পানীয় দ্রব্য

৪৯৬৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া- তামীমী (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদর দিবসে আমি গনীমত (যুদ্ধলব্ধ মাল) থেকে একটি বয়স্কা উটনী পেয়ে ছিলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আর একটি বয়স্কা উটনী দিয়েছিলেন। একদিন আমি জনৈক আনসারী ব্যক্তির দরজার সামনে সে দুটি বসিয়ে রাখলাম। আমার ইরাদা হল, সে দুটির পিঠে করে কিছু ইযখির ঘাস বয়ে আনবো, আর তা বিক্রয় করে ফাতিমা (রাঃ)-এর ওলীমায় সাহায্য নিব। আমার সাথে ছিল বনূ কায়নূকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার। হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) সে বাড়িতেই মদ্যপান করছিল। তার সাথে ছিল একজন গায়িকা। সে (তার গানের মধ্যে) বললোঃ হে হামযা! হৃষ্টপূষ্ট উটনী দুটির কাছে যাও (এবং তোমার মেহমানদের জন্য তা যবেহ কর)। এরপর হামযা ও দুটির কাছে তরবারিসহ ছুটে গেল। পরে দুটিরই কূঁজ কেটে ফেললো এবং তাদের পিছন দিক ফেঁড়ে ফেললো। এরপর সে এ দুটির কলিজা বের করে নিল। আমি ইবনু শিহাবকে বললাম, তিনি কূঁজ দুটি কি করলেন? তিনি বললেন, কূঁজ দুটি কেটে সাথে নিয়ে গেলেন। ইবনু শিহাব বলেনঃ আলী (রাঃ) বলেনঃ এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম। তাঁর কাছে ছিল যায়দ ইবনু হারিসা। তারপর আমি তাঁকে সমস্ত ঘটনা অবহিত করলাম। তিনি যায়দকে সাথে নিয়ে বের হলেন। আমিও তার সঙ্গে চললাম। হামযার কাছে গিয়ে তাকে কিছু কড়া কথা বললেন। হামযা চোখ ভুলে বললো, তোমরা তো আমার বাবার গোলাম বৈ কিছু নও। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাচাৎ দিকে ফিরে আসলেন। এমনকি তিনি তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসলেন। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪৯৬৬। আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ বদরের দিন আমার জন্য গনীমত থেকে আমার অংশে একটি বয়স্কা উটনী ছিল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন এক-পঞ্চমাংশ থেকে আমাকে আর একটি বয়স্কা উটনী দিয়েছিলেন। আমি যখন রাসুল-তনয়া ফাতিমা-এর সঙ্গে বাসর যাপনের ইচ্ছা করলাম, তখন বানূ কাহানূকা গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার ও আমি পরস্পর ওয়াদাবদ্ধ হলাম। সে আমার সঙ্গে যাবে আর আমরা (দু-জনে) ইযখির (ঘাস) নিয়ে আসবো। আমি ইচ্ছা করলাম, এগুলি স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রয় করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওলীমার ব্যাপারে সাহায্য নিব। আমি উট দুটির জন্য জ্বীন, থলে এবং রশি ইত্যাদি জিনিস সংগ্রহ করছিলাম। আর আমার উট দুটি জনৈক আবূ সারী ব্যক্তির ঘরের পাশে বসানো ছিল। আমিও যা সংগ্রহ করবার সংগ্রহ করলাম। এমন সময় হঠাৎ দেখি সে দুটির কূঁজ কেটে ,ফেলা হয়েছে, পিছনের দিক ফেঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং উভয়ের কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। আমি আমার দু-চোখে এ দূশ্য সহ্য করতে পারলাম না। আমি বলে উঠলম, এ কাজ কোন ব্যক্তি করলো? লোকেরা বললো, হামযা ইবনু আব্দুল মুত্তালিব। সে এ বাড়িতে আনসারদের একদল সূরাপায়ীর মধ্যে আছে। তাকে ও তার সাথীদেরকে গান শুনাচ্ছিল এক গায়িকা। সে তার গানে বললোঃ হে হামযা! তুমি মোটাসোটা উট দুটির কাছে যাবে কি? পরে হামযা গিয়ে ডঁঠলো, ঊট দুটির কূঁজ কেটে ফেললো, পিছনের দিক ফেঁড়ে ফেললো এবং কলিজা বের করে নিলো। আলী (রাঃ) বলেনঃ অবশেষে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তাঁর কাছে ছিল যায়দ ইবনু হারিসা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেহারার অবস্হা দেখে বুঝতে পারলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর শপথ, আজকের মত দিন আমি আর কখনও দেখিনি! হামযা আমার উট দুটির উপর চড়াও হয়ে উভয়ের কূঁজ দুটি কেটে ফেলেছে, পিছনের দিক ফেঁড়ে ফেলেছে (এবং কলিজা বের করে নিয়েছে) সে ঐ বাড়িতে আছে আর তার সঙ্গে আছে সূরাপায়ীর এক দল। তিনি বলেনঃ এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর নিয়ে আসতে বললেন। পরে তা পরিধান করে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসা তাঁর পিছনে পিছনে চললাম। অবশেষে তিনি হামযা যে ঘরে ছিল, সে ঘরের দরজায় এসে অনুমতি চাইলেন। তারা তাঁকে অনুমতি দিল। তিনি প্রবেশ করেই দেখতে পেলেন সূরাপায়ীর দল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযার কৃতকর্মের জন্য তাকে ভৎসনা করতে লাগলেন। হঠাৎ হামযার চোখ দুটি লাল হয়ে গেলো। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দিকে তাকালো। এরপর সে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো তাঁর হাঁটুর দিকে, তারপর আরো উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো তাঁর নাভির দিকে, এরপর দৃষ্টি তুললো তাঁর চেহারার দিকে। তারপর হামযা বললো, তোমরা তো আমার পিতার গোলাম বৈ কিছুই নও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন সে নেশাগ্রন্ত, তখন তিনি পিছনে হেঁটে বের হয়ে পড়লেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে বের হলাম। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৪৯৬৭। আবূ রবী সুলায়মান ইবনু দাঊদ আতাকী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ মদ হারাম হওয়ার দিন আমি আবূ তালহার বাড়িতে লোকদের মদ্যপান করাচ্ছিলাম। তারা শুকনো ও কাচা খেজুরের মদ্যপান করতো। হঠাৎ শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি ঘোষণা দিচ্ছে। তিনি বললেন, বের হয়ে দেখ। আমি বের হয়ে দেখলাম, এক ব্যক্তি ঘোষণা দিচ্ছিলঃ শুনে রাখ, মদ হারাম করা হয়েছে। তিনি বলেনঃ এরুপর মদিনার অলিগলি দিয়ে মদের ঢল প্রবাহিত হতে থাকে। আবূ তালহা আমাকে বললেন, বের হও এবং এ শুছেন ঢেলে দিয়ে আস। তারপর আমি সেগুলো ঢেলে দেই। তারা সকলে বা তাদের কেউ কেউ বললেন, অমুকের সর্বনাশ! অমুকের সর্বনাশ! তাদের পেটে মদ আছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি জানি না একথাও আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত কিনা। এরপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা যা খেয়েছে, তাতে তাদের কোন পাপ নেই যদি তারা সাবধান হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকাজ করে,” (৫:৯৩)।

৪৯৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) আব্দুল আযীয ইবনু সূহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ লোকেরা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলো “ফাযীখ” (খেজুরের তৈরি মদ) সমন্ধে। তিনি বললেন, তোমরা যাকে ‘ফাযীখ’ বলে থাক, তোমাদের এ ফাযীখ- ছাড়া আমাদের অন্য কোন মদ-ই ছিল না। আমি আমাদের বাড়িতে আবূ তালহা, আবূ আইয়্যুব (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরো কিছু সাহাবীকে মদ্যপান কমাতে লিপ্ত হচ্ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, তোমাদের নিকট কি কোন খবর পৌছেছে? আমরা বললাম, না। সে বললো, মদ তো হারাম করা হয়েছে। (আবূ তালহা) বললেন, হে আনাস! এ মটকাগুলো ঢেলে দাও। তিনি বলেনঃ তারা উক্ত ব্যক্তির খবরের পর কোন অনুসন্ধানও করেননি, এ সমন্ধে কোন প্রশ্নও করেননি।

৪৯৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি গোত্রের লোকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আমার চাচাঁদের “ফাযীখ” পান করাচ্ছিলাম। আর আমি তাদের সবার চেয়ে বয়সে ছোট ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বললো। মদ তো হারাম করা হয়েছে। তারা সকলে বললেন- হে আনাস! এ পাত্রগুলো উল্টিয়ে দাও। আমি সেগুলো উল্টে ফেলে দিলাম। তিনি বলেনঃ আমি আনাসকে বললাম, ফাযীখ কি? তিনি বললেন, কাঁচা-পাকা খেজুর (দ্বারা তৈরি মদ)। তিনি বলেনঃআবূ বকর ইবনু আনাস বলেছেন, তখন এটাই ছিল তাদের মদ। সুলায়মান বলেনঃ আমার কাছে এক ব্যক্তি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আনাস) একথাও বলেছেন।

৪৯৭০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদূল আলা (রহঃ) আমাদেরকে (গ্রন্থকারকে) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমাদেরকে আল-মুতামির তার পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি গোত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের মদ্যপান করাচ্ছিলাম। এরপর বর্ণনাকারী ইবনু উলায়্যার অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেনঃ তারপর আবূ বাকর ইবনু আনাস বললেন, তখনকার দিনে ওটাই ছিল তাদের মদ। আনাস (রাঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি একথা অস্বীকার করেননি। ইবনু আবূল আলা মুতামির-এর সুত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ যারা তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁদের একজন আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, তিনি আনাসকে বলতে শুনেছেন খনকার দিনে সেটাই ছিল তাদের মদ।

৪৯৭১। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি আবূ তালহা,আবূ দুজানা ও মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে আনসারীদের একদল লোকের মধ্যে মদ্যপান করাচ্ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি আমাদের কাছে এসে বললোঃ একটি ব্যাপার ঘটেছে, মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর আমরা সেদিন পাত্রগুলো উপূড় করে ফেলে দিয়েছিলাম। সে মদ ছিল কাঁচা-পাকা মিশ্রিত খেজুরের তৈরি। কাতাদা বলেনঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই মদ হারাম করা হয়েছে তখনকার দিনে তাদের সাধারণ মদ ছিলো কাঁচা-পাকায় সংমিশ্রিত খেজুরের তৈরি।

৪৯৭২। আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি একটি মদ্যপাত্র থেকে, যাতে কাচা-পাকা খেজুরের মদ ছিল আবূ তালহা, আবূ দুজানা ও সুহায়ল ইবনু বায়দা (রাঃ)-কে মদ্যপান করাচ্ছিলাম। অতঃপর বর্ণনাকারী সাঈদ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৪৯৭৩। আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে, তিনি তাঁকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁচা-পাকা খেজুর মিশিয়ে মদ তৈরি করা এবং তা পান করা থেকে নিষেধ করেছেন। যেদিন মদ হারাম করা হব, সেদিন তা-ই ছিল তাদের সাধারণ মদ।

৪৯৭৪। আবূ তাহির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ, আবূ তালহা ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে মদ্যপান করাচ্ছিলাম, যা ছিল কাচা ও শুকনো খেজুরের দ্বারা তৈরি। এরপর জনৈক আগন্তুক এসে বললো, মদ তো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হহোছে। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আনাস! তুমি এই কলসটির কাছে গিয়ে সেটি ভেঙে ফেল। আমি আমাদের মিহরাসটির (ছিদ্রযুক্ত পাথর) কাছে গেলাম এবং কলসটাকে ওর নিম্নাংশ দ্বারা আঘাত করলাম। ফলে সেটি ভেঙে খণ্ড খন্ড হয়ে গেল।

৪৯৭৫। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না (রহঃ) জাফর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে, আল্লাহ তাআলা যে আয়াতে মদ হারাম করেছেন, সেটি এমন সময় নাযিল করেছেন, যখন মদিনায় খেজুরের মদ্যপান করা হতো।

৪৯৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহিয়া ও যুহায়র ইবনু হারব আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মদ দ্বারা সিরকা প্রস্তৃত করা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, না।

৪৯৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ওয়াল আন-হাযরামী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ তারিক ইবনু সুওয়ায়দ জুফী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মদ সন্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে নিষেধ করলেন, অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। তিনি তারিক (রাঃ) বললেন, আমি তো ঔষধ প্রস্তুত করার জন্য মদ বানাই। তিনি বললেনঃ এটি তো (রোগ নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই রোগ।

৪৯৭৮। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদ হয় এই দুটি বৃক্ষ থেকে খেজুর ও আঙ্গূর বৃক্ষ।

৪৯৭৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, মদ হয় ঐ দুটি বৃক্ষ থেকে খেজুর ও আঙ্গুর বৃক্ষ।

৪৯৮০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদ হয় ঐ দুটি বৃক্ষ থেকে আঙ্গুর ও খেজুর বৃক্ষা আবূ কুরায়বের বর্ণনায় ‘আল কারমি অন নাকলি’ রয়েছে।

৪৯৮১। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত করতে (নাবীয তৈরি করতে) নিষেধ করেছেন।

৪৯৮২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও নিষেধ করেছেন কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র মিশিয়ে নাবীয তৈরি করা থেকে।

৪৯৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ রাফি (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর এবং কিসমিস ও খুরমা একত্র করে নাবীয তৈরি করো না।

৪৯৮৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও খুরমা একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি একত্রে কাঁচা-পাকা খেজুর দিয়ে নাবীয তৈরি করতেও নিষেধ করেছেন।

৪৯৮৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুরমা ও কিসমিস একত্রে মিশাতে নিষেধ করেছেন এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র করতে নিষেধ করেছেন।

৪৯৮৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (নাবীযে) কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাচা-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত করতে নিষেধ করেছেন।

৪৯৮৭। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ মাসলামা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।

৪৯৮৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নাবীয (খেজুর বা আঙ্গূর ভেজানো পানি) পান করতে ইচ্ছুক, সে যেন কিসমিস বা শুকনো খেজুর কিংবা কাঁচা খেজুর দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে নাবীয বানিয়ে তা পান করে। আবূ বাকর ইসহাক (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু মুসলিম আবদী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন কাঁচা খেজুর শুকনো খেজুরের সাথে না মিশাই অথবা কিসমিস খুরমার সাথে না মিশাই কিংবা কিসমিস কাচা খেজুরের সাথে না মিশাই। তিনি আরও বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে তা পান করতে ইচ্ছুক এরপর বর্ণনাকারী ওয়াকী (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।

৪৯৮৯। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র করে নাবীয প্রস্তুত করবে না। কিসমিস ও খুরমা একত্র করেও নাবীয তৈরি করবে না, বরং প্রত্যেকটি পৃথকভাবে পানিতে ফেলবে।

৪৯৯০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রাঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৪৯৯১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ কাতাদা (বা) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কাচা-পাকা খেজুর একত্র করে নাবীয তৈরি করবে না এবং কাচা খেজুর ও কিসমিস দিয়ে নাবীয তৈরি করবে না, বরং প্রত্যেকটি দিয়ে পৃথক পৃথকভাবে নাবীয তৈরি করবে। ইয়াহইয়া মনে করেন যে, ব্দুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদার সঙ্গে সাক্ষাত করলে তাঁর পিতার সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস তার কাছে বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকর ইবনু ইসুহাক (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে উপরোক্ত দুটি সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি কাঁচা-পাকা খেজুর এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিসের কথা উল্লেখ করেছেন।

৪৯৯২। আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁচা ও শুকনো খেজুর একত্রে সংমিশ্রণ করা থেকে এবং কিসমিস ও শুকনো খেজুর সংমিশ্রণ করা থেকে এবং কাঁচা-পাকা খেজুর সংমিশ্রণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটির দ্বারা পৃথকভাবে নাবীয তৈরি কর।

৪৯৯৩। ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেনঃ আমার কাছে আবূ সালামা ইবনু আন্দুর রাহমান (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৪৯৯৪। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা ও শুকনো খেজুর (একত্রে মিশ্রিত করে নাবীয তৈরি করা) থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি দিয়ে পৃথকভাবে নাবীয করা যেতে পারে। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এরপর বর্ণনাকারী অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৪৯৯৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে এবং কাচা ও শুকনো খেজুর একত্র করে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ‘জুরাশ’ (ইয়েমেনের একটি শহব)-বাসীদের পত্র লিখে তাদেরকে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের সংমিশ্রণে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমাকে ওয়াহব ইবনু বাকিয়া খালিদ তাহহান (রহঃ)-এর সুত্রে শায়বানী থেকে (রহঃ) উপরোক্ত সনদে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে (ওয়াহব) কাঁচা ও শুকনো খেজুরের কথা উল্লেখ করেননি।

৪৯৯৬। মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলতেন, কাঁচা-পাকা খেজুর একত্রে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে নাবীয বানাতে নিষেধ করা হয়েছে।

৪৯৯৭। আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কাচা-পাকা খেজুর একত্রে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে নাবীয নাবীয বানাতে নিষেধ করা হয়েছে।

৪৯৯৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মূযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।

৪৯৯৯। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। বর্ননাকারী বলেনঃ আবূ সালামা (রহঃ)- তাকে জানিয়েছেন, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করো না। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ হানতাম- এর ব্যবহার থেকেও তোমরা দূরে থাক।

৫০০০। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াফফাত, হানতাম ও নাকীর (ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি করা) থেকে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃআবূ হুরায়রা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হানতাম কি? তিনি বললেন, সবুজ রং-এর কলসী।

৫০০১। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়েসের প্রতিনিধি দলকে বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে দূব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুকাইয়ার থেকে নিষেধ করছি। হানতাম এবং মাথা কাটা চামড়ার পাত্র থেকে। তবে তুমি তোমার চামড়ার তৈরি পাত্র থেকে (নাবীয) পান কর আর এর মুখ বন্ধ রাখ।

৫০০২। সাঈদ ইবনু আমর আশআসী, যুহায়র ইবনু হারব ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। এ হলো জারীর (রহঃ) বর্ণিত হার্দীস। আবসার ও শুবা (রহঃ)-এর হাদীসে আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০০৩। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আসওয়াদ (রহঃ)-কে বললাম, আপনি কি উম্মুল মুমিনীনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিসে নাবীয তৈরি করা মাকরুহ? তিনি বললেন, হ্যা। আমি বলেছিলা, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে বলুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, তিনি আমাদের আহলে বাইতকে নিষেধ করেছেন আমরা যেন দূব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি না করি। ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ আমি আসওয়াদকে বললাম, তিনি (আয়িশা) কি হানতাম ও কলসীর কথা উল্লেখ করেননি? তিনি বললেন, আমি যা শুনেছি, তাই তোমার নিকট বলছি যা শুনিনি তাও কি তোমার নিকট বলতে হবে?

৫০০৪। সাঈদ ইবনু আমর আশআসী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূব্বা ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০০৫। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আয়িশা(রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৫০০৬। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) সূমামা ইবনু হাযন কুশায়রী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ আমি আয়িশা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমার নিকট বর্ননা করলেন যে, আবদুল কায়সের দল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমণ করলো এবং তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নাবীয সমন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি তাদেরকে দূব্বা, নাকীর, মুয়াফফাত ও হানতাম-এ নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করলেন।

৫০০৭। ইয়াকবুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মূসাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০০৮। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইসহাক ইবনু সুওয়ায়দ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি “মুযাফফাত” এর স্হলে ‘মুকাইয়ার’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।

৫০০৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আব্দুল কায়সের প্রতিনিধি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমণ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দুব্বা হানতাম, নাকীর এবং মুকাইয়ার থেকে নিষেধ করছি। হাসা’দ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘মুকাইয়ার’ স্থলে ‘মুয়াফফাত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

৫০১০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুব্বা, হানতাম, মুয়াফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০১১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন দুব্বা, হানতাম, মুয়াফফাত ও নাকীর থেকে এবং কাচা-পাকা খেজুর একত্রে মিশ্রিত করা থেকে (নাবীয তৈরি করা থেকে)।

৫০১২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূব্বা, নাকীর ও মুয়াফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০১৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন।

৫০১৪। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুয়াফফাত থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০১৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণিত যে, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। এরপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।

৫০১৬। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম, দুব্বা ও নাকীরের পানীয় নিষেধ করেছেন।

৫০১৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও সুরায়জ ইবনু ইউনূস (রাঃ) [আর বাক্যটি আবূ বাকর (রহঃ)-এর] সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ইবনু উমার (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর পক্ষে যে, তালা উভয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দূব্বা, হানতাম, মুয়াফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০১৮। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে কলসীর নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীযকে হারাম করে দিয়েছেন। এরপর আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এসে বললাম, আপনি কি ইবনু উমারের কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, তাঁর কি কথা? আমি বললাম, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীয হারাম করেছেন। তিনি বললেন, ইবনু উমার সত্যই বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসীর নাবীযকে হারাম করেছেন। আমি বললাম, কলসীর নাবীয কি? তিনি বললেন, মাটি দিয়ে যে পাত্র তৈরি করা, হয় তাই।

৫০১৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক যুদ্ধে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি সে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। কিন্তু আমি তার নিকট পৌছার পূর্বেই তিনি (অন্যদিকে) ফিরে গেলেন। আমি (লোকদের) জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বললেন? তারা বললেনঃ তিনি দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয বানাতে নিষেধ করলেন।

৫০২০। কুতায়বা, ইবনু রুমহ, আবূ-রাবী ও আবূ কামিল, যূহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুনায়র, ইবনু মূসান্না, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মাদ ইবনু রাফিঁ ও হারূন আয়লী (রহঃ) উসামা (রহঃ) থেকে তাঁদের প্রত্যেকেই নাফি (রহঃ)-এর সৃত্রে ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে মালিক ও উসামা (রহঃ) ছাড়া অন্য কেউ ‘কোন এক যুদ্ধে’ কথাটি উল্লেখ করেননি।

৫০২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সাবিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসীর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর তিনি বললেন, লোকদের তো তাই ধারণা। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন কি-না? তিনি বললেন, লোকদের তো তাই ধারণা।

৫০২২। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব (রহঃ) তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বললো, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসীর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা। এরপর তাউস বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি তাঁর কাছ থেকে শুনেছি।

৫০২৩। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসী ও কদুর খোলে নাবীয বানাতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যা।

৫০২৪। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী ও দূব্বা থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০২৫। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কলসী, দূব্বা ও মুযাফফাত-এর নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন- হ্যা।

৫০২৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মুহারিব ইবনু দিসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম, দূব্বা ও মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁর নিকট একাধিকবার শুনাছি।

৫০২৭। সাঈদ ইবনু আমর আশ-আসী (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি নাকীর -এর কথাও বলেছেন।

৫০২৮। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী, দুব্বা, মুযাফফাত থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি কর।

৫০২৯। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানতাম থেকে নিষেধ করেছেন। তখন আমি বললাম, হানতাম কি? তিনি বললেন, কলসী।

৫০৩০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) যাযান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব শরাব থেকে নিষেধ করেছেন সে সমন্ধে আপনি আপনার ভাষায় আমার নিকট বর্ণনা করুন এবং আমাদের ভাষায় তা ব্যাখ্যা করে দিন। কেননা আপনাদের ভাষা আমাদের ভাষা থেকে ভিন্ন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন হানতাম থেকে হানতাম হলো কলসী। আর দূব্বা থেকে সেটা হলো কদু (এর খোল)। আর মুযাফফাত থেকে সেটা হলো আলকাতরা মাখা পাত্র এবং নাকীর থেকে সেটা হলো খেজুর বৃক্ষের গোড়া, যার ভেতরের অংশ ফেলে দিয়ে পাত্রের মত করা হয়। আর তিনি “চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয বানানোর আদেশ দিয়েছেন।

৫০৩১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ দাঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ শুবা (রহঃ) উক্ত সনদে আমাদের নিকট হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৫০৩২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে এই মিম্বারের কাছে বলতে শুনেছি এ বলে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মিম্বারের প্রতি ইঙ্গিত করেন। আবদূল কায়সের দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমণ করলো এবং তাকে শরাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দূব্বা, নাকীর ও হানতাম থেকে নিষেধ করলেন। আমি বললাম, হে আবূ মুহাম্মদ! মুযাফফাতের কথা? আমরা ভাবলাম, তিনি হয়ত বিব্রত হয়েছেন। তিনি বললেন, সে দিন আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে একথা বলতে শুনিনি, তবে এটাকে অপছন্দ করতেন।

৫০৩৩। আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকীর, মুয়াফফাত ও দুব্বা থেকে নিষেধ করেছেন।

৫০৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কলসী, দূব্বা এবং মুযাফফাত (ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি) থেকে নিষেধ করতে শুনেছি!আবূ মুবায়র (রহঃ) বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কেও বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কলসী, মুয়াফফাত ও নাকীর থেকে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করার অন্য কোন পাত্র না পেতেন তবে প্রস্তর নির্মিত পাত্রে তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো।

৫০৩৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য প্রস্তর নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি করা হতো।

৫০৩৬। আহমদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য চামড়া নির্মিত পাত্রে নাবীয তৈরি করা হতো। যদি তারা (লোকেরা) চামড়া নির্মিত পাত্র না পেতেন তবে প্রস্তর নির্মিত পাত্রে তাঁর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো। তখন এক ব্যক্তি বললো, আমিও আবূ যুবায়র এর কাছে শুনেছি। তিনি বললেন, বারাম থেকে? বললে, বারাম থেকে। বারাম অর্থ বড় পেয়ালা যা ডেগের মত।

৫০৩৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে চামড়ার পাত্র ছাড়া অন্য সমস্ত পাত্রের নাবীয থেকে নিষেধ করেছেন। এখন তোমরা সকল প্রকার পাত্রে নাবীয তৈরি করে পান করতে পার। তবে নেশাযূক্ত নাবীয পান করো না।

৫০৩৮। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে সকল পাত্র থেকে নিষেধ করলাম। পাত্রগুলো কিংবা তিনি বলেছেন, পাত্র তো কোন বস্তুকে হালাল করতে পারে না, হারামও করতে পারে না। আর সর্বপ্রকার নেশাকর বস্তুই হারাম।

৫০৩৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে চামড়ার সকল পাত্রে (নাবীয) পান করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা সব ধরনের পাত্রেই পান করতে পার। তবে নেশাকর বস্তু পান করো না।

৫০৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমর (শব্দ ভাষ্য ইবনু আবূ উমরের) (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (চামড়ার ব্যতীত) সকল পাত্রের নাবীয থেকে নিষেধ করলেন, তখন লোকেরা বলল, সবাই তো (চামড়ার পাত্র) পায় না। পরে তিনি আলকাতরা এ প্রলেপ মাখানো কলসী ছাড়া অন্য কলসীর ব্যপারে অনুমতি প্রদান করেন।

৫০৪১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে বিত’ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলো। তিনি বললেন, নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোন পানীয়ই হারাম। জল মধু দিয়ে তৈরি নাবীয যা ইয়ামানবাসীদের পানীয় ছিল।

৫০৪২। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) – কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে বিত’ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলো। তিনি বললেন, নেশা সৃষ্টি করে এমন যে কোন পানীয় হারাম।

৫০৪৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ইবনু উয়ায়না থেকে; অপর সনদে হাসান-হুলওয়ানী, সালিহ থেকে অপর সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) মামার (রহঃ) থেকে তারা সকলে যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে সুফিয়ান ও সালিহ (রহঃ)-এর হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ‘বিত’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো কথাটি নেই। তবে কথাটি মামার (রহঃ)-এর হাদীসে আছে। আর সালিহ (রহঃ)-এর হাদীসে আছে যে (আয়িশা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন-প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী শরাবই হারাম।

৫০৪৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠালেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের এনাকায় যব থেকে ‘মিরয’ নামক শরাব এবং মধূ থেকে “বিত’ নামক শরাব তৈরি করা হয়। তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম।

৫০৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সাঈদ ইবনু আবূ বুরদা তাঁর পিতার সাধঁনে তাঁর পিতামহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠালেন এবং তাদেরকে বললেনঃ তোমরা (মানূষকে) সুসংবাদ দেবে আর (দ্বীনকে) সহজভাবে ভুলে ধরবে, (মানুষকে) দ্বীন শিক্ষা দেবে, কাউকে (দ্বীন থেকে) সরিয়ে দেবে না। আমার মনে হয় একমত হয়ে কাজ করবে- কথাটিও বলেছেন। তিনি রওয়ানা করলে আবূ মূসা (রাঃ) ফিরে এসে বললেন, ইয়া রাসুলল্লাহ! তাদের তো মধু থেকে তৈরি শরাব আছে যা পাকিয়ে গাঢ় করা হয় এবং ‘মিরয’ আছে যা যব দ্বারা তৈরি করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যা কিছু সালাত থেকে বিমুখ করে, তা-ই হারাম।

৫০৪৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) আবূ বুরদা তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়েমেনে পাঠালেন এবং বললেনঃ তোমরা মানুষকে (দ্বীনের) দাওয়াত দেবে, সুসংবাদ দেবে, কাউকে তাড়িয়ে দেবে না। সহজ করবে, কঠিন করবে না। তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইয়েমেনে আমরা দুধরনের শরাব প্রস্তুত করি, আপনি সে সমন্ধে আমাদেরকে অবহিত করুন। এক, “আলবিত” যা মধু পাকিয়ে গাঢ় করে তৈরি করা হয়; দুই, “আন-মিরয” যা যব পাকিয়ে গাঢ় করে প্রস্তুত করা হয়। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অল্প শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা পবিত্রতার সাথে প্রকাশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তিনি প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু যা সালাত থেকে বিমুখ করে, তাই হারাম করেছেন।

৫০৪৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। জায়শান থেকে এক ব্যক্তি আসলো। জায়শান ইয়েমেনের একটি এলাকা। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের এলাকায় তারা শস্য দ্বারা তৈরি মিযর নামক যে শরাব পান করে, সে সমন্ধে জিজ্ঞাসা করল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা কি নেশা সৃষ্টি করে? সে বললো, হ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই হারাম। নিশ্চয়ই, আল্লাহ তা-আলার ওয়াদা, যে ব্যক্তি নেশা জাতীয় বস্তু পান করবে, তাকে তিনি “তীনাতূল খাবাল” পান করিয়ে ছাড়বেন। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! “তীনাতুল খাবাল” কি? তিনি বললেন, দোযখবাসীদের ঘাম বা দোযখবাসীদের প্রস্রাব-পায়খানা।

৫০৪৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (র) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে শরাব (মদ) পান করবে এবং তাওবা করবে না, আখিরাতে সে তা থেকে বঞ্চিত হবে। তাকে তা পান করানো হবে না। মালিক (রহঃ)-কে বলা হলো হাদীসটি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে? তিনি বললেন, হ্যা।

৫০৪৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় শরাব পান করবে, আখিরাতে সে তা পান করতে পারবে না। কিন্তু যদি তাওবা করে।

৫০৫০ সালিহ ইবনু মিসমার সুলামি (রহঃ) মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে।

৫০৫১ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই রিওয়ায়েত করেছেন। তিনি বলেন, যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম।

৫০৫২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে শরাব (মদ) পান করবে, আখিরাতে সে তা থেকে বঞ্ছিত থাকবে।

৫০৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (র) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি পৃথিবীতে শরাব (মদ) পান করবে এবং তাওবা করবে না, আখিরাতে সে তা থেকে বঞ্চিত হবে। তাকে তা পান করানো হবে না। মালিক (রহঃ)-কে বলা হলো হাদীসটি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে? তিনি বললেন, হ্যা।

৫০৫৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ায় শরাব পান করবে, আখিরাতে সে তা পান করতে পারবে না। কিন্তু যদি তাওবা করে।

৫০৫৫। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৫০৫৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য রাতের প্রথমভাগে নাবীয তৈরি করা হতো। তিনি তা পান করতেন, সেদিন সকালে আগামী রাতে, পরবর্তী দিনে-এর পরের রাতে এবং পরদিন আসর পর্যন্ত। তথাপি যদি কিছু অবশিষ্ট থেকে যেত তা তিনি তাঁর খাদিমকে পান করাতেন অথবা ফেলে দিতে আদেশ দিতেন।

৫০৫৭। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইয়াহইয়া বাহরানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট নাবীযের কথা আলোচনা করলে তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য মশকে নাবীয তৈরি করা হতো। সুবা বলেন- সোমবারের রাতে করা হলে তিনি তা সোমবার দিন ও মঙ্গলবার আসর পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও কিছু অবশিষ্ট থাকলে তিনি তা খাদিমকে পান করাতেন বা ফেলে দিতেন।

৫০৫৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসুহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য কিসমিস ভিজিয়ে রাখা হতো। তিনি সেদিন- তার পরের দিন এবং পরের দিনের পরে তৃতিয় দিন বিকাল পর্যন্ত তা পান করতেন। এরপরতার আদেশে কাউকে পান করানো হতো অথবা ঢেলে ফেলা হতো।

৫০৫৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য মশকের মধ্যে কিসমিসের নাবীয তৈরী করা হতো। তিনি সেদিন, তার পরবর্তী দিন এবং পরের দিনের পরের দিন পর্যন্ত তা পান করতেন। তিনি দিনের বিকাল হলে তিনি নিজে তা পান করতেন এবং অন্যকে পান করাতেন। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকত, তিনি তা ফেলে দিতেন।

৫০৬০। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ইয়াহইয়া নাখঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিছু সংখ্যক লোক ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে শরাব ক্রয়-বিক্রয় ও এর ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেন, তোমরা কি মুসলমান? তারা বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে এর ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা বৈধ হবে না। বর্ণনাকার্রী বলেনঃ এরপর তারা তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সফরে গিয়ে যখন প্রত্যাবর্তন করলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের থেকে কিছু লোক হানতাম, নাকীর ও দুব্বার মধ্যে নাবীয তৈরি করছিলো। তিনি আদেশ দিলে তা ঢেলে ফেলা হয়। এরপর তিনি মশক আনতে আদেশ দিলেন। তারপর তাতে কিসমিস ও পানি দিয়ে সারারাত রাখা হলো। সেদিন সকালে এবং আগামী রাত ও তার পরবর্তী বিকাল পর্যন্ত তিনি তা থেকে পান করেন আর অন্যদের পান করতে দেন। রাত অতিবাহিত হলে তিনি অবশিষ্ট অংশ সমন্ধে আদেশ দিলেন তা ঢেলে ফেলা হলো।

৫০৬১। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) সূমামা ইবনু হাযন কুশায়রী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁকে নাবীয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলামা আয়িশা (রাঃ) এক হাবশী ক্রীতদাসীকে ডাকলেন এবং বললেন, একে জিজ্ঞাসা কর, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে নাবীয তৈরি করতো। পরে হাবশী মেয়েটি বললো, রাতে আমি তাঁর জন্য মশকের মধ্যে নাবীয তৈরি করতাম এবং সেটি মুখ বন্ধ করে ঝূলিয়ে রাখতাম। সকাল হলে তিনি এর থেকে পান করতেন।

৫০৬২। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না আম্বারী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাবীয প্রস্তুত করতাম এমন মশকে যেটির মুখ বন্ধ থাকত উপরের দিকে এবং যেটির (নিচের দিকে) অনেকশুলো ছিদ্র ছিল। আমরা সকালে নাবীয তৈরি করলে রাত্রেই পান করতেন। আবার রাতে করলে সকালেই তিনি পান করতেন।

৫০৬৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ উসায়দ সাঈদী (রাঃ) তাঁর বিবাহে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। তাঁর নব বিবাহিত স্ত্রীই সেদিন তাদের খাদিম ছিলেন। সাহল (রাঃ) বললেন, তোমরা কি জান, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কী পান করতে দিয়েছিলেন? তিনি রাতে কিছু খেজুর একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার সমাপন করলে তাই তিনি তাকে পান করতে দিয়েছিলেন।

৫০৬৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি সাহল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে,আবূ উসায়দ সাঈদী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলেন। তারপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসের অনূরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি একথা বলেন নাই যে, ‘আহার সমাপন করলে সে নাবীযটূকু তিনি তাঁকে পান করতে দেন।”

৫০৬৫। মুহাম্মাদ ইবনু সাহল-তামীমী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেন, প্রস্তর নির্মিত পাত্রে” (ভেজানো হয়েছিল), এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার শেষ করলে তিনি তা নরম করে একমাত্র তাঁকেই পান করতে দিয়েছিলেন।

৫০৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু সাহল তামীমী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আরবের জনৈকা মহিলার প্রসঙ্গ আলোচিত হলে, তিনি আবূ উসায়দ (রাঃ)-কে তার নিকট লোক পাঠানোর জন্য আদেশ দিলেন। তিনি লোক (সূত) পাঠালে উক্ত মহিলা এলো এবং বনূ সাঈদা গোত্রের দুর্গে অবস্হান গ্রহণ করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তার নিকট আসলেন। তিনি যখন তার কাছে পৌছলেন তখন মহিলা মস্তকাবনত হয়ে বসেছিল। তিনি তার সাথে কথোপকথন করলে সে বললো, আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। তিনি বললেন, আমিও তোমাকে নিস্তার দিলাম। লোকেরা মহিলাকে বললো, তুমি জান ইনি কে? সে বললো, না। তারা বললো, তো আল্লাহর রাসুল। তিনি তোমাকে বিবাহ করতে এসেছিলেন। তখন সে বললো, আমি তো হতভাগী। সাহল (রাঃ) বলেনঃ এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন ফিরে এসে তার সাহাবীদের সাথে বনূ সাঈদার সাকীফায় (বাগানে) উপবেশন করেন। এরপর তিনি সাহলকে বললেন, আমাদেরকে কিছু পান করাও। সাহল বলেনঃ পরে আমি একটি পেইয়ালা বের করে তাদের সকলকেই তা থেকে পান করিয়েছিলাম। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেনঃ সাহল (রাঃ) আমাদের সামনে পেয়ালা বের করলে আমরা তাতে পান করলাম। তারপর উমার ইবনু আব্দুর আযীয (রহঃ) তা চাইলে, তিনি তাঁকে সেটি দান করেন। আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, বললেন, হে সাহল! তুমি আমাদেরকে পান করাও।

৫০৬৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার এ পেয়ালাটি দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মধূ, নাবীয, পানি, দুধ ইত্যাদি সব ধরনের পানীয় (দ্রব্য) পান করিয়েছি।

৫০৬৮। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী (রহঃ) বারা-আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ বাকর (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা যখন মক্কা থেকে মদিনা অতিমুখে বের হলাম, এক পর্যায়ে আমরা এক রাখালের নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃষ্ণার্ত হলে আমি তাঁর জন্য কিছু দুধ দোহন করে নিয়ে তাঁর কাছে আসলাম। তিনি পান করলে আমি খুশি হলাম।

৫০৬৯। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনার দিকে রওয়ানা দিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু-শুম তাঁর পিছে পিছে ছুটলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর বদ দুআ করলে তার ঘোড়া মাটিতে গেড়ে গেলো। সে বললো, আমার জন্য দুআ করুন, আমি আপনার কোন অনিষ্ট করবো না। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঁআ করলেন। রাবী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃষ্ণার্ত হলেন আর তাঁরা এক বকরীর রাখালের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেনঃ আমি একটি পেয়ালা-নিয়ে তার জন্য কিছু দুধ দোহন করে আনলাম। তিনি তা পান করলেন। আমি খুশি হলাম।

৫০৭০। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মি’রাজ রাজনীতে বায়তুল মুকাদ্দাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট শরাব ও দুধের দুটি পেয়ালা পেশ করা হলে তিনি সে দুটির প্রতি তাকালেন, তারপর তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সমন্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আপনাকে স্বভাব সুলভ পথ গ্রহণে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। যদি আপনি শরাব গ্রহণ করতেন তবে আপনার উম্মাত বিভ্রান্ত হয়ে যেত।

৫০৭১। সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আনা হলো। তারপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের কথা উল্লেখ করেননি।

৫০৭২। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আবদ ইবনু হুমায়দ আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাকী নামক স্থান থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম। পেয়ালাটি ছিল অনাবৃত। তিনি বললেনঃ তুমি একে ঢাকলে না কেন, এর উপর একটি কাঠি রেখে হলেও? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেনঃ তিনি আমাদেরকে রাত্রে মশকের মুখ ও দরজা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন।

৫০৭৩। ইবরাহীমইবনু দ্বীনার (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক বাটি দুধ নিয়ে আসলেন। পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাবী যাকারিয়া আবূ হুমায়দ-এর বর্ণনায় উল্লেখিত রাত্রে, কথাটি উল্লেখ করেন নাই।

৫০৭৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়ঁবা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি কিছু পান করতে চাইলে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি আপনাকে নাবীয পান করতে দেবো? বললেন, হ্যা। তারপর লোকটি দ্রুত বেরিয়ে গেল এবং ত্রকটি পেয়ালা নিয়ে এলো যাতে নাবীয ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও তুমি এটি ঢেকে আনলে না কেন? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর তিনি পান করলেন।

৫০৭৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃআবূ হুমায়দ নামক এক ব্যক্তি ‘নাকী’ (নামক স্হান) থেকে এক পেয়ালা দুধ নিয়ে আসলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি এটা ঢেকে আনলে না কেন, এর ওপর একটা কাঠি দিয়ে হলেও?

৫০৭৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) লাইস (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা (শয়নকালে) পাত্রসমুহ ঢেকে রাখবে, মশকগুলোর মুখ বন্ধ রাখবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কারণ, শয়তান মশকের মুখ ছুটাতে পারে না, দরজা খুলতে পারে না এবং পাত্রও অনাবৃত করতে পারে না। যদি তোমাদের কেউ তার পাত্রের উপর রাখার জন্য কাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তবে সে যেন তাই রাখে এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কেননা দুষ্টু ইঁদুর বাড়িওয়ালাদের বাড়ি দ্রুত জ্বালিয়ে দেয়। কুতায়বা তাঁর হাদীসে দরজা বন্ধ কর- কথাটির উল্লেখ করেন নাই।

৫০৭৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তিনি বলেছেন, তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। আর তিনি পাত্রের উপর কাঠি রাখার কথা উল্লেখ করেন নাই।

৫০৭৮। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দরজা বন্ধ করবে। অতঃপর রাবী লাইস (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। তিনি আরও বলেনঃ ওটা (ইদূর) গৃহবাসীদের পোশাক পূড়িয়ে ফেলবে।

৫০৭৯। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁদের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ইঁদুর গৃহবাসীদের গৃহ পুড়িয়ে দেবে।

৫০৮০। ইসহাক ইবনু মানূসূর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাত্রি যখন ঘনিয়ে আসবে অথবা তোমরা সন্ধ্যান্ন উপনীত হবে, তখন তোমরা নিজেদের ছেলেমেয়েদের রুখে রাখবে। কেননা শয়তাণ সে সময় চলাফেরা করে। রাত্রি ঘন্টাখানেক অতিক্রান্ত হলে তাদের ছেড়ে দাও। আর দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং আল্লাহরনাম স্মরণ করবে। কারণ, শয়তান কোন বন্ধ দুয়ার খোলে না। আর তোমরা নিজেদের মশক সমূহের মুখ এটে রাখবে এবং আল্লাহর নাম স্বরণ করবে। আর নিজেদের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে এবং যদি তার ওপর একটি কাঠি রেখেও হয় এবং আল্লাহর নাম স্বরণ করবে। আর নিজেদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে।

৫০৮১। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আতা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে তিনি আল্লাহর নাম স্বরণ করার- কথা উল্লেখ করেন নাই।

৫০৮২। আহমাদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আতা ও আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে রাওহ (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতের অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।

৫০৮৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) অন্য সনদে ইয়াহইয়া (রাঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নিজেদের গৃহপালিত পশু এবং ছেলেমেয়েদেরকে সূর্যাস্তের সময় বের হতে দেবে না, যতক্ষন না রাত্রির কিছু অংশ অতিক্রান্ত হয়। কেননা সূর্যাস্তের পর থেকে রাত্রির কিয়দাংশ অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত শয়তান বিচরণ করতে থাকে।

৫০৮৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যুহায়র (রহঃ) -এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৫০৮৫। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা পাত্র গুলো ঢেকে রাখবে এবং মশকসমূহের মুখ ঐটে রাখবে। কেননা বছরে একটি রাত আছে, যে রাতে মহামারী নাযিল হয়। যে কোন অনাবৃত পাত্র এবং বন্ধনমুক্ত মশকের উপর দিয়ে তা অতিক্রম করে তাতেই সে মহামারী নেমে আসে।

৫০৮৬। নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) লাইস ইবনু সাহদ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি বলেছেনঃ কেননা বছরে একটি দিন আছে, যে দিনে মহামারী নেমে আসে। বর্ণনাকারী হাদীসের শেষাংশে তিনি বলেছেনঃ যে, লাইস বলেছেন, আমাদের মধ্যে অনারবরা “প্রথম কানূন” এ থেকে বেঁচে থাকে।

৫০৮৭। আবূ বাক্বর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গৃহে আগুন রেখে শয়ন করবে না।

৫০৮৮। সাঈদ ইবনু আমর আশআরী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র,আবূ আমির আশ আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাত্রে মদিনায় গৃহবাসীসহ একটি বাড়ি পূড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের অবস্হা সমন্ধে অবহিত করা হলে তিনি বললেনঃ এ আগুন তোমাদের শক্র। সূতরাং তোমরা শোয়ার সময় তা নিভিয়ে ফেলবে।

৫০৮৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন যিয়াফত উপলক্ষে আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উপস্থিত হতাম, যতক্ষন তিনি স্বীয় হাত মুবারক রেখে শুরু না করতেন ততক্ষন আমরা নিজেদের হাত (আহারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে এক খাওয়ার দাওয়াতে হাযির হলাম। এমন সময় একটি মেয়ে এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়ানো হয়েছে। সে আহারে তার হাত দিতে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে ফেললেন। তারপর একজন বেদুঈন এল। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িত করা হচ্ছিল। তিনি তাঁর হাত ধরে ফেললেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা না হলে শয়তান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। আর সে এ বালিকাটিকে নিয়ে এসেছে যাতে তার দ্বারা হালাল করতে পারে। তারপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে যাতে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে তার (শয়তানের) হাত বালিকার হাতসহ আমার হাতে মুঠোয়।

৫০৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমাদের যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন-খাওয়া উপলক্ষে দাওয়াত করা হতো। অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ মুআবিয়া (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি এর ‘ইয়াদফায়ু’ স্হলে ‘ইয়ুতরাদু’ এবং বালিকার বেলায় “তাদাফায়ু” স্হলে ‘তুতারুদু’ শব্দ উল্লেখ করেন। আর এ হাদীসে তিনি বালিকাটির আসার বেদুঈনের আগমণের কথা উল্লেখ করেছেন এবং হাদীসের শেষাংশে তিনি বলেছেন, অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ বলেন এবং আহার গ্রহণ করেন। আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।তবে তিনি প্রথমে বালিকার আগমণ ও পরে বেদুঈনের আগমণের কথা উল্লেখ করেছেন।

৫০৯১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, যখন কোন লোক তার গৃহে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও আহারকালে গৌরবময় ক্ষমতাবান আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, তখন শয়তান (তার সাথীদের) বলে, তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে কিন্তু প্রবেশকালে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার জায়গা পেয়ে গেলে। আর যখন সে আহারের সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, তখন সে বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের খাওয়ার ব্যবস্হা পেলে। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ আসিম (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রেওয়ায়াত করেন।

৫০৯২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বাম হাতে খাবে না। কারণ শয়তান বাম হাতে খায়।

৫০৯৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে, তখন সে যেন ডান হাতে আহার করে। আর যখন পান করে- সে যেন ডান হাতে পান করে। কারণ শয়তান বাম হাতে আহার করে এবং বাম হাতে পান করে।

৫০৯৪। কুতায়বা (রহঃ) মালিক ইবনু আনাস থেকে, অন্য সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) পিতা নুমায়র থেকে, অপর একটি সনদে ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া আলকাততান (রহঃ), শেষোক্ত দু-জন উবায়দুল্লাহ থেকে, আর তারা সকলে যুহরী (রহঃ) থেকে সুফিয়ান (রহঃ)-এর সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

৫০৯৫। আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে পানাহার না করে। কারণ শয়তান বাম হাতে পানাহার করে। বর্ণনাকারী বলেনঃ নাফি (রহঃ) এতে অতিরিক্ত যোগ করতেন, বাম হাতে যেন (কিছু) গ্রহণ না করে এবং প্রদানও না করে। আবূ তাহির (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘আহাদিমিনকুম’ এর স্হলে ‘আহাদুকুম’ শব্দ রয়েছে।

৫০৯৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাম হাতে আহার করছিল। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ডান হাতে আহার কর। সে বললো, আমি পারবো না। তিনি বললেনঃ তুমি যেন না-ই পার। একমাত্র অহঙ্কারই তাকে বাধা দিচ্ছে সালামা (রাঃ) বলেনঃ সে আর তার ডান হাত মুখের কাছে তুলতে পারেনি।

৫০৯৭। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তত্তাবধানে ছিলাম। খাবার পাত্রে আমার হাত চতূর্দিকে যেত। তিনি আমাকে বললেনঃ হে বালক! বিসমিল্লাহ বল, তোমার ডান হাতে খাও এবং নিজ পার্শ থেকে খাও।

৫০৯৮। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আহার করছিলাম। আমি বর্তনের বিভিন্ন পার্শে থেকে গোশত নিতে লাগলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি নিজ পার্শ থেকে খাও।

৫০৯৯। আমুরুন-নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক হেলিয়ে এর মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০১। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী মামার বলেছেন ‘অখতেনানসুহা’ অর্থ মশকের মাথা উল্টিয়ে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা।

৫১০২। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করা থেকে ধমক দিয়েছেন।

৫১০৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যাক্তির দাড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদা বলেনঃ আমরা বললাম, তবে খাওয়া? তিনি বললেন, সেটা তো আরো খারাপ, আরো নিকৃষ্ট।

৫১০৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনা কারী হিশাম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ)-এর উক্তি উল্লেখ করেননি।

৫১০৫। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

৫১০৬। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।

৫১০৭। আব্দুল জাব্বার ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো দাড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গেলে সে যেন পরে বমি করে ফেলে।

৫১০৮। আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যমযম থেকে পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়ান অবস্হায় তা পান করেন।

৫১০৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমযম কুপ থেকে ডোল দিয়ে পানি তুলে দাঁড়িয়ে পান করেছেন।

৫১১০। সুরায়জ ইবনু ইউনূস, ইয়াকুব দাওরাকী ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে যমযম থেকে পানি পান করেছেন।

৫১১১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যমযম থেকে পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়ে পান করেছেন এবং তিনি পানি চেয়ে পাঠালেন, তখন তিনি বায়তূল্লাহর সন্নিকটে ছিলেন।

৫১১২। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের উভয়ের হাদীসে আছে আমি তাঁর কাছে একটি বালতি নিয়ে আসলাম।

৫১১৩। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভিতরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিষেধ করেছেন।

৫১১৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার সময় তিনবার পাত্রে (পাত্রের বাইরে) শ্বাস গ্রহণ করতেন।

৫১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ পান করার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন এবং বলতেন এতে উত্তমরুপে তৃপ্তিলাভ হয়, পিপাসার ক্লেশ সত্বর দূর হয় এবং অতি সহজে গলাধকরণ হয়। আনাস (রাঃ) বলেনঃ পান করার সময় আমিও তিনবার শ্বাস প্রহণ করে থকি।

৫১১৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বাকর ইবনু শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী হিশাম ‘ফিশশারাব’ শব্দের স্হলে ‘ফিলআনায়ি’ বলেছেন।

৫১১৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পানি মিশ্রিত কিছু দুধ আনা হলো। তার ডানদিকে ছিল একজন বেদুঈন, বামদিকে ছিল আবূ বাকুর (রাঃ)। তিনি পান করলেন। তারপর উক্ত বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ ডান থেকে ডানে হওয়া উচিত।

৫১১৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমণ করেন তখন আমার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তখন আমার বয়স বিশ বছর। আমার মা-খালাগণ আমাকে তাঁর খিদমত করার জন্য উৎসাহিত করতেন। একদা তিনি আমাদের বাড়িতে আগমণ করলে, আমরা তাঁর জন্য পালিত ছাগলের দুধ দোহন করলাম, বাড়ির একটি কুপ থেকে কিছু পানি মিশ্রিত করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর বামদিকে ছিলেন। উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আবূ বকরকে দিন। কিন্তু তিনি তার ডানদিকের বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃ ডনি দিক থেকে, ডানের হক অধিক।

৫১১৯। ইয়াহয়া ইবনু আইয়্যুব কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর আবদুল্লাহ ইবনু সালামা ও ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়িতে আগমণ করে কিছু পান করতে চাইলেন। আমরা তাঁর জন্য একটি বকরী দোহন করলাম। অতঃপর আমি আমার এ কুপটি থেকে কিছু পনি দুধের সঙ্গে মিশ্রিত করলাম। তিনি (আনাস) বলেনঃ তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পান করলেনঁ। আবূ বকর (রাঃ) তার বামদিকে ছিলেন। উমরে (রাঃ)-তাঁর সামনে আর এক বেদুঈন ছিল তার ডানদিকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পান-করা শেষ করলেন, তখন উমর (রাঃ) আবূ বকরকে দেখিয়ে দিয়ে তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এই তো আবূ বকর (তাকে দিন)। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে (আগে) ডানদিক দিয়ে সে বেদুঈনকে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগে ডানদিকের লোকদের, ডানদিকের লোকদেরই-অগ্রাধিকার রয়েছে। আনস (রাঃ) বলেনঃ সুতরাং তাই সুন্নাত, তাই সুন্নাত, তাই সুন্নাত।

৫১২০। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহুল ইবনু সাহল সাঈদী (রাঃ) থেকে-বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হলে তিনি কিছু-পান করলেন। তাঁর ডানদিকে ছিল-একটি বালক আর বামদিকে কতিপয় বয়স্ক লোক। তিনি বালকটিকে বললেন, তুমি কি তাদেরকে দেয়ার জন্য আমাকে অনুমতি দিবে? বা লোকটি বললো না, আল্লাহর কসম! আপনার কাছ থেকে-প্রাপ্ত আমার অংশে আমি কাউকে প্রাধান্য দিব না। আনাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- দুধের পেয়ালা তার হাতেই দিয়ে দিলেন।

৫১২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ রিওযায়াত করেছেন। তবে তারা উভয়ে (তার হাতে দিলেন) শব্দটি উল্লেখ করেননি। কিন্তু ইয়াকুব (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘কিতলাহ’ এর স্হলে ‘ফায়িতা’ (তাকেই দিলেন) কথাটি উল্লেখিত হয়েছে।

৫১২২। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমরুন নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, সে যেন স্বীয় হাত মুছে না ফেলে যতক্ষন না সে তা চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়।

৫১২৩। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (বা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, সে যেন তার হাত মুছে না ফেলে যতক্ষন না সে তা নিজে চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়।

৫১২৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার আঙ্গূল তিনটি থেকে খানা চেটে খেতে দেখেছি। তবে ইবনু হাতিম (রহঃ) (তিন) শব্দটি উল্লেখ করেননি। আর ইবনু আবূ শায়বা তাঁর রিওয়ায়াতে আব্দুর রাহমান ইবনু কা’ব (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে সনদটির কথা বলেছেন।

৫১২৫। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গূলে আহার করতেন এবং হাত মুছে ফেলার পূর্বে তা চেটে খেতেন।

৫১২৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন আঙ্গূলে আহার করতেন এবং আহার শেষে আঙ্গুলগুলো চেটে খেতেন।

৫১২৭। আবূ কুরায়ব (রহঃ) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫১২৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গূল ও বর্তন চেটে খেতে আদেশ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ তোমরা জানো না (খাদ্যের) কোন অংশে বরকত আছে।

৫১২৯। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো লুকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তূলে নেয়। অতঃপর তাতে যে ময়লা লেগেছে তা যেন দূর করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন তা ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।

৫১৩০। ইসহাক ইবুন ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁদের উভয়ের হাদীসে আছে, সে যেন তার হাত রুমাল দ্বারা মুছে না ফেলে যতক্ষণ না সে নিজে তা চেটে খায় বা অন্যকে দিয়ে চাটায়। এরপরে অবশিষ্ট অংশ বর্ননা করেছেন।

৫১৩১। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্গিত। তিনি বলেন! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্হিত ইয়। এমনকি তোমাদের কারো আহারের সময়ও সে উপস্হিড় হয়। সুতরাং তোমাদের কারো যদি লূকমা পড়ে যায়, সে যেন লেগে যাওয়া ময়লা দূর করে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। অতঃপর সস্পূর্ন আহার শেষ করবে। (আহার শেষে) সে যেন তার আঙ্গুল গুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না, তার খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।

৫১৩২। আবূ কূরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ) খেকে উল্লেখিত সনদে রেওয়ায়াত করেছেন যে, যখন-তোমাদের কারো লূকমা পড়ে যায় হাদীসের শেষ পর্যন্ত। তবে আবূ মুআবিয়া (রহঃ) হাদীসের প্রথমাংশ শয়তান তোমাদের প্রতিটি কাজে উপস্থিত হয় কথাটি উল্লেখ করেননি।

৫১৩৩। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চেটে খাওয়া প্রসঙ্গে হাদীস রেওয়াযাত করেছেন। আবূ সুফইয়ান জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন, তিনিও তাদের দু-জনের হাদীসের ন্যায় লুকমার কথা উল্লেখ করেছেন।

৫১৩৪। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত-যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন খাবার খেতেন তখন তাঁর আঙ্গুল তিনটি চেটে খেতেন এবং তিনি বলেছেনঃ যদি তোমাদেঁর কারো লুকমা পড়ে যায় তবে সে যেন তা থেকে, ময়লা দূর করে এর খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে, শয়তানের জন্য যেন তা রেখে না দেয়। আর আমাদের বর্তন মুছে খেতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, কেননা তোমরা জান না, তো মাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে।

৫১৩৫। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমাদেঁর ,কেউ যদি আহার করে, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বরকত আছে। আবূ বাকর ইবনু নাফি (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে হাদীসটি বর্ণিত। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকে যেন বর্তন মুছে খায়, আর তিনি ‘ফি আয়্যি তুয়ামিকুমুল বারাকাহ আও ইয়ুবারাকু লাকুম’ উল্লেখ করেছেন।

৫১৩৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) (উভয় একই বাক্যাবলীতে) আবূ মাসঊদ আবূ সারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ শু-আয়ব নামক জনৈক আনসারী ব্যক্তি ছিল, তার একজন কসাই গোলাম ছিল। লোকটি একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখে তাঁর চেহারায় ক্ষুধার আভাস উপলব্ধি করলেন। পরে তার গোলামকে বললো, আক্ষেপ তোমার উপর, আমাদের পাঁচজনের জন্য তুমি খাবার প্রস্তুত কর। কেননা আমি পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত দিতে ইচ্ছা করেছি। (বর্ণনাকারী) বললেন, তখন সে খাবার প্রস্তুত করলো। অতঃপর লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে তাঁকে সহ পাঁচজনকে দাওয়াত দিল। এক ব্যক্তি তাঁদের পশ্চাঁদানূসরণ করলো। দরজা পর্যন্ত পৌছলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ লোকটি আমাদের অনুসরণ করেছে। তুমি ইচ্ছা করলে তাকে অনুমতি দিতে পার, আর যদি চাও, তবে সে ফিরে যাবে। লোকটি বললো, না, আমি বরং তাকে অনুমতি দি ইয়া রাসুলল্লাহ!।

৫১৩৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, নাসর ইবনু আলী জাহযামী,আবূ সাঈদ আশাজ্জ, উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জারীর (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। নাসর ইবনু আলী এই হাদীসে তাঁর বর্ণনায় বলেনঃআবূ উসামা আমাশ শাকীক ইবনু সালমা এবং আবূ মাসউদ আনসারী পরস্পর আঁমাশের হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৫১৩৮। মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে এবং অন্য সনদে সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৫১৩৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একজন পারসিক প্রতিবেশী ভাল সালুন পাকাতে পারতো। একবার সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করে তাঁকে দাওয়াত করতে আসলো। তিনি আয়িশার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এই যে, আয়িশা রয়েছেন। সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (তাহলে আমিও) না। লোকটি পূনরায় তাঁকে দাওয়াত দিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনিও (আয়িশা)? সে বললো, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (তা হলে আমিও) না। এরপর সে আবার তাঁকে দাওয়াত করতে আসল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনিও? লোকটি তৃতীয়বারে বললো, হ্যা। অতঃপর তারা দু-জনেই দাঁড়ালেন এবং একজনের পিছনে আর একজন চলে তার বাড়িতে এসে পৌছলেন।

৫১৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক দিবসে কিংবা রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আবূ বাকর (রাঃ) “ও উসমান (রাঃ)-কে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ সময় কিসে তোমাদের বাড়ি থেকে বের করেছে? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!। ক্ষুধার তাড়নায়। তিনি বললেন, যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ, যা তোমাদের বের করে এনেছে, আমাকেও তাই বের করে এনেছে চলো। তাঁরা তাঁর সাথে চলতে লাগলেন। অতঃপর তিনি এক আনসারীর বাড়িতে এলেন। তখন তিনি গৃহে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী তাঁকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে) দেখে বললো, মারহাবা ওয়া আহলান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কোথায়? মহিলাটি বললো, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন। তখনই আনসারী লোকটি উপস্থিত হয়ে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সঙ্গীকে দেখতে পেয়ে বললেন, আল্লাহর শোকর, আজ মেহমানের দিক থেকে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। অতঃপর তিনি গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি নিয়ে আসলেন। তাতে কাঁচা পাকা ও শুকনা খেজুর ছিল। তিনি বললেন, আপনারা এ খেজুর থেকে খেতে খাকুন। এ সময় তিনি একটি ছুরি নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবধান, দুধওয়ালা বকরি যবেহ করবে না। তারপর তাদের জন্য বকরি যবেহ করলেন তারা বকরি ও কাদির খেজুর খেলেন ও (মিঠাঁ) পানি পান করলেন। তাঁরা যখন ক্ষুধা নিবারন করলেন ও পরিতৃপ্ত হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! কিয়ামতের দিন এ নিয়ামত সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে ক্ষুধা তোমাদের ঘর থেকে বের করে এনেছে অথচ তোমরা এ নিয়ামত লাভ না করে প্রত্যাবর্তন করনি।

৫১৪১। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আবূ বাকর (রাঃ) বসা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এসে বললেনঃ কিসে তোমাদের এখানে বসিয়ে রেখেছে? তাঁরা বললেন- সে সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন। ক্ষুধা আমাদের গৃহ থেকে থেকে আমাদের বের করে নিয়ে এসেছে তারপর বর্ণনাকারী খালফ ইবনু খালীফা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন।

৫১৪২। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ পরিখা খননের সময় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শরীরে ক্ষুধার লক্ষণ দেখতে পেলাম। তারপর আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে তাকে বললাম, তোমার নিকট কিছু আছে কি? কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অতি ক্ষুধার্ত অবস্হায় দেখেছি। সে একটি চামড়ার থলে বের করলো, যাতে এক সা-পারিমাণ যব ছিল। আর আমাদেরএকটি গৃহপালিত বাচ্চা মেষ ছিল। আমি সেটা যবেহ করলাম, আর স্ত্রী যবগুলো পিষে নিল। আমার কাজ সমাধার সাথে সাথে সেও তার কাজ সমাধা করলো। আমি (রান্নার জন্য) গোশত কেটে ডেগচিতে রাখলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এলাম। (যাওয়ার সময়) স্ত্রী আমাকে বললো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সঙ্গীদের দ্বারা তুমি আমাকে লজ্জিত করো না। তিনি বলেনঃ অতঃপর আমি তাঁর কাছে এসে চুপেচুপে তাঁকে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা একটি মেষ যবেহ করেছি আর আমার স্ত্রী আমাদের এক সা-পরিমাণ যব ছিল, তাই পিষে নিয়েছে। কাজেই আপনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চকণ্ঠে বললেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির তোমাদের জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করেছে। তোমরা সকলে চল। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেনঃ আমি না আসা পর্যন্ত তোমাদের ডেগ (চুলা থেকে) নামাবে না এবং খামীর দিয়ে রুটি তৈরি করবে না। আমি এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের আগে আগে আসলেন। আমি আমি স্ত্রীর কাছে এলে সে আমাকে (তিরস্কার করে) বললো, তোমার সর্বনাশ হোক, তোমার সর্বনাশ হোক। আমি বললাম, আমি তাই করেছি, তুমি যা আমাকে বলেছিলে। অতঃপর সে খামীর গুলি বের করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে একটু লালা দিলেন এবং বরকতের দু’আ করলেন। অতঃপর তিনি ডেগের কাছে গিয়ে তাতেও একটু লালা দিলেন এবং বরকতের দু’আ করলেন। তারপর তিনি বললেন, রুটি প্রস্তৃতকারিনাকে ডাক, যে তোমার সাথে রুটি প্রস্তুত করবে। আর তুমি ডেগ থেকে পেয়ালা ভরে ভরে নিবে। আর ডেগ (চুলা থেকে) নামাবে না। তারা ছিলেন এক হাজার লোক। আল্লাহর নামে কসম করছি, তাঁরা সকলে আহার করলেন। অবশেষে তাঁরা তা ছেড়ে এমন অবস্হায় ফিরে গেলেন যে, আমাদের ডেগ পুর্বের মত উথলাচ্ছিল। আর আমাদের খামীর থেকে আগের মত রুটি তৈরি করা হচ্ছিল।

৫১৪৩। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (একদা) আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুর্বল আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছি যে, তাঁর ক্ষুধা পেয়েছে। তাই তোমার নিকট কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যা। তিনি যবের কয়েক টূকরা রুটি বের করলেন। তারপর তার ওড়না নিলেন এবং এর একাংশ দ্বারা রুটিগুলো পেঁচিয়ে আমার কাপড়ের নিচে ভাজে দিলেন আর অন্য অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পাঠালেন। তিনি (আনাস) বলেনঃ আমি এগুলো সহ গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে বসা পেলাম। তাঁর সাথে আরো লোক ছিলেন। আমি তাঁদের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, খাওয়ার ব্যাপারে? আমি বললাম, হ্যা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীদের বললেন, সবাই চল। আনাস বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন। আর আমি তাদের আগে আগে চলতে লাগলাম। অবশেষে আমি আবূ তালহার নিকট এসে তাঁকে (ঘটনা) অবহিত করলাম। তখন আবূ তালহা বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো লোকদের নিয়ে আসছেন, অথচ আমাদের নিকট সে পরিমাণ নেই যা তাদের খাওয়াতে পারি। (উম্মু সুলায়ম) বললেন, (কোন চিন্তা করো না) আল্লাহ এবং তার রাসুলই ভাল জানেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে এসে (উভয়ে) গৃহে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলায়মকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা আছে নিয়ে এস। তিনি সেই রুটিগুলো নিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলে সেগুলো টূকরা টূকরা করা হলো। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) চামড়া নির্মিত ঘি-এর পাত্রটি টিপে তা সালূন হিসেবে দিলেন। আর এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ইচ্ছামত কিছু পড়লেন। আরপর বললেনঃ দশজনকে আসতে বলো। তাদের ডাকা হলে তারা এসে তৃপ্তিসহ আহার করে বেরিয়ে গেলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আরো দশজনকে ডাক। তাদের ডাকা হলে তারা পেটপূরে খেয়ে চলে গেলেন। তিনি আবার বললেনঃ দশজনকে ডাক। এভাবে দলের সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। তাঁদের দলে সত্তর কিংবা আশিজন।

৫১৪৪। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃআবূ তালহা (রাঃ) কিছু খাবার প্রস্তুত করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে গেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি আমার দিকে তাকালেন। আমি লজ্জাসহকারে বললাম, আপনি আবূ তালহার দাওয়াত গ্রহণ করুন। তখন তিনি লোকদের বললেনঃ তোমরা সকলে চলো। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো কেবল আপনার জন্য কিছু খাবার তৈরি করেছি। আনাস(রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার গুলো স্পর্শ করলেন এবং এতে বরকতের দু’আ করলেন। তারপর বললেনঃ আমার সঙ্গীদের থেকে দশজনকে গৃহে নিয়ে এসো। তিনি তাদের বললেন, তোমরা খেতে থাক। তিনি তাদের জন্য তার আঙ্গূলের মাঝ থেকে কিছু বের করে দিলেন। তারা সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করার পর বেরিয়ে গেলেন। এরপর বললেন, আরো দশজনকে গৃহে নিয়ে এস। তারাও খেয়ে বের হয়ে গেলেন। এভাবে দশজন গৃহে প্রবেশ করেন এবং দশজন বের হয়ে যান। এমনকি তাদের মধ্য থেকে একজনও অবশিষ্ট থাকেননি যিনি প্রবেশ করে পরিতৃপ্ত হয়ে খাননি। তিনি পাত্র খুলে দেখলেন, সকলে আহার করার শুরু তে যেমন ছিল এখনও তেমনি রয়েছে।

৫১৪৫। সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া উমাবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃআবূ তালহা (রাঃ) আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পাঠালেন। বর্ণনাকারী ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেন। তবে হাদীসটির শেষাংশে তিনি বলেনঃ এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশিষ্টাংশ একত্রিত করে এতে বরকতের দু’আ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ পরে তা যেমনি ছিল, পূনরায় তেমনি হয়ে গেল। আর তিনি বললেনঃ এ থেকে তোমরা গ্রহণ কর।

৫১৪৬। আমরুন নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ শুধুমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাবার প্রস্তুত করতে আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি আমাকে তার নিকট পাঠালেন। তারপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। এতে তিনি বলেছেন, তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে হাত রাখলেন এবং আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলেন। তারপর বললেনঃ দশজনকে আসতে বলো। তাদের আসতে বললে তারা প্রবেশ করলো। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বিসমিল্লাহ বলে আহার কর। তারা আহার করলো। এমনিভাবে আশিজনের সঙ্গে এরুপ করলেন। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বাড়ির লোকেরা আহার করলেন এবং কিছু অবশিষ্ট রেখে গেলেন।

৫১৪৭। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সুত্রে আবূ তালহা (রাঃ)-এর খাবারের এ ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। এতে বর্ণনাকারী বলেছেন, অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসা পর্যন্ত আবূ তালহা (রাঃ) দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর তাঁকে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এতো সামান্য মাত্র! তিনি বললেনঃ তাই নিয়ে এস। আল্লাহ অবশ্যই এতে বরকত দান করবেন।

৫১৪৮। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর বর্ণনাকারী বলেছেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহার করলেন। গৃহবাসীরাও আহার করলো। তারা নিজেদের প্রতিবেশীদের নিকট পৌছানোর জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখলেন।

৫১৪৯। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে পার্শে শুয়ে পেট ও পিঠ ওলট পালট করতে দেখলেন। তখন তিনি উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মসজিদে পার্শে শুয়ে পেট ও পিঠে ওলট-পালট করতে দেখতে পেছেছি। আমার মনে হলো, তিনি ক্ষুধার্ত। অতঃপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি রিওয়ায়াত করেন। এতে তিনি বলেছেনঃ তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ও আনাস(রাঃ) আহার করলেন। কিছু অবশিষ্ট থেকে গেলে আমরা তা প্রতিবেশীদের নিকট হাদিয়া পাঠালাম।

৫১৫০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজাইবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে তাকে দেখতে পেলাম, তিনি তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে বসে কখোপকথন করছেন। আর তিনি তাঁর পেট একটি বস্ত্রখন্ড দ্বারা বেধে রেখেছেন। বর্ণনাকারী উসামা বলেনঃ পাথরসহ ছিল কিনা, এতে আমার সন্দেহ রয়েছে। আমি তাঁর কোন সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন? তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে। এরপর আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনত মিলহান (রাঃ)-এর স্বামী ছিলেন। আমি বললাম, আব্বা! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখলাম তিনি কাপড় দিয়ে তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি তার জনৈক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধার কারণে। তারপর আবূ তালহা (রাঃ)আমার মাতার কাছে গেলেন এবং বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যা আমার নিকট কয়েক টূকরা রুটি আর কয়েকটি খেজুর আছে। যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গৃহে একাকী আসেন, তাহলে আমরা তাঁকে পরিতৃপ্ত করতে পারি। আর যদি অন্য কেউ তাঁর সঙ্গে আসে, তা হলে তাঁদের কম হবে। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনাসহ পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ করেন।

৫১৫১। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ তালহার খাবারের ব্যাপারে তাঁদের (উপরোক্ত বর্ণনাকারীদের) হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৫১৫২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক দর্জি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খাবার তৈরি করে তাঁকে দাওয়াত করলো। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ সে দাওয়াতে আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে গেলাম। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে যরের রুটি, শুরু য়া বিশিষ্ট কদু ও ভূনা গোশত উপস্থিত করলো। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, তিনি প্লেটের চতূর্দিক থেকে কদু খুজে নিচ্ছিলেন। সেদিন থেকে আমিও কদু পছন্দ করতে লাগলাম।

৫১৫৩। মুহাম্মদ ইবনু আলা আবূ কুরায়র (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলো। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তরকারী আনা হলো যাতে কদু ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কদুগুলো খেতে লাগলেন। কদু তাঁর কাছে ভাল লাগল। ইনি বলেনঃ এরুপ দেখে আমি নিজে না খেয়ে এগুলো তাঁর কাছে এগিয়ে দিতে লাগলাম। আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর থেকে সর্বদাই কদু আমার পছন্দনীয় হয়ে যায়।

৫১৫৪। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক দর্জি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাওয়াত করলো। বর্ণনাকারী অতিরিক্ত যোগ করেছেন যে, সাবিত (রহঃ) বলেছেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এরপর আমার জন্য যদি খাদ্য প্রস্তুত করা হতো, এতে কদু দিতে আমি সক্ষম হলে তাই করা হতো।

৫১৫৫। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতার নিকট আগমণ করলেন। আমরা তাঁর সামনে কিছু খাবার ও ওতবা (খেজুর চুর্ণ, পানর ও ঘি যোগে তৈরি এক প্রকার খাদ্য) উপস্থিত করলাম। তিনি কিছু খেলেন। তারপর খেজুর আনা হলে তিনি তা খেতে লাগলেন। আর বিচি গুলো মধ্যমা ও শাহাদত অঙ্গূলী একত্র করে দুআঙ্গূলের মাঝ দিয়ে ফেলতে লাগলেন। শুবা বলেনঃ এটা আমার ধারণা। তবে ইনশা আল্লাহ এতে দু’আঙ্গূলের মাঝ দিয়ে বিচি ফেলা র কথাটি আছে। তারপর তাঁর কাছে পানীয় আনা হলে তিনি তা পান করেন। পরে তিনি তাঁর ডান পার্শস্হ ব্যক্তিকে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমার পিতা তাঁর সাওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন। তখন তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! তুমি তাদের রিযিকে বরকত দাও, তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের প্রতি রহম কর।

৫১৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তারা উভয়েই দু’আঙ্গুলের মাঝ দিয়ে বিচি ফেলে দেয়ার ব্যাপারে শুবার সন্দেহের কথা উল্লেখ করেননি।

৫১৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী ও আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু জাঁফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাজা খেজুরের সাথে কাকুড় খেতে দেখেছি।

৫১৫৮। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জানুদ্বয় তুলে উপরি বসে খেজুর খেতে দেখেছি।

৫১৫৯। যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শুকনা খেজুর আনা হলে তিনি তা বণ্টন করতে লাগলেন এবং তিনি নিজে জানুদ্বয় তুলে বসা অবস্হায় দ্রুত এগুলো থেকে খাচ্ছিলেন। যুহায়র (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘আকিলানযারিয়্যান’ শব্দের স্হলে ‘আকালান হাসিসান’ শব্দ উল্লেখিত হয়েছে (উভয় শব্দের অর্থই দ্রুত)।

৫১৬০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবালা ইবনু সূহায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাদের খাদ্য হিসেবে খেজুর দিতেন। সে সময় মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল। আমরা তাই খেয়ে থাকতাম। একবার আমরা খাচ্ছিলাম, এমন সময় ইবনু উমার (রাঃ) আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি বলেনঃ তোমরা একাধিক খেজুর এক সাথে খেও না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সঙ্গে একাধিক খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। তবে যদি কেউ তার (সাথী) ভাই থেকে অনুমতি নিয়ে নেয় (তাহলে খেতে পারে)। শুবা (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয়, অনুমতি নেয়ার কথাটা ইবনু উমার (রাঃ)-এরই কথা।

৫১৬১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তাঁদের হাদীসে শুবা (রহঃ)-এর উক্তি এবং জাবালা (রাঃ)-এর এ উক্তি নেই যে, সে সময় মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছিল।

৫১৬২। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবালা ইবনু সুহায়ম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তির এক সঙ্গে দুটি করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন।

৫১৬৩। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে পরিবারের লোকদের কাছে খেজুর আছে, তারা ক্ষুধার্ত হতে পারে না।

৫১৬৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আয়িশা! যে বাড়িতে খেজুরও নাই, সে বাড়ির লোকজন ক্ষুধার্ত। হে আয়িশা! যে বাড়িতে খেজুরও নাই, সে বাড়ির লোকজন ক্ষুধার্ত হবে বা হয়েছে। কথাটি তিনি দু”বার অথবা তিনবার বলেছিলেন।

৫১৬৫। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওযাক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদিনার উভয় প্রান্তের মাঝে উৎপন্ন খেজুরের সাতটি করে প্রত্যহ সকালে আহার করে, তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন বিষ ক্ষতি করতে পারে না।

৫১৬৬। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যহ সকালে সাতটি করে আজওইয়া (মদিনা শরীফে উৎপন্ন এক জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না।

৫১৬৭। ইবনু আবূ উমার মারওয়ান আল ফাযারী (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ বদর শুজা ইবনু ওয়ালীদ থেকে, তাঁরা উভয়ে হাশিম ইবনু হাশিম (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ রিওয়াত করেছেন। তবে তারা দুজেনে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি উক্তিটি উল্লেখ করেননি।

৫১৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আয়্যুব ও ইবনু হুজর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার উচু ভীমির আজওয়াহ খেজুরে শেফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। অথবা বলেছেনঃ এগুলো প্রতিদিন সকালের আহারে বিষনাশক ঔষধের কাজ করে।

৫১৬৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জারির (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কামআমান্না জাতীয়। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কামআ মান্না জাতীয়। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। শুবা (রহঃ) বলেনঃ হাকাম (রহঃ) যখন আমার কাছে হাদীসটি বর্ণনা করলেন, তখন আমি আবদুল মালিক (রহঃ)-এর হাদীসটিকে আর ‘গরীব’ (যে হাদীসের সনদের কোন স্থানে মাত্র একজন বর্ণনাকারী থাকেন) মনে করলাম না।

৫১৭২। সাঈদ ইবনু আমর আলআসী (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নূফায়ল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআমানা জাতীয় (উদ্ভিদ) যা বনী ইসরাঈলের উপর মহিমান্বিত ও গৌরবান্বিত আল্লাহ তাঁআলা অবতীর্ণ করেছিলেন আর এর রস চোখের ঔষধ বিশেষ।

৫১৭৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কামআমান্না জাতীয় (উদ্ভিদ) যা মহান ও গৌরবান্বিত আল্লাহ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭৪। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআ সেই মান্না জাতীয় (উদ্ভিদ) যা মহান ও গৌরবান্বিত আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর অবতীর্ণ করেছিলেন। আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭৫। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কামআমান্না জাতীয়, আর এর রস চোখের জন্য ঔষধ বিশেষ।

৫১৭৬। আবূ তাহির (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মারকয যাহরান নামক স্থানে কাবাস (পিলু ফল) কুড়াচ্ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের শুধু কালোগুলো কুড়ানো উচিত। রাবী বলেনঃ আমরা তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি মনে হয় বকরী চরিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যা, প্রত্যেক নাবীই বকরী চরিয়েছেন। (রাবী বলেন) অথবা তিনি প্রায় এরুপ কোন কথা বলেছেন।

৫১৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারিমী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিরকা তো খুব ভাল সালুন (তরকারী)।

৫১৭৮। মূসা ইবনু কুরায়শ ইবনু নাফি তামীমী (রহঃ) সুলায়মান ইবনু বিলাল (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তিনি ’নিমালঅদয়ু’ বলেছেন ‘নি মাল উদামি আবিল উদামে’ বলে শব্দের মধ্যে কোন সন্দেহ প্রকাশ করেননি।

৫১৭৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারের লোকদের কাছে সালুন চাইলে তারা বললো, সিরকা ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কিছু নেই। তখন তাই আনতে বললেন এবং খেতে খেতে বললেনঃ কত ভাল তরকারি সিরকা কত উত্তম তরকারি সিরকা! কুড়ানো উচিত। রাবী বলেনঃ আমরা তখন বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি মনে হয় বকরী চরিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যা, প্রত্যেক নাবীই বকরী চরিয়েছেন। (রাবী বলেন) অথবা তিনি প্রায় এরুপ কোন কথা বলেছেন।

৫১৮০। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম দাওরাকী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে নিজ গৃহে গেলেন। পরে এক টূকরা রুটি তাঁর সামনে উপাস্থিত করা হলে তিনি বললেনঃ কোন তরকারি কি নেই? তারা বললেন, না। তবে সামান্য কিছু সিরকা আছে। তিনি বললেন, সিরকা তো উত্তম তরকারি। জাবির (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একথা শ্রবণ করার পর আমি সিরকা পছন্দ করতে থাকি। তালহা (রহঃ) বলেনঃ আমিও জাবির (রাঃ)-এর নিকট একথা শ্রবণ করার পর থেকে সিরকা পছন্দ করতে লাগলাম।

৫১৮১। নাসর ইবনুু-আলী জাহযামী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) তার হাত ধরে নিজ গৃহে গেলেন। এরপর বর্ণনাকারী সিরকা কত উত্তম তরকারি-পর্যন্ত ইবনু উলায়্যা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু তিনি এর পরের অংশটি উল্লেখ করেননি।

৫১৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একটি বাড়িতে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ইশারা করলে আমি তাঁর কাছে উঠে গেলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন। এরপর আমরা চললাম। অবশেষে তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর গৃহে আসলেন এবং প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি আমাকে অনুমতি দিলে আমি পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেনঃ খাবার কিছু আছে কি? তারা বললেন, হ্যা। পরে তিনখন্ড রুটি আনা হলো এবং তা দন্তরখানে রাখা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি খন্ড নিয়ে তাঁর সামনে রাখলেন। অন্য একটি খন্ড নিয়ে আমার সামনে রাখলেন। এরপর খন্ডটি নিয়ে দু”ভাগ করলেন এবং এর অর্ধেক তাঁর সামনে ও বাকি অর্ধেক আমার সামনে রাখলেন। এরপর বললেনঃ কোন তরকারি কি আছে? তাঁরা বললেনঃ যৎকিঞ্চিৎ সিরকা আছে। তিনি বললেন, তাই নিয়ে আস। সেটা তো উত্তম তরকারি।

৫১৮৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কোন খাবার আনা হলে তিনি কিছু খেতেন আর অবশিষ্টটূকু আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। একদিন তিনি এমন কিছু খাবার পাঠিয়ে দিলেন যা থেকে কিছুই গ্রহণ করেননি; কেননা তাতে রসুন ছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম- এটা কি হারাম? তিনি বললেনঃ না। তবে আমি গন্ধের দরুন ওটা অপছন্দ করি। তিনি বললেন- তাহলে আমিও অপছন্দ করবো, যা আপনি অপছন্দ করেন।

৫১৮৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেন।

৫১৮৫। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর ও আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর (রহঃ) আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (হিজরতের সময়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে অতিথি হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকতেন নীচ তলায়, আর আবূ আইয়ুব (রাঃ) থাকতেন উপর তলায়। এক রাত্রে আবূ আইয়ুব (রাঃ) জড়িত হয়ে বললেন, আমরা তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথার উপর চলাফেরা করি। তখন তাঁরা সেখান থেকে সরে গিয়ে এক কোণে রাত কাটালেন। এরপর (সকালে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তিনি বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেনঃ নীচ তলায়ই বেশি সুবিধা। তখন তিনি বললেনঃ আপনি নীচে থাকবেন এমন ছাদে আমি উঠবো না। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর তলায় এবং আবূ আইয়্যুব (রাঃ) নীচ তলায় স্হান পরিবর্তন করলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য খাবার তৈরি করতেন। যখন (অবশিষ্ট) খাবার ফিরিয়ে আনা হতো, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন স্থানে তাঁর আঙ্গুল লাগিয়েছেন? এরপর তাঁর আঙ্গুলের স্হান থেকে বেছে বেছে খেতেন। একদা তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরি করলেন, যাতে ছিল রসূন। তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনা হলে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আঙ্গূলের স্থান সন্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁকে বলা হলো, তিনি এগুলো আহার করেননি। এতে তিনি ঘাবড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর নিকট গেলেন। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন ওটা কি হারাম? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। তবে আমি ওটা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, তাহলে আপনি যা অপছন্দ করেন, আমিও তা অপছন্দ করি। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তখন ওহী আনত।

৫১৮৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, আমি খুব ক্ষুধার্ত। তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালে তিনি বললেন, যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছ্যো তাঁর শপথ! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছু নেই। তিনি অন্য এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠলে তিনিও একই কথা বললেন। এভাবে তাঁরা সকলে একই কথা বললেন যে, সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, আমার নিকট পানি ছাড়া অন্য কিছু নেই। তখন তিনি বললেন, আজ রাতে কে লোকটির মেহমানদারী করবে? আল্লাহ তার উপর রহম করুন! এ সময় জনৈক আনসারী ব্যক্তি উঠে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি। এরপর লোকটিকে নিয়ে আবূসারী নিজ গৃহে গেলেন এবং তার স্ত্রীকে বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বললো, না। শুধু বাচ্চাঁদের জন্য সামান্য কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কিছু দিয়ে ভূলিয়ে রাখ। আর যখন মেহমান প্রবেশ করবে, তখন তুমি আলোটা দিয়ে দেবে। তুমি তাকে দেখাবে যে, আমরাও আহার করছি। সে (মেহমান) যখন খাওয়া শুরু করবে, তখন তুমি আলোর কাছে গিয়ে সেটা নিভিয়ে দেবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর তারা বসে রইলেন, আর মেহমান খেতে লাগলো। সকাল বেলা তিনি (আনসারী) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলে, তিনি বললেনঃ আজরাতে মেহমানের সাথে তোমাদের দুজনের আচরণে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন।

৫১৮৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক আনসারী ব্যক্তির গৃহে এক মেহমান রাত যাপন করলেন। তাঁর কাছে তাঁর ও বাচ্চাঁদের জন্য সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছু ছিল না। তিনি তার স্ত্রীদের বললেন, বাচ্চাঁদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা নিভিয়ে দাও এবং তোমার কাছে যা আছে তাই মেহমানের জন্য উপস্থিত কর। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ তারা নিজেদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দেয় যদিও তাদের অভাব থাকে।”

৫১৮৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমান হয়ে জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এলেন। কিন্তু তাঁর নিকট এমন কিছু ছিল না যদ্বারা তিনি তার মেহমানদারী করবেন। তখন তিনি বললেনঃ এর মেহমানদারী করার মতো কেউ আছে কি? আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন! এ সময় আবূ তালহা নামক জৗনক আনসারী ব্যক্তি উঠলেন এবং লোকটি-কে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন। এরপর বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি জারীর (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন। আর তিনি ওকী (রহঃ)-এর মত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন।

৫১৮৯। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মিক্বদাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ও আমার দুই সাথী সামনে অগ্রসর হনাম এমন অবস্হায় প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে আমার ও আমার দু সঙ্গীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের কাছে নিজেদের পেশ করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদেরকে গ্রহণ করলেন না। অবশেষে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলে তিনি আমাদের নিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে গেলেন। সেখানে তিনটি মেষ ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা ভাগ করে পান করব। তিনি বলেনঃ এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করতো। আর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্যতার অংশ তুলে রাখতাম। মিকদাদ (রাঃ) বলেনঃ রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয় আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। রাবী বলেনঃ এরপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করতেন ও ফিরে এসে দুধপান করতেন। এক রাতে আমার কাছে শয়তান আসলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বললো-মুহাম্মাদ আননারীদের কাছে গেলে তারা তাঁকে তোহফা (উপটৌকন) দিরে এবং তাদের কাছে তাঁর এ সামান্য দুধের প্রয়োজনীয়তাও মিটে যাবে। এরপর আমি এসে সেটূকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন ভালভাবে আমার পেটে প্রবেশ করলো এবং আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই, তখন শয়তান আমার থেকে দূর সরে গিয়ে বললো, তোমার সর্বনাশ হোক তুমি কি কাণ্ড করলে! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুধপান করে ফেলেছ? তিনি এসে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু’আ করবেন। তাতে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আমার গায়ে ছিল একটা চাঁদর। যদি আমি তা আমার পদযুগলের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদযুগল বেরিয়ে পড়ে। আমার ঘূম আসছিলো না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘূমাচ্ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেনঃ এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। তারপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর দুধের কাছে এসে ঢাকনা খূলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি স্বীয় মাথা আসমানের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই তিনি আমার ওপর বদূ-দু’আ করবেন, আর আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাকে আহার করায়, তাকে তুমি আহার করাও। আর যে আমাকে পান করায়, তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ (রহঃ) বলেনঃ এ সময় আমি চাঁদরটি নিয়ে শরীরে বাধলাম, আর একটি ছুরি নিলাম, তারপর (এই ভেবে) মেষগুলির কাছে গেলাম যে, এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা, আমি সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য যবেহ করবো। গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব মেষও দুধে পরিপূর্ণ। এরপর আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবারের একটি পাত্র নিয়ে এলাম যাতে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি মিকদাদ (রাঃ) বলেনঃ আমি তাতেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি পাত্রের উপরিভাগে ফেলা ভেসে উঠলো। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি রাতের দুধ পান করেছেন? তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করলেন, এরপর আমাকে দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ!আপনি পান করুন। তিনি পান করে আবার আমাকে দিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর দুঃআ পেয়ে গেছি, তখন আমি হাসতে হাসতে যমীনে পড়ে গেলাম। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মিকদাদ! তুমি কি কোন অপকর্ম করেছেন? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এ ই কাণ্ড ঘটে গেছে। অথবা তিনি বলেছেন, আমি এরুপ কাজ করে ফেলেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা একমাত্র আল্লাহর মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে অবহিত করলে না? আমরা আমাদের সাথীদ্বয়কে জাগ্রত করতাম, তাহলে তারাও এর ভাগ পেত! তিনি বলেনঃ আমি তখন বললাম, যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! আপনি যখন পেয়েছেন, অথবা বলেছেন, আমি যখন আপনার সাথে ভাগ পেয়েছি, তখন অন্য কোন লোক পাওয়া না পাওয়ার আমি পরওয়া করি না।

৫১৯০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে।

৫১৯১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, হামিদ ইবনু উমার বাকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা একশ- ত্রিশজন লোক (এক সফরে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক সময়) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কারো কাছে খাদ্যদ্রব্য আছে কি? দেখা গেল, এক ব্যক্তির কাছে এক সা বা অনুরুপ পরিমাণ খাদ্য আছে। তা (শুলিয়ে) খামীর করা হলো। এরপর এলোকেশী দীর্ঘদেহী এক মুশরিক ব্যক্তি কিছু বক্বরী হাঁকিয়ে নিয়ে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এগুলো বিক্রি করবে না উপহার হিসেবে দিবে? অথবা উপহার শব্দের পরিবর্তে তিনি দান করবে- বলেছিলেন। লোকটি বললো- না, আমি বরং বিক্রি করবো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তার থেকে একটি বকরী খরিদ করলেন। বকরীটা যবেহ করা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কলিজা ভূনা করতে আদেশ দিলেন। রাবী আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম, একশ- ত্রিশজনের মধ্যে একজনও এমন ছিলনা যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক টূকরা কলিজা দেন নাই। যারা উপস্থিত ছিল, তাদেরকে তো তখনই দিয়েছেন। আর যারা অনুপস্হিত। তাদের জন্য ভুলে রেখেছেন। রাবী বলেনঃ গোশত দুটি পাত্রে ভাগ করে রাখলেন। আমরা সকলে তৃপ্ত হয়ে আহার করলাম। এরপরও পাত্র দুটিতে গোশত উদ্বৃত্ত থাকলো। আমি তা উটের পিঠে বহন করে নিয়ে গেলাম। অথবা তিনি (বর্ণনাকারী) যেভাবে বর্ণনা করেছেন।

৫১৯২। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আম্বারী, হামিদ ইবনু উমার বাকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আলা কায়সী (রহঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে আসহাবে সূফফার লোকজন ছিলেন দরিদ্র। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেনঃ যার নিকট দুজেনের খাবার আছে সে যেন একজনকে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের খাবার আছে, সে যেন পঞ্চম কিছুবা ষষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়ে যায়। অথবা বর্ণনাকারী যেভাবে বর্ণনা করেছেন। রাবী বলেনঃ-আবূ বাকর (রাঃ) তিনজনকে নিয়ে আললেন। আর আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে নিয়ে রওয়ানা হলেন। আমাদের পরিবারে আমরা ছিলাম তিনজন। আমি, আমার পিতা ও আমার মাতা। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি জানি না, তিনি বলেছেন, কি না যে, আমার স্ত্রী এবং আমাদের ও আবূ বাকরের বাড়িতে শরিক খাদিম। রাবী বলেনঃ আবূ বাকর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গৃহে রাতের খানা খেলেন। এরপর তিনি অপেক্ষা করলেন। অবশেষে ইশার সালাত আদায় করা হলো। সালাত থেকে প্রত্যাবর্তন করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তন্দ্রাচন্ন হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছা নুযায়ী রাত্রির কিয়দাংশ অতিবাহিত হলে তিনি (গৃহে) ফিরে আসলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমান রেখে দেরী করলেন কেন? তিনি বললেন, কেন? তুমি কি তাঁদের রাতের খাবার খাওয়াও নি? তাঁর স্ত্রী বললেন আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা আহার করতে অস্বীকার করেছেন। কয়েকবারই খাবার পোঢ়া করা হয়েছে কিন্তু মেহমানরা তাঁদের কথা থেকে হটেননি। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ আমি গিয়ে লুকিয়ে রইলামা তিনি বললেন, হে নির্বোধ! তারপর তিনি আমাকে বকাবকি করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, ভাল হলোনা। আপনারা আহার করুন! তিনি আরও বললেন, আল্লাহর কসম! আমি এ আহার গ্রহণ করবো না। আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমরা যে লোকমাই গ্রহণ করছিলাম তার নীচে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে বেড়ে যেত। এমনকি আমরা পরিতৃপ্ত হয়েও আমাদের খাদ্য পূর্বে যা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেল। আবূ বাকর (রাঃ) খাবারের প্রতি লক্ষ্য করে দেখলেন, তা যেমন ছিল তেমনি আছে বা তার চেয়েও অধিক হয়েছে। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন হে উখত (বোন) বনী ফিরাস, একি ব্যাপার! তিনি বললেন, কিছু না। আমার চোখের প্রশান্তি, এগুলি পূর্বে যা ছিল তার চেয়ে তিন গুন বেড়ে গেছে। আবদুর রহমান বলেনঃ এরপর আবূ বকর (রাঃ) কিছু খেলেন এবং বললেন, ওটা অর্থাৎ কসমটা ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে। অতঃপর আরও এক লূকমা খেলেন। তারপর সেগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে গেলেন। আমিও তাঁর কাছে সকাল পর্যন্ত থাকলাম। তিনি বলেনঃ আমাদের এবং কোন এক সম্প্রদায়ের মাঝে একটি চুক্তি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমরা (বারটি দল করে) বারজন লোক নিযুক্ত করলাম। প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে অনেক লোক ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন, প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে কতজন লোক ছিল। তাদের প্রত্যেকের নিকট এ খাবার পাঠানো হলো। আর তারা সকলেই সে খাবার খেলেন। অথবা বর্ণনাকারী যেভাবে বর্ণনা করেছেন।

৫১৯৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদূর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা কিছু মেহমান আমাদের বাড়িতে এলেন। (রাবী বলেন)। আমার পিতা রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আলাপ আলোচনা করতেন। তাই তিনি যাওয়ার সময় বললেনঃ হে আবদুর রাহমান! মেহমানদারীর সব কাজ সমাধা করবে। আব্দুর রাহমান বলেনঃ রাত হলে আমি মেহমানদের খাবার নিয়ে এলাম। কিন্তু তারা খেতে রাযী হলেন না। তারা বললেন, বাড়ির মালিক যতক্ষন পর্যন্ত এসে আমাদের সাথে আহার না করবেন, ততক্ষন পর্যন্ত আমরা আহার করবো না। আমি তাঁদের বললাম, তিনি খুব রাগী মানুষ। আপনারা যদি আহার না করেন তাহলে আমার ভয় হচ্ছে, আমাকে তাঁর বকাবকি শুনতে হবে। তিনি বলেনঃ তাঁরা রাযীহলেনই না। আমার পিতা এসে প্রথমেই তাঁদের সংবাদ নিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি মেহমানদারীর কাজ সমাধা করেছ? তাঁরা বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমরা সমাধা করি নাই। তিনি বললেন, আমি কি আবদূর রহমানকে নির্দেশ দিয়ে যাইনি? আবদুর রাহমান বলেনঃ আমি তাঁর দৃষ্টি থেকে সরে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে আব্দুর রাহমান! আমি আরও সরে গেলাম! তিনি পুনরায় বললেন, নির্বোধ! আমি কসম করে তোমাকে বলছি তুমি যদি আমার আওয়ায শুনে থাক, তাহলে হাযির হও। তিনি বলেনঃ তখন আমি হাযির হয়ে বললাম, আল্লাহর কসম! আমার কোন অপরাধ নেই। আপনার মেহমানদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন আমি তাঁদের খাবার নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে সমুন্নত হলেন না। তখন তিনি (মেহমানদের) বললেন, আপনাদের কি হয়েছে? আপনারা কেন আমাদের আপ্যায়ন গ্রহণ করেননি? আবদূর রাহমান বলেনঃ তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আজ আর খাব না। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারা বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমরাও খাব না। তিনি বললেন, তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আজকের রাতের মত এত খারাপ রাত আমি আর দেখিনি। সর্বনাশ, আপনারা কেন আমাদের মেহমানদারী গ্রহণ করবেন না? তিনি বললেন, প্রথমে যা হয়েছে তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তোমরা খাবার নিয়ে আস। তিনি বলেনঃ এরপর খাবার আনা হলে তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে খেতে লাগলেন। তাঁরাও খাওয়া শুরু করল। আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেনঃ পরদিন সকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে বললেনঃ ইয়া রাসুলল্লাহ! তারা তো ভাল কাজই করেছেন কিন্তু আমি কসম ভেঙ্গে ফেলেছি। তিনি (বর্ণনাকারী) বললেন। অতঃপর তাকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) ঘটনাটি খূলে বললেন। পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং তুমি সবচেয়ে বেশি সৎকর্মশীল এবং সবচেয়ে ভাল। আব্দুর রাহমান বলেনঃ কাফফারার কথা আমার কাছে পৌছেনি।

৫১৯৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য আর তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।

৫১৯৫। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট। আর দুজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট, আবার চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। ইসহাক (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে আছে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি “আনি শুনেছি- কথাটি উল্লেখ করেননি!

৫১৯৬। ইবনু নুমায়র (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে, অন্য সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৫১৯৭। ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া,আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজনের খাবার দু-জনের জন্য যথেষ্ট। আর দুজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।

৫১৯৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক ব্যক্তির খাবার দুব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। দুব্যাক্তির খাবার চার ব্যক্তির জন্য যখেষ্ট। আর চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।

৫১৯৯। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কাফির ব্যক্তি সাত হাতে খায় আর মুমিন খায় এক হাতে।

৫২০০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ রিওয়ায়াত করেছেন।

৫২০১। আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ বাহিলী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু উমার (রাঃ) জনৈক মিসকীনকে দেখলেন, সে শুধু সামনে হাত মারছে। আর এভাবে সে অনেক খাবার খেয়ে ফেলেছে। তিনি (নাফি”) বলেনঃ তখন ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ ধরনের লোককে আর কখনো আমার কাছে আনবে না। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কাফির ব্যক্তি সাত হাতে খায়।

৫২০২। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ও ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন এক হাতে আহার করে, আর কাফির সাত হাতে আহার করে।

৫২০৩। ইবনু নুমায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনু উমার (রাঃ) -এর কথা উল্লেখ করেননি।

৫২০৪। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মুমিন এক হাতে খাদ্য গ্রহণ করে, আর কাফির সাত হাতে খাদ্য গ্রহণ করে।

৫২০৫। কুতায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁদের সকলের হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৫২০৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক কাফির ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মেহমান হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরীর দুধ দোহন করতে আদেশ দিলেন। দুধ দোহন করা হলে লোকটি সে দুধ টূকু পান করল। এরপর অপর একটি বক্বরী দোহন করা হলে সে তাও পান করল। আবার অন্য একটি দোহন করা হলে সেটার দুধও সে পান করলো। এমনিভাবে সে সাতটি বকরীর দুধ পান করে ফেলল। পরদিন সকালে সে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্বার তার জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করতে আদেশ দিলেন। (দোহন করা হলে) সে তা পান করল। তিনি পুনরায় আর একটি দোহন করার আদেশ দিলে সে আর তার সবটূকু পান করতে পারল না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মুমিন এক হাতে পান করে। আর কাফির সাত হাতে পান করে।

৫২০৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাবারকে খারাপ বলেনি। কোন খাবার পছন্দ হলে খেয়েছেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করেছেন।

৫২০৮। আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫২০৯। আবদ ইবনু হুমায়াদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫২১০। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা, আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করতে শুনিনি। তাঁর মনে চাইলে তিনি খেতেন আর মনে না চাইলে চুপ থাকতেন।

৫২১১। আবূ কুরায়র ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: পানীয় দ্রব্য
পানীয় দ্রব্য
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/Beverages.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/Beverages.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy