মসজিদ ও সালাতের স্থান

১০৪২ আবূ কামিল আল-জাহাদারী, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম- (কাবা গৃহ)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, অতঃপর কোনটি। তিনি বললেন, মাসজিদুল আক্বসা- (বায়তুল মুকাদ্দাস)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই দুটির মধ্যে কালের ব্যবধান কতটূকু? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। তবে যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হবে, সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে। সেটিই মসজিদ। আবূ কামিলের বর্ণনায় আছে, যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হবে, সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে। কেননা, সেটিই মসজিদ।

১০৪৩ আর্লী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) ইবরাহীম ইবনু ইয়াযীদ আত তায়মী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে মসজিদের আঙ্গিনায় কুরআন পাঠ করে শুনতাম। আমি যখন সিজদার আয়াত পড়তাম, তখন তিনি সিজদা করতেন। আমি তাঁকে বললাম, হে পিতা, আপনি কি রাস্তায় সিজদা করছেন? তিনি বললেন, আমি আবূ যার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন মাসজিদটি দুনিয়ায় সর্ব প্রথম স্হাপিত? তিনি বললেন, মাসজিদুল হারাম। এ দুটির মধ্যে কত বছরের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছরের। তবে সারা দুনিয়াই তোমার জন্য মাসজিদ। যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হবে সেখানেই তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে।

১০৪৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কাউকে দেয়া হয়নি; ১/ প্রত্যেক নাবীকে বিশেষ ভাবে তার গোত্রের প্রতি পাঠানো হয়েছে, আর আমাকে পাঠানো হয়েছে লাল-কাল সবার প্রতি ২/ আমার জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে আমার পূর্ববর্তীকারও জন্য তা হালাল ছিল না; ৩/ আমার জন্য সমগ্র ভূপৃষ্ঠ পবিত্র, পবিত্রকারী ও মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে সুতরাং যেখানে যার সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হবে, সেখানে সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে ৪/ আমাকে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, যা এক মাসের ব্যবধান থেকে অনুভূত হয়; ৫/ আর আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দান করা হয়েছে।

১০৪৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০৪৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – বলেছেন তিনটি জিনিস দ্বারা অন্যদের উপর আমাদের মর্যাদা দান করা হয়েছে ১/আমাদের (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) কাতারগুলোকে ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায় করা হয়েছে এবং ২/ আমাদের জন্য সমগ্র ভূমন্ডলকে মসজিদ বানানো হয়েছে। আর তার মাটিকে করা হয়েছে আমাদের জন্য পবিত্রকারী, যখন আমরা পানি না পাই। আরও একটি বিষয় বর্ননা করেছেন।

১০৪৭ আবূ করায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আন (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০৪৮ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ আলী হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্য নাবীদের (নবীদের) উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে ১/ আমাকে ব্যাপক তথ্যপূর্ণ ও অর্থবহ বাণী দান করা হয়েছে; ২/ আমাকে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে; ৩/ আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে; ৪/ আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে; ৫/ আমার দ্বারা নাবীদের (নবীদের) সীল মোহর (নবূওয়াতের সমাণ্ডি) করা হয়েছে।

১০৪৯ আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ব্যাপক তথ্য পূর্ণ ও অর্থবহ বাণী সহ প্রেরিত হয়েছি। আমি প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায প্রাপ্ত হয়েছি। আমি একবার নিদ্রিত ছিলাম, তখন বিশ্ব ধনভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে দেওয়া হয়েছিল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেছেন, আর তোমরা ঐ গুলো বের করছ।

১০৫০ হাজিব ইবনুল ওয়ালীদ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইউনুস কর্তিক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১০৫১ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০৫২ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , আমাকে প্রবল প্রভাব দ্বারা শক্রর বিরুদ্ধে সাহায্য করা হয়েছে এবং ব্যাপক তথ্যপূর্ণ ও অর্থবহ বাণী দান করা হয়েছে। একবার আমি যখন নিদ্রিত ছিলাম, তখন জগতের ধন-ভাণ্ডারের চাবি আমাকে দেওয়া হয় এবং তা আমার দুই হাতে রাখা হয়।

১০৫৩ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; হাম্মম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছি এবং ব্যাপক তথ্যপূর্ণ ও অর্থবহ বাণী প্রদত্ত হয়েছি।

১০৫৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -মদিনায় আগমন করলেন এবং মদিনার উাচ্চ এলাকার এক মহল্লায় অবতরণ করলেন। যাকে আমর ইবনু আওফ গোত্রের মহল্লা বলা হয়। সেখানে তিনি চৌদ্দ রাত্রি অবস্হান করলেন। তারপর তিনি নাজ্জার গোত্রের নেতাদের খবর পাঠালেন। তারা তরবারি ঝূলিয়ে এলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পাচ্ছি। তিনি তাঁর সাওহারীর ওপর এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পিছনে আর নাজ্জার গোত্রের নেতারা তাঁর চতুর্দিকে ছিলেন। অবশেষে তিনি আবূ আইউবের গৃহ প্রাঙ্গণে অবতরণ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হতো, সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতেন। বকরীর বাথানেও তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর তাঁকে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নাজ্জার গোত্রের প্রধানদের খবর দিলেন। তারা এলো। তিনি তাদের বললেন, হে বানূ নাজ্জার! তোমাদের এই বাগান খানি আমার নিকট বিক্রি কর। তারা বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা তার মূল্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাই। আনাস (রাঃ) বলেন, ঐ বাগনটিতে কি ছিল তা আমি বলছি- খেজুর গাছ, মুশরিকদের কবর ও পূরাতন ঘর দুয়ারের ভগ্নাবশেষ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে খেজুর গাছ কেটে দেয়া হলো, কবর গুলো খুড়ে ফেলা হলো এবং ধ্বংসাবশেষ সমান করে দেয়া হল। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর কিবলার দিকে খেজুর গাছের সারিবদ্ধ থাম দেওয়া হল এবং দুই পাশে পাথর স্হাপন করা হল। নির্মাণ কাজের সময় সাহাবা-ই- কিরাম রাজায’ (উৎসাহোদ্দীপক শ্লোক) আবৃতি করছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে আবৃতি করছিলেন। তারা বলছিলেন হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যান। সূতরাং আনসার ও মুহাজিরদেরকে তুমি সাহায্য কর।

১০৫৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-অম্বারী (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ তৈয়ার হওয়ার পূর্বে বকরীর বাথানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

১০৫৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিও উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০৫৭ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বায়তুল মূকাদ্দাসের দিকে মুখ করে ষোল মাস পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। অবশেষে সূরা বাকারার এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়- (অর্থাৎ তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের চেহারা কা’বার দিকে কর)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করার পর আয়াতটি নাযিল হয়। এরপর একজন সাহাবী চলে গেলেন পথিমধ্যে একদল আনসারকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখলেন। তিনি তাঁদেরকে এ বিষয় অবহিত করলেন, তারাঁ তাদের চেহারা কাবার দিকে ফিরিয়ে নিলেন।

১০৫৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও আবূ বকর ইবনু খালাদ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। অতঃপর আমাদেরকে কাবার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

১০৫৯ শায়বান ইবনু ফাররূখ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা কুবাতে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিল, ইতিমধ্যে একজন লোক এসে বলল, এ রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং কাবার দিকে মুখ করবার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। অতএব, তোমরাও কাবার দিকে মুখ করে দাড়াও। তাদের চেহারা ছিল তখন সিরিয়ার দিকে। অতঃপর তারা কা’বার দিকে ঘূরে গেলেন।

১০৬০ সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকজন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিল, ইতিমধ্যে একজন লোক তাদের কাছে আসলো। পরবর্তী অংশ মালিকের হাদীসের অনুরুপ।

১০৬১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর এ আয়াতটি নাযিল হলঃ আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানোকে আমি প্রায়ই লক্ষ্য করি। সুতরাং তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ কর। অতএব, তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও”। অতঃপর সালামা গোত্রের একজন লোক যাচ্ছিল। সে দেখল, লোকেরা ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকুতে আছে এবং তাঁরা এক রাকআত আদায় করেছে, সে উচ্চস্বরে বললো, ওহে, কিবলা বদলে গেছে, তখন তাঁরা ঐ অবস্হায়ই কিবলার দিকে গেল।

১০৬২ যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মু হাবীবা ও উম্মু সালামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি গীর্জার কথা উল্লেখ করলেন, যা তাঁরা আবিসিনিয়ায় দেখেছিলেন। তাতে অনেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরাসুলের ছবি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের মধ্যে যখন কোন নেক লোক মারা যেত, তখন তার কবরের উপর তারা মসজিদ নির্মাণ করত এবং তারা সেখানে এদের ছবি তৈরী করত। এই সব লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।

১০৬৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তার মৃত্যু রোগের সময় আলোচনা করছিলেন, তখন উম্মু সালামা ও উম্মু হাবীবা (রাঃ) একটি গীর্জার কথা উল্লেখ করেন, পরবতীঁ অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

১০৬৪ আবূ কুবায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণ একটি গীর্জার সম্পর্কে আলোচনা করলেন যা তাঁরা আবিসিনিয়ায় দেখেছিলেন। যার নাম ছিল মারিয়া। পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

১০৬৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) আয়োশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -যে রোগ থেকে আরোগ্যলাভ করেননি সে রোগশয্যায় থেকে বলেছেন, ইয়াহূদ ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবর গুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি এরুপ আশংকা না হতো, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কবর খোলা জায়গায় করা হতো। কিন্তু তাকে মসজিদ বানানোর আশংকা করেছিলেন।

১০৬৬ হারুন ইবনু সাইদ আন-আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইয়াহুদীদেরকে ধ্বংস করুক, তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবর গুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।

১০৬৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ বলেছেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।

১০৬৮ হারুন ইবনু সাঈদ আন আয়লী ও হারামালা ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত যখন নিকটবর্তী হল, তখন তিনি চাঁদর দিয়ে তাঁর চেহারা ঢাকতে লাগলেন। তাঁর শ্বাস রুদ্ধ হলে চেহারা থেকে তা সরিয়ে ফেলছিলেন। এমতাবস্হায় তিনি বললেন, ইয়াহুদী-নাসারার উপর আল্লাহর অভিশাপ। তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। তিনি (এই কথা বলে) তাদের মত করা থেকে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন।

১০৬৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের পাঁচদিন আগে তাকে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ আমার খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) হওয়া থেকে আমি আল্লাহর কাছে নিষ্কৃতি চাইছি। কেননা, আল্লাহ তায়ালা আমাকে তার খলীল রূপে গ্রহণ করেছেন-যেমনিভাবে খলীলরুপে গ্রহণ করেছিলেন ইবরাহীমকে। আমি যদি আমার উম্মাতের মধ্যে কাউকে খলীলরুপে গ্রহণ করতাম তবে আবূ বাকরকেই খলীল রুপে গ্রহণ করতাম। সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক্কারদের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরাও কবরকে মসজিদ বানিও না। আমি তোমাদের তা থেকে নিষেধ করছি।

১০৭০ হারূন ইবনু সাঈদ আল আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবায়দুল্লাহ আল-খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি যখন হযত উসমান (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদটি (মসজিদ-ই নববী ভেঙ্গে নতূন ভাবে) তৈরি করলেন এবং লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে লাগল। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা অনেক বেশী কথা বলাবলি করছ। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করবে, বর্ণনাকারী বুকায়র বলেন, আমার ধারণা তিনি বলেছেন, তদ্বারা তার একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করাই উদ্দেশ্যে হবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন।

১০৭১ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) যখন নতুন ভাবে মসজিদ-ই নববী নির্মাণের সংকল্প করলেন, লোকে তা পছন্দ করল না। তারা সেটি আগের মত রাখাই ভাল মনে করেছিল। তখন উসমান (রাঃ)বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরুপ ঘর তৈরী করবেন।

১০৭২ আবূ কুবায়র মুহাম্মদ ইবনুল আলা আলা হামদানী (রহঃ) আসওয়াদ ও আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা দু’জনে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বাসগৃহে উপস্হিত হলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের পিছনে যারা রয়েছে (অর্থাৎ শাসকগণ) তারা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে ওঠ এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর (কেননা, সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হয়ে গেছে এবং আমীর ও শাসকদের অপেক্ষায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে বিলম্ব করা যায় না) তিনি আমাদের আযান ও ইকামাতের আদেশ দিলেন না। আমরা তাঁর পিছনে দাঁড়াতে চাইলাম, তিনি আমাদের এক জনকে হাত ধরে ডান দিকে এনে দাঁড় করালেন এবং অন্য জনকে বাম দিকে। যখন তিনি রুকু করলেন, আমরা আমাদের দুই হাত হাটূর উপর রাখলাম। তিনি আমাদের হাত ধরে এবং হাতের দুই তালূ জোড় করে দুই উরুর মাঝখানে রাখলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে বললেন, অচিরেই তোমাদের মধ্যে এমন এমন অমীরের আবির্ভাব ঘটবে যারা সালাত (নামায/নামাজ)কে তার ওয়াক্ত হতে দেরী করে পড়বেন এবং (আসরের) সালাত (নামায/নামাজ)কে এরুপ দেরী করে পড়বে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হবে। অতএব, তোমরা যখন তাদের এরুপ করতে দেখবে তখন তোমরাও ওয়াক্তের ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে। তারপর তাঁদের সাথে দ্বিতীয়বার নফল হিসাবে পড়বে। আর তোমরা যখন তিনজন হবে, তখন সবাই মিলে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে (অর্থাৎ সবাই এক কাতারে দাঁড়াবে এবং ইমাম মাঝখানে থাকবে)। যখন তিনের অধিক হবে, তখন একজনকে ইমাম বানিয়ে নিবে (এবং তিনি সামনে দাঁড়াবেন)। আর যখন রুকু করবে, তখন দুই হাত উরুর উপর রেখে ঝুঁকে পড়বে এবং দুই হাতের তালূ জোড় করে (দুই উরুর মাঝে) রাখবে আমি যেন এখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এক হাতের আঙ্গুলগুলো আরেক হাতের আঙ্গূলের ফাঁকে ঢুকতে দেখতে পাচ্ছি এই বলে তাদের দেখালেন।

১০৭৩ মিনজাব ইবনুল হারিস আত তামীমী, উসমান ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip; আলকামা ও আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন তারপর আবূ মুআবিয়ার হাদীসের মর্ম অনুযায়ী বর্ণনা করেছেন। এবং ইবনু মুসহির ও জারীরের হাদীসে আছে, আমি যেন এখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুকু অবস্হায় তার এক হাতের আঙ্গূলগুলো আরেক হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকেছে দেখতে পাচ্ছি।

১০৭৪ আবদুল্লাহ ইবনু আবদূর রহমান আদ দারিমী (রহঃ) আলকামা ও আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ এর নিকট গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের পিছনের লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? তাঁরা বললেন, হ্যা! অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রহঃ) তাঁদের মধ্যভাগে দাড়ালেন এবং একজনকে ডান পাশে দাড় করালেন ও অপরজনকে বাম পাশে। তারা বললেন, আমরা রুকু করার সময় আমাদের হাত হাঁটুর উপর রাখলাম। কিন্তু তিনি আমাদের হাত ধরে দুই হাত জোড় করে দুই উরুর মাঝখানে রাখলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপই করেছেন।

১০৭৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) মূসআব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আমার পিতার পার্শ দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম এবং (রূকু করাকালীন) আমার দুই হাত দুই হাঁটুর মাঝখানে রাখলাম। তিনি ইশারা করে আমাকে আমার দুই হাতের তালূ আমার দুই হাঁটুর উপর রাখতে বললেন। আমি দ্বিতীয়বার ঐরুপ করলাম। আবার আমার হাতের উপর হাত মারলেন এবং বললেন, আমাদের এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে আর হাতের তালূ দুই হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১০৭৬ খালাফ ইবনু হিশাম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ ইয়াফুর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উক্ত সনদে আমাদের এরুপ করতে নিষেধ করা হয়েছে” পর্যন্ত বর্ণনা করেন। তবে এসনদে ঐ হাদীসের পরের কথাটি উল্লেখ করেননি।

১০৭৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুস’আব ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনা, আমি রুকু করার সময় দুই হাত এরুপ করলাম অর্থাৎ দুই হাত জোড় করে দুই উরুর মাঝখানে রাখলেন। আমার পিতা বললেন, আমরা প্রথমে এরুপ করতাম, কিন্তু পরে আমাদের হাটূর উপর হাত রাখতে আদেশ করা হয়েছে।

১০৭৮ হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) মুস’আব ইবনু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আমার পিতার পার্শে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। যখন রুকুতে গেলাম, তখন এক হাতের আঙ্গুল আরেক হাতে আঙ্গুলের ফাকে ঢুকিয়ে উভয় হাত মাঝখানে রাখলাম। তিনি আমার হাতে মারলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন, প্রথমে আমরা এরুপ করতাম। কিন্তু আমাদের হাঁটুর উপর রাখার আদেশ দেয়া হয়।

১০৭৯ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা ইবনু আববাস (রাঃ)-কে ইক’আ (দুই সিজদার ফাকে গোড়ালির উপর নিতম্ব রেখে বসা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তা সুন্নাত। আমরা বললাম, আমরাতো এই ধরনের বসা একজন লোকের জন্য কঠিন মনে করি। ইবনু আববাস (রাঃ)বললেন, এটি তোমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরই সুন্নাত।

১০৮০ আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুআবিয়া ইবনুল হাকাম আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলাম। ইত্তবসরে আমাদের মধ্যে একজন হাঁচি দিল। আমি ইয়ারহামুকাল্লহ বললাম। তখন লোকেরা আমার দিকে আড়চোখে দেখতে লাগল। আমি বললাম “ আমার মায়ের পূত্র বিয়োগ হোক”। তোমরা আমার প্রতি তাকাচ্ছ কেন? তখন তারা তাদের উরুর উপর হাত চাপড়াতে লাগল। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, তখন আমি চুপ হয়ে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, আমার মাতা-পিতা তাঁর জন্য কুরবান হোক! আমি তার মত এত সুন্দর করে শিক্ষা দিতে পূর্বেও কাউকে দেখিনি, তাঁরপরেও কাউকে দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, মারলেন না, গালিও দিলেন না। বরং বললেন, সালাত (নামায/নামাজ) কথা কথাবার্তা বলা ঠিক নয়। বরং তা হচ্ছে- তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠের জন্য। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! জাহিলি যুগ বিদুরিত হল বেশী দিন হয়নি, এইতো ইসলাম এসেছে আমাদের কেউ কেউ তো গনকদের নিকট আসা যাওয়া করে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে যেওনা। আমি পূনরায় বললাম, আমাদের কেউ কেউ তো শুভ ও অশূভ লক্ষণের অনুকরণ করে। তিনি বললেন, এটি তাদের মনগড়া বিষয়। এটি যেন তাদেরকে (কোন ভাল কাজ করতে) বাধা না দেয়। আমি বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক রেখা অঙ্কন করে, (ভাগ্য নির্নয় করে) তিনি বললেন, একজন নাবীরেখা অঙ্কন করতেন। যার রেখা সেই নাবীর রেখার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হবে তারটা ঠিক হবে। (বর্ণনাকারী মুঅেবিয়া বলেন,)আমার একটি দাসী ছিল। সে উহুদ ও জাওয়ানিয়ার দিকে আমার ছাগল চরাত। একদিন আমি সেখানে উপস্হিত হয়ে দেখি, একটি একটি বাঘ এসে একটি ছাগল নিয়ে গেল। যেহেতু আমিও মানুষ, সেহেরতু অন্যান্য মানুষের মত আমারও রাগ এসে গেল। আমি তাকে একটি চড় বসিয়ে দিলাম। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম। তিনি আমার এই কাজকে অত্যন্ত অপছন্দ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি তাকে আযাদ করে দিব? তিনি বললেন, তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো আমি তাকে তার নিকট নিয়ে এলাম। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ কোথায় আছেন? সে বলল, আকাশে। তিনি বললেন, আমি কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল। তখন তিনি বললেন, ওকে আযাদ করে দাও। কেননা ও মুমিনা।

১০৮১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াহইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর থেকে উপরোক্ত সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

১০৮২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায় সালাম করতাম এবং তিনি ঐ অবস্হায়ই আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। কিন্তু আমরা আবিসিনিয়া হতে ফিরে এসে যখন ঐ অবস্হায় তাকে সালাম দিলাম, তিনি তার কোনও জবাব দিলেন না। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার সালাত (নামায/নামাজ)রত অবস্হায় আপনাকে সালাম দিতাম, (আপনি তার জবাব দিতেন, কিন্তু এখন আপনি জবাব দিলেন না, এর কারণ কি? তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ) নির্ধারিত আমল রয়েছে (সূতরাং এসময় অন্য কাজে মশগুল হওয়া যায় না)।

১০৮৩ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উক্তরুপ বর্ণনা করেছেন।

১০৮৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) কথাবার্তা বলতাম। প্রত্যেকেই তার পাশের ব্যাক্তির সাথে আলাপ করত। অতঃপর যখন (আল্লাহর জন্য দাড়াবে বিনীতভাবে) (২, ২৩৮) আয়াতটি নাযিল হলো, তখন চুপ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরস্পরে আলাপ করতে নিষেধ করা হয়।

১০৮৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১০৮৬ কুঅয়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহু (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি কাজে পাঠিয়ে ছিলেন। আমি ফিরে এসে দেখি, তিনি (সাওয়ারীতে আরোহণ করে নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। আমি (ঐ অবস্থায়ই) তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি ইঙ্গিতে আমাকে চুপ করতে বললেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে আমাকে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি এক্ষুণে আমাকে সালাম দিয়েছিলে অথচ আমি সালাত (নামায/নামাজ)রত ছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এই সময় পূর্বমুখী ছিলেন।

১০৮৭ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী মুস্তালিক গোত্রের দিকে যাওয়ার সময় আমাকে কোনও এক কাজে পাঠিয়ে ছিলেন। আমি এসে দেখি! তাঁর উটের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। আমি ঐ অবস্থায়ই তাঁর সাথে কথা বললাম। হাত দ্বারা (চুপ করতে) ইশারা করলেন। বর্ণনাকারী যুহায়র এই সময় তাঁর হাত দ্বারা ইশারা করে দেখালেন, আমি আবার কথা বললাম। আবার এরুপ ইশারা করলেন। বর্ণনাকারী যুহায়র এবারও তাঁর হাত দ্বারা মাটির দিকে ইশারা করে দেখালেন। তখন আমি তার কুরআন তিলাওয়াত শুনছিলাম। মাথায় ইশারা করে রুকু সিজদা করছিলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি যে কাজে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম, তার কি করেছ? আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম বলে তোমার কথার উত্তর দিতে পারি নি।

১০৮৮ আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি এক সফর উপলক্ষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহযাত্রী ছিলাম। তিনি আমাকে কোনও এক কাজে পাঠালেন। ফিরে এসে দেখি, তিনি কাবা-এর অন্য দিকে মুখকরে তার উতের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। আমি সালাম দিলাম। কিন্তু উত্তর দিলেন না। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন, আমি যদি সালাত (নামায/নামাজ)রত না থাকতাম, তবে তোমার সালামের উত্তর অবশ্যই দিতাম।

১০৮৯ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির (রাঃ)থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোনও এককাজে পাঠিয়ে ছিলেন। অতঃপর বর্ণনা কারী হাম্মাদ কর্তূক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১০৯০ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে একটি দুষ্ট জ্বীন আমার সালাত (নামায/নামাজ) নষ্ট করার জন্য হানা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাকে আমার আয়ত্তাধীন করে দিলেন। আমি তার ঘাড় মটকিয়ে দিলাম। আমার ইচ্ছা হয়েছিল যে, তাকে মসজিদের কোনও একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি। যাতে তোমরা সবাই ভোর বেলা তাকে দেখতে পাও পরে আমার ভাই সুলায়মানের প্রার্থনা মনে পড়ে গেল। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন- হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন সালতানাত দান কর যা আমার পর অন্য কেউ না পায়”। এরপর আল্লাহ তাকে (দুষ্ট জ্বীনকে) লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করলেন।

১০৯১ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা শূবা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু জা’ফরের বর্ণনায়-আমি তার ঘাড় মটকিয়ে দিলাম কথাটি নেই।

১০৯২ ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গতরাতে একটি দুষ্টু জ্বীন আমার সালাত (নামায/নামাজ) নষ্ট করার জন্য হানা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাকে আমার আয়ত্তাধীন করে দিলেন। আমি তার ঘাড় মটকিয়ে দিলাম। আমার ইচ্ছা হয়েছিল যে, তাকে মসজিদের কোনও খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি। যাতে তোমরা সবাই ভোরবেলা তাকে দেখতে পাও। পরে আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সালামের প্রার্থনা মনে পড়ে গেল। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে এমন রাজত্ব দান কর যা আমার পর অন্য কেউ না পায়” এরপর আল্লাহ্‌ তাকে (দুষ্ট জ্বীনকে) লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করলেন।

১০৯৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা শু’বা (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু জাফরের বর্ণনায় “আমি তার ঘাড় মটকিয়ে দিলাম” কথাটি নেই। আর ইবনু আবূ শায়বার বর্ণনায় আছে, “আমি তাকে সাজোরে ধাক্কা দিলাম”।

১০৯৪ মুহাম্মাদ ইবনু সালাম আল-মুরাদী (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। আমি শুনতে পেলাম, তিনি বলছিলেন “আমি তোমার থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। তারপর তিনবার বললেন, আমি তোমাকে লা’নত করছি, যেরুপ আল্লাহ্‌ তোমাকে লা’নত করেছনে। এরপর তিনি তার হাত বাড়িয়ে দিলেন-যেন কোনও জিনিস ধরছিলেন। পরে যখন তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন, তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আজ আমি আপনাকে সালাত (নামায/নামাজ) এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা ইতিপূর্বে কখনও শুনিনি। আরও দেখলাম যে, আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন ইবলিশ আমার মুখে লাগানোর জন্য আগুনের একটি শিখা নিয়ে এসেছিল। তাই আমি তিনবার “আউজুবিল্লাহে মিনকা” বললাম। তারপরত তিনবার বললাম – অর্থাৎ আমি তোমার উপর আল্লাহর পূর্ণ অভিশাপ বর্ষণ করছি। কিন্তু সে তখনও হটে গেল না। শেষে তাকে পাকড়াও করার ইচ্ছা হয়েছিল। আল্লাহর কসম! যদি আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সাল্লামের দ’আ না থাকত, তবে সে ভোর পর্যন্ত বাঁধা থাকত আর মদিনার শিশুরু া তাকে নিয়ে খেলা করত।

১০৯৫ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কন্যা যয়নাবের মেয়ে উমামাকে (আবূল আস ইবনুুন রবী’র ঔরসজাত) স্বীয় কাঁধে উঠিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়াতেন তাকে উঠিয়ে নিয়তেন আর যখন সিজদা করতেন, তখন নামিয়ে রাখতেন।

১০৯৬ মুহাম্মদ ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ কাতাদা আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবূল আ’সের কন্যা উমামাকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা যায়নাবের মেয়ে) স্বীয় কাঁধের উপর রেখে ইমামতি করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকু করতেন, তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন সিজদা হতে দাঁড়াতেন, তাকে আবার কাঁধের উপর তুলে নিতেন।

১০৯৭ আবূ তাহির ও হারুন ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ কাতাদা আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবূল আসের কন্যা উমামাকে স্বীয় কাঁধে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করতে দেখেছি। তিনি যখন সিজদা করতেন, তখন তাকে নিচে রেখে দিতেন।

১০৯৮ কতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি মসজিদে বসা ছিলাম, ইত্যবসরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন। হাদিসের পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদিসের অনুরুপ। তবে এ হাদিসে ঐ সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইমামতির কথা উল্লেখ নেই।

১০৯৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) আবূ হাজিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, করিপয় লোক সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর নিকট আগমন করল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বর কি কাঠের তৈরি ছিল তা নিয়ে তারা বিতর্ক করতে লাগল। তিনি (সাহল ইবনু সা’দ) বললেন, আল্লাহর কসম! সেটি কি কাঠের তৈরি ছিল, কে তৈরি করেছিল, তা আমি ভাল করে জানি এবং সর্বপ্রথম কোনদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর আরোহণ করেছিলেন, তাও আমি দেখেছি। আবূ হাজিম বলেন, আমি সাহল (রাঃ) কে বললাম, হে আব্বাসের পিতা! আপনি ঐসব ঘটনা পুনরায় আমাদের নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে বলে পাঠালেন [ আবূ হাজিম বলেন, সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সেইদিন মহিলাটির নামও বলেছিলেন] তুমি তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামটিকে একটু ফুরসত দিও। সে আমার জন্য একটি মিম্বর তৈরি করে দিবে, আমি তার উপর থেকে মানুষকে ওয়াজ নসিহত করব। অতঃপর সেই গোলামটি তিন সিঁড়িবিশিষ্ট এই মিম্বরটি বানায় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে সেটি মসজিদের এই স্থানে (বর্তমান স্থানে) রাখা হয়। তার কাঠগুলি গাবা (মদিনার নয় মাইল দূরে অবস্থিত মালভূমির নাম) অঞ্চলের ঝাউগাছের ছিল। আর আমি দেখলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর দাঁড়ালেন এবং (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) তাকবীর বললেন, লোকেরাও তার পিছনে তাকবীর বলল। তিনি মিম্বরের উপরেই ছিলেন, অতঃপর তিনি রুকু হটে উঠে দু’এক কদম পিছনের দিকে হেঁটে নিচে নেমে গেলেন। আর মিম্বরের গোঁড়ায় সিজদা করলেন। আবার তিনি পূর্বস্থানে চলে গেলেন। আভাবে তিনি তার সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করলেন। তারপর তিনি লোকদের দিকে ফিরে বললেন, হে লোকসকল! আমার এরুপ করার কারন হল, যেন তোমরা আমার অনুকরন করতে পার এবং আমার সালাত (নামায/নামাজ) শিখে নিতে পার।

১১০০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, জুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হাজিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, কয়েক ব্যাক্তি সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) এর নিকট আসল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বর কিসের তৈরি তা জানতে চাইল। এরপর তারা উপরোক্ত ইবনু আবূ হাজিমের হাদিসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১১০১ হাকাম ইবনু মূসা আল-কানতারী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমরে হাত রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আবূ বকরের বর্ণনায় “না ইয়া রাসুলুল্লাহ” উল্লেখ রয়েছে।

১১০২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মু’আয়কীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঙ্কর সরানো সম্বন্ধে আলোচনা করলেন এবং বললেন, তা যদি তোমার করতেই হয় তবে একবার মাত্র করতে পার।

১১০৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) মু’আয়কীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কঙ্কর সরানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেলেন, মাত্র একবার।

১১০৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল-কাওয়ারীরী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মু’আয়কীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর সিজদাস্থলের মাটি সমান করা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, যদি তা তোমার করতেই হয় তবে একবারমাত্র করতে পার।

১১০৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত-তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দেয়ালে শ্লেমা লেগে থাকতে দেখে তা ঘষে তুলে ফেললেন। অতঃপর লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তখন সম্মুখের দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে না। কেননা আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সময় তার সম্মুখে থাকেন।

১১০৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, যুহায়র ইবনু হারব, ইবনু রাফি ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কিবলার দিকে শ্লেমা দেখতে পেলেন। রাবী বলেন, হাদিসের অবশিষ্ট অংশ মালিকের উপরোক্ত হাদিসের অনুরুপ।

১১০৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন-নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কিবলার দিকে শ্লেমা দেখতে পেয়ে একটি কঙ্কর দ্বারা তা ঘষে তুলে ফেলেলেন। অতঃপর তিনি ডানদিকে ও সামনের দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করেন। তবে প্রয়োজনে বামদিকে ও বাম পায়ের নিচে থুথু ফেলতে অনুমতি দিয়েছেন।

১১০৮ আবূ তাহির, হারামালা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে উয়ায়না বর্ণিত উপরোক্ত হাদিসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।

১১০৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কিবলার প্রাচীরে থুথু কিংবা শ্লেমা বা করফ দেখতে পেয়ে তা ঘষে তুলে ফেললেন।

১১১০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কিবলার দিকে শ্লেমা দেখতে পেলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তোমাদের একজন তো প্রভুর দিকে মুখ করে সালাত (নামায/নামাজ) দাড়ায়, তারপর সে সামনে দিকে থুথু নিক্ষেপ করতে থাকে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, কেউ তার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে অতঃপর তার মুখের উপর থুথু নিক্ষেপ করবে? যখন তোমাদের কারো থুথু এসে পড়ে, তখন বামদিকে পায়ের নিচে ফেলবে। যদি জায়গা না থাকে, তবে এরুপ করবে—বর্ণনাকারী কাসিম এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিজ কাপড়ে থুথু ফেললেন এবং এক প্রান্তকে আরেক প্রান্ত দিয়ে ঘষে ফেললেন।

১১১১ শায়বান ইবনু ফাররুখ, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইবনু উলাইয়ার অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তবে হুশায়মের বর্ণিত হাদিসে অতিরিক্ত আছেঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড়ের আরেক অংশের সাথে ঘষছেন।

১১১২ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ)রত থাকে, তখন সে তার রবের সাথে একান্তে আলাপ করে। অতএব তার সম্মুখে ও ডানদিকে থুথু ফেলবে না, বরং বামদিকে পায়ের নিচে ফেলবে।

১১১৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গুনাহ। তার কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হচ্ছে তা মাটিচাপা দেওয়া।

১১১৪ ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল-হারিসী (রহঃ) শু’বা (রহঃ) বলেন, আমি কাতাদা (রহঃ) কে মসজিদে থুথু ফেলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা গুনাহের কাজ এবং তার কাফফারা হচ্ছে মাটিচাপা দেওয়া।

১১১৫ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয-যুবাঈ ও শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সামনে আমার উম্মতের ভালোমন্দ সমস্ত আমল পেশ করা হল। আমি তাদের নেক আমলের মধ্যে একটা দেখলাম রাস্তা হটে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, আর তাদের মন্দ কর্মসমূহের মধ্যে একটা দেখলাম সেই শ্লেমা যা মসজিদে ফেলা হয় অথচ মাটিচাপা দেয়া হয় না।

১১১৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তাকে দেখতে পেলাম যে, তার কফ বের হলে তিনি জুতা দ্বারা তা ঘষে ফেললেন।

১১১৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শিখখীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তিনি বলেন অতঃপর তার কফ বের হলে তিনি বাম পায়ের জুতা দিয়ে তা ঘষে ফেললেন।

১১১৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মাসলামা সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি জুতা পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

১১১৯ আবূর-এরাবী আয-যাহরানী (রহঃ) সাঈদ ইবনু ইয়াযীদ আবূ মাসলামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, অতঃপর পূর্বের হাদিসের অনুরুপ।

১১২০ আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশাদার চাঁদর পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বললেন, এই নকশাগুলি আমাকে ঝঞ্ঝাটে ফেলে দিয়েছে (সালাত (নামায/নামাজ) অমনোযোগী করে ফেলেছে)। আত আবূ জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং আমাকে তার মোটা চাঁদরটি এনে দাও।

১১২১ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নকশাকৃত চাঁদর পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন। চাঁদরের নকশাগুলি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি বললেন, এই চাঁদরটি আবূ জাহম ইবনু হুজায়ফার নিকট নিয়ে যাও এবং তার মোটা চাঁদরটি আমাকে এনে দাও, কেননা এটি এখন আমাকে আমার সালাত (নামায/নামাজ) অন্যমনস্ক করেছে।

১১২২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি নকশাদার চাঁদর ছিল। চাঁদরখানি সালাত (নামায/নামাজ)-এর মনোযোগ নষ্ট করত। তিনি চাঁদরটি আবূ জাহমকে দিয়ে দিলেন এবং তার মোটা চাঁদরটি গ্রহন করলেন।

১১২৩ আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উয়ায়না (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বং তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রাত্রির খাবার আসবে, ওদিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামাত বলা হবে তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে।

১১২৪ হারুন ইবনু সাঈদ আল-আয়লী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খাবার সামনে পেশ করা হলে এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হলে তোমরা মাগ্রিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে খাবার খেয়ে নিবে। খাবার রেখে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য তাড়াহুড়া করবে না।

১১২৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে , ইবনু উয়ায়না (রহঃ) কর্তৃক যুহরী (রহঃ) এর সুত্রে . আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ।

১১২৬ ইবনু নুমায়র ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার রাখা হয়, ওদিকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইকামত শুরু হয়ে যায়, তখন সে প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে। খাবার শেষ না করে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য তাড়াহুড়া করবে না।

১১২৭ মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল-মূসা ইয়াবী, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও সালত ইবনু মাসউদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

১১২৮ মুহামাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ইবনু আবূ আতীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর সিদ্দিক (. আয়িশার ভাতুস্পুত্র) আয়িশা (রাঃ) ‘র কাছে একটি হাদিস আলোচনা করছিলাম। কাসিমের কথায় উচ্চারণগত অনেক ভুল হত। তার মাতা ছিল উম্মু ওয়ালাদ (অর্থাৎ তিনি দাসীর পুত্র ছিলেন)। আয়িশা (রাঃ) তাকে বলেন, কাসিম, তোমার কি হয়েছে! তুমি আমার এই ভাতুস্পুত্রের ইবনু আতীক) মত কোথা বলছ না কেন? অবশ্য আমি জানি, তুমি কোথা থেকে এসেছ। একে তার মা আদব শিক্ষা দিয়েছে (সে ছিল আযাদ), আর তোমার মা তমাকে শিক্ষা দিয়েছে (সে ছিল বাদী)। রাবী বলেন, এই কথায় কাসিম রেগে গেলেন এবং আয়িশা (রাঃ) ‘র প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। এরপর যখন দেখলেন যে, আয়িশা (রাঃ) এর পক্ষ থেকে দস্তরখান বিছানো হচ্ছে, তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেোথায় আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, বস। তিনি বললেন, আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে যাচ্ছি। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ওরে অকৃতজ্ঞ! বস! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনিছি খাবার সামনে আসার পর কোনও সালাত (নামায/নামাজ) নেই এবং পেশাব পায়খানার বেগ থাকা অবস্থায়ও কোন সালাত (নামায/নামাজ) নেই।

১১২৯ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এ হাদিসে কাসিম ইবনু মুহাম্মাদের উক্ত ঘটনা উল্লেখ করা হয়নি।

১১৩০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেছেন, যে ব্যাক্তি এই উদ্ভিদ অর্থাৎ রসুন খায়, সে যেন মসজিদে না আসে। যুহায়রের বর্ণনায় শুধু যুদ্ধের কথা উল্লেখ আছে, খায়বারের উল্লেখ নেই।

১১৩১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এই সবজি অর্থাৎ রসুন খাবে, সে যেন এর দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়।

১১৩২ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল আজিজ ইবনু সুহায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) এর নিকট রসুন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এই উদ্ভিদ হতে আহার করবে, সে যেন আমাদের নিকট না আসে এবং আমাদের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে।

১১৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি এই উদ্ভিদ খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকট না আসে এবং আমাদেরকে রসুনের গন্ধদ্বারা কষ্ট না দেয়।

১১৩৪ আবূ বাকর আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিঁয়াজ ও মুলা খেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। অতঃপর একবার নিরুপায় হয়ে আমরা তা খেয়ে ফেললাম। তখন তিনি বললেন, যে ব্যাক্তি এই দুর্গন্ধযুক্ত উদ্ভিদ আহার করবে, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা মানুষ যাতে কষ্ট অনুভব করে, ফেরেশতাগণও তাতে কষ্ট পান।

১১৩৫ আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি পিঁয়াজ ও রসুন খাবে, সে যেন আমাদের নিকট হটে দূরে থাকে এবং নিজ ঘরে বসে থাকে। একবার তার নিকট একটি ডেগ আনা হল, তাতে তরকারী রান্না হয়েছিল। তিনি তাতে রসুনের গন্ধ পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এতে কি আছে? বলা হল, এতে রসুন জাতীয় জিনিস আছে। তিনি বললেন, এগুলি অমুক সাহাবীর নিকট নিয়ে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন, সেও তা খাওয়া পছন্দ করছে না, তখন বললেন, তুমি খেয়ে ফেল। আমি যার সঙ্গে কথা বলি (ফেরেশতা) তুমি তার সঙ্গে কথা বল না।

১১৩৬ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এইসব রসুনের তরকারী খাবে (কখনও বলেছেন) যে ব্যাক্তি পিঁয়াজ, রসুন ও কুরগাছ (গন্ধে ও স্বাদে পিয়াজের মত সবজি বিশেষ) খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের কাছে না আসে। কেননা আদম সন্তান যাতে কষ্ট পায়, ফেরেশতাগনও তাতে কষ্ট পান।

১১৩৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহিম ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এই উদ্ভিদ অর্থাৎ রসুন খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। এই রিওয়ায়াতে পিঁয়াজ ও কুররাছের কথা উল্লেখ নেই।

১১৩৮ আমর আন-নাকিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয়ের পর আমরা তখনও ফিরে আসতে পারিনি। এদিকে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী-সাথীগন রসুন ইত্যাদি সবজি খেতে শুরু করলাম। লোকেরা ছিল খুবই ক্ষুধার্ত, আমরা খুব খেলাম। তারপর মসজিদে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গন্ধ পেয়ে বললেন, যে ব্যাক্তি এই নিকৃষ্ট উদ্ভিদ থেকে কিছু খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের নিকট না আসে। লোকেরা বলতে লাগল, (রসুন) হারাম হয়ে গিয়েছে, হারাম হয়ে গিয়েছে। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, হে লোকসকল! আল্লাহ আমার জন্য যা হালাল করেছেন, আমি তা হারাম করতে পারি না। কিন্তু এটি এমন এক উদ্ভিদ যার গন্ধ আমার ভাল লাগে না।

১১৩৯ হারুন ইবনু সাঈদ আল-আয়লী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগনসহ একটি পিঁয়াজ ক্ষেত অতিক্রম করছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাতে নেমে পিঁয়াজ খেলেন এবং কেউ কেউ খেলেন না। এরপর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। যারা পিঁয়াজ খাননি তিনি তাদেরকে কাছে ডাকলেন। আর যারা খেয়েছিলেন, তাদের মুখ হতে পিঁয়াজের গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত তাদের পিছিয়ে রাখলেন।

১১৪০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) মা’দান ইবনু আবূ তালহা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) একদিন জুম’আর খুতবা দিলেন। এতে তিনি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) এর আলোচনা করে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি মোরগ এসে আমাকে তিনটি ঠোকর মারল। আমার মতে এর তা’বীর হচ্ছে, আমার মৃত্যু অতি নিকটবর্তী। লোকেরা আমাকে বলেছে আমার একজন স্থলবর্তী নিযুক্ত করতে। নিশ্চয় আল্লাহ তার দ্বীন ও খিলাফাতকে নষ্ট করবেন না। আর তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাও নষ্ট করবেন না। যদি শীঘ্রই আমার মৃত্যু এসে পড়ে, তবে খিলাফত ঐ ছয় ব্যাক্তির পরামর্শের উপর রইল, যাদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। আমি জানি, করিপয় লোক, যাদেরকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছি, এ ব্যাপারে তারা ইসলামের প্রতি দোষারোপ করবে। তারা যদি তা করে, তবে তারা আল্লাহর দুশমন ও পথভ্রষ্ট কাফির। আমি কালালা (পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যাক্তি) ‘র সমস্যা ব্যাতিত অন্য কোন কঠিন সমস্যা রেখে যাচ্ছি না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কালালা সম্পর্কে যতবার জিজ্ঞাসা করেছি, ততবার অন্য কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি নি। তিনিও আমার প্রতি এ ব্যাপারে যতটা কঠোর ব্যবহার করেছেন, ততটা অন্য কোনও ব্যাপারে করেন নি। এক পর্যায়ে তিনি তার আঙুলদ্বারা আমার বুকে টোকা মেরে বললেন, হে উমর! সূরা নিসার শেষভাগের গ্রীষ্মকালীন (কালালা সম্পর্কিত) আয়াতটই কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? আর আমি যদি বেঁচে থাকি, তাহলে কালালা সম্পর্কে এমন এক ফয়সালা রেখে যাব, যাকে ভিত্তি করে কুরআন জানা অজানা সকলেই ফয়সালা দিতে পারবে। অতঃপর উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমি তোমাকে সেইসব লোক সম্পর্কে সাক্ষী করছি, যাদেরকে আমি বিভিন্ন শহরে প্রশাসক (গভর্নর, সুবেদার ও অফিসার) রুপে প্রেরণ করেছি। আমি তাদেরকে এ জন্য পাঠিয়েছি যে, তারা জনগণের মধ্যে সুবিচার কায়েম করবে, তাদেরকে তাদের দ্বীন ও নাবীর তরীকা শিক্ষাদান করবে, তাদের মধ্যে তাদের যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন করবে এবং কোনও কঠিন সমস্যার উদ্ভব হলে তা আমার সমীপে উত্থাপন করবে। আর যে জনমণ্ডলী! তোমরা দু’টি গাছ ভক্ষণ করে থাক। আমি ঐ দু’টিকে অপছন্দ করি। তা হচ্ছে পিঁয়াজ ও রসূন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি, যখন তিনি মসজিদের কোনও ব্যাক্তি হটে ঐ দু’টির (কোন একটি গাছের) গন্ধ পেতেন, তখন তিনি তাকে “বাকী” প্রান্তরের দিকে বের করে দেয়ার আদেশ দিতেন। অতএব যে ব্যাক্তি তা (পিঁয়াজ রসূন) খেতে চাইবে, উত্তমরূপে রান্না করে খাবে- যাতে তার গন্ধ না থাকে।

১১৪১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উপরোক্তরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

১০২২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) সষ্পূর্ণ আদায় করতেন, আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকতাম। যখন বিতর আদায় করতে ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগ্রত করতেন। আমিও তখন বিতর (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম।

১০২৩ আমর ইবনু আলী (রহঃ) উরওয়া ইবনুুয যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন সামনে দিয়ে কী অতিক্রম করলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়? আমরা বললাম, ন্ত্রীলোক ও গাধা। তিনি বললেন, স্ত্রীলোক একটি মন্দ প্রাণী? অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে খাকতাম আর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

১০২৪ আমর আবূ-নাকিদ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আল আসওয়েদি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)-এর সামনে আলোচনা হচ্ছিল যে, কুকুর গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে দিয়ে গেলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যায়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদের গাধা ও কুকুরের সমতুল্য গণ্য করছ? আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে তখন পাশে শুয়ে থাকতাম। যখন ওঠার প্রয়োজন হতে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে বসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কষ্ট দেয়া আমি অপছন্দ করতাম। আমি তখন পাশের পায়ের দিক দিয়ে সরে পড়তাম।

১০২৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা আমাদের কুকুর ও গাধার পর্যায় ভুক্ত করছ। অথচ আমি তখন পোশের উপর শুয়ে থাকতাম, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তখন পোশের মাঝখানে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন। তাঁকে কষ্ট দেওয়া আমার অপছন্দ হতো তাই আমি তখতপোশের পায়ের দিক দিয়ে লেপের নিচ থেকে সরে পড়তাম।

১০২৬ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম। অমার পা দু’টি তার কিবলার দিকে থাকতো। যখন সিজদা দিতেন তখন আমাকে ঠেলা দিতেন, আর আমি পা টেনে নিতাম। আর তিনি যখন দাড়িয়ে যেতেন আমি পা ছড়িয়ে দিতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন ঘরে বাতি থাকত না।

১০২৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি ঋতুমতী অবস্হায় তাঁর পাশে থাকতাম। কখনও সিজদা করতে তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেত।

১০২৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি ঋতূমতী অবস্থায় তার পাশে থাকতাম। আমি একটি চাঁদর গায় দিতাম, তার কিছু অংশ তাঁর গায়েও থাকত।

১০২৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি মাত্র কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুই কাপড় আছে?

১০৩০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১০৩১ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাদের মধ্যে কেউ কি একটি কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুটি করে কাপড় রয়েছে?

১০৩২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তার কাঁধের উপর একাংশ থাকে না- এই ভাবে এক কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না।

১০৩৩ আবূ কুরায়ব (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার গৃহে এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি আর দুই প্রান্ত কাঁধের উপর রেখেছিলেন।

১০৩৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) উরুওয়া থেকে বর্নিত। তিনি এরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১০৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তার উভয় প্রান্ত তিনি বিপরীত দিকে দিয়ে ছিলেন।

১০৩৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি তার দু প্রান্ত দুই বিপরীত দিকে নিয়ে জড়িয়ে রেখে ছিলেন। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তাঁর বর্ণনায় দুই কাঁধের উপর কথাটি অতিরিক্ত বলেছেন।

১০৩৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে ‘তাওয়াশগুহ’ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।

১০৩৮ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছে তবে ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় ‘আমি দেখেছি’ কথাটির স্হানে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করলাম কথাটি বলা হয়েছে।

১০৩৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ যূবায়র আল মাক্কী (রহঃ) বলেন, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। অথচ তাঁর নিকট একাধিক কাপড় ছিল। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ঐরুপ করতে দেখেছেন।

১০৪০ আমর আন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করলাম এবং তাঁকে দেখলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন ও তার উপর সিজদা করছেন। আরও দেখলাম, এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।

১০৪১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আল আমাশ থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ কুরায়বের রিওয়ায়াতে কাপড়ের দুপ্রান্ত দুই কাঁধের উপরে রাখার কথা উল্লিখিত হয়েছে এবং আবূ বকর ও সুওয়ায়দের রিওয়ায়েতে তাওয়াশগুহ এর কথা বলা হয়েছে।

১১৪২ আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি কোনও লোককে মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনবে, তখন সে বলবে, আল্লাহ তোমাকে তা ফিরিয়ে না দিন। কেননা মসজিদ এর জন্য তৈরি হয়নি।

১১৪৩ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্তরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

১১৪৪ হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি মসজিদে উচ্চস্বরে হারানো জিনিস খুঁজল এবং বলল, লাল উটের দিকে ডাকল কে? (অর্থাৎ কে সেটি পেয়েছে?) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটি যেন না পাও। মসজিদ যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যই তা ব্যবহৃত হবে।

১১৪৫ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, তখন এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, লাল উটটির দিকে ডাকল কে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (তোমার উট) তুমি যেন না পাও। মসজিদ যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যই ব্যবহৃত হবে।

১১৪৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত সম্পন্ন করলেন, তখন জনৈক বেদুঈন এসে মসজিদে দরজা দিয়ে তাঁর মাথা ঢুকাল। অতঃপর রাবী উপরোক্ত হাদিসের অনুরুপ বর্ণনা করলেন। মুসলিম বলেন, সনদে উল্লেখিত শায়বা হল, শায়বা ইবনু না’আমা থেকে মিস’আর, হুসায়ম, জারীর প্রমুখ কুফাবাসী রাবীগন হাদিস বর্ণনা করেছেন।

১১৪৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করতে দাড়ায়, তখন শয়তান ভুলাবার জন্য তাঁর নিকট আগমন করে। শেষ পর্যন্ত সে কয় রাক’আত পড়ল, তা তাঁর মনে থাকে না। যখন এরুপ হবে, তখন দুটি সিজদা (সাহু) করবে।

১১৪৮ আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে উপরোক্ত হাদিসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১১৪৯ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন আযান হতে থাকে, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পলায়ন করে, যাতে সে আযান শুন্তে না পায়। যখন আযান শেষ হয়ে, যায়, তখন সে ফিরে আসে। যখন তা তাকবীর আরম্ভ হয়, তখন আবার সে পলায়ন করে এবং তাকবীর শেষে ফিরে এসে সালাত আদায়কারীর অন্তরে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। সে বলে, এই কথা স্মরণ কর, ঐ কথা স্মরণ কর, যা তার স্মরণ ছিল না। শেষ পর্যন্ত সে কত রাক’আত সালাত আদায় করেছে, তা ভুলে যায়। যখন তোমাদের কেউ কত রাক’আত সালাত আদায় করেছে তা ভুলে যাবে, তখন সে বসা অবস্হায় দুটি সিজদা করবে।

১১৫০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের আযান হতে থাকে, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পনায়ন করে। অতঃপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি এতে আরো বর্ণনা করেন যে, সে তার মনে বহু আশা-বাসনার উদ্রেক করে এরং এমন এমন কাজ স্মরণ করায়, যা তার স্মরণ ছিল না।

১১৫০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের আযান হতে থাকে, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পনায়ন করে। অতঃপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি এতে আরো বর্ণনা করেন যে, সে তার মনে বহু আশা-বাসনার উদ্রেক করে এরং এমন এমন কাজ স্মরণ করায়, যা তার স্মরণ ছিল না।

১১৫২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু বুহায়না আল-আসা’দী (রাঃ) (তিনি ছিলেন আবদুল মুত্তালিব গোত্রের মিত্র) থেকে বর্ণিত যে,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে প্রথম বৈঠকে ভুলে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, তখন সালাম ফিরানোর পূর্বে বসা অবস্হায় দুটি সিজদা করলেন। প্রত্যেক সিজদা তাকবীর বললেন। লোকেরাও তাঁর সাথে দুটি সিজদা করল। তা (প্রথম) বৈঠক ভুল করার পরিবর্তে ছিল।

১১৫৩ আবূ রাবী আয যাহরানী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়না আল আযদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসালাতের প্রথম দুই রাকআতের পর বসার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করে যেতে লাগলেন। যখন তিনি সালাতের শেষ পর্যায়ে ছিলেন তখন সালাম ফিরানোর পূর্বে তিনি সিজদা করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন।

১১৫৪ মুহাম্মদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) আবূ সাইদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার সালাতে সন্দেহ পতিত হয় এবং সে স্থির করতে ব্যর্খ হয় যে তিন রাকআত পড়েছে, তিন না চার রাকআত, তখন সে সন্দেহ পরিত্যাগ করবে এবং যে-কয় রাকআতের উপর দ্রির প্রত্যয় হয় সেটিই ধারণ করবে। তারপর সালাম ফিরাবার পূর্বে দুটি সিজদা করবে যদি তার পাঁচ রাকআতই পড়া হয়েগিয়ে থাকে, তবে এই দুই সিজদা মিলে ছয় রাকআত হয়ে যাবে। আর যদি তার সালাত পূর্ণ চার রাকআতই হয়, তবে দুই সিজদা! শয়তানের মুখে মাটি পড়ার কারণ হবে।

১১৫৫ আহমাদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে বর্ণিত হয়েছে যে, সালামের পুর্বে দুটি সিজদা করবে। যেমন সূলায়মান ইবনু বিলাল বলেছেন।

১১৫৬ আবূ শায়বার দুই পূত্র আবূ বাকর ও উসমান এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- (এক বার) সালাত আদায় করলেন। ইবরাহীম বলেন, ঐ সালাতের কিছু বেশ-কম হয়েগেল। যখন সালাম ফিরালেন, তখন বলা হল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সালাতে কি কোনও নতূন হুকুম হয়েছে? তিনি বললেন, সেটি কি? তারা বলল, আপনি এরুপ এরুপ করছেন। তখন তিনি ম্বীয় পদদ্বয় ঘূরালেন এবং কিবলা মূখী হয়ে দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। এরপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, সালাতে যদি নতূন কোনও হুকুম হত, তবে আমি তোমাদের জানিয়ে দিতাম। কথা হচ্ছে, আমিও একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভূল কর, আমিও তেমনি ভূল করে থাকি। অতএব, আমি যদি ভূল করি, তোমারা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিরে। আর তোমাদের কারও যদি সালাতে সন্দেহ হয়, তবে ভেবে-চিন্তে যেটি সঠিক মনে হবে, তার ভিত্তিতে সালাত পূর্ণ করে নিবে। তারপর দুটি সিজদা করবে।

১১৫৭ আবূ কুরায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) মানসূর সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি কিঞ্চিত শাব্দিক পরিবর্তনের সাথে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (হাদিস নম্বরঃ ১১৫৬)

১১৫৮ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান আদ দারিমী ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মানসূর সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনার শব্দে সামান্য পার্থক্য রয়েছে।

১১৫৯ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না, ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) মানসূর থেকে সামান্য শব্দ পরিবর্তনের সাথে উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

১১৬০ উবায় দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত পাচ রাকআত পড়লেন। যখন সালাম ফিরালেন, তখন তাকে বলা হল, সালাত কি বেড়ে গেছে? তিনি বললেন, কি রুপে? তারা বলল, আপনি পাঁচ রাকআত পড়েছেন। তখন তিনি দুটি সিজদা করলেন।

১১৬১ ইবনু নুমায়র ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) ইবরাহীম ইবনু সুওয়ায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আলকামা আমাদেরকে নিয়ে ষূহরের সালাত পাঁচ রাকআত আদায় করলেন। যখন সালাম ফিরালেন, তখন লোকেরা বলল, হে আবূ শিবল (আলকামার কুনিয়াত)! আপনি পাচ রাকআত পড়েছেন। তিনি বললেন, কক্ষণও নয়। আমি (ঐরুপ) করি নি। তারা বলল, অবশ্যই (আপনি পাচ রাকআত পড়েছেন)। বর্ণনাকারী সুওয়ায়দ বলেন, আমি তাদের এক পার্শে ছিলাম। তখন আমি ছেলে মানুষ! আমি বললাম, হ্যা। তখন তিনি ফিরলেন এবং দুটি সিজদা করে সালাম ফিরালেন। তারপর বললেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের নিয়ে পাচ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন লোকেরা ফিসফিস করতে লাগল। তিনি বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাত কি বৃদ্ধি পেয়েছে? তিনি বললেন, না। তারা বলল, আপনি পাচ রাকআত পড়েছেন। তখন তিনি ঘূরে বসলেন এবং সিজদা করে সালাম ফিরালেন। তারপর বললেন, আমি তোমাদরই মত একজন মানুষ। তোমরা যে রুপ ভুলে যাও, আমিও তদ্রুপ ভুলে যাই। ইবনু নূমায়রের বর্ণনায় এটূকু বেশী আছে অতএব, তোমাদের কেউ যখন ভূলে যাবে, তখন দুটি সিজদা করবে।

১১৬২ আওন ইবনু সাল্লাম আল কুফী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সহ পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করলেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কির রুপে? তারা বলল, আপনি পাচ রাক’আত পড়েছেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতই একজন মানূয। তোমরা যেমন স্মরণ রাখ, আমিও তেমনি স্মরণ রাখি। তোমরা যে রুপ ভুলে যাও, আমিও সে রুপ ভূলে যাই। এরপর ভূলের জন্য দুটি সিজদা করলেন।

১১৬৩ মিনজাব ইবনুল হারিস আত তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-একবার সালাত আদায় করলেন। কিন্তু সালাতে কিছু বেশী অথবা কম হল। বর্ণনাকারী ইবরাহীম বলেন, এই বেশী অথবা কমের সন্দেহটি আমার। বলা হল (লোকেরা বলল), ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাতে কি কিছু বাড়ানো হয়েছে? তিনি বললেন, আমি তোমাদের মতই মানুষ বৈ কিছু নই। তোমাদের মতই আমি ভুলে যাই। কাজেই তোমাদের কেউ যদি (সালাতে) ভূলে যায়, তবে বসা অবস্হায় দুটি সিজদা করে নিবে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুরে বসে দুটি সিজদা করলেন।

১১৬৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলের সিজদাদ্বয় সালাম ও কথাবার্তা সস্পন্ন করার পর করেছিলেন।

১১৬৫ কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। (সালাতের নির্ধারিত রাকাআত থেকে) বেশী করলেন কিংবা কম করলেন। বর্ণনাকারী ইবরাহীম বলেন, আল্লাহর কসম! এ সন্দেহ আমার স্মরণের ক্রটির জন্য হয়েছে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সালাতে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেন, না। তখন তিনি যা করেছেন (বেশী কিংবা কম), আমরা তা বললাম। তিনি বললেন, যখন কোন ব্যাক্তি (সালাতে) কিছু বেশী কিংবা কম করবে, তখন দুটি সিজদা (সাহু) করে নিবে। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি দুটি সিজদা (সাহু) করলেন।

১১৬৬ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে যুহর অথবা আসরের সালাত আদায় করলেন এবং দু-রাকআত পড়েই সালাম ফিরালেন। অতঃপর তিনি একটি খর্জ্যুর কাণ্ডের খুটির নিকট আসলেন, যা মসজিদের পশ্চিম দিকে লাগানো ছিল। এবং এর সাথে হেলান দিয়ে রাগান্নিত অবস্হায় দাঁড়ালেন। জামাআতে আবূ বকর ও উমার (রাঃ) ও উপস্হিত ছিলেন। তারাও কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। আর যাদের তাড়াতাড়ি করে যাওয়ার ছিল তাঁরা এই বলে চলেগেল যে, সালাত কমে গিয়াছে। তখন যুল-ইয়াদায়ন নামক জনৈক ব্যাক্তি দাড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত (এর রাকআত) কমে গিয়েছে, না আপনি ভূলে গেছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডানে ও বামে তাকিয়ে বললেন, যুল-ইয়াদায়ন বলে কি? লোকেরা বলল, সে সত্য বলেছে আপনি দু-রাকআতই পড়েছেন। তখন তিনি (আরো) দুই রাকআত পড়লেন এবং সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর বললেন ও সিজদা (সাহু) করলেন। অতঃপর তাকবীর বললেন ও মাথা উঠালেন। আবার তাকবীর বললেন ও সিজদা করলেন। এরপর পূনরায় তাকবীর বললেন ও মাথা উঠালেন। মুহাম্মাদ ইবনু (রহঃ) বলেন, ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে,তিনি বলেছেন, এবং সালাম ফিরালেন।

১১৬৭ আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রুপ বর্ণনা করেছেন।

১১৬৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাদেরকে আসরের সালাত পড়ালেন এবং দুই রাক’আত আদায় করেই সালাম ফিরালেন। তখন যুল-ইয়াদাইন দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহু! সালাত কি হরাস করা হয়েছে, না আপনি ভুলেগেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর কোনোটাই হয়নি। যুল-ইয়াদায়ন (রাঃ)বললেন, যে কোনও একটি অবশ্যই হয়েছে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, যুল-ইয়াদায়ন কি সত্য বলেছে? তারা বলল, জী হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহহ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-অবশিষ্ট সালাত পূর্ণ করলেন এবং সালাম ফিরানোর পর বসা অবস্হায় দুটি সিজদা (সাহু) করলেন।

১১৬৯ হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত দুই রাকআত পড়ে সালাম ফিরালেন। তখন বনূ সুলায়ম-এর জনৈক ব্যাক্তি এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত কি হরাস করা হয়েছে, না আপনি ভূলে গেছেন? রাবী হাদীসের পরবর্তী অংশ বর্ণনা করেন।

১১৭০ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুহরের সালাত আদায় করছিলাম। তিনি দুই রাকআত আদায় করেই সালাম ফিরিয়ে দিলেন। তখন সুলায়ম গোত্রের জনৈক দারিয়ে গেল। তারপর রাবী উপরোক্তরুপ অবশিষ্ট হাদীসটি বর্ণনা করলেন।

১১৭১ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত তিন রাকআত পড়ে সালাম ফিরালেন। তারপর নিজ গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন (কিঞ্চিত) লম্বা দুই হস্ত বিশিষ্ট খিরবাক নামক জনৈক ব্যাক্তি তাঁর উদ্দেশ্যে উঠে দাড়ালেন। এবং ‘হে আল্লাহর রাসুল’ বলে সম্মোধন করে বিষয়টি সম্পর্কে তাকে জানালেন। তিনি চাঁদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাগান্বিত হয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকদের নিকট এসে বললেন, এই লোকটি কি সত্য বলছে? তারা বলল, জী হ্যা। তারপর তিনি এক রাকঅত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং দুটি সিজদা (সাহু) করে পূনরায় সালাম ফিরালেন।

১১৭২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত তিন রাকআত আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর উঠে হুজরার মধ্যে প্রবেশ করলেন। ইত্যবসরে র্দীর্ঘ দুই হাত বিশিষ্ট জনৈক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে? তখন তিনি রাগান্নিত হয়ে বের হয়ে এলেন এবং তিনি যে রাকআতটি ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেটি আদায় করলেন। এবং সালাম ফিরালেন। এরপর দুটি সিজদা (সাহু) করে পূনরায় সালাম ফিরালেন।

১১৭৩ যুহায়র ইবনু হারব, উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। যে সূরায় সিজদার আয়াত রয়েছে, তাও পাঠ করতেন এবং সিজদা (তিলাওয়াত) করতেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করতাম। এমনকি আমাদের কেউ কেউ (ভিড়ের দরুন) কপাল রাখার জায়গাও পেতনা।

১১৭৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কখনও কখনও কুরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন এবং আমাদের নিয়ে সিজদা করতেন। ভিড়ের কারণে আমাদের কেউ কেউ সিজদার জায়গাও পেত না। এ ছিল সালাতের বাইরের ঘটনা।

১১৭৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সূরা ওয়ান নাজমি পাঠ করলেন এবং সিজদা করলেন। তাঁর সাথে যারা ছিলেন, তারাও সকলে সিজদা করলেন। কিন্তু এক বৃদ্ধা (উমায়্যা ইবনু খালফ) সিজদা করল না। সে এক মুষ্টি মাটিও পাথর কুচি উঠিয়ে কপালে লাগাল এবং বলল, আমার জন্য এটই যথেষ্ট। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমি দেখেছি, পরবর্তীতে (বদরের যুদ্ধে) সে কাফির অবস্হায় নিহত হয়।

১১৭৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, তিনি যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে ইমামের সাথে কিরা-আত পাঠ সম্পর্কে করলেন। তিনি বললেন, ইমামের সাথে কোনও কিরাআত নেই এবং আরও বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে সুরা ওয়ান নাজমি ইযা হাওয়া পাঠ করলাম, কিন্তু তিনি সিজদা করলেন না।

১১৭৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহিয়া (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাতে ‘ইযাস ছামাআ ইনশাক্কাত’ পাঠ করলেন এবং সিজদা করলেন। তারপর সালাত শেষ করে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরায় সিজদা করেছেন।

১১৭৮ ইবরাহীম ইবনু মূসা ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১১৭৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইযাস সামাউন শাক্কাত এবং ইকরা বিসমি রাব্বিকা সূরা দ্বয়ে সিজদা করেছি।

১১৮০ মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযাস সামাউন শাক্কাত এবং ইকরা বিসমি রাব্বিকা পাঠ করে সিজদা করেছেন।

১১৮১ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১১৮২ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ রাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ইশার সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাতে ‘ইযাস সামাউন শাক্কাত’ পাঠ করলেন এবং সিজদা করলেন। (সালাত শেষে) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটি কিসের সিজদা? তিনি বললেন, এ সিজদাটি আমি আবূল কাসিম (রাসুলের কুনিয়াত)-এর পিছনেও করেছি। সুতরাং আমি এটি তাঁর সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত (মৃত্যু পর্যন্ত) করতে থাকবে। ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) বলেন, (তিনি বলেছেন) আমি এই সিজদা সর্বদা করতে থাকব।

১১৮৩ আমর আন-নাকিদ, আবূ কামিল ও আহমাদ ইবনু আবদা আত তায়মী সুত্রে বর্ণিত, তিনি উপরোক্ত রুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এরা “ আবূল কাসিম” এর পিছনেঁ কথাটি বলেননি।

১১৮৪ মুহাষ্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ রাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে ‘ইযাস সামাউন শাক্কাত’ পাঠ করে সিজদা করতে দেখলাম। আমি বললাম, আপনি এ সূরায় সিজদা করেন? তিনি বললেন, হ্যা। আমি আমার বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সূরায় সিজদা করতে দেখেছি। সুতরাং আমি তাঁর সাথে মুলাকাত (মৃত্যু) পর্যন্ত এস সূরায় সিজদা করতে থাকব। শুবা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, (এই সূরায়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-(সিজদা করতেন)? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

১১৮৫ মুহাম্মাদ ইবনু মা”মার ইবনু রিবঈ আল-কায়সী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুুয যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, বাম পা-খানি বিছিয়ে দিতেন। এবং বাম হাত বাম উরুর উপর ও ডান হাত খানি ডান উরুর উপর রাখতেন, আর আঙ্গুল (তর্জনী) দ্বারা ইশারা করতেন।

১১৮৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুআ করার জন্য বসতেন, তখন ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন এবং বাম হাত বাম উরুর উপর। শাহাদাত আংগুলি (তর্জনী) দ্বারা ইশারা করতেন এবং বৃদ্ধাংগুলোকে মধ্যমার উপর রাখতেন। আর বামহাতের তালূ দ্বারা বাম হাঁটু আকড়িয়ে ধরতেন।

১১৮৭ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন দু হাত দুই হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলির পাশের (শাহাদত) আংগুলি উঠিয়ে তা দ্বারা(ইংগিতে) দুঁআ করতেন। আর বাম হাত খানি বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে রাখতেন।

১১৮৮ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসূলূঁল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন তার বাম হাত বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর (ডান হাতের আংগুল দ্বারা) তিপ্পান্ন বানিয়ে শাহাদাত আংগুলি দ্বারা ইশারা করতেন।

১১৮৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী ইবনু আবদুর রহমান মুআবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমাকে সালাতে কংকর নিয়ে খেলা করতে দেখলেন। আমি সালাত শেষ করার পর তিনি আমাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রুপ করতেন তুমিও তদ্রুপ কর। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকি রুপ করতেন? তিনি বললেন, তিনি যখন সালাতে বসতেন, তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন এবং সমস্ত আংগুল গুটিয়ে রেখে বৃদ্ধাংগুলির নিকটস্হ আংগুল দ্বারা ইশারা করতেন। আর বাম হাতের তালুখানি বাম উরুর উপর রাখতেন।

১১৯০ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আলী ইবনু আব্দুর রহমান মুআবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর পার্শে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছি। তারপর উপরোক্ত- হাদীস সদৃশ বর্ণনা করেন।

১১৯১ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মা’মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মক্কায় একজন আমীর ছিলেন, তিনি দুটি সালাম বলতেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) বলেন, তা কোথা থেকে পেয়েছেন? হাকাম তাঁর রিওয়ায়াতে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দুটি সালাম) করতেন।

১১৯২ আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, জনৈক আমীর অথবা ব্যাক্তি (সালাত শেষ করার জন্য) দুটি সালাম ফিরালেন। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কোথেকে তিনি তা হাসিল করেছেন?

১১৯৩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম করতে দেখতাম। এমন কি সালাম করাকালীন তাঁর গন্ড দেশের ওভ্রতাও দেখতাম।

১১৯৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেঁন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সমাপ্তি তাঁর তাকবীর দ্বারা বুঝতে পারতাম।

১১৯৫ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সমাপ্তি তাকবীর দ্বারাই বুঝতে পারতাম। আমর বলেন, আমি আবূ মাবাদকে এ বিষয়টি আবার জ্ঞাত করালে তিনি তা অশিকার করেন এবং যে, আমি তা তোমার নিকট বলি নি। অথচ তিনি তা আমার নিকট বলেছিলেন।

১১৯৬ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ফরয সালাতের পর উচ্চকন্ঠে যিকির করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় প্রচলিত ছিল। এবং আমি যখন তা শুনতাম, তখন বুঝতাম যে, লোকেরা সালাত শেষে করেছে।

১১৯৭ হারুন ইবনু সাঈদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমার ঘরে এলেন। আমার নিকট তখন এক ইয়াহুদী ন্ত্রীলোক বসা ছিল। সে বলছিল তোমরা কি জান যে, কবরে তোমাদের পরীক্ষা হবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষ্মিত হলেন এবং বললেন, ইয়াহুদিরাই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা কয়েকদিন অতিবাহিত করলাম। পরে একদিন রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জান যে, এই মর্মে আমার নিকট ওহী নাযিল হয়েছে, তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের আযাব থেকে প্রার্থনা করতে শুনেছি।

১১৯৮ হারুন ইবনু সাঈদ, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তারপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।

১১৯৯ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনার দুজন ইয়াহুদী বৃদ্ধা আমার কাছে এল এবং বলল, কবরবাসীদের কবরের মধ্যে আযাব দেওয়া হয়। আমি তাদের মিথ্যাবাদিনী বলতে আমার মনে চাইল না। তারা চলে যাওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে এলেন। আমিা তাঁকে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মদিনার দু-জন বৃদ্ধা ইয়াহুদী আমার নিকট এসেছিল। তারা বলেছে, কবরের মধ্যে কবরবাসীদের আযাব দেওয়া হয়। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছেন তাদের এরুপ আযাব দেওয়া হয় যে, তা জীবজন্তুরা শুনতে পায়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাকে প্রত্যেক সালাতে কবর আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছি।

১২০০ হান্নাদ ইবনুল সারী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে আছে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি শুনেছি,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতে কবর আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

১২০১ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার সালাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে শুনেছি।

১২০২ নাসর ইবনু আলী আন-জাহযামী, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতে-তাশাহুদ পড়বে, তখন চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। বলবে- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।

১২০৩ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) নাবী সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাতে এই দুআ পড়তেন- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাই কবর আযাব থেকে, তোমার কাছে পানাহ চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং তোমার কাছে পানাহ চাই জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাই, পাপকার্য ও ঝণগ্রস্ততা থেকে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি তাকে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি ঋণগ্রস্ততা থেকে এত বেশী আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন কেন? তিনি বললেন, মানুষ যখন ঝণগ্নস্ত হয়, তখন মিথ্যা কথা বলে এবং ওয়াদা করে ওয়াদা করে ওয়াদা খেলাফ করে।

১২০৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আখেরী বৈঠক তাশাহুদ শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় চাইবে। জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মরণের ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে।

১২০৫ হাকাম ইবনু মূসা ও আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) আওযাঈ (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সুত্রে বর্ণনা করেন। তারা বলেন, যখন তোমাদের কেউ তাশাহুদ শেষ করবে, এতে আখেরী বৈঠকের কথা নেই।

১২০৬ মুহাম্মাদ হবনূল-মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট পানাহ চাই কবর আযাব থেকে জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মরণে বিপর্যয় থেকে দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে। –

১২০৭ মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আবূ হুরায়ারা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর, আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর, আল্লাহর নিকট মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং আল্লাহর নিকট জীবন-মরনের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর।

১২০৮ মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নযী থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১২০৯ মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১২১০ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর আযাব, জাহান্নামের আযাব ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

১২১১ কুতয়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে যেমন কুরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন তেমনি এক দু’আও শিক্ষা দিতেন বলতেন, বল (হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট পানাহ চাই জাহান্নামের আযাব থেকে, আমি তোমার নিকট পানাহ চাই কবরের আযাব থেকে, আমি তোনার নিকট পানাহ চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং আমি তোমার নিকট পানাহ –চৗই জীবন-মরনের ফিতনা থেকে।) মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি, তাঊস তার পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সালাতে এই দুআ পড়েছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, তোমার সালাত আবার আদায় কর। কেননা, (তোমার পিতা) তাঊস এই হাদীসটি তিনজন অথবা চারজন রাবী থেকে বর্ণনা করেছেন।

১২১২ দাঊদ ইবনু রাশীদ (রহঃ) সাওবান- (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার সালাত শেষ করতেন, তখন তিনবার ইস্তিগফার- করতেন এবং বলতেন- “হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং অেমা থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও সষ্মানিত’”। ওয়ালীদ বলেন, আমি আওযাঈকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইস্তিগফার কেমন করে? তিনি বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ, বলবে।

১২১৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও নূমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে (আরবি) আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম অয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা জাল জালালে অয়াল ইকরাম এই দু’আ পাঠ করার পরিমাণের চেয়ে বেশী বসতেন না।

১২১৪ ইবনু নুমায়র আসিম (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি ইয়া জাল জালালে অয়াল ইকারাম বলেছেন।

১২১৫ আব্দুল ওয়ারিস ইবনু আব্দুস সামাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনূরূপ বর্ণনা করেছেন।

১২১৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মুগীর ইবনু শূবার আযাদকৃত গোলাম ও ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) মুআবিয়া (রহঃ)-কে লিখে পাঠালেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে সালাম ফিরিয়ে বলতেন – “আল্লাহ ভিন্ন কোন মাবুদ নেঁই। তিনি একক। তার কোন অংশীদার নেই। রাজঁত্ব তাঁরই এবং প্রশংর্সাও তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও, তা কেউই রোধ করতে পারে না। এবং তুমি যা রোধ কর, তা কেউ করতে পারে না। আর কোন সম্পদশালীর সস্পদ তোমার আযাব থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবে না”।

১২১৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও আহমাদ ইবনু সিনান (রহঃ) মুগীরা (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকর ও আবূ কুরায়ব তাঁদের রিওয়ায়াতে বলেন যে, মুগীরা (রহঃ) হাদীসটি আমাকে লিখিয়ে দেন। তারপর আমি তা মুআবিয়ার নিকট লিখে পাঠাই।

১২১৮ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) মুগীরা ইবনু শু’বার আযাদকৃত গোলাম ওয়াররাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা ইবনু শু-বা (রহঃ) মুআবিয়া (রহঃ) নিকট যে পত্র খানি লিখেছিলেন, তা ওয়াররাদ লিখেছেন। (এতে ছিল যে,) আমি শুনেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে সালাম ফিরিয়ে বলতেন, পরবর্তী অংশ উপরোক্ত আবূ বাকর ও আবূ কুরায়বের হাদীসের অনুরুপ।

১২১৯ হামিদ ইবনু উমার আল বাকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না মুগীরা ইবনু শু’বার কাতিব (লেখক) ওয়ারারাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুগীরা (রহঃ) মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট লিখলেন, পরবর্তী অংশ মনসূর ও আ’মাশের অনুরুপ।

১২২০ ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী আবদা ইবনু আবূ লূবাবা ও আবদুল মালিক ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তাঁরা মুগীরা ইবনু শু’বা (রহঃ)-এর কাতিব (লেখক) ওয়াররাদকে বলতে শুনেছেন, মুআবিয়া (রাঃ) মুগীরা (রহঃ) কে লিখে পাঠান যে, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছ এরুপ কিছু আমাকে লিখে জানাও। তখন তিনি তাঁকে লিখলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি সালাত শেষ করে বলতেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অয়াহদাহু লা সারিকা লাহু লাহুল মূলক অয়া লাহুল হামদ অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির”

১২২১ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ইবনু যুবায়র (রহঃ) প্রত্যেক সালাতের পর সালাম ফিরাবার সময় বলতেন- আল্লাহ ছাড়া! কোন মা-বুদ নেই। তিনি এক। তাঁর কোন অংশীদার নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনই সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারও শক্তি-সামর্থ্য নেই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আমরা তাঁকে ছাড়া অন্যকারও বন্দেগী করি না। তাঁরই সমস্ত নিয়ামাত, সমস্ত অনুগ্রহ ও সমস্ত উত্তম প্রশংসা। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আনুগত্য একমাত্র তাঁরই উদ্দেশ্যে। যদিও তা কাফিরগণ অপছন্দ করে”। ইবনুুয-যুবায়র (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক (ফরয) সালাতের পর এই কালিমা-ই তাওহীদ পাঠ করতেন।

১২২২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়ার আযাদকৃত গোলাম আবূয যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু যূবাইর (রাঃ) প্রত্যেক সালাতের পর ইবনু নূমায়রের হাদীসের অনুরুপ-কালিমা তাওহীদ পাঠ করতেন। তিনি প্রত্যেক সালাতের পর এই “কালিমা তাওহীদ”, পাঠ করতেন।

১২২৩ ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনুুয যুবায়র (রহঃ) কে এই মিম্বারের উপর দাড়িয়ে খুতবা দান করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সালাত শেষে সালাম ফিয়িয়ে বলতেন পররর্তী অংশ হিশাম ইবনু উরওয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

১২২৪ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) যূবায়র মাক্কী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনুুয যুবায়র (রহঃ)-কে সালাতের পর সালাম ফিরিয়ে বলতে শুনেছেন- পরবর্তী অংশ হিশাম ও হাজ্জাজের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ। এই দীসের শেষে রয়েছে যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

১২২৫ আসিম ইবনু নাযার আত তায়মী ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। হাদীসটির শব্দ কুতায়বা থেকে গৃহীত- তিনি বলেন একদা দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্হিত হয়ে বললেন, ধনী লোকেরা উচ্চ মর্যাদা ও নিয়ামাত নিয়োগেলেন, তিনি বললেন, তা কেমন করে? তারা বললেন, তাঁরা সালাত আদায় করেন যেরুপ আমরা সালাত আদায় করি, তাঁরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেন, যে রুপ আমরা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করি। এবং তাঁরা সাদাকা করেন, আমরা সাদাকা করতে পারি না। তারা (দাস-দাসী) আযাদ-করেন, আযাদ করেন, আমরা (দাস-দাসী) আযাদ করতে পারি না। রাসূলৃল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিক্ষা দিবনা, যদ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রগামীদের মর্যাদা লাভ করবে এবং অন্যদের থেকে অগ্রগামী থাকবে? আর তোমাদের অপেক্ষা কেউ শ্রেষ্ঠ হতে পারবে না-অবশ্য যারা তোমাদের মত করবে তাদের কথা ভিন্ন। তারা বললেন, নিশ্চয়ই, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার করে সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবর ও আল-হামদুলিল্লাহ পড়বে। আবূ সালেহ বলেন, এরপর দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এলেন এবং বললেন, আমাদের ধনী ভাইরা আমাদের আমলের বিষয়টি শুনে ফেলেছেন এবং তারাও আমাদের মত আমল করা শুরু করেছেন। তিনি বললেন, তা আল্লাহ দান-তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। কুতায়বা ছাড়া অন্যান্য রাবীগণ এই হাদীসে ইবনু আজলান সূত্রে বাড়িয়ে বলেছেন যে, সূমাইয়্যা বলেন, এই হাদীসটি আমি আমার পরিবারের এক ব্যাক্তির নিকট বললাম। সে আমাকে বলল, তুমি ভূল করেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি সুবহানাল্লাহ বলবে তেত্রিশবার, আল-হামদুলিল্লাহ বলবে তেত্রিশবার এবং আল্লাহু আকবার বলবে তেত্রিশবার। সুমায়্যি বলেন, তারপর আমি আবূ সালিহের নিকট গেলাম এবং তাঁকে ঐ কথা বললাম। তিনি আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, সুবাহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ এই ভাবে সবগুলি মিলিয়ে তেত্রিশবার বলবে। ইবনু আজলান (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীস রাজা ইবনু হাওয়ার কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি আমার কাছে আবূ সালিহ (রহঃ) থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে এবং তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সেরুপ বর্ণনা করেন।

১২২৬ উমায়্যা ইবনু বিস্তাম আল আয়শী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা দরিদ্র মুহাজিরগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ ধনবান লোকেরা উচ্চ মর্যাদা ও অনুগ্রহ নিয়োগেল। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ লায়স থেকে কুতায়বার বর্ণনার মত। কিন্তু আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর হাদীসে আবূ সালিহের কথাটিও সংযোজন পর্যন্ত। এই হাদীসে একথাটিও বেশী বলেছেন যে, সূহায়ল বলতেন, প্রত্যেকটি বাক্য এগারবার করে বলবে তাতে সর্বমোট তেত্রিশবার হবে।

১২২৭ হাসান ইবনু ঈসা (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক ফরয সালাতের পর এমন কিছু যিকর আছে, যা পাঠকারী কিংবা আমলকারী কখনও বঞ্চিত হবে না। তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামডুলিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবর।

১২২৮ নাসর ইবনু আলী আল-জাহযামী (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতের পর পাঠ করার এমন কিছু যিকর আছে, যা পাঠকারী কিংবা আমলকারী কখনো বঞ্চিত হবে না। প্রত্যেক সালাতের পর তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ ও চৌত্রিশবার আল্লাহু আকবর।

১২২৯ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) হাকাম (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১২৩০ আব্দুল হামীদ ইবনু বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার বলবে এই নিরানব্বই-আর আশহাদু আল্লাহ্‌ ইলাহা ইল্লালাহু অয়াদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মূলক অয়া লাহুল হামদ অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” বলে একশ পূর্ণ করবে, তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়।

১২৩১ মুহাম্মাদ ইবনুুস সাব্বাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ।

১২৩২ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে তাকবীর তাহরীমা বলে কিরা’আত পাঠ পুর্বে কিছুক্ষণ নীরব থাকতেন। আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান, আপনি তাকবীর তাহরিমা ও কিরা’আতের মাঝখানে নীরব থেকে কী বলেন তা আমাকে বলুন। তিনি বললেন, আমি পড়ি (আরবি হাদিস দেখুন) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপসমূহের মধ্যে ব্যবধান করে দাও, যেরুপ ব্যবধান করে দিয়েছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার পাপ সমূহ থেকে পরিস্কর করে দাও, যেরুপ পরিস্কার করা হয়ে থাকে সাদা ময়লা থেকে। হে আল্লাহ তুমি আমার পাপ সমূহকে ধূয়ে বরফ, পানি ও শিলা (বৃষ্টির মত সচ্ছ পানি) দ্বারা।

১২৩৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র ও আবূ কামিল (রহঃ) উমারা ইবনু কা-কা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে জারীরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আমার নিকট ইয়াহইয়া ইবনু হাসান ও ইউনূস আল মুআদ্দিব (রহঃ) প্রমুখ থেকেও বর্ণনা করা হয়েছে তারা সকলেই আব্দুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ ও উমারা ইবনু কা’কার মাধ্যমে আবূ যুরআর সুত্রে . আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকআতে দাড়াতেন, তখন “আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দ্বারা কিরআত শূরু করতেন এবং নীরব থাকতেন না।

১২৩৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি এসে সালাতের কাতারে শামিল হল। সে হাপাচ্ছিল। এরপর সে বলল ‘আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, তিনি পবিত্র ও বরকতময় বলেছ? সকলে নীরব থাকল। তিনি আবার জিঞ্জাসা করলেন, কে এই বাক্য বলেছ? বস্তুত সে কোনও মন্দ কথা বলেনি। তখন এক ব্যাক্তি বলল, আমি যখন এলাম তখন আমি হাঁপাচ্ছিলাম। তখন আমি তা বলেছিলাম। তিনি বললেন, আমি বারোজন ফেরেশতাকে দেখলাম, তারা তাড়াহুড়া করছে কে ঐগুলো উপরে নিয়ে যাবে।

১২৩৫ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম। লোকদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল- অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন কে এই বাক্যগুলো বলেছে? লোকদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি বলেছি ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, আমি আাশ্চর্যাম্বিত হলাম ঐ গুলোর জন্য আকাশের সব দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এই কথা শোনার পর থেকে আমি কোনও দিন এই বাক্য গুলো পড়া বাদ দেইনি।

১২৩৬ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সালাত শুরু হয়ে গেলে তার জন্য দৌড়িয়ে আসবে না। বরং ধীরে সুস্হে আসবে তারপর যা ইমামের সাথে পাবে, তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায়, পূরণ করে নিবে।

১২৩৭ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতের ইকামাত দেওয়া হলে, তার জন্য দৌড়ে আসবে না, বরং ধীরে সুস্হে আসবে। তারপর যা পাবে, আদায় করবে আর যা ছুটে যায়, তা পূর্ণ করে নিবে। কেননা, তোমাদের কেউ যখন সালাতের উদ্দেশ্যে চলে তখন সে সালাতেই গণ্য।

১২৩৮ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহু (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে এইটিও যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালতের আযান দেওয়া হয়, তখন তোমরা তার দিকে ধীরস্থীর ভাবে হেটে আস। তারপর যা পাবে পড়বে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করে নিবে।

১২৩৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের ইকামত দেওয়া হয়, তোমাদের কেউ তার দিকে দৌড়ে আসবে না, বরং ধীরস্হির ভাবে হেঁটে আসবে। যা পাবে আদায় করবে, আর যা আগে ছুটে যায় তা কাযা করে নিবে।

১২৪০ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি পদ ধ্বনি ও শুঞ্জন শুনলেন। পরে বললেন, তোমাদের কি হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। তিনি বললেন এমন করবে না। তোমরা যখন সালাতে আসবে,শান্ত ভাবে আসবে। অতঃপর যা ইমামের সাথে পাবে তা আদায় করে নেবে; আর যা তোমাদের আগে ছুটে গেছে তা পুরন করে নিবে।

১২৪১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১২৪২ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সালাতের ইকামাত দেওয়া হয় আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ইবনু হাতিম সন্দেহ করেছেন, যখন ইকামত দেওয়া হয় বলেছেন, না যখন আহবান করা হয় বলেছেন।

১২৪৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ কাতাদা সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে ইসহাক (রহঃ) মামার ও শায়বান সূত্র বর্ণিত হাদীসে এই কথা বাড়িয়ে বলেছেনঃআমি বের হয়ে আসছি, তা না দেখা পর্যন্ত”।

১২৪৪ হারুন ইবনু মারুফ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সালাতের ইকামাত দেওয়া হয়। তখন আমরা দৗড়িয়ে গেলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে বের হয়ে আসার আগে আমরা কাতার গুলো সোজা করে নিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাঁর মূসা ল্লায় গিয়ে দাড়ালেন। তাকবীর তাহরিমা বাঁধার আগেই হঠাৎ তার (গোসলের কথা) স্মরণ হয়ে গেল। তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। অবশেষে তিনি গোসল সেরে এমন অবস্হায় আমাদের সামনে এলেন যে, তাঁর মাথা থেকে পানির ফৈাটা পড়ছিল। তারপর তাকবীর বললেন এবং আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন।

১২৪৫ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সালাতের ইকামাত হল- লোকেরা তাদের কাতার করে দাঁড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বের হয়ে এসে তাঁর স্হানে গিয়ে দাঁড়ালেন। এরপর তাদেরকে নিজের স্হানে থাকতে হাত দিয়ে ইশারা করে বের হয়ে গেলেন। পরে গোসল করে আসলেন। তখন তার মাথা থেকে পানি ঝরছিল। অনন্তর তিনি তাদের সালাত আদায় করলেন।

১২৪৬ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সালাতের ইকামাত বলা হতো। তিনি আপন জায়গায় দাঁড়াবার পূর্বেই লোকেরা নিজনিজ কাতারে দাঁড়িয়ে যেত।

১২৪৭ সালামা শাবীব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পরে, তখন বিলাল (রাঃ) আযান দিতেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের না হওয়া পর্যন্ত ইকামাত দিতেন না। তিনি বের হলে তাকে দেখে ইকামাত দিতেন।

১২৪৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সালাতের এক রাক’আত পেল সে উক্ত সালাত পেল।

১২৪৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাকআত পেল সে উক্ত সালাতই পেল।

১২৫০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ যুহায়র ইবনু হারব, আবূ কুরায়ন, ইবনু নুমায়র ও ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-থেকে ইয়াহইয়ার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো হাদিসে ইমামের সাথে কথাটি নেই। উবায়দুল্লাহ এর রিওয়ায়াতে আছে “সে সম্পূর্ণ সালাতই পেয়েছে”।

১২৫১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূর্যদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের এক রাক’আত পেয়েছে, সে ফজরের সালাত পেয়েছে এবং যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পুর্বে আসরের এক রাকআত পেয়েছে, সে আসরের সালাত পেয়েছে।

১২৫২ হাসান ইবনু রাবী, আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের একটি সিজদা পেয়েছে কিংবা সুর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের সালাতের একটি সিজদা পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে এখানে সিজদা রাক’আত বুঝানো হয়েছে।

১২৫৩ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মালিকের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১২৫৪ হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যাক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাক’আত পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে। আর যে ব্যাক্তি সূর্যোদয়য়ের পূর্বে ফজরের এক রাক’আত পেয়েছে, সে উক্ত সালাত পেয়েছে।

১২৫৫ আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) মামার সুত্রে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন।

১২৫৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, উমার ইবনু আবদুল আযিয একদিন আসরের সালাতে কিছুটা দেরী করলেন। তখন উরওয়া (রহঃ) তাঁকে বললেন, এতে কোন সন্দেহ নাই যে, জিবরাঈল আলায়হি সালাম অবতরণ করেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমাম হয়ে সালাত আদায় করেন। উমার ইবনু আবদুল আযীঁয বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলবে, বুঝে বলবে। তিনি (উরওয়া) বললেন, আম বাশীর ইবনু আবূ মাসঊদকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আমি আবূ মাসঊদ (রহঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাযিল হয়ে আমার ইমামতি করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করি। তারপর তাঁর সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তার সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তারপর তাঁর সঙ্গে আবার সালাত আদায় করি। তিনি তাঁর অংগুলি দ্বারা (এরুপ) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত গণনা করেন।

১২৫৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রহঃ) একদা সালাতে দেরী করে ফেললেন। তখন উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) কুফায় থাকতে একদিন সালাত দেরী করে আদায় করেছিলেন। তখন আবূ মাসঊদ আনসারী (রহঃ) তাঁর নিকট এসে বললেন, হে মুগীরা। আপনি একি করলেন? আপনি কি জানেন না যে, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবতরণ করে সালাত আদায় করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর আবার তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি সালাত আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , (তার সঙ্গে) সালাত আদায় করলেন। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আপনাকে এরুপই (সালাত আদায় করতে) নির্দেশ দেওয়া! হয়েছে। তখন উমার উরওয়াকে বললেন, হে উরওয়া! তুমি যা বলবে চিন্তা করে বলবে, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি রাসুলুল্লাহ সালাতের ওয়াক্ত ঠিক করে দিয়েছে? উরওয়া বললেন, এরুপই বর্ণনা করেছেন, বাশীর ইবনু আবূ মাসউদ তার পিতা থেকে। তারপর উরওয়া বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) আমার কাছে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেছেন, যখন সূর্যের কিরণ ছজরার আঙ্গিনায় ছিল-তা উপরে উঠার আগে।

১২৫৮ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেন যখন সূর্যের কিরণ আমার হূজরায় পড়ছিল। তখনো তার ছায়া পড়েনি। আবূ বকরের বর্ণনায় রয়েছে, ‘তখনো ছায়া উপরে উঠেনি।

১২৫৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী-সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ আসরের সালাত আদায় করেন যখন সূর্যের কিরণ তার হূজরা (আঙ্গিনা)-য়ছিল, হূজরা (আঙ্গিনা) থেকে উপরে উঠেনি।

১২৬০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করেন। যখন সূর্য কিরণ আমার হূজরা (-এর আঙ্গিনা)-য় পড়ছিল।

১২৬১ আবূ গাসসান মিসমাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, -তোমরা যখন ফজরের সালাত আদায় করবে, জেনে রাখ, তখন সূর্যের উপরাংশ উদিত না হওয়া পর্যন্ত ওয়াক্ত রয়েছে তারপর যখন তোমরা যূহরের সালাত আদায় করবে, তখন আসরের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত তার ওয়াক্ত রয়েছে। তারপর যখন তোমরা আসরের সালাত আদায় করবে তখন সূর্যেরশ্মি হলুদ বর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তার ওয়াক্ত রয়েছে। অনন্তর যখন তোমরা মাগরিবের সালাত আদায় করবে তখন “শাফাক” (সন্ধাকাশের পশ্চিম দিগন্তে উদ্ভাসিত সাদা আলো চিহ্ন) গায়েব না হওয়া পর্যন্ত তার ওয়াক্ত রয়েছে। আর যখন – তোমরা ইশার সালাত আদায় করবে, তখন তার ওয়াক্ত রয়েছে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত।

১২৬২ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যুহরের ওয়াক্ত রয়েছে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত। আসরের ওয়াক্ত রয়েছে সূর্য কিরণ হলুদ বর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের ওয়াক্ত রয়েছে (পশ্চিমা কাশে) শাফাকের প্রসার থাকা পর্যন্ত। ইশার ওয়াক্ত রয়েছে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং ফজরের ওয়াক্ত্র রয়েছে সুর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত।

১২৬৩ যূহায়র ইবনু হারব এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ)- উভয়ে উভয়ে উপরোক্ত সনদে শুবা থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। এবং এদের হাদীস রয়েছে যে, শুবা (রহঃ) উক্ত হাদীস এক বার “মারফূ” রূপে বর্ণনা করেন এবং আরো দুই বার বর্ণনা করতে গিয়েঁ “মারফু” করেন নি।

১২৬৪ আহমাদ ইবনু ইবরাহীম আদ-দাওরাকী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য চলে যাওয়ার পর যুহরের ওয়াক্ত হয় এবং মানুষের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া ও আসরের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত তা রয়েছে। আসরে ওয়াক্ত সুর্য হলুদ না হওয়া পর্যন্ত রয়েছে। মাগরিবের ওয়াক্ত শাফাক গায়েব না হওয়া পর্যন্ত রয়েছে। এশার ওয়াক্ত রয়েছে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। এবং ফজরের ওয়াক্ত রয়েছে ঊষার উদয়কাল হতে সূর্যদয় না হওয়া পর্যন্ত। আর যখন সূর্য উদয় হতে থাকে তখন সালাত থেকে বিরত থাকবে। কেননা, সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের দিয়ে উদিত হয়।

১২৬৫ আহমাদ ইবনু ইউসুফ আল আযদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আ’স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ফজরের সালাতের ওয়াক্ত সূর্যের ঊর্ধাংশের উদয় না হওয়া পর্যন্ত। যুহরের সালাতের ওয়াক্ত মধ্যাকাশ থেকে সূর্য ঢলে আসর না হওয়া পর্যন্ত। আসরের ওয়াক্ত সূর্য হলুদ না হওয়া এবং তার নিস্নাংশ না যাওয়া পর্যন্ত। মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত সূর্যান্ত থেকে শাফাক গায়েব না হওয়া পর্যন্ত এবং এশার সালাতের ওয়াক্ত অর্ধরাত্রি পর্যন্ত।

১২৬৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, যে, দৈনিক সুখ ভোগের সাথে জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।

১২৬৭ যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একব্যাক্তি সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে এই দুই দিন সালাত আদায় কর। তারপর (প্রথম দিন) সূর্য ঢলে পড়তেই তিনি বিলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে বললেন। তিনি আযান দিলেন। তারপর তাঁকে নির্দেশ দিলেন তিনি যুহরের ইকামাত দিলেন। তারপর তিনি নির্দেশ দিলেন বিলাল (রাঃ) আসরের ইকামাত দিলেন। তখন সূর্য উপরে-অবস্হিত শুভ্র, স্বচ্ছাতার পর তাঁকে নির্দেশ দিলেন। তিনি মাগরিবের ইকামাত দিলেন তখন সূর্য অস্তমিত হয়েছে। তারপর তাকে নির্দেশ দিলেন, তিনি ইশার ইকামাত দিলেন। তখন শাফাক অদ্রিশ্য হয়েছে। তারপর নির্দেশ দিলেন। তিনি ফজরের ইকামাত দিলেন। তখন মাত্র সুবহে সা’দিক হয়েছে। তারপর দ্বিতীয় দিন এলে তিনি যুহরের জন্য তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার পর আযানের নির্দেশ দিলেন। তিনি তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার অপেক্ষা করলেন এবং তাপ যথেষ্ট ঠাণ্ডা হওয়ার পর যুহর আদায় করলেন। তিনি অতঃপর আসর পড়লেন। সূর্য তখনও উপরে, কিন্তু প্রথম দিন অপেক্ষা বিলম্বে। অতঃপর মাগরিব আদায় করলেন-শাফাক অদৃশ্য হওয়ার আগে। তারপর ইশা আদায় করলেন-এরাত্রির এক তৃতীয়াংশের পর। তারপর ফজর পড়লেন সুবিহ সা’দিক ফর্সা হওয়ার পর। তারপর বললেন, সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি। তিনি বললেন, তোমাদের সালাতের সময় এই দুই দিন যা দেখলে তার মাঝখানে।

১২৬৮ ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আর’আরা আল সামী (রহঃ) বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একব্যাক্তি সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তুমি আমাদের সঙ্গে সালাতে উপস্হিত থাকবে। তারপর বিলাল (রাঃ)-কে আদেশ করলেন। তিনি আযান দিলেন ভোরের আধারে। তারপর ফজর আদায় করলেন সূবহি সা’দিক হলে। তারপর যুহরের আদেশ করলেন সূর্য মধ্য আকাশ থেকে ঢলে পড়লে। তারপর আসরের নির্দেশ দিলেন যখন সূর্য উপরে রয়েছে তারপর মাগরিবের নির্দেশ দিলেন সূর্য অস্ত যেতেই তারপর এশার নির্দেশ দিলেন শাফাক গায়েব হয়ে গেলে। তারপর দ্বিতীয় দিন তাঁকে আদেশ করলেন। তিনি ফজর আদায় করলেন ভোরের আলো উদ্ভাসিত হওয়ার পর। তারপর তাকে যুহরের আদেশ দিলেন। সূর্য তাপ ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা আদায় করলেন। তারপর আসরের নির্দেশ দিলেন শাফাক ঢুবে যাওয়ার ক্ষণিক আগে। তারপর তাঁকে ইশার নির্দেশ দিলেন রাতের এক তৃতীয়ংশ অথবা রাতের কিছু অংশ অতিবাহীত হলে, হারামী এতে সন্দেহ করেছেন। তারপর যখন ভোর তখন বললেন, কোথায় জিজ্ঞাসাকারী? তুমি যা দেখলে এর মাঝখানেই সালাত ওয়াক্ত।

১২৬৯ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক প্রশ্নকারী এসে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি তখন তার কোনও উত্তর দিলেন না। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, তারপর ফজর আদায় করলেন যখন ফজরের ওয়াক্ত মাত্র প্রতিভাত হল। আর লোকেরা (অন্ধকারের জন্য) একে অন্যকে চিনতে পারছিল না। তারপর তাকে (বিলালকে) আদেশ করলেন অতঃপর তিনি যুহর আদায় করলেন সূর্য হেলা মাত্র। তখন কেউ কেউ বলাবলি করছিল যে, এখন দুপুর হয়েছে মাত্র। অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত ছিলেন। তারপর তাঁকে (বিলালকে) আদেশ করলেন পরে তিনি মাগরিব আদায় করলেন সূর্য অস্ত যাওয়া মাত্র। তারপর তাকে (বিলালকে) আদেশ করলেন আর তিনি এশা আদায় করলেন শাফাক গায়েব হওয়ার পর। তারপরের দিন ফজরের সালাত বিলম্বিত করলেন এমন কি সালাত শেষ করার পর কেউ কেউ বলাবলি করছিল যে, সূর্য উঠে গেছে কিংবা প্রায় উঠে উঠে। তারপর যুহর দেরী করে আদায় করলেন গত দিনের আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি সময়ে। তারপর আসর এত খানি দেরী করে আদায় করলেন যাতে সালাত শেষে লোকেরা বলছিল যে, সূর্য লাল হয়ে গিয়েছে তারপর মাগরিবে এতখানি দেরী করলেন যে, শাফাক গায়েব হওয়ার কাছাকাছি সময় এসে গেল। তারপর এশা রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করলেন। তারপর ভোর হলে প্রশ্ন কারীকে ডেকে বললেন, ওয়াক্ত এই সীমার মধ্যবতী।

১২৭০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন এক প্রশ্নকারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে সালাতের ওয়াক্ত সমন্ধে প্রশ্ন করল-পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে রয়েছে দ্বিতীয় দিন মাগরিবের সালাত আদায় করলেন “শাফাক” গায়েব হওয়ার পূর্বে

১২৭১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন গ্রীষ্মের তীব্রতা বেড়ে যায়, তখন সালাত ঠাণ্ডা করে আদায় করবে। কেননা তাপের তীব্রতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত।

১২৭২ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের হুবহু অনুরুপ।

১২৭৩ হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী, আমর ইবনু সাওয়াদ ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)- থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, গ্রীষ্মের দিনে উত্তাপ একটু ঠান্ডা হলে সালাত আদায় করবে। কেননা, তাপের তীব্রতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। আমর বলেন, আবূ ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উত্তাপ একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় কর। কেননা, গ্রীষ্মের তীব্রতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। আমর বলেন, ইবনু শিহাব ইবনুল মূসা য়্যাব ও আবূ সালামা আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, আবূ হূরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রূপ বর্ণনা করেছেন।

১২৭৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই উত্তাপ জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভাত। সূতরাং তোমরা বেলা একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় করবে।

১২৭৫ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হূরায়রা (রাঃ) আমার নিকট কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গ্রীষ্মের সময় সালাত বেলা একটু ঠাণ্ডা করে পড়বে। কেননা, গ্রীষ্মের প্রখরতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভূত।

১২৭৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুয়াজ্জ্বীন যুহরের আযান দিলেন। তখন নাবী বললেন, একটু ঠাণ্ডা হতে দাও, একটু ঠান্ডা হতে দাও! অথবা বললেন, একটু অপেক্ষা কর, একটু অপেক্ষা কর! আর বললেন, গ্রীষ্মের প্রখরতা জাহান্নামের স্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। কাজেই যখন গ্রীষ্ম প্রখর হবে, তখন একটু ঠাণ্ডা হলে সালাত আদায় করবে। আবূ যার (রাঃ) বলেন, বিলম্ব করলেন যে আমরা টিলার ছায়া দেখতে পেলাম।

১২৭৭ আমর ইবনু সাওয়াদ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। (শব্দ হারামালা-এর) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের আগুন তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলল, আয় রব! আমার একাংশ আরেকাংশকে খেয়ে ফেলল। তখন তাকে দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে এবং আরেকটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্ম কালে। এ কারণেই তোমরা গ্রীষ্মের প্রখরতা ও ঠাণ্ডার তীব্রতা অনুভব করে থাক।

১২৭৮ ইসহাক ইবনু মূসা আল-আনসারী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন গ্রীষ্ম আসে, তখন একটু ঠান্ডা হলে সালাত আদায় করবে। কেননা, গ্রীষ্মের তীব্রতা জাহান্নামের ষ্ফীত শিখা থেকে উদ্ভুত। আরও বলেন, জাহান্নামের আগুন তার রবের কাছে অভিযোগ করল, তখন তাকে প্রতি বছর-দুটি নিঃশ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি নিঃশ্বাস শীত কালে এবং আরেকটি গ্রীষ্ম কালে।

১২৭৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম বলল, আয় রব! আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলল। আমাকে শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিন। তখন তাকে দুটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি শীত কালে এবং আর একটি গ্রীষ্ম কালে। অতএব, তোমরা যে শীত অনুভব কর, তা জাহান্নামের শ্বাস; আর যে গ্রীষ্ম অনুভব কর, তাও জাহান্নামের শ্বাস।

১২৮০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে পড়লে যূহরের সালাত আদায় করতেন।

১২৮১ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচশু রোদে সালাত আদায় করতে আমাদের অসুবিধার কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করলাম। আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেন নি।

১২৮২ আহমাদ ইবনু ইউনূস ও আওন ইবনু সাল্লাম (রহঃ) খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এস রোদের প্রচশুতার অভিযোগ পেশ করলাম, আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেননি। যুহায়র (রহঃ) বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহঃ) এর কাছে জানতে চাইলাম, তাকি যুহরের সালাত ছিল? তিনি বললেন, হাঁ। আমি বললাম যুহরের সালাত আগে ভাগে আদায় করার বিষয়ে ছিল কি? তিনি বললেন, হাঁ।

১২৮৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে প্রচশু রোদে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে কপাল রাখতে না পারলে সে তার কাপড় বিছিয়ে তার উপর সিজদা দিত।

১২৮৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহু (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করতেন তখন সূর্য উচুঁতে তেজোদীপ্ত থাকত। এরপর কোন লোক মদিনার মহল্লার দিকে গমন করতেন। মহল্লায় পৌছার পরও সূর্য উচুঁতে থাকত। মহল্লায় পৌছার কথাটি কুতায়বা (রহঃ) উল্লেখ করেন নি।

১২৮৫ হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত আদায় করতেন যখন প্রতিটি বস্তুর ছায়া তার সমান হত।

১২৮৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম। এরপর কেউ কেউ কুবায় যেত, সে গন্তব্যে পৌছে যেত অথচ তখনও সূর্য উচুতে থাকত।

১২৮৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম। এরপর লোকজন বনী আমর ইবনু আউফ এর মহল্লায় যেতেন। সেখানে তাদের আসরের সালাতরত অবস্হায় পেতেন।

১২৮৮ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আলা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুহরের সালাত আদায় করে বসরায় আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। তার গৃহটি ছিল মসজিদের পাসেই। আমরা তাঁর কাছে গেলে বলেলেন, তোমরা আসরের সালাত আদায় করেছ কি? আমরা তাকে বললাম, আমরাতো এখনই যুহরের সালাত আদায় করলাম। তিনি বললেন, তোমরা এখন আসরের সালাত আদায় কর। আমরা দাড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। সালাত থেকে আমরা যখন ফিরলাম তখন বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, বসে বসে কেউ কেউ অপেক্ষা করে এমনকি সূর্যটি শয়তানের দুই শিং এর মাঝামাঝি আসলে সে দাঁড়িয়ে চারটি ঠোকর মারে, এতে আল্লাহকে সে কমই স্মরণ করে এটা হচ্ছে মুনাফিকের সালাত।

১২৮৯ মানসুর ইবনু আবূ মূযাহিম (রহঃ) আবূ উমামা ইবনু সাহল (রহঃ) বলেন, আমরা উমর ইবনু আবদুল আযীয এর সাথে যুহরের সালাত আদায় করলাম। এরপর বের হয়ে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম আমরা যেয়ে দেখি তিনি আসরের সালাত আদায় করছেন। আমি বললাম- চাচা জান এটি কোন সালাত যা যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, আসর, আর এটই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত যা আমরা তাঁর সঙ্গে আদায় করতাম।

১২৯০ আমর ইবনু সাওয়াদ আল আমিরী, মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী ও আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে আসরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে বনী সালামার এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে এল এবং বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা আপনার জন্য একটি উট যবেহ করার ইচ্ছা করেছি, আমরা চাই যে, আপনি সেখানে তাশরীফ নিবেন। তিনি বললেন আচ্ছা। এরপর তিনি রওনা হলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে গেলাম, আমরা যেয়ে দেখলাম তখনও উটটি যবেহ করা হয়নি। এরপর আমরা যবেহ করলাম। তার গোশত টূকরো করা হলো, তারপর তা রান্না করা হলো, এরপর সূর্য ডুবে যাবার আগেই আমরা তা খেলাম। মুরাদী (রহঃ) বলেন, ইবনু ওয়াহাব (রহঃ) ইবনু লাহী’আ ও আমর ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

১২৯১ মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রাযি (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আসর আদায় করতাম। এরপর উঠ যবেহ করা হত এবং তা দশভাগে বিভক্ত করা হত, এরপর তা রান্না করতাম এবং সূর্য ডুবে যাবার আগেই ভূনা গোশত খেতাম।

১২৯২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আওযাঈ (রহঃ) থেকে এসনদে বর্ণিত, তবে রাবী বলেছেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় আসরের সালাত শেষে উট যবেহ করতাম, কিন্তু তিনি বলেননি যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম।

১২৯৩ ইয়াহইয় ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যার আসরের সালাত ছুটে যায় তার অবস্হা এমন যে, যেন তার পরিজন ও সস্পদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে

১২৯৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমর আবূ-নাকিদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমর বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আবূ বাকর (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মারফু।

১২৯৫ হারুন ইবনু সাঈদ-আন আয়লী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার আসর ছুটে যায় তার অবস্হা এরূপ যে, যেন তার পরিবার ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল।

১২৯৬ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাদের কবর ও ঘরকে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন। কেননা তারা আমাদের মধ্যবতী সালাত থেকে বিরত রেখেছে এমন কি সূর্য অস্ত গেল।

১২৯৭ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর আলী মুকাদ্দামী, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হিশাম থেকে উক্ত সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা! করেছেন।

১২৯৮ ইবনুল মূসান্না, মুহাম্মদ বাশশার (রাঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন তারা আমাদেরকে মধ্যবতী সালাত আদায় থেকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে এমন কি সূর্য ড়ূবে গেল। আল্লাহ কবর, গৃহ কিংবা উদর অগ্নিতে পরিপূর্ণ করেদিন। শুবা (রহঃ) “ঘর নাকি উদর”, এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন।

১২৯৯ মুহাম্মদ ইবনুুূল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ঘর এবং কবর এতে কোনরুপ সন্দেহ পোষণ করেন নি।

১৩০০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেনঃ যখন খন্দকের কোন এক মুখে বসা ছিলেন। তারা আমাদের মধ্যবতী সালাত থেকে বিরত রেখেছে এমন কি সূর্য ঢুবে গেল। আল্লাহ তাদের কবর ও ঘরকে অগ্নিময় করেদিন। অথবা বলেছেন, কবর, উদর কে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন।

১৩০১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের দিন বলেছেন, তারা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত-আসরের সালাত থেকে বিরত রেখেছে আল্লাহ তাদের ঘর ও কবরকে আগুনে পরিপূর্ণ করে দিন। এরপর তিনি এ সালাত মাগরিব ও এশার মধ্যবতী সময়ে আদায়- করেন।

১৩০২ আওন ইবনু সালাম আল কুফী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আসরের সালাত থেকে বিরত রাখে। এমনকি সূর্য লাল কিংবা হলুদ বর্ণ হয়েগেল। এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওরা আমাদেরকে মধ্যবর্তী সালাত আসরের সালাত থেকে বিরত রাখল। আল্লাহ তাদের উদর ও কবরকে অগ্নিময় করেদিন।

১৩০৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবূ ইউনূস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) কুরআন শরীফের কিছু অংশ লিখে দিতে আমাকে আদেশ করলেন। এবং বললেন, যখন তুমি তোমার সালাতের প্রতি কিছু অংশ লিখে দিতে আমাকে আদেশ করলেন এবং বললেন, “যখন তুমি তোমার সালাতের প্রতি যত্নবান হবে বিশেষতম ধ্যবতীঁ সালাতের” (২-২৩৮) এ আয়াতে পৌছবে তখন আমাকে জানাবে। তিনি বলেন আমি উক্ত আয়াতে পৌছলে তাঁকে অবহিত করলাম, এবং তিনি আমাকে দিয়া লিখালেন- তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষতম ধ্যবতীঁ সালাত ও আসরের সালাত এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীত ভাবে দাঁড়াবে।” (২-২৩৮) (এরপর) আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরুপ শুনেছি।

১৩০৪ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে এবং আসরের সালাতের প্রতি” (২-২৩৮) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে আর আমরা তা পড়েছি যত দিন আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর আল্লাহ তা রহিত করে দিলেন। এরপর অবতীর্ণ হল, “তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবতী সালাতের” (২-২৩৮)। সে সময়ে এক ব্যাক্তি যিনি ‘শাকীক” এর কাছে বসা ছিলেন তিনি বললেন, তাহলে এ হচ্ছে আসরের সালাত। তখন বারা (রাঃ) বললেন, কি রূপে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে এবং কিভাবে আল্লাহ তা রহিত করে দিলেন আমি তা তোমাকে অবহিত করেছি। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। ইমাম মুসলিম বলেন, এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন আশজাঈ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে। তিনি বলেন, আমরা এ আয়াতটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কিছু পর্যন্ত পাঠ করেছি। ফূবায়ল ইবনু মারযূক (রহঃ) এর হাদীসের অনুরূপ।

১৩০৫ আবূ গাসসান আল মিসামাঈ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, খন্দকের দিন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কুরাইশ কাফিরদেরকে ভৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি আসরের সালাত আদায় করতে পারলাম না। অথচ-সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হয়ে গেল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও তো ঐ সালাত আদায় করতে পারি নি। এরপর আমরা এক কংকরময় স্হানের দিকে নেমে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযু করলেন, আমরাও উযু করলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যাস্তের পর আসরের সালাত আদায় করলেন এরপর মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।

১৩০৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ বর্ণনা করছেন।

১৩০৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে পালাক্রমে এক দল ফেরেশতা রাতে এবং এক দল ফেরেশতা দিনে আসতে থাকেন এবং তারা- উভয় দল ফজর ও আসরের সালাতে একত্র হন। এরপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি যাপন করেছিলে তাঁরা ঊধলোকে চলে যান। এরপর তাঁদের প্রতি পালক তাদেরকে প্রশ্ন করেন, অথচ তিনি তাঁদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত- তোমরা আমার বান্দাদের কি হালে রেখে এলে? তখন তাঁরা বলেন আমরা যখন তাদেরকে রেখে আসি তখনও তারা সালাত আদায় করছিলেন আর যখন তাদের কাছে গিয়েছিম তখনও তারা আদায় করছিলেন।

১৩০৮ মুহাস্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ফিরিস্তারা তোমাদের মধ্যে পালাক্রমে আসতে থাকেন। এরপর আবূয যিনাদ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৩০৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্নিমার চাঁদের দিকে নযর করে বললেনঃ ওহে! তোমরা অচিরেই তোমাদের রবকে দেখতে পাবে যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তোমরা আল্লাহকে দেখতে গিয়ে পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা সক্ষম হও। তোমরা যেন সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করতে পিছপা হয়োনা। অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত। এরপর জারীর (রাঃ) পাঠ করলেনঃ এবং সূর্যো দয়ের আগে ও সূর্যাস্তের তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর”।[২০-১৩০]

১৩১০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র, আবূ উসামা ও ওয়াকী (রহঃ) আমার কাছে এই সনদে রিওয়ায়াত বর্ণনায় বলেনঃ জেনে রেখ, অচিরেই তোমাদেরকে স্বীয় প্রতিপালকের কাছে পেশ করা হবে, তোমরা তাঁকে দেখতে পাবে; যেমন দেখতে পাচ্ছ এ চাঁদকে। বর্ণনাকারী বলেন- এরপর পাঠ করেন। এবং তিনি জারীরের নাম উল্লেখ করেননি।

১৩১১ আবূ বকর ইবনু শায়বা (রহঃ) আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু উমার ইবনু রূয়াইবা (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, যে সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের অর্থাৎ ফজর ও আসরের সালাত আদায় করে, সে কখনও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তখন বসরাবাসী এক ব্যাক্তি তাঁকে বললেন,- আপনি কি তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন হাঁ। তখন সে ব্যাক্তি বলল, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বকর্ণে-তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং আমার হৃদয়ে তা গেঁথে রেখেছি।

১৩১২ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ দাওরাকী (রহঃ) ইবনু উমারা ইবনু রূমাইবা (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি স্যূর্য দয়ের ও সুর্যাস্তের সালাত আদায় করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তখন কাছে বাসরাবাসী এক লোক ছিলেন। তিনি বললেন, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শুনেছেন? তিনি (বর্ননাকারী) বললেন হ্যা, আমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি। লোকটি বললেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা বলতে শুনেছি সে স্হানে যে স্থানে আপনি তার থেকে শুনেছেন।

১৩১৩ হাদ্দাব ইবনু খালিদ আল আযদী (রহঃ) আবূ বাকর (রহঃ) তার পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি শান্ত-স্নিগ্ধ দুই সময়ে সালাত অর্থাৎ ফজর ও আসর আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

১৩১৪ ইবনু আবূ উমর, ইবনু খিরাশ (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত উক্ত সনদে উভয় রাবী আবূ বাকর (রহঃ)-এর পিতার নাম উল্লেখ করে বলেন যে, আবূ বাকর ইবনু মূসা।

১৩১৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালামা ইবনুল আক্বওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ড়ূবে গেলে এবং পর্দার অন্তরালে চলেগেলে মাগরিবের সালাত আদায় করতেন।

১৩১৬ মুহাম্মদ ইবনু মিহরান আর রাযী ইবনু খাদিজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম এমন সময়ে যে, আমাদের কেউ ফিরে যেত এবং নিক্ষিপ্ত র্তীর যে স্থানে পৌছত সে স্হান দেখতে পেত।

১৩১৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) রাফী ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ -এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করতাম (উপরে বর্ণিত হাদীসে) অনুরুপ।

১৩১৮ আমর ইবনু সাওয়াদ আমিরী ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত, যাকে আতামা বলা হতো দেরী করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ততক্ষন বের হন নাই, যতক্ষন না উমার (রাঃ) বললেন যে, মিহিলা ও বালকেরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে মসজিদের লোকদের- বললেন, তোমরা ছাড়া কেউই এ সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না। এটি ছিল সেই সময়ের ঘটনা, যখন মানুষের মধ্যে ইসলাম ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। হারামালা তার বর্ণনায় অতিরিক্ত বলেন, ইবনু শিহাব বলেন, আমাকে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য উচিত নয় যে, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতের জন্য পিরাপিরি করবে। এটি তখনই বলে ছিলেন, যখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উচ্চস্বরে আহবান করে ছিলেন।

১৩১৯ আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনুল-লায়স (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এতে এ কথা উল্লেখ করেন নি যে, আমাকে বলা হয়েছে- এবং তার পরবর্তী অংশ।

১৩২০ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এশার সালাতে) দেরী করেন। এমনকি রাতের এক বড় অংশ অতিবাহিত হয়েগেল। যারা মসজিদে ছিল তারও ঘূমিয়ে পড়ল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর বললেন, এই সালাতের প্রকৃত সময়, যদি না আমি আমার উম্মাতের জন্য একে কষ্টকর বলে মনে করতাম। আবদুল রাযযাকের বর্ণনায় রয়েছেঃ যদি আমার উম্মাতের উপর তা কষ্ট কর না হতো।

১৩২১ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমরা শেষ এশার সালাত আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপেক্ষায় ছিলাম। রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা আরো কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন। আমরা জানতাম না যে, জরুরী কোন কাজ তাঁকে তাঁর গৃহে ব্যস্ত রেখেছিল, না অন্য কোন কাজে তিনি মশশুল ছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, তোমরা এমন এক সালাতের অপেক্ষা করছ, যার জন্য তোমরা-ছাড়া অন্য কোন ধর্মা বলন্বীগণ অপেক্ষা করেনি। আমার উম্মাতের উপর যদি তা ভারী না হতো, তাহলে তাদের নিয়ে এই সময়ই সালাত আদায় করতাম। তারপর তিনি মু-আযযিনকে আদেশ দিলেন। সে সালাতের ইকামত দিল এবং তিনি সালাত আদায় করলেন।

১৩২২ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে সালাতে দেরী করেন। এমন কি আমরা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়ি, আবার জেগে উঠি, আবার ঘুমিয়ে পড়ি, আবার জেগে উঠি। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তোমরা ছাড়া পৃথিবীর কেউই এই রাতে এই সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে না।

১৩২৩ আবূ বকর ইবনু নাফি আবদী (রহঃ) সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা আনাস (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আংটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-মাঝরাত পর্যন্ত অথবা মাঝরাত অতিবাহিত হওয়ার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত এশার সালাত বিলম্ভ করেন। এরপর তিনি এসে বললেন লোকেরা সালাত আদায় করে শুয়ে পড়েছে তোমরা ততক্ষন পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় ছিলে, ততক্ষন তোমরা সালাতেরত ছিলে বলে গণ্য হবে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রুপার আংটির চমক দেখছিলাম এবং তখন তিনি তাঁর বামহাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল উঠিয়ে ছিলেন।

১৩২৪ হাজ্জাজ ইবনুুশ শাঈর (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন কি মাঝ রাতের কাছাকাছি সময় হয়ে গেল তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্হিত হয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন। তখন আমি যেন তাঁর হাতের রুপার আংটির চমক দেখছিলাম।

১৩২৫ আবদুল্লাহ ইবনু সাব্বাহ আ-আত্তার (রহঃ) কুবুরা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে তারপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন—অংশটি উল্লেখ করেন নি।

১৩২৬ আবূ আমির আল আশ’আরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিও আমার সঙ্গীরা যারা নৌকায় করে আমার সাথে এস্বছিল, মদিনার একটি কংকরময় প্রান্তরে অবতরণ করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একদল প্রত্যেক রাতে এশার সালাতের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পালাক্রমে আসত। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, একরাতে আমি ও আমার কতিপয় সাথীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্হিত হলাম। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাজে কাজে মশশুল ছিলেন। ফলে এশার সালাতে দেরী করলেন। এমন কি অর্ধ রাত্রি হয়ে গেল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্হিত লোকদের বললেন, তোমরা নিজ জায়গায় থাক, আমি তোমাদের বাতলিয়ে দিচ্ছি। তোমাদের জন্য সুসংবাদ, তোমাদের উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্র যে, এই সময় তোমরা ছাড়া আর কেউই সালাত আদায় করছেনা অথবা বললেন, তোমরা ছাড়া কেউই এ সময় সালাত আদায় করে নি বর্ণনা কারী বলেন, আমি ঠিক করে বলতে পারছি না, তিনি এই দুটি বাক্যের কোনটি বলে ছিলেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা শুনে আনন্দের সাথে এলাম।

১৩২৭ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রাঃ) বলেন যে, আমি আতা-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার নিকট কোন সময়টি উত্তম যে, আমি একাকী বা জামাআতে ইশার সালাত আদায় করব, যাকে লোকেরা আতামা বলে? আতা বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে এশার সালাতে উপস্হিত হতে দেরী করেন এমন কি লোক জন ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে উঠে। আবার ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে উঠে তারপর উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আল সালাত! আতা বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন, আমি এখনও যেন দেখতে পাচ্ছি যে, তার মাথা থেকে পানি পড়ছে, তখন তাঁর হাত তাঁর মাথার এক পাশে রাখা ছিল। আর তিনি বললেন- আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কশ্তকর মনে না করতাম, তাহলে তাদের এই সময় সালাত আদায় করতে আদেশ দিতাম। ইবনু জুরায়জ (রহঃ) বলেন, আমি আতা’র কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাসূলুল্লাহ কি ভাবে তার মাথার উপর হাত রেখে ছিলেন এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর কাছে কি ভাবে বর্ণনা করেছেন? তখন আতা তার আঙ্গুলগুলো কিছুটা ফাঁক এবং আঙ্গুলের অগ্রভাগগুলো মাথার উপরিভাগে রাখেন। তারপর এভাবে আঙ্গূলটেনে আনেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি চেহারার দিকের কানের পার্শু স্পর্শ করে। এরপর হাত নিয়ে আসেন কানপউহ ও দাড়ির পার্শ পর্যন্ত। তিনিঁ চিপ ও দেননি, কিছুতে ধরেনও নি, কেবল এভাবে নিয়ে আসেন। ইবনু জুরায়জ বলেন যে, আমি আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ইশার সালাত কতক্ষণ বিলম্ভ করে আদায় করেছিলেন? তিনি বললেন, আমি জানি না, আতা বলেন, আমি এটাই পছন্দ করি যে, একাকই হই বা ইমাম হিসাবে আদায় করি এশার সালাত ততক্ষন পর্যন্ত দেরী করে আদায় করি, যে রুপ দেরী করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন। একাকী আদায় করার সময় দেরী করা যদি তোমার জন্য কষ্টকর হয় অথবা জামা*আতে পড়া অবস্হায় যদি লোকদের জন্য কষ্ট কর হয়, তাহলে মধ্যম সময়ে এই সালাত আদায় করবে। তাড়াতাড়িও করবে না অথবা বেশী দেরীও করবে না।

১৩২৮ ইয়াইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার। সালাত দেরী করে আদায় করতেন।

১৩২৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মতই সালাত আদায় করতেন; তবে এশার সালাত তোমাদের চাইতে একটু দেরী করে আদায় করতেন এবং সালাত সংক্ষেপে আদায় করতেন। আবূ কামিলের অপর এক বর্ণনায় এর স্হলে বর্ণিত হয়েছে।

১৩৩০ যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, বেদুঈনরা যেন তোমাদের সালাতের নাম করণে তোমাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার না করে। ম্মরণ রেখো, এ সালাতের নাম এশা। বেদুঈনরা সে সময় উটের দুগ্ধ দোহন করে বলে একে আতামা- নামে অবহিত করত।

১৩৩১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন, বেদুঈনরা যেন তোমাদের এশার সালাতের নামকরণে প্রধান্য লাভ না করে। কেননা আল্লাহর কিতাবে একে এশা নামে অতিহিত করা হয়েছে; কিন্তু বেদুঈনরা সে সময় উটের দুগ্ধ দোহন করে বলে একে আতামা বলে।

১৩৩২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে, মুমিন মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করে ফিরতেন নিজনিজ চাঁদর গায়ে জাড়িয়ে এবং কেউ তাদেরকে চিনতে পারত না।

১৩৩৩ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুমিন মহিলারা গায়ে চাঁদর জড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংগে ফজরের সালাতে শরীক হতেন। তারপর নিজ গৃহে ফিরে যেতেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করতেন বিধায় তাদেরকে চেনা যেতো না।

১৩৩৪ নাসুর ইবনু আলী আল জাহযামী ও ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, ম্ফিলারা গায়ে চাঁদর জড়িয়ে চলে যেতেন, কিন্তু অন্ধকার হেতু তাদেরকে চেনা যেতোনা। আনসারী তাঁর অপর এক বর্ণনায় এর স্হলে বর্ণনা করেছেন।

১৩৩৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জাজ মদিনায় উপস্হিত হলে আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে (সালাতের সময় সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য মধ্যাকাশ থেকে ঢলে পড়লেই যুহরের সালাত আদায় করতেন, সুর্যের আলো পরিষ্কার থাকা অবস্হাতেই আসরের সালাত আদায় করতেন, সূর্য ডুবলেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন এবং এশার সালাত কখনো দেরী করে আবার কখনো তারাতারি করে আদায় করতেন। যখন দেখতেন যে, লোকজন সমবেত হয়েছে তখন তারাতারি করে আদায় নিতেন। আর যখন দেখতেন যে, লোকদের দেরী হচ্ছে তখন তিনিও বিলম্ব করতেন। আর ফজরের সালাত সাহাবাগণ অথবা রাবী বলেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্ধকার থাকতেই আদায় করতেন।

১৩৩৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূআয (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু হাসান ইবনু আলী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাজ্জাজ সালাত দেরী করে আদায় করতেন। অতঃপর আমরা জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সালাতের সময় সম্পর্কে উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।

১৩৩৭ ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) সায়্যার ইবনু সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালত সম্পর্কে আবূ বারযা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি নিজেই শুনেছেন? সায়্যার বলেন, আমি যেন এই মুহূর্তেই শুনতে পাচ্ছি। এরপর সায়্যার বলেন, আমি আমার পিতাকে আবূ বারযা (রাঃ)-এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নানাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি আবূ বারযা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কোন কোন সালাত অর্থাৎ এশার সালাত অর্ধ রাত পর্যন্ত বিলম্ব করতে কুণ্ঠিত হতেন না। তবে এশার সালাতের পূর্বে নিদ্রা যেতে এবং পরে আলোচনায় মশশুল হতে অপছন্দ করতেন। শুবা বলেন, এরপর আমি আবূ বারযা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, এবং জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য ঢলে পড়ত। আসরের সালাত আদায় করতেন, যখন সালাত শেষে কোন ব্যাক্তি মদিনার শেষ প্রান্তে চলে যেত এবং সূর্য তখনো সর্জীব থাকত।শুবা বলেন, পরে আমি আবার আবূ বারযা (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সময় ফজরের সালাত আদায় করতেন যে, সালাত শেষ করে মুসল্লী যখন ফিরে বসত, তখন সামনে বসা লোকটি পরিচিত হলে তাকে ছিনতে পারত। বর্ণনা কারী বলেন, রাসুলুল্লাহ ফজরের সালাতে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত পাঠ করতেন।

১৩৩৮ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ এশার সালাত অর্ধ রাত পর্যন্ত বিলম্ভ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। তিনি এশা-এর সালাতের পূর্বে নিদ্রা যাওয়া। এবং সালাতের পরে গল্পগুজব করাকে পছন্দ করতেন না। রাবী শুবা বলেন এরপর আমি আবার আমার উস্তাদের সংগে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।

১৩৩৯ আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ বারযা আল আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী কঁরতেন। এশার সালাতের আগে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথা বার্তা তিনি অপছন্দ করতেন। ফজরের সালাতে তিনি ৬০ থেকে ১০০ আয়াত পাঠ করতেন। এমন সময় সালাত শেষ করতেন, যখন আমরা একে অপরের চেহারা চিনতে পারতাম।

১৩৪০ খালাফ ইবনু হিশাম , আবূ রাবী আয যাহরানী ও আবূ কামিল আল জাহদারী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, যখন তোমার উপর এমন সব আমীর হবেন, যারা নির্ধারিত সময় থেকে বিলম্বে সালাত আদায় করবে অথবা সালাতের সময় ফাওত করে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে কি করতে বলেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সালাত যথা সময়ে আদায় করে নিবে। তারপর তাদের সঙ্গে যদি পাও তবে তুমি আবার আদায় করে নিবে এবং এ হবে তোমার জন্য নফল। বর্ণনাকারী খালাফ তাঁর বর্ণনায় শব্দ উল্লেখ করেন নি।

১৩৪১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ যার! আমার পরে এমন সব শাসক আসবে, যারা সালাতকে মেরে ফেলবে। তখন তুমি তোমার সালাত যথাসময়ে আদায় করে নিবে। আর সময় মত যদি তাদের সঙ্গে পড়তে পার, তবে তা হবে তোমার জন্য নফল। নতুবা তুমি তো তোমার সালাত হিফাযত করেই ফেলেছ।

১৩৪২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার খলীল আমাকে এই অসিয়্যত করেছেন যে, আমি যেন (আমীরের) কথা শুনি ও মানি, যদিও তিনি হাত-পা কাটা দাস হন এবং আমি যেন যথাসময়ে সালাত আদায় করি। অতএব যদি দেখতে পাও যে লোকেরাও সালাত আদায় করে ফেলেছে, তাহলে তুমি তো তোমার সালাত আদায় করেই নিয়েছ অন্যথায় (তুমি তাদের সঙ্গে সালাত আদায় করলে) তা তোমার জন্য নফল হবে।

১৩৪৩ ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরু স্পর্শ করে বললেন, তুমি কি করবে, যখন এমন এক সমাজ থাকবে যারা যথাসময় থেকে বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে? আবূ যার (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে কি নির্দেশ করেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যথাসময় সালাত আদায় করে নিজের প্রয়োজনে বেরিয়ে যাবে। এরপর যদি সালাতের ইকামত হয় এবং তুমি মসজিদে উপস্হিত থাক, তাহলে তুমিও সালাত আদায় করে নিবে।

১৩৪৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূল আলিয়া বাররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন ইবনু যিয়াদ সালাত আদায়ে দেরী করলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) আমার কাছে আসলেন। আমি তার জন্য একটি কুরসী রাখলাম। এবং তিনি তাতে বসলেন। আমি তার কাছে ইবনু যিয়াদের এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। (তা শুনে) তিনি তার ঠৌটে কামড় দিলেন এবং আমার রানে হাত মেরে বললেন, তুমি যেমন আমাকে জিজ্ঞাসা করছ, আমিও তেমনি আবূ যার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করে ছিলাম। আর তিনিও আমার রানে হাত মেরে যেমন ভাবে আমি তোমার রানে হাত মেরেছি -বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করেছিলাম, যেমন ভাবে তুমি আমাকে প্রশ্ন করেছ এবং তিনিও আমার রানে হাত মেরে ছিলেন। যেমন ভাবে আমি তোমার রানে হাতমেরেছি অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তুমি সালাত যথাসময় আদায় করে নাও। তারপর যদি তাদের সঙ্গে সালাত পাও তাহলে তুমিও আদায় করেনিও। আর এমন বলোনা যে, আমি সালাত আদায় করে ফেলেছি, তাই আবার সালাত আদায় করব না।

১৩৪৫ আসিম ইবনু নাযর আত তায়মী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা এমন এক সমাজে থাকবে যারা যথাসময় থেকে বিলম্ব করে সালাত আদায় করবে তখন কি করবে? অথবা বলেছেন, তুমি কি করবে? অতঃপর বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করবে। এরপর যদি সালাতের ইকামাত হয়, তাহলে তাদের সঙ্গেও সালাত আদায় করবে এবং তা হবে তোমার জন্য অতিরিক্ত সাওয়াব।

১৩৪৬ আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) আবূল আলিয়া বাররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনুু-সামিত কে বললাম, আমরা জ্বুমূআর দিন এমন শাসকদের পেছনে সালাত আদায় করি, যারা বিলম্ভ করে। বর্ণনা কারী বলেন, এরপর আবদুল্লাহ ইবনুু-সামিত (রাঃ) আমার রানে এমন হাত মারলেন যে, আমি ব্যথা পেলাম। তারপর বললেন, আমিও আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এবং তিনি আমার রানে হাত মেরে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন যে, তোমরা যথা সময়ে সালাত আদায় করে নিও এবং তাদের সঙ্গে আদায়কৃত সালাত কে নফল ধরে নিও বর্ণনাকারী বলেন, আবদুল্লাহ (রহঃ) অপর এক বর্ণনায় বলেছেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার (রাঃ)-এর রানে হাত মেরে ছিলেন।

১৩৪৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো একাকী সালাত আদায় করার চাইতে জামাআতে পড়ার ফযীলত পঁচিশ গুন বেশী।

১৩৪৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কারো একাকী সালাত আদায়ের চাইতে জামাআতে সালাত আদায় করার ফযীলত পঁচিশ গুন বেশী। তিনি বলেন, রাতের এবং দিনের ফিরিশতারা ফজরের সালাতে এসে একত্রিত হয়। আবূ হূরায়রা (রাঃ) বলেন, যদি তোমরা চাও তাহলে, (প্রমাণ স্বরূপ) এই আয়াতটি পাঠ ক (রহঃ) “আর (কায়েমকর) ফজরের সালাত, কেননা ফজরের সালাত (একত্রে) উপস্থিত হওয়ার সময়”।

১৩৪৯ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বলতে শুনেছি।

১৩৫০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, জামাআতে সালাত একাকী সালাতের পঁচিশগুন সমান।

১৩৫১ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমামের সঙ্গে একবার সালাত আদায় করা একাকী পঁচিশবার সালাত আদায়ের চাইতে উত্তম।

১৩৫২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাআতে সালাত আদায় করার মর্যাদা একাকী সালাত আদায়ের চাইতে সাতাশ গুন বেশী।

১৩৫৩ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত আদায় করা একাকী সালাত আদায়ের সাতাশগুন বেশী।

১৩৫৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) উপরোক্ত সনদে ইবনু নুমায়র (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা, করেন, “বিশগুন থেকে কিছু বেশী; এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর বর্ণনায় বলেন, সাতাশ গুন।

১৩৫৫ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বিশ থেকে কিছু বেশী।

১৩৫৬ আমর আবূ নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সালাতে কোন কোন লোককে অনুপস্থিত পান। তখন তিনি বললেন, আমি সংকল্প করেছিলাম যে, কোন এক জনকে এই মর্মে আদেশ করি যে সে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করূক এবং আমি তাদের পিছনে যাই, যারা সালাতে আসেনি। তারপর আমি নির্দেশ দেই যে, তাদের ঘর কাঠের আটি দ্বারা তাদেরসহ জালিয়ে দেওয়া হোক। তারা যদি জানত যে, এখানে আসলে উটের গোশত ভর্তি মোটা হাঁড় পাওয়া যাবে, তবে নিশ্চয়ই এই সালাতে অর্থাৎ এশার সালাতে উপস্থিত হত।

১৩৫৭ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ বলেছেন যে, মুনাফিকদের জন্য সবচাইতে ভারী সালাত হলো এশা ও ফজরের সালাত তারা যদি এই দুই সালাতে কী মর্যাদা আছে জানতে পারত; তবে হামাগুড়ি দিয়েও এসে সালাতে উপস্হিত হতো। আমি মনস্হ করেছিলাম যে, আমি সালাত সম্পর্কে আদেশ করি যে, ইকামত দেওয়া হোক। এরপর একজন কে নির্দেশ করি যে, সে- লোকদের নিয়ে-সালাত কায়েম করুক। তারপর আমি লাকড়ীর বোঝাসহ একদল লোক নিয়ে সেই সব লোকের ঘরে চলে যাই যারা সালাতে উপস্হিত হয় না। অতঃপর তাদের ঘর আগুন দিয়ে তাদের সহ জ্বালিয়ে দেই।

১৩৫৮ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহু (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ হূরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ থেকে কতকগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার একটি এই যে, রাসুলুল্লাহ বলেন, আমি মনস্ত করি যে, আমি আমার যুবকদের লাকড়ীর-আটি আমার জন্য প্রস্তুত করে দেয়ার নির্দেশ দেই এবং এক –ব্যাক্তিকে আদেশ দেই যে, সে লোকদের সালাত কায়েম করে। এরপর যারা-(জামাআতে শরীক না হয়ে) ঘরে বসে থাকবে, তাদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।

১৩৫৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্নিত হয়েছে।

১৩৬০ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সমস্ত লোক যারা জুমূআয় শামিল হয়না তাদের সম্পর্কে বলেছেন, আমি মনস্হ করেছি যে, এক ব্যাক্তিকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেই, আর যারা জুমূআয় শামিল- হয় না, সে সব লোকসহ তাদের ঘর তাদের ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই।

১৩৬১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ), সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক অন্ধ ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এমন কোন লোক নেই। যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে। অতএব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাওয়াল করলেন যে, তাকে তার ঘরে সালাত আদায়ের অনুমতি দেয়া হোক। অতঃপর তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। সে চলে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সালাতের আযান শুনতে পাও? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তুমি (জামাঅোতে) হাযির হবে।

১৩৬২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, আমরা দেখেছি যে, সেই সমস্ত মুনাফিক, যাদের মুনাফিকী সম্পর্কে জানাজানি হয়ে পড়েছিল এবং রোগী ব্যাক্তিরা ব্যতীত অন্য কেউ জামাঁআতে অনুপস্হিত থাকে না, যে সব রোগী দুই জনের কাঁধে ভর করে চলতে সক্ষম তারাও জামাআতে শরীক হতো। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিদায়াতের পথ শিক্ষা দিয়েছেন। এই সকল পথের একটি হল সেই মসজিদে সালাত আদায় করা যেখানে আযান দেয়া হয়েছে।

১৩৬৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ব্যাক্তি পছন্দ করে যে কাল বিচার দিবসে সে মুসলমান হিসাবে আল্লাহ সাক্ষাত লাভ করবে, তার উচিত এই সালাত সমুহের সংরক্ষণ করা, যেখানে সালাতের জন্য আহবান করা হয়। কারণ, আল্লাহ তোমাদের নাবীকে হিদায়াতের সকল পথ বাতলে দিয়েছেন। আর এই সমস্ত সালাত হল হিদায়াতের পথ সমুহের অন্যতম। তোমরা যদি এই সকল সালাত ঘরে আদায় কর, যেমন একদল লোক জামাআত ছেড়ে ঘরে সালাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তোমাদের নাবীর সূন্নাতকে ছেড়ে দিলে। তোমরা যদি নাবীর সূন্নাত ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা অবশ্যই গুমরাহ হয়ে যাবে। যে উত্তম রুপে পবিত্র হয়ে এই সকল মসজিদের একটির দিকে অগ্রসর হবে তার প্রত্যেক কদমের জন্য একটি করে নেকী লেখা হবে এবং তার একটি মর্যাদা পাবে এবং একটি গুনাহ মাফ করা হবে। তারপর একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া আর কাউকে জামাআত থেকে বাদ পড়তে আমরা দেখিনি। অনেক লোক দু- জনের কাঁধে ভর করে হেচঁড়িয়ে হেচঁড়িয়ে মসজিদে আসত এবং তাদের সারিতে দাঁড় করিয়া দেয়া হতো।

১৩৬৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ-শায়বা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা একদিন আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সঙ্গে মসজিদে উপবিষ্ট ছিলাম। মুআয বিন আযান দিলেন। তখন এক ব্যাক্তি মসজিদ থেকে উঠে চলে যেতে লাগল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাকে তাকিয়ে দেখলেন ও অনুসরণ করলেন। তারপর লোকটি মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, লোকটি আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ)-এর কথার নাফরমানী করল।

১৩৬৫ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) আবূ শা’সা আল মুহারিবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছি যে, তিনি এক ব্যাক্তিকে আযানের পরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখলেন। তখন – তিনি বললেন, লোকটি আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ) -এর নাফরমানী করল।

১৩৬৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু আবূ আমরা (রহঃ) বলেন, একদিন উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) মাগরিবের সালাতের পর মসজিদে প্রবেশ করেন এবং একাকী বসে থাকেন; তখন তাঁর কাছে গিয়ে বসলাম। তখন বললেন, ভাতুষ্পূত্র! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি জামাআতে এশার সালাত আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত আদায় করল। আর যে ব্যাক্তি জামাআতে ফজরের সালাত আদায় করল সে যেন সারা রাত সালাত আদায় করল।

১৩৬৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)- আবূ সাহল উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) থেকে একই সুত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

১৩৬৮ নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর যিম্মার ব্যাপারে তোমাদের কারো কাছে কিছু চান না। এমন হবে না যে, তোমাকে ধরে তিনি আধো মূখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

১৩৬৯ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আত দাওরাকী (রহঃ) আনাস ইবনু সীরিন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জন্দুব আল-কাসরী (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফজরের সালাত আদায় করল, সে আল্লাহর যিম্মায় রয়েগেল। তখন তার আশ্রয়ের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা কারো কাছে কিছু চাইবেন না; কিন্তু যার যিম্মার ব্যাপারে তিনি চাইবেন, সে আধো মুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

১৩৭০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জুনদুব ইবনু সুফিয়ানের সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনূরুপ হাদীস বর্ণিত আছে।

১৩৭১ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) মাহমূদ ইবনুল রাবী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ত্রকজন সাহাবী ছিলেন আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং একজন আনসার ও ছিলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে এবং আমি (সালাতে) আমার গোত্রের ইমামতি করি। তখন আমি তাদের (সালাতের জন্য) মসজিদে আসতে পারি না। অতএব, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ইচ্ছা হয় যে, আপনি আমার ঘরে আসবেন এবং আমার ঘরের কোন একটি অংশে সালাত আদায় করবেন। আর আমি সেই স্হানটি আমার মূসা ল্লা হিসাবে ব্যবহার করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ শীগ্রই আমি তা করব। ইতবান (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরদিন দ্বিপ্রহরে আবূ বাকর (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসেন এবং প্রবেশের অনুমতি চান। আমি তাকে অনুমতি দিলে তিনি প্রবেশ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার ঘরের কোন অংশে আমার সালাত আদায় পছন্দ কর? তখন আমি আমার ঘরের একটি কোণের প্রতি ইঙ্গিত করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন। আমরাও তার পেছনে দাঁড়ালাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। ইতবান (রাঃ) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য শিরনী পাক করাছিম। এই জন্য তাঁকে আটকে রাখলাম। ইতিমধ্যে মহল্লার অন্যান্য প্রতিবেশীরাও এসে একত্রিত হলো। এ সময় তাদের মধ্যে একজন বলল, মালিক ইবনু দাখশান কোথায়? কেউ বলল, সে তো মুনাফিক, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসেনা। তা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরুপ বলবে না। কেননা তোমরা কি দেখনা যে, আল্লাহকে রাযী করার উদ্দেশ্যে সে “লা-ইলাহা ইল্লাহু- বলেছে? রাবী বলেনঃ উপস্হিত লোকেরা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলেই তা ভাল জানেন। এক ব্যাক্তি বলল, আমরা তো মুনাফিকদের প্রতই তার প্রীতি ও সহানুভূতি দেখতে পাচ্ছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে সন্তুষ্ট করার জন্য “লা-ইলাহা ইল্লাহু” বলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করেদেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমি বুসায়ন ইবনু মুহাম্মাদ আনসারী, যিনি সালিম গোত্রের লোক ছিলেন, তাঁকে মাহমুদ ইবনুুর রাবী (রাঃ)-এর হাদীসটি সম্পর্কে করেছিলাম। তিনি হাদীসটির যথার্থতা স্বীকার করেছেন।

১৩৭২ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে-উপস্হিত হলাম তারপর তিনি ইউনূস এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এই কথাগুলো বাড়িয়ে বলেন যে, একব্যাক্তি বলল, মালিক ইবনু দাখশান কোথায়? মাহমুদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) বলেন, আমি এই হাদীসটি অনেকের কাছে বর্ণনা করেছি। তাদের মধ্যে আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) ও শামিল। তিনি বললেন, আমার ধারণা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রুপ বলেননি। তখন আমি কসম করে বললাম- আমি ইতিবানের কাছে যাব এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করব। তারপর আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং তাকে খুবই বৃদ্ধা দেখতে পেলাম। তাঁর দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি তাঁর গোত্রের ইমাম ছিলেন। আমি তাঁর পাশে বসলাম এবং হার্দীসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস! করলাম। তিনি সেই রকমই বললেন, যে রকম আমি প্রথম বর্ণনা করেছি। যুহরি (রহঃ) বলেন, এরপর আল্লাহর বহু আদেশ নিষেধ অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার জানা আছে। অতএব যে ব্যাক্তি ধোঁকায় পড়তে না চায় সে তা থেকে বেঁচে থাকবে।

১৩৭৩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) মাহমূদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেই কুলির কথা এখনঁও স্মরণ আছে, যেটি তিনি আমাদের ঘরে বালতি থেকে (আমার উপর) ঢেলেছিলেন। মাহমূদ বলেন, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চোখ অন্ধ হয়েগেছে তারপর সমুদয় হাদীসটি এই পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, এরপর আমাদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু”রাকআত সালাত আদায় করেন। আর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বিলম্ব করলাম- ঐ শিরনীর জন্য যা আমরা তার জন্য তৈরী করেছিলাম। তিনি ইউনুস ও মা’মার (রহঃ) থেকে বর্ণিত পরবর্তী অতিরিক্ত অংশ বর্ণনা করেন নি।

১৩৭৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার তার দাদী মুলায়কা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাবার তৈরী করে তাঁকে দাওয়াত দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে খেলেন। তারপর বললেন, তোমরা দাড়িয়ে যাও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমাদের চাটাইয়ের জন্য উঠলাম, যা দির্ঘ ব্যবহারের কারণে কাল হয়ে গিয়াছিল। আমি তা পানি ছিটিয়ে ধুয়ে নিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সেটির উপর দাঁড়ালেন। আমি আর ইয়াতীম বালক তার পেছনে দাঁড়ালাম এবং বৃদ্ধা ও আমাদের পেছনে দাড়ালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি ফিরে গেলেন।

১৩৭৫ শায়বান ইবনু ফাররহুখ (রহঃ) ও আবূর-এরাবী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকল মানুষের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। কখনো তিনি আমাদের ঘরে থাকাকালে সালাতের ওয়াক্ত হয়ে পড়ত। তিনি আমাদের সেই বিছানা সম্পর্কে, যাতে তিনি বসাছিলেন, আদেশ করতেন, তখন তা ঝেড়ে তাতে পানি ছিটিয়ে দেয়া হতো। তারপর রাসুলুল্লাহ ইমাম হতেন এবং আমরা তার পেছনে দাঁড়াতাম। আর আমাদের নিয়ে তিনি সালাত আদায় করতেন। বর্ণনা কারী বলেন, তাদের বিছানা খেজুর পাতা তৈরী ছিল।

১৩৭৬ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের এখানে আসলেন। ঘরে আমি, আমার মা ও আমার খালা উম্মু হারাম ছাড়া কেউ ছিলেন না। তিনি বললেন, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও, আমি তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করব। (সে সময় কোন সালাতের ওয়াক্ত ছিল না)। তখন তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। এক-ব্যাক্তি সাবিতকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনাসকে কোথায় দাঁড় করিয়েছিলেন? বললেন, তাঁর ডান পার্শো। তারপর তিনি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গলের জন্য দুআ করলেন। আমার মা আরয করলেন, ইয়া রাশুলুল্লাহ! এইটি আপনার ক্ষুদ্র খাদিম, তার জন্য আল্লাহর কাছে একটু দুআ করুন। আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি আমার সার্বিক মঙ্গলের জন্য দু’আ করলেন, যার শেষাংশে এইরূপ ছিল, ইয়া আল্লাহ! তাঁর ধন ও সন্তান বৃদ্ধি কর এবং তাতে বরকত দান কর।

১৩৭৭ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-আমাকে তাঁর ডান পার্শে দাঁড় করালেন এবং মহিলাকে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শু’বা (রহঃ) শুত্রে অনুরুপ সনদে বর্ণনা করেছেন।

১৩৭৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন, আর আমি তাঁর! পার্শেই ছিলাম। তিনি সিজদায় গেলে কখনো কখনো তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেতো। চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করছিলেন।

১৩৭৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, সূওয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রবেশ করে তাঁকে চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি তার উপর সিজদা করছিলেন।

১৩৮০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তির জামাআতে সালাত আদায় করা তার ঘরে বা বাজারে সালাত আদায়ের চাইতে বিশ শুণের অধিক ফযীলত রয়েছে। কারণ যখন তাদের কেউ উযু করে, এরপর মসজিদে আসে, একমাত্র সালাতের জন্যই উঠে আসে। সালাত ব্যতীত আর কোন উদ্দেশ্য রাখে না। তখন যে কদম উঠায় তার জন্য তাকে একটি ফযীলত দেওয়া হয় এবং তার থেকে একটি গুনাহ মোচন করা হয়, যে পর্যন্ত না সে মসজিদে প্রবেশ করে। এরপর যখন মসজিদে প্রবেশ করে, যতক্ষন পর্যন্ত সে সালাতের অপেক্ষায় থাকতে হয় ততক্ষন সে সালাতে রত গণ্য হয়। আর যতক্ষন পর্যন্ত সে সালাতের স্হানে বসে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ফিরিশতারা তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকবে যে, “ইয়া আল্লাহ! তার প্রতি দয়া কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমাকর, তুমি তার তাওবা কবুল কর- যতক্ষন না সে অপরকে কষ্ট দেয় এবং অপবিত্র না হয়-”।

১৩৮১ সাঈদ ইবনু আমর আল আশআরী (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু বাক্বকার ইবনু রাইয়ান (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৩৮২ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফিরিশতারা তোমাদের মধ্যে তার জন্য দু’আ করতে যতক্ষন সে সালাতের স্হানে বসে থাকে। তাঁরা বলতে থাকে “ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমত বর্ষণ কর, যতক্ষন পর্যন্ত সে অযূ নষ্ট না করে। আর তোমাদের মধ্যে সে ব্যাক্তি সালাতের মধ্যে গণ্য যতক্ষন তাকে সালাত অপেক্ষায় থাকবে”।

১৩৮৩ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষন কোন বান্দা সালাতের স্থানে থেকে সালাতের অপেক্ষা করে, ততক্ষন তাকে সালাতের মধ্যেই গণ্য করা হয়। আর ফিরিশতারা তার জন্য এই বলে দু’আ করতে থাকে যে, ইয়া আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তুমি তার উপর রহমত বর্ষন কর। যতক্ষন না সেই ব্যাক্তি উঠে যায় অথবা হাদাস করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হাদাস কী? তিনি বললেন, নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু নিঃসরণ হওয়া।

১৩৮৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তিকে যতক্ষন পর্যন্ত আবদ্ধ রাখে ততক্ষন সে সালাতের মধ্যে গণ্য। সালাত ছাড়া অন্য কিছুই তাকে তার পরিবারের দিকে যেতে বাধা দেয়নি।

১৩৮৫ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল-মুরাদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে, সে সালাতে আছে ততক্ষন পর্যন্ত গণ্য করা হয়, যতক্ষন-সে হাদাস না করে। আর ফিরিস্তারা তার জন্য দুআ করতে থাকেন, ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর, ইয়া আল্লাহ! তার উপর রহমত বর্ষণ কর।

১৩৮৬ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৩৮৭ আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশ’আরি ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যাক্তি সালাতের সব চাইতে বড় প্রতিদানের অধিকারী, যে অধিক দূর থেকে হেঁটে সালাতে আসে। তারপর ঐ ব্যাক্তি যে অপেক্ষাকৃত অল্প দূর থেকে আসে। আর যে ব্যাক্তি ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করার অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যাক্তি ঐ ব্যাক্তি অধিক সাওয়াবের অধিকারী, যে (একাকী) সালাত আদায় করে নিদ্রা যায়। আবূ করায়বের অপর এক বর্ণনায় জামা’আতের সাথে ইমামের সঙ্গে সালাত আদায়ের অপেক্ষায় থাকে উল্লেখ আছে।

১৩৮৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উবাই ইবনু কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ছিল, যার বাড়ী অপেক্ষা কারো বাড়ী মসজিদ থেকে অধিক দূরে ছিল বলে আমার জানা নাই। কিন্তু তার কোন সালাত বাদ পড়তনা। বর্ণনাকারী বলেন তাকে বলা হল অথবা আমি তাঁকে এ বললাম, তুমি যদি একটি গাধা ক্রয় কর, তাহলে তাতে চড়ে অন্ধকারে এবং গরমের সময় আসতে পারবে সে বলল,আমার বাড়ী মসজিদের নিকটবর্তি হোক, তাতে আমি খুশি নই। আমি চাই যে, মসজিদে হেটে যাওয়া এবং আমার ঘরে ফিরে আসা আমার আমল নামায় লিখা হোক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,আল্লাহ তা তোমার জন্য পুরাপুরি জমা করেছেন।

১৩৮৯ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তায়মী থেকে উক্ত সুত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

১৩৯০ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকর অল-মুকাদ্দামী (রহঃ) উবাই ইবনু কা’ব (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, এক আন্সারির বাড়ি ছিল মদিনার শেষ প্রান্তে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তার সালাত বাদ পড়ত না। আমার তার জন্য দুঃখিত হলাম এবং আমি তাকে বললাম, হে অমুক! তুমি যদি একটি গাধা কিনে নিতে তাহলে তা তোমাকে তাপ এবং মাটির কীট থেকে রক্ষা করত। লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমার বাড়ী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাড়ীর নিকটবতীঁ হোক, আমি তা পছন্দ করি না। বর্ণানাকারী বলেন তার কথায় আমার মনে বাধল। অবশেষে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাকে তা অবহিত করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডাকলেন। তার কাছে ও সে অনুরূপ কথা বলল এবং জানাল যে, সে তার পায়ে হাটার সাওয়াব কামনা করে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন; তুমি যা আশা করেছ, তা তুমি পাবে।

১৩৯১ সাঈদ ইবনু আমর আল আশাআসী-, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ও সাঈদ ইবনু আযহার আন-ওয়াসিতী (রহঃ) আসিম (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

১৩৯২ হাজ্জাজ ইবনুুশ-শাঈর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের বাড়ী মসজিদ থেকে দুরে অবস্হিত ছিল। ফলে আমরা ইচ্ছা করলাম যে, আমরা আমাদের বাড়ীটি বিক্রি করে দেব এবং মসজিদের কাছাকাছি এসে যাব। রাসুলুল্লাহ আমাদের নিষেধ করলেন এবং বললেন, তোমাদের প্রতি কদমে সাওয়াব রয়েছে।

১৩৯৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মসজিদের কাছাকাছি কিছু জায়গা খালী হয়। তাতে বানূ সালামার লোকেরা মসজিদের কাছে স্হানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা করল। এই খবর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌছলে তা দের বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা নাকি মসজিদের কাছাকাছি স্হানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা রাখ? তারা বলল, হাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা মসজিদের কাছাকাছি যাওয়ার মনস্হ করেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বানূ সালামা! তোমরা তোমাদের ঘরেই থাক, তোমাদের পদ চিহ্ন লেখা হবে। তোমরা ঘরে থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হবে।

১৩৯৪ আসিম ইবনু নাযার আত তায়মী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ সাআমার লোকেরা বাড়ী পরিবর্তন করে মসজিদের কাছে আসতে ইচ্ছা করে। রাবী বলেন একটি জায়গাও খালী ছিল। এই খবরটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছলে তিনি বললেন, হে বানূ সালামা! তোমরা তোমাদের ঘরেই থাক, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হবে। তখন বলল, এখন বাড়ী বদলিয়ে আসা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক রইল না।

১৩৯৫ ইসাহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি গৃহে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর হেঁটে আল্লাহর ঘর সমূহের মধ্যে কোন ঘরে গেল, এই জন্য যে আল্লাহর ফরযগুলর কোন ফরয আদায় করবে। তাহলে তার পদচিহ্নের একটিতে একটি গুনাহ মাফহবে এবং আরেকটিতে মর্যাদা উন্নিত হবে।

১৩৯৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বর্ণনাকারী বলেন যে বাকরের হাদীসে আছে যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, বলত তোমাদের মধ্যে কারো দরজা সামনে একটি নদী থাকে এবং সে যদি তাতে দৈনিক পাচবার গোসল করে তবে তার (শরীরে) কোন ময়লা থাকতে পারে? তাঁরা বললেন, কোন মায়লাই থাকতে পারে না। রাসূলুল্লাহ বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতেরঁ উদাহরন এই। আল্লাহ তা’আলা এ সালাত দ্বারা পাপ মোচন করেন।

১৩৯৭ আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির অর্থাৎ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ হল প্রবল স্রোতম্বিনী নদীর মত যা তোমাদের কারো দরজার পাশদিয়ে প্রবাহিত, যাতে সে ব্যাক্তি প্রত্যহ পাচবার গোসল করে। হাসান বলেন, তাতে তার গায়ে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকে না।

১৩৯৮ আবূ বাকর আবূ শায়বা (রহঃ) ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি সকাল-সন্ধা মসজিদে আসা-যাওয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে প্রতি সকাল-সন্ধ্যার জন্য যিয়ারতের ব্যবস্হা করেন।

১৩৯৯ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) সিমাক ইবনু হারব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি রাসুলুল্লাহ এর কাছে বসতেন! তিনি বললেন, হ্যাঁ, বহুবার। তারপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মূসা ল্লায় ফজরের অথবা বলেছেন ভোরের সালাত আদায় করতেন, সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকতেন। তারপর যখন সূর্য উদিত হতো তখন তিনি সালাতে দাড়াতেন। আর লোকেরা সেথায় জাহিলি যুগের ন্যায় কথাবার্তা বলত ও হাসাহাসি করত, রাসুলুল্লাহ মুচকি হাসতেন।

১৪০০ আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন, তিনি মূসা ল্লায় বসে থাকতেন, যতক্ষন না ভাল ভাবে সূর্যোদয় হত।

১৪০১ কুতায়বা, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সিমাক (রহঃ) থেকে এ সনদে বর্ণিত। কিন্তু তাতে ভাল ভাবে শব্দটির উল্লেখ নেই।

১৪০২ হারুন ইবনু মারুফ (রহঃ) এবং ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) আবূ হুরায়হারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’য়ালার জন্য নিকট সবচাইতে পছন্দনীয় স্হান হলো মসজিদ এবং সবচাইতে অপছন্দনীয় স্থান বাজার।

১৪০৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তিনজন একত্রিত হয় তবে একজন তাদের ইমামতি করবে। আর ইমাম হওয়ার সবচাইতে যোগ্য তিনি, যিনি তাদের মধ্যে কুরআন পাঠ সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ।

১৪০৪ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) এবং আবূ গাসসান আন-মিসমাঈ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সূত্রে অনুরুপ বর্ণিত।

১৪০৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও হাসান ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদুরী (রাঃ) সুত্রে নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণীত।

১৪০৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যাক্তি লোকদের ইমামতি করবেন যিনি আল্লাহর কিতাব পাঠে সবচাইতে অভিজ্ঞ। কুরআন পাঠে যদি সকলেই সমান হয় তবে যিনি তাঁদের মধ্যে সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা অভিজ্ঞ। তাতেও যদি সকলে একরকম হয় তবে যিনি আগে হিজরত করেছেন। তাতেও যদি সকলেই সমান তবে আগেই সলাম গ্রহণ করেছেন কোন ব্যাক্তি অন্যকোন ব্যাক্তির অধিকারে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে তার বিশেষ আসনে বসবে না। আশাজ্জ তাঁর রিওয়ায়াতে বলেন যে, ইসলামের স্হলে বয়সের কথা বলেছেন।

১৪০৭ আবূ কুরায়ব (রহঃ) ইসহাক (রহঃ), আশাজ্জ ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আ”মাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণিত।

১৪০৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন, সেই ব্যাক্তই লোকদের ইমামতি করবে যে আল্লাহর কিতাব পাঠে অধিক অভিজ্ঞ যদি কিতাব পাঠে সকলেই সমান হয়, তবে সে ইমামতি করবে যে আগে হিজরত করেছো যদি হিজরাতেও সকলেই সমান হয়, তবে বয়সে যে বড়, সে ইমামতি করবে। তোমাদের কেউ অন্যকারো ঘরে কিংবা অন্যকারো স্হানে ইমামতি করবে না এবং অনুমতি ছাড়া কারো গৃহে তার আসনে বসবে না।

১৪০৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একবার) আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আমরা সকলেই সমবয়সী যুবক ছিলাম। আমরা বিশ দিন তার কাছে অবস্হান করলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহ প্রবণ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিজনের জন্য উদগ্রীব আছি। তিনি আমাদের পরিজনদের কাকে কাকে রেখে এসেছি জানতে চাইলেন। আমরা তাঁকে তা জানানাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে অবস্থান কর। আর তাদের শিক্ষা শিক্ষা দাও ও সৎ কাজের আদেশ কর। আর যখন সালাতের সময় হবে, তখন তোমাদের কেউ আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বয়োজ্যেষ্ট ব্যাক্তি সালাতের ইমামতি করবে।

১৪১০ আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ), খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস আবূ সুলায়মান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কয়েকজন লোকসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। আর আমরা সকলেই সমবয়সী যূবক ছিলাম। পরবর্তী অংশ ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ।

১৪১১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমার একজন সাথী সহ এলাম। আমরা যখন তাঁর কাছ থেকে ফিরে যেতে চাইলাম তখন আমাদের বললেন, যখন সালাতের সময় হয়, তখন আযান দিও; তারপর ইকামত দিও। তারপর তোমাদের মধ্যে যে বয়োজ্যেষ্ট, সে ইমামতি করবে।

১৪১২ আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) খালিদ আল হাযযা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে যে, হাযযা (রহঃ) বলেছেন, তারা উভয়ে কুরআন পাঠে প্রায় সমান ছিলেন।

১৪১৩ আঁবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াঁ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সালাতে কিরা’আত শেষ করতেন ও তাকবীর বলতেন এবং (রুকু থেকে) মাথা উঠাতেন, তখন সামি’আল্লাহুলিমান হামিদা” “রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ”-বলতেন। পরে দাঁড়াণৌ অবস্হায় বলতেন, ইয়া আল্লাহ! তুমি ওয়ালীদ ইবনুল ওয়ালীদ, সালামা ইবনু হিশাম এবং আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবী’আকে মুক্তি দাও এবং অন্যান্য দূর্বল মুমিনদের নাজাত দাও। ইয়া আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর কঠোর শাস্তি অবতীর্ণ কর। তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় দুর্ভিক্ষ নাযিল কর। ইয়া আল্লাহ! লিহয়ান, রিল, যাকওয়ান ও উসায়্যা গোত্রের লোকেরা, আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ অমান্য করেছে, তাই তাদের উপর তোমার লানত নাযিল কর। পরে আমাদের কাছে খবর পৌছেছে যে, কুরআনের এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি লানত করা বাদ দিয়েছেনঃ আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন না শাস্তি দিবেন তা আপনার ইখতিয়ার ভুক্ত নয়; তারা নিশ্চয়ই যালিম।

১৪১৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, ইয়া আল্লাহ! তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের বছরগুলোর অনুরুপ দুর্ভিক্ষ আপতিত কর। কিন্তু তিনি এরপরের অংশ বর্ননা করেন নি।

১৪১৫ মুহাম্মাদ মিহরান আবূ সালাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রহঃ) তাদের কাছে হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে রুকুর পর এক মাস ব্যাপী কুনূত পড়েছেন। সামি”আল্লাহু লিমান হামিদা বলার পর কুনূতে তিনি বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনুল ওয়ালীদকে মুক্তি দাও; ইয়া আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে নাজাত দাও; ইয়া আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবী আকে মুক্তি দান কর; ইয়া আল্লাহ! অত্যাচারিত দূর্বল মুমিনদের মুক্তি দাও; ইয়া আল্লাহ! মুদার- গোত্রের শাস্তি কঠোর কর। ইয়া আল্লাহ! ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর মত তাদের উপর সেই রুপ দুর্ভিক্ষ নাযিল কর। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ ছেড়ে দিয়েছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমি দেখেছি, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দুআ করা ছেড়ে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রহঃ) বললেন, বলা হল, তুমি কি দেখতে পাড়ছ না যে, তারা এসে গেছে?

১৪১৬ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রহঃ) তাকে বলেছেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সামনে ইশার সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সামি আল্লাহু-লিমান হামিদা, বললেন, তারপর সিজদা করার আগে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রাবীআকে (কাফিরদের হাত থেকে) মুক্তি দান কর। অতঃপর আওযাঈর হাদীসের অনুরুপ ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের বছরগুলোর মত দুর্ভিক্ষ নাযিল কর- পর্যন্ত বর্ণনা করেন; কিন্তু এরপরের অংশটি বর্ণনা করেন নি।

১৪১৭ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের অনুরুপ তোমাদের সালাত পড়াচ্ছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যুহর, এশা ও ফজরের সালাতে কুনুত পড়তেন। মুসলমানদের জন্য দু’আ করতেন এবং কাফিরদেরকে অভিশাপ দিতেন।

১৪১৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বির-ই মাউনার মুবাল্লিগদের হত্যাকারীদের প্রতি ক্রমাগত ত্রিশদিন ফজরের সালাতে বদদুআ করেছেন। রিল যাকওয়ান, লিহয়ান ও উসায়্যা গোত্রের উপরও বদ দু’আ করেছেন; কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করেছে। আনাস (রাঃ) বলেন, বির-ই মাউেনায় শাহাদাত বরণকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরজানের আয়াত নায়িল করেন। আর আমরা সেই আয়াতটি পাঠ করতাম, অবশেষে তা মানসূখ হয়ে যায়।

১৪১৯ আমর আল নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ,রুকু করার পর কিছু সময়।

১৪২০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল আনবারী (রাঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ), ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আঁলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতে রুকুর পরে এক মাস কুনূত পাঠ করেছেন। রিল ও যাকওয়ান গোত্র দুয়ের উপর বদদুআ করেছেন। উসায়্যা গোত্র সম্পর্কে বলেছেন, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করেছে।

১৪২১ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ফজরের সালাতের রুকুর পর একমাস পর্যন্ত কুনুত পাঠ করেছেন। উসায়্যা গোত্রের উপর বদদুআ করেছেন।

১৪২২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে কুনুত সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলাম, তা কি রুকুর আগে না পরে? বললেন, রুকুর আগে। আসিম (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, লোকেরা মনে করে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর পরে কুনূত পাঠ করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রুকুর পরে) এক মাস কুনূত পাঠ করেছেন, তিনি সেই সমস্ত লোকদের প্রতি বদ দু’আ করেছেন, যারা তাঁরা সংখ্যক সাহাবীকে হত্যা করেছিল যাদেরকে ক্বারী- বলা হতো।

১৪২৩ ইবনু আবূ উমর (রহঃ), আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন সারিয়্যার (বাহিনীর) সম্বন্ধে এত বেশী দুঃখিত হতে দেখিনি। যতখানি দুঃখিত হয়েছিলেন সেই সত্তর জন সাহাবীর জন্য যাদের “বির-ইমাউনা-এর দিন শহীদ করা হয়েছিল, তাঁদের কারী- বলা হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হত্যাকারীদের এক মাস ধরে বদদুআ করতে থাকলেন।

১৪২৪ আবূ কুরায়ব এবং ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রহঃ) উক্ত হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কারো বর্ণনা অন্যদের চাইতে কিছু বর্ধিত হয়েছে।

১৪২৫ আমর আন নাকিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এক মাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেন। এতে তিনি লানত করেন রি’ল, যাকওয়ান উসায়্যা গোত্রের পতি যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের নাফরমানী করেছে।

১৪২৬ আমর আবূ-নাকিদ (রহঃ) আনাস (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

১৪২৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেন। এতে তিনি আরবের কয়েকটি গোত্রের উপর বদদুআ করেন। এরপর তিনি তা পরিত্যাগ করেন।

১৪২৮ মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও মাগরিবে কুনূত পাঠ করতেন।

১৪২৯ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর ও মাগরিবে কুনূত- পাঠ করেছেন।

১৪৩০ আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু সারাহ আল মিসরী (রহঃ) খুফাফ ইবনু ঈমা আল-গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে এই দুআ পাঠ করেছেন, হে আল্লাহ! আপনি লানত করুন বানূ লিহয়ান, রি’ল ও যাকওয়ানকে এবং উসায়্যাকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানী করেছে। আর গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদের নিরাপত্তা দান করুন।

১৪৩১ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) কুতায়বা (রহঃ) ও ইবনু হুজ্বর (রহঃ) হারিস ইবনু খুফাফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খুফাফ ইবনু ঈমা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করে মাথা উঠানোর পর বলেনঃ গিফার, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন; আসলাম, আল্লাহ তাদের নিরাপত্তা দান করুন। আর উসায়্যা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা অমান্য করেছে হে আল্লাহ! বানূ লিহয়ানের প্রতি লানত এবং রি’ল ও যাকওয়ানের প্রতি লানত দাও। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় যান। খুফাফ (রাঃ) বলেন, এ কারণে কাফিরদের লানত দেওয়া হয়।

১৪৩২ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) খূফাফ ঈমা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ‘এ কারনে কাফিরদের লানত করা হয়- উল্লেখ করেন নি।

১৪৩৩ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজায়বী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় রাত্রে সফর করলেন। অবশেষে যখন তাঁর তন্দ্রা পেল, তখন তিনি শেষ রাত্রে (এক স্হানে) মনযিল করলেন এবং বিলাল (রহঃ) কে নির্দেশ দিলেন, তুমি আমাদের জন্য এ রাতের প্রতি লক্ষ্য রাখ। তারপর বিলাল (রাঃ) সালাত আদায় করেন যা তার সামার্থ ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম (রহঃ) ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের সময় ঘনিয়ে এলে বিলাল (রাঃ) পূর্ব দিকে মুখ করে তাঁর বাহনের উপর হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। বিলালের চোখ নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। তখন তিনি তার সাওয়ারীতে হেলান দেয়া অবস্হায়ই ছিলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) বা সাহাবীদের কেউই জাগলেন না, যতক্ষন না সূর্যের কিরণ তাঁদের উপর পতিত হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জাগলেন, এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেরেশান হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হে বিলাল! বিলাল বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান। আপনার আত্মা যিনি নিয়ে নিয়েছেন, আমার আত্মাও নিয়ে নিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাওয়ারীগুলোকে এখান থেকে নিয়ে চল। তারপর কিছু নেওয়ার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযু করলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন। তিনি সালাতের ইকামত দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করে বললেন, তোমাদের কেউ যদি সালাত ভুলে যায়, তবে সারণ মাত্র যেন আদায় করে নেয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর”।

১৪৩৪ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা এক বার শেষ রাত্রে ঘুমিয়ে পড়লাম। সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা জাগতে পারনাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সকলেই নিজ সাওয়ারীর মাথায় ধরে নিয়ে চল। কেননা এই মনযিলে আমাদের কাছে শয়তান এসে পড়েছে বর্ণনাকারী বলেন,-আমরা তাই করলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনিয়ে উযু করলেন এবং দুটি সিজদা করলেন; আর ইয়াকুব বলেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। এরপর সালাতের ইকামত দেয়া হলো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায় করলেন।

১৪৩৫ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে আমাদেরকে বললেন, তোমরা চলতে থাক অপরাহ্নে ও রাত্রিতে, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে পানির নিকট পৌছে যাবে। তারপর লোকেরা এমন ভাবে পথ চলতে লাগল যে, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছিল না। আবূ কাতাদা (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও এভাবে চলছিলেন। এমন কি অর্ধরাত হয়ে গেল, আমি তাঁর পাশে ছিলাম আবূ কাতাদা (রহঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তন্দ্রা পেল। তিনি সাওয়ারীর উপর থেকে চলতে লাগলেন। আমি তাঁর কাছে এসে তাকে জাগিয়ে তাঁকে ঠেস দিলাম। ফলে তিনি নাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। তিনি বলেন, তারপর চলতে থাকলেন। অবশেষে রাতের বেশী অংশ গত হলে তিনি সাওয়ারীর উপর আবার একদিকে ঢুলতে লাগলেন। আমি তাঁকে না জাগিয়ে আবার ঠেস দিলাম। ফলে তিনি সাওয়ারীর উপর সোজা হয়ে গেলেন। তারপর আবার চলতে লাগলেন। যখন সাহরীর শেষ সময় এলো তখন তিনি পূর্বের দু-বারের চাইতে এত অধিক ঢুলে পড়লেন যে, প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাকে আবার ঠেস দিলাম। তিনি মাথা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, এই কে? আমি বললাম, আবূ কাতাদা। তিনি বললেন, তুমি কখন থেকে এভাবে আমার সাথে চলেছ? আমি বললাম, সারা রাত ধরে। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করুন, যেহেতু তুমি আল্লাহর নাবীকে হিফাযত করেছ। তারপর বললেন, তুমি কি বুঝতে পাচ্ছ? আমরা কি লোকদের থেকে আড়ালে পড়ে গেছি? আবার বললেন, কাউকে কি দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, এই একজন সাওয়ার। আবার বললাম, এই আর একজন সাওয়ার। এইরুপ আমরা সাতজন সাওয়ারী একত্রিত হলাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাস্তা থেকে একটু সরে গেলেন এবং (আরাম করার জন্য) মাথা রাখলেন তারপর বললেন তোমরা আমাদের সালাতের সময়ের লক্ষ্য রাখবে। যারা জাগলেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জাগলেন তাদের কিরণ স্পর্শ করছিল। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা সন্ত্রস্ত অবস্হায় উঠলম। তারপর বললেন, তোমরা আরোহন কর। আমরা আরোহন করলাম এবং চলতে লাগলাম। এমন কি সূর্য যখন উপরে উঠল, তখন অবতরণ করলেন এবং উযুর পাত্র চাইলেন। তা আমার কাছে ছিল এবং তাতে অল্প পানি ছিল। আবূ কাতাদা (রহঃ) বলেন , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পানি থেকে ভাল ভাবে উযু করলেন। তিনি বলেন, তাতে কিছু পানি অবশিষ্ট রইল। তারপর আবূ কাতাদা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি আমাদের জন্য তোমার এ উযুর পাত্রটি হিফাযতে রাখ। শীগ্রই তা থেকে বিরাট ঘটনা প্রকাশ পেতে পারে। তারপর বিলাল (রাঃ) সালাতের আযান দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ফজরের দু-রাক’আত (ফরয) আদায় করলেন। অন্যান্য দিনে যেমন ভাবে আদায় করেন, আজকেও সেভাবেই আদায় করলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমরা সাওয়ার হয়ে চললাম। তিনি বলেন, আমরা একে অপরকে চুপে চুপে বলতে লাগলাম, আমরা সালাতের ব্যাপারে যে ক্রটি করেছি, তার কাফফারা কি হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার মধ্যে কি তোমাদের জন্য ব্যাক্তির জন্য, যে সালাত আদায় করে না, এমন কি অন্য সালাতের সময় এসে পড়ে। কারো যদি এরুপ হয়, তবে তার উচিত সজাগ হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেয়া। তারপর যখন দিন আসবে, তখন যেন ঠিক সময় মত সেই সালাত আদায় করে। তারপর বললেন তোমাদের ধারণা কি? লোকেরা কি করছে? অতঃপর নিজেই বললেন, “ভোর হলে লোকেরা তাদের নাবীকে দেখতে পেল না। আবূ বকর ও উমার বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনেই রয়েছেন। তিনি – তোমাদের পেছনে ফেলে যেতে পারেন না। আর লোকেরা বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চই তোমাদের সামনে রয়েছেন। তারা আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা মেনে নিলেই ঠিক করত”। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমরা দুপূরের দিকে তাদের কাছে পৌছলাম। তখন সকল কিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে লোকেরা বলতে লাগল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! পিপাসায় আমরা মরে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বললেন, তোমরা হালাক হবে না। তারপর বললেন, আমার পেয়ালাটি আন! তিনি বলেন, তারপর সেই উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানির পাত্রটি তলব করলেন এবং রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে পানি ঢাললেন। আর আবূ কাতাদা (রাঃ) লোকদের পান করাতে লাগলেন। লোকেরা পাত্রের পানি দেখে এতই ভিড় করল যে, সকলেই একে ঘিরে বসল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের মধ্যে শৃংখলা বজায় রাখ। তোমরা তৃপ্তি লাভ করবে। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারা তাই করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢালতে লাগলেন। আর আমি তাদের পান করাতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি ছাড়া আর কেউ বাদ রইল না। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি ঢেলে আমাকে বললেন, তুমি পান কর। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করার আগে আমি পান করব না। তিনি বললেন, যে লোকদের পানি পান করায় সে সকলের শেষেই পান করে। তিনি বলেন, আমি পানি পান করলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন, লোকেরা পানি পান করল আনন্দ ও তৃপ্তি সহকারে। রাবী বলেন, (আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণনাকারী রাবী) আবদুল্লাহ ইবনু রাবাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি জানি মসজিদে এই হাদীসটি বর্ণনা করছিলাম। এমন সময় ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বললেন, হে যুবক! তুমি ভেবে দেখ, তুমি কী বলছ। কেননা আমি সে রাতে একজন আরোহী ছিলাম। আমি বললাম, নিশ্চয়ই আপনি হাদীসটি অধিক জানেন। তিনি বললেন, তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, আনসার। তিনি-বললেন, তবে তুমি বর্ণনা কর। কারণ তুমি এ সম্পর্কে অবশ্য ভালই জান। তারপর আমি পূর্ণ হাদীসটি লোকদের কাছে বর্ণনা করলাম। ইমরান (রাঃ) বললেন, আমি সেই রাত্রে উপস্থিত ছিলাম; কিন্তু তুমি যে ভাবে মনে রেখেছ অন্য কেউ এভাবে মনে রেখেছে বলে আমার জানা নেই।

১৪৩৬ আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর আদ-দারিমী (রহঃ) ইমরান ইবনু হূসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেন এক সফরে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলতে ছিলাম। যখন প্রভাতের কাছাকাছি সময় হল তখন আমরা মনযিল করলাম। আমাদের চোখ বুঝে গেল এমন কি সূর্য উঠে গেল। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) সর্ব প্রথম জেগে উঠলেন। আমাদের অভ্যাস ছিল যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাতেন তখন তার ঘূম থেকে তাঁকে জাগাতাম না, যতক্ষন না নিজে জেগে উঠতেন। এরপর উমর (রাঃ) জেগে উঠলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে লাগলেন। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। মাথা তুলে দেখতে পেলেন যে, সূর্য উদিত হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা চল তখন তিনি আমাদের নিয়ে চললেন। যখন সুর্যের আলো পরিষ্কার হয়ে গেল তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। লোকদের মধ্য থেকে একজন আলাদা রইল। সে আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় করল না। সালাত শেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন হে অমূক! তোমাকে আমার সাথে সালাত আদায় থেকে বিরত রাখল? সে বলল, ইয়া নাবী, আমি জুনুবী হয়ে গেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের আদেশ করলেন। সে মাটির দ্বারা তায়ামুম করে সালাত আদায় করল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কয়েঁকজন আরোহী সহ আমকে পানির তালাশে আগে পাঠিয়ে দিলেন। আমরা ভীষণ পিপাসার্ত হয়েছিলাম। আমরা যখন পথ চলছিলাম, তখন আমরা এক মহিলাকে দেখতে পেলাম। সে উটের পিঠে দুটি পানির মশকের মধ্যে পা ঝূলিয়ে বসে আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, পানি কোথায় আছে? সে বলল, অনেক অনেক দূরে, তোমরা পানি পাবে না। আমরা বললাম, তোমার বাড়ী থেকে পানির স্হানের দুরত্ব কতটুকু? সে বলল, একদিন ও একরাতের পথ। আমরা বললাম, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে চলো। সে বলল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে? আমরা তার সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে চললাম এবং তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে নিয়ে গেলাম। তিনিও তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাঁর কাছে সে রুপই বলল, যেমন আমাদের কাছে বলেছিল। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এও জানাল যে, সে একজন বিধবা, তার কয়েকজন ইয়াতীম বাচ্চা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পানি বাহক উটটি সম্পর্কে নির্দেশ দিলে সেটি বসানো হল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশক দুটির উপরের মুখ দুটিতে কুল্লির পানি ঢেলে দিলেন। তারপর আমরা ৪০ জন পিপাসার্ত ব্যাক্তি তৃপ্তি করে পানি পান করলাম এবং আমাদের সংগে যে মশক ও পাত্র ছিল, তা ভরে নিলাম। আমাদের সে সঙ্গীটি কেও গাসলের পানি দিলাম। সেও ভালভাবে গোসল করল তবে আমাদের উটগুলোকে পানি পান করাইনি। এদিকে মশক দুটি পানিতে ফেটে পড়ার উপক্রম হচ্ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমাদের সঙ্গে যার যা আছে এসো। আমার তাঁর জন্য রুটি টুকরা ও খেজুর একত্রিত করলাম। আর তাঁর জন্য এগুলো একটি পোটলায় বেঁধে দেওয়া হল। মহিলাকে বললেন, তুমি যাও আর এগুলি তোমার পরিবারকে এবং তোমার ইয়াতীমদের -খাওয়াও। আর জেনে রাখ, মনে রেখো, আমরা – তোমার পানি কমাইনি। তারপর সে যখন তার পরিবারের কাছে এল তখন বলল, আমি আজ মানুষের মধ্যে সবচাইতে বড় যাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম, অথবা, তার ধারণা অনুযায়ী, তিনি নাবী। তার ব্যাপার ছিল এই রুপ, এইরুপ। ফলে আল্লাহ তা’আলা সেই মহিলার বদৌলতে তার গোত্রটিকে হিদায়াত করলেন। মহিলাটি ও ইসলাম গ্রহণ করল এবং তারাও ইসলাম গ্রহণ করল।

১৪৩৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম। রাত যখন শেষ হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকট বর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকটবর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য এমন একটি কাঙ্খিত বস্তু যার তুলনা হয় না। তারপর সূর্য কিরণ ছাড়া আমাদের কেউ জাগাতে পারেনি। পরে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সহ সালম ইবনু যারীরের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেনা উক্ত হাদীসে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, উমর (রাঃ) জেগে উঠে লোকদের অবস্হা দেখলেন। তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী এবং খুবই শক্তিশালী। তারপর তিনি উচচঃস্বরে তাক্ববীর দিতে লাগলেন। তাঁর শব্দের উচ্চ সূরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তাঁর জাগার পর লোকেরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে নানা অভিযোগ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন ক্ষতি নেই, এই স্হান ত্যাগ কর পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।

১৪৩৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) . আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সফরে থাকতেন এবং তখন শেষরাতে নিদ্রা যেতেন, তখন ডান কাতে শুতেন। আর যখন ভোরের পূর্বক্ষণে নিদ্রা যেতেন তখন বাহু খাড়া করে হাতের উপর মাথা রাখতেন।

১৪৩৯ হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি সালাতের কথা ভুলে যায়, স্মরণ হওয়া মাত্র সে তা আদায় করে নেবে। এর কোন কাফফারার প্রয়োজন নেই। বরং আদায় করাই কাফফারা। কাতাদা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আমার স্মরণে সালাত কায়েম কর”।

১৪৪০ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীসটিতে “এর কাফফারার প্রয়োজন নাই বরং আদায় করাই কাফফারা” অংশটি উল্লেখ করেন নাই।

১৪৪১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তি যদি সালাতের কথা ভূলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তবে এর কাফফারা হলো স্মরণ হওয়া মাত্র তা আদায় করে নেয়া।

১৪৪২ নাসর ইবনু আলী জাহযামী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ভুলে যায় তাহলে তার স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নিবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “আমার স্মরণে সালাত আদায় কর”।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: মসজিদ ও সালাতের স্থান
মসজিদ ও সালাতের স্থান
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/mosque.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/mosque.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy