৪১২২ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ সাঈদ ইবনু মুআল্লা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে নববীতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম, এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা আমাকে ডাকেন। কিন্তু সে ডাকে আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলাম। (এ কারণে জবাব দিতে পারিনি)। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ কি বলেন নি যে, হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডাকেও যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন। (৮ঃ ২৪)। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বেই তোমাকে আমি কুরআনের এক মহান সূরা শিক্ষা দিব। তারপর তিনি আমার হাত ধরেন। এরপর যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করেন তখন আমি তাঁকে বললাম, আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতম সূরা শিক্ষা দিবেন বলে বলছিলেন? তিনি বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক, এটা বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন যা আমাকেই প্রদান করা হয়েছে।
৪১২৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যখন ইমাম বলবে তখন তোমরা বলবে অর্থ আল্লাহ আপনি কবূল করুন। যার
পড়া ফেরেশতাদের পড়ার সময়ে হবে তার পূর্বে গুনাহ
মাফ করে দেয়া হবে।
৪১২৪ মুসলিম ও খলীফা (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন কিয়ামতের দিন
মু’মিনগণ একত্রিত হবে এবং তারা বলবে আমরা যদি আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য একজন সুপারিশকারী পেতাম।
এরপর তারা আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আসবে এবং তাঁকে বলবে আপনি মানব জাতির পিতা।
আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আর ফেরেশতা দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন
এবং যাবতীয় বস্ত্তর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য
সুপারিশ করুন যেন আমাদের কঠিন স্থান থেকে
আরাম দিতে পারেন। তিনি বলবেন তোমাদের এ কাজের
আমার সাহস হচ্ছে না। তিনি নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে লজ্জাবোধ করবেন। (তিনি বলবেন) তোমরা
নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। তিনই প্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যাকে আল্লাহ জগতবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন। তখন তারা তাঁর শরণাপন্ন হবে। তিনিও বলবেন তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। তিনি তাঁর রবের কাছে
প্রশ্ন করেছিলেন এমন বিষয় যা তাঁর জানাছিল না। সেকথা স্মরণ করে তিনি লজ্জাবোধ করবেন।
এবং বলবেন বরং তোমরা আল্লাহর খলীল (ইবরাহীম) আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। তারা
তখন তাঁর কাছে আসবে তখন তিনি বলবেন তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। তোমরা মূসা আলাইহি
ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। তিনি এমন বান্দা যে তাঁর সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাঁকে
তাওরাত গ্রন্থ দান করেছেন। তখন তারা তাঁর কাছে আসবে। তিনি বলবেন তোমাদের এ কাজের জন্য আমার সাহস হচ্ছে না। এবং তিনি এক কিবতীকে
বিনা দোষে হত্যা করার কথা স্মরণ করে তাঁর রবের নিকট লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন তোমরা ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বান্দা
ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এবং আল্লাহর বাণী ও রূহ্। (তারা খোনে যাবে)
তিনি বলবেন তোমাদের এ কাজের জন্য আমার
সাহস হচ্ছে না। তোমরা মুহাম্মদ -এর কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা যার পূর্ব ও পরের
ভুলত্রটি আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। তখন তারা আমার কাছে আসবে। তখন আমি আমার রবের কাছে
যাব এবং অনুমতি চাব আমাকে অনুমতি
প্রদান করা হবে। আর আমি যখন আমার রবকে দেখব তখনমি সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আল্লাহ যতক্ষণ চান আমাকে এ অবস্থায়
রাখবেন। তারপর বলা হবে আপনার মাথা উঠান
এবং চান দেওয়া হবে বলুন শোনা হবে সুপারিশ করুন কবুল করা হবে। তখন আমি আমার মাথা উঠাব এবং আমাকে
যে প্রশংসাসূচক বাক্য শিক্ষা দিবেন তা দ্বারা আমি তাঁর প্রশংসা করব। তারপ সুপারিশ করব।
আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। (সেই সীমিত সংখ্যায়) আমি তাদের জান্নাতে
প্রবেশ করাব। আমি পুনরায় রবের সমীপে ফিরে আসব। যখন আমি আমার রবকে দেখব তখন পূর্বের
ন্যায় সব কিছু করব। তারপর আমি সুপারিশ করব। আবার আমাকে একটি সীমারেখা নির্দিষ্ট করে
দেওয়া হবে। তদনুসারে আমি তাদের জান্নাতে দাখিল করাব। (তারপর তৃতীয়বার) আমি আবার রবের
দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরূপ করব। এরপর আমি চতুর্থবার ফিরে আসব এবং আরজ করব এখন কেবল
তারাই জাহান্নামে অবশিষ্ট রয়ে গেছে যারা কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আটকে রয়েছে আর যাদের
উপর চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকা অবধারিত রয়েছে। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন কুরআনের যে ঘোষণায় তারা জাহান্নামে আবদ্ধ রয়েছে তাহল মহান আল্লাহর
বাণীঃ অর্থাৎ তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে।
৪১২৫ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম যে কোন গুনাহ আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড়? তিনি বললেন আল্লাহর জন্য সমকক্ষ দাঁড়ান করান। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
আমি বললাম এতো সত্যি বড় গুনাহ। আমি বললাম তারপর কোন গুনাহ? তিনি উত্তর দিলেন তুমি তোমার সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করবে যে সে তোমার সাথে আহার
করবে। আমি আরয করলাম এরপর কেনটি? তিনি উত্তর দিলেন তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচার করা।
৪১২৬ আবূ নুআইম (রহঃ) সাঈদ ইবনু
যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল কামাআত (ব্যাঙের
ছাতা) মান্ন জাতীয়। আর তার পানি চক্ষু রোগের শিফা।
৪১২৭ মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন বনী ইসরাঈলকে
বলা হয়েছিল যে তোমরা সিজদা অবস্থায় শহর দ্বারে
প্রবেশ কর এবং বল হিত্তাতুন(ক্ষমা চাই) কিন্তু তারা প্রবেশ করল নিতম্ব হেঁচড়িয়ে এবং
নির্দেশিত শব্দকে পরিবর্তন করে তদস্থলে বলল গম ও যবের দানা। আল্লাহর বাণীঃ ‘যারা জিবরাঈলের শত্রুতা করবে।
‘ইকরিমা (রহঃ) বলেন জবর মীক সারাফ অর্থ ‘আবদ-বান্দা ঈল-আল্লাহ। (অর্থ দাঁড়াল আবদুল্লাহ-আল্লাহর বান্দা)
৪১২৮ আবদুল্লাহ মুনীর (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর শুভাগম বার্তা শুনতে পেলেন। তখন তিনি (আবদুল্লাহগ ইবনু সালাম) বাগানে ফল আহোরণ
করছিলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন আমি আপনাকে তিনটি বিষয় জিজ্ঞাসা করব যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বতীত অন্য কেউ জানেন না। তাহল কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ কি? জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কি হবে? এবং সন্তান কখন পিতার সদৃশ হয় আর কখন মাতার সর্দশ হয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আমাকে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখনি এসব সম্পর্কে অবহিত করলেন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন জিবরাঈল? নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে হ্যাঁ। ইবনু সালাম
বললেন
সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইয়াদীদের শত্রু। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন যে ব্যাক্তি জিবরাঈলের শত্রু হবে এ জন্যযে তিনি তো আপনার অমত্মরে (আল্লাহর হুকুমে) ওহী নাযিল করেন। (২: ৯৭)। কিয়ামতের প্রথম লক্ষণ
হল
এক প্রকার আগুন বের হবে যা মানবকুলকে পূর্ব প্রামত্ম হতে পশ্চিম
প্রামত্ম পর্যন্ত একত্রিত করবে। আর জান্নাতীরা প্রথমে যা আহার করবে তা হল মাছের কলিজার
টুকরা। আর যখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর উপর প্রাধান্য লাভ করবে তখন সন্তান পিতার সদৃশ
হয় এবং যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের উপ প্রাধান্য লাভ করে তখন সন্তান মাতার সদৃশ হয়।
তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদরা সাঘাতিক মিথ্যারূপকারী। যদি তারা আপনাকে প্রশ্ন করার পূর্বেই
আমার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জেনে যায় তবে তারা আমার প্রতি অপবাদ আনবে। ইতিমধ্যে ইহূদীরা
এসে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহূদীদের জিজ্ঞাসা করলেন আবদুল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা উত্তর দিল তিনি আমাদের মধ্যে উত্তম এবং আমাদের মধ্যে সম্ভ্রামত্ম ব্যাক্তির
পুত্র। তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার ছেলে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
যদি আবদুল্লাহ ইবনু ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমরা কেমন মনে করবে। তারা বলল আল্লাহ তাকে এর থেকে পানাহ দিন। তখন {আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)} বের হয়ে এসে বললেন আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ নিঃসন্দেহে আল্লাহর
প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন তারা বলল সে আমাদের মধ্যে মন্ ব্যাক্তি ও মন্দ ব্যাক্তির ছেলে। তারপর
তারা ইবনু সালাম (রাঃ)-কে দোষী সাব্যস্ত করে সমালোচনা করতে লাগল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু
সালাম (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এটাই আমি ভয় করছিলাম।
৪১২৯ আমর ইবনু আলী (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উমর (রাঃ) বলেন উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কারী আর আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক। কিন্তু আমরা উবাই
(রাঃ)-এর সব কথাই গ্রহণ করি না। কারণ উবাই (রাঃ) বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছি তা
ছেড়ে দিতে পারি না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলে আমি যে আয়াত রহিত করি অথবা বিস্মৃত হতে দেই (২: ১০৬)।
৪১৩০ আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তা‘আলা
বলেন
আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে। অথচ তার তা উচিত নয়।
আমাকে গালি দিয়েছে অথচ তার জন্য তা উচিত নয়। তার আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ হল সে বলে যে আমি তাকে পূর্বের
ন্যায় পুনরুজ্জীবনে সক্ষম নই। আর আমাকে তার গালি প্রদন হল–তার বক্তব্য যে আমার সন্তান আছে অথচ আমি স্ত্রী ও সন্তান গ্রহণ থেকে সম্পূর্ণ
পবিত্র।
৪১৩১ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উমর (রাঃ) বলেছেন তিনটি বিষয়ে আমার মতামত আল্লাহর ওহীর অনুরূপ হয়েছে অথবা (তিনি
বলেছেন) তিনটি বিষয়ে আমার মতামতের অনুকুলে আল্লাহ ওহী নাযিল করেছেন। তা হল আমি বলেছিলাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনি মাকামে
ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান হিসাবে গ্রহণ করতেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা
নাযিল করলেন । তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থানে নির্ধারণ কর
(২: ১২৫) আমি আরয করেছিলাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার কাছে ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারে লোক আসে। কাজেই আপনি যদি উম্মাহাতুল
মু’মিনীনদেরকে (আপনার স্ত্রীদের) পর্দা করার নির্দেশ দিতেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা পর্দার
আয়াত নাযিল করেন। তিনি আরো বলেন আমি জানতে পেরেছিলাম
যে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কতক বিবির প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন। তখন আমি তাদের কাছে উপস্থিত হই এবং বলি যে আপনারা এর থেকে বিরত হবেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল) -কে
আপনাদের চেয়েও উত্তম স্ত্রী প্রদান করবেন। এরপর আমি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে আসি তখন তিনি বললেন হে উমর! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণকে
নসীহত করে থাকেন আর এখন তুমি তাদের উপদেশ দিতে আরম্ভ করেছ? তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যদি তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তাঁর রব সম্ভবত তোমাদের স্থলে তাঁকে দিবেন তোমাদের
অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী যারা হবে আত্মসমপর্ণকারী। (৬৬: ৫) ইবনু আবী মারয়াম (রহঃ) বলেন আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে উমর (রাঃ) আমার কাছে এরূপ বলেছেন।
৪১৩২ ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমার কি জানানেই যে তোমার সম্প্রদায় কুরাইশ কা’বা তৈরী করেছে
এবং ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ভিত্তির থেকে ছোট নির্মাণ করেছে?’ {আয়িশা (রাঃ) বলেন} আমি তখন বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি ইবরাহীম আলাইহি
ওয়া সাল্লাম -এর ভিত্তির উপর কা’বাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন না? তিনি বললেন যদি তোমার গ্রোত্রে কুফরীর যামানা অতীতে না হত। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) বললেন যদি আয়িশা (রাঃ)
এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনে থাকেন তবে আমার মনে হয় যে এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাতিমের দিকের দুই রোকনে (রোকনে ইরাকী ও রোকন শামী) চুম্বন বর্জন করেছেন যেহেতু বায়তুল্লাহ ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ভিত্তির উপর
সম্পূর্ণভাবে নির্মিত নয়।
৪১৩৩ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আহলে কিতাব (ইহূদী) ইবরানী ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের জন্য
তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা আহলে কিতাবকে বিশ্বস করো না আর অবিশ্বাসও কর না এবং (আল্লাহর
বাণী) ‘তোমরা বল আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তা । ’
৪১৩৪ আবূ নু‘আইম (রহঃ) বারা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মদিনাতে ষোল অথবা সতের মাস যাবত বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করেন। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর দিকে
তাঁর কিবলা হওয়াকে পছন্দ করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত
(নামায/নামাজ) (কাবার দিকে মুখ করে) আদায় করেন এবং লোকেরাও তাঁর সাথে সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করেন। এরপর তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী একজন বের হন এবং তিনি একটি
মসজিদের লোকদের কাছ দিয়ে গেলেন তখন তারা রুকু অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন আমি আল্লাহকে সাক্ষি রেখে বলছি যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মক্কার দিকে
মুখ কনোমায আদায় করেছি। একথা শোনার পর তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায় বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে গেলেন। আর যারা কিবলা বায়তুল্লাহর
দিকে পরিবর্তের পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় অবস্থায় মারা
গিয়েছেন
শহীদ হয়েছেন তাদের সম্পর্কে আমরা কি বলব তা আমাদের জানাছিল না। তখন আল্লাহ
তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন-‘‘আল্লাহ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমানকে তিনি ব্যর্থ করে দিবেন নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র পরমদয়ালু। (২:১৪৩)
৪১৩৫ ইউসুফ ইবনু রাশিদ (রহঃ) আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিয়ামতের দিন নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে ডাকা হবে। তখন তিনি
উত্তর দিবেন এ বলেঃ হে আমাদের রব! আমি আপনার পবিত্র দরবারে উপস্থিত (তখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা
করবেন) তুমি কি (আল্লাহ পায়গাম লোকদের) চৌঁছে দিয়েছিলেন? তিনি বলবেন হ্যাঁ। এরূপ তাঁর উম্মাতকে জিজ্ঞাসা করা হবে [নূহ্ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি] তোমাদের নিকট (আল্লাহর পয়গাম) পৌঁছে
দিয়েছে?
তারা তখন বলবে আমাদের কাছে কোন সতর্কবাণী আগমন করেনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা [নূহ
আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে] বলবেন তোমা দাবির প্রতি
সাক্ষী কে? তিনি বলবেন মুহাম্মাদ এবং তাঁর উম্মাতগণ। তখন তারা সাক্ষ্য প্রদান করবে
যে
নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মাতের নিকট আল্লাহর পয়গাম প্রচার
করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের প্রতি সাক্ষ্য হবেন। এটাই
মহান আল্লাহর বাণী । ওয়াসাত শব্দের অর্থ ন্যায়নিষ্ঠ।
৪১৩৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত একদিন লোকেরা
কুবা মসজিদে ফযরের সালাম আদায় করছিলেন। এমন সময় এক আগন্তুক এসে বলল আল্লাহ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি
কুরআনের এ আয়াত নাযিল করেছেন যে তিনি যেন কাবার
দিকে (সালাত (নামায/নামাজ)) মুখ করেন। কাজেই আপনারাও কাবার দিকে মুখ করে নিন। সে মুতাবিক
লোকেরা কাবার দিকে মুখ করে নেন।
৪১৩৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যারা উভয় কিবলার (কাবা ও বায়তুল মুকাদ্দাস)-এর দিকে ফিরে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করেছেন তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ জীবিত নেই।
৪১৩৮ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইবনু
উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত একদা লোকেরা মসজিদে
কুবায় ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের কাছে একজন লোক এসে বলল এই রাত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর কুরআনের
আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তিনি নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করার জন্য। অতএব আপনারা কাবার দিকে মুখ ফিরান। আর তখন লোকদের চেহারা শামের দিকে
ছিল। এরপর তারা তাদের চেহারা কাবার দিকে ফিরিয়ে নিলেন।
৪১৩৯ ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা লোকেরা কুবা মসজিদে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন তখন তাদের নিকট একজন আগুন্তুক এসে বললেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি এ রাতে কুরআনের
আয়াত নাযিল করা হয়েছে তাতে তাঁকে কাবার
দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারা কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তার
তখন তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল। এরপর তাদের মুখ কাবার দিকে ফিরে গেল।
৪১৪০ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ)
বারা ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস যাবত (মদিনাতে) বায়তুল মুকাদ্দাসের
দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তারপর আল্লাহ তাঁকে কাবার দিকে ফিরিয়ে
দেন।
৪১৪১ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু
উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা কূবা মসজিদে সাহাবীগণ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন।
এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে বলল আজ রাতে {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি} কুরআনের আযাত নাযিল হয়েছে তাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে মুখ ফিরাতে
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারা সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তখন তারা আপন আপন অবস্থায়
মুখ ফিরিয়ে নেন এবং কাবার দিকে মুখ করেন। সে সময় তাদের মুখ সিরিয়ার দিকে ছিল।
৪১৪২ কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু
উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা কূবাতে সাহাবীগণ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন এমতাবস্থায় জনৈক আগুন্তুক এসে বলল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এÿ প্রতি আজ রাতে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তাঁকে কাবার দিকে
মুখ ফিরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অতএব আপনারাও সে দিকে মুখ ফিরান। তাদের মুখ তখন সিরিয়ার
দিকে ছিল। এরপর তারা কাবার দিকে ফিরে গেলেন।
৪১৪৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা
(রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম আর সে সময় আমি অল্প বয়স্ক ছিলাম। মহান আল্লাহর বাণী এ আয়াত
সম্পর্কে আপনার অভীমত কি? ‘‘সাফা এবং মারওয়া
পর্বদ্বয় আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শসমূহের অমত্মর্ভুক্ত। কাজেই যে বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ)
বা উমরা ইচ্ছা করে তার জন্য উভয় পর্বতের মধ্যে সায়ীকরণে কোন দোষ নেই। ’’ (২:১৫৮) আমি
মনে করি উক্ত দুই পর্বত সায়ী নাকরণের কোন ব্যাক্তির উপর গুনাহ বর্তাবে না। তখন আয়িশা
(রাঃ) বললেন কখনই এরূপ নয়। তুমি যা বলছ
যদি তাই হতো তা হলে বলা হতো এভাবে ‘‘উভয় পর্বত তাওয়াফ না করলে কোন গুনাহ বর্তাবে না।
বস্ত্তত এই আয়াত নাযিল হয়েছে আনসারদের শানে। তারা ‘‘মানাত’-এর পূজা করত। আর ‘মানাত’
ছিল কুদায়েদের পথে অবস্থিত। আনসারগণ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে সায়ী করা মন্দ জানতো। ইসলামের
আগমনের পর তারা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল।
তখন আল্লাহ উক্ত আয়াত নাযিল করেন।
৪১৪৪ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আসিম ইবনু সুলাইমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে সাফা ও মারওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমরা ঐ দু’টিকে জাহেলী যুগের প্রথা বলে বিবেচনা করতাম। এরপর
যখন ইসলাম আসলো তখন আমরা উভয়ের মধ্যে সায়ী
করা থেকে বিরত থাকি। তখন উক্ত আয়াত নাযিল হয়।
৪১৪৫ আবদান (রহঃ) ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু
মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কথা বললেন আর আমি আর একটি বললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে তাঁর সমকক্ষে স্থাপন করতঃ মৃত্যুবরণ
করে
সে জাহান্নামে যাবে। আর আমি বললাম যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন না করা
অবস্থায় মারা যায় (তখন তিনি বললেন)
সে জান্নাতে যাবে।
৪১৪৬ হুমায়দী (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ে কিসাস প্রথা চালু ছিল কিন্তু দিয়াত২ তাদের
মধ্যে চালু ছিল না। অনমত্ম আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতের জন্য এ আয়াত নাযিল করেনঃ উল্লিখ
আয়াতে আলআফুর -এর অর্থ ইচ্ছাকৃত হত্যার বিনিময়ে দিয়াত গ্রহণ করে কিসাস ক্ষমা করে দেওয়া।
‘‘ফাত্তবাউন বিল মারুফি ওয়া আদাউন ইলাহি বি ইহসানিন’ অর্থাৎ এ ব্যাপারে যথাযথ বিধির
অনুসরণ করবে এবং সততার সাথে দিয়াত আয়াত করে দেবে। তোমাদের প্রতি অবধারিতভাবে আরোপিত
কেবল কিসাস হতে তোমাদের প্রতি দিয়াত ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের প্রতি বিশেষ
অনুগ্রহ ও হ্রাস ও লঘু শাস্তির বিধান। দিয়াত কবুল করার পরও যদি হত্যা করে তাহলে তার
জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে।
৪১৪৭ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী
(রহঃ) আনাস (রাঃ) তাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন
যে
তিনি বলেছেন আল্লাহর কিতাবেই কিসাসের নির্দেশ রয়েছে।
৪১৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আনাসের ফুফু রুবাঈ
জনৈক বাঁদির সামনের দাঁদ ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকেরা ক্ষা প্রার্থী
হলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দীয়াত পেশ করা হল তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু বাঁদির লোকেরা কিসাস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ
করতে অস্বীকার করল। রাসূলুল্লাহ কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবনু নযর (রাঃ) নিবেদন
করল
ইয়অ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রুবাঈয়ের সামনে দাঁত
ভেঙ্গে দেওয়া হবে? না যে সত্তা আপনাকে
সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
হে আনাস! আল্লাহর কিতাবই কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির সম্প্রদায়
রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করেন আল্লাহ তা পূরণ করেন।
৪১৪৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন জাহেলী যুগের লোকেরা আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) রোযা পালন করত।
এরপর যখন রমযানের রোযা বিধান অবতীর্ণ হল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যার ইচ্ছা সে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা পালন করতে পারে
আর যে চায় সে পালন না-ও করতে পারে।
৪১৫০ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রমযানের রোযা অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র
রোযা পালন করা হত। এরপর যখন রমযানের রোযার বিধান অবতীর্ণ হল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে ইচ্ছা করে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)
পালন করবে আর যে চায় সে রোযা পালন করবে
না।
৪১৫১ মাহমূদ ইবনু গায়লা) (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন তাঁর নিকট ‘আশ‘আস
(রাঃ) আসেন। এ সময় ইবনু মাসঊদ (রাঃ) পানাহার করছিলেন। তখন আশ‘আস (রাঃ) বললেন আজকে তো ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)। তিনি বললেন রমযানের রোযার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র
রোযা পালন করা হতো। যখন রমযানের নাযিল হল তখন তা পরিত্যাগ করা হয়েছে। এস তুমিও খাও।
৪১৫২ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন জাহেলী যুগে কুরাইশগণআশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন রোযা পালন
করত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও সে রোযা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায়
হিজরত করলেন তখনও তিনি সে রোযা পালন করতেন এবং অন্যদেরকেও তা পালনের নির্দেশ দিতেন।
এরপর যখন রমযানের ফরয রোযার হুকুম নাযিল হল তখন আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র রোযা ছেড়ে
দেওয়া হল। এরপর যে চাইত সে উক্ত রোযা পালন করত আর যে চাইত পালন করত না।
৪১৫৩ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে পড়তে শুনেছেন (আরবী) অর্থাৎ যাদের প্রতি
রোযার বিধান আরোপ করা হয়েছে অথচ তারা এর সময় নয়। তাদের প্রতি একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই
ফিদয়া। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন এ আয়াত রহিত হয়নি।
এর হুকুম সেই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা রোযা পালনে সামর্থ্য
রাখে না
তখন প্রত্যেকদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট ভরে আহার
করাবে।
৪১৫৪ আইয়্যাশ ইবনুল ওয়ালিদ (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি পাঠ করতেন
রাবী বলে
এ আয়াত আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
৪১৫৫ কুতায়বা (রহঃ) সালাম ইবনু
আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল এবং যারা রোযা পালনের সামর্থ রাখে তারা
একজন মিসকীনকে ফিদয়াস্বরূপ আহার্য দান করবে। তখন যে ইচ্ছা রোযা ভঙ্গ করত এবং তার পরিবর্তে
ফিদয়া প্রদান করত। এরপর পরবর্তী আয়াত নাযিল হয় এবং পূর্বোক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে
দেয়। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন ইয়াযীদের পূর্বে
বুকায় মারা যান। আবূ মামার মুজাহিদ (রহঃ) বর্ণিত ইবনু আববাস (রাঃ) এ আয়াত এভাবে তিলাওয়াত করতেন তিনি বলতেন যাদের প্রতি রোযার বোঝা চাপানো হয়েছে (আর সে হল অতিবৃদ্ধ যে
রোযা পালনে অসমর্থ। তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে প্রতিদিন একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।
আর স্বতঃস্ফূর্তভাবে অতিরিক্ত নেক কাজ করবে তা তার জন্য উত্তম। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন যে ব্যাক্তি অতিরিক্ত করে এবং নির্ধারিত সংখ্যক মিসকীনদের অধিক
জনকে খাদ্যদান করে তা তার জন্য কল্যাণকর হবে।
৪১৫৬ উবায়দুল্লাহ ও আহমদ ইবনু উসমান
(রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন রমযানের রোযার হুকুম নাযিল হল তখন মুসলিমরা গোটা রমযান মাস
স্ত্রী-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকতেন আর কিছু সংখ্যক লোক এ ব্যাপারে নিজেদের উপরে (স্ত্রী-সম্ভোগ
করে) অবিচার করে বসে তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন -‘‘আল্লাহ জানতেন যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। এরপর তিনি তোমাদের প্রতি
ক্ষমাশীল হন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন। সুতরায়এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং
আল্লাহ যা তোমাদের জন্যবিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। (২: ১৮৭)
৪১৫৭ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ‘আদী
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি (আদী) একটি
সাদা ও একটি কালো সুতা সঙ্গে রাখলেন। কিছু রাত অতিবাহিত হলে খুলে দেখলেন কিন্তু তাঁর
কাছে সাদা কালোর কোন ব্যবধান স্পষ্ট হল না। যখন সকাল হল তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আমার বালিশের
নিচে (সাদা ও কালো রঙের দু’টি সুতা) রেখেছিলাম এবং তিনি রাতের ঘটনাটি উল্লেখ করলেন।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার বালিশ তাহলে বেশ চওড়া ছিল যদি কালো ও সাদা সুতা তোমার বালিশের নিচে থেকে থাকে।
৪১৫৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আদী
ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আল্লাহর বাণীতে) সাদা সুতা কালো সুতা বের হয়ে আসার অর্থ কি? আসলে কি ঐ দুটি সুতা? তিনি উত্তর দিলেন তুমি অবশ্য চওড়া পিঠ ও পচাঁদ বিশিষ্ট দু’টি সুতা দেখতে। তারপর
তিনি বললেন তানয় বরং এ হল রাতের অন্ধকার
ও দিনের শুভ্রতা।
৪১৫৯ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) সাহল
ইবনু সা‘আদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এ আয়াত যখন নাযিল হয় তখন ‘ফজ হতে’ কথাটি নাযিল হয়নি। তাই লোকেরা
রোযা পালনের ইচ্ছা করলে তখন তাদের কেউ কেউ দুই পায়ে সাদা ও কালো রঙের সুতা বেঁধে রাখতো।
এরপর ঐ দুই সুতা পরিস্কারভাবে দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তারা পানাহার করতো। তখন আল্লাহ
তা‘আলা পরে শব্দটি নাযিল করেন। এতে লোকেরা জানতে পারেন যে এ দ্বারা উদ্দেশ্য হল রাত ও দিন।
৪১৬০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)
বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন জাহেলীযুগে যখন লোকেরা ইহরাম বাঁধতো (এ সময় বাড়িতে আসার প্রয়োজন দেখা দিলে) তারা পেছনের দরজা দিয়ে
ঘরে প্রবেশ করত। তখন আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন।
৪১৬১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁর কাছে দুই
ব্যাক্তি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়রকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ফিতনার সময় আগমন করল এবং বলল লোকেরা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আর আপনি উমর (রাঃ)-এর পুত্র এবং
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী! কি কারণে আপনি বের হন না? তিনি উততর দিলেন আমাকে নিষেধ করেছে এ কথা নিশ্চই আল্লাহ তা‘আলা
আমার ভাইয়ের রক্ত হারাম করেছে। তারা দু’জন বললেন আল্লাহ কি এ কথা বলেননি যে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর যাবত না ফিতনার অবসান ঘটে। তখন ইবনু
উমর (রাঃ) বললেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করেছি যাবত না ফিতনার অবসান ঘটেছে এবং দ্বীনও আল্লাহর জন্য হয়ে গেছে। আর তোমরা
ফিতনা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা ইচ্ছা করছ আর যেন আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য দ্বীন হয়ে
গেছে। উসমান ইবনু সালিহ ইবনু ওহাব (রহঃ) সূত্রে নাফে (রহঃ) থেকে কিছু বাড়িয়ে বলেন যে এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল হে আবূ আবদুর রহমান! কি করণে আপনি এক বছর হাজ্জ (হজ্জ) করেন
এবং একবছর উমরা করেন অথচ আপনি আল্লাহর পথে জিহাদ পরিত্যাগ করেছেন? আপনি পরিজ্ঞাত আছেন যে আল্লাহ এ বিষয়ে জিহাদ সম্পর্কে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইবনু
উমর (রাঃ) বললেন হে ভাতিজা; ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটি বস্ত্তর উপরঃ আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল) -এর প্রতি ঈমান আনা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ) প্রতিষ্ঠা রমযানের রোযা
পালন
যাকাত প্রদান এবং বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) উদযাপন। তখন সে ব্যাক্তি
বলল
হে আবূ আবদুর রহমান! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে কি বর্ণনা করেছেন
তা কি আপনি শুনেননি? অর্থাৎ মু’মিনদের
দু’দল দ্বন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংশা করে দিবে। এরপর তাদের একদল অপর
দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষন না তারা আল্লাহর
নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে-তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা
করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ইাল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালবাসেন। (৪৯: ৯) (এ আয়াতগুলো
শ্রবণ করার পর) ইবনু উমর (রাঃ) বললেন আমরা এ কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে করেছি
এবং তখন ইসলামের অনুসারীর দল স্বল্পসংখ্যক ছিল। যদি কোন লোক দ্বীন সম্পর্কে ফিতনায়
নিপতিত হতো তখন হয় তাকে হত্যা করা হক অথবা শ্বাসিত্ম প্রদান করা হত। এভাবে ইসলামের
অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেল। তখন আর কোন ফিতনা রইল না। সে ব্যাক্তি বলল আলী ও উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন উসমান (রাঃ)-কে তো আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করেছেন অথচ তোমরা তাঁকে
ক্ষমা করা পছন্দ করো না। আর আলী (রাঃ)-তিনি তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর জামাতা। তিনি নিজ হাত দ্বারা ইশারা করে বলেন এই তো তাঁর ঘর {রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরের কাছে} যেমন তোমরা দেখতে পাচ্ছ।
৪১৬২ ইসহাক (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে এ আয়াত আল্লাহর পথে ব্যয় করা
সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
৪১৬৩ আদম আবদুল্লাহ ইবনু মা‘কিল
(রাঃ) থেকে বর্ণত। তিনি বলেন আমি কা‘ব ইবনু
উজরা-এর নিকট এই কূফার মসজিদে বসা থাকাকালে রিাযার ফিদয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম।
তিনি বললেন আমার চেহারায় উকুন ছড়িয়ে পড়া
অবস্থায় আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আনা হয়। তিনি তখন বললেন আমি মনে করি যে এতে তোমার কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী যোগাড় করতে পার? আমি বললাম না। তিনি বললেন তুমি তিনদিন রোযা পালন কর অথবা ছয়জন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান কর।
প্রতিটি দরিদ্রকে অর্ধ সা‘ খাদ্য প্রদান করতে হবে এবং তোমার মাথার চুল কামিয়ে ফেল।
তখন আমার সম্পর্কে বিশেষভাবে আয়াত নাযিল হয়। তবে তা তোমাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য।
৪১৬৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইমরান ইবনু
হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন তামাত্তুর আয়াত আল্লাহর কিতাবে নাযিল হয়েছে। এরপর আমরা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তা আদায় করেছি। এবং একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
কুরআনের কোন আয়াত নাযিল হয়নি। এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল পর্যন্ত
তা থেকে নিষেধও করেনি। এখন যে তা নিষেধ করতে চায় তা হচ্ছে তার নিজস্ব অভিমত।
৪১৬৫ মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উকায মাজানো্না এবং
যুল-মাজায নামক তিনটি স্থানে জাহেলী যুগে বাজার ছিল। কুরাইশগণ তথায় হাজ্জের (হজ্জ)
মওসুমে ব্যবসা করতে যেত। তাই মুসলিমগণ সেখানে যাওয়া দোষ মনে করত। তাই এ আয়াত নাযিল
হয়।
৪১৬৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে কুরাইশ এবং যারা
তাদের দ্বীনের অনুসারী ছিল তারা (হাজ্জের (হজ্জ) সময়০ মুযদালিফায় অবস্থান করত। ার কুরাইশগণ
নিজেদের সাহসী ধর্মে অটল বলে অভিহিত করত এবং অপরাপর আরবগণ আরাফাতে অবস্থান করত। এরপর
যখন ইসলামের আগমন হল তখন আল্লাহ তা‘আলা
তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আরাফাতে ওকুফের এবং রেপর সেখান থেকে
প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দিলেন। আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৪১৬৭ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন তামাত্তু আদায়কারী ব্যাক্তি উমরা আদায়ের পরে যতদিন হালাল অবস্থায়
থাকবে ততদিন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) জন্য ইহরাম বাঁধবে। এরপর
যখন আরাফাতে যাবে তখন উট গরু ছাগল প্রভৃতি যা মুহারিমের জন্য সহজলভ্য হয় তা মীনাতে কুরবানী
করবে। আর যে কুরবানীর সঙ্গতি রাখে না সে হাজ্জের (হজ্জ) দিনসমূহের মধ্যে তিনটি রোযা
পালন করবে। আর তারাফার দিবসের পূর্বে হতে হবে। আর তিন দিনের শেষ দিন যদি আরাফার দিন
হয়
তবে তাতে কো্ন দোষ নেই। তারপর আরাফাত ময়দানে যাবে এবং সেখানে
সালাত (নামায/নামাজ) আসর হতে সূর্যাস্তের অন্ধকার পর্যন্তওকুফ (অবস্থান) করবে। এরপর
আরাফা হতে প্রত্যাবর্তন করে মুযদালিফায় পৌঁছে সেখানে নেকী হাসিলের কাজ করতে থাকবে এবং
অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকর করবে। সেখানে ফজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর ও তাহলীল পাঠ
করবে। এরপর (মদিনার) দিকে প্রত্যাবর্তন করবে যেভাবে অন্যান্য লোক প্রর্ত্যাবর্তন করে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘‘এরপর প্রত্যাবর্তন
করে সেখান হতে যেখান হতে লোকজন প্রত্যাবর্তন
করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল দয়াময়। ’’ তারপর জমরাতুল উকাযার প্রস্তর নিক্ষেপ করবে।
৪১৬৮ আবূ মা‘মার (রহঃ) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে দুআ করতেন ‘‘হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও
কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। ’’ (২: ২০১)
৪১৬৯ কাবীসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহর নিকট ঘৃণিত মানুষ হচ্ছে অতিরিক্ত ঝগড়াটে ব্যাক্তি। আবদুল্লাহ
বলেন
আমার কাছে সুফিয়ান হাদীস বর্ণনা করেন সুফিয়ান বলেন আমার কাছে ইবনু যুরায়জ ইবনু আবূ মূলায়কা হতে আয়িশা
(রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই মর্মে বর্ণনা করেছেন।
৪১৭০ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ‘‘আল্লাহর বাণীঃ ‘‘অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গণ যখন নিরাশ হলেন এবং লোকেরা ভাবলো যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া
হয়েছে (১২: ১১০) তখন ইবনু আববাস
(রাঃ) এই আয়াতসহ সূরা বাকারার আয়াতের শরনাপন্ন হন ও তিলাওয়াত করেন যেমনঃ এমন কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর
সাএথ ঈমান আনয়নকারীগণ বলে উঠেছিল-আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? হ্যাঁ হ্যাঁ আল্লাহর সাহায্য নিকটেই (২:২১৪) রাবী বলেন এরপর আমি উরওয়া ইবনু যুবায়রের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ সম্পর্কে
অবহিত করি তখন তিনি বলেন যে আয়িশা (রাঃ) বলেছেন আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি আল্লাহর কসম আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল) -এর নিকট যেসব অঙ্গীকার করেছেন তিনি জানতেন যে তা তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই বাস্তবে পরিণত হবে।
কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের প্রতি সমূহ বিপথ-আপদ নিপতিত হতে
থাকবে। এমন কি তারা আশঙ্কা করবে যে সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করবে। এ প্রসঙ্গে আয়িশা
(রাঃ) এ আয়াত পাঠ করতেন তারা ভাবল যে তারা তাদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করবে।
৪১৭১ ইসহাক (রহঃ) নাফি (রাঃ) থেকে
বর্ণিত
তিনি বলেন ইবনু উমর (রাঃ)
যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন তখন কুরআন তিলাওয়াত হতে অবসর না হয়ে কোন কথা বলতেন না। একদা
আমি সূরা বাকারা পাঠ করা অবস্থায় তাঁকে পেলাম। পড়তে পড়তে তিনি এক স্থানে পৌঁছলেন। তখন
তিনি বললেন তুমি জানো কি উপলক্ষ্যে এ আয়াত নাযিল হয়েছে? আমি বললাম না। তিনি তখন
বললেন
অমুক অমুক ব্যাপারে আয়াত নাযিল হয়েছে। তারপর আবার তিনি তিলাওয়াত
করতে থাকেন। আবদুস সামাদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমার কাছে হাদীস
বর্ণনা করেন আমার পিতা তিনি বলেন আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করে আইয়ুব তিনি নাফি‘ থেকে আর নাফি‘ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে। অতএব তোমরা তোমাদের
শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার। (২: ২২৩)। রাবী বলেন স্ত্রীলোকের পশ্চাৎ দিক দিয়ে সহবাস করতে পারে। মুহাম্মদ ইবনু
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ তাঁর পিতা থেকে তিনি উবায়দুল্লাহ থেকে তিনি নাফি‘ থেকে এবং তিনি ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৪১৭২ আবূ নু‘আইম (রহঃ) জাবির (রাঃ)
থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ইহুদীরা বলতো যে যদি কেউ স্ত্রীর পেছন দিক থেকে সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা
চোখের হয়। তখন (তাদের এ ধারণা রদ করে) আয়াত অবতীর্ণ হয়।
৪১৭৩ উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ)মা‘কিল
ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমার
এক বোনের বিয়ের পয়গাম আমার নিকট পেশ করা হয়। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন যে ইবরাহীম (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে তিনি হাসান বসরী (রহঃ) থেকে এবং তিনি মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রহঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন। আবূ মা‘মার (রহঃ)হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর বোনকে তার স্বামী তালাক দিয়ে তারপর
পৃথক করে রাখে। যখন ‘ইদ্দত পালন পূর্ণ হয় তখন তার স্বামী তাকে আবার পয়গাম পাঠায়। মা‘কিল
(রাঃ) অমত পোষণ করে তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‘‘তারা তাদের স্বামীর সাথে পুনরায় বিধিমত
বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতে চাইলে তাদের তোমরা বাঁধা দিওনা। (২: ২৩২)
৪১৭৪ উমাইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-কে উক্ত সম্পর্কে বললাম যে এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানকুক (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত
আয়াত আপনি মুসহাফে লিখেছেন (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না তখন তিনি নউসমান (রাঃ) বললেন হে ভাতিজা আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না।
৪১৭৫ ইসহাক (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এ আয়াতে স্ত্রীর
প্রতি স্বামীর পরিবার থেকে ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। আয়াতে উল্লিখত শব্দের অর্থ দান করে।
অনন্তর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেনঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে সপত্নীক অবস্থায় যাদের মৃত্যু আসন্ন
তারা যেন তাদের স্ত্রীদের গৃহ হতে বহিস্কার না করে তাদের এক বছরের ভরণ পোষণের ওসীয়ত
করে। কিন্তু যদি তারা বের হয়ে যায় তবে বিধিমত নিজেদের জন্য তারা যা করবে তাতে তোমাদের
কোন পাপ নেই। আল্লাহ পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। (২:
২৪০) রাবী বলেন আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীর জন্য
পূর্ণ বছর সতের মাস এবং বিশ রজনী নির্ধারিত করেছেন ওসীয়ত হিসেবে। সে ইচ্ছা করলে তার
ওসয়ত থাকতে পারে ইচ্ছা করলে বের
হয়েও যেতে পারে। এ কথারই ইঙ্গিত করে আল্লাহর বাণীঃ মোট কথা যেভাবেই হোক স্ত্রীর উপর
ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। মুজাহিদ থেকে এরূপই জানাগেছে। কিন্তু ইমাম আতা বলেন যে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন এই আয়াত স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর বাড়িতে ‘ইদ্দত পালন করার
হুকুম রহিত করে দিয়েছে। সুতরাং স্ত্রী যথেচ্ছা ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহর এ বাণী
দলীল বলেঃ ইমাম আতা বলেন স্ত্রী ইচ্ছা
করলে স্বামীর পরিজনের নিকট ‘ইদ্দত পালন করতে পারে এবং তার ওসীয়ত থাকতে পারে অথবা তথা
হতে চলেও যেতে পারে। আয়াতের মর্মানুসারে। ইমাম আতা (রাঃ) বলেন তারপর মিরাস বা উত্তরাধিকারের হুকুম আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হল।
সুতরাং ঘর ও বাসস্থানের নির্দেশ রহিত হয়ে যায়। কাজেই যথেচ্ছা স্ত্রী ‘ইদ্দত পালন করতে
পারে। আর তার জন্য ঘরের বা বাসস্থানের দাবি আগ্রহ্য। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ হতে বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেন আমার নিকট ওয়াকা’ ইবনুুাবি নাজীহ থেকে আর
তিনি মুজাহিদ থেকে এ সম্পর্কে। এবং আরো আবী নাজীহ আতা থেকে এবং তিনি ইবনু আববাস (রাঃ)
বর্ণনা করেন ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন এই আয়াত স্ত্রীর ‘ইদ্দত পালন করতে পারে। আল্লাহর এই বাণীঃ এবং
তদনুরূপ আয়াত এর দলীল মুতাবিক।
৪১৭৬ হিববান (রহঃ) মুহাম্ম ইবনু
সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি এমন একটি জলসায় (সভায়) উপবিষ্ট ছিলাম যেখানে নেতৃস্থানীয়
আনসারদের কতেক ছিলেন এবং তাদের মাঝে
আবদুর রহমান বিন আবূ লায়লা (রহঃ)-ও ছিলেন। এরপর সুবাইয়া বিনতে হারিস (রহঃ) প্রসঙ্গে
বর্ণিত আবদুল্লাহ বিন উতবা (রহঃ) হাদীসটি উত্থাপন করলাম এরপর আবদুর রহমান (রহঃ) বললেন ‘‘পক্ষান্তরে তাঁর চাচা এ রকম বলতেন না’’ অনমত্ম আমি বললাম কূফায় বসবাসরত ব্যাক্তিটি সম্পর্কে যদি আমি মিথ্যা বলি তবে আমি
হব চরম ধৃষ্ট এবং তিনি তার স্বর উচুঁ করলেন তিনি বললেন তারপর আমি বের হলাম এবং মালিক বিন আমির (রাঃ) মালিক ইবনু আউফ
(রহঃ)-এর সাথে আমি বললাম গর্ভাবস্থায় বিধবা
রমণীর ব্যাপারে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর মমত্মব্য কি ছিল বললেন যে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন তোমরা কি তার উপর কঠোরতা অবলম্বন করছ আর তার জন্য সহজ বিধানটি
অবলম্বন করছ না সংক্ষিপ্ত ‘‘সূরা নিসাটি
(সূরা ত্বালাক) দীর্ঘটির পর অবতীর্ণ হয়েছে। আইয়ুব (রহঃ) মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন
‘‘ আবূ আতিয়হ মালিক বিন আমির (রহঃ)-এর সাথে আমি
সাক্ষাৎ করেছিলাম।
৪১৭৭ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হা আবদুর রহমান আলী
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন খন্দক যুদ্ধের
দিন কাফিরগণ আমাদের মধ্যবর্তী সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত রাখে এমনকি এ অবস্থায়
সূর্য অস্তে চলে যায়। আল্লাহ তাদের কবর ও তাদের ঘরকে অথবা পেটকে আগুন দ্বারা পূর্ণ
করুক। এখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর না পেট বলেছেন তাতে ইয়াহইয়া রাবীর
সন্দেহ রয়েছে।
৪১৭৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) যায়িদ ইবনু
আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতাম আর আমাদের
কেউ তার ভাইয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ তখন আমাদেরকে চুপ থাকার ও
সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কথা না বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
৪১৭৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
নাফি‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে যখন সালাতুল (নামায) খাওফ (যুদ্ধ
ক্ষেত্রে শত্রুভয়ের মধে সালাত (নামায/নামাজ)) প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হত তখন তিনি বলতেন ইমাম সাহেব সামনে যাবেন এবং একদল লোকও জামাতে শামিল হবে। তিনি
তাদের সঙ্গে এক রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন এবং তাদের আর একদল জামাতে শামিল
না হয়ে তাদের ও শত্রুর মাঝখানে থেকে যারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনি তাদের পাহারা
দিবে। ইমামের সাথে যারা এক রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তারা পেছনে গিয়ে
যারা এখনও নামায় আদায় করেনি তাদের স্থানে দাঁড়াবে কিন্তু সালাম ফিরাবে না। যারা সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করেনি তারা আগে বাড়বে এবং ইমামের সাথে এক রাকাআত আদায় করবে। তারপর
ইমাম সালাত (নামায/নামাজ) হতে অবসর গ্রহণ করবে। কেননা তিনি দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করেছেন। এরপর উভয় দল দাঁড়িয়ে নিজে নিজে বাকি এক রাকাআত ইমামের সালাত (নামায/নামাজ)-এর
শেষে আদায় করে নিবে। তাহলে প্রত্যেক জনেরই দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় হয়ে
যাবে। আর যদি ভয়-ভীতি ভীষণতর হয় নিজে নিজে দাঁড়িয়ে অথবা যানবাহনে আরোহিত অবস্থায় কিবলার
দিকে মুখ করে অসুবিধা হলে যেদিকে সম্ভব মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইমাম
মালিক (রহঃ) বলেন ইমাম নাফি‘ (রাঃ)
বলেন
আমি অবশ্য মনে করি ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেই এ হাদীস বর্ণণা করেছেন।
৪১৮০ আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ
(রহঃ) ইবনু আবূ মূলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ইবনু যুবায়র
(রাঃ) বললেন আমি উসমান (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা
করলাম যে
সূরা বাকারার এ আয়াতটি কে তো অন্য একটি আয়াত রহিত করে দিয়েছে।
তারপরও আপনি এভাবে লিখছেন কেন? জবাবে উসমান
(রাঃ) বললেন ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা তা যথাস্থানে
রেখে দিয়েছি। আপন স্থান থেকে কোন কিছুই আমরা পরিবর্তন করিনি। হুমাইদ (রহঃ) বললেন ‘‘অথবা প্রায় এরকমই উত্তর দিয়ে দিলেন। ’’
৪১৮১ আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ইবরাহীম আলাইহি
ওয়া সাল্লাম যখন প্রভু! তুমি আমাকে দেখাও কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত কর? তখন তাঁর তুলনায় আমার সন্দেহ পোষণের ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য ছিলাম।
শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘সেগুলোকে টুকরো টুকরো করুন।
৪১৮২ ইবরাহীম উবায়দ ইবনু ইমায়র
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে একদা উমর (রাঃ)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণদের জিজ্ঞাসা করলেন যে এ আয়াতটি যে উপলক্ষে অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যঅপারে আপনাদের মতামত কি? তখন তারা বললেন আল্লাহই জানেন। উমর (রাঃ) এতে রেগে গিয়ে বললেন আমরা জানি অথবা জানিনা এদুহটোর একটি বল। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন হে আমীরুল মু’মিনীন! এ ব্যাপারে আমার অমত্মককিছুটা ধারণা আছে।
উমর (রাঃ) ভলেন বৎস! বলে ফেল এবং নিজেকে তুচ্ছ
ভেবো না। তখন ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন এটা কর্মে দৃষ্টামত্ম হিসাবে পেশ করা হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন কোন কর্মের? ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন একটি কর্মের। উমর (রাঃ) বললেন এটি উদাহরণ হচ্ছে সেই ধনবান ব্যাক্তির যে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর্রতি শয়তানকে প্রেরণ করেন। অনমত্ম সে
পাপ কার্যে লিপ্ত হয় এবং তার সকল সৎকর্ম নষ্ট করে দেয়।
৪১৮৩ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আতা
ইবনু ইয়াসার এবং আবূ আমরা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তারা উভয়ে বলেন যে আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন একটি খেজুর কি দু’টি খেজুর আর এক গ্রাস খাদ্য কি দু’ গ্রাস খাদ্য
যাকে দ্বারে দ্বারে ঘোরাতে থাকে সে প্রকৃত মিসকীন নয়। মিসকীন সে ব্যাক্তই যে ভিক্ষা করা থেকে বেঁচে থাকে। তোমরা ইচ্ছা করলে আল্লাহর বাণী
পাঠ করতে পার।
৪১৮৪ উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সুদ সম্পর্কিত সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর মদের ব্যবসা
নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন।
৪১৮৫ বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হলেন
এবং মসজিদে গিয়ে লোকদের নিকট পাঠ করে শোনালেন। এরপর মদের ব্যবসা নিসিদ্ধ ঘোষণা করলেন।
৪১৮৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
আয়িশা র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গিয়ে তা পাঠ করে
আমাদের শোনান এবং মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেন।
৪১৮৭ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন সূরা বাকারার শেষ দিকের আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আমাদের
সম্মুখে তা পাঠ করলেন। তারপর মদের ব্যবসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন।
৪১৮৮ কাবীসা ইবনু উকবা (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অবতারিত শেষ আয়াতটি
হচ্ছে সুদ সম্পর্কিত।
৪১৮৯ মুহাম্মদ (রহঃ) মারওয়ান আল
আসফার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন একজন সাহাবীদরে থেকে বর্ণনা
করেন
আর তিনি হচ্ছেন উব্ন উমর (রাঃ)-যে আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে।
৪১৯০ ইসহাক (রহঃ) মারওয়ানুল আসফার
(রাঃ) একজন সাহাবী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি ধারণা করেন যে তিনি ইবনু উমর (রাঃ) হবেন। আয়াতটি রহিত হয়ে গিয়েছে।
৪১৯১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি তিনই তোমার প্রতি
এ কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন। এগুলো কিতাবের মূল অংশ; আর অন্যগুলো রূপক; যাদের অমত্মরে সত্য লংঘন প্রবণতা রয়েছে শুধু তারাইফিতনা এবং
ভুল ব্যাখ্যার উদ্ধেশ্যে যা রূপক তা অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অনূ কেউ এর ব্যাখ্যা
জাননা। আর যারা জ্ঞানে সু-গভীর তাঁরা বলেন আমরা এসব বিশ্বাস কির সমস্তআমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত; এং বোধশক্তি সম্পন্নেরা ব্যূতীত অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
(৩: ৭) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে যারা মুতাশাবাহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন
মনে করব যে তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে
সতর্ক থাকবে। আল্লাহর বাণীঃ অভিশপ্ত শয়তান থেকে তার ও তার বংশধরদের জন্য তোমার শরণ
ও আশ্রয় চাচ্ছি। (৩: ৩৬)
৪১৯২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন প্রত্যেক নবপ্রসূত বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ
করেই। যার ফলশ্রুতিতে শয়তানের স্পর্শমাত্র সে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু মরিয়ম আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পুত্র ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে পারেনি। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বলতেন
যদি তোমরা ইচ্ছা কর তাহলে পড়ঃ (৩ : ৩৬) ”অতঃপর যখন তাকে প্রসব
করলো বলল হে আমার পালনকর্তা! আমি একে
কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত
কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে
তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে। ”
৪১৯৩ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কোন মুসলিম ব্যাক্তির
সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে যে মিথ্যা শপথ করে সে আল্লাহ সম্মুখীন হবে এমন অবস্থায় যে আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। এর সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহ
তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ (৩ : ৭৭) ”যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য
মুল্যে বিক্রয় করে আখেরাতে তাদের
কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার)
দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
আযাব। ” বর্ণনাকারী বললেন এরপর আশআস ইবনু
কায়েস (রহঃ) সেখানে প্রবেশ করলেন এবংবললেন আবূ আবদুর রহমান (রাঃ) তোমাদের নিকট কোন হাদীস বর্ণনা করেছেন? আমরা বললাম এ রকম এ রকম বলেছে। তখন তিনি বললেন এ আয়াত তো আমাকে উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। আমার চাচাতো ভাইয়ের
এলাকায় আমার একটি কূপ ছিল। এ ঘটনায় জ্ঞাত হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
হয়তো তুমি প্রমাণ উপস্থাপন করবে নতুবা সে শপথ করবে। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! সে তো শপথ করে বসবে। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে ব্যাক্তি কোন
মুসলমানের সম্পত্তি হরণ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে সে আল্লাহর সম্মুখীন হবে এমন
অবস্থায় যে আল্লাহই তার উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন।
৪১৯৪ আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে এক ব্যাক্তি বাজারে
তার একটি দ্রব্য উপস্থি করল এবং মসলিমদের আটক করার জন্য শপথ সহকারে প্রচার করল যে এর যে মূল্য দেওয়া কথা হচ্ছে এর চেয়ে অধিক দিতে কোন ক্রেতা রাযী
হয়েছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ (৩ : ৭৭) ”যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা
সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে আখেরাতে তাদের
কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার)
দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক
আযাব। ”
৪১৯৫ নসর ইবনু আলী (রহঃ) ইবনু আবূ
মূলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে দু’জন মহিলা একটি
ঘর কিংবা একটি কক্ষে সেলাই করছিল। হাতের তালুতে সুই বিদ্ধ হয়ে তাদের একজন বেরিয়ে পড়ল
এবং অপর জনের বিরুদ্ধে সুই ফুটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করল। এই ব্যাপারটি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর
নিকট উপস্থাপন করা হলে তিনি বললেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যদি শুধু মাত্র দাবির উপর ভিত্তি করে মানুষের দাবি পূরণ করা
হয়
তাহলে তাদের জানো ও মালের নিরাপত্তা থাকবে না। সুতরায় তোমরা
বিবাদিদের আল্লাহর নামে শপথ করাও এ আয়াত া তার সম্মুখে পাঠ কর। এরপর তারা তাকে শপথ
করাল এবং সে নিজ দোষ স্বীকার করল। ইবনু আববাস (রাঃ) বললে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শপথ করা বিবাদীর জন্য প্রযোজ্য।
৪১৯৬ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবূ সুফিয়ান আমাকে সামনাসামনি হাদীস শুনিয়েছেন। আবূ সুফিয়ান
বলেন
আমাদের আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে সম্পাদিত
চুক্তির মেয়াদে আমি ভ্রমণে বের হয়ে ছিলাম। আমি তখন সিরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। তখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের নিকট থেকে একখানা পত্র
পৌছান। দাহইয়াতুল কালবী এ চিঠিটা বসরাধিপতিকে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হিরাক্লিয়াসের নিকট
পৌছিয়ে দিলেন। পত্র পেয়ে হিরাক্লিয়াস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র দাবিদার
ব্যাক্তির গোত্রস্থি কেউ এখানে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল হ্যাঁ আছে। কয়েকজন কুরাইশীসহ আমাকে ডাকা হলে আমরা হিরাক্লিয়াসের
নিকট গেলাম এবং আমাদেরকে তাঁর সম্মুখে বসালেন। এরপর তিনি বললেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র দাবিদার ব্যাক্তির তোমাদের
মধ্যে নিকটতম আত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন উত্তরে বললাম আমই। তারা আমাকে তাদের সম্মুখে এবং আমার সাথীদেরকে
আমার পিছনে বসালেন। তারপর দোভাষিকে ডাকলেন এবং বললেন এদেরকে জানিয়ে দাও যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র দাবিদার ব্যাক্তিটি
সম্পর্কে আবূ সুফিয়ানকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে যদি আমার নিকট মিথ্যা বলে তোমরা তার
মিথ্যাচারিতা ধরিয়ে দিবে। আবূ সুফিয়ান বলেন যদি তাদের পক্ষ থেকে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণের আশংকা না থাকত তাহলে
আমি মিথ্যা বলতামই। সুফিয়ান বললেন তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের অধিকারী। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন
যে
তাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি রাজা-বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম না। তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন
তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যূাচারের
অপবাদ দিতে পেরেছ? আমি বললাম না। তিনি বললেন সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ তাঁর অনুসরণ করছে না দূর্বলগণ? আমি বললাম বরং দুর্বলগণ।
তিনি বললেন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে
না হ্রাস পাচ্ছে। আমি বললাম বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন তাঁর ধর্মে দীক্সিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কেউ কি
ধর্ম ত্যাগ করে? আমি বললাম না। তিনি বললেন তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেছ কি? আমি বললাম জি হ্যাঁ। তিনি
বললেন
তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলাফল কি? আমি বললাম আমাদের ও তাদের
মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল হলঃ একবার তিনি জয়ী হন আর একবার আমরা জয়ী হই। তিনি বললেন তিনি প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেন কি? বললাম না। তবে বর্তমানে
আমরা একটি সন্ধির মেয়াদে আছি। দেখি এতে তিনি কি করেন। আবূ সুফিয়ান বলেন আল্লাহর শপথ এর সাথে আর অতিরিক্ত কিছু বক্তব্য সংযোজন করার সাহস
আমার ছিল না। বললেন তাঁর পূর্বে এমন
কেউ কি আর দাবি করেছে? বললাম না। তারপর
তিনি তার দোভাষিকে বললেন যে একে জানিয়ে দাও
যে আমি তোমাকে তোমাদের সাথে সে ব্যাক্তির বংশ মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
তারপর তুমি বলেছ যে সে আমাদের মধ্যে
কুলীন। তদ্রুপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ শ্রেষ্ঠ বংশেই জন্মগ্রহণ করে
থাকেন। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি বলেছ না। তাই আমি বলছি
যে
যদি তাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ থাকতেন তাহলে বলতাম তিনি
তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করতে চাচ্ছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম
যে
দুর্বলগণ তাঁর অনুসারী না সম্ভ্রামত্মগণ? তুমি বলেছ দুর্বলগণই। আমি বলেছি যে যুগে যুগে দুর্বলগণই রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের অনুসারী হয়ে থাকি। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে এ দাবির পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিয়েছিলে
কি?
তুমি উত্তরে বলেছ যে না। তাতে আমি বুঝেছি যে যে ব্যাক্তি প্রথমে মানুষদের সাথে মিথ্যাচার ত্যাগ করেন তারপর আল্লাহর সাথে মিথ্যাচারিতা করবেন তা হতে পারে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাঁর প্রতি বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট
হয়ে কেউ ধর্ম ত্যাগ করে কিনা? তুমি বলেছ না। আমি বলেীছ ঈমান যখন অমত্মরের অমত্মস্থলে একবার প্রবিষ্ট হয় তখন এ রকমই
হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তাঁর অনুসারীরা বৃদ্ধি পাচ্ছে না হ্রাস পাচ্ছে? তুমি বলেছ ক্রমশ বৃদ্ধি
পাচ্ছে। আমি বলেছি ঈমান পূর্ণতা
লাভ করলে এ অবস্থাই হয়। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে যুদ্ধ করেছ এবং তার ফলাফল হচ্ছে পানি উত্তোলনের বালতির ন্যায়।
কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের পরীক্ষা করা হয় তাপর চুড়ামত্ম বিজয় তাদের পক্ষেই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ না। তদ্রুপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গণ প্রতি্ঞা ভঙ্গ করেন না। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তাঁর পূর্বে কেউ এ দাবি উত্থাপন করেছিল কিনা? তুমি বলেছ না। আমি বলি যদি
কেউ তাঁর পূর্বে এ ধরণের দাবি করে থাকত তাহলে আমি মনে করতাম এ ব্যাক্তি পূর্ববর্তী
দাবির অনুসরণ করছে। আবূ সুফিয়ান বলেন তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন তিনি তোমাদের কি কাজের নির্দেশ দেন? আমি বললাম সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করতে যাকাত প্রদান করতে আত্মীয়তা রক্ষা করতে এবং পাপচারিতা থেকে পবিত্র থাকার নির্দেশ
দেন। হিরাক্লিয়াস বললেন তাঁর সম্পর্কে
তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয় তাহলে তিনি ঠিকউ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি আবির্ভূত হবেন তা আমি জানতাম বটে তবে তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত
হবেন তা মনে করিনি। যদি আমি তাঁর সান্নিধ্যে পৌছাবার সুযোগ পেতাম তাহলে আমি তাঁর সাক্ষাতকে
অগ্রাধিকার দিতাম। যদি আমি তাঁর নিকট অবস্থান করতাম তাহলে আমি তাঁর পদযুগল ধুইয়ে দিতাম।
আমার নিচের জমীন পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃত লাভ করবে। আবূ সুফিয়ান বলেন তারপর হিরাক্লিয়াস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
পত্রখানি আনতে বললেন। এরূপ পাঠ করতে বললেন। চিঠির বক্তব্য এইঃ দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর
নামে
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ -এর পক্ষ থেকে রোমের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের
প্রতি। হেদায়েতের অনুসারীর প্রতি শামিত্ম বর্ষিত হোক। এরপরামি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত
দিচ্ছি
ইসলাম গ্রহণ করুন মুক্তি পাবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্বিগুন প্রতিদান দেবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে
থাকেন তাহলে সকল প্রজার পাপরাশিও আপনার উপর নিপতিত হবে। হে কিতাবিগণ! এসো সে কথায় যামাদের ও তোমাদের মধ্যে একই যে আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবো না কোন কিছুতেই তাঁর সাথে শরীক না করি। ার আমাদের একে অন্যকে আল্লাহ
ব্যতীত প্রতিপালকরূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল তোমরা সাক্ষী থাক আমরা মুসলিম। যখন তিনি পত্র পাঠ সমাপ্ত করলেন চতুর্দিকে উচ্চ
রব উঠল এবং গুনজন বৃদ্ধি পেল। তারপর তাঁর নির্দেশে আমাদের বাইরে নিয়ে আসা হল। আবূ সুফিয়ান
বলেন
আমরা বেরিয়ে আসার পরামি আমার সাথীদের বললা যে আবূ কাবশার সন্তানের ব্যাপারে তো বিসত্মর প্রভাব লাভ করেছে।
রোমীয় রাষ্ট্র নায়ক পর্যন্ত তাকে ভয় পায়। তখন থেকে আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল
যে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীন অতি সত্বর বিজয়
লাভ করবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করলেন। ইমাম যুহরী (রহঃ)
বলেন
তারপর হিরাক্লিয়াস রোমের নেতৃবৃন্দকে ডেকে একটি কক্ষে একত্রিত
করলেন এবং বললেন হে রোমকগণ! তোমরা
কি আজীবন সৎপথ ও সফলতার প্রত্যাশী এবং তোমাদের রাজত্ব অটুট থাকুক? এতে তারা তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বন্য-গর্দভের ন্যায় পলায়নরত
হল। কিন্তু দরজা গুলো সবই বন্ধ পেল। এরপর বাদশাহ নির্দেশ দিলেন যে তাদের সবাইকে আমার নিকট নয়ে এসো। তিনি তাদের সবাইকে ডাকলেন এবং
বললেন
তোমাদের ধর্মের উপর তোমাদের আস্থা কতটুকু আছে তা আমি পরীক্ষা
করলাম। আমি যা আশা করেছিলাম তা তোমাদের থেকে পেয়েছি। অনন্তর সবাই তাঁকে জিজ্ঞাসা করল
এবং তার উপর সন্তুষ্ট থাকল।
৪১৯৭ ইসমাঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) বলেন মদিনা মনোয়ারায় আবূ তালহা
(রাঃ)-ই অধিক সংখ্যক খেজুর বৃক্সের মালিক ছিলেন। তার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সম্পত্তি
ছিল ‘‘বীরাহা’’ নামক বাগান। আর তা ছিল মসজিদের সম্মুকে। রাসূলুল্লাহ সেখানে এসে সেখানকার
(কূপের) সুমিষ্ট পান পান করতেন। যখন আয়াতটি নাযিল হল তখন আবূ তালহা (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেন ‘‘তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যায় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য
লাভ করতে পারবে না। ’’ (৩ঃ ৯২) আমার সর্বাধিক প্রিয় সম্পত্তি বীরাহা। এটা আল্লাহ ওয়াসেত্মামি
দান করে দিলাম। আমি আল্লাহর নিকট পূণ্য ও সঞ্চয় চাই। আল্লাহ আপনাতে যেখানে নির্দেম
দেন আপনি সেখানে তা ব্যয় করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন বাহ! ওটি তো ক্ষয়িঞ্চু সম্পদ ওটি তো ক্ষয়িঞ্চু সম্পদ তুমি যা বলেছ আমি তা শুনেছি। তুমি তা তোমার নিকট আত্মীয়কে দিয়ে
দাও
আমি এ রায় দিচ্ছি। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা করব। তারপর আবূ তালহা (রাঃ) সেটা তাঁর
চাচাতো ভাই-বোন ও আত্মীয়দের মধ্যেবণ্টন করে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইবনু উবাদাহ
(রাঃ)-এর বর্ণনায় ‘‘ওটা তো লাভ জনক সম্পত্তি’’ বলে উল্লেখিত হয়েছে।
৪১৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)
বলেন
আমি মালিক (রহঃ)-এর নিকট ‘‘ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ পড়েছি। ’’
৪১৯৯ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী
(রাঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন এরপর আবূ তালহা (রাঃ) হাসসান ইবনু সাবিত এবং উবায় ইবনু কাআবের
মধ্যেবণ্টন করে দিলেন। আমি তার নিকটাত্মীয় ছিলাম। কিন্তু আমাকে তা থেকে কিছুই দেননি।
৪২০০ ইবরাহীম ইবনু মুনযির আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত ব্যভিচারে লিপ্ত
হয়েছে এমন দু’জন পুরুষ ও মহিলা নিয়ে ইহুদীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর দরবারে উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা কিভাবে শাস্তি দাও? তারা বলল আমরা তাদের চেহারা
কালিমালিপ্ত করি এবং তাদের প্রহার করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলল আমরা তাতে এতদ
সম্পর্কিত কোন কিছু পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাত আন এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তা পাঠ কর। এরপর তাওরাত পাঠের সময় তাদের পন্ডিত-পাঠক প্রস্তর
নিক্ষেপ বিধির আয়াতের উপর স্বীয় হস্ত রেখে তা থেকে কেবল পূর্ব ও পরের অংশ পড়তে লাগল।
রজমের আয়াত পড়ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তার হাতটি তুলে ফেলে বললেন এটা কি? যখন তারা পরিস্থিতি
বেগতিক দেখল তখন বলল এটি রজমের আয়াত।
অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। এবং
মসজিদের পার্শ্বে জানাযাগাহের নিকটে উভয়কে ‘রজম’ করা হল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন আমি সেই পুরুষটিকে দেখেছি যে নিজে মহিলার উপর উপুড় হয়ে তাকে
প্রস্তরাঘাত হতে বাচানোর চেষ্টা করছে।
৪২০১ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) আয়াত সম্পর্কে বলেন মানুষের জণ্যে মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে
শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে। এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে।
৪২০২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আয়াতটি আমাদেরকে
উপলক্ষ করেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন আমরা দু’দল বনী হারিছা আর বনী ছালিমা। যেহেতু এ আয়াতে‘‘আল্লাহ
উভয়ের সহায়ক’’ উল্লেখ আছে সেহেতু এটা অবতীর্ণ
না হোক তা আমরা পছন্দ করতাম না। সুফিয়ান (রাঃ)-এর এক বর্ণণায় আমাকে ভাল লাগেনি’ আছে।
৪২০৩ হিববান (রহঃ) সালিম (রাঃ)
তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন যে তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষ রাকাআতে রুকু থেকে মাথা
তুলে ‘সামিআল্লাহ লিমান হামিদা রাববানা ওলাকাল
হামদ’ বলার পর এটা বলতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক অমুক এবং অমুককে লানত২
দিন। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন। তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদের শাস্তি
দিবেন
এবিষয়ে তোমার করনীয় কিছুই নেই। কারণ তারা জালিম। ৩ (৩: ১২৮)
ইসহাক ইবনু রাশিদ (রহঃ) ইমাম যুহরী (রহঃ) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন।
৪২০৪ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো জন্য বদদোয়া অথবা দোয়া করার মনস্থ করতেন তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকুর পরেই কুনূতে নাযিলা পড়তেন।
কখনো কখনো সামি আল্লাহ লিমান হামিদা আল্লাহুম্মা রাববানা লাকাল হামদ বলার পর বলতেন হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদ সালমা ইবনু হিশাম এবং আইয়াশ ইবনু আবূ রাবিয়াকে মুক্ত করুন। হে
আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর শা স্তি কঠোর করুন। এ শ্বাসিত্মকে ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম
-এর যুগের দূর্ভক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষে রূপামত্মরিত করে দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ কথা গুলোকে উচ্চস্বরে বলতেন। কখনো কখনো তিনি কয়েকটি আরব গোত্রের নাম উল্লেখ
করে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) বলতেন হে আল্লাহ! অমুক এবং অমুককে লানত দিন। অবশেষ আল্লাহ তাআলা নাযিল
করলেনঃ (৩ : ১২৮) হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে
আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর।
৪২০৫ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) বারা
ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদাতিক
বাহিনীর উপর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে সেনাপতি নির্ধারণ করেন। এরপর তাদের কতক
পরাজিত হলে পালাতে লাগল এটাই হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তোমাদের পেছন দিক
থেকে ডাকছিলেন। মাত্র বারজন ছাড়া আর কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সাথে ছিলেন না।
৪২০৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আবূ তালহা (রাঃ) বলেন আমরা উহুদ যুদ্ধের
দিন আপন আপন সারিতে ছিলাম। তন্দ্রা আমাদের আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল। তিনি বলেছিলেন আমার তরবারী আমার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল আর আমি তা উঠাচ্ছিলাম আবার পড়ে যাচ্ছিল আবার আমি উঠাচ্ছিলাম।
৪২০৭ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত বাক্যটি ইবরাহীম
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন যখন তিনি অগ্নিতে
নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। আর মুহাম্মদ বলেছিলেন যখন লোকেরা বলল ‘‘তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করকিন্তু এটি তাদের ঈমান দৃঢ়তর করেছিল
এবং তারা বলেীছল ‘‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্ম বিধায়ক’’ (৩:
১৭৩)
৪২০৮ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন
তখন তাঁর শেষ বক্তব্য ছিল ‘‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’’ তিনি কত উত্তম কর্ম বিধায়ক।
৪২০৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যাকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দেন তারপর সে তার যাকাত পরিশোধ করে না- কিয়ামত দিবসে তার ধন-সম্পদকে
তার জন্য লোমবিহীন কালো-চিহৃ বিশিষ্ট সর্পে রূপামত্মরিত করা হবে এবং তার গলায় পরিয়ে
দেয়া হবে। মুখের দু’ধার দিয়ে সে তাকে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে ‘আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার সঞ্চয়। ’ এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন(৩ : ১৮০) অর্থ আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন
তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে।
বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত
ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান
ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।
৪২১০ আবূল ইয়ামান (রহঃ) উসামা ইবনু
যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধার পিঠে আরোহন
করেছিলেন
একটি পদকি চাঁদর তাঁর পরনে ছিল। উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে তাঁর
পেছনে বসিয়েছিলেন। তিনি বনী হারিস ইবনু খাযরায গোত্রে অসুস্থ সা’দ ইবনু উবায়দা (রাঃ)-কে
দেখতে যাচ্ছিলেন। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন যে যেতে যেতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি মজলিশে<র সামনে গিয়ে পৌছলেন যেখানে আবদুল্লাহ ইবনু উবায় বিন সালুলও ছিল-সে তখনও ইসলাম গ্রহণ
করেনি। সে মজলিসে মুসলিম মুশরিক প্রতিমা পূজারী এবং ইহূদী সকল প্রকারের লোক ছিল এবং তথায় আবদুল্লাহ
ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-ও ছিলেন। জন্তুর পদধূলি যখন মজলিস ছেয়ে ফেলল তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় আপন চাঁদরে নাক ঢেকে ফেলল। তারপর বলল আমাদের এখানে ধুলো উড়িয়ো না। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এদরকে সালাম করলেন। তারপর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর প্রতি
দাওয়াত দিলেন এবং তাদেরকে কুআন মজীদ পাঠ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উবায় বলল , এই লোকটি! তুমি যা বলছ তা যদি সত্যি হয় তাহলে এর চেয়ে উত্তম
কিছুই নেই। তবে আমাদের মজলিসে আমাদেরকে জ্বালাতন করবে না। তুমি তোমার তাবুতে যাও। যে
তোমার কাছে যাবে তুমি তাকে তোমার কথা বলবে। অনন্তর আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাদের মজলিসে
এগুলো আমাদের কাছে বলবেন কারণ আমরা তা
পছন্দ করি। এতে মুসলমান মুশরিক এবং ইহূদীরা
পরস্পর গালাগালি শুরু করল। এমনকি তারা মারামারিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে থামাচ্ছিলেন। অবশেষে তারা থামলো। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্তুর পিঠে আরোহণ করে রওয়অনা দিলেন এবং সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর
কাছে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন হে সা’দ! আবূ হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবায় কি বলেছে তুমি শুনেছ কি! সে এমন বলেছে। সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাকে ক্ষমা করে দিন।
তার দিকে ভ্রক্ষেপ করবেন না। যিনি আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছেন তাঁর শপথ করে বলছি আল্লাহ আপনার উপর যা নাযিল করেছেন তা সত্য। এতদঞ্চলের অধিবাসীগণ
চুক্তি সম্পাদন করেছিল যে তাকে শাহী টুপি
পরাবে এবং নেতৃত্বের শিরস্ত্রানে ভুষিত করবে। যখন আল্লাহ তাআলা সত্য প্রদানের মাধ্যমে
এ পরিকল্পনা অস্বীকার করলেন তখন সে ক্রদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং আপনার সাথে যে ব্যবহার
করেছে যা আপনি দেখেছেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে
দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ (রাঃ) মুশরিক এবং কিতাবীদেরতে
ক্ষমা করে দিতেন এবং তাদের জ্বালাতনে ধৈর্যধারণ করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘‘তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং মুশরিকদের
নিকট থেকে তোমরা অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে (৩ঃ ১৮৬)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন ‘‘তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও কিতাবীদরে মধ্যে অনেকই তোমাদের
ঈমান আনার পর ঈর্ষামূলক মনোভাববশত আবার তোমাদেরকে সত্য প্রত্যঅখানকারীরূপে ফিরে পাওয়ার
আকাঙ্খা করে। তোমরা ক্সমা কর এবং উপেক্ষা কর যতক্ষণ না আল্লাহ কোন নির্দেশ দেন। আল্লাহর সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
’’ (২: ১০৯) আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মোতাবেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষমার
দিকেই প্রত্যাবর্তন করতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বদরের যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন এবং তাঁর মাধ্যমে
আল্লাহ তাআলা কাফের কুরাইশ নেতাদেরকে হত্যা করলেন তখন ইবনু উবায় ইবনু সালুল তার সঙ্গী
মুশরিক ও প্রতিমা পূজারীরা বলল এটাতো এমন একটি
ব্যাপার যা বিজয় লাভ করেছে। এরপর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
ইসলামের বায়আত করে জাহেরীভাবে ইসলাম গ্রহণ করল।
৪২১১ সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে
বের হতেন তখন কিছু সংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারার আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তাঁর কাছে শপথ সহকারে অক্ষমতা প্রকাশ করত এবং যা করেনি
তার জণ্যে প্রশংসিত হওয়াকে ভালবাসত।
৪২১২ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আলকামা
ইবনু ওয়াক্কাস অবহিত করেছেন যে মারওয়ান (রাঃ)
তাঁর দারোয়ানকে বললেন হে নাফি! তুমি
ইবনু আববাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বল যদি প্রাপ্ত বস্ত্ততে আনন্দিত এবং করেনি এমন কাজ সম্পর্কে প্রশংসিত
হতে আশাবাদী প্রত্যেক ব্যাক্তই শ্বাসিত্ম প্রাপ্ত হয় তাহলে তাবৎ মানুষই শ্বাসিত্ম প্রাপ্ত
হবে। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন এটানিয়ে তোমাদের
মাথা ঘামানো হচ্ছে একটা অবামত্মর ব্যাপার। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইহূদীদেরকে ডেকে একটা বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাতে তারা সত্য গোপন করে বিপরীত তথ্য দিয়েছিল। এতদসত্বেও তারা
প্রদত্ত উত্তরের বিনিময়ে প্রশংসা লাভের আশা করেছির এবং তাদের সত্য গোপনের জন্য উল্লাসিত
হয়েছিল। তারপর ইবনু আববাস (রাঃ) পাঠ করলেন- ‘‘স্মরণ কর যদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন তোমরা এটা মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন
করবে না। এরপরও তারা তা অগ্রহ্য করে এবং তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে। অতএব তারা যা ক্রয়
করে তা কত নিকৃষ্ট! যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনমত্ম প্রকাশ করে এবং যা করেনি এমন
কাজের জণ্যে প্রশংসিত হতে ভালবাসে তারা শ্বাসিত্ম থেকে মুক্তি পাবে এরূপ তুমি কখনো মনে করো না তাদের জন্য মর্মন্তুদ শ্বাসিত্ম রয়েছে (৩ঃ ১৮৭-১৮৮)। বর্ণনাকারী
আবদুর রাযযাক (রহঃ) ইবনু জুরায়য (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪২১৩ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) হুমাইদ
ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) অবহিত করেছেনযে মারওয়ান এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪২১৪ সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন আমি আমার খালাম্মা মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করেছিলাম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ তাঁর পরিবারবর্গের সাখে আলাপ-আলোচনা
করে শুয়ে পড়লেন। তারপর রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশে তিনি উঠলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে পাঠ
করলেন-। এরূপ দাঁড়ালেন এবং ওযু করে মিসওয়াক করে এগার রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করলেন। এরপর হযরত বিলাল (রাঃ) আযান দিলে তিনি দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করলেন। তারপর বের হয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪২১৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আমার খালাম্মা মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করি। আমি
মনে স্থির করলাম যে অবশ্যই আমি রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা দেখব। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য একটা বিছানা বিছিয়ে দেয়া হল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সেটার লম্বালম্বি দিকে নিদ্রামগ্ন হলেন। এরপর জাগ্রত হয়ে মুখমন্ডল থেকে
ঘুমের রেশ মুছতে লাগলেন এবং সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করে তা সমাপ্ত করলেন।
তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের পানি পাত্রের নিকট এসে তা নিলেন এবং ওযু করে সালাত
(নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন আমি দাঁড়িয়ে তিনি
যা যা করছিলেন তা তা করলাম। তারপর আমি এসে তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায়
হাত রাখলেন তারপর আমার কান ধরে মলতে লাগলেন।
তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’
রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর
বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪২১৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে
তিনি মায়মুনা (রাঃ)-এর কাছে রাত্রি যাপন করেন তিনি হলেন তার খালাম্মা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন আমি বিছানায় আড়াআড়িভাবে শুয়েছিলাম আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার পরিবারবর্গ লম্বালম্বি দিকে শুয়েছিলেন। অর্ধরাত্রি কিংবা
এর সামান্য পূর্ব অথবা সামান্য পর পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হলেন। এরপর দু’হাত দিয়ে মুখ থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন।
তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের কাছে গেলেন এবং তা থেকে পরিপাটিভাবে উজু করলেন। এরপর
সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। তিনি যা যা করেছিলেন আমিও ঠিক তা করলাম। তারপর গিয়ে
তার পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ডান হাত আমার
মাথায় রেখে আমার ডান কান ধরে মলতে লাগলেন। এরপর তিনি দু’রাকাত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত তারপর দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর
বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি একটু শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াজ্জ্বীন
আসল
তিনি হালকাভাবে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর
বের হলেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪২১৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) কুরায়ব
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনু আববাস (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন যে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মূনা
(রাঃ) -এর নিকট রাত্রি যাপন করেছিলেন। মায়মূনা (রাঃ) হলেন তাঁর খালাম্মা। তিনি বলেন আমি বিছানার প্রস্থের দিকে শুয়েছিলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ দৈর্ঘ্যের দিকে শুয়েছিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রামগ্ন হয়েছিলেন। অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামান্যাগে কিংবা সামান্য
পরক্ষনে তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। এবং মুখ থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে মুছতে বসলেন। তারপর
সূরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। তারপর
ঝুলন্ত একটি পরাতন মশকের দিকে গিয়ে ভালভাবে ওযু করলেন। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন।
ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন আমিও দাঁড়ালাম
এবং তিনি যা করেছেন আমিও তা করলাম। তারপর আমি গিয়ে তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথায় রেখে আমার ডান কান মলতে শুরু করলেন। তারপর
তিনি দু’ রাকাআত ছয়বারে বারো রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তারপর তিনি
বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। শেষে মুয়াযযিন ফজরের আযান দিলে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে
সংক্ষিপ্ত কিরাআতে দু’ রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর হুজরাথেকে বের
হলেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৪২১৮ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তির তত্ত্বাবধানে এক ইয়াতীম বালিকা ছিল। এরপর সে তাকে
বিয়ে করল
সে বালিকার একটি বাগান ছিল। তার অমত্মরে ঐ বালিকার প্রতি কোন
আকর্ষণ না থাকা সত্ত্বেও বাগানের কারণে সে ঐ বালিকাটিকে সে বিবাহ করে রেখে দিতে চায়।
এ সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ হয়। আর যদি আশংকা কর যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না। আমার ধারণা যে উরওয়া বলেন ইয়াতীম বালিকাটি সে বাগান ও মালের মধ্যে শরীক ছিল।
৪২১৯ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস তকরলেন মহান আল্লাহ বাণী সম্পর্কে।
তিনি উত্তরে বললেন হে ভাগ্নে! সে
হচ্ছে পিতৃহীন বালিকা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে
থাকে এবং তার সম্পত্তিতে অংশীদার হয় এবং তার রূপ ও সম্পদ তাকে (অভিভাবককে) আকৃষ্ট করে।
এরপর সে অভিভাবক উপযুক্ত মোহরানা না দিয়ে তাকে বিবাহ করতে চায়। তদুপরি অন্য ব্যাক্তি
যে পরিমাণ মোহর দেয় তা না দিয়ে এবং তার প্রতি ন্যায় বিচার না করে তাকে বিয়ে করতে চায়।
এরপর তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মোহর এবং ন্যায় ও সমুচিত মোহর প্রদান
ব্যতীত তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং তদ্ব্যতীত মহিলাপছন্দ হয় তাদেরকে বিয়ে
করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। ‘উরওয়া (রহঃ) বলেন যে আয়িশা (রাঃ) বলেছন এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে মহিলাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন এবং লোকেরা আপনার কাছে নারীদের বিষয়ৈ জানতে চায় । আয়িশা (রাঃ)
বলেন
আল্লাহর বাণী অন্য এক আয়াতে-তোমরা তাদেরকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রুকাশ
কর। ইয়াতীম বালিকার ধন-সম্পদ কাম হলে এবং সুন্দরী না হলে তাকে বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ
করো না। আয়েশো (রাঃ) বলেন তাই ইয়াতীম বালিকাদের
মাল ও সৌন্দর্যের আকর্ষনে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ন্যায় বিচার করলে ভিন্ন
কথা। কেননা তারা সম্পদের অধিকারী না হলে তাদেরকেও বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না।
৪২২০ ইসহাক (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে আল্লাহর বাণী বিত্তশালী গ্রহণ
করবে না। অবতীর্ণ হয়েছে ইয়াতীমের সম্পদ উপলক্ষ্যে যদি তত্ত্বাবধায়ক বিত্তহীন হয় তাহলে রক্ষনাবেক্ষণের বিনিময়ে
সংগত পরিমাণে তা থেকে ভোগ করবে।
৪২২১ আহমদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আয়াতটি সুস্পষ্ট রহিত বা মানসুখ নয়। সাঈদ (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে ইকরামা
(রাঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণীঅর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে
নির্দেশ দিচ্ছেন। (৪: ১১)
৪২২২ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) বনী সালমা গোত্রে পদব্রোজে আমার রোগ সম্পর্কে
খোজ খবর নিতে গিয়েছিলেন। অনন্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অচেতন অবস্থা
দেখতে পেলেন। কাজেই তিনি পানি আনালেন এবং ওযু করে ওযুর পানি আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন।
তখন আমি হুশ ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পত্তিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনি
আমাকে নির্দেশ দেবেন? তখন এ আয়াত নাযিল
হলঃ
৪২২৩ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মৃত ব্যাক্তির সম্পদ ছিল সন্তানের জন্য আর ওসীয়ত ছিল পিতামাতার জন্য। এরপর তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর
পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুন নির্ধারণ করলেন। পিতামাতা
প্রত্যেকের জন্য ৬ ভাগের ১ অংশ ও ৩ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন স্ত্রীদের জন্য ৮ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন এবং
স্বামীর জন্য ২ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন।
৪২২৪ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে অবস্থা এরূপ ছিল যে কোন ব্যাক্তি মারা গেলে তার অভিভাবকগণ তার স্ত্রীর উপর দাবিদার
হত। তারা ইচ্ছা করলে ঐ মহিলাকে বিয়ে করত। ইচ্ছে করলে অন্যের কাছে বিয়ে দিত। আর নতুবা
তাকে আমরণ আটকে রাখত। কারো কাছে বিয়ে দিত না। মহিলার পরিবারের তুলনায় এরা অধিক দাবিদার
ছিল। এরপর এ আয়াত নাযিল হল।
৪২২৫ সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হচ্ছে বংশীয় উত্তরাধিকারী হচ্ছে মুহাজিরগণ যখন মদিনায় এসেছিলেন তখন তারা আনসারদের উত্তরাধিকারী
হতেন। আত্মীয়তার কারণে নয় বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদের মধ্যে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের স্থাপনের কারণে। যখন (৪ : ৩৩ ” পিতা-মাতা এবং নিকটাত্নীয়গণ যা ত্যাগ
করে যান সেসবের জন্যই আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা
অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা নিঃসন্দেহে সব কিছুই প্রত্যক্ষ
করেন। ” নাযিল হল তখন এ হুকুম রহিত
হয়ে গেল। তারপর বললেন যাদের সাথে তোমরা
চুক্তি করে থাক সাহায্য সহযোগীতা ও পরস্পরের উপকার করার। পূর্বতন উত্তরাধিকার বিলুপ্ত
হল এবং এদের জন্য ওসীয়ত বৈধ। হাদীসটি আবূ উসামা ইদ্রিসের কাছে এবং ইদ্রিস তালহার কাছে
থেকে শুনেছেন।
৪২২৬ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আযীয
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একদল লোক বলল হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ অবশ্যই। গ্রীষ্মকালের
মেঘবিহীন ভর দুপুরের প্রখর কিরণ বিশিষ্ট সূর্য দেখতে তোমরা কি পরস্পর ভিড় করে থাক? তারা বলল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন পূর্ণিমার রাতে
মেঘবিহীন আলো বিশিষ্ট চন্দ্র দেখতে গিয়ে তোমরা কি ভিড় কর? আবার তারা বলল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এদের কোনটিকে দেখতে যেমন ভিড় করো না; কিয়ামতের দিনও আল্লাহকে দেখতেও তোমরা পরস্পর ভিড় করবে না। কিয়ামত
যখন আসবে তখন এক ঘোষক ঘোসণা দেবে। তখন প্রত্যেকেই আপন আপন উপাস্যের অনুসরণ করবে। আল্লাহ
ব্যতীত প্রতিমা ও পাথর ইত্যাদির যারা পূজা করেছে তারা সবাই দোযখে গিয়ে পড়বে একজনও অবশিষ্ট থাকবে না। পুণ্যবান হোক চাই পাপী এরা এবং আল্লাহ অবশিষ্ট বিশ্বাসীরা ব্যতীত যখন আর কেউ থাকবে
না
তখন ইহূদীদেরকে ডেকে বলা হবে তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর
পুত্র উযাইরের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে যে তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ করেননি পুত্রও গ্রহণ
করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে হে প্রভু! আমরা তৃষ্ণার্ত আমাদেরকে পানি পান করান। এরপর তাদেরকে ইঙ্গিত করা হবে যে তোমরা পানির ধারে যাওনা কেন? এরপর তাদেরকে দোযখের দিকে একত্র করা হবে তা যেন মরুভূমির মরিচীকা এক এক অংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে। অনন্তর তারা সবাই দোযখে
পতিত হবে। তারপর খ্রিষ্টানদেরকে ডাকা হবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর
পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ
করেননি এবং পুত্রও নয়। তাদেরকে বলা হবে তোমরা কি চাও? তারা প্রতম পক্ষের মত বলবে এবং তাদের মত দোযখে নিপতিত হবে। অবশেষে পুণ্যবান হোক কিংবা পাপী
হোক আল্লাহর উপাসকগণ ব্যতীত আর কেউ যখন বাকি থাকবে না তখন তাদের কাছে পরিচিত রূপের নিকটতম একটি রূপ নিয়ে রাববুল আলামীন
তাদের কাছে আবির্ভূত হবেন। এরপর বলা হবে প্রত্যেক দল নিজ নিজ উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে। তোমরা কিসের
অপেক্ষা করছ? তারা বলবে দুনিয়াতে এ সকল লোকের প্রতিামাদের চরম প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও
আমরা সেখানে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছি এবং তাদের সাথে মেলামেশা করিনি। এখন আমরা
আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি আমরা তাঁর ইবাদত
করতাম। এরপর তিনি বলবেন আমই তোমাদের প্রতিপালক।
তারা বলবে আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক
করব না। এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বলবে।
৪২২৭ সা’দকাহ (রহঃ) আমর ইবনু মুররা
থৈকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন আমার কাছে কুরআন
পাঠ কর। আমি বললাম আমি আপনার কাছে
পাঠ করব?
অথছ তা আপনার কাছেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন অন্যের মুখে শ্রবণ করাকে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর নিকপ
‘সূরা নিসা’ পড়লাম যখন আমি পর্যন্ত
পাঠ করলাম তিনি বললেন থাম থাম তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু নির্গত হচ্ছিল। আল্লাহর
বাণীঃ আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে
’’(৪: ৪৩)। মাটির উপরি ভাগ। জাবির (রাঃ) বলেন যে সকল তাগুদের কাছে তারা বিচারের জন্য
যেত তাদের একজন ছিল বুহাইনা গোত্রের একজন আসলাম গোত্রের এবং এভাবে প্রত্যেক গোত্রে এক-একজন করে তাগূদ
ছিল। তারা হচ্ছে গণক। তাদের কাছে শয়তান আসত। উমর (রাঃ) বলেন যাদু। শয়তান। ইকরামা (রাঃ) বলেন হাবশী ভাষায় শয়তানকে বলা হয়। আর গণককে বলা হয়।
৪২২৮ মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমার নিকট থেকে
আসমা (রাঃ)-এর একটি হার হারিয়ে গিয়েছিল। তা খোজতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন। তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল তাদের কাছে পানি ছিল না। আবার ওযুর পানিও পেলেন না। এরপর বিনা
ওযুতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেললেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান নাযিল
করলেন।
৪২২৯ সাদাকাহ ইবনু ফাযল (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে (৪ : ৫৯) ”হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের।
তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা
আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে
উত্তম। ” আয়াতটি নাযিল হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা ইবনু কায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন
তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলের প্রধান করে প্রেরণ করেছিলেন।
৪২৩০ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)
উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন হারব বা মদিনার কঙ্করময় ভূমিতে একটি পানির নালা নিয়ে একজন আনসার
হযরত যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে ঝগড়া করছিলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে যুবায়র! প্রথমত তুমি তোমার জমিতে পানি দাও তারপর তুমি প্রতিবেশীর জমিতে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে আপনার ফুফাত ভাই তাই এই ফয়সালা দিলেন। এতে অসন্তুষ্টিবশত রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন হে যুবায়র! তুমি পানি চালাবে তারপর আইল পর্যন্ত ফিরে না আসা
পর্যন্ত তা আটকে রাখবে তারপর প্রতিবেশীর জমির দিকে ছাড়বে। আনসারী যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রাগিয়ে তুললেন তখন তিনি তার হক পুরোপুরি যুবায়র (রাঃ)-কে প্রদানের
জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে প্রথমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন
একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে উদারতা ছিল।
৪২৩১ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
হাওশাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে প্রত্যেক নাবী অন্তিম সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তাকে দুনিয়া
ও আখিরাতের যে কোন একটি নির্বাচন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়। যে অসুস্থতায় তাকে উঠিয়ে নেওয়া
হয়েছে সে অসুস্থতায় তাঁর ভিষণ শাসকষ্ট আরম্ভ হয়েছিল। সে সময় আমি তাঁকে [তাঁরা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ সত্যনিষ্ঠ শহীদ ও সৎকর্ম পরায়ন যাদের প্রতি আর। আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন
তাঁদের সঙ্গী হবেন (৪: ৬৯)] বলতে শুনেছি। এরপর আমি বুঝে নিয়েছি
যে তাঁকে ইখতিয়ার (শাসকষ্ট) দেওয়া হয়েছে।
৪২৩২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছিলেন যে আমি এবং আমার আম্মা (আয়াতে উল্লিখিত) অসহায়দের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
৪২৩৩ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ইবনু আববাস (রাঃ) ‘‘তবে যেসব অসহায় পুরুষ নারী ও শিশু (৪: ৯৮) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন আল্লাহ যাদের অক্ষমতা অনুমোদন করেছেন আমি এবং আমার আম্মা তাদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত সংকুচিত হয়েছে। সাক্ষ্য দিতে তাদের
জিহবা বক্র হয়। হিজরতের স্থান আমা গোত্রকে ছেড়ে
দিয়েছি
এবং তাদের উপর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
৪২৩৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত উহুদের যুদ্ধ থেকে একদল লোক দল ত্যাগ করে ফিরে এসেছিল এরপর তাদের ব্যাপারে লোকেরা দু’দল হয়ে গেল একদল বলেছে তাদেরকে হত্যা করে ফেল; অপর দল বলছিল তাদেরকে হত্যা করো না তখন নাযিল হলঃ অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এই মদিনা হচ্ছে পবিত্র স্থান আগুন যেভাবে রোপ্যের কালিমা বিদূরিত করে এটাও খবিস ও অসৎদেরকে
বিদূরিত করে।
৪২৩৫ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) সাঈদ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে এই আয়াত সম্পর্কে কূফাবাসীগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করল। (কেউ
বলেন তা মনসূখ কেউ বলেন মনসূখ নয় এরপর এর সমাধানের জন্য) আমি হযরত ইবনু আববাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম
এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম উত্তরে তিনি বললেন আয়াতটি অবতীর্ন হয়েছে এবং এটি শেষের দিকে অবতীর্ন আয়াত; এটাকে কোন কিছু মনসূখ করেনি।
৪২৩৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আয়াতের ঘটনা হচ্ছে এই যে এক ব্যাক্তির কিছু সংখ্যক ছাগল ছিল মুসলিমদের সাথে তাদের সাক্ষাত ঘটায় সে তাদেরকে বলল ‘‘আসসালামু
আলাইকুম’’ মুসলিমরা তাকে হত্যা করল এবং
তার ছাগলগুলো হস্তগত করে ফেলল এই প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা এই আয়াত নায়িল করলেন (৪ : ৯৪) ”হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে
ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি
অনুগ্রহ করেছেন। অতএব এখন অনুসন্ধান
করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্খায়-আর
সে সম্পদ হচ্ছে এ ছাগল পেল। ” আতা (রহঃ) বলেন ইবনু (রাঃ)পড়েছেন।
৪২৩৭ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আয়াতটি লেখার নির্দেশ
দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় উম্মে মাকতুম (রাঃ) তাঁর কাছে আগমন
করলেন এবং বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শপথ যদি আমি জিহাতে সক্ষম হতাম তা হলে অবশ্যই জিহাদ করতাম।
তিনি অন্ধ ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল) -এর উপর ওহী অবতীর্ন করলেন এমতাবস্থায় যে তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল আর তা আমার কাছে এতই
ভারী অনুভুত হচ্ছিল যে আমি আমার উরু
থেতলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। তারপর তাঁর থেকে এই অবস্থা কেটে গেল আর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪: ৯৫)
৪২৩৮ হাফস ইবনু ‘উমর (রহঃ)বারা‘
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেলেন যখন আয়াতটি নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ (রাঃ)-কে ডাকলেন।
তিনি তা লিখে নিলেন। ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) এসে তাঁর দৃষ্টিহীনতার ‘ওযর পেশ করলেন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪: ৯৫)
৪২৩৯ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আয়াতটি যখন নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন অমুককে ডেকে
আন। এরপর দোয়াত কাঠ অথবা হাড় খন্ড নিয়ে তিনি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন। তিনি বললেন লিখে নাওঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পেছনে ছিলেন
ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তিনি বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি দৃষ্টিহীন। এরপর
তখনই অবতীর্ন হলঃ (৪ : ৯৫) গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান
যারা জানো ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে -সমান নয়। যারা জানো ও মাল দ্বারা জেহাদ করে আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায়
এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদ্বীনকে উপবিষ্টদের
উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।
৪২৪০ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) অবহিত করেছেন যে বদরের যুদ্ধে
অংশগ্রহণকারী আর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত মু’মিনগণ সমান নয়।
৪২৪১ আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ মুকরী
(রহঃ) আবূল আসওয়াদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে একদল সৈন্য পাঠানোর জন্য মদিনাবাসীদের উপর নির্দেশ জারি করা
হল
এরপর আমাকেও তাতে অমত্মর্ভূক্ত করা হল। আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর
মুক্ত গোলাম ইকরামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে
এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন তারপর বললেন কিছুসংখ্যক মুসলিম মুশরিকদের সাথে থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের দল ভারী করেছিল তীর এসে তাদের কারো উপর পতিত হতো এবং তাকে মেরে ফেলত অথবা তাদের
কেউ মার খেত এবং নিহত তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ন করলেনঃ আবূল আসওয়াদ থেকে লাইস এটা
বর্ণনা করেছেন।
৪২৪২ আবূ নু‘মান (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত সম্পর্কে তিনি
বলেছেন যে আল্লাহর তা‘আলা যাদের অক্ষমতা
কবূল করেছেন আমার মাতা তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
৪২৪৩ আবূ নু‘আইম (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছিলেন তিনি সামি আল্লাহলিমান হামিদা বললেন তারপর সিজদা করার পূর্বে বললেন হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবিয়াকে মুক্ত করুন হে আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে মুক্ত করুন হে আল্লাহ ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে
মুক্ত করুন হে আল্লাহ! অসহায় মু’মিনদেরকে
মুক্ত করুন হে আল্লাহ মুযার গোত্রের উপর কঠিন শাস্তি নাযিল করুন হে আল্লাহ! এটাকে উসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগের দূর্ভিক্ষে
রূপান্তরিত করুন।
৪২৪৪ আবূল হাসান ইবনু মুহাম্মদ
মুকাতিল (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আবদুর রাহমান ইবনু ‘আইফ (রাঃ) আহত ছিলেন।
৪২৪৫ ‘ইবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আয়াত সম্পর্কে
তিনি বলেছেন যে সে হচ্ছে ঐ ব্যাক্তি যার নিকট
ইয়াতীম বালিকা থাকে সে তার অভিভাবক এবং তার মুরুবিব এরপর সেই বালিকা সেই অভিভাবকের
অংশিদার হয়ে যায় এমনকি খেজুর বৃক্ষেও।
সে ব্যাক্তি তাকে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকে এবং অন্য কারো নিকট বিয়ে দিতেও অপছন্দ করে
এ আশংকায় যে তার সেই সম্পত্তিতে বালিকা
অংশীদার সেই সম্পত্তিতে তৃতীয় ব্যাক্তি অংশীদার হয়ে যাবে। এভাবে সেই ব্যাক্তি ঐ বালিকাকে
আবদ্ধ করে রাখে। তাই এই আয়াত অবতীর্ন হয়েছে।
৪২৪৬ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আয়াত সম্পর্কে
তিনি বলেছেন যে কোন ব্যাক্তির যাওযিয়তে
কোন মহিলা থাকে কিন্তু স্বামী তার প্রতি আকৃষ্ট নয় বরং তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায় তখন স্ত্রী বলোমার এই এই পাওনামি তোমাকে অব্যাহতি দিচ্ছি এতদুপলক্ষে এ আয়াত নাযিল হল।
৪২৪৭ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আসওয়াদ
(রহঃ) বলেছেন আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ
(রাঃ)-এর মজলিশে ছিলাম সেখানে হুযায়ফা
আসলেন এবং আমাদের নসম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে সালাম দিলেন। এরপর বললেন তোমাদের চেয়ে উত্তম গোত্রের উপরও মুনাফিকী এসেছিল পরীক্ষাসরূপ।
আসওয়াদ বললেন সুবহানাল্লাহ! অথচ আল্লাহ
তা‘আলা বলেন ‘‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম
স্তরে থাকবে’’ হুযায়ফা (রাঃ)-এর সত্য প্রকাশে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে উঠলেন।
হুযায়ফা (রাঃ) মসজিদের এক কোনে গিয়ে বসলেন আবদুল্লাহ (রাঃ) উঠে গেল তাঁর শাগরিদরাও চলে গেলেন। এরপর হুযায়ফা
(রাঃ) আমার দিকে একটি পাথর টুকরো নিক্ষেপ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তার নিকট গেলে তিনি
বললেন
তাঁর নিছক হাশিতে আমি আশ্চর্য হলাম অথচ আমি যা বলেছি তা তিনি
বুঝেছেন। এমন গোত্র যারা তোমাদের চেয়ে উত্তম তাদের উপর মুনাফিকী অবতরণ করা হয়েছিল।
তারপর তারা তওবা করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের তওবা কবূল করেছেন।
৪২৪৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ‘‘আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম’’ এটা
বলা কারো উচিত নয়।
৪২৪৯ মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে যে ব্যাক্তি বলে
‘‘আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম’’ সে মিথ্যা বলে।
৪২৫০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি ‘বারা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে সর্বশেষ অবতীর্ন সূরা হচ্ছে ‘‘বারাআ’ত’’ এবং সর্বশেষ অবতীর্ন
আয়াত হচ্ছে-
৪২৫১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
তারিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইহূদীগণ ‘উমর ফারুক (রাঃ)-কে বলল যে আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের মধ্যে অবতীর্ন
হত
তবে আমরা সেটাকে ‘‘ঈদ’’ করে রাখতাম। উমর (রাঃ) বললেন এটা কখন অবতীর্ন হয়েছে কোথায় অবতীর্ন হয়েছে এবং নাযিলের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোথায় ছিলেন আল্লাহর শপথ আমরা
সবাই ‘আরাফাতে ছিলা সেই আয়াতটি হল-
৪২৫২ ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা বলেছেন যে আমরা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এক
সফরে বের হলাম বায়দা কিংবা বায়তুল জায়শ নামক
স্থানে পৌছার পর আমর গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোজার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তথায় অবস্থান করলেন এবংঅন্যান্যলোকও তাঁর সাথে অবস্থান করল। সেখানেও কোন
পানি ছিল না এবং তাদের সাথেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে আসল এবং
বলল
আয়িশা (রাঃ) যা করেছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকিয়ে
রেকেছেন
অথচ তাদের কাছেও পানি নেই আবার সেখানেও পানি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঊরুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) এলেন
এবং বললেন তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকে রেখেচ অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সাথেও পানি নেই।
আয়িশা (রাঃ) বললেন যে আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে দোষারূপ করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরেঠুসি
দিতে লাগলেন আমার কোলে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্থানই আমাকে পালিয়েযেতে ভাধা দিয়েছে। পানিবিহীন অবস্থায় রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুম থেকে উঠলেন। এরপর বলে আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমোর
আয়াত নাযিল করলেন তখন উসায়দ ইবনু
হুযায়র বলেছেন হে আবূ বকর-এর বংশধর! এটা
আপনাদের প্রথম মাত্র বরকত নয়। আয়িশা (রাঃ) বললেন যে উটের উপর আমি ছিলাম তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে।
৪২৫৩ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ)
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেছেন মদিনায় প্রবেশের
পথে বায়দা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। হযরত আবূ বকর
(রাঃ) এসে আমাকে কঠোরভাবে থাপ্পর লাগালেন এবং বললেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে
আটকে রেখেছ। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় আছেন এতোমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন ফজর সালাত (নামায/নামাজ)-এর
সময় হল এবং পানি খোজ করে পাওয়া গেল না তখন নাযিল হলঃ হে মু’মিনগণ যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য প্রস্ত্তত হবে তখন তোমরা
তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কণুই পর্যন্ত ধৌত করবে। (৫: ৬) এরূপ উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন হে আবূ বকরের বংশধর! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্য
বরকত নাযিল করেছেন। তোমাদের আপাদ মস্তক তাদের জন্য বরকতই বরকত।
৪২৫৪ আবূ নু‘আঈম (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ বলেন যে বদর যুদ্ধের দিন
মিকদাদ (রাঃ) বলেীছলেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইসরাঈলরিা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে যে রকম বলেছিল ‘‘যাও তুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ কর আমরা এখানে বথোকব’’- আমরা আপনাকে সে রকম বলব না বরং আপনি অগ্রসর
হোন
আমরা সবাই আপনার সাথেই আছি তখন যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯সা) থেকে সব
দুশ্চিন্তা দূ হয়ে গেল। এই হাদীসটি ওয়াকা-সুফিয়ান থেকে তিনি মুখারিক থেকে এবং তিনি (মুখারিক) তারিক থেকে বর্ণণা করেছেন
যে
মিকদাদ এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা-কে বলেীছলেন।
৪২৫৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন।
তাঁরা কিসামাত দন্ড সম্পর্কিত হাদীসটি আলোচনা করলেন এবং এর অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করলেন তারা মৃত্যুদন্ডের পক্ষে বললেন এবং এও বললেন যে খুলাফায়ে রাশেদ্বীন এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছেন। এরপর
তিনি আবূ কিলাবার প্রতি তাকালেন আবূ কিলাবা তাঁর
পেছনে ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ নামে কিংবা আবূ কিলাবা নামে ডেকে বললেন এই ব্যাপারে তোমার মতামত কি? আমি বললাম বিয়ের পর ব্যভিচার কিসাসবিহীন খুন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষনার কোন একটি ব্যতীত অন্য কোন কারণেকাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ইসলামে বৈধ বলে আমার জানানেই।
আনবাসা বললেন আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এভাবে
হাদীস বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ হাদীসে আরনিন।)আমি (আবূ কিলাবা) বললাম আমাকেও আনাস (রাঃ)এই হাদীস বর্ণণা করেছেন। তিনি বলেছেন একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এসে
তাঁর সাথে আলাপ করল তারা বলল (প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে) আমরা এদেশের সাথে মিলতে পারছি না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এগুলো আমার উট ঘাস খাওয়ানোর জন্য বের হচ্ছে তোমরা এগুলোর সাথে যাও এবং এদের দুধ ও পে<াব পান কর। তারা ওগোলোর সাথে বেরিয়ে গেল এবং দুধ ও প্রসাব পান
করে সুস্থ হয়ে উঠল এরপর রাখালের
উপর আক্রমন করে তাকে হত্যা করে পশুগুলো লুট করে নিয়ে গেল। মৃত্যুদন্ড ভোগ করার অপরাথসমূহ
তাদের থেকে কতটুকু দূরে ছিল? তারা নর হত্যা করেছেআল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ভয় দেখিয়েছে। আনবাসা আশ্চর্য হয়ে বলল সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম আমার এ হাদীস সম্পর্কে তুমি কি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেবে? আনবাসা বলল আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ কিলাবা বললেন তখন ‘আনবাসা বলল হে দেশবাসী (অর্থাৎ সিরিয়াবাসী) এ রকম ব্যাক্তিবর্গ যতদিন তোমাদের
মধ্যে থাকবে ততদিন তোমরা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।
৪২৫৬ মুহাম্মদ ইবনু সাল্লাম (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন রুবাই যিনি আনাস (রাঃ)-এর ফুফু এক আনসার মহিলার সামনের একটি বড় দাত ভেঙ্গে ফেলেছিল। এরপর আহত
মহিলার গোত্র এর কিসাস দাবি করে। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
এলো
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন আনাস ইবনু মালিক এর চাচা আনাস ইবনু নযর বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর শপথ রুবাই-এর
দাত ভাঙ্গা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আনাস! আল্লাহর কিতাব তো ‘‘বদলার’’ বিধান দেয়। পরবর্তীতে বিরোধী
পক্ষ রাযী হয়ে মুক্তিপণ বা দিয়ত গ্রহণ করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছে যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ
তা‘আলা তাদের শপথ সত্যে পরিণত করেন।
৪২৫৭ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে যদি কেউ তোমাকে বলে যে তাঁর অবতীর্ণ বিষয়ের যৎসামান্য কিছুও হযরত মুহাম্মদ গোপন করেছেন
তা হলে নিশ্চিত যে সে মিথ্যা বলেছে।
আল্লাহ বলেছেন হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি প্রচার
কর। ’
৪২৫৮ আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে আয়াতটি নাযিল হয়েছে মানুষের
উদ্দেশ্যবিহীন উক্তি আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর শপথ
ইত্যাদি উপলক্ষে।
৪২৫৯ আহমদ ইবনু আবূ রাযা’ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তাঁর পিতা কোন
শপথই ভঙ্গ করতেন না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা শপথ ভঙ্গে কাফফারার বিধান নাযিল করলেন।
আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন শপথকৃত কার্যের
বিপরীতটি যদি আমি উত্তম ধারণা কতিবে আমি আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগটি গ্রহণ করি এবং উত্তম
কাজটি সম্পাদন করি।
৪২৬০ আমর ইবনু আউন (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধে
বের হতাম
তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না তখন আমরা বলতাম আমরা খিাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে
বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মু‘আর অনুমতি দিলেন এবং পাঠ করলেনঃ
৪২৬১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন মদ
নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান যখন নাযিল হল তখন মদিনাতে পাঁচ প্রকারে মদের প্রচলন ছিল আঙ্গুরের পানিগুলো এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
৪২৬২ ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে তোমরা যেটাকে ফাযীক অর্থাৎ কাচা খুরমা ভিজানোো পানি নাম রেখেছ
সেই ফাযিখ ব্যতীত আমাদের অন্য কোন মদ ছিল না। একদিন আমি দাঁড়ি দাঁড়িয়ে আবূ তালহা অমুক এবং অমুককে তা পান করাচ্ছিলাম। তখনই এক ব্যাক্তি এসে বলল আপনাদের কাছে এ সংবাদ এসেছে কি? তাঁরা বললেন ঐ কি সংবাদ? সে বললঃ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে তাঁরা বললেন হে আনাস! এই পাত্রগুলো ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন যে তাঁরা এতদ প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞাসাও করলেন না এবং এই ব্যাক্তির
সংবাদের পর তাঁরা দ্বিতীয়বার পান করেন নি।
৪২৬৩ সা’দকা ইবনু ফাযল (রহঃ) যাবির
(রাঃ) বলেছেন যে উহুদের যুদ্ধের
দিন ভোরে কিছু লোক মদ পান করেছিলেন এবং সেদিন তারা সবাই শহীদ হয়েছেন। এই মদ্যপান ছিল
তা হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা।
৪২৬৪ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানজালী
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আমি ‘উমর (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে এরপর হে লোকসকল!
মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার খুরমা থেকে আঙ্গুর খেজুর থেকে মধু থেকে গম থেকে এবং যা
থেকে আর মদ হচ্ছে যা সুস্থ ও জ্ঞানকে আচ্ছাদিত করে রাখে।
৪২৬৫ আবূ নু‘মান (রহঃ) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে ঢেলে দেয়া মদগুলো ছিল ফাযীখ।
আবূ নু‘মান থেকে মুহাম্মদ সাল্লাম আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন আনাস (রাঃ) বলেছেন আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর ঘরে লোকদেরকে মদ পরিবেশন করছিলাম তখনই মদের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষককে তা প্রচারের নির্দেশ দিলেন। এরপর সে ঘোষণা দিল। আবূ তালহা বলল বেরিয়ে দেখ তো ঘোষণা কিসের? আনাস (রাঃ) বললেন আমি বেরুলাম এবং বললাম যে একজন ঘোষক ঘোষণা দিচ্ছেযে যেনে রাখ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বললেন যাও এগুলো সব ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন সেদিন মদিনায় মনোয়ারার রাস্তায় রাস্তায় মদের স্রোত প্রবাহিত
হয়েছিল। তিনি বলেন সে যুগে তাদের
মদ ছিল ফাযীখ তখন একজন বললেন যারা মদপান করে শহীদ হয়েছেন তাঁদের কি অবস্থা হবে? তিনি বলেন এরপর আল্লাহ তা‘আলা
নাযিল করলেন-
৪২৬৬ মুনযির ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ)
আনাস (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি খুতবা দিলেন যেরূপামি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেছেন ‘‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং
বেশী বেশী করে কাঁদতে’’। তিনি বলেন সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) আপন আপন চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কান্না
জুড়ে দিলেন এরপর এক ব্যাক্তি (আবদুল্লাহ ইবনু হুযায়ফা বা অন্য কেউ) বলল আমার পিতা কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘‘অমুক’’। তখন এই আয়াত নাযিল হল এই হাদীসটি শুবা থেকে নযর এবং
রাওহ ইবনু উবাদা বর্ণনা করেছেন।
৪২৬৭ ফাযল ইবনু সাহল (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেছেন কিছু লোক ছিল
তারা ঠাট্টা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করত কেউ বলত আমার পিতা কে? আবার কেউ বলত আমার উষ্ট্রী হারিয়ে গেছে তা কোথায়? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেছেন
৪২৬৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) সাঈদ
ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ) বলেছেন বাহীরা যে জন্তুর
সত্মন প্রতিমার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত থাকে কেউ তা দোহন করে না। সায়িবা যে জন্তু তারা তার উপাস্যের নামে ছেড়ে দিত এবং তা বহন কার্যে
ব্যবহার করে না। তিনি বলেন আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আমি আমর ইবনু
আমির খুযায়ীকে দোযখের মধ্যে দেখেছি সে তার নাড়িভুড়ি টানছে সে-ই প্রথম ব্যাক্তি যে সাহীবা প্রথা প্রথম চালু করে। ওয়াসীলাহ যে উষ্ট্রী প্রথম বারে মাদী বাচ্চা প্রসব করে এবং দ্বীতীয়বারেও
মাদী বাচ্চা প্রসব করে (যেহেতু নর বাচ্চার
ব্যবধান ব্যতীত একটা অন্যটার সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেহেতু) ঐ উষ্ট্রীকে তারা তাদের তাগূতের
উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিত। হাম নর উট যা দ্বারা
কয়েকবার প্রজনন কার্য নেয়া হয় প্রজনন কার্য
সমাপ্ত হলে সেটাকে তারা তাদের প্রতিমার জন্য ছেড়ে দেয় এবং বোঝা বহন থেকে ওটাকে মুক্তি দেয়। সেটির উপর কিছু বহন করা
হয় না। এটাকে তারা ‘হাম’ নামে অভিহিত করত। আমাকে আবূল ইয়ামান বলেছেন যে শুয়াইব ইমাম যুহরী (রাঃ)
থেকে আমাদের অবিহিত করেছেন যুহরী বলেন আমি সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যিব (রহঃ) থেকে শুনেছি তিনি তাকে এ ব্যাপারে অবিহিত করেছেন। সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যিব
বলেছেন
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রকম শুনেছি।
ইবনু হাদ এটা বর্ণনা করেছেন ইবনু শিহাব থেকে। আর তিনি সাঈদ থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
৪২৬৯ মুহাম্মদ ইবনু আবূ ইয়াকূব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি জাহান্নামকে দেখেছি তার একাংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে বা
প্রবলভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘আমরকে দেখেছি
সে তার নাড়িভুড়ি টানছে সে-ই প্রথম ব্যাক্তি
যে
‘‘সায়ীবা’’ প্রথা চালু করে্
৪২৭০ আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন খুতবা দিলেন বললেন হে লোক সকল! তোমরা
খালি পা
উলঙ্গ এবং খতনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহর নিকট একত্রিত হবে তারপর তিনি পড়লেন যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি
করব
প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য আমি তা পালন করবই। আয়াতের শেষ পর্যন্ত (২১: ১০৪) তারপর তিনি
বললেন
কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম যাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে তিনি
হচ্ছেন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা জেনে রাখ আমার উম্মতের কতগুলো লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাদেরকে বাম
দিকে অর্থাৎ দোযখের দিকে নেয়া হবে। আমি তখন বলব প্রভু হে! এগুলো তো আমার গুটি কয়েক সাহাবী তখন বলা হবে যে আপনার পর তারা কি জঘন্য কাজ করেছে তা আপানি জানেন না।
৪২৭১ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন আমাদের হাশর করা হবে এবং কিছু সংখ্যক লোককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া
হবে
তখন আমি পুণ্যবান বান্দার অর্থাৎ ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
মত বলব
৪২৭২ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অদৃশ্যের কুঞ্জি পাঁচটি – ‘‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে
রয়েছে
তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জাননা কোন স্থানে
তাঁর মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ সর্ববিষয়ে অবহিত। (৩১: ৩৪)
৪২৭৩ আবূ নূ‘মান (রহঃ) জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন যখনই এই আয়াত
নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাহ বললেন ‘‘আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি আবার যখন অবতীর্ণ হল তখনও বললেন আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। এবং
যখন নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা তুলনামূলকভাবে হালকা তিনি কিংবা বলেছেন।
৪২৭৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যখন আয়াত নাযিল
হল
তখন তাঁর সাহাবাগণ বললেন ‘‘জুলুম করেনি আমাদের মধ্যে এমন কে আছে?’’ এরপর নাযিল হল নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম।
৪২৭৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিনা করেছেন তিনি বলেছেন ‘‘আমি ইউনুস এবং মাত্তা থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত
নয়।
৪২৭৬ আদম ইবনু আবূ আয়াস (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন ‘‘আমি ই্নুস ইবনু মাত্তা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত নয়।
৪২৭৭ ইবরাহীম ইবনু মূসা মুজাদি
ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সূরা ‘‘৩৮ : ২৪’’-এ সিজদা আছে কি না। তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ আছে। এরপর এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- তারপর বললেন যে তিনি
অর্থাৎ দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অন্তর্ভুক্ত ইয়াযিদ ইবনু হারূন মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ এবং সাহল ইবনু ইউসুফ আওয়াম থেকে তিনি মুজাহিদ থেকে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন মুজাহিদ বললেন যে আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এরপর তিনি বললেন যাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪২৭৮ ‘আমর ইবনু খালিত (রহঃ) জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদেরকে লানত করেছেন যখন তিনি তাদের উপর চর্বি হারাম করেছেন তখন তারা ওটাকে তরল করে
জমা করেছে তারপর বিক্রি করে তার মূল্য
ভোগ করেছে। আবূ আসিম (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে।
৪২৭৯ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হারাম কাজে মু’মিনদেরকে
বাধা দানকারী আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ নেই এই জন্যই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সকল অশ্লীলতা হারাম করেছেন আল্লাহর স্ত্ততি প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু
নেই
সেজন্যই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন। আমর ইবনু মুররাহ
(রহঃ) বলেন আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা
করলাম
আপনি কি তা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। আমি বললাম এটাকে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী হিসাবে
বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ।
৪২৮০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘‘পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয়ের পূর্ব পর্যন্ত কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে
না। লোকেরা যখন তা দেখবে তখন পৃথিবীর সকলে
ঈমান আনবে এবং সেটি হচ্ছে এমন সময়
‘‘পূর্ব ঈমান আনেনি এমন ব্যাক্তির ঈমান তার কাজে আসবে না। ’’
৪২৮১ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যতক্ষন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয় ঘটবে ততক্ষন কিয়ামত হবে না যখন সেদিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে তখন সবাই
ঈমান গ্রহণ করবে এটাই সেই সময়
যখন কোন ব্যাক্তিকে তার ঈমান কল্যাণ সাধন করবে না। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।
৪২৮২ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
আমর ইবনু মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি এটা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ এবং তিনি এটাকে মারফু‘ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অন্যায়কে ঘৃণাকরী আল্লাহর তুলনায় অন্য কেউ নেই এজন্যই তিনি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন আবার আল্লাহর চেয়ে প্রশংসা প্রিয় কেউ নেই এজন্যই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।
৪২৮৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন
যে এক ইহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এসে হাজির হল। তার মুখমন্ডলে
চপেটাঘাত খেয়ে বলল হে মুহাম্মদ!
আপনার এক আনসারী সাহাবী আমার মুখমন্ডলে চপেটাঘাত করেছে। তিনি বললেন তাকে ডেকোন। তারা ওকে ডেকে আনল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘‘একে চপেটাঘাত করেছ কেন?’’ সে বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এই ইহুদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম যে সে বলছে তারই শপথ যিনি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে মানবজাতির
উপর মনোনীত করেছেন আমি বললাম মুহাম্মদ
-এর উপরও মনোনীত করেছেন কি? এরপর আমার রাগ
এসে গিয়েছিল তাই তাকে চপেটাঘাত করেছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (অন্যের মানহানি হতে পারে কিংবা নিজেদের খেয়াল খুশী মত) তোমরা
আমাকে অন্যান্য নাবী থেকে উত্তম বলো না’’ (বরং আল্লাহর ঘোষণায় আমি তো উত্তম আছই বরং
থাকবোই)
কারণ কিয়ামত দিবসে সব মানুষই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে সর্বপ্রথম আমই সচেতন হয়ে পড়ব সর্বপ্রথম আমই সচেতন হব। তিনি বলেন তখন আমি দেখব যে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশের খুটি ধরে রেখেছেন আমার বোধগম্য হবে না যে তিনি কি আমার পূর্বে সচেতন হবেন নাকি তুর পাহাড়ের সংজ্ঞাহীনতাকে
এর বিনিময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪২৮৪ মুসলিম (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জাতীয় উদ্ভিদ
মান্না-এর মত এবং এর পানি চোখের রোগমুক্তি।
৪২৮৫ আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূদ দারদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে চটিয়ে দিয়েছিলেন এরপর রাগান্বিত অবস্থায় উমর (রাঃ) সেখান থেকে প্রস্থান করলেন আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু
ছুটলেন কিন্তু উমর (রাঃ) ক্ষমা করলেন না বরং তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে আসলেন। আবূদ দারদা (রাঃ) বলেন আমরা তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ছিলাম ঘটনা শোনার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমাদের এই সাথী আবূ বকর (রাঃ) অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি
বলেন
এতে উমর লজ্জাবোধ করলেন এবং সালাম করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর পাশে বসে পড়লেন ও ইতিবৃত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে সব বর্ণনা করলেন। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন। সিদ্দিকে
আকবর (রাঃ) বারবার বলছিলেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি অধিক দোষী ছিলাম। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? এমন একদিন ছিল যখন আমি বলেীছলাম ‘‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন তোমরা তোমরা বলেছিলেন ‘‘তুমি মিথ্যা বলেছ’’ আর আবূ বকর (রাঃ) বলেছিল ‘‘আপনি সত্য বলেছেন। ’’ ইমাম আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন
অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে।
৪২৮৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইসরাঈলীদেরকে
নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে ‘‘নতশিরে প্রবেশ
কর এবং বল ক্ষমা চাই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব। ’’ (৭: ১৬১) এরপর তারা তার বিপরীত
করল
তারা নিজেদের নিতম্বে ভর দিয়ে মাটিতে বসে বসে প্রবেশ করল এবং
বলল যবের মধ্যে বিচি চাই।
৪২৮৭ আবূল য়ামান (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন ‘উয়াইনা ইবনু হিসন ইবনু হুযাইফা এসে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হুর ইবনু
কায়সের কাছে অবস্থান করলেন। উমর (রাঃ) যাদেরকে পার্শ্বে রাখতেন হুর হলেন তাদের মধ্যে
একজন। কারীবৃন্দ যুবক-বৃদ্ধ সকলেই
উমর ফারূক (রাঃ)-এর মজলিশের সদস্য এং উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ‘উয়াইনা তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে
ডেকে বললেন এই আমীরের কাছে তো তোমার একটা
মর্যাদা আছে সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর
কাছে প্রবেশের একটা অনুমতি নিয়ে দাও। তিনি বললেন হ্যাঁ তাঁর কাছে আমি আপনার প্রবেশের প্রার্থনা করব। ইবনু আববাস (রাঃ)
বলেন
এরপর হুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন ‘‘উয়াইনা জন্য এবং উমর (রাঃ)
অনুমতি দিলেন। ‘উয়াইনা উমরের কাছে গিয়ে বললেন হ্যাঁ আপনি তো আমাদেরকে বেশী বেশী দানও করেন না এবং আমাদের মাঝে
ন্যায় বিচারও করেন না। উমর (রাঃ) ক্রোধান্বিত হলেন এবং তাকে কিছু একটা করাতে উদ্যত
হলেন। তখন হুর বললেন আমিরুল মু’মিনীন!
আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলেছেন ‘‘ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর’ সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞ দিগকে
উপেক্ষা কর’’ আর এই ব্যাক্তি তো নিঃসন্দেহে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত। (হুর যখন তাঁর নিকট
এটা তিলাওয়াত করলেন তখন আল্লাহর কসম তখন উমর (রাঃ) আয়াতের অমান্য করেননি। উমর আল্লাহর
কিতাবের বিধানের সামনে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতেন অর্থাৎ তা অতিক্রম করতেন না।
৪২৮৮ ইয়াহইয়া (রহঃ)আবদুল্লাহ ইবনু
যুবায়র (রাঃ) বলেছেন আয়াতটি আল্লাহ
তা‘আলা মানুষের চরিত্র সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ বলেন আবূ উসামা আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
মানুষের আচরণ সম্পর্কে ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৪২৮৯ মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম
(রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম সূরা আনফাল সম্পর্কে তিনি বললেন বদরের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।
৪২৯০ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত সম্পর্কে তিনি
বলেছেন যে তারা হচ্ছে বনী আবদুদদার গোষ্ঠীর
একদল লোক।
৪২৯১ ইসহাক (রহঃ) আবূ সাঈদ ইবনু
মুয়াল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি একদা সালাত (নামায/নামাজ) ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে
গেলেন এবং আমাকে ডাকলেন সালাত (নামায/নামাজ)
শেষ না করা পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাইনি তারপর গেলাম তিনি বললেন তোমাকে আসতে বাধা দিল কিসে? আল্লাহ কি বলেননি ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে ডাক দিলে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে ডাকে সাড়া
দেবে?’’
তারপর তিনি বললেন আমি মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বে তোমাকে একটি বড় সওয়াবযুক্ত সূরা
শিক্ষা দেব। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমি তাঁর নিকট প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। মু‘আয
বলেনহাফস শুনেছেন একজন সাহাবী আবূ
সাঈদ ইবনুল মু‘আল্লাকে এ হাদীস বর্ণনা করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-সেই সূরাটি হচ্ছে
সাত আয়াত বিশিষ্ট ও পুনঃ পুনঃ উল্লেখ্য আবৃত।
৪২৯২ আহমদ (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আবূ জাহেল বলেছিল ‘‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ
শাস্তি দাও। তখনই নাযিল হল- -আল্লাহ এমন নহেন যে তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ
এমনও নহেন যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে
অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং তাদের কি-বা
বলবার আছে যে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন
না যখন তারা লোকদের মসজিদুল হারাম থেকে নিবৃত করে? (যদিও তারা এর তত্ত্বাবধায়ক নয় মুত্তাকীগণই এর তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা অবগত নয়) (৮: ৩৩-৩৪)
৪২৯৩ মুহাম্মদ ইবনু নযর (রহঃ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন আবূ জাহেল বলেছিল।
এরপর নাযিল হল-(৮ : ৩৩) অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি
তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও
তাদের উপর আযাব দেবেন না। (৮ : ৩৪) আর তাদের মধ্যে এমন কি বিষয় রয়েছে যার ফলে আল্লাহ তাদের উপর আযাব দান করবেন না। অথচ তারা মসজিদে-হারামে
যেতে বাধাদান করে অথচ তাদের সে
অধিকার নেই। এর অধিকার তো তাদেরই রয়েছে যারা পরহেযগার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই সে বিষয়ে
অবহিত নয়।
৪২৯৪ হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক ব্যাক্তি তাঁর
কাছে এসে বলল হে আবূ আবদুর রহমান! আল্লাহ
তাঁর কিতাবে যা উল্লেখ করেছেন আপনি কি তা শোনেন না? মু’মিনদের দু’দল দন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংশা
করে দেবে সুতরাং আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী যুদ্ধ করতে কোন বস্ত্ত আপনাকে নেষেধ
করছে?
এরপর তিনি বললেন হে ভাতিজা! এইায়াতের তাবিল বা ব্যাখ্যা করে যুদ্ধ না করা আমার
কাছে অধিক প্রিয় ‘‘যে স্বেচ্ছায় মু’মিন খুন করে ’’ আয়াতে তাবিল করার তুলনায়। সে ব্যাক্তি বলল আল্লাহ বলেছেন ‘‘তোমরা ফিতনা নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ করবে ’’ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমরা তা করেছি
যখন ইসলাম দুর্বল ছিল। ফলে লোক তার দ্বীন নিয়ে ফিতনায় পড়ত হয়ত কাফেররা তাকে হত্যা করত নতুবা বেঁধে রাখত ক্রমেক্রমে ইসলামের প্রসার ঘটল এবং ফিতনা থাকল না। সে লোকটি
যখন দেখল যে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
তারুদ্দেশ্যের অনুকুল হচ্ছেন না তখন সে বলল যে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন যে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আমার কোন বক্তব্য নেই তবে ‘উসমান (রাঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ক্ষমা করে দিয়েছেন
কিন্তু তোমরা তাঁকে ক্ষমা করতে রাযি নও আর ‘আলী (রাঃ) তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচাতো ভাই এবং
জামাতা
তিনি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন ঐ উনি হচ্ছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা যেথায় তোমরা তাঁর ঘর দেখছ বলেছেন কিংবা বলেছেন।
৪২৯৫ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) সা‘ঈদ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ইবনু উমর (রাঃ) আমাদের কাছে এলেন। বর্ণনাকারী অথবা শব্দ বলেছেন।
এরপর এক ব্যাক্তি বলল ফিতনা সম্পর্কিত
যুদ্ধের ব্যাপারে আপনার রায় কি? আবদুল্লাহ ইবনু
উমর (রাঃ) বললেন ফিতনা কি তা তুমি
জানো?
মুহাম্মদ মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। সুতরাং তাদের কছে
যাওয়া ছিল ফিতনা তার সঙ্গে গিয়ে
যুদ্ধ করা তোমাদের রাজত্বের জন্য যুদ্ধ করার সমতুল্য নয়।
৪২৯৬ ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে (আল্লাহর
বাণীঃ) যখন নাযিল হল। এরপর দশজন কাফেরের বিপরীত একজন মুসলিম থাকলেও পালায়ন না করা ফরয
করে দেয়া হল। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) আবার বর্ণনা করেন দু’শ জন কাফেরের বিপরীত ২০জন মুসলিম থাকলেও পলায়ন করা যাবে না।
তারপর নাযিল হল- আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশ’জন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের
উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক সহস্র থাকলে আল্লাহ অনুজ্ঞাক্রমে তারা দু’সহস্রের
উপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (৮: ৬৬) এরপর দু’শ কাফেরের বিপক্সে
এক’ম মুসলিম থাকলে পলায়ন না করা (আল্লাহ পাক) ফরয করে দিলেন। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা
(রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে (তাতে কিছু
অতিরিক্তাছে যেমন)নাযিল হল সুফিয়ান বলেন ইবনু শুবরুমা বলেছেন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ব্যাপারটাও আমি এরকম মনে
করি।
৪২৯৭ ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ সুলামী
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন যখন আয়াতটি নাযিল
হল তখন দশজনের বিপরীত একজনের পলায়নও নিষিদ্ধ করা হল তখন এটা মুসলমানদের উপর দুৎসাধ্য মনে হলে পরে তা লাঘবের বিধান
এলো(৮ : ৬৬) ”এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর এবং তিনি জেনে
নিয়েছেন যে তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে।
কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে তবে জয়ী হবে দু’শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর
হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের সাথে। ” ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন আল্লাহ এদেরকে
যখন সংখ্যার দিক থেকে হাল্কা করে দিলেন সেই নমনীয়তার সমপরিমাণ তাদের ধর্ম ও হ্রাস পেল।
৪২৯৮ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) বারা ইবনু
‘আযিব (রাঃ) বলেছেনঃ সর্বশেষে যে আয়াত অবতীর্ণ হয় তা হল লোকে আপনার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়; বলুন! পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যাক্তি সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদের
ব্যবস্থা জানোাচ্ছেন। (৪: ১৭৬) এবং সর্বশেষে যে সূরাটি অবতীর্ণ হয় তা হল সূরায়ে বারাআত।
৪২৯৯ সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবূ বকর (রাঃ) নবম হিজরীর হাজ্জে (হজ্জ) আমাকে এ নির্দেশ দিয়ে
পাঠিয়ে দেন যে আমি কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের
সঙ্গে মিনায় (সমবেত লোকদের) এ ঘোষণা করে দেই যে এ বছরের পর কোস মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করা জন্য আসবে না। আল্লাহর
ঘর উলঙ্গ অবস্থা তাওয়াফ করবে না। হুমায়দ ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে পুনরায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে তুমি সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন মীনায় অবস্থানকারীদের মাঝে
(কুরবানীর পর) আলী (রাঃ) আমাদের সাথে ছিলেন এবং সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করলেন এ বছরের পর কোস মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করা জন্য আসবে না। কেউ উলঙ্গ
অবস্থায় ঘর তাওয়াপ করবে না। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ অর্থ তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
৪৩০০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে সেই কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সাথে মীনায় এ (কথা) ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে এ বছরের পর আর কোন মুশরিক (মক্কায়) হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে
না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থায় কাউকে তাওয়াফ করতে দেওয়া হবে না। হুমায়দ (রাঃ) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে আলী ইবনু আবূ তালিবকে
পাঠালেন এবং বললেনঃ সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আলী (রাঃ) আমাদের সাথেই মীনাবাসীদের মধ্যে সূরায়ে বারাআত কুরবানীর
দিন ঘোষণা করলেন। বললেন এ বছরের পরে কেউ
হাজ্জ (হজ্জ) (মক্কা) করতে আসতে পারবে না। এবং উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘরকে তাওয়াফ করবে
না।
৪৩০১ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ)
পূর্বের বছর আবূ বকর (রাঃ)-কে যে হাজ্জের (হজ্জ) আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন সেই হাজ্জে (হজ্জ) তিনি যেন লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেন এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে আসতে পারবে না এবং
উলঙ্গ অবস্থায় কেউ আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান বলেন
(আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে হাজ্জে (হজ্জ) আকবেরর দিন হল কুরবানীর দিন।
৪৩০২ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ)
যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আমরা হুযায়ফা
(রাঃ)-এর কাছে ছিলাম তখন তিনি বলেন এ আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে শুধু তিনজন মুসলমান
ও চারজন মুনাফিক চেঁচে আছে। ইত্যবসরে একজর বেদুঈন বলল আপনারা সকলে মুহাম্মদ -এর সাহাবী। আমাদের এমন লোকদের অবস্থা
সম্পর্কে খবর দিন যারা আমাদের ঘরে সিদ কেটে ঘরের অতি মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে
যাচ্ছে
কেননা তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন তারা সবাই ফাসীক ও অন্যায়কারী। হ্যাঁ তাদের মধ্যে হতে চার ব্যাক্তি এখনও জীবতি-তাদের মধ্যে একজন এত
বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে যে শীতল পানি পান
করার পর তার শীতলতাটুকুর অনুভূতি সে উপলব্ধি করতে পারে না।
৪৩০৩ হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন তোমাদের মধ্যে অনেকের পুঞ্জিভূত সম্পদ (যার যাকাত আদায় করা হয়
না) কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সর্পে পরিণত হবে।
৪৩০৪ কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ)
যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি একদা রাবাযা
নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি (তাকে) জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কিসের জন্য এ স্থানে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন আমি সিরিয়া ছিলাম তখন আমি [মুআবিয় (রাঃ)-এর সামনে] এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম।
‘‘যারা স্বর্ণ রোপ্য পঞ্জিভূত করে রাখে এবং
আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদের যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তির খবর দিন। ’’ (৯: ৩৪) মু‘আবিয়া (রাঃ) এ আয়াত শুনে বললেন এ আয়াত আমাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়নি। বরং আহলে কিতাবদের (ইহুদী
ও নাসারা) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি (জবাবে) বললাম এ আয়াত আমাদের ও তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (এ তর্ক বিতর্কের
কারণে সব কিছু বর্জন করে আমি এখানে চলে এসেছি। )
৪৩০৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব
(রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেছেন
আল্লাহর যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করে সেদিন যেভাবে কাল (যামানা)
ছিল তা আজও অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছর তন্মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ যিলহাজ্জ ও মুহাররম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামিদিউসসানী ও
সাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী।
৪৩০৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে বলেছেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (সওর) গুহায়
ছিলাম। তখন আমি মুশরিকদের পদচারণা দেখতে পেয়ে [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে] বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি তাদের (মুশরিকদের) কেউ পা উঠায় তাহলে আমাদের দেখে ফেলবে। তখন
তিনি বললেন এমন দু’জন সম্পর্কে
তোমার কি ধারণা যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ।
৪৩০৭ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন তাঁর ও ইবনু
যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে (বায়আতের প্রেক্ষিতে) মতভেদ ঘটল তখন আমি বললাম তার পিতা যুবায়ের তার মাতা আসমা (রাঃ) ও তার খালায়েশা (রাঃ) তার নানা আবূ বকর (রাঃ) ও তার নানী সুফিয়া (রাঃ)। আমি সুফিয়ানকে
বললাম
এর সনদ বর্ণনা করুন। তিনি বললেন এবং ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলার আগেই অন্য এক ব্যাক্তি তাকে অন্যদিকে
আকৃষ্ট করল।
৪৩০৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন ইবনু আববাস
(রাঃ) ও ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে বায়আত নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হল তখন আমি ইবনু আববাসের কাছে গিয়ে বললাম আপনি কি আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করে ইবনু যুবায়রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান? তখন তিনি বললেন আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি এ কাজ তো ইবনু যুবায়র ও বনী ইমাইয়ার জন্যই আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে
রেখেছেন। আল্লাহর কসম! কখনো আমি তা হালাল মনে করব না (আবূ মূলায়কা বলেন) তখন লোকজন ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলল আপনি ইবনু যুবায়রের পক্ষে বায়আত গ্রহণ করুন। তখন ইবনু আববাস
বললেন
তাতে ক্ষীতর কি আছে? তিনি এটার জন্য যোগ্যতম ব্যাক্তি। তাঁর পিতা যুবায়র তো নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহায্যকারী ছিলেন তার নানা আবূ বকর (রাঃ) হুযুর -এর সওর গুহার সহচর ছিলেন। তার
মা আসমা
যার উপাধি ছিল খাতুন নেতাক। তার খালা আয়িশা (রাঃ) উম্মূল মু’মিনীন
ছিলেন
তার ফুফু খাদিজা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর স্ত্রী ছিলেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফুফু সফিয়া ছিলেন তার দাদী। এ ছাড়া তিনি ইবনু যুবায়রের) তো ইসলামী
জগতে নিষ্কলুষ ব্যাক্তি ও কুরআনের ক্বারী। আল্লাহর কসম! যদি তারা (বনী উমাইয়অ) আমার
সাথে সম্পর্ক রাখে তবে তারা আমার নিকটত্মীায়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রাখল। আর যদি তারা
আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে তবে তারা সমকক্ষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তিরই রক্ষণাবেক্ষণ করল।
ইবনু যুবায়র বনী আসা’দ বনী তুআইত বনী উসামা-এসব
গোত্রকে আমার চেয়ে নিকটতম করে নিয়েছেন। নিশ্চই আবিলাস-এর পুত্র অর্থাৎ আবদুল মালিক
ইবনু মারওয়ান অহংকারী চালচলন আরম্ভ করেছে। নিশ্চই তিনি অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ) তার লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন।
৪৩০৯ মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দ ইবনু
মায়মূনা (রহঃ) ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) বলেন আমরা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন তোমরা কি ইবনু যুবায়রের বিষয়ে বিষ্মিত হবে না? তিনি তো আর এ কাজ (খিলাফতের বিষয়) স্থিতিশীল। আমি বললাম আমি অবশ্য মনে মনে তার ব্যাপাচচিন্তা ভাবনা করি কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) কিংবা উমর (রাঃ)-এর ব্যাপাএেতটুকু চিন্তা-ভাবনা
করিনি। সব দিক থেকে তার চেয়ে তারা উভয়ে উত্তম ছিলেন। আমি বললাম তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফুফু সফিয়া (রাঃ)-এর
সন্তান
যুবায়রের ছেলে আবূ বকর (রাঃ)-এর নাতি। খাদিজা (রাঃ)এর ভাতিজা আয়িশা (রাঃ)-এর বোন আসমার ছেলে। কিন্তু তিনি (নিজেকে বড় মনে
করে) আমার থেকে দূরে সরে থাকেন এবং তিনি আমার সহযোগিতা কামনা করেন না। আমি বললাম আমি নিজে থেকে এজন্য তা প্রকাশ করি না যে হয়ত তিনি তা প্রত্যঅখান করবেন। এবংামি মনে করি না যে তিনি এটা ভাল করেছেন। অগত্যা বণী উমাইয়অর নেতৃত্ব ও শাসন আমার
কাছে অন্যদের থেকে উত্তম।
৪৩১০ মুহাম্মদ ইবনু কাছীর (রহঃ)
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ
করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চার জনের মধ্যেবণ্টন করে দিলেন। আর বললেন তাদেরকে (এর দ্বারা) আকৃষ্ট করছি। তখন এক ব্যাক্তি বলল আপনি সঠিকভাবে দান করেননি। এতদশ্রবনে তিনি বললেন এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন সব লোক জন্ম নেবে যারা দ্বীন থেকে
বের হয়ে যাবে।
৪৩১১ বিশর ইবনু আবূ খালিদ আবূ মুহাম্মদ
(রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন আমাদের সা’দকা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল তখন আমরা পরিশ্রমের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদিন আবূ ‘আকীল
(রাঃ) অর্ধ সা’ খেজুর (দান করার উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যাক্তি (আবদুর
রহমান ইবনু আউফ তার চেয়ে অধিক মালামাল (একই উদ্দেশ্যে) নিয়ে উপস্থিত হলেন। (এগুলো দেখে)
মুনাফিকরা সমালোচনা করতে লাগল আল্লাহ এ ব্যাক্তির
সা’দকার মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যাক্তি [আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)] শুধু মানূষ
দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় -‘‘মু’মিনদের মধ্যে
যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সা’দকা প্রদান করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীরেকে কিছুই পায় না তাদেরকে যারা দোষারূপ করে ও বিদ্রুপ করে আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ
করেন;
তাদের জন্য রয়েছে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। ’’ (৯: ৭৯)
৪৩১২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দকার করার আদেশ প্রদান করলে আমাদের মধ্য হতে কেউ কেউ অত্যন্ত
পরিশ্রম করে (গম অথবা খেজুর ইত্যাদি) এক
মুদ্দ আনতে পারত কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে কারো কারো এক লাখ পরিমাণ (দিরহাম) রয়েছে।
আবূ মাসঊদ (রাঃ) যেন (এ কথা বলে) নিজের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
৪৩১৩ উবায়েদ ইবনু ইসমাঊল (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় (মুনাফিক) মারা গেল তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কোর্তা দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোর্তাটি
প্রদান করলেন এরপর (আবদুল্লাহ তার পতিার)
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়ানোর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে আবেদন জানালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
পড়ানোর জন্য (বসা থেকে) উঠে দাঁড়ালেন ইত্যবসরে উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাপড় টেনে ধরে আবেদন করলেন হে আল্লাহর রাসূল
আপনি কি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব (আল্লাহ তা‘আলা) আপনাকে তার জন্য দোআ করতে নিষেধ
করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছেন। আর আল্লাহ
তা ইরশাদ করেছেন ‘‘তুমি তাদের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তর বারও
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তুব আমি তাদের ক্সমা করব না। ’’ সুতরাং আমি তার জন্য
সত্তর বারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমর (রাঃ) বললেন সে তো মুনাফিক শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানোযার
সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালেন এরূপ এ আয়াত অবতীর্ণ
হয়। ‘‘তাদের মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না।
৪৩১৪ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন আবদুল্লাহ
ইবনু উবায় ইবনু সালুল মারা গেল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়বার জন্য আহবান করা হল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (জানাযার জন্য) উঠে দাঁড়ালে আমি তাঁর কাছে গিয়ে আরজ করলাম ইয়অ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি ইবনু উবায়ের
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াবেন? অথচ যে লোক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে। উমর ইবনু খাত্তাব
(রাঃ) বলেন আমি তার কথাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে এক একটি করে উল্লেখ করেছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন হে উমর আমাকে যেতে দাও।
আমি বারবার বলাতে তিনি বললেন আল্লাহর আমাকে
ইখতিয়ার দিয়েছেন। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি যদি বুঝতে পারি যে সত্তরবারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আল্লাহ তা‘আলা
ক্ষমা করে দিবেন তবে আমি সত্তরবারের
অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবো। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং (জানাযা) থেকে প্রত্যাবর্তন করে আসার পরই সূরা
বারাআতের এ আয়াত অবতীর্ণ হয় ‘‘তাদের
কেউ মারা গেলে কখনো তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। এরা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল) -এর প্রতি অবিশ্বাস করেছে। এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। (৯: ৮৪)
উমর (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সামনে আমার এ দুৎসাহসের জন্য পরে আমি চিন্তা করে আশ্চর্যান্বিত হতাম।
বস্ত্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) অধিক জ্ঞাত।
৪৩১৫ ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন (মুনাফিক) ইবনু আবদুল্লাহ উবায় মারা গেল তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন। তিনি {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } তাঁর নিজ জামাটি তাকে দিয়ে দিলেন এবং এর দ্বারা তার পিতার কাফনের
ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তখন ইবনু উমর খাত্তাব (রাঃ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাপড় ধরে আরজ করলেন {ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } আপনি কি তার (আবদুল্লাহ ইবনু উবায়)-এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করবেন? সে তো মুনাফিক অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করতে আপনাকে নিষেধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (হে উমর!) আল্লাহ আমাকে ইখীতয়ার দিয়েছেন অথবা বলেছেন আল্লাহ আমাকে অবহিত করেছেন এবং বলেছেন ‘‘আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন আপনি যদি সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবুও আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। ’’ (৯: ৮০) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আমি সত্তরবারের চেয়েও বেশীবার ক্ষমা প্রার্থনা করবো। বর্ণনাকারী
বলেন
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও তাঁর সাথে জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম।
এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হল ‘‘তাদের (মুনাফিকদের)
কেউ মারা গেলে আপনি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) কখনো আদায় করবেন না এবং তার কবরের
পার্শ্বেও দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) কে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী
অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে। (৯: ৮৪)
৪৩১৬ ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
কা‘আব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি কা‘ব ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি যখন তাবুকের
যুদ্ধে পিছনে রয়ে গেলেন (অংশ গ্রহণ করলেন না) আল্লাহর কসম! তখন আল্লাহ আমাকে এমন এক নিয়ামক দান করেন যা মুসলমান
হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এতবড় নিয়ামত পাইনি। তা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে সত্য কথা প্রকাশ করা। আমি তাঁর কাছে মিথ্যা বলিনি। যদি মিথ্যা বলতাম তবে অন্যান্য (মুনাফিক ও)মিথ্যাবাদী ধ্বংস হয়েছে আমিও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে সময় ওহী নাযিল হল ‘‘তোমরা তাদের
নিকট (মদিনায়) ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না। ’’ (৯:
৯৫)
৪৩১৭ মুয়াম্মিল ইবনু হিশাম (রহঃ)
সামুরা ইবনু জন্দুর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন রাতে দু’জন ফেরেশতা
এসে আমাকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করলেন। এরপর আমরা এমন এক শহরে পৌছলাম যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। সেখানে এমন কিছু সংখ্যক
লোকের সাথোমাদের সাক্ষাত ঘটর যাদের শরীরের
অর্ধেক খুবই সুন্দর যা তোমরা কখনো দেখনি। এবং আর এক অর্ধেক এমন কুৎসিত যা তোমরা কখনো
দেখনি। ফেরেশতা দু’জন তাদেরকে বললেন তোমরা ঐ নহরে গিয়ে ডুব দাও। তারা সেখানে গিয়ে ডুব দিয়ে আমাদের
নিকট ফিরে এল। তখন তাদের বিশরী চেহারা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল এবং তারা সুন্দর চেহারা
লাভ করলো। ফেরেশতাদ্বয় আমাকে বললেন এটা হল ‘জান্নাতে আদন’ এটাই হল আপনার আসল আরামস্থল। ফেরেশতাদ্বয়
(বিস্তারিত বুঝিয়ে) বললেন (আপনি) যেসব লোকের
দেহের অর্ধেক সুন্দর এবং অর্ধেক বিশরী (দেখেছেন) তারা ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে সৎকর্মের সাথে অসৎকর্ম মিশিয়ে
ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন (এবং তারা অতি সুন্দর চেহারা লাভ করেছে)।
৪৩১৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
মূসা য়্যাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন আবূ তালিবে মৃত্যুর আলামত দেখা দিল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে গেলেন। এ সময় আবূ জেহেল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াও
সেখানে বসা ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে চাচা! আপনি পড়ুন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!। আপনার মুক্তির জন্য
আল্লাহর নিকট এ নিয়ে আবেদন পেশ করব্ এ কথা শুনে আবূ জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনু উমইয়া বলল হে আবূ তালিব! তুমি কি মৃত্যুর সময় (তোমার পিতা) আবদুল মুত্তালিবের
ধর্ম ত্যাগ করতে চাও? নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে চাচা! আমি
আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হবে ততক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা
করতে থাকবো। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‘‘আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মু’মিনদের জন্য সঙ্গত নয় যখন এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে তারা জাহান্নামী। ’’ (৯: ১১৩)
৪৩১৯ আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু কা‘আব (রহঃ) থেকে বর্ণিত কা‘আব (রাঃ) যখন
দৃষ্টিহীন হয়ে পড়লেন তখন তাঁর ছেলেদের
মধ্যে যার সাহায্যে তিনি চলাফেরা করতেন তিনি বলেন আমি (আমার পিতা)
কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে তার ঘটনা বর্ণনায়। এ আয়াত এর তাফসীর সম্পর্কে বলতে
শুনেছি। তিনি তার ঘটনার সর্বশেষে বলতেন আমি আমার তওবা কবুল হওয়ার খুশিতে আমার সকল মাল আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল) -এর পথে দান করতে চেয়েছছিলাম। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (সকল মাল সা’দকা করো না) কিচু সা’দকা করো এবং কিছু নিজের জন্য
রেখে দাও। এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।
৪২২১ আহমদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আয়াতটি সুস্পষ্ট রহিত বা মানসুখ নয়। সাঈদ (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে ইকরামা
(রাঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর বাণীঅর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের সন্তান সম্বন্ধে
নির্দেশ দিচ্ছেন। (৪: ১১)
৪২২২ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) জাবির
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) বনী সালমা গোত্রে পদব্রোজে আমার রোগ সম্পর্কে
খোজ খবর নিতে গিয়েছিলেন। অনন্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অচেতন অবস্থা
দেখতে পেলেন। কাজেই তিনি পানি আনালেন এবং ওযু করে ওযুর পানি আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন।
তখন আমি হুশ ফিরে পেলাম। তখন আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমার সম্পত্তিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনি
আমাকে নির্দেশ দেবেন? তখন এ আয়াত নাযিল
হলঃ
৪২২৩ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মৃত ব্যাক্তির সম্পদ ছিল সন্তানের জন্য আর ওসীয়ত ছিল পিতামাতার জন্য। এরপর তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর
পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুন নির্ধারণ করলেন। পিতামাতা
প্রত্যেকের জন্য ৬ ভাগের ১ অংশ ও ৩ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন স্ত্রীদের জন্য ৮ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন এবং
স্বামীর জন্য ২ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন।
৪২২৪ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে অবস্থা এরূপ ছিল যে কোন ব্যাক্তি মারা গেলে তার অভিভাবকগণ তার স্ত্রীর উপর দাবিদার
হত। তারা ইচ্ছা করলে ঐ মহিলাকে বিয়ে করত। ইচ্ছে করলে অন্যের কাছে বিয়ে দিত। আর নতুবা
তাকে আমরণ আটকে রাখত। কারো কাছে বিয়ে দিত না। মহিলার পরিবারের তুলনায় এরা অধিক দাবিদার
ছিল। এরপর এ আয়াত নাযিল হল।
৪২২৫ সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হচ্ছে বংশীয় উত্তরাধিকারী হচ্ছে মুহাজিরগণ যখন মদিনায় এসেছিলেন তখন তারা আনসারদের উত্তরাধিকারী
হতেন। আত্মীয়তার কারণে নয় বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাদের মধ্যে
ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের স্থাপনের কারণে। যখন (৪ : ৩৩ ” পিতা-মাতা এবং নিকটাত্নীয়গণ যা ত্যাগ
করে যান সেসবের জন্যই আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা
অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা নিঃসন্দেহে সব কিছুই প্রত্যক্ষ
করেন। ” নাযিল হল তখন এ হুকুম রহিত
হয়ে গেল। তারপর বললেন যাদের সাথে তোমরা
চুক্তি করে থাক সাহায্য সহযোগীতা ও পরস্পরের উপকার করার। পূর্বতন উত্তরাধিকার বিলুপ্ত
হল এবং এদের জন্য ওসীয়ত বৈধ। হাদীসটি আবূ উসামা ইদ্রিসের কাছে এবং ইদ্রিস তালহার কাছে
থেকে শুনেছেন।
৪২২৬ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল আযীয
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একদল লোক বলল হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ অবশ্যই। গ্রীষ্মকালের
মেঘবিহীন ভর দুপুরের প্রখর কিরণ বিশিষ্ট সূর্য দেখতে তোমরা কি পরস্পর ভিড় করে থাক? তারা বলল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন পূর্ণিমার রাতে
মেঘবিহীন আলো বিশিষ্ট চন্দ্র দেখতে গিয়ে তোমরা কি ভিড় কর? আবার তারা বলল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এদের কোনটিকে দেখতে যেমন ভিড় করো না; কিয়ামতের দিনও আল্লাহকে দেখতেও তোমরা পরস্পর ভিড় করবে না। কিয়ামত
যখন আসবে তখন এক ঘোষক ঘোসণা দেবে। তখন প্রত্যেকেই আপন আপন উপাস্যের অনুসরণ করবে। আল্লাহ
ব্যতীত প্রতিমা ও পাথর ইত্যাদির যারা পূজা করেছে তারা সবাই দোযখে গিয়ে পড়বে একজনও অবশিষ্ট থাকবে না। পুণ্যবান হোক চাই পাপী এরা এবং আল্লাহ অবশিষ্ট বিশ্বাসীরা ব্যতীত যখন আর কেউ থাকবে
না
তখন ইহূদীদেরকে ডেকে বলা হবে তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর
পুত্র উযাইরের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে যে তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ করেননি পুত্রও গ্রহণ
করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে হে প্রভু! আমরা তৃষ্ণার্ত আমাদেরকে পানি পান করান। এরপর তাদেরকে ইঙ্গিত করা হবে যে তোমরা পানির ধারে যাওনা কেন? এরপর তাদেরকে দোযখের দিকে একত্র করা হবে তা যেন মরুভূমির মরিচীকা এক এক অংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে। অনন্তর তারা সবাই দোযখে
পতিত হবে। তারপর খ্রিষ্টানদেরকে ডাকা হবে। তাদেরকে বলা হবে তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর
পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহ স্ত্রীও গ্রহণ
করেননি এবং পুত্রও নয়। তাদেরকে বলা হবে তোমরা কি চাও? তারা প্রতম পক্ষের মত বলবে এবং তাদের মত দোযখে নিপতিত হবে। অবশেষে পুণ্যবান হোক কিংবা পাপী
হোক আল্লাহর উপাসকগণ ব্যতীত আর কেউ যখন বাকি থাকবে না তখন তাদের কাছে পরিচিত রূপের নিকটতম একটি রূপ নিয়ে রাববুল আলামীন
তাদের কাছে আবির্ভূত হবেন। এরপর বলা হবে প্রত্যেক দল নিজ নিজ উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে। তোমরা কিসের
অপেক্ষা করছ? তারা বলবে দুনিয়াতে এ সকল লোকের প্রতিামাদের চরম প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও
আমরা সেখানে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছি এবং তাদের সাথে মেলামেশা করিনি। এখন আমরা
আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি আমরা তাঁর ইবাদত
করতাম। এরপর তিনি বলবেন আমই তোমাদের প্রতিপালক।
তারা বলবে আমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক
করব না। এ কথাটি দু’বার কি তিনবার বলবে।
৪২২৭ সা’দকাহ (রহঃ) আমর ইবনু মুররা
থৈকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন আমার কাছে কুরআন
পাঠ কর। আমি বললাম আমি আপনার কাছে
পাঠ করব?
অথছ তা আপনার কাছেই অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন অন্যের মুখে শ্রবণ করাকে আমি পছন্দ করি। এরপর আমি তাঁর নিকপ
‘সূরা নিসা’ পড়লাম যখন আমি পর্যন্ত
পাঠ করলাম তিনি বললেন থাম থাম তখন তাঁর দুচোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু নির্গত হচ্ছিল। আল্লাহর
বাণীঃ আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ শৌচ স্থান থেকে আসে
’’(৪: ৪৩)। মাটির উপরি ভাগ। জাবির (রাঃ) বলেন যে সকল তাগুদের কাছে তারা বিচারের জন্য
যেত তাদের একজন ছিল বুহাইনা গোত্রের একজন আসলাম গোত্রের এবং এভাবে প্রত্যেক গোত্রে এক-একজন করে তাগূদ
ছিল। তারা হচ্ছে গণক। তাদের কাছে শয়তান আসত। উমর (রাঃ) বলেন যাদু। শয়তান। ইকরামা (রাঃ) বলেন হাবশী ভাষায় শয়তানকে বলা হয়। আর গণককে বলা হয়।
৪২২৮ মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমার নিকট থেকে
আসমা (রাঃ)-এর একটি হার হারিয়ে গিয়েছিল। তা খোজতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন। তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল তাদের কাছে পানি ছিল না। আবার ওযুর পানিও পেলেন না। এরপর বিনা
ওযুতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফেললেন। তখন আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের বিধান নাযিল
করলেন।
৪২২৯ সাদাকাহ ইবনু ফাযল (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে (৪ : ৫৯) ”হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের।
তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড় তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা
আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে
উত্তম। ” আয়াতটি নাযিল হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা ইবনু কায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন
তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলের প্রধান করে প্রেরণ করেছিলেন।
৪২৩০ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)
উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন হারব বা মদিনার কঙ্করময় ভূমিতে একটি পানির নালা নিয়ে একজন আনসার
হযরত যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে ঝগড়া করছিলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে যুবায়র! প্রথমত তুমি তোমার জমিতে পানি দাও তারপর তুমি প্রতিবেশীর জমিতে পানি ছেড়ে দিবে। আনসারী বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে আপনার ফুফাত ভাই তাই এই ফয়সালা দিলেন। এতে অসন্তুষ্টিবশত রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন হে যুবায়র! তুমি পানি চালাবে তারপর আইল পর্যন্ত ফিরে না আসা
পর্যন্ত তা আটকে রাখবে তারপর প্রতিবেশীর জমির দিকে ছাড়বে। আনসারী যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রাগিয়ে তুললেন তখন তিনি তার হক পুরোপুরি যুবায়র (রাঃ)-কে প্রদানের
জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন। তাদেরকে প্রথমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন
একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে উদারতা ছিল।
৪২৩১ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
হাওশাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে প্রত্যেক নাবী অন্তিম সময়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তাকে দুনিয়া
ও আখিরাতের যে কোন একটি নির্বাচন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়। যে অসুস্থতায় তাকে উঠিয়ে নেওয়া
হয়েছে সে অসুস্থতায় তাঁর ভিষণ শাসকষ্ট আরম্ভ হয়েছিল। সে সময় আমি তাঁকে [তাঁরা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ সত্যনিষ্ঠ শহীদ ও সৎকর্ম পরায়ন যাদের প্রতি আর। আল্লাহ অনুগ্রহ
করেছেন
তাঁদের সঙ্গী হবেন (৪: ৬৯)] বলতে শুনেছি। এরপর আমি বুঝে নিয়েছি
যে তাঁকে ইখতিয়ার (শাসকষ্ট) দেওয়া হয়েছে।
৪২৩২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছিলেন যে আমি এবং আমার আম্মা (আয়াতে উল্লিখিত) অসহায়দের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
৪২৩৩ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ইবনু আববাস (রাঃ) ‘‘তবে যেসব অসহায় পুরুষ নারী ও শিশু (৪: ৯৮) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন আল্লাহ যাদের অক্ষমতা অনুমোদন করেছেন আমি এবং আমার আম্মা তাদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত সংকুচিত হয়েছে। সাক্ষ্য দিতে তাদের
জিহবা বক্র হয়। হিজরতের স্থান আমা গোত্রকে ছেড়ে
দিয়েছি
এবং তাদের উপর সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
৪২৩৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত উহুদের যুদ্ধ থেকে একদল লোক দল ত্যাগ করে ফিরে এসেছিল এরপর তাদের ব্যাপারে লোকেরা দু’দল হয়ে গেল একদল বলেছে তাদেরকে হত্যা করে ফেল; অপর দল বলছিল তাদেরকে হত্যা করো না তখন নাযিল হলঃ অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এই মদিনা হচ্ছে পবিত্র স্থান আগুন যেভাবে রোপ্যের কালিমা বিদূরিত করে এটাও খবিস ও অসৎদেরকে
বিদূরিত করে।
৪২৩৫ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) সাঈদ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে এই আয়াত সম্পর্কে কূফাবাসীগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করল। (কেউ
বলেন তা মনসূখ কেউ বলেন মনসূখ নয় এরপর এর সমাধানের জন্য) আমি হযরত ইবনু আববাস (রাঃ)-এর কাছে গেলাম
এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম উত্তরে তিনি বললেন আয়াতটি অবতীর্ন হয়েছে এবং এটি শেষের দিকে অবতীর্ন আয়াত; এটাকে কোন কিছু মনসূখ করেনি।
৪২৩৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আয়াতের ঘটনা হচ্ছে এই যে এক ব্যাক্তির কিছু সংখ্যক ছাগল ছিল মুসলিমদের সাথে তাদের সাক্ষাত ঘটায় সে তাদেরকে বলল ‘‘আসসালামু
আলাইকুম’’ মুসলিমরা তাকে হত্যা করল এবং
তার ছাগলগুলো হস্তগত করে ফেলল এই প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা‘আলা এই আয়াত নায়িল করলেন (৪ : ৯৪) ”হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর তখন যাচাই করে নিও এবং যে তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে
ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি
অনুগ্রহ করেছেন। অতএব এখন অনুসন্ধান
করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। ইহজীবনের সম্পদের আকাঙ্খায়-আর
সে সম্পদ হচ্ছে এ ছাগল পেল। ” আতা (রহঃ) বলেন ইবনু (রাঃ)পড়েছেন।
৪২৩৭ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আয়াতটি লেখার নির্দেশ
দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় উম্মে মাকতুম (রাঃ) তাঁর কাছে আগমন
করলেন এবং বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর শপথ যদি আমি জিহাতে সক্ষম হতাম তা হলে অবশ্যই জিহাদ করতাম।
তিনি অন্ধ ছিলেন। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল) -এর উপর ওহী অবতীর্ন করলেন এমতাবস্থায় যে তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল আর তা আমার কাছে এতই
ভারী অনুভুত হচ্ছিল যে আমি আমার উরু
থেতলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। তারপর তাঁর থেকে এই অবস্থা কেটে গেল আর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪: ৯৫)
৪২৩৮ হাফস ইবনু ‘উমর (রহঃ)বারা‘
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেলেন যখন আয়াতটি নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ (রাঃ)-কে ডাকলেন।
তিনি তা লিখে নিলেন। ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) এসে তাঁর দৃষ্টিহীনতার ‘ওযর পেশ করলেন আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ অক্ষমদের ব্যতীত। (৪: ৯৫)
৪২৩৯ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আয়াতটি যখন নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন অমুককে ডেকে
আন। এরপর দোয়াত কাঠ অথবা হাড় খন্ড নিয়ে তিনি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন। তিনি বললেন লিখে নাওঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পেছনে ছিলেন
ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তিনি বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি দৃষ্টিহীন। এরপর
তখনই অবতীর্ন হলঃ (৪ : ৯৫) গৃহে উপবিষ্ট মুসলমান-যাদের কোন সঙ্গত ওযর নেই এবং ঐ মুসলমান
যারা জানো ও মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে -সমান নয়। যারা জানো ও মাল দ্বারা জেহাদ করে আল্লাহ তাদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায়
এবং প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহেদ্বীনকে উপবিষ্টদের
উপর মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন।
৪২৪০ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) অবহিত করেছেন যে বদরের যুদ্ধে
অংশগ্রহণকারী আর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত মু’মিনগণ সমান নয়।
৪২৪১ আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ মুকরী
(রহঃ) আবূল আসওয়াদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে একদল সৈন্য পাঠানোর জন্য মদিনাবাসীদের উপর নির্দেশ জারি করা
হল
এরপর আমাকেও তাতে অমত্মর্ভূক্ত করা হল। আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর
মুক্ত গোলাম ইকরামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে
এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন তারপর বললেন কিছুসংখ্যক মুসলিম মুশরিকদের সাথে থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধে মুশরিকদের দল ভারী করেছিল তীর এসে তাদের কারো উপর পতিত হতো এবং তাকে মেরে ফেলত অথবা তাদের
কেউ মার খেত এবং নিহত তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ন করলেনঃ আবূল আসওয়াদ থেকে লাইস এটা
বর্ণনা করেছেন।
৪২৪২ আবূ নু‘মান (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত সম্পর্কে তিনি
বলেছেন যে আল্লাহর তা‘আলা যাদের অক্ষমতা
কবূল করেছেন আমার মাতা তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
৪২৪৩ আবূ নু‘আইম (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছিলেন তিনি সামি আল্লাহলিমান হামিদা বললেন তারপর সিজদা করার পূর্বে বললেন হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবিয়াকে মুক্ত করুন হে আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে মুক্ত করুন হে আল্লাহ ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে
মুক্ত করুন হে আল্লাহ! অসহায় মু’মিনদেরকে
মুক্ত করুন হে আল্লাহ মুযার গোত্রের উপর কঠিন শাস্তি নাযিল করুন হে আল্লাহ! এটাকে উসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যুগের দূর্ভিক্ষে
রূপান্তরিত করুন।
৪২৪৪ আবূল হাসান ইবনু মুহাম্মদ
মুকাতিল (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আবদুর রাহমান ইবনু ‘আইফ (রাঃ) আহত ছিলেন।
৪২৪৫ ‘ইবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আয়াত সম্পর্কে
তিনি বলেছেন যে সে হচ্ছে ঐ ব্যাক্তি যার নিকট
ইয়াতীম বালিকা থাকে সে তার অভিভাবক এবং তার মুরুবিব এরপর সেই বালিকা সেই অভিভাবকের
অংশিদার হয়ে যায় এমনকি খেজুর বৃক্ষেও।
সে ব্যাক্তি তাকে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকে এবং অন্য কারো নিকট বিয়ে দিতেও অপছন্দ করে
এ আশংকায় যে তার সেই সম্পত্তিতে বালিকা
অংশীদার সেই সম্পত্তিতে তৃতীয় ব্যাক্তি অংশীদার হয়ে যাবে। এভাবে সেই ব্যাক্তি ঐ বালিকাকে
আবদ্ধ করে রাখে। তাই এই আয়াত অবতীর্ন হয়েছে।
৪২৪৬ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আয়াত সম্পর্কে
তিনি বলেছেন যে কোন ব্যাক্তির যাওযিয়তে
কোন মহিলা থাকে কিন্তু স্বামী তার প্রতি আকৃষ্ট নয় বরং তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায় তখন স্ত্রী বলোমার এই এই পাওনামি তোমাকে অব্যাহতি দিচ্ছি এতদুপলক্ষে এ আয়াত নাযিল হল।
৪২৪৭ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আসওয়াদ
(রহঃ) বলেছেন আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ
(রাঃ)-এর মজলিশে ছিলাম সেখানে হুযায়ফা
আসলেন এবং আমাদের নসম্মুখে দন্ডায়মান হয়ে সালাম দিলেন। এরপর বললেন তোমাদের চেয়ে উত্তম গোত্রের উপরও মুনাফিকী এসেছিল পরীক্ষাসরূপ।
আসওয়াদ বললেন সুবহানাল্লাহ! অথচ আল্লাহ
তা‘আলা বলেন ‘‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম
স্তরে থাকবে’’ হুযায়ফা (রাঃ)-এর সত্য প্রকাশে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে উঠলেন।
হুযায়ফা (রাঃ) মসজিদের এক কোনে গিয়ে বসলেন আবদুল্লাহ (রাঃ) উঠে গেল তাঁর শাগরিদরাও চলে গেলেন। এরপর হুযায়ফা
(রাঃ) আমার দিকে একটি পাথর টুকরো নিক্ষেপ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তার নিকট গেলে তিনি
বললেন
তাঁর নিছক হাশিতে আমি আশ্চর্য হলাম অথচ আমি যা বলেছি তা তিনি
বুঝেছেন। এমন গোত্র যারা তোমাদের চেয়ে উত্তম তাদের উপর মুনাফিকী অবতরণ করা হয়েছিল।
তারপর তারা তওবা করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের তওবা কবূল করেছেন।
৪২৪৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ‘‘আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম’’ এটা
বলা কারো উচিত নয়।
৪২৪৯ মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে যে ব্যাক্তি বলে
‘‘আমি ইউনুছ ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম’’ সে মিথ্যা বলে।
৪২৫০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আমি ‘বারা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে সর্বশেষ অবতীর্ন সূরা হচ্ছে ‘‘বারাআ’ত’’ এবং সর্বশেষ অবতীর্ন
আয়াত হচ্ছে-
৪২৫১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
তারিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইহূদীগণ ‘উমর ফারুক (রাঃ)-কে বলল যে আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের মধ্যে অবতীর্ন
হত
তবে আমরা সেটাকে ‘‘ঈদ’’ করে রাখতাম। উমর (রাঃ) বললেন এটা কখন অবতীর্ন হয়েছে কোথায় অবতীর্ন হয়েছে এবং নাযিলের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোথায় ছিলেন আল্লাহর শপথ আমরা
সবাই ‘আরাফাতে ছিলা সেই আয়াতটি হল-
৪২৫২ ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা বলেছেন যে আমরা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এক
সফরে বের হলাম বায়দা কিংবা বায়তুল জায়শ নামক
স্থানে পৌছার পর আমর গলার হার হারিয়ে গেল। তা খোজার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তথায় অবস্থান করলেন এবংঅন্যান্যলোকও তাঁর সাথে অবস্থান করল। সেখানেও কোন
পানি ছিল না এবং তাদের সাথেও পানি ছিল না। এরপর লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে আসল এবং
বলল
আয়িশা (রাঃ) যা করেছেন আপনি তা দেখেছেন কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকিয়ে
রেকেছেন
অথচ তাদের কাছেও পানি নেই আবার সেখানেও পানি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঊরুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) এলেন
এবং বললেন তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এবং সকল লোককে আটকে রেখেচ অথচ সেখানেও পানি নেই আবার তাদের সাথেও পানি নেই।
আয়িশা (রাঃ) বললেন যে আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে দোষারূপ করলেন এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন তা বলেছেন এবং তাঁর অঙ্গুলি দিয়ে আমার কোমরেঠুসি
দিতে লাগলেন আমার কোলে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্থানই আমাকে পালিয়েযেতে ভাধা দিয়েছে। পানিবিহীন অবস্থায় রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুম থেকে উঠলেন। এরপর বলে আল্লাহ তা‘আলা তায়াম্মুমোর
আয়াত নাযিল করলেন তখন উসায়দ ইবনু
হুযায়র বলেছেন হে আবূ বকর-এর বংশধর! এটা
আপনাদের প্রথম মাত্র বরকত নয়। আয়িশা (রাঃ) বললেন যে উটের উপর আমি ছিলাম তাকে আমরা উঠালাম তখন দেখি হারটি তার নিচে।
৪২৫৩ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ)
হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেছেন মদিনায় প্রবেশের
পথে বায়দা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। হযরত আবূ বকর
(রাঃ) এসে আমাকে কঠোরভাবে থাপ্পর লাগালেন এবং বললেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে
আটকে রেখেছ। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় আছেন এতোমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন ফজর সালাত (নামায/নামাজ)-এর
সময় হল এবং পানি খোজ করে পাওয়া গেল না তখন নাযিল হলঃ হে মু’মিনগণ যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য প্রস্ত্তত হবে তখন তোমরা
তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কণুই পর্যন্ত ধৌত করবে। (৫: ৬) এরূপ উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন হে আবূ বকরের বংশধর! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্য
বরকত নাযিল করেছেন। তোমাদের আপাদ মস্তক তাদের জন্য বরকতই বরকত।
৪২৫৪ আবূ নু‘আঈম (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ বলেন যে বদর যুদ্ধের দিন
মিকদাদ (রাঃ) বলেীছলেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইসরাঈলরিা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে যে রকম বলেছিল ‘‘যাও তুমি ও তোমার প্রতিপালক যুদ্ধ কর আমরা এখানে বথোকব’’- আমরা আপনাকে সে রকম বলব না বরং আপনি অগ্রসর
হোন
আমরা সবাই আপনার সাথেই আছি তখন যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৯সা) থেকে সব
দুশ্চিন্তা দূ হয়ে গেল। এই হাদীসটি ওয়াকা-সুফিয়ান থেকে তিনি মুখারিক থেকে এবং তিনি (মুখারিক) তারিক থেকে বর্ণণা করেছেন
যে
মিকদাদ এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সা-কে বলেীছলেন।
৪২৫৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন।
তাঁরা কিসামাত দন্ড সম্পর্কিত হাদীসটি আলোচনা করলেন এবং এর অবস্থা সম্পর্কে আলাপ করলেন তারা মৃত্যুদন্ডের পক্ষে বললেন এবং এও বললেন যে খুলাফায়ে রাশেদ্বীন এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছেন। এরপর
তিনি আবূ কিলাবার প্রতি তাকালেন আবূ কিলাবা তাঁর
পেছনে ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ নামে কিংবা আবূ কিলাবা নামে ডেকে বললেন এই ব্যাপারে তোমার মতামত কি? আমি বললাম বিয়ের পর ব্যভিচার কিসাসবিহীন খুন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষনার কোন একটি ব্যতীত অন্য কোন কারণেকাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া ইসলামে বৈধ বলে আমার জানানেই।
আনবাসা বললেন আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এভাবে
হাদীস বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ হাদীসে আরনিন।)আমি (আবূ কিলাবা) বললাম আমাকেও আনাস (রাঃ)এই হাদীস বর্ণণা করেছেন। তিনি বলেছেন একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এসে
তাঁর সাথে আলাপ করল তারা বলল (প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে) আমরা এদেশের সাথে মিলতে পারছি না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এগুলো আমার উট ঘাস খাওয়ানোর জন্য বের হচ্ছে তোমরা এগুলোর সাথে যাও এবং এদের দুধ ও পে<াব পান কর। তারা ওগোলোর সাথে বেরিয়ে গেল এবং দুধ ও প্রসাব পান
করে সুস্থ হয়ে উঠল এরপর রাখালের
উপর আক্রমন করে তাকে হত্যা করে পশুগুলো লুট করে নিয়ে গেল। মৃত্যুদন্ড ভোগ করার অপরাথসমূহ
তাদের থেকে কতটুকু দূরে ছিল? তারা নর হত্যা করেছেআল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ভয় দেখিয়েছে। আনবাসা আশ্চর্য হয়ে বলল সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম আমার এ হাদীস সম্পর্কে তুমি কি আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেবে? আনবাসা বলল আনাস (রাঃ) আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন আবূ কিলাবা বললেন তখন ‘আনবাসা বলল হে দেশবাসী (অর্থাৎ সিরিয়াবাসী) এ রকম ব্যাক্তিবর্গ যতদিন তোমাদের
মধ্যে থাকবে ততদিন তোমরা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।
৪২৫৬ মুহাম্মদ ইবনু সাল্লাম (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন রুবাই যিনি আনাস (রাঃ)-এর ফুফু এক আনসার মহিলার সামনের একটি বড় দাত ভেঙ্গে ফেলেছিল। এরপর আহত
মহিলার গোত্র এর কিসাস দাবি করে। তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট
এলো
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন আনাস ইবনু মালিক এর চাচা আনাস ইবনু নযর বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর শপথ রুবাই-এর
দাত ভাঙ্গা হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আনাস! আল্লাহর কিতাব তো ‘‘বদলার’’ বিধান দেয়। পরবর্তীতে বিরোধী
পক্ষ রাযী হয়ে মুক্তিপণ বা দিয়ত গ্রহণ করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছে যারা আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ
তা‘আলা তাদের শপথ সত্যে পরিণত করেন।
৪২৫৭ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে যদি কেউ তোমাকে বলে যে তাঁর অবতীর্ণ বিষয়ের যৎসামান্য কিছুও হযরত মুহাম্মদ গোপন করেছেন
তা হলে নিশ্চিত যে সে মিথ্যা বলেছে।
আল্লাহ বলেছেন হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তুমি প্রচার
কর। ’
৪২৫৮ আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে আয়াতটি নাযিল হয়েছে মানুষের
উদ্দেশ্যবিহীন উক্তি আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর শপথ
ইত্যাদি উপলক্ষে।
৪২৫৯ আহমদ ইবনু আবূ রাযা’ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তাঁর পিতা কোন
শপথই ভঙ্গ করতেন না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা শপথ ভঙ্গে কাফফারার বিধান নাযিল করলেন।
আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন শপথকৃত কার্যের
বিপরীতটি যদি আমি উত্তম ধারণা কতিবে আমি আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগটি গ্রহণ করি এবং উত্তম
কাজটি সম্পাদন করি।
৪২৬০ আমর ইবনু আউন (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন যে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধে
বের হতাম
তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না তখন আমরা বলতাম আমরা খিাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে
বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মু‘আর অনুমতি দিলেন এবং পাঠ করলেনঃ
৪২৬১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন মদ
নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান যখন নাযিল হল তখন মদিনাতে পাঁচ প্রকারে মদের প্রচলন ছিল আঙ্গুরের পানিগুলো এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
৪২৬২ ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে তোমরা যেটাকে ফাযীক অর্থাৎ কাচা খুরমা ভিজানোো পানি নাম রেখেছ
সেই ফাযিখ ব্যতীত আমাদের অন্য কোন মদ ছিল না। একদিন আমি দাঁড়ি দাঁড়িয়ে আবূ তালহা অমুক এবং অমুককে তা পান করাচ্ছিলাম। তখনই এক ব্যাক্তি এসে বলল আপনাদের কাছে এ সংবাদ এসেছে কি? তাঁরা বললেন ঐ কি সংবাদ? সে বললঃ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে তাঁরা বললেন হে আনাস! এই পাত্রগুলো ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন যে তাঁরা এতদ প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞাসাও করলেন না এবং এই ব্যাক্তির
সংবাদের পর তাঁরা দ্বিতীয়বার পান করেন নি।
৪২৬৩ সা’দকা ইবনু ফাযল (রহঃ) যাবির
(রাঃ) বলেছেন যে উহুদের যুদ্ধের
দিন ভোরে কিছু লোক মদ পান করেছিলেন এবং সেদিন তারা সবাই শহীদ হয়েছেন। এই মদ্যপান ছিল
তা হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা।
৪২৬৪ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানজালী
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে আমি ‘উমর (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে এরপর হে লোকসকল!
মদপানের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হয়েছে আর তা হচ্ছে পাঁচ প্রকার খুরমা থেকে আঙ্গুর খেজুর থেকে মধু থেকে গম থেকে এবং যা
থেকে আর মদ হচ্ছে যা সুস্থ ও জ্ঞানকে আচ্ছাদিত করে রাখে।
৪২৬৫ আবূ নু‘মান (রহঃ) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে ঢেলে দেয়া মদগুলো ছিল ফাযীখ।
আবূ নু‘মান থেকে মুহাম্মদ সাল্লাম আরও অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন আনাস (রাঃ) বলেছেন আমি আবূ তালহা (রাঃ)-এর ঘরে লোকদেরকে মদ পরিবেশন করছিলাম তখনই মদের নিষেধাজ্ঞা অবতীর্ণ হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একজন ঘোষককে তা প্রচারের নির্দেশ দিলেন। এরপর সে ঘোষণা দিল। আবূ তালহা বলল বেরিয়ে দেখ তো ঘোষণা কিসের? আনাস (রাঃ) বললেন আমি বেরুলাম এবং বললাম যে একজন ঘোষক ঘোষণা দিচ্ছেযে যেনে রাখ মদ হারাম করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আমাকে বললেন যাও এগুলো সব ঢেলে দাও। আনাস (রাঃ) বললেন সেদিন মদিনায় মনোয়ারার রাস্তায় রাস্তায় মদের স্রোত প্রবাহিত
হয়েছিল। তিনি বলেন সে যুগে তাদের
মদ ছিল ফাযীখ তখন একজন বললেন যারা মদপান করে শহীদ হয়েছেন তাঁদের কি অবস্থা হবে? তিনি বলেন এরপর আল্লাহ তা‘আলা
নাযিল করলেন-
৪২৬৬ মুনযির ইবনু ওয়ালিদ (রহঃ)
আনাস (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি খুতবা দিলেন যেরূপামি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেছেন ‘‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা হাসতে খুব কমই এবং
বেশী বেশী করে কাঁদতে’’। তিনি বলেন সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) আপন আপন চেহারা আবৃত করে গুনগুন করে কান্না
জুড়ে দিলেন এরপর এক ব্যাক্তি (আবদুল্লাহ ইবনু হুযায়ফা বা অন্য কেউ) বলল আমার পিতা কে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘‘অমুক’’। তখন এই আয়াত নাযিল হল এই হাদীসটি শুবা থেকে নযর এবং
রাওহ ইবনু উবাদা বর্ণনা করেছেন।
৪২৬৭ ফাযল ইবনু সাহল (রহঃ) ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেছেন কিছু লোক ছিল
তারা ঠাট্টা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করত কেউ বলত আমার পিতা কে? আবার কেউ বলত আমার উষ্ট্রী হারিয়ে গেছে তা কোথায়? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করেছেন
৪২৬৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) সাঈদ
ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ) বলেছেন বাহীরা যে জন্তুর
সত্মন প্রতিমার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত থাকে কেউ তা দোহন করে না। সায়িবা যে জন্তু তারা তার উপাস্যের নামে ছেড়ে দিত এবং তা বহন কার্যে
ব্যবহার করে না। তিনি বলেন আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আমি আমর ইবনু
আমির খুযায়ীকে দোযখের মধ্যে দেখেছি সে তার নাড়িভুড়ি টানছে সে-ই প্রথম ব্যাক্তি যে সাহীবা প্রথা প্রথম চালু করে। ওয়াসীলাহ যে উষ্ট্রী প্রথম বারে মাদী বাচ্চা প্রসব করে এবং দ্বীতীয়বারেও
মাদী বাচ্চা প্রসব করে (যেহেতু নর বাচ্চার
ব্যবধান ব্যতীত একটা অন্যটার সাথে সংযুক্ত হয়েছে সেহেতু) ঐ উষ্ট্রীকে তারা তাদের তাগূতের
উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিত। হাম নর উট যা দ্বারা
কয়েকবার প্রজনন কার্য নেয়া হয় প্রজনন কার্য
সমাপ্ত হলে সেটাকে তারা তাদের প্রতিমার জন্য ছেড়ে দেয় এবং বোঝা বহন থেকে ওটাকে মুক্তি দেয়। সেটির উপর কিছু বহন করা
হয় না। এটাকে তারা ‘হাম’ নামে অভিহিত করত। আমাকে আবূল ইয়ামান বলেছেন যে শুয়াইব ইমাম যুহরী (রাঃ)
থেকে আমাদের অবিহিত করেছেন যুহরী বলেন আমি সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যিব (রহঃ) থেকে শুনেছি তিনি তাকে এ ব্যাপারে অবিহিত করেছেন। সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যিব
বলেছেন
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রকম শুনেছি।
ইবনু হাদ এটা বর্ণনা করেছেন ইবনু শিহাব থেকে। আর তিনি সাঈদ থেকে তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
৪২৬৯ মুহাম্মদ ইবনু আবূ ইয়াকূব
(রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি জাহান্নামকে দেখেছি তার একাংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে ফেলছে বা
প্রবলভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘আমরকে দেখেছি
সে তার নাড়িভুড়ি টানছে সে-ই প্রথম ব্যাক্তি
যে
‘‘সায়ীবা’’ প্রথা চালু করে্
৪২৭০ আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন খুতবা দিলেন বললেন হে লোক সকল! তোমরা
খালি পা
উলঙ্গ এবং খতনাবিহীন অবস্থায় আল্লাহর নিকট একত্রিত হবে তারপর তিনি পড়লেন যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি
করব
প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য আমি তা পালন করবই। আয়াতের শেষ পর্যন্ত (২১: ১০৪) তারপর তিনি
বললেন
কিয়ামত দিবসে সর্ব প্রথম যাকে বস্ত্র পরিধান করানো হবে তিনি
হচ্ছেন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তোমরা জেনে রাখ আমার উম্মতের কতগুলো লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাদেরকে বাম
দিকে অর্থাৎ দোযখের দিকে নেয়া হবে। আমি তখন বলব প্রভু হে! এগুলো তো আমার গুটি কয়েক সাহাবী তখন বলা হবে যে আপনার পর তারা কি জঘন্য কাজ করেছে তা আপানি জানেন না।
৪২৭১ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন আমাদের হাশর করা হবে এবং কিছু সংখ্যক লোককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া
হবে
তখন আমি পুণ্যবান বান্দার অর্থাৎ ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
মত বলব
৪২৭২ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অদৃশ্যের কুঞ্জি পাঁচটি – ‘‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে
রয়েছে
তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জাননা কোন স্থানে
তাঁর মৃত্যু ঘটবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ সর্ববিষয়ে অবহিত। (৩১: ৩৪)
৪২৭৩ আবূ নূ‘মান (রহঃ) জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন যখনই এই আয়াত
নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাহ বললেন ‘‘আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি আবার যখন অবতীর্ণ হল তখনও বললেন আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। এবং
যখন নাযিল হল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটা তুলনামূলকভাবে হালকা তিনি কিংবা বলেছেন।
৪২৭৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যখন আয়াত নাযিল
হল
তখন তাঁর সাহাবাগণ বললেন ‘‘জুলুম করেনি আমাদের মধ্যে এমন কে আছে?’’ এরপর নাযিল হল নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম।
৪২৭৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিনা করেছেন তিনি বলেছেন ‘‘আমি ইউনুস এবং মাত্তা থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত
নয়।
৪২৭৬ আদম ইবনু আবূ আয়াস (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন ‘‘আমি ই্নুস ইবনু মাত্তা আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম’’ এ উক্তি করা কারো জন্য উচিত নয়।
৪২৭৭ ইবরাহীম ইবনু মূসা মুজাদি
ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সূরা ‘‘৩৮ : ২৪’’-এ সিজদা আছে কি না। তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ আছে। এরপর এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- তারপর বললেন যে তিনি
অর্থাৎ দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অন্তর্ভুক্ত ইয়াযিদ ইবনু হারূন মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ এবং সাহল ইবনু ইউসুফ আওয়াম থেকে তিনি মুজাহিদ থেকে একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন মুজাহিদ বললেন যে আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এরপর তিনি বললেন যাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ করা হয়েছে তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অন্তর্ভুক্ত।
৪২৭৮ ‘আমর ইবনু খালিত (রহঃ) জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদেরকে লানত করেছেন যখন তিনি তাদের উপর চর্বি হারাম করেছেন তখন তারা ওটাকে তরল করে
জমা করেছে তারপর বিক্রি করে তার মূল্য
ভোগ করেছে। আবূ আসিম (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন জাবির (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে।
৪২৭৯ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হারাম কাজে মু’মিনদেরকে
বাধা দানকারী আল্লাহর চেয়ে অধিক কেউ নেই এই জন্যই প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সকল অশ্লীলতা হারাম করেছেন আল্লাহর স্ত্ততি প্রকাশ করার চেয়ে প্রিয় তাঁর কাছে অন্য কিছু
নেই
সেজন্যই আল্লাহ আপন প্রশংসা নিজেই করেছেন। আমর ইবনু মুররাহ
(রহঃ) বলেন আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞাসা
করলাম
আপনি কি তা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। আমি বললাম এটাকে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী হিসাবে
বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ।
৪২৮০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘‘পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয়ের পূর্ব পর্যন্ত কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে
না। লোকেরা যখন তা দেখবে তখন পৃথিবীর সকলে
ঈমান আনবে এবং সেটি হচ্ছে এমন সময়
‘‘পূর্ব ঈমান আনেনি এমন ব্যাক্তির ঈমান তার কাজে আসবে না। ’’
৪২৮১ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যতক্ষন না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয় ঘটবে ততক্ষন কিয়ামত হবে না যখন সেদিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে তখন সবাই
ঈমান গ্রহণ করবে এটাই সেই সময়
যখন কোন ব্যাক্তিকে তার ঈমান কল্যাণ সাধন করবে না। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন।
৪২৮২ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ)
আমর ইবনু মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি এটা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ এবং তিনি এটাকে মারফু‘ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অন্যায়কে ঘৃণাকরী আল্লাহর তুলনায় অন্য কেউ নেই এজন্যই তিনি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অশ্লীলতা হারাম করে দিয়েছেন আবার আল্লাহর চেয়ে প্রশংসা প্রিয় কেউ নেই এজন্যই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন।
৪২৮৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন
যে এক ইহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এসে হাজির হল। তার মুখমন্ডলে
চপেটাঘাত খেয়ে বলল হে মুহাম্মদ!
আপনার এক আনসারী সাহাবী আমার মুখমন্ডলে চপেটাঘাত করেছে। তিনি বললেন তাকে ডেকোন। তারা ওকে ডেকে আনল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ‘‘একে চপেটাঘাত করেছ কেন?’’ সে বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এই ইহুদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম যে সে বলছে তারই শপথ যিনি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে মানবজাতির
উপর মনোনীত করেছেন আমি বললাম মুহাম্মদ
-এর উপরও মনোনীত করেছেন কি? এরপর আমার রাগ
এসে গিয়েছিল তাই তাকে চপেটাঘাত করেছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (অন্যের মানহানি হতে পারে কিংবা নিজেদের খেয়াল খুশী মত) তোমরা
আমাকে অন্যান্য নাবী থেকে উত্তম বলো না’’ (বরং আল্লাহর ঘোষণায় আমি তো উত্তম আছই বরং
থাকবোই)
কারণ কিয়ামত দিবসে সব মানুষই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে সর্বপ্রথম আমই সচেতন হয়ে পড়ব সর্বপ্রথম আমই সচেতন হব। তিনি বলেন তখন আমি দেখব যে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশের খুটি ধরে রেখেছেন আমার বোধগম্য হবে না যে তিনি কি আমার পূর্বে সচেতন হবেন নাকি তুর পাহাড়ের সংজ্ঞাহীনতাকে
এর বিনিময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪২৮৪ মুসলিম (রহঃ) সাঈদ ইবনু যায়দ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জাতীয় উদ্ভিদ
মান্না-এর মত এবং এর পানি চোখের রোগমুক্তি।
৪২৮৫ আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূদ দারদা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে চটিয়ে দিয়েছিলেন এরপর রাগান্বিত অবস্থায় উমর (রাঃ) সেখান থেকে প্রস্থান করলেন আবূ বকর (রাঃ) তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে করতে তাঁর পিছু
ছুটলেন কিন্তু উমর (রাঃ) ক্ষমা করলেন না বরং তাঁর সম্মুখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে আসলেন। আবূদ দারদা (রাঃ) বলেন আমরা তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ছিলাম ঘটনা শোনার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমাদের এই সাথী আবূ বকর (রাঃ) অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি
বলেন
এতে উমর লজ্জাবোধ করলেন এবং সালাম করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর পাশে বসে পড়লেন ও ইতিবৃত্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে সব বর্ণনা করলেন। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন। সিদ্দিকে
আকবর (রাঃ) বারবার বলছিলেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি অধিক দোষী ছিলাম। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? তোমরা আমার জন্য আমার সাথীটাকে রাখবে কি? এমন একদিন ছিল যখন আমি বলেীছলাম ‘‘হে লোক সকল! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন তোমরা তোমরা বলেছিলেন ‘‘তুমি মিথ্যা বলেছ’’ আর আবূ বকর (রাঃ) বলেছিল ‘‘আপনি সত্য বলেছেন। ’’ ইমাম আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন
অগ্রে কল্যাণ লাভ করেছে।
৪২৮৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইসরাঈলীদেরকে
নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে ‘‘নতশিরে প্রবেশ
কর এবং বল ক্ষমা চাই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করব। ’’ (৭: ১৬১) এরপর তারা তার বিপরীত
করল
তারা নিজেদের নিতম্বে ভর দিয়ে মাটিতে বসে বসে প্রবেশ করল এবং
বলল যবের মধ্যে বিচি চাই।
৪২৮৭ আবূল য়ামান (রহঃ) ইবনু আববাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন ‘উয়াইনা ইবনু হিসন ইবনু হুযাইফা এসে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হুর ইবনু
কায়সের কাছে অবস্থান করলেন। উমর (রাঃ) যাদেরকে পার্শ্বে রাখতেন হুর হলেন তাদের মধ্যে
একজন। কারীবৃন্দ যুবক-বৃদ্ধ সকলেই
উমর ফারূক (রাঃ)-এর মজলিশের সদস্য এং উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর ‘উয়াইনা তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রকে
ডেকে বললেন এই আমীরের কাছে তো তোমার একটা
মর্যাদা আছে সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর
কাছে প্রবেশের একটা অনুমতি নিয়ে দাও। তিনি বললেন হ্যাঁ তাঁর কাছে আমি আপনার প্রবেশের প্রার্থনা করব। ইবনু আববাস (রাঃ)
বলেন
এরপর হুর অনুমতি প্রার্থনা করলেন ‘‘উয়াইনা জন্য এবং উমর (রাঃ)
অনুমতি দিলেন। ‘উয়াইনা উমরের কাছে গিয়ে বললেন হ্যাঁ আপনি তো আমাদেরকে বেশী বেশী দানও করেন না এবং আমাদের মাঝে
ন্যায় বিচারও করেন না। উমর (রাঃ) ক্রোধান্বিত হলেন এবং তাকে কিছু একটা করাতে উদ্যত
হলেন। তখন হুর বললেন আমিরুল মু’মিনীন!
আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলেছেন ‘‘ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর’ সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞ দিগকে
উপেক্ষা কর’’ আর এই ব্যাক্তি তো নিঃসন্দেহে অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত। (হুর যখন তাঁর নিকট
এটা তিলাওয়াত করলেন তখন আল্লাহর কসম তখন উমর (রাঃ) আয়াতের অমান্য করেননি। উমর আল্লাহর
কিতাবের বিধানের সামনে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতেন অর্থাৎ তা অতিক্রম করতেন না।
৪২৮৮ ইয়াহইয়া (রহঃ)আবদুল্লাহ ইবনু
যুবায়র (রাঃ) বলেছেন আয়াতটি আল্লাহ
তা‘আলা মানুষের চরিত্র সম্পর্কেই নাযিল করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ বলেন আবূ উসামা আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র বলেছেন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
মানুষের আচরণ সম্পর্কে ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৪২৮৯ মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম
(রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম সূরা আনফাল সম্পর্কে তিনি বললেন বদরের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।
৪২৯০ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত সম্পর্কে তিনি
বলেছেন যে তারা হচ্ছে বনী আবদুদদার গোষ্ঠীর
একদল লোক।
৪২৯১ ইসহাক (রহঃ) আবূ সাঈদ ইবনু
মুয়াল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি একদা সালাত (নামায/নামাজ) ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে
গেলেন এবং আমাকে ডাকলেন সালাত (নামায/নামাজ)
শেষ না করা পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাইনি তারপর গেলাম তিনি বললেন তোমাকে আসতে বাধা দিল কিসে? আল্লাহ কি বলেননি ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে ডাক দিলে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে ডাকে সাড়া
দেবে?’’
তারপর তিনি বললেন আমি মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বে তোমাকে একটি বড় সওয়াবযুক্ত সূরা
শিক্ষা দেব। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমি তাঁর নিকট প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। মু‘আয
বলেনহাফস শুনেছেন একজন সাহাবী আবূ
সাঈদ ইবনুল মু‘আল্লাকে এ হাদীস বর্ণনা করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-সেই সূরাটি হচ্ছে
সাত আয়াত বিশিষ্ট ও পুনঃ পুনঃ উল্লেখ্য আবৃত।
৪২৯২ আহমদ (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আবূ জাহেল বলেছিল ‘‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে মর্মন্তুদ
শাস্তি দাও। তখনই নাযিল হল- -আল্লাহ এমন নহেন যে তুমি তাদের মধ্যে থাকবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ
এমনও নহেন যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে
অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন এবং তাদের কি-বা
বলবার আছে যে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন
না যখন তারা লোকদের মসজিদুল হারাম থেকে নিবৃত করে? (যদিও তারা এর তত্ত্বাবধায়ক নয় মুত্তাকীগণই এর তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা অবগত নয়) (৮: ৩৩-৩৪)
৪২৯৩ মুহাম্মদ ইবনু নযর (রহঃ) আনাস
ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন আবূ জাহেল বলেছিল।
এরপর নাযিল হল-(৮ : ৩৩) অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি
তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও
তাদের উপর আযাব দেবেন না। (৮ : ৩৪) আর তাদের মধ্যে এমন কি বিষয় রয়েছে যার ফলে আল্লাহ তাদের উপর আযাব দান করবেন না। অথচ তারা মসজিদে-হারামে
যেতে বাধাদান করে অথচ তাদের সে
অধিকার নেই। এর অধিকার তো তাদেরই রয়েছে যারা পরহেযগার। কিন্তু তাদের অধিকাংশই সে বিষয়ে
অবহিত নয়।
৪২৯৪ হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক ব্যাক্তি তাঁর
কাছে এসে বলল হে আবূ আবদুর রহমান! আল্লাহ
তাঁর কিতাবে যা উল্লেখ করেছেন আপনি কি তা শোনেন না? মু’মিনদের দু’দল দন্ধে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মিমাংশা
করে দেবে সুতরাং আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী যুদ্ধ করতে কোন বস্ত্ত আপনাকে নেষেধ
করছে?
এরপর তিনি বললেন হে ভাতিজা! এইায়াতের তাবিল বা ব্যাখ্যা করে যুদ্ধ না করা আমার
কাছে অধিক প্রিয় ‘‘যে স্বেচ্ছায় মু’মিন খুন করে ’’ আয়াতে তাবিল করার তুলনায়। সে ব্যাক্তি বলল আল্লাহ বলেছেন ‘‘তোমরা ফিতনা নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ করবে ’’ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমরা তা করেছি
যখন ইসলাম দুর্বল ছিল। ফলে লোক তার দ্বীন নিয়ে ফিতনায় পড়ত হয়ত কাফেররা তাকে হত্যা করত নতুবা বেঁধে রাখত ক্রমেক্রমে ইসলামের প্রসার ঘটল এবং ফিতনা থাকল না। সে লোকটি
যখন দেখল যে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
তারুদ্দেশ্যের অনুকুল হচ্ছেন না তখন সে বলল যে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন যে ‘আলী (রাঃ) এবং ‘উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আমার কোন বক্তব্য নেই তবে ‘উসমান (রাঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ক্ষমা করে দিয়েছেন
কিন্তু তোমরা তাঁকে ক্ষমা করতে রাযি নও আর ‘আলী (রাঃ) তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচাতো ভাই এবং
জামাতা
তিনি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন ঐ উনি হচ্ছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা যেথায় তোমরা তাঁর ঘর দেখছ বলেছেন কিংবা বলেছেন।
৪২৯৫ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) সা‘ঈদ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন ইবনু উমর (রাঃ) আমাদের কাছে এলেন। বর্ণনাকারী অথবা শব্দ বলেছেন।
এরপর এক ব্যাক্তি বলল ফিতনা সম্পর্কিত
যুদ্ধের ব্যাপারে আপনার রায় কি? আবদুল্লাহ ইবনু
উমর (রাঃ) বললেন ফিতনা কি তা তুমি
জানো?
মুহাম্মদ মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন। সুতরাং তাদের কছে
যাওয়া ছিল ফিতনা তার সঙ্গে গিয়ে
যুদ্ধ করা তোমাদের রাজত্বের জন্য যুদ্ধ করার সমতুল্য নয়।
৪২৯৬ ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে (আল্লাহর
বাণীঃ) যখন নাযিল হল। এরপর দশজন কাফেরের বিপরীত একজন মুসলিম থাকলেও পালায়ন না করা ফরয
করে দেয়া হল। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ) আবার বর্ণনা করেন দু’শ জন কাফেরের বিপরীত ২০জন মুসলিম থাকলেও পলায়ন করা যাবে না।
তারপর নাযিল হল- আল্লাহ এখন তোমাদের ভার লাঘব করলেন। তিনি অবগত আছেন যে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে সুতরাং তোমাদের মধ্যে একশ’জন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের
উপর বিজয়ী হবে। আর তোমাদের মধ্যে এক সহস্র থাকলে আল্লাহ অনুজ্ঞাক্রমে তারা দু’সহস্রের
উপর বিজয়ী হবে। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (৮: ৬৬) এরপর দু’শ কাফেরের বিপক্সে
এক’ম মুসলিম থাকলে পলায়ন না করা (আল্লাহ পাক) ফরয করে দিলেন। সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা
(রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে (তাতে কিছু
অতিরিক্তাছে যেমন)নাযিল হল সুফিয়ান বলেন ইবনু শুবরুমা বলেছেন সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ব্যাপারটাও আমি এরকম মনে
করি।
৪২৯৭ ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ সুলামী
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন যখন আয়াতটি নাযিল
হল তখন দশজনের বিপরীত একজনের পলায়নও নিষিদ্ধ করা হল তখন এটা মুসলমানদের উপর দুৎসাধ্য মনে হলে পরে তা লাঘবের বিধান
এলো(৮ : ৬৬) ”এখন বোঝা হালকা করে দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর এবং তিনি জেনে
নিয়েছেন যে তোমাদের মধ্য দূর্বলতা রয়েছে।
কাজেই তোমাদের মধ্যে যদি দৃঢ়চিত্ত একশ লোক বিদ্যমান থাকে তবে জয়ী হবে দু’শর উপর। আর যদি তোমরা এক হাজার হও তবে আল্লাহর
হুকুম অনুযায়ী জয়ী হবে দু’হাজারের উপর আর আল্লাহ রয়েছেন দৃঢ়চিত্ত লোকদের সাথে। ” ইবনু
আববাস (রাঃ) বলেন আল্লাহ এদেরকে
যখন সংখ্যার দিক থেকে হাল্কা করে দিলেন সেই নমনীয়তার সমপরিমাণ তাদের ধর্ম ও হ্রাস পেল।
৪২৯৮ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) বারা ইবনু
‘আযিব (রাঃ) বলেছেনঃ সর্বশেষে যে আয়াত অবতীর্ণ হয় তা হল লোকে আপনার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়; বলুন! পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যাক্তি সম্বন্ধে আল্লাহ তোমাদের
ব্যবস্থা জানোাচ্ছেন। (৪: ১৭৬) এবং সর্বশেষে যে সূরাটি অবতীর্ণ হয় তা হল সূরায়ে বারাআত।
৪২৯৯ সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবূ বকর (রাঃ) নবম হিজরীর হাজ্জে (হজ্জ) আমাকে এ নির্দেশ দিয়ে
পাঠিয়ে দেন যে আমি কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের
সঙ্গে মিনায় (সমবেত লোকদের) এ ঘোষণা করে দেই যে এ বছরের পর কোস মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করা জন্য আসবে না। আল্লাহর
ঘর উলঙ্গ অবস্থা তাওয়াফ করবে না। হুমায়দ ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে পুনরায় এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে তুমি সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন মীনায় অবস্থানকারীদের মাঝে
(কুরবানীর পর) আলী (রাঃ) আমাদের সাথে ছিলেন এবং সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করলেন এ বছরের পর কোস মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করা জন্য আসবে না। কেউ উলঙ্গ
অবস্থায় ঘর তাওয়াপ করবে না। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ অর্থ তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
৪৩০০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে সেই কুরবানীর দিন ঘোষণাকারীদের সাথে মীনায় এ (কথা) ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে এ বছরের পর আর কোন মুশরিক (মক্কায়) হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে
না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থায় কাউকে তাওয়াফ করতে দেওয়া হবে না। হুমায়দ (রাঃ) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরে আলী ইবনু আবূ তালিবকে
পাঠালেন এবং বললেনঃ সূরায়ে বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন আলী (রাঃ) আমাদের সাথেই মীনাবাসীদের মধ্যে সূরায়ে বারাআত কুরবানীর
দিন ঘোষণা করলেন। বললেন এ বছরের পরে কেউ
হাজ্জ (হজ্জ) (মক্কা) করতে আসতে পারবে না। এবং উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘরকে তাওয়াফ করবে
না।
৪৩০১ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জ)
পূর্বের বছর আবূ বকর (রাঃ)-কে যে হাজ্জের (হজ্জ) আমীর বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন সেই হাজ্জে (হজ্জ) তিনি যেন লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেন এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে আসতে পারবে না এবং
উলঙ্গ অবস্থায় কেউ আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান বলেন
(আবূ হুরায়রা (রাঃ) হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে হাজ্জে (হজ্জ) আকবেরর দিন হল কুরবানীর দিন।
৪৩০২ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ)
যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আমরা হুযায়ফা
(রাঃ)-এর কাছে ছিলাম তখন তিনি বলেন এ আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে শুধু তিনজন মুসলমান
ও চারজন মুনাফিক চেঁচে আছে। ইত্যবসরে একজর বেদুঈন বলল আপনারা সকলে মুহাম্মদ -এর সাহাবী। আমাদের এমন লোকদের অবস্থা
সম্পর্কে খবর দিন যারা আমাদের ঘরে সিদ কেটে ঘরের অতি মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে
যাচ্ছে
কেননা তাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন তারা সবাই ফাসীক ও অন্যায়কারী। হ্যাঁ তাদের মধ্যে হতে চার ব্যাক্তি এখনও জীবতি-তাদের মধ্যে একজন এত
বৃদ্ধ হয়ে পড়েছে যে শীতল পানি পান
করার পর তার শীতলতাটুকুর অনুভূতি সে উপলব্ধি করতে পারে না।
৪৩০৩ হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন তোমাদের মধ্যে অনেকের পুঞ্জিভূত সম্পদ (যার যাকাত আদায় করা হয়
না) কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সর্পে পরিণত হবে।
৪৩০৪ কুতায়বা ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ)
যায়িদ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি একদা রাবাযা
নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি (তাকে) জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কিসের জন্য এ স্থানে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন আমি সিরিয়া ছিলাম তখন আমি [মুআবিয় (রাঃ)-এর সামনে] এ আয়াত পাঠ করে শোনালাম।
‘‘যারা স্বর্ণ রোপ্য পঞ্জিভূত করে রাখে এবং
আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদের যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তির খবর দিন। ’’ (৯: ৩৪) মু‘আবিয়া (রাঃ) এ আয়াত শুনে বললেন এ আয়াত আমাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়নি। বরং আহলে কিতাবদের (ইহুদী
ও নাসারা) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি (জবাবে) বললাম এ আয়াত আমাদের ও তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (এ তর্ক বিতর্কের
কারণে সব কিছু বর্জন করে আমি এখানে চলে এসেছি। )
৪৩০৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব
(রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেছেন
আল্লাহর যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করে সেদিন যেভাবে কাল (যামানা)
ছিল তা আজও অনুরূপভাবে বিদ্যমান। বারমাসে এক বছর তন্মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ যিলহাজ্জ ও মুহাররম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামিদিউসসানী ও
সাবান মাসদ্বয়ের মধ্যবর্তী।
৪৩০৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে বলেছেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (সওর) গুহায়
ছিলাম। তখন আমি মুশরিকদের পদচারণা দেখতে পেয়ে [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে] বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি তাদের (মুশরিকদের) কেউ পা উঠায় তাহলে আমাদের দেখে ফেলবে। তখন
তিনি বললেন এমন দু’জন সম্পর্কে
তোমার কি ধারণা যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ।
৪৩০৭ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন তাঁর ও ইবনু
যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে (বায়আতের প্রেক্ষিতে) মতভেদ ঘটল তখন আমি বললাম তার পিতা যুবায়ের তার মাতা আসমা (রাঃ) ও তার খালায়েশা (রাঃ) তার নানা আবূ বকর (রাঃ) ও তার নানী সুফিয়া (রাঃ)। আমি সুফিয়ানকে
বললাম
এর সনদ বর্ণনা করুন। তিনি বললেন এবং ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলার আগেই অন্য এক ব্যাক্তি তাকে অন্যদিকে
আকৃষ্ট করল।
৪৩০৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন ইবনু আববাস
(রাঃ) ও ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে বায়আত নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হল তখন আমি ইবনু আববাসের কাছে গিয়ে বললাম আপনি কি আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করে ইবনু যুবায়রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান? তখন তিনি বললেন আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি এ কাজ তো ইবনু যুবায়র ও বনী ইমাইয়ার জন্যই আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে
রেখেছেন। আল্লাহর কসম! কখনো আমি তা হালাল মনে করব না (আবূ মূলায়কা বলেন) তখন লোকজন ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলল আপনি ইবনু যুবায়রের পক্ষে বায়আত গ্রহণ করুন। তখন ইবনু আববাস
বললেন
তাতে ক্ষীতর কি আছে? তিনি এটার জন্য যোগ্যতম ব্যাক্তি। তাঁর পিতা যুবায়র তো নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহায্যকারী ছিলেন তার নানা আবূ বকর (রাঃ) হুযুর -এর সওর গুহার সহচর ছিলেন। তার
মা আসমা
যার উপাধি ছিল খাতুন নেতাক। তার খালা আয়িশা (রাঃ) উম্মূল মু’মিনীন
ছিলেন
তার ফুফু খাদিজা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর স্ত্রী ছিলেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফুফু সফিয়া ছিলেন তার দাদী। এ ছাড়া তিনি ইবনু যুবায়রের) তো ইসলামী
জগতে নিষ্কলুষ ব্যাক্তি ও কুরআনের ক্বারী। আল্লাহর কসম! যদি তারা (বনী উমাইয়অ) আমার
সাথে সম্পর্ক রাখে তবে তারা আমার নিকটত্মীায়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রাখল। আর যদি তারা
আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে তবে তারা সমকক্ষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তিরই রক্ষণাবেক্ষণ করল।
ইবনু যুবায়র বনী আসা’দ বনী তুআইত বনী উসামা-এসব
গোত্রকে আমার চেয়ে নিকটতম করে নিয়েছেন। নিশ্চই আবিলাস-এর পুত্র অর্থাৎ আবদুল মালিক
ইবনু মারওয়ান অহংকারী চালচলন আরম্ভ করেছে। নিশ্চই তিনি অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ) তার লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন।
৪৩০৯ মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দ ইবনু
মায়মূনা (রহঃ) ইবনু আবূ মূলায়কা (রহঃ) বলেন আমরা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন তোমরা কি ইবনু যুবায়রের বিষয়ে বিষ্মিত হবে না? তিনি তো আর এ কাজ (খিলাফতের বিষয়) স্থিতিশীল। আমি বললাম আমি অবশ্য মনে মনে তার ব্যাপাচচিন্তা ভাবনা করি কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) কিংবা উমর (রাঃ)-এর ব্যাপাএেতটুকু চিন্তা-ভাবনা
করিনি। সব দিক থেকে তার চেয়ে তারা উভয়ে উত্তম ছিলেন। আমি বললাম তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফুফু সফিয়া (রাঃ)-এর
সন্তান
যুবায়রের ছেলে আবূ বকর (রাঃ)-এর নাতি। খাদিজা (রাঃ)এর ভাতিজা আয়িশা (রাঃ)-এর বোন আসমার ছেলে। কিন্তু তিনি (নিজেকে বড় মনে
করে) আমার থেকে দূরে সরে থাকেন এবং তিনি আমার সহযোগিতা কামনা করেন না। আমি বললাম আমি নিজে থেকে এজন্য তা প্রকাশ করি না যে হয়ত তিনি তা প্রত্যঅখান করবেন। এবংামি মনে করি না যে তিনি এটা ভাল করেছেন। অগত্যা বণী উমাইয়অর নেতৃত্ব ও শাসন আমার
কাছে অন্যদের থেকে উত্তম।
৪৩১০ মুহাম্মদ ইবনু কাছীর (রহঃ)
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ
করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চার জনের মধ্যেবণ্টন করে দিলেন। আর বললেন তাদেরকে (এর দ্বারা) আকৃষ্ট করছি। তখন এক ব্যাক্তি বলল আপনি সঠিকভাবে দান করেননি। এতদশ্রবনে তিনি বললেন এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন সব লোক জন্ম নেবে যারা দ্বীন থেকে
বের হয়ে যাবে।
৪৩১১ বিশর ইবনু আবূ খালিদ আবূ মুহাম্মদ
(রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন আমাদের সা’দকা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল তখন আমরা পরিশ্রমের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদিন আবূ ‘আকীল
(রাঃ) অর্ধ সা’ খেজুর (দান করার উদ্দেশ্যে) নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যাক্তি (আবদুর
রহমান ইবনু আউফ তার চেয়ে অধিক মালামাল (একই উদ্দেশ্যে) নিয়ে উপস্থিত হলেন। (এগুলো দেখে)
মুনাফিকরা সমালোচনা করতে লাগল আল্লাহ এ ব্যাক্তির
সা’দকার মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যাক্তি [আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)] শুধু মানূষ
দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় -‘‘মু’মিনদের মধ্যে
যারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সা’দকা প্রদান করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতীরেকে কিছুই পায় না তাদেরকে যারা দোষারূপ করে ও বিদ্রুপ করে আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ
করেন;
তাদের জন্য রয়েছে অতি মর্মন্তুদ শাস্তি। ’’ (৯: ৭৯)
৪৩১২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দকার করার আদেশ প্রদান করলে আমাদের মধ্য হতে কেউ কেউ অত্যন্ত
পরিশ্রম করে (গম অথবা খেজুর ইত্যাদি) এক
মুদ্দ আনতে পারত কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে কারো কারো এক লাখ পরিমাণ (দিরহাম) রয়েছে।
আবূ মাসঊদ (রাঃ) যেন (এ কথা বলে) নিজের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
৪৩১৩ উবায়েদ ইবনু ইসমাঊল (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় (মুনাফিক) মারা গেল তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কোর্তা দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোর্তাটি
প্রদান করলেন এরপর (আবদুল্লাহ তার পতিার)
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়ানোর জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে আবেদন জানালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
পড়ানোর জন্য (বসা থেকে) উঠে দাঁড়ালেন ইত্যবসরে উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাপড় টেনে ধরে আবেদন করলেন হে আল্লাহর রাসূল
আপনি কি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব (আল্লাহ তা‘আলা) আপনাকে তার জন্য দোআ করতে নিষেধ
করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছেন। আর আল্লাহ
তা ইরশাদ করেছেন ‘‘তুমি তাদের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তর বারও
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তুব আমি তাদের ক্সমা করব না। ’’ সুতরাং আমি তার জন্য
সত্তর বারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমর (রাঃ) বললেন সে তো মুনাফিক শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানোযার
সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালেন এরূপ এ আয়াত অবতীর্ণ
হয়। ‘‘তাদের মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি কখনো তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না।
৪৩১৪ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন আবদুল্লাহ
ইবনু উবায় ইবনু সালুল মারা গেল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়বার জন্য আহবান করা হল। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (জানাযার জন্য) উঠে দাঁড়ালে আমি তাঁর কাছে গিয়ে আরজ করলাম ইয়অ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি ইবনু উবায়ের
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়াবেন? অথচ যে লোক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে। উমর ইবনু খাত্তাব
(রাঃ) বলেন আমি তার কথাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে এক একটি করে উল্লেখ করেছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন হে উমর আমাকে যেতে দাও।
আমি বারবার বলাতে তিনি বললেন আল্লাহর আমাকে
ইখতিয়ার দিয়েছেন। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি যদি বুঝতে পারি যে সত্তরবারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আল্লাহ তা‘আলা
ক্ষমা করে দিবেন তবে আমি সত্তরবারের
অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবো। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং (জানাযা) থেকে প্রত্যাবর্তন করে আসার পরই সূরা
বারাআতের এ আয়াত অবতীর্ণ হয় ‘‘তাদের
কেউ মারা গেলে কখনো তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। এরা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল) -এর প্রতি অবিশ্বাস করেছে। এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। (৯: ৮৪)
উমর (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সামনে আমার এ দুৎসাহসের জন্য পরে আমি চিন্তা করে আশ্চর্যান্বিত হতাম।
বস্ত্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) অধিক জ্ঞাত।
৪৩১৫ ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন (মুনাফিক) ইবনু আবদুল্লাহ উবায় মারা গেল তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন। তিনি {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } তাঁর নিজ জামাটি তাকে দিয়ে দিলেন এবং এর দ্বারা তার পিতার কাফনের
ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তখন ইবনু উমর খাত্তাব (রাঃ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাপড় ধরে আরজ করলেন {ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } আপনি কি তার (আবদুল্লাহ ইবনু উবায়)-এর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করবেন? সে তো মুনাফিক অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের (মুনাফিকদের) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করতে আপনাকে নিষেধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (হে উমর!) আল্লাহ আমাকে ইখীতয়ার দিয়েছেন অথবা বলেছেন আল্লাহ আমাকে অবহিত করেছেন এবং বলেছেন ‘‘আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর না করেন আপনি যদি সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবুও আল্লাহ কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। ’’ (৯: ৮০) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আমি সত্তরবারের চেয়েও বেশীবার ক্ষমা প্রার্থনা করবো। বর্ণনাকারী
বলেন
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও তাঁর সাথে জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম।
এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হল ‘‘তাদের (মুনাফিকদের)
কেউ মারা গেলে আপনি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) কখনো আদায় করবেন না এবং তার কবরের
পার্শ্বেও দাঁড়াবেন না। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) কে অস্বীকার করেছে এবং পাপাচারী
অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে। (৯: ৮৪)
৪৩১৬ ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
কা‘আব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি কা‘ব ইবনু
মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি তিনি যখন তাবুকের
যুদ্ধে পিছনে রয়ে গেলেন (অংশ গ্রহণ করলেন না) আল্লাহর কসম! তখন আল্লাহ আমাকে এমন এক নিয়ামক দান করেন যা মুসলমান
হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এতবড় নিয়ামত পাইনি। তা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে সত্য কথা প্রকাশ করা। আমি তাঁর কাছে মিথ্যা বলিনি। যদি মিথ্যা বলতাম তবে অন্যান্য (মুনাফিক ও)মিথ্যাবাদী ধ্বংস হয়েছে আমিও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে সময় ওহী নাযিল হল ‘‘তোমরা তাদের
নিকট (মদিনায়) ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না। ’’ (৯:
৯৫)
৪৩১৭ মুয়াম্মিল ইবনু হিশাম (রহঃ)
সামুরা ইবনু জন্দুর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন রাতে দু’জন ফেরেশতা
এসে আমাকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করলেন। এরপর আমরা এমন এক শহরে পৌছলাম যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইট দ্বারা নির্মিত। সেখানে এমন কিছু সংখ্যক
লোকের সাথোমাদের সাক্ষাত ঘটর যাদের শরীরের
অর্ধেক খুবই সুন্দর যা তোমরা কখনো দেখনি। এবং আর এক অর্ধেক এমন কুৎসিত যা তোমরা কখনো
দেখনি। ফেরেশতা দু’জন তাদেরকে বললেন তোমরা ঐ নহরে গিয়ে ডুব দাও। তারা সেখানে গিয়ে ডুব দিয়ে আমাদের
নিকট ফিরে এল। তখন তাদের বিশরী চেহারা সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল এবং তারা সুন্দর চেহারা
লাভ করলো। ফেরেশতাদ্বয় আমাকে বললেন এটা হল ‘জান্নাতে আদন’ এটাই হল আপনার আসল আরামস্থল। ফেরেশতাদ্বয়
(বিস্তারিত বুঝিয়ে) বললেন (আপনি) যেসব লোকের
দেহের অর্ধেক সুন্দর এবং অর্ধেক বিশরী (দেখেছেন) তারা ঐ সকল লোক যারা দুনিয়াতে সৎকর্মের সাথে অসৎকর্ম মিশিয়ে
ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন (এবং তারা অতি সুন্দর চেহারা লাভ করেছে)।
৪৩১৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ)
মূসা য়্যাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যখন আবূ তালিবে মৃত্যুর আলামত দেখা দিল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে গেলেন। এ সময় আবূ জেহেল এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াও
সেখানে বসা ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে চাচা! আপনি পড়ুন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!। আপনার মুক্তির জন্য
আল্লাহর নিকট এ নিয়ে আবেদন পেশ করব্ এ কথা শুনে আবূ জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনু উমইয়া বলল হে আবূ তালিব! তুমি কি মৃত্যুর সময় (তোমার পিতা) আবদুল মুত্তালিবের
ধর্ম ত্যাগ করতে চাও? নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে চাচা! আমি
আপনার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হবে ততক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা
করতে থাকবো। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‘‘আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মু’মিনদের জন্য সঙ্গত নয় যখন এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে তারা জাহান্নামী। ’’ (৯: ১১৩)
৪৩১৯ আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু কা‘আব (রহঃ) থেকে বর্ণিত কা‘আব (রাঃ) যখন
দৃষ্টিহীন হয়ে পড়লেন তখন তাঁর ছেলেদের
মধ্যে যার সাহায্যে তিনি চলাফেরা করতেন তিনি বলেন আমি (আমার পিতা)
কা‘আব ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে তার ঘটনা বর্ণনায়। এ আয়াত এর তাফসীর সম্পর্কে বলতে
শুনেছি। তিনি তার ঘটনার সর্বশেষে বলতেন আমি আমার তওবা কবুল হওয়ার খুশিতে আমার সকল মাল আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল) -এর পথে দান করতে চেয়েছছিলাম। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (সকল মাল সা’দকা করো না) কিচু সা’দকা করো এবং কিছু নিজের জন্য
রেখে দাও। এটাই তোমার জন্য কল্যাণকর হবে।
৪৪১৫ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সাথে বসেছিলেন। এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ঈমান কী? তিনি বললেন “আল্লাহ্তে ঈমান আনবে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের প্রতি ঈমান আনবে এবং (কিয়ামতে) আল্লাহর দর্শন লাভ ও পুনরুত্থানের
ওপর ঈমান আনবে। ” লোকটি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইসলাম কী? তিনি বললেন ইসলাম (হল) আল্লাহর ইবাদত করবে ও তার সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক
সাব্যস্ত করবে না এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে ফরয যাকাত দিবে ও রমযানের সিয়াম পালন করবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইহ্সান কী? তিনি বললেন ইহ্সান হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত এমন একাগ্রতার সাথে করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও তবে (মনে করবে) আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন। লোকটি আরও জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কখন কিয়ামত সংঘটিত
হবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে বেশি জাননা। তবে আমি তোমার কাছে এর (কিয়ামতের) কতগুলো লক্ষণ
বলছি। তা হল যখন দাসী তার মনিবকে প্রসব
করবে
এটা তার (কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার) একটি নিদর্শন। আর যখন দেখবে নগ্নপদ ও নগ্নদেহ লোকেরা মানুষের নেতা হবে এও তার একটি লক্ষণ। এটি ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানেন নাঃ (১) ‘কিয়ামতের জ্ঞান কেবল
আল্লাহর নিকটই রয়েছে। (২) তিনই বৃষ্টি বর্ষণ করান (৩) তাঁরই জ্ঞানে রয়েছে মাতৃগর্ভে কি আছে। এরপর লোকটি চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন তাকে আমার নিকট
ফিরিয়ে আন। সাহাবাগণ তাঁকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন কিন্তু কিছুই দেখতে পাননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
তিনি জিবরাঈল লোকদের তাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন।
৪৪১৬ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন গায়েবের [১] চাবি পাঁচটি। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ কিয়ামতের
জ্ঞান কেবল আল্লাহ্ তা’আলারই রয়েছে। ১ অদৃশ্যঃ দৃষ্টির অন্তরালের বস্তু যা ইন্দ্রিয়ানুভূতির অতীত যেমন আল্লাহ্ ফেরেশতা আখিরাত জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি।
৪৪১৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ তা’আলা বলেন আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব সামগ্রী তৈরী করে রেখেছি যা কোন নয়ন দর্শন করেনি কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন অন্তকরণের চিন্তায় আসেনি। আবূ
হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন তোমরা চাইলে
(প্রমাণ স্বরূপ) এ আয়াত তিলাওয়াত করঃ কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত
রাখা হয়েছে। সুফিয়ান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর
কাছে জিজ্ঞেস করা হল আপনি কি এ হাদিস
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন তা নয়তো কি? আবূ মু’আবীয়া (রহঃ) আবূ সালিহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) “আলিফ” এবং লম্বা ‘তা’ সহ পাঠ করেছিলেন।
৪৪১৮ ইসহাক ইবনু নাস্র (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ তা’আলা বলেন আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করে রেখেছি সঞ্চিতরুপে যা কোন নয়ন দর্শন কনেনি কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন ব্যাক্তির মনেও তার কল্পনা সৃষ্টি
হয়নি। আর যা তোমাদের অবহিত করা হয়েছে তা ছাড়া। তারপর এ আয়াত পাঠ করলেন কেউ জাননা তাদের জন্য নয়ন শীতলকারী কী লুক্কায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।
৪৪১৯ ইব্রাহীম ইবনুল মুন্যির (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মু’মিনের জন্য আমই ঘনিষ্ঠতম। তোমরা ইচ্ছা
করলে এ আয়াত পাঠ করতে পার। “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদের নিকট তাদের
নিজেদের চাইতে বেশি ঘনিষ্ঠ। ” সুতরাং কোন মু’মিন কোন মাল-সম্পদ রেখে গেলে তার নিকটআত্মীয়
সে যে-ই হোক হবে তার উত্তরাধিকারী আর যদি ঋণ অথবা অসহায় সন্তানাদি রেখে যায় সে যেন আমার কাছে আসে আমি তার অভিভাবক।
৪৪২০ মুয়াল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর আযাদকৃত গোলাম যায়িদ
ইবনু হারিসাকে আমরা “যায়িদ ইবনু মুহাম্মদ-ই” ডাকতাম যে পর্যন্ত না এ আয়াত নাযিল হয়। তোমরা তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক আল্লাহর দৃষ্টিতে এটই অধিক ন্যায়সংগত।
৪৪২১ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা মনে করি এ আয়াত আনাস ইবনু নায্র সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। “মু’মিনদের
মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। ”
৪৪২২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) যায়িদ ইবনু
সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা যখন সহীফা থেকে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের
একটি আয়াত অবিদ্যমান পেলাম যা রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (অধিক পরিমাণ) তিলওয়াত করতে শুনেছি। (অবশেষে) সেটি খুযায়মা আনসারী
ব্যতীত অন্য কারও কাছে পেলাম না; যার সাক্ষী রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন পুরুষ সাক্ষীর সমান গণ্য করেছেন।
৪৪২৩ আবূল ইয়ামান (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) বলেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন যখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর সহধর্মিণীগণের ইখতিয়ার দেয়ার ব্যাপারে
নির্দেশ দিলেন [১] তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম আমাকে দিয়ে শুরু করলেন এবং বললেন আমি তোমার কাছে একটি কথা উল্লেখ করছি। তাড়াহুড়ো না করে তোমার
পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ করে উত্তর দেবে। তিনি এ কথা ভালভাবেই জানতেন যে আমার আব্বা-আম্মা তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ কখনও দিবেন না। আয়িশা (রাঃ)
বলেন
(আমাকে এ কথা বলার পর) তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেন আল্লাহ্ বলছেন “হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আপনার স্ত্রীদের
বলুন। তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার ভূষণ কামনা কর । তখন আমি তাঁকে বললাম তাতে আমার আব্বা-আম্মা থেকে পরামর্শ নেবার কী আছে? আমি তো আল্লাহ্ তাঁর রাসূল) এবং আখিরাতের জীবনই চাই। ১ খায়বারের যুদ্ধের পর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণ তাদের ভরণ-পোষণের জন্য কিছু আর্থিক
অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানোান। এতে তিনি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ ঘটনার দিকেই এর ইঙ্গিত।
৪৪২৪ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহীম
(রহঃ) “আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এ আয়াতটি “(তুমি তোমার
অন্তরে যা গোপন করছ আল্লাহ্ তা প্রকাশ
করে দিচ্ছেন। )” জয়নব বিনতে জাহ্শ এবং যায়িদ ইবনু হারিসা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
৪৪২৫ যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যেসব মহিলা নিজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর
কাছে হেবাস্বরূপ ন্যাস্ত করে দেন তাদের আমি ঘৃণা
করতাম। আমি (মনে মনে) বলতাম মহিলারা কি নিজেকে
অর্পণ করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্
তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে
পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই। ”তখন আমি বললাম আমি দেখছি যে আপনার রব আপনি যা ইচ্ছা করেন তা-ই পূরণ করেন।
৪৪২৬ হাব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) মু’আয
(রহঃ) সূত্রে … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে অবস্থানের
পালার ব্যাপারে আমাদের থেকে অনুমতি চাইতেন এ আয়াত নাযিল হওয়ার পরও “আপনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট হতে দূরে রাখতে পারেন
এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন এবং আপনি যাকে দূরে রেখেছেন তাকে কামনা
করলে আপনার কোন অপরাধ নেই। ” এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মু’আয বলেন আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞস করলাম আপনি এর উত্তরে কি বলতেন? তিনি বলতেন আমি তাঁকে বলতাম এ বিষয়ের অধিকার যদি আমার থেকে থাকে তাহলে আমি ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার ব্যাপারে কাউকে অগ্রাধিকার দিতে চাইনে। আব্বাদ বিন আব্বাদ
‘আসম থেকে অনুরূপ শুনেছেন।
৪৪২৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) … উমর (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার কাছে ভাল ও
মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ব্যাপারে পর্দার আদেশ দিতেন (তবে ভাল
হত) তারপর আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।
৪৪২৮ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ
রকাশী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন জয়নাব বিন্ত জাহশ্কে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিয়ে করেন তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন।
লোকেরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন কিন্তু লোকেরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি
উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যাক্তি বসেই রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন তারা তখনও বসে রয়েছে (তাই হুযুর চলে গেলেন)। এরপর তারাও উঠে
গেল। আমি গিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম।
তারপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপরও আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা
ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম র গৃহে প্রবেশ করো না… শেষ পর্যন্ত।
৪৪২৯ সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি পর্দার আয়াত সম্পর্কে লোকদের চেয়ে বেশি জানি। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যয়নাবকে বাসর যাপনের জন্য পাঠানো হয় এবং তিনি তাঁর ঘরে
তাঁর সঙ্গে অবস্থান করেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার তৈরি করে লোকদের দাওয়াত দিলেন। তারা (খাওয়ার পর) বসে কথাবার্তা
বলতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে গিয়ে আবার ঘরে ফিরে এলেন তখনও তারা বসে আলাপ-আলোচনা করছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল
করেন। “হে মু’মিনগণ তোমাদের অনুমতি
দেয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে আহারের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না। ” পর্দার আড়াল থেকে’ পর্যন্ত। এরপর পর্দার
বিধান কার্যকর হল এবং লোকেরা চলে গেল।
৪৪৩০ আবূ মা’আমার (রহঃ) … আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন জয়নাব বিন্ত জাহ্শের
বাসর যাপন উপলক্ষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু রুটি-গোশতের ব্যবস্থা
করলেন। তারপর খানা খাওয়াবার জন্য আমাদের লোকদের ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে
বের হয়ে গেল। তারপর আর একদল এসে খেয়ে বের হয়ে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম; কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি
না। তিনি বললেন খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যাক্তি
ঘরে রয়ে গেল তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার দিকে গেলেন এবং
বললেন
আস্সালামু আলায়কুম ইয়া আহলাল বায়ত ওয়া রহমাতুল্লাহ্! আয়িশা
(রাঃ) বললেন ওয়া আলায়কা ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।
আল্লাহ্ আপনাকে বরকত দিন আপনার স্ত্রীকে
কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে সব
স্ত্রীর হুজরায় গেলেন এবং আয়িশাকে যেমন বলেছিলেন তাদেরও অনুরূপ বললেন। আর তাঁরা তাঁকে
সে জবাবই দিয়েছিলেন যেমন আয়িশা
(রাঃ) দিয়েছিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে সে তিন ব্যাক্তিকেই
ঘরে আলাপরত দেখতে পেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব লাজুক ছিলেন। (তাই
তাদের দেখে লজ্জা পেয়ে) আবার আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার দিকে গেলেন। তখন আমি স্মরণ করতে পারছি না অন্য কেউ না আমি তাকে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার খবর দিলাম। তিনি
ফিরে এসে দরজার চৌকাঠের ভিতরে এক পা ও বাইরে এক পা রেখে আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা ঝুলিয়ে
দিলেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।
৪৪৩১ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আনাস্
(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে জয়নাব বিন্ত জাহ্শের
সাথে বাসর উদ্যাপনের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ালীমা করলেন। লোকদের
তিনি গোশত-এরুটি তৃপ্তি সহকারে খাওয়ালেন। তারপর তিনি উম্মুল মু’মিনীনদের কক্ষে যাওয়ার
জন্য বের হলেন। যেমন বাসর রাত্রির ভোরে তার অভ্যাস ছিল যে তিনি তাঁদের সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দোয়া করতেন এবং তাঁরাও
তাঁকে সালাম বলতেন তাঁর জন্য দোয়া
করতেন। তারপর ঘরে ফিরে এসে দু’ব্যাক্তিকে আলাপরত দেখতে পেলেন। তাদের দেখে তিনি ঘর থেকে
ফিরে গেলেন। সে দু’জন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে ঘর থেকে ফিরে যেতে দেখে
দ্রুত বের হয়ে গেল। এরপরে আমার স্মরণ নেই
যে আমি তাঁকে তাদের বের হয়ে যাওয়ার সংবাদ দিলাম না অন্য কেউ দিল। তখন তিনি ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করলেন এবং আমার
ও তাঁর মধ্যে পর্দা লটকিয়ে দিলেন এবং পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়।
৪৪৩২ যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে
যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে পরিচিত লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবনু
খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে দেখে বললেন হে সাওদা! জেনে
রাখ
আল্লাহর কসম আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো কেমন করে বাইরে যাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন (এ কথা শুনে) সাওদা (রাঃ) ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা
(রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর (রাঃ) আমাকে এমন
এমন কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ
হওয়া শেষ হল হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই
ছিল
তিনি তা রাখেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
৪৪৩৩ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পর্দার আয়াত অবতীর্ণ
হওয়ার পর
আবূল কু’আয়স এর ভাই-আফ্লাহ আমার কাছে প্রবেশ করার অনুমতি চায়।
আমি বললাম এ ব্যাপারে যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি না দিবেন ততক্ষণ আমি অনুমতি দিতে পারি না। কেননা তার ভাই আবূ কুআয়স সে
নিজে আমাকে দুধ পান করাননি। কিন্তু আবূল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আবূল কু’আয়াসের ভাই-আফলাহ্ আমার সাথে দেখা
করার অনুমতি চাইছিল। আমি এ বলে অস্বীকার করেছি যে যতক্ষণ আপনি এ ব্যাপারে অনুমতি না দেবেন ততক্ষণ আমি অনুমতি দেব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
তোমার চাচাকে (তোমার সাথে দেখা করার) অনুমতি দিতে কিসে বাধা
দিয়েছে?
আমি বললাম সে ব্যাক্তি তো
আমাকে দুধ পান করাননি; কিন্তু আবূল কু’আয়াসের
স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমার হাত ধুলি ধূসরিত হোক তাকে অনুমতি দাও কেননা সে তোমার চাচা।
উরওয়া বলেন এ কারণে আয়িশা (রাঃ) বলতেন
বংশের দিক দিয়ে যা হারাম মনে কর দুধ পানের কারণেও
তা হারাম জানো।
৪৪৩৪ সাঈদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ)
কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলা হল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার উপর সালাম
(প্রেরণ করা) আমরা জানতে পেরেছি; কিন্তু সালাত
(নামায/নামাজ) কি ভাবে? তিনি বললেন তোমরা বলবে “হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পরিজনের উপর রহমত
অবতীর্ণ কর যেমনিভাবে ইব্রাহীম-এর পরিজনের
উপর তুমি রহমত অবতীর্ণ করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ্! তুমি মুহাম্মদ-এর উপর এবং মুহাম্মদ-এর
পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ কর। যেমনিভাবে তুমি বরকত অবতীর্ণ করেছ ইব্রাহীমের পরিজনের
প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত মর্যাদাবান।
৪৪৩৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
… আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ তো হল সালাম পাঠ; কিন্তু কেমন করে আমরা আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করব? তিনি বললেন তোমরা বলবে “হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ –এর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন যেভাবে রহমত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি এবং মুহাম্মাদ
প্রতি ও মুহাম্মাদের পরিজনের প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর
প্রতি। তবে বর্ণনাকারী আবূ সালিহ লায়েস থেকে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ও তার পরিজনের
প্রতি বরকত অবতীর্ণ করুন যেমন আপনি বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীমের পরিজনের প্রতি।
৪৪৩৬ ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ)
… ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত। তিনি (এমনিভাবে) বলেন যেমনভাবে ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর রহমত নাযিল করেছেন।
আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ –এর প্রতি এবং মুহাম্মদের পরিজনের প্রতি যেভাবে বরকত অবতীর্ণ করেছেন ইব্রাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
প্রতি এবং ইব্রাহীমের পরিবারের প্রতি। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে কষ্ট দিয়েছে। ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বড় লজ্জাশীল ব্যাক্তি। আর এ প্রেক্ষিতে
আল্লাহর এ বাণী হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের
মত হয়ো না যারা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
-কে কষ্ট দিয়েছে। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে ওদের অভিযোগ থেকে পবিত্র করেছেন। আর তিনি
ছিলেন আল্লাহর কাছে অতি সম্মানিত।
৪৪৩৭ আল হুমায়দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ তা’আলা
যখন আকাশে কোন ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশের প্রতি অতি বিনীতভাবে তাদের
পাখা ঝাড়তে থাকে ; যেন মসৃণ পাথরের
উপর শিকলের আওয়াজ। “যখন তাদের মনের আতংক বিদূরিত হয় তারা (একে অপরকে) জিজ্ঞেস করে তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন? তারা (উত্তরে) বলেন তিনি যা বলেছেন সত্যই বলেছেন। তিনি মহান উচ্চ। যে সময়ে লুকোচুরিকারী (শয়তান)
তা শোনে
আর লুকোচুরিকারী এরূপ একের ওপর এক। সুফিয়ান তাঁর হাত উপরে উঠিয়ে
আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে দেখান। তারপর শয়তান কথাগুলো শুনে নেয় এবং প্রথমজন তার নিচের জনকে
এবং সে তার নিচের জনকে পৌঁছিয়ে দেয়। এমনিভাবে এ সংবাদ দুনিয়ার জাদুকর ও জ্যোতিষের মুখে
পৌছেঁ দেয়। কোন কোন সময় কথা পৌঁছানোর পূর্বে তার উপর অগ্নিশিখা নিক্ষিপ্ত হয় আবার অগ্নিশিখা
নিক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্বে সে কথা পৌঁছিয়ে দেয় এবং এর সাথে শত মিথ্যা মিশিয়ে বলে। এরপর
লোকেরা বলাবলি করে। সে কি অমুক দিন অমুক অমুক কথা আমাদের বলেনি? এবং সেই কথা যা আসমান থেকে শুনে এসেছে তার জন্য সব কথা সত্য
বলে মনে করে।
৪৪৩৮ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাফা (পাহাড়ে) আরোহণ
করে ‘ইয়া সাবাহাহ বলে সকলকে ডাক
দিলেন। কুরাইশগণ তাঁর কাছে সমবেত হয়ে বলল তোমার ব্যাপার কী? তিনি বললেন তোমরা বল তো আমি যদি তোমাদের বলি যে শত্রুবাহিনী সকাল বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত
;
তবে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? তারা বলল অবশ্যই। তিনি
বললেন
আমি তো তোমাদের জন্য এক আসন্ন কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী।
একথা শুনে আবূ লাহাব বলল তোমার ধ্বংস হোক।
এই জন্যই কি আমাদেরকে সমবেত করেছিলে? তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেনঃ “ আবূ লাহাবের দুহাত ধ্বংস হোক।
”
৪৪৩৯ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবূ যার
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা সূর্যাস্তের
সময় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন হে আবূ যার! তুমি কি জানো সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম আল্লাহ্ এবং তাঁর
রাসূল) সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন সূর্য চলে অবশেষে আরশের
নিচে গিয়ে সিজ্দা করে। নিম্নবর্ণিত আয়াত –এ এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এ পরাক্রমশলী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
৪৪৪০ হুমায়দী (রহঃ) আবূ যার গিফারী
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আল্লাহর বাণীঃ –এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে।
৪৪৪১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
… আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (ইউনুস) ইবনু
মাত্তার চেয়ে উত্তম বলে দাবি করা কারো জন্য সমীচীন নয়।
৪৪৪২ ইব্রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ)
… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে বলে আমি ইউনুস ইবনু
মাত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সে মিথ্যা বলে।
৪৪৪৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
আওওআম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি
বললেন
(এ বিষয়ে) ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা
হলে
তিনি পাঠ করলেন ‘তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এতে সিজদা
করতেন। ’
৪৪৪৪ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ
(রহঃ) … আওওআম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি মুজাহিদকে সূরা সা’দ-এর সাজদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি
বললেন
আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম (এ সূরায়) সাজদা কোত্থেকে? তিনি বললেন তুমি কি কুরআনের এ আয়াত পড়নি “আর তার বংশধর দাউদ ও সুলায়মান
– তাদেরই আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন সুতরাং তাঁদের পথের অনুসরণ কর। দাউদ তাঁদের অন্যতম তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের যাদের অনুসরণের
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরায় সাজ্দা করেছেন।
অর্থ – অত্যাশ্চর্য অর্থ –লিপি। এখানে দ্বারা নেক লিপি বোঝানো হয়ছে। মুজাহিদ বলেছেন অর্থ ঔদ্ধত্য। মানে কুরাইশদের ধর্মাদর্শ। অর্থ –মিথ্যা। আকাশের
পথসমূহ –এ বাহিনীও সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পরাজিত হবে অর্থাৎ কুরাইশ সম্প্রদায়। অর্থাৎ
অতীতকাল। -অর্থ প্রত্যাবর্তন। অর্থ –আমাদের শাস্তি। অর্থ –আমি তাদের বেষ্টন করে রেখেছি।
মানে –সমবয়স্কা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন ইবাদতে শক্তিশালী ব্যাক্তি। -এর মর্ম –আল্লাহর কাছে সূক্ষ্ণদর্শী
ব্যাক্তি। অর্থ – আল্লাহর স্মরণ থেকে। তিনি ঘোড়াগুলোর পা ও গলায় হাত বুলাতে লাগলেন।
মানে – শৃঙ্খল (বাঁধন)
৪৪৪৫ ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন গতরাতে অবাধ্য জ্বীনের একটি দৈত্য আমার কাছে এসেছিল অথবা এ ধরনের
কিছু কথা তিনি বললেন আমার সালাত (নামায/নামাজ)
নষ্ট করার জন্য। তখন আল্লাহ্ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দান করলেন। আমার ইচ্ছা করলাম মসজিদের খুঁটিগুলোর একটির সাথে ওকে বেঁধে রাখতে যাতে ভোরে তোমরা সকলে ওটা দেখতে পাও। তখন আমার ভাই হযরত সুলায়মান
আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দোয়া স্মরণ হল “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে দান কর এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমি
ছাড়া আর কেউ না হয়। ” রাবী রাওহ্ বলেন এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অপমান করে তাড়িয়ে
দেন।
৪৪৪৬ কুতায়বা (রহঃ) … মাসরূক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি হযরত আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন হে লোকসকল! যে ব্যাক্তি কোন বিষয়ে জানে সে তা বর্ণনা করবে। আর
যে না জানে তার বলা উচিত আল্লাহ্ই ভাল জানেন। কেননা অজানাবিষয় সম্বন্ধে আল্লাহ্ই ভাল
জানেন। এ কথা বলাও জ্ঞানের লক্ষণ। আল্লাহ্ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলেছেন ‘বল এর (কুরআন বা তাওহীদ প্রচারের) জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান
চাই না এবং আমি বানোয়টকারীদের অন্তর্ভুক্ত নই। ’ (কুরআনে বর্ণিত) ধূমর সম্পর্কে শীঘ্র
আমি তোমাদের বলব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদেরকে ইসলামের প্রতি
দাওয়াত দিলে তারা (এ দাওয়াতে সাড়া দিতে) বিলম্ব করল। তখন তিনি বললেন হে আল্লাহ্! হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জীবনকালের দুর্ভিক্ষের
সাত বছরের মত দুর্ভিক্ষ দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। এরপর দুর্ভিক্ষ
তাদেরকে গ্রাস করে নিল। শেষ হয়ে গেল সমস্ত কিছু। অবশেষ তারা মৃত জন্তু ও চামড়া খেতে
লাগল। তখন তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় চোখে আকাশ ও তার মধ্যে ধোঁয়া
দেখত। আল্লাহ্ বললেন “অতএব তুমি সেদিনের
অপেক্ষা কর যেদিন ধোঁয়া হবে আকাশে এবং তা আচ্ছন্ন করে ফেলবে সকল মানুষ। এ তো মর্মন্তুদ শাস্তি।
” রাবী বলেন তারপর তারা দোয়া করল হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ আযাব থেকে মুক্তি দাও আমরা ঈমান আনব। তারা কিভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? তাদের কাছে তো এসেছে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদাতা এক রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তারা মুখ ফিরিয়ে নিল তাঁর থেকে এবং বলল সে তো শিখানো বুলি আওড়ায় সে তো এক উন্মাদ। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি।
তোমরা তো অবশ্য তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। ইবনু মাসউদ বলেন) কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে আযাব রহিত করা হবে? তিনি ইবনু মাসউদ) বলেন আযাব দূর করা হলে তারা পুনরায় কুফ্রীর দিকে ফিরে গেল। তারপর
আল্লাহ তা’আলা বদর যুদ্ধের দিন তাদের পাকড়াও করলেন। আল্লাহ্ বলেন যেদিন আমি তোমাদের কঠোরভাবে পাকড়াও করব সেদিন আমি তোমাদের শাস্তি দেবই।
৪৪৪৭ ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ)
… হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মুশরিকদের কিছু লোক অত্যধিক হত্যা করে এবং অত্যধিক ব্যভিচারে
লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মাদ -এর কাছে এল এবং বলল আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহবান করেন তা অতি উত্তম। আমাদের যদি জানিয়ে দিতেন যে আমরা যা করেছি তার কাফ্ফারা কি? এর প্রেক্ষিতে নাযিল হয় ‘এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্কে
ডাকে না
আল্লাহ্ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন তাকে না-হক হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আরো নাযিল হলঃ
“হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।
৪৪৪৮ আদম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ইহুদী আলিমদের
থেকে জনৈক আলিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে দেখতে) পাই যে আল্লাহ্ তা’আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে
এক আঙ্গুলের উপর বৃক্ষসমূহকে এক
আঙ্গুলের উপর পানি এক আঙ্গুলের উপর মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর
স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন আমই বাদশাহ্।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন তারা আল্লাহর
যথোচিত সম্মান করে না।
৪৪৪৯ সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) … হযরত
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা যমীনকে নিজ মুঠায় নিবেন এবং আকাশমণ্ডলীকে
ভাঁজ করে তাঁর ডান হাতে নিবেন তারপর বলবেন আজ আমই মালিক দুনিয়ার বাদশারা কোথায়?
৪৪৫০ হাসান (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন শেষ বার শিঙ্গায়
ফুঁক দেয়ার পর যে সর্বপ্রথম মাথা উঠাবে সে আমি। তখন আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখব আরশের সাথে
ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি জানিনা তিনি আগে থেকেই
এভাবে ছিলেন না শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর।
৪৪৫১ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) … আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন দুইবার ফুঁৎকারের মাঝে ব্যবধান চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞেস করল হে আবূ হুরায়রা চল্লিশ দিন? তিনি বললেন আমার জানানেই। তারপর তারা জিজ্ঞেস করল চল্লিশ বছর? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন তাহলে কি চল্লিশ মাস। এবারও তিনি অস্বীকার করলেন এবং বললেন মেরুদণ্ডের হাড়
ব্যতীত মানুষের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ দ্বারাই সৃষ্টি জগত আবার সৃষ্টি করা হবে।
৪৪৫২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
… উরওয়া ইবনু যুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আ’স (রাঃ)-কে বললাম মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কঠোরতম
কি আচরণ করেছে সে সম্পর্কে আপনি আমাকে বলুন।
তিনি বললেন একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কা’বা শরীফের আঙ্গিনায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমতাবস্থায় উকবা
ইবনু আবূ মু’আইত আসল এবং সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘাড় ধরল এবং
তার কাপড় দিয়ে তাঁর গলায় পেচিয়ে খুব শক্ত করে চিপ দিল। এ সময়ে (হঠাৎ) আবূ বকর (রাঃ)
উপস্থিত হয়ে তার ঘাড় ধরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাকে সরিয়ে দিলেন
এবং বললেন তোমরা কি এ ব্যাক্তিকে এ জন্য
হত্যা করবে যে সে বলে ‘আমার রব আল্লাহ্’
;
অথচ তিনি তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের
কাছে এসেছেন।
৪৪৫৩ সাল্ত ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের কর্ণ তোমাদের বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য দেবে- এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না। ” আয়াত সম্পর্কে বলেন কুরাইশ গোত্রের দুই ব্যাক্তি ছিল যাদের জামাতা ছিল বনী সাকীফ গোত্রের অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ)
দুই ব্যাক্তি ছিল বনী সাকীফ গোত্রের আর তাদের জামাতা ছিল কুরাইশ গোত্রের। তারা সকলেই
একটি ঘরে ছিল। তারা পরস্পর বলল তোমার কি ধারণা আল্লাহ্ কি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন? একজন বলল তিনি আমাদের কিছু
কথা শুনছেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যাক্তি বলল তিনি যদি আমাদের কিছু কথা শুনতে পান তাহলে সব কথাও শুনতে পাবেন। তখন নাযিল হলঃ “তোমাদের কান ও তোমাদের
চোখ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না। আয়াতের শেষ পর্যন্ত।
৪৪৫৪ হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন কা’বা শরীফের
কাছে দু’জন কুরাইশী এবং একজন সাকাফী অথবা দু’জন সাকাফী ও একজন কুরাইশী একত্রিত হয়।
তাদের পেটের মেদ ছিল বেশি ; কিন্তু অন্তরের
বুদ্ধি ছিল কম। তাদের একজন বলল তোমাদের কি ধারণা আমরা যা বলছি তা কি আল্লাহ শুনছেন? উত্তরে অপর এক ব্যাক্তি বলল আমরা যদি জোরে বলি তাহলে তিনি শুনতে পান। আর যদি চুপে চুপে বলি তাহলে তিনি শুনতে পান না। তৃতীয় ব্যাক্তি বলল আমরা জোরে বললে যদি তিনি শুনতে পান তাহলে চুপে চুপে বললেও তিনি শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ্ নাযিল
করলেন
‘তোমাদের চোখ কান এবং তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এ থেকে তোমরা কখনো নিজেদের লুকাতে পারবে না (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)।
হুমায়দী বলেন সুফিয়ান এ হাদীস বর্ণনার সময়
বলতেন
মানসূর বলেছেন অথবা ইবনু আবূ নাজীহ্ অথবা হুমায়দী তাঁদের একজন বা দু’জন। এরপর
তিনি মানসূরের উপরই নির্ভর করেছেন এবং একাধিকবার তিনি সন্দেহ বর্জন করে বর্ণনা করেছেন।
৪৪৫৫ আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবদুল্লাহ
ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৪৫৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
… ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে একদা তাকে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) হযরত সাঈদ
ইবনু জুবায়ির (রাঃ) বললেন এর অর্থ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) বললেন তুমি তাড়াহুড়া করে ফেললে।
কুরাইশের কোন শাখা ছিল না যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর আত্মীয়তা
ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেছেন আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে
তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি।
৪৪৫৭ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ)
… ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে মিম্বরে পড়তে শুনেছি
(তারা চীৎকার করে বলবে হে মালিক! তোমার
প্রতিপালক যেন আমাদের নিঃশেষ করে দেন।)কাতাদা বলেন এর অর্থ পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ। কাতাদা (রহঃ) ব্যতীত অন্যান্য
মুফাস্সির বলেছেন -নিয়ন্ত্রণকারী।
বলা হয় অর্থাৎ তার নিয়ন্তা। অর্থ হাত বিহীন পানপাত্র। অর্থ হচ্ছে আল্লাহর কোন সন্তান নেই- এ কথা প্রত্যাখ্যানকারী সর্বপ্রথম আমি
নিজেই। দুই ধরনের ব্যবহার রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) –এর পরিবর্তে পাঠ করতেন।
কোন কোন মুফাস্সির বলেন -এ বর্ণিত শব্দটি
থেকে ;
যার অর্থ অস্বীকারকারী। কাতাদা (রহঃ) বলেন অর্থাৎ মূল কিতাব।
-এর মাঝে উল্লিখিত –এর অর্থ অর্থাৎ আমি কি তোমাদের হতে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার
করে নেব এই কারণে যে তোমরা মুশরিক? আল্লাহর কসম এ উম্মতের প্রাথমিক অবস্থায় যখন (কুরাইশগণ) আল-কুরআনকে প্রত্যাখ্যান
করেছিল
তখন যদি তাকে প্রত্যাহার করা হত তাহলে তাঁরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যেত। -এর মাঝে বর্ণিত –এর অর্থ
তাদের মধ্যে যারা তাদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল তাদের আমি ধ্বংস করেছিলাম। আর এভাবেই চলে এসেছে পূর্ববর্তী লোকদের
শাস্তির দৃষ্টান্ত। অর্থ সমকক্ষ।
৪৪৫৮ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পাঁচটি নিদর্শনই
বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। ধোঁয়া (দুর্ভিক্ষ) রোম (পরাজয়) চন্দ্র (দ্বিখণ্ডিত হওয়া) পাকড়াও (বদর যুদ্ধে) এবং ধ্বংস।
৪৪৫৯ ইয়হ্ইয়া (রহঃ) মাসরূক (রহঃ)
থেকে বর্ণিত যে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন অবস্থা এ জন্য যে কুরাইশরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নাফরমানী
করল
তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্ভিক্ষের দোয়া করলেন যেমন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়ে।
তারপর তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধার কষ্ট এমনভাবে আপতিত হল যে তারা হাড্ডি খেতে আরম্ভ করল। তখন মানুষ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার
তাড়নায় তারা আকাশ ও তাদের মধ্যে শুধু ধোঁয়ার মত দেখতে পেত। এ সম্পর্কেই আল্লাহ্ নাযিল
করলেন
“অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন স্পষ্ট ধূমরাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব
জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। ” বর্ণনাকারী বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট (কাফেরদের পক্ষ
থেকে) এক ব্যাক্তি এসে বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মুদার গোত্রের জন্য বৃষ্টির দোয়া করুন। তারা তো ধ্বংস হয়ে গেল।
তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন মুদার গোত্রের জন্য দোয়া করতে বলছ। তুমি তো খুব সাহসী। তারপর
তিনি বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হল। তখন নাযিল হল তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। য়খন তাদের সচ্ছলতা
ফিরে এলো
তখন আবার নিজেদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেল। তারপর আল্লাহ্ নাযিল
করলেন
“যেদিন আমি তোমাদের প্রবলভাবে পাকড়াও করব সেদিন আমি তোমাদের প্রতিশোধ নেবই। বর্ণনাকারী বলেন অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন।
৪৪৬০ ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … মাসরুক
(রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবদুল্লাহ
(রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভাল জানেন একথা বলাও জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ তার নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলেছেন “বল আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং আমি বানোয়াটকারীদের
অন্তর্ভুক্ত নই। ” কুরাইশরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বাড়াবাড়ি
করল এবং বিরোধিতা করল তখন তিনি দোয়া
করলেন
ইয়া আল্লাহ্! হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়কার সাত
বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। তারপর
দুর্ভিক্ষ তাদেরকে পাকড়াও করল। ক্ষুধার জ্বালায় তারা হাড্ডি এবং মরা খেতে আরম্ভ করল।
এমনকি তাদের কোন ব্যাক্তি আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় তার ও আকাশের মাঝে শুধু
ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। তখন তারা বলল “হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ শাস্তি সরিয়ে নাও নিশ্চয়ই আমরা ঈমান আনব। ” তাঁকে বলা হল যদি আমি তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দই তাহলে তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। তারপর তিনি তাঁর
রবের নিকট দোয়া করলেন। আল্লাহ্ তাদের থেকে শাস্তি রহিত করে দিলেন ; কিন্তু তারা আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এল। তাই আল্লাহ্ বদর
যুদ্ধের দিন তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলেন। নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে।
আয়াত … পর্যন্ত।
৪৪৬১ সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহঃ)
… মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবদুল্লাহর কাছে গেলাম। তারপর তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরাইশদের ইসলামের
দাওয়াত দিলেন এবং তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল ও তার নাফরমানী করল তখন তিনি বললেন ইয়া আল্লাহ্! হযরত ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়কার সাত
বছরের দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে
দুর্ভিক্ষ তাদের এমনভাবে গ্রাস করল যে নির্মূল হয়ে গেল সমস্ত কিছু ; অবশেষে তারা মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করল। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আকাশের
দিকে তাকালে ক্ষুধার জ্বালায় সে তার ও আকাশের মাঝে ধোঁয়ার মতই দেখতে পেত। এরপর তিনি
পাঠ করলেন “অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের যে দিন স্পষ্ট ধূমরাচ্ছন্ন হবে আকাশ এবং তা আবৃত করে ফেলবে মানব
জাতিকে। এ হবে মর্মন্তুদ শাস্তি। আমি তোমাদের শাস্তি কিছুকালের জন্য রহিত করছি তোমরা তো তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। ” পর্যন্ত আবদুল্লাহ
(রাঃ) বলেন কিয়ামতের দিনও কি তাদের থেকে
শাস্তি রহিত করা হবে? তিনি বলেন দ্বারা বদরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৪৪৬২ বিশর্ ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহ্ তা’আলা
মুহাম্মাদ -কে পাঠিয়ে বলেছেন “বল আমি এর জন্য তোমাদের কোন প্রতিদান চাই না এবং যারা মিথ্যা দাবি
করে তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। ” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন যে কুরাইশরা তাঁর নাফরমানী করছে তখন তিনি বললেন ইয়া আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময়কার সাত বছরের
দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের দ্বারা তুমি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর। ফলে দুর্ভিক্ষ
তাদের গ্রাস করল। নিঃশেষ করে দিল তাদের সমস্ত কিছু এমনকি তারা হাড় ও চামড়া খেতে আরম্ভ করল। আর একজন রাবী বলেছেন তারা চামড়া ও মৃতদেহ খেতে লাগল। তখন যমীন থেকে ধোঁয়ার মত বের
হতে লাগল। এ সময় আবূ সুফিয়ান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে বলল হে মুহাম্মদ! তোমার কওম তো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর কাছে দোয়া
কর
যেন তিনি তাদের থেকে এ অবস্থা দূরীভূত করে দেন। তখন তিনি দোয়া
করলেন
এবং বললেন এরপর তারা আবার
নিজেদের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। মানসুর থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন “অতএব তুমি অপেক্ষা
কর সে দিনের যে দিন স্পষ্ট ধূমরাচ্ছন্ন
হবে আকাশ
তোমরা তো পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবেই পর্যন্ত। (তিনি বলেন) আখিরাতের
শাস্তিও কি দূরীভূত হয়ে যাবে? ধোঁয়া প্রবল পাকড়াও এবং ধ্বংস তো অতীত হয়েছে। এক রাবী চন্দ্র এবং অন্য
রাবী রোমের পরাজয়ের কথাও উল্লেখ করেছেন।
৪৪৬৩ ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পাঁচটি বিষয় ঘটে
গেছেঃ ধ্বংস রূম পাকড়াও চন্দ্র ও ধোঁয়া।
৪৪৬৪ হুমায়দী (রহঃ) আবূ হুমায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ বলেন আদম সন্তানরা আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যমানাকে গালি দেয় ; অথচ আমই যমানা। আমার হাতেই ক্ষমতা ; রাত ও দিন আমই পরিবর্তন করি।
৪৪৬৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল ইউসুফ ইবনু
মাহাক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মারওয়ান ছিলেন
হিজাযের গভর্নর। তাকে নিয়োগ করেছিলেন মু’আবিয়া (রাঃ)। তিনি একদা খুতবা দিলেন এবং তাতে
ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার কথা বারবার উল্লেখ করতে লাগলেন যেন তাঁর পিতার ইন্তেকালের পর তার বায়আত গ্রহন করা হয়। এ সময়
তাকে আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর কিছু কথা বললেন মারওয়ান বললেন তাঁকে পাকড়াও কর। তৎক্ষণাৎ তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরে চলে গেলেন।
তারা তাঁকে ধরতে পারল না। তারপর মারওয়ান বললেন এ তো সেই ব্যাক্তি যার সম্বন্ধে আল্লাহ নাযিল করেছেন “আর এমন লোক আছে যে মাতাপিতাকে বলে তোমাদের জন্য
আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে তখন তার মাতাপিতা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে বলে দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের
উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়। ”
৪৪৬৬ আহমদ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমনভাবে কখনো
হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর কন্ঠনালীর আলজিভ
দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। যখনই তিনি মেঘ অথবা ঝঞ্ঝা বায়ু দেখতেন তখনই তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানুষ যখন মেঘ দেখে তখন বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। কিন্তু আপনি যখন মেঘ দেখেন তখন আমি আপনার চেহারায় আহংকের ছাপ পাই। তিনি বললেন হে আয়িশা! এতে যে আযাব নেই এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। বাতাসের দ্বারাই তো এক কওমকে আযাব
দেয়া হয়েছে। সে কওম তো আযাব দেখে বলেছিল এ তো আমাদের বৃষ্টি দান করবে।
৪৪৬৭ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ)
… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি ফারেগ
হলে ‘রাহিম’ (রক্তসম্পর্ক) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন থামো। সে বলল আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যাক্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্যই
আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন যে তোমাকে সম্পৃক্ত রাখে আমিও তাকে সম্পৃক্ত রাখব; আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব- এতে কি তুমি সন্তুষ্ট নও? সে বলল নিশ্চয়ই হে আমার প্রভু। তিনি বললেন যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন ইচ্ছা হলে তোমরা পড় “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ”
৪৪৬৮ ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ)
… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (এরপর তিনি বলেন) রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইচ্ছা হলে তোমরা
পড় (“ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার
বন্ধন ছিন্ন করবে। ”)
৪৪৬৯ বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)
মু’আবিয়া ইবনু আবূল মুযার্রাদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (আবূ হুরায়রা বলেন)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইচ্ছা হলে তোমরা পড় (ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি
করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে)।
৪৪৭০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ)
… আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে হযরত উমর ইবনু খাত্তাব
(রাঃ)-ও চলছিলেন। হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন জবাব
দেননি। তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু তিনি কোন জবাব দিলেন না। তারপর তিনি আবার তাঁকে জিজ্ঞেস
করলেন
এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তখন উমর (রাঃ) (নিজেকে) বললেন উমরের মা হারাক। তুমি তিনবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে প্রশ্ন করলে কিন্তু একবারও
তিনি তোমার জবাব দিলেন না। উমর (রাঃ) বলেন তারপর আমি আমার উটটি দ্রুত চালিয়ে লোকদের আগে চলে গেলাম এবং
আমার ব্যাপারে কুরআন নাযিলের আশংকা করলাম। বেশিক্ষণ হয়নি তখন শুনলাম এক আহবানকারী আমাকে আহবান করছে। আমি (মনে মনে) বললাম আমি তো আশংকা করছিলাম যে আমার ব্যাপারে কোন আয়াত নাযিল হতে পারে। তারপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন আজ রাতে আমার উপর এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে যা আমার কাছে এই পৃথিবী যার ওপর সূর্য
উদিত হয়
তা থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি পাঠ করলেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।
৪৪৭১ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন “এর দ্বারা হুদাবিয়ার সন্ধি বোঝানো হয়েছে।
৪৪৭২ মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন সূরা
ফাতহ্ সুমধুর কণ্ঠে পাঠ করেন। মু’আবিয়া (রাঃ) বলেন আমি ইচ্ছা করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কিরাআত
তোমাদের নকল করে শোনাতে পারি।
৪৪৭৩ সাদাকা ইবনু ফায্ল (রহঃ) মুগীরা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত বেশি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে তাঁর কদমদ্বয় ফুলে যেতো। তাঁর বলা হল আল্লাহ্ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের ত্রুটিসমূহ মাজনা করে দিয়েছেন।
তিনি বললেন আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা
হবো না?
৪৪৭৪ হাসান ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত বেশি সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করতেন যে তাঁর দুই পা ফেটে
যেতো। আয়িশা (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবু আপনি কেন তা করছেন? তিনি বললেন আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে ভালবাসবো না? তাঁর মেদ বেড়ে গেলে [১] তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে
কিরাআত পড়তেন তারপর রুকূ করতেন। ১ অর্থাৎ
তিনি বার্ধক্যে উপনীত হলেন।
৪৪৭৫ আবদুল্লাহ (রহঃ) আমর ইবনু
আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে কুরআনের এ আয়াত “আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” তাওরাতে আল্লাহ্ এভাবে বলেছেন হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি তোমাকে পাঠিয়েছি
সাক্ষীরূপে সুসংবাদবাদা ও উম্মী লোকদের
মুক্তি দাতারুপে। তুমি আমার বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি তোমার
নাম নির্ভরকারী (মুতাওয়াক্কিল) রেখেছি যে রূঢ় ও কঠোরচিত্ত নয় বাজারে শোরগোলকারী নয় এবং মন্দ মন্দ দ্বারা প্রতিহতকারীও নয়; বরং তিনি ক্ষমা করবেন এবং উপেক্ষা করবেন। বক্র জাতিকে সোজা না
করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তাঁর জানো কবয করবেন না। তা এভাবে যে তারা বলবে আল্লাহ্ ছাড়া
ইলাহ নেই। ফলে খুলে যাবে অন্ধ চোখ বধির কান এবং পর্দায় ঢাকা অন্তরসমূহ।
৪৪৭৬ উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ)
বারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জনৈক সাহাবী কিরাআত
পাঠ করছিলেন। তাঁর একটি ঘোড়া ঘরে বাঁধা ছিল। হঠাৎ তা পালিয়েযেতে লাগলো। সে ব্যাক্তি
বেরিয়ে এসে নজর করলেন; কিন্তু কিছুই
দেখতে পেলেন না। ঘোড়াটি ভেগেই যাচ্ছিল। যখন ভোর হল তখন তিনি ঘটনাটি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন এ হল সেই প্রশান্তি যা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় নাযিল হয়ে থাকে।
৪৪৭৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)
… জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হুদায়বিয়ার (সন্ধির) দিন আমরা এক হাজার চারশ’ লোক ছিলাম।
৪৪৭৮ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
… আবদুল্লাহ ইবনু মাগাফ্ফাল মুযানী (রাঃ) (যিনি সন্ধির সময় উপস্থিত ছিলেন) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দুই আঙ্গুলের মাঝে কংকর নিয়ে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। উক্বা ইবনু সুহ্বান
(রহঃ) বলেন আমি আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল
মুযানী (রাঃ)-কে গোসলখানায় পেশাব করা সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি।
৪৪৭৯ মুহাম্মদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ)
সাবিত ইবনু দাহ্হাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও বৃক্ষতলে বায়আতকারী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত
ছিলেন।
৪৪৮০ আহ্মাদ ইবনু ইস্হাক সুলামী
(রহঃ) … হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আবূ ওয়ায়িল (রাঃ)-এর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য এলে তিনি বললেন আমরা সিফ্ফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি বললেন তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখতে পাচ্ছ না যাদের আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান করা হচ্ছে? আলী (রাঃ) বললেন হাঁ। তখন সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) বললেন প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়ার দিন অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল আমরা তা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলেছিলেন আমরা কি হকের উপর নই আর তারা কি বাতিলের উপর নয়? আমাদের নিহত ব্যাক্তিরা জান্নাতে আর তাদের নিহত ব্যাক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বললেন হাঁ। তখন উমর (রাঃ) বললেন তাহলে কেন আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা
হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে
এ সন্ধির ব্যাপারে অবমাননাকর শর্ত আরোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে নির্দেশ দেননি। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো আমাকে
ধ্বংস করবেন না। উমর গোস্বায় ক্ষুণ্ন মনে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন
না। তারপর তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন হে আবূ বকর! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ্ কখনো
তাকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সূরা ফাতহ্ নাযিল হয়।
৪৪৮১ ইয়াসারা ইবনু সাফওয়ান ইবনু
জামীল লাখ্মী (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন উত্তম দুই জন- আবূ বকর ও উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কন্ঠস্বর উঁচু করে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিলেন। যখন বনী তামীম
গোত্রের একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসেছিল। তাদের একজন
বনী মাজাশে গোত্রের আকরা ইবনু হাবিসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করল এবং অপরজন অন্য
ব্যাক্তির নাম প্রস্তাব করল। নাফি বলেন এ লোকটির নাম আমার মনে নেই। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) উমর
(রাঃ)-কে বললেন আপনার ইচ্ছাই হল কেবল আমার
বিরোধিতা করা। তিনি বললেন না আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমার নেই। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁদের
কন্ঠস্বর উঁচু হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন “হে মু’মিনগণ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র কন্ঠস্বরের
উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করবে না” … শেষ পর্যন্ত। ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর উমর (রাঃ) এতো আস্তে কথা বলতেন যে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেতেন না। তিনি আবূ বকর (রাঃ) সম্পর্কে এ ধরনের কথা বর্ণনা করেন
নি।
৪৪৮২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
… আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়স
(রাঃ)-কে খুঁজে পেলেন না। একজন সাহাবী বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার কাছে তাঁর
সংবাদ নিয়ে আসছি। তারপর লোকটি তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন যে তিনি তাঁর ঘরে অবনত মস্তকে বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আপনার কি অবস্থা? তিনি বললেন খারাপ। কারণ এই (অধম) তার কন্ঠস্বর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কন্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু করে কথা বলত। ফলে তার আমল বরবাদ হয়ে গেছে এবং সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
গেছে। তারপর লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ফিরে এসে সংবাদ দিলেন
যে
তিনি এমন এমন কথা বলছেন। মূসা বলেন এরপর লোকটি এক মহাসুসংবাদ নিয়ে তাঁর কাছে ফেরে গেলেন (এবং বললেন)
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন। তুমি যাও এবং তাকে বল তুমি জাহান্নামী নও; বরং তুমি জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।
৪৪৮৩ হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)
ইবনু আবূ মুলায়কা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাদেরকে জানিয়েছেন যে একবার বনী তামীম গোত্রের একদল লোক সাওয়ার হয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন কা’কা ইবনু মাবাদ (রাঃ)-কে আমীর বানানো হোক এবং উমর (রাঃ) বললেন আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ)-কে আমীর নিযুক্ত করা হোক। তখন আবূ বকর
সিদ্দীক (রাঃ) বললেন আপনার ইচ্ছা হল
কেবল আমার বিরোধিতা করা। উত্তরে উমর (রাঃ) বললেন আমি আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা করিনি। এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর তর্ক-বিতর্ক
করতে লাগলেন এক পর্যায়ে তাদের কন্ঠস্বর
উঁচু হয়ে গেল। এ উপলক্ষে আল্লাহ্ নাযিল করলেন “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -এর সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে
অগ্রণী হয়ো না। … আয়াত শেষ। ”
৪৪৮৪ আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হলে জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি? পরিশেষে আল্লাহ্ তাঁর পা সেখানে রাখবেন তখন সে বলবে আর না আর না।
৪৪৮৫ মুহাম্মদ ইবনু কায্যান (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফূ হাদীস হিসাবে বর্ণিত। তবে আবূ সুফয়ান এ হাদীসটিকে অধিকাংশ
সময় মওকুফ হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। জাহান্নামকে বলা হবে তুমি কি পূর্ণ হয়ে গিয়েছ? জাহান্নাম বলবে আরো আছে কি? তখন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আপন চরণ তাতে রাখবেন। তখন জাহান্নাম
বলবে
আর নয় আর নয়।
৪৪৮৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হয়। জাহান্নাম বলে
দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে আমার কি হল? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ লোকেরাই প্রবেশ করছে। তখন
আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা জান্নাতকে বলবেন তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা আমি
অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা শাস্তি
দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পরিপূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ
হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর কদম মুবারক তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে বস বস বস। তখন জাহান্নাম ভরে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সাথে মুড়িয়ে
দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি জুলুম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতের
জন্য অন্য মাখলূক পয়দা করবেন।
৪৪৮৭ ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ)
জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একরাতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসা
ছিলাম। তখন তিনি চৌদ্দ তারিখের রজনীর চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন তোমরা যেমন এ চাঁদটি দেখতে পাচ্ছ অনুরূপভাবে তোমরা তোমাদের রবকে দেখতে পাবে এবং তাঁকে দেখার ব্যাপারে
(তোমরা একে অন্যের কারণে) বাধাপ্রাপ্ত হবে না। তাই তোমাদের সামর্থ্য থাকলে সূর্যোদয়ের
আগে এবং সূর্যাস্তের আগের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারে প্রভাবিত হবে না। তারপর
তিনি পাঠ করলেন “আপনার রবের প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে।
”
৪৪৮৮ আদম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আল্লাহ্ তা’আলা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর তাঁর
পবিত্রতা বর্ণনার নির্দেশ দিয়েছেন।
৪৪৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে ওযর পেশ
করলাম যে
আমি অসুস্থ। তিনি বললেন তুমি সওয়ার হয়ে লোকদের পেছন তাওয়াফ করে নাও। তখন আমি তাওয়াফ
করলাম। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন এবং তিলাওয়াত করছিলেন।
৪৪৯০ হুমায়দী (রহঃ) জুবায়র ইবনু
মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবে সূরা তূর
পাঠ করতে শুনেছি। যখন তিনি এ আয়াত পর্যন্ত পৌছেনঃ তারা কি স্রষ্টা ব্যতীত সৃষ্টি হয়েছে না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? আসমান-যমীন কি তারাই সৃষ্টি করেছে? আসলে তারা অবিশ্বাসী। আমার প্রতিপালকের ধনভাণ্ডার কি তাদের কাছে
রয়েছে
না তারাই্ এ সমুদয়ের নিয়ন্তা? তখন আমার অন্তর প্রায় উড়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল। সুফয়ান (রহঃ)
বলেন
আমি যুহরীকে মুহাম্মদ ইবনু জুবায়ির ইবনু মুত’ইমকে তার পিতার
বর্ণনা করতে শুনেছি যা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি। কিন্তু এর অতিরিক্ত আমি শুনেছি
যা তাঁরা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
৪৪৯১ ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) মাসরূক (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করলাম আম্মা! মুহাম্মদ কি তাঁর রবকে
দেখেছিলেন? তিনি বললেন তোমার কথায় আমার গায়ের পশম কাটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। তিনটি কথা
সম্পর্কে তুমি কি অবগত নও? যে তোমাকে এ তিনটি
কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। যদি কেউ তোমাকে বলে যে মুহাম্মদ তাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি পাঠ করলেন তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নহেন কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত; এবং তিনই সূক্ষদর্শী সম্যক পরিজ্ঞাত” “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে আল্লাহ্ তাঁর সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যম ছাড়া অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে”। আর যে ব্যাক্তি
তোমাকে বলবে যে আগামীকাল কি হবে সে তা জানে তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তারপর তিনি তিলওয়াত করলেন “কেউ জাননা আগামীকাল সে কি অর্জন করবে। ” এবং তোমাকে যে বলবে
যে
মুহাম্মদ কোন কথা গোপন রেখেছেন তাহলেও সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি পাঠ করলেন “হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তোমার প্রতিপালকের
কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর। ” হ্যাঁ তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -কে তাঁর নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন।
৪৪৯২ আবূন্ নু’মান (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। আয়াত দু’টোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম
-কে দেখেছেন। তাঁর ছয়’শ ডানা ছিল।
৪৪৯৩ তাল্ক বি্ন গান্নাম (রহঃ)
… শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি যির্র (রহঃ)-কে আল্লাহর বাণীঃ –এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলে তিনি বললেন আমাকে আবদুল্লাহ
(রাঃ) বলেছেন মুহাম্মদ জিবরাঈল আলাইহি ওয়া
সাল্লাম -কে দেখেছেন। এ সময় তাঁর ডানা ছিল ছ’শ।
৪৪৯৪ কাবীসা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবুজ রঙের একটি ‘রফরফ’
দেখেছিলেন যা সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে রেখেছিল।
৪৪৯৫ মুসলিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ –এর ব্যাখ্যায় বলেন এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যাক্তিকে বোঝানো হয়েছে যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত।
৪৪৯৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি কসম করে বলে যে লাত ও উয্যার কসম তাহলে সাথে সাথে তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা উচিত। আর যে
ব্যাক্তি তার সাথীকে বলে এসো আমি তোমার
সাথে জুয়া খেলব তার সা’দ্কা দেয়া উচিত।
৪৪৯৭ হুমায়দী (রহঃ) উরওয়া (রহঃ)
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন মুশাল্লাল নামক
স্থানে অবস্থিত মানাত দেবীর নামে যারা ইহরাম বাঁধতো তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ করতো না। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা
নাযিল করলেন “সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের
অন্যতম। ” এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানগণ তাওয়াফ করলেন। সুফয়ান
(রহঃ) বলেন ‘মানাত’ কুদায়দ নামক স্থানের
মুশাল্লাল নামক জায়গায় অবস্থিত ছিল। অপর এক বর্ণনায় আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রহঃ)
… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এ আয়াতটি আনসারদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। ইসলাম গ্রহণের পূর্বের
আনসার ও গাস্সান গোত্রের লোকেরা মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো। হাদীসের অবশিষ্টাংশ সুফ্য়ানের
বর্ণনার মতই। অপর এক সূত্রে মা’মার (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আনসারদের কতিপয় লোক মানাতের নামে ইহরাম বাঁধতো মানাত মক্কা ও মদিনার মধ্যস্থলে রক্ষিত একটি দেবমূর্তি। তারা
বললেন
হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানাতের সম্মানার্থে
আমরা সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে তাওয়াফ করতাম না। এ হাদীসটি পূর্বের হাদীসেরই অনুরূপ।
৪৪৯৮ আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু আব্বস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজমের মধ্যে সিজদা করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলমান মুশরিক জ্বীন ও মানব
সকলেই সিজদা করল। আইয়ূব (রহঃ)-এর সূত্রে ইবনু তাহ্মান (রহঃ) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ
করেছেন ;
তবে ইবনু উলাইয়া (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ)-এর সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর
কথা উল্লেখ করেননি।
৪৪৯৯ নাস্র ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সিজদার আয়াত সম্বলিত
নাযিল হওয়া সর্বপ্রথম সূরা হল আন-নাজম। এ সূরার মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সিজদা করলেন এবং সিজদা করল তাঁর পেছনের সকল লোক। তবে এক ব্যাক্তিকে আমি দেখলাম এক মুষ্টি মাটি হাতে তুলে তার ওপরে সিজদা করছে। এরপর আমি তাকে
কাফের অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। সে হল উমাইয়া ইবনু খাল্ফ।
৪৫০০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু মাসউদ
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। এর এক খণ্ড পাহাড়ের উপর এবং অপর
খণ্ড পাহাড়ের নিচে পড়েছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা সাক্ষী থাক।
৪৫০১ আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রহঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- চাঁদ বিদীর্ণ হল যখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম।
এবং তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এরপর তিনি আমাদের বললেন “তোমরা সাক্ষী থাক তোমরা সাক্ষী থাক”।
৪৫০২ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
জীবনকালে চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছিল।
৪৫০৩ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) আনাস (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- মক্কাবাসীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে একটি নিদর্শন দেখানোর দাবি জানালো। তখন তিনি তাদের চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার নিদর্শন দেখালেন।
৪৫০৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) । আনাস
(রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।
৪৫০৫ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’
পড়তেন।
৪৫০৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’
পড়তেন। (মূল পাঠে ছিল ‘মুযযাকির’। কিন্তু আরবী ব্যাকরণের বিধান অনুযায়ী কুরআনে ব্যবহৃত
হয়েছে ‘মুদ্দাকির’। )
৪৫০৭ আবূ ন’আঈম (রহঃ) আবূ ইসহাক
(রহঃ) হতে বর্ণিতঃএক ব্যাক্তি আল-আসওয়াদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করেছেন যে আয়াতের মধ্যে ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’ নাকি ‘মুযযাকির’? আল-আসওয়াদ (রহঃ) বললেন “আমি আবদুল্লাহকে এটি ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’ পড়তে শুনেছি। আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ও এটি ‘দাল’ দিয়ে ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’ পড়তে
শুনেছি”।
৪৫০৮ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু
মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’
পড়েছেন।
৪৫০৯ মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’ পড়েছেন।
৪৫১০ ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ‘ফাহাল
মিম-মুযযাকির’ পড়েছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন এটি ‘ফাহাল মিম-মুদ্দাকির’।
৪৫১১ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু
হাওশাব (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রসূল বদর
যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন- “হে আল্লাহ! আমি তোমাকে
তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আবেদন করছি! হে আল্লাহ! যদি তুমি চাও আজকের পর তোমার ইবাদত আর না করা হোক ” ঠিক তখনই আবূ বকর সিদ্দিক
(রহঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন “যথেষ্ট হয়েছে।
হে রসূলুল্লাহ! আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের সাথে বহু দু’আ করেছেন”। তখন রসূল
বর্ম পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁবু থেকে বেরিয়ে গেলেন দুটি আয়াত পড়তে
পড়তে
“এ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন
করবে। অধিকন্তু কিয়ামত তাদের আযাবের নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর”
(সূরা ৫৪
আয়াত ৪৫-৪৬)।
৪৫১২ ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- “অধিকন্তু কিয়ামত তাদের আযাবের নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত
হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (সূরা ৫৪ আয়াত ৪৬) আয়াতটি
মুহাম্মাদ এর প্রতি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তখন কিশোরী ছিলাম খেলাধুলা করতাম।
৪৫১৩ ইসহাক (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রসূল বদর যুদ্ধের দিন একটি ছোট্ট তাঁবুতে অবস্থান করে এ দু’আ করেছিলেন-
“হে আল্লাহ! আমি তোমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আবেদন করছি! হে আল্লাহ!
যদি তুমি চাও আজকের পর তোমার ইবাদত আর না
করা হোক ” ঠিক তখনই আবূ বকর সিদ্দিক (রহঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন “যথেষ্ট হয়েছে। হে রসূলুল্লাহ! আপনি আপনার রবের নিকট অনুনয়-বিনয়ের
সাথে বহু দু’আ করেছেন”। তখন তিনি লৌহবর্ম পরা অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি তাঁবু থেকে
বেরিয়ে গেলেন এ আয়াত পড়তে পড়তে- “এ দল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে।
অধিকন্তু কিয়ামত তাদের আযাবের নির্ধারিতকাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর” (সূরা
৫৪
আয়াত ৪৫-৪৬)।
৪৫১৪ আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ
(রহঃ) কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রসূল বলেছেন (জান্নাতে) দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের
সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে। এবং (জান্নাতে) আরও দুটি উদ্যান থাকবে। এই দুটির সকল পাত্র
এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসীরা তাদের
রবকে দেখবে। জান্নাতবাসী এবং তাদের রবের এই দর্শনের মাঝে আল্লাহর সত্তার উপর জড়ানো
তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের পর্দা ছাড়া আর কিছুই থাকবেনা।
৪৫১৫ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ)
কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রসূল বলেছেন জান্নাতের মধ্যে ফাঁপা মূর্তির একটি তাঁবু থাকবে যা হবে ষাট
মাইল প্রশস্ত। এর প্রতিটি কোণে থাকবে হুর-বালা যাদের এক কোণার জন অপর কোণার জনকে দেখবে না। ঈমানদার লোকেরা
তাদের কাছে যাবে। এতে দুটি উদ্যান থাকবে যার সকল পাত্র এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু রূপার তৈরি হবে।
এবং আরও দুটি উদ্যান থাকবে যার সকল পাত্র
এবং এর অভ্যন্তরের সকল বস্তু সোনার তৈরি হবে। জান্নাতে-আদনের মধ্যে জান্নাতবাসী এবং
তাদের রবের দর্শনের মাঝে আল্লাহর সত্তার উপর জড়ানো তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের পর্দা ছাড়া আর
কিছুই থাকবেনা।
৪৫১৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “জান্নাতের মধ্যে এমন বড় একটি বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় একজন সওয়ারী একশ বছর চলতে পারবে কিন্তু তা অতিক্রম করতে পারবে না। যদি তুমি চাও তবে (সম্প্রসারিত
ছায়া) পাঠ করতে পার”।
৪৫১৭ মুহাম্মদ ইবনু আবদূর রহীম
(রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন – আমি ইবনু আব্বাস (রহঃ)-কে সূরা
তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এটি তো লাঞ্ছনাকারী সূরা। “ তাদের একদল এই করছে আরেক দল ঐ করছে” এই বলে একাধারে এ সূরা নাযিল হতে থাকলে লোকজন ধারণা করতে লাগলো
যে
তাদের মধ্যে এমন কেউ আর বাকী থাকবেনা যাকে এই সূরায় উল্লেখ করা হবেনা। বর্ণনাকারী বলেন- আমি তাঁকে
সূরা আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এই সূরাটি বদর যুদ্ধের সময় নাযিল হয়েছে। আমি তাঁকে সূরা হাশর
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এই সূরাটি বনী নাদীর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
৪৫১৮ হাসান ইবনু মুদরিক (রহঃ) সাঈদ
ইবনু জুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে ‘সূরা হাশর’ সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এটিকে ‘সূরা বনী
নাযীর’ বল।
৪৫১৯ কুতায়বা (রহঃ) ইবনু উমার
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রসূল বনী নাযীর গোত্রের খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন
এবং কেটে ফেলেছিলেন যা ‘বুওয়াইরা’
নমক স্থানে (মদিনার নিকটে) ছিল। এরপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ “তোমরা যে খেজুর গাছ
কেটেছ বা যেগুলোকে কাণ্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ তা তো আল্লাহরই অনুমতিতে যাতে আল্লাহ পাপীদের লাঞ্ছিত করবেন” (সূরা ৫৯ আয়াত ০৫)।
৪৫২০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
উমার (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- বনী নাদীর এর বিষয়সম্পত্তি ঐ সকল বস্তুর অন্তর্ভুক্ত
ছিল
যা আল্লাহ তাঁর রসূল -কে ‘ফাই’ হিসেবে দিয়েছেন এ জন্য যে মুসলিমরা ঘোড়ায় বা উটে চড়ে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটি
খাস ছিল রসূল এর জন্য। এর মধ্য থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ দান করতেন।
এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের কাজে ব্যয় করতেন আল্লাহর পথে জিহাদের
প্রস্তুতি হিসেবে।
৪৫২১ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহ লা’নত করেছেন ঐ সকল নারীর প্রতি যারা
অন্যের শরীরে উল্কি অংকন করে নিজ শরীরে উল্কি
অংকন করায় যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ
উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এরা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটিয়েছে।
এরপর বনী আসা’দ গোত্রের উম্মে ইয়াকুব নামে এক মহিলার কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে সে এসে বলল আল্লাহর রসূল যার প্রতি লা’নত করেছেন আল্লাহর কিতাবে যার প্রতি লা’নত করা হয়েছে আমি তার প্রতি লা’নত করব না কেন? তখন মহিলা বলল আমি দুই ফলকের মাঝে যা আছে তা (পূর্ণ কুর’আন) পড়েছি। কিন্তু
আপনি যা বলেছেন তা তো এতে পাইনি। আবদুল্লাহ
(রহঃ) বললেন যদি তুমি কুর’আন পড়তে অবশ্যই
তা পেতে
তুমি কি পড়নি? “রসূল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা তোমাদের নিষেধ
করেন তা হতে বিরত থাক”। (সূরা ৫৯ আয়াত ০৭) মহিলা
বলল
হ্যাঁ নিশ্চয়ই পড়েছি। আবদুল্লাহ (রহঃ) বললেন রসূল এ কাজে নিষেধ করেছেন। তখন মহিলা বলল আমার মনে হয় আপনার পরিবারও এ কাজ করে। তিনি বললেন তুমি যাও এবং ভালোভাবে দেখে এসো। এরপর মহিলা গেল এবং ভালোভাবে
দেখে এলো। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কিছুই দেখতে পেলো না। তখন আবদুল্লাহ (রহঃ) বললেন আমার স্ত্রী যদি এমন করত তবে সে আমার সাথে একত্রে থাকতে পারত না।
৪৫২২ আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- যে নারী কৃত্রিম চুল লাগায় তার প্রতি রসূল লা’নত করেছেন।
৪৫২৩ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আমর
ইবনু মাইমুন (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- উমার (রাঃ) বলেছেন আমি আমার পরবর্তী খলীফাকে অসীয়ত করেছি প্রথম যুগের মুহাজিরদের হক আদায় করার জন্য এবং আমার পরবর্তী
খলীফাকে আনসারদের ব্যাপারে অসীয়ত করেছি যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের পূর্বে
এ নগরীতে বসবাস করতেন এবং ঈমান এনেছিলেন যেন সে তাদের পুণ্যবানদের সৎকর্মকে গ্রহণ করে
এবং দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করে দেয়।
৪৫২৪ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু
কাসীর (রহঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক ব্যাক্তি রসূল এর কাছে এসে
বলল
হে রসূলুল্লাহ আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের
কাছে পাঠালেন কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই
পেলেন না। এরপর রসূল বললেন এমন কেউ আছে কি যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারী করতে পারে? আল্লাহ তার প্রতি রহমত করবেন। তখন আনসারদের একজন দাঁড়িয়ে বললেন হে রসূলুল্লাহ! আমি আছি। এরপর তিনি তাকে সাথে নিয়ে বাড়িতে গেলেন
এবং নিজ স্ত্রীকে বললেন ইনি রসূল এর মেহমান কোন জিনিস জমা রাখবে না। মহিলা বলল আল্লাহর কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই।
তিনি বললেন ছেলে-মেয়েরা রাতের খাবার চাইলে
তুমি তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিও এবং বাতি নিভিয়ে দিও। আজ রাতে আমরা অভুক্ত থাকব। সুতরাং
মহিলা তা-ই করল। পরদিন সকালে আনসার সাহাবী রসূল এর কাছে গেলে তিনি বললেন অমুক ব্যাক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন।
এরপর আল্লাহ নাযিল করলেন “এবং তারা তাদের
নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও” (সূরা ৫৯ আয়াত ০৯)।
৪৫২৫ হুমায়দী (রহঃ) আলী (রাঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর রসূল যুবাইর (রাঃ) মিকদাদ (রাঃ) ও আমাকে পাঠালেন এবং বললেন তোমরা ‘রওদা খাখ’ নামক স্থানে যাও। সেখানে এক উট-আরোহিণী মহিলা
পাবে। তার কাছে একটি চিঠি রয়েছে তোমরা তার কাছ
থেকে সেই চিঠিটি নিয়ে নিবে। এরপর আমরা রওনা হলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল।
যেতে যেতে আমরা রওদায় গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছেই আমরা উট-আরোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা
বললাম
চিঠিটি বের কর। সে বলল আমার কাছে কোন চিঠি নেই। আমরা বললাম অবশ্যই তুমি চিঠিটি বের করবে তা না হলে তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হবে। এরপর সে তার চুলের
বেণী থেকে চিঠিটি বের করল। আমরা চিঠিটি নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে এলাম। দেখা গেল চিঠিটি হাতিব
ইবনু আবূ বালতাআহ (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লিখা। এ চিঠিতে তিনি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিয়েছেন। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বললেন হে রসূলুল্লাহ! আমার ব্যাপারে দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না।
আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সাথে বসবাসকারী এক ব্যাক্তি কিন্ত বংশগতভাবে তাদের সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। আপনার
সাথে যত মুহাজির আছেন তাদের সবারই সেখানে
আত্নীয়-স্বজন রয়েছে। এসব আত্নীয়-স্বজনের মক্কায় তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদ রক্ষা
পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম যেহেতু তাদের
সাথে আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই তাই এবার যদি
আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি তাহলে হয়তো তারাও
আমার আত্মীয়স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে। কুফর ও নিজ ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব
নিয়ে আমি এ কাজ করিনি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। তখন উমার (রাঃ) বললেন হে রসূলুল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন এখনই আমি তার শিরচ্ছেদ করি।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুমি কি জানো না আল্লাহ অবশ্যই বদরে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেছেনঃ
“তোমরা যা চাও কর আমি তোমাদের ক্ষমা
করে দিয়েছি”। আমর বলেন এ ঘটনার প্রেক্ষিতে
নাযিল হয়েছেঃ “হে ঈমানদারগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না”
(সূরা ৬০
আয়াত ০১)। সুফইয়ান (রাঃ) বলেন আয়াতটি হাদিসের অংশ নাকি আমর (রাঃ)-এর কথা তা আমি জানিনা।
৪৫২৬ আলী (রহঃ) হতে বর্ণিত যে সুফইয়ান ইবনু উয়াইনা (রহঃ)-কে “হে মুমিনগণ! আমার শত্রুকে বন্ধুরূপে
গ্রহণ করো না” আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন মানুষ বর্ণনার মাঝে তো এমনই পাওয়া যায়। আমি এ হাদিসটি আমর ইবনু
দীনার (রহঃ) থেকে মুখস্ত করেছি। এর মধ্য থেকে একটি অক্ষরও আমি বাদ দেইনি। আমার ধারণা আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে আমি ব্যতীত আর কেউ এ হাদিস মুখস্ত
করেনি।
৪৫২৭ ইসহাক (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) তাঁকে
বলেছেন
কোন মুমিন মহিলা রসূল এর কাছে হিজরত করে এলে তিনি তাকে আল্লাহর এই আয়াতের ভিত্তিতে যাচাই করতেন- “হে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মুমিন নারীরা যখন আপনার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে
আসে যে
তারা আল্লাহর সাথে শরীক করবে না চুরি করবে না ব্যভিচার করবে না নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে
না
তখন তাদের বায়’আত গ্রহণ করবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু” (সূরা ৬০ আয়াত ১২)। উরওয়া (রাঃ) বলেন আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে মুমিন নারী এসব শর্ত মেনে নিত রসূল তাকে বলতেন আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়’আত করে নিলাম। আল্লাহর কসম! বায়’আত
গ্রহণকালে কোন নারীর হাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতকে স্পর্শ করেনি।
নারীদের তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়’আত করতেন- “আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়’আত করলাম”।
৪৫২৮ আবূ ম’মার (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা রসূল এর কাছে বায়’আত গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি আমাদের
সামনে পাঠ করলেন “তারা আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না”। এরপর তিনি আমাদেরকে মৃৎ ব্যাক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদতে
নিষেধ করলেন। এ সময় এক মহিলা তার হাত টেনে নিয়ে বলল অমুক মহিলা আমাকে বিলাপে সাহায্য করেছে আমি তাকে এর বিনিময় দিতে চেয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকে কিছুই বলেননি। এরপর মহিলাটি উঠে চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে এলো তখন রসূল তাকে বায়’আত করলেন।
৪৫২৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহর বানী- “এবং তারা সৎকাজে আপনাকে অমান্য
করবে না” (সূরা ৬০ আয়াত ১২) এর ব্যাখ্যায়
বলেন যে
এটি একটি শর্ত যা আল্লাহ নারীদের প্রতি আরোপ করেছেন (যারা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়’আত করতে আসতেন)।
৪৫৩০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে ছিলাম তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি এসব শর্তে আমার কাছে বায়’আত করবে যে তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না যিনা করবে না এবং চুরি করবে না। এরপর তিনি নারীদের শর্ত সম্পর্কিত
আয়াত পাঠ করলেন। বর্ণনাকারী সুফইয়ান প্রায়ই বলতেন রসূল আয়াতটি পাঠ করেছেন। এরপর রসূল বললেন তোমাদের যে ব্যাক্তি এসব শর্ত পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে
ফেলবে এবং তাকে (দুনিয়াতে) শাস্তিও দেয়া হবে তবে এ শাস্তি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যাক্তি এসবের
কোন একটি করে ফেলল এবং আল্লাহ তা গোপন রাখলেন তাহলে এ বিষয়টি আল্লাহর কাছে রইল। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে
পারেন অথবা তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।
৪৫৩১ মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর রহীম
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ঈদুল-ফিতরের দিন ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)
রসূল এর সাথে উপস্থিত ছিলাম এবং আবূ বকর (রাঃ) উমার (রাঃ) এবং উসমান (রাঃ) ও সাথে ছিলেন। তাঁরা সকলেই খুতবার
আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর তিনি খুতবা দিয়েছেন।
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নামলেন। তখন তিনি যে লোকজনকে
হাতের ইশারায় বসাচ্ছিলেন এ দৃশ্য আমি এখন
ও যেন দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি তাদের দুভাগ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং মহিলাদের
কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ) ও ছিলেন। এরপর তিনি পাঠ করলেন “হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মুমিন নারীরা যখন আপনার
কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে যে তারা আল্লাহর
সাথে শরীক করবে না চুরি করবে না ব্যভিচার করবে না নিজ সন্তানকে হত্যা করবে না তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রটাবে না এবং সৎকাজে আপনাকে অমান্য করবে
না ”। তিনি পূর্ণ আয়াত তিলাওয়াত করে শেষ করলেন। এরপর তিনি বললেন তোমরা কি এই শর্ত পূরণে রাজি আছো? একজন মহিলা বলল হ্যাঁ হে আল্লাহর রসূল!
এ ছাড়া আর কোন মহিলা কোন উত্তর দেয়নি। এ মহিলাটি কে ছিলেন হাসান (রাঃ) তা জানতেন না। রসূল বললেন তোমরা দান করো। তখন বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন এবং
মহিলারা তাদের রিং ও আংটি তাতে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিতে লাগলেন।
৪৫৩২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) জুবাইর
ইবনু মুত’ইম (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আল্লাহর রসূল কে বলতে শুনেছি “আমার অনেকগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ আমি আহমাদ এবং আমি মাহী যার দ্বারা আল্লাহ সকল কুফরী বিলুপ্ত করবেন। এবং আমি হাশির আমার পিছনে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে এবং আমি আকিব সর্বশেষ আগমনকারী”।
৪৫৩৩ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে বসেছিলাম। এই অবস্থায় তাঁর উপর নাযিল হল সূরা জুম্মা যার একটি আয়াত হল- “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের
সাথে মিলিত হয়নি” (সূরা ৬২ আয়াত ০৩)। আমি
জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের
মাঝে সালমান ফারসী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর রসূল সালমান (রাঃ) এর উপর হাত রেখে
বললেন
ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের কাছে থাকলেও আমাদের কিছু লোক অথবা তাদের
এক ব্যাক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে।
৪৫৩৪ আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াহাব (রহঃ)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমাদের লোক অথবা তাদের কিছু লোক অবশ্যই তা পেয়ে যাবে।
৪৫৩৫ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) জাবির
ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- একবার জুম্মার দিন একটি বাণিজ্য দল এলো আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। বারজন
লোক ছাড়া সকলেই সেদিকে ছুটে গেল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “এবং যখন তারা দেখে
ব্যবসা ও খেল-তামাশা তখন তারা (আপনাকে
দাঁড় করিয়ে রেখে) সেদিকে ছুটে যায়” (সূরা ৬২ আয়াত ১১)।
৪৫৩৬ আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ)
যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন
আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে বলতে শুনলাম আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল
লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচা কিংবা উমার (রাঃ) এর কাছে বলে দিলাম। তিনি
তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। ফলে তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে
বিস্তারিত সব বললাম। তখন আল্লাহর রসূল আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তাঁর সাথীদের কাছে খবর
পাঠালেন
তারা সকলেই কসম করে বলল এই কথা তারা বলেনি। ফলে রসূল আমার কথাকে মিথ্যা ও তার কথাকে
সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। আমি (মনের দুঃখে)
ঘরে বসে ছিলাম এবং আমার চাচা আমাকে বললেন আল্লাহর রসূল তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার প্রতি
অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে তুমি কীভাবে ভাবলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ
আপনার কাছে আসে” (সূরা ৬৩ আয়াত ০১)। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে লোক পাঠালেন এবং এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর
বললেন
হে যাইদ! আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৪৫৩৭ আদম ইবনু ইয়াস (রহঃ) যাইদ
ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ
ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে এবং সে এও বলল আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল
লোকদের বহিষ্কৃত করবেই। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। তখন আল্লাহর রসূল আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে
ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল এই কথা তারা বলেনি। ফলে রসূল আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে
সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন মনকষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এমনকি আমি (মনের
দুঃখে) ঘরে বসে ছিলাম। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (সূরা
৬৩
আয়াত ০১); “তারা বলে
আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে” (সূরা ৬৩ আয়াত ০৭); “তথা হতে
প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই” (সূরা ৬৩ আয়াত ০৭-০৮)। এরপর আল্লাহর রসূল আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং আমার
সামনে এ সূরা পাঠ করলেন। এরপর বললেন আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৪৫৩৮ আদম (রহঃ) যাইদ ইবনু আরকাম
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আবদুল্লাহ ইবনু উবাই যখন বলল “আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না” এবং এও বলল “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে ”। তখন এখবর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। এ কারণে আনসারগণ আমার নিন্দা করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনু
উবাই কসম করে বলল এই কথা সে বলেনি।
এরপর আমি বাড়ি ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর আল্লাহর রসূল আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর
কাছে গেলাম। তখন তিনি বললেন আল্লাহ তোমার
সত্যতা ঘোষণা করেছেন এবং নাযিল করেছেন- “তারা বলে আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা
ব্যয় করবে না ” (সূরা ৬৩ আয়াত ০৭)।
৪৫৩৯ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) যাইদ
ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা কোন এক সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সাথে বের হলাম। সফরে লোকজন সংকটের মধ্যে পড়ে গেল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু
উবাই তার সাথীদের বললেন “আল্লাহর রসূল
এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে” এবং সে এও বলল “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল
লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। (এ কথা শুনে) আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে খবর দিলাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে ডেকে পাঠালেন।
সে জোরালো কসম করে বলল এই কথা সে বলেনি।
তখন লোকেরা বলল যাইদ রসূল কে মিথ্যা বলেছে।
তাদের এ কথায় আমি খুব মনকষ্ট পেলাম। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ আমার সত্যতা সম্পর্কে এই আয়াত
নাযিল করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে” (সূরা ৬৩ আয়াত ০১)। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ডাকলেন যাতে তারা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কিন্তু তারা তাদের মাথা ফিরিয়ে নিল।
৪৫৪০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)
যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আমার চাচার সাথে ছিলাম। তখন আবদুল্লাহ
ইবনু উবাই ইবনু সালূলকে বলতে শুনলাম “আল্লাহর রসূল এর সহচরদের জন্য তোমরা ব্যয় করবে না যতক্ষণ না তারা তাঁর থেকে সরে পড়ে” এবং “আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন
করলে তথা হতে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকদের বহিষ্কৃত করবেই”। এ কথা আমি আমার চাচার কাছে
বলে দিলাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁকে বিস্তারিত সব বললাম। তখন তিনি আবদুল্লাহ
ইবনু উবাই এবং তার সাথীদেরকে ডেকে পাঠালেন। তারা সকলেই কসম করে বলল এই কথা তারা বলেনি। ফলে রসূল আমার কথাকে মিথ্যা ও তাদের কথাকে
সত্য বলে মেনে নিলেন। এতে আমি এমন কষ্ট পেলাম যা আগে কখনো পাইনি। এরপর আমি ঘরে বসে
ছিলাম। তখন আমার চাচা আমাকে বললেন এমন কাজের চিন্তা কেন করলে যাতে আল্লাহর রসূল তোমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন এবং তোমার
প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? তখন আল্লাহ নাযিল
করলেন- “যখন মুনাফিকগণ আপনার কাছে আসে তখন তারা বলে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল” (সূরা ৬৩ আয়াত ০১)। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে
লোক পাঠালেন এবং আমার সামনে এ সূরা পাঠ করলেন ও বললেন আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৪৫৪১ আলী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। বর্ণনাকারী সুফইয়ান (রাঃ)
একবার ‘গযাওয়া’ এর স্থলে ‘জাইশ’ বর্ণনা করেছেন। এ সময় জনৈক মুহাজির এক আনসারের পাছায়
লাথি মারেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন এবং মুহাজির সাহাবী
হে মুহাজির ভাইয়েরা! বলে সাহায্য চাইলেন। রসূল শুনে বললেন কি হল আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের
মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা
বললেন
হে আল্লাহর রসূল! এক মুহাজির এক আনসারীর পাছায় লাথি মেরেছে।
তিনি বললেন বাদ দাও এটি খুবই বাজে কথা। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর কানে পৌঁছল।
সে বলল
আচ্ছা মুহাজির কি এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল
লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
পৌঁছল। তখন উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের
শিরচ্ছেদ করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে মুহাম্মাদ তাঁর সাথীদের হত্যা করেন। মুহাজিররা পরবর্তীতে যখন
মদিনায় হিজরত করে আসেন তখন মুহাজিরদের
তুলনায় আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান।
৪৫৪২ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- হাররায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাদের
খবর শুনে শোকাহত হয়েছিলাম। আমার এ শোকের খবর যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) এর কাছে পৌঁছলে
তিনি আমার কাছে চিঠি লিখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে তিনি রসূল কে বলতে শুনেছেন হে আল্লাহ! আনসার ও আনসারদের সন্তানদের তুমি ক্ষমা করে দাও।
এ দু’আর মাঝে রসূল আনসারদের তাদের সন্তানদের ও তাদের সন্তানদের জন্য দু’আ করেছেন কিনা
এ ব্যাপারে ইবনু ফাযল (রাঃ) সন্দেহ করেছেন। এ ব্যাপারে আনাস (রাঃ) তার কাছে উপস্থিত
ব্যাক্তিদের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) ঐ ব্যাক্তি যার শ্রবণ করাকে আল্লাহ সত্য
বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৪৫৪৩ হুমায়দী (রহঃ) জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। জনৈক মুহাজির
এক আনসারের নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী সাহাবী- হে আনসারী ভাইয়েরা! এবং মুহাজির
সাহাবী- হে মুহাজির ভাইয়েরা! বলে ডাক দিলেন। আল্লাহর রসূল শুনে বললেন এ কি ধরণের ডাকাডাকি? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। আনসারী হে আনসারী
ভাইয়েরা! এবং মুহাজির সাহাবী হে মুহাজির ভাইয়েরা! বলে নিজ নিজ গোত্রকে ডাক দিলেন। এ
কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন বাদ দাও এটি খুবই বাজে
কথা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে আসেন তখন আনসাররা সংখ্যাগরিষ্ঠ
ছিলেন। অবশ্য পরে মুহাজিররা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যান। এরপর ঘটনাটি আবদুল্লাহ ইবনু উবাইর
কানে পৌঁছল। সে বলল সত্যই তারা কি
এ কাজ করেছে? আল্লাহর কসম! আমরা মদিনায়
প্রত্যাবর্তন করলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বলদের বহিষ্কার করবেই। তখন উমার ইবনু
খত্তাব (রাঃ) বললেন হে আল্লাহর রসূল!
আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এখনই এ মুনাফিকের শিরচ্ছেদ করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন উমার! তাকে ছেড়ে
দাও
যেন কেউ এ কথা বলতে না পারে যে মুহাম্মাদ তাঁর সাথীদের হত্যা করছেন।
৪৫৪৪ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর উমার
(রাঃ) তা রসূল কে জানালেন। এতে আল্লাহর রসূল খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। এরপর তিনি বললেন সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয়। এরপর পবিত্রাবস্থা না আসা পর্যন্ত তাকে
নিজের কাছে রেখে দিক। এরপর ঋতু এসে পুনরায় পবিত্র হলে তখন যদি তালাকের প্রয়োজন মনে
করে তাহলে পবিত্রাবস্থায় স্পর্শ করার পূর্বে সে যেন তাকে তালাক দেয়। আল্লাহ যে ইদ্দত
পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এটি সেই ইদ্দত।
৪৫৪৫ সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ
সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক ব্যাক্তি ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাছে আসল যখন আবূ হুরাইরা (রাঃ) তাঁর সাথে বসে ছিলেন। লোকটি বলল এক মহিলা তার স্বামীর মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর বাচ্চা প্রসব করেছে।
সে এখন কীভাবে ইদ্দত পালন করবে এ বিষয়ে আপনার রায় দিন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দুটির যেটি দীর্ঘ তাকে সেটি পালন করতে হবে। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন আমি বললাম আল্লাহর হুকুম
তো হল- গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আবূ হুরাইরা বলেন আমি আমার ভ্রাতুষ্পুত্রের (আবূ সালামা (রাঃ)) সাথে একমত। তখন
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর ক্রীতদাস কুরাইবকে বিষয়টি জিজ্ঞেসের জন্য উম্মে সালামা (রাঃ)
এর কাছে পাঠালেন। তিনি বললেন সুবাই’আ আসলামিয়া
(রাঃ) গর্ভবতী থাকাকালীন সময়ে তার স্বামী নিহত হন এবং মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর তিনি একটি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর
তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হল এবং আল্লাহর রসূল তার বিয়ে দিয়ে দিলেন। যারা তাকে বিয়ের প্রস্তাব
দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আবূ সানাবিল। (অন্য এক সনদে) সুলায়মান ইবনু হারব
(রহঃ) ও আবূন ন’মান হাম্মাদ ইবনু
যায়দ ও আইয়ুবের মাধ্যমে রাসুল থেকে বর্ণনা করছেন তিনি বলেছেন আমি ঐ মজলিশে ছিলাম যেখানে আব্দুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) – ও উপস্থিত ছিলেন।
তার সঙ্গীরা তাকে খুব সম্মান করতেন। তিনি ইদ্দত সম্পর্কিত হুকুম দু’টি থেকে দীর্ঘ সময়
সাপেক্ষে হুকুমটির কথা উল্লেখ করলে আমি আবদুল্লাহ ইবনু উতবার বরাত দিয়ে সুবায়আ বিনত
হারিস আসলামিয়া (রহঃ) সম্পর্কিত হাদিসটি বর্ণনা করলাম। মুহাম্মদ ইবনু সিরিন (রহঃ) বলেন এতে তার কতিপয় সঙ্গী সাথী আমাকে থামিয়ে দিল। তিনি বলেন আমি বুঝালাম তারা আমার হাদিসটি অস্বীকার করছে। তাই আমি বললাম আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) কুফাতে এখনও জীবিত আছেন এমতাবস্থায় যদি আমি তার নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলি তাহলে এতে আমার চরম দুঃসাহসিকতা দেখান হবে। এ কথা শুনে আব্দুর
রহমান ইবনু আবূ লায়লা লজ্জিত হলেন এবং বললেন কিন্তু তারা চাচা তো এ হাদিস বর্ণনা করেন নি। তখন আমি আবূ আতিয়া
মালিক ইবনু আমিরের সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি সবায়আ (রাঃ) এর হাদিসটি বর্ণনা করে আমাকে শোনাতে লাগলেন।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম (এ বিষয়ে) আপনি
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে কোন কথা শুনেছেন কি? তিনি বললেন আমরা আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন তোমরা কি এ ধরনের মহিলাদের প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন না করে কঠোরতা
অবলম্বন করতে চাচ্ছ? সুরা নিসা আলকুসরা
এরপর নাযিল হয়েছে। আল্লাহ বলেন গর্ভবতী নারীদের
ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।
৪৫৪৬ মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) সাঈদ
ইবনু জুবায়ির (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইবনু আব্বাস
(রাঃ) বলেছেন কেউ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে “তুমি আমার জন্য অবৈধ” তাহলে তাকে অবশ্যই এর কাফফারা দিতে হবে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) আরও বললেন “আল্লাহর
রসূল এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ”।
৪৫৪৭ ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর রসূল যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ) এর কাছে মধু পান
করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন। তাই আমি ও হাফসা একমত হলাম যে আমাদের যার ঘরেই আল্লাহর রসূল আসবেন সে তাঁকে বলবে আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং
তিনি বললেন না বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম
করলাম
আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।
৪৫৪৮ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ
(রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- উমার ইবনু খত্তাব (রাঃ) কে একটি আয়াতের
(সূরা তাহরীমের) ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেসের জন্য আমি এক বছর ধরে চেয়েছিলেম কিন্তু তাঁর ব্যাক্তিত্বের প্রভাবের ভয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে
পারিনি। অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। ফিরে
আসার সময় আমরা যখন কোন একটি পথ অতিক্রম করছিলাম তখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে একটি পিলু গাছের আড়ালে গেলেন।
তিনি প্রয়োজন সেরে না আসা পর্যন্ত আমি সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। এরপর তাঁর সাথে
পথ চলতে চলতে বললাম হে আমীরুল মুমিনীন!
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই দুজন স্ত্রী কারা যারা তাঁর বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? তিনি বললেন তারা হল আয়িশা এবং হাফসা। তারপর আমি তাঁকে বললাম আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে এই ব্যাপারে এক বছর আগেই জিজ্ঞেস করতে
চেয়েছিলাম কিন্তু আপনাকে আমি সম্মান
করি বলে তা করতে পারিনি। উমার (রাঃ) বললেন আমাকে জিজ্ঞেস করতে পিছপা হবে না। যদি তুমি মনে কর যে আমি জানি
তাহলে জিজ্ঞেস করবে এবং আমি যদি জানি
তাহলে আমি তোমাকে বলব। এরপর উমার (রাঃ) আরও বললেন আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে নারীদের কোন আধিকার আছে বলে আমরা মনে
করতাম না। অবশেষে আল্লাহ তাদের সম্পর্কে যে বিধান নাযিল করার ছিল তা নাযিল করলেন এবং
তাদের হক হিসেবে যা নির্দিষ্ট করার ছিল তা নির্দিষ্ট করলেন। তিনি বলেন একদিন আমি কোন এক বিষয়ে চিন্তা করছিলাম এই এবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে বলল কাজটি যদি আপনি এভাবে করেন (তাহলে ভালো হবে)। আমি বললাম তোমার কি দরকার? এবং আমার কাজে তুমি মাথা ঘামাচ্ছ কেন? সে আমাকে বলল হে খত্তাবের পুত্র! কি আশ্চর্য আপনি চান না যে আমি আপনার কথার উত্তর দই অথচ আপনার মেয়ে হাফসা (রাঃ) আল্লাহর রসূল এর সাথে তর্ক করেছে এমনকি এতে তিনি পুরো একদিন রাগান্বিত ছিলেন। এ কথা শুনে উমার
(রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং চাঁদরটি নিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তিনি তাকে বললেন হে আমার কন্যা! তুমি নাকে আল্লাহর রসূল এর সাথে তর্ক কর ফলে তিনি দিনভর রাগান্বিত থাকেন? হাফসা (রাঃ) বলেন আল্লাহর কসম! আমরা তো অবশ্যই তাঁর কথার জবাব দিয়ে থাকি। উমার
(রাঃ) বললেন জেনে রাখো! আমি তোমাকে আল্লাহর
শাস্তি ও আল্লাহর রসূল এর অসন্তুষ্টি সম্পর্কে সতর্ক করছি। রূপ-সৌন্দর্যের কারণে আল্লাহর
রসূল এর ভালোবাসা যাকে গর্বিতা করে রেখেছে (আয়িশা (রাঃ)) সে যেন তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে। উমার (রাঃ) বললেন এরপর আমি সেখান থেকে বেরিয়ে উম্মে সালামা (রাঃ) এর ঘরে ঢুকলাম
ও এই বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বললাম। কারণ তাঁর সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তখন উম্মে
সালামা (রাঃ) বললেন হে খত্তাবের পুত্র!
কি আশ্চর্য তুমি প্রত্যেক বিষয়েই হস্তক্ষেপ
করছ
আল্লাহর রসূল ও তাঁর স্ত্রীদের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছ।
আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে এমন কঠোরভাবে ধরলেন যে আমার রাগ কিছুটা কমে গেল। এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে এলাম।
সেসময় আমার এক আনসার বন্ধু ছিল। সে আমার অনুপস্থিতিতে এবং আমি তার অনুপস্থিতিতে খবর
(রসূল থেকে) সংগ্রহ করতাম। সেসময় আমরা গাসসানী বাদশাহের (আক্রমণের) ভয়ে ছিলাম। আমরা
শুনেছিলাম যে সে আমদেরকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। তাই আমাদের অন্তর ভয়ে আতঙ্কিত
ছিল। একদিন আমার আনসার বন্ধু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার দরজায় করাঘাত করল এবং বলল খুলুন খুলুন! আমি বললাম গাসসানী বাদশাহ কি এসেছে? সে বলল না কিন্তু আরও বেশি অঘটন ঘটেছে। আল্লাহর রসূল তাঁর স্ত্রীদের কাছ
থেকে আলাদা হলেন। আমি বললাম হাফসা ও আয়িশার
নাক ধূলায় ধূসরিত হোক। এরপর আমি কাপড় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। গিয়ে দেখলাম আল্লাহর রসূল একটি উঁচু টোঙে আবস্থান করছেন। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে
উঠতে হয়। সিঁড়ির মুখে আল্লাহর রসূল এর এক কালো গোলাম বসা ছিল। আমি বললাম বলুন উমার ইবনু খত্তাব
এসেছেন। এরপর আল্লাহর রসূল আমাকে অনুমতি দিলেন আমি তাঁকে এসব ঘটনা বললাম এক পর্যায়ে আমি যখন উম্মে সালামার কথোপকথন পর্যন্ত পৌঁছলাম তখন
আল্লাহর রসূল মুচকি হাসলেন। এসময় তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে ছিলেন। চাটাই ও আল্লাহর
রসূল এর মাঝে আর কিছুই ছিল না। তাঁর মাথার নিচে ছিল খেজুরের ছালভর্তি চামড়ার একটি বালিশ
ও পায়ের কাছে ছিল সলম গাছের পাতার একটি স্তূপ ও মাথার উপর লটকানো ছিল চামড়ার একটি মশক।
আমি আল্লাহর রসূল এর এক পাশে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেললে তিনি বললেন তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম হে আল্লাহর রসূল!
কিসরা ও কায়সার পার্থিব ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে আছে অথচ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন আল্লাহর রসূল বললেন তুমি কি পছন্দ করো না যে তারা দুনিয়া লাভ করুক আর আমরা আখিরাত লাভ করি।
৪৫৪৯ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল ইবনু
ইবরাহিম ইবনু মুগীরা আল জুফী (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি উমার
(রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করলাম আমি বললাম হে আমীরুল মু’মিনীন!
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীদের কোন দু’জন তার ব্যাপারে একমত
হয়ে পরস্পর একে অন্যকে সহযোগিতা করেছিলেন? আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি বললেন তারা হল আয়িশা এবং হাফসা (রাঃ)।
৪৫৫০ হুমায়দী (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে একমত
হয়ে যে দুজন নারী পরস্পরকে সাহায্য করেছিল তাদের সম্পর্কে উমার (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞেস
করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিজ্ঞেসের সুযোগ না পেয়ে আমি এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম।
অবশেষে একবার হাজ্জ (হজ্জ) করার উদ্দেশ্যে আমি তাঁর সাথে যাত্রা করলাম। আমরা ‘যাহরান’
নামক স্থানে পৌঁছলে উমার (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে গেলেন। এরপর আমাকে বললেন আমার জন্য ওযুর পানির ব্যবস্থা কর। আমি পাত্র ভরে পানি নিয়ে
আসলাম এবং ঢালতে লাগলাম। প্রশ্ন করার সুযোগ মনে করে আমি তাঁকে বললাম হে আমীরুল মুমিনীন! ঐ দুজন মহিলা কারা যারা পরস্পরকে সাহায্য করেছিল? ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন- আমি আমার কথা শেষ করতে না করতেই তিনি
বললেন
তারা হল আয়িশা এবং হাফসা।
৪৫৫১ আমর ইবনু আউন (রহঃ) আনাস
(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন উমার (রাঃ) বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সচেতন করার জন্য তার
সহধর্মীগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই আমি তাঁদেরকে বললাম- যদি তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে তার প্রতিপালক সম্ভবত তাকে দেবেন তোমাদের অপেক্ষা উত্তম
স্ত্রী। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। (সূরা ৬৬ আয়াত ০৫)
৪৫৫২ মাহমুদ (রাঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি “কঠোর স্বভাব এবং তদুপরি কুখ্যাত” (সূরা ৬৮ আয়াত ১৩) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন এই ব্যাক্তিটি হল কুরাইশ গোত্রের এমন এক ব্যাক্তি যার ঘাড়ে বকরীর চিহ্নের মত একটি বিশেষ চিহ্ন ছিল।
৪৫৫৩ আবূ নুআঈম (রহঃ) হারিস ইবনু
ওয়াহব খুযাই (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে বলতে শুনেছি আমি কি তোমাদের জান্নাতী লোকদের
পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায় যাদের লোকেরা অবজ্ঞা করে কিন্তু তারা যদি কোন বিষয়ে শপথ করে ফেলেন তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। এবং আমি কি তোমাদের জাহান্নামী
লোকদের পরিচয় বলব না? তারা উগ্রস্বভাবের অহংকারী এবং একরোখা।
৪৫৫৪ আদম (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি আমাদের রব যখন তাঁর পায়ের গোড়ালির জ্যোতি বিকিরণ করবেন তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাঁকে সিজদা করবে। কিন্তু যারা
দুনিয়াতে লোক দেখানো ও প্রচারের জন্য সিজদা করত তারা কেবল অবশিষ্ট থাকবে। তারা সিজদা করতে চাইলে তাদের পিঠ একখণ্ড
কাঠফলকের মত শক্ত হয়ে যাবে।
৪৫৫৫ ইবরাহিম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- যে প্রতিমার পূজা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর
জাতির মাঝে প্রচলিত ছিল পরবর্তী সময়ে
আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ ‘দুমাতুল জানো্দাল’ নামক স্থানে অবস্থিত
কালব গোত্রের একটি দেবমূর্তি সূওয়া’আ হল হুযাইল
গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুস ছিল মুরাদ গোত্রের অবশ্য পরে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার
নিকটে ‘জাওফ’ নামক স্থানে। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমযায় শাখারদের মূর্তি। নূহ(আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এর জাতির কতিপয় নেক লোকের নাম নাসর ছিল। তারা মারা গেলে শয়তান তাদের জাতির লোকদের হৃদয়ে এই কথা ঢুকিয়ে দিল যে তারা যেখানে বসে মজলিস করত সেখানে তোমরা কিছু মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সকল নেক লোকের নামানুসারেই
এগুলোর নামকরণ কর। সুতরাং তারা তাই করল কিন্তু তখনও ঐসব মূর্তির পূজা করা হত না। তবে মূর্তি স্থাপনকারী
লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলো সম্পর্কে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের
পূজা করতে শুরু করে দেয়।
৪৫৫৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রসূল একদল সাহাবীকে নিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করলেন। এ সময়ই জ্বীনদের আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে বাঁধা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে
এবং তাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। ফলে জ্বীন শয়তানরা ফিরে আসলে
অন্য জ্বীনরা তাদের বলল তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল আসমানি খবরাদি
শোনার ব্যাপারে আমাদের উপর বাঁধা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা
হয়েছে লেলিহান অগ্নিশিখা। তখন শয়তান বলল আসমানি খবরাদি শোনার ব্যাপারে তোমাদের উপর যে বাঁধা সৃষ্টি করা
হয়েছে
অবশ্যই তা কোন নতুন ঘটনা ঘটার কারণেই হয়েছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীর
পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত সফর কর এবং দেখ ব্যাপারটা কি ঘটেছে? তাই আসমানি খবরাদি সংগ্রহের ব্যাপারে যে বাঁধা সৃষ্টি হয়েছে এর কারণ খুঁজতে তারা সকলেই পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমে অনুসন্ধান
সফরে বেরিয়ে পড়ল। যারা তিহামার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল তারা ‘নাখলা’ নামক স্থানে আল্লাহর
রসূল এর কাছে এসে উপস্থিত হল। আল্লাহর রসূল এখান থেকে উকায বাজারের দিকে যাওয়ার জন্য
ঠিক করেছিলেন। এ সময় আল্লাহর রসূল সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
জ্বীনদের ঐ দলটি কুর’আন শুনতে পেয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে তা শুনতে লাগল এবং বলল আসমানি খবরাদি এবং তোমাদের মাঝে এটই মূলত বাঁধা সৃষ্টি করেছে।
তারপর তারা তাদের জাতির কাছে ফিরে এসে বলল হে আমাদের জাতি! আমরা এক বিস্ময়কর কুর’আন (তিলাওয়াত) শুনেছি যা সঠিক পথ নির্দেশ করে। এতে আমরা ঈমান এনেছি। আমরা কখনো আমাদের
রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। এরপর আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
র প্রতি নাযিল করলেনঃ “বলুন আমার প্রতি ওহী
প্রেরিত হয়েছে যা জ্বীনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে” (সূরা ৭২ আয়াত ০১)। জ্বীনদের এই কথাটি তাঁর (রসূল )প্রতি নাযিল করা হয়েছিল।
৪৫৫৭ ইয়াহইয়া (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু
কাসীর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) কে কুর’আনের
নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিলি বললেন “ইয়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির” (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম লোকজন তো বলে- “ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাযী খলাক” (সূরা আলাক)।
এতে আবূ সালামা (রাঃ) বলেন আমি জাবির ইবনু
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং তুমি যা বললে আমিও তাকে তাই বলেছিলাম।
এতে তিনি বলেন আল্লাহর রসূল আমাদের যা বলেছেন
তা বাদে আমি তোমাকে কিছুই বলব না। আল্লাহর রসূল বলেছেন আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত অবস্থায় ছিলাম। আমার ইতিকাফ শেষ হলে
আমি সেখান থেকে নেমে এলাম। তখন আমি আমাকে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি ডানে তাকালাম কিন্তু কিছু দেখলাম না। বামে তাকালাম কিন্তু এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর সামনে তাকালাম এদিকেও কিছু দেখলাম না। এরপর পিছনে তাকালাম কিন্তু এদিকেও আমি কিছু দেখলাম না। অবশেষে আমি উপরে তাকালাম
এবং কিছু একটা দেখলাম। এরপর আমি খাদিজার (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। তাই
তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করে এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালে। এরপর নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত!
উঠুন
সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন”
(সূরা মুদ্দাসসির)।
৪৫৫৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন
আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। উসমান ইবনু উমার আলী ইবনু মুবারক (রাঃ) থেকে যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তিনিও অনুরূপ
হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (উপরোক্ত হাদিস)।
৪৫৫৯ ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ইয়াহইয়া
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রাঃ) কে কুর’আনের
নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিলি বললেন “ইয়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির” (সূরা মুদ্দাসসির)। আমি বললাম আমাকে তো বলা হয়েছে- “ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাযী খলাক” (সূরা
আলাক)। এতে আবূ সালামা (রাঃ) বলেন আমি জাবির (রাঃ) কে কুর’আনের নাযিলকৃত প্রথম আয়াত (সূরা) সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেন “ইয়া আয়্যুহাল
মুদ্দাসসির” প্রথম নাযিল হয়েছিল। তখন আমি বললাম আমাকে তো বলা হয়েছে- “ইকরা বিসমি রব্বিকাল্লাযী খলাক” প্রথমে
নাযিল হয়েছিল। তখন তিনি বলেন আল্লাহর রসূল
যা বলেছেন আমি তোমাকে তাই বলছি। আল্লাহর
রসূল বলেছেন আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ রত
অবস্থায় ছিলাম। ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে নেমে উপত্যকার মাঝে পৌঁছলে আমি আমাকে
ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি সামনে পিছনে ডানে ও বামে তাকালাম।
দেখলাম সে (ফেরেশতা জিবরাঈল) আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। এরপর আমি
খাদিজার (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন এবং আমার গায়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন। তখন
আমার প্রতি নাযিল হলঃ “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন”
(সূরা মুদ্দাসসির)।
৪৫৬০ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল
সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন একবার আমি হাটছিলাম তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি
দেখলাম
যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে (ফেরেশতা জিবরাঈল)
আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি
ফিরে এসে বললাম আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ
নাযিল করলেন “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন অপবিত্রতা
হতে দূরে থাকুন” এই আয়াতগুলো সালাত (নামায/নামাজ) ফরয হওয়ার আগে নাযিল হয়েছিল। ‘রুজয’
অর্থ হল মূর্তিগুলো।
৪৫৬১ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল
সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছি। তিনি তাঁর আলোচনার মাঝে বলেন একবার আমি হাঁটছিলাম তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি
দেখলাম
যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল সে (ফেরেশতা জিবরাঈল)
আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। আমি তাঁর ভয়ে এতটাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে
গেলাম যে মাটিতে পড়ে গেলাম। এরপর আমি আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললাম আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন আমাকে বস্ত্রাবৃত করুন। তারা আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। এরপর আল্লাহ
নাযিল করলেন “হে বস্ত্রাবৃত! উঠুন অপবিত্রতা
হতে দূরে থাকুন” (সূরা ৭৪ আয়াত ০১-০৫)।
আবূ সালামা (রাঃ) বলেছেন ‘রুজয’ অর্থ হল
মূর্তিগুলো। এরপর থেকে ঘনঘন এবং ধারাবাহিকভাবে ওহী আসতে লাগল।
৪৫৬২ হুমায়দী (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী
নাযিল হত তখন তিনি দ্রুত তাঁর জিহ্বা নাড়তেন (পড়তেন)। রাবী সুফইয়ান বলেন এভাবে করার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ওহী মুখস্ত করা। এতে আল্লাহ
নাযিল করলেনঃ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না” (সূরা ৭৫ আয়াত ১৬)।
৪৫৬৩ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ)
মূসা ইবনু আবূ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহর বানীঃ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার
জন্য আপনি আপনার জিহ্বা নাড়াবেন না” সম্পর্কে সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করার
পর তিনি বললেন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন ওহী নাযিল
করা হত
তখন তিনি তাঁর ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। তখন তাঁকে বলা হল দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন
না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহী ভুলে যাবার আশংকায় এমন করতেন। নিশ্চয়ই
এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। অর্থাৎ আমি নিজেই তাকে তোমার স্মৃতিপটে
সংরক্ষিত রাখব। তাই আমি যখন তা পাঠ করব অর্থাৎ যখন তোমার প্রতি ওহী নাযিল হতে থাকবে তখন তুমি তার অনুসরণ করবে। এরপর তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই
অর্থাৎ এ কুরআনকে তোমার মুখ দিয়ে বর্ণনা করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার।
৪৫৬৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি আল্লাহর বানীঃ “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার
জিহ্বা নাড়াবেন না” – এর ব্যাখ্যায় বলেন যে জিবরাঈল(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ওহী নিয়ে আসতেন তখন রাসুল তাঁর
জিহ্বা ও ঠোঁট দুটো দ্রুত নাড়তেন। এটা তাঁর জন্য কষ্টকর হত এবং তাঁর চেহারা দেখেই বোঝা
যেত। তাই আল্লাহ তা’আলা “দ্রুত ওহী আয়ত্ত করার জন্য আপনি আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন
না। এ কুর’আন সংরক্ষণ ও পাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই” নাযিল করলেন। এতে আল্লাহ বলেছেনঃ
এ কুরআনকে আপনার বক্ষে সংরক্ষণ করা ও পরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং আমি যখন তা
পাঠ করি
আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন অর্থাৎ আমি যখন ওহী নাযিল করি তখন আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন।
তারপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই অর্থাৎ আপনার মুখে তা বর্ণনা করার দায়িত্ব আমারই।
রাবী বলেন এরপর জিবরাঈল(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
চলে গেলে
আল্লাহর ওয়াদা “অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমার” অনুযায়ী
তিনি তা পাঠ করতেন।
৪৫৬৫ মাহমুদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা রসূল এর সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত (নামায/নামাজ)
নাযিল হল। আমরা তাঁর মুখে শুনে সেটি শিখছিলাম। তখন একটি সাপ বেরিয়ে এল। আমরা ওদিকে
দৌড়ে গেলাম কিন্তু সাপটি আমাদের থেকে
দ্রুত পালিয়েগিয়ে গর্তে ঢুকে পড়ল। তখন আল্লাহর রসূল বললেন তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।
৪৫৬৬ আবদা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইসরাইল সুত্রে আসওয়াদ ইবনু আমির পুরবের
হাদিসটির অনুসরন করেছেন। অন্য সনদে হাফস আবূ মুআবিয়া এবং সুলায়মান ইবনু কারম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। অপর এক সনদে ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ঠিক এমনি
বর্ণনা করেছেন।
৪৫৬৭ কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন – এক গুহার মধ্যে আমরা আল্লাহর রসূল এর সাথে ছিলাম। এসময়
তাঁর প্রতি সূরা মুরসালাত (নামায/নামাজ) নাযিল হল। আমরা যত জলদি সম্ভব তাঁর মুখ থেকে
শুনে সেটি শিখছিলাম। হঠাৎ একটি সাপ বেরিয়ে এলো। আল্লাহর রসূল বললেন তোমরা ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম কিন্তু সাপটি আমাদের আগে চলে গেল। তখন আল্লাহর রসূল বললেন তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল।
৪৫৬৮ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ)
আব্দুর রহমান ইবনু আবিস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি ঐ আয়াতের (“নিশ্চয়ই তা উৎক্ষেপ
করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্টালিকার মত”-সূরা মুরসালাত (নামায/নামাজ) আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আমির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের কাণ্ড সংগ্রহ করে শীতকালের
জন্য উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই ‘কসর’ বলতাম।
৪৫৬৯ আমর ইবনু আলী (রহঃ) আব্দুর
রহমান ইবনু আবিস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আয়াতের (সূরা মুরসালাত (নামায/নামাজ) আয়াত ৩২) ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে লম্বা কাঠ সংগ্রহ করে শীতকালের জন্য
উঠিয়ে রেখে দিতাম। আর আমরা একেই ‘কসর’ বলতাম। ‘জিমালাতুন সুফর’ অর্থ জাহাজের রশি যা জমা করে রাখা হত। এমনকি তা মধ্যম দেহী মানুষের সমান উঁচু
হয়ে যেত।
৪৫৭০ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক গুহায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথে ছিলাম। এসময় তাঁর প্রতি ‘সূরা ওয়াল মুরসালাত (নামায/নামাজ)’ নাযিল হল। তিনি তা
তিলাওয়াত করছিলেন আর আমি তাঁর মুখ
থেকে শুনে সেটি শিখছিলাম। তিলাওয়াতে তখনো তাঁর মুখ সিক্ত ছিল। হঠাৎ আমাদের সামনে একটি
সাপ বেরিয়ে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ওটাকে মেরে ফেল। আমরা সেদিকে ছুটে গেলাম কিন্তু সাপটি চলে গেল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন
তোমরা যেমন তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেলে তেমনি সেও তোমাদের অনিষ্ট হতে বেঁচে গেল। উমার ইবনু হাফস বলেন এই হাদিসটি আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনে মুখস্ত করেছি। গুহাটি
মিনায় অবস্থিত বলে উল্লেখ আছে।
৪৫৭১ মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরাইরা
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর রসূল বলেছেন ১ম এবং ২য় শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার মাঝে চল্লিশ ব্যবধান হবে। জনৈক
ব্যাক্তি আবূ হুরাইরা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করল এর মানে চল্লিশ দিন? কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল চল্লিশ মাস? এবারও তিনি অস্বীকার করলেন। তারপর সে জিজ্ঞেস করল চল্লিশ বছর? পুনরায় তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন এরপর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। এতে মৃতরা জীবিত হয়ে
উঠবে
যেমনি বৃষ্টির পানিতে উদ্ভিদরাজি উৎপন্ন হয়। তখন মেরুদণ্ডের
হাড় ছাড়া মানুষের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পচে গলে শেষ হয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন ঐ হাড়-খণ্ড
থেকেই পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।
৪৫৭২ আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) সাহল
ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি দেখেছি আল্লাহর রসূল তাঁর মধ্যমা ও শাহাদাত
আঙ্গুল দুটি এভাবে একত্রিত করে বলেছেন কিয়ামত ও আমাকে এরূপে পাঠানো হয়েছে।
৪৫৭৩ আদম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন কুর’আনের হাফেজ পাঠক লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতার মত। অতি কষ্ট
হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি বারবার কুর’আন তিলাওয়াত করে সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে।
৪৫৭৪ ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “যেদিন
সকল মানুষ বিশ্বজগতের রবের সামনে দাঁড়াবে” (সূরা ৮৩ আয়াত ০৬) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন সেদিন প্রত্যেকের কানের লতি পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে।
৪৫৭৫ সুলায়মান ইবনু হারব (রাঃ)
আয়িশা (রাঃ) ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন যে ব্যাক্তিরই হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। আল্লাহ
কি বলেননিঃ “যার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে তার হিসাব নিকাশ সহজ হবে” (সূরা ৮৪ আয়াত ০৭-০৮)। একথা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন এখানে তো কেবল আমলনামা কিভাবে দেয়া হবে তার উল্লেখ করা হয়েছে অন্যথায় যার চুলচেরা হিসাব নেয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে।
৪৫৭৬ সাঈদ ইবনু নাযর (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- “লাতার-কাবুন্না তবাকন ‘আন-তবাক” (সূরা ৮৪ আয়াত ১৯) – এর মর্মার্থ হচ্ছে এক অবস্থার পর আরেক অবস্থা হওয়া। তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই এ অর্থ বর্ণনা করেছেন।
৪৫৭৭ আব্দান (রহঃ) বারা (রাঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে প্রথম
যারা হিজরত করে আমাদের কাছে এসেছিলেন তাঁরা হলেন মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) ও ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)।
তাঁরা দুজন এসেই আমাদেরকে কুর’আন পড়াতে শুরু করেন। এরপর এলেন আম্মার বিলাল ও সা’দ (রাঃ)। এরপর এলেন বিশজন সাহাবীসহ উমার ইবনু খত্তাব
(রাঃ)। এরপর এলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর আগমনে মদিনাবাসীকে এত বেশি আনন্দিত হতে দেখেছি যে অন্য কোন বিষয়ে তাদেরকে তততা আনন্দিত হতে আর কখনো দেখিনি। এমনকি
আমি দেখেছি ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত
বলছিল যে
ইনই তো আল্লাহর সেই রসূল যিনি আমাদের মাঝে এসেছেন। বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসার আগেই আমি
“সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা” (সূরা আ’লা) এর মত আরও কিছু সূরা শিখেছিলাম।
৪৫৭৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু যাম‘আ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা দিতে
শুনেছেন
যেখানে তিনি সামূদ গোত্রের কাছে প্রেরিত উটনী ও তার পা কাটার
কথা বললেন। তারপর রসূল “অতএব তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগা সে যখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো” (সূরা শামস আয়াত ১২) – এর ব্যাখ্যায় বললেন ঐ উটনীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যাক্তি তৎপর
হয়ে উঠলো যে সে সমাজের মধ্যে আবূ যাম’আতের মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই
খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারে কিন্তু ঐ দিন শেষেই সে আবার তার সাথে একই বিছানায় মিলিত হয়।
এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেয়া সম্পর্কে উপদেশ দিলেন কোন ব্যাক্তি সেই কাজটির জন্য কেন হাসে যে কাজটি সে নিজেও করে?
৪৫৭৯ কাবীসা ইবনু উকবা (রহঃ) আলকামা
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর একদল সাথীর সাথে সিরিয়া গেলাম।
আবূ দারদা আমাদের কাছে এসে বললেন কুর’আন পাঠ করতে
পারেন এমন কেউ আছেন কি? আমরা বললাম হ্যাঁ আছে। এরপর তিনি বললেন তাহলে আপনাদের মাঝে উত্তম তিলাওয়াতকারী কে? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিলে তিনি আমাকে বললেন পড়ুন। আমি পড়লাম “শপথ রাতের যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায় শপথ দিনের যখন তা আলোকিত হয় এবং শপথ নর ও নারীর” (সূরা লাইল আয়াত ০১-০৩)। তিলাওয়াত শুনে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি এই সূরা আপনার ওস্তাদ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের মুখে শুনেছেন? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন তিনি
বললেন
আমি এই সূরাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখে
শুনেছি। কিন্তু তারা (সিরিয়াবাসী) তা অস্বীকার করছে।
৪৫৮০ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ইবরাহিম
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিছু সাথী আবূ দারদা
(রাঃ) এর কাছে আসলেন। তিনিও তাদের খোঁজ করে পেয়ে গেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কিরাআত অনুযায়ী
কে কুর’আন তিলাওয়াত করতে পারে? তারা বললেন আমরা সবাই। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হাফিয কে? সকলেই আলকামার দিকে ইঙ্গিত করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে ‘সূরা লাইল’ কিভাবে পড়তে শুনেছেন? আলকামা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন “এবং শপথ নর ও নারীর”। আবূ দারদা বললেন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে অনুরূপ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। কিন্তু এরা (সিরিয়াবাসীরা) চায় আমি যেন তিলাওয়াত করি
এভাবে- “এবং শপথ তাঁর যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন”। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তাদের
কথা মানব না।
৪৫৮১ আবূ নু’আইম (রাঃ) আলী (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। সেসময় তিনি বলেছিলেন তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে
নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে আমল সহজ করা হয়েছে। এরপর তিনি পাঠ করলেন “সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে এবং যা উত্তম
তা বর্জন করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব
কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল আয়াত ০৫-১০)।
৪৫৮২ মূসা’দ্দাদ (রাঃ) আলী (রাঃ)
হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম।
তারপর তিনি উপরোক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেন।
৪৫৮৩ বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আলী
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি কোন একটি জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। এরপর তিনি একটি কাঠি হাতে
নিয়ে তা দিয়ে মাটি খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে
নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন “সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে এবং যা উত্তম
তা বর্জন করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব
কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল আয়াত ০৫-১০)।
৪৫৮৪ ইয়াহইয়া (রাঃ) আলী (রাঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। এসময়
তিনি বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি
নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে আমরা সবাই বললাম হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? তিনি বললেন না তোমরা আমল করতে
থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন “সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে এবং যা উত্তম
তা বর্জন করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব
কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল আয়াত ০৫-১০)।
৪৫৮৫ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম।
এরপর রসূল আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে গিয়ে বসলাম। এসময় তাঁর হাতে একটি
কাঠি ছিল। তিনি তাঁর মাথা নিচু করে সেটি দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলেন। এরপর বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে
নির্ধারিত হয়নি কিংবা তাকে ভাগ্যবান বা হতভাগ্য
লিখা হয়নি। একথা শুনে জনৈক সাহাবী বললেন হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে নিয়তির উপর
নির্ভর করে বসে থাকব? আমাদের মধ্যে
যে সৌভাগ্যবান সে তো সৌভাগ্যবান লোকদের মাঝেই শামিল হয়ে যাবে আর আমাদের মধ্যে যে হতভাগা সে তো হতভাগা লোকদের আমলের দিকেই এগিয়ে যাবে। তখন আল্লাহর রসূল
বললেন
সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ
করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ
করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন “সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে এবং যা উত্তম
তা বর্জন করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব
কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল আয়াত ০৫-১০)।
৪৫৮৬ আদম (রহঃ) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন- এক জানাজায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশ নিয়েছিলেন। এসময় তিনি
কিছু একটা কাঠি হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে
নির্ধারিত হয়নি। একথা শুনে সবাই বললেন হে আল্লাহর রসূল! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে আমাদের নিয়তির
উপর নির্ভর করে বসে থাকব? উত্তরে তিনি বললেন তোমরা আমল করতে থাক। কেননা যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেয়া হবে। সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের
জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য
দুর্ভাগ্য লাভ করার আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন “সুতরাং কেউ দান করলে মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে
স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে এবং যা উত্তম
তা বর্জন করলে তার জন্য আমি সুগম করে দেব
কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল আয়াত ০৫-১০)।
৪৫৮৭ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জুনদুব
ইবনু সুফইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- অসুস্থতার কারণে রসূল দুই বা তিন রাত তাহাজ্জুদের
জন্য উঠতে পারেন নি। এসময় এক মহিলা এসে বলল হে মুহাম্মাদ! আমার মনে হয় তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। দুই বা তিন দিন ধরে আমি
তাকে তোমার কাছে আসতে দেখছি না। তখন আল্লাহ নাযিল করলেনঃ “শপথ পূর্বাহ্ণের শপথ রজনীর যখন তা গভীর হয় আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন
নি” (সূরা দুহা ৯৩ আয়াত ০১-০৩)।
৪৫৮৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
জুনদাব বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এক মহিলা এসে বলল হে আল্লাহর রসূল! আমি দেখছি আপনার সাথী আপনার কাছে ওহী নিয়ে আসতে বিলম্ব করে ফেলছে। তখনই
নাযিল হলঃ “আপনার রব আপনাকে পরিত্যাগ করেন নি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হন নি” (সূরা
দুহা
আয়াত ০৩)।
৪৫৮৯ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ)
বারা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন
সময় ঈশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর দুই রাকআতের কোন এক রাকআতে ‘সূরা তীন’ তিলাওয়াত করেছেন।
৪৫৯০ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র ও সাঈদ
ইবনু মারওয়ান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের
মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী শুরু হয়েছিল। ঐ সময় তিনি
যে স্বপ্ন দেখতেন তা প্রভাতের আলোর
মতই সুস্পষ্ট হত। এরপর নির্জনতা তাঁর কাছে প্রিয় হয়ে উঠলো। তিনি হেরা গুহায় চলে যেতেন
এবং পরিবার-পরিজনের কাছে আসার পূর্বে সেখানে একটানা কয়েকদিন পর্যন্ত তাহান্নুস করতেন।
তাহান্নুস মানে বিশেষ নিয়মের ইবাদত। এজন্য তিনি কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি বিবি
খাদিজার কাছে ফিরে এসে পুনরায় অনুরূপ কিছু খাবার নিয়ে যেতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকা
অবস্থায় আকস্মিক তাঁর কাছে সত্যবানী এসে পৌঁছল। ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে বললেন পড়ুন। রসূল বললেন আমি পড়তে পারিনা। রসূল বলেন এরপর তিনি আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এতে আমি খুব মারাত্মক
কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন পড়ুন। আমি বললাম আমি তো পড়তে পারিনা। রসূল বলেন এরপর তিনি দ্বিতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরলেন। এবারও
আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন পড়ুন। আমি বললাম আমি পড়তে পারিনা। এরপর তিনি তৃতীয়বারের মত আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে
ধরলেন। এবারও আমি খুব মারাত্মক কষ্ট অনুভব করলাম। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন “পাঠ করুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক (জমাটবাঁধা
রক্তপিণ্ড) হতে। পাঠ করুন এবং আপনার রব মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না” (সূরা আলাক আয়াত ০১-০৫)। এরপর রসূল এই আয়াতগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এসময়
তাঁর কাঁধের পেশী ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল। খাদিজার কাছে পৌঁছেই তিনি বললেন আমাকে বস্ত্রাবৃত কর আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। তখন সকলেই তাঁকে বস্ত্রাবৃত করল। অবশেষে
তাঁর ভীতি কেটে গেলে তিনি খাদিজাকে বললেন খাদিজা আমার কি হল? আমি আমার নিজের সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। এরপর তিনি তাঁকে সব
খুলে বললেন। একথা শুনে খাদিজা (রাঃ) বললেন কখনো নয়। আপনার জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ কখনো আপনাকে
লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেন সত্য কথা বলেন অসহায় লোকদের কষ্ট লাঘব করে দেন নিঃস্ব লোকদের উপার্জন করে দেন মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং সত্যের পথে আগত বিপদাপদে লোকদের
সাহায্য করে থাকেন। তারপর খাদিজা তাঁকে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফালের
কাছে গেলেন। তিনি জাহেলী যুগে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবীতে বই লিখতেন।
আর তিনি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী আরবীতে ইনজীল কিতাব অনুবাদ করে লিখতেন। তিনি খুব বৃদ্ধ
ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে বললেন হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজা কি বলতে চায় তা শুনুন। ওয়ারাকা
বললেন
হে আমার ভাতিজা! তুমি কি দেখেছ? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু দেখেছেন তা খুলে
বললেন। ওয়ারাকা বললেন এটা তো সেই ফেরেশতা
যাকে পাঠানো হয়েছিল মূসা(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে। আহ! আমি যদি যুবক হতাম। আহ!
সেসময় আমি যদি জীবিত থাকতাম। এরপর তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করলে রসূল বললেন সত্যই তারা কি আমাকে তাড়িয়ে দিবে? ওয়ারাকা বললেন হ্যাঁ তারা তোমাকে তাড়িয়ে
দিবে। তুমি যে দাওয়াত নিয়ে এসেছ এ দাওয়াত যেই
নিয়ে এসেছে তাকেই কষ্ট দেয়া হয়েছে। তোমার নবুয়তকালে আমি জীবিত থাকলে অবশ্যই আমি বলিষ্ঠভাবে
তোমাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করলেন এবং ওহী নাযিলও
বেশ কিছিদিন ধরে বন্ধ ছিল যে রসূল ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)
হতে বর্ণিত- রসূল ওহী বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনার মাঝে বলেন একবার আমি পথে হাঁটছিলাম তখন আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উপরে তুলেই আমি
দেখলাম
যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিলেন তিনি (ফেরেশতা জিবরাঈল)
আসমান ও জমিনের মাঝে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছেন। আমি এতে ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি
ফিরে এসে বললাম আমাকে বস্ত্রাবৃত কর আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। সুতরাং সকলেই আমাকে বস্ত্রাবৃত করল। তখন
আল্লাহ নাযিল করলেন “হে বস্ত্রাবৃত!
উঠুন অপবিত্রতা হতে দূরে থাকুন” (সূরা মুদ্দাসসির আয়াত ০১-০৫)। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন আরবরা জাহেলী যুগে সেসব মূর্তির পূজা করত তাদের ‘রুজয’ বলা হত।
এরপর থেকে ঘন ঘন এবং ধারাবাহিকভাবে ওহী নাযিল হওয়া শুরু করল।
৪৫৯১ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- প্রথমত আল্লাহর রসূল – এর প্রতি ওহীর সূচনা হয়েছিল
সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (সূরা ৯৬ আয়াত ০১-০৫)।
৪৫৯২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রাঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর রসূল – এর প্রতি সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে
ওহীর সূচনা হয়। এরপর তাঁর কাছে ফেরেশতা এসে বললেন “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে। পাঠ করুন এবং আপনার রব মহা মহিমান্বিত” (সূরা ৯৬ আয়াত ০১-০৫)।
৪৫৯৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- এরপর রসূল খাদিজা (রাঃ)- এর কাছে ফিরে এসে বললেন আমাকে বস্ত্রাবৃত কর আমাকে বস্ত্রাবৃত কর। এরপর রাবী সম্পূর্ণ হাদিসটি বর্ণনা করলেন।
৪৫৯৪ ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস
(রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আবূ জাহল বলেছিল আমি যদি মুহাম্মাদকে কাবার পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে
দেখি তাহলে অবশ্যই আমি তার ঘাড় পদদলিত করব। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে পৌঁছার পর তিনি বলেছেন সে যদি তা করে
তাহলে অবশ্যই ফেরেশতা তাকে পাকড়াও করবে। উবায়দুল্লাহর মাধ্যমে আবদুল থেকে আমর ইবনু
খালিদ এ হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৫৯৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন তোমাকে ‘সূরা বায়্যিনাহ’ পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন আল্লাহ কি আমার নাম নিয়ে বলেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন।
৪৫৯৬ হাসসান ইবনু হাসসান (রহঃ)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু
কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন তোমাকে কুর’আন
পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেন আল্লাহ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ আল্লাহ তোমার
নাম উল্লেখ করেছেন। একথা শুনে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। কাতাদা (রাঃ) বলেন আমাকে জানানো হয়েছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ‘সূরা বায়্যিনাহ’
পাঠ করে শুনিয়েছিলেন।
৪৫৯৭ আহমদ ইবনু আবূ দাউদ (রহঃ)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বলেছিলেন তোমাকে কুর’আন পড়ে শোনানোর জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
একথা শুনে তিনি বললেন আল্লাহ কি আপনার
কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) আশ্চর্যান্বিত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস
করলেন
সমগ্র বিশ্বের রবের কাছে কি আমার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে? উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ। একথা শুনে তাঁর উভয় চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো।
৪৫৯৮ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ আবূ
হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আল্লাহর রসূল বলেছেন তিন শ্রেণীর মানুষের ঘোড়া থাকে। এক শ্রেণীর জন্য তা সওয়াব ও
পুরস্কারের কারণ হয় এক শ্রেণীর মানুষের
জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে এবং এক শ্রেণীর মানুষের প্রতি তা হয় গুনাহের কারণ।
যার জন্য তা সওয়াবের কারণ হয় তারা সেসব ব্যাক্তি যারা আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তা প্রস্তুত করে রাখে এবং কোন
চারণ ক্ষেত্রে বা বাগানে লম্বা রশি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। রশির আওতায় চারণ ক্ষেত্রে
বা বাগানে সে যা কিছু খায় তা ঐ ব্যাক্তির জন্য নেকী হিসেবে গণ্য হয়। যদি ঘোড়াটি রশি
ছিঁড়ে ফেলে এবং নিজ স্থান অতিক্রম করে দুএক উঁচু স্থানে চলে যায় তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরের বিনিময়েও ঐ ব্যাক্তি সওয়াব লাভ করবে।
আর ঘোড়াটি যদি কোন জলাধারের কিনারায় গিয়ে নিজে নিজেই পানি পান করে তবে মালিকের সেখান থেকে পানি পান করানোর ইচ্ছা না থাকলেও সে
ব্যাক্তি এর বিনিময়ে সওয়াব লাভ করবে। এই ঘোড়া এই ব্যাক্তির জন্য তো হল সওয়াবের কারণ।
আরেক শ্রেণীর মানুষের জন্য হয় তা (গুনাহ হতে) আবরণরূপে তারা ঐ ব্যাক্তি যারা মানুষের থেকে মুখাপেক্ষী না থাকার জন্য
ও মানুষের কাছে হাত পাতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য তা পালন করে। কিন্তু তাতে আল্লাহর যে
হক আছে তা দিতে ভুলে যায় না। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য এ ঘোড়া হল পর্দা। আরেক শ্রেণীর
ঘোড়ার মালিক যারা গর্ব করার মনোভাব ও দুশমনীর জন্য ঘোড়া রাখে। এ ঘোড়া হল তাদের জন্য
গুনাহের কারণ। এরপর আল্লাহর রসূল কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ছাড়া এ বিষয়ে আল্লাহ
আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেননি। আয়াতটি এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা
দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (সূরা যিলযাল আয়াত ০৭-০৮)।
৪৫৯৯ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন একক ও ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক এ একটি মাত্র আয়াত ছাড়া এ বিষয়ে আল্লাহ
আমার প্রতি আর কোন আয়াত নাযিল করেননি। আয়াতটি এইঃ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা
দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলেও সে তা দেখবে” (সূরা যিলযাল আয়াত ০৭-০৮)।
৪৬০০ আদম (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে
বর্ণিতঃ তিনি বলেন- আকাশের দিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ হলে
তিনি বলেন আমি একটি জলাধারের (নদী) ধারে
পৌঁছলাম
যার উভয় তীরে ফাঁপা মুক্তার তৈরি গম্বুজ রয়েছে। আমি বললাম হে জিবরাঈল! এটি কি? তিনি বললেন এটই (হাউযে) কাওসার।
৪৬০১ খালিদ ইবনু ইয়াযীদ কাহিলী
(রহঃ) আবূ উবায়দা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ) কে আল্লাহ তা’আলার বাণী এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন কাউছার একটি নহর যা তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুহাম্মদ কে প্রদান করা হয়েছে। এর দু’টো পাড় রয়েছে। উভয় পাড়ে বিছানো রয়েছে খোখলা মোতি।
এর পাত্রের সংখ্যা তারকারাহির অনুরূপ। (অন্য সনদে) যাকারিয়া (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ)
থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৪৬০২ ইয়াকূব ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি কাউছার সম্পর্কে বলেছেন যে এ এমন একটি কল্যাণ যা আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন্। বর্ণনাকারী
আবূ বিশর (রহঃ) বলেন আমি সাঈদ ইবনু
জুবায়ের (রহঃ) কে বললাম লোকেরা মনে করে
যে
কাউছার হচ্ছে জান্নাতের একটি নহর। এ কথা শুনে সাঈদ (রহঃ) বললেন জান্নাতের নহরটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেয়া
কল্যানের একটি।
৪৬০৩ হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) আয়িশা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূরা নাযিল হবার
পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন তখনই
তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করেছেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র তুমই আমার রব। সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্ধারিত। হে আল্লাহ!
তুমি আমাকে ক্ষমা কর”।
৪৬০৪ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূরা নাস্র নাযিল হাবার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
(হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র তুমই আমার রব সমস্ত প্রশংসা তোমারই জন্য নির্দিষ্ট। তুমি আমাকে ক্ষমা করে
দাও)। দোয়াটি রুকু-সিজদার মধ্যে বেশী বেশী পাঠ করতেন।
৪৬০৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন উমর (রাঃ) লোকদেরকে আল্লাহর বাণী এর ব্যাখ্যা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস
করার পর তারা বললেন এ আয়াতে শহর এবং
প্রাসা’দসমূহের বিজয়ের কথা বলা হয়েছে। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন হে ইবনু আব্বাস! তুমি কি বল? তিনি বললেন এ আয়াতে ওফাত অথবা মুহাম্মদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর দৃষ্টান্ত এবং তাঁর শান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
৪৬০৬ মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন উমর (রাঃ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ সাহাবীদের সঙ্গে আমাকেও
শামিল করতেন। এ কারণে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিল। একজন বললেন আপনি তাঁকে আমাদের সাথে কেন শামিল করছেন। আমাদের তো তাঁর মত
সন্তানই রয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন এর কারণ তো আপনারাও
জানেন। সুতরাং একদিন তিনি তাঁকে ডাকলেন এবং তাঁদের সাথে বসলেন। ইবনু আব্বাস (রহঃ) বলেন আমি বুঝতে পারলাম আজকে তিনি আমাকে ডেকেছেন এজন্য যে তিনি আমার প্রজ্ঞা তাঁদেরকে দেখবেন। তিনি তাদেরকে বললেন। আল্লাহর
বাণীঃ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনারা কি বলেন তখন তাঁদের কেউ বললেন আমরা সাহায্য প্রাপ্ত হলে এবং আমরা বিজয় লাভ করলে। এ আয়াতে আমাদেরকে
আল্লাহর প্রশংসা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার
কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন। এরপর তিনি আমাকে বললেন হে ইবনু আব্বাস! তুমিও কি তাই বল? আমি বললাম না। তিনি বললেন তাহলে তুমি কি বলতে চাও? উত্তরে আমি বললাম “এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ জানিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলে’ এটই হবে তোমার মৃত্যুর আলামত।
তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর এবং তার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি তো তওবা কবুলকারী”। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন তুমি যা বলছ এ আয়াতের ব্যাখ্যা আমিও তা-ই জানি।
৪৬০৭ ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “তুমি তোমার কাছে আত্মীয়- স্বজনকে সতর্ক করে দাও” আয়াতটি নাযিল
হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের
হয়ে সাফা পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন এবং (সকাল বেলার বিপদ সাবধান) বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেন।
আওয়াজ শুনে তারা বলল এ কে? তারপর সবাই তাঁর কাছে গিয়ে সমবেত হল। তিনি বললেন আমি যদি তোমাদেরকে বলি আশি অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনী ও পাহাড়ের পেছনে তোমাদের উপর হামলা
করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে তাহলে কি তোমরা
আমাকে বিশ্বাস করবে? সকলেই বলল আপনার মিথ্যা বলার ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এ
কথা শুনে আবূ লাহাব বলল তোমার ধ্বংস হোক।
তুমি কি এ জন্যই আমাদেরকে একত্র করেছ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দাঁড়ালেন। তারপর নাযিল হলঃ “ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু’গাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও”।
আমাশ (রহঃ) আয়াতটিতে শব্দের পূর্বে সংযোগ করে পড়েছেন।
৪৬০৮ মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাত্হা প্রান্তরের
দিকে চলে গেলেন এবং পাহাড়ে আরোহণ করে বলে উচ্চস্বরে ডাকলেন। কুরাইশরা তাঁর কাছে এসে
সমবেত হল। তিনি বললেন আমি যদি তোমাদেরকে
বলি
শত্রু সৈন্যরা সকালে বা সন্ধ্যায় তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য
প্রস্তুত হয়ে আছে তাহলে কি তোমরা
আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে? তারা সকলেই বলল হাঁ আমরা বিশ্বাস
করব। তখন তিনি বললেন আমি তোমাদেরকে
আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি। এ কথা শুনে আবূ লাহাব বলল তুমি কে এজন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তোমাদের ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহ তা’আলা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত
সূরা লাহাব নাযিল করলেন ধ্বংস হোক আবূ
লাহাবের দুই হস্ত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও। তার ধন-সম্পদ এবং উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি।
অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও যে উন্ধন বহন করে তার গণদেশে পাকান রজ্জু।
৪৬০৯ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) ইবনু
আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আবূ লাহাব রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললো তোমার ধ্বংস হোক তুমি কি এ জন্যই আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তখন সূরাটি নাযিল হল।
৪৬১০ আবূল ইয়ামন (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন “বনী আদম আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে; অথচ এরূপ করা তার জন্য সমীচীন হয়নি। বণী আদম আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার জন্য উচিত হয়নি। আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার
অর্থ হচ্ছে এই যে সে বলে আল্লাহ আমাকে যেমনিভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন অনুরূপভাবে তিনি আমাকে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন না। অথচ তাকে
পুনরায় জীবিত করা অপেক্ষা প্রথম সৃষ্টি করা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমাকে তার গালি দেয়ার
অর্থ হচ্ছে এই যে সে বলে আল্লাহ্ তা’আলা সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি একক কারো মুখাপেক্ষী নই। আমি কাউকে জন্ম দেইনি আমাকেও জন্ম হয়নি এবং কেউ আমার সমতুল্য নয়”।
৪৬১১ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন; অথচ এরূপ করা তার জন্য উচিত হয়নি। সে আমাকে গালি দিয়েছে; অথচ এমন করা তার পক্ষে সমীচীন হয়নি। আমার প্রতি তার মিথ্যা আরোপ
করার মানে হচ্ছে এই যে সে বলে আমি পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নই যেমনিভাবে আমি তাকে প্রথমে সৃষ্টি
করেছি। আমাকে তার গালি দেয়া হচ্ছে এই যে সে বলে আল্লাহ্ তা’আলা
সন্তান গ্রহণ করেছেন; অথচ আমি কারো
মুখাপেক্ষী নই। আমি এমন এক সত্তা যে আমি কাউকে জন্ম দেইনি আমাকেও জন্ম দেয়নি এবং আমার সমতুর্য কেউ নেই। ইমাম বুখারী (রহঃ)
বলনেঃ এবং সম অর্থবোধক শব্দ।
৪৬১২ কুতায়রা ইবনু সাঈদ (রহঃ) যির
ইবনু হুবাইশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উবায় ইবনু কা’বকে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি
বললেন
এ বিষয়ে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে জিজ্ঞেস
করেছিলাম। তিনি বলেছেন আমাকে বলা হয়েছে তাই আমি বলছি। উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন আমরাও ঠিক তেমনি বলছি।
৪৬১৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)
যির ইবনু হুবাইশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) – কে জিজ্ঞেস করলাম বল্লাম হে আবূল মুনযির!
আপনার ভাই ইবনু মাসউদ (রাঃ) তো এ ধরনের কথা বলে থাকেন। তখন উবায় (রাঃ) বললেন আমি এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস
করলে তিনি আমাকে বললেন আমাকে বলা হয়েছে।
তাই আমি বেলেছি। উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন আমরাও
তাই বলি।