৬৮৬৯। আব্দুরল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে অপছন্দনীয় বস্তু দ্বারা এবং জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখা হয়েছে লৌভনীয় বস্তু দ্বারা।
৬৮৭০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৮৭১। সাঈদ ইবনু আমর আশ আশী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্নিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আল্লাহ
তাআলা বলেছেন, আমি
আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান
শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনিা হুবহু এ কথাটি আন-কুরআনেও বিদ্যমান
রয়েছে-”কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের
কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরুপ। ” (সূরা সাজদা:১৭)
৬৮৭২। হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার
নেক বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান
কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তকরণ যা কখনো কল্পনাও করেনি। এসব নিয়ামত আমি সঞ্চিত রেখে
দিয়েছি। আল্লাহ তোমাদেরকে যা জানিয়েছেন তা রাখ।
৬৮৭৩। আবূ বকর ইবনু আবী শায়বা ও আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
আল্লাহ তাআলা বলেঁছেন,
আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরী করে রেখেছি, যা কোন
চক্ষু কখনো দেখেনি,
কোন কান কখনো শুনেনি এবং যা কোন অন্তকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। এগুলো আমি
তোমদের জন্য জমা করে রেখে দিয়েছি। এসব ছাড়া আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু দেখিয়েছেন এর
কোন মূল্য নেই। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, “কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী
লূকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পূরুস্কার স্বরুপ। ” (সূরা সাজদাঃ ১৭)।
৬৮৭৪। হারুন ইবনু মারুফ ও হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) সা’দ ইবনু সা’দ আল
সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) -এর এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বর্ননাতীতভাবে জান্নাতের প্রশংসা
করে শেষ পর্যায়ে বললেন, এতে এমন সব নিয়ামত রয়েছে যা কোন চক্ষু কখনো
দেখেনি, কোন
কান কখনো শুনেনি এবং কোন অন্তকরণ কখনো কল্পনাও করেনি। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- তারা
শয্যা ত্যাগ করত তাদের প্রতিপালককে ডাকে, আশায় ও আশংকায় এবং তাদেরকে যে রিযক দান করেছি
তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানেনা তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকরণ কী লুকায়িত রাখা
হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরুপ। ”
৬৮৭৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতে এমন একটি
বৃক্ষ আছে, যার
ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত সফর করতে পারবে।
৬৮৭৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে
রয়েছে যে- এতেও সে সফর শেষ করতে পারবে না।
৬৮৭৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) সাহুল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে এমন একটি
বৃক্ষ রয়েছে, যার
ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর সফর করেও তা শেষ করতে পারবে না। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম
(রহঃ) বলেন, নূ”মান
ইবনু আবূ আয়্যাশ যুরাকীর নিকট এ হাদীস আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমাকে আবূ
সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যা স্ফুর্তিবাজ দ্রুতগামী অশ্বের আরোহী একশ-
বছর পর্যন্ত সফর করেও অতিক্রম করতে পারবে না।
৬৮৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবারে রহমান ইবনু সাহল (অন্য সনদে) হারুন ইবনু সাঈদ আল
আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে
জান্নাতীগণ! তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার দরবারে উপড়ী
আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তর
দেবে, হে
আমাদের প্রতিপালক! কেন আমরা সন্তুষ্ট হবো না? অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছিল যা
আপনার সৃষ্টি জগতের অন্য কাউকে দান করেননি। তিনি বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর থেকে
উত্তম জিনিস দান করব না? তারা বলবে, হে রব! এর চাইতে উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? অতঃপর
আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি নাযিল করব। এরপর তোমাদের উপর আমি
আর কখনো অসন্তুষ্ট হবো না।
৬৮৭৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকেরা জান্নাতের সুউচ্চ
বালাখালাসমূহ দেখতে পাবে, তোমরা যেমন আকাশের তারকারাজি দেখে থাকা
বর্ণনাকারী বলেন, নুঁমান
ইবনু আবূ আয়্যাশের নিকট এ হাদীসটি আমি বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, আমি আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, যেমনিভাবে তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিগন্তের
তারকারাজি দেখে থাক।
৬৮৮০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে এর সনদে ইয়াকুবের হাদীসে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৮১। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু খালিদ (অন্য সনদে) হারুন ইবনু
সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতের বাসিন্দাগণ জান্নাতের সুউচ্চ বালাখানাসমূহ
উপর থেকে দেখতে পাবে,
যেমন দূরবর্তী উজ্জ্বল তারকারাজি তোমরা আকাশের পৃর্ব বা পশ্চিম দিগস্তে দেখতে
পাও। কেননা তাদের পরস্পরে মর্যাদার ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান থাকবে। এ কথা শুনে
সাহাবীগণ বললেন, হে
আল্লাহর রাসুল! এ স্তরসমুহ তো নাবীদের (নবীদের) জন্য নির্দিষ্ট। তাদের ব্যতীত
অন্যেরা তো এ স্তরে কখনো পৌছতে পারবে না। উত্তরে তিনি বললেনঃ কেন পারবে না, নিশ্চয়ই
পারবে। যে সত্তার হাতে আমার গ্রাণ আমি তাঁর কসম করে বলছি! যে সমস্ত লোক আল্লাহতে
ঈমান আনয়ন করেছে এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি আস্হা স্হাপন করেছে, তারা সকলেই
এ মর্যাদা সম্পন্ন স্তরসমূমুহে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।
৬৮৮২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমাকে অধিক
মহব্বাতকারী ঐ সমস্ত লোকেরা হবে, যারা আবির্ভুত হবে আমার তিরোধানের পর, তারা কামনা
করবে, হায়
যদি তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধনঐর্যের বিনিময়েও আমাকে দেখতে পেত।
৬৮৮৩। আবূ উসমান সাঈদ ইবনু আবদুল জাব্বার আল বাসরী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতে একটি
বাজার থাকবে। প্রত্যেক জুমআয় জান্নাতী লোকেরা এতে সমবেত হবে। অতঃপর উত্তরের বায়ু
প্রবাহিত হয়ে সেখানকার ধূলা-বালি তাদের মুখমন্ডল ও কাপড় চোপড়ে গিয়ে লাগবে। এতে
তাদের সৌন্দর্য এবং গায়ের রং আরো বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা নিজ পরিবারের নিকট
ফিরে আসবে। এসে দেখবে,
তাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্যও বহু বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তাদের পরিবারের লোকেরা
বলবে, আল্লাহর
কসম! আমাদের নিকট হতে যাবার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারাও
বলবে, আল্লাহর
শপথ! তোমাদের গায়ের সৌন্দর্য আমাদের কাছ হতে যাবার পর বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
৬৮৮৪। আমর নাকিদ ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী (রহঃ) মুহাম্মদ (রহঃ) হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
লোকেরা হয়ত গর্ব প্রকাশ করে বলল, অথবা আলোচনা করতঃ বলল, জান্নাতে
পুরুষ বেশী হবে, না
মহিলা! এ কথা শুনে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আবূল কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কি বলেন নি, যে
দলটি জান্নাতে প্রথম প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়
দণ্ডিয়মান। তাদের পর যারা জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হবে ঊর্দাকাশের উজ্জ্বল
নক্ষত্রের ন্যায়। তাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে দু জন স্ত্রী। গোশতের একাংশ হতে
তাদের পায়ের গোছার মগজ দেখা যাবে। জান্নাতের মধ্যে কেউ অবিবাহিত থাকবে না।
৬৮৮৫। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পুরুষ ও
মহিলাদের মধ্যে কারা অধিক জান্নাতী হবে, এ বিষয়ে পুরুষ ও মহিলাগণ বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হল।
অতঃপর তারা এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি ইবনু উলায়্যার মত
বললেন, আবূল
কাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথা বলেছেন।
৬৮৮৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(অন্য সনদে) কুতায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ প্রথমে যে দলটি জান্নাতে
প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় দীপ্তিমান হবে। তাদের পর যারা
জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা আকাশের উদিত উজ্জ্বল তারকারাজির ন্যায় হবে।
তারা পেশাব-পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না এবং নাক ঝাড়বেনা। তাদের চিরুনি
হবে স্বর্ণের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে এবং তাদের আংটি হবে অগুরুর
কাষ্ঠের তৈরী। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুর। তাদের চরিত্র হবে একই ব্যক্তির
চরিত্রের ন্যায়। আদি পিতা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি হবে তাদের আকৃতি। ষাট
হাত লম্বা হবে তাদের দেহ।
৬৮৮৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথমে আমার
উম্মাতের যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হরে পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়
দীপ্তিমান। অতঃপর যারা জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা হবে উর্ধাকাশে উদিত
নক্ষত্ররাজির ন্যায়। অতঃপর যারা জান্নাতে যাবে তাদের কয়েকটি স্তর হবে। তারা
পেশাব-পায়খান করবে না,
নাক ঝাড়বেনা এবং থুথু ফেলবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের আংটিগুলো
হবে অশুর কাষ্ঠের তৈরী। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ বিচ্ছুরিত হবে। তাদের
চরিত্র একই ব্যক্তির চরিত্রের ন্যায় হবে। তারা তাদের আদি পিতা আদম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর ন্যায় ষাট হাত লম্বা হবে। অতঃপর ইবনু আবী শায়বা ও আবূ কুতায়বা
উভয়ই বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বলেছেন, তাদের
আকৃতি তাদের পিতা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আকৃতি হবে।
৬৮৮৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রাঃ) হতে বর্ণনা
করেছেন। এর থেকে একটি হল এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ যে দলটি প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়
দীপ্তিমান হবে। তথায় তারা থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বেনা এবং পায়খানাও করবে না। তথায় তাদের
বরতন এবং চিরুনিসমূহ স্বর্ণ এবং রৌপ্য নির্মিত হবে। তাদের আংটিগুলো হবে অশুর
কাষ্ঠের নির্মিত। তাদের শরীরের ঘাম মিশকের ন্যায় সুঘ্রাণযুক্ত হবে। তাদের
প্রত্যেকেরই দু”জন করে ন্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশতের উপর থেকে তাদের পায়ের
গোছার মগজ দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য থাকবে না এবং থাকবে না কোন
হিংসা বিদ্বেষ। তাদের হৃদয় একই হৃদয়ের ন্যায় হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর
তাসবীহ করবে।
৬৮৮৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী লোকেরা জান্নাতে
পানাহার করবে। তবে থুথু ফেলবে না, পেশাব-পায়খানা করবে না এবং নাকও ঝাড়বেনা। এ কথা
শুনে সাহাবীগণ বললেন,
তবে ভক্ষিত খানা যাবে কোথায়? উত্তরে তিনি বললেন, এক ঢেকুরে
শেষ হয়ে যাবে। তাদের শরীরের ঘাম মিশকের ন্যায় সুঘ্রাণতে হবে। তাসবীহ-তাহলীল করার
যোগ্যতা তাদের অন্তকরণে ইলহাম করা হয় যেমন ইলহাম করা হয় তাদের মাঝে তাদের শ্বাস
প্রশ্বাস।
৬৮৯০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে ‘কারা
শিহিল মিশক’ পর্যন্ত অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৮৯১। হাসান ইবনু আলী আন-হুলওয়ানী ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ জান্নাতী লোকেরা তথায় পানাহার করবে। তবে তারা তথায় পেশাব-পায়খানা করবে না
এবং নাকও ঝাড়বেনা। তাদের এ খাদ্য ঢেকুরের মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাদের শরীরের
ঘাম মিশকের ন্যায় সূঘ্রাণ বিচ্ছুরিত করবো তাসবীহ-তাহলীলের যোগ্যতা তাদের অন্তকরণে
ইলহাম করা হবে যেমনি ভাবে শ্বাস -প্রশ্বাস তাদের মাঝে ইলহাম করা হয়। তবে হাজ্জাজের
হাদীসে অতিরিক্ত এ কথা বর্ণিত রয়েছে যে,’তুয়ামুহুম যালিকা’।
৬৮৯২। সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া আল উমবী (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত আছে। তবে এতে
অতিরিক্ত এ কথা বর্ণিত রয়েছে যে, ‘ইয়ুলহামুনাস তাসবীহ্’।
৬৮৯৩। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে সাচ্ছন্দ্যে থাকবে
ও চিন্তাতে থাকবে। তার কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তার যৌবন কখনো শেষ হবে না।
৬৮৯৪। ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কোন আহবানকারী জান্নাতী
লোকদেরকে আহবান করে বলবে, এখানে সর্বদা তোমরা সুস্হ থাকবে, আর কখনো
অসুস্হ হবে না। তোমরা যুবক থাকবে, কখনো আর তোমরা বৃদ্ধ হবে না। তোমরা সর্বদা
সুখ-সাচ্ছন্দ্যে থাকবে, কখনো আর তোমরা কষ্ট-ক্লেশে পতিত হবে না। এ
মর্মে মহা মহিম আল্লাহর বানীঃ এবং তাদেরকে সন্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যা
করতে তারই জন্য তোমাদেরকে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।
৬৮৯৫। সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতে মুমিনদের জন্য ভেতর শুন্যৃ লূলূ
পাথরের একটি তাঁবু নির্মাণ করা হবে। এর দৈর্ঘ হবে ষাট মাইল। মুমিনদের স্ত্রীগণও
এতে থাকবে। তারা তাদের চতুস্পার্শে ঘূরাফেরাও করবে। তবে পরস্পর একে অন্যকেই দেখতে
পাবে না।
৬৮৯৬। আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতে মুমিনদের জন্য
ভেতর শুন্য লূলূ পাথরের তাঁবু নির্মাণ করা হবে। এর প্রস্হ হবে ষাট মাইল। এর
প্রত্যেক প্রান্তেই মানুষ থাকবে। তারা পরস্পর একে অন্যের চতুস্পার্শে ঘূরাফেরা
করবে। কিন্তু একে অপরকে দেখতে পাবে না।
৬৮৯৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মাল-মুক্তার তাঁবু হবে। ঊর্ধাকাশের দিকে
এর দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের স্ত্রীগণ থাকবে। তবে পরস্পর
একে অপরকে দেখতে পাবে না।
৬৮৯৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ সায়হান, জায়হান, ফুরাত ও নীল এসব জান্নাতের নহর সমূহেরই
অন্তর্ভুক্ত।
৬৮৯৯। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এমন কতিপয় লোক জান্নাতে যাবে, যাদের হৃদয়
পাখীর হৃদয়ের ন্যায়।
৬৯০০। মুহাম্মদ ইলূন রাফিঁ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে একটি হল এ
ই যে, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হল ষাট হাত। সৃষ্টির
পর তিনি তাকে বললেন,
যাও, এ
সমস্তদেরকে সালাম কর। তারা হচ্ছে ফিরিশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। সালামের জবাবে তারা
কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর। কেননা তোমার এবং তোমার আওলাদের অতিবাদন
এই। বর্ণনাকারী বলেন,
অতঃপর তিনি গেলেন ও বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম”। উত্তরে তারা বললেন, আসসালামু
আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ-। তাঁরা ওয়া রামাতূল্লাহ বাড়িয়ে বলেছেন। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি
জান্নাতে যাবে সে আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতিতে যাবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট
হাত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এরপর হতে মানব দেহের পরিমাণ
দিন দিন কমতে থাকে অদ্যাবধি পর্যন্ত।
৬৯০১। উমার ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামকে আনা হবে।
সেদিন এর মধ্যে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার
ফিরিশতা। তারা উহা টেনে নিয়ে যাবে।
৬৯০২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ
প্রজ্জলিত করে তা জান্নামের অগ্নির তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া
রাসুলল্লাহ। আল্লাহর কসম! এ আগুন কি যথেষ্ট ছিল না? তিনি বললেনঃ সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায়
উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি গুন দুনিয়ার আগুনের
সমমানের।
৬৯০৩। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আবূ যিনাদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তবে এতে হাম্মাম (রহঃ) ‘কুল্লুহা’ এর স্হলে ‘কুল্লুহুন্না মিসলু হাররিহা’ বলেছেন।
৬৯০৪। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে বসাছিলাম। হঠাৎ ধপাস- করে
একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ
কিসের আওয়াজ, তোমরা
কি জান? বর্ণনাকারী
বলেন, আমরা
বললাম, আল্লাহ
ও তার রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অতঃপর তা কেবল যেতেই ছিল। যেতে যেতে এখন উহা তার অতল তলে গিয়ে
পৌছেছে।
৬৯০৫। মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ
সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত এ কথা বর্ণিত রয়েছে যে, এ পাথরটি
এখন জাহান্নামের অতল তলে গিয়ে পৌছেছে, তাই তোমরা ঠোস” করে আওয়াজ শুনতে পেয়েছে।
৬৯০৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, জাহান্নামীদের
কাউকে তো অগ্নি তার উভয় টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে; আবার কাউকে
তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।
৬৯০৭। আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অগ্নি জাহান্নামীদের কাউকে তার উভয়
টাখনু পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, কাউকে তার উভয় কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, কাউকে তার
কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, আবার কাউকে তার হাসুলী পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।
৬৯০৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মূহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) সাঈদ (রাঃ) থেকে
এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ‘হুযযাতাহ’ এর পরিবর্তে ‘হুকুইয়াহ’
শব্দটি বর্ণিত আছে।
৬৯০৯। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম ও জান্নাত পরস্পর ঝগড়া করল।
অতঃপর জাহান্নাম বলল,
প্রতিপত্তি সম্পন্ন অহংকারী লোকের! আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জান্নাত বলল, দূর্বল ও
নিস্ব, লোকেরা
আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার
আযাব, যাকে
ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। কোন কোন সময় তিনি বলবেন, যাকে ইচ্ছা
আমি তোমার দ্বারা আক্রান্ত করব। এরপর তিনি জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার
রহমত, যাকে
ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুণা সিক্ত করব। তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপূর
খোরাক।
৬৯১০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:একদা জাহান্নাম ও জান্নাত দ্বন্দে লিপ্ত
হল। জাহান্নাম বলল,
অহংকারী এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন লোকেরা আমার মাঝে প্রবেশ করবে। জান্নাত
বলল, আমার
কি হল, মানুষের
মাঝে যারা দুর্বল, নীচু
স্তরের এবং অক্ষম, তারাই
আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার
রহমত, আমার
বান্দাদের যার প্রতি ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা করুনা বর্ষণ করব। এরপর তিনি
জাহান্নামকে বললেন,
তুমি আমার আযাব,
আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি তোমার দ্বারা শাস্তি দেব। তোমাদের প্রত্যেকের
জন্যই থাকবে ভরপূর হিস্যা। এতদৃসত্ত্বেও জাহান্নাম পূর্ণ হবে না। তাই আল্লাহ তাআলা
এতে স্বীয় পা মূবারক রাখবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট। এ সময়ই জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং
জাহান্নামীদের উপর হুমড়ী খেয়ে গিয়ে পড়বে।
৬৯১১। আবদুল্লাহ ইবনু আউন হিলালী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ একদা জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক যুদ্ধে
লিপ্ত হল। অতঃপর ইবনু আবূ যিনাদের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৯১২। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি
হাদীস হচ্ছে এই যে,
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম
পরস্পর ঝগড়া করেছে। জাহান্নাম বলল, প্রতিপত্তিশালী ও দম্ভকারীদের জন্য আমাকে
প্রদান করা হয়েছে। জান্নাত বলল, আমার কি হল, আমাতে কেবল দূর্বল ও নগণ্য লোকেরাই প্রবেশ
করবে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা, জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের
যাকে চাই তার প্রতি আমি রহমত নাযিল করব। এবং তিনি জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার
আযাব। তোমার দ্বারা আমি আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আযাব দিব। বস্তুতঃ তোমাদের
প্রত্যেকের জন্যই থাকবে ভরপুর হিস্যা। কিন্ত্বু জাহান্নাম কিছুতেই পূর্ণ হবে না।
অবশেষে তিনি স্বীয় চরণ মুবারক তাতে স্হাপন করবেন। তখন জাহান্নাম বলবে ব্যস, ব্যস, ব্যস। তখনি
কেবল জাহান্নাম পুর্ণ হবে এবং এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে গিয়ে সংকুচিত হয়ে
আসবে। আল্লাহ তাআলা তার সৃষ্টির কারো উপর যূলূম করবেন না। আর জান্নাত পূর্ণ করার
জন্য আল্লাহ তাআলা অন্য মাখলাকুন সৃষ্টি করবেন।
৬৯১৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ একনা জান্নাত ও জাহান্নাম ঝগড়া করল। অতঃপর আবূ হুরায়রা
(রাঃ) -এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ‘অলি কুল্লু অয়াহিদাতিন’ -এর
পরিবর্তে” (অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেককে ভরপুর হিস্যা প্রদান করা আমার দায়িত্ব)
কথাটি বর্ণিত আছে। কিন্তু এর পরবর্তী অতিরিক্ত অংশ এখানে বিবৃত হয়নি।
৬৯১৪। আবদইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম সর্বদা বলবে, আরো অধিক
আছে কি? শেষ
পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত আপন পদ মূবারক তাতে স্হাপন করবেন। তখন সে বলবে, আপনার
ইজ্জতের কসম! ব্যস,
ব্যস, ব্যস।
তখন এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে গিয়ে সংকুচিত হয়ে আসবে।
৬৯১৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) থেকে শায়বানের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৯১৬। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) মহান আল্লাহর বানী “ইয়াওমা নাকুলু
লিজাহান্নামা” -এর ব্যাখ্যায় আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ অব্যাহতভাবে (জাহান্নামীদেরকে)
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তবুও জাহান্নাম বলবে, আরো অধিক আছে কি? শেষ পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বূল ইজ্জত এতে আপন পদ
মুবারক স্হাপন করবেন। তখন এর এক অংশ অপর অংশের সাথে মিলে গিয়ে সংকুচিত হয়ে আসবে
এবং বলবে, তোমার
ইজ্জত ও অনুগ্রহের কসম! ব্যস, ব্যস। আর সর্বদা জান্নাতের মধ্যে স্হান খালি
থেকে যাবে। অবশেষে আল্লাহ এর জন্য অন্য মাখলূক পয়দা করবেন এবং খালি স্থানে তাদেরকে
স্হান দিবেন।
৬৯১৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন আল্লাহর যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ স্হান জান্নাতে খালি
থাকবে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা নিজ ইচ্ছা মুতাবিক এর জন্য অন্য মাখলুক সষ্টি করবেন।
৬৯১৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন
মৃত্যু কে উপস্থিত করা হবে একটি মোটাসোটা মেষের আকারে। আবূ কুরায়ব অতিরিক্ত
বর্ণনা করে বলেন, অতঃপর
তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্হলে দাঁড় করানো হবে। এরপর উভয়ই অবশিষ্ট হাদীস
একই রকম বর্ণনা করেছেন। তখন কেউ বলবে, হে জান্নাতীগন! তোমরা কি একে চিনো? একথা শুনে
তারা মাথা উঠিয়ে দেখবে এবং বলবে, হ্যা, এ তো মৃত্যুা বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বলা
হবে, হে
জাহান্নামীগণ! তোমরা কি একে চিনো? তখন তারা মাথা তুলে দেখবে এবং বলবে, হ্যা, এতো
মৃত্যু। অতঃপর আর্দেশ দেয়া হবে এবং উহাকে যবাহ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বলা
হবে, হে
জান্নাতীগণ! মৃত্যু নেই, তোমরা অনন্তকাল এখানে থাকবে। হে জাহান্নামীরা!
মৃত্যু নেই, তোমরা
অনন্তকাল এখানেই থাকবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাঠ
করলেনঃ “তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দাও-পরিতাপের দিবস সমন্ধে, যখন সকল
বিষয়ে শিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা গাফিল এবং তারা বিশ্বাস করে না। ” এ সময়
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হস্ত দ্বারা দূনিয়ার প্রতি
ইংগিত করলেন।
৬৯১৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন জান্নাতী লোকদেরকে জান্নাতে দাখিল
করা হবে এবং জাহান্নামী লোকদেরকে জাহান্নামে দাখিল করা হবে, তখন বলা
হবে, হে
জান্নাতবাসীগণ! অতঃপর জারীর (রহঃ) আবূ মুআবিয়া (রহঃ)-এর অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে ‘সুম্মা কারাআ রাসুলু’ এর পরিবর্তে ‘ফা যালিকা কাউলুহা’ কথাটি
উল্লেখ করেছেন এবং এতে -অতঃপর-তিনি স্বীয়,হস্তদ্বারা দূনিয়াকে ইংগিত করেছেন। একথাটিও
তিনি উল্লেখ করেননি।
৬৯২০। যুহায়র ইবনু হারব, হাসান ইবনু আলী-আন হুলওয়নী ও আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা জান্নাতে আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ
করানোর পর তাদের মধ্যখানে জনৈক ঘোষণাকারী দাড়িয়ে ঘোষণা করবে, হে
জান্নাতবাসীগণ! এখন মূত্যু নেই, হে জাহান্নামীরা! এখন মৃত্যু নেই। অনন্তকাল
তোমরা স্ব-স্ব-স্থানেই থাকবে।
৬৯২১। হারুন ইবনু সাঈদ আল আইলী ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন
জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তখন মৃত্যু
কে আনা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে দাড় করিয়ে যবাহু করে দেয়া
হবে। অতঃপর একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীগণ! এখানে আর তোমাদের মৃত্যু
নেই। অনুরুপভাবে জাহান্নামীদেরকেও বলা হবে, হে জাহান্নামীরা! আর তোমাদের মৃত্যূ নেই। এতে
জান্নাতীদের খুশীর সাথে আরো খুশী বদ্ধিত হবে এবং জাহান্নামীদের শোকের সাথে আরো
শোক সংযোজিত হবে।
৬৯২২। সূরায়হ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কাফিরদের দাঁত উহুদ পাহাড়ের সমতুল্য হবে
এবং তাদের চর্মের দুর্গন্ধ তিন দিনের দূবৃত্ব পর্যন্ত পৌছবে।
৬৯২৩। আবূ কুরায়ব ও আহমাদ ইবনু উমার ওয়াকীঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
মারফু সুত্রে হিসাবে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
জাহান্নামে কাফিরদের উভয় কাঁধের মধ্যখানে দ্রুতগামী আরোহী ব্যক্তির তিন দিনের
দূরত্বের পথ হবে। তবে ওয়াকীঈ ‘ফিননারি’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৯২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, আমি কি
তোমদেরকে কিছু সংখ্যক জান্নাতবাসীর পরিচয় জানাবো না? সাহাবীগণ
বললেন, হাঁ, অবশ্যই।
তিনি বললেনঃ তারা হবে দুর্বল এবং নমর স্বভাবের লোক। যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে
আল্লাহতা পূরণ করেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে কিছু সংখ্যক দোযখ বাসীর
পরিচয় জানাবো না? সাহাবীগণ
বললেনঃ হ্যা, জানাবেন।
তিনি বরলেন, তারা
হবে অত্যাচারী, দাম্ভিক
ও অহংকারী লোক।
৬৯২৫। মুহাম্মদ ইবনু আবূদল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহাব খুযাঈ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জান্নাতী
লোকদের পরিচয় আমি কি তোমাদেরকে জানাবো না? তারা হবে দূর্বল-নমর স্বভাবের লোক। যারা
আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। তিনি পূনরায় বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে
জাহান্নামী লোকদের পরিচয় জানাবো না? তারা হবে দাম্ভিক, কুখ্যাত
এবং অহংকারী লোক।
৬৯২৬। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কতিপয় লোক এমন আছে, যারা ধুলায়
ধুসরিত, দ্বার
দ্বার হতে বিতাড়িত। তারা যদি আল্লাহর নামে শপথ করে তবে আল্লাহ তা পূরণ করেন।
৬৯২৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যামআ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুৎবা
দানকালে উষ্ট্রী সম্পর্কে এবং যে ব্যক্তি ওটার পা কেটেছিল। তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করলেন। তিনি বললেনঃ যখন ঐ উষ্ট্রীকে হত্যা করার জন্য তাদের কাওমের সবচেয়ে দুর্ভাগা
লোকটি উঠল তখন এ কাজের জন্য উঠেছিল ঐ কাওমের সবচে শক্তিশালী, নিষ্ঠুর, বিদ্রোহী
ও দূর্ভাগা লোকটি। সে ছিল আবূ যামআর মত ব্যক্তি। এ খুতবায় তিনি মহিলাদের সম্পর্কেও
আলোচনা করলেন এবং তাদেরকে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন
লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে মারপিট করে। আবূ বকরের বর্ণনায় আছে, ক্রীতদাসীর
মত মারপিট করে। কিন্তু আবার ঐ দিন শেষে রাতের বেলা তার সাথে মিলিত হয়। তারপর তিনি
বায়ু নিঃসরণ করে হাচি সম্পর্কে ওয়ায করলেন এবং বললেনঃ এমন কাজের ব্যাপারে তোমরা
কেন হাসবে যা নিজেও করবে।
৬৯২৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি বনী কাবের বাপ আমর ইবনু লুহায় ইবনু
কামআ ইবনু খিনদাফকে জাহান্নামের মধ্যে দেখেছি। পেট হতে তার সব নাড়ী-ভূড়ি বেরিয়ে
পড়ছে, আর
সে সেগুলো টেনে নিয়ে হাঁটছে।
৬৯২৯। আমর নাকিদ,
হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদইবনু হুমায়দ (রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসায়্যিব (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
“বাহীরা” বলা হয় এমন উষ্ট্রীকে, যা কোন
দেবতার নামে মানত করে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। উহাকে আর কেউ দোহন করে না। সাইবা
বলা হয় এমন উটকে, যা
কাফিররা তাদের দেবতার নামে ছেড়ে দিত। এভাবে ছেড়ে দেয়ার পর এর পিঠে কোন বোঝা বহল
করা হতো না। ইবনু মূসায়্যিব (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি জাহান্নামের মধ্যে আমর ইবনু আমির
খুযাঈকে দেখেছি, সে
তার নাড়ী-ভুড়ি টেনে নিয়ে হাটছে। দেবদেবীর নামে সে-ই সর্বপ্রথম উট ছেড়ে ছিল।
৬৯৩০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দুই প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবে। আমি তাদেরকে
দেখিনি। এক প্রকার ঐ সমস্ত মানুষ যাদের নিকট গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। তারা
এর দ্বারা লোকদের প্রহার করবে। প্রকার ঐ সমস্ত মহিলা, যারা
বস্ত্র পরিহিতা কিন্তু উলঙ্গ, বিচ্যুতকারিনা ও স্বয়ংবিচ্যুত। যাদের মাথার
খোপা বুখতী উটের পিঠের উচুকুজোর ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং
জান্নাতের সূঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সূঘ্রাণ এতো-এতো দূরত্বে পাওয়া যাবে।
৬৯৩১। ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ অচিরেই দীর্ঘ হায়াত পেলে তুমি দেখতে পাবে
এমন এক কওম, যাদের
হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক। সকাল হবে তাদের আল্লাহর গযবের মধ্যে এবং
সন্ধ্যা হবে তাদের আল্লাহর অসন্তুষ্টির মধ্যে।
৬৯৩২। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
-কে আমি বলতে শুনেছি,
দীর্ঘ হায়াত পেলে অচিরেই তুমি এমন এক সম্প্রদায় দেখতে পাবে, যাদের সকাল
হবে আল্লাহর অসন্তুষ্টির মধ্যে এবং সন্ধ্যা হবে আল্লাহর অভিসম্পাতের মধ্যে। তাদের
হাতে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক।
৬৯৩৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (অন্য সনদে) ইয়াহইয়া
ইবনু ইয়াইয়া (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম (রহঃ) বনূ ফিহরের ভ্রাতা মুসতাওরিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! দুনিয়া আখিরাতের তুলনায়
অতটুকুনই, যেমন
তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি নদীতে ভিজিয়ে দেখলো যে, এতে কি পরিমাণ পানি লেগেছে। এ সময় বর্ণনাকারী
ইয়াহইয়া শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইশারা করেছেন। ইয়াহইয়া ব্যতীত সকলের বর্ণনার
মধ্যেই আছে, আমি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি। আবূ উসামার
বর্ণনার মধ্যেও এ কথা উল্লেখিত রয়েছে যে, ইসমাঈল বৃদ্ধাঙ্গূলির দ্বারা ইশারা করেছেন।
৬৯৩৪। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের
দিন লোকদেরকে একত্রিত করা হবে খালি পা, নগ্ন দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। এ কথা শুনে
আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! পূরুষ এবং মহিলা এক সাথেই উপস্থিত হবে কি? তবে তো
তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি নযর করবে। অতঃপর তিনি বলেলেন, হে আয়িশা!
তখনকার অবস্হা এতো কঠিন ও ভীতিকর হবে যে- তারা একে অন্যের প্রতি নযর করবে না।
৬৯৩৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) হাতিম ইবনু সাগীরা (রাঃ)
থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এত খাতনাবিহীন কথাটি উল্লেখ নেই।
৬৯৩৬। আবূ বকর ইবনু শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে খূৎবারত অবস্হায় একথা বলতে শুনেছেন যে, অবশ্যই
তোমরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে পায়ে হেটে, খালি পা, নগ্নদেহ ও খাতনাহীন অবস্হায়। তবে যুহায়র (রহঃ)
তার হাদীসে খুতবা দানের কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৯৩৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (অন্য সনদে)
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
উপদেশ সম্বলিত ভাষণ দানের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান হয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সামনে খালি পা এবং
নগ্নদেহ অবস্থায় উপস্থিত হবে। যেমন প্রথম দিন শুরু করেছিলাম, তেমনি তার
পূনরাবৃত্তি করবো। এটা আমার একটা ওয়াদা, তা পালন করা আমার দায়িত্বের অন্তর্তুক্ত। আমি
তা পালন করবই। সাবধান,
কিয়ামতের দিন সবার মাঝে সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পোশাক
পরানো হবে। সাবধান! আমার উম্মতের কতিপয় লোককে আনা হবে এবং তাদেরকে বা দিকে নিয়ে
যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো, হে আমর রব! এরা তো আমরে উম্মাত। জবাবে আমাকে
বলা হবে, তুমি
জানো না তোমার পরে এরা কত নূতন কথা উদ্ভাবন করেছিল। আমি তখন আল্লাহর নেক বান্দা
(ঈসা-আ)-এর মত বলবো,
এবং যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী; কিন্তু যখন
তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং
তুমিই সর্ব বিষয়ে সাক্ষী, তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো
তোমারই বান্দা, আর
যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তখন বলা হবে, তুমি তাদের
থেকে বিদায় গ্রহণের পর তারা সর্বদা মুখ ফিরিয়ে উল্টো পথে চলছিল। ওয়াকী এবং মুআযের
হাদীসের মধ্যে রয়েছে ‘ফাইয়ুকালু ইন্নাকা’।
৬৯৩৮। যুহায়র ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ লোকদেরকে তিন
দলে বিভক্ত করে একত্রিত করা হবে। প্রথম দল আশাবাদী এবং ভীত লোকদের দল। দ্বিতীয়
দলে সে সব লোক যাদের দুঁজন থাকবে এক উটৈর উপর, কোন উটের উপর তিনজন, কোনটির
উপর চারজন, আর
কোনটির উপর সাওয়ার হবে দশজন। অবিশিষ্টরা হবে সে সমস্ত লোক যাদেরকে আগুন তাড়িয়ে
নিয়ে যাবে। তারা যেখানে রাত্রিযাপন করবে আগুনও তাদের সঙ্গে রাত কাটাবে। তারা
যেখানে শয়ন করবে আগুনও তাদের সাথে থাকবে। যেখানে তাদের সকাল হবে আগুনও তাদের সাথে
থাকবে। আর সেখানে তাদের সন্ধ্যা হবে একই সঙ্গে আগুনও তাদের সাথে অবস্হান করবে।
৬৯৩৯। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু
সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ‘ইয়াওমা ইয়াকুমুন নাসি’, এর
ব্যাখ্যায় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সেদিন
মানুষ অর্ধ কর্ণ পর্যন্ত ঘামে ড়ূবন্ত দণ্ডায় মান হবে। ইবনু মূসান্নার বর্ণনায় তিনি
‘ইয়াওমু’ শব্দটি উল্লেখ করা ব্যাতিরেখে শুধু ‘ইয়াকুমুননাস’ উল্লেখ করেছেন।
৬৯৪০। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মূসায়্যিবী (অন্য সনদে) সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (অন্য
সনদে) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া (অন্য
সুত্রে) আবূ নাসর তাম্মার (অন্য সনদে) হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার
(রাঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে উবায়দুল্লাহব
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে মূসা ইবনু উকবা ও সালিহ (রহঃ)-এর হাদাসের মধ্যে
আছে যে,’হাত্তা
ইয়াগিবা আহাদুহুম’।
৬৯৪১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের দিন ঘাম সত্তর বাঁও (উভয় হাতের
প্রশস্ততা) পরিমিত ভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে। অধিকন্তু তা মানুষের মুখমন্ডল পর্যন্ত বা
কর্ণ পর্যন্ত পৌছে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোনটির
কথা বলেছেন, এ
বিষয়ে বর্ণনাকারী সাওর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
৬৯৪২। হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের
দিন সূর্যকে মানুষের নিকটবর্তী করে দেয়া হবে। ফলে তা মানুষের থেকে এক মাইলের
দুরুত্বের ভেতর চলে আসবে। বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু আমির (রহঃ) বলেন, আমি জানিনা, ‘মিল’ বলে
কি বুঝানো হয়েছে, ভূমির
দুরত্ব, না
চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা। মানুষ তাদের আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে ড়ূবন্ত থাকবে। কেউ
তো পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ড়ূবে থাকবে, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ড়ূবে থাকবে আর
কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
স্বীয় মুখের প্রতি ইশারা করলেন।
৬৯৪৩। আবূ গাসসান আলমিসমাঈ, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) ইয়ায ইবনু হিমার আল মুজাশিঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাষণ রত অবস্থায় বললেনঃ সাবধান, আমার
প্রতিপালক আজ আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এ থেকে তোমাদেরকে এমন বিষয়ের শিক্ষা দেয়ার
জন্য তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যে বিষয়ে তোমরা সস্পূর্ণরুপে অজ্ঞ। তা হল এই যে, আমি আমার
বান্দাদেরকে যে ধন-সম্পদ দিব তা পরিপূর্ণরুপে হালাল। আমি আমার সমস্ত বান্দাদেরকে
একনিষ্ঠ (মুসলিম) হিসাবে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে দ্বীন
হতে বিচ্যুত করে দেয়। আমি যে সমস্ত জিনিস তাদের জন্য হালাল করেছিলাম সে তা হারাম
করে দেয়। অধিকন্তু সে তাদেরকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শিরক করার জন্য নির্দেশ দিল, যে বিষয়ে
আমি কোন সনদ পাঠাইনি। আল্লাহ তা-আলা পৃথিবীরবাসীদের প্রতি নযর করে কিতাবীদের
কতিপয় লোক ব্যতীত আরব-আজম সকলকে অপছন্দ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাকে পরীক্ষা
করার উদ্দেশ্যে এবং তোমার দ্বারা অন্যদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমি তোমাকে
দুনিয়াতে প্রেরণ করেছি এবং তোমার প্রতি আমি এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা পানি কখনো
ধুয়ে-মুছে ফেলতে পারবে না। ঘুমন্ত ও জাগ্নত অবস্হায় তুমি উহা পাঠ করবে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কুরায়শ গোত্রের লোকদেরকে
জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তখন বললাম, হে আমার
প্রতিপালক! আমি যদি এ কাজ করি তবে তারা তো আমার মাথা ভেঙ্গে রংটির ন্যায় টুকরা
টূকরা করে ফেলবে। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ তারা যেমনিভাবে তোমাকে বহিস্কার করেছে ঠিক
তুদ্রূপ তুমিও তাদেরকে বহিস্কার করে দাও। তুমি তাদের সাথে যুদ্ধ কর। আমি তোমাকে
সাহায্য করব। ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তোমার জন্যও ব্যয় করা হবে। তুমি একটি বাহিনী
প্রেরণ কর, আমি
অনুরুপ বাহিনী প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে যারা তোমর
বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের সাথে লড়াই কর। তিন প্রকার মানুষ জান্নাতী হবে। এক প্রকার
মানুষ তারা, যারা
রাষ্ট্রীয় কর্ণধার,
ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী
এবং নেক কাজের তাওফীক হলতে ধন্য লোক। তারা ঐ সমস্ত মানুষ, যারা দয়ালূ
এবং আত্নীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয় ঐ সমস্ত মানুষ, যারা
পুত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক।
অতঃপর তিনি বললেনঃ পাঁচ প্রকার মানুষ জাহান্নামী হবো এক এমন দুর্বল মানুষ, যাদের মাঝে
পার্থক্য ক্ষমতা নেই,
যারা তোমাদের এমন তাবেদার যে, না তারা পরিবার-পরিজন চায়, না
ধনৈশ্বর্য। দুই এমন খিয়নতকারী মানুষ, সাধারণ বিষয়েও যে খিয়ানত করে যার লোভ কারো
নিকটই লূকায়িত নেই। তিন ঐ লোক, যে তোমার পয়িবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের ব্যাপারে
তোমার সাথে সকাল-সন্ধ্যা প্রতারণা করে। অবশেষে তিনি কৃপণতা মিথ্যা বলা এবং
গালমন্দ করার কথাও উল্লেখ করেছেন। তবে আবূ গাসসান (রহঃ) তার হাদীসের মধ্যে ‘অ
আনফিক ফাসা ইয়াকফাকু’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৯৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) কাতাদা থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে তিনি ‘কুল্লু মালিন নাহাতুহু আব্দা হালালান’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৬৯৪৫। আবদুর রহমান ইবনু বিশর আল আবদী (রহঃ) ইয়ায ইবনু হিমার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভাষণ দিলেন। এরপর তিনি পূর্ণ
হাদীসটি বর্ণনা করলেন। শেষাংশে রয়েছে, কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি
মূতাররিফকে বলতে শুনেছি।
৬৯৪৬। আবূ আম্মার হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ) বনূ মুজাশি এর ভ্রাতা ইয়ায ইবনু
হিমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) ভাষণ দানকালে আমাদের মাঝে দাড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন। অতঃপর তিনি কাতাদা (রহঃ) থেকে হিশামের সুত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। তবে এতে একথা উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা আমার প্রতি প্রত্য্যদেশ করেছেন যে, তোমরা
নম্রতা প্রদর্শন কর,
যেন কেউ কারো উপর গর্ব না করে এবং যেন কেউ কারো প্রতি সীমালংঘন না করে। এ
হাদীসে একথাও রয়েছে যে, তারা তোমাদের এমন অনুগামী যে, না তারা
স্ত্রী চায় আর না তারা ধন-সম্পদ চায়। কাতাদা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি
জিজ্ঞেস করলাম, হে
আবূ আবদুল্লাহ! এমনটি কি হবে? তিনি বললেন, হ্যা, অবশ্যই। জাহিলিয়্যাতের যুগে আমি তাদেরকে
পেয়েছি। এক গোত্রে কোন এক ব্যক্তি ছিল। সে বকরী চরাতো। মনিবের দাসী ব্যতীত সেখানে
তার নিকট কেউ যেতো না। তার সাথেই সে সহবাস করতো।
৬৯৪৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর
সকাল-সন্ধ্যা তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে
জান্নাতবাসীদের থেকে আর যদি জাহান্নামী হয় তবে জাহান্নামীদের থেকে। আর তাকে বলা
হবে, এটাই
তোমার বাসস্থান। বলছিলেনঃ পুনরুত্থান পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে।
৬৯৪৮। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট তার
ঠিকানা পেশ করা হয়। যদি সে জান্নাতবাসী হয় তবে জান্নাত আর যদি জাহান্নামী হয় তবে
জাহান্নাম। অতঃপর তাকে বলা হয়, এটাই তোমার ঐ বাসস্হান যেথায় তুমি কিয়ামতের
দিন প্রেরিত হবে।
৬৯৪৯। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত
(রাঃ)-এর সুত্রে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত!আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম না, বরং আমাকে
যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) নাজ্জার গোত্রের একটি প্রাচীর বেষ্টিত বাগানে তাঁর একটি খচ্চরের উপর
সাওয়ার ছিলেন। এ সময় আমরা তাঁর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ উহা লাফিয়ে উঠলো এবং তাঁকে ফেলে
দেয়ার উপক্রম করল। দেখা গেল, সেখানে তিন কিংবা পাঁচটি অথবা চারটি কবর রয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, জুবায়রী
অনুরুপ বর্ণনা করতেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, এ কবরবাসীদেরকে কে চিনে-! তখন এক ব্যক্তি বললেন, আমি চিনি।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন:তারা কখন মৃত্যূবরণ
করেছে? তিনি
বললেন, তারা
শিরকের অবস্হায় মৃত্যুবরণ করেছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। তোমরা মৃত
ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এ আশংকা না হলে আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করতাম
যেন তিনি তোমাদেরকেও কবরের আযাব শুনান যা আমি শুনতে পাচ্ছি। অতঃপর আমাদের প্রতি
মনোনিবেশ করে বললেনঃ তোমরা সকলে জাহান্নামের শাস্তি হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা কর। সাহাবীগণ বললেন, জাহান্নামের শাস্তি হতে আমরা আল্লাহর নিকট
আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অতঃপর বললেনঃ তোমরা সকলে কবরের আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা কর। সাহবীগণ বললেন, কবরের আযাব হতে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
অতঃপর বললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সমুদয় ফিতনা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা কর। তার বললেন, প্রকাশ্য ও গোপন সমুদয় ফিতনা হতে আমরা আল্লাহর
নিকট পানাহ চাই। এরপর তিনি আবারো বললেনঃ তোমরা দাজ্জালের ফিতনা হতে আল্লাহর নিকট
পানাহ চাও। সাহাবীগণ বললেন, দাজ্জালের ফিতনা হতে আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ
চাই।
৬৯৫০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা
বর্জন করবে এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর নিকট দুআ করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের
কিছু বিষয় শুনিয়ে দেন।
৬৯৫১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয (অন্য সনদে)
মুহাম্মদ ইবনু মুনান্না ও ইবনু বাশশার (অন্য সনদে) যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। সূর্য অস্তমিত
হবার পর একদা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হলেন। এ সময় তিনি
একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী লোকদেরকে তাদের কবরের মধ্যে শাস্তি
দেয়া হচ্ছে।
৬৯৫২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার
সঙ্গী-সাথীরা তথা হতে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায় তখন তার নিকট
দু-জন ফিরিশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায়। অতঃপর তাকে তারা প্রশ্ন করে, এ ব্যক্তি
সম্পর্কে তুমি কি বলতে? মুঁমিন বান্দা তখন বলে, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি
আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ
তাআলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন দেখে নেয়।
বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার
কবরকে দৈর্ঘ্যে-প্রস্হে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ শ্যামল গাছের
দ্বারা ভরপূর করে দেয়া হয় কিয়ামত পর্যন্তের জন্য।
৬৯৫৩। মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল দারীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যখন তার কবরে
রাখা হয় তখন সে তার সঙ্গী-সাথীদের প্রত্যাবর্তন কালে তাদের তার আওয়াজ শুনতে পায়।
৬৯৫৪। আমর ইবনু যারারাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রেখে তার
সঙ্গী-সাথীগণ ফিরে আসে। অতঃপর সাঈদ (রহঃ) শায়বানের সুত্রে কাতাদা (রহঃ) থেকে
বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৯৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ইবনু উসমান আবদী বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বানী: -যারা শ্বাশত
বানীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন” – সম্পর্কে বলেন, এ আয়াত
কবরের আযাব সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে কবরে তাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব
কে? সে
বলে, আমার
রব আল্লাহ এবং আমার নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাই আল্লাহর
নিম্নবর্ণিত বানীর অর্থ, ‘যারা শ্বাশ্বত বানীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ
ইহ-জগতে ও পর-জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন।
৬৯৫৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও আবূ বাকর ইবনু নাফি
(রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে আল্লাহর বানী: সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে ‘‘যারা
শ্বাশ্বত বানীতে বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ ইহ-জগতে ও পর-জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ’
এ আয়াতটি কবরের আযাব-সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
৬৯৫৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারিরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
ইমানদার ব্যক্তির রুহ কবয করার পর দুজন ফিরিশতা এসে তার রুহ উর্ধাকাশে উঠিয়ে
নিয়ে যায়। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে ঐ রুহের সুগন্ধি এবং
মিশকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আকাশের বাসিন্দ্বারা বলতে থাকে, কোন পবিত্র
আত্না হতে আগমন করেছে! আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার আযাদকৃত শরীরের প্রতি রহমত
নাযিল করুন। অতঃপর তাকে তার প্রতিপালকের নিকট নিয়ে যায় এবং তারা বলতে থাকে, তাকে তার
স্থানে নিয়ে যাও। কিয়ামত পর্যন্ত তোমরা এখানেই বসবাস করবে। আর যখন কোন কাফির
ব্যক্তির রুহ বের হয় বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এখানে তার দুর্গন্ধ এবং তার
প্রতি অভিসম্পাতের কথা উল্লেখ করেছেন। তখন আকাশের অধিবাসীরা বলতে থাকে, কোন খবীস
আত্না। পৃথিবী হতে এসেছে। অতঃপর বলা হল, তাকে তার স্থানে নিয়ে যাও। কিয়ামত পর্যন্ত তারা
এখানেই বসবাস করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) গায়ে জড়ানো একটি পাতলা কাপড় দ্বারা নিজের নাকটি এভাবে ধরলেন।
৬৯৫৮। ইসহাক ইবনু উমার ইবনু সালীত আল বুযালী (অন্য সনদে) শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার
(রাঃ)-এর সাথে একদা আমরা মক্কা ও মদ্বীনার মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ
দেখাছিলাম। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলাম, তাই আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আমি ব্যতীত কেউ
বলেনি যে, সে
চাঁদ দেখেছে। তিনি বলেনঃ আমি উমার (রাঃ)-কে বলছিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? এ ই তো
চাঁদ। কিন্তু তিনি দেখছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার (রাঃ) বলছিলেন, অল্পক্ষণের
মাঝেই আমি দেখতে পাব। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্হায়
তিনি আমাদের নিকট বদর যূদ্ধে অংশ গ্রহণকারী কাফিরদের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন।
বললেন, গতকাল
বদর যুদ্ধাদের ধরাশায়ী হবার স্হান রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আমাদেরকে দেখাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় এটা অমুকের ধরাশায়ী হবার স্হান।
বর্ণনাকারী বলেন, উমার
(রাঃ) বলেছেন, শপথ
সে সত্তার, যিনি
তাকে সত্য বানী সহ প্রেরণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
যে সীমারেখা বলে দিয়েছেন, তারা সে সীমারেখা একটুও অতিক্রম করেনি। অতঃপর
তাদেরকে একটি কুপে এক জনের উপর অপর জনকে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিকট গিয়ে বললেনঃ হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের
ছেলে অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যে ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছেন তোমরা কি তা সঠিক
পেয়েছো? আমার
প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন? আমি তা সঠিক পেয়েছি। তখন উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! যে সব দেহে প্রাণ নেই, আপনি তাদের
সাথে কিভাবে কথা বলছেন? নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
আমি যা বলছি, তা
তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শুনছনা। তবে তারা এ কথার উত্তর দিতে সক্ষম নয়।
৬৯৫৯। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বদর যুদ্ধে নিহত লোকদেরকে তিন দিন পর্যন্ত এ
ভাবেই রেখে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি তাদের নিকট এসে তাদের লাশের সান্মুখে দাঁড়ালেন
এবং তাদেরকে আওয়াজ দিয়ে বললেন, হে হিশামের পূত্র আবূ জাহল, হে উমায়্যা
ইবনু খালফ, হে
উকবা ইবনু রাবীআ, হে
শায়বা ইবনু রাবীআ! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সাথে যা ওয়াদা করেছেন তোমরা কি তা
সঠিক পাওনি? আমার
প্রতিপালক আমার সাথে যা ওয়াদা করেছেন আমি তা সঠিক পেয়েছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এ কথা উমার (রাঃ) শুনে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তারা তো মৃত। কিভাবে তারা শুনবে এবং কিভাবে
তারা উত্তর দিবে? তিনি
বললেনঃ আমি তাদেরকে যা বলছি এ কথা তাদের থেকে তোমরা অধিক শুনছ না। তবে তারা জবাব
দিতে সক্ষম নয়। অতঃপর তিনি তাদের সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তাদেরকে হেঁচড়িয়ে নিয়ে
বদরের কুপে নিক্ষেপ করা হল।
৬৯৬০। ইউসূফ ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর
যুদ্ধের দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কাফিরদের উপর জয়লাভ করলেন, তখন তিনি
বিশের অধিক কুরায়শ নের্তৃবৃন্দ রাওহ (রাঃ) বলেন, চব্বিশ জন কুরায়শ নের্তৃবৃন্দ সম্পর্কে নির্দেশ
দিলেন। অতঃপর তাদের লাশ বদর প্রান্তরে এক নোংরা আবর্জনাপূর্ণ কুপে নিক্ষেপ করা হয়।
অতঃপর আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত সাবিতের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৯৬১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামতের দিন যার হিসাব
যাচাই করা হরে তার আযাব অবধারিত। আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তায়ালা কি বলেন নিঃ “তার হিসাব-নিকাশ
সহজেই লওয়া হবে”। একথা শুনে তিনি বললেনঃ এ তো হিসাব নয় বরং এ তো শুধু নামে মাত্র
পেশ করা। কারণ কিয়ামতের দিন যার হিসাব যাচাই করা হবে তার আযাব অবধারিত।
৬৯৬২। আবূ আন-আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৬৯৬৩। আবদুর রহমান ইবনু বিশর ইবনুুূল হাকাম আল আবাদী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যারই হিসাব যাচাই করা হবে
সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কথা শুনে আমি প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ কি সহজ হিসাবের কথা বলেন নি? তিনি
বললেনঃ এ তো শুধু নামে মাত্র পেশ করা। কারণ যার হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে
যাবে।
৬৯৬৪। আব্দুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যার হিসাব যাচাই করা হবে সে ধ্বংস হয়ে
যাবে। অতঃপর উসমান ইবনু আসওয়াদ (রহঃ) আবূ ইউনূসের হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৬৯৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে তাকে আমি এ কথা বলতে
শুনেছি যে, তোমাদের
প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি নেক ধারণা পোষণরত অবস্হায় মৃত্যু বরণ করে।
৬৯৬৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৯৬৭। আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনু মাবাদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
থেকে-বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর ইন্তেকালের তিন দিন পূর্বে আমি তাকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমাদের
প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি নেক ধারণা পোষণ করা অবস্থায় মারা যায়।
৬৯৬৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একথা বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক
বান্দা কিয়ামতের দিন ঐ অবস্হায় উন্থিত হবে, যে অবস্হায় সে মৃত্যূবরণ করেছেন।
৬৯৬৯। আবূ বকর ইবনু নাফি- (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে তিনি ‘সামিয়তু’ না বলে- “আনিন নাবিয়্যি” বর্ণনা করেছেন।
৬৯৭০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজিবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি, আল্লাহ যখন
কোন সম্প্রদায়কে আযাব দেয়ার ইচ্ছা করেন তখন এ আযাব ঐ সম্প্রদায়ে অবস্হিত সকলকেই
গ্রাস করে নেয়। অতঃপর কিয়ামতের দিন স্বীয় আমলের উপর উত্থিত হবে।