রোগীদের বর্ণনা

৫২৩৮ আবূল ইয়ামান হাকাম (রহঃ) ইবনু নাফি (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমান ব্যাক্তির উপর যে সকল বিপদ আপদ আপতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাটা তার শরীরে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও।

৫২৩৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যাক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ ব্যাধি, উদ্দেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমন কি যে কাটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেন।

৫২৪০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুমিন ব্যাক্তির উদাহরণ হল সে শস্যক্ষত্রের নরম চারা গাছের ন্যায়, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেক বার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের উদাহরন, সে যেন ভূমির উপর কঠিনভাবে রপিত বৃক্ষ, যাকে কোন ক্রমেই নোয়ানো যায় না। অবশেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উৎপাটিত হয়ে যায়। যাকারিয়্যা তার পিতা কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে এরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫২৪১ ইবরাহীম ইবনু মুনাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যাক্তির উপমা হল সে যেন শস্যক্ষেত্রের কোমল চারাগাছ। যে কোন দিক থেকেই তার দিকে বাতাস আসলে বাতাস তাকে নূইয়ে দেয়। আবার (যখন বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তখন তা সোজা হয়ে দাড়ায়। (তদ্রূপ অবস্থা হল মু-মিনের) বানীঃ মুসিবত তাকে নোয়াতে থাকে। আর ফাসিক হল ভূমির উপর কঠিনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো বৃক্ষের ন্যায়, যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন ভেংগে দেন।

৫২৪২ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যাক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি মুসীবতে লিপ্ত করেন।

৫২৪৩ কাবীসা (রহঃ) ও বিশর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাইতে অধিক রোগ যাতনা ভোগকারী অন্য কাউকে দেখিনি।

৫২৪৪ মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিড়িত অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললাম নিশ্চয়ই আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে! এটা এ জন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। তিনি বলেনঃ হ্যা। যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তার উপর থেকে গুনাহ সমুহ এভাবে ঝরে যায়, যে ভাবে বৃক্ষ থেকে ঝরে যায় তার পাতাগুলো।

৫২৪৫ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হা। তোমাদের দুব্যাক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একহি ততটুকু জুরে আক্রান্ত হই। আমি বললাম এটি এজন্য সে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন হা ব্যাপারটি এমনই। কেননা যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, চাই একটি কাটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যে ভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়।

৫২৪৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ মূসা আশাআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, রোগীর সেবা কর এবং কয়েদীকে মুক্ত কর।

৫২৪৭ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি জিনিসের আদেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আামাদের নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, মোটা ও পাতলা এবং কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় ব্যাবহার-করতে এবং কাসূসী ও মিয়নারা কাপড় ব্যবহার করতে। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ আমরা যেন জানাযার অনুসরন করি, রোগীর সেবা করি এবং বেশী বেশী করে সালাম করি।

৫২৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একবার আমি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) পায়ে হেঁটে আমার খোজ খবর নেওয়ার জন্য আমার নিকট আসলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তিনি তার অবশিষ্ট পানি আমার গায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে দেখলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমি কি করবো? আমার সম্পদের ব্যাপারে কি পদ্ধতিতে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো? তিনি তখন আমাকে কোন উত্তর দিলেন না। অবশেষে মীরাসের আয়াত নাযিল হল।

৫২৪৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আতা ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাবো না? আমি বললাম অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কৃষ্ণ বর্ণের মহিলাটি, সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসেছিল। অরপর সে বলল: আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার ছতর খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যদি চাও, ধৈর্য ধারণ করতে পার। তোমার জন্য থাকবে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, যেন তোমাকে নিরাময় করেন। মহিলা বলল আমি ধৈর্য ধারণ করবো। সে বলল তবে যে সে অবস্থায় ছতর খূলে যায়। কাজেই আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন আমার ছতর খুলে না যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু’আ করলেন।

৫২৫০ মুহাম্মদ (রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সেই উম্মে যুফার (রাঃ) কে দেখেছেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়। সে ছিল দীর্ঘ দেহী কৃঞ্চ বর্ণের এক মহিলা।

৫২৫১ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি সে, আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দুটি জিনিসের ব্যাপারে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করে, তাহলে আমি তাকে সে দুটির বিনিময়ে দান করবো জান্নাত। আনাস (রাঃ) বলেন, দুটি প্রিয় জিনিস বলে তার উদ্দেশ্য হল সে ব্যাক্তির চক্ষুদ্বয়। অনুরুপ বর্ণনা করেছেন আশআস ইবনু জাবির ও আবূ যিলান (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে।

৫২৫২ কুতায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – মদিনায় আসলেন, তখন আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেনঃ আমি তাদের কাছে গেলাম এবং বললাম হে আব্বাজান! আপনি কেমন অনুভব করছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন অনুভব করছেন? আবূ বকর (রাঃ)-এর অবস্থা ছিল, তিনি যখন জ্বরে আক্রান্ত হতেন তখন তিনি আবৃতি করতেন। সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজনের মধ্যে, আর মৃত্যু অপেক্ষমান থাকে তবে জুতার ফিতার চেয়ে সন্নিকটে। বিলাল (রাঃ)-এর জ্বর যখন থামত তখন তিনি বলতেন হায়! আমি যদি লাভ করতাম একটি রাত কাটানোর সুযোগ এমন উপত্যকায় যে আমার পাশে আছে ইযখির ও জালীল ঘাস। যদি আমার অবতরণ হতো কোন দিন মাজ্বীন্নার কূপের কাছে। হায়! আমি কি কখনো দেখা পাব শামা ও তাফীলের। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তাকে এদের অবস্থা জানালাম। তখন তিনি দুআ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যে রুপে তুমি আমাদের কাছে মক্কা প্রিয় করে দিয়েছ কিংবা সে অপেক্ষা আরো অধিক প্রিয় করে দাও। হে আল্লাহ! আর মদিনাকে উপযোগী করে দাও এবং মদিনার মুদ্দ ও সা- এর ওযনে বরকত দাও। আর এখানকার জ্বরকে স্থান্তরিত করে জুহফা এলাকায় স্থাপন করে দাও।

৫২৫৩ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক কন্যা (যায়নাব) তাঁর কাছে সংবাদ পাঠিয়েছেন, এ সময় উসমা, স্বাদ ও সম্ভবত উবায় (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলেন। সংবাদ ছিল এ মর্মে যে, -(যায়নাব বলেছেন) আমার এক শিশুকন্যা মৃত্যুসয্যায় শায়িত। কাজেই আপনি আমাদের এখানে আসুন। উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে সালাম পাঠিয়ে বলে দিলেনঃ সব আল্লাহর ইখতিয়ার। তিনি যা চান নিয়ে নেন, আবার যা চান দিয়ে যান। তার কাছে সব কিছু একটি নির্ধারিত সমতা আছে। কাজেই তুমি ধৈর্যধারণ কর এবং উত্তম প্রতিদানের আশায় থাকো। তারপর আবারো তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কসম ও তাগিদ দিয়ে সংবাদ পাঠালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাড়ালেন। আমরাও দাড়িয়ে গেলাম। এরপর শিশুটিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কোলে তুলে দেওয়া হল। এ সময় তার নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু-চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। সা-দ (রাঃ) বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটা কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ এটা রহমত। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করেন তার অন্তরে এটিকে স্থাপন করেন। আর আল্লাহ তার মেহেরবান বান্দাদের প্রতই মেহেরবানী করে থাকেন।

৫২৫৪ মুআলা ইবনু আস্বাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বেদূঈনের কাছে গিয়েছিলেন! তার রোগের খোজ-খবর নেওয়ার জন্য। বর্ণনাকারী বলেনঃ আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল। তিনি যখন কোন রোগীকে দেখতে যেতেন তখন তাকে বলতেন কোন ক্ষতি নেই। ইনশাআল্লাহ তুমি তোমার গুনাহ থেকে পবিত্রতা লাভ করবে। তখন বেদুঈন বললঃ আপনি কি বলেছেন যে, এটা গুনাহ থেকে পবিত্র করে দেবে? কখনো নয়, বরং এটা এমন এক জ্বর যা এক অতি বৃদ্ধকে গরম করছে কিংবা সে বলেছিল উত্তপ্ত করছে, যা তাকে কবরস্থান দেখিয়ে ছাড়বে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ তবে তেমনই।

৫২৫৫ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ইয়াহুদীর ছেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমত করত। ছেলেটির অসূস্থ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে এলেন। এরপর তিনি বললেন তুমি ইসলাম গ্রহন করো। সে ইসলাম গ্রহন করলো। সাঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ তাসিব মৃত্যুমুখে পতিত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসেছিলেন।

৫২৫৬ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতার সময় লোকজন তাকে দেখার জন্য তাঁর কাছে আসলে তিনি তাদের নিয়ে বসা অবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। লোকজন তার পেছনে দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করেছিল। ফলে তিনি তাদের বসার জন্য ইশারা করেন। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি বলেনঃ ইমাম হল এমন ব্যাক্তি যাকে অনুসরন করতে হয়। কাজেই সে যখন রুকু করবে তখন তোমরাও রুকু করবে। সে যখন মাথা উঠাবে, তোমরা মাথা উঠাবে। আর সে যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।

৫২৫৭ ইসহাক (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি একটি বর্ষা নিয়ে এসেছেন এবং তা মাটিতে পুঁতে দিলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত দিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, একটি ‘হুল্লার’ দু’টি চাঁদরের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে বের হয়ে আসলেন এবং বর্শার দিকে ফিরে দু’ রাকা‘আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর মানুষ ও পশুকে দেখলাম, তারা তাঁর সামনে দিয়ে এবং বর্শার পিছন দিয়ে গমন করছে।

৫২৫৮ কুতায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গায়ে আমার হাত বুলালাম এবং বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যা! আমি এমন কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হই, যা তোমাদের দু-জনের হয়ে থাকে। আমি বললাম এটা এ জন্য যে, আপনার জন্য প্রতিদানও হল দ্বিগুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যা! এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে কোন মুসলিম ব্যাক্তির উপর কোন যন্ত্রণা, রোগ ব্যাধি বা এ ধরনের অন্য কিছু আপতিত হলে তাতে আল্লাহ তার গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, যে ভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে।

৫২৫৯ কাবীসা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতার সময় তার কাছে এলাম। এরপর তাঁর শরীরে হাত বুলালাম। এ সময় তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত এবং এটা এ জন্য যে আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেন হা! কোন মুসলিম ব্যাক্তির উপর কোন কষ্ট আপতিত হলে তার উপর থেকে গুনাহগুলো এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে বৃক্ষ থেকে পাতা ঝরে যায়।

৫২৬০ ইসহাক (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুরল্লাহ এক রোগীকে দেখার জন্য তার কাছে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি বলেনঃ কোন ক্ষতি নেই ইনশাআল্লাহ গুনাহ থেকে তোমার পবিত্রতা লাভ হবে। রোগী বলে উঠলঃ কখনো না বরং এটি এমন জ্বর, যা এক অতি বৃদ্ধের গায়ে টগকা করছে আশংকা হয় যেন তাকে কবরে পৌছাবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হা হবে তাই।

৫২৬১ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাধার পিঠে আরোহন করলেন। গাধাটির পিঠে ছিল ফাদকঁ এলাকায় তৈরী চাঁদর মোড়ানো একটি গদি। তিনি নিজের পেছনে উসামা (রাঃ)-কে বসিয়ে অসুস্থ স্বাদ ইবনু উবাদা (রাঃ)- কে দেখতে গিয়েছিলেন। এটা বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলতে চলতে এক পর্যায়ে এক মজসিসের পাশ অতি-ক্রম করতে লাগলেন। সেখানে ছিল আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুল। এ ঘটনা ছিল আবদূল্লাহর ইসলাম গ্রহনের আগের। মজলিসটির মধ্যে মুসসিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের লোকও ছিল। আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-ও সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। সাওয়ারী জানোয়ারটির পায়ের ধূলা-ঝরছিল যখন মজলিসের লোকদের মাঝে উড়াতে লাগল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় তার চাঁদর দিয়ে নিজের নাক চেপে ধরল এবং বলল আমাদের উপর ধূলা-বালু উড়াবেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দিলেন এবং নীচে অবতরণ করে তাদের আল্লাহর প্রতি আহবান জানালেন। এরপর তিনি তাদের সামনে কুরআন পাঠ করলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় তাঁকে বললঃ জনাব, আপনি যা বলেছেন আমার কাছে তা পছন্দনীয় নয়। যদি এ সব কথা সত্য হয়, তাহলে আপনি এ মজলিসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। বরং আপনি নিজ বাড়ীতে চলে যান এবং সেখানে যে আপনার কাছে যাবে, তার কাছে এসব বৃত্তান্ত প্রকাশ করবেন। ইবনু রাওয়াহা বলে উঠলেন: অবশ্যই, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এসব বক্তব্য নিয়ে আমাদের মজলিসে আসবেন। আমরা এগুলো পছন্দ করি। এরপর মুসলিম, মুশরিক, ও ইয়াহুদীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা আরম্ভ হয়ে গেল, এমন কি তারা পরস্পর মারামারি করতে উদ্যত হলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শান্ত ও নীরব করতে চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে সবাই শান্ত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ারীর উপর আরোহন করেন এবং সা-দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি তাঁকে অর্থাৎ সা’দ (রাঃ)-কে বললেন তুমি কি শুনতে পাওনি আবদুল্লাহ ইবনু উবায় কি উক্তি করেছে? সা-দ (রাঃ) উত্তর দিলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহ আপনাকে যে মর্যাদা দান করার ইচ্ছা করেছেন তা দান করেছেন। আমাদের এ উপদ্বীপ এলাকার লোকজন একমত হয়েছিল তাকে রাজমুকট পরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং তাকে নেতৃত্ব দান করার জন্য। এরপর যখন আপনাকে আল্লাহ যে হক ও সত্য দান করেছেন তখন এর দ্বারা তার ইচ্ছা পণ্ড হয়ে গেল। এতে সে গভীর মনোক্ষুন্ন হল। আর আপনি তার যে আচরণ দেখলেন, তার কারণ এটই।

৫২৬২ আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) জাবের (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার অসুস্থতা দেখার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় তিনি না কোন গাধার পিঠে আরোহী ছিলেন, আর না কোন ঘোড়ার পিঠে ছিলেন।

৫২৬৩ কাবীসা (রহঃ) কাব ইবনু -উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, এ সময় আমি পাতিলের নীচে লাকড়ী জ্বালাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার মাথার উকুন কি তোমাকে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমি বললাম জ্বি-হ্যা। তখন তিনি নাপিত ডাকলেন। সে মাথা মুড়িয়ে দিল। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ফিদইয়া আদায় করে দিতে আদেশ করলেন।

৫২৬৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ যাকারিয়্যা (রাঃ) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন হায় যন্ত্রনায় আমার মাথা গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো, তোমার জন্য দু’আ করবো। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হায় আফসুস, আল্লাহর কসম। আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর এমনটি হচ্ছে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য সহধর্মিনাদের সংগে রাত যাপন করতে পারবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং আমি আমার মাথা গেল বলার বেশি যোগ্য। আমি তো ইচ্ছা করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলাম আবূ বকর (রাঃ) ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাবো এবং অসীয়ত করে যাবো, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আঙ্ক্ষাকারীদের কোন আকাঙ্ক্ষা করার অবকাশ না থাকে। তারপর শুনলাম। আল্লাহ (আবূ বকর ব্যতীত অন্য কেউ খিলাফতের আকাঙ্ক্ষা করুক) তা অপছন্দ করবেন, মুমিনগণ তা পরিহার করবেন। কিংবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা পরিহার করবেন এবং মুমিনগগ তা অপছন্দ করবেন।

৫২৬৫ মূসা (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গারে আমার হাত রাখলাম এবং বললামঃ আপনি কঠিন জ্বরে ভুগছেন। তিনি বললেনঃ হ্যা যেমনটি তোমাদের দূ-জনকে ভুগতে হয়। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বললেন আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হাঁ কোন মুসলিম ব্যাক্তি, কোন কষ্ট বা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় কিংবা অন্য কোন যন্ত্রনায় নিপতিত হয়, আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন, সেমনভাবে বৃক্ষ তার পাতাসমূহ ঝেড়ে ফেলে।

৫২৬৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আমির ইবনু স্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় আমার রোগ কঠিন আকার ধারন করলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দেখতে আসলেন। আমি বললাম: (মৃত্যু)আমার সন্নিকটে এসে গেছে যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন অথচ আমি একজন বিত্তবান ব্যাক্তি। একটি মাত্র কন্যা ছাড়া আমার কোন ওয়ারিস নেই। এখন আমি আমার সম্পদের দুতৃতীয়াংশ স্বাদকা করতে পারি কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ না। আমি বললাম: তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেনঃ এও অনেক বেশী। নিশ্চয়ই তোমার ওয়ারিসদের সাবলম্বী রেখে যাওয়াই উত্তম তাদের নিঃস্ব ও মানুষের দারগ্রস্ত বানিয়ে যাওয়ার চাইতে। আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে যে ব্যয়ই কর না কেন, তার বিনিময়ে তোমাকে সাওয়াব দেওয়া হবে। এমন কি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে আহার তুলে দাও, তাতেও।

৫২৬৭ ইবরাহীম ইবনু মূসা ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে এলো, তখন ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের সমাবেশ ছিল। যাদের মধ্যে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-ও ছিলেন। তখন তিনি (রোগ যন্ত্রনায় কাতর অবস্থায়) বললেনঃ লও, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেব, যাতে পরবর্তীতে তোমরা বিভ্রান্ত না হও। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর বেশি যাতনা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। আর তোমাদের নিকট কুরআন বিদ্যমান। আর আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময়ে আহলে বাইতর মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হল। তারা বাদানূবাদে প্রবৃত্ত হলেন তারপরে কেউ কেউ বলতে লাগলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কাগজ পৌছিয়ে দাও এবং তিনি আমাদের জন্য কিছু লিখে দেবেন, যাতে পরবর্তীতে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হই। আবার তাদের মধ্যে অন্যরা উমর (রাঃ) সা বললেন তা বলে যেতে লাগলেন। এভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তাঁদের বাকবিতণ্ডা ও মতানৈক্য বেড়ে চলল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা উঠে যাও। উবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন, বড় মুসীবৎ হল লোকজনের সেই মতানৈক্য ও তর্ক-বিতর্ক, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সেই লিখে দেওয়ার মধ্যে অস্ত্ররায় সৃষ্টি করেছিল।

৫২৬৮ ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেন ইসা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরে বোনের ছেলেটি অসুস্থ তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমি তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তার পিঠের পেছনে গিয়ে দাড়ালাম। তখন আমি মোহরে নবুওয়াতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটি তার দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং খাটিয়ার গোল ঘুন্টির মত।

৫২৬৯ আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মলিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দুঃখ দৈন্যে নিপতিত হওয়ার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি এমন একটা কিছু করতেই হয়, তা হলে সে যেন বলে হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়।

৫২৭০ আদম (রহঃ) কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমরা অসুস্থ খাববাব (রাঃ) কে দেখতে গেলাম। এ সময় (তার পেটে চিকিৎসার জন্য) সাতবার দাগ লাগানো হয়েছিল। তখন তিনি বললেন আমাদের সংগীরা যারা (পূর্বেই) ইন্তেকাল করেছেন তাঁরা এমতাবস্হায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাঁদের আমলের সাওয়াবে কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন জিনিস লাভ করেছি, যা মাটি ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাই না। যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দুআ কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তবে আমি মৃত্যুর জন্য দু’আ করতাম। এরপর আমরা অন্য এক সময় তার কাছে এসেছিলাম। তখন তিনি তার বাগানের দেয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেনঃ মুসলমান ব্যাক্তিকে তার সকল প্রকার ব্যয়ের উপর সওয়াব দান করা হয় তবে এ মাটিতে স্থাপিত জিনিসের কথা ভিন্ন।

৫২৭১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তোমাদের কাউকে তার নেক আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম হবে না। লোকজন প্রশ্ন করল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তার করুণা ও মেহেরবানীর দ্বারা ঢেকে না দেন। কাজেই মধ্যপন্থী অবলম্বন কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বেশী বয়স পাওয়ার দরুন) তার নেক আমল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ পাবে। পক্ষান্তরে মন্দ লোক হলে সে লজ্জিত হয়ে তওবা করার সুযোগ লাভ করতে পারবে।

৫২৭২ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিৎ। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার পায়ের উপর হেলান দেওয়া অবস্থায় বলতে শুনেছি যে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার প্রতি অনুগ্রহ কর, আর আমাকে মহান বন্ধুর সংগে মিলিয়ে দাও।

৫২৭৩ মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল- তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তার নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত তখন তিনি বলতেন কষ্ট দূর করে দাও হে মানূষের রব, শেফা দান কর, তুমই একমাত্র শেফাদানকারী। তোমার শেফা ব্যতীত অন্য কোন শেফা নেই। এমন শেফা দান কর যা সামান্য রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। আমর ইবনু আবূ কায়স ও ইবরাহীম ইবনু তুহমান হাদীসটি মানসুর ইবরাহীম ও আবূযযোহা থেকে “যখন কোন রোগীকে আনা হতো”, এভাবে বর্ননা করেছেন। জারীর হাদীসটি মানসুর আবূযযোহা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি যখন রোগীর কাছে আসতেন– এ শব্দসহ বর্ণনা করেছেন।

৫২৭৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে প্রবেশ করলেন তখন আমি ছিলাম অসূস্থ। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর আমরে শরীরের উপর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি ছিটিয়ে দিলেন। কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন এরপর তিনি উপস্থিত লোকদের বলেছেন: তার শরীরে পানি ছিটিয়ে দাও। ফলে আমি চেতনা ফিরে পেলাম। আমি বললাম কালালাহ (পিতাও নেই, সন্তানও নেই) ব্যতীত আমার কোন ওয়ারিস নেই। সুতরাং আমার পরিত্যক্ত সম্পদ কিভাবে বণ্টন করা হবে? তখন ফারায়েয সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়।

৫২৭৫ ইসমাঁঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদিনা) আসলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাদের কাছে গেলাম এবং বললাম আব্বাজান, আপনার কাছে কেমন লাগছে? হে বিলাল! আপনি কিরুপ অনুভব করছেন? তিনি বললেনঃ আবূ বকর (রাঃ) যখন জ্বরাক্রান্ত হতেন তখন তিনি আবৃত্তি করতেন, সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজন নিয়ে। আর মৃত্যু অপেক্ষমান থাকে তার জুতার ফিতার চাইতেও সন্নিকটে আর বিলাল (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল যখন তার জ্বর ছেড়ে যেত, তিনি তখন স্বর উচ্ছেসুরে বলতেনঃ হ্যা আমি যদি লাভ করতাম একটি রাত কাটানোর সূযোগ এমন উপত্যকায় যেখানে আমার পাশে আছে ইযখির ও জালীল ঘাস। যদি আমার অবতরন হতো কোন দিন মাজ্বীন্না অঞ্চলের কুপের কাছে, যদি আমার চোখে ভেসে আসতো শামা ও তাফীল। আয়িশা (রাঃ) বলেন এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের কাছে মদিনাকে প্রিয় বানিয়ে দাও যেভাবে আমাদের কাছে প্রিয় ছিল মক্কা এবং মদিনাকে সাস্থকর বানিয়ে দাও। আর মদিনার মুদ্দ ও সা-কে বরকতময় করে দাও এবং মদিনার জ্বরকে বিতারিত করে “জুহফা অঞ্চলে স্থাপন করে দাও।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: রোগীদের বর্ণনা
রোগীদের বর্ণনা
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/patient.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/patient.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy