মাগাজি বা যুদ্ধাভিযান

(৩৬৬৪) আবদুল্লাহ ইবনু মুহামদ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়েদ ইবনু আরকওমের পাশে ছিলাম। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়টি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল আপনি তাঁর সাথে কতটি যুদ্ধে শরীক ছিলেন? তিনি বললেন, সতেরটি। (আবূ ইসহাক বলেন) আমি বললাম, এসব যুদ্ধের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল কোনটি? তিনি বললেন, ‘উশায়রা বা ‘উশায়রা। (বর্ণনাকারী বলেন) বিষয়টি আমি কাতাদা (রহঃ)-এর কাছে আলোচনা করলে তিনিও বললেন, ‘উশায়রা(এর যুদ্ধই সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল)।

(৩৬৬৫)আহ্‌মাদ ইবনু উসমান (রহঃ) সা‘দ ইবনু মু‘ইয়ায (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন। তাঁর ও উমাইয়া ইবনু খালফের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উমাইয়া মদিনায় আসলে সা‘দ ইবনু মু’আযের অতিথি হত এবং সা‘দ (রাঃ) মক্কায় গেলে উমাইয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজতর করার পর একদা সা‘দ (রাঃ) উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা গেলেন এবং উমাইয়ার বাড়ীতে অবস্থান করলেন। তিনি উমাইয়াকে বললেন, আমাকে এমন একটি নিরিবিলি সময়ের কথা বল যখন আমি (শান্তভাবে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে পারব। তাই দ্বি-প্রহরের সময় একদিন উমাইয়া তাঁকে সাথে নিয়ে বের হল, যখন তাঁদের সাথে আবূ জেহেলের দেখা হল। তখন সে (আবূ জেহেল উমাইয়াকে লক্ষ্য করে) বলল, হে আবূ সাফ্‌ওয়ান! তোমার সাথে ইনি কে? সে বলল, ইনি সা’দ ইবনু মু’আয)। তখন আবূ জেহেল তাকে (সা’দ ইবনু মু‘আযকে) লক্ষ্য করে বলল, আমি তোমাকে নিঃশঙ্ক চিত্তে ও নিরাপদে মক্কায়(বায়তুল্লাহর)তাওয়াফ করতে দেখেছি অথচ তোমরা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দান করেছ এবং তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে চলেছ। আল্লাহর কসম, (এ মুহূর্তে) তুমি আবূ সাফওয়ানের (উমাইয়া) সঙ্গে না থাকলে তোমার পরিজনদের কাছে নিরাপদে ফিরে যেতে পারতে না। সা’দ (রাঃ) এর চেয়েও অধিক উচ্চস্বরে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি এতে যদি আমাকে বাঁধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি ব্যাপারে তোমাকে বাঁধা দেব যা তোমার জন্য এর চেয়েও ভীষণ কঠিন হবে। আর তা হল, মদিনার উপকন্ঠ দিয়ে তোমার(ব্যবসা বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) যাতায়তের রাস্তা (বন্ধ করে দেব)। তখন উমাইয়া তাকে বলল, হে সা’দ (রাঃ) এ উপত্যাকার প্রধান সর্দার আবূল হাকওমের(আবূ জেহেল) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলিও না। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ কর। আল্লাহর কসম, আমি রাসুল্লুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি যে, তারা তোমার হত্যাকারী। উমাইয়া জিজ্ঞাসা করল, মক্কার বুকে? সা’দ (রাঃ) বললেন, তা জানিনা। উমাইয়া এতে ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। এরপর উমাইয়া বাড়ী গিয়ে তার(স্ত্রীকে ডেকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান সা’দ আমার সম্পর্কে কি বলছে জানো? সে বলল, সা’দ তোমাকে কি বলেছে? উমাইয়া বলল, সে বলেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা আমার হত্যাকারী। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি মক্কায়? সে(সা’দ) বলল, তা আমি জানিনা। এরপর উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম, আমি কখনো মক্কা থেকে বের হব না। কিন্তু বদর যুদ্ধের দিন সমাগত হলে আবূ জেহেল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলল, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া(মক্কা ছেড়ে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে আবূ জেহেল এসে তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান। তুমি এ উপত্যাকার আধিবাসিদের(একজন) নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে(তুমি যুদ্ধ যাত্রায়) পেছনে বয়ে গেছ তখন তারাও তোমার সাথে এ বলে পেছনেই থেকে যাবে। এ বলে আবূ জেহেল তার সাথে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বলল, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছ তাই খোদার কসম অবশ্যই আমি এমন একটি উষ্ট্র ক্রয় করব যা মক্কার সবচাইতে ভাল। এরপর উমাইয়া(তার স্ত্রীকে) বলল, হে উম্মে সাফওয়ান; আমার সফরের ব্যবস্থা কর। তখন তার স্ত্রী তাকে বলল, হে আবূ সাফওয়ান! তোমার মদিনাবাসী ভাই যা বলেছিলেন তা তুমি ভূলে গিয়েছ কি? সে বলল, না। আমি তাদের সাথে কিছু দূর যেতে চাই মাত্র। রওয়ানা হওয়ার পর রাস্তায় যে মন্‌যিলেই উমাইয়া কিছুক্ষণ অবস্থান করেছে সেখানেই সে তার উট বেঁধে রেখেছে, গোটা পথেই এরূপ সে করল পরিশেষে বদর প্রান্তরে আল্লাহর হুকুমে সে মারা গেল।

(৩৬৬৬)ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন তন্মধ্যে তাবূকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সব যুদ্ধে আমি শরীক ছিলাম। তবে বদর যুদ্ধেও আমি শরীক হইনি। কিন্তু যারা যোগদান করেননি তাদেরকে কোন প্রকার দোষারূপ করা হয়নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশ কাফেলার পশ্চাঁদ্ধাবন করার উদ্দেশ্যেই যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত সময় ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা তাদের (মুসলমানদের) সাথে তাদের শত্রুদের মুখামুখী করিয়ে দেন।

(৩৬৬৭) আবূ নু’আঈম (রহঃ) ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মিকাদাদ ইবনু আসওয়াদকে এমন একটি ভূমিকায় পেয়েছি যে, সে ভূমিকায় যদি আমি হতাম, তবে যা দুনিয়ার সব কিছুর তুলনায় আমার নিকট প্রিয় হত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন, তখন তিনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু’আ করছিলেন। এতে তিনি(মিকাদাদ ইবনু আসওয়াদ) বললেন, মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাওম যেমন বলেছিল যে, “তুমি(মূসা) আর তোমার প্রতিপালক যাও এবং যুদ্ধ কর”। (৫ মায়েদা ২৪) আমরা তেমন বলব না, বরং আমরাতো আপনার ডানে, বামে, সিম্মুখে, পেছনে সর্বদিক থেকে যুদ্ধ করব। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি দেখলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুখমন্ডল উজ্জ্বল হয়ে উঠল এবং (একথা) তাঁকে খুব আনন্দিত করল।

(৩৬৬৮) মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ আপনি যদি চান (কাফিররা আমাদের উপর জয়লাভ করুক) আপনার ইবাদত করার লোক আর থাকবে না। এমতবস্থায় আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হাত চেপে বললেন, আপনার জন্য এ যথেষ্ট। তখন তিনি(রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )এ আয়াত পড়তে পড়তে বের হলেন! “শত্রুদল শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে। ” (৫৪ ক্বামার ৪৫)

(৩৬৬৯) ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’মিনদের মধ্যে (যারা অক্ষম নন) অথচ ঘরে বসে থাকেন তারা সমান নন।

(৩৬৭০) মুসলিম (রহঃ) ও মাহমূদ বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদরের দিন আমাকে ও ইবনু উমরকে ছোট মনে করা হয়েছিল, এ যুদ্ধে মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের বেশী এবং আনসারদের সংখ্যা ছিল দুইশ’ চল্লিশেরও কিছু বেশী।

(৩৬৭১) আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ -এর যে সব সাহাবী বদরে অংশ গ্রহণ করেছেন তারা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সংখ্যা তালূতের যে সব সঙ্গী (জিহাদে শরীক হওয়ার নিমিত্তে তাঁর সাথে) নদী পার হয়েছিল তাদের সমান ছিল। তাদের সংখ্যা তিনশ’ দশেরও কিছু বেশী। বারা’ (রাঃ) বলেন, আল্লাহের কসম ঈমানদার ব্যতীত আর কেউই তাঁর সাথে নদী অতিক্রম করেনি।

(৩৬৭২) আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ -এর সাহাবাগণ পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা তালূতের সঙ্গে নদী অতিক্রমকারী লোকদের সমানই ছিল এবং তিনশ’ দশজনের অধিক ঈমানদার ব্যাক্তই কেবল তাঁর সাথে নদী পার হয়েছিলেন।

(৩৬৭৩) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু কাসীর বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা পরস্পর আলোচনা করতাম যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা তালূতের সাথে নদী অতিক্রমকারী লোকদের অনুরূপ তিনশ’ দশজনেরও কিছু বেশী ছিল। আর মু’মিনগণই কেবল তাঁর সাথে নদী পার হয়েছিলেন।

(৩৬৭৪) আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে মুখ করে কুরাইশ গোত্রীয় কপিতয় লোক তথা—শায়বা ইবনু রাবী’আ, উতবা ইবনু রাবী’আ, ওয়ালিদ ইবনু উতবা এবং আবূ জেহেল ইবনু হিশামের বিরুদ্ধে দু’আ করেন। (আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)বলেন) আমি আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিচ্ছি, অবশ্যই আমি এ সমস্ত লোকদেরকে (বদরের রণাঙ্গনে) নিহত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখেছি। রৌদ্রের প্রচন্ডতা দেহগুলোকে বিকৃত করে দিয়েছিল। বস্তুতঃ সে দিনটি ছিল প্রচন্ড গরম।

(৩৬৭৫) ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, বদর যুদ্ধের দিন আবূ জেহেল যখন মৃত্যুর মুখোমুখি তখন তিনি(আবদুল্লাহ) তার কাছে গেলেন। তখন আবূ জেহেল বলল, (আজ) তোমরা তোমাদের এক ব্যাক্তিকে হত্যা করেছ এতে আমি কি আশ্চর্যবোধ করব।

(৩৬৭৬) আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ও আমর ইবনু খালিদ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, (বদরের দিন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ জেহেলের কি অবস্থা কেউ দেখে আসতে পার কি? তখন ইবনু মাসউদ (রাঃ) তার খোঁজে বের হলেন এবং দেখতে পেলেন যে, ‘আফ্‌রার দুই পুত্র তাকে এমনভাবে প্রহার করতেছে যে, মুমূর্ষু অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। রাবী বলেনঃ যাকে (অর্থাৎ আবূ জেহেল) তোমরা অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল তার চেয়ে বেশী আর কি? আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) বলেন, তুমই কি আবূ জেহেল।

(৩৬৭৭) মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, (বদরের দিন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ জেহেলের কি করল, কে তার খোঁজ নিয়ে আসতে পার? (একথা শুনে) ইবনু মাসউদ (রাঃ) চলে গেলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন, আফ্‌রার দুই পুত্র তাকে এমনভাবে প্রহার করেছে যে, সে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তিনি তার দাঁড়ি ধরে বললেন, তুমই কি আবূ জেহেল? উত্তরে সে বলল, এক ব্যাক্তিকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করল অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) যাকে তোমরা হত্যা করলে! এর চাইতে বেশী আর কি? ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে অনুরূপ একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে।

(৩৬৭৮) আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইব্‌রাহীমের দাদা থেকে তথা আফ্‌রার দুই ছেলের সম্পর্কে এক রেওয়ায়ত বর্ণনা করেছেন।

(৩৬৭৯) মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ রুকাশী (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমই সর্বপ্রথম ব্যাক্তি যে কিয়ামতের দিন দয়াময়ের সামনে বিবাদের (মীমাংসার) জন্য হাঁটু গেড়ে বসব। কায়স ইবনু উবাদ (রাঃ) বলেন, এদের সম্পর্কেই কুরআন মজীদের (আরবী) “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ তাঁরা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে” (২২ হাজ্জ (হজ্জ)-১৯) আয়াতটি নাযিল হয়েছে। তিনি বলেন, (মুসলিম পক্ষের) তারা হল হাম্‌যা, আলী ও উবায়দা অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আবূ উবায়দা ইবনুল হারিস (কাফির পক্ষের) শায়বা ইবনু রাবীআ, উত্‌বা এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবা।

(৩৬৮০) কাবীসা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, (আরবী) “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে” আয়াতটি কুরাইশ গোত্রীয় ছয়জন লোক (এদের তিনজন মুসলিম এবং তিনজন মুশরিক) সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তারা হলেন, (মুসলিম পক্ষের) হাম্‌যা, আলী ও উবায়দা অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আবূ উবায়দা ইবনুল হারিস (কাফির পক্ষের) শায়বা ইবনু রাবীআ, উত্‌বা এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবা।

(৩৬৮১) ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম সাওওয়াফ কায়স ইবনু উবাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন (আরবী) “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে” আয়াতটি আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে।

(৩৬৮২) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু জাফর (রহঃ) কায়স ইবনু উবাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আমি আবূ যার (রাঃ)-কে কসম করে বলতে শুনেছি যে, উপরোক্ত আয়াতগুলো উল্লেখিত বদরের দিন ঐ ছয় ব্যাক্তি সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল।

(৩৬৮৩) ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আবূ যার (রাঃ)-কে কসম করে বলতে শুনেছি যে, (আরবী) “এরা দুটি বিবাদমান পক্ষ তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে” আয়াতটি বদরের দিন দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হামযা, আলী, উবাইদা ইবনুল হারিস, রাবীআর দুই পুত্র উত্‌বা ও শায়বা এবং ওয়ালীদ ইবনু উত্‌বার সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে।

(৩৬৮৪) আহ্‌মদ ইবনু সা‘ঈদ আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি শুনলাম, এক ব্যাক্তি বারা‘ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল, ‘আলী (রাঃ) কি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল? তিনি বললেন, আলী তো নিঃসন্দেহে মুকাবিলায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং দুইটি লৌহ পোশাক পরিধান করেছিলন।

(৩৬৮৫)‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমাইয়া ইবনু খালফে্‌র সাথে একটি চুক্তি করেছিলাম। যখন বদর দিবস উপস্থিত হল, এরপর তিনি উমাইয়া ইবনু খাল্‌ফ ও তার পুত্রের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করলেন। সেদিন বিলাল (রাঃ) বললেন, যদি উমাইয়া ইবনু খাল্‌ফ প্রাণে বেঁচে যায় তাহলে আমি সফল হব না।

(৩৬৮৬) আবদান ইবনু ‘উসমান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি সূরা নাজ্‌ম তিলাওয়াত করলেন এবং সাথে সাথে সিজ্‌দা করলেন। এক বৃদ্ধ ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীর নিকট যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সকলেই সিজ্‌দা করলেন। সে বৃদ্ধ এক মুষ্টি মাটি উঠিয়ে কপালে লাগিয়ে বলল, আমার জন্য এতটুকু যথেষ্ট। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, কিছুদিন পর আমি তাকে কাফির অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা হিশামের পিত (‘উরওয়া) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (তার পিতা) যুবায়রের শরীরে তিনটি মারাত্নক আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। এর একটি ছিল তার কাঁধে। ‘উরওয়া বলেন, আমি আমার আঙ্গুলগুলো ঔ ক্ষতস্থানে ঢুকিয়ে দিতাম, বর্ণনাকারী ‘উরওয়া বলেন, ঔ আঘাত তিনটির দু’টি ছিল বদর যুদ্ধের এবং একটি ছিল ইয়ারমুক যুদ্ধের। ‘উরওয়া বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র শহীদ হলেন তখন আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান আমাকে বললেন, হে ‘উরওয়া, যুবায়রের তরবারিখানা তুমি কি চিন? আমি বললাম হাঁ চিনি। ‘আবদুল মালিক বললেন, এর কি কোন চিহ্ন(তোমার জানোা) আছে? আমি বললাম, এর ধার পাশে এক জায়গায় ভাঙ্গা আছে যা বদর যুদ্ধের দিন ভেঙ্গে ছিল তখন তিনি বললেন, হাঁ তুমি সত্যি বলেছ, (তারপর তিনি একটি কবিতাংশ আবৃত্তি করলেন) (আরবী) সে তরবারীর ভাঙ্গন ছিল শত্রু সেনাদের আঘাত করার কারণে। এরপর আবদুল মালিক তরবারী খানা ‘উরওয়ার নিকট ফিরিয়ে দিলেন, হিশাম বলেন, আমরা নিজেরা এর মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম তিন হাজার দিরহাম। এরপর আমাদের এক ব্যাক্তি তা (উত্তরাধিকার সূত্রে) নিয়ে নিল। আমার মনে বাসনা জাগল যে যদি আমি তরবারীটি নিয়ে নিতাম।

(৩৬৮৭) ফারওয়া (রহঃ) হিশামের পিতা (‘উরওয়া) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যুবায়র (রাঃ)-এর তরবারী রূপার কারুকার্য খচিত ছিল। হিশাম (রাঃ) বলেন, ‘উরওয়া (রহঃ)-এর তরবারীটিও রূপার কারুকার্য খচিত ছিল।

(৩৬৮৮) আহ্‌মদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ারমুকের (যুদ্ধের) দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবাগণ যুবায়র (রাঃ) কে বলেন যে, (মুশরিকদের প্রতি) আপনি কি আক্রমন করবেন না তাহলে আমরাও আপনার সঙ্গে আক্রমণ করব। তখন তিনি বলেন, আমি যদি (তাদের প্রতি) আক্রমণ করি তখন তোমরা পিছে সরে পড়বে। তখন তারা বললেন, আমরা তা করব না। এরপর তিনি (যুবায়ের (রাঃ) তাদের উপর আক্রমণ করলেন। এমনকি শত্রুদের কাতার ভেদ করে সামনে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু (এ সময়) তার সঙ্গে আর কেউ ছিলনা। মুখোমুখি হয়ে ফিরে আসার জন্য উদ্যত হলে শত্রুগণ তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেলে এবং তার কাঁধের উপর দু’টি আঘাত করে, যে আঘাত দু’টির মাঝেই বিদ্যমান রয়েছে বদর যুদ্ধের আঘাতের চিহ্নটি। ‘উরওয়া (রহঃ) বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ঐ ক্ষত চিহ্ন গুলোতে আমার সবগুলো আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে আমি খেলা করতাম। ‘উরওয়া (রাঃ) আরো বলেন, ঐদিন তার(যুবায়রের) সঙ্গে (তার পুত্র) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) ও শরীক ছিলেন, তখন তার বয়স ছিল দশ বছর। যুবায়র (রাঃ), তাকে ঘোড়ার পিঠে উঠিয়ে নিলেন এবং এক ব্যাক্তিকে তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিলেন।

(৩৬৮৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কদর্য আবর্জনপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে সে স্থানের উপকন্ঠে তিনদিন অবস্থান করতেন। সে মতে বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিন তিনি তাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারী জ্বীন কষে বাঁধা হল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে (কিছু দূর) এগিয়ে গেলেন। সাহাবাগণও তাঁর পেছনে পেছনে চলেছেন। তারা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, কোন প্রয়োজনে (হয়ত) তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূঁপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যাক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে শুরু করলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভাব করতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বস্তু ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) ‘উমর (রাঃ) বললেন, হে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আত্মাহীন দেহগুলুকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শ্রবণ করছ না। কাতাদা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা শোনাতে) তাদের ধমকি, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেওয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন।

(৩৬৯০) হুমায়দী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (আরবী) (যারা আল্লাহর অনুগ্রহের বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে) ১৪ ইবরাহীম ২৮ আয়াতাংশ সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর কসম, এরা হল কাফির কুরাইশ সম্প্রদায়। ‘আমর (রহঃ) বলেন, এরা হচ্ছে কুরাইশ সম্প্রদায় এবং মুহাম্মদ হচ্ছেন আল্লাহর নিয়ামত। এবং (আরবী) (নিজেদের সম্প্রদায়কে তারা নামিয়ে আনে ধ্বংসের ক্ষেত্রে) ১৪ ইবরাহীম ২৮ আয়াতাংশের মাঝে বর্ণিত (আরবী) এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) দোযখ। (অর্থাৎ বদর যুদ্ধের দিন তারা তাদের কাওমকে দোযখে পৌছিয়ে দিয়েছে।)

(৩৬৯১) উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হিশামের পিতা (উরওয়া) (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মৃত ব্যাক্তিকে তার পরিবার পরিজনদের কান্নাকাটি করার কারণে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়। ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কথাটি” আয়িশা (রাঃ) –এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছেন, মৃত ব্যাক্তির অপরাধ ও গোনাহর কারণে তাকে (কবরে) শাস্তি দেয়া হয় অথচ তখনও তার পরিবারের লোকেরা তার জন্য ক্রন্দন করছে। তিনি (রাঃ) বলেন, এ কথাটি ঐ কথাটিরই অনুরূপ যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে কূপে বদর যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে যা বলার বল্লেন(এবং জানালেন)যে, আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। তিনি বললেন, এখন তারা খুব বুঝতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলছিলাম তা ছিল যথার্থ। এরপর ‘আয়িশা (রাঃ)(আরবী) (তুমি তো মৃতকে শোনাতে পারবেনা) (৩০ রূমঃ ৫২) (এবং তুমি শোনাতে সমর্থ হবে না তাদেরকে যারা কবরে রয়েছে)(৩৫ ফাতিরঃ ২২) আয়াতাংশ দু’টো তিলাওয়াত করলেন। উরওয়া (রাঃ) বলেন, (এর অর্থ হল) জাহান্নামে যখন তারা তাদের আসন গ্রহণ করে নেবে।

(৩৬৯২) উসমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরে অবস্থিত কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, (হে, মুশরিকগণ) তোমাদের রব তোমাদের নিকট যা ওয়াদা করেছিলেন তা তোমরা ঠিক মত পেয়েছ কি? পরে তিনি বললেন, এ মুহূর্তে তাদেরকে আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। এ বিষয়টি আয়িশা (রাঃ) এর সামনে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার অর্থ হল, তারা এখন বুঝতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলতাম তাই হক ছিল। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন (আরবী) তুমি তো মৃতকে শোনাতে পারবেনা) এভাবে আয়াতটি সম্পুর্ণ তিলাওয়াত করলেন।

(৩৬৯৩) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, হারিসা (রাঃ) একজন নওজোয়ান লোক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করার পর তার আম্মা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারিসা আমার কত আদরের আপনি তো তা অবশ্যই জানেন। (বলুন) সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা পোষণ করব। আর যদি এর অন্যথায় হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি (তার জন্য) যা করছি। তখন তিনি বললেন, তোমার কি হল, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে? বেহেশ্‌ত কি একটি? (না না) বেহেশ্‌ত অনেকগুলি, সে তো জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করছে।

(৩৬৯৪) ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মারসা’দ, যুবায়র ও আমাকে কোথাও পাঠিয়েছিলেন এবং আমরা সকলেই অশ্বারোহী। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা যাও। যেতে যেতে তোমরা ‘রাওযা খাখ’ নামক স্থানে পৌঁছে তথায় একজন স্ত্রীলোক দেখতে পাবে। তার নিকট (মক্কায়) মুরশিকদের কাছে লিখিত হাতিব ইবনু আবূ বালতার একখানা পত্র আছে। (সে পত্রখানা ছিনিয়ে আনবে।)আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নির্দেশিত স্থানে গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। সে তখন স্বীয় একটি উটের উপর আরোহণ করে পথ অতিক্রম করছিল। আমরা তাকে বললাম, পত্রখানা আমাদের নিকট অর্পণ কর। সে বলল, আমার নিকট কোন পত্র নেই। আমরা তখন তার উটটিকে বসিয়ে তার তল্লাশী নিলাম। কিন্তু পত্রখানা উদ্ধার করতে পারলাম না। আমরা বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেন নি। তোমাকে পত্রখানা বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। যখন (আমাদের) কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করল তখন স্ত্রীলোকটি তার কোমরের পরিধেয় বস্ত্রের গিঁটে কাপড়ের পুঁটুলির মধ্য থেকে পত্রখানা বের করে দিল। আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর দরবারে উপস্থিত হলাম (সব দেখে শুনে) উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) এবং মু’মিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকথা করেছে। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দই। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হাতিব ইবনু আবূ বালতা (রাঃ) কে ডেকে) বললেন, তোমাকে একাজ করতে কিসে উদ্বুদ্ধ করল? হাতিব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশ্বাসী নই, আমি এরূপ নই। বরং (এ কাজ করার পেছনে) আমার মূল উদ্দেশ্য হল (মক্কার শত্রু) কাওমের প্রতি কিছু অনুগ্রহ করা যাতে আল্লাহ এ উসিলায় (তাদের অনিষ্ট থেকে) আমার মাল এবং পরিবার ও পরিজনকে রক্ষা করেন। আর আপনার সাহাবীদের সকলেরই কোন না কোন আত্নীয় সেখানে রয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ তার ধন-সম্পদ ও পরিবারবর্গকে রক্ষা করেছেন (এ কথা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্যই বলেছে। সুতরাং তোমরা তার ব্যাপারে ভাল ব্যাতীত আর কিছু বলো না। তখন উমর (রাঃ) বললেন, সে তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল) ও মু’মিনদের সাথে বিশ্বাসঘাতকথা করেছে। সুতরাং আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি বদরী সাহাবী নয়? নিশ্চয়ই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরকে দেখে শুনেই আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমাদের যা ইচ্ছা কর” তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। (এ কথা শুনে) উমর (রাঃ)-এর দু’চোখ তখন অশ্রু সজল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই সর্বাধিক জ্ঞাত।

(৩৬৯৫) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল জু‘ফী (রহঃ) আবূ উসাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছিলেন, শত্রু তোমাদের নিকটবর্তী হলে তোমরা তীর নিক্ষেপ করবে এবং তীর ব্যবহারে সংযমী হবে।

(৩৬৯৬) মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) আবূ উসাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা (শত্রুরা) তোমাদের নিকটবর্তী হলে তোমরা তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে এবং তীর ব্যবহারে সংযমী হবে।

(৩৬৯৭) আমর ইবনু খালীদ (রহঃ) বারা‘ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহোদ যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়রকে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। (এ যুদ্ধে) তারা (মুশরিক বাহিনী) আমাদের সত্তর জনকে শহীদ করে দেয়। বদর যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণ মুশরিকদের একশ চল্লিশ জনকে নিহত ও গ্রেফতার করে ফেলেছিলেন। এর মধ্যে সত্তর জন বন্দী হয়েছিল এবং সত্তর জন নিহত হয়েছিল। (ওহোদ যুদ্ধের দিন যুদ্ধ সমাপান্তে কুফরী অবস্থায়) আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আজকের দিন হল বদরের বদলা(বিজয়)। যুদ্ধ কূপের বালতির ন্যায় হাত বদল হয়।

(৩৬৯৮) মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে১ যে কল্যাণ দেখতে পেয়েছিলাম সে তো ঐ কল্যাণ যা পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দান করেছেন। আর উত্তম প্রতিদান সম্বন্ধে যা দেখেছিলাম তা তো আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন বদর যুদ্ধের পর। (১ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে কতকগুলো গরু কুরবানী করতে দেখলেন এবং ইংগিত পেলেন কতকগুলো কল্যাণকর বিষয়ের। তিনি গরু কুরবানী করাকে ওহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের শাহাদাত বরণ করার দ্বারা ব্যাখ্যা করলেন এবং দ্বিতীয় বদরের পর মুসলমানগণ যে ঈমানী বল লাভ করেছিলেন সেটিকে তিনি স্বপ্নে দেখা কল্যাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলান। কেননা বদরের পূর্বে ভীতি সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে অবদমিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে তাদের ঈমান আরো ময্‌বুত হয়ে যায় এবং মনোবল আরো দৃঢ় হয়ে যায়। আল-কুরানে এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।)

(৩৬৯৯) ইয়াকুব (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বদরের রণাঙ্গনে সৈন্যদের সারিতে দাঁড়িয়ে আমি এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, আমার ডানে ও বামে অল্প বয়স্ক দু’জন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তাদের মত অল্প বয়স্ক দু’জন যুবক দাঁড়িয়ে থাকার ফলে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছিলাম না। এমতাবস্থায় তাদের একজন অপরজন থেকে গোপন করে আমাকে জিজ্ঞাসা করল চাচাজানো, আবূ জেহেল কোন লোকটি আমাকে তা দেখিয়ে দিন? আমি বললাম, ভাতিজা, তাকে চিনে তুমি কি করবে? সে বলল, আমি আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছি, তার দেখা পেলে আমি তাকে হত্যা করব না হয় (এ চেষ্টায়) নিজেই শহীদ হয়ে যাব। এরপর দ্বিতীয় যুবকটিও তাঁর সঙ্গীকে গোপন করে আমাকে অনুরূপ জিজ্ঞাসা করল। আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাঃ) বলেন, (তাদের কথা শুনে) আমি এত অধিক সন্তুষ্ট হলেম যে, দু’জন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের মধ্যস্থলে অবস্থানেও আমি ততটুকু সন্তুষ্ট হতাম না। এরপর আমি তাদের দু’জনকে ইশারা করে আবূ জেহেলকে দেখিয়ে দিলাম। তৎক্ষণাৎ তাঁরা বাজ পাখির ন্যায় ক্ষিপ্রতার সাথে তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং ভীষণভাবে তাকে আঘাত করল। এরা দু’জন ছিল ‘আফরার দু‘পুত্র।

(৩৭০০) মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসিম ইবনু উমর ইবনু খাত্তাবের নানা আসিম ইবনু সাবিত আনসারীর নেতৃত্বে দশজন সাহাবীর একটি দল গোয়েন্দাগিরির জন্য পাঠালেন। তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থান হান্দায় পৌছালে হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বানু লিহয়ানকে তাদের আগমন সম্বন্ধে অবগত করা হয়। (এ সংবাদ শুনে) তারা প্রায় একশ’ জন তীরন্দাজ তৈরি হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পথ চলতে আরম্ভ করে। যেতে যেতে তারা এমন স্থানে পৌছে যায় যেখানে অবস্থান করে তাঁরা (সাহাবীগণ) খেজুর খেয়েছিলেন। এতদৃষ্টে তারা (বানু লিহ্‌য়ানের লোকেরা) ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি) বলে তাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে তাদের খুঁজতে লাগল। আসিম ও তাঁর সঙ্গীগণ তাদের (আগমন) সম্বন্ধে অনুভব করতে পেরে একটি (পাহাড়ি) স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেন। (লিহয়ান) কাওমের লোকেরা তাদের বেষ্টন করে ফেলে। তারপর তারা মুসলমানদের নিচে অবতরণ করে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে বলল, তোমাদেরকে ওয়াদা দিচ্ছি, আমরা তোমাদের কাউকে হত্যা করব না। তখন আসিম ইবনু সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আমার সাথী ভাইয়েরা, কাফিরের নিরাপত্তায় আশ্বস্ত হয়ে আমি কখনো নিচে অবতরণ করব না। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের খবর আপনার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলমানদের প্রতি তীর নিক্ষেপ আরম্ভ করল এবং আসিমকে (আরো ছয়জনসহ) শহীদ করে ফেলল। অবশিষ্ট তিনজন, খুবাইব, যায়িদ ইবনু দাসিনা এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ ইবনু তারিক) তাদের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে নিচে নেমে আসলেন। তারা (শত্রুগণ) তাঁদেরকে কাবু করে নিয়ে নিজেদের ধনুকের তার খুলে তা দিয়ে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তৃতীয়জন বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের সাথে যাবনা, আমার জন্য তো এদের(শহীদ সাথীদের) আদর্শই অনুসরনীয়। অর্থাৎ আমিও শহীদ হয়ে যাব। তারা তাকে বহু টানা হেচড়া করল। কিন্তু তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। (অবশেষে তারা তাঁকে শহীদ করে দিল) এরপর খুবাইব এবং যায়িদ ইবনু দাসিনাকে (বন্দী করে) নিয়ে গিয়ে তাদেরকে (মক্কার বাজারে) বিক্রি করে দিল। এটা ছিল বদর যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা। বদর যুদ্ধে খুবাইব যেহেতু হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। তাই (প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে) হারিস ইবনু আমির ইবনু নাওফিলের পুত্রগণ তাঁকে খরীদ করে নিল। খুবাইব তাদের নিকট বন্দী অবস্থায় কাটাতে লাগলেন। এরপর তারা সবাই তাকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করল। তিনি হারিসের কোন এর কন্যার নিকট থেকে ক্ষৌরকর্মের জন্য একটি ক্ষুর চেয়ে নিলেন। তার (হারিসের কন্যার) অসতর্ক অবস্থায় তার একটি ছোট বাচ্চা খুবাইবের কাছে গিয়ে পৌঁছল। সে (হারিসের কন্যা) দেখতে পেল তিনি (খুবাইব) তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে রানের উপর বসিয়ে ক্ষুরখানা হাতে ধরে আছেন। সে (হারিসের কন্যা) বর্ণনা করেছে, (এ দেখে) আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম, খুবাইব তা বুঝতে পারলেন, তিনি বললেন, আমি তাকে (শিশুটিকে) হত্যা করে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পেয়েছ? আমি কখনো এ কাজ করবনা। সে আরো বলেছে, আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী আর কখনো দেখেনি। আল্লাহর কসম একদিন আমি তাকে আঙ্গুদের গুচ্ছ হাতে নিয়ে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ সে লোহার শিকলে বাঁধা ছিল এবং সে সময় মক্কায় কোন ফলও ছিল না। সে (হারিসের কন্যা) বলত, ঐ আঙ্গুরগুলো আল্লাহ তা‘আলা খুবাইবকে রিয্‌কস্বরূপ দান করেছিলেন। অবশেষে একদিন তারা খুবাইবকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের সীমানার বাইরে নিয়ে গেল। তখন খুবাইব (রাঃ) তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সুযোগ দাও, তারা সুযোগ করে দিলে তিনি দু ‘রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি (মৃত্যু ভয়ে) ভীত হয়ে পড়েছি, তোমরা এ কথা না ভাবলে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। এরপর তিনি এ বলে দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুনে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে হত্যা কর এবং তাদের একজনকেও অবশিষ্ট রেখ না। তারপর তিনি আবৃত্তি করলেনঃ “আমি যখন মুসলমান হিসাবে মৃত্যু বরণ করার সৌভাগ্য লাভ করেছি, তাই আমার কোনই ভয় নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যে কোন অবস্থাতেই আমার মৃত্যু হউক। আর তা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই, তিনি ইচ্ছা করলে আমার প্রতিটি কর্তিত অঙ্গে বরকত প্রদান করতে পারেন। ” এরপর (হারিসের পুত্র) আবূ সারুআ উকবা (উকবা ইবনু হারিস) তাঁর দিকে দাঁড়াল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। এভাবেই খুবাইব (রাঃ) সে সব মুসলমানদের জন্য দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ)-এর নিয়ম (সুন্নাত) চালু করে গেলেন যারা ধৈর্যের সাথে শাহাদত বরণ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐদিনই সাহাবীদেরকে অবহিত করেছিলেন যে দিন তাঁরা শত্রু কবলিত হয়ে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। কুরাইশদের নিকট তাঁর (আসিম (রাঃ) এর) নিহত হওয়ার খবর পৌঁছলে তারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসিমের শরীরের কোন অঙ্গ কেটে আনার উদ্দেশ্যে কপিতয় কুরাইশ কাফিরকে প্রেরণ করল। যেহেতু (বদর যুদ্ধের দিন) আসিম ইবনু সাবিত তাদের (কুরাইশদের) একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিল। এদিকে আল্লাহ আসিমের লাশকে হিফাযাত করার জন্য মেঘখন্ডের ন্যায় এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন। মৌমাছিগুলো আসিম (রাঃ) এর লাশকে শত্রু সেনাদের হাত থেকে রক্ষা করল। ফলে তাঁর দেহের কোন অঙ্গ কেটে নিতে সক্ষম হল না। কা’ব ইবনু মালিক(রা০ বলেন, মুরারা ইবনু রাবী আল উমরী এবং হিলাল ইবনু উমাইয়া আল ওয়াকিফী সম্বন্ধে লোকেরা বলেছেন যে, তারা উভয়ই আল্লাহর নেক বান্দা ছিলেন এবং দু’জনই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

(৩৭০১)কুতায়বা (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ইবনু উমরের নিকট জুম‘আর দিন এ সুংবাদ পৌঁছলে তিনি সাওয়ারী পিঠে আরোহণ করে তাঁকে দেখতে গেলেন। তখন বেলা হয়ে গিয়েছে এবং জুমু‘আর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময়ও ঘনিয়ে আসছে দেখে তিনি জুমু‘আর সালাত (নামায/নামাজ)-এর আদায় করতে পারলেন না। (আর এক সনদে) লায়স (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা উমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম আয যুহরী সুবায়া বিনত হারিস আসলামিয়্যা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তার ঘটনা ও (গর্ভবতী মহিলাম ইদ্দত সম্বন্ধে) তার প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে পত্র মারফত জিজ্ঞাসা করে জানতে আদেশ করলেন। এরপর উমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উতবাকে লিখে জানালেন যে, সুবায়আ বিনতুল হারিস তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বানু আমির ইবনু লুয়াই গোত্রের সা’দ ইবনু খাওলার স্ত্রী ছিলেন, সা‘দ (রাঃ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী ছিলেন। তার ইন্তেকালের কিছুদিন পরেই তিনি সন্তান প্রসব করলেন। এরপর নিফাস থেকে পবিত্র হয়েই তিনি বিবাহের পয়গাম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করলেন। এ সময় আবদুদ্দার গোত্রের আবূস সানাবিল ইবনু বা’কাক নামক এর ব্যাক্তি তাকে গিয়ে বললেন কি হয়েছে, আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি যে তুমি বিবাহের আশায় পয়গম দাতাদের উদ্দেশ্যে সাজসজ্জা আরম্ভ করে দিয়েছ? আল্লাহর কসম চার মাস দশদিন অতিবাহিত হওয়ার পুর্বে তুমি বিবাহ করতে পারবেনা। সুবায়আ (রাঃ) বলেন, (আবূস সানাবিল আমাকে) এ কথা বলার পর আমি ঠিকঠাক মত কাপড় চোপড় পরিধান করে বিকেল বেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম এবং এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, যখন আমি বাচ্চা প্রসব করেছি তখন থেকেই আমি হালাল হয়ে গিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিলেন যদি আমার ইচ্ছা হয়। (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আসবাগ ইউনুসের সূত্রে লায়সের মতই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। লায়স (রহঃ) বলেছেন, ইউনুস ইবনু শিহাব থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, বানু আমির ইবনু লুয়াই গোত্রের আযাদকৃত গোলাম মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু সাওবান আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদ ইবনু বুকায়য়ের পিতা তাকে জানিয়েছেন।

(৩৭০২) ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) মু‘আয ইবনু রিফাআ‘ ইবনু যুরাকী (রহঃ)তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একজন। তিনি বলেন, একদা জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদেরকে কিরূপ গণ্য করেন? তিনি বললেন, তাঁরা সর্বোত্তম মুসলমান অথবা(বর্ণনাকারীর সন্দেহ) এরূপ কোন বাক্য তিনি বলেছিলেন। জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ফিরিশ্‌তাগণের মধ্যে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণও তদ্রুপ মর্যাদার অধিকারী।

(৩৭০৩) সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) মু‘আয ইবনু রাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রিফাআ‘ (রাঃ) ছিলেন বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী আর রাফি‘ (রাঃ) ছিলেন বায়‘আতে আকাবায় অংশগ্রহণকারী একজন সাহাবী। রাফি‘ (রাঃ) এর পুত্র (রিফাআ‘) কে বলতেন, বায়‘আতে ‘আকাবায় শরীক থাকার চেয়ে বদর যুদ্ধে শরীক থাকা আমার কাছে বেশী আনন্দের বিষয় বলে মনে হয় না। কেননা জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

(৩৭০৪) ইসহাক ইবনু মনসূর (রহঃ) মু‘আয ইবনু রিফাআ‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন ফিরিশ্‌তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। (অন্য সনদে) ইয়াহ্‌ইয়া থেকে বর্ণিত যে, ইয়াযীদ ইবনুল হাদ (রহঃ) তাকে জানিয়েছেন যে, যেদিন মু‘আয (রাঃ) এ হাদিসটি বর্ণনা করেছিলেন সেদিন আমি তার কাছেই ছিলাম। ইয়াযীদ বলেছেন, মু‘আয (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, প্রশ্নকারী ফিরিশ্‌তা হলেন জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম।

(৩৭০৫) ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই তো জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম রণ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে ঘোড়ার মাথা (ঘোড়ার লাগাম) হাত দিয়ে ধরে আছেন।

(৩৭০৬) খালীফা (রহঃ) আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আবূ যায়েদ (রাঃ) ইন্তেকাল করেন। তিনি কোন সন্তান-সন্ততি রেখে যাননি। তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী।

(৩৭০৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) ইবনু খাব্বাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ সা‘ঈদ ইবনু মালিক খুদরী (রাঃ) সফর থেকে বাড়ী ফেরার পর তার পরিবারের লোকেরা তাঁকে কুরবানীর গোশ্‌ত থেকে কিছু গোশ্‌ত খেতে দিলেন। তিনি বললেন, আমি না জিজ্ঞাসা করে এ গোশ্‌ত খেতে পারিনা। তারপর তিনি তার মায়ের গর্ভজাত ভ্রাতা কাতাদা ইবনু নু’মানের কাছে গিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি ছিলেন, একজন বদরী সাহাবী। তখন তিনি তাকে, বললেন, তিনদিন পর কুরবানীর গোশ্‌ত খাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের প্রতি যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল পরবর্তীতে (অনুমতি সম্বলিত হাদীসের দ্বারা) তা সম্পূর্ণ রহিত করে দেয়া হয়েছে।

(৩৭০৮) ঊবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুবায়র (রাঃ) বলেছেন, বদর যুদ্ধের দিন আমি উবায়দা ইবনু সাঈদ ইবনু আস (রাঃ) কে এমন অস্ত্রাবৃত অবস্থায় দেখলাম যে, তার দু’চোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাকে আবূ যাতুল কারিশ বলে ডাকা হত। সে বলল, আমি আবূ যাতুল কারিশ। (একথা শুনে) বর্শা দিয়ে আমি তার উপর হামলা করলাম এবং তার চোখ ফুঁড়ে দিলাম। সে তৎক্ষণাৎ মারা গেল। হিশাম বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, যুবায়র (রাঃ) বলেছেন, তার(উবায়দা ইবনু সাঈদ ইবনু আসের) লাশের উপর পা রেখে বেশ বল প্রয়োগ করে (তার চোখ থেকে) আমি বর্শাটি টেনে বের করলাম। এতে বর্শার উভয় প্রান্ত বাঁকা হয়ে যায়। উরওয়া (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়রের নিকট বর্শাটি চাইলে তিনি তা তাঁকে দিয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পর তিনি তা নিয়ে যান। এবং পরে আবূ বকর (রাঃ) তা চাইলে তিনি তাঁকে বর্শাখানা দিয়ে দেন। আবূ বকরের ইন্তেকালের পর উমর (রাঃ) তা চাইলেন। তিনি তাঁকে বর্শাখানা দিয়ে দিলেন। কিন্তু উমরের ইন্তেকালের পর যুবায়র (রাঃ) পুনরায় বর্শাটি নিয়ে যান। এরপর উসমান (রাঃ) তাঁর নিকট বর্শাখানা চাইলে তিনি উসমানকে তা দিয়ে দেন। তবে উসমানের শাহাদতের পর তা আলীর লোকজনের হস্তগত হওয়ার পর আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তা চেয়ে নিয়ে যান। এরপর থেকে শহীদ হওয়া পর্যন্ত বর্শাখানা তাঁর নিকটই থাকে।

(৩৭০৯) আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ ইদরীস আয়িযুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার হাতে বায়‘আত গ্রহণ কর। তিনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।

(৩৭১০) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাহাবী আবূ হুযাইফ (রাঃ) এর আনসারী মহিলার আযাদকৃত গোলাম সালিমকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেন, যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়েদকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি তাকে তার ভ্রাতুষ্পুত্রী হিন্‌দা বিন্‌তে ওয়ালীদ এব্‌ন উতবার সাথে বিয়ে করিয়ে দেন। জাহিলিয়্যাতের আমলে কেউ কোন ব্যাক্তিকে পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করলে লোকেরা তাকে তার(পালনকারীর) প্রতই সম্বোধন করত, এবং সে তার পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হত। অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন, “তোমরা তাদেরকে ডাক তাদের পিতৃ পরিচয়ে। ” এরপর (আবূ হুযাইফার স্ত্রী) সাহ্‌লা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে হাদীসে বর্ণিত প্রকৃত ঘটনা বর্ণনা করলেন।

(৩৭১১) আলী (রহঃ) রুবায়ই বিন্‌ত মু‘আওয়িয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার বাসর রাতের পরদিন সকাল বেলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন এবং তুমি(খালিদ ইবনু যাকওয়ান) যেভাবে আমার কাছে বসে আছ ঠিক সে ভাবে আমার বিছানায় এসে বসলেন। তখন কয়েকজন ছোট বালিকা দুফ বাজিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত শহীদ পিতাদের প্রশংসা শ্লোক আবৃত্তি করছিল। পরিশেষে একটি বালিকা বলে উঠল, আমাদের মাঝে এমন একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন, যিনি জানেন আগামীকাল কি হবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ কথা বলবে না, বরং পূর্বে যা বলতে ছিলে তাই বল।

(৩৭১২) ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা ও ইসমাইল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী আবূ তাল্‌হা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরে কুকুর কিংবা ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশ্‌তা প্রবেশ করেন না। ইবনু ‘আব্বাসের মতে ছবি-এর অর্থ হচ্ছে প্রাণীর ছবি।

(৩৭১৩) আবদান ও আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মাল থেকে আমার অংশে আমি একটি উট পেয়েছিলাম। ‘ফায়’ থেকে প্রাপ্ত এক পঞ্চমাংশ থেকেও সেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি উট প্রদান করেন। আমি যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমার সাথে বাসর রাত যাপন করার ইচ্ছা করলাম এবং বানু কায়নকা গোত্রের এক ইয়াহূদী স্বর্ণকারকে ঠিক করলাম যেন সে আমার সাথে যায়। (সেখান থেকে) আমরা ইয্‌খির ঘাস সংগ্রহ করে নিয়ে আসব। পরে ঐ ঘাস স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা আমি আমার বিয়ের ওয়ালিমায় খরচ করার ইচ্ছা করেছিলাম (একদা ঐ কার্যে যাত্রা করার জন্য) আমি আমার উট দু’টোর জন্য গদি, বস্তা এবং দড়ি ব্যবস্থা করেছিলাম আর উট দু’টো এক আনসারী ব্যাক্তির ঘরের পার্শ্বে বসানো ছিল। আমার যা কিছু সংগ্রহ করার তা সংগ্রহ করে নিয়ে এসে দেখলাম উট দু’টির চুট কেঁটে ফেলা হয়েছে এবং সে দু’টির বক্ষ বিদীর্ণ করে কলিজা খুলে নেওয়া হয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমি আমার অশ্রু সংবরণ করতে পারলাম না। আমি (নিকটস্থ লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম, এ কাজ কে করেছে? তারা বললেন, আবদুল মুত্তালিবের পুত্র হামযা এ কাজ করেছেন। এখন তিনি এ ঘরে আনসারদের কিছু মদ্যপায়ীদের সাথে মদপান করছেন। সেখানে একদল গায়িকা ও কপিতয় সঙ্গী সাথী। (মদ্যপানের সময়) গায়িকা ও তার সঙ্গীগণ গানের ভেতর বলেছিল, “হে হামযা! মোটা উষ্ট্রদ্বয়ের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়”। একথা শুনে হামযা দৌড়িয়ে গিয়ে তলোয়ার হাতে নিল এবং উষ্ট্রদ্বয়ের চুট দু’টো কেঁটে নিল আর তাদের পেট চিরে কলীজা বের করে নিয়ে আসল। আলী (রাঃ) বলেন, তখন আমি পথ চলতে চলতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়েদ ইবনু হারিস (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে দেখামাত্রই) আমি যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি তা বুঝে ফেললেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আজকের মত বেদনাদায়ক ঘটনা আমি কখনো দেখিনি। হামযা আমার উট দু’টোর উপর খুব জুলুম করেছেন, তিনি উট দূ’টোর চুট কেঁটে ফেলেছেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করেছেন। এখন তিনি একটি ঘরে একদল মদ্যপায়ীদের সাথে অবস্থান করছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদরখানা চেয়ে নিলেন এবং তা গায়ে দিয়ে হেঁটে রওয়ানা হলেন। (আলী বলেন) এরপর আমি এবং যায়েদ ইবনু হারিস (রাঃ) তাঁকে অনুসরণ করলাম। (হাঁটতে হাঁটতে) তিনি যে ঘরে হামযা অবস্থান করছিলেন সে ঘরের কাছে পৌঁছে তার নিকট অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তার কৃতকর্মের জন্য ভৎসনা করতে শুরু করলেন। হামযা তখন নেশাগ্রস্ত। চোখ দু’টো তার লাল। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং দৃষ্টি উপর দিকে উঠিয়ে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাটুর দিকে তাকালেন। এরপর দৃষ্টি আরো একটু উপরে দিকে উঠিয়ে তিনি তাঁর চেহারার প্রতি তাকালেন। এরপর হামযা বললেন, তোমরা তো আমার পিতার দাস। (এ কথা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝলেন যে, তিনি এখন নেশাগ্রস্ত। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( পেছনের দিকে হটে (সেখান থেকে) বেরিয়ে পড়লেন, আমরাও তাঁর সাথে সাথে বেড়িয়ে পড়লাম।

(৩৭১৪) মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ইবনু মাকিল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (তিনি বলেছেন) আলী (রাঃ) সাহ্‌ল ইবনু হুনাইফের(জানাজার সালাত (নামায/নামাজ)) তাকবীর উচ্চারণ করলেন এবং বললেন, তিনি (সাহল ইবনু হুনাইফ) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

(৩৭১৫) আবূল ইয়ামান (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (উমর (রাঃ) তাঁকে বলেছেন) ‘উমর ইবনু খাত্তাবের কন্যা হাফসার স্বামী খুনায়স ইবনু হুযাফা সাহামী (রাঃ) যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, মদিনায় ইন্তেকাল করলে হাফসা (রাঃ) বিধবা হয়ে পড়লেন। ‘উমর (রাঃ) বলেন, তখন আমি ‘উসমান ইবনু আফফা্‌নের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁর নিকট হাফসার কথা আলোচনা করে তাঁকে বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে ‘উমরের মেয়ে হাফসাকে বিয়ে দিয়ে দেব। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, ব্যাপারটি আমি একটু চিন্তা করে দেখি। (‘উমর (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে) আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। পরে ‘উসমান (রাঃ) বললেন, আমার সুস্পষ্ট অভিমত এই যে, এই সময় আমি বিয়ে করব না। ‘উমর (রাঃ) বলেন, এরপর আমি আবূ বকরের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনার ইচ্ছা করলে ‘উমরের কন্যা হাফসাকে আমি আপনার নিকট বিয়ে দিয়ে দেব। (এ কথা শুনে) আবূ বকর (রাঃ) চুপ করে রইলেন এবং আমাকে কোন জবাব দিলেন না। এতে আমি ‘উসমানের (অস্বীকৃতির) চেয়েও অধিক দুঃখ পেলাম। এরপর আমি কয়েকদিন চুপ করে রইলাম, এমতাবস্থায় হাফসার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – নিজেই প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁকে সাসূলুল্লাহ -এর সাথে বিয়ে দিলাম। এরপর আবূ বকর (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমার সাথে হাফসার বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর আমি কোন উত্তর না দেওয়ার ফলে সম্ভবত আপনি মনকষ্ট পেয়েছেন। (‘উমর (রাঃ) বলেন) আমি বললাম, হাঁ। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আপনার প্রস্তাবের জবাব দিতে একটি জিনিসই আমাকে বাঁধা দিয়েছে আর তা হল এই যে, আমি জানতাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই হাফসা (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপনীয় বিষয়টি প্রকাশ করার আমার ইচ্ছা ছিল না। (এ কারণেই আমি আপনাকে কোন উত্তর দেই নি।)যদি তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )তাঁকে গ্রহণ না করতেন, অবশ্যই আমি তাঁকে গ্রহণ করতাম।

(৩৭১৬) মুসলিম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, স্বীয় আহ্‌লের(পরিবার পরিজনের) জন্য ব্যয়।

(৩৭১৭) আবূল ইয়ামান (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) তাঁর খিলাফত কালের (একটি ঘটনা) বর্ণনা করেছেন যে, মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) কুফার আমীর থাকা কালে তিনি (একদা) আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বিলম্ব করে ফেললে যায়েদ ইবনু হাসানের দাদা বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ উতবা ইবনু আমর আনসারী (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আপনিতো জানেন যে, জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর সাথে) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি এভাবেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করানোর জন্য আদিষ্ট হয়েছেন। (উরওয়া বলেন) বশীর ইবনু আবূ মাসউদ তার পিতার নিকট থেকে হাদিসটি এভাবেই বর্ণনা করতেন।

(৩৭১৮) মূসা (রহঃ) বদরী সাহাবী আবূ মাসউদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যাক্তি রাতের বেলা আয়াত দূ’টো তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। ‘আবদুর রাহমান (রহঃ) বলেন, পরে আমি আবূ মাসঊদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। (সেখানে) এ হাদিসটি সম্পর্কে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তা আমার নিকট বর্ণনা করলেন।

(৩৭১৯) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মাহ্‌মূদ ইবনু রবী (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, ‘ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আনসারী সাহাবী ছিলেন এবং তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলেন।

(৩৭২০) আহ্‌মদ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, আমি বনী সালিম গোত্রের অন্যতম নেতা হুসাইন ইবনু মুহাম্মদকে (রহঃ) ইতবান ইবনু মালিক থেকে মাহমুদ ইবনু রাবী এর বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি উহার স্বীকৃতি দিলেন।

(৩৭২১) আবূল ইয়ামান (রহঃ) বনী আদী গোত্রের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাক্তি আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবী‘আ যার পিতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, আমাকে বর্ণনা করেন যে, উমর (রাঃ) কুদামা ইবনু মাযউনকে (রাঃ) বাহ্‌রাইনের শাসনকর্তা নিয়োগ করেছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ)- এর মামা।

(৩৭২২) আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) রাফি’ ইবনু খাদীজা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমরকে বলেছেন যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তার দু’চাচা তাকে জানিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবাদযোগ্য ভূমি ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনিতো এ ধরনের জমি ভাড়া দিয়ে থাকেন? তিনি বললেন, হাঁ। রাফি’ ইবনু খাদীজা) তো নিজের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছেন।

(৩৭২৩) আদম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনু হাদ লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রিফা‘আ ইবনু রাফি‘ আনসারী (রাঃ) কে দেখেছি, তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

(৩৭২৪) আবদান (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী, বনী আমির ইবনু লুওয়াই গোত্রের বন্ধু আমর ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনুল জার্‌রাহ্‌কে জিযিয়া আনার জন্য বাহ্‌রাইন পাঠান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার্‌রাইন বাসীদের সাথে সন্ধি করে ‘আলা ইবনু হাযরামী (রাঃ)-কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবায়দা (রাঃ) বাহ্‌রাইন থেকে মান নিয়ে এসে পৌঁছালে আনসারগণ তার আগমনের সংবাদ জানতে পেরে সকলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন। সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্তির পর ফিরে বসলে তারা সকলেই তাঁর সামনে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে হয়, আবূ উবায়দা কিছু মাল নিয়ে এসেছে বলে তোমরা শুনতে পেয়েছ। তারা সকলেই বললেন, হাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, সু-সংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমাদের আনন্দদায়ক বিষয়ের আশায় থাক, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রের আশংকা করিনা। বরং আমি আশংকা করি যে, তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য এসে যাবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা তা লাভ করতে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে যেমনভাবে তারা করেছিল। আর এ ধন-সম্পদ তাদেরকে যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনিভাবে ধ্বংস করে দিবে।

(৩৭২৫) আবূন নু‘মান (রহঃ) নাফি‘ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) সব ধরনের সাপকে হত্যা করতেন। অবশেষে বদরী সাহাবী আবূ লুবাবা (রাঃ) তাকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে বসবাসকারী (শ্বেতবর্ণের) ছোট সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। এতে তিনি তা মারা থেকে বিরত থাকেন।

(৩৭২৬) ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কপিতয় আনসারী সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তারা বললেন, আমাদেরকে আমাদের ভাগিনা ‘আব্বাসের ফিদ্‌য়া মাফ করে দেয়ার অনুমতি দিন। ১ তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা তার (মুক্তিপণ এর) একটি দিরহামও মাফ করবেনা। ১ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাচা আব্বাস (রাঃ) বদর যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন। তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাঁকে বন্দী করেছিলেন, আবূল ইউসর কা’ব ইবনু আমর আনসারী (রাঃ)। আন্যান্য বন্দীদের সাথে লোকেরা তাকেও সারারাত শক্তভাবে বেঁধে রাখেন। আদর্শগত বিরোধ থাকার কারণে চাচার প্রতি কোন অনুকম্পা দেখাতে না পারলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারারাত ঘুমাতে পারলেন না। লোকেরা তা বুঝতে পেরে তার বাঁধন খুলে দিলেন এবং মুক্তিপণ মাফ করে দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর প্রতি বিশেষ সম্মান দেখাতে চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী তাদের এ প্রস্তাব মেনে নিতে পারলেন না। তিনি বললেন, একটি দিরহামও মাফ করা যাবে না। অন্যদের থেকে যা নেয়া হবে তার থেকেও তদ্রূপই নেয়া হবে। মদিনাবাসী আনসারগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর চাচা আব্বাসকে ভাগিনা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, আব্বাসের দাদা হাশিম বনী নাজ্জার গোত্রের আমর ইবনু উহায়হার কন্যা সালমাকে বিয়ে করেছিলেন। এ বিয়ের পিছনে মূল কারণ হল এই যে, ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া যাওয়ার পথে তিনি মদিনাতে খাযরাজ গোত্রের বনী নাজ্জার শাখার আমর ইবনু উহায়হার বাড়ীতে অবস্থান করতেন। আমরের কন্যা সালমাকে দেখে তার পছন্দ হবার পর বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমর সালমাকে তার নিকট বিয়ে দেন।

(৩৭২৭) আবূ আসিম ও ইসহাক (রহঃ) বনী যুহরা গোত্রের হালীফ(মিত্র) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী মিকদাদ ইবনু আমর কিনদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলুন, কোন কাফিরের সাথে আমার যদি (যুদ্ধক্ষেত্রে) সাক্ষাৎ হয় এবং আমি যদি তার সাথে লড়াই করি আর সে যদি তলোয়ারের আঘাতে আমার একখানা হাত কেটে ফেলে এবং তারপর আমার থেকে আত্মরক্ষার জন্য গাছের আড়ালে গিয়ে বলে “আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম গ্রহণ করলাম” এ কথা বলার পরেও কি আমি তাকে হত্যা করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে হত্যা করবে না। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে তো আমার একখানা হাত কেটে এরপর একথা বলছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, না তুমি তাকে হত্যা করবেনা। কেননা তুমি তাকে হত্যা করলে হত্যা করার পূর্বে তোমার যে মর্যাদা ছিল সে সেই মর্যাদা লাভ করবে, আর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পূর্বে তার যে মর্যাদা ছিল তুমি সে স্তরে গিয়ে পৌঁছাবে। ইয়াকুব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বললেন, আবূ জেহেলের কি অবস্থা কেউ দেখে আসতে পার কি? তখন আবদুল্লাহ ইবনু মাসুউদ (রাঃ) তার খোঁজে বের হলেন। এবং আফরার দুই পুত্র তাকে আঘাত করে মুমূর্ষু করে ফেলে রেখেছে দেখতে পেলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি আবূ জেহেল? (উত্তরে আবূ জেহেল বলল) একজন লোককে হত্যা করা ছাড়া তোমরা তো বেশী কিছু করনি? সুলায়মান বলেন, অথবা সে (আবূ জেহেল) বলেছিল এর চেয়ে বেশী কিছু হয়েছে কি যে,)একজন লোককে তার কাওমের লোকেরা হত্যা করেছে? আবূ মিজলায (রাঃ) বলেন, আবূ জেহেল বলেছিল, কৃষক ব্যতীত অন্য কেউ যদি আমাকে হত্যা করত, (তাহলে কতই না ভাল হত)।

(৩৭২৮) ইয়াকুব ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বললেন, আবূ জেহেলের কি অবস্থা কেউ দেখে আসতে পার কি? তখন আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তার খোঁজে বের হলেন। এবং আফরার দুই পুত্র তাকে আঘাত করে মৃত প্রায় করে ফেলে রেখেছে দেখতে পেলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি আবূ জেহেল? (উত্তরে আবূ জেহেল বলল) একজন লোককে হত্যা করা ছাড়া তোমরা তো বেশী কিছু করনি। সুলায়মান বলেন, অথবা সে (আবূ জেহেল) বলেছিল, (এর চেয়ে বেশী কিছু হয়েছে কি যে) একজন লোককে তার কাওমের লোকেরা হত্যা করেছে? আবূ মিজলায (রাঃ) বলেন, আবূ জেহেল বলেছিল, কৃষক ব্যাতিত অন্য কেউ যদি আমাকে হত্যা করত (তাহলে কতই না ভাল হত)।

(৩৭২৯) মূসা (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত (তিনি বলেছেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর যখন ওফাত হল তখন আমি আবূ বকরকে বললাম, আমাদেরকে আনসার ভাইদের নিকট নিয়ে চলুন। পথিমধ্যে আমরা আনসারদের দু’জন নেক ব্যাক্তির সাক্ষাৎ পেলাম। যাঁরা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘উরওয়া ইবনু যুবায়রের নিকট এ হাদিসখানা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, তারা ছিলেন ‘উওয়াম ইবনু সা’ঈদ এবং মা‘ন ইবনু আদী (রাঃ)।

(৩৭৩০) ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের (বাৎসরিক) ভাতা পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার (দিরহাম) করে নির্ধারিত ছিল। উমর (রাঃ) বলেছেন, অবশ্যই আমি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদেরকে পরবর্তী লোকদের চেয়ে অধিক মর্যাদা প্রদান করব।

(৩৭৩১) ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তুর পড়তে শুনেছি। এ ঘটনা থেকেই সর্বপ্রথম আমার হৃদয়ে ঈমান বদ্ধমূল হয়। (অপর এক সনদে) যুহরী (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুত‘ঈমের মাধ্যমে তার পিতা জুবায়র ইবনু মুত‘ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধবন্দীদের সম্পর্কে বলেছেন, মুত‘ঈম ইবনু ‘আদী যদি বেচে থাকতেন১ আর এসব কদর্য লোকদের সম্পর্কে যদি আমার নিকট সুপারিশ করতেন, তাহলে তার খাতিরে এদেরকে আমি (মুক্তিপণ ব্যতীতই) ছেড়ে দিতাম। লায়স ইয়াহ্‌ইয়ার সূত্রে সা‘ঈদ ইবনু মূসা য়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, প্রথম ফিত্‌না২ অর্থাৎ ‘উসমান হত্যাকান্ড সংঘটিত হবার পর বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের আর কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। দ্বিতীয়৩ ফিত্‌না তথা হারবার ঘটনা সংঘটিত হলে পর হুদায়বিয়ার সন্ধিকালিন সময়ে কোন সাহাবীই আর বাকী ছিলেন না। এরপর তৃতীয় ফিত্‌না সংঘটিত হওয়ার পর তা কখনো শেষ হয়নি, যতদিন মানুষের মধ্যে আক্‌ল ও কল্যাণকামিতা বিদ্যমান ছিল। ১ মুত‘ঈম ইবনু আদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীর দাদার চাচাতো ভাই ছিলেন। তিনই তায়েফ থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তনের পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আশ্রয় দিয়ে ছিলেন। মমত্ববোধের কারণেই তিনি তার সম্পর্কে একথা বলেছেন। ২ তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ) ইয়াহূদী সন্তান মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনু সাবা কর্তৃক উসকিয়ে দেয়া মিসরবাসী কপিতয় বিদ্রোহী লোকেরা হাতে উনপঞ্চাশ দিন কিংবা দুই মাস বিশ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ৮ই যিলহাজ্জ জুমু‘আর দিন এ পৃথিবী থেকে চরবিদায় গ্রহণ করেন। ৩ হাররা মদিনার নিকটবর্তী কাল পাথরবিশিষ্ট একটি জায়গার নাম। এখানেই ৬৩ হিজরী সনের যিলহাজ্জ মাসে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর পুত্র ইয়াযীদের শাসন আমলে তারই নির্দেশে তার সেনাবাহিনী মদিনায় ত্রাসের রাজ্ত্ব কায়েম করে এবং ব্যাপক গণহত্যা ও লুটতরাজ আরম্ভ করে। এমনকি তারা মসজিদে নববীকে আস্তাবলে পরিণত করে। ফলে মসজিদে নববীতে কয়েকদিন পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামা‘আত কায়েম করা সম্ভব হয়নি। ৪ এ ফিত্‌নাটি কারো মতে ১৩০ হিজরী সনে মারওয়ান ইবনু মুহাম্মদ ইবনু মারওয়ান ইবনু হাযামের খিলাফতকালে সংঘটিত আবূ হামযা খারিজীর ফিত্‌না। আবার কারো মতে ৭৪ হিজরী সনে হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ কর্তৃক আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে হত্যা করা ও কাবা ঘর ধ্বংস করার ফিত্‌না।

(৩৭৩২) হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মূসা য়্যিব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস ও ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিণী আয়িশার (প্রতি আরোপিত) অপবাদের ঘটনা সম্পর্কে শুনেছি। তারা সকলেই হাদীসটির একটি অংশ আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন। আমি এবং উম্মে মিসতাহ্‌ (প্রাকৃতিক প্রয়োজনে) বের হলাম। তখন উম্মে মিসতাহ চাঁদরে পেচিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। এতে সে বলল, মিসতাহ এর জন্য ধ্বংস। (আয়িশা (রাঃ) বলেন) তখন আমি বললাম, আপনি ভাল বলেন নি। আপনি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ব্যাক্তিকে মন্দ বলেছেন! এরপর অপবাদ-এর (ইফ্‌ক) ঘটনাটি উল্লেখ করলেন।

(৩৭৩৩) ইব্‌রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত (তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জিহাদ সমূহের বর্ণনা দেয়ার পর) বলেছেন, এ গুলোই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সামরিক অভিযান। এরপর তিনি (বদর যুদ্ধের) ঘটনা বর্ণনা করলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিহত) কুরাইশ কাফিরদের লাশ কূপে নিক্ষেপ করার সময় (সে গুলোকে সম্বোধন করে) বললেন, তোমাদের রব তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন পেয়েছ তো? (বর্ণনাকারী) মূসা নাফির মাধ্যমে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাহাবীদের থেকে কেউ কেউ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি মৃতলোকদের আহবান করছেন! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কথা গূলো তোমরা তাদের থেকে অধিক শুনতে পাচ্ছনা। গণিমতের অংশ লাভ করেছিলেন, এ ধরনের যে সব কুরাইশী সাহাবী বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলের তাঁদের সংখ্যা হল একাশি। ‘উরওয়া ইবনু যুবায়র বললেন, যে যুবায়র (রাঃ) বলেছেন, (বদর যুদ্ধে অংশ গ্রনণকারী) কুরাইশী সাহাবীদের গণীমতের মালের অংশগুলো বন্টন করা হয়েছিল। তাদের সংখ্যা ছিল সর্বমোট একশ’ আল্লাহই ভাল জানেন)

(৩৭৩৪) ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, বদরের দিন মুহাজিরদের জন্য (গণীমতের মালের) একশ’ হিস্‌সা দেয়া হয়েছিল।

(৩৭৩৫) ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধ আরম্ভ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ নাযীর গোত্রকে দেশান্তরিত করে দেন এবং বনু কুরায়যা গোত্রের প্রতি কৃপা প্রদর্শন করে তাদেরকে (তাদের ঘর বাড়ীতেই) থাকতে দেন। কিন্তু (পরবর্তীকালে) বনূ কুরায়যা গোত্র (মুসলমানদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত হলে কিছু সংখ্যক ব্যাক্তি যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর দল ভুক্ত হবার পর তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন তারা মুসলমান হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করে দেয়া হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার সকল ইয়াহূদীকে দেশান্তরিত করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালামের গোত্র বনু কায়নুকা ও বনু হারিসাসহ অন্যান্য ইয়াহূদী সম্প্রদায়কেও তিনি দেশান্তরিত করেন।

(৩৭৩৬) হাসান ইবনু মুদরিক (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাসের নিকট সূরা হাশরকে সূরা হাশর বলে উল্লেখ করলে, তিনি আমাকে বললেন, বরং তুমি বলবে “সূরা নাযীর”। আবূ বিশ্‌র থেকে হুশাইমও এ বর্ণনায় তার (আবূ আওয়ানা) অনুসরণ করেছেন।

(৩৭৩৭) আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আনসারগণ কিছু কিছু খেজুর গাছ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন। অবশেষে বনু কুরায়যা ও বনু নাযীর বিজিত হওয়ার পর তিনি ঐ খেজুর গাছগুলো তাদেরকে ফিরত দিয়ে দেন।

(৩৭৩৮) আদম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুওয়াইরা নামক স্থানে বনু নাযীর গোত্রের যে খেজুর গাছ ছিল তা কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু কেটে ফেলেছিলেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ তোমরা যে খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলেছ অথবা যেগুলো কান্ডের উপর স্থির রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে (হাশর ৫৯: ৫)।

(৩৭৩৯) ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু নাযীর গোত্রের খেজুর গাছগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, এ সম্বন্ধেই হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেছেনঃ “বনূ লুওয়াই গোত্রের নেতাদের (কুরাইশদের) জন্য সহজ হয়ে গিয়েছে বুওয়াইবা নামক স্থানের সর্বত্রই অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলিত হওয়া। ” বর্ণনাকারী ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, এর উত্তরে আবূ সুফিয়ান ইবনু হারিস বলেছিল, “আল্লাহ এ কাজেকে স্থায়ী করুণ এবং জ্বালিয়ে রাখুন মদিনার আশে পাশে লেলিহান আগুন, অচিরেই জানোবে আমাদের মাঝে কারা নিরাপদ থাকবে এবং জানোবে দুই নগরির কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ”

(৩৭৪০) আবূল ইয়ামান (রহঃ) মালিক ইবনু আ’ওস ইবনু হাদসান নাসিরী (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, (একদা) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাকে ডাকলেন। এসময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলল, উসমান, আবদুর রাহমান, যুবায়র এবং সা’দ (রাঃ) আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হাঁ তাঁদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পরে এসে বলল, আব্বাস এবং আলী (রাঃ) আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, হাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করলেন। আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে, আমীরুল মু’মিনীন! আমার এবং তাঁর মাঝে (চলমান বিবাদের) মীমাংসা করে দিন। বনূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তাঁর রাসূল) (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে ফাই(বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ) হিসাবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তাঁরা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, (এ দেখে আগত) দলের সকলেই বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! তাদের মাঝে একটি ফয়সালা করে তাদের পারস্পরিক এ বিবাদ থেকে অব্যাহতি দিন। তখন উমর (রাঃ) বললেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান ও যমিন স্থির আছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাইনা। যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গন্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বললেন, উপস্থিত সকলেই বললেন, হাঁ তিনি একথা বলেছেন। উমর (রাঃ) আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে একথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তাঁরা উভয়েই বললেন, হাঁ, এরপর তিনি (উমর) বললেন, এখন আমি আপনাদেরকে(উত্থাপিত) বিষয়টির প্রকৃত অবস্থা খুলে বলছি। ফায়(বিনা যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ) এর কিছু অংশ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল) -এর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি আর অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট হতে তাঁর রাসূল) কে যে ফায় দিয়েছেন, তাঁর জন্য তোমরা অশ্বে কিংবা উষ্ট্রে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ তো তাঁর রাসূল) কে যার উপর ইচ্ছা তার উপর কতৃত্ব দান করেন। ; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (৬ ঃ ৫৯) অতএব এ ফায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর জন্যই খাস ছিল। আল্লাহর কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেন নি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যান নি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বন্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এ থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহর পথে খরচ করে দিতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবদ্দশায় এ রূপই করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, এখন থেকে আমই হলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর ওলী। এরপর আবূ বকর (রাঃ) তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আজ আপনারা যা বলেছেন এ বিষয়ে আপনারা আবূ বকরের সাথেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহর কসম! তিনি জানেন, এ বিষয়ে আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হকের অনুসারী এক মহান ব্যাক্তিত্ব। এরপর আবূ বকরের ইন্তেকাল হলে আমি বললাম, (আজ থেকে) আমই হলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আবূ বকরের ওলী। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খিলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আবূ বকরের আনুসৃত নীতই আনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও হকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দু’জনই আমার নিকট এসেছেন। আপনাদের কথাও এবং আপনাদের ব্যাপারটিও এক। আর আব্বাস আপনিও এখন এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমরা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ) কাউকে উত্তরাধিকারী করিনা, আমরা যা রেখে যাই তা সদকা হিসাবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্বাবধানে দেওয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে, আপনারা আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং আবূ বকর করেছেন। আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আমার সাথে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান যমীন স্থির আছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারবনা। আপনারা যদি এ দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমই যথেষ্ট। বর্ণনাকারী(যুহরী) বলেন, আমি হাদিসটি উরওয়া ইবনু যুবায়রের নিকট বর্ণনা করার পর তিনি (আমাকে) বললেন, মালিক ইবনু আওস (রাঃ) ঠিকই বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, (বনী নাযীর গোত্রের সম্পদ থেকে) ফায় হিসাবে আল্লাহ তাঁর রাসূল) কে যে সম্পদ দিয়েছেন তার অষ্টমাংশ আনার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সহধর্মিণীগণ উসমানকে আবূ বকরের নিকট পাঠালে (পাঠাতে ইচ্ছা করলে) এই বলে আমি তাদেরকে রাবণ করছিলাম যে, আপনারা কি আল্লাহকে ভয় করেন না? আপনারা কি জানেন না যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতের আমরা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ) কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না, আমরা যা রেখে যাই তা সা’দকা হিসাবেই থেকে যায়। এ দ্বারা তিনি নিজেকে উদ্দেশ্য করেছেন। এ সম্পদ থেকে মুহাম্মদ(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর বংশধরগণ খেতে পারবেন। (তারা এ সম্পদের মালিক হতে পারবেন না।)আমার এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর সহধর্মিণীগণ বিরত হলেন। বর্ণনাকারী (উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) বলেন, অবশিষে সা’দকার এ মাল আলীর তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি আব্বাসকে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং পরিশিষে (এ যমীনের ব্যাপারে) তিনি আব্বাসের উপর জয়ী হল। এরপর তা যথাক্রমে হাসান ইবনু আলী এবং হুসাইন ইবনু আলীর হাতে ছিল। পুনরায় তা আলী ইবনু হুসাইন এবং হাসান ইবনু হাসানের হস্তগত হয়। তাঁরা উভয়ই পর্যায়ক্রমে তার দেখা শোনা করতেন। এরপর তা যায়েদ ইবনু হাসানের তত্ত্বাবধানে যায়। ইহা অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর সদ্‌কা।

(৩৭৪১) ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা এবং আব্বাস (রাঃ) আবূ বকরের কাছে এসে ফাদাক এবং খায়বারের (ভূমির) অংশ দাবী করেন। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি, আমরা (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গন আমাদের সম্পদের) কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাই না। আমরা যা রেখে যাই সা’দকা হিসাবেই রেখে যাই। এ মাল থেকে মুহাম্মদের পরিবার পরিজন ভোগ করবে। আল্লাহর কসম! আমার আত্মীয় স্বজনের সাথে আত্মীয়তা বন্ধনকে সুদৃঢ় করার চেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর আত্মীয়তাই আমার নিকট অধিক প্রিয়।

(৩৭৪২) আলী ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)) বললেন, কা‘ব ইবনু আশরাফের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত আছ কে? কেননা সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) কে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) দাঁড়ালেন, এবং বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি কি চান যে আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হাঁ। তখন মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম (রাঃ) বললেন, তাহলে আমাকে কিছু (কৃত্রিম) কথা বলার অনুমতি দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যা বল। এরপর মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম (রাঃ) কা‘ব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ লোকটি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে সা’দ্‌কা চায়। এবং আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই (বাধ্য হয়ে) আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল, আল্লাহর কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করবে এবং আরো অতিষ্ট করে তুলবে। মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম (রাঃ) বললেন, আমরা তো তাঁকে অনুসরণ করছি। পরিণাম ফল কি দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করা ভাল মনে করছিনা।

এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দুই ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফিয়ান বলেন, আমর (রহঃ) আমার নিকট হাদিসখানা কয়েকবার বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে (স্মরণ করিয়ে) বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক ও দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। তখন তিনি বললেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দুই ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কা‘ব ইবনু আশবাফ বলল, ধারতো পেয়ে যাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম (রাঃ) বললেন, কি জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম (রাঃ) বললেন, আপনি আরবের অন্যতম সুশ্রী ব্যাক্তি, আপনার নিকট কি করে, আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব আমরা? তখন সে বলল, তাহলে তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কি করে বন্ধক রাখি? (কেননা তা যদি করি তাহলে) তাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দুই ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটাতো আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হল অস্ত্রশস্ত্র।

অবশেষে তিনি (মুহাম্মদ ইবনু মাসলাম) তাকে(কা’ব ইবনু আশরাফকে) পুনরায় যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কা’ব ইবনু আশরাফের দুধ ভাই আবূ নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কা’ব তাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে (উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। এ সময় তার স্ত্রী বলল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, এইতো মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা এবং আমার ভাই আবূ নাইলা এসেছে। (তাদের কাছে যাচ্ছি) আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে কা’বের স্ত্রী বলল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কা’ব ইবনু আশরাফ বলল, মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা এবং দুধ ভাই আবূ নাইলা, (অপরিচিত কোন লোক তো নয়) ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিৎ। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) সঙ্গে আরো দুই ব্যাক্তি নিয়ে (তথায়) গেলেন। সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ‘আমর কি তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফিয়ান বললেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন।

আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দু’জন মানুষ সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে (কা’ব ইবনু আশরাফ) আসবে। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ (মুহাম্মদ ইবনু মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে) বলেছেন যে(তারা হলেন) আবূ আবস ইবনু জাব্‌র হারীস ইবনু আওস এবং আব্বাদ ইবনু বিশ্‌র। আমর বলেছেন, তিনি অপর দুই ব্যাক্তিকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। এবং তাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি (কোন বাহানায়) তার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়িয়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারী দিয়ে তাকে আঘাত করবে। তিনি (মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা) একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। সে(কা’ব) চাঁদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন (মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, কা’ব বলল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ এরপর তিনি মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে (আরেকবার শুঁকাবার জন্য) অনুমতি দেবেন কি? সে বলল, হাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর নিকট এসে এ সংবাদ জানালেন।

(৩৭৪৩) ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) বারা ইবনু আযীব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দশ জনের কম একটি দলকে রাফির উদ্দেশ্যে পাঠালেন (তাদের মধ্যে) আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) রাতের বেলা তার ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে হত্যা করেন।

(৩৭৪৪) ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুল্লাহ‌ ইবনু আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কপিতয় সাহাবীকে ইয়াহূদী আবূ রাফির(হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবূ রাফি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদের সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দুর্গ ছিল। (সে সেখানে বসবাস করত) তারা যখন তার দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ বাড়ীর দিকে) আবদুল্লাহইবনু আতীক) তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সাথে আমি (কিছু) কৌশল প্রদর্শন করব। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলল, হে আবদুল্লাহ‌ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব। আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা লটকিয়ে রাখল। (আবদুল্লাহ‌ ইবনুু্‌ আতীক (রাঃ) বলেন) এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম। আবূ রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো, এ সময় সে তার উপর তলায় কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে, আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এসময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার (আগমন) সম্বন্ধে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন্‌ অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবূ রাফি‘ বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম। আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কিছুই করতে পারলাম না। সে চীৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞেস করলাম, আবূ রাফি’ এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ‘আতীক বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারালো দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক দরজা খুলে নিচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নিচে পা রাখতেই আমি (আঁছাড় খেয়ে) পড়ে গেলাম। অমনই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল। (তাড়াহুড়া করে) আমি আমার মাথার পাগড়ী দ্বারা পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরে উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবূ রাফীর মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ আবূ রাফিকে হত্যা করেছেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা টি লম্বা করে দাও। আমি আমার পা টি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল) যেন তাতে কোন আঘাতই পায়নি।

(৩৭৪৫) আহমদ ইবনু উসমান (রহঃ) বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনু আতীক ও আবদুল্লাহ ইবনু উতবাকে একদল লোকসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে তারা দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছালে আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) তাদেরকে বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি যাই, দেখি কি করে সুযোগ করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) বলেন, দুর্গের ভিতর প্রবেশ করার জন্য আমি কৌশল অবলম্বন করব। ইতিমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল এবং একটি আলো নিয়ে এর সন্ধানে বের হল। তিনি বলেন, আমাকে চিনে ফেলবে আমি এ আশংকা করছিলাম। তাই (কাপড় দিয়ে) আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে রইলাম যেন আমি প্রাকৃতিক আবশ্যক মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য বসেছি। এরপর দ্বার রক্ষী ডাক দিয়ে বলল, কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে এখনই দরজা বন্ধ করার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দুর্গের দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার স্থানে আত্মগোপন করে থাকলাম। আবূ রাফির নিকট সবাই বসে রাতের খানা খেয়ে গল্পগুজব করল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেল। যখন কোলাহল থেকে গেল এবং কোন নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না। তখন আমি বের হলাম। আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাঃ) বলেন, দুর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে রাখা হয়েছিল তা আমি পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে আমি দুর্গের দরজাটি খুললাম। তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কাওমের লোকেরা যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে সহজেই আমি (পেলিয়ে) যেতে পারব। এরপর দুর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলোর দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে আবূ রাফির কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ঘরটি ছিল ভীষণ অন্ধকার। লোকটি কোথায়, কিছুতেই আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবূ রাফি। সে বলল, কে ডাকছ? তিনি বলেন আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে চীৎকার করে উঠল। এ আঘাতে কোন কাজই হয়নি। এরপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফি’ তোমার কি হয়েছে? সে বলল, কি আশ্চার্য ব্যাপার, তার মায়ের সর্বনাশ হোক, এইত এক ব্যাক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে, আবদুল্লাহ‌ ইবনু ‘আতীক বলেন, তাকে লক্ষ্য করে পুনরায় আমি আঘাত করলাম, এবারও কোন কাজ হলনা। সে চীৎকার করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর পুনরায় আমি সাহায্যকারীর ভান করে কন্ঠস্বরে পরিবর্তন করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এসময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল (এ দেখে)আমি তরবারির অগ্রভাগ তার পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ির নিকট এসে পৌঁছলাম। ইচ্ছা ছিল নেমে যাব। কিন্তু (নামতে গিয়ে) আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। এবং এতে আমার পা খানা ভেঙ্গে গেল। সাথে সাথে(পাগড়ী দিয়ে) আমি তা বেঁধে ফেললাম। এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর বললাম, তোমরা যাও এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে সুসংবাদ দাও। আমি তার মৃত্যুসংবাদ না শুনে আসব না। ঊষালগ্নে মৃত্যু ঘোষণাকারী (প্রাচীরে) উঠে বলল, আমি আবূ রাফীর মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করছি। আবদুল্লাহ‌ ইবনু আতীক (রাঃ) বলেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম। এ সময় আমার (পায়ে) কোন ব্যাথাই ছিল না। আমার সাথীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর নিকট পৌঁছার আগেই আমি তাদের ধরে ফেললাম এবং (গিয়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে তার (আবূ রাফির) মৃত্যুর সংবাদ জানালাম।

৩৭৪৬ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন বলেছেন, এই তো জিবরাঈল, তাঁর ঘোড়ার মাথায় হাত রেখে (লাগাম হাতে) এসে পৌঁছেছেন; তাঁর পরিধানে রয়েছে সমরাস্ত্র।

৩৭৪৭ মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রহীম (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আট বছর পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য (কবরস্থানে গিয়ে) এমনভাবে দোয়া করলেন যেমন কোনো বিদায় গ্রহনকারী জীবিত ও মৃতদের জন্য দোয়া করেন। তারপর তিনি (সেখান থেকে ফিরে এসে) মিম্বরে উঠে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রে প্রেরিত এবং আমই তোমাদের সাক্ষীদাতা। এরপর হাউযে কাওসারের পাড়ে তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে। আমার এ জায়গা থেকেই আমি হাউযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। তোমরা শির্‌কে লিপ্ত হয়ে যাবে আমি এ আশংকা করি না। তবে আমার আশংকা হয় যে, তোমরা দুনিয়ার আরাম-আয়েশে অত্যধিক আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এ দেখাই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে শেষবারের মত দেখা।

৩৭৪৮ উবায়দুল্লাহ্‌ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঐ দিন (উহুদ যুদ্ধের দিন) আমরা মুশরিকদের মুকাবিলায় অবতীর্ণ হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ‌ ইবনু জুবাইর) (রাঃ)-কে তীরন্দাজ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে তাদেরকে (নির্ধারিত এক স্থানে) মোতায়েন করলেন এবং বললেন, যদি তোমরা আমাদেরকে দেখ যে, আমরা তাদের উপর বিজয় লাভ করেছি, তাহলেও তোমরা এখান থেকে সরবে না। অথবা যদি তোমরা তাদেরকে দেখ যে, তারা আমাদের উপর জয় লাভ করেছে, তাহলেও তোমরা এই স্থান পরিত্যাগ করে আমাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসবে না। এরপর আমরা তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলে তারা পালাতে আরম্ভ করল। এমনকি আমরা দেখতে পেলাম যে, মহিলাগণ দ্রুত দৌড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। তারা বস্ত্র পায়ের গোছা থেকে টেনে তুলছে, ফলে পায়ের অলংকারগুলো পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ছে। এ সময় তারা (তীরন্দাজ বাহিনীর লোকরা) বলতে লাগলেন, এই গনীমত-গনীমত! তখন আবদুল্লাহ‌ [ইবনু জুবাইর (রাঃ)] বললেন, তোমরা যেওন এ স্থান না ছাড় এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল। যখন তারা এ কথা অগ্রাহ্য করল, তখন তাদের রোখ ফিরিয়ে দেয়া হল এবং শহীদ হলেন তাদের সত্তর জন সাহাবী। আবূ সুফিয়ান একটি উঁচু স্থানে উঠে বলল, কাওমের মধ্যে মুহাম্মদ জীবিত আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন উত্তর দিওনা। সে আবার বলল, কাওমের মধ্যে ইবনু আবূ কুহাফা (আবূ বকর) বেঁচে আছে কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার কোন জবাব দিও না। সে পুনরায় বলল, কওমের মধ্যে ইবনুল খাত্তাব কি জীবিত আছে? তারপর সে বলল, এরা সকলেই নিহত হয়েছে। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জবাব দিত। এ সময় উমর (রাঃ) নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, হে আল্লাহর দুশমন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। যে জিনিসে তোমাকে লাঞ্ছিত করবে আল্লাহ তা বাকি রেখেছেন। আবূ সুফিয়ান বলল, হুবালের জয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা তার উত্তর দাও। তারা বললেন, আমরা কি বলব? তিনি বললেন, তোমরা বল- ‘আল্লাহ সুমন্নত ও মহান’। আবূ সুফিয়ান বলল আমাদের উয্‌যা আছে আছে, তোমাদের উয্‌যা নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার জবাব দাও। তারা বললেন, আমরা কি জবাব দেব? তিনি বললেন, বল- ‘আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, তোমাদের তো কোনো অভিভাবক নেই’। পরিশেষে আবূ সুফিয়ান বলল, আজকের দিন বদর যুদ্ধের বিনিময়ের দিন, যুদ্ধ কূপ থেকে পানি উঠানোর পাত্রের মত (অর্থাৎ একবার এক হাতে আরেকবার অন্য হাতে) (যুদ্ধের ময়দানে) তোমরা নাক-কান কাটা কিছু লাশ দেখতে পাবে। আমি এরূপ করতে আদেশ করিনি। অবশ্য আমি এতে অসন্তুষ্টও নই। আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলা শরাব পান করেছিলেন। ১ এরপর তাঁরা শাহাদাত বরণ করেন। ১/ তখন পর্যন্ত শরাব পান করা হারাম ঘোষিত হয়নি

৩৭৪৯ আবদান (রহঃ) সা’দ ইবনু ইব্‌রাহীমের পিতা ইব্‌রাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ)- এর নিকট কিছু খাবার আনা হল। তিনি তখন রোযা ছিলেন। তিনি বললেন, মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) ছিলেন আমার থেকেও উত্তম ব্যাক্তি। তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। তাঁকে এমন একটি চাঁদরে কাফন দেয়া হয়েছিল যে, তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত, আর পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, হামযা (রাঃ) আমার চেয়েও উত্তম লোক ছিলেন। তিনি শাহাদাত বরণ করেছেন। এরপর দুনিয়াতে আমাদেরকে যথেষ্ট সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া হয়েছে অথবা বলেছেন পর্যাপ্ত পরিমাণে দুনিয়ার ধন-সম্পদ দেওয়া হয়েছে। আমার আশংকা হচ্ছে, হয়তো আমাদের নেকীর বদলা এখানেই (দুনিয়াতে) দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি আহার্য পরিত্যাগ করলেন।

৩৭৫০ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, আপনি কি মনে করেন, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় অবস্থান করব? তিনি বললেন, জান্নাতে। তারপর উক্ত ব্যাক্তি হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেললেন, এরপর তিনি একাই লড়াই করলেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন।

৩৭৫১ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে (মদিনায়) হিজরত করেছিলাম। ফলে আল্লাহর কাছে আমাদের পুরস্কার সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের কতক দুনিয়াতে পুরস্কার ভোগ না করেই অতীত হয়ে গিয়েছেন অথবা চলে গিয়েছেন। মাসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) তাদের মধ্যে একজন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। তিনি একটি ধারাদার পশমী বস্ত্র ব্যতীত আর কিছুই রেখে যাননি। এ দিয়ে আমরা তার মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন। ইয্‌খির দ্বারা তার পা আবৃত কর। আমাদের কতক এমনও আছেন, যাদের ফল পেকেছে এবং তিনি এখন তা সংগ্রহ করছেন।

৩৭৫২ হাস্সান ইবনু হাস্সান (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন), তাঁর চাচা [আনাস ইবনু নযর (রাঃ)] বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি [আনাস ইবনু নযর (রাঃ)] বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সর্বপ্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কোনো যুদ্ধে শরীক করেন তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখবেন, আমি কত প্রাণপণ চেষ্টা করে লড়াই করি। এরপর তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হওয়ার পর লোকেরা পরাজিত হলে (পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে আরম্ভ করলো) তিনি বললেন। আমি এর জন্য আপনার নিকট ওযরখাহী পেশ করেছি এবং মুশরিকগণ যা করল তা থেকে আমি আমার সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি। এরপর তিনি তলোয়ার নিয়ে অগ্রসর হলেন। এ সময় সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ হে সা’দ? আমি উহুদের অপর প্রান্ত হতে জান্নাতের সুঘ্রান পাচ্ছি। এরপর তিনি (বীর বিক্রমে) যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করলেন। তাঁকে চেনা যাচ্ছিল না। অবশেষে তাঁর বোন তাঁর শরীরের একটি তিল অথবা অঙ্গুলীর মাথা দেখে তাঁকে চিনলেন। তাঁর শরীরে আশিটিরও বেশি বর্শা, তরবারি ও তীরের আঘাত ছিল।

৩৭৫৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা কুরআন মজীদকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার সময় সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি হারিয়ে ফেলি, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পাঠ করতে শুনতাম। তাই আমরা উক্ত আয়াতটি অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে তা পেলাম খুযায়মা ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর কাছে। আয়াতটি হলঃ “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত অংগীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ রয়েছে প্রতীক্ষায়। (৩৩:২৩) এরপর এ আয়াতটিকে আমরা কুরআন মাজীদের ঐ সূরাতে (আহযাবে) সংযুক্ত করে নিলাম।

৩৭৫৪ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের উদ্দেশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলে যারা তাঁর সংগে বের হয়েছিল, তাদের কিছুসংখ্যক লোক ফিরে এলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ তাদের সম্পর্কে দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। একদল বললেন, আমরা তাদের সাথে লড়াই করব। অপরদল বললেন, আমরা তাদের সাথে লড়াই করব না। এ সময় নাযিল হয় (নিম্নবর্ণিত আয়াতখানা) “তোমাদের কী হল যে, তোমরা মুনাফিকদের সম্বন্ধে দু’দল হয়ে গেলে, যখন তাদের কৃতকর্মের দরুন আল্লাহ তাদেরকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। (৪:৮৮) এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ (মদিনা) পবিত্র স্থান। আগুন যেমন রূপার ময়লা দূর করে দেয়, এমনিভাবে মদিনাও গুনাহ্‌কে দূর করে দেয়।

৩৭৫৫ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তোমাদের মধ্যে দু’দলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল” আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে তথা বনূ সালিমা এবং বনূ হারিসা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আয়াতটি নাযিল না হোক এ কথা আমি চাইনি। কেননা এ আয়াতেই আল্লাহ্ বলেছেন, আল্লাহ্ উভয় দলেরই সহায়ক।

৩৭৫৬ কুতায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জাবির! তুমি বিয়ে করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কেমন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না (কুমারী নয়) বরং অকুমারী। তিনি বললেন, কোনো কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার আব্বা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। এবং রেখে গেছেন নয়টি মেয়ে। এখন আমার নয় বোন। এ কারণে আমি তাদের সাথে তাদেরই মত একজন অনভিজ্ঞ মেয়েকে এনে একত্রিত করা পছন্দ করলাম না। বরং এমন একটি মহিলাকে (বিয়ে করা পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়িয়ে দিতে পারবে এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। (এ কথা শুনে) তিনি বলেছেন, ঠিক করেছ।

৩৭৫৭ আহমাদ ইবনু আবূ সুরাইজ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উহুদ যুদ্ধের দিন তার পিতা ছয়টি মেয়ে ও কিছু ঋণ তার উপর রেখে শাহাদাত বরণ করেন। এরপর যখন খেজুর কাটার সময় এল তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললাম, আপনি জানেন যে, আমার পিতা উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রেখে গেছেন। এখন আমি চাই, ঋণদাতাগণ আপনাকে দেখুক। তখন তিনি বললেন, তুমি যাও এবং বাগানের এক কোণে সব খেজুর কেটে জমা কর। [জাবির (রাঃ) বলেন] আমি তাই করলাম। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ডেকে আনলাম। যখন তারা (ঋণদাতাগণ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলেন, সে মুহূর্তে যেন তারা আমার উপর আরো ক্ষেপে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আচরণ দেখে বাগানের বড় গোলাটির চতুষ্পার্শে তিনবার চক্কর দিয়ে এর উপর বসে বললেন, তোমার ঋণদাতাদের ডাক। (তারা এলে) তিনি তাদেরকে মেপে মেপে দিতে লাগলেন। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা আমার পিতার আমানত আদায় করে দিলেন। আমিও চাচ্ছিলাম যে, একটি খেজুর নিয়ে আমি আমার বোনদের নিকট না যেতে পারলেও আল্লাহ তা’আলা যেন আমার পিতার আমানত আদায় করে দেন। অবশ্য আল্লাহ তা’আলা খেজুরের সবকটি গোলাই অবশিষ্ট রাখলেন। এমনকি আমি দেখলাম যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে গোলার উপর বসা ছিলেন তার থেকে যেন একটি খেজুরও কমেনি।

৩৭৫৮ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আমি আরো দুই ব্যাক্তিকে দেখলাম, যারা সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ হয়ে তুমুল লড়াই করেছে। আমি তাদেরকে পূর্বেও কোনোদিন দেখিনি এবং কোনোদিন দেখিনি।

৩৭৫৯ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তাঁর তীরদানী থেকে তীর খুলে দিয়ে বললেন, তোমার জন্য আমার মাতা- পিতা কুরবান হোক; তুমি তীর নিক্ষেপ করতে থাক।

৩৭৬০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উদ্দেশ্যে তাঁর পিতা-মাতাকে এক সাথে উল্লেখ করেছেন।

৩৭৬১ কুতায়বা (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আমার জন্য তাঁর পিতা-মাতা উভয়কে একসাথে উল্লেখ করেছেন। এ কথা বলে তিনি বোঝাতে চান যে, তিনি লড়াই করেছিলেন এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, তোমার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক।

৩৭৬২ আবূ নুআয়ম (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ (রাঃ) ব্যতীত অন্য কারো জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে তাঁর পিতা-মাতা (কুরবান হোক) এক সাথে উল্লেখ করতে আমি শুনিনি।

৩৭৬৩ ইয়াসারা ইবনু সাফওয়ান (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) ব্যতীত অন্য কারো জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর পিতা-মাতা (কুরবান হোক)’র কথা উল্লেখ করতে আমি শুনিনি। উহুদ যুদ্ধের দিন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, হে সা’দ, তুমি তীর নিক্ষেপ কর, আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক।

৩৭৬৪ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে দিনগুলোতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করেছেন তার কোনো এক সময়ে তালহা এবং সা’দ (রাঃ) ব্যতীত (অন্য কেউ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলেন না। হাদীসটি আবূ উসমাস (রাঃ) তাদেরকে উভয়ের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন।

৩৭৬৫ আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) সায়েব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ, তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্‌, মিকদাদ এবং সা’দ (রাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছি। তাদের কাউকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি, তবে কেবল তালহা (রাঃ)-কে উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি।

৩৭৬৬ আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) কায়িস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তালহা (রাঃ)-এর হাত অবশ (অবস্থায়) দেখেছি। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি এ হাত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করেছিলেন।

৩৭৬৭ আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ছেড়ে যেতে আরম্ভ করলেও আবূ তালহা (রাঃ) ঢাল হাতে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখলেন। আবূ তালহা (রাঃ) ছিলেন সুদক্ষ তীরন্দাজ, ধনুক খুব জোরে টেনে তিনি তীর ছুঁড়তেন। সেদিন (উহুদ যুদ্ধে) তিনি দু’টি অথবা তিনটি ধনুক ভেঙ্গেছিলেন। সেদিন যে কেউ ভরা তীরদানী ণীয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তাকেই তিনি বলেছেন, তীরগুলো খুলে আবূ তালহার সামনে দেখে দাও। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে যখনই শত্রুদের প্রতি তাকাতেন, তখনই আবূ তালহা (রাঃ) বলতেন, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হঠাৎ তাদের নিক্ষিপ্ত তীর আপনার শরীরে লেগে যেতে পারে। আপনার বক্ষ রক্ষা করার জন্য আমার বক্ষই রয়েছে (অর্থাৎ আপনার জন্য আমার জীবন কুরবান)। [আনাস (রাঃ) বলেন] সেদিন আমি আয়িশা বিনত আবূ বকর এবং উম্মে সুলায়ম (রাঃ)-কে দেখেছি, তাঁরা উভয়েই পায়ের কাপড় গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আমি তাঁদের পায়ের তলা দেখতে পেয়েছি। তারা মশক ভরে পিঠে বহন করে পানি আনতেন এবং (আহত) লোকদের মুখে ঢেলে দিতেন। আবার চলে যেতেন এবং মশক ভরে পানি এনে লোকেদের মুখে ঢেলে দিতেন। সেদিন আবূ তালহা (রাঃ)-এর হাত দু’বার অথবা তিনবার তরবারিটি পড়ে গিয়েছিল।

৩৭৬৮ উবায়দুল্লাহ্ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে মুশরিকরা পরাজিত হয়ে গেলে অভিশপ্ত ইবলীস চীৎকার করে বলল, হে আল্লাহর বান্দ্বারা, তোমাদের পেছন দিক থেকে আরেকটি দল আসছে। এ কথা শুনে তারা পেছনের দিকে ফিরে গেল। তখন অগ্রভাগ ও পশ্চাঁদভাগের মধ্যে পরস্পর সংঘর্ষ হল। এ পরিস্থিতিতে হুযায়ফা (রাঃ) দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর পিতা ইয়ামন (রাঃ)-এর সাথে লড়াই করছেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, (ইনি তো) আমার পিতা, আমার পিতা (তাকে আক্রমণ করবেন না)। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর কসম, এতে তাঁরা বিরত হলেন না। বরং তাঁকে হত্যা করে ফেললেন। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ আপনাদেরকে ক্ষমা করে দিন। উরওয়া (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আল্লাহর সাথে মিলনের (মৃত্যুর) পূর্ব পর্যন্ত হুযায়ফা (রাঃ)-এর মনে এ ঘটনার অনুতাপ বাকি ছিল।

৩৭৬৯ আবদান (রহঃ) উসমান ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জ (হজ্জ) পালনের উদ্দেশ্য এক ব্যাক্তি বায়তুল্লায় এসে সেখানে একদল লোককে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এসব লোক কারা? তারা বললেন, এরা হচ্ছেন কুরাইশ গোত্রের লোক। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এ বৃদ্ধ লোকটি কে? উপস্থিত সকলেই বললেন, ইনি হচ্ছেন (আবদুল্লাহ‌) ইবনু উমর (রাঃ)। তখন লোকটি তাঁর ইবনু উমর) কাছে গিয়ে বললেন, আমি আপনাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করব, আপনি আমাকে বলে দেবেন কি? এরপর লোকটি বললেন, আমি আপনাকে এই ঘরের মর্যাদার কসম দিয়ে বলছি, উহুদ যুদ্ধের দিন উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) পেলিয়েছিলেন, এ কথা আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বললেন, তিনি বদরের রণাংগনে অনুপস্থিত ছিলেন, যুদ্ধে অংশগ্রহন করেননি- এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি পুনরায় বললেন, তিনি বায়আতে রিদওয়ানেও অনুপস্থিত ছিলেন- এ কথাও কি আপনি জানেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি তখন আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করল। তখন ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, এসো, এখন আমি তোমাকে সব ব্যপারে অবহিত করছি এবং তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুলে বলছি। (১) উহুদের রনাঙ্গন থেকে তাঁর পেলানোর ব্যাপার সম্বন্ধে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। (২) বদর যুদ্ধে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা (রুকাইয়া) তাঁর স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন অসুস্থ। তাই তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মত তুমি সওয়াব লাভ করবে এবং গনীমতের অংশ পাবে। (৩) বাইআতে রিদওয়ান থেকে তাঁর অনুপস্থিত থাকার কারণ হল এই যে, মক্কাবাসীদের নিকট উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) থেকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যাক্তি থাকলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মক্কা পাঠাতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জন্য উসমান (রাঃ)-কে (মক্কা) পাঠালেন। তাঁর মক্কা গমনের পরই বায়আতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়েছিল। তাই (বায়আত গ্রহণের সময়) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতখানা অপর হাতের উপর রেখে বলেছিলেন, এটাই উসমানের হাত। এরপর তিনি (আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর) বললেন, এই হল উসমান (রাঃ)-এর অনুপস্থিতির মূল কারণ। এখন তুমি যাও এবং এই কথাগুলো মনে গেঁথে রেখো।

৩৭৭০ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ‌ ইবনু জুবায়র (রাঃ)- কে পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তারা পরাজিত হয়ে (মদিনার দিকে) ছুটে গিয়েছিলেন। এটাই হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তাদেরকে পেছনের দিক থেকে ডাকা।

৩৭৭১ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবদুল্লাহ‌ সুলামী (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষ রাকাতে রুকূ থেকে মাথা উত্তোলন করে “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদা ও রাব্বানা লাকাল হা’মদ” বলার পর বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ আপনি অমুক, অমুক এবং অমুকের উপর লানত বর্ষণ করুন, তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদেরকে শাস্তি দেবেন, এ বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা যালিম। হানজালা (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া, সুহাইল ইবনু আমর এবং হারিস ইবনু হিশামের জন্য বদদোয়া করতেন। এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হয়েছে উপরোক্ত আয়াতখানা।

৩৭৭২ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) সা’লাবা ইবনু আবূ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কতকগুলো চাঁদর মদিনাবাসী মহিলাদের মধ্যে বন্টন করলেন। পরে একটি সুন্দর চাঁদর অবশিষ্ট রয়ে গেল। তার নিকট উপস্থিত লোকদের একজন বলে উঠলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, এ চাঁদরখানা আপনার স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নাতনী আলী (রাঃ)-এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ)-কে দিয়ে দিন। উমর (রাঃ) বললেন, উম্মে সালীত (রাঃ) তার চেয়েও অধিক হকদার। উম্মে সালীত (রাঃ) আনসারী মহিলা। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। উমর (রাঃ) বললেন, উহুদের দিন এ মহিলা আমাদের জন্য মশক ভরে পানি এনেছিলেন।

৩৭৭৩ আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) জাফর ইবনু আমর ইবনু উমাইয়া যামরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবায়দুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ)-এর সাথে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা যখন হিম্‌স নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) আমাকে বললেন, ওয়াহ্‌শীর কাছে যেতে তোমার ইচ্ছা আছে কি? আমরা তাকে হামযা (রাঃ)-এর শাহাদাত বরণ করার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করব। আমি বললাম, হ্যাঁ যাব। ওয়াহ্‌শী তখন হিম্‌স শহরে বসবাস করতেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকদেরকে) জিজ্ঞেস করলাম। আমাদের কে বলা হল ঐ তো তিনি তার প্রাসা’দর ছায়ার মধ্যে পশমহীন মশকের মত স্থির হয়ে বসে আছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে অল্প কিছু দূরে গিয়ে থামলাম এবং তাকে সালাম দিলাম। তিনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন। , জাফর (রহঃ) বর্ণনা করেন, তখন উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) তার মাথা পাগড়ি দ্বারা এমনভাবে আবৃত করে রেখেছিলেন যে, ওয়াহ্‌শী তার দুই চোখ এবং দুই পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) ওয়াহ্‌শীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ওয়াহ্‌শী আপনি আমাকে চিনেন কি? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তখন তার দিকে তাকালেন এবং এরপর বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে আমি এটুকু জানি যে, আদী ইবনু খিয়ার উম্মে কিতাল বিন্‌ত আবূল ঈস নামক এক মহিলা কে বিয়ে করেছিলেন। মক্কায় তার একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আই তার দাই খোঁজ করেছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সাথে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে দিনের সে বাচ্চার পা দু’টির মত যেন আপনার পা দু’টি দেখতে পাচ্ছি। বর্ণনাকারী বললেন, তখন উবায়দুল্লাহ্‌ তার মুখের পর্দা সরিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হামযা (রাঃ)-এর শাহাদাত সম্পর্কে আমাদেরকে খবর দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বদর যুদ্ধে হামযা (রাঃ) তুআইমা ইবনু ‘আদী ইবনু খিযারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব জুবায়র ইবনু মুতঈম আমাকে বললেন, তুমি যদি আমার চাচার প্রতিশোধস্বরুপ হামযা-কে হত্যা করতে পার তাহলে তুমি আযাদ। রাবী বলেন, যে বছর উহুদ পাহাড় সংলগ্ন আইনাইন পাহাড়ের উপত্যকায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সকলের সাথে রওয়ানা হয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলেই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে (কাফির সৈন্যদলের মধ্য থেকে) সিবা নামক এক ব্যাক্তি ময়দানে এসে বলল, দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য কেউ কি প্রস্তুত আছ? ওয়াহ্‌শী বলেন, হামযা ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) (বীর বিক্রমে) তার সামনে গিয়ে বললেন, হে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মে আনমারের পুত্র সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর সাথে দুশমনী করছ? বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করলেন, যার ফলে সে অতীত দিনের মত বিলীন হয়ে গেল। ওয়াহ্‌শী বলেন, আমি হামযা (রাঃ)-কে কতল করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নিচে আত্মগোপন করে ওঁত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন তখন আমি আমার অস্ত্র দ্বারা এমন জোরে আঘাত করলাম যে তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহ্‌শী বলেন, এইটাই হল তাঁর শাহাদাতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সাথে ফিরে এসে মক্কায় অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর মক্কায় ইসলাম প্রসার লাভ করলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসিগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন না। তাই আমি তাদের সাথে রওয়ানা হলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমি কি ওয়াহ্‌শী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমই কি হামযাকে হত্যা করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? ওয়াহ্‌শী বলেন, আমি তখন চলে আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পর মূসা য়লামাতুল কায্‌যাব (নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার) আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মূসা য়লামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযা (রাঃ)-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহ্‌শী বলেন, তাই আমি লোকদের সাথে রওয়ানা করলাম। তার অবস্থা যা হওয়ার তাই হল। তিনি বর্ণনা করেন যে, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের ন্যায় উষ্কখুষ্ক চুলবিশিষ্ট এক ব্যাক্তি একটি ভাঙ্গা প্রাচীরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সাথে সাথে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম। এবং তার বক্ষের উপর বসিয়ে দিলাম যে, তা দু কাঁধের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এরপর আনসারী এক সাহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তরবারী দ্বারা তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন। আবদুল্লাহ‌ ইবনু ফজল (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, সুলায়মান ইবনু ইয়াসির (রহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, (মূসা য়লামা নিহত হলে) ঘরের ছাদে উঠে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়! আমিরুল মু’মিনীন (মূসা য়লামা)-কে একজন কালো ক্রীতদাস হত্যা করল।

৩৭৭৪ ইসহাক ইবনু নাস্‌র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (ভাঙ্গা) দাঁতের প্রতি ইংগিত করে বলেছেন, যে সম্প্রদায় তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র সাথে এরুপ আচরণ করেছেন তাদের প্রতি আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ এবং যে ব্যাক্তিকে আল্লাহর রাসূল আল্লাহর পথে (জিহাদরত অবস্থায়) হত্যা করেছে তার প্রতিও আল্লাহর গযব অত্যন্ত ভয়াবহ।

৩৭৭৫ মাখলাদ ইবনু মালিক (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যাক্তিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পথে হত্যা করেছে, তার জন্য আল্লাহর গযব ভীষণতর। আর যে সম্প্রদায় আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র চেহারাকে রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছে তাদের প্রতি আল্লাহর ভয়াবহ গযব।

৩৭৭৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আহত হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছেন, আল্লাহর কসম, সে সময় যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জখম ধুয়েছিলেন এবং যিনি পানি ঢালছিলেন তাদেরকে আমি খুব ভালোভাবেই চিনি এবং কোন বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল এ সম্পর্কেও আমি অবগত আছি। তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তা ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি এনে ঢালছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন দেখলেন যে, পানির দ্বারা রক্ত পড়া বন্ধ না হয়ে কেবল তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তিনি একখন্ড চাটাই নিয়ে তা জ্বালিয়ে তার ছাই জখমের উপর লাগিয়ে দিলেন। এতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এ ছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডানদিকের একটি দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল। চেহারা জখম হয়েছিল এবং লৌহ শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গিয়ে মাথায় বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

৩৭৭৭ আমর ইবনু আলী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর গযব অত্যন্ত কঠোর ঐ ব্যাক্তির জন্য, যাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হত্যা করেছেন এবং যে ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারাকে রক্তে রঞ্জিত করেছে তার জন্যও আল্লাহর গজব অত্যন্ত ভয়াবহ।

৩৭৭৮ মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উরওয়া (রাঃ) কে সম্বোধন করে বললেন, হে ভাগ্নে জানো? “জখম হওয়ার পর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা সতকার্য করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার। উক্ত আয়াতটিতে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে তোমার পিতা যুবায়র (রাঃ) এবং (তোমার নানা) আবূ বকর (রাঃ)-ও শামিল আছেন। এ অবস্থায় (শত্রুসেনা) মুশরিকগণ চলে গেলে তিনি আশংকা করলেন যে, তারা আবারও ফিরে আসতে পারে। তিনি বললেন, কে আছ যে, তাদের পেছনে ধাওয়া করার জন্য যাবে। এ আহবানে সত্তরজন সাহাবী সাড়া দিয়ে প্রস্তুত হলেন। উরওয়া (রাঃ) বলেন, তাদের মধ্যে আবূ বকর ও যুবায়র (রাঃ)-ও ছিলেন।

৩৭৭৯ আম্‌র ইবনু আলী (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন আরবের কোন জনগোষ্ঠীই আনসারদের তুলনায় অধিক সংখ্যক শহীদ এবং অধিক মর্যাদার হকদার হবে বলে আমরা জানিনা। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাকে বলেছেন, উহুদ যুদ্ধের দিন আনসারদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন, বিরে মাউনার ঘটনায় তাদের সত্তর জন শহীদ হয়েছেন এবং ইয়ামামার যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন সত্তর জন। বর্ণনাকারী বলেন যে, বিরে মাউনার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় এবং ইয়ামাআর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল (মিথ্যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )মূসা য়লামাতুল কায্‌যাবের বিরুদ্ধে আবূ বকর (রাঃ)-এর খিলাফত কালে।

৩৭৮০ কুতায়বা ইব্‌ন সাঈদ (রহঃ) জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দু’জনকে একই কাপড়ে (একই কবরে) দাফন করেছিলেন। কাফনে জড়ানোর পর তিনি জিজ্ঞেস করতেন, এদের মধ্যে কে কুরআন শরীফ সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত? যখন কোনো একজনের প্রতি ইঙ্গিত করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষ্য হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) ও আদায় করা হয়নি এবং তাদেরকে গোসলও  দেওয়া হয়নি। (অন্য এক সনদে) আবূল ওয়ালী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদাত বরণ করার পর (তাঁর শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করেছিলেন। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবদুল্লাহ‌র ফুফুকে বলেছেন) তোমরা এর জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফেরেশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করছে।

৩৭৮১ মুহাম্মদ ইবনু ‘আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি একখানা তরবারি নাড়া দিলাম, অমনি এর মধ্যস্থলে ভেঙ্গে গেল। (আমি বুঝতে পারলাম) এটা উহুদ যুদ্ধে মু’মিনদের উপর আগত বিপদেরই প্রতিচ্ছবি ছিল। এরপর আমি তরবারিটিকে পুনরায় নাড়া দিলাম। এতে তা পূর্বের থেকেও অধিক সুন্দর হয়ে গেল। এর অর্থ হল (পরবর্তীকালে) মু’মিনদের বিজয় লাভ করা এবং তাদের একতাবদ্ধ হওয়া এবং স্বপ্নে আমি একটি গরুও দেখেছিলাম। উহুদ যুদ্ধে মু’মিনদের শাহাদাত বরণ করাই হচ্ছে এর তাবীর। আল্লাহর প্রতিদান অতি উত্তম বা আল্লাহর সকল কাজ কল্যানময়।

৩৭৮২ আহ্‌মদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাঃ)-এর সাথে হিজরত করেছিলাম। এতে আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। অতএব, আল্লাহর কাছে আমাদের প্রতিদান নির্ধারিত হয়ে আছে। আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) কেউ চলে গিয়েছেন। অথচ পার্থিব প্রতিদান থেকে তিনি কিছুই ভোগ করতে পারেননি। মুস’আব ইবনু উমায়র (রাঃ) হলেন তাদের মধ্যে একজন। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি শাহাদাৎ বরণ করেছেন। একখানা মোটা চাঁদর ব্যতীত তিনি আর কিছুই রেখে যাননি। এ দ্বারা আমরা তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’খানা বেরিয়ে যেতো এবং পা দু’খানা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত। (এ দেখে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কে বললেন, এ কাপড় দ্বারা তার মাথা ঢেকে দাও এবং উভয় পা ইয্‌খির (এক প্রকার ঘাস) দ্বারা আবৃত করে দাও। অথবা বললেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ), তাঁর উভয় পায়ের উপর ইয্‌খির দিয়ে দাও। আর আমাদের কেউ কেউ এমনও আছেন, যার ফল উত্তমরুপে পেকেছে, এখন তিনি তা সংগ্রহ করেছেন।

৩৭৮৩ নাস্‌র ইবনু আলী (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-এর নিকট হতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উহুদ পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে) বলেছেন, এ পাহাড় আমাদের কে ভালোবাসে এবং আমরাও একে ভালোবাসি।

৩৭৮৪ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে উহুদ পাহাড় পরিলক্ষিত হলে তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের কে ভালোবাসে এবং আমরা একে ভালোবাসি। হে আল্লাহ! ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে হরম শরীফ ঘোষণা দিয়েছেন এনং আমি দুটি কংকরময় স্থানের মধ্যবর্তী জায়গাকে (মদিনা)১ হরম শরীফ ঘোষনা দিচ্ছি। ১ মদিনা হরম হওয়ার অর্থ হল, এর তাযীম মুসলমান দের জন্য অপরিহার্য। তবে মক্কা শরীফের মত এখানে অন্যায় করার কারণে কোনো ‘জাযা’ বা ‘দম’ দেয়াও ওয়াজিব নয়।

৩৭৮৫ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদিনা থেকে) বের হয়ে (উহুদ প্রান্তরে গিয়ে) উহুদের শহীদগণের জন্য জানাযার সালাত (নামায/নামাজ)-এর মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর মিম্বরের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদের অগ্রগামী ব্যাক্তি এবং আমই তোমাদের সাক্ষ্যদাতা। আমি এই মূহুর্ত্বেই আমার হাউয (কাওসার) দেখতে পাচ্ছি। আমাকে পৃথিবীর ধনভান্ডারের চাবি দেওয়া হয়েছে অথবা বললেন (বর্ণনাকারীর সন্দেহ), আমাকে পৃথিবীর চাবি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার ইন্তেকালের পর তোমরা শির্‌কে লিপ্ত হবে- আমার এ ধরণের কোনো আশংকা নেই। তবে আমি আশংকা করি যে, তোমরা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়বে।

৩৭৮৬ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুশরীকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসিম ইবনু উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নানা আসিম ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল কোথাও প্রেরণ করলেন। যেতে যেতে তারা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছালে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বনী লিহ্‌ইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বনী লিহ্‌ইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌঁছালো, যে স্থানে অবতরণ করে সাহাবীগণ খেজুর খেয়েছিলেন। তারা সেখানে খেজুরের আটি দেখতে পেল যা সাহাবীগণ মদিনা থেকে পাথেয়রুপে এনেছিলেন। তখন তারা বলল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আটি)। এরপর তারা পদচিহ্ন ধরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল এসে তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম (রাঃ) বললেন, আমি কোনো কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছিয়ে দিন। এরপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলের প্রতি আক্রমণ করল এবং তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। এভাবে তারা আসিম (রাঃ)-সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল। এখন শুধু বাকী রইলেন খুবায়ব (রাঃ), যায়েদ (রাঃ) এবং অপর একজন (আবদুল্লাহ‌ ইবনু তারিক) সাহাবী (রাঃ)। পুনরায় তারা তাদের কে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আবদুল্লাহ‌ ইবনু তারিক) (রাঃ) বললেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি তাদের সাথে যেতে অস্বীকার করলেন। তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হলেন না। অবশেষে কাফেররা তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবায়ব ও যায়দ (রাঃ)-কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রয় করে দিল। বনী হারিস ইবনু আমির ইবনু নাওফল গোত্রের লোকেরা খুবায়ব (রাঃ)-কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবায়ব (রাঃ) হারিস কে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিন বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার দৃঢ় পরিকল্পনা করলে তিনি নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলমান হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেঁটে তাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। খুবায়ব (রাঃ) বুঝতে পেরে বললেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইন্‌শা আল্লাহ আমি তা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবায়ব (রাঃ) থেকে উত্তম বন্দী আর কখনো দেখিনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোনো ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য হারাম শরীফের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন, আমাকে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সুযোগ দাও। (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বললেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শংকিত হয়ে পড়ছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে তাহলে আমি (সালাত (নামায/নামাজ)কে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দ’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সুন্নাত প্রবর্তন করেছেন সর্বপ্রথম তিনই। এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখুন। এরপর তিনি দু’টি পঙতি আবৃত্তি করলেন, “যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছি তাই আমার কোনো শংকা নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যেকোনো পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি”। “আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি, তাই তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অংগে বরকত দান করতে পারেন”। এরপর উকবা ইবনু হারিস তাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আসিম (রাঃ)-এর শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম (রাঃ) বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম (রাঃ)-কে রক্ষা করল। ফলে তারা তাঁর দেহ থেকে কোনো অংশ নিতে সক্ষম হল না।

৩৭৮৭ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুবায়ব (রাঃ)-এর হত্যাকারী হল আবূ সিরওআ (উক্‌বা ইবনু হারিস)।

৩৭৮৭ আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক প্রয়োজনে সত্তরজন সাহাবীকে (এক জায়গায়) পাঠালেন, যাদের ক্বারী বলা হত। বনী সুলাইম গোত্রের দু’টি শাখা – রিল ও যাকওয়ান বি’রে মাউনা নামক একটি কূপের নিকট তাদেরকে আক্রমণ করলে তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম। , আমরা তোমাদের সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্য আসিনি। আমরা তো কেবল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নির্দেশিত একটি কাজের জন্য এ পথ দিয়ে যাচ্ছি। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের কে হত্যা করল। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফজর সালাত (নামায/নামাজ) তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। এভাবেই কুনূত পড়া আরম্ভ হয়। (রাবী বলেনঃ এর পূর্বে আমরা) কখনো আর কুনুত (এ নাযিলা) পড়িনি। আবদুল আযীয (রহঃ) বলেন, এক ব্যাক্তি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কুনূত কি রুকূর পর পড়তে হবে না কিরাত শেষ করে পড়তে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, না, কিরাত শেষ করে পড়তে হবে।

৩৭৮৯ মুসলিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত আরবের কয়েকটি গোত্রের প্রতি বদদোয়া করার জন্য সালাত (নামায/নামাজ) রুকূর পর কুনূত পাঠ করেছেন।

৩৭৯০ আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রি’ল যাকওয়ান, উসায়্যা ও বনূ লিহ্‌ইয়ানের লোকেরা শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম —এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে সত্তরজন আনসার সাহাবী পাঠিয়ে তিনি তাদেরকে সাহায্য করলেন। সেকালে আমরা তাদেরকে ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তারা দিনের বেলা লাকড়ি কুড়াতেন এবং রাতের বেলা সালাত (নামায/নামাজ) কাটাতেন। যেতে যেতে তাঁরা বি’রে মাউনার নিকট পৌঁছালে তারা (আমির ইবনু তোফায়েলের আহবানে ঐ গোত্র চতুষ্টয়ের লোকেরা) তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাঁদেরকে শহীদ করে দেয়। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌঁছালে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাক্‌ওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কিত কিছু আয়াত আমরা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। একটি আয়াত ছিল- “আমাদের কওমের লোকদের জানিয়ে দাও। আমোড়া আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন। কাতাদা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁকে বলেছেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুহাম্মদ এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আরবের কতিপয় গোত্র- তথা রি’ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেছেন। [ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ] খলীফা (রহঃ) এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু যুরায় (রহঃ) সাঈদ ও কাতাদা (রহঃ)-এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা ৭০ জন সকলেই ছিলেন আনসার। তাঁদেরকে বি’রে মাউনা নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিল। [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, এখানে “কুরআ’ন” শব্দটি কিতাব বা অনুরুপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

৩৭৯১ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মামা উম্মে সুলায়মানের (আনাসের মা) ভাই [ হারাম ইবনু মিলহান (রাঃ)]-কে সত্তরজন অশ্বারোহীসহ (আমির ইবনু তুফায়েলের নিকট) পাঠালেন। মুশরিকের দলপতি আমির ইবনু তুফায়েল (পূর্বে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তিনটি বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, পল্লী এলাকায় আপনার কর্তৃত্ব থাকবে এবং শহর এলাকায় আমার কর্তৃত্ব থাকবে। অথবা আমি আপনার খলীফা হব বা গাতফান গোত্রের দুই হাজার সৈন্য নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এরপর আমির উম্মে ফুলানের গৃহে মহামারিতে আক্রান্ত হল। সে বলল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোঁড়া হয় আমারও তেমন ফোঁড়া হয়েছে। তোমরা আমার ঘোড়া নিয়ে আস। তারপর (ঘোড়ায় আরোহণ করে) অশ্বপৃষ্ঠেই সে মৃত্যুবরণ করে। উম্মে সুলাইম (রাঃ)-এর ভাই হারাম [ইবনু মিলহান (রাঃ)] এক খোঁড়া ব্যাক্তি ও কোন এক গোত্রের অপর এক ব্যাক্তি সহ সে এলাকার দিকে রওয়ানা করলেন। [হারাম ইবনু মিলহান (রাঃ)] তার দুই সাথীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা নিকটেই অবস্থান কর। আমই তাদের নিকট যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তোমরা এখানেই থাকবে। আর যদি তারা আমাকে শহীদ করে দেয় তাহলে তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথীর কাছে চলে যাবে। এরপর তিনি (তাদের নিকট গিয়ে) বললেন, তোমরা (আমাকে) নিরাপত্তা দিবে কি? দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতাম। তিনি তাদের সাথে এ ধরণের আলাপ-আলোচনা করছিলেন। এমতাবস্থায় তারা এক ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করলে সে পেছন দিক থেকে এসে তাঁকে বর্ষা দ্বারা আঘাত করল। হাম্মাম (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় আমার শায়খ [ইসহাক (রাঃ)] বলেছিলেন যে, বর্শা দ্বারা আঘাত করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। (আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হারাম ইবনু মিলহান (রাঃ) বললেন, আল্লাহু আকবর, কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি। এরপর উক্ত (হারামের সঙ্গী) লোকটি (অপেক্ষমান সাথীদের সাথে) মিলিত হলেন। তারা হারামের সংগীদের উপর আক্রমণ করলে খোঁড়া ব্যাক্তি ব্যতীত সকলেই নিহত হলেন। খোঁড়া লোকটি ছিলেন পাহাড়ের চূড়ায়। এরপর আল্লাহ তা’আলা আমাদের প্রতি (একখানা) আয়াত নাযিল করলেন যা পরে মনসূখ হয়ে যায়। আয়াতটি ছিল এইঃ “ আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন”। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রি’ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ান গোত্রের জন্য বদদোয়া করেছেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর অবাধ্য হয়েছিল।

৩৭৯২ হিব্‌রান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর মামা হারম ইবনু মিলহান (রাঃ)-কে বি’রে মাউনার দিন বর্শা বিদ্ধ করা হলে তিনি এভাবে দু’হাতে রক্ত দিয়ে নিজের চেহারা এবং মাথায় মেখে বললেন, কাবার প্রভুর কসম, আমি সফলকাম হয়েছি।

৩৭৯৩ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কার কাফেরদের) অত্যাচার চরম আকার ধারণ করলে আবূ বকর (রাঃ) মক্কা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে বললেন, (আরো কিছুদিন) অবস্থান কর। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আশা করেন যে, আপনাকে অনুমতি দেওয়া হোক? তিনি বললেন, আমি তো তাই আশা করি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এর জন্য অপেক্ষা করলেন। একদিন যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) এর সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাঁকে [ আবূ বকর (রাঃ)-কে] ডেকে বললেন, তোমার কাছে যারা আছে তাদেরকে সরিয়ে দাও। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, এরা তো আমার দু’মেয়ে (আয়িশা এবং আসমা)। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জানোো আমাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আপনার সাথে যেতে পারবো? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ আমার সাথে যেতে পারবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার কাছে দু’টি উটনী আছে। এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যই এ দু’টিকে আমি প্রস্তুত করে রেখেছি। এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দুটি উটের একটি উট প্রদান করলেন। এ উটটি ছিল কান-নাক কাটা। তাঁরা উভয়ে সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং গারে সাওরে পৌঁছে সেখানে আত্মগোপন করলেন। আয়িশা (রাঃ)-এর বৈমাত্রেয় ভাই আমির ইবনু ফুহায়রা ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু তুফায়ল ইবনু সাখরার গোলাম। আবূ বকর (রাঃ)-এর একটি দুধের গাভী ছিল। তিনি (আমির ইবনু ফুহায়রা) সেটিকে সন্ধ্যাবেলা চরাতে নিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে তাদের (মক্কার কাফেরদের) কাছে নিয়ে যেতেন এবং ভোরবেলা তাঁদের উভয়ের কাছে নিয়ে যেতেন। কোনো রাখালই এ বিষয়টি বুঝতে পারতো না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) গারে সাওর থেকে বের হলে তিনিও তাদের সাথে রওয়ানা হলেন। তাঁরা মদিনা পৌঁছে যান। আমির ইবনু ফুহায়রা পরবর্তীকালে বি’রে মাউনার যুধে শাহাদাত বরণ করেন। (অন্য সনদে) আবূ উসায়মা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) বলেন, আমার পিতা [উরওয়া (রাঃ)] আমাকে বলেছেন, রি’রে মাউনার যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারীগণ শহীদ হলে আমর ইবনু উমাইয়া যামরী বন্ধী হলেন। তাঁকে আমির ইবনু ফুহায়রার লাশ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এ ব্যাক্তি কে? আমর ইবনু উমাইয়া বললেন, ইনি হচ্ছেন আমির ইবনু ফুহায়রা। তখন সে (আমির ইবনু তুফায়ল) বলল, আমি দেখলাম, নিহত হওয়ার পর তার লাশ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি আমি তার লাশ আসমান যমীনের মাঝে দেখেছি। এরপর তা রেখে দেয়া হল (যমিনের উপর)। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌঁছলে তিনি সাহাবীগণকে তাদের শাহাদাতের সংবাদ জানিয়ে বললেন, তোমাদের সাথীদের হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট এবং আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট- এ সংবাদ আমাদের ভাইদের কাছে পৌঁছে দিন। তাই মহান আল্লাহ তাঁদের এ সংবাদ মুসলমানদের কাছে পৌঁছিয়ে দিলেন। ঐ দিনের নিহতদের মধ্যে উরওয়া ইবনু আসমা ইবনু সাল্লাত (রাঃ)-ও ছিলেন। তাই এ নামেই উরওয়া ইবনু যুবায়েরের)-এর নামকরণ করা হয়েছে। আর মুনযির ইবনু আমত (রাঃ) ও এ দিন শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাই এ নামেই মুনযির-এর নামকরণ করা হয়েছে।

৩৭৯৪ মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) রুকূর পরে কুনূত পাঠ করেছেন। এতে তিনি রি’ল, যাকওয়ান গোত্রের জন্য বদদোয়া করেছেন। তিনি বলেন, উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাফরমানী করেছে।

৩৭৯৫ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা বি’রে মাউনার নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণকে শহীদ করেছিল সে হত্যাকারী রি’ল, যাকওয়ান, বনী লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের প্রতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশদিন পর্যন্ত ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) বদদোয়া করেছেন। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর নাফরমানী করেছে। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, বি’রে মাউনা নামক স্থানে যারা শাহাদাতবরণ করেছেন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি আয়াত নাযিল করেছিলেন। আমরা তা পাঠ করতাম। আয়াতটি হল- “আমাদের কাওমের কাছে এ সংবাদ পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।

৩৭৯৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আসিমুল আহওয়াল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে নামা্যে (দোয়া) কুনূত পড়তে হবে কি না- এসম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তে হবে। আমি বললাম, রুকূর আগে পড়তে হবে, না পরে? তিনি বললেন, রুকূর আগে। আমি বললাম, অমুক ব্যাক্তি আপনার সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আপনি রুকূর পর কুনূত পাঠ করেছেন। এর কারণ ছিল এই যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তরজন কারীর একটি দলকে মুশরিকদের নিকট কোনো এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদের মধ্যে চুক্তি ছিল। তারা (আক্রমণ করে সাহাবীগণের উপর) বিজয়ী হল। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি বদদোয়া করে সালাত (নামায/নামাজ) রুকূর পর এক মাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেছেন।

৩৭৯৭ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি ইবনু উমর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য) নিজেকে পেশ করার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমুতি দেননি। তখন তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। তবে খন্দকের যুদ্ধের দিন তিনি (যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য) নিজেকে পেশ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন। তখন তাঁর বয়স পনের বছর।

৩৭৯৮ কুতায়বা (রহঃ) সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পরিখা খননের কাজে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তাঁরা পরিখা খনন করেছিলেন আর আমরা কাঁধে করে মাটি বহন করেছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের জন্য দোয়া করে) বলেছিলেন, হে আল্লাহ, আখিরাতের শান্তই প্রকৃত শান্তি। আপনি মুহাজির এবং আনসারদের ক্ষমা করে দেন।

৩৭৯৯ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পরিখা খননের স্থানে উপস্থিত হন। এ সময় মুহাজির এবং আনসারগণ ভোরে তীব্র শীতের মধ্যে পরিখা খনন করছিলেন। তাদের কোনো গোলাম ছিলনা যারা তাদের পক্ষ হতে এ কাজ করে দেবে। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনাহার ও কষ্ট ক্লেশ দেখতে পান, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের শান্তই প্রকৃত শান্তি; তাই আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন। সাহাবীগণ এর উত্তরে বললেন, “আমরা সে সব লোক, যারা জিহাদের আত্মনিয়োগ করার ব্যাপারে মুহাম্মদ -এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা জীবিত থাকি ততদিন পর্যন্ত।

৩৮০০ আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদিনার চারপাশে পরিখা খনন করেছিলেন এবং নিজ নিজ পিঠে মাটি বহন করেছিলেন। আর (আনন্দ কন্ঠে) আবৃত্তি করেছিলেন, “আমরা তো সে সব লোক যারা ইসলামের ব্যাপারে মুহাম্মদ -এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা জীবিত থাকি ততদিনের জন্য”। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ কথার উত্তরে বলতেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতিত আর কোন কল্যাণ নেই, তাই আনসার ও মুহাজিরদের কাজে বরকত দান করুন। বর্ণনাকারী [আনাস (রাঃ)] বর্ণনা করেছেন যে, (পরিখা খননের সময়) তাদেরকে এক মুষ্টি ভরে যব দেওয়া হত। তা বাসি, স্বাদবিকৃত চর্বিতে মিশিয়ে খানা পাকিয়ে ক্ষুধার্ত কাওমের সামনে পরিবেশন করা হত। অথচ এ খাদ্য ছিল একেবারে স্বাদহীন ও ভীষণ দুর্গন্ধময়।

৩৮০১ খাল্লাদ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) আয়মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি বললেন, খন্দক যুদ্ধের দিন আমরা পরিখা খনন করেছিলাম। এ সময় একখন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে আসলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, খন্দকের মাঝে একখন্ড শক্ত পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাংতে পারছি না)। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব। এরপর তিনি দাঁড়ালেন। এ সময় তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী ছিলাম। কোনো কিছুর স্বাদও গ্রহণ করিনি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানা কোদাল হাতে নিয়ে প্রস্তরখন্ডে আঘাত করলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ টা চূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন। (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ি পৌঁছে) আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট কোনো খাবার আছে কি? সে বলল, আমার কাছে কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে। তখন বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম। এবং সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। এরপর গোশত ডেকচিতে দিয়ে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম। এ সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার উপর ছিল ও গোশত প্রায় রান্না হয়ে আসছিল। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার (বাড়িতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। আপনি একজন বা দুইজন সাথে নিয়ে চলুন। তিনি বললেন, কি পরিমাণ খাবার আছে? আমি তার নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, এ তো অনেক উত্তম। এরপর তিনি আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত উনান থেকে ডেকচি ও রুটি না নামায়। এরপর তিনি বললেন, উঠ! (জাবির তোমাদের খাবার দাওয়াত দিয়েছে) মুহাজিরগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন)। জাবির (রাঃ) তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললেন, তোমার সর্বনাশ হোক! (এখন কি হবে?) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাঁদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন। তিনি (জাবিরের স্ত্রী) বললেন, তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত হয়ে) বললেন, তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় কোরোনা। এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে এরপর গোশত তিনি সাহাবীগণের নিকট তা বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি এবং উনান ঢেকে রেখেছিলেন। এমনি করে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে পেট ভরে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তাই তিনি (জাবিরের স্ত্রীকে) বললেন, এ তুমি খাও এবং অন্যকে হাদিয়া দাও। কেননা লোকদেরো ক্ষুধা পেয়েছে।

৩৮০২ আম্‌র ইবনু আলী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোনো কিছু আছে কি? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দারুণ ক্ষুধার্ত দেখেছি। (এ কথা শুনে) তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমাদের গৃহপালিত একটি বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ্‌ করলাম এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করে চললাম। তখন সে (স্ত্রী) বলল, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজন কে সাথে নিয়ে আসুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারীগণ! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরি করবে না। আমি (বাড়িতে) আসলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-ই-কিরাম সহ তাশরীফ আনলেন, এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। (তুমি এ কি করলে? এতগুলো লোক নিয়ে আসলে? অথচ খাদ্য একেবারে নগন্য) আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর তিনি ডেকচির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দোয়া করলেন। তারপর বললেন, (হে জাবির) রুটি প্রস্তুতকারিনীকে ডাকো। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত পরিবেশন করুক। তবে চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না। তাঁরা (আগন্তুক সাহাবা-ই-কিরাম) ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তিসহকারে খেয়ে অবশিষ্ট খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি পূর্বের ন্যায় তখনও টগবগ করছিল এবং আমাদের আটার খামির থেকেও পূর্বের মত রুটি তৈরি হচ্ছিল।

৩৮০৩ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল উঁচু অঞ্চল ও নীচু অঞ্চল হতে এবং তোমাদের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়েছিল (৩৩:১০) তিনি বলেন, এ আয়াতখানা খন্দকের যুদ্ধে নাযিল হয়েছে।

৩৮০৪ মুসলিম ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি তাঁর পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাঁর পেট ধূলায় আছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ হেদায়েত না করলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, দান সদকা করতাম না, এবং সালাত (নামায/নামাজ)ও আদায় করতাম না। সুতরাং (হে আল্লাহ!) আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করুন এবং আমাদের কে শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার সময় দৃঢ়পদ রাখুন। নিশ্চয়ই মক্কাবাসীরা আমাদের প্রতি বিদ্রোহ করেছে। যখনই তারা ফিতনার প্রয়াস পেয়েছে তখনই আমরা উপেক্ষা করেছি। শেষের কথাগুলো বলার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে “উপেক্ষা করেছি”, “উপেক্ষা করেছি” বলে উঠেছেন।

৩৮০৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে পুবালি বায়ু দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, আর আদ জাতিকে পশ্চিমা বায়ু দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

৩৮০৬ আহ্‌মাদ ইবনু উসমান (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব (খন্দক) যুদ্ধের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিখা খনন করছিলেন। আমি তাঁকে খন্দকের মাটি বহন করতে দেখেছি। এমনকি ধূলাবালি পড়ার কারণে তাঁর পেটের চামড়া ঢাকা পড়ে গেছে। তিনি অধিক পশম বিশিষ্ট ছিলেন। সে সময় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে মাটি বহন করা অবস্থায় ইবনু রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি। তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি যদি হেদায়েত না করতেন তাহলে আমরা হেদায়েত পেতাম না, আমরা সদকা করতাম না এবং আমরা সালাত (নামায/নামাজ)ও আদায় করতামনা। সুতরাং আমাদের প্রতি আপনার রহমত নাযিল করুন এবং দুশমনের মুকাবিলা করার সময় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন। অবশ্য মক্কাবাসীরাই আমাদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তারা ফিতনা বিস্তার করতে চাইলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। বর্ণনাকারী (বারা) বলেন, শেষ পঙক্তিটি আবৃত্তি করার সময় তিনি তা প্রলম্বিত করে পড়তেন।

৩৮০৭ আবদা ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম আমি যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি তা ছিল খন্দকের যুদ্ধ।

৩৮০৮ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি হাফসা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। সে সময় তাঁর চুলের বেণি থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছিল। আমি তাঁকে বললাম, আপনি তো দেখেছেন, নেতৃত্বের ব্যাপারে লোকজন কি কান্ড করেছে। ইমারত ও নেতৃত্বের কিছুই আমাকে দেওয়া হয়নি। তখন তিনি বললেন, আপনি গিয়ে তাদের সাথে যোগ দিন। কেননা তাঁরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি তাদের থেকে দূরে সরে থাকার কারণে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি আশংকা করছি। হাফসা (রাঃ) তাঁকে (এ কথা) বলতে থাকেন। (অবশেষে) তিনি (সেখানে) গেলেন। এরপর লোকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মুআবিয়া (রাঃ) বক্তৃতা দিয়ে বললেন, ইমারত ও খিলাফতের ব্যাপারে কারো কিছু বলার ইচ্ছা থাকলে সে আমাদের সামনে মাথা উঁচু করুক। এ ব্যপারে আমরাই তাঁর ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক হকদার। তখন হাবীব ইবনু মাসলামা (রহঃ) তাঁকে বললেন, আপনি এ কথার জবাব দেননি কেন? তখন আবদুল্লাহ‌ ইবনু উমর) বললেন, আমি তখন আমার গায়ের চাঁদর ঠিক করলাম এবং এ কথা বলার ইচ্ছা করলাম যে, এ বিষয়ে ঐ ব্যাক্তই অধিক হকদার যে ইসলামের জন্য আপনার ও আপনার পিতার সাথে লড়াই করেছেন। তবে আমার এ কথায় (মুসলমানদের মাঝে) অনৈক্য সৃষ্টি হবে, অযথা রক্তপাত হবে এবং আমার এ কথার অপব্যাখ্যা করা হবে এ আশংকায় এবং আল্লাহ জান্নাতে যে নিয়ামত তৈরি করে রেখেছেন তার কথা স্মরণ করে আমি উক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকি। তখন হাবীব (রহঃ) বললেন, এভাবেই আপনি (ফিতনা থেকে) রক্ষা পেয়েছেন এবং বেঁচে গিয়েছেন।

৩৮০৯ আবূ নূআইম (রহঃ) সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আর আমাদের প্রতি আক্রমণ করতে পারবে না।

৩৮১০ আবদুল্লাহ‌ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সুলায়মান ইবনু সুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী মদিনা ছেড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবেনা। আর আমরা তাদের এলাকায় গিয়েই আক্রমণ করব।

৩৮১১ ইসহাক (রহঃ) আলী (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের দিন (কাফের মুশরিকদের প্রতি) বদদোয়া করে বলেছেন, আল্লাহ তাদের ঘরবাড়ি ও কবর আগুন দ্বারা ভরপুর করে দিন। কেননা তারা আমাদেরকে (যুদ্ধে ব্যস্ত করে) মধ্যবর্তী সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্ত গিয়েছে।

৩৮১২ মককী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, খন্দক যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এসে কুরাইশ কাফেরদের গালি দিতে আরম্ভ করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আজ সূর্যাস্তের পূর্বে আমি (আসর) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমিও আজ এ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনি। [জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) বলেন] এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে বুতহান উপত্যকায় গেলাম। এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আমরাও সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। এরপর তিনি সূর্যাস্তের পর প্রথমে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) এবং পরে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৩৮১৩ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কুরাইশ কাফেরদের খবর আমাদের নিকট এনে দিতে পারবে কে? যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি পারব। তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] আবার বললেন, কুরাইশদের খবর আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? তখনও যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি পারব। তিনি পুনরায় বললেন, কুরাইশদের খবর আমাদের নিকট কে এনে দিতে পারবে? এবারও যুবায়র (রাঃ) বললেন, আমি পারব। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রত্যেক নাবীরই হাওয়ারী (বিশেষ সাহায্যকারী) ছিল। আমার হাওয়ারী হল যুবায়র।

৩৮১৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খন্দকের যুদ্ধের সময়) বলতেন, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনই তাঁর বাহিনীকে মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই শত্রুদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। তারপর আর কিছুই কি থাকবে না অথবা এরপর আর ভয়ের কোন কারণ নেই।

৩৮১৫ মুহাম্মদ ইবনু সালাম) (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীর প্রতি বদদোয়া করে বলেছেন, কিতাম নাযিলকারী ও হিসেব গ্রহণে তৎপর হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ! তাদেরকে পরাজিত এবং ভীত ও কম্পিত করে দিন।

৩৮১৬ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ, হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা থেকে ফিরে এসে প্রথমে তিনবার তাকবীর বলতেন। এরপর বলতেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ্‌ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। সব বিষয়ে তিনই সর্বশক্তিমান। আমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তনকারী, তাঁরই কাছে তওবাকারী, তাঁরই ইবাদতকারী। আমরা আমাদের প্রভুর দরবারেই সিজদা নিবেদনকারী, তাঁরই প্রশংসা বর্ণনাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছেন। তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন।

৩৮১৭ আবদুল্লাহ‌ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে সমরাস্ত্র রেখে গোসল করেছেন মাত্র। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে বললেন, আপনি তো অস্ত্রশস্ত্র (খুলে) রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমরা এখনও তা খুলিনি। চলুন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বনূ কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ঐদিকে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে রওয়ানা হলেন।

৩৮১৮ মূসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ কুরায়যার মহল্লার দিকে যাচ্ছিলেন তখন [জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অধীন] ফেরেশতা বাহিনীও তাঁর সংগে যাচ্ছিলেন, এমনকি (পথিমধ্যে) বনূ গানম গোত্রের গলিতে জিবরাঈল বাহিনীর গমনে ওড়া ধূলারাশি এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি।

৩৮১৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধের দিন (যুদ্ধ সমাপ্তির দিন) বলেছেন, বনূ কুরায়যার মহল্লায় না পৌঁছে কেউ যেন আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে। পথিমধ্যে আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেলে কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে পৌঁছার পূর্বে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা এখনই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিষেধাজ্ঞার অর্থ এই নয় যে, রাস্তায় সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেলেও তা আদায় করা যাবে না। বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ওঠানো হলে তিনি তাদের কোনো দলের প্রতই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি।

৩৮২০ ইবনু আবূল আসওয়াদ ও খলীফা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ব্যয় নির্বাহের জন্য) লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খেজুর হাদিয়ে দিতেন। অবশেষে তিনি বনী নাযীর এবং বনী করায়যার উপর জয়লাভ করলে আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আদেশ করল, যেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে তাদের দেয়া সবগুলো খেজুর গাছ অথবা কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ তাঁর নিকট থেকে ফেরত আনার জন্য আবেদন করি। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ গাছগুলো উম্মে আয়মান (রাঃ)-কে দান করে দিয়েছিলেন। এ সময় উম্মে আয়মান (রাঃ) আসলেন এবং আমার গলায় কাপড় লাগিয়ে বললেন, এ কখনো হতে পারেনা। সেই আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি ঐ বৃক্ষগুলো তোমাকে আর দেবেন না। তিনি তো এগুলো আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। অথবা (রাবীর সন্দেহ) যেমন তিনি বলেছেন। এদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তুমি ঐ গাছগুলোর পরিবর্তে আমার নিকট থেকে এ-ই এ-ই পাবে। কিন্তু উম্মে আয়মান (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! এ কখনো হতে পারেনা। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (অনেক বেশি) দিলেন। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে [উম্মে আয়মান (রাঃ)-কে] বলেছেন, এর দশগুণ অথবা যেমন তিনি বলেছেন।

৩৮২১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ)-এর ফয়সালা মেনে নিয়ে বনী কুরায়যা গোত্রের লোকেরা দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ কে আনার জন্য লোক পাঠালেন। এরপর তিনি গাধার পিঠে চড়ে আসলেন। তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার সাহাবীকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা তোমাদের নেতা বা সর্বোত্তম ব্যাক্তিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (তিনি আসলে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, এরা তোমার ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এসেছে। তখন তিনি বললেন, তাদের যোদ্ধাদের হত্যা করা হবে এবং তাদের সন্তানদের বন্দী করা হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সা’দ! তুমি আল্লাহর হুকুম মুতাবিক ফয়সালা করেছ। কোনো কোনো সময় তিনি বলেছেন, তুমি রাজাধিরাজ আল্লাহর বিধান মুতাবিক ফয়সালা করেছ।

৩৮২২ যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সা’দ (রাঃ) আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবনু ইরকা নামক এক ব্যাক্তি তাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। কাছে থেকে তার শুশ্রূষা করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তে একটি খিমা তৈরি করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল সমাপন করলেন তখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মাথার ধূলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আপনি তো হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি এখনও তা রেখে দেই নি। চলুন তাঁদের প্রতি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায়? তিনি বনী কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ কুরায়যার মহল্লায় এলেন। পরিশেষে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সা’দ (রাঃ)-এর উপর অর্পণ করলেন। তখন সা’দ (রাঃ) বললেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই রায় দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ (মুসলমানদের মধ্যে) বন্টন করে দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বলেন, আমার পিতা [উরওয়া (রাঃ)] আয়িশা (রাঃ) থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ (রাঃ) (বনূ কুরায়যার ঘটনার পর) আল্লাহর কাছে এ বলে দোয়া করছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, যে সম্প্রদায় আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোন কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। হে আল্লাহ! আমি মনে করি (খন্দক যুদ্ধের পর) আপনি তো আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন তবে এখনো যদি কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে সে জন্য বাঁচিয়ে রাখুন, যেন আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারি। আর যদি যুদ্ধে অবসান ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত করুন এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটান। এরপর তাঁর ক্ষত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসতে দেখে তারা ভীত হয়ে বললেন, হে তাঁবুবাসীগণ আপনাদের দিক থেকে এসব কি আমাদের দিকে বয়ে আসছে? পরে তাঁরা দেখলেন যে, সা’দ (রাঃ)-এর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশেষে এ জখমের কারণেই মারা যান।

৩৮২৩ হাজজাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আদি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বারা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাস্‌সান (রাঃ)-কে বলেছেন, কবিতার মাধ্যমে তাদের (কাফেরদের) দোষত্রুটি বর্ণনা কর আথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) তাদের দোষত্রুটি বর্ণনা করার জবাব দাও। (তোমার সাহায্যার্থে) জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার সাথে থাকবেন। (অন্য এক সনদে) ইব্‌রাহীম ইবনু তাহ্‌মান (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী কুরায়যার সাথে যুদ্ধ করার দিন হাসান ইবনু আযিব (রাঃ)-কে বলেছিলেন (কবিতার মাধ্যমে) মুশরিকদের দোষত্রুটি বর্ণনা কর। এ ব্যাপারে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার সাথে থাকবেন।

৩৮২৪ মুহাম্মদ ইবনু আ’লা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক যুদ্ধে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে রওয়ানা করলাম। আমরা ছিলাম ছয়জন। আমাদের একটি মাত্র উট ছিল। পালাক্রমে আমরা এর পিঠে আরোহণ করতাম। (হেঁটে হেঁটে) আমাদের পা ফেটে যায়। আমার পা দুখানাও ফেটে গেল, খসে পড়ল নখগুলো। এ কারণে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া জড়িয়ে বাঁধলাম। এ জন্য এ যুদ্ধকে যাতুর রিকা যুদ্ধ বলা হয়। কেননা আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দ্বারা পট্টি বেঁধেছিলাম। আবূ মূসা (রাঃ) উক্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন, আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করিনা। সম্ভবতঃ তিনি তার কোন আমল প্রকাশ করাকে অপছন্দ করতেন।

৩৮২৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালিহ্‌ ইবনু খাওয়াত (রাঃ) এমন একজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন যিনি যাতুর রিকার যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সালাতুল (নামায) খাওফ আদায় করেছেন। তিনি বলেছেন, একদল লোক (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কাতারে দাঁড়ালেন এবং অপর দলটি রইলেন শত্রুর সম্মুখীন। এরপর তিনি তার সাথে দাঁড়ানো দলটি নিয়ে এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মুকতাদিগণ তাদের সালাত (নামায/নামাজ) পুরা করে ফিরে গেলেন এবং শত্রুর সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর দ্বিতীয় দলটি এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট রাকাত আদায় করে স্থির হয়ে বসে রইলেন। এবার মুকতাদিগণ তাদের নিজেদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পূর্ণ করলে তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাম ফিরালেন। মুআয (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমরা নাখল নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলাম। এরপর জাবির (রাঃ) সালাতুল (নামায) খাওফের কথা উল্লেখ করেন। এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, সালাতুল (নামায) খাওফ সম্পর্কে আমি যত হাদিস শুনেছি এর মধ্যে এ হাদীসটই সবচেয়ে উত্তম। লাইস (রহঃ) কাসেম ইবনু মুহাম্মদ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাযওয়ায়ে বনূ আনমারে সালাতুল (নামায) খাওফ আদায় করেছেন। এই বর্ণনায় মুয়ায (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

৩৮২৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (সালাতুল (নামায) খাওফে) ঈমাম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন। মুকতাদীদের একদল থাকবেন তাঁর সাথে। এবং অন্যদল শত্রুদের মুখোমুখী হয়ে তাদের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। তখন ইমাম তাঁর পেছনে একতেদাকারী লোকদের নিয়ে এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন। এরপর একতেদাকারীগণ নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে রুকূ ও দু’সিজদাসহ আরো এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে ঐ দলের স্থানে গিয়ে দাঁড়াবেন। এরপর তারা এসে একতেদা করার পর ইমাম তাদের নিয়ে আরো এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন। এভাবে ইমামের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর মুকতাদিগণ রুকূ সিজদাসহ আরো এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন।

৩৮২৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সাহ্‌ল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৮২৮ মুহাম্মদ (রহঃ) উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (পূর্ব বর্ণিত) হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৮২৯ আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে নাজদ এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি। এ যুদ্ধে আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করেছিলাম এবং তাদের সামনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।

৩৮৩০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সৈন্যদেরকে দু’দলে বিভক্ত করে) একদল সাথে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। অন্যদলকে নিয়োজিত রেখেছেন শত্রুর মোকাবেলায়। তারপর (যে দল তাঁর সংগে এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন) তাঁর শত্রুর মুকাবিলায় নিজ সাথীদের স্থানে চলে গেলেন। অন্যদল (যারা শত্রুর মুকাবিলায় দাঁড়িয়েছিলেন) চলে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিয়ে এক রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁরা তাদের বাকি আরেক রাকাত আদায় করলেন এবং শত্রুর মুকাবিলায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এবার পুর্বের দলটি এসে নিজেদের অবশিষ্ট রাকাতটি আদায় করলেন।

৩৮৩১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাজ্‌দ এলাকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। (অন্য এক সনদে) ইসমাঈল (রহঃ) জাবির ইবনু ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাজ্‌দ এলাকায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করলেন। পথিমধ্যে কাঁটা গাছ ভরা এক উপত্যকায় মধ্যাহ্নের সময় তাঁদের ভীষণ গরম অনুভূত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই অবতরণ করলেন। লোকজন সবাই ছায়াবান গাছের খোঁজে কাঁটাবনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ল। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের নিচে অবস্থান করে তরবারিখানা গাছে ঝুলিয়ে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, সবেমাত্র আমরা নিদ্রা গিয়েছি। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকতে আরম্ভ করলেন। আমরা সকলেই তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে এক বেদুঈন বসা ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম, এমতাবস্থায় সে আমার তরবারিখানা হস্তগত করে কোষমুক্ত অবস্থায় তা আমার উপর উচিয়ে ধরলে আমি জাগ্রত হই। তখন সে আমাকে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? আমি বললাম, আল্লাহ! দেখ না, এ-ই তো সে বসা আছে। (এ জঘন্যতম অপরাধের পরও) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি। (অপর এক সনদে) আবান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যাতুর রিকার যুদ্ধে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা একটি ছায়াবান বৃক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আরামের জন্য আমরা তা ছেড়ে দিলাম। এমন সময় এক মুশরিক ব্যাক্তি এসে গাছের সাথে ঝুলানো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তরবারীখানা হাতে নিয়ে তা তাঁর উপর উঁচিয়ে ধরে বলল, তুমি আমাকে ভয় পাও কি? তিনি বললেন, না। এরপর সে বলল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে কে? তিনি বললেন, আল্লাহ। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণ তাকে ধমক দিলেন। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ হলে তিনি মুসলমানদের একটি দলকে নিয়ে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারা এখান থেকে হটে গেলে অপর দলটি নিয়ে তিনি আরো দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হল চার রাকাত এবং সাহাবীদের হল দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ)। (অন্য এক সূত্রে) মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বিশ্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি যে লোকটি তলোয়ার উঁচু করেছিল তার নাম হল গাওরাস ইবনু হারিস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানে খাসাফার বংশধর মুহারিব গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, নাখল নামক স্থানে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ছিলাম। তিনি এ সময় সালাতুল (নামায) খাওফ আদায় করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাতুল (নামায) খাওফ আদায় করেছি। আবূ হুরায়রা খায়বার যুদ্ধের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছিলেন।

৩৮৩২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) ইবনু মুহায়রীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং তাকে আযল১ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে খায়েস হল এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। তাই আমরা আয্‌ল করা পছন্দ করলাম এবং তা করার মনস্থ করলাম। তখন আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরুপ না করলে তোমাদের ক্ষতি কি? জেনে রাখ, কিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।

৩৮৩৩ মাহমূদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাজদের যুদ্ধে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে অংশগ্রহণ করেছি। কাঁটা গাছে ভরা উপত্যকায় প্রচন্ড গরম লাগলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের নিচে অবতরণ করে তার ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং তরবারিখানা (গাছের সাথে) ঝুলিয়ে রাখলেন। সাহাবীগণ সকলেই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা এ অবস্থায় ছিলাম, হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকলেন। আমরা তাঁর নিকটে গিয়ে দেখলাম, এক বেদুঈন তাঁর সামনে বসে আছে। তিনি বললেন, আমি ঘুমিয়েছিলাম। এমন সময় সে আমার কাছে এসে আমার তরবারিখানা নিয়ে উঁচিয়ে ধরল। ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি দেখলাম, সে মুক্তু কৃপাণ হস্তে আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলছে, এখন তোমাকে আমাড় ঠেকে কে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। ফলে সে তরবারিখানা খাপে ঢুকিয়ে বসে যায়। সে তো এ-ই ব্যাক্তি। বর্ণনাকারী জাবির (রাঃ) বলেন, (এ ধরণের অপরাধ করা সত্ত্বেও) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি।

৩৮৩৪ আদম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আনমার যুদ্ধে সাওয়ারীতে আরোহণ করে মুশরিকদের দিকে মুখ করে নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।

৩৮৩৫ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র, সাঈদ ইবনু মুস্যায়িব, আলকামা ইবনু ওয়াক্কাস ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন অপবাদ রটনাকারিগণ তাঁর প্রতি অপবাদ রটিয়েছিল।। রাবী যুহরী (রহঃ) বলেন, তারা প্রত্যেকেই হাদীসটির অংশবিশেষ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি স্মরণ রাখা ও সঠিকভাবে বর্ণনা করার করার ক্ষেত্রে তাদের কেউ কেউ অন্যের চেয়ে অধিকতর অগ্রগামী ও নির্ভরযোগ্য। আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে তারা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন আমি তাদের প্রত্যেকের কথাই যাথাযথভাবে স্মরণ রেখেছি। তাদের একজনের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষ অপরের বর্ণিত হাদীসের অংশবিশেষের সত্যতা প্রমাণ করে। যদিও তাদের একজন অন্যজনের চেয়ে অধিক স্মৃতিশক্তির অধিকারী। বর্ণনাকারীগণ বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছা করতেনতখন তিনি তাঁর স্ত্রীগণের (নামের জন্য) কোরা ব্যবহার করতেন। এতে যার নাম আসত তাকেই তিনি সাথে করে সফরে বের হতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এমনি এক যুদ্ধে (মুরায়সীর যুদ্ধ) তিনি আমাদের মাঝে কোরা ব্যবহার করেন এবং এতে আমার নাম বেরিয়ে আসে। তাই আমই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সফরে বের হলাম। এ ঘটনাটি পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পর সংঘটিত হয়েছিল। তখন আমাকে হাওদাজ সহ সাওয়ারীতে উঠানো ও নামানো হত। এমনি করে আমরা চলতে থাকলাম। অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ যুদ্ধ থেকে অবসর হলেন, তখন তিনি (বাড়ির দিকে) ফিরলেন। ফেরার পথে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলে তিনি একদিন রাতের বেলা রওয়ানা হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। রওয়ানা হওয়ার ঘোষনা দেওয়ার পর আমি উঠলাম এবং (প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য) পায়ে হেঁটে সেনাছাউনি অতিক্রম করে (একটু সামনে) গেলাম। এরপর প্রয়োজন সেরে আমি আমার সাওয়ারীর কাছে ফিরে এসে বুকে হাত দিয়ে দেখলাম যে, (ইয়ামানের অন্তর্গত) ফিফার শহরের পুতি দ্বারা তৈরি করা আমার গলার হারটি ছিঁড়ে কোথাও পড়ে গিয়েছে। হার তালাশ করতে করতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, যে সমস্ত লোক উটের পিঠে আমাকে উঠিয়ে দিতেন তারা এসে আমার হাওদাজ উঠিয়ে তা আমার আমার উটের পিঠে তুলে দিতেন যার উপর আমি আরোহণ করতাম। তারা মনে করেছিলেন যে, আমি এর মধ্যেই আছি, কারণ খাদ্যাভাবে মহিলাগণ তখন খুবই হালকা পাতলা হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের দেহ মাংসল ছিল না। তাঁরা খুবই স্বল্প পরিমাণে খাবার খেতে পেত। তাই তারা যখন হাওদাজ উঠিয়ে উপরে রাখেন খন তা হালকা হওয়ায় বিষয়টিকে কোনো প্রকার অস্বভাবিক মনে করেননি। অধিকন্তু আমি ছিলাম একজন অল্প বয়স্কা কিশোরী। এরপর তারা উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যায়। সৈন্যদল রওয়ানা হওয়ার পর আমি আমার হারটি খুঁজে পাই এবং নিজস্ব স্থানে ফিরে এসে দেখি তাঁদের (সৈন্যদের) কোনো আহবায়ক এবং কোনো উত্তরদাতা ওখানে নেই। (নিরুপায় হয়ে) তখন আমি পূর্বে যেখানে ছিলাম সেখানে বসে রইলাম। ভাবছিলাম, তাঁরা আমাকে দেখতে না পেলে অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। ঐ স্থানে বসে থাকা অবস্থায় ঘুম চেপে আসলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। বানূ সুলামী গোত্রের যাকওয়ান শাখার সাফওয়ান ইবনু মুয়াত্তাল (রাঃ) [যাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে যাওয়া আসবাবপত্র কুড়িয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ] সৈন্যদল চলে যাওয়ার পর সেখানে ছিলেন। তিনি প্রত্যূষে আমার অবস্থানস্থলের কাছে পৌঁছে একজন ঘুমন্ত মানুষ দেখে আমার দিকে তাকানোর পর আমাকে চিলে ফেললেন। তিনি আমাকে দেখেছিলেন পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লে আমি তা শুনতে পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং চাঁদর টেনে আমার চেহারা ঢেকে ফেললাম। আল্লাহর কসম! আমি আর কথা বলিনি এবং তাঁর থেকে ইন্নালিল্লাহ পাঠ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাইনি। এরপর তিনি সওয়ারী থেকে অবতরন করলেন এবং সওয়ারীকে বসিয়ে তার সামনের পা নিচু করে দিলে আমি গিয়ে তাতে আরোহণ করলাম। পরে তিনি আমাকে সহ সওয়ারীকে টেনে আগে আগে চলতে লাগলেন, পরিশেষে ঠিক দ্বিপ্রহরে প্রচন্ড গরমের সময় আমরা গিয়ে সেনাদলের সাথে মিলিত হলাম। সে সময় তাঁরা একটি জায়গায় অবতরণ করছিলেন।। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর যাদের ধ্বংস হওয়ার ছিল তারা (আমার প্রতি অপবাদ আরোপ করে) ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের মধ্যে এ অপবাদ আরোপের ব্যপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল সে হল আবদুল্লাহ‌ ইবনু উবায় ইবনু সুলূল। বর্ণনাকারী উরওয়া (রাঃ) আর বর্ণনা করেছেন যে, অপবাদ আরোপকারী ব্যাক্তিদের মধ্যে হাসান ইবনু সাবিত, মিসতাহ ইবনু উসাসা এবং হামনা বিনত জাহাশ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তারা গুটিকয়েক ব্যাক্তির একটি দল ছিল, এতটুকু ব্যতীত তাদের সম্পর্কে আমার আর কিছু জানানেই। যেমন আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন , এ ব্যপারে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তাকে আবদুল্লাহ‌ ইবনু উবায় ইবনু সুলূল বলে ডাকা হয়ে থাকে। বর্ণনাকারী উরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর ব্যপারে হাসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গালমন্দ করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, হাসান ইবনু সাবিত তো ঐ ব্যাক্তি যিনি তার এক কবিতায় বলেছেন, আমার মান সম্মান এবং আমার বাপ দাদা মুহাম্মদ এর মান সম্মান রক্ষায় নিবেদিত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমরা মদিনায় আসলাম। মদিনায় আগমণ করার একমাস পর্যন্ত আমি অসুস্থ থাকলাম। এদিকে অপবাদ রটনাকারীদের কথা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা ও চর্চা হতে লাগলো। কিন্তু এসবের কিছুই আমি জানিনা। তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যেরুপ স্নেহ ভালবাসা লাভ করতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না। তিনি আমার কাছে এসে সালাম করে কেবল “তুমি কেমন আছ” জিজ্ঞাসা করে চলে যেতেন। তাঁর এ আচরণই আমার মনে চরম সন্দেহের উদ্রেক করে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাইরে বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ জঘন্য অপবাদ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। উম্মে মিসতাহ (রাঃ) একদা আমার সাথে টয়লেটের দিকে বের হন। আর প্রকৃতির ডাকে আমাদের বের হওয়ার অবস্থা এই ছিলে যে, এক রাতে বের হলে আমরা আবার পরের রাতে বের হতাম। এ ছিল আমাদের ঘরের পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করার পূর্বের ঘটনা। আমাদের অবস্থা প্রাচীন আরবীয় লোকদের অবস্থার মত ছিল। তাদের মত আমরাও পায়খানা করার জন্য ঝোঁপঝাড়ে চলে যেতাম। এমনকি (অভ্যাস না থাকার কারণে) বাড়ির পার্শ্বে পায়খানা তৈরি করলে আমরা খুব কষ্ট পেতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদা আমি এবং উম্মে মিসতাহ (যিনি ছিলেন আবূ রুহম ইবনু মুত্তালিব ইবনু আবদে মুনাফের কন্যা, যার মা সাখার ইবনু আমির-এর কন্যা ও আবূ বকর সিদ্দীকের খালা এবং মিসতাহ ইবনু উসাসা ইবনু আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব যার পুত্র) একত্রে বের হলাম। আমরা আমাদের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে উম্মে মিসতাহ তার কাপড়ে জড়িয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে বললেন, মিসতাহ ধ্বংস হোক! আমি তাকে বললাম, আপনি খুব খারাপ কথা বলেছেন। আপনি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্যাক্তিকে গালি দিচ্ছেন? তিনি আমাকে বললেন, ওগো অবলা, সে তোমার সম্পর্কে কি বলে বেড়াচ্ছে তুমি তো তা শুনোনি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার সম্পর্কে কি বলছে? তখন তিনি অপবাদ রটনাকারীদের কথাবার্তা সম্পর্কে আমাকে আমাকে জানালেন। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, এরপর আমার পুরোনো রোগ আরো বেড়ে গেল। আমি বাড়ি ফেরার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন এবং সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন আছ? আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক খবর জানতে চাচ্চিলাম, তাই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম আপনি কি আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন। তখন (বাড়িতে গিয়ে) আমি আমার আম্মাকে বললাম্‌ আম্মাজানো, লোকজন কি আলোচনা করছে? তিনি বললেন, বেটি এ বিষয়টিকে হালকা করে ফেল। আল্লাহর কসম, সতীন আছে এমন স্বামী সোহাগিনী সুন্দরী রমণীকে তাঁর সতীনরা বদনাম করবে না, এমন খুব কমই হয়ে থাকে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বিস্ময়ের সাথে বললাম, সুবাহানাল্লাহ! লোকজন কি এমন গুজবই রটিয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন রাতভর আমি কাঁদলাম। কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমার অশ্রুও বন্ধ হল না এবং আমি ঘুমাতেও পারলাম না। এরপর ভোরবেলাও আমি কাঁদছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, এ সময় ওহী নাযিল হতে বিলম্ব হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর (আমার) বিচ্ছেদের বিষয়টি সম্পর্কে পরামর্শ ও আলোচনা করার নিমিত্তে আলী ইবনু আবূ তালিব এবং উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, উসামা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীদের পবিত্রতা এবং তাদের প্রতি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জির) ভালবাসার কারণে বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল)তাঁরা আপনার স্ত্রী, তাদের সম্পর্কে আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আর আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল , আল্লাহ তো আপনার জন্য সংকীর্ণতা রাখেননি। তাঁকে (আয়িশা) ব্যতীত আরো বহু মহিলা রয়েছে। তবে আপনি এ ব্যাপারে দাসী [বারীরা (রাঃ)]-কে জিজ্ঞাসা করুন। সে আপনার কাছে সত্য কথাই বলবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরা (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে বারীরা, তুমি তাঁর মধ্যে কোনো সন্দেহমূলক আচরণ দেখেছ কি? বারীরা (রাঃ) তাঁকে বললেন, সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বিধানসহ পাঠিয়েছেন, আমি তার মধ্যে কখনো এমন কিছু দেখিনি যার দ্বারা তাঁকে দোষী বলা যায়। তবে তাঁর ব্যপারে শুধু এতটুকু বলা যায় যে, তিনি হলেন অল্প বয়স্কা যুবতী, রুটি তৈরী করার জন্য আটা খামির করে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। আর বকরী এসে অমনি তা খেয়ে ফেলে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) সেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে উঠে গিয়ে মিম্বরে বসে আবদুল্লাহ ইবনু উবায়-এর ক্ষতি থেকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বলেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অপবাদ ও বদনাম রটিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার এ অপবাদ থেকে আমাকে কে মুক্তু করবে? আল্লাহর কসম, আমি আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। তার তাঁরা (অপবাদ রটনাকারীরা) এমন এক ব্যাক্তির (সাফওয়ান ইবনু মু’আত্তাল) নাম উল্লেখ করছে যার সম্বন্ধেও আমি ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। সে তো আমার সাথেই আমার ঘরে যায়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) বনী আবদুল আশহাল গোত্রের সা’দ ইবনু মুআয) (রাঃ) উঠে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাকে এ অপবাদ থেকে মুক্তি দেব। সে যদি আউস গোত্রের লোক হয় তা হলে তার শিরচ্ছেদ করব। আর যদি সে আমাদের ভাই খাযরাজের লোক তাহলে তার তাহলে তার ব্যাপারে আপনি যা বলবেন তাই পালন করব। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-এর মায়ের চাচাতো ভাই খাযরাজ গোত্রের সর্দার সাঈদ ইবনু উবাদা (রাঃ) দাঁড়িয়ে এ কথার প্রতিবাদ করলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এ ঘটনার পূর্বে তিনি একজন সৎ এবং নেককার লোক ছিলেন। কিন্তু (এ সময়) গোত্রীয় অহমিকায় উত্তেজিত হয়ে তিনি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর কসম, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাকে হত্যা করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যদি সে তোমার গোত্রের লোক হত তাহলে তুমি তার হত্যা হওয়া কখনো পছন্দ করতে না। তখন সা’দ ইবনু মুআয (রাঃ) এর চাচাতো ভাই উসাঈদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) সা’দ ইবনু ওবায়দা (রাঃ)- কে বললেন, বরং তুমই মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করব। তুমি হলে মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ অবলম্বন করে কথা বলছ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্র খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে। এমনকি তারা যুদ্ধের সংকল্প পর্যন্ত করে বসে। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের থামিয়ে শান্ত করলেন এবং নিজেও চুপ হয়ে গেলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি সেদিন সারাক্ষণ কেঁদে কাটালাম। ওশ্রুঝরা আমার বন্ধ হয়নি এবং একটু ঘুম ও আমার আসেনি। তিনি বলেন, আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার পিতা-মাতা আমার পার্শ্বে বসা ছিলেন। এমনি করে একদিন দুই রাত কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দেই। এর মাঝে আমার কোন ঘুম আসেনি। বরং অবারিত ধারায় আমার চোখ থেকে অশ্রুপাত হতে থাকে। মনে হচ্ছিল যেন, কান্নার ফলে আমার কলিজা ফেটে যাবে। আমি ক্রন্দনরত ছিলাম আর আমার আব্বা-আম্মা আমার পাশে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা আমার কাছে আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি আমি তাকে আসার অনুমতি দিলাম। সে এসে বসল এবং আমার সাথে কাঁদতে আরম্ভ করল। তিনি বলেন, আমরা ক্রন্দনরত ছিলাম ঠিক এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এসে সালাম করলেন এবং আমাদের পাশে বসে গেলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অপবাদ রটানোর পর আমার কাছে এসে এভাবে তিনি আর কখনো বসেননি। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ একমাস কাল অপেক্ষা করার পরও আমার বিষয়ে তাঁর নিকট কোনো ওহী আসেনি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, বসার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কালিমা শাহাদাত পাঠ করলেন। এরপর বললেন, যা হোক আয়িশা তোমার সম্বন্ধে আমার কাছে অনেক কথাই পৌঁছেছে, যদি তুমি এর থেকে মুক্ত হও তাহলে শীঘ্রই আল্লাহ তোমাকে এ অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তুমি কোনো গুনাহ করে থাক তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা কর। কেননা বান্দা গুনাহ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তা’আলা তওবা কবুল করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা বলে শেষ করলে আমার অশ্রুপাত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক ফোঁটা অশ্রুও আমি আর অনুভব করলাম না। তখন আমি আমার আব্বাকে বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন আমার পক্ষ থেকে আপনি তার জবাব দিন। তখন আমার আব্বা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি আমার আম্মাকে বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন আমার পক্ষ থেকে আপনি তার জবাব দিন। তখন আমার আম্মা বললেন, আল্লাহর কসম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কি জবাব দিব আমি তা জানিনা। তখন আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা কিশোরী। কুরআনও বেশি পড়তে পারতাম না। তথাপিও এ অবস্থা আমি নিজেই বললাম, আমি জানি আপনারা এ অপবাদের ঘটনা শুনেছেন, আপনারা তা বিশ্বাস করেছেন এবং বিষয়টি আপনাদের মনে সুদৃঢ় হয়ে আছে। এখন যদি আমি বলি যে, এর থেকে আমি পবিত্র এবং আমি নিষ্কলুস তাহলে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি এ অপরাধের কথা স্বীকার করে নেই যা সম্পর্কে আমার আল্লাহ জানেন যে, আমি এর থেকে পবিত্র, তাহলে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর কসম, আমি ও আপনারা যে অবস্থার স্বীকার হয়েছি এর জন্য (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিতার কথার উদাহরণ ব্যতীত আমি আর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছিনা। তিনি বলেছিলেনঃ “সুতরাং পূর্ণ ধৈর্যই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার আশ্রয়স্থল”। এরপর আমি মুখ ফিরিয়ে আমার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আল্লাহ তা’আলা জানেন যে, সে মূহুর্তে আমি পবিত্র। অবশ্যই আল্লাহর আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন (এ কথার প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল) তবে আল্লাহর কসম, আমি কখনো ধারণা করিনি যে, আমার ব্যাপারে আল্লাহ ওহী নাযিল করবেন যা পঠিত হবে। আমা ব্যাপারে আল্লাহ কোনো কথা বলবেন আমি নিজেকে এতখানি যোগ্য মনে করিনি বরং আমি নিজেকে এর চেয়ে অধিক অযোগ্য বলে মনে করতাম। তবে আমি আশা করতাম যে, হয়তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমন স্বপ্ন দেখানো হবে যার দ্বারা আল্লাহ আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দেবেন। আল্লাহর কসম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনো তাঁর বসার জায়গা ছাড়েননি এবং ঘরের লোকদের থেকেও কেউ ঘর থেকে বাইরে যাননি। এমতাবস্থায় তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু হল। ওহী নাযিল হওয়ার সময় তাঁর যে বিশেষ কষ্ট হত তখনও সে অবস্থা তাঁর হল। এমনকি প্রচন্ড শীতের দিনেও তাঁর দেহ থেকে মোতির দানার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ত ঐ বানীর গুরুভারের কারণে, যা তাঁর প্রতি নাযিল করা হয়েছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি হাসিমুখে প্রথমে যে কথাটি বললেন, তা হল, হে আয়িশা! আল্লাহ তোমার পবিত্রতা জাহির করে দিয়েছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন্‌, এ কথা শুনে আমার আম্মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এখন তাঁর দিকে উঠে যাব না। মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা আমি করব না। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ (আমার পবিত্রতা ঘোষনা করে) যে দশটি আয়াত নাযিল করেছেন, তাহল এই, “যারা এ অপবাদ রটনা করেছে (তারা তো তোমাদেরই একটা দল; এ ঘটনাকে তোমরা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর মনে করো না; বরং এও তোমাদের জন্য কল্যানকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তাদের কৃত পাপকর্মের ফল এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। এ কথা শোনার পর মু’মিন পুরুষ এবং নারীগণ কেন নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা করেনি এবং বলেনি, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ। তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, সেহেতু তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমরা যাতে লিপ্ত ছিলে তার জন্য কঠিন শাস্তি তোমাদেরকে স্পর্শ করত। যখন তোমরা মুখে মুখে এ মিথ্যা ছাড়াচ্ছিলে এবং এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোনো জ্ঞান তোমাদের ছিলনা এবং একে তোমরা তুচ্ছ ব্যাপার বলে ভাবছিলে, অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল খুবই গুরুতর ব্যাপার। এবং এ কথা শোনামাত্র তোমরা কেন বললে না যে, এ বিষয়ে বলাবলি করা আমাদের জন্য উচিত নয়। আল্লাহ পবিত্র, মহান! এ তো এক গুরুতর অপবাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে কখনো অনুরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি করবে না, আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানোো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই অব্যাহতি পেত না। আল্লাহ দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। (২৪:১১-২০) এরপর আমার পবিত্রতা ঘোষণা করে আল্লাহ এ আয়াতগুলো নাযিল করলেন। আত্মীয়তা এবং দারিদ্রের কারণে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) মিসতাহ ইবনু উসাসা কে আর্থিক ও বৈষয়িক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে তিনি যে অপবাদ রটিয়েছিলেন এ কারণে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) কসম করে বললেন, আমি আর কখনো মিসতাহকে আর্থিক কোনো সাহায্য করব না। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন – তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্থকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহত্যাগ করেছে তাদের কে কিছুই দিবে না। তারা যেন তাদের কে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। শোন! তোমরা কি পছন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের কে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল; পরম দয়ালু! (২৪:২২) (এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলে উঠলেন হ্যাঁ, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি পছন্দ করি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ (রাঃ) এর জন্য যে অর্থ খরচ করতেন তা পুনঃ দিতে আরম্ভ করলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তাঁকে এ অর্থ দেয়া আর কখনো বন্ধ করবনা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার এ বিষয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) কেও জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি যায়নাব (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে কী জানো অথবা বলেছিলেন তুমি কি দেখেছ? তখন তিনি বলেছিলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমি আমার চোখ এবং কানকে সংরক্ষণ করেছি। আল্লাহর কসম! আমি তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া আর কিছুই জানিনা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্ত্রীগণের মধ্যে তিনি আমার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে আল্লাহ ভীতির ফলে রক্ষা করেছেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অথচ তাঁর বোন হামনা (রাঃ) তাঁর পক্ষ অবলম্বন করে অপবাদ রটনাকারীদের মত অপবাদ রটনা করে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে ধ্বংস হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, ঐ সমস্ত লোকের ঘটনা সম্পর্কে আমার কাছে যা পৌঁছেছে তা হল এইঃ উরওয়া (রাঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর কসম! যে ব্যাক্তি সম্পর্কে অপবাদ দেয়া হয়েছিল, তিনি এসব কথা শুনে বলতেন, আল্লাহ মহান! ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমি কোনো স্ত্রীলোকের কাপড় খুলেও কোনোদিন দেখিনি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, পরে তিনি আল্লাহর পথে শাহাদাত লাভ করেছিলেন।

৩৮৩৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ওয়ালীদ ইবনু আবদুল মালিক (রহঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকট কি এ সংবাদ পৌঁছেছে যে, আয়িশা (রাঃ)-এর প্রতি অপবাদ আরোপকারীদের মধ্যে আলী (রাঃ)-ও শামিল ছিলেন? আমি বললাম, না, তবে আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ও আবূ বকর ইবনু আবদুর রহমান ইবনু হারিস নামক তোমার গোত্রের দুই ব্যাক্তি আমাকে জানিয়েছে যে, আয়িশা (রাঃ) তাদের দু’জনকে বলেছেন যে, আলী (রাঃ) তার ব্যপারে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ ছিলেন।

৩৮৩৭ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর মা উম্মে রুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আয়িশা (রাঃ) বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা প্রবেশ করে বলতে লাগল আল্লাহ অমুক অমুককে ধ্বংস করুন। এ কথা শুনে উম্মে রুমান (রাঃ) বললেন, তুমি কি বলছ? সে বলল, যারা অপবাদ রটিয়েছে তাদের মধ্যে আমার ছেলেও আছে। উম্মে রুমান (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কি শুনেছেন? সে বলল, হ্যাঁ। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ বকরও শুনেছেন? সে বল, হ্যাঁ। এ কথা শুনে আয়িশা (রাঃ) বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। হুঁশ ফিরে আসার পর তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসল। এরপর আমি একটি চাঁদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে দিলাম। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর কি অবস্থা? আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাঁর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয়তো সে অপবাদের ঘটনার কারণে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এ সময় আয়িশা (রাঃ) উঠে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম! (আমার পবিত্রতার ব্যাপারে) আমি যদি কসম করি, তাহলেও আপানারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না, আর যদি আমি ওযর পেশ করি তবুও আমার ওযর আপনারা কবূল করবেন না, আমার এবং আপনাদের উদাহরণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াকূব আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছেলেদের উদাহরণের মতই। তিনি বলেছিলেন, “ তোমরা যা বলেছ সে বিষয়ে আল্লাহই একমাত্র আমার সাহায্যস্থল”। উম্মে রুমান (রাঃ) বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর [আয়িশা (রাঃ)] পবিত্রতা বর্ণনা করে আয়াত নাযিল করলেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করি আর কারো না, আপনারও না।

৩৮৩৮ ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি আয়াতাংশ “ইয তালকু’নাহু বিআলসিনাতিকুম” পড়তেন এবং বলতেন “আলওয়ালকু’” অর্থ “আলকিযবু”। ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) বলেছেন, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আয়িশা (রাঃ) অন্যদের তুলনায় বেশি জানতেন। কেননা এ আয়াত তারই ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল।

৩৮৩৯ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশামের পিতা [উরওয়া (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর সম্মুখে হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গালি দিতে আরম্ভ করলে তিনি বললেন, তাঁকে গালি দিও না। কেননা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ অবলম্বন করে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের নিন্দাবাদ করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তুমি কুরাইশদের নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করলে আমার বংশ কে কি করে রক্ষা করবে? তিনি বললেন, আমি আপনাকে তাদের থেকে এমনিভাবে পৃথক করে রাখব যে, যেমনি ভাবে আটার খামির থেকে চুলকে পৃথক করে রাখা হয়। মুহাম্মদ (রহঃ) বলেছেন, উসমান ইবনু ফারকাদ (রহঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি হিশাম (রহঃ)-কে তার পিতা উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে গালি দিয়েছি। কেননা তিনি ছিলেন, আয়িশা (রাঃ) এর প্রতি অপবাদ রটনাকারীদের মধ্যে অন্যতম।

৩৮৪০ বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তাঁর কাছে হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) তাঁকে তাঁর নিজের রচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলেন। তিনি আয়িশা (রাঃ)-এর প্রশংসা করে বলেছেন, “তিনি সতী, ব্যাক্তিত্বসম্পন্না ও জ্ঞানবতী, তাঁর প্রতি কোনো সন্দেহই আরোপ করা যায় না। তিনি অভুক্ত থাকেন, তবুও অনুপস্থিত লোকের গোশত খান না বা গীবত করেন না। এ কথা শুনে আয়িশা (রাঃ) বললেন, কিন্তু আপনি তো এরুপ নন। মাসরুক (রহঃ) বলেছেন যে, আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম যে, আপনি কেন তাকে আপনার কাছে আসতে অনুমতি দেন? অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি”। আয়িশা (রাঃ) বললেন, অন্ধত্ব থেকে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে? তিনি তাকে আরো বলেন যে, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ হয়ে কাফেরদের সাথে মুকাবিলা করতেন অথবা কাফেরদের বিরুদ্ধে নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করতেন।

৩৮৪১ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) যায়িদ ইবনু খালি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের বছর আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে বের হলাম। এক রাতে খুব বৃষ্টি হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপরে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা জানো কি তোমাদের রব কি বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ই অধিক জানেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন (এ বৃষ্টির কারণে) আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনে মু’মিন হয়েছে, আবার কেউ কেউ আমাকে অমান্য করে কাফের হয়েছে। যারা বলেছে, আল্লাহর রাহমাত, আল্লাহর করুণা এবং আল্লাহর রিযিক প্রদানের পূর্বাভাস হিসাবে আমাদের প্রতি বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মু’মিন এবং নক্ষত্রের প্রভাব অস্বীকারকারী। আর যারা বলেছে যে, অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে, তারা তারকার প্রতি ঈমান আনয়নকারী এবং আমাকে অস্বীকারকারী কাফের।

৩৮৪২ হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা পালন করেছেন। তিনি হাজ্জের (হজ্জ) সাথে যে উমরাটি পালন করেছিলেন সেটি ব্যতীত সবকটই যিলকাদাহ্‌ মাসে পালন করেছেন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে যে উমরাটি পালন করেছিলেন, সেটি ছিল যিলকাদাহ মাসে এবং হুনায়নের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ যে জিঈরানা নামক স্থানে বন্টন করেছিলেন, সেখান থেকে যে উমরাটি করা হয়েছিল তাও ছিল যিলকাদাহ মাসে, আর তিনি হাজ্জের (হজ্জ) সাথে একটি উমরা পালন করেন।

৩৮৪৩ সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের বছর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা করেছিলাম। এ সময় তাঁর সাহাবীগণ ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহ্‌রাম বাঁধিনি।

৩৮৪৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) বারআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়কে তোমরা মৌল বিজয় মনে করেছ। অথচ মক্কা বিজয়ও একটি বিজয়। কিন্তু হুদায়বিয়ার দিনে অনুষ্ঠিত বায়আতে রিদওয়ানকে আমরা মৌল বিজয় বলে মনে করি। সে সময় আমরা চৌদ্দ’শ সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কূপ। আমরা তা’ থেকে পানি উঠাতে উঠাতে তার মধ্যে এক বিন্দুও অবশিষ্ট রাখিনি। আর এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌঁছালে তিনি এসে সে কূপের পাড়ে বসলেন। এরপর এক পাত্র পানি আনিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং কুল্লি করলেন। পরিশেষে দোয়া করে অবশিষ্ট পানি কূপের মধ্যে ফেলে দিলেন। আমরা অল্প কিছুক্ষণ পর্যন্ত কূপের পানি উঠানো বন্ধ রাখলাম। এরপর আমরা আমাদের নিজেদের ও আরোহী পশুর জন্য প্রচুর পানি কূপ থকে বের করলাম।

৩৮৪৫ ফাজল ইবনু ইয়াকূব (রহঃ) আবূ ইসহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে বারা ইবনু আযিব (রাঃ) সংবাদ দিয়েছেন যে, হুদায়বিয়ার যুদ্ধের দিন তাঁরা চৌদ্দশ কিংবা তার চেয়ে অধিক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলেন। তখন তারা একটি কূপের পার্শ্বে অবতরণ করেন এবং তা থেকে পানি উত্তোলন করতে থাকেন। (এতে সব পানি নিঃশেষ হয়ে যায়) তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে এসে এ সংবাদ জানালেন। তখন তিনি কূপটির কাছে এসে এর পাড়ে বসলেন। এরপর বললেন, আমার কাছে এই কূপের এক বালতি পানি নিয়ে আস। তখন তা নিয়ে দেয়া হল। তিনি এতে থুথু ফেললেন এবং দোয়া করলেন। এরপর তিনি বললেন, এ থেকে কিছুক্ষণের জন্য তোমরা পানি উঠানো বন্ধ রাখো। এরপর সকলেই নিজেদের ও আরোহী জীবসমূহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সংগ্রহ করলেন এবং পরে চলে গেলেন।

৩৮৪৬ ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিন লোকেরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একটি চর্মপাত্র ভর্তি পানি ছিল মাত্র। তিনি তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তখন লোকেরা তাঁর প্রতি এগিয়ে আসলে তিনি তাদের কে বললেন, কি হয়েছে তোমাদের? তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার চর্মপাত্রের পানি ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কোনো পানি নেই যার দ্বারা আমরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করব এবং যা আমরা পান করব। বর্ণনাকারী জাবির (রাঃ) বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুবারাক হাতখানা ঐ চর্মপাত্রে রাখলেন। অমনি তার আঙ্গুলগুলোর মধ্যস্থল থেকে ঝরণাধারার মত পানি উথলিয়ে উঠতে লাগলো। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা সে পানি পানি করলাম এবং তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। [সালিম (রাঃ) বলেন] আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা সেদিন কতজন লোক ছিলেন? তিনি বললেন, আমাদের সংখ্যা এক লাখ হলেও এ পানই আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। আমরা ছিলাম তখন পনেরশ লোক মাত্র। (১) ১) হুদায়বিয়ার যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের সংখ্যা কোন হাদীসে পনেরশ আবার কোনো হাদীসে তেরশ’র কথা উল্লেখ আছে। আসলে সংখ্যা কত এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা কিরমানী (রহঃ) বলেছেন, যারা বৃদ্ধ, যুবক ও কিশোর সকলকে গণনা করেছেন তাঁরা বলেছেন পনেরশ, আর যারা বৃদ্ধ ও যুবকদের গণনা করেনি তারা বলেছেন তেরশ। মূলত এ কথার মধ্যে কোন সংঘাত নেই। এর জবাবে আল্লামা নববী (রহঃ) বলেছেন, সাহাবাদের সংখ্যা চৌদ্দশ’র কিছু বেশি ছিল। কেউ ভগ্নাংশ সহ পনেরশ উল্লেখ করেছেন। আমার কেউ ভগ্নাংশ বাদ দিয়ে চৌদ্দশ বর্ণনা করেছেন। আর যারা তেরশ উল্লেখ করেছেন, মূলত তাদের সংখ্যা জানাছিল না।

৩৮৪৭ সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনু মূসা য়্যিব (রাঃ)-কে বললাম, আমি শুনতে পেয়েছি যে, জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলতেন, তাঁরা (হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাদের সংখ্যা চৌদ্দশ ছিল। সাঈদ (রাঃ) আমাকে বললেন, জাবির (রাঃ) আমাকে বর্ণনা করেছেন যে, হুদায়বিয়ার যুদ্ধে যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল পনেরশ। আবূ দাউদ কুরবা (রহঃ)-এর মাধ্যমে কাতাদা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)- ও অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূ দাউদ (রহঃ) (অন্য সনদে) শু’বা (রহঃ) থেকেও অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৩৮৪৮ আলী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার যুদ্ধের দিন আমাদের কে বলেছেন, পৃথিবীবাসিদের মধ্যে তোমরাই সর্বোত্তম। সেদিন আমরা ছিলাম চৌদ্দশ। আজ আমি যদি দেখতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে সে বৃক্ষ-স্থানটি দেখিয়ে দিতাম। আমাশ (রহঃ) হাদীসটি সালিম (রাঃ)-এর মাধ্যমে জাবির (রাঃ) থেকে সুফিয়ান (রহঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন সাহাবীদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দশ। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, গাছের নিচে বায়আত গ্রহণকারীদের সংখ্যা ছিল তেরশ। সৈন্যদের মধ্যে আসলাম গোত্রের সাহাবীগণের সংখ্যা ছিল মুহাজিরগনের মোট সংখ্যার এক-অষ্টমাংশ।

৩৮৪৯ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) কায়েস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন বৃক্ষের নিচে বায়আত গ্রহণকারী সাহাবী মিরদাস আসলামীকে বলতে শুনেছেন যে, পুণ্যবাদ লোকদেরকে একের পর এক উঠিয়ে নেওয়া হোবে। এরপর অবশিষ্ট থাকবে খেজুর ও যবের ছালের মত কতিপয় নিম্নস্তরের লোক, যাদের কোনো পরওয়া আল্লাহ করবেন না।

৩৮৫০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) বর্ণিত। তাঁরা উভয়েই বলেছেন যে, হুদায়বিয়ার বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজারের অধিক সাহাবী সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে যাত্রা শুরু করলেন। যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধালেন, (কুরবানীর পশুর)কুজ কাটলেন এবং সেখান থেকে ইহরাম বাঁধলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন, এ হাদীস সুফিয়ান থেকে কতবার শুনেছি তার সংখ্যা আমি নির্ণয় করতে পারছি না। পরিশেষে তাঁকে বলতে শুনেছি, যুহরী থেকে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধা এবং ইশআর করার কথা আমার স্মরণ নেই। রাবী আলী ইবনু আবদুল্লাহ বলেন, সুফিয়ান এ কথা বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা আমি জানিনা। তিনি কি এ কথা বলতে চেয়েছেন যে, যুহরী থেকে ইশআর ও কিলাদা কথা তাঁর স্মরণ নেই, না পুরা হাদীসটি স্মরণ না থাকার কথা বলতে চেয়েছেন?

৩৮৫১ হাসান ইবনু খালাফ (রহঃ) কাব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এমতাবস্থায় দেখলেন যে, উকুন (তার মাথা থেকে) মুখমন্ডলে ঝরে পড়ছে। তখন তিনি বললেন, কীটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে তাঁর মাথা মুন্ডিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন। তখন সাহাবীগণ মক্কা প্রবেশ করার জন্য খুবই উদ্গ্রীব হয়ে উঠছিলেন। হুদায়বিয়াতেই তাদেরকে হালাল হয়ে যেতে হবে এ কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের কাছে বর্ণনা করেননি। তাই আল্লাহ ফিদইয়ার হুকুম নাযিল করলেন। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছয়জন মিসকিনকে এক ফারাক (প্রায় বার সের) খাদ্য খাওয়ানোর অথবা একটি বকরী কুরবানী করার অথবা তিনদিন রোযা পালন করার নির্দেশ দিলেন।

৩৮৫২ ইসমাইল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর সঙ্গে বাজারে বের হলাম। সেখানে একজন যুবতী মহিলা তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন, আমার স্বামী ছোট একটা বাচ্ছা রেখে ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহর কসম, তাদের আহারের জন্য পাকানোর মত কোন বকরীর খুরাও নেই এবং নেই কোন ফসলের ব্যবস্থা ও দুধের উঠ, বকরী। পোকা তাদেরকে খেয়ে ফেলবে বলে আমার আশঙ্কা হচ্ছে অথচ আমি হলাম খুফাফ ইবনু আয়মা গিফারীর কন্যা। আমার পিতা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) তাঁকে অতিক্রম না করে পার্শ্বে দাঁড়ালেন। এরপর বললেন, তোমার গোত্রকে ধন্যবাদ। তারা তো আমার খুবই নিকটের মানুষ। এরপর তিনি বাড়িতে এসে আস্তাবলে বাঁধা উটের থেকে একটি মোটা তাজা উট এনে দুই বস্তা খাদ্য এবং এর মধ্যে কিছু নগদ অর্থ ও বস্ত্র রেখে এগুলো উক্ত উটের পৃষ্ঠে উঠিয়ে দিয়ে মহিলার হাতে এর লাগাম দিয়ে বললেন, তুমি এটি টেনে নিয়ে যাও। এগুলো শেষ হওয়ার পূর্বেই হয়তো আল্লাহ তোমাদের জন্য এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। তখন একব্যাক্তি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনি তাকে খুব বেশি দিলেন। উমর (রাঃ) বললেন, তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। ১ আল্লাহর কসম, আমি দেখেছি এ মহিলার আব্বা ও ভাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি দূর্গ অবরোধ করে রেখেছিলেন এবং পরে তা জয় ও করেছিলেন। এরপর ওই দুর্গ থেকে অর্জিত তাঁদের অংশ থেকে আমরাও যুদ্ধলব্দ সম্পদের দাবি করি (এবং কিছু অংশ আমরা নিজেরা গ্রহণ করি এবং কিছু অংশ তাদেরকে দেই। )

৩৮৫৩ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) মূসা য়্যিব ইবনু হুযন) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, (যে বৃক্ষের নিচে বায়াত গ্রহণ করা হয়েছিল) আমি সে বৃক্ষটি দেখেছিলাম। কিন্তু এরপর যখন সেখানে আসলাম তখন আর তা চিনতে পারলাম না। মাহমুদ (রহঃ) বলেন, (মূসা য়্যিব ইবনু হুযন বলেছেন) পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। এর বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়।

৩৮৫৪ মাহমুদ (রহঃ) তারিক ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি হাজ্জ (হজ্জ) করতে যাওয়ার পথে সালাত (নামায/নামাজ)রত এক কাওমের নিকট দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার সময় তাদেরকে বললাম, এ জায়গাটি কিরুপ সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান? তাঁরা বললেন, এটা সেই বৃক্ষ যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের থেকে) বায়াতে রিদওয়ান গ্রহণ করেছিলেন। এর পর আমি সাঈদ ইবনু মূসা য়্যিব (রহঃ) এর কাছে গেলাম এবং এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন সাঈদ ইবনু মূসা য়্যিব) (রহঃ) বললেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, বৃক্ষটির নিচে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। মূসা য়্যিব (রাঃ) বলেছেন, পরবর্তী বছর আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন আমরা আর ওই বৃক্ষটিকে নির্দিষ্ট করতে পারলাম না। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সাঈদ (রহঃ) বললেন, মুহাম্মদ এর সাহাবীগণ (এখানে উপস্থিত হয়ে বায়াত গ্রহণ করা সত্ত্বেও) তা চিনতে পারলেন না আর তোমরা তা চিনে ফেলেছ? তাহলে তোমরা কি তাদের চেয়েও অধিক বিজ্ঞ?

৩৮৫৫ মূসা (রহঃ) মূসা য়্যিব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, বৃক্ষের নিচে যারা বায়াত গ্রহণ করেছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, পরবর্তী বছর আমরা আবার সে গাছের স্থানে উপস্থিত হলে আমরা গাছটি চিনতে পারলাম না। গাছটি আমাদের কাছে সন্দেহপূর্ণ হয়ে গেল।

৩৮৫৬ কাবীস (রহঃ) তারিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাঈদ ইবনু মূসা য়্যিব (রাঃ) এর কাছে সে গাছটির কথা উল্লেখ করা হলে তিনি হেসে বললেন, আমার পিতা আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি বৃক্ষের নিচে বায়াতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

৩৮৫৭ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) আমর ইবনু মুররা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি বৃক্ষের নিচে বায়াতকারী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বর্ণনা করেছেন, কোন কওম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সা’দকার অর্থ নিয়ে আসলে তিনি তাঁদের জন্য দোয়া করে বলতেন, “হে আল্লাহ আপনি তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন”। এ সময় আমার পিতা তাঁর কাছে সা’দকার অর্থ নিয়ে আসলে তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! আপনি আবূ আউফার বংশধরদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন”।

৩৮৫৮ ইসমাইল (রহঃ) আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, হাররার ঘটনার দিন যখন লোকজন আবদুল্লাহ ইবনু হানযালা (রাঃ) এর হাতে বায়াত গ্রহণ করছিলেন, তখন ইবনু যায়দ (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনু হানযালা (রাঃ) লোকদেরকে কিসের উপর বায়াত গ্রহণ করছেন? তখন তাঁকে বলা হল, মৃত্যুর উপর বায়াত গ্রহণ করেছেন। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে এ ব্যাপারে আমি আর কারো হাতে বায়াত গ্রহণ করব না। তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

৩৮৫৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়ালা মুহারিবী (রহঃ) ইয়াস ইবনু সালামা ইবনু আকওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বৃক্ষের নিচে অনুষ্ঠিত বায়াতে অংশগ্রহণকারী আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে যখন বাড়ি ফিরতাম তখনও প্রাচীরের নিচে ছায়া পড়ত না, যার ছায়ায় বসে আরাম করা যায়।

৩৮৬০ কুতাইবা ইবনু সাইড (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবাইদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, হুদায়বিয়ার দিন আপনারা কিসের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত করেছিলেন। তিনি বললেন, মৃত্যুর উপর।

৩৮৬১ আহমদ ইবনু আশকা (রহঃ) মূসা য়্যিব (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বললাম, আপনার জন্য সুসংবাদ, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং বৃক্ষের নিচে তাঁর হাতে বায়াতও করেছেন। তখন তিনি বললেন, ভাতিজা, তুমি তো জানো না, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আমরা কি করেছি।

৩৮৬২ ইসহাক (রহঃ) আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাবিত ইবনু দাহহাক (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি গাছের নিচে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত করেছেন।

৩৮৬৩ আহমাদ ইবনু ইসিহাক (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, “ইন্না ফাতাহনা লাকা ফাতহাম মুবিনা” নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়”। তিনি বলেনঃ এ আয়াতটিতে “ফাতহাম মুবিনা” (সুস্পষ্ট বিজয়)(১) বলে হুদায়বিয়ার সন্ধিকেই বোঝানো হয়েছে। (আয়াতটি নাযিল হওয়ার পর) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ বললেন, (আপনার জন্য তো) এটা খুশী ও আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের জন্য কিছু আছে কি? তখন আল্লাহ তা’লা নাযিল করলেন, ‘লিউদখিলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি’ এটা এ জন্য যে, তিনি মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীগণকে দাখিল করবেন জান্নাতে। শু’বা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি কুফায় পৌছালাম এবং কাতাদা থেকে বর্ণিত হাদিসটির সবটুকু বর্ণনা করলাম, এরপর কুফা থেকে ফিরে সে কাতাদাকে সবকিছু জানালে তিনি বললেন, ‘ইন্না ফাতাহনা লাকা’ (এর অর্থ হুদায়বিয়ায় অনুষ্ঠিত বায়াতে রিদওয়ান) আয়াতখানা আনাস থেকে বর্ণিত। আর “হানি-আম মারি’আ” কথাটি ইকরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ১ ৬ হিজরী মোতাবেক ৬২৮ খ্রীস্টাব্দে ১৪০০ সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কাভিমুখে রাওয়ানা হন। মক্কার মুশরিকরা তাঁদেরকে উমরা করতে বাঁধা দিবে, এ আশঙ্কায় তাঁরা মক্কার তিন মাইল উত্তরে হুদায়বিয়ার শিবির স্থাপন করেন। এরপর আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে মক্কাবাসীদের সাথে সন্ধি হয়। সন্ধির শর্তগুলো আপাতদৃষ্টিতে মুসলিমদের জন্য অবমাননাকর মনে হলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাস্তির খাতিরে তা মেনে নিয়েছিলেন। সন্ধির শর্তানুযায়ী উমরা না করেই তাঁরা মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। পথিমধ্যে সুরাটি অবতীর্ণ হয়। অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে এ সন্ধিকে আল্লাহ স্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষণা করেছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, কেবল জাহিরী বিজয়ই প্রকৃত বিজয় নয়। বরং জাহিরের বিপরীত অবস্থাতেও বিজয় নিহিত থাকে কখনো।

৩৮৬৪ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) মাজযা ইবনু যাহির আসলামী (রহঃ) এর পিতা “যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে হুদায়বিয়ার গাছের নিচে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন” তাঁর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি হাঁড়িতে গাধার গোশত রান্না করছিলাম, এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাঁর মুনাদী (ঘোষক আবূ তালহা) ঘোষণা দিয়ে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (অন্য এক সনদে) মাজযা (রহঃ) অপর এক ব্যাক্তি থেকে অর্থাৎ বৃক্ষের নিচে অনুষ্ঠিত বায়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবী উহবান আউস (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর [উহবান ইবনু আউস (রাঃ)] এর হাঁটুতে আঘাত লেগেছিল। তাই তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় হাঁটুর নিচে বালিশ রাখতেন।

৩৮৬৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) গাছের নিচে অনুষ্ঠিত বায়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবী সুওয়াইদ ইবনু নুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জন্য ছাতু আনা হতো। তাঁরা পানিতে গুলিয়ে তা খেয়ে নিতেন। মুআয (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে ইবনু আবূ আদী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৮৬৬ মুহাম্মদ বিন হাতিম ইবনু বাযী (রহঃ) আবূ জামরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, গাছের নিচে অনুষ্ঠিত বায়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আয়েয ইবনু আমর (রাঃ) কে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বিতর সালাত (নামায/নামাজ) কি দ্বিতীয়বার আদায় করা যাবে? তিনি বললেন, রাতের প্রথম ভাগে একবার বিতর আদায় করে থাকলে দ্বিতীয়বার রাতের শেষে আর আদায় করবে না।

৩৮৬৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন এক সফরে রাত্রিকালে চলছিলেন। এ সফরে উমর (রাঃ) ও তাঁর সাথে চলছিলেন। এক সময় উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে কোন এক বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন উত্তর করলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তবুও তিনি তাঁকে কোন জবাব দিলেন না। এরপর আবার তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবারও তার কোন উত্তর দিলেন না। তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নিজেকে লক্ষ করে মনে মনে বললেন, হে উমর! তোমাকে তোমার মা হারিয়ে ফেলুক। তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তিনবার পিড়াপীড়ি করলে। কিন্তু কোনবারই তিনি তোমাকে উত্তর দেননি। উমর (রাঃ) বললেন, এরপর আমি আমার উটকে তাড়া দিয়ে মুসলমানদের সামনে চলে যাই। কারন আমি আশঙ্কা করছিলাম যে, হয়ত আমার সম্পর্কে কোরআন শরীফের কোন আয়াত অবতীর্ণ হতে পারে। এ কথা বলে আমি বেশি দেরি করিনি এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক ব্যাক্তি চিৎকার করে আমাকে ডাকতে শুরু করলেন। উমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমার সম্পর্কে হয়তো কুরআন নাযিল হয়েছে। এ মনে করে আমি ভীত হয়ে পড়লাম। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তখন তিনি বললেন, আজ রাতে আমার প্রতি এমন একটি সুরা নাযিল হয়েছে যা আমার কাছে সূর্য উদিত পৃথিবী থেকেও অধিক প্রিয়। তারপর তিনি “ইন্না ফাতাহনা লাকা ফাতহাম মুবিনা” তিলাওয়াত করেন।

৩৮৬৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও মারওয়ান ইবনু হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা একে অন্যের চেয়ে অধিক বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে বলেন, হুদায়বিয়ার বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাজারের অধিক সাহাবী সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। তাঁরা যুল হুলায়ফা পৌঁছে কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বাঁধলেন, ইশ’আর করলেন। ১ সেখান থেকে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলেন এবং খুযাআ গোত্রের এক ব্যাক্তিকে গোয়েন্দা হিসেবে পাঠালেন। পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সেই দিকে রওয়ানা হলেন। যেতে যেতে গাদীরুল আশতাত নামক স্থানে পৌঁছার পর প্রেরিত গোয়েন্দা এসে তাঁকে বলল, কুরাইশরা বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে আপনার বিরুদ্ধে প্রস্তুত হয়ে আছে। তারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিভিন্ন গোত্র থেকে এসে আশতাত নামক স্থানে জমায়েত হয়েছে। তারা আপনার বিরুদ্ধের লড়াই করবে এবং বায়তুল্লাহ জিয়ারতে বাঁধা দিবে ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তখন তিনি বললেন, হে লোক সকল, তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও এবং বল, যারা আমাদেরকে বায়তুল্লাহর জিয়ারতে বাঁধা দেয়ার ইচ্ছা করছে, আমি কি তাদের পরিবারবর্গ এবং সন্তান-সন্ততিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ব? তারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সংকল্প করে থাকলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন, যিনি মুশরিকদের থেকে একজন গোয়েন্দাকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন। আর যদি তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে তাহলে আমরা তাদের পরিবার এবং অর্থ-সম্পদ থেকে বিরত থাকব এবং তাদেরকে তাদের পরিবার ও অর্থ সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি তো বায়তুল্লাহর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন, কাউকে হত্যা করা এবং কারো সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে তো এখানে আসেননি। তাই বায়তুল্লাহর দিকে অগ্রসর হোন। যে আমাদেরকে তা থেকে বাঁধা দিবে আমরা তাঁর সাথে লড়াই করবো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) চলো আল্লাহর নামে। ১ কুরবানীর পশু জখম করতঃ প্রবাহিত রক্ত দ্বারা তা কুরবানীর পশু হিসেবে চিহ্নিত করাকে ইশ’আর বলা হয়।

৩৮৬৯ ইসহাক (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মারওয়ান ইবনু হাকাম এবং মিসওয়াক ইবনু মাখরামা (রাঃ) উভয়ের থেকে হুদায়বিয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উমরা আদায় করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন। তাঁদের থেকে উরওয়া (রাঃ) আমার (মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব) নিকট যা বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহায়ল ইবনু আমরকে হুদায়বিয়ার দিন সন্ধিনামায় যা লিখিয়েছিলেন তার মধ্যে সুহায়ল ইবনু আমরের আরোপিত শর্তসমুহের মধ্যে একটি শর্ত এই ছিলঃ আমাদের থেকে যদি কেউ আপনার কাছে চলে আসে তবে সে আপনার দ্বীনে বিশ্বাসী হলেও তাকে আমাদের কাছে ফেরত দিয়ে দিতে হবে এবং তার ও আমাদের মধ্যে আপনি কোন বাঁধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। এ শর্ত মেনে না নিলে সুহায়ল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সন্ধি করতেই অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। এ শর্তটিকে মু’মিনগণ অপছন্দ করলেন এবং এতে তারা অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ণ হলেন ও এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করলেন। কিন্তু যখন সুহায়ল এ শর্ত ব্যতীত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে চুক্তি সম্পাদনে অস্বীকৃতি জানাল তখন এ শর্তের উপরই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সন্ধিপত্র লেখালেন এবং আবূ জানো্দাল ইবনু সুহায়ল (রাঃ) কে এ মুহুর্তেই তার পিতা সুহায়ল আমরের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সন্ধির মেয়াদকালে পুরুষদের মধ্যে যারাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে চলে আসতেন, মুসলমান হলেও তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতেন। এ সময় কিছু সংখ্যক মুসলিম মহিলা হিজরত করে চলে আসেন। উম্মে কুলসুম বিনত উকবা আবূ মু’আইত (রাঃ) ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি হিজরতকারিণী একজন যুবতী মহিলা। তিনি হিজরত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে পৌঁছলে তাঁর পরিবারের লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালো। এসময় আল্লাহ পাক মু’মিন মহিলাদের সম্পর্কে যা নাযিল করার তা নাযিল করলেন। বর্ণনাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে উরওয়া উবন যুবায়র (রাঃ) বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত আয়াতের নির্দেশ অনুযায়ী হিজরতকারিণী মু’মিন মহিলাদেরকে পরীক্ষা করতেন। আয়াতটি হল এইঃ হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মু’মিন মহিলাগণ যখন আপনার নিকট আসে [শেষ পর্যন্ত (৬০ : ১২)]। (অন্য সনদে) ইবনু শিহাব (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে এ বিবরণও পৌঁছেছে যে, যখন আল্লাহ তা’লা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিক স্বামীর তরফ থেকে হিজরতকারী মুসলমান স্ত্রীকে দেওয়া মুহরানা মুশরিক স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর আবূ বাসীর (রাঃ) এর ঘটনা সম্বলিত হাদীসও আমাদের নিকট পৌঁছেছে। এরপর তিনি আবূ বাসীর (রাঃ) এর ঘটনা সম্বলিত হাদিসটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করলেন।

৩৮৭০ কুতায়বা (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফিতনার যমানায় (হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের মক্কা আক্রমনের সময়) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) উমরা পালনের নিয়তে রওয়ানা হয়ে বললেন, যদি আমাকে বায়তুল্লাহর যিয়ারতে বাঁধা প্রদান করা হয় তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমরা যা করেছিলাম এ ক্ষেত্রেও আমরা তাই করবো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু হুদায়বিয়ার বছর উমরার ইহরাম বেঁধে যাত্রা করেছিলেন তাই তিনিও উমরার ইহরাম বেঁধে যাত্রা করলেন।

৩৮৭১ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফিতনার বছর তিনি (উমরার) ইহরাম বেঁধে বললেন, যদি আমার আর তার (যিয়ারতে বায়তুল্লাহর) মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তাহলে কুরাইশ কাফিররা বায়তুল্লাহর যিয়ারতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছিলেন আমিও ঠিক তাই করবো এবং তিনি তিলাওয়াত করলেন, “তোমাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”।

৩৮৭২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা ও মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কোন ছেলে তাঁকে [আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে] লক্ষ করে বলেন, এ বছর আপনি মক্কা শরীফ যাওয়া স্থগিত রাখলেই উত্তম হত। কারণ আমি আশঙ্কা করছি যে, আপনি বায়তুল্লাহ শরীফ যেতে পারবেন না। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। পথে কুরাইশ কাফেররা বায়তুল্লাহর যিয়ারতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কুরবানীর পশুগুলো যবেহ করে মাথা কামিয়ে ফেললেন। সাহাবীগণ চুল ছাঁটলেন। (এরপর তিনি বললেন) আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার জন্য উমরা আদায় করা আমি ওয়াজিব করে নিয়েছি। যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না হয় তাহলে আমি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবো। আর যদি আমার ও বায়তুল্লাহর মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন আমি তাই করবো। এরপর তিনি কিছুক্ষন পথ চলে বললেন, আমি হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরার বিষয়টি একই মনে করি। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার হাজ্জ (হজ্জ)কেও উমরার সাথে আমার জন্য ওয়াজিব করে নিয়েছি। এরপর তিনি উভয়ের জন্য একই তওয়াফ এবং একই সায়ী করলেন এবং হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার ইহরাম খুলে ফেললেন।

৩৮৭৩ শুজা ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন বলে থাকে যে, ইবনু উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অথচ ব্যাপারটি এমন নয়। তবে (মূল ঘটনা ছিল এই যে) হুদায়বিয়ার দিন উমর (রাঃ) (তাঁর পুত্র) আবদুল্লাহ (রাঃ) কে এক আনসারী সাহাবার কাছে রাখা তাঁর ঘোড়াটি আনার জন্য পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি এর উপর আরোহণ করে লড়াই করতে পারেন। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের কাছে (লোকদের) বায়াত গ্রহণ করছিলেন। বিষয়টি উমর (রাঃ) জানতেন না। আবদুল্লাহ (রাঃ) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত গ্রহণ করে পরে ঘোড়াটি আনার জন্য গেলেন এবং ঘোড়াটি নিয়ে উমর (রাঃ) এর কাছে আসলেন। এ সময় উমর (রাঃ) যুদ্ধের পোশাক পরিধান করছিলেন। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে জানালেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছের নিচে বায়াত গ্রহণ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমর (রাঃ) তাঁর {আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)} এর সাথে গেলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত গ্রহণ করলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই লোকেরা এ কথা বলাবলি করছিল যে, ইবনু উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) এর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। (অন্য সনদে) হিশাম ইবনু আম্মার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যে লোকজন ছিলেন তাঁরা সকলেই ছায়া লাভের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বৃক্ষের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। একসময় তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘিরে দাঁড়ালে উমর (রাঃ) তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বললেন, হে আবদুল্লাহ! দেখতো মানুষের কি হয়েছে? তাঁরা এভাবে ভিড় করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ইবনু উমর (রাঃ) দেখতে পেলেন যে, তাঁরা বায়াত গ্রহণ করছেন। তাই তিনিও বায়াত গ্রহণ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) এর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন। তিনিও রাওয়ানা করে এসে বায়াত গ্রহণ করলেন।

৩৮৭৪ ইবনু নুমাইর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা আদায় করেন; তখন আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তাওয়াফ করলে আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে আমরাও তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সায়ী করলেন। মক্কাবাসীদের কেউ যাতে কোন কিছুর দ্বারা তাঁকে আঘাত করতে না পারে সেজন্য সর্বদা আমরা তাঁকে আড়াল করে রাখতাম।

৩৮৭৫ হাসান ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হাসীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ ওয়াইল (রহঃ) বলেছেন যে, সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) যখন সিফফীন যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন যুদ্ধের খবরাখবর জানার জন্য আমরা তাঁর কাছে আসলে তিনি বললেন, নিজেদের মতামতকে সন্দেহযুক্ত মনে করবে। আবূ জানোদাল (রাঃ) এর ঘটনার দিন আমি আমাকে (আল্লাহর পথে) দেখতে পেয়েছিলাম। সেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ আমি উপেক্ষা করতে পারলে উপেক্ষা করতাম। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই সর্বাধিক জ্ঞাত। আর কোন দুঃসাধ্য কাজের জন্য আমরা যখন তরবারি হাতে নিয়েছি তখন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজবোধ্য হয়ে গিয়েছে। এ যুদ্ধের পূর্বে আমরা যত যুদ্ধ করেছি তার সবগুলোকে আমরা নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করেছি। কিন্তু এ যুদ্ধের অবস্থা এই যে, আমরা একটি সমস্যা সামাল দিতে না দিতেই আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু কোন সমাধানের পথ আমাদের জানানেই।

৩৮৭৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। সে সময় আমার মাথার চুল থেকে উকুন ঝরে ঝরে আমার মুখমণ্ডলে পড়ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মাথার এ উকুন তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তুমি মাথা মুন্ডিয়ে ফেল। আর এ জন্য তিন দিন রোযা পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাবার খাওয়াও অথবা একটি পশু কুরবানী কর। আইয়ুব (রহঃ) বলেন, এ তিনটি থেকে কোনটির কথা আগে বলেছিলেন তা আমি জানিনা।

৩৮৭৭ মুহাম্মদ ইবনু হিশাম আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে মুহরিম অবস্থায় আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। মুশরিকরা আমাদেরকে আটকে রেখেছিল। কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) বলেন, আমার কান পর্যন্ত মাথায় বাবরী চুল ছিল। (মাথার চুল থেকে) উকুন গুলো আমার মুখমণ্ডলের উপর ঝরে ঝরে পড়ছিল। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার মাথার এ উকুন গুলো তোমাকে কি কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) বলেন, এরপর আয়াত নাযিল হল, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে তবে রোযা কিংবা সা’দকা অথবা কুরবানীর দ্বারা তাঁর ফিদইয়া আদায় করবে’। (২ : ১৯৬)

৩৮৭৮ আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আনাস (রাঃ) তাদেরকে বলেছেন, উকল এবং উরায়না গোত্রের কতিপয় লোক মদিনাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে কালেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা দুগ্ধপানে অভ্যস্ত লোক, আমরা কৃষক নই। তারা মদিনার আবহাওয়ায় তাদের নিজেদের জন্য অনুকূল বলে মনে করল না। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে একজন রাখালসহ কতগুলো উট দিয়ে মদিনার বাইরে মাঠে চলে যেতে এবং ওইগুলোর দুধ ও পেশাব পান করার নির্দেশ দিলেন। তাঁরা যেতে যেতে হাররা নামক স্থানে পৌঁছে ইসলাম ত্যাগ করে পুনরায় কাফের হয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি তাদের অনুসন্ধানে তাদের পিছনে লোক পাঠিয়ে দেন। (তাদের পাকড়াও করে আনা হলে) তিনি তাদের প্রতি কঠিন দণ্ডাদেশ প্রদান করলেন। সাহাবীগণ লৌহ শলাকা দিয়ে তাদের চক্ষু উৎপাটিত করে দিলেন এবং তাদের হাত কেটে দিলেন। এরপর হাররা এলাকার এক প্রান্তে তাদেরকে ফেলে রাখা হল। অবশেষে এ অবস্থায়ই তারা মারা গেল। কাতাদা (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই লোকজনকে সা’দকা প্রদান করার জন্য উৎসাহিত করতেন এবং মুসলা থেকে বিরত রাখতেন। শুবা, আবান এবং হাম্মাদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উরায়না গোত্রের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আবূ কাসীর ও আইয়ুব (রহঃ) আবূ কিলাবা (রহঃ) এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উকল গোত্রের কতিপয় লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছিল।

৩৮৭৯ মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর রহীম (রহঃ) উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন তিনি লোকদের কাছে কাসামাত সম্পর্কে পরামর্শ জানতে চেয়ে বললেন, তোমরা এ কাসামা সম্পর্কে কি বল? তাঁরা বললেন, এটা সত্য এবং হোক। আপনার পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খলীফাগণ সকলেই কাসামাতের ১ নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আবূ কিলাবা (রহঃ) উমর ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) এর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আম্বাসা ইবনু ইবনু সাঈদ (রহঃ) বললেন, উরায়না গোত্র সম্পর্কে আনাস (রাঃ) এর হাদীসটি কোথায় এবং কে জানো? তখন আবূ কিলাবা (রহঃ) বললেন, হাদিসটি আমার জানা আছে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমার কাছেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে উকল গোত্রের কথা উল্লেখ করে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ১ কোন জনপদে কোন নিহত ব্যাক্তির লাশ এবং হত্যার আলামত পাওয়া গেলে এবং হত্যাকারীকে নির্দিষ্ট করা না গেলে তখন ঐ জনপদের লোকদের মধ্য থেকে হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার জন্য যে শপথ নেয়া হয়ে থাকে তাকে কাসামা বলা হয়।

৩৮৮০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) আমি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযানের পূর্বে (মদিনার বাইরে মাঠের দিকে) বের হলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুগ্ধবতী উটগুলোকে যি-কারাদ নামক স্থানে চরানো হতো। সালমা (রাঃ) বলেন, তখন আমার সাথে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এর গোলামের সাক্ষাৎ হল। সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুগ্ধবতী উটগুলো লুণ্ঠিত হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে ওগুলো লুণ্ঠন করেছে? সে বলল, গাতফানের লোকজন। তিনি বলেন, তখন আমি ইয়া সাবাহা বলে তিনবার উচ্চস্বরে চিতকার দিলাম। আর মদিনার উভয় পর্বতের মধ্যবর্তী সকল অধিবাসীর কানে আমার এ চীৎকার শুনিয়ে দিলাম। তারপর দ্রুতপদে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে তাদের (শ্ত্রুদের) কাছে পৌঁছে গেলাম। এ সময় তাঁরা উটগুলোকে পানি পান করাতে আরম্ভ করেছিল। আমি ছিলাম একজন দক্ষ তীরন্দাজ, তাই তখন তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছিলাম আর বলছিলাম, আমি হলাম আকওয়া এর পুত্র, আজকের দিনটি তোদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট। এভাবে শেষ পর্যন্ত আমি তাদের কাছ থেকে উটগুলোকে কেড়ে নিলাম এবং সে সঙ্গে তাদের ত্রিশখানা চাঁদরও কেড়ে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য লোক সেখানে পৌঁছালে আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কাফেলাটি পিপাসার্ত ছিলো, আমি তাদেরকে পানি পান করতেও দেইনি। আপনি এখনই এদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনুল আকওয়া! তুমি (তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে) সক্ষম হয়েছ, এখন একটু শান্ত হও। সালমা (রাঃ) বলেন, এরপর আমরা (মদিনার দিকে) ফিরে আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর উটনীর পেছনে বসালেন এবং এ অবস্থায় আমরা মদিনায় প্রবেশ করলাম।

৩৮৮১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সুওয়াইদ ইবনু নু’মান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (সুওয়াইদ ইবনু নু’মান) খায়বারের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে খায়বার অভিযানে বেরিয়েছিলেন। [সুওয়াইদ ইবনু নু’মান (রাঃ) বলেন] যখন আমরা খায়বারের ঢালু এলাকার ‘সাহবা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর সাথে করে আনা খাবার পরিবেশন করতে হুকুম দিলেন। কিন্তু ছাতু ব্যতীত আর কিছুই দেওয়া সম্ভব হল না। তাই তিনি ছাতুগুলোকে গুলতে বললেন। ছাতুগুলোকে গুলানো হল। এরপর (তা থেকে) তিনিও খেলেন, আমরাও খেলাম। তারপর তিনি মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উঠে পড়লেন এবং কুল্লি করলেন। আমরাও কুল্লি করলাম। তারপর তিনি নতুন ওযু না করেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৩৮৮২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলা পথ অতিক্রম করছিলাম, এমন সময় কাফেলার জনৈক ব্যাক্তি আমির (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলল, হে আমির! তোমার সমর সংগীত থেকে আমাদেরকে কিছু শোনাবে কি? আমির (রাঃ) ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী থেকে নেমে গেলেন এবং সংগীতের তালে তালে গোটা কাফেলা হাঁকিয়ে চললেন। সংগীতে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনার তওফীক না হলে আমরা হেদায়েত লাভ করতাম না, সা’দকা দিতাম না আর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম না। তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। যতদিন আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আপনার জন্য সমর্পিত-প্রাণ হয়ে থাকব। আর আমরা যখন শত্রুর মুকাবিলায় যাব তখন আপনি আমাদের কে দৃঢ়পদ রাখুন এবং আমাদের উপর ‘সাকিনা’ (শান্তি) বর্ষণ করুন। আমাদের যখন (কুফরের দিকে) সজোরে আওয়াজে ডাকা হয় আমরা তখন তা প্রত্যাখ্যান করি। আর এ কারণে তারা চীৎকার দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লোক-লষ্কর জমা করে। (কবিতাগুলো শুনে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সংগীতের গায়ক কে? তাঁরা বললেন, আমির ইবনুল আকওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। কাফেলার একজন বললোঃ হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার জন্য (শাহাদাত) নিশ্চিত হয়ে গেলো। (আহ) আমাদেরকে যদি তার কাছ থেকে আরো উপকার হাসিল করার সুযোগ দিতেন। এরপর আমরা এসে খায়বার পৌঁছলাম এবং তাদেরকে অবরোধ করলাম। অবশেষে এক পর্যায়ে আমাদেরকে কঠিন ক্ষুধার জ্বালাও বরণ করতে হল। কিন্তু পরেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করলেন। বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় মুসলমানগণ (রান্নাবান্নার জন্য) অনেক আগুন জ্বালালেন। (তা দেখে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এ সব কিসের আগুন? তোমরা কি পাকাচ্ছ? তারা জানালেন , গোশত পাকাচ্ছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিসের গোশত? লোকজন উত্তর করলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এগুলি ঢেলে দাও এবং ডেকচি গুলো ভেঙ্গে ফেল। একজন বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গোশতগুলো ঢেলে দিয়ে যদি পাত্রগুলো ধুয়ে নেই তাতে যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেন, তাও করতে পারো। এরপর যখন সবাই যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, আর আমির ইবনুল আকওয়া (রাঃ)-এর তরবারিখানা ছিলো খাটো, তা দিয়ে তিনি জনৈক ইহুদীর পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারীর তীক্ষ্ম ভাগ ঘুরে গিয়ে তাঁর নিজের হাঁটুতে লেগে পড়ে। তিনি এ আঘাতের কারণে মারা যান। সালমা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) বলেনঃ তারপর সব লোক খায়বার থেকে প্রত্যাবর্তন শুরু করলে এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললেন, কি খবর? আমি বললামঃ আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! লোকজন ধারণা করেছে যে, (স্বীয় হস্তের আঘাতে মারা যাওয়ার কারণে) আমির (রাঃ) এর আমল বাতিল হয়ে গিয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা যে বলেছে সে ভুল বলেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দুটি আঙ্গুল একত্রিত করে সেদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, বরং আমিরের রয়েছে দ্বিগুন সওয়াব। অবশ্যই সে একজন কর্মতৎপর ব্যাক্তি এবং আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ। তাঁর মত গুণসম্পন্ন আরবী খুব কম আছে।

৩৮৮৩ আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে খায়বারে পৌঁছলেন। আর তাঁর নিয়ম ছিল, তিনি যদি (কোনো অভিযানে) কোন গোত্রের এলাকায় রাত্রিকালে গিয়ে পৌঁছতেন, তা হলে ভোর না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করতেন না (বরং অপেক্ষা করতেন)। ভোর হলে ইহুদীরা তাদের কৃষি সরঞ্জামাদি ও টুকরি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যখন (সসৈন্য) দেখতে পেলো, তখন তারা (ভীত হয়ে) বলতে লাগলো, মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ তার সেনাদলসহ এসে পড়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যখনই কোনো গোত্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছি তখন সেই সতর্ককৃত গোত্রের রাত পোহায় অশুভভাবে।

৩৮৮৪ সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রত্যূষে খায়বার এলাকায় গিয়ে পৌঁছোলাম। তখন সেখানকার অধিবাসীরা কৃষি সরঞ্জামাদি, নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে পেলো তখন বলতে শুরু করল্‌ মুহাম্মদ, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ তার সেনাদলসহ এসে পড়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কথা শুনে) আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারন করে বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যখনই কোনো গোত্রের এলাকায় গিয়ে পৌঁছি, তখন সেই সতর্কিকৃত গোত্রের রাত পোহায় অশুভভাবে। [আনাস (রাঃ) বলেন] এ যুদ্ধে আমরা (গনীমত হিসেবে) গাধার গোশত লাভ করে ছিলাম। (আর তা পাকানো হচ্ছিল)। এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষনা করলেন, আল্লাহ ও তারঁ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা নাপাক।

৩৮৮৫ আবদুল্লাহ ইবনুুব আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে একজন আগন্তুক এসে বললো, (গনীমতের) গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসে বলল, গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখনও চুপ থাকলেন। লোকটি তৃতীয়বার এসে বলল, গৃহপালিত গাধাগুলো খতম করে দেয়া হচ্ছে। তখন তিনি একজন ঘোষণাকারীকে হুকুম দিলেন, সে লোকজনের সামনে গিয়ে ঘোষনা দিলো, আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাঃ) তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (ঘোষণা শুনে) ডেকচিগুলো উল্টিয়ে দেয়া হল। অথচ ডেকচিগুলোতে গাধার গোশত তখন টগবগ করে ফুটছিল।

৩৮৮৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের নিকটবর্তী এক স্থানে প্রত্যুষে সামান্য অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করে বললেন, খায়বার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যখনই কোনো গোত্রের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে পৌঁছি তখনই সতর্ককৃত সেই গোত্রের সকাল হয় অশুভ রুপ নিয়ে। এ সময়ে খায়বার অধিবাসীরা (ভয়ে) বিভিন্ন অলি-গলিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে আরম্ভ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যেকার যুদ্ধে সক্ষম লোকদের হত্যা করলেন। আর শিশু (ও মহিলাদের)-দের কে বন্দী করলেন। বন্দীদের মধ্যে ছিলেন সাফিয়্যা [বিনত হুইয়াই (রাঃ)] প্রথমে তিনি দাহইয়াতুল কালবীর অংশে এবং পরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অংশে বন্টিত হন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আযাদ করত এই আযাদীকে মোহর ধার্য করেন (এবং বিবাহ করে নেন)। আবদুল আযীয ইবনু সুহায়ব (রহঃ) সাবিত (রহঃ) কে বললেন, হে আবূ মুহাম্মদ! আপনি কি আনাস (রাঃ)—কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর [সাফিয়্যা (রাঃ)-এর] মোহর ধার্য করেছেন? তখন সাবির (রাঃ) ‘হাঁ-সূচক’ ইঙ্গিত করে মাথা নাড়লেন।

৩৩৮৭ আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খায়বারের যুদ্ধে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে (প্রথমত) বন্দী করেছিলেন। পরে তিনি তাঁকে আযাদ করে বিয়ে করেছিলেন। সাবিত (রহঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোহর কত ধার্য করেছিলেন? আনাস (রাঃ) বললেনঃ স্বয়ং সাফিয়্যা (রাঃ)-কেই মোহর ধার্য করছিলেন এবং তাঁকে আযাদ করে দিয়েছিলেন।

৩৮৮৮ কুতায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (খায়বার যুদ্ধে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। পরস্পরের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (দিনের শেষে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছাউনিতে ফিরে আসলেন আর অন্যরাও (মুশরিকরা) তাদের ছাউনিতে ফিরে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে এমন এক ব্যাক্তি ছিল , যে তার তরবারি থেকে একাকী কিংবা দলবন্ধ কোনো শত্রু সৈন্যকেই রেহাই দেয়নি। বরং পিছু ধাওয়া করে তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা হয়েছে। (সাহাবাগণের মধ্যে তার আলোচনা উঠলো) তাদের কেউ বললেন, অমুক ব্যাক্তি আজ যা করেছে আমাদের মধ্যে তার অন্য কেউ এমনটি করতে পারেনি। তখন রাসুলূল্লাহ বললেন, কিন্তু সে তো জাহান্নামী। (সকলের কাছে কথাটি আশ্চর্য মনে হল) সাহাবীগণের একজন বললেন, (ব্যাপারটি) দেখার জন্য আমি তার সঙ্গী হব। সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) বলেন, পরে তিনি ঐ লোকটির সাথে বের হলেন, লোকটি যখন থেমে যেতো তিনিও তার সাথে থেমে যেতেন, আর যখন লোকটি দ্রুত চলতো তিনিও তার সাথে দ্রুত চলতেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময়ে লোকটি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল এবং (যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে) সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করল। তাই সে (এক পর্যায়ে) তার তরবারির গোড়ার অংশ মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ম ভাগ বুকের বরাবর রাখলো। এরপর সে তরবারির উপর নিজেকে সজোরে চেপে ধরে আত্মহত্যা করলো। এ অবস্থা দেখে অনুসরণকারী সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছুটে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার? তিনি বললেন, একটু পূর্বে আপনি যে লোকটির ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন যে, লোকটি জাহান্নামী, আর তার সম্পর্কে এরুপ কথা সকলের কাছে আশ্চর্যকর অনুভূত হয়েছিল। তখন আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমি লোকটির অনুসরণ করে ব্যাপারটি দেখে আসব। কাজেই আমি ব্যাপারটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। এরপর (এক সময়ে দেখলাম) লোকটি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হল এবং দ্রুত নিজের মৃত্যু কামনা করল, তাই সে নিজের তরবারির উপর নিজেকে সজোরে চেয়ে ধরে আত্মহত্যা করল। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অনেক সময় মানুষ (বাহ্যত) জান্নাতীদের ন্যায় আমল করতে থাকে, যা দেখে অন্যরা তাকে জান্নাতীই মনে করে। অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী। আবার অনেক সময় মানুষ (বাহ্যত) জাহান্নামীদের মত আমল করতে থাকে যা দেখে লোকজনও সেইরুপই মনে করে থাকে, অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী।

৩৮৮৯ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর সংগীদের মধ্যে থেকে এক ব্যাক্তি যে মুসলমান বলে দাবি করতো, তার সম্পর্কে বললেন, লোকটি জাহান্নামী। এরপর যুদ্ধ আরম্ভ হলে লোকটি ভীষণভাবে যুদ্ধ চালিয়ে গেল, এমনকি তার দেহের অনেক স্থান ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল। এতে কারো কারো (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যতবাণীর উপর) সন্দেহের উপক্রম হল। (কিন্তু তারপরেই দেখা গেল) লোকটি আঘাতের যন্ত্রণায় তুণীরের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে সেখান থেকে তীর বের করে আনল। আর তীরটি নিজের বক্ষদেশে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করল। তা দেখে কতিপয় মুসলমান দ্রুত ছুটে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ আপনার কথা সত্য বলে প্রমাণিত করেছেন। ঐ লোকটি নিজেই নিজের বক্ষে আঘাত করে আত্মহত্যা করেছে। তখন তিনি বললেন, হে অমুক! দাঁড়াও, এবং ঘোষণা দাও যে, মু’মিন ব্যাতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। অবশ্য আল্লাহ (কখনো কখনো) ফাসিক ব্যাক্তি দ্বারাও দ্বীনের সাহায্য করে থাকেন। মা’মার (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনায় শুআয়ব (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। শাবীব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম (আবদুল্লাহ) ইবনু মুবারাক হাদীসটি ইউনুস-যুহতী-সাঈদ [ইবনুল মূসা ইয়্যাব (রাঃ)] সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। সালিহ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে ইবনু মূবারাক (রাঃ)-এর মতই বর্ণনা করেছেন। আর যুবায়দি (রহঃ) হাদীসটি যুহরী, আবদুর রহমান ইবনু কাআব, উবায়দুল্লাহ ইবনু কাআব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে খায়বারে অংশগ্রহণকারী জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। (যুবায়দী আরো বলেন) যুহরী (রহঃ) এ হাদিসটিতে আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ এবং সাঈদ ইবনুল মূসা ইয়্যাব) (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

৩৮৯০ মূসা ইবনু ঈসমাঈল (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অভিমুখে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করলে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, না ইলাহা ইল্লাল্লাহু! (আল্লাহ মহান , আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি সদয় হও। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সাথেই আছেন। [ আবূ মূসা] আশআরী (রাঃ) বলেন] আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সওয়ারীর পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে লা’ হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ বলতে শুনে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস! আমি বললাম, আমি হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ভান্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভান্ডার? আমি বললাম, হ্যাঁ! ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কথাটি হল ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।

৩৮৯১ মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি সালমা ইবনু আকওয়া) (রাঃ)-এর পায়ের নলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম , সে আবূ মুসলিম! এ আঘাতটি কিসের? তিনি বললেন, এটি খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত আঘাত। (যুদ্ধক্ষেত্রে আমাকে আঘাতটি মারার পর) লোকজন বলাবলি শুরু করে দিল যে, সালমা মারা যাবে। কিন্তু এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি ক্ষতস্থানটিতে তিনবার ফুঁ দিয়ে দিলেন। ফলে আজ পর্যন্ত আমি এতে কোনো ব্যথা অনুভব করিনি।

৩৮৯২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন। পরস্পরের মধ্যে তুমুল লড়াই হল। (শেষে) সকলেই নিজ নিজ সেনা ছাউনিতে ফিরে গেল। মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে এমন এক ব্যাক্তি ছিল, যে মুশরিকদের কোনো একাকী কিংবা দলবদ্ধ কোন শত্রুকেই তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেয়নি বরং সবাইকেই তাড়া করে তার তরবারির আঘাতে হত্যা করেছে। তখন (তার ব্যপারে) বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল! অমুক ব্যাক্তি আজ যে পরিমাণ আমল করেছে অন্য কেউ আজ সে পরিমাণ করতে পারেনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ব্যাক্তি তো জাহান্নামী। তারা বললো, তা হলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতবাসী হতে পারবে যদি এ ব্যাক্তই জাহান্নামী হয়? তখন কাফেলার মধ্যে থেকে একজন বলল, অবশ্যই আমি তাকে অনুসরণ করে দেখব (যে তার পরিণাম কি ঘটে) (তিনি বলেন) লোকটি যখন দ্রুত চলতো আর ধীরে চলতো সর্বাবস্থায় আমি তার সাথে থাকতাম। পরিশেষে লোকটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে আর (আঘাতের যন্ত্রণায়) সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করে তার তরবারির বাট মাটিতে স্থাপন করল এবং ধারালো ভাগ নিজের বুক বরাবর রেখে এর উপর সজোরে ঝুঁকে পড়ে আত্মহত্য করলো। তখন (অনুসরণকারী) সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার? তিনি তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সব ঘটনা জানালেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেউ কেউ (দৃশ্যত) জান্নাতবাসীদের মত আমল করতে থাকে আর লোকজন তাকে অনুরুপই মনে করে থাকে প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী। আবার কেউ কেউ জাহান্নামীর মত আমল করে থাকে আর লোকজনও তাকে তাই মনে করে অথচ সে জান্নাতী।

৩৮৫৩ মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ খুযাই (রহঃ) আবূ ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক জুম’আর দিনে আনাস (রাঃ) লোকজনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তাদের (মাথায়) তায়ালিসা চাঁদর। তখন তিনি বললেন, এ মুহুর্ত্বে এদেরকে যেন খায়বারের ইহুদীদের মতো দেখাচ্ছে। ১ ১ তায়ালিস শব্দটি তায়ালসান শব্দটির বহুবচন। মূল শব্দটি ফারসী। পরবর্তীতে এটি সামান্য বিকৃত হয়ে আরবী ভাষায় রুপান্তরিত হয়। এটি এক প্রকার চাঁদরের নাম। খায়বারের ইহুদি সম্প্রদায় এ চাঁদর অধিক ব্যবহার করতো। তাদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে এ চাঁদর ব্যবহার করতে আনাস (রাঃ) কখনো দেখেননি। তাই তিনি যখন বসরায় আসলেন আর খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের গায়ে ঐ চাঁদর দেখে খায়বারের ইহুদিদের তুলনা দিয়ে নিজ অনুভুতি প্রকাশ করেছেন।

৩৮৯৪ আবদুল্লাহ ইবনু মাসায়লামা (রহঃ) সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চক্ষু রোগে আক্রান্ত থাকার দরুণ আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে খায়বার অভিযাবে পেছনে ছিলেন। [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা থেকে রওয়ানা দিয়ে এসে পড়লে] আলী (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে (যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে) আমি পেছনে বসে থাকবো! সুতরাং তিনি গিয়ে তাঁর সাথে মিলিত হলেন। [সালমা (রাঃ) বলেন] খায়বার বিজিত হওয়ার পূর্ব রাতে তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন একজন ব্যাক্তির হাতে ঝান্ডা অর্পন করব অথবা তিনি বলেছিলেন, আগামীকাল সকালে এমন এক ব্যাক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ভালোবাসেন। আর তাঁর হাতেই খায়বার বিজিত হবে। কাজেই আমরা সবাই তা পাওয়ার আকাংক্ষা করছিলাম। তখন বলা হল, ইনি তো আলী (রাঃ)! এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঝান্ডা প্রদান করলেন এবং তাঁর হাতেই খায়বার বিজিত হল।

৩৮৯৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধে একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামীকাল সকালে আমি এমন এক ব্যাক্তির হাতে ঝান্ডা অর্পণ করব যার হাতে আল্লাহ খায়বারে বিজয় দান করবেন এবং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল) ভালবাসেন আর সেও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল) কে ভালোবাসে। সাহল (রাঃ) বলেন, (ঘোষণাটি শুনে মুসলমানগণ এ জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই রাত কাটালো যে, তাদের মধ্যে কাকে অর্পন করা হবে এই ঝান্ডা। সকাল হল, সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলেন, আর প্রত্যেকেই মনে মনে এ ঝান্ডা লাভ করার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) কোথায়? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি তো চক্ষুরোগে আক্রান্ত অবস্থায় আছেন। তিনি বললেন, তাকে লোক পাঠিয়ে সংবাদ দাও। সে মতে তাঁকে আনা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় চোখে থু থু লাগিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন। ফলে তাঁর চোখ এরুপ সুস্থ হয়ে উঠলো যে, যেন কখনো চোখে কোনো রোগই ছিলনা। এরপর তিনি তাঁর হাতে ঝান্ডা অর্পণ করলেন। তখন আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আমাদের মত (মুসলমান) না হওয়া পর্যন্ত আমি তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বর্তমান অবস্থায়ই তাদের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে উপনিত হও, এরপর তাদের কে ইসলাম গ্রহণের প্রতি আহবান করো (যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে) ইসলামী বিধানে ওদের উপর যেসব হক বর্তায় সেসব সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করে দাও। কারণ আল্লাহর কসম! তোমার দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ যদি মাত্র একজন মানুষকেও হেদায়েত দেন তা হলে তা তোমার জন্য লোহিত বর্ণের (মূল্যবান) উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম।

৩৮৯৬ আবদুল গাফফর ইবনু দাঊদ ও আহমদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বারে এসে পৌঁছলাম। এরপর যখন আল্লাহ তাঁকে খায়বার দুর্গের বিজয় দান করলেন তখন তাঁর কাছে (ইহুদী দলপতি) হুয়াঈ ইবনু আখতাবের কন্যা সাফিয়্যা (রাঃ)-এর সৌন্দর্য্যের কথা আলোচনা করা হল। তার স্বামী (কেনানা ইবনুুর রাবী এ যুদ্ধে) নিহত হয়। সে ছিল নববধূ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের জন্য মনোনীত করেন এবং তাঁকে সংগে করে (খায়বার থেকে) রওয়ানা হন। এরপর আমরা যখন সা’দ্দুস সাহবা নামক স্থান পর্যন্ত দিয়ে পৌঁছলাম তখন সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর মাসিক ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা লাভ করলেন। এ সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে বাসরঘরে সাক্ষাৎ করলেন। তারপর একটি ছোট দস্তরখানে (খেজুর-ঘি ও ছাতু মেশানো এক প্রকার) হায়স নামক খাদ্য সাজিয়ে আমাকে বললেন, তোমার আশেপাশে যারা আছে সবাইকে ডাকো। আর এটই ছিল সাফিয়্যা (রাঃ)-এর সাথে বিয়ের ওয়ালীমা। তারপর আমরা মদিনার দিকে রওয়ানা হলাম, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর পেছনে (সাওয়ারীর পিঠে) সাফিয়্যা (রাঃ)-এর জন্য একটি চাঁদর বিছাতে দেখেছি। এরপর তিনি তাঁর সাওয়ারীর উপর হাঁটুদয় মেলে বসতেন আর সাফিয়্যা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাঁটুর উপর পা রেখে সাওয়ারীতে আরোহণ করতেন।

৩৮৯৭ ইসমাঈল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার থেকে প্রত্যাবর্তন করার পথে সাফিয়্যা (রাঃ) বিনতে হুয়াঈ-এর কাছে তিনি দিন অবস্থান করে তাঁর সাথে বাসর যাপন করেছেন। আর সাফিয়্যা (রাঃ) ছিলেন সে সব মহিলাদের একজন যাদের জন্য পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। (১) ১) পর্দার ব্যবস্থার কারণে বোঝা গেল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উম্মুল মু’মিনীণো হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কেননা মিলকে ইয়ামীন বা ক্রীতদাসী হিসেবে গ্রহণ করে থাকলে তার মৌলিক সতর ছাড়া অন্যান্য অংগের পর্দার ব্যবথা করার প্রয়োজন হত না।

৩৮৯৮ সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার ও মদিনার মধ্যবর্তী এক জায়গায় তিনি দিন অবস্থান করেছিলেন আর এ সময় তিনি সাফিয়্যা (রাঃ)-এর সঙ্গে বাসর যাপন করেছেন। আমি মুসলমানগণকে তাঁর ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত দিলাম। অবশ্য এ ওয়ালীমাতে গোশত রুটির ব্যবস্থা ছিল না, কেবল এতটুকু ছিল যে, তিনি বিলাল (রাঃ)-কে দস্তরখান বিছাতে বললেন। দস্তরখান বিছানো হল। এরপর তাতে কিছু খেজুর, পনির ও ঘি রাখা হল। এ অবস্থা দেখে মুসলিমগণ পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো যে, তিনি [সাফিয়্যা (রাঃ)] কি উম্মাহাতুল মু’মীনিনেরই একজন, না ক্রীতদাসীদের একজন? তাঁরা (আরো) বললেন, যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য পর্দার ব্যবস্থা করেন তাহলে তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীনেরই একজন বোঝা যাবে। তার পর্দার ব্যবস্থা না করলে ক্রীতদাসী হিসেবেই বুঝতে হবে। এরপর যখন তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] রওয়ানা দিলেন তখন তিনি নিজের পেছনে সাফিয়্যা (রাঃ)-এর জন্য বসার জায়গা করে দিয়ে পর্দা টানিয়ে দিলেন।

৩৮৯৯ আবূল ওয়ালীদ ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা খায়বারের দুর্গ অবরোধ করে রাখলাম, এমন সময়ে এক ব্যাক্তি একটি থলে নিক্ষেপ করল। তাতে ছিল কিছু চর্বি। আমি সেটি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসলাম, হঠাৎ পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখলাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার দিকে তাকিয়ে আছেন) তাই আমি লজ্জিত হয়ে গেলাম।

৩৯০০ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। তিনি রসুন খেতে নিষেধ করেছেন কথাটি কেবল নাফি’ থেকে বর্ণিত হয়েছে, আর গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন কথাটি সালিম [ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত হয়েছে।

৩৯০১ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু কাযাআ (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুতআ (মেয়াদী বিয়ে) করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন। [১] [১ ] মুত্আ বা মেয়াদী বিয়ে বলতে কোন মহিলাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কোন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিয়ে করাকে বোঝায়। ইসলামের প্রাথমিককালে এ প্রকারের বিয়ে বৈধ থাকলেও খায়বার যুদ্ধের সময় তা হারাম করে দেয়া হয়। এরপর অষ্টম হিজরীর মক্কা বিজয়ের সময় কেবল তিন দিনের জন্য বৈধ করা হয়েছিল। এ তিন দিন পর আবার তা চিরকালের জন্য হারাম ঘোষিত হয়।

৩৯০২ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন।

৩৯০৩ ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন।

৩৯০৪ সুলায়মান ইবনু হার্‌ব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাসূলুল্লাহ্ খায়বারের যুদ্ধের দিন (গৃহপালিত)গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশ্‌ত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।

৩৯০৫ সাঈদ ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ইবনু আবী আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেন) খায়বার যুদ্ধে আমরা অত্যন্ত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলাম, আর তখন আমাদের ডেকচিগুলোতে (গাধার গোশ্‌ত) টগবগ করে ফুটছিলো। রাবী বলেন, কোন কোন ডেকচির গোশ্‌ত পাকানো হয়ে গিয়েছিল এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী এসে ঘোষণা দিলেন, তোমরা (গৃহপালিত) গাধার গোশ্‌ত থেকে সামান্য পরিমাণও খাবে না এবং তা ঢেলে দেবে। ইবনু আবী আওফা (রাঃ) বলেন, ঘোষণা শুনে আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, যেহেতু গাধাগুলো থেকে খুমুছ (এক-পঞমাংশ) আদায় করা হয়নি এ কারণেই তিনি সেগুলো খেতে নিষেধ করেছেন। আর কেউ কেউ মন্তব্য করলেন, না, তিনি চিরদিনের জন্যই গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা গাধা অপবিত্র জিনিস খেয়ে থাকে।

৩৯০৬ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) বারাআ এবং আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (খায়বার যুদ্ধে) তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলেন। (খাবারের জন্য তাঁরা) গাধার গোশ্‌ত পেলেন। তাঁরা তা রান্না করলেন। এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, ডেকচিগুলো সব উল্টিয়ে ফেল।

৩৯০৭ ইসহাক (রহঃ) আদী ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (তিনি বলেন) আমি বারাআ এবং ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, খায়বারের দিন তাঁরা গাধার গোশ্‌ত পাকানোর জন্য ডেকচি বসিয়েছিলেন, এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ডেকচিগুলো উল্টিয়ে ফেল।

৩৯০৮ মুসলিম (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বারে অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলাম । পরে তিনি উপরোল্লিখিত বর্ণনা অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৯০৯ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কাঁচা ও রান্না করা সকল প্রকারের গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত ঢেলে দিতে হুকুম করেছেন। এরপরে আর কখনো তা খেতে অনুমতি দেননি।

৩৯১০ মুহাম্মদ ইবনু আবূল হুসায়ন (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঠিক জানিনা যে, গৃহপালিত গাধাগুলো মানুষের মাল-সামান আনা-নোয়ার কাজে ব্যবহার হতো, কাজেই এর গোশ্‌ত খেলে মানুষের বোঝা বহনকারী পশু নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং লোকজনের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়বে, এ জন্য কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেতে নিষেধ করেছিলেন, না-খায়বারের দিনে এর গোশ্‌ত (আমাদের জন্য) স্থায়ীভাবে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন।

৩৯১১ হাসান ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ার জন্য দুই অংশ এবং পদাতিক যোদ্ধার জন্য এক অংশ হিসেবে (গনীমতের) সম্পদ বন্টন করেছেন। বর্ণনাকারী [উবায়দুল্লাহ্ ইবনু উমর (রাঃ)] বলেন, নাফি হাদীসটির ব্যাখ্যা করে বলেছেন, (যুদ্ধে) যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে তার জন্য তিন অংশ এবং যার সঙ্গে ঘোড়া থাকে না, তার জন্য এক অংশ।

৩৯১২ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি খায়বারের প্রাপ্ত খুমুস থেকে বনী মুত্তালিবকে অংশ দিয়েছেন, আমাদেরকে দেননি। অথচ আপনার সাথে বংশের দিক থেকে আমরা এবং বনী মুত্তালিব একই পর্যায়ের। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিঃসন্দেহে বনী হাশিম এবং বনী মুত্তালিব সম-মর্যাদার অধিকারী। যুবায়র (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী আবদে শাম্‌স ও বনী নাওফিলকে (খায়বার যুদ্ধের খুমুস থেকে) কিছুই দেননি।

৩৯১৩ মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হিজরতের খবর পৌছলো। তাই আমি ও আমার দু’ভাই আবূ বুরদা ও আবূ রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের জন্য বেরিয়ে পরলাম। আমি ছিলাম আমার দু’ ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে আরোহণ করলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ্) নাজ্জাশীর নিকট পৌছেয়ে দিল। সেখানে আমরা জা’ফর ইবনু আবূ তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাঁর সাথেই আমরা রয়ে গেলাম। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর খায়বার বিজয়কালে সকলে (হাসশা থেকে) প্রত্যাবর্তন করে এসে তাঁর সঙ্গে একত্রিত হলাম। এ সময়ে মুসলমানদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থৎ জাহাজযোগে আগমনকারীদেরকে বললো, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের অপেক্ষা অগ্রগামী। আমাদের সাথে আগমনকারী আসমা বিন্‌ত উমায়স একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী হাফসার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। অবশ্য তিনিও (তাঁর স্বামী জা’ফরসহ) নাজ্জাশী বাদশাহর দেশের হিজরতকারীদের সাথে হিজরত করেছিলেন। আসমা (রাঃ) হাফসার কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমর (রাঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। উমর (রাঃ) আসমাকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? হাফসা (রাঃ) বললেন, তিনি আসমা বিনত উমায়স (রাঃ)। উমর (রাঃ) বললেন, ইনই কি হাবশা দেশে হিজরতকারিণী আসমা? ইনই কি সমুদ্র ভ্রমণকারিণী? আসমা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ! তখন উমর (রাঃ) বললেন, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বেশি ঘনিষ্ঠ। এতে আসমা (রাঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, কখনো হতে পারে না। আল্লাহর কসম, আপনারা তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের আহারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের মধ্যকার অবুঝ লোকদেরকে সুদুপদেশ দিতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহুদূর এবং সর্বদা শত্রু কবলিত-হাবশা দেশে। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -এর উদ্দেশ্যেই ছিলো আমাদের এ কুরবানী। আল্লাহর কসম, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত কোন খাবার গ্রহণ করবো না এবং পানিও পান করবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হতো, ভয় দেখানো হতো। অচিরেই আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এসব কথা বলবো। এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করবো। তবে আল্লাহর কসম, আমি মিথ্যা বলবো না, ঘুরিয়ে কিংবা এর উপর বাড়িয়েও কিছু বলবো না। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন, তখন আসমা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! উমর (রাঃ) এসব কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাঁকে কি উত্তর দিয়েছ? আসমা (রাঃ) বললেনঃ আমি তাঁকে এরূপ এরূপ বলেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ ব্যাপারে) তোমাদের তুলনায় উমর (রাঃ) আমার বেশি ঘনিষ্ঠ নয়। কারণ উমর (রাঃ) এবং তাঁর সাথীদের তো মাত্র একটই হিজরত লাভ হয়েছে, আর তোমরা যারা জাহাজে আরোহণকারী ছিলে তাদের দু’টি হিজরত অর্জিত হয়েছে। আসমা (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবূ মূসা (রাঃ) এবং জাহাজযোগে আগমনকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা দলে দলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন এ কথাটি তাদের কাছে এতই প্রিয় ছিল যে, তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস এত প্রিয় ছিল না। আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি আবূ মূসা [আশ্‌আরী (রাঃ)]-কে দেখেছে, তিনি বারবারই আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন। আবূ বুরদা (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে আরো বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশআরী গোত্রের লোকজন রাতের বেলায় এলেও আমি তাদেরকে তাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ থেকেই চিনতে পারি। এবং রাতের বেলায় তাদের কুরআন তিলাওয়াত শুনেই আমি তাদের বাড়িঘর চিনে নিতে পারি। যদিও আমি দিনের বেলায় তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে দেখিনি। হাকীম ছিলেন আশআরীদের একজন। যখন তিনি কোন দল কিংবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) কোন শত্রুর মুকাবিলায় আসতেন তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, আমার বন্ধুরা তোমাদের বলেছেন, যেন তোমরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা কর।

৩৯১৪ ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার জয় করার পরে আমরা তাঁর কাছে গিয়ে পৌছলাম। তিনি আমাদের জন্য গনীমতের মাল বন্টন করেছেন। আমাদেরকে ছাড়া বিজয়ে অংশগ্রহণ করেনি এমন কারুর জন্য তিনি (খায়বারের গনীমতের মাল) বন্টন করেননি।

৩৯১৫ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করেছি কিন্তু গনীমত হিসেবে আমরা সোনা, রূপা কিছুই লাভ করিনি। আমরা যা পেয়েছিলাম তা ছিল গরু, উট, বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী এবং ফলের বাগান। (যুদ্ধ শেষ করে) আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থান পর্যন্ত ফিরে আসলাম। তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] সঙ্গে ছিল মিদআম নামক একটি গোলাম। বনী যুবায়র-এর জনৈক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এটি হাদিয়া দিয়েছিল। এক সময়ে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাওদা নামানোর কাজে ব্যস্ত ছিল আর ঐ মুহূর্তে এক অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি তীর ছুটে এসে তার গায়ে পড়লো। ফলে গোলামটি মারা গেল। এ অবস্থা দেখে লোকজন বলাবলি শুরু করলো যে, কি আনন্দদায়ক তার এ শাহাদত! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই নাকি? সেই মহান সত্তার কসম, তাঁর হাতে আমার প্রাণ, বন্টনের আগে খায়বার যুদ্ধলব্ধ গনীমত থেকে সে যে চাঁদরখানা তুলে নিয়েছিল সেটি আগুন হয়ে অবশ্যই তাকে দগ্ধ করবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথাটি শোনার পর আরেক ব্যাক্তি একটি অথবা দু’টি জুতার ফিতা নিয়ে এসে বললো, এ জিনিসটি আমি বন্টনের আগেই নিয়েছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ একটি অথবা দু’টি ফিতাও আগুনের ফিতায় রূপান্তরিত হতো।

৩৯১৬ সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মনে রেখো! সেই সত্তর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যদি পরবর্তী বংশধরদের নিঃস্ব ও রিক্ত-হস্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত তা হলে আমি আমার সমদয় বিজিত এলাকা সেভাবে বন্টন করে দিতাম যেভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার বন্টন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তা তাদের জন্য গচ্ছিত আমানত হিসাবে রেখে যাচ্ছি যেন পরবর্তী বংশধরগণ তা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিতে পারে।

৩৯১৭ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পরবর্তী মুসলমানদের উপর আমার আশংকা না থাকলে আমি তাদের (মুজাহিদগণের) বিজিত এলাকাগুলো তাঁদের মধ্যে সেভাবে বন্টন করে দিতাম যেভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার বন্টন করে দিয়েছিলেন।

৩৯১৮ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমবাসা ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে (খায়বার যুদ্ধের গনীমতের) অংশ চাইলেন। তখন বনূ সাঈদ ইবনু আস গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি বলে উঠলো, না, তাকে (খায়বারের গনীমতের অংশ) দিবেন না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, এ লোক তো ইবনু কাওকালের হত্যাকারী (কাজেই তাকে না দেওয়া হোক)। কথাটি শুনে সে ব্যাক্তি বললো, বাঃ! দান পাহাড় থেকে নেমে আসা অদ্ভুত বিড়ালের কথায় আশ্চর্য বোধ করছি। যুবায়দী-যুহরী-আমবাসা ইবনু সাঈদ (রহঃ)- আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি সাইদ ইবনু আস (রাঃ) সম্পর্কে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবান [ইবনু সাঈদ (রাঃ)]-এর নেতৃত্বে একটি সৈন্যদল মদিনা থেকে নাজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার বিজয় করে সেখানে অবস্থানরত ছিলেন তখন আবান (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ সেখানে এসে তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর] সাথে মিলিত হলেন। তাদের ঘোড়াগুলোর লাগাম ছিল খেজুরের ছালের বানানো। (অর্থাৎ তাঁরা ছিলেন রড়ই নিঃস্ব) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাদেরকে কোন অংশ দিবেন না। তখন আবান (রাঃ) বললেন, আরে বুনো বিড়াল, দান পাহাড় থেকে নেমে আসছ বরং তুমই না পাওয়ার যোগ্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবান, বসো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (আবান ও তার সঙ্গীদেরকে) অংশ দিলেন না। [১] [১ ] উহুদের যুদ্ধে আবান ইবনু সাঈদ কাফের ছিলেন এবং কাফেরদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে নুমান ইবনু কাওকাল (রাঃ)-কে শহীদ করেন। এরপর তিনি খায়বারের যুদ্ধের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হন। বিতর্কের মুহূর্তে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। ‘দান’ আরবের দাওস এলাকার একটি পাহাড়ের নাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর গোত্র সেখানেই বাস করতো। এ জন্যই আবান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে তাঁর উপনামের অর্থ ও ঐ পাহাড়ের সাথে মিলিয়ে বলেছেন, বুনো বিড়াল, দান পাহাড় থেকে এসেছে।

৩৯১৯ মূসা ইবনু ইস্‌মাঈল (রহঃ) আমর ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার দাদা [সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আস (রাঃ)] আমাকে জানিয়েছেন যে, আবান ইবনু সাঈদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে সালাম দিলেন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ লোক তো ইবনু কাওকাল (রাঃ)-এর হত্যাকারী! তখন আবান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বললেন, আশ্চর্য! দান পাহাড়ের চূড়া থেকে অকস্মাৎ নেমে আসা বুনো বিড়াল! সে এমন এক ব্যাক্তির সম্পর্কে আমাকে দোষারোপ করছে যাকে আল্লাহ্ আমার হাত দ্বারা সম্মানিত করেছেন (শাহাদত দান করেছেন)। আর তাঁর হাত দ্বারা অপমানিত হওয়া থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। ১ কেননা উহুদের যুদ্ধে তিনি কাফের ছিলেন। আর সে অবস্থায় তিনি যদি কাওকাল (রাঃ)-এর হাতে নিহত হতেন তাহলে অবশ্যই তিনি পরকালে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত হতেন এবং চিরকাল লাঞ্ছিত থাকতেন।

৩৯২০ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ত্যাজ্য সম্পত্তি মদিনা ও ফাদকে অবস্থিত ফাই (বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ) এবং খায়বারের খুমুসের (পঞ্চমাংশ) অবশিষ্টাংশ থেকে মিরাসী স্বত্ব চেয়ে পাঠালেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) উত্তরে বললেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, আমাদের (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের) কোন ওয়ারিস হয় না, আমরা যা রেখে যাবো তা সা’দকা হিসেবে পরিগণিত হবে। অবশ্য মুহাম্মদ -এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি কেবল ভোগ করতে পারেন। আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সা’দ্‌কা তাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে সামান্যতমও পরিবর্তন করবো না। এ ব্যাপারে তিনি যে নীতিতে ব্যবহার করে গেছেন আমিও ঠিক সেই নীতিতেই কাজ করবো। এ কথা বলে আবূ বকর (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে এ সম্পদ থেকে কিছু প্রদান করতে অস্বীকার করলেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) (মানবোচিত কারণে) আবূ বকর (রাঃ)-এর উপর নারাজ হয়ে গেলেন এবং তাঁর থেকে নিস্পৃহ হয়ে রইলেন। পরে তাঁর ওফাত পর্যন্ত তিনি (মানসিক সংকোচের দরুন) আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে কথা বলেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাকের পর তিনি ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করলে তাঁর স্বামী আলী (রাঃ) রাতের বেলা তাঁর দাফন কার্য শেষ করে নেন। আবূ বকর (রাঃ)-কেও এ সংবাদ দেননি। এবং তিনি তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেন। ১ ফাতিমা (রাঃ) জীবিত থাকা পর্যন্ত লোকজনের মনে আলী (রাঃ)-এর বেশ সম্মান ও প্রভাব ছিল। এরপর যখন ফাতিমা (রাঃ) ইন্তেকাল করলেন, তখন আলী (রাঃ) লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহৃ দেখতে পেলেন। তাই তিনি আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে সমঝোতা ও তাঁর হাতে বায়আত গ্রহণের ইচ্ছা করলেন। [ফাতিমা (রাঃ)-এর অসুস্থতা ও অন্যান্য] ব্যস্ততার দরুন এ ছয় মাসে তাঁর পক্ষে বায়আত গ্রহণে অবসর হয়নি। তাই তিনি আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। তবে অন্য কেউ যেন আপনার সঙ্গে না আসে। কারণ আবূ বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে উমর (রাঃ)-ও উপস্থিত হোক-তিনি তা পছন্দ করেননি। (বিষয়টি শোনার পর) উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি একা একা তাঁর কাছে যাবেন না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তাঁরা আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে বলে তোমরা আশংকা করছ? আল্লাহর কসম, আমি তাঁদের কাছে যাব। তারপর আবূ বকর (রাঃ) তাঁদের কাছে গেলেন। আলী (রাঃ) তাশাহ্‌হুদ পাঠ করে বললেন, আমরা আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু দান করেছেন সে সম্পর্কে অবগত আছি। আর যে কল্যাণ (অর্থাৎ খিলাফত) আল্লাহ্ আপনাকে দান করেছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার সাথে হিংসা রাখি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজের মতের প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে (পরামর্শ দেওয়াতে) আমাদেরও কিছু অধিকার রয়েছে। এ কথায় আবূ বকর (রাঃ)-এর চোখ-যুগল থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করলেন কখন বললেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকটাত্মীয় অপেক্ষাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আত্মীয়বর্গ বেশি প্রিয়। আর এ সম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনুসরণে কোন কসুর করিনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে করতে দেখেছি। তারপর আলী (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেনঃ যুহরের পর আপনার হাতে বায়আত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর আবূ বকর (রাঃ) মিম্বরে বসে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করলেন, তারপর আলী (রাঃ)-এর বর্তমান অবস্থা এবং বায়আত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাঁর (আবূ বকরের) কাছে পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করলেন। এরপর আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বললেন, তিনি বিলম্বজনিত যা কিছু করেছেন তা আবূ বকর (রাঃ)-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ্ প্রদত্ত তাঁর এ সম্মানের অস্বীকার করার মনোবৃত্তি নিয়ে করেননি। (তিনি বলেন) তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদের পরামর্শও দেওয়ার অধিকার থাকবে। অথচ তিনি [ আবূ বকর (রাঃ)] আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিকভাবে ব্যথা পেয়েছিলাম। (উভয়ের এ আলোচনা শুনে) মুসলমানগণ আনন্দিত হয়ে বললেন, আপনি ঠিকই করেছেন। এরপর আলী (রাঃ) আমল বিল মা’রূফ (অর্থাৎ রায়আত গ্রহণ)-এর দিকে ফিরে এসেছেন দেখে সব মুসলমান আবার তাঁর প্রতি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। ১ ওফাতের পূর্বে ফাতিমা (রাঃ)-এর ওয়াসিয়াত ছিল যে, মৃত্যুর সাথে সাথেই যেনো তার কাফন-দাফন শেষ করা হয়, কারণ লোকজন ডাকাডাকি করলে তাতে পর্দার ব্যাঘাত ঘটনের আশংকা আছে। সেমতে আলী (রাঃ) রাতের ভিতরই সব কাজ সেরে নিয়েছেন। আর সংবাদ তো নিশ্চয়ই আবূ বকর (রাঃ) পর্যন্ত পৌছে যাবে এ ধারণায় তিনি নিজে গিয়ে সংবাদ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। অবশ্য এ ছয় মাস যাবত তিনি আবূ বকর (রাঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ না করায় মুসলমানদের মনে প্রশ্ন উদয় হলেও যেহেতু তিনি রোগে শয্যাশায়ী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তনয়ার খিদমতে ব্যস্ত থাকতেন, সেহেতু লোকজন তাঁর প্রতি কোন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি। কিন্তু ফাতিমা (রাঃ)-এর ওফাত হওয়ার পর সেই কারণ অবশিষ্ট না থাকায় আলী (রাঃ) পরবর্তীকালে মানুষের চেহারায় অসন্তুষ্টির ভান দেখতে পেয়েছেন।

৩৯২১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয় হওয়ার পর আমরা (পরস্পর) বললাম, এখন আমরা পরিতৃপ্ত হয়ে খেজুর্ খেতে পারবো।

৩৯২২ হাসান (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার বিজয় লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত আমরা তৃপ্তি সহকারে খেতে পাইনি।

৩৯২৩ ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার অধিবাসীদের জন্য (সাওয়াদ ইবনু গাযিয়া নামক) এক ব্যাক্তিকে প্রশাসক নিযুক্ত করলেন। এরপর এক সময়ে তিনি (প্রশাসক) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উন্নত জাতের কিছু খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এরূপ হয়ে থাকে? প্রশাসক উত্তর করলেন, জী না, আল্লাহর কসম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তবে আমরা এরূপ খেজুরের এক সা’ সাধারণ খেজুরের দু’ সা’-এর বিনিময়ে কিংবা এ প্রকারের খেজুরের দু’ সা’ সাধারণ খেজুরের তিন সা’র বিনিময়ে সংগ্রহ করে থাকি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরূপ করো না। দিরহামের বিনিময়ে সব খেজুর বিক্রয় করে ফেলবে। তারপর দিরহাম দিয়ে উত্তম খেজুর খরিদ করবে। [১] আবদুল আযীয ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বনী আদী গোত্রের এক ব্যাক্তিকে খায়বার পাঠিয়েছেন এবং তাঁকে খায়বার অধিবাসীদের জন্য প্রশাসক নিযুক্ত করে দিয়েছেন। অন্য সনদে আবদুল মাজীদ- আবূ সালিহ সাম্মান (রহঃ)- আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [১ ] কেননা খেজুরের বিনিময়ে খেজুরের বেচা-কেনা যদি ক্রেতা বিক্রেতার উভয় দিক থেকে সম পরিমাণের না হয় তা হলে বর্ধিত অংশ সুদের পর্যায়ে চলে যায়। দিরহামের মাধ্যমে বিনিময় করলে আর ঐ আশংকা থাকে না।

৩৯২৪ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের কৃষিভূমি সেখানকার অধিবাসী ইহুদীদেরকে এ চুক্তিতে প্রদান করেছিলেন যে, তারা ভূমি চাষ করবে এবং ফসল উৎপাদন করবে। বিনিময়ে তার উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তারা লাভ করবে।

৩৯২৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন খায়বার বিজয় হয়ে গেলো তখন (ইহুদীদের পক্ষ থেকে) একটি বকরী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হাদিয়া দেওয়া হয়। সেই বকরীটি বিষ মেশানো ছিলো। [১] [১] খায়বার যুদ্ধে যখন ইহুদীদের জন্য মুসলমানদের আনুগত্য স্বীকার ব্যতীত অন্য কোন পথ বাকী রইল না তখন তারা ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইহুদী হারিসের কন্যা ও সালাম ইবনু মুশফিমের স্ত্রী যয়নাব একটি বকরীর গোশতে বিষ মিশিয়ে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য হাদিয়া পাঠালো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীটির গোশত খেলেও বিষ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারেনি বটে, কিন্তু তাঁর সাহাবী বারআ ইবনু মা’রূর (রাঃ) বিষক্রিয়ার ফলে শহীদ হন। ষড়যন্ত্রকারী মহিলা ধরা পড়ার পর প্রথমে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে যখন বারাআ (রাঃ) মারা গেলেন তখন ‘কিসাস’ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। তবে মা’মার (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, ঐ মহিলা পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এ জন্য তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল। (কাসতুলানী)

৩৯২৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনু যায়িদ) (রাঃ)-কে (নেতৃস্থানীয় মুহাজির ও আনসারদের সমন্বয়ে গঠিত) একটি বাহিনীর আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। লোকজন তাঁর আমীর নিযুক্ত হওয়ার উপর সমালোচনা শুরু করলে তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, আজ তোমরা তার আমীর নিযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সমালোচনা করছো, অবশ্য ইতিপূর্বে তোমরা তার পিতার আমীর নিযুক্ত হওয়ার ব্যাপারেও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর কসম, তিনি (উসামার পিতা যায়িদ ইবনু হারিসা) ছিলেন আমীর হওয়ার জন্য যথাযোগ্য এবং আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তার মৃত্যুর পর এ (উসামা ইবনু যায়িদ) আমার নিকট বেশি প্রিয় ব্যাক্তি।

৩৯২৭ উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলকা’দা মাসে উমরা আদায় করার ইচ্ছায় মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করেন। মক্কাবাসীরা তাঁকে মক্কা নগরীতে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালো। অবশেষে তিনি তাদের সঙ্গে এ কথার উপর সন্ধি-চুক্তি সম্পাদন করেন যে, (আগামী বছর উমরা পালন করতে এসে) তিনি মাত্র তিন দিন মক্কায় অবস্থান করবেন। মুসলিমগণ সন্ধিপত্র লেখার সময় এভাবে লিখেছিলেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ আমাদের সঙ্গে এ চুক্তি সম্পাদন করেছেন। ফলে তারা (কথাটির উপর আপত্তি উঠিয়ে) বললো, আমরা তো এ কথা (মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল)স্বীকার করিনি। যদি আমরা আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলে স্বীকারই করতাম তা হলে মক্কা প্রবেশে মোটেই বাধা দিতাম না। বরং আপনি তো মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ। তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল এবং মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (উভয়টই)। তারপর তিনি আলী (রাঃ)-কে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শব্দটি মুছে ফেল। আলী (রাঃ) উত্তর করলেন, আল্লাহর কসম, আমি কখনো এ কথা মুছতে পারবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজেই চুক্তিপত্রটি হাতে নিলেন। তিনি (আক্ষরিকভাবে) লিখতে জানতেন না, তিনি লিখিয়ে দিলেন যে, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ এ চুক্তিপত্র সম্পাদন করে দিয়েছে যে, তিনি কোষবদ্ধ তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করবেন না। মক্কার অধিবাসীদের কেউ তাঁর সাথে যেতে চাইলেও তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন না। তাঁর সাথীদের কেউ মক্কায় (পুনরায়) অবস্থান করতে চাইলে তিনি তাকে বাধা দেবেন না। (পরবর্তী বছর সন্ধি অনুসারে) যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ অতিক্রম হল তখন মুশরিকরা আলীর কাছে এসে বললো, আপনার সাথী [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ]-কে বলুন যে, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তাই তিনি যেন আমাদের নিকট থেকে চলে যান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মতে প্রত্যাবর্তন করলেন। এ সময়ে হামযা (রাঃ)-এর কন্যা চাচা চাচা বলে ডাকতে ডাকতে তার পেছনে ছুটলো। আলী (রাঃ) তার হাত ধরে তুলে নিয়ে ফাতিমা (রাঃ)-কে দিয়ে বললেন, তোমার চাচার কন্যাকে নাও। ফাতিমা (রাঃ) বাচ্চাটিকে তুলে নিলেন। (কাফেলা মদিনা পৌঁছার পর) বাচ্চাটি নিয়ে আলী, যায়িদ ইবনু হারিসা) ও জা’ফর [ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)]-এর মধ্যে ঝগড়া আরম্ভ হয়ে গেল। আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাকে (প্রথমে) কোলে নিয়েছি এবং সে আমার চাচার কন্যা (তাই সে আমার কাছে থাকবে)! জা’ফর দাবি করলেন, সে আমার চাচার কন্যা এবং তার খালা হল আমার স্ত্রী। যায়িদ [ইবনু হারিসা (রাঃ)] বললেন, সে আমার ভাইয়ের কন্যা (অর্থাৎ সবাই নিজ নিজ সম্পর্কের ভিত্তিতে নিজের কাছে রাখার অধিকার পেশ করলো)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়েটিকে তার খালার জন্য (অর্থাৎ জা’ফরের পক্ষে) ফায়সালা দিয়ে বললেন (আদর ও লালন-পালনের ব্যাপারে) খালা মায়ের সমপর্যায়ের। এরপর তিনি আলীর দিকে লক্ষ্য করে করে বললেন, তুমি আমার এবং আমি তোমার। জা’ফর (রাঃ)-কে বললেন, তুমি দৈহিক গঠন এবং চারিত্রিক গুণে আামার মতো। আর যায়িদ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি আমাদের ঈমানী ভাই ও আযাদকৃত গোলাম। আলী (রাঃ) [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে] বললেন, আপনি হামযার মেয়েটিকে বিয়ে করছেন না কেন? তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] উত্তরে বললেন, সে আমার দুধ-ভাই (হামযা)-এর মেয়ে।

৩৯২৮ মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ ও মুহাম্মদ ইবনু হুসাইন ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমরা পালনের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করলে কুরায়শী কাফেররা তাঁর এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। কাজেই তিনি হুদায়বিয়া নামক স্থানেই কুরবানীর জন্তু যবেহ্ করলেন এবং মাথা মুন্ডন করলেন (হালাল হয়ে গেলেন), আর তিনি তাদের সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি সম্পাদন করলেন যে, আগামী বছর তিনি উমরা পালনের জন্য আসবেন। কিন্তু তরবারি ব্যতীত অন্য কোন অস্ত্র সাথে আনবেন না এবং মক্কাবাসীরা যে ক’দিন ইচ্ছা করবে এর বেশি দিন তিনি সেখানে অবস্থান করবেন না। সে মতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরবর্তী বছর উমরা পালন করতে আসলে) সম্পাদিত চুক্তিনামা অনুসারে তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন। তারপর তিন দিন অবস্থান করলে মক্কাবাসীরা তাঁকে চলে যেতে বলল। তাই তিনি (মক্কা থেকে) চলে গেলেন।

৩৯২৯ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেই দেখলাম আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার কিনারেই বসে আছেন। উরওয়া (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক’টি উমরা আদায় করেছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, চারটি। এ সময় আমরা (ঘরের ভিতরে) আয়িশা (রাঃ)-এর মিসওয়াক করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। উরওয়া (রাঃ) বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! আবূ আবদুর রহমান [ইবনু উমর (রাঃ)] কি বলছেন, তা আপনি শুনেছেন কি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি উমরা করেছেন? আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কয়টি উমরা আদায় করেছিলেন তার সবটিতেই তিনি ইবনু উমর) তাঁর সাথে ছিলেন। [তাই ইবনু উমর (রাঃ) ঠিকই বলবেন] তবে তিনি রজব মাসে কখনো উমরা আদায় করেননি।

৩৯৩০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরাতুল কাযা আদায় করছিলেন তখন আমরা তাঁকে মুশরিক ও তাদের যুবকদের থেকে (তাঁর চতুর্দিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে) আড়াল করে রেখেছিলাম যেন তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কোন প্রকার কষ্ট বা আঘাত দিতে না পারে।

৩৯৩১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ (উমরাতুল ‘কাযা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা) আগমন করলে মুশরিকরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল যে, তোমাদের সামনে এমন একদল লোক আসছে, ইয়াসরিবের জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে। এজন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে প্রথম তিন সাওত বা চক্করে দেহ হেলিয়ে দুলিয়ে চলার জন্য এবং দু’ রুকনের মধ্যবর্তী স্থানে স্বভাবিকভানে চলতে নির্দেশ দেন। অবশ্য তিনি তাঁদেরকে সবকটি চক্করেই হেলে দুলে চলার আদেশ করতেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি তাঁর অনুভূতই কেবল তাঁকে এ হুকুম দেওয়া থেকে বিরত রেখেছিল। অন্য এক সনদে ইবনু সালমা (রহঃ) আইয়ূব ও সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সন্ধি সম্পাদনের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভের পরবর্তী বছর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) আগমন করলেন তখন মুশরিকরা যেন সাহাবীদের দৈহিক-বল অবলোকন করতে পারে এজন্য তিনি তাঁদের বলেছেন, তোমরা হেলেদুলে তাওয়াফ করো। এ সময় মুশরিকরা কুআয়কিআন পাহাড়ের দিক থেকে মুসলমানদেরকে দেখছিল। [১] [১ ] ইয়াসরিব মদিনার পুরাতন নাম। এ এলাকায় দীর্ঘদিন পূর্ব থেকেই এক প্রকার জ্বরের প্রাদুর্ভাব লেগে থাকত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদিনায় আগমনের পর তাঁর দোয়ার বরকতে সেটি মদিনা তেকে দূর হয়ে গেল। মুশরিকরা ঐ জ্বরের প্রতি ইঙ্গিত করেই বলেছিল মুসলমানরা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে রমল করার আদেশ দিলেন যেন তাঁদের শৌর্য-বীর্য অবলোকন করে মুশরিকরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। আর যেহেতু তারা কুআয়কিআন পর্বত থেকেই মুসলমানদের দিকে তাকিয়েছিল আর সেখান থেকে দু’ রুকনের মধ্যবর্তী স্থানটি দেখা যেতো না, এ কারণে তিনি সাহাবাদেরকে এ স্থান স্বভাবিক ভাবে হেঁটে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।

৩৯৩২ মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বায়তুল্লাহ্ এবং সাফা ও মারওয়া-এর মধ্যখানে এ জন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সায়ী’ করেছিলেন, যেন মুশরিকদেরকে তাঁর শৌর্য-বীর্য অবলোকন করাতে পারেন।

৩৯৩৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মূনা (রাঃ) -কে বিয়ে করেছেন এবং (ইহরাম খোলার পরে) হালাল অবস্থায় তিনি তাঁর সাথে বাসর যাপন করেন। মায়মূনা (রাঃ) (মক্কার নিকটেই) সারিফ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেছেন। [ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] অপর একটি সনদে ইবনু ইসহাক-ইবনু আবূ নাজীহ্ ও আবান ইবনু সালিহ-আতা ও মুজাহিদ (রহঃ)-ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে অতিরিক্ত এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরাতুল কাযা আদায়ের সফরে মায়মূনা (রাঃ) -কে বিয়ে করেছিলেন।

৩৯৩৪ আহমদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সেদিন (মূতার যুদ্ধের দিন) তিনি শাহাদত প্রাপ্ত জা’ফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর লাশের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। (তিনি বলেন) আমি জা’ফর (রাঃ)-এর দেহে তখন বর্শা ও তরবারির পঞ্চাশটি আঘাতের চিহৃ গুণেছি। আর তম্মধ্যে কোনটাই তাঁর পশ্চাৎ দিকে ছিল না।

৩৯৩৫ আহমদ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মূতার যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ)-কে সেনাপতি নিযুক্ত করে বলেছিলেন, যদি যায়েদ (রাঃ) শহীদ হয়ে যায় তাহলে জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সেনাপতি হবে। যদি জাফর (রাঃ)-ও শহীদ হয়ে যায় তাহলে আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) সেনাপতি হবে। আবদুল্লাহ [ইবনু উমর (রাঃ)] বলেন, ঐ যুদ্ধে তাদের সাথে আমিও ছিলাম। যুদ্ধ শেষে আমরা জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কে তালাশ করলে তাকে শহীদগণের মধ্যে পেলাম। তখন আমরা তার দেহে তরবারী ও বর্শার নব্বইটিরও অধিক আঘাতের চিহৃ দেখতে পেয়েছি। [১] [১ ] ইতিপূর্বের হাদীসে যেহেতু কেবল তরবারি ও বর্শার আঘাতগুলো গণনা করা হয়েছিল এ জন্য পঞ্চাশটি আঘাতের কথা বলা হয়েছে। আর বক্ষ্যমাণ হাদীসে বর্শা ও তীরের আঘাতগুলো গণনা করা হয়েছে, তাই নব্বইরও অধিক সংখ্যার কথা বলা হয়েছে। কিংবা পূর্ব হাদীসে কেবল সম্মুখের দিকে অবস্থিত আঘাতগুলো গণনা করা হয়েছিল। আর বর্তমান হাদীসে সম্মুখ-পশ্চাৎ নির্বিশেষে সমগ্র দেহের আঘাতগুলো গণনা হয়েছে। তাই সংখ্যার পরিমাণে উভয় হাদীসের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে।

৩৯৩৬ আহমদ ইবনু ওয়াকিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট (মূতার) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খবর এসে পৌছার পূর্বেই তিনি উপস্থিত মুসলমানদেরকে যায়িদ, জাফর ও ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদতের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যায়িদ (রাঃ) জতাকা হাতে অগ্রসর হলে তাঁকে শহীদ করা হয়। তখন জাফর (রাঃ) পাতাকা হাতে অগ্রসর হল, তাকেও শহীদ করে ফেলা হয়। তারপর ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা হাতে নিল। এবার তাকেও শহীদ করে দেয়া হল। এ সময়ে তাঁর দু’চোখ থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। (তারপর তিনি বললেন) অবশেষে সাইফুল্লাহ্‌দের মধ্যে এক সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তরবারি) হাতে পতাকা ধারণ করেছে। ফলত আল্লাহ্ তাদের উপর (আমাদের) বিজয় দান করেছেন।

৩৯৩৭ কুতায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যায়িদ ইবনু হারিসা, জাফর ইবনু আবূ তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদতের সংবাদ এসে পৌঁছলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে পড়লেন। তাঁর চেহারায় শোকের চিহৃ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তখন দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে তাকিয়ে দেখলাম, জনৈক ব্যাক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জাফর (রাঃ)-এর পরিবারের মেয়েরা কান্নাকাটি করছে। তখন তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] মেয়েদেরকে বারণ করার জন্য লোকটিকে হুকুম করলেন। লোকটি ফিরে গেলো। তারপর আবার এসে বলল, আমি তাদেরকে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা তা শোনেনি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনঃ হুকুম করলেন। লোকটি সেখানে গেল কিন্তু পুনরায় এসে বলল, আল্লাহর কসম তারা আমার কথা মানছে না। আয়িশা (রাঃ) বলেন, (তারপর) সম্ভবত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন, তা হলে তাদের মুখের উপর মাটি ছুঁড়ে মার। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি লোকটিকে বললাম, আল্লাহ্ তোমার নাককে অপমানিত করুক। আল্লাহর শপথ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে যে কাজ করতে বলেছেন তাতে তুমি সক্ষম নও অথচ তুমি তাঁকে বিরক্ত করা পরিত্যাগ করছ না।

৩৯৩৮ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) আমির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল যে, যখনই তিনি জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর পুত্র (আবদুল্লাহ)-কে সালাম দিতেন তখনই তিনি বলতেন, তোমার প্রতি সালাম, হে দু’ডানাওয়ালা পুত্র। [১] [১ ] মূতার লড়াইয়ে জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর দু’টি হাতই কেটে যাওয়ার কারণে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। আর এর বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে দু’টি পাখা দান করেছেন যেগুলোর সাহায্যে তিনি জান্নাতের মধ্যে উড়ে বেড়ান। এবং এ কারণেই জাফরকে তাইয়্যার উপাধি দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) ঐ দিকে ইঙ্গিত করেই তাঁর ছেলেকে দু’পাখাওয়ালার পুত্র বলে ডাকতেন। (কাসতুলানী, শরহে বুখারী)

৩৯৩৯ আবূ নুআইম (রহঃ) কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলছেন, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তরবারি ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরিশেষে আমার হাতে একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তরবারি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

৩৯৪০ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলছেন, মূতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়খানা তরবারি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল। (পরিশেষে) আমার হাতে আমার একটি প্রশস্ত ইয়ামানী তরবারই টিকেছিল।

৩৯৪১ ইমরান ইবনু মায়সারা (রহঃ) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) (কোন কারণে) সংজ্ঞাহীন হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর বোন ‘আমরা [বিনত রাওয়াহা (রাঃ)] হায়, হায় পাহাড়ের মতো আমরা ভাই, হায়রে অমুকের হত, তমুকের মত ইত্যাদি গুণ উল্লেখ করে কান্নাকাটি শুরু করল। এরপর সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে তিনি তাঁর বোনকে বললেন, তুমি যেসব কথা বলে কান্নাকাটি করেছিলে সেসব কথা সম্পর্কে আমাকে (বিদ্রূপাত্মকভাবে) জিজ্ঞাসা করে বলা হয়েছে, তুমি কি সত্যই এরূপ?

৩৯৪২ কুতায়বা (রহঃ) নু’মান ইবনু বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়লেন যেভাবে উপরোক্ত হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে। (তারপর তিনি বলেছেন) এরপর তিনি [আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)] যখন (মূতার লড়াইয়ে) শহীদ হন তখন তাঁর বোন মোটেই কান্নাকাটি করেনি।

৩৯৪৩ আমর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হুরকা গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যূষে গোত্রটির উপর আক্রমণ করি এবং তাদেরকে পরাজিত করে দেই। এ সময়ে আনসারদের এক ব্যাক্তি ও আমি তাদের (হুরকাদের) একজনের পিছু ধাওয়া করলাম। আমরা যখন তাকে ঘিরে ফেললাম তখন সে বলে উঠলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এ বাক্য শুনে আনসারী তার অস্ত্র সামলে নিলেন। কিন্তু আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ফেললাম। আমরা মদিনা প্রত্যাবর্তন করার পর এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কান পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি বললেন, হে উসামা। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ? আমি বললাম, সে তো আত্মরক্ষার জন্য কলেমা পড়েছিল। এর পরেও তিনি এ কথাটি ‘হে উসামা! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলার পরেও তুমি তাকে হত্যা করেছ’ বারবার বলতে থাকলেন। এত আমার মন চাচ্ছিল যে, হায় যদি সেই দিনটির পূর্বে আমি ইসলামই গ্রহণ না করতাম! (তা হলে কতই ভাল হত, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এহেন অনুতাপের কারণ হতে হত না। )[১] [১ ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনায় দারুণভাবে ব্যথিত হয়েছেন দেখে তিনি অনুতাপের আতিশয্যে এ কথা বলেছেন। নতুবা পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ যে খারাপ করে ফেলেছেন এ কথা বলা উদ্দেশ্য নয়। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বর্ণনা করেছেনঃ এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিহত ব্যাক্তির দিয়্যাত (রক্তপণ) আদায়ের জন্য আদেশ দিয়েছেন।

৩৯৪৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আর তিনি যেসব অভিযান (বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিকে) পাঠিয়েছিলেন তম্মধ্যে নয়টি অভিযানে আমি অংশ নিয়েছি। এসব অভিযানে একবার আবূ বকর (রাঃ) আমাদের সেনাপতি থাকতেন, আরেকবার উসামা (রাঃ) আমাদের সেনাপতি থাকতেন। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) অপর একটি হাদীসে তাঁর পিতা ইয়াযীদ ইবনু আবী উবায়দা (রাঃ)-এর মাধ্যমে সালমা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আর তিনি (বিভিন্ন দিকে) যেসব সেনাদল পাঠিয়েছিলেন এর নয়টি সেনাদলে অংশ নিয়েছি। এ সব সেনাদলে একবার আবূ বকর (রাঃ) আমাদের সেনাপতি থাকতেন। আরেকবার উসামা (রাঃ) আমাদের সেনাপতি থাকতেন।

৩৯৪৫ আবূ আসিম দাহ্‌হাক ইবনু মাখলাদ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং যায়িদ ইবনু হারিসা (রাঃ)-এর সাথেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (যায়িদকে) আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেছিলেন।

৩৯৪৬ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। এতে তিনি খায়বার , হুদায়বিয়া, হুনায়ন ও যিকারাদের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন। বর্ণনাকারী ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, অবশিষ্ট যুদ্ধগুলোর নাম আমি ভুলে গিয়েছি।

৩৯৪৭ কুতায়বা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে এবং যুবাযর ও মিকদাদ (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলে পাঠালেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে রাওযায়ে খাখ নামক স্থানে চলে যাও, সেখানে সাওয়ারীর পিঠে হাওদায় আরোহিণী জনৈক মহিলার কাছে একখানা পত্র আছে। তোমরা ঐ পত্রটি সেই মহিলা থেকে কেড়ে আনবে। আলী (রাঃ) বলেন, আমরা রাওযায়ে খাখ পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। গিয়েই আমরা হাওদায় আরোহিণী মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা (তাকে) বললাম, পত্রটি বের কর। সে উত্তর দিলঃ আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম অবশ্যই তোমাকে পত্রটি বের করতে হবে, অন্যথায় আমরা তোমরা কাপড়-চোপড় খুলে তালাশ করব। রাবী বলেন, মহিলাটি তখন তার চুলের খোপা থেকে পত্রটি বের করল। আমরা পত্রটি নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম। দেখা গেল এটি হাতিব ইবনু আবূ বালতা’আ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এতে মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গৃহীত কিছু গোপন তৎপরতার সংবাদ ফাঁস করে দিয়েছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হাতিব! এ কি কাজ করেছ? তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনুগ্রহ পূর্বক) আমার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আমি কুরাইশদের স্বগোত্রীয় কেউ ছিলাম না বরং তাদের বন্ধু অর্থাৎ তাদের মিত্র গোত্রের একজন ছিলাম। আপনার সঙ্গে যেসব মুহাজির আছেন কুরাইশ গোত্রে তাঁদের অনেক আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। যারা এদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদের হিফাজত করছে। আর কুরাইশ গোত্রে যখন আমার বংশগত কোন সম্পর্ক নেই তাই আমি ভাবলাম যদি আমিতাদের কোন উপকার করে দেই তাহলে তারা আমরা পরিবার-পরিজনের হিফাজতে এগিয়ে আসবে। কখনো আমি আমর দ্বীন পরিত্যাগ করা কিংবা ইসলাম গ্রহণের পর কুফরকে গ্রহণ করার জন্য এ কাজ করিনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, সে (হাতিন) তোমাদের কাছে সত্য কথাই বলেছে। উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেবো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল্লাহ্ বললেন, দেখ, সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তুনি তো জানো না, হয়তো আল্লাহ্ তা’আলা বদরে অংশগ্রহণকারীরদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে বলে দিয়েছেন, তোমরা যা খুশী করতে থাক, আমি তোমারদেরক ক্ষমা করি দিয়েছি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এ সূরা অবতীর্ণ করেনঃ হে মু’মিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছ অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এবং তোমাদেরকে (স্বদেশ থেকে) বহিস্কার করেছে এ কারণে যে তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে বিশ্বাস কর। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে থাক তবে কেন তোমরা ওদের সাথে গোপনে বন্ধুত্ব করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর তা আমি সম্যক অবগত আছি। আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ কাজ করে সে তো বিচ্যুত হয়ে যায় সরল পথ থেকে (৬০:১)

৩৯৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি জানিয়েছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ করেছেন। বর্ণনাকারী যুহরী (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ ইবনুল মূসা য়্যাব (রহঃ)-কেও অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। আরেকটি সূত্র দিয়ে তিনি উবায়দুল্লাহ্ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস বলেছেন, (মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হয়ে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা পালন করছিলেন। অবশেষে তিনি যখন কুদায়দ এবং উস্‌ফান নামক স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গার ঝরনাটির কাছে পৌঁছেন কখন তিনি ইফ্‌তার করেন। এরপর রমযান মাস খতম হওয়া পর্যন্ত তিনি আর রোযা পালন করেননি।

৩৯৪৯ মাহমুদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওয়ানা হন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার সাহাবী। তখন (মক্কা থেকে) হিজরত করে মদিনা চলে আসার সাড়ে আট বছর অতিক্রম হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলিমগণ রোযা অবস্থায়ই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। অবশেষে তিনি যখন উস্‌ফান ও কুদায়দ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদীদ নামক জায়গার ঝরনার নিকট পৌঁছলেন কথন তিনি ও সঙ্গী মুসলিগণ ইফতার করলেন। যুহরী (রহঃ) বলেছেনঃ (উম্মাতের জীবনযাত্রায়) ফাতওয়া হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাজকর্মের শেষোক্ত আমলটিকেই চূড়ান্ত দলীল হিসাবে গণ্য করা হয়। (কেননা শেষোক্ত আমল এর পূর্ববর্তী আমলকে রহিত করে দেয়)।

৩৯৫০ আইয়াশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে হুনায়নের দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। সঙ্গী মুসলিমদের অবস্থা ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কেউ ছিলেন রোযাদার। আবার কেউ রোযাবিহীন অবস্থায়। তাই তিনি যখন সওয়ারীর উপর বসলেন কথন তিনি একপাত্র দুধ কিংবা পানি আনতে বললেন। তারপর তিনি পাত্রটি হাতের উপর কিংবা সওয়ারীর উপর রেখে (সমবেত) লোকজনের দিকে তাকালেন। এ অবস্থা দেখে রোযাবিহীন লোকেরা রোযাদার লোকদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা রোযা ভেঙ্গে ফেল। আবদুর রায্‌যাক, মা’মার, আইয়ুব, ইা (রহঃ) সূত্রে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – অভিযানে বের হয়েছিলেন। এভাবে হাম্মাদ ইবনু যায়িদ আইয়ুব ইা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বিষয়টি বর্ণনা করেছেন।

৩৯৫১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে রোযা অবস্থায় (মক্কা অভিমুখে) সফর করেছেন। অবশেষে তিনি উসফান নামক স্থানে উপনীত হলে একপাত্র পানি দিতে বললেন। তারপর দিনের বেলাই তিনি সে পানি পান করলেন যেন তিনি লোকজনকে তাঁর রোযাবিহীন অবস্থা দেখাতে পারেন। এরপর মক্কা পৌঁছা পর্যন্ত তিনি আর রোযা পালন করেননি। বর্ণনাকারী বলেছেন, পরবর্তীকালে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলতেন সফরে কোন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা পালন করতেন আবার কোন কোন সময় তিনি রোযাবিহীন অবস্থায়ও ছিলেন। তাই সফরে (তোমাদের) যার ইচ্ছা সে রোযা পালন করতে পার আর যার ইচ্ছা সে রোযাবিহীন অবস্থায়ও থাকতে পার। (সফর শেষে আবাসে আ আদায় করে নেবে)।

৩৯৫২ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হিশামের পিতা [উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ)] থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কা অভিমুখে) রওয়ানা করেছেন। এ সংবাদ কুরাইশদের কাছে পৌঁছলে আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব, হাকীম ইবনু হিযাম এবং বুদায়ল ইবনু ওয়ারক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য বেরিয়ে এলো। তারা রাতের বেলা সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে (মক্কার অদুরে) মাররুয জাহ্‌রান নামক স্থান পর্যন্ত এসে পৌঁছলে আরাফার ময়দানে প্রজ্বলিত আলোর মত অসংখ্য আগুন দেখতে পেল। আবূ সুফিয়ান (আশ্চর্যান্বিত হয়ে) বলে উঠল, এ সব কিসের আলো? ঠিক যেন আরাফার ময়দানে প্রজ্বলিত আলোর মত (অসংখ্য বিস্তৃত)। বুদায়ল ইবনু ওয়ারকা উত্তর করল, এগুলো আমর গোত্রেরে (চুলার) আলো। আবূ সুফিয়ান বলল, আমর গোত্রের লোক সংখ্যা এ অপেক্ষা অনেক কম। ইত্যবসরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কয়েকজন সামরিক প্রহরী তাদেরকে দেখে ফেলল এবং কাছে গিয়ে তাদেরকে পাকড়াও করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে নিয়ে এলো। এ সময় আবূ সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করল। এরপর তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] যখন (সেনাবাহিনী সহ মক্কা নগরীর দিকে) রওয়ানা হলেন তখন আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আবূ সুফিয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় (পাহাড়ের কোণে) দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলমানদের সমগ্র সেনাদলটি দেধতে পায়। তাই আব্বাস (রাঃ) তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খন্ডদল হয়ে আবূ সুফিয়ানের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করে যেতে লাগল। প্রথমে একটি দল অতিক্রম করে গেল। আবূ সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস (রাঃ), এরা কারা? আব্বাস (রাঃ) বললেন, এরা গিফার গোত্রের লোক। আবূ সুফিয়ান বললেন, আমার এবং গিফার গোত্রের মধ্যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল না। এরপর জুহায়না গোত্রের লোকেরা অতিক্রম করে গেলেন, আবূ সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সা’দ ইবনু হুযায়ম গোত্র অতিক্রম করল, তখনো আবূ সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। তারপর সুলায়ম গোত্র অতিক্রম করলেও আবূ সুফিয়ান অনুরূপ বললেন। অবশেষে একটি বিরাট বাহিনী তার সামনে এলো যে, এত বিরাট বাহিনী এ সময় তিনি আর দেখেননি। তাই (আশ্চর্য হয়ে) জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন, এরাই (মদিনার) আনসারবৃন্দ। সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) তাঁদের দলপতি। তাঁর হাতেই রয়েছে তাঁদের পতাকা। (অতিক্রমকালে) সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বললেন, হে আবূ সুফিয়ান! আজকের দিন রক্তপাতের দিন, আজকের দিন কাবার অভ্যন্তরে রক্তপাত হালাল হওয়ার দিন। আবূ সুফিয়ান বললেন, হে আব্বাস! আজ হারাম ও তার অধিবাসীদের প্রতি তোমাদের করুণা প্রদর্শনেরও কত উত্তম দিন। তারপর আরেকটি সেনাদল আসল। সংখ্যাগত দিক থেকে এটি ছিল সবচেয়ে ছোট দল। আর এদের মধ্যেই ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ। যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ)-এর হাতে ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঝান্ডা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আবূ সুফিয়ানের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছেলেন, তখন আবূ সুফিয়ান বললেন, সা’দ ইবনু উবাদা কি বলছে আপনি তা কি জানেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি বলেছে? আবূ সুফিয়ান বললেন, সে এ রকম এ রকম বলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সা’দ ঠিক বলেনি বরং আজ এমন একটি দিন যে দিন আল্লাহ্ কা’বাকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আজকের দিনে কা’বাকে গিলাফে আচ্ছাদিত করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, (মক্কা নগরীতে পৌঁছে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজুন নামক স্থানে তাঁর পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী উরওয়া নাফি’ জুবায়র ইবনু মুত্‌ঈম আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যাবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ)-কে (মক্কা বিজয়ের পর একদা) বললেন, হে আবূ আবদুল্লাহ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে এ জায়গায়ই পতাকা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উরওয়া (রাঃ) আরো বলেন, সে, দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদকে মক্কার উঁচু এলাকা কাঁধার দিক থেকে প্রবেশ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নিম্ন এলাকা) কুদার দিক থেকে প্রবেশ করেছিলেন। সেদিন খালিদ ইবনু ওয়ালীদের অশ্বারোহী সৈন্যদের মধ্য থেকে হুবায়শ ইবনুল আশআর এবং করয ইবনু জাবির ফিহ্‌রী (রাঃ)-এ দু’জন শহীদ হয়েছিলেন।

৩৯৫৩ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর উটনীর উপর দেখেছি, তিনি ‘তারজী’ করে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করছেন। বর্ণনাকারী মু’আবিয়া ইবনু কুররা (রহঃ) বলেন, যদি আমার চতুষ্পার্শ্বে লোকজন জমায়েত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তা হলে আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর তিরাওয়াত বর্ণনা করতে যেভাবে তারজী করেছিলেন আমিও ঠিক সে রকমে তারজী করে তিলাওয়াত করতাম।

৩৯৫৪ সুলায়মান ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মক্কা বিজয়ের কালে [বিজয়ের একদিন পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে] বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগামীকাল আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আকীল কী আমাদের জন্য কোন বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গিয়েছে? এরপর তিনি বললেন, মুমিন ব্যাক্তি কাফেরের ওয়ারিশ হয় না, আর কাফেরও মু’মিন ব্যাক্তির ওয়ারিশ হয় না। ১ (পরবর্তীকালে) যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, আবূ তালিবের ওয়ারিশ কে হয়েছিল? তিনি বলেছেন, আকীল এবং তালিব তার ওয়ারিশ হয়েছিল। মামার (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আপনি আগামীকাল কোথায় অবস্থান করবেন কথাটি (উসামা ইবনু যায়িদ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তার হাজ্জের (হজ্জ) সফরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কিন্তু ইউনূস (রহঃ) তাঁর হাদীসে মক্কা বিজয়ের সময় বা হাজ্জের (হজ্জ) সফর কোনটিরই উল্লেখ করেননি। [১ ] আবূ তালিবের মৃত্যুকালে তার পুত্র আকীল কাফের অবস্থান ছিল। এ দিকে আবূ তালিবেরও ঈমান গ্রহণের সৌভাগ্য হয়নি। এ জন্য আকীল তার উত্তরাধিকার লাভ করেছিলেন আর আলী এবং জা’ফর মুসলমান হওয়ার কারণে তাঁরা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। কিন্তু আকীল পরবর্তীকালে সমুদয় সম্পদ জমা-জমি বিক্রয় করে ফেলে এবং মুসলমান হয়ে যায়। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত উক্তি করেছেন।

৩৯৫৫ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের পূর্বে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্ আমাদেরকে বিজয় দান করলে ইন্‌শাআল্লাহ্ ‘খাইফ’ হবে আমাদের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফেররা কুফরীর উপর পরস্পরে শপথ গ্রহণ করেছিল। [১] [১ ] হিজরতের পূর্বে একবার কাফেররা সম্মিলিতভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘খাইফ’ নামক স্থানে একত্রিত হয়েছিল এবং তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিবকে মক্কা থেকে বহিস্কার করে খাইফ এলাকায় নির্বাসন দেয়ার ফয়সালা করেছিল। পরিশেষে সকলে এ ফয়সালা মুতাবি কাজ করে যাবে এ কথার উপর তারা পরস্পর শপথ করে একটি চুক্তিনামাও স্বাক্ষর করেছিলেন। এটই খাইফের দস্তাবেজ নামে প্রসিদ্ধ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিকেই ইশারা করেছিলেন।

৩৯৫৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে বললেন, বনী কিনানার খাইফ নামক স্থানেই হবে আমাদের আগামী কালের অবস্থানস্থল, যেখানে কাফেররা কুফরের উপর পরস্পর শপথ গ্রহণ করেছিল।

৩৯৫৭ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু কাযাআ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় লোহার টুপি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেছেন। তিনি সবেমাত্র টুপি খুলেছেন এ সময় এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে হত্যা কর। [১] ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, আমাদের ধারণামতে সেদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্‌রাম অবস্থায় ছিলেন না। তবে আল্লাহ্ আমাদের চেয়ে ভাল জানেন।

৩৯৫৮ সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) আবদুল্লাহ [ইবনু মাসউদ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন বায়তুল্লাহর চারপাশ ঘিরে তিনশত ষাটটি প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে (বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং) প্রতিমাগুলোকে আঘাত করতে থাকলেন আর (মুখে) বলতে থাকলেন, হক এসেছে, বাতিল অপসৃত হয়েছে। হক এসেছে বাতিলের আর উদ্ভব ও পুনরুদ্ভব ঘটবে না।

৩৯৫৯ ইসহাক (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আগমন করার পর তৎক্ষণাৎ বায়তুল্লাহর অভ্যন্তরে প্রবেশ করা থেকে বিরত রইলেন, কারণ সে সময় বায়তুল্লাহর অব্যন্তরে অনেক প্রতিমা স্থাপিত ছিল। তিনি এগুলোকে বের করে ফেলার জন্য আদেশ দিলেন। প্রতিমাগুলো বের করা হল। তখন (ঐগুলোর সাথে) ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মূর্তিও বেরিয়ে আসল। তাদের উভয়ের হাতে ছিল মুশরিকদের ভাগ্য নির্ণয়ের কয়েকটি তীর। কখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করুক। তারা অবশ্যই জানত যে, ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ণয়ের কাজ করেননি। এরপর তিনি বায়তুল্লাহর ভিতরে প্রবেশ করলেন। আর প্রত্যেক কোণায় কোণায় গিয়ে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন এবং বেরিয়ে আসলেন। আর সেখানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। মা’মার (রহঃ) আইয়্যুব (রহঃ) সূত্রে এবং ওহায়ব (রহঃ) আইয়্যুব (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইকরাম (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৯৬০ হায়সাম ইবনু খারিজা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উঁচু এলাকা ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করেছেন। আবূ উসামা এবং ওহায়ব (রহঃ) ‘কাদা’-এর দিক দিয়ে প্রবেশ করার বর্ণনায় হাব্‌স ইবনু মায়সারা (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

৩৯৬১ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হিশামের পিতা থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উঁচু এলাকা অর্থাৎ ‘কাদা’ নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করেছিলন।

৩৯৬২ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আবী লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছে-এ কথাটি একমাত্র উম্মে হানী (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি বলেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে গোসল করেছিলেন, এরপর তিনি আট রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সালাত (নামায/নামাজ) অপেক্ষা হালকাভাবে অন্য কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকূ, সিজ্‌দা পুরোপুরই আদায় করেছিলেন।

৩৯৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ‘সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকূ’ ও সিজ্‌দায় পড়তেন, সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকাল্লাহুম্মা ইগফিরলী অর্থাৎ অতি পবিত্র হে আল্লাহ্! হে আমাদের প্রভু! আমি তোমারই প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করে দাও।

৩৯৬৪ আবূ নুমান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) তাঁর (পরামর্শ মজলিসে) বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বর্ষীয়ান সাহাবাদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। তাই তাঁদের কেউ কেউ বললেন, আপনি এ তরুণকে কেন আমাদের সাথে মজলিসে শামিল করেন। তার মত সন্তান তো আমাদেরও আছে। তখন উমর (রাঃ) বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) ঐ সব মানুষের একজন যাদের (মর্যাদা ও জ্ঞানের গভীরতা) সম্পর্কে আপনারা অবহিত আছেন। ইবনু আব্বাস বলেন, একদিন তিনি (উমর) তাদেরকে পরামর্শ মজলিসে আহবান করলেন এবং তাঁদের সাথে তিনি আমাকেও ডাকলেন। তিনি ইবনু আব্বাস) বলেন, আমার মনে হয় সেদিন তিনি তাঁদেরকে আমার ইল্‌মের গভীরতা দেখানোর জন্যই ডেকেছিলেন। উমর বলেন, (আরবী আয়াত) এভাবে সূরাটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ সূরা সম্পর্কে আপনাদের কি বক্তব্য? তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, এখানে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, যখন আমাদেরকে সাহায্য করা হবে এবং বিজয় দান করা হবে তখন যেন আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর কেউ কেউ বললেন, আমরা অবগত নই। আবার কেউ কেউ কোন উত্তরই করেননি। এ সময় উমর (রাঃ) আমাকে বললেন, ওহে ইবনু আব্বাস! তুমি কি এ রকমই মনে কর? আমি বললাম, জ্বী, না। তিনি বললেন, তা হলে তুমি কি রকম মনে কর? আমি বললাম, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের সংবাদ। আল্লাহ্ তাঁকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। ‘যখন আল্লাহর সাহয্য এবং বিজয় আসবে’ অর্থাৎ মক্কা বিজয়। সেটিই হবে আপনার ওফাতের পূর্বাভাস। সুতরাং এ সময়ে আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করবেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেন, এ সূরা থেকে তুমি যা যা উপলব্ধি করেছ আমি ঐটি ছাড়া অন্য কিছু উপলব্ধি করিনি।

৩৯৬৫ সাঈদ ইবনু শুরু াহ্‌বীল (রহঃ) আবূ শুরু ায়হিল আদাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (মদিনার শাসনকর্তা) আমর ইবনু সাঈদ যে সময় মক্কা অভিমুখে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করছিলেন তখন আবূ শুরু ায়হিল আদাবী (রাঃ) তাকে বলেছিলেন, হে আমাদের আমীর! আপনি আমাকে একটু অনুমতি দিন, আমি আপাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি বানী শোনাবো, যেটি তিনি মক্কা বিজয়ের পরের দিন বলেছিলেন। সেই বাণীটি আমার দু’কান শুনেছে। আমার হৃদয় তা হিফাজত করে রেখেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সে কথাটি বলছিলেন তখন আমার দু’চোখ তাঁকে অবলোকন করেছে। প্রথমে তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং সানা পাঠ করেন। এর পর তিনি বলেন, আল্লাহ্ নিজে মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। কোন মানুষ এ ঘোষণা দেয়নি। কাজেই যে ব্যাক্তি আল্লাহ্ এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান এনেছে তার পক্ষে (অন্যায়ভাবে) সেখানে রক্তপাত করা কিংবা এখানকার গাছপালা কর্তন করা কিছুতেই হালাল নয়। আর আল্লাহর রাসূল -এর সে স্থানে লড়াইয়ের কথা বলে যদি কেউ নিজের জন্যও সুযোগ করে নিতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ্ তাঁর রাসূল) -এর ক্ষেত্রে (বিশেষভাবে) অনুমতি দিয়েছিলেন, তোমাদের জন্য কোন অনুমতি দেনদি। আর আমার ক্ষেত্রেও তা একদিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই কেবল অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর সেদিনই তা পুনরায় সেরূপ হারাম হয়ে গেছে যেরূপে তা একদিন পূর্বে হারাম ছিল। উপস্থিত লোকজন (এ কথাটি) অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেবে। (বর্ণনাকারী বলেন) পরবর্তী সময়ে আবূ সুরাইয়া (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, (হাদীসটি শোনার পর) আমর ইবনু সাঈদ আপনাকে কি উত্তর করেছিলেন? তিনি বললেন, আমর আমাকে বললেন, হে আবূ সুরাইয়া ! হাদীসটির বিষয়ে আমি তোমার চেয়ে অধিক অবগত আছি। (কথা ঠিক) কিন্তু, হারামে মক্কা কোন অপরাধী বা খুন থেকে পলায়নকারী কিংবা কোন চোর বা বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় না।

৩৯৬৬ কুতায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মক্কায় অবস্থানকালে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল) মদের বেচাকেনা হারাম ঘোষণা করেছেন।

৩৯৬৭ আবূ নুআয়ম ও কাবীসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (মক্কায়) দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। এ সময়ে আমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর কসর করতাম।

৩৯৬৮ আবদান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উনিশ দিন অবস্থান করেছিলেন, এ সময়ে তিনি দু’ রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৩৯৬৯ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের সময়ে) সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে উনিশ দিন (মক্কায়) অবস্থান করেছিলাম। [১] এ সময়ে আমরা নামায়ে কসর করেছিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আমরা সফরে উনিশ দিন পর্যন্ত কসর করতাম। এর চাইতে অধিক দিন অবস্থান করলে আমরা পূর্ণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। (অর্থাৎ চার রাকাত আদায় করতাম)। [১ ] আনাস (রাঃ) এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসদ্বয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্থানের মেয়াদ বর্ণনায় পার্থক্য দেখা গেলেও হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, মূলত হযরত আনাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)র সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবস্থান মেয়াদ এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীসে মক্কা বিজয়ের সফরে তাঁর অবস্থান মেয়াদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৩৯৭০ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি সুনাইন আবূ জামিলা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। যুহরী (রহঃ) বলেন, আমরা (সাঈদ) ইবনু মূসা য়্যিব (রহঃ)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় আবূ জামিলা [১] (রাঃ) দাবি করেন যে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মক্কা বিজয়ের বছর (যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য) বের হয়েছিলেন। [১ ] আবূ জামীলা সাহাবী কি সাহাবী নন-এ বিষয়টি মুহাদ্দিসীনের কাছে বিতর্কিত বিষয়। ইবনু মান্দাহ্, আবূ নুআয়ম প্রমুখ ইমাম তাঁকে সাহাবীদের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এখানে উল্লিখিত সনদ দিয়ে ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর সাহাবী হওয়ার পক্ষে প্রমাণ পেশ করেছেন।

৩৯৭১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আমর ইবনু সালিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আইয়ুব (রহঃ) বলেছেন, আবূ কিলাবা আমাকে বললেন, তুমি আমর ইবনু সালিমার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাস কর না কেন? আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেন, এরপর আমি আমর ইবনু সালিমার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমরা (আমাদের গোত্র) পথিকদের যাতায়াত পথের পাশে একটি ঝরনার নিকট বাস করতাম, (মক্কার) লোকজনের কি অবস্থা? মক্কার লোকজনের কি অবস্থা? আর ঐ লোকটিরই কি অবস্থা? তারা বলত, সে ব্যাক্তি তো দাবি করেন যে, আল্লাহ্ তাঁক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেছেন। (কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে বললেন) তাঁর কাছে আল্লাহ্ এ রকম ওহী নাযিল করেছেন। (আমর ইবনু সালিমা বলেন) তখন (পথিকদের মুখ থেকে শুনে) আমি সে বাণীগুলো মুখস্থ করে ফেলতাম যেন তা আজ আমার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। সমগ্র আরববাসী ইসলাম গ্রহণের জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ের অপেক্ষা করছিল। তারা বলত, তাঁকে তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের সঙ্গে (প্রথমে) বোঝাপড়া করতে দাও। কেননা তিনি যদি তাদের উপর বিজয় লাভ করেন তাহলে তিনি সত্য সত্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এরপর মক্কা বিজয়ের ঘটনা সংঘটিত হল। এবার সব গোত্রই তাড়াহুড়া করে ইসলামে দীক্ষিত হতে শুরু করল। আমাদের কাওমের ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আমার পিতা বেশ তাড়াহুড়া করলেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করে বাড়ি ফিরলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, আমি সত্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র দরবার থেকে তোমাদের কাছে এসেছি। তিনি বলে দিয়েছেন যে, অমুক সময়ে তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে কুরআন মেশি মুখস্থ করেছে সে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমানতি করবে। (এরপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় হল) সবাই এ রকম একজ্বীন লোককে খুঁজতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে অধিক কুরআন মুখস্থকারী অন্য কাউকে পাওয়া গেল না। কেননা আমি কাফেলার লোকদের থেকে শুনে (কুরআন) মুখস্থ করতাম। কাজেই সকলে আমাকেই (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য) তাদের সামনে এগিয়ে দিল। অথচ তখনো আমি ছয় কিংবা সাত বছরের বালক। আমার একটি চাঁদর ছিল, যখন আমি সিজ্‌দায় যেতাম তখন চাঁদরটি আমার গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যেত। (ফলে পেছনের অংশ অনাবৃত হয়ে পড়ত) তখন গোত্রের জনৈক মহিলা বলল, তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনের অংশ আবৃত করে দাও না কেন? তাই সবাই মিলে কাপড় খরিদ করে আমাকে একটি জামা তৈরি করে দিল। এ জামা পেয়ে আমি এত আনন্দিত হয়েছিলাম যে, কখনো অন্য কিছুতে এ আনন্দিত হইনি।

৩৯৭২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। অন্য সনদে লায়েস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উতবা ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তার ভাই সা’দ [ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)]-কে ওয়াসিয়াত করে গিয়েছিল যে, সে যেন যামআর বাঁদীর সন্তানটি তাঁর নিজের কাছে নিয়ে নেয়। উতবা বলেছির, পুত্রটি আমার ঔরসজাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয়কালে সেখানে আগমন করলেন (সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাসও তাঁর সাথে মক্কায় আসেন। সুযোগ পেয়ে) তখন তিনি যামআর বাঁদীর সন্তানটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত করলেন। তাঁর সাথে আবদ ইবনু যামআ (যামআর পুত্র) ও আসলেন। সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস দাবি উত্থাপন করে বললেন, সন্তানটি তো আমার ভাতিজা। আমার ভাই আমাকে বলে গিয়েছেন যে, এ সন্তান তার ঔরসজাত কিন্তু আবদ ইবনু যামআ তার দাবি পেশ করে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , এ আমার ভাই, এ যাম্‌আর সন্তান, তাঁর বিছানায় এর জম্ম হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন যামআর ক্রীতদাসীর সন্তানের প্রতি নযর দিয়ে দেখলেন যে, সন্তানটি দৈহিক আকৃতিগত দিক থেকে উতবা ইবনু আবূ ওয়াক্কাসের সাথেই বেশি সা’দৃশ্যপূর্ণ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবদ ইবনু যামআ! সন্তানটি তুমি নিয়ে যাও। সে তোমার ভাই। কেননা সে তার (তোমার পিতা যামআর) বিছানায় জম্মগ্রহণ করেছে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সন্তানটির দৈহিক আকৃতি উতবা ইবনু আবী ওয়াক্কাসের আকৃতির সা’দৃশ্য দেখার কারণে (তাঁর স্ত্রী) সাওদা বিনতে যামআ (রাঃ)-কে বললেন, হে সওদা! তুমি তার (বিতর্কিত সন্তানটির) থেকে পর্দা করবে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সন্তানের (আইনগত) পিতৃত্ব স্বামীর। আর ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) বলেছেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল যে তিনি এ কথাটি উচ্চস্বরে বলতেন।

৩৯৭৩ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় (মক্কা) বিজয় অভিযানের সময়ে জনৈকা মহিলা চুরি করেছিল। তাই তার গোত্রের লোকজন আতংকিত হয়ে গেল এব উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ)-এর কাছে এসে (উক্ত মহিলার ব্যাপারে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ করল। উরওয়া (রাঃ) বলেন, উসামা (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে যখনি কথা বললেন, তখন তাঁর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি উসামা (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত একটি হুকুম (হাদ) প্রয়োগ করার ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করছ? উসামা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এরপর সন্ধ্যা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতবা দিতে দাঁড়ালেন। যথাযথভাবে আল্লাহর হাম্‌দ ও প্রশংসা পাঠ করে বললেন, “আম্মা বাদ” তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতরা এ কারণে ধ্বংস হয়েছিল যে, তারা তাদের মধ্যকার অভিজাত শ্রেণীর কোন লোক চুরি করলে তার উপর শরীয়ত নির্ধারিত দন্ড প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকত। পক্ষান্তরে কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর দন্ড প্রয়োগ করত। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ, যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও চুরি করত তা হলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মহিলাটির হাত কেটে দিতে আদেশ দিলেন। ফলে তার হাত কেটে দেওয়া হল। অবশ্য পরবর্তীকালে সে উত্তম তওবার অধিকারিণী হয়েছিল এবং (রানু সুলায়েম গোত্রের এক ব্যাক্তির সঙ্গে) তার বিয়ে হয়েছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর সে আমার কাছে প্রায়ই আসত। আমি তার বিভিন্ন প্রয়োজন ও সমস্যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে পেশ করতাম।

৩৯৭৪ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) মুজাশি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের পর আমি আমার ভাই (মুজালিদ)-কে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি আমার ভাইকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি যেন আর্পান তার কাছ থেকে হিজরত করার ব্যাপারে বায়াআত গ্রহণ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হিজরতকারিগণ (মক্কা বিজয়ের পূর্বে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকারিগণ) হিজরতের সমুদয় মর্যাদা ও বরকত পেয়ে গেছেন। (এখন আর হিজরতের অবকাশ নেই) আমি বললাম, তা হলে কোন্ বিষয়ের উপর আপনি তার কাছ থেকে বায়আত গ্রহণ করবেন? তিনি বললেন, আমি তাঁর কাছ থেকে বায়আত গ্রহণ করবো ইসলাম, ঈমান ও জিহাদের উপর। [বর্ণনাকারী আবূ উসমান (রাঃ) বলেছেন] পরে আমি আবূ মাবাদ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি ছিলেন তাঁদের দু’ভাইয়ের মধ্যে বড়। আমি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মুজাশি’ (রাঃ) ঠিকই বর্ণনা করেছেন।

৩৯৭৫ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) মুজাশি’ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ মা’বাদ (রাঃ) (মুজালিদ)-কে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম, যেন তিনি তাঁর কাছ থেকে হিজরতের জন্য বায়আত গ্রহণ করেন। তখন তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, হিজরতের মর্যাদা (মক্কা বিজয়ের পূর্বেকার) হিজরতকারীদের দ্বারা সমাপ্ত হয়ে গেছে। আমি তার কাছ থেকে ইসলাম ও জিহাদের জন্য বায়আত গ্রহণ করব। [বর্ণনাকারী আবূ উসমান নাহদী (রহঃ) বলেন] এরপরে আমি আবূ মা’বাদ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, মুজাশি’ (রাঃ) সত্যই বলেছেন। অন্য সনদে খালিদ (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ)-এর মাধ্যমে মুজাশি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তার ভাই মুজালিদ (রাঃ)-কে নিয়ে এসেছিলেন।

৩৯৭৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বললাম, আমি সিরিয়া দেশে হিজরত করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই, বরং প্রয়োজন আছে জিহাদের। সুতরাং যাও, নিজ অন্তরের সাথে বোঝাপড়া করে দেখ, যদি জিহাদের সাহস খুঁজে পাও (তবে ভাল, গিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ কর)। অন্যথায় হিজরতের ইচ্ছা থেকে ফিরে আস। অন্য সনদে নাযর [ইবনু শুমাইল (রহঃ)] মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে (এ কথা) বললে তিনি উত্তর করলেন, বর্তমানে হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই, অথবা তিনি বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। এরপর তিনি উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

৩৯৭৭ ইসহাক ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) মুজাহিদ ইবনু জাব্‌র আল-মাক্কী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলতেনঃ মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন অবশিষ্ট নেই।

৩৯৭৮ ইসহাক ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ‘আতা ইবনু আবূ রাবাহ্‌ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবায়দ ইবনু উমায়র (রহঃ) সহ আয়িশা (রাঃ)-এর সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। সে সময় উবায়দ (রহঃ) তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। পূর্বে মু’মিন ব্যাক্তির এ অবস্থা ছিল যে, সে তার দ্বীনকে ফিত্‌নার হাত থেকে হিফাজন করতে হলে তাকে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল) -এর দিকে (মদিনার দিকে) পালিয়েযেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে (মক্কা বিজয়ের পর) আল্লাহ্ ইসলামকে বিজয় দান করেছেন। তাই এখন ম’মিন যেখানে যেভাবে চায় আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। তবে বর্তমানে জিহাদ এবং হিজরতের সওয়াবের নিয়্যাত রাখা যেতে পারে।

৩৯৭৯ ইসহাক (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুত্‌বার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন, যেদিন আল্লাহ্ সমুদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ্ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বেকার কারো জন্য তা (কখনো) হালাল করা হয়নি, আমার পরবর্তী কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। এখানে অবস্থিত শিকারকে তাড়ানো যাবে না, কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের কাঁটাতেও কাস্তে ব্যবহারে করা যাবে না। ঘাস কাটা যাবে না। রাস্তায় পড়ে থাকা কোন জিনিসকে মালিকের হাতে পৌঁছেয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হারানো প্রাপ্তি সংবাদ প্রচারকারী ব্যতীত অন্য কেউ তুলতে পাবে না। এ ঘোষণা শুনে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয্‌খির ঘাস ব্যতীত। কেননা ইয্‌খির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ঘরের ছাউনির) কাজে প্রয়োজন হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বললেন, ইয্‌খির ব্যতীত। ইয্‌খির ঘাস কাটা জায়েয। অন্য সনদে ইবনু জুবায়ের (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে। তাছাড়া এ হাদীস আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

৩৯৮০ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রাঃ)-এর হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। (আঘাতের ব্যাপারে) তিনি বলেছেন, হুনাইনের (যুদ্ধের) দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে থাকা অবস্থায় আমাকে এ আঘাত করা হয়েছিল। আমি বললাম, আপনি কি হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন? তিনি বললেন, এর পূর্বের যুদ্ধগুলোতেও অংশগ্রহণ করেছি।

৩৯৮১ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যাক্তি এসে তাকে জিজ্ঞাস করলো, হে আবূ উমর! হুনাইনের যুদ্ধের দিন আপনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিলেন কি? তখন তিনি বলেন যে, আমি তো নিজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। তবে মুজাহিদদের অগ্রবর্তী যোদ্ধাগণ (গনীমত কুড়ানোর কাজে) তাড়াহুড়া করলে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা তাঁদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় আবূ সুফিয়ান ইবনুল হারিস (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাদা খচ্চরটির মাথা ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আর রাসুলু্ল্লাহ্ তখন বলছিলেন, আমি যে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে কোন মিথ্যা নেই, আমি তো (কুরাইশ নেতা) মুত্তালিবের সন্তান।

৩৯৮২ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি শুনলাম যে, বারা ইবনু আযিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, হুনাইন যুদ্ধের দিন আপনারা কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? তিনি বললেন, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেন নি। তবে তারা (হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা) ছিল দক্ষ তীরন্দাজ, [এ কারণে তারা তীর বর্ষণ আরম্ভ করলে বসাইকে পেছনে হেঁটে যেতে হয়েছে তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে হটেননি]। তিনি (অটলভাবে দাঁড়িয়ে) বলছিলেন, আমি যে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে কোন মিথ্যা নেই। আমি (তো কুরাইশ নেতা) আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।

৩৯৮৩ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বারআ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁকে কায়স গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করেছিল যে, হুনায়ন যুদ্ধের দিন আপনারা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে পেলিয়েছিলেন? তখন তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পেলান নি। তবে হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাদের উপর আক্রমণ চালালাম তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে আরম্ভ করে। আমরা গনীমত তুলতে শুরু করলাম ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা (অতর্কিতভাবে) তাদের তীরন্দাজ বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হলাম। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহণ অবস্থায় দেখেছি। আর আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলেন, তিনি বলছিলেন, আমি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , এতে কোন মিথ্যা নেই। বর্ণনাকারী ইসরাঈল এবং যুহাইর (রহঃ) বলেছেন যে, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খচ্চরটির (পিঠ থেকে) নীচে আবতরণ করেছিলেন।

৩৯৮৪ সাঈদ ইবনু উফাইর ও ইসহাক (রহঃ) মারওয়ান এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিগণ যখন ইসলাম কবূল করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এলো এবং তাদের (যুদ্ধ লুন্ঠিত) সম্পদ ও বন্দীদেরকে ফেরত দেওয়ার প্রার্থনা জানালো তখন তিনি দাঁড়ালেন এবং তাদের বললেন, আমার সঙ্গে যারা আছে (সাহানাগণ) তারেদ অবস্থা তো তোমরা দেখতে পাচ্ছ। সত্য কথাই আমার কাছে বেশি প্রিয়। কাজেই তোমরা যুদ্ধবন্দী অথবা সম্পদের যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে পার। আমি তোমাদের জন্য (পথেই) অপেক্ষা করছিলাম। বস্তুত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তন করার পথে (জিরানা জায়গায়) দশ রাতেরও অধিক সময় পর্যন্ত তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধিদের কাছে যখন এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’টির মধ্যে একটির বেশি ফেরত দিতে সম্মত নন তখন তারা বললেন, আমরা আমাদের বন্দীদেরকে গ্রহণ করতে চাই। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথাযোগ্য হাম্‌দ ও সানা পাঠ করে বললেন, আম্মা বায়াদু, তোমাদের (হাওয়াযিন গোত্রের মুসলিম) ভাইয়েরা তওবা করে আমাদের কাছে এসেছে, আমি তাদের বন্দীদেরকে তাদের নিকট ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব তোমাদের মধ্যে যে আমার এ সিদ্ধান্তকে খুশি মনে গ্রহণ করে নেবে সে (তার অংশের বন্দীকে) ফেরত দাও। আর তোমাদের মধ্যে যে তার অংশের অধিকারকে অবশিষ্ট রেখে তা এভাবে ফেরত দিতে চাইবে যে, ফাইয়ের সম্পদ থেকে (আগামীতে) আল্লাহ্ আমাকে সর্বপ্রথম যা দান করবেন তা দিয়ে আমি তার এ বন্দীর মূল্য পরিশোধ করবো, তবে সেও তাই করো। তখন সকল লোক উত্তর করলোঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আপনার প্রখম সিদ্ধান্ত খুশিমনে গ্রহণ করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে এ ব্যপারে কে খুশিমনে অনুমতি দিয়েছে আর কে খুশিমনে অনুমতি দেয়নি আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই তোমরা ফিরে যাও এব তোমাদের মধ্যাকার বিজ্ঞ ব্যাক্তিদরে সাথে আলাপ কর। তাঁরা আমার কাছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যাক্তিদের সাথে আলাপ কর। তাঁরা আমার কছে বিষয়টি পেশ করবে। সবাই ফিরে গেল। পরে তাদের বিজ্ঞ ব্যাক্তিগণ তাদের সাথে (আলাদা আলাদাভাবে) আলাপ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এসে জানালো যে, সবাই তাঁর (প্রথম) সিদ্ধান্তকেই খুশি মনে মেনে নিয়েছে এবং (ফেরত দেয়া) অনুমতি দিয়েছে। [ইমাম ইবনু শিহান যুহরী (রহঃ) বলেন] হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের বিষয়ে এ হাদীসটই আমি অবহিত হয়েছে।

৩৯৮৫ আবূ নু’মান (রহঃ) নাফি’ (সাখতিয়ানী) (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! । হাদসিটি অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুনায়নের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করার কালে উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জাহিলিয়্যাতের যুগে মানত করা তাঁর একটি ই’তিকাফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সেটি পূরণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন হাদীসটি হাম্মাদ-আইয়ূব-নাফে (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া জারীর ইবনু হাযিম এবং হাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ)-ও এ হাদীসটি আইয়ুব, নাফে (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

৩৯৮৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের বছর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা যখন (যুদ্ধের জন্য) শত্রুদের মুখোমুখি হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম সে মুসলিমদের এক ব্যাক্তিকে পরাভূত করে ফেলেছে। তাই আমি কাফের লোকটির পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম এবং লোকটির পরিহিত লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসলো এবং আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর গন্ধ অনুভব করতে লাগলাম। এরপর লোকটই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আর আমাকে ছেড়ে দিল। এরপর আমি উমর [ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)]-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, লোকজনের (মুসলিমদের) কি হল, (যে সবাই বিশৃংখল হয়ে গেলো)? তিনি বললেন, মহান ও শক্তিশালী আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এলো (এবং মুশরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল) যুদ্ধের পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এক স্থানে) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যাক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাঁকে তার (নিহত ব্যাক্তির) পরিত্যক্ত সব সম্পদ প্রদান করা হবে। এ ঘোষণা শুনে আমি (দাঁড়িয়ে সবাইকে লক্ষ করে) বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কেউ আছে কি? (কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম। আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেনঃ (তারপর) আবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ ঘোষণা দিলেন। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কেউ আছে কি? কিন্তু (এবারও কোন সাড়া না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারপর অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন, আবূ কাতাদা! তোমার কি হয়েছে? আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময়ে এক ব্যাক্তি বললো, আবূ কাতাদা (রাঃ) ঠিকই বলেছেন, তবে নিহত ব্যাক্তির পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাঁকে সম্মত করে দিন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, না, আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতে পারেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকর (রাঃ) ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাঁকে (আবূ কাতাদা) দিয়ে দাও। [ আবূ কাতাদা (রাঃ) বলেন] তখন সে আমাকে পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল। এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বনী সালিমার এলাকায় একটি বাগান খরিদ করআম। আর ইসলাম কবূল করার পর এটই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি। অপর সনদে লাইস (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখতে পেলাম যে, একজন মুসলিম এক মুশরিকের সাথে লড়াই করছে। অপর এক মুশরিক মুসলিম ব্যাক্তির পেছন দিক থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আত্রমণ করছে। আমি আক্রমণকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সে আমাকে আঘাত করার জন্য তার হাত উঠাল। আমি তার হাতের উপর আঘাত করলাম এবং তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে সজোরে চাপ দিল। এমনকি আমি (মৃত্যুর) ভয় পেয়ে গেলাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও সে দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেললাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলেন। আমিও তাঁদের সাথে পেলালাম। হঠাৎ লোকদের মাঝে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে আমি তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কি? তিনি বললেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হয়েছে। এরপর লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে মুসলিম ব্যাক্তি (শত্রুদলের) কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত ব্যাক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যে একজনকে হত্যা করেছি সে ব্যাপারে আমি দাঁড়িয়ে সাক্ষী খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু আমর পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কাউকে পেলাম না। তখন আমি বসে পড়লাম। এরপর আমি ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন তাঁর সঙ্গীদের একজন বললেন, উল্লিখিত নিহত ব্যাক্তির (পরিত্যক্ত) হাতিয়ার আমার কাছে আছে। তা আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করে দিন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল) -এর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরায়শী দুর্বল ব্যাক্তিকে তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] দিতে পারেন না। রাবী বলেন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান খরিদ করলাম। আর ইসলাম কবূল করার পর এটই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল, যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি।

৩৯৮৭ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধ থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হওয়ার পর তিনি আবূ আমির (রাঃ)-কে একটি সৈন্যবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের প্রতি পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি (আবূ আমির) দুরায়দ ইবনু সিম্মার সাথে মুকাবিলা করলে দুরায়দ নিহত হয় এবং আল্লাহ্ তার সহযোগী যোদ্ধাদেরকেও পরাজিত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ আমির (রাঃ)-এর সাথে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজানো! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যাক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করলো। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পশ্চাঁদ্ধাবন করলাম, (পেলাচ্ছো কেন,)বেহায়া দাঁড়াও না, দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেলো। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ্ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি বললেন, (ঠিক আছে, এবার তুমি আমার হাঁটু থেকে) তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানিও বেরিয়ে আসলো। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! (আমি হয়তো বাঁচবো না) তাই তুমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে আমাকে সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচেছিলেন, তারপর ইন্তেকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর বাড়ি প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (নামেমাত্র) একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পিঠে এবং পার্শ্বদেশে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। (তাঁকে এ কথাও বললাম যে) তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) বলে গিয়েছেন, তাঁকে [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে] আমার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বলবে। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনতে বললেন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ্! তোমার প্রিয় বান্দা আবূ আমিরকে মাগফিরাত দান করো। [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়ার মুহূর্তে হাতদ্বয় এত উপরে তুললেন যে] আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ পর্যন্ত দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ্! কিয়ামত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলুকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করো। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দোয়া করুন)। তিনি দোয়া করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও এবং কিয়ামত দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, দু’টি দোয়ার একটি ছিল আবূ আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিলো আবূ মূসা (আশআরী) (রাঃ)-এর জন্য।

৩৯৮৮ হুমাইদী (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমার কাছে এক হিজড়া ব্যাক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম, সে (হিজড়া ব্যাক্তি) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া (রাঃ)-কে বলছে, হে আবদুল্লাহ! কি বলো, আগামীকাল যদি আল্লাহ্ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা হলে গায়লানের কন্যাকে অবশ্যই তুমি লুফে নেবে। কেননা সে (এতই স্থুলদেহ ও কোমল যে), সামনের দিকে আসার সময়ে তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। [উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন] তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদেরকে (হিজড়াদেরকে) তোমাদের কাছে প্রবেশ করতে দিও না। ইবনু উয়াইনা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু জুরায়জ (রাঃ) বলেছেন, হিজড়া লোকটির নাম ছিলো হীত।

৩৯৮৯ মাহমুদ (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি এ হাদীসে এতটুকু বৃদ্ধি করেছেন যে, সেদিন তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] তায়িফ অবরোধ করা অবস্থায় ছিলেন।

৩৯৯০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফ অবরোধ করলেন। (এবং দীর্ঘ পনেরোরও অধিক দিন পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে গেলেন) কিন্তু তাদের কাছ থেকে কিছুই হাসিল করতে পারেননি। তাই তিনি বললেন, ইন্‌শা আল্লাহ্ আমরা (অবরোধ উঠিয়ে মদিনার দিকে) ফিরে যাবো। কথাটি সাহাবীদের মনে ভারী অনুভূত হল। তাঁরা বললেন, আমরা চলে যাবো, তায়েফ বিজয় করবো না? বর্ণনাকারী একরার কাফিলুন শদ্বের স্থলে নাকফুলো (অর্থাৎ আমরা ‘যুদ্ধবিহীন ফিরে যাবো’) বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে, সকালে গিয়ে লড়াই করো। তাঁরা (পরদিন) সকালে লড়াই করতে গেলেন, এতে তাঁদের অনেকেই আহত হলেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইন্‌শা আল্লাহ্ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাবো। তখন সাহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এ অবস্থা দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। বর্ণনাকারী সুফিয়ান (রহঃ) একবার বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মুচকি হাসি হেসেছেন। হুমায়দী (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান আমাদিগকে এ হাদীসের পূর্ণ সূত্রটিতে ‘খবর’ শব্দ প্রয়োগ করে বর্ণনা করেছেন (অর্থাৎ কোথাও ‘আন’ শব্দ প্রয়োগ করেন নি)।

৩৯৯১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ উসমান [নাহ্‌দী (রহঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাদীসটি শুনেছি সা’দ থেকে, যিনি আল্লাহর পথে গিয়ে সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) থেকেও শুনেছি যিনি (তায়েফ অবরোধকালে) সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনসহ তায়েফের পাঁচিলের উপর চড়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসেছিলেন। তাঁরা দু’জনই বলেছেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার জানাথাকা সত্ত্বেও অন্যকে নিজের পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম। হিশাম (রহঃ) বলেন, মা’মার (রহঃ) আমাদের কাছে আসিম- আবূল আলিয়া (রহঃ) অথবা আবূ উসমান নাহদী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি সা’দ এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি শুনেছি। আসিম (রহঃ) বলেন, আমি (আবূল আলিয়া অথবা আবূ উসমান) (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা কররাম, নিশ্চয় আপনাকে হাদীসটি এমন দু’জন রাবী বর্ণনা করেছেন যাঁদেরকে আপনি আপনার নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট মনে করেন। তিনি উত্তরে বললেন, অবশ্যই, কেননা তাদের একজন হলেন সেই ব্যাক্তি যিনি আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলোন। আর অপর জন হলেন যিনি তায়েফের (নগরপাঁচিল টপকিয়ে) এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সাক্ষাৎকারী তেইশ জনের একজন।

৩৯৯২ মুহাম্মদ ইবনু ‘আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ)-সহ মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী জিরানা নামাক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তখন, আমি তাঁর কাছে ছিলাম। এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করো। সে বললো, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি আবূ মূসা ও বিলাল (রাঃ)-এর দিকে ফিরে সক্রোধে বললেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দু’জন তা গ্রহণ করো। তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি পানি ভরে একটি পাত্র আনতে বললেন। (পানি আনা হল) তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমন্ডল ধুয়ে কুল্লি করলেন। তারপর [ আবূ মূসা ও বিলাল (রাঃ)-কে] বললেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমন্ডলি ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ করো। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে যথা নির্দেশ কাজ করলেন। এমন সময় উম্মে সালামা (রাঃ) পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও কিছু অবশিষ্ট রেখে দিও। অতএব তাঁরা এ থেকে অবশিষ্ট কিছু উম্মে সালামা (রাঃ)-এর জন্য রেখে দিলেন।

৩৯৯৩ ইয়াকুব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) সাফওয়ান ইবনু ইয়া’লা ইবনু উমাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইয়ালা (রাঃ) (অনেক সময়) বলতেন যে, আহা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার মুহূর্তে যদি তাঁকে দেখতে পেতাম। ইয়া’লা (রাঃ) বলেন, এরই মধ্যে একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর (মাথার) উপর একটি কাপড় টানিয়ে ছায়া করে দেয়া হয়েছিল। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে সাহাবীদের কয়েকজনও উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক বেদুঈন আসলো। তার গায়ে খুশবূ মাখানো ছিলো এবং পরনে ছিলো একটি জোব্বা। সে বললো, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন যে গায়ে খুশবু মাখানোর পর জোব্বা পরিধান করা অবস্থায উমরা আদায়ের জন্য ইহ্‌রাম বেঁধেছে? [প্রশ্নকারীর জবাব দেয়ার পূর্বেই উমর (রাঃ) দেখলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারায় ওহী অবতীর্ণ হওয়ার চিহৃ দেখা যাচ্ছে] তাই উমর (রাঃ) হাত দিয়ে ইশারা করে ইয়া’লা (রাঃ)-কে আসতে বললেন। ইয়া’লা (রাঃ) এলে উমর (রাঃ) তাঁর মাথাটি (ছায়ার নিচে) ঢুকিয়ে দিলেন। তখন তিনি (ইয়া’লা) দেখতে পেলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা লাল বর্ণ হয়ে রয়েছে। আর ভিতরে শ্বাস দ্রুত যাতায়াত করছে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ পর্যন্ত ছিন, তারপর স্বাভঅবিক অবস্থায় ফিরে এলো। তখন তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে লোকটি কোথায়, কিছুক্ষণ আগে যে আমাকে ‘উমরার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। এরপর লোকটিকে খুঁজে আনা হলে তিনি বললেনঃ তোমার গায়ে যে খুশবু রযেছে তা তুমি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জোব্বাটি খুলে ফেল। তারপর হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ে যা কিছু করে থাক উমরাতেও সেগুলোই পালন কর।

৩৯৯৪ মূসা ইবনু ইস্‌মাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু আসিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিবসে আল্লাহ্ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই তিনি দেননি। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তাঁরা তা পান নি। অথবা তিনি বলেছেনঃ তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, যার পরে আল্লাহ্ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, যার পর আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে রিক্তহস্ত, যার পরে আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগন জবাবে বলতেন, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল) ই আমাদের উপর অধিক ইহ্‌সানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাসূল -এর জবাব দিতে তোমাদেরক বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে গেলেন, আল্লাহ্ এবাং তাঁর রাসূল) ই আমাদের উপর অধিক ইহ্‌সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন (যেগুলোকে আমরা বিদূরিত করেছি এবং আপনাকে সাহায্য করেছি) কিন্তু তোমরা কি এ কথার সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হল (নববী) দেহসংযুক্ত গেঞ্জি আর অন্যান্য লোক হল উপরের জামা। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে (দ্বীনের উপর টিকে থাকবে) অবশেষে তোমরা হাউজে কাওসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

৩৯৯৫ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ্ তাঁর রাসূল) -কে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গনীমত হিসেবে যতটুকু দান করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে এক একশ’ করে উট দান করতে লাগলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারি থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। আনাস (রাঃ) বলেন, তাঁদের এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বর্ণনা করা হলে তিনি আনসারদের কাছে সংবাদ পাঠালেন এবং তাদেরকে একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে জামায়েত করলেন। এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে উপস্থিত থাকতে অনুমতি দেননি। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে কি কথা আমার নিকট পৌঁছলো? আনসারদের বিজ্ঞ উলামাবৃন্দ বললেনঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারিগুলো থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে (গনীমতের মাল) দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফ্‌র ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্য যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করতে পারি। তোমরা কি এত সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহর কসম, তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে। আনসারগন বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা এতে সন্তুষ্ট থাকলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রাধান্য প্রবলভাবে অনুভব করতে থাকবে। অতএব, আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল) -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা সবর করে থাকবে। আমি হাউজে কাওসারের নিকট থাকব। আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) সবর করেননি।

৩৯৯৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মধ্যে গনীমতের মাল বন্টন করে দিলেন। এতে আনসারগণ নাখোশ হয়ে গেলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন পার্থিব সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহর রাসূল কে নিয়ে ফিরবে? তাঁরা উত্তর দিলেন, অবশ্যই (সন্তুষ্ট থাকবো)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকজন কোন উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করবো।

৩৯৯৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখি হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণকারী) নও-মুসলিমগণ। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এ মুহূর্তে তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। (অবস্থা আরো তীব্র আকার ধারণ করলে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন আর বলতে থাকলেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল)। (শেষ পর্যন্ত) মুশরিকরাই পরাজিত হল। (যুদ্ধশেষে) তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে (গনীমতের সম্পূর্ণ সম্পদ) বন্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল। তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর একত্রিত করলেন এবং বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন তো বকরী ও উট নিয়ে চলে যাবে আর তোমরা চলে যাবে আল্লাহর রাসূল কে নিয়ে। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে গমন করে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে গমন করে তা হলে আমি আমার জন্য আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহণ করবো।

৩৯৯৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের লোকজনকে জমায়েত করে বললেন, কুরাইশরা অতি সম্প্রতিকালের জাহিলিয়াত বর্জনকারী (নও-মুসলিম) এবং দুর্দশাগ্রস্ত। তাই আমি তাদেরকে অনুদান দিয়ে তাদের মন জয় করার ইচ্ছা করেছি। তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, অন্যান্য লোক পার্থিব ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে আল্লাহর রাসূল কে নিয়ে। তারা বললেন, অবশ্যই (সন্তুষ্ট থাকবো)। তিনি আরো বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে অতিক্রম করে আর আনসারগণ একটি গিরিপথ দিয়ে অতিক্রম করে যায়, তা হলে আমি আনসারদের গিরিপথ অথবা তিনি বলেছেন, আনসারদের উপত্যকা দিয়েই অতিক্রম করে যাবো।

৩৯৯৯ কাবীসা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের গনীমত বন্টন করে দিলেন, তখন আনসারদের এক ব্যাক্তি বলে ফেলল যে, এই বন্টনের ব্যাপারে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখেন নি। কথাটি শুনে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে কথাটি জানিয়ে দিলাম। তখন তাঁর চেহারার বং পরিবর্তিত হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহ্, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর রহমত বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবর করেছিলেন।

৪০০০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন লোককে (গনীমতের মাল) বেশি বেশি করে দিয়েছিলেন। যেমন আকরা’কে একশ’ উট দিয়েছিলেন। ‘উয়ায়নাকে অনুরূপ (একশ’ উট) দিয়েছেলেন। এভানে আরো কয়েকজনকে দিয়েছেন। এতে এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, এ বন্টন পদ্ধতিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন) আমি বললাম, অবশ্যই আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা জানিয়ে দিব। এরপর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি শুনে] বললেন, আল্লাহ্ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর করুণা বর্ষণ করুন। তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন।

৪০০১ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিন হাওয়াযিন, গাতফান ইত্যাদি গোত্র নিজেদের গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী ও সন্তান-সন্ততিসহ যুদ্ধক্ষেত্রে এলো। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলো দশ হাজার তুলাকা [১] সৈনিক। যুদ্ধে তারা সবাই তাঁর পাশ থেকে পিছনে সরে গেল। ফলে তিনি একাকী রয়ে যান। সেই সংকটময় মূহুর্তে তিনি আলাদা-আলাদাভাবে দু’টি ডাক দিয়েছিলেন, তিনি ডান দিক ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল, তাঁরা সবাই উত্তর করলেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। এরপর তিনি বাম দিকে ফিরে বলেছিলেন, ওহে আনসারসকল। তাঁরা সবাই উত্তরে বললেন, আমরা হাযির ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি সুসংবাদ নিন, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাদা রঙের খচ্চরটির পিঠে ছিলেন। (অবস্থা আরো তীব্র হলে) তিনি নিচে নেমে পড়লেন এবং বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল)। (শেষ পর্যন্ত) মুশরিক দলই পরাজিত হল। সে যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ গনীমত হস্তগত হল। তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] সেসব সম্পদ মুহাজির এবং নও-মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে তার কিছুই দেননি। তখন আনসারদের (কেউ কেউ) বললেন, কঠিন মূহুর্ত আসলে আমাদেরকে ডাকা হয় আর গনীমত অন্যদেরকে দেওয়া হয়। কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। তাই তিনি তাদেরকে একটি তাঁবুতে জমায়েত করে বললেন, হে আনসারগন! একি কথা আমার কাছে পৌঁছলো? তাঁরা চুপ করে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আনসারগন! তোমরা কি খুশি থাকবেনা যে, লোকজন দুনিয়ার ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা (বাড়ি) ফিরে যাবে আল্লাহর রাসূল ’কে সঙ্গে নিয়ে? তাঁরা বললেনঃ অবশ্যই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকজন একটি উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসারগন একটি গিরিপথ দিয়ে চলে তাহলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই গ্রহন করে নেবো। বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ হামযা (আনাস ইবনু মালিক) আপনি কি এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি তাঁর কাছ থেকে আলাদা থাকতাম বা কখন? (যে আমি তখন সেখানে থাকবোনা)। [১] ‘তুলাকা’ শব্দটি ‘তালীক’- এর বহু বচন। এর অথ হল মুক্তিপ্রাপ্ত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের কয়েকজন ব্যতীত অবশিষ্ট সবাইকে সাধারনভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তুলাকা শব্দ দিয়ে সে সব ক্ষমাপ্রাপ্তদেরকে বুলানো হয়েছে। হুনায়ন যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী মুক্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা আলোচ্য হাদীসে দশ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত দশ হাজার ছিলো আনসার ও মুহাজিরদের সৈনিক সংখ্যা। আর ‘তুলাকা’দের সংখ্যা ছিলো এর এক-দশমাংশেরও অনেক কম। এ জন্য ইবনু হাজার আসকালানী ও অন্যান্য হাদীসবিদদের মতানুসারে এখানে ‘তুলাকা’ শব্দের পূর্বে একটি ‘ওয়া’ হরফ উহ্য আছে। অর্থাৎ দশ হাজার আনসার ও মুহাজির এবং মুক্তিপ্রাপ্ত লোকজন।

৪০০২ : হযরত আবূ নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে একটি সৈন্যদল পাঠিয়েছিলেন, তাতে আমিও ছিলাম। (এ যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের অংশে) আমাদের সবার ভাগে বারোটি করে উট পৌঁছল। উপরন্তু আমাদেরকে একটি করে উট বেশিও দেওয়া হল। কাজেই আমরা সকলে তেরোটি করে উট নিয়ে ফিরে আসলাম।

৪০০৩ : হযরত মাহমুদ ইবনু গায়লান) ও নুয়াঈম (রহঃ) সালিমের পিতা [আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)] থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) কে বনী জাযিমার বিরুদ্ধে এক অভিযানে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে পৌঁছে) খালিদ (রাঃ) তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। (তারা দাওয়াত কবুল করেছিল) কিন্তু আমরা ইসলাম কবুল করলাম, এ কথাটি বুঝিয়ে বলত পারছিলোনা। তাই তারা বলতে লাগলো, আমরা স্ব-ধর্ম ত্যাগ করলাম, আমরা স্ব-ধর্ম ত্যাগ করলাম। খালিদ (রাঃ) তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে থাকলেন। এবং আমাদের প্রত্যেকের কাছে বন্দীদেরকে সোপর্দ করতে থাকলেন। অবশেষে একদিন তিনি আদেশ দিলেন আমাদের সবাই যেন নিজ নিজ বন্দীকে হত্যা করে ফেলি। আমি বললাম, আল্লাহর কসম, আমি আমার বন্দীকে হত্যা করবোনা, আর আমার সাথীদের কেউই তার বন্দীকে হত্যা করবেনা (কারন ব্যাপারটি সন্দেহযুক্ত)। অবশেষে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে আসলাম। আমরা তাঁর কাছে এ ব্যাপারটি উল্লেখ করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দু’হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ্! খালিদ যা করেছে আমি তার দায় থেকে মুক্ত (আমি এর সাথে জড়িত নই)। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছেন।

৪০০৪ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আলী ইবনু আবূ তালিব) (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক অভিযানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিলেন। এবং আনসারদের এক ব্যাক্তিকে তার সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি তাদেরকে তাঁর (সেনাপতির) আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (পরে কোন কারনে) আমীর ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করতে নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আমার জন্য কিছু কাঠ সংগ্রহ করো। তাঁরা কাঠ সংগ্রহ করলেন। তিনি বললেন, এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। তাঁরা আগুন লাগালেন। তখন তিনি বললেন, এবার তোমরা সকলে এ আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ো। (আদেশ মতো) তাঁরা ঝাঁপ দেয়ার সংকল্পও করে ফেললেন। কিন্তু তাদের কয়েকজন বাধা দিয়ে বলতে লাগলেন, আগুন থেকেই তো আমরা পালিয়েগিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। (অথচ এখানে সেই আগুনেই ঝাঁপ দেয়ারই আদেশ)। এভাবে জ্বলতে জ্বলতে অবশেষে আগুন নিভে গেলো এবং তার ক্রোধও থেমে গেলো। এরপর এ সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, যদি তারা আগুনে ঝাঁপ দিত তা হলে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আর এ আগুন থেকে বের হতে পারতোনা। কেননা আনুগত্য কেবল সৎ কাজের।

৪০০৫ হযরত মূসা (রাঃ) হযরত আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মূসা এবং মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। বর্ননাকারী বলেন, তৎকালে ইয়ামানে দু’টি প্রদেশ ছিলো। তিনি তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে বলে দিলেন, তোমরা (এলাকাবাসীদের সাথে) কোমল আচরন করবে, কঠিন আচরন করবেনা। এলাকাবাসীদের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে, অনীহা সৃষ্টি হতে দেবেনা। এরপর তাঁরা দু’জনে নিজ নিজ শাসন এলাকায় চলে গেলেন। আবূ বুরদা (রাঃ) বললেন, তাঁদের প্রত্যেকেই যখন নিজ নিজ এলাকায় সফর করতেন এবং অন্যজনের কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে যেতেন তখন তাঁর সাথে সাক্ষাত হলে তাদের সালাম বিনিময় করতেন। এভাবে হযরত মু’আয (রাঃ) একবার তাঁর এলাকায় এমন স্থানে সফর করছিলেন, যে স্থানটি তাঁর সাথী হযরত আবূ মূসা (রাঃ) এর এলাকার নিকটবর্তী ছিল। সুযোগ পেয়ে তিনি খচ্চরের পিঠে চড়ে (আবূ মূসা’র এলাকায়) পৌঁছে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে হযরত আবূ মূসা (রাঃ) বসে আছেন আর তাঁর চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়ে রয়েছে। আরো দেখলেন, পাশে এক লোককে তার গলার সাথে উভয় হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। হযরত মু’আয (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (আবূ মূসা), এ লোকটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, এ লোকটি ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। হযরত মু’আয (রাঃ) বললেন, তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি সাওয়ারী থেকে অবতরন করবোনা। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, এ উদ্দেশ্যেই তাকে এখানে আনা হয়েছে। সুতরাং আপনি অবতরন করুন। তিনি বললেন, না তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমি নামবোনা। ফলে আবূ মূসা (রাঃ) হুকুম করলেন এবং লোকটিকে হত্যা করা হল। এরপর হযরত মু’আয (রাঃ) অবতরন করলেন। মু’আয (রাঃ) বললেন, ওহে আবদুল্লাহ! আপনি কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি বললেন, আমি (রাত-দিনের সব সময়ই) কিছুক্ষন পরপর কিছু অংশ করে তেলাওয়াত করে থাকি। তিনি বললেন, আর আপনি কিভাবে তিলাওয়াত করেন, হে মু’আয? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাতের প্রথম ভাগে শুয়ে পড়ি এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিদ্রা যাওয়ার পর আমি উঠে পড়ি। এরপর আল্লাহ্ আমাকে যতটুকু তাওফীক দান করেন তিলাওয়াত করতে থাকি। এ পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য আমি আমার নিদ্রার অংশকেও সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করি, যেভাবে আমি আমার তিলাওয়াতকে সাওয়াবের বিষয় বলে মনে করে থাকি।

৪০০৬ : হযরত ইসহাক (রহঃ) হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (আবূ মূসা’কে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরী করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ঐগুলো কি কি? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তা হল বিত্উ ও মিযর শরাব। বর্ননাকারী হযরত সাঈদ (রহঃ) বলেন, (কথার ফাঁকে) আমি আবূ বুরদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিত্উ কি? তিনি বললেন, বিত্উ হল মধু থেকে গ্যাজানোো রস আর মিযর হল যবের গ্যাজানোো রস। (সাঈদ বলেন) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। হাদীসটি জারীর এবং আবদুল ওয়াহিদ শায়বানী (রহঃ) এর মাধ্যমে হযরত আবূ বুরদা (রাঃ) সূত্রেও বর্ননা করেছেন।

৪০০৭ : হযরত মুসলিম (রহঃ) হযরত আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, তার দাদা আবূ মূসা ও মু’আয (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (গভর্নর হিসেবে) ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময় তিনি (উপদেশ স্বরুপ) বলে দিয়েছিলেন, তোমরা লোকজনের সাথে কোমল আচরন করবে। কখনো কঠিন আচরন করবেনা। মানুষের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করবে। কখনো তাদের মনে অনীহা আসতে দিবেনা এবং একে অপরকে মেনে চলবে। হযরত আবূ মূসা বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের এলাকায় মিযর নামের এক প্রকার শরাব যব থেকে তৈরী হয় আর বিত্উ নামের এক প্রকার শরাব মধু থেকে তৈরী করা হয় (অতএব এগুলোর হুকুম কি?)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নেশা উৎপাদনকারী সকল বস্তুই হারাম। এরপর দু’জনেই চলে গেলেন। মু’আয আবূ মূসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করেন? তিনি উত্তর দিলেন, দাঁড়িয়ে, বসে, সাওয়ারীর পিঠে সাওয়ার অবস্থায় এবং কিছুক্ষন পরপরই তিলাওয়াত করি। তিনি বললেন, তবে আমি রাতের প্রথমদিকে ঘুমিয়ে পড়ি তারপর (শেষ ভাগে তিলাওয়াতের জন্য সালাত (নামায/নামাজ)) দাঁড়িয়ে যাই। এ রকমে আমি আমার নিদ্রার সময়কেও সাওয়াবের অন্তর্ভুক্ত মনে করি, যেভাবে আমি আমার সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ানোকে সাওয়াবের বিষয় মনে করে থাকি। এরপর (প্রত্যেকেই নিজ নিজ শাসন এলাকায় কার্য পরিচালনার জন্য) তাঁবু খাটালেন। এবং পরস্পরের সাক্ষাত বজায় রেখে চললেন। (সে মতে এক সময়) হযরত মু’আয (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) এর সাক্ষাতে এসে দেখলেন, সেখানে এক ব্যাক্তি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, লোকটি ইহুদী ছিলো, ইসলাম গ্রহন করার পর মুরতাদ হয়ে গেছে। হযরত মু’আয (রাঃ) বললেন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেবো। শু’বা ইবনুল হাজ্জাজ) থেকে আফাদী এবং ওয়াহাব অনু্রুপ বর্ননা করেছে। আর ওকী (রহঃ) নযর ও আবূ দাউদ (রহঃ) এ হাদীসের সনদে শুবা (রহঃ)-সাঈদ-সাঈদের পিতা- সাঈদের দাদা – রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। হাদীসটি জারীর ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ) শায়বানী (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ বুরদার সূত্রে বর্ননা করেছেন।

৪০০৮ : হযরত আববাস ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আমার গোত্রের এলাকায় (গভর্নর নিযুক্ত করে) পাঠালেন। (আমি সেখানেই রয়ে গেলাম। এরপর বিদায় হাজ্জের (হজ্জের) বছর আমিও হাজ্জ (হজ্জ) করার জন্য আসলাম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবতাহ নামক স্থানে অবস্থান করার সময় আমি তাঁর সাক্ষাতে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কাইস, তুমি ইহরাম বেঁধেছ কি? আমি বললাম, জী হ্যাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি বললেন, (তালবিয়া) কিরুপে বলেছিলে? আমি উত্তর দিলাম, আমি তালবিয়া এরুপ বলেছি যে, হে আল্লাহ্, আমি হাজির হয়েছি এবং আপনার [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] ইহরামের মতো ইহরাম বাঁধলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা, তুমি কি তোমার সঙ্গে কুরবানীর পশু এনেছ? আমি জবাব দিলাম, আনিনি। তিনি বললেন, (ঠিক আছে) বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করো এবং সাফা ও মারওয়ার সায়ী আদায় করো, তারপর হালাল হয়ে যাও। আমি সে রকমই করলাম। এমন কি বনী কাইসের জনৈক মহিলা আমার চুল পর্যন্ত আঁচড়িয়ে দিয়েছিলো। আমি হযরত উমর ইবনু খাত্তাব) (রাঃ) এর খিলাফত আমল পর্যন্ত এ রকম আমলকেই অব্যাহত রেখেছি।

৪০০৯ : হযরত হিববান (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবালকে (গভর্নর বানিয়ে) ইয়ামানে পাঠানোর সময় তাঁকে বললেন, অচিরেই তুমি আহলে কিতাবদের এক গোত্রের কাছে যাচ্ছ। যখন তুমি তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ দাওয়াত দেবে, তারা যেন সাক্ষ্য দেয় যে, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ’, এরপর তারা যদি তোমার এ কথা মেনে নেয়, তখন তাদেরকে এ কথা জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর দিনে ও রাতে পাঁচবার সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিয়েছেন। তারা তোমার এ কথা মেনে নিলে তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর যাকাত ফরয করে দিয়েছেন, যা তাদের (মুসলমানদের) সম্পদশালীদের কাছ থেকে গ্রহন করা হবে এবং তাদের অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিতরন করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তা হলে (তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহন করার সময়) তাদের মালের উৎকৃষ্টতম অংশ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকবে। মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করবে, কেননা, মজলুমের বদদোয়া এবং আল্লাহর মাঝখানে কোন পর্দার আড়াল থাকেনা। আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেন, এবং সমার্থবোধক শব্দ, এবং এর অর্থ একই।

৪০১০ : হযরত সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মায়মুন (রাঃ) থেকে বর্নিত, হযরত মু’আয ইবনু জাবাল) (রাঃ) ইয়ামানে পৌঁছার পর লোকজনকে নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে গিয়ে তিনি (অর্থাৎ, আল্লাহ্ ইবরাহীমকে বন্ধু বানিয়ে নিলেন) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। তখন কাওমের এক ব্যাক্তি বলে উঠলো, ইবাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে। মু’আয ইবনু মু’আয বাসরী), শু’বা-হাবীব-সাঈদ (রহঃ)- আমর (রাঃ) থেকে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ননা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু জাবাল) (রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠালেন। (সেখানে পৌঁছে) মু’আয (রাঃ) ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা নিসা তিলাওয়াত করলেন। যখন তিনি (তিলাওয়াত করতে করতে) পাঠ করলেন তখন তাঁর পেছন থেকে জনৈক ব্যাক্তি বলে উঠলো ইবরাহীমের মায়ের চোখ ঠান্ডা হয়ে গেছে।

৪০১১ : হযরত আহমাদ ইবনু উসমান (রহঃ) হযরত বারা’ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) এর সঙ্গে ইয়ামানে পাঠালেন। বারা (রাঃ) বলেন, তারপর কিছুদিন পরেই তিনি খালিদ (রাঃ) এর স্থলে আলী (রাঃ) কে পাঠিয়ে বলে দিয়েছেন যে, খালিদ (রাঃ) এর সাথীদেরকে বলবে, তাদের মধ্যে যে তোমার সাথে (ইয়ামানের দিকে) যেতে ইচ্ছা করে সে যেন তোমার সাথ চলে যায়, আর যে (মদিনায়) ফিরে যেতে চায় সে যেন ফিরে যায়। (রাবী বলেন) তখন আমি আলী (রাঃ) এর সাথে ইয়ামানগামীদের মধ্যে থাকলাম। ফলে আমি গনীমত হিসেবে অনেক পরিমান আওকিয়া লাভ করলাম।

৪০১২ : হযরত মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হযরত বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে খুমুস (গনীমতের এক পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন। (রাবী, বুরায়দা বলেন, কোন কারনে) আমি আলী (রাঃ) এর প্রতি নারাজ ছিলাম, আর তিনি গোসলও করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরায়দা! তুমি কি আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি উত্তর করলাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেকেোনা। কারন খুমসের ভিতরে তার প্রাপ্য অধিকার এ অপেক্ষাও বেশি রয়েছে। [১] [১] হযরত বুরায়দা (রাঃ) আলী (রাঃ) এর প্রতি নারাজ হয়ে যাওয়ার কারন ছিলো: তিনি দেখেছেন যে, আলী কয়েদীদের মধ্যে থেকে একজন বাঁদীকে নিজের জন্য নির্বাচন করে নিয়েছিলেন। এবং আলীর শেষ রাতের গোসল এবং বাঁদীর চুল থেকে পানির ফোঁটা টপকানো দেখে তিনি উভয়ের একত্রে রাত্রি যাপনেরও সন্দেহ করলেন। অথচ এখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গনীমত মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দেননি। পরে বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানানো হলে তিনি বুরায়দাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আলীকে গনীমত বন্টন করে দেয়ার হুকুমও দেয়া হয়েছিলো।

৪০১৩ : হযরত কুতায়বা (রহঃ) হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ইয়ামান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সিলম বৃক্ষের পাতা দ্বারা পরিশোধিত এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু তাজা স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত খনিজ মাটিও পরিষ্কার করা হয়নি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার ব্যাক্তির মধ্যে স্বর্ণখন্ডটি বন্টন করে দিলেন। তারা হলেন, উয়ায়না ইবনু বাদর, একরা ইবনু হারিস, যায়দ আল-খায়ল এবং চতুর্থজন আলকামা কিংবা আমির ইবনু তুফাইল (রাঃ)। তখন সাহাবীগনের মধ্য থেকে একজন বললেন, এ স্বর্নের ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। (রাবী) বলেন, কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছল। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমান অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। এমন সময়ে এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়ালো। লোকটির চোখ দু’টি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপালধারী, তার দাড়ি ছিল অতিশয় ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গি ছিল উপরের দিক উঠান। সে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্ কে ভয় করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহ্ কে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি বেশি হকদার নই? আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, লোকটি (এ কথা বলে) চলে যেতে লাগলে হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেবনা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, হতে পারে সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। (বাহ্যত মুসলমান)। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারন করে যা তাদের অন্তরে নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট ফেঁড়ে (ঈমানের উপস্থিতি) দেখার জন্য বলা হয়নি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ ব্যাক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটবে যারা শ্রুতিমধুর কন্ঠে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহর বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবেনা। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে নিক্ষেপকৃত জন্তুর দেহ থেকে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ননাকারী বলেন) আমার মনে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে হাতে পাই, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ জাতির মতো হত্যা করে দেবো।

৪০১৪ : হযরত মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) কে তাঁর কৃত ইহরামের উপর কায়েম থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ ইবনু বকর ইবনু জুরায়জ- আতা (রহঃ)- জাবির (রাঃ) এর সূত্রে আরও বর্ননা করেন যে, জাবির (রাঃ) বলেছেনঃ আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) (ইয়ামানে ছিলেন এরপর তিনি তাঁর) আদায়কৃত কর খুমুস নিয়ে (মক্কায়) আসলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে আলী! তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি উত্তর করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটির ইহরাম বেঁধেছেন (আমিও সেটির ইহরাম বেঁধেছি)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে তুমি কুরবানীর পশু পাঠিয়ে দাও এবং এখন যেভাবে আছ সেভাবে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় অবস্থান করতে থাক। বর্ননাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, সে সময় আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কুরবানীর পশু পাঠিয়েছিলেন।

৪০১৫ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত বকর (রহঃ) থেকে বর্নিত, হযরত ইবনু উমর (রাঃ) এর কাছে এ কথা উল্লেখ করা হল, আনাস (রাঃ) লোকদের কাছে বর্ননা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। তখন ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জের) জন্য ইহরাম বেঁধেছেন, তাঁর সাথে আমরাও হাজ্জের (হজ্জের) জন্য ইহরাম বাঁধি। যখন আমরা মক্কায় উপনীত হই, তিনি বললেন, তোমাদের যার সঙ্গে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন তার হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম উমরার ইহরামে পরিনত করে ফেলে। অবশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিলো। এরপর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) হাজ্জের (হজ্জের) উদ্দেশ্যে ইয়ামান থেকে আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? কারন আমাদের সাথে তোমর স্ত্রী (ফাতিমা) রয়েছে। তিনি উত্তর দিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেটির ইহরাম বেঁধেছেন, আমি সেটিরই ইহরাম বেঁধেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এ অবস্থায়ই থাক, কারন আমাদের কাছে কুরবানীর জন্তু আছে।

৪০১৬ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী) (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি (নকল তীর্থ) ঘর ছিল, যাকে ‘যুল খালাসা’, ইয়ামানী কা’বা এবং সিরীয় কা’বা বলা হতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি কি যুল খালাসার পেরেশানী থেকে আমাকে স্বস্থি দেবেনা? এ কথা শুনে আমি একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে ছুটে চললাম। আর এ ঘরটি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিলাম এবং সেখানে যাদেরকে পেলাম তাদের হত্যা করে ফেললাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে এই সংবাদ জানালে তিনি আমাদের জন্য এবং (আমাদের গোত্র) আহমাসের জন্য দোয়া করলেন।

৪০১৭ : হযরত মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হযরত কায়স (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, হযরত জারীর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসা থেকে স্বস্থি দেবে না? যুল-খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কা’বা। এ কথা শুনে আমি আহমাস্ গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমার বুকের উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। (এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি [জারীর (রাঃ)] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে] বলল, সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কালো উঠের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।

৪০১৮ : হযরত ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) হযরত জারীর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললাম: অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর (রাঃ) বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা। রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে হযরত জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যাক্তিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।

৪০১৯ : হযরত ইসহাক (রহঃ) হযরত আবূ উসমান (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনুল আস (রাঃ) কে (সেনাপতি নিযুক্ত করে) যাতুস সালাসিল বাহিনীর বিরুদ্ধে পাঠিয়েছেন। আমর ইবনুল আস বলেন: (যুদ্ধ শেষ করে) আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে কোন লোকটি অধিকতর প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, আয়িশা (রাঃ)। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর (আয়িশার) পিতা। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বললেন, উমর (রাঃ), এভাবে তিনি (আমার প্রশ্নের জবাবে) একের পর এক আরো কয়েকজনের নাম বললেন। আমি চুপ হয়ে গেলাম এই আশংকায় যে, আমাকে না তিনি সকলের শেষে স্থাপন করে বসেন।

৪০২০ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা আবসী (রহঃ) হযরত জারীর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা যুকালা ও যু’আমর নামে ইয়ামানের দু’ব্যাক্তির সাথে আমার সাক্ষাতহল। আমি তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস শোনাতে লাগলাম। (বর্ননাকারী বলেন) এমন সময়ে যু’আমর, (রাবী) জারীর (রাঃ) কে বললেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা যদি তোমার সাথীরই [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] কথা হয়ে থাকে তা হলে মনে রেখো যে, তিন দিন আগে তিনি ইন্তেকাল করে গেছেন। (জারীর বলেন, কথাটি শুনে আমি মদিনা অভিমুখে ছুটলাম)। তারা দু’জনেও আমার সাথে সম্মুখের দিকে চললেন। অবশেষে আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদিনার দিক থেকে আসা একদল সওয়ারীর সাক্ষাত পেলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়ে গেছে। মুসলমানদের সম্মতিক্রমে হযরত আবূ বকর (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু’জনে (আমাকে) বলল, (তুমি মদিনায় পৌঁছলে) তোমার সাথী (আবূ বকর) (রাঃ) কে বলবে যে, আমরা কিছুদুর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ্, এ কথা বলে তারা দু’জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি হযরত আবূ বকর (রাঃ) কে তাদের কথা জানালাম। তিনি (আমাকে) বললেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময় (যু’আমরের সাথে সাক্ষাত হলে) তিনি আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটি কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষন পর্যন্ত কল্যান ও সাফল্যের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা একজন আমীর মারা গেলে অপরজনকে (পরামর্শের মাধ্যম) আমীর বানিয়ে নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয়, তা হলে তোমাদের আমীরগন (জাগতিক) অন্যান্য রাজা বাদশাদের মতোই হয়ে যাবে। তারা রাজাসুলভ ক্রোধ, রাজাসুলভ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। (খলীফা ও খিলাফত আর অবশিষ্ট থাকবে না। )

৪০২১ : হযরত ইসমাঈল (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমুদ্র সৈকতের দিকে একটি সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ) কে তাদের আমীর নিযুক্ত করে দিলেন। তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন তিনশত। (তন্মধ্যে আমিও ছিলাম) আমরা যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমরা এক রাস্তা দিয়ে পথ চলছিলাম, তখন আমাদের রসদপত্র নি:শেষ হয়ে গেল, তাই আবূ উবায়দা (রাঃ) আদেশ দিলেন সমগ্র সেনাদলের অবশিষ্ট পাথেয় একত্রিত করতে। অতএব সব একত্রিত করা হল। দেখা গেল মাত্র দু’থলে খেজুর রয়েছে। এরপর তিনি অল্প অল্প করে আমাদের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করতে লাগলেন। পরিশেষে তাও শেষ হয়ে গেল এবং কেবল তখন একটি মাত্র খেজুর আমাদের মিলত। (বর্ননাকারী বলেন) আমি জাবির (রাঃ) কে বললাম, একটি করে খেজুর খেয়ে আপনাদের কতটুকু ক্ষুধা নিবারন হতো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, একটি খেজুর পাওয়াও বন্ধ হয়ে গেলে আমরা একটির কদরও অনুভব করতে লাগলাম। এরপর আমরা সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। তখন আমরা পাহাড়ের মতো বড় একটি মাছ পেয়ে গেলাম। সমগ্র বাহিনী আঠারো দিন পর্যন্ত তা খেল। তারপর হযরত আবূ উবায়দা (রাঃ) মাছটির পাঁজরের দু’টি হাড় আনতে হুকুম দিলেন। (দু’টি হাড় আনা হলে) সেগুলো দাঁড় করানো হল। এরপর তিনি একটি সাওয়ারী তৈয়ার করতে বললেন। সাওয়ারী তৈয়ার হল এবং হাড় দু’টির নিচে দিয়ে সাওয়ারীটি অতিক্রম করান হল। কিন্তু হাড় দু’টিতে কোন স্পর্শ লাগলোনা।

৪০২২ : হযরত আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তিনশত সাওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশের একটি কাফেলার উপর সুযোগমতো আক্রমন চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ) ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করলাম। (ইতিমধ্যে রসদপত্র নি:শেষ হয়ে গেল) আমরা ভীষন ক্ষুধার শিকার হয়ে গেলাম। অবশেষে ক্ষুধার যন্ত্রনায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতা ওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের ন্যায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবূ উবায়দা (রাঃ) আম্বরটির শরীর থেকে পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বললেন। সুফয়ান (রাঃ) আরেক বর্ননায় বলেছেন, আবূ উবায়দা (রাঃ) আম্বরটির পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন। এবং (ঐ) লোকটিকে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচে দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির (রাঃ) বলেন, সেনাদলের এক ব্যাক্তি (খাদ্যের অভাব দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবেহ্ করেছিলেন। এরপর আবূ উবায়দা (রাঃ) তাকে (উট যবেহ্ করতে) নিষেধ করলেন। আমর ইবনু দীনার (রাঃ) বলতেন, আবূ সালিহ (রহঃ) আমাদের জানিয়েছেন যে, কায়স ইবনু সা’দ (রাঃ) (অভিযান থেকে ফিরে এসে) তাঁর পিতার কাছে বর্ননা করছিলেন যে, সেনাদলে আমিও ছিলাম, এক সময়ে সমগ্র সেনাদল ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল, (কথাটি শোনামাত্র কায়সের পিতা) সা’দ বললেন, এমতাবস্থায় তুমি উট যবেহ্ করে দিতে। কায়স বললেন, (হ্যাঁ) আমি উট যবেহ্ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে গেল। এবারো তার পিতা বললেন, তুমি যবেহ্ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ্ করেছি। তিনি বললেন, তারপর আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা’দ বললেন, এবারো উট যবেহ্ করতে। তিনি বললেন, (হ্যাঁ) যবেহ্ করেছি। তিনি বললেন, এরপরও আবার সবাই ক্ষুধার্ত হল। সা’দ (রাঃ) বললেন, উট যবেহ্ করতে। তখন কায়স ইবনু সা’দ (রাঃ) বললেন, এবার আমাকে (যবেহ করতে) নিষেধ করা হয়েছে।

৪০২৩ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা জায়শুল খাবাতের যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলাম, আর আবূ উবায়দা (রাঃ) কে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। পথে আমরা ভীষন ক্ষুধায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামের একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এতো বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি। এরপর মাছটি থেকে আমরা অর্ধ মাস আহার করলাম। একবার আবূ উবায়দা (রাঃ) মাছটির একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সাওয়ারীর পিঠে চড়ে একজন হাড়টির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল (হাড়ে স্পর্শ লাগেনি)। ইবনু জুরায়জ বলেন) আবূ যুবায়র (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছেন, জাবির (রাঃ) বলেন: ঐ সময় আবূ উবায়দা (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা মাছটি আহার কর। এরপর আমরা মদিনা ফিরে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি অবগত করলাম। তিনি বললেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিযক, আল্লাহ্ পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরকেও স্বাদ গ্রহন করতে দাও। একজন মাছটির কিছু অংশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এনে দিলে তিনি তা খেলেন।

৪০২৪ : হযরত সুলায়মান ইবনু দাউদ আবূ রাবী’ (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, বিদায় হাজ্জের (হজ্জের) পূর্ববর্তী যে হাজ্জ (হজ্জ) অনুষ্ঠানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) কে আমীরুল হাজ্জ (হজ্জ) নিযুক্ত করেছিলেন। সেই হাজ্জের (হজ্জের) সময় আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে [ আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে] একটি ছোট দলসহ লোকজনের মধ্যে এ ঘোষনা দেওয়ার জন্য পাঠিয়ছিলেন যে, আগামী বছর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবেনা। আর উলঙ্গ অবস্থায়ও কেউ বায়তুল্লায় তাওয়াফ করতে পারবেনা।

৪০২৫ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) হযরত বারা ইবনু আযির) (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, সর্বশেষে যে সূরাটি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় অবতীর্ন হয়েছিলো, তা ছিল সূরা বারাআত। আর সর্বশেষ যে সূরার আয়াতটি সমাপ্তি রুপে অবতীর্ন হয়েছিল সেটি ছিল সূরা নিসার এ আয়াত : ‘ইয়াসতাফতূনাকা কুলিল্লাহু ইয়ুফতীকুম ফিল কালালা’। অর্থাৎ-‘লোকেরা আপনার কাছে সমাধান জানতে চায়, বলুন, পিতা-মাতাহীন নি:সন্তান ব্যাক্তি সম্বন্ধে তোমাদিগকে আল্লাহ্ তায়া’লা সমাধান জানোাচ্ছেন, (কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক বোন থাকে তাহলে বোনের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ হবে) (৪:১৭৬)

৪০২৬ : হযরত নুআইম (রহঃ) হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্নিত, বনী তামীমের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, ‘হে বনী তামীম! খোশ-খবরী গ্রহন কর। তারা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি খোশ-খবরী দিয়ে থাকেন, এবার আমাদেরকে কিছু (অর্থ-সম্পদ) দিন। কথাটি শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারকে অসন্তোষের ভাব প্রকাশ পেল। এরপর ইয়ামানের একটি প্রতিনিধি দল আসলে তিনি তাঁদেরকে বললেন, বনী তামীম যখন খোশ-খবরী গ্রহন করলোই না তখন তোমরা সেটি গ্রহন কর। তারা বললেন, আমরা তা গ্রহন করলাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।

৪০২৭ : হযরত যুহাইর ইবনু হারব (রহঃ) হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী তামীমের পক্ষে তিনটি কথা বলেছেন। এগুলো শোনার পর থেকেই আমি বনী তামীমকে ভালোবাসতে থাকি। (তিনি বলেছেন) তারা আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের বিরোধিতায় সবচেয়ে বেশি কঠোর থাকবে। তাদের গোত্রের একটি বাঁদি হযরত আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে আযাদ করে দাও, কারন সে হযরত ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশধর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাদের সা’দকার অর্থ-সম্পদ আসলে তিনি বললেন, এটি একটি কাওমের সা’দকা বা তিনি বলেন, এটি আমার কাওমের সা’দকা।

৪০২৮ : হযরত ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্নিত, বনী তামীম গোত্র থেকে একটি অশ্বারোহী দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসল। (তাঁরা তাদের একজনকে সেনাপতি নিযুক্ত করার প্রার্থনা জানালে) আবূ বকর (রাঃ) প্রস্তাব দিলেন, কা’কা ইবনু মা’বাদ ইবনু যারারা (রাঃ) কে এদের আমীর নিযুক্ত করে দিন। উমর (রাঃ) বললেন, বরং একরা ইবনু হাবিস (রাঃ) কে আমীর বানিয়ে দিন। হযরত আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তুমি কেবল আমার বিরোধিতাই করতে চাও। উমর (রাঃ) বললেন, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমি কখনো করিনা। এর উপর দু’জনের বাক-বিতন্ডা চলতে চলতে শেষ পর্যায়ে উভয়ের আওয়াজ উচ্চতর হল। ফলে এ সম্পর্কে আয়াত নাযিল হল, ‘‘হে মু’মিনগন! আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল) -এর সামনে তোমরা কোন ব্যাপারে অগ্রনী হয়োনা। বরং আল্লাহ্ কে ভয় করো, আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। হে মু’মিনগন! তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উঁচু করোনা। এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলোনা। কারন এতে তোমাদের আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে। (৪৯: ১-২)

৪০২৯ : হযরত ইসহাক (রহঃ) হযরত আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, (তিনি বলেন), আমি ইবনু আববাস (রাঃ) কে বললাম, আমার একটি কলসী আছে। তাতে আমার জন্য (খেজুর ভিজিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য তৈরী করা হয় এবং পানি মিঠা হয়ে সারলে আমি তা আরেকটি পাত্রে (ছোট গ্লাসে) ঢেলে পান করি। কিন্তু কখনো যদি ঐ পানি বেশি পরিমান পান করে লোকজনের সাথে বসে যাই এবং দীর্ঘক্ষন পর্যন্ত মজলিসে বসে থাকি, তখন আমার আশংকা হয় যে, (নেশার দোষে) আমি (লোকসম্মুখে) অপমানিত হব। তখন ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, আবদুল কাইস গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসলে তিনি বললেন, কাওমের জন্য খোশ-আমদেদ। যাদের আগমন না ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় হয়েছে, না অপমানিত অবস্থায়। তারা আরয করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমাদের ও আপনার মধ্যে মুদার গোত্রের মুশরিকরা প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। এ জন্য আমরা আপনার কাছে আশহুরল হুরুম (নিষিদ্ধ মাসসমূহ) ব্যতীত অন্য সময়ে আসতে পারিনা। কাজেই আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা বলে দিন, যেগুলোর উপর আমল করলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। আর যাঁরা আমাদের পেছনে (বাড়িতে) রয়ে গেছে তাদেরকে এর দাওয়াত দেব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি জিনিস পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলছি। (আমি তোমাদেরকে) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিচ্ছি। তোমরা কি জানো আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কাকে বলে? তা হল: আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, আর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের রোযা পালন করা এবং গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ (বায়তুল মালে) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। আর চারটি জিনিস- লাউয়ের পাত্র, কাঠের তৈরী নাকীর নামক পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য তৈরী করা থেকে নিষেধ করছি।

৪০৩০ : হযরত সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) হযরত আবূ জামরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, (তিনি বলেন), আমি ইবনু আববাস (রাঃ) এর কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আবদুল কাইস গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমরা অর্থাৎ এই ছোট্ট দল রাবীআর গোত্র। আমাদের এবং আপনার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে মুদার গোত্রের মুশরিকরা। কাজেই আমরা নিষিদ্ধ মাসগুলো ছাড়া অন্য সময়ে আপনার কাছে আসতে পারিনা। এ জন্য আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে দিন, যেগুলোর উপর আমরা আমল করতে থাকব এবং যারা আমাদের পেছনে রয়েছে তাদেরকেও সেই দিকে আহবান জানাব। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি বিষয় আদায় করার হুকুম দিচ্ছি এবং চারটি জিনিস থেকে নিষেধ করছি। (বিষয়গুলো হল) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া। কথাটি বলে তিনি আঙ্গুলের সাহায্যে এক গুনেছেন। আর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা, যাকাত দেওয়া এবং তোমরা যে গনীমত লাভ করবে, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য (বায়তুল মালে) জমা দেওয়া। আর আমি তোমাদেরকে লাউয়ের পাত্র, নাকীর নামক খোদাইকৃত কাঠের পাত্র, সবুজ কলসী এবং মুযাফফাত নামক তৈল মাখানো পাত্র ব্যাবহার থেকে নিষেধ করছি।

৪০৩১ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান ও বকর ইবনু মুদার (রহঃ) হযরত বুকাইর (রাঃ) থেকে বর্নিত, (তিনি বলেন), ইবনু আববাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম কু্রাইব (রহঃ) তাকে বর্ননা করেছেন, ইবনু আববাস, আবদুর রহমান ইবনু আযহার এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রহঃ) (এ তিনজনে) আমাকে আয়িশা (রাঃ) এর কাছে পাঠিয়ে বললেন, তাঁকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে। এবং তাঁকে আসরের পরের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। কারন আমরা অবহিত হয়েছি যে, আপনি নাকি এই দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন- এ হাদীসও আমাদের কাছে পৌঁছেছে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি হযরত উমর (রাঃ) সহ এ দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী লোকদেরকে প্রহার করতাম। কুরায়ব (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর [হযরত আয়িশা (রাঃ)] কাছে গেলাম এবং আমাকে যে ব্যাপারে পাঠিয়েছেন তা জানালাম। তিনি বললেন, বিষয়টি উম্মে সালমা (রাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা কর। এরপর আমি তাঁদেরকে [হযরত আয়িশা (রাঃ) এর জবাবের কথা] জানালে তাঁরা আবার আমাকে হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন এবং হযরত আয়িশা (রাঃ) এর কাছে যা বলতে বলেছিলেন সেসব কথা তাঁর কাছেও গিয়ে বলতে বললেন। তখন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা থেকে নিষেধ করেছেন। কিন্তু একদিন তিনি আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। এ সময় আমার কাছে ছিল আনসারদের বনী হারাম গোত্রের কতিপয় মহিলা। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমি তা দেখে খাদীমা কে পাঠিয়ে বললাম, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে এবং বলবে, ‘‘উম্মে সালমা (রাঃ) আপনাকে এ কথা বলেছেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি কি আপনাকে এ দু’রাকাত আদায় করা থেকে নিষেধ করতে শুনিনি? অথচ দেখতে পাচ্ছি, আপনি সেই দু’রাকাত আদায় করছেন’’। এরপর যদি তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন তাহলে পিছনে সরে যাবে। খাদীমা গিয়ে (সেভাবে কথাটি) বলল। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করলেন। খাদীমা পেছনের দিকে সরে গেল। এরপর সালাত (নামায/নামাজ) সেরে তিনি বললেন, হে আবূ উমাইয়ার কন্যা! (উম্মে সালমা) তুমি আমাকে আসরের পরের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা জিজ্ঞাসা করছ। আসলে আজ আবদুল কায়স গোত্র থেকে তাদের কয়েকজন লোক আমার কাছে ইসলাম গ্রহন করতে এসেছিল। তাঁরা আমাকে ব্যাস্ত রাখার কারনে যুহরের পরের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সুযোগ আমার হয়নি। আর সেই দু’রাকাত হল এ দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ)।

৪০৩২ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ জু’ফী (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে জুম’আর সালাত (নামায/নামাজ) জারী করার পর সর্বপ্রথম যে মসজিদ জুম’আর সালাত (নামায/নামাজ) জারী করা হয়েছিল তা হল বাহরাইনের জুয়াসা এলাকার আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদ।

৪০৩৩ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। (সেখানে গিয়ে) তাঁরা সুমামা ইবনু উসাল নামক বনূ হানীফার এক ব্যাক্তিকে ধরে আনলেন এবং মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে তাকে বেঁধে রাখলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে এসে বললেন, ওহে সুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। (কারন আপনি মানুষের উপর কখনো জুলুম করেননা বরং অনুগ্রহই করে থাকেন)। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ দান করেন তা হলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যাক্তিকে অনুগ্রহ দান করবেন। আর যদি আপনি (এর বিনিময়ে) অর্থ সম্পদ চান তা হলে যতটা খুশী দাবি করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার তাকে বললেন, ওহে সুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছ সেটিই মনে হচ্ছে যা (গতকাল) আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন তা হলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যাক্তির উপর অনুগ্রহ প্রদর্শন করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে সুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে, যা আমি পূর্বেই বলেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সুমামার বন্ধন খুলে দাও। এবার (মুক্তি পেয়ে) সুমামা মসজিদে নববীর নিকটস্থ একটি খেজুরের বাগান গেল এবং গোসল করল। এরপর ফিরে এসে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে বলল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। (তিনি আরো বললেন) ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আল্লাহর কসম, ইতিপূর্বে আমার কাছে যমীনের বুকে আপনার চেহারার চাইতে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিলোনা। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহর কসম, আমার কাছ আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃন্য অপর কোন দ্বীন ছিলোনা। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে অধিক সমাদৃত। আল্লাহর কসম, আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে বেশি খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিলোনা। কিন্তু এখন আপনার শহরটই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগন আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি উমরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম। তাই এখন আপনি আমাকে কি কাজ করার হুকুম করেন? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (দুনিয়া ও আখিরাতের) সু-সংবাদ প্রদান করলেন এবং উমরা আদায়ের জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মক্কায় আসলেন তখন জনৈক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, তুমি নাকি নিজের দ্বীন ছেড়ে দিয়ে অন্য দ্বীন গ্রহন করেছ? তিনি উত্তর করলেন, না, (বেদ্বীন হইনি, কুফর, শিরক তো কোন দ্বীনই নয়) বরং আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলাম গ্রহন করেছি। আর আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিনানুমতিতে তোমাদের কাছে ইমাম থেকে গমের একটি দানাও আসবেনা।

৪০৩৪ : হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মিথ্যুক মূসা য়লামা (মদিনায়) এসেছিল। সে বলতে লাগল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আমাকে তাঁর পরবর্তীতে (স্থলাভিষিক্ত) নিয়োগ করে যায়, তা হলে আমি তাঁর অনুগত হয়ে যাবো। সে তার গোত্রের বহু লোকজনসহ এসেছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়স ইবনু সাম্মাসকে সাথে নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হলেন। সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। মূসা য়লামা তার সাথীদের মধ্যে ছিল, এমতাবস্থায় তিনি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলেন। তিনি বললেন, যদি তুমি আমার কাছে এ তুচ্ছ ডালটিও চাও, তবে এটিও আমি তোমাকে দেবনা। তোমার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা লংঘিত হতে পারেনা। যদি তুমি আমার আনুগত্য থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি, যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত আমার পক্ষ থেকে তোমাকে জবাব দেবে। এরপর তিনি তার কাছ থেকে চলে আসলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘‘আমি তোমাকে তেমনই দেখতে পাচ্ছি যেমনটি আমাকে দেখানো হয়েছিল’’- সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে জানালেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদিন আমি ঘুমাচ্ছিলাম, তখন স্বপ্নে দেখলাম, আমার দু’হাতে স্বর্ণের দু’টি খাড়ু। খাড়ু দু’টি আমাকে ঘাবড়িয়ে দিল (পুরুষের জন্য স্বর্ণের খাড়ু অবৈধ) তখন ঘুমের মধ্যেই আমার প্রতি নির্দেশ দেয়া হল, খাড়ু দু’টির উপর ফুঁ দাও। আমি সে দু’টির উপর ফুঁ দিলে তা উড়ে গেল। এরপর আমি এর ব্যাখ্যা করেছি দু’জন মিথ্যাবাদী (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাবীকারী) আমার পরে বের হবে। এদের একজন আনসী আর অপরজন মূসা য়লামা।

৪০৩৫ : হযরত ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম এমতাবস্থায় (স্বপ্নে) আমার নিকট যমীনের সমুদয় সম্পদ উপস্থাপন করা হল এবং আমার হাতে দু’টি সোনার খাড়ু রাখা হল। আমি আমার মনে ব্যাপারটি গুরুতর অনুভূত হলে আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হল যে, এগুলোর উপর ফুঁ দাও। আমি ফুঁ দিলাম, খাড়ু দু’টি উধাও হয়ে গেল। এরপর আমি এ দু’টির ব্যাখ্যা করলাম যে, এরা সেই দু’ মিথ্যাবাদী (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাবীকারী) যাদের মাঝখানে আমি অবস্থান করছি। অর্থাৎ সানআ শহরের অধিবাসী (আসওয়াদ আনসী) এবং ইয়ামামা শহরের অধিবাসী (মূসা য়লামাতুল কাযযাব)।

৪০৩৬ : হযরত সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আবূ রাজা উতারিদী (রহঃ) বলেন যে, (ইসলাম গ্রহন করার পূর্বে) আমরা একটি পাথরের পূজা করতাম। যখন এ অপেক্ষা উত্তম কোন পাথর পেতাম তখন এটিকে নিক্ষেপ করে দিয়ে অপরটির পূজা আরম্ভ করতাম আর কখনো যদি আমরা কোন পাথর না পেতাম তা হলে কিছু মাটি একত্রিত করে স্তুপ বানিয়ে নিতাম। তারপর একটি বকরী এনে সেই স্তুপের উপর দোহন করতাম (যেনো কৃত্রিমভাবে তা পাথরের মতো দেখায়) তারপর এর চারপাশে তাওয়াফ করাতাম। আর রজব মাস আসলে আমরা বলতাম, এটা তীর থেকে ফলা বিচ্ছিন্ন করার মাস। কাজেই আমরা রজব মাসে তীক্ষ্ণতাযুক্ত সব ক’টি তীর ও বর্শা থেকে এর তীক্ষ্ণ অংশ খুলে আলাদা করে দিতাম। রাবী (মাহদী) (রহঃ) বলেন, আমি আবূ রাজা (রহঃ) কে বলত শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়ত প্রাপ্তিকালে আমি ছিলাম অল্পবয়স্ক বালক। আমি আমাদের উট চরাতাম। তারপর যখন আমরা শুনলাম যে, তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] নিজের কাওমের উপর অভিযান চালিয়েছেন (এবং মক্কা জয় করে ফেলছেন) তখন আমরা পালিয়েএলাম জাহান্নামের দিকে অর্থাৎ মিথ্যাবাদী (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাবীকারী) মূসা য়লামার দিকে।

৪০৩৭ : হযরত সাঈদ ইবনু মুহাম্মদ জারমী (রহঃ) হযরত উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) বলেন, আমাদের কাছে এ খবর পৌঁছে যে, [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায়] মিথ্যাবাদী মূসা য়লামা একবার মদিনায় এসে হারিসের কন্যার ঘরে অবস্থান করেছিল। হারিস ইবনু কুরায়যের কন্যা তথা আবদুল্লাহ ইবনু আমিরের মা ছিল তার (মূসা য়লামার) স্ত্রী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস (রাঃ), তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খতীব বলা হতো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ছিল একটি খেজুরের ডাল। তিনি তার কাছে গিয়ে তার সাথে কথাবার্তা রাখলেন। মূসা য়লামা তাঁকে [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে] বলল, আপনি ইচ্ছা করলে আমার এবং আপনার মাঝে কর্তৃত্বের বাধা এভাবে তুলে দিতে পারেন যে, আপনার পরে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি যদি এ ডালটিও আমার কাছে চাও, তাও আমি তোমাকে দেবনা। আমি তোমাকে ঠিক তেমনই দেখতে পাচ্ছি, যেমনটি আমাকে (স্বপ্নযোগে) দেখানো হয়েছে। এই সাবিত ইবনু কায়স এখানে রইল, সে আমার পক্ষ থেকে তোমার জবাব দেবে। এ কথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সেখান থেকে) চলে গেলেন। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উল্লেখিত স্বপ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, [ আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক] আমাকে বলা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় আমাকে দেখানো হল যে, আমার দু’হাতে দু’টি সোনার খাড়ু রাখা হয়েছে। এতে আমি ঘাবড়ে গেলাম এবং তা অপছন্দ করলাম। তখন আমাকে (ফুঁ দিতে) বলা হল। আমি এ দু’টির উপর ফুঁ দিলে সে দুটি উড়ে গেল। আমি এ দু’টির ব্যাখ্যা করলাম যে, দু’জন মিথ্যাবাদী (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাবিদার) আবির্ভূত হবে। উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন, এ দু’জনের একজন হল আসওয়াদ আল আনসী, যাকে ফায়রুয নামক এক ব্যাক্তি ইয়ামান এলাকায় হত্যা করেছে, আর অপর জন হল মূসা য়লামা।

৪০৩৮ : হযরত আববাস ইবনু হুসায়ন (রহঃ) হযরত হুযায়ফা (রহঃ) বর্নিত, তিনি বলেন, নাজরান এলাকার দু’জন সরদার আকিব এবং সাইয়িদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর সাথে মুবাহালা [১] করতে চেয়েছিল। বর্ননাকারী হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, তখন তাদের একজন অপরজনকে বলল, এরুপ করোনা। কারন আল্লাহর কসম, তিনি যদি সত্যি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ে থাকেন আর আমরা তাঁর সাথে মুবাহালা করি, তাহলে আমরা এবং আমাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি (কেউ) রক্ষা পাবেনা। তারা উভয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বলল যে, আপনি আমাদের কাছ থেকে যা চাইবেন, আপনাকে আমরা তা-ই দেবো। তবে এর জন্য আপনি আমাদের সাথে একজন আমানতদার ব্যাক্তিকে পাঠিয়ে দিন। আমানতদার ছাড়া অন্য কোন ব্যাক্তিকে আমাদের সাথে পাঠাবেননা। তিনি বললেন, আমি তোমাদের সাথে অবশ্যই একজন পুরা আমানতদার ব্যাক্তিকেই পাঠাবো, এ দায়িত্ব গ্রহনের নিমিত্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগন আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ তুমি উঠে দাঁড়াও। তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হচ্ছে এই উম্মতের আমানতদার। [১] সত্য উদঘাটনের নিমিত্তে অনন্য উপায় হচ্ছে দু’পক্ষের পরস্পরকে বদদোয়া করা।

৪০৩৯ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হযরত হুযায়ফা (রহঃ) বর্নিত, তিনি বলেন, নাজরান অধিবাসীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, আমাদের এলাকার জন্য একজন আমানতদার ব্যাক্তি পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের কাছে আমি একজন আমানতদার ব্যাক্তিকেই পাঠাবো, যিনি সত্যই আমানতদার। কথাটি শুনে লোকজন সবাই আগ্রহভরে তাকিয়ে রইলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তখন আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ) কে পাঠালেন।

৪০৪০ : হযরত আবূল ওয়ালীদ (হিশাম ইবনু আবদুল মালিক) (রহঃ) হযরত আনাস (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক উম্মতের একজন আমানতদার রয়েছে। আর এ উম্মতের সেই আমানতদার হল আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ্।

৪০৪১ : হযরত কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, বাহরাইনের অর্থ সম্পদ (জিযিয়া) আসলে তোমাকে এতো পরিমান, এতো পরিমান, এতো পরিমান দেবো। (এতো পরিমান শব্দটি) তিনি তিনবার বললেন। এরপর বাহরাইন থেকে আর কোন অর্থ সম্পদ আসেনি। অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়ে গেল। এরপর হযরত আবূ বাকার (রাঃ) এর যুগে যখন সেই অর্থ সম্পদ আসলো, তখন তিনি একজন ঘোষনাকারীকে নির্দেশ দিলেন। সে ঘোষনা করল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যার ঋণ প্রাপ্য রয়েছে কিংবা কোন ওয়াদা অপূরন রয়ে গেছে সে যেনো আমার কাছে আসে (এবং তা নিয়ে নেয়)। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি আবূ বাকার (রাঃ) এর কাছে এসে তাঁকে জানালাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, যদি বাহরাইন থেকে অর্থ-সম্পদ আসে তা হলে তোমাকে আমি এতো পরিমান এতো পরিমান দেবো। (এতো পরিমান কথাটি) তিনবার বললেন। জাবির (রাঃ) বলেন, তখন আবূ বাকার (রাঃ) আমাকে অর্থ সম্পদ দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, এর কিছুদিন পর আমি আবূ বাকার (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করলাম। এবং তার কাছে মাল চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে কিছুই দিলেননা। এরপর আমি তাঁর কাছে দ্বিতীয়বার আসি, তিনি আমাকে কিছুই দেননি। এরপর আমি তাঁর কাছে তৃতীয়বার এলাম। তখনো তিনি আমাকে কিছুই দিলেননা। কাজেই আমি তাঁকে বললাম, ‘আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আপনি আমাকে দেননি। তারপর (আবার) এসেছিলাম, তখনো দেননি। এরপরেও এসেছিলাম তখনো আমাকে আপনি দেননি। কাজেই এখন হয়তো আপনি আমাকে সম্পদ দিবেন নয়তো আমি মনে করব, আপনি আমার ব্যাপারে কৃপনতা অবলম্বন করেছে’। তখন তিনি বললেন, এ কি বলছ তুমি ‘আমার ব্যাপারে কৃপনতা করছেন’। (তিনি বললেন) কৃপনতা থেকে মারাত্নক ব্যাধি আর কি হতে পারে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। (এরপর তিনি বললেন) যতবারই আমি তোমাকে সম্পদ দেয়া থেকে বিরত হয়েছি, ততবারই আমার ইচ্ছা ছিলো যে, (অন্য কোথাও থেকে) তোমাকে দেবো। আমর [ইবনু দীনার (রহঃ)] মুহাম্মদ ইবনু আলী (রহঃ) এর মাধ্যমে জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আবূ বাকার (রাঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, এ (আশরাফী) গুলো গুনো। আমি ঐগুলো গুনে দেখলাম এখানে পাঁচশ’ (আশরাফী) রয়েছে। তিনি বললেন, (ওখান থেকে) এ পরিমান আরো দু’বার তুলে নাও।

৪০৪২ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ এবং ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার ভাই ইয়ামান থেকে এসে অনেক দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছি। এ সময়ে তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] খিদমতে ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও তাঁর আম্মার অধিক আসা-যাওয়া ও ঘনিষ্ঠতার কারনে আমরা তাঁদেরকে তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] পরিবারেরই অন্তর্ভুক্ত মনে করেছিলাম।

৪০৪৩ : হযরত আবূ নুআইম (রহঃ) হযরত যাহদাম (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আবূ মূসা (রাঃ) এ এলাকায় এসে জারম গোত্রের লোকদেরকে মর্যাদাবান করেছেন। একদা আমরা তাঁর কাছে বসা ছিলাম। এ সময়ে তিনি মুরগীর গোশত দিয়ে দুপুরের খানা খাচ্ছিলেন। উপস্থিতদের মধ্যে এক ব্যাক্তি বসা ছিল। তিনি তাকে খানা খেতে ডাকলেন। সে বলল, আমি মুরগীকে একটি (খারাপ) জিনিস খেতে দেখেছি। এ জন্য খেতে আমার অরুচি লাগছে। তিনি বললেন, এসো। কেননা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুরগী খেতে দেখেছি। সে বলল, আমি শপথ করে ফেলছি যে, এটি খাবোনা। তিনি বললেন, এসে পড়ো। তোমার শপথ সম্বন্ধে আমি তোমাকে জানোাচ্ছি যে, আমরা আশ’আরীদের একটি দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তাঁর কাছে সাওয়ারী চেয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে সাওয়ারী দিতে অস্বীকার করলেন। এরপর আমরা (পূনরায়) তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] কাছে সাওয়ারী চাইলাম। তিনি তখন শপথ করে ফেললেন যে, আমাদেরকে তিনি সাওয়ারী দেবেননা। কিছুক্ষন পরেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গনীমতের কিছু উট আনা হল। তিনি আমাদেরকে পাঁচটি করে উট দেয়ার আদেশ দিলেন। উটগুলো হাতে নেয়ার পর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর শপথ থেকে অমনোযোগী করে ফেলছি (এবং উট নিয়ে যাচ্ছি) এমন অবস্থায় কখনো আমরা কামিয়াব হতে পারবোনা। কাজেই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি শপথ করেছিলেন যে, আমাদের সাওয়ারী দেবেননা। এখনতো আপনি আমাদের সাওয়ারী দিলেন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই। তবে আমার নিয়ম হল, আমি যদি কোন ব্যাপারে শপথ করি আর এর বিপরীত কোনটিকে এ অপেক্ষা উত্তম মনে করি তাহলে (শপথকৃত ব্যাপার ত্যাগ করি) উত্তমটিকেই গ্রহন করে নেই।

৪০৪৪ : হযরত আমর ইবনু আলী (রহঃ) হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বনী তামীমের লোকজন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, হে বনী তামীম! খোশ-খবরী গ্রহন কর। তারা বলল, আপনি খোশ-খবরী তো দিলেন, কিন্তু আমাদেরকে (কিছু আর্থিক সাহায্য) দান করুন। কথাটি শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহেরা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। এমন সময়ে ইয়ামানী কিছু লোক আসল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বনী তামীম যখন খোশ-খবর গ্রহন করলোনা, তাহলে তোমরাই তা গ্রহন কর। তাঁরা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমরা তা কবুল করলাম।

৪০৪৫ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল-জু’ফী (রহঃ) হযরত আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানের দিকে তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছেন, ঈমান হল ওখানে। আর কঠোরতা ও হৃদয়হীনতা হল রাবীয়া ও মুযার গোত্রদ্বয়ের সেসব মানুষের মধ্যে যারা উটের লেজের কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার দেয়, যেখান থেকে উদিত হয়ে থাকে শয়তানের উভয় শিং।

৪০৪৬ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল ও দরদী। ঈমান হল ইয়ামানীদের, হিকমত হল ইয়ামানীদের, আত্নম্ভরিতা ও অহংকার রয়েছে উট-ওয়ালাদের মধ্যে, বকরী পালকদের মধ্যে আছে প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য। গুনদুর (রহঃ) এ হাদীসটি শুবা-সুলায়মান-যাকওয়ান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন।

৪০৪৭ : হযরত ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমান হল ইয়ামানীদের, আর ফিতনার (বিপর্যয়ের) গোড়া হল ওখানে, যেখানে উদিত হয় শয়তানের শিং।

৪০৪৮ : হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইয়ামানবাসীরা তোমাদের কাছে এসেছে। তাঁরা অন্তরের দিক থেকে অত্যন্ত কোমল। আর মনের দিক থেকে অত্যন্ত দয়ার্দ্র। ফিকাহ্ হল ইয়ামানীদের আর হিকমাত হল ইয়ামানীদের।

৪০৪৯ : হযরত আবদান (রহঃ) হযরত আলকামা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর কাছে বসা ছিলাম। তখন সেখানে হযরত খাববাব (রাঃ) এসে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান ইবনু মাসউদ)! এসব তরুন কি আপনার তিলাওয়াতের মতো তিলাওয়াত করতে পারে? তিনি বললেন, আপনি যদি চান তাহলে একজনকে হুকুম দেই যে, সে আপনাকে তিলাওয়াত করে শোনাবে। তিনি বললেন, অবশ্যই। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বললেন, ওহে আলকামা, পড় তো। তখন যিয়াদ ইবনু হুদায়রের ভাই যায়েদ ইবনু হুদায়র বলল, আপনি আলকামাকে পড়তে হুকুম করেছেন, অথচ সে তো আমাদের মধ্যে ভাল তিলাওয়াতকারী নয়। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বললেন, যদি তুমি চাও, তাহলে আমি তোমার গোত্র ও তার গোত্র সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন তা জানিয়ে দিতে পারি। (আলকামা বলেন) এরপর আমি সূরায়ে মারয়াম থেকে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করলাম। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আপনার কেমন মনে হয়? তিনি বললেন, বেশ ভালোই পড়েছে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি যা কিছু পড়ি, তার সবই সে পড়ে নেয়। এরপর তিনি হযরত খাববাব (রাঃ) এর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন, তার হাতে একটি সোনার আংটি। তিনি বললেন, এখনো কি এ আংটি খুলে ফেলার সময় হয়নি? হযরত খাববাব (রাঃ) বললেন, ঠিক আছে, আজকের পর আর এটি আমার হাতে দেখতে পাবেননা। এ কথা বলে তিনি আংটিটি ফেলে দিলেন। হাদীসটি হযরত গুনদুর (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন।

৪০৫০ : হযরত আবূ নুআইম (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, তুফায়েল ইবনু আমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, দাওস গোত্র হালাক হয়ে গেছে। তারা নাফরমানী করেছে এবং (দ্বীনের দাওয়াত) গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের প্রতি বদদোয়া করুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ্! দাওস গোত্রকে হিদায়েত দান করুন এবং (দ্বীনের দিকে) নিয়ে আসুন।

৪০৫১ : হযরত মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসার জন্য রওয়ানা হয়ে রাস্তার মধ্যে বলেছিলাম, হে সুদীর্ঘ ও চরম পরিশ্রমের রাত! (তবে) এ রাত আমাকে দারুল কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছে। (এটই আমার পরম পাওয়া) আমার একটি গোলাম ছিল। আসার পথে সে পালিয়েগেল। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বায়আত করলাম। এরপর একদিন আমি তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] খেদমতে বসা ছিলাম। এমন সময় গোলামটি এসে হাযির। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রা! এই যে তোমার গোলাম (নিয়ে যাও)। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সে আযাদ- এই বলে আমি তাকে আযাদ করে দিলাম।

৪০৫২ : হযরত মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হযরত আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা একটি প্রতিনিধি দলসহ হযরত উমর (রাঃ) এর দরবারে আসলাম। তিনি প্রত্যেকের নাম নিয়ে একজন একজন করে ডাকতে শুরু করলেন। তাই আমি বললাম, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি কি আমাকে চিনেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ চিনি। লোকজন যখন ইসলামকে অস্বীকার করেছিল তখন তুমি ইসলাম গ্রহন করেছ। লোকজন যখন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল তখন তুমি সম্মুখে অগ্রসর হয়েছ। লোকেরা যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তুমি তখন ইসলামের ওয়াদা পূরন করেছ। লোকেরা যখন দ্বীনের সত্যতা অস্বীকার করেছিল তুমি তখন দ্বীনকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করেছ। এ কথা শুনে আদী (রাঃ) বললেন, তা হলে এখন আমার কোন চিন্তা নেই।

৪০৫৩ : হযরত ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) (মক্কার পথে) রওয়ানা হই। তখন আমরা উমরার (নিয়্যতে) ইহরাম বাঁধি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষনা দিলেন, যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু রয়েছে, তারা যেন হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের একসাথে ইহরামের নিয়্যত করে এবং হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার অনুষ্ঠানাদি সমাধা করার পূর্বে হালাল না হয়। এভাবে তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর] সঙ্গে আমি মক্কায় পৌঁছি এবং ঋতুবতী হয়ে পড়ি। এ কারনে আমি বায়তুল্লায় তাওয়াফ- এর সাফা ও মারওয়ার সায়ী করতে পারলামনা। এ খবর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, তুমি তোমার মাথার চুল ছেড়ে দাও এবং মাথা (চিরুনি দ্বারা) আঁচড়াও আর কেবল হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ ও উমরা ছেড়ে দাও। আমি তাই করলাম। এরপর আমরা যখন হাজ্জের (হজ্জের) কাজসমূহ সম্পন্ন করলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) এর পুত্র (আমার ভাই) আবদুর রহমান (রাঃ) এর সঙ্গে তানঈম নামক স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। সেখান থেকে (ইহরাম বেঁধে) উমরা আদায় করলাম। তখন তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, এই উমরা তোমার পূর্বের কাযা উমরার পরিপূরক হল। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তারা বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করে এবং সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পর হালাল হয়ে যান এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর আর এক তাওয়াফ আদায় করেন। আর যাঁরা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার ইহরাম এক সাথে বাঁধেন (হাজ্জে (হজ্জ) কিরানে), তাঁরা কেবল এক তাওয়াফ আদায় করেন।

৪০৫৪ : হযরত আমর ইবনু আলী (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, মুহরিম ব্যাক্তি যখন বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করল তখন সে তাঁর ইহরাম থেকে হালাল হয়ে গেল। আমি ইবনু জুরায়জ) জিজ্ঞাসা করলাম যে, ইবনু আববাস (রাঃ) এ কথা কি করে বলতে পারেন? (যে সাফা ও মারওয়া সায়ী করার পূর্বে কেউ হালাল হতে পারে।)রাবী আতা (রহঃ) উত্তর বলেন, আল্লাহ্ তা’আলার এই কালামের দলীল থেকে যে, এরপর তার হালাল হওয়ার স্থল হচ্ছে বায়তুল্লাহ্ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁর সাহাবীদের হুজ্জাতুল বিদায় (এ কাজের পরে) হালাল হয়ে যাওয়ার হুকুম দেওয়ার ঘটনা থেকে। আমি বললাম, এ হুকুম তো আরাফা-এ উকুফ করার পর প্রযোজ্য। তখন আতা (রহঃ) বললেন, ইবনু আববাস (রাঃ) এর মতে উকুফে আরাফার পূর্বে ও পরে উভয় অবস্থায়ই এ হুকুম প্রযোজ্য।

৪০৫৫ : হযরত বায়ান (রহঃ) হযরত আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি (বিদায় হাজ্জে (হজ্জ)) মক্কার বাত্হা নামক স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছ?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে (পূনরায়) জিজ্ঞাসা করলেন, কোন প্রকার হাজ্জের (হজ্জ) ইহরামের নিয়ত করেছ? আমি বললাম, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহরামের মতো ইহরামের নিয়্যত করে তালবিয়া পড়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ কর এবং সাফা ও মারওয়া সায়ী কর। এরপর (ইহরাম খুলে) হালাল হয়ে যাও। তখন আমি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করলাম ও সাফা এবং মারওয়া সায়ী করলাম। এরপর আমি কায়েস গোত্রে এক মহিলার কাছে গেলাম, সে আমার চুল আঁচড়ে (ইহরাম থেকে মুক্ত করে) দিল।

৪০৫৬ : হযরত ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হযরত হাফসা (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) কে জানিয়েছেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দেন। তখন হযরত হাফসা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি কারনে হালাল হচ্ছেননা? তদুত্তরে তিনি বললেন, আমি আঠা (গাম) জাতীয় বস্তু দ্বারা আমার মাথার চুল জমাট করে ফেলেছি এবং কুরবানীর পশুর (নিদর্শনস্বরুপ) গলায় চর্ম বেঁধে (গলতানী বা গলকন্ঠ) দিয়েছি। কাজেই, আমি আমার (হাজ্জ (হজ্জ) সমাধা করার পর) কুরবানীর পশু যবেহ্ করার পূর্বে হালাল হতে পারবনা।

৪০৫৭ : হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আশআম গোত্রের এক মহিলা বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করে। এ সময় ফজল ইবনু আববাস (রাঃ) (একই যানবাহনে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে উপবিষ্ট ছিলেন। মহিলাটি আবেদন করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি হাজ্জ (হজ্জ) ফরয করেছেন। আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় ফরয হল যে, তিনি অতীব বয়োবৃদ্ধ। যে কারনে যানবাহনের উপর সোজা হয়ে বসতেও সমর্থ নন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর পক্ষ থেকে (নায়েবী) হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলে তা আদায় হবে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ।

৪০৫৮ : হযরত মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফতেহ মক্কার বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে চললেন। তিনি (তাঁর) কাসওয়া নামক উটনীর উপর উসামা (রাঃ) কে পিছনে বসালেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল ও উসমান ইবনু তালহা (রাঃ)। অবশেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর বাহনকে) বায়তুল্লাহর নিকট বসালেন। তারপর উসমান ইবনু তালহা) (রাঃ) কে বললেন, আমার কাছে চাবি নিয়ে এসো। তিনি তাঁকে চাবি এনে দিলেন। এরপর কা’বা শরীফের দরজা তাঁর জন্য খোলা হল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , উসামা, বিলাল এবং উসমান (রাঃ) কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। এরপর তিনি দিবা ভাগের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এবং পরে বের হয়ে আসেন। তখন লোকেরা কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার জন্য তাড়াহুড়া করতে থাকে। আর আমি তাদের অগ্রগামী হই এবং বিলাল (রাঃ) কে কাবার দরজার পিছনে দাঁড়ানো অবস্থায় পাই। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি বললেন, ঐ সামনের দু’ স্তম্ভের মাঝখানে। এ সময় বায়তুল্লায় দুই সারিতে ছয়টি স্তম্ভ ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনের দুই খামের মাঝখানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর দরজা তাঁর পিছনে রেখেছিলেন এবং তাঁর চেহারা মুবারক ছিল আপনার বায়তুল্লায় প্রবেশকালে সামনে যে দেয়াল পড়ে সেদিকে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন তা জিজ্ঞাসা করতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আর যে স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন সেখানে লাল বর্নের মর্মর পাথর ছিল।

৪০৫৯ : হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনী হুয়াই এর কন্যা হযরত সাফিয়া (রাঃ) বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কি আমাদের (মদিনার পথে প্রত্যাবর্তনে) বাঁধ সাধল? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তিনি তো তাওয়াফে যিয়ারাহ্ আদায় করে নিয়েছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে সেও রওয়ানা করুক।

৪০৬০ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমরা বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) সম্পর্কে আলোচনা করতাম। আর আমরা বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) কাকে বলে তা জানতামনা। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ননা করেন। তারপর তিনি মাসীহ্ দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং বলেন, আল্লাহ্ এমন কোন নাবী প্রেরন করেননি যিনি তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেননি। নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর পরবর্তী নাবী গনও তাঁদের উম্মতগনকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে তোমাদের মধ্যে প্রকাশিত হবে। তার অবস্থা তোমাদের উপর প্রচ্ছন্ন থাকবেনা। তোমাদের কাছে এও অস্পষ্ট নয় যে, তোমাদের রব (আল্লাহ্) এক চোখ কানা নন। অথচ দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে। যেন তার চোখ একটি ফোলা আঙ্গুর। তোমরা সতর্ক থাক। আজকের এ দিন, এ শহর এবং এ মাসের মতো আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের শোণিত ও তোমাদের সম্পদকে তোমাদের উপর হারাম করেছেন। তোমরা লক্ষ্য কর, আমি কি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। সমবেত সকলে বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্, আপনি সাক্ষী থাকুন। তিনি একথা তিনবার বললেন, (তারপর বললেন), তোমাদের জন্য পরিতাপ অথবা তিনি বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস, সতর্ক থেকেো, আমার পরে তোমরা কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, একে অপরের গর্দান মারবে।

৪০৬১ : হযরত আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) হযরত যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঊনিশটি যুদ্ধে স্বয়ং অংশগ্রহন করেন। আর হিজরতের পর তিনি কেবল একটি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেন। এরপর তিনি আর কোন হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেননি এবং তা হল বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, মক্কায় অবস্থানকালে তিনি (নফল) হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেন।

৪০৬২ : হযরত হাফস ইবনু উমর (রাঃ) হযরত জারির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জারীর (রাঃ)- কে বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) বললেন, লোকজনকে চুপ থাকতে বলো। তারপর বললেন, মনে রেখ! আমার ইন্তেকালের পর তোমরা কাফিরে পরিনত হয়োনা যে, একে অপরের গর্দান মারবে।

৪০৬৩ : হযরত মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) হযরত আবূ বাকরা (রাঃ) এর সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে ও অবস্থায়। যেদিন থেকে আল্লাহ্ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এক বছর বারো মাসে হয়ে থাকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিনমাস পরপর আসে- যেমন যিলকদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররাম এবং রজব মুদার যা জমাদিউল আখির ও শা’বান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। (এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন) এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -ই অধিক জানেন। এরপর তিনি চুপ থাকলেন। এমনকি আমরা ধারনা করলাম যে, হয়তো বা তিনি অচিরেই এ মাসের অন্য কোন নাম রাখবেন। (তারপর) তিনি বললেন, এ কি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -ই অধিক জানেন। তারপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ধারনা করলাম যে, হয়ত বা তিনি অচিরেই এ শহরের অন্য কোন নাম রাখবেন। তারপর তিনি বললেন, এটি কি (মক্কা) শহর নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এ দিনটি কোন দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -ই ভালো জানেন। তারপর তিনি চুপ থাকলেন। এতে আমরা মনে করলাম যে, তিনি এ দিনটির অন্য কোন নামকরন করবেন। তারপর তিনি বললেন, এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ; (রাবী) মুহাম্মদ বলেন, আমার ধারনা যে, তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] আরও বলেছিলেন, তোমাদের মান-ইজ্জত তোমাদের উপর পবিত্র, যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস। তোমরা অচিরেই তোমাদের রবের সাথে মিলিত হবে। তখন তিনি তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। খবরদার! তোমরা আমার ওফাতের পরে বিভ্রান্ত হয়ে পড়োনা যে, একে অপরের গর্দান মারবে। শোন, তোমাদের উপস্থিত ব্যাক্তি অনুপস্থিত ব্যাক্তিকে আমার পয়গাম পৌঁছে দেবে। এটা বাস্তব যে, অনেক সময় যে প্রত্যক্ষভাবে শ্রবন করেছে তার থেকেও প্রচারকৃত ব্যাক্তি অধিকতর সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। (রাবী) মুহাম্মদ [ইবনু সীরীন (রহঃ)] যখনই এ হাদীস বর্ননা করতেন তখন তিনি বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জেনে রাখ, আমি কি (আল্লাহর বানী তোমাদের কাছে) পৌঁছিয়ে দিয়েছি? এভাবে দু’বার বললেন।

৪০৬৪ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত তারিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, একদল ইহুদী বলল, যদি এ আয়াত আমাদের প্রতি অবতীর্ন হতো, তাহলে আমরা উক্ত অবতরনের দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। তখন হযরত উমর (রাঃ) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, কোন আয়াত? তারা বলল, এই আয়াতঃ ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (জীবন-বিধান) কে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ন করলাম। (৫:৩)। তখন হযরত উমর (রাঃ) বললেন, কোন স্থানে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল তা আমি জানি। এ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফা ময়দানে (জাবালে রহমতে) দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন।

৪০৬৫ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, আমরা (মদিনা মুনাওয়ারা থেকে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন আর কেউ কেউ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম, আবার কেউ কেউ হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিলেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছিলেন। যাঁরা শুধু হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধেন অথবা হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার ইহরাম একসঙ্গে বাঁধেন, তারা কুরবানীর দিন দশই যিলহাজ্জ এর পূর্বে হালাল হতে পারবেনা।

৪০৬৬ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত মালিক (রহঃ) থেকে বর্ননা করেন, তিনি বলেন, উপরোক্ত ঘটনা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালীন সময়ের। ইসমাঈল (রহঃ) সূত্রেও মালিক (রহঃ) থেকে অনু্রুপ বর্নিত আছে।

৪০৬৭ : হযরত আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) হযরত সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস) (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় আমি বেদনাজনিত মরনাপন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে এলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার রোগ যে কঠিন আকার ধারন করেছে তা আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তশালী লোক অথচ আমার একমাত্র কন্যা ব্যতীত অন্য কোন উত্তরাধিকারী নেই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ সা’দকা১ করে দেব? তিনি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] বললেন, ‘‘না’’। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তবে কি আমি এর অর্ধেক সা’দকা করে দেব? তিনি বললেন, ‘‘না’’। আমি বললাম, এক-তৃতীয়াংশ, তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, এক তৃতীয়াংশ অনেক। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সচ্ছল অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া তাদেরকে অভাবগ্রস্থ অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম- যারা পরে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে। আর তুমি যা-ই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত খরচ কর, তার বিনিময়ে তোমাকে প্রতিদান প্রদান করা হবে। এমনকি যে লোকমা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে ধর তারও। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আমার সাথীদের পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি পিছনে পড়ে থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমল করবে তা দ্বারা তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ও সমুন্নত হবে। সম্ভবত তুমি পিছনে থেকে যাবে। ফলে তোমার দ্বারা এক সম্প্রদায় উপকৃত হবে। অন্য সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ইয়া আল্লাহ্! আমার সাহাবীদের হিজরত আপনি জারী রাখুন এবং তাদের পিছনের দিকে ফিরিয়ে দিবেননা। কিন্তু আফসোস সা’দ ইবনু খাওলা (রাঃ) এর জন্য, (রাবী বলেন) মক্কায় তাঁর মৃত্যু হওয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। ১) নিছক আল্লাহর জন্য তাঁর পথে দান করা।

৪০৬৮ : হযরত ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) হযরত নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্নিত, ইবনু উমর (রাঃ) তাঁদেরকে অবহিত করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) তাঁর মাথা মুন্ডন করেছিলেন।

৪০৬৯ : হযরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্নিত, ইবনু উমর (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) তাঁর মাথা মুন্ডন করেন এবং তাঁর সাহাবীদের অনেকেই আর তাঁদের কেউ কেউ মাথার চুল ছেঁটে ফেলেন।

৪০৭০ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাযাআ ও লায়িস (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি গাধায় আরোহন করে রওয়ানা হন। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)কালে মিনায় দাঁড়িয়ে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তখন গাধাটি সালাত (নামায/নামাজ)-এর একটি কাতারের সামনে এসে পড়ে। এরপর তিনি গাধার পিঠ থেকে অবতরন করেন এবং তিনি লোকদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কাতারে সামিল হন।

৪০৭১ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হিশামের পিতা [হযরত উরওয়া (রহঃ)] থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার উপস্থিতিতে উসামা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বললেন, মধ্যম গতিতে চলেছেন আবার যখন প্রশস্ত পথ পেয়েছেন তখন দ্রুতগতিতে চলেছেন।

৪০৭২ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) হযরত আবূ আইউব (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) (মুযদালিফায়) মাগরিব ও এশার সালাত (নামায/নামাজ) এক সাথে আদায় করেছেন।

৪০৭৩ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার সাথীরা আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পাঠালেন তাদের জন্য যানবাহন চাওয়ার জন্য। কারন তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কঠিনতর যুদ্ধ অর্থাৎ তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহনেচ্ছু ছিলেন। অনন্তর আমি এসে বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার সাথীরা আমাকে আপনার সমীপে এ জন্য পাঠিয়েছেন যে, আপনি যেন তাদের জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা করেন। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি রাগান্বিত। অথচ আমি তা অবগত নই। আর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যানবাহন না দেয়ার কারনে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ফিরে আসি। আবার এ ভয়ও ছিল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হৃদয়ে আমার প্রতি না আবার অসন্তোষ আসে। তাই আমি সাথীদের কাছে ফিরে যাই এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তা আমি তাদের অবহিত করি। পরক্ষনেই শুনতে পেলাম যে হযরত বিলাল (রাঃ) ডাকছেন এ বলে যে, আবদুল্লাহ ইবনু কায়স কোথায়? তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। তখন তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে ডাকছেন, আপনি উপস্থিত হোন। আমি যখন তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম তখন তিনি বললেন, এই জোড়া এবং ঐ জোড়া এমনি ছয়টি উটনী যা সা’দ থেকে ক্রয় করা হয়েছে, তা গ্রহন কর। এবং সেগুলো তোমার সাথীদের কাছে নিয়ে যাও। এবং বল যে, আল্লাহ্ তায়ালা (রাবীর সন্দেহ) অথবা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তোমাদের যানবাহনের জন্য ব্যাবস্থা করেছেন, তোমরা এগুলোর উপর আরোহন কর। এরপর আমি সেগুলোসহ তাদের কাছে গেলাম এবং বললাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোকে তোমাদের বাহন হিসেবে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা যারা শুনেছিল আমার সাথে তোমাদের কেউ এমন কারুর কাছে না যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের চলে যেতে দিতে পারিনা- যাতে তোমরা এমন ধারনা না কর যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি, আমি তা তোমাদের বর্ণনা করেছি। তখন তারা আমাকে বললেন, আল্লাহর কসম, আপনি আমাদের কাছে সত্যবাদী বলে খ্যাত। তবুও আপনি যা পছন্দ করেন, আমরা অবশ্য করব। অনন্তর আবূ মূসা (রাঃ) তাদের মধ্যকার একদল লোককে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হন এবং যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অপারগতা প্রকাশ এবং পরে তাদেরকে দেয়ার কথা শুনেছিলেন, তাদের কাছে আসেন। এরপর তাদের কাছে সেরুপ ঘটনা বর্ননা করলেন যেমন আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) বর্ননা করেছিলেন।

৪০৭৪ : হযরত মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত মুসআব ইবনু সা’দ তাঁর পিতা (আবূ ওয়াক্কাস) (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর আলী (রাঃ) কে খলীফা মনোনীত করেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও মহিলাদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে, তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে যেমন হযরত হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পক্ষ থেকে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তবে এতোটুকু পার্থক্য যে, (তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আর) আমার পরে আর কোন নাবী নেই। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু’বা (রহঃ) আমাকে হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুসআব (রহঃ) থেকে শুনেছি।

৪০৭৫ : হযরত উবায়দুল্লাহ্ ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাফওয়ান এর পিতা ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উসরা এর যুদ্ধে অংশগ্রহন করি। ইয়ালা বলতেন যে, উক্ত যুদ্ধ আমার কাছে নির্ভরযোগ্য আমলের অন্যতম বলে বিবেচিত হতো। হযরত আতা (রহঃ) বলেন যে, সাফওয়ান বলেছেন, ইয়ালা (রাঃ) বর্ননা করেন, আমার একজন (দিনমজুর) চাকর ছিল, সে একবার এক ব্যাক্তির সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল এবং এক পর্যায়ে একজন অন্যজনের হাত দাঁত দ্বারা কেটে ফেলল। আতা (রহঃ) বলেন, আমাকে সাফওয়ান (রহঃ) অবহিত করেছেন যে, উভয়ের মধ্যে কে কার হাত দাঁত দ্বারা কেটেছিল তার নাম আমি ভুলে গেছি। রাবী বলেন, আহত ব্যাক্তি ঘাতকের মুখ থেকে নিজ হাত মুক্ত করার পর দেখা গেল, তার সম্মুখের দুটো দাঁত উৎপাটিত হয়ে গেছে। তারপর তারা এ মামলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমীপে পেশ করে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাঁতের ক্ষতিপূরনের দাবি বাতিল করেছেন। আতা (রহঃ) বলেন যে, আমার ধারনা যে, বর্ননাকারী এ কথাও বলেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তবে কি সে তার হাত তোমার মুখে চিবানোর জন্য ছেড়ে দিবে? যেমন উটের মুখে চিবানোর জন্য ছেড়ে দেয়া হয়?

৪০৭৬ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু কা’আব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, কা’আব (রাঃ) অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর সন্তানদের মধ্যে থেকে যিনি তাঁর সাহায্যকারী ও পথ-প্রদর্শনকারী ছিলেন, তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, আমি কা’আব ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে তিনি পশ্চাতে থেকে যান তখনকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তার মধ্যে তাবুক যুদ্ধ ছাড়া আমি কোন যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহন করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যারা পেছনে পড়ে গেছেন, তাদের কাউকে ভৎসনা করা হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের এবং তাঁদের শত্রুবাহিনীর মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবা রজনীতে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহন করেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরের উপস্থিতিকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা অধিক প্রসিদ্ধ ছিল। আর আমার অবস্থার বিবরন এই- তাবুক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ, শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহর কসম, আমার কাছে কখনো ইতিপূর্বে কোন যুদ্ধে একই সাথে দু’টো যানবাহন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় সংগ্রহ করেছিলাম। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহন করতেন, দৃশ্যত তার বিপরীত ভাব দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষন উত্তাপের সময়, অতি দূরের সফর, বিশাল মরুভূমি এবং অধিক সংখ্যক শত্রুসেনার মুকাবিলা করার। কাজেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানের অবস্থা মুসলমানদের কাছে প্রকাশ করে দেন যেন তারা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সম্বল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী লোক সংখ্যা ছিল অধিক যাদের হিসাব কোন রেজিষ্ট্রারে লিখিত ছিলনা। কা’আব (রাঃ) বলেন, যার ফলে যেকোনো লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছা করলে তা সহজেই করতে পারত এবং ওহী মারফত এ খবর পরিজ্ঞাত না করা পর্যন্ত তা সংগোপন থাকবে বলে সে ধারনা করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-ফলাদি পাকার ও গাছের ছায়ায় আরাম উপভোগের সময় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহন করে ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাঁদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকি। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। মনে মনে ধারনা করতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছা যেতে সক্ষম। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পুরাপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলল। ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথী মুসলিমগন রওয়ানা করলেন অথচ আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলামনা। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দু’দিনের মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাঁদের সঙ্গে মিলিত হব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হতে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করার মানসে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাদের সাথে পথে মিলে যাবার ইচ্ছা পোষন করতে থাকলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম! কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাদের মাঝে বিচরন করতাম। একথা আমার মনকে পীড়া দিত যে, আমি তখন (মদিনায়) মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আমার কথা আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবুকে একথা জনতার মধ্যে উপবিষ্টাবস্থায় জিজ্ঞাসা করে বসলেন, কা’আব কি করল? বনী সালমা গোত্রের এক লোক বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ধন-সম্পদ ও আত্নগরিমা তাকে আসতে দেয়নি। একথা শুনে হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম, আমরা তাঁকে উত্তম ব্যাক্তি বলে জানি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। কা’আব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন আমি যখন অবগত হলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা মুনাওয়ারার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন, তখন আমি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং মিথ্যার বাহানা খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব, যাতে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্রোধকে প্রশমিত করতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার পরিবারস্থ জ্ঞানীগুনীদের থেকে পরামর্শ গ্রহন করতে থাকি। এরপর যখন প্রচারিত হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে মিথ্যা তিরোহিত হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মালো যে, এমন কোন পন্থা অবলম্বন করে আমি তাঁকে কখনো ক্রোধমুক্ত করতে সক্ষম হবোনা, যাতে মিথ্যার নামগন্ধ থাকে। অতএব আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করলাম যে, আমি সত্যই বলব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাতে মদিনায় পদার্পন করলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করলেন, তখন যারা পশ্চাঁদপদ ছিলেন তারা তাঁর কাছে এসে শপথ করে করে অক্ষমতা ও আপত্তি পেশ করতে লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিকভাবে তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহন করলেন, তাদের বায়আত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। [কা’আব (রাঃ) বলেন] আমিও এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি যখন তাঁকে সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহেরায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, এসো। আমি সে অনুসারে অগ্রসর হয়ে একেবারে তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কারনে তুমি অংশগ্রহন করলেনা? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। আল্লাহর কসম, এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কোন দুনিয়াদার ব্যাক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি তাঁর অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশমিত করার প্রয়াস চালাতাম। আর আমি তর্কে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে মিথ্যা বলে আমার প্রতি আপনাকে রাযী করার চেষ্টা করি, তাহলেই অচিরেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার কাছে সত্য প্রকাশ করি, যাতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে মহান আল্লাহ্ তায়ালার ক্ষমা পাওয়ার নির্ঘাত আশা রাখিি। না, আল্লাহর কসম, আমার কোন ওযর ছিলনা। আল্লাহর কসম, সেই অভিযানে আপনার সাথে না যাওয়াকালীন সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বনী সালিমার কতিপয় লোক আমার অনুসরন করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম, তুমি ইতিপূর্বে কোন গুনাহ্ করেছ বলে আমাদের জানানেই। তুমি কি অন্যান্য পশ্চাঁদগামীর মতো তোমার অক্ষমতার একটি ওযর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পেশ করে দিতে পারতেনা? আর তোমার এ অপরাধের কারনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম, তারা আমাকে অনবরত কঠিনভাবে ভৎর্সনা করতে থাকে। ফলে আমি পূর্ব স্বীকারোক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করতে থাকি। এরপর আমি তাদের বললাম, আমার মতো এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল, হ্যাঁ, আরও দু’জন তোমার মতো বলেছে। এবং তাদের ক্ষেত্রেও তোমার মতো একই রুপ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কে কে? তারা বললো, একজন মুরারা ইবনু রবী আমরী এবং অপরজন হলেন হিলাল ইবনু উমায়্যা ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে অবহিত করল যে, তারা উভয়ে উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সেজন্য উভয়ে আদর্শবান। যখন তারা তাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবুকে অংশগ্রহন হতে বিরত ছিল তাদের সাথে কথা বলতে মুসলমানদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলমানরা আমাদের পরিহার করে চললো। আমাদের প্রতি তাদের আচরন পরিবর্তন করে নিল। এমনকি এদেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার অপর দু’জন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে কাঁদতে থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হয়ে আসতাম, মুসলমানদের জামাআতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। এবং বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলতনা। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হয়ে তাঁকে সালাম দিতাম। যখন তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ করতাম, তিনি আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁটদ্বয় নেড়েছেন কিনা? তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে দেখতাম যে, আমি যখন সালাত (নামায/নামাজ) মগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন, আর যখন আমি তাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলার আচরন দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান থাকে। একদা আমি আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু হযরত আবূ কাতাদা (রাঃ) এর বাগানের প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে তাঁকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহর কসম, তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম, হে আবূ কাতাদা, আপনাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) কে ভালোবাসি? তখন তিনি নীরবতা পালন করলেন। আমি পূনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এবারও কোন জবাব দিলেন না। আমি পূন: (তৃতীয়বারও) তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) ই ভালো জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অগত্যা আমি পূনরায় প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম। কা’আব (রাঃ) বলেন, একদা আমি মদিনার বাজারে বিচরন করছিলাম। এমতাবস্থায় সিরিয়ার এক কৃষক বনিক যে মদিনার বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কা’আব ইবনু মালিককে কেউ পরিচয় করিয়ে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারায় দেখাচ্ছিল। তখন সে এসে গাসসানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলুম করেছে। আর আল্লাহ্ আপনাকে মর্যাদাহীন ও আশ্রয়হীন করে সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনাকে সাহায্য-সহানুভূতি করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম, তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খোঁজ করে তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে এক সংবাদবাহক আমার কাছে এসে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হতে পৃথক থাকবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হবে না বরং তার থেকে পৃথক থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হবেননা। আমার অপর দু’জন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি তথায় অবস্থান কর। কা’আব (রাঃ) বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবনু উমায়্যার স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , হিলাল ইবনু উমায়্যা অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাঁর কোন খাদিম নেই। আমি তাঁর খেদমত করি, এটা কি অপছন্দ করেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবেনা। সে বলল, আল্লাহর কসম, এ সম্পর্কে তার কোন অনুভূতই নেই। আল্লাহর কসম, তিনি এ নির্দেশ পাওয়া অবধি সর্বদা কান্নাকাটি করছেন। [কা’আব (রাঃ) বলেন] আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চাইতেন, যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিলাল ইবনু উমায়্যার স্ত্রীকে তাঁর (স্বামীর) খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি কখনো তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চাইবো না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতি চাই, তবে তিনি কি বলবেন, তা আমার জানানেই। আমি তো নিজেই আমার খেদমতে সক্ষম। এরপর আরও দশরাত অতিবাহিত করলাম। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন থেকে আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ন হল। এরপর আমি পঞ্চাশতম রাত শেষে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম এবং আমাদের ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যা আল্লাহ্ তা’আলা (কুরআনে) বর্ননা করেছেন। আমার জানো-প্রাণ দুর্বিষহ এবং গোটা জগতটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ন হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক চীৎকার কারীর চীৎকার। সে সালা পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চস্বরে ঘোষনা করছে, হে কা’আব ইবনু মালিক! সুসংবাদ গ্রহন করুন। হযরত কা’আব (রাঃ) বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র আমি সিজদায় লুটে পড়লাম। আর আমি অনুভব করলাম যে, আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে আমাদের তাওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গীদ্বয়ের কাছে সুসংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী লোক আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের অপর এক ব্যাক্তি দ্রুত আগমন করে পাহাড়ের উপর আরোহন করত চীৎকার দিতে থাকে। তার চীৎকারের শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করতে আসল, আমি তখন আমার নিজের পরিধেয় দুটো কাপড় তাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য দান করলাম। আর আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, ঐ সময় সেই দুটো কাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কোন কাপড় ছিলোনা। আমি দুটো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানোাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে মহান আল্লাহ্ রাববুল আলামিন তোমার তাওবা কবুল করেছেন। কা’আব (রাঃ) বলেন, অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসা ছিলেন এবং তাঁর চতুস্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। হযরত তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) দ্রুত উঠে এসে আমার সাথে মূসা ফাহা করলেন ও মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম, তিনি ব্যতীত আর কোন মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি তালহার ব্যাবহার ভুলতে পারবোনা। কা’আব (রাঃ) বলেন, এরপর আমি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম জানালাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকঝক করছিল। তিনি আমাকে বললেন, তোমার মাতা তোমাকে জন্মদানের দিন হতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহন কর। কা’আব বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশী হতেন তখন তাঁর চেহারা মুবারক এতো উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল হতো যেন পূর্নিমার চাঁদের ফালি। এতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার তাওবা কবুলের শুকরিয়া স্বরুপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) এর পথে দান করতে চাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু মাল তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খায়বরে অবস্থিত আমার অংশটি আমার জন্য রাখলাম। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , মহান আল্লাহ্ তাআলা সত্য বলার কারনে আমাকে রক্ষা করেছেন, তাই আমার তাওবা কবুলের নিদর্শন অক্ষুন্ন রাখতে আমার অবশিষ্ট জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কোন মুসলিমকে সত্য কথার বিনিময়ে এরুপ নিয়ামত আল্লাহ্ দান করেননি যে নিয়ামত আমাকে দান করেছেন। [কা’আব (রাঃ) বলেন] যেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে সত্য কথা বলেছি সেদিন হতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষন করি যে, বাকী জীবনও আল্লাহ্ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে হিফাজত করবেন। এরপর আল্লাহ্ তাআলা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এই আয়াত নাযিল করেন অর্থাৎ আল্লাহ্ অনুগ্রহ পরায়ন হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি এবং মুহাজিরদের প্রতি এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (৯ ১১৭-১১৯)। [কাআব (রাঃ) বলেন] আল্লাহর শপথ, ইসলাম গ্রহনের পর থেকে কখনো আমার উপর এতো উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ্ প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তা হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমার সত্য বলা ও তাঁর সাথে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে মিথ্যাবাদীদের মতো আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাবাদিদের সম্পর্কে যখন ওহী নাযিল হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ অর্থাৎ, তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (৯:৯৫-৯৬)। কাআব (রাঃ) বলে, আমাদের তিনজনের তাওবা কবুল করতে বিলম্ব করা হয়েছে— যাদের তাওবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবুল করেছেন যখন তারা তাঁর কাছে শপথ করেছে, তিনি তাদের বায়আত গ্রহন করেছেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থগিত রেখেছেন। এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্ বলেন— সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। (৯:১১৮) কুরআনের এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর- আপত্তি পেশ করেছিল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা গ্রহন করেছিলেন। বরং এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত দেয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল।

৪০৭৭ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ জু’ফী (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সামুদ গোত্রের) হিজর বস্তি অতিক্রম করেন, তখন তিনি বললেন, যারা নিজ আত্নার উপর অত্যাচার করেছে তাদের আক্রান্তস্থলে ক্রন্দনাবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করোনা। যেন তোমাদের প্রতিও শাস্তি নিপতিত না হয় যা তাদের প্রতি নিপতিত হয়েছিল। তারপর তিনি তাঁর মস্তক আবৃত করেন এবং অতি দ্রুতবেগে চলে উক্ত স্থান অতিক্রম করেন।

৪০৭৮ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজর নামক স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁর সঙ্গীদের বললেন, তোমরা ঐ শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ক্রন্দনরত অবস্থা ছাড়া প্রবেশ করোনা– যাতে তোমাদের উপরও সেরুপ বিপদ আপতিত না হয় যেরুপ তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।

৪০৭৯ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতির) প্রয়োজনে বাহিরে গেলেন। (ফিরে এলে) আমি দাঁড়িয়ে তাঁর (ওযুর) পানি ঢেলে দিচ্ছিলাম। (স্থানটি কোথায়) তা আমার স্মরন নেই। তবে তা ছিল তাবুক যুদ্ধের সময়কার। এরপর তিঁনি তাঁর চেহেরা ধৌত করেন। এবং তাঁর বাহুদ্বয় ধৌত করতে গেলে দেখা গেল যে, তাঁর জামার আস্তিন আটসাঁট। তখন তিনি উভয় বাহুকে জামার মধ্য থেকে বের করে আনেন এবং তা ধৌত করেন। তারপর তিন তাঁর মোজার উপর মুসেহ্ করেন।

৪০৮০ : হযরত খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) হযরত হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদিনাতে পদার্পন করলাম তখন তিনি বললেন, এই মদিনার অপর নাম ত্বাবা (পবিত্র) এবং এই উহুদ এমন পাহাড় যে, সে আমাদের ভালোবাসে আর আমরাও তাকে ভালোবাসি।

৪০৮১ : হযরত আহমাদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদিনার নিকটবর্তী হলেন, তখন তিনি বললেন, মদিনাতে এমন সম্প্রদায় রয়েছে যারা কোন দূরপথ ভ্রমন করেনি, এবং কোন উপত্যকাও অতিক্রম করেনি তবুও তারা তোমাদের সাথে (সওয়াবে) শরীক রয়েছে। সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তারা তো মদিনায়-ই অবস্থান করছিল। তখন তিনি বললেন, তারা মদিনায়ই রয়ে গেছে, তবে ওযর তাদের আটকে রেখেছিল।

৪০৮২ : হযরত ইসহাক (রহঃ) হযরত আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফা সাহমী (রাঃ) কে তাঁর পত্রসহ কিসরার কাছে প্রেরন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ নির্দেশ দেন যে, সে যেন পত্রখানা প্রথমে বাহরাইনের গভর্নরের কাছে দেয় এবং পরে বাহরাইনের গভর্নর যেন কিসরার হাতে পত্রটি পৌঁছিয়ে দেয়। কিসরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্রখানা পড়ল, তখন তা ছিড়ে টুকরা করে ফেলল। (রাবী বলেন) আমার যতদূর মনে পড়ে, ইবনুল মূসা য়্যাব (রাঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি এ বলে বদদোয়া করেন, আল্লাহ্ তাদেরকেও সম্পূর্নরুপে টুকরো টুকরো করে দিন।

৪০৮৩ : হযরত উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) হযরত আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বানী আমাকে জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন মহা উপকার করেছে, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সাথে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শরিক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরা (রাঃ) বলেন, সে বানীটি হল, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা তনয়াকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, কখনোই সে জাতি সফলতার মুখ দেখবেনা যারা স্ত্রীলোককে তাদের প্রশাসক নির্বাচন করে।

৪০৮৪ : হযরত আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হযরত সায়েব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার স্মৃতিপটে এখনও সে ঘটনা জাগে যে, মদিনার ছেলেপুলের সাথে ছানিয়্যাতুল বিদায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বাগত জানাতে আমিও গিয়েছিলাম। সুফয়ান (রাঃ) এর রিওয়ায়েতে স্থলে শব্দের উল্লেখ রয়েছে।

৪০৮৫ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত সায়েব ইবনু ইয়াযীদ) (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আমি স্মৃতিচারন করি যে, ছানিয়্যাতুল বিদায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে স্বাগত জানাতে মদিনার ছেলেদের সাথে গিয়েছিলাম, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলেন।

৪০৮৬ : হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত উম্মুল ফদল বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা ‘‘ওয়াল মুরসালাত (নামায/নামাজ) উরফা’’ পাঠ করতে শুনেছি। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রুহ মুবারক কবজ করা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি।

৪০৮৭ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু আরআরা (রহঃ) হযরত ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) কে তাঁর কাছে বসাতেন। এতে আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমাদেরও তো ইবনু আববাস (রাঃ) এর সমবয়সী ছেলেপুলে আছে! তখন হযরত উমর (রাঃ) বললেন, সে কিরুপ মর্যাদার লোক তা তো আপনারাও জানেন। এরপর হযরত উমর (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) কে এই আয়াতের প্রকৃত মর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন, এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের খবর তাঁকে [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে] অবগত করানো হয়েছে। তখন হযরত উমর (রাঃ) বললেন, আমিও তা-ই মনে করি যা তুমি মনে করছ।

৪০৮৮ : হযরত কুতায়বা (রহঃ) হযরত সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, বৃহস্পতিবার! বৃহস্পতিবারের ঘটনা কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ-জ্বালা প্রবলভাবে দেখা দেয়। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার কাছে আস, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিয়ে যাই যেন তোমরা এরপর কখনও বিভ্রান্ত না হও। তখন তারা পরস্পর মতভেদ করতে থাকে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে মতবিরোধ করা শোভনীয় নয়। এরপর কিছুসংখ্যক লোক বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা কেমন? তিনি কি প্রলাপ বকছেন? তোমরা তাঁর কাছে থেকে ব্যাপারটি বুঝে নাও। এতে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ব্যাপারটি পূনরুথ্থাপনের উদ্যোগ নিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমাকে আমার অবস্থায় ছেড়ে দাও, তোমরা যে কাজের দিকে আমাকে আহবান জানোাচ্ছ তার চেয়ে আমি উত্তম অবস্থায় অবস্থান করছি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে তিনটি নসীহত করলেন (১) আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বহিষ্কার করে দিবে, (২) দূতদের সেরুপ আদর-আপ্যায়ন করবে যেমন আমি করতাম এবং তৃতীয়টি বলা থেকে তিনি নীরব থাকলেন অথবা বর্ননাকারী বলেন, তৃতীয়টি আমি ভুলে গিয়েছি।

৪০৮৯ : হযরত আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের সময় যখন নিকটবর্তী হল এবং ঘরে ছিলো লোকের সমাবেশ, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আস, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেই, যেন তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হও। তখন তাদের মধ্যকার কিছু লোক বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ-যন্ত্রনা কঠিনতর অবস্থায়, আর তোমাদের কাছে তো কুরআন মউযূ (ওজু/অজু/অযু)দ আছে। আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। ইত্যবসরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের লোকজনের মধ্যে মতানৈক্য শুরু হয়ে যায়, এবং তারা পরস্পর বাক-বিতন্ডা করত থাকেন। তাদের কেউ বললেন, তোমরা কাগজ উপস্থিত কর, তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিন। যাতে তোমরা তাঁর পরে কোন বিভ্রান্তিতে নিপতিত না হও। আবার কেউ বললেন এর বিপরীত। এরপর যখন বাক-বিতন্ডা ও মতবিরোধ চরমে পৌঁছল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উঠে চলে যাও। উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, ইবনু আববাস (রাঃ) বলতেন, এ ছিল অত্যন্ত দু:খজনক ব্যাপার যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের জন্য কিছু লিখে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতবিরোধ ও উচ্চ শব্দই মূলত প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

৪০৯০ : হযরত ইয়াসারা ইবনু সাফয়ান ইবনু জামীল আল লাখমী (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু-এরোগকালে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে আনলেন এবং চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন হযরত ফাতিমা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূনরায় তাঁকে ডেকে চুপে চুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হাসলেন। পরে আমরা এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে আক্রান্ত আছেন এ রোগেই তাঁর ইন্তেকাল হবে। এ কথাটই তিনি গোপনে আমাকে বলেছেন। তখন আমি কাঁদলাম। আবার তিনি আমাকে চুপে চুপে বললেন, তাঁর পরিবার-পরিজনের মধ্যে সর্বপ্রথম আমই তাঁর সঙ্গে মিলিত হব, তখন আমি হাসলাম।

৪০৯১ : হযরত মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি একথা শুনছিলাম যে, কোন নাবী মারা যান না যতক্ষন না তাঁকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয় দুনিয়া বা আখিরাত গ্রহন করার। যে রোগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন সে রোগে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মৃত্যু যন্ত্রনায় আক্রাস্তাবস্থায় বলতে শুনেছি, তাঁদের সাথে যাঁদের প্রতি আল্লাহ্ তা’আলা নিয়ামত প্রদান করেছেন [তাঁরা হলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-গন, সিদ্দীকগন এবং শহীদগন। ] (৪:৭২) তখন আমি ধারনা করলাম যে তিনিও ইখতিয়ার প্রাপ্ত হয়েছেন।

৪০৯২ : হযরত মুসলিম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হন, তখন তিনি বলতেছিলেন, ‘‘ফির রাফীকিল আলা’’। উর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন। )

৪০৯৩ : হযরত আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থাবস্থায় বলতেন, কোন নাবী (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রান কখনো কবজ করা হয়নি, যতক্ষন না তাঁর স্থান জান্নাতে দেখানে হয়েছে। তারপর তাঁকে জীবিত রাখা হয় অথবা ইন্তেকালের ইখতিয়ার দেয়া হয়। এরপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁর মাথা হযরত আয়িশা (রাঃ) এর উরুতে রাখাবস্থায় তাঁর জানো কবজের সময় উপস্থিত হল তখন তিনি চৈতন্যহীন হয়ে পড়লেন। এরপর যখন তিনি চেতনা ফিরে পেলেন তখন তিনি ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, হে আল্লাহ্! উর্ধ্বজগতের মহান বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন)। অনন্তর আমি বললাম, তিনি আর আমাদের মাঝে থাকছেন না। এরপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, ইহা ঐ কথাই যা তিনি আমাদের কাছে বর্ননা করতেন। আর তাই ঠিক।

৪০৯৪ : হযরত মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার বুকে হেলান দেওয়া অবস্থায় রেখেছিলাম এবং আবদুর রহমানের হাতে তাজা মিসওয়াকের ডাল ছিল যা দিয়ে সে দাঁত পরিষ্কার করছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন। আমি মিসওয়াকটি নিলাম এবং তা চিবিয়ে নরম করলাম। তারপর তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দিয়ে দাঁত মর্দন করলেন। আমি তাঁকে এর আগে এতো সুন্দরভাবে মিসওয়াক করতে আর কখনোও দেখিনি। এ থেকে অবসর হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত অথবা আঙ্গুল উপরে উঠিয়ে তিনবার বললেন, উর্ধ্বলোকের মহান বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত করুন), তারপর তিনি ইন্তেকাল করলেন। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুক ও থুতনির মধ্যস্থলে থাকাবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

৪০৯৫ : হযরত হিববান (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনার দুই সূরা (ফালাক ও নাস) পাঠ করে নিজ দেহে ফুঁক দিতেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা শরীর মুসেহ্ করতেন। এরপর যখন তিনি মৃত্যু-এরোগে আক্রান্ত হলেন, তিনি আমি আশ্রয় প্রার্থনার সূরাদ্বয় দ্বারা তাঁর শরীরে দম করতাম, যা দিয়ে তিনি দম করতেন। আমি তাঁর হাত দ্বারা তাঁর শরীর মুসেহ্ করিয়ে দিতাম।

৪০৯৬ : হযরত মুআল্লাহ্ ইবনু আসা’দ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পূর্বে যখন তাঁর পিঠ আমার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কান ঝুঁকিয়ে দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলছে শুনেছি, হে আল্লাহ্! আমাকে মাফ করুন, রহম করুন এবং (উর্ধ্বজগতের) মহান বন্ধুর সাথে আমাকে মিলিত করুন।

৪০৯৭ : হযরত সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যে রোগ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর সুস্থ হয়ে উঠেননি সে রোগাবস্থায় তিনি বলেন, ইহুদীদের প্রতি আল্লাহ্ লা’নত করেছেন। তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কবরগুলোকে সিজদার স্থানে পরিনত করেছে। হযরত আয়িশা (রাঃ) মন্তব্য করেন, এরুপ প্রথা যদি না থাকত তবে তাঁর কবরকেও খোলা রাখা হতো। কারন তাঁর কবরকেও মসজিদ (সিজদার স্থান) বানানোর আশংকা ছিল।

৪০৯৮ : হযরত সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ প্রবল হল ও ব্যাথা তীব্র আকার ধারন করল, তখন তিনি আমার ঘরে সেবা-শুশ্রুষা করার ব্যাপারে তাঁর বিবিগনের নিকট অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁরা তাঁকে অনুমতি দিলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে বের হয়ে ইবনু আববাস (রাঃ) ও অপর একজন সাহাবীর সাহায্যে জমীনের উপর পা হিঁচড়ে চলতে লাগলেন। উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) কে হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) কথিত ব্যাক্তি সম্পর্কে অবহিত করলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি সেই দ্বিতীয় ব্যাক্তি যার নাম হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) উল্লেখ করেননি, তার নাম জানো? আমি বললাম, না। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, তিনি হলেন হযরত আলী (রাঃ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হযরত আয়িশা (রাঃ) বর্ননা করেন যে, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর ব্যাথা বেড়ে গেল, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন সাত মশক যার মুখ এখনোও খোলা হয়নি, তা থেকে আমার শরীরে পানি ঢেলে দাও। যেন আমি (সুস্থ হয়ে) লোকদের উপদেশ দিতে পারি। এরপর আমরা তাঁকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী হযরত হাফসা (রাঃ) এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা উক্ত মশক হতে তাঁর উপর ততক্ষন পর্যন্ত পানি ঢালা অব্যাহত রাখলাম, যতক্ষন না তিনি তাঁর হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করেছ। হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে জামাতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) আমাকে জানালেন যে, হযরত আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) উভয়ে বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ-যাতনায় অস্থির হতেন তখন তিনি তাঁর কালো চাঁদর দিয়ে নিজ মুখমন্ডল ঢেকে রাখতেন। আবার যখন জ্বরের উষ্ণতা হ্রাস পেত তখন মুখমন্ডল থেকে চাঁদর সরিয়ে ফেলতেন। রাবী বলেন, এরুপ অবস্থায়ও তিনি বলতেন, ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লানত, তারা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কবরকে মসজিদে পরিনত করেছে। তাদের কৃতকর্ম থেকে সতর্ক করা হয়েছে। উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন যে, হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ) এর ইমামতির ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বারবার আপত্তি করেছি। আর আমার তাঁর কাছে বারবার আপত্তি করার কারন ছিল এই, আমার অন্তরে একথা আসেনি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে তাঁর স্থলে কেউ দাঁড়ালে লোকেরা তাকে পছন্দ করবে। বরং আমি মনে করতাম যে, কেউ তাঁর স্থলে দাঁড়ালে লোকেরা তাঁর প্রতি খারাপ ধারনা পোষন করবে, তাই আমি ইচ্ছা করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দায়িত্ব হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর পরিবর্তে অন্য কাউকে প্রদান করুন। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস হযরত ইবনু উমর, আবূ মূসা ও ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন।

৪০৯৯ : হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এমন অবস্থায় ওফাত হয় যে, আমার বুক ও থুতনির মধ্যস্থলে তিনি হেলান দেওয়া অবস্থায় ছিলে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যু-যন্ত্রনার পর আমি আর কারো জন্য মৃত্যু-যন্ত্রনাকে কঠোর বলে মনে করিনা।

৪১০০ : হযরত ইসহাক (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, হযরত আলী ইবনু আবূ তালীব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ হতে বের হয়ে আসেন যখন তিনি মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তখন সাহাবীগন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূল হাসান, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ কেমন আছেন? তিনি বললেন, আল্-হামদুলিল্লাহ্, তিনি কিছুটা সুস্থ। তখন হযরত আববাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তাঁর হাত ধরে তাঁকে বললেন, আল্লাহর কসম, তুমি তিন দিন পরে অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবে। আল্লাহর শপথ, আমি মনে করি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রোগে অচিরেই ওফাত হবেন। কারন আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশের অনেকের মৃত্যুকালীন চেহারার অবস্থা লক্ষ্য করেছি। চল যাই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি (খিলাফতের) দায়িত্ব কার উপর ন্যাস্ত করে যাচ্ছেন। যদি আমাদের মধ্যে থাকে তো তা আমরা জানোব। আর যদি আমাদের ছাড়া অন্যদের উপর ন্যাস্ত করে যান, তাহলে তাও আমরা জানতে পারব এবং তিনি এ ব্যাপারে আমাদের তখন অসীয়ত করে যাবেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, যদি এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমরা জিজ্ঞাসা করি আর তিনি আমাদের নিষেধ করে দেন, তবে তারপরে লোকেরা আর আমাদের তা প্রদান করবেনা। আল্লাহর কসম, এজন্য আমি কখনোই এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করবোনা।

৪১০১ সাঈদ ইবনু উফায়র (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সোমবারে সাহাবীগণ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলেন। আর আবূ রবক (রাঃ) তাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামাতের ইমামতী করছিলেন। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর কক্ষের পর্দা উঠিয়ে তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। সাহাবীগণ কাতারবন্দী অবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের নিমিত্ত পিছিয়ে আসতে মনস্থ করলেন। তিনি ধারনা করেছিলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য বেরিয়ে আসার ইচ্ছা করছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের আনন্দে সাহাবীগণের সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গের উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে ইশারায় তাদের সালাত (নামায/নামাজ) পুরা করতে বললেন। তারপর তিনি কক্ষে প্রবেশ করলেন ও পর্দা টেনে দিলেন।

৪১০২ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দা (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রায়ই বলতেন, আমরা প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার হলকুম ও সিনার মধ্যস্থলে থাকাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হয় এবং আল্লাহ্তাআলা তাঁর ইন্তেকালের সময় আমার থুথু তাঁর থুথুর সাথে মিশ্রিত করে দেয়। এ সময় আবদুর রহমান (রাঃ) আমার নিকট প্রবেশ করে এবং তার হাতে মিসওয়াক ছিল। আর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে (আমার বুকে) হেলান লাগান অবস্থায় রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তিনি আবদুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি অনুভবন করতে পারলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক আনব? তিনি তখন মাথায় ইশারায় জানালেন যে, হ্যাঁ, আন। তখন আমি মিসওয়াক আনলাম। কিন্তু মিসওয়াক শক্ত ছিল, তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব? তখন তিনি মাথায় ইশারায় হ্যাঁ বললেন। তখন আমি মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি মিসওয়াক করলেন। তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল (রাবী উমরের সন্দেহ) তাতে পানি ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার স্বীয় হস্তদ্বয় উক্ত পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মাসেহ (ঠান্ডা) করালেন এবং আল্লাহ ব্যাতিত কোন মাবুদ নেই, সত্যই মৃত্যুযন্ত্রণা কঠিন। তারপর উভয় হাত উপর দিকে উত্তোলন করে বলছিলেন, আমি উর্ধ্বলোকের মহান বন্ধু সাথে মিলিত হতে চাই। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হল আর হাত শিথিল হয়ে গেল।

৪১০৩ ইসমাঈল আয়িশার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে রোগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন সে অবস্থায় তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামী কাল কার ঘরে থাকব? এর দ্বারা তিনি আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে থাকার পালার প্রতি ইচ্ছা প্রকাশ করতেন। অন্য সহধর্মিনীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যার ঘরে ইচ্ছা সেখানে অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থান করতে থাকেন। এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তেকাল করেন এবং আল্লাহ্তাঁর রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাঁর মাথায় আমা হলকুম ও সীনার মধ্যস্থলে ছিল এবং আমার থুথুর সাথে তাঁর থুথু মিশ্রিত হয়ে যায়। তারপর তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) এর হাতে একটি মিসওয়াক ছিল যা দিয়ে সে তার দাঁত মাজছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন। আমি তখণ তাকে বললাম, হে আবদুর রহমান এই মিসওয়াকটি আমাকে দাও, তখন সে তা আমাকে দিয়ে দিল। আমি সেটি চিবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াকটি দ্বারা দাঁত পরিস্কার করলেন, আর তিনি তখন আমার বুকে হেলান লাগান অবস্থায় ছিলেন।

৪১০৪ সুলাইয়মান ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আমার পালার দিনে এবং হলকুম ও সীনার মধ্যস্থলে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ্য হতেন তখন আমাদের মধ্যকার কেউ দোয়া পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ঝাড়ফুঁক করার জন্য তাঁর কাছে গেলাম। তখন তিনি তাঁর মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন, ঊর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে (মিলিত হতে চাই), ঊর্ধ্ব জগতের মহান বন্ধুর সাথে (মিলিত হতে চাই)। এ সময় আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) আগমন করলেন। তাঁর হাতে মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেদিকে তাকালেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] মিসওয়াকের প্রয়োজন। তখন আমি সেটি নিয়ে চিবালাম, ঝেড়ে পরিস্কার করলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা দিলাম। তখন তিনি এর দ্বারা এত সুন্দরভাবে দাঁত পরিস্কার করলেন যে এর আগে কখনও এরূপ করেননি। তারপর তা আমাকে দিলেন। এরপর তাঁর হাত ঢলে পড়ল অথবা রাবী বলেন তাঁর হাত থেকে ঢলে পড়ল। আল্লাহ্ তা’আলা আমার থুথুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থুথুর সাথে মিলিয়ে দিলেন। দুনিয়ার জীবনের শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে।

৪১০৫ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়ে তার সুনহের বাড়ি থেকে আগমন করেন। ঘোড়া থেকে অবতরন করে তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন, কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে সোজা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্যে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামনী চাঁদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। তখন তিনি চেহারা হতে কাপড় হটিয়ে তাঁর ওপর ঝুঁকে পড়েন এবং তাঁকে চুমু দেন ও কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, আমর মাতাপিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! আল্লাহর কসম আলালাহ্তো আপনাকে দু’বার মৃত্যু দিবেন না, যে মৃত্যু ছিলো আপনার জন্য নির্ধারিত সে মৃত্যু আপনি গ্রহন করে নিলেন। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, আমাকে আবূ সালামা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আবূ বকর (রাঃ) বের হয়ে আসেন তখন উমর (রাঃ) লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে উমর বসে পড়। উমর (রাঃ) বসতে অস্বীকার করলেন। তখন সাহাবীগণ উমর (রাঃ) কে ছেড়ে আবূ বকর (রাঃ) এর প্রতি মনোনিবেশ করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) ভাষণ দিলেন- “এরপর আপনাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ্ এর ইবাদত করতেন, তিনি তো ইন্তেকাল করেছেন। আর যারা আপনাদের মধ্যে আল্লাহর ইবাদত করতেন (জেনে রাখুন) আল্লাহ চিরঞ্জীব, চির অমর। মহান আল্লাহ্ বলেন, মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র, তাঁর পূর্বে বহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গত হয়েছেন। কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন (৩ : ১৪৪) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আবূ বকর (রাঃ) এর পাঠ করার পূর্বে লোকেরা যেন জানতো না যে আল্লাহ্তা’আলা এরূপ আয়াত নাযিল করেছেন। এরপর সমস্ত সাহাবী তাঁর থেকে উক্ত আয়াত শিখে নিলেন। তখন সকালে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতে লাগলেন। আমকে সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব (রহঃ) অবহিত করেন যে, উমর (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর কসম, আমি যখন আবূ বকর (রাঃ) কে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনলাম, তখন হতভম্ব হয়ে গেলাম, এবং আমার পা দু’টি যেন আমাকে আর বহন করতে পারছিল না, আমি জমীনের ওপর পড়ে গেলাম। যখন আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি তিলাওয়াত করছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন।

৪১০৬ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর তাঁকে চুমু দেন।

৪১০৭ আলী ইবনু মাদিনী) (রহঃ) বলেন, আমার কাছে ইয়াহ্ইয়া (রাঃ) এতদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগাক্রান্ত অবস্থায় তাঁর মুখে ঔষধ ঢেলে দিতাম। তিনি ইশারায় আমাদেরকে তাঁর মুখে ঔষধ ঢালতে নিষেধ করলেন। আমরা বললাম, এটা ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারণ বিরক্তিভাব (তাই নিষেধ মানলাম না)। যখন তিনি সুস্থ্যবোধ করলেন তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের ঔষধ সেবন করাতে নিষেধ করিনি? আমরা বললাম, আমরা মনে করেছিলাম এটা ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারণ বিরক্তিভাব। তখন তিনি বললেন, আব্বাস ব্যতীত বাড়ীর প্রত্যেকের মুখে ঔষধ ঢাল তা আমি দেখি। কেননা সে তোমাদের মাঝে উপস্থিত নেই। এ হাদীস ইবনু আবূ যিনাহ আয়িশা (রাঃ) থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করেন।

৪১০৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উল্লেখ করা হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে ওসীয়াত করে গেছেন। তখন তিনি বললেন, একথা কে বলেছে? আমার বুকের সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি। তিনি একটি চিলিমচি আনতে বললেন, তাতে থুথু ফেললেন এবং ইন্তেকাল করলেন। অতএব আমি বুঝতে পারছি না তিনি কিভাবে আলী (রাঃ)- কে ওসীয়াত করলেন।

৪১০৯ আবূ নুআঈম (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ওসীয়াত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, তাহলে কেমন করে মানুষের জন্য ওসীয়াত লিপিবদ্ধ করা হল অথবা কিভাবে এর নির্দেশ দেয়া হল? তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন সম্পর্কে ওসীয়াত করে গেছেন।

৪১১০ কুতায়বা (রহঃ) আমর ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দীনার, দিরহাম, গোলাম বাঁদি রেখে যাননি। কেবলমাত্র মাদা উষ্ট্রীটি যার উপর তিনি আরোহণ করতেন এবং তাঁর যুদ্ধাস্ত্র আর একখন্ড (খায়বর এ ফদাকের) জমীন যা মূসা ফিরদের জন্য দান করে গেছেন।

৪১১১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর রোগ প্রকটরূপ ধারণ করে তখন তিনি বেহুশ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ফাতিমা (রাঃ) বললেন, উহ! আমার পিতার উপর কত কষ্ট! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, আজকের পরে তোমার পিতার উপর আর কোন কষ্ট নেই। যখন তিনি ইন্তেকাল করলেন তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, হায়! আমার পিতা! রবের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। হায় আমার পিতা! জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁর বাসস্থান। হায় পিতা! জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম – কে তাঁর ইন্তেকালের খবর পরিবেশন করছি। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে সমাহিত করা হল, তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, হে আনাস! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে মাটি চাপা দিতে কি করে তোমাদের প্রাণ সায় দিল।

৪১১২ বিশ্‌র ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ থাকাকালীন বলতেন, কোন নাবী র ওফাত হয়নি যতক্ষণ না তাকে জান্নাতে তাঁর ঠিকানা দেখানো হয়। তারপর তাঁকে ইখতিয়ার প্রদান করা হয় (দুনিয়া বা আখিরাত গ্রহণের), যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর রোগ বৃদ্ধি পেল তখন তাঁর মাথা আমার উরুর উপর ছিল এ সময় তিনি মূর্ছা যান। তারপর আবার হুশ ফিরে এলে, ছাদের দিকে তিনি দৃষ্টি উত্তোলন করেন। তারপর বলেন, হে আল্লাহ আমাকে উর্ধ্ব জগতের মহান বন্ধুর (সান্নিধ্য দান করুন)। তখন আমি বললাম, তাহলে তো তিনি আর আমাদের মাঝে থাকতে চাচ্ছেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা ঐ কথা যা তিনি সুস্থাবস্থায় আমাদের কাছে বর্ণনা করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর শেষ কথা যা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তা হল -হে আল্লাহ্! উর্ধ্বলোকের বন্ধুর সাথে আমাকে মিলিত করুন।

৪১১৩ আবূ নুআইম (রহঃ) আয়িশা ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুযুলে কুরআনের দশ বছর মক্কায় বসবাস করেছেন এবং মদিনাতেও দশ বছর কাটান।

৪১১৪ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তেষট্টি বছর বয়সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর ওফাত হয়। ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, আমাকে সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব এরূপই অবহিত করেন।

৪১১৫ কাবীসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন এমন অবস্থায় যে, তাঁর বর্ম (যুদ্ধাস্ত্র) ইহুদীর কাছে ত্রিশ সা’ যবের বিনিময়ে বন্ধক রাখা ছিল।

৪১১৬ আবূ আসিম যাহ্হাক ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে (একটি যুদ্ধের আমীর) নিযুক্ত করেন। এতে সাহাবীগণ (নিজেদের মধ্যে) ১ নুযুলে কুরআনের সময় মক্কায় মোট ১৩ বছর। তবে প্রথম নাযিলের পর তিন বছরকাল ওহী বন্ধ থাকে এ জন্য এখানে দশ বছর বলা হয়েছে। সমালোচনা করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা উসামার আমীর নিযুক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করছো, অথচ সে আমার নিকট প্রিয়তম লোক।

৪১১৭ ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ আব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাদল প্রেরণ করেন এবং উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে তাদের আমীর নিযুক্ত করেন। তখন সাহাবীগণ তাঁর নেতৃত্বের সমালোচনা করতে থাকেন। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা আজ তার নেতৃত্বের সমালোচনা করছ, এভাবে তোমরা তাঁর পিতা (যায়দ)- এর নেতৃত্বের প্রতিও সমালোচনা করতে। আল্লাহর কসম সে (যায়দ) ছিল নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ব্যাক্তি এবং সে আমার কাছে লোকদের মধ্যে প্রিয়তম ব্যাক্তি। আর এ (উসামা) তার পিতার পরে লোকদের মধ্যে আমার কাছে প্রিয়তম ব্যাক্তি।

৪১১৮ আসবাগ (রহঃ) সুনাবিহী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসা করেন আপনি কখন হিজরত করেছেন? তিনি বলেন, আমরা ইয়ামান থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে জুহফাতে পৌঁছি। তখন একজন অশ্বারোহীকে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, খবর কি খবর কি? তিনি বললেন, পাঁচদিন অতিবাহিত হল আমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সমাহিত করেছি। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি শবেকদর সম্পর্কে কিছু শুনেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর মুয়াযযিন বিলাল (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তা রমযানের শেষ দশ দিনের সপ্তম দিনে রয়েছে।

৪১১৯ আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কতটি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বলেন, সতেরটি। আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি।

৪১২০ আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে পনেরটি যুদ্ধ করেছি।

৪১২১ আহমদ ইবনু হাসান বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ষোলটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: মাগাজি বা যুদ্ধাভিযান
মাগাজি বা যুদ্ধাভিযান
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/magaji.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/magaji.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy