৩৬২৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরীক (যৌথ মালিকানাধীন) ক্রীত-দাসের বেলায় তার নিজ, অংশ মুক্ত করে দেয় এবং তার (মুক্তিদাতার) কাছে এই পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকে যা উক্ত ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ পৌছে যায় তবে ন্যায় সংগতভাবে মূল্য নিরুপণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য অংশীদারদের হিস্যার মূল্যও তাকে পরিশোধ করতে হবে। আর ক্রীতদাসটি পুরোপুরি ভাবে তার পক্ষ থেকেই মুক্ত হরে যাবে। তবে যদি সে (পূরো অংশের মূল্য পরিশোধে) সক্ষম না হয় তাহলে সে যতটুকু অংশ মুক্ত করেছে ততটূকু মুক্ত হয়ে যাবে।
৩৬৩০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ, শায়বান ইবনু ফাররুখ, আবূর রাবী, আবূ কামিল, ইবনু
মুমায়র, মুহাম্মাদ
ইবনুল মূসান্নাঁ, ইসহাক
ইবনু মানসূর, হারুন
ইবনু সাঈদ আয়লী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মালিক
(রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের মর্মানূযায়ী বর্ণিত।
৩৬৩১। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ক্রীতদাসটি দু-জনের মালিকানাধীন তার
একজন নিজের অংশ মুক্ত করে দিলে অপরজনের হিস্যার ও সে যিম্মাদার হবে (যদি সে
বিত্তবান হয়)।
৩৬৩২। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যৌথ মালিকানাধীন ক্রীতদাসের
বেলায় নিজেরা হিস্যা মুক্ত করে দিবে তার বাকী অংশ তার সস্পদ দ্বারাই তে করতে হবে
যদি সে ধনবান হয়। আর যদি সে বিত্তশালী না হয় তাহলে সে ক্রীতদাসকে উপার্জনের
মাধ্যমে আযাদী লাভের চেষ্টায় নিযুক্ত করতে হবে। তবে তার উপর তার সামর্থের বাইরে
বোঝা চাপানো যাবে না।
৩৬৩৩। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) সাঈদ ইবনু আবূ আরুবা (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত।
তবে তিনি তার বর্ণনায় এতটুকু বেশী উল্লেখ করেছেন যে, “যদি সে মুক্তিদাতা বিত্তবান না হয় তখন ঐ
ক্রীতদাসের প্রচলিত মূল্য নিরুপণ করতে হবে। এরপর সে তার অবশিষ্ট তে করার লক্ষ্যে
উপার্জনে নিয়োজিত করতে হবে। তবে এই ব্যাপারে তাকে সাধ্যাতীত কষ্টে ফেলা যাবে না।
৩৬৩৪। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ওয়াহব ইবনু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, আমি
কাতাদা (রহঃ)-কে এ সনদে ইবনু আবূ আরুবা এর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করতে
শুনেছি। তিনি তার বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ক্রীতদাসের উপযুক্ত মূল্য নিরুপণ করতে হবে।”
৩৬৩৫। ইয়হইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার একটি
ক্রীতদাসী খরিদ করে তাকে মুক্ত করে দিবেন বলে ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তখন সে
ক্রীতদাসীর মনিবেরা তাকে জানালেন যে, আমরা আপনার কাছ থেকে এই শর্তে ক্রীতদাসটি
বিক্রয় করতে পারি যে,
তার ওয়ালার১ অধিকারী আমরাই থাকব। তিনি বলেন, এরপর বিষয়টি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্হাপন করলাম। তিনি বললেন, এই শর্ত
তোমাকে ওয়ালা- থেকে বঞ্চিত করবে না। কেননা মুক্তিদাতার জন্যই কঁওয়ানার হক, নির্ধারিত।
৩৬৩৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরা
(রাঃ) তাঁর লিখিত মুক্তি চুক্তির বিনিময় পরিশোধের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আয়িশা
(রাঃ)-এর কাছে এল। সে তার লিখিত মুক্তিপণের যাবতিয় পাওনা আদায় করে নি। তখন আয়িশা
(রাঃ) তাকে বললেন, তুমি
তোমার মুনিবের কাছে ফিরে যাও। যদি তারা এ শর্তে সন্মতি জ্ঞাপন করে যে, আমি তোমার
লিখিত মুক্তিপণের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করলে তোমার ওয়ালা আমার প্রাপ্য হবে, তবে তা আমি
করতে পারি। বারীরা তার মুনিবদের কাছে বিষয়টি উন্থাপন করল। কিন্তু তারা সে প্রস্তাব
গ্রাহ্য করল না এবং বলে পাঠাল, যদি তিন সাওয়াবের আশায় তোমার লিখিত মুক্তিপণ
আদায়ের দায়িত্ব নেন তাহলে নিতে পারেন, তবে তোমার -ওয়ালা- আমাদের জন্যই থাকবে। এরপর
তিনি (আয়িশা (রাঃ) বিষয়টি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর কাছে উপস্হাপন
করলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার। কেননা ওয়ানা, মুক্তিদাতার
জন্যই নির্ধারিত। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে গেলেন
এবং বললেনঃ লোকদের কী হয়েছে তারা এমন কতক শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে
ব্যক্তি এমন শর্তারোপ করবে যা আল্লাহর কিতাবে নেই- সে শর্তের কোন মূল্য নেই যদি ও
সে একশো বার শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই কেবল যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য।
৩৬৩৭। আবূ তাহির (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, হে আয়িশা!
আমি আমার মুনিবের কাছে লিথিত মুক্তিপণের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি যে, বছরে এক
উকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) করে নয় বছরে সর্বমোট নয় উকিয়া পরিশোধ করব। এরপর
লায়স (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। তবে এই বর্ণনায় এতটুকুবেশী উল্লেখ আছেঃ তিনি
(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের এ শর্ত করা তোমাকে “ওয়ালা” প্রাপ্তি হতে
বাধা দিবে না। তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার। উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) এই
হাদীসে উল্লেখ করেন,
তখন রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং
আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করেন।
৩৬৩৮। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আনা হামদানী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদিন
নারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মুনিব আমাকে প্রতি বছর একটি করে নয় বছরে
নয়টি উকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তি দানের
ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি (আয়িশা রা) তাকে বললাম, তোমার
মুনিব যদি এই শর্তে রাজী হয় যে, তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার
“ওয়ালা” আমার প্রাপ্য হবে তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।
তখন বারীরা (রাঃ) এই বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উত্থাপন করলে তাদের জন্য -ওয়ালা-
ব্যাতিরেকে তারা তার প্রভূত্য প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার (আয়িশা রা-এর) কাছে
এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, তাহলে
আল্লাহর কসম! আমি রাজী নই। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এরপর
তিনি বললেন, হে
আয়িশা! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্তে রাবী হয়ে
যাও। প্রকৃত পক্ষে ওয়ালা- সেই পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (আয়িশা) তাই করলাম।
রাবী বলেন, এরপর
সন্ধ্যা বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি
আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্হা এই
পর্যায়ে নেমে গিয়েছে যে, তারা এমন সব শর্তারোপ কর যা আল্লাহর কিতাবে
নেই। সারণ রাখ, যে
শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই তা বাতিল বলে গণ্য, যদি ও শতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের
শর্তই যথার্থ সঠিক,
আল্লাহর শর্তই নির্ভরযোগ্য। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কি হয়েছে যে, তারা অপরকে
বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর “ওয়ালা- গ্রহণ করব আমরা? অথচ
“ওয়ালা” তো আসলে তারই যে আযাদ করে।
৩৬৩৯। আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব, যূহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ একই সনদে বর্ণিত আছে। তবে জারীর
বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে- বলেন, তার (বারীরার) সামী ছিল ক্রীতদাস। সে কারণে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইখতিয়ার দান করেছিলেন। (যখন সে
মুক্ত হবে তখন ক্রীতদাস স্বামীর সংগে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল রাখতে কিংবা তা নাকচ
করে দিতে পারবে- এই ইখতিয়ার তাকে দেওয়া হয়েছিল)। সে আত্মপক্ষই সমর্থন করল (ক্রীতদাস
স্বামীকে পছন্দ করল না)। যদি সে স্বাধীন হত তাহলে তিনি তাকে (বারীরাকে) ই-খতিয়ার
প্রদান করতেন না। আর তাদের বর্ণিত হাদীসে ‘আম্মা বাদু’ (অতঃপর) শব্দটির উল্লেখ
নেই।
৩৬৪০। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, বারীরার
কল্যাণে তিনটি শরী’আতী বিধান লাভ হয়েছিলঃ ১। তার মুনিবেরা তাকে বিক্রি করার ইচ্ছা
প্রকাশ করেছিল এবং তার ‘ওয়ালার’র উপর তাদের অধিকার লাভের শর্তারোপ করেছিল। আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলাম। তিনি আমাকে
বললেন, তাকে
খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা ‘ওয়ালা’ তারই প্রাপ্য যে আযাদ করে। ২। যখন তাকে
(বারীরাকে) মুক্ত করে দেওয়া হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে (তার দাস স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করল)। ৩। তিনি (আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা
বারীরাকে সদকা-খয়রাত করত এবং সে তা (সদকাকৃত জিনিস) থেকে আমাদের কাছে হাদিয়া
পাঠাত। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম।
তিনি বললেন, “তা
তার জন্য সদকা এবং তোমাদের জন্য হাদিয়া। সুতরাং তোমরা তা খেতে পার।”
৩৬৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কতিপয়
আনসার মুনিবের কাছ থেকে বারীরাকে খরিদ করলেন। তবে তারা (সে সময়) ‘ওয়ালা’র শর্তারোপ
করেছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘ওয়ালা’ তারই
প্রাপ্য যে অনুগ্রহ প্রদর্শন করে (মুক্তিদাতা)। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন। তার স্বামী ছিল ক্রীতদাস। একবার
সে আয়িশা (রাঃ) –এর কাছে কিছু পরিমাণ গোশত হাদিয়া পাঠাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতো বারীরা সদকা হিসেবে পেয়েছে (আর আপনার জন্য
সদকা হারাম)। তিনি বললেন, তা তার জন্য সদকা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।
৩৬৪২। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মুক্ত
করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বারীরাকে খরিদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু তারা
(বারীরার মুনিবেরা) তার “ওয়ালার” অধিকার লাভের শর্তারোপ করে বসল। তখন তিনি বিষয়টি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উত্থাপন করলেন। তিনি বললেন, তুমি তাকে
খরিদ করে মুক্ত করে দাও। আসলে “ওযালা” সেই পাবে যে মুক্ত করে দেয়। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য কিছু গোশত হাদিয়া রুপে পেশ করা হল। তখন
তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, এই গোশত
বারীরাকে সাদাকা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এতো তার জন্য সাদাকা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া।
তাকে (বারীরাকে) তার (ক্রীতদাস) স্বামীর ছিল স্বাধীন। শুবা (রহঃ) বলেন, আমি পুনরায়
তাকে (আবদুর রহমানকে) তার (বারীরার) স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন
আমার জানা নেই।
৩৬৪২/১। আহমদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) শুবা (রহঃ)-এর সুত্রে এই সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৩৬৪৪। আবূ তাহির (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী
অয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরার ঘটনায় তিনটি বিধান জারী হয়েছে- ১। যখন
সে মুক্তি লাভ করেছিল তখন স্বামীর (বৈবাহিক সূত্র বহাল রাখা, না রাখার)
ব্যাপারে তাকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয়েছিল। ২। তাকে গোশত সাদাকা করা হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা (আয়িশার) কাছে এলেন। তখন গোশতের
হাড়ি উনুনের উপর টগবগ করছিল। তিনি খাবার চাইলেন। তখন তাঁর সামনে কটি এবং ঘর থেকে
তরকারী পরিবেশন করা হল। তিনি বললেন, আমি কি লক্ষ্য করি নি যে, উনুনের উপর
হাঁড়ি আছে যার মধ্যে গোশত রয়েছে। তারা বললেনঃ জি হাঁ, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! ওটা ভো এমন গোশত যা বারীরাকে সাদাকা কর হয়েছে। আমরা তা থেকে আপনাকে
খাওয়ানো পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, এতে তার জন্য সাদাকা এবং তার পক্ষ থেকে তা
আমাদের জন্য হাদিয়া। ৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার (বারীরার)
মুক্তির ব্যাপারে বললেন, আসলে ওয়ালা” তারই প্রাপ্য যে আযাদ করে।
৩৬৪৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
আয়িশা (রাঃ) একটি ক্রীতদাসী খরিদ করে মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তার মুনিবেরা
তাদের জন্য তার “ওয়ালা”, ব্যতিরেকে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। তিনি এই
বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উত্থাপন করলেন। তখন
তিনি বললেন, তুমি
তাকে খরিদ করে মুক্তি দিয়ে দাও। তা (মুক্তি দেওয়া) তোমাকে “ওয়ালা” থেকে
বাধাপ্রাপ্ত করবে না। কেননা “ওয়ালা- তারই প্রাপ্য যে মুক্তিদান করে।
৩৬৪৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালা- বিক্রি করা এবং তা হেবে (দান বা উইল) করা
নিষিদ্ধ করেছেন। ইবরাহীম (রহঃ) বলেছেন, আমি মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ)-এর সুত্রে
আবদুল্লাহ ইবনু দ্বীনারকে এই হাদীসে বলতে শুনেছি যে, “সকল মানুষ একই পরিবারভূক্ত।”
৩৬৪৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইয়াহইয়া
ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা
ইবনু হুজর, ইবনু
নুমায়র, ইবনু
মুনান্না ও ইবনু রাফি ইবনু উমর (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে সাকাফী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে উবায়দুল্লাহ
সুত্রে উল্লেখ নেই। এই বর্ণনায় বিক্রির কথা আছে। তবে তিনি হেবার কথা উল্লেখ
করেননি।
৩৬৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখিত ফরমান জারি করলেন যে, প্রত্যেক
গোত্রের উপর তৎকর্তৃক হত্যাকাণ্ডের ক্ষতিণূরণ ওয়াজিব হবে। এরপর তিনি লিখলেন, দাসের
অনূমতি ব্যতীত কোন মুসলমানের পক্ষে অপর মুসলমানের ক্রীতদাসের ওয়ালী হওয়া হালাল
নয়। এরপর আমি জানতে পারলাম যে, যে ব্যক্তি এরুপ কাজ করবে তিনি তার লিখিত
ফরমানে তাকে লানত করেছেন।
৩৬৪৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ক্রীতদাশ)তার মুনিবের অনুমতি
ছাড়া অন্য কাউকে মুনিব বানাবে তার উপর আল্লাহর লানত এবং তার ফিরিশতাদেরও লানত। তার
ফরয কিংবা নফল (আল্লাহর কাছে) কবুল হবে না।
৩৬৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মাওলা বানাবে তার উপর আল্লাহর লানত, ফিরিশতা ও
সমগ্র মানব জাতির লানত বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে তার কোন ফরয কিংবা নফল আল্লাহর
নিকট গৃহীত হবে না।
৩৬৫১। ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত- তবে এতে
বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার মুনীবের অনুমতি ছাড়া অন্যকে মাওলা বানাবে না।”
৩৬৫২। আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইবরাহীম তায়মী (রাঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, একবার
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, যে ব্যক্তি
মনে করে যে, এই
ক্ষুদ্র পূস্তিকা ও আল্লাহর কিতাব ব্যতীত অ্যমাদের কাছে এমন কিছু আছে যাকে আমরা
অধ্যয়ন করি সে নির্জল মিথ্যা বলছে। সে (বর্ণনাকারী) বলল সে সময় তার (আলীর) তরবারীর
খাপের মধ্যে একথানি পূস্তিকা ঝূলানো ছিল। এই পুস্তিকায় উটের দাঁতের বিবরণ ছিল এবং
যখমের দিয়াত (ক্ষতিপূরণ) সম্পর্কে বিধান ছিল। এতে আরও উল্লেখ ছিল যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার ‘আয়র- থেকে “সাওর” পর্বত পর্যন্ত
এলাকা হারাম (সংরক্ষিত স্হান)। যে ব্যক্তি এই এনাকায় বিদূআত করবে অথবা কোন বিদ
আতীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর লানত, তাঁর ফিরিশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লানত
বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল কবুল করবেন না। সকল
মুসলমানের দায়িত্ব অভিন্ন। একজন আদনা (সাধারণ) মুসলমানও এই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট
থাকবে। যে ব্যক্তি তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পিতা বলে দাবী করবে অথবা যদি
কোন ক্রীতদাস তার মুনিবকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মাওলা বানায়। তার উপর আল্লাহর লানত, ফিরিশতা ও
সমগ্র মানব জাতির লানেত বর্ষিত হবে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার কোন ফরয কিংবা নফল
(ইবাদত) কবুল করবেন না।
৩৬৫৩। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আনাযী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
কোন মুসলিম ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যেঙ্গের
বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।
৩৬৫৪। দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
কোন ঈমানদার ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিবে আল্লাহ তার প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের
বিনিময়ে মুক্তিদাতার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা
করবেন-এমন কি তার লজ্জাস্হানের বিনিময়ে তার লজ্জা স্হানও।
৩৬৫৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি
কোন ঈমানদার ক্রীতদাস মুক্ত করবে আল্লাহ তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে
তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন- এমন কি তিনি তার
(মুক্তদাসের) গুপ্তস্হানের পরিবর্তে তার (মুক্তিকারীর) গুপ্তস্হানও রক্ষা করবেন।
৩৬৫৬। হুমায়দ ইবনু মাস-আদা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমান ক্রীতদাসকে মুক্ত
করলে আল্লাহ তার (মুক্ত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিনিময়ে তার
(মুক্তিদাতার) প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাবেন। তিনি
(বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনু মারজানা (রহঃ) বললেন,আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এই হাদীস শোনার পরপরই
আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ)এর কাছে গেলাম এবং তাঁর কাছে হাদীসখানি উপস্হাপন করলাম। তখনই
তিনি তাঁর একটি গোলাম (ক্রীতদাস) তে করে দিলেন যার বিনিময় মূল্য হিসেবে তিনি ইবনু
জাফরকে দশ হাজার দিরহাম অথবা এক হাজার দ্বীনার পরিশোধ করেছিলেন।
৩৬৫৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কোন সন্তান তার পিতার ঝণ পরিশোধ করতে পারে না। তবে হ্যা, সে যদি তার
পিতাকে ক্রীতদাস হিসেবে দেখতে পায় এবং তখনি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দেয় (তাহলে
ভিন্ন কথা)। ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ)-এর বর্ণনায় সন্তান তার পিতাকে- শব্দটির উল্লেখ
আছে।
৩৬৫৮। আবূ কুরায়ব,
ইবনু নুমায়র ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) সুহায়ল (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত
আছে। তারা তাদের বর্ণনায় সন্তান তার পিতাকে- কথাটি বলেছেন।