২৬৬২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জানতে চাইল যে, মুহরিম ব্যাক্তি কি ধরনের পোশাক পরবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করতে পারবে না। তবে কোন ব্যাক্তি চপ্পলের অভাবে মোজা পরিধান করলে তাকে পায়ের গোছার নীচ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলতে হবে। তোমরা এমন কাপড় পরিধান কর না যা জাফরান বা ওয়ারুস-এর রঙে রঞ্জিত করা হয়েছে।
২৬৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আমর আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার
সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, মুহরিম
ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায় কী পরিধান করবে? তিনি
বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি জামা, পাগড়ী, টুপি, পায়জামা, জাফরান
বা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় এবং মোজা পরিধান করবে না। কিন্তু তার চপ্পল না থাকলে
সে পায়ের গোছার নিম্নাংশ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলে তা পরিধান করতে পারবে।
২৬৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ব্যাক্তিকে জাফরান বা ওয়ারূস দ্বারা রঞ্জিত
কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, কারও
চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরিধান করবে এবং পায়ের গোছার নীচ বরাবর এর উপরিভাগ কেটে
ফেলবে।
২৬৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূর-রবী যাহরানী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ভাষণে বলতে শুনেছি, মুহরিম ব্যাক্তির কাপড় না থাকলে সে পায়জামা
পরতে পারবে এবং তার চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরতে পারবে।
২৬৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু বাসশার
অ আবূ গাসসান রাযী (রহঃ) আহমাদ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে এই সনদ সূত্রে বর্নিত
হয়েছে যে, আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছেন এরপর তিনি
উপরোক্ত কথা গুলো বর্ননা করেন।
২৬৬৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া,আবূ কুরায়ব, আলী
ইবনু খাশরম ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) সকলেই আমর ইবনু দ্বীনারের সুত্রে এই সনদে
উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শুবা ছাড়া তাদের কারও বর্ণনায় নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “আরাফাতে ভাষণ দিয়েছেন” কথার উল্লেখ নাই।
২৬৬৮। আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু ইউনূস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যার -কাপড় নাই সে পায়জামা
পরিধান করতে পারে, আর যার চপ্পল নাই সে মোজা
পরতে পারে।
২৬৬৯। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) সাফওয়ান ইবনু ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সুগন্ধিযুক্ত অথবা বলেন, হলুদ রং-এর চিহ্নযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্হায়
জিরানা নামক স্হানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, উমরা পালনের সময় আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ
দেন? এই সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর উপর ওহী নাযিল হচ্ছিল এবং তিনি একটি কাপড় আচ্ছাদিত অবস্হায় ছিলেন। ইয়ালা (রাঃ)
বলতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হওয়া অবস্থায় যদি আমি তাঁকে দেখতে পেতাম! তখন উমর
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)বললেন, ওহী নাযিল হওয়ার মুহৃর্তে
তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে খুশি হবে কি? ইয়ালা (রাঃ) বলেন, এরপর উমর (রাঃ) কাপড়ের এক কোণ উন্মুক্ত করলেন
এবং আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম যে, তাঁর
মুখ দিয়ে উঠতি বয়সের উটের আওয়াজের মত আওয়াজ বের হচ্ছে। যখন তাঁর এ অবস্হা কেটে গেল, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, উমরা সমন্ধে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেন, তোমার
দেহ থেকে হলুদ রং ধুয়ে ফেল, অথবা বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন। তোমার জুব্বা খুলে ফেল। অতঃপর
তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামে থাকলে যা করতে, উমরার
জন্য তাই কর।
২৬৭০। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এল। তখন তিনি জিরানা নামক স্হানে ছিলেন
এবং আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছেই ছিলাম। লোকটি (খালূক
জাতীয়) সুগন্ধিযুক্ত একটি জুব্বা পরিহিত ছিল। সে বলল, আমি উমরার ইহরাম বেধেছি এবং আমার পরিধানে এই
জুব্বা রয়েছে এবং আমি খালূক জাতীয় সুগন্ধি ব্যবহার করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামে থাকলে কি করতে? সে
বলল, আমি নিজের এই পরিধেয় খুলে এবং নিজের দেহ থেকে
এই সুগন্ধি ধূয়ে ফেলতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামে থাকলে যা করতে, উমরার জন্য তাই কর।
২৬৭১। যুহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) ইয়ালা
ইবনু উমায়্যা (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতেন, আহা! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
উপর যখন ওহী নাযিল হয়, আমি যদি সেই অবস্হায় তাঁকে
দেখতে পেতাম! একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানায় অবস্হান করছিলেন
এবং একটি কাপড়ের সাহায্যে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করা হয়েছিল। তার সংগে তার কিছু
সংখ্যক সাহাবীও ছিলেন যাদের মধ্যে উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। এই সময় এক ব্যাক্তি
সুগন্ধিযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্থায় তাঁর নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এক ব্যাক্তি জুব্বায় সুগন্ধি
মেখে তা পরিহিত অবস্হায় উমরার ইহরাম বেঁধেছে, তার
সষ্পর্কে আপনার কি অভিমত? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন, অতঃপর
নীরব রইলেন। এই সময় তার উপর ওহী আসল। উমর (রাঃ) হাতের ইশারায় ইয়ালা ইবনু উমায়্যা
(রাঃ)-কে বললেন, এদিকে আস। ইয়ালা (রাঃ) এসে
নিজের মাথা (কাপড়ের মধ্যে) চুকিয়ে দিলেন (এবং দেখলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং তার মুখ দইয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে
অতঃপর এই অবস্হা দূরীভূত হল এবং তিনি বললেন, এইমাত্র
যে ব্যাক্তি আমার নিকট উমরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল-সে কোথায়? লোকটিকে খুঁজে এনে তাঁর নিকট উপস্হিত করা হল।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং
জুব্বা খূলে ফেল। অতঃপর যে নিয়মে হাজ্জ (হজ্জ) কর, ঠিক
সেই নিয়মে উমরা কর।
২৬৭২। উকবা ইবনু মুকরাম
আম্মী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইয়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক
ব্যাক্তি জিরানা নামক স্হানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল।
লোকটি উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্হায় ছিল। তার দাঁড়ি ও মাথার চুল হলুদ রঙে
রঞ্জিত ছিল এবং তার পরনে ছিল একটি জুব্বা। সে বলল, হে
আল্লাহর রাসুল! আমি উমরা করার জন্য ইহরাম বেঁধেছি এবং আমি কি অবস্থায় আছি তা আপনি
দেখছেন। তিনি বললেন, তুমি তা খূলে ফেল এবং হলুদ
রং ধুয়ে ফেল। অতঃপর হাজ্জে (হজ্জ) যে সব অনুষ্ঠান পালন কর, উমরাতেও তাই কর।
২৬৭৩। ইসহাক ইবনু মানসুর
(রহঃ) সাফওয়ান তার পিতা সুত্রে ইবনু উমায়্যা) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সংগে ছিলাম। তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি জুব্বা পরিহিত অবস্থায় উপস্হিত
হল। তাতে (খালুক জাতীয়) সুগন্ধির চিহ্ন ছিল। সে বলল, হে
আল্লাহর রাসুল! আমি উমরার ইহরাম বেঁধেছি, আমাকে
কি করতে হবে? তিনি তার কথার কোন উত্তর না
দিয়ে নীরব থাকলেন। যখন তার উপর ওহী নাযিল হতে আরম্ভ হল তখন উমর (রাঃ)তাকে ছায়া
দেওয়ার জন্য একখন্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি (ইয়ালা) উমর (রাঃ)-কে বলেছিলাম, তার উপর যখন ওহী নাযিল হয় তখন আমি তাঁর সংগে
কাপড়ের অভ্যন্তর ভাগে আমার মাথা ঢুকাতে চাই। যখন ওহী নাযিল হল, উমর (রাঃ) তাঁকে একখন্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন।
আমি তাঁর নিকট এসে কাপড়ের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলাম এবং তাকে দেখলাম। এই অবস্হা শেষ
হলে তিনি বললেন, এইমাত্র উমরা সম্পর্কে
প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি তাঁর সামনে দাড়াল।
তিনি বললেন, তোমার পরিধানের জুব্বা খূলে
ফেল এবং সুগন্ধির চিহ্ন ধুয়ে ফেল। অতঃপর যেভাবে হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন কর, ঠিক সেভাবে উমরা কর।
২৬৭৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, খালফ ইবনু হিশাম, আবূর-রাবী
ও কুতায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদিনাবাসীদের জন্য যূল-হুলায়ফা, সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য
আল-জুহফা, নাজদবাসীদের জন্য
কারনূল-মানাযিল, ইয়েমেন বাসীদের জন্য
ইয়ালামলামকে মীকাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এগুলো ঐসব এলাকার লোকদের মীকাত এবং এর বাইরের
যে সব লোক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার উদ্দেশ্যে ঐসব এলাকা হয়ে আসবে, তাদের মীকাত। আর যেসব লোক উল্লেখিত মীকাত
সমূহের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা স্বস্হান থেকে ইহরাম
বাধবে, এভাবে যারা আরো ভিতরে, তারা সে স্হান হতে। এমনকি মক্কাবাসিগণ মক্কা
থেকে তালবিয়া পাঠ করবে।
২৬৭৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মদিনার
অধিবাসীদের জন্য যূল-হুলায়ফা, সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য আল
জুহফা, নাজদবাসীদের জন্য
কারনূল-মানাযীল এবং ইয়েমেনবাসীদের জন্য ইয়ালামলামকে মীকাত নির্ধারণ করেছেন। তিনি
আরও বলেছেন, এগুলো উল্লেখিত এলাকার
লোকদের মীকাত এবং বাইরের যেসব লোক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার উদ্দেশ্যে ঐ সব এলাকা হয়ে
আসবে, তাদের মীকাত। আর যেসব লোক
মীকাতের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা যে স্হান থেকে ইহরাম
ধাঁধতে ইচ্ছা করে, সে স্হান হতে। এমনকি
মক্কাবাসীগণ মক্কা থেকে ইহরাম বাধবে।
২৬৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনাবাসীগণ
যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়াবাসী গণ আল-জুহ্ফা
থেকে এবং নাজদবাসীগণ কারন থেকে ইহরাম বাধবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে খবর পৌছেছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়েমেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে।
২৬৭৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মদিনাবাসীদের মুহাল (মীকাত)
যূল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের মুহাল মুহায়আ
অর্থাৎ আল -জুহফা এবং নাজদবাসীদের মুহাল কারন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়েমেনবাসীদের মুহাল
ইয়ালামলাম, কিন্তু আমি তা তাঁর নিকট
থেকে শুনিনি।
২৬৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু দ্বীনার (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের যুল-হুলায়ফা থেকে, সিরিয়ার অধিবাসীদেরকে আল জুহফা থেকে এবং
নাজদবাসীদেরকে কারন থেকে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
বলেন, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তিনি আরও বলেছেন, ইয়েমেনবাসীগণ
ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাধবে।
২৬৭৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট
মুহাল স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছেন। এরপর তিনি হাদীসটি শেষ পর্যন্ত
বর্ণনা করেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি
মনে করি যে, জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে সরাসরি এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।
২৬৮০। যুহায়র ইবনু হারব ও
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনাবাসীগণ
যুল-হুলায়ফা থেকে এবং সিরিয়াবাসীগণ আল-জুহফা থেকে, নাজদবাসীগণ
কারন থেকে ইহরাম বাধবে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমার
নিকট উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ইয়ামেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে
ইহরাম বাঁধবে, কিন্তু একথা আমি সরাসরি তাঁর
নিকট থেকে শুনিনি।
২৬৮১। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে মুহাল সম্পর্কে প্রঁশ্ন
করা হলে তার জওয়াবে আবূ যুবায়র (রহঃ) তাঁ কে বলতে শুনেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি (রাবীর ধারণায় তিনি এই হাদীস তার সাথে সংযুক্ত করেছেন) মদিনাবাসীদের
মুহাল যুল-হুলায়ফা, অপর একটি পথ হচ্ছে আল জুহফা, ইরাকবাসীদের মুহাল হচ্ছে যাতু ইরাক, নাজদবাসীদের মুহাল হচ্ছে কারন এবং
ইয়েমেনবাসীদের মুহাল হচ্ছে ইয়ালামলাম।
২৬৮২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তালবিয়া নিম্নরুপ ছিল: অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট
হাযির হয়েছি, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, তোমার দরবারে উপস্হিত আছি। তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার সমীপে উপস্হিত হয়েছি। যাবতীয় প্রশংসা
ও নিয়ামত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শরীক নাই।
” নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
নিজের তরফ থেকে তালবিয়ার সাথে আরও যোগ করতেনঃ অর্থাৎ তোমার দরবারে উপস্হিত হয়েছি, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, তোমার খিদমতের সৌভাগ্য লাভ করেছি। সমস্ত
কল্যাণ তোমার হাতে, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, সমস্ত আকর্ষণ তোমার প্রতি এবং সকল কাজ তোমারই
জন্য। ”
২৬৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকট যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উষ্ট্রী তাকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াত, তখন তিনি তালবিয়া পাঠ শুরু করতেন। তিনি বলতেন, লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লা শারীকা লাকা। ”
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন,-এই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তালবিয়া। নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে আরও যোগ করতেনঃ
লাব্বাইকা লাববাইকা ওয়াল আমালু”।
২৬৮৪। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর মুখে তালবিয়া শিখেছি অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
২৬৮৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে মাথার চুল জমাট করা অবস্হায় তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, লাব্বহিকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা লা শারীকা
লাকা-। তিনি এর সাথে আর কোন কথা যোগ করতেন না। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরও
বলতেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফায়, দুরাকআত সালার আদায় করতেন। অতঃপর তার উষ্ট্রী
যখন তাকে নিয়ে যুল-হুলাইফার মসজিদের সামনে দণ্ডায়মান হতো তখন তিনি সব শব্দ-সহকারে
তালবিয়া, পাঠ শুরু করতেন। আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) আরও বলতেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তালবিয়া। পাঠ করতেন এবং বলতেন, “লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ওয়ার রাগবাউ
ইলাইকা ওয়াল আমালু। ”
২৬৮৬। আব্বাস ইবনু আবদুল
আযীম আম্বারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা বলত, “লাব্বাইকা
লা শারীকা লাকা। ” রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, তোমাদের ক্ষতি হোক, ক্ষান্ত হও, ক্ষান্ত
হও (সামনে আর বলো না)। তারা এর সাথে আরও বলত, “কিন্তু
হে আল্লাহ! তোমার আরও একজন শরীক আছে তুমিই যার মালিক এবং সে কিছুরই মালিক নয়। ”
তারা এই কথা বলত আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করত।
২৬৮৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে তার পিতা সুত্রে বর্ণিত। তিনি তার পিতাকে
বলতে শুনেছেন, তোমাদের এই বায়দা নামক
স্হান সম্পর্কে তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে
সস্পূক্ত করে ভুল বর্ণনা করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কেবলমাত্র যুল-হুলায়ফার মসজিদের নিকটেই ইহরাম বাঁধতেন।
২৬৮৮। কুতাইবা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
উমর (রাঃ)-কে যখন বলা হল, বায়দা নামক স্হানে ইহরাম
বাঁধতে হবে তখন তিনি বললেন, এই বায়দাকে কেন্দ্র করেই
তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর দিকে সম্পূক্ত করে ভূল
বর্ণনা করে থাক। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গাছের নিকট
ইহরাম বেঁধে লাব্বাইকা ধ্বনি উচ্চারণ করতেন- যেখান থেকে তার উট তাকে নিয়ে রওনা
হতো।
২৬৮৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) উবায়দ ইবনু শুরু ায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে
বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি
আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখছি- যা আপনার সঙ্গী-সাথীদের কাউকে করতে দেখিনি। তিনি
বললেন, হে ইবনু শুরু ায়জ! সেগুলো কি
কি? তিনি বললেন, আমি
দেখেছি আপনি রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রতকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কোন রুকন স্পর্শ করেন
না। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি পশমবিহীন চামড়ার
স্যাণ্ডেল পরিধান করেন। আমি আরও দেখেছি যে, আপনি
হলুদ বর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি
মক্কায় অবস্হানকালে (যিলহাজ্জ মাসের) আট তারিখে ইহরাম বাধেন। অথচ লোকেরা নতূন চাঁদ
দেখার সাথে সাথে ইহরাম বাধে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রুকন সমূহের ব্যাপারে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ
করতে দিতে দেখিনি। আর পশমবিহীন স্যাণ্ডেলের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে পশমবিহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরিধান করতে দেখেছি। তিনি তা পায়ে দিয়ে
উযুও করতেন। আমিও তাই এ ধরনের স্যাণ্ডেল পছন্দ করি। হলুদ রঙ-এর সম্পর্কে কথা হচ্ছে
এই যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এই রং ব্যবহার করতে দেখেছি। অতএব আমিও এই রং পছন্দ করি।
ইহরাম সম্পর্কে বলতে হয় যে, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তখনি তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছি যখন তাঁর উট
যাত্রা শুরু করেছে।
২৬৯০। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
(রহঃ) উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর সংগে হাজ্জ
(হজ্জ) ও উমরা মিলিয়ে ১২ বার করেছি। আমি বললাম, হে
আবূ আবদূর রহমান! আমি আপনাকে চারটি কাজ করতে দেখেছি অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত
হাদীসের সমার্থ বোধক। কিন্তু তালবিয়া পাঠ প্রসংগে রাবী ইবনু কুসায়ত) সাঈদ মাকবুরীর
বিপরীত বর্ণনা করেছেন, তবে তার উল্লেখ ব্যতীত আর সব
বর্ণনায় কোন বিরোধ হয়নি।
২৬৯১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পাদানীতে পা রাখতেন এবং তার বাহন দাঁড়িয়ে
সোজা হয়ে রওনা করত, তখন তিনি যুলহুলায়ফায়
“লাব্বাইকা, ধ্বনি উচ্চারণ করতেন।
২৬৯২। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
বর্ণনা করতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উষ্ট্রী যখন তাকে নিয়ে সোজা হয়ে রওনা হতো, তখন তিনি “লাব্বাইকা”- ধ্বনি উচ্চারণ করতেন।
২৬৯৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি
দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম – যুল-হুলায়ফা নামক স্হানে তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন, অতঃপর তা যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হায় দাঁড়ান, তখন তিনি “লাব্বাইক” ধ্বনি উচ্চারণ করলেন।
২৬৯৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি শুরু কবার
প্রারম্ভে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-হুলায়ফায় রাত যাপন করেন
এবং এখানকার মসজিদে সালাত আদায় করেন।
২৬৯৫। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাধার সময় এবং (হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে)
ইহরাম মুক্ত হওয়ার পর বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৬। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর–এর স্ত্রী আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরাম বাধার প্রাক্কালে এবং ইহরাম মুক্ত হওয়ার
পর কিন্তু বায়তূল্লাহ তাওয়াফের পূর্বে তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধার জন্য ইহরামের পোশাক পরিধান করার
পূর্বে এবং ইহরাম মুক্ত হওয়ার পর বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পুর্বে আমি তাঁকে সূগন্ধি
মেখে দিতাম।
২৬৯৮। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহরাম বাঁধার সময় এবং ইহরামমুক্ত হওয়ার পর আমি
তাকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি।
২৬৯৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি। বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় নিজ হাতে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যারীরা (ভারতীয় সুগন্ধি) মেখে
দিয়েছি—ইহরাম মুক্ত হওয়ার সময় এবং ইহরাম বাধার সময়।
২৭০০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উসমান ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা
করলাম, আপনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাঁধার সময় তাঁকে কি জিনিস দিয়ে
সুগন্ধিযুক্ত করেছিলেন? তিনি বললেন, সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের (কস্তৃরীর)
সাহায্যে।
২৭০১। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যতদূর
সম্ভব সর্বোৎ কৃষ্ট সুগন্ধির সাহায্যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি যুক্ত করতাম, অতঃপর তিনি ইহরাম বাঁধতেন।
২৭০২। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যতদুর
সম্ভব সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের সাহায্যে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর ইহরাম বাধার প্রাক্কালে এবং ইহরামমুক্ত হওয়ার পর কিন্তু
তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বে, সুগন্ধিযুক্ত করেছি।
২৭০৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূর-রবী, খালফ
ইবনু হিশাম ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর মাথার সিঁথিতে কস্তৃরীর ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি, অথচ তিনি তখন ইহরাম অবস্হায় ছিলেন। রাবী খালফের
বর্ণনায়, তিনি তখন ইহরামাবস্হায়
ছিলেন– কথার উল্লেখ নাই। তবে তাঁর বর্ণনায় আছে, “এটা
ছিল তাঁর ইহরামের সময়কার সুগন্ধি। ”
২৭০৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথাব সিঁথিতে কস্তৃরীর
ঔজ্জূল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়া পাঠ
করছিলেন।
২৭০৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ওআবূ সাঈদ
আল আশাজ্জ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মাথার সিঁথিতে সুগন্ধির ঔজ্জল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
২৭০৬। আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
যেন দেখতে পাচ্ছি ওয়াকী (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।
২৭০৭। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না
ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর মাথার সিথিতে তাঁর ইহরামের অবস্হায় সুগন্ধির উজ্জল্য দেখতে পাচ্ছি।
২৭০৮। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিঁথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায়
সুগন্ধির ঔজ্জুল্য দেখছি।
২৭০৯। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইহরাম বাঁধার সংকল্প করতেন তখন তিনি যথাসাধ্য
সর্বোত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। অতঃপর আমি তার মাথায় ও দাড়িতে তৈলের চাকচিক্য
দেখেছি।
২৭১০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সিথিতে তার ইহরামের অবস্থায় কস্তৃরীর চাকটিক্য
দেখতে পাচ্ছি।
২৭১১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে।
২৭১২। আহমদ ইবনু মানী ও
ইয়াকুব দাওরাকী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
তাঁর ইহরাম বাঁধার পুর্বে এবং কুরবানীর দিন বায়তূল্লাহ তাওয়াফের পুর্বে কস্তুরী
মিশ্রিত সুগন্ধি মেখে দিতাম।
২৭১৩। সাঈদ ইবনু মানসূর-ও
আবূ কামিল ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে
বর্ণিত। তিনি (মুহাম্মদ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ)-কে এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলম যে সুগন্ধি মেখেছে, অতঃপর মুহরিম অবস্হায় ভোরে উপনীত হয়েছে। তিনি
বললেন, আমি ভোর বেলা এমন অবস্হায়
ইহরাম বাধা পছন্দ করি না যে, আমি সুগন্ধি ঝেড়ে ফেলতে
ব্যস্ত থাকব। এই কাজ (সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা মাখা অধিক
পছন্দনীয় মনে করি। অতঃপর আমি (মুহাম্মদ) আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং
তাঁকে অবহিত করলাম যে, ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, ভোরবেলা এমন অবস্হায় ইহরাম বাধা পছন্দ করি না
যে, আমি সুগন্ধি ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত থাকব। এই কাজ
(সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা
লাগানো অধিক শ্রেয় মনে করি। ” তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে তার ইহরাম বাধার সময় সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। এরপর তিনি তার স্ত্রীদের
নিকট চক্কর দিলেন এরপর ভোরবেলা ইহরাম বাঁধলেন।
২৭১৪। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
হারিসী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দেহে সুগন্ধি মেখে দিতাম। অতঃপর তার স্ত্রীদের
নিকট চক্কর দিতেন, অতঃপর ভোরবেলা সুগন্ধি ঝাড়তে
ঝাড়তে ইহরাম বাঁধতেন।
২৭১৫। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ভোরবেলা
সুগন্ধির চিহ্ন দূরিভূত করা অবস্হায় ইহরাম বাঁধার তুলনায় ভোরবেলা আলকাতরা মাখা
অবস্হায় ইহরাম বাধা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। রাবী বলেন, এরপর আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে ইবনু
উমরের উক্তি সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দেহে খোশবু লাগিয়েছি। এরপর তিনি
তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন। অতঃপর তিনি ইহরাম অবস্হায় ভোর করলেন।
২৭১৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) সাব ইবনু জাসলামা লাইসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বন্য গাধা (গোশত) হাদিয়া স্বরুপ
দিলেন। আর তিনি তখন আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্হানে অবস্হান করছিলেন। তিনি তার
কাছে তা ফেরত পাঠালেন। সাব (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারা মলিন দেখে বললেন, আমি তোমাকে তা ফেরত দিতাম না, শুধু ইহরামের কারণেই তা ফেরত দিয়েছি।
২৭১৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, কুতায়বা, আবদ
ইবনু হুমায়দ ও হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি (সাবা) তাকে বন্য গাধার
গোশত হাদিয়া দিয়েছিলাম। ইমাম মালিক (রহঃ) যেরুপ বর্ণনা করেছেন। লাইস ও সালিহ এর
বর্ণনায় রয়েছে- সাব ইবনু জাসলামা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন।
২৭১৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) যুহরী
(রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উল্লেখ আছে তিনি (সাব) বলেন, আমি
তাঁকে বন্য গাধার গোশত হাদইয়া দিয়েছিলাম।
২৭১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাব ইবনু জাসলামা (বা) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য বন্য গাধার গোশত উপটৌকন পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি তখন
ইহরাম অবস্হায় ছিলেন। রাবী বলেন, তাই তিনি এই উপটৌকন তাকে
ফেরত দিলেন এবং বললেন, আমরা যদি ইহরাম অবস্হায় না
থাকতাম তবে তোমার এই উপটৌকন অবশ্যই গ্রহণ করতাম।
২৭২০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রাঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাব
ইবনু জাসলামা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বন্য গাধার পায়ের
গোশত হাদইয়া দেন। তখন তা থেকে রক্ত ঝরছিল। আর হাকওমের সুত্রে শুবা কতৃঁক বর্ণিত
হাদীসে বন্য গাধার পেছনের অংশের কথা উল্লেখ আছে। আর হাবীবের শুবা কর্তৃক অপর
বর্ণনায় আছে, (সাব) বন্য গাধার উরুর
পার্শের গোশত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য উপটৌকন পাঠান। কিন্তু
তিনি তা ফেরত দেন।
২৭২১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যায়দ
ইবনু আরকাম (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে স্বরণ
করিয়ে দিয়ে বললেন, ইহরাম অবস্হায় রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিকার করা জন্তুর গোশত উপটৌকন দেওয়া হয়েছিল।
সেটা যে হারাম একথা আপনি আমাকে কিভাবে অবহিত করেছিলেন? রাবী (তাউস) বলেন, তিনি বললেন, তাকে
শিকারকৃত জন্তুর একটি অঙ্গ হাদিয়া দেওয়া হয়েছিল, তা
ফেরত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমরা এই গোশত খেতে পারি না, কারণ আমরা ইহরাম অবস্হায় আছি।
২৭২২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওনা হলাম, এমনকি ‘কাহা’ নামক স্হানে গিহো পৌছলাম।
আমাদের কতক ইহরাম অবস্হায় এবং কতক ইহরামবিহীন অবস্হায় ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার সংগীরা একটা কিছুর দিকে তাকাচ্ছে আমি
তাকিয়ে দেখলাম, তা একটি বন্য গাধা। অতএব আমি
আমার ঘোড়ার জ্বীন বাঁধলাম এবং বল্লম তুলে নিলাম। এরপর ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলাম। এ
অবস্হায় আমার চাবুক নীচে পড়ে গেল। আমি আমার সংগীদের তা তুলে দিতে বললাম, তারা ইহরাম অবস্হায় ছিল। তাই তারা আল্লাহর শপথ
করে বলল, আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে
কিছুমাত্র সাহায্য করতে পারব না। অতঃপর আমি নীচে নেমে এসে তা তূললাম। তারপর ঘোড়ায়
চড়ে গাধার পশ্চাঁদ্ধাবন করলাম। তা ছিল একটি টিলার আড়ালে। আমি বল্লমের আঘাতে এটাকে
হত্যা করলাম। অতঃপর আমার সংগীদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের কতক বলল, তা খাও, আর
কতক বলল, খেও না। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সন্মুখভাগে ছিলেন। আমি ঘোড়া হাঁকিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত
হলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা
হালাল, অতএব তোমরা তা খাও।
২৭২৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও কুতায়বা (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার একটি
পথে যখন আমরা পৌছলাম তখন তিনি তার কতিপয় মুহরিম সংগীসহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর পেছনে পড়ে গেলেন। তিনি ছিলেন ইহরামমুক্ত। তিনি একটি বন্য গাধা
দেখতে পেয়ে নিজের ঘোড়ায় চেপে বসলেন এবং সংগীদেরকে তার চাবুকটি তুলে দিতে বললেন।
তারা তা তুলে দিতে রাজী হলেননা। তিনি তাদেরকে নিজের বল্লমটিতুলে দিতে বললেন, এবারও তারা তার কথায় রাজী হলেন না। এরপর তিনি
নিজেই তা তুলে নিলেন এবং ঘোড়া হাঁকিয়ে গাধাটি শিকার করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় সাহাবী তার গোশত খেলেন এবং কতক তা প্রত্যাখ্যান করলেন।
অতএব তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছে তাকে এ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এতো
খাদ্য, মহামহিম আল্লাহ তোমাদের তা
দান করেছেন।
২৭২৪। কুতায়বা (রহঃ) আবূ
কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বন্য গাধা সম্পর্কিত হাদীসটি
এ সুত্রে ও আবূ নাযর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু যায়দ ইবনু
আসলামের বর্ণনায় আরো আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এর
কিছু গোশত তোমাদের সাথে আছে কি?
২৭২৫। সালিহ ইবনু মিসমার
সূলামী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে গেলেন। তার সংগীগণ ইহরাম বাঁধলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরাম বাঁধলেন না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবহিত করা হল যে, শক্ররা গাইকা নামক স্হানে ওত পেতে আছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। আবূ
কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে
ছিলাম, তাদের কতক আমার দিকে চেয়ে
হাসছিল। আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আমি বর্শার আঘাতে তার
গতিরোধ করলাম এবং সাহাবীদের সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করতে
অস্বীকৃতি জানালেন। আমরা এর গোশত খেলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকাবোধ করলাম। অতএব আমি তাঁর কাছে পৌছার
জন্য কখনো ঘোড়া হাকিয়ে, আবার কখনো পদব্রেজে অগ্রসর
হতে লাগলাম। মধ্যরাতে গিফার গোত্রের এক ব্যাক্তির সাক্ষাত পেলাম এবং তাকে
জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কোথায় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাত পেয়েছে? সে
বলল, আমি তাঁকে তা-হিন নামক স্থানে ছেড়ে এসেছি এবং
তিনি সুফয়া নামক স্হানে দুপূরের সময়টা যাত্রা বিরতি করার মনস্হ করেছেন। আমি (আবূ
কাতাদা) তাঁর সাথে মিলিত হয়ে বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনার সাহাবীগন আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং আপনার জন্য আল্লাহর রহমত
কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা করছেন। অতএব আপনি তাদের
জন্য অপেক্ষা করুন। অতএব তিনি তাদের জন্য অপেক্ষা করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমি একটি শিকার ধরেছি এবং তার
কিছু অংশ আমার কাছে অবশিষ্ট আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের
বললেন, তোমরা খাও। তারা ইহরাম
অবস্হায় ছিলেন।
২৭২৬। আবূ কামিল জাহদারী
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে রওনা হলেন এবং আমরাও তাঁর সফর সঙ্গী হলাম। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-ভিন্ন পথ ধরলেন এবং আবূ কাতাদা (রাঃ) সহ কতিপয় সাহাবীকে (অন্য পথ অনুসরণ করার
নির্দেশ দিয়ে) বললেন, তোমরা আমার সঙ্গে সাক্ষাত না
করা পর্যন্ত সমূদ্র তীরবর্তী পথ ধরে অগ্রসর হও। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, অতএব তারা সমুদ্র উপকুল বরাবর পথ ধরলেন। তারা
যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পথে মোড় নিলেন, তখন আবূ কাতাদা (রাঃ) ছাড়া আর সকলে ইহরাম
বাঁধলেন, তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। এই
অবস্হায় পথ চলতে চলতে তারা কতকগুলো বন্য গাধা দেখতে পেলেন এবং আবূ কাতাদা (রাঃ)
এগুলোকে আক্রমণ করে একটি গাধী শিকার করলেন। তারা যাত্রা বিরতি দিয়ে গাধীর গোশত
খেলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারা বললেন, আমরা ইহরাম অবস্হায় শিকারের গোশত খেলাম। এরপর
তারা এর অবশিষ্ট গোশত সংগে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সঙ্গে মিলিত হায় বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা ইহরাম
বেঁধেছি কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরাম বাঁধেন নি। এই অবস্হায় আমরা কয়েকটি বন্য
গাধা দেখতে পেলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ)এগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি গাধী শিকার করেন।
আমরা যাত্রা বিরতি দিয়ে এর গোশত খেয়েছি। অতঃপর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা ইহরাম অবস্হায় শিকারকৃত পশুর গোশত আহার
করব কি অথচ আমরা মুহরিম? আমরা অবশিষ্ট গোশত সাথে করে
নিয়ে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কেউ কি তা শিকার করার নির্দেশ অথবা
ইংগিত করেছে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, তাহলে
অবশিষ্ট গোশতও খেতে পার।
২৭২৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) উসমান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহঃ)
থেকে উপরোক্ত সনদ সুত্রে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছো শায়বানের বর্ননায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কেউ কি তাকে গাধাটি
আক্রমণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে অথবা এর প্রতি ইংগিত করেছে? আর শুবার বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি (শিকারের দিকে)
ইংগিত করেছিলে অথবা সাহায্য করেছিলেঁ অথবা -শিকার করেছিলে-,- শুবা বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এই দুটো বাক্য বলেছেন কিনা তা আমার মনে নেই।
২৭২৮। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর
রহমান আদু-দারিমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ-কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তার পিতা
তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমি ছাড়া আর সকলেই উমরা করার
জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম এবং আমার মুহরিম সংগীদের
এর গোশত খাওয়ালাম। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে
উপস্থিত হয়ে তাঁকে অবহিত করলাম যে, শিকারের
অবশিষ্ট গোশত আমাদের সাথে আছে। তিনি বললেন, তোমরা
তা খাওঁ- তখন তারা ছিলেন মুহরিম।
২৭২৯। আহমদ ইবনু আবদা যাব্বী
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (সফরে) রওনা হলেন। তারা সবাই ইহরাম অবস্হায় ছিলেন, কিন্তু আবূ কাতাদা (রাঃ) হালাল অবস্থায় ছিলেন।
হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বাবৎ তবে এই বর্ণনায় আরও আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিজ্ঞাসা করলেন, এর কিছু গোশত তোমাদের সাথে
আছে কি? তারা বললেন, এর পায়ের গোশত আমাদের সাথে আছে। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা
নিয়ে আহার করলেন।
২৭৩০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, কুতায়বা ও ইসহাক (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ কাতাদা (রাঃ) ইহরামকারী একটি দলের সঙ্গে
ছিলেন, কিন্তু তিনি ইহরামমুক্ত
ছিলেন। হাদীসের পরবর্তী বর্ণনা পূর্ববত এতে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের কেউ কি শিকারের দিকে
ইংগিত করেছে অথবা কোনরুপ নির্দেশ দিয়েছে? তারা
বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ না। তিনি
বললেন, তাহলে এটা খেতে পার।
২৭৩১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) মুআয ইবনু আবদুল রহমান ইবনু উসমান তায়মী (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে
বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় তালহা
ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাকে (শিকার করা) পাখির গোশত উপটৌকন দেয়া
হল। এ সময় তিনি ঘুমে ছিলেন। আমাদের কতক তা খেল এবং কতক বিরত থাকল। তালহা (রাঃ) ঘুম
থেকে উঠে গোশত আহারকারীদের অনুক্যুল মত প্রকাশ করলেন এবং বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (ইহরাম অবস্হায়) তা (শিকার করা প্রানীর গোশত) খেয়েছি।
২৭৩২। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা
(রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ এমন চার প্রকার দুষ্ট জন্তু হারাম এবং হারামের
বাইরে নিধন করা যায় চিল (এবং শকুন), কাক, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর। তিনি (উবায়দুল্লাহ)
বলেন, আমি কাসিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাপের বিষয়ে আপনার মত কি? তিনি বললেন, তা
হীনভাবে হত্যা করতে হবে।
২৭৩৩। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাঁচ
প্রকার দুষ্ট জন্তুকে হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ সাপ, আবকা” (যার বুক ও পিঠ সাদা বর্ণের) কাক, ইঁদুর, হিংস্র
কুকুর এবং চিল।
২৭৩৪। আবূর-রবী যাহরানী
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি
অনিষ্টকর প্রানীকে হারামের ভিতর হত্যা কারা যায়:বিচ্ছু, ইঁদুর, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর।
২৭৩৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
২৭৩৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ পাচটি দুষ্ট জন্তু হারামের মধ্যেও হত্যা করতে হবেঃ ইদূর, বিচ্ছু, কাক, চিল এবং হিংস্র কুকুর।
২৭৩৭। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি দুষ্ট অনিষ্টকর জন্তু হারাম ও হারামের
বাইরে নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ইয়াযীদ ইবনু যুরায় (রহঃ)-এর
হাদীসের অনুরুপ।
২৭৩৮। আবূত-তাহির ও হারামালা
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি জন্তুর প্রতিটই
অনিষ্টকর। ইহরাম অবস্হায় তা হত্যা করা যাবেঃ কাক, চিল, হিংস্র কুকুর, বিচ্ছু
ও ইঁদুর।
২৭৩৯। যুহায়র ইবনু হারব ও
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, পাঁচটি জন্তু নিধনে কোন দোষ নেই, হারামের ভিতরে ও ইহরাম অবস্থায়ঃ ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর। ইবনু আবূ উমর তার
রিওয়ায়াতে হারাম শরীফে বা ইহরাম অবস্হায় কথাটুকু উল্লেখ করেছেন।
২৭৪০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা হাফসা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ পাঁচটি জন্তুর প্রত্যেকটই অনিষ্টকর, কেউ
তা হত্যা করলে তার কোন দোষ হবে নাঃ বিচ্ছু, কাক, চিল, ইদূর
ও হিংস্র কুকুর।
২৭৪১। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ)
যায়দ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক
ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম
ব্যাক্তি কোন কোন জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি
বললেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈকা সহধর্মিনা অবহিত করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচ্ছু, চিল, হিংস্র
কুকুর ও কাক হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা রাবী বলেন, নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২৭৪২। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) যায়দ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা
করল, মুহরিম ব্যাক্তি কোন কোন জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জনৈকা সহধর্মিনা বলেছেন যে, হিংস্র কুকুর, ইদূর, বিচ্ছু, চিল, কাক ও সাপ হত্যা করার নির্দেশ দিতেন, এমনকি সালাতরত অবস্হায়ও তা হত্যা করা যায়।
২৭৪৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, এমন পাঁচটি জন্তু আছে যা
মুহরিম ব্যাক্তি হত্যা করলে কোন দোষ হবে না:কাক, চিল, বিচ্ছু, এবং
হিংস্র কুকুর।
২৭৪৪। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি (রহঃ)-এর নিকট
জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি ইবনু উমর (রাঃ)-কে
মুহরিম ব্যাক্তির জন্য কোন কোন প্রানী হত্যার বৈধতা ঘোষণা করতে শুনেছেন? নাফি (রহঃ) আমাকে বললেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি, এমন পাঁচ প্রকারের প্রানী
আছে, কোন ব্যাক্তি তা হত্যা করলে তার কোন গুনাহ হবে
নাঃ কাক, চিল, বিচ্ছু, ও
হিংস্র কুকুর।
২৭৪৫। কুতায়বা, ইবনু রুমহ, শায়বান
ইবনু ফাররুখ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র,আবূ
কামিল ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু মালিক (রহঃ) ও ইবনু শুরু ায়জের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে এবং একমাত্র ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ব্যতীত নাফি- “ইবনু উমর (রাঃ) থেকে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঁ কথাটি আর কেউ বলেননি। এই বর্ণনায়
ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু ইসহাক (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
২৭৪৬। ফযল ইবনু সাহল (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, পাচ ধরনের প্রানী, এর কোন একটি হারাম শরীফে বা ইহরাম অবস্হায়
হত্যা করা হলে কোন দোষ নেই পূর্বের হাদীসের অনুরুপ।
২৭৪৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এমন পাঁচ ধরনের প্রানা আছে, ইহরাম অবস্হায় কোন ব্যাক্তি সেগুলো হত্যা করলে
তাতে তার কোন শুনাহ হবে নাঃ বিচ্ছু, ইদূর, হিংস্র কুকুর, কাক
ও চিল। হাদীসের মূল পাঠ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়ার বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে।
২৭৪৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরি ও আবূর-রবী (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন এবং আমি তখন চুলায় আমার হাড়ি বা পাতিলের নীচে
আগুন জ্বালাচ্ছিলাম। আর উকুন আমার চেহারার উপর গড়িয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাথার পোকাগুলো কি
তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও অথবা একটি কুরবানী
কর। আয়্যুব (রহঃ) বলেন, আমার মনে নেই তিনি (মুজাহিদ)
কোন শব্দটি আগে বলেছেন।
২৭৪৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী, যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আয়্যুব (রহঃ) থেকে এই সনদ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৫০। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে, অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত
হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে এবং এই কারণে সে মাথা মুড়িয়ে ফেলে, তবে তাকে ফিদয়া হিসেবে সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সদকা দিতে হবে অছাবা কুরবানী করতে
হবে” (সূরা বাকারা- ১৯৬)। রাবী বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম এবং তিনি বললেন, আরও নিকটে আস। অতএব আমি নিকটবর্তী হলাম এবং
তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট
দিচ্ছে? ইবনু আওন (রহঃ) (নিজস্ব
সূত্র পরস্পরায়) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, হ্যা। কা’ব (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অথবা সদকা অথবা সহজলভ্য হলে কুরবানীর মাধ্যমে ফিদয়া
আদায়ের নির্দেশ দিলেন।
২৭৫১। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট দাঁড়ালেন এবং তখন তার মাথা থেকে উকুন ঝড়ে
পড়ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যা।
তিনি বললেন, তাহলে তোমার মাথা কামিয়ে
ফেল। রাবী বলেন, অতএব আমার সম্পর্কে এই আয়াত
নাযিল হলঃ অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন
অসুখ হবে (এবং এই কারণে মাথা মুড়িয়ে ফেলবে) তবে তাকে ফিদয়া হিসেবে সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সদকা দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে
হবে”-(সূরা বাকারাঃ ১৯৬)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বললেন, তুমি তিন দিন সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা এক ফারাক (তিন সা) খাদ্য ছয়জন মিসকীনকে দান
কর অথবা কুরবানী কর- যা সহজলভ্য হয়।
২৭৫২। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
উমর (রহঃ) কা’ব ইবনু উজলা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন-মক্কায় প্রবেশের পূর্বে-তিনি যখন
ইহরাম অবস্হায় ছিলেন এবং নিজের হাড়ির নীচে আগুন জালাচ্ছিলেন। এই অবস্হায় তার (মাথা
থেকে) মুখমণ্ডলে উকুন ঝরে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে
তোমার মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং ছয়জন মিসকীনকে এক ফারাক খাদ্য দান কর (এক ফারাক এ তিন
সা), অথবা তিনদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন
কর অথবা একটি কুরবানী কর। ইবনু আবূ নাজীহ-এর বর্ণনায় আছে, “অথবা একটি বকরী কুরবানী কর। ”
২৭৫৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমার মাথায় উপদ্রব করছে? তিনি বললেনঃ হ্যা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, মাথা মুড়িয়ে ফেল। অতঃপর একটি
বকরী কুরবানী কর অথবা তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন
মিসকীনকে তিন সা খেজুর খেতে দাও।
২৭৫৪। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাকিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে কাব ইবনু উজরা (রাঃ)-এর নিকট বসলাম।
অতঃপর আমি তাকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, ফিদয়া
হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে হবে অথবা সা’দকা দিতে হবে অথবা
কুরবানী করতে হবে। ” কাব (রাঃ) বললেন, তা
আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার মাথায় কিছু কষ্ট ছিল। অতঃপর আমাকে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল এবং তখন আমার মুখমণ্ডলে
উকুন গড়িয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যা দেখছি তাতে মনে হয় যে, তোমার অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী
সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে? আমি বললাম, না। তখন এই আয়াত নাযিল হয়, “ফিদয়া হিসেবে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)
পালন করতে হবে, সদকা করতে হবে অথবা কুরবানী
করতে হবে। ” বললেন, তিন দিন সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে অর্ধ সা- করে
খাদ্য দান কর। কা’ব (রাঃ) বলেন, আয়াতটি বিশেষভাবে আমার
প্রসংগে নাযিল হয়েছে কিন্তু এর নির্দেশ সাধারণভাবে তোমাদের সকলের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য।
২৭৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি ইহরাম অবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে রওনা হলেন। তার মাথা ও দাঁড়িতে উকুন ধরে যায়। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা জানতে পেরে তাকে ডেকে পাঠালেন এবং একজন নাপিতও
ডাকলেন। সে তার মাথা মুড়িয়ে দিল। অতঃপর তিনি বললেন, তোমার
সাথে কুরবানীর পশু আছে কি? তিনি বললেন, আমি তা সংগ্রহ করতে সক্ষম নই। অতঃপর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের
অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে এক সা করে খাদ্য দান করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহ
তা’আলা বিশেষ করে তার প্রসংগে নাযিল করলেন, “তোমাদের
মধ্যে যে ব্যাক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে ”। অতঃপর এই
আয়াতের নির্দেশ সাধারণভাবে সকল মুসলমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
২৭৫৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় শিংগা লাগিয়ে ছিলেন।
২৭৫৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইহরাম অবস্হায় মক্কায় যাওয়ার পথে নিজের মাথার মধ্যস্হলে শিংগা লাগিয়েছিলেন।
২৭৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) নুঁবাই
ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
(ইহরাম অবস্হায়) আবান ইবনু উসমান (রহঃ)-এর সাথে রওনা হলাম। আমরা মালাল নামক স্হানে
পৌছলে উমর ইবনু উবায়দুল্লাহর চোখে নাড়া দেখা দিল। রাওহা নামক স্হানে পৌছে তার
চোখের ব্যথা আরও তীব্রতর হল। তিনি (নূবাইহ) আবান ইবনু উসমান (রহঃ)-এর কাছে (কি
করতে হবে তা) জিজ্ঞাসা করার জন্য একজনকে পাঠালেন। তিনি বলে পাঠালেন, চোখে মুসব্বরের প্রলেপ দাও, কারণ উসমান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম
অবস্হায় এক ব্যাক্তির চক্ষুরোগ দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার চোখে মুসব্বরের প্রলেপ দেন।
২৭৫৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) নূবাইহ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উবায়দুল্লাহ ইবনু মা-মার-এর
পূত্র উমরের চোখ ফূলে উঠলে তিনি সূরমা লাগানোর ইচ্ছা করলেন। কিন্তু আবান ইবনু
উসমান (রহঃ) তাকে চোখে সূরমা লাগাতে নিষেধ করলেন এবং মুসব্বরের প্রলেপ দেওয়ার
নির্দেশ দিলেন। তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে এও বর্ণনা করেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করেছেন।
২৭৬০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
ইবরাহীম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত।
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও মিসওয়ার ইবনু মাখরাম (রাঃ) আবওয়া নামক স্হানে পরস্পর মতবিরোধে
লিপ্ত হলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)বললেন, মুহরিম
ব্যাক্তি মাথা ধৌত করতে পারবে, কিন্তু মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, সে মাথা ধৌত করতে পারবে না। ইবনু আব্বাস (রাঃ)
আমাকে (অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু হুসায়নকে) এ সম্পর্কিত মাসআলা জানার জন্য আবূ আয়্যুব
আনসারী (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। আমি তাকে কুপের দুই খুটির মাঝে গোসলরত অবস্হায়
পেলাম। তিনি একখন্ড কাপড় টাংগিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। আমি তাকে সালাম করলে
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে? আমি বললাম, আবদুল্লাহ
ইবনু হুসায়ন-আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)আপনার নিকট এই কথা জিজ্ঞাসা করার
জন্য পাঠিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় কিভাবে মাথা ধৌত করতেন? আবূ আয়্যুব (রাঃ) তার হাত টানানো কাপড়ের উপর
রাখলেন এবং তা (সামান্য) নীঢ়ু করলেন-যাতে তার মাথা আমার দৃষ্টিগোচর হল। অতঃপর তিনি
তার গোসলে সাহায্যকারী ব্যাক্তিকে পানি ঢালতে বললেন। অতএব সে তার মাথায় পানি ঢালল।
এরপর তিনি উভয় হাত সামনে ও পিছনে সঞ্চালন করে নিজের মাথা মললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে এরুপ করতে দেখেছি।
২৭৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে এ সনদ সুত্রে উপরোক্ত হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, আবূ আয়্যুব (রাঃ) তার উভয়
হাত সামনে-পেছনে সঞ্চালন করে সষ্পূর্ণ মাথা ভালভাবে মললেন। এরপর মিসওয়ার (রাঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আমি আর কখনও আপনার সাথে
বিতর্কে লিপ্ত হব না।
২৭৬২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত। এক ব্যাক্তি তার উটের পিঠ থেকে পড়ে গেল। ফলে তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং মারা
গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে
কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার
দুই কাপড়েই কাফন দাও এবং তার মাথা অনাবৃত রাখ। কারণ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন
তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
২৭৬৩। আবূর-রবী যাহরানী
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
এক ব্যাক্তি আরাফাতের ময়দানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে
উকুফরত ছিল। হঠাৎ সে তার বাহন থেকে নীচে পড়ে গেল। এতে তার ঘাড় মটকিয়ে গেল এবং সে
মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা অবহিত করা হলে তিনি বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়েই তাকে কাফন করাও, তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত কর
না। (রাবী আয়্যুব বলেন) কারণ আল্লাহ তা আলা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়া পাঠরত
অবস্থায় উঠাবেন। আমর (রহঃ) অনুরুপ বলেছেন।
২৭৬৪। আমরুন-নাকিদ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উকুফ করছিল। অবশিষ্ট বর্ণনা হাম্মাদ আইয়্যুবের হাদীসের
অনুরুপ।
২৭৬৫। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি ইহরাম অবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে এসেছিল। সে
উট থেকে পড়ে গেল এবং তার ঘাড় মটকে গেল। ফলে সে মারা গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি
দিয়ে গোসল করাও এবং তার পরনের কাপড়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মাথার চুল আবৃত করো না।
কারণ সে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্হায় তাকে উপস্হিত হবে।
২৭৬৬। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি ইহরাম অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে
এসেছিল পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায় আছে, “তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠান হবে।
এতে আরও আছে, কোথায় সে উটের পিঠ থেকে পড়ে
গেল তা সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) উল্লেখ করেননি।
২৭৬৭। আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তিকে ইহরাম অবস্হায় তার বাহনের পিঠ থেকে ফেলে
দিয়ে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিলে সে মারা গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কুলপাঁতা মিশ্রিত পানি
দিয়ে গোসল করাও, তার পরিধেয় বস্ত্র দুটি দিয়ে
তার কাফন দাও, কিন্তু তার মুখমন্ডল ও মাথা
অনাবৃত রাখ। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠান হবে।
২৭৬৮। মুহাম্মাদ ইবনু
সাব্বাহ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি ইহরাম
অবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী
তার ঘাড় ভেঙ্গে দিল, ফলে সে মারা গেল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে
কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও, তার
পরিধেয় বস্ত্র দুঁখানা দিয়ে তাকে কাফন পরাও, কিন্তু
তার দেহে সুগন্ধি মাখিও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন
মাথার চুল জমাট করা অবস্হায় উঠান হবে।
২৭৬৯। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু
হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তিকে তার উট নীচে
ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় (এবং সে মারা যায়)। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ইহরাম অবস্হায় ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা অনাবৃত রাখতে
নির্দেশ দেন। কারণ কিয়ামতের দিন তাকে মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় পুনরুত্থিত করা
হবে।
২৭৭০। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
ও আবূ বকর ইবনু নাফি- (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু আব্বাস
(রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছেন, এক ব্যাক্তি ইহরাম অবস্থায়
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে উপস্হিত হল। হঠাৎ সে তার
উষ্ট্রীর পিঠ থেকে পড়ে গেল এবং ঘাড় মটকে যাওয়ার ফলে মারা গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, তার পরিধেয় দুখন্ড বস্ত্রে কাফন দিতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা কাফনের বাইরে রাখতে
নির্দেশ দিলেন। শুবা (রহঃ) বলেন, অতঃপর আবূ বিশর আমাকে এভাবে
বললেন, তাকে এভাবে কাফন পরাও যাতে
তার মাথা ও মুখমন্ডল বাইরে থাকে। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন মাথার চুল জমাট করা
অবস্হায় উঠান হবে।
২৭৭১। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) বলেন, ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এক ব্যাক্তিকে তার বাহন নীচে
ফেলে দিলে ঘাড় মটকে সে মারা যায়। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সংগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত লোকদের তাকে
কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে এবং তার মুখমন্ডল রাবী বলেন, আমি মনে করি যে, তার
মাথা অনাবৃত রেখে কাফন পরাতে নির্দেশ দিলেন। কারণ তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্হায়
পুনরুত্থিত করা হবে।
২৭৭২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী তাকে
থেকে ফেলে দেওয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় এতে সে মারা যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -বললেন, তাকে গোসল দাও, তার দেহে সুগন্ধি মাখিও না এবং তার মুখ মণ্ডলও
ঢেকে দিও না। কারণ তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্হায় উঠান হবে।
২৭৭৩। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনুল আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুবাআহ বিনত যুবায়র (রাঃ)-এর নিকট গেলেন এবং-তাকে বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইচ্ছা পোষণ করেছ? তিনি বললেন, হ্যা, আল্লাহর কসম! কিন্তু আমি প্রায়ই অসুস্হ থাকি
তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি হাজ্জ (হজ্জ) কর এবং
শর্ত রাখ ও বল, হে আল্লাহ! তুমি যেখানে
আমাকে আটকিয়ে দেবে (সেখানে আমি ইহরাম খুলব)। তিনি মিকদাদ (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন।
২৭৭৪। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়র ইবনু আবদিল মুত্তালিব কন্যা যুবাআহ
(রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ আমি হাজ্জের (হজ্জ) সংকল্প করেছি-কিন্তু আমি অসুস্হ। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং এই শর্ত কর যে, আল্লাহ!
তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দেবে সেখানে আমি ইহরাম খুলব।
২৭৭৫। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৭৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুবায়র ইবনু আবদিল মুত্তালিব কন্যা যুবাআহ
(রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, আমি একজন পিড়িত মহিলা এবং আমি হাজ্জের (হজ্জ)
সংকল্প রাখি। আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি
বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম
বাধ এবং শর্ত কর যে, আল্লাহ! তুমি আমাকে যেখানে
আটকিয়ে দেবে সেখানে আমি ইহরাম খুলব। রাবী বলেন, তিনি
হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালনে সক্ষম হয়েছিলেন।
২৭৭৭। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুবাআহ
(রাঃ) হাজ্জের (হজ্জ) ইরাদা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শর্ত
সাপেক্ষে ইহরাম বাধার নির্দেশ দিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশ মুতাবিক তাই করলেন।
২৭৭৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ আয়্যুব গায়লানী ও আহমদ ইবনু খিরাশ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাআহ
(রাঃ)-কে বললেন, তুমি হাজ্জ (হজ্জ) কর এবং
শর্ত রাখ যে, আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে
থামিয়ে দেবে, সেখানে আমি ইহরাম খুলব।
ইসহাকের বর্ণনায় আছে, তিনি যুবাআহ (রাঃ)-কে এই
নির্দেশ দিয়েছিলেন।
২৭৭৯। হান্নাদ ইবনুল সারী, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আসমা
বিনত উমায়স (রাঃ) আশ-শাজার নামক স্হানে আবূ বকর (রাঃ)-এর পুত্র মুহাম্মাদকে প্রসব
করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে তাকে
গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন।
২৭৮০। আবূ গাসসান মুহাম্মদ
ইবনু আমর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) যুল-হুলায়ফা নামক স্হানে সন্তান প্রসব
করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন
এবং তিনি তদনূযায়ী তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বললেন।
২৭৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে
রওনা হলাম। আমরা উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, যার সাথে হাদী অর্থাৎ
কুরবানীর পশু আছে সে যেন একত্রে উমরার সাথে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধে, অতঃপর উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) অমুষ্ঠান শেষ না
করে যেন ইহরামতে না হয়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি
হায়য অবস্হায় মক্কায় পৌছলাম। তাই আমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে এবং সাফা-মারওয়া
পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করতে পারিনি। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তোমার
চুলের বেনী খূলে ফেল এবং চিরুনি কর, হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং উমরা পরিত্যাগ কর। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। আমাদের হাজ্জের (হজ্জ)
অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (আমার
ভাই) আবদুর রহমানের সাথে তানঈম নামক স্হানে পাঠালেন। আমি সেখান থেকে ইহরাম বেধে
উমরা পালন করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা তোমার (ইহরাম বাধার) স্হান। যেসব লোক শুধু
উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তারা বায়তূল্লাহর তাওয়াফ এবং
সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করার পর ইহরামমুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা মিনা
থেকে ফিরে এসে পূনরায় তাদের হাজ্জের (হজ্জ) তাওয়াফ করল আর যারা উমরা ও হাজ্জের
(হজ্জ) জন্য একত্রে ইহরাম বেঁধেছিল, তারা
একবার তাওয়াফ করল।
২৭৮২। আব্দুল মালিক ইবনু
শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ)
বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে রওনা হলাম। আমাদের কেউ
শুধু উমরার ইহরাম বাধল, আর কেউ শুধু হাজ্জের (হজ্জ)
ইহরাম বাঁধল। এভাবে আমরা মক্কায় পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা উমরার জন্য ইহরাম
বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু আনেনি, তারা
যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং সাথে কুরবানীর পশুও এনেছে, তারা কুরবানী করার পরই কেবল ইহরামমুক্ত হবে। আর
যারা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছে, তারা
যেন হাজ্জ (হজ্জ) পুর্ণ করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার
হায়য শুরু হয়ে গেল এবং আরাফাত দিবস পর্যন্ত তা চলতে থাকল। আমি উমরার ইহরাম বেঁধে ছিলাম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মাথার চুল খুলে ফেলতে, তাতে চিরুনি করতে, হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধতে এবং উমরা পরিত্যাগ
করতে নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম এবং হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পূর্ণ করলাম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে (আমার ভাই) আবদুল রহমান
ইবনু আবূ বকরকে পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তানঈম থেকে ইহরাম বেঁধে উমরা করার নির্দেশ
দিলেন- যেহেতূ আমি উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেধেছিলাম; অথচ আমি উক্ত উমরা সমাপ্ত করতে পারি নাই।
২৭৮৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে রওনা
হলাম। আমি উমরার ইহরাম বাধনাম এবং সাথে কুরবানীর পশু? নইনি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু আছে
সে যেন তার উমরার সাথে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামও বাঁধে এবং উভয়ের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত
করার পূর্বে যেন ইহরাম না খোলে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার
মাসিক ঋতু শুরু হওয়া গেল। আরাফাতের রাত শুরু হলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি উমরার ইহরাম বেঁধে ছিলাম, অতএব আমি কিভাবে হাজ্জ (হজ্জ) করব? তিনি বললেন, তোমর
চুল খুলে ফেল এবং চিরুনী কর, উমরা স্থগিত রাখ এবং হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
যখন হাজ্জ (হজ্জ) সমাপ্ত করলাম, তখন তিনি (আমার ভাই) আবদূর
রহমানকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদনূযায়ী আমাকে তার বাহনের পেছন দিকে বসিয়ে তানঈম
থেকে উমরা করালেন- যে যেহেতু আমি উমরার অনুষ্ঠান পালন থেকে বিরত থাকতে বাধ্য
হয়েছিলাম।
২৭৮৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে রওনা হলাম। তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে যে
ব্যাক্তি একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন তাই করে। আর যে ব্যাক্তি শুধু হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরাম বাধতে চায়, সেও যেন তাই করে। আয়িশা
(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন এবং তার সাথের লোকেরাও
তাই করল। কতিপয় লোক উমরা ও হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল এবং কতিপয় লোক শুধু উমরার
ইহরাম বাঁধল। আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তভুক্ত ছিলাম।
২৭৮৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর
যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে (মক্কা) রওনা হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি
উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে তা করতে পারে। আমার সংগে
হাদী বা কুরবানীর পশু না থাকলে আমি উমরার ইহরাম বাধতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকদের মধ্যে কতক উমরার ইহরাম বাঁধল এবং কতক
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল। তিনি বললেন, আমি
উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমরা রওনাহলাম, অতঃপর মক্কায় পৌছে গেলাম। আরাফাত দিবস পর্যন্ত
আমার মাসিক ঋতু অব্যাহত ছিল এবং উমরা করে ইহরাম খোলার সুযোগ পেলাম না। এ সংকটের
বিষয়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবহিত করলে তিনি বললেন, তুমি তোমার উমরা পরিত্যাগ কর, চুলের বাধন খূলে ফেল এবং তাতে চিরুনী কর আর
হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
তাই করলাম। অতঃপর যখন মুহাসলাবের রাত এল এবং আল্লাহ তাআলা আমাদের হাজ্জ (হজ্জ)
সমাপন করার তৌফিক দিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে
পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তার বাহনের পেছনে বসিয়ে তানঈম নামক স্হানে রওনাহলেন। অতঃপর
আমি উমরার ইহরাম বাঁধলাম। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা সমাপনের
তৌফিক দান করলেন। এজন্য হাদী বা কুরবানী, সদকা
বা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) কোনটই পালন করতে হয়নি।
২৭৮৬। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিলহাজ্জ
মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে রওনা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য
ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি উমরার ইহরাম বাঁধতে
চায়, সেই তাই করুক। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ আবদা
(রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ।
২৭৮৭। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যিলহাজ্জ
মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সংগে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক উমরার, কতক হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের এবং কতক শুধু
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধল। আমি উমরার উদ্দেশ্যে ইহরামকারীদের অন্তভুক্ত ছিলাম।
অবশিষ্ট বর্ণনা (উভয়ের) হাদীসের অনুরুপ। তবে উরওয়ার বর্ণনায় আছে, “আল্লাহ তাআলা আয়িশা (রাঃ)-কে তার হাজ্জ (হজ্জ)
ও উমরা সমাপনের তৌফিক দিলেন। ” আর হিশামের বর্ণনায় আছে, এজন্য (উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরাম বাধার কারণে তাকে) হাদী বা কুরবানীও করতে হয়নি, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন করতে হয়নি-
সদকাও দিতে হয়নি। ”
২৭৮৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে
রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক উমরার উদ্দেশ্যে, কতক
হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের উদ্দেশ্যে এবং কতক শুধু হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে ইহরাম
ধাঁধল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম
বাঁধলেন। যারা উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিল, তারা
(উমরা সমাপনান্তে) ইহরাম খুলে ফেলল। আর যারা শুধু হাজ্জের (হজ্জ), আর যারা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের ইহরাম
বেঁধেছিল, তারা কুরবানী দিবসের পূর্ব
পর্যন্ত ইহরামমুক্ত হতে পারে নি।
২৭৮৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একমাত্র হাজ্জের (হজ্জ)
উদ্দেশ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে রওনা হলাম। আমরা সারিফ
নামক স্হানে বা এর কাছাকাছি পৌছলে আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে যায়। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হায়য হয়েছে? আমি বললাম, হ্যা।
তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এটা আদম
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি হাজ্জের
(হজ্জ) যাবতীয় অনুষ্ঠান পূর্ণ কর, শুধূ (হায়যকাল শেষ হওয়ার পর)
গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সহধর্মিনাগণের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেন।
২৭৯০। সুলায়মান ইবনু
উবায়দুল্লাহ আবূ আয়্যুব গায়লানী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কেবল হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে রওনা হলাম। আমরা যখন সারিফ
নামক স্হানে পৌছলাম, আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে
গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন
কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর
কসম! আমি যদি এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) করতে না আসতাম! তিনি বললেন, কি হয়েছে তোমার? সম্ভবত
তুমি ঋতুমতী হয়েছ? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা এটা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তুমি হাজ্জ (হজ্জ) পালনকারীগণ যা করে, তাই কর কিন্তু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত
বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করো না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
যখন মক্কায় পৌছলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের
বললেন, তোমরা উমরার জন্য ইহরাম
বাঁধ। যাদের সাথে হাদী বা কুরবানীর পশু ছিল, তারা
ব্যতীত সকলে উমরার ইহরাম বাঁধল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ), উমর
(রাঃ) ও অন্যান্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে কুরবানীর দিন পশু (হাদী) ছিলো, তারা ইতিপূর্বে যারা ইহরাম খুলে ফেলেছিল, মিনার দিকে) অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে পূনরায়
(হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল। তিনি বলেন, আমি
কুরবানীর দিন পবিত্র হলাম এবং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নির্দেশে তাওয়াফে ইফাযা করলাম। আমাদের জন্য গরুর গোশত পাঠান হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কি? তারা
বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সহধর্মিনীদের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছেন। যখন হাসবার রাত এল, আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! লোকেরা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পালন করে প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করে প্রত্যাবর্তন
করছি। রাবী বলেন, তিনি বলেন, তিনি আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে
নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী তিনি আমাকে তার উটের পিছিন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন।
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং
আমার মনে আছে যে, তন্দ্রাছন্ন হয়ে আমার মাথা
বারবার পালানের খুটির সাথে আঘাত খাছিল। এভাবে আমরা তানঈম পৌছলাম। সেখান থেকে আমি
আবার ইহরাম বাঁধলাম- যা লোকেরা ইতিপূর্বে আদায় করেছে।
২৭৯১। আবূ আয়্যুব গাসলানী
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) জন্য
ইহরাম বাঁধলাম। আমরা যখন সাবিফ নামক স্হানে পৌছলাম তখন আমি ঋতুমতী হলাম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন আমি তখন কাঁদছিলাম
অবশিষ্ট বর্ণনা (পুর্ববর্তী) মাজিশুনের হাদীসের অনুরুপ। তবে হাম্মাদের বর্ণনায়
নিন্নোক্ত কথার উল্লেখ নাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও অন্যন্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে
(হাদী) কুরবানীর পশু ছিল, তাঁরা অগ্রসর হওয়ার
প্রাক্কালে পূনরায় (হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। ” তার বর্ণনায় আয়িশা (রাঃ)-এর
নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ নাইঃ আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং আমার উত্তমরুপে মনে আছে যে, তন্দ্রাচন্ন অবস্হায় আমার মাথা বারংবার পালানের
খুঁটির সাথে টক্কর খাচ্ছিল। ”
২৭৯২। ইসমাঈল ইবনু আবূ
উওয়ায়েস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফরাদ হাজ্জ (হজ্জ) করেছিলেন।
২৭৯৩। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) মাসসমূহে, হাজ্জের (হজ্জ) সময় ও স্থানসমুহে (অথবা হাজ্জের
(হজ্জ) সময়কার বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে) এবং হাজ্জের (হজ্জ) রাতসমুহে ইহরাম বেঁধে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে রওনা হলাম। আমরা যখন সারিফ
নামক স্হানে যাত্রা বিরতি করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিকট উপস্হিত হয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নাই, সে যদি চায় তবে সে এই হাজ্জ (হজ্জ)কে উমরায়
পরিবর্তিত করে নিক। আর যার সাথে কুরবানীর পশু (হাদী) আছে, সে যেন এরুপ না করে। তাদের মাঝে কিছু সংখ্যক
এটা গ্রহণ করল এবং কিছু সংখ্যক- যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলঁ না, তারা উমরা করল না। কিন্তু রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর স্বচ্ছল সাহাবীদের সংগে কুরবানীর পশুছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করলেন এবং আমি তখন
কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম আমি আপনার সাহাবীদের উদ্দেশ্যে আপনার
কথাবার্তা শুনেছি যে, আপনি উমরা করার নির্দেশ
দিয়েছে। কিন্তু আমি তা করতে পারছি না। তিনি বললেন, কেন, তোমার কি হয়েছে? আমি
বললাম, আমি সালাত আদায় করতে পারছি
না। আমার ঋতু দেখা দিয়েছো তিনি বললেন, এতে
তোমার কোন ক্ষতি নেই, তুমি হাজ্জের (হজ্জ)
অনুষ্ঠানাদি পালন কর। আশা করি আল্লাহ তায়ালা তোমাকে উমরা পালনের সুযোগ দিবেন। তুমি
আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাদের জন্য যা নির্ধারণ
করেছেন, তোমার জন্যও তা নির্ধারণ
করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব আমি হাজ্জের (হজ্জ)
জন্য বের হলাম। অবশেষে মিনায় অবতরণ করলাম এবং পাক হয়ে গেলাম। এরুপর আমি
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুহাসসাবে অবতরণ করলেন এবং আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, তোমার বোনকে হারাম সীমার বাইরে নিয়ে যাও, সে (সেখানে গিয়ে) উমরার জন্য ইহরাম বাধবে এবং
বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ করবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আয়িশা (রাঃ)বললেন, আমরা রওনা হয়ে (তানঈম) গেলাম এবং (সেখানে)
ইহরাম বাঁধলাম, তারপর বায়তূল্লাহ তাওয়াফ
করলাম এবং সাফা-মারওইয়া সাঈ করলাম। অতঃপর আমরা মধ্যরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি স্বস্হানেই ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন, তুমি কি উমরা সম্পাদন করে
নিয়েছ? আমি বললাম, হ্যা। তিনি তাঁর সাহা বীদের রওনা হওয়ার জন্য
ঘোষণা দিলেন। তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌছলেন এবং ফজরের সালাতের পূর্বে তাঁর
তাওয়াফ করলেন, তারপর মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা
হলেন।
২৭৯৪। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব
(রহঃ) উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের কেউ ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ), কেউ কিরান হাজ্জের (হজ্জ) এবং কেউ তামাত্তু
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধল।
২৭৯৫। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা
(রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য এসেছিলেন।
২৭৯৬। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, যিলকদ
মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সঙ্গে রওনা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) পালন ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিল না। আমরা
মক্কার নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই নির্দেশ দিলেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে
সাঈ করার পর ইহরাম ভঙ্গ করবে। আযেশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর
দিন কেউ আমাদের জন্য গরুর গোশত নিয়ে এল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ কি? বলা হল, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন।
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীস কাসিম ইবনু
মুহাম্মাদের নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর
শপথ! তিনি (আমরাহ) তোমার নিকট হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন।
২৭৯৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) এই সনদেও পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৭৯৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও কাসিম (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে
আল্লাহর রাসুল! লোকেরা দুটি ইবাদতসহ (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা) প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি একটি মাত্র ইবাদতসহ (হাজ্জ (হজ্জ) ফিরে
যাচ্ছি। তিনি বলেন, অপেক্ষা কর। তুমি পাক হয়ে
যাওয়ার পর তানঈম চলে যাও এবং সেখানে ইহরাম বাঁধ, অতঃপর
অমুক অমুক সময় আমাদের সঙ্গে মিলিত হও। রাবী বলেন, আমার
মনে হয় তিনি ভোরবেলার কথা বলেছেন এবং তুমি তোমার পরিশ্রম অথবা খরচ অনুযায়ী (এই
উমরার সাওয়াব পাবে)।
২৭৯৯। ইবনু মূসান্না (রহঃ)
উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! লোকেরা
দুটি ইবাদতের সওয়াব নিয়ে ফিরে যাচ্ছে অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
২৮০০। যুহায়র ইবনু হারব ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, শুধুমাত্র হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যেই আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা (মক্কায়)
পৌছে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম। যারা কুরবানীর পশু (হাদী) সাথে আনে নাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদেরকে ইহরাম খোলার নির্দেশ দিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে আনে নাই, তারা ইহরাম ছেড়ে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনাগণ সাথে কুরবানীর পশু আনেন নাই। তাই তারাও ইহরাম
খূলে ফেললেন। আয়িশা (রাঃ) আরও বললেন, আমার
মাসিক দেখা দিল এবং বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করতে পারলাম না। হাসবায় অবস্হানের রাতে
আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ লোকেরা
হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা করে ফিরে যাচ্ছে, আর
আমি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করে ফিরছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা যে রাতে মক্কায় পৌছেছি, তখন তুমি কি বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ করনি? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তাহলে তুমি তোমার ভাইয়ের
সাথে তানঈম যাও এবং (সেখানে) উমরার ইহরাম বাধ। অতঃপর তুমি অমুক অমূক জায়গায়
(আমাদের সাথে) মিলিত হতে পারবে। উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, মনে হয় আমি আপনাদের আটকিয়ে রাখব। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুর
ভাগী, তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি
কুরবানীর দিন বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ করছ? বললেনঃ
হ্যা, করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে কোন অসুবিধা নেই, তুমি অগ্রসর হও। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার সাথে সাক্ষাত করলেন, তিনি মক্কার উচ্চভূমি দিয়ে
অগ্রসর হচ্ছিলেন। আর আমি তা অতিক্রম করে নিম্নভূমিতে নামছিলাম। অথবা তিনি উচচভূমি
অতিক্রম করে নিম্নভূমির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, আর
আমি নিম্নভূমি থেকে উচ্চভূমির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। ইসহাকের বর্ণনায় আছে, আয়িশা (রাঃ) এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ে নিম্নভূমি অতিক্রম করছিলেন।
২৮০১। সূয়ায়দ ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করতে করতে রওনা হলাম।
আমরা সুষ্টভাবে হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা কোনটিরই উল্লেখ করিনি। অবশিষ্ট বর্ণনা
পূর্বোক্ত মানসূর (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ।
২৮০২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও
ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যিলহাজ্জ মাসের ৪র্থ অথবা ৫ম দিনে (মক্কায়) এলেন। এরপর রাগান্বিত অবস্থায় আমার
কাছে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে আপনাকে
রাগান্বিত করল, আল্লাহ তাকে আগুনে নিক্ষেপ
করুন? তিনি বললেন, তুমি কি জান না আমি লোকদের একটি কাজের নির্দেশ
দিয়েছিলাম অথচ তারা ইতস্তত করছে? রাবী হাকাম বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, যেন তারা ইতস্তত করয়ে আমি যদি জানতাম, যে বিষয়ের আমি পরে সন্মুখীন হয়েছি, তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না; বরং পরে তা কিনে নিতাম এবং আমিও ইহরাম খুলে
ফেলতাম যেমন অন্যরা ইহরাম খুলেছে।
২৮০৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহাজ্জ মাসের চার অথবা পাচ তারিখে (মক্কায়)
পৌছলেন তিনি পূর্বোক্ত গুনদারের হাদীসের অনুরুপ। কিন্তু এই সনদে তিনি (রাবী)
হাকওমের উজিতে এ সন্দেহ, “ত্যরা ইতস্তত করেছে” উল্লেখ
করেননি।
২৮০৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
উমরার ইহরাম বাঁধলেন, এরপর (মক্কায়) পৌছলেন এবং
বায়তুল্লাহ তাওয়াফ না করতেই ঋতুমতী হলেন। এরপর তিনি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম ধাঁধলেন
এবং এর যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন (তাওয়াফ ব্যতীত)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মীনায় অগ্রসর হওসার দিন তাকে বললেন, তোমার
(একবারের) তাওয়াফই তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তিনি তাতে
তৃপ্ত হলেন না। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আবদুর
রহমানের সাথে তানঈম পাঠালেন। অতএব তিনি হাজ্জের (হজ্জ) পর (এখান থেকে) ইহরাম বেঁধে
উমরা করলেন।
২৮০৫। হাসান ইবনু আলী
হুলওয়ানী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
সারিফ নামক স্হানে ঋতূমতী হলেন এবং আরাফাত দিবসে পবিত্র হলেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার
সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যকার সাঈ তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য
যথেষ্ট।
২৮০৬। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
হারিসী (রহঃ) সাফিয়্যা বিনত শায়বা বলেন, আয়িশা
(রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুললাহ! লোকেরা দুটি
সওয়াবসহ প্রত্যাবর্তন করবে আর আমি কি মাত্র একটি সওয়াব নিয়ে ফিরে যাব? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদূর
রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন-
তাকে নিয়ে তানঈম যাওয়ার জন্য। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি
তার উটের পিঠে আমাকে তার পেছনে বসিয়ে রওনা হলেন। আমি আমার ওড়না উঠাচ্ছিলাম এবং তা
ঘাড় থেকে সরিয়ে রাখলাম। তিনি আমার পায়ে আঘাত করছিলেন- যেমন উটকে আঘাত করেন। আমি
তাকে বললাম, আপনি এখানে কাউকে দেখতে
পাচ্ছ কি? তিনি বলেন, আমি (তানঈম পৌছে) উমরার ইহরাম বাঁধলাম, অতঃপর (মক্কায়) ফিরে এসে (তাওয়াফ শেষে) হাসবা
নামক স্হানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মিলিত হলাম।
২৮০৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন আয়িশা (রাঃ)-কে
(বাহনে) তার পিছনে বসিয়ে তানঈম নিয়ে যাওয়ার জন্য যাতে তিনি তাকে (তানঈম থেকে) উমরা
করান।
২৮০৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (মক্কার দিকে) অগ্রসর হলাম
আর আয়িশা (রাঃ) উমরার ইহরাম বেঁধে আসলেন। আমরা যখন সারিফ নামক স্হানে পৌছিলাম, আয়িশা (রাঃ)-এর মাসিক ঋতু শুরু হল। অবশেষে আমরা
মক্কায় পৌছে কাবা ঘর তাওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করলাম।
আমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আমরা বললাম, কি প্রকারে ইহরাম খোলা হবে? তিনি বললেন, সম্পূর্ণরুপে
ইহরামমুক্ত হওয়া। ” অতএব আমরা স্ত্রী সহবাস করলাম, সূগন্ধি
ব্যবহার করলাম এবং সাধারণ পোশাক পরিধান করলাম। তখন আরাফাত দিবস ও আমাদের মাঝে আর মাত্র
চার দিনের ব্যবধান ছিল। অতঃপর তালবিয়া দিবসে (১০-ই যিলহাজ্জ) আমরা পূনরায় ইহরাম
বাঁধলাম। এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট
উপস্হিত হয়ে তাকে ক্রন্দনরত অবস্হায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আয়িশা
(রাঃ)বললেন, ব্যাপার এই যে, আমার হায়েয দেখা দিয়েছে। লোকেরা ইহরাম খুলেছে
কিন্তু আমি ইহরামমুক্ত হতে পারিনি এবং বায়তুল্লাহ এরও তাওয়াফ করতে পারিনি, আর এখন লোকেরা হাজ্জের (হজ্জ) উদ্দেশ্যে রওনা
হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা এমন একটি ব্যাপার যা আল্লাহ তাআলা আদম
(রাঃ)-এর কন্যা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি গোসল কর এবং
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। তিনি তাই করলেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) স্থানসমূহে অবস্হান
করলেন। অতঃপর তিনি পবিত্র হলেন, কাবা ঘর তাওয়াফ করলেন এবং
সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, এখন তোমার হাজ্জ (হজ্জ) ও
উমরা উভয়টই পূর্ণ হল। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার অবস্হা এই যে, হাজ্জ (হজ্জ) না করা পর্যন্ত
আমি (উমরার জন্য) বায়তুল্লাহ -এর তাওয়াফ করতে পারি নি, কিন্তু হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নিয়েছি। তিনি
বললেন, হে আবদুল রহমান!তাকে নিয়ে
চলে যাও এবং তানঈম থেকে তাকে উমরা করাও। এটা ছিল হাসবার রাতের ঘটনা।
২৮০৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা
(রাঃ)-এর কাছে উপস্হিত হলেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। হাদীসের
অবশিষ্ট অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ। অবশ্য উক্ত হাদীসের প্রথমাংশ
এই হাদীসে বর্ণনা করা হয় নি।
২৮১০। আবূ গাসসান মিসমাঈ
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) উপলক্ষে আয়িশা (রাঃ) উমরার ইহরাম বাঁধলেন অবশিষ্ট
অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায় আরও আছে- জাবির (রাঃ)
বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নমনীয় স্বভাবের। অতএব আয়িশা (রাঃ) যখনই কোন কিছু আবদার
ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন।
তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে আব্দুর রহমানের সাথে পাঠালেন এবং তিনি তানঈম থেকে উমরার ইহরাম
বাঁধলেন। (অধস্তন রাবী) মাতার (রহঃ) বলেন, আবূ
যুবায়র (রহঃ) বলেছেনঃ আয়িশা যখনই হাজ্জ (হজ্জ) করতেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যেভাবে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন, তদনূরুপ করতেন।
২৮১১। আহমদ ইবনু ইউনূস ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। আমাদের সাথে মহিলাগণ
এবং শিশুরু াও ছিল। আমরা মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম এবং
সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খূলে ফেলে। আমরা বললাম, কি ধরনের ইহরাম ভংগ করব? তিনি বললেন, পূর্ণরুপে
ইহরাম ভংগ কর। রাবী বলেন, অতএব আমরা আমাদের স্ত্রীদের
নিকট গমন করলাম, (সাধারণ) পোশাক পরলাম এবং
সূগন্ধি মাখলাম। তারবিয়ার দিন আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধলাম এবং পূর্বেকার
তাওয়াফ ও সাঈ আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রতিটি কুরবানীর গরু এবং উটে সাতজন করে শরীক হওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন।
২৮১২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা
ইহরামমুক্ত হওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (পূনরায়) ইহরাম
বাঁধার নির্দেশ দিলেন- যখন আমরা মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অতএব আমরা আল আবতাহ
নামক স্হান থেকে ইহরাম বাধলাম।
২৮১৩। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর
সাহাবীগণ একবার মাত্র সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু
আবূ বকর-এর বর্ণনায় আছে “তাঁর প্রথমবারের তাওয়াফ। ”
২৮১৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা
মুহাম্মাদ -এর সাহাবীগণ কেবল হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামই বাধলাম। রাবী আতা (রহঃ)
বলেছেনঃ জাবির (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম চার যিলহাজ্জের (হজ্জ) ভোরে (মক্কায়) পৌছে আমাদেরকে ইহরাম খোনার
নির্দেশ দিলেন। অধস্তন রাবী মাতারের বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা
ইহরামতে হও এবং স্ত্রীদের কাছে যাও। কিন্তু তার এ নির্দেশ বাধ্যতামূলক ছিল না, বরং তাদেরকে ন্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছিল
মাত্র। জাবির (রাঃ) বলেন, আরাফাত দিবসের আর পাচ দিন
মাত্র বাকী। অতএব আমরা এমন অবস্হায় আরাফাতে পৌছলাম যে, আমরা যেন এইমাত্র স্ত্রী সহবাস করেছি। আতা
(রহঃ) বলেন, জাবির (রহঃ) তার হাত নেড়ে
কথাগুলো বলছিলেন এবং আমি যেন তার হাতের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি। জাবির (রাঃ) বলেন, ইত্যবসরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা নিশ্চিত জান- আমি
তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি, তোমাদের
চেয়ে অধিক সত্যবাদী এবং পূণ্যবান। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি অবশ্যই
ইহরাম ভংগ করতাম যেমন তোমরা ভংগ করেছ। আমাকে কি করতে হবে তা আগে জানতে পারলে আমি
সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না, অতএব তোমরা হালাল হও (ইহরাম
ভংগ কর)। আতা (রহঃ) বলেছেন, জাবির (রাঃ)বলেনঃ অতএব আমরা
হালাল হলাম, তার কথা শুনলাম এবং তাঁর
আনুগত্য করলাম। জাবির (রাঃ) আরও বলেন, আলী
(রাঃ) (ইয়েমেনবাসীদের থেকে আদায়কৃত) খারাজ নিয়ে উপস্থিত হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কোন ধরনের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ধরনের ইহরাম বেঁধেছেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি
কুরবানী কর এবং ইহরাম অবস্হায় থাক। জাবির (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর জন্য কুরবানীর পশু এনেছিলেন। সুলাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশুম (রাঃ)
বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা কি
শুধু এই বছরের জন্য, না সব সময়ের জন্য? তিনি বললেন, সর্বকালের
জন্য।
২৮১৫। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম
বাধলাম। আমরা মক্কা শরীফ পৌছলে তিনি আমাদেরকে হালাল হওয়ার এবং এই ইহরামকে উমরার
ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন। আমাদের জন্য তাঁর এই নির্দেশ কঠোর মনে হল
এবং আমাদের মনোকষ্ট হল। এই খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
পৌছলে। আমাদের জানা নেই কি ওহীর মাধ্যমে এ খবর পেয়েছেন, না কেউ তাঁর কাছে এ কথা পৌছিয়েছে? তিনি বললেন, হে
জনগণ! তোমরা হালাল (ইহরামমুক্ত) হও। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমিও
তোমাদের অনুরুপ করতাম। জাবির (রাঃ) বলেন, অতএব
আমরা ইহরামমুক্ত হলাম, এমনকি স্ত্রী সংগত এবং
সাভাবিক অবস্হায় সাধারণত যা করা হয়, তাই
করলাম। অতঃপর তারবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আমরা মক্কা ত্যাগ করলাম (মিনা ও আরাফাতের
উদ্দেশ্যে) এবং হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম।
২৮১৬। ইবনু নূমায়র (রহঃ)
মূসা ইবনু নাফি, (রহঃ) বলেন, আমি উমরাসহ তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম
বেঁধে তারবিয়া দিবসের চারদিন পুর্বে (৪ যিলহাজ্জ) মক্কায় পৌছলাম। লোকেরা বলল, এখন তো আপনার হাজ্জ (হজ্জ) মক্কাবাসীদের অনুরুপ
হাজ্জ (হজ্জ) হয়ে যাবে। অতএব আমি আতা ইবনু আবী রাবাহ-এর নিকট উপস্হিত হয়ে তার কাছে
মাসআলা জিজ্ঞাসা করলাম। আতা (রহঃ) বললেন, জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন- যে
বছর তিনি সঙ্গে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন এবং তারা কেবল হাজ্জের (হজ্জ) (ইফরাদ
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেধেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমরা ইহরাম খুলে ফেল, বায়তুল্লাহ- এর তাওয়াফ কর, সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ কর, মাথার চুল ছাট এবং ইহরামমুক্ত অবস্হায় থাক। যখন
তারবিয়ার দিন আসবে তখন পূনরায় হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ এবং এটা তামাত্তু হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরামে পরিণত কর। তারা বললেন, কিভাবে
আমরা তা তামাত্তুতে পরিণত করব, অথচ আমরা হাজ্জের (হজ্জ)
ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বললেন, আমি তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি, তাই কর। কারণ আমি যদি সাথে করে কুরবানীর পশু না
আনতাম তবে তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি আমিও তদ্রুপ করতাম। কিন্তু হাদী যথাস্হানে
কুরবানী না করা পর্যন্ত আমার জন্য ইহরাম খোলার সূযোগ নেই। অতএব তারা তাঁর নির্দেশ
অনুযায়ী কাজ করলেন।
২৮১৭। মুহাম্মদ ইবনু মামার
ইবনু রিবঈ কায়সী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে (মক্কায়) পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার এবং (উমরা
পালনের পর) ইহরামমুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু থাকায় তিনি নিজের হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামকে উমরার ইহরামে
পরিবর্তন করতে পারেননি।
২৮১৮। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ নাযরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করার
নির্দেশ দিতেন এবং ইবনু যুবায়র (রাঃ) তামাত্তু বুজ্জ করতে নিষেধ করতেন। আমি বিষয়টি
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সামনে পেশ করলাম। তিনি বললেন, এ ঘটনাটি আমার সামনেই ঘটেছে। আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। উমর (রাঃ)
খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর বললেন, আল্লাহ তাআলা তার রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য যে জিনিস ইচ্ছা এবং যে কারণে ইচ্ছা, হালাল করেন এবং কুরআন নাযিল হওয়া সমাপ্ত হয়েছে।
অতএব তোমরা আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা সম্পাদন কর- যেভাবে তিনি
নির্দেশ দিয়েছেন এবং যে সব নারীকে তোমরা মুত-আর মাধ্যমে বিবাহ করেছ- তাদের সঠিক
বিবাহ বন্ধনে নিয়ে নাও। আমার নিকট
মুত-আর শর্তে বিবাহকারী কোন পুরুষ লোক এলে আমি অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে
হত্যা) করব।
২৮১৯। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) কাতাদা (রাঃ)-এর সূত্রেও উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই
বর্ণনায় আরও আছে, উমর (রাঃ) বলেন, “তোমাদের হাজ্জ (হজ্জ)কে উমরা থেকে পৃথক কর।
কারণ এতে তোমাদের হাজ্জ (হজ্জ)ও পূর্ণাঙ্গ হবে এবং উমরাও পূর্ণাঙ্গ হবে। ”
২৮২০। খালফ ইবনু হিশাম, আবূর-রবী ও কুতায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মক্কায়) পৌছলাম হাজ্জের (হজ্জ) জন্য তালবিয়া উচ্চারণ
করতে করতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইহরামকে উমরার
ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন।
২৮২১। আবূ বকর ইবনু শায়বা ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি সকলের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। অবশেষে আমার পরিচয় জানতে
চাইলেন। আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু আলী ইবনু
হুসায়ন। অতএব তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি আমার জামার
উপরদিকের বোতাম খুললেন তারপর নীচের বোতাম খুললেন। তারপর তার হাত আমার বুকের মাঝে
রাখলেন। আমি তখন ছিলাম যুবক। বললেন, হে
ভ্রাতা,পূত্র! তোমাকে সাগত জানাই, তুমি যা জানতে চাও, জিজ্ঞাসা কর। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি (বার্ধক্যজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি
হারিয়ে ফেলেন। ইতিমধ্যে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি নিজেকে একটি চাঁদর আবৃত করে
উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাঁদরের প্রান্ত নিজ কাঁধের উপর রাখতেন- তা (আকারে) ছোট
হওয়ার কারণে নীচে পড়ে যেত। তার আরেকটি বড় চাঁদর তার পাশেই আলনায় রাখা ছিলো। তিনি
আমাদের নিয়ে সালাতের ইমামতি করলেন। অতঃপর আমি বললাম- আপনি আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (বিদায়) হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে অবহিত করুন।
জাবির (রাঃ) স্বহস্তে নয় সংখ্যার প্রতি ইংগিত করে বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর (মদিনায়) অবস্হান করেন এবং এ সময়কালের মধ্যে হাজ্জ
(হজ্জ) করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ
বছর হাজ্জে (হজ্জ) যাবেন। এবং মদিনায় বহুলোকের আগমণ হল। তাদের প্রত্যেকে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতে এবং তার অনুরুপ আমল
করতে আগ্রহী ছিল। আমরা তাঁর সংগে রওনা হলাম। আমরা যখন যুল-হুলায়ফা নামক স্হানে
পৌছলাম- আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকরকে প্রসব করলেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন এখন আমি কি করব? তিনি বললেন, তুমি
গোসল কর, একখন্ড কাপড় দিয়ে পট্টি
বেঁধে নাও এবং ইহরামের পোশাক পরিধান কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মসজিদে (ইহরামের দু-রাকআত) সালাত আদায় করলেন। অতঃপর “কাসওয়া” নামক
উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অতঃপর বায়দা নামক স্হানে তাঁর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে
সোজা হয়ে দাঁড়াল আমি সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে
দেখলাম লোকে লোকারন্য কতক সওয়ারীতে, কতক
পদব্রজে অগ্রসর হচ্ছে। ডানদিকে, বাঁদিকে এবং পেছনেও একই
দৃশ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তার
উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনই এর আসল তাৎপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন, আমরাও তাই করতাম। তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত
এই তালবিয়া পাঠ করলেনঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা না শারীকা লাকা লাব্বাইকা, ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নি মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা শারীকা নাক। অর্থঃ আমি তোমার দরবারে হাযির
আছি হে আল্লাহ, আমি তোমার দরবারে হাযির, আমি তোমার দরবারে হাযির, তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমার দরবারে উপস্হিত। নিশ্চিত সমস্ত
প্রশংসা, নিআমত তোমারই এবং সমগ্র
রাজত্ব তোমার, তোমার কোন শরীক নেই। ”
লোকেরাও উপরোক্ত তালবিযা পাঠ করল- যা (আজকাল) পাঠ করা হয়। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে বেশি কিছু বলেন নাই! আর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন। জাবির (রাঃ)
বলেন, আমরা হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়া অন্য
কিছুর নিয়্যাত করিনি, আমরা উমরার কথা জানতাম না।
অবশেষে আমরা যখন তাঁর সংগে বায়তূল্লাহ শরীফে পৌছলাম তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ)
স্পর্শ করলেন, তারপর সাতবার কা’বা ঘর
তাওয়াফ করলেন- তিনবার দ্রুতগতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর তিনি মাকামে
ইবরাহীমে পৌছে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ অর্থ “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়াবার স্হানকে
সালাতের স্হানরুপে গ্রহণ কর”- (সূরা বাকারাঃ ১২৫)। তিনি মাকামে ইবরাহীমকে তাঁর ও
বায়তূল্লাহর মাঝখানে রেখে (দু-রাকঃআত সালাত আদায় করলেন)। (জাফর বলেন) আমার পিতা
(মুহাম্মদ) বলতেন, আমি যতদুর জানি, তিনি (জাবির) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি দু-রাক’আত সালাতে সূরা কুল হুআল্লাহু আহাদ- ও
কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন- পাঠ করেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমো খেলেন। তারপর
তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত
করলেনঃ অর্থঃ নিশ্চয়ই সাফা-মাঁরওইয়া আল্লাহর দুটি নিদর্শনসমূহের অন্যতঁম”- (সূরা
বাকারাঃ ১৫৮) এবং আরো বললেন আল্লাহ তা’আলা যে পাহাড়ের উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড় থেকে শুরু ু, করলেন এবং তারপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ শরীফ দেখতে পেলেন। তিনি কিবলামুখী
হলেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ন
ঘোষণা করলেন এবং বললেনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াহুদাহু লা শারীকা লাহুল -মুলকু ওয়া
হুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন
কাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহ ওয়া
হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু। অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর
কোন শরীক নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ
ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি
পূর্ণ করেছেন। ” তিনি এ দু’আ পড়লেন এবং তিনি অনুরুপ তিনবার বলেছেন। অতঃপর তিনি
নেমে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন- যাবত না তাঁর পা মুবারক উপত্যকার সমতল
ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন- যাবত না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়া
পাহাড়ে উঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা
তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। সর্বশেষ তাওয়াফে যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌছলেন, তখন (লোকদের সম্মোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আগেই
ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম, তাহলে আমি সাথে করে কুরবানীর
পশুও আনতাম না এবং (হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামকে উমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব তোমাদের
মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নাই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং
একে উমরায় পরিণত করে। এ সময় সূসাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশুম (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই ব্যবস্হা কি আমাদের এ
বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাতের আংগুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢূকালেন এবং দু-বার বললেন, উমরা হাজ্জের (হজ্জ) মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও
বললেনঃ না, বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য। এ সময় আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য কুরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা
ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাতিমা (রাঃ)-কে তাদের
অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীণ কাপড় পরিহিত ছিলেন এবং চোখে সূরমা
দিয়েছিলেন। আলী (রাঃ) তা অপছন্দ করলেন। ফাতিমা (রাঃ)বললেন, আমার পিতা আমাকে এরুপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাবী বলেন, আলী (রাঃ) ইরাকে থাকতেন, অতএব ফাড়িমা (রাঃ) যা করেছেন তার প্রতি
অন্তুষ্ট হয়ে আমি তাকে জানালাম যে আমি তার এ কাজ অপছন্দ করেছি। তিনি যা উল্লেখ
করেছেন, সে বিষয়ে জানার জন্য আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফাতিমা
সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। তুমি হাজ্জের
(হজ্জ) ইহরাম বাঁধার সময় কি বলেছিলে? আলী
(রাঃ) বললেন আমি বলেছি, ইয়া আল্লাহ! আমি ইহরাম
বাঁধলাম, যেরুপ ইহরাম বেঁধেছেন আপনার
রাসুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সঙ্গে হাদী
(কুরবানীর পশু) আছে অতএব তুমি ইহরাম খুলবে না। জাবির (রাঃ) বলেন, আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে যে পহুরপাল নিয়ে এসেছেন
এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সঙ্গে করে যে সব পশু নিয়ে এসেছিলেন, সর্বসাকুল্যে এর সংখ্যা দাঁড়াল একশত। অতএব নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল তারা ব্যতীত আর
সকলেই ইহরাম খুলে ফেললেন এবং চুল কাটলেন। তারপর যখন তারবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আসল, লোকেরা পুবরায় ইহরাম বাঁধল এবং মিনার দিকে রওনা
হঁল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাহনে সওয়ার হয়ে গেলেন
এবং সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা
ও ফজরের সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত সেখানে কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করলেন এবং নামিরা নামক স্থানে পিয়ে তার জন্য একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ
দিলেন এবং নিজেও রওনা হয়ে গেলেন। কুরায়শগণ নিসন্দেহ ছিল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাশ-আরুল
হারামের কাছে অবস্হান করবেন যেমন জাহিলী যুগে কুরায়শগণ করত। কিন্তু তিনি সামনে
অগ্রসর হলেন, তারপরে আরাফাতে পৌছলেন এবং
দেখতে পেলেন নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলেন। তারপর
যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তিনি তাঁর কাসওয়া (নামক
উষ্ঠী) -কে প্রস্তৃত করার নির্দেশ দিলেন। তার পিঠে হাওদা লাগান হল। তখন তিনি বাতনে
ওয়াদীতে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন! তিনি বললেনঃ “তোমাদের রক্ত ও
তোমাদের সস্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে। ” সাবধান!
জাহিলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহেলী যুগের রক্তের
দাবিও বাতিল হল। আমি সর্ব প্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হল আমাদের বংশের রবীআ ইবনু হারিসের পূত্রের
রক্তপণ। সে শিশু অবস্হায় বানূ সা’দ এ দুগ্ধপোষ্য ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে।
জাহেলী যুগের সুদও বাতিল হল। আমি প্রথমে যে সুদ বাতিল করছি তা হল আমাদের বংশের
আব্বাস ইবনু আবদূল মুত্তালিরের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল হল। ‘তোমরা স্ত্রীলোকদের
ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং
আল্লাহর কালেমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্হান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে
তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন
কোন লোককে স্হান না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরুপ করে তবে হালকাভাবে
প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সংগত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছেদের হুকুম
রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি- যা দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরে থাকলে
তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। ” “আমার সম্পর্কে তোমরা
জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কি বলবে?” তারা বলল, আমরা
সাক্ষ্য দিব যে, আপনি (আল্লাহর বানী)
পৌছিয়েছেন, আপনার হক আদায় করেছেন এবং
সদুপদেশ দিয়েছেন। তারপর তিনি তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের ইশারা করে বললেন, “ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক, তিনি তিনবার এরুপ বললেন। তারপর (মুয়াজ্জ্বীন)
আযান দিলেন ও ইকামত দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের
সালাত আদায় করলেন। এরপর ইকামত দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করলেন। তিনি এই দুই সালাতের মাঝখানে অন্য কোন সালাত
আদায় করেননি। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে মাওকিফ
(অবস্হানস্হল) -এলেন, তাঁর কাসওয়া উষ্ট্রীর পেট
পাথরের স্তূপের দিকে করে দিলেন এবং লোকদের একত্র হওয়ার জায়গা সামনে রেখে কিবলামুখী
হয়ে দাড়ালেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি এভাবে উকুফ করলেন। হলদে আভা কিছু দূরীভূত হঁল, এমনকি সূর্য গোলক সষ্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল।
উসামা (রাঃ)-কে তাঁর বাহনের পেছনদিকে বসালেন এবং কাসওয়ার নাকের দড়ি সজোরে টান
দিলেন- ফলে তার মাথা মাওরিক (সওয়ারী ক্লান্তি অবসা’দর জন্য যাতে পা রাখে) স্পর্শ
করল। তিনি ডান হাতের ইশারায় বলেন, হে জনমণ্ডলী! ধীরে সুস্হে, ধীরে সূস্হে অগ্রসর হও। যখনই তিনি বালূর
স্তূপের নিকট পৌছতেন, কাসওয়ার নাকের রশি কিছুটা
ঢিল দিতেন যাতে সে উপরদিকে উঠতে পারে। এ ভাবে মুযদালিফায় পৌছলেন এবং এখানে একই
আযানে ও দুই ইকামতে মাগরিব ও ইশার সালাম আদায় করলেন। এই সালাতের মাঝখানে অন্য কোন
নফল সালাত আদায় করেননি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুয়ে
পড়লেন যাবত না ফজরের ওয়াক্ত হল। অতঃপর ভোর হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইকামত সহ ফজরের
সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি কাসওয়ার পিঠে আরোহণ করে মোশ-আবূল হারাম- নামক স্হানে
আসলেন। এখানে তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন, তার মহাত্ব বর্ণনা করলেন, কালেমা তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা
করলেন। দিনের আলো যথেষ্ট উজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরুপ করতে থাকলেন।
সূর্য উদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওনা করছিলেন এবং ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) সওয়ারীতে
তাঁর পেছনে বসলেন। তিনি ছিলেন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অগ্রসর হলেন- পাশাপাশি একদল
মহিলাও যাচ্ছিলো। ফযল (রাঃ) তাদের দিকে তাকাতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত ফযলের চেহারার উপর রাখলেন এবং তিনি তার মুখ অন্যদিকে
ঘুরিয়ে দিলেন এবং ফযল (রাঃ) অপরদিক হতে দেখতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূনরায় অন্যদিক হতে ফযল (রাঃ)-এর মূখমন্ডলে হাত রাখলেন। তিনি
আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। “বাতনে মুহাসসাব- নামক স্হানে পৌছলেন এবং
সওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুত করলেন। তিনি মধ্যপথে অগ্রসর হলেন- যা জামরাতুল কুবরার
দিকে বেরিয়ে গেছে। তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং নীচের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে
এখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন এবং প্রত্যেকবার আল্লাহু আকবার- বললেন। অতঃপর
সেখানে থেকে কুরবানীর স্হানে এলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টী পশু যবেহ করলেন। তিনি
কুরবানীর পশুতে আলী (রাঃ)-কেও শরীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর গোশতের কিছু
অংশ নিয়ে একত্রে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। অতএব তাই করা হল। তারা উভয়ে এই গোশত
থেকে খেলেন এবং ঝোল পান করলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহর দিকে রওনা হলেন এবং মক্কায় পৌছে যোহরের সালাত আদায় করলেন।
অতএব বনু আবদিল মূত্তালিব-এর লোকদের কাছে আসলেন, তারা
লোকদের যমযমের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধরগণ!
পানি তোল। আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি
পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভুত করে দেবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তূলতাম। তখন
তারা তাঁকে এক বালতি পানি দিল এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন।
২৮২২। উমর ইবনু হাফস ইবনু
গিয়াস (রহঃ) জাফর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট এলাম
এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। হাদীসের অবিশেষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাতিম ইবনু ইসমাঈলের
বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায় আছেঃ আরও আবূ সাইয়ারা নামক এক ব্যাক্তি
(জাহেলীযুগে) লোকদেরকে জ্বীন বিহীন গাধার পিঠে করে (মুযদালিফা থেকে) নিয়ে যেত।
রাসুলূলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুযদালিফা থেকে আলমাশ-আবূল-হারাম-এর
দিকে অগ্রসর হলেন, তখন কুরায়শরা নিসন্দেহ ছিল
যে, তিনি এখানে থামবেন এবং অবস্হান করবেন। কিন্তু
তিনি আরও সামনে অগ্রসর হলেন এবং এদিকে কোন ভ্রক্ষেপ করলেননা অবশেষে তিনি আরাফাতে
পৌছে সেখানে অবতরণ করলেন।
২৮২৩। উমর ইবনু হাফস ইবনু
গিয়াস (রহঃ) জাবির (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তার
এই হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এখানে কুরবানী
করেছি এবং মিনার গোটা এলাকা কুরবানীর স্হান। অতএব তোমরা যার যার অবস্হানে কুরবানী
কর। আর আমি এখানে অবস্হান করছি এবং গোটা আরাফাতই অবস্হানস্হল (মাওকিফ)। মুযদালিফার
সবই অবস্হানস্হল এবং আমি এখানে অবস্হান করছি। ”
২৮২৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় এসে পৌছলেন প্রথমে হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে তাতে চুমু
খেলেন, অতঃপর তাওয়াফ করলেন।
২৮২৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরায়শগণ এবং তাদের ধর্মের
অনুসারীরা (জাহেলী যুগে) মুযদালিফায় অবস্হান করত। তারা নিজেদের নামকরণ করেছিল, “আল হুমস” আর সমস্ত আরববাসীরা আরাফাতে অবস্হান
করত। যখন ইসলামের আবির্ভাব হল, আল্লাহ তা-আলা তাঁর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আরাফাতে অবস্হান করার ও সেখানে থেকে
প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন! আল্লাহর বানীর তাৎপর্যও তাইঃ অত৪পর অন্যান্য লোক
যেখানে থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখানে থেকে
প্রত্যাবর্তন করবে” (সূরা বাকারাঃ ১৯৯)
২৮২৬। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
হিশাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি (উরওয়া) বলেন, আল হুমস ব্যতীত সকল আরব উলংগ অবস্হায়
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করত। কুরায়শ ও তাদের বংশধরগণকে “আল হুমস” বলা হতো। আরবরা
উলংগ অবস্হায়ই তাওয়াফ করত। কিন্তু আল হুমস তাদেরকে কাপড় দান করলে স্বতন্ত্র কথা।
তাদের পুরুষরা পূরুষদের এবং মহিলারা মহিলাদের কাপড় দান করত। আল হুমস মুযদালিফার
বাইরে যেত না, আর সব লোক আরাফাতে চলে যেত।
হিশাম বলেন, আমার পিতা (উরওয়া) আয়িশা
(রাঃ)-এর সুত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, আয়িশা
(রাঃ) বলেছেন, আল হুমস- যাদের সম্পর্কে আল্লাহ
তায়ালা এই আযাত নাযিল করেছেনঃ “অতঃপর অন্যান্য লোক যেখানে প্রত্যাবর্তন করে-
তোমরাও সেখানে থেকে প্রত্যাবর্তন করবে” – (সূরা বাকারাঃ ১৯৯)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা আরাফাত থেকে প্রত্যার্বতন করত আর আল
হুমস মুযদালিফা থেকে প্রত্যাবর্তন করত। তারা বলত, আমরা
কেবলমাত্র হারাম এলাকা থেকেই প্রত্যাবর্তন করব। অতঃপর যখন “তোমরা প্রত্যাবর্তন কর
যেখান থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করেআয়াত নাযিল হল তখন থেকে তারা আরাফাতে গেল।
২৮২৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) বলেন, আমার একটি উট হারিয়ে গেল। আরাফাত দিবসে আমি তার
খোঁজে বের হলাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লোকদের সাথে
আরাফাতে অবস্হানরত দেখলাম। আমি বললাম, আল্লাহর
শপথ! ইনি তো হুমস -এর অন্তর্ভুক্ত, কি
ব্যাপার ইনি এখানে কেন? অথচ কুরায়শদেরকে হুমস-এর
মধ্যে গণ্য করা হতো।
২৮২৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম। তিনি বাতহা নামক স্হানে
উট বসিয়ে যাত্রা বিরতি করছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি
কি হাজ্জের (হজ্জ) নিয়্যত করেছ? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, তুমি কি ধরনের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি
বলেছি- লাব্বাইকা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও
তদ্রুপ ইহরাম বাঁধলাম। তিনি বললেনঃ তুমি ভালই করেছ। এছুন বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ কর
এবং সাফা-মারওয়ার সাঈ কর, অতঃপর ইহরাম খুলে ফেল। তিনি
বলেনঃ আমি বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলাম, সাফা-মারওয়ার
সাঈ করলাম, অতঃপর কায়স গোত্রের এক
স্ত্রীলোকের নিকট এলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের (হজ্জ)
ইহরাম বাঁধলাম। আমি লোকদের এভাবেই ফতওয়া দিতে থাকলাম উমর (রাঃ)-এর খিলাফত পর্যন্ত।
এ সময় এক ব্যাক্তি তাকে বলল, হে আবূ মূসা অথবা (বলল)
আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আপনার কিছু ফতওয়া আপাতত স্হগিত রাখুন। কারণ আমীরুল মুমিনীন
(উমর) আপনার পরে হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে যে নতূন বিধান প্রবর্তন করেছেন, তা আপনি জ্ঞাত নন। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি যাদের ফতওয়া দিয়েছি (ইহরাম
খোলা সম্পর্কে) তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ আমীরুল মূমিনীন অচিরেই তোমাদের নিকট
আসছেন, অতএব তার আনুগত্য করা
তোমাদের কর্তব্য। রাবী বলেন, উমর (রাঃ) এলেন এবং আমি তাঁর
সামনে বিষয়টি উপস্হাপন করলাম। তিনি বললেন, আমরা
যদি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী চলি, তবে তা আমাদের নির্দেশ দেয়
(হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা) পুর্ণ করার। আমরা যদিঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের উপর আমল করি, তবে
কুরবানীর পশু তার (কুরবানীর) স্হানে না পৌছা পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম খুলেননি। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) শুবা থেকে এই
সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৮২৯। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম। তিনি বাতহা নামক স্হানে
উট বসিয়ে অবস্হান করছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন:তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুরুপ ইহরাম বেঁধেছি! তিনি পুনরায়
জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তাহলে তুমি বায়তুল্লাহ-এর
তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেল। অতএব আমি বায়তুল্লাহ-এর
তাওয়াফ ও সাফা-মারুওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম খূলে ফেললাম। এপর আমার গোত্রের এক
মহিলার নিকট এলাম, সে আমার মাথার চুল আচড়িয়ে
দিল এবং আমার মাথা ধুয়ে দিল। আমি আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে লোকদের
অনুরুপ ফতওয়া দিতাম। হাজ্জের (হজ্জ) মৌসূম আগত, এ
সময় এক ব্যাক্তি আমার নিকট এসে বলল, আপনি
হয়ত জানেন না আমীরুল মুমিনীন (উমর) হাজ্জের (হজ্জ) ব্যাপারে কি নতূন বিধান
প্রবর্তন করেছেন। আমি বললাম, হে জনগণ! আমি যাদেরকে কতগুলো
বিষয় সম্পর্কে যে ফতওয়া দিয়েছি তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ, ইতিমধ্যেই আমীরুল মুমিনীন তোমাদের মধ্যে এসে
পৌছবেন। তোমরা তার অনুসরণ করবে। তিনি (উমর) এসে পৌছলে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি হাজ্জের (হজ্জ)
ব্যাপারে নতুন কি বিধান দিয়েছি? তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাব আকড়ে ধরি, তবে আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে
হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পূর্ণ কর”- (সূরা বাকারাঃ ১৯৬)। আর আমর! যদি আমাদের নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাতের অনুসরণ করি, তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাথে করে নিয়ে আসা পশু যবেহ না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতেন না।
২৮৩০। ইসহাক ইবনু মানসূর ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে ইয়েমেনে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি যে বছর হাজ্জ (হজ্জ) করেছিলেন, আমি সে বছর (হাজ্জে (হজ্জ) এসে তাঁর সংগে মিলিত
হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ মূসা! ইহরাম বাঁধার সময় তুমি কি নিয়্যত
করেছিলে? আমি বললাম, লাব্বাইকা! আমার ইহরাম নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহরামের অনুরুপ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি সাথে করে
কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে যাও, বায়তুল্লাহর-এর তাওয়াফ কর, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ কর, অতঃপর ইহরাম খূলে ফেল। তিনি হাদীসের অবশিষ্ট
বর্ণনা পূর্বোক্ত শু’বা ও সূফয়ানের হাদীস দুটির অনুরুপ।
২৮৩১। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি তামাত্তু হাজ্জের
(হজ্জ) অনুকুলে ফতওয়া দিতেন। এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, আপনি
আপনার কোন কোন ফতওয়া স্হগিত রাখুন। আপনি হযত জানেন না, আপনার পরে আমীরুল মুমিনীন হাজ্জের (হজ্জ)
ব্যাপারে কি বিধান প্রবর্তন করেছেন। পরে তিনি (আবূ মূসা)তার সাথে সাক্ষাত করলেন
এবং (এ ব্যাপারে) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। উমর (রাঃ)বললেন, আমি অবশ্যই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ (তামাত্তু) করেছেন। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করি না
যে, বিবাহিত লোকেরা গাছের ছায়ায় স্ত্রীদের সাথে
সহবাস করবে, অতঃপর এমন অবস্হায় হাজ্জের
(হজ্জ) জন্য রওনা হবে যে, তাদের মাথার চুল দিয়ে পানি
টপকে পড়ছে।
২৮৩২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক (রহঃ) বলেছেন, উসমান (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করতে নিষেধ
করতেন। আন আলী (রাঃ) তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করার নির্দেশ দিতেন। অতএব উসমান (রাঃ)
আলী (রাঃ)-এর সঙ্গে কথা বললেন। অতঃপর আলী (রাঃ)বললেন, আপনি অবশ্যই জানেন, আমরা নিশ্চিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। উসমান (রাঃ) বললেন, হ্যা; কিন্তু
আমরা তখন আতঙ্কিত ছিলাম।
২৮৩৩। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল
হারিসী (রহঃ) শু’বা (রহঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৮৩৪। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আলী (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)
উসফান” নামক স্হানে একত্রে হলেন। উসমান (রাঃ) তামাত্তু ও উমরা করতে নিষেধ করতেন।
আলী (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজ করেছেন, আপনি তা নিষেধ করছেন- এতে
আপনার উদ্দেশ্যে কি? উসমান (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে আপনার কথা থেকে রেহাই দিন। আলী
(রাঃ) বললেন, আমি আপনাকে ছাড়তে পারি না।
আলী (রাঃ) যখন এই অবস্হা দেখলেন, তিনি একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও
উমরা উভয়ের ইহরাম বাঁধলেন।
২৮৩৫। সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ
যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) মুহাম্মাদ-এর
সাহাবীদের জন্যই বিশেষভাবে খাছ ছিল।
২৮৩৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তামাত্তু
বুজ্জ আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা হিসেবে অনুমোদিত ছিল।
২৮৩৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ যর (রাঃ) বলেন, দুটি মুত’আ কেবল আমাদের
যুগের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। অর্থৎ মুত’আ বিবাহ ও তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ)।
২৮৩৮। কুতায়বা (রহঃ) আব্দুর
রহমান ইবনু আবূ শ্বাসা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবরাহীম নাসঈ ও ইবরাহীম আততায়মীর নিকট এলাম
এবং বললাম, আমি এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) ও
উমরা একত্রে করতে চাই। ইববাহীম নাখঈ বললেন, কিন্তু
তোমার পিতা তো এরুপ সংকল্প করেননি। কুতায়বা (রহঃ) ইবরাহীম তায়মী তার পিতার সুত্রে
বর্ণনা করেন যে, তিনি (পিতা) রাবযা নামক
স্হানে আবূ যর (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন
তিনি তার সামনে এই প্রসংগ উপস্হাপন করলেন। আবূ যর (রাঃ)বললেন, তা আমাদের জন্য (একটা সুবিধা স্বরুপ) নিদিষ্ট ছিল, তোমাদের
জন্য নয়।
২৮৩৯। সাঈদ ইবনু মানসূর ও
ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সুলায়ম ইবনু কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিসা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে তামাত্তু
হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমরা
উমরা আদায় করেছি। এটা সেই সময়কার কথা যখন তিনি (আমীর মুআবিয়া) কাফির ছিলেন এবং
মক্কার বাড়িতে বসবাস করতেন।
২৮৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সুলায়মান তায়মী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। তিনি এই রিওয়ায়াতে
মুআবিয়া (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেছেন।
২৮৪১। আমরুন-নাকিদ ও
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) সুলায়মান তায়যী (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে উভয়ের
হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে এবং সুফয়ানের হাদীসে তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) উল্লেখ
রয়েছে।
২৮৪২। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) মূতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান
ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি আজ তোমাকে একটি হাদীস
বলব, পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা এরদ্বারা তোমাকে
উপকৃত করবেন। জেনে রাখ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে যিলহাজ্জ মাসের দশ তারিখের মধ্যে
উমরা করিয়েছিলেন। এটা রহিত করে কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরে লোকেরা নিজ
নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মত পোষণ করে।
২৮৪৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আল জুরায়রী (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে
হাতিম তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, এক ব্যাক্তি অর্থাৎ উমর
(রাঃ) নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী মত পোষণ করেন।
২৮৪৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান
ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদীস
শুনাব। আশা করি আল্লাহ তোমাকে এরদ্বারা উপকৃত করবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে আদায় করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ন
পর্যন্ত এরুপ করতে নিষেধ করেননি এবং তা হারাম বলে কুরআনের কোন আয়াতও নাযিল হয়নি।
(রোগের কারণে) তপ্ত লোহার দাগ গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত আমাকে (ফিরিশতাগণ কর্তৃক)
সালাম দেওয়া অব্যাহত ছিল। আমি দাগ গ্রহণ করলে সালাম দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন
দাগ দেওয়া বন্ধ করলাম, পূনরাযু সালাম দেওয়া শুরু
হয়।
২৮৪৫। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন পরবর্তী
অংশ উপরোক্ত মু’আয বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
২৮৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)মৃত্যুকালীন রোগে আমাকে
ডেকে পাঠান। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কয়েকটি হাদীস
বলব, আশা করি আল্লাহ তা-আলা আমার পরে তোমাকে
এরদ্বারা উপকৃত করবেন। আমি বেচে থাকলে তুমি আমার সুত্রে বর্ণনা করা গোপন রাখবে।
আর আমি মারা গেলে তুমি চাইলে তা বর্ণনা করতে পার। আমাকে সালাম করা হতো। জ্ঞানে
রাখ, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে আদায় করেছেন। অতঃপর এ বিষয়ে কোন আয়াতও নাযিল হয়নি এবং
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা নিষিদ্ধ করেননি। এক ব্যাক্তি (উমর) এ
বিষয়ে যা ইচ্ছা করলেন, তা বললেন।
২৮৪৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জেনে রাখ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা একত্রে (একই ইহরামে) আদায়
করেছেন। এরপর এ বিষয় কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও অনুরুপ করতে আমাদের নিষেধ করেননি। এরপর এক ব্যাক্তি এ বিষয়ে নিজ
ইচ্ছামত যা বলার, তা বললেন।
২৮৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। এ বিষয়ে কুরআনে কোন আয়াত নাযিল
হয়নি। এক ব্যাক্তি ইচ্ছামত যা বলার তাই বললেন।
২৮৪৯। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির
(রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু
হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেছেন এবং আমরাও তার সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি।
২৮৫০। হামিদ ইবনু উমর আল
বাকরাবী ও মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাবে মুতআ অর্থাৎ
তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ)
সম্পর্কিত আয়াত রহিতকারী কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-ও ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরবর্তীকালে এক
ব্যাক্তি নিজ ইচ্ছামত যা বলার তাই বলেছেন।
২৮৫১। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, “আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এ হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। ” তিনি এরুপ বলেননি- “রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ”
২৮৫২। আব্দুল মালিক ইবনু শু’আয়ব
ইবনু লায়স (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, বিদায়
হাজ্জে (হজ্জ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু করেছেন, প্রথমে উমরা ও পরে হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন এবং পশু? কুরবানী করেছেন। যুল-হুলায়ফা থেকে সাথে করে
কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন। এখানে থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রথমে উমরার, অতঃপর হাজ্জের (হজ্জ)
তালবিয়া পাঠ শুরু করেন। লোকেরাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
অনুসরণে হাজ্জের (হজ্জ) সাথে উমরাতে করে তামাত্তু করেছে। কতক লোকের কুরবানীর পশু
ছিল এবং তারা তা সাথে নিয়েছিল, আর কতকের কুরবানীর পশু
ছিলনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা শরীফে উপনীত হয়ে লোকদের
উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে, হাজ্জ (হজ্জ) শেষ না করা পর্যন্ত তাদের জন্য
(সাময়িকভাবে) নিষিদ্ধ কোন জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে
কুরবানীর পশু নাই- তারা যেন বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে
মাথার চুল খাটো করার পর ইহরাম খুলে ফেলে। অতঃপর তারা (৮ যিলহাজ্জ) পূনরায় হাজ্জের
(হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং (নিদিষ্ট দিনে) কুরনানী করবে। কোন ব্যাক্তি কুরবানীর
পশুনা পেলে হাজ্জ (হজ্জ) চলাকালীন সময়ে তিন দিন এবং বাড়িতে ফেরার পর সাত দিন সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কায় পৌছে প্রথমে রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করলেন- তিন চক্কর
সামান্য দ্রুতগড়িতে এবং চার চক্কর ধীরগতিতে। বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ সমাপ্ত করে
মাকামে ইবরাহীমের নিকট দু-রাকআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ
করলেন। অতঃপর তিনি সাফা পাহাড়ে এলেন এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সাঈ
করলেন। এরপর তিনি কোন জিনিস হালাল করেননি- যা হারাম হয়েছিল (ইহরামের কারণে অর্থাৎ
তিনি ইহরামমুক্ত হননি) যে পর্যন্ত না হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করেন এবং কুরবানীর দিন
নিজের পশু কুরবানী না করেন এবং কাবাঘর-এর তাওয়াফ আদায় করেছেন। তারপর যে সব জিনিস
হারাম ছিল, তা তার জন্য হালাল হয়ে গেল (অর্থাৎ
তিনি ইহরাম খুললেন) আর যেসব লোক সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছিল, তারাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর অনুরুপ করেছিল।
২৮৫৩। আবদূল মালিক ইবনু
শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) পালন এবং তাঁর সাথের লোকদের তামাত্তু হাজ্জ
(হজ্জ) সম্পাদন সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
২৮৫৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর স্ত্রী হাফসা (রাঃ)বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কি ব্যাপার
লোকেরা ইহরামমুক্ত হল অথচ আপনি উমরা করার করও ইহরাম খুলেননি? তিনি বললেন, আমি
আমার মাথার চুল জমিয়েছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি। অতএব আমি কুরবানী না
করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারি না।
২৮৫৫। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
হাফসা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কি ব্যাপার আপনি ইহরাম খুলেন
নি? উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
২৮৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! কি ব্যাপার লোকেরা ইহরাম খূলেছে অথচ আপনি উমরা করার পরও ইহরাম
খুলেননি? বললেন, আমি কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি এবং মাথার
চুল জমিয়েছি। অতএব হাজ্জের (হজ্জ) যাবতীয় অনুষ্ঠান শেষ না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম
খুলতে পারব না।
২৮৫৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হাফসা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ-
কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারি না।
২৮৫৮। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাফসা
(রাঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিন তাঁর স্ত্রীদের (উমরা সমাপনের পর)
নির্দেশ দিলেন তারা যেন ইহরাম খূলেন। হাফসা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনাকে
ইহরাম খুলতে কিসে বাধা দিচ্ছে? তিনি বললেন, আমি মাথার চুল আঠালো করেছি এবং সাথে কুরবানীর
পশু এনেছি। অতএব কেউ কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম খুলতে পারি না।
২৮৫৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হাংগামা [হাজ্জাজ ইবনু
ইউসুফ ও আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)]-এর মধ্যকার সংঘাত চলাকালীন সময়ে উমরা করার
উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি বলেন, বায়তূল্লাহ পৌছতে আমরা যদি
বাধাপ্রাপ্ত হই তবে (অনুরুপ পরিস্থিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যেরুপ করেছিলাম, এখন
তদ্রুপ করব। অতএব তিনি রওনা হলেন এবং উমরার ইহরাম বাঁধলেন, তিনি সফর অব্যাহত রাখলেন; যতক্ষন না আর বায়দা নামক স্হানে পৌছলেন। এখানে
তিনি নিজের সংগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, হাজ্জ
(হজ্জ) ও উমরা উভয়ের নিয়ম একই। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি যে, আমি নিজের জন্য জ্জেকে উমরার সাথে বাধ্যতামূক
করলাম। (রাবী বলেন) অতএব তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌছলেন, সাতবার তাওয়াফ করলেন এবং সাফ-মারওয়ার মাঝে
সাতবার সাঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং
নিজের (হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার) জন্য এটাই (এক তাওয়াফ ও এক সাঈ) যথেষ্ট বিবেচনা
করলেন এবং কুরবানী করলেন।
২৮৬০। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালিম ইবনু
আবদুল্লাহ উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর সাথে কথা বললেন- যে বছর হাজ্জাজ ইবনু
ইউসূফ আবদুল্লাহ ইবনু মুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল। তারা উভয়ে
বললেন, এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) না করলে
আপনার কি ক্ষতি আছে? কারন আমাদের আশংকা হচ্ছে-
গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আপনি বায়তূল্লাহ পর্যন্ত পৌছতে পারবেন না। আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ)বললেন, যদি তা আমার ও বায়তুল্লাহ এর
মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়ও তবে (অনুরুপ পরিস্হিতিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন, আমিও তদ্রুপ করব। কুরায়শ কাফিররা
যখন তাঁর ও বায়তুল্লাহ মাঝে প্রতিবন্ধক হয়েছিল, এ
সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি উমরার নিয়্যত করলাম। অতঃপর রওনা হয়ে
যুল-হুলায়ফা নামক স্হানে পৌছে উমরার জন্য তালবিয়া পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, যদি আমার পথ উন্মুক্ত থাকে, তবে আমি উমরা পূর্ণ করব। আর যদি আমার ও
বায়তূল্লাহ-এর মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে
(অনুরুপ পরিস্হিতিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন আমিও
তাই করব। সে সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন:“তোমাদের জন্য
আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ” (সুরা আহযাবঃ ২১)। তিনি আবার চলতে
লাগলেন, যতক্ষন না বায়দা নামক
স্হানের উপকণ্ঠে পৌছলেন। এখানে পৌছে তিনি বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার বিধান একইা
যদি আমার এবং উমরার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে
আমার এবং হাজ্জের (হজ্জ) মাঝেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি
যে, আমি আমার উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)কেও
বাধ্যতামূলক করে নিলাম। অতঃপর তিনি অগ্রসর হলেন এবং কুদায়দ নামক স্থানে পৌছে
কুরবানীর পশু ক্রয় করলেন। অতঃপর হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের জন্য এক তাওয়াফ (সাত
চক্কর) ও এক সাঈ (সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার দৌড়) করলেন এবং ইহরাম খুললেন না, বরং হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করে কুরবানীর দিন উভয়ের
ইহরাম খুললেন।
২৮৬১। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
নাফি, (রহঃ) থেকে বর্ণিত। হাজ্জাজ
যে বছর ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হল ঐ বছর ইবনু উমর (রাঃ) হাজ্জের
(হজ্জ) সংকল্প করলেন। অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। এই সুত্রে
হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে যে, তিনি বলতেন, যে ব্যাক্তি হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার জন্য একত্রে
ইহরাম বাঁধল, তার জন্য এক তাওয়াফই (সাত
চক্কর) যথেষ্ট এবং উভয়ের অনুষ্ঠান সমাপ্ত না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলবে না।
২৮৬২। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও
কুতায়বা (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফ যে বছর ইবনু যুবায়র
(রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল সেই বছর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) হাজ্জে
(হজ্জ) যাওয়ার সংকল্প করলেন। তাকে বলা হল, লোকদের
মধ্যে এখন যুদ্ধাবস্হা বিরাজ করছে এবং আমাদের আশংকা হচ্ছে- তারা আপনাকে বাধা দিবে।
তিনি বললেন, তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ (সূরা আহযাব ২১)।
এইরুপ পরিস্হিতিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন, আমিও অনুরুপ করব। আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে
নিশ্চয়ই আমি উমরার সংকল্প করেছি। অতঃপর তিনি রওনা হলেন। অবশেষে যখন আলবায়দার
উপকণ্ঠে পৌছলেন তখন তিনি বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার অবস্হা
একই, তোমরা সাক্ষী থাক। ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে আমি
তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি নিশ্চয়ই আমার উমরার সাথে
হাজ্জ (হজ্জ) অনিবার্য করে নিলাম। অতঃপর তিনি কুরবানীর পশু সংগে নিলেন যা তিনি
কুদায়দ নামক স্হানে ক্রয় করেছিলেন। অতঃপর তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার একত্রে ইহরাম
বেধে অগ্রসর হলেন। অবশেষে মক্কায় পৌছে তিনি বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার
মাঝে সাঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করলেন না।
তিনি কুরবানীও করেননি। মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটেননি এবং (ইহরামের কারণে) যা কিছু
তার জন্য হারাম হয়েছিল তার কোনটি হালাল করেননি। অবশেষে কুরবানীর দিন এলে তিনি
কুরবানী করলেন ও মাথা কামালেন এবং তার মত অনুযায়ী তিনি তার প্রথম তাওয়াফ দ্বারাই
হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তাওয়াফ সস্পাদন করে ফেলেছেন। ইবনু উমর (রাঃ)বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এরূপ করেছেন।
২৮৬৩। আবূর-রবী যাহরানী, আবূ কামিল ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) নাফি, সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের
অনুরুপ ঘটনা বর্ণনা করেন। তবে এ সুত্রে হাদীসের প্রথমাংশে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উল্লেখ করেছেন যখন তাকে বলা হল, আপনি বায়তুল্লাহ এ পৌছতে বাধাগ্রস্ত হবেন। তখন
তিনি বললেন, তাহলে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরুপ করেছেন, আমিও
তদ্রুপ করব। তিনি হাদীসের শেষে উল্লেখ করেননি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করেছেন- যেমন লায়স (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে।
২৮৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব
ও আবদুল্লাহ ইবনু আঊন হিলালী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইয়াহইয়ার
রিওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। ইবনু আঊন-এর রিওয়ায়াতে
আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফরাদ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন।
২৮৬৫। সূরায়জ ইবনু ইউনূস
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তালবিয়া পাঠ
করতে শুনেছি। (অধঃস্তন রাবী) বকর বলেন, আমি
এই হাদীস ইবনু উমর (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করেছেন। অতঃপর আমি (বকর) আনাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত
করে তার কাছে ইবনু উমর (রাঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করি। তখন আনাস (রাঃ)বললেন, তোমরা আমাদেরকেও শিশুই মনে কর। আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার তালবিয়া
পাঠ করতে শুনেছি।
২৮৬৬। উমায়্যা ইবনু বিসতাম
আয়শী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একত্রে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা আদায় করতে
দেখেছেন। রাবী বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমরা শুধু হাজ্জের (হজ্জ)
ইহরাম বেঁধেছি। আমি (বকর) পুনরায় আনাস (রাঃ)-এর নিকট ফিরে আসি এবং ইবনু উমর (রাঃ)
যা বলেছেন, সে সম্পর্কে তাকে অবহিত
করলাম। আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা বুঝি তখন শিশু।
২৮৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ওয়াবারা (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট
বসা দ্গিাম। তখন এক ব্যাক্তি তার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, আলমাওকিফ (আরাফাত)-এ যাওয়ার পূর্বে বায়তুল্লাহ
তাওয়াফ করা আমার জন্য সঠিক হরে কি? তিনি
বললেন, হ্যা। সে বলল, কিন্তু ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তুমি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ কর না যে পর্যন্ত না
মাওকিফে আস! ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন এবং মাওকিফে যাওয়ার পূর্বেই
বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে বল, তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কথামত আমল করা উচিত, না
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কথা মত?
২৮৬৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ওয়াবারা (রহঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর
(রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি বায়তূল্লাহর তাওয়াফ
করব অথচ আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছি? তিনি
বললেন, কিসে তোমাকে বাঁধা দিচ্ছে? সে বলল, আমি
অমুকের পূত্রকে দেখেছে, তিনি তা পছন্দ করেন না
কিন্তু তার তূলনায় আপনি আমাদের অধিক প্রিয়। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এই দুনিয়া তাকে প্রলূব্ধ করেছে। ইবনু উমর
(রাঃ)বললেন, তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন
কে আছে যাকে দুনিয়া প্রলূব্ধ করেনি? অতঃপর
তিনি বললেন, আমরা দেখেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ
করেছেন। অতএব তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর হুকুম ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সূন্নাত অমুকের সুন্নাতের ভুলনায় অনুসরণের বেলায় অগ্রগণ্য।
২৮৬৯। যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ)
আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট এক লোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, যে উমরা করার উদ্দেশ্যে আগমণ করেছে, অতঃপর বায়লাহ তাওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ার
মাঝে সাঈ করেনি- সে কি তার স্ত্রীর সাথে মিলতে পারে? ইবনু
উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করে সাতবার বায়তূল্লাহ তাওয়াফ করেন, মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দুরাকআত সালাত আদায়
করেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সাঈ করেন। আর তোমাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
২৮৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
২৮৭১। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
(রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইরাকের ব অধিবাসী এক ব্যাক্তি তাকে বলল, আমার পক্ষ থেকে আপনি উরওয়া ইবনু যুবায়র
(রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করুন যে, এক ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ)
ইহরাম বাঁধল, সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের পর
ইহরাম খুলতে পারবে কিনা? তিনি যদি আপনাকে বলেন, সে ইহরাম খুলতে পারবে না তবে তাকে বলুন এক
ব্যাক্তি বলেছে, সে ইহরাম খুলতে পারবে। রাবী
বলেন, অতএব আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে
বলেন, যে ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছে, সে তা সমাধান না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারবে
না। আমি বললাম, কিন্তু এক ব্যাক্তি তাই
বলেছে। তিনি বললেন, সে যা বলছে তা দুঃখজনক।
ইরাকের লোকটি আমার সাথে পূনরায় সাক্ষাত করলে আমি তাকে উপরোক্ত কথা বললাম। সে বলল, আপনি তাকে বলব, কিন্তু
এক ব্যাক্তি বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করেছেন এবং আসমা (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ) অনুরুপ করেছেন কেন? রাবী বলেন, আমি
তার নিকট গিয়ে এই বিষয় তাকে জানাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটি কে? আমি
বললাম, জানি না। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে যে, সে
নিজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছে না? আমার
মনে হয়, সে ইরাকী। আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা শরীফে পৌছে সর্ব প্রথম যে কাজ করেছেন তা ছিল এই যে, তিনি উযু করেন, এরপর
বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ করেছেন, অতঃপর আবূ বকবু (রাঃ) হাজ্জ
(হজ্জ) করেছেন। তিনি (মক্কায় পৌছে) সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করেছেন। এবং
এরপর উমর (রাঃ)-ও অনুরুপ করেছেন। অতঃপর উসমান (রাঃ)হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন। আমি তাকে
সর্বপ্রথম বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ করতে দেখেছি এবং এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর
মুআবিয়া (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) -ও (অনুরুপ করেছেন)। এরপর আমি আমার পিতা
যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ)-এ সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। তিনিও সর্বপ্রথম
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করেছেন। এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর আমি মুহাজির ও
আনসারদের অনুরুপ করতে দেখেছি। এছাড়া তারা অন্য কিছু করেননি। অতঃপর সর্বশেষে আমি
যাকে অনুরুপ করতে দেখেছি, তিনি হাজ্জে (হজ্জ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)। তিনি হাজ্জ (হজ্জ)কে উমরা দ্বারা ভংগ করেননি। আর সেই
ইবনু উমর (রাঃ) তোমাদের মধ্যে বর্তমান আছে। তারা কেন তাকে জিজ্ঞাসা করছে না? এভাবে যত লোক অতীত হয়েছে, তারা মক্কা শরীফে পা রেখেই সর্বপ্রথম
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করতেন। তিনি অতঃপর তারা ইহরাম খুলতেন না। আর আমি, আমার মা আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) ও আমার খালা
আয়িশা (রাঃ)-কেও দেখেছি যে, তারা মক্কায় পৌছে প্রথমেই
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করেছেন। এরপর ইহরাম খুলেননি। আমার মা (আসমা) আমাকে অবহিত
করেছেন যে, তিনি তার বোন (আয়িশা), যুবায়র (রাঃ) এবং অমুক অমুক শুধুমাত্র উমরার
ইহরাম বেধে মক্কায় এসেছেন এবং তারা (তাওয়াফ ও সাঈর পরে) রুকন (হাজারে আসওয়াদ)
চুম্বন করার পর ইহরাম খুলেছেন। এই ব্যাক্তি (ইরাকী) এ ব্যাপারে যা বলেছে, মিথ্যা বলেছেন।
২৮৭২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার
সাথে কুরবানীর পশু? রয়েছে, সে যেন ইহরাম অবস্হায় থাকে। আর যার সাথে
কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খূলে ফেলে।
আমার সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তাই আমি ইহরাম খুলে ফেললাম।
কিন্তু (আমার সামী) যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তাই তিনি ইহরাম খুলেননি। রাবী বলেন, আমি আমার স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে বের হয়ে
গিয়ে যূবায়র (রাঃ)-এর পাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার
নিকট থেকে উঠে যাও। আমি বললাম, তুমি কি আকাঙ্খা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়ব?
২৮৭৩। আব্বাস ইবনু আবদুল
আযীম আরারী (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে
(মক্কায়) পৌছলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা ইবনু জুরায়জের হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায়
আছে, “যুবায়র (রাঃ)বললেন, “তুমি আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাও, দুরে সরে যাও। ”আমি (আসমা) বললাম, তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাপিয়ে পড়ব?”
২৮৭৪। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। আসমা
(রাঃ) যখনই আল হাজুন (হারাম শরীফের সীমার মধ্যে মক্কার উচ্চভূমিতে একটি পাহাড়)
অতিক্রম করতেন, তখনই তিনি তাকে বলতে শুনতেন, সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহী (আল্লাহ তা’আলা তার
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুগ্রহ করুন)। আমরা তার সংগে এখানে
অবতরণ করেছিলাম, আমাদের বোঝা ছিল কম, বাহনের সংখ্যা অত্যল্প এবং রসদও ছিল সামান্য।
আমি, আমার বোন আয়িশা (রাঃ), মুবায়র (বা) এবং আরও অমুক অমুক উমরা পালন
করেছিলাম। আমরা যখনই বায়তূল্লাহ স্পর্শ করলাম, তখনই
ইহরাম খূলে ফেললাম। এরপর তিনি তৃতিয় প্রহরে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম। অধস্তন
রাবী হারুন তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, “আসমা (রাঃ)-এর মুক্ত দাস-
তিনি “আবদুল্লাহ- নাম উল্লেখ করেননি।
২৮৭৫। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) মুসলিম কুররী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি
তার অনুমতি দিলেন কিন্তু ইবনু যুবায়র তা নিষেধ করতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, এই তো ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মা, তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এটা করার অনুমতি দিয়েছেন। তোমরা তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা কর। রাবী বলেন, আমরা তার কাছে গেলাম, তিনি ছিলেন স্থুলদেহী এবং তার দৃষ্টিশক্তি লোপ
পেয়েছিল। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু হাজ্জের (হজ্জ) অনুমতি দিয়েছেন।
২৮৭৬। ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে এই সুত্রে বর্ণিত হয়েছে। অধস্তন রাবী আব্দুর
রহমানের বর্ণনায় আল মুতআ উল্লেখ আছে মুত-আতল-হাজ্জ (হজ্জ)- নয় এবং ইবনু জাফর
(রহঃ)-এর বর্ণনায় শুবা (রহঃ) বলেন, মুসলিম
কুররী (রহঃ) বলেছেন, তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) না
মুতআ বিবাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা আমি জানি না।
২৮৭৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) মুসলিম কুররী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি উমরার ইহরাম বাধলেন এবং তাঁর সাহাবীগণ
হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাধলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর
সাহাবীদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু এনেছে, তারা
হহরাম খুলেন না অন্যরা (তাওয়ায ও শাঈর পর)ইহরাম মুক্ত হয়ে গেলেন। যারা সাথে
কুরবানীর পশু এনেছিলেন, তালহা (রাঃ) তাদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অতএব তিনিও ইহরাম খুলেননি।
২৮৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। ত্যব তার বর্ণনায়
হাদীসের শেষাংশ এইরুপ যাদের সাথে কুরবানার পশু ছিল না, তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এবং আরও এক
ব্যাক্তি তাদের অন্তভুক্ত ছিলেন। অতএব তারা উভয়ে ইহরাম খুলে ফেলেন।
২৮৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জাহেলী যুগে লোকেরা হাজ্জের (হজ্জ)
মাসসমূহে উমরা পালন করাকে পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধ মনে করত এবং মুহাররম
মাসকে সফর- মাস হুসাবে গণনা করত। তারা বলত, যখন
উটের পিঠ ভালো হয়ে যাবে, হাজীদের পদচিহ্ন লূপ্ত হয়ে
যারে এবং সফর মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন
যে ব্যাক্তি উমরা করতে চায়, তার জন্য তা করা জায়েয হবে।
নাবীটিও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে যিলহাজ্জের (হজ্জ) চার তারিখে
মক্কায় পৌছলে তিনি তাদের হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ
দেন। কিন্তু এই নির্দেশ তাদের কাছে শুরু ুতর কাজ বলে মনে হল। অতএব তারা বললেনঃ হে আল্লাহর
রাসুল! কি রুপে ইহরামমুক্ত হব? তিনি বললেন, সম্পূর্ণ রুপে ইহরাম তে হবে।
২৮৮০। নাসর ইবনু আলী জাহযামী
(রহঃ) আবূল আলিয়া আল বাররাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম
বাঁধলেন। তিনি যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখের পর (মক্কা) পৌছলেন এবং ফজরের সালাত আদায়
করলেন। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি এই ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিণত করতে
চায়, সে তা করতে পারে।
২৮৮১। ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার, আবূ দাঊদ মূবারকী ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
(রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
রাওহ ও ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ)-এর বর্ণনায় নাসর (রহঃ)-এর অনুরুপ কথা আছে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলেন। আবূ
শিহাব (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে “আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে রওনা হলাম। ” তাদের সকলের বর্ণনায় আছেঃ
রাসুলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলবাতহা নামক স্হানে ফজরের সালাত আদায়
করলেন। কিন্তু আল জাহযামী (রহঃ)-এর বর্ননায় এ কথার উল্লেখ নাই।
২৮৮২। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে
(যিলহাজ্জ মাসের প্রথম) দশ দিনের চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মক্কায় উপনীত হব। তিনি
তাদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন এই ইহরামকে উমরার
ইহরামে পরিণত করে।
২৮৮৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তূওয়া নামক স্থানে ফজরের সালাত আদায় করলেন।
যিলহাজ্জ মাসের চার দিন অতিক্রান্ত হইয়ার পর (মক্কায়) পৌছলেন এবং তাঁর সাহাবীদের
নির্দেশ দিলেন, তারা যেন নিজেদের ইহরামকে
উমরায় পরিণত করে কিন্তু যার সাথে কুরবানীর পশু আছে, সে
ব্যতীত।
২৮৮৪। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ
ইবনু মূআয (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ এই সেই উঁমরা যা থেকে আমরা ফায়দা উঠিয়েছি। অতএব যার সাথে কুরবানীর পশু নেই
সে যেন সম্পূর্ণরুপে ইহরাম খুলে ফেলে। কেননা উমরাকে কিয়ামত পর্যন্ত হাজ্জের (হজ্জ)
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২৮৮৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ যামরা যুবাঈ (রহঃ) বলেন, আমি তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করলাম। কতিপয় লোক
আমাকে তা করতে নিষেধ করল। আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্হিত হয়ে তাকে এ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা করার নির্দেশ দিলেন। এরপর আমি বায়তূল্লাহ
শরীফে আসলাম এবং ঘূমালাম। স্বপ্নে আমার কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, উমরাও কফা হয়েছে এবং হাজ্জ (হজ্জ)ও কবুল হয়েছে।
আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে এ স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু
আকবার! এতো আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত।
২৮৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যুলহুলায়ফা নামক স্হানে যোহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর নিজের (কুরবানীর) উষ্ট্রী
নিয়ে আসতে বললেন এবং কুজের ডান দিক দিয়ে ফেঁড়ে দিলেন। ফলে রক্ত প্রবাহিত হল। অতঃপর
উষ্ট্রী এর গলায় দুটি পাদুকার মালা পরিয়ে দিলেন। এরপর নিজের বাহনে আরোহণ করলেন।
তারপর তা যখন তাঁকে নিয়ে আল বায়দায় পৌছলেন, তখন
তিনি হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ করলেন।
২৮৮৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে এই সূত্রে শুবা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে। অবশ্য তিনি এখানে বলেছেনঃ যখন যুল-হুলায়ফা এলেন”- তবে “যোহরের সালাত আদায়
করেছেন” এ কথা উল্লেখ করেননি।
২৮৮৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হাসসান আরাজ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল হুযায়ম গোত্রের এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস
(রাঃ)-কে বলল, আপনি এ কি ফাতওয়া দিচ্ছেন যা
নিয়ে লোকেরা জটিলতায় পড়েছে? (তা এই) যে ব্যাক্তি
বায়তুল্লাহ-এর তাওয়াফ করবে, সে ইহরামমুক্ত হতে পারবে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ)বললেন, এটা তোমাদের নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূন্নাত, তা
তোমাদের মনপূত হোক বা না হোক।
২৮৮৯। আহমদ ইবনু সাঈদ দারিমী
(রহঃ) আবূ হাসসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু
আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল, এই ব্যাপারটি লোকদের মধ্যে
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, যে ব্যাক্তি বায়তুল্লাহ–এর
তাওয়াফ করে, সে হালাল হয়ে যায় এবং তার
ইহরাম উমরায় পরিণত হয় (যদিও হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম হয়ে থাকে)। ইবনু আব্বাস
(রাঃ)বললেন, এটা তোমাদের নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সূন্নাত যদিও তোমাদের নাক ধূলা মলিন হয়।
২৮৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আতা (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, যে ব্যাক্তি (মক্কায় পৌছে) বায়তুল্লাহ এর
তাওয়াফ কবুল, সে ইহরাম মুক্ত হয়ে গেল- চাই
সে হাজ্জ (হজ্জ) পালনকারী হোক অথবা অন্য কিছু (উমরা) পালনকারী। আমি ইবনু জুরায়জ)
আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কিসের ভিত্তিতে একথা
বলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কালামের ভিত্তিতেঃ অতঃপর এগুলোর
কুরবানীর স্হান মর্যাদাবান ঘরের নিকট” (সূরা হাজ্জ (হজ্জ)–৩৩)। আমি বললাম, তা তো আরাফাত থেকে ফিরার পর। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, (কুরবানীর স্হান সম্মানিত ঘরের নিকট) তা আরাফাতে
উকুফের পর হোক অথবা পূর্বে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কার্যক্রম থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং
বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়ে ইহরাম খোলার নির্দেশ দেন।
২৮৯১। আমরুন-নাকিদ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, মু-আবিয়া (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান আমি কাঁচি দিয়ে মারওয়া পাহাড়ের
নিকট রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার চুল ছেঁটে দিয়েছি? আমি তাঁকে বললাম, এটা
আপনার বিরুদ্ধে দলীল।
২৮৯২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফয়ান (রাঃ) তাকে অবহিত
করে বলেছেন, আমি মারওয়া পাহাড়ে একটি
কাচির সাহায্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার চুল ছেঁটে
দিয়েছি। অথবা আমি (অধস্তন রাবীর সন্দেহ) মারওয়া পাহাড়ের উপর কাচির সাহায্যে তার
মাথার চুল ছাঁটতে দেখেছি।
২৮৯৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরি (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ
করতে করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা
মক্কায় পৌছলে তিনি আমাদের তা উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে
আমরা হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম।
২৮৯৪। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির
(রহঃ) জাবির (রাঃ) ওআবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা উচ্চস্বরে হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া পাঠ
করতে করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মক্কায় উপনীত হলাম।
২৮৯৫। হামিদ ইবনু উমর
বাকরাবী (রহঃ) আবূ নাদরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর নিকট
উপস্হিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যাক্তি তার নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, (তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) ও মুতআ বিবাহ) সম্পর্কে
ইবনু আব্বাস ও ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে মতবিরোধ চলছে। জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর যুগে তা করেছি। এরপর উমর (রাঃ) আমাদের তা করতে নিষেধ করেন। অতএব
আমরা আর কখনও তা করিনি।
২৮৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ইয়েমেন থেকে আগমণ
করলেন বী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন:তুমি কিসের ইহরাম
বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
অনুরুপ উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি (উমরা
করার পর) ইহরাম খুলে ফেলতাম।
২৮৯৭। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির ও
আবদুল্লাহ ইববন হাশিম (রহঃ) সালীম ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত
হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৮৯৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এভাবে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের
তালবিয়া পাঠ করতে শুনেছিঃ ”লাব্বাইকা উমরারাতান ও হাজ্জ (হজ্জ)ান, লাব্বাইকা উমরাতান ওয়া হাজ্জ (হজ্জ)ান। ”
২৮৯৯। আলী ইবনু হুজর (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আমি উমরা ও হাজ্জ
(হজ্জ) উভয়ের ইহরাম বাঁধছি।
২৯০০। সাঈদ ইবনু মানসুর, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, সেই
সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়ম পূত্র ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চিত
রাওহা উপত্যকায় হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা অথবা উভযের তালবিয়া পাঠ করবেন।
২৯০১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে
মুহাম্মদ -এর প্রাণ। ”
২৯০২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেই
সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
২৯০৩। হাদ্দাব ইবনু খালিদ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার
উমরা করেছেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) সাথের উমরা ব্যতীত সকল উমরাই যুল-কাদায় করেন। (১)
হুদায়বিয়া থেকে বা হুদায়বিয়ার সময়ের উমরা যুল-কাদা মাসে, (২) পরবর্তী বছরের উমরা যুল-কাদা মাসে, (৩) জিরানা থেকে কৃত উমরা, যেখানে হুনায়নের গনীমতের সম্পদ বণ্টন করা হয়েছে, সে উমরা যুল-কা-দা মাসে এবং (৪) আর একটি উমরা
যা হাজ্জের (হজ্জ) সাথে করেন।
২৯০৪। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি
আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন? তিনি
বললেন, একবার এবং উমরা করেছেন
চারবার। অবশিষ্ট বর্ণনা হাদ্দাবের হাদীসের অনুরুপ।
২৯০৫। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে থেকে কয়বার যূদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, সতেরবার।
রাবী বলেন, সায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) আমাকে
আরও বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশবার যুদ্ধ করেছেন এবং তিনি হিজরত করার পর একবার হাজ্জ
(হজ্জ) করেছেন, তা হল বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)।
আবূ ইসহাক আরও বলেন, তিনি মক্কা থেকেও একবার
হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন।
২৯০৬। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি
ও ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) -এর ঘরে ঠেস দিয়ে বসেছিলাম এবং আমরা মিসওয়াক দিয়ে
তার দাঁত মাজার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। রাবী বলেন, আমি
বললাম, হে আবূ আবদুর রহমান ইবনু
উমর)! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি রজব মাসে উমরা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা।
আমি (উরওয়া) বললাম, হে আম্মা, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আবূ আব্দুর রহমান কি
বলছেন? তিনি বললেনঃ সে কি বলছে? আমি বললাম, তিনি
বলছেন, নাবীরজব মাসে উমরা করেছেন।
তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আবূ আবদুল
রহমানকে ক্ষমা করুন। আমার জীবনের শপথ, তিনি
রজব মাসে কখনও উমরা করেননি। আর তিনি যখনই উমরা করেছেন, অবশ্যই আবূ আবদুর রহমান তাঁর সঙ্গে ছিল। রাবী
বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) কথাগুলো
শুনছিলেন, কিন্তু তিনি হ্যা-ও বলেননি
এবং না ও বলেননি, বরং নীরব ছিলেন।
২৯০৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ও উরওয়া ইবনু যুবায়র মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশার
হুজরায় বসা ছিলেন এবং লোকেরা মসজিদে চাশতের সালাত আদায় করছিল। আমরা এদের সালাত
সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তা
বিদআত। তাকে উরওয়া বললেন, হে আবূ আব্দুর রহমান!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার উমরা করেছেন? তিনি বললেনঃ চারটি উমরা, এর একটি রজব মাসে। আমরা তার কথা অসত্য মনে করা
ও তা রদ করা অপছন্দ করলাম। আমরা হুজরা থেকে আয়িশা (রাঃ)-এর মিসওয়াক করার শব্দ
শুনতে পেলাম। উরওয়া বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ
আব্দুর রহমান কি বলেছেন তাকি আপনি শুনছেন না? তিনি
জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি বলে? উরওয়া বললেন, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম চারবার উমরা করেছেন, এর একটি ছিল রজব মাসে। আয়িশা
(রাঃ) বললেন, আল্লাহ তাআলা আবূ আবদুর
রহমানকে রহম করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই উমরা করেছেন, সে তার সাথেই ছিল। তিনি কখনও রজব মাসে উমরা
করেননি।
২৯০৮। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ইবনু মায়মূন (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি
এক আনসাবী মহিলাকে বললেন যার নাম ইবনু আব্বাস (রাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি
তার নাম ভুলে গেছি- আমাদের সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমাকে কিসে বাঁধা দিল? মহিলা বলল, আমাদের
পানি বহনকারী মাত্র দুটি উট আছে। আমার ছেলের বাপ (স্বামী) ও তার ছেলে এর একটিতে
চড়ে হাজ্জ (হজ্জ) করেন এবং অপরটি আমাদের জন্য রেখে যান পানি বহনের উদ্দেশ্যে। তিনি
বললেন, রমযান মাস এলে তুমি উমরা কর।
কারণ এ মাসের উমরা একটা হজ্জের সমান।
২৯০৯। আহমাদ ইবনু আবদা যাববী
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু
সিনান নাম্লী এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমাকে
কিসে বাধা দিল? মহিলা বলল, অমুকের পিতা- তার স্বামীর দুটি পানি বছরকারী উট
আছে। এর একটি নিয়ে সে ও তার ছেলে হজ্জে গিয়েছে। অপরটির সাহায্যে আমাদের গোলাম
পানি বহন কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে রমযান মাসের উমরা-হজ্জের সমান কিংবা তিনি
বলেছেন, আমাদের সঙ্গে একটি হজ্জের
সমান।
২৯১০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
শাজারাঁর পথ দিয়ে (মদিনা থেকে) বের হতেন এবং মুআররাশ-এর পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ
করতেন। তিনি মক্কায় প্রবেশকালে উচ্চ গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং নিম্ন পথ দিয়ে
বের হতেন।
২৯১১। যুহায়র ইবনু হারব ও
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু রাবী বলেন, যুহায়রের রিওয়ায়াতে রয়েছে
বাতহার দিকের উচ্চপথ।
২৯১২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় পৌছলেন, তখন উচ্চ এলাকা দিয়ে প্রবেশ
করলেন এবং নীচু এলাকা দিয়ে বের হলেন।
২৯১৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা
বিজয়ের বছর মক্কার উচ্চ ভূমিতে অবস্হিত “কাদা- টিলা দিয়ে প্রবেশ করেন। হিশাম বলেন, আমার পিতা উভয় স্হান দিয়েই প্রবেশ করতেন, তবে অধিকাংশ সময় “কাদা” টিলা দিয়ে প্রবেশ
করতেন।
২৯১৪। যূহায়র ইবনু হারব ও
উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যি-তূওয়া নামক স্হানে ভোর পর্যন্ত রাত্রি যাপন
করলেন, অতঃপর মক্কায় প্রবেশ করলেন।
নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ)-ও তাই
করতেন। ইবনু সাঈদের বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে ফজরের সালাত আদায় করলেন। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, অথবা (উবায়দুল্লাহ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে
সকাল পর্যন্ত অবস্হান করলেন।
২৯১৫। আবূর-রবী যাহরানী
(রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ) যি-তূওয়ায় ভোর পর্যন্ত রাত যাপন না
করে মক্কায় উপনীত হতেন না। তিনি (সেখানে) গোসল করতেন, তারপর দিনের বেলায় মক্কায় প্রবেশ করতেন এবং
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাই করতেন বলে তিনি বলেছেন।
২৯১৬। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক
মূসায়্যাবী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করলে প্রথমে যি-তুওয়ায় অবতরণ করতেন, সেখানে রাত যাপন করতেন এরপর ফজরের সালাত আদায়
করতেন (তারপর মক্কা শহরে প্রবেশ করতেন)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর এই সালাতের স্হান ছিলো একটি অসমতল টিলার উপর, সেখানে নির্মিত মসজিদে নয়, বরং নিম্নদিকে অবস্হিত টিলায়।
২৯১৭। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক
মূসায়্যাবী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) তার কাছে বর্ণনাকরেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার ও কাবার পাহাড়ের মাঝে অবস্হিত দুই উপত্যকার দিকে মুখ করে দাড়ালেন। টিলার
পার্শে নির্মিত মসজিদ তাঁর বাঁ দিকে থাকত। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের স্হান এই কালো টিলার পাদদেশে দশ হাত বা তার চেয়ে সামান্য
কমবেশি দুরত্বে অবস্হিত ছিল। তিনি দুই টিলার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করলেন যা
তাঁর ও কাবার পার্শবর্তি বড় পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। তাঁর উপর আল্লাহর রহমত ও
শান্তি বর্ষিত হোক।
২৯১৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বায়তূল্লাহ শরীফ প্রথমবারের তাওয়াফে তিন চরুর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর
সাভাবিক পদক্ষেপে তাওয়াফ করতেন। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈর সময় (বাতনূল মাসীল)
মাসীল উপত্যকার মধ্যবর্তী স্হানে দৌড়াতেন। ইবনু উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।
২৯১৯। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রথমে মক্কায় পৌছে হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার জন্য বায়তূল্লাহর যে তাওয়াফ করতেন, তাতে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর
স্বাভাবিক পদক্ষেপে সম্পন্ন করতেন। তাপর দু-রাকাআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর
সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করতেন।
২৯২০। আবূত-তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি
দেখেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে যখন হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতেন, তখন তিনি সাত চক্করের মধ্যে তিন চক্কর দ্রুত
পদক্ষেপে সমাধা করতেন।
২৯২১। আবদুল্লাহ ইবনু উমর
ইবনু আবান আল জুফী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং
চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করেছেন।
২৯২২। আবূ কামিল জাহদারী
(রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাজারে
আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপে তাওয়াফ করেছেন এবং উল্লেখ
করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করেছেন।
২৯২৩। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ থেকে দ্রুত পদক্ষেপে তিন চক্কর
কেটেছেন এবং হাজারে আসওয়াদে পৌছে শেষ করেছেন।
২৯২৪। আবূত-তাহির (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত পদক্ষেপে হাজারে আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ
পর্যন্ত তিন তাওয়াফ সম্পন্ন করেছেন।
২৯২৫। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু
হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) আবূত-তূফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলাম, বায়তুল্লাহ চারদিক তিনবার দ্রুত গতিতে এবং
চারবার স্বাভাবিক গতিতে প্রদক্ষিণ করা কি আপনি সূন্নাত মনে করেন? আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা তা সুন্নাত মনে করে।
তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও
বলেছে। রাবী বলেন, আমি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলাম-
“তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য বলেছে” – আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কি? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমণ করলে মুশরিকরা বলল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
তাঁর সাহাবীরা শারীরিক দুর্বলতার কারণে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে সক্ষম হবে না। তারা
তাঁর প্রতি হিংসা পোষণ করত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার
সাহাবীগণকে দ্রুত পদক্ষেপে তিনবার এবং স্বাভাবিক গতিতে চারবার (বায়তুল্লাহ)
প্রদক্ষিণ করার নির্দেশ দেন। আমি তাঁকে (পুনরায়) বললাম, আপনি আমাকে সাফা- মারওয়ার মাঝে সওয়ার অবস্হায়
প্রদক্ষিণ সম্পর্কে অবহিত করুন, তা কি সুন্নাত? কারণ আপনার সফাদায়ের লোকেরা মনে করে তা
সূন্নাত। বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য
বলেছে। আমি তাকে বললাম, “তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও
বলেছে”- আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কি? তিনি
বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলেন। তাঁর আশেপাশে প্ররে লোক সমাগম হলো। এমনকি যুবতী
মেয়েরা পর্যন্ত (তাঁকে একটু দেখার জন্য) ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। লোকেরা বলাবলি করছিলঃ
মুহাম্মাদ, ইনি মুহাম্মাদ। রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে থেকে লোকদের হটিয়ে দেওয়া হতোনা। তাঁর
আশেপাশে প্রচুর লোক সমাগম হওয়ার কারণে তিনি (উষ্ট্রীতে) আরোহণ করেন, অথচ স্বাভাবিক গতিতে পদব্রজে যাওয়া ও সাঈ করা
উত্তম।
২৯২৬। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) জুয়াঁয়রী (রহঃ) সূত্রে অত্র সনদে অনুরুপ বর্ণিত। তিনি বলেন, “তারা মক্কাবাসী হিংসুক সম্প্রদায়।” তবে তিনি
‘ইয়াহ সুদুনাহু’ বলেননি।
২৯২৭। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আবূত-তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, আপনার সম্প্রদায় বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বায়তুল্লাহর তাওয়াফে ও সাফা-মারওয়ার সাঈ রামাল করেছেন, আর এটা সূন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং এবং অসত্য বলেছে।
২৯২৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূত-তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বললাম, আমি যেন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখছি। তিনি বললেন, আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ কর। তিনি বললেন, আমি তাকে মারওয়ার নিকট একটি উষ্ট্রীর পিঠে আরহন
দেখেছি। তাঁর চারপাশে লোকের ভীড় ছিল। ইবনু আব্বাস (রাঃ)বললেন, হ্যা, তিনই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কারণ সাহাবাদের তাড়িয়ে দেয়া হতো না
এবং তাদের ধমকও দেয়া হতোনা।
২৯২৯। আবূর-রবী যাহরানী
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ মক্কায় আগমণ করলেন! ইয়াসরিবের
জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিল। মুশরিকরা বলল, আগামীকাল
তোমাদের এখানে একদল লোক আসবে- যাদেরকে জ্বরে দুর্বল করে দিয়েছে এবং তারা তাতে
ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। মুশরিকরা হাতীম-এ বসে থাকল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম – তাঁর সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা
যেন তিন চক্কর দ্রুতপদে এবং হাজারে আসত্তয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে স্বাভাবিক
গতিতে চলে-যাতে মুশরিকদেরকে তাদের বীরত্ব দেখানো যায়। মুশরিকরা বলল, তোমরা তো এদের সম্পর্কে ধারণা করেছিলে যে, জ্বর তাদেরকে দূর্বল করে দিয়েছে অথচ তারা এমন
শক্তিশালী। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দয়া পরবশ হয়ে তাদেরকে সাত চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে
করতে নির্দেশ দেননি (যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে না যায়)।
২৯৩০। আমরুন-নাকিদ, ইবনু আবূ উমর ও আহমদ ইবনু আবদাহ (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপে বায়তূল্লাহ-এর তাওয়াফ
করেছেন-যাতে তিনি মুশরিকগণকে স্বীয় শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন।
২৯৩১। ইয়াহইয়া ইবনুুইয়া হইয়া
ও কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে দুই ইয়ামানী রুকন ব্যতীত বায়তূল্লাহর অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি।
২৯৩২। আবূত-তাহির ও হারামালা
(রহঃ) সালিম (রহঃ) তার পিতার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রুকনে আসওয়াদ (হাজারে আসওয়াদ সংযুক্ত কোণ) এবং তৎসংলগ্ন দিকের কোণ যা জুমাহী
গোত্রের বসতির দিকে অবস্হিত, ব্যতীত বায়তুল্লাহর আর কোন
রুকন স্পর্শ করতেন না।
২৯৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর) (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজারে অষূসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কিছু স্পর্শ করতেন না।
২৯৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না জুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এই দুই রুকন অর্থাৎ
ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কোণ স্পর্শ করা পরিত্যাগ করিনি- যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তা স্পর্শ করতে দেখেছি। তা কষ্টকর বা
সুবিধাজনক যে কোন অবস্হায় হোক না কেন।
২৯৩৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ স্বহস্তে
স্পর্শ করে তাতে চুমূ খেতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে দিন তা করতে দেখেছি- তখন থেকে আমি তা কখনো
পরিত্যাগ করিনি।
২৯৩৬। আবূত-তাহির (রহঃ) আবূ
তুফায়ল বাকরী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দুই রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত কখনও অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি।
২৯৩৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
ও হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে। তার পিতা তাকে বর্ণনা করতে যেয়ে
বলেছেন যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিত
জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। আমি
যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম
তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। অনুরুপ একটি হাদীস যায়দ ইবনু আসলাম থেকে তার
পিতার সুত্রে বর্ণিত হয়েছে।
২৯৩৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
বকর মুকাদ্দমী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উমর (রাঃ) হাজারে আসওয়াদকে
চুম্বন করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে চুম্বন করছি বটে
কিন্তু অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর পাত্র।
কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমায় চুম্বন করতে
দেখেছি।
২৯৩৯। খালফ ইবনু হিশাম, মুকাদ্দমী,আবূ
কামিল ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি লৌহ মানব অর্থাৎ উমর
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে কৃষ্ণ পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি
বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই
তোমাকে চুন্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি
একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার
না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।
২৯৪০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবিস ইবনু
রবীআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
উমর (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন আমি অবশ্যই তোমায়
চুম্বন করছি এবং আমি জানি যে, তুমি অবশ্যই একটি পাথর। আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি
কখনও তোমায় চুম্বন করতাম না।
২৯৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সূয়ায়দ ইবনু গাফলা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে
এবং তা জড়িয়ে ধরতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, আমি
তোমার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গভীর ভালোবাসা
লক্ষ্য করেছি।
২৯৪২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) সুফয়ান (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপবোক্ত হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ)বলেছেন, কিন্তু
আমি আবূ-ল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা
পোষণ করতে দেখেছি। এই বর্ণনায় “তিনি তা জড়িয়ে ধরলেন কথার উল্লেখ নাই।
২৯৪৩। আবূত-তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেন এবং একটি
ছড়ির (মিহযান) সাহায্যে রুকন (পাথর) স্পর্শ করেন।
২৯৪৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায়
হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপরে থেকে
(বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করেন এবং তাঁর ছড়ির সাহায্যে পাথর স্পর্শ করেন- যেন লোকেরা
তাঁকে দেখতে পায়। তিনি উচুতে থাকেন যাতে তারা তাঁকে মাসআলা- মাসায়েল জিজ্ঞাসা করতে
পারে, কেননা তিনি লোকদ্বারা
বেষ্টিত ছিলেন।
২৯৪৫। আলী ইবনু খাশরম ও আবদ
ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করেছেন- যাতে
লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়; তিনি সবার উপরে থাকেন এবং
তাঁর নিকট তারা (প্রয়োজনীয় বিষয়) জিজ্ঞাসা করতে পারে। কারণ লোকেরা তাঁকে বেষ্টন
করে রেখেছিল। ইবনু খাশরমের বর্ণনায় “তারা যেন তাঁকে প্রয়োজনীয় বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে
পারে” কথার উল্লেখ নাই।
২৯৪৬। হাকাম ইবনু মূসা
কানতারী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায়
হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটে সওয়ার হয়ে কাবার
চতূর্দিকে প্রদক্ষিণ করেন এবং রুকন স্পর্শ করেন- লোকদের তার নিকট থেকে হটিয়ে
দেয়াটা অপছন্দ হওয়ার কারণে।
২৯৪৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) মারযুফ ইবনু খাসরায (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূত-তুফাহাল (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে, তার
সাথের লাঠি দিয়ে রুকন স্পর্শ করতে এবং লাঠিতে চুম্বন করতে দেখেছি।
২৯৪৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) উম্মু সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার অসুস্হতার কথা জানালাম।
তিনি বললেনঃ তুমি সওয়ারী অবস্হায় লোকদের পেছনে থেকে তাওয়াফ কর। উম্মু সালমা (রাঃ)
বলেন, আমি (সেভাবে) তাওয়াফ করনাম-
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ পাশে সালাত আদায়
করছিলেন। আর তিনি তাতে তিলাওয়াত করছিলেনঃ আততূর, ওয়া
কিতাবিম-মাসতূর।
২৯৪৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে তার পিতা সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আমি মনে করি কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়া
পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাঈ না করলে এর কোন ক্ষতি হবে না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কেন? আমি বললাম, কেননা
আল্লাহ তা-আলা বলেছেনঃ সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম (সূরা বাকারা –
১৫৮)। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার
মাঝে সাঈ না করলে আল্লাহ তার হাজ্জ (হজ্জ)
ও উমরা পূর্ণ করেন না। তুমি যা বলেছ যদি তাই হতো তবে আয়াতটি এভাবে হতোঃ “ঐ দুই
পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন অসুবিধা নেই।”তুমি কি জান ব্যাপারটি কী? ব্যাপার তো ছিল এই যে, আনসারগণ জাহেলী যুগে দুটি প্রতিমার নামে
সমূদ্রের তীরে ইহরাম বাঁধত। একটির নাম ইসাফ, অপরটির
নাম নায়েলা। তারা এসে সাফা-মারওয়া সাঈ করত। অতঃপর মাথা কামাতো। ইসলামের আবির্ভাবের
পর তারা জাহেলী যুগে যা করত, সে কারণে সাফা-মাওয়ার মাঝে
সাঈ করা খারাপ মনে করল। তাই আল্লাহ তা-আলা নাযিল করলেনঃ সাফা-মারওয়া আল্লাহর
নিদর্শন সমূহের অন্যতম। অতঃপর লোকেরা সাঈ করে।
২৯৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে
সাঈ না করি তবে এতে আমার জন্য কোন দোষ মনে করি না। তিনি বললেন, কেন? আমি
বললাম, কেননা মহামহিম আল্লাহ বলেনঃ
“সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম।” তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি যেরুপ বলছ, যদি
তাই হতো, তবে আয়াতের বক্তব্য এরুপ
হতোঃ “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন দোষ নেই।” এ আয়াত আনসারদের সম্পর্কে
নাযিল করা হয়। জাহেলী যুগে তারা যখন লাব্বাইকা বলত তা মানাত দেবীর নামে লাব্বাইকা
ধ্বনি করত। তাই তারা মনে করত যে, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা
তাদের জন্য ঠিক নয়। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে (বিদায়)
হজ্জে এসে তাঁর নিকট এই বিষয়ে উল্লেখ করলে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। অতএব
আমার জীবনের শপথ! যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ না করে- আল্লাহ তার হাজ্জ (হজ্জ) পূর্ণ
করবেন না।
২৯৫১। আমরুন নাকিদ ও ইবনু
আবূ উমর (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার
মাঝে নাঈ না করলে এতে আমি দোষের কিছু দেখি না এবং আমি নিজেও এতদুভয়ের মাঝে সাঈ
বর্জন করায় কিছু মনে করি না। আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে
বোনপূত্র! তুমি যা বলেছ তা মন্দ বলেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(সাফা-মারওয়ার মাঝে) তাওয়াফ (সাঈ) করেছেন এবং মুসলমানরাও তাওয়াফ করেছ। অতএব তা
সূন্নাত। যে সব লোক (জাহিলি যুগে) মেশাল্লাল- নামক স্হানে অবস্হিত নাফরমান মানাত
দেবীর নামে ইহরাম বাঁধত, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে
তাওয়াফ করত না। ইসলামের আবির্ভাবের পর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নিকট এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তখন আল্লাহ তা,আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেনঃ“ সাফা-মারওয়া
আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ কাবা ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা
পালন করে, এ দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ
করলে এতে তার কোন পাপ নেই (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)। তুমি যা বলেছ, ব্যাপারটি যদি তদ্রুপ হতো তবে বলা হতো, “এই দুটির মধ্যে প্রদক্ষিণ নাকরলে তার কোন পাপ
নেই।” ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, এ প্রসংগটি আমি আবূ বকর ইবনু
আব্দুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশামের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি তাতে বিস্মিত হলেন
এবং বললেন, এর নামই জ্ঞান। তিনি আরও
বললেন, জ্ঞানবান সমাজের অনেক লোককে
বলতে শুনেছি- সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ বর্জনকারী আরবের অধিবাসীরা বলত এই দুই
পাথরের মাঝে তাওয়াফ করা জাহিলী যুগের কাজা আর আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা বলত, আমাদেরকে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ
তা-আলা নাযিল করলেন, “সাফা-মারওয়া আল্লাহর
নির্দশনসমূহের অন্যতম।” আবূ বকর ইবনু আব্দুর রহমান বলেন, আমিও মনে করি যে, উল্লেখিত
সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে।
২৯৫২। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম
পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায় আছে- তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমরা সাফা- মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ মনে করি। তখন আল্লাহ তা-আলা
নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। সূতরাং
যে কেউ বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা পালন করে- এ দুটির মাঝে তাওয়াফ করলে
তার কোন দোষ নেই।” আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি
এতভয়ের মাঝে তাওয়াফ করাকে বিধিবদ্ধ করেছেন। অতএব এতভয়ের মাঝে তাওয়াফ বর্জন করার
কারো অধিকার নেই।
২৯৫৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে, আনসার সম্প্রদায় ও গাসসান গোত্রের নিয়ম ছিল, তারা ইসলাম গ্রহনের পুর্বে মানাত দেবীর জন্য
ইহরাম বাধতা অতএব তারা সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করাকে পাপ মনে করতা এটা তাদের
পূর্ব-পুরুষদের রিতী যে, তাদের কোন ব্যক্তি মানাত
দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধলে সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করত না। তারা ইসলাম গ্রহণের পর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তখন
এই প্রসংগে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেনঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূ-হের
অন্যতম। অতএব যে কেউ বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা পালন করে, এতভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই এবং
স্বতস্ফুর্তভাবে সৎকাজ করলে আল্লাহ পূরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ (সূরা বাকারাঃ ১৫৮)।
২৯৫৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনসারগণ
সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফকে খারাপ কাজ মনে করত। অতএব এই প্রসংগে নিন্নোক্ত আয়াত
নাযিল হয়ঃ “সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমুহের অন্যতম। অতএব যে কোন ব্যক্তি
বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা পালন করে এতভয়ের মাঝে তাওয়াফ করলে, তার কোন দোষ নেই।,”
২৯৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির ইবনুু-আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার
সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারের অধিক সাঈ করেননি।
২৯৫৬। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
“একবার মাত্র সাঈ (সাত পাক), তা হচ্ছে প্রথমবারের সাঈ।”
২৯৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু হুজর ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উসামা
ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আরাফাতের ময়দান থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে তাঁর
বাহনে আরোহণ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার
নিকটবর্তী পাহাড়ের বামপাশে পৌছে উটকে হাটু গেড়ে বসালেন, এরপর (নেমে গিয়ে) পেশাব করলেন এবং ফিরে এলেন।
আমি তাকে ইযুর পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সংক্ষেপে (অল্প পানি ব্যবহার করে) উযু
সেরে নিলেন। এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ! সালাতের সময়
হয়েছে।বললেনঃ আরও সামনে গিয়ে সালাত আদায় করব। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে আরোহণ করলেন এবং মুযদালিফায় পৌছে সালাত আদায় করলেন।
এরপর সকালবেলা ফযল (রাঃ)-কে তাঁর (বাহনে) পেছন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন। কুরায়ব বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ফযলের সুত্রে
আমাকে অবহিত করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পৌছার পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
২৯৫৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় ফযলকে বাহনে তার পিছনে বসালেন। রাবী বলেন, এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতুল
আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিযা পাঠ করতে থাকেন।
২৯৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফযল ইবনু আব্বাস। (রাঃ) সুত্রে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাহনে তাঁর সফরসংগী
ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাতে সন্ধ্যাবেলা এবং
মুযদালিফায় ভোর বেলা লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, যখন
তারা অগ্রসর হচ্ছিলঃ তোমরা ধীরে-সুস্হে অগ্রসর হও।” তিনিও নিজ উষ্ট্রীর গতি শ্লথ
করে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং এভাবে মুহাসসির পৌছলেন- যা মিনার অন্তর্গত। তিনি (এখানে)
বললেন, তোমরা গুড়ি পাথর তুলেনাও যা
জামরায় নিক্ষেপ করা হয়। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অবিরত তালবিয়া পাঠ
করতে থাকলেন।
২৯৬০। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে
রাবী এ কথাটি উল্লেখ করেননি- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরায়
পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অনবরত তালবিয়া পাঠ করতে থাকলেন।” কিন্তু এতে উল্লেখ আছেঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় দখিয়ে দিলেন (নিক্ষেপের জন্য)
পাথর কিভাবে ধরবে।”
২৯৬১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা মুযদালিফায় (সমবেত) ছিলাম। এ সময় আমি যার
উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তাকে এই স্হানে বলতে শুনলামঃ
“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা।”
২৯৬২। সুরায়জ ইবনু ইউনূস
(রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) মুযদালিফা রওয়ানার
প্রাক্কালে তালবিয়া পাঠ করলেন। বলা হল, এ
সম্ভবত বেদুঈন (হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সঠিকভাবে জানে না)। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, লোকেরা কি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সূন্নাত) ভূলে গেছে, না
পথভ্রষ্ট হয়েছে! যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তাকে
আমি এই স্হানে বলতে শুনেছিঃ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা।”
২৯৬৩। হাসান হুওয়ানী (রহঃ)
হুসায়ন (রহঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৯৬৪। ইউসুফ ইবনু হাম্মাদ
মাইয়ী (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ ও আসওয়াদ ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তারা বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ
(রাঃ)-কে মুযদালিফায় বলতে শুনেছি যে, যার
উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তাঁকে আমি বলতে শুনেছিঃ লাব্বাইকা
আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।” এরপর তিনি ইবনু মাসউদ) তালবিয়া পাঠ করলেন এবং আমরাও তার
সংগে তালবিয়া পাঠ করলাম।
২৯৬৫। আহমদ ইবনু হাম্বল, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া
উমাবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। বলেন, আমরা সকালবেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হলাম তখন আমাদের মধ্যে
কতক তালবিয়া পাঠকারী এবং কতক তাকবীর পাঠকারী ছিল।
২৯৬৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী
মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আরাফাত দিবসের সকালবেলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কতক
তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করছিল আর কতক তালবিয়া পাঠ করেছিল। আমরা তাকবীর ধ্বনি করেছি।
অধস্তন রাবী (আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সালামা) বলেন, আমি
(আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহকে) বললাম, কি
আশ্চর্য! আপনি তাকে (আবদুল্লাহ ইবনু উমর) কেন জিজ্ঞাসা করলেন না যে, আপনি এই ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি করতে দেখেছেন?
২৯৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ)-এর সাথে সকাল বেলা মিনা থেকে আরাফাতে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা এই দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কিভাবে কি করতেন? তিনি
বললেন, আমাদের কতক তালবিয়া পাঠ করত
কিন্তু তাতে বাঁধা দেয়া হতো না এবং কতক তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করত কিন্তু তাতেও
বাঁধা দেয়া হতো না।
২৯৬৮। সুরায়জ ইবনু ইউনুস
(রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরাফাত দিবসের সকালবেলা আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এই দিন আপনারা তালবিয়ার
ক্ষেত্রে কি বলতেন? তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে আমি ও তাঁর সাহাবীগণ এই পথ ভ্রমণ করেছি। আমাদের কতক “আল্লাহ আল্লাহ-
ধ্বনি উচ্চারণ করেছে এবং কতক তালবিয়া (লাব্বাইকা আল্লাহলা লাব্বাইকা) উচ্চারণ
করেছে। এতে আমাদের কেউ কারো দোষ ধরেনি।
২৯৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব থেকে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর
সুত্রে বর্ণিত। তিনি তাকে বলতে শুনেছেন, আরাফাত
থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন, পাহাড়ের সরু পথের নিকট পৌছে
বাহন থেকে নেমে পেশাব করলেন, এরপর হালকা উযু করলেন, পূর্ণ উযু নয়। আমি তাঁকে বললাম, সালাতের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করব। এরপর তিনি
সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, মুযদালিফায় পৌছে পূর্ণাঙ্গ
উযু করলেন। এরপর সালাতের ইকামত দেওয়া হল এবং (এখানে) মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর প্রত্যেকে নিজ নিজ উট বসাল (বিশ্রামের জন্য), এরপর
ইশার সালাতের ইকামত দেওয়া হল এবং ইশার সালাত আদায় করলেন। এই দুই সালাতে মধ্যে তিনি
অন্য কোন সালাত আদায় করেননি।
২৯৭০। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ
(রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য কোন এক গিরিপথে
গেলেন। এরপর আমি তাঁর উযুর পানি ঢেলে দিলাম, এরপর
বললাম, সালাত আদায় করবেন কি? তিনি বললেন, সামনে
এগিয়ে সালাত আদায় করব।
২৯৭১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উসামা ইবনু যায়দ
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফাত থেকে
প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি গিরিপথের নিকটে পৌছে বাহন থেকে নেমে পেশাব করলেন। উসামা
একথা বলেন নি যে, তিনি পানি ঢেলে দিয়েছেন। বরং
বলেছেন, তিনি পানি চাইলেন এবং
হালকাভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমি বললাম, ইয়া
রাসুলল্লাহ! আপনি কি সালাত আদায় করবেন? বললেনঃ
সালাত তো তোমার সন্মুখে রয়েছে। রাবী বলেন, এরপর
তিনি চলতে থাকলেন এবং মুযদালিফায় পৌছলেঁন। এরপর মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করলেন।
২৯৭২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাথে তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন, তখন
আরাফাত দিবসের সন্ধ্যায় আপনারা কি করেছিলেন? তিনি
বললেন, যে উপত্যকায় লোকেরা মাগরিবের
সময় নিজের উটকে (বিশ্রামের জন্য) বসায়, তিনি
সেখানে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উষ্ট্রৈী বসালেন
এবং পেশাব করলেন। উসামা (রাঃ) পানি ঢেলে দেওয়ার কথা বলেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি চেয়ে আলালেন এবং হালকাভাবে উযু করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি সালাত আদায় করবেন? তিনি বললেন, সালাত
তোমার সম্মুখে। এরপর তিনি সওয়ার হয়ে রওনা করলেন। অবশেষে আমরা মুযদালিফায় আসলাম।
মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। লোকেরা নিজ নিজ স্হানে উট বসাল কিন্তু মাল-সামান খুলল
না, এমনকি ইশার সালাতে দাড়ালেন এবং সালাত আদায়
করলেন। এরপর লোকেরা মাল-সামান নামাল। আমি (কুরায়ব) বললাম, ভোর হওয়ার পর আপনারা কি করলেন? তিনি (উসামা) বললেন, ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) তার বাহনে (তার পেছনে)
সওয়ার হলেন এবং আমি কুরাশদের অগ্রভাগে পদব্রজে রওনা হলাম।
২৯৭৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে উপত্যকায় মক্কার সমস্ত লোকেরা অবতরণ
করত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সেখানে অবতরণ করে পেশাব করলেন। তিনি পানি ঢেলে দেয়ার কথা উল্লেখ করেননি। এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি চাইলেন এবং হালকা উযু করলেন। আমি
বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত।
তিনি বললেন, সালাত সামনে এগিয়ে আদায় করা
হবে।
২৯৭৪। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
উসামা ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওয়ারীতে পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন।
উপত্যকায় পৌছে তিনি তাঁর উটনী বসালেন, এরপর
প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য গেলেন। তিনি ফিরে এলেন। আমি পাত্র থেকে পানি ঢেলে
দিলাম এবং তিনি উযু করলেন, এরপর সওয়ার হলেন এবং মুযদালিফায়
পৌছে তিনি মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করলেন।
২৯৭৫। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য রওনা হলেন। উসামা (রাঃ) তাঁর পেছনে উপবিষ্ট
ছিলেন। উসামা (রাঃ) বলেন, তিনি মুযদালিফায় পৌছা
পর্যন্ত অনবরত চলতে থাকলেন।
২৯৭৬। আবূর রবী যাহরানী ও
কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে তার পিতার হতে বর্ণিত। তিনি (উরওয়া)
বলেন, উসামা (রাঃ)-কে আমার
উপস্হিতিতে জিজ্ঞাসা করা হল অথবা (অধস্তন রাবীর সন্দেহ) আমি উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে
জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকে তার সওয়ারীর পেছনে বসিয়ে ছিলেন, তখন তিনি কিভাবে চলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি
ধীর গতিতে সওয়ারী চালালেন, যখন খোলা জায়গা পেলেন, তখন দ্রুতগতিতে হাঁকালেন।
২৯৭৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে এই সূত্রে হাদীস অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
হুমায়দের রিওয়ায়াতে আছে, রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন
‘আনাকা’ এর চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে চলাকে বলা হয়।
২৯৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ আয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বিদায় হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করেছেন।
২৯৭৯। কুতায়বা ও ইবনু রুমহ
(রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অমূরুপ বর্ণনা
করেছেন। ইবনু রুমহ তার বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ খাতমীর সুত্রে উল্লেখ করেছেন
যে, আবূ আয়্যুব আনসারী (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ)-এর খিলাফতকালে কুফার আমীর ছিলেন।
২৯৮০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন।
২৯৮১। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) উবায়দূল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তার পিতা বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেছেন। তিনি এই দুই সালাতের মধ্যে
অন্য কোন সালাত (সুন্নাত বা নফল) আদায় করেনি। তিনি মাগরিব তিন রাকআত এবং ইশা
দু-রাকআত আদায় করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-ও (মুযদালিফায়) অনুরুপভাবে সালাত
আদায় করতেন এবং এই অবস্হায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
২৯৮২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (মুযদালিফায়) মাগরিব ও
ইশার সালাত এক ইকামতে একই সাথে আদায় করেছেন। এরপর তিনি ইবনু উমর (রাঃ) সম্পর্কে
বলেছেন যে, তিনিও তন্দ্রপভাবে সালাত
আদায় করেছেন। আর ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ করেছেন।
২৯৮৩। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) শুবা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এতে
উল্লেখ আছে, তিনি একই ইকামতে দুই
ওয়াক্তের সালাত আদায় করেছেন।”
২৯৮৪। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে (একই
সময়ে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নিয়্যতে) আদায় করেছেন। তিনি এক ইকামতেই মাগরিবের সালাত
তিন রাকআত এবং ইশার সালাত দু-রাক’আত আদায় করেছেন।
২৯৮৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সাঈদ ইবনু শুয়র (রহঃ) বলেন, আমরা
ইবনু উমর (রাঃ)-এর সাথে (আরাফাত থেকে মুযদালিফায়) এলাম। তিনি আমাদের সাথে মাগরিব ও
ইশার সালাত এক ইকামতে আদায় করেন। সালাত শেষ করে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই
স্হানে আমাদের নিয়ে এভাবে সালাত আদায় করেছেন।
২৯৮৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নির্ধারিত ওয়াক্তেই সালাত আদায়
করতে দেখেছি। তবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত আদায় করেছেন এবং রাতের ভোরে
ফজরের সালাত নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অর্থাৎ ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায়
করেছেন।
২৯৮৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ) সুত্রে
উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনার শেষাংশ নিম্নরুপঃ “ওয়াক্ত হওয়ার সাথে
সাথেই অন্ধকারের মধ্যে তা আদায় করেছেন।”
২৯৮৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সওদা (রাঃ) মূযদালিফার রাতে রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগেই এবং রাস্তায় জনতার ভিড় হওয়ার পূর্বেই
মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি ছিলেন স্থুলদেহী।
(অধঃন্তন রাবী) আল কাসিম বলেন, ‘আস সাবতাহ’- শব্দের অর্থ ‘আস
সাকিলাহ’ (ভারী)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। অতএব তিনি তাঁর আগেই রওনা হয়ে
গেলেন এবং আমরা ফজর পর্যন্ত সেখানে অবস্হান করলাম। এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাখে রওনা হলাম। আমিও যদি সওদা (রাঃ)-এর মত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি নিয়ে আগে ভাগে চলে
যেতাম, তবে তা আরও আনন্দদায়ক হত- যে
আনন্দ এখন আমি অনুভব করছি, তার তূলনায়।
২৯৮৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সওদা (রাঃ) ছিলেন ভারী ও স্থুলদেহী। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট মুযদালিফা থেকে রাত থাকতেই প্রস্হান করার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি
দিলেন। আয়িশা (রাঃ)আরও বলেন, হায়! যদি সওদা (রাঃ)-এর মত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনিও অনুমতি প্রার্থনা করতাম!
আয়িশা (রাঃ) ইমামের সাথে মুযদালিফা হতে রওনা হতেন।
২৯৯০। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম আমিও
যদি সওদা (রাঃ)-এর অনুরুপ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
অনুমতি প্রার্থনা করতাম। তিনি মিনায় পৌছে ফজরের সালাত আদায় করেন এবং লোকদের পৌছার
পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেন। আয়িশা (রাঃ)-কে বলা হল, সওদা (রাঃ) কি তাঁর নিকট অনুমতি চেয়েছিলেন? তিনি বললেন, হ্যা, তিনি ছিলেন স্থুলদেহী এবং ভারী, তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুমতি চয়েছিলেন এবং তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।
২৯৯১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম (রহঃ) থেকে এই সুত্রে
উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
২৯৯২। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
বকর মুকাদ্দমী (রহঃ) আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমাকে আসমা (রাঃ) মুযদালিফা
অবস্হানকালে জিজ্ঞাসা করলেন, চাঁদ ডূবেছে কি? আমি বললাম, না।
অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ সালাত আদায় করলেন। পড়ে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! চাঁদ ড়ূবেছে কি? আমি বললাম, হ্যা।
তিনি বললেন, আমার সাথে রওনা হও। আমরা
রওনা হলাম এবং জামরা (পৌছে) তিনি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, এরপর নিজের তাঁবুতে সালাত আদায় করলেন। আমি তাকে
বললাম, হে সম্মানিত মহিলা! আমরা খুব
ভোরে রওনা হয়েছিলাম। তিনি বললেন, কোন অসুবিধা নেই হে বৎস!
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের খুব ভোরে রওনা হওযার অনুমতি
দিয়েছিলেন।
২৯৯৩। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে
আছেঃ “আসমা (রাঃ) বলেন, হে বৎস! নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।”
২৯৯৪। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও
আলী ইবনু খাশরম (রহঃ) (সালিম) ইবনু শাওয়াল (রাঃ) উম্মু হাবীবা (রহঃ)-এর নিকট
উপস্হিত হলে তিনি তাকে অবহিত করেন যে, নাবীরাত
থাকতেই তাকে মুযদালিফা থেকে মিনায় (পাঠিয়ে দেন)।
২৯৯৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) সালিম ইবনু শাওয়াল সুত্রে উম্মূ হাবীবা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আমল থেকে এরুপ করতাম, অর্থাৎ
রাতের অন্ধকারেই মুযদালিফা থেকে মিনায় চলে আসতাম। নাকিদ-এর বর্ণনায় আছেঃ মুযদালিফা
থেকে আমরা রাতের অন্ধকারেই রওনা হতাম।”
২৯৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে মালপত্র নিয়ে অথবা (অপর বর্ণনা অনুযায়ী) দূর্বল লোকদের সাথে রাত থাকতেই
মুযদালিফা থেকে (মিনার উদ্দেশ্যে) পাঠিয়ে দেন।
২৯৯৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের যে দূর্বলদের (মুযদালিফা থেকে)
সর্বাগ্রে পাঠিয়ে দেন, আমি তাদের অন্তভুক্ত ছিলাম।
২৯৯৮। আবূ বকর আবূ শায়বা
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারের যে দূর্বলদের আগেভাগে পাঠিয়ে দেন আমি তাদের সাথে
ছিলাম।
২৯৯৯। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর মালপত্র নিয়ে ভোর রাতে মুযদালিফা থেকে
(মিনায়) পাঠিয়ে দেন। আমি ইবনু জুরায়জ) আতাকে বললাম, আপনি
জানেন কি ইবনু আব্বাস (রাঃ)বলেছেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে গতীর রাতে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, না, কেবল ভোর রাতের কথাই আমি জানি। আমি তাঁকে
পূনরায় বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ)বলেছেন, আমরা ফজরের সালাতের পূর্বেই জামরায় পাথর
নিক্ষেপ করেছি।” তাহলে তিনি ফজরের সালাত কোথায় আদায় করেছেন? আতা বললেন, না, আমি এতটুকুই জানি।
৩০০০। আবূত-তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তার সাথের দূর্বল
লোকদেরকে মূযদালিফার নিকটবর্তী স্হান মাশ-আরুল হারামে রাতে অবস্হানের জন্য
আগেভাগেই পাঠিয়ে দিতেন। অতএব তারা রাতের বেলা যতক্ষন ইচ্ছা আল্লাহর যিকির করত।
ইমামের অবস্হান ও ফিরে আসার পুর্বেই তারা (এখান থেকে) রওনা হতো। অতএব তাদের মধ্যে
কেউ ফজরের সালাতের সময় মিনায় পৌছতে এবং কেউ ফজরের সালাতের পরে। তারা এখানে পৌছে
জামরায় পাথর নিক্ষেপ করত। ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূর্বল ও বৃদ্ধদের এই অনুমতি প্রদান করেছেন।
৩০০১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) উপত্যকার মধ্যখানে
দাঁড়িয়ে জামরাতূল আকাবায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেছেন এবং প্রতিটি পাথরের সাথে
তাকবীর বলেছেন। রাবী বলেন, তাকে বলা হল, লোকেরা তো উচ্চ স্হানে দাঁড়িয়ে পাথর নিক্ষেপ
করে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)বললেন, সেই
সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া আর। কোন ইলাহ নেই, এই সেই স্থান যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।
৩০০২। মিনজাব ইবনু হারিস
তামীমী (রহঃ) আঁমাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফকে মিন্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে পিয়ে বলতে শুনেছি: জিবরীল
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে ক্রমবিন্যাসে কুরআন মজীদ সাজিয়েছেন, তোমরা তদনূযায়ী তা সুবিন্যস্ত কর। যেমন, প্রথম সেই সূরা যার মধ্যে গাভী সম্পর্কে আলোচনা
এসেছে। এরপর যে সূরায় মহিলাদের সম্পর্কে, এরপর
সেই সূরা যার মধ্যে ইমরান-পরিবার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। আমাশ (রহঃ) বলেন, এরপর আমি ইবরাহীমের সাথে সাক্ষাত করে তাকে
হাজ্জাজের বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি তাকে গালি দিলেন। এরপর বললেন, আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ আমাকে বলেছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর সাথে
ছিলেন। তিনি জামরাতূল আকাবায় এলেন, উপত্যকার
মাঝে দাঁড়ালেন এবং জামরাকে নিজের সম্মুখভাগে রাখলেন, এরপর
উপত্যকার মাঝে দাঁড়িয়ে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, প্রত্যেকবার
নিক্ষেপের সাথে সাথে আল্লাহ আল্লাহ বললেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে
আবূ আবদুল রহমান! লোকেরা উপত্যকার উপরিভাগ থেকে পাথর নিক্ষেপ করে। তিনি বললেন, সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, এই সেই স্হান যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছিল।
৩০০৩। ইয়াকুব দওরাকী ও ইবনু
আবূ উমর (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
হাজ্জাজকে বলতে শুনেছি, তোমরা বল না সূরাতূল বাকারা
এরপর ইবনু মুসহির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৩০০৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ (রাঃ)-এর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) করেন। রাবী বলেন, তিনি
(আবদুল্লাহ) জামরায় সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করেন- বায়তূল্লাহকে বামদিকে এবং মিনাকে
ডানদিকে রেখে এবং তিনি বলেন, এই সেই স্হান যেখানে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল করা
হয়েছিল।
৩০০৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অরেপ বর্ণিত হয়েছে। তরে
তিনি বলেছেন, (আবদুল্লাহ) যখন জামরাতুল
আকাবায় এলেন।”
৩০০৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ
(রাঃ)-কে বলা হল, লোকেরা আকানার উচ্চভূমি
থেকে পাথর নিক্ষেপ করে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ
(রাঃ) উপত্যকার মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে তা নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি বলেন, সেই সত্তার শপথ যিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই, যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে, তিনি এই স্হান থেকে কাঁকর নিক্ষেপ করেছেন।
৩০০৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে সওয়ারীতে আরোহণ অবস্হায় পাথর নিক্ষেপ করতে দেখেছি এবং তিনি
বলছিলেনঃ আমার নিকট থেকে তোমরা হজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। কারণ আমি জানি না এই
হজ্জের পর আমি আর হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারব কিনা।”
৩০০৮। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) করেছি
এবং আমি দেখেছি, তিনি জামরাতুল আকাবায় পাথর
নিক্ষেপ করে সওয়ারীতে চড়ে ফিরে আসেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল ও উসামা (রাঃ)
তাদের একজন উটের লাগাম ধরে তা টেনে নিচ্ছিলেন এবং অপরজন সূর্যের তাপের কারণে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার উপর কাপড় ধরে রাখছিলেন।
উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কথা বললেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ যদি নাক-কান কাটা
কোন কাফ্রী ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা নিয়োগ করা হয় এবং সে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী
তোমাদের পরিচালনা করে, তবে তার (নির্দেশ) শোন এবং
আনুগত্য কর।
৩০০৯। আহমদ ইবনু হাম্বল
(রহঃ) উম্মুল হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) করেছি।
আমি উসামা ও বিলালকে দেখেছি যে, তাদের একজন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে আছেন এবং অপরজন কাপড় দিয়ে
তাকে রৌদ্র তাপ থেকে ছায়া দান করছেন। এমতাবস্হায় তিনি জামরায় কাঁকর নিক্ষেপ করেন।
ইমাম মুসলিম বলেন,আবূ আব্দুর রহীমের নাম খালিদ
ইবনু আবূ ইয়াযীদ যিনি মুহাম্মদ ইবনু সালামার মামা ওয়াকী এবং হাজ্জাজ আওয়ার তার
থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।
৩০১০। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
জামরায় ক্ষুদ্র পাথর (পাথর) নিক্ষেপ করতে দেখেছি।
৩০১১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে জামরায় পাথর
নিক্ষেপ করেন, পূনরায় দ্বিপ্রহরের পরে।
৩০১২। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৩০১৩। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইস্তিনযায় ব্যবহ্নত টিলার সংখ্যা বেজোড়, জামরায় নিক্ষিপ্ত পাথরের সংখ্যা বেজোড়, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈর সংখ্যা বেজোড় এবং
তাওয়াফও বেজোড়। অতএব তোমাদের যে কেউ যখন ইস্তিঞ্জায় ঢেলা ব্যবহার করবে, সে যেন বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করে।
৩০১৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু উমর) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুন্ডন করলেন। তাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবীও মাথা
মুন্ডন করলেন আর কিছু সংখ্যক চুল খাটো করলেন। আবদুল্লাহ (বা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
অথবা দুইবার বললেনঃ যারা মাথা মুন্ডন করেছে, আল্লাহ
তাদের উপর অনুগ্রহ করুন। অতঃপর তিনি বললেনঃ যারা চুল খাটো করেছে, তাদের উপরও।
৩০১৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে
আল্লাহ! মাথা মূণ্ডনকারীদের প্রতি দয়া করুন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! চুল খাটোকারীদের প্রতিও। তিনি
বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি দয়া করুন। তারা বললেন, চুল খাটোকারীদের জন্যও (দুআ করুন) হে আল্লাহর
রাসুল! বললেনঃ এবং চুল খাটোকারীদের প্রতিও। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সুফয়ান
এ হাদীসটি মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ-এর সুত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেন।
৩০১৬। আবূ ইসহাক ইবরাহীম
ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সুফয়ান ইমাম মুসলিম হতে বর্ণনা করেন যে,ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি
আল্লাহ অনুগ্রহ করুন! তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! চুল
ছোটকারীদের জন্য (দু’আকরুন) তিনি বললেনঃ মাথা মুণ্ডকারীদের আল্লাহ রহম করুন। তারা
বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! চুল ছোটকারীদের জন্যও। তিনি বললেনঃ মাথা মুন্ডনকারীদের
প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তে ছোটকারীদের প্রতিও। তিনি
বললেনঃ চুল ছোটকারীদের প্রতিও।
৩২১৭। ইবনু মূসানা (রহঃ)
উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তার
বর্ণনায় আছেঃ চতুর্খবারে তিনি বললেনঃ চুল খাটোকারীদের উপরও (রহম করুন)।”
৩০১৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আলাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের ক্ষমা করুন। তারা বললেনঃ
ইয়া রাসুলুল্লাহ! চুল খাটোকারীদের (ক্ষমার জন্য দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ হে
আল্লাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের ক্ষমা করুন। তারা বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! চুল খাটোকারীদেরও। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের শুনাহ
মাফ করুন। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! চুল
খাটোকারীদেরও। তিনি বললেনঃ চুল খাটোকারীদেরও (গুনাহ ক্ষমা করুন)।
৩০১৯। উমায়্যা ইবনু বিসতাম
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই সনদ সুত্রেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর উপরোক্ত হাদীসে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩০২০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে তার দাদীর সুত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদী)
বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাথা
মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার এবং চুল খাটোকারীদের জন্য একবার দু’আকরতে শুনেছেন।
ওয়াকীর বর্ণনায় -বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)- কথাটুকু উল্লেখিত হয়নি।
৩০২১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালে নিজের মাথার চুল মুন্ডন করেছেন।
৩০২২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মিনায় এলেন, অতঃপর জামরায় এসে পাথর
নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি মিনায় নিজ স্থানে ফিরে এলেন এবং কুরবানী করলেন। তারপর
হাজ্জ (হজ্জ)াম (ক্ষৌরকার)-কে ইশারায় বললেনঃ মাথার ডান পাশ থেকে শুরু কর, তারপর বাম পাশ। তারপর তিনি লোকদেরকে নিজের চুল
দান করলেন।
৩০২৩। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। আবূ বকর
(রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারা দিয়ে হাজ্জ (হজ্জ)ামকে মাথার ডান পাশ
থেকে শুরু করতে বললেন। তারপর তিনি কাছের লোকেদের নিজের মাথার চুল দান করলেন। রাবী
বলেন, তারপর তিনি হাজ্জ (হজ্জ)ামকে
মাথার বাম পাশের চুল কাটার ইংগিত করলেন। সে তাই করল। এই চুলগুলো তিনি উম্মু সুলায়ম
(রাঃ)-কে দান করলেন। আর আবূ কুরায়বের বর্ণনায় আছেঃ হাজ্জ (হজ্জ)াম ডান পাশ থেকে
ক্ষৌরকার্য শুরু করল। তিনি লোকদের একটি-দুটি করে চুল দিলেন। তারপর বাঁ পাশের চুল
কাটার নির্দেশ দিলেন এবং সে তাই (মাথা মুন্ডন) করল তারপর তিনি বললেনঃ আবূ তালহা!
এখানে আস। অতএব তিনি এবারের চুলগুলো তাকে দান করলেন।
৩০২৪। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জামরাতূল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর কুরবানীর উটের নিকট ফিরে এসে তা যবেহ
করলেন। হাজ্জ (হজ্জ)াম নিকটেই বসা দ্ঘি। তিনি মাথার দিকে হাতের ইশারা করলেন এবং সে
তার মাথার ডান পার্শের চুল কামিয়ে দিল। তিনি তা নিকটস্হ লোকদের মধ্যে বণ্টন
করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ মাথার অপরাংশ কামাও। তিনি বললেনঃ আবূ তালহা কোথায়? তখন তিনি সেগুলো তাকেই দান করলেন।
৩০২৫। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তিনি জামরায় পাথর নিক্ষেপ
করলেন। তারপর কুরবানী করলেন, তারপর মাথা কামালেন- তিনি
ক্ষৌরকারের প্রতি মাথার ডান পার্শ এগিয়ে দিলেন এবং সে তা চেঁছে দিল। তারপর তিনি
আবূ তালহা আনসারী (রাঃ)-কে ডাকলেন এবং তাকে (নিজের) চুল দান করলেন। অতঃপর তিনি
মাথার বাম পাশ এগিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ কামিয়ে দাও। (অতএব ক্ষৌরকার) তা কমিয়ে দিল।
তিনি চুলগুলো আবূ তালহা (রাঃ)-কে দিয়ে বললেনঃ এগুলো লোকদের মধ্যে বন্টন কর।
৩০২৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের সংগে মিনায় অবস্হান করলেন যাতে তারা
প্রয়োজনীয় বিষয় তাঁর কাছ থেকে জেনে নিতে পারে। এ সময এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! না জানার কারণে আমি কুরবানী
করার পূর্বে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই, তুমি কুরবানী কর। অতঃপর এক ব্যক্তি তাঁর নিকট
উপস্হিত হলে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জানতাম
না, ফলে পাথর নিক্ষেপের পুর্বে কুরবানী করে নিয়েছি।
তিনি বললেন, অসুবিধা নেই, তুমি পাথর নিক্ষেপ কর। রাবী বলেন, অজ্ঞতা বশত কাজ আগে অথবা পরে করা সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলেই তিনি বলেন, তুমি এখন করে নাও, তাতে কোন দোষ নেই।
৩০২৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ঈসা ইবনু তালহা তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীর উপর অবস্হান করলেন। লোকেরা তাঁর নিকট বিভিন্ন
বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকল। তাদের কেউ জিজ্ঞাসা করল, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আমি জানতাম না যে, কুরবানীর পূর্বে পাথর
নিক্ষেপ করতে হয়। তাই আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ
পাথর নিক্ষেপ কর, এতে কোন দোষ হবে না। অপর
ব্যক্তি এসে বলল, আমি জানতাম না যে, মাথা কামানোর পূর্বে কুরবানী করতে হবে। অতএব
আমি কুরবা নীর পূর্বে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন, কোন দোষ নেই, তুমি
কুরবানী কর। রাবী বলেন, মানুষ অজ্ঞতা বশত যেসব কাজের
ক্ষেত্রে পরেরটি আগে করে ফেলেছে, এ সম্পর্কে বা এ জাতীয় বিষয়
সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হলেই আমি
তাঁকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা তা করে নাও, এতে
কোন দোষ হবে না।
৩০২৮। হাসান আল হুলওয়ানী
(রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৩০২৯। আলী ইবনু খাশরম (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমি জানতাম না যে, এই এই কাজ অমুক অমুক কাজের পূর্বে করতে হয়।
এরপর আর এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি মনেঁ
করেছিলাম এই কাজ অমুক অমুক তিনটি (পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী, মাথা কামানো) কাজের পূর্বে করতে হয়। তিনি
বললেনঃ করে নাও, কোন অসুবিধা নেই।
৩০৩০। আবদ ইবনু হুমায়দ ও
সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এই সূত্রে বর্ণিত।
মুহাম্মাদ ইবনু বকর এর বর্ণনা ঈসার বর্ণনার অনুরুপ। তবে তার বর্ণনায় ঐ তিন কাজ”-
কথাটুকু উল্লেখ নাই। ইয়াহইয়া উমাবীর বর্ণনায় আছেঃ আমি কুরবানী করার পূর্বে মাথা
মুন্ডন করেছি, পাথর নিক্ষেপের পূর্বে
কুরবানী করেছি ইত্যাদি।”
৩০৩১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি যবেহ করার পূর্বে মাথা
কমিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন, কোন দোষ নেই, এখন যবেহ কর। (অতঃপর একজন) বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করছি। তিনি
বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই, তুমি এখন পাথর নিক্ষেপ কর।
৩০৩২। ইবনু আবূ উমর ও আবদ
ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে মিনায় তাঁর উষ্ট্রীর উপর অবস্হানরত দেখেছি। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর
নিকট এলো উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৩০৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন জামরাতূল আকাবার নিকট অবস্হানরত ছিলেন। আমি এক
ব্যক্তিকে তার নিকট এসে বলতে শুনলাম, ইয়া
রাসুলল্লাহ! আমি পাথর নিক্ষেপে র পূর্বে মাথা কামিয়ে নিয়েছি। তিনি বললেনঃ কোন
অসুবিধা নেই, পাথর নিক্ষেপ করে নাও। আরেক
ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে
কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন, কোন দোষ নেই, পাথর নিক্ষেপ করে নাও। অপর এক ব্যক্তি তাঁর
নিকট এসে বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে
বায়তূল্লাহ তাওয়াফ করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ পাথর নিক্ষেপ কর, তাতে কোন অসুবিধা নেই। রাবী বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি, সেদিন যে সম্পর্কেই” (আগে-পিছে করার ক্ষেত্রে)
তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ কোন দোষ নেই, এখন করে নাও।
৩০৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নিকট কুরবানী, মাথা মুণ্ডন, পাথর নিক্ষেপ, আগের
অনুষ্ঠান পরে এবং পরের অনুষ্ঠান আগে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সষ্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে
তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই।
৩০৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরবানীর দিন তাওয়াফূল ইফা যা সষ্পন্ন করেন, অতঃপর
মিনায় ফিরে এসে যোহরের সালাত আদায় করেন। নাফি বলেন, ইবনু
উমর (রাঃ)-ও কুরবানীর দিন তাওয়াফূল ইফাযা সম্পন্ন করতেন, অতঃপর ফিরে এসে মিনায় যোহরের সালাত আদায় করতেন
এবং বলতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম – এরুপ করেছেন।
৩০৩৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)
আব্দুল আযীয ইবনু রুফাই (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, আপনার যা স্বরণ আছে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত
করুন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারবিয়ার দিন (৮ই যিলহাজ্জ) যোহরের সালাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মিনায়।
আমি বললাম, (হাজ্জ (হজ্জ) সমাপ্তলাভে)
বিদায়ের দিন তিনি আসরের সালাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি
বললেন, বাতহা উপত্যকায়। অতঃপর তিনি
বললেন, তোমার প্রশাসকগণ যা করেন, তদ্রুপ কর।
৩০৩৭। মুহাম্মদ ইবনু মিহরান
রাবী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ
বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) আবতাহ নামক স্হানে অবতরণ করতেন।
৩০৩৮। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
ইবনু মায়মূন (রহঃ) নাফি- (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ) মুহাসসাবে যাত্রা
বিরতি সুন্নাত মনে করতেন। তিনি বিদায়ের দিন (১২ অথবা ১৩ যিলহাজ্জ) সেখানে যোহরের
সালাত আদায় করতেন। নাফি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাসুসাবে যাত্রা বিরতি করেছেন এবং তাঁর পরে খলীফাগণও।
৩০৩৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবতাহে অবতরন করা সূন্নাত নয়। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল এজন্য সেখানে যাত্রা বিরতি করেছিলেন যে, সেখান থেকে তারজন্য যাত্রা করা সহজতর ছিল।
৩০৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, আবূ রবি যাহরানী ও আবূ কামিল
(রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে। এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৩০৪১। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
সালিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আবূ বকর (রাঃ), উমর (রাঃ) ও ইবনু উমর (রাঃ) আবতাহে অবতরণ
করতেন। যুহরী বলেন, আমাকে উরওয়া অবহিত করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) আবতাহে যাত্রা বিরতি করতেন না।
তিনি বলতেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল মাত্র (বিশ্রামের জন্য) এখানে যাত্রা বিরতি করতেন যাতে
সামনের পথ অতিক্রম সহজ হয়।
৩০৪২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমর ও আহমদ ইবনু আবদা (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাসসাবে
যাত্রা বিরতি বাধ্যতাম্যূলক নয়। এটি একটি মঞ্জিল যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাত্রা বিরতি করেছেন।
৩০৪৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আবূ রাফি (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন মিনা থেকে রওনা হলেন তখন তিনি আমাকে আবতাহে যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেননি। বরং
আমি সেখানে পৌছে তাঁবু খাটালাম, এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সেখানে অবতরণ করলেন। আবূ রাফি (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মালপত্রের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত
ছিলেন।
৩০৪৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, ইনশা আল্লাহ আমরা আগামীকাল
সকালে খায়ফে বানূ কিনানায় অবতরণ করব- যেখানে তারা (কাফিররা) কুফরীর উপর অবিচল
থাকার শপথ নিয়েছিল।
৩০৪৫। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
মিনায় থাকাকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেনঃ
আগামীকাল সকালে আমরা কিনানা গোত্রের ঘাটিতে অবতরণ করব যেখানে তারা কুফরীর উপর অটল
থাকার শপথ করেছিল। তা হচ্ছে- কুরায়শ ও কিনানা গোত্র হাশিম ও মুত্তালিব
গোত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, এরা
তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে স্হাপন করবে না এবং বাণিজ্যিক লেনদেন করবে নাযতক্ষন
তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের হাতে অর্পণ না করবে- এ
হচ্ছে সেই মুহাসসাব।
৩০৪৬। মুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আল্লাহ যদি আমাদের বিজয় দান করেন তবে ইনশা আল্লাহ আমাদের মঞ্জিল হবে
খায়ফে, যেখানে কুরায়শরা কুফরীর উপর অটল
থাকার শপথ করেছিল।
৩০৪৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আব্বাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব
(রাঃ) মিনার রাতগুলো মক্কায় অতিবাহিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কারণ পানি সরবরাহের দায়িত্ব তার উপর
ন্যস্ত ছিল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন।
৩০৪৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে।
৩০৪৯। মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল
যারীর (রহঃ) বকর ইবনু আবদুল্লাহ মুযানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে কাবার সন্নিকটে
বসা ছিলাম। এ সময় এক বেদুঈন তাঁর নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, কি ব্যাপার? আমি
দেখছি আপনার চাচাতো ভাইয়েরা (আগন্তুকদের) মধু ও দুধ পান করায়। আর আপনারা নাবীয
(খেজুরের তৈরি শরবত) পান করান? তা কি আপনাদের দরিদ্রতার
কারণে, না কৃপণতার কারণে? ইবনু আব্বাস (রাঃ) আলহামদু লিল্লাহ উচ্চারণ করে
বললেন, আমাদের না দারিদ্র আক্রান্ত
করেছে, না কৃপণতা। প্রকৃত ব্যাপার
এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীতে চড়ে এখনে এলেন এবং তাকে এক পেয়ালা নাবীয দিলাম। তিনি তা
পান করলেন এবং অবশিষ্টটুকু উসামাকে পান করালেন। এরপর বললেনঃ “ তোমরা খুবই উত্তম
কাজ করেছ এবং এরুপই করতে থাক।, অতএব রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা করার নির্দেশ দিয়েছেন- আমরা তার
পরিবর্তন করতে চাই না।
৩০৫০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর কুরবানীর উটগুলোর নিকট দাড়াতে এবং
এগুলোর গোশত, চামড়া ও ঝূল দান-খয়রাত করে
দিতে নির্দেশ দিলেন এবং তা দিয়ে কসাইয়ের মজুরী দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ আমাদের
নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরী পরিশোধ করে দেব।
৩০৫১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) আব্দুল কারীম জাযারী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩০৫২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই
বর্ণনায় কসাইয়ের মজুরীর কথা উল্লেখ নাই।
৩০৫৩। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, মুহাম্মাদ ইবনু মারযূক ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
তার কুরবানীকৃত উট শুলির নিকট অবস্হানের নির্দেশ দিলেন। তিনি তাকে উটের সমস্ত গোশত, চামড়া ও ঝূল মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করারও
নির্দেশ দিলেন এবং তা থেকে কসাইকে মজুরী স্বরূপ কিছু দিতে নিষেধ করলেন।
৩০৫৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নির্দেশ দিলেন উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৩০৫৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর (৬ষ্ঠ হিজরী) আমরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং
প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছি।
৩০৫৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আহমদ ইবনু ইউনুস (রাঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হজ্জের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওনা হলাম। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি উট বা
গরু সাতজনে মিলে কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন।
৩০৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন করি। আমরা সাত শরীকে একটি করে উট বা গরু
কুরবানী করেছি।
৩০৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা পালনকালে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সাতজনে মিলে একটি উট কুরবানী করেছি। এক
ব্যক্তি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, জাযূরে
যে কজন শরীক হতে পারে বাদানাতেও কি অনুরুপ শরীক হওয়া যায়? তখন তিনি বললেন, উভয়
তো একই জাবির (রাঃ) হুদায়বিয়ায় উপস্হিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ঐদিন ৭০ টি উট কুরবানী করেছি। প্রতিটি
উটেই ৭ জন শরীক ছিলাম।
৩০৫৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আলোচনা করতে
শুনেছেন। তিনি (জাবির রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইহরাম খোলার সময় কয়েকজন শরীক হয়ে এক-একটি পশু কুরবানীর
নির্দেশ দেন। এটা সেই সময়ের কথা যখন তিনি তাদেরকে (উমরা আদায়ের পর) হজ্জের ইহরাম
ভঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৩০৬০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে তামাত্তু হাজ্জ (হজ্জ) করেছি। আমরা সাত শরীকে মিলে একটি গরু কুরবানী
করেছি।
৩০৬১। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরবানীর দিন আয়িশা (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেন।
৩০৬২। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ও
সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রাঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঞা
তাঁর সহধর্মিনাদের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী করেছেন। কিন্তু ইবনু বকর (রহঃ) কর্তুক
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, তিনি
তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) উদযাপনকালে একটি গাভী কুরবানী করেন।
৩০৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) যিয়াদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু
উমর (রাঃ) এক ব্যক্তির কাছে এলেন। সে তার উটকে বসিয়ে কুরবানী করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
তিনি বললেন, এটাকে দাঁড় করিয়ে কুরবানী
কর। এটাই তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাত।
৩০৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা (রহঃ) উরওয়া ইবনু
যুবায়র ও আমরাহ বিনত আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মদিনা থেকে তাঁর কুরবানীর পশু (মক্কার হরমে) পাঠাতেন। আমি তার কুরবানীর পশুর (গলায়
বাধার জন্য) মালা তৈরি করে দিতাম। এরপর তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না যা
থেকে ইহরামধারীদের বিরত থাকতে হয়।
৩০৬৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে (উপরোক্ত হাদীসের) অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩০৬৬। সাঈদ ইবনু মানসূর, যুহায়র ইবনু হারব, খালফ ইবনু হিশাম ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার
চোখে সেই দুশ্য ভাসছে আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কুরবানীর পশুর (গলায় পরাণৌর জন্য) মালা তৈরি করে দিচ্ছি অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত
হাদীসের অনুরুপ।
৩০৬৭। সাঈদ ইবনু মালসূর
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আমার হাত দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর মালা
বানিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না এবং তা পরিহার করতেন না
(যা হজ্জের ইহরামধারীকে পরিহার করতে হয়)।
৩০৬৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর পশুর মালা বানিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি কুরবানীর পশুকে
চিহ্নিত করেন ও গলায় মালা বেঁধে দেন। এরপর তিনি বায়তুল্লাহয় পাঠিয়ে দেন এবং মদিনায়
অবস্হান করেন। ফলে তাঁর উপর এমন কোন জিনিস হারাম হয়নি যা তার জন্য হালাল ছিল।
৩০৬৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী ও
ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার কুরবানীর পশু (মক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। আমি নিজ হাতে এর মালা তৈরি করে দিতাম।
অতঃপর তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না যা থেকে কোন ইহরামবিহীন ব্যক্তি
বিরত থাকে না।
৩০৭০। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রংগীন পশমের সূতা আমাদের কাছে ছিল তা দিয়ে
এ সব মালা তৈরি করেছি। অতঃপর তিনি ভোরবেলা ইহুরামবিহীন অবস্হায় উপনীত হতেন এবং
আমাদের কাছে আসেন, ইহরামবিহীন ব্যক্তি নিজ
স্ত্রীর সাথে যা করে, তিনিও তাই করেছেন; কিংবা তিনি বলেন, লোকে
তার স্ত্রীর কাছে যে ভাবে এসে থাকে, তিনিও
সেভাবে আসেন।
৩০৭১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
যেন নিজেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কুরবানীর মেষের জন্য
মালা তৈরিরত দেখতে পাচ্ছি। তিনি তা হরমে পাঠিয়ে দেন এবং আমাদের মাঝে অবস্হান করেন
ইহরামবিহীন ব্যক্তির মতো।
৩০৭২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরি করে
দিতাম এবং তিনি তা নিজের কুরবানীর পশুর গলায় পরিয়ে দিতেন, এরপর তা (মক্কায়) পাঠিয়ে দেন। অতঃপর তিনি
(মদিনায়) অবস্হান করতেন এবং এমন কোন কিছু থেকে বিরত থাকতেন না – যা থেকে ইহরামধারী
ব্যক্তি বিরত থাকে।
৩০৭৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তূল্লাহ হরমে (কুরবানীর উদ্দেশ্যে) ছাগল পাঠান
এবং এর গলায় মালা বাঁধেন।
৩০৭৪। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
বকরীর গলায় মালা পরিয়ে তা (কুরবানীর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহয়) পাঠিয়েছি। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামবিহীন অবস্হায় ছিলেন এবং কোন জিনিস তাঁর জন্য
হারাম ছিল না (যা মুহরিমের জন্য হারাম)।
৩০৭৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আমরাহ বিনত আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু যিয়াদ (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ)-এর কাছে লিখেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস
(রাঃ)বলেনঃ যে ব্যক্তি (মক্কার হবমে) কুরবানীর পশু পাঠায়, হাজীদের জন্য যা করা হারাম তার জন্যও তা করা
হারাম যতক্ষন না ঐ পশু কুরবানী করা হয়। আমি কুরবনীর পশু (হরমে) পাঠিয়েছি। এ
ব্যাপারে আপনার অভিমত আমাকে লিখে জানাবেন।” আমরাহ বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) যে ভাবে বলেছেন, ব্যাপারটি তা নয়। আমি নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর (গলায় বাঁধার) জন্য মালা তৈরি
করে দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে তা পশুর গলায়
বেঁধেছেন, তারপর আমার পিতার মাধ্যমে তা
(হবম শরীফ) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এর ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর উপর এমন কোন জিনিস হারাম হয়নি- যা আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য হালাল
করেছেন। অতঃপর পশু কুরবানী করা হয়েছে।
৩০৭৬। সাঈদ ইবনু মাসরুক
(রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আয়িশা (রাঃ)-কে পর্দার আড়াল থেকে হাত তালি দিয়ে বলতে শুনেছি:আমি নিজ হাতে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরি করে
দিতাম। অতঃপর তিনি (তাঁর) কুরবানীর পশু (মক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু পশু কুরবানী
হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না যা থেকে সাধারণত
ইহরামধারী ব্যক্তিগণ বিরত থাকে।
৩০৭৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৩০৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট টেনে নিয়ে যেতে
দেখলেন। তিনি বললেনঃ এর পিঠে সওয়ার হও। সে বলল, হে
আল্লাহর রাসুল! এটা কুরবানীর উট। তিনি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বারে বললেনঃ তোমার জন্য
আফসোস! এর পিঠে আরোহণ কর।
৩০৭৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী বলেন, একদা এক ব্যক্তি গলায় মালা পরিহিত একটি
কুরবানীর উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
৩০৮০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ হুরায়রা (রাঃ) মুহাম্মদা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে এই হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। এরপর
তিনি কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে একটি এই যে, তিনি বলেন, একদা
এক ব্যক্তি কুরবানীর একটি উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এর গলায় মালা পরিহিত ছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার জন্য আফসোস! এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! এটা কুরবানীর পশু। তিনি বললেনঃ
তোমার জন্য আফসোস! এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার
জন্য আফসোস! এর পিঠে চড়ে যাও।
৩০৮১। আমরুন-নাকিদ, সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি উট টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ এর পিঠে
চড়ে যাও। সে বলল, এটা কুরবানীর উট। তিনি
দুই-তিনবার বললেনঃ এর পিঠে চড়ে যাও।
৩০৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট দিয়ে কুরবানীর উট অথবা কুরবানীর পশু নিয়ে
যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ পিঠে চড়ে যাও। সে বলল, এটা
কুরবানীর উট, কুরবানীর পশু। তিনি বললেনঃ
তাহলেও।
৩০৮৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট দিয়ে
একটি কুরবানীর উট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৩০৮৪। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ)-এর নিকট ,কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ প্রয়োজনবোধে এর
পিঠে আরোহণ করতে পার, একে কষ্ট না দিয়ে- যতক্ষন না
অন্য সওয়ারী পাও।
৩০৮৫। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-এর নিকট
কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি: সহানুভূতির সাথে এর পিঠে আরোহণ কর- যদি অন্য সওয়ারী না পাও।
৩০৮৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) মূসা ইবনু সালামা হুযালী (রহঃ) বলেন, আমি
ও সিনান ইবনু সালামা উমরা পালনের জন্য রওনা হলাম। সিনানের একটি কুরবানীর উট ছিল।
সে পশুটি হাঁকিয়ে নিয়ে যাটিলে। পথি মধ্যে পশুটি অচল হয়ে পড়ল। এ ব্যাপারে সে অসহায়
ও চিন্তথিস্হ হয়ে পড়ল এবং (মনে মনে বলল) এ যদি সামনে অগ্রসর না হতে পারে, তবে এটাকে কি করে গন্তব্যস্হলে নেয়া যাবে? সে বলল, যদি
মক্কা পর্যন্ত পৌছতে পারতাম তবে এ সম্পর্কে ভালরুপে মাসআলা জেনে নিতাম। রাবী বলেন
আমরা দিনের প্রথমভাগে আবার চলতে শুরু করলাম এবং “বাতহা” নামক স্হানে যাত্রা বিরতি
দিলাম। সিনান বলল, চল আমরা ইবনু আব্বাস
(রাঃ)-এর নিকট গিয়ে (বিষয়টি) আলোচনা করি। রাবী বলেন, সিনান
তার নিকটে নিজের উটের কথা বর্ণনা করল। ইবনু আব্বাস (রাঃ)বললেন, তুমি উত্তম রুপে অবহিত ব্যক্তির নিকটই বিষয়টি
বর্ণনা করেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির মাধ্যমে
ষোলটি উট (মক্কার হরমে) পাঠালেন এবং তাকে এগুলোর তত্ত্বাবধায়ক নিমুক্ত করলেন।
রাবী বলেন, সে রওনা হয়ে গেল এবং পূনরায়
ফিরে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি এর
মধ্যকার কোন পশু চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ে, তবে
কি করব? তিনি বললেনঃ তা যবেহ কর এবং
এর (গলায় বাঁধা) জুতা জোড়া রক্তে রঞ্জিত করে এর কূঁজের উপর রেখে দাও। এর গোশত
তুমিও খাবে না তোমার সংগীদের কেউও খাবে না।
৩০৮৭। ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে আঠারটি উট (কুরবানীর জন্য মক্কার হরমে) পাঠালেন। অবশিষ্ট
আবদুল ওয়ারিসের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এই সনদে হাদীসের প্রথমাংশের
(সিনানের সাথে সংশ্লিষ্ট) ঘটনা উল্লেখ নেই।
৩০৮৮। আবূ গাসসান মিসমাঈ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার নিকট যুওয়ায়ব আবূ কাবীসা (রাঃ) বর্ণনা
করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কুরবানীর উটসহ (মক্কায়) পাঠাতেন এবং বলে দিতেন: এগুলোর
মধ্যকার কোন উট দুর্বল হয়ে চলতে অক্ষম হয়ে পড়লে এবং তুমি এর মূতার আশংকা করলে তা
যবেহ করে দিও। অতঃপর এর (গলায় বাঁধা) জুতা জোড়া রক্ত রঞ্জিত করে এর কূঁজে ছাপ মেরে
দিও। তুমি এবং তোমার সংগীদের কেউই এ গোশত খাবে না।”
৩০৮৯। সাঈদ ইবনু মাননূর ও
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা বিভিন্ন পথ দিয়ে প্রত্যাবর্তন করছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “কেউই যেন শেষবারের মত
বায়তূল্লাহ তাওয়াফ না করা পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন না করে।” যুহায়রের বর্ণনায় ‘ফি’
(মাঝে) অব্যয়টি উল্লেখিত।
৩০৯০। সাঈদ ইবনু মানসুর ও
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, লোকদেরকে (প্রত্যাবর্তনকালে) শেষবারের মত
বায়তূল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঋতুমতী মহিলাদেরকে তা থেকে রেহাই
দেয়া হয়েছে।
৩০৯১। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সংগে ছিলাম। যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে
বললেন, আপনি কি এই ফাতওয়া দিয়েছেন
যে, হায়য গ্রস্ত মহিলারা বিদায়ী তাওয়াফ না করেই
প্রস্হান করতে পারবে? ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে
বললেন, যদি আপনি আশ্বস্ত না হতে
পারেন, তবে অমুক আনসারী মহিলাকে
জিজ্ঞাসা করুন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাকে এরুপ নির্দেশ দিয়েছিলেন? তাঊস
বলেন, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হাসতে
হাসতে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন আমি মনে করি আপনি সত্য কথাই
বলেছেন।
৩০৯২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ সালমা ও উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, সাফিয়্যা বিনত হুওয়াই (রাঃ) তাওয়াফে ইফাযা করার
পর হায়য গ্রস্ত হয়ে পড়েন। আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, আমি
তার হায়যের কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উল্লেখ
করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে
রাখবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! সে তাওয়াফে ইফাযা করার পর হায়য গ্রস্ত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে
সে রওনা হতে পারে।
৩০৯৩। আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ)
ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
স্ত্রী সাফিয়্যা বিনত হুওয়াই বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালে পবিত্র অবস্হায় তাওয়াফে ইফাযা
করার পর হায়গ্নস্ত হন। তিনি অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত লায়সের হাদীসের অনুরুপ।
৩০৯৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
নিকট উল্লেখ করলেন যে, সাফিয়্যা (রাঃ)-এর হায়য
হয়েছে। অবশিষ্ট যুহরীর হাদীসের অনুরুপ।
৩০৯৫। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আশংকা করছিলাম যে, সাফিয়্যা (রাঃ) তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বে
হায়যগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং বললেন সাফিয়্যা আমাদের আটকে
রাখবে হয়ত।” আমরা বললাম, তিনি তাওয়াফে ইফাযা করেছেন।
তিনি বললেনঃ তাহলে আটকে পড়ার কোন কারণ নেই।
৩০৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সাফিয়্যা
বিনত হুওয়াই হায়যগ্রস্তা হয়ে পড়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ হয়ত সে আমাদের আটকে রাখবে। সে কি তোমাদের সংগে বায়তূল্লাহ তাওয়াফ করেনি? তারা বললেন, হ্যা।
তিনি বললেনঃ তবে তোমরা চল।
৩০৯৭। হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন পূরুষ স্ত্রীর সাথে
সাধারণত যা করার ইচ্ছা করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাফিয়্যা (রাঃ)-এর সাথে তাই করার ইচ্ছা করলেন। তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি হায়যগ্রস্তা। তিনি
বললেনঃ তাহাল সে তো আমাদের এখানে অবস্হান করতে বাধ্য করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কুরবানীর দিন
(বায়তুল্লাহ-এর) যিয়ারত করেছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে সে তোমাদের সংগে যাত্রা করুক।
৩০৯৮। মুহাম্মাদ ইবনুল
মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ
ইবনু মু’আয (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রওনা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন সাফিয়্যাকে তাঁর তাঁবুর দরজায় চিন্তিতা ও
অবসা’দ গ্রস্তা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ বন্ধ্যা, নেড়ি!
তুমি আমাদের (এখানে) আটকে রাখবে? তিনি পূনরায় তাকে বললেনঃ
তুমি কি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ) যিয়ারত করেছ? তিনি
বললেন, হ্যা। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে রওনা হও।
৩০৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে এই সূত্রে উপরোক্ত হাকওমের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে
“চিন্তিতা- ও অবসা’দগ্রস্তা শব্দদ্বয়ের উল্লেখ নেই।
৩১০০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উসামা, বিলাল
ও উসমান ইবনু তালহা হাজাবী (রাঃ) কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। তারপর তিনি ভিতর
থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং কিছুক্ষণ সেখানে অবস্হান করলেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি বিলালকে বের হয়ে আসলে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
“কি করেছেন? তিনি বললেন, তিনি দুইটি থাম নিজের বাঁ দিকে একটি থাম ডান
পাশে এবং তিনটি থাম পেছনে রেখে সালাত আদায় করলেন। তৎকালে বায়তূল্লাহ ছয়টি থামের
উপর দণ্ডায়মান ছিল।
৩১০১। আবূর-রবী যাহরানী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা
বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) এলেন এবং কাবার
চত্বরে অবতরণ করলেন। অতঃপর উসমান ইবনু তালহা (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি চাবি
নিয়ে এলেন এবং (কাবার) দরজা খুললেন। রাবী বলেন, অতঃপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল, উসামা
ইবনু যায়দ ও উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) ভিতরে প্রবেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দরজা (ভিতর থেকে) বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন, অতএব তা বন্ধ করে দেয়া হলো। তালা কিছু সময়
ভিতরে অবস্হান করলেন। অতঃপর দরজা খোলা হল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি বাইরে সকলের আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে মিলিত হলাম এবং বিলাল তাঁর পেছনে ছিলেন। আমি বিলালকে
বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কাবার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা।
আমি বললাম, কোন জায়গায়? বিলাল (রাঃ)বললেন, তাঁর সামনের দুই থামের মাঝখানে। ইবনু উমর (রাঃ)
বলেন, তিনি কত রাক’আত সালাত আদায়
করেছেন, বিলালের নিকট তা জিজ্ঞাসা
করতে আমি ভুলে গেছি।
৩১০২। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা
বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর
উষ্ট্রীতে আরোহণ করে (মক্কায়) আগমণ করেন। উসামা (রাঃ) উষ্ট্রীকে কাবার চত্বরে
বসান। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু তালহা
(রাঃ)-কে ডাকলেন এবং বললেন, আমার নিকট (কাবার) চাবি নিয়ে
এসো। তিনি তার মায়ের নিকট উপস্হিত হয়ে চাবি চাইলেন কিন্তু তিনি তাকে চাবি দিতে
অস্বীকৃতি জানান। উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর
শপথ! তাঁকে চাবি দিন, অন্যথায় এই তরবারি আমার পিথ
ভেদ করে চলে যাবে। অতঃপর তিনি তাকে চাবি দিলেন। তিনি চাবি নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তা তাঁর নিকট হস্তান্তর করেন। তিনি কা’বার দরজা
খূললেন। তিনি হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাসা’দ ইবনু যায়দের হাদীসের
অনুরুপ।
৩১০৩। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তূল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং তার সংগে
ছিলেন উসামা, বিলাল ও উসমান ইবনু তালহা
(রাঃ) লোকেরা অনেকক্ষণ দরজা বন্ধ করে রাখল। অতঃপর তা খোলা হল। আমিই সর্ব প্রথম
(অগ্রসর হয়ে ভিতরে) প্রবেশ করে বিনালকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কান
স্হানে সালাত আদায় করেছেন? বিলাল বললেন, সামনের দুই থামের মাঝখানে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা
করতে ভুলে গেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকআত সালাত আদায় করেছেন।
৩১০৪। হুমায়দ ইবনু মাসাআদা
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কাবা শরীফের নিকটে পৌছলেন।
ইতিমধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল ও উসামা (রাঃ) কা-বার
অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছু
সময় কাবার অভ্যন্তরে অবস্হান করলেন। অতঃপর দরজা খোলা হল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন। আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম এবং বায়তূল্লাহর
অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় সালাত আদায় করেছেন? তারা বললেন,-এখানে।
ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, তিনি কত রাকআত সালাত আদায়
করেছেন তা আমি তাদের নিকট জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি।
৩১০৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
ইবনু রুমহ (রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতা সুত্রে বর্ণিত। তিনি (পিতা) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উসামা ইবনু যায়দ, বিলাল ও উসমান ইবনু তালহা
(রাঃ) বায়তুল্লাহয় প্রবেশ করলেন। অতঃপর তারা দরজা বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর যখন তারা
দরজা খুললেন, তখন প্রথমেই আমি ভিতরে
প্রবেশ করলাম এবং বিলালের সাথে মিলিত হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
ভিতরে সালাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা, তিনি
দুই ইয়ামানী থামের মাঝখানে সালাত আদায় করেছেন।
৩১০৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম, উসামা ইবনু যায়দ, বিলাল ও উসমান ইবনু তালহা (রাঃ)-কে কা-বার
অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেখলাম। তাদের সংগে আর কেউ প্রবেশ করেনি। অতঃপর দরজ বন্ধ
করে দেয়া হল। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, বিলাল
অথবা উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার কেন্দ্রস্হলে ইয়ামানী দুই স্তম্ভের মাঝখানে
দাড়িয়ে সালাত আদায় করলেন।
৩১০৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি
আতা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি কি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন:
তোমাদের কেবল তাওয়াফের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বায়তুল্লাহ
অভ্যন্তরে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়নি? আতা
বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো কাবার
অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধ করেননি, বরং আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ
উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এর সকল পার্শে
দু’আ করেছেন কিন্তু বের হওয়া পর্যন্ত কোন সালাত আদায় করেননি। তিনি বের হয়ে এসে
বায়তুল্লাহ দিকে মুখ করে দুরাকআত সালাত আদায় করেছে এবং বলেছেন, এ হল কিবলা। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এর পার্শ বলতে কি বুঝায়? তা দিয়ে কি কোণ বুঝানো হয়েছে? তিনি (আতা) আরও বললেন, এর সমস্ত পার্শও কোণই কিবলা।
৩১০৮। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার
অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। আর তাতে ছিল ছয়টি স্তম্ভ। একটি থামের পার্শে দৗড়িয়ে তিনি
দু’আ করেছেন তিনি সালাত আদায় করেননি।
৩১০৯। সূরায়জ (রহঃ) ইসমাঈল
আবূ খালিদ বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আবূ আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা
আদায়কালে বায়তুল্লাহ অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন কি? তিনি
বললেন না।
৩১১০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তোমার জাতির লোকদের কুফরি
পরিত্যাগের যুগটি নিকটবর্তী না হলে আমি কাবাঘর ভেঙ্গে তা ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর ভিতের উপর পূনর্নিমাণ করতাম। কারণ কুরায়শগণ কাবাঘর নির্মানের সময়
এর আয়তন ছোট করে দিয়েছে। আর তার পেছনে একটি দরজা স্হাপন করতাম।
৩১১১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত।
৩১১২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, তুমি কি দেখনি যে, তোমার গোত্রের লোকেরা কাবাঘর নির্মাণের সময়
তা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ভিত্তিগুলোর চেয়ে ছোট করে দেয়? আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি কি তা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ভিতের উপর পূনর্নির্মাণ
করতে চান? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কওমের কুফরী পরিত্যাগের যুগটি যদি নিকটতর না হতো
(তরে তাই করতাম)। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, যদিও
বা আয়িশা (রাঃ) -এর মুখে শুনে থাকবেন। কিন্তু হাজারের নিকটবর্তী উভয় রুকনের স্পর্শ
ত্যাগ করতে দেখিনি। তবে বায়তুল্লাহ ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর গোটা ভিতের
উপর পূনর্নির্মিত।
৩১১৩। আবূত-তাহির ও হারুন
ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি
জাহেলী যুগের কাছাকাছি না হতো অথবা নিকট অতীতে কুফরী ত্যাগ না করত, তবে আমি অবশ্যই কাবায় পূজীভূত সম্পদ আল্লাহর
রাস্তায় খরচ করতাম, এর দরজা ভূমির সমতলে স্হাপন
করতাম এবং হাতীমকে কাবার অন্তভুক্ত করে দিতাম।
৩১১৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) সাঈদ ইবনু মীনাআ বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু যূবায়র
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার খালা আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে
আয়িশা! তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা নিকট অতীতে শিরক পরিত্যাগ না করলে আমি কাবাঘর
ভেংগে এর ভিত ভূমির সমতলে স্হাপন করতাম। এর দুটি দরজা করতাম- একটি পূর্বদিকে, অপরটি পশ্চিমদিকে এবং আলহাজার (হাতীম)-এর ছয় গজ
স্হান কাবার অন্তভুক্ত করতাম। কেননা কুরায়শরা কাবা ঘর নির্মাণকালে এর ভিত ছোট করে
দেয়।
৩১১৫। হান্নাদ ইবনুল সারী
(রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াযীদ
ইবনু মুআবিয়ার সময় কাবাঘর দগ্নীভূত হয়েছিল যখন সিরীয় বাহিনী মক্কায় যুদ্ধে লিপ্ত
ছিল (৬৩ হিজরী) এবং কাঁবার যা হবার তাই হল। হজ্জের মৌসূমে লোকদের আগমণের সময়
আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) কাবাকে এই অবস্হায় রেখে দিলেন। তার উদ্দেশ্যে ছিল
লোকদেরকে উদ্দীপ্ত করা অথবা তাদের মধ্যে সিরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার
মনোবল সৃষ্টি করা। লোকেরা সমবেত হলে তিনি বললেন, হে
জনগণ! আমাকে কাবাঘর সম্পর্কে পরামর্শ দিন। আমি কি তা ভেংগে ফেলে সম্পূর্ণ নতুনভাবে
গড়ে তুলব, নাকি শুধু এর ক্ষতিগ্রস্ত
অংশ মেরামত করব? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার মনে একটি মতের উদয় হয়েছে, আমি মনে করি যে, শুধু
ক্ষতিগ্রস্ত অংশ তুমি মেরামত করবে এবং লোকদের ইসলাম গ্রহণ ও রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়াত লাভকালীন সময়ে কাবাঘর ও পাথরসমূহ যে
অবস্হায় ছিল, তা সেই আবস্হায় রেখে দেবে।
ইবনু যুবায়র (রাঃ)বললেন, আপনাদের কারো ঘর অগ্নিদগ্ধ
হলে তা সংস্কার না করা পর্যন্ত তিনি সূস্তি লাভ করতে পারেন না। অতএব আপনাদের
প্রতিপালকের ঘর কি করে এররূপ অবস্হায় রাখা যেতে পারে? আমি আমার রব-এর কাছে তিন দিন ইস্তিখারা করব
(অভিপ্রায় অবগত হওয়ার জন্য)। অতঃপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তিন দিন পর তিনি
কা-বাঘর ভেংগে পূনর্নির্মাণের দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। লোকেরা আশংকা করল যে, সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি কাবার ছাদে উঠবে, সে হয়ত কোন আসমানী গযবে নিপতিত হবে। শেষ
পর্যন্ত এক ব্যক্তি (ছাদ ভাংগার জন্য) কয়-বার ছাদে উঠল এবং তার একটি পাথর নীচে
ফেলল। লোকেরা যখন দেখল সে কোন বিপদে পড়েনি, তখন
তারাও তাকে অনুসরণ করল এবং কাবাঘর ভেংগে যমীনের সাথে মিশিয়ে দিল। অতঃপর ইবনু
যুবায়র (রাঃ) কতগুলো থাম স্হাপন করে এগুলোর সাথে পর্দা ঝূলিয়ে দিলেন। অবশেষে কা,বার দেয়ালের গাথুনি উচ্চ হল। ইবনু যুবায়র
(রাঃ)বললেন, অবশ্যই আমি আয়িশা (রাঃ)-কে
বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “লোকেরা যদি নিকট অতীতে কুফরী ত্যাগ না করত এবং আমার নিকটও
কাবাকে পূনর্নির্মাণ করার মত অর্থ-সামর্থ্যও নেই তাহলে আমি অবশ্যই আলহাজার
(হাতীম)-এর পাচ গজ স্হান কা-বা ঘরের অন্তর্ভুক্ত করতাম এবং লোকদের প্রবেশের জন্য ও
বের হওয়ার জন্য এর দুটি দরজা বানাতাম। ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, বর্তমানে আমার হাতে তা নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত
অর্থ আছে এবং লোকদের তরফ থেকেও কোন প্রতিবাদের আশংকা নেই। সাবী বলেন- এরপর হাতীমের
পাঁচ গজ এলাকা কা-বার অন্তর্ভুক্ত করলেন। ফলে তা (পূরাতন) ভিতের উপর গড়ে উঠল ইযার
উপর ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা গড়েছিলেন এবং লোকেরা তা অবলোকন করল। এই
ভিতের উপর দেয়াল গড়ে তোলা হল। কাবার দৈর্ঘ্য ছিল আঠার গজ। তা যখন (প্রস্হে) বাড়ানো
হল, তখন (স্বাভাবিকভাবেই দৈর্ঘ্যে) তা ছোট হওয়ায়
দৈর্ঘ্যে তা আরও দশ গজ বৃদ্ধি করা হল এবং এর দুটি দরজা নির্মাণ করা হল, একটি প্রবেশের জন্য এবং অপরটি প্রস্হানের জন্য।
ইবনু যুবায়র (রাঃ) শহীদ হলে হাজ্জাজ ইবনু ইউসূফ) আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানকে তা
লিখে জানাল। সে আরও জানাল যে, ইবনু যুবায়র (কা’বার ঘর) সেই
ভিতের উপর নির্মাণ করেছে যা ছিল ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ভিত এবং মক্কার
বিশ্বস্ত লোকেরা তা যাচাই করে দেখেছে। আব্দুল মালিক তাকে লিখে পাঠালেন যে, কোন বিষয়ে ইবনু যুবায়রকে অভিযুক্ত করার প্রয়োজন
আমাদের নেই। সে দৈর্ঘ্যে যতইকু বর্ধিত করেছে, তা
বহাল রাখ এবং হাতীমের দিকে যতইক বর্ধিত করেছে, তা
ভেঙ্গে পূর্বাবস্হায় নিয়ে আসো। আর সে যে (নতূন) দরজা খুলেছে তা বন্ধ করে দাও। এরপর
হাজ্জাজ তা ভেংগে পূর্বের ভিতের উপর পূননির্মাণ করে।
৩১১৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) হারিস ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ রবিআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উবায়দ
বলেন, হারিস ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
হিসেবে আব্দুল মালিক ইবনু মারওয়ানের রাজত্বকালে তার নিকট গিয়েছিলেন। আবদুল মালিক
বললেন, আমি মনে করি না যে, আবূ যুবায়র অর্থাৎ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আয়িশা
(রাঃ)-এর নিকট এমন কথা শুনেছেন যার দাবি তিনি করে থাকেন। অর্থাৎ ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর ভিত-এর উপর কাবা ঘরের পুনঁনির্মাণের ব্যাপারে রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অভিপ্রায় সম্পর্কিত কোন হাদীস তিনি আয়িশা
(রাঃ)-এর নিকট শুনেন নি। হারিস বলেন, হ্যা, আমি নিজেই তার নিকট এই হাদীস শুনেছি। আবদুল
মালিক বললেন, আপনি তাকে কি বলতে শুনেছেন? হারিস বলেন, আয়িশা
(রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “তোমার কওমের লোকেরা কাবা ঘরের ভীত (আয়তনে) ছোট করে
ফেলেছো নিকট অতীতে তারা শিরক পরিত্যাগ না করলে আমি তাদের পরিত্যক্ত অংশটুকু কাবার
অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম। তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি আমার পরে তা পূননির্মাণের
পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এস, আমি তোমাকে তাদের পরিত্যক্ত অংশটুকু দেখিয়ে দই”
অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা-কে (হাতীম সংলগ্ন) প্রায়
সাত গজ স্থান দেখিয়ে দিলেন। এই হাদীস আবদুল্লাহ ইবনু উবায়দ কর্তুক বর্ণিত। ওয়ালীদ
ইবনু আতা এ বর্ণনার উপর আরো বৃদ্ধি করেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি যমীনের সমতলে দুটি দরজাও নির্মাণ করতাম- একটি পূর্বদিকে এবং অপরটি
পশ্চিমদিকে। তুমি কি জান তোমার গোত্রের লোকেরা কা’বার দরজা (ভূমি থেকে) উচুতে
স্হাপন করেছে কেন?” আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, না।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গর্ব ও অহংকারের বশবতী হয়ে (তারা এটা
করেছে) যাতে কেবল সেই ব্যক্তই কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে- যাকে তারা অনুমতি
দেবে। যখন কোন ব্যক্তি কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশের ইচ্ছা করত, তারা তাকে বেয়ে উপরে উঠতে দিত। এমনকি সে যখন
তাতে প্রবেশ করত, তখন তারা তাকে টেনে নীচে
ফেলে দিত। ”আবদুল মালিক হারিসকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি
কি আয়িশা (রাঃ)-কে একথা বলতে শুনেছেন? তিনি
বললেন, হ্যা। রাবী বলেন, কিছুক্ষণ হাতের ছড়ি দিয়ে মাটি খুড়তে লাগলেন, এরপর বললেনঃ আমি তার ইবনু যুবায়র) কাজ স্ব
অবস্হায় বহাল রাখার আকাঙ্ক্ষা করছি।
৩১১৭। মুহাম্মাদ ইবনু আমর
ইবনু জাবালা ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এই সনদে ইবনু বকর-এর
হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১১৮। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আবূ কাযাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান বায়তুল্লাহ
তাওয়াফকালে বলে উঠলেন, আল্লাহ ইবনু মুবাযুরকে ধ্বংস
করুন- যেহেতু সে উম্মুল মুমিনীন (আয়িশা)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে যে, সে তাকে নাকি বলতে শুনেছে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ হে আয়িশা! তোমার সম্প্রদায় যদি নিকট অতীতে কুফুরি পরিত্যাগকারী না হতো তবে
আমি কা-বাঘর ভেংগে তাতে হাতীমের অংশ যুক্ত করে দিতাম। কারণ তোমার সম্প্রদায় কা-বার
আয়তন ছোট করে দিয়েছে।” (আব্দুল মালিকের এই কথার উপর) হারিস ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
আবূ রবীআ বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! এই কথা
আর বলবেন না। কারণ আমি নিজে উম্মুল মুমিনীন (আয়িশা)-কে একথা বলতে শুনেছি। অতঃপর
আব্দুল মালিক বললেন, কাবাঘর ভাংগার পুর্বে যদি
আমি তা শুনতে পেতাম, তাহলে ইবনু যুবায়য়ের ভিতের
উপরই তা অটুট রাখতাম।
৩১১৯। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, হাতীমের দেয়াল কি বায়তুল্লাহর অন্তভুক্ত? তিনি বললেনঃ হ্যা। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, তবে তারা কেন এটাকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত
করেনি? তিনি বললেনঃ তোমার
সম্প্রদায়ের নিকট পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এর দরজা উচুতে স্বাপিত হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেনঃ তাও তোমার সম্প্রদায়ের কান্ড যাতে
তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি তাতে প্রবেশাধিকার পায় এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তি প্রবেশ করতে
না পারে। তোমার কওমের জাহিলিয়াত পরিত্যাগের যুগ নিকটতম না হলে এবং আমার যদি এই
আশংকা না হতো যে, তাদের অন্তর পরিবর্তিত হয়ে
যেতে পারে- তা হলে আমি অবশ্যই (হাতীমের) দেয়াল বায়তুল্লাহ অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম
এবং কাবার দরজা যমীনের সমতলে স্হাপন করার বিষয়ে বিবেচনা করতাম।
৩১২০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আল হাজার (হাতীম) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
জিজ্ঞাসা করলাম। এরপর পূর্বোক্ত আবূল-আহওয়াসের হাদীসের অনুরুপ। এই বর্ণনায় আছে
আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেনঃ “এর দরজা উচুতে স্হাপিত হওয়ার কারণ কি যে, সিড়ি ব্যতীত তাতে উঠা যায় না? ”এতে আরো আছে “তাদের অন্তর পরিবর্তিত হয়ে যাওযার
আশংকায়।”
৩১২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফযল ইবনু আববাস (রাঃ) সওয়ারীতে রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। এমতাবস্হায় খাসআম
গোত্রের এক মহিলা তাঁর নিকট মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে আসলো। ফযলও তার দিকে তাকাচ্ছিল
এবং মহিলাটিও ফযলের দিকে তাকাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ফযল -এর মুখমণ্ডল অন্যদিকে ঘূরিয়ে দিলেন। মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর
যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরয করেছেন তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপরও ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর অবস্হান করতে অক্ষম।
আমি কি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারি? তিনি
বললেনঃ হ্যা। এটা বিদায় হজ্জের সময়কার ঘটনা।
৩১২২। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফযলের সুত্রে বর্ণিত। খাসআম গোত্রের এক মহিলা বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ হয়ে
পড়েছেন এবং তার উপর আল্লাহর ধার্যকৃত হাজ্জ (হজ্জ) ফরয হয়েছে। কিন্তু তিনি তার
উটের পিঠে বসে থাকতে সক্ষম নন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি
তার পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) কর।
৩১২৩। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ
উমর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রাওহা নামক স্থানে একদল আরেহীর নাক্ষাত পালের এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা
মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর
রাসুল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করল, এর জন্য হাজ্জ (হজ্জ) আছে কি? তিনি বললেন, হ্যা
এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে।
৩১২৪। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনুল আলা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা তার শিশু পুত্রকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস
করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর জন্য হাজ্জ (হজ্জ) হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যা এবং তোমার জন্য রয়েছে
সাওয়াব।
৩১২৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) কুরায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। এক মহিলা তার শিশুকে তুলে ধরে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর হাজ্জ (হজ্জ) হবে কি? তিনি বললেন, হাঁ
এবং তোমার জন্য সাওয়াব হবে।
৩১২৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে এই সনদ সুত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩১২৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ হে জনগণ!
তোমাদের উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হাজ্জ (হজ্জ) কর। এক ব্যক্তি
জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তা কি
প্রতি বছর? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলল। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি
হাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে (প্রতি বছরের জন্য) অথচ তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে
না। তিনি পূনরায় বললেনঃ তোমরা আমাকে ততইকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের
জন্য বলি। কারণ তোমাদের পুর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের
নাবীদের (নবীদের) সাথে বিরোধীতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু
করার নির্দেশ দেই- তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ
করি তখন তা পরিত্যাগ কর।
৩১২৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন
মাহিলা যেন সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া একাকী তিন দিনের (দ্যুারত্বে) সফর না করে।
৩১২৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। আবূ বকর (রহঃ)-এর
বর্ণনায় রয়েছেঃ -তিন দিনের অতিরিক্ত আর ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর পিতার সূত্রে বর্ণনায়
রয়েছে- সালাসাহ- (তিনরাত)
৩১৩০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ যে ন্ত্রীলোক আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান এনেছে- তার জন্য সাথে কোন মাহরাম
ব্যক্তি ছাড়া তিন দিনের দূরত্বের পথের সফর করা বৈধ নয়।
৩১৩১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) কাযাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট থেকে একটি
হাদীস শুনে আশ্চর্যানিত হলাম এবং তাকে জিজ্ঞেসা করলাম- আপনি কি তা সরাসরি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি
যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শুনি নি তা কেন তাঁর নামে
বলব। কাযাআ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কেবল তিনটি মসজিদের দিকেই (সাওয়াবের উদ্দেশ্যে)
সফর করঃ আমার এই মসজিদ, মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে
আকসা। আমি তাকে আরও বলতে শুনেছি:কোন – মহিলা যেন দুই দিনের পথেও সফর না করে- তার
সাথে তার কোন মাহরাম পূরুষ অথবা তার স্বামী ব্যতীত।”
৩১৩২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট চারটি কথা শুনেছি এবং তা আমার পছন্দ হয়েছে ও আমার কাছে ভাল
লেগেছে। সাথে স্বামী অথবা কোন মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত কোন মহিলাকে দুই দিনের পথও
সফর করতে তিনি নিষেধ করেছেন। অতঃপর তিনি অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩১৩৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ন্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ
ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর না করে।
৩১৩৪। আবূ গাসসান মিসমাঈ
(রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন স্ত্রীলোক যেন তিনি দিনের দুরত্বের পথ
একাকী সফর না করেন- তার সাথে একজন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত।
৩১৩৫। ইবনু মূসান্না (রহঃ)
কাতাদা (রহঃ) থেকে এই সনদ সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। এই
বর্ণনায় আছেঃ তিন দিনের অতিরিক্ত দুরত্ব, সাথে
মাহরাম পুরুষ ব্যতীত।
৩১৩৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম মহিলার জন্য সাথে তার কোন মাহরাম পূরুষ
ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়।
৩১৩৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে-
তার জন্য সাথে কোন মাহরাম পূরুষ ব্যতীত এক দিনের দূরত্বের পথ সফর করা হালাল নয়।
৩১৩৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তার জন্য সংগে কোন মাহরাম
পুরুষ ব্যতীত একাকী এক দিন ও এক রাতের সূরত্বের পথও সফর করা হালাল নয়।
৩১৩৯। আবূ কামিলা জাহদারী
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ন্ত্রীলোকের জন্য তার সাথে কোন
মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়।
৩১৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ- যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে তার পিতা অথবা তার ছেলে
অথবা তার স্বামী অথবা তার ভাই অথবা তার অপর কোন মাহরাম আত্নীয় তার সফর সঙ্গী না
হলে তার জন্য তিন দিন বা তার অতিরিক্ত সময়ের পথ সফর করা হালাল নয়।
৩১৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩১৪২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে
ভাষণ দিতে শুনেছিঃ সাথে মাহরাম পুরুষ না থাকা অবস্হায় কোন পুরুষ লোক যেন কোন
মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাত না করে। কোন ন্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ
ছাড়া একাকী সফর না করে। এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আমার স্ত্রী হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্য
বাহিনীতে তালিকা করা হয়েছে- যা অমুক স্হানে যূদ্ধে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি চলে যাও
এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) কর।
৩১৪৩। আবূর রাবী যাহরানী
(রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে।
৩১৪৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই
সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ
নাইঃ কোন পুরুষ লোক যেন কোন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাত না করে, কিন্তু তার সাথে তার কোন মাহরাম পুরুষ থাকলে
স্বতন্ত্র কথা।”
৩১৪৫। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে তাঁর উটে আরোহণের সময়
তিনবার “আল্লাহু আকবার, (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলতেন, এরপর যে দুআ পাঠ করতেন তার অর্থ এইঃ –পবিত্র
মহান সেই সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না।
আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমাদের এই
সফরে আমরা তোমার নিকট কল্যাণ, তাকওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি
বিধানকারী কাজের তৌফিক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এই সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও
এবং এর দুরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের
তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সস্পদ ও পরিবারের
ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে। এরপর তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখনও উপরোক্ত দুআ পড়তেন
এবং এর সাথে যোগ করতেন:(অর্থ) -আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, আমাদের
প্রতিপালকের ইবাদতকারী ও প্রশংসাকারী। পূর্ববতী পূর্বাপর পর্ব ইমাম মালিক, শাফিঈ (প্রসিদ্ধ মত), আওযাঈ, আতা, সাঈদ ইবনু জুবায়র ও ইবনু সীরীনের মতে হাজ্জ
(হজ্জ) ফরয হওয়ার জন্য কোন মহিলার সাথে তার মাহরাম থাকা শর্ত নয়, বরং নিজের জীবনের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত
হওয়া আবশ্যক। ইমাম শাফিঈর মতে তিনটি জিনিসের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ হয়:(১) স্বামী
বা (২) অন্য কোন মাহরাম পুরুষ বা (৩) একদল বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মহিলা। এই
তিনটির কোন একটির অভাবে কোন মহিলার উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরয হয় না। কতক মনীষী নফল
হাজ্জ (হজ্জ) ও ব্যবসায়িক সফর মাহরাম ব্যতীত জায়িয বলেন- যদি তা একদল নির্তরযোগ্য
মহিলার একত্র সফর হয়।
৩১৪৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন সফর করতেন তখন আশ্রয় প্রার্থনা করতেন সফরের কষ্ট থেকে, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে, সুখময় অবস্হার পর দুঃখময় অবস্হায় পড়িত হওয়া
থেকে, মযলূমের বদদুআ থেকে এবং
সম্পদ ও পরিবার- পরিজনের ক্ষতিকর দৃশ্য অবলোকন থেকে।
৩১৪৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আসিম আন-আহওয়ালি (রহঃ) থেকে এই সনদে উপরের হাদীসের
অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য আব্দুল ওয়াহিদের বর্ণনায় -ফীল মাল ওয়াল আহব এবং
মুহাম্মাদ ইবনু হাযমের বর্ণনায় প্রত্যাবর্তনকালে প্রথমে আহব- শব্দ রয়েছে। উভয়ের
বর্ণনায় রয়েছে:“আয় আল্লাহ! -আমি সফরে কষ্ট ক্লান্তি হতে তোমার কাছে পানাহ চাই।”
৩১৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদ, অভিযান, হাজ্জ (হজ্জ) অথবা উমরা করে ফিরে আসার সময় যখন
কোন উচুটিলা বা কংকর ময় উচ্চভূমিতে আরোহণ করতেন তখন তিনবার “আল্লাহআল্লাহ” (আল্লাহ
সর্বশ্রেষ্ঠ) ধনি দিতেন এরপর এই দুআ পড়তেন। অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নাই।
তাঁরই রাজত্ব (বা সার্বভৌমত্ব), তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং
তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান (আমরা) প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আমাদের প্রতিপালককে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী।
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য
করেছেন এবং একাই সমিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন।”
৩১৪৯। যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু আবূ উমর ও ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)
থেকে এই সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র আয়্যুবের বর্ণনা দু-বার তাকবীরের কথা উল্লেখ আছে।
৩১৫০। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আবূ তালহা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উষ্ট্রীর
পিঠে পেছনে সাওয়ার ছিলেন। আমরা যখন মদিনার শহরতলীতে পৌছলাম তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়লেনঃ (অর্থ) “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, আমাদের
প্রভূর ইবাদাতকারী, প্রশংসাকারী।, আমরা মদিনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি অবিরত এই
দু’আ পড়তে থাকতেন।
৩১৫১। হুমায়দ ইবনু মাসআদা (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৫২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূল-হুলায়ফার কংকরময় ভূমি (বাতহা)-তে তাঁর উট
বসালেন এবং সেখানে সালাত আদায় করলেন। নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) ও তাই করতেন।
৩১৫৩। মুহাম্মদ ইবনু রুমহ
ইবনু মুহাজির মিসরী ও কুতায়বা (রহঃ) নাফিঁ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) যুল-হুলায়ফার বাতহা প্রান্তরে
তাঁর উট বসাতেন সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উট বসাতেন
এবং সালাত আদায় করতেন।
৩১৫৪। মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ)
অথবা উমরা সমাপনান্তে ফেরার পথে যুল-হুলায়ফার কংকরময় ভূমিতে নিজের উট বসাতেন
যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উট বসাতেন।
৩১৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ
(রহঃ) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্রের বর্ণিত। যূল-হুলায়ফায় রাতের শেষ ভাগে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (কোন আগন্তুক ফিরিশ্তা)
আবির্ভুত হয়। তাঁকে বলা হল, আপনি বরুকত পূর্ণ পাথরময় স্হানে
(অবস্থানকরছেন)।
৩১৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু বাহনর
(রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যূল-হুলায়ফার উপত্যকার কেন্দ্রস্হলে অবস্হানকালে
রাতের বিশেষ প্রহরে তাঁর নিকট (কোন ফিরিশতা) আবির্ভুত হয় এবং বলা হয়ঃ আপনি
বরকতপূর্ণ কংকরময় স্হানে (অবস্হান করছেন)। মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বলেন, সালিম (রহঃ) আমাদের সাথে সফরকালে মসজিদের নিকট
তাঁর উট বসাতেন। যেখানে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নিজের বসাতেন এবং এই স্থানকে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবতরণ (অবস্হান) স্হল মনে করতেন।
স্হানটি উপত্যকার কেন্দ্রস্হলে নির্মিত মসজিদের নিম্নদেশের সমতলে মসজিদও কিবলার
মাঝখানে অবস্হিত।
৩১৫৭। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
(রহঃ) আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায়
হজ্জের পূর্ববতী (বছরের) যে হজ্জে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ
বকর সিদ্দীক (রাঃ) কে আমীর নিয়োগ করেছিলেন, সেই
হজ্জের সময় তিনি (আবূ বকর) আমাকে সহ একদল লোককে কুরবানীর দিন জনগণের মধ্যে
নিন্নোক্ত ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেনঃ “এ বছরের পর মুশরিকরা আর হাজ্জ (হজ্জ) করতে
পারবে না এবং উলংগ অবস্হায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করবে না।” ইবনু শিহাব বলেন,আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর এই হাদীস অনুযায়ী হুমায়দ
ইবনু আব্দুর রহমান বলতেন- “মহান হজ্জের দিন হচ্ছে এই কুরবানীর দিন।
৩১৫৮। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী
(রহঃ) সাঈদ ইবনুল মূসায়্যাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা
(রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আরাফাত দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নাই- যে দিন আল্লাহ
তাড়িআলা সর্বাধিক সংখ্যক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তাআলা
নিকটবর্তী হন অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে ফিরিশতাদের সামনে গৌরব প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ
তারা কি উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছে (বা তারা কি চায়)?
৩১৫৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ একটি উমরা পরবর্তী উমরা পর্যন্ত মাঝখানের শুনাহসমূহের কাফফারা স্বরুপ এবং
ক্রটিমুক্ত (অথবা আল্লাহর নিকট গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।
৩১৬০। সাঈদ ইবনু মানসূর
মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল মালেক, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই সনদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩১৬১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই (কাবা) ঘরে (হজ্জের উদ্দেশ্যে) আসে অতঃপর
অশ্লীল আচরণও করে না এবং দুস্কর্মও করে না সে এমন (নিষ্পাপ) ভাবে প্রত্যাবর্তন করে
যে তার জননী তাকে (নিষ্পাপ অবস্হায়) প্রসব করেছেন।
৩১৬২। সাঈদ ইবনু মানসুর আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু মূসান্না (রহঃ) মানসূর
(রহঃ) থেকে এই সনদের পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তরে হাদীসটি এভাবে
শুরু হয়েছে যে ব্যক্তি হাজ্জ (হজ্জ) করে এবং (এ সময়) কোনরুপ অশ্লীল আচরণও করে না, দুস্কর্মও করে না”।
৩১৬৩। সাঈদ ইবনু মানসুর
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৬৪। আবূ তাহির (রহঃ) উসামা
ইবনু যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি কি মক্কায় আপনার বাড়ীতে
অবতরণ করবেন? তিনি বললেনঃ আকীল কি
আমাদেরজন্য কোন চার দেয়াল বা ঘর অবশিষ্ট রেখেছে? আবূ
তালিবের (মৃত্যুর পর তার পুত্র) আকীল ও তালিব তার ওয়ারিস হয়, কিন্তু জাফর ও আলী তার কোন ওয়ারিস হতে পারে নি।
কেননা তারা উভযে (আবূ তালিবের মৃত্যুর সময়) ছিলেন মুসলমান এবং আকীল ও তালিব ছিল
কাফির।
৩১৬৫। মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান
রাযী (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আগামী কাল কোথায় অবতরণ
করবেন? এটা ছিল তাঁর বিদায় হাজ্জ
(হজ্জ)কালীন ঘটনা, যখন আমরা মক্কার নিকটবর্তী
হয়েছিলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাসস্হান অবশিষ্ট রেখেছে?
৩১৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর মর্জি আপনি আগামীকাল
কোথায় অবতরণ করবেন? এটা মক্কা বিজয়কালের
বক্তব্য। তিনি বললেনঃ আকীল কি আমাদের জন্য কোন বাবস্হান অবশিষ্ট রেখেছে?
৩১৬৭। আবদুল্লাহ মাসলামা
ইবনু কানাব (রহঃ) আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে
মুহাজিরগণ তিনদিন মক্কায় অবস্হান করবে। তিনি যেন এ বাক্যের দ্বারা তিন দিনের অধিক
না হবার কথা বলেছেন।
৩১৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাজিরগণ হাজ্জ (হজ্জ) সমাপান্তে মক্কায়
তিন দিন অবস্হান করতে পারবে।
৩১৬৯। হাসান আল হুলওয়ানী ও
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আলা ইনবুল হাযরামী (রাঃ) বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে
শুনেছিঃ হাজ্জ (হজ্জ) সমাপনান্তে মুহারিজগণ তিন রাত মক্কায় অবস্হান করবে।
৩১৭০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, হজ্জের অনুষ্ঠানাদি শেষ করার
পর মুহাজিরগণ মক্কায় তিন দিন অবস্হান করতে পারবে।
৩১৭১। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির
(রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রহঃ) থেকে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৭২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, “হিরতের আর প্রয়োজন নেই, কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত থাকবে।
তোমাদেরকে যখন জিহাদের আহবান জানানো হয তখন জিহাদে যোগদান কর। মক্কা বিজয়ের দিন
তিনি আরও বলেন: আল্লাহ তা-আলা এই শহরকে সম্মানিত করেছেন- যেদিন তিনি আসমান ও যমীন
সৃষ্টি করেছেন দেয়া থেকে। অতএব কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এই শহরের মর্যাদা ও
সম্মান অক্ষুন্ন রাখবেন। তিনি এই শহরে আমার পূর্বে আর কারও জন্য যুদ্ধ বৈধ করেননি।
আমার জন্য মাত্র একদিনের কিছু সময় এখানে যুদ্ধ বৈধ করেছিলেন। অতএব তথায় যুদ্ধ
বিগ্রহ করা হারাম। আল্লাহ তা’আলা কর্তূক কিয়ামত পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার কারণে
এখানকার কোন কাঁটাযুক্ত গাছ উপড়ানো যাবে না, এখানকার
শিকারের পশ্চাঁদ্ধাবণ করা যাবে না, এখানকার
পতিত জিনিস তোলাযাবে না। তখন আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ কিন্তু ইযখির (লন্বা ঘাস) সম্পর্কে (অনুমিত দিন)। কারণ তা স্বর্ণকার ও
তাদের ঘরের কাজে লাগে। তিনি বললেনঃ কিন্তু ইযখির (তোলার অনুমতি দেয়া হল)।
৩১৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রাঃ) মানসূর (রহঃ) থেকে এই সুত্রে সামান্য শাব্দিক পার্থক্য সহোকারে উপরোক্ত সনদে
অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন” কথাটুকুর উল্লেখ
করেননি এবং কিতাল শব্দের পরিবর্তে কতল শব্দ ব্যবহার করেছেন।
৩১৭৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ শুরাইহ আদাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আস ইবনু উমায়্যা)
যখন মক্কা অভিযানের উদ্দেশ্যে সৈন্য বাহীনিসহ রওনা করেন তখন আবূ শুরায়হ (রাঃ) তাকে
বলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন
একটি কথা বলতে যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন
সকাল বেলা দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- যা আমার দুই কান শুনেছে, আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে এবং উভয় চোখ সেই
দৃশ্য দেখেছে। যখন তিনি তা বলেছিলেন, প্রথমে
তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ নিশ্চয়ই মক্কাকে আল্লাহ
তা’আলা হারামে পরিণত করেছেন- কোন মানুষ তাকে হারামের মর্যাদার উন্নীত করে নি। অতএব
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে- তার পক্ষে সেখানে রক্ত
প্রবাহিত করা বা সেখানকার কোন গাছ উপড়ানো হালাল নয়! যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর
রাসূলের উদাহরণ পেশ করে এখানে রক্তপাত বৈধ করতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ তা’আলা তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে এজন্য অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তোমাদের জন্য কখনও অনুমতি দেননি। আর
আমার জন্য তিনি তাও এক দিনের সামান্য সময় সেখানে যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছিলেন। আজকে
তার সেই হুরমাত (মর্যাদা) গত কালের মত পূনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপস্হিত লোকেরা যেন
(একথা) অনুপস্হিতদের নিকট পৌছে দেয়। আবূ শুয়ারাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল- আমর
আপনাকে কি জবাব দিল? তিনি বললেন, হে আবূ শুরাইহ! এ সম্পর্কে আমি আপনার চেয়ে অধিক
জ্ঞাত আছি। নিশ্চয়ই হারাম শরীফ কোন পাপীকে, কোন
হত্যাকারীকে এবং কোন অনিষ্টকারীকে আশ্রয় দেয় না।
৩১৭৫। যুহায়র ইবনু হারব ও
উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মক্কা বিজয় দান করলেন- তখন তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে
ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ
নিশ্চিত আল্লাহ তায়ালা হস্তি বাহিনীর মক্কায় প্রবেশে বাধা প্রদান করেছেন এবং তার
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিনদেরকে মক্কা অতিযানে বিজয়ী করেছেন।
আমার পূর্বে কারও জন্য এখানে রক্তপাত বৈধ ছিল না। আর আমার জন্যও একদিনের কিছু সময়
এখানে যুদ্ধ করা হালাল করা হয়েছিল। আমার পরে আর কারও জন্য তা কখনও হালাল হবে না।
অতএব এখানকার শিকারের পশ্চাঁদারণ করা যাবে না, একানকার
কাঁটাদার গাছও উপড়ানো যাবে না এবং এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা
প্রদানকারী (তা তুলেনিতে পারবে)। কারও কোন আত্নীয় নিহত হলে তার জন্য দুটি অবস্হার
যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার রয়েছেঃ হয় ফিদয়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে নতুবা
হত্যাকারীকে কিসাস স্বরূপ হত্যা করতে হবে। আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! কিন্তু ইযখির ঘাস যা আমরা কবরে
দিয়ে থাকি এবং আমাদের ঘরের চালায় ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিন্তু ইযখির ঘাস (এর কাটার অনুমতি দেওয়া হল)। ইয়ামানের অধিবাসী
আবূ শাহ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে
(একথাগুলো) লিখে দেওয়ার ব্যবস্হা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি
আওয়াঈকে (রহঃ) জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে লিখে দেওয়ার ব্যবস্হা
করুন— তাঁর একথার অর্থ কি? তিনি বললেন, যে ভাষণ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দিতে শুনলেন তা।
৩১৭৬। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বানূ লাইস কর্তৃক বানূ খুযআর এক
ব্যাক্তিকে হত্যার প্রতিশোধ স্বরুপ শেষোক্ত গোত্রের লোকেরা মক্কা বিজয়ের সময়ে
প্রথমোক্ত গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌছলে তিনি নিজ সাওয়ারীতে আরোহণ পূর্বক ভাষণ দেন এবং
বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হস্তি বাহিনীর মক্কায় প্রবেশ প্রতিরোধ করেন এবং তাঁর
রাসুল ও মুমিনদেরকে এর উপর বিজয়ি করেন। সাবধান! আমার পর কারও জন্য এখানে রক্তপাত
হালাল ছিলনা এবং আমার পরেও কখনও কারও জন্য তা হালাল নয়। সাবধান! আমার জন্যও এক
দিনের সামান্য সময় এখানে (রক্তপাত) বৈধ করা হয়েছিল। সাবধান! এই মুহূর্তে আবার তা
(আমার জন্যও) হারাম হয়ে গেল। অতএব এখানকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষও উপড়ানো যাবে না, গাছপালাও কাটা যাবে না এবং পথে পড়ে থাকা বস্তুও
তোলা যাবে না। তরে ঘোষণা প্রদানকারী ব্যক্তি (তা তুলতে পারবে)। যার কোন আত্নীয়
নিহত হয়েছে তার দু টি ব্যবস্হার যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। হয় ফিদয়া
(রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে, নতুবা কিসাস স্বরুপ
“হত্যাকারীকে হত্যা করতে হবে। রাবী বলেন, আবূ
শাহ (রাঃ) নামক ইয়ামানের এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া
রাসুলল্লাহ! আমাকে লিখে দিন। তিনি বললেনঃ তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। কুরায়শ বংশের
এক ব্যক্তি বললেন, কিন্তু ইযখির ঘাস-আমরা তো তা
আমাদের ঘর তৈরির কাজে এবং কবরে ব্যবহার করে থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইযখির ঘাস ব্যতীত।
৩১৭৭। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ- তোমাদের কারো জন্য মক্কায়
অস্ত্র বহন করা হালাল নয়।
৩১৭৮। আবদুল্লাহ ইবনু
মাস-লামা কা-নাবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময়ে লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্হায় মক্কায়
প্রবেশ করেন। তিনি যখন তা মাথা থেকে নামিয়ে রাখলেন তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে
বলল, ইবনু খাতালাকে কাবার গেলাফের সাথে বেঁধে রাখা
হয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমরা তাকে হত্যা কর। (ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ইমাম মালিককে
জিজ্ঞাসা করেন যে, ইমাম যুহরী (রহঃ) আনাস
(রাঃ)-এর সুত্রে তাঁকে এই হাদীস বলেছেন, কিনা), তিনি বলেন, হ্যা।
৩১৭৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
তামীমী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ সাকাফী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন। কুতায়বা
(রহঃ) বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন ইহরামবিহীন অবস্হায় কালো পাগড়ী পরিধান করে মক্কায়
প্রবেশ করেন। কুতায়বা (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কালো পাগড়ী পরিশান করে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেন।
৩১৮০। আলী ইবনু হাকীম আওদী
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায়
মক্কায় প্রবেশ করেন।
৩১৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাফর ইবনু আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার
সুত্রে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় কালো পাগড়ী
পরিহিত অবস্থায় লোকদের উদ্দেশ্যে (মক্কা বিজয়ের দিন) ভাষণ দেন।
৩১৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও হাসান আল-হুলওয়ানী (রহঃ) জাফর ইবনু আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ)-এর পিতার সুত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মিম্বরের উপর (উপবিষ্ট) দেখতে
পাচ্ছি এবং তিনি পাগড়ীর দুই প্রান্ত কাঁধের মাঝ বরাবর ঝূলিয়ে রেখেছে। আবূ বকর
(রহঃ) -এর বর্ণনায় মিম্বারের উপর- কথাটুকু উল্লেখ নাই।
৩১৮৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ ইবনু আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে হারাম বানিয়েছেন এবং এখানকার
বাসিন্দাদের জন্য দুআ করেছেন। আর আমি নিশ্চয়ই মদিনাকে হারামে পরিণত করলাম ঠিক
যেভাবে ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন। আমি এখানকার
মুদ্দ ও সাড়ু (ওজন পরিমাপের দুটি একক) এর জন্য দুআ করলাম যেরুপ ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) মক্কার অধিবাসীদের জন্য দু’আ করেছেন।
৩১৮৪। আবূ কামিল আল জাহদারী
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইরবাহীম (রহঃ)
আমর ইবনু ইয়াহইয়া মাযিনী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩১৮৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন, আর আমি দুটি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী
স্হানকে হারাম ঘোষণা করছি। তিনি মদিনাকে বুঝিয়েছেন।
৩১৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) নাফি ইবনু জুবায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মারওয়ান ইবনু হাকাম লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ
দিলেন। তিনি মক্কা ও তার বাসিন্দা এবং এর হারামের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করলেন।
তখন রাফিা ইবনু খাদীজ (রাঃ) তাকে ডাক দিয়ে বললেন, কি
ব্যাপার! আমি আপনাকে মক্কা, তার অধিবাসী এবং তার হারামের
মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করতে শুনছি, অথচ
আপনি মদিনা, তার অধিবাসী এবং তার হারামের
মর্যাদা সম্পর্কে আপনি কিছূ বলেন নি; অথচ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের
মধ্যবর্তী স্হানকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তীর এই হাদীস আমাদের নিকট একটি
খাওলানী চামড়ায় লিপিবদ্ধ আছে। আপনি চাইলে আমি তা আপনার সামনে পড়ে শোনাতে পাবি।
রাবী বলেন, মারওয়ান চুপ হয়ে গেলেন, তারপর বললেন, অবশ্য
আমিও এ রকম কিছু শুনেছি।
৩১৮৭। আবূ বকর ইবনু শায়বা ও
আমরুন নাকিদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
নিশ্চয় ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মদিনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দুই
প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএব এখানকার কোন কাটাযূক্ত গাছও কাটা
যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না।
৩১৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আমির ইবনু সাঈদ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি মদিনার দুই পার্শের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে হারাম বলে ঘোষণা
দিচ্ছি এখানকার কাটাযূক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে
না। তিনি আরও বলেন, মদিনা তার অধিবাসীদের জন্য
কল্যাণকর স্হান, যদি তারা বুঝে। যে ব্যক্তি
অনাগ্রহবশত মদিনা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার চাইতে উত্তম
ব্যক্তিকে তার স্হলবর্তী করেন। আর যে ব্যক্তি এখানে ক্ষুধা ও কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ
করে, আমি তার জন্য কিয়ামতের দিন শাফা আতকারী অথবা
বলেছেন, সাক্ষী হব।
৩১৮৯। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পরবর্তী
অংশ উপরোক্ত ইবনু নূমায়রের অনুরুপ। তরে এই হাদীসে অতিরিক্ত আছে যে, (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন) যে ব্যক্তই মদিনাবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে দোযখের
আগুনে এমনভাবে বিগলিত করবেন, যেভারে আগুনের তাপে সীসা গলে
যায় অথবা লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়।
৩১৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। সা’দ (রাঃ) আলআকীকে তার আবাসে রওনা হলেন।
পথিমধ্যে তিনি একটি ক্রীতদাসকে একটি গাছ কাটতে অথবা (লাঠি দিয়ে) এর পাতা ঝরাতে
দেখলেন। অতএব তিনি তার অস্ত্র কেড়ে নিলেন। তিনি ফিরে এলে ঐ গোলামের মনিব এসে তার
সাথে আলাপ করলেন এবং তাদের গোলামের
নিকট থেকে তিনি যা কেড়ে নিয়েছেন তা তাদের কাছে অথবা তাদের গোলামের কাছে ফেরত দিতে
অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন, যে জিনিস রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উপহার স্বরুপ দিয়েছেন। তা ফেরত দেওয়ার
ব্যাপারে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। অতএব তিনি তা ফেরত দিতে অস্বীকার
করলেন।
৩১৯১। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব
আমর ইবনু আবূ আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -আবূ তালহা (রাঃ)-কে বললেনঃ তোমাদের
বালকদের মধ্য থেকে একজন বালক আমার খিদমতের জন্য খুজে আন। অতএব আবূ তালহা (রাঃ)
আমাকে বাহনে তার পিছনে বসিয়ে রওনা হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখনই (বাহন থেকে) অবতরণ করতেন, আমি
তার প্রয়োজনীয় সেবা করতাম। এই হাদীসে তিনি আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হতে থাকলেন এবং উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টি
গোচর হল তিনি বললেনঃ এই পাহাড় আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।” তিনি
যখন মদিনার নিকটবর্তী হলেন তখন বললেনঃ হে আল্লাহ! তাদের (মদিনার অধিবাসীদের) মুদ্দ
ও সা-এ বরকত দান করুন।”
৩১৯২। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত এই
যে, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, আমি মদিনার দুই প্রান্তের
কংকরময় মাঠের মধ্যবর্তী স্হানকে হারাম করছি।”
৩১৯৩। হামিদ ইবনু উমর (রহঃ)
আসিম (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি
বললেন, হ্যা, এখানে থেকে ওখানের মধ্যেবর্তী স্হান। অতএব যে
ব্যাক্তি এখানে কোন পাপ করে, তিনি পূনরায় আমাকে বললেন, তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার যে এখানে কোন পাপ করে
তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতা এবং সমগ্র মানব
জাতির লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফরয অথবা নফল কোন ইবাদতই কবুল করবেন
না। রাবী বলেন, আনাস (রাঃ)-এর তে বললেন, “অথবা যে কোন পাপীকে আশ্রয় দিল।”
৩১৯৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আসিম আল আহওয়াল (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞানা
করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি
বললেন, হাঁ, তা হারাম। অতএব এখানকার উদ্ভিদ উপড়ানো যাবে না।
যে ব্যক্তি তা করবে তার উপর আল্লাহ, তার
ফিরিশতা এবং সমগ্র মানব জাতির লানত।
৩১৯৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আনাসইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, আয় আল্লাহ! তাদের বরকত দান
করুন দাড়ি পাল্লায়, তাদের সা’দ্দ এ এবং তাদের
মুদ্দ-এ।
৩১৯৬। যুহায়র ইবনু হারব ও
ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ সাম্মী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি মক্কায় বরকত দান করেছেন, মদিনায়
তার দ্বিগুন বরকত দান করুন।
৩১৯৭। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ
কুরায়ব (রহঃ) ইবরাহীম তায়মী (রহঃ) থেকে তিনি তার পিতার সূত্রে বর্নিত। তিনি বলেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে
ভাষন দিলেন। তিনি বললেন যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আমাদের
(আহলে বাইত) কাছে আল্লাহর কিতাব ছাড়া যা আমরা পাঠ করি এবং এ সহীফা রাবী বলেন, অর্থাৎ ঐ সহীফা, যা
তার তরবারীর খাপে ঝূলন্ত ছিল তা ছাড়া কিছু আছে, সে
মিথ্যা বলে। এই সহীফায় উটের বয়স এবং কিছু যখমের বর্ণনা ছিল। এর মধ্যে আরও ছিল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদিনার আইর ও নাওর এর মধ্যবর্তী স্হান হারাম।
এখানে যে ব্যক্তি কোন বিদআতী কর্মে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তার
ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল
ইবাদত কবুল করবেন না। মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে সমান। তাদের
নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকর। যে অন্য পিড়ের সাথে নিজ বংশ দাবী
করে অথবা নিজ মনিবের পরিবর্তে অন্য মনিবের সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করে তার উপর
আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাদের ও সমগ্র
মানব জাতির লানত। আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই গ্রহণ
করবেন না। রাবী বলেন, আবূ বকর ও যূহায়রের হাদীস
শেষে হয়ে গেছে “তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকরী– এই কথা
পর্যন্ত। তারা এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। তাদের উভয়ের বর্ণনায় –তাঁর তরবারীর
খাপে ঝূলন্ত– কথটুকু উল্লেখিত হয় নি।
৩১৯৮। আলী ইবনু হুজর সা’দী
(রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে উল্লেখ আছে “যে
ব্যক্তি কোন মুসলিমের সাথে (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর) বিশ্বাসঘাতকতা করে
তার উপর আল্লাহ, তাঁ ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব
জাতির লানত। কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কোন ইবাদতই কবুল করা হবে না। তাদের (আলী
ও ওয়াকী) উভয়ের বর্ণনায় “যে ব্যক্তি নিজ পিতৃ পরিচয়ের পরিবর্তে অন্য পিতৃপরিচয়ের
দাবী করে কথাটুকুর উল্লেখ এবং ওয়াকীর বর্ণনায় -কিয়ামতের দিন– কথাটুকুর উল্লেখ নাই।
৩১৯৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরী (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে ইবনু মুসহির ও ওয়াকীর হাদীসের অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে। তবে এদের বর্ননায় যে “গোলাম নিজের মনিবের পরিবর্তে অন্যক্কে নিজের
মনিব বলে পরিচয় দেয়-, কথাটুকু নেই! আর তার প্রতি
লানতের কথা উল্লেখিত হয়েছে।
৩২০০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, মদিনা হারাম। অতএব, যে এখামে কোন পাপে লিপ্ত হয় অথবা কোন পাপীকে
আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতাগণ এবং সমগ্র মানব জাতির লানত।
কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল (কিছুই) কবুল করা হবে না।
৩২০১। আবূ বকর ইবনু নাদর
ইবনু আবূ নাদর (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি
কিয়ামতের দিন কথাইকু বলেন নি।তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, “মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে
সমান। তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকর। কেউ যদি মুসলিম
প্রদত্ত নিরাপত্তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে, তবে
তার উপর আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতাগণ এবং সমগ্র
মানব জাতির লা’নত। কিয়ামতের দিন তার ফরয বা নফল কিছুই কবুল হবে না।”
৩২০২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
বলেন, আমি যদি মদিনায় হরিণ বিচরণ
করতে দেখি তবে তাকে ভয় দেখাব না। (কেননা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনায় দুই পার্শ্বের
কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ হারাম।
৩২০৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু রাফী ও ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ
হারাম ঘোষণা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি
যদি মদিনার দুই পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশে হরিণ বিচরণ করতে দেখি, তবে আমি তাকে উত্ত্যক্ত করব না এবং তিনি মদিনার
চারপাশের বার মাইল পর্যন্ত চারণভূমি ঘোষণা করেছেন।
৩২০৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা
যখন প্রথম (পাকা) ফল দেখতে পেত, তা নিয়ে নাবীসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিকট আসত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন তা গ্রহন করতেন তখন নিম্নোক্ত দু’আ পড়তেন , “হে
আল্লাহ্! আপনি আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) বরকত দান করুন, আমাদের মদিনায় বরকত দান করুন, আমাদের সা’এ বরকত দান করুন এবং আমাদের মুদ্দ’এ
বরকত দান করুন। হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনার বান্দা, প্রিয় বন্ধু ও নাবী। আর আমিও আপনার বান্দা ও
নাবী। তিনি মক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছেন। আমিও আপনার নিকট মদিনার জন্য দু’আ
করছি – যেমন তিনি মক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছিলেন এবং তার সাথে অনুরূপ আরও।”
রাবী বলেন,অতঃপর তিনি সর্ব কনিষ্ঠ
শিশুকে ডাকতেন এবং তাকে ফল দিয়ে দিতেন।
৩২০৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহ ইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মৌসুমের
প্রথম ফল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেয়া হত। তিনি তখন বলতেন, “হে আল্লাহ্! আমাদের মদিনায় আমাদের ফলে (বা
উৎপন্ন ফসলে) আমাদের মুদ্দ – এ ও আমাদের সা’ – এ বরকত দান করুন, বরকতের উপর বরকত দান করুন।” অতঃপর তিনি ফলটি
তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন।
৩২০৬। হাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল
ইবনু উলায়্যা (রহঃ) আবূ সাঈদ মাওলা মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তারা মদিনায় কষ্ট ও
দুঃখে পতিত হন। তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট উপস্হিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যনা অনেক এবং আমরা
দুঃখ দুর্দশার সমুঙ্খীন হয়েছি। তাই আমি আমার পবিবারকে কোন শস্য শ্যামল এলাকায়
স্হানান্তরের মনস্হ করেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, তা
করো না বরং মদিনাকে আকড়ে থাক। কারণ, একদা
আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি
এও বলেছেন যে এবং উসফান পর্যন্ত পৌছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্হান করলেন।
লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে
অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্হায়
রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। একথা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি বলেনঃ কি ব্যাপার, তোমাদের
একথা আমার নিকটে পৌছেছে। রাবী বলেন, আবূ
সাঈদ (রাঃ) কথাটা কিভাবে পূর্বব্যক্ত করেছেন তা আমার মনে নেই। সেই সত্তার নামে শপথ
অথবা সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য
আমি মনস্হ করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও রাবী
বলেন, আবূ সাঈদ (রাঃ) কোনটি
বলেছেনঃমু তা আমার সঠিক মনে নাই। তবে আমি নিশ্চিত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হওয়ার
নির্দেশ দিব এবং মদিনায় পৌছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব
না)। তারপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে
হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে। আর আমি মদিনাকে হারাম ঘোষণা
করলাম যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্হলে অবস্হিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা
যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে
অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপাথর
পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের
সা’- এ বকরত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! বরকতের
সাথে আমাদের আরো দুটি বরকত দান করুন। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদিনার
এমন কোন প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু-জন
করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই। পূনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা রওনা হও।” অতএব আমরা রওনা হলাম এবং
মদিনায় এসে পৌছলাম। সেই সত্তার শপথ যার নামে আমরা শপথ করি অথবা যার নামে শপথ করা
হয়- হাম্মাদ তার উধর্বতন রাবী কোনটি বলেছেন সে সমন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মদিনায়
প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি ইত্যাবসরে আবদুল্লাহ ইবনু গাতফান গোত্রের
লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে, অথচ
এরুপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয় নি।
৩২০৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ ও
সা-এ বরকত দিন এবং বরকতের সাথে আরও দুটি বরকত দান করুন।
৩২০৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইসহাক ইবনু মানসুব (রহঃ)
ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এই সূত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২০৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ সাঈদ মাওলা যাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
আল হাররার রাতগুলোতে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট এলেন এবং মদিনা থেকে (কোথাও)
চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তাঁর কাছে এখানকার দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতিও নিজের
বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাকে আরও জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও রুক্ষ আবহাওয়া বরদাশত
করতে পারছেন না। আবূ সাঈদ (রাঃ) তাঁকে বললেন, তোমার
জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের
পরামর্শদিতে পারি না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি এখানকার কষ্টসহ্য করে
মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার
জন্য শাফাআত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলমান হয়ে থাকে।
৩২১০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে
শুনেছেনঃ মদিনার দুই প্রাস্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্হানকে আমি হারাম
ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (অধস্তন রাবী) আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবূ সাঈদ (রাঃ) যদি আমাদের কারও হাতে
পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন।
৩২১১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর হাত দিয়ে মদিনার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ ঐ স্থান হারাম ও নিরাপদ।
৩২১২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
মদিনায় এলাম এবং তা ছিল অস্বাস্হ্যকর স্হান। আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) অসুস্হ হয়ে
পড়লেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগনের অসূস্হতা
লক্ষ্য করে দুআ করলেনঃ “হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের জন্য প্রিয় স্হান করুন যেমন
মক্কাকে প্রিয় স্হান করেছেন অথবা আরও অধিক, তাকে
সাস্থ্যকর স্হানে পরিণত করুন, আমাদের জন্য এখানকার সা ও
মুদ্দ-এর বরকত দান করুন এবং জ্বর জুহফায় সরিয়ে দিন।”
৩২১৩। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২১৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এখানকার
দুঃখ কষ্ট সবর করে আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই তার জন্য শাফাআত করব অথবা তার পক্ষে
সাক্ষী হব।
৩২১৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) যুবায়রের আযাদকৃত গোলাম ইউহান্নিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ফিৎনার সময় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর
নিকট বসা ছিলেন তার নিকট তার এক আযাদকৃত বাদী সালাম দিয়ে বল, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি (মদিনা থেকে) বের হয়ে
যাওয়ার ইচ্ছা করছি। আমাদের উপর দিয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত হচ্ছে। আবদুল্লাহ(রাঃ) তাকে
বললেন, বোকা মেয়ে, থেকে যাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখ কষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ
করবে আমি কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফাআতকারী হব।
৩২১৬। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবদুল্লাহ উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এখানকার
দুঃখকষ্ট ও বিপদ আপদে ধৈর্যধারণ করে আমি কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা
তার শাফাআতকারী হব। এখানকার বলতে মদিনাকে বুঝানো হয়েছে।
৩২১৭। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার উাম্মাতের যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখকষ্ট ও বিপদ আপদে
ধৈর্যধারণ করবে, তার জন্যই আমি কিয়ামতের দিন
শাফাআতকারী হব অথবা তার পক্ষে সাক্ষী হব।
৩২১৮। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আগের হাদীসের অনুরুপ।
৩২১৯। ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখকষ্টের উপর সবর
করবে। আগের হাদীসের অনুরুপ।
৩২২০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথে ফিরিশতাগণ প্রহরারত।
তথায় মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।
৩২২১। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাসীহ (দাজ্জাল) মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে এসে উহুদ
পাহাড়ের পশ্চাতে অবতরণ করবে এবং ফিরিশতারা তার মুখ (গতি) সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিবে
আর তথায় সে ধ্বংস হবে।
৩২২২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মদিনার) লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন
কোন ব্যক্তি তার চাচাত ভাইকে এবং নিকটাত্নীয়কে ডেকে বলবে আস কোন উর্বর এলাকায়
গিয়ে বসতি স্হাপন করি, আস কোন শস্য-শ্যামল এলাকায়
গিয়ে বাস করি। কিন্তু মদিনাই তাদের জন্য উত্তম যদি তারা জানত! সেই সত্তার শপথ যার
হাতে আমার প্রাণ! যদি কোন ব্যক্তি মদিনার উপর রিবক্ত হয়ে চলে যায় তবে আল্লাহ
তায়ালা তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি তার স্হ্যীবর্তী করবেন। সাবধান! মদিনা হচ্ছে হাপর
তূল্য, যা নিজের মধ্য থেকে নিকৃষ্ট
জিনিস (ময়লা) বের করে দেয়। কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন
মদিনা তার ধুক থেকে নিকৃষ্ট লোকদের বের করে না দেবে যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে
দেয়।
৩২২৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এমন একটি জনপদে (হিজরতের) জন্য আদিষ্ট যা সমস্ত
জনপদ খেয়ে ফেলবে (আধিপত্য বিস্তার করবে)। লোকেরা তাকে ইয়াসরীব নামে অভিহিত করেছে।
অথচ তা হল মদিনা। তা লোকদের এমনভাবে বের করবে যেমনিভাবে হাপর লোহার ময়লা বের করে।
৩২২৪। আমরুন নাকিদ, ইবনু আবূ উমর ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া
ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকেও এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছ। তবে এরা দু-জন বলেছেনঃ যেমন
হাপর ময়লা দুর করে এবং “লোহা” শব্দের উল্লেখ করেননি।
৩২২৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক
বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার)
বায়আত করেন। তারপর বেদুঈন মদিনায় প্রবল জ্বরে আক্রন্ত হল। সে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বল, হে
মুহাম্মাদ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি তার কথা প্রত্যাখ্যান করবেন। সে
পুনরায় তার নিকট এসে বলল, আমার বায়-আত ফিরিয়ে নিন।
তিনি তা অস্বীকার করলেন। সে পূনরায় এসে বলল, ইয়া
মুহাম্মাদ! আমার বায়আত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও অস্বীকার করলেন। তারপর বেদুঈন
(মদিনা থেকে) চলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
“মদিনাহচ্ছে হাপর স্বরুপ, সে নিজের বুক থেকে ময়লা
বহিস্কার করে দেয় এবং পবিত্র জিনিস ধুয়ে মুছে সাফ করে।
৩২২৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয আম্বারী (রহঃ) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল তায়বা (পবিত্র) অর্থাৎ মদিনা, তা ময়লা দূর করে দেয় যেমন আগুন রুপার ময়লা দূর
করে দেয়।
৩২২৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, হান্নাদ ইবনু সারী ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তায়ালা মদিনার নাম রেখেছেন “তাবা”।
৩২২৮। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার ও মুহাম্মাদ রাফি (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূল
কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শহরের অর্থাৎ মদিনার
অধিবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে
যায়।
৩২২৯। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার ও ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এখানকার (মদিনার) অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের
ইচ্ছা করবে, আল্লাহ তাকে গলিয়ে ফেলবেন
যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
৩২৩০। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩২৩১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে
ব্যক্তি মদিনাবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে, আল্লাহ
তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
৩২৩২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এই সুত্রে
আকম্মিক আক্রমণ অথবা “ক্ষতিসাধন” এর কথা উল্লেখ আছে।
৩২৩৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাবাসীদের
মুদ্দ- এ বরকত দান করুন” অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্নবৎ তবে এতে আরো আছেঃ যে ব্যক্তি
এখানকার অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে, আল্লাহ
তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন পানিতে লবণ গলে যায়।”
৩২৩৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, শাম (সিরিয়া) বিজিত হবে। ফলে
একদল লোক সপরিবারে মদিনা থেকে চলে যাবে উট হাকাতে হাঁকাতে। অথচ মদিনাই তাদের জন্য
কল্যাণকর ছিল যদি তারা বুঝতে পারত। এরপর ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট
হাঁকিয়ে সপরিবারের চলে যাবে (মদিনা। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা
বুঝতে পারত। এরপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট হাঁকিয়ে সপরিবারে মদিনা থেকে
বের হয়ে যাবে অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি
তারা বুঝতে পারত।
৩২৩৫। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ
ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথায় চলে যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত। তারপর শাম (সিরিয়া) বিজিত
হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার পরিজন ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথায় চলে
যাবে। অথচ মদিনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝতে পারত। তারপর ইরাক বিজিত
হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথা চলে যাবে।
অথচ মদিনাই ছিল তদের জন্য কল্যাণকর, যদি
তারা বুঝতে পারত।
৩২৩৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা সম্পর্কে বলেছেনঃ “এখানকার লোকেরা মদিনা ত্যাগ করবে, সে স্হান তাদের জন্য কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও।
আর তা এমনভাবে জনণূন্য হয়ে যাবে যে, তা
হিংস্র জন্তু ও পাখির আবাসে পরিণত হবে। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ সাফওয়ান- আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মলিক ছিলেন
ইয়াতীম। তিনি ইবনু জুরায়জের তত্ত্বাবধানে দশ বছর প্রতিপালিত হন।
৩২৩৭। আবদুল মালিক ইবনু
শুআয়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মদিনা ত্যাগ করবে তাদের জন্য তা (মদিনায় বসবাস)
কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও এবং কেবল হিংস্র জন্তু ও পাখিরাই সেখানে বসবাস করবে। তারপর
মুযায়না গোত্রের দুটি রাখাল মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে উচ্চস্বরে নিজেদের মেষপাল
হাকিয়ে। তারা সে স্হান হিংস্র প্রানীতে ভর্তি দেখতে পাবে। তারা “সানিয়াতূল বিদা”
উপত্যকা পর্যন্ত পৌছে উপুড় হয়ে পড়ে যাবে।
৩২৩৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ মাযিনী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ “আমার ঘরও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্হান জান্নাতের বাগান সমূহের একটি।”
৩২৩৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(ব) আবদুল্লাহ ইবনু যায়িদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্হান জান্নাতের
বাগান সমূহের অন্তভুক্ত।
৩২৪০। যুহায়র ইবনু হারব ইবনু
নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার ঘরও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্হান
জান্নাতের বাগান সমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বার আমার (কাওসার নামক) হাওযের
উপরে অবস্হিত।
৩২৪১। আবদুল্লাহ ইবনু
মাসলামা (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে রওনা হলাম।
তারপর আবূ হুমায়দ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বললেন, (যুদ্ধ শেষে) আমরা পূনরায় অগ্রসর হলাম এবং
ওয়াদিল কুরায় পৌছলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত অগ্রসর হই। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি
আমার সঙ্গে চলতে চায় সে আমার সজেহ দ্রুত চলূক। আর যার ইচ্ছা। সে থেমেথেমে আসুক।
তখন আমরা রওনা হলাম এবং অবশেষে মদিনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এই (মদিনা) হচ্ছে তাবা এবং এই হচ্ছে উহুদ আর উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের
ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪২। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে
এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবুদ পাহাড়ের দিকে তাকালেন এবং বললেন, উহুদ এমন একটি পাহাড় যে আমাদের ভালোবাসে এবং
আমরাও তাকে ভালোবাসি।
৩২৪৪। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার এই মসজিদে (মসজিদে
নবযীতে) এক (রাকআত) সালাত মসজিলে হারাম ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে এক হাজার
(রাকাঁআত) সালাতের চেয়েও উত্তম।
৩২৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরে এই মসজিদে এক সালাত মসজিদুল হারাম
ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে আদায়কৃত এক হাজার (রাক’আত সালাতের তুলনায় অধীক ফযীলত
পূর্ণ।
৩২৪৬। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর শাগরিদ আবূ সালামা ইবনু আবারে রহমান ও আবূ আবদুল্লাহ
আগার (জুহায়না গোত্রের মুক্তদাস) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে
বলতে শুনেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে এক (রাকআত)
সালাত আদায় মাসজিদ হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে হাজার (রাক’আত)সালাতের তুলনায়
অধিক ফযীলত পূর্ণ। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবীগণের সমাপ্তি (সর্বশেষ নাবী) এবং তার মসজিদ (নাবী-রাসুলগণ
কর্তৃক নির্মিত মসজিদসমুহের মধ্যে) সর্বশেষ মসজিদ। আবূ সালামা ও আবূ আবদুল্লাহ
(রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে আবূ হুরায়রা
(রাঃ) যে সব কথা বলেছেন, তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস থেকেই বলেছেন। এজন্য আমরা তার ইন্তেকালের পূর্ব
পর্যন্ত তাঁর নিকট থেকে এই হাদীস সত্যায়িত করে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নি। আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর নিকট থেকে এই হাদীসের সত্যায়ন সম্পর্কে আমরা
পরস্পর আলোচনা করি এবং একে অপরকে দোষারুপ করি যে কেন আমরা এই হাদীস সম্পর্কে আবূ
হুরায়রা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করি নি যে, তিনি
তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে শানে বর্ণনা করেছেন
কিনা। এ অবস্হায় একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনু ইবরাহীম ইবনু কারিযের কাছে বসলাম এবং এই
হাদীস ও তা আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর নিকট থেকে বর্ণিত হওয়া সম্পর্কে আলোচনা উন্থাপন করলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু
ইবরাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) আমাদের বললেন, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমি আবূ হুরায়রা
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অতএব অবশ্যই আমি নাবীগণের সমাপ্তি এবং আমার মসজিদ
সর্বশেষে মসজিদ।
৩২৪৭। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবরাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা
(রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছো যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত অন্য সকল মসজিদে এক
হাজার (রাকআত) সালাতের চেয়ে উত্তম অথবা এই মসজিদ ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার
(রাকআত) সালাতের সমতূল্য। মসজিদে হারামের কথা স্বতন্ত্র।
৩২৪৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত
হয়েছে।
৩২৪৯। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত মসজিদূল
হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মসজিদে এক হাজার (রাকআত) সালাতের চেয়ে অধিক ফযীলতপূর্ণ।
৩২৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
৩২৫১। ইবরাহীম ইবনু মূসা
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি উক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৩২৫২। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুরুপ
বর্ণিত হয়েছে।
৩২৫৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি
স্ত্রীলোক রোগাক্রান্ত হওয়ার পর বলল, আল্লাহ
আমাকে রোগমুক্তি দান করলে আমি গিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে অবশ্যই সালাত আদায় করব।
তারপর সে আরোগ্য লাভ করল এবং (বায়তুল মুকাদ্দাস) যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল এবং
সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর স্ত্রী মায়মুনা (রাঃ) এর নিকট
উপস্হিত হয়ে তাকে সালাম দিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করল। তিনি বললেন, তুমি এখানে থাক, যা
কিছু পাথেয় নিয়েছ তা খাও এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
মসজিদের সালাত আদায় কর। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছিঃ “এই মসজিদে এক (রাকআত) সালাত আদায় মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন
মসজিদে এক হাজার (রাক’আত)সালাত পড়ার চেয়েও অধিক ফযীলত পূর্ণ।
৩২৫৪। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উটের পিঠে হাওদা আটা যাবে না (সফর করা যাবে না) তিনটি মসজিদ
ব্যতীতঃ এই মসজিদ, মসজিলে হারাম ও মূসজিদুল
আকসা।
৩২৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এই সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা এভাবে শুরু হয়েছেঃ তিনটি মসজিদের
উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে।”
৩২৫৬। হারুন ইবনু সাঈদ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেবলমাত্র তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্য সফর করা
যাবেঃ কাবা মসজিদ, আমার এই মসজিদ এবং ইলিয়ার
মসজিদ (বায়তূল মুকাদ্দাস)।
৩২৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদূর রহমান (রহঃ) বলেন,আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর পুত্র আব্দুর রহমান (রহঃ) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার
উপর স্হাপিত হয়েছে সেই মসজিদ সম্পর্কে আপনার পিতাকে আপনি কিরুপ বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমার
পিতা আমাকে বলেছেন, তাঁর কোন এক স্ত্রীর ঘরে
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্হিত হলাম। আমি বললাম
ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেই মসজিদ কোনটি যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? রাবী (আবূ সাঈদ) বলেন, তিনি একমুষ্টি কাঁকড় তুলেতুলে তা যমীনের বুকে
নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর বললেনঃ “তা তোমাদের
এই মসজিদ মদিনার মসজিদ।” রাবী (আবূ সালামা) বলেন, এখন
আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমিও আপনার পিতাকে এভাবেই ঐ মসজিদের
উল্লেখ করতে শুনেছি।
৩২৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে এই সনদে উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।
কিন্তু এই সনদের মধ্যে আব্দুর রহমান ইবনু আবূ সাঈদের নাম উল্লেখিত হয় নি।
৩২৫৯। আবূ জাফর আহমাদ ইবনু
মানী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে মসজিদে যিয়ারতের জন্য
যেতেন।
৩২৬০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে কুবা মসজিদে আসতেন এবং তাতে দুরাক’আত
সালাত আদায় করতেন।
৩২৬১। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পদব্রজের বা বাহনে চড়ে কুবায় আসতেন।
৩২৬২। আবূ মাআন রুকাশী (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৩২৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে চড়ে এবং পদব্রজে কুবায় আসতেন।
৩২৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব
কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বাহনে চড়ে ও পদব্রজে কুবায় আসতেন।
৩২৬৫। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু
উমর (রাঃ) প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বলতেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রতি শনিবার এখানে আসতে দেখেছি।
৩২৬৬। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বাহনে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে তথায় আসতেন।
ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) ও অনুরুপ
আামল করতেন।
৩২৬৭। আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম
(রহঃ) ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এই সুত্রে প্রতি শনিবার কথাটুকু উল্লেখ
নাই।