যাকাত

২১৩৫ আমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু বুকায়র আন-নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ মালে যাকাত নেই, পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণে (রৌপ্যে) যাকাত ধার্য হবে না।

২১৩৬ মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) আমর ইবনু ইয়াহহিয়া (রহঃ) তার সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২১৩৭ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি তাঁর হাতের পাচ আঙ্গূলের দ্বারা ইংগিত করেছিলেন। তারপর রাবী ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বর্ণিত পূর্ব হাদীসটির অনুরুপ বর্ণনা করেছেনন।

২১৩৮ আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ মালে যাকাত নেই, পাঁচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণ (রুপায়) যাকাত নেই।

২১৩৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত নেই এবং ঐ পরিমাণ শস্যের কমেও যাকাত নেই।

২১৪০ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শস্য এবং খেজুরের পাচ ওয়াসাকের কমে যাকাত নেই, পাচ উটের কম সংখ্যায় যাকাত নেই এবং পাঁচ উকিয়ার কম পরিমাণে (রুপায়) যাকাত নেই।

২১৪১ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু উমায়্যা (রহঃ)-এর সূত্রে এই সনদে আবদুর রহমান ইবনু মাহর্দী (রহঃ) এর অনুরুপ হার্দীস বর্ণনা করেছেন।

২১৪২ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু উমায়্যা (রহঃ)-এর সূত্রে এই সনদে আবদুর রহমান ইবনু মাহদী ও ইয়াহিয়া ইবনু আদম (রহঃ)-এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এই হাদীসের মধ্যে খেজুরের স্হলে ফলের কথা উল্লেখ রয়েছে।

২১৪৩ হারুন ইবনু মারুফ ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাচ উকিয়ার কম রুপায় যাকাত নেই, পাঁচ উটের কমে যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত নেই।

২১৪৪ আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর সারহ, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী, আমর ইবনু সাওয়াদ এবং ওয়ালীদ ইবনু সূজা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছেন, যে ভূমি নদ-নদী ও বৃষ্টির পানি দ্বারা সঞ্চিত হয়, তাতে উশর (এক দশমাংশ) ওয়াজিব হবে। আর যে ভূমিতে উটের দ্বারা পানি সেচ করা হয় তাতে অর্ধ ওশর ওয়াজিব হবে।

২১৪৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া তামীমী (র) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমের উপর তার গোলাম (ব্যাক্তিগত প্রয়োজনের)এবং ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই।

২১৪৬ আমরুন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানের উপর তার (ব্যাক্তিগত প্ররোজনের) গোলাম এবং ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই।

২১৪৭ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া কুতায়বা ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনূরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

২১৪৮ আবূ তাহির হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গোলামের জন্য (মনিবের উপর) যাকাত নেই। তবে সাদাকায়ে ফিতর আছে।

২১৪৯ জুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিন বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার (রাঃ)-কে যাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণ করেন। এর পর তাঁকে বলা হল ইবনু জামীল খালিদ ইবনু ওয়ালীদ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা আব্বাস (রাঃ) যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু জামীল তো নিঃস্ব ছিল অতঃপর আল্লাহ তাকে বিত্তশালী করেছেন এখন সে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে আর খালিদের কথা এই যে তোমরা তার প্রতি যুলূম করছ, কেননা সে তার লৌহ বর্ম ও যুদ্ধ সরঞ্জমাদি আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছে। আর আব্বাস, তাঁর (উপর দাবীকৃত) যাকাত এবং তৎসঙ্গে অনুরুপ পরিমাণ আদায় করা আমার দায়িত্বে। এরপর তিনি বললেন, হে উমর! তুমি কি জান না? চাচা বাপের সমমর্যাদা সস্পন্ন।

২১৫০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইয়াহহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেকের উপর রমযানের সাদাকা-ই-ফিতর ফরয করেছেন। প্রতিজন মুসলিম স্বাধীন, পুরুষ ও মহিলার উপর এক সা খেজুরে অথবা এক সা যব নির্ধারিত করে দিয়েছেন।

২১৫১ ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাস ও স্বাধীন ছোট-বড় প্রত্যেকের উপর সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা খেজুর অথবা এক সা যব নির্ধারিত করেন।

২১৫২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবীরমযানের সাদাকা (সাদাকাতুল ফিতর) বাবদ স্বাধীন ও ক্রীতদাস, পুরুষ ও মহিলা সকলের উপর এক সা খেজুর অথবা এক সা যব নির্ধারিত করেন। রাবী বলেন, এর পর লোকেরা অর্ধ সা গমকে এক সার সমান করে নিয়েছে।

২১৫৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা” খেজুর অথবা এক সা যব আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, (পরবতীঁকালে) লোকেরা গমের দু” মুদকে তার সমপরিমাণ হিসেরে ধরে নিয়েছে।

২১৫৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত য়ে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাধীন ও ক্রীত দাস, নর ও নারী, ছেটি ও বড় প্রত্যেক মুসলমানের উপর রমযানের সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা- খেজুর অথবা এক সা’ যব নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

২১৫৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা সাদাকাতুল ফিতর বা বদ এক সা খাদ্য (গম) অথবা এক সা” যব অথবা এক সা খেজুর অথবা এক সা পনির কিংবা এক সা কিশমিশ প্রদান করতাম।

২১৫৬ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড় স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ হতে সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা” পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পনির অথবা এক সা যব অথবা এক সা” খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ প্রদান করতাম। এভাবেই আমরা তা আদায় করতে থাকি। পরে মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরার উদ্দেশ্যে যখন আমাদের নিকট আসলেন তখন তিনি মিম্বরে আরোহণ করে উপস্থিত লোকদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দু’মুদ গম এক সা- খেজুরের সামান। লোকেরা তা গ্রহণ করে নিলেন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তো যত দিন জীবিত থাকব ঐ ভাবেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করব, যে ভাবে আমি সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে আসছিলাম।

২১৫৭ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) সাঈদ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন-আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন আমরা ছোট ও বড়, স্বাধীন ও ক্রীতদাস প্রত্যেকের পক্ষ হতে তিন প্রকার বস্তু থেকে সাদাকাতুল ফিতর বাবদ এক সা খেজুর, এক সা পনির অথবা এক সা যব প্রদান করতাম। এভাবে আমরা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করছিলাম। অতঃপর মুআবিয়া (রাঃ)-এর সময় আসল। তখন তিনি দু’মুদ গম এক সা’ খেজুরের সমান ধার্য করেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি তো সর্বদা পূর্বের ন্যায়ই আদায় করতে থাকব।

২১৫৮ মুহাম্মদ ইবনু রাফি- (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা পনির, খেজুর ও যব এ তিন প্রকার বস্তু থেকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম।

২১৫৯ আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া (রাঃ) যখন অর্ধ সা- গমকে এক সা খেজুরের সমপরিমাণ নির্ধারণ করলেন, তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) তা মেনে নিলেন না এবং বললেন, আমি সাদাকাতুল ফিতর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে যা আদায় করতাম এখনও তাই আদায় করব-এক সা খেজুর অথবা এক সা” কিশমিশ অথবা এক সা যব কিংবা এক সা- পনির।

২১৬০ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের (ঈদের) সালাতে গমনের পূর্বেই সাদাকাতূল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

২১৬১ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের (ঈদের) সালাতে গমনের পূর্বে সাদাকাতূল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

২১৬২ সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন স্বর্ন ও রৌপ্যের মালিক যদি এগুলোর হক (যাকাত) আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিনে তার জন্য আগুনের শয্যা বিছানো হবে। তারপর জাহান্নামের অগ্নিতে ঐসব (স্বর্ণ-রৌপ্য) উত্তপ্ত করে তা দিয়ে তার পার্শে ও ললাটে, পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। এর পর যখন উত্তপ্ততা কমে যাবে তখন পূনরায় তা উত্তপ্ত করা হরে। এভাবে চলতে থাকবে, দিনভর যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, যে পর্যন্ত না বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা হবে। অতঃপর দেখান হবে তার পথ হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে। বলা হল, ইয়া রাসুলল্লাহ! উট সম্বন্ধে বিধান কি? তিনি বললেন, আর উটের হক হল, পানি পান করার দিন তা দোহন করা। উটের কোন মালিক যদি এর হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত প্রান্তরে অধঃমূখী করে শয়িত করা হবে। তারপর ঐ উট পূর্বের চাইতেও অধিক মোটাতাজা অবস্হায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এমন কি একটি বাচ্চাও বাদ পড়বেনা এবং স্বীয় খুর দ্বারা উটের মালিক যদি তার হক আদায় না করে তাকে পায়ে মাড়াতে থাকবে ও মুখে কাটতে থাকবে। মালিককে দলিত করে একটি উট চলে গেলে অপরটি আসবে। এমনি করে চলতে থাকবে ঐ দিন, এদলন প্রক্রিয়া যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। অতঃপর লোকদের ফয়সালা হরে। পথ দেখানো হবে তাকে হয় তো জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! গরু ও ছাগলের হক কি? তিনি বললেন, গরু-ছাগলের কোন মালিক যদি তাদের হক আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে শয়ন করান হবে। অতঃপর গরু-ছাগল তাকে স্বীয় খুর দ্বারা দলিত এবং শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সেদিন সেগুলোর কোন একটিকেও অনুপস্থিত দেখতে পাবে না এবং তাদের মধ্যে কোন গরু-ছাগল শিংবিহীন, উল্টো শিং এবং ভাংগা শিং বিশিষ্টও থাকবে না। (দলন ও আঘাতের পর) এদের প্রথম দলটি যখন চলে যাবে তৎক্ষণাৎ অন্য দলটি এসে যাবে। ঐ দিনটি পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে। অবশেষে যখন লোকদের বিচার অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে তখন পথ প্রদর্শন করা হরে তাকে হয় তো জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! ঘোড়ার হক কি? উত্তরে তিনি বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। ঘোড়া কারো জন্য বোঝা হবে। আর কারো জন্য হবে আবরণ। আর কারো জন্য তা হবে পূণ্য। যার জন্য ঘোড়া বোঝা স্বরুপ হবে তা সে ব্যাক্তি যে তার ঘোড়াকে বেধে রেখেছে লোকদের দেখানো, গর্ব প্রকাশ এবং মুসলমানদের শক্রতা পোষণের জন্য। এ ঘোড়াই হবে তার জন্য বোঝা স্বরুপ। যে ঘোড়া কারো জন্য আবরন স্বরুপ হবে, তা সে ব্যাক্তির ঘোড়া যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য বেঁধে রেখেছে এবং এর পিঠ ও ঘাড়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আল্লাহর হকের কথাও সে ভুলে যায়নি। এ ঘোড়াই হরে তার জন্য ঢাল স্বরুপ। আর যে ঘোড়া মালিকের জন্য পূণ্য স্বরুপ হবে তা ঐ ব্যাক্তির ঘোড়া, যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর পথে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বাগান বা সবুজ তৃণভূমিতে বেঁধে রেখেছে। ঘোড়াটি ঐ চারণভূমি বাগান থেকে যে পরিমাপ ভক্ষণ করবে এর বিনিময়ে তাকে দেয়া হবে পুণ্য। অনরুপভাবে এর মল মূত্রের বিনিময়েও পরিমাণ তাকে পূণ্য দেয়া হবে। আর ঘোড়াটি যদি তার রশি ছিড়ে এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে; তবে তার প্রতিটি পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও তাকে পুণ্য দেয়া হবে। যদি মালিক ঘোড়াটি নিয়ে কোন নদী-নালা অতিক্রম করে এবং মালিক ঘোড়াটিকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না করা সত্ত্বেও যদি ঘোড়াটি কিছু পানি পান করে নেয়, তবে যে পরিমাণ পানি পান করেছে সে পরিমাণ নেকী তাকে দেয়া হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! গাধা (সমন্ধে কোন বিধান আছে কি?) উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন গাধা সম্পর্কে আমার নিকট কোন আদেশ অবর্তীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক এই একটি আয়াত বিদ্যমান আছে – “কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে-। (সুরা যিলযাল :৭-৮)।

২১৬৩ ইউনুস ইবনু আব্দুল আঁলা আল সাদাফী (রহঃ) যায়িদ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে এই সনদে হাফস ইবনু মায়সারা (রহঃ)-এর হাদীসের মর্মানুযায়ী শেয পর্যন্ত হাদীসটি বর্ননা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন আর তিনি বলেননি এবং এ হাদীসে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন ।

২১৬৪ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সোনা-এরুপা সঞ্চয়কারী ব্যাক্তি যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর এগুলোকে পাতের ন্যায় বানিয়ে এর দ্বারা তার পাচুর্য এবং ললাটে দাগ দেয়া হবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত- এমন দিনে যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর দেখানো হবে তাকে তার পথ জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। কোন উটের মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে অধোমুখী করে শায়িত করা হবে। এর পর সে উট পূর্বের চাইতেও অধিক মোটাতাজা অবস্হায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং তাকে পদদলিত করতে থাকবে। এদের শেষটি চলে গেলে আমার প্রথমটি ফিরে আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত সে দিন যে দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এরপর দেখান হবে তাকে তার পথ জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। বকরীর কোন মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে তবে তাকে প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে শায়িত করা হবে। এরপর সে বকরী পূর্বের চেয়েও অধিক মোটাতাজা অবস্হায় মালিকের নিকট উপড়ী হবে এবং স্বীয় খুর দ্বারা তাকে দলিত ও শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। এদের মধ্যে সেদিন কোনটাই শিংবিহীন এবং উল্টো শিং বিশিষ্ট থাকবে না। যখন এদের শেষটি চলে যাবে তখন আবার প্রথমটি ফিরে আসবে। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করা পর্যন্ত এমন দিনে ষে দিনের পরিমাণ হবে তোমাদের হিসাব অনুসারে পঞ্চাশ হাজার বছর। এরপর তাকে দেখান হবে তার রাস্তা জান্নাতের দিকে অথবা জাহান্নামের দিকে। রাবী সুহায়ল (রাঃ) বলেন, তিনি গরুর কথা উল্লেখ করছেন কি না, আমি জানি না। এরপর সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! ঘোড়ার হুকুম কি? তিনি বললেন (ঘোড়ার কপালে আছে) অথবা বললেন (ঘোড়া তার কপালের সাথে আবদ্ধ করা হয়েছে) বর্ণনাকারী সুহায়ল (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিয়ামত পর্যন্তের জন্য কল্যাণ) বলেছেন- কিনা, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘোড়া হরে আবরণ স্বরুপ। (তিন) অন্য এক ব্যাক্তির জন্য হবে ঘোড়া বোঝা স্বরুপ। যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য পূণ্য স্বরুপ হবে, তা সে ব্যাক্তি ঘোড়া যে তার ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় নিয়োজিত রাখে এবং সদা তৈরী রাখে তাকে তাঁরই জন্য। এ ঘোড়া যা কিছু গলধ করণ করে এর প্রতিটির তাকে দেওয়া হবে পারিশ্রমিক। যদি সে তাকে কোন সবুজ চারণ ভুমিতে চরায় তবে ঘোড়ার যা কিছু আহার করে তার প্রতিটি তৃণের বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য সওয়াব লিখবেন।। যদি সে ঘোড়াকে কোন নদী হতে পানি পান করায়, তবে যতটা পান করল তার প্রতিটি ফোটার বিনিময়ে সে সাওয়াব পাবে। এমনকি অবশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়াবের উল্লেখ করলেন এর পেশাব এবং গোবরের ব্যাপারে)। যদি তা এক বা দুটি টিলা অতিক্রম করে, তবে এর প্রতিটি কদমের বিনিময়ে রয়েছে মালিকের জন্য পূণ্য। যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য আবরণ স্বরুপ তা সে ব্যাক্তির ঘোড়া যে তার ঘোড়াকে আদর-যত্ন সহকারে সুন্দরভাবে প্রতিপালন করে ‘এবং তার ভাল অবস্হায়ও মন্দ অবস্হায় তার পেট ও পিঠের হকের কথা কখনো ভুলেনা। আর ঘোড়া বোঝা স্বরুপ হবে সে ব্যাক্তির জন্য যে ঘোড়া প্রতিপালন করে মানুষের সাথে অহংকার ও গরিমা প্রকাশ এবং লোক দেখানোর জন্য, এ ঘোড়াই তার উপর বোঝা স্বরুপ হবে। তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! গাধা সম্পর্কে হুকুম কি? তিনি বললেন, ব্যাপক অর্থবোধক আয়াতটি ব্যতীত এ সম্পর্কে আমার প্রতি আল্লাহর কোন হুকুম নাযিল করেননি। “কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে” (সূরা যিলযালঃ ৭-৮)

২১৬৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূহায়ল (রাঃ) থেকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

২১৬৬ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) সুহায়ল ইবনু আবূ সালিহ (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এর স্হলে বলেছেন এবং ললাটে দাগ দেয়ার কথা উল্লেখ করা ছাড়া কেবল পায়ে এবং পৃষ্ঠে দাগ দেয়া হবে কথাটি উল্লেখ করেছেন।

২১৬৭ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি মানুষ আল্লাহর হক আদায় না করে অথবা (বলেছেন) উটের সাদাকা আদায় না করে-এরপর রাবী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সুহায়ল তিনি তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হাদীসটির অনুরুপ।

২১৬৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে “শুনেছি, যে উটের মালিক তার (যাকাত) আদায় করবে না, কিয়ামতের দিন সে উট পুর্বের চেয়ে অধিক মোটাতাজা হয়ে মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। এরপর তাকে একটি প্রশস্ত সমতল মাঠে বসান হবে এবং ঐ উট তার পা ও খুরের দ্বারা তাকে পদদলিত করবে। যদি কোন গরুর মালিক তার যাকাত আদায় না করে তবে কিয়ামতের দিন সে গরু পূর্বের চেয়ে ও অধিক মোটা-তাজা অবস্হায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। এরপর তাকে এক প্রশস্ত সমতল প্রান্তরে বসান হবে এবং সে ছাগল তাকে শিং দ্বারা গুতাবে ও খুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে। সেদিন এ ছাগল সমুহে কোনটি শিংবিহীন এবং শিংভাঙ্গা হবে না। আর যদি সোনা-এরুপা সঞ্চয়কারী কোন ব্যাক্তি এর হক আদায় না করে, তবে তার এ সঞ্চয় কিয়ামতের দিন মাথার চুলপড়া বিষধর সাপরুপে মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং মুখ হা করে তার পেছনে ধাওয়া করবে। যখন সে সাপ তার নিকট আসবে তখন সে এর থেকে পালাবে। তখন সে তাকে ডেকে বলবে, তুমি তোমার সঞ্চয় গ্রহণ কর, যা তুমি লুকিয়ে রেখেছিলে। আমার তার কোন প্রয়োজন নেই। মালিক যখন দেখবে যে, এর থেকে বাচবার কোন উপায় নেই তখন সে সাপটির মুখে হাত-হকিয়ে দিবে। এর পর সাপটি তার হাতকে ষাঁড়ের মত কামড় দিয়ে ধরবে। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি। এর পর আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম তিনিও উবায়দ ইবনু উমায়র (রাঃ)-এর মত বললেন। রাবী আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়রকে বলতে শুনেছি, এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! উটের হক কি? তিনি বললেন, এর হক হল, পানি পান করাবার স্থানে এদেরকে দোহন করা, এদের (দ্বারা পানি উঠাবার) পত্র অন্যকে ধার দেয়া, এগুলোর মধ্যে ষাড় উট ও দুগ্ধবর্তী উটনী অন্যকে হাওলাত দেয়া এবং আল্লাহর পথে লোকদেরকে এ গুলোর উপর আরোহণ করান।

২১৬৯ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উট এবং গরু-ছাগলের কোন মালিক যদি এগুলোর যাকাত না দেয় তবে কিয়ামতের দিন তাকে এক প্রশস্ত সমতল ভূমিতে বসান হবে। এরপর খূর বিশিষ্ট প্রানী তাকে স্বীয় খুর দ্বারা দলিত করবে এবং শিংবিশিষ্ট পশু তাকে স্বীয় শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। সেদিন এদের মধ্যে শিংবিহীন এবং শিং ভাঙ্গা কোন পশু থাকবে না। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এদের হক কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উটকে উটনীর পাল নিতে দেয়া, এদের পাত্রসহ পানি উঠাবার জন্য কাউকে অস্হায়ীভাবে প্রদান করা। দুগ্ধবর্তী উচ্ছ্রী অন্যকে ধার দেয়া, পানি পান কর। বার স্থানে এদের দুগ্ধদোহন করা এবং আল্লাহর পথে এদের উপর লোকদেরকে আরোহণ করতে দেয়া। যে বিত্তশালী ব্যাক্তি তার তার মালের যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তা তার জন্য মাথার চুলপড়া বিষধর সাপে রুপন্তরিত করা হবে। অতঃপর সে সাপ যাকাত অস্বীকারকারী ব্যাক্তি যেখানে যাবে সেখানেই তাকে ধাওয়া করবে। তখন সে সাপ থেকে পলায়ন করতে থাকবে। কিন্তু তাকে বলা হবে, এই তোমার সম্পদ যার ব্যাপারে তুমি কার্পণ্য করতে। অতঃপর যখন সে দেখবে এর থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই, তখন সে তার হাত এর মুখের মধ্যে হকিয়ে দিবে। তৎপর সে সাপ তার হাত চিবাতে থাকবে, ষাড়ের চিবানোর মত।

২১৭০ আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, যাকাত আদায়কারী লোকজন আমাদের প্রতি যুলুম করে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যাকাত আদায়কারী লোকদেরকে সন্তুষ্ট করে দাও। জারীর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ বানী শুনার পর কোন যাকাত আদায়কারী ব্যাক্তি আমার নিকট হতে সন্তুষ্ট না হয়ে যায়নি।

২১৭১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইসহাক (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ইসমাঈল (রহঃ) তাঁরা সকলেই মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২১৭২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়া উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে বললেন, কা’বা গৃহের মালিকের শপথ, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আবূ যার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাঁর নিকট গিয়ে বসলাম, কিন্তু বিলম্ব না করে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতিআমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা হল অধিক সম্পদের মালিকরা। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা এদিক ওদিকে, ডানে, বামে, সন্মুখে, পাচাতে ব্যয় করেছে। তবে এদের সংখ্যা অনেক কম। উট ও গরুর-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট আসবে এবং তাকে ওদের শিং দ্বারা আঘাত করবে ও খুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে। পদদলিত করে যখনই সর্বশেষটি চলে যাবে, তৎক্ষণাৎ প্রথমটি পূনরায় ফিরে আসবে এবং তা চলতে থাকবে লোকদের ফয়সালা হওয়ার পর্যন্ত।

২১৭৩ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আতনা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি কাবা গৃহের ছায়াতলে উপবিষ্ট ছিলেন। এরপর ওয়াকীর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার! প্রাণ যমীনের উপর এমন কোন লোক নেই যে, মরে যাবে এবং রেখে যাবে এমন উট অথবা গরুর অথবা ছাগল যার যাকাত সে আদায় করে নি।

২১৭৪ আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এতে আমি খুশী নই যে, আমার জন্য উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ হোক এবং তিন দিন এ অবস্হায় অতিবাহিত হোক যে, সে স্বর্ণ থেকে আমার কাছে একটি দ্বীনার অবশিষ্ট থাকুক। তবে সে দ্বীনার ব্যতীত যা আমি কারো ঋণ পরিশোধ করার জন্য প্রস্তৃত রাখি।

২১৭৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি।

২১৭৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইশারে সময় মদিনার হাররা অঞ্চলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমরা উহুদ পর্বতের দিকে তাকিয়ে ছিলম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ যার! আমি বললাম, লাব্বাইক- ইয়া রাসুলল্লাহ! অতঃপর তিনি বললেন, আমি এই উহুদ পাহাড়টি আমার জন্য স্বর্ণ হয়ে যাক পছন্দ করি না যে, আমি তিন রাত অতিবাহিত করি এ অবস্হায় যে, যে স্বর্ণের একটি দ্বীনার ও আমার কাছে থাকুক। তবে সে দ্বীনারের কথা সতন্ত্র যা আমি ঝণ পরিশোধ করার জন্য রেখে থাকি। তবে যদি আমি ডানে, বামে, সামনে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমনিভাবে বিতরণ করি, তিনি উভয় হাতে অঞ্জলি করলেন। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমরা পথ চলতে লাগলাম। এরপর তিনি বললেন, হে আবূ যার! আমি বললাম লাব্বাইক, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, বিত্তশালী লোকেই হবে কিয়ামতের দিন গরীব। তবে যারা ব্যয় করেছে এভাবে এভাবে এভাবে যে রুপ তিনি প্রথমবার করেছিলেন সেরুপ করলেন। আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমরা পথ চলতে লাগলাম। তিনি এরপর বললেন, হে আবূ যার! আমি তোমার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অবস্হায় কর। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি যেতে যেতে আমার দৃষ্টি হতে অদূশ্য হয়ে গেলেন। আবূ যার (রাঃ) বলেন, এরপর আমি কতিপয় অর্থহীন শব্দ এবং আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে করলাম, . রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিপদের সস্মুর্খীন হয়েছেন। তখন আমি তার অনুসরণ করার ইচ্ছা করলাম। হঠাৎ ম্মরণ হল, -আমি তোমার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই অবস্থান করবে”-তার এ নির্দেশটি। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে তিনি ফিরে আসার পর, আমি যা শুনতে পেলাম তার তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলেন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার নিকট এসে বললেন, আপনার উম্মাতের কোন লোক যদি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক না করে মৃত্যৃবরণ করে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি সে চুরি এবং ব্যভিচার করে তবুও? তিনি বললেন, হা, যদি সে চুরি এবং ব্যভিচার করে তবুও।

২১৭৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি বের হলাম। দেখলাম- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী পায়চারী করছেন। তাঁর সঙ্গে অন্য কোন মানুষ ছিল না। তিনি বলেন, আমি মনে করলাম, হয়ত তাঁর সঙ্গে কারো হাঁটা তিনি পছন্দ করছেন না। তাই আমি চাঁদের ছায়ায় হাটতে আরম্ভ করলাম। এরপর তিনি এদিকে তাকালেন এবং আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? আমি বললাম, আবূ যার। আল্লাহ জন্য আপনার প্রতি আমাকে উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেন, হে আবূ যার! এসো। এরপর আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ পথ চললাম। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন বিত্তশালী লোকেরাই নিঃস্ব হবে, কিন্তু সে ব্যতীত যাকে আল্লাহ মাল দিয়েছেন, এর পর সে বিলিয়ে দিয়েছে সে সস্পদ ডানে বামে সামনে ও পেছনে এবং এর দ্বারা কল্যাণকর কাজ করেছে। তিনি বলেন, এরপর আমি তার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ চললাম। তিনি বললেন এখানে বস। এ বলে তিনি আমাকে পাথর ঘেরা একটি সমতল মাঠে বসালেন এবং বললেন- আমি তোমার কাছে ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানে বসে থাকবে। রাবী বলেন, এর পর তিনি “হাররা” এর দিকে চলতে লাগলেন। এমনকি আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার থেকে পৃথক হয়ে দীর্ঘ সময় বিলম্ভ করলেন। এর পর তিনি ফিরে আসার পথে আমি শুনতে পেলাম তিনি বলছেন, যদিও সে চুরি করে থাকে, যদিও সে ব্যাভিচার করে থাকে”। আবূ যার (রাঃ) বলেন, যখন তিনি আসলেন, তখন আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নাবী! আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন, আপনি হাররা অঞ্চলে কার সাথে কথা বলছিলেন? আমি তো কাউকে আপনার কথার কোন উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেন, এ হলেন-জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাররা অঞ্চলে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আপনি আপনার উম্মাতকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দিন যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এরপর আমি বললাম, হে জিবরাঈল! যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। তিনি বললেন, হাঁ। পুনরায় আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে ব্যভিচার করে? তিনি বললেন, হাঁ। এরপর আবার আমি বললাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে ব্যভিচার করে? তিনি বললেন, হাঁ, যদিও সে মদ্যপান করে।”

২১৭৮ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আহনাফ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মদিনায় এলাম। সে সময় কুরায়শ নেত্ববৃন্দের একটি হালকায় বসাছিলাম। তখন খসখসে বস্ত্র, খসখসে শরীর ও খসখসে চেহারা নিয়ে এক ব্যাক্তি এসে তাদের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, সম্পদ পূঞ্জীভূতকারী ব্যাক্তিদেরকে সুসংবাদ দিন, এমন গরম পাথরের যা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের বুকের উপর রাখা হবে ফলে তাদের গ্রীবা দেশের হাড় বিদীর্ণ করে অপর দিকে বের হয়ে যাবে। আবার তার ঘাড়ের হাড়ের উপর রাখা হবে। এমনকি তা স্তন্যভেদ করে বের হবে। রাবী বলেন, এ সময় লোকেরা তাদের মাথা নত করে রাখলেন। উপস্থিত কাউকে তার এ কথার প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। এরপর লোকটি ফিরে গেলেন। আমি তাঁর পেছনে পেছনে গেলাম। অবশেষে তিনি একটি থামের নিকট গিয়ে বসলেন। আমি বললাম, আপনি তাদেরকে যা বলেছেন, আমার ধারণা তারা তা অপছন্দ মনে করছে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তারা এমন লোক যারা কিছুই বুঝতে পারছে না। আমার বন্ধু আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি তাঁর নিকট যাওয়ার পর তিনি বললেন, তুমি কি উহুদ পাহাড়টি দেখতে পাচ্ছ? তখন আমি লক্ষ্য করলাম, আমার উপর সূর্য আর কতটূকু অবশিষ্ট আছে এবং তিনি তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে তথায় পাঠাবেন। আমি বললাম, জী হ্যা, দেখতে পাচ্ছি তখন তিনি বললেন, আমাকে আনন্দিত করবেনা এ সমপরিমাণ স্বর্ণ আমার কাছে হোক, আর আমি এসব ব্যয় করি তিনটি স্বর্ণ মুদ্রা ব্যতীত। এরপর এসব লোক দুনিয়া সঞ্চয় করছে। অথচ তারা কোন কিছুই বুঝছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কুরায়শী ভাইদের সাথে আপনার কী হয়েছে যে, আপনি তাদের সাথে মেলামেশা করেন না, যাননা এবং তাদের কাছ থেকে কিছু লাভ করেন না? তিনি বললেন, না তোমার রবের কসম! আমি তাদের নিকট দুনিয়াও চাইব না এবং দ্বীন সম্পর্কেও কোন কথা জিজ্ঞাসা করব না। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত।

২১৭৯ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আহকাফ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরায়শের একদল লোকের মধ্যে ছিলাম। তখন আবূ যার (রাঃ) এলেন। আবূ যার (রাঃ) এ দিক দিয়ে যাওয়ার পথে বলছিলেন, সুসংবাদ দাও সস্পদ সঞ্চয়কারীদেরকে। গরম লোহা দ্বারা তাদের পৃষ্ঠদেশ দাগ দেয়ার যে গরম লোহা তাদের দেহের হাড় পাশ দিয়ে বের হয়ে আসবে এবং তাদের ঘাড়ের দিকে গরম লোহা দ্বারা এমনভাবে দাগ দেয়া হবে যে, ললাটের দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি একটু সরে বসে পড়লেন। রাবী বলেন, এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ লোকটি কে? তারা বললেন, তিনি আবূ যার (রাঃ)। তখন আমি তার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিছুক্ষণ পুর্বে আপনাকে যা বলতে শুনলাম, এ-কি? তিনি বললেন, আমি তাই বলেছি, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। এরপর আমি বললাম, এ -সরকারী অনুদান সম্পর্কে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তুমি-তা গ্রহণ কর কেননা আজকের দিন এতে রয়েছে সাহায্য। কিন্তু তা যদি হয় দ্বীন বিক্রয়ের মূল্য স্বরুপ হ্য তবে তুমি তা গ্রহণ- করবে না।

২১৮০ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়াআলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেন, এমন পরিপুর্ণ দিবা-এরাত্রির অনবরত দানই তাতে কিছু কমায় না।

২১৮১ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন, তন্মধ্যে একটি হল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ আমাকে বলেছেন, তুমি দান কর, আমি তোমাকে দান করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাত্র দিনের অনবরত কোন দানই তা হরাস করতে পারে না। তোমরা কি দেখনি, আকাশ ও পৃথিবীর পর হতে তিনি কি পরিমাণ দান করেছেন? বিন্তু এ দান তাঁর হাতের সস্পদের কিছুই কমাতে পারে নি। তিনি বলেন, তাঁর আরশ পানির উপর। তার অপর হস্তে রয়েছে মৃত্যু। – তিনি (যাকে ইচ্ছা) উন্নীত করেন এবং (যাকে ইচ্ছা) অবনমিত করেন।

২১৮২ আবূ রাবী যাহুরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম সে দ্বীনার (মূদ্রা) ব্যয় করা মানুষ যে মুদ্রা তার পরিবারের জন্য খরচ করে এবং সে মুদ্রা আল্লাহর পথে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে বেঁধে রাখা জানোয়ারের জন্য খরচ করে এবং যে মুদ্রা আল্লাহর পথে জিহাদকারী সঙ্গী-সাহলদের জন্য খরচ করে। বর্ণনাকারী আবূ কিলাবা বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবার- পরিজনের- কথা প্রথমে বলেন। এরপর আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি তার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততির প্রতি ব্যয় করে, যার ফলে আল্লাহ তাদেরকে পবিত্র রাখেন, অভাবমুক্ত করেন অথবা উপকৃত করেন এবং তাদের অভাবমুক্ত রাখেন এর চাইতে মহান পারিশ্রমিকের অধিকারী আর কে হতে পারে?

২১৮৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন দ্বীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ, কোন দ্বীনার তুমি ব্যয় করেছ ক্রীতদাসকে মুক্ত করার জন্য, কোন দ্বীনার তুমি সাদাকা করেছ মিসকীনের জন্য এবং কোন দ্বীনার তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করেছ। সাওয়াবের দিক সর্বোত্তম হল যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য খরচ করেছ।

২১৮৪ সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ জারমী (রহঃ) খায়সামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় তার কাছে তার খাজাঞ্চী এলেন এবং ভিতরে প্রবেশ করলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি ভৃত্যদেরকে তাদের খোরাকী দিয়েছ কি? তিনি বললেন, না দেই নি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, যাও তাদেরকে দিয়ে দাও। এরপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাপের জন্য এই যথেষ্ট যে, যাদের খোরপোষ তোমার দায়িত্ব তুমি তাদের খোরাকী আটকিয়ে রাখবে”।

২১৮৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী ওজরার এক ব্যাক্তি ‘তার মৃত্যুর পর’- এ কথার শর্তে তার এক গোলামকে আযাদ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ খবর শুনার পর (মালিককে) বললেন, তোমার নিকট ইহা ব্যতিরেকে অন্য কোন মাল আছে কি? সে বলল, নেই। তখন তিনি বললেন, আমার কাছ থেকে এ গোলামকে খরিদ করবে কি? তখন নুয়াইম ইবনু আবদুল্লাহ আবদী (রাঃ) আটশ- রৌপ্য দিরহামের বিনিময়ে তাকে খরিদ করলেন। এরপর তিনি এ মুদ্রাগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর- কাছে নিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তাকে দিয়ে বললেন, প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় কর। এরপর অবশিষ্ট থাকলে পরিজনের জন্য ব্যয় কর। নিজ পরিজনের জন্য ব্যয় করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে নিকটাত্নীয়দের জন্য ব্যয় কর। আতীয়-স্বজনদেরকে দান করার পরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে এদিক অর্থাৎ সম্মুখে, ডানে,বামে, খরচ করবে।

২১৮৬ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ মাযকুর নামক এক আনসারী নিজের মরণের পর ইয়াকুব নামক তার এক গোলামকে আযাদ হওয়ার ঘোষণা দিল। এরপর লায়স বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী বর্ণনা করেন।

২১৮৭ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনার আনসারী সাহাবীদের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সর্বাপেক্ষা বিত্তবান ছিলেন। তার সস্পড়ির মধ্যে ‘বায়রুহাই’ ছিল সর্বাধিক প্রিয় সম্পদ। সেটি মসজিদুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অবস্থিত ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গিয়ে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা তোমরা কখনো পূন্যতা লাভ করবে না–” এ আয়াত নাযিল হলে তখন আবূ তালহা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আলকুরআনে বলছেন, “তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূন্যতা লাভ করবে না।” ‘বায়রুহাই’- আমার সর্বপেক্ষা প্রিয় সম্পদ। অতএব আমি আল্লাহর রাহে সাদাকা করলাম, বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে নেকী ও সঞ্চয় আশা করি এবং আখিরাতে রুজির আশা রাখিি। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার মর্জি মাফিক আপনি তা স্বদ্ব্বব্যবহার করুন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহ! – সম্পদটি লাভজনক। সম্পদটি লাভজনক। এ সম্পর্কে তুমি যা বললে, অবশ্যই আমি তা শুনেছি তবে আমার পছন্দ হচ্ছে তা তুমি তোমার আত্নীয়-স্বজনদের মাঝে বন্টন করে দাও। অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) আত্নীয়-স্বজন ও তার চাচাতো ভাইদের মাঝে তা বন্টন করে দিলেন।

২১৮৮ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “ তোমরা না ভালবাস তা থেকে ব্যয় নাকরা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূণ্য লাভ করবে না” এ আযাতটি নাযিল হওয়ার পর আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি আমাদের রব আমাদের সম্পদ থেকে কিছু চাচ্ছেন। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনাকে সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার, ‘বায়রুহা’- নামক তুমি আল্লাহর রাহে দান করলাম। বলেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তা তোমার আত্নীয়-স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দাও। তিনি তা হালসান ইবনু সাবিত ও উবাই ইবনু কাব (রাঃ)-এর মধ্যে বণ্টন করে দিলেন।

২১৮৯ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) মায়মুনা বিনত হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দায় একটি বাদী আযাদ করেছিলেন। এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তোমার মামুদের দান করতে তাহলে তুমি অধিকতর সাওয়াব পেতে।

২১৯০ হাসান ইবনুুর রাবী (রহঃ) আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে নারী সমাজ! তোমাদের অলংকার দিয়ে হলেও তোমরা সাদাকা কর। তিনি বলেন, এ কথা শুনে আমি আমার স্বামী আবদুল্লাহর নিকট চলে গেলাম এবং তাকে বললাম, আপনি তো অসচ্ছল। রাসুলুল্লাহ আমাদেরকে সাদাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনি গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যদি আপনাকে দিলে আমার সাদাকা আদায় হয়ে যায় তা হলে তো হলই। আর যদি আদায় না হয় তা হলে আমি আপনাকে ছাড়া অন্যকে দিয়ে দিব। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, বরং তাঁর নিকট তুমি যাও। যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমি গেলাম এবং এক আনসারী মহিলাকে আমার মত একই প্রয়োজনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দ্বারপ্রান্তে উপবৃষ্ট দেখতে পেলাম। তিনি বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা মুবারকে অপরুপ গাম্ভীর্যের ছাপ বিদ্যমান ছিল। এমতাবস্হয়ে বিলাল (রাঃ) আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গিয়ে বলুন, দরজার নিকট দু-জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে, তাদের নিজ নিজ স্বামীকে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত ইয়াতীমদের সাদাকা দিলে তাঁদের সাদাকা আদায় হবে কি? তবে আমরা কারা এবং আমাদের পরিচয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিবেননা। অতঃপর বিলাল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে এ কথা জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে বললেন, এরা কারা? বিলাল (রাঃ) বললেন, একজন আনসারী মহিলা এবং যায়নাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন যায়নাব? তিনি বললেন, আবদুল্লাহর ন্ত্রী যায়নাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের জন্য দ্বিগুন সাওয়াব রয়েছে। আত্নীয়তার সাওয়াব এবং সাদাকার সাওয়াব।

২১৯১ আহমাদ ইবনু ইউসুফ আযদী (রহঃ) আবদুল্লাহর ন্ত্রী যায়নাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাবী আ’মাশ (রাঃ) বলেন, আমি ইবরাহীমকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি আবূ উবায়দা আমর ইবনু হারীস (রহঃ) সুত্রে আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নব থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। এতে রয়েছে যে, আমি ছিলাম মসজিদে তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখলেন এবং বললেন, নিজেদের অলংকার থেকে হলেও তোমরা সাদাকা কর”। হাদীসের পরবর্তী অংশ আবূল আহওয়াসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২১৯২ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আবূ সালামার সন্তানদের জন্য যা খরচ করে থাকি। তাতে আমি সাওয়াব পাব কি? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছাড়তে পানি না। তারা তো আমারই সন্তান। উত্তরে তিনি বললেন, হা, তাদের জন্য তুমি খরচ করবে- তাতে তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।

২১৯৩ সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ)-এর সুত্রে এ সনদ পূর্বক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২১৯৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আনবারী (রহঃ) আবূ মাসউদ বাদরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মুসলিম যদি সাওয়াবের আশায় স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য কিছু ব্যয় করে, তবে তার জন্য সাদাকা হবে।

২১৯৫ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবূ কুবায়ব (রহঃ) শুবা (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে পুর্বের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২১৯৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আম্মা আমার নিকট এসেছেন। তিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণে বিমুখ বা অনাগ্রহী, আমি তার সাথে সদাচরণ করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যা।

২১৯৭ আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মা আমার নিকট এসেছেন। সে তো মুশরিক মহিলা। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা সে সময় জিজ্ঞাসা করেছিলাম যখন কুরায়শদের সাথে তিনি সন্ধিচুক্তি করেছিলেন। আমি তাকে বললাম, আমার আম্মা আমার কাছে এসেছেন আশা নিয়ে। আমি আমার আম্মার সাথে ভাল ব্যবহার করব কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, তুমি তোমার আম্মার সাথে ভাল ব্যবহার কর।

২১৯৮ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার আম্মা হঠাৎ মৃত্যু বরন করেছেন। তিনি অসিয়্যত করে যেতে পারেন নি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তা ভাল সাদাকা করতেন। অতএব আমি যদি তার পক্ষ হাত সাদাকা করি তবে এর সাওয়াব তিনি পাবেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, পাবেন।

২১৯৯ যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব, আলী ইবনু হুজর ও হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) হিশাম (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামার হাদীসের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু বিশরের হাদীসের মত শব্দটি বর্ণিত আছে। কি অন্যরা এ কথাটি উল্লেখ করেন নাই।

২২০০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তবে কুতায়বার হাদীসে আছে যে, “তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , আর ইবনু আবূ শায়বার হাদীসে রয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সাদাকা।

২২০১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যাবঈ (রহঃ) আবূ যার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কয়েকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বিত্তবানরা সাওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত সালাত আদায় করেন, আমাদের মত সিয়াম সাধনা করেন এবং তারা নিজেদের ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কী আল্লাহ তাআলা সাদাকা করার ব্যবস্হা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ সাদাকা, প্রতিটি তাকবীর সাদাকা প্রতিটি তাহমীদ সাদাকা, প্রতিটি তাহলীল সাদাকা, সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎকাজ হতে বিরত রাখা সাদাকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও সাদাকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেউ যদি ন্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরুপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে।

২১০২ হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বনী আদমের প্রতি মানুষকে ৩৬০ টি গ্রন্থি বিশিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। অতএব যে ব্যাক্তি ঐ সংখ্যা পরিমাণ আল্লাহু আকবর বলবে, আল হামদুলিল্লাহ বলবে, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, সুবহানাল্লাহ বলবে, আসতাগ ফিরুল্লাহ বলবে, মানুষের চলার পথ থেকে কোন পাথর সরাবে কিংবা কাটা বা হাড় সরাবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে। সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে চলাফেরা করবে যে, সে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দুরে রেখে দিয়েছে। আবূ তাওবা (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী এর স্হলে বলতেন।

২২০৩ আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) যায়িদ সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত। তবে সৎকাজের আদেশ দেবে একথাটি ব্যতীত। অন্য সুত্রে তিনি বলেন, “সে দিন যে সন্ধ্যা করবে।

২২০৪ আবূ বকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর রাবী যায়িদের হাদীসের অনূরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর হাদীসের মধ্যে “সে দিন সে চলাফেরা করবে” কথাটি বর্ণিত রয়েছে।

২২০৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে তার দাদা থেকে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সাদাকা করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হল, যদি সাদাকা করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও সাদাকা করবে। পূনরায় জিজ্ঞাসা করা হল যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কি হবে? তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞাসা করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহলে সৎকাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জিজ্ঞাসা করা হল যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দকাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও সাদাকা।

২২০৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে বর্ণিত।

২২০৭ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,-এ হচ্ছে আবূ হুরায়রা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা। এরপর তিনি কিছু হাদীস বর্ণনা করলেন, তার মধ্যে এটিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক দিন যখন সূর্য উদিত হয়, তখন মানুষের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কর জন্য সাদাকা ওয়াজিব। তিনি বলেন, দু-ব্যাক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা সাদাকা, কোন ব্যাক্তিকে তার সাওয়ারীর ব্যাপারে সাহায্য করা। অথবা তার মাল সামগ্রী তুলে দেয়া সাদাকা। তিনি আরও বলেছেন, ভাল কথা বলা সাদাকা, সালাতের উদ্দেশ্যে গমনের পথে প্রতিটি পদক্ষেপ সাদাকা। চলার পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া সাদাকা।

২২০৮ কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যহ মানুষের যখন ভোর হয়, তখন দু-জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। অতঃপর তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার বদলা দাও। অপরজন বলেন, কৃপনের ধন ধ্বংস কর।

২২০৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা সাদাকা দাও। অচিরেই এমন হবে যে, যখন এক মানুষ তার সাদাকার সামগ্রী ঘুরবে। যাকে দিতে চাইবে সে বলবে, যদি গতকালও নিয়ে আসতে তাহলে আমি তাগ্রহণ করতাম। কিন্তু আমার আজ এর কোন প্রয়োজন নেই। অবশেষে সাদাকা গ্রহণের জন্য কাউকেই পাওয়া যাবে না।

২২১০ আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ-আরী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের এমন এক সময় আসবে যখন সোনা নিয়ে সাদাকা করার জন্য লৈাক ঘূরে বেড়াবে কিন্তু তা নেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। আরো দেখা যাবে যে, পুরুষের সংখ্যা সল্পতা ও নারীদের আধিক্যের দরুন চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনস্হ হবে এবং তারা তার থেকে ফায়দা হাসিল করবে। ইবনু বাররাদ (রহঃ)-এর অপর এক রিওয়ায়াতে আছে তুমি এক ব্যাক্তিকে দেখতে পাবে।”

২২১১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না প্রঢ়ুর ধন-সম্পদ ও বিপূল প্রাচুর্য প্রকাশ পায়। এমনকি তখন মানুষ তাঁর মালের যাকাত নিয়ে বের হবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না। আরব দেশ চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।

২২১২ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের মাঝে এত প্রাচুর্য দেখা দেবে যে, তা উপচে পড়বে। এমনকি সম্পদের মালিক তখন ভাবনা করবে যে, কে তার সাদাকা গ্রহণ করবে? সাদাকা দেয়ার জন্য লোকদেরকে আহবান করা হবে। তখন সে বলবে, — আমার কোন প্রয়োজন নেই।

২২১৩ ওয়াসিল ইবনু আবদুল্লাহ আব্দুল আলা, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযীদ রিফাঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ভুমি তার বক্ষস্থিত অভ্যন্তরীণ বস্তুসমূহ সোনা স্তম্ভের মত বের করে দেবে। তখন হত্যাকারী ব্যাক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য হত্যা করেছি। আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যাক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছি। চোর এসে বলবে, এরই কারণে আমার হাত কাটা হয়েছে। অতঃপর সকলেই তা ছেড়ে দেবে। এর থেকে তাঁরা কেউ কিছুই গ্রহণ করবে না।

২২১৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যাক্তি হালাল সম্পদ হতে সাদাকা করলে, বস্তুত আল্লাহ হালাল ছাড়া গ্রহণ করেন না। সেদিন রহমান তা ডান হস্তে গ্রহণ করবেন। যদি তা একটি খেজুরো ও হয় তবে তা রহমান আল্লাহর হাতে লালিত হবে। ফলে তা পাহাড়ের চাইতেও বড় হবে। যেভাবে তোমাদের কেউ নিঁজের ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবককে পালন করে।

২২১৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হালাল উপায়ে উপার্জিত সম্পদ হতে যদি কোন ব্যাক্তি একটি খেতের সাদাকা করে তবে আল্লাহ তা তাঁর ডানহস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা পালন করেন যেমন তোমার তোমাদের ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবক পানক করে থাকো। অবশেষে তা পর্বতসম হয়ে যায় কিংবা তার চেয়েও অধিক গুনে বেড়ে যায়।

২২১৬ উমায়্যা ইবনু বিসতাম ও আহমাদ ইবনু উসমান আওদী (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ – হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাওহ (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে “হালাল উপার্জন থেকে অতঃপর ব্যয় করে সে তা তার প্রাপ্য স্থানে” এবং সূলায়মানের হাদীসে রয়েছে ‘অতঃপর ব্যয় করে সে তা যথাস্থানে-”।

২২১৭ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুহায়লের বরাত দিয়ে ইয়াকুবের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

২২১৮ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আতনা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করে না। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর, সে সমন্ধে আমি অবহিত”। (সূরা মুমিনুন:৫১) তিনি আরো ইরশাদ করেন, “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমি যে সব পবিত্র বস্তু দিয়েছি, তা থেকে আহার কর”। (সূরা বাকারাঃ ১৭২) এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে, দীর্ঘ সফর করে যার এলোমেলো চুল ধুলায় ধুসরিত সে আকাশের দিকে দু-হাত তুলে বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং তাঁর শরীর গঠিত হয়েছে হারামে। অতএব, তাঁর দু’আ কিভাবে কবুল করা হবে?

২২১৯ আঊন ইবনু সাল্লাম আল কুফী (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে সমর্থ এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও সেটা তাঁর করা উচিত।

২২২০ আলী ইবনু জুহর আস-সা’দী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই সাথে আল্লাহ নিশ্চয়ই কথা বলবেন। আল্লাহ তাঁর ও বান্দার মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবে না। অতঃপর বান্দা তাঁর বাম দিকে তাকাবে, কিন্তু কৃত কর্মগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই সে দেখবে না। এরপর বান্দা তার বাম দিকে তাকবে। কিন্তু কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না! অতঃপর সামনের দিকে তাকাবে, কিন্তু চোখের সামনে সে আগুন ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। সুতরাং এক টুকরা খেজুর সাদাকা করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাচ। ইবনু হুজর (রহঃ) খায়সামা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় ”উত্তম কথা হলেও” কথাটি অতিরিক্ত বর্ণিত আছে। ইসহাক আমর ইবনু মুররা (রহঃ) সূত্রে খায়সামা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

২২২১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং ভ্রকুঞ্চিত করলেন। এরপর বললেন, তোমরা আগুন থেকে বাঁচ। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং ভ্রুকুঞ্চিত করলেন। এমনকি আমাদের ধারণা হল তিনি যেন আগুন দেখতে পাচ্ছেন। এরপর বললেন, এক টূকরা খেজুর দিয়ে হলেও তোমরা আগুন থেকে বাচ। যদি সে তা না পায় তবে একটি উত্তম কথার বিনিময়ে হলেও। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেঁন, আবূ কুয়ায়ব (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় , শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং বলেন, আমাদের কাছে আবূ মু’আবিয়া রিওয়ায়াত করেছেন যে, আমাশ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

২২২২ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের অগ্নি সম্পর্কে আলোচনা করলেন। এরপর তা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন এবং মুখমন্ডল তিনবার ফিরিয়ে নিলেন। এরপর তিনি বললেন, এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও তোমরা অগ্নি থেকে বেঁচে থাক। যদি তা না পাও তবে অন্তত ৪ একটি ভাল কথার বিনিময়ে হলেও।

২২২৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আনাযী (রহঃ) মুনযির ইবনু জারীর (রহঃ) কর্তৃক তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দিনের পূর্ব ভাগে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম। এ সময় নগ্নপদ খালি, মাথা চামড়ার বস্ত্র পরিহিত ও তরবারী গলায় লটকিয়ে এক দল লোক তাঁর নিকট আসল। তাদের অধিকাংশ- বরং সকলেই ‘মুযার’- গোত্রের লোক ছিল। তাদের মাঝে অনাহারের নিদর্শন দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি (গৃহাভ্যন্তরে) প্রবেশ করলেন এবং বেরিয়ে এলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন। তিনি (বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন ও ইকামত দিলেন। সালাত আদায় করার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন এবং তিলাওয়াত করলেন, “হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপাল কে ভয় কর;-যিনি তোমাদেরকে এক ব্যাক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তার সংগিনী সৃষ্টি করেন; যিনি তাদের দুঁজন থেকে বহু নর নারী ছড়িয়ে দেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞা কর এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে। আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন” (সূরা নিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম১)। (অন্য আয়াত)- “হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, প্রত্যেকেই ভেবে দেখ আগামী কালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। (সূরা হাশরঃ ১৮)। পূরুষ তার দ্বীনার হতে, তার দিরহাম হতে, তার বস্তু হতে কিছু-এবং সা এর মাপে গম, সা এর মাপে খেজুরে দান করুক। এমন কি তিনি বললেন, এক টূকরো খেজুর দিয়ে হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন এক আনসারী ব্যাক্তি একটি থলে নিয়ে আসল তার হাত যেন তা ভুলতে সক্ষম হচ্ছিলেন না। বরং অপারগ হল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকজন একের পর এক সাদাকা নিয়ে আসতে লাগল। অবশেষে আমি খাদ্য ও বস্ত্রের দুটি স্থুপ দেখতে পেলাম। তখন আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা মুবারক সমুজ্জল হল যেন এক টুকরা সোনা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি ইসলামে কোন নেক প্রথা চালু করবে, সে তার নেককর্মের সাওয়াব পাবে এবং ঐ ব্যাক্তির সম পরিমাণ সাওয়াবও লাভ করবে যে ব্যাক্তি তার পরে ঐ নেক আমল করবে, এতে তাদের নেকী বিন্দুমাত্র ও কমবে না। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যাক্তি ইসলামে কোন কুপ্রথা চালু করে তবে এ অসৎকর্মের শুনাহ তার উপর বর্তাবে এবং ঐ ব্যাক্তির শুনাহও যে তার পরবর্তীতে সে অসৎকর্ম করবে, এতে তাদের শুনাহ বিন্দু পরিমাণ ও কম বেশী হবে না।

২২২৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দিনের প্রথম ভাগে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ছিলাম। তারা ইবনু জাফরের অনুরুপ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে মু’আয (রাঃ)-এর হাদীসের ম্যধ্য “অতঃপর তিনি যুহরের সালাত আদায় করলেন এবং ভাষণ দিলেন” কথাটি বর্ণিত হয়েছে।

২২২৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী, আবূ কামিল এবং মুহাম্মদ আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তখন চামড়ার বস্ত্র পরিহিত অবস্হায় একদল লোক তার নিকট আসল। তারপর তারা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে, যে যুহরের সালাত আদায় করলেন। এরপর ছোট একটি মিম্বরে আরোহন করে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, আম্মা বাদু! আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে অবর্তীর্ণ করেছেন। “হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, । (সূরা নিসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম১)

২২২৬ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, কয়েক জন বেদূঈন -এরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এল। তাদের গায়ে পশমের কাপড় ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ অবস্হা দেখে বুঝলেন যে, তারা অভাব-গ্রস্হা তারপর তাদের হাদীসের মর্ম বর্ণনা করলেন।

২২২৭ ইয়াহিয়া ইবনু মুঈন ও বিশুরু ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের সাদাকা প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হল। আমরা এ উদ্দেশ্যে বোঝা বহন করতাম। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, তখন আবূ আকীল (রাঃ) অর্ধ সা সাদাকা করলেন এবং অন্য এক ব্যাক্তি তার-চাইতে অধিক সাদাকা নিয়ে আসলেন। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তার সাদাকার মুখাপেক্ষী নন। আর এ দ্বিতীয় লোকটি তো লোক দেখানোর জন্যই দান করেছেন। তখন অবর্তীর্ণ হল, “মুমিনদের মধ্যে যারা সতঃস্ফুর্ত ভাবে সাদাকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ব্যাতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি বিদ্রুপ করেন–। (সূরা তাওবাঃ ৭৯) বিশর (রহঃ) শব্দটি এখানে উল্লেখ করেননি।

২২২৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) শু’বা (রাঃ)-এর থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ)-এর হাদীসের মধ্যে আছে, আমরা পিঠের উপর বোঝা বহন করতাম।”

২২২৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পোছিয়েছেন। জেনে রেখ, যে ব্যাক্তি কোন গৃহবাসীকে দুগ্ধবর্তী এমন একটি উষ্ট্রী দান করল, যা সকাল সন্ধা বড় পাত্র ভর্তি দুধ দেয়, অবশ্য তার জন্য রয়েছে মহা পূরস্কার।

২২৩০ মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি কাজ নিষেধ করলেন। সে গুলোর উল্লেখ করার পর তিনি বললেন, যে দুগ্ধবর্তী পশুদান করে সে সকালে এক সাদাকা নিয়ে আসে এবং বিকেলেও এক সাদাকা নিয়ে আসে। অর্থাৎ সকালে তার দুধ ও বিকালে তার দূধ পান।

২২৩১ আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থ ব্যয়কারী ও সাদাকাকারীর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যার গায়ে বক্ষ থেকে কণ্ঠনালী পর্যন্ত দুটি লৌহবর্মর জোব্বা রয়েছে, যখন ব্যয়কারী ইচ্ছা করে, অন্য রাবী বলেন, যখন সাদাকাকারী সাদাকা করার ইচ্ছা করে তখন তা তার উপর প্রশস্ত বা সম্প্রসারিত হয়ে যায়। আর কৃপণ ব্যাক্তি যখন দান করার ইচ্ছা করে তখন তা তার উপর সংকোচিত হয়ে যায় এবং বর্মের প্রতিটি আংটা সস্থানে দৃঢ়ভাবে এটে যায়। এমন কি তা তার নখাগ্র পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ সে বর্মটিকে প্রশস্ত ও বিস্তূত করতে চায় কিন্তু তা বিস্তূত হয় না।

২২৩২ সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ আবূ আয়্যুব গায়লানী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যাক্তির উপমা ঐ ব্যাক্তির ব্যাক্তির অনুরুপ, যাদের গায়ে রয়েছে দুটি লৌহবর্ম এবং যাদের উভয় হাত তাদের বক্ষ ও কন্ঠনালীর সাথে জড়িয়ে আছে। অতঃপর দানশীল ব্যাক্তি যখনই দান করতে চায় তখন এ বর্মপ্রশস্ত হয়ে যায়। এমন কি তার নখগ্রে পর্যন্ত আবৃত করে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর কৃপণ ব্যাক্তি যখনই সাদাকা করার ইচ্ছা করে তখন লৌহ বর্মটি সংকোচিত হয়ে যায় এবং এর প্রতিটি আংটা স্বস্থানে এটে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জামার “গরিবান” এ অঙ্গুলি দিয়ে বলছেন। তুমি যদি তাকে এমন দেখতে যে, সে তা প্রশস্ত করতে চাইছে। তা প্রশস্ত হচ্ছে না।

২২৩৩ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যাক্তি দ্বয়ের দৃষ্টান্ত ঐ দুই ব্যাক্তির অনুরুপ যাদের গায়ে রয়েছে দুঁটি লৌহবর্ম; দানশীল ব্যাক্তি যখনই দান করার ইচ্ছা করে তখন তা তার শরীরে বিস্তূত হয়ে যায়, এমনকি তার পদচিহ্ন পর্যন্ত মুছে যায়। আর কৃপণ যখন সাদাকা করার জন্য উদ্যত হয় তখন তা তার শরীরে সংকোটিত হয়ে যায়। তার উভয় হাত তার কণ্ঠনালীর সাথে মিলে যায় এবং তার প্রতিটি আংটা অন্য আংটাকে জাকড়িয়ে ধরে। বর্ণনাকারী বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, সে ঐ বর্ম প্রশস্ত করার প্রয়াস পাবে। কিন্তু প্রশস্ত করতে পারবে না।

২২৩৪ সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ব্যাক্তি বলল, আমি অদ্য রাত্রে কিছু সাদাকা করব। তারপর সে সাদাকা নিয়ে বের হল এবং একজন ব্যভিচারিনীর হাতে তা প্রদান করল। ভোর হলে, লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, আজ রাতে এক ব্যভিচারিনীকে সাদাকা প্রদান করা হয়েছে। দাতা একথা শুনে বলল, আয় আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমারই, (আমার সাদাকা) ব্যাভিচারিনীর হাতে পড়লেও। অবশ্য আমি আবার সদাকা করব। তারপর সে তার সাদাকা নিয়ে বের হল এবং তা এক ধনীর হাতে প্রদান করল। ভোর হলে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল যে, একজন ধনীকে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। লোকটি তখন বলল, আয় আল্লাহ! সকল প্রশংসা তোমারই, (আমার সাদাকা) ধনী ব্যাক্তির হাতে পড়লেও। সে বলল, আমি অবশ্যই আবার সাদাকা দিব। তারপর সে তার সাদাকা নিয়ে বেল হল এবং একজন চোরের হাতে তা অর্পণ করল। ভোর হলে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, একটি চোরকে সাদাকা দেয়া হয়েছে এ কথা শুনে সে বলল, আয় আল্লাহ! তোমারই সকল প্রশংসা (আমার দান) ব্যাভিচারিনী, ধনী ও চোরের হাতে অর্পিত হলেও! পরে (স্বপ্নযোগে) এক ব্যাক্তি তার নিকট এসে বলল, তোমার সাদাকা কবুল হয়েছে। জেনে রাখ, ব্যভিচারিনী হয় তো এর কারণে ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবে, ধনী ব্যাক্তি হয় তো এর থেকে উপদেশ করবে এবং আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে খরচ করবে এবং চোর হয় তো এর বদোলতে তার চুরি থেকে বিরত থাকবে।

২২৩৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ আমির আশ আরী, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আমানতদার মুসলিম খাজাঞ্চি, তাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পুরোপুরি ভাবে সন্তুষ্টচিত্তে কার্যকরী করে অথবা বলেছেনা, দান করে এবং যাকে প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাকে তা পৌছিয়ে দেয়, সে দুই দানকারীর একজন।

২২৩৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন স্ত্রী লোক ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা না করে তার ঘরের খাদ্য থেকে কিছু দান করে তবে সে দান করার কারণে সাওয়াব লাভ করবে। আর তার স্বামী তা উপার্জনের কারণে সাওয়াব পাবে আর খাজাঞ্চিও অনুরুপ সাওয়াব লাভ করবে। তাদের একের দ্বারা অন্যের সাওয়াব কিছু কমবে না।

২২৩৭ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) মানসুর (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে, তার স্বামীর খাদ্য সামগ্রী থেকে।

২২৩৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, যদি কোন মহিলা ক্ষতি না করে তার স্বামীর ঘর থেকে খরচ করে, তবে তার জন্য রয়েছে প্রতিদান, তার সামীর জন্য ও রয়েছে অনুরুপ প্রতিদান, যেহেতু সে উপার্জন করেছে। মহিলার জন্য এ কারণে, যেহেতু সে খরচ করেছে। আর খাজাঞ্চির জন্যও রয়েছে অনুরুপ প্রতিদান, এতে তাদের প্রতিদান বিন্দ্রুমাত্র ও কমবে না।

২২৩৯ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২২৪০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ লাহমের আযাদকৃত গোলাম উমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম একজন গোলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি আমার মনিবের মাল থেকে কিছু সাদাকা করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যা পার। তবে সাওয়াব উভয়ই অর্ধেক অর্ধেক পাবে।

২২৪১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ লাহমের গোলাম উমায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে আমার মনিব গোশত শুকাবার নির্দেশ দিলেন। এ সময় একজন মিসকীন আসল। আমি এর থেকে কিছু তাকে খেতে দিলাম। আমার মনিব এ কথা জানতে পেরে আমাকে প্রহার করলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। তখন তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কেন প্রহার করেছ? – সে বলল, সে আমার নির্দেশ ছাড়াই আমার খাদ্যদ্রব্য অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওয়াব তোমাদের উভয়ের জন্যই।

২২৪২ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু হাদীস বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। স্বামীর উপস্থিতিতে কাউকে তার অনুমতি ছাড়া তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিবে না, স্বামীর উপার্জন থেকে তার হুকুম ছাড়া কোন ন্ত্রী লোক যে পরিমাণ দান করবে; তার সাওয়াব স্বামীও অর্ধেক পাবে।

২২৪৩ আবূ-তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া তুজায়বী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি; আল্লাহর রাস্তায় জোড়া দান করবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য আহবান করা হবেঃ হে আল্লাহর বান্দা! এ কাজ উত্তম। যে ব্যাক্তি সালাত আদায়ে নিষ্ঠাবান, তাকে ‘বাবুস সালাত’ থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি মুজাহিদ, তাকে “বাবুল জিহাদ”- থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি দানশীল, তাকে ‘বাবুস সাদাকা”- থেকে আহবান জানান হবে। যে ব্যাক্তি সিয়াম পালনকারী তাকে –“বাবুস রায়্যান” থেকে আহবান জানান হবে। আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর সকল দরজা থেকে কাউকে আহবান করা তো জরুরী নয়। তবে এমন কি কেউ হবে যাকে এ সকল দরজা থেকে আহবান জানান হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ এবং আমি আশা করি তুমিও তাঁদের একজন হবে।

২২৪৪ আমরুন নাকিদ, হাসান আল হুলওয়ানি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) সূত্রে ইউনূস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২২৪৫ মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া দান করবে তাকে জান্নাতের প্রত্যেক দরজা থেকে দার রক্ষকগণ আহবান করবে, হে অমুক! তুমি এদিকে এসো। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তবে তো তার কোন ধ্বংস নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্যই আশা করি তুমি ও তাঁদের একজন হবে।

২২৪৬ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাঝে আজ কে সিয়াম পালনকারী আছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি আছি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে জানাযার সাথে চলেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কেউ রোগীর শশ্রষা করেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মধ্যে এই কাজ সমূহের সমাবেশ ঘটবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে।

২২৪৭ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি খরচ কর অথবা ছড়িয়ে দাও অথবা ঢেলে দাও। আর গুণে রেখ না তা হলে আল্লাহ ও তোমকে গুণে গুণে দিবেন।

২২৪৮ আমরুন নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি ছড়িয়ে দাও অথবা বিলিয়ে দাও অথবা ব্যয় কর। গুণেগুণে রেখ না, তাহলে আল্লাহ ও তোমাকে গুণেগুনে দিবেন। আর শুটিয়ে রেখ না তবে আল্লাহ ও তোমা থেকে শুটিয়ে রাখবেন।

২২৪৯ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, পরবর্তী অংশ তাদের হাদীসের অনুরুপ।

২২৫০ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরস্পর-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, আয় আল্লাহর নাবী! যুবায়র আমাকে যা দেন তা ব্যতীত আমার কিছুই নেই। তিনি আমাকে যা দেন তা থেকে আমি যদি দান করি তবে আমার কোন গুনাহ হবে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা তোমার সামর্থে আছে, তা দান কর। গুটিয়ে রেখ না, তাহলে আল্লাহও তোমা থেকে গুটিয়ে রাখবেন।

২২৫১ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীকে অল্প পরিমাণ দান করাকে যেন তুচ্ছ মনে না করে, যদিও তা বকরীর একটি খুরও হয়।

২২৫২ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাত ব্যাক্তিকে আল্লাহতার (আরশের) ছায়াতলে ছায়া দিবেন, যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। ১/ ন্যায়পরায়ণ ইমাম (রাষ্ট্রনায়ক)। ২/ ঐ যুবক যে আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে। ৩/ ঐ ব্যাক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে জড়িত। ৪/ ঐ ব্যাক্তি যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একে অন্যকে ভালবাসে এবং মিলিত হয় এ প্রেরণা নিয়ে এবং পৃথক হয় এ প্রেরণা সহ। ৫/ ঐ ব্যাক্তি যাকে কোন অতিজাত সুন্দরী মহিলা (অসৎ কাজে) আহবান করে, আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ৬/ ঐ ব্যাক্তি, যে কিছু দান করল এবং এত গোপন ভাবে করল যে, তার ডান হাত জানতে পারল না, তার বাম হাত কি দান করেছে, ৭/ ঐ ব্যাক্তি যে একাকী বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর দুই চোখে (আল্লাহর ভয়ে) অশ্রু ঝরে।

২২৫৩ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কিংবা হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরবর্তী অংশ উবায়দুল্লাহর হাদীসের অনুরুপ তবে এ হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যাক্তি মসজিদের সাথে জড়িত থাকে মসজিদ থেকে পূনরায় মসজিদে ফিরে আসা পর্যন্ত”।

২২৫৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! উত্তম সাদাকা কি? তিনি বললেন, অর্থের প্রতি লোভ থাকাকালে সুস্হ অবস্হায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্রের ভয় কর এবং ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা রাখ। আর (সাদাকা প্রদানে) এত বিলম্ব করবে না যে, যখন তোমার প্রাণ কন্ঠনালীতে এসে যায়। তখন যদি বলতে থাক যে, অমুকের জন্য এ পরিমাণ এবং অমুকের জন্য এ পরিমান। জেনে রাখ, এ সম্পদ তো অমুকের হয়েই আছে।

২২৫৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! বিরাট সাওয়াব কোন সাদাকায়? তিনি বললেন, জেনে রাখ, তোমার পিতার শপথ (অবশ্য) তোমাকে অবহিত করা হচ্ছে যে, অর্থ লোভ থাকাকালে সুস্হ অবস্হায় তোমার সাদাকা করা যখন তুমি দারিদ্র্যের আশংকা কর এবং দীর্ঘায়ু কামনা কর। (সাদাকা প্রদানে) এত বিলম্ভ করবে না যে, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হয়ে যাবে তখন তুমি বলতে থাকবে, এ পরিমাণ অমুকের জন্য এবং এ পরিমাণ অমুকের জন্য। অথচ তা তো অমুকের জন্য হয়েই আছে।

২২৫৬ আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) উমারা ইবনু কা’কা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে জাবির (রাঃ)-এর অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে তিনি এর স্হলে বলেছেন।

২২৫৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) মিম্বরে দাড়িয়ে দান খয়রাত ও ভিক্ষা থেকে নিবৃত্তির কথা উল্লেখ করে বললেন, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী আর নিচের হাত হল যাঞ্ছাকারী।

২২৫৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধনী অবস্হায় যে দান করা হয়, তাই উত্তম সাদাকা অথবা বলেছেন উৎকৃষ্ট সাদাকা। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। আর যাদের লালন পালন কর, তাদের দিয়ে (দান) শুরু কর।

২২৫৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আমাকে দান করলেন। আমি আবার তার নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আবার আমাকে দান করলেন। আমি আবার ও তাঁর নিকট সাওয়াল করলাম। তিনি আমাকে দান করলেন। এরপর বললেন, এই ধন সম্পদ আকর্ষনীয় ও মধুর। যদি কোন ব্যাক্তি সাওয়াল ব্যতিরেকে নির্লোভ অবস্হায় তা গ্রহণ করে তবে তাঁর জন্য একে বরকতময় করে দেওয়া হয়। আর যদি কোন ব্যাক্তি নির্লোভ অন্তরের সাথে তা গ্রহণ করে তবে এতে তাঁর জন্য বরকত দেওয়া হয় না। সে ঐ ব্যাক্তির মত হয় যে খায় কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।

২২৬০ নাসর ইবনু আলী জাহযামী, যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি অতিরিক্ত সম্পদ ব্যয় কর। তা তোমার জন্য উত্তম। আর তুমি যা আটকিয়ে রাখ তা তোমার জন্য মন্দ। প্রয়োজন পরিমাণ রাখার ব্যাপারে তোমাকে অভিযুক্ত করা হবে না। আর যাদের লালন পালনের দায়িত্ব তোমার-উপরে তাদের দিয়ে শুরু কর এবং উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।

২২৬১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইয়াহসাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, উমর (রাঃ)-এর সময় প্রচলিত হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস বর্ণনা করা থেকে তোমরা আত্নসংবরণ কর। কারণ তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে লোকদের আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করতেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকেই দ্বীনের সুক্ষ বোধশক্তি দান করেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরো শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি (স্বীয় সস্পদের) খাজাঞ্চি মাত্র। সন্তুষ্টচিত্তে আমি যা যাকে দান করি, তা তার জন্য বরকতপূর্ণ হবে। আর যে ব্যাক্তিকে সাওয়ালের ও লোভের কারণে দান করি তার অবস্হা ঐ ব্যাক্তির মত যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।

২২৬২ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সাওয়ালে করো না। আল্লাহর কসম, তোমাদের কেউ আমার কাছে কিছু সাওয়াল করলে, ঐ সাওয়ালের কারণে আমার অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছ থেকে কিছু বের করে নেয় তাতে আমার এ দানে তার জন্য কোন বরকত হবে না।

২২৬৩ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘সানআ’ অঞ্চলে অবস্হিত ওয়াহব ইবনু মুনাব্বিহ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকে আখরোট এনে তার ঘরে আমাকে খাওয়ালেন।-তারপর তিনি বললেন, আমি মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুলেছি এরপর তিনি অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

২২৬৪ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ভাষণ দান কালে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাকেই তিনি দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন। আমি তো বণ্টনকারী মাত্র, দানকারী আল্লাহ তাআলা।

২২৬৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ ব্যাক্তি মিসকীন নয় যে মানুষের মধ্যে ঘোরাফেরা করে এবং দু-এক লুকমা (খাদ্য) অথবা দু- একটি খেজুর পেয়ে ফিরে যায়। সাহাবাগণ প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাহলে মিসকীন কে? তিনি বললেন, প্রকৃত মিসকীন সেই যে অতটুকু মালের অধিকারী নয় যা তাকে অভাবমুক্ত করতে পারে এবং তার অবস্হাও বুঝা যায় না। যাতে তাকে সাদাকা প্রদান করা হবে; আর সে লোকের কাছে চায় না।

২২৬৬ ইয়াহহিয়া ইবনু আয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ঐব্যাক্তি মিসকীন নয়, যে দু-একটি খেজুর এবং দু-একটি লুকমা খাদ্য পেয়ে ফিরে যায়। প্রকৃত মিসকীন সেই দরিদ্র যে সাওয়াল থেকে মুক্ত। ইচ্ছা হলে তোমরা (আল্লাহর এ বানী) পাঠ করঃ “যারা লোকের কাছে পীড়াপীড়ি করে সাওয়াল করে না”। (সূরা আলে ইমরান)

২২৬৭ আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরবর্তী অংশ ইসমাঈলের হাদীসের অনুরুপ।

২২৬৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ ভিক্ষা করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত এ অবস্হায় থাকবে যে, তার মুখমন্ডলে গোশ্তের এক টুকরাও থাকবে না। আমরুন নাকিদ (রহঃ) মা”মার (রহঃ) যুহরীর ভাই এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি (টুকরা) কথাটি উল্লেখ করেননি।

২২৬৯ আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সর্বদা মানুষের নিকট ভিক্ষা করে কিয়ামতের দিন এমতাবস্হায় উপস্থিত হবে, তার মুখমন্ডলে গোশ্তের এক টূকরা থাকবে না।

২২৭০ আবূ কুরায়ব ও ওয়াসিল ইবনু আব্দুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সম্পদ বাড়ানোর জন্য লোকের কাছে মাল ভিক্ষা করে, সে যেন আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করল। চাইলে সে তা কম করুক বা বেশী করুক।

২২৭১ হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের যে কেউ ভোর বেলা বের হয়ে কাঠের বোঝা পিঠে বহন করে আনে এবং তা থেকে সে সাদাকা করেও লোকের কাছে সাহায্য চাওয়া থেকে মুক্ত থাকে, সে ঐ ব্যাক্তি থেকে অনেক ভাল, যে কারো কাছে সাওয়াল করে, যে তাকে দিতেও পারে, নাও পারো উপরের হাত নিচের হাত হতে উত্তম। যাদের লালন-পাননের দায়িত্ব তোমার উপর রয়েছে তাদের দিয়ে (সাদাকা) শুরু কর।

২২৭২ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর কসম, তোমাদের যে কেউ ভোরবেলা বের হয়ে পিঠে করে কাঠের বোঝা বহন করে এনে তা বিক্রি করে পরবর্তী অংশ রাবী বায়ানের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

২২৭৩ আবূ তাহির ও ইউনুস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ কাঠের একটি আটি বেঁধে তা পিঠে বহন করে এনে বিক্রি করে তা ঐ ব্যাক্তি থেকে অনেক ভাল যে লোকের কাছে সাওয়াল করে। সে হয় তো তাকে দান করবে অথবা ফিরিয়ে দিবে।

২২৭৪ আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নয় বা আট কিংবা সাত জন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? অথচ আমরা কিছু দিন আগে তার হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলাম। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? তখন আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। এখনি আবার কিসের উপর বায়অোত “গ্রহণ করবো? বললেন, (এ কথার উপর বায়আত গ্রহণ করবে যে,) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করবে না। পাচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। আল্লাহর আনুগত্য করবে। তারপর তিনি ফিসফিস করে একটি কথা বললেন, মানুষের নিকট কোন কিছু সাওয়াল করবে না। আমি দেখেছি, এই কাফিলার কারো পশুর পৃষ্ট থেকে চাবুক পড়ে যাওয়ার পর সে কাউকে তা তুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানায়নি।

২২৭৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও কুতায়বা সাঈদ (রহঃ) কাবীসা ইবনু মুখারিক আল হিলালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি অতিশয় ঝনী হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে চাওযার জন্য তার কাছে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট সাদাকার সামগ্রী আসা পর্যন্ত তুমি এখানে অপেক্ষা কর, আমি তা থেকে তোমাকে কিছু দিতে বলে দিব। তারপর তিনি বললেন, হে কাবীসা! তিন ব্যাক্তি ছাড়া কারো সাওয়াল করা বৈধ নয়। ১ ঐ ব্যাক্তি যে ঝণগ্রস্হ হয়ে পড়েছে, তার ঝণ পরিশোধের পরিমাণ সাওয়াল করা, তারপর সে বিরত থাকবে। ২ ঐ ব্যাক্তি-বিপর্যয় যার ধন সম্পদ ধ্বংস করে দিয়েছে, তার মধ্যপস্হয়ে জীবিকা নির্বাহের পরিমাণ সাওয়াল করা ৩, আর যে ব্যাক্তি ক্ষুধা ক্লিষ্ট তার গোত্রের তিনজন লোক তার সম্পর্কে এ সাক্ষ্য দেয় যে, সে ব্যাক্তি অবশ্যই ক্ষুধা ক্লিষ্ট; তার মধ্যম পন্হায় জীবিকা নির্বাহের পরিমাণ সাওয়াল করা বৈধ। হে কাবীসা! এ তিনজন ছাড়া যে ভিক্ষা করে খায় সে হারাম খায়।

২২৭৬ হারুন ইবনু মারুফ ও হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) উমর উবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু দান করতে চাইলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে যারা বেশী দারিদ্র তাদের দান করুন। অবশেষ একবার আমাকে কিছু মাল দিলেন। আমি বললাম, আমার চাইতে বেশী দারিদ্র তা দান করুন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটি নাও। সাওয়াল ও লালসা ছাড়া যে মাল তোমার নিকট আসে তুমি তা গ্রহণ কর। আর যে সম্পদ এভাবে আসে না তুমি তার পেছনে লেগো না।

২২৭৭ আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর (রাঃ)-কে কিছু দান করলেন। উমর (রাঃ) তাকে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার চেয়ে যে অধিক মুখাপেক্ষী এটি তাকে দান করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এটি গ্রহণ কর ও সঞ্চয় কর কিংবা দান কর। সাওয়াল ও লালসা ব্যতীত যে মাল তোমার কাছে আসে তুমি তা গ্রহণ কর। আর যে মাল এভাবে আসে না তুমি নিজে তার পেছনে লেগো না। সালিম (রহঃ) বলেন, এ কারণেই ইবনু উমর (রাঃ) কারো নিকট কোন কিছু সাওয়াল করতেন না এবং তাঁকে কোনবস্তু (উপকোকন) দেয়া হলে, তা ফিরিয়েও দিতেন না।

২২৭৮ আবূ তাহির (রহঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২২৭৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ইবনু সাঈদী মালিকী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে সাদাকা উসূলকারী নিযুক্ত করেন। যখন আমি কাজ সমাধা করে সাদাকার মালামাল তাঁর নিকট অর্পণ করলাম, তখন তিনি আমাকে আমার পারিশ্রমিক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম, আমি তো আল্লাহর ওয়াস্তে কাজ করেছি। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহর নিকটই আছে। বললেন, তোমাকে যা দেওয়া হায়ছে তা তুমি গ্রহণ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ও আমি উসূলকারীরুপে কাজ করেছি। তিনি আমাকে উসূলকারী নিয়োগ করেছিলেন। আামিও তোমার মত বলেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, যদি সাওয়াল ছাড়া তোমাকে কিছু দেওয়া হয় তবে তা খাও এবং সাদাকা কর।

২২৮০ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) ইবনু সাঈদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করে বললেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে সাদাকা উসূলকারী নিযুক্ত করেছিলেন।

২২৮১ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বৃদ্ধ মানুষের হদয় দুটি বস্তুর ভালবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত তরুণ ১/ জীবনের মায়া ও ২/ ধন সম্পদের মায়া।

২২৮২ আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বৃদ্ধ লোকের হৃদয় দুটি বস্তুর ভালবাসার ব্যাপারে যুবক- ১ দীর্ঘায়ু কামনা ও ২- প্রাচুর্যের লোভ।

২২৮৩ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয় এবং তার দুটি জিনিস যুবক হয়। ১ প্রাচুর্যের আকাঙ্ক্ষা ও ২- দীর্ঘায়ু কামনা।

২২৮৪ আবূ গাসশান মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২২৮৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

২২৮৬ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তানের যদি দুই ময়দান পরিপূর্ণ সম্পদ জমা হয় তবে সে আরো প্রান্তর কামনা করে। আদম সন্তানের পেট মাটি ব্যতীত কিছু পূর্ণ করতে পারবে না। (কিন্তু) যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।

২২৮৭ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি (আনাস) বলেন, আমি জানি না, তাঁর প্রতি তখন কোন কিছু অবর্তীর্ণ হচ্ছিল, না তিনি নিজের পক্ষ থেকেই এ কথা বলছিলেন। তারপর তিনি আওয়ানার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

২২৮৮ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি আদম সন্তানের স্বর্ণের একটি ময়দান থাকে তবু সে অনুরুপ আরেকটি প্রান্তর কামনা করবে। মাটি ব্যতীত কিছু মানুষের মুখ পূর্ণ করতে পারবে না, যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।

২২৮৯ যুহায়র ইবনু হারব ও হায়ীন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুনেছি তিনি বলেন, যদি আদম সন্তানের ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ একটি প্রান্তর থাকে তবু সে অনুরুপ অপর একটি প্রান্তর কামনা করবে। মানুষের কামনাকে মাটি ব্যতীত অন্য কিছু পূর্ণ করতে পারবে না। যে ব্যাক্তি তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, “এ কথা কুরআনে বানী কিনা আমি জানি না”। যুহায়রের অপর বর্ণনায় “ইহা কুরআনের বানী কিনা আমি জানি না” এ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। তবে তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নাম উল্লেখ করেননি।

২২৯০ সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ)-কে বসরাবাসী ক্বারীগনের নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি তথায় গিয়ে এমন তিনশ লোকের সাক্ষাৎ পেলেন, যারা কুরআনের ক্বারী ছিলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা বসরা শহরের সম্ভ্রন্ত লোক এবং আল কুরআনের ক্বারী, আপনারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকুন। বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনাদের মন যেন কঠিন না হয়ে যায়, যেমন পূর্বেকার লোকদের মন কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি সূরা পাঠ করতাম যা দৈর্ঘ ও কাঠিন্যের দিক থেকে সূরা (বারা-আত) তাওবার অনুরুপ। আমি তা ভুলে গিয়েছি। তবে তা ছাড়া এর থেকে এ কথাটি আমার মুখস্ত আছে “যদি আদম সন্তানের জন্য দুই মাঠ পরিপূর্ণ ধন-দৌলত হয়, তবে সে আরো মাঠ অবশ্যই খুজে বেড়াবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছু আদম সন্তানের পেট পুরা করতে পারবে না”। আমি অন্য একটি সূরাও পাঠ করতাম যা কোন একটি মুশাববাহতের১ সম পরিমাণ (দৈর্ঘ্য)। আমি তা ভুলেগিয়েছি। তবে তা ছাড়া এর থেকে আমার একটি মুখস্হ আছে- হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল”? তারপর তা সাক্ষ্য তা সাক্ষ্য স্বরুপ তোমাদের গর্দানে লিখে দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে কিয়ামতের দিন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।

২২৯১ যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অধিক ধন-সম্পদে অভাব মুক্তি নেই। অন্তরের অভাব মুক্তই প্রকৃত ধন সম্পদ।

২২৯২ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আল্লাহর কসম, আমি তো তোমাদের জন্য আশংকা করি কেবল আল্লাহ তোমাদের জন্য পার্থিব জাকঁজমক থেকে যা উদগত করে দিবেন সে বিষয়ে। তখন এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একথা ওনে) কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তারপর বললেন, তুমি কী বলেছিলেন? লোকটি বলল, আমি বলেছিলাম, কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কল্যাণ কল্যাণ ব্যতীত আসে না। যেমন, বসন্তকাল যা (তৃণলতা) উদগত করে তা জীব পশুকে পেট ফুলিয়ে মারে বা মরার নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে তৃণভোজী পশু তা খায় এবং খেয়ে উদরপূর্তি করে, তারপর সূর্যের আলোকে থাকে, পেশাব ও পায়খানা করে এবং জাবর কাটে এরপর আবার আসে এবং খায়। অতএব যে ব্যাক্তি ন্যায়ভাবে মাল উপার্জন করে তার জন্য এ মাল বরকত পূর্ণ করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যাক্তি; অন্যায়ভাবে মাল উপার্জন করে সে ঐ লোকের অনুরুপ যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।

২২৯৩ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদ্দরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের ব্যাপারে সর্বাধিক আশংকা করি পার্থিব চাকচিক্যের, যা আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করে দিবেন। তখন সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পার্থিব চাকচিক্য কি? তিনি বললেন, যমীনের বরকত সমূহ তারা আবার বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? বললেন, কল্যাণ তো কল্যাণ ছাড়া কিছু আনে না। একথা তিনি তিনবার বললেন। তবে বসন্তকাল যা উদগত করে তা হয় তো (জীব জন্তুকে) মেরে ফেলে অথবা মরার নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে পশু তা খেয়ে উদরপূর্তি করে, তারপর রৌদ্রে গিয়ে জাবর কাটে এবং পেশাব পায়খানা করে, তারপর ফিরে আসে এবং খায়। পার্থিব সম্পদ মধুর ও চাকচিক্যময়! যে ন্যয়ভাবে মাল উপার্জন করে এবং যথাস্থানে তা ব্যয় করে তবে তা হয় উত্তম সহায়ক আর যে অন্যায়ভারে সস্পদ উপার্জন করে সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।

২২৯৪ আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসলেন। আমরাও তার চর্তুপার্শে বসলাম। তারপর তিনি বললেন, আমার তিরোধানের পর তোমাদের ব্যাপারে আমি যে সব বিষয়ের আশংকা করি এর মধ্যে প্রধানতম বিষয় হচ্ছে পার্থিব জাঁকজমক ও এর চাকচিক্য। তখন এক ব্যাক্তি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কল্যাণ কি অকল্যাণ আনতে পারে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। তাঁকে বলা হল, তোমার কী ব্যাপার তুমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কথা বলছ। আর তোমার সাথে কথা বলছেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। তারপর তিনি স্বাভাবিক হয়ে নিজের ঘাম মুছে ফেলে বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? মনে হল, তিনি তার প্রশ্ন পছন্দ করেছেন। এরপর তিনি বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ আনেনা। অবশ্য বসন্ত কাল যা কিছু উদগত করে (ভক্ষণকারী) পশুকে পেট ফুলিয়ে মেরে ফেলে বা মৃত্যুর নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে তৃণভোজী পশু তা খায় এমনকি যখন তার উভয় কোক পূর্ণ হয়ে যায় তখন সে উত্তাপ গ্রহণ করে, এরপর সে মল ত্যাগ ও পেশাব করে এবং পূনরায় চরতে যায়। মনে রাখবে, এ ধন সস্পদ সবুজ শ্যামল ও মধূর! এ সম্পদ ঐ মুসলমানের উত্তম সঙ্গী যে এ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মূসা ফিরদেরকে দান করে।১ অথবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শব্দ বলেছেন। আর যে ব্যাক্তি এ সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করে সে ঐ ব্যাক্তির মত যে ভক্ষণ করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না। অধিক কিয়ামতের দিন এ সম্পদ তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে।

২২৯৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কয়েকজন আনসারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাওয়াল করলে তিনি তখন তাদের কিছু দান করলেন। আবার তারা সাওয়াল করলেন তিনি তাদেরকে আবার দান করলেন। এমনকি তার নিকট যা ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গেলে তিনি বললেন, আমার নিকট আরও মাল থাকলে আমি তা কখনো তোমাদের না দিছো মউযূ (ওজু/অজু/অযু)দ রাখব না। যে ব্যাক্তি ভিক্ষা থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে ভিক্ষা থেকে পবিত্র রাখেন এবং যে ব্যাক্তি পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে পরমূখাপেক্ষী করেন না এবং যে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাকে ধৈর্যশীল করেন। ধৈর্যের চাইতে অধিক কল্যাণকর ও প্রশস্ততর সম্পদ কাউকে দান করা হয়নি।

২২৯৬ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)-এর সূত্রে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ১ উক্ত বক্তব্যের মধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যবহরিত হুবহু শব্দ সম্পর্কে সন্দেহ থাকার কারণে বর্ননাকারী বলেন, অথবা যে শব্দে তিনি বলেছেন।

২২৯৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করল, তাকে প্রয়োজন মাফিক জীবিকা প্রদান করা হল এবং তাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকল সেই সফলকাম হল।

২২৯৮ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজনকে জীবন ধারণ করা যায় পরিমাণ রিযক দান করুন।

২২৯৯ উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ ক্ষেত্রে বন্টন করলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এদের ছাড়া অন্যেরা এদের চাইতে অধিক হকদার ছিল। তিনি বললেন, এরা দুটি কাজের একটির মধ্যে পতিত হতে আমাকে বাধ্য করেছে। এরা হয় অভাবে আমার কাছে সাওয়াল করবে অথবা আমার প্রতি কৃপণতার অভিযোগ আনবে। অথচ আমি কৃপণ হতে রাজী নই।

২৩০০ আমরুন নাকিদ ও ইউনুস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন নাজরানে ভৈরী মোটা আচল বিশিষ্ট একটি চাঁদর তাঁর গায়ে ছিল। তাঁর সঙ্গে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হয়। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাঁদর ধরে এমন জোরে টান দিল যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গর্দানের উপরিভাগে তাকিয়ে দেখলাম এ শক্ত টানের কারণে তাঁর গর্দানের উপর চাঁদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ প্রদত্ত যে মাল তোমার নিকট মউযূ (ওজু/অজু/অযু)দ আছে এর থেকে আমাকে কিছু দেয়ার জন্য আদেশ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং হেসে দিলেন! এরপর তাকে দান করার জন্য নির্দেশ দিলেন।

২৩০১ যুহায়র ইবনু হারব ও সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইকরামা ইবনু আম্মারের হাদীসে এ কথাটি উল্লেখ আছে যে, বেদুঈন লোকটি চাঁদর ধরে তার দিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমনভাবে টান দিলে যে, তিনি বেদুঈনের বুকের উপরিভাগে লুটিয়ে পড়লেন। আর হাম্মামের বর্ণনায় আছে যে, “সে তার সঙ্গে এমনভাবে টানাটানি করল যে, চাঁদরটি ছিড়ে এক পার্শ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘাড়ের উপর আটকে রইল।

২৩০২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি ‘কাবা’- বিতরণ করলেন এবং মাখরামা (রাঃ) কে কিছু দেননি। তখন মাখরামা (রাঃ) বললেন, হে বৎস! তুমি আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে চল। আমি তাঁর সঙ্গে চললাম। তারপর তিনি বললেন, তুমি যাও এবং তাঁকে আমার পক্ষ থেকে ডাক। তিনি বলেন, আমি তাঁর পক্ষ থেকে তাঁকে ডাকলাম। তিনি বের হয়ে নিকট এলেন। এ সময় ঐ গুলোর একটি ‘কাবা’- তাঁর সঙ্গে ছিল। তিনি বললেন, এটি আমি তোমার জন্য লুকিয়ে রেখেছিলাম। তারপর তিনি মাখরামা (রাঃ) এর দিকে তাকিয়ে বললেন, মাখরামা খুশী হয়েছে।

২৩০৩ আবূল খাত্তাব যিয়াদ ইবনু ইয়াহিয়া হাসসানী (র) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কয়েকটি ‘কাবা’- আসল। তখন আমার পিতা মাখরামা আমাকে বললেন, তুমি আমাকে তাঁর নিকট নিয়ে চল হয় তো এর থেকে তিনি আমাকেও কিছু দিবেন। তারপর আমার পিতা (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) গূহ দ্বারে গিয়ে দাঁড়িয়ে একথা বলতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আওয়াজ শুনে ফেললেন এবং বেরিয়ে এলেন, এ সময় তাকে সঙ্গে একটি ‘কাবা’ ছিল। তিনি মাখরামাকে ‘কাবা’- সৌন্দর্য দেখাতে দেখাতে বললেন, এটি তোমার জন্য আমি লূকিয়ে রেখেছিলাম, এ কাবা তোমার জন্য আমি লূকিয়ে রেখেছিলাম।

২৩০৪ হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোক কে (কিছু মাল) দান করলেন। আমি ও তাদের মাঝে বসাছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থেকে এক ব্যাক্তিকে এড়িয়ে গেলেন, তাকে দিলেন না। অথচ এ লোকটি এদের তুলনায় আমার কাছে অধিকযোগ্য ছিল। তাই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে তাকে গোপনে বললাম, অমুক লোকটির ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে একজন মূমিন বলে ধারণা করি। তিনি বলেন, বরং মুসলমান। এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। কিন্তু তার সমন্ধে আমি যা জানি তা আমাকে প্রভাবিত করল। ফলে পূনরায় আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! অমুকের ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে অবশ্যই একজন মুমিন বলে মনে করি। তিনি বললেন, বরং মুসলিম। পুনরায় আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অমুকের ব্যাপারে আপনার কি খেয়াল? আল্লাহর সপথ! আমি তো তাকে অবশ্যই একজন মুমিন বলে মনে করি তিনি বললেন, বরং মুসলিম। তার পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কোন এক জনকে কিছু দান করি অথচ অন্যজন তার চাইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়, এই আশংকায় যে, অধোমুখী হয়ে সে জাহান্নামে পতিত হতে পারে। হুলওয়ানীর হাদীসে কথাটি তিনবারের স্হলে দু-বার বর্ণিত আছে।

২৩০৫ ইবনু আবূ উমর, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে সালিহ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেছেন।

২৩০৬ হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু সা’দ (রহঃ)-এর সুত্রে যুহরী কতৃক হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে এ ও বর্ণিত আছে যে, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত আমার ঘাড় ও কাঁধের উপর মারলেন এবং বললেন, হে সা’দ! তুমি কি আমার সাথে লড়াই করতে চাইছ? আমি অবশ্যই কোন ব্যাক্তিকে দান করি।

২৩০৭ হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া তূজায়বী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধের দিন আল্লাহ তাঁর রাসুলকে হাওয়াযিন গোত্রের যে সম্পদ দান করলেন তা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শদের কিছু লোককে শতে শতে উট দান করলেন। আনসারগণ বলতে লাগলেন, আল্লাহ তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরায়শদের দিচ্ছেন, আর আনসা’দরকে বাদ দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারী থেকে এখনো তাদের রক্ত টপটপ করে ঝরছে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তাদের এ কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বর্ণনা করা হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং তাদের চামড়ার একটি তাঁবুর মধ্যে সমবেত করলেন। তাঁরা সকলে সমবেত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট আসলেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কথাটি কী, যা তোমাদের থেকে আমার নিকট পৌছেছে? তখন প্রজ্ঞাবান আনসারগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের জ্ঞানী লেরুকেরা কিছুই বলেনি, অবশ্য আমাদের মধ্যে কিছু অল্প বয়সের লোক বলেছে যে, আল্লাহ তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ক্ষমা করুন, তিনি কুরায়শদের দান করছেন। আর আমাদের বাদ দিয়েছেন। অথচ তাদের রক্ত এখনো আমাদের তরবারী থেকে টপটপ করে ঝরছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা সবেমাত্র কুফুরি বর্জন করে ইসলাম গ্রহণ করেছে, এমন কতিপয় ব্যাক্তিকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আমি দান করেছি। তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা ধন দৌলত নিয়ে যাবে আর তোমরা আপন গৃহে প্রস্হান করবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে? আল্লাহর কসম! তোমরা যা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে তা উত্তম এ জিনিস থেকে যা নিয়ে তারা প্রত্যাবর্তন করছো। তারপর-আনসারগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! হাঁ, অবশ্যই আমরা এতে সন্তুষ্ট আছি। এরপর বললেন, তোমরা তোমাদের চাইতে আরো বেশী অগ্রাধিকার পেতে দেখবে। এমতাবস্হায় তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করবে। আমি অবশ্য হাউযে কাওসারের পাশে থাকব (সেখানে আমাকে তোমরা পাবে)।

২৩০৮ হাসান আন-হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) -আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাওয়াযিন গোত্রের যে ধন সম্পদ থেকে আল্লাহ তা আলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (ফায় হিসেবে) দিয়েছেন এরপর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে রয়েছে যে, আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা ধৈর্য্যধারণ করতে পারিনি কারণ আমাদের মধ্যে অল্প বয়সী রয়েছে।

২৩০৯ যুহাহার ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে আনাস (রাঃ) বলেছেন যে, তারা বললেন, “আমরা ধৈর্য্যধারণ করব”। যেমন যুহুরি থেকে ইউনূসের রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে।

২৩১০ মুহাম্মদ ইবনুল মাসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের একত্রিত করলেন এবং বললেন, তোমাদের মধ্যে অন্য গোত্রের কেউ আছে কি? তারা বললেন, নেই। তবে আমাদের ভগ্নি পূত্র গণ। তখন রসুসূলূলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভগ্নিপূত্রগণ কাওমেরই অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি পূনরায় বললেন, কুরায়শ লোকেরা সবেমাত্র জাহেলী যুগ বর্জন করেছে এবং সদ্য বিপদমুক্ত হয়েছে। অতএব আমার ইচ্ছা, আমি তাদের ক্ষতির প্রতিদান দিব এবং তাদের হদয়কে আকৃষ্ট করব। তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে আর তোমরা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করবে। যদি সমস্ত মানুষ এক প্রান্তরে চলতে থহকে আর আনসারগণ চলে অন্য একটি ঘাটি দিয়ে তাহলে আমি অবশ্যই আনসারদের ঘাটিতে তাদের সাথে চলব।

২৩১১ মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনিমতের মাল কুরায়শদের মধ্যে বন্টন করলেন। এতে আননারগণ বলতে লাগল যে একি আাশ্চর্য। আমাদের তরবারী থেকে তাদের রক্ত ঝরছে আর আমাদের গনিমত তাদের দেওয়া হচ্ছে। এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছলে তিনি তাদেরকে একত্রিত করলেন এবং বললেন, কী কথা যা তোমাদের পক্ষ হতে আমার নিকট পৌছেছে? তারা বললেন, যা আপনার কাছে পৌছেছে তা ঠিকই আর আনসাররা মিথ্যা কথা বলতেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব ধন-সম্পদ নিয়ে নিজ বাড়ীতে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ীতে ফিরে যাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সঙ্গে নিয়ে। যদি লোকজন কোন প্রান্তর বা ঘাটি দিয়ে চলে আর আনসারগণ চলে অন্য প্রান্তর বা ঘাটি দিয়ে, তবে অবশ্যই আমি আনসারদের প্রান্তর বা ঘাটিতেই চলব।

২৩১২ মুহাম্মাদ ইবমূল মূসান্না ও ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর”আরা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের মুদ্ধে হাওয়াযিন, গাতফান ও অন্যান্য গোত্রের লোকেরা তাদের সন্তান সন্ততি এবং পশুপালন কে নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে অগ্রসর হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে দশ হাজার সৈন্য ছিল এবং তাঁর সঙ্গে আরো ছিল ক্ষমাপ্রাপ্ত মক্কাবাসী। যুদ্ধ আরম্ভ হলে তারা সবাই পালিয়ে গেল, এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী রয়ে গেলেন। এ সময় তিনি উচ্চস্বরে দু-বার ডাক দিলেন। এ দু-য়ের মধ্যে কথা মিলিত ছিল না। আনাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি ডান দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তাঁরা বললেন, লাব্বায়ক ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ। করুন আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর বাম দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তারা বললেন, লাব্বায়ক ইয়া রাসুলুল্লাহ! সুসংবাদ গ্রহণ করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা খচ্চরের উপর ছিলেন এরপর তিনি নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর বানী ও তাঁর রাসুল। অবশেষে মুশরিকরা পরাজিত হল। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাভ করেন তাদের থেকে বহু গনিমতের মাল। তিনি ঐ গুলো মুহাজির এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত মক্কাবাসীদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। কিন্তু আনসারদেরকে কিছু দিলেন না। এতে আনসারগণ বলতে লাগল, বিপদকালে আমাদের ডাকা হয় আর গনিমত আমাদের ছাড়া অন্যদেরকে দেওয়া হয়। এ খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছার পর তিনি তাদের একটি তাঁবুতে সমবেত করলে এবং বললেন হে আনসার সম্প্রদায়! এ-কি কথা তোমাদের পক্ষ হতে আমার নিকট পৌছেছে? তারা নীরব রইলেন। তারপর তিনি বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তোমার কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকের পার্থিব ধনসম্পদ নিয়ে চলে যাবে আর তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে ফিরে যাবে এবং তার সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকার সৌভাগ্য লাভ করবে। তারা বললেন, হ্যা ইয়া রাসুলুল্লাহ! এতে আমরা সন্তুষ্ট আছি। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকেরা একটি প্রান্তরে চলে আর আনসারগণ চলে অন্য একটি ঘাঁটিতে তাহলে আমি আনসারদের ঘাটই অবলন্বন করব। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হামযা (আনাস)! তুমি কি এ সময় উপস্থিত ছিলে? তিনি বললেন, আমি কোথায় তাঁর থেকে অনুপস্হিত থাকব?

২৩১৩ ঊবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয, হামিদ ইবনু উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মক্কা বিজয় করলাম। তারপর হুনায়নের যুদ্ধে অগ্রসর হলাম। এ সময় মুশরিকরা সৃংখল ও সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হল। প্রথম কাতারে ছিল তাদের অশ্বারোহী দল, তারপর পদাতিবহু বাহিনীর কাতার, তারপর মহিলাদের কাতার, তারপর বকরীর কাতার, তারপর উটের কাতার। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা। ছিলাম সংখ্যায় অনেক। আমার সংখ্যা ছয় হাজার গিয়ে পৌছেছিল।১ আমাদের ডান দিকের অশ্বরোহী দলের সেনাপতি ছিলেন খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)। এক সময় আমাদের ঘোড়াগুলো পাশ্চাঁদপদ হতে লাগল এবং আমাদের ঘোড়াগুলো দ্রুত ময়দান ছেড়ে গেল। আর বেদুঈন লোকেরা এবং আমদের কিছু জানা লোকও পালাল। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে ডাক দিলেন, হে মুহাজির সম্প্রদায়! হে মুহাজির সম্প্রদায়! তিনি আবার বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! হে আনসার সম্প্রদায়! রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, হাদীসের পরবর্তী অংশ আমার চাচাঁদের কাছ থেকে বর্ণিত। আমরা বললাম, লাব্বাইক ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্মুখের দিকে অগ্রসর হলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম আমরা আমাদের স্থানে পৌছার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের পরাজিত করে দিলেন। আমরা তাদের সে সকল সম্পদ হস্থগত করলাম। তারপর আমরা তায়িফের দিকে চললাম এবং তায়িফ বাসীদের চল্লিশ দিন পর্যন্ত অবরোধ করে রাখলাম। তারপর আমরা মক্কার দিকে ফিরে এলাম এবং তথায় অবতরণ করলাম। রাবী বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে একশ করে উট দিতে লাগলেন।- হাদীসের পরবর্তী অংশ কাতাদা, আবূ তায়্যাহ ও হিশাম ইবনু যায়িদ (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

২৩১৪ মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব, সাফওয়ান ইবনু উমায়্যা, উয়ায়না ইবনু হিসন ও আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) সহ উক্ত ব্যাক্তিদের একশ- করে উট প্রদান করলেন। আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ)-কে ঐ পরিমাণ সংখ্যা থেকে কিছু কম দিলেন। তখন আব্বাস ইবনু মিরদাস (রাঃ) বললেন, আপনি আমার ও আমার ঘোড়ার অংশকে বণ্টন করেছেন উয়ায়না এবং আকরার মাঝে। অথচ উয়ায়না ও আকরার কোন সমাবেশে মিরদাস হতে অগ্রগামী হতে পারেনি। আমি তাদের চেয়ে কম বাহাদূর নই, আজকে যাকে ছোট করা হবে সে আর বড় হবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তকেও একশ উট পূর্ণ করে দিলেন।

২৪১৫ আহনাদ ইবনু আবদা আদ-দাবী (রহঃ) উমর ইবনু সাঈদ ইবনু মাসরুক (রহঃ) সুত্রে এ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধ লব্ধ সস্পদ বণ্টন করলেন এবং আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব (রাঃ) কে একশ- উট প্রদান করলেন। তারপর পূ-এর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে একথাও রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলকামা ইবনু উলাসা (রাঃ)-কেও একশ উট প্রদান করলেন।

২৩১৬ মাখলাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) সাঈদ (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার হাদীসের মধ্যে আলকামা ইবনু উলানা ও সাফওয়ান ইবনু উমায়্যা কথা উল্লেখ করেননি এবং কবিতাগুলোও তার হাদীসে বর্নিত নেই।

২৩১৭ সূরায়জ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন বিজয় হয়ে গেলে গনীমতের মাল বন্টন করলেন এবং আকর্ষণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নও মুসলিমদের তা থেকে দিলেন। পরে তার কাছে এ খবর পৌছল যে, আনসারদের পছন্দ এই যে, তাদেরও অন্যান্য লোকদের সমান দেওয়া হোক। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ালেন এবং আনসারদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা এবং গুনাবলিলী বর্ণনা করলেন। তার পর বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদে পথহারা পাইনি? পরে আল্লাহ তায়ালা আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত করেছেন। আমি কি তোমাদের বিচ্ছিন্ন পাইনি? তারপর আল্লাহ তাআলা আমার দ্বারা তোমাদের বিত্তশালী করেছেন। আমি কি তোমাকের বিচ্ছিন্ন পাইনি? তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার মাধ্যমে তোমাদের সংহত করেছেন। আনসারগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুগ্রহশীল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোনরা কি আমার কথার উত্তর দিবে না? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অনুগ্রহশীল। তিনি বললেন, তোমরা কি চাও, তোমরা এরুপ, এরুপ বল এবং এরুপ কর? বলতে বলতে তিনি কয়েকটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করলেন। (বর্ণনাকারী) আমর (রাঃ) বলেন যে, তিনি তা স্বরণ রাখতে পারেন নি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি খুশী হবে না যে লোকেরা বকরী এবং উট নিয়ে (ফিরে) যাবে আর তোমরা তোমাদের গৃহে যাবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে? আনসারগণ আমার নিকটতম আর অন্যান্যরা আমার থেকে দুরের। যদি হিজরত না হত তবে অবশ্যই আমি আননারদেরই একজন হতাম। যদি লোকেরা এক প্রান্তরে বা এক ঘাটিতে চলে তবে আমি অবশ্যই আনসারদের প্রান্তর ও ঘাটি দিয়েই পথ চলব। তোমরা আমার পর একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিতে দেখবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে, হাউযে কাওসারে আমার-সাথে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত।

২৩১৮ যুহায়র ইবনু হারব, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বন্টনে কতিপয় ব্যাক্তিকে প্রাধান্য দিলেন। তিনি আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ)-কে একশ- উট দিলেন! উয়ায়না (রাঃ)-কেও অনুরুপ দিলেন। আরবের শীর্য স্হানীয় কতিপয় ব্যাক্তিকেও গনীমতের মাল দিলেন। বণ্টনে তাদের সেদিন অন্যদের উপর প্রাধান্য দিলেন। তখন এক ব্যাক্তি বললেন, আল্লাহর কসম! এ বন্টনে ইনসাফ করা হয়নি। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। আবদুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বলেন, এ কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম, এ সংবাদ অবশ্যই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর নিকট পৌছিয়ে দিব। তারপর আমি তাঁর নিকট এসে সে যা বলেছিল তা বলে দিলাম। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ন্যায়বিচার করেননি তবে ন্যায়বিচার আর কেই বা করবে? তারপর তিনি বলেলন, আল্লাহ . মূসা (আ-)-এর প্রতি দয়া করুন। তাকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন। রাবী বলেন, আমি মনে মনে করলাম, ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ কখনো আমি তাঁকে নিকট আর পৌছাব না।

২৩১৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বণ্টন করলেন। তখন এক ব্যাক্তি বলল, এ বন্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। রাবী বলেন, তারপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে চুপিচুপি তাকে এ কথা বললাম। এতে তিনি ভীষণ রাগান্বিত হলেন এমনকি তাঁর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল। আমি ভাবলাম, যদি আমি তার নিকট (এ কথা) না বলতাম! বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি বললেন, . মূসা (আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এর চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে। আর তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।

২৩২০ মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় জইররানাতে অবস্হানকালে এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসল। এ সময় বিলাল (রাঃ)-এর কাপড়ের মধ্যে কিছু রেৌপ্য ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে নিয়ে নিয়ে লোকদের দান করতে লাগলেন। তখন লোকটি বলল, হে মুহাম্মদ! ন্যায়ভারে বণ্টন রুকন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধবংস হোক, আমি যদি ন্যায় না করি, তবে কে ন্যায় করবে? যদি আমি ন্যায় না করি তবে তা আমি বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিককে কতল করে ফেলি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পানাহ, এতে লোকেরা রটাবে যে, আমি আমার সঙ্গীদের হত্যা করছি। এ ব্যাক্তি এবং তার সঙ্গীরা তো কুরআন পাঠ করে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। তারা কুরআন থেকে রেরিয়ে যায় যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

২৩২১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনামতের সম্পদ বণ্টন করছিলেন। উক্ত হাদীস শেষ পর্যন্ত বর্ননা করেন।

২৩২২ হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে কিছু মাটি মিশ্রিত স্বর্ণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা চারজন লোকের মধ্যে বন্টন করলেন। আকরা ইবনু হাবিস হানযালী, উয়ায়না ইবনু বাদর ফাযারী, আল কামা ইবনু উলাসা আমিরী তিনি বনী কিলাবের একজন আর যায়দ আন খায়র তাঈ তিনি বনী নাবহানের একজন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এতে কুরায়শারা ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ল এবং বলল, তিনি নজদের সর্দারদের দিচ্ছেন আর আমাদের বাদ দিচ্ছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তাদের মন আকৃষ্ট করার জন্যই তা করেছি। ইতিমধ্যে ঘনদাঁড়ি, ফোলাগাল কোটরাগত চোখ, উচু ললাট এবং মুড়িত মস্তক এক ব্যাক্তি এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় কর। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি আল্লাহর নাফরমানী করি তবে তার আনুগত্য করবে কে? এ পৃথিবীর অধিবাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে বিশ্বাস করেছেন। অথচ তোমরা আমাকে বিশ্বাস করছ না। রাবী বলেন, এরপর লোকটি চলে গেল। তখন উপস্থিত সাহাযীদের একজন তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন, সম্ভবত তিনি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) হবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোকটির বংশ থেকে এমন সষ্প্রদায় সৃষ্টি হরে যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর ভিতরে প্রবেশ করবেনা। তারা মূর্তি পূজকদের বাদ দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করবে। তারাই ইসলাম থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে বেরিয়ে যায় তীর শিকার ভেদ করে। আমি যদি তাদের পাই তাহলে অবশ্যই আদ সম্প্রদায়ের মত তাদের হত্যা করতাম।

২৩২৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামান থেকে আলী (রহঃ) দাবাগাত করা চামড়ার থলিতে করে কিছু সোনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পাঠালেন। তখনো স্বর্নগুলো মাটি থেকে পৃথক করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুলো চার ব্যাক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। উয়ায়না ইবনু হিসন, আকরা ইবনু হাবিস, যায়িদ জাল-খায়ল, চতুর্থ ব্যাক্তি হয় তো আলকামা ইবনু উলাসা অথবা আমির ইবনু তুফায়ল (রাঃ)। তখন সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, তাদের থেকে আমরাই এ মালের অধিক হকদার ছিলাম। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছার পর তিনি বললেন, তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন, তাঁর কাছে আমি আমানতদার। আমার কাছে সকাল সন্ধ্যায় আসমানের খবর আসে। রাবী বলেন, তখন কোটরাগত চোখ, ফোলাগাল, ডঁচু ললাট, ঘন দাঁড়ি, মুন্ডিত মস্থক এবং লুঙ্গি কাঁচানো এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেছেন, তোমার সর্বনাশ হোক। আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে পৃথিবীতে আমি কি সর্বাধিক যোগ্য নই? রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি ফিরে চলে গেল। এ সময় খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না সম্ভবত সে সালাত আদায় করে। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক মুসল্লী আছে যারা মুখ দিয়ে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষের হদয় অনুসন্ধানের এবং পেট বির্দিন্ন করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকালেন, সে ঘাড় ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, তার বংশে এমন লোক জন্মগ্রহণ করবে যারা অনায়াসে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার শিকার ভেদ করে। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যদি আমি তাদের পাই তবে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ সম্প্রদায়ের মত হত্যা করব।

২৩২৪ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উমর ইবনু কা’কা (রহঃ) সূত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারীর এ হাদীসের মধ্যে আলকামা ইবনু উলাসার কথা রয়েছে। কিন্তু আমির ইবনু তুফায়লের কথা উল্লেখ নেই। অনুরুপ ভাবে এ হাদীসের মধ্যে এর স্হলে কথাটি উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীসের মধ্যে অতিরিক্ত এ কথাও বর্ণিত আছে যে, এরপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না। তারপর লোকটি পেছনের দিকে চলে গেল। এরপর খালিদ সাইফুল্লাহ (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না। এরপর বললেন, অচিরেই তার বংশ থেকে এমন কাওম হবে, যারা নমরভাবে মধুর সূরে আল্লাহর কিতাব পাঠ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেনঃ যদি আমি তাদেরকে পাই তবে সামূদ সম্প্রদায়ের মত অবশ্যই তাদের হত্যা করব।

২৩২৫ ইবনু নুমায়র (রহঃ) উমারা ইবনু কা’কা (রহঃ) সুত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনাগুলো যায়দ আল খায়র আবড়া’ ইবনু হাবিস, উয়ায়না ইবনু হিসন ও আলকামা ইবনু উলাসা বা আমির ইবনু তুফায়ল (রাঃ) এই চার ব্যাক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। আব্দুল ওয়াহিদের হাদীসের মতে এ হাদীসেও কথাটি উল্লেখ রয়েছে। এ হাদীসে এও বর্ণিত আছে যে, এর ঔরষ থেকে এমন এক কাওম বের হবে-যেঁ এ হাদীসের মধ্যে “যদি আমি তাদেরকে পাই; তবে সামূদ সাশ্রদায়ের হত্যা করার মত আমিও তাদেরকে হত্যা করব। কথাটি উল্লেখ নেই।

২৩২৬ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সালামা ও আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা তারা দু-জন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) -এর নিকট এসে হারুরিয়্যাদের (খারেজী সম্প্রদায়) দের সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন এবং বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হারুরিয়্যাদের আলোচনা করতে শুনেছো কি? তিনি বললেন, হারুরিয়্যা কারা আমি জানি না, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একথা বলতে শুনেছি যে, এ উম্মাতের মাঝে, তিনি “এ উম্মাত থেকে” (এ কথা বলেন নি) এমন কাওম বের হবে তোমরা তোমাদের সানাতকে তাদের সালাতের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু এ কুরআন তাদের হলকুম বা কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্হল ভেদ করে। এরপর তীর নিক্ষেপকারী ব্যাক্তি তার তীর, নাসল রুসাফ এর ফুকার (ধনূকের অংশের আরবী নাম) প্রতি তাকিয়ে দেখে যে, এগুলি রক্তে রঞ্জিত কিনা?

২৩২৭ আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া ও আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করলেন। ত্র সময় বনী তামীম গোত্রের যুল খুওসায়সিরা নামক এক ব্যাক্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল ইনসাফ করুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধবংস হোক কে ইনসাফ করবে যদি আমি ইনসাফ না করি! আমি যদি ইসনাফ না করি তবে তো আমি অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার সঙ্গী সাহলরা তো এমন যে, তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে এবং তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তাদের সিয়ামের তুলনায় নগণ্য মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে- যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্হল অতিক্রম করে। তখন তীর নিক্ষেপকারী ব্যাক্তি ধনুকের নাসল পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। এরপর সে এর রুসাফ পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তারপর সে এর নায়ইও পরীক্ষা করে দেখবে এতে ও কিছুই পাওয়া যাবে না। কাদাহকেই নাযই বলা হয়। তারপর সে এর কুযায পরীক্ষা করে দেখবে এতেও পাওয়া যাবে না। তীর এত তীব্র গতিতে বেরিয়ে যায় যে মল বা রক্তের গাদ এতে লাগতেই পারে না। এ সম্প্রদায়ের লোকদের পরিচয় এই যে, এক কাল ব্যাক্তি যার উভয় বাহুহ-তে একটি বাবু হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায় অথবা এক টূকরা বাড়তি গোশ্তের ন্যায়। এদের আবির্ভাব তখন হবে যখন লোকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি একথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী (রাঃ) তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তখন আমি তার সাথে ছিলাম। আলী (রাঃ) এ লোকটিকে খোজ করার নির্দেশ দেওয়ার পর তাকে তালাশ করে পাওয়া গেল। এরপর তাকে আনা হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে নিদর্শন করেছেন সে বর্ণিত নিদর্শন মুতাবিক আমি তার দিকে তাকালাম।

২৩২৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যারা তাঁর উম্মাতের মাঝেই সৃষ্টি হবে। তারা আবির্ভুত হবে ঐ সময় যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে। তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাথা মুন্ডান থাকবে। তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট বা সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হবে। – তা-দেরকে দুদলের এমন দলটি হত্যা করবে যারা সভ্যের দিকে অধিক নিকটবর্তী এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একটি উপমা বর্ণনা করলেন অথবা করলেন, এক ব্যাক্তি লক্ষ্যস্হল নিরুপন করে তীর নিক্ষেপ করে এরপর নাসল পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতে বিব্দুমাত্র রক্তও সে দেখতে পায় না। এরপর এর নাযই পরীক্ষা করে দেখে, এতেও বিন্দুমাত্র রক্ত সে দেখে না। তারপর সে এর ফুক পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতেও সে বিন্দুমাত্র কোন কিছু দেখতে পায় না। বর্ণনাকারী আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, হে ইরাকবাসী! তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছ।

২৩২৯ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , মুসলমানদের মতবিরোধের সময় একটি দল বের হবে, তাদেরকে হত্যা করবে, দু-দলের এমন দলটি যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।

২৩৩০ আবূর রাবী যাহরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতে দুটি দল সৃষ্টি হবে। তখন তাদের থেকে অন্য আরেকটি দল সৃষ্টি হবে। এ দলকে দু দলের ওই দল হত্যা করবে যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।

২৩৩১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে যখন মত বিরোধ দেখা দিবে তখন একদল লোক বের হবে। তাদেরকে হত্যা করবে দু’দলের যে দলটি হকের অধিক নিকটবর্তী।

২৩৩২ উবায়দুল্লাহ কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে তিনি এক কাওম সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, এক ভীষণ মতবিরোধ চনাকালীন অবস্থায় তারা আবির্ভুত হবে। দু’দলের যে দলটি সত্যের অধিক নিকটবর্তী হবে, তারা তাদেরকে হত্যা করবে।

২৩৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) সুত্তয়াদ ইবনু গাফানা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেন নি এরুপ কোন কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামে বলার চেয়ে আমার নিকট আকাশ হতে পতিত হওয়া অধিক পছন্দনীয়। যখন আমি এবং তোমরা পরস্পর কোন কথা বলি তখন মনে রাখবে যে, যুদ্ধে প্রতারণা সা’দৃশ্য কৌশল বৈধ। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুনেছি; তিনি বলেন, শেষ যূগে একদল লোক বের হবে, তাদের বয়স কম হবে এবং জ্ঞানের দিক থেকে তারা হবে মুর্খ তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষের ন্যায় উত্তম কথা বলবে, কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্য স্হলভেদ করে। যখন তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে তখন তাদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। কেননা তাদেরকে হত্যা করার মাঝে রয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট প্রতিদান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে তাদেরকে হত্যা করেছে।

২৩৩৪ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দমী, আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) আমাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

২৩৩৫ উসমান ইবনু আবূ শায়বা, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আমাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মধ্যে “তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর তার লক্ষ্যস্হল ভেদ করে বের হয়ে যায়”- কথাটি উল্লেখ নেই।

২৩৩৬ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দমী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করলেন এবং বললেন, এদের মধ্য এক ব্যাক্তি এমন হবে যার হস্থদ্বয় খাটো হবে। তোমরা ঔদ্ধত প্রদর্শন না করলে, আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদেরকে যারা হত্যা করবে তাদের সাথে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদেরকে বলে দিতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে বললাম, আপনি এ কথা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছো কি? তিনি বললেন, হাঁ, আমি শুনেছি, এ কাবা গৃহের মালিকের শপথ, এ কা-বা গৃহের মালিকের শপথ, এ কা’বা গৃহের মালিকের শপথ।

২৩৩৭ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আবীদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার থেকে আমি যা শুনেছি তাই তোমাদের নিকট বর্ণনা করছি। এরপর তিনি আয়্যুবের অনুরুপ আলী (রাঃ) থেকে হাদীসটি মারফু হিসাবে বর্ণনা করলেন।

২৩৩৮ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যায়দ ইবনু ওয়াহব জুহানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ঐ সৈন্য দলের মধ্যে ছিলেন, যারা আলী (রাঃ)-এর সাথে খারেজী সষ্শ্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সফর করেছিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাত থেকে এমন একদল সেনাক বের হবে যারা কুরআন পাঠ করবে। কিন্তু তোমাদের কিরা-আত তাদের কিরআতের তুলনায় তুচ্ছ মনে হবে। তোমাদের সালাত তাদের সালাতের তুলনায় তুচ্ছ নয় এবং তোমাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) তাদের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র তুলনায় কিছুই নয়। তারা নিজেদের কল্যাণ ভেবে কুরআন পাঠ করবে কিন্তু এ তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। তাদের সালাত তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে যেমন তীর তার লক্ষ্যস্হল ভেদ করে বের হয়ে যাবে, যে সেনাদল কতৃক তারা আক্রান্ত হবে তাদের সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে তা যদি সৈন্যগণ জানত তবে অবশ্যই তারা আমল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকত। তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাঝে এমন এক ব্যাক্তি হবে যার বাহুর সঙ্গে হাত থাকবে না। স্তনের বোটার ন্যায় এর উপরে থাকবে সাদা কতগুলো পশম। (আলী (রাঃ) বলেন, তোমরা মু’আবিয়া (রাঃ) ও সিরিয়াবাসীদের দিকে আগ্রসর হচ্ছে এবং তাদেরকে এড়িয়ে যাচ্ছ অথচ তারা তোমাদের পেছনে তোমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে কষ্ট দিবে এবং তোমাদের ধন সম্পদ নষ্ট করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আশংকা করি তারাই ঐ কাওম যারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটাবে এবং মানুষের পশুগুলো লূণ্ঠন করবে। অতএব তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য চল। সালামা ইবনু কুহায়ল (রাঃ) বলেন, এরপর যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) আমার নিকট সৈন্যদের বিভিন্ন মনজিলে অবতরণের কথা বর্ণনা করলেন। তারপর বললেন, যেতে যেতে আমরা একটি পূল অতিক্রম করলাম। এরপর আমরা তাদের সাক্ষাৎ পেলাম। সে দিন খারেজীদের সেনাপতি ছিল, আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব রাসিবী সে তাদেরকে নির্দেশ দিল, তোমরা বর্শা রেখে দাও এবং তরবারী খাপ মুক্ত কর। আমি আশংকা করছি, তারা তোমাদের প্রতি হামলা করবে যেমন হারুরার দিন হামলা করেছিল। এরপর তারা ফিরে গিয়ে নিজ বর্শা খুলে রেখে দিল এবং তরবারী কোশ মুক্ত করল। মুসলমানগণ বর্শা দ্বারা তাদের প্রতি আক্রমণ করলে তারা নিতে হয়ে একের পর এক ধরাশায়ী হতে লাগল। সে দিন মুসলমানদের দুই ব্যাক্তই কেবল শহীদ হয়েছিলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা এদের মধ্যে খাটো হাত বিশিষ্ট লোকটিকে আন। তারা সকলেই তাকে তালাশ করলেন কিন্তু কোথাও পেলেন না। এরপর আলী (রাঃ) স্বয়ং দাড়ালেন এবং একের উপর এক পতিত লাশগুলোর কাছে গেলেন। এরপর তিনি লাশগুলো সরাবার নির্দেশ দিলেন। এ সময় তারা মাটির সাথে লেগে থাকা অবস্হায় খাটো হাত বিশিষ্ট লোকটিকে পেয়ে গেলেন। তখন আলী (রাঃ) “আল্লাহুআল্লাহ” ধ্বনী দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাযথভাবে পৌছিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আবীদা সালমানী (রাঃ) তার নিকট দাঁড়িয়ে বললেন, হে আমীযুল মুমিনীন! আল্লাহ তিনই, ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আপনি এ হাদীস শুনেছো কি? তিনি বললেন, হ্যা ঐ আল্লাহর শপথ! তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। এভাবে তিনি তিনবার কসম দিয়ে একথা বললেন।

২৩৩৯ আতে তাহিলু ও ইউনূস ইবনু আবদুল আতলা (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযাদকৃত গোলাম উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন বেরিয়ে গেল তখন তিনি (রাবী) আলী (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন, তারা বলতে লাগল যে, “হুকুম একমাত্র আল্লাহর” তখন আলী (রাঃ) বললেন, কথা তো হক কিন্তু এর উদ্দেশ্য বাতিল-। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোকের নিদর্শন বর্ণনা করেছেন, এ নিদর্শনগুলো এদের মাঝে আমি অবশ্যই দেখতে পাচ্ছি-দেখতে পাচ্ছি তারা-মুখে সত্য কথা বলবে কিন্তু এ কথা তাদের এস্হানও অতিক্রম করবে না। এ সময় তিনি কণ্ঠনালীর দিকে ইশারা করেছেন। তারা সৃষ্টি জগতের সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত লোক। তাদের -মধ্যে একজন কাল লোক রয়েছে। তার একটি হাত বকরীর ন্তনের মত অথবা স্তনের বোটার মত। যখন আলী (রাঃ) তাদেরকে হত্যাকরলেন তখন তিনি বললেন, তোমরা (তাকে) তালাশ কর। তারা তালাশ করলেন কিন্তু কিছু-ই পেলেন না। এরপর তিনি বললেন, তোমরা ফিরে যাও, আল্লাহর শপথ! আমি মিথ্যা বলিনি এবং আমার নিকট মিথ্যা বলা হয়নি, একথা তিনি দু-বার কিম্বা তিনবার করে বললেন। অতঃপর তারা তাকে লাশের স্থুপের মধ্যে পেয়ে আলী (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে আসলেন এবং তার সামনে রেখে দিলেন। উবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তাদের বিষয়টি আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং তাদের সম্পর্কে আলী (রাঃ) যা – বলেছেন আমি তা শুনেছি। ইউনূস (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে তিনি এ কথা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, বুকায়র বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু হলায়ন থেকে আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু হুনায়ন (রহঃ) বলেছেন, আমি কাল লোকটিকে দেখেছি।

২৩৪০ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার পর আমার উম্মাতের থেকে অথবা অচিরেই আমার পর আমার উম্মাত থেকে এমন কাওম আবির্ভুত হবে – যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যারে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্হল ভেদ করে। এরপর তারা আর দ্বীনের দিকে আসবে না। তারা জগতের সর্ব নিকৃষ্ট লোক হবে এবং তাদের স্বভাব ও হবে নীচু ধরনের। ইবনু সামিত (রাঃ) বলেন, হাকাম গিফারীর ভাই রাফিঁ ইবনু আমর গিফারী (রহঃ) থেকে এ কেমন কেমন হাদীস শুনতে পেলাম। তার নিকট আমি হাদীসটি উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, এ হাদীস আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুনেছি।

২৩৪১ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইউসায়র ইবনু আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খারেজীদের সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন, তা কি আপনি শুনেছেন? তখন তিনি বললেন, আমি তা শুনেছি। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, তারা এমন কাওম যারা মুখে কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। – তারা দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্য স্হল ভেদ করে।

২৩৪২ আবূ কামিল (রহঃ) সুনায়মান শায়বানী (রহঃ) এর সুত্রে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ উম্মাতের থেকে কতিপয় সম্প্রদায় আবির্ভুত হবে।

২৩৪৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক (রহঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলে এমন এক সম্প্রদায় আবিভূত হবে যাদের সকলেই থাকবে মাথা মুন্ডান অবস্হায়।

২৩৪৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সাদার একটি খেজুর হাতে নিয়ে মুখে পুরিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কাখ-কাখ’, ধবনি দ্বারা ইংগিত করে বললেন, এ ফেলে দাও। তুমি কি জাননা আমরা সাদাকা খাইনা।

২৩৪৫ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে যে, সাদাকা আমাদের জন্য হালাল নয়।

২৩৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবনু মুআয (রাঃ) -এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সাদাকা আমরা খাই না।

২৩৪৭ হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করে আমার বিছানার উপর একটি খেজুর পড়ে আছে দেখতে পেলাম। এরপর খাওয়ার জন্য আমি তা উঠিয়ে নিলাম। তারপর তা সাদাকার হবে বলে আমার আশংকা হল। তাই আমি তা ফেলে দিলাম।

২৩৪৮ মুহাম্মদ ইবনু রাফি- (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ননা করেছেন। এ বলে তিনি তার থেকে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করলেন। এরপর বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করে একটি খেজুর বিছানায় অথবা ঘরের ভেতর পড়ে থাকা অবস্হায় দেখতে পেলাম এবং খাওয়ার জন্য তা উঠিয়ে নিলাম। এরপর আমার ভয় হল, হয়ত তা সাদাকা হবে। তাই আমি তা ফেলে দিলাম।

২৩৪৯ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর পেয়ে বললেন, এ যদি সাদাকার খেজুর না হত তাহলে অবশ্যই আমি তা খেয়ে ফেলতাম।

২৩৫০ আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করার সময় বললেন, যদি এ সাদাকা না হত তাহলে আমিই আমি তা ভক্ষন করতাম।

২৩৫১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খেজুর পেয়ে বললেন, যদি সাদাকার না হত তাহলে অবশ্যই আমি তা ভক্ষণ করতাম।

২৩৫২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয যুবাঈ (রহঃ) আব্দুল মুত্তালিব ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাবী’আ ইবনুল হারিস (রহঃ) এবং আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব। (রাঃ) একত্রিত হলেন। এরপর তারা বললেন, আল্লাহর সপথ! আমরা যদি আবদুল মুত্তালিব ইবনু রাবী’আ এবং ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ দু-জন যুবককে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট- পাঠাই এবং তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে আলোচনা করে। এরপর তিনি তাদেরকে যাকাত উসূলকারী নিয়োগ করেন এবং মানুষ যা যাকাত প্রদান করবে তা -তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছিয়েদেয় এবং তারা পারিশ্রমিক হিসাবে ঐ পরিমাণ পায় যা অন্যান্য লোকেরা পেয়ে থাকে। এ সময় আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এসে তাদের নিকট দাড়ালেন। তারা এ বিষয়টি তার নিকট আলোচনা করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, আপনারা পাঠাবেন না। কারণ আল্লাহর শপথ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ কাজ করবেন-না। তখন রাবীআ ইবনুল হারিস (রহঃ) আলী (রাঃ)-এর প্রতি রেগে গেলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ। আপনি আমাদের প্রতি ঈর্যাষিত হয়ে এ আচরণ করছেন। আল্লাহর কসম! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামাতা হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। কিন্তু আমরা তো এতে আপনার প্রতি ঈর্ষা করিনা। এ কথা শুনে আলী (রাঃ) বললেন, তোমরা তাদেরকে পাঠিয়ে দাও। এরপর তারা চললেন এবং আলী (রাঃ) শুয়ে পড়লেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুহরের সালাত আদায় করলেন তখন তারা অগ্রে গিয়ে হুজরার নিকট দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাদের উভয়ের কান ধরে বললেন, তোমাদের মনে কি কথা জমা আছে বল। তারপর তিনি হুজরায় প্রবেশ করলেন। আমরাও তাঁর সাথে প্রবেশ করলাম। এ সময় তিনি যয়নব বিনত জাহশের গৃহে অবস্হান করছিলেন। রাবী বলেন, আমরা একে অন্যের উপর ভরসা করে ছিলাম। এ সময় আমাদের একজন কথা বলতে আরম্ভ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দয়াবান এবং আত্নীয়তা রক্ষাকারী। আমরা বিবাহের বয়সে পদার্পণ করেছি আমরা এসেছি, যেন আপনি আমাদেরকে এই যাকাতের মাল উসুলকারী নিয়োজিত করেন। আমরাও আপনার নিকট পৌছিয়ে দিব যেমন অন্যান্য লোকেরা পৌছিয়ে দেন এবং আমরাও (এর থেকে কিছু) যেন আপনি পাব যেমন অন্যরা পান। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে তিনি দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকলেন। অবশেষে পূনরায় আমরা তার সাথে (এ বিষয়ে) কথা বলার ইচ্ছা করলাম। তখন যয়নাব (রাঃ) পর্দার অন্তরাল থেকে আমাদেরকে ইশারা করে বললেন, তাঁর সাথে এখন কোন কথা বলো না। রাবী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের জন্য সাদাকার মাল ভক্ষণ করা বৈধ নয়। এতো মানুষের ময়লা। তোমরা মাহমিয়াকে আমার নিকট ডেকে আন। সে খুমুসের রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিল। নাওফল ইবনুল হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিব বলেন, এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন! এরপর তিনি মাহমিয়াকে বললেন, তুমি তোমার কন্যাকে ফযল ইবনু আব্বাসের নিকট বিয়ে দিয়ে দাও। তিনি এরপর নাওফল ইবনু হারিস (রাঃ)-কে বললেন, তুমিও তোমার কন্যাকে এ ছেলেটির নিকট বিয়ে দিয়ে দাও। বর্ণনাকারী আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি আমার নিকট বিয়ে দিয়ে দিলেন। তারপর তিনি মাহমিয়াকে বললেন, খুমুসের মাল থেকে তাদেরকে এই এই পরিমাণ সাদাকা দিয়ে দাও! ইমাম বলেন- তিনি আমার নিকট তার নাম উল্লেখ করেননি।

২৩৫৩ হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) আবদুল মুত্তালিব ইবনু রাবীআ ইবনু হারিস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাঁর পিতা রাবী’আ ইবনুল হারিস ও আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) আবদুল মুত্তালিব ইবনু রাবীঁআ ও ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, তোমরা উভয়েই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাও। এরপর তিনি মালিক (রহঃ)-এর বর্ণিত অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করবেন। তবে এতে এও আছে যে তারপর আলী (রাঃ) চাঁদর বিছিয়ে এর উপর শুয়ে পড়লেন এবং বললেন, আমি প্রজ্ঞাবান ও রায় প্রদানে বলিন্ঠ। আল্লাহর শপথ! আমি এ স্হান পরিত্যাগ করার পূর্বেই তোমাদের উভয়ের ছেলে ঐ উত্তর নিয়ে ফিরে আসবে যার জন্য তোমরা তাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পাঁঠিয়েছ। এ হাদীসের মধ্যে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, অতঃপর তিনি আমাদেরকে বললেন, এতো সাদাকা এঁতো মানুষের ময়লা এ মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজনের জন্য হালাল নয়। হাদীসে এ কথাও বর্নিত আছে যে, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নিকট মাহমিয়া ইবনু জুয (রাঃ)-কে ডেকে নিয়ে আস। তিনি ছিলেন বর্নী আসা’দর এক ব্যাক্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গনীমতের মালের খুমুস-৫/১ উসূলকারী নিয়োগ করেছিলেন।

২৩৫৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী জুওয়রিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করে বললেন, কিছু খাবার আছে কি? তিনি বললেন, না। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আমার নিকট কোন খাবার নেই। তবে বকরীর কিছু হাড় গোড় আছে যা আমার আযাদকৃত দাসীকে সাদাকা হিসাবে দেয়া হয়েছিল। একথা শুনে তিনি বললেন, তা আমার নিকট আন। বস্তুত সাদাকা তার আপন স্থানে পৌঁছে গিয়েছে।

২৩৫৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

২৩৫৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়াদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বারীরা (রাঃ) সাদাকা হিসাবে প্রাপ্ত কিছু গোশতঁ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাদিয়া দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহা তার জন্য সাদাকা। আর আমার জন্য হাদিয়া।

২৩৫৭ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু গরুর গোশত আসল। তখন তাকে বলা হল, এগুলো বারীরা (রাঃ)-কে সাদাকা দেওয়া হয়েছে। তখন তিনি বললেন, ইহা বারীরার জন্য সাদাকা, আর আমর জন্য হাদিয়া।

২৩৫৮ যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ)-কে কেন্দ্র করে তিনটি বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। লোকেরা তাকে সাদাকা দিত। আর সে তা আমাকে হাদিয়া করত। আমি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আলোচনা করার পর তিনি বললেন, এ তার জন্য সাদাকা, আর তোমাদের জন্য হাদিয়া সুতরাং তোমরা তা খাও।

২৩৫৯ আবূ বাকর আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত।

২৩৬০ আবূত-তাহির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে ‘তা আমাদের জন্য তার পক্ষ থেকে হাদিয়া।

২৩৬১ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট সাদাকার একটি বকরী পাঠালেন। আমি এ থেকে কিছু অংশ আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট আসলেন তখন জিজ্ঞাসা তোমার নিকট কোন আছে কি? ‘ তিনি বললেন, না কোন কিছুই নেই। তবে নূসায়বা আমাদের জন্য বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছেন যা আপনি তাকে দিয়েছিলেন তা আছে, তখন তিনি বললেন, বস্তুতঃ সাদাকা তার স্থানে পৌছে গেছে।

২৩৬২ আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কোন খাদ্য দ্রব্য আসলে তিনি সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন যদি বলা হত, হাদিয়া, তবে তা খেতেন। আর যদি বলা হত সাদাকা, তবে তা খেতেন না।

২৩৬৩ ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন কাওম তাদের সাদাকা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসত তখন তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। একদা আবূ আওফা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তার সাদাকা নিয়ে আসলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আবূ আওফার পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

২৩৬৪ ইবনু নুমায়র (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের এর স্থলে কথাটি বর্ণিত আছে।

২৩৬৫ ইয়াহহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যাকাত উসূলকারী তোমাদের নিকট আসবে, তখন সে যেন তোমাদের থেকে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রত্যাবর্তন করে।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: যাকাত
যাকাত
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/jakat.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/jakat.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy