৫৭৩৯। মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাযী ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রাহমান ইবনু সাহম (রহঃ) আবূ আম্মার শাদ্দাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ওয়াসিলা ইবনু আসকা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন মহান আল্লাহ ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সন্তানদের হতে কিনানা–কে বাছাই করে নিয়েছেন, আর কিনানা (এর বংশ) হতে, কুরায়শ–কে বাছাই করে নিয়েছেন, আর কুরায়শ (বংশ) হতে বনূ হাশিমকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং বনূ হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন।
৫৭৪০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মক্কায় একটি
পাথরকে জানি, যে
(নাবীরুপে) প্রেরিত হওয়ার আগেও আমাকে সালাম করত: আমি এখনও তাকে নিশ্চিতভাবে চিনতে
পারি।
৫৭৪১। হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কিয়ামতের দিনে আদম
সন্তানদের নেতা হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এবং আমিই
প্রথম সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশ গৃহীত ব্যক্তি।
৫৭৪২। আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন, তখন একটি প্রশস্ত তলবিশিষ্ট অগতীর পেয়ালা নিয়ে
আসলেন। (তিনি তাতে হাত রেখে বরকতের দুআ করলেন) এবং লোকেরা উযু করতে লাগল। আমি
তাদের সংখ্যা ষাট থেকে আশির মধ্যে অনুমান করলাম। রাবী বলেনঃ আমি পানির দিকে তাকাতে
থাকলাম তাঁর আংগুল সমূহের মাঝ থেকে উদ্বেলিত হয়ে বেরিয়ে আসছিল।
৫৭৪৩। ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী ও আবূ তাহির (রহঃ) আনাস মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, তখন আসরের
সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল আর লোকেরা উযুর পানি খুজছিল কিন্তু তারা তা পেল না। এ সময়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু উযুর পানি আনালেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পানির পাত্রে তাঁর হাত মুবারক রেখে
দিলেন এবং লোকদের তা থেকে উযু করতে বললেন, রাবী বলেন। আমি দেখলাম, পানি তাঁর
অংগুলি সমূহের নিচ থেকে উদ্বেলিত হয়ে বেবিয়ে আসছে। তখন লোকেরা উযু করল, এমন কি
তাদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত সকলেই উযু করল।
৫৭৪৪। আবূ গাসশান মিসমাঈ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণ যাওরা নামক স্থানে ছিলেন রাবী
বলেনঃ যাওরা- হল মদিনার বাজার ও মসজিদের নিকট ঐ স্হান। তখন তিনি একটি পেয়ালা আনতে
বললেন, যাতে
সামান্য পানি ছিল। তিনি তাঁর (হাতের) পাঞ্জা তাতে রাখলেন। তখন তাঁর অংশুলি সমূহের
মাঝ থেকে (পানি) উথলে বের হতে লাগল আর তাঁর সাহাবীগণ সকলেই উযু করলেন। রাবী কাতাদা
বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ হামযা (রাঃ) তাঁরা কতজন ছিলেন? বললেন, তাঁরা
ছিলেন তিনশ জনের মত।
৫৭৪৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাওরায় ছিলেন। তখন একটি পানির পাত্র আনা হলো, যা (র
পানিতে) তাঁর অংগুলিসমূহ ড়ূবছিল না কিংবা ঐ পরিমাণ, যা তাঁর অংগুলিসমূহ ডূবাতে পারে। এরপর তিনি
(পূর্বোক্ত হাদীসের) রাবী হিশাম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।
৫৭৪৬। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মু
মালিক (রাঃ) তার একটি চামড়ার পাত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য
ঘি হাদিয়া পাঠাতেন। (কোন কোন সময়) তার ছেলেরা তার কাছে এসে (রুটি মাখাবার জন্য)
তরকারি চাইত। কিন্তু তখন তাদের কাছে কিছু থাকত না। তাই তিনি (উম্মে মালিক) সে পাত্রটির
কাছে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন- যাতে করে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
জন্য হাদিয়া পাঠাতেন। তখন তিনি তাতে কিছু ঘি পেয়ে যেতেন। পরে তা তার ঘরের (রুটি
মাখাবার) তরকারির কাজ দিতে থাকল। যতক্ষন না সে তিনি সেটি (আংগুল দিয়ে মুছে) নিংড়ে
ফেললেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তুমি
সেটি নিংড়ে ফেলেছে?
তিনি বললেন, হ্যা।
তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সেটিকে (না নিংড়িয়ে)
যথাবস্থায় রেখে দিলে তা বিদ্যমান থেকেই যেত।
৫৭৪৭। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি
খাবার চাইতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল তিনি তাকে অর্ধ
ওয়াসক যব খাবার জন্য দিলেন। লোকটি তা থেকে খেতে থাকল আর তার স্ত্রী এবং তাদের
উভয়ের মেহমানরাও। অবশেষে সে (একদিন) তা মেপে দেখল। ফলে তা ফূরিয়ে গেলে। পরে সে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (অভিযোগ নিয়ে) আসল। তিনি বললেন, তুমি যদি
তা মেপে না দেখতে, তা
হলে তোমরা তা থেকে খেতে থাকতে এবং তা তোমাদের জন্য (দীর্ঘকাল) বিদ্যমান থাকত।
৫৭৪৮। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারিমী (রহঃ) মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি (দুই) সালাত একত্রে আদায়
করতেন। অর্থাৎ যোহর ও আসর একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন।
অবশেষে এক দিন (এমন) হল যে, সালাত বিলম্বিত করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যোহব
ও আসর একত্রে আদায় করলেন, অতঃপর (তাঁবুতে) প্রবেশ করলেন। তারপর আবার
বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনশা
আল্লাহ তোমরা আগামীকাল তাবুক প্রস্রবণে পৌছবে আর চাশতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা
সেখানে পৌছতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে যে সেখানে (প্রথমে) পৌছবে, সে যেন তার
পানির কিছুই স্পর্শ না করে যতক্ষন না আমি এসে পৌছি। আমরা (যথাসময়ই) সেখানে পৌছলাম।
(কিন্তু) ইতিমধ্যে দুব্যক্তি আমাদের আগে সেখানে পৌছে গিয়েছিল। আর প্রস্রবণটিতে
জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় কিছু সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। মুয়ায (রাঃ)
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দুজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তার
থেকে কিছু পানি স্পর্শ করেছ কি? তারা দু’জন বলল, হ্যা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদের দুজনকে তিরস্কার করলেন। আর আল্লাহর যা ইচ্ছা, তাদের তাই বললেন। রাবী বলেনঃ তারপর লোকেরা
তাদের হাত দিয়ে অঞ্চলি ভরে ভরে প্রস্রবণ থেকে অল্প অল্প করে (পানি) তূলল অবশেষে তা
একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ সঞ্চিত হল। রাবী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে তাঁর দুংহাত এবং মুখ মুবারক ধুলেন এবং পরে তা (পানি) তাতে
(প্রস্রবণে) উলটিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে প্রস্রবণটি প্রবল পানি ধারায় অথবা রাবী
বলেছেন, প্রচুর
পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। আবূ আলী (রহঃ) সন্দেহ করেছেন যে, রাবী এর
মধ্যে কোনটি বলেছেন। এবার লোকেরা প্রয়োজনমত পানি পান করল। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ হে মুয়াযা যদি তুমি দীর্ঘজিবী হও, তবে আশা
করা যায় যে, তুমি
দেখতে পাবে, প্রস্রবণের
এ স্হানটি বাগানে ভরে গিয়েছে।
৫৭৪৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তাবুক
যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা ওয়াদিল কুরা- এলাকায় এক মহিলার এক টি বাগানের
কাছে পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর
পরিমাণ অনুমান কর। আমরা এর পরিমাণ অনুমান করলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ওয়াসুক (প্রায় পঞ্চাশ মণ) পরিমাণ অনুমান করলেন এবং
(স্ত্রীলোকটিকে) বললেন, আমরা ইনশা আল্লাহ তোমার এখানে ফিরে আসা পর্যন্ত
এ পরিমাণ ধরে রাখ। পরে আমরা এগিয়ে চললাম এবং তাবুক পৌছে গেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আজ রাতে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ তোমাদের উপর
দিয়ে বয়ে যাবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মাঝে দাড়িয়ে না থাকে এবং যার উট আছে, সে যেন তার
দড়ি শক্ত করে বেঁধে রাখে। সে রাতে) প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হল। এক ব্যক্তি দাঁড়ালে
বাতাস তাকে উঠিয়ে নিল। অবশেষে তাই নামক পাহাড়ে ফেলে দিল। আর (ঐ সময় নিকটবর্তী)
‘আয়লার’ এলাকা প্রধান (শাসক) ইবনুল আলমার দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাঁদর হাদিয়া পাঠালেন।
তারপর আমরা এগিয়ে চলতে চলতে ‘ওয়াদিল কুরা’ পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকটিকে (বাগানের মালিক) তার বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করলেন যে, তার
ফল কি পরিমাণে পৌছেছে? সে বলল, দশ ওয়াসক। তার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত যাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয়, সে আমার
সঙ্গে দ্রুত যেতে পারে। আর যার ইচ্ছা, সে অবস্হান করতে পারে। আমরা বের হয়ে পড়লাম।
অবশেষে মদিনার কাছাকাছি পৌছলাম। তখন তিনি বললেন, এ (মদিনা) হল তোবা পবিত্র ও উত্তম স্হান। আর এ
হল উহুদ। আর তা এমন পাহাড়, যে আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি।
তারপর বললেন, আননারীদের
শ্রেষ্ঠ পরিবার বনূ-নাজ্জার, তারপর বনূ আব্দুল আশহাল, তারপর বনূ
হারিস ইবনু খাযরাজ,
তারপর বনূ সাঈদা পরিবার। আর আনসারদের প্রতিটি গোত্রই উত্তম। সা’দ ইবনু উবাদা
(রাঃ) আমাদের সাথে এসে মিলিত হলে (তাঁবু গোত্রের) আবূ উসায়দ (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি কি
দেখেন নি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার গোত্রগুলির মাঝে ক্রমানূসারে শ্রেষ্ঠত্ব
বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের গোত্রকে তালিকার শেষে রেখেছেন। তখন সা’দ (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুজে পেলেন এবং বললেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আপনি আনসার গোত্রগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের শেষে
রেখেছেন! তখন তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ তালিকাতে অন্যতম হওয়াও কি তোমাদের জন্য
যথেষ্ট নয়?
৫৭৫০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) আমর ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) উক্ত ‘আনসারদের প্রতিটি গোত্রে কল্যাণ রয়েছে’ পর্যন্ত রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি
পরবর্তী অংশ সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনায় উল্লেখ করেন নি। উহায়ব (রহঃ)
তাঁর বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর ইবনুল আলমা)-র জন্য তাদের জনপদগুলি লিখে দিলেন। উহায়ব (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার কাছে চিঠি লিখে পাঠালেন কথাটি
উল্লেখ করেননি।
৫৭৫১। আবদ ইবনু হুমায়দ, আবূ ইমরান মুহাম্মদ ইবনু জা’ফার ইবনু যিয়াদ
(রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ষর্ণিত। তিনি বলেষ, আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নাজদ-এর দিকে একটি জিহাদে
গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পেছব থেকে এসে) একটি
কাঁটাবনযুক্ত উপত্যকায় আমাদের পেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একটি গাছের তলায় অবতরণ করলেন এবং তার তরবারিখানি সে গাছের একটি শাখায় ঝূলিয়ে
রাখলেন। রাবী জাবির (রাঃ) বলেনঃ আর লোকেরা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য উপত্যকায়
ছড়িয়ে পড়ল। রাবী বলেনঃ পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এক
ব্যক্তি আমার কাছে এল। তখন আমি ঘুমন্ত। সে তরবারিটি হাতে নিল। আমি জেগে উঠলাম, আর সে আমার
শিয়রে দাঁড়িয়ে। কিছু বুঝে না উঠতেই (দেখি) তরবারি তার হাতে উন্মুক্ত। সে আমাকে বলল, কে তোমাকে
আমার থেকে রক্ষা করবে?
তিনি বলেনঃ আমি বললাম, আল্লাহ। সে দ্বিতীয়বার বলল, তোমাকে
আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বলেনঃ আমি বললাম, আল্লাহর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তখন তরবারিটি কোষবদ্ধ করল।
আর ওই যে সে বসে আছে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
কিছুই বললেন না।
৫৭৫২। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারিমী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) সিনান
ইবনু আবূ সিনান দুআলী ও আবূ সালাম ইবনু আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা
করেন যে, জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) তিনি ছিলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
অন্যতম সাহাবী। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নাজদ অভিমুখে
একটি অভিযানে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফিরে এলেন, তখন তিনিও
তাঁর সঙ্গে ফিরে আসেন। একদা দুপুরের বিশ্রামকাল সমুপস্হিত হল। তারপর ইবরাহীম ইবনু
সা’দ ও মামার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৫৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এগিয়ে চললাম। অবশেষে আমরা যখন
যাতূর-রিকায় পৌছলাম। তারপর যুহরী (রহঃ) বর্নিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।
তবে তিনি তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আর কোন কিছু
বললেন না কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৭৫৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা,আবূ আমির আশ আরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ)
আবূ বুরদা (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে যে হিদায়াত ও ইলম সহকারে
পাঠিয়েছেন; তার
দৃষ্টান্ত সে বৃষ্টির ন্যায় যা কোন ভূমিতে বর্ষিত হয়, আর সে
ভূমির উৎকৃষ্ট কতকাংশ পানি গ্রহণ করে এবং প্রচুর তারতাজা ঘাস-পাতা উৎপন্ন করে। আর
কতকাংশ ঢূল শক্ত মাটি,
যা পানি আটকিয়ে রাখে, ফলে আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে মানুষের উপকার পৌছান
এবং তারা তা থেকে পান করে, (অন্যদের) পান করায় ও পশু চরায়। আর (বৃষ্টির
পানি) সে ভূমির আরও কতকাংশে বর্ষিত হল যা উচু অনুর্বর, যা কোন
পানি আটকিয়ে রাখে না আর কোন ঘাস-পাতাও উৎপন্ন করে না। সেই দৃষ্টান্ত হল সে সব
লোকের উপমা যারা আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞান হাসিল করে এবং আল্লাহ তাদের সে সব দিয়ে
উপকৃত করেন যা নিয়ে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। ফলে সে ইলম হাসিল করে অন্যকেও শিক্ষা
দেয়। অ্যর তৃতীয় দৃষ্টান্ত হল ঐ লোকদের, যারা তার প্রতি মাথা তুলেও তাকায় না এবং
আল্লাহর ঐ হিদায়াতও কবুল করে না- যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে।
৫৭৫৫। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ যা দিয়ে আমাকে
পাঠিয়েছেন, তার
দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দুষ্টান্তের মত, যে তার স্বগোত্রের কাছে এসে বলে, হে আমার
কাওম! আমি আমার দুচোখে (শক্র) বাহিনী দেখে এসেছি, আর আমি (সুষ্পষ্ট) সতর্ককারী। অতএব, আত্মরক্ষা
কর। তখন তার কাওমের একদল তার কথা মেনে নিল এবং রাতের আধারের সুযোগে (স্হান ত্যাগ
করে) চলে গেল। আর এক দল তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে ভোর পর্যন্ত স্ব-স্থানে থেকে
গেল। ফলে (শক্র) বাহিনী প্রত্যূষে তাদের আক্রমণ করল এবং তাদের সমূলে ধ্বংস করে
দিল। অতএব, এ
হলো তাদের দৃষ্টান্ত যারা আমাদের আনুগত্য করল এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসরণ
করল এবং ওদের দৃষ্টান্ত যারা আমার নাফরমানী করল এবং যে সত্য আমি নিয়ে এসেছি তাকে
অস্বীকার করল।
৫৭৫৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত ও আমার
উম্মাতের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে আগুন জ্বালিয়েছে ফলে মাকড় ও কীট-পতঙ্গ তাতে
পড়তে লাগল। আমি তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে (তোমাদের রক্ষার প্রয়াসে) টানছি আর তোমরা
সবেগে তাতে পড়তে যাচ্ছো।
৫৭৫৭। আমরুন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্নিত।
তিনি বলেনঃ এ হল সে সব (হাদীস), যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এরপর সেগুলি থেকে তিনি কয়েকটি
হাদীস উল্লেখ করেন। একটি হল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমার অবস্হা সে ব্যক্তির অবস্হার ন্যায় যে আগুনে প্রজ্জ্বলিত করল, যখন তাতে
তার চতূষ্পার্শ আলোকিত হচ্ছেন, তখন পতঙ্গ ও সেসব প্রানী যা আগুন পড়ে থাকে, তাতে পড়তে
লাগল আর সে ব্যক্তি সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। কিন্তু তারা তাকে হারিয়ে দিতে তাতে
ঢুকে পড়তে লাগল। তিনি বললেন, এটাই হল তোমাদের অবস্হা আর আমার অবস্হা। আমি
আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধগুলি ধরে রাখি ও বলি, আগুন থেকে
দুরে থাক, আগুন
থেকে দুরে থাক। আর তোমরা আমাকে হারিয়ে দিয়ে তার মাঝে ঢুকে পড়ছো।
৫৭৫৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার দূষ্টান্তরাজি ও তোমাদের
দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত যে আগুন জালাল, ফলে ফড়িং
দল আর পতঙ্গ তাতে পড়তে লাগল আর সে ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগল। আমিও আগুন
থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ।
৫৭৬০। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার তুলনা এবং অন্য নাবীগণের তূলনা সে
ব্যক্তির অবস্হার সাথে তূলনীয়, যে একটি প্রসা’দ নির্মাণ করল এবং সে তা সুন্দর
ও সুদৃশ্য করল। পরে (তা দর্শনে আগত) লোকেরা তার চারদিকে ঘূরে দেখতে লাগল (এবং)
বলতে লাগল যে, এর
চাইতে সুন্দর কোন প্রাসা’দ আমরা দেখিনি। তবে এ একটি ইটের স্হান অসমাপ্ত রয়েছে।
(নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ) আমি হলাম সে ইট খানি।
৫৭৬১। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ এ হল সে সকল হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। ‘এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস
উল্লেখ করেন। তার একটি হল,আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন, আমার
দৃষ্টান্ত ও আমার আগেকার নাবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে কতকগুলি
ঘর তৈরি করল, তা
সুন্দর করল, সুদূশ্য
করল এবং পূর্ণাঙ্গ করল কিন্তু তার কোন একটির কোনে একথানি ইটের স্হান ব্যতীত (খালি
রাখল)। লোকেরা সে ঘরগুলির চারদিকে চক্কর দিতে লাগল আর সে ঘরগুলি তাদের মুগ্ন করতে
লাগল। অবশেষে তারা বলতে লাগল, এখানে একথানি ইট লাগালেন না কেন? তা হলে তো
আপনার প্রাসা’দ পূর্ণাঙ্গ হতো। এরপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন যে আমি-ই হলাম সেই ইটখানি।
৫৭৬২। ইয়াহইয়াইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং আমার পূর্ববর্তী
নাবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি আট্টালিকা বানাল এবং তা সুন্দর ও
সুদৃশ্য করল। তবে তার কোণগুলির কেনি এক কোনায় একটি ইটের জায়গা ছাড়া। লোকেরা তার
চারদিকে ঘূরে ঘুরে দেখতে লাগল আর তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবংপরস্পর বলতে লাগল, ঐ ইটখানি
স্হাপন করা হল না কেন?
(নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমি-ই সে
ইটখানি আর আমি নাবীগণের মোহর ও শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৫৭৬৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
আমার দৃষ্টান্ত এবং নাবীগণের দৃষ্টান্ত অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
৫৭৬৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- আমার দৃষ্টান্ত এবং নাবীগণের দৃষ্টান্ত
সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি গৃহ নির্মাণ করল এবং সে তা সস্পূর্ণ ও
পূর্ণাঙ্গ করল কিন্তু একথানি ইটের জায়গা ব্যতীত। লোকেরা তাতে প্রবেশ করতে লাগল এবং
তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং বলাবলি করতে লাগল, যদি এ একথানি ইটের জায়গা খালি না থাকত (তবে কতই
না ভাল হতো)! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমি হলাম সে
ইটের জায়গায়। আমি আগমন করলাম এবং নাবীগণের সিলসিলা সমাপ্ত করলাম। মুহাম্মদ ইবনু
হাতিম (রহঃ) সালীম ইবনু হাইয়ান (রহঃ) সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি
(পরিপূর্ণ)-এর স্হলে! (সুন্দর করেছে) বলেছেন।
৫৭৬৫। (ইমাম মুসলিম বলেন), আবূ উসামা (রহঃ) সুত্রে এ হাদীস আমার কাছে
বর্ণনা করা হয়েছে,আবূ
মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা যখন তার বান্দাদের মাঝে কোন
উম্মাতের প্রতি রহমতের ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নাবীকে তাদের আগেই তুলে নেন এবং
তাঁকে তাদের যুগের অগ্রগামী ও পুর্ববর্তী করেন। আর যখন কোন উম্মাতের ধ্বংস করার
ইচ্ছা করেন, তখন
তাদের নাবীর জীবিত অবস্হায় তাদের আযাব দেন এবং এ অবস্হায় তাদে ধ্বংস করেন যে, তিনি
(নাবী) তা দেখতে পান। অতঃপর তাদের ধ্বংস দেখে তাঁর চোখ শীতল করেন, যেহেতু
তারা তাঁকে অস্বীকার করেছে ও তাঁর আদর্শ অমান্য করেছিল।
৫৭৬৬। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমি হাওয
এর কাছে তোমাদের জন্য অগ্রগামী।
৫৭৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, উবায়াদুল্লাহ ইবনু মু’আয ও মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে-অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৬৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ আমি ‘হাওয’ (কাওসার)-এর কাছে
তোমাদের জন্য অগ্রগামী। যে সেখানে আসবে, সেই পান করবে। আর যে তা থেকে পান করবে, সে কখনো
পিপাসার্ত হবে না। আর আমার কাছে এমন কতক দল উপনীত হবে, যাদের আমি
চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার ও তাদের মাঝে বাধা সৃষ্টি করা
হবে। রাবী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেনঃ আমি যখন তাঁদের কাছে এ হাদীস বর্ণনা করি, তখন নূমান
ইবনু আবূ আয়্যাশ শুনে বললেন, তুমি কি সাহল (রাঃ)-কে এরুপই বলতে শুনেছো? তিনি বলেনঃ
আমি বললাম, হ্যা।
নূমান বললেন, আর
আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি অবশ্যই তাকে অতিরিক্ত রিওয়ায়াত করতে শুনেছি
যে, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, এরা তো আমার উম্মাত! তখন বলা হবে, আপনি তো
জানেন না, তারা
আপনার পরে কি আমল করেছে। তখন যারা আমার পরে (দ্বীনে) রদ-বদল করেছে, আমি তাদের
বলবঃ দূর হও, দূর
হও।
৫৭৬৯। হারুন ইবনু সাঈদ আয়লী (রহঃ) আবূ হাযিমের (রহঃ) মাধ্যমে সাহল (রাঃ)
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং নুমান ইবনু আবূ আয়্যাশ
(রহঃ)-এর মাধ্যমে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে (পূর্ববর্তী) ইয়াকুব (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৭৭০। দাঊদ ইবনু উমার যাব্বী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার
হাওয–এর দূরত্ব এক মাসের পথ, তার সকল কোণ এক সমান, তার পানি
রুপার চাইতে সাদা, তার
ঘাণ মেশক-এর চাইতে সুগন্ধি এবং তার পেয়ালার সংখ্যা আকাশের তারকার মত। যে ব্যক্তি
তা থেকে পান করবে, সে
তার পরে কখনো পিপাসার্ত হবে না। রাবী ইবনু আবূ মুলায়কা) বলেনঃ আর আসমা বিনত আবূ
বকর (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমি
হাওযের পাশে থাকব, যাতে
দেখতে পারি যে, তোমাদের
মধ্যে কারা আমার কাছে এল। আর আমার সামনে থেকে কিছু লোককে আটকানো হবে, তখন আমি
বলব, ইয়া
রব্ব! এরা তো আমার লোক এবং আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি- কি
জানেন না যে, আপনার
পরে এরা কি করেছে? আল্লাহর
কসম! এরা আপনার পরে এদের পিছনের দিকেই ফিরে গেছে রাবী (নাফি,) বলেনঃ তাই
বর্ণনাকারী ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলতেন, আয়, আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আমাদের
পিছনে ফিরে যাওয়া থেকে এবং আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে।
৫৭৭১। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সাহাবীগণের সন্মুখে বলতে
শুনেছি যে, আমি
‘হাওয’ এর কাছে তোমাদের মধ্য থেকে যারা আমার কাছে আসবে, তাদের
অপেক্ষায় থাকব। আল্লাহর কসম! আমার নিকট থেকে অবশ্যই কতক লোককে দূর করে দেয়া হবে।
তখন আমি বলব, আয়
রব্ব! (এরা তো) আমার-ই এবং আমার উম্মাতেরই (লোক)। আল্লাহ বলবেনঃ আপনি নিশ্চয়ই
জানেন না তারা আপনার পরে কি আমল করেছে। তারা তো তাদের পিছনের দিকেই ফিরে গিয়েছে।
৫৭৭২। ইউনূস ইবনু আবদুর আলা সাদাফী (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ আমি হাওয (কাওসার)
সম্পর্কে লোকদের আলোচনা করতে শুনতাম। কিন্তু আমি (নিজে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্বন্ধে কিছু শুনিনি। পরে যখন একদিন ঐ বিষয়ের আলোচনা এল, এ সময় একটি
মেয়ে আমার চুল আচড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্বোধন করতে শুনলামঃ হে লোক সকল-! তখন মেয়েটিকে আমি বললাম, তুমি আমার
থেকে দুরে সরে যাও। সে বলল, তিনি তো পুরুষদের ডাক দিয়েছেন এবং
স্ত্রীলোকদের ডাকেননি। আমি বললাম, আমিও তো লোকদের একজন। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ আমি তোমাদের জন্য ‘হাওয’ এর কাছে
অগ্রগামী হবো। তাই সাবধান আমার কাছে তোমাদের এমন কেউ যেন না আসে, যাকে আমার
কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দেওয়া হবে, যেমন হারানো উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর আমি বলতে
থাকব, কেন
তাদের তাড়ানো হচ্ছে?
তখন বলা হবে, আপনি
তো জানেন না, তারা
আপনার পরে কী নতুন বিষয়ের উদ্ভাবন করেছে? তখন আমিও বলব, দুর হও!
৫৭৭৩। আবূ মানে রাকাশী,আবূ বকর ইবনু নাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বারে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল। এ সময় উম্মে সালমা (রাঃ) চুল
আচড়াচ্ছিলেন। তখন তিনি কেশ বিন্যাসকারিণীকে বললেন , আমার মাথা আচড়ানো বন্ধ রাখ। তিনি অবশিষ্ট অংশ
রাবী কাসিম ইবনু আব্বাস (রাঃ)সুত্রে বুকায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
৫৭৭৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বাইরে এসে উহুদবাসীদের জন্য জানাযার সালাতের
ন্যায় সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বারের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি
তোমাদের জন্য অগ্রগামী এবং তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষী। আর আমি, আল্লাহর
কসম! এ মুহৃর্তে আমার হাওয দেখতে পাচ্ছি। আর আমাকে অবশ্যই পৃথিবীর ভাণ্ডার সমুহের
চাবিসমূহ অথবা বলেছেন,
চাবিসগূচ্ছ দেওয়া হয়েছে। আর আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি
না যে, তোমরা
আমার পরে শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়বে। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমরা
দুনিয়ার সম্পদের মোহে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়বে।
৫৭৭৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ (একদিন) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের জন্য
সালাত আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে আরোহণ করে জীবিত ও মৃতদের বিদায়দানকারীর ন্যায়
ইরশাদ করলেনঃ আমি হাওযের পাশে তোমাদের অগ্রগামী। আর জেনে রাখ, তার
প্রসস্হ যেমন ‘আয়লা’ থেকে ‘জোহফা-র’ দূরত্ব। আমি তোমাদের ব্যাপারে ভয় করি না যে, তোমরা আমার
পরে শিরক্ব শুরু করবে। তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে দুনিয়াকে ভয় করি যে, এর অর্জনের
প্রতিযোগিতায় তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়বে, আর পরস্পর হানাহানি করবে; ফলে তোমরা
বিনাশ হয়ে যাবে। যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা বিনাশ হয়েছে। উকবা (রাঃ) বলেনঃ এই ছিল
মিম্বরের উপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার শেষ দেখা।
৫৭৭৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ আমি ‘হাওযে-র কাছে তোমাদের অগ্রগামী। আর আমি অবশ্যই কতক দলের ব্যাপারে
বিতর্ক করব এবং আমি অবশ্যই তাদের ব্যাপারে পরাভূত হয়ে যাব। তখন আমি বলব, আয় রব্ব!
(এরা তো) আমার সহচর,
আমার সাথী। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না যে, তারা আপনার
পরে কি উদ্ভাবন করেছে?
৫৭৭৭। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত
সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি ‘আমার সহচর, আমার সাথী’ কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৭৭৮। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম এবং ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ
ওয়াইল (রহঃ) থেকে আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে পূর্বোক্ত আমেশ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে শুবা
(রহঃ) বর্ণিত হাদীসে মুগীরা সুত্রে রয়েছে আমি আবূ ওয়াইল (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি।
৫৭৭৯। সাঈদ ইবনু আমর আশআস ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুগীরা (রাঃ) ও আমাশ
(রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৭৮০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) হারিসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁর হাউয
মদিনা এবং সানআর মধ্যবর্তী দূরতের সমান। তারপর মুসতাওরিদ (রহঃ) তাঁকে বললেন, আপনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাত্র সন্মন্ধে আলোচনা শুনেছেন
কি? হারিসা
(রাঃ) উত্তর দিলেন,
না। তখন মুসতাওরিদ (রহঃ) বললেন, সেখানে নক্ষত্রের মত পাত্রসমূহ দেখা যাবে।
৫৭৮১। ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর আরা হারিসা ইবনু ওয়াহব খুযাঈ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি
এবং তিনি অনুরুপভাবে হাউযের বর্ণনা দিলেন। তবে তিনি মুসতাওরিদ ও তাঁর কথার উল্লেখ
করেননি।
৫৭৮২। আবূর রাবী যাহরানী এবং আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের
সামনে একটি হাউয থাকবে যার উভয় পার্শের দুরত্ব হবে জারবা ও আযরুহার মধ্যবর্তী
স্থানের সমান।
৫৭৮৩। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু
সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের সামনে এমন একটি হাউয থাকবে যার প্রসস্থতা জারবা এবং আযরুহার মধ্যবর্তী
দূরত্বের সমান। ইবনু মূসান্নার বর্ণনামতে আমার হাউয বর্ণিত হয়েছে।
৫৭৮৪। ইবনু নুমায়র ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উবায়দুল্লাহ হতে উল্লিখিত
হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন! তবে উবায়দুল্লাহ অতিরিক্ত বর্ণনা করেন। তিনি
বলেন আমি নাফি (রহঃ)-এর নিকট জারবা ও আযরুহা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, সিরিয়ার
অদুরে দুটি গ্রামের নাম। উভয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব তিন রাতের পথ। আর ইবনু বিশরের
বর্ণনামতে তিন দিনের পথ।
৫৭৮৫। সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে উবায়দুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৭৮৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সামনে একটি হাউয হবে যার
প্রশস্হতা জারবা ও আযরুহার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। সেখানে আকাশের নক্ষত্রের মতো
বহু পেয়ালা থাকবে। যে ব্যক্তি এখানে এসে ঐ হাউয থেকে পান করবে- পরে সে কখনো
পিপাসার্ত হবে না।
৫৭৮৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেছি, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! হাউযের পাত্র কত হবে? তিনি বললেন, যার কাবজায় আমার জীবন, তাঁর কসম!
সেই হাউযের পাত্র আকাশের নক্ষত্র ও তারকারাজির চেয়েও বেশি এমন রাতের- যার অন্ধকারে
কোন পরিবর্তন ঘটে না। ঐ পাত্র জান্নাতেরই পাত্র। যে ঐ পাত্র থেকে পান করবে, শেষ
পর্যন্ত আর পিপাসার্ত হবে না। ঐ হাউযের মধ্যে জান্নাত থেকে প্রবাহিত দুড়ি নালার
সংযোগ রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ হাউয থেকে পান করবে, সে আর পিপাসার্ত হবে না। সেই হাউযের দৈর্ঘ্য ও
প্রস্হ সমাল হবে। সেই হাউযের প্রশস্ততা আসমান থেকে আয়লার মধ্যবর্তী দুরতের সমান।
সেই হাউযের পানি দুধের চেয়ে বেশি সাদা এবং মধুর চেয়েও বেশি মিষ্টি।
৫৭৮৮। আবূ গাসসান মিসমাঈ , মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি আমার হাউযের পার্শে থাকবো। ইয়েমেনবাসীদের জন্য সাধারণ মানুষকে সরিয়ে
দেবো। আমি আমার লাঠি দিয়ে হাউযের পানির উপর আঘাত করবো যাতে তাদের উপর প্রবাহিত
হয়। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সে হাউযের প্রশস্ততা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমার এ স্হান থেকে আম্মানের দূরত্বের সমান। আবার সে
হাউযের পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। বললেনঃ দুধের চেয়ে বেশি সাদা ও মধুর চেয়ে
বেশি মিষ্টি। জান্নাত থেকে প্রবাহিত দু-টো নালা দিয়ে সে হাউযের মধ্যে পানি আসতে
থাকবে। তার একটি (নালা) সোনার এবং অপরটি রুপার। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কাতাদা
(রহঃ) হিশাম থেকে সাওবান (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা কেরেছেন। শুধু
এত টুকু পার্থক্য যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কিয়ামতের দিন হাউযের পাশেই
থাকবো।
৫৭৮৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) সাওবান (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে হাউযের হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি ইয়াহইয়া ইবনু হাম্মাদ
(রহঃ)-কে বললেন, আমি
আবূ আওয়ানা (রাঃ) থেকেও এই হাদীস শুনেছি। ইয়াহিয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) বললেন, আমি শু’বা
(রাঃ) থেকে এই হাদীস শুনেছি। তারপর আমি বলেছি যে, আপনি এ হাদীস সম্পর্কে আমাকে একটু সময় দিন, তিনি আমাকে
সময় দিলেন এবং আমাকে হাদীসটি শুনিয়ে দিলেন।
৫৭৯০। আবদুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই আমি আমার হাউয
থেকে কিছু সংখ্যক লোককে সরিয়ে দেবো, যেভাবে অপরিচিত উট সরিয়ে দেয়া হয়। উবায়দুল্লাহ
ইবনু মুয়্যয (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের অনুরুপ হাদীস বলেছেন।
৫৭৯১। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউযের প্রশস্ততার পরিমাণ আয়লা এবং
ইয়েমনের সানআর দূরত্বের সমান। আর সেখানে পানির পাত্রগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত
অগণিত।
৫৭৯২। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যি হাডযের পার্শে এমন কিছু লোক আসবে
যারা দুনিয়াতে আমার সাহচর্য লাভ করেছিল। এমন কি যখন আমি তাদের দেখতে পাব এবং
তাদেরকে আমার সম্মুখে নিয়ে আনা হবে, তখন আমার নিকট আসতে তাদের বাধা দেওয়া হবে।
তারপর আমি বলব, আয়
রব্ব! এরা আমার-সাথী,
এরা আমার সাথী। তখন আমাকে বলা হবে, অবশ্য আপনি জানেন না, আপনার পর
এরা কিরুপ বিদআত করেছে।
৫৭৯৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আলী ইবনু হুজর ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস (রাঃ)
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একই অর্থের হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এতে অতিরিক্ত রয়েছে তার পাত্রগুলোর সংখ্যা নক্ষত্রের মত।
৫৭৯৪। আসিম ইবনু নাযর তামীমী ও হুরায়ম ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার হাউযের দুই পার্শের দূরত্ব
এতটা, যতটা
দূরত্ব মদিনা ও সান’আর মধ্যে।
৫৭৯৫। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। পার্থক্য শুধূ এতটুকু যে, এই হাদীসে
বর্ণনাকারীদ্বয় সন্দেহ করে বলেছেন, ‘অথবা মদিনা ও উলানের দূরত্বের সমান।’
৫৭৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রুযযী (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাউযের নিকট আকাশের তারকারাজির
মতো অসংখ্য স্বর্ণ ও রোপ্যের পানপাত্র দেখতে পাবে। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ)সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। এতে অতিরিক্ত রয়েছে- অথবা আকাশের নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও অধিক।’
৫৭৯৭। ওয়ালীদ ইবনু হুজা ইবনু ওয়ালীদ আস-সুকুনী (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)
হতে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাউযের নিকট আমি তোমাদের অগ্রগামী হবো।
এর দুপাশের দুরত্ব সানআ ও আয়লার দূত্বের সমান। তার পাত্রগুলো যেন নক্ষত্রের মতো।
৫৭৯৮। কুতাহাবা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আমির ইবনু সা’দ
ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। বলেনঃ আমি আমার গোলাম নাফির মাধ্যমে জাবির
ইবনু সামুরার নিকট লিখে পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কোন হাদীস সম্পর্কে অবহিত করুন
যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। তিনি বলেনঃ তারপর
তিনি আমাকে লিখেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমি হাউযের
উপর তোমাদের অগ্রগামী থাকবো।’
৫৭৯৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ উসামা (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, আমি
উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডানে এবং বামে দুই
ব্যক্তিকে দেখতে পাই। তাঁদের পরনে সাদা পোশাক ছিল। এর আগে বা পরে তাঁদেরকে আর
কখনো দেখি নি। আসলে তাঁরা ছিলেন জিবরাঈল ও মিকাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
৫৮০০। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেন, উহুদ
যুদ্ধে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডানে ও নামে দুই
ব্যক্তিকে দেখতে পাই,
যাদের পরনে ছিল সাদা পোশাক। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর পক্ষে যুদ্ধ করছিলেন, ঘোরতর যুদ্ধ করছিলেন। এর আগে ও পরে আমি তাঁদের
দেখি নি।
৫৮০১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ রবী
আতাকী ও আবূ কামিল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষের মধ্যে অতি সুন্দর, অতি দানশীল
এবং শ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাতে মদিনাবাসীরা ঘাবড়িয়ে পড়েছিল। যেদিক থেকে শব্দ
আসছিল, লোকেরা
সেদিকে ছুটে চলল। পথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তাদের
সাক্ষাত হয় ও তখন তিনি ফিরে আসছিলেন। কারণ শব্দের দিকে প্রথম তিনই ছুটে গিয়েছিলেন।
তখন তিনি আবূ তালহা (রাঃ)-এর জ্বীনবিহীন ঘোড়ায় আরোহিত ছিলেন। তার কাঁধে তরবারি
ছিল। তিনি বলছিলেনঃ তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা তীত হয়ো না। তিনি আরো বললেনঃ আমি এ
ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মতো। অথবা বললেন, এ তো সমুদ্র। ইতিপূর্বে এ ঘোড়ার গতি ছিল ধীর।
৫৮০২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন
এক সময় মদিনায় ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তালহা
(রাঃ)-এর একটি ঘোড়া চেয়ে নিলেন। এটিকে ‘মনদূব’ বলা হতো। তিনি তার উপর আরোহণ করলেন।
তাঁরপর বললেনঃ আমি ভয়ের কোন কারণ দেখতে পাই নি। আর এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মতো
পেয়েছি।
৫৮০৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ইবনু বাশশার ও ইয়াহইয়াঁ ইবনু হাবীব (রহঃ) শুবা
(রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনু জাঁফরের হাদীসে আমাদের ঘোড়ার কথা
বলা হয়েছে, আবূ
তালহা (রাঃ)-এর কথা বলা হয় নি। খালিদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা
হয়েছে, আমি
আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছি।
৫৮০৪। মানসূর ইবনু আবূ মুযাহির ও আবূ ইমরান মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দানশীলতায় সবচেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে রমযান মাসে তাঁর
দানশীলতা অত্যধিক হতো। কেননা জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছর রমযান মাসে
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। রমযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামনে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। যখন জিবরাঈল (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তার সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি ছড়িয়ে পড়া বাতাসের চেয়েও অধিক দান
করতেন। আবূ কুরায়ব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৫৮০৫। সাঈদ ইবনু মানসূর ও আবূ রবী- (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি দশ বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমত
করেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কখনো আমাকে উহ শব্দও বলেন নি এবং কোন সময় আমাকে এটা কেন
করলে-, ‘ওটা
কেন কর নি তাও বলেন নি। আবূ রবী (রহঃ) অতিরিক্ত বলেছেনঃ কোন বিষয় সম্পর্কে যা
খাদিমের করা উচিত নয়’ এবং তার বর্ণনায় আল্লাহর কসমের উল্লেখ নেই।
৫৮০৬। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮০৭। আহমদ ইবনু হাম্বল ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় তাশরীফ আনেন
তখন আবূ তালহা (রাঃ) হাত ধরে আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত হলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছেলে, সে আপনার
খিদমত করবে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি সফর ও ইকামত অবস্হায় তাঁর খিদমত করেছি। আল্লাহর
কসম! আমি যে কোন কাজই করেছি, কেন তুমি এটি এমন করলে, এ রকম তিনি
বলেন নি। আর যে কোন কাজই আমি করি নি, কেন তুমি এটি এমন কর নি এরকমও বলেন নি।
৫৮০৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আমি নয় বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত
করেছি। আমার জানা নেই,
তিনি কখনো আমাকে বলেছেন, ‘কেন তুমি এ কাজ করলে?’, এবং কোন
বিষয়ে আমাকে কখনো দোষারোপও করেন নি।
৫৮০৯। আবূ মাআন রাক্কাশী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে, বর্নিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। একদিন তিনি আমাকে একটি
কাজে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যাব না। অথচ আমার অন্তরে ছিল
যে কাজে আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিয়েছেন, আমি সে
কাজে যাব। তারপর আমি বের হয়ে ছেলেদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা বাজারে খেলা করছিল।
ছুঠাৎ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিয়ে এসে আমার ঘাড়
ধরলেন। আনাস বলেনঃ আমি তাঁর দিকে তাকালাম তখন তিনি হাসছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ
হে উনায়স! তুমি কি ওখানে গিয়েছিলে, যেখানে তোমাকে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলাম? তিনি বলেনঃ
আমি বললাম, হ্যা, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমি অবশ্যই যাচ্ছি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি নয় বছর তাঁর
খিদমত করেছি, কিন্তু
আমার জানানাই, কোন
কাজ আমি করেছি সে সম্পর্কে বলেন নি এমন এমন কেন করলে কিংবা কোন কাজ করি নি, সে
সম্পর্কে বলেন নি, অমুক
অমুক কাজ কেন করলে না।
৫৮১০। শায়বান ইবনু ফররুখ ও আবূ রবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে উত্তম
চরিত্রের অধিকারী।
৫৮১১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কেউ
কিছু চাইলে কোন দিন তিনি না- বলেন নি।
৫৮১২। আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) মুহাযাম্মাদ ইবনু মূনকাদির
(রহঃ) সুত্রে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন।
৫৮১৩। আসিম ইবনু নযর তায়মী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ
কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে দিতেন। আনাস(রাঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো। তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দিলেন যাতে
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্হান পূর্ণ হয়ে যারে। তারপর সে ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের
কাছে গিয়ে তাদের বললো- হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যার পর আর অভাবের ভয়
থাকে না।
৫৮১৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক
ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে দুই পাহাড়ের
মধ্যবর্তী ছাগলগুলো চাইলে তিনি তাকে তা দিয়ে দিলেন। তারপর সে ব্যক্তি তার
সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গিয়ে বললো, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর।
আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি দান করেন যে, তারপর আর
অভাবের ভয় থাকে না। আনাস (রাঃ) বলেনঃ মানুষ যদি শুধু দুনিয়ার উদ্দেশ্যে মুসলমান হয়, তরে সে
ততক্ষন পর্যন্ত প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষন ইসলাম তার কাছে দুনিয়া এবং
দুনিয়ার সমস্ত সম্পদের চেয়ে বেশি প্রিয় না হবে।
৫৮১৫। আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ করেন।
তারপর তাঁর সঙ্গে যে মুসলমানরা ছিলেন, তাদের নিয়ে তিনি বের হন। আর তাঁরা সকলেই
হুনায়নে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনের এবং মুসলমানদের সাহায্য
করেন। ঐ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাযওয়ান ইবনু উমাইয়াকে
একশ- উট দান করেন। তারপর একশ উট, আবার আরেক শ- উট দান করেন। ইবনু শিহাব (রহঃ)
বলেনঃ সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যিব (রাঃ) আমাকে বলেছেনঃ যে, সাফওয়ান (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দান করলেন এবং এমন পরিমাণে আমাকে দান করলেন
যে, আমার
দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি ছিলেন, অথচ আমাকে লাগাতার দান করতে থাকলেন, এমন কি
তিনি আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি হয়ে গেলেন।
৫৮১৬। আমরুন-নাকিদ, ইসহাক ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমাদের নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে, তাহলে
তোমাকে এত, এত, এত পরিমাণ
দিব এবং তিনি উভয় হাত মিলিয়ে ইশারা করলেন। তারপর বাহরাইন থেকে মাল আসার পূবেই
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হয়ে যায়। পরে আবূ বকর
(রাঃ)-এর নিকট বাহরাইন থেকে মাল আসে। তিনি একজন ঘোষককে এই মর্মে ঘোষণা দেওয়ার
নির্দেশ দিলেন যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর যার কিছু ওয়াদা অথবা ঋণ রয়েছে, সে যেন তা
নিতে আসে। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বলেছিলেন যে, যদি
বাহরাইন থেকে আমাদের নিকট মাল আসে, তাহলে তোমাকে এত, এত, এত পরিমাণ দিব। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) এক
অঞ্জলি উঠালেন এবং বললেন, গুণে দেখ। আমি তা গুণে দেখলাম তাতে পাঁচশ
রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, এর আরো দ্বিগুন তুমি নিয়ে নাও।
৫৮১৭। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন এবং
আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট আলা ইবনু হাযরামীর পক্ষ থেকে মাল এল তখন আবূ বাকর (রাঃ)
ঘোষনা দিলেন যার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ঋন আছে
অথবা অঙ্গীকার রয়েছে,
সে যেন আমার নিকট আসে। বাকী হাদীস ইবনু উয়ায়নার অনুরুপ।
৫৮১৮। হাদ্দাব ইবনু খালিদ ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
রাত্রে আমারএকটি সন্তান জন্মলাভ করে, আমি তার নাম আমার পিতা ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর নামে রাখি। তারপর তিনি ঐ সন্তানকে উম্মে সাইফ নামক একজন মহিলা কে
দিলেন। তিনি ছিলেন একজন কর্মকারের স্ত্রী। কর্মকারের নাম আবূ সাইফ। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আবূ সাইফ-এর নিকট যাচ্ছিলেন আর আমিও তার
সাথে যাচ্ছিলাম। যখন আমরা আবূ সাইফের ঘরে উপস্থিত হই, তখন সে তার
হাপর বা ফিলানীতে ফু দিচ্ছিল, পূর্ণ ঘর ধোঁয়ায় ভরপুর ছিল।। আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগে দৌড়ে গিয়ে আবূ সাইফকে বললাম, তুমি একটু
অপেক্ষা কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ এনেছেন। সে
অপেক্ষা করল তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেকে ডাকালেন এবং তাকে
জড়িয়ে ধরলেন এবং যা আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে, তা বললেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি ঐ ছেলেকে
দেখলাম, সে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে বড় বড় শ্বাস ফেলছিল। তা
দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুই চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়েছিল।
তখন তিনি বললেনঃ চোখ কাঁদছে, মন ব্যথিত হচ্ছে, মুখে আমরা কিছু বলছি না; কিন্তু
রাব্বূল আলামীন যা পছন্দ করেন। হে ইবরাহীম! আল্লাহর কসম! আমরা তোমার কারণে খুবই
দুঃখিত।
৫৮১৯। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শিশুদের প্রতি বেশি দয়া প্রদর্শনকারী কাউকে আমি দেখিনি। তিনি
বলেনঃ (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ছেলে) ইবরাহীম(রাঃ) মদিনার
গ্রামাঞ্চলে দুধপান করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে
যেতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে যেতাম। তিনি দাইয়ের ঘরে প্রবেশ করতেন, আর সেখানে
ধোঁয়া হতো। কেননা তার বংশ কর্মকার ছিল। তিনি ছেলেকে কোলে নিতেন এবং স্নেহ করতেন।
পরে তিনি ফিরে আসতেন। আমর ইবনু সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ যখন ইবরাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইবরাহীম আমার পুত্র, দুধপান করা
অবস্হায় ইন্তেকাল করেছে। তার জন্য দু-জন দাই রয়েছে, যারা জান্নাতে তাকে দুধপান করার সময়সীমা
পর্যন্ত দুধপান করাবে।
৫৮২০। আবূ বাকর ইবনু শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গ্রাম্য কিছু আরবী
লোক এলো। তারা জিজ্ঞাসা করল, আপনারা কি আপনাদের শিশুদের স্নেহ করেন? উপস্থিত
সকলে বললেন, হ্যা।
তখন তারা বললেন, কিন্তু
আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের স্নেহ করি না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি করবো, আল্লাহ তোমাদের থেকে দয়া দূর করে নিয়েছেন। ইবনু
নূমায়রের রিওয়ায়াতে আছে, তোমার অন্তসমূহ থেকে।
৫৮২১। আমরুন-নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
দেখলেন যে, তিনি
(ইমাম) হাসান (রাঃ)-কে স্নেহ করছেন। তখন আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) বলেনঃ ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমার দশটি সন্তান রয়েছে। আমি তাদের কাউকে স্নেহ করি নি। তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা দয়া করে না (আল্লাহ
কর্তৃক) তাদের প্রতি দয়া করা হবে না।
৫৮২২। আবদ ইবনু হুমায়দ আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮২৩। যূহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু মানসুর, ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম, আবূ
কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না।
৫৮২৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু আবূ উমার ও আহমদ ইবনু আবদা (রহঃ) জারীর
(রাঃ) থেকে আমাশের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৮২৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয, যুবায়র ইবনু হারব মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও
আহমদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দানশীন কুমারীর চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। আর
যখন তিনি কোন বস্তুকে অপছন্দ করতেন, আমরা তাঁর চেহারা মুবারক থেকে তা আচ করতে
পারতাম।
৫৮২৬। যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে
বর্নিত। তিনি বলেছেনঃ আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর নিকট গিয়েছিলাম যখন
মুআবিয়া (রাঃ) কুফায় এসেছিলেন। মুআবিয়া (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়ে বললেন, তিনি অশ্লীল ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বলতেন না।
মুআবিয়া (রাঃ) আরো বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যার চরিত্র ভাল। উসমান বললেন, যখন তিনি
মুআবিয়া (রাঃ)-এর সঙ্গে কুফায় এসেছিলেন।
৫৮২৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আমাশ
(রহঃ) থেকে একটু সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮২৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সিমাক ইবনু হারব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বসতেন? তিনি বললেন, হ্যা, অনেকবার। তিনি ফজরের সালাত যেখানে আদায় করতেন, সূর্যোদয়ের
সেখান থেকে উঠতেন না। তারপর যখন সূর্য উঠতো, তখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন। লোকেরা কথাবার্তা বলতো, জাহেলী
যুগের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো এবং হাসতো আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসতেন।
৫৮২৯। আবূ রবী আতাকী, হামিদ ইবনু উমর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল (রহঃ) আনাস(রাঃ)
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আনজাশাহ নামক একজন
হাবশী ক্রীতদাস গীত গাইছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে
আনজালাহ! ধীরে চল এবং উটগুলোকে কাচপাত্রবাহী উটের মতো (সতর্কতার সাথে) হাঁকাও।
৫৮৩০। আবূ রবী আতাকী, হামিদ ইবনু উমর ও আবূ কামিল (রহঃ) আনাস (রাঃ)
সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৩১। আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সহধর্মিনাদের কাছে এলেন। আনজাশাহ নামক একজন উট
চালক তাঁদের উটকে হাকাচ্ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি নিপাত যাও, ওহে
আনজাশাহ! কাঁচপাত্র চল। আবূ কিলাবা বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এমন কথা বলেছেন যা তোমাদের কেউ বললে তাকে দোষারোপ করা হতো।
৫৮৩২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কামিল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ উম্মূ সুলাইম (রাঃ)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সহধর্মিনাদের সঙ্গে ছিলেন এবং একজন উট চালক তাঁদের উট হাকাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে আনজাশাহ! কাঁচপাত্র নিয়ে ধিরে চালাও।
৫৮৩৩। ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একজন সূকণ্ঠ গায়ক ছিল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ধীরে চল, ওহে
আনজাশাহ! কাঁচপাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেলো না। অর্থাৎ কোন নারীদের (কষ্ট দিও না)।
৫৮৩৪। ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তবে সূকণ্ঠ গায়ক, কথাটি উল্লেখ করেননি।
৫৮৩৫। মুজাহিদ ইবনু মূসা, আবূ বাকর ইবনু নযর ইবনু আবূ নযর এবং হারুন ইবনু
আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোরের সালাত আদায় করতেন তখন মদিনার খাদিমরা
তাদের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসত। তাঁর কাছে কোন পাত্র আনা হলে তিনি তাতে হাত
ডুবিয়ে দিতেন। আর শীতের দিনেও কখনো কখনো তিনি হাত ডূবিয়ে দিতেন।
৫৮৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
দেখেছি ক্ষোরকার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চুল মুড়াচ্ছে আর
সাহাবীরা তার চারপাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল যেন মাটিতে না পড়ে যায়, যেন কারো
না কারো হাতে পড়ে।
৫৮৩৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলার
বুদ্ধিতে কিছু ক্রটি ছিল। সে বললো, ইয়া রাসুলাল্লাহু! আপনার সাথে আমার প্রয়োজন
আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের মা! তুমি কোন
গলি দেখে নাও, আমি
তোমার কাজ করে দেব। তারপর তিনি কোন পথের মধ্যে তার সাথে নির্জনে দেখা করলে সে তার
কাজ সেরে নিল।
৫৮৩৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে দু-টো বিষয়ের কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন, যদি না তা দোষের হতো। আর যদি তা দুষনীয় হতো, তবে তিনি তা থেকে সকলের চাইতে দুরে থাকতেন।
নিজের জন্য তিনি কোন দিন প্রতি শোধ গ্রহণ করতেন না, তবে
মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হলে (প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন)।
৫৮৩৯। যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আহমাদ ইবনু আবদা, হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) উক্ত সনদে মালিক (রাঃ)-এর অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৫৮৪০। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সামনে এমন দুটৈা বিষয়ের ইখতিয়ার দেওয়া হতো যার একটি অপরটির চেয়ে সহজ, তখন তিনি সহজটিকেই গ্রহণ করতেন, যদি তা দোষের না হতো। আর দোষের হলে তিনি তা
থেকে সর্বাধিক দুরে থাকতেন।
৫৮৪১। আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র
(রহঃ) হিশাম (রাঃ) সূত্রে উক্ত সনদে বর্নিত দু-টোর মধ্যে সহজটি- পর্যন্ত বর্ণনা
করেন এবং তারা উভয়ে পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি।
৫৮৪২। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর নিজ হাতে কোন দিন কাউকে মারেন নি, কোন
স্ত্রীলোককেও না, খাদিমকেও না, আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া। আর যে তার ক্ষতি করেছে, তার থেকে প্রতিশোধও গ্রহণ করেননি। তবে মহীয়ান ও
গরীয়ান আল্লাহর মর্যাদা হানিকর কোন কিছু করলে তিনি তার প্রতিশোধ নিয়েছেন।
৫৮৪৩। আবূ বাকর-ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব
(রহঃ) একই সনদে হিশাম থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তাঁদের একে অন্য থেকে কিছু অতিরিক্ত
বর্ণনা করেছেন।
৫৮৪৪। আমর ইবনু হাম্মাদ ইবনু
তালহা কান্নাদ (রহঃ) জাবির ইবনু সামূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যোহরের সালাত আদায় করলাম।
তারপর তিনি তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলেন, আমিও
তাঁর সঙ্গে বের হলাম। সামনে কয়েকটি শিশু এলো। তিনি একজন একজন করে এদের প্রত্যেকের
গালে হাত বুলালেন। রাবী বলেনঃ তিনি আমার গালেও হাত বুলালেন। আমি তাঁর হাতে এমন
শীতলতা ও সূগন্ধি পেয়েছি যেন তিনি খুশবুওয়ালার পাত্র থেকে হাত বের করেছেন।
৫৮৪৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
যুহায়র ইবনু হারব আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (মূবারক দেহের) চেয়ে বেশি সুগন্ধিময় কোন আম্বর, মেশক বা অন্য কোন বস্তুর আমি মনে গ্রহণ করি নি
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (মুবারক দেহের) চেয়ে কোমল
কোন রেশম বা মোলায়েম কাপড় আমি স্পর্শ করিনি।
৫৮৪৬। আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু
সাখর দারিমী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ফর্সা উজ্জুল বর্নের। তাঁর ঘাম যেন মুক্তা। তিনি চলার সময়
সামনের দিকে দিকে চলতেন। আমি মোলায়েম কাপড় বা রেশমকেও তাঁর (মুবারক) হাতের তালূর
মতো নরম পাইনি এবং মেশক ও আম্বরের মধ্যেও আমি ঐ সুগন্ধ পাইনি যা আমি তাঁর মুবারক
দেহে পেয়েছি।
৫৮৪৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন। তিনি ঘামছিলেন আর আমার মা
একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে
উম্মে সূলায়ম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ আপনার ঘাম, যা
আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা
সুগন্ধি।
৫৮৪৮। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলায়মের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন আর উখে সুলায়ম তখন
ঘরে থাকতেন না। আনাস (রাঃ) বলেনঃ একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘূমালেন। অতঃপর
তিনি (উম্মে সূলায়ম) এলে তাকে বলা হল, ইনি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার ঘরে, তোমার
বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ উম্মে সুলায়ম ঘরে এলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন
ঘেমেছিলেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার
উপর জমেছিল। উম্মে সুলায়ম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে
লাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘূম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কি করছ, হে
উম্মে সুলায়ম! তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের
শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ ভাল করেছ।
৫৮৪৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) উম্মে সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন। উমে সুলায়ম তার
জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর ‘কায়লুলা- করতেন। তিনি খুব ঘামতেন আর
উম্মে সুলায়ম তা জমা করতেন এবং সুগন্ধির শিশিতে তা রাখতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে উমে সুলায়ম! এ কী করছ? তিনি
বললেন, আপনার ঘাম, আমি তা সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে রাখি।
৫৮৫০। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ শীতের দিনে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল হভো আর তাঁর কপাল বেয়ে ঘাম
পড়তো।
৫৮৫১। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা,আবূ কুরায়ব ও মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন, আপনার
কাছে ওহী কী ভাবে আসে? তিনি বললেনঃ কখনো তা আসে
ঘন্টার ধ্বনির মতো আর তা আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়। তারপর ওহী থেমে যায়, আর আমি শিখে নই। আবার কখনো (ওহী নিয়ে) পূরুষের
বেশে এক ফিরিশ্তা আসেন এবং তিনি যা বলেন আমি তা শিখে নই।
৫৮৫২। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তিনি বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যখন ওহী আসতো তখন তাতে তাঁর খুব কষ্ট হতো
এবং তার চেহারা মূবারক মলিন হয়ে যেতো।
৫৮৫৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর উপর যখন ওহী নাযিল হতো তখন তিনি মাথা নিচু করে ফেলতেন এবং তাঁর
সাহাবীরাও মাথা নিচু করতেন। তারপর যখন ওহী শেষ হয়ে যেতো, তিনি তাঁর মাথা তুলতেন।
৫৮৫৪। মানসূর ইবনু আবূ
মুযাহিম ও মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ আহলে কিতাবরা তাদের কেশ কপালের উপর ঝূলিয়ে রাখতো, আর মুশরিকরা কাটতো। যে বিষয়ে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি কোন আদেশ আসতো না, সে বিষয়ে তিনি আহলে কিতাবদের অনুসরণ করা পছন্দ
করতেন। তাই তিনি তাঁর কেশ মুবারক কপালে ঝূলিয়ে রাখেন এবং পরবর্তী সময় সিঁথি কাটতে
থাকেন। আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৫৮৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মুনান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মধ্যম আকৃতির পুরুষ। তাঁর উভয়
কাঁধের দুরত্ব ছিল অল্প বেশি। চুল ছিল কানের লতিকা পর্যন্ত লম্বিত। তিনি লাল পোশাক
পরিহিত ছিলেন। তাঁর চেয়ে সুন্দর কিছু আমি কখনো দেখি নি।
৫৮৫৬। আমরুন-নাকিদ ও আবূ
কুরায়ব (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ চুলওয়ালা, লাল পোশাক পরিহিত কোন লোককে আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে সুন্দর দেখিনি। তাঁর চুল কাঁধ স্পর্শ
করতো। উভয় কাঁধের মধ্যে অল্প দূরত্ব ছিল। তিনি লম্বাও ছিলেন না, বেঁটেও ছিলেন না। আবূ কুরায়ব বলেন তাঁর চুল।
৫৮৫৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আলা (রহঃ) বারা- (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার চেয়ে সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলেন, আর তিনি ছিলেন সবার চাইতে উত্তম চরিত্রের
অধিকারী। তিনি খুব লম্বাও ছিলেন না, বেঁটেও
ছিলেন না।
৫৮৫৮। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে
জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কেশ কেমন ছিল? তিনি
বললেন, মধ্যম।- না খুব কোকড়ানো, আর না একেবারে সোজা, তা ছিল দু-কাঁধ এবং দু-কানের মাঝ বরাবর।
৫৮৫৯। যুহায়র ইবনু হারব ও
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কেশ দু-কাঁধের মাঝামাঝি ঝূলে থাকতো।
৫৮৬০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কেশ মুবারক কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঝূলান ছিল।
৫৮৬১। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না এবং মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন প্রশস্ত মুখ, টানটানা চোখ এবং সূষম গোড়ালী বিশিষ্ট।
বর্ণনাকারী শুবা (রহঃ) সিমাক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, প্রশস্থ
মুখ কেমন? তিনি বললেন, বড় মুখ। শুবা বলেনঃ আমি বললাম, টানা চোখ কেমন? তিনি
বললেন, চোখ দুটো দীঘল দীর্ঘ ডাগর।
তিনি বলেন যে, আমি বললাম, সুষম গোড়ালী কেমন? তিনি বললেন, হালকা
গোড়ালী।
৫৮৬২। সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) আবূ তুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যা, ভিনি
ছিলেন ফর্সা, লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী।
মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ)বলেনঃ একশ হিজরীতে আবূ তুফায়ল (রাঃ) ইন্তেকাল করেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগে সাহাবীদের মধ্যে তিনই সর্বশেষে
ইন্তেকাল করেন।
৫৮৬৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর
কাওয়ারীরী (রহঃ) আবূ তুফায়েল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি। আমি ছাড়া এমন কেউ দুনিয়ায় আর অবশিষ্ট নেই। রাবী বলেনঃ আমি
বললাম, তাঁকে কেমন দেখেছেন? তিনি বললেনঃ ফর্সা, লাবণ্যময় এবং মধ্যমাকৃতির।
৫৮৬৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আমরুন-নাকিদ
(রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
খেযাব (কলপ) লাগাতেন? তিনি বললেনঃ না এতখানি
বার্ধক্য তার মাঝে দেখা দেয় নি। তবে ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেনঃ তিনি যেন কম করছিলেন।
অবশ্য আবূ বাকর ও উমর (রাঃ) মেহদী এবং নীল রঙের কলপ লাগিয়েছেন।
৫৮৬৫। মুহাম্মাদ ইবনু বাককার
ইবনু রায়য়্যান (রহঃ) ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খেযাব ব্যবহার করেছিলেন? উত্তরে
তিনি বললেন (তিনি) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেযাব ব্যবহারের সময়ে
পৌছোনি। অতঃপর তিনি বললেন, তাঁর দাড়িতে কিছু লে সাদা
ছিল। রাবী বললেন, আমি তাকে আনাস(রাঃ)-কে,-বললাম, আবূ
বকর (রাঃ) কি খেযাব ব্যবহার করেছিলেন? উত্তরে
তিনি বললেন, হ্যা, মেহদী ও নীলের দ্বারা।
৫৮৬৬। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির
(রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু সীরীন (রহঃ) আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলপ দিতেন? তিনি বললেন তাঁর মাঝে
সামান্য মাত্র বার্ধক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল।
৫৮৬৭। আবূ রবী আতাকী (রহঃ)
বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কলপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করলে তার মাথার সাদা চুল গুণে ফেলতে
পারতাম। তিনি বলেনঃ তিনি কলপ দেন নি। অবশ্য আবূ বকর (রাঃ) মেহদী এবং নীল রঙ দিয়ে
কলপ দিয়েছেন। আর উমর (রাঃ) শুধু মেহদী দিয়ে কলপ দিয়েছেন।
৫৮৬৮। নসর ইবনু আলী জাহযামী
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কারো চুল ও দাঁড়ির সাদা কেশ
উপড়িয়ে ফেলা মাকরুহ। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলপ দেন নি।
কিছু সাদা ছিল তাঁর অধরের নীচের ছোট দাঁড়িতে, কানপটিতে
কিছু, আর মাথায় কিছু, মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) এ সনদই এ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৫৮৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, ইবনু বাশশার, আহমদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী ও হারুন ইবনু
আবদুল্লাহ (রহঃ) এরা সবাই বর্ননা করেন যে, আনাস
(রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বার্ধক্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা
হলো। তিনি বললেন, তাঁকে আল্লাহ বার্ধক্য
দ্বারা পরিবর্তিত করেননি।
৫৮৭০। আহমাদ ইবনু ইউনুস ও
ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এতটুকু সাদা হতে দেখেছি এবং
যুহায়র (রহঃ) তার কটি অংশুলি ছোট দাঁড়িতে রেখে বলতে লাগলেন; তখন লোকেরা আবূ জুহায়ফাকে বললো, সে দিন আপনি কি অবস্হায় ছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি তীর ঠিক করছিলাম এবং তীরে শর
লাগাচ্ছিলাম।
৫৮৭১। ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা
(রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি তার রং ছিল ফর্সা, তিনি
প্রায় বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) দেখতে
তাঁর সদৃশ ছিলেন।
৫৮৭২। সাঈদ ইবনু মানসূর ও
ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে এ হাদীসটই বর্ণনা করেছেন; কিন্তু বর্ণনাকারীরা ফর্সা এবং বুড়ো হয়ে
গিয়েছিলেন’ এ কথাগুলো উল্লেখ করেননি।
৫৮৭৩। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু
সামুরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেনঃ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বার্ধক্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, যখন তিনি মাথায় তেল দিতেন, তখন সাদা বর্ণ দেখা যেত না। তবে যখন তেল দিতেন
না তখন দেখা যেতো।
৫৮৭৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল এবং দাঁড়ির সম্মুখভাগ সাদা হয়ে গিয়েছিল।
যখন তিনি তেল দিতেন, (সাদা লে) তখন দেখা যেত না, আর যখন চুল এলোমেলো হতো, তখন (শুভ্রতা) দেখা যেতো। তাঁর চুল খুব ঘন
ছিল। এক ব্যক্তি বললো, তাঁর চেহারা মুবারক ছিল
তলোয়ারের মত। জাবির (রাঃ) বললেন, না, তার চেহারা মুবারক ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মত
(উজ্জ্বল) গোলাকার। তাঁর বাহব উপর আমি কবুতরের ডিমের মত নবুওয়াতের মোহর দেখেছি।
এটির রং ছিল তাঁর শরীরের রংয়ের সদৃশ।
৫৮৭৫। মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিঠে মোহরে নুবুওয়াত দেখেছি, যেন কবুতরের ডিম।
৫৮৭৬। ইবনু নুমায়র (রহঃ)
সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮৭৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার
খালা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি
বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি আমার
বোনের ছেলে। সে অসুস্হ তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের
দু’আ করলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমি তাঁর উযুর পানি থেকে পান
করলাম। তাঁর পেছনে দাড়ালাম এবং তাঁর দুকাঁধের মাঝে মোহরে নূবুওয়াত দেখতে পেলাম
হাজালা ডিমের মতো।
৫৮৭৮। আবূ কামিল, সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ ও হামিদ ইবনু উমর আল বাকরাবী
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি এবং তাঁর সঙ্গে গোশত ও কটি খেয়েছি অথবা
বলেছেন সারীদ- (খেয়েছি)। তিনি বলেন যে, আমি
তাঁকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যা, তোমার জন্যও। পরে এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ ‘ক্ষমা
প্রার্থনা কর তোমার পাপের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের জন্য’ (৪৭ –১৯)।
আবদুল্লাহ বলেনঃ তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে
গেলাম আর মোহরে নূবুওয়াত দেখলাম, দু-কাঁধের মাঝে বামপাশের
বালূর হাড়ের কাছে অংগুলির মতো, যাতে তিলক ছিল।
৫৮৭৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি লম্বাও ছিলেন না বা বেশি খাটোও ছিলেন না। একেবারে সাদাও
ছিলেন না এবং অতিরিক্ত ফর্সাও ছিলেন না। তার চুল অতিরিক্ত কোকড়ানোও ছিলো না এবং
একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নুবুওয়াত দান করেন।
এরপর তিনি মক্কায় দশ বছর অবস্হান করেন এবং মদিনায় দশ বছর। ষাট বছরের মাথায় আল্লাহ
তা আলা তাঁকে ওফাত দান করেন। এ সময় তার মাথায় ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা ছিল না।
৫৮৮০। ইয়াইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আলী ইবনু হুজর ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তাঁরা
তাদের হাদীসে ‘উজ্জ্বল সাদা বর্ণের ছিল’ অতিরিক্ত বলেছেন।
৫৮৮১। আবূ গাসসান আর রাবী
মুহাম্মাদ ইবনু আমর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যু হয়েছে তেষট্টিবছর বয়সে,আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এরও তেষট্টি বছর বয়সে, উমর (রাঃ)-এরও তেষট্টি বছর বয়সে।
৫৮৮২। আব্দুল মালিক ইবনু
শুআয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকাল হল, তখন
তাঁর বয়স তেষট্টি বছর। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) আমাকে
অনুরুপ বর্ণনা অবহিত করেছেন।
৫৮৮৩। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
ও আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে দু-টো সনদের দ্বারা উকায়ল-এর
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৮৮৪। আবূ মামার ইসমাঈল ইবনু
ইবরাহীম হুযালী (রহঃ) আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উরওয়াকে জিজ্ঞাসা
করলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন দশ বছর। রাবী বলেনঃ আমি বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো বলেনঃ তেরো বছর।
৫৮৮৫। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি উরওয়া (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত
দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন দশ বছর। রাবী
বলেনঃ আমি বললাম, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তো বলেন
দশ বছরের অধিক। রাবী বলেনঃ ইবনু আব্বাসের জন্য দু’আ করলেন এবং বললেন- তিনি এ তথ্য
কবিদের কথা থেকে নিয়েছেন।
৫৮৮৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও
হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কায় তের বছর ছিলেন এবং তেষট্টি বছর বয়সে তাঁর ওফাত হয়।
৫৮৮৭। ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তের বছর মক্কায় অবস্হান করে ছিলেন, তখন
তাঁর উপর ওহী নাযিল হয়। আর মদিনায় দশ বছর ছিলেন। তিনি ইন্তেকাল করেন যখন তাঁর বয়স
তেষট্টি বছর।
৫৮৮৮। আবদুল্লাহ ইবনু উমর
ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান আল যুফী (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
আমি আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রাঃ) এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন লোকেরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বয়স নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। তাদের কেউ কেউ
বললো, আবূ বকর (রাঃ) (বয়সে)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেয়ে বড় ছিলেন। আবদুল্লাহ (রাঃ)
বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় তখন তাঁর বহাস তেষট্টি বছর, আবূ বকর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর বয়সও
তেষট্টি বছর, উমর (রাঃ) শহীদ হন তখন তাঁর
বয়স তেষট্টি বছর। রাবী বলেন লোকদের ভেতর আমর ইবনু সা’দ নামক একজন বললো, জারীর আমাকে বলেছেন যে, আমরা মুআবিয়া (রাঃ)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম।
লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বয়সের উল্লেখ করলো। তখন মু’আবিয়া
(রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হব তখন তঁরে বয়স তেষট্টি বছর, আবূ বকর (রাঃ) ইন্তেকাল করেন তাঁর বয়স তেষট্টি
বছর, উমর (রাঃ) শহীদ হন তখন তাঁর বয়সও তেষট্টি বছর।
৫৮৮৯। ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি
মুআবিয়া (রাঃ)-কে ভাষণ দিতে শুনেছেন। মুআবিয়া (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর ইন্তেকাল হয় তখন তাঁর বয়স ভেষট্টি বছর, আবূ
বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-ও তেষট্টি বছর (বয়সে ইন্তেকাল করেন)। আমি তেষট্টি বছর
(বয়সের)।
৫৮৯০। ইবনু মিনহাল দারীর
(রহঃ) বনূ হাশিমের ক্রীতদাস আম্মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু আব্বাস
(রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
ইন্তেকাল করেন তখন তাঁর (বয়স) কত ছিল? ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি ভাবি নি যে, তুমি তাঁর সম্প্রদায়ের লোক হয়েও এ কথটিা জানবে
না। আমি বললাম, আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেঢেন। তাই এ বিষয়ে
আপনাকে জিজ্ঞাসা করাই আমি বেশি ভাল মনে করলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি কি হিসাব জান? তিনি বলেনঃ আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, আচ্ছা চল্লিশ- মনে রেখো। এ সময় তিনি রাসুল হন।
এর সঙ্গে পনেরো বছর যোগ কর, যখন মক্কায় অবস্হান করেন
সংশয় এবং নিরাপত্তায়। আরো দশ হিজরতের পর থেকে মদিনায়।
৫৮৯১। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইয়াযীদ ইবনু যুরাঈ-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
৫৮৯২। নাসর ইবনু আলী (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পঁয়ষট্টি বছর বয়সের ইহলোক ত্যাগ করেন। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)-এ
সনদে খালিদ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫৮৯৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পনেরো বছর অবস্হান করেন, সাত বছর শব্দ শুনতেন এবং আলো দেখতেন, কিছু অন্য কিছু দেখতেন না। আর আট বছর তার কাছে
ওহী আসতো। তারপর মদিনায় অবস্হান করেন দশ বছর।
৫৮৯৪। যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ)
জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মুহাম্মা (প্রশংসিত), আমি আহমদ (অত্যধিক প্রশংসাকারী), আমি আল মাহী (বিলুপ্তকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার
মাধ্যমে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি আল হাশির (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকদের সমবেত করা হবে। আমি আল আকিব
(সর্বশেষ), আর আল আকীব ঐ ব্যক্তি, যার পর কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নেই।
৫৮৯৫। হারামালা ইবনু ইয়াইয়া
(রহঃ) যুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার অনেক নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমদ, আমি
আলমাহী (বিলোপ সাধনকারী) ঐ ব্যক্তি যে, আমার
মাধ্যমে আল্লাহ কুফরকে বিলূপ্ত করবেন। আমি আল-হাশির (সমবেতকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার
পায়ের কাছে লোকেরা সমবেত হবে। আমি আন-আকীব (সমাপ্তি), এমন ব্যক্তি, যার
পর কেউ নেই এবং আল্লাহ তার নাম রেখেছেন রাঊফ ও রাহীম।
৫৮৯৬। আবদুল মালিক ইবনু
ওয়াইব ইবনু লাইস, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ
ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
শুয়ায়ব এবং মা-মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে -আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি’ উল্লেখ রয়েছে; এবং
মা-মারের হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেনঃ আমি যুহুরী
(রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল আকিব কী? তিনি বললেন, এমন
ব্যক্তি যার পর আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেই।, মামার ও উকায়ল-এর হাদীসে আছে ‘আল কাফরাহ’, আর যুবায়ব-এর হাদীসের রয়েছে ‘আল কাফরা’
৫৮৯৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
হানযালী (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের নাম গুলো আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহমদ, আল
মুকাফফী (সর্বশেষ), আল হাশির (সমবেতকারী), তাওবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
রহমতের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
৫৮৯৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একটি কাজ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম করলেন এবং এটি চালূ রাখলেন। এ খবর তাঁর কতক সাহাবার কাছে পৌছলে
তাঁরা এ কাজটি অপছন্দ করলেন এবং এ থেকে বিরত রইলেন। এ কথা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ
লোকদের কি হল, তাদের কাছে এ সংবাদ পৌছেছে
যে, একটা কাজ আমি অনুমোদন করেছি, এরপরও তারা একে খারাপ মনে করছে আর এ থেকে বিরত
থাকছে? আল্লাহর কসম! আল্লাহকে আমি
সবচেয়ে বেশি জানি এবং আল্লাহকে তাদের চেয়ে বেশি ভয় করি।
৫৮৯৯। আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে সনদে জারীর (রাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা
করেছেন।।
৫৯০০। আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একটি কাজকে বৈধ করলেন, একজন তা খারাপ মনে করলো। এ
কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলে তিনি রাগান্বিত হলেন; এমন কি তাঁর চেহারায় ক্রোধ প্রকাশিত হলো। তখন
তিনি বললেনঃ লোকদের কী হলো যে, আমার জন্যে অনুমোদিত একটা
কাজে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহর কসম? অবশ্যই
আমি আল্লাহকে তাদের চেয়ে বেশি জানি এবং বেশি ভয় করি।
৫৯০১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও
মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আনসারদের এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে যুবায়র (রাঃ)-এর সঙ্গে পানি সেচের আল হাররার নালা
নিয়ে তর্ক করলো, যা থেকে তারা খেজুর গাছে
পানি দিত। আনসার লোকটি বলল, পানি ছেড়ে দাও, প্রবহমান থাকুক। যুবায়র (রাঃ) মানলেন না। শেষ
পর্যন্ত সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে তর্ক করলে
তিনি যুবায়রকে বললেন, হে যুবায়র! তুমি পানি
ব্যবহার করে তোমার পড়শীর জন্য ছেড়ে দাও। তখন আনসার লোকটি রেগে গিয়ে বল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যুবায়র তো আপনার ফূফাতো ভাই!
এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারার রং বদলে গেলো। তিনি বললেনঃ
হে যুবায়র! নিজের গাছগুলোকে পানি দাও এবং পানি আটকে রাখো, যতক্ষন না পানি বাঁধ পর্যন্ত পৌছে যায়। যুবায়র
(রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমার মনে হয় এ আয়াত সে সম্পকেই অবতীর্ণ হয়ঃ ‘তোমার
প্রতিপালকের শপথ! তারা ঈমানদার হতে পারবে না (৪ -৬৫)।
৫৯০২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
তুজিবী (রহঃ) আবদুর রহমান ও সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে
বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছেন, আমি তোমাদের যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক এবং যা তোমাদের আদেশ করেছি, তা থেকে যা সম্ভব তা পালন কর। কারণ তোমাদের
পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে প্রশ্নের আধিক্য এবং নিজ নাবীদের (নবীদের) সাথে
মতবিরোধ।
৫৯০৩। মুহাম্মাদ ইবনু আহমদ
ইবনু আবূ খালফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯০৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইবনু নূমায়র, কুতায়বা
ইবনু সাঈদ, ইবনু আবূ উমর, উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা সকলেই বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমি তোমাদের জন্য যা ছেড়ে দিয়েছি, তা তোমরা পরিত্যাগ কর’।
হুমাম (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, যে ব্যাপারে তোমাদের ছাড়
দেয়া হয়েছে’। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে, তারপর তাঁরা এবং আবূ সালামা (রহঃ)-এর হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫৯০৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী সে ব্যক্তি, যে এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে যা মুসলিমদের জন্য
হারাম ছিলনা। আর তার প্রমাণ করার কারণে সে বিষয়টি মুসলমানদের উপর হারাম করে দেওয়া
হয়।
৫৯০৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ
শায়বা, ইবনু আবূ উমর ও মুহাম্মাদ
ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী মুসলমান সেই, যে মুসলমানদের জন্য যা হারাম নয়, এমন বিষয়ে প্রশ্ন করে আর সে বিষয়টি তার প্রশ্ন
করার কারণে লোকদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়। মুসলিম শরীফ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) থেকে এবং আবদ ইবনু হুমায়দ মামার থেকে উভয়ে উক্ত সনদে যুহরী (রহঃ) থেকে
বর্ণনা করেন। তবে মাহমার-এর হাদীসে যুহরীর রিওয়াতে অতিরিক্ত রয়েছে, কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং তার
খুঁটিনাটি জানতে চায়’। ইবনু সা-দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত ইউনূসের হাদীসে রয়েছে যে, যুহরী (রহঃ) বলেছেন, আমের ইবনু সা’দ, সা’দ
(রহঃ) থেকে শুনেছেন।
৫৯০৭। মাহমূদ ইবনু গায়লান, মুহাম্মদ ইবনু কুদামাহ সূলামী এবং ইয়াহইয়া ইবনু
মুহাম্মাদ লুলুয়ী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তাঁর
সাহাবীদের কোন কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলো।
তখন তিনি এক ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ আমার সন্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়।
আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি আর দেখি নি। আমি যা জানতে পেরেছি তা যদি তোমরা জানতে, তবে অবশ্যই তোমরা খুবই কম হাসতে এবং বেশি
কাদতে। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের উপর এর চেয়ে ভয়াবহ কোন দিন আর আসে নি। তারা
নিজেদের মাথা ঢেকে ফেলল এবং তাদের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসতে লাগলো। আনাস (রাঃ)
বলেনঃ তারপর উমর (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন, আমরা
সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহকে রব্ব হিসেবে, ইসলামকে
দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে মেনে নিলাম। রাবী বলেনঃ এরপর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, আমার পিতা কে? তিনি
বললেনঃ তোমার পিতা অমুকা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে
প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে।’
৫৯০৮। মুহাম্মদ ইবনু মামার
ইবনু রিবঈ কায়সী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি
বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার পিতা কে? তিনি
বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। আর তখনই অবতীর্ণ হয়ঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে
প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে আয়াতের শেষ পর্যন্ত (৫-১০১)।
৫৯০৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারামালা ইবনু ইমরান তূজীবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলার পর বাইরে এলেন এবং লোকদের নিয়ে যোহরের সালাত আদায়
করলেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন মিম্বরে উঠে কিয়ামতের আলোচনা করলেন এবং উল্লেখ করলেন
যে, এর আগে অনেক বড় বড় ব্যাপার সংঘটিত হবে। এরপর
বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে চায়, সে যেন সে সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করে। আল্লহর
কসম! যতক্ষন পর্যন্ত আমি এ স্থানে রয়েছি, ততক্ষন
তোমরা আমাকে যে বিষয়েই প্রশ্ন করবে, আমি
তা বলে দিব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ এ কথা শুনে লোকেরা খুবই কান্নাকাটি শুরু
করে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারংবার বলতে থাকলেন, আমাকে প্রশ্ন কর। তখন আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা
(রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমার পিতা কে? ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা
হুযাফাহ। এরপর যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারংবার বলতে থাকলেন
আমাকে প্রশ্ন কর। তখন উমর (রাঃ) হাটু গেড়ে বসে বললেনঃ সন্তুষ্ট চিত্তে আমরা
আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছি। আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) বলেনঃ উমর (রাঃ) যখন এ কথা বললেন, তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন। রাবী বলেনঃ এরপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিপদ সন্নিকটে। মুহাম্মাদের
প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! এ দেয়ালটির পাশে
এখনই আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়। অতএব আজকের মত ভাল এবং মন্দ
আমি আর দেখি নি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেনঃ উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবাহ
আমাকে বলেছেন, তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু
হুযাফার মা আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফাকে বলেছেন, তোর
চেয়ে বেশি অবাধ্য কোন সন্তানের কথা আমি দেখিনি নি। তুই কি এ কথা থেকে নিশ্চিন্ত
ছিলি যে, তোর মাও হয়ত এমন কোন পাপ করে
বসেছে যা জাহেলী যুগের রমনারা করতো, আর
তুই তোর মাকে লোকদের সামনে অপমান করতিস! আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা (রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর কসম! যদি তিনি আমাকে একটা কাল হাবশীর
সাথেও সস্পর্কিত করতেন তবে আমি তা গ্রহণ করে নিতাম।
৫৯১০। আবদ ইবনু হুমায়দ ও
আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং উবায়দুল্লাহব হাদীসটি এর সঙ্গে
রয়েছে তবে শুআয়ব সুত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাকে
জনৈক আলিম ব্যক্তি হাদীস শুনিয়েছেন, নিশ্চয়ই
আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফার মা ইউনুসের হাদীসের অনুরুপ বলেছেন।
৫৯১১। ইউসুফ ইবনু হাম্মাদ মানী
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন প্রশ্ন করতে লাগল। এমনকি
তারা তাঁকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেললো। তখন একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে মিম্বরে উঠে বললেনঃ আমাকে জিজ্ঞাসা কর, যে কোন বিষয়ে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে আমি
অবশ্যই তোমাদের বর্ণনা করে দেব। লোকেরা একথা শুনে তাঁকে প্রশ্ন করা থেকে মুখ বন্ধ
রাখল এবং ঘাবড়িয়ে গেল, না জানি সম্মুখে কোন বিষয়
উপস্থিত সূয়ে পড়ে! আনাস (রাঃ) বলেন আমি ডানে বাঁয়ে দেখতে লাগলাম। সব মানুষ নিজ নিজ
মাথা কাপড়ে ঢেকে কাঁদছিল। তখন মসজিদ থেকে একজন লোক উঠল যাকে ঝগড়া লাগলে তার পিতা
ব্যতীত অন্যের দিকে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। সে বলল, হে
আল্লাহর নাবী! কে আমার পিতা? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা এরপর উমর (রাঃ) উঠে বললেন, আমরা সন্তুষ্টটিত্তে আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রাসুল হিসেবে মেনে নিলাম। আর আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি
ফিতনার অকল্যাণ থেকে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেনঃ
আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি কখনো দেখি নি। আমার সন্মুখে জান্নাত ও জাহান্নামের
চিত্র তুলে ধরা হয়। তাই আমি উভয়টিকে এ দেয়ালের পাশে দেখতে পাই।
৫৯১২। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আসিম ইবনু নাযর তায়মী
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে এ ঘটনাই বর্ণনা করেছেন।
৫৯১৩। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ
আশ আরী ও মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা
হয় যা তিনি পছন্দ করেননি। যখন এ ধরনের প্রশ্ন অত্যধিক করা হলো, তিনি রাগাম্বিত হয়ে লোকদের বললেনঃ যা ইচ্ছে, তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর। এক ব্যক্তি বললো, কে আমার পিতা? তিনি
বললেন, তোমার পিতা হুযাফা। আরেক
ব্যক্তি দাড়িয়ে বললো ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে আমার পিতা? তিনি
বললেনঃ তোমার পিতা শায়বার আযাদকৃত গোলাম সলিম। উমর (রাঃ) যখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারায় রাগের লক্ষণ দেখতে পেলেন, তখন বললেন, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! আমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। আবূ কুরায়ব (রহঃ)-এর বর্ণনায় (শুধু
এটূকু) আছে, বললো, কে আমার পিতা, ইয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শায়বার
আযাদকৃত গোলাম সালিম।
৫৯১৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
সাকাফী ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খেজুর গাছের পাশে দাঁড়ানো
লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এরা কি করছে? লোকেরা বললো, এরা প্রজনন করছে। নরকে মাদী (কেশর) লাগায় এতে
তা গর্ভবতী হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি মনে
করি না এতে কোন উপকার হয়। রাবী বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ মন্তব্য সাহাবাদের কাছে পৌছলে তারা প্রজনন
কর্ম বন্ধ করে দিল। এরপর এ খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
দেওয়া হলো। তিনি বললেনঃ এতে যদি তাদের উপকার হয়ে থাকে, তবে তারা করুক। আমি তো একটা ধারণা করেছি মাত্র।
অতএব তোমরা আমার ধারণাকে অবলম্বন করো না। কিস্তু আমি যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন
কথা বলি, তবে তার উপর আমল করো। কেননা
আমি মহীয়ান ও গরীয়ান আল্লাহর প্রতি কখনই মিথ্যারোপ করবো না।
৫৯১৫। আবদুল্লাহ ইবনু রুমী
ইয়ামামী, আব্বাস ইবনু আব্দুল আযীম
আনবারী ও আহমদ ইবনু জাফর মাকিরী (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করলেন। লোকেরা খেজুর গাছ
তাবীর করত। রাযী বলেনঃ অর্থাৎ খেজুর গাছকে গর্ভদান করত। তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি করছ? তারা বলছেন- আমরা এরুপ করে আসছি। তিনি বললেনঃ
তোমরা এমন না করলেই বোধ হয় ভাল হয়। রাবী বললেন, সূতরাং
তারা তা বর্জন করল। আর এতে খেজুর ঝরে পড়ল অথবা রাবী বলেছেন, তার উৎপাদন কমে গেল। রাবী বলেনঃ লোকেলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ ঘটনা বলল। তখন তিনি বললেন, নিঃসন্দে হে আমি তো একজন মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে
যখন তোমাদের আমি কোন আদেশ দেই, তখন তোমরা তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার মতানূসারে বলি, তখন তো আমি একজন মানুষ মাত্র। রাবী ইকরামা
(রহঃ) বলেনঃ অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ বলেছেন। আর মাকিরী
(রহঃ) সন্দেহ ব্যতিরেকে কেবল নাফাযাত- (ঝরে পড়ল) বলেছেন।
৫৯১৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে এবং ভিন্ন সুত্রে আনাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গাছে গর্ভদানরত কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তিনি বললেন, যদি এটা না কর তাহলে ভাল হবে। লোকেরা তা করল
না। এতে চিটা খেজুর উৎপন্ন হলো। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের খেজুর গাছের কি হলো? লোকেরা বললো, আপনি
এমন এমন বলেছিলেন (তা করায় এরুপ হয়েছে)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের পার্থিব বিষয়ে তোমরাই অধিক অবগত।
৫৯১৭। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এটা আবূ হুরায়রা
(রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি কতকগুলো হাদীস উল্লেখ করলেন। তার
মধ্য থেকে একটি হাদীস হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুহাম্মাদের প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! তোমাদের কারো উপর এমন এক সময় আসবে
যখন সে আমাকে দেখতে পাবে না আর আমার দর্শন লাভ তার কাছে তখন তার ধন-ঐশ্বর্য্য ও
পরিবার-পরিজনের চেয়েও প্রিয় হবে। আবূ ইসহাক বলেনঃ এর মধ্যে আমার নিকট অর্থ হলো
নিশ্চয়ই আমাকে দেখা তাদের কাছে তার পরিবার ও ধন-সম্পদ থেকে অধিকতর প্রিয় হবে এবং
ওটা আমার নিকট অগ্র-পশ্চাৎ করা হয়েছে।
৫৯১৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমি
মরিয়ম তনয়ের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী। নাবীগণ পরস্পরে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা সমতূল্য। আর
আমার ও তাঁর মধ্যে কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেই।
৫৯১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সবচেয়ে নিকটবর্তী।
নাবীগণ পরস্পরে বৈমাত্রেয় ভ্রাতা সমতুল্য। আর আমার ও ঈসার মধ্যে কোন নাবী নেই।
৫৯২০। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বরেন, ইহ ও পরজগতে আমি ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সবচেয়ে নিকটবর্তী লোকেরা বললো, কেমনে হে আল্লাহর রাসুল! তখন
তিনি বললেনঃ নাবীগণ একই পিতার সন্তানের মত। তাদের মা বিভিন্ন। তাঁদের দ্বীন একটই।
আর তাঁর এবং আমার মধ্যে কোন নাবীও নেই।
৫৯২১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন নবজাতক নেই যাকে শয়তান স্পর্শ না করে আর সে নবজাত
শিশু শয়তানের পরশে চিৎকার করতে শুরু করে।শুধু মরিয়ম তনয় এবং তাঁর মাতা ছাড়া। এরপর
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ তোমাদের ইচ্ছে হলে পড়ঃ ‘নিশ্চয়ই আমি অভিশপ্ত শয়তান হতে
তাঁর ও তাঁর বংশধরদের জন্য তোমার স্মরণ নিচ্ছি– (৩:৩৬)। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও
আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) মুহুরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা
করেছেন, এবং তাঁরা বলেনঃ জন্মের সময়ে
তাকে স্পর্শ করে, তখন শয়তানের ছোঁয়ায় সে
চিৎকার জুড়ে দেয়।’ শুয়াইবের হাদীসে রয়েছে ‘শয়তানের ছোঁয়া।’
৫৯২২। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত।
তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক আদম সন্তানকেই শয়তান ছুঁয়ে দেয়, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করে, শুধু মারিয়াম ও তাঁর ছেলে ব্যতীত।
৫৯২৩। শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি ভূমিষ্ট হওয়ার সময় সন্তানের চিৎকার শয়তানের একটি খোচার
কারণে।
৫৯২৪। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মরিয়ম পূত্র ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে
চুরি করতে দেখলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি
চুরি করেছ। সে বললো, কখনো না। যিনি ব্যতীত আর কোন
ইলাহ নেই, তাঁর শপথ (আমি চুরি করি নি)। তখন ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্হাপন করলাম আর আমি
নিজেকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলাম।
৫৯২৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও আলী ইবনু হুজর সা’দী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, হে সৃষ্টির সেরা! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি তো ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
৫৯২৬। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯২৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯২৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) খাতনা করেছেন কুড়াল জাতীয় অস্ত্র দিয়ে, তখন
তাঁর বয়স ছিল আশি বছর।
৫৯২৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চেয়ে অধিকতর সন্দেহ
প্রবণ। যখন তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি কিভাবে মৃতকে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। তিনি বললেনঃ তুমি কি তবে বিশ্বাস
কর নি? তিনি বললেনঃ কেন করব না, তবে তা কেবল আমার চিত্ত-প্রশান্তির জন্য (২
-২৬০)। লুত (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আল্লাহ রহম করুন, তিনি শক্ত-কঠিন স্তম্ভের আশ্রয় চাইতেন। আমি যদি
ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সমান সময় কারাগারে বন্দী থাকতাম, তবে আহবানকারীর ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতাম।
৫৯৩০। ইনশা আল্লাহ আবদুল্লাহ
ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইউনুস সুত্রে যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসের মর্মে হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩১। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেনঃ লূত (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন, তিনি শক্ত-কঠিন স্তম্ভের আশ্রয় চেয়েছিলেন।
৫৯৩২। আবূ তাহির (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) কখনো মিথ্যা বলেন নি; তিনবার
ব্যতীত। দুবার আল্লাহ সস্পর্কিত। একবার তো তিনি বলেছিলেনঃ আমি অসুস্হ আর তাঁর কথা, ‘বরং এদের বড়টাই একাজ করেছে আরেকটা সারা-
সম্পর্কে। যখন তিনি এক অত্যাচারীর দেশে গিয়েছিলেন, সারাও
সঙ্গে ছিলেন। সারা ছিলেন সেরা সুন্দরী। তখন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সারাকে
বললেন, এ অত্যাচারী রাজা যদি জানতে
পারে যে, তুমি আমার স্ত্রী, তবে তোমাকে ছিনিয়ে নেবে। কাজেই তোমাকে যদি কেউ
প্রশ্ন করে, তুমি বলবে যে, তুমি আমার বোন। ইসলামের দিক দিয়ে তুমি তো আমার
বোনই হও। কেননা তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম আছে বলে আমার জানা নেই।
যখন ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে অত্যাচারীর দেশে পৌছলেন, তখন রাজার লোকজন তাঁর কাছে নারীকে দেখতে পেয়ে
রাজার কাছে এসে বলল, আপনার দেশে এমন একজন
স্ত্রীলোক এসেছে, আপনই শুধু তার উপযুক্ত। রাজা
সারাকে ডেকে পাঠালে ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে দাড়িয়ে গেলেন। সারা যখন
রাজার কাছে পৌছলেন, সে সম্মোহিতের মত সারার দিকে
হাত বাড়াতেই তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এটে গেলো। রাজা বললো, তুমি আল্লাহর কাছে আমার হাত খূলে যাওয়ার জন্য
দুআ কর, আমি তোমাকে বিরক্ত করবো না।
তিনি দুআ করলেন। পূনরায় সে হাত বাড়াল, তখন
প্রথম মুষ্টির চেয়ে অধিক শক্ত হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। সারাকে সে আগের মতই
বললো। তিনি দুআ করলেন। পুনরায় সে হাত বাড়াল। তখন প্রথম দুবারের চেয়ে আরো অধিক
কঠিনভাবে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। তখন রাজা বললো, তুমি আল্লাহর কাছে আমার হাত খুলে দেয়ার জন্য
দুআ কর। আল্লাহর কসম, তোমাকে আমি উত্যক্ত করব না।
তিনি দুআ করলেন। তার হাত খূলে গেলো। তখন সে ঐ লোকটিকে ডাকলো যে সারাকে এনেছিলো।
বললো, তূই তো আমার কাছে শয়তান নিয়ে
এসেছিস, মানুষ আনিস নি। একে আমার দেশ
থেকে বের করে দে। সাথে হাজেরাকে দিয়ে দে। বর্ণনাকারী বলেনঃ সারা এগিয়ে চললেন।
ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদের দেখে এগিয়ে এলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ঘটল? তিনি
বললেন, ভালোই আল্লাহ তাআলা আমার উপর
থেকে এই দুষ্টের হাতকে ফিরিয়ে রেখেছেন। আর একটা সেবিকাও দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেনঃ এই সেবিকাই তোমাদের মা, হে
পানির সন্তানেরা!
৫৯৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলরা উলংগ হয়ে গোসল করত ও একে
অপরের লজ্জা স্হান দেখত। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একাকী গোসল করতেন। লোকেরা বলত, মূসা আমাদের সাথে গোসল করে না। কারণ তার
অণ্ডকোষে রোগ আছে। রাবী বলেনঃ একবার মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাথরের উপর কাপড়
রেখে গোসল করেছিলেন। তখন পাথরটি তাঁর কাপড় চোপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও ‘পাথর আমার কাপড় দে’, ‘পাথর
আমার কাপড় দে’ বলে পাথরটির পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলেন, এতে বনী ইসরাঈল তাঁর গোপনাঙ্গ দেখে ফেলল এবং
বলল, আল্লাহর কসম! মূসার তো কোন রোগ নেই! এরপর
পাথরটি থেমে গেলো, যখন ভালোভাবে তা দৃষ্টিগোচর
হলো। রাবী বলেনঃ অতঃপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাপড় নিলেন এবং পাথরটিকে মারতে
আরম্ভ করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! এ পাথরটির গায়ে মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর মারের ছয় কি সাতটি দাগ হয়েছে।
৫৯৩৪। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
হারিসী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
অত্যন্ত লজ্জাশীল ব্যক্তি ছিলেনা রাবী বলেনঃ অতঃপর তাঁকে (কেউ) বিবস্ত্র দেখেনি।
তিনি আরো বললেন, বনী ইসরাঈলরা বললো, মূসার অণ্ডকোষ রোগাক্রান্ত। রাবী বললেন, একবার তিনি পানিতে গোসল করলেন এবং কাপড় একটা
পাথরের উপর রাখলেন। পাথরটি দৌড়ে চলতে লাগলো। তিনি তাঁর লাঠি হাতে পাথরটিকে মারতে
মারতে এর পিছু পিছু চললেন। বলতে লাগলেন, হে
পাথর আমার কাপড়, হে পাথর আমার কাপড়! পাথরটি
বনী ইসরাঈলের এক লোক সমাবেশে গিয়ে থামলো। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ হে
ঈমানদারগণ তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কষ্ট দিয়েছে।
তাদের দেওয়া অপবাদ থেকে আল্লাহ তাঁকে মুক্ত করেছেন, আর
তিনি আল্লাহর নিকট ছিলেন সম্মানিত (৩৩:৬৯)।’
৫৯৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মালাকুল
মাঊতকে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে পাঠানো হয়েছিল। যখন ফিরিশতা তার কাছে
এলেন তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে একটা থাপ্পড় মারলেন। এতে তাঁর একটা চোখ
নষ্ট হয়ে গেল। এরপর আল্লাহর কাছে ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার কাছে পাঠিয়েছেন যে
মরতে চায় না। রাবী বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ফিরিশতার চোখ ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, আবার তাঁর নিকট যাও এবং তাকে বল, সে যেন তাঁর হাত একটি বলদের পিঠের উপর রাখে।
এতে যতগুলো পশম তাঁর হাতের নীচে পড়বে, প্রতিটি
পশমের বদলে সে এক বছর জীবিত থাকবে। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে প্রভূ! এরপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, এরপর
মরণ। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা
হলে এখনই। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র
ভূমির একটি টিলার নিকটবতীঁ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ যদি আমি ওখানে হতাম তা হলে রাস্তার পাশে লাল বালির কাছে মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম।
৫৯৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মালাকুল মাঊত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বললো, মূসা, তোমার
প্রভুর কাছে চলো। রাবী বলেনঃ তখন তাঁর চোখের উপর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে
একটা থাপ্পড় মারলেন, এতে তাঁর চোখ নষ্ট করে
ফেলেছিলেন। এরপর ফিরিশতা আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার কাছে
পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না এবং সে আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তাঁর চোখ
ভালো করে দিলেন এবং বললেন, আমার বান্দার কাছে আবার যাও
এবং বল, তুমি কি আরও হায়াত চাও? যদি তা চাও তবে তোমার হাত একটি বলদের পিঠের উপর
রাখ। এতে তোমার হাত যতগুলো পশম ঢেকে ফেলবে, তত
বছর তুমি বেঁচে থাকবে। মূসা বললেন, এরপর
কি? আল্লাহ বললেন, এরপর
মৃত্যু বরণ করবে। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে
এখনই ভালো। আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমির একটি পাথরের টিলার নিকটে নিয়ে মৃত্যু দান করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি যদি ওখানে
হতাম তবে পথের কিনারে লাল বালূকা স্তূপের পাশে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম। আবূ
ইসহাক (রাঃ) মামার (রহঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, এক
ইয়াহুদী কিছু মাল বিক্রি করছিল, মূল্য দেওইয়া হলে সে তাতে
সন্তুষ্ট হলো না, অথবা এটাকে খারাপ মনে করল।
বলল, না হবে না, তাঁর
শপথ যিনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মানুষদের জন্য মনোনীত করেছেন। এ কথা এক
আনসারী শুনতে পেয়ে ইয়াহুদীর মুখে একটি থাপ্পড় মারলেন এবং বললেন, তুই বলিস, মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে লোকদের ভেতর হতে মনোনীত করেছেন অথচ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ্যমান রয়েছেন! ঐ ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে
আবূল কাসিম! আমি যিম্মী এবং মুসলিম রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মানুষ। আমাকে অমুক
ব্যক্তি থাপ্পড় মেরেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা
করলেন, কেন ভূমি তার মুখে থাপ্পড়
দিলে? আনসারী বললেন, হে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সে বলেছে, যিনি মানুষের মাঝে মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মনোনীত করেছেন। অথচ আপনি আমাদের মাঝে রয়েছেন। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব রাগাম্বিত হলেন।
রাগের চিহ্ন তাঁর চেহারায় ফূটে উঠলো। বললেন নাবীদের (নবীদের) মধ্যে একজনকে অপরজনের
উপর মর্যাদা দিও না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিংগায় ফৃৎকার দেয়া হবে, তখন আসমান ও যমীনের সবাই বেহুশ হয়ে পড়বে শুধু
আল্লাহ যাদের চাইবেন তাঁরা ছাড়া। পরে দ্বিতীয়বার যখন ফূৎকার দেওয়া হবে, তখন আমিই সর্বপ্রথম উপস্থিত হব এবং দেখতে পাব
যে, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আরশ ধরে রয়েছেন। আমার
জানা নেই যে, তুর পাহাড়ে তাঁর বেহুশ
হওয়াটাই তার এখনকার বেহুশনা হওয়ার কারণ, না
আমার আগেই তাঁকে অহি দান করা হয়েছে? আর
আমি এ কথাও বলি না যে, কোনো পয়গাম্বর ইউনূস ইবনু
মাত্তা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ)
আবদুল আযীয ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৯৩৮। যুহায়র ইবনু হারব এবং
আবূ বকর ইবনু নযর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ইয়াহুদী ও
এক মুসলমান গালাগালি করল। মুসলমান বললো, তাঁর
শপথ! যিনি সারা জাহানের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মনোনীত
করেছেন। ইয়াহুদী বলল, শপথ তাঁর, যিনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে মনোনীত
করেছেন সারা জাহানের -মধ্যে! রাবী বলেনঃ এমন সময় মুসলমান হাত তূলল এবং ইয়াহুদীটির
মুখে থাপ্পড় মারল। এরপর ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে গেল এবং তার ও মুসলমানের ঘটনা বলল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর মর্যাদা দিও না।
কারণ লোকেরা বেহুশ হবে। সর্বপ্রথম আমিই হুশ ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরশ ধরে রয়েছেন।
জানি না তিনি কি বেহুশ হয়ে আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি যারা বেহুশ হননি, তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত।
৫৯৩৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর
রহমান দারিমী এবং আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ এক মুসলমান ও এক ইয়াহুদী গালাগালি করলো- এরপর ইবরাহীম ইবনু সাঈদ ইবনু শিহাব
হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
৫৯৪০। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, তার
মুখে থাপ্পড় দেয়া হয়েছে- যুহরীর হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি
শুধু এ কথাই বলেছেন যে, জানি না তিনি কি বেঁহুশ হয়ে
আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়েছেন, না কি বেহুশই তাঁর জন্য
যথেষ্ট হয়েছে।
৫৯৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাবীদের (নবীদের) মধ্যে একের
উপরে অন্যকে শ্রেষ্ঠ মনে কর না এবং ইবনু নুমায়রের হাদীসে আছে, আমর ইবনু ইয়াহইয়া তাঁর পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
৫৯৪২। হাদ্দাব ইবনু খালিদ
এবং শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে
রাতে আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে গেলাম। লাল বালূকা স্তূপের কাছে
তাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।
৫৯৪৩। আলী ইবনু খাশরাম, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম
করলাম, তখন তিনি তার কবরে সালাত
আদায় করছিলেন। ঈসার হাদীসে রয়েছে আমাকে যে রাতে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সে রাতে
আমি অতিক্রম করছিলাম।
৫৯৪৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা বলেছেন, আমার
কোন বান্দার পক্ষেই বলা উচিৎ নয় যে, ‘ইউনুস
ইবনু মাত্তা থেকে আমি উত্তম।’ইবনু আবূ শায়বা বলেনঃ মুহাম্মদ ইবনু জাফর শুবা থেকে
বর্ণনা করেছেন।
৫৯৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচাত ভাই
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার পক্ষেই এ কথা বলা উচিত নয়, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম।’ ইউনুস
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এখানে তাঁর পিতা মাত্তার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।
৫৯৪৬। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু
সাঈদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলা হলো, ইয়া
রাসুলুল্লাহ! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ তাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকি ব্যক্তি।
প্রশ্ন কারীরা বললেন, আমরা এ সম্পর্কে আপনাকে
জিজ্ঞাসা করছি না। তিনি বললেনঃ তবে ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহর নাবীর পুত্র, আল্লাহর খলীলের পূত্র। তারা বললো, এ সম্পর্কেও আমরা আপনাকে প্রশ্ন করি নি। তিনি
বললেনঃ তবে কি তোমরা আরবের বংশ-উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছো? জাহেলী যুগে যারা তাদের মধ্যে উত্তম ছিল, ইসলামের পরও তারা উত্তম বলে গণ্য, যদি তারা দ্বীনের জ্ঞান আহরণ করে।
৫৯৪৭। হাদ্দাব ইবনু খালিদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকারিয়া (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।
৫৯৪৮। আমর ইবনুুমুহাম্মাদ
নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
উমর মাক্কী (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবাঁয়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ
ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাওফ
বিকালী বলেন যে, বনী ইসরাঈলের নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথী মূসা নন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। আমি উবাই ইবনু কাব (রাঃ)
থেকে শুনেছি, তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনী ইসরাঈলের মধ্যে ভাষণ দিতে দাড়ালেন। তাকে প্রশ্ন করা হলো, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী? তিনি উত্তর দিলেন, আমি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী। আল্লাহ তাআলা তাঁর
প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। কারণ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানকে আল্লাহর
প্রতি ন্যস্ত করেননি। অতঃপর আল্লাহর তার ওহী পাঠালেন যে, দুসাগরের সঙ্গম স্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক
বান্দা আছে, যে তোমার চেয়েও অধিক জ্ঞানী।
মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশ্ন করলেন আয় রব্ব! আমি কী করে তাঁকে পাব? তাঁকে বলা হলো, থলের
ভেতর একটি মাছ নাও। মাছটি যেখানে হারিয়ে যাবে, সেখানেই
তাঁকে পাবে। তারপর তিনি রওনা হলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর খাদিম ইউশা ইবনু নূনও চললেন
এবং মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)একটি মাছ থলিতে নিয়ে নিলেন। তিনি ও তাঁর খাদিম চলতে
চলতে একটি চটানে উপস্থিত হলেন। এখানে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন।
তাঁবু সাথীও ঘুমিয়ে পড়ল। মাছটি নড়েচড়ে থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়লো। এদিকে
আল্লাহ তা’আলা পানির গতিরোধ করে দিলেন। এমনকি তা একটি খোপের মত হয়ে গেল এবং মাছটির
জন্য একটি সুড়ঙ্গের মতো হয়ে গেল। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তার খাদিমের জন্য
এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল। এরপর তাঁরা আবার দিন-রাতভর চললেন। মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাথী খবরটি দিতে ভুলে গেলো। যখন সকাল হলো, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর খাদিমকে বললেন, আমাদের নাশতা বের কর। আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত
হয়ে পড়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আদেশকৃত স্হান
অতিক্রম না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্লান্ত হন নি। খাদিম বলল, আপনি কি জানেন, যখনই
আমরা চটানে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথাটি ভুলে
যাই, আর শয়তানই আমাকে আপনাকে বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে
এবং আশ্চর্যজনকভাবে মাছটি সমুদ্রে তার নিজের পথ করে চলে গেল। মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ জায়গাটই তো আমরা খুজছি।
অতঃপর উভয়েই নিজ নিজ পদচিহ্ন অনুসরণ করে চটান পর্যন্ত পৌছলেন। সেখানে চাঁদরে
আচ্ছাদিত একজন লোক দেখতে পেলেন। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে সালাম দিলেন।
খিযির বললেন, তোমার এ দেশে সালাম কোত্থেকে? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বললেন, হ্যা।
খিযির বললেন, আল্লাহ তার জ্ঞানের এমন এক
ইলম তোমাকে দিয়েছেন যা আমি জানি না। আর আল্লাহ তাঁর জ্ঞানের এমন এক ইলম আমাকে
দিয়েছেন যা তুমি জান না। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি আপনার সাথে থাকতে চাই যেন আপনাকে প্রদত্ত
জ্ঞান আমাকে দান করেন। খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। আর
কী করে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে, ঐ বিষয়ের উপর যা সম্পর্কে
তুমি জ্ঞাত নও? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে
ধৈর্যশীল পাবেন। আর আপনার কোন নির্দেশ আমি অমান্য করব না। খিযির (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুসরণ
কর, তবে আমি নিজে কিছু উল্লেখ না করা পর্যন্ত কোন বিষয়ে
আমাকে প্রশ্ন করবে না। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আাচ্ছা। খিযির এবং মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
উভয়ে সমুদ্র তীর ধরে চলতে লাগলেন। সম্মুখ দিয়ে একটি নৌকা আসল। তারা নৌকাওয়ালাকে
তাঁদের তুলে নিতে বললেন। তারা খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে চিনে ফেললো, তাই দুজনকেই বিনা ভাড়ায় তুলে নিল। এরপর খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নৌকার একটি তক্তার দিকে লক্ষ্য করলেন এবং তা উঠিয়ে ফেললেন।
মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এরা তো এমন লোক যে, আমাদের বিনা ভাড়ায় নিয়েছে আর আপনি তাদের
নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন যাতে নৌকা ড়ূবে যায়? আপনি
তো সাংঘাতিক কাজ করেছেন! খিযির বললেন, আমি
কি তোমায় বলি নি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে
থাকতে সক্ষম হবে না? মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)বললেন, আপনি আমার এ জন্য ক্ষমা করে
দিবেন। আর আমাকে কঠিন অবস্থায় ফেলবেন না। তারপর নৌকার বাইরে এলেন এবং উভয়ে সমুদ্র
তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ একটি বালকের সম্মুখীন হলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল। খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মাথাটি হাত দিয়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করলেন। মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আপনি
কোন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই একটা নিষ্পাপ প্রাণকে শেষ করে দিলেন? আপনি তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন। খিযির (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)বললেন, আমি কি তোমাকে বলি নি যে, আমার সাথে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হবে না? আর এ ভুল প্রথমটার চেয়ে আরো শুরু তর। মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, আচ্ছা, এরপর যদি আর কিছু সম্পর্কে প্রশ্ন করি, তা হলে আমাকে সাথে রাখবেন না। নিঃসন্দেহে আপনার
প্রতি আমার ক্রটি চরমে পৌছেছে। এরপর উভয়েই চলতে লাগলেন এবং একটি গ্রামে পৌছে
গ্রামবাসীর কাছে খাবার চাইলেন। তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করলো। তারপর
তাঁরা একটি দেয়াল পেলেন, যেটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম
হয়েছে অর্থাৎ ঝুঁকে পড়েছে। খিজির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপন হাতে সেটি ঠিক করে
সোজা করে দিলেন। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, আমরা
এ সম্প্রদায়ের কাছে এলে তারা আমাদের মেহমানদারী করে নি এবং খেতে দেয় নি। আপনি
চাইলে এদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন? খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এবার আমার ও তোমার মাঝে
বিচ্ছেদ। এখন আমি তোমাকে এসবের তাৎপর্য বলছি, যে
সবের উপর তুমি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হও নি (১৮- ৬০-৮২)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর রহম করুন, আমার আকাঙ্ক্ষা হয় যে, যদি তিনি ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাসমূহের বিবরণ
দেওয়া হতো। রাযী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রথমটা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ভুলবশত করেছিলেন। এও
বলেছেন, একটি চড়ূই এসে নৌকার পার্শে
বসে সমুদ্রে চঞ্চু মারল। তখন খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মূসাকে বলেনঃ আমার ও
তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় এতই কম, যতখানি
সমূদ্রের পানি থেকে এ চড়ুইটি কমিয়েছে। সাঈদ জ্যুায়র (রাঃ) বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনু
আব্বাস (রাঃ) পড়তেনঃ (এদের সম্মুখে একজন বাদশাহ ছিল, যে
সমস্ত ভালো নৌকা কেড়ে নিতো) তিনি আরো পড়তেনঃ (আর সে বালকটি ছিল কাফির)।
৫৯৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল
আলা কায়সী (রহঃ) সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হলো, নাওফ দাবি করে যে, মূসা (আ)যিনি জ্ঞান অন্বেষন বের হয়েছিলেন। তিনি
বনী ইসরাঈলের মূসা নন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, হে
সাঈদ, তূমি কি তাকে এটা বলতে শুনেছ? আমি বললাম! হ্যা। তিনি বললেন, নাওফ মিথ্যা বলেছে। কেনন! উবাই ইবনু কাব (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেনঃ যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মূসা (আ)একদা তার জাতির
সামনে আল্লাহ তা-আলার নিয়ামত এবং তাঁর শাস্তি ম্মরণ করিয়ে নসীহত করছিলেন। কথা
প্রসদে তিনি বলে ফেললেন, পৃথিবীতে আমার চেযে উত্তম
এবং বেশি জ্ঞানী কোন ব্যক্তি আছে বলে আমরে জানা নেই। আ ল্লাহ মূসা (আ )-এর প্রতি
ওহী পাঠালেনঃ আমি জানি মূসা থেকে উত্তম কে বা কার কাছে কল্যাণ রয়েছে। অবশ্যই
পৃথিবীতে আরো ব্যক্তি আ ছে যে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আ)বললেন, আয় রবব! আমাকে তার পথ বাতলিয়ে দিন। তাকে বলা
হলো লবণাক্ত এক টি মাছ সঙ্গে নিয়ে যাও। যেখানে এ মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই সে ব্যক্তি মূসা (আ)এবং তাঁর খাদিম
রওনা হলেন, অবশেষে তাঁরা একঢি চটানের
কাছে পৌছলেন। তখন মূসা (আ)তাঁর সাথীকে রেখে অগোচরে চলে গেলেন। এরপর মাছটি তড়পিয়ে
পানিতে চলে গেল এবং পানিও খোপের মত হয়ে গেল মাছের পথে মিলিত হল না। মূসা (আ )-এর
খাদিম বললেন, আ চ্ছা আমি আল্লাহর নাবীর
সাথে মিলিত হয়ে তাঁকে এ ঘটনা বলবো। পরে তিনি ভূলে গেলেন। যখন তারা আরো সামনে
অগ্রসর হলেন, তখন মূসা (আ)বললেন! আমার
নাশতা দাও, এ সফরে তো আমরা বূর্তান্ত
হয়ে পড়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষগ তারা এ স্হানটি অতিক্রম করেন নি, ততক্ষণ তাদের ক্লান্তি আসে নি। তাঁর সাথীর যখন
স্বরণ হল তখন বলল, আপনি কি জানেন যখন আমরা
চটানে আশ্রয় নিয়েছিলা! তখন আমি মাছের কথা ভুলে গেছি। আর শয়তানই আমাকে আপনার কাছে
বলার কখা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং বিনয়করভাবে মাছটি সমুদ্রে তার পথ করে নিয়েছে। মূসা
(আ)বললেন, এ-ই তো ছিল আমাদের উদ্দীষ্ট।
অতএব তাঁরা পদাংক অনুসরণ করে ফিরে চললেন। তখন তার খাদিম মাছের স্হানটি তাকে
দেখালো। মূসা (আ)বললেন, এ স্হানের বিবরনই আমাকে
দেওয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুজতে লাগলেন, এমন
সময় তিনি বস্ত্রাবৃত খিযির (আ )-কে গ্রীবার উপর চিৎ হঘে শায়িত দেখতে পেলেন। অথবা
অন্য বর্ননায়, গ্রীবার উপর সোজাসুজি। মূসা
(আ)বললেন, আসসালামু আলাইকুম। খিযির
(আ)মুখ খেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, ওয়া আলাইকুম সালাম, তুমি কে? মূসা
(আ)বললেন, আমি মূসা। তিনি বললেন, কোন মূসা? মূসা
(আ)উত্তর দিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা। খিযির
(আ)বললেন! তোমার এ মহান আগমন কিসের জন্য? মূসা
(আ)বললেন, আমি এসেছি যেন আপনাকে যে
সৎজ্ঞান দান করা হয়েছে, তা থেকে কিছু আপনি আমায়
শিক্ষা দেন। খিযির (আ)বললেন, আমার সঙ্গে তুমি ধৈর্যধারণ
করতে সক্ষম হবে না। আর কেমন করে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান দেওয়া হয় নি। এমন বিষয় হতে পারে যা
করতে আমাকে আ দেশ দেওয়া হয়েছে, তুমি যখন তা দেখবে, তখন তুমি সবর করতে পারবে না। মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে
ধৈর্যশীল পাবেন। আর আমি আপ নার কোন নির্দেশ। অমান্য করেন না। খিযির (আ)বললেন, তূমি যদি আমার অনুগামী হও তবে আমাকে কোন বিষয়ে
প্রশ্ন করো না যতক্ষণ না আমি নিজেই এ বিযয়ে উল্লেখ করি। এরপর উভয়ই চললেন, অবশেষে তারা একটি নৌকায় চড়লেন। খিযির (আ)তখন
নৌকার একটি অংশ ভেঙ্গে ফেললেন। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, আপনি কি নৌকাটি ভেঙ্গে ফেলেছেন, নৌকারোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে? আপনি তো বড় গুরুতর কাজ করেছেন। খিযির (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবে না? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি ভুলে গইয়েছি, আমাকে
আপনি দোষী করবেন না। আমার বিষয়টিকে আপনি জটিল করবেন না। আবার দু-জন চলতে লাগলেন।
এক জায়গায় তাঁরা বালকদের পেলেন খেলা করয়ে খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবলীলাক্রমে
একটি শিশুর কাছে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। এতে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খুব ঘাবড়ে
গিয়ে বললেন, আপনি প্রাণের বিনিময় ব্যতীত
একটি নিস্পাপ প্রাণকে হত্যা করলেন? বড়ই
গর্হিত কাজ আপনি করেছেন। এ স্হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আল্লাহর রহমত বর্ষণ করুন আমাদের ও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর। তিনি
যদি তাড়াহুড়া না করতেন তাহলে আরো বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পেতেন। কিন্তু তিনি খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সামনে লজ্জিত হয়ে বললেন, এরপর
যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তবে
আপনি আমায় সঙ্গে রাখবেন না। সত্যই আমার ভূমিকা অতিশয় আপত্তিকর হয়েছে। যদি মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধৈর্য ধরতেন, তাহলে
আরো বিসায়কর বিষয় দেখতে পেতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
কোন নাবীর উল্লেখ করতেন, প্রথমে নিজকে দিয়ে শুরু
করতেন, বলতেন, আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন এবং আমার অমুক
ভাইয়ের উপরও। এভাবে নিজেদের উপর আল্লাহর রহমত কামনা করতেন। তারপর উভয়ে চললেন এবং
ইতরদের একটি জনপদে গিয়ে উঠলেন। তাঁরা লোকদের মাঝে সমাবেশে ঘুরে তাদের কাছে খাবার
চাইলেন। তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। এরপর তাঁরা একটি পতন্নোখ দেয়াল
পেলেন। (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেটি ঠিকঠাক করে দিলেন। মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)বললেন, আপনি চাইলে এর বিনিময়ে
পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, এবার আমার আর তোমার মধ্যে বিচ্ছেদ। খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাপড় ধরে বললেন, তুমি যেসব বিষয়ের উপর অধৈর্য হয়ে পড়েছিলে সে
সবের তাৎপর্য বলে দিচ্ছি। নৌকাটি ছিল কতিপয় গরীব লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করতো–
আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়লেন। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসলো তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে
ছেড়ে দিল। এরপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দিয়ে নৌকাটি ঠিক করে নিলো। আর বালকটি
সৃষ্টিতেই ছিল কাফির। তার মা-বাবা তাকে বড়ই সেহ করতো। সে বড় হলে ওদের দুজনকেই
অবাধ্যতা ও কুফরির দিকে নিয়ে যেতো। সুতরাং আমি ইচ্ছে করলাম, আল্লাহ যেন তাদেরকে এর বদলে আরো উত্তম, পবিত্র স্বভাবের ও অধিক ভাজন ছেলে দান করেন। আর
দেয়ালটি ছিল শহরের দুটো ইয়াতীম বণিকের আয়াতের শেষ পর্যন্ত (১৮-৬০-৮২)।
৫৯৫০। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল
রহমান দারিমী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রাঃ) থেকে এর অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৫৯৫১। আমরুন নাকিদ (রহঃ)
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেনঃ ‘আত তাখাযতা আলিহি আযরান’।
৫৯৫২। হারামালা ইবনু ইয়াহিয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস এবং ইবনু কায়স ইবনু হিসন ফাযারী
মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথী সনূন্ধে বিতর্ক করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, সাথীটি ছিলেন খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
তারপর সেখানে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এলেন, ইবনু
আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেনঃ হে আবূ তুফায়ল! এদিকে আসুন, আমি এবং সে বিতর্ক করছি মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাথীর ব্যাপারে, যার কাছে তিনি পিয়েছিলেন।
আপনি কি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছেন? উবাই ইবনু কাব (রাঃ) বললেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে
শুনেছি, মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এক সমাবেশে কিছু বলছিলেন, এমন সময় একটা লোক এসে প্রশ্ন
করলো, আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী কোন
ব্যক্তি সম্পর্কেকি আপনার জানা আছে? মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেন, না। তখন আল্লাহ ওহী পাঠালেন, আমার বান্দা খিযির তোমার চেয়ে বেশি জানেন। মূসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খিযির (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাক্ষাত লাভের উপায় জিজ্ঞেস
করলেন। আল্লাহ তাআলা মাছকে নিদর্শন হিসেবে ঠিক করলেন এবং আদেশ করা হচ্ছেন, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে, তখন ফিরবে আর তাঁর দেখাও মিলবে। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আল্লাহর ইচ্ছা মতো চললেন। এরপর তাঁর সাথীকে বললেন, আমাদের
নাশতা পরিবেশন কর। খাদিম বললো, আপনার কি জানা নেই যে, যখন আমরা সাখরায় পৌছলাম তখন মাহের কথা ভুলে
গিয়েছি; আর শয়তানই আমাদের বিস্মৃতির
কারণ। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটাই
তো আমরা চাইতাম। অতঃপর উভয়েই পদাংক অনুসরণ করে ফিরলেন (১৮- ৬৩-৬৪) এবং খিযির
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে পেলেন। পরবর্তী ঘটনা
আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তবে ইউনূস (রহঃ)-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে
যে, তাঁরা সমুদ্রগামী মাছটির চিহ্ন অনুসরণ করে
ফিরলেন।