৪৬৯৩ সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিবিগণের গৃহে আগমন করল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে অবহিত করা হল, তখন তারা এ ইবাদতের পরিমাণ যেন কম মনে করল এবং বলল, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমকক্ষ হতে পারি না। কারণ, তার আগে ও পরের সকল গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সারা বছর রোযা পালন করব এবং কখনও বিরতি দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী বিবর্জিত থাকব-কখনও শাদী করব না। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা ঐ সকল ব্যাক্তি যারা এরূপ কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশী ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি আমি বেশ আনুগত্যশীল; অথচ আমি রোযা পালন করি, আবার রোযা থেকে বিরতও থাকি। সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি এবং ঘুমাই ও বিয়ে-শাদী করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ ভাব পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।
৪৬৯৪ আলী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উরওয়া (রহঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) কে আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ তোমরা যদি আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে শাদী কর নাদীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে- দুই, তিন অথবা চার। কিন্তু তোমাদের মনে যদি ভয় হয় যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা”। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে ভাগ্নে! একটি ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ ও রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে তার সমকক্ষ মহিলাদের চেয়ে কম মোহর দিয়ে শাদী করার ইচ্ছ করে তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হল। ঐসব ইয়াতীমের শাদী করার ব্যাপারে; তবে যদি তারা তোমাদের ব্যাপারে সুবিচার করে ও পূর্ণ মোহর আদায় করে (তাহলে পারবে)। যদি না পারে, তাহলে তোদের ব্যতীত অন্য নারীদের শাদী করার আদেশ করা হল।
৪৬৯৫ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সাথে ছিলাম, উসমান (রাঃ) তাঁর সাথে মিনাতে দেখা করে বলেন, হে আবদুর রহমান! আপনার কাছে আমার কিছু প্রয়োজন আছে। এরপর তারা উভয়েই এক পার্শ্বে গেলেন। তারপর উসমান (রাঃ) বললেন, হে আবদুর রহমান! আমি আপনার সাথে এমন একটি কুমারী মেয়ের শাদী দেব, যে আপনাকে আপনার অতীত দিনকে স্মরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ যখন দেখলেন, তার এ শাদীর প্রয়োজন নেই তখন তিনি আমাকে ‘হে আলকামা’ বলে ডাক দিলেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে বলতে শুনলাম, আপনি যখন আমাকে একথা বলেছেন (তখন আমার স্মরনে এর চেয়ে বড় কথা আসছে আর তা হচ্ছে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে শাদীর সামর্থ্য রাখে, সে যেন শাদী করে এবং যে শাদীর সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ‘রোযা’ পালন করে। কেননা, রোযা যৌন ক্ষমতাকে অবদমন করবে।
৪৬৯৬ উমর ইবনু হাফ্স ইবনু গিয়াস (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমরা যুবক বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম; অথচ আমাদের কোনো কিছু (সম্পদ) ছিল না। এমনি অবস্থায় আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা শাদী করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন শাদী করে। কেননা, শাদী তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে এবং যাদের শাদী করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা পালন করে। কেননা, রোযা তার যৌনতাকে দমন করবে।
৪৬৯৭ ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আতা (রহঃ) বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সঙ্গে ‘সারিফ’ নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ) এর জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী। সুতরাং যখন তোমরা তাঁর জানাযা উঠাবে তখন ধাক্কা-ধাক্কি এবং জোরে নাড়া-চাড়া করো না; বরং ধীরে ধীরে নিয়ে চলবে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নয়জন বিবি ছিলেন। তিনি আট জনের সাথে পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন। কিন্তু একজনের সাথে রাত্রি যাপনের পেলা ছিল না।
৪৬৯৮ মূসা দ্দাস (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একই রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল বিবির নিকট গমন করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন’জন স্ত্রী ছিল। অন্য সনদে “মূসা’দ্দাদ” এর স্থলে খলীফা নাম উল্লেখ আছে।
৪৬৯৯ আলী ইবনু হাকাম (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি শাদী করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, শাদী কর। কেননা, এই উম্মতের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, তাঁর অধিক সংখ্যক বিবি ছিল।
৪৭০০। ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাযা’আ (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিয়্যতের ওপরেই কাজের ফলাফল নির্ভর করে এবং প্রত্যেক ব্যাক্তি তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। সুতরাং যার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্তুষ্টির জন্য তার হিজরত আল্লাহ্ এবং তাঁর বসূলের জন্যই। আর যার হিজরত পার্থিব স্বার্থের জন্য অথবা কোন মহিলাকে শাদী করার জন্য, সে তাই পাবে, যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।
৪৭০১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করি। আমাদের সাথে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। তাই আমরা বলেছিলাম, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিলেন।
৪৭০২ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) মদিনায় এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং সা’দ ইবনু রাবী আল আনসারী (রাঃ)-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে দেন। এ আনসারীর দু’জন স্ত্রী ছিল। সা’দ (রাঃ) আবদুর রহমান (রাঃ)-কে বললেন, আপনি আমার স্ত্রী এবং সম্পদের অর্ধেক নিন। তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ আপনার স্ত্রী ও সম্পদের বরকত দিন। আপনি আমাকে বাজার দেখিয়ে দিন। এরপর তিনি বাজারে গিয়ে পনির ও মাখনের ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করলেন। কিছুদিন পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরে হলুদ রং-এর ছিটা দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, হে আবদুর রহমান। তোমার কি হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমি জনৈকা আনসারী রমণীকে শাদী করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কত মোহর দিয়েছ। তিনি উত্তরে বললেন, একটি খেজুরের আটির সমপরিমাণ স্বর্ণ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার (বিবাহ ভোজ) ব্যবস্থা কর, যদি একটি বকরি দিয়েও হয়।
৪৭০৩ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মাজ’উনকে শাদী থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।
৪৭০৪ আবূল ইয়ামন (রহঃ) সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মাজ’উনকে শাদী থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে, আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।
৪৭০৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বললাম, আমরা কী খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সাথে একখানা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও শাদী করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ হে মু’মিনগণ! আল্লাহ যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম করো না এবং সীমালংঘন করো না। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। আসবাগ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি একজন যুবক। আমার ভয় হয় যে, আমার দ্বারা না জানি কোন গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায়; অথচ আমার শাদী করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। এই কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলাম। তিনি চুপ রইলেন। আমি আবারও অনুরূপভাবে বললাম। তিনি চুপ থাকলেন। আবারও অনুরূপভাবে বললে তিনি উত্তর করলেন, হে আবূ হুরায়রা! যা কিছু তোমার ভাগ্যে আছে, তা লেখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হও বা না হও, তাতে কিছু আসে যায় না। [১] ১ খাসি হও বা না হও তোমার ভাগ্যে যা আছে, তা অবশ্যই ঘটবে। সুতরাং খাসি হওয়ার দরকার নেই।
৪৭০৬ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মনে করুন আপনি এমন একটি ময়দানে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখানে একটি গাছের কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন কটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার দ্বারা আয়িশা (রাঃ)-এর উদ্দেশ্য ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছাড়া অন্য কোন কুমারীকে শাদী করেননি।
৪৭০৭ উবায়দুলস্নাহ্ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’বার করে আমাকে স্বপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে। এক ব্যাক্তি রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে দেখে বলল, এই হচ্ছে তোমার স্ত্রী। তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমই। তখন আমি বললাম, এ স্বপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে তিনি বাস্তবে পরিণত করবেন।
৪৭০৮ আবূ নু’মান (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এক জিহাদ থেকে ফিরছিলাম। আমি আমার দুর্বল উটটি দ্রুত চালাতে চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় কে একজন আরোহী আমার পিছন থেকে এসে আমার উটটিকে ছড়ি দ্বারা খোঁচা দিলে উটটি দ্রুত চলতে লাগল। পিছনে ফিরে দেখি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, জাবির, তোমার এত তাড়াতাড়ি করার কারণ কী? আমি উত্তর দিলাম, আমি নতুন শাদী করেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুমারী শাদী করেছ, না বিধবাকে? আমি উত্তর দিলাম বিধবাকে। তিনি বললেন, তুমি কেন কুমারী মেয়েকে শাদী করলে না? যার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতে আর সেও তোমার সাথে খেল-তামাসা করত। বর্ণনাকারী বলেন, যখন আমরা মদিনায় প্রবেশ করব এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, (যেন তোমার মহিলাটি স্ত্রী) (যার স্বামী এতদিন কাছে ছিল না) নিজের অগোছালো কেশরাশি বিন্যাস করে নিতে পারে এবং ক্ষৌরকার্য করতে পারে।
৪৭০৯ আদম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাদী করলে, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন মেয়ে শাদী করেছ? আমি বললাম, পূর্ব বিবাহিতা রমণীকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, কুমারী মেয়ে এবং তাদের কৌতুকের প্রতি তোমার আগ্রহে নেই? (রাবী বলেন) আমি এ ঘটনা আমর ইবনু দীনার (রাঃ)-কে অবগত করালে তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তুমি কেন কুমারী মেয়েকে শাদী করলে না, যাতে তুমি তার সাথে এবং সে তোমার সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করতে পারত?
৪৭১০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উরওয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে আশেয়া (রাঃ)-এর শাদীর পয়গাম দিলেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি আপনার ভাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আমার আল্লাহর দ্বীনের এবং কিতাবের ভাই। তবে, সে আমার জন্য হালাল।
৪৭১১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উষ্ট্রারোহী মহিলাদের মধ্যে কুরাইশ বংশীয় মহিলারা সর্বোত্তম। তারা শিশুদের প্রতি স্নেহশীলা এবং স্বামীর মর্যাদা রক্ষার্থে উত্তম হেফাজতকারিণী।
৪৭১২ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আপন ক্রীতদাসীকে উত্তম শিক্ষা দান করে এবং শিষ্টচার শিক্ষা দেয়। এরপর তাকে মুক্ত করে শাদী করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। ঐ আহলে কিতাব, যে তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ওপর ঈমান আনে এবং আমার ওপর ঈমান এনেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে। আর ঐ গোলাম, যে তার প্রভুর হক আদায় করে এবং আল্লাহরও হক আদায় করে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব।
৪৭১৩ সাঈদ ইবনু তালীদ (রহঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার ব্যতীত কোন মিথ্যা কথা বলেন নি। [১] অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে ‘সারা’ (রাঃ) ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তাঁর সেবার জন্য তাঁকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আল্লাহ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতের জন্য আজেরা (হাজেরা)-কে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘‘হে আকাশের পানির সন্তানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা। ’’ ১ প্রকৃতপক্ষে হযরত ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যা বলেননি’ বরং প্রয়োজনবশত দ্ব্যর্থবোধক বাক্য ব্যবহার করেছিলেন।
৪৭১৪ কুতায়বা (রাঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর এবং মদিনার মাঝখানে তিন দিন অবস্থান করলেন এবং হুয়ায়্যার কন্যা সাফীয়ার সাথে রাতে বাসর যাপনের ব্যবস্থা করলেন। আমি মুসলমানদের ওয়ালীমার দাওয়াত দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দসত্মরখানা বিছাবার নির্দেশ দিলেন এবং সেখানে গোশত ও রুটি ছিল না। খেজুর, পনির, মাখন ও ঘি রাখা হল। এটাই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়ালীমা। উপস্থিত মুসলমানরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল। তিনি (সাফীয়া) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীদের মধ্যে গণ্য হবেন অথবা ক্রীতদাসীদের মধ্যে গণ্য হবেন। এরপর তাঁরা ধারণা করলেন যে, যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফীয়ার জন্য পর্দার ব্যবস্থা করেন, তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী হিসাবে গণ্য করা হবে। আর যদি পর্দা না করা হয়, তাহলে তাঁর ক্রীতদাসী হিসাবে মনে করা হবে। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে অন্যত্র যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন, তখন সাফীয়ার জন্য উটের পিছনে জায়গা করলেন এবং তাঁর লোকদের মাঝখানে পর্দার ব্যবস্থা করলেন।
৪৭১৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফীয়াকে আযাদ করলেন এবং এই আযাদীকে তার শাদীর মোহরানা হিসাবে ধার্য করলেন।
৪৭১৬ কুতায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছে না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আপনার শাদীর কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সাথে একে শাদী দিয়ে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কি আছে? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ। কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাও পেলাম না, কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ (শুধু আছে)। (রাবী) সাহল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাঁদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইলেন। তখন রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন শরীফ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে হিসাব করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এই মহিলাটিকে (শাদী) দিলাম।
৪৭১৭ আবূল ইয়ামন (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুযায়ফা (রাঃ) ইবনু উত্বা ইবনু রাবিয়া ইবনু আবদে শাম্স, যিনি বদরের যুদ্ধে রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, তিনি সালিমকে পালক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তার সাথে তিনি তাঁর ভাতিজী, ওয়ালীদ ইবনু উতবা ইবনু রাবিয়ার কন্যা হিন্দাকে শাদী দেন। সে ছিল জনৈকা আনসারী মহিলার আযাদকৃত দাস। যেমন নাকি যায়দকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালক-পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। জাহিলী যুগের রীতি ছিল যে, কেউ যদি অন্য কোন ব্যাক্তি পালক-পুত্র হিসাবে গ্রহণ করত, তবে লোকেরা তাকে ঐ ব্যাক্তির পুত্র হিসাবে ডাকত এবং মৃত্যুর পর ঐ ব্যাক্তির উত্তরাধিকারী হত। যতক্ষণ না পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘তাদেরকে (পালক পুত্রদেরকে) তাদের জন্মদাতা পিতার নামে ডাক তারা তোমাদের মুক্ত করা গোলাম। এরপর থেকে তাদেরকে পিতার নামেই শুধু ডাকা হত। যদি তাদের পিতা সম্পর্কে জানানা যেত, তাহলে তাকে মাওলা বা দ্বীনী ভাই হিসাবে ডাকা হত। তারপর [ আবূ হুযায়ফা ইবনু উতবা (রাঃ)-এর স্ত্রী] সাহলা বিনতে সুহায়ল ইবনু আমর আল কুরাইশী আল আমিরী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা সালিমকে আমাদের পুত্র হিসাবে মনে করতাম’ অথচ একন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তো আপনই ভাল জানেন। এরপর তিনি পুরো হাদীস বর্ণনা করলেন।
৪৭১৮ উবায়দা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবা’আ বিন্তে যুবায়র-এর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তোমার হাজ্জে (হজ্জ) যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি? সে উত্তর দিল, আল্লাহর কসম! আমি খুবই অসুস্থবোধ করছি (তবে হাজ্জে (হজ্জ) যাওয়ার ইচ্ছা আছে।)তার উত্তরে বললেন, তুমি হাজ্জের (হজ্জ) নিয়্যতে বেরিয়ে যাও এবং আল্লাহর কাছে এই শর্ত আরোপ করে বল, হে আল্লাহ! যেখানেই আমি বাধাগ্রস্থ হব, সেখানেই আমি আমার ইহরাম শেষ করে হালাল হয়ে যাব। সে ছিল মিকদাদ ইবনু আসওয়াদের স্ত্রী।
৪৭১৯ মূসা’দ্দাদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে শাদী করা যায়- তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রসত্ম হবে।
৪৭২০ ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) হযরত সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট দিয়ে গমন করছিল, তখন তিনি (সাহাবায়ে কিরাম) বললেন, তোমাদের এর সম্পর্কে কি ধারণা? তারা উত্তর দিলেন, ‘‘যদি কোথাও কোন মহিলার প্রতি এ লোকটি শাদীর প্রস্তাব করে, তার সাথে বিয়ে দেয়া যায়। যদি সে সুপারিশ করে, তাহলে সুপারিশ গ্রহণ করা যায়, যদি কথা বলে, তবে কান লাগিয়ে শোনা উচিত। তারপর সেখান দিয়ে একজন গরীব মুসলমান অতিক্রম করতেই রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমাদের কি ধারণা? তারা জবাব দিলেন, যদি এ ব্যাক্তি কোথাও শাদীর প্রস্তাব করে, তো বিবাহ দেয়া ঠিক হবে না। যদি কারও সুপাশি করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি কোন কথা বলে, তবে তা শোনার প্রয়োজন নেই। তখন রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সমস্ত পৃথিবীতে ঐ ব্যাক্তির চেয়ে এ উত্তম (ধনীদের চেয়ে গরীবরা উত্তম)।
৪৭২১ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে উরওয়া (রহঃ) বলেছেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে ‘তোমরা যদি ভয় কর যে ইয়াতীমদের প্রতি ইনসাফ করতে পাবে না’-এই আয়াতের মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হে ভাগ্নে! এই আয়াত ঐসব ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা কোন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে আছে। আর অভিভাবক তার ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতি আসক্ত; কিন্তু শাদীর পর মোহর দিতে অনিচ্ছুক। এই রকম অভিভাবককে ঐ ইয়াতীম বালিকাদের শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করতে নিষেধ করা করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ইনসাফের সাথে পূর্ণ মোহর তাদেরকে দিয়ে দেয় এবং এদেরকে ছাড়া অন্যদের শাদী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে লোকেরা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন, ‘‘লোকেরা তোমার নিকট স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বল, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে তোমাদের প্রতি এই নির্দেশ দিচ্ছেন এবং সেই সঙ্গে এই হুকুমগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, যা অনেক পূর্ব থেকেই তোমাদেরকে শোনানো হয়েছে। সেই হুকুমগুলো যা এই ইয়াতীম মেয়েদের সম্পর্কে। যাদের হক তোমরা সঠিক মত আদায় কর না। যাদেরকে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করার কোন আগ্রহ তোমাদের নেই। ’’ ইয়াতীম বালিকারা যখন সুন্দরী এবং ধনবতী হয়, তখন অভিভাবকগণ তার বংশমর্যদা রক্ষা এবং শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতঃ তারা এদের পূর্ণ মোহর আদায় না করা পর্যন্ত শাদী করতে পারে না। আর তারা যদি এদের ধন-সম্পদ এবং সৌন্দর্যের অভাবের কারণে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করতে আগ্রহী না হত, তাহলে তারা এদের ছাড়া অন্য মহিলাদের শাদী করত। সুতরাং যখন তারা এদের মধ্যে স্বার্থ পেতো না তখন তাদের বাদ দিত। এ কারণে তাদেরকে স্বার্থের বেলায় পূর্ণ মোহর আদায় করা ব্যতীত শাদী করতে নিষেধ করা হয়।
৪৭২২ ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রী, বাড়িঘর এবং ঘোড়ার ভিতরে অশুভের লক্ষণ আছে।
৪৭২৩ মুহাম্মদ ইবনু মিনহাল (রহঃ) হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট লোকেরা অশুভ স্ত্রীলোক সম্পর্কে আলোচনা করলে তিনি বলেন, কোন কিছুর মধ্যে যদি অপয়া থাকে, তা হলঃ বাড়ি-ঘর, স্ত্রীলোক এবং ঘোড়া।
৪৭২৪ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যদি কোন কিছুর মধ্যে কুলক্ষণ থাকে, তা হচ্ছে, ঘোড়া, স্ত্রীলোক এবং বাসগৃহ।
৪৭২৫ আদম (রহঃ) হযরত উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুরুষের ওপরে মেয়েলোকের অপেক্ষা অন্য কোন বড় ফিতনা আমি রেখে গেলাম না।
৪৭২৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রারীরা’ থেকে তিনটি বিষয় জানাগেছে যে, যখন তাকে মুক্ত করা হয় তখন তাকে ইখতিয়ার দেয়া হয় (সে ক্রীতদাস স্বামীর সাথে থাকবে কিনা)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ক্রীতদাসের আল ওয়ালার [১] অধিকার মুক্তকারী ব্যাক্তির। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে চুলার ওপরে ডেকচি দেখতে পেলেন। কিন্তু তাকে রুটি এবং তরকারী দেয়া হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, চুলার ওপরের ডেকচির তরকারী দেখতে পাচ্ছি না যে? উত্তর দেয়া হল, ডেকচিতে রারীরার জন্য দেয়া সা’দকার গোশত রয়েছে। আর আপনি তো সা’দকার গোশত খান না। তখন তিনি বললেন, এটা রারীরার জন্য সা’দ্কা এবং আমাদের জন্য হাদিয়া। ১ মুক্ত দাস-দাসীর ব্যাপারে যে অধিকার জন্মে তাকে ‘ওয়ালা’ বলা হয়।
৪৭২৭ মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ‘যদি তোমরা ভয় কর ইয়াতীমদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ কায়েম করতে পারবে না’-এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই আয়াত ঐ সমস্তইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছে, যাদের অভিভাবক তাদের সম্পদের লোভে শাদী করে। কিন্তু তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং তাদের সম্পত্তিকে ইনসাফের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করে না। তার জন্য সঠিক পন্থা এই যে, ঐ বালিকাদের ব্যতীত মহিলাদের মধ্য থেকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী দুইজন অথবা তিনজন অথবা চারজনকে শাদী করতে পারবে।
৪৭২৮ ইসমাঈল (রহঃ) হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যাক্তি হাফসা (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যাক্তি হাফ্সার দুধের সম্পর্কে চাচা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যদি অমুক ব্যাক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কের থেকে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সাথে দেখা করতে পারতাম)? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাঁ, রক্তের সম্পর্কের কারণে, যাদের সাথে যাদের শাদী নিষিদ্ধ, দুধের সম্পর্কের কারণে তাদের সঙ্গে শাদী নিষিদ্ধ।
৪৭২৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলল, আপনি কেন হামযা (রাঃ)-এর মেয়েকে শাদী করছেন না? তিনি বললেন, সে আমার দুধ সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ে। পরে হাদীসের অন্য একটি সনদ বর্ণিত হয়েছে।
৪৭৩০ হাকাম ইবনু নাফি উম্মে হাবীবা বিন্তে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমার বোন আবূ সুফিয়ানের কন্যাকে শাদী করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? তিনি উত্তর করলেন হাঁ। এখন তো আমি আপনার একা স্ত্রী নই এবং আমি চাই যে, আমার বোনও আমার সাথে উত্তম কাজে অংশীদার হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনতে পেলাম, আপনি নাকি আবূ সালমার মেয়েকে শাদী করতে চান। তিনি বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ যে, আমি উম্মে সালমার মেয়েকে শাদী করতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি সে আমার প্রতিপালিতা কন্যা না হত, তাহলেও তাকে শাদী করা হলাল হত না। কেননা, সে দুধ সম্পর্কের দিক দিয়ে আমার ভাতিজী। কেননা, আমাকে এবং আবূ সালমাকে সুওয়াইবা দুধ পান করিয়েছেন। সুতরাং, তোমরা তোমাদের কন্যা ও ভগিনীদেরকে শাদীর জন্য পেশ করো না। উরওয়া (রাঃ) বর্ণনা করেন, সুওয়াইবা ছিল আবূ লাহাবের দাসী এবং সে তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দুধ পান করায়। আবূ লাহাব যখন মারা গেল, তার একজন আত্মীয় তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। আবূ লাহাব বলল, যখন তোমাদের থেকে দূলে রয়েছি, তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। কিন্তু সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে কিছু পানি পান করতে পারছি।
৪৭৩১ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এলেন। সে সময় একজন লোক তার কাছে বসা ছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারকে ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেল, যেন তিনি এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ আমার ভাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যাচাই করে দেখ, তোমাদের ভাই কারা? যথন দুধই একমাত্র পানীয়, যা খেয়ে শিশুরু া প্রাণ রক্ষা করে। [১] ১ সন্তানের দু’বছর বয়সের মধ্যে যদি দুধপান করে থাকে, তবে দুধের সম্পর্ক হবে, নতুবা হবে না।
৪৭৩২ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার আয়াত নাযিল হবার পর তাঁর [আয়িশা (রাঃ)] দুধ সম্পর্কীয় চাচা আবূল কু’আয়াসের ভাই ‘আফলাহ্’ তাঁর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তার সাথে যে ব্যবহার করেছি, সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য আমাকে বললেন।
৪৭৩৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উক্বা ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি শাদী করলাম। এরপর একজন কালো মহিলা এসে বলল, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম, আমি অমুকের কন্যা অমুককে শাদী করেছি। এরপর জনৈকা কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এসে আমাদেরকে বলল যে, আমি তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছি; অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এই কথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে এসে বললাম, সে মিথ্যাবাদী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেমন করে তোমার সাথে শাদী হল; অথচ তোমাদের উভয়কে ঐ মহিলা দুধ পান করিয়েছে- এ কথা বলছে। অতএব, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও। রাবী ইসমাঈল শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় উত্তোলন করে ইশারা করেছে যে, তার উর্ধ্বতন রাবী আইউব এইরূপ করে দেখিয়েছেন।
৪৭৩৪ হুমায়দী (রাঃ) উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আবূ সুফিয়ানের কন্যার ব্যাপারে আগ্রহী? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, তাকে দিয়ে আমার কি হবে? আমি বললাম, তাকে আপনি শাদী করবেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তা পছন্দ করবে? আমি বললাম, হাঁ। এখন তো আমি একাই আপনার স্ত্রী নই। সুতরাং আমি চাই, আমার বোনও আমার সাথে কল্যাণে অংশীদার হোক। তিনি বললেন, তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনেছি যে, আপনি আবূ সালামার কন্যা-দররাকে শাদী করার জন্য পয়গাম পাঠিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, উম্মে সালামার কন্যা? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, যেদিন আমার প্রতিপালিতা সৎ কন্যা যদি নাও হতো তবুও তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা সুয়াইবিয়া আমাকে ও তার পিতাকে দুধ পান করিয়েছিল। সুতরাং শাদীর জন্য তোমাদের কন্যা বা বোন কাউকে পেশ করো না। লাইছ বলেন, হিশাম দুররা বিনত আবী সালামার নাম বলেছেন।
৪৭৩৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উম্মে হাবীবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমার বোন আবূ সুফিয়ানের কন্যাকে শাদী করুন। তিনি বলেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী নই এবং আমি যাকে সবচেয়ে ভালবাসি, তার সাথে আমার বোনকেও অংশীদার বানাতে চাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, তুমি কি উম্মে সালামার কন্যার কথা বলেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, যদি সে আমার সৎ কন্যা নাও হতো তবুও তাকে শাদী করা আমার জন্য হালাল হতো না। কারণ সে হচ্ছে আমার দুধ সম্পর্কীয় ভাইয়ের কন্যা। সুওয়াইবা আমাকে এবং তার পিতা আবূ সালমাকে দুধ পান করিয়েছিলেন। সুতরাং তোমাদের কন্যা বা বোনদের শাদীর পয়গাম আমার কাছে পেশ করো না।
৪৭৩৬ আবদার (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তি যেন তার স্ত্রীর ভাইয়ের মেয়ে এবং ভাগ্নীকে শাদী না করে। অপর এক সূত্রে এই হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে।
৪৭৩৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা ও তার বোনঝিকে একত্রে শাদী না করে।
৪৭৩৮ আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে একসাথে ফুফু ও ভ্রতুষ্পুত্রী এবং খালা ও তার বোনের মেয়েকে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। অধস্তন রাবী যুহরী বলেছেন, আমার স্ত্রীর পিতার খালার ব্যাপারেও এ নির্দেশ জানি, কেননা উরওয়া আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রক্তের সম্পর্কের কারণে যা হারাম, দুধ পানের কারণেও এসব তোমরা হারাম মনে করো।
৪৭৩৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্-শিগার নিষিদ্ধ করেছেন। ‘আশ্-শিগার’ হলঃ কোন ব্যাক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যাক্তির পুত্রের সাথে বিবাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং এক্ষেত্রে কোন কনেই মোহর পাবে না।
৪৭৪০ মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) হিশামের পিতা উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদের পুরপুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুআনের এ আয়াত অবর্তীর্ণ হল- ‘‘হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার । ’’ আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবূ সাঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইবনু বিশর এবং আবদাহ্ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হতে একে অপরের চেয়ে কিছু বেশী-কমসহ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
৪৭৪১ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হাবির ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ইহরাম অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেছেন।
৪৭৪২ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ও তাঁর ভাই আবদুল্লাহ তাঁদের পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আলী (রাঃ) ইবনু আববাস বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধে মুতা’আ বিবাহ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া নিষেধ করেছেন।
৪৭৪৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি মহিলাদের মুতা’আ বিবাহ সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, তখন তিনি তার অনুমতি দেন। তাঁর আযাদকৃত গোলাম তাঁকে বললেন, যে এরূপ হুকুম অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা, মহিলাদের স্বল্পতা ইত্যাদির কারণেই ছিল? তখন ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, হাঁ।
৪৭৪৪ আলী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালামা আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমরা কোন এক সেনাবাহিনীতে ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রেরিত এক ব্যাক্তি আমাদের নিকট এসে বললেন, তোমাদেরকে মুতা’আ বিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা মুতা’আ করতে পার। ইবনু আবূ যিব বলেন, আয়াস ইবনু সালামা ইবনু আকওয়া তার পিতা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে কোন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে (মুতা’আ করতে) একমত হলে তাদের পরস্পরের এই সম্পর্ক তিন রাতের জন্য গণ্য হবে। এরপর তারা ইচ্ছা করলে এর চেয়ে বেশি সময় স্থায়ী করতে পারে অথবা বিচ্ছিন্ন হতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা জানিনা এ ব্যবস্থা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, না সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেন, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এটা পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, মুতা’আ বিবাহ প্রথা রহিত হয়ে গেছে।
৪৭৪৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সাবিত আল বুনানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে তাঁর কন্যাও ছিলেন। আনাস (রাঃ) বললেন, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সমর্পণ করতে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে আনাস (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম, সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য পেতে আকৃষ্ট হয়েছিল। এ কারণেই সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিজেকে পেশ করেছে।
৪৭৪৬ সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিজেকে পেশ করলেন। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাকে আমার সঙ্গে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কি আছে, সে উত্তর দিল, আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তালাশ কর, কোন কিছু পাও কিনা? যদি একটি লোহার আংটিও পাও (তা নিয়ে এসো)। লোকটি চলে গেলে এবং ফিরে এসে বলল, একটি কিছুই পেলাম না এমনটিক একটি লোহার আংটিও না; কিন্তু আমার তহবন্দখানা আছে। এর অর্ধেকাংশ তার জন্য। সাহল (রাঃ) বলেন, তার দেহে কোন চাঁদর ছিল না। অতএব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার তহবন্দ দিয়ে কি করবে? যদি তুমি এটা পরিধান কর, মহিলার শরীরে কিছুই থাকবে না, আর যদি সে এটা পরিধান করে তবে তোমার শরীরে কিছুই থাকবে না। এরপর লোকটি অনেক্ষণ বসে রইল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চলে যেতে দেখে ডাকলেন বা ডাকানো হল এবং বললেন, তুমি কুরআন কতটুকু জানো? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে সূরাগুলোর উল্লেখ করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন জানো, তার বিনিময়ে তোমাকে তার সাথে শাদী দিলাম।
৪৭৪৭ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন উমর (রাঃ)-এর কন্যা হাফসা (রাঃ) খুনায়স ইবনু হুযায়ফা সাহমীর মৃত্যুতে বিধবা হলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একজন সাহাবী ছিলেন এবং মদিনায় ইন্তেকাল করেন। উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি উসমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ)-এর কাছে গেলাম এবং হাফসাকে শাদীর জন্য প্রস্তাব দিলাম; তখন তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। এরপর আমি কয়েক রাত অপেক্ষা করলাম, তারপর আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, আমার কাছে এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, যেন এখন আমি তাকে শাদী না করি। উমর (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, যদি আপনি চান, তাহলে আপনার সাথে উমরের কন্যা হাফ্সাকে শাদী দেই। আবূ বকর (রাঃ) নীরব থাকলেন এবং প্রতি-উত্তরে আমাকে কিছুই বললেন না। এতে আমি উসমান (রাঃ)-এর চেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হলাম, তারপর আমি কয়েকরাত অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে শাদীর জন্য প্রস্তাব পাঠালেন এবং হাফসাকে আমি তার সাথে শাদী দিলাম। এরপর আবূ বকর (রাঃ) আমার সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, সম্ভবত আপনি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আপনি যখন হাফসাকে আমার জন্য পেশ করেন তখন আমি কোন উত্তর দেইনি। উমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হাঁ। আব বকর (রাঃ) বললেন, আপনার প্রস্তাবে সাড়া না দিতে কোন কিছুই আমাকে বিরত করেনি, বরং আমি জানি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসার বিষয় উল্লেখ করেছেন, কখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন ভেদ প্রকাশ আমার পক্ষক্ষ সম্ভব নয়। যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রত্যাহার করতেন তাহলে আমি হাফসাকে গ্রহণ করতাম।
৪৭৪৮ কুতায়বা (রহঃ) ইরাক ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যয়নাব বিন্তে আবূ সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বলেছেন, আপনি দুররাহ্ বিনত আবূ সালামাকে শাদী করতে যাচ্ছেন- এ কথা আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বললেন, আমি উম্মে সালামা থাকতে তাকে শাদী করব? যদি আমি উম্মে সালামাকে শাদী নাও করতাম, তবুও সে আমার জন্য হালাল হত না। কেননা তার পিতা আমার দুধভাই।
৪৭৪৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমি তোমাকে স্বপ্নের মধ্যে দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী চাঁদরে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে এসে বলল, এ হচ্ছে আপনার স্ত্রী। এরপর আমি তোমার মুখমন্ডল থেকে চাঁদর খুলে ফেলে তোমাকে দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, যদি স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তা বাস্তবায়িত হবে।
৪৭৫০ কুতায়বা (রহঃ) হযরত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করতে এসেছি। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে দেখলেন এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দৃষ্টি দিলেন। আপাদমস্তক দেখা শেষ করে তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলা দেখতে পেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে কোন ফায়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। তারপর একজন সাহাবী দাঁড়িয়ে অনুরোধ করলেন। ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনার এ মহিলার কোন প্রয়োজন না থাকে, তাহলে আমার সাথে তাকে শাদী দিয়ে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কোন সম্পদ আছে কি? সে বলল- না, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার কাছে কোন সম্পদ নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে দেখ, কোন কিছু পাও কিনা? তারপর সে চলে গেল, ফিরে এসে বলল, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কিছুই পেলাম না। তখন তিনি বললেন, দেখ, একটি লোহার আংটি পাও কিনা! এরপর সে চলে গেল, ফিরে এসে বলল, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম, একটি লোহার আংটিও পেলাম না; কিন্তু আমার তদবন্দ আছে। [বর্ণনাকারী সাহল (রাঃ) বলেন, তার অন্য কোন চাঁদর ছিল না] এর অর্ধেক তাকে দিয়ে দেব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমার এ তদবন্দ দ্বারা কি হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তার ওপর কিছুই থাকবে না, আর যদি সে পরিধান করে তাহলে তোমার জন্যও কিছুই থাকবে না। এরপর লোকটি বসে পড়ল। দীর্ঘক্ষণ পরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন এবং ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কুরআন কতটুকু জানা আছে? সে বলল, হ্যাঁ, আমার অমুক, অমুক, অমুক সূরা জানা আছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এগুলো মুখস্থ পড়তে পার? সে বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, যাও যে পরিমাণ কুরআন শরীফ মুখস্থ জানো, এর বিনিময়ে এই মহিলাকে তোমার সাথে শাদী করিয়ে দিলাম।
৪৭৫১ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান ও আহমদ ইবনু সালিহ্ (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, জাহিলী যুগে চার প্রকারের বিয়ে প্রচলিত ছিল। এক প্রকার হচ্ছে, বর্তমান যে ব্যবস্থা চলতে অর্থাৎ কোন ব্যাক্তি কোন মহিলার অভিভাবকের নিকট তার অধীনস্থ মহিলা অথবা তার কন্যার জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিবে এবং তার মোহর নির্ধারণের পর বিবাহ করবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, কোন ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ঋতু থেকে মুক্ত হওয়ার পর এই কথা বলত যে, তুমি অমুক ব্যাক্তির কাছে যাও এবং তার সাথে যৌন মিলন কর। এরপর তার স্বামী নিজ স্ত্রী থেকে পৃথক থাকত এবং কখনও এক বিছানায় ঘুমাত না, যতক্ষণ না সে অন্য ব্যাক্তির দ্বারা গর্ভবতী হ, যার সাথে স্ত্রীর যৌন মিলন হত। যখন তার গর্ভ সুস্পষ্টবাবে প্রকাশ হত তখন ইচ্ছা করলে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করত। এটা ছিল তার স্বামীর অভ্যাস। এতে উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে সে একটি উন্নত জাতের সন্তান লাভ করতে পারে। এ ধরণের বিবাহকে ‘নিকাহুল ইস্তিবদা’ বলা হত। তৃতীয় প্রথা ছিল যে, দশ জনের কম কতিপয় ব্যাক্তি একত্রিত হয়ে পালাক্রমে একই মহিলার সাথে যৌনমিলনে লিপ্ত হত। যদি মহিলা এর ফলে গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর কিছুদিন অতিবাহিত হত, সেই মহিলা এ সকল ব্যাক্তিকে ডেকে পাঠাত এবং কেউই আসতে অস্বীকৃতি জানাতে পারত না। যখন সকলেই সেই মহিলার সামনে একত্রিত হত, তখন সে তাদেরকে বলত, তোমরা সকলেই জানো- তোমরা কি করেছ! এখন আমি সন্তান প্রসব করেছি, সুতরাং হে অমুক! এটা তোমারই সন্তান। ঐ মহিলা যাকে খুশি তার নাম ধরে ডাকত, তখন এ ব্যাক্তি উক্ত শিশুটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য থাকত এবং ঐ মহিলা তার স্ত্রীরূপে গণ্য হত। চতুর্থ প্রকারের বিবাহ হচ্ছে, বহু পুরুষ একই মহিলার সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হত এবং ঐ মহিলা তার কাছে যত পুরুষ আসত, কাউকে শয্যা-শায়ী করতে অস্বীকার করত না। এরা ছিল বারবনিতা (পতিতা), যার চিহ্ন হিসাবে নিজ ঘরের সামনে পতাকা উড়িয়ে রাখত। যে কেউ ইচ্ছা করলে অবাধে এদের সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হতে পারত। যদি এ সকল মহিলাদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হত এবং কোন সন্তান প্রসব করত তাহলে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া সকল কাফাহ্ পুরুষ এবং একজন ‘কাফাহ্’ (এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যারা সন্তানের মুখ অথবা শরীরের কোন অঙ্গ দেখে বলতে পারত- অমুকের ঔরসজাত সন্তান)-কে ডেকে আনা হত সে সন্তানটির যে লোকটি সাথে এ সা’দৃশ্য দেখতে পেত তাকে বলত, এটি তোমার সন্তান। তখন ঐ লোকটি ঐ সন্তানকে নিজের হিসাবে অস্বীকার করতে পারত না। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সত্য দ্বীনসহ পাঠানো হল তখন তিনি জাহেলী যুগের সমস্ত বিবাহ প্রথাকে বাতিল করে দিলেন এবং বর্তমানে প্রচলিত শাদী ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিলেন।
৪৭৫২ ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এবং যা কিছু তোমার কাছে তিলাওয়াত করা হয় ইয়াতীম নারী সম্পর্কে তোমরা যাদের প্রাপ্য পরিশোধ কর না এবং যাদের তোমরা শাদী করতে আগ্রহী’’ তিনি বলেন, এই আয়াত হচ্ছে ঐ ইয়াতীম নারীদের সম্পর্কে, যারা কোন অভিভাবকের আওতাধীন রয়েছে এবং তার ধন-সম্পদে সে শরীকানা রাখে কিন্তু তাকে শাদী করা পছন্দ করে না এবং তার সম্পদের জন্য অন্যের কাছে শাদী দিতে আগ্রহীও নয়, যাতে করে অন্য লোক এ সম্পত্তিতে তাদের সাথে অংশীদার হয়ে না বসে (উক্ত আয়াতে অভিভাবকদের এরূপ গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়ছে)।
৪৭৫৩ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ)- এর কন্যা হাফসা (রাঃ) যখন তার স্বামী খুনায়স ইবনু হুযাফা আস্সাহ্মীর মৃত্যুর ফলে বিধবা হল, ইনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী ছিলেন এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং মদিনায় ইন্তেকাল করেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি উসমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাঁর কাছে হাফসার শাদীর প্রস্তাব করলাম এই বলে যে, যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তবে হাফসাকে আপনার সঙ্গে শাদী দিব। তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করে দেখি। আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনি আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আমি বর্তমানে শাদী না করার জন্য মনস্থির করেছি। উমর (রাঃ) আরো বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি যদি চান, তাহলে হাফসাকে আপনার সাথে শাদী দেব।
৪৭৫৪ আহমদ ইবনু আবূ আমর (রহঃ) আল হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘‘তোমরা তাদেরকে আটকিয়ে রেখো না’’-এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) বলেছেন যে, উক্ত আয়াত তার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমার বোনকে এক ব্যাক্তির সাথে শাদী দেই, সে তাকে তালাক দিয়ে দেয়। যখন তার ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হয় তখন সেই ব্যাক্তি আমার কাছে আসে এবং তাকে পুনরায় শাদীর পয়গাম দেয়। কিন্তু আমি তাকে বলে দেই, আমি তাকে তোমার সাথে শাদী দিয়েছিলাম এবং তোমরা মেলামেশা করেছ এবং আমি তোমাকে মর্যাদা দিয়েছি। তারপরেও তুমি তাকে তালাক দিলে? পুনরায় তুমি তাকে চাওয়ার জন্য এসেছ? আল্লাহর কসম, সে আবার কখনও তোমার কাছে ফিরে যাবে না। মা’কিল বলেন, সে লোকটি অবশ্য খারাপ ছিল না এবং তার স্ত্রীও তার কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তাদেরকে বাদা দিও না, ’’ এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আমার বোনকে তার কাছে শাদী দেব। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে তার সাথে পুনঃ শাদী দিলেন।
৪৭৫৫ ইবনু সালাম (রাঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন, এ আয়াত হচ্ছে ‘‘তারা আপনার কাছে নারীদের সম্পর্কে ফয়সালা চায়। আপনি বলে দিন, আল্লাহ তাদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন । ’’ এই আয়াত হচ্ছে ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে, যারা কোন অভিভাবকের অধীনে আছে এবং তারা ঐ অভিভাবকের ধন-সম্পদেও অংশীদার; অথচ সে নিজে ওকে শাদী করতে ইচ্ছুক নয় এবং অন্য কেউ তাদেরকে শাদী করম্নক এবং ধন-সম্পদে ভাগ বসাক তাও পছন্দ করে না। তাই সে তার শাদীর বাধার সৃষ্টি করে। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
৪৭৫৬ আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে বসা ছিলাম। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একজন মহিলা এসে নিজকে পেশ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আপাদমস্তক সুন্দর করে দেখলেন; কিন্তু তার কথা কোন প্রতি-উত্তর দিলেন না। একজন সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাকে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? লোকটি উত্তর করল, না, আমার কাছে কিছু নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি লোহার আংটিও নেই? লোকটি উত্তর করল, না, একটি লোহার আংটিও নেই। কিন্তু আমি আমার পরিধানের তহবন্দের অর্ধেক তাকে দেব আর অর্ধেক নিজে পরব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তোমার কুরআন মজীদের কিছু জানা আছে? সে বলল, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন জানো, তার পরিবর্তে তাকে তোমার সাথে শাদী দিলাম।
৪৭৫৭ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে শাদী করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬ বছর এবং নয় বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে বাসর ঘর করেন এবং তিনি তাঁর সান্নিধ্যে নয় বছরকাল ছিলেন।
৪৭৫৮ মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রাঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন তাঁর ছয় বছর বয়স তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শাদী করেন। তিনি তাঁর সাথে বাসর ঘর করেন নয় বছর বয়সে। হিশাম (রাঃ) বলেন, আমি জেনেছি যে, আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নয় বছর ছিলেন।
৪৭৫৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করলাম। এরপর সে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল এরপর একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, আপনার প্রয়োজন না থাকলে, আমার সঙ্গে এর শাদী দিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে মোহরানা দেয়ার মতো কি কিছু আছে? লোকটি বলল, আমার এ তহবন্দ ছাড়া আর কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তহবন্দখানা তাকে দিয়ে দাও, তাহলে তোমার কিছু থাকবে না। সুতরাং তুমি অন্য কিছু তালাশ কর। লোকটি বলল, আমি কোন কিছুই পেলাম না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তালাশ কর, যদি একটি লোহার আংটিও পাও। সে কিছুই পেল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কুরআন শরীফের কিছু অংশ তোমার জানা আছে? লোকটি বলল, হ্যাঁ! অমুক অমুক সূরা আমার জানা আছে এবং সে সূরাগুলোর নাম একে একে উল্লেখ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুরআনের যে যে অংশ তোমার জানা আছে, তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার নিকট শাদী দিলাম।
৪৭৬০ মু’আয বিন ফদালা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া শাদী দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া শাদী দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কেমন করে তার অনুমতি নেব। তিনি বললেন, তার চুপ করে থাকাটাই তার অনুমতি।
৪৭৬১ আমর ইবনু রবী (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! নিশ্চয়ই কুমারী মেয়েরা লজ্জাশীলা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার চুপ থাকাটাই তার সম্মতি।
৪৭৬২ ইসমাঈল (রহঃ) হযরত খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি বয়স্কা ছিলেন তখন তার পিতা তাকে শাদী দেন। এ শাদী তার পছন্দ ছিল না। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলে তিনি এ শাদী বাতিল করে দেন।
৪৭৬৩ ইসহাক (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ এবং মুজাম্মি ইবনু ইয়াযীদ উভয়েই বর্ণনা করেন যে, ‘খিযামা’ নামক এক ব্যাক্তি একটা মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া অন্যের সঙ্গে শাদী দেন। পরবর্তী অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের বর্ণনার ন্যায়।
৪৭৬৪ আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত উরওয়া ইবনু আবূ যুবায়র (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, খালাম্মা, ‘‘যদি তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে পারবে না তোমাদের দক্ষক্ষণ হসত্ম যার মালিক । এই আয়াত কোন্ প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে? হযরত আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমার ভাগ্নে! এই আয়াত ঐ ইয়াতীম বালিকাদের প্রসঙ্গে অবর্তর্ণ হয়েছে, যারা তার অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং সেই অভিভাবক তার রূপ ও সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে তাকে শাদী করতে চায়; কিন্তু তার মোহরানা কম দিতে চায়। এই আয়াতের মাধ্যমে উক্ত বালিকাদের শাদী করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের ব্যতীত অন্য নারীদের শাদী করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য যদি সে এদের পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেয় তবে সে শাদী করতে পারবে। আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ ‘‘তারা তোমার কাছে মহিলাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং তোমরা যাদের শাদী করতে চাও’’ আল্লাহ তা’আলা এদের জন্য এ আয়াত নাযিল করেন; যদি কোন ইয়াতীম বালিকার সৌন্দর্য এবং সম্পদ থাকে, তাহলে এরা তাদেরকে শাদী করতে চায় এবং এদের স্বীয় আভিজাত্যের ব্যাপারেও ইচ্ছা পোষণ করে এবং মোহর কম দিতে চায়। কিন্তু সে যদি তাদের পছন্দমতো পাত্রী না হয়, তার সম্পদ ও রূপ কম হওয়ার কারণে এদেরকে ত্যাগ করে অন্য মেয়ে শাদী করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যেমনিভাবে এদের প্রতি অনীহার সময় এদের পরিত্যাগ করতে চায় তদ্রম্নপ যে সময় আকর্ষণ থাকবে, সে সময়েও যেন তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করে পূর্ণ মোহর আদায় করে।
৪৮৬৫ আবূ নু’মান হযরত সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো এবং নিজকে শাদীর জন্য তাঁর কাছে পেশ করল। তিনি বললেণ, এখন আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। এরপর উপস্থিত একজন লোক বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাকে আমার সাথে শাদী দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি আছে? লোকটি বলল, আমার কিছু নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে একটি লোহার আংটি হলেও দাও। লোকটি বলল, আমার কাছে কিছুই নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কি পরিমাণ কুরআন আছে? লোকটি বলল, এ পরিমাণ কুরআন শরীফ আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন শরীফ জানো, তার বিনিময়ে এই মহিলাকে তোমার কর্তৃত্বে দিয়ে দিলাম।
৪৭৬৬ মাক্কী ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে এক ভাই কোন জিনিসের দাম করলে অন্যকে তার দরদাম করতে নিষেধ করেছেন এবং এক মুসলিম ভাইয়ের শাদী প্রস্তাবের ওপরে অন্য ভাইকে প্রস্তাব দিতে নিষেধ করেছেন, যতক্ষণ না প্রথম প্রস্তাবকারী তার প্রস্তাব উঠিয়ে নেবে বা তাকে অনুমতি দেবে।
৪৭৬৭ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়ব (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ করো না, একে অন্যের ব্যাপারে মন্দ কথায় কান দিও না এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা রোখো না’ বরং পরস্পর ভাই হয়ে যাও। এক মুসলিম ভাইয়ের প্রস্তাবিত মহিলার কাছে শাদীর প্রসত্মব করো না; বরং ঐ পর্যন্ত অপেক্ষা কর, যতক্ষণ না সে তাকে শাদী করে অথবা বাদ দেয়।
৪৭৬৮ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, উমর (রাঃ) বলেন, হাফসা (রাঃ) বিধবা হলে আমি আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনি যদি চান তবে হাফসা বিনত উমরকে আপনার কাছে শাদী দিতে পারি। আমি কয়েকদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। তারপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শাদীর পয়গাম পাঠালেন। পরে আবূ বকর (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আপনার প্রস্তাবে উত্তর দিতে কোন কিছুই আমাকে বাধা দেয়নি; তবে আমি জেনেছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং আমি কখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন প্রকাশ করতে পারি না। তিনি যদি তাকে বাদ দিতেন, তাহলে আমি তাকে গ্রহণ করতাম। ইউনুস, মূসা ইবনু উকবা এবং ইবনু আকিকে যুহরীর সূত্রে উক্ত হাদীসের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
৪৭৬৯ কাবিস (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, পূর্বাঞ্চল থেকে দু’ব্যাক্তি এসে বক্তৃতা দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন কোন বক্তৃতা জাদুমন্ত্রের মতো।
৪৭৭০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত রুবাই বিনত মুআবিবয ইবনু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং আমার চাঁদরের ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার কাছে বসে আছ। সে সময় আমাদের কচি মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ-চাচাঁদের শোকগাঁথা হচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজন এ কথা বলে ফেলল যে, আমাদের মধ্যে একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন, যিনি আগামী দিনের কথা জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা বলা ছেড়ে দাও এবং পূর্বে যা বলেছিলে তাই বল।
৪৭৭১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) কোন এক মহিলাকে শাদী করলেন এবং তাকে মোহরানা হিসাবে খেজুর দানার পরিমাণ স্বর্ণ দিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখে শাদীর আনন্দের ছাপ দেখলেন তখন তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন; তখন সে বললঃ আমি একজন নারীকে খেজুরের আটি পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে শাদী করেছি। কাতাদা আনাস থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুর রহমান খেজুরের দানা পরিমাণ স্বর্ণ মোহরানা হিসাবে দিয়ে কোন মহিলাকে শাদী করেন।
৪৭৭২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি অন্যান্য লোকের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে পেশ করছি, এখন আপনার মতামত দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন উত্তর দিলেন না। এরপর মহিলাটি পুনরায় দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আমার জীবনকে আপনার কাছে পেশ করেছি। এতে আপনার মতামত কি? তিনি কোন প্রতিউত্তর করলেন না। তারপর তৃতীয় বারে দাঁড়িয়ে বলল, আমি আমার জীবন আপনার কাছে সোপর্দ করছি। আপনার মতামত কি? এরপর একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই মহিলাকে আমার সাথে শাদী দিয়ে দিন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কাছে কিছু আছে? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, যাও তালাশ কর, একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। লোকটি চলে গেল এবং খুঁজে দেখল। এরপর এসে বলল, আমি কিছুই পেলাম না; এমনকি একটি লোহার আংটিও না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি কিছু কুরআন জানা আছে? সে বলল, অমুক অমুক সূরা আমার মুখস্থ আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে পরিমাণ কুরআন মুখস্থ পার, তার বিনিময়ে এ মহিলাকে তোমার সাথে শাদী দিলাম।
৪৭৭৩ ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হযরত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেন, তুমি শাদী কর একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হলেও।
৪৭৭৪ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) হযরত উক্বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল শর্তের চেয়ে শাদীর শর্ত পালন করা তোমাদের জন্য অধিক কর্তব্য এই জন্য যে, এর মাধ্যমেই তোমাদেরকে মহিলাদের বিশেষ অংশ ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে।
৪৭৭৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শাদীর সময় কোন নারীর জন্য এরূপ শর্ত আরোপ করা বৈধ নয় যে, তার বোনের তালাক দাবি করবে, যাতে সে তার পাত্র পূর্ণ করে নেয় (সব কিছুর ওপরে তার একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে) কেননা, তার ভাগ্যে যা আছে তাই ঘটবে।
৪৭৭৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বণিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে এমন অবস্থায় এলেন যে, তার সুফরার চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) তার উত্তরে বললেন, তিনি এক আনসারী নারীকে শাদী করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি পরিমাণ মোহরানা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমি তাকে খেজুরের আটির সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।
৪৭৭৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নাব (রাঃ)-এর শাদীতে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন এবং মুসলমানদের জন্য উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। তারপর তার অভ্যাস মত তিনি বাইরে আসেন এবং উম্মুল মু’মিনীনদের গৃহে প্রবেশ করে তাদের জন্য দোয়া করেন এবং তাঁরাও তাঁর জন্য দোয়া করেন। এরপরে ফিরে এসে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, দু’জন লোক বসে আছে। এরপর তিনি ফিরে গেলেন। বর্ণনাকারী বলে, আমি ঠিক স্মরণ করতে পারছি না যে, আমি তাকে ঐ লোক দু’টি চলে যাওয়ার সংবাদ দিয়েছিলাম, না তিনি নিজেই কারুর দ্বারা খবর পেয়েছিলেন।
৪৭৭৮ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)-এর দেহে সুফরার চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এ কি? আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, আমি একজন মহিলাকে একটি খেজুরের আটি সমপরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে শাদী করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার এ শাদীতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।
৪৭৭৯ ফারওয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শাদী করেন তখন আমার মা আমার কাছে এলেন এবং আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করালেন, আমি সেখানে কয়েকজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম। তারা মঙ্গল, বরকত ও সৌভাগ্য কামনা করে দোয়া করছিলেন।
৪৭৮০ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আম্বিয়ায়ে কিরামের মধ্য থেকে কোন একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদের জন্য বের হলেন এবং নিজ লোকদেরকে বললেন, ঐ ব্যাক্তি যেন আমার সাথে জিহাদে না যায়, যে শাদী করেছে এবং স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে ইচ্ছা করে: অথচ এখনও মিলন হয়নি।
৪৭৮১ কাবিসা ইবনু উকবা (রাঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-কে শাদী করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ছয় বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তাঁর বয়স ছিল নয় বছর এবং (মোট) নয় বছর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে জীবন যাপন করেন।
৪৭৮২ মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন পর্যন্ত মদিনা এবং খায়বরের মধ্যবর্তী কোন এক স্থানে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি সাফিয়া বিনতে হুয়ায়া (রাঃ)-এর সাথে শাদী বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর আমি মুসলমানদেরকে ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত করি, তাতে রুটি ও গোশত ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার দসত্মরখানা বিছাবার জন্য আদেশ করলেন এবং তাতে খেজুর, পনির এবং মাখন রাখা হল। এটাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওয়ালীমা। মুসলমানেরা একে অপরকে বলতে লাগল, সাফিয়া কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রী হিসাবে গণ্য হবেন, না ক্রীতদাসী হিসাবে। সকলে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে পর্দার ভিতরে রাখেন তাহলে তিনি উম্মুহাতুল মু’মিনীনদের মধ্যে গণ্য হবেন। আর যদি পর্দায় না রাখেন, তাহলে ক্রীতদাসী হিসাবে গণ্য হবে। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন তখন লোকজন এবং তার মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
৪৭৮৩ ফারওয়া ইবনু আবূ মাগরা (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে শাদী করার পর আমার আম্মা আমার কাছে এলেন এবং আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরে নিয়ে গেলেন। মধ্যাহ্নের সময় আমার কাছে তাঁর আগমন ছাড়া আর কিছুই আমাকে অবাক করেনি।
৪৭৮৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি বিছানার চাঁদর ব্যবহার করেছ? আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোথায় বিছানার চাঁদর পাব? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতি সত্বর তুমি এগুলো পেয়ে যাবে।
৪৭৮৫ ফযল ইয়াকূব (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন এক আনসারীর জন্য এক মহিলাকে শাদীর কনে হিসাবে সাজালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা! এই শাদী উপলক্ষক্ষ তুমি কি কোন রকম আনন্দ ফূর্তির ব্যবস্থা করনি? আনসারদের নিকট এটা খুবই পছন্দনীয়।
৪৭৮৬ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি আসমা (রাঃ) থেকে গলার একছাড়া হার ধার হিসাবে এনেছিলেন। এরপর তা হারিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কয়েকজন সাহাবীকে তা খোঁজ করে বের করার জন্য পাঠালেন। এমন সময় সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক হয়ে গেলে তারা বিনা উযূ (ওজু/অজু/অযু)তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হয়ে অভিযোগ করলেন, তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বললেন, [হে আয়িশা (রাঃ)! আল্লাহ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন! কারণ যখনই আপনার ওপর কোন অসুবিধা আসে, তখনই আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে তা আপনার জন্য বিপদমুক্তির ও উম্মতের জন্য বরকতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪৭৮৭ সা’দ ইবনু হাফ্স (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন স্ত্রী-সহবাস করে, তখন যেন সে বলে, ‘বিসমিল্লাহ্ই আল্লাহুম্মা জানো্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জানো্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা’- আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ। এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না।
৪৭৮৮ ইয়াহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসেন তখন আমার বয়স দশ বছর ছিল। আমার মা, চাচী ও ফুফুরা আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খাদেম হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। এরপর আমি দশ বছরকাল তাঁর খেদমত করি। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকাল হয় তখন আমার বয়স ছিল বিশ বছর। আমি পর্দা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানি। পর্দা সম্পর্কীয় প্রাথমিক আয়াতসমূহ যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)-এর সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাসর রাত যাপনের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। সেদিন সকাল বেলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুলহা ছিলেন এবং লোকদেরকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলেন। সুতরাং তাঁরা এসে খানা খেলেন। কিছুসংখ্যক ছাড়া সবাই চলে গেলেন। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কাটালেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বাইরে গেলেন। আমি তাঁর পিছু পিছু চলে এলাম, যাতে করে অন্যেরাও বের হয়ে আসে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন, এমনকি তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে গেলেন, এরপরে বাকি লোকগুলো হয়ত চলে গেছে এ কথা ভেবে তিনি ফিরে এলেন, আমি তাঁর সাথে ফিরে এলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যয়নব (রাঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, লোকগুলো বসে রয়েছে- চলে যায়নি। সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বাইরে বের হলেন এবং আমি তাঁর সাথে এলাম। যখন আমরা আয়িশা (রাঃ)-এর কক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলাম, তিনি ভাবলেন যে, এতক্ষণে হয়ত লোকগুলো চলে গিয়েছে। তিনি ফিরে এলেন। আমিও তাঁর সাথে ফিরে এসে দেখলাম যে, লোকগুলো চলে গেছে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও তাঁর মাঝখানে একটি পর্দা টেনে দিলেন। এ সময়ে পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হল।
৪৭৮৯ আলী (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) একজন আনসারী মহিলাকে শাদী করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি উত্তর করলেন, একটি খেজুরের আটির পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। আনাস (রাঃ) আরও বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ সাহাবিগণ মদিনায় আগমন করলেন, তখন মুহাজিরগণ আনসারদের গৃহে অবস্থান করতেন। আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) সা’দ ইবনুুর রাবী (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থান করতেন। সা’দ (রাঃ) আবদুর রহমান (রাঃ)-কে বললেন, আমি আমার বিষয়-সম্পত্তি দু’ভাগ করে আমরা উভয়ে সমান ভাগে ভাগ করে নেব এবং আমি আমার দুই স্ত্রীর মধ্যে একজন তোমাকে দেব। আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমার সম্পত্তি ও স্ত্রীদেরকে বরকত দান করুন। তারপর আবূদর রহমান (রাঃ) বাজারে গেলেন এবং ব্যবসা করতে লাগলেন এবং লাভ হিসাবে কিছু পনির ও ঘি পেলেন এবং শাদী করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, একটি ছাগল দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।
৪৭৯০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন শাদী করেন, তখন ওয়ালীমা করেন, কিন্তু যয়নাব (রাঃ)-এর শাদীর সময় যে পরিমাণ ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা অন্য কারো বেলায় করেননি। সেই ওয়ালীমা ছিল একটি ছাগল দিয়ে।
৪৭৯১ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়া (রাঃ)-কে আযাদ করে শাদী করেন এবং এই আযাদ করাকেই তাঁর মোহরানা নির্দিষ্ট করেন এবং ‘হাইস’ বা এক প্রকার সুস্বাদু হালুয়ার দ্বারা ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন।
৪৭৯২ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক সহধর্মিণীর সাথে বাসর ঘরের ব্যবস্থা করলেন এবং ওয়ালীমার দাওয়াত দেয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন।
৪৭৯৩ মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যয়নাবের শাদীর আলোচনায় আনাস (রাঃ) উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, যয়নাব বিনতে জাহাশের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শাদীর সময় যে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অধিক ওয়ালীমার ব্যবস্থা কারো শাদীর সময় করতে আমি দেখিনি। এই শাদী অনুষ্ঠানে তিনি একটি ছাগল দ্বারা ওয়ালীমা করেন।
৪৭৯৪ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত সাফিয়া বিনত শায়বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন এক স্ত্রীর শাদীতে দুই মুদ (চার সের) পরিমাণ যব দ্বারা ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন।
৪৭৯৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করলে তা অবশ্যই গ্রহণ করবে।
৪৭৯৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বন্দীদেরকে মুক্তি দাও, দাওয়াত কবূল কর এবং রোগীদের সেবা কর।
৪৭৯৭ হাসান ইবনু রবী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে বলেছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে রোগীর সেবাযত্ন করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, হাঁচি দিলে তার জবাব দেয়া, কসম পুরা করায় সহযোগিতা করা, মজলুমকে সাহায্য করা, সালামের বিসত্মার করা এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা কবূল করা- এইসব করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, ঘোড়ার পিঠের ওপরে রেশমী গদি ব্যবহার করতে এবং ‘কাস্সিয়া’ বা পাতলা রেশমী কাপড় এবং দ্বীবাজ ব্যবহার করতে। আবূ আওয়ানা এবং শায়বানী আশ্আস সূত্রে সালামের বিসত্মারের কথা সমর্থন করে বর্ণনা করেন।
৪৭৯৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ উসায়দ আস্ সাঈদী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার শাদী উপলক্ষক্ষ ওয়ালীমার দাওয়াত করেন। তাঁর নববধু সেদিন খাদ্য পরিবেশন করছিলেন। সাহল বলেন, তোমরা কি জানো, সে দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কি পানীয় সরবরাহ করা হয়েছিল? সারারাত ধরে কিছু খেজুর পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তা থেকে তৈরি পানীয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খাওয়া শেষ করলেন, তখন তাঁকে ঐ পানীয়ই পান করতে দেয়া হয়।
৪৭৯৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ওয়ালীমায় শুধুমাত্র ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে ব্যাক্তি দাওয়াত কবূল করে না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর সঙ্গে নাফরমানী করে।
৪৮০০ আবদান (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে যদি কেউ পায়া খেতে দাওয়াত দেয় আমি তা কবূল করব এবং আমাকে যদি কেউ পায়া হাদীয়া দেয়, তবে আমি তা অবশ্যই গ্রহণ করব।
৪৮০১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমাদেরকে শাদী অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয়, তবে তা গ্রহণ কর। নাফে বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল, তিনি রোযাদার হলেও শাদী বা এ ধরণের দাওয়াত পেলে সে দাওয়াত রক্ষা করতেন।
৪৮০২ আব্দুর রহমান ইব’নুল মুবারক (রহঃ) হযরত আনাস ইব’ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক মহিলা এবং শিশুকে শাদীর অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখলেন। তিনি আনন্দের সাথে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, আমি আল্লা’হর নামে বলছি, তোমরা সকল মানুষের চেয়ে আমার কাছে প্রিয়।
৪৮০৩ ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ছবিটি দেখেলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, ইয়া বাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর কাছে তওবা করছি এবং তাঁর রাসূল) -এর কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন বাসূলুল্লাহ বললেন এই বালিশ কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন বাসূলুল্লাহ বললেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরও বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।
৪৮০৪ সাঈদ ইব’নে আবূ মারয়াম (রহঃ) হযরত সাহাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ উসায়দ আস’সাঈদী (রাঃ) তাঁর ওয়ালীমায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ কে দাওয়াত দিলেন, তখন তাঁর নববধু উম্মু উসায়দ ছাড়া আর কেউ উক্ত খাদ্য প্রস্তুত এবং পরিবেশন করেনি। তিনি একটি পাথরের পাত্রে সারা রাত পানির মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে বাখেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন, তখন সেই তোহফা রাসুল -কে পান করান।
৪৮০৫ ইয়াহ্ইয়া ইব’ন বুকায়র (রহঃ) সাহ’ল ইব’ন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ উসায়দ আস’সাঈদী (রাঃ) তাঁর ওয়ালীমায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দাওয়াত দেন। তাঁর নববধু সেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খাদ্য এবং পানীয় পরিবেশন করেন। সাহ’ল (রাঃ) বলেন, তোমরা কি জানো সেই নববধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি পান করিয়েছেলেন? তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি পানপাত্রে কিছু খেজুর সারা রাত ধরে ভিজিয়ে রেখেছিলেন।
৪৮০৬ আবদুল আযীয ইব’ন আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি তোমরা তাকে একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। সুতরাং, যদি তোমরা তাদের থেকে লাভবান হতে চাও, তাহলে ঐ বাঁকা অবস্থাতেই লাভবান হতে হবে।
৪৮০৭ ইসহাক ইব’ন নসর (রহঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সেযেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট নাদেয়। আর তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টী করা হয়েছে পাঁজরের হাড় থেকে এবং সবচেয়ে বাঁকা হচ্ছে পাঁজরের ওপরের হাড়। যদি তুমি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি তুমি তা যেভাবে আছে সে ভাবে রেখে দাও তাহলে বাঁকাই থকবে। অতএব, তোমাদেরকে ওসীয়াত করা হল নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যহার করার।
৪৮০৮ নুআয়ম (রহঃ) হযত ইব’ন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা থেকে দূরে থাকতাম এই ভয়ে যে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে কোন ওহী নাযিল হইয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আমরা তাদের সাথে অবাধে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা করতাম।
৪৮০৯ আবূ নু’মান (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইব’ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জি জ্ঞাসিত হবে। একজন শাসক সে তার অধীনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর গৃহের রক্ষক, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন গোলাম তার মনিবের সম্পদের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।
৪৮১০ সুলায়মান ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজ্র (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বসল এবং সকলে মিলে এই কথা উপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন তথ্যই গোপন রাখবে না। প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী অত্যন্ত হাল্কা-পাতলা দুর্বল উটের গোশতের ন্যায় যেন কোন পাহাড়ের চুড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে আরোহণ করা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারনে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করবে। দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলবনা, কারন আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, যদি আমি তার সম্পর্কে বলতে যাই, তা হলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলতে হবে। তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যাক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই (আর সে যদি তা শোনে) তাহলে সে আমাকে তালাক দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহল সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ তালাকও দেবে না, স্ত্রীর মতো ব্যবহারও করবে না। চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মতো মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠাণ্ডাও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই। পঞ্চম মহিলা বলল, যখন আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে, তখন চিতা বাঘের ন্যায় থাকে। যখন বাইরে যায় তখন সিংহের ন্যায় তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না। ষষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাঁদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি হাত বের করেও আমার খবর নেয় না। সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করতে পারে। অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধ হচ্ছে যারনাব (এক প্রকার বনফুল-এর মত) , নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে (অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী)। তার ছাইভস্ম প্রচুর পরিমাণের (অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমানদারীও হয়) এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। লোকজন তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করতে পারে। দশম মহিলা বলল, আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কি প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়ে উর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় (অর্থাৎ মেহমানদের জবাই অরে খাওয়ানোর জন্য) এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাদের মেহমানদের জন্য জবাই করা হবে। একাদশতম মহিলা বলল, আমার স্বামী আবূ যার’আ। তার কথা আমি কি বলব। সে আমাকে এত বেশি গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রূপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম। আর আবূ যার’আর আম্মার কথা কি বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত। আবূ যার’আর পুত্রের কথা কি বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখনা পা। আর আবূ যার’আর কন্যা সম্পর্কে বলতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সম্পূর্ণ বাধ্যগত সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থের অধিকারিণী, যে কারনে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবূ যার’আর কৃতদাসীরও অনেক গুন। সে আমাদের গোপন কথা কখনও প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না। সে মহিলা আরও বলল, একদিন দুধ দোহন করার সময় আবূ যার’আ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল, যার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন্য নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে তালাক দিয়ে তাকে শাদী করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যাক্তিকে শাদী করলাম , সে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মে আর’যা! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও। মহিলা আরও বলল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আমু যার’আর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পুর্ন করতে পারবে না (অর্থাৎ আবূ যার’আর সম্পদের তুলনায় খুবই সামান্য ছিল)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলূল্লাহ্ আমাকে বলেলেন, “ আবূ যার’আ তার স্ত্রী উম্মে যার’আর প্রতি যেরূপ আমিও তোমার প্রতি তদ্রূপ (পার্থক্য এতটুকুই) আমি তোমাকে তালাক দেব না এবং তোমার সাথে উত্তম ব্যাবহার করব।
৪৮১১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত উরওয়া, হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন হাবশীরাা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পারলে যে, অল্প বয়স্কা মেয়েরা কি পরিমাণ আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে।
৪৮১২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বহুদিন ধরে উৎসুক ছিলাম যে, আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকটে জিজ্ঞেস করব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণের মধ্যে কোন্ দু’জন সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেছেনঃ “তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর নিকট তওবা কর (তবে এটা উত্তম) কেননা, তোমাদের মন সঠিক পথ থেকে সরে গেছে। ” এরপর একবার তিনি [হযরত উমর (রাঃ)] হাজ্জের (হজ্জ) জন্য রওয়ানা হলেন এবং আমিও তাদের সঙ্গে হাজ্জে (হজ্জ) গেলাম। (ফিরে আসার পথে) তিনি ইস্তিনজারের জন্য রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমি পানি পূর্ণ পাত্র হাতে তাঁর সাথে গেলাম। তিনি ইস্তিনজার করে ফিরে এলে আমি উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি তাঁর হাতে ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণীগণের মধ্যে কোন্ দু’জন, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “তোমরা দু’জন যদি আল্লাহর নিকট তওবা কর (তবে তোমাদের জন্য উত্তম) কেননা, তোমাদের মন সঠিক পথ থেকে সরে গেছে। ” জবাবে তিনি বললেন, হে ইবনু আব্বাস! আমি তোমার প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছি। তাঁরা দু’জন তো আয়িশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ)। এর পর হযরত উমর (রাঃ) এই ঘটনাটি বর্ণনা করলেন, “আমি এবং আমার একজন আনসারী প্রতিবেশী যিনি উমাইয়া ইবনু যায়দ গোত্রের লোক এবং তারা মদিনার উপকণ্ঠে বসবাস করত। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সঙ্গে পালাক্রমে সাক্ষাত করতাম। সে একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে যেত, আমি আর একদিন যেতাম। যখন আমি দরবারে যেতাম, ঐ দিন দরবারে ওহী অবতীর্ণসহ যা ঘটত সবকিছুর খবর আমি তাকে দিতাম এবং সেও অনুরুপ খবর আমাকে দিত। আমরা কুরাইশরা নিজেদের স্ত্রীগণের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা যখন আনসারদের মধ্যে এলাম, তখন দেখতে পেলাম, তাদের স্ত্রীগণ তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে এবং তাদের ওপর কর্তৃত্ব করে চলছে। সুতরাং আমাদের স্ত্রীরাও তাদের দেখাদেখি সেরূপ ব্যবহার করতে লাগল। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি নারাজ হলাম এবং তাকে উচ্চস্বরে কিছু বললাম, সেও প্রতি-উত্তর দিল। আমার কাছে এরকম প্রতি-উত্তর দেয়াটা অপছন্দ হল। সে বলল, আমি আপনার কথার পেল্টা উত্তর দিচ্ছি এতে অবাক হচ্ছেন কেন? আল্লাহর কসম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণ তাঁর কথার মুখে মুখে পেল্টা উত্তর দিয়ে থাকেন এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এক দিন এক রাত পর্যন্ত কথা না বলে কাটান। [হযরত উমর (রাঃ) বলেন], এ কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং আমি বললাম, তাদের মধ্যে যারা এরূপ করেছে, তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এরপর আমি আমার কাপড় পরিধান করলাম এবং আমার কন্যা হাফসার ঘরে প্রবেশ করলাম এবং বললামঃ হাফ্সা! তোমাদের মধ্যে থেকে কারো প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী সারা দিন রাত পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেননি? সে উত্তর করল, হ্যাঁ। আমি বললাম, তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ। তোমরা কি এ ব্যাপারে ভীত হচ্ছো না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর অসন্তুষ্টির কারনে আল্লাহঅসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন? পরিণামে তোমরা ধ্বংসের মধ্যে পড়ে যাবে। সুতরাং তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অতিরিক্ত কোন জিনিস দাবি করবে না এবং তাঁর কথার প্রতি-উত্তর করবে না এবং তাঁর সাথে কথা বলা বন্ধ করবে না। তোমার যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয়, তবে আমার কাছে চেয়ে নেবে। আর তোমার সতীন তোমার চেয়ে অধিক রূপবতী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অধিক প্রিয়- তা যেন তোমাকে বিভ্রান্ত না করে। এখানে সতীন বলতে হযরত আয়িশা (রাঃ)- কে বোঝানো হয়েছে। হযরত উমর (রাঃ) আরও বলেন, এ সময় আমাদের মধ্যে এ কথা ছড়িয়ে পড়েছিল যে, গাস্সানের শাসনকর্তা আমাদের ওপর আক্রমণ চালাবার উদ্দেশ্যে তাদের ঘোড়াগুলোকে প্রস্তুত করেছে। আমার প্রতিবেশী আনসার তার পালার দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমত থেকে রাতে ফিরে এসে আমার দরজায় খুব জোরে করাঘাত করল এবং জিজ্ঞেস করল, আমি ঘরে আছি কিনা? আমি সংকিত অবস্থায় বেরিয়ে এলাম। সে বলল, আজ একটা বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। আমি বললাম, সেটা কি? গাস্সানিরা কি এসে গেছে? সে বলল, না, তার চেয়ে বড় ঘটনা এবং তা ভয়ংকর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সহধর্মিণীগণকে তালাক দিয়েছেন। আমি বললাম, হাফসা তো ধ্বংস হয়ে গেল, ব্যর্থ হল। আমি আগেই ধারনা করেছিলাম, খুব শীগগীরই এরকম একটা কিছু ঘটবে। এরপর আমি পোশাক পরিধান করলাম এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাথে আদায় করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওপরের কামরায় (মাশরুবা) একাকী আরোহণ করলেন, আমি তখন হাফ্সার কাছে গেলাম এবং তাকে কাঁদতে দেখলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কাঁদছ কেন? আমি কি তোমাকে এ ব্যাপারে পূর্বেই সতর্ক করে দেইনি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়েছেন? সে বলল, আমি জানিনা। তিনি ওখানে ওপরের কামরায় একাকী রয়েছেন। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মিম্বরের কাছে বসলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক লোক বসা ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই কাঁদছিল। আমি তাদের কাছে কিছুক্ষন বসলাম, কিন্তু আমার অন্তর এ অবস্থা সহ্য করতে পারছিল না। সুতরাং যে ওপরের কামরায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন আমি সেই ওপরের কামরায় গেলাম এবং তাঁর হাবশী কালো খাদেমকে বললাম, তুমি কি উমরের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে যাওয়ার অনুমতি এনে দেবে? খাদেমটি গেল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কথা বলল। ফিরে এসে উত্তর করল, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আপনার কথা বলেছি ; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। তখন আমি ফিরে এলাম এবং যেখানে লোকজন বসা ছিল সেখানে বসলাম। কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। তাই আবার এসে খাদেমকে বললাম! তুমি কি উমরের জন্য অনুমতি এনে দিবে? সে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আমি তার কাছে আপনার কথা বলেছি; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। সুতরাং আমি আবার ফিরে এসে মিম্বরের কাছে ঐ লোকজনের সাথে বসলাম। কিন্তু এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য লাগছিল। পুনরায় আমি খাদেমের কাছে গেলাম এবং বললাম, তুমি কি উমরের জন্য অনুমতি এনে দিবে? সে গেল এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে বলতে আসল, আমি আপনার কথা উল্লেখ করলাম ; কিন্তু তিনি নিরুত্তর আছেন। যখন আমি ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি, এমন সময় খাদেমটি আমাকে ডেকে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করে দেখলাম, তিনি খেজুরের চাটাইয়ের ওপর চাঁদরবিহীন অবস্থায় খেজুরের পাতা ভর্তি একটি বালিশে ভর দিয়ে শুয়ে আছেন। তাঁর শরীরে পরিষ্কার চাটাইয়ের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আমি তাকে সালাম দিলাম এবং দাঁড়ানো অবস্থাতেই জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি কি আপনার বিবিগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন, না (অর্থাৎ তালাক দেইনি)। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। এরপর আলাপটা নমনীয় করার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি যদি শোনেন তাহলে বলিঃ আমরা কুরাইশগণ, মহিলাদের ওপর আমাদের প্রতিপত্তি খাটাতাম; কিন্তু আমরা মদিনায় এসে দেখলাম, এখানকার পুরুষদের ওপর নারীদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিদ্যমান। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! যদি আপনি আমার কথার দিকে একটু নজর দেন। আমি হাফ্সার কাছে গেলাম এবং আমি তাকে বললাম, তোমার সতীনের রূপবতী হওয়া ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রিয় পাত্রী হওয়া তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। এর দ্বারা আয়িশা (রাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় মুচকি হাসলেন। আমি তাঁকে হাসতে দেখে বসে পড়লাম। এরপর আমি তাঁর ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম, আল্লাহর কসম, শুধু মাত্র তিনটি চামড়া ছাড়া আমি আর তাঁর ঘরে উল্লেখযোগ্য কিছুই দেখতে পেলাম না। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! দোয়া করুন, আল্লাহ তা’আলা যাতে আপনার উম্মতদের সচ্ছলতা দান করেন। কেননা, পারস্য ও রোমানদের প্রাচুর্য দান করা হয়েছে এবং তাদের দুনিয়ার আরাম প্রচুর পরিমানে দান করা হয়েছে ; অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। এ কথা শুনে হেলান দেয়া অবস্থা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা হয়ে বসে বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তুমি কি এখন এই ধারনা পোষণ করছ? ওরা ঐ লোক, যারা উত্তম কাজের প্রতিদান এ দুনিয়ায় পাচ্ছে! আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। হাফ্সা (রাঃ) কর্তৃক আয়িশা (রাঃ)-কে কথা ফাঁস করে দেয়ার কারনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিন তাঁর বিবিগণ থেকে আলাদা থাকেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমি এক মাসের মধ্যে তাদের কাছে যাব না তাদের প্রতি গোস্বার কারণে। তখন আল্লাহতা’আলা তাঁকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন। সুতরাং যখন ঊনত্রিশ দিন হয়ে গেল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং তাঁকে দিয়েই শুরু করলেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি কসম করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আসবেন না; কিন্তু এখন তো ঊনত্রিশ দিনেই এসে গেলেন। আমি প্রতিটি দিন এক এক করে হিসাব করে রেখেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঊনত্রিশ দিনেও এক মাস হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ মাস ২৯ দিনের। হযরত আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, ঐ সময় আল্লাহ তা’আলা ইখতিয়ারের আয়াত নাযিল করেন [১] এবং তিনি তাঁর বিবিগণের মধ্যে আমাকে দিয়েই শুরু করেন এবং আমি তাকেই গ্রহন করি। এরপর তিনি অন্য বিবিগণের অভিমত চাইলেন। সকলেই তাই বলল, যা হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন। ১ সূরা আহযাবের ২৮ নং আয়াত নাযিল হয়।
৪৮১৩ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখবে না।
৪৮১৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রাঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সাথে একই বিছানায় শোয়ার জন্য ডাকে, আর তার স্ত্রী অস্বীকার করে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ মহিলার ওপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকে।
৪৮১৫ মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রাঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর শয্যা ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করে এবং যতক্ষণ না সে তার স্বামীর শয্যায় ফিরে আসে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার ওপর লা’নত বর্ষণ করতে থাকে।
৪৮১৬ আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন স্বামী উপস্থিত থাকবে, তখন স্বামীর অনুমতি ছাড়া রোযা রাখবে না এবং স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না। যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নির্দেশ ছাড়া তার সম্পদ থেকে খরচ করে, তাহলে স্বামী তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। হাদীসটি সিয়াম অধ্যায়ে আবূয্যানাদ মূসা থেকে, তিনি নিজ পিতা থেকে এবং তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
৪৮১৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন; অথচ ধনবানগণ আটকা পড়ে আছে। বিপরীতে জাহান্নামীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়ালাম এবং দেখলাম যে, অধিকাংশই নারী।
৪৮১৮ আবদুল্লাহইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় একদিন সুর্য গ্রহন আরম্ভ হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতুল (নামায) খুসুফ বা সুর্যগ্রহনের সালাত (নামায/নামাজ) পড়লেন এবং লোকেরাও তার সাথে অংশগ্রহণ করল। তিনি এত দীর্ঘক্ষন কিয়াম করলেন, যাতে সূরা বাকারার সমপরিমাণ কুরআন পাঠ করা যায়। এরপর তিনি দীর্ঘক্ষন রুকূ করলেন এবং মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেন; এ প্রথম কিয়ামের চেয়ে কম সময় ছিল। তারপর কুরআন তিলাওয়াত করলেন, পুনরায় দীর্ঘক্ষন রুকূ করলেন। কিন্তু এবারের রুকূর পরিমাণ পুর্বের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিল। এরপর তিনি দাঁড়ালেন এবং সিজদায় গেলেন। এরপর তিনি কিয়াম করলেন, কিন্তু এবারের সময় ছিল পুর্বের কিয়ামের চেয়ে সল্পস্থায়ী। এরপর পুনরায় তিনি রুকূতে গেলেন, কিন্তু এবারের রুকূর সময় পূর্ববর্তী রুকূর সময়ের চেয়ে কম ছিল। এরপর পুনরায় তিনি দাঁড়ালেন। কিন্তু এবারে দাঁড়াবার সময় ছিল পুর্বের চেয়েও কম। এরপর রুকূতে গেলেন; এবারের রুকূর সময় পুর্ববর্তী রুকূর চেয়ে কম ছিল। তারপর সিজদায় গেলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন। ততক্ষনে সুর্যগ্রহন শেষ হয়ে গেছে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, চন্দ্র এবং সুর্য এ দু’টি আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে এদের গ্রহন হয় না। তাই তোমার যখন প্রথম গ্রহন দেখতে পাও, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর। এরপর তাঁরা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমরা আপনাকে দেখতে পেলাম যে, আপনি কিছু নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছেন, এরপর আবার আপনাকে দেখতে পেলাম যে, আপনি পিছনের দিকে সরে এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জান্নাত দেখতে পেলাম অথবা আমাকে জান্নাত দেখান হয়েছে এবং আমি সেখান থেকে আঙ্গুরের থোকা ছিঁড়ে আনার জন্য হাত বাড়ালাম এবং তা যদি আমি ধরতে পারতাম, তবে তোমরা তা থেকে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত খেতে পারতে। এরপর আমি দোযখের আগুন দেখতে পেলাম। আমি এর পূর্বে কখনও এত ভয়াবহ দৃশ্য দেখিনি এবং আমি আরও দেখতে পেলাম যে, তার অধিকাংশ আদিবাসীই নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! এর কারন কি? তিনি বললেন, এটা তাদের অকৃতজ্ঞতার ফল স্বরূপ। লোকেরা বলল, তার কি আল্লাহ তা’আলার সাথে নাফরমানী করে? তিনি বললেন, তারা তাদের স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞ এবং তাদের প্রতি যে অনুগ্রহ দেখানো হয়, তার জন্য তাদের শোকর নেই। তোমারা যদি সারা জীবন তাদের সাথে ভাল ব্যবহার কর; কিন্তু তারা যদি কখনও তোমার দ্বারা কষ্টদায়ক কোন ব্যবহার দেখতে পায়, তখন বলে বসে, আমি তোমার থেকে জীবনে কখনও ভাল ব্যবহার পেলাম না।
৪৮১৯ উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) হযরত ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম, দেখলাম, অধিকাংশ বাসিন্দাই হচ্ছে গরীব এবং দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার অধিকাংশ অধিবাসী হচ্ছে নারী। আইউব এবং সালম বিন যরীর উক্ত হাদীসের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
৪৮২০ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হে আবদুল্লাহ! আমাকে কি এ খবর প্রদান করা হয়নি যে, তুমি রাতভর ইবাদতে দাঁড়িয়ে থাক এবং দিনভর সিয়াম পালন কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! তিনি বললেন, তুমি এরূপ করো না, বরং সিয়ামও পালন কর, ইফতারও কর, রাত জেগে ইবাদত কর এবং নিদ্রাও যাও। তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে; তোমার চোখেরও তোমার উপর হক আছে এবং তোমার স্ত্রীরও তোমার ওপর হক আছে।
৪৮২১ আবদান (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। আমীর রক্ষক, একজন ব্যাক্তি তার পরিবারের লোকদের রক্ষক, একজন নারী তার স্বামীর গৃহের ও সন্তানদের রক্ষক। এ ব্যাপারে তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক, আর তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অধীনস্ত লোকদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
৪৮২২ খালিদ ইবনু মাখ্লাদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ করলেন যে, এক মাসের মধ্যে তিনি স্ত্রীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন না। তিনি নিজস্ব একটি উঁচু কামরায় অবস্থান কছিলেন। ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হলে তিনি সেখান থেকে নিচে নেমে এলেন। তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি শপথ করেছেন যে, এক মাসের মধ্যে কোন স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
৪৮২৩ আবূ আসিম (রহঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শপথ গ্রহন করলেন যে, এক মাসের মধ্যে তাঁর কতিপয় বিবির নিকট তিনি গমন করবেন না; কিন্তু যখন ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হল তখন তিনি সকালে কিংবা বিকালে তাঁদের কাছে গেলেন। কোন একজন তাঁকে বলেলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি শপথ করেছেন এক মাসের মধ্যে কোন বিবির কাছে যাবেন না। তিনি বললেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেরও হয়ে থাকে।
৪৮২৪ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা একদিন প্রত্যুষে দেখতে পেলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণ কাঁদছেন এবং তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে পরিবারের লোকজনও রয়েছে। আমি মসজিদে গেলাম এবং সেখানকার অবস্থা ছিল জনাকীর্ণ। হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) সেখানে এলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপরিস্থিত কক্ষে আরোহণ করলেন এবং সালাম করলেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় তিনি সালাম দিলেন ; কিন্তু কেউ কোনরূপ সাড়া দিল না। আবার তিনি সালাম দিলেন; কিন্তু কেউ কোনরূপ জবাব দিল না। এরপর খাদেমকে ডাকলেন এবং তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি আপনার বিবিগণকে তালাক দিয়েছেন? তিনি বললেন, না, কিন্তু আমি শপথ করেছি যে, তাদের কাছে এক মাস পর্যন্ত যাব না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনত্রিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে তাঁর বিবিগণের কাছে গমন করেন।
৪৮২৫ মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যাম’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সাথে তো মিলিত হবে।
৪৮২৬ খাল্লাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা তার মেয়েকে শাদী দিলেন। কিন্তু তার মাথার চুলগুলো উঠে যেতে লাগল। এরপর সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলল, আমার স্বামী আমাকে বলেছে আমি যেন আমার মেয়ের মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করিয়ে দেই। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তা করো না, কারন, আল্লাহ তা’আলা এ ধরনের মহিলাদের ওপর লা’নত বর্ষণ করে থাকেন, যারা মাথায় কৃত্রিম চুল পরিধান করে।
৪৮২৭ ইবনু সালাম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে নিষ্ঠুরতা বা উপেক্ষার আশংকা করে” এই আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, এ আয়াত হচ্ছে ঐ মহিলার সম্পর্কে, যার স্বামী তার স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখতে চায় না; বরং তাকে তালাক দিয়ে অন্য কোন মহিলাকে শাদী করতে চায়। তখন তার স্ত্রী তাকে বলে, আমাকে রাখ এবং তালাক দিও না বরং অন্য মহিলাকে বিয়ে করে নাও এবং তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে খোরপোষ না-ও দিতে পার আর আমকে শয্যাসঙ্গিনী না-ও করতে পার। আল্লাহ তা’আলার উক্ত আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, স্বামী-স্ত্রী যদি পারস্পরিক সন্ধি করে নেয়, তবে তাতে কোন দোষ নেই এবং সন্ধি করা উত্তম।
৪৮২৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা ‘আযল’ করতাম।
৪৮২৯ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘আযল’ করতাম, তখন কুরআন নাযিল হত। অন্য সূত্র থেকেও হযরত জাবির (রাঃ) এরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৪৮৩০ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময় গনীমত হিসেবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাদের সাথে আযল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ আরে! তোমার কি এমন কাজও করো? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করলেন এবং পরে বললেন, কিয়ামত পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হবে।
৪৮৩১ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে যাওয়ার ইরাদা করতেন, তখনই বিবিগণের মধ্যে লটারি করতেন। এক সফরের সময় হযরত আয়িশা (রাঃ) এবং হযরত হাফসা (রাঃ)-এর নাম লটারিতে ওঠে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অভ্যাস ছিল যখন রাত হত তখন হযরত আয়িশা (রাঃ)-এর সাথে এক সওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন। একরাতে হযরত হাফসা (রাঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) কে বললেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখতে পাবে? হযরত আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাজি আছি। সে হিসাবে হযরত আয়িশা (রাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-এর উটে এবং হযরত হাফসা (রাঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ)-এর উটে সওয়ার হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়িশা (রাঃ)-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হযরত হাফসা (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি সালাম করলেন এবং তাঁর পার্শ্বে বসে সফর করলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করলেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করলেন তখন হযরত আয়িশা (রাঃ) নিজ পদযুগল ‘ইযখির’ নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা, আমি এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কিছু বলতে পারব না।
৪৮৩২ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সওদা বিনতে যাম’আ (রাঃ) তাঁর পালার রাতে আয়িশা (রাঃ)-কে দান করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়িশা (রাঃ)-এর জন্য দু’দিন বরাদ্দ করেন- একদিন আয়িশা (রাঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট দিন এবং সওদা (রাঃ)-এর দিন।
৪৮৩৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নত এই যে, যদি কেউ কুমারী মেয়ে শাদী করে, তবে তার সাথে সাত দিন-এরাত্রি যাপন করতে হবে আর যদি কেউ কোন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করে, তাহলে তার সাথে যেন তিন দিন অতিবাহিত করে।
৪৮৩৪ ইউসুফ ইবনুুে রাশিদ (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নত হচ্ছে, যদি কেউ বিধবা স্ত্রী থাকা অবস্থায় কুমারী শাদী করে তবে সে যেন তার সঙ্গে সাত দিন অতিবাহিত করে এবং এরপর পেলা অনুসারে এবং কেউ কোন বিধবাকে শাদী করে এবং তার ঘরে পূর্ব থেকেই কুমারী স্ত্রী থাকে তবে সে যেন তার সাথে তিন দিন কাটায় এবং তারপর পালাক্রমে। হযরত আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, আমি ইচ্ছা করলে বলতে পারতাম যে, হযরত আনাস (রাঃ) এর হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন। হযরত আবদুর রাযযাক বলেন, আমি ইচ্ছা করলে বলতে পারতাম যে, খালেদ এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।
৪৮৩৫ আবূল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) হযরত কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে সকল বিবির সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। ঐ সময় তাঁর সর্বমোট ন’জন বিবি ছিল।
৪৮৩৬ ফারাওয়া (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন, তখন স্বীয় স্ত্রীদের মধ্যে থেকে যে কোন একজনের নিকট গমন করতেন। একদিন তিনি বিবি হাফসা (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং স্বভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় কাটালেন।
৪৮৩৭ ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যে অসুখে ইন্তেকাল করেছিলেন, সেই অসুখের সময়ে জিজ্ঞেস করতেন, আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পেলা? আগামীকাল আমার কার কাছে থাকার পেলা? তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর পালার জন্য এরূপ বলতেন। সুতরাং উম্মাহাতুল মু’মিনীন তাঁকে যার ঘরে ইচ্ছা থাকার অনুমতি দিলেন এবং তিনি ওফাত পর্যন্ত আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরেই অবস্থান করেন এবং সেখানে তাঁর স্বভাবিক পালার দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার কাছে থাকার পালার দিনই আল্লাহ তাঁর প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে গেলেন এ অবস্থায় যে, আমার বুক ও গলার মাঝখানে তাঁর বুক ও মাথা ছিল এবং তাঁর মুখের লালা আমার মুখের লালার সাথে মিশেছিল [১] ১ হযরত আয়িশা (রাঃ) কাঁচা মিসওয়াক চিবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিলেন এবং নিজ দন্ত দ্বারা চিবালেন, এমনি করে একজনের মুখের লালা অন্যের মুখে গেল।
৪৮৩৮ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হযরত উমর (রাঃ) থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমর (রাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং বললেন, হে আমার কন্যা! তার আচরণ-ব্যবহার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো না, কারন সে তার সৌন্দর্য ও তার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভালবাসার কারণে গর্ব অনুভব করে। এ কথার দ্বারা তিনি হযরত আয়িশা (রাঃ)-কে বুঝিয়েছিলেন। তিনি আরও বললেন, আমি এ ঘটনা আল্লাহর রাসূল -এর কাছে বললাম। তিনি এ কথা শুনে মুচকি হাসলেন।
৪৮৩৯ সুলায়মান ইবনু হারব্ (রহঃ) এবং মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, কোন একজন মহিলা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার সতীন আছে। এখন তাঁকে রাগানোর জন্য যদি আমার স্বামী আমাকে যা দেয়নি তা বাড়িয়ে বলি, তাতে কি কোন দোষ আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যা তোমাকে দেয়া হয়নি, তা দেয়া হয়েছে বলা ঐরূপ প্রতারকের কাজ, যে প্রতারনার জন্য দু প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরল।
৪৮৪০ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাশীল কেউ নয় এবং এ কারণেই তিনি সকল অশ্লীল কাজ হারাম করেছেন আর (আল্লাহর) প্রশংসার চেয়ে আল্লাহর অধিক প্রিয় কিছু নেই।
৪৮৪১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে উম্মতে মুহাম্মদী! আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। তিনি তাঁর কোন বান্দা নর হোক কি নারী হোক তার ব্যভিচার তিনি দেখতে চান না। হে উম্মতে মুহাম্মদী! যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে।
৪৮৪২ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ আর কারো নেই। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমু সালামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অনুরূপ হাদীস বলতে শুনেছেন।
৪৮৪৩ আবূ নুআয়ম (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলার আত্মমর্যাদাবোধ আছে এবং আল্লাহর আত্মমর্যাদাবোধ এই যে, যেন কোন মু’মিন বান্দা হারাম কাজে লিপ্ত না হয়।
৪৮৪৪ মাহমুদ (রহঃ) হযরত আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যুবায়র (রাঃ) আমাকে শাদী করলেন, তখন তার কাছে কোন ধন-সম্পদ ছিল না, এমন কি কোন স্থাবর জমি-জমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু মাত্র কুয়ো থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চড়াতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম; কিন্তু ভাল রুটি তৈরি করতে পারতাম না। তাই আনসারী প্রতিবেশী মহিলারা আমার রুটি তৈরিতে সাহায্য করত। আর তাঁরা ছিল খুবই উত্তম নারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়রা (রাঃ)-কে একখণ্ড জমি দিয়েছিলেন। আমি সেখান থেকে মাথায় করে খেজুরের আটি বহন করে আনতাম। ঐ জমির দূরত ছিল প্রায় দু’মাইল। একদিন আমি মাথায় করে খেজুরের আটি বহন করে নিয়ে আসছিলাম। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাত হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কয়েকজন আনসারও ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাক ডাকলেন এবং আমাকে তাঁর উটের পিঠে বসার জন্য তাঁর উটকে আখ্! আখ্! বললেন, যাতে উটটি বসে এবং আমি তাঁর পিঠে আরোহণ করতে পারি। আমি পরপুরুষের সাথে একত্রে যাওয়াকে লজ্জাবোধ করতে লাগলাম এবং যুবায়র (রাঃ)-এর আত্মসম্মানবোধ এর কথা আমার মনে পড়ল। কেননা, সে ছিল খুবই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝতে পারলেন, আমি খুব লজ্জিত বোধ করছি। সুতরাং তিনি এগিয়ে চললেন। আমি যুবায়র (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলাম এবং বললাম, আমি খেজুরের আটির বোঝা মাথায় নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আমার দেখা হয় এবং তাঁর সাথে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন। তিনি তাঁর উটকে হাঁটু গেড়ে বসালেন, যেন আমি তাতে সওয়ার হতে পারি। কিন্তু আমি তোমার আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে লজ্জা অনুভব করলাম। এ কথা শুনে যুবায়র (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! খেজুরের আটির বোঝা মাথায় বহন করা তাঁর সাথে উটে চড়ার চেয়ে আমার কাছে বেশি লজ্জাজনক। এরপর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর ঘোড়া দেখাশোনার জন্য আমাকে সাহায্যার্থে একজন খাদেম পাঠিয়ে দিলেন। এরপরই আমি যেন রেহাই পেলাম।
৪৮৪৫ আলী ইবনু মাদানী (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা বিবির কাছে ছিলেন। ঐ সময় উম্মুহাতুল মু’মিনীনের আর একজন একটি পাত্রে কিছু খাদ্য পাঠালেন। যে বিবির ঘরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছিলেন সে বিবির খাদেমের হাতে আঘাত করলেন। ফলে খাদ্যের পাত্রটি পড়ে ভেঙ্গে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের ভাঙ্গা টুকরোগুলো কুড়িয়ে একত্রিত করলেন, তারপর খাদ্যগুলো কুড়িয়ে তাতে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের আম্মাজীর আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লেগেছে। তারপর তিনি খাদেমকে অপেক্ষা করতে বললেন এবং যে বিবির কাছে ছিলেন তাঁর কাছ থেকে একটি পাত্র নিয়ে যার পাত্র ভেঙ্গেছিল, তাকে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি যে ভেঙ্গেছিল তার কাছেই রাখলেন।
৪৮৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি প্রাসা’দ দেখতে পেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, এতি কার প্রাসা’দ? তাঁরা (ফেরশতাগণ) বললেন, এই প্রাসা’দটি হযরত উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর। আমি তার মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলাম; কিন্তু [তিনি সেখানে উপস্থিত হযরত উমর (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে বললেন] তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিল। এ কথা শুনে হযরত উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার ক্ষেত্রেও আমি (উমর) আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করব?
৪৮৪৭ আবদান (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বসা ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি একদিন ঘুমন্ত অবস্থায় জান্নাতের একটি প্রাসা’দর পার্শ্বে একজন মহিলাকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে দেখলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই প্রাসা’দটি কার? আমাকে বলা হল, এটা উমর (রাঃ)-এর। তখন আমি উমরের আত্মমর্যাদার কথা স্মরণ করে পিছনে ফিরে চলে এলাম। এ কথা শুনে হযরত উমর (রাঃ) সেই মজলিসেই কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনার সাথেও কি আমি আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখব?
৪৮৪৮ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাক এবং কখন রাগান্বিত হও। ” আমি বললাম, কি করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, না মুহাম্মদ –এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, না! ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর্ কসম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম মুবারক উচ্চারন করা থেকেই বিরত থাকি।
৪৮৪৯ আহমদ ইবনু রাজা (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণের মধ্যে থেকে খাদীজা (রাঃ)-এর চেয়ে অন্য কোন বিবির প্রতি বেশি ঈর্ষা-পোষণ করিনি। কারন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় তাঁর কথা স্মরণ করতেন এবং তাঁর প্রশংসা করতেন। তাছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওহীর মাধ্যমে তাঁকে [খাদিজা (রাঃ)]-কে জান্নাতের মধ্যে একটি মতির প্রাসা’দর সুসংবাদ দেবার জন্য জ্ঞাত করানো হয়েছিল।
৪৮৫০ কুতায়বা (রহঃ) হযরত মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে, বনি হিশাম ইবনু মুগীরা, আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তাদের মেয়ে শাদী দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে; কিন্তু আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী ইবনু আবূ তালিব আমার কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে শাদী করতে পারে। কেননা, ফাতেমা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।
৪৮৫১ হাফ্স ইবনু উমরুল হাওদী (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে একখানি হাদীস বর্ণনা করব, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে শুনেছি এবং আমি ছাড়া আর কেউ সে হাদীস বলতে পারবে না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল্লহ্ -কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে রয়েছে ইল্ম উঠে যাবে, অজ্ঞতা বেড়ে যাবে, ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে, মদ্য পানের মাত্রা বেড়ে যাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীদের সংখ্যা এত অধিক হারে বেড়ে যাবে যে, একজন পুরুষকে পঞ্চাশজন নারীর দেখাশোনা করতে হবে।
৪৮৫২ কুতুয়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। জনৈক আনসার জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! দেবরদের ব্যাপারে কি নির্দেশ? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর তো মৃত্যুতুল্য।
৪৮৫৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহ্রমের উপস্থিতি ব্যতীত কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে সাক্ষাত করবে না। এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য বেরিয়ে গেছে এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিরে যাও এবং স্বীয় স্ত্রীর সাথে হাজ্জ (হজ্জ) সমাপন কর।
৪৮৫৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক আনসারী মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে এলে, তিনি তাকে ডেকে পার্স্বে নিয়ে বললেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহর কসম! তোমার আমার কাছে সকল লোকের চেয়ে অধিক প্রিয়।
৪৮৫৫ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে থাকাকালে সেখানে একজন মেয়েলী ভাবাপন্ন পুরুষ ছিল। ঐ মেয়েলী পুরুষটি উম্মে সালামার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াকে বলল, যদি আগামীকাল আপনাদেরকে আল্লাহ তায়েফ বিজয় দান করেন, তবে আমি আপনাকে গায়লানের মেয়েকে গ্রহন করারা পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, সে এত মেদবহুল যে, সে সম্মুখ দিকে আগমন করলে তার পেটের চামড়ায় চার ভাঁজ পড়ে আর পিছু ফিরে যাওয়ার সময় আট ভাঁজ পড়ে। একথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ মেয়েলী পুরুষ হিজড়া) সে যেন কখনো তোমাদের কাছে আর না আসে।
৪৮৫৬ ইসহাক ইবনু ইববাহীম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙ্গিনায় খেলা খেলছিল। আমি খেলা দেখে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। তোমরা অনুমান কর যে, অল্পবয়স্কা মেয়েরা খেলাধূলা দেখতে কি পরিমাণ আগ্রহী।
৪৮৫৭ ফারাওয়া ইবনু আবূল মাগ্রা (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে উম্মেহাতুল মু’মিনীন সওদা বিনত জামাআ (রাঃ) কোন কারণে বাইরে গেলেন। হযরত উমর (রাঃ) তাঁকে দেখে চিনে ফেললেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! হে সওদা (রাঃ) তুমি নিজেকে আমাদের কাছ থেকে লুকাতে পারনি। এতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে গেলেন এবং উক্ত ঘটনা তাঁর কাছে বললেন। তিনি তখন আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এবং তাঁর হাতে গোশ্তপূর্ণ একখানা হাড় ছিল। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে ওহী নাযিল হল। যখন ওহী নাযিল হওয়া শেষ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা’আলা প্রয়োজনে তোমাদের জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।
৪৮৫৮ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিমের পিতা [ইবনু উমর (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহলে তাকে নিষেধ করো না।
৪৮৫৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কের চাচা এলেন এবং আমার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন ; কিন্তু আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনুমতি নেয়া ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি হচ্ছেন তোমার চাচা। সুতরাং তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে মহিলা দুধ পান করিয়েছেন ; কিন্তু কোন পুরুষ আমাকে দুধ পান করায়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার চাচা, সুতরাং তাকে তোমার কাছে আসার অনুমতি দাও। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, এই ঘটনা পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর। তিনি আরও বলেন, জন্মসূত্রে যারা হারাম, দুধ সম্পর্কের কারনেও তাঁরা হারাম।
৪৮৬০ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারী যেন অন্য কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তার বর্ণনা নিজ স্বামীর নিকট এমনভাবে না দেয়, যেন সে (স্বামী) তাকে (ঐ নারীকে) দেখতে পাচ্ছে।
৪৮৬১ উমর ইবনু হাফ্সা ইবনু গিয়াস (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন নারী যেন অন্য কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তার বর্ণনা নিজ স্বামীর নিত এমনভাবে না দেয়, যেন সে তাকে দেখতে পাচ্ছে।
৪৮৬২ মাহমুদ (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পুত্র সুলায়মান আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার একশত বিবির সঙ্গে মিলিত হব এবং তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এ কথা শুনে একজন ফেরেশতা বলেছিলেন, আপনি ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলুন ; কিন্তু তিনি একথা ভুলক্রমে বলেননি। এরপর তিনি তার বিবিগণের সঙ্গে মিলিত হলেন ; কিন্তু তাদের কেউ কোন সন্তান প্রসব করল না। শুধুমাত্র একজন বিবি একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি হযরত সুলায়মান আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলতেন, তাহলে আল্লাহ তাঁর আশা পূর্ণ করতেন। আর সেটাই ছিল তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য উত্তম।
৪৮৬৩ আদম হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে এসে রাতে ঘরে প্রবেশ করা অপছন্দ করতেন।
৪৮৬৪ মুহাম্মাদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকে রাতে আকস্মিকভাবে তার ঘরেও প্রবেশ করা উচিত নয়।
৪৮৬৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা ফিরে আসছিলাম, আমি আমার মন্থর গতি উটের পিঠে ত্বরা করতে লাগলাম। তখন আমার পিছনে একজন আরোহী এসে মিলিত হলেন। তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বললেন, তোমার এ ব্যস্ততার কারন কি? আমি বললাম, আমি সদ্য শাদী করেছি। তিনি বললেন, কুমারী, না পূর্ব-বিবাহিতা বিয়ে করেছ? আমি বললাম, পূর্ব-বিবাহিতা। তিনি বললেন, কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করতে, আর সেও তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। (রাবী) বলেন, আমরা মদিনায় পৌঁছেনিজ নিজ বাড়িতে যাইতে চাইলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর- পরে রাতে অর্থাৎ এশা নাগাদ ঘরে যাবে, যাতে এলোকেশী নারী তার চুল আঁচড়িয়ে নিতে পারে এবং প্রবাসী স্বামীর স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করতে পারে। (রাবী) বলেন, আমাকে এক নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে এও বলেছেন যে, হে জাবির। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দাও। (কোন রাবী বলেন) অর্থাৎ সন্তান কামনা কর, সন্তান কামনা কর।
৪৮৬৬ মুহাম্মাদ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সফর থেকে রাতে প্রত্যাবর্তন করে গৃহে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না স্বামীর অবিদ্যমান স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করতে পারে এবং রুক্ষকেশী স্ত্রী চিরুনী করে নিতে পারে। (রাবী), বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমার কর্তব্য সন্তান কামনা করা, সন্তান কামনা করা। উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) ওয়াহাব (রহঃ) থেকে জাবির (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘সন্তান অন্বেষণ’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
৪৮৬৭ ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহীম (রাঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। যুদ্ধ শেষে প্রত্যাবর্তনকালে যখন আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম, আমি আমার মন্থর গতি সম্পন্ন উটের পিছে ত্বরা করতে লাগলাম। একটু পরেই জনৈক আরোহী আমার পিছনে এসে মিলিত হলেন এবং তাঁর লাঠি দ্বারা আমার উটকে খোঁচা দিলেন। এতে আমার উটটি সর্বোৎকৃষ্ট উটের ন্যায় চলতে লাগল। মুখ ফিরিয়ে দেখলাম যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি সদ্য বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, বিয়ে করেছ? আমি বললাম, জি-হ্যাঁ। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বরং বিধবা। তিনি বললেন, কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে আমোদ-প্রমোদ করতে, আর সেও তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। রাবী বলেন, এরপর আমরা যখন মদিনায় উপস্থিত হয়ে (নিজ নিজ গৃহে) প্রবেশে উদ্যত হলাম, তখন তিনি বললেন, আস, সকলে রাতের অর্থাৎ সন্ধ্যায় প্রবেশ করবে, যাতে এলোকেশী নারী চিরুনি করে নিতে পারে এবং স্বামী অবিদ্যমান স্ত্রী ক্ষুর ব্যবহার করে নিতে পারে।
৪৮৬৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হাযিম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ক্ষতস্থানে কি ঔষধ লাগানো হয়েছিল, এ নিয়ে লোকদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হল। পড়ে তারা সাহল ইবনু সা’দ সাঈদীকে জিজ্ঞেস করল, যিনি মদিনার অবশিষ্ট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিগণের সর্বশেষ ছিলেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ কোন ব্যাক্তি অবশিষ্ট নেই। ফাতেমা (রহঃ) তাঁর মুখমণ্ডল হতে রক্ত ধৌত করছিলেন আর আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি আনছিলেন। পরে একটি চাটাই পুড়ে, তা ক্ষতস্থানে চতুর্দিকে লাগিয়ে দেয়া হল।
৪৮৬৯ আহ্মদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু আবিস থেকে বর্ণিত যে, আমি জনৈক ব্যাক্তিকে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি যে, আপনি আযহা বা ফিতরের কোন ঈদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে উপস্থিত ছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তবে তাঁর সাথে আমার এত ঘনিষ্ঠতা না থাকলে সল্প বয়সের দরুন আমি তাঁর সাথে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি (আরও) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপর খুতবা দিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) আযান ও ইকামতের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি মহিলাদের কাছে এলেন এবং তাদেরকে ওয়াজ ও নসীহত করলেন ও তাদেরকে সা’দকা করার আদেশ দিলেন। (রাবী বলেন,)আমি দেখলাম, তারা তাদের কর্ণ ও কণ্ঠের দিকে হাত প্রসারণ করে (গয়নাগুলো) বিলালের কাছে অর্পণ করছে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিলাল (রাঃ) গৃহে প্রত্যাবর্তন করলেন।
৪৮৭০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ভর্ৎসনা করলেন এবং আমার কোমরে তাঁর হাত দ্বারা আঘাত করতে লাগলেন। আমার ঊরুর ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মস্তক থাকায় আমি নড়াচড়া করতে পারিনি।