৬৯৭১। আমর নাকিদ (রহঃ) যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ একদিন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘূম থেকে জাগ্রত হলেন। এ সময়ে তিনি বললেনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! নিকট ভবিষ্যতে সংঘটিত দুর্যোগে আরবরা ধংস হয়ে যাবে। আজ ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাচীর এতটুকু পরিমাণ খুলে গেছে। এ সময় সুফিয়ান স্বীয় হস্ত দ্বারা দশের চক্র বানালেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে নেক লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধবংস হয়ে যাব? জবাবে তিনি বললেন, হ্যা যখন পাপাচার বেশী হবে।
৬৯৭২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা , সাঈদ ইবনু আমর আশআশী, যুহায়র
ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) যুহরী (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে তারা অতিরিক্ত এ কথাটি ‘আন সুফিয়ান ফাকালু আন যাইনাবু বর্ণনা
করেছেন।
৬৯৭৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
-এর স্ত্রী যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্হায় বের হলেন।
তখন তাঁর চেহারা মুবারক লাল বর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলছিলেনঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নিকট
ভবিষ্যতে সংঘটিত দুর্যোগে আরবরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আজ ইয়াযুয মাজূজের প্রাচীর
এতটুকু পরিমাণ খুলে গেছে। এ সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি ও শাহাদাত আঙ্গুলির দ্বারা
চক্র বানালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)! আমাদের মধ্যে নেক লোক থাকা অবস্হায়ও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন, হাঁ, যখন
পাপাচার বেশী হবে।
৬৯৭৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) (অন্য সনদে) আমর নাকিদ (রহঃ)
ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে ইউনূস (রহঃ)-এর সুত্রে যুহরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৬৯৭৫। আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আজ ইয়াযুয ও মাজুজের প্রাচীর এতটুকু
পরিমাণ খুলে গেছে। এ সময় উহায়ব (রহঃ) নব্বই ইঙ্গিতের গিরা করলেন।
৬৯৭৬। শুয়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু কিবতিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হারিস ইবনু
আবূ রাবী আ এবং আবদুল্লাহ ইবনু সুফিয়ান (রহঃ) উভয়ই উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা
(রাঃ)-এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। তারা তাকে ঐ বাহিনী সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলেন, যারা
ভূমিতে ধ্বসে যাবে। তখন ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর খিলাফতকাল ছিল। উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জনৈক আশ্রয় গ্রহণকারী বায়তুল্লাহ শরীফে
আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তার বিরুদ্ধে একটি সেনাদল প্রেরণ করা হবে। তারা যখন এক
ময়দানে অবস্থান নিবে তখন তারা ভূমিতে ধ্বসে যাবে। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে এ কি করে প্রযোজ্য হতে পারে যে অন্তুষ্টচিত্তে এ
অভিযানে শরীক হয়েছেই জবাবে বললেন, তাদের সাথে তাকে সহ ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। তবে
কিয়ামতের দিন তার উত্থান হবে স্বীয় নিয়্যাতের ভিত্তিতে। বর্ননাকারী আবূ জাঁফর
(রহঃ) বলেন, এ
হল মদ্বীনার ময়দান।
৬৯৭৭। আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবদুল আযীয ইবনু রুফায় (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে আছে, আমি আবূ জাফর (রহঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, উলে সালামা
(রাঃ) তো কোন এক ময়দানের কথা বলেছেন। আবূ জাফর বললেন, কখনো নয়, আল্লাহর
কসম! এতো মদ্বীনার ময়দান।
৬৯৭৮। আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে এ কথা বলতে শুনেছি, একটি
সৈন্যদল এ গৃহের বিরুদ্ধে লড়াই করবার ইচ্ছা করবে। অতঃপর তারা যখন এক ময়দানে
পদার্পণ করবে তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধ্বসে যাবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা
পেছনের সৈন্যদেরকে চিৎকার করে ডাকতে থাকবে। অতঃপর সকলেই ভূমিতে ধ্বসে যাবে। বেঁচে
যাওয়া একটি লোক ব্যতীত তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না। সে-ই তাদের সম্পর্কে
অন্যদেরকে সংবাদ দিবে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি হাফসা
(রাঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করনি এবং হাফসা (রাঃ)-এর ব্যাপারেও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, তিনিও
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি।
৬৯৭৯। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) উম্মূল মুমিনীন হাফসা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এমন সম্প্রদায় এ
গৃহ তথা কাবার দায়িত্ব গ্রহণ করবে, যাদের প্রতিরোধ শক্তি থাকবে না, থাকবে না
তাদের উল্লেখযোগ্য সৈন্য সংখ্যা এবং থাকবে না তাদের আসবাব সামগ্রী। তাদের
বিরুদ্ধে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করা হবে। তারা উদ্ভিদ শূন্য এক ময়দানে আসতেই তাদেরকে
ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। বর্ণনাকারী ইউসুফ (রহঃ) বলেন, এ সময়
সিরিয়াবাসীরা মক্কাবাসীদের সাথে লড়াই করার জন্য আসছিল। আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান
(রহঃ) বলেন, আল্লাহর
কসম! তারা এ সৈন্যবাহিনী নয়। বর্ননাকারী যায়িদ (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন থেকে ইউসুফ
ইবনু মাহিকের হাদীসের অনুররূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আবদুল্লাহ ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) যে
বাহিনীর কথা উল্লেখ করেছেন তিনি সে বাহিনীর কথা উল্লেখ করেননি।
৬৯৮০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাতে
ঘুমন্ত অবস্হায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় হাত পা
নাড়ালেন। আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসুল! অদ্য রাতে ঘুমন্ত অবস্হায় আপনি এমন আচরণ করেছেন, যা পূর্বে
আপনি কখনো করেননি। তিনি বললেনঃ আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, কুরায়শ
বংশীয় এক ব্যক্তি বায়তুল্লাহ শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তার কারণে আমার উম্মাতের
একদল লোক বায়তুল্লাহর উপর আক্রমণের ইচ্ছা করবে। তারা রওয়ানা হয়ে উদ্ভিদশূন্য
ময়দানে আসতেই তাদেরকে সহ ভূমি ধ্বসিয়ে দেয়া হরে। এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! বিভিন্ন রকমের মানুষই তো রাস্তা দিয়ে
চলে। জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যা, তাদের মধ্যে কেউ তো সেচ্ছায় আগমণকারী, কেউ অপারগ, আবার কেউ
পথিক মূসাফির। তারা সকলে এক সাথেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে বিভিন্ন মিল্লাতের অনুসারী
হিসাবে তাদের উত্থান হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তাদের নিয়্যাতের ভিত্তিতে উন্থিত
করবেন।
৬৯৮১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ)
উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
মদ্বীনার সুউচ্চ এক দানানের উপর আরোহণ করে বললেন, আমি যা কিছু দেখছি তোমরা কি তা দেখছ? আমি
তোমাদের গৃহের অভ্যন্তরে বৃষ্টি বর্ষণের ন্যায় বিপদাপদ পতিত হবার স্থানসমূহ দেখতে
পাচ্ছি।
৬৯৮২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণিত
আছে।
৬৯৮৩। আমর নাকিদ,
হাসান আল হুলওয়ানি ও আবদ ইবনু হুমায়দ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ শীঘ্রই এমন ফিতনা দেখা
দিবে, যখন
বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তি হতে ভাল থাকবে। আর দাঁড়ানো ব্যক্তি তখন চলমান
ব্যক্তি হতে ভাল থাকবে। আর চলমান ব্যক্তি তখন দ্রুতগামী ব্যক্তি থেকে ভাল থাকবে।
যে ফিতনায় লিপ্ত হবে তাকে সে ফিতনা ধ্বংস করে দিবে। আর যে তখন আশ্রয়স্হল পাবে, তার উহা
দ্বারা নিজেকে রক্ষা করা উচিত।
৬৯৮৪। আমর নাকিদ,
হাসান আল হুলওয়ানি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) নাওফাল ইবনু মুআবিয়া (রাঃ) থেকে
আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর এ হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ বাকর (রাঃ)
এতে সালাতের কথা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যার সালাত
ছুটে গেল তার যেন পরিবার পরিজন এবং সমুদয় ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল।
৬৯৮৫। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, অচিরেই ফিতনা দেখা দিবে। তখন ঘুমন্ত ব্যক্তি
জাগ্রত ব্যক্তি থেকে ভাল থাকবে। আর জাগ্রত ব্যক্তি তখন দাঁড়ান ব্যক্তি থেকে ভাল
থাকবে। এবং দাড়ান ব্যক্তি দ্রুতগামী ব্যক্তি হতে তখন ভাল থাকবে। তখন যদি কোন
ব্যক্তি আশ্রয়স্হল অথবা মুক্তস্হান পায় তবে তার আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত।
৬৯৮৬। আবূ কামিল জাহদারী ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন উসমান আশ-শাহহাম (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
মুসলিম ইবনু আবূ বাকরা (রহঃ) তার স্বীয় ভূমিতে ছিলেন। এমতাবস্হায় আমি ও ফারকাদ
সাবাখী তার নিকট গেলাম। এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আপনার আববাকে ফিতনা সম্পর্কে কোন হাদীস
বর্ণনা করতে শুনেছেন?
জবাবে তিনি বললেন,
হ্যা, আমি
আবূ বাকরা (রাঃ)-কে এ কথা বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ অচিরেই ফিতনা দেখা দিবে। সাবধান, সেখানে ফিতনা দেখা দিবে। তখন বসে থাকা ব্যক্তি
চলমান ব্যক্তি থেকে ভাল থাকবে। আর চলমান ব্যক্তি তখন দ্রুতগামী ব্যক্তি হতে ভাল
থাকবে। সাবধান যখন ফিতনা আপতিত হবে অথবা সংঘটিত হবে, এমতাবস্হায় যে ব্যক্তি উটের মালিক সে তার উট
নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। আর যার বকরী আছে সে তার বকরী নিয়ে ব্যস্ত থাকুক এবং যার যমীন
আছে সে তার যমীন নিছো ব্যস্ত থাকুক। এ কথা শুনে তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! যার উট, বকরী ও
যমীন নেই, সে
কি করবে? উত্তরে
তিনি বললেন, সে
তার তরবারি হস্তে ধারণ করতঃ প্রস্তরাঘাতে উহার ধারাল তীক্ষ্ণ অংড়া চুর্ণ-বিচুর্ণ
করে ফেলবে। অতঃপর সে রক্ষা পেতে চাইলে রক্ষা লাভ করুক। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে
আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি! হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি? হে আল্লাহ!
আমি কি পৌছিয়ে দিয়েছি! এ সময় জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি চাপ সৃষ্টি করে দুই
সারির কোন একটিতে অথবা দুই দলের কোন এক দলে আমাকে নিয়ে যায় আর কোন এক ব্যক্তি তার
তরবারি দ্বারা আমাকে আঘাত করে বা তীর এসে আমার গায়ে লাগে এবং আমাকে সে মেরে ফেলে, তবে আমার
অবস্হা কি হবে? উত্তরে
তিনি বললেনঃ তবে সে তার এবং তোমার পাপের ভার বহন করবে এবং চির জাহান্নামী হয়ে
যাবে।
৬৯৮৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) উসমান আশ-শাহহাম (রহঃ) থেকে এ সনদে ইবনু আবূ আদী (রহঃ)-এর হাদীসটি
হাম্মাদের হাদীসের অনুরুপ শেষ পর্যন্ত বর্ণিত আছে। তবে ‘ইনিসতাতায়ান নাযাআ’ পর্যন্ত
ওয়াকীহ (রহঃ)-এর হাদীসটি শেষ হয়েছে। এর পরবর্তী অংশটি তিনি আর উল্লেখ করেননি।
৬৯৮৮। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আন-জাহদারী (রহঃ) আসীফ ইবনু কায়স (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি বের হলাম। এই লোকটিকে সাহায্য করা
আমার ইচ্ছা ছিল। এ সময় আবূ বাকর (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি বললেন, হে আহনাফ!
তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
-এর চাচাত ভাই আলী (রাঃ)-এর সাহায্য করার জন্য আমি যেতে চাচ্ছি। আহনাফ (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি
আমাকে বললেন, হে
আহনাফ! চলে যাও। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে আমি একথা
বলতে শুনেছি, যখন
দু’জন মুসলমান তলোয়ার নিয়ে পরস্পর যুদ্ধ করে তখন হত্যাকারী ও হত্যাকৃত ব্যক্তি
উভয়ই জাহান্নামী হবে। একথা শুনে আমি বললাম অথবা বলা হল, হে আল্লাহর
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যাকারীর অবস্থা তো এই, তবে
নিগৃহীত ব্যক্তির অবস্হা কি? উত্তরে তিনি বললেন, সেও তার
সাথীকে হত্যা করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।
৬৯৮৯। আহমাদ ইবনু আবদা আযযাব্বী (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দু-জন মুসলমান তলোয়ার
নিয়ে পরস্পরযুদ্ধে লিপ্ত হয় তবে হত্যাকারী ও নিহত উভয় ব্যক্তই জাহান্নামী হবে।
৬৯৯০। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আইউব (রহঃ) থেকে এ সনদে আবূ কামিলের সুত্রে
হাম্মাদের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
৬৯৯১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেনঃ যদি দু-জন মূসলমানের একজন তার অন্য ভ্রাতার উপর অস্ত্রধারণ করে তবে তারা
উভয়ই জাহান্নামের প্রান্তে এসে উপনীত হয়। অতঃপর যখন তাদের একজন তার অপর সঙ্গীকে
হত্যা করে ফেলে, তখন
তারা উভয়ই জাহান্নামে দাখিল হয়ে যায়।
৬৯৯২। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তন্মধ্যে একটি হচ্ছে এই যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষননা দুটি বড় দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
তাদের মাঝে এক ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। অথচ তাদের উভয়ের দাবী একই হবে।
৬৯৯৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষননা
‘হারজ’ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ‘হারজ’- কি? জবাবে তিনি
বললেন, হত্যা, হত্যা।
৬৯৯৪। আবূ রাবী আল আতাকী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীকে ভাজ
করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত
পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে
পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধনাগার দেয়া হয়েছে।
আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি
তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের
ব্যতীত এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে টুক্বরা টুকরা করে
দিবে। এ কথা
শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো
প্রতিহত হয় না। আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের
দ্বারা ধ্বংস করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে
চাপিয়ে দেবো না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও
বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলমানগণ পরস্পর একে
অপরকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে।
৬৯৯৫। যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মাদ
ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীকে গুটিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে পেশ
করেছেন। আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত (দখে নিয়েছি। আল্লাহ
তায়ালা আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধন-ভাণ্ডার দান করেছেন। অতঃপর কাতাদা (রহঃ) আইউবের
সুত্রে আবূ কেলাবা (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৬৯৯৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা আলিয়া হতে এসে বনূ মু-আবিয়ায়
অবস্হিত মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি উক্ত মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত
আদায় করলেন। আমরাও তার সাথে সালাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তার প্রতিপালকের নিকট
দীর্ঘ দুআ করলেন। এবং দুঁআ শেষে আমাদের নিকট ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ আমি আমার
প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিস কামনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান
করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট কামনা করেছিলাম, যেন তিনি
আমার উম্মাতকে দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু’আ কবুল করেছেন।
তাঁর নিকট এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মাতকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস না
করেন। তিনি আমার এ দু’আও কবুল করেছেন। আমি তাঁর নিকট এ মর্মেও দু’আ করেছিলাম যে, যেন
মুসলমান পরস্পর একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। তিনি আমার এ দুআ কবুল
করেননি।
৬৯৯৭। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সাহাবীদের একটি দলের
মাঝে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সাথে কোথাও থেকে আসলেন।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বনূ মুআবিয়ায় অবস্থিত
মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি ইবনু নূমায়রের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬৯৯৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজিবী (রহঃ) আবূ ইদরীস খাওলানী (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) বলেন, আমার ও কিয়ামত সংঘটিত হবার সময়কালের মাঝে ঘটমান
ফিতনা সম্পর্কে আমি সর্বাধিক জ্ঞাত। বস্তুত বিষয়টি এমন নয় যে, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্যদের নিকট বর্ণনা না করে কেবল আমার নিকটই এ
বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর এক
মজলিসে আমি ছিলাম। এতে তিনি ফিতনা সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন এবং শুনে শুনে বর্ণনা
করছিলেন। এগুলোর তিনটি এমন, যা কোন কিছুকেই অব্যাহতি দিবে না। এর কতেকটি
গ্রীষ্মের ঝাঞ্ঝা বায়ুর ন্যায়। আবার কতেকটি ছোট এবং কয়েকটি বড়। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, মজলিসে
উপস্থিত লোকদের আমি ব্যতীত সকলেই এ পৃথিবী হতে চির বিদায় গ্রহণ করেছেন।
৬৯৯৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান হয়ে কিয়ামত পর্যন্ত
ঘটমান সমস্ত ফিতনার কথা বর্ণনা করলেন। অতঃপর যে ,স্বরণ রাখবার সে সারণ রাখল এবং যে ভুলে যাবার
সে ভুলে গেল। তিনি বলেন, আমার এই সাহলগণ জানেন যে, এর কতিপয়
বিষয় এমন আছে, যা
আমি ভুলে গিয়েছি। কিন্তু উহা সংঘটিত হতে দেখে আমার তা পূনরায় স্বরণ হয়ে যায়।
বিষয়টি ঠিক তদ্রুপ যেমন এক ব্যক্তি কোন ব্যক্তির চেহারা দেখে, অতঃপর সে
তার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবার পর পূনরায় দেখে সে তাকে চিনে নেয়।
৭০০০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আমাশ থেকে এ সনদে ‘অ নাসিয়া মান নাসিয়া’
পর্যন্ত অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসের পরবর্তী অংশটি সুফিয়ান (রহঃ) উল্লেখ
করেননি।
৭০০১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (অন্য সনদে) আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) হুযায়ফা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত ঘটমান সমুদয় ফিতনা সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সংবাদ দিয়েছেন। ফিতনা সংক্রান্ত
সমুদয় বিষয় সম্পর্কে আমি তাকে প্রশ্ন করেছি। তবে মদ্বীনাবাসীকে কিসে মদ্বীনা হতে
বের করবে এ বিষয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করিনি।
৭০০২। মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস
বর্ণিত আছে।
৭০০৩। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আবূ যায়িদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা
দিলেন। অবশেষে যুহরের সালাতের সময় হল। তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করতঃ সালাত আদায়
করলেন। এরপর আবার মিম্বরে আরোহণ করতঃ তিনি খুতবা দিলেন। এবার আসরের সালাতের সময়
হল। তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করে সালাত আদায় করে পূনরায় মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং
আমাদেরকে লক্ষ্য করে খূৎবা দিলেন। অতঃপর সূর্য অস্তমিত হলে তিনি আমাদেরকে যা হয়েছে
এবং যা হবে ইত্যাকার বিষয়ে সংবাদ দিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
এ কথাগুলো সর্বাধিক স্বরন রেখেছেন আমাদের মাঝে এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত।
৭০০৪। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল আ’লা ইবনু আবূ
কুরায়ব (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমরা উমার (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। এ সময় তিনি
বললেন, ফিতনা
সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস তোমাদের কার স্বরণ
আছে? আমি
বললাম, আমার
স্বরণ আছে। এ কথা শুনে বললেন, ব্যস, তুমি তো খুব সাহসী। তিনি কি বলেছেন, বল। অতঃপর
আমি বললাম, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, স্বীয় নাফস, সন্তান-সন্ততি
এবং প্রতিবেশীর ব্যাপারে মানুষ যে ফিতনায় আক্রান্ত হয়, তার সিয়াম, সালাত, সাদাকা এবং
সৎকার্যের আদেশ ও অসৎকার্যে বাধা দানই হল এগুলোর জন্য কাফফারা। এ কথা শুনে উমার
(রহঃ) বললেন, আমি
তো এ ফিতনা সম্পর্কে শুনতে চাইনি। বরং সমুদ্রের তরঙ্গমালার ন্যায় যে ফিতনা আপতিত, আমি তো
কেবল তাই শুনতে চেয়েছি। তখন আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! এ ফিতনার সাথে আপনার কি
সম্পর্ক, এতে
আপনার উদ্দেশ্য কি?
এ ফিতনা ও আপনার মাঝে এক রুদ্ধদ্বার অন্তরায় রয়েছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দ্বার কি
ভাঙ্গা হবে, না
খোলা হবে? আমি
বললাম, না, ভাঙ্গা হবে
না, বরং
খোলা হবে। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) বললেন, তবে তো তা আর কখনো বন্ধ হবে না। বর্ণনাকারী
শাকীক (রহঃ) বলেন, আমরা
হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কে সে দ্বার উমার (রাঃ) তা কি জানতেন? জবাবে তিনি
বললেন, হ্যা, আগামী
দিনের পর রাত্র, এ
কথাটি যেমন জানতেন,
ঠিক তদ্রুপ ঐ বিষয়টিও তিনি জানতেন। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে
ভুল হাদীস শুনাইনি। শাকীক (রহঃ) বলেন, কে সে দ্বার, এ সম্পর্কে হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে আমরা
ভয় পাচ্ছিলাম। তাই আমরা মাসরুক (রহঃ)-কে বললাম, আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন। তিনি হুযায়ফা
(রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, এ দ্বার উমার (রাঃ) নিজেই।
৭০০৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (অন্য সনদে) উসমান ইবনু আবূ
শায়বা (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (অন্য সনদে) ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আ’মাশ
(রাঃ) থেকে এ সনদে আবূ মূআবিয়ার অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ঈসা (রহঃ)-এর
সুত্রে শাকীঁক (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে তিনি বলেছেন , আমি
হুযায়ফা (রাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি।
৭০০৬। ইবনু আবূ উমার (রাঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ)
বলেছেনঃ ফিতনা সম্পর্কে আমাকে কে হাদীস শুনাতে পারবে? অতঃপর
সুফিয়ান (রহঃ) পূর্ববতীদের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০০৭। মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) মুহাম্মদ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। জুনদুব (রহঃ) বলেন, জারআর দিন আমি আসলাম। দেখলাম, এক ব্যক্তি
উপবিষ্ট আছে। আমি বললাম, আজ তো এখানে কয়েকটি খুন হবে। এ কথা শুনে লোকটি
বলল, কখনো
না। আল্লাহর কসম! খুন হবে না। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই খুন হবে। সে আবারো বলল, আল্লাহর
কসম! কখনো খুন হবে না। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! অবশ্যই খুন হবে। পূনরায় সে বলল, আল্লাহর
কসম! খুন কখনো হবে না। এ সমন্ধে আমি একটি হাদীস শুনেছি, যা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। আজ হতে তুমি
আমার একজন নিকৃষ্ট সাথী। কারণ তুমি শুনতে পাচ্ছ যে, আমি তোমার বিরুদ্ধাচরণ করছি। অথচ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীস শুনা সত্ত্বেও তুমি আমাকে বারণ করছ না।
অতঃপর আমি বললাম, রাগ
হওয়াতে কি ফায়দা? তাই
আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম। পরে জানতে পেলাম, তিনি হলেন
হুযায়ফা (রাঃ)।
৭০০৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না
ফোরাত তার মধ্যস্থিত স্বর্ণের পর্বত বের করে দিবে। লোকেরা এ নিয়ে লড়াই করবে এবং
এক শতের মধ্যে নিরানব্বই জন মারা যাবে। তাদের প্রত্যেকেই বলবে, সম্ভবত আমি
বেঁচে যাব।
৭০০৯। উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) সূহায়ল (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমার পিতা বলেছেন, যদি তোমরা
ঐ পর্বত দেখ তবে তোমরা এর কাছেও যেও না।
৭০১০। আবূ মাসউদ হাহল ইবনু উসমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ফোরাত তার মধ্যস্হিত
স্বর্ণখনি বের করে দিবে। সুতরাং এ সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন এ থেকে কিছুই
গ্রহণ না করে।
৭০১১। সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ফোরাত তার মধ্যস্হিত স্বর্ণের
পাহাড় বের করে দিবে। সূতরাং এ সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন এ থেকে কিছুই গ্রহণ
না করে।
৭০১২। আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন ও আবূ মাআন রুক্কাশী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
হারিস ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উবায় ইবনু কাব (রাঃ)-এর থেকে দণ্ডায়মান
অবস্হায় ছিলাম। এমতাবস্হায় তিনি বললেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করতঃ মানুষ পার্থিব
সম্পদ উপার্জনের কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। আমি বললাম, হাঁ, ঠিকই। তখন
তিনি বললেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, অচিরেই
ফোরাত তার মধ্যস্হিত স্বর্ণের পাহাড় বের করে দিবে। এ কথা শুনামাত্রই লোকজন সেদিকে
চলতে আরম্ভ করবে। সেখানকার লোকেরা বলবে, আমরা যদি লোকদেরকে ছেড়ে দেই তবে তারা সবই নিয়ে
চলে যাবে। এ নিয়ে তারা পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে এবং এতে একশতের নিরানব্বই জন
লোকই নিহত হবে। বর্ণনাকারী আবূ কামিল (রহঃ) তার হাদীসে উল্লেখ করেছেন যে, আমি এবং
উবায় ইবনু কাব (রাঃ) হাসসানের কিল্লার ছায়ায় দণ্ডায়মান ছিলাম।
৭০১৩। উবায়দ ইবনু ইয়াঈশ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক সময় ইরাক তার
রৌপ্য মুদ্রা এবং কাফীয দিতে অস্বীকার করবে। সিরিয়াও তার মূদ্রা এবং স্বর্ণমুদ্রা
প্রদান করতে অস্বীকার করবে। অনুরুপভাবে মিসরও তাদের আরদাব এবং স্বর্ণ প্রদান করতে
অস্বীকার প্রকাশ করবে। অবশেষে তোমরা পূর্বাবস্হায় ফিরে যাবে, তোমরা
পূর্ববস্হায় ফিরে যাবে, তোমরা পৃর্বাবস্হায় ফিরে যাবে। আবূ হুরায়রার
রক্ত-মাংস এ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছে।
৭০১৪। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না
রোমীয় সেনাবাহিনী ‘আমাক’ অথবা ‘দাবেক’ নগরীতে অবতরণ করবে। তখন তাদের মুকাবিলায়
মদ্বীনা হতে এ পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে। অতঃপর উভয় দল
সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হবার পর রোমীয়গণ বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের থেকে পৃথক হয়ে যাও, যারা
আমাদের লোকদেরকে বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে লড়াই করবো। তখন মুসলমানগণ বলবে, আল্লাহর
শপথ! আমরা আমাদের ভ্রাতাদের থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না। অবশেষে তাদের পরস্পর
যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলমানদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পালিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা
কখনো তাদের তাওবা কবুল করবেন না। সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে
আল্লাহর নিকট শহীদানের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজিয়ী হবে।
জীবনে আর কখনো তারা ফিতনায় আক্রান্ত হবে না। তারাই ইস্তাম্বুল জয় করবে। তারা
নিজেদের তরবারী যায়তুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ বন্টন করতে থাকবে।
এমতাবস্হায় তাদের মধ্যে শয়তান চিৎকার করে বলতে থাকবে- দাজ্জাল তোমাদের পেছনে
তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ কথা শুনে মুসলমানরা সেখান থেকে বের
হবে। অথচ এটি মিথ্যা খবর। তারা যখন সিরিয়া পৌছবে তখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। যখন
মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু
করবে তখন সালাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবতরণ করবেন এবং সালাতে
তাদের ইমামত করবেন। আল্লাহর শক্র তাকে দেখামাত্রই বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে
গলে যায়। যদি ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাউকে এমনই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই
বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর হাতে
তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে
দেখিয়ে দিবেন।
৭০১৫। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স মুসতাওরিদ আল কুরাশী (রহঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নিকট বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, খ্রীষ্টানদের সংখ্যা যখন সর্বাধিক হবে তখন
কিয়ামত কায়িম হবে। এ কথা শুনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) তাকে বললেন, কি বলছ, ভেবে-চিন্তে
বল। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি আমি তাই বলছি। অতঃপর আমর ইবনুল আস
(রাঃ) বললেন, তুমি
যদি বল, তবে
সত্যই বলছ। কেননা খ্রীষ্টানদের মাঝে চারটি বৈশিষ্ট্য আছে। ফিতনার সময় তারা
সর্বাধিক ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে থাকে এবং মুসীবতের পর তড়িৎ তাদের মধ্যে হুশ ফিরে আসে।
পলায়নের পর সর্বপ্রথম তারা হামলা করে এবং মিসকীন, ইয়াতীম ও দুর্বলের জন্য তারা সর্বাধিক কল্যাণকামী।
তাদের পঞ্চম সুন্দর গুনটি হল এই যে, তারা রাজন্যবর্গের যূলূম প্রতিহত করতে অধিক
তৎপর।
৭০১৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) মুসতাওরিদ আল কুরাশী (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, রোমীয়দের
সংখ্যা যখন সর্বাধিক হবে তখন কিয়ামত কায়িম হবে। এ সংবাদ আমর ইবনুল আস (রাঃ) -এর
নিকট পৌছার পর তিনি বললেন, এ কেমন হাদীস, যা সমন্ধে লোকেরা বলছে যে, এ নাকি
তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করছো? জবাবে
মুসতাওরিদ (রাঃ) তাকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে যা শুনেছি আমি তাই বলছি। এ কথা শুনে আমর (রাঃ) বললেন, তুমি যদি
বলে থাক তা ঠিকই আছে। কেননা তারা ফিতনার সময় সর্বাধিক ধৈর্যশীল হবে এবং মুসীবতের
পর সবার পুর্বেতাদের হুশ ফিরে আসবে। সর্বোপরি তারা হলো মিসকীন এবং দূর্বল মানুষের
জন্য অধিক শুভাকাংখী।
৭০১৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ)
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার কুফা নগরীতে হলল ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত হল।
এ সময় এক ব্যক্তি কুফায় আসল। তার কথার তকিয়্যাই এ ই ছিল যে, হে
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ! কিয়ামত কায়িম হবে না, যতক্ষন না উত্তরাধিকার সম্পদ অবণ্টিত থাকবে এবং
যতক্ষন না লোক গনীমতের ব্যাপারে নিরানন্দ প্রকাশ করবে। অতঃপর তিনি স্বীয় হস্ত
দ্বারা সিরিয়ার প্রতি ইংগিত করে বললেন, আল্লাহর শক্ররা সমবেত হবে মুসলমানদের সাথে লড়াই
করার জন্য এবং মুসলমানগণও তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সমবেত হবে। এ কথা শুনে আমি
বললাম, আল্লাহর
শক্র বলে আপনাদের উদ্দেশ্য হল রোমীয় খ্রীষ্টান সম্প্রদায়। তিনি বললেন, হ্যা এবং
তখন ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হবে। তখন মুসলিম সম্প্রদায় একটি দল অগ্রে প্রেরণ করবে, তারা
মৃত্যুর জন্য সামনে অগ্রসর হবে। জয়লাভ করা ব্যতিরেকে তারা পেছনে ফিরবে না। এরপর
পরস্পর তাদের মাঝে যুদ্ধ হবে। যুদ্ধ করতে করতে রাত্র হয়ে যাবে। অতঃপর উভয় পক্ষের
সৈন্য জয়লাভ করা ব্যতিরেকেই ফিরে চলে যাবে। যুদ্ধের জন্য মুসলমানদের যে দলটি অগ্রে
এগিয়ে গিয়েছিল তারা সকলেই মরে যাবে। অতঃপর পূর্ববর্তী দিন মুসলমানগণ মৃত্যুর জন্য
অপর একটি দল অগ্রে প্রেরণ করবে। তারা বিজয়ী না হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে না। এদিনও
পরস্পরের মাঝে মারাত্মক যূদ্ধ হবে। অবশেষে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। উভয় বাহিনী জয়লাভ করা
ব্যতীতই নিজ নিজ শিবিরে ফিরে আসবে। যে দলটি অগ্রে ছিল তারা সরে যাবে। অতঃপর পরের
দিন পূনঃরায় মূমিনগণ মৃত্যু বা বিজয়ের উদ্দেশ্যে অপর একটি বাহিনী প্রেরণ করবে। এ
যুদ্ধ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকবে। অবশেষে জয়লাভ করা ব্যতিরেকেই উভয় বাহিনী ফিরে
যাবে। তবে মুসলিম বাহিনীর সামনের সেনাদলটি শহীদ হয়ে যাবে। এরপর যুদ্ধের চতুর্থ
দিবসে অবশিষ্ট মুসলমানগণ সকলেই যুদ্ধের জন্য সন্মুখ পানে এগিয়ে যাবে। সেদিন
কাফিরদের উপর আল্লাহ তায়ালা অমঙ্গল চক্র চাপিয়ে দিবেন। অতঃপর এমন যুদ্ধ হবে যা
জীবনে কেউ দেখবেনা অথবা যা জীবনে কেউ দেখেনি। অবশেষে তাদের শরীরের উপর পাখী উড়তে
থাকবে। পাখী তাদেরকে অতিক্রম করবে না; এমতাবস্হায় তা মাটিতে পড়ে মরে যাবে। একশ মানুষ
বিশিষ্ট পূর্ন পুরুষদের একটি গোত্র, এদের থেকে মাত্র এক ব্যক্তি বেঁচে থাকবে।
এমতাবস্হায় কেমন করে গনীমতের সম্পদ নিয়ে লোকেরা আনন্দ উৎসব করবে এবং কেমন করে
উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন করা হবে। মুসলমানগণ এ সময় আরেকটি ভয়াবহ বিপদের সংবাদ
শুনতে পাবে এবং এ মর্মে একটি আওয়াজ তাদের নিকট পৌছবে যে, দাজ্জাল
তাদের পেছনে তাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ সংবাদ শুনতেই তারা হাতের
সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে রওয়ানা হয়ে যাবে এবং দশজন অশ্বারোহী ব্যক্তিকে সংবাদ
সংগ্রাহক দল হিসাবে প্রেরণ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ দাজ্জালের সংবাদ সংগ্রাহক দলের প্রতিটি ব্যক্তির নাম, তাদের
বাপ-দাদার নাম এবং তাদের অশ্বের রং সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। এ সর্বোত্তম
অশ্বারোহী দল সেদিন তারাই হবে।
৭০১৮। মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দ ইবনুল শুবারী (রহঃ) ইউসার ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তখন লাল রক্তিম ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত যে।
অতঃপর তিনি পুর্বের ন্যায় অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে ইবনু উলায়্যার হাদীসটি
পূর্ণাঙ্গ এবং প্রশান্তিদায়ক।
৭০১৯। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা
আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর বাড়ীতে ছিলাম। বাড়ীটি তখন লোকে লোকারন্য ছিল।
ইবনু উনায়র এর মত তিনিও বললেন, তখন কুফা নগরীতে লাল রক্তিম ঝঞ্ঝা বায়ু
প্রবাহিত হল।
৭০২০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) নাফি ইবনু উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। তখন পশ্চিম দিক
হতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এক দল লোক আসল। তাদের গায়ে ছিল
পশমের কাপড়। তারা এক টিলার নিকট এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে সাক্ষাৎ করলো। এসময় তারা ছিল দণ্ডায়মান এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উপবিষ্ট। আমার মন তখন আমাকে বলল, তুমি যাও
এবং তাদের ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাঝে গিয়ে দাঁড়াও, যেন তারা
প্রতারণা করে তাকে হত্যা করতে না পারে। পূনঃরায় আবার আমার মনে আসল, সম্ভবত
তিনি তাদের সাথে কোন গোপন আলাপ করছেন। তথাপিও আমি গেলাম এবং তাদের ও রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। এ সময় আমি তার থেকে
চারটি কথা মূখস্হ করলাম এবং তিনি এ কথাগুলো আমার হাত দ্বারাই গণনা করালেন। তিনি
বললেন, তোমরা
জাযিরাতুল আরবে যূদ্ধ করবে, আল্লাহ তা বিজীত করে দিবেন। অতঃপর
পারস্যবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তাও বিজীত করে দিবেন। এরপর রোমীয়দের
সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ
তাআলা এতেও তোমাদের বিজয়ী করে দিবেন। অবশেষে তোমরা দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে, এখানেও
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন। বর্ণনাকারী নাফি (রহঃ) বলেন, হে জাবির!
আমাদের ধারণা রোম বিজয়ের পর দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।
৭০২১। আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার মাক্কী
(রহঃ) হুযায়ফা ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা
আলোচনা করছিলাম। এমতাবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করয়েই জবাবে তাঁরা
বললেন- আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। এ কথা শুনে বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না
যতক্ষন না তোমরা দশটি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধুমর, দাজ্জাল, দাব্বা, পশ্চিম
দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া, মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবতরণ, ইয়াজুজ
মা-জুজ এবং তিনবার ভূমি ধ্বসে যাওয়া তথা প্রান্ত তুমি ধ্বস, পশ্চিম
প্রান্তে ভূমি ধ্বস,
এবং আরব উপদ্বীপে ভূমি ধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। এ নিদর্শন সমূহের পর এক অগ্নি
প্রকাশিত হবে, যা
তাদেরকে ইয়ামান থেকে হাঁকিয়ে ময়দানে হাশরের দিকে নিয়ে যাবে।
৭০২২। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) আবূ সারীহা হুযায়ফা ইবনু আসা’দ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি
কামরার ভেতর ছিলেন। তখন আমরা তাঁর থেকে একটু নীচু স্থানে ছিলাম। এমতাবস্হায় তিনি
আমাদের নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আলোচনা করছিলে। আমরা বললাম, কিয়ামত
সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না
দশটি নিদর্শন প্রকাশিত হবে। পূর্ব দিগন্তে ভূমি ধ্বস, পশ্চিম
দিগন্তে ভূমি ধবস, আরব
উপদ্বীপে ভূমি ধ্বস,
ধুমর, দাজ্জাল, দাব্বার
আরব, ইয়াযুয-মা-জুজ, পশ্চিম
দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং সর্বশেষ আদন দেশের প্রান্ত হতে অগ্নি প্রকাশিত
হওয়া এবং লোকদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া। শু’বা (রহঃ) বলেন, এ বর্ণনায়
দশম নিদর্শনের কথা উল্লেখ নেই। তবে অন্য বর্ণনায় দশম নিদর্শন হিসাবে কোথাও ঈসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবতরণের কথা উল্লেখ রয়েছে, আবার কোথাও উল্লেখ রয়েছে যে, সর্বশেষ
এমন ঝঞ্ঝা বায়ু প্রবাহিত হবে, উহা লোকদেরকে সমুদ্রের মধ্যে নিক্ষেপ করবে।
৭০২৩। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সারীহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কামরার ভেতর ছিলেন। আমরা তার নীচে ছিলাম। অতঃপর
বর্ণনাকারী হাদীসটি পূর্বের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। শুবো (রহঃ) বলেন, আমার মনে
হয় তিনি বলেছেনঃ তারা যেখানে অবতরণ করবে আগুনও সেখানে অবতরণ করবে এবং তারা যেখানে
দ্বিপ্রহরে শয়ন করবে আগুনও সেখানে তাদের সঙ্গে দ্বিপ্রহরে থাকবে। বর্ণনাকারী শুবা
(রহঃ) বলেন, জনৈক
ব্যক্তি আবূ সারীহার এ হাদীসটি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তবে মারফূ- হিসাবে তিনি এ
হাদীসটি উল্লেখ করেননি। এতে এক ব্যক্তি বলেছেন, দশম নিদর্শনটি হল, ঈসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবতরণ। কিন্তু অপর ব্যক্তি বলেছেন, দশম
নিদর্শনটি হল, তখন
এমন ঝঞ্ঝা বাযু প্রবাহিত হবে, যা লোকদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।
৭০২৪। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আবূ সারীহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
আলোচনা করছিলাম, এমতাবস্হায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে আসলেন। অতঃপর তিনি মু’আয
ও ইবনু আবূ জাফরের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তার হাদীসের শেষাংশে বর্ণনা
করেছেন যে, দশম
নিদর্শনটি হল, মারইয়াম
তনয় ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবতরণ। বর্ণনাকারী শুবা (রহঃ) বলেন, আবদুল আযীয
(রহঃ) -এ হাদীসটি মারফু হিসাবে বর্ণনা করেননি।
৭০২৫। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না।
হিযায ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত হবে। ফলে বসরায় অবস্হান রত উটের গলা পর্যন্ত
আলোকিত হয়ে যাবে।
৭০২৬। আমর আবূ-নাকিদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মদ্বীনার বাড়ি ঘর ইহাব অথবা ইউহাব পর্যন্ত পৌছে যাবে।
যুহায়র (রহঃ) বলেন,
আমি সূহায়ল (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, উহা মদ্বীনা হতে কত দুরে অবস্হিত। তিনি বললেন, এতো-এতো
মাইল দুরে অবস্থিত।
৭০২৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ হবে না। বরং
দুর্ভিক্ষ হবে এ কারণে যে, কেবল বৃষ্টি হতে থাকবে, বৃষ্টি
কেবল হতে থাকবে। ফলে ভূমি কোন কিছুই উদগত করবে না।
৭০২০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (অন্য সনদে) ফূহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পূর্বমুখী ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছেন, ফিতনা
এদিক থেকে, ফিতনা
এদিক থেকে- যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে।
৭৩২৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারিরী, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (অন্য সনদে)
উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসা (রাঃ)-এর দরজার নিকট দণ্ডায়মান
ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুল দ্বারা প্রাচ্যের দিকে ইংগিত করে বললেন, ফিতনা এ
দিক থেকে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। এ কথাটি তিনি দুই বা তিনবার বলেছেন।
বর্ণনাকারী উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) তার বর্ণনার মাঝে উল্লেখ করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-এর দরজার নিকট দণ্ডায়মান ছিলেন।
৭০৩০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাচ্যমুখী হয়ে বললেনঃ ফিতনা এদিক
থেকে -ফিতনা এদিক থেকে-অবশ্যই ফিতনা এদিক থেকে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে।
৭৯৩১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহ থেকে বের হয়ে
বললেনঃ তিনি মাথা এদিক থেকে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। অর্থাৎ প্রাচ্যের
দিক থেকে।
৭০৩২। ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রাচ্যের
দিকে ইংগিত করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে আমি একথা বলতে শুনেছি যে, সাবধান, ফিতনা এদিক থেকে, সাবধান ফিতনা এদিক থেকে- তিনবার বলে তিনি বললেন-
যেদিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে।
৭০৩৩। আবদুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু আবান, ওয়াসিল ইবনু আবদুল আ’লা ও আহমাদ ইবনু উমর
ওয়াকীঈ (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, হে
ইরাকবাসী! আমি তোমাদেরকে সগীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল এবং যারা কবীরা
গুনাহ করছে তাদের সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করছিল। আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমার
(রাঃ) থেকে শুনেছি,
তিনি বলতেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে স্বীয় হস্ত দ্বারা প্রাচ্যের দিকে
ইংগিত করে বলতে শুনেছি, ফিতনা এদিক থেকে আসবে-যেদিক থেকে শয়তানের শিং
উদিত হবে। অথচ তোমরা পরস্পর হানাহানি করছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “এবং তুমি
এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হতে মুক্তি দেই। আমি
তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি। ” বর্ণনাকারী আহমাদ ইবনু উমার (রহঃ) তাঁর বর্ননায়
‘সামিয়তু সালিমান’ না বলে ‘আন সালিমিন’ বলেছেন।
৭০৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন
না দাউস গোত্রীয় রমনীদের নিতম্ব যুলখালাসা মূর্তির নিকট ঘর্ষিত হবে। ষূলখালাসা
একটি মুর্তি ছিল, দাউস
গোত্রীয় লোকেরা প্রাক-ইসলামী যুগে তাবানা নামক স্থানে এর পূজা করত।
৭০৩৫। আবূ কামিল আল জাহদারী, আবূ মাআন যায়িদ ইবনু ইয়াযীদ কক্বকাশী (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, রাত্র দিন খতম হবে না, যতক্ষন না
লাত ও উযযা দেবতার পূজা পূনরায় আরম্ভ করা হয়। এ কথা শুনে আমি বললাম, হে আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তাঁর
রাসুলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ, সকল দ্বীনের উপর উহাকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের জন্য, যদিও
মুশরিকরা উহা অপছন্দ করে। এ আয়াত নাযিলের পর আমি তো মনে করছিলাম যে, এ ওয়াদা
অবশ্যই পূর্ণ করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা
অবশ্যই হবে। তবে যতদিন আল্লাহ ইচছা করবেন ততদিন পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। অতঃপর তিনি
সচ্ছ বায়ু প্রবাহিত করবেন। ফলে যাদের হৃদয়ে দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাদের প্রত্যেকেই
মরে সাফ হয়ে যাবে। অবশেষে যাদের মাঝে কোন কল্যাণ নেই তারাই কেবল বেঁচে থাকবে।
অতঃপর আবার পূর্ব পুরুষদের ধর্মে ফিরে যাবে।
৭০৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আবদুল হামীদ ইবনু জাফর (রহঃ) থেকে এ সনদে
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৩৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিয়ামত কায়িম হবে না, যতক্ষন না
এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কবরের পার্শ্ব দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, হায়! আমি যদি
তার স্থানে হতাম।
৭০৩৮। আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবান ইবনু সালিহ ও মুহাম্মদ
ইবনু ইয়াযীদ রিফাঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর শপথ করে বলছি, দুনিয়া খতম
হবে না যতক্ষননা এক ব্যক্তি কবরের পার্শ দিযে যাত্রাকালে উহার উপর গড়াগড়ি দিয়ে
বলবে, বাহ!
এই কবরবাসীর স্থানে যদি আমি হতাম। তার নিকট দ্বীন থাকবে না; থাকবে কেবল
বালা মুসীবত।
৭০৩৯। ইবনু আবূ উমার মাক্কী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, মানুষের
নিকট এমন এক সময় আসবে,
যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও
জানবে না যে, কি
অপরাধে সে নিহত হয়েছে।
৭০৪০। আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু আবান, ওয়াসিল ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই সত্তার শপথ!
যার হাতে আমার প্রাণ,
দুনিয়া খতম হবে না যে পর্যন্ত না মানুষের নিকট আসে এমন এক যুগ, যখন
হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও
জানবে না যে, কি
অপরাধে সে নিহত হয়েছে। প্রশ্ন করা হল, এমন যুলুম কিভাবে হবে? তিনি
উত্তরে বললেনঃ সে যুগটা হবে হত্যার যুগ। এরুপ যুগের হত্যকারী ও নিহত উভয় ব্যক্তই
জাহান্নামী হবে। বর্ণনাকারী আবান হল, ইয়াযীদ ইবনু কায়সান। তিনি ইসমাঈল (রহঃ) থেকে এ
হাদীসটি বর্ণনা করেছেনন। তবে আসলামী শব্দটি তিনি উল্লেখ করেননি।
৭০৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমার আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আবিসিনিয়ার এক ব্যক্তি কাবা গৃহকে
ধ্বংস করবে; তার
উভয় পায়ের গোছা ছোট ছোট হবে।
৭০৪২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আবিসিনিয়ার এক ব্যক্তি কাবা
গৃহকে ধ্বংস করবে; তার
পায়ের গোছা ছোট ছোট হবে।
৭০৪৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছোট ছোট গোছা বিশিষ্ট আবিসিনিয়ার এক
ব্যক্তি আল্লাহ তাঁআলার ঘরকে ধ্বংস করবে।
৭০৪৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন না কাহতান
গোত্র হতে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হবে, যে লোকদেরকে লাঠি দ্বারা পরিচালিত করবে।
৭০৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আলজাবাদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ রাত্র দিন খতম হবে না, যতক্ষন
পর্যন্ত না জাহলাহ নামক ব্যক্তি বাদশাহ হবে। তারা চার ভাই- শরীক, উবায়দুল্লাহ, উমায়র ও
আবদুল কবীর। তারা সকলেই আবদুল মজীদের সন্তান।
৭০৪৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমার আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যে পর্যন্ত না, তোমরা এমন
এক সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমন্ডল হবে চামড়া জড়ানো ঢালের ন্যায়
মাংসল। কিয়ামত কায়িম হবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা এমন জাতির সাথে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা
হবে পশমের।
৭০৪৭। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যে পর্যন্ত
না তোমরা এমন দলের সাথে যুদ্ধ করবে যারা পশমী জুতা পরিধান করবে। তাদের মুখমন্ডল
হবে চামড়া জড়ানো ঢালের ন্যায় মাংসল।
৭০৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না, যে পর্যন্ত
তোমরা এমন সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ না করবে, যাদের জুতা হবে পশমের কিয়ামত কায়িম হবে না, যে পর্যন্ত
তোমরা এমন কাওমের সাথে যুদ্ধ না করবে যাদের চক্ষু হবে ছোট ছোট এবং নাসিকা হবে
অনুন্নত।
৭০৪৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না, যে পর্যন্ত
মুসলিমরা তুর্কীদের সাথে যূদ্ধ না করবে। তারা এমন সম্প্রদায়, যাদের
মুখমন্ডল হবে চামড়া জড়ানো ঢালের ন্যায় মাংসল। তারা পশমী পোষাক পরবে এবং পশমের উপর
হাটবে।
৭০৫০। আবূ কুরায়ব ও আবূ উসামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের পুর্বে তোমরা এমন এক
কাওমের সাথে যূদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের। তাদের মুখমণ্ডল চামড়া
জড়ানো ঢালের ন্যায় মাংসল, এবং রক্ত বর্ণ হবে এবং তাদের চক্ষু হবে ছোট
ছোট।
৭০৫১। যুহায়র ইবনু হারব ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ- অচিরেই ইরাকবাসীরা না খাদ্যশস্য পাবে না দিরহাম পাবে।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম,
কার কারণে এ বিপদ আসবে”? তিনি বললেন- অনারবদের কারণে। তারা খাদ্য শস্য ও
দিরহাম আসতে দিবে না। তিনি আবার বললেন অচিরেই সিরিয়াবাসীর নিকট কোন দ্বীনার আসবে
না এবং কোন খাদ্যশস্যও আসবে না। আমরা প্রশ্ন করলাম, এ বিপদ কোন দিক থেকে আগমন করবে? তিনি বললেন, রোমের দিক
থেকে। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, আমার উম্মাতের শেষভাগে একজন খলীফা হবে। সে হাত
ভরে ভরে অর্থ সম্পদ দান করবে, গণনা করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবূ
নাদরা ও আবূল আলাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের ধারণায় ইনি কি উমার ইবনু আবদুল আযীয? তারা জবাবে
বললেন, না।
৭০৫২। ইবনু মুসান্না (রহঃ) জুরায়রী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
৭০৫৩। নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (অন্য সনদে) আলী ইবনু হুজর আবূ সাঈদ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের খলীফাদের
মধ্যে একজন খলীফা এমন হবে, যে হাত ভরে ভরে দান করবে এবং মালের কোন গণনাই
করবে না। ইবনু হুজর (রহঃ)-এর রেওয়ায়েতে ‘ইয়াহসুল মাল’ এর পরিবর্তে ‘ইয়াহসিল মাল’
বর্ণিত আছে।
৭০৫৪। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সাঈদ ও জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আখেরী যুগে এমন খলীফা
পয়দা হবে, যে
মাল বণ্টন করবে কিন্তু কোন গণনা করবে না।
৭০৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমার থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আমাকে জানিয়েছেন যে, আম্মার (রাঃ) যখন পরিখা খনন করছিলেন তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁকে সম্মোধন
করে বলেছেনঃ সুমায়্যতু তনয়ের উপর ভয়াবহ বিপদ আপতিত হবে এবং একটি বিদ্রোহী দল
তোমাকে হত্যা করবে।
৭০৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু মু’আয ইবনু আব্বাদ আল আনবারী ও সুহায়ম ইবনু আবদুল আ’লা
(রহঃ) (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইসহাক ইবনু মানসূর, মাহমূদ
ইবনু গায়নান ও মুহাম্মাদ ইবনু কুদামা (রহঃ) আবূ মাসলামা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৭০৫৮। মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা (অন্য সনদে) উকবা ইবনু মুকাররাম আম্মী ও
আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মার (রাঃ)-কে বলেছেনঃ
তোমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী লোকেরা হত্যা করবে।
৭০৫৯। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) উম্মে সালমা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৬০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আম্মারকে রাষ্ট্রদ্রোহী
লোকেরা হত্যা করবে।
৭০৬১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়াশের এ গোত্রটি আমার উম্মাতকে ধংস
করবে। এ কথা শুনে সাহাবীগন প্রশ্ন করলেন, আপনি আমাদের কি নির্দেশ দিচ্ছেন। জবাবে তিনি
বললেনঃ তখন যদি লোকেরা তাদের থেকে দূরে সরে যায়।
৭০৬২। আহমাদ ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৩। আমর নাকিদ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পারস্য রাজ নিপাত গেছে। অতঃপর
পারস্য রাজ্য আর হবে না। এবং যখন রোম সমরাট নিপাত যাবে তারপর আর কোন রোম সমরাট
হবে না। শপথ ঐ সত্তার,
যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা তাদের ধন-ভাণ্ডার অবশ্যই আল্লাহর
রাস্তায় লুটিয়ে দিবে।
৭০৬৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া অন্য সনদে ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)
যূহরী (রহঃ) থেকে সুফিয়ান (রহঃ)-এর সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৫। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি
হাদীস হচ্ছে এই যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পারস্য রাজ্য নিপাত
গিয়েছে, এরপর
আর কেউ পারস্য রাজ্য হবে না। রোম সমরাট অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর আর কোন রোম
সমরাট হবে না। তোমরা তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর পথে বন্টন করবে।
৭০৬৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পারস্য রাজ্য নিপাত যাবে। এরপর
আর কেউ পারস্য রাজ্য হবেনা। অতঃপর জাবির (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর অনুরুপ হাদীস
বর্ণনা করেছেন।
৭০৬৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুসলমান অথবা মুমিনদের একটি দল শুভ্র
প্রাসা’দ সংরক্ষিত পারস্য রাজ্যের ধনভাণ্ডার জয় করবে। বর্ণনাকারী কুতায়হল
দ্বিধাহীনভাবে মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেছেন।
৭০৬৮। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি আবূ আওয়ানা (রহঃ)-এর
হাদীসের অনুরুপ।
৭০৬৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি ঐ শহরের কথা শুনেছ, যার এক
প্রান্তে স্হল ভাগ এবং এক প্রান্তে জলভাগ? উত্তরে সাহবীগণ বললেন, হে আল্লাহর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনেছি। অতঃপর বললেনঃ কিয়ামত কায়িম
হবে না যতক্ষন পর্যন্ত ইসহাক (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সন্তানদের সত্তর হাজার লোক এ
শহরের লোকদের সাথে যুদ্ধ না করবে। তারা শহরের হলর প্রান্তে উপনীত হয়ে কোন অস্ত্র
দ্বারা যুদ্ধ করবে না এবং কোন তীরও চালাবে না; বরং তারা একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং
আল্লাহু আল্লাহ বলবে;
অমনি এর একপ্রান্ত ভূমিস্যাৎ হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী সাওর (রহঃ) বলেন, আমার যতটা
মনে পড়ে, আমার
কাছে বর্ণনাকারী ব্যক্তি সমূদ্রস্তিত প্রান্তের কথা বলেছিলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার
তারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আল্লাহ- বলবে। এতে শহরের অপর প্রান্ত
ভূমিস্যাৎ হয়ে যাবে। এরপর তারা তৃতীয় বার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহ আল্লাহ
বলবে। তারা যখন গনীমতের মাল বন্টনে ব্যস্ত থাকবে, তখন কেউ চীৎকার করে ঘোষণা করবে, দাজ্জালের
আবির্ভাব হয়েছে। এ কথা শুনতেই তারা ধন-সম্পদ ফেলে দেশে প্রত্যাবর্তন করবে।
৭০৭৩। মুহাম্মাদ ইবনু মারযুক (রহঃ) সাওর ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৭০৭১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অবশ্যই তোমরা ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে
এবং তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে, অবশেষে পাথর বলবে, হে মুসলিম!
এ ই তো ইয়াহুদী। তুমি তাকে হত্যা কর।
৭০৭২। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে
-এতে রয়েছে অর্থাৎ এই তো আমার পশ্চাতে ইয়াহুদী লুকিয়ে আছে।
৭০৭৩। আবূ বকর ইবনু আবী
শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা এবং ইয়াহুদী সম্প্রদায় পরস্পর লড়াই করবে। অবশেষে প্রন্তর
খন্ড বলবে, হে মুসলিম! এই তো ইয়াহুদী
আমার পাশ্চাতে লূকিয়ে আছে, তাকে তুমি হত্যা কর।
৭০৭৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইয়াহুদী সম্প্রদায় তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর তোমরা তাদের
উপর বিজয়ী হবে। অবশেষে পাথর বলবে, হে মুসলিম! এই তো ইয়াহুদী
আমার পশ্চাতে লুকিয়ে আছে, তাকে তুমি হত্যা কর।
৭০৭৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত মুসলমানগন ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের সাথে
লড়াই না করবে। মুসলমানগণ তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে
আত্মগোপন করবে। তখন প্রস্তর বা বৃক্ষ বলবে, হে
মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা! এই তো
ইয়াহুদী আমার পশ্চাতে। এসো, তাকে হত্যা কর। কিন্তু
–গারকাদ নামক বৃক্ষ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহুদীদের বৃক্ষ।
৭০৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (অন্য সনদে) আবূ কামিল আলজাহদারী (রহঃ) জাবির ইবনু
সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে কতিপয় মিথ্যাবাদী লোকের
আবির্ভাব হবে। তবে আবূল আহওয়াসের বর্ণনায় এ কথা বর্ণিত আছে যে, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছো? তিনি বললেন, শুনেছি।
৭০৭৭। ইবনু মুসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। সিমাক (রহঃ) বলেনঃ
আমি আমার ভ্রাতাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, তোমরা তাদের থেকে বেচে থাকবে।
৭০৭৮। যুহায়ব ইবনু হারব ও
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী
দাজ্জালের আবির্ভাব হয়। আবির্ভাবের পর তারা প্রত্যেকেই বলবে, সে আল্লাহর রাসুল।
৭০৭৯। মুহাম্মদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে শুধু ‘হাত্তা ইয়ান বায়াছা’ পর্যন্ত বর্ণিত আছে।
৭০৮০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমরা কতিপয়
বালকের নিকট দিয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে ইবনু সায়্যাদও বিদ্যমান ছিল। বালকেরা পালিয়ে
গেল এবং ইবনু সায়্যাদ বসে রইল। এ দেথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিছুটা বিরক্তিবোধ করলেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ
তোমার উভয় হস্ত ধুলায় ধুসরিত হোক। তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসুল! সে বলল, না। বরং আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে আমি আল্লাহর
রাসুল। একথা শুনে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে
আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। অতঃপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যা মনে করছো, যদি সে তাই হয়, তবে
তো তুমি তাকে কতল করতে সক্ষম হবে না।
৭০৮১। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবূ
কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, আমরা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে পায়চারি করছিলাম। এমতাবস্হায় আমরা
ইবনু সায়্যাদের নিকট দিয়ে অতিবাহিত হলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার ব্যাপারে আমি একটি কথা গোপন রেখেছি। ইবনু সায়্যাদ
বলল, আপনার অন্তরে (ধুঁয়া) শব্দটি লূকায়িত আছে। এ
কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চলে যা অভিশপ্ত, তুই তোর পরিমণ্ডল অতিক্রম করতে পারবি না। তখন
উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। এক্ষণি আমি তার গর্দান উড়িযে
দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে ছাড়, যার সম্পর্কে তুমি আশংকা করছো সে যদি ঐ
ব্যাক্তিই হয়ে থাকে তবে তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না।
৭০৮২। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার মদ্বীনার কোন এক গলিতে ইবনু সায়্যাদের
সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও উমর (রাঃ) এর
সামনাসামনি দেখা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়্যাদকে বললেনঃ
তুমি কি সাক্ষ্য দাও, আমি আল্লাহর রাসুল? জবাবে সে বলল, আপনি
কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আমি তো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাগণের প্রতি ও তার
কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, আমি
পানির উপর আরশ দেখতে পাচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি তো সমুদ্রে ইবলীসের আরশ দেখতে পাচ্ছ। আচ্ছা তুমি আর কি দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, আমি
দুজন সত্যবাদী ও একজন মিথ্যাবাদীকে অথবা দুইজন মিথ্যাবাদী ও একজন সত্যবাদীকে দেখতে
পাচ্ছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে ছেড়ে দাও। সে নিজের
সম্পর্কে সন্দিহান।
৭০৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও
মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু সায়্যাদকে দেখলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আবূ বকর ও উমর (রাঃ) ও ছিলেন। এবং ইবনু সায়্যাদ (রহঃ) কতিপয়
বালকের সাথে। অতঃপর জুরায়রী (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৮৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার
আল কাওয়ারীরী ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা মক্কা যাওয়ার পথে ইবনু
সায়্যাদ মক্কা পর্যন্ত আমার সফর সঙ্গী ছিল। পথিমধ্যে সে আমায় বলল, মানুষের কানাঘূষায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তারা
মনে করছে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না? তিনি বলেন, আমি
বললাম, হাঁ শুনেছি। তখন সে বলল, আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জাল মক্কা ও মদ্বীনা প্রবেশ করতে পারবে না? আমি বললাম, হ্যা, শুনেছি। সে বলল, দেখুন, আমি তো মদ্বীনায় জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এখন
মক্কা যাবার ইচ্ছা করছি। এ সব কথা বলার পর উপসংহারে সে বলল, আল্লাহর কসম! তবে আমি জানি, দাজ্জাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে, তার বাড়ী কোথায় এবং এখন সে কোথায় আছে। আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এহেন কথা বলে সে আমাকে মহা
ফাপড়ে ফেলে দিল।
৭০৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,একদা ইবনু সায়্যাদ আমার সাথে কিছু কথাবার্তা
বলল। এতে আমি লজ্জিত হলাম। সে বলল, লোকদের
নিকট ওযর পেশ করলাম এবং বললাম, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীরা! আমার ব্যাপারে তোমাদের কি হয়েছে? আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কি এ কথা বলেননি যে, দাজ্জাল ইয়াহুদী হবে? আমি তো মুসলমাল। তিনি তো বলেছেনঃ দাজ্জালের কোন
সন্তান হবে না। আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। তো এও বলেছেন যে আল্লাহ তা আলা
দাজ্জালের উপর মক্কায় প্রবেশ করা হারাম করে দিয়েছেন। অথচ আমি তো সেও করেছি। আবূ
সাঈদ (রাঃ) বলেন, সে অনর্গল এমনভাবে বলে যেতে
লাগল, যার ফলে আমি তাকে সত্যবাদী
মনে করার কাছাকাছি পৌছে গেলাম। অতঃপর সে বলল, আল্লাহর
শপথ! অবশ্যই আমি জানি, দাজ্জাল এখন কোথায় আছে। আমি
তার পিতামাতাকেও চিনি। লোকেরা ইবনু সায়্যাদকে প্রশ্ন করল, তুমি দাজ্জাল হও, একি
তুমি পছন্দ কর? জবাবে সে বলল যদি আমাকে
দাজ্জাল বানানো হয়, তবে আমি তা অপছন্দ করব না।
৭০৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,একবার আমরা হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলাম। আমাদের সাথে ছিল ইবনু সাঈদ। অতঃপর এক স্থানে আমরা অবতরণ করলাম। লোকেরা
এদিক-ওদিক চলে গেল। কেবল আমি এবং সে রয়ে গেলাম। লোকেরা ইবনু সাইয়াদ সম্পর্কে যে
কহল বলাবলি করছে, এ কারণে আমি তার থেকে ভীষণ
আতংকবোধ করছিলাম। তিনি বলেন, ইবনু সাইয়াদ তার মাল-পত্র
আমার মালের সাথে এনে রাখল। আমি বললাম, গরম
খুব প্রচণ্ডা তুমি যদি তোমার মালামাল ঐ বৃক্ষের নীচে নিয়ে রাখতে। এ কথা শুনে সে
তাই করল। অতঃপর আমাদের সামনে কতগুলো বকরী এল। এ দেখে ইবনু সাইয়াদ সেখানে গেল এবং
এক পাত্র দুধ নিয়ে এল। এরপর সে আমাকে বলল, হে
আবূ সাঈদ। তুমি দুধ পান করে নাও। আমি বললাম, গরম
খুব প্রচন্ড। দুধও গরম। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, দুধ
পান না করার কারণ এটাই ছিল যে, তার হাতে দুধ পান করা বা তার
হাত থেকে দুধ গ্রহণ করা আমি পছন্দ করিনি। এ দেখে ইবনু সাইয়াদ বলল, হে আবূ সাঈদ! লোকেরা আমার সম্পর্কে যে কথা
কানাঘূষা করে বলছে, এ কারণে এখন আমার ইচ্ছা যে, আমি একটি রশি নিয়ে উহা গাছে লটকিয়ে ফাঁসি দিয়ে
মরে যাই। অতঃপর সে বলল, হে আবূ সাঈদ! তোমাদের আনসার
সম্প্রদায়ের তুলনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস আর কার
নিকট অধিক লুক্কায়িত আছে। তুমি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
হাদীস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত নও? রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, দাজ্জাল
কাফির হবে অথচ আমি মুসলমান। তিনি কি বলেননি যে, দাজ্জাল
বন্ধ্যা এবং সন্তানহীন হবে? অথচ মদ্বীনায় আমি আমার
সন্তান রেখে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি যে, দাজ্জাল মক্কা -মদ্বীনা প্রবেশ করতে পারবে না? অথচ আমি মদ্বীনা থেকে এসেছি এবং মক্কা যাবার
ইচ্ছা করছি। আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেন, তার
কথায় আমি তার পক্ষ অবলম্বন করার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলাম। অতঃপর ইবনু সাইয়াদ বললঃ
আল্লাহর কসম! আমি তাকে (দাজ্জালকে) চিনি, তার
জনাস্হান চিনি এবং এখন সে কোথায় আছে, তাও
আমি জানি। এ কথা শুনে আমি বললাম, তোমার সমস্ত দিন ধ্বংস হোক, অকল্যাণকর হোক।
৭০৮৭। নাসর ইবনু আলী আল
জাহযামী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইবনু সাঈদকে প্রশ্নক রেছেন, জান্নাতের মাটি কিরুপ হবে? সে বলল, হে
আবূল কাসিম! জান্নাতের মাটি ময়দার মত সাদা এবং খাটি মেশকের মত সুগন্ধিযূক্ত হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সত্য বলেছ।
৭০৮৮। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু সায়্যাদ জান্নাতের মাটি
কিরুপ হবে, এ সম্পর্কে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেনঃ জান্নাতের মাটি
ময়দার মত সাদা এবং মেশকের ন্যায় সুগন্ধিযূক্ত হবে।
৭০৮৯। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয
আল আনবারী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে আল্লাহ রনামে শপথ
করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, ইবনু সায়্যাদই হলো দাজ্জাল।
আমি বললাম, আপনি আল্লাহর নামে শপথ করে এ
কথা বলছেন? তিনি বললেন, আমি উমর (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শপথ করে এ বিষয়ে আলোচনা করতে শুনেছি। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কথাকে অস্বীকার করেননি।
৭০৯০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া
ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারামালা ইবনু ইমরান আত তূজীবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব
(রাঃ) একদলমানুষ সহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ইবনু
সায়্যাদের নিকট গেলেন। তখন তাকে বনী মাগলার কিলার নিকট একদল বালকের সাথে ক্রীড়ারত
অবস্থায় পেলেন। তখন ইবনু সায়্যাদ বালিগ হবার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু সে তা
জানত না। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হস্ত দ্বারা তার
পৃষ্ঠে আঘাত করে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল? এ কথা শুনে ইবনু সায়্যাদ তার প্রতি তাকাল এবং
বলল যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনু সায়্যাদ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন উত্তর দেননি। অধিকন্তু তিনি বললেনঃ আমি ঈমান আনয়ন
করেছি আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলগণের প্রতি। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? ইবনু
সায়্যাদ বলল, আমার নিকট একজন সত্যবাদী ও
একজন মিথ্যাবদী লোক আসে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে বললেন, তোমার বিষয়টি হযবরল হযে
গিয়েছে। তোমাকে জিজ্ঞেস করার জন্য একটি কথা আমি মনে মনে গোপন রেখেছি। শুনা মাত্রই
ইবনু সায়্যাদ বলল, তা হচ্ছে (ধুয়া)। তৎপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দূর হয়ে যা। তুই তোর পরিমণ্ডল
অতিক্রম করতে পারবি না। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এক্ষণি
তার গর্দান উড়িয়ে দেব। রাসুল বললেনঃ যদি সে দাজ্জাল হয়, তবে তো তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। আর যদি
সে দাজ্জাল না হয় তবে তাকে হত্যা করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। মালিক ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, অতঃপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবায় ইবনু কাব (রাঃ) সেই বাগানের দিকে চললেন, যেখানে ইবনু সায়্যদূদ বসবাস করত। বাগানের মধ্যে
এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করতে
চেষ্টা করছিলেন, যাতে ইবনু সায়্যাদ তাঁকে
দেখার পূর্বে তিনি তার কথা শুনে নেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাকে দেখলেন যে, সে তার বিছানায় একটি চাঁদরে
আবৃত অবস্হায় গুনগুন করে কি যেন বলছিল। এদিকে ইবনু সায়্যাদের মা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখল যে, তিনি
বৃক্ষের আড়ালে আত্নগোপনের চেষ্টা করছেন। সে ততক্ষণাৎ ইবনু সায়্যাদকে বলে উঠলঃ হে
সাফ! এটা ইবনু সায়্যাদের নাম। মুহাম্মাদ এসে গেছে। এ কথা শুনতেই ইবনু সায়্যাদ
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার মা
তাকে সাবধান না করলে সে পরিষ্কার বলে ফেলত। সালিম (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে আল্লাহ তা’আলার
যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুনকীর্তনের পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেনঃ আমি
তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিৎনা সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নাবী তাঁর সম্প্রদায়কে
এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -ও তাঁর কাওমকে এ
সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে
দিচ্ছি যা কোন নাবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হল এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল
কানা হরে। আল্লাহ তাআলা কানা নন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
জৈনক সাহাবী যে দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে
সতর্ক করেছেন। সে দিন তিনি বলেছেনঃ চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির লেখা থাকবে। যে
ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপছন্দ করবে সে উহা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মুমিন
ব্যক্তই উহা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এও বলেছেন যে, তোমরা
জেনে রাখ যে, তোমাদের কোন ব্যক্তি
মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিপালককে দেখতে সক্ষম হবে না।
৭০৯১। হাসান আন-হুলওয়ানি ও
আবদ ইবনু হুমায়দ সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবী সহ চললেন। এতে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -ও ছিলেন।
তিনি ইবনু সায়্যাদকে বালিগ হওয়ার কাছাকাছি সময় বালক অবস্হায় বনী মুআবিয়্যার
কিল্লার নিকট অন্যান্য বালকদের সাথে ক্রীড়ারত অবস্হায় দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি
উমার ইবনু সাবিতের হাদীসের শেষ পর্যন্ত ইউনুসের অনুরুপ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে
ইয়াকুবের এ হাদীসের মধ্যে একথা বর্ণিত রয়েছে যে, আমার পিতা ‘লাওতারাকতাহু বাইনা’ এর স্হলে (যদি তার
মা না বলত; তবে তার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে
যেতো) বর্ণিত আছে।
৭০৯২। আবদ ইবনু হুমায়দ ও
সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুল একদল সাহাবী সহ ইবনু সায়্যাদের নিকট
গেলেন। এদের মধ্যে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও ছিলেন। এ সময় সে বনী মাগালার কিল্লার
নিকট এক দল বালকের সাথে খেলাধূলা করছিল। তখন সে বালক ছিল। বর্ণনাকারী এ হাদীসটি
ইউনূস এবং মালিকের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমারের
হাদীস তথা উবায় ইবনু কা’বের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাগানের
দিকে যাওয়ার হাদীসটি উল্লেখ করেননি।
৭০৯৩। আবদ ইবনু হুমায়দ ও
উবাদা (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদ্বীনার
এক গলিতে ইবনু উমর (রাঃ) ইবনু সায়্যাদের সাক্ষাৎ পান। তিনি তাকে এমন কিছু কথা বলেন, যার ফলে সে রাগে ফূলতে থাকে। সে এমন ফূলল যে, সমগ্র গলি যেন পূর্ণহয়েঁ গেল। অতঃপর ইবনু উমর
(রাঃ) হাফসা (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি পূর্বেই এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তিনি
বললেন, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম
করুন। আপনি অনর্থক কেন তাকে খোচা দিতে গেলেন”? আপনি
কি জানেন না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল যখন বের হবে তবে কোন ব্যাপারে ক্রুদ্ধ হয়ে বের
হবে।
৭০৯৪। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, ইবনু সায়্যাদের সাথে আমার দুবার সাক্ষাৎ হয়েছে
একবার সাক্ষাতের পর আমি জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি বলেন যে, ইবনু
সায়্যাদই দাজ্জাল? জবাবে সে বলল, আল্লাহর শপথ, কখনো
না। আমি বললাম, তাহলে তো তুমি আমাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করছো। আল্লাহর কসম! তোমাদের জনৈক ব্যক্তি তো আমাকে এ মর্মে সংবাদ
দিয়েছে যে, সে মৃত্যূবরণ করবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা সর্বাধিক বিত্তশালী এবং
সন্তান-সন্ততি সস্পন্ন না হবে। আজ তো অনুরুপই হয়েছে বলে সে মন্তব্য করছো অতঃপর
ইবনু সায়্যাদ আমাদের সাথে আলোচনা করল। এরপর আমি তার থেকে পৃথক হয়ে গেলাম। ইবনু
সায়্যাদের সাথে আরেকবার আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তখন তার চক্ষু ফূলা অবস্হায় ছিল। আমি
তাকে বললাম, তোমার চোখের কি অবস্থা, কি আমি দেখতে পাচ্ছি! সে বলল, আমি জানিনা। আমি বললাম, তোমার মাথায় চক্ষু অথচ তুমি জাননা! অতঃপর সে
বলল, আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার এ লাঠিঁতেও তিনি চক্ষু
পয়দা করে দিতে পারেন। এরপর সে গাধার চেয়েও বিকট আওয়াজে চিৎকার করল। বর্ণনাকারী
বলেন, আমি শুনেছি, আমার কতিপয় সাথী বলেছেন যে, আমি তাকে আমার লাঠি দ্বারা প্রহার করেছি। ফলে
লাঠিটি টুকরা টুকরা হয়ে পড়েছে। আল্লাহর কসম অথচ এ সম্পর্কে আমি কোন কিছু জানিনা।
নাফি (রহঃ) বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনু উমর
(রাঃ) উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রাঃ)-এর নিকট এলেন এবং তার নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলেন।
একথা শুনে তিনি বললেন, ইবনু সায়্যাদের নিকট আপনার
কি প্রয়োজন ছিল? আপনি কি জানেন না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ কারো প্রতি ক্রোধই প্রথমে দাজ্জালকে মানুষের সামনে বের করে নিয়ে আসবে।
৭০৯৫। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (অন্য সনদে) ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে দাজ্জালের আলোচনা করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। কিন্তু সাবধান!
দাজ্জালের ডান চক্ষু কানা হবে। আর তা যেন আঙ্গুরের ন্যায় ফোলা হবে।
৭০৯৬। আবূর রাবী ও আবূ কামিল
(রহঃ) (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭০৯৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীই তার উম্মাতকে
কানা মিথ্যাবাদী সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সাবধান! দাজ্জাল কানা হবে। তোমাদের
প্রতিপালক কানা নন। দাজ্জালের চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে- ‘কা ফা রা’ লেখা আছে।
৭০৯৮। ইবনু মুসান্না ও ইবনু
বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, দাজ্জালের চক্ষুদ্বয়ের
মাঝখানে ‘কাফারা’ অথবা কাফির লেখা থাকবে।
৭০৯৯। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের চক্ষু ফোলা হবে। তার চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির লেখা
থাকবে। এর হেজ্বু হচ্ছে,’কাফারা’ প্রত্যেক মুসলমানই এ
লিখা পাঠ করতে পারবে।
৭১০০। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, মুহাম্মাদ ইবনুল আলা ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের বামচক্ষু কানা হবে। তার দেহে ঘন চুল হবে। তার সাথে
জান্নাত ও দোযখ থাকবে। পক্ষান্তরে তার জাহান্নাম জান্নাত হবে এবং তার জান্নাত
জাহান্নাম হবে।
৭১০১। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের সাথে কি থাকবে, এ
সম্পর্কে আমি নিশ্চিত অবগত আছি। তার সাথে প্রবাহমান দুটি নহর থাকবে। একটি শ্যত
সাদা পানি এবং অপরটি দূশ্যত লেলিহান অগ্নি মনে হবে। যদি কেউ সুযোগ পায় তবে সে যেন
ঐ নহরে প্রবেশ করে যাকে বৃশ্যত অগ্নি মনে হবে এবং চক্ষু বন্ধ করতঃ মাথা অবনমিত করে
সে যেন উহা থেকে পানি সেবন করে। উহা হবে ঠাণ্ডা পানি। দাজ্জালের চক্ষু ফোলা হবে
এবং তার চোখে পূরু নখ থাকবে এবং উভয় চোখের মাঝখানে আলাদা আলাদাভাবে কাফির লেখা
থাকবে। শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল মুমিন ব্যক্তি এ লেখা পাঠ করতে পারবে।
৭১০২। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রাঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দাজ্জালের
সাথে পানি ও আগুন থাকবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার আগুনই হবে সুশীতল পানি এবং তার
পানই হবে অগ্নি। সুতরাং নিজেকে ধ্বংস করো না। বর্ণনাকারী আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছি।
৭১০৩। আলী ইবনু হুজর (রহঃ)
উকবা ইবনু আমির ও আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) বলেন, আমি উবইবা ইবনু আমির ও আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ)-এর
সাথে হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তারপর উকবা (রাঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে
বললেন, আপনি দাজ্জাল সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা যা শুনেছেন তা আমাদেরকেও
শোনান। তিনি বললেন, দাজ্জাল যখন আবিভূতি হবে তখন
তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। কিন্ত্বু মানুষ যাকে পানি দেখবে সেটা হবে দাহনশীল
অগ্নি। আর যেটাকে মানুষ অগ্নি দেখবে সেটা হবে সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি। কাজেই তোমাদের
মধ্যে যে কেউ এ সময়কাল পায় সে যেন দূশ্যত যাকে অগ্নি দেখা যাচ্ছে তাতেই প্রবেশ
করে। কেননা প্রকৃতপক্ষে সেটা হবে সুপেয় সুমিষ্ট পানি। তারপর হুযায়ফার সমর্থন করে
উকবা (রহঃ) বলেন, আমিও রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছি।
৭১০৪। আলী ইবনু হুজর সা’দী ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা হুনায়ফা ও আবূ মাসউদ (রাঃ) একত্রিত হলেন।
তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, দাজ্জালের সাথে যা থাকবে এ
সম্পর্কে আমি তার থেকে সর্বাধিক জ্ঞাত। তার সাথে একটি পানির নহর এবং একটি আগুনের
নহর থাকবে। যেটাকে দূশ্যত অগ্নি মনে হবে সেটাই হবে পানি। আর যেটাকে দৃশ্যত পানি
মনে হবে সেটাই হবে আগুন। তোমাদের কেউ যদি এ সময়কাল পায় এবং সে পানি পান করার
ইচ্ছা করে তবে সে যেন যা দৃশ্যত অগ্নি মনে হবে তা থেকে পান করে। কেননা এখানেই সে
পানি পাবে। বর্ণনাকারী আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমিও
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এরুপ বলতে শুনেছি।
৭১০৫। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদেরকে এমন বিষয় বলব না কি, যা কোন নাবী তার কাওমকে আজ পর্যন্ত বলেননি শোন, দাজ্জাল কানা হবে এবং তার সাথে জান্নাত ও
জাহান্নাম নামে দুটি প্রতারণার বস্তু থাকবে। সে যাকে জান্নাত বলবে সেটি আসলে হবে
জাহান্নাম। দেখ, দাজ্জালের ব্যাপারে আমি
তোমাদেরকে তীতি-প্রদর্শন করছি, যেমন নূহ (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তাঁর সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন।
৭১০৬। আবূ খায়সামা যুহায়র
ইবনু হারব (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান রাবী (রহঃ) নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। আলোচনা কালে তিনি
কখনো আওয়াজ ছোট করলেন, আবার কখনো আওয়াজ বড় করলেন।
ফলে আমরা মনে করলাম যে, দাজ্জাল বৃক্ষরাজির এ ঝাড়ের
মধ্যেই বুঝি এসে পড়েছে। অতঃপর আমরা সন্ধ্যায় আবার তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাদের
মাঝে এর কিছু আলামত দেখতে পেয়ে বললেন, তোমাদের
কি অবস্হা? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! আপনি সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এতে আপনি কখনো আওয়াজ
ছোট করেছেন, আবার কখনো বড় করেছন। ফলে
আমরা মনে করেছি যে, দাজ্জাল বুঝি এ ঝাড়ের মধ্যেই
বিদ্যমান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, দাজ্জাল নয়, বরং তোমাদের ব্যাপারে অন্য কিছুর আমি অধিক
আশংকা করছি। শোন, আমি তোমাদের মাঝে বিদ্যমান
থাকা অবস্হায় যদি দাজ্জালের আবির্ভাব হয় তবে আমি নিজেই তাকে প্রতিহত করব। তোমাদের
প্রয়োজন হবে না। আর যদি আমি তোমাদের মাঝে না থাকা অবস্হায় দাজ্জালের আবির্ভাব হয়, তবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তি নিজের পক্ষ হতে একে
প্রতিহত করবে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলাই হলেন আমার পক্ষ হতে
তত্ত্বাবধায়ক। দাজ্জাল যুবক এবং কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট হবে। তার চক্ষু হবে স্ফীত
আঙ্গূরের ন্যায়। আমি তাকে কাফির আবদুল উযযা ইবনু কুতনের সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি।
তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সূড়া কাহফের প্রথমোক্ত আয়াত সমুহ
পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ হতে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বামে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ! অবিচল থাকবে। আমরা
জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে পৃথিবীতে কত দিন অবস্হান করবে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, চল্লিশ দিন পর্যন্ত। এর
প্রথম দিনটি এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাসের সমান
এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের দিনসমূহের মতই হবে।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যেদিন এক
বছরের সমান হবে, উহাতে এক দিনের সালাতই কি
আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? জবাবে তিনি বললেন, না, বরং
তোমলা এদিন হিসাবে ঐ দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! দাজ্জাল পৃথিবীতে কেমন করে চলবে? তিনি
বললেন, বাতাসে পরিচালিত মেঘের
ন্যায়। সে এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে কুফরীর দিকে আহবান করবে। তারা তার উপর
ঈমান আনহান করবে এবং তার ডাকে সাড়া দিবে। অতঃপর সে আকাশকে হুকুম করবে। আকাশ বৃষ্টি
বর্ষণ করবে এবং ভূমিকে নির্দেশ দিরে, ভূমি
গাছ-পালা ও শষ্য উদগত করবে। এরপর সন্ধ্যায় তাদের গবাদী পশুগুলো পূর্বের তূলনায়
অধিক লম্বা, কুজ, প্রশস্ত স্তন এবং উদরপূর্ণ অবস্হায় তাদের নিকট
ফিরে আসবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে এবং তাদেরকে কুফুরীর প্রতি
আহবান করবে। তারা তার কথাকে উপেক্ষা করবে। ফলে সে তাদের নিকট হতে ফিরে চলে যাবে।
অমনি তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও পানির অনটন দেখা দিবে এবং তাদের হাতে তাদের ধন-সম্পদ
থাকবে না। তখন দাজ্জাল এক পতিত স্থান অতিক্রমকালে উহাকে সম্মোধন করে বলবে, তুমি তোমার গুপ্তধন বের করে দাও। তখন যমীনের
ধন-ভাণ্ডার বের হয়ে তার চতূস্পার্শে একত্রিত হতে থাকবে, যেমন মধু মক্ষিকা তাদের সর্দারের চারিপাশে
সমবেত হয়। তৎপর দাজ্জাল এক যুবক ব্যক্তিকে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত
করে তীরের লক্ষ্যস্হলের ন্যায় দু-ফাক করে ফেলবে। অতঃপর সে পূনরায় তাকে ডাকবে। যুবক
দীপ্তমান হাস্যোজ্জল চেহারায় তার দিকে এগিয়ে আসবে। এ সময় আল্লাহ রাববুল আলামীন
মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে প্রেরণ করবেন। তিনি দুই ফিরিশতার কাঁধের
উপর ভর করে গোলানা রং এর জোড়া পরিহিত অবস্হায় দামেশক নগরীর পূর্ব দিকের শুভ্র
মিম্বারের উপর অবতরণ করবেন। যখন তিনি তার মাথা ঝুঁকাবেন তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম
তাঁর শরীর থেকে গড়িযে পড়বে। তিনি যে কোন কাফিরের নিকট খাবেন সেই তাঁর শ্বাসের
বাতাসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাঁর যতটৈ পর্যন্ত যাবে তাঁর শ্বাসও ততাদূর পর্যন্ত পৌছবে।
তিনি দাজ্জালকে তালাশ করতে থাকবেন। অবশেষে তাকে লুদ- নামক স্থানে গিয়ে পাকড়াও
করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ সম্প্রদায়ের নিকট
যাবেন, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা
দাজ্জালের ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন। তাদের নিকট গিয়ে তিনি তাদের চেহারায় হাত
বুলিয়ে জান্নাতে তাদের স্থানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। এমতাবস্হায় আল্লাহ তাআলা
ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি এ মর্মে অহী নাযিল করবেন যে, আমি আমার বান্দাদেরকে নাযিল করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই।
সুতরাং তুমি তাদেরকে নিয়ে ভূর পর্বতে চলে যাও। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয
সম্প্রদায়কে প্রেরণ করবেন। তারা প্রতি উচু ভূমি হতে ছুটে আসবে। তাদের প্রথম দলটি
তবরিস্তান সমুদ্রের নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। অতঃপর তাদের
সর্বশেষ দলটি এ স্হান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ
সমুদ্রে এক সময় অবশ্যই পানি ছিল। তারা আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ফলে
তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ দ্বীনারের মূল্যের চেয়েও
অধিক মূল্যবান প্রতিপন্ন হবে। তখন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে
আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড়ে এক
প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর ন্যায় তালাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে।
অতঃপর ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত
জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ পূনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ
তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লহল এক ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন। তারা তাদেরকে বহন করে
আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে ফেলবে। এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ
করবেন যার ফলে কাচা-পাকা কোন ঘরই আর বাকী থাকবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে উদ্ভিদ
শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পূনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর
পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে
যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি
ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত
হবে। ফলে দুগ্নবতী একটি উটই একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে, দুগ্ধবতী একটি গাভী একগোত্রীয় মানুষের জন্য
যথেষ্ট হবে এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের জন্য। এ সময়
আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার
লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলমানদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন
একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের
সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে।
৭১০৭। আলী ইবনু হুজর (রহঃ)
আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ইবনু জারির (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে এতে “এখানেও এক সময় পানি ছিল” এ কথার পর অতিরিক্ত এ কথাও বর্ণিত আছে
যে, অতঃপর তারা এগুতে থাকবে। অবশেষে যেতে যেতে তারা
-জাবালে খায়র- নামক স্থানে গিয়ে পৌছবে। এ হল, বায়তুল
মুকাদ্দাসের একটি পাহাড়। এখানে পৌছে তারা বলবে, আমরা
তো দুনিয়াবাসীদেরকে খতম করে দিয়েছি। এসো, আসমানের
সত্তাকেও খতম করে দেই। এ বলেই তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকবে। আল্লাহ
তীর রক্তে রঞ্জিত করে তাদের প্রতি আবার ফিরিয়ে দিবেন। বর্ণনাকারী ইবনু হুজরের
বর্ণনায় অতিরিক্ত এ কথাও রয়েছে যে, আল্লাহ
বলবেন, আমি আমার বান্দাদেরকে নাযিল
করোছি, যাদের সাথে যুদ্ধ করা ক্ষমতা
কারো নেই।
৭১০৮। আমর নাকিদ, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ
সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ বর্ননা
দিলেন। দাজ্জাল সম্পর্কে তিনি এওবললেন যে, দাজ্জাল
আসবে, কিন্তু মদ্বীনার রাস্তা ঘাটে
প্রবেশ করা তার জন্য হারাম ও অসাধ্য কাজ হবে। কাজেই সে মদ্বীনার আশে পাশে কোন
প্রস্তরপূর্ণ ভূমিতে অবতরণ করবে। তার মুকাবিলার জন্য মদ্বীনা থেকে এক ব্যক্তি তার
কাছে যাবে, যে সেদিন শ্রেষ্ঠ মানব হবে।
সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিয়ে বলছি যে, তূই সে দাজ্জাল যার কথা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শুনিয়েছিলেন। দাজ্জাল বলবে, লোক সকল! যদি আমি এ ব্যক্তিকে হত্যা করি অতঃপর
জীবিত করি তবে তোমাদের মনে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে কি? লোকেরা বরেবে না। অতঃপর সে তাকে হত্যা করবে; অতঃপর জীবিত করবে; জীবিত করার পর সে ব্যক্তি বলবে, আল্লাহর কসম! এখনি তো তোমার ব্যাপারে আমার
জ্ঞান আরো বেড়ে গেছে, যা ইতিপূর্বে কখনো ছিল না।
দাজ্জাল আবারো তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু করতে সক্ষম হবে না।
৭১০৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদূর
রহমান দারেমী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১১০। মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু কাহয়ায (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দাজ্জালের আবির্ভাবের পর জনৈক মুসলিম
ব্যক্তি তার দিকে অগ্রসর হবে। অতঃপর রাস্তায় অস্ত্রধারী দাজ্জাল বাহিনীর সাথে তার
সাক্ষাৎ হবে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, কোথায়
যাবেই সে বলবে, আবির্তূত দাজ্জালের নিকট
যাব। তারা তাকে আবারো জিজ্ঞেস করবে, তুমি
কি আমাদের মালিকের উপর ঈমান আনয়ন করনি? সে
বলবে, আমাদের প্রতিপালক গুপ্ত নন।
দাজ্জালের লোকেরা তার সম্পর্কে বলবে- তোমরা তাকে হত্যা করে দাও। তখন তাদের
পরস্পর একে অপরকে বলবে- আমাদের মালিক কাউকে তার সামনে নেয়া ব্যতিরেকে হত্যা করতে
তোমাদেরকে নিষেধ করেননি? অতঃপর তারা তাকে নিয়ে
দাজ্জালের নিকট যাবে। দাজ্জালকে দেখা মাত্রই সে বলবে, হে লোক সকল! এ-তো সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর দাজ্জাল তার লোকদেরকে আগন্তুক ব্যক্তির
মাথা ছিন্ন-ভিন্ন করার নির্দেশ দিয়ে বলবে, তাকে
ধর এবং তার মাথা ছিন্ন-ভিন্ন করে দাও। অতঃপর তার পেট ও পৃষ্ঠে আঘাত করা হবে।
পূনরায় দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি
কি আমার প্রতি বিশ্বাস স্হাপন কর না। সে বলবে, তুমি
তো মাসীহ দাজ্জাল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর
দাজ্জাল তার সম্পর্কে হুকুম দিবে। দাজ্জালের হুকুমে মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকে
করাতে চিরে দু-ফাঁক করে দেয়া হবে। অতঃপর দাজ্জাল উভয় ইকরার মধ্যস্হলে দাঁড়িয়ে তাকে
সম্মোধন করে বলবে, উঠ। সে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে।
অতঃপর আবারো তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি আমার প্রতিঈমান রাখ
না? জবাবে সে বলবে, তোমার
ব্যাপারে প্রতীতি আমার মাঝে কেবল বেড়েই চলবে। অতঃপর আগন্তুক ব্যক্তি বলবে, হে লোক সকল! আমার পর দাজ্জাল আর কারো সাথে এমন
আচরণ করতে সক্ষম হবে না। এরপর যবাহ করার জন্য দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করবে। কিন্তু
তার গলা হতে হাসলী পর্যন্ত শরীর তামায় পরিণত হয়ে যাবে। ফলে দাজ্জাল তাকে যবাহ করতে
সক্ষম হবে না। উপায় না দেখে দাজ্জাল তখন তার হাত-পা ধরে তাকে ছুঁড়ে মারবে। লোকেরা
মনে করবে, দাজ্জাল তাকে আগুনে নিক্ষেপ
করেছো বস্তুতঃ নিক্ষিপ্ত হবে সে জান্নাতে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ রাব্বূল আলামীনের নিকট এ ব্যক্তই হবে মানুষের মধ্যে
সর্বোত্তম শহীদ।
৭১১১। শিহাব ইবনু আব্বাদ আল
আবাদী (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জাল সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার তুলনায় এতো অধিক আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি। তিনি বলেছেনঃ
তোমার কিসের চিন্তা? সে তোমার কোন ক্ষতই করতে
পারবে না। উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে খাদ্য এবং পানির নহর থাকবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা তো আল্লাহর নিকট তার চাইতেও অনেক সহজ।
৭১১২। সুরায়জ ইবনু ইউনূস
(রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাজ্জাল সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার চাইতে অধিক জিজ্ঞেস আর কেউ করেনি। আর তিনি আমাকে বলেছেন, তোমার কি প্রশ্ন? তিনি
বলেন, উত্তরে আমি বললাম, যেহেতু লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে ও গোশতের পাহাড় এবং পানির ঝর্ণা
থাকবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা তো আল্লাহর নিকট তার
চাইতেও সহজ।
৭১১৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা
ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) (অন্য সনদে) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (অন্য সনদে) ইবনু আবূ উমর
(অন্য সনদে) আবূ বকর ইবনু শায়বা (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ইসমাঈল (রহঃ)
থেকে এ সনদে ইবরাহীম ইবনু হুমায়দের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ইয়াযীদের
হাদীসে অতিরিক্ত এ কথা রয়েছে যে, অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, হে বৎস!।
৭১১৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয
আল আনবারী (রহঃ) ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়া ইবনু মাসউদ সাকাফী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে
আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে, একদা এক ব্যক্তি তার নিকট
এসে বললেন এ কেমন হাদীস আপনি বর্ণলা করছেন যে, -এতো
এতো দিনের মধ্যে কিয়ামত কায়িম হবে। এ কথা শুনে তিনি বললেন, সুবহান আল্লাহ অথবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অথবা
অনুরুপ কোন শব্দ। অতঃপর তিনি বললেন, আমি
তো কেবল এ কথাই বলেছেনঃ যে- অচিরেই তোমরা এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে যা
ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিবে। এ ঘটনা সংঘটিত হবেই হবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে
চল্লিশ পর্যন্ত অবস্হান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না
চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়া ইবনু মাসউদের অনুরুপ হবে। তিনি দাজ্জালকে তালাশ
করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। অতঃপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দুই ব্যক্তির মাঝে কোন দুশমনী থাকবে না। তখন
আল্লাহ তাআলা সিয়িয়ার দিক হতে ঠান্ডা বায়ু প্রবাহিত করবেন। ফলে যার অন্তরে কল্যাণ
বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন ব্যক্তই এ
পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তায়ালা কবয করে
নিবেন। এমন কি তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি পাহাড়ের অভ্যন্তরে গিয়েও আত্মগোপন করে
তবে সেখানেও বায়ু তার নিকট পৌছে তার জান কবয করে নিবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে একথা বলতে শুনেছি যে, তখন
মন্দ লোকগুলো দুনিয়াতে বাকী থাকবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রানীর
ন্যায় তাদের আখলাক হবে। তারা কল্যাণকে অকল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ
বলে মনে করবে না। এ সময় শয়তান এক আকৃতিতে তাদের নিকট এসে বলবে, তোমরা কি ডাকে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি
আমাদেরকে কোন বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছে? তখন
সে তাদেরকে মূর্তি পূজার নির্দেশ দিবে। এমতাবস্হায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা
থাকবে এবং তারা সাফল্যময় জীবন যাপন করবে। তখনই শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। যেই এ
আওয়ায শুনবে সেই তার ঘাড় একদিকে অবনমিত করবে এবং অন্য দিকে উত্তলোন করবে। এ আওয়ায
সর্বপ্রথম ঐ ব্যক্তই শুনতে পাবে যে তার উটের জন্য হাউয মেরামতের কাজে নিয়োজিত
থাকবে। আওয়ায শুনমাত্রই সে বেহুশ হয়ে পড়ে যাবে। সাথে সাথে অনান্য লোকেরাও বেহুশ
হয়ে যাবে। অতঃপর মহান আল্লাহ শুক্র বিন্দুর মত বৃষ্টি প্রেরণ করবেন বা নাযিল
করবেন। বর্ণনাকারী নুমান (রহঃ) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এতে মানুষর শরীর পরিবদ্ধিত
হবে। পূনরায় সিংগায় ফূৎকার দেয়া হবে। তৎক্ষণাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবো
অতঃপর আহবান করা হবে যে- হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আস। অতঃপর
তাদেরকে থামাও, কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা
হবে। এরপর আবারো বলা হবে, জাহান্নামী দল বের কর।
জিজ্ঞেস করা হবে, কত জন? জবাবে বলা হবে, প্রত্যেক
হাজার থেকে নয়শ- নিরানব্বই জন। অতঃপর তিনি বললেন, এ ই
তো ঐ দিন, যেদিন কিশোরকে পরিণত করবে
বৃদ্ধে এবং এই চরম সংকটের দিন।
৭১১৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) ইয়াকুব ইবনু আসিম ইবনু উরওয়া ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে শুনেছি যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আমরকে জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি কি বলেছেন, অমূক
অমূক সময় কিয়ামত কায়িম হবে? একথা শুনে তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছি, তোমদেরকে
কোন কথাই আমি আর বলব না। আমি তো একথাই বলেছি যে, অল্প
কিছু দিন পরেই তোমরা একটি ভয়াবহ ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে। যা ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে ভষ্মীভূত
করে দিবে। বর্ণনাকারী শুবা এ কথা বা অনুরুপ কথাই বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। অতঃপর
তিনি মূআযের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে বলেছেন, যার অন্তরে অণুপরিমাণ ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন ব্যক্তই তখন আর বাকী থাকবে না। বরং
তার জান কবয করে নেয়া হবে। মুহাম্মাদ ইবনু জাফর (রহঃ) বলেন, শুবা (রহঃ) এ হাদীস আমার নিকট কয়েকবার বর্ণনা
করেছেন এবং আমিও তার নিকট উহা পেশ করেছি।
৭১১৬। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে আমি একটি হাদীস মুখস্হ করেছি, যা
কখনো আমি ভুলিনি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে
শুনেছি যে, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল, পূর্ব দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া এবং পূর্বাহ্নের
সময় দাববা মানুষের বের হওয়া। এ দুটির যে কোনটি প্রথমে সংঘটিত হবে পরক্ষণে
দ্বিতীয়টিও তড়িৎ প্রকাশিত হবে।
৭১১৭। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আবূ যুরআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদ্বীনায় মারওয়ান ইবনুল হাকামের নিকট তিনজন
মুসলমান উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি কিয়ামতের নিদর্শন সমুহের বিবরণ দিচ্ছিলেন এবং তারা তা
শুনছিলেন। আলোচনায় তিনি বলছিলেন যে, কিয়ামতের
নিদর্শন সমূহের প্রথম নিদর্শন হল, দাজ্জালের আবির্ভাব হওয়া।
একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, মারওয়ানের
কথা কিছুই হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এমন একটি হাদীস
আমি মুখস্হ করেছি, যা কখনো আমি ভূলিনি। আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর তিনি
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১১৮। নাসর ইবনু আলী আল
জাহযামী (রহঃ) আবূ যুরঁআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মারওয়ানের নিকট লোকেরা কিয়ামত সম্পর্কে
আলোচনা করল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বোক্ত হাদীস দু’টোর অনুরুপ বর্ণনা
করতে শুনেছি। তবে এতে তিনি পূর্বাহ্নের কথা উল্লেখ করেননি।
৭১১৯। আবদুল ওয়ারিস ইবনু
আবদুল সামাদ ইবনু আব্দুরল ওয়ারিস ও হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আমির ইবনু শারাহীল
শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যাহহাক ইবনু কায়সের বোন ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করলেন। যে সমন্ত মহিলাগণ প্রথমে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম। তিনি বলেন, আপনি, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস শুনেছেন, অন্যের দিকে সন্মোধন করা ব্যতিরেকে, এমন একটি হাদীস আপনি আমার নিকট বর্ণনা করুন।
তিনি বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি শুনতে চাও, তবে অবশ্যই আমি বর্ণনা করবো। সে বলল, হ্যা আপনি বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি ইবনু মুগীরাকে বিবাহ করেছি। তখন তিনি
কুরায়শী যুবকদের উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে প্রথম যুদ্ধে শরীক হয়েই তিনি শহীদ হয়ে যান। আমি বিধবা হয়ে যাবার পর আবদুল
রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) আমার নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠান। পয়গাম পাঠান রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আরো কতিপয় সাহাবী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর আযাদকৃত গোলাম উসামা ইবনু যায়িদের জন্য পয়গাম পাঠান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ হাদীসটি আমি পূর্বেই শুনেছিলাম
যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে যেন
উসামাকেও ভালবাসে। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করার পর আমি তাকে বলেছি, আমার বিষয়টি আপনার ইখতিয়ারে ছেড়ে দিলাম। আপনি
যার সাথে ইচ্ছা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিন। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট চলে যাও। উম্মে শারীক
একজন আনসারী বিত্তশালী মহিলা। আল্লাহর পথে সে অধিক ব্যয় করে এবং তার নিকট অধিক
অতিথি আসে। একথা শুনে আমি বললাম, আমি তাই করব। তখন তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট যেয়ো না। কেনানা উম্মে
শারীক অধিক আপ্যায়নকারী মহিলা এবং আমি এটাও পছন্দ করিনা যে, তোমার উড়না পড়ে যাক বা তোমার পায়ের গোছা হতে
কাপড় খসে যাক আর লোকেরা তোমার শরীরের এমন স্হান দেখে নিক যা তুমি কখনো পছন্দ
করনা। তবে তুমি তোমার চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাকত্যূমর নিকট চলে যাও। তিনি বনী
ফিহরের এক ব্যক্তি। ফিহর কুরায়শেরই একটি শাখা গোত্র। ফাতিমা যে খান্দানের লোক
তিনিও সে খান্দানেরই মানুষ। আমি তার নিকট চলে গেলাম। অতঃপর আমার ইদ্দত সমাপ্ত হলে
আমি জনৈক আহবানকারীর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বস্তুতঃ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত আহবানকারী ছিলেন। তিনি এ মর্মে আহবান করছিলেন
যে সালাতের উদ্দেশ্যে তোমরা একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর আমি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম
এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি
বলেন, কাওমের পেছনে যে কাতারে
মহিলাগণ ছিলেন আমি সে কাতারেই ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামাযান্তে হাসিমুখে মিম্বরে বসে গেলেন। অতঃপর বললেনঃ প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে
বসে যাও। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভীতি
প্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এ জন্য একত্রিত করেছি যে, তামীমদারী (রাঃ) প্রথমে খ্রীষ্টান ছিল। সে আমার
নিকট এসে বায়আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। সে আমার কাছে এমন একটি
কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সেই বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের শ্রুতিগোচর
করেছিলাম। সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লখম ও জুযাম
গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক নৌকায় আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক তুফান এক
মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকো অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক
দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে।
দ্বীপে নামতেই জন্তুর মত একটি জিনিস তাদের দৃষ্টিগোচর হল। তার সমগ্র দেহ লোমে আবৃত
ছিল। লোমের কারণে তার আগা-পাছা চিনা যাচ্ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তূই
কে? সে বলল, আমি
দাজ্জালের গুপ্তচর। লোকেরা বলল- গুপ্তচর আবার কি? সে
বলল! লোক সকল! ঐযে গীর্জা দেখা যায় সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে
তোমাদের অপেক্ষা করয়ে তামীমদারী (রাঃ) বলেন, তার
মুখে এক ব্যক্তির কথা শুনে আমরা ভীত ছিলাম যে, সে
আবার শয়তান তো নয়! আমরা দ্রুত হেটে গীর্জায় প্রবেশ করতঃ -এক বিশালদেহী ব্যক্তিকে
দেখতে পেলাম। ইতিপূর্বে এমন আমরা আর কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাধা অবস্হায় দুই
হ্যাইর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো। আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই
কে? সে বলল, তোমরা
আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বল, তোমাদের
পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে
ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমূদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস
পর্যন্ত ঝাড়ের কবলে থেকে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায়
আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ লোমে আবৃত
জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। লোমের আধিক্যের কারণে আমরা তার আগা-পাছা চিহ্নিত করতে
পারছিলাম না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে
বলেছে, সে নাকি দাজ্জালের গুপ্তচর।
আমরা বললাম, শুপ্তচর আবার কি! তখন সে
বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর
আগ্রন্থে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি। আমরা তার
কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি; না জানি এ আবার কোন জ্বীন
ভূত কিনা? অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বায়সানের খেজুর বাগানের খবর বল।
আমরা বললাম, এর কোন বিষয়টি সম্পর্কে তূই
সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বায়সানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে
আমরা বললাম, হাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন
নিকটেই যেদিন এগুলোতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচছা, তিবরিয়া সমুদ্র সম্পর্কে আমাকে অবগত কর। ” আমরা
বললাম, এর কোন বিষয় সম্পর্কে তূই
আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস! সে বলল, এর
মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল,হ্যা, সেখানে
বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশী দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, যুগার এর ঝর্ণা সম্পর্কে তোমরা আমাকে অবহিত
কর। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদেরকে
জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস। সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? এবং এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার
পানি দেয় কি! আমরা বললাম- হাঁ, এ তে বহু পানি আছে এবং এ
জনপদের লোকেরা এপানি দ্বারাই তাদের ক্ষেত সিক্ত করে। সে পূনরায় বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সংবাদ দাও। সে এখন কি করছেই তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদ্বীনায় চলে
এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে
যুদ্ধ করছে কি! আমরা বললাম, হাঁ, করেছে। সে বলল, সে
তাদের সাথে কিরুপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শবর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং
তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি
হয়েই গেছে? আমরা বললাম, হাঁ। সে বলল, বশ্যতা
স্বীকার করে নেয়াই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক ছিল। এখন আমি নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে
বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি
সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেইয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র
প্রদক্ষিণ করবো। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোন জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কা ও
তায়্যিবা এ দু-টি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দুটির কোন একটিতে
প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফিরিশ্তা উযুক্ত
তরবারি হস্তে সামনে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফিরিশতাদের
পাহারা থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছড়ি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা। অর্থাৎ তায়্যিবা অর্থ এই
মদ্বীনায় সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতিপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হাঁ, আপনি বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তামীমদারীর কথাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে! যেহেতু তা
সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার- যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মাদ্বীনা ও মক্কা সম্পর্কে ইতিপূর্বে বলেছি।
তিনি আরো বললেন, সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান
সাগরে বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্নদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি স্বীয় হস্তদ্বারা
পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বলেন, এ হাদীস আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে মুখস্হ করেছি।
৭১২০। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব
হারেসী (রহঃ) শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
আমি ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। অতঃপর তিনি আমাকে তাজা খেজুর হাদিয়া
দিলেন। এ খেজুরকে ‘রাতবু ইবনু তালিব’ বলা হয়। এবং যবের ছাতূ পান করালেন। এরপর আমি
তাকে তিন তালাক- পাপ্তা মাহলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কোথায় ইদ্দত পালন করবে? জবাবে তিনি বললেন আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক
দেয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার বাপের বাড়ীতে
ইদ্দত পালনের অনুমতি দিয়েছিলেন। ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) বলেন, তখন লোকদের উদ্দেশ্যে ঘোষনা দেয়া হল, সালাতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর এ
ঘোষণা শুনে যারা সমবেত হলেন তাদের সাথে আমিও গেলাম এবং পূরুষের কাতারের পেছনে
মহিলাদের কাতারের প্রথম সারিতে আমি দাড়ালাম। সালাতান্তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরে বসে খুৎবারত অবস্হায় একথা বলতে শুনেছি যে, তামীমদারীর চাচাতো ভাই একবার সমুদ্রে নৌকায়
ভ্রমণ করছিল। অতঃপর হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত একথা বর্ণিত
আছে যে, ফাতিমা বলেন, আমি যেন এখনো দেখতে পাচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর কোমর হেলিয়ে মাটির দিকে ইশারা করে বলেছেন, এই
হচ্ছে তায়্যিবা অর্থ মদ্বীনা।
৭১২১। হাসান ইবনু আলী আল
হুলওয়ানী ও আহমাদ ইবনু উসমান নাওফিলী (রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তামীমদারী আসল এবং রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ মর্মে অবগত করল যে, একদা সে সমুদ্রে নৌকায় আরোহণ করল। তখন নৌকাটি
তাকে সহ জায়গা” থেকে বিচ্যুত হয়ে গেল এবং দ্বীপের তটে গিয়ে লাগল। অতঃপর সে পানির
উদ্দেশ্যে দ্বীপ অভ্যন্তরে প্রবেশ করল। সেখানে পৌছে সে এমন এক ব্যক্তিকে দেখল, যে তার লোম হেঁচড়িয়ে চলছে। অতঃপর তিনি হাদীসের
পূর্ণ কাহিনী বর্ণনা করলেন। তবে এতে এও রয়েছে যে, দাজ্জাল
বলবে, আমাকে যদি বের হওয়ার অনুমতি
প্রদান করা হয় তবে আমি তায়্যিবা ব্যতীত সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করব। অতঃপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামীমদারীকে লোকদের মাঝে নিয়ে এলেন
এবং সে তাদেরকে পূরা বৃত্তান্ত বর্ণনা করে শুনাল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই তায়্যিবা এবং দাজ্জাল ঐ ব্যক্তই।
৭১২২। আবূ বকর ইবনু ইসহাক
(রহঃ) ফাতিমা বিনত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসে বললেন, হে লোক সকল! তামীমদারী আমার
নিকট বর্ণনা করেছে যে, এক সময় তার কাওমের কতিপয় লোক
সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করাছীল। অতঃপর তাদের নৌকাটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
উপায়ান্তর না পেয়ে তাদের কেউ কেউ নৌকার কাষ্ঠে ভর করে সামূদ্রিক দ্বীপে গিয়ে
পৌছে। অতঃপর আবূ যিনাদ হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১২৩। আলী ইবনু হুজর (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মক্কা মদ্বীনা ব্যতীত পৃথীবি সমস্ত শহরেই দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে। তবে
মক্কা মদ্বীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। কেননা এ দুই শহরের প্রতিটি রাস্তায়ই
ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে এর পাহারাদারীতে নিয়োজিত থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল
মদ্বীনার এক নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করবে। তখন মদ্বীনাতে তিনবার ভূমিকম্প হবে। যার
ফলে প্রত্যেক মুনাফিক ও কাফির মদ্বীনা থেকে বের হয়ে তার নিকট চলে যাবে।
৭১২৪। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর হাম্মাদ ইবনু সালামাহ অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে
রয়েছে যে, দাজ্জাল এসে জুরফের এক
অনুর্বর ভূমিতে অবতরণ করবে এবং এখানেই সে তার শিবির স্হাপন করবে। যার ফলে প্রত্যেক
মুনাফিক পূরুষ ও মহিলা তার নিকট চলে যাবে।
৭১২৫। মানসুর ইবনু আবী
মুযাহিম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ইস্পাহানের সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুগামী হবে, তাদের গায়ে থাকবে কালো চাঁদর।
৭১২৬। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) উম্মে শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে পালিয়ে যাবে। এ
কথা শুনে উম্মে শারীক বললেন, হে আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সেদিন আরবের লোকেরা কোথায় থাকবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তখন তারা সংখ্যায় কম হবে।
৭১২৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১২৮। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ দাহমা,আবূ কাতাদা ও অনুরুপ আরো
কতিপয় ব্যক্তি থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, হিশাম
ইবনু আমিরের সন্মুখে দিয়ে আমরা ইমরান ইবনু হুসায়নের নিকট যেতাম। একদা হিশাম (রহঃ)
বললেন, তোমরা আমাকে অতিক্রম করে এমন
মানুষের নিকট যাচ্ছ, যারা আমার তুলনায়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে অধিক উপস্থিত হয়নি এবং
যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস সম্পর্কে আমার তুলনায়
অধিক জ্ঞাত নয়। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে
শুনেছি যে, আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
পর হতে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মাঝে দাজ্জালের তূলনায় মারাত্মক আর কোন কিছু হবে না।
৭১২৯। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম
(রহঃ) তিন ব্যক্তি থেকে বর্ণিত, এদের মধ্যে আবূ কাতাদাও আছেন, তারা আবদুল আযীয ইবনু মুখতারের মতই বলেছেন যে, আমরা হিশাম ইবনু আমিরের সামুখ দিয়ে ইমরান ইবনু
হুসায়নের নিকট যেতাম। তবে এতে ‘খালকু আকবারু মিনাদ দাজ্জাল’ কথাটি উল্লেখ আছে।
৭১৩০। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পুর্বে
তোমরা তড়িৎ নেক আমল কর, তা হল-ধুঁয়া, দাজ্জাল, দাব
বাতূল আরদ, খাস বিষয় ও আম বিষয়।
৭১৩১। উমায়্যা ইবনু বিসতাম
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তড়িৎ তোমরা নেক আমল করতে আরম্ভ কর। তা হল
দাজ্জাল, ধোঁয়া, দাববাতুল আরঁদ, পশ্চিম
দিক হতে সূর্যউদয় হওয়া, কিয়ামত এবং মাউত।
৭১৩২। যুহায়র ইবনু হারব ও
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১৩৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া
(অন্য সনদে) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মাকাল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হত্যাকাণ্ডের সময় ইবাদত করা আমার নিকট হিজরত
করার সমতূল্য। আবূ কামিল (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৭১৩৪। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
সর্ব নিকৃষ্ট মানুষের উপরই কিয়ামত কায়িম হবে।
৭১৩৫। যাঈদ ইবনু মানসুব
(অন্য সনদে) কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন
আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা
ইশারা করে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আমি ও কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি
এ দুটির মত।
৭১৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু
মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি ও কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ
দুটির মত। শুবা (রহঃ) বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ)-এর নিকট
শুনেছি, তিনি তার বর্ণনায় বলতেন, যেমন এক আঙ্গূল অন্য আঙ্গুলের তুলনায় বড়। অতঃপর
শুবা (রাঃ) বলেন, এ কথাটি কাতাদ (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন না নিজের থেকেই বলছেন, তা আমি নিশ্চিত জানি না।
৭১৩৭। ইয়াহইয়া-ইবনু হাবীব
মারিসী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এবং কিয়ামত এ দুটির মত প্রেরিত হয়েছি। এ কথাটি বর্ণনা করতে
গিয়ে শুবা তার শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলিকে এক সাথে মিলালেন।
৭১৩৮। ইবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৭১৩৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার
(রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭১৪০। আবূ গাসসান মিসমাঈ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আমি এবং কিয়ামত প্রেরিত হয়েছি এ দুটির মত। এ সময় তিনি তার শাহাদাত ও মধ্যমা
আঙ্গূলিকে একত্রিত করেছেন।
৭১৪১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা
ও আবূ কুরায়ব আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বেদুঈন
লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসেই তাকে কিয়ামত
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, বলত, কিয়ামত কবে হবে? তখন
তিনি তাদের মাঝে কম বয়স লোকটির প্রতি নযর করে বলতেন, এ যদি বেঁচে থাকে তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার পুর্বেই
তোমাদের কিয়ামত এসে যাবে।
৭১৪২। আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামত কবে হবে? তখন
তাঁর নিকট মুহাম্মাদ নামক এক আনসারী বালক উপিস্থিত ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বালক যদি বেঁচে থাকে তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে কিয়মত
কায়িম হয়ে যাবে।
৭১৪৩। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন যে, কিয়ামত
কবে হবে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পর্যন্ত চুপ করে থাকেন। অতঃপর তিনি
সন্মুখস্হ ইযদ গোত্রের এ যুবকের প্রতি তাকালেন, বস্তুতঃ
ইযদ শানূয়ার একটি শাখা গোত্র। অতঃপর তিনি বললেনঃ এ বালক যদি দীর্ঘ হায়াত পায় তবে
তার বার্ধক্যে পদার্পণ করার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন এ বালক আমার সমবয়স্ক ছিল।
৭১৪৪। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার সমবয়স্ক মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর এ
গোলাম একদা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি তার হায়াত দীর্ঘায়িত হয় তবে সে
বার্ধক্যে পৌছার পূর্বেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে।
৭১৪৫। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ এক ব্যক্তি তার উষ্ট্রী দোহন করবে; কিন্তু
পাত্র তার মুখের কাছে পৌছার পুর্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে। ব্যক্তি কাপড়
বেচা-কেনায় লিপ্ত থাকবে। তারা বেচা-কেনা শেষ না করতেই কিয়ামত কায়িম হয়ে যাবে।
এমনিভাবে এক ব্যক্তি তার হাউয মেরামত করতে থাকবে। কিন্তু মেরামত সেরে মুখ ফিরাবার
পুর্বেই কিয়ামত এসে যাবে।
৭১৪৬। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ উভয় ফুৎকারের মাঝে চল্লিশ হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আবূ হুরায়রা! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি
অস্বীকার করি। তারা আবারো জিজ্ঞেস করলেন, এ
কি চল্লিশ মাস? এবারো তিনি বললেন, এ অস্বীকার করি। অতঃপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত
হবে, এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে যেমন সবজি উদগত
হয়। অতঃপর তিনি বললেন, তখন একটি হাড় ব্যতীত মানুষের
সমস্ত শরীর পঁচে যাবে। আর সে হাড়টি হল, মেরুদণ্ডের
হাড়। কিয়ামতের দিন এ হাড় থেকেই আবার মানুষকে পূনরায় সৃষ্টি করা হবে।
৭১৪৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ মানুষের সব কিছুই মাটি খেয়ে ফেলবে। কেবল মেরুদণ্ডের হাড় বাকী থাকবে। এর
দ্বারাই প্রথমতঃ মানুষ করা হয়েছে এবং এর দ্বারাই আবার তাদেরকে সৃষ্টি করা হবে।
৭১৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস
হচ্ছে এই যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের শরীরে এমন একটি হাড্ডি আছে, যা যমীন কখনো ভক্ষণ করবে না। কিয়ামতের দিন এর
দ্বারাই পুনরায় মানুষ করা হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে
আল্লাহর রাসুল! এ আবার কোন হাড়? তিনি বললেন, এ হল, মেরুদণ্ডের
হাড়।