যিকির,দুআ, তওবা ও ইস্তেগফার

৬৬৬১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধা হতো তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ “আমরা সন্ধ্যায় ইপনীত হয়েছি এবং বিশ্ব অল্লোহর জন্য সন্ধ্য পৌছেছে। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহরই। আল্লাহ ব্যাতীত ইলাহ নেই। তিনি এক সত্তা তার শরীক নেই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণ চাই এই রাত ও তার পরবর্তী রাতের এবং আমি তোমার কাছে পানাহ চাই এই রাত ও এর পরবর্তী রাতের অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই। অলসতা, বার্ধক্য, অহংকারের অনিষ্ট, দুনিয়ার ফিতনা ও কবর আযাব থেকে। ” হাসান ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, যুবায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে মারফূ সনদে একটু বাড়িয়ে বলেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনই সকল কিছু উপর সর্বশক্তিমান। ”

৬৬৬২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তিনি তার বাহিনীকে ইজ্জত দিয়েছেন এবং তাঁর বান্দাকে সাহায্যে করেছেন। আর তিনি একাই কাফির বাহিনীর উপর প্রবল হয়েছেন। তাঁরপরে আর কোন কিছু নেই। ”

৬৬৬৩। আবূ কুরায়ব মুহামুদ ইবনু আলা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ তুমি বলঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান কর, আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর। ” তিনি আমাকে আরও বলেছেন, তোমার সোজা রাস্তায় চলার মত হিদায়াত এবং তীর সোজা করার মত সরলতার-সাথে তাকে স্বরণ কর। ”

৬৬৬৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) আসিম ইবনু কুনায়ব (রহঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এভাবে বলতে বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত ও সরলপথ কামনা করছি। — এরপর তিনি তার অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৬৬৬৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমর নাকিদ, ইবনু আবূ উমর (রহঃ) জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যূষে তাঁর নিকট থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন তখন তিনি সালাতের জায়গায় ছিলেন। এরপর তিনি –দুহা’র পরে ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যে অবস্হায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্হায়ই আছ। তিনি বললেন, হ্যা। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর চারটি কালেমা তিনবার পাঠ করেছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ তার সাথে ওযন করলে এই কালেমা চারটির ওযনই বেশী হবে। কালেমাগুলো এই- আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি তার অগণিত সৃষ্টির সমান, তার সন্তুষ্টি, তার আরশের ওযনের পরিমাণ ও তার কালেমার সংখ্যার পরিমাণ। ”

৬৬৬৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক (রহঃ) জুওয়ায়রিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফজরের সালাতের সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার কাছে আসলেন অথবা ফজরের সালাতের পরে তিনি আসলেন। এরপর বর্ণনাকারী তার অনুরুপ উল্লেখ করেন। তবে এতে পার্থক্য এই যে, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর প্রশংসার সঙ্গে পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির পরিমাণ, তার সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ এবং তার কালেমা সমূহের সংখ্যার পরিমাণ। ”

৬৬৬৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) যাতা পিষতে গিয়ে তাঁর হাতে ব্যথা পেলেন। তিনি একটি খাদিম চাওয়ার জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এলেন। কিন্তু তিনি এসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে পেলেন না। তিনি আয়িশা (রাঃ) -এর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। এরপর যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসলেন তখন আয়িশা (রাঃ) তার কাছে ফাতিমা (রাঃ) -এর আগমনের বিষয় জানালেন। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা আমাদের শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা আমাদের শয্যা থেকে উঠতে চাইলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের জায়গায় থাক। এরপর তিনি আমাদের সামনে বসলেন। তখন আমি তাঁর কদম মুবারকের শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিক্ষা দেব না, যা তোমরা চেয়েছিলে তার চাইতে উত্তম? যখন তোমরা তোমাদের শয্যা গ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার আলাহ আল্লাহ, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ এবং ৩৩ বার আন হামদুলিল্লাহ পড়বে। এটি তোমাদের জন্য খাদিমের চাইতে উত্তম। ”

৬৬৬৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা সূত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে মূআযের হাদীসে (রাতে) শব্দটি উল্লেখ আছে।

৬৬৬৯। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও উবায়দ ইবনু ইয়ায়িশ (রহঃ) আলী (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে ইবনু আবূ লায়লা সুত্রে হাকামের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। হাকাম হাদীসে এইটুকু বাড়িয়ে বলেছেন যে, আলী (রাঃ) বলেছেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শোনার পর থেকে কখনো আমি তা ছাড়িনি। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হব সিফফীনের রাতেও কি! তিনি বললেন, সিফফীনের রাতেও নয়। ইবনু আবূ লায়লা সূত্রে আতা বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেছেন, আমি তাকে বললাম, সিফফীনের রাতেও কি ছেড়ে দেননি।

৬৬৭০। উমায়্যা ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ফাতিমা (রাঃ) একজন খাদিমের জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে এলেন এবং অনেক কাজের অভিযোগ করলেন। তিনি বললেনঃ “আমার কাছে তো কোন খাদিম নেই। তিনি বললেনঃ তবে আমি কি তোমাকে এমন কিছুর কথা বলবনা, যা তোমার খাদিম থেকে উত্তম? তা হল রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তুমি ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করবে। আহমাদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূহায়ল (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৬৭১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ চাইবে। কেননা সে ফিরিশতা দেখে থাকে। আর যখন তোমরা গাধার বিকট আওয়ায শুনতে পাবে তখন আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চাইবে। কেননা সে শয়তান দেখে থাকে।

৬৬৭২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কঠিন বিপদের সময় বলতেনঃ “মহান, সহিষ্ণু আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। আসমানের ও যমীনের রব এবং সম্মানিত আরশের রব আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই।

৬৬৭৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম (রাঃ) -এর সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর মু’আয ইবনু হিশামের হাদীস অধিক পূর্ণাঙ্গ।

৬৬৭৪। আবদ ইবনু হুমায়দ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করতেন এবং কঠিন বিপদের সময় এইগুলো বলতেন। এরপর তিনি কাতাদা সূত্রে মূআয ইবনু হিশামের হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন। এই বর্ণনায় আসমান-যমীনের প্রতিপালক কথাটি আছে।

৬৬৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন শুরুত্বপূর্ণ কাজ (বিপদ) তাঁর সম্মুখীন তে তখন তিনি বলতেন। এরপর তিনি মুঁআযের পিতার-বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন এবং এর সাথে “মহান আরশের অধিপতি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই- অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন।

৬৬৭৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল কোন কালাম সর্বাপেক্ষা উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা তার ফিরিশতা অথবা তার বান্দাদের জন্য যে কালাম পছন্দ করেছেন, তা হল, “সূবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি- আমি আল্লাহর সপ্রশংস ও পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি।

৬৬৭৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবূ যার! আমি কি তোমাকে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম বাতলে দেব না? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় কালামটি আপনি আমাকে বাতলে দিন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কালাম হল, “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি।

৬৬৭৮। আহমাদ ইবনু উমর ইবনু হাফস ওয়াকী- (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান বান্দা তার ভাই এর অনুপস্হিতিতে তার জন্য দু’আ করলে একজন ফিরিশতা তার জবাবে বলে আর তোমার জন্যও অনুরুপ।

৬৬৭৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উম্মু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই এর অনুপস্হিতিতে তার জন্য দুআ করে, তার জন্য একজন নিয়োজিত ফিরিশতা আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তোমার জন্যও অনুরুপ।

৬৬৮০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উম্মু দারদা (রাঃ) -এর হলমী সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়াতে আবূ দারদা (রাঃ) -এর ঘরে গেলাম। আমি তাকে ঘরে পেলাম না; বরং সেখানে উম্মু দারদাকে পেলাম। তিনি বললেন, আপনি কি এ বছর হজ্জ পালন করবেন? আমি বললাম, জি হ্যা। তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে আমাদের কল্যাণের জন্য দুআ করবেন। কেননা, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ একজন মুসলমান বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্হিতিতে তার জন্য দুআ করলে তা কবুল হয়। তার মাথায় একজন ফিরিশতা নিয়োজিত থাকেন, যখন সে তার ভাইয়ের জন্য দু’আ করে তখন নিয়োজিত ফিরিশতা বলে থাকে আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরুপ”। তিনি বলেন, এরপর আমি বাজারের দিকে বের হলাম। আর আবূ দারদা (রাঃ) -এর দেখা পেলাম, তখন তিনি আমাকে তার অনুরুপ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করলেন।

৬৬৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) আবদুল মালিক ইবনু আবূ সূলায়মান থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এবং তিনি বলেছেন, সাফওয়ান ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) -এর সুত্রে।

৬৬৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সেই বন্দার প্রতি সন্তুষ্ট, যে খাওয়ার পরে তার জন্য আলহামদু লিলাহ বলে এবং পানীয় পান করার পরে তার শুকরিয়া সূরুপ আল হামদু লিল্লাহ বলে। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুরুপ বলেছেন।

৬৬৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারোর দুআ তখনই কবুল করা হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। (তাড়াহুড়া করে দুআ করার পর) সে তো বলতে থাকে, আমি আমার প্রতি পালকের সকাশে দুআ করলাম; অথচ তিনি আমার দুআ কবুল করলেন না।

৬৬৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারোর দুআ তখনই কবুল করা হয় যখন সে তাড়াহুড়া না করে। সে বলতে থাকে, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে দুআ করলাম আর আমার দুআ কবুল করলেন না।

৬৬৮৫। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বান্দার দুআ হামেশা কবুল করা হয় যদি না সে পাপ কর্মের জন্য কিংবা আত্নীয়তার সম্পর্কে করার জন্য দুআ করে এবং (দুআয়) তাড়াড়ো না করে। প্রশ্ন করা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! (দু’আয়) তাড়াহুড়ো করা কি? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি দুআ তো করেছি, আমি দুআ তো করেছি; কিন্তূ তা কবুল হল কিনা দেখতে পেলাম না। তখন সে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং দুআ করা ছেড়ে দেয়।

৬৬৮৬। হাদ্দাব ইবনু খালিদ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি জান্নাতের প্রবেশ পথে দাড়ালাম। দেখলাম, অধিকাংশই যারা জান্নাতে প্রবেশ করছে, মিসকীন আর সম্পদশালীরা বন্দী অবস্হায়। যারা জাহান্নামী তাদের জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। আমি জাহান্নামের প্রবেশ পথে দাঁড়ালাম। দেখলাম যে, অধিকাংশই যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, নারী।

৬৬৮৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে উকি দিলাম, দেখতে পেলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই ফকীর। এরপর আমি জাহান্নামের দিকে তাকালাম, দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী।

৬৬৮৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

৬৬৮৯। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জাহান্নামের দিকে উকি দিয়ে দেখলেন। এরপর রাজা” আইউবের হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬৬৯০। আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এরপর সাঈদ (রহঃ) তার অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৬৬৯১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) আবূ তায়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) -এর দুই স্ত্রী ছিল। তিনি একদা তাদের একজনের কাছ থেকে এলেন। তখন অন্য জন বলল, আপনি তো অমুকের নিকট থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)-এর কাছে থকে এসেছি। তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতের অল্প সংখ্যক অধিবাসী নারী সমাজ।

৬৬৯২। মুহাম্মাদ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু আবদুল হামীদ আবূ তায়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মূতাররিফকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তার দু-জন স্ত্রী ছিল। মুআযের হাদীসের মর্মের অনুরুপ।

৬৬৯৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল করীম আবূ যুর’আ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দু’আর মধ্যে একটি ছিল এইঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই, তোমার নিয়ামত সরে যাওয়া, তোমার ক্ষমা ওলটপালট হয়ে যাওয়া, তোমার আকক্মিক শাস্তি এবং তোমার সব রকমের অসন্তুষ্টি থেকে।

৬৬৯৪। সাঈদ ইবনু মানসুর (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার (ওফাতের) পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর বেশি ফিতনা রেখে যাইনি।

৬৬৯৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিসা ও সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নূ”ফায়ল (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি আমার (ওফাতের) পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি।

৬৬৯৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সুলায়মান তায়মী থেকে এই সনদে তার অনুরুপ বর্ণিত।

৬৬৯৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দুনিয়া টাটকা মিষ্ট ফলের মত লোভনীয়। আল্লাহ তায়াআলা সেখানে তোমাদের খলীফা হিসেবে পাঠিয়েছেন। তিনি দেখতে চান যে, তোমরা কি কর? তোমরা দুনিয়া ও নারী থেকে সাবধান থাক। কেননা বনী ইসরাঈলদের মধ্যে যে প্রথম ফিতনা দেখা দিয়েছিল তা ছিল নারীকে কেন্দ্র করে। ইবনু বাশশার (রহঃ) বর্নিত হাদীসে ‘ফাইয়ানজুরা’ এর স্হলে (তোমরা কি কর তা দেখার জন্য তিনি তোমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন)।

৬৬৯৮। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক মূসায়্যাবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা তিন ব্যক্তি পথে হেঁটে চলছিল। পথে তাদের উপর বৃষ্টি নামল। তখন তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। ইত্যবসরে পর্বত গাত্র থেকে একটি পাথর খন্ড খসে তাদের গুহার মুখ চাপা দিল। ফলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, আপন আপন নেক আমলের প্রতি লক্ষ্য কর, যা তোমরা আল্লাহর দরবারে সন্তুষ্টিলাভের জন্য করেছ এবং সেই নেক আমলের ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাক। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন। তখন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতামাতা ছিলেন অতিশয়র বৃদ্ধ। আমার একজন স্ত্রী ও ছোট ছোট সন্তানাদি ছিল। আমি তাদের (জীবিকার) জন্য- বকরী মাঠে চরাতাম। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে এসে আমি সেগুলোর দুধ দোহন করতাম এবং আমি আমার পূত্র কন্যাদের আগে প্রথমেই আমার পিতামাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন একটি গাছ আমাকে দুরে নিয়ে গেল (অর্থাৎ চারণভূমি দুরে ছিল)। এতে আমার ঘরে ফিরতে রাত হয়ে গেল। আমি তাদের (পিতামাতা) উভয়কে ঘুমন্ত অবস্হায় পেলাম। এরপর আমি পূর্বের মতই দুধ দোহন করলাম। আমি দুধ নিয়ে আমার পিতামাতার মাথার কাছে দাড়িয়ে রইলাম এবং তাদের নিদ্রা ভঙ্গ করা অপছন্দ মনে করলাম এবং তাদের আগে সন্তানদের দুধ পান করানোও অপছন্দ করলাম। তখন আমার সন্তানরা পিপাসায় আমার দুই পায়ের কাছে কাতরাচ্ছিল। তাদের ও আমার এই অবস্হা চলল। অবশেষে ভোর হয়ে গেল। যদি আপনি মনে করেন যে, আমি এই কাজ আপনারসন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি, তাহলে আমাদের জন্য একটা সুড়ঙ্গ করে দিন, যদ্বারা আমরা আসমান দেখতে পাই। তখন আল্লাহ তা’আলা তাতে একটি সুড়ঙ্গ করে দিলেন। তা দিয়ে তারা আসমান দেখতে পেল। আরেক জন বলল, হে আল্লাহ! আমার ঘটনা এই, আমার এক চাচাতো বোন ছিলঁ। পুরুষ যেভাবে নারীকে ভালবাসে আমি তাকে তেমন ভালবাসতাম। আমি তাকে একান্ত কাছে পেতে চাইলাম। সে তাতে অস্বিকৃতি জানাল এবং একশ দ্বীনার বায়না ধরল। আমি চেটা করে একশ দ্বীনার সঞ্চয় করলাম। এরপর সেগুলো নিয়ে তার কাছে গেলাম। যখন আমি তার দু পায়ের মাঝখানে বসলাম, তখন সে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। অন্যায়ভাবে ছিপি খুলো না (কুমারিত্ব নষ্ট করো না)। একথা শুনে আমি তার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আপনি যদি মনে করেন যে, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই আমি একাজ করেছি তাহলে আমাদের জন্য একটি সুড়ঙ্গ খুলে দিন। তখন তিনি তাদের জন্য আরেকই ফাক করে দিলেন। অপর ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমি এক ফারাক- শস্যের একজন মজুর নিয়োগ করেছিলাম। সে তার কাজ সমাধা করে তার প্রাপ্য মজুরী দাবী করল। আমি এক ফারাক (শস্য) তার সামনে পেশ করলাম। কিন্তু সে তা নিলনা। আমি সে শস্য যমীনে চাষ করতে থাকনাম। পরিশেষে তা দিয়ে গরু-বকরী ও রাখাল সংগ্রহ করলাম। পরে সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর। আর আমার প্রাপ্য পরিশোধের ব্যাপারে আমার উপর যুলুম করো না। আমি বললাম, তুমি এই গরু ও রাখাল নিয়ে যাও। তখন সে তা নিয়ে চলে গেল। যদি আপনি জানেন যে, আমি একাজটি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করেছি তাহলে অবশিষ্ট অংশ খুলে দিন। তখন আল্লাহ তা’আলা গুহা মুখের অবশিষ্ট অংশ খূলে দিলেন।

৬৬৯৯। ইসহাক ইবনু মানসূর ও আবদ ইবনু হুমায়দ, সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু তারীক বাজালী যুহায়র ইবনু হারব, হাসান হুলওয়ানী, আবদ ইবনু হুমায়দ ও ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে, মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) সুত্রে আবূ যামরা (রহঃ)-এর হাদীসের মর্ম অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন। তাঁরা তাঁদের হাদীসের এইটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন তারা পায়ে হেঁটে বের হয়েছিল। সালিহ (রহঃ)-এর হাদীসে “তারা পায়ে হেটে চলছিল- উল্লেখ আছে। উবায়দুল্লাহর হাদীসে তারা বের হলো উল্লেখ আছে। এরপর তিনি কিছুই উল্লেখ করেননি।

৬৫৬১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানূহু বলেন, আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারণা অনুযায়ী। যখন সে আমার যিকর করে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। বান্দা আমাকে একাকী স্বরণ করলে আমিও তাকে একাকী স্বরণ করি। আর যদি সে কোন মজলিসে আমার যিকর (স্বরণ) করে তাহলে আমি তাকে তাদের চাইতে উত্তম মজলিসে স্বরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি।

৬৫৬২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে যদি সে আমর দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে আসি কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬৫৬৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এইগুলি আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর বর্ণিত হাদীস। এরপর তিনি কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন কোন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তখন আমি তার পানে এক হাত এগিয়ে আসি। আর যখন সে একহাত আগায় তখন আমি একগজ আগাই। যখন সে এক গজ এগিয়ে আসে তখন আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি।

৬৫৬৪। উমায়্যা ইবনু বিসতাম আয়শী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ করতে করতে জুমদান নামক একটি পাহাড়ের নিকটে গেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা এই জুমদান পর্বতে পরিভ্রমণ কর। এখানে মূফাররিদরা- অতিক্রম করেছ। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, মুফাররিদঁ কারা, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তিনি বললেনঃ অধিক যিকরকারী ও অধিক যিকরকারিনা।

৬৫৬৫। আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তার হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তাআলা বেজোড়। তিনি বেজোড় পছন্দ করেন। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) -এর বর্ননায় (হিফাযত করে) এর স্হলে (যে গণনা করে) উল্লেখ আছে।

৬৫৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি অর্থাৎ এক কম একশটি নাম আছে। যে ব্যক্তি তাগণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাম্মাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এইটুকু বাড়িয়ে বলেছেন যে, তিনি বেজোড় এবং তিনি বেজোড় ভালবাসেন।

৬৫৬৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন দুআ করবে তখন দৃঢ় সংকল্পের সাথে দু’আ করবে। আর সে যেন হে আল্লাহ! যদি আপনি চান তাহলে আমাকে দান করুন না বলে। কেননা আল্লাহর উপর জোর করার কেউ নেই।

৬৫৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমদের কেউ যখন দুআ করে তখন সে যেন না বলে (হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করুন)। বরং সে যেন সংকল্পে দৃঢ়তার সাথে দুআ করে। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে যা দান করেন তা আল্লাহ তা আমার কাছে এমন কোন বড় জিনিস নয়।

৬৫৬৯। ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো না বলে যে, (হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে আমার প্রতি দয়া বর্ষণ করুন)। সে যেন অবশ্যই দৃঢ় সংকল্পের সাথে দুআ করে। কেননা, আল্লাহ তায়াআলা মহান কারিগর, তিনি যা ইচ্ছা তৈরি করেন। তাকে বল প্রয়োগকারী কেউ নেই।

৬৫৭০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বিপদ আপতিত হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি অগত্যা মৃত্যু কামনা করতেই হয় তাহলে সে যেন বলে-হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখূন যতক্ষন পর্যন্ত আমার হায়াত আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়। আর যদি আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয়, তবে আমাকে মৃত্যু দান করুন।

৬৫৭১। ইবনু আবূ খালফ ও যুহায়র ইবনু হারব আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি (তার উপর পতিত বিপদের কারণে) এর স্হলে (যে বিপদ তার উপর আপতিত হয়েছে তা থেকে) বলেছেন।

৬৫৭২। হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) নাযর ইবনু আনাস ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যূ কামনা করবে না-” না বলতেন তাহলে অবশ্যই আমি মৃত্যূ কামনা করতাম।

৬৫৭৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাঃ) -এর কাছে গেলাম। তিনি তার পেটে সাতটি আঘাত পেয়েছিলেন। তখন তিনি বললেন, যদি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মৃত্যূকে আহবান জানাতে নিষেধ না করতেন তাহলে অবশ্যই আমি তাকে ডাকতাম।

৬৫৭৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) অন্য সুত্রে ইবনু নুমায়র, উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৫৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাদ ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এই মর্মে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আমাদের কাছে যা বর্ণনা করেছেন, তন্মধ্যে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে যেন তার জন্য দুআনা না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন ব্যক্তির বয়স দীর্ঘায়িত হলে এতে তার কল্যাণ হয়ে থাকে।

৬৫৭৬। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।

৬৫৭৭। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৫৭৮। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রাযী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। তখন আমি বললাম, ইয়া নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ কি মৃত্যু অপছন্দ করেন, যেমন আমরা সবাই তা অপছন্দ করি? তিনি বলেন, বিষয়টি এরুপ নয়। তবে যখন একজন মুমিনকে আল্লাহর রহমত, তার রিযামন্দি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যখন কাফিরকে আল্লাহর আযাব ও তার অসন্তুষ্টির খবর দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।

৬৫৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৫৮০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদার অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। আর মূত্যু আল্লাহর সংগে সাক্ষাতের পর সংঘটিত হয়।

৬৫৮১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি খবর দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার অনুরুপ বলেছেন।

৬৫৮২। সাঈদ ইবনু আমর আশআসী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সংগে সাক্ষাৎ পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সংগে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন না। বলেন, এরপর আমি (শুরায়) আয়িশা (রাঃ) -এর কাছে এলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। যদি বিষয়টি এরুপ হয় তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। তখন তিনি (আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কথা মত যে ব্যক্তি ধ্বংস হয়েছে, সে বস্তুতই ধ্বংস হয়েছে। বিষয়টি কী? (রাবী) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন আর আমাদের মাঝে এমন কেউ নেই, যে মৃত্যূকে অপছন্দ করে না। তখন তিনি (আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই কথাই বলেছেন। তবে তুমি যা বুঝেছ ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। প্রকৃতপক্ষে যখন চক্ষু বন্ধ হয়ে যাবে, শ্বাস বক্ষে আটকে যাবে, শরীরের লোম শিউরে উঠবে এবং আংশুলগুলো সংকুচিত হয়ে যাবে তখন যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করবে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ পছন্দ করবেন এবং সে সময় যে আল্লাহর সাক্ষাহু অপছন্দ করবে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করবেন।

৬৫৮৩। ইসহাক হানযালী (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) -এর সনদে আবসার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৫৮৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ আমির আশ আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসে আল্লাহ তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।

৬৫৮৫। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার বান্দার ধারণানূরুপ আমি আছি। আর আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে ডাকে।

৬৫৮৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ইবনু উসমান আবদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ জাল্লা শানূহু ইরশাদ করেনঃ যখন আমার বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে তখন আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে আসি। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।

৬৫৮৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) মুতামির (রহঃ) তার পিতার সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। আর তিনি তার বর্ণনায় (যখন সে পায়ে হেটে আসে) উল্লেখ করেননি।

৬৫৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ জাল্লা শানূহু ইরশাদ করেনঃ আমি আমার বান্দার কাছে তার ধারনা অনুযায়ী থাকি। যখন সে আমার যিকর করে তখন আমি তার সংগী হয়ে যাই। যখন সে একাকী আমার যিক্বর করে তখন আমি একাকী তাকে স্বরণ করি। যখন সে কোন মজলিসে আমার যিকর করে তখন আমি তাকে তার চাইতে উত্তম মজলিসে স্বরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে এক গজ (দুহাত) এগিয়ে আসি। যদি সে আমার দিকে পায়ে হেটে আসলে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি।

৬৫৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ জালা শানূহু ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে দশগুন পূরস্কার; আর আমি তাকে আরও বাড়িয়ে দেব। অ্যর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার প্রতিফল সেই কাজের অনুরুপ কিংবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে একহাত এগিয়ে আসি। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি একহাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়িয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে পৃথিবী সমান গোনাহ করে এবং আমার সংগে কাউকে শরীক করেনি আমি তার সংগে অনুরুপ তুল্য মাগফিরাত নিয়ে মিলিত হই। ইবরাহীম বলেন, হাসান ইবনু বিশর ওয়াকী সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৫৯০। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমাশ সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে পার্থক্য এই যে, তিনি বলেছেন, তার জন্য রয়েছে দশগুন পূরস্কার অথবা আমি আরও বাড়িয়ে দেব।

৬৫৯১। আবূল খাত্তাব যিয়াদ ইবনু ইয়াহইয়া হাসসানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন মুসলিমের রোগ সেবার জন্য গেলেন। সে অসুখে কাতর হয়ে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি কোন দুআ করছিলে কিংবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু কামনা করছিলে? সে বললঃ হ্যা। আমি বলছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি আখিরাতে আমাকে যে শাস্তি দিবেন তা এই দুনিয়াতেই ত্বরান্বিত করে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন শক্তি নেই যে, তা বহন করবে? অথবা তুমি তা বরদাশত করতে পারবে না। তুমি এরুপ বললে না কেন? হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দাও দুনিয়াতে এবং কল্যাণ দান কর আখিরাতে। আর জাহান্নাম থেকে আমাদের নাজাত দাও। তিনি (রাবী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন। আর আল্লাহ তাকে নিরাময় করেন।

৬৫৯২। আসিম ইবনু নযর তায়মী (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) এবং জাহান্নাম থেকে আমাদের বাচান’ পর্যন্ত এই সনদে উল্লেখ করেছেন। এর অতিরিক্ত অংশ তিনি উল্লেখ করেননি।

৬৫৯৩। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর এক সাহাবীর অসুখে দেখতে যান। সে ভীষণ কাতর হয়ে পড়েছিল। সুহায়দের হাদীসের মর্মানূযায়ী বর্ণনা করেন। তবে তার বর্ণনায় এইটুকু পার্থক্য যে, আল্লাহর আযাব বরদাশত করার মত শক্তি তোমার নেই আর এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন এবং আল্লাহ তাকে নিরাময় করেন” কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি।

৬৫৯৪। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬৫৯৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়াআলার একদল ভ্রাম্যমান অতিরিক্ত ফিরিশতা আছে। তারা যিকরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করে বেড়ায়। তাঁরা যখন কোন যিকরের মজলিস পায় তখন সেখানে তাদের (যিকরকারীরদের) সঙ্গে বসে যায়। আর তারা একে অপরকে তাদের পক্ষ বিস্তার করে ঢেকে নেয়। এমনিভাবে তাঁরা তাদের ও নিকটবর্তী আসমানের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে ফেলে। যিকরকারীরা যখন আলাদা হয়ে যায় তখন তাঁরা আসমানে আরোহণ করে। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ জাল্লা শানূহু তাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা কোথা হতে এসেছ? অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। তখন তারা বলতে থাকেন, আমরা যমীনে অবস্হানকারী আপনার বান্দাদের নিকট থেকে এসেছি, যারা আপনার তাসবীহ পাঠ করে, তাকবীর পাঠ করে, (তাহলীল পাঠ করে) “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর যিকর করে, আপনার প্রশংসা ঘোষণা করে আর আপনার কাছে তাদের কাংখিত বস্তু কামনা করে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দ্বারা আমার কাছে কি চায়? তারা বলেন, তারা আপনার কাছে আপনার জান্নাত কামনা করে। তিনি বলেন, তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে? তাঁরা বলেন, না; হে আমাদের প্রতিপালক! তিনি বলেন, যদি তারা আমার জান্নাত দেখতে পেত তাহলে কী করত? তাঁরা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করত। তিনি বলেন, কিসের থেকে তারা আমার কাছে পানাহ চাইত? তাঁরা বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেন, তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে? তারা বলেন, না; তারা দেখেননি। তিনি বলেন, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখতে পেত। তাহলে কী করত? তারা বলেন, তাহলে তারা আপনার কাছে মাগফিরাত কামনা করত। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তারা যা চাইছিল আমি তা তাদের দান করলাম। আর তারা যা থেকে পানাহ চাইছিল আমি তা থেকে-তাদের নাজাত দিয়েছি। এরপর তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে তো অমুক গোনাহগার বান্দা ছিল, যে তাদের (যাকেরীনদের) সঙ্গে মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বসেছিল। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। তারা তো এমন একটি সম্প্রদায় যাদের সঙ্গে তাদের সাথীরা শক্রতা পোষণ করে না।

৬৫৯৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল আযীয ইবনু সূহায়ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাতাদা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন দুঁআ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অধিক পাঠ করতেন? তিনি বললেন, তিনি যে দুঁআ দ্বারা অধিক দুআ করতেন তাতে বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের দান কর দুনিয়ায় কল্যাণ এবং পরকালে কল্যাণ। আর আমাদের রক্ষা কর জাহান্নামের আযাব থেকে। ” রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) যখন কোন দু’আ করার ইচ্ছা করতেন তিনি এই দুআ পাঠ করতেন। যখন তিনি কোন ব্যাপারে দুআ করার ইচ্ছা করতেন তখন এই দুঁআ পড়তেন।

৬৫৯৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দুআ পাঠ করতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কল্যাণ দান কর পার্থিব জীবনে- কল্যাণ দান কর আখিরাতে। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা কর।

৬৫৯৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই; তিনই সবকিছু উপর ক্ষমতাবান- এই দুআ দিনে একশ বার পাঠ করে সে দশজন গোলাম আযাদ করার সাওয়াব পাবে, তার আমল নামায় একশ নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার থেকে একশ গোনাহ মুছে দেওয়া হবে। আর তা ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান (তার কুমন্ত্রণা) থেকে তার জন্য রক্ষাকবচ হয়ে যায়। সেদিন সে যা করেছে তার চেয়ে অধিক পূণ্যবান কেউ হবে না। কিন্তু কেউ তার বেশী আমল করলে তার কথা ভিন্ন। আর যে ব্যক্তি দিনে একশ- বার আমি আল্লাহর সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করছি পাঠ করবে, তার যাবতীয় গোনাহ মোচন করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেলার সমতুল্য হয়।

৬৫৯৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমুবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি (আল্লাহ পবিত্র ও সমন্ত প্রশংসা তাঁরই) একশ বার পাঠ করে কিয়ামতের দিনে তার চেয়ে উত্তম আমল কেউ আসবে না। তবে সে ছাড়া, যে ব্যক্তি তদানূরুপ আমল করে কিংবা তার চেয়ে আরও বেশী আমল করে।

৬৬০০। সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ আবূ আইউব গায়লানী (রহঃ) আমর ইবনু মায়মুন (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি দশবার “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সোর্বত্তম ক্ষমতা তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই, তিনি সব কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান” পাঠ করবে সে যেন ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর বংশের চারজন গোলামকে মুক্তি দান করল। সূলায়মান (রহঃ) রাবী ইবনু খায়সাম (রহঃ) -এর সুত্রে অনুরুপ বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কার নিকট থেকে তা শুনেছেন? তিনি বললেন, আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) থেকে। তিনি বলেন, তখন আমি আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) -এর কাছে গেলাম এবং বললাম, আপনি কার নিকট থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকে। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৬৬০১। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু তারীফ বাজালী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দুটি কালেমা জিহবার উপর (উচ্চারণে) খুবই হালকা, মীযানের পাল্লায় অত্যান্ত ভারী, রাহমান (পরম দয়ালূ আল্লাহ) -এর কাছে খুবই প্রিয়। তা হলো ‘আমি আল্লাহ জন্য সপ্রশংসা পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, আমি মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

৬৬০২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়েব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি বলি-”আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান” পাঠ করা আমার অধিক পছন্দনীয়-সে সব জিনিসের চাইতে, যার উপর সূর্য উদিত হয়।

৬৬০৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আমাকে একটি কালাম শিক্ষা দিন, যা আমি পাঠ করব। তিনি বললেন, তুমি বল-আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, আল্লাহ মহান, সর্বাপেক্ষা মহান, আল্লাহরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা এবং আমি আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য কারো নেই, তিনি পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময়। সে বলল, এই সব তো আমার প্রতিপালকের জন্য। আমার জন্য কি! তিনি বললেন, বল, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত নসীব করুন এবং আমাকে রিযক দান করুন। মূসা (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন ও বলেছেন। তবে আমার তা সঠিক জানা নেই। ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তার হাদীসে মূসার উক্তি উল্লেখ করেননি।

৬৬০৪। আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) আবূ মালিক আশজায়ী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে এই দুআ শিক্ষা দিতেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে হিদায়াত করুন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন।

৬৬০৫। সাঈদ ইবনু আযহার ওয়াসিতী (রহঃ) আবূ মালিক আশজাঈর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করত তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সালাত শিক্ষা দিতেন। এরপর তাকে এই কালেমাসমূহ পাঠ করার নির্দেশ দিতেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, আমাকে হিদায়াত দান করুন, আমাকে রোগমুক্ত করেদিন এবং আমার জীবিকা প্রসারিত করে দিন।

৬৬০৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মালিক (রাঃ) -এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছেন যে, তাঁর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি যখন আমার রবের কাছে প্রার্থনা করব তখন কিভাবে তা ব্যক্ত করব? তিনি বললেন, তুমি বল, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি রহম করুন, আমাকে মাফ করে দিন এবং আমাকে জীবিকা দান করুন। আর তিনি বৃদ্ধাঙ্গূলী ব্যতীত সব আংশুল একত্র করে বললেন, এই শব্দগুলো তোমার দুনিয়া ও আখিরাতকে একত্র করে দেবে।

৬৬০৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে সক্ষম? তখন সেখানে উপবিষ্টদের মধ্য থেকে এক প্রশ্নকারী বলল, আমাদের কেউ কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করতে পারবে? তিনি বললেনঃ যে একশ-বার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করলে তার জন্য এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার থেকে এক হাজার গোনাহ মিটিয়ে দেওযা হবে।

৬৬০৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা হামদানী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের দুর্দশা লাঘব করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোন মূসলমানের ক্রটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ক্রটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষন তার ভাই এর সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষন তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন। যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সূগম করে দেন। যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর ঘর সমূহের কোন একটিতে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তার পর্যালোচনায় নিয়োজিত থাকে তখন তাদের উপর স্বস্তি অবতীর্ণ হয়। রহমতের শামিয়ানা তাদের আচ্ছাদিত করে এবং ফিরিশ্তাগণ তাদের পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর নৈকট্যধারীদের (ফিরিশতাগণের) মাঝে তাদের স্বরণ করেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেবে তার বংশ মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবেনা।

৬৬০৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আবূ মুআবিয়া (রহঃ) -এর হাদীসের অনুরুপ। আবূ উসামার হাদীসে একটু পার্থক্য আছে। তার হাদীসে “অভাবগ্রস্তের অভাব লাঘব করার” উল্লেখ নেই।

৬৬১০। মূসাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আগরাবী মুসলিম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য যে, আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সাক্ষ্য দিয়েছেন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায় আল্লাহ জাল্লা শানূহুর যিকর করতে বসলে একদল ফিরিশতা তাদের পরিবেষ্টন করে নেন এবং রহমত তাদের উপর আচ্ছাদন হয়ে যায়। আর তাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ হল এবং আল্লাহ তা’আলা তার কাছের ফিরিশতাগণের মাঝে তাদের স্বরণ করেন। যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শু’বা থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৬১১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) মসজিদে একটি হোলকায় আসলেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাদের এখানে বসিয়েছে (তোমরা এখানে বসেছ কেন)? তারা বলল, আমরা আল্লাহর যিকর করতে বসেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া আর কিছু তোমাদের বসায়নি? (তোমরা কি শুধু এই জন্যই বসেছ?) তারা বলল, আল্লাহর কসম! এ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের বসায়নি। তিনি বললেন, আমি তোমাদিগকে নিন্দা করব, সে উদ্দেশ্যে কসম করতে বলিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দৃষ্টিতে আমার যে মর্যাদা ছিল সে অনুযায়ী আমার চেয়ে কম হাদীস বর্ণনাকারী কেউ নেই। একবার রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাহাবীদের একটি “হলকায়” যোগ দিয়ে বললেন, কিসে তোমাদের বসিয়েছে! তারা বলল, আমরা বসেছি আল্লাহর যিকর ও তার প্রশংসা করার জন্য। যেহেতু তিনি আমাদের ইসলামের দিকে পরিচালিত করেছেন এবং আমাদের উপর তিনি তার অনুগ্রহ করেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাদের কি কেবল এটই বসিয়েছে? তারা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা শুধুমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই বসেছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের নিন্দা করার উদ্দেশ্যে কসম খেতে বলিনি; বরং আমার কাছে (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসেছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, আল্লাহ জাল্লা শানূহু ফিরিশতাগণের কাছে তোমাদের ফযীলত বর্ণনা করছেন।

৬৬১২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ রাবীড়ি আতাকী (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহাবী আগার মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ক্বলবে (কখনো কখনো) পর্দা পড়ে যায়, তাই আমি প্রতিদিন একশ বার ইসতিগফার পাঠ করে থাকি।

৬৬১৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ বুরদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাহাবী আগার (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, ইবনু উমর (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশ বার তাওবা করে থাকি।

৬৬১৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, ইবনু মূসান্না শুবার মূত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৬১৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ সাঈদ আশাজ্জ, আবূ খায়সামা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।

৬৬১৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সংগে কোন এক সফরে ছিলাম। তখন লোকেরা জোরে জোরে তাকবীর পাঠ করছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রাণের প্রতি সদয় হও। কেননা, তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুরুপ সত্তাকে ডাকছ না। নিশ্চয়ই তোমরা আহবান জানাচ্ছ এমন এক সত্তাকে যিনি “ সর্ব শ্রোতা, নিকটবর্তী এবং তিনি তোমাদের সংগে আছেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তার পিছনে ছিলাম। তখন আমি বললাম, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হওয়ার এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডার সমূহের কোন একটি ভাণ্ডারের সন্ধান দেব না? তখন আমি বললাম, নিশ্চয়ই ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তখন তিনি বললেন, তুমি বল, হ্যা।। তা হল আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো (ভাল কাজের দিকে) অগ্রসর হওয়া এবং (মন্দ কাজ থেকে) বিরত থাকার সাধ্য নেই।

৬৬১৭। ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রাঃ) আসিম সুত্রে এই সনদে তার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬৬১৮। আবূ কামিল, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা (সাহাবীগণ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সংগে ছিলেন এবং তারা সানিয়া নামক স্থানে একটি ঘাটিতে আরোহণ করছিলেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি যখনই কোন টিলার উপর উঠত তখন উচ্চস্বরে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান- বলত। তিনি (রাবী) বলেন, তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তো নিশ্চয়ই কোন বধির কিংবা অনুরুপ সত্তাকে আহবান করছনা। তিনি বলেন, এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা হে আব্দুরলাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে একটি কালেমা বাতলে দেব না জান্নাতের ভাণ্ডার। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! সেটা কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে ফিরে থাকার সাধ্য নেই।

৬৬১৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন। এরপর তিনি তার অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬৬২০। খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ রাবী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। কোন এক যুদ্ধে আমরা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সংগে ছিলম। এরপর তিনি আসিমের হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬৬২১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সংগে কোন এক যুদ্ধে ছিলাম। এরপর তিনি পুরো হাদীস উল্লেখ করেন। তিনি তার বর্ণনায় বলেছেন, তোমরা যাকে আহবান করছ তিনি তোমাদের উটের গর্দানের চাইতেও নিকটতর। ” তবে তার হাদীসে ‘লা হাওলা অলা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’ কথাটির উল্লেখ নেই।

৬৬২২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ আমি তোমাকে জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের একটি কালেমার কথা বাতলে দেব না অথবা তিনি বলেছেনঃ জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভাণ্ডার সম্পর্কে বলব না? তখন আমি বললামঃ হ্যা। তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কারো ভাল কাজ করার এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সাধ্য নেই।

৬৬২৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিক্ষা দিন, যা আমি আমার সালাতে পড়ব। তিনি বললেনঃ তুমি বল, হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর সাংঘাতিক বড় রকমের যুলূম করেছি। কুতায়বা (রাঃ) বলেন, অত্যধিক-। আপনি ব্যতীত কেউ গোনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপনি আপনার তরফ থেকে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ। ” আবূ তাহির (রহঃ) আবূল খায়ের থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ”স (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিক্ষা দিন যার দ্বারা আমি আমার সালাতে ও ঘরে দুআ করতে পারি। এরপর তিনি লায়সের হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন। তবে তাতে এইটুকু পার্থক্য রয়েছে যে, “অনেক যুলূম- উল্লেখ করেছেন।

৬৬২৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই সব দুআ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের ফিতনা থেকে পণিাহ চাই, জাহান্নামের আযাব থেকে পানাহ চাই, কবরের ফিতনা, কবর আযাব ও ধন-সম্পদের ফিতনা এবং দারিদ্রের ফিতনার অনিষ্ট থেকে আপনার পানাহ চাই। আমি আপনার কাছে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অশুভ পরিণতি থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমার পাপরাশি বরফ ও ঠাণ্ডা পানি দ্বারা ধুয়ে সাফ করে দিন। আমার কলব পরিস্কার করে দিন যেভাবে আপনি সাদা কাপড় ময়লা থেকে সাফ করে দেন। আমি ও আমার পাপরাশির মধ্যে ব্যবধান করে দিন যেমন আপনি পূর্ন ও পশ্চিমের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, পাপ ও ধার-কর্জ থেকে পানাহ চাই। ”

৬৬২৫। আবূ কুবায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) -এর সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত।

৬৬২৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, কাপূরষতা, বার্ধক্য, কৃপণতা থেকে পানাহ চাচ্ছি। আমি আপনার কাছে আরও পানাহ চাচ্ছি কবর আযাব, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনার অনিষ্ট থেকে।

৬৬২৭। আবূ কামিল ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে তার অনুরুপ বর্ণিততবে ইয়াযীদ হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বানীঃ ‘র্জীবন ও মৃত্যুর ফিতনার অনিষ্ট হাত- কথাটির উল্লেখ নেই।

৬৬২৮। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি পানাহ চেয়েছেন বর্ণিত বস্তুসমূহ থেকে এবং কৃপণতা হতে।

৬৬২৯। আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই দুআ সমূহ পাঠ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কৃপণতা, অলসতা, বার্ধক্যের দৈন্য, কবর আযাব এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে পানাহ চাই।

৬৬৩০। আমর নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশ্রয় চাইতেন অদৃষ্টের অনিষ্ট থেকে, পাপের স্পর্শ থেকে, দুশমনের দুশমনি থেকে এবং মুসিবতের দুঃখ থেকে। আমর তাঁর হাদীসে বলেছেন যে, সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি সন্দেহ পোষণ করছি, এর থেকে একটি বাড়িয়ে বলতে।

৬৬৩১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) খাওলা বিনত হাকীম সুলায়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকোন মনযিলে অবতরন করে বলবে, আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালাম দ্বারা তার কাছে তাঁর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। সে ঐ মানযিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

৬৬৩২। হারুন ইবনু মারুফ ও আবূ তাহির (রহঃ) খাওহল বিনত হাকীম সুলায়মিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন কোন মনযিলে অবস্হান করে তখন সে যেন এই দুআ পাঠ করে-আমি পরিপূর্ণ কালাম দ্বারা আল্লাহর কাছে তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। এতে সে ব্যক্তি এ মনযিল থেকে অন্যত্র রুওনা হওয়া অবধি কোন কিছু তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, কাকা ইবনু হাকীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি বড় কষ্ট পাচ্ছি গত রাতে একটি বিচ্ছু আমাকে দংশন করেছে। তিনি বললেনঃ যদি তুমি সন্ধ্যায় এই দুআটি পাঠ করতে ‘আয়্যুজুবি কালিমাতিল্লাহি তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা ’ তাহলে সে তোমাকে কষ্ট দিতে পারত না।

৬৬৩৩। ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এল এবং বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে একটি বিচ্ছু দংশন করেছে। এরপর ইবনু ওহাবের হাদীসের অনুরুপ।

৬৬৩৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) বারা”আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণ করবে তখন সালাতের ন্যায় তুমি অযু করে নেবে। এরপর ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়বে। এরপর তুমি বল, হে আল্লাহ! আমি আমার মুখমন্ডল তোমার দিকে সোপর্দ করলাম, আমার কাজ-কর্ম তোমার কাছে সমর্পণ করলাম। আমি পূরস্কার লাভের আশায় এবং শাস্তির ভয় পোষণ পূর্বক তোমার উপর ভরসা করলাম। তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্হল ও ঠিকানা নেই। তুমি যে কিতাব নাযিল করেছ তার উপর ঈমান আনলাম, তুমি যে নাবীকে প্রেরণ করেছ তাঁর প্রতি ঈমান আনলাম। ” আর এই বাক্যগুলোকে তোমার শেষ কথা বানিয়ে নাও। এরপর যদি তুমি এই রাতে ইন্তেকাল কর তাহলে তুমি ইসলামের উপরই ইন্তেকাল করলে। বারাআ (রাঃ) বলেন, আমি এই বাক্যগুলো স্মরণে রাখার জন্য পুনর্বার পড়লাম। তখন আমি বললাম, আমি তোমার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছি যাকে তুমি রাসুল রুপে পাঠিয়েছ। অর্থাৎ তোমার নাবীর- স্থলে তোমার রাসুল- বললাম! তিনি বললেন, তুমি বল, আমি ঈমান এনেছি তোমার নাবীর প্রতি যাকে তুমি পাঠিয়েছ।

৬৬৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) সুত্রে থেকে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি মানসূর বর্ণিত হাদীসটি পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। সা’দ ইবনু উবায়দা হুসায়নের হাদীসে যদি তার সকাল হয় তাহলে সে কল্যাণ লাভ করবে’ কথাটি উল্লেখ করেছেন।

৬৬৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন রাতে শয্যা গ্রহণের সময় সে বলেঃ-হে আল্লাহ! আমি আমার জীবন আপনার কাছে সঁপে দিলাম। আমার মুখমন্ডল আপনার প্রতি ফিরালাম। আমার পিঠ আপনার কাছে ঠেকালাম, পূরস্কার লাভের আশায়; কোন ঠিকানা ও আশ্রয় নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনার কিতাবের প্রতি যা আপনি নাযিল করেছেন এবং রাসূলের প্রতি যাকে আপনি পাঠিয়েছেন। ” এরপর যদি সে ঐ রাতে ইন্তেকাল করে তাহলে ইসলামের উপরই ইন্তেকাল করেছে বলে গণ্য হবে। ইবনু বাশশার (রহঃ) তার হাদীসে “রাত্রিকালে” শব্দটি উল্লেখ করেননি।

৬৬৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ হে অমুক! যখন তুমি তোমার শয্যায় আশ্রয় গ্রহণ করবে। এরপর আমর ইবনু মুররা বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। তবে পার্থক্য এই যে, বলেছেন, “এবং আপনার সেই নাবীর প্রতি, যাকে আপনি পাঠিয়েছেন। ” যদি তুমি রাতে মারা যাও তাহলে ইসলামের উপরই মারা গেলে। যদি ভোর বেলায় উঠ তাহলে তোমার কল্যাণ হবে।

৬৬৩৮। ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারাঁআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন। এরপর তার অনুরুপ। তবে তিনি “যদি তুমি ভোর বেলায় উঠ তাহলে তোমার কল্যাণ হবে” কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬৬৩৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শয্যা-গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই জীবিত আছি আর তোমার নামেই মৃত্যূবরণ করছি। ” আর যখন তিনি নিদ্রা থেকে উঠতেন তখন বলতেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি আমাদেরকে মৃত্যু র পর জীবন দান করেছেন। আর তার দিকেই প্রত্যাবর্তন। ”

৬৬৪০। উকবা ইবনু মূকরিম আমী ও আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, যখন শয্যাগ্রহণ করবে তখন বলবে, হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রাণ সৃষ্টি করেছ এবং তুমিই তার মৃত্যুদানকারী। তোমার জন্য তার (নফসের) জীবন ও মৃত্যু। যদি তুমি একে জীবিত রাখ তাহলে এর হিফাযত কর। আর যদি তুমি এর মৃত্যু ঘটাও তাহলে একে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুস্হতা কামনা করছি”। তখন সে তাকে বলল, আপনি তা উমার (রাঃ) থেকে শুনেছেনই তিনি বললেন, উমারের চাইতে যিনি উত্তম (অর্থাৎ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছি। ইবনু নাফি (রহঃ) তার বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বলেছেন। তিনি ‘সামিয়তু’ শব্দটি উল্লেখ করেননি।

৬৬৪১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ সালিহ আমাদিগকে নির্দেশ দিতেন, যখন আমাদের কেউ নিদ্রায় যায় সে যেন ডান কাত হয়ে-শয্যা গ্রহণ করে। এরপর তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আপনি আসমান, যমীন ও মহান আরশের প্রতিপালক। আমাদের প্রতিপালক ও সব কিছুর পালনকর্তা। আপনি বীজ ও উদ্ভিদের সৃষ্টিকর্তা, আপনি তাওরাত, ইনজীল ও ফূরকানের অবতীর্ণকারী। আমি আপনার কাছে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই। আপনই সব নিয়ন্ত্রণকারী। হে আল্লাহ! আপনই আদি, আপনার পূর্বে কোন কিছুর অন্তিত্ব নেই এবং আপনই অন্ত, আপনার পরে কোন কিছু নেই। আপনই যাহির, আপনার ঊর্ধে কেউ নেই। আপনই বাতিন, আপনার অগোচরে কিছু নেই। আমাদের ঝণ পরিশোধ করে দিন এবং দারিদ্র্য থেকে আমাদের অমুখাপেক্ষী করে দিন। ” তিনি (আবূ সালিহ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রেও এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করতেন।

৬৬৪২। আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান ওয়াসেতী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিতেন যে, যখন আমরা শয্যাগ্রহণ করি তখন যেন আমরা বলি। এরপর জারীরের হাদীসের অনুরুপ। আর তিনি বলেছেনঃ সকল প্রানার অনিষ্ট থেকে যাদের নিয়ন্ত্রণকর্তা আপনই।

৬৬৪৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর কাছে এসে একজন খাদিম চাইলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেনঃ তুমি বল, “সাত আসমানের মালিক হে আল্লাহ! “(তারপর) সুহায়লের পিতা থেকে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।

৬৬৪৪। ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন তার শয্যা গ্রহণ করতে বিছানায় আসে, সে যেন তার কাপড়ের আচল দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয় এবং বিসমিল্লাহ পড়ে নেয়। কেননা সে জানেনা যে, শয্যা ত্যাগ করার পর তার বিছানায় কি আছে। এরপর যখন সে শয্যা গ্রহণ করবে তখন যেন ডান কাত হয়ে শয্যা গ্রহণ করে। এরপর সে যেন বলে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি পবিত্র। আপনার নামেই আমি আমার পাঁজর রাখলাম, আপনার নামেই তা উঠাব। আপনি যদি আমার প্রান বাতি নিভিয়ে দেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি আপনি তারে, উঠবার অবকাশ দেন তাহলে তাকে হিফাযত করুন, যেমন আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।

৬৬৪৫। আবূ কুরায়ব (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ এরপর সে যেন বলে হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমার পার্শ রাখলাম। যদি তুমি আমার প্রাণ জীবিত রাখ তাহলে তার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ কর।

৬৬৪৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেনঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের আহার দিয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন, তিনি আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমন অনেক আছে যাদের জন্য কোন পৃষ্ঠপোষক নেই, আশ্রয় দাতাও নেই।

৬৬৪৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ফারওয়া ইবনু নাওফিল আশজা”ঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি আয়িশা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে কি কি দুআ করতেন? তিনি বললেন, তিনি বলতেন: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সে সব কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই যা আমি আমল করেছি এবং আমি যা করিনি তা থেকে”।

৬৬৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব ফারওয়া ইবনু নাওফিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর দুঁআ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সে সব কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি।

৬৬৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার, মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (রহঃ) হুসায়ন (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু জাফর হাদীসে এবং আমি যা করিনি তার অনিষ্ট থেকে- কথাটি নেই।

৬৬৫০। আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর দুআয় বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই সে সব আমলের অনিষ্ট থেকে, যা আমি করেছি এবং যা আমি করিনি তা থেকেও।

৬৬৫১। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই আনুগত্য পোষণ করছি, তোমার প্রতই ঈমান এনেছি, তোমার উপরই ভরসা করছি, তোমার দিকেই রুজু- হয়েছি এবং তোমার সাহায্যেই দুশমনের বিরুদ্ধে লড়ছি। হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কাছে পানাহ চাচ্ছি তুমি ব্যতীত ইলাহ নেই। তুমি আমাকে পথ ভ্রান্তি থেকে রক্ষা কর। তুমি চিরঞ্জীব সত্তা, যার মৃত্যূ নেই। আর জ্বীন্ন ও মানব জাতি মারা যাবেই।

৬৬৫২। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সফরে থাকতেন তখন ভোরবেলা বলতেন, “শ্রোতা আল্লাহর প্রশংসা শুনেছে, তার বখশিশ আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের সঙ্গী হও। আমাদের উপর ফযল ও করম কর। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই জাহান্নাম থেকে।

৬৬৫৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয আম্বারী (রহঃ) আবূ মূসা আশ-আরী (রাঃ) তাঁর পিতার সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি এই দু’আ দ্বারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতেনঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহ, আমার মূর্খতা ও আমার কাজের সীমালংঘন ক্ষমা করে দাও। তিনি এ বিষয়ে আমার চাইতে অধিক জান। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার উদ্দেশ্যমূলক ও উদ্দেশ্যহীন অপরাধ এবং আমার ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সব রকমের অপরাধ (যা আমি করেছি)। হে আল্লাহ! ক্ষমা করে দাও যা আমি আগে করে ফেলেছি এবং যা আমি পরে করব, যা আমি গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি। আর তুমি আমার চাইতে আমার বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞাত। তুমিই অগ্রবর্তী এবং তুমিই পরবর্তী। তুমি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।

৬৬৫৪। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রাঃ) সূত্রে এই সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৬৬৫৫। ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীন ইসলাহ (পরিশুদ্ধ) করে দাও, যে দ্বীনে আমার রক্ষাকবচ। তুমি সংশোধন করে দাও আমার দুনিয়াকে, যেথায় আমার জীবিকা রয়েছে তুমি ইসলাহ (কল্যান কর) করে দাও এ আমার আখিরাতকে, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তুমি আমার জীবনকে দীর্ঘায়িত করে দাও প্রত্যেকটি কল্যাণময় কাজের জন্য এবং তুমি আমার মৃত্যু কে আরাম দায়ক বানিয়ে দাও সব কিছুর অনিষ্ট থেকে।

৬৬৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি এই বলে – দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, নিস্কুলূষতা ও পরমুখাপেক্ষী হীনতার জন্য প্রার্থনা করছি।

৬৬৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু ইসহাক (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে পার্থক্য এইটুকু যে, ইবনু মূসান্না তার বর্ণনায় ‘আল আফাফ’-এর স্হলে ‘আল ইফফা’ , (হারাম থেকে পবিত্রতা) উল্লেখ করেছেন।

৬৬৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) যাযিদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে তেমনই বলব যেমন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন তিনি বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ ঁ-হে আল্লাহ! আমি তোমার কছে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা, -অলসতা, কাপূরষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য এবং কবরের আযাব থেকে। হে আল্লাহ! তুমি আমার নফসে (অন্তর) তাকওয়া দান কর এবং একে পরিশুদ্ধ করে দাও। তুমি একে সর্বোত্তম পরিশোধনকারী, মালিক ও আশ্রয়স্হল। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অনুপোকারী ইলম থেকে ও ভয় ভীতিহীন কলব থেকে; অতৃপ্ত নফসের অনিষ্ট থেকে ও এমন দুআ থেকে যা কবুল হয় না।

৬৬৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধ্যা হত তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেন:“আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সন্ধ্যায় পৌছেছে। সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তার শরীক নেই। ” হাসান (রহঃ) বলেন, আমাকে যুবায়দ (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি ইবরাহীম (রহঃ) থেকে এ দু’আটি হিফয করেছেনঃ “রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তারই, তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ রাতের কল্যাণ কামনাকরি এবং এ রাতের অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই এবং এর পরবর্তী রাত থেকেও। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই অলসতা থেকে ও অহংকারের অনিষ্ট থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই জাহান্নামের আযাব থেকে এবং কবর আযাব থেকে।

৬৬৬০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সন্ধ্যা হত তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সন্ধ্যায় পৌছেছে। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত ইলাহ নেই। তিনি একক সত্তা, তার শরীক নেই। ” রাবী মনে করেন যে, তিনি তার দুআর মধ্যে বলেছেন, “রাজত্ব তারই, প্রশংসা তাঁরই এবং সব কিছু উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে কল্যাণ চাই এই রাতের এবং পরবর্তী রাতেরও। আর আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি এই রাতের অনিষ্ট থেকে এবং এর পরবর্তী রাতের অনিষ্ট থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই অলসতা, অহংকারের মন্দ পরিণাম থেকে। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই জাহান্নাম ও কবর আযাব থেকে। ” আর যখন সকাল হতো, তিনি বলতেনঃ “আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং আল্লাহর রাজ্যও সকালে পৌছেছে।”

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: যিকির,দুআ, তওবা ও ইস্তেগফার
যিকির,দুআ, তওবা ও ইস্তেগফার
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/doa.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/doa.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy