মুসাকাত ও মুযারাত(বর্গাচাষ)

৩৮১৮। আহমাদ ইবনু হাম্বল ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরবাসীদের উৎপাদিত ফসল বা ফলের অর্ধেক ভাগের শর্তে খায়বারের জমি বর্গা দিয়েছিলেন।

৩৮১৯। আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের জমি উৎপন্ন ফল বা শস্যের অর্ধেকের শর্তে প্রদান করেরছিলেন। তিনি আপন বিবিদেরকে বছর প্রতি একশ ওসাক প্রদান করতেন। তন্মধ্যে আশি ওসাক খুরমা আর বিশ ওসাক যব। উমর (রাঃ) যখন খলীফা হন তখন খায়বারের জমি তিনি বণ্টন করে দেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনীদেরকে ইখতিয়ার দেন যে, তাঁরা ভূমি ও পানি নিবেন। (অর্থাৎ নিজেদের দায়িত্বে চাষাবাদের ব্যবস্হা করবেন) অথবা বার্ষিক হারে ওসাক গ্রহণ করবেন। তাঁরা এ ব্যাপারে ভিন্নভিন্ন মতপোষণ করেন। তাদের মধ্যে কেউ ভূমি ও পানি নিলেন আর কেউ বার্ষিক হারে ওসাক গ্রহণ করলেন। আয়িশা ও হাফসা (রাঃ) ভূমি ও পানি নিয়েছিলেন।

৩৮২০। ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের জমি খায়বরবাসীদের উৎপাদিত শস্য ও ফলের অর্ধেকের শর্তে বন্দোবস্ত দিয়েছিলেন এরপর হাদীসটি আলী ইবনু মুসহিরের বর্ণিত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে এ কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি যে, আয়িশা ও হাফসা (রাঃ) ভূমি ও পানি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এ কথা বলেছেনঃ যে, উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনীদের ইখতিয়ার দেন জমি নিতে তবে সেখানে পানির উল্লেখ করেননি।

৩৮২১। আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের পর ইয়াহুদীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবেদন জানায় তাদের শ্রম বিনিয়োগের বিনিময়ে তাদেরকে তথায় থাকতে দেওয়ার জন্য এই শর্তের উপর যে, উৎপন্ন ফসল ও ফলের অর্ধেক তারা পাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উপরোক্ত শর্তে যতদিন আমরা চাই ততদিনের জন্য থাকার অনুমতি দিলাম। এরপরে আবদুল্লাহ থেকে ইবনু নুমায়র ও ইবনু মুসহিরের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তাতে এতটুকু অতিরিক্ত আছে যে, খায়বারের প্রাপ্ত অর্ধেক ফলকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হত। আর তা থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পঞ্চমাংশ গ্রহণ করতেন।

৩৮২২। ইবনু রুমহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, খায়বারের বাগান ও যমীন খায়বারের ইয়াহুদীদেরকে এই শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেদের অর্থে তাতে কাজ করবে আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ফলের অর্ধেক পাবেন।

৩৮২৩। মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে হিজাজের মাটি থেকে উচেছদ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয় করেন তখন তিনি তাদের তথা হতে বহিস্কার করতে চেয়েছিলেন। খায়বার যখন বিজয় হল তখন তা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুসলমানদের সস্পত্তিতে পরিণত হয়। তাই তিনই ইয়াহুদীদের বিতাড়িত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে ইয়াহুদীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে তথায় তাদের থাকার অনুমতি প্রার্থনা করে এই শর্তের উপর যে, তারা শ্রম বিনিয়োগ করবে এবং উৎপাদিত ফলের অর্ধেক পাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যতদিন এই শর্তের উপর আমাদের ইচ্ছা, থাকার অনুমতি দিলাম। এরপর তারা তথায় রয়ে গেল। পরে উমর (রাঃ) তাদেরকে তায়মা- ও আরীহায়- বিতাড়িত করেন।

৩৮২৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ লাগাবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দান স্বরুপ, যা কিছু চুরি হয় তাও দান সূররুপ, বন্য জন্তু যা খায় তাও দান স্বরুপ। পাখী যা খায় তাও দান স্বরুপ। আর কেউ কিছু অন্যে কিছু নিয়ে গেলে তাও তার জন্য দান স্বরুপ।

৩৮২৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা উম্মু মুবাশশির নাম্বী জনৈকা আনসারী মহিলার খেজুর বাগানে গমন করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এই খেজুর গাছ কি কোন মুসলমান লাগিয়েছেন; না কোন কাফির? মহিলা উত্তর দিল মুসলমান। তিনি বললেন, যে কোন মুসলমান গাছ লাগায় বা ক্ষেত করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা জীব জন্তু অথবা অন্য কিছুতে খায় তবে তা তার পক্ষে দান স্বরুপ।

৩৮২৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কোন মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ক্ষেত করে, আর তা থেকে কোন হিংস্র জন্তু কিংবা পাখী অথবা অন্য কিছুতে খায় তবে এর জন্য সে সাওয়াব পাবে। ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) বলেছেনঃ- পাখী বা এমন কিছু।

৩৮২৭। আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা উম্মু মাবাদ -এর বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মু মাবাদ! এ গাছ কে লাগিয়েছে? কোন মুসলমান না কোন কাফির? সে জানাল, মুসলমান। তিনি বললেন, কোন মুসলমান যদি কোন গাছ লাগায়, আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতূস্পদ জন্তু অথবা পাখী ভক্ষণ করে, তবে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তা তার জন্য দান স্বরুপ থাকবে।

৩৮২৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) হাফস ইবনু গিমাস (রহঃ) থেকে , আনু কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) একত্রে আবূ মুআবিয়া (রাঃ) থেকে, আমরুন নাকিদ (রহঃ) আম্মার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু ফূযায়ল (রহঃ) থেকে এবং এরা প্রত্যেকেই আমাশ-এর সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তবে আমীর (রহঃ) থেকে আমরের বর্ণনায় ও মুঁআবিয়ার থেকে আবূ বকরের বর্ণনায় উম্মু মুবাশশির (রাঃ)-এর নাম অতিরিক্ত এসেছে। আর ইবনু ফূযায়লের। বর্ণনায় যায়িদ ইবনু হারিসার স্ত্রীর নাম সং-যোজন করা হয়েছে। আর মুআবিয়ার থেকে ইসহাকের যে বর্ণনা তাতে। তিনি কখনও বা তার নাম ছাড়াই বর্ণনা করেন। আর এরা সকলেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ঐ রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেরুপ বর্ণনা করেছেন আতা- (রহঃ) আবূ যুবায়র ও আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ)।

৩৮২৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ শুবারী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমান যদি গাছ লাগায় কিংবা ফসল উৎপন্ন করে আর তা থেকে পাখী কিংবা মানুষ অথবা চতুস্পদ জন্তু কিছু খায় তরে তা তার পক্ষ থেকে দান স্বরুপ হবে।

৩৮৩০। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা উম্মু মুবাশশির নামি এক আনসারী মহিলার খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, এ খেজুর গাছ কে লাগিয়েছে, কোন মুসলমান না কোন কাফির? তারা বলল, একজন মুসলমান। এরপর উপরে উল্লিখিত রাবীদের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৩১। আবূ তাহির ও মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার অপর ভাইয়ের নিকট ফল বিক্রি কর, তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়, তবে তার থেকে কিছু আদায় করা তোমার জন্য বৈধ নয়। তোমার ভাইয়ের অর্থ বিনা অধিকারে কিভাবে গ্রহণ করবে?

৩৮৩২। হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৩৩। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, খেজুরের রং পরিবর্তন হওয়ার পুর্বে তা বিক্রি করতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আমরা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রং পরিবর্তন হওয়া বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, লাল রং বা মেটে লাল রং ধারণ করা। বল তো দেখি, আল্লাহ যদি ফল নষ্ট করে দেন তবে কোন অধিকারে তোমার ভাইয়ের অর্থ গ্রহণ করতে পার?

৩৮৩৪। আবূ তাহির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফলের রং পরিবর্তন হওয়ার আগে বিক্রি করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। তারা বলল, রং পরিবর্তন হওয়ার অর্থ কি? তিনি বললেন, লাল রং ধারণ করা। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ যদি ফল বিনষ্ট করে দেন তাহলে কিসের বিনিময়ে তুমি তোমার ভাইয়ের অর্থ গ্রহণ করবে?

৩৮৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যদি ফলের মধ্যে পূর্নতা দান না করেন তাহলে কিভাবে তোমাদের একজন অপর ভাইয়ের অর্থ বৈধ করবে?

৩৮৩৬। বিশর ইবনুল হাকাম, ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার ও আবদুল জব্বার ইবনু আলা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষাতস্ত ফলের মুল্য গ্রহণ নাকরতে নির্দেশ দান করেছেন। ইবরাহীম সুফিয়ানের সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৩৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময়ে এক ব্যক্তির খরিদকৃত ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক ঋনী হয়ে পড়ে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে সাহায্য কর। লোকজন তাকে সাহায্য করল, কিন্তু ধান পরিশোধের পরিমাণ হল না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পাওনাদারদের বললেন, যা তোমরা পেয়েছ তা গ্রহণ কর; এর তারা আর পাবে না।

৩৮৩৮। ইউনুস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) বুকায়র ইবনুল আশাজ্জ (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৩৯। আমাদের একাধিক সাথী আমার নিকট ইসমাঈল ইবনু আবূ উয়্যয়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরযার নিকটে দুই ব্যক্তি উচু কণ্ঠে ঝগড়া শুনতে পান। তাদের একজন অন্যজনের নিকট কোন এক বিষয়ে অব্যাহতি দেওয়ার ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করার আবেদন করয়ে আর অপরজন বলছে যে, আল্লাহর শপথ! আমি তা করতে পারব না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তাদের দু-জনের কাছে গেলেন এবং বললেন, পূণ্যের কাজ না করার জন্য আল্লাহর নামে শপথকারী কোথায়? একজন বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি। এরপর তিনি তার জন্য এটাই পছন্দ করলেন।

৩৮৪০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে একদা মসজিদের মধ্যে ইবনু আবূ হাদরাদ নামীয় এক ব্যক্তির নিকট ম্বীয় প্রাপ্য ঋণের তাগাদা করেন। উভয়ের আওয়াজ উচু হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে আওয়াজ ঘর থেকে শুনতে পান এবং ঘরের পর্দা উঠিয়ে বাইরে তাদের নিকট চলে আসেন। তিনি কাবকে ডাক দিলেন, হে কাব! তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি উপস্হিত আছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় তাকে তার প্রাপ্য ঝণের অর্ধভাগ ক্ষমা করে দিতে বললেন। কাড়ব (রাঃ) বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাই করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তার অবশিষ্ট পরিশোধ কর।

৩৮৪১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) কাব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন আলী ইবনু আবূ হাদরাদের নিকট তার প্রাপ্য ঋণের তাগাদা করেন। এরপর ইবনু ওয়াহবের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) কাব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ হাদরাদ আসলামীর নিকট কিছু মাল পেতেন। তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জোর তাগাদা করেন। উভয়ে পরস্পর কথাবার্তা বলেন এবং এক পর্যায়ে সোরগোল সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের কাছে এলেন এবং কাবকে ডেকে হাতের ইশারায় বললেন, অর্ধেক। সূতরাং কাব (রাঃ) ঝণের অর্ধেক গ্রহণ করেন এবং অর্ধেক পরিত্যাগ করেন।

৩৮৪২। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অথবা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি দেউলিয়া ঘোষিত কোন লোকের কাছে তার মাল অবিকলভাবে পায় কিংবা কোন মানুষের নিকট পায় যাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে তবে সে তার মাল ফেরৎ পাওয়ার ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় বেশী হকদার।

৩৮৪৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ রাবী ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সুত্রে যুহায়র বর্ণিত হাদীসের মর্মে হাদীস বর্ণনা করেন। আর তাদের মধ্যে কেবল ইবনু রুমহ (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি দেউলিয়া সাব্যস্ত হলে।

৩৮৪৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, দেউলিয়া লোকের নিকট যদি কোন বস্তু পাওয়া যায় এবং স্হানান্তরিত না হয় তবে বিক্রেতাই ঐ বস্তুর প্রাপক।

৩৮৪৫। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি কোন লোকেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় তার আর লোক তার সম্পদ অবিকলভাবে তার কাছে পায় তবে সে ব্যক্তই উহার অধিক দাবীদার।

৩৮৪৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত রুপ বর্ণনা করেন। অবশ্য এ বর্ণনার শেষে বলা হয়েছে সে ব্যক্তই অন্যান্য সকল পাওনাদারদের চেয়ে বেশী হকদার।

৩৮৪৭। মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালফ ও হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন লোক যখন দেউলিয়া হয়ে যায়, আর তার নিকট কোন ব্যক্তি তার বিক্রিত মাল অপরিবর্তিত অবস্হায় পায় তখন সে-ই তার অধিক দাবীদার।

৩৮৪৮। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববতাঁ উম্মাতের এক ব্যক্তির রুহের সাথে ফিরিশতাগণ সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলেন, বিশেষ কোন সৎকাজ তুমি করেছ কি? সে বলল, না। তারা বললেন, স্বরণ করে দেখ। সে বলল, আমি মানুষের সাথে লেনদেন করতাম। তারপর অসচ্ছল ব্যক্তিদের অবকাশ দিতে ও সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি সহানূভূতি প্রদর্শন করতে আমি আমার লোকদের নির্দেশ দিতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এরপর আল্লাহ তায়াআলা বললেনঃ “ওকে ছেড়ে দাও।”

৩৮৪৯। আলী ইবনু হুজর ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুযায়ফা (রাঃ) ও আবূ মাসঊদ (রাঃ) একত্রে মিলিত হল। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মিলিত হয়। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি কি সৎকাজ করেছ? সে বলল, আমি তেমন কোন সৎকাজ করিনি; তবে আমি একজন ধনী লোক ছিলাম। আমি মানুষের কাছে পাওনা চাইতাম এ ভাবে যে, সচ্ছলদেরকে সময় দিতাম আর গরীবদেরকে মাফ করে দিতাম। এরপর আল্লাহ নির্দেশ দিলেনঃ আমার বান্দাকে মাফ করে দাও। আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরুপই বলতে শুনেছি।

৩৮৫০। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তুমি কোন ধরনের আমল করতে? রাবী বলেন, এরপর সে স্বরণ করে বা তাকে স্বরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সে বলল, আমি মানুষের সাথে কেনা-বেচা করতাম। দরিদ্র লোকদেরকে আমি সময় দিতাম এবং মুদ্রা বা অর্থমাফ করে দিতাম এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এরপর আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এরুপই আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

৩৮৫১। আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর সমীপে তার এমন এক বান্দাকে উপস্হিত করা হল, যাকে তিনি প্রহব সম্পদ দান করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করেন, দুনিয়ায় তুমি কি আমল করেছ? রাবী বলেন, আর আল্লাহর নিকট কেউ কোন কথা গোপন রাখতে পারে না। সে বলল, হে আমার রব! আপনি আপনার সস্পদ আমাকে দান করেছিলেন। আমি মানুষের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। সুতরাং সচ্ছল ব্যক্তির সহিত আমি সহনশীলতা প্রদর্শন করতাম আর গরীবকে সময় দিতাম। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এ ব্যাপারে তোমার চেয়ে আমি অধিকযোগ্য। তোমরা আমার বান্দাকে ছেড়ে দাও। উকবা ইবনু আমির জুতানী ও আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, এরুপই আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখ থেকে শুনেছি।

৩৮৫২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা,আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক লোকের হিসাব গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রকার ভাল আমল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সে মানুষের সাথে লেন-দেন করত এবং সে ছিল সচ্ছল। তাই দরিদ্র লোকদের মাফ করে দেওয়ার জন্য সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বললেনঃ এ ব্যাপারে আমরা তার চেয়ে অধিকযোগ্য। একে ক্ষমা করে দাও।

৩৮৫৩। মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম ও মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- এক লোক মানুষের সাথে লেন-দেন করত। সে তার গোলামকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাব গ্রস্তের কাছে যাবে তখন তাকে ক্ষমা করে দিবে। হয়ত আল্লাহ আমাদেরও ক্ষমা করে দিবেন। এরপর সে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মিলিত হন। আর আল্লাহ তাকে মাফ করে দিলেন।

৩৮৫৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুরুপ বলতে শুনেছি।

৩৮৫৫। আবূল হায়সাম খালিদ ইবনু খিদাশ ইবনু আজলান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে,আবূ কাতাদা (রাঃ) একবার তার এক ঋণ গ্রহীতাকে খোজ করেন। সে তার থেকে আত্মগোপন করছিল। পরে তিনি তাকে পেয়ে যান। সে বলল, আমি অভাবগ্রস্ত। তিনি বললেন, আল্লাহ শপথ! সে বলল, আল্লাহর শপথ। তিনি বললেন, তাহলে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এ কামনা করে যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে যেন মুক্তি দিক সে যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোকের সহজ ব্যবস্হা করে কিংবা ঋণ মওকুফ করে দেয়।

৩৮৫৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সক্ষম ব্যক্তির টালবাহানা করা অত্যাচারের শামিল। তোমাদের কারো প্রতি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দিলে সে যেন তা গ্রহণ করে।

৩৮৫৭। আবূ তাহির (রহঃ) আয়্যুব (রহঃ) থেকে উক্ত সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৫৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেন।

৩৮৫৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।

৩৮৬০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেনঃ উট দ্বারা পাল দিয়ে তার মজুরী গ্রহণ করতে এবং চাষের ও জমির বিনিময়ে পানি বিক্রি করতে। এগুলোর প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

৩৮৬১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুবায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি ব্যবহার কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না, যার উদ্দেশ্য যার (মূল) উদ্দেশ্য (পশুকে চারনভূমির) ঘাস খেতে বাধা দেয়া।

৩৮৬২। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে বাধা দিবে না, যার দ্বারা উদ্দেশ্য হবে ঘাস খেতে বাধা সৃষ্টি করা।

৩৮৬৩। আহমাদ ইবনু উসমান নাওফলী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (আত্মজন্ম) ঘাস বিক্রির অবৈধ উদ্দেশ্য প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রি করা যাবে না।

৩৮৬৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মাসুঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচার দ্বারা উপার্জিত অর্থ এবং গণকের গণনা দ্বারা উপার্জিত অর্থ গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন।

৩৮৬৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) থেকে এবং তাঁরা উভয়ে যুহরী (রহঃ) থেকে এই সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইবনু রুমহের বর্ণনায় লায়স (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে শ্রবণ করেন।

৩৮৬৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, গুরুতরতম উপার্জন বেশ্যা থেকে উপার্জন এবং কুকুরের মূল্য আর রক্ত মোক্ষণকারীর আয়।

৩৮৬৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুকুরের মূল্য নিকৃষ্ট, ব্যভিচারিনীর ব্যভিচারের আয় নিকৃষ্ট এবং রক্ত মোক্ষণকারীর উপার্জন নিকৃষ্ট।

৩৮৬৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ)-এর সূত্রে এই হাদীস উক্ত রুপে বর্ণনা করেন।

৩৮৬৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৭০। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ) -এর নিকট কুকুর ও বিড়ালের মুল্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন।

৩৮৭১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করার জন্য আদেশ করেছেন।

৩৮৭২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি মদিনার চারপাশে লোক প্রেরণ করলেন যে, কুকুর হত্যা করা হোক।

৩৮৭৩। হুমায়দ ইবনু মাসআদা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করার জন্য হুকুম দিতেন। অতঃপর মদিনার অভ্যন্তরে ও তার চারপাশের কুকুর ধাওয়া করাতে। আর কোন কুকুরই আমরা না মেরে ছেড়ে দিতাম না। এমন কি বেদুইনদের দুগ্ধবতী উষ্ট্রীর সাথে যে কুকুর থাকত তাও আমরা হত্যা করতাম।

৩৮৭৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করতে হুকুম দিয়েছেন। তবে শিকারী কুকুর, বকরী পাহারা দানের কুকুর অথবা অন্য জীবজন্তু পাহারা দেওয়া কুকুর ব্যতীত। অতঃপর ইবনু উমরের নিকট বলা হল যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) তো ক্ষেত পাহারার কুকুরের কথাও বলে থাকেন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আবূ হুরায়রার ক্ষেত আছে।

৩৮৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালফ ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করার জন্য আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর কোন বেদুঈন নারী কুকুরসহ আগমণ করলে আমরা তাও হত্যা করে ফেলতাম। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হত্যা করতে নিষেধ করেন এবং বলেন, চোখের উপর সাদা দুই টিকা বিশিষ্ট ঘন কৃষ্ণ বর্ণের কুকুর তোমরা হত্যা কর কেননা উহা হল শয়তান।

৩৮৭৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) ইবনু মুগাফিাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুর হত্যা করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। পরে তিনি বলেছেন, এদের এবং কুকুরের কি অবস্হা হল! অতঃপর শিকারী কুকুর ও বকরীর পাল পাহারার ব্যাপারে তিনি অনুমতি প্রদান করেন।

৩৮৭৭। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব , মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনুল মুনান্না (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে উক্তরুপে বর্ণনা করেন এবং ইবনু হাতিম ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলেন, এবং তিনি অনুমতি দিয়েছেন বকরীর পাল পাহারার, শিকারী এবং ক্ষেত্র পাহারার কুকুরের ক্ষেত্রে।”

৩৮৭৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালন করে যা গূহপালিত জীব জন্তু পাহারা দানের জন্যও নয় কিংবা শিকার করার জন্যও নয় তাহলে প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু-কিরাত কমতে থাকবে।

৩৮৭৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর কিছুবা গৃহপালিত পঊর পাহারার কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে, প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু’কিরাত করে কমতে থাকবে।

৩৮৮০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর অথবা জীবজন্তু পাহারা দেওয়ার কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার আমল থেকে দু-কিরাত করে কম হতে থাকবে।

৩৮৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রাঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবজন্তু পাহারার কুকুর বা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে তার আমল থেকে প্রতিদিন এক কিরাত করে কমে যাবে। আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন,আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, কিংবা ক্ষেত পাহারার কুকুর–।

৩৮৮২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর অথবা গৃহপালিত পশু? পাহারার কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে, তার আমল থেকে প্রতিদিন দু-কিরাত করে কমতে থাকবে। সালিম (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন-“কিংবা ক্ষেত পাহারার কুকুর”। আর তিনি ছিলেন ক্ষেতের মালিক।

৩৮৮৩। দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরের মালিক জীব জন্তু পাহারার কুকুর বা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার আমল থেকে দু’কিরাত করে কমে থাকবে।

৩৮৮৪। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষেত কিংবা বকরীর পাল পাহারার কুকুর অথবা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর রাখবে প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে এক কিরাত করে কমতে থাকবে।

৩৮৮৫। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালন করে যা শিকারী কিংবা জীবজন্তু পাহারার জন্য নয়, তবে প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু’কিরাত করে কমতে থাকবে। আর আবূ তাহিরের বর্ণনায় “ক্ষেত পাহারার জন্য” কথাটি নেই।

৩৮৮৬। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা -(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবজন্তু পাহারার অথবা শিকারী অথবা ক্ষেত পাহারার কুকুর ভিন্ন অন্য কুকুর রাখবে, তার সাওয়াব থেকে প্রতিদিন এক কিরাত করে কমে যাবে। যুহরী (রহঃ) বলেন, ইবনু উমরের নিকট আবূ হুরায়রার কথাটি উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ আবূ হুরায়রার প্রতি রহমত করুন! তিনি ছিলেন একজন কৃষক।

৩৮৮৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কুকুর রাখবে তার আমল থেকে প্রতিদিন এক কিরাত করে কমতে থাকবে, তবে ক্ষেত পাহারার কিংবা জীবজন্তু পাহারার কুকুর ব্যতীত।

৩৮৮৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উক্ত রুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৮৯। আহমাদ ইবনু মুনযির (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর এর সুত্রে উক্ত রুপ বর্ণনা করেন।

৩৮৯০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কুকুর রাখবে যা শিকারী অথবা বকরীর পাল পাহারা দানের জন্য নয় তা হলে প্রতিদিন তার আমল থেকে এক কিরাত করে কমতে থাকবে।

৩৮৯১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু যুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ছিলেন শানুআহ গোত্রের লোকরা সুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালন করবে যা তার ক্ষেতের বা জীবজন্তু পাহারার কাজে লাগে না, তবে প্রতিদিন তার নেক আমল থেকে এক কিছুরাত পরিমাণ কমতে থাকে। রাবী বললেন- আপনি কি এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যা, এই মসজিদের মালিকের শপথ।

৩৮৯২। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাদের নিকট একবার সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়র আশ-শানাইয়্যু প্রতিনিধি হয়ে আগমন করেন। অতঃপর তিনি বলেন!যে,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উপরের অনুরুপ।

৩৮৯৩। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট শিংগা বৃত্তির উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা (নিজ শরীরে) লাগিয়েছেন। আবূ তায়বা তাকে শিংগা দিয়েছে। তাকে দু-সা খাদ্য বস্তু দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেনঃ তোমরা যে সব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও শিংগা তার চেয়ে উত্তম ব্যবস্হা অথবা (বলেছেন) ইহা তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক।

৩৮৯৪। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ)-এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-এর নিকট শিংগা বৃত্তির মজুরী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। অতঃপর তিনি উক্তরুপ বর্ণনা করেন। তাছাড়া তিনি বলেন, তোমরা যে সব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও শিংগা লাগানো এবং “কুসতুল বাহরী” ব্যবহার তার মধ্যে অতি উত্তম ব্যবস্হা। অত্রএব তোমরা তোমাদের শিশুদের কণ্ঠনালী দাবিয়ে দিয়ে কষ্ট দিও না।

৩৮৯৫। আহমাদ ইবনু হাসান ইবনু খিরাশ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ)-এর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একজন শিংগা বৃত্তিজীব বালককে ডেকে পাঠান। সে তাঁর শরীরে শিংগা লাগায়। অতঃপর তিনি তাকে এক সা অথবা এক মুদ বা বা দু-মুদ পরিমাণ পরিশোধ করতে আদেশ করেন এবং তার সম্পর্কে আলোচনা করেন। এতে তার উপর থেকে কর হরাস করে দেওয়া হয়।

৩৮৯৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংগা লাগিয়েছেন এবং শিংগা প্রয়োগকারীকে তার মজুরী প্রদান করেছেন এবং তিনি নাকে ঔষধ ঢেলে ব্যবহার করেছেন।

৩৮৯৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানূ বায়াদা এর একটি গোলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে শিংগা লাগায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মজুরী প্রদান করেন এবং তার মালিকের সাথে আলোচনা করেন। এত সে তার উপর থেকে ধার্যকৃত দৈনিক মজুর কর হরাস করে দেয়। যদি তা হারাম হতো তা হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দিতেন না।

৩৮৯৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মদিনায় খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ হে লোক সকল! আল্লাহ তাঁআলা মদের প্রতি ইঙ্গিত (নিষেধ) দিয়েছেন। হয়তো এ ব্যাপারে তিনি শীঘ্রই কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ দান করবেন। সুতরাং কারো। নিকট এর কিছু থাকলে সে যেন তা বিক্রি করে দেয় এবং কাজে লাগায়। রাবী বলেন, অল্প কয়েক দিন পরেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যার নিকট এ আযাত পৌছবে এবং তার নিকট এর কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবে সে যেন তা পান না করে এবং বিক্রি না করে। রাবী বলেন, তখন যাদের নিকট তা ছিল- তা নিয়ে তারা মদিনার রাস্তায় নেমে আসল এবং ঢেলে দিল।

৩৮৯৯। সুওয়াহাদ ইবনু সাঈদ ও আবূ তাহির (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু ওয়ালাতা আস সাবাঈ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আঙ্গুরের রস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এক মশক শরাব হাদিয়া স্বরুপ নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি জাননা যে, আল্লাহ উহা হারাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর সে এক ব্যক্তির সাথে কানাকানি করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে গোপনে কী বললে? সে বলল, আমি তাকে ইহা বিক্রি করার পঁরামর্শ দিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, যিনি ইহা পান করা হারাম করেছেন। তিনি ইহার বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। রাবী বলেন, এরপর সে মশকের মুখ খুলে দিল এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল সব পড়ে গেল।

৩৯০০। আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৯০১। যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা বাকারার শেষের আয়াতগুলো লোকদের পড়ে শোনান। এরপর মদের ব্যবসা নিযিদ্ধ ঘোষণা করেন।

৩৯০২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন সুরা বাকারার সুদ সম্পকীঁয় শেষের আয়াতগুলো নাযিল হল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দিকে বের হয়ে আসেন এবং মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

৩৯০৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কা বিজয়ের বছরে মক্কায় অবস্হান কালে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল হারাম ঘোষণা করেছেন মদ, মৃতজন্তু, শুকর ও মূর্তি বিক্রয় করা। তখন জিজ্ঞাসা করা হল হে আল্লাহর রাসুল! মৃতজন্তুর চর্বি সম্পর্কে নির্দেশ কি? কেননা ইহা নৌকায় লাগান হয়, চামড়ায় মালিশ করা হয় এবং মানুষ ইহা দ্বারা আগুন জ্বালায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, তা হারাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ ইয়াহূদী জাতিকে তখনই ধ্বংস করেছেন, যখন আল্লাহ তাদের মৃতের চর্বি হারাম করেন আর তারা তা গলিয়ে করেছে এবং তার মূল্য ভক্ষণ করেছেন।

৩৯০৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কা বিজয়ের বছরে হাদীসের অনুরুপ বলতে শুনেছি।

৩৯০৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর নিকট এই সংবাদ পৌচেছে যে, সামুরা (রাঃ) মদ বিক্রি করেছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ সামুরার সর্বনাশ করুক। সে কি জানে না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদী জাতির উপর অভিশাপ দিয়েছেন। তাদের উপর চর্বি হারাম করা হয়েছিল। এরপর তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে।

৩৯০৬। উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উপরোক্ত রুপ বর্ণিত।

৩৯০৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস করুন! তিনি তাদের উপর চর্বি হারাম করেছেন, তারপর তারা তা বিক্রি করে মূল্য ভক্ষণ করেছে।

৩৯০৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদী জাতিকে ধ্বংস করুক। তাদের উপর চর্বি হারাম করা হয়েছে, তারপর তারা তা বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছেন।

৩৯০৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ব্যতিরেকে বিক্রি করো না উহার এক অংশ অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর রুপার বিনিময় রুপা সমান সমান ব্যতিরেকে বিক্রি করো না এবং উহার এক অংশ অপর অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর উহার কোনটিকেই নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না।

৩৯১০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) নাফি (রহঃ)-এর সুত্রে বর্ণিত যে, লায়স গোত্রের জনৈক ব্যক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলল যে,আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইহা বর্ণনা করেছেনঃ কুতায়বার বর্ণনা অনুযায়ী এরপর আবদুল্লাহ নাফি-কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। আর ইবনু রুমহ-র বর্ণনা মতে নাফি (রহঃ) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রহঃ) চলে গেলেন, আমিও লায়সী গোত্রের লোকটি আমাকে জানিয়েছে যে, আপনি এ কথা প্রচার করছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুপার বিনিময়ে রুপা সমতার পরিমাণ ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্নের বিনিময়ে স্বর্ণ পরিমাণের সমতা ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) আপন আঙ্গুলি দ্বারা তাঁর চক্ষুদ্বয় ও কর্ণদ্বয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার চক্ষুদ্বয় দেখেছে ও কর্পদ্বয় শুনেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একথা বলতে যে, তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রি করো না এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না- সমান সমান পরিমাণ ব্যতীত। আর তোমরা উহার এক অংশকে অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না এবং হাতে হাতে ব্যতীত নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না।

৩৯১১। শায়বান ইবনু ফাররুখ ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীসে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৩৯১২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণও রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না ওযন ও পরিমাণ সমান সমান হওয়া ব্যতিরেকে।

৩৯১৩। আবূ তাহির, হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এক দ্বীনারকে দুই দ্বীনারের বিনিময়ে এবং এক দিরহামকে দুই দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো না।

৩৯১৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) মালিক ইবনু আউস ইবনু হাদাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এ কথা বলতে বলতে অগ্রসর হলাম যে, দিরহাম বিনিময় করতে পারে এমন কে আছে? তখন তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নিকটেই ছিলেন- তিনি বললেন, তোমার স্বর্ণ আমাদেরকে দেখাও এবং তুমি পরে এসো। আমাদের খাদিম যখন আসবে তখন তোমার রৌপ্য দিয়ে দিব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ কখনও নয়; আল্লাহর শপথ, হয় তুমি তার দিরহাম এখনই প্রদান কর অন্যথায় তার স্বর্ণ তাকে ফেরৎ দাও। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ নগদ নগদ বিক্রি না হলে সুদ হবে, গমের বিনিময়ে গম নগদ নগদ এবং হাতে হাতে বিক্রি না হলে সুদ হবে, যবের বিনিময়ে যব নগদ নগদ না হলে সুদ হবে এবং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর নগদ বিক্রি না হলে তাও সুদে পরিণত হবে।

৩৯১৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত রুপ বর্ণিত হয়েছে।

৩৯১৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় এক মজলিসে উপস্হিত ছিলাম। তথায় মুসলিম ইবনু ইয়াসারও ছিলেন। এমন সময় আবূল আশআশ আগমন করলেন। তারা বলল, আবূল আশ-আস, আমিও বললাম, আবূল আশ-আস (এসেছেন)। অতঃপর তিনি বসলেনঃ আমি তাঁকে বললাম, আমাদের ভাইদের নিকট উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর হাদীসটি শোনান। তিনি বসলেন, আচ্ছা আমরা একবার এ যুদ্ধে অবতীর্ণ হই। মুআবিয়া (রাঃ) ছিলেন সেনাপড়ি। প্রচুর পরিমাণ গনীমত আমাদের হস্তগত হয়। আমাদের এই গনীমতের মধ্যে রুপার এটা পাত্রও ছিল। মুআবিয়া (রাঃ) উহা লোকদের বেতন-ভাতার বিনিময়ে বিক্রি করার জন্য একজনকে আদেশ দান করেন। লোকজন এ ব্যাপারে সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করল। উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌছলে তিনি দণ্ডায়মান হন এবং বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিষেধ করতে শুনেছি- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবনের বিনিময়ে লবন বিক্রি করতে, পরিমাণে সমান সমান ও নগদ নগদ ব্যতিরেকে। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে সে সুদের কাজ কারবার করল। এরপর লোকজন যা কিছু নিয়েছিল তা ফেরত দিল এবং মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌছে দিল। তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, মানুষের একি আবস্হা হল, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেন যা আমরা তাঁর থেকে শুনি নাই অথচ আমরা তাঁর নিকট উপস্হিত থাকতাম এবং তাঁরই সান্নিধ্য লাভ করতাম। এরপর উবাদা (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বর্ণনার করে বললেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা কিছু শুনেছি তা অবশ্যই বর্ণনা করব, যদিও মুআবিয়া (রাঃ) তা অপছন্দ করেন অথবা বলেছেন যে, যদিও মুআবিয়া তাতে দুঃখিত হন। আমি পরোয়া করি না যে, তার বাহিলীতে এক কালো রাত্র না থাকি। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, তিনি এ কথাই বলেছেন কিংবা এর অনুরুপ কিছু।

৩৯১৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আয়্যুব (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৯১৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণ স্বর্ণের বিনিময়ে, রৌপ্য বৌপ্যের বিনিময়ে, গম গমের বিনিময়ে, যব যবের বিনিময়ে, খেজুর খেজুরের বিনিময়ে এবং লবন লবনের বিনিময়ে সমান সমান সমপরিমাণ ও হাতে হাতে হতে (নগদ) হবে। অবশ্য এই দ্রব্যগুলো যদি একটা অপরটার সাথে বিনিময় হয়। (অর্থাৎ পণ্য এক জাতীয় না তোমরা যেরুপ ইচ্ছা করতে পার যদি হাতে হাতে (নগদে) হয়।

৩৯১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, বৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর ও লবনের বিনিময়ে লবন সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি তা প্রদান করে বা গ্রহণ করে তবে তা সুদে পরিণত হবে গ্রহণকারী ও প্রদানকারী এতে সমপর্যায় ভূক্ত হবে।

৩৯২০। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্নের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান হতে হবে। অতঃপর উপরের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৯২১। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিমযে যব ও লবনের বিনিময়ে লবন সম পরিমাণ ও হাতে হাতে হতে হবে। কেউ যদি বেশী দেয় বা বেশী নেয় তবে সুদ হবে। তবে যদি এর শ্রেনী পরিবর্তন হয়। (তবে কম বেশী জায়িয হবে)।

৩৯২২। আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) ফূযায়ল ইবনু গাযৃওয়ান (রহঃ) থেকে এই সনদে বর্ণিত। তবে তিনি “হাতে হাতে” কথটি উল্লেখ করেন নাই।

৩৯২৩। আবূ কুরায়ব ও ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এক প্রকার ওযনে ও পরিমাণে এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য একই প্রকার ও পরিমাণ সমান সমান করতে হবে। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে, তা সুদ হবে।

৩৯২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা কানাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনারের বিনিময়ে দ্বীনার- উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না।

৩৯২৫। আবূ তাহির (রহঃ) মূসাইবনু আবূ তামীম এর সনদে উপরোক্ত হাদীস অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।

৩৯২৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) আবূল মিনহাল (রহঃ)-এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার এক শরীক মওসূম পর্যন্ত বা হজ্জ পর্যন্ত কিছু রুপা বাকীতে বিক্রি করে। অতঃপর সে আমার কাছে আসে এবং আমাকে জানায়। আমি বললাম, এ কাজটি ঠিক হয় নাই। সে বলল, আমি ইহা বাজারে বিক্রি করেছি এবং কেউ আমাকে এ থেকে নিষেধ করে নাই। এরপর আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ) নিকট এসে তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন আমরা এ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় করতাম। তিনি বললেন, যদি নগদ নগদ হয় তাহলে কোন আপত্তি নেই, আর যদি বাকীতে হয় তবে সুদ হবে। তুমি যায়িদ ইবনু আরকওমের (রাঃ) নিকট যাও, যেহেতু তিনি আমার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও অনুরুপ বললেন।

৩৯২৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুশআয আম্বারী (রহঃ) আবূল মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু আযিবকে “সারফ” সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যায়িদ ইবনু আরকামকে জিজ্ঞাসা কর। কেননা, তিনি অধিক বিজ্ঞলোক। এরপর উভয়ে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকীতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।

৩৯২৮। আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য ও স্বর্গের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ব্যতিরেকে নিষেধ করেছেন এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য ক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন, যে ভাবে আমরা চাই এবং রৌপের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করতে যেরুপে আমরা ইচ্ছা করি। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, হাতে হাতে। লোকটি বলল, এরুপই আমি শুনেছি।

৩৯২৯। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন- অতঃপর উক্ত রুপ বর্ণনা করেন।

৩৯৩০। আবূ তাহির, আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ফূযালা ইবনু উবাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরে আবস্থানকালে তাঁর নিকট গনীমতের একটা হার উপস্হিত করা হয়। উহাতে পূতি ও স্বর্ন লাগান ছিলো। হারটি বিক্রি হচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারের সাথে লাগান স্বর্ণের ব্যাপারে আদেশ দান করেন। অতঃপর কেবল উহাকেই আলাদা করা হয়। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান ওযনে বিক্রি করতে হবে।

৩৯৩১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ফূযালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খায়বার দিবসে বার দ্বীনার এর বিনিময়ে একটি হার ক্রয় করি। উহাতে স্বর্ণ ও পুতি ছিল। এরপর আমি তা আলাদা করলাম এবং বার দ্বীনারের চেয়ে অধিক পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে বিষয়টি আমি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন আলাদা না করে বিক্রি করা যাবে না।

৩৯৩২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে উক্ত রুপ বর্ণিত।

৩৯৩৩। কুতায়বা (রহঃ) ফূযালা ইবনু উবায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খায়বার দিবসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলাম। ইয়াহুদীদের সাথে এক ঊকিয়া স্বর্ণ দুই বা তিন দ্বীনারের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ স্বর্ণের সম ওযন ব্যতিরেকে বিক্রি করো না।

৩৯৩৪। আবূ তাহির (রহঃ) হানাশ (রহঃ)এর সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে ফূযালা ইবনু উবায়দের সঙ্গে ছিলাম। আমার ও আমার সাথীদের অংশে একটি হার আসে যার মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য ও জাওহার খচিত ছিল। আমি উহা খরিদ করে রাখতে ইচ্ছা করলাম। তাই ফূযালা ইবনু উবায়দকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন এর স্বর্ণ আলাদা করে এক পাল্লাহা রাখ আর তোমার স্বর্ণ অন্য পাল্লায় রাখ এবং সমপরিমাণ ব্যতিরেকে গ্রহণ করো না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন সমপরিমাণ ব্যতিরেকে গ্রহণ না করে।

৩৯৩৫। হারুন ইবনু মারমূফ ও আবূ তাহির (রহঃ) মামার ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি এক সা গমসহ তার গোলামকে পাঠিয়েছেন এবং বলে দেন যে, ইহা বিক্রি করে তা দিয়ে যব কিনে আন। গোলাম চলে যায় এবং এক সা ও সায়ের কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করে। যখন সে মাংমারের নিকট উপস্থিত হলে এবং যখন তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলে। মামার (রহঃ) তাকে বলল, তুমি এরুপ কেন করেছ? পূনরায় যাও ও তাকে ফেরৎ দাও, সহপরিমাণ ব্যতীত কিছুতেই গ্রহণ করবে না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি:খাদ্যের বিনিময়ে খাদ্য সমান সমান হতে হবে। আর ঐ সময়ে যব ছিল আমাদের খাদ্য। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল ইহা তো উহার অনুরুপ নয়। তিনি বললেন, অনুরুপ হওয়ার আশংকা আমি বোধ করছি।

৩৯৩৬। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, আনসারদের আদী গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে আমীন নিযুক্ত করেন। সে জানীব জাতীয় খেজুর নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, খায়বারের সমস্ত খেজুরেই কি এই ধরনের? সে বলল, না; আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা মিশ্রিত খেজুরের দুই সা-এর বিনিময়ে এক সা খরিদ করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরুপ করো না বরং সমান সমানভাবে করো অথবা একটা বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে অন্যটা খরিদ করিও, অনুরুপভাবে ওযনের ক্ষেত্রেও।

৩৯৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে খায়বরের আমিল নিতে করেন। সে জানীব শ্রেনীর খেজুর নিয়ে তার নিকট আগমন করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ খায়বারের সমস্ত খেজুর কি এই শ্রেনীর? সে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম, এরুপ নয়। আমরা এই শ্রেনীর এক সা দুই সা’র বিনিময়ে এবং দুই সা তিন সা”র বিনিময়ে খরিদ করে থাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরুপ করো না। মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো। তারপর দিরহামের বিনিময়ে জানীব খরিদ করো।

৩৯৩৮। ইসহাক ইবনু মানসূর, মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীনী জাতীয় খেজুর নিয়ে বিলাল (রাঃ) আগমন করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কোথে কে এনেছ? বিনাল (রাঃ) বলল, আমাদের নিকট নিম্ন শ্রেনীর খেজুর ছিল আমি তা থেকে দু-সা” এক সা”-এর বিনিময়ে বিক্রি করেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খাওয়ানোর জন্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ হায় আফসোস! এভো প্রত্যক্ষ সুদ, এরুপ করো না, বরং যখন তুমি খেজুর ক্রয় করতে চাও, তখন এটাকে বিক্রি কর, তারপর এর মূল্য দ্বারা খরিদ করো। ইবনু সাহব (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় তখন- শব্দটি উল্লেখ করেন নাই।

৩৯৩৯। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু খেজুর আনা হয়। তিনি বললেন, আমাদের খেজুর অপেক্ষা এই খেজুর তো খুবই উত্তম। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের দু-সা খেজুর এর এক সাঁর বিনিময়ে বিক্রি করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ তো সুদ। এ ফেরৎ দাও, তারপর আমাদের খেজুর বিক্রি কর এবং এই জাতীয় খেজুর আমাদের জন্য খরিদ কর।

৩০৪০। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আমলে মিশ্রিত খেজুর আমাদের দেওয়া হত আর তা হচ্ছে মিশ্রিত খেজুর। আমরা এর দু-সা” এক সার বিনিময়ে বিক্রি করতাম, এ সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছল। তিনি বললেন, দু-সা- খেজুর এক সার বিনিময়ে, দু-সা- গম এক সার বিনিময়ে এবং দু- দিরহাম এক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করা জায়িয নয়।

৩৯৪১। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আবূ সা’দরা (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে ‘সারফ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন, নগদ নগদ? আমি বললাম, হাঁ। তিন বললেন, এতে কোন আপত্তি নেই। অতঃপর আমি সাঈদকে জানালাম এবং বললাম, আমি ইবনু আব্বাসের নিকট সারফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, নগদ নগদ? আমি বলেছি, হ্যা। তিনি বলেছেন, আমি শ্লীঘ্রই তাকে লিখে দিচ্ছি। অতঃপর তিনি আর তোমাদেরকে এ ফাতওয়া দিবেন না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! কতিপয় যুবক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু খেজুর নিয়ে আসে। সে বলল, ইহা আমাদের দেশের খেজুরর মধ্যে অথবা আমাদের এ বছরের খেজুরের মধ্যে কিছুটা খারাপ ছিল। অতঃপর আমি এটা গ্রহণ করি এবং কিছুটা বৃদ্ধি করি। তিনি বললেন, বেশী দিয়েছ তো সুদ প্রদান করেছ, এর কাছেও যেয়ো না। যখন তোমার খেজুরের মধ্যে কোন খেজুর খারাপ পরিলক্ষিত হবে তখন তা বিক্রি করে দিও, পরে যে খেজুর পছন্দ করো তা খরিদ কর।

৩৯৪২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ নাদরা (রাঃ)-এ সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট এ ‘সারফ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। তারা এতে কোন দোষ মনে করেন নি। পরবর্তীকালে একবার আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তার নিকট ‘সারফ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, যা অতিরিক্ত হবে তা সুদ। কিন্তু তাদের দু-জনের মতের কারণে আমি এর প্রতিবাদ করলাম। এরপর তিনি বললেন, আমি রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি তাই তোমার কাছে বর্ণনা করছি। একদা তার নিকট খেজুরের বাগানের এক মালিক এক সা’ উৎকৃষ্ট খেজুর নিয়ে আসে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেজুরের ও এই শ্রেনীরই ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এ তুমি কোথায় পেলে? সে বলল, আমি দু’সা নিয়ে বাজারে যাই এবং তার বিনিময়ে এই এক সা- ক্রয় করি। কেননা বাজারে এটার মূল্য এতো এবং ওটার মূল্য এতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আফসোস তোমার প্রতি, তুমি সুদের কারবার করেছ। যখন এরুপ করতে চাও, তখন তোমার খেজুর কোন বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। পরে তোমার বস্তুর বিনিময়ে যে প্রকার খেজুর চাও কিনে নিবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, সুতরাং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সুদ হওয়ার অধিক যোগ্য নাকি রেৌপ্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত রেৌপ্য সুদ হওয়ার বেশী যোগ্য। রাবী বলেন, পরবর্তী কালে আমি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট এসেছি এবং তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন। আর আমি ইবনু আব্বাসের কাছে যাই নি। রাবী বলেন, আবূস সাহবা (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, এ ব্যাপারে ইবনু আব্বাসের কাছে মক্কায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন তা অপছন্দ করেছেন।

৩৯৪৩। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দ্বীনারের বিনিময়ে দ্বীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। যে অধিক দিবে বা অধিক নিবে সে সূদের লেনদেন করল। আমি তাকে বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো অন্য কিছু বলে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাসের সাথে সাক্ষাৎ করেছি এবং জিজ্ঞাসা করেছি যে, আপনি এই যা বলছেন, তা কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, না কি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইহা শুনি নাই এবং আল্লাহর কিতাবেও পাই নি বরং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বাকী বিক্রয়েই হয় সুদ।

৩৯৪৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) জানিয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীতে হয়।

৩৯৪৫। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নগদ বিক্রিতে সুদ নেই।

৩৯৪৬। হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) আতা ইবনু আবূ রাবাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সারফ’ সম্পর্কে আপনার যে মত, তার কিছু কি আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন, না কি আল্লাহর কুরআনে কিছু পেয়েছেন? ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, কোনটই আমি বলছি না। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ সম্পর্কে তো আপনারা অধিক অবগত এবং আল্লাহর কিতাবেও তা আমি জানি না। বরং উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) আমর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সুদ বাকীতেই হয়।

৩৯৪৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন সুদ খোরের প্রতিও সূদ প্রদানকারীর প্রতি। রাবী বলেন, আমি বললামঃ এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষীদ্বয়ের প্রতিও। তিনি বললেন, আমরা কেবল তাই বর্ণনা করি যা আমরা শুনেছি।

৩৯৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু সাববাহ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন, সুদ গ্রহীতার উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান।

৩৯৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র হামদানী (রহঃ) নূমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শুনেছিঃ অর্থাৎ বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, রাবী বলেনঃ এ সময় নামান তাঁর অঙ্গুলিদ্বয় দ্বারা কানের দিকে ইঙ্গিত করেন, নিশ্চই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম ও সুস্পষ্ট আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এ সব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দুরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত চারণভূমির পার্শে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে সে পশু তার অভ্যন্তরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তার হারামকৃত বিষয়সমূহ জেনে রাখো, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে। যখন তা সুস্হ থাকে তখন সমস্ত শরীরই সুস্হ থাকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হল কালব- হৃদয়।

৩৯৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) যাকারিয়্যা (রহঃ)-এর টি উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ননা করেন।

৩৯৫১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও কুতায়বা (রহঃ) নুঁমান ইবনু বাশীর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীস তাদের হাদীস থেকে পরিপূর্ণও অধিক পরিচিত।

৩৯৫২। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একজন সাহাবী। তিনি হিমসে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম ও সুস্পষ্ট। অতঃপর তিনি শাবী (রহঃ) থেকে যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন তার উক্তি:’উহার অভ্যন্তরে চলে যাওয়ার আশকা রয়েছে’ পর্যন্ত।

৩৯৫৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি তার ক্লান্ত উটের উপর আরোহণ করে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি উটটি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা করেন। তিনি বলেন, এরপর আমার সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার জন্য দুআ করেন এবং উটটিকে আঘাত করলেন। এরপর উট এমনভাবে চলতে থাকে যে, যেমন আর কখনও চলে নি। বলেন, এটি আমার নিকট এক উকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি কর। আমি বললাম, না। তিনি পুনরায় বললেন, আমার নিকট এটাকে বিক্রি করে দাও। অতঃপর এক উকিয়ার বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিলাম এবং আমার বাড়ী পর্যন্ত হাতে আরোহণ করার শর্ত করলাম। যখন আমি পৌছলাম তখন তাঁর নিকট উট নিয়ে আসলাম। তিনি আমাকে তার মূল্য পরিশোধ করলেন। পরে প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, আমি কি তোমার উট নেওয়ার জন্য মূল্য কম বলেছিলাম? তোমার উট নিয়ে যাও এবং তোমার দিরহাম তোমার জন্যই।

৩৯৫৪। আলী ইবনু খাসরাম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ইবনু নূমায়রের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৩৯৫৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে জিহাদে গমন করি। পথিমধ্যে তিনি আমাকে পেয়ে বললেন, আমি একটি মন্থরগতির উটের পিঠে চলছিলাম, যে চলতে প্রায় অক্ষম হয়ে পড়েছিল। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, অসুখ হয়েছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পশ্চাতে গেলেন এবং উটকে ধমক দিলেন ও দ্যুআ করলেন। এরপর তা সকল উটের অগ্রভাবে চলতে থাকে। তিনি বললেন, এখন তোমার উটের অবস্হা কি? আমি বললাম, ভালই; আপনার বরকতের পরশ লেগেছে। তিনি বললেন, এটা আমার নিকট বিক্রি করবে কি? আমি লজ্জিত-হলাম। কারণ ইহা ভিন্ন আমাদের অন্য কোন পানি বহনকারী উট ছিল না। অবশেষে বললাম, হাঁ। সূতরাং তাঁর নিকট ইহা এই শর্তে বিক্রি করলাম যে, মদিনা পর্যন্ত তার পিঠ আমার অধিকারে থাকবে। তিনি বললেন, এরপর আমি আরয করলাম হে আল্লাহর রাসুল! আমি সদ্য বিবাহিত। তাই আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং অন্যান্য লোকের আগেই আমি মর্দ্বীনা অভিমুখে রওয়ানা হলাম। যখন শেষ সীমায় পৌছলাম তখন আমার মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। তিনি আমার কাছে উটের অবস্হা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে সে সব কথা জানালাম যা এ ব্যাপারে আমি করেছি। তিনি এ জন্য আমাকে তিরস্কার করলেন। জাবির (রাঃ)বললেন, আমি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করি তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি কুমারী না পূর্ব বিবাহিতা বিবাহ করেছ? বললাম, আমি পূর্ব বিবাহিত নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, কেন কুমারী বিবাহ কর নাই? যার সাথে তুমি আমোদ প্রমোদ করতে আর সে ও তোমার সাথে আমোদ প্রমোদ করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রেখে আমার পিতা ইন্তেকাল করেন অথবা (বলেন) শাহাদাত বরণ করেন। তাই আমি অপছন্দ করি তাদের নিকট তাদেরই অনুরুপ আর একজনকে বিবাহ করে আনতে যে তাদের সুশিক্ষা দিতে ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না। এ কারণে আমি পূর্ব বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করেছি, যাতে সে তাদের লালন পালন করে ও সুশিক্ষা দিতে পারে। জাবির (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌছলেন, আমি প্রত্যূষে উটসহ তাঁর নিকট হাযির হলাম। তিনি তার মূল্য আমাকে প্রদান করেন এবং উটও ফেরত দেন।

৩৯৫৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মক্কা থেকে মদিনায় আগমন করি। অতঃপর আমার উট অসুস্হ হয়ে পড়ে এবং পুর্ণ ঘটনাসহ তিনি হাদীস বর্ননা করেন। আর এ বর্ননায় তিনি আমাকে বললেন, আমার নিকট তোমার এ উট বিক্রি করা আমি বললাম, না বরং এটা আপনারই। তিনি বললেন, না বরং আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম, না বরং এটা তো আপনারই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন না, বরং এটা আমার নিকট বিক্রি কর। আমি বললাম, তাহলে আমার উপর এক ব্যক্তির এক উকিয়া স্বর্ণ পাওনা আছে তার বিনিময়ে এটা আপনার। তিনি বললেন আমি এটা গ্রহন করলাম। তুমি এতে আরোহণ করে মদিনা পর্যন্ত যেতে পারবে। জাবির (রাঃ) বললেন, যখন আমি মদিনায় পৌছলাম তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে বললেন, একে এক উকিয়া ,স্বর্ণ দাও এবং কিছু অতিরিক্ত দাও। অতঃপর তিনি আমাকে এক উকিয়া স্বর্ণ দিলেন এবং এক কীরাত অতিরিক্ত দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি (মনে মনে) বললামঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত এ বস্তু কখনও আমার থেকে খরচ হবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তা আমার নিকট একটি থলির মধ্যে থাকত। সিরিয়াবাসীরা হাররা দিবসে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

৩৯৫৭। আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উট পিছনে থেকে যায় এবং হাদীসটি পূর্ণ বর্ণনা করেন। আর তার মধ্যে বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটিকে খোচা দিলেন। তারপর সর্বদা আমাকে অধিক দিতে থাকেন এবং বলতে থাকেন আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন।

৩৯৫৮। আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমার নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আমার উট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারপর তিনি উটটিকে খোঁচা দিলেন। এতে সে দৌড়াতে আরম্ভ করল। পরে আমি ইহার লাগাম টেনে ধরি তাঁর কথা শোনার জন্য, কিন্তু তা আমি পেরে উঠলম না। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সহিত মিলিত হন এবং বলেন, আমার নিকট একে বিক্রি কর। সুতরাং পাঁচ উকিয়ার বিনিময়ে আমি বিক্রি করি। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি এই শর্ত করলাম যে, মদিনা পর্যন্ত আমি এতে আরোহণ করব। তিনি বলেন, মদিনা পর্যন্ত তুমি আরোহণ করতে পারবে। জাবির (রাঃ) বলেন, যখন আমি মদিনায় পৌছলাম তখন উটসহ আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে আরো এক উকিয়া অতিরিক্ত দেন এবং পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটটি ও আমাকে দান করে দেন।

৩৯৫৯। উকবা ইবনু মুকরাম আম্মী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে কোন এক সফরে সঙ্গী থাকি। রাবী বলেন, হয়ত তিনি জিহাদের সফরের কথা বলেছেন এবং পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে অতিরিক্ত আছে যে, তিনি বললেনঃ হে জাবির! আমি কি মুল্য পরিশোধ করেছি? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, মূল্য তোমার, উটও তোমার, মূল্য তোমার, উটও তোমার।

৩৯৬০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার থেকে একটি উট দু উকিয়া ও এক দিরহাম বা দুই দিরহামের বিনিময়ে খরিদ করেন। যখন তিনি সিরার নামক স্থানে পৌছেন, তখন একটি গাভী যবেহ করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। আমি যবেহ করলাম। তারা সকলেই তা খেলেন। যখন তিনি মদিনায় পৌছেন তখন আমাকে মসজিদে আসার ও দুরাক’আত সালাত আদায়ের হুকুম করেন। তিনি আমাকে উটের মুল্য ওযন করে দেন এবং কিছু বেশী দেন।

৩৯৬১। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। অবশ্য এতে তিনি বলেন যে, তিনি আমার থেকে সেই দামে উহা খরিদ করেন যা তিনি নির্ধারিত করেন। তিনি দুই উকিয়া ও এক দিরহাম এবং দুই দিরহামের কথা উল্লেখ করেন নাইা আর তিনি গাভীর যবহের জন্য নির্দেশ দেন। সূতরাং তা নহর করা হয় ও পরে গোশত বণ্টন করা হয়।

৩৯৬২। আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, আমি চার দ্বীনারের বিনিময়ে তোমার উট নিলাম, আর এর পিঠে চড়ে তুমি মদিনায় যেতে পারবে।

৩৯৬৩। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নেন। এরপর তার নিকট সাদাকার উট আসে। তিনি আব রাফি কে সে ব্যক্তির উট পরিশোধ করার আদেশ দান করেন। আবূ রাফি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এসে জানালেন যে, সাদাকার উটের মধ্যে আমি সেরুপ উট পাই না, তার চেয়ে উৎকৃষ্ট উট আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওটাই তাকে দাও। উত্তম ব্যক্তি সে যে ধার পরিশোধে উত্তম।

৩৯৬৪। আবূ কুরায়ব (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযাদকৃত গোলাম আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের এক বাচ্চা ধার করেন, এরপর উক্তরুপ বর্ণনা করেন। তবে এতে তিনি বলেন যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে যে দেনা পরিশোধে উত্তম।

৩৯৬৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর এক ব্যক্তির ঝণ ছিল। সে তার সাথে রুঢ় ব্যবহার করে। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ তাকে (শাসন করতে) উদ্যত হন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পাওনাদারে কিছু বলার অধিকার আছে। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে বললেনঃ তোমরা তার জন্য একটি উট খরিদ কর এবং তাকে দিয়ে দাও। তারা বললেন- আমরা এমন উট পাচ্ছি যা তার উটের চেয়ে উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ওটা খরিদ কর ও তাকে দিয়ে দাও। কারণ তোমাদের থেকে বা তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারে উত্তম।

৩৯৬৬। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (বা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি এউট ধার করে আনেন। অতঃপর এর চেয়ে বড় একটি উট তাকে দেন এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে উত্তম ভাবে ধার পরিশোধ করে।

৩৯৬৭। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঁ, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে উট দাবী করতে থাকে। তিনি বললেন, তার উটের চেয়ে উৎকৃষ্ট উট তাকে দাও এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে ধার পরিশোধের ক্ষেত্রে উত্তম।

৩৯৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন গোলাম এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট হিজরতের উপর বায়আত গ্রহণ করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারেন নাই যে, সে লোকটি গোলাম। অতঃপর তার মুনিব তাকেনিয়ে যাওয়ার জন্য আগমন করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও। তারঃপর তিনি দু-জন কালো রং বিশিষ্ট গোলামের বিনিময়ে একে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি বায়আত নিতেন না যতক্ষন না জিজ্ঞাসা করতেন যে, সে গোলাম কি না?

৩৯৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর থেকে কিছু খাদ্য বস্তু বাকীতে ক্রয় করেন। অতঃপর তাঁর বর্মটি তাকে বন্ধক হিসাবে প্রদান করেন।

৩৯৭০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আলী ইবনু খাশরাম হানযালী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ইয়াহুদীর থেকে কিছু খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করেন এবং তাঁর লৌহ বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।

৩৯৭১। ইসহাক ইবনুুইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনৈক ইয়াহুদীর থেকে নির্দিষ্ট সময়ের শর্তে কিছু খাদ্য বস্তু ক্রয় করেন এবং স্বীয় লৌহ বর্ম তার নিকট বন্ধক রাখেন।

৩৯৭২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এতে লৌহের কথা উল্লেখ নাই।

৩৯৭৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদিনায় আগমনকালে মদিনাবাসীরা এক বা দুই বছর মেয়াদে বিভিন্ন প্রকার ফল অগ্রিম ক্রয় করত। তিনি বলেন, যে কেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে বা নির্ধারিত ওযনে এবং নির্ধারিত মেয়াদে ক্রয় করে।

৩৯৭৪। শাইবান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন কালে মদিনার লোকজন খেজুর অগ্রিম ক্রয় করত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ যে অগ্রিম ক্রয় করতে চায় সে যেন নির্ধারিত পরিমাপ ও নির্ধারিত ওযনে ক্রয় করে।

৩৯৭৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) সকলেই ইবনু উয়ায়নার সুত্রে ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে আবদুল ওয়ারিস (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইবনু উয়ায়না (রহঃ) নির্ধারিত সময়ের কথা উল্লেখ করেন নাই।

৩৯৭৬। আবূ কুরায়ব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) সুফিয়ানের সুত্রে ইবনু আবূ নাজীহ (রহঃ) থেকে আপন সনদে ইবনু উয়ায়নার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন এবং সুফিয়ান (রহঃ) এতে নির্ধারিত সময়ের কথা উল্লেখ করেছেন।

৩৯৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) মামার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গুদামজাত করে সে অপরাধী। অতঃপর সাঈদকে বলা হল, আপনি তো গুদামজাত করেন। সাঈদ (রহঃ) বললেন যে, মামার এ হাদীস বর্ণনা করছেন। ও গুদামজাত করে থাকেন।

৩৯৭৮। সাঈদ ইবনু আমর আল আশ আসী (রহঃ) মামার ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অপরাধী লোক ব্যতীত কেউ গুদামজাত করে না।

৩৯৭৯। আমাদের জনৈক সাথী মুহাদ্দিস আমর ইবনু আওনের সুত্রে আদী ইবনু কাব গোত্রের জনৈ মা’মার ইবনু আবূ মামার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর ইয়াহইয়া থেকে সুলায়মান ইবনু বিলাল (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৩৯৮০। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কসম পণ্যদ্রব্য পরিচাননাকারী ও মুনাফা বিলোপকারী।

৩৯৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা ব্যবসায়ের মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাক। কেননা, উহা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে কিন্তু বরকত মিটিয়ে দেয়।

৩৯৮২। আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইসহাক (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জমি অথবা বাগানে যদি কারও কোন শরীক থাকে, তবে ঐ শরীকের অনুমতি না নিয়ে সে উহা বিক্রি করতে পারবে না। তার পছন্দ হলে গ্রহণ করবে আর অপছন্দ হলে ছেড়ে দিবে।

৩৯৮৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব বিষয়ে শুফআর আর পক্ষে হুকুম দিয়েছেন যা বিভক্ত করা যায় না- জমি হোক বা বাগান। আপন শরীককে অব গত করান ব্যতীত তা করা বৈধ নয়। সে ইচ্ছা করলে রেখে দিবে আর ইচ্ছা করলে ত্যাগ করবে। যদি সে বিক্রি করে এবং শরীককে অবগত না করায়।

৩৯৮৪। আবূ তাহির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি শরিকী বিষয়ে ও শুফআর অধিকার আছে- জমি হোক বা বাড়ী অথবা প্রচীর। বিক্রি করা তার পক্ষে বৈধ হবে না শরীকের নিকট পেশ করা ব্যতীত। অতঃপর হয়ত সে গ্রহণ করবে অথবা পরিত্যাগ করবে। যদি সে না বলে তবে তার শরীকই উহার বেশী অধিকারী যতদিন তাকে খবর দেওয়া না হরে।

৩৯৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার প্রাচীর গাত্রে কীলক স্হাপন করতে যেন আপন প্রতিবেশীকে নিষেধ না করে। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, কি ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে অমনোযোগী দেখতে পাচ্ছি আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাদের ঘাড়ে ছুঁড়ে মারবো।

৩৯৮৬। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ তাহির, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৩৯৮৭। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নূফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারও এক বিঘত জমি জোর দখল করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গলায় সাত স্তর যমীন হতে বেড়ির রুপে পরিয়ে দিবেন।

৩৯৮৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়িদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আরওয়া নামক এক মহিলা বাড়ীর কিছু অংশ নিয়ে তার সহিত বিবাদ করে। তিনি বললেন, তোমরা ওকে ছেড়ে দাও এবং জমির দাবীও ত্যাগ কর। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ বিনা অধিকারে এক বিঘত জমি জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন তাকে সাত উর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। হে আলাহ! আরওয়া যদি মিথ্যাবাদী হয় তবে তার চোখ অন্ধ করে দিন এবং তার ঘরেই তার কবর করুন। রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি আরওয়াকে অন্ধ অবস্হায় দেখেছি, প্রাচীরে প্রাচীরে সে আঘাত খেয়ে খেয়ে চলত। সে বলত, সাঈদ ইবনু যায়িদের বদূ দুআ আমার লেগেছে। একদিন সে বাড়ীর মধ্যে চলাচল করছিল। বাড়ীর মধ্যে এক কুয়ার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে তাতে পড়ে যায় কুয়াই তার কবর হয়।

৩৯৮৯। আবূর রাবী আতাকী (রহঃ) উরত্তয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আরওয়া বিনত উয়ায়স সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) -এর উপর দাবী করেন যে, আরওয়ার জমির কিছু অংশ জবর দখল করেছেন। সে মারওয়ান ইবনু হাকওমের নিকট এর বিচার দাবী করে। সাঈদ বললেনঃ আমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর থেকে ঐ কথা শোনার পরে তার জমির কিছু অংশের জবর দখলকারী হতে পারি? তিনি বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাপ জমি জোর পূর্বক দখল করবে তাকে সাত স্তর পর্যন্ত জমির বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। মারওয়ান বললেন, অতঃপর আপনার নিকট আর সাক্ষীর কথা জিজ্ঞাসা করব না। এরপর সাঈদ বললেন, হে আল্লাহ! আরওয়া যদি’ মিথ্যাবাদিনী হয় তবে তার দুই চক্ষু অন্ধ করে দিন এবং তার জমিতে তাকে মৃত্যু দান করুন। রাবী বলেন, এরপর সে অন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করে নাই। পরে তার জমিতে চলার সময় অকমিৎ এক গর্তে পড়ে মারা যায়।

৩৯৯০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি: যে ব্যক্তি জোরপূর্বক এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমির বেড়ি লাগিয়ে দেওয়া হবে।

৩৯৯১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি এক বিঘত জমি বিনা অধিকারে জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সাত স্তর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দিবেন।

৩৯৯২। আহমাদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ সালামা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন। তার ও তার গোত্রের মধ্যে একটি জমি নিয়ে বিবাদ ছিল। তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন এবং তাকে সে বিষয়ে জানান। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আবূ সালামা! জমি থেকে বেঁচে থাক। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে নিবে তাকে সাত স্তর জমির বেড়ি পরান হবে।

৩৯৯৩। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ সালামা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট উপচথিত হন। অতঃপর উক্ত রুপ বর্ণনা করেন।

৩৯৯৪। আবূ কামিল ফূযাইল ইবনু হুসাইন জাহদারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা রাস্তার ব্যাপারে মতবিরোধ করবে তখন তা সাত হাত প্রশস্ত করতে হবে।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: মুসাকাত ও মুযারাত(বর্গাচাষ)
মুসাকাত ও মুযারাত(বর্গাচাষ)
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/borgachash.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/borgachash.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy