১৯১৭ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর ও উসমান (রাঃ)-এর সঙ্গে ঈদুল ফিতরের সালাতে শরীক হয়েছি। তাঁরা সবাই খুৎবা প্রদানের পূর্বেই এ সালাত আদায় করতেন। তারপর খুতবা দিতেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখন দেখছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর হতে নামছেন হাতের ইশারায় সবাইকে বসিয়ে দিচ্ছেন এরপর পুরুষদের কাতার ভেদ করে অগ্রসর হলেন এবং মহিলাদের নিকট গিয়ে পৌছলেন। তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল (রাঃ)। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন “হে নাবী! মু-মিন নারী যখন তোমার কাছে এসে বায়আত করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহ্ব সাথে কোন শরীক স্হির করবে না। (৬০: ১২)। সস্পূর্ণ আয়াত পাঠ করার পর তিনি বললেন, তোমরা কি এ আয়াতের শর্তের উপর স্থির আছ? তখন একজন মহিলা উত্তর দিল। এ মহিলা ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলেননি। “ হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -! কিন্তু সে মহিলা কে তা জানা যায়নি। তিনি বললেন, তোমরা সাদাকা কর। বিলাল (রাঃ) তার কাপড় দিলেন এবং বললেন, এসো আমার মাতা-পিতা তোমাদের জন্য উৎসর্গকৃত। মহিলাগণ তাদের বালা ও আংটি বেলালের কাপড়ে দিতে লাগলেন।
১৯১৮ আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য
দিচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার পূঁর্বে সালাত আদায় করতেন।
তারপর খুতবাদিতেন। একবার তার মনে হল যে, মহিলারা
(খুতবা) শুনতে পায়নি। তাই তিনি তাদের নিকট গেলেন। অতঃপর তাদের উদ্দেশ্যে
ওয়ায-নসীহত করলেন এবং সাদাকা করতে আদেশ দিলেন। আর বিলাল (রাঃ) তার কাপড় পেতে
রাখলেন এবং মহিলাগণ আংটি, কানের দুল ইত্যাদি অলংকার দিতে লাগল।
১৯১৯ আবূ
রাবী যাহমীনী ও ইয়াকুব দাওরাকী (রহঃ) আয়্যুব (রহঃ) থেকে সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
১৯২০ ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে প্রথমে খুতবার পূর্বে
সালাত আদায় করলেন। এর পর লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করার পর মিম্বর হতে অবতরণ করলেন এবং মহিলাদের নিকট
গেলেন এবং তাদেরকে উপদেশ দিলেন। তখন তিনি বিলালের হাতের উপর হেলান দিয়ে ছিলেন। আর
বিলাল কাপড় পেতে রেখেছিলেন। মহিলারা সাদাকা দিচ্ছিল। আমি আতাকে জিজ্ঞেস করলাম, এসব কি
সাদাকায়ে ফিতরা ছিল? তিনি বললেন- না। তবে তারা নফল সাদাকা দিচ্ছিল। সে ঐ সময়ে মহিলাগণ সাদাকা করছিল
তাদের কানের বালা এবং অন্যান্য জিনিস। আমি আতাকে বললাম, এখনও কি
ইমামের খুতবা শেষ করার পর মহিলাদের নিকট যাওয়া এবং তাদের উপদেশ দেয়া কর্তব্য। তিনি
বললেন, হ্যা, আমার জীবনের কসম। এ হল তাদের দায়িত্ব। কিন্তু তাদের কি হয়েছে? তারা কেন তা
করেন না?
১৯২১
মুহাম্মাদ ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদের দিন সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি
খূতবার পূর্বে প্রথমে সালাত আরম্ভ করলেন তাতে আযান ও ইকামত ছিল না। তারপর তিনি, গায়ে হেলান
দিয়ে দাড়ালেন এবং আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ দিলেন। তার (আল্লাহর)
অনুগত্যের প্রতি উৎসাহিত করলেন। লোকদের ওয়ায-নসিহত করলেন। তারপর মহিলাদের নিকট
গেলেন। তাদের উদ্দেশ্যে ওয়ায-নসীহত করলেন এবং বললেন, সাদাকা কর।
কেননা তোমাদের অধিকাংশ হবে জাহান্নামের অধীন। মহিলাদের মধ্যে থেকে একজন মহিলা
দাড়াল। যার উভয় গালে কাল দাগ ছিলা সে বলল, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! তা কেন? তিনি বললেন। তোমরা বেশী অভিযোগ করে থাকো তোমরা উপকারকারীর উপকার অস্বীকার কর।
রাবী বলেন তখন মহিলাগণ তাদের অলংকারাদি সাদাকা স্বরুপ বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ে তাদের
আংটি, কানের দুল ইত্যাদি ফেলতে শুরু করল।
১৯২২
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তারা বলেন- ফিতরের দিবস ও আযহার দিবসে আযান দেয়া হত না। ইবনু জুরায়জ
(রহঃ) বলেন, কিছুক্ষণ পর আমি তাকে [আতাকে] এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে বললেন যে, জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) আমার কাছে রিওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন যে, ঈদুল ফিতরের
সালাতের জন্য কোন আযান নেই। ইমাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার মূহৃর্তেও নয়, পরেও নয়।
ইকামতও নেই, নেদা-আহবান কিছুই নেই। সেদিন আহবানও নেই, ইকামতও নেই।
১৯২৩
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু
যুবায়রের (রাঃ) যখন প্রথম বায়আত অনুষ্ঠিত হল, তখন ইবনু
আব্বাস (রাঃ) তার নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, তিনি ঈদূল
ফিতরের সালাতের জন্য আযান দেন না। অতএব তুমিও আযান দিও না। রাবী বলেন, ইবনু যুবায়র
(রাঃ) ঐ দিন ঈদুল ফিতরের সালাতে আযান দেননি এবং এ বাণীও পাঠান যে, খুতবা দেয়া
হবে সালাতের পর। পূর্বে এ ভাবেই করা হত। রাবী আরো বলেন, ইবনু যুবায়র
(রাঃ) খূতবা দেয়ার পূর্বেই সালাত আদায় করে নিলেন।
১৯২৪
ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া, হাসান ইবনু রাবী , কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ) সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি একাধিক বার আযান ইকামত ব্যতীত উভয় ঈদের সালাত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আদায় করেছি।
১৯২৫ আবূ
বকর ইবনু আবূ শাহাব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমর (রাঃ) খুতবা দেয়ার পূর্বে উভয় ঈদের
সালাত আদায় করতেন।
১৯২৬
ইয়াহিয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার ও ঈদুল ফিতরের দিনে বের হতেন এবং
সর্বপ্রথম সালাত আদায় করতেন। সালাত আদায় করার পর সালাম ফিরিয়ে সবার দিকে মুখ করে
দাড়িয়ে যেতেন। তখন সবাই নিজ নিজ সালাতের জায়গায় বসে থাকতেন। যদি কোথাও বাহিনী
প্রেরণের প্রয়োজন হলে তবে তিনি তা লোকদের নিকট উল্লেখ করতেন। অন্য কোন প্রয়োজন
থাকলে তারও নির্দেশ দিতেন। আর তিনি বলতেন, সাদাকা কর, সাদাকা কর, সাদাকা কর।
মহিলাগণই বেশী সাদাকা দিতেন। তারপর তিনি ফিরতেন এটাই ছিল-নিয়ম। যখন মারওয়ানের যুগ
এল তখন আমিও মারওয়ানের হাত ধরাধরি করে বের হলাম। ঈদগাহে পৌছে দেখতে পেলাম যে, কাসীর ইবনু
সালত ইট ও মাটি দ্বারা একটি মিম্বর তৈরী করে রেখেছে। তখন মারওয়ান আমার হাত ধরে
টানতে লাগলেন যেন তিনি আমাকে মিম্বরের দিকে নিয়ে যাবেন। আর আমি তাকে সালাতের দিকে
টানছি। যখন আমি এ অবস্হা দেখলাম, তখন তাকে বললাম, প্রথমে
সালাত আদায় করার কি হল? তিনি বললেন, হে আবূ সাঈদ! না, তুমি যা জান তা বাদ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, কখনো নয়, যার হাতে
আমার জীবন তার কসম করে বলছি, তার চেয়ে উত্তম আমি যা জানি তার
বিরুদ্ধাচরণ করে তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। তোমরা কিছু আনতে পারবে না। এই কথাটি
তিনবার বলে তিনি চলে গেলেন।
১৯২৭ আবূর
রাবী যাহরানী (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, দু-ঈদের
সালাতে যাওয়ার জন্য। সাবালক ও পর্দানশীল নির্বিশেষে সবার জন্য এ আদেশ। কিন্তু
ঋতুমতী মহিলাদেরকে নিষেধ করেছেন মুসলমানদের ঈদগাহে হাযির হতে।
১৯২৮
ইয়াহিয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে
উভয় ঈদে যাওয়ার জন্য আদেশ করা হত। পর্দানশীল ও কুমারী মহিলাদেরকেও। রাবী বলেন, ঋতূমতী
মহিলারাও বের হবে কিন্তু দাঁড়াবে পুরুষের পেছনে এবং সকলের সাথে তাকবীর বলবে।
১৯২৯ আমরুন
নাকিদ (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাবলিকা মেয়েদেরকে, ঋতুমতীদেরকে
ও পর্দানশীলদেরকে ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য বের করতে। তবে ঋতুমতী মহিলারা সালাতে
অংশ-গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। তারা কল্যাণ কর্ম ও মুসলিমদের দুআতে অংশগ্রহণ
করবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কারো ওড়না থাকে না (সে কি করবে?) তিনি বললেন, একে অন্যকে
ওড়না পরিধান করতে দিয়ে সাহায্য করবে।
১৯৩০
উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বরী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতর দিবসে বের হলেন এবং
দু-রাক’আত ঈদের সালাত আদায় করলেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। এরপর
মহিলাদের কাছে গমন করলেন, বিলাল (রাঃ) ও তার সাথে ছিলেন। মহিলাদেরকে সাদাকা করতে নির্দেশ দিলেন। তখন
মহিলারা তাদের আংটি ও কণ্ঠাবরণ (গলার হার) দিতে শুরু করল।
১৯৩১ আমরুন
নাকিদ, আবূ বাকর ইবনু নাফি ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১৯৩২
ইয়াহহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল
খাত্তাব (রাঃ) আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরে কোন সূরা পাঠ করতেন? তিনি বললেন, উভয় ঈদের
সালাতে সূরা “কাফ ওয়াল কুরানিল মাজীদ” প্রায় তিলাওয়াত করতেন। ইকতারাবাতিস সা’আ-, “ওয়াল
শাক্কাল কামার”- তিলাওয়াত করতেন।
১৯৩৩ ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ)
আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতে কোন সূরা পাঠ করতেন।
আমি বললাম, –ইকতারাবাতিস সা’আ ও ক্কাফ ওয়াল কুরআনিল “ মাজীদ পাঠ করতেন।
১৯৩৪ আবূ
বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার গৃহে
আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন। আমার নিকট দু’টি আনসারী বালিকা ছিল। তারা বিরত্ব গাথা
গাইছিল, যা আনসারগণ বুয়াস দিবসে আবৃত্তি করেছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আসলে বালিকা
দুটি গায়িকা ছিল না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, শয়তানের
বাদ্যযন্ত্র দ্বারা কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে গান
গাওয়া হচ্ছে। সে দিনটি ছিল ঈদের দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে আবূ বাকর, প্রত্যেক জাতিরই ঈদ আর এটা হল আমাদের ঈদ।
১৯৩৫
ইয়াহহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া , আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে ঐ সনদে বর্ণিত। এতে আরও আছে যে, দুটি বালিকা
দফ (বাদযন্ত্র) নিয়ে খেলছিল।
১৯৩৬ হারুন
ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর
(রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। তখন তাঁর কাছে দুটি বালিকা দফ বাজাচ্ছিল আর গান গাইছিল। আর
সেটা ছিল মিনা দিবসের মধ্যে আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বস্ত্রাবৃত ছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) বালিকাদের ধমকালেন। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখের আবরণ সরিয়ে বললেন, হে আবূ বকর!
এদেরকে ছেড়ে দাও, যেহেতু এটা ঈদের দিন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখছি যে, তিনি আমাকে
তাঁর চাঁদর দ্বারা মাথা ঢেকে রেখেছেন আর তখন আমি হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। আমি তখন
অল্প বয়স্কা। অনুমান করুন অল্প বয়স্কা একজন আরবী বালিকার কত কদর তাঁর কাছে ছিল।
১৯৩৭ আবূ
তাহির (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)
বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি যে, তিনি আমার
হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতেন আর হাবশীরা তাদের অস্ত্র দিয়ে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে যুদ্ধের অনুশীলন (আনত) তিনি তাঁর চাঁদর
দিয়ে আমাকে ঢেকে রাখতেন যেন আমি তাদের খেলাধুলা দেখতে পারি এবং ফিরে না যাওয়া
পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে থাকতেন। তোমরা অনুমান
কর, অল্প বয়স্কা ও খেলাধূলার প্রতি আগ্রহী একজন বালিকার কত কদর তাঁর কাছে ছিল।
১৯৩৮ হারুন
ইবনু সাঈদ আয়লী ও ইউনুস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করলেন, তখন আমার
কাছে দুটি বালিকা ছিল। তারা বুয়াসের ঘটনাবলী সম্পর্কে গান গাচ্ছিল। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং তিনি মুখ
ফিরিয়ে নিলেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং আমাকে ধমকালেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শয়তানের বাজনা বাজান হচ্ছে তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, এদেরকে
গাইতে দাও। যখন আবূ বকর (রাঃ) নিস্পৃহ হলেন। তখন আমি তাদেরকে ইঙ্গিত করলাম এবং
তারা বেরিয়ে গেল। আর ঈদের দিনে সুদানী ঢাল- তলোয়ার জাতীয় যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে
খেলাধূলা করছিল। হয়ত আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
আবেদন করেছিলাম কিংবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তোমার
যুদ্ধের অনুশীলনী দেখার আগ্রহ আছে? আমি বললাম, হ্যা আছে।
এরপর আমাকে তাঁর পিছনে দাড় করালেন। আমার গালে তার গালের উপর ছিল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, এভাবে
অনুশীলন জারি রাখ হে আরাফিদার বংশধরগণ শেষ পর্যন্ত আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি
বললেন, তোমার দেখা শেষ হয়েছ কি? আমি বললাম, তা হয়েছে।
বললেন, এখন যেতে পার।
১৯৩৯ যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সেনাদল আগমন
করলেন ঈদের দিনে মসজিদে। যখন তারা অনূশীলন করছিল, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। আমি আমার মাথা তাঁর
কাঁধের উপর রেখে দিলাম এবং তাদের অনুশীলন দেখতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই
অনুশীলন দেখা থেকে চলে গেলাম।
১৯৪০
ইয়াহহিয়া ইবনু ইয়াহহিয়া ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) হিশাম থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। কিন্তু তারা মসজিদের কথাটি উল্লেখ করেননি।
১৯৪১
ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার, উকবা ইবনু মুকরাম আম্মী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি অনুশীলনকারীদের সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলেছিলেন যে, আমি তাদের
দেখতে আগ্রহী। তিনি বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আমি তাঁর পিছনে
দরজার পার্শে দাড়ালাম এবং তাঁর কান ও কাঁধের মধ্য দিয়ে দেখতে লাগলাম। তখন তারা
মসজিদে মহড়া দিচ্ছিল। আতা (রহঃ) বলেন, অনুশীলনকারী
পার্শিয়ান অথবা হাবশী ছিল। রাবী বলেন, আমাকে ইবনু
আতিক (রহঃ) বলেছেন যে, বরং তারা হাবশী ছিল।
১৯৪২
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা হাবশীরাা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তলোয়ার নিয়ে
যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছিল। সে সময়ে উমর (রাঃ) আগমন করলেন এবং কঙ্কর তুলে নিয়ে তাদের
দিকে ছুড়ে মারতে লাগলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর!
তাদেরকে অনুশীলন করতে দাও।