অনুমতি চাওয়া

৫৭৯৪ ইয়াহইয়া ইবনু জাফর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তার যথাযথ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার উচ্চোতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফিরিশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শুনবে তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয়? কারন এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশ ধরের সম্ভাষন (তাহিয়্যা) তাই তিনি গিয়ে বললেন আস সালামু আলাইকুম-। তারা জবাবে বললেনঃ “আসসালামুআলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তারা বাড়িয়ে বললেনঃ – ওয়া রাহমাতুল্লাহ বাক্যটি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে।

৫৭৯৫ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কুরবান দিনে ফাযল ইবনু আববাস (রাঃ)-কে আপন সাওয়ারীর পিঠে নিচের পেছনে বসালেন। ফাযল (রাঃ) একজন সুন্দ ব্যাক্তি ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাসায়েল বাতলিয়ে দেওয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশ‘আম গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলা (রাঃ)-এর নিকট একটা মাসায়েল জিজ্ঞাসা করার জন্য আসল। তখন ফাযল (রাঃ) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাকে আকৃষ্ট করে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাযল (রাঃ)-এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল তার দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল (রাঃ)-এর চিবুক ধরে ঐ মহিলার দিকে না তাকানোর জন্য তার চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরয হওয়ার বিধান দেওয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে সাওয়ারীর বসতে তিনি সক্ষম নন। যদি আমি তার তরফ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে আদায় হয় যাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ।

৫৭৯৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা রাসত্মায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রাসত্মায় বসা ছাড়া গত্যমত্মর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তিনি বললেনঃ যদি তোমাদের রাসত্মায় মজলিস করা ছাড়া উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাসত্মায় হক আদায় করবে। তারা বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসত্মার দাবী কি? তিনি বললেন, তা হল চোখ অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেওয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেওয়া আর অসৎকাজ থেকে নিষেদ করা।

৫৭৯৭ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম, তখন (বসা অবস্থায়) আমরা আল্লাহর প্রতি তার বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, তখন আমাদের দিকে চেহারা মুবারক ফিরিয়ে বললেন আল্লাহ তা-আলা সালাম। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি’ যখন এ কথাটি বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌছে যাবে। তারপর বলবে ‘আশাদু আন্না’ তারপর বসে তার পছন্দমত দুআ নির্বাচন করে নেবে।

৫৭৯৮ আবূল হাসান মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোট বড়কে, পথচারী উপবিষ্ট লোককে এবং আর সংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোকদের সালাম দিবে।

৫৭৯৯ মুহাম্মদ ইবনু সালাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী ব্যাক্তি পদচারীকে, পদচারী ব্যাক্তি উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখক লোক অধিক সংখককে সালাম দিবে।

৫৮০০ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখক লোকরো সালাম দিবে।

৫৮০১ কুতায়বা (রহঃ) বারা-আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজের রোগির খোজ খবর নেওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, ঋন দাতার জনা দুআ করা। দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সহায়তা করা, সালাম প্রসারিত করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ন করা। আর নিষেধ করেছেন (সাতটি কাজ থেকে) রুপার পাত্রে পানাহার সোনার আংটি পরিধান রেশমী জ্বীনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী কাপড় পরিধান, পাতনা রেশম কাপড় ব্যবহার রেশম মিশ্রিত কাতান পাকড় পরিধান, এবং গাঢ় রেশমী কাপড় পরিধান করা।

৫৮০২ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলঃ ইসলামের কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে খাবার দেবে, আর সালাম দিবে যাকে তুমি চেন এবং যাকে তুমি চিন না।

৫৮০৩ আগী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলমানের পক্ষে তার কোন ভাইরের সাথে তিন দিনের বেশী এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে তারা দুজনের দেখা সাক্ষাত হলেও একজন এদিকে অপরজন অন্যদিকে চেহারা ফিরিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যাক্তি যে প্রথম সালাম দিবে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেনঃ যে এ হাদীসটি আমি যুহরী (রহঃ) থেকে তিনবার শুনেছি।

৫৮০৪ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনের দশ বছর আমি তার খিদমত করি। আর পর্দার বিধান সম্পর্কে আমি সব চেয়ে বেশী অবগত ছিলাম, যখন তা নাযিল হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) প্রায়ই আমাকেএ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। যায়নাব বিনত জাহস (রাঃ)-এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাসরের দিন প্রথম পর্দার আয়াত নাযিল হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন দুলহা হিষেবে সে দিন লোকদের দাওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দাওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তার কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তধন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তার সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলেন এবং আমিও তার সঙ্গে চলি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার দরজায় এসে পৌছেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনিও তার সঙ্গে আমি ফিরে আসি। তিনি যায়নাব (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছে, চলে যায়নি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে গেলেন এবং আমিও তার সলে ফিরে যাচ্ছি। এমন কি তিনি আয়িশা (রাঃ)- এর দরজার চৌকাট পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ধারণা করেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছেন। এই সময় পর্দার আয়াত নাযিন হল। এবং তিনি তার ও আমার মধ্যে পর্দ্য টেনে দেন।

৫৮০৫ আবূ নুমান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব (রাঃ)-কে বিয়ে করলেন, তখন (দাওয়াত প্রাপ্ত) একদা লোক তার ঘরে এসে খাওয়া দাওয়া করলেন। এরপর তারা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করতে লাগলেন। তিনি দাড়ানোর পর কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছে কিছুক্ষণ পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিয়ে তিনি এসে প্রবেশ করলেন। তখন আমি ভেতরে যেতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝখানে পর্দা ঝূলিয়ে দিলেন। এই সময় আল্লাহ তা আলা এই আয়াত নাযিল করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না শেয পর্যন্ত।

৫৮০৬ ইসহাক (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রয়ই বলতেন যে, আপনি আপনার সহধর্মিনাদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনাগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বেরিয়ে যেতেন। একবার সাওদা বিনত যামআঁ (রাঃ) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন লম্বাকৃতির মহিলা। উমর (রাঃ) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি তাকে দেখে ফেললেন এবং পর্দার নির্দেশ নাযিল হওয়ার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদা! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। অতঃপর আল্লাহ তায়াআলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।

৫৮০৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন এক হুজরায় উকি মেরে তাকালো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একটা মিদরা- ছিলো, যা দিয়ে তিনি তার মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে তুমি উকি মারবে, তবে এ নিরে তোমার চোখ ফুড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেওয়া হয়েছে।

৫৮০৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একবার এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কামরায় উকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ধনুক কিংবা তীর ফনকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তা যেন এখনও আমি প্রত্যক্ষ করছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুড়ে দেওয়ার জন্য তাকে খুজে ছিলেন।

৫৮০৯ হুমায়দী ও মাহমূদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বনী আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যি জড়িত হবে। চোখের যিনা হল তাকানো জিহবার যিনা হল কথা বলা কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খায়েশ সৃষ্টি করে এবং যৌনাংগ তা সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে।

৫৮১০ ইসহাক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম বলতেন, তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলতেন তখন তা তিনবার উল্লেখ করতেন।

৫৮১১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা (রাঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার উমর (রাঃ)-এর নিকট অনুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অমুমতি চাইলাম কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনূমতি চায়। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমর বলেনঃ কারন আল্লাহ কসম! তোমারে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমান পেশ করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মধ্যে কেউ আছে কি? যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কাব (রাঃ) বললেন আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্ব কনিষ্ঠ বাক্তই উঠে দাড়াবে। আর আমই দলের সর্ব কনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তার সঙ্গে উঠে দাড়িয়ে বললাম: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই এ কথা বলেছেন।

৫৮১২ আবূ নূয়াঈম ও মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তার ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালা দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ হির! তুমি আহলে সুফফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এল এবং প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করলো।

৫৮১৩ আলী ইবনু জাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মাসিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে একবার তিনি একদন শিশুরু পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি তাদের সালাম করে বললেনঃ যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা করতেন।

৫৮১৪ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিৎ। তিনি বলেনঃ আমরা জুমুআর দিনে আনন্দিত হতাম। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম: কেন? তিনি বললেনঃ আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন একজনকে -বুদাআ- নামক খেজুর বাগানে পাঠাত সে বীট চিনির শিকড় আনতো। তা একটি ডেগচিতে ফেলে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘূটত ফলে তাতে এক প্রকার খাবার তৈরী করত। এরপর আমরা যখন জুম-আর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করত আমরা এজন্য খুশী হতাম। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, আমরা জুমু-আর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম।

৫৮১৫ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আয়িশা। ইনি জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন আমিও বললাম ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দে্শ্য করে বললেনঃ আমরা যা দেখছি, তা আপনি দেখছেন। ইউনূস যুহরি সুত্রে বলেন এবং –বারাকাত- ও বলেছেন।

৫৮১৬ আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু আব্দুল মালিক (রহঃ) জাবির বলেনঃ বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: কে? আমি বললাম: আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি আমি যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন।

৫৮১৭ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একপার্শে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এসে তাকে সালাম করন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বলেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম তুমি ফিরে যাও এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কেননা তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারের সময় অথবা তার পরের বারে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াবার ইচ্ছা করবে, তখন প্রথমে তুমি যথাবিধি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে। তারপর কিবলামুখী দাড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে! তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকু করবে প্রশান্তভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাড়াবে। তারপর তুমি সিজদা করবে প্রশান্তভাবে তারপর মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর সিজদা করবে প্রশান্তভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে প্রশান্তভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সকল কাজ সম্পন্ন করবে। আবূ উসামা বলেনঃ বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াবে।

৫৮১৮ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর উঠে বস প্রশান্তির সাথে।

৫৮১৯ আবূ নুয়াইম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম করেছেন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়ালাইহিসসালাম সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

৫৮২০ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) উসামা ইবনু সায়দ থেকে বর্ণিত যে, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাঁদর ছিল। তিনি উসামা ইবনু যায়দকে নিজের পেছনে বসিয়ে ছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের স্বাদ ইবনু উবাদা -এর দেখাশোনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেখানে মুসলমান, প্রতিমাপূজক মুশরিক ও ইয়াহুদী ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুলও ছিল। আর এ মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে উড়ন্ত ধূলাবালী মজলিসকে ঢেকে ফেলছিল। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাঁদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধুলাবালু উড়িয়োনা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সালাম করলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহর প্রতি আহবান করলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুল বললোঃ হে আগত ব্যাক্তি! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যসিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মজলিসে এসব বসে আামাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ ঠিকানায় ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য থেকে কেউ আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের মজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহুদীদের মধ্যে পরস্পর , গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমন কি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হল। তখণি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামাতে লাগলেন। অবশেষে তিনি তার সাওয়ারীতে আরোহন করে রওয়ানা হলেন এবং স্বাদ ইবনু উবাদার কাছে পৌছলেন। তারপর তিনি বললেন হে স্বাদ! আবূ তুরাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কি বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? স্বাদ (রাঃ) বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা আলা আপনাকে যে সব নিয়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করেছেন। পক্ষান্তরে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে সিধান্ত নিয়েছিল যে, তারা তাকে রাজ মুকুট পরবে। আর তার মাথায় রাজকীয় পাগড়ী বেধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করেছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (ক্ষোভানলে) জ্বলছে এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে আচরন করেছে, তা আপনি নিজেই প্রত্যাক্ষ করেছেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাফ করে দিলেন।

৫৮২১ ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেনঃ যখন কাব ইবনু মালিক (রাঃ) তাবুকের যূদ্ধে অংশ গ্রহন না করে পশ্চাতে রয়ে যান, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে সালাম কালাম করতে সবাইকে নিষেধ করে দেন। (তখনকার ঘটনা) আমি কাব ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসতাম এবং তাকে সালাম করতাম আর মনে মনে বলতাম যে, আমার সালামের জবাবে তার ঠোট দুখানা নড়ছে কিনা। পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় ঘোষনা দিলেন যে, আল্লাহ তা-আলা আমাদের তাওবা কবুল করেছেন।

৫৮২২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহুদী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললোঃ আসসামু আলায়কা। (তোমার মূত্যু হোক! (নাউযূ (ওজু/অজু/অযু)বিল্লাহ) আমি একথার মর্ম বুঝে বললাম?, আলাইকুমুস সামু ওয়ালা লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লানত)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে “আয়িশা! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ধাবস্থায়ই বিনয় পছন্দ করেন। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! তারা যে বললো: তা কি আপনি শুনেন নি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)।

৫৮২৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহুদী তোমাদের সালাম করলে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ আসসামু আলায়কা। তখন তোমরা জবাবে ওয়াআলায়কা বলবে।

৫৮২৪ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলায়কুম। (তোমাদের উপরও)।

৫৮২৫ ইউসুফ ইবনু বাহলুল (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও জুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ) এবং আবূ মারস্বাদ গানাভী (রাঃ)-কে অশ্ব বের করে নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা রওমানা হয়ে যাও এবং ‘রওযায়ে খাখে’ গিয়ে পৌছ। সেখানে একজন মুশরিক স্ত্রীলোক পাবে। তার কাছে হাতিব ইবনু আবূ বালতার দেওয়া মুশরিকদের নিকট একখানা পত্র আছে। আমরা ঠিক সেই জায়গাতেই তাকে পেয়ে গেলাম যেখানকার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। ঐ স্ত্রী লোকটি তার এক উটের উপর সাওয়ার ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আমার কাছে যে পত্রখানি আছে তা কোথায়? সে বললোঃ আমার সাথে কোন পত্র নেই। তখন আমরা তার উটসহ তাকে বসালাম এবং তার সাওয়ারীর আসবাব পত্রের তল্লাসি করলাম। কিন্তু আমরা কিছুই (পত্রখানা) খুজে পেলাম না। আমার দুজন সাথী বললেনঃ পত্রখানা তো পাওয়া গেল না। আমি বললামঃ আমার জানা আছে যে, রাসুলুলাহ অযথা কথা বলেন নি। তখন তিনি স্ত্রী লোকটিকে ধমকিয়ে বললেনঃ তোমাকে অবশ্যই পত্রখানা বের করে দিতে হবে, নতুবা আমি তোমাকে উপুড় করে তল্লাসি নেব। এরপর সে যখন আমার দৃঢ়তা দেখলো। তখন সে বাধ্য হবে তার কোমরে পেচানো চাঁদরে হাত দিয়ে ঐ পত্রখানা বের করে দিল। তারপর আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাহে পৌছলাম। তখন তিনি হাতিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে হাতিব! তুমি কেন এমন কাজ করলে? তিনি বললেনঃ আমার মনে এমন কোন দুসংকল্প নেই যে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমি আমার দৃঢ় মনোভাব পরিবর্তন করিনি এবং আমি ধর্মও বদল করিনি। এই পত্রখানা দ্বারা আমার নিছক উদ্দেশ্য ছিল যে, এতে মক্কাবাসীদের উপর আমার দ্বারা এমন এহসান হোক, যার ফলে আল্লাহ তা’আলা আমার পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে রাখবেন। আর সেখানে আপনার অন্যান্য সাহাবীদের এমন লোক আছেন যাদের দ্বারা আল্লাহ তা’আলা তাদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে দিবেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাতিব ঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তাকে ভাল ছাড়া অন্য কিছুই বলো না। রাবী বলেনঃ উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) এবং মুমিনদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন। অতএব আমাকে ছেড়ে দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উমর! তোমার কি জানানেই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা-আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে, তোমরা যা ইচ্ছা করতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে আছে। রাবী বলেনঃ তখন উমর (রাঃ)-এর দুঁচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তার রাসুলই সবচেয়ে ভাল জানেন।

৫৮২৬ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব তাকে বলেছেনঃ হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে ডেকে পাঠালেন, কুরায়শদের ঐ দলসহ যারা ব্যবসার জন্য সিবিয়া গিয়েছিলেন। তারা সবাই তার নিকট উপস্থিত হলেন। এরপর তিনি ঘটনার বর্ননা করেন। শেষভাগে বললেন যে- তারপর হিরাক্লিয়াস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পত্রখানি আনালেন এবং তা পাঠ করা হল। এতে ছিল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে রোম সমরাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি -: ‘আসসালামু আলা মানিততায়াল হুদা’ শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা সৎপথের অনুসরণ করেছে।

৫৮২৭ লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের এক ব্যাক্তির কথা উল্লেখ করে বললেনঃ যে সে এক খণ্ডকাঠ নিয়ে খোদাই করে এর ভেতর এক হাজার দীনার ভর্তি, করে রাখল এবং এর মালিকের প্রতি লেখা একখানা চিঠিও রেখে দিল। আর উমর ইবনু আবূ সালামা সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একব্যাক্তি একখণ্ড কাঠ খোদাই করে তার ভেতরে কিছু মাল রেখে দিল এবং এর সাথে তার প্রাপকের প্রতি একখানা পত্রও ভরে দিল, যার মধ্যে লিখা ছিল, অমুকের পক্ষ থেকে অমুকের প্রতি।

৫৮২৮ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে কুরাইযা গোত্রের লোকেরা স্বাদ (রাঃ)-এর ফায়সালার উপর আত্মসমর্পন করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আসার জন্য লোক পাঠালেন। তারপর তিনি এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বললেনঃ তোমরা আপন সরদারের প্রতি অথবা বললেনঃ তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তির প্রতি উঠে দাঁড়াও। তারপর স্বাদ (রাঃ) এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশেই বসলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ এরা তোমার ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি ফায়সালা দিচ্ছি যে এদের মধ্যে যারা যূদ্ধযোগ্য তাদের হত্যা করা হোক। আর তাদের বাচ্চাঁদের বন্দী করা হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা অমুযায়ীই ফায়সালা দিয়েছ। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আমার কোন কোন সঙ্গী আবূল ওয়ালীদ থেকে আবূ সাঈদের এ হাদীছে ‘আলাহুকমিকা’ এর স্থলে ‘আলাহুকমিকা’ শব্দ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।

৫৮২৯ আমর ইবনু আসিম (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে কি মূসা ফাহা করার রেওয়ায ছিল? তিনি বললেনঃ হ্যা।

৫৮৩০ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) খেকে বর্নিত যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন।

৫৮৩১ আবূ মূয়ায়ম (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত তার উভয় হাতের মধ্যে রেখে আমাকে এমনভাবে তাশাহুদ শিখিয়েছেন, যে ভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সুরা শিখাতেন ‘আত্তাহুয়্যাতুলিল্লাহি’ এসময় তিনি আমাদের মাঝেই বিদ্যমান ছিলেন। তারপর যখন তার ওফাত হয়ে গেল, তখন থেকে আমরা ‘আসসালামু আলাইকা’ এর স্থলে পড়তে লাগলাম ‘আসসালামু আলান নাবিয়্যি’।

৫৮৩২ ইসহাক এবং আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে আলী ইবনু আবূ তালিব যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অতিক্রম কালের সময় তাঁর কাছে থেকে বেরিয়ে এলেন লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করলো হে আবূল হাসান! কিভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভোর হয়েছে? তিনি বললেনঃ সুস্থ অবস্থায় তার ভোর হয়েছে। তখন আব্বাস (রাঃ) তার হাত ধরে বললেনঃ তুমি কি তার অবস্হা বুঝতে পারছ না? তুমি তিনদিন পরই লাঠির গোলাম হয়ে যাবে। আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে ধারণা করছি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রোগেই সত্তর ইন্তেকাল করবেন। আমি বনূ আবদুল মুত্তালিবের চেহারা থেকে তাঁদের ওফাতের লক্ষণ চিনতে পারি। অতএব তুমি আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যাও। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তার অবর্তমানে খিলাফতের দায়িত্ব কাদের হাতে থাকবে? যদি আমাদের খান্দানেই থাকে তবে তা আমরা জেনে রাখলাম। আর যদি অন্য কোন গোত্রের হাতে থাকবে বলে জানি, তবে আমরা তার সাথে পরামর্শ করবো এবং তিনি আমাদের জন্য অসিয়ৎ করে যাবেন। আলী (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! যদি আমরা এ ব্যাপারে রাসুলুলাহ কে জিজ্ঞাসা করি আর তিনি এ সম্পর্কে আমাদের বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তাহলে লোকজন কখনও আমালের এর সুযোগ দেবেন না। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কখনো জিজ্ঞেস করবো না।

৫৮৩৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর পেছনে তার সওয়ারীর উপর বসা ছিলাম। তখন তিনি আমাকে দাকলেনঃ ও হে মুআয! আমি বললাম, লাব্বায়কা ওয়া সাদারকা। তারপর তিনি অনুরুপ তিনবার দাকলেন। এর পর তিনি বললেনঃ তুমি কি জানোো যে, বান্দাদের উপর আল্লাহর হক কি? তিনি বললেনঃ তা-হল বান্দ্বারা তার ইবাদত করবে আর এতে তার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আবার কিছুক্ষণ চলার পর তিনি বললেনঃ ওহে মুআয! আমি জবাবে বাললামঃ লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানোো যে, বান্দা যতক্ষন তাৎ ইবাদত করবে, তখন আল্লাহর উপর বান্দাদের হক কি হবে? তিনি বললেনঃ তা হল এই যে, তিনি তাদের আযাব দিবেন না।

৫৮৩৪ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) বলেনঃ, আল্লাহর কসম! আবূ যার (রাঃ) রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এশার সময় মদিনায় হাররা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা ওহুদ পাহাড়ের সম্মূখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক। আর ঋন পরিশোধ পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন তাত পর্যন্ত আমার হাতে তা থেকে যাক। বরং আনি পছন্দ করি যে, আমি আগুলো আল্লাহর বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কিভাবে দিবেন) তা তার হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। তাহাপর বললেনঃ হে আবূ যার! আমি বললামঃ লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা, ইয়া রাসুলুল্লাহ তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদাশালী, আখিরাতে তারা হবেন অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হবেন এর ব্যতিক্রম। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত , হে আবূ যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোখাও যেয়োনা। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমন কি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন। এমন সময় একটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিপদের সন্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে অগ্রসর হতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিষেধাজ্ঞা, যে কোথায়ও যেয়োনা মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি একটা আওয়াজ শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। আপনার কথা স্বরণ করে থেমে গেলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরাঈল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যাক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদিও সে ব্যাক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যাক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদি-ও চুরি করে থাকে তবুও। আমাশ (রাঃ) বললেনঃ আমি যাবদকে বললাম, আমার কাছে খবর পৌছেছে যে, এ হাদীসের রাবী হল আবূ দারদা। তিনি বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ হাদীসটি আবূ যারই রাবাযা নামক স্থানে আমার কাছে বর্ননা করেছেন। আমাশ (রহঃ) বলেন, আবূ সালিহ ও আবূদ দারদা (রাঃ) সুত্রে আমার কাছে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আর আবূ শিহাব আমাশ থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ – ‘তিন দিনের অতিরিক্ত’।

৫৮৩৫ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি অপর কাউকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সে সেখানে বসবে না।

৫৮৩৬ খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ব্যাক্তিকে তার বসার জায়গা থেকে তুলে দিয়ে সেখানে অপর ব্যাক্তিকে বসতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমরা বসার জায়গা প্রশস্ত করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও। ইবনু উমর (রাঃ) কেউ তার জায়গা থেকে উঠে যাক এবং তার জায়গায় অন্যজন বসুক তা পছন্দ করতেন না।

৫৮৩৭ হাসান ইবনু উমর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনত জাহশ (রাঃ) কে বিয়ে করলেন, তখন তিনি কয়েকজন লোককে দাওয়াত করলেন। তারা আহার করার পর বসে বসে অনেক সময় আলাপ আলোচনায় মশগুল থাকলেন। তখন তিনি নিজে উঠে চলে যাওয়ার ভাব প্রকাশ করতে শুরু করলেন। কিন্তু এতেও তারা উঠলেন না। তিনি এ অবস্থা দেখে নিজেই উঠে দাড়ালেন। যখন তিনি চলে গেলেন, তখন লোকজনের মধ্যে যারা দাড়াবার ইচ্ছা করলেন, তারা তার সাথেই উঠে চলে গেলেন। কিন্তু তাদের তিনজন থেকে গেলেন। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেন, তখন দেখলেন যে ঐ তিনজন তখনো বসে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর তারাও উঠে চলে গেলে, আমি গিয়ে তাকে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। এরপর তিনি এসে ঘরে ঢূকলেন। তখন আমিও ঢ়ুকতে চাইলে তিনি আমার ও তার মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। এই সময় আল্লাহ তাআলা ওহী নাযিল করলেন: হে মুনিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেওয়া না হলে তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে প্রবেশ করবে না। আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ঘোরতর অপরাধ (৩৩: ৫৩)।

৫৮৩৮ মুহাম্মদ ইবনু আবূ গালিব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কাবা শরীফের আঙ্গিনায় দু হাঁটু খাড়া করে দু-হতে নিরে তা বেড় দিয়ে এভাবে বসা অবস্থায় পেয়েছি।

৫৮৩৯ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদের নিকৃষ্ট কবীরা গুনাহের বর্ণনা দিব না? সকলে বললেনঃ হ্যা ইয়া রাসুলারাহ! তখন তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে , আল্লাহব সঙ্গে অন্য কোন কিছুকে শরীক করা এবং মা বাপের অবাধ্যতা। মূসা’দ্দাদ বিশরের এক সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তাতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ হুশিয়ার হয়ে যাও! আর (সবচেয়ে বড় গুনাহ হল মিথ্যা কথা বলা। এ কথাটা তিনি বারবার বলতে থাকলেন অবশেষে আমরা বললাম: হায়! তিনি যদি থেমে যেতেন।

৫৮৪০ আবূ আসিম (রহঃ) উকবা ইবনু হারিস (রাঃ) বলেন একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তাড়াতাড়ি গিয়ে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন।

৫৮৪১ কুতাইবা (রহঃ) আয়িশা। (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার) পেলঙ্গের মধাখানে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তখন আমি তাঁর কিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম। যখন আমার কোন প্রয়োজন হতো, তখন আমি তাঁর দিকে মুক করে উঠে দাড়ানো পছন্দ করতাম না বরং আমি শুয়ে শুয়েই পেছনের দিক দিয়ে কেটে পড়তাম।

৫৮৪২ ইসহাক এবং আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন সে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আমার বেশী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন সম্পর্কে উল্লেখ করা হল। তখন তিনি আমার ঘরে আসলেন এবং আমি তার উদ্দেশ্যে খেজ্বরের ছাল ভর্তি করা চামড়ার একটা বালিশ পেশ করলাম। তিনি মাটিতেই বসে পড়লেন। আর বাশিশটা আমার ও তার মাঝখানে থেকে গেল। তিনি আমাকে বললেনঃ প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা থাকা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? আমি বললাম। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেনঃ তা হলে পাচ দিন? আমি বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ তবে সাতদিন? আমি আবার বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ তবে নয়দিন? আমি পূনরায় বললাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ তা হলে এগার দিন? আমি আবার বললাম: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি বললেনঃ দাউদ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র চেয়ে বেশী কোন (নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) নেই। তিনি প্রত্যেক মাসের (অথবা বছরের) অর্ধেক দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) , পালন করতেন অর্থাৎ একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন আর একদিন পালন করতেন না।

৫৮৪৩ ইয়াহইয়া ইবনু জাফর ও আবূ ওয়ালীদ (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আলকামা (রাঃ) সিরিয়া গমন করলেন। তখন তিনি মসজিদে গিয়ে দু-রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে একজন নেক সঙ্গী দান করুন। এরপর তিনি আবূদ দারদা (রাঃ)-এর পাশে গিয়ে বসে পড়লেন। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনি কোন শহবের লোক? তিনি জবাব দিলেনঃ আমি কুফার বাসিন্দা। তিনি জিজ্ঞাসা করললেন: আপনাদের মধ্যে কি সেই ব্যাক্তি নেই? যিনি ঐ ভেদ সম্পর্কে অবগত ছিলেন, যা অপর কেউ জানতেন না। (রাবী বলেন) অর্থাৎ হুযায়ফা (রাঃ) আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনাদের মধ্যে কি এমন ব্যাক্তি নেই, অথবা আছে যাকে আল্লাহ তা’আলা তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র দু’আর কারনে শয়তান থেকে পানাহ দিয়েছেন? (রাবী বলেন) অর্থাৎ আম্মার (রাঃ) তিনি আবার জিজ্ঞাস করলেন: আর আপনাদের মধ্যে কি সে ব্যাক্তি নেই যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মিসওয়াক ও বালিশের জিম্মাদার ছিলেন? (রাবী বলেন) অর্থাৎ আাদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)। আবূ দারদা (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ আদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূরায়ে ‘ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগশা’ কি রকম পড়তেন? তিনি বললেনঃ তিনি ‘ওমা খালাকায যাকারা ওইয়াল উনসা’ এর স্থলে ‘ওয়ামা খালাকা’ অংশটুকু ছেড়ে দিয়ে পড়তেন “ওয়ায যাকারা ওইয়াল উনসা”। তখন তিনি বললেনঃ এখানকার লোকেরা আমাকে এ সূরা সম্পর্কেই সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিচ্ছিলেন। অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রকমই শুনেছি।

৫৮৪৪ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমরা জুমআর সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরেই কায়লুলা করতাম এবং দূপূরের খাবার খেতাম।

৫৮৪৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আলী (রাঃ)-এর কাছে আবূ তুরাব এর চাইতে প্রিয়তর কোন নাম ছিল না। এ নামে ডাকা হয়ে তিনি অতান্ত খুশী হতেন। কারণ একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরে আসলেন। তখন আলী (রাঃ) কে ঘরে পেলেন না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তার মধ্যে কিছু ঘটায় তিনি আমার সঙ্গে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছেন। আমার কাছে কায়লুলা করেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখতো সে কোথায়? সে লোকটি এসে বললঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি তো মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখতে পেলেন যে, তিনি কাত হয়ে শুয়ে আছেন, আর তার চাঁদরখানা পাশ থেকে পড়ে গেছে। ফলে তার সাথে মাটি লেগে গেছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গায়ের মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ ওঠো, আবূ তুরাব (মাটির বাবা) ওঠো, আবূ তুরাব! একথাটা তিনি দুবার বললেন।

৫৮৪৬ কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে সুলায়ম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা করতেন। এরপর তিনি যখন ঘূম থেকে উঠতেন তখন তিনি তার শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করতেন এবং তা একটা শিশির মধ্যে জমাতেন এবং তাকে -সুক্ক- নামক সুগন্ধির মধ্যে মিশাতেন। রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক বলেনঃ-এর ওফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে, তিনি আমাকে অসিয়ত করলেন: যেন ঐ ‘সুক্ক’ থেকে কিছুটা তার সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং তা তার সুগন্ধির মধ্যে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল।

৫৮৪৭ ইসমাঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কুবা- এর দিকে যখন যেতেন তখন প্রায়ই উম্মে হারাম বিনতে মিরহান (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাঁকে খানা খাওয়াতেন। তিনি উবাদা ইবনু সামিৎ (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তিনি তার ঘরে গেলে তাকে খাবার খাওয়াতেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রহঃ) সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নের মধ্যে আমাকে আমার উম্মাতের মধ্য হতে আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিসাল সমুদ্রের মাঝখানে বাদশাহদের মত সিংহাসনের উপর সমাসীন। তখন তিনি বললেনঃ আপনি দু’আ করুন সেন আল্লাহ তা’আলা আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। তিনি সে দু’আ করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে সজাগ হলেন। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন (স্বপ্নের মধ্যে) আমাকে আমার উম্মতের মধ্য থেকে আল্লাহর পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক লোক দেখানো হয়েছে, যারা এই বিশাল সমুদ্রের মাঝখানে বাদশাহদের মত সিংহাসলের উপর সমাসীন। তখন আবার আমি বললামঃ আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম বাহিনীদেরই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সুতরাং তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-এর আমলে সামুদ্রিক অভিযানে রওয়ানা হন এবং সমুদ্রাভিযান থেকে ফিরে এসে তার নিজেরই সাওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে (আল্লাহর পথেই) শাহাদাত বরন করেন।

৫৮৪৮ আলা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু-এরকমের লেবাস এবং দু-ধরনের বিক্রয় নিষেধ করেছেন। পেচিয়ে কাপড় পরিধান করা থেকে এবং এক কাপড় পরে এহতেবা করা থেকে, যাতে মানুষের লজ্জাস্থানের উপর কোন কাপড় না থাকে এবং “মুলামাসা ও মুনাবাযা” বেচা-কেনা থেকেও।

৫৮৪৯ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ)উম্মূল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) বর্ণণা করেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সব সহধর্মিণী তাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতিমা (রাঃ) পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহর কসম! তাঁর হাঁটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাঁটার অনুরূপই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমন শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। এরপর যখন তিনি তাঁকে নিজের ডান পাশে অথবা (রাবী বলেন) বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাঁর সঙ্গে কানে কানে কিছুক্ষণ কথা বললেন, তিনি (ফাতেমা) খুব বেশী কাদতে লাগলেন। এরপর তাঁর বিষন্ন অবস্থা দেখে দ্বিতীয়বার তাঁর সঙ্গে তিনি কানে কানে আরো কিছু কথা বললেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) হাসতে লাগলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীগণের মধ্য থেকে আমি বললামঃ আমাদের উপস্থিত থাকা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ করে আপনার সঙ্গে বিশেষ কি গোপনীয় কথা কানে কানে বললেন, যার কারণে আপনি খুব কাঁদছিলেন? এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে চলে গেলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তিনি আপনাকে কানে কানে কি বলেীছলেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভেদ (গোপনীয় কথা) পাস করবো না। এরপর রাসূলল্লাহ -এর ওফাত হয়ে গেল। তখন আমি তাঁকে বললামঃ আপনার উপর আমার যে দাবী আছে, আপনি আমি তার কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি কি গোপনীয় কথাটি আমাকে জানাবেন না? তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেনঃ হাঁ এখন আপনাকে জানাবো। সুতরাং তিনি আমাকে জানাতে গিয়ে বললেনঃ প্রথম বার তিনি আমার নিকট যে গোপনীয় কথা বললেন, তাহল এই যে, তিনি আমার নিকট বর্ণণা করেন যে, জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বছর এসে পূর্ণ কুরআন একবার আমার নিকট পেশ করতেন। কিন্তু এ বছর তিনি এসে তা আমার কাছে দু’বার পেশ করেছেন। এতে আমি অনুমান করছি যে, আমার চির বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। সুতরাং তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী। তখন আমি কাঁদলাম যা নিজেই দেখলেন। তারপর যখন তিনি আমার বিষন্ন ভাব দেখলেন, তখন দ্বিতীয়বার আমাকে কানে কানে বললেনঃ তুমি কি জান্নাতের মুসলিম মহিলাদের অথবা এ উম্মতের মহিলাদের নেত্রী হয়ে যাওয়াতে সন্তুষ্ট হবে না? (তখন আমি হেসে দিলাম)।

৫৮৫০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ আনসায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মসজিদে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছি, তখন তার এক পা আরেক পায়ের উপর রাখা ছিল।

৫৮৫১ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ও ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোথাও তিনজন লোক থাকে তবে তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দু-জনে মিলে চুপি চুপি কথা বলবে না।

৫৮৫২ আবদুল্লাহ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তার পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাকেও বলি নি।

৫৮৫৩ উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন কোথাও তোমরা তিনজন থাকো, তখন একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে-কানে কথা বলবে না। এতে তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে তবে তা করাতে দোষ নেই।

৫৮৫৪ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন কিছুমাল লোকজনকে বণ্টন করে দিলেন। তখন একজন আনসারী মন্তব্য করলেন যে এ বণ্টনটি এমন যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। তখন আমি বললাম সাবধান! আল্লাহর কসম! আমি নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে এ কথাটা বলে দিব। এরপর আমি তার নিকট গেলাম। কিন্তু তখন তিনি একদল সাহাবীর মধ্যে ছিলেন। তাই আমি কথাটা তাকে কানে-কানেই বললাম তখন তিনি রেগে গেলেন। এমন কি তার চেহারার রং লাল হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে তিনি বললেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর রহমত নাযিল হোক। তাকে এর চাইতে অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছে, বিত তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন।

৫৮৫৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। একবার সালাত (নামায/নামাজ)-এর একামত হয়ে গেলো, তখনও একজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কানে-কানে কথা বলছিলেন এবং দীর্ঘক্ষন ধরে তিনি এভাবে আলাপ করতে থাকলেন। এমন কি তার সংগীগণ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৫৮৫৬ আবূ নূয়ায়ম (রহঃ) সালিম (রাঃ) তার পিতা থেকে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা ঘূমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন রেখে ঘূমাবে না।

৫৮৫৭ মুহাম্মদ ইবনু আ-লা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাত্রি কালে মদিনার এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ পূড়ে গেল। এদের অবন্হা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট জানানো হলে, তিনি বললেনঃ এ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘূমাতে যাবে, তখন তোমাদেরই হিফাযতের জন্য তা নিভিয়ে ফেলবে।

৫৮৫৮ কুতায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। আর ঘূমাবার সময় (ঘরের)দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলবে। কারণ প্রায়ই দুষ্ট ইদূরেরা জালানো বাতির ফিতাগুলো টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরে আগুন লাগিয়ে গৃহবাসীকে জালিয়ে দেয়।

৫৮৫৯ হাসসান ইবনু আবূ আববাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাতে যখন তোমরা ঘূমাতে যাবে, তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজা বন্ধ করবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে এবং মশকের মুখ বেধে বাখবে। হাম্মাম বলেনঃ এক টুকরা কাঠ দিয়ে হলেও।

৫৮৬০ ইয়াহইয়া ইবনু কুযাআ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের স্বভাবগত বিষয় হলো পাচটিঃ খাতনা করা, নাভির নীচের পশম কামানো, বগলের পশম উপড়ানো, গোঁফ কাটা এবং (অতিরিক্ত)নখ কাটা।

৫৮৬১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আশী বছর বয়সের পর কাদূম -নামক- স্থানে নিজেই নিজের খাতনা করেন। কুতায়বা (রহঃ) আবূয যিনাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ -কাদ্দুম- একটি স্থানের নাম।

৫৮৬২ মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর রহীম (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের সময় আপনি বয়সে কার মত ছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি তখন মাখতুন (খাতূনাকৃত) ছিলাম। তিনি আরও বলেনঃ তাদের নিয়ম ছিল যে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তারা খাতনা করতেন না।

৫৮৬৩ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি কসম করে এবং তার কসমে বলে লাত ও উযযার কসম, তা হলে সে যেন লা ইলাহা ইলাল্লাহ বলে, আর যে কেউ তার বন্ধুকে বলে: এসো আমি তোমার সাথে জুয়া খেলবো। সে যেন সাদাকা করে।

৫৮৬৪ আবূ নুয়ায়ম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বর্ননা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় আমার খেয়াল হলো যে, আমি নিজ হাতে আল্লাহর কোন সৃষ্টির সাহায্য ছাড়া এমন একটা ঘর বানিয়ে নেই, যা আমাকে বৃষ্টির পানি থেকে ঢেকে রাখে এবং আমাকে রোদ থেকে ছায়া দান করে।

৫৮৬৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বর্ননা করেন। আল্লাহর কসম আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পর থেকে এ পর্যন্ত কোন ইটের উপর ইট রাখি নি। (অর্থাৎ কোন পাকা ঘর নির্মাণ করিনি) আর কোন খেজুরের চারা লাগাই নি। সুফিয়ান (রাবী) বর্ণনা করেন, আমি এ হাদীসটি তার পরিবারের এক ব্যাক্তির নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম তিনি তো নিশ্চয়ই পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। তখন আমি বললাম, তা হলে সম্ভবতঃ এ হাদীসটি তাঁর পাকা ঘর নিমাণের আগেকার হবে।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: অনুমতি চাওয়া
অনুমতি চাওয়া
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/permission.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/permission.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy