বললেন, আল্লাহ
তোমাকে এত বরকত দান করুন। অতঃপর ফিরিশতা তার চোখের উপর হাত বুলালে আল্লাহ তার
দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এরপর ফিরিশতা পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন মাল
তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে বলল, বকরী। তাকে গর্তবতী বকরী দান করা হল। অতঃপর
উষ্ট্রী, গাভী
এবং বকরী সবই বাচ্চা দিল। ফলে তার এক মাঠ উট, তার এক মাঠ গাভী এবং তার এক মাঠ বকরী হয়ে গেল।
অতঃপর ফিরিশতা অনতিকাল পরে তার প্রথম আকৃতিতে কুষ্ঠরোগীর নিকট এসে বলল, আমি একজন
মিসকীন ও নিঃস্ব ব্যক্তি, সফরে আমার সমস্ত অবলম্বন শেষ হয়ে গিয়েছে।
আল্লাহর ও তোমার সাহায্য ব্যতিরেকে বাড়ী পৌছাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সূতরাং যে
আল্লাহ তোমাকে উত্তম রং, সুন্দর চামড়া এবং মাল দান করেছেন তার নামে আমি
তোমার নিকট একটি উট প্রার্থনা করছি, যেন এ সফরে আমি উহাতে আরোহন করে বাড়ী পৌছতে
পারি। এ কথা শুনে সে বলল, দায়-দায়িত্ব অনেক বেশী। তখন ফিরিশতা বললেন, আমি তোমাকে
চিনি বলে মনে হচ্ছে তুমি কি নিঃস্ব কুষ্ঠরোগী ছিলে না? অতঃপর
আল্লাহ তোমাকে সম্পদ দান করেছেন। সে বলল, বাহ! আমরা তো বাপ-দাদার কাল হতেই ক্রমাগত এ
সম্পদের ওয়ারিস হয়ে আসছি। অতঃপর ফিরিশতা বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ
তা’আলা যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন। এবার ফিরিশতা তার আকৃতিতে টাক মাথা
ব্যক্তির নিকট এসে ঐ ব্যক্তির মত তাকেও বললেন এবং সে-ও প্রথম ব্যক্তির মতই উত্তর
দিল। অতঃপর তিনি বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও তবে যেন আল্লাহ তাআলা
তোমাকে তোমার পূর্বের অবস্হায় ফিরিয়ে দেন। এরপর ফিরিশতা তাঁর পূর্বের আকৃতিতে অন্ধ
ব্যক্তির নিকট এসে বলল, আমি একজন নিঃস্ব মুসাফির ব্যক্তি। আমার সফরের
সমস্ত আসবাব অবলম্বন শেষ হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এবং পরে তোমার সহযোগিতা
ব্যতীত আজ বাড়ী পৌছা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যে আল্লাহ তোমাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে
দিয়েছেন তার নামে তোমার নিকট আমি একটি বকরী চাই যেন আমি সফর শেষে বাড়ী পৌছতে
পারি। এ কথা শুনে লোকটি বলল, হ্যা, আমি অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরিয়ে
দিয়েছেন। আপনার ইচ্ছামত আপনি নিয়ে যান এবং যা মনে চায় রেখে যান। আল্লাহর কসম! আজ
আল্লাহর নামে আপনি যা নিবেন এ ব্যাপারে আমি আপনাকে বাধা দিব না। অতঃপর ফিরিশতা
বললেন, তুমি
তোমার মাল রেখে দাও। তোমাদের তিন জনের পরীক্ষা হল। আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট
এবং তোমার অপর দুই সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
৭১৬৩।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আব্বাস ইবনু আবদুল আযীম (রহঃ) আমের ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
সা’দ ইবনু ওয়াক্কাস (রাঃ) একদা তার উষ্ট্ররাজির মাঝে বসা ছিলেন, এমতাবস্হায়
তার পূত্র উমার আসল। সা’দ (রাঃ) তাকে দেখামাত্রই পাঠ করলেন ‘আয়ুজুবিল্লাহি মিন
শাররি হাযাররাকিবি’ অর্থাৎ এই আরোহী ব্যক্তির অকল্যাণ হতে আমি পানাহ চাই। এরপর সে
তার সাওয়ারী হতে অবতরণ করল এবং বলল আপনি লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে উষ্ঠ্র এবং বকরীর মাঝে
এসে গেছেন কি? অথচ
রাজত্ব নিয়ে লোকেরা পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত। একথা শুনে সা’দ (রাঃ) তার বক্ষে আঘাত করে
বললেন, চুপ
থাক। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ভীরু, বিত্তশালী ও লোকালয় হতে নির্জনে বাসকারী
বান্দাকে আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন।
৭১৬৪।
ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারেসী, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ)
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আল্লাহর কসম! আরবের বাসিন্দাদের মধ্যে আমিই
সর্বপ্রথম আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে যুদ্ধ করতাম। তখন হুবলা এবং সমর বৃক্ষের পাতা ব্যতিরেকে
আমাদের নিকট খাবার মত কোন খাদ্যই থাকত না। ফলে আমাদের এক একজন বকরীর মত মল ত্যাগ
করত। আর এখন বনূ আসা’দর লোকেরা দ্বীনী ব্যাপারে আমাদেরকে ধমক দিচ্ছে, এমনই যদি
হয় তবে তো আমরা অকৃতকার্য এবং আমাদের আমল সবই ব্যর্থ। ইবনু নুমায়র তার বর্ণনায়
‘আজা’ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৭১৬৫।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, ফলে আমাদের এক একজন বকরীর মত মল ত্যাগ করত। এর
সাথে কোন কিছুই মিশ্রিত থাকত না।
৭১৬৬।
শায়বান ইবনু ফররুখ (রহঃ) খালিদ ইবনু উমায়র আদাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উকবা ইবনু
গাযওয়ান (রহঃ) একদা আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন এবং প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও
গুনকীর্তন করে বললেন,
আম্মা বাদ! দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবার সংবাদ দিয়েছে। দুনিয়ার সামান্য কিছু বাকী
রয়েছে, যেমন
খানার পর বরতনে কিছু খাদ্য উচ্ছিষ্ট থকে, যা ভক্ষণকারী রেখে দেয়। একদিন এ দুনিয়া ছেড়ে
তোমরা অবিনশ্বর জগতের দিকে রওয়ানা করবে। সুতরাং তোমরা ভবিষ্যতের জন্য কিছু নেকী
নিয়ে রওয়ানা কর। কেননা আমার সামনে আলোচনা করা হয়েছে যে, জাহান্নামের
এক কোণে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হবে, অতঃপর উহা সত্তর বছর পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে যেতে
থাকবে, তথাপিও
উহা তার তলদেশে পৌছতে পারবে না। আল্লাহর শপথ! জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে। তোমরা কি
এতে বিস্ময় বোধ করছ?
এবং আমার নিকট এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত
চল্লিশ বছরের পথ। অচিরেই একদিন এমন আসবে, যখন উহা মানুষের ভীড়ে পরিপূর্ণ থাকবে। আমি আমার
প্রতি লক্ষ্য করেছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথী সাত ব্যক্তির সপ্তম জন ছিলাম। তখন আমাদের নিকট গাছের পাতা
ব্যতীত আর কোন খাদ্যই ছিল না। ফলে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গেল। এ সময় আমি একটি চাঁদর
পেয়েছিলাম। অতঃপর আমার ও সা’দ ইবনু মালিকের জন্য আমি উহাকে দু-টুকরা করে নেই। এক
টূকরা দিয়ে আমি লুঙ্গি বানিয়েছি এবং অপর টুকরা দিয়ে লুঙ্গি বানিয়েছে সা’দ ইবনু
মালিক (রাঃ)। আজ আমাদের সকলেই কোন না কোন শহরের আমীর। অতঃপর তিনি বলেন, আমি আমার
নিকট বড় এবং আল্লাহর নিকট ছোট হওয়া থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। সমস্ত পয়গাম্বরের
নবুয়্যাতই এক পর্যায়ে নির্বাপিত হয়ে পড়েছে। অবশেষে উহা বাদশাহীর রুপ পরিগ্রহ
করেছে। আমাদের পর আগমনকারী আমীর-উমারাদের সংবাদ তোমরা অচিরেই পাবে এবং তাদেরকে
পরীক্ষা করতে পারবে।
৭১৬৭।
ইসহাক ইবনু উমার ইবনু সালীত (রহঃ) খালিদ ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। জাহেলী যুগ
পেয়ে ছিলেন, খালিদ
(রহঃ) বলেন, একদা
উতবা ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) বক্তৃতা দিলেন। তখন তিনি বসরার আমীর ছিলেন। অতঃপর ইসহাক
সুত্রে শায়বানের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭১৬৮।
আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) খালিদ ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি
উতবা ইবনু গাযওয়ান (রাঃ)-কে একথা বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, এক সময় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাহল সাতজনের সপ্তম ব্যক্তি ছিলাম, তখন হবলা বৃক্ষের পাতা ব্যতীত আমাদের কোন
খাদ্য ছিল না। পাতা খেতে খেতে অবশেষে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে যায়।
৭১৬৯।
মুহাম্মাদ ইবনু উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবীগন
প্রশ্ন করলেন, হে
আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? উত্তরে
বললেন, আকাশে
মেঘ না থাকা অবস্হায় দ্বিপ্রহরের সময় সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবীগণ
বললেন, জী
না। অতঃপর তিনি বললেন,
আকাশে মেঘ না থাকা অবস্হায়–পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবীগণ
বললেন, জি
না। এরপর তিনি বললেন,
সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ! চন্দ্র সূর্যের কোন একটি দেখতে তোমাদের
যেরুপ কষ্ট হয় তোমাদের প্রতিপালককেও দেখতে তোমাদের ঠিক তদ্রূপ কষ্ট হবে। আল্লাহর
সাথে বান্দার মিলন হবে। তখন তিনি বললেন, হে অমুক! আমি কি তোমাকে ইজ্জত দান করিনি, নেতৃত্ব
দান করিনি, জোড়া
মিলিয়ে দেইনি, ঘোড়া,উট তোমার
অনুগত করে দেইনি এবং প্রাচুর্যের মাঝে তোমার পানাহারের ব্যবস্হা করিনি? জবাবে
বান্দা বলবে, হ্যা, হে আমার
প্রতিপালক! অতঃপর তিনি বলবেন, তুমি কি মনে করতে যে, তুমি আমার
সাথে সাক্ষাৎ করবে?
সে বলবে, না।
তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি
যেমনিভাবে আমাকে ভূলে গিয়েছিলে অনুরুপভাবে আমিও তোমাকে ভুলে যাচ্ছি। অতঃপর দ্বিতীয়
অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে মিলন হবে। তখন তিনি তাকেও বলবেন, হে অমুক!
আমি কি তোমাকে সম্মান দান করিনি, নেতৃত্ব দেই নি, তোমার জোড়া মিলিয়ে দেইনি, উট-ঘোড়া
তোমার অনুগত করে দেইনি এবং সূখ-সাচ্ছন্দ্যে পানাহারের জন্য তোমাকে কি সুযোগ করে
দেই নি? সে
বলবে, হাঁ
করেছেন, হে
আমার প্রতিপালক! অতঃপর তিনি বলবেন, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে এ কথা তুমি মনে
করতে? সে
বলবে, না।
তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে এ কথা কি তুমি মনে
করতে? সে
বলবে, না।
তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছিলে অনুরুপভাবে আমিও
তোমাদেরকে বিষ্মিত হব। অতঃপর তিনি অপর এক ব্যক্তির আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হবে।
অতঃপর পূর্বের অনুরুপ বলবেন। তখন লোকটি বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার প্রতি এবং কিতাব
ও রাসুলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। আমি সালাত আদায় করেছি, সাওম পালন
করেছি এবং সাদাকা করেছি। এমনিভাবে সে যথাসম্ভব নিজের প্রশংসা করবে। এমতাবস্হায়
আল্লাহ তাআলা বলবেন,
এখনই তোমার মিথ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর তাকে বলা হবে, এখনই আমি তোমার উপর আমার সাক্ষী কায়িম করব।
তখন বান্দা মনে মনে চিন্তা করতে থাকবে যে, কে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে? তখন তার
মুখে মোহর দেয়া হবে। এবং তার উরু, গোশত ও হাড়কে বলা হবে, তোমরা কথা
বল। ফলে তার উরু, গোশত
ও হাড়ি তার আমল সম্পর্কে বলতে থাকবে। এ ব্যবস্হা এ জন্য করা হবে যেন, আত্মপক্ষ
সমর্থন করার কোন অবকাশ তার আর বাকি না থাকে। এই ব্যক্তি হচ্ছে মুনাফিক। তার প্রতি
আল্লাহ তাআলা অন্তুষ্ট হবেন।
৭১৭০।
আবূ বকর ইবনু নযর ইবনু আবূ নযর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলাম। এ সময় তিনি হেসে
বললেন, তোমরা
কি জান, আমি
কেন হাসছি? আমরা
বললাম, এ
সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ বান্দা তার
প্রতিপালকের সাথে যে কথা বলবে, এ জন্য হাসছি। তখন বান্দা বলবে হে আমার
প্রতিপালক! তুমি কি আশ্রয় দাওনি আমাকে যুলম হতে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হাঁ আমি কারো প্রতি যূলূম করি না। অতঃপর
বান্দা বলবে, আমি
আমার ব্যাপারে নিজের সাক্ষ্য ব্যতীত অন্য কারো সাক্ষী হওয়াকে জায়িয মনে করি না।
তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আজ তুমি নিজেই তোমার সাক্ষী হওয়ার জন্য যথেষ্ট
এবং সম্মানিত লিপিকার বৃন্দও। অতঃপর বান্দার মূখের উপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং
আর অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে হুকুম করা হবে যে, তোমরা বল। তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। এরপর
বান্দাকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে। তখন বান্দা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে লক্ষ্য করে
বলবে, অভিশাপ
তোমাদের প্রতি, তোমরা
দূর হয়ে যাও। আমি তো তোমাদের জন্যই ঝগড়া করছিলাম।
৭১৭১।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনকে প্রয়োজন
অনুপাতে জীবিকা দান কর।
৭১৭২।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে
আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান কর। আমরের বর্ণনায়
‘আল্লাহুম্মার জুক’ শব্দটি বর্ণিত আছে।
৭১৭৩।
আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) উমারা ইবনু কা’কা (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
তবে এ রিওয়ায়েতে ‘কাওতা’ এর স্থলে ‘কাফা ফা’ শব্দ বর্ণিত আছে।
৭১৭৪।
যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইররাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্বীনায় আসার পর তার পরিজন উপর্যুপরী তিন দিন
গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি। আর এ অবস্হায় তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল।
৭১৭৫।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ধারাবাহিক তিন দিন গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি, এ অবস্হায়ই তিনি তাঁর পথে চলে যান।
৭১৭৬।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, ধারাবাহিক
দুই দিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার যবের রুটি কখনো তৃপ্ত
হয়ে ভক্ষণ করেননি। এ অবস্হায়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
ইন্তেকাল হয়ে যায়।
৭১৭৭।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মদ
(রাঃ)-এর পরিবার তিন দিনের অধিক গমের রুটি কখনো পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি।
৭১৭৮।
আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উপর্যুপরী
তিন দিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার গমের রুটি পরিতৃপ্ত
হয়ে খাননি। এ অবস্হায়ই তিনি তাঁর পথে চলে যান।
৭১৭৯।
আবূ কুরায়ব (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার দুই দিন পরিতৃপ্ত হয়ে গমের রুটি ভক্ষণ
করেননি। দু-দিনের এক দিন তিনি খুরমা খেয়েই কাটাতেন।
৭১৮০।
আমর নাকিদ (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার মাস-মাস এমনভাবে কাটাতাম যে, আমরা আগুনও
জ্বালাতাম না। আমরা শুধু খূরমা ও পানি খেয়েই কাটিয়ে দিতাম।
৭১৮১।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও কুরায়ব (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। এতে রয়েছে যে, ‘ইন কুন্না লামাঙ্কুছু’ কিন্তু ‘আলা মুহাম্মাদ’
কথাটির উল্লেখ নেই। আবূ কুরায়বের বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে যে, হ্যা, যখন গোশত
আসত তখন অগ্নি প্রজ্জলিত করা হত।
৭১৮২।
আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আলা ইবনু কুরায়ব আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন, তখন আমার
পাত্রে সামান্য কিছু যব ছিল। আমি তা থেকেই খেতাম। এভাবে অনেক দিন চলে যায়। অতঃপর আমি
তা ওযন দিলাম। ফলে উহা শেষ হয়ে গেল।
৭১৮৩।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আমার
বোনের ছেলে! আমরা নূতন চাঁদ দেখতাম এরপর পূনরায় নূতন চাঁদ দেখতাম অর্থাৎ দু”মাসে
তিনটি নতুন চাঁদ দেখতেন। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরে
আগুন জ্বলত না। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে খালা!
আপনারা কিভাবে দিনাতিপাত করতেন? তিনি বললেনঃ দুটো কালো জিনিস, খুরমা ও
পানি দ্বারা। তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় আনসারী
প্রতিবেশী ছিল। তাদের ছিল দুগ্ধবতী উটনী ও বকরী। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সেগুলো দোহন করে এর দুধ তার নিকট পাঠাতেন এবং আমরা তাই
পান করতাম।
৭১৮৪।
আবূ তাহির (অন্য সনদে) হারুন ইবনু সাঈদ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মরে গেছেন অথচ দুবেলা তিনি রুটি ও যায়তূন দ্বারা কখনো পরিতৃপ্ত হননি।
৭১৮৫।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (অন্য সনদে) সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বিদায় গ্রহণ করেছেন, অথচ লোকেরা
এখন দুটি কালো বস্তু তথা খুরমা ও পানি খেয়ে পরিতৃপ্ত হচ্ছে।
৭১৮৬।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকাল হয়েছে, অথচ আমরা দুটি কাল বস্তু তথা পানি ও খূরমা খেয়ে
পরিতৃপ্ত হচ্ছি।
৭১৮৭।
আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) নসর ইবনু আলী (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। তবে এখানে শুধু ‘অমা শাব্বিনা মিন আশ অয়াদিন’ এ কথাটই বর্ণিত আছে।
৭১৮৮।
মুহাম্মদ ইবনু আববাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ঐ
সত্তার কসম, যার
হাতে আমার প্রাণ। বর্ণনাকারী ইবনু আববাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, ঐ সত্তার
কসম, যার
হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ। এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার-পরিজনকে পরিতৃপ্ত করতে পারেননি। এ
অবস্থায়ই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন।
৭১৮৯।
মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-কে স্বীয় আঙ্গুল দ্বারা কয়েকবার ইশারা করতঃ একথা বলতে শুনেছি যে, ঐ সত্তার
কসম! যার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ উপর্যুপরি তিন দিন পর্যন্ত আল্লাহর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার গমের রুটি দ্বারা কখনো পরিতৃপ্ত
হননি। এমতাবস্হায় তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন।
৭১৯০।
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
তোমরা কি সুখ-সাচ্ছন্দ্যে পানাহার করছনা? অথচ আমি তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি যে, পেট ভরার জন্য নিম্নমানের খেজুরও তিনি পাননি।
বর্ণনাকারী কুতায়বা ‘বিহি’ শব্দটি উল্লেখ করেননি।
৭১৯১।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সিমাক (রহঃ) থেকে এ
সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন তবে সিমাক (রহঃ) যুহায়রের হাদীসের মধ্যে অতিরিক্ত এ
কথাটি বর্ণনা করেছেন যে, অথচ বর্তমানে তোমরা খুরমা ও মাখনের বিভিন্ন
প্রকার খাদ্য ব্যতীত কোন খাদ্য পছন্দ করনা।
৭১৯২।
মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নূমান
(রহঃ)-কে বক্তৃতারত অবস্থায় আমি একথা বলতে শুনেছি যে, উমর (রাঃ)
বলেছেন, মানুষ
কি পরিমাণ দুনিয়া কামাই করেছে। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি
দেখেছি যে, তিনি
ক্ষুধার তাড়নায় সারা দিন অস্হির থাকতেন। পেট ভরার মত নিম্নমানের একটি খেজুরও তিনি
পেতেন না।
৭১৯৩।
আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি তাকে প্রশ্ল করল যে, আমরা কি মুহাজির ফকীরদের অন্তভুক্ত নই? একথা শুনে
আব্দুরল্লাহ তাকে বললেন, তোমার কি স্ত্রী নেই, যার নিকট
তুমি গিয়ে থাক? জবাবে
সে বলল, হাঁ
আছে। অতঃপর তিনি বললেন, বসবাস করার জন্য তোমার কি বাসস্হান নেই? সে বলল, হ্যা আছে।
তখন তিনি বললেন, তবে
তো তুমি ধনীদের অন্তভুক্ত। এরপর সে বলল, আমার একজন খাদিমও আছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তাহলে তো
তুমি বাদশাহ। আবূ আব্দুর রহমান বলেন, একদা তিন ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস
(রাঃ)-এর নিকট এলেন। তখন আমি তার নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এসে তারা বলল, হে আবূ
মুহাম্মাদ! আমাদের কোন কিছুই নেই। না ব্যয় করার মত পয়সা আছে, না আছে
সাওয়ারী, না
আছে কোন আসবাব সামগ্রী। অতঃপর তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা যা চাও আমি তাই করব। তোমাদের মনে চাইলে
তোমরা আমার নিকট চলে এসো। আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে যা রেখেছেন আমি তোমাদেরকে তা
দান করব। তোমরা চাইলে,
বাদশাহর নিকট আমি তোমাদের আলোচনা করব। আর তোমাদের মনে চাইলে তোমরা ধৈর্য ধারণ
কর। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের
দিন ফকীর মুহাজির ব্যক্তিগণ ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে পৌছে যাবে।
একথা শুনে তারা বললেন,
আমরা ধৈর্য ধারন করব, আমরা কিছুই চাই না।
৭১৯৪।
ইয়াহইয়া ইবনু আইউব,
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসহাবে হিজ্বর সামূদ সম্প্রদায়
সম্পর্কে সাহাবাদেরকে বলেছেন শাস্তি প্রাপ্ত এ সম্প্রদায়ের উপর দিয়ে কান্না জড়িত
অবস্হায় তোমাদের পথ অতিক্রম করা উচিৎ। যদি তোমাদের কান্না না আসে তাদের এলাকায়
কিছুতেই প্রবেশ করবে না। যাতে এমনটি না ঘটে যে, যে আযাব তাদের উপর নাযিল হয়েছিল, অনুরুপ
আযাব তোমাদের উপরও নাযিল হয়ে যায়।
৭১৯৫।
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে একদা আমরা হিজর অধিবাসীদের এলাকা দিয়ে পথ
অতিক্রম করছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
বললেন, যারা
নিজেদের প্রতি যূলুম করেছে তাদের জনপদ দিয়ে তোমরা কান্না জড়িত অবস্হায় যাবে। এ
আশংকায় যে, তাদের
উপর যে আসাব নাযিল হয়েছে অনুরুপ আযাব তোমাদের উপরও যেন নাযিল
না হয়ে যায়। অতঃপর ধমক দিয়ে তিনি তার সাওয়ারীকে আরো দ্রুতগতি করলেন এবং উক্ত
অঞ্চল অতিক্রম করলেন।
৭১৯৬।
হাকাম ইবনু মুসা আবূ সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে হিজর তথা সামূদ
সম্প্রদায়ের জনপদে পৌছলেন। অতঃপর লোকেরা তথাকার কুয়া হতে পানি উঠালেন এবং এর
দ্বারা আটার খামীর তৈরী করলেন। এ দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে এ পানি ফেলে দেয়া এবং খামীর উষ্ট্রিকে খাওয়ায়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আর
তাদেরকে ঐ কুপ হতে পানি সংগ্রহ করার নির্দেশ দিলেন, যে কুপ হতে সালিহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
উষ্ট্রি পানি পান করত।
৭১৯৭।
ইসহাক ইবনু মুসা আনসারী (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে ‘ফাসতাকু মিন বারিহা’ এর স্হলে ‘অয়তাযানুবিহি’ শব্দ রয়েছে।
৭১৯৮।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা”নাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিধবা ও মিসকীনের প্রতি অনুগ্রহকারী ব্যক্তি
আল্লাহর পথে জিহাদকারী ব্যক্তির সমতুল্য। বর্ননাকারী বলেন, আমার মনে
হয় তিনি এও বলেছেন যে,
ঐ ব্যক্তি অক্লান্ত সালাত আদায়কারী ও অনবরত সিয়াম সাধনাকারী ব্যক্তির সমতূল্য।
৭১৯৯।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আত্নীয় বা অনাত্নীয় ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী ও আমি
জান্নাতে এ দুই আঙ্গূলের মত থাকব। বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) হাদীস বর্ণনার সময়
শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলীর দ্বারা ইশারা করেছেন।
৭২০০।
হারুন ইবনু সাঈদ ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন মুসজিদে নববী নির্মাণের ব্যাপারে লোকজন
তার সমালোচনা করছিল তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ, অথচ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
মসজিদ নির্মাণ করবে-বুকায়ব (রহঃ) বলেন, রাবঅ আসিম মনে হয় এও বলেছেন যে, আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে;
আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরুপ ঘর তৈরী করবেন। হারুনের বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তার
জন্য জান্নাতে ঘর তৈরী করবেন।
৭২০১।
যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
উসমান ইবনু আফফান (রহঃ) মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা করলে লোকেরা এটাকে অপছন্দ করল।
তারা চাচ্ছিল যে, তিনি
উহাকে পূর্বের অবস্থায় রেখে দেন। তখন তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে একথা বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ
নির্মাণ করবে, আল্লাহ
তা আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরুপ ঘর নির্মাণ করবেন।
৭২০২।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল হামীদ ইবনু জাঁফর (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর
নির্মাণ করবেন।
৭২০৩।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ একদা এক ব্যক্তি কোন এক জঙ্গলে ভ্রমণ
করছিলেন। এমতাবস্হায় হঠাৎ মেঘখন্ড হতে এ আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, অমুকের
বাগানে পানি দাও। সঙ্গে সঙ্গে ঐ মেঘখন্ডটি একদিকে যেতে লাগল। অতঃপর এক প্রস্তর
পূর্ণ ভূমিতে ধারাপাত করল। ঐ স্থানের নালা সমূহের একটি নালা ঐ পানিতে সম্পূণরুপে
ভরে গেল। তখন সে লোকটি পানির অনুসরণ করে চলল। যেতে যেতে সে এক ব্যক্তিকে তার
বাগানে দণ্ডায়মাল অবস্হায় কোদাল দিয়ে পানি ফিরাচ্ছে, দেখতে পেল। এ দেখে সে তাকে বলল, হে আল্লাহর
বান্দা! তোমার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক, যা তুমি মেঘ খণ্ডের মাঝে শুনতে পেয়েছ। অতঃপর
বাগানের মালিক তাকে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জিজ্ঞেস করলে
কেন? জবাবে
সে বলল, যে
মেঘের এ পানি, এর
মাঝে আমি এ আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, তোমার নাম নিয়ে বলছে যে, অমুকের
বাগানে পানি দাও। অতঃপর বলল, তুমি এ (বাগানের ব্যাপারে) কি আমল কর? মালিক বলল, যেহেতু
তুমি জিজ্ঞেস করছ,
(তাই বলছি) আমি এ বাগানের উৎপাদিত ফসলের প্রতি লক্ষ্য করি।
অতঃপর এর এক-তৃতীয়াংশ সাদাকা করি, এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার পরিজন আহার করি
এবং এক তৃতীয়াংশ এতে ফিরিয়ে দেই (চাষাবাদ ও বাগানের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করি)।
৭২০৪।
আহমাদ ইবনু আব্দা দাব্বী (রহঃ) ওয়াহাব ইবনু কায়সান (রহঃ) থেকে এ সনদে (অনুরুপ
হাদিস বর্ণনা করেছেন)। তবে এতে একথা উল্লখ রয়েছে যে, অতঃপর সে বলল, এর এক-তৃতীয়াংশ আমি মিসকিন, প্রার্থী ও
মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করি।
৭২০৫।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আমি শিরক
হতে শরীকদের মধ্যে সর্বাধিক বেপরোয়া। যদি কোন ব্যাক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমি
ব্যাতিরেকে অন্য কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে (শরীক ও শিরকী
কাজকে) তাঁর অবস্থায় ছেড়ে দেই।
৭২০৬।
উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি লোক সমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে
(নেক আমল) করে আল্লাহ্ তা’আলাও (কিয়ামতের ময়দানে) তাঁর (কৃতকর্মের) উদ্দেশ্যের
কথা লোকদেরকে জানিয়ে ও শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যাক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে (কোন
সৎ কাজ) করে, আল্লাহ্
তা’আলাও তাঁর (প্রকৃত উদ্দেশ্যের) কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন (অপদস্থ
করবেন)।
৭২০৭।
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জুনদুব আল-আলাকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (লোক সমাজে) প্রচারের
উদ্দেশ্য (নেক) আমল করে আল্লাহ্ তা’আলাও তাঁর (প্রকৃত উদ্দেশ্যের) কথা লোকদের
শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যাক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে (কোন সৎকাজ) করে আল্লাহ্
তা’আলাও তার (প্রকৃত উদ্দেশ্যের) কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন।
৭২০৮।
ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে এ সনদে (অনুরুপ হাদিস বর্ণনা
করেছেন)। তবে এতে অধিক একথা আছে যে, রাবী বলেন, তাকে (সুফিয়ান) ব্যাতিত অন্য কাউকে আমি একথা
বলতে শুনিনি যে, “রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন”।
৭২০৯।
সাঈদ ইবনু আমর আশআছী (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। অর্থাৎ তিনি এ হাদিসটি মারফু
বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে এ কথা বলেতে শুনেছি। সুফিয়ান সাওরীর হাদিসের অনুরুপ এ হাদিসটিও।
৭২১০।
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সতবাদী আমানতদার ব্যাক্তি ওয়ালীদ ইবনু হারব (রহঃ) থেকে অনুরুপ
সনদে বর্ণনা করেছেন।
৭২১১।
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, বান্দা এমন
কথা বলে, যার
ফলে সে জাহান্নামের অত দূরে নিক্ষিপ্ত হয় যা পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের মধ্যস্থিত
ব্যবধানের অধিক।
৭২১২।
মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দা এমন কথা বলে, যার ক্ষতি
সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা (গবেষণা) করে না। ফলে সে জাহান্নামের এমন গভীরে নিক্ষিপ্ত
হয় যা পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যস্থিত ব্যবধানের চেয়েও অধিক দূরে।
৭১২৩।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া,
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু
ইবরাহিম ও আবূ করায়ব (রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী বলেন, তাকে
[উসামা (রাঃ)] কে বলা হল, আপনি উসমান (রাঃ) এর নিকট গিয়ে (আপত্তি
উত্থাপিত বিষয়ে) আলাপ আলোচনা করেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি তাঁর সাথে কথা বলি না, তোমরা কি
এটা মনে করছ? তোমাদের
শুনিয়ে কথা বলব? আল্লাহর
কসম! আমার ও তাঁর মধ্যকার যে কথা বল্বার, আমি তাকে তা বলেছি। তবে আমি এমন কোন ব্যাপারের
সূচনা করতে চাই না,
যে ব্যাপারে আমিই হব এর সূচনাকারী। আর কোন ব্যাক্তি আমার আমীর হলে তাঁর
সম্পর্কে আমি এ কথাও বলতে চাই না যে, তিনই সর্বোত্তম ব্যাক্তি। কেননা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি একথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের
দিন এক ব্যাক্তিকে উপস্থিত করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তাঁর
উদরস্থ নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এরপর গাধা যেমন চাক্কী নিয়ে ঘুরে অনুরূপভাবে সেও
এগুলি নিয়ে ঘুরতে থাকবে। তখন জাহান্নামীরা তাঁর চারপাশে সমবেত হয়ে বলবে, হে অমুক!
তোমার কি হয়েছে? তুমি
কি সৎকাজের আদেশ দিতেনা এবং অসৎ কর্ম হতে নিষেধ করতে না? সে বলবে
হ্যাঁ, তবে
আমি সৎকর্মের আদেশ দিতাম, কিন্তু নিজে তা পালন করতাম না এবং মন্দ কর্মে
নিষেধ করতাম কিন্তু নিজে তা করতাম।
৭২১৪।
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা উসামা
ইবনু যায়দ (রাঃ) এর নিকট ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি তাকে বললেন, উসমান
(রাঃ) এর নিকট গিয়ে তিনি যা করছেন এ বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করতে আপনাকে কিসে
বাঁধা দিচ্ছে? অতঃপর
[জারীর (রহঃ)] অনুরুপ বর্ণনা করলেন।
৭২১৫।
যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মদ
ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, নিজের
অপরাধ প্রকাশকারী ব্যাতিত আমার উম্মাতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। নিজদের অপরাধ
প্রকাশ করার মানে হচ্ছে এই যে, মানুষ রাতে কোন অপরাধ জনিত কাজ করে, অতঃপর সকাল
হয় আর তাঁর প্রতিপালক উহা গোপন করে রাখেন। অথচ সে নিজেই বলে, হে অমুক!
গতরাতে আমি এই কাজটি করেছি। অথচ রাত্রে তাঁর প্রতিপালক উহাকে গোপন রেখেছেন এবং
অবিরত তাঁর প্রতিপালক তা গোপন রাখছিলেন আর সে রাত যাপন করছিল। কিন্তু সকালে সে
তাঁর প্রতিপালকের গোপন রাখা বিষয়টিকে প্রকাশ করে দিল। রাবী যুহায়র (রহঃ) — এর
স্থলে — শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
৭২১৬।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, দুই
ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাঁচি দেয়ার পর তিনি এক
জনের জন্য দু’আ করলেন। কিন্তু অপর জনের জন্য দু’আ করলেন না। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে দু’আ করেন নি, সে বলল, অমুক হাঁচি দিয়েছে আপনি তাকে দু’আ করলেন, আর আমিও
হাঁচি দিয়েছি কিন্তু আপনি আমাকে হাচির দু’আ করেন নি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তো আল্লাহর প্রশংসা করেছনে আলহামদুলিল্লাহ্ বলেছে; কিন্তু
তুমি আল্লাহর প্রসংসা করনি।
৭২১৭।
আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭২১৮।
যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ বুরাদা (রহঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি
আবূ মূসা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তখন ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কন্যার ঘরে ছিলেন।
তখন আমি হাঁচি দিলাম;
কিন্তু আবূ মূসা (রাঃ) আমাকে দু’আ করলেন না। অতঃপর সে (ফযলের কন্যা) হাঁচি দিল, তিনি তাকে
দু’আ করলেন। আমি আমার মায়ের নিকট ফিরে এসে তাকে এ সম্পর্কে জানালাম। এরপর (কোন এক
সময়) আবূ মূসা (রাঃ) আমার আম্মার নিকট আসলে তিনি তাকে বললেন, তোমার নিকট
আমার ছেলে হাঁচি দিয়েছিল, তুমি তাকে দু’আ করনি। কিন্তু সে (ফযলের কন্যা)
হাঁচি দিলে তুমি তাকে দু’আ করেছ। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তোমার ছেলে
হাঁচি দিয়েছে কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করেনি, আলহামদুলিল্লাহ্ বলে নি। তাই আমিও তাকে দু’আ
দেয়নি। আর সে (মহিলা হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, তাই আমিও
তাকে দু’আ দিয়েছি। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে
শুনেছি যে, তোমাদের
কেউ যদি হাঁচি দেয় এবং আলহামদুলিল্লাহ্ বলে তাহলে তোমরা তাকে দু’আ দিবে। আর যদি
সে আলহামদুলিল্লাহ্ না বলে তবে তোমরাও তাকে দু’আ দিবে না।
৭২১৯।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) সালাম
ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট হাঁচি দেয়ার পর তিনি তাকে বললেন ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ্ তোমার প্রতি
রহম করুন)। অতঃপর সে আরেক বার হাঁচি দেবার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁর সর্দি লেগেছে।
৭২২০।
ইয়াহইয়া ইবনু আইউব,
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হাই তোলা শয়তানের পক্ষে হতে (আসে)। তোমাদের
কেউ যদি হাই তোলে তবে যথাসম্ভব সে যেন তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
৭২২১।
আবূ গাসসান মিসামাঈ মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর
মুখের উপর হাত রাখে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখের ভিতরে) প্রবেশ করে।
৭২২২।
কতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর
মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে। কেননা এ সময় শয়তান (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে।
৭২২৩।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাতের মধ্যে তোমাদের কেউ যদি হাই তোলে
তবে সে যেন যথা সম্ভব তাকে প্রতিহত করে। কেননা, শয়তান এ সময় (মুখ দিয়ে) প্রবেশ করে।
৭২২৪।
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুহায়লের পিতা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) এর পুত্র আবূ সাঈদ
খুদরী (রাঃ) এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশর ও
আবদুল আজিজের অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
৭২২৫।
মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে আর জীন
সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করা হয়েছে ধুয়া বিহিন আগুনের শিখা হতে এবং আদম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছে তোমাদের নিকট বর্ণিত বস্তু হতে।
৭২২৬।
ইসহাক ইবনু ইবরাহিম,
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না আম্বরী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রাযী (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ বনী ইসরাইলের একদল লোক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। জানা নেই তাঁরা কোথায় গিয়েছে।
আমার মনে হয় তারাই ইঁদুর (হয়ে গিয়েছে)। তোমরা কি দেখছ না যে, এদের জন্য
যদি উষ্ঠ্রীর দুধ রাখা হয় তবে তাঁরা তা পান করে না। কিন্তু বকরীর দুধ রাখা হলে
তাঁরা তা পান করে নেয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ হাদীস আমি কা’ব (রাঃ) এর নিকট বর্ণনা করার পর
তিনি আমাকে বললেন, এ
হাদিসটি তুমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ।
কথাটি তিনি আমাকে বারবার বললে অবশেষে আমি বললাম, আমি কি তাওরাত পাঠ করি? রাবী ইসহাক
তাঁর বর্ণনায় —- এর স্থলে —- বাক্যটি উল্লেখ করেছেন।
৭২২৭।
আবূ করায়ব মুহাম্মদ ইবনু আ’লা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, ইঁদুর
(মানুষের) বিকৃত প্রানী। এর নিদর্শন হচ্ছে এই যে, এদের সামনে বকরীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তা পান
করে, আর
উষ্ঠ্রীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তাঁর একটু স্বাদ গ্রহন করেও দেখেনা। এ কথা শুনে কা’ব
(রাঃ) তাকে বললেন, তুমি
নিজে কি (এ হাদিসটি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছ? তিনি বললেন, তা না হলে, কি তাওরাত
আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে?
৭২২৮।
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একই ছিদ্র হতে মুমিন দু’বার দংশিত হয় না। আবূ
তাহির ও হারামালা (অন্য সনদে) যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
৭২২৯।
হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী ও ফাররুখ ইবনু শায়বান (রহঃ) সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের অবস্থা ভারি অদ্ভুত। তাঁর সমস্ত
কাজই তাঁর জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ব্যাতিত অন্য কারো জন্য এ কল্যাণ লাভের ব্যাবস্থা
নেই। তাঁরা আনন্দ (সুখ শান্তি) লাভ করলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তা তাঁর
জন্য কল্যাণকর হয়, আর
দুঃখকষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারন করে, এও তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়।
৭২৩০।
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যাক্তি অপর এক ব্যাক্তির প্রশংসা
করল। এ কথা শুনে তিনি বললেন, হতভাগা! তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে
দিয়েছ, তুমি
তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেলেছ। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। অতঃপর তিনি
বললেনঃ তোমাদের কারো যদি তাঁর সঙ্গীর প্রশংসা করতেই হয় তবে সে যেন বলেন ‘অমুক
সম্পর্কে আমার ধারনা’ আল্লাহ্ তা’আলাই তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবে জানেন, (আমি তাঁর
ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে জানি না)। আর আল্লাহর উপর খোদকারী করে কারো পরিশুদ্ধতা
ঘোষণা করছি না। পরিনাম সম্পর্কিত জ্ঞান আল্লাহরই আছে। (তবে) আমি মনে করি সে এরুপ।
৭২৩১।
মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, (একদিন)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক ব্যাক্তি সম্পর্কে আলোচনা হয়। তখন
অপর এক ব্যাক্তি বলল,
হে আল্লাহর রাসুল! অমুক অমুক কাজের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর পর তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কোন ব্যাক্তি নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হতভাগা! তুমি তো তোমার সাথীর গর্দান কেটে ফেললে। বারবার
তিনি কথাটি বললেন, তবে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কারো যদি তাঁর ভ্রাতার প্রশংসা করতেই
হয় তবে সে যেন বলেন,
অমুক সম্পর্কে আমার ধারনা যে, সে এমন (বাস্তবে হলেই এ কথাটি বলতে পারবে), তবে
আল্লাহর সামনে আমি কাউকে নির্দোষ বলছি না। আমর আন-নাকিদ (অন্য সনদে) আবূ বকর
ইবনুুূ আবূ শায়বা (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে ইয়াযীদ ইবনু যুরায় (রহঃ) এর
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের [হাশিম ও শায়বা (রহঃ) এর ] হাদিসে এ
কথাটি উল্লেখ নেই যে,
অতঃপর জনৈক ব্যাক্তি বলল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
পর তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি আর কেউ নেই।
৭২৩২।
আবূ জা’ফর মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে অপর ব্যাক্তির প্রশংসা করতে এবং
তাতে অতিশয়োক্তি করতে শুনলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা তো (ঐ ব্যাক্তিকে) ধ্বংস করে
দিয়েছ, অথবা
বললেন, লোকটির
পিঠ ভেঙ্গে দিয়েছ।
৭২৩৩।
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আবূ মা’মার (রহঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, এক
ব্যাক্তি দাড়িয়ে কোন এক আমীরের প্রশংসা করতে আরম্ভ করলে মিকদাদ (রাঃ) তাঁর মুখে
মাটি ছুঁড়ে মারতে শুরু করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিশয়
প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি ছুঁড়ে মারার জন্য আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন।
৭২৩৪।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হাম্মাম ইবনুল হারিছ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, এক
ব্যাক্তি উসমান (রাঃ) এর প্রশংসা করতে শুরু করল। তখন মিকদাদ (রাঃ) হাঁটুর উপর ভোর
করে বসলেন, (কারন)
তিনি মোটা (মানুষ) ছিলেন। অতঃপর তিনি প্রশংসাকারীর মুখে নুড়ি পাথর ছুঁড়ে মারতে
লাগলেন। তখন উসমান (রাঃ) তাকে বললেন, (হে মিকদাদ!) তুমি কি করছ? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অতিশয় প্রশংসাকারীদেরকে দেখলে তাদের
মুখমণ্ডলে মাটি ছুঁড়ে মারবে।
৭২৩৫।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (অন্য সনদে) উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
মিকদাদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
৭২৩৬।
নাসর ইবনু আলী আল-জাহযামী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ স্বপ্নে দেখলাম, আমি
মিসওয়াক করছি। তখন দুই ব্যাক্তি এসে আমাকে আকর্ষণ করল। একজন বড় এবং অপরজন ছোট।
অতঃপর তাদের ছোটজনকে আমি আমার মিসওয়াকটি দিতে গেলাম, তখন আমাকে বলা হল, বড়কে দাও।
তখন সেটি আমি বড়জনকে দিয়ে দিলাম।
৭২৩৭।
হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) উরাওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাদিস বর্ণনা করছিলেন
এবং বলছিলেন, হে
হুজরা বাসিনী, শুনুন
হে হুজরা বাসিনী! শুনুন। তখন আয়িশা (রাঃ) সালাত আদায় করছিলেন। সালাতান্তে তিনি
উরওয়া (রাঃ) কে বললেন,
এ কি বলছে, তুমি
তা শুনতে পেয়েছ কি?
অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে কথা বলতেন, যদি কোন
গণনাকারী (তাঁর শব্দ ও বর্ণ) গননা করতে চাইত তবে সে তা গুনতে পারত।
৭২৩৮।
হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার বাণী তোমরা লিপিবদ্ধ করোনা। কুরআন
ব্যাতিত কেউ যদি আমার বানী লিপিবদ্ধ করে থাকে তবে যেন তা মুছে ফেলে। আমার হাদিস
বর্ণনা কর, এতে
কোন অসুবিধা নেই। যে ব্যাক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে- হাম্মাম (রহঃ) বলেন, আমার মনে
হয় তিনি
বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে; তবে সে যেন
জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
৭২৩৯।
হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) সুহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক বাদশাহ ছিল। তাঁর ছিল এক
যাদুকর। বার্ধক্যে উপনীত হয়ে সে বাদশাকে বলল, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, সুতরাং
একজন কিশোরকে আপনি আমার নিকট পাঠিয়ে দিন, যাকে আমি যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব। তখন
যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য বাদশাহ তাঁর নিকট এক কিশোর (বালক) কে পাঠাল। বালকের
যাত্রাপথে ছিল এক পাদ্রী। বালক তাঁর নিকট বসল এবং তাঁর কথা শুনল। তাঁর কথা বালকের
পছন্দ হল। অতঃপর বালক যাদুকরের নিকট যাত্রাকালে সর্বদাই পাদ্রির নিকট যেত এবং তাঁর
নিকট বসত। এরপর সে যখন যাদুকরের নিকট যেত তখন সে তাকে প্রহার করত। অবশেষে যাদুকরের
ব্যাপারে সে পাদ্রির নিকট অভিযোগ করল। তখন পাদ্রি বলল, তোমার যদি
যাদুকরের ব্যাপারে আশংকা হয় তবে বলবে, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আসতে বাঁধা দিয়েছে, আর যদি
তুমি তোমার পরিবারের লোকদের ব্যাপারে আশংকাবোধ কর তবে বলবে, যাদুকর
আমাকে আসতে বাঁধা দিয়েছে। এমনি একদিন হঠাৎ সে একটি ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন
হল, যা
লোকদের পথ আটকিয়ে রেখেছিল। এ অবস্থা দেখে সে বলল, আজই জানতে পারব, যাদুকর উত্তম না পাদ্রী উত্তম। অতঃপর একটি পাথর
হাতে নিয়ে সে বলল, হে
আল্লাহ্! যদি যাদুকরের তরীকার তুলনায় পাদ্রীর তরীকা আপনার নিকট প্রিয় হয়, পছন্দনীয়
হয়, তবে
এই প্রস্তারাঘাতে এই হিংস্র প্রাণীটি নিহত করে দিন, যেন লোকজন চলাচল করতে পারে। অতঃপর সে তাঁর
প্রতি পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং উহাকে মেরে ফেলল। ফলে লোকজন আবার যাতায়াত আরম্ভ করল।
এরপর সে পাদ্রীর নিকট এসে সে সম্পর্কে পাদ্রীকে সংবাদ দিল। পাদ্রী বলল, বৎস আজ
তুমি তো আমার থেকেও শ্রেষ্ঠ হয়ে গিয়েছ। তোমার মর্যাদা এ পর্যন্ত পৌঁছেছে যা আমি
দেখতে পাচ্ছি। তবে অচিরেই তুমি পরীক্ষার সুম্মুখীন হবে। যদি পরীক্ষার মুখোমুখি হও
তবে আমার কথা বলবে না। এ দিকে বালক জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য এবং লোকদের
সমুদয় রোগ ব্যাধির চিকিৎসা করতে লাগল। বাদশাহের পরিষদবর্গের এক ব্যাক্তি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তাঁর (বালকটির) সংবাদ সে শুনতে পেয়ে বহু উপহার ও উপঢৌকন নিয়ে তাঁরা তাঁর কাছে আসল
এবং তাকে বলল, তুমি
যদি আমাকে আরোগ্য দান করতে পার তবে এ সব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিব। এ কথা শুনে বালক
বলল, আমি
তো কাউকে আরোগ্য দান করতে পারি না। আরোগ্য তো দেন আল্লাহ্ তা’আলা। আপনি যদি
আল্লাহর উপন ঈমান আনয়ন করেন তবে আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করব, আল্লাহ্
আপনাকে আরোগ্য দান করবেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করলেন, আল্লাহ্
তা’আলা তাকে রোগমুক্ত করে দিলেন। অতঃপর সে বাদশাহের নিকট এসে অন্যান্য সময়ের ন্যায়
এবারও বসল। বাদশাহ তাকে বললেন, তোমার দৃষ্টিশক্তি কে ফিরিয়ে দিয়েছেন? সে বলল, আমার
প্রতিপালক। এ কথা শুনে বাদশাহ বলল, আমি ব্যাতিত তোমার অন্য কোন প্রতিপালকও আছে কি? সে বলল, আমার ও
আপনার সকলের প্রতিপালকই আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন। অতঃপর বাদশাহ তাকে পাকড়াও করে
অব্যাহতভাবে শাস্তি দিতে লাগল। অবশেষে সে বালকের কথা বলে দিন। তখন বালককে আনা হল।
বাদশাহ তাকে বললেন,
হে বৎস! তুমি তো যাদুতে এত দক্ষ হয়েছ যে, তুমি জন্মান্ধকে ও কুষ্ঠ রোগীকে নিরাময় করে দাও
এবং এই কর সেই কর! সে বলল, আমি কাউকে নিরাময় করি না। আল্লাহই শিফা দান
করেন। তখন বাদশাহ তাকেও পাকড়াও করে শাস্তি দিতে থাকল। অবশেষে সে পাদ্রীর কথা বলে
দিল। এবার পাদ্রীকে ধরে আনা হল এবং তাকে বলা হল তুমি তোমার দ্বীন পরিত্যাগ কর। সে
অস্বীকার করল, ফলে
তাঁর মাথার তালুতে করাত রেখে তাকে বিদীর্ণ করে ফেল হল। এতে তাঁর দেহ দুই খণ্ড হয়ে
মাটিতে পড়ে গেল। অতঃপর বাদশাহর পরিষদকে আনা হল এবং তাকে বলা হল তোমার দ্বীন থেকে
ফিরে আস। সে তা অস্বীকার করলে তার মাথার মাঝখানে করার রাখল এবং তাকেও দুই টুকরা
করল। পরিশেষে ঐ বালকটিকে আনা হল এবং তাকেও একই কথা বলা হল যে তুমি তোমার দ্বীন
থেকে ফিরে আসো। সেও অস্বীকার করল। অতঃপর বাদশাহ তাকে তাঁর করিপয় সহযোগী
(কর্মচারী)’র হাওয়ালা করে দিয়ে বলল, তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকে সহ
পাহাড়ে আরোহণ কর। পর্বত শৃঙ্গে পৌছার পর সে যদি তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে আসে তবে ভাল।
অন্যথা তাকে সেখান থেকে ছুঁড়ে মারবে। তারপর তাঁরা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে সহ
পাহাড়ে আরোহণ করল। তখন সে দু’আ করে বলল, হে আল্লাহ্! আপনার যেভাবে ইচ্ছা তাদের
ব্যাপারে আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান (আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন)
তৎক্ষণাৎ তাদেরকে সহ পর্বত প্রকম্পিত হতে লাগল। ফলে তাঁরা পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়ল। আর
সে হেঁটে হেঁটে বাদশাহের নিকট চলে এলো। এ দেশে বাদশাহ তাকে বলল তোমরা সঙ্গীরা
কোথায়? সে
বলল, আল্লাহ্
আমার জন্য তাদের ব্যাপারে যথেষ্ট হয়েছে (আমাকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করেছেন)। আবার
বাদশাহ তাকে তাঁর কতিপয় সহচরের হাওয়ালা করে বলল, তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং ক্ষুদ্র নৌকায় উঠিয়ে
তাকে মাঝ সমুদ্রে নিয়ে যাও। অতঃপর সে যদি তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে আসে তবে ভাল, অন্যথা
তোমরা তাকে সমুদ্রে ফেলে দাও। তাঁরা তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল। এবারও সে দু’আ করে বলল, হে আল্লাহ্!
আপনার যেভাবে ইচ্ছা তাদের ব্যাপারে আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান (আমাকে তাদের
ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন)। তৎক্ষণাৎ নৌকাটি তাদেরকে সহ উল্টে গেল। ফলে তাঁরা
সকেলেই পানিতে ডুবে গেল আর ছেলেটি হেঁটে হেঁটে বাদশাহের নিকট চলে এলো। বাদশাহ তাকে
বলল, তোমার
সাথিরা কোথায়? সে
বলল, আল্লাহ্
তাদের ব্যাপারে আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে (আমাকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করেছেন)।
অতঃপর সে বাদশাহকে বলল, তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে না যে পর্যন্ত না
তুমি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি মুতাবিক কাজ করবে। বাদশাহ বলল, সে আবার কি? বালক বলল, একটি
ময়দানে তুমি লোকদেরকে সমবেত কর, তারপর একটি কাঠের শূলীতে আমাকে উঠিয়ে আমার
তীরদানি হতে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখ, এরপর বিসমিল্লাহি রাব্বুল আলামিন বলে আমার দিকে
তীর ছুঁড়ে মার। এ যদি কর তবে তুমি আমাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে। তাঁর কথা মোতাবেক
বাদশাহ লোকদেরকে এক ময়দানে সমবেত করল এবং তাকে একটি কাঠের শূলীতে চড়াল, অতঃপর তাঁর
তীরদানী হতে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে বিসমিল্লাহি রাব্বুল আলামিন বলে
তাঁর দিকে ছুঁড়ে মারল। তীর তাঁর কানপট্টিতে গিয়ে বিধল। অতঃপর সে (বালক) কানপট্টিতে
তীরের স্থানে নিজের হাত রাখল এবং মারা গেল। এ দেখে সমবেত লোকজন বলে উঠল “আমরা এই
বালকের রবের প্রতি ঈমান আনলাম”। এই সংবাদ বাদশাহকে জানানো হল এবং তাকে বলা হল
লক্ষ্য করেছেন কি? আপনি
যে পরিস্থিতি হতে আশংকা করছিলেন, আল্লাহর কসম! সে আশংকাজনক পরিস্থিতই আপনার
মাথার উপর চেপে বসেছে। সমস্ত মানুষই বালকের রবের উপর ঈমান আনয়ন করেছে। তখন বাদশাহ
রাস্তার মাথায় গরত খননের নির্দেশ দিল। গর্ত খনন করা হল এবং তাদের অগ্নি প্রজ্বলিত
করা হল। অতঃপর বাদশাহ হুকুম করল যে, যে ব্যাক্তি তাঁর ধর্মমত বর্জন না করবে তাকে
তাতে নিক্ষেপ করব, অথবা
সে বলল, তাকে
বলবে সে যেন অগ্নিতে প্রবেশ করে। লোকেরা তাই করল। অবশেষে এক মহিলা আসল, তাঁর সঙ্গে
ছিল এক শিশু। সে অগ্নিতে পতিত হবার ব্যাপারে ইতস্তত করছিল, এ দেখে
শিশু তাকে বলল, হে
আম্মাজান, ধৈর্যধারণ
করুন, আপনি
তো সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
৭২৪০।
হারুন ইবনু মারুফ ও মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) উবাদ ইবনু ওয়ালীদ ইবনু উবাদা ইবনু
সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি এবং আমার পিতা আনসারী সাহাবীদের
ইনতিকালের পূর্বে আনসারী সাহাবীদের এই মল্লোয় ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে
বের হলাম। প্রথমে আমাদের যার সাথে সাক্ষাৎ হল, তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবূল ইউসর (রাঃ)। এক বোঝা কিতাব নিয়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন
তাঁর এক গোলাম। তখন আবূল ইউসুর (রাঃ)-এর গায়ে ছিলএকটি চাঁদর এবং একটি মুআফিরী
কাপড়। অনুরুপভাবে তার গোলামের গায়েও একটি চাঁদর এবং একটি মুআফিরী কাপড় বিদ্যমান
ছিল। অতঃপর আমার আব্বা তাঁকে বললেন, হে চাচাজান! আপনার চেহারায় যে ক্রোধের নিদর্শন
দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, হ্যা, কারন বনী হারাম গোত্রের অমুকের পূত্র অমুকের
নিকট আমি মাল পাওনা আছি। তাগাদার উদ্দেশ্যে আমি তার বাড়ীতে গিয়েছি। অতঃপর আমি
সালাম দিয়ে বললাম, অমুক
কোথায়, সে
বাড়ী আছে কি? বাড়ীর
ভেতর হতে তারা বলল- সে বাড়ীতে নেই। এমতাবস্হায় তার এক কিশোর ছেলে বাইরে আমার নিকট
এলো। আমি তাকে বললাম,
তোমার বাবা কোথায় ? সে বলল, আপনার আওয়াজ শুনে আমার আম্মার খাটের ভেতর
পালিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে এলো। অবশ্যই আমি জানি তুমি কোথায়
আছে। অতঃপর সে বেরিয়ে আসল। আমি তাকে বললাম, আমার থেকে আত্মগোপন করার ব্যাপারে কিসে তোমাকে
অনুপ্রাণিত করেছে। সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে বলব, তবে মিথ্যা
বলব না। আল্লাহর কসম,
আপনি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী, তাই এ
বিষয়টিকে আমি ভয়ানক মনে করেছি যে আমি আপনার সাথে মিথ্যা কথা বলব অথবা অঙ্গীকার করে
অঙ্গীকার ভঙ্গ করব। আল্লাহর কসম! আমি একজন অভাবগ্রস্হ ব্যক্তি। আমি বললাম, সত্যই তুমি
আল্লাহর কসম করে বলছো?
সে বলল, হ্যা।
আমি আল্লাহর কসম করে বলছি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম করে বলছো? সে বলল, হাঁ
আল্লাহর কসম করে বলছি। আমি আবারো বললাম, আল্লাহর কসম করে বলছো? সে বলল, হাঁ, আল্লাহর
কসম করে বলছি। অতঃপর এতদসশ্লিষ্ট দলীল আনা হল এবং আবূল ইউসর নিজ হস্তে উহা মুছে
দিলেন। এরপর তিনি বললেন, আমার ঝণ পরিশোধের মত টাকা যদি তোমার হস্তগত হয়
তবে তুমি তা পরিশোধ করবে। অন্যথায় তুমি আমার পক্ষ হতে মুক্ত। অতঃপর আবূল ইউসর
(রাঃ) দুটি আঙ্গুল তার চক্ষুদ্বয়ের উপর রেখে বললেন, আমার উভয় চোখের দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে, আমার উভয়
কান শ্রবণ করেছে এবং হৃদয় ধমনীর প্রতি ইশারা করে তিনি বললেন, আমার হৃদয়
তা সংরক্ষণ করেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন
অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় বা মাফ করে দেয় আল্লাহ তাআলা তাকে তাঁর স্বীয়
ছায়ার নীচে আশ্রয় প্রদান করবেন। উবাদা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, চাচাজান! যদি আপনি আপনার গোলামের শরীর থেকে
চাঁদরটি নিয়ে তাকে আপনার মুআফিরী কাপড়টি দিয়ে দেন অথবা তার মুআফিরী কাপড়টি নিয়ে
আপনি যদি তাকে আপনার চাঁদরটি দিয়ে দেন তবে তো আপনার এক জোড়া কাপড় এবং তারও এক
জোড়া কাপড় হয়ে যায়। এ কথা শুনে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ!
আপনি এ বাচ্চার মধ্যে বরকত দিন। এরপর বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমার এ দু-চোখ প্রত্যক্ষ
করেছে, আমার
এ দুকাল শ্রবণ করেছে এবং হদয় ধমনীর প্রতি ইশারা করে তিনি বললেন, আমার এ
হৃদয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সংরক্ষণ করেছে, তিনি
বলেছেনঃ তোমরা যা খাও, তাদেরকেও তা খাওয়াও, তোমরা যা
পরিধান কর তাদেরকেও তা পরিধান করাও। অধিকন্তু তিনি বললেন, কিয়ামতের
দিন তার আমার নেকী নিয়ে যাওয়ার চেয়ে আমার তাকে পার্থিব সামগ্রী যা একেবারেই তুচ্ছ
তা দান করা খুবই সতে ব্যাপার। অতঃপর আমরা সেখান থেকে রওনা হয়ে জাবির ইবনু
আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট মসজিদে আসলাম। তখন তিনি এক কাপড় শরীরে জড়িয়ে সালাত আদায়
করছিলেন। এ দেখে আমি লোকদের উপর দিয়ে আস্ফালন করতঃ তার ও কিবলার মাঝামাঝি স্থানে
গিয়ে বসলাম অতঃপর আমি বললাম, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। আপনি এক কাপড়
পরিহিত অবস্হায় সালাত আদায় করছেন। অথচ আপনার পাশ্বেই আপনার চাঁদর পড়ে আছে। এ কথা
শুনে তিনি আঙ্গুলগুলো প্রশস্ত করতঃ উহাদেরকে কামানের মত বাকা করে আমার বক্ষের দিকে
ইশারা করে বললেন, আমার
ইচ্ছা। যে তোমার মত কোন অবিবেকী ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমি যা করছি তা প্রত্যক্ষ
করবে এবং করবে তার অনুরুপ আচরণ। শোন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইবনু আবের একটি ডালা হাতে আমাদের এ মসজিদে আসলেন এবং মসজিদের পশ্চিম
দিকে কফ দেখে তিনি ডালার দ্বারা ঘষে উহা পরিস্কার করলেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ
ফিরিয়ে বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে, আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন? জাবির
(রাঃ) বলেন, এতে
আমরা তীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম। অতঃপর তিনি আবার বললেনঃ তোমাদের কেউ পছন্দ করবে কি
যে, আল্লাহ
তাআলা তার থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নেন? তিনি বলেন, এবারও আমরা শংকিত হয়ে গেলাম, তৎপর
পূনরায় তিনি বললেনঃ তোমাদের কে চায় যে তার থেকে আল্লাহ তাআলা মুখ ফিরিয়ে নেনই
উত্তরে আমরা বললাম,
না! হে আল্লাহ! আমাদের কেউ এমনটি চায়না। অতঃপর বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাযে
দাড়াবে, তখন
আল্লাহ তাআলা তার চেহারামুখী থাকেন। সূতরাং মুসল্লী যেন সম্মুখের দিকে, ডান দিকে
থু-খু না ফেলে; বরং
সে যেন বাম দিকে বাম পায়ের নীচে থু-থু ফেলে আর যদি তড়িৎ কফ চলে আসে তবে সে যেন
কাপড়ের উপর এভাবে থু-থু ফেলে, এবং পরে যেন এক অংশকে অন্য অংশের উপর এভাবে
গুটিয়ে নেয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার নিকট
সুগন্ধি নিয়ে আসো। তখন আমাদের গোত্রের একজন যুবক লম্ফ দিয়ে উঠে দৌড়িয়ে তার
বাড়ীতে গেল এবং হাতের তালূতে করে সুগন্ধি নিয়ে এলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে সুগন্ধি নিয়ে ডালার মাথায় মেখে কফের দাগ ছিল উহাতে তা
লাগিয়ে দিলো। জাবির (রাঃ) বলেন, এখান থেকেই তোমরা তোমাদের মসজিদে সুগন্ধি মাখতে
আরম্ভ করেছ। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ধুওয়াত প্রান্তরের যুদ্ধে রওনা হলাম। তিনি মাজদী ইবনু আমর
জুহানী কাফিরকে তালাশ করছিলেন। অবস্থা এই ছিল যে, আমাদের পাচ পাঁচ, ছয় ছয়, সাত সাত ব্যক্তি পালাক্রমে একটি উটের উপর আরোহণ
করতো। অতঃপর এক আনসারী ব্যক্তির আরোহণের পালা আসলে সে তার উটটিকে বসিয়ে এর উপর
আরোহণ করল এবং উহাকে চানাল। চলমাল অবস্হায় উটটি তার উপর কিছু ধূলাবালি উড়াল। ফলে
সে ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল- আল্লাহ তোমার প্রতি লানত করেন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটি কে যে তার উষ্ট্রের প্রতি
অভিসম্পাত করল? সে
বলল, আমি, ইয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি এর থেকে নেমে যাও ! আর অভিসপ্ত উটটি আমাদের সাথে থাকতে
পারবে না। তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপর বদ দুআ করোনা এবং নিজের ধন-সম্পদের উপরও
না। এমন যেন না হয় যে,
তোমরা এমন মুহুর্তে বদ দু’আ করবে যখন আল্লাহর নিকট কিছু চাওয়া হয় এবং
গ্রহণযোগ্যও হয়। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথে আমরা আবার চললাম,
সন্ধ্যা হলে আমরা আরবের এক জল স্থানের নিকট পৌছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কে আছে, যে আমাদের আগে গিয়ে হাউজটি ঠিকঠাক করবে এবং
নিজেও পান করবে আর আমাদেরকেও পান করাবে। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি
দাঁড়িয়ে বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! এই ব্যক্তি অগ্রে যাবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জাবিরের সাথে আর কে যাবে? তখন জাববার ইবনু সাখর (রাঃ) দাঁড়ালেন। অতঃপর
আমরা দু-জন কুসার ধারে গেলাম এবং এক বা দুবালতি কুয়াতে ছাড়লাম। এরপর আমরা কুয়াটি
মাটি দ্বারা লেপলাম। পরে আমরা কসা হতে পানি উঠাতে আরম্ভ করলাম এবং পানি দ্বারা উহা
কানায় কানায় ভরে দিলাম। অতঃপর সর্ব প্রথম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে এলেন এবং বললেন, তোমরা কি আমাকে অনুমতি দাও? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই হে
আল্লাহর রাসুল! অতঃপর তিনি তাঁর উষ্ট্রী ছাড়লেন পানি পানের জন্য। উষ্ট্রী পানি পান
করল। অতঃপর তিনি তাঁর উষ্ট্রীকে টান দিলে উহা পানি পান বন্ধ করল এবং পেশাব করল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে উহাকে আলাদা স্থানে নিয়ে গেলেন
এবং বসালেন। এরপর পুনরায় তিনি হাউজের নিকট এসে অযু করলেন, আমি দাড়িয়ে
থাকলাম এবং পরে আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযুর স্হান
হতে অযু করলাম। জাব্বার ইবনু সাখর (রাঃ) সৌচকার্যের উদ্দেশ্যে গমন করলেন। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে দাড়ালেন। আমার
গায়ে ছিল একটি চাঁদর। আমি তার উভয় আচল বিপরীত দিকে দেয়ার চেষ্টা করলাম ; কিন্তু তা
সংকুলান হলনা। তবে উহাতে কতগুলো রেশমের থোবা ছিল। তাই উহাকে আমি উপূড় করলাম ও এর
দুই পার্শ্ব বিপরীতভাবে দুই কাঁধের উপর রাখলাম এবং গর্দানের সাথে উহাকে বাঁধলাম।
অতঃপর আমি এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাম পার্শে
দাড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘূরিয়ে আমাকে তাঁর ডান পার্শে দাঁড় করালেন। অতঃপর
জাব্বার ইবনু সাখর (রাঃ) এসে অযু করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
বাম পার্শে দাড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উভয়ের হাত
ধরে আমাদেরকে পেছনের দিকে সরিয়ে দিলেন এবং আমাদেরকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। এ সময়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার প্রতি তীক্ষ্ণভাবে তাকাতে আরম্ভ
করলেন; কিন্তু
আমি বুঝতে পারছিলাম না, অবশেষে আমি বুঝতে পারলাম। তখন তিনি আমাকে স্বীয়
হস্ত দ্বারা ইশারা করে বললেন, তুমি তোমার কোমর বেঁধে নাও। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতান্তে বললেনঃ হে জাবির! আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেনঃ চাঁদর যদি প্রশস্ত হয় তবে এর উভয় প্রান্ত
বিপরীতভারে উভয় কাঁধের উপর রেখে দিবে আর চাঁদর যদি সংকীর্ণ হয় তবে উহাকে তোমার
কোমরে বেঁধে নিবে। জাবির (রাঃ) বলেন, পুনরায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে চলতে আরম্ভ করলাম। তখন জীবিকা হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেই একটি
করে খেজুর পেত, উহা
সে চুষত এবং পরে আবার উহা কাপড়ের মধ্যে রেখে দিত। তখন আমরা আমাদের ধনূকের দ্বারা
গাছের পাতা পাড়তাম এবং উহা ভক্ষণ করতাম। ফলে আমাদের চোয়ালে ঘা হয়ে গেল। এ সময় এক
দিন এক ব্যক্তি খেজুর বন্টন করল এবং বন্টনের সময় এক ব্যক্তিকে ভুলে গেল। আমরা তাকে
নিয়ে চললাম এবং তার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে বললাম, তাকে খেজুর দেয়া হয়নি। অবশেষে তাকেও খেজুর দেয়া
হল। সে দাড়িয়ে খেজুর গ্রহণ করল। জাবির (রাঃ) বলেন, পুনরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আমরা চলতে আরম্ভ করলাম। যেতে যেতে আমরা এক প্রশস্ত উপত্যকায়
অবতরণ করলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচকার্য
সমাধানের উদ্দেশ্যে গমন করলেন আমিও পানির পাত্র নিয়ে তার পেছনে পেছনে গেলাম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব করে দেখলেন; কিন্তু
পর্দা করবার জন্য কিছুই পেলেন না। হঠাৎ উপত্যকার এক প্রান্তে দুটি বৃক্ষ দেখতে
পেলেন। তাই তিনি এর একটির নিকট গেলেন এবং এর একটি ডাল হাতে নিয়ে বললেন, আল্লাহর
হুকুমে তুমি আমার আনুগত্য কর। ডালটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর বশ্যতা স্বীকার করে নিল, লাগাম পরিস্তিতি ঐ উটের ন্যায় যা তার চালকের
অনুসরণ করে। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় বৃক্ষটির নিকট এসে এর একটি ডাল হাতে নিয়ে বললেন, আল্লাহর
হুকুমে তুমি আমার বশ্যতা স্বীকার কর। এটিও অনুরুপ তার বশ্যতা স্বীকার করে নিল।
অতঃপর তিনি যখন উভয় বৃক্ষের মধ্য স্হলে পৌছলেন, তখন তিনি ডাল দু-টো এক সাথে মিলিয়ে বললেন, আল্লাহর
হুকুমে তোমরা আমার সন্মুখে একত্রিত হয়ে যাও, মিলে যাও। তারা উভয়ই একত্রিত হয়ে গেল, মিলে গেলা
জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর
আমি এই ভয়ে দৌড়িয়ে চলে এলাম যে, না জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার সন্নিকটে হবার বিষয়টি জেনে ফেলেন এবং আরো দুরে চলে যান। ইবনু
আববাদ (রাঃ) উল্লেখ করেছেন। অতঃপর আমি বসে মনে মনে কিছু বলছিলাম। এমতাবস্হায় নযর
উঠিয়েই আমি দেখলাম যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সষ্মুখ দিক হতে তাশরীফ আনছেন। উভয়
বৃক্ষই তখন আলাদা হয়ে স্বীয় কান্ডের উপর দণ্ডায়মান অবস্হায় ছিল। অতঃপর আমি দেখলাম
যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাথা দ্বারা ডানে ও বামে
ইশারা করলেন। এ স্হলে বর্ণনাকারী আবূ ইসমাঈলও তার মাথা দ্বারা ইশারা করেছেন। এরপর
তিনি সামনের দিকে এগিয়ে এসে আমার পর্যন্ত পৌছে আমাকে বললেন, হে জাবির!
তুমি তো আমার অবস্থানের স্হান দেখেছো? আমি বললাম, হাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি বললেন, তুমি ঐ বৃক্ষ দু-টির নিকট যাও এবং উহাদের
প্রত্যেকটির একটি একটি ডাল কেটে নিয়ে এসো। অতঃপর তুমি আমার এ স্থানে পৌছে একটি
ডাল ডান দিকে এবং অপরটি বাম দিকে রেখে দিবে। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি উঠলাম
এবং একটি পাথর হাতে নিয়ে উহাকে ভেঙ্গে তীক্ষ্ণ করলাম। ফলে উহা ভীষণ ধারাল হল।
অতঃপর আমি বৃক্ষ দুটির নিকট আসলাম এবং এক এক বৃক্ষ হতে এক একটি করে ডাল কাটলাম।
এরপর ডাল দুটো হেঁচড়িয়ে নিয়ে আমি রওনা হলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর অবস্হান স্হলে পৌছে একটি ডাল আমার ডান দিকে এবং অন্য ডালটি আমার
বাম দিকে রেখে দিলাম। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আপনি যা বলেছেন আমি তা পালন করেছি। তবে এর কারণ কি-। জবাবে তিনি বললেনঃ
দুঁটি কবরের পার্শ দিয়ে পথ অতিক্রম কালে আমি দেখেছি, তাদের কবরে আযাব হচ্ছে। আমি তাদের জন্য সুপারিশ
করার ইচ্ছা করছি। সম্ভবত এ তাদের আযাবকে লঘু করে দিবে, যতক্ষন
পর্যন্ত এ ডাল দু,টো
তরতাজা থাকবে। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা সৈন্যদের মাঝে আসলাম। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে জাবির! ঘোষণা দাও, অযু করার
জন্য। আমি ঘোষণা করলাম, হে লোক সকল! অযু কর, অযু কর, অযু কর।
এরপর আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! কাফেলার নিকট এক ফোটা পানিও নেই। কাফেলায় এক আনসারী সাহাবী ছিলেন।
তিনি কাষ্ঠের ডালাতে ঝূলন্ত একটি মশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর জন্য পানি ঠাণ্ডা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি অমুকের ছেলে অমুক আনসারীর নিকট
যাও এবং দেখ তার মশকে কিছু পানি আছে কিনা? আমি তার নিকট গেলাম এবং দেখলাম, মশকের মুখে
শুধু এক ফোটা পানি আছে। উহা যদি আমি মাশকের ভেতর ফেলে দেই তবে শুষ্ক মশকই উহা খেয়ে
নিঃশেষ করে দিবে। এ দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে
আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! মশকের মুখে এক ফোটা পানি ব্যতীত আর কোন পানই মশকের ভেতর নেই। উহাও
যদি মশকের ভেতর ঢেলে দেয়া হয় তবে মশকের শুষ্ক অংশই উহা খেয়ে নিঃশেষ করে দিবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যাও, উহা নিয়ে
এসো। জাবির (রাঃ) বলেন, উহা আমি নিয়ে আসলাম। তিনি উহা হাতে নিয়ে কি যেন
পড়তে শুরু করলেন। আমি তা বুঝতে পারাছিলাম না। এবং সাথে সাথে নিজ হস্ত মুবারক
দ্বারা উহা টিপতে আরম্ভ করলেন। অতঃপর তিনি মশকটি আমার হাতে দিয়ে বললেন, হে জাবির!
একটি বড় পাত্র নিয়ে আবার ঘোষণা দাও। আমি ঘোষণা করলাম। হে কাফেলা! একটি বড় পাত্র, একটি বড়
পাত্র অতঃপর আমার কাছে একটি বড় পাত্র নিয়ে আসা হলো! আমি উহা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে নিয়ে রাখলাম। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হস্ত মুবারক উক্ত পাত্রের উপর বুলালেন এবং
পাত্রের তলায় নিজের হাত রেখে আঙ্গূলগুলো ছড়িয়ে রাখলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে জাবির!
ঐ মশকটি নিয়ে এসো এবং বিসমিল্লাহ- বলে উহার পানি আমার হাতের উপর ঢালো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ মোতাবিক -বিসমিল্লাহ- বলে আমি উহার
পানি ঢাললাম। অমনি দেখতে পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
আঙ্গুল সমূহের মধ্য হতে পানি উথলিয়ে উঠছে। অবশেষে পাত্রও উথলিয়ে উঠল এবং ঘূরতে
শুরু করল। হতে হতে পরে পাত্র পানিতে ভরপূর হয়ে গেল। তখন আবার রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে জাবির! ঘোষণা দাও, যার যার
পানির প্রয়োজন আছে। জাবির (রাঃ) বলেন, লোকজন সকলেই আসলো, পানি পান
করলো এবং তৃপ্ত হলো। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, পানির প্রযোজন আছে, এমন কোন
লোক বাকী রয়েছে কি?
অতঃপর পাত্র পানিতে ভরপূর এ অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পাত্র হতে স্বীয় হস্ত উত্তোলন করলেন। জাবির (রাঃ) বলেন,অতঃপর
লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ক্ষুধার ব্যাপারে
অভিযোগ করলেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, অচিরেই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে খাদ্য দান করবেন।
অতঃপর আমরা সমুদ্র উপকুলে আসলাম। সমুদ্র তরঙ্গায়িত হয়ে একটি মৎস্য আমাদের সম্মুখে
নিক্ষেপ করল। আমরা সমুদ্র তীরে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতঃ উহা পাকালাম, ভূনা করলাম
এবং ভক্ষণ করলাম ও তৃপ্ত হয়ে ভক্ষণ করলাম। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি এবং
অমুক অমুক পাঁচ ব্যক্তি এর চোখের গোলাকৃতির মাঝে প্রবেশ করলাম। আমাদের কাউকেই
দেখা যাচ্ছিলোনা। অতঃপর আমরা বের হয়ে এলাম। এরপর এর পাঁজরের হাড়সমূহের একটি হাড়
আমরা হাতে নিলাম এবং উহাকে ধনূকের মত বানিয়ে বৃহৎ যীন পরিহিত অবস্হায় কাফেলার সর্ব
বৃহৎ উষ্ট্রীতে আরোহণ করতঃ কাফেলার বৃহদকায় এক ব্যক্তিকে এর তলদেশ দিয়ে প্রবেশ
করার জন্য আমরা আহবান জানালাম। সে এর তলদেশ দিয়ে মাথা অবনমিত করা ব্যতিরেকেই
প্রবেশ করে চলে গেল।
৭২৪১।
সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবূ
বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার পিতার নিকট আসলেন এবং তাঁর থেকে একটি হাওদা খরীদ করলেন।
অতঃপর আমার পিতা আযিবকে বললেন, তুমি তোমার ছেলেকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও, সে উহা
আমার সাথে বহন করে আমার বাড়ী পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়ে আসবে। আমার পিতা আমাকে বললেন, তুমি উহা
উঠিয়ে নাও। আমি উহা উঠিয়ে নিলাম। অতঃপর মূল্য আদায়ের জন্য আমার পিতাও তাঁর সাথে
বের হলেন। পথিমধ্যে আমার পিতা তাকে বললেন, হে আবূ বাকর! যে রাত্রে আপনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ভ্রমণ করেছিলেন তখন আপনারা কি করেছিলেন, তা আমার
নিকট আপনি খূলে বলুন। উত্তরে তিনি বললেন, তা হলে শোন, আমরা পুর্ণ রাত্র সফর করেছি। অবশেষে যখন দিন হল, ঠিক
দ্বিপ্রহরের সময় হল রাস্তা সস্পূর্ণ খালি হয়ে গেল এবং কোন মানুষ জন আর রাস্তা
অতিক্রম করেছেন। , তখন
আমরা একটি বৃহদাকায় পাথর দেখতে পেলাম। এর ছায়া মাটিতে পড়ছিল এবং তখনো পর্যন্ত
সেখানে রৌদ্র আসেনি। তাই আমরা সেখানে গেলাম এবং আমি নিজে পাথরটির নিকট গিয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘূমানোর জন্য একটু স্থান
সমান্তরাল করলাম। এরপর একটি কম্বল উহাতে আমি বিছিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল! আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি আপনার আশেপাশের শক্রদের অবস্হান সম্পর্কে অনুসন্ধান
চালাচ্ছি। একথা শুনে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন এবং আমি তাঁর পার্শবর্তী স্হানসমূহে
অনুসন্ধান চালালাম। হঠোৎ একজন বকরীর রাখালকে দেখতে পেলাম। সে আমাদের মত উদ্দেশ্য
নিয়েই পাথরটির দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস
করলাম, ওহে!
তুমি কার গোলাম? সে
বলল, আমি
শহরবাসী এক ব্যক্তির গোলাম। আমি বললাম, তোমার বকরীতে দুধ আছে কি? সে বলল, হ্যা, আছে। আমি
বললাম, তাহলে
আমার জন্য উহা দোহন করবে কি? সে বলল, হ্যা করব। অতঃপর সে একটি বকরী নিয়ে এল। তখন আমি
তাকে বললাম, প্রথমে
পশম, মাটি
এবং খড়কুটা হতে স্তনটি একবার ঝেড়ে নাও। রাবী বলেন, এ সময় আমি বারাআ ইবনু আযিবকে এক হাত অন্য হাতের
উপর মেরে ঝাড়তে দেখেছি। অতঃপর সে কাষ্ঠের একটি পেয়ালাতে আমার জন্য সামান্য দুধ
দোহন করল। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আমার নিকট একটি পাত্র ছিল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পান করা ও অযু করার জন্য উহাতে আমি পানি
রাখতাম। অতঃপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসলাম। কিন্তু
তাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করতে আমার ইচ্ছা ছিলনা। তবে তার প্রতি আমি চেয়ে দেখি যে, তিনি নিজে
নিজেই জাগ্রত হয়ে গিয়েছেন। এরপর দুধের মাঝে আমি পানি ঢাললাম। ফলে উহা শীতল হয়ে
গেল। অতঃপর আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে একটু দুধ পান করে
নিন। তিনি দুধ পান করলেন এবং খুব খুশী হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ এখনো কি যাত্রার
সময় হয়নি! আমি বললাম,
হাঁ হয়েছে। ঠিক দ্বিপ্রহরের পর আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। এদিকে সুরাকা
ইবনু মালিক আমাদের অনুসরণ করে চলছে। আমরা তখন এক শক্ত ভূমিঁতে ছিলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল আমাদেরকে তো ধরে ফেলেছে। তিনি বললেনঃ চিন্তিত হয়োনা, আল্লাহ
আমাদের সাথে আছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর
বদূ-দু’আ করলেন। এতে তার ঘোড়া পেট পর্যন্ত যমীনে ধ্বসে গেল। আমি তা দেখতে
পাচ্ছিলাম। অতঃপর সে বলল, আমি জানি, তোমরা আমার জন্য বদূ-দুআ করেছ। আমি আল্লাহর
কসম করে বলছি, আমি
তো তোমাদের তালাশে বের হয়েছিলাম, এখন আমি তোমাদের তালাশ ছোড় ফিরে যাব। সুতরাং
তোমরা আমার জন্য দুআ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট
দুআ করলেন। এতে সে মুক্তি পেয়ে গেল। অতঃপর সে ফিরে গেল। এবং যে কোন কাফিরের সাথে
দেখা হলে সে বলত, এদিকে
আমি সব দেখে এসেছি। এদিকে কোন কিছুই নেই। মোটকথা, যার সাথেই তার দেখা হত সে তাকে ফিরিয়ে দিত। আবূ
বাকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, সুরাকা তার অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন যূহায়র ইবনু
হারব (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু হারব (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ বকর
সিদ্দীক (রাঃ) আমার পিতার নিকট হতে তের দিরহামের বিনিময়ে একটি হাওদা ক্রয় করেছেন।
অতঃপর তিনি যূহায়রের সূত্রে ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। তবে ইসরাঈল উসমান ইবনু উমার (রহঃ) এর সূত্রে বর্ণিত
হাদীসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, সে নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বদ-দুআ করেছেন। এতে পেট পর্যন্ত তার ঘোড়ার পা যমীনে
ধ্বসে যায়। সুরাকা সেখান হতেই আস্ফালন করে বলল, হে মুহাম্মদ! আমি জানি, এ তোমারই
কাজ। আমি যে বিপদে আছি এ থেকে যেন আল্লাহ আমাকে মুক্তি দেন, এ ব্যাপারে
তুমি আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ কর। আমি তোমাকে ওয়াদা দিচ্ছি যে, আমার পেছনে
যারাই তোমার তালাশে থাকবে আমি তাদের থেকে তোমার অবস্থান গোপন রাখব এবং এ হচ্ছে
আমার তীরদানী, এ
থেকে তুমি একটি তীর নিয়ে যাও। কিছু দুর পরই অমুক স্থানে তুমি আমার উট ও গোলামদেরকে
দেখতে পাবে, এর
থেকে তুমি তোমার প্রয়োজন অনুপাতে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমার উটের আমার
কোন প্রয়োজন নেই। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, রাত্রে আমরা মদ্বীনায় পৌছিলাম। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কার বাড়ীতে অবস্হান করবেন, এ নিয়ে
লোকদের মাঝে বিতর্ক শুরু হল। তখন তিনি বললেনঃ আমি আবদুল মুত্তালিবের মামার বংশ বনূ
নাজ্জারে অবতরণ করবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কবীলায়
অবতরণ করতঃ তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন। অতঃপর পূরুষ লোকেরা পাহাড়ে আরোহণ
করে, মহিলাগণ
নিজ নিজ গৃহে এবং যুবক ও ক্রীতদাসগণ রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষিপ্ত হয়ে এ আওয়াজ দিতে
লাগল যে, হে
মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসুল! হে মুহাম্মাদ! হে আল্লাহর রাসুল।