শফত ও মানত এবং মফতের কাফ্ফারা

৬১৪২ আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আবদূল মালিক (রহঃ) আবদূলাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশদিন পর্যন্ত শুক্র বিন্দুরুপে জমা থাক। তারপর ঐরুপ চল্লিশ দিন রক্তপিণ্ড এবং এরপর ঐরুপ চল্লিশ দিন মাংস পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরন করেন এবং তাকে বিযিক, মউত, দূর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য-এ চারটি ব্যাপার লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। তিনি আরও বলেন! আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে তখন কেবলমাত্র একহাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যাক্তি বেহেশতীদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা দু-গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় তাকদীর তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন যে, আদম তার বর্ননায় শুধুমাত্র (এক গজ) বলেছেন।

৬১৪৩ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা রেহেম (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। তিনি বলেনঃ হে প্রভূ! এটি বীর্য। হে প্রতূ! এটি রক্তপিণ্ড। হে প্রভূ! এটি মাংসপিণ্ড। আল্লাহ তা-আলা যখন তার সৃষ্টি পরিপূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রভূ। এটি নর হবে, না নারী? এটি হতভাগ্য হবে, না ভাগ্যবান? তার জীবিকা কি পরিমাণ হবে? তার আয়ুষ্কাল কি হবে? তখন (আল্লাহ তাঁআলা যা নির্দেশ দেন) তার মাতৃগর্তে থাকা অবস্হায় ঐরুপই লিপিবদ্ধ করা হয।

৬১৪৪ আদম (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদেরকে চেনা যাবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। সে বলল, তাহলে আমলকারীরা আমল করবে কেন? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক ব্যাক্তি ঐ আমলই করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা যা তার জন্য সহজ করা হয়েছে।

৬১৪৫ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুশরিকদের (মৃত নাবালিগ) সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেনঃ তারা (জীবিত থাকলে) কি আমল করত এ সম্পর্কে আল্লাহ তা-আলা সর্বাধিক অবহিত।

৬১৪৬ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুশরিকদের (মৃত নাবালিগ) সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ তারা যা করত এ সম্পর্কে আল্লাহ তা-আলা সর্বাধিক অবহিত।

৬১৪৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন সন্তান যখন জন্মগ্রহণ করে, তবে স্বভাবধর্মের (ইসলাম) ওপরই জন্মগ্রহন করে। কিন্তু তার পিতামাতা (পরবর্তীতে) তাকে ইয়াহুদি বা নাসারা বানিয়ে দেয়। যেমন কোন চতূস্পদ প্রাণী যখন বাচ্চা প্রদান করে তখন কি কানকাটা (ত্রুটিযুক্ত) দেখতে পাও? যতক্ষন তোমরা তার কানকেটে ক্রটিযুক্ত করে দাও। তখন সাহাবাগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! নাবালিগ অবস্থায় যে মৃত্যুবরণ করে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ তারা যা করত এ সম্পর্কে আল্লাহ তা-আলা সর্বাধিক অবহিত।

৬১৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারী নিজে বিয়ে করার জন্য যেন তার বোনের (অপর নারীর) তালাক না চায়। কেননা, তার জন্য (তাকদীরে) যা নির্ধারিত আছে তাই সে পাবে।

৬১৪৯ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে ছিলাম। তার সঙ্গে সা’দ ইবনু উবাদা উবাই ইবনু কাব ও মু’আয ইবনু জাবালও ছিলেন। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন এক কন্যা কর্তৃক প্রেরিত একজন লোক এই খবর নিয়ে এলো যে, তার পুত্র সন্তান মরণাপন্ন। তখন তিনি এই বলে লোকটিকে পাঠিয়ে দিলেন যে, আল্লাহর জন্যই যা তিনি গ্রহণ করেন, আল্লাহর জন্যই যা তিনি দান করেন। প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত একটি সময় রয়েছে। সুতরাং সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং এটাকে যেন সে (সন্তান হারানকে) পূণ্য মনে করে।

৬১৫০ হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি (একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় আনসার গোত্রের একটি লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো বাঁদীদের সাথে মিলিত হই অথচ মালকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং ’আযল’ করা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি এ কাজ কর? তোমাদের জন্য এটা করা আর না করা উভয়ই সমান। কেননা, যে কোন জীবন যা পয়দা হওয়াকে আল্লাহ তাআলা লিখে দিয়েছেন তা পয়দা হবেই।

৬১৫১ মূসা ইবনু মাসউদ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের মাঝে এমন একটি ভাষণ প্রদান করলেন যাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এমন কোন কথাই বাদ দেননি। এগুলি স্বরণ রাখা যার সৌভাগ্য হয়েছে সে স্বরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গিয়েছে। আমি ভুলে যাওয়া কোন কিছু যখন দেখতে পাই তখন তা চিনে নিতে পারি এভাবে যেমন, কোন ব্যাক্তি কাউকে হারিয়ে ফেললে আবার যখন তাকে দেখতে পায় তখন চিনতে পারে।

৬১৫২ আবদান (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তার সঙ্গে ছিল একটি লাঠি। যা দিয়ে তিনি মাটি খুড়ছিলেন। তিনি তখন বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যাক্তি নেই যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। লোকদের ভিতর থেকে এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি তা হলে (এর উপর) নির্ভর করব না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমল কর। কেননা, প্রত্যেকের জন্য আমল সহজ (যার জন্য তাকে)করা হয়েছে। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘ফা আম্মা মান আ সা ’।

৬১৫৩ হিববান ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমরা খায়বারের যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গীগণের মাঝ থেকে ইসলামের দাবি করছিল এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে বললেনঃ যে, এই লোকটি জাহান্নামী। যখন যুদ্ধ শুরু হল লোকটি প্রবল বেগে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল। এতে সে প্রব্রে ক্ষতবিক্ষত হল। তবু সে অটল রইল। সাহাবীগণের মাঝ থেকে একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামী হবে বলে আপনি যে ব্যাক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন সে তো প্রবল বেগে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেছে এবং তাতে সে প্রচুর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। তিনি বললেনঃ সাবধান, সে জাহান্নামী! এতে কতিপয় মুসলমানের মনে সন্দেহের ভাব হল। আর লোকটি ঐ অবস্হায়ই ছিল। হঠাৎ করে সে যখমের যন্ত্রণা অনুভব করতে লাগল-আর অমনই সে স্বীয় হাতটি তীরের থলের দিকে বাড়িয়ে দিল এবং একটি তীর বের করে আপন বক্ষে বিধিয়ে দিল। এতদৃষ্টে কয়েকজন মুসলমান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দৌড়িয়ে যেয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলা আপনার কথাকে সত্যে পরিনত করে দেখালেন। অমূক ব্যাক্তি তো আত্নহত্যা করেছেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বিলাল! উঠে দাঁড়াও এবং এই মর্মে ঘোষণা করে দাও যে, জান্নাতে কেবলমাত্র মুমিনগণই প্রবেশ করবে। আর আল্লাহ তাআলা গুনাহগার বান্দাকে দিয়েও এই দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন।

৬১৫৪ সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থেকে যে সমস্ত মুসলমান যুদ্ধ করেছেন তাদের মাঝে একজন ছিল তীব্র আক্রমণকারী। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে নযর করে বললেনঃ যে ব্যাক্তি কোন জাহান্নামীকে দেখতে ইচ্ছা করে সে যেন এই লোকটির দিকে নযর করে। উপস্থিত লোকদের ভিতর থেকে এক ব্যাক্তি সেই লোকটির অনুসরন করল। আর সে তখন প্রচণ্ডভাবে মুশরিকদের সঙ্গে মুকাবিলা করছিল। এমন কি সে (এক পর্যায়ে) যখম হয়ে তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করতে চাইল। সে তার তরবারীর তীক্ষ্ণ দিকটি তার বুকের উপর দাবিয়ে দিল। এমন কি দু-কাঁধের মাঝ দিয়ে তরবারী বক্ষ ভেদ করল। (এতদৃষ্টে) লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দৌড়ে এসে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি সত্যই আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি হল? লোকটি বলল, আপনি অমুক ব্যাক্তি সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “যে ব্যাক্তি কোন জাহান্নামী লোক দেখতে চায় সে যেন এ লোকটিকে দেখে নেয়। ” অথচ লোকটি অন্যান্য মূসলমানের তুলনায় অধিক রুপে আক্রমনকারী ছিল। সূতরাং আমার ধারণা ছিল এ লোকটির মৃত্যু এহেন অবস্হায় হবে না। যখন সে আঘাত প্রাপ্ত হল, তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল এবং আত্নহত্যা করে বসল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা শুনে বললেনঃ নিশ্চয়ই কোন বান্দা জাহান্নামীদের আমল করেন মূলত সে জান্নাতী। আর কোন বান্দা জান্নাতী লোকের আমল করেন মুলত সে জাহান্নামী। নিশ্চয়ই আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার পারিণামের উপর।

৬১৫৫ আবূ নুআঈম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিষেধ করেছেন। এই মর্মে তিনি বলেনঃ মানত কোন জিনিসকে দূর করতে পারে না। এ দ্বারা শুধুমাত্র কৃপণের মাল খরচ হয়।

৬১৫৬ বিশর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মানত মানব সন্তানকে এমন কিছু এনে দিতে পারে না যা তাকদীরে নির্ধারণ নেই অথচ সে যে মানতটি করে তাও আমি তাকদীরে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি যেন এর দ্বারা কৃপণের কাছ থেকে (মাল) বের করে নেই।

৬১৫৭ মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল আবূল হাসান (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমরা যূদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখনই কোন উচ্চস্থানে আরোহণ করতাম, কোন উচুতে থাকতাম এবং কোন উপত্যকা অতিক্রম করতাম তখনই উচ্চঃস্বরে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতাম। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকটবর্তী হলেন এবং বললেনঃ হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের উপর রহম কর। তোমরা কোন বধির বা কোন অনুপস্হিত সত্তাকে ডাকছ না- তোমরা তো ডাকছ শ্রবণকারী ও দর্শনকারী এক সত্তাকে। এরপর তিনি বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি কি তোমাকে এমন একটি কালিমা শিক্ষা দিব না, যা কিনা জান্নাতের ভাণ্ডার সমূহের অন্যতম? তা হচ্ছেঃ ‘লা-হাওলা ওয়ালা-কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’

৬১৫৮ আবদান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে কোন লোককেই খলীফা বানানো হয় তার জন্য দুটি গুপ্তচর থাকে। একটা তো তাকে সৎকর্মের আদেশ করে এবং এর প্রতি তাকে উৎসাহিত করে। আরেকটা তাকে মন্দ কর্মের আদেশ করে এবং এর প্রতি তাকে প্ররোচিত করে। আর নিস্পাপ সেই ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ তা’আলা রক্ষা করেন।

৬১৫৯ মাহমূদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ছোট গুনাহ সম্পর্কে যা বলেছেনঃ তার চেয়ে যথাযথ উপমা আমি দেখি না। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ) আল্লাহ আদম সন্তানের উপর যিনার কোন না কোন হিসসা লিখে দিয়েছেন; তা সে অবশ্যই পাবে। সুতরাং চোখের যিনা হল (নিষিদ্ধদের প্রতি) নযর করা এবং জিহবার যিনা হল (যিনা সম্পর্কে) বলা। মন তার আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করে, লজ্জাস্হান তাকে বাস্তবায়িত করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। শাবাবা (রহঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১৬০ হুমাইদী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। ‘অমা যায়ালনা রাইয়াললাতি ’(আয়াতের ব্যাখ্যায়) তিনি বলেনঃ তা হচ্ছে চোখের দেখা। যে রজনীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল, সে রজনীতে তাকে যা দেখানো হয়েছিল। তিনি বলেনঃ কুরআন মজীদে উল্লিখিত ‘অসসাযারাতা মালইয়ুনা’ দ্বারা যাককুম (যাক্কুম) বৃক্ষকে বোঝানো হয়েছে।

৬১৬১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (বা) সুত্রে থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আদম ও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (পরস্পরে) কথা কাটাকাটি করেন। মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ হে আদম, আপনি তে আমাদের পিতা। আপনি আমাদেরকে বঞ্চিত করেছেন এবং আমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করেছেন। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললেনঃ হে মূসা! আপনাকে তো আল্লাহ তাঁআলা স্বীয় কালামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং আপনার জন্য স্বীয় হাত দ্বারা লিখেছেন। অতএব আপনি কি আমাকে এমন একটি ব্যাপার নিয়ে তিরস্কার করছেন? যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বেই আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তখন আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)–এর উপর এই বিতর্কে জয়ী হলেন। উক্ত কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বলেছেন। সুফিয়ানও (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১৬২ মুহাম্মাদ ইবনু সিনান (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ওয়াররাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা মুআবিয়া (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ)-এর নিকট এই মর্মে চিঠি লিখলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর যা পাঠ করতেন এ সম্পর্কে তুমি যা শুনেছ আমার কাছে লিখে পাঠাও। তখন মুগীরা (রাঃ) আমাকে তা লিখে দেওয়ার দায়িত্ব দিলেন। তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরে বলতে শুনেছি অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি অদ্বিতীয়, অংশীদারবিহীন। হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রদকারী কেউ নেই। আর তুমি যা রদ কর তার কোন দানকারীও নেই। তুমি ব্যতীত প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টাও কোন ফল বয়ে আনবে না। ইবনু জুরায়জ আবদা থেকে বর্ণনা করেন যে, ওয়াররাদ তাকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। এরপর আমি মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট গিয়েছি। তখন আমি তাঁকে শুনেছি তিনি মানুষকে এ দোয়া পড়তে হুকুম দিতেন।

৬১৬৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমরা ভয়াবহ বিপদ, হতভাগ্যের অতল গহবর, মন্দ তাকদীর এবং শক্রর আনন্দ প্রকাশ থেকে আল্লাহ তা-আলার কাছে আশ্রয় প্রর্থনা কর।

৬১৬৪ মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল আবূ-ল হাসান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এইরুপ শপথ করতেনঃ শপথ অন্তর সমূহের পরিবর্তনকারী (আল্লাহর)।

৬১৬৫ আলী ইবনু হাফস ও বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহিয়্যাদকে একদা বললেনঃ আমি (একটি কথা আমার অন্তকরণে) তোমার জন্য গোপন রেখেছি। সে বললো, তা হচ্ছে (কল্পনার) ধুমরজাল মাত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চুপ কর, তুমি তো তোঁমার তাকদীরকে কখনও অতিক্রম করতে পারবে না। এতদশ্রবণে উমর (রাঃ) বললেনঃ আমাকে অনুমতি দিন আমি তার মুণ্ডপাত করে দেই। তিনি বললেনঃ রাখ একে, এ যদি তাই হয় তবে তুমি তার ওপর (এ কাজে) সক্ষম হবে না। আর যদি তা না হয় তাহলে তাকে হত্যা করার মাঝে তোমার জন্য কোন কল্যাণ নেই।

৬১৬৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ এটা হচ্ছে আল্লাহর এক আযাব। আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা তার ওপরই প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাআলা এটা মুসলমানের জন্য রহমাতে পরিণত করেছেন। প্লেগাক্রান্ত শহরে কোন বান্দা যদি ধৈর্যধারণ করে এ বিশ্বাস নিয়ে সেখানেই অবস্হান করে, তা থেকে বের না হয়। আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা ভাগ্যে লিখেছেন তা ব্যতীত কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, তাহলে সে শহীদের সাওয়াব লাভ করবে।

৬১৬৭ আবূ নূ’মান (রহঃ) বারআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি খন্দকের যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছি, তিনি আমাদের সঙ্গে মাটি বহন করেছেন এবং বলছেনঃ আল্লাহর কসম! তিনি যদি আমাদেরকে হেদায়েত না করতেন তবে আমরা হেদায়েত পেতাম না। সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতাম না আর সালাত (নামায/নামাজ)ও আদায় করতাম না। সূতরাং (প্রভূ হে) আমাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করুন আর শত্রুর মুকাবিলায় আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখূন। মুশরিকরা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। তারাই আমাদের উপর ফিতনা (যুদ্ধ) চাপিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু আমরা তা চাইনি।

৬২৫১ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি বললেনঃ কাছে এসো। আমি তার নিকটে গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাকে কি তোমার উকুন যন্ত্রণা দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেনঃ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) অথবা সাদাকা অথবা কুরবানী করে ফিদইয়া আদায় কর। ইবনু আউন আইউব থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হচ্ছে তিন দিন, কুরবানী হল একটি বকরী আর মিসকীনের সংখ্যা হল ছয়।

৬২৫২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক ব্যাক্তি এসে বলল, আমি ধবংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ তোমার কি অবস্থা? লোকটি বলল, রমযানে আমি আমার স্ত্রীর সাথে (দিনের বেলা) সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করতে সক্ষম? লোকটি বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তুমি দু-মাস লাগাতার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তা হলে কি তুমি ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াতে সক্ষম হবে? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ বস। লোকটি বসল। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক আরক- আনা হলো যাতে ছিল খেজুর। আর -আরক- হচ্ছে বড় ধরনের পরিমাপ পাত্র। তিনি বললেনঃ এটা নিরে যাও এবং তা সাদাকা করে দাও। লোকটি বলল, এটা কি আমার চাইতে অধিকতর অভাবীকে প্রদান করব? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – হেসে ফেললেনঃ এমন কি তার মাড়ির দন্ত মুবারক পর্যন্ত দেখা গেল। তিনি বললেনঃ এটা তোমার পরিবারকে খাওয়াও।

৬২৫৩ মুহাম্মাদ ইবনু মাহবুব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমি ধবংস হয়ে গেছি। তিনি বললেনঃ কি ব্যাপার? লোকটি বলল, রমযানে (দিনের বেলা) আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেলেছি? তিনি বললেনঃ তুমি কি এবংটি গোলাম আযাদ করতে সক্ষম? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তাহলে কি তুমি দু-মাস লাগাতার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে সক্ষম? সে বলল, না। তবে কি তুমি ষাটজন মিসকীনকে খানা খাওয়াতে পারবে? লোকটি বলল, না। রাবী বলেনঃ এমন সময় এক আনসার ব্যাক্তি একটি ‘আরক’ নিয়ে উপস্থিত হল। আর আরক হচ্ছে পরিমাপ পাত্র; তার মাঝে খেজুর ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং তা সাদাকা করে দাও। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার চেয়ে যে অভাবী তাকে কি দান করব? সে আরও বললঃ কসম ঐ মহান সত্তার, যিনি আপনাকে হকের (দ্বীনের) সাথে প্রেরণ-করেছেন; মদিনার দুউপত্যকার মধ্যবর্তী স্থানে আমার চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্ত আর কেউ নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যাও এগুলি তোমার পরিজনকে নিয়ে আহার করাও।

৬২৫৪ আবদুল্লাহ ইরন মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমি তো ধংস হয়ে গিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি অবস্থা? লোকটি বলল, রমযানে (দিনের বেলায়) আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করেছি। তিনি বললেনঃ একটি গোলাম আযাদ করার মত কি তোমার কাছে কিছু আছে? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ তবে কি তুমি দু-মাস লাগাতার সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতে পারবে? সে বলল, না। বললেনঃ তাহলে কি তুমি ষাটজন মিসকীনকে আহার করাতে পারবে? সে বলল, আমার কাছে এখন কিছু নেই। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটি ঁআরক- আনা হল যাতে খেজুর ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এটা নিয়ে নাও এবং তা সাদাকা করে দাও। সে বলল, আমার চেয়ে যে অধিকতর অভাবী তাকে কি দেব? সে আরও বললঃ এখানকার দূটি উপত্যকার মাঝে আমাদের চেয়ে অভাবী তো আর কেউ নেই। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – বললেনঃ এটা নিয়ে যাও এবং তোমার পরিবারকে আহার করাও।

৬২৫৫ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সা- ছিল তোমাদের এখনকার মুদ্দের হিসাবে এক মুদ্দ ও এক মুজের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ। এরপর উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর যামানায় তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

৬২৫৬ মুনয়ির ইবুনুল ওয়ালীদ জারদী (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু উমর (রাঃ) রমযানের ফিতরা আদায় করতেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুদ্দ অর্থাৎ প্রথম মুদ্দ-এর মাধ্যমে। আর কসমের কাফফারাতেও তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুদ্দ ব্যাবহার করতেন। আবূ কুতায়বা বলেনঃ মালিক (রহঃ) আমাদেরকে বলেছেনঃ যে, আমাদের মুদ্দ তোমাদের মুদ্দ অপেক্ষা বড়। আর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুদ্দের মাঝেই আধিক্য দেখি। রাবী বলেনঃ আমাকে মালিক (রহঃ)বলেছেনঃ তোমাদের কাছে কোন বাদশাহ এসে যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুদ্দ থেকে তোমাদের মুদ্দকে ছোট করে দিয়ে থাকেন, তাহলে তোমরা কিসের মাধ্যমে (ওযন করে) মানুষদেরকে দিতে! আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুদ দিয়েই প্রদান করতাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি দেখছ না যে, পরিমাপের ব্যাপারটা এভাবেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুদ্দের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে।

৬২৫৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করেছেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাদের (উম্মাতের) কায়ল (মাপে), সা ও মুদ্দের মাঝে বরকত প্রদান কর।

৬২৫৮ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি একটি মুসলমান গোলাম আযাদ করবে আল্লাহ তা’আলা সে গোলামের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নামের আগুন থেকে তার প্রতিটি অংকে মুক্ত করবেন। এমন কি তার গুপ্তাঙ্গকেও গোলামের গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে মুক্ত করবেন।

৬২৫৯ আবূ নূমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আনসার সম্প্রদায়ের এক ব্যাক্তি তার গোলামকে মুদাব্বীর বানালো। ঐ গোলাম ব্যতীত তার আর কোন মাল ছিল না। খবরটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছল। তিনি বললেনঃ গোলামটিকে আমার কাছ থেকে কে ক্রয় করবে? নূআয়ম ইবনু সাহহাম (রাঃ) তাকে আটশ দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করে নিল। সনদস্হিত রাবী আমর (রাঃ) বলেনঃ আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে গোলামটি ছিল কিষতী আর (আযাদ করার) প্রথম বছরেই সে মারা গিয়েছিল।

৬২৬০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বাবীরা নামী বাদীকে ক্রয় করতে চাইলে তার মালিকগণ তার উপর ওয়ালা-এর শর্তারোপ করল। আয়িশা (রাঃ) ব্যাপারটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ তাকে তুমি ক্রয় করে নাও কেননা ওয়ালা (স্বত্বাধিকার) হল ঐ ব্যাক্তির জন্য যে আযাদ করে দেয়।

৬২৬১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ মূসা আলআশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা কতিপয় আশাআরী লোকের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটি বাহন চাইবার জন্য এলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহনদিতে পারব না। কারণ, এমন কিছু আমার নিকট নেই যা বাহন হিসাবে তোমাদেরকে দিতে পারি। এরপর আল্লাহ তা’আলা যতক্ষন চাইলেন আমরা অবস্হান করলাম। এমন সময় তাঁর নিকট কিছু উট আনা হল। তখন তিনি আমাদেরকে তিনটি উট দেওয়ার জন্য হুকুম করলেন। আমরা যখন রওনা করলাম, তখন পরস্পরে বলতে লাগলাম যে, আল্লাহ তো আমাদের বরকত দিবেন না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য যখন এলাম তখন তিনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করলেন। এরপরও আমাদেরকে বাহন দিয়ে দিলেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ফিরে এসে ব্যাপারটি তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি তো তোমাদেরকে বাহন দেইনি; বরং আল্লাহ তা-আলা দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! ইনশা আল্লাহ আমি যখন কোন বিষয়ে কসম কবি আর তার বিপরীতটির মাঝে মংল দেখতে পাই তখন কসমের কাফফারা আদায় করে দেই। আর যেটি কল্যাণকর সেটিই বাস্তবায়িত করি।

৬২৬২ আবূ নুমান (রহঃ) হাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিন্তু আমি আমার কৃত কসমের কাফফারা আদায় করি এবং যেটি কল্যাণকর সেটি বাস্তবায়িত করি। অথবা বলেছেনঃ যেটি কল্যাণকর সেটি বাস্তবায়িত করি এবং এর কাফফারা আদায় করে দেই।

৬২৬৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত সুনায়মাল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বলেছিলেন যে, অবশ্যই আজ রাতে আমি নববইজন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব। তারা প্রত্যেকেই পুত্র সন্তান প্রসব করবে যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তার সাথী (রাধী সুফিয়ান সাথী দ্বারা ফেরেশতা বুঝিয়েছেন) বলল, আপনি ইনশাআল্লাহ বলুন। কিন্তু তিনি তা ভুলে গেলেন এবং সকল স্ত্রীর সাথে মিলিত হলেন। তবে একজন ব্যতীত অন্য কোন স্ত্রীর গর্ভ থেকেই কোন সন্তান পয়দা হল না: তাও ছিল অপূর্ণাঙ্গ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি কসমের মাঝে যদি ইনশা আল্লাহ বলতেন তাহলে তার কসময় ভং হত না আবার উদ্দেশ্যও সাধিত হত। একবার আবূ হুরায়রা (রাঃ) এরুপ বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনি যদি “ইস্তিসনা” করতেন (অর্থাৎ ইনশা আল্লাহ বলতেন)। আবূ যিনাদ আরাজের মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

৬২৬৪ আলী ইবনু হুজর (রহঃ) যাহদাম জারমী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমরা একদা আবূ মূসা আশআরী (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। আমাদের এবং জারম গোত্রের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। রাবী বলেনঃ তার জন্য খানা পেশ করা হল, তাতে ছিল মুরগীর গোশত। তাদের দলের মাঝে বনী তাইমিল্লাহ গোত্রের এক ব্যাক্তি ছিল যার গায়ের রংছিল লাল যেন দেখতে গোলাম। রাবী বলেনঃ লোকটি খানার কাছেও গেল না। আবূ মূসা আশ আরী তাকে বললেনঃ কাছে এসো (খানাতে শরীক হও)। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোশত খেতে দেখেছি। লোকটি বলল, আমি একে (মুরগী) কিছু খেতে দেখেছি; ফলে আমি এটিকে ঘৃণা করছি। এবং সে থেকে কসম করেছি যে, কখনও আর এটি খাব না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ কাছে এসো; আমি তোমাকে এ সম্পর্কে অবহিত করব। একদা আমরা আশ আরী সম্প্রদায়ের একটি দলের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাহন চাইবার জন্য আসলাম। তখন তিনি যাকাতের উট বণ্টন করছিলেন। আইয়্যুব বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি তখন রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে বাহন দিব না। আর আমার কাছে বাহনযোগ্য কোন কিছুই নেই। বাবী বলেনঃ আমরা তখন প্রস্হান করলাম। এমন সময় তাঁর নিকট গনীমতের কয়েকটি উট আনা হল। তিনি বললেনঃ ঐ আশ আরী লোকগুলো কোথায়? ঐ আশ আরী লোকগুলো কোথায়? তখন আমরা ফিরে এলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি আকর্ষনীয় উট আমাদেরকে দেওয়ার জন্য হুকুম করলেন। আমরা উটগুলো নিয়ে রওনা হলাম। এমন সময় আমি আমার সঙ্গীদেরকে বললাম, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিলাম। আর তিনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করেছিলেন। কিন্তু এরপরে আমাদের কাছে লোক পাঠালেন এবং আমাদেরকে বাহন দিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কসম ভুলে গিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমরা যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার কসমকে ভূলিয়ে দিয়ে থাকি তাহলে তো আমরা কখনও কৃতকার্য হতে পারব না। চল, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে যাই এবং তার কসম সম্পর্কে স্বরন করিয়ে দেই। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিলাম, আপনি আমাদেরকে বাহন দিবেন না বলে কসম করেছিলেন। কিন্তু পরে আবার বাহন দিয়েছিলেন। এতে আমরা ধারণা করলাম বা বুঝতে পারলাম, আপনি হয়ত কসম ভুলে গিয়েছেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা চলে যাও। নিশ্চয়ই আল্লাহই তো তোমাদেরকে বাহন দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি যখন আল্লাহর ইচ্ছায় কোন বিষয়ে কসম করি আর তার অন্যটির মাঝে মঙ্গল দেখতে পাই তখন যেটার মধ্যে কল্যান আছে সেটি বাস্তবায়িত করি এবং কসমের কাফফারা আদায় করে দেই। হাম্মাদ ইবনু যায়িদ, আইউব, আবূ কিলাবা এবং কাসিম ইবনু আসিম কুলায়বী (রহঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসে ইসমাঈল ইবনু ইব্রাহিমের অনুসরণ করেছেন।

৬২৬৫ কুতায়রা (রহঃ) যাহদাম (রাঃ) থেকে উক্তরুপ বর্ণিত আছে। (দেখুন হাদিস নম্বর ৬২৬৪)

৬২৬৬ আবূ মামার (রহঃ) যাহদাম (রাঃ) থেকেও উক্তরুপ বর্ণিত আছে। (দেখুন হাদিস নম্বর ৬২৬৪)

৬২৬৭ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি নেতৃত্ব চাইও না। কেননা, চাওয়া ব্যতীত যদি তোমাকে তা দেওয়া হয় তবে তোমাকে তাতে সাহায্য করা হবে। আর যদি চাওয়ার পর তা তোমাকে দেওয়া হয় তবে তা তোমার দায়িত্বেই ছেড়ে দেওয়া হবে (অর্থাৎ ভাল মন্দের দায়িত্ব তোমারই থাকবে)। তুমি যখন কোন কিছুতে কসম কর আর কল্যাণ তার অন্যটির মাঝে দেখতে পাও। তখন যেটীর মাঝে কল্যান সেটাই বাস্তবায়িত কর। আর তোমার কৃত কসমের কাফফারা আদায় করে দাও। আশহাল ইবনু হাতিম, ইবনু আউন থেকে এবং উসমান ইবনু আমর-এর অনূসরণ করেছেন এবং ইউনূস, সিমাক ইবনু আতিয়্যা, সিমাক ইবনু হারব, হুমায়দ, কাতাদা, মানসুর, হিশাম ও রাবী উক্ত বর্ননায় আবদুল্লাহ ইবনু আউন-এর অনুসরন করেছেন।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: শফত ও মানত এবং মফতের কাফ্ফারা
শফত ও মানত এবং মফতের কাফ্ফারা
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/shafot.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/shafot.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy