৫২১২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পান করে, সে তার পেটে জাহান্নামের আগুন ঢুকায় মাত্র।
৫২১৩। কুতায়বা,
মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, আলী ইবনু হুজর সা’দ, ইবনু
নুমায়র, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না, আবূ
বকর ইবনু আবূ শায়বা,
ওলীদ ইবনু শুজা ,
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) তাঁরা সকলেই
নাফি (রহঃ) থেকে মালিক ইবনু আনাস (রাঃ)-এর স্বীয় সনদে নাফি- (রহঃ) থেকে বর্ণিত
হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর সূঁত্রে আলী ইবনু
মুসহির (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত আছে, যে ব্যক্তি রৌপ্য ও স্বর্ণ পাত্রে আহার কিংবা
পান করবে। ইবনু মুসহির (রহঃ)-এর হাদীস ছাড়া অন্য কারো হাদীসে আহার করা ও স্বর্ণ
পাত্রের কথা উল্লেখ নেই।
৫২১৪। যায়দ ইবনু ইয়াযীদ আবূ মাআন রাককাশী (রহঃ) উামু সালামা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি স্বর্ণ বা রৌপ্যপাত্রে পান করে সে কেবল তার উদরে জাহান্নামের আগুন ঢুকায়।
৫২১৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াইয়া আত তামীমী ও আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ)
মুআবিয়া ইবনু সুআয়দ ইবনু মুকাররিন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বারা ইবনু
আযিব (রাঃ)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি জিনিসের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি
জিনিস থেকে নিষেধ করেছেন। আমাদের রোগীর দেখাশোনা করা, জানাযার
সাথে চলা, হাঁচিদাতার
জবাব “ দেয়া, কসম
পূর্ণ করা অথবা বলেছেন কসমকারীর কসম পূর্ণ করা, মাযলূমের সাহায্য করা, দাওয়াতকারীর
আহবানে (দাওয়াতে) সাড়া দেয়া এবং সালামের বিস্তার করার আদেশ দিয়েছেন। আর তিনি
আমাদেরকে স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা, রৌপ্য পাত্রে পান করা, মায়াসির
(এক জাতীয় নরম রেশমী কাপড়) ও কাসসী (রেশম মিশ্রিত এক জাতীয় মিসরীয় কাপড়) ব্যবহার
করা এবং মিহি রেশমী কাপড়, মোটা রেশমী বস্ত্র ও খাঁটি রেশমী কাপড় পরিধান
করতে নিষেধ করেছেন।
৫২১৬। আবূ রবী আতাকী (রহঃ) আশআস ইবনু সুলায়ম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। শুধু কসম বা কসমকারীর কসম পূর্ণ করার- কথাটি ছাড়া। কেননা তিনি তাঁর
হাদীসেও কথাটি উল্লেখ করেননি। এর স্হলে তিনি হারানো বস্তু পেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার
কথা উল্লেখ করেছেন।
৫২১৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আশআস ইবনু আবূ
শ্বাসা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে যুহায়র (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
তবে তিনি সন্দেহ ছাড়াই কসমকারীর কসম পূর্ণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর তিনি তাঁর
হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন যে, তিনি রৌপ্য পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন।
কেননা ইহকালে যারা এতে পান করে পরকালে তারা এতে পান করতে পারবে না।
৫২১৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আশআস ইবনু আবূ শ্বাসা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী ইবনু ইঁদুরীস (রহঃ) জারীর ও ইবনু মুসহির
(রহঃ)-এর বর্ধিত অংশ উল্লেখ করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না,! ইবনু
বাশশার, উবায়দুল্লাহ
ইবনু মু’আয, ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম ও আবদুর রহমান ইবনু বিশর (রহঃ) আশআস ইবনু সুলায়ম (রহঃ) থেকে তাঁদের
সনদে, তাঁদের
হাদীসের সমার্থক করেছেন। তবে বর্ণনাকারী শুঁবা (রহঃ) সালামের বিস্তার করার কথাটি
উল্লেখ করেননি। এর পরিবর্তে তিনি সালামের উত্তর দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, আমাদেরকে
স্বর্ণের আংটি বা স্বর্ণের রিং ব্যবহার করতে তিনি নিষেধ করেছেন।
৫২১৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আশআস আবূ শ্বাসা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে
হাদীসটি বর্ণিত আছে। তিনি (সুফিয়ান)-ও সালামের বিস্তারের কথা এবং সন্দেহ ছাড়াই
স্বর্ণের আংটির কথা উল্লেখ করেছেন।
৫২২০। সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাহল ইবনু ইসহাক ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আশ আস ইবনু কায়স
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উকায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-এর
সাথে মাদায়েনে ছিলালাম। হুযায়ফা (রাঃ) পানি পান করতে চাইলে এক গ্রাম্য মাতব্বর
তাঁর নিকট রৌপ্য পাত্রে পানি নিয়ে এল। তিনি তা ছুড়ে মারলেন এবং বললেন, আমি
তোমাদেরকে (এটি ছুড়ে মারার কারণ) জানাচ্ছি। তাকে আমি নিষেধ করেছিলাম, সে যেন এতে
করে আমাকে পানি পান না করায়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্রে পান করবে না, এবং মোঢী রেশমী বস্ত্র ও মিহি রেশমী বস্ত্র
পরিধান করবে না। কেননা দুনিয়াতে এসকল কাফিরদের জন্য, আর তোমাদের জন্য হবে তা পরকালে, কিয়ামত
দিবসে।
৫২২১। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উকায়ম (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা
হুযায়ফা (রাঃ)-এর সাথে মাদায়েনে ছিলাম। এরপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত রিওয়ায়াতের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার হাদীসে কিয়ামত দিবসে কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫২২২। আব্দুল জব্বার ইবনু আতনা (রহঃ) ইবনু উকায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-এর সাথে মাদায়েনে ছিলাম। এর পর বর্ণনাকারী উপরোক্ত
রিওয়ায়াতের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি কিয়ামত দিবসে কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫২২৩। উবাদুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়সী (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মাদায়েনে হুযায়ফা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি পানি পান
করতে চাইলে এক ব্যক্তি রৌপ্য পাত্রে পানি নিয়ে এল। এর পর বর্ণনাকারী হুযায়ফা
(রাঃ)-এর সুত্রে ইবনু উকায়ম (রহঃ)-এর হাদীসের সমার্থক হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫২২৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও আবদুর রাহমান ইবনু বিশর (রহঃ)
বাহয (রহঃ) থেকে, তারা
সকলে শু’বা (রহঃ) থেকে মু’আয(রাঃ)-এর হাদীস ও সনদের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে
কেবল মু’আয (রাঃ) ছাড়া তাঁদের মধ্যে অন্য কেউ তাঁর হাদীসে –আমি হুযায়ফার সাথে
উপস্থিত ছিলাম এ কথাটি উল্লেখ করেননি। তাঁরা শুধু বলেছেন, হুযায়ফা
(রাঃ) পানি পান করতে চাইলেন।
৫২২৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-এর
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখিত হাদীসের সমার্থক
(হাদীস)-বর্ণিত আছে।
৫২২৬। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হুযায়ফা (রাঃ) পানি পান করতে চাইলে জনৈক অগ্নিপূজক
একটি রৌপ্য পাত্রে তাঁকে পানি পান করতে দিল। তখন তিনি বললেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা মিহি
রেশমী কাপড় ও মোটা রেশমী কাপড় পরিধান করবে না,স্বর্ণ ও রৌপ্য পাত্রে পান করবে না এবং
সোনা-রুপার প্লেটে আহারও কারবে না। কারণ দুনিয়াতে এসব তাদের (কাফিরদের) জন্য।
৫২২৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদা) উমার
ইবনু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদের দরজার নিকটে লাল রংয়ের হুল্লা (রেশম মিশ্রিত চাঁদর)
দেখে বললেন, হে
আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি এটি খরিদ করে জুমূআর দিন এবং কোন প্রতিনিধি দল আপনার নিকট
আসলে পরিধান করতেন (তাহলে কতো ভাল হতো)! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটি সে ব্যক্তই পরিধান করবে পরকালে যার কোন অংশ নাইা এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ জাতীয় কয়েকটি হুল্লা এলে
তিনি তা থেকে একটি হুল্লা উমার (রাঃ)-কে দিলেন। উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর
রাসুল! আপনি এটি আমাকে পরতে দিলেন? অথচ আপনি উতারিদের (জনৈক ব্যক্তি) হুলা
সম্পর্কে কত কিছু বলেছেন? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এটি তোমাকে পরিধান করতে দেইনি। এরপর উমার (রাঃ) সেটি তার
মক্কার এক মুশরিক ভাইকে পরিয়ে দিলেন।
৫২২৮। ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ
ইবনু আবূ বাকর মুকাদ্দাসী ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সূত্রে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫২২৯। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
(একবার) উমার (রাঃ) উতারিদ তামীমীকে বাজারে লাল রং-এর হুল্লা বিক্রি করতে দেখলেন।
লোকটি রাজা-বাদশাহদের নিকট যেত এবং তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা অর্জন করত। উমার
(রাঃ) বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি উতারিদকে বাজারে লাল রং-এর হুল্লা বিক্রি করতে দেখলাম। আপনি যদি
এটি খরিদ করে আরবের কোন প্রতিনিধি দল আপনার নিকট এলে পরিধান করতেন! আমার মনে হয়
তিনি আরো বলেছেন, এবং
জুমুআর দিনেও পরিধান করতেন, তাহলে কতো না ভাল হতো! তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ রেশমী কাপড় সে লোকই দুনিয়ায় পরিধান
করবে, পরকালে
যার কোন হিসসা নেই। এর এক দিন পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে কিছু লাল রং-এর হুল্লা আসলে তিনি তার একটি উমার (রাঃ)-এর কাছে ও একটি উসামা
ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কেও তিনি একটি
-হুল্লা- দিলেন এবং বললেন, এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদের মাঝে
বণ্টন করে দাও। ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ এরপর উমার (রাঃ)তার হুল্লাটি নিয়ে আসলেন এবং
বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি আপনি আমার নিকট পাঠিয়ে দিলেন অথচ গতকাল উতারিদ-এর
হুল্লা সম্পর্কে আপনি কত কিছু বলেছিলেন? তিনি বললেন, পরিধান করার জন্য সেটি আমি তোমার কাছে পাঠাইনি, বরং আমি
এটি তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তুমি এটি বিক্রি করে উপকৃত হতে পার। এদিকে উসামা
(রাঃ) তাঁর হুল্লাটি পরিধান করে বিকেল বেলা বের হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি এমনভাবে তাকালেন, যে, তিনি বুঝতে পারলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কাজকে অপছন্দ করেছেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া
বাসূলাল্লাহ! আপনি এভাবে আমার প্রতি তাকাচ্ছেন কেন? আপনই তো এটি আমার নিকট পাঠিয়ে ছেন! তিনি বললেন
আমি তোমার কাছে এজন্য পাঠাই নি যে, তুমি এটি পরিধান করবে বরং এজন্য এটি পাঠিয়েছি
যে, তুমি
এটি ফেড়ে ওড়না বানিয়ে তোমার মহিলাদেরকে দিবে।
৫২৩০। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ
ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) একদা বাজারে মোটা
রেশমের তৈরি একটি হুল্লা বিক্রি হতে দেখে সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিয়ে এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি খরিদ করুন। তাহলে
ঈদের দিন ও প্রতিনিধি দলের আগমণকালে এটি দ্বারা আপনি সুসজ্জিত হতে পারবেন। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটি কেবল সে ব্যক্তিরই পোশাক, যার
(পরকালে) কোন হিসসা নেই। ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ এরপর উমার (রাঃ)আল্লাহর ইচ্ছা
অনুযায়ী কিছুকাল অতিবাহিত করলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে একটি খাঁটি রেশমের জুব্বা পাঠালেন। উমার (রাঃ) সেটি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর
রাসুল! এটি সে ব্যক্তিরই পোশাক (পরকালে) যার কোন অংশ নাই, আবার আপনি
এটি আমার কাছে পাঠালেন যে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ (আমি পাঠিয়েছি) যাতে তুমি এটি বিক্রি করে নিজের “
প্রয়োজন মিটাতে পার।
৫২৩১। হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৫২৩২। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমার (রাঃ)
উতারিদ পরিবারের জনৈক ব্যক্তির নিকট একটি রেশমী কাবা (বড় জামা) দেখতে পেয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, আপনি যদি
এটি খরিদ করতেন! তখন তিনি বললেনঃ এটি কেবল সে ব্যক্তই পরবে (পরকালে) যার কোনঅংশ
নেই। এরপর লাল রং-এর একটি হুল্লা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
নিকট হাদিয়া পাঠানো হলে তিনি সেটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি উমার (রাঃ) বলেনঃ
আমি বললাম, আপনি
এটি আমার কাছে পাঠালেন? অথচ এজাতীয় কাপড় সমন্ধে আপনার উক্তি আমার
কর্ণগোচর হয়েছে। তিনি বললেনঃ আমি শুধু এজন্য এটি তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তুমি
এটি দ্বারা (বিক্রি করে) উপকার লাভ করতে পারো।
৫২৩৩। ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমার (রাঃ)
উতারিদ পরিবারের জনৈক ব্যক্তির গায়ে দেখতে পেলেন। এরপর বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনু
সাঈদ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমি এটি
তোমার কাছে পাঠিয়েছি যাতে তুমি এরদ্বারা উপকৃত হতে পার। পরিধান করার জন্য এটি
তোমার কাছে পাঠাই নি।
৫২৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ ইসহাক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সালিম ইরন আবদুল্লাহ (রহঃ) আমাকে বলেন ইসতাবরাক কি? তিনি বললেন, আমি বললাম, মোটা ও
খসখসে রেশমী কাপড়। তিনি বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, উমার (রাঃ)
এক ব্যক্তির গায়ে ইসতাবরাকের তৈরি হুল্লা দেখে সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসলেন। এরপর বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া (রহঃ) উল্লেখিত
রাবীগণের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি বলেছেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এটি তোমার কাছে কেবল এজন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি এর
দ্বারা কিছু মাল সংগ্রহ করতে পারবে।
৫২৩৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম
আবদুল্লাহ (রহঃ), আতা
(রহঃ)-এর সন্তানদের মামাও হতেন– থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আসমা (রাঃ) আমাকে
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট এই বলে পাঠালেন যে, আমি জানতে
পেরেছি তুমি নাকি তিনটি জিনিসকে হারাম মনে কর। কাপড়ে (রেশমের) নকশা, গাঢ় লাল
রং-এর মাহাসারা (এক জাতীয় রেশমজাত বস্ত্র) ও রজবের পূরো মাস সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)
পালন করা। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, আপনি যে রজব মাসের সাওম
(রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হারামের কথা বললেন এটা সে ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে সম্ভব
সদাসর্বদা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন? আর আপনি যে কাপড়ে (রেশমের) নকশার কথা বললেন, এ সমন্ধে
আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি, রেশমী
কাপড় কেবল সে লোকই পরবে (পরকালে) যার কোন হিসসা নেই। তাই আমার আশংকা লে নকশাও এর
অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রঙ-এর মায়সারা সে তো আবদল্লাহই মায়সারা। দেখলাম, আসলেই সেটি
গাঢ় লাল রং-এর। এরপর আমি আসমা (রাঃ)-এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে খবর
দিলাম। তখন তিনি বললেন, এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর জুববা। এই বলে তিনি কিসরাওয়ানী (পারস্য সমরাট কিসরার দিকে
সন্বন্ধযূক্ত) সবুজ রং-এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল খাঁটি রেশমের তৈরি
এবং এর (হাতার) ছিদ্রদ্বয় ছিল খাটি রেশমের টূকরা দ্বারা আবৃত। তিনি বললেন, এটি আয়িশার
মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আমি এটি নিয়েছি। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের শেফা হাসিলের
জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি।
৫২৩৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) খালীফা ইবনু কাণব আবূ যুবআন (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে খুতবায় একথা বলতে শুনেছি যে, সাবধান!
তোমরা তোমাদের। নারীদেরকে রেশমী কাপড় পরাবে না। কারণ আমি উমার ইবনু খাত্তাব
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমরা রেশমী কাপড় পরো না। কেননা দুনিয়ায় যে ব্যক্তি তা পরবে, পরকারে সে
তা পরতে পারবে না।
৫২৩৭। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমরা -আজারবাইজান”-এ ছিলাম, এ সময় উমার (রাঃ) আমাদের (দলপতির) নিকট পত্র
লিখলেন, হে
উতবা ইবনু ফারকাদ! এ সস্পদ তোমারও কষ্টার্জিত নয়, তোমার পিতামাতারও কষ্টার্জিত নয়। সুতরাং এ
থেকে তুমি যেভাবে নিজ গৃহে পেটপূরে আহার কর, তেমনিভাবে মুসলমানদের বাড়িতে পৌছে দিয়ে
তাদেরকেও তৃপ্তিসহ আহার করাও। আর সাবধান, বিলাসিতা, মুশরিকদের বেশভূষা এবং রেশমী কাপড় পরা থেকে
বেচে থাকবে। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী বস্ত্র পরিধান
করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তবে এ পরিমাণ জায়েয আছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইবাদাত ও মধ্যমা অঙ্গুলীদ্বয় একত্রিত করে
আমাদের সামনে তুলে ধরলেন। যুহায়র (রাঃ) বললেন আসিম (রাঃ) বলেছেন, কিতাবে আছে, আর যুহায়র
(রাঃ) আঙ্গুল উঠালেন।
৫২৩৮। যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে রেশমী কাপড় সমন্ধে অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫২৩৯। আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আবূ উসমান (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা উকবা ইবনু ফারকাদ (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমাদের
কাছে উমার (রাঃ)-এর পত্র এলো। পত্রে উল্লেখ ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ-:রেশমী কাপড় কেবল সে লোকই পরিধান করবে, পরকালে যার তা থেকে কোন অংশ নেই। তবে এ পরিমাণ
জায়েয আছে। আবূ উসমান (রহঃ) তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুল সংলগ্ন দুটো আঙ্গুল দ্বারা ইশারা
করলেন। আমাকে সে দুটোতে তায়ালিসার বোতাম দেখানো হলো যখন আমি তায়ালিনা (সবুজ রং এর
চাঁদর) দেখলাম।
৫২৪০। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আলা (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমরা উকবা ইবনু ফারকাদ (রহঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বর্ণনাকারী পরবর্তী অংশ
জারীরের হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।
৫২৪১। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা উকবা ইবনু ফারকাদ (রহঃ)-এর সাথে আজার বাইজান-এ অথবা
সিরিয়ায় ছিলাম। সে সময় আমাদের কাছে উমার (রাঃ)-এর নিকট থেকে এ মর্মে একটি পত্র
এলো যে, আম্মা
বাদ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেশমী কাপড় ব্যবহার নিষেধ করেছেন, তবে
দুআঙ্গুল পরিমাণ হলে জায়েয হবে। আবূ উসমান (রহঃ) বলেনঃ আমাদের বুঝতে বিলম্ব হল না
যে, তিনি
(এ দ্বারা) নকশী ও কারুকার্যের প্রতি ইংগিত করেছেন।
৫২৪২। আবূ গাসসান মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে
উল্লিখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি আবূ উসমান (রহঃ)-এর উক্তিটি উল্লেখ
করেন নাই।
৫২৪৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, যুহায়র
ইবনু হারব, ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সুওয়ায়দ ইবনু গাফালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদা) উমার
ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জাবিয়া নামক স্থানে খুতবা দানকালে বললেন, আল্লাহর
নাবীরেশমী বস্ত্র পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি দুআঙ্গূল বা তিন আঙ্গুল বা
চার আঙ্গুল পরিমাণ হয় (তাহালে জায়েয হবে)।
৫২৪৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রু্যযী (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে
অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৫২৪৫। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, ইয়াহইয়া
ইবনু হাবীব ও হাজ্জাজ ইবনু শাঁঈর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাটি রেশমের তৈরি একটি কাবা
পরিধান করলেন, যা
তাঁকে হাদিয়া (উপটোকন) দেয়া হয়েছিলো। এরপর তিনি সেটি ততক্ষণাৎ খুলে ফেললেন।
তারপর-সেটি উমার ইবনু খাত্তাবের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। তাকে বলা হলো, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আপনি ঝট করে এটি খুলে ফেললেন যে? বললেন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এটি
ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। এরপর উমার (রাঃ) ক্রন্দনরত অবস্হায় তাঁর কাছে এসে
বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যে বস্তু অপছন্দ করলেন তা আমাকে দিলেন, আমার উপায়
কি? তখন
তিনি বললেন, আমিএটি
তোমাকে পরতে দেইনি। আমি কেবল তোমাকে বিক্রি করার জন্য দিয়েছি। পরে উমার (রাঃ) সেটি
দু’হাজার দিরহামে বিক্রি করলেন।
৫২৪৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আলী (রাঃ) এ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি লাল রংয়ের হুল্লা হাদিয়া
দেয়া হল। এরপর তিনি সেটি আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আমি সেটি পরিধান করলে আমি তাঁর
চেহারায় ক্রোধ লক্ষ্য করলাম। তিনি বললেনঃ আমি এটি পরিধান করার জন্য তোমার কাছে
পাঠাইনি। পাঠিয়েছি কেবল এজন্য যে, তুমিএটি ফেড়ে ওড়না হিসেবে তোমার মহিলাদের মধ্যে
বণ্টন করে দিবে।
৫২৪৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ আওন (রহঃ)
উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে মুআয (রহঃ)-এর হাদীসে আছে, পরে তার
আদেশে আমি সেটি আমার মহিলাদের মাঝে ভাগ করে দিলাম। আর মুহাম্মাদ ইবনু জাফর (রহঃ)-এর
হাদীসে আছে, পরে
আমি আমার মহিলাদের মাঝে সেটি ভাগ করে দিলাম। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর আদেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করেননি।
৫২৪৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, দাওমা
নিবাসী উকায়দির নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি রেশমী কাপড় উপটৌকন
দিলে তিনি সেটি আলী (রাঃ)-কে দিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি এটি ফেড়ে ফাতিমাদের মধ্যে ভাগ করে দাও।
আবূ বাকর ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)-মহিলাদের মাঝে- বাক্য উল্লেখ করেছেন।
৫২৪৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি লাল বর্ণের
হুল্লা দিলেন। আমি সেটি পরে বের হলে তাঁর চেহারায় ক্রোধ লক্ষ্য করলাম। তিনি বলেনঃ
পরে আমি সেটি ফেড়ে আমার মহিলাদের মাঝে ভাগ করে দিলাম।
৫২৫০। শায়বান ইবনু ফারূরুখ ও আবূ কামিল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার (রাঃ)-এর
নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালে উমার (রাঃ) বললেন, আপনি এটি আমার কাছে পাঠালেন, অথচ আপনি
এটি সম্বন্ধে কত কিছু না বলেছেন? তিনি বললেনঃ আমি এটি এজন্য পাঠাইনি যে তুমি তা
পরিধান করবে। আমি কেবল এ জন্য পাঠিয়েছি যে, তুমি এর বিক্রয়লব্ধ টাকা দ্বারা উপকৃত হবে।
৫২৫১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি দুনিযায় রেশমজাত কাপড় পরে, পরকালে সে তা পরতে পারবে না।
৫২৫২। ইবরাহীম ইবনু মূসা আর-রাযী (রহঃ) আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমজাত কাপড় পরে, পরকালে সে
তা পরতে পারবে না।
৫২৫৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
বলেছেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রেশমের তৈরি পেছন ফাড়া একটি কাবা উপটৌকন দেয়া
হলে তিনি তা পরিধান করলেন। তারপর তা পরেই সালাত আদায় করলেন। যখন সালাত সমাধা করলেন, তখন সেটি
খুব তড়িঘড়ি খুলে ফেললেন। যেন তিনি ওটা পছন্দ করছেন না। পরে তিনি বললেন, মুত্তাকীদের
জন্য এটা পরিধান করা উচিত নয়।
৫২৫৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) থেকে
উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।
৫২৫৫। আবূ কুরায়র মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনু আওফ ও যুবায়র ইবনু আওয়াম
(রাঃ)-কে তাদের চর্মরোগ বা অন্য কোন রোগের দরুন সফরে রেশমী জামা পরিধানের অনুমতি
দিয়েছেন।
৫২৫৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাঈদ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদেও হাদীসটি
বর্ণিত আছে।তবে তিনি। মুহাম্মদ ইবনু বিশর (রহঃ) সফরে কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫২৫৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়র ইবনু আওয়াম ও আব্দুর রহমান
ইবনু আওফ (রাঃ)-কে তাদের চর্ম রোগের দরুণ রেশমী কাপড় পরিধানের অনুমতি দিয়েছেন।
অথবা তিনি বলেনঃ তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
৫২৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু জাফর
(রহঃ)-এর সূত্রে শুবা (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে অনুরুপ সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫২৫৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে আন্দুর রহমান ইবনু
আওফ ও যুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
(শরীরে) উকুনের অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে এক যুদ্ধে রেশমী কামিস “ (জামা) পরিধানের
অনুমতি দিয়েছেন।
৫২৬০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসফার ঘাস দ্বারা
রঞ্জিত (হলুদ রঙের) দুটি কাপড় দেখে বললেন, এগুলো কাফিরদের পোশাক। সূতরাং তুমি এগুলি
পরিধান করবে না।
৫২৬১। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ
কাসীর (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। তবে তাঁরা দুজেন খালিদ ইবনু
মাদান (রহঃ)-এর কথাও উল্লেখ করেছেন।
৫২৬২। দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গায়ে আসফার দ্বারা রঞ্জিত (হলুদ রঙের)
দুটি কাপড় দেখে বললেন,
তোমার মা কি তোমাকে এ কাজে আদেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, আমি এ দুটি ধুয়ে ফেলি? তিনি বললেন, বরং
দুটিকেই পুড়িয়ে ফেল।
৫২৬৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাসসী (এক জাতীয় রেশমী কাপড়) ও মুআসফার (আসফার ঘাস
দ্বারা রঞ্জিত হলুদ কাপড়) পরিধান করতে, সোনার আংটি ব্যবহার করতে এবং রুকুতে কুরআন
পড়তে নিষেধ করেছেন।
৫২৬৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী (রাঃ)-থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু অবস্হায় কুরআন পড়তে, স্বর্ণ ও
মুআসফার কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
৫২৬৫। আদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে, কাসসী কাপড়
পরিধান করতে, রুকু
ও সিজদায় কুরআন পড়তে এবং আসফার দ্বারা রঞ্জিত (হলুদ রঙের) পোশাক পরতে নিষেধ
করেছেন।
৫২৬৬। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সব চেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় পোশাক কি ছিল? তিনি বললেনঃ কাতান কাপড়।
৫২৬৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাপড় ছিল
কাতান।
৫২৬৮ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি আমাদের সামনে ইয়েমেনের তৈরি মোটা কাপড়ের একটি ইযার
(লুঙ্গি) ও মুলাববাদা নামক একটি চাঁদর বের করলেন। তিনি বলেনঃ এরপর তিনি (আয়িশা)
আল্লাহর কসম করে বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটি কাপড়
পরিহিত অবস্হায় ওফাত পান।
৫২৬৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) আমাদের সামনে একটিঁ
ইযার ও একটি তালিবিশিষ্ট চাঁদর বের করলেন এবং বললেন, এতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত হয়। ইবনু হাতিম (রহঃ) তাঁর হাদীসে মোটা ইযারের কথা বলেছেন।
৫২৭০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আইয়ুব (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত
আছে। তিনিও মোটা ইযারের (লূঙ্গি) কথা বলেছেন।
৫২৭১। সূরায়জ ইবনু ইউনূস, ইবরাহীম ইবনু মূসা ও আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(গৃহ থেকে) একটি চাঁদর গায়ে দিয়ে বের হয়েছিলেন যাতে কালো পশম দ্বারা উটের হাওদার
চিত্র চিত্রিত ছিল।
৫২৭২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে
বালিশের ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দিতেন সেটি ছিল
চামড়ার। এর ভেতরে ভরা ছিল খেজুর বৃক্ষের ছাল।
৫২৭৩। আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিছানায় ঘূমাতেন, সেটি
চামড়ার ছিল। তার ভিতরে ভরা ছিল খেজুর বৃক্ষের ছাল।
৫২৭৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হুশাম (রহঃ) থেকে
উল্লেখিত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়েত করেন। তবে তারা দুজন ফিরাশ-এর স্হলে ‘দিজা’
বলেছেন। আর আবূ মুআবিয়া (রহঃ)-এর হাদীসে আছে “যার উপর তিনি ঘুমাতেন।
৫২৭৫। কুতায়রা ইবনু সাঈদ, আমরুন এ নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি বিয়ে করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি কি বিছানার চাঁদর তৈরি করেছ? আমি বললাম, আমরা
বিছানার চাঁদর কোথায় পাব? তিনি বললেন, অচিরেই এর ব্যবস্হা হবে।
৫২৭৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি যখন বিয়ে করলাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তুমি কি বিছানার চাঁদর তৈরি করেছ? আমি বললাম, আমরা কোথায়
পাব বিছানার চাঁদর?
তিনি বললেন, শীঘ্রই
এর ব্যবস্হা হবে। জাবির (রাঃ) বলেনঃ আমার স্ত্রীর কাছে একটি বিছানার চাঁদর ছিল।
আমি বলতাম, তুমি
এটি (আমার বাড়ি থেকে) সরিয়ে ফেল। সে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না
বলেছেনঃ শীস্রই এর ব্যবস্হা হবে? মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ)
থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তিনি ‘ফাআদায়ুহা’ কথাটি বর্ধিত
করেছেন।
৫২৭৭। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, ত্রকটি বিছানা পুরুষের, দ্বিতীয়
বিছানা মহিলার, তৃতীয়টি
মেহমানের জন্য আর চতূর্থটি (যদি প্রয়োজনাতিরিক্ত হয়) শয়তানের জন্য।
৫২৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় (পায়ের
গিরার নিচে) ঝূলিয়ে রাখে, আল্লাহ তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।
৫২৭৯। আবূ বাকর ইবনু শায়বা, ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, উবায়দুল্লাহ
ইবনু সাঈদ, আবূ
রাবী ,আবূ
কামিল, যুহায়র
ইবনু হারব, কুতায়বা, ইবনু রুমহ
ও হারুন আয়লী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের অনুররুপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে তাঁরা কিয়ামত দিবসে
কথাটি বর্ধিত করেছেন।
৫২৮০। আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক অহংকারবশে তাঁর কাপড়গুলো (টাখনুর
নীচে) ঝূলিয়ে দেবে,
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি (রহমতের নযরে) তাকাবেন না।
৫২৮১। আবূ বাকর ইবনু শায়বা, ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত বর্ণনাকারীদের হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৫২৮২। ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় (টাখনুর
নিচে) ঝূলিয়ে রাখবে,
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না।
৫২৮৩। ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি। বর্ণনাকারী উল্লেখিত
হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়েত করেন। তবে তিনি ‘সাওয়াবাহ’ -এর পরিবর্তে ‘সিয়াবাহ’
বলেছেন।
৫২৮৪। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক
ব্যক্তিকে তার ইযার (লুঙ্গি, টাখনুর নিচে) ঝূলিয়ে রাখতে দেখে বললেন, তুমি কোন
বংশের লোক? সে
তার বংশ পরিচয় দিল। দেখা গেল সে বনী লায়স গোত্রের লোক। তিনি তাকে চিনতে পারলেন।
তিনি বললেন, আমি
আমার এ দুটি কানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
তার ইযার ঝূলিয়ে চলবে আর তার উদ্দেশ্য থাকবে কেবল অহংকার প্রকাশ করা, কিয়ামত
দিবসে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।
৫২৮৫। ইবনু নুমায়র, উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয ও ইবনু আবূ খালফ (রহঃ)
ইবনু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
বর্ণনা করেন। তবে সবার বর্ণনায় আছে, যে ইযার ঝূলিয়ে দিবে এবং তারা ‘সাওয়াবা’ কথাটি
উল্লেখ করেননি।
৫২৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও ইবনু আবূ খালফ (রহঃ)
মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ইবনু জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার
(রাঃ)-এর নিকট একথা জিজ্ঞাসা করার জন্য নাফি ইবনু আবদূল হারিস (রহঃ)-এর আযাদকৃত
গোলাম মুসলিম ইবনু ইয়াসারকে আদেশ দিলাম যে, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে সে ব্যক্তি সমন্ধে কিছু শুনেছেন যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার ইযার ঝূলিয়ে চলে? এ সময় আমি
তাদের দু-জনের মাঝেই উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে
(নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে) বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত
দিবসে আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না।
৫২৮৭। আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। আমার
ইযারটি একটু ঝূলে ছিল। তিনি বললেন, হে আবদুল্লাহ! তোমার ইযারটি
(লুঙ্গি বা পায়জামা) উপরে তোল। তখন আমি তা উপরে তুললে তিনি পূনরায় বললেনঃ আরো
উপরে। আমি আরো উপরে তুললাম। তখন থেকে সর্বদা আমি এর প্রতি সতর্ক থাকি। উপস্থিত
লোকদের একজন বললো,
কত উপরে (তুলেছিলেন)? তিনি বললেনঃ ‘নিসফ সাক’- পর্যন্ত।
৫২৮৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি- (তিনি বাহরায়নের গভর্নর ছিলেন), একদা তিনি
দেখলেন, এক
ব্যক্তি তার ইযার ঝূলিয়ে চলছে আর স্বীয় পা যমীনে মেরে বলছে, গভর্নর
এসেছেন, গভর্নর
এসেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ সে লোকের দিকে
তাকাবেন না, যে
তার ইযার ঝূলিয়ে চলে অহংকারবশে।
৫২৮৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উল্লিখিত
সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। তবে ইবনু জাফর (রহঃ)-এর হাদীসে আছে মারওয়ান (রাঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-কে তাঁর স্হলাড়িষিক্ত করেন। আর ইবনু মূসান্না (রহঃ)-এর হাদীসে আছে, “-আবূ
হুরায়রা (রাঃ) মদিনায় স্হলাভিযিক্ত হন।
৫২৯০। আব্দুর রাহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি পায়চারী
করছিল। তার বাকরী ও দু-চাঁদর তাকে বিমোহিত করে তুলছিল। এমন সময় তাকে মাটিতে ধসিয়ে
দেয়া হয়। সে কিয়ামত পর্যন্ত ভূ-গর্ভে তলিয়ে যেতে থাকবে।
৫২৯১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনু
মুনান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫২৯২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার দু-চাঁদর পরে গর্বভরে
পায়চারী করছিল। নিজেকে নিজে ভাল মনে করছিল। এমন সময় হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটিতে ধসিয়ে
দিলেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে ভূ-গর্ভে তলিয়ে যেতে থাকবে।
৫২৯৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হালাম মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ এ হাদীসগুলি আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কিছু হাদীস উল্লেখ করলেন। (তন্মধ্যে একটি হল), রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি তার দুচাঁদর পরে গর্বভরে পথ
চলছিল। এরপর হাম্মাম (রহঃ) উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।
৫২৯৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের
পূর্ববর্তী উম্মাত সমুহের কোন এক ব্যক্তি হুল্লা পরে গর্ব ভরে চলছিল। এরপর
বর্ণনাকারী আবূ রাফি (রহঃ) তাঁদের হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।
৫২৯৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
৫২৯৬। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না ও ইবনু বাশশার, মুহাম্মাদ ইবনু জাফর (রহঃ)-এর সুত্রে শুবা (রহঃ)
থেকে উল্লিখিত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু মূসান্না (রহঃ)-এর হাদীসে
কাতাদা (রহঃ) বলেছেন ,
আমি নাযর ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে শুনেছি। মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
ব্যক্তির হাতে একটিস্বর্ণের আংটি দেখতে পেয়ে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের
মধ্যে কেউ কেউ আগুনের টূকরা সংগ্রহ করে তার হাতে রাখে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্হান করলে লোকটিকে বলা হল, তোমার আংটিটি তুলেনাও, এরদ্বারা
ফায়দা লাভ কর। সে বলল,
না। আল্লাহর শপথ! আমি কখনো ওটা নেব না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তো ওটা ফেলে দিয়েছেন।
৫২৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিযী, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি তৈরি করলেন।
তিনি যখন এটি পরতেন,
এর মোহরটি রাখতেন হাতের তালূর দিকে। লোকেরাও এরুপ বানিয়ে নিল। এরপর একদিন তিনি
মিম্বারে বসে সেটি খূলে ফেললেন এবং বললেনঃ আমি এ আংটিটি পরতাম আর এর মোহরটি ভেতরের
দিকে রাখতাম। পরে তিনি সেটি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। এরপর বললেন, আল্লাহর
কসম! আমি এটি আর কখনো পরব না। তখন লোকেরাও তাদের আংটিগুলো খুলে ফেলে দিল।
৫২৯৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু
মূসান্না ও সাহব ইবনু উসমান (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম – থেকে ম্বর্ণের আংটি প্রসঙ্গে এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে
বর্ণনাকারী উকবা ইবনু খালিদ (রহঃ)-এর হাদীসে এ কথাটি বর্ধিত করেছেন- তিনি এটি তাঁর
ডান হাতে পরতেন। ”আহমদ ইবনু আবদা, ইসহাক মূসায়্যাবী, মুহাম্মদ
ইবনু আব্বাদ ও হারুন আয়লী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্বর্ণের আংটি প্রসঙ্গে লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ
রিওয়ায়েত করেছেন।
৫২৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার একটি আংটি তৈরি
করেছিলেন। এটি তাঁর হাতেই থাকত। এরপর আবূ বাকর (রাঃ)-এর হাতে, এরপর উমার
(রাঃ)-এর হাতে, এরপর
উসমান (রাঃ)-এর হাতে ছিল। তাঁর হাতে থেকেই সেটি আরীস নামক কুপে পড়ে গেল। তাতে
খোদিত ছিল ‘মুহাম্মাদু রাসুলুল্লাহ’ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেনঃ অবশেষে সেটি কুপে পড়ে
গেল। -তাঁর হাত থেকে পড়েছে- একথা তিনি বলেননি।
৫৩০০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
স্বর্ণের একটি আংটি তৈরি করে কিছুদিন পর তা ফেলে দিলেন। এরপর একটি রুপার আংটি তৈরি
তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন। তিনি বললেন, কেউ যেন
আমার এ আংটির খোদাইর অনুরুপ খোদাই না করে। তিনি যখন এটি পরতেন, এর মোহরটি
হাতের তালুমুখী করে রাখতেন। সেটাই মুআয়কিব (রাঃ) থেকে আরীস নামক কুপে পড়ে গিয়েছিল।
৫৩০১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ রবী আতাকী (রহঃ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবীরুপার একটি আংটি তৈরি করলেন এবং তাতে
‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন। তিনি লোকদের বললেন, আমি একটি
রুপার আংটি তৈরি করেছি এবং তাতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করেছি।
সুতরাং কেউ যেন অনুরুপ খোদাই না করে।
৫৩০২। আহমদ ইবনু হান্বল, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণিত
আছে। তবে বর্ণনাকারী হাদীসেঃ ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৩০৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমে (বাদশাহব
নিকট) পত্র পাঠাতে চাইলেন তখন সাহাবাগণ বললেন, তারা তো মোহরাঙ্কিত পত্র ছাড়া অন্য কোন পত্র
পাঠ করে না। তিনি (আনাস) বলেনঃ পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রুপার একটি আংটি বানালেন। আমি যেন এখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর হাতে এর শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছি। এতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’
কথাটি খোদিত ছিল।
৫৩০৪। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অনারবী (সমরাট)-দের নিকট পত্র দেয়ার
ইচ্ছা করলেন। তাঁকে বলা হলো, অনারবীরা তো কেবল মোহরাল্কিত পত্র গ্রহণ করে।
তখন তিনি একটি রুপার আংটি বানিয়ে নিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি যেন এখনো তাঁর হাতে
সেটির শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছি।
৫৩০৫। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পারস্য সমরাট) কিসরা, (রোম সমরাট)
কায়সার ও (আবিসিনিয়ার সমরাট) নাজ্জাশীর নিকট পত্র লিখতে ইচ্ছা করলে তাঁকে বলা হলো, তারা তো
সিলমোহর ছাড়া পত্র গ্রহণ করে না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রুপার একটি আংটি তৈরি করলেন এবং এতে ‘মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ’ কথাটি খোদাই করলেন।
৫৩০৬। আবূ ইমরান মুহাম্মদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে একদিন
চাঁদির একটি আংটি দেখলেন। তিনি বলেনঃ লোকেরাও চাঁদির আংটি বানিয়ে পরতে লাগল। পরে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আংটিটি খুলে ফেললে লোকেরাও তাদের আংটি
গুলি খুলে ফেলে দিল।
৫৩০৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে একদিন চাঁদির একটি আংটি
দেখলেন, এরপর
লোকেরাও চাঁদির আংটি বানিয়ে পরতে লাগলো। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর আংটিটি ফেলে দিলে লোকেরাও তাদের আংটিগুলি ছুঁড়ে ফেলে দিল।
৫৩০৮। উকবা উবন মুকরাম আম্মী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে
অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৩০৯। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটিটি ছিল চাঁদির তৈরি- এর
মোহরটি ছিল হাবশী।
৫৩১০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতে র্মীপার একটি আংটি পরেছেন। এতে
হাবশী মোহর ছিল। তিনি এর মোহরটি হাতের তালুর দিকে করে রাখতেন।
৫৩১১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইউনুস ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) উল্লেখিত সনদে তালহা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)-এর হাদীসের অনুররূপ বর্ণনা করেছেন।
৫৩১২। আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ
রাফি (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর আংটি ছিল এ আঙ্গুলে। এবং তিনি এ কথা বলে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলের
প্রতি ইশারা করেন।
৫৩১৩। মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন, আমি
যেন এ আঙ্গূলে বা এ আঙ্গুলে আমার আংটি না পরি। আসিম (রহঃ)-এর জানা নাই আঙ্গুল দুটি
কোন কোনটি। আর তিনি আমাকে কাসসী কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন এবং মায়াসির–এর উপর বসতে
নিষেধ করেছেন। কাসসী হচ্ছেন ডোরাদার কাপড়- যা মিসর ও সিরিয়া থেকে আমদানী করা হতো, তাতে এমন এমন চিত্রও থাকতো। আর মায়াসির হলো-
সেই (নরম রেশমজাত) কাপড় যা মহিলারা তাদের স্বামীদের জন্য হাওদায় বিছিয়ে দেয়, বিছানার লাল চাঁদরের মত।
৫৩১৪। ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
আবূ মূসা (রাঃ)-এর জনৈক পুত্র থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে বলতে
শুনেছি। এরপর বর্ণনাকারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপভারে এই
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৫৩১৫। ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। এরপর বর্ণনাকারী অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।
৫৩১৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমি যেন আমার এ আঙ্গুল কিংবা
এ আঙ্গুলে আংটি ব্যবহার না করি। এই বলে তাঁর মধ্যমা ও তাঁর (ডান) পার্শস্থ
আঙ্গুলের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।
৫৩১৭। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে এক যূদ্ধে বলতে শুনেছি, তোমরা
বেশি বেশি (সময় জুতা পরে থাকবে। কেননা মানুষ যতক্ষন জুতা পরিহিত থাকে, ততক্ষন সে সওয়ার থাকে।
৫৩১৮। আব্দুর রাহমান ইবনু
সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন জুতা পরিধান করবে, তখন
প্রথমে ডান পায়ে পরিধান করবে। আর যখন খুলবে, তখন
আগে বাম পায়ের জুতা খুলবে। আর হয় দু-খানাই পায়ে দিবে, নতুবা দুখানাই খুলে ফেলবে।
৫৩১৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এক পায়ে জুতা পরে যেন
চলাফেরা না করে। হয়তো দু-খানাই পায়ে দিবে, নতুবা
দুখানাই খুলে ফেলবে।
৫৩২০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ রযীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃআবূ হুরায়রা
(রাঃ) আমাদের কাছে এলেন এবং স্বীয় হাত কপালে মেরে বললেন, তোমরা কি আলোচনা কর যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর ওপর মিথ্যারোপ করি? যাতে
করে তোমরা নিজেদের হিদায়াতপ্রাপ্ত হবার দাবি করতে পার আর আমি বিভ্রান্ত প্রমানিত
হই? শোন, আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন
তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা না পায়, তখন
সে যেন সেটি ঠিক না করা পর্যন্ত অপর জুতাটি পায়ে দিয়ে না চলে। আলী ইবনু হুজর সা’দী
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৫৩২১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যক্তির বাম হাতে আহার করা, এক পায়ে জুতা পরে চলাফেরা করা, এক কাপড়ে সমস্ত দেহ পেঁচিয়ে রাখা ও গুপ্তাঙ্গ
খোলা রেখে এক কাপড়ে শুটি মেরে বসা থেকে নিষেধ করেছেন।
৫৩২২। আহমদ ইবনু ইউনুস ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিংবা তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের
কারো যখন -একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়, তখন
সে যেন এক জুতা পায়ে না চলে। যতক্ষন সে তার ফিতাটি ঠিক না করে। আর কেউ যেন এক
মোজা পায়ে দিয়ে না চলে, বাম হাতে আহার গ্রহণ না করে, এক কাপড়ে শুটি মেরে না বসে এবং এক কাপড়ে সমস্ত
শরীর পেঁচিয়ে না রাখে।
৫৩২৩। কুতায়বা ও রুমহ (রহঃ)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কাপড়ে
সমস্ত শরীর পেঁচিয়ে রাখা, এক কাপড়ে শুটি মেরে বসা এবং
চিৎ হয়ে শোয়া অবস্হায় এক পায়ের উপর অপর পা তুলে রাখা থেকে নিষেধ করেছেন।
৫৩২৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
একটি জুতা পরে হাঁটবে না, এক ইযারে শুটি মেরে বসবে না, বাম হাতে খাবে না, এক কাপড়ে সমস্ত শরীর পেঁচিয়ে রাখবে না এবং চিৎ
হয়ে শোয়া অবস্হায় এক পায়ের উপর অপর পা তুলে দিবে না।
৫৩২৫। ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অপর পা
ভুলে না দেয়।
৫৩২৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ)-এর চাচা থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্হায় এক পায়ের উপর অপর পা তুলে রাখতে
দেখেছেন।
৫৩২৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নূমমুয়র, যুহায়র
ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ তাহির, হারামালা
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৩২৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ-রবী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যাফবানী রংয়ের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। কুতায়বা (রহঃ) বলেনঃ হাম্মাদ
(রহঃ) বলেছেনঃ অর্থাৎ পূরুষদেরকে।
৫৩২৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পূরুষদের যাফরানী
রং-এর কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
৫৩৩০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (মক্কা) বিজয়ের বছর কিংবা (বর্ণনা
সন্দেহ, রাবী বলেছেন) (মক্কা) বিজয়ের
দিন (আবূ বাকর-এর পিতা) আবূ কুহাফা (রাঃ)-কে উপস্থিত করা হল কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ, রাবী বলেছেন-) (নিজেই) এলেন। তাঁর মাথা (র চুল)
ও ‘নাগাম, বা সাগামা-র ন্যায় (সাদা)
ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে তার (বাড়ির) মহিলাদের
কাছে নিয়ে যেতে আদেশ করলেন, কিংবা (বর্ণনা সন্দেহ, রাবী বলেছেন) তাঁকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া
হল এবং তিনি ইরশাদ করলেনঃ এ (সাদা রং)-কে কোন কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও।
৫৩৩১। আবূ তাহির (রহঃ) জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মক্কা বিজয়ের দিন আবূ কুহাফা (রাঃ)-কে
নিয়ে আসা হল। তার চুল-দাঁড়ি ছিল সাগামা-র ন্যায় সাদা। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি
কোন কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও; তবে কাল রং বর্জন করবে।
৫৩৩২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ
আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারারা খিযাব ব্যবহার করে না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত
করবে।
৫৩৩৩। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন নির্ধারিত
সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আগমনের ওয়াদা করলেন
কিন্তু যথাসময়ে তিনি এলেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
হাতে একটি লাঠি ছিল, তিনি তা তার হাত থেকে ফেলে
দিয়ে বললেন, আল্লাহ তো তাঁর ওয়াদা খেলাফ
করেন না; তাঁর রাসুলগণও না। এরপর তিনি
লক্ষ্য করে তাঁর খাটের নিচে একটি কুকুর ছানা দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে
আয়িশা! কুকুর (ছানা) টি এখানে ঢুকে পড়ল কখন? আয়িশা
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি জানি না।
তখন তিনি আদেশ দিলে সেটিকে বের করে দেয়া হল। ইতিমধ্যে জিবরাঈল (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আপনি আমাকে
ওয়াদা দিয়েছিলেন, তাই আমি আপনার প্রতীক্ষায়
বসেছিলাম। কিন্তু আপনি এলেন না। তিনি বললেন, আপনার
ঘরে (অবস্হানরত) কুকুরটি আমার জন্য প্রতিবন্ধক হয়েছিল। কারণ যে ঘরে কোন ছবি কিংবা
কুকুর থাকে, সে ঘরে আমরা (রহমতের
ফিরিশতারা) প্রবেশ করি না।
৫৩৩৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেন যে, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমনের ওয়াদা করেছিলেন। তারপর হাদীসের শেষ
পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি রাবী আবদুল আযীয ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) বর্ণিত
হাদীসের ন্যায় তাঁর বিবরণ দীর্ঘায়িত করেননি।
৫৩৩৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মায়মুনা (রাঃ) আমাকে
বলেছেন, যে, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ভোরে বিষণ্ণ অবস্হায় উঠলেন। তখন মায়মুনা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজ আপনার চেহারা মূবারক
বিমর্ষ দেখছি! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিবরঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আজ রাতে আমার
সঙ্গে মুলাকাত করার ওয়াদা করেছিলেন, কিন্তু
তিনি আমার সঙ্গে মুলাকাত করেননি। জেনে রাখ, আল্লাহর
কসম! তিনি (কখনো) আমার সঙ্গে ওয়াদা খেলাফ করেননি। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সে দিনটি এভাবেই কাটালেন। এরপর আমাদের পর্দা (ঘেরা খাট)-এর
নিচে একটি কুকুর ছানার কথা তাঁর মনে পড়ল। তিনি হুকুম দিলে সেটিকে বের করে দেয়া হল।
তারপর তিনি তাঁর হাতে সামান্য পানি নিয়ে তা ঐ (কুকুর ছানার বসার) স্থানে ছিঁটিয়ে
দিলেন। পরে সন্ধ্যা হলে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সঙ্গে মুলাকাত করলেন।
তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি তো গতরাতে আমার সাথে
মুলাকাতের ওয়াদা করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যা।
তবে আমরা (ফিরিশতারা) এমন কোন ঘরে প্রবেশ করিনা, যে
ঘরে কোন কুকুর থাকে কিংবা কোন (প্রানীর) ছবি থাকে। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেদিন ভোরবেলায় কুকুর নিধনের আদেশ দিলেন, এমনকি
তিনি ছোট বাগানের পাহারাদার কুকুরও মেরে ফেলার হুকুম দিয়েছিলেন এবং বড় বড় বাগানের
কুকুরগুলোকে রেহাই দিয়েছিলেন।
৫৩৩৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আলকন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ
তালহা (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেছেন, ফিরিশ্তাগণ সে ঘরে প্রবেশ
করেন না, যে ঘরে কোন কুকুর কিংবা কোন
(প্রানীর) ছবি থাকে।
৫৩৩৭। আবূ তাহির ও হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, ফিরিশতাগণ
এমন কোন ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কুকুর কিংবা
(প্রাণীর) ছবি থাকে।
৫৩৩৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
আরদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। অবশ্য সুত্রের মধ্যে মামার (রহঃ) ‘আন’ এর স্হলে ‘আখবারা’
ব্যবহার করেছেন।
৫৩৩৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফিরিশ্তাগণ সে ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কোন ছবি থাকে। রাবী বাসর (রহঃ) বলেনঃ
এরপর (রাবী) যায়দ (রহঃ) অসুস্হ হয়ে পড়লে আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। দেখলাম তাঁর
দরজায় একটি পর্দা রয়েছে, যাতে ছবি রয়েছে। আমি তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা মায়মুনা (রাঃ)-এর পালিত সন্তান
উবায়দুল্লাহ হাওলানী (রহঃ)-কে বললাম-আগে (এক) দিন ছবির ব্যাপারে কি যায়দ (রহঃ)
আমাদের কাছে হাদীস রিওয়ায়াত করেননি? উবায়দুল্লাহ
বললেন, তুমি কি তাঁর এ উক্তি
শোননি:কিন্তু কোন কাপড়ে অঙ্কিত ছবি।
৫৩৪০। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ
তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতাগণ সে ঘরে প্রবেশ
করেন না যে ঘরে কোন ছবি থাকে। রাবী বুসর (রহঃ) বলেনঃ যায়দ ইবনু খালিদ (রহঃ) অসুস্হ
হলে আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। তখন আমরা তার ঘরের একটি পর্দায় অনেক ছবি রয়েছে দেখতে
পেলাম। উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ)-কে বললাম, তিনি
কি ছবি সম্পর্কে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেননি? উত্তরে
বললেন, তিনি বলেছিলেন, কিন্তু কাপড়ে অঙ্কিত ছবি। তুমি কি তা শুনতে
পাওনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই
তিনি বলেছিলেন।
৫৩৪১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ তালহা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বল তে শুনেছি যে, ফিরিশতাগণ
সে ঘরে প্রবেশ করেন না, যে ঘরে কোন কুকুর কিংবা কোন
মূর্তি থাকে। রাবী যায়দ-ইবনু খালিদ (রহঃ) বলেনঃ পরে আমি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে
জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি (আবূ তালহা) আমাকে
বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ফিরিশ্তাগণ সে ঘরে প্রবেশ
করেন না, যে ঘরে কোন কুকুর কিংবা
মূর্তি থাকে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ বিষয়ে
আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, না। তবে আমি তাঁকে যা করতে দেখেছি, তার বর্ণনা তোমাদের দিচ্ছি। আমি তাকে দেখেছি, তিনি (কোন) যুদ্ধে বেরিয়ে গেলেন। তখন আমি একটি
মসৃণ চাঁদর সংগ্রহ করলাম এবং তা দিয়ে দরজার পর্দা বানালাম। তিনি ফিরে এসে যখন
চাঁদরটি দেখতে পেলেন”, তখন তার চেহারায় আমি
অসন্তুষ্টির আলামত প্রত্যক্ষ করলাম। তিনি তা টেনে নামিয়ে ফেললেন; এমনকি তা ছিঁড়ে ফেললেন অথবা টূকরা টূকরা করে
ফেললেন। আর বললেনঃ মহান আল্লাহ পাথর কিংবা মাটিকে পোশাক পরানোর হুকুম আমাদের
দেননি। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমরা চাঁদরটি কেটে দুটি বালিশ বানালাম এবং সে দুটির
ভিতরে খেজুর গাছের অংশ ভরে দিলাম। তাতে তিনি আমাকে দোষারোপ করলেন না।
৫৩৪২। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের একটি পর্দা ছিল। তাতে পাখির ছবি
ছিল। আর (গৃহে) প্রবেশকারীর প্রবেশকালে তা তার সামনে পড়ত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এটি
সরিয়ে ফেল। কেননা যতবার আমি প্রবেশ করি এবং তা দেখি, ততবার
আমি দুনিয়া স্মরণ করেছি। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আর আমাদের একটি পশমী চাঁদর ছিল। আমরা
লক্ষ্য করতাম যে, এটির নকশা রেশমের। আমরা সেটি
পরিধান করতাম। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু আবূ আদী ও আবূল আলা (রহঃ) থেকে
উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু মূসান্না (রহঃ) বলেছেন, এ সনদে অর্থাৎ আবদুল আলা (রহঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের তা কেটে ফেলতে আদেশ করেননি।”
৫৩৪৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি দরজায় একটি আচলযুক্ত মসৃণ
পর্দা লাগিয়ে দিলাম, যাতে ডানাবিশিষ্ট ঘোড়া (-এর
ছবি)তিনি আমাকে হুকুম করলেন। তখন আমি তা টেনে খূলে ফেললাম।
৫৩৪৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ওয়াকী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে আবদার
হাদীসে সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন কথাটি নেই।
৫৩৪৫। মানসূর ইবনু আবূ
মুযাহিম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে (হুজরায়) এলেন। আমি ত খন একটি মিহি কাপড়ের পর্দা
লাগিয়ে রেখেছিলাম, যাতে ছবি ছিল। এতে তাঁর
চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি পর্দাটিহাতে নিয়ে তা ছিঁড়ে ফেললেন, পরে বললেনঃ কিয়ামতের দিন কঠিনতম আযাব ভোগকারী
লোকদের মাঝে ওরাও থাকবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে
সা’দৃশ্য সাধনে প্রবৃত্ত হয়।
৫৩৪৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (আয়িশার) গৃহে প্রবেশ করলেন পরবর্তী অংশ
ইবরাহীমইবনু সা’দ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ। তবে ইউনুস বলেছেন, এর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পর্দার দিকে ঝুঁকলেন এবং নিজ হাতে তা ছিড়ে ফেললেন।
৫৩৪৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে রিওয়ায়াত করছেন। তবে ইবনু উয়ায়না (রহঃ) এবং মামার
(রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে ‘ইন্না আশাদ্দাননাসি আযাবা’ তারা ‘মিন আশাদ্দান নাস’
বলেননি।
৫৩৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন, তখন
আমি আমার একটি তাক পর্দা দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলাম, যাতে
ছবি ছিল। তিনি তা দেখতে পেয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। আর তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি
বললেনঃ হে আয়িশা! কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে ঐ সকল লোক কঠিন আযাব ভোগ করবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির সা’দৃশ্য প্রদর্শন করে।
আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমরা তখন সেটি কেটে ফেললাম এবং তা দিয়ে একটা বা দুটো বালিশ
বনালাম।
৫৩৪৯। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তার
একখন্ড কাপড় ছিল, যাতে ছবি ছিল এবং তা একটা
তাকের উপরে টানানো ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে সালাত আদায়
করতেন। তখন তিনি বললেন, এটি আমার সম্মুখ থেকে সরিয়ে
নাও। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি সেটি সরিয়ে ফেললাম এবং (পরে) সেটি দিয়ে কয়েকটি
বালিশ বানিয়ে নিলাম।
৫৩৫০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
উকবা ইবনু মুকরাম (রহঃ) সাঈদ ইবনু আমের (রহঃ) থেকে; অন্য
সুত্রে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ আমের আবাদী থেকে, উভয়ে শু”বা (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন।
৩৫৫১। আবূ বাকর ইবনু শায়বা
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তখন একটা মিহি চাঁদর দিয়ে পর্দা
বানিয়েছিলাম যাতে বহু ছবি ছিল। তিনি সেটি সরিয়ে ফেললেন। তখন আমি তা দিয়ে দুঁটি
বালিশ বানালাম।
৫৩৫২। হারুন ইবনু মারুফ
(রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, তিনি একটি পর্দা ঝূলালেন, যাতে অনেক ছবি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করে সেটি টেনে ফেলে দিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি সেটি
কেটে দুটি বালিশ বানালাম। তখন সভায় উপস্থিত বনূ যুহবার মাওলা, রাবীআ ইবনু আতা নামে পরিচিত এক ব্যক্তি বললেন, আপনি কি আবূ মুহাম্মাদকে একথা উল্লেখ করতে
শোনেননি যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সে (বালিশ) দুটিতে হেলান দিতেন। ইবনু কাসিম (রহঃ) বললেন, না, কিন্তু
আমি কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর কাছেই একথা শুনেছি।
৫৩৫৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
একটি গদি কিনলেন, যাতে অনেক ছবি ছিল। তা দেখে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরজায় (হুজরায় প্রবেশ না করে) দাঁড়িয়ে
রইলেন। আমি তাঁর চেহারাহা অসন্তোষ লক্ষ্য করলাম- কিংবা রাবী বলেছেন, তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন পরিলক্ষিত হল।
তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে তাওবা করছি। তবে
আমি কী পাপ করেছি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ গদির ব্যাপার কি? তিনি বললেন, আপনার
জন্য আমি এটি খরিদ করেছি, আপনি তাতে বসবেন এবং তাতে
হেলান দিবেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সব ছবি
প্রস্তুতকারীদের আযাব দেয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, তোমরা
যা বানিয়েছ, তা জীবিত কর। এরপর বললেন, যে ঘরে ছবি থাকে সেখানে ফিরিশতা প্রবেশ করেন
না।
৫৩৫৪। কুতায়বা, ইবনু রুমহ, ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম, আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদস
সামাদ, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আবূ
বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ঐদের কারো হাদীস
কারো হাদীসের তূলনায় পূর্ণাঙ্গ। আব্দুল আযীয (রহঃ) তাঁর হাদীসে অতিরিক্ত রিওয়ায়াত
করেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, সেটি দিয়ে আমি তাঁকে দুটি হেলান তাকিয়া বানিয়ে
দিলাম। তিনি ঘরে সে দুটিতে হেলান দিতেন।
৫৩৫৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু মূসান্না ও ইবনু নুমায়র
ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত ষে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের
দিন তাদের আযাব দেয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা
যা বানিয়েছ তাকে জীবিত কর।
৫৩৫৬। আবূ রবী,আবূ কামিল, যুহায়র
ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে উবায়দুল্লাহ সুত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুররুপ
বর্ণনা করেছেন।
৫৩৫৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে
কঠিনতর আযাব ভোগকারী হবে ছবি প্রস্তুতকারীরা। তবে আশাজ্জ (রহঃ) (নিশ্চয়ই) শব্দটি
উল্লেখ করেননি।
৫৩৫৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আমাশ (রহঃ)
থেকে উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে ইয়াহইয়া ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)আবূ মুআবিয়া
সুত্রে বর্ণিত রেওয়াযাতে রয়েছে, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন
জাহান্নামবাসী কঠিনতর আযাব ভোগকারীদের মধ্যে থাকবে ছবি প্রস্তুতকারীরা। আর সুফিয়ান
(রহঃ)-এর হাদীস রাবী ওয়াকী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুররুপ।
৫৩৫৯। নাসর ইবনু আলী আল
জাহযামী (রহঃ) মুসলিম ইবনু সুবায়হ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মাসরুক
(রহঃ)-এর সাথে একটি ঘরে ছিলাম। সেখানে মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতিকৃত
ছিল। মাসরুক (রহঃ) বললেন, এটি (পারস্য সমরাট) কিসরার
প্রতিকৃতি। আমি বললাম, না, এটি মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
প্রতিকৃতি। তখন মাসরুক (রহঃ) বললেন, শুন!
আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন কঠিনতর আযাব ভোগকারী হবে ছবি
অঙ্কনকারীরা। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ আমি নাসর ইবনু আলী আন-জাহযামী (রহঃ)-কে (এ
হাদীসের পাঠ) পড়ে শুনিয়েছি। সাঈদ ইবনু আবূল হাসান (রহঃ) “থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
এক ব্যক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি
এসব ছবি একে থাকি; তাই এ বিযয় আপনি আমাকে
ফোতওয়া- দিন। তিনি বললেন, তুমি আমার নিকটে এস। সে তার
কাছে এলে তিনি বললেন আরো কাছে এস। সে আরো কাছে এলে তিনি তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যা শুনেছি, তা তোমাকে বলে দিচ্ছি। আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি প্রত্যেক ছবি
অঙ্কনকারী জাহান্নামের অধিকারী। তার অংকিত প্রতিটি ছবিতে প্রাণ দেয়া হবে, তখন সেগুলি জাহান্নামে তাকে আযাব দিতে থাকবে।
তিনি আরও বললেন, তোমাকে একান্তই যদি (তা)
করতে হয়, তা হলে গাছ (প্রাণী) এবং যার
প্রাণ নেই, সে সবের (ছবি) তৈরি কর। [
ইমাম মুসলিম (রহঃ) এ হাদীস পড়ে শোনানো নাসর ইবনু আলী (রহঃ) তার স্বীকৃতি দিলেন।]
৫৩৬০। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) নাসর ইবনু আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু
আব্বাস (রাঃ) -এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি (বিভিন্ন বিষয়) ফাতওয়া দিতে লাগলেন, কিন্তু (কোন ফাতওয়ায়) একথা বলেননি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন। অবশেষে এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করল। সে বলল, আমি এসব (প্রানীর) ছবি অঙ্কন করে থাকি। তখন
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে বলেছেন- কাছে এসো। লোকটি কাছে এল। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ)
বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, পৃথিবীতে
যে ব্যক্তি (প্রানীর) ছবি আকে, কিয়ামতের দিন তাতে আত্না
ফুঁকে দিতে তাকে বাধ্য করা হবে। অথচ সে (তা) ফুঁকে দিতে পারবে না।
৫৩৬১। আবূ গাসসান মিসমাঈ ও
মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না (রহঃ) নাসর ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এল।
তারপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ রিওয়ায়াত
করেছেন।
৫৩৬২। আবূ বাবহর ইবনু আবূ
শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ যুরআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ আমি আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে (খলীফা) মারওয়ানের ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি সেখানে অনেক ছবি
দেখে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, মহান
আল্লাহ বলেছেনঃ “সে ব্যক্তির চাইতে অধিকতর জালিম আর কে আছে, যে আমার সৃষ্টিতুল্য মাখলূক সৃষ্টি করতে চায়; তাহলে তারা একটি (অনুভূতিশীল) বিন্দু সৃষ্টি
করুক! অথবা তারা (খাদ্যপ্রাণ ও স্বাদযুক্ত) একটি শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখাক! অথবা
তারা একটি (মাত্র) যব (-এয় দানা) সৃষ্টি করুক! হায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যুরআ
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি এবং আবূ হুরায়রা (রাঃ) সাঈদ কিংবা মারওয়ানের
জন্য মদিনায় নির্মীয়মান একটি বাড়িতে প্রবেশ করলাম। রাবী বলেনঃ তখন তিনি আবূ
হুরায়রা (রহঃ) দেখতে পেলেন যে, একজন চিত্রশিল্পী ঘরের
দেয়ালগুলিতে (বিভিন্ন) চিত্র আকছে। তিনি তখন বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বলেছেন। তবে তিনি “তারা
একটি (মাত্র) যবদানা সৃষ্টি করুক।”, অংশটি
উল্লেখ করেননি।
৫৩৬৩। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতাগণ সে ঘরে প্রবেশ
করেন না, যে ঘরে মূতি অথবা ছবি থাকে।
৫৩৬৪। আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু
হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (ষা) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ (রহমতের) ফিরিশতাগণ সে সফরকারী কাফেলার সাথে অবস্হান করেন না, যাতে কোন কুকুর বা ঘণ্টা থাকে।
৫৩৬৫। যুহায়র ইবনু হারব ও
কুতায়বা (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৩৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘন্টা শয়তানের বাঁশি।
৫৩৬৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহিয়া
(রহঃ) আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ
বাশীর আনসারী (রাঃ) তাকে বলেছেন যে, তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক সফরে তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষক পাঠালেন; আবদুল্লাহ আবূ বাকর (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয়, তিনি (আব্বাদ) বলেছেন, তখন কাফেলার লোকেরা তাদের রাত যাপনের ন্যায়
(শুয়ে পড়ে) ছিল, অবশ্যই কোন উটের গলায়”
চামড়ার দড়ির মালা কিংবা কোন মালা, অবশিষ্ট থাকবে না; থাকলে তা কেটে ফেলতে হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ
আমার বিশ্বাস, তা বদ নযর থেকে রক্ষার
উদ্দেশ্যে (লাগানো) হতো।
৫৩৬৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রানীর) মুখে প্রহার করা এবং মুখে দাগ লাগানো নিষেধ করেছেন।
৫৩৬৯। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
এবং (ভিন্ন সনদে) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিষেধ করেছেনঃ হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৩৭০। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখ দিয়ে একটি গাধা চলে গেল, যার মুখে দাগ লাগানো হয়েছিল। তিনি বললেন, যে লোক এটিকে দাগ লাগিয়েছে, আল্লাহ তাকে লানত করুন।
৫৩৭১। আহমদ ইবনু ঈসা (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে
দাগ লাগানো একটি ঘোড়া দেখে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ইবনু আব্বাস)
বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তার মুখ থেকে সর্বাধিক দুরবর্তী অংশেই দাগ লাগাব। তারপর
তিনি তাঁর একটি গাধা সম্পর্কে হুকুম করলে তার দুই নিতম্ব প্রান্তে দাগ লাগান হল।
ফলে হলেন নিতম্ব প্রান্তে দাগ দেওয়ানোয় প্রথম ব্যক্তি ও প্রবর্তক।
৫৩৭২। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (আমার মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)
সন্তান প্রসরের পর আমাকে বললেন, হে আনাস, এ শিশুটির দিকে নযর রেখ, যেন সকালে তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছু না খায়। তিনি খেজুর চিবিয়ে (তার মুখে
দিয়ে) তাকে বরকত দিবেন। রাবী আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি সকালে গিয়ে দেখলাম, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) একটি বাগানে রয়েছেন এবং তাঁর গায়ে একটি -জাওনীঁ কাল পশমী চাঁদর রয়েছে, আর তিনি যুদ্ধ জয় থেকে প্রাপ্ত (গনীমতের)
উটগুলিকে দাগ লাগাচ্ছেন।
৫৩৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
(রহঃ) হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে বর্ণনা
করতে শুনেছি যে, তাঁর মা যখন সন্তান প্রসব
করলেন, তখন তাঁরা নবজাতককে নিয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে গেলেন, যাতে তিনি তার মুখে লালা দিয়ে বরকত দেন। রাবী
আনাস (রাঃ) বলেনঃ গিয়ে দেখলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি খোঁয়াড়ে ছাগলের গায়ে দাগ লাগাচ্ছেন (সনদের অন্য রারী) শুবা (রহঃ)
বলেনঃ আমার দূঢ় প্রত্যয় এই যে, তিনি (হিশাম) বলেছেনঃ
সেগুলোর কানে, দাগ লাগাচ্ছিলেন।
৫৩৭৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমরা একটি (ছাগলের) খোঁয়াড়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি ছাগলের গায়ে
দাগ লাগাচ্ছিলেন। রাবী (শুবা) বলেনঃ আমার ধারণা, তিনি
(হিশাম) বলেছেনঃ সেগুলোর কানে (দাগ লাগাচ্ছিলেন)। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীর ও মুহামুদ
ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত সনদে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫৩৭৫। হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে ‘দাগযন্ত্র’ দেখতে পেলাম, তিনি তখন সদকার উটে দাগ লাগাচ্ছিলেন।
৫৩৭৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “কাযা নিষেধ করেছেন। রাবী (উমার ইবনু নাফি) বলেনঃ
আমি নাফি- (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কাযা
কি? তিনি বললেন, শিশুর
মাথার (চুল) কতকাংশ মুড়ানো এবং কতকাংশ রেখে দেয়া।
৫৩৭৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন। তবে উসামা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে তিনি কাযা শব্দের ব্যাখ্যাটিকে উবায়দুল্লাহ
(রহঃ)-এর উক্তি বলে উল্লেখ করেছেন।
৫৩৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও উমাইয়া ইবনু বিসতাম (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন। তারা দু’জন ব্যাখ্যাটিকে (মূল) হাদীসের অন্তভুক্ত করেছেন।
৫৩৭৯। মুহাম্মদ ইবনু রাফি, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ জাফর দারিমী (রহঃ) ইবনু
উমার (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উক্ত হাদীস
রিওযায়াত করেছেন।
৫৩৮০। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাস্তায় বসে থাকা তোমরা পরিহার করবে। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (রাস্তার উপরে) আমাদের বৈঠক
না করে উপায় নেই, সেখানে আমরা (প্রয়োজনীয়)
কথাবার্তা বলে থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একান্তই
যদি তোমাদের তা করতে হয়, তবে রাস্তাকে তার প্রাপ্য হক
দিবে। তাঁরা বললেনঃ এর হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, সালামের জবাব দেওয়া এবং নেককাজের আদেশ দেয়া ও
অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করা।
৫৩৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি- (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৩৮২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক মহিলা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আমার এক নববিবাহিত মেয়ে হামরোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাতে তার চুল পড়ে
গিয়েছে। আমি কি তাকে পরচুলা লাগিয়ে দিব? তিনি
বললেন, পরলো সংযোজনকারিনা ও সংযোজন
প্রার্থিনা নারীদের লানত করা হয়েছে।
৫৩৮৩। আবূ বাকর আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ
কুরায়ব ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে আবূ
মু-আবিয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী ওয়াকী ও
শুবা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘তামাররুকা শা রুহা’ শব্দের স্থানে ‘তামাররাত শারুহা’
শব্দ রয়েছে (উভয় শব্দের অর্থ চুল পড়ে গিয়েছে)।
৫৩৮৪। আহমাদ ইবনু সাঈদ
দারিমী (রহঃ) আসমা বিনূত আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর খিদমতে এসে বললেন, আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, এখন (রোগাক্রান্ত হয়ে) তার মাথার চুল পড়ে
গিয়েছে, আর তার স্বামী তাকে
(অবলম্বনে কাছে পাওয়া) পছন্দ করে। আমি কি তাকে পরচুলা সংযোজন করে দিব ইয়া
রাসুলাল্লাহ? তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন।
৫৩৮৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, ইবনু বাশশার ও আবূ বাকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক
আননারী তরুনীর বিয়ে হল। আর সে রোগাক্রান্ত হলে তার চুল পড়ে গেল। তখন তার পরিবারের
লোকেরা তাকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়ার ইাচ্ছা করল। তাই তারা ঐ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিজ্ঞাসা করল। তিনি তখন চুল
সংযৈাজনকারিনা ও সংযোজন প্রার্থী নারীকে লানত করলেন।
৫৩৮৬। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক
আনসারী মহিলা তার একটি মেয়েকে বিয়ে দিলেন, মেয়েটি
অসুস্হ হয়ে পড়ল এবং তাতে তার চুল পড়ে গেল। মাহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, তার স্বামী তাকে এখন নিতে
চায়। আমি তার চুলের সাথে পরচুলা লাগিয়ে দিব কি? তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নকল চুল সংযোজনকারিণীদের
অভিসস্পাত করা হয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু নাফি (রহঃ) থেকে
উল্লিখিত সনদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন যে, নকল
চুল সংযোজনকারিনাদের প্রতি অভিসম্পাত। তবে তাঁর রিওয়ায়াতে ‘আল মাওসিলাত’ রয়েছে।
৫৩৮৭। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পরচুলা সংযোজনকারিনা ও সংযোজন প্রার্থনা এবং মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিনা ও অঙ্কন
প্রার্থিনীদের লাঁনত করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন।
তিনি বলেনঃ মানবদেহে চিত্র
অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনপ্রার্থিণী নারী, কপাল
ভুরুর চুল উৎপাটনকারিনা ও উৎপাটনকামী নারী এবং সৌন্দর্য সুষমা বৃদ্ধির মানসে
দাঁতের মাঝে (সদৃশ্য) ফাঁক সৃষ্টিকারিনা, যারা
আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারিদী, এদের
আল্লাহ তা’আলা লানত করেন। রাবী বলেনঃ বনূ আসা’দ গোত্রের উম্মু ইয়াকুব নামী এক
মহিলার কাছে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর এ হাদীসের বর্ণনা পৌছল। তিনি কুরআন পাঠে অভ্যস্ত
ছিলেন। তিনি তার কাছে কাছে এসে বললেন, সে
হাদীস খানি কিরুপ, যা আপনার পক্ষ থেকে আমার
কাছে পৌছেছে যে, আপনি মানবদেহে চিত্র
অঙ্কনকারিনা ও অঙ্কনকারী নারী ও কপাল ভ্রুর লোম উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটনকামী নারী
এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়াসে দাতের মাঝে ফাক তৈরিকারিনাদের, যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনকারিনা, এদের লানত করেছেন? আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার কি যুক্তি থাকতে পারে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন, আমি সে লোকদের অতিসস্পাত দিব
না? অথচ তা আল্লাহর কিতাবে রয়েছে। মহিলা বললেন, আল-কুরআন-এর বাঁধাই কাগজের মধ্যবর্তী
(আগাগোড়া) সবটূকুআমি পড়েছি, কিন্তু তা তো কোথাও পাইনি? তিনি বললেন, তুমি
যদি (গভীর অতিনিবেশসহকারে) পড়তে, তাহলে অবশ্যই তা পেতে। মহান
আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ) “আর রাসুল তোমাদের কাছে যা উপস্হাপন করেন তা ধরে রাখ, আর তিনি যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে
বিরত থাক। মহিলা বললেন, আমি প্রায় নিশ্চিত যে, এর কোন কিছু এখন গিয়ে আপনার স্ত্রীর মাঝে দেখতে
পাব”। তিনি বললেন, যাও, তা দেখ গিয়ে। রাবী বলেনঃ মহিলা আবদুল্লাহ
(রাঃ)-এর স্ত্রীর কাছে গেলেন, কিন্তু (সে সবের) তিনি দেখতে
পেলেন না। তখন এসে বললেন, দেখতে পেলাম না। তিনি বললেন, শোন! তেমন কিছু থাকলে আমরা একত্রে বসবাস করতাম
না।
৫৩৮৯। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, ইবনুুন বাশশার ও মুহাম্মাদ
ইবনু রাফি (রহঃ) মানসুর (রহঃ) থেকে উল্লিখিত সনদে জারীর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী সুফিয়ান (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে “মানব দেহে
উল্কি অঙ্কনকারিনা ও অঙ্কনপ্রার্থিণী রয়েছে। আর রাবী মুফাযযাল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে
রয়েছে “মানবদেহে অঙ্কনকারিনা ও অঙ্কনকৃত নারীরা।
৫৩৯০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মানসূর
(রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস
বর্ণনা করেছেন। তবে তা উমু ইয়াকুব প্রসঙ্গের সব কিসসা থেকে মুক্ত।
৫৩৯১। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
(পূর্বোক্ত) ওদের হাদীসের অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৫০৯২। হাসান ইবনু আলী
খাওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (র ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে
নারী তার মাথায় কোন কিছু সংযোজন করে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধমক দিয়েছেন ও তা নিষেধ করেছেন।
৫৩৯৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) হুমায়দ ইবনু আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) মুআবিয়া ইবনু আবূ সূফইয়ান
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, যখন তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে
(ভাষণ দেয়ার সময়) একটি (নকল) চুলের খোপা হাতে নিয়ে, যা
একজন দেহরক্ষীর হাতে ছিল, বলেছিলেন, হে মদিনাবাসী! তোমাদের আলিম সমাজ কোথায়? আমি শুনেছি, রাসুলুল্লাহ
আ এরুপ জিনিস নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল তখনই হালাক হয়েছে, যখন তাদের স্ত্রীলোকেরা এসব গ্রহণ করেছে।
৫৩৯৪। ইবনু আবূ উমার, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
থেকে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী মা’মার (রহঃ)
বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, “বনূ ইসরাঈলকে আযাব প্রদত্ত
হয়েছে।”
৫৩৯৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু মুনান্না ও ইবনু বাশশার
(রহঃ) সাঈদ ইবনুু-মূসাইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুআবিয়া (রাঃ) মদিনায়
এলেন। তিনি আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং তখন চুলের একটি খোপা বের করে বললেন, আমি জানতাম না যে, ইয়াহুদী ছাড়া অন্য কেউ এ কাজ করে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এটি পৌছলে তিনি এটি “মিথ্যা- নামে
অভিহিত করেছেন।
৫৩৯৬। আবূ গাসসান মিসমাঈ ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া (রাঃ) (একদিন) বললেন, তোমরা একটি নিকৃষ্ট রীতি উদ্ভাবন করেছ। অথচ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেকী ও অলীক বিষয়ে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেনঃ
তখন এক ব্যক্তি একটি লাঠি নিয়ে এল। যার মাথায় একটি (নকল চুলের) খোপা ছিল। মুআবিয়া
(রাঃ) বললেন, দেখ! এটাই মেকী ও অলীক। রাবী
কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ অর্থাৎ যেসব গোছা দিয়ে মেয়েরা তাদের চুলের পরিমাণ বাড়িয়ে
দেখায়।
৫৩৯৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু-ধরনের লোক, যাদের
আমি (এখনো)দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায়
চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে
পিটাবে। আর এক দল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা, যারা অন্যদের আকর্ষণ কারিনা ও আকৃষ্টা, তাদের- মাথার চুলের অবস্হা উটের হেলে পড়া
কূঁজের ন্যায়া ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি
তার খুশবুও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে তার খুশবু পাওয়া যায়।
৫৩৯৮। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একটি স্ত্রীলোক (এসে) বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি, সে সম্পর্কে যদি আমি বলি যে, সে আমাকে (এই এই জিনিস) দিয়েছে (এরুপ করা কেমন)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ যা দেয়া হয়নি তা নিয়ে আত্নতৃপ্তি প্রকাশকারী দুখানি মেকী বস্ত্র
পরিধানকারীর তূল্য।
৫৩৯৯। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত করেন যে, এক স্ত্রীলোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমার একজন সতীন আছে। আমার
স্বামী যে মালপত্র আমাকে দেননি, তার নাম নিয়ে আত্নতৃপ্তি
প্রকাশ করলে আমার কোন শুনাহ হবে কি? রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা দেওয়া হয়নি, তাতে আত্নতৃপ্তি প্রকাশকারী দু’খানি মিথ্যা
কাপড় পরিধানকারীর ন্যায়।
৫৪০০। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) সুত্রে উল্লিখিত হাদীস রিওয়ায়াত
করেছেন।