৭২১ আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুসলমানরা মদিনায় আসার পর একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে নিত। এ জন্য কেউ আযান দিত না। একদিন তারা ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের অনুরূপ একটা নাকূস (ঘন্টা) ব্যবহার কর। তাদের অপরজন বলল, ইহুদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার কর। উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আহবান করতে একটি লোক পাঠাওনা কেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বিলাল! উঠো এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য ডাক।
৭২২ খালাফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, . বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দগুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দ গুলো এক বার করে বলতে। ইয়াহইয়া তার হাদীসে ইবনু উলায়্যার মাধ্যমে এতটুকু যোগ করেন যে, আমি আইউব (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন , কদ কমাতিচ্ছলাহ শব্দ টি ছাড়া (এটি দু’বার বলবে) বাকী শব্দ গুলো এক বার করে বলবে।
৭২৩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একদা) সাহাবায়ে কিরাম কোন পরিচিত জিনিসের মাধ্যমে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়া সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করলেন। এ ব্যাপারে তারা আগুন জ্বালানো অথবা নাকুস (শঙ্খ) বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। শেষে . বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হল, আযানের শব্দগুলো কে দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দ গুলোকে এক বার করে বলতে।
৭২৪ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) … খালিদ আল হাযযা থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত আছে যে, তখন লোকজন বেশী হয়ে গেল তখন তারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়ার আলোচনা করল এরপর সাকাফীর হাদীস-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে উল্লেখ রয়েছে।
৭২৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দ গুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলো এক বার করে বলতে।
৭২৬ আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মাহযুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই আযান শিখিয়ে ছিলেন “আল্লাহু আকবর” (আল্লাহ মহান); আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই); আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুল আল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল); এরপর আবার বলবে। হাই আল-আস সালাহ দুই বার (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য এস) দুই বার, হাই আ-লাল ফালাহ (কল্যাণের দিকে এস) দুই বার। ইসহাক তার বর্ণনায় ও বাক্য দু’টি বর্ণনা করেছেন।
৭২৭ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুই জন মু’আযযিন ছিল। বিলাল এবং দৃষ্টিহীন সাহাবী ইবনু উষ্মি মাকতূম।
৭২৮ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রহঃ) সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭২৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতিক্রমে আযান দিতেন। আর তিনি ছিলেন দৃস্টিহীন।
৭৩০ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ)-হিশাম এর সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭৩১ যুহায়র ইবনু হারব (ব)… আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে শক্রর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতেন। আযান শোনার অপেক্ষা করতেন। আযান শুনতে পেলে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন। আযান শুনতে না পেলে আক্রমণ করতেন। এক বার তিনি কোন এক ব্যাক্তিকে বলতে শুলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তুমি ফিতরাত (দ্বীন ইসলাম)-এর উপর রয়েছ। এর পর সে ব্যাক্তি বলল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তুমি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এলে। সাহাবায়ে কিরাম লোকটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখতে পেলেন যে, সে ছিল একজন ভেড়ার রাখাল।
৭৩২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা আযান শুনবে তখন মু-আযযিন যা বলে তাই বলবে।
৭৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জ্বীনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্হান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশাকরি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৭৩৪ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ওমর ইবনুল খাত্তাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন বলে তখন তোমাদের কেউ যদি বলল। তারপর মু-আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। অতঃপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। পরে মু’আযযিন যখন বলে, তখন সে বলল। এরপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। তারপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল-এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৭৩৫ মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি মু-আযযিনের আযান শুনে নিম্নের দুঁআটি পাঠ করে তার শোনাহ মাফ করে দেয়া হয়ঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তিনি এক, কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি সন্তুষ্ট আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে এবং মুহাম্মাদ কে রাসুল হিসেবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
৭৩৬ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) তালহা ইবনু ইয়াহইয়ার চাচা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি (একবার) মু’আবিয়া (রহঃ) ইবনু আবূ সুফিয়ানের কাছে ছিলাম। মু’আযযিন এসে তাকে সালাত (নামায/নামাজ) এর জন্য ডাকল। মু’আবিয়া (রহঃ) বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনদের ঘাড় সকলের চেয়ে লম্বা হবে।
৭৩৭ ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) মুঅবিয়া (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭৩৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) . জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন (মদিনা থেকে) রাওহা পর্যন্ত চলে যায়। সুলায়মান (আ’মাশ) বলেন, আমি রাবী আবূ সুফিয়ান কে (রাওহা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন , এ জায়গাটি মদিনা থেকে ছত্রিশ (৩৬) মাইল দুরে অবস্থিত।
৭৩৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বু ও আবূ কুরায়বের সুত্রে আ’মাশ থেকেও হাদীসটি বর্ণিত আছে।
৭৪০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালায় যাতে সে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। অতঃপর আযান যখন থেমে যায় তখন ফিরে এসে ওয়াসওসা (ধোঁকা)দেয়। তারপর যখন ইকামাত শোনে তখন আবার চলে যায় যাতে তার শব্দ সে শুনতে না পায়। অতঃপর যখন তা (ইকামাত)- শেষ হয় তখন ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (ধোঁকা) দেয়।
৭৪১ আব্দুল হামীদ ইবনু বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন আযান দেয় শয়তান তখন পেছন ফিরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড় দেয়।
৭৪২ উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বানূ হারিসা নামক গোত্রের কাছে পাঠালেন। আমার সাথে তখন আমাদেরই একটি গোলাম ছিল, বর্ণনান্তরে (তিনি বলেন) আমার এক জন সঙ্গী ছিল। অতঃপর একটি বাগানের প্রাচীর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাক দিল। তিনি বলেন, আমার সঙ্গী তখন প্রাচীরের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল, কিন্তু কিছু দেখতে পালনা। পরে এ ঘটনা আমি আমার পিতার কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন , আমি যদি জানতাম যে, তুমি এরুপ অবস্হার সম্মূখীন হবে তাহলে তোমাকে আমি পাঠাতাম না। তুমি (ভবিষ্যতে) যখন এরুপ আওয়াজ শুনবে তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিবে। কারণ আমি আবূ হুরায়রাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে।
৭৪৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পিছন ফিরে দৌড় দেয়, যাতে সে আযানের ধ্বনি শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে। আর যখন ইকামাতের তাকবীর বলা হয় তখন আবার পিছন দিকে ফিরে দৌড় দেয়। ইকামাত শেষ হলে ফিরে আসে এবং মানুষের অন্তরে ওয়াস ওয়াসা (ধোকা) দেয়। সে তাকে এমন সব জিনিসের কথা সরণ করিয়ে দেয় যা সে ইতিপূর্বে মনেও করেনি। ফলে সে কয় রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল- তা ঠিক মনে করতে পারে না।
৭৪৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে সেখানে বর্ণিত হয়েছে যে, ফলে সে কিভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল তা খেয়াল করতে পারে না।
৭৪৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালিম-এর পিতা ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন (তখনো অনুরুপ ভাবে হাত উঠাতেন)। কিন্তু উভয় সিজদার মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না।
৭৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (ব)… ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়াতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমন কি তা তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। তারপর তাকবীর বলতেন। পরে যখন রুকু করার ইরাদা করতেন তখন ও অনুরুপ করতেন। আবার রুকু থেকে যখন উঠতেন তখনও অনুরুপ করতেন। কিন্তু সিজদা থেকে যখন মাথা তুলতেন তখন এরুপ করতেন না।
৭৪৭ মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাহযায (রহঃ) যুহরি (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন তারপর তাকবীর বলতেন।
৭৪৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রহঃ)-কে দেখলেন, তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বলে উভয় হাত উঠালেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন উভয় হাত উঠালেন। আর রুকু থেকে যখন মাথা উঠালেন তখন আবারও হাত উঠালেন এবং (পরে) বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করতেন।
৭৪৯ আবূ কামিল আল জাহদারী (ব)… মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রহঃ) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবির (তাকবীরে তাহরিমা) বলে উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখনও কান বরাবর উভয় হাত উঠাতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা তুলে বলতেন তখনো অনুরুপ করতেন।
৭৫০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রহঃ) বলেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কান বরাবর হাত তুলতে দেখেছেন।
৭৫১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) (একবার) তাদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করলেন, তিনি সব কয়বার নিচু হওয়ার এবং উঠার সময় বললেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করার পর আমাদের দিকে ফিরে বললেন , আল্লাহর কসম! আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অধিক সদৃশ তোমাদের চাইতে।
৭৫২ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রাঃ)… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন তখন দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। তারপর রুকু করার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকু থেকে পিঠ তুলতেন তখন বলতেন। তারপর দাড়ান অবস্থায় বলতেন তারপর সিজদায় ঝুকবার সময় তাকবির বলতেন। তারপর সিজদা থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর সিজদা করার সময় (আবার) তাববীর বলতেন। তারপর মাথা তুলবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত পূর্ণ সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করতেন। তারপর দুই রাকআতের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন , তোমাদের সকলের চাইতে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুল –এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অধিক সদৃশ।
৭৫৩ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াতেন তখন দাড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। ইবনু জুরায়জ এর হাদীসের অনুরুপ। কিন্তু তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর উক্তি তোমাদের সকলের চেয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অধিক সদৃশ- এর উল্লেখ করেননি।
৭৫৪ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রাঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রহঃ)-কে মারওয়ান যখন মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত করেন, তখন তিনি ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালে তাকবীর বলতেন। এরপর ইবনু জুরায়জ-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তার হাদীসে (আরো) রয়েছে যে, অতঃপর তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন এবং সালাম ফিরাতেন তখন মসজিদে উপস্হিত লোকদের দিকে মুখ করে বলতেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জানো! তোমাদের সকলের চেয়ে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুল এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সদৃশ।
৭৫৫ মুহাম্মদ ইবনু মিহরান আর রাযি (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) প্রত্যেক বার উচু এবং নিচু হবার সময় তাকবীর বলতেন। আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রা! এ কেমন তাকবীর? তিনি বললেন , এটাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)।
৭৫৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ এর সুত্রে সুহায়ল-এর পিতা থেকে বর্ণিত যে, . আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রত্যেক বার নিচু এবং উচু হবার সময় তাকবীর বলতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, রাসূলল্লাহ এরুপ করতেন।
৭৫৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আলী আবূ তালিব (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন (সিজদা থেকে) মাথা তূললেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন দু’রাকআত এর পর দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বললেন। অতঃপর আমরা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলাম তখন ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন , ইনি আমাদের কে নিয়ে ঠিক মুহাম্মাদ এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। অথবা তিনি বলেন, ইনি আমাকে মুহাম্মাদ এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
৭৫৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উবাদা ইবনুুস সামিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করবে না তার (পরিপূর্ণ) সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৫৯ আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ ইরশাদ করেন, যে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬০ আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানি (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে উম্মুল কুরআন পাঠ করবে না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ হুমায়দ-এর সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত আছে। সেখানে ‘আরেকটূ বেশী’ শব্দটি অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
৭৬২ ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) হবে অসস্পূর্ণ তিন বার এটা বললেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা তো ইমামের পেছনে থাকি (তখনো কি ফাতিহা পড়ব?) তিনি বললেন , তখন মনে মনে তা পড়। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আর বান্দা যা চাইবে- তা সে পাবে। অতঃপর বান্দা যখন বলে, (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য); আল্লাহ তা’আলা এর জবাবে বলেন- আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, ‘আর রহমানির রহীম’ (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তাআলা বলেন- বান্দা আমার তা‘রিফ করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন; (তিনি বিচার দিনের মালিক); তখন আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। তিনি এও বলেন, বান্দা সমস্ত কাজ আমার উপর সোপর্দ করেছে। সে যখন বলে, ‘ইয়্যাকানা‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন’ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তখন আল্লাহ বলেন- এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দা যা চায় তাই দেয়া হবে। যখন সে বলে, ‘ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম, সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম অলাদ-দোয়াল্লীন’ (আমাদের সরল-সঠিক ও স্থায়ী পথে পরিচালনা করুন। যে সব লোকদের আপনি নিয়ামত দান করেছেন, যারা অভিশপ্তও নয় এবং পথভ্রষ্টও নয়- তাদের পথেই আমাদের পরিচালনা করুন); তখন আল্লাহ বলেন- এসবই আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হবে। সুফিয়ান বলেন, আলা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ইয়া‘কুবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করে শোনান। এ সময় তিনি রোগ শয্যায় ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
৭৬৩ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) পড়ল অথচ তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না সুফিয়ানের হাদীসের অনুরূপ। তাদের উভয়ের হাদীসে রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন- আমি সালাত (নামায/নামাজ)কে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি, এর অর্ধেক আমার বান্দার।
৭৬৪ আহমাদ ইবনু জা’ফর আল মাকিরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি; সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) অসম্পূর্ণ। তিন বার এ বাক্যটি বললেন , উপরের বর্ণনাকারীদের হাদীসের অনুরুপ।
৭৬৫ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সালাত (নামায/নামাজ) হবে না কিরা’আত ছাড়া। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সালাত (নামায/নামাজ) উচ্চস্বরে আদায় করেছেন তোমাদের জন্য আমরাও তা উচ্চ স্বরে আদায় করি আর যা নিম্ন স্বরে আদায় করেছেন আমরাও তা নিম্ন স্বরে আদায় করি।
৭৬৬ আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে (নামায) কিরা’আত পাঠ করা উচিৎ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের কে শুনিয়ে কিরা’আত পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমরাও তোমাদের কে শুনিয়ে পাঠ করি। আর যে সব সালাত (নামায/নামাজ) কিরা’আত নীরবে পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমরাও নীরবে পাঠ করি। অতঃপর তাকে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমি যদি উম্মুল কুরআন এর চেয়ে আর বেশী না পড়ি? তিনি বললেন , তুমি যদি উম্মূল কুরআনের পর আরো বেশী পড় তাহলে তা হবে উত্তম। আর যদি শুধু উম্মুল কুরআনই পড় তাহলে তা হবে তোমার জন্য যথেষ্ট।
৭৬৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে (নামায) কিরা’আত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে সালাত (নামায/নামাজ) (কিরা’আত) শুনিয়েছেন, আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের কে শোনাই আর যে সালাত (নামায/নামাজ) নীরবে পাঠ করেছেন আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ) নীরবে পাঠ করি। যে ব্যাক্তি উম্মুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। আর যে আরো! বেশী পাঠ করবে তা হবে উত্তম।
৭৬৮ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন একটি লোক প্রবেশ করল। সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে সালাম করল। সালামের জবাব দিয়ে বললেন , ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে সালাম করল। রাসূলল্লাহ উত্তর দিয়ে বললেন , গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। এই রুপ তিন বার করলেন। অতঃপর লোকটি বলল, আপনাকে সত্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম! সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের এর চেয়ে ভাল কোন পন্হা থাকলে আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন , যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর তুমি কুরআনের যতটুকু জানো তা থেকে যা সহজ হয় তাই পাঠ করবে। তারপর রুকু করবে। এমন কি নিবিষ্ট ভাবে (কিছুক্ষণ) রুকু করতে থাকবে। তারপর (রুকু থেকে) উঠবে, সোজা ভাবে (কিছুক্ষণ) দণ্ডায়মান থাকবে। তারপর সিজদা করবে। (কিছুক্ষণ) নিবিষ্ট ভাবে সিজদারত থাকবে। তারপর উঠে বসবে। এবং (কিছুক্ষণ) সোজা ভাবে বসে থাকবে। তোমার গোটা সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করবে।
৭৬৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এক পাশে ছিলেন। এরপর রাবী উপরোক্ত ঘটনার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়ায়াতটিতে রাবীদ্বয় আরেকটু যোগ করেছেন যে, “যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন সুন্দর করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তারপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর বলবে”।
৭৭০ সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (একবার) আমাদের কে নিয়ে যুহর অথবা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) তিনি বললেন , তোমাদের কে আমার পেছনে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ সুরাটি পড়ছিলে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। আর এর দ্বারা মঙ্গল লাভ ছাড়া আমার ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। তিনি বললেন , আমার মনে হল, তোমরা কেউ এ নিয়ে আমার পাঠে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এক লোক তার পেছনে সূরাটি পড়ল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন , তোমাদের মধ্যে কে কিরা’আত পাঠ করেছ? অথবা বললেন , তোমাদের মধ্যে কিরা’আত পাঠ কারী কে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। তিনি বললেন , আমার মনে হচ্ছিল তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বললেন , আমি মনে করলাম তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি, কিন্তু তাঁদের কাউকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম সরবে পড়তে শুনিনি।
৭৭৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি (নিজে) কি এটা আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন , হ্যা, আমরা এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করে ছিলাম।
৭৭৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মিহরান আর রাযী (রহঃ) আবদা থেকে বর্ণিত যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এই বাক্যগুলি সরবে পাঠ করতেন। কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমার ও উসমান (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তারা সবাই সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ পাঠ দিয়ে। তারা কিরাআতের শুরুতেও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম উল্লেখ করতেন না, শেষেও না।
৭৭৬ মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
৭৭৭ আলী ইবনু হূজর আাস সা’দী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব হল, এরপর তিনি মুচকি হেসে মাথা উঠালেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কিসে আপনার হাসি এল? তিনি বললেন , এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এই বলে তিনি পড়লেন, এরপর বললেন , তোমরা কি জানো (কাওসার) কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন , সেটা হল একটি নহর। আল্লাহ তাআলা আমাকে যার ওয়াদা করেছেন। সেখানে বহু কল্যাণ রয়েছে। সেটি একটি জলাশয়। কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাত (পানি পানের জন্য) সেখানে আসবে। তার গ্লাসের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমান। অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে এক জন বান্দাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, পরোয়ারদেগার! সে তো আমার উম্মত। বলা হবে, আপনার জানানেই যে, আপনার পরে এরা কি নতুন রীতি (বিদাআত) উদ্ভাবন করেছিল। ইবনু ছুজর আরো একটু যোগ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে মসজিদে বসা ছিলেন। শেষে আছে আল্লাহ বলবেন, এ সেই ব্যাক্তি যে আপনার পর বিদআত করেছিল।
৭৭৮ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইবনু মুসহির বর্ণিত (উপরিউক্ত) হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন যে, এক বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিছুটা তন্দ্রার ভাব দেখা দিল । এ রিওয়াতে ‘হাউযের গ্লাসের সংখ্যা তারকার সমপরিমাণ কথাটির উল্লেখ নেই’। শুধূ এতটুকু বলা হয়েছে যে, তা (কাওসার) হল জান্নাতের একটি নহর যা আমার রব আমাকে দেয়ার ওয়াদা করেছেন।
৭৭৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হুমাম বলেন, উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে নিলেন (গায়ে চাঁদর দিলেন)। তারপর তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড় থেকে বের করলেন। পরে উভয় হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন। যখন বললেন , তখন উভয় হাত তুললেন। পরে উভয় হাতের মাঝখানে সিজদা করলেন।
৭৮০ আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সময় (বৈঠকে) বলতাম, ‘আল্লাহর উপর সালাম হোক, অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন- বস্তুত আল্লাহ নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)। অতএব তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) বসে সে যেন বলে, যাবতীয় মান-মর্যাদা, প্রশংসা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি নেমে আসুক। যখন সে একথাগুলো বলে তখন তা আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যায়, সে আসমানেই থাক অথবা জমীনে। “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ” অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছা অনুযায়ী সে যে কোন দোয়া পড়তে পারে।
৭৮১ উল্লেখিত সনদ সূত্রে মানসুর থেকে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় “অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দোয়া পড়তে পারে” এ কথাটুকু উল্লেখ নেই।
৭৮২ একই সনদে মানসূর থেকে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনার শেষ অংশ হচ্ছে- অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছা অনুযায়ী অথবা নিজের পছন্দমত যে কোন দোয়া পড়তে পারে।
৭৮৩ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে বসতাম মনসূরের হাদীসের অনুরূপ। এর শেষাংশের বর্ণনা হচ্ছে- এর পর সে যে কোন দোয়া পাঠ করবে।
৭৮৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়েছেন আমার হাত তাঁর হাতের মধ্যে রেখে যেমনিভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। এবং তিনি অন্যান্য রাবীর তাশাহুদের ন্যায় বর্ণনা করেছেন।
৭৮৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনি ভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তেমনি ভাবে আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন। ইবনু রুমহ এর বর্ণনায় রয়েছে তিনি যে ভাবে আমাদের কুরআন শিক্ষা দিতেন।
৭৮৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন, যেমনি ভাবে শিক্ষা দিতেন আমাদেরকে কুরআনের সূরা।
৭৮৭ সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ কামিল আল জাহদারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আল উমাবী (রহঃ) হিত্তান ইবনু আবদুল্লাহ আর রুকাশী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একবার) আমি আবূ মূসা (রাঃ) -এর সাথে এক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি তখন তাশালূদের বৈঠকে ছিলেন তখন মুসল্লীদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি বলে উঠল, (সালাত (নামায/নামাজ) নেকী ও যাকাতের সাথে ফরয করা হয়েছে)। হিত্তান বলেন, আবূ মূসা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন এবং সালাম ফিরালেন তখন বললেন , তোমাদের মধ্যে এই ধরনের কথা কে বলেছে? সবাই চুপ করে রইল। তিনি আবার বললেন , এরকম কথা তোমাদের কে বলেছে? সবাই চুপ রইল। তিনি বললেন , “হিত্তান! তুমিই হয়ত এরকম বলেছ। হিত্তান বললেন , আমি এটা বলিনি আমি ভয় করলাম যে, তিনি একারনে হয়তোবা আমার ওপর রাগ হয়ে যাবেন। অতঃপর এক ব্যাক্তি বলল, আমি এটা বলেছি। আর আমি এটা কেবলমাত্র সাওয়াব হাসিলের জন্য বলেছি”। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন , তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) কি বলবে তা জাননা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে খুতবা দিলেন। তিনি আমাদের করনীয় কাজ সমূহ পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করলেন এবং আমাদেরকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিয়ে বললেন যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন তোমাদের কাতার সোজা করবে। তারপর তোমাদের একজন ইমামত করবে। ইমাম যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরা সবাই তাকবীর বলবে আর যখন ‘গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওলাদদল্লীন’ বলবে তখন তোমরা আমীন বলবে এতে আল্লাহ তোমাদের দুই দু’আ কবুল করবেন। অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে। কারন ইমামকে তোমাদের আগে রুকুতে যেতে হয় এবং তোমাদের আগে উঠতে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , ফলে তোমাদের এই দেরি ইমাম কতৃক কিছু আগে তাকবীর ও রুকু করার সময়ের গণ্য হবে। আর যখন ইমাম ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’ আল্লাহ তাআলা তোমাদের দুয়া শুনেন। কারন তিনি তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র যবানিতে বলেছেন যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শুনেন। আর যখন ইমাম তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে। কারণ ইমামকে তোমাদের আগে তাকবীর বলতে হয় এবং তোমাদের কিছু আগে উঠতে হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , ফলে তোমাদের এই দেরী ইমাম কতৃক কিছু আগে তাকবীর ও রুকু করার সময়ের সমান গণ্য হবে। ইমাম যখন তাশাহুদে বসবে তখন সর্বপ্রথমে তোমরা বলবে, ‘আত্তাহিয়াতু তাইয়্যেবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহি আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হু। ’
৭৮৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) আরো একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “ইমাম যখন কিরা’আত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে”। আবূ কামিল (রহঃ) আবূ আওয়ানা (রহঃ) থেকে যে রিওয়াত করেছেন সেটিতে ছাড়া আর কারো বর্ণনায় এ বাক্যটি নেই যে, কারণ আল্লাহ তাআলা তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যবানীতে বলেছেন, যে তার প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন। ”ইসহাক (ইমাম মূসলিমের ছাত্র) বলেন, আবূ নযর-এর ভাগিনা আবূ বাকর (রহঃ) এ রিওয়াত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বললেন , তুমি কি কাউকে সুলায়মান থেকে বেশী স্মরণশক্তি সম্পন্ন বলে মনে কর? আবূ বাকর (রহঃ) বললেন , তাহলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর হাদীস? অর্থাৎ ইমাম যখন কিরা’আত পড়ে তখন তোমরা চুপ থাক” (এটার কি হবে?) তিনি বললেন , এটা আমার কাছে সহীহ। আবূ বাকর বললেন , তাহলে সেটা আপনি এখানে কেন আনলেন না? তিনি জবাব দিলেন, আমি সব সহীহ হাদীসই এখানে আনছি না বরং এখানে কেবল সেগুলোই আনছি যার উপর মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
৭৮৯ কাতাদা থেকে উল্লেখিত সনদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় জানিয়ে দিলেন- যে আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন।
৭৯০ আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সা’দ ইবনু উবাদার (রাঃ) বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বশীর ইবনু সা‘দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কী ভাবে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করব? রাবী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আপসোস করে বললাম, সে যদি তাঁকে এ প্রশ্ন না করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেলন- তোমরা বল “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। আর সালাম দেয়ার নিয়ম তোমাদের জানা আছে। দুরূদ শরীফের অর্থঃ “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ কর- যে ভাবে তুমি ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বরকত ও প্রাচুর্য দান কর- যে ভাবে তুমি ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখেরাতে বরকত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। “
৭৯১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক বার কাবা ইবনু উজরা (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন , আমি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না? একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন! আমরা বললাম, (ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আপনাকে কিভাবে সালাম দিতে হয় তাতো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দুরুদ আমরা কি ভাবে পাঠ করব? তিনি বললেন , তোমরা বলবে “আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
৭৯২ যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব এর সুত্রে হাকাম থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি ‘আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না’ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি।
৭৯৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাককার-এর সুত্রে হাকাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি তার রিওয়াতে শুধু “ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিন” এর উল্লেখ করেছেন। “আল্লাহুমা” শব্দটির উল্লেখ করেন নি।
৭৯৪ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) – আবূ হুমায়দ আস সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার উপর দুরুদ পাঠ করব? তিনি বললেন , তোমরা বলবে, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা (ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ) ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। ’’
৭৯৫ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন।
৭৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুল বলেছেন, ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদা’ বলেন, তোমরা তখন আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ” বলবে। কেননা, যার বাক্য ফিরিশতাদের বাক্যের অনুরুপ হবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে।
৭৯৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা, যে ব্যাক্তি ফিরিস্তাদের আমীন বলার সাথে একই সময় আমীন বলবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন।
৭৯৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিকট শুনেছি এই বলে মালিকের হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু শিহাবের কথা উল্লেখ করেননি।
৮০০ হারামাল ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আমীন বলবে ও ফিরিস্তারা আকাশের উপর আমীন বলবে এবং উভয়টি একই সময় হবে, যখন তার অতীতের সমস্ত শোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা আল কানাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমীন বলবে এবং ফিরিস্তারা আকাশের ওপর আমীন বলবেন, আর উভয়টি একই সময় উচ্চারিত হবে তখন তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০২ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্তরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮০৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন পাঠকারী (ইমাম) যখন বলবেন এবং তাঁর পিছনের ব্যাক্তি (মুকতাদী) আমীন বলবে, এবং তার বাক্য আকাশ বাসীর (ফিরিশতার) বাক্যর অনুরুপ একই সময় উচ্চারিত হবে, তখন তার পূর্ববর্তী সমুদয় পাপমোচন হয়ে যাবে।
৮০৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার দরুণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের দক্ষিন পাশ ছিলে যায়। আমি তাকে সেবা করতে গেলাম। ইতিমধ্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হল। আমাদের নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও বসে বসে তার পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম, সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পর বললেন , অনুসরণ করার জন্য ইমাম মনোনীত হন। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বল, তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা কর, তিনি যখন উঠেন, তোমরাও উঠবে তিনি যখন তোমরা তখন বল। আর যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তোমরাও তখন বসেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৮০৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্ব পিঠ হতে পড়ে গিয়ে তাঁর ডান পাজরে আঘাত প্রাপ্ত হলেন। অতঃপর বসে বসে আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন! হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরোক্ত রুপ বর্ণনা করেন।
৮০৬ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া হতে পড়ে গেলেন। তাঁর ডানপাশ আঘাত প্রাপ্ত হলো। তারপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি একটি কথা বেশী বলেছেন তাহল, ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮০৭ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সাওয়ার হলেন। তারপর পড়ে গিয়ে তার ডান পার্শ্বদেশ যখম হলো। এরপর তিনি উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ননা করেন। এতেও বলা হয়েছে যে, “ইমাম যখন দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৮০৮ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং দক্ষিণ পার্শ্বদেশ যখম প্রাপ্ত হয়। তারপর তিনি পূর্বানুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। কিন্তু এতে ইউনুস ও মালিকের বর্ণিত অতিরিক্ত কথাটি নেই।
৮০৯ আবূ বাকর ইবনু আল শায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঘাত প্রাপ্ত হলে তার শুশ্রষার জন্য সাহাবায়ে কিরাম আগমন করলেন। তাদেরকে নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিছুলোক দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলে তিনি তাদেরকে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে ইশারা করলেন। তাই তারা বসে পড়লেন। সালাত (নামায/নামাজ) সমাপনান্তে বললেন , ইমাম নিয়োগ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১০ আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) … হিশাম ইবনু উরওয়া থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮১১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগ্নবস্হায় আমরা তাঁর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) (মুকাব্বির হিসাবে) লোকদেরকে তাঁর তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে দেখলেন যে, আমরা দাঁড়িয়ে। তিনি আমাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন আমরা বসলাম। এবং আমরা তার পেছনে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। অতঃপর সালামান্তে তিনি বললেন , এই মুহূর্তে যে কাজটি করেছ, তা পারস্য ও রোমবাসীদের অনুরুপ। তারা তাদের সমরাটের সন্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সমরাট থাকে বসে। তোমরা এরুপ কখনো করবে না। বরং সর্বদা স্বীয় ইমামের অনুসরণ করবে। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে আদায় করবে।
৮১২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বাকর তার পিছনে ছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলতেন আবূ বকরও আমাদেরকে শোনাবার জন্য তাকবীর বলতেন। তারপর লায়স কত্রিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮১৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অনুসরণের জন্য ইমাম মনোনীত হন। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে।। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও সকলে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮১৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু খাশরাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিবলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তালিম দিতেন এবং বলতেন যে, তোমরা ইমামের থেকে আগে বেড়ে যেওনা তাকবীর বললে তোমরা তাকবীর বলবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে।
৮১৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এই সনদের বর্ণনায় এরপর বলার কথাটি নেই। তবে এই কথাটি বেশী আছে, তোমরা ইমামের আগে (মাথা) উঠাবে না।
৮১৭ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) অবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম হলেন ঢালস্বরুপ। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। পৃথিবীবাসীর (মুসল্লির) কথা যখন আকাশবাঁসীর (ফিরিস্তার) কথার অনুরুপ হবে, তখন তার বিগত সমস্ত শোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮১৮ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা! হয় অনুসরণের উদ্দেশ্যে। তিনি তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। তিনি দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও দাড়িয়ে আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১৯ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট উপস্হিত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুখের বৃত্তান্ত জানতে চাইলাম। তিনি বললেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগাক্রান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন লোকজন কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না। তারা আপনার প্রতীক্ষায় আছে। তিনি বললেন – আমার জন্য গামলায় পানি রাখ। আমি পানি দিলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমনোদ্যত হলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। চেতনা পেয়ে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষা করছে তিনি বললেন , গামলায় পানি দাও আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমণৌদ্যত হলে পূনরায় সংজ্ঞাহারা হলেন। সংজ্ঞা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় রয়েছে তিনি বললেন , গামলায় পানি দাও। আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন এবং গমনোদ্যত হয়ে বেহুশ হয়ে পড়লেন। অতঃপর হুশ হলে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে। আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের অপেক্ষায় মসজিদে বসেছিল। অবশেষে তিনি লোক মারফত আবূ বকর (রাঃ) কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলে পাঠালেন। লোকটি আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আপনাকে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করার আদেশ করেছেন। আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাই উমার (রাঃ) – কে বললেন হে উমার! তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দাও। উমার (রাঃ) বললেন জী না, আপনই এই কাজের অধিক যোগ্য ব্যাক্তি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, সুতরাং আবূ বকর (রাঃ) ঐ কয়েক দিন সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করেন। ইত্যবসরে একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিত সুস্হবোধ করলেন। এবং দুই জন মানুষের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে মসজিদে গেলেন। ঐ দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। রাসুলূল্লাহ মসজিদে পৌছে দেখেন যে, আবূ বকর (রাঃ) ইমাম হিসাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। তিনি তাঁকে দেখে পিছে হাটতে চাইলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাঁকে পিছে হটতে বারণ করলেন। এবং স্বীয় সঙ্গী দু’জনকে বললেন যে, আমাকে আবূ বকর (রাঃ) – এর পাশে বসিয়ে দাও তারা তাঁকে আবূ বকর (রাঃ) –এর পাশে বসিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করতে লাগলেন। লোকজন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে আবূ বকর (রাঃ) – এর অনুসরণ করছিল। উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) – এর নিকট পোছে বললাম, আমি কি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগকালীন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আয়িশা (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হাদীসটি শোনাবো? তিনি বললেন , বর্ণনা কর। আমি তাঁকে হাদীসটি শোনালাম, তিনি পুরা হাদীসের কোথাও আপত্তি করলেন না বটে, কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আব্বাস (রাঃ) -এর সাথে অপর ব্যাক্তিটির নাম কি তোমার কাছে আয়িশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম, জী না! তিনি বললেন , সেই ব্যাক্তি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২০ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মায়মুনা (রাঃ) -এর গৃহে অসুস্হ হয়ে পড়েন! অতঃপর তাঁর সকল সহধর্মিনীর নিকট আয়িশা (রাঃ) এর গৃহে পরিচর্যা লাভের আকাংখা প্রকাশ করেন। তারা সকলেই অমুমতি প্রকাশ করলেন। একদিন তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হলেন। তার একখানা হাত ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাঁধের উপর এবং অপর হাত খানা অন্য এক ব্যাক্তির কাঁধের উপর ছিল। দুর্বলতার জন্য মাটিতে পা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে চলছিলেন উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীসটি ইবনু আববাস (রহঃ) কে শোনালে তিনি বললেন , আয়িশা (রাঃ) অন্য যে ব্যাক্তির নাম উচ্চারণ করেননি, তাঁর নাম কি তুমি জানো? তিনি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২১ আব্দুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পড়লেন এবং ক্রমেই পীড়া বৃদ্ধি পেয়ে চলল, তখন তিনি তার স্ত্রীগণের নিকট অনুমতি চাইলেন আমার গৃহে পরিচর্যা লাভের নিমিত্ত। তারা সকলেই তাঁকে অনুমতি প্রদান করলেন। (ঐ সময়ে একদিন) তিনি দুই ব্যাক্তির সহায়তায় মাটিতে দুই পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন। একজন আব্বাস ইবনু আবাদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং আরেকজন অন্য ব্যাক্তি। উবায়দুল্লাহ বলেন, আয়িশা (রাঃ) -এর এই বর্ণনাটি আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে অবহিত করলে তিনি বললেন , আয়িশা (রাঃ) যে ব্যাক্তির নাম উচচারণ করেননি, তার নাম কি তুমি জানো? আমি বললাম , না! তিনি বললেন , তিনি আলী (রাঃ)।
৮২২ আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার পিতা আবূ বাকর (রাঃ) -কে সালাত পড়াবার আদেশ দিলেন তখন আমি এই নির্দেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাঁকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলাম। আমার এই পূনঃপূনঃ অনুরোধ এই কারণে ছিল আমার মনে এই ধারণার উদ্রেক যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্হানে যে দাঁড়াবে (ইমামত করবে) লোকেরা তাকে সর্বদা ভালবাসবে, বরং আমার ধারণা হল যে, তারপর যে ব্যাক্তি তাঁর স্হানে দাঁড়িয়ে ইমামত করবে লোকেরা তাকে অপয়া বলবে, তাই আমি চেয়েছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই নির্দেশ আবূ বকর (রাঃ) হতে অন্যত্র সরে যাক।
৮২৩ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পীড়িত অবস্হায়) আমার গৃহে প্রবেশ করে পরে বললেন , আবূ বকরকে আদেশ (শুনিয়ে) দাও, সে যেন লোকদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয় ব্যাক্তি। তিনি যখন কুরআন পাঠ করেন, তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারেননা। আপনি যদি আবূ বকর (রাঃ) -কে ব্যতীত অন্য কাউকে আদেশ করতেন (তবে উত্তম হতো)। আল্লাহর কসম! আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল, যেন লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্হানে সর্বপ্রথম দাড়ানোর কারনে তাঁর সম্পর্কে অপয়া হবার ধারণা করতে না পারে। তাই আমি এ ব্যাপারে তাঁর সাথে দু-তিন বার অনুরোধের পীড়াপীড়ি করেছি। এরপরেও তিনি বললেন , আবূ বাকর যেন লোকের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করে। (এবং বললেন)তোমরা হচ্ছ ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গিনীদের অনুরুপ।
৮২৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্হ অবস্হায় বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামতের জন্য ডাকতে আসলেন। তিনি বললেন , যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি নিতান্ত নরম মানুষ। তিনি আপনার স্হানে দাড়িয়ে লোকদেরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতে পারবেন না। আপনি উমারকে আদেশ করলে উত্তম হবে। কিন্তু তিনি তবুও বললেন , যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। এরপর আমি হাফসাকে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবূ বকর অতি নরম লোক। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষকে কুরআন শোনাতে পারবেন না! আপনি উমারকে আদেশ করলে ভাল হবে। হাফসা তাঁকে তাই বললেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গিনীদের ন্যায়। যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। শেষ পর্যন্ত লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) -কে নির্দেশ শোনালেন এবং তিনি লোকদের ইমামত করলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করার এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্হবোধ করলেন। তিনি দুই জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মসজিদে প্রবেশ করলে তাঁর আগমন শব্দ পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পিছনে সরে আসার উপক্রম করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাকে তাঁর স্থানে দন্ডায়মান থাকতে বললেন এবং নিজে এসে আবূ বকর (রাঃ) -এর বামপাশে বসে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দন্দায়মান অবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করছিলেন। আর অন্য মুসল্লীগণ আবূ বকর (রাঃ) -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করছিল।
৮২৫ মিনজাব ইবনুল হারিস আত তামীমী (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আঁমাশ (রহঃ) থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এদের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু রোগে যখন আক্রান্ত হলেন। ইবনু মুসহিরের হাদীসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে এসে তার ( আবূ বকর (রাঃ) -এর) পাশে বসিয়ে দেওয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ইমামতি কর ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। ঈসার হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পাশে থেকে লোকদের কে শোনাচ্ছিলেন।
৮২৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) এবং ইবনু নুমায়র (রহঃ)-… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত অবস্হায় আবূ বকর (রাঃ) -কে ইমামতি করার নির্দেশ দান করেন। সে মতে তিনি ইমামতি করতে থাকেন। রাবী উরওয়া (রহঃ) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্হ্য বোধ করলে মসজিদে গমন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পশ্চাতে সরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারায় তাঁর স্হানে থাকতে বললেন এবং নিজে তাঁর বরাবর পাশে বসে পড়লেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ইমামতিতে আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং অন্য মুসল্লীগণ আবূ বকরের ইমামতিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৮২৭ আমর আন নাকিদ (রহঃ), হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুরোগ শয্যায় শায়িতাবস্হায় আবূ বকর (রাঃ) তাদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করতে থাকেন। এভাবে যখন সোমবার দিন সকলে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কক্ষের পর্দা উত্তোলন করে দাঁড়ানো অবস্হায় আমাদের দিকে তাকালেন। এবং তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল স্বর্ণ পাতার ন্যায় জ্বল জ্বল করছিল তিনি আনন্দে হেসে উঠলেন। এদিকে আমরাও সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই তাঁর আগমন লক্ষ্য করে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। আবূ বকর (রাঃ) মনে করলেন যে, সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হচ্ছেন। তাই পিছনে সরে আসতে উদ্যত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন কর। অতঃপর তিনি তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে দরজার পর্দা ফেলে দিলেন। এবং ঐ দিনই তিনি ইন্তেকাল করেন। আমর আন নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শেষ বারের মত দেখেছিলাম যখন তিনি সোমবার দিন হূজরার পর্দা উত্তোলন করে ছিলেন। এবং এ প্রসঙ্গে রাবী সালিহ কতৃক বর্ণিত হাদীসটি অধিক পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ।
৮২৮ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন সোমবার হল, তারপর উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮২৯ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তিন দিন যাবত বের হননি। (তিন দিনের পরের ঘটনা) এক সালাত (নামায/নামাজ) ইকামত দেয়া হল। আবূ বকর (রাঃ) সামনে অগ্রসর হবেন ইত্যবসরে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা উত্তোলন করলেন। আমরা তাঁর চেহারা মুবারক অবলোকন করলাম তাকে এমন দেখা যাচ্ছিল যে, সেরুপ অপূর্ব দৃশ্য আগে আর আমরা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। তিনি হাতের ইশারায় আবূ বাকর (রাঃ) -কে সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। এরপর আর তিনি বের হতে পারেননি, ওফাত পর্যন্ত।
৮৩০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পরলেন। তার পীড়া বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিনি বললেন , আবূ বকরকে নির্দেশ শুনিয়ে দাও যেন সে লোকদের ইমামতি করে। আয়িশা (রাঃ) বললেন , ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর হচ্ছেন নরম মানুষ। তিনি আপনার স্হানে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে পারবেননা। তবু তিনি বললেন, যাও আবূ বকরকেই ইমামতি করতে বল। তোমরা হচ্ছো ইউসুফের সঙ্গিনীদের অনুরূপ। এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আবূ বকর (রাঃ) ‘ই লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করেন।
৮৩১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … সাহল ইবনু সারীদ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে তাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসার কাজে গমন করলেন। ইত্যবসরে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত উপস্হিত হলে মু’আযযিন (আযান দিয়ে) আবূ বকর (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে বললেন , আপনি কি ইমামত করবেন? আমি ইকামত বলছি। আবূ বকর (রাঃ) বললেন -হ্যা। আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিক হতে আগমন করেন এবং মানুষের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কাতারে শরীক হলেন। মুকতাদীগণ তালি বাজাতে লাগলেন। কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে অন্য কোন দিকে মনোযোগ দিতেন না। যখন মুকতাদীগণ অধিক তালি বাজাতে লাগলে তখন তিনি ফিরে তাকালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেয়ে পিছনে হটতে চাইলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন , তুমি তোমার জায়গায় দণ্ডায়মান থাক। আবূ বকর (রাঃ) দুই হাত উপরে তুলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক তাকে এই ইমামতির মর্যাদা প্রদানে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করলেন এবং পশ্চাতে হটে এসে মুকতাদীর কাতারে দাঁড়ালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ বকর! তুমি তোমার জায়গায় দন্ডায়মান থাকলে না কেন? আমি তো তোমাকে দণ্ডায়মান থাকতেই বলেছিলাম। আবূ বকর (রাঃ) বললেন , আবূ কুহাফার পূত্রের এমন দুঃসাহস নেই যে, আল্লাহর রাসূল -এর সামনে ইমামত করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুকতাদীদের প্রতি তাকিয়ে) বললেন , কী ব্যাপার! তোমরা এত তালি বাজালে কেন? তোমাদের কারো সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখন তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’বলবে, তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’ বললেই ইমাম তোমাদের প্রতি মনোযোগ দিবেন। তালি বাজানোর বিধান তো নারীদের জন্য।
৮৩২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুহায়ল ইবনু মা’দ (রাঃ) থেকে মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন। এবং এদের উভয়ের বর্ণনায় আছে, আবূ বাকর (রাঃ) তার হস্তদয় উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং পিছনে সরে এসে সারিতে দন্ডায়মান হলেন।
৮৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ আস- সাঈদী (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে একটি আপোস-মীমাংসার কাজে গমন করেন। সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে পিছনের কাতার সমুহ ভেদ করে সামনের কাতারে এসে দাঁড়ালেন এবং . আবূ বকর (রাঃ) পাশ্চাৎ দিকে হটে আসলেন।
৮৩৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও হাসান ইবনু আলী আল হূলওয়ানী (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করে ছিলেন। মুগীরা (রাঃ) বলেন, একদিন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে (উক্ত তাবূক নামক স্হানে) রাসূলল্লাহ ইস্তেঞ্জা করার জন্য রওয়ানা হলেন আমি পানির পাত্র নিয়ে তার সঙ্গে গেলাম। যখন তিনি আমার নিকট ফিরে আসলেন আমি তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। প্রথমে তিনবার হাত ধৌত করলেন, অতঃপর মুখমন্ডল। তারপর তাঁর জুব্বার আস্তিন হাতের উপর দিকে উঠাতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন ছোট ছিল বিধায় তিনি জুব্বার নিচের দিকদিয়ে হাত ঢূকায় দুই হাত জুব্বার নিচ দিয়ে বের করে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর উভয় মোজার উপর মাসহ করলেন। তারপর রওয়ানা হলেন এবং আমিও তার সাথে রওয়ানা হলাম। ফিরে এসে দেখতে পেলাম, লোকজন আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) -কে আগে বাড়িয়ে দিয়েছে, তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক’আত পেলেন এবং লোকজনের সাথে দ্বিতীয় রাক’আত আদায় করলেন। আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) যখন সালাম ফিরালেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ন করার নিমিত্তে দাঁড়ালেন। মুসলমানগণ এই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে গেলেন এবং বেশী করে তাসবীহ পড়তে নাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তাদের লক্ষ্য করে বললেন তোমরা উত্তম কাজ করেছ। সঠিক ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন।
৮৩৫ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আল হূলয়ানী (রহঃ) হামযা ইবনুল মুগীরা (রাঃ) থেকে আব্বাদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস সদৃশ বর্ণনা করেছেন। মুগীরা (রহঃ) বলেন, আমি অব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) -কে পিছনে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তাকে ছেড়ে দাও।
৮৩৬ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আমর আন নাকিদ (রহঃ), হরুন ইবনু মারুফ (রহঃ), ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পুরুষের জন্য ‘সূবহানাল্লাহ’ এবং নারীদের জন্য হল হাত চাপড়ানো। হারামালা তাঁর বর্ণনায় আরও বলেন যে, ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেছেন, আমি কতিপয় আলেমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে সুবহানাল্লাহ, বলতে এবং ইশারা করতে দেখেছি।
৮৩৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) – এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৩৮ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তার বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে ‘সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে’ কথাটি।
৮৩৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল-হামদাযী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শেষে বললেন , হে অমূক! তোমার সালাত (নামায/নামাজ) উত্তমরূপে আদায় করবে না কি? মুসুল্লী যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে কি রুপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তা কি সে লক্ষ্য করে না? অথচ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কারী তার নিজের কল্যাণের জন্যই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেমন সামনের দিকে দেখি, তেমনি পিছনের দিকেও দেখি।
৮৪০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি দেখছ-আমার কিবলা এই দিকে? অথচ আল্লাহর শপথ! আমার নিকট তোমাদের রুকু এবং সিজদা কোনটাই গোপন নয়। আমি তোমাদেরকে পিছন হতেও দেখছি।
৮৪১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু এবং সিজদা যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তখন তা আমি পিছন দিক হতে (রাবী কখনও বলেছেন)আমি পৃষ্ঠদেশের দিক হতে দেখে থাকি।
৮৪২ আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু-সিজদা গুলো পুর্ণরুপে আদায় করবে। আল্লাহর কসম! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তা আমি পিছন দিক হতে অবলোকন করি।
৮৪৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের অব্যবহিত পরই আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন , হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালাম করার ক্ষেত্রে আমার হতে আগে বাড়িও না। কারণ আমি সম্মুখ ও পাশ্চাৎ হতে তোমাদেরকে দেখতে পাই। অতঃপর বললেন , যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ করে বলছি, আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পেলে হাসতে কম, কাঁদতে বেশী। সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কী দেখেছেন? তিনি বললেন , আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছি।
৮৪৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), ইবনু নুমায়র (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে ‘সালাম ফিরাবে না’ কথাটি নেই।
৮৪৫ খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ), আবূ রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেন, ইমামের পূর্বে সিজদা হতে যে ব্যাক্তি মাথা তুলবে, তার ভয় করা উচিত, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথার মত করে দিবেন।
৮৪৬ আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পূর্বে সিজদা হতে তার শির উত্তোলন করবে, সে কি নিশঙ্ক হয়ে গেল যে, আল্লাহ তার চেহারাকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
৮৪৭ আব্দুর রহমান ইবনু সালাম আল-জুমাহী (রহঃ), আবদুর-এরাহমান ইবনুুর রাবী ইবনু মুসলিম (রহঃ), উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও আবূ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রুপ বর্ণনা করেছেন। তবে আর-এরাবী ইবনু মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তার মুখমন্ডলকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
৮৪৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আকাশের দিকে তাকায়, অবশ্যই তাদের তা হতে বিরত হওয়া উচিত, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি আর না আসতে পারে।
৮৪৯ আবূ তাহির ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে দু’আর সময় আকাশের দিকে না তাকায় অন্যথায় তার দৃস্টি শক্তি নষ্ট করে দেয়া হবে।
৮৫০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করে বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মত হাত উঠাচ্ছ কেন? সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে নিশ্চল থাকবে (কোন অঙ্গ ভঙ্গি করবে না) একবার তিনি আমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত দেখে বললেন , তোমরা পৃথক পৃথক রয়েছ কেন? আরেকবার আমাদের সামনে এসে বললেন , তোমরা এমন ভাবে কাতার বাধবে, যেমনিভবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতার বন্দী হয়ে থাকেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কীভাবে কাতার বন্দী হন? তিনি বললেন , ফেরেশতাগণ সামনের কাতারগুলী আগে পূর্ণ করেন এবং গায়ে গায়ে লেগে দাড়ান।
৮৫১ আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮৫২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ডান-বাম দিকে হাত ইশারা করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’- বলতাম। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ নাড়ার মত হাত ইশারা করছ কেন? (সালাত (নামায/নামাজ)-এর বৈঠকে) উরুর ওপর হাত রেখে ডানে-বামে অবস্হিত তোমাদের ভাইকে (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতূল্লাহ’ বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
৮৫৩ জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছি। আমরা যখন সালাম ফিরাতাম, হাত দিয়ে ইশারা করে বলতাম, ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বললেনঃ কি ব্যাপার তোমরা হাত দিয়ে ইশারা করছ- মনে হচ্ছে যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। তোমাদের কেউ যখন সালাম করে সে যেন তার সাথের লোকের দিকে ফিরে সালাম করে এবং হাত দিয়ে ইশারা না করে।
৮৫৪ আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়াও এবং আগে-পেছে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়বে। বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যাক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এই গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যাক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ-বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে।
৮৫৫ ইবনু উয়ানায়া হতে এই সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৮৫৬ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী লোকেরা আমার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তাদের কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা দাঁড়াবে। তিনি একথা তিনবার বলেছেন। সাবধান! তোমরা (মসজিদে) বাজারের মত শোরগোল করবে না।
৮৫৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা রাখবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্ণতার অংশ।
৮৫৮ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার পূরা কর। কেননা আমি তোমাদেরকে পিছন হতে দেখে থাকি।
৮৫৯ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রহঃ) কতিপয় হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের নিকট বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কাতার সোজা রাখবে। কেননা, কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
৮৬০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের কাতার সমূহ সোজা রাখবে। নতুবা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।
৮৬১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … নুমান ইবনু বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতার গুলোকে এমন ভাবে সোজা করে দিতেন যেন তিনি ধনুকের কাঠিটি সোজা করছেন। যতক্ষন না তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা বিষয়টি তাঁর নিকট হতে যথাযথ ভাবে বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন (হুজরা হতে) বের হয়ে এসে স্বীয় স্হানে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবেন, এমন সময় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যাক্তির বক্ষদেশ কাতার হতে আগে বেড়ে আছে। তখন বললেন , আল্লাহর বান্দ্বারা! তোমরা তোমাদের কাতার অবশ্যই সোজা কর। নতুবা আল্লাহ তোমাদের বিভেদ করে দিবেন।
৮৬২ হাসান ইবনুুর-এরাবী (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ আওইয়ানাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে আপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৬৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানত এবং লটারী ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকত তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারী করত এবং যদি (যূহরের সালাত (নামায/নামাজ) আওওয়াল ওয়াক্তে গমনের – ফযিলত যদি তারা জানত তবে তারা এর জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের মাহাত্ম্য যদি অবহিত হত, তবে তারা ঐ দুটির জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগমন করত।
৮৬৪ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাগণকে পিছনের কাতারে দেখে- বললেন , আমার নিকটে আস এবং প্রথম কাতার পূরা কর, অতঃপর দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করবে। এমন কিছু লোক সবসময় থাকবে যারা সালাত (নামায/নামাজ) পিছনে আল্লাহ তাদেরকে (নিজ রহমত হতেও) পিছনে রাখবেন।
৮৬৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল-এরহমান আদ-দারিমী (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল-খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে দেখলেন, তারা মসজিদের পেছনের দিকে আছেন। তারপর উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮৬৬ ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু হারব আন-ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (অথবা বলেছেন তারা) যদি প্রথম কাতারের মাহাত্ম্য অবগত হতো, তবে লটারী করতে হতো। ইবনু হারব (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, প্রথম কাতারে লটারী করা ছাড়া কেউ যেতে পারত না।
৮৬৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার। আর স্ত্রী লোকদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার (যা পুরুষের কাতার হতে দুরে থাকে), এবং সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার (যদি পুরুষদের কাতারের নিকটে হয়)।
৮৬৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৬৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি তহবন্দ খাটো হবার দরুন মানুষকে বালকের ন্যায় তাদের তহবন্দ গলায় বেঁধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তখন জনৈক ব্যাক্তি বলল, হে নারী সমাজ! পুরুষরা তাদের শির উত্তোলন না করা পর্যন্ত তোমরাও সিজদা হতে শির উত্তোলন করবে না।
৮৭০ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো ন্ত্রী মসজিদে যেতে চাইলে তাকে নিষেধ করবে না।
৮৭১ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের স্ত্রী লোকগণ মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিবে না। রাবী (সালেম) বলেন, বিলাল ইবনু আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব। রাবী (সালেম) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) তার দিকে ফিরে অকথ্য ভাষায় তাকে তিরস্কার করলেন। আমি তাকে এর পূর্বে কখনো এভাবে তিরস্কার করতে শুনিনি। তিনি আরো বললেন, আমি তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছঃ আল্লাহর শপথ! আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব।
৮৭২ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিওনা।
৮৭৩ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মহিলারা মসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও।
৮৭৪ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদেরকে রাতের বেলা, মসজিদে যেতে বাধা দিওনা। আবদুল্লাহ ইবনু উমারের এক ছেলে (বিলাল) বলল, আমরা তাদেরকে বের হতে দিবনা। কেননা লোকেরা একাকে ফ্যাসা’দর রূপ দিবে। বারী বলেন, ইবনু উমার তার বুকে ঘুষি মেরে বললেন, আমি বলছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তুমি বলছ আমরা তাদেরকে (বাইরে যেতে) ছেড়ে দিব না!
৮৭৫ এই সনদে আ’মাশ থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৮৭৬ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকদের রাতে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে। তখন ওয়াকিদ নামক তার এক পূত্র বলল যে, তারা সেখানে গিয়ে প্রতারণা করবে। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) তার বুকে হাত মেরে বললেন, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি বলছ, তাদেরকে যেতে দিবে না?
৮৭৭ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকগণকে রাতে মসজিদে পূণ্য লাভের জন্য যেতে নিষেধ করনা, যখন তারা তার অনুমতি চাইবে। তখন বিলাল বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তাদেরকে নিষেধ করব। একথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি বলছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তুমি বলছ, আমরা তাদেরকে নিষেধ করব!
৮৭৮ হারুন ইবনু সাঈদ আন-আয়লী (রহঃ) যায়নাব আস-সাকাফিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন স্ত্রীলোক যখন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে (মসজিদে) আসে, তখন সে যেন ঐ রাতে খোশবূ না লাগায়।
৮৭৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী মসজিদে আসবে, সে যেন খোশবূ ষ্পর্শও না করে।
৮৮০ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী কোন সুগন্ধির ধুনি নিবে, সে যেন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের সাথে শরীক না হয়।
৮৮১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) … আমরা বিনতে আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্ত্রী আয়িশা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এ যুগের নারীদের আচরণের অবস্হা দেখতেন, তবে তাদেরকে বনী ইসরাঈলী নারীদের ন্যায় মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন। রাবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বনী ইসরাঈলী নারীদেরকে কি মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন , হ্যা।
৮৮২ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, আমর আন-নাকিদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি অনুরুপ সনদে হাদীস বর্ণনা
৮৮৩ আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনুুস-সাব্বাহ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ তায়াআলার পবিত্র বাণী সম্পর্কে বলেন, (মধ্যম আওয়াজে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ সম্বলিত) এই আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আত্মগোপন করে অবস্থান করছিলেন। রাসূলল্লাহ তার সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় উচ্চস্বরে কিরা-আত পাঠ করতেন। মুশরিকরা তা শ্রবণ করে কুরআন, তা অবতীর্ণকারী এবং যার প্রতি তা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে গালি-গালাজ করত। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন আপনি সালাত (নামায/নামাজ) এত উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করবেন না যে, মুশরিকগণ তা শুনতে পায় এবং এত নিম্নস্বরেও পাঠ করবেন না যে, আপনার সাহাবীগণ তা শুনতে না পায়। বরং মধ্যম আওয়াজে কুরআন পাঠ করুন।
৮৮৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশ দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে (অথাৎ অধিক উচ্চস্বরেও দুআ করবে না, আর অধিক নিম্নস্বরেও দুআ করবে না)
৮৮৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৮৮৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ সম্পর্কে বলেন, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ওহী নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসতেন তখন তার জিব্বা ও ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন এতে তাঁর ভীষণ কষ্ট হতো। এবং এ তার চেহার দেখে চিনা যেত। অতঃপর আল্লাহ তা’য়াআলা নাযিল করলেন, অর্থাৎ তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্তে ওন্ঠ সঞ্চালন করবেন না, আপনার সীনায় আমিই তো সংরক্ষন করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন। আপনি মনোযোগ সহকারে শুনূন এবং চুপ থাকুন। আপনার যবানে পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। রাবী বলেন এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আগমণ করতেন তখনঁ মাথা নত করে করে থাকতেন এবং জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্গমন করলে তিনি আল্লাহর অঙ্গীকার মুতাবিক হুবহু তা আবৃত্তি করতেন।
৮৮৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন, কুরআন নাযিলের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্ত ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন। এতে তাঁর অত্যধিক কষ্ট হতো। (রাবী বলেন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রহঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন আমি সেরুপ ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করব। সাঈদ বলেন, যে ভাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ) ম্বীয় ওষ্ট নাড়াচ্ছিলেন, আমিও তদ্রূপ ওষ্ট নাড়াচ্ছি এরপর তার ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়াআলা এই আয়াত নাযিল করলেন: আপনার সীনায় তা সংরক্ষণ করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন। “আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। এরপর তা আপনার দ্বারা পাঠ করানোর দায়িত্ত আমারই”। রাবী বলেন, এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ওহীসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করতেন, তখন তা নীরবে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন এবং জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্গমন করলে পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু তা আবৃতি করতেন।
৮৮৮ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বীনদের নিকট কুরআন পাঠ করেন নি এবং তাদের দেখেন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীর সঙ্গে উকায বাজারে গমন করেন তখন শয়তানদের জন্য আকাশের সংবাদ সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তানদের উপর অগ্নিশিখা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। তাই একদল শয়তান তাদের নিকট গিয়ে বলল, যে, আকাশের খবরাখবর জ্ঞাত হওয়া আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং আমাদের উপর আগুনের শিখা বর্ষিত হচ্ছে। তারা বলল, নিশ্চয়ই কোন নতূন ঘটনা ঘটে থাকবে। তোমরা দুনিয়ার পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত খোজ নিয়ে দেখ, কি কারণে আমাদের নিকট আকাশের খবর আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তারা দুনিয়ার পূর্ব-পশ্চিম ঘূরে বেড়াতে লাগল। তাদের কিছু সংখ্যক লোক তেহামার পথে উকায বাজারে গমন করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ‘নাখল’- নামক স্হানে স্বীয় সাহাবীগণ সহ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ছিলেন। তারা (জ্বীন সম্প্রদায়) যখন কুরআন পাঠ শুনল, তখন তাতে মনোনিবেশ করল এবং বলল আকাশের খবরাখবর বন্ধ হওয়ার কারণ একমাত্র এটাই এরপর তারা তাদের কাওমের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমাদের কাওম। আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সত্য পথ-নির্দেশক। আমরা তাতে বিশ্বাস স্হাপন করেছি এবং এবং আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এর উপর (এ ওহী) –অবতীর্ণ করেন- বলুন: আমার প্রতি ওহী নযিল হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল শুনেছে -।
৮৮৯ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলকামাকে জিজ্ঞাসা করলাম জ্বীন-এরজনী -(অর্থাৎ যে রাত্রিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জ্বীনদের সহিত সাক্ষাৎ হয়েছিল) তে কি ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বললেন , আমি ইবনু মাসঊদ (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেছি, জ্বীন-এরজনী –তে কি তোমাদের মধ্য হতে কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিল? তিনি বললেন , না! কিন্তু একরাত্রি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। এবং তাঁকে পর্বতের উপত্যকা ও ঘাঁটিসমূহে খোঁজাখুজি করলাম। আমরা ভাবলাম জ্বীনেরা তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে কিংবা শুপ্ত ঘাতক তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা রাত্রটি দ্বারুন উদ্বেগে কাটালাম। ভোরবেলা আমরা (দেখলাম যে,) তিনি হিরা (জাবাল-ই-নূর পর্বত, যা মক্কা ও মীনার মধ্যস্হলে অবস্হিত) পর্বতের দিক হতে আসছেন। রাবী বলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনাকে আমরা হারিয়ে বহু খোঁজাথুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। ফলে দারুন উদ্বেগের মধ্যে আমরা রাত কাটিয়েছিা তিনি বললেন , জ্বীনদের একজন প্রতিনিধি আমাকে নেওয়ার জন্য এসেছিল। আমি তার সঙ্গে গেলাম এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করলাম। এরপর তারা আমাকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেল এবং তাদের নিদর্শন ও তাদের আগুনের নিদর্শনগুলো দেখাল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করল। তিনি বললেন , যে সমস্ত প্রাণী আল্লাহর নামে যবেহ হবে, তাদের হাড্ডি তোমাদের খাদ্য। তোমাদের হস্তগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা গোস্তে পরিণত হয়ে যাবে, এবং সকল উষ্ট্রের বিষ্ঠা তোমাদের জীব জন্তুর খাদ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমরা ঐ দুটি জিনিস (অস্হি ও উষ্ট্রের বিষ্ঠা) দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে না। কেননা, ওগুলো তোমাদের ভাই (জ্বীন ও তাদের জানোয়ার) দের খাদ্য।
৮৯০ আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) দাঊদ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে পর্যন্ত আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। শাবী বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট তাদের খাদ্যের জন্য গ্রার্থনা করেছিল এবং তারা ছিল জাযীরার অধিবাসী।
৮৯১ আবূ বাবর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পর্যন্ত বর্ণনা করেন। পরের অংশ তিনি বর্ণনা করেন নি।
৮৯২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জ্বীন-এরজনী-তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু আমার বাসনা জাগে যে, আহা! সেদিন যদি আমি তাঁর সঙ্গে থাকতাম।
৮৯৩ সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ আল জারমী ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … মা’ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন আমি মাসরূককে জিজ্ঞাসা করেছি যে রাতে জ্বীনেরা এসে কুরআন শ্রবণ করল সে রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কে তাদের উপস্হিতি সংবাদ দিয়েছিল? তিনি বলেন, আমাকে তোমার পিতা অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, তাঁকে জ্বীনের উপস্হিতি একটি বৃক্ষ সংবাদ দিয়েছিল।
৮৯৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আল আনাযী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও কখনও আমরা আয়াত শুনতে পেতাম। আর যুহারের প্রথম রাকআত সূরা ফতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত খাট করতেন। অনুরুপ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)ও।
৮৯৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও আরও একটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও আয়াত আমাদেরকে শোনাতেন। আর শেষের দু রাকআতে শুধু-সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।
৮৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিয়াম (দাঁড়ান)-এর পরিমাপ করতাম। যুহরের প্রথম দুই রাকআতে তাঁর কিয়াম, আলিফ লা-ম মীম তানযীল আস-সিজদাহ পাঠের সময়ের পরিমাণ হত। আর শেষ দুই রাকআতে তার অর্ধেক পরিমাণ। আসরের প্রথম দুই রাকআত যুহুরের শেষ দু-রাকআতের পরিমাণ দাড়াতেন এবং আসরের শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ এবং আবূ বাকর (রাঃ) তার রিওয়ায়াতে সূরা আলিফ লা-ম মীম তানযীল-এর উল্লেখ করেন নি, বরং ত্রিশ আয়াত পরিমাণ বলেছেন।
৮৯৭ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দুই রাআতের প্রত্যেক রাকআতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ কিরা’আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকাআত পনের আয়াত পরিমাণ। অথবা বলেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। এবং আসরের প্রথম দুই রাকআতের প্রত্যেক রাকআতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরা-আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ।
৮৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, কুফাবাসিগণ সা’দের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে উমার ইবনুল খাত্তাবের নিকট অভিযোগ করল। উমার (রাঃ) তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি আগমন করলে উমার তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে কুফা বাসীদের অভিযোগের কথা অবহিত করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন , আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতই তাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাকি। তাতে একটুকুও ক্রটি করিনা। আমি প্রথম দুই রাকআত লম্বা করি এবং শেষের দুই রাকআত সংক্ষেপে আদায় করে থাকি। তখন উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন , হে আবূ ইসহাক! তোমার নিকট হতে এটাই আশা করা যায়।
৮৯৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল মালিক উমায়র (রাঃ) সুত্রে এই সনদে বর্ণনা করেন।
৯০০ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) সা’দ (রাঃ) কে বললেন , মানুষ তোমার বিরুদ্ধে সকল ব্যাপারে অভিযোগ করছে এমন কি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারেও। সা’দ (রাঃ) বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করার ক্ষেত্রে মোটেই কসুর করি না। উমার (রাঃ) বললেন , তোমার থেকে এটাই আশা করা যায়। অথবা বললেন , তোমার সম্পর্কে আমার এই রূপই ধারণা।
৯০১ আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। অবশ্য তিনি কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ (রাঃ) বললেন, আরব বেদূঈনগণ আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিবে।
৯০২ দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। অতঃপর কোনও আগমনকারী ‘বাকী’ নামক স্হানে গমন করত এবং তার প্রয়োজন সেরে পরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে ফিরে আসত। তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিরা’আত) দীর্ঘ করার কারণে প্রথম রাকআতেই থাকতেন।
৯০৩ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) কাযা’আহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট আগমন করলাম। তখন তাঁর নিকট অনেক লোকের সমাগম ছিল। তারা চলে গেলে আমি বললাম, এরা যা জিজ্ঞাসা করেছে, আমি আপনার নিকট তা জিজ্ঞাসা করব না, বরং আমি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সার্গীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। তিনি বললেন, এতে তোমার কোনও ফায়দা নেই (কেননা, তুমি ঐরূপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সক্ষম হবে না) তিনি (কাযা’আহ) পূনরায় তাই জিজ্ঞাস করলেন। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। তারপর আমাদের মধ্য হতে কেউ ‘বাকী’ পর্যন্ত যেত এবং (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন সেরে নিজ গৃহে এসে উযূ (ওজু/অজু/অযু) বানাত। অতঃপর মসজিদে ফিরে যেত, তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক’আতেই থাকতেন।
৯০৪ হারূন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সূরা মু’মিনূন শুরু করলেন। যখন মূসা ও হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অথবা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামের উল্লেখিত আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাশি আসল। তিনি রুকুতে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনুুস সাইব (রাঃ) তখন উপস্থিত ছিলেন। আব্দুর রাযযাকের রিওয়ায়াতে আছে, তিনি কিরা’আত বন্ধ করে দিলেন এবং রুকুতে গেলেন।
৯০৫ যুহায়র ইবনু হারব, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) । আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তাকভীর পাঠ করতে শুনেছেন।
৯০৬ আবূ কামিল আল-জাহদারী, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) কুতুবা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি যখন সূরা কাফ তিলাওয়াত শুরু করে আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন (রাবী বলেন) আমি আয়াতটি বারবার আবৃত্তি করতে লাগলাম।
৯০৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কুতবা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সমুন্নত খেজুর গাছ যাতে আছে গুচ্ছ খেজুর (সূরা ক্বাফ, ৫০:১০) পড়তে শুনেছি।
৯০৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) যিয়াদ ইবনু ইলাকা-এর চাচার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )প্রথম রাক’আতে এই আয়াত পড়লেন এবং কখনও বলেছেন, সূরা ‘ক্বাফ’ (পড়েছেন)।
৯০৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা পড়তেন। তাঁর অন্যান্য সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত হত।
৯১০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি সিমাক সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করতেন ঐ সকল লোকের মত (দীর্ঘ করে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালতে কিংবা তৎসদৃশ (সুরা সমূহ) পড়তেন।
৯১১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) পড়তেন এবং আসরের সালাত (নামায/নামাজ)ও অনুরুপ সূরা এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) তার চেয়েও দীর্ঘ সুরা পড়তেন।
৯১২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) তদপেক্ষা দীর্ঘ সূরা পাঠ করতেন।
৯১৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) ষাট হতে একশ’ আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৪ আবূ কুরায়র (রহঃ) আবূ বারযা আন-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) ষাট হতে একশ, আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উম্মল ফযল বিনত হারিস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে সূরা পাঠ করতে শুনে বললেন, হে আমার পুত্র! তুমি এই সূরাটি পাঠ করে আমাকে ম্মরণ করিয়ে দিলে যে , এটি এমন এক সূরা যা আমি সর্বশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতে শুনেছি।
৯১৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) যুহরি (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন। কিন্তু সাহিল কর্তুক বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত এই কথাটি আছে, এরপর ওফাত পর্যন্ত তিনি আর কোনও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি।
৯১৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি।
৯১৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন।
৯১৯ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ছিলেন। তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং এক রাকআতে সূরাটি পাঠ করেন।
৯২০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি তাতে সূরা পাঠ করলেন।
৯২১ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতে শুনেছি। আমি তার থেকে অধিক সুন্দর আওয়াজ কারও কাছে শুনিনি।
৯২২ মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ফিরে আসতেন এবং তার নিজ লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করতেন। এক রাতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর স্বীয় লোকদের কাছে আসলেন। এবং তাদের ইমামত করলেন। এতে তিনি সূরা বাকারা পড়া শুরু করেন। এতে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে সালাম ফিরাল এবং একাকী সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে চলে গেল। লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি মুনাফিক হয়ে গিয়েছ? সে বলল, না আল্লাহর কসম আমি মুনাফিক নই। আমি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাব এবং তাকে একথা জানাব। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসল এবং বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো দিনে উট দিয়ে পানি সেচের কাজ করি। আর মু’আয (রাঃ) আপনার সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আসেন এবং সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করেন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুা’আযের প্রতি ফিরলেন এবং বললেন, হে মু’আয তুমি কি ফেৎনা সৃষ্টি কারী? তুমি এই সূরা পাঠ করবে। সুফিয়ান বলেন, আমি আমরকে বললাম, আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, পাঠ করবে। আমর (রাঃ) বললেন এমনই।
৯২৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু’আয ইবনু জাবাল আল-আনসারী (রাঃ) তাঁর লোকজনদের নিয়ে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন এবং তা খুবই দীর্ঘ করেন। আমাদের মধ্যে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। মু’আযকে এ বিষয়ে অবগত করা হল। তখন বললেন, ঐ ব্যাক্তি মুনাফিক! এই খবর ঐ ব্যাক্তির নিকট পৌছল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেল এবং মু’আযের উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয (রাঃ)-কে বললেন, হে মু’আয তুমি ফিতনা সৃষ্টি কারী হতে চাও? তুমি যখন সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করবে, তখন পাঠ করবে।
৯২৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ম্বীয় লোকদের নিকট আসতেন এবং তাদের নিয়ে সেই সালাত (নামায/নামাজ)ই ইমামতি করতেন।
৯২৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূর রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর স্বীয় কাওমের মসজিদে এসে তাদেরকে নিয়ে সেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৯২৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মাসঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করে বলল, আমি অমুক ব্যাক্তির কারণে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আসছি না। কেননা, সে আমাদের নিয়ে (সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘ করে। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নসীহত করার ক্ষেত্রে কখনও এত অধিক রাগান্বিত হতে দেখি নি, যতটা দেখলাম সে দিন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা (দ্বীন সম্পর্কে) ঘৃণা তৈরি করেছে। তোমাদের যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, সে যেন সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করে। কেননা, তার পিছনে বৃদ্ধ, দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত (মানুষ) থাকে।
৯২৭ আবূ বকর ইবনু শায়বা, ইবনু নুমায়র ও ইবনু আবূ আমর (রহঃ) ইসমাঈল সুত্রে উপরোক্ত সনদে হুশায়মের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৯২৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যখন তোমাদের মধ্যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, তখন (সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা, তাদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল, ও রুগ্ন, লোক থাকে। আর যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন যেভাবে মন চায় তা আদায় করবে।
৯২৯ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রহঃ) আমাদের নিকট মুহাম্মাদুর বাসূলূল্লাহ -এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাবী আরও বলেন, তার মধ্যে একটি এই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সংক্ষিপ্ত ভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। কেননা, তাদের মধ্যে বৃদ্ধ ও দুর্বল (লোক) থাকে। আর যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন যত ইচ্ছা তা আদায় করবে।
৯৩০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা, লোকদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন ও অভাবী (মানুষ) থাকে।
৯৩১ আব্দুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনুল লাইস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এই সনদে) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রুগ্ন এর স্থলে বৃদ্ধ বলেছেন।
৯৩২ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল-আস আস-সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, তুমি তোমার কাওমের ইমামত করবে। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এই ব্যাপারে ভয় পাই। তিনি বললেন, আমার কাছে আস। এবং আমাকে তাঁর সামনে বসালেন। অতঃপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। এরপর বললেন, ফিরে বস এবং আমার পিঠের ওপর দুই কাঁধের মাঝে তার হাত রাখলেন। অতঃপর বললেন, নিজ কাওমের ইমামত কর। আর যে কেউ তার কাওমের ইমামত করবে, সে যেন তার সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করে। কেননা, তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, রুগ্ন, দুর্বল এবং এমন লোকও রয়েছে যার কোন প্রয়োজন আছে। অবশ্য যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সে যেরুপ ইচ্ছা করতে পারে।
৯৩৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল আস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে শেষ উপদেশ দিয়েছিলেন তা হচ্ছে, যখন তুমি তোমার কাওমের ইমামত করবে, তখন তাদের সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করবে।
৯৩৪ খালাফ ইবনু হিশাম ও আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সংক্ষেপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন কিন্তু তা হতো পূর্ণাঙ্গ।
১৪৩৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম। রাত যখন শেষ হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকট বর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকটবর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য এমন একটি কাঙ্খিত বস্তু যার তুলনা হয় না। তারপর সূর্য কিরণ ছাড়া আমাদের কেউ জাগাতে পারেনি। পরে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সহ সালম ইবনু যারীরের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেনা উক্ত হাদীসে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, উমর (রাঃ) জেগে উঠে লোকদের অবস্হা দেখলেন। তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী এবং খুবই শক্তিশালী। তারপর তিনি উচচঃস্বরে তাক্ববীর দিতে লাগলেন। তাঁর শব্দের উচ্চ সূরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তাঁর জাগার পর লোকেরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে নানা অভিযোগ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন ক্ষতি নেই, এই স্হান ত্যাগ কর পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৯৩৯ হামিদ ইবনু উমার আল-বাকরাবী ও আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আল-জাহদারী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) গতীর ভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। অতএব, তাঁর কিয়াম (সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ান), রুকু, রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ান, অতঃপর সিজদা এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বসা অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদা এবং সালাম ও (মূসা ল্লীদের দিকে) ফিরে বসার মধ্যবতী বৈঠক-এই সবগুলোকে প্রায়ই সমান সমান পেয়েছি।
৯৪০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) আল হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আশ’আসের শাসন কালে জনৈক ব্যাক্তি যার নাম তিনি উল্লেখ করেছিলেন কুফা বাসীদের উপর তার আধিপত্য স্হাপন করেছিল। আবূ উবায়দা ইবনু আবদুল্লাহ কে সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করতে নির্দেশ দিলেন। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কালে তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন আমার এ দু’আটি পাঠ করা পরিমাণ সময় পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতেন। (হেআল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমান ও যমীন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণ-তা ছাড়াও যত টূকু আপনি ইচ্ছা করেন। হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আপনি যা দান করবেন তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি যা রোধ করবেন তা দান করারও কেউ নেই। এবং কোনও সম্পদশালী কেই তার সস্পদ আপনার শাস্তি থেকে বাচাতে পারবে না। ) হাকাম বলেন, আমি একথা আব্দুর-এরাহমান ইবনু আবূ লায়লার নিকট বললাম। তিনি বললেন, আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুকু এবং রুকু হতে দাঁড়ান, তারপর সিজদা এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময় এ সকল প্রায়ই সমান সমান হত। শুবা (রহঃ) বলেন, আমি আমর ইবনু মুররা’র সাথে এ হাদীস নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, আমি আব্দুর-এরাহমান ইবনু আবূ লায়লাকে দেখেছি, তার সালাত (নামায/নামাজ) এরুপ ছিল না।
৯৪১ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আল-হাকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাতার ইবনু নাজিয়া যখন কুফার উপর আধিপত্য স্হাপন করলেন তখন আবূ উবায়দাকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করলেন।
৯৪২ খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিয়ে ঐরুপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে ক্রটি করব না, যে রুপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে আমাদেরকে নিয়ে রাবী বলেন, আমি আনাসকে কিছু কাজ করতে দেখতাম, তোমাদেরকে তা করতে দেখিনা, তিনি যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা ভাবে দাড়িয়ে যেতেন, এমনকি কেউ কেউ মনে করত যে, তিনি (হয়ত) ভুলে গেছেন। প্রথম সিজদা থেকে মাথা তুলেও এরুপ বসে যেতেন যে, কেউ কেউ মনে করত, তিনি (হয়ত) ভূলে গেছেন।
৯৪৩ আবূ বাকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)কে পূর্ণরুপে আদায় করা সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত সালাত (নামায/নামাজ) আমি আর কারও পিছনে আদায় করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকন সমূহ প্রায় সমান সমান হত। আবূ বকরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর (রুকন সমূহ) ও প্রায় সমান সমান হত। যখন ওমর (রাঃ)-এর যামানা আসল, তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘ করলেন। রাসূলল্লাহ যখন বলতেন, তখন এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, আমরা মনে করতাম সম্ভবত তিনি বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন। তারপর সিজদা করতেন এবং দুই সিজদার মাঝে এত দীর্ঘ সময় বসে থাকতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি সম্ভবত বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন।
৯৪৪ আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) আমার নিকট বলেছেন, তিনি অসত্য বলেন নি। তাঁরা (সাহাবায়ে কিরাম) রাসূলল্লাহ -এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন ‘রুকু” থেকে মাথা তুলতেন, তখন তার কপাল মাটিতে না রাখা পর্যন্ত আমাদের কাউকে পিঠ ঝুকাতে দেখিনি। অতঃপর তার পিছনের সবাই সিজদায় চলে যেতেন।
৯৪৫ আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ আল-বাহিলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) আমার নিকট বলেছেন এবং তিনি অসত্য বলেন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন – বলতেন, আমাদের মধ্যে কেউ পিঠ ঝুকাতনা যে পর্যন্ত না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় যেতেন। (তিনি সিজদায় তারপর আমরা সিজদায় যেতেন)।
৯৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর-এরহমান ইবনু সাহম আনতাকী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন, তাঁরাও রুকু করতেন। যখন তিনি রুকু হতে মাথা উঠাতেন এবং বলতেন। বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন তখন আমরা দাড়িয়ে থাকতাম। তারপর যখন তাকে মাটির উপর কপাল রাখতে দেখতাম, তখন আমরাও তার অনুসরণ করতাম।
৯৪৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়) আমাদের এ নিয়ম ছিল আমরা যতক্ষন পর্যন্ত তাঁকে সিজদা করতে না দেখতাম, ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুঁকাত না।
৯৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু সাহম আল আনতাকী (রহঃ) বাড়া ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন, তারাও রুকু করতেন। যখন তিনি রুকু হতে মাথা উঠাতেন এবং সামিয়াল্লা হুলিমান হামিদাহ বলতেন, তখন আমরা দাড়িয়ে থাকতাম। তারপর যখন তাকে মাটির উপর কপাল রাখতে দেখতাম, তখন আমরাও তাঁর অনুসরণ করতাম।
৯৪৯। যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) বাড়া (ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (সালাত আদায়ে) আমাদের নিয়ম ছিল আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সিজদা করতে না দেখতাম, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুকাত না।
৯৫০। মুহরিয ইবনু আবূ আওন (রহঃ) আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে ফজরের সালাত আদায় করলাম। তখন তাকে পড়তে শুনলাম, অর্থাৎ “আমি শপথ করি পশ্চাঁদপসরণকারী নক্ষত্রের, যা প্রত্যাগমন করে ও অদৃশ্য হয়। (সূরা আত-তাকবীরঃ ১৫-১৬) এবং তিনি পূর্ণভাবে সিজদায় না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুকাত না।
৯৫১। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে পিঠ উঠাতেন, তখন বলতেন, অর্থাৎ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ, আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ, মিলাসসামাওয়াতি ওয়া মিল আরদি ওয়া মিল —- (অর্থাৎ প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ্ শুনেন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! সকল প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমানপূর্ণ ও যমিনপূর্ণ এবং পূর্ণতা ছাড়াও যা আপনি ইচ্ছা করেন)
৯৫২ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে ‘ওয়াসখ” শব্দের স্হলে ‘দ্বারান, উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইয়াযীদের বর্ণনায় ‘ওয়াসাখ’- শব্দের স্হলে “দানাস’ বলা হয়েছে।
৯৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর-এরাহমান আদ-দারিমী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন বলতেনঃ
৯৫৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন এই দুআ পড়তেন :
৯৫৫ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পর্যন্ত বর্ণিত আছে এই রিওয়ায়াতে (বর্ণিত দু’আর) পরবর্তী অংশের উল্লেখ নাই।
৯৫৬ সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মৃত্যু রোগে আক্রান্ত অবস্হায় হুজ্বরা শরীফের) পর্দা খুলে দিলেন। তখন লোকেরা আবূ বকরের পিছনে কাতার বন্দী অবস্হায় ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোকগণ। এখন আর সত্য স্বপ্ন ব্যতীত নবূওয়াতের সুসংবাদ দেওয়ার কিছু অবশিষ্ট থাকবে না (কেননা, আমার উপর নবুওয়াতের সমাপ্তি ঘটেছে) মুসলমানগণ তা দেখবে। তোমরা সাবধান হও। আমাকে রুকূ এবং সিজদায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তোমরা রুকুতে তোমাদের রবের মহত্ত বর্ণনা করবে। এবং সিজদায় অধিক পরিমাণ দুআ পড়বে। তোমাদের দু’আ কবুল হওয়ার উপযুক্ত হাদীসটি আবূ বকর বলে বর্ণনা করেছেন।
৯৫৭ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ইন্তেকাল করেছেন, সে রোগে আক্রান্ত অবস্হায় আমাদের উদ্দেশ্যে পর্দা খূলে দিলেন। তাঁর মাথায় তখন পট্টি বাধা ছিল। এরপর বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছয়েছি? এরুপ তিন বার বললেন। বস্তুত আমার পরে নবুওয়াতের কোনও সুসংবাদ দান কারী থাকবে না। কিন্তু সত্য স্বপ্ন থেকে যাবে। নেক বান্দা তা দেখবে অথবা তাকে দেখানো হবে। তারপর রাবী সুফিয়ানের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৯৫৮ আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় (কুরআন) পড়তে নিষেধ করেছেন।
৯৫৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।
৯৬০ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন। আমি বলি না যে, তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
৯৬১ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার হাবীব আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন।
৯৬২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ঈসা ইবনু হাম্মাদ আল মিসরী, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ আল মুকাদ্দামী, হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু হুজর এবং হান্নাদ ইবনুুস সারী (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু করা কার্লীন কিরাআত পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। তারা সকলেই আলী (রাঃ) সুত্রে বলেছেন যে, তিনি আমাকে রুকু অবস্থায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন, কিন্তু সিজদায় কিরাআত পড়ার নিষেধ সম্পর্কে তারা তাদের রিওয়াতে কোন উল্লেখ করেননি। যে রুপ যুহুরী, যায়দ ইবনু আসলাম, ওয়ালীদ ইবনু কাসীর ও দাঊদ ইবনু কায়স উল্লেখ করেছেন।
৯৬৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে সিজদা অবস্হায় (কিরাআত পড়ার) কথার উল্লেখ নেই।
৯৬৪ আমর ইবনু আলী (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রুকুতে থাকাকালীন অবস্হায় কিরাআত পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সনদে আলীর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
৯৬৫ হারুন ইবনু মারূফ ও আমর ইবনু সাওওয়াদ (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সিজদার অবস্থায়ই বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব, তোমরা (সিজদায়) অধিক পরিমাণ দুআ পড়বে।
৯৬৬ আবূ তাহির ও ইউনূস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় (এ দু’আটি) পড়তেন – হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন। সল্প এবং অধিক, প্রথম এবং শেষ, প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য।
৯৬৭ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু এবং সিজদাসমূহে অধিকাংশ সময় এই দু’আটি পাঠ করতেন- তিনি কুরআনের উপর আমল করতেন।
৯৬৮ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্বে এই দুআটি পাঠ করতেন- আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি দেখছি যে আপনি নতূন নতুন বাক্য বলছেন? এ সব কি? তিনি বললেন আমার উম্মাতের মধ্যে আমার নিদর্শন রাখা হয়েছে। আমি যখন তা দেখি, তখন আমি এই বাক্যগুলো বলতে থাকি নাসর সূরার শেষ পর্যন্ত।
৯৬৯ মুহাষ্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর আমি লক্ষ্য করেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সালাত (নামায/নামাজ) পড়তেন, তখনই দুআ করতেন এবং বলতেন
৯৭০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এ দু’আ পড়তেন- আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আামি লক্ষ্য করছি যে, আপনি প্রায় দু’আটি পাঠ করে থাকেন। তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত আমাকে সংবাদ প্রদান করেছেন যে, আমি আমার উস্মাতের মধ্যে অচিরেই একটি নিদর্শন দেখব। তাই যখন আমি তা দেখছি, অধিক মাত্রায় পড়ছি। ঐ নিদর্শন সম্ভবত এই যে, অর্থাৎ মক্কা বিজয় এ কথা বলে তিনি সূরাটি শেষ অবধি পাঠ করলেন:
৯৭১ হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি রুকু’তে কি বলছ? তিনি বললেন, আমি বলছি। কেননা, ইবনু মুলায়কা আয়িশা (রাঃ) হতে আমর নিকট বর্ণনা করেনঃ আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাছে না পেয়ে মনে করলাম যে, সম্ভবত তিনি তাঁর অন্য কোন ন্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। আমি গোপনে তালাশ করলাম এবং (না পেয়ে) ফিরে এলাম। দেখলাম, তিনি রুকু কিংবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) সিজদায় আছেন এবং বলন আমি বললাম, আমার মা-বাপ আপনার জন্য (উৎসর্গিত) আমি এক ধারণায় ছিলাম আর আপনি অন্য কাজে মগ্ন আছেন।
৯৭২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিছানায় না পেয়ে (অন্ধকারে) হাতড়াতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাত খানি তাঁর পায়ের তালুতে গিয়ে লাগল। তিনি সিজদারত আছেন, পা দু-খানি খাড়া রয়েছে। তিনি বলছিলেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার অসন্তোষ থেকে তোমার সন্তোষের মাধ্যমে এবং তোমার আযাব হতে তোমার ক্ষমার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এবং আমি তোমার (শাস্তি) হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে সক্ষম নই। তুমি তেমনই যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছ।
৯৭৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু এবং সিজদায় এ দুআ পড়তেন;
৯৭৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৯৭৫ যুহায়র ইবনু হারব (রাঃ) মাঁদান ইবনু আবূ তালহা ইয়ামুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযাদকৃত গোলাম সাওবন (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি বললাম, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের সংবাদ দান করুন, যার উপর আমল করলে আল্লাহ আমাকে জানো্নতে দাখিল করাবেন কিংবা তিনি বললেন, আপনি আমাকে আল্লাহর একটি প্রিয়তম আমলের সংবাদ দিন। তিনি নীরব রইলেন। আমি আবার বললাম, তিনি এবারও কিছু বললেন না। অতঃপর আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক সিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করবে, তখন এ দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করে দিবেন। মা’দান বলেন, অতঃপর আবূদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তাঁর নিকটও আমি একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও সাওবান (রাঃ)-এর অনুরুপই বললেন।
৯৭৬ আল-হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) রাবী’আ ইবনু কা’ব আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রাত যাপন করি। আমি তার পানি এবং তার যা প্রয়োজন তা এগিয়ে দই। তখন তিনি আমাকে বললেন, চাও। আমি এ-ই চাই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি অধিক সিজদা দ্বারা তোমার নিজের ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে।
৯৭৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তার চুল ও কাপড় গুটানো নিষেধ করা হয়েছে। ইহা ইয়াহইয়ার বর্ণনা। আবূ রাবী- বলেন, সাতটি অঙ্গের উপর (সিজদা করতে আদেশ করা হয়েছে) এবং চুল ও কাপড় গুটাতে নিষেধ করা হয়েছে। (আর ঐ সাতটি অঙ্গ হচ্ছে) দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা এবং কপাল।
৯৭৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে এবং কাপড় ও চুল না গুটাতে।
৯৭৯ আমর আবূ-নাকিদ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাত (অঙ্গ)-এর উপর সিজদা করতে আদেশ করা হয়েছে এবং চুল ও কাপড় গুটাতে নিষেধ করা হয়েছে।
৯৮০ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি-কপাল, (বর্ণনা কারী বলেন) তিনি এই সময় তাঁর নাকের দিকে ইশারা করলেন, দুই হাত, দুই হাটূ এবং দুই পায়ের অগ্রভাগ। আর কাপড় ও চুল না গুটাতে।
৯৮১ আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ূলাহ বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাতটির উপর সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে। (সাতটি হল) কপাল ও নাক, দুই হাত, দুই হাটু এবং দুই পা।
৯৮২ আমর ইবনু সাওয়াদ আমিরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস কে দেখতে পেলেন যে, তিনি তার চুলগুলোকে পিছনে বেধে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তা খুলে দিলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ইবনু আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমার মাথার এবং আপনার (এ কর্মের) ব্যাপারটি কি? আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, এই ব্যাক্তির উদাহরণ (যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর অবস্হায় মাথার চুল বেধে রাখে) ঐ ব্যাক্তির মত যে তার হাত বাধা অবস্হায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে।
৯৮৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , তোমরা সিজদার সময় অংগসমূহ সঠিক রাখবে-কুকুরের মত দুই হাত দিবেনা।
৯৮৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব মুহাম্মাদ ইবনু জাফর এবং জাফর ইবনু খালিদ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তবে ইবনু জাফরের হাদীসে উক্ত হাদীসের – এর স্হলে – রয়েছে।
৯৮৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি সিজদা করবে, তখন তোমার দুই হাতের তালূ (ভূমিতে) রাখবে এবং দুই কনূই (ভূমি থেকে) উঠিয়ে রাখবে।
৯৮৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় (সিজদা) করতেন তখন তাঁর উভয় হাত পার্শ্বদেশ থেকে এতখানি পৃথক রাখতেন যে তার বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।
৯৮৭ আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আমর ইবনুল হারিস এবং লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) সুত্রে উভয়ই জাফর ইবনু রাবী’আ (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন তবে আমর ইবনু হারিসের বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত এমন ভাবে পৃথক করে রাখতেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। লায়সের বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত বগল থেকে এমন ভাবে পৃথক রাখতেন যে, আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।
৯৮৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন কোন মেসশাবক ইচ্ছা করলে তাঁর দুহাতের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারত।
৯৮৯ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত (পার্শ্বদেশ থেকে) এরুপ দুরে রাখতেন যে, তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা পিছন হতে দেখা যেত। এবং যখন বসতেন, তখন তাঁর বাম উরুর উপর শান্ত হয়ে বসতেন।
৯৯০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শব্দ গুলো আমরের, মায়মূনা বিনতুল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুবাহু পৃথক করে রাখতেন। যারা তাঁর পিছনে থাকতেন, তারা তাঁর বগলের উজ্জ্বল্য দেখতে পেতেন। ওয়াকী (রহঃ) বলেন, মায়মুনা (রাঃ) ঔজ্জ্বল্য দ্বারা শুভ্রতা বুঝিয়েছেন।
৯৯১ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শব্দ ইসহাকের, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -, তাকবীর দ্বারা সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন এবং সূরা ফাতিহা দ্বারা কিরা’আত আরম্ভ করতেন। যখন রুকু করতেন তখন তাঁর মাথা উঠিয়েও রাখতেন না, ঝুঁকিয়েও রাখতেন না; বরং মাঝামাঝি রাখতেন। আর যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না। আর যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা হয়ে না বসে (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতেন না। এবং প্রতি দু-রাক’আতে আততাহিয়্যাতু পড়তেন বাম পা বিছিয়ে রাখতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। শয়তানের মত পাছার উপর বসা থেকে নিষেধ করতেন। পূরুষকে তার দু’বাহু হিংস্র জন্তুর মত বিছিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি সালামের দ্বারা সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করতেন।
৯৯২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ তার সম্মুখে হাওদার পিছনের খাড়া কাঠের পরিমাণ কিছু স্হাপন করে, যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এরপর সেটির পিছন কেউ গেলে কোন পরোয়া করবে না।
৯৯৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম এবং আমাদের সম্মুখ দিয়ে পশুগুলো যাতায়াত করত আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমাদের কারও সম্মুখে হাওদার পিছনের কাঠ পরিমাণ কোনও কিছু থাকবে সেটির বহিরে দিয়ে কোন কিছুর যাতায়াত তার কোন ক্ষতি করবে না। ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেন, তার বাইরে দিয়ে ‘কোনও ব্যাক্তির’ যাতায়াত ক্ষতি করবে না।
৯৯৪ যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুসল্লীর সূতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, হাওদার পিছনের কাঠের পরিমাণ।
৯৯৫ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুকের যুদ্ধকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুসল্লীর সূতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, তা হাওদার পিছনের কাঠটির মত।
৯৯৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হতেন, তখন ক্ষুদ্র বর্শা সংগে নেয়ার জন্য আদেশ করতেন। তারপর তা তার সামনে স্থাপন করা হতো এবং তিনি সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর লোকেরা তার পিছনে থাকত। সফরেও তিনি এরূপ করতেন। এ থেকেই শাসকগনও তা গ্রহন করেছেন।
৯৯৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণীত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাঠি গেড়ে রাখতেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, পুতে রাখতেন। এবং সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ইবনু আবূ শায়বা বাড়িয়ে বলেন, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, তা হল ক্ষুদ্রাকৃতির বর্শা।
৯৯৮ আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাওয়ারীকে সামনে রেখে সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৯৯৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাওয়ারির দিকে ফিরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ইবনু নূমায়র (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
১০০০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম। তখন তিনি আবতাহ নামক স্হানে লাল চামড়ার তাবুতে অবস্হান করছিলেন। বিলাল (রাঃ) তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিয়ে বের হলেন, অতঃপর কেউ অবশিষ্ট পানি পেল আর কেউ অন্যের নিকট থেকে পানির ছিটা নিল। আবূ জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল চাঁদর গায়ে দিয়ে বের হলেন। আমি যেন এখনও তাঁর পায়ের গোছাদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। আমি এদিক-ওদিক মুখ ফিরিয়ে তাঁর অনুসরণ করলাম। বিলাল (রাঃ) যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ফিরালেন ও বললেনঃ বলার পর অগ্রভাগে লৌহযুক্ত ছোট যষ্টি (আনাযা) পুঁতে দেয়া হল। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং যুহরের দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁর সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর আসা-যাওয়া করছিল। তিনি তাদের বাধা দেননি। তারপর আসরের দু-রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরূপে মদিনায় পৌছা পর্যন্ত তিনি দুই দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।
১০০১ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আওন ইবনু আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে লাল চামড়ার তাবুতে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র অবশিষ্ট পানি বের করতে দেখলাম। আর দেখলাম লোকেরা ঐ পানির জন্য তাড়াহুড়া করছে। যে ঐ পানি পেল, সে তা তার গায়ে মাখল। আর যে তা পালনা সে তার সাথীর হাতের অদ্রতা থেকে কিছু নিল। তারপর দেখলাম একটি অগ্রভাগে লৌহযুক্ত যষ্ঠি বের করে গেড়ে দিলেন। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল ডোরা যুক্ত চাঁদর পরিধান করে তা উঠিয়ে বের হলেন। অতঃপর লোক জনকে নিয়ে যষ্ঠি সামনে রেখে দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর দেখলাম মানুষ ও জীবজন্তুকে বর্শার সম্মুখ দিয়ে চলা ফেরা করছে।
১০০২ ইসহাক ইবনু মানসূর, আবদ ইব হূমায়দ ও আল কাসিম ইবনু যাকারিয়া আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে মালিক ইবনু মিগওয়াল বর্ণিত হাদীসে আছে, যে, যখন দুপূর হলো, তখন বিলাল (রাঃ) বের হলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিলেন।
১০০৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশার (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপূর বেলা বাতহার দিকে বের হয়ে গেলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে দু-রাকআত যুহরের ও দু’রাকআত আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁর সামনে একটি বর্শা প্রোথিত ছিল। তার অপর দিক দিয়ে নারী ও গাধা যাতায়াত করছিল।
১০০৪ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) শুবা থেকে বর্ণিত যে, এ হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসের অনূরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আল-হাকওমের বর্ণনায় ‘লোকেরা তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি সংগ্রহ করতে লাগল’ কথাটি বেশি আছে।
১০০৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আমি গাধার উপর সাওয়ার হয়ে মীনার দিকে এলাম। আমি তখন যৌবনে উপনীত প্রায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন নিয়ে সেখানে সালাত (নামায/নামাজ)রত ছিলেন। আমি কাতারের সামনে এসে অবতরণ করলাম এবং গাধাটিকে চরবার জন্য ছেড়ে দিয়ে কাতারে প্রবেশ করলাম। এতে কেউই আমার উপর আপত্তি তোলেন নি।
১০০৬ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া উবায়াদূল্লহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন সে, তিনি গাধার উপর আরোহণ করে মীনার দিকে আসেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) উপলক্ষে লোকজনসহ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, গাধাটি কাতারের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করল। তারপর তা থেকে নামলেন এবং লোকদের সাথে কাতারে শামিল হলেন।
১০০৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আমর আন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
১০০৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ হুমায়দ (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এই রিওয়াতে মীনা ও আরাফাত কোনও উল্লেখ করেন নি। বরং বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)- কিংবা –মক্কা বিজয়- উল্লেখ করেছেন।
১০০৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তখন তার সম্মুখ দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না। বরং যথাসাধ্য তাকে বাধা দিবে। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা, সে একটি শয়তান।
১০১০ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) হুমায়দ ইবনু হীলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার এক জন সঙ্গী একটি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সহসা আবূ সালিহ আস-সাম্মান বলে উঠল, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট যা শুনেছি এবং দেখেছি, – তা এখন তোমার নিকট বলব। আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। একটি ‘সুতরা’ সামনে রেখে শুক্রবার দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। ইত্যবসরে আবূ মু’আয়ত গোত্রের একজন জওয়ান এসে উপস্থিত হলো এবং সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সাঈদ (রাঃ) তার বুকে হাত দিয়ে বাধা দিলেন। কিন্তু সে আবূ সাঈদ (রহঃ)-এর সম্মুখ ছাড়া অন্য কোনও পথ পালনা। তাই সে পূনরায় যেতে চাইল। আবূ সাঈদ (রাঃ) এবার আরও জোরে তার বুকে ধাক্কা দিলেন। এবার সে ছবির মত গেল এবং আবূ -সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট থেকে তিরস্কার পেল। তারপর লোকজন এসে ভিড় জমালে সে মদিনার গভর্ণর মারওয়ানের নিকট গিয়ে অভিযোগ দায়ের করল। আবূ সাঈদ (রাঃ) ও মারওয়ানের দরবারে প্রবেশ করলেন। তারপর মারওয়ান তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি ও আপনার ভাতিজার মধ্যে কি ঘটেছে? সেতো এসে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে আবূ সাঈদ (রাঃ) জওয়াব দিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মানুষকে আড়াল করবার নিমিত্ত সুতরা রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং কোনও ব্যাক্তি তার সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইবে, সে যেন তার বুকে হাত দিয়ে বাধা দেয়। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা সে একটি শয়তান।
১০১১ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে কাউকে তার সম্মুখ দিয়ে যেতে দিবে না। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা, তার সাথে একটি সহচর (শয়তান) রয়েছে।
১০১২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০১৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইহা (রহঃ) বুসর ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ)-এর নিকট এ কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, সালাত (নামায/নামাজ)রত ব্যাক্তির সম্মুখ দিয়ে গমন কারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে তিনি কী শুনেছেন। আবূ জুহাহাম (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি সালাত (নামায/নামাজ)রত ব্যাক্তির সম্মুখ দিয়ে গমনকারী ব্যাক্তি জানত যে, তার উপর কি পাপের বোঝা চেপেছে, তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকাও তার পক্ষে তা অপেক্ষা উত্তম হতো। আবূন-নাযর বলেন, আমি জানিনা, তিনি চল্লিশ দিন বলেছেন কিংবা মাস অথবা বছর।
১০১৪ আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ইবনু হায়্যান আল-আবদী (রহঃ) জুহায়ম আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা কয়েছেন।
১০১৫ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ-দাওরাকী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্হান এবং সুতরার মধ্যকার ব্যবধান এই পরিমাণ প্রশস্ত ছিল যে, একটি বকরী যেতে পারে।
১০১৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সালামা ইবনুল আকওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাসবীহ ও নফল সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মিসহাফ নামক স্হানে আসন গ্রহণ করতেন এবং বলতেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্হানটিতে আসন গ্রহণ করতেন। ঐ স্থানটি মিম্বার ও কিবলার মধ্যকার একটি যেতে পারে এই পরিমাণ ছিল।
১০১৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, সালামা (রাঃ) মিসহাফের নিকটে অবস্হিত খুটির পাশে সালাত (নামায/নামাজ)-এর আসন গ্রহণ করতেন। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, হে আবূ মুসলিম! আমি লক্ষ্য করছি, আপনি বরাবর এই খুঁটিটির নিকটেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্হান নির্বাচন করেন। তিনি জওয়াব দিলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এর নিকটেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
১০১৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ-সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে, তখন তার সম্মুখে হাওদার পিছনের কাণ্ঠ পরিমাণ কোনও বস্তু রেখে দিবে। যদি এরূপ কোনও বস্তু না থাকে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে গাধা স্ত্রীলোক ও কালো কুকুর গমন করলে তার সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যাবে। রাবী ইবনু সামিত বলেন, আমি বললাম, হে আবূ যার! গমন করলে তার সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যাবে। রাবী ইবনু সামিত বলেন, আমি বললাম, হে আবূ যার! লাল কুকুর ও হলুদ কুকুর থেকে কালো কুকুরকে পৃথক করার কারণ কি? তিনি জওয়াব দিলেন, হে ভাতিজা, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমার মত এই বিষয়টি জিজ্ঞাস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, কালো কুকুর একটি শয়তান।
১০১৯ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) হুমায়দ হিলাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইউনুস কর্তূক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০২০ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-মাখযুমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারী, গাধা ও কুকুর সম্মুখ দিয়ে গেলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যায়। তা রক্ষার উপায় হলো, মুসল্লীর সামনে হাওদার কাণ্ঠ পরিমাণ কোনও বস্তু রাখা।
১০২১ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আবূ-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি কিবলার দিকে তার সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতাম।
১০২২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) সষ্পূর্ণ আদায় করতেন, আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকতাম। যখন বিতর আদায় করতে ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগ্রত করতেন। আমিও তখন বিতর (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম।
১০২৩ আমর ইবনু আলী (রহঃ) উরওয়া ইবনুুয যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন সামনে দিয়ে কী অতিক্রম করলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়? আমরা বললাম, ন্ত্রীলোক ও গাধা। তিনি বললেন, স্ত্রীলোক একটি মন্দ প্রাণী? অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে খাকতাম আর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
১০২৪ আমর আবূ-নাকিদ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আল আসওয়েদি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)-এর সামনে আলোচনা হচ্ছিল যে, কুকুর গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে দিয়ে গেলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যায়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদের গাধা ও কুকুরের সমতুল্য গণ্য করছ? আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে তখন পাশে শুয়ে থাকতাম। যখন ওঠার প্রয়োজন হতে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে বসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কষ্ট দেয়া আমি অপছন্দ করতাম। আমি তখন পাশের পায়ের দিক দিয়ে সরে পড়তাম।
১০২৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা আমাদের কুকুর ও গাধার পর্যায় ভুক্ত করছ। অথচ আমি তখন পোশের উপর শুয়ে থাকতাম, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তখন পোশের মাঝখানে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন। তাঁকে কষ্ট দেওয়া আমার অপছন্দ হতো তাই আমি তখতপোশের পায়ের দিক দিয়ে লেপের নিচ থেকে সরে পড়তাম।
১০২৬ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম। অমার পা দু’টি তার কিবলার দিকে থাকতো। যখন সিজদা দিতেন তখন আমাকে ঠেলা দিতেন, আর আমি পা টেনে নিতাম। আর তিনি যখন দাড়িয়ে যেতেন আমি পা ছড়িয়ে দিতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন ঘরে বাতি থাকত না।
১০২৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি ঋতুমতী অবস্হায় তাঁর পাশে থাকতাম। কখনও সিজদা করতে তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেত।
১০২৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি ঋতূমতী অবস্থায় তার পাশে থাকতাম। আমি একটি চাঁদর গায় দিতাম, তার কিছু অংশ তাঁর গায়েও থাকত।
১০২৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি মাত্র কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুই কাপড় আছে?
১০৩০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০৩১ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাদের মধ্যে কেউ কি একটি কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুটি করে কাপড় রয়েছে?
১০৩২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তার কাঁধের উপর একাংশ থাকে না- এই ভাবে এক কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না।
১০৩৩ আবূ কুরায়ব (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার গৃহে এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি আর দুই প্রান্ত কাঁধের উপর রেখেছিলেন।
১০৩৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) উরুওয়া থেকে বর্নিত। তিনি এরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১০৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তার উভয় প্রান্ত তিনি বিপরীত দিকে দিয়ে ছিলেন।
১০৩৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি তার দু প্রান্ত দুই বিপরীত দিকে নিয়ে জড়িয়ে রেখে ছিলেন। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তাঁর বর্ণনায় দুই কাঁধের উপর কথাটি অতিরিক্ত বলেছেন।
১০৩৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে ‘তাওয়াশগুহ’ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
১০৩৮ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছে তবে ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় ‘আমি দেখেছি’ কথাটির স্হানে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করলাম কথাটি বলা হয়েছে।
১০৩৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ যূবায়র আল মাক্কী (রহঃ) বলেন, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। অথচ তাঁর নিকট একাধিক কাপড় ছিল। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ঐরুপ করতে দেখেছেন।
১০৪০ আমর আন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করলাম এবং তাঁকে দেখলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন ও তার উপর সিজদা করছেন। আরও দেখলাম, এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
১০৪১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আল আমাশ থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ কুরায়বের রিওয়ায়াতে কাপড়ের দুপ্রান্ত দুই কাঁধের উপরে রাখার কথা উল্লিখিত হয়েছে এবং আবূ বকর ও সুওয়ায়দের রিওয়ায়েতে তাওয়াশগুহ এর কথা বলা হয়েছে।
৭২২ খালাফ ইবনু হিশাম ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, . বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দগুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দ গুলো এক বার করে বলতে। ইয়াহইয়া তার হাদীসে ইবনু উলায়্যার মাধ্যমে এতটুকু যোগ করেন যে, আমি আইউব (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন , কদ কমাতিচ্ছলাহ শব্দ টি ছাড়া (এটি দু’বার বলবে) বাকী শব্দ গুলো এক বার করে বলবে।
৭২৩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একদা) সাহাবায়ে কিরাম কোন পরিচিত জিনিসের মাধ্যমে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়া সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করলেন। এ ব্যাপারে তারা আগুন জ্বালানো অথবা নাকুস (শঙ্খ) বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। শেষে . বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হল, আযানের শব্দগুলো কে দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দ গুলোকে এক বার করে বলতে।
৭২৪ মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) … খালিদ আল হাযযা থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত আছে যে, তখন লোকজন বেশী হয়ে গেল তখন তারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত জানিয়ে দেয়ার আলোচনা করল এরপর সাকাফীর হাদীস-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে উল্লেখ রয়েছে।
৭২৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আযানের শব্দ গুলো দু-বার করে বলতে এবং ইকামাতের শব্দগুলো এক বার করে বলতে।
৭২৬ আবূ গাসসান আল মিসমাঈ, মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ মাহযুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এই আযান শিখিয়ে ছিলেন “আল্লাহু আকবর” (আল্লাহ মহান); আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লালাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই); আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুল আল্লাহ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল); এরপর আবার বলবে। হাই আল-আস সালাহ দুই বার (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য এস) দুই বার, হাই আ-লাল ফালাহ (কল্যাণের দিকে এস) দুই বার। ইসহাক তার বর্ণনায় ও বাক্য দু’টি বর্ণনা করেছেন।
৭২৭ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দুই জন মু’আযযিন ছিল। বিলাল এবং দৃষ্টিহীন সাহাবী ইবনু উষ্মি মাকতূম।
৭২৮ ইবনু নুমায়র (রহঃ) … আয়িশা (রহঃ) সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭২৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ইবনু উম্মু মাকতূম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুমতিক্রমে আযান দিতেন। আর তিনি ছিলেন দৃস্টিহীন।
৭৩০ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ)-হিশাম এর সুত্রেও অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭৩১ যুহায়র ইবনু হারব (ব)… আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরে শক্রর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করতেন। আযান শোনার অপেক্ষা করতেন। আযান শুনতে পেলে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন। আযান শুনতে না পেলে আক্রমণ করতেন। এক বার তিনি কোন এক ব্যাক্তিকে বলতে শুলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তুমি ফিতরাত (দ্বীন ইসলাম)-এর উপর রয়েছ। এর পর সে ব্যাক্তি বলল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তুমি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে এলে। সাহাবায়ে কিরাম লোকটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখতে পেলেন যে, সে ছিল একজন ভেড়ার রাখাল।
৭৩২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা আযান শুনবে তখন মু-আযযিন যা বলে তাই বলবে।
৭৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু সালামা আল মুরাদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল কে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জ্বীনকে আযান দিতে শুনবে, তখন সে যা বলে তাই বলবে। তারপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ করবে। কারণ যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন। পরে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্হান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশাকরি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৭৩৪ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ওমর ইবনুল খাত্তাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন বলে তখন তোমাদের কেউ যদি বলল। তারপর মু-আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। অতঃপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। পরে মু’আযযিন যখন বলে, তখন সে বলল। এরপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল। তারপর মু’আযযিন যখন বলে, তখন সেও বলল-এসবই যদি সে বিশুদ্ধ অন্তরে বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৭৩৫ মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি মু-আযযিনের আযান শুনে নিম্নের দুঁআটি পাঠ করে তার শোনাহ মাফ করে দেয়া হয়ঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তিনি এক, কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি সন্তুষ্ট আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে এবং মুহাম্মাদ কে রাসুল হিসেবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে।
৭৩৬ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) তালহা ইবনু ইয়াহইয়ার চাচা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি (একবার) মু’আবিয়া (রহঃ) ইবনু আবূ সুফিয়ানের কাছে ছিলাম। মু’আযযিন এসে তাকে সালাত (নামায/নামাজ) এর জন্য ডাকল। মু’আবিয়া (রহঃ) বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মুয়াযযিনদের ঘাড় সকলের চেয়ে লম্বা হবে।
৭৩৭ ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) মুঅবিয়া (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
৭৩৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) . জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি যে, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন (মদিনা থেকে) রাওহা পর্যন্ত চলে যায়। সুলায়মান (আ’মাশ) বলেন, আমি রাবী আবূ সুফিয়ান কে (রাওহা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন , এ জায়গাটি মদিনা থেকে ছত্রিশ (৩৬) মাইল দুরে অবস্থিত।
৭৩৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বু ও আবূ কুরায়বের সুত্রে আ’মাশ থেকেও হাদীসটি বর্ণিত আছে।
৭৪০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, শয়তান যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান শোনে তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালায় যাতে সে আযানের শব্দ শুনতে না পায়। অতঃপর আযান যখন থেমে যায় তখন ফিরে এসে ওয়াসওসা (ধোঁকা)দেয়। তারপর যখন ইকামাত শোনে তখন আবার চলে যায় যাতে তার শব্দ সে শুনতে না পায়। অতঃপর যখন তা (ইকামাত)- শেষ হয় তখন ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা (ধোঁকা) দেয়।
৭৪১ আব্দুল হামীদ ইবনু বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু’আযযিন যখন আযান দেয় শয়তান তখন পেছন ফিরে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড় দেয়।
৭৪২ উমায়্যা ইবনু বিসতাম (রহঃ) সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বানূ হারিসা নামক গোত্রের কাছে পাঠালেন। আমার সাথে তখন আমাদেরই একটি গোলাম ছিল, বর্ণনান্তরে (তিনি বলেন) আমার এক জন সঙ্গী ছিল। অতঃপর একটি বাগানের প্রাচীর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাক দিল। তিনি বলেন, আমার সঙ্গী তখন প্রাচীরের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখল, কিন্তু কিছু দেখতে পালনা। পরে এ ঘটনা আমি আমার পিতার কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন , আমি যদি জানতাম যে, তুমি এরুপ অবস্হার সম্মূখীন হবে তাহলে তোমাকে আমি পাঠাতাম না। তুমি (ভবিষ্যতে) যখন এরুপ আওয়াজ শুনবে তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিবে। কারণ আমি আবূ হুরায়রাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পলায়ন করে।
৭৪৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পিছন ফিরে দৌড় দেয়, যাতে সে আযানের ধ্বনি শুনতে না পায়। আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে। আর যখন ইকামাতের তাকবীর বলা হয় তখন আবার পিছন দিকে ফিরে দৌড় দেয়। ইকামাত শেষ হলে ফিরে আসে এবং মানুষের অন্তরে ওয়াস ওয়াসা (ধোকা) দেয়। সে তাকে এমন সব জিনিসের কথা সরণ করিয়ে দেয় যা সে ইতিপূর্বে মনেও করেনি। ফলে সে কয় রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল- তা ঠিক মনে করতে পারে না।
৭৪৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে সেখানে বর্ণিত হয়েছে যে, ফলে সে কিভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল তা খেয়াল করতে পারে না।
৭৪৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী, সাঈদ ইবনু মানসুর, আবূ বাকর আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালিম-এর পিতা ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তা একেবারে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। আর রুকু করার এবং যখন রুকু থেকে উঠতেন (তখনো অনুরুপ ভাবে হাত উঠাতেন)। কিন্তু উভয় সিজদার মাঝখানে তিনি হাত উঠাতেন না।
৭৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (ব)… ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়াতেন তখন উভয় হাত উঠাতেন। এমন কি তা তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর হয়ে যেত। তারপর তাকবীর বলতেন। পরে যখন রুকু করার ইরাদা করতেন তখন ও অনুরুপ করতেন। আবার রুকু থেকে যখন উঠতেন তখনও অনুরুপ করতেন। কিন্তু সিজদা থেকে যখন মাথা তুলতেন তখন এরুপ করতেন না।
৭৪৭ মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কাহযায (রহঃ) যুহরি (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে ইবনু জুরায়জ (রহঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন তারপর তাকবীর বলতেন।
৭৪৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ কিলাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রহঃ)-কে দেখলেন, তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বলে উভয় হাত উঠালেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন উভয় হাত উঠালেন। আর রুকু থেকে যখন মাথা উঠালেন তখন আবারও হাত উঠালেন এবং (পরে) বর্ণনা করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ করতেন।
৭৪৯ আবূ কামিল আল জাহদারী (ব)… মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রহঃ) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবির (তাকবীরে তাহরিমা) বলে উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতেন তখনও কান বরাবর উভয় হাত উঠাতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা তুলে বলতেন তখনো অনুরুপ করতেন।
৭৫০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রহঃ) বলেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কান বরাবর হাত তুলতে দেখেছেন।
৭৫১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) (একবার) তাদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করলেন, তিনি সব কয়বার নিচু হওয়ার এবং উঠার সময় বললেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করার পর আমাদের দিকে ফিরে বললেন , আল্লাহর কসম! আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অধিক সদৃশ তোমাদের চাইতে।
৭৫২ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রাঃ)… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন তখন দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন। তারপর রুকু করার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকু থেকে পিঠ তুলতেন তখন বলতেন। তারপর দাড়ান অবস্থায় বলতেন তারপর সিজদায় ঝুকবার সময় তাকবির বলতেন। তারপর সিজদা থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর সিজদা করার সময় (আবার) তাববীর বলতেন। তারপর মাথা তুলবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করা পর্যন্ত পূর্ণ সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করতেন। তারপর দুই রাকআতের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন , তোমাদের সকলের চাইতে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুল –এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অধিক সদৃশ।
৭৫৩ মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াতেন তখন দাড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। ইবনু জুরায়জ এর হাদীসের অনুরুপ। কিন্তু তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর উক্তি তোমাদের সকলের চেয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর দিক দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অধিক সদৃশ- এর উল্লেখ করেননি।
৭৫৪ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রাঃ) আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রহঃ)-কে মারওয়ান যখন মদিনার গভর্ণর নিযুক্ত করেন, তখন তিনি ফরয সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাঁড়ালে তাকবীর বলতেন। এরপর ইবনু জুরায়জ-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তার হাদীসে (আরো) রয়েছে যে, অতঃপর তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতেন এবং সালাম ফিরাতেন তখন মসজিদে উপস্হিত লোকদের দিকে মুখ করে বলতেন, সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জানো! তোমাদের সকলের চেয়ে আমার সালাত (নামায/নামাজ) রাসুল এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সদৃশ।
৭৫৫ মুহাম্মদ ইবনু মিহরান আর রাযি (রহঃ) আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) প্রত্যেক বার উচু এবং নিচু হবার সময় তাকবীর বলতেন। আমরা বললাম, হে আবূ হুরায়রা! এ কেমন তাকবীর? তিনি বললেন , এটাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)।
৭৫৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ এর সুত্রে সুহায়ল-এর পিতা থেকে বর্ণিত যে, . আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রত্যেক বার নিচু এবং উচু হবার সময় তাকবীর বলতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, রাসূলল্লাহ এরুপ করতেন।
৭৫৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) মুতাররিফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আলী আবূ তালিব (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তিনি যখন সিজদায় গেলেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন (সিজদা থেকে) মাথা তূললেন তখন তাকবীর বললেন। আর যখন দু’রাকআত এর পর দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বললেন। অতঃপর আমরা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলাম তখন ইমরান (রাঃ) আমার হাত ধরে বললেন , ইনি আমাদের কে নিয়ে ঠিক মুহাম্মাদ এর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। অথবা তিনি বলেন, ইনি আমাকে মুহাম্মাদ এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
৭৫৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উবাদা ইবনুুস সামিত (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করবে না তার (পরিপূর্ণ) সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৫৯ আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ ইরশাদ করেন, যে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পাঠ করল না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬০ আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানি (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে উম্মুল কুরআন পাঠ করবে না তার সালাত (নামায/নামাজ) হবে না।
৭৬১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ হুমায়দ-এর সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত আছে। সেখানে ‘আরেকটূ বেশী’ শব্দটি অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
৭৬২ ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) হবে অসস্পূর্ণ তিন বার এটা বললেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা তো ইমামের পেছনে থাকি (তখনো কি ফাতিহা পড়ব?) তিনি বললেন , তখন মনে মনে তা পড়। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক করে ভাগ করেছি। আর বান্দা যা চাইবে- তা সে পাবে। অতঃপর বান্দা যখন বলে, (সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য); আল্লাহ তা’আলা এর জবাবে বলেন- আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, ‘আর রহমানির রহীম’ (তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ তাআলা বলেন- বান্দা আমার তা‘রিফ করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন; (তিনি বিচার দিনের মালিক); তখন আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছে। তিনি এও বলেন, বান্দা সমস্ত কাজ আমার উপর সোপর্দ করেছে। সে যখন বলে, ‘ইয়্যাকানা‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন’ (আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি); তখন আল্লাহ বলেন- এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দা যা চায় তাই দেয়া হবে। যখন সে বলে, ‘ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম, সিরাতাল্লাযীনা আন‘আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম অলাদ-দোয়াল্লীন’ (আমাদের সরল-সঠিক ও স্থায়ী পথে পরিচালনা করুন। যে সব লোকদের আপনি নিয়ামত দান করেছেন, যারা অভিশপ্তও নয় এবং পথভ্রষ্টও নয়- তাদের পথেই আমাদের পরিচালনা করুন); তখন আল্লাহ বলেন- এসবই আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হবে। সুফিয়ান বলেন, আলা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু ইয়া‘কুবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করে শোনান। এ সময় তিনি রোগ শয্যায় ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
৭৬৩ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) পড়ল অথচ তাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না সুফিয়ানের হাদীসের অনুরূপ। তাদের উভয়ের হাদীসে রয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন- আমি সালাত (নামায/নামাজ)কে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি, এর অর্ধেক আমার বান্দার।
৭৬৪ আহমাদ ইবনু জা’ফর আল মাকিরী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যাক্তি; সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল (অথচ) তাতে ফাতিহাতুল কিতাব পাঠ করল না সে সালাত (নামায/নামাজ) অসম্পূর্ণ। তিন বার এ বাক্যটি বললেন , উপরের বর্ণনাকারীদের হাদীসের অনুরুপ।
৭৬৫ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সালাত (নামায/নামাজ) হবে না কিরা’আত ছাড়া। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সালাত (নামায/নামাজ) উচ্চস্বরে আদায় করেছেন তোমাদের জন্য আমরাও তা উচ্চ স্বরে আদায় করি আর যা নিম্ন স্বরে আদায় করেছেন আমরাও তা নিম্ন স্বরে আদায় করি।
৭৬৬ আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে (নামায) কিরা’আত পাঠ করা উচিৎ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের কে শুনিয়ে কিরা’আত পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমরাও তোমাদের কে শুনিয়ে পাঠ করি। আর যে সব সালাত (নামায/নামাজ) কিরা’আত নীরবে পাঠ করেছেন সে সব সালাত (নামায/নামাজ) আমরাও নীরবে পাঠ করি। অতঃপর তাকে এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, আমি যদি উম্মুল কুরআন এর চেয়ে আর বেশী না পড়ি? তিনি বললেন , তুমি যদি উম্মূল কুরআনের পর আরো বেশী পড় তাহলে তা হবে উত্তম। আর যদি শুধু উম্মুল কুরআনই পড় তাহলে তা হবে তোমার জন্য যথেষ্ট।
৭৬৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সালাতে (নামায) কিরা’আত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে সালাত (নামায/নামাজ) (কিরা’আত) শুনিয়েছেন, আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ) তোমাদের কে শোনাই আর যে সালাত (নামায/নামাজ) নীরবে পাঠ করেছেন আমরাও সে সালাত (নামায/নামাজ) নীরবে পাঠ করি। যে ব্যাক্তি উম্মুল কিতাব (সূরা ফাতিহা) পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হবে। আর যে আরো! বেশী পাঠ করবে তা হবে উত্তম।
৭৬৮ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন একটি লোক প্রবেশ করল। সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে সালাম করল। সালামের জবাব দিয়ে বললেন , ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। লোকটি ফিরে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে সালাম করল। রাসূলল্লাহ উত্তর দিয়ে বললেন , গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। কারণ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) হয়নি। এই রুপ তিন বার করলেন। অতঃপর লোকটি বলল, আপনাকে সত্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার কসম! সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের এর চেয়ে ভাল কোন পন্হা থাকলে আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন , যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য দাড়াবে তখন তাকবীর বলবে। তারপর তুমি কুরআনের যতটুকু জানো তা থেকে যা সহজ হয় তাই পাঠ করবে। তারপর রুকু করবে। এমন কি নিবিষ্ট ভাবে (কিছুক্ষণ) রুকু করতে থাকবে। তারপর (রুকু থেকে) উঠবে, সোজা ভাবে (কিছুক্ষণ) দণ্ডায়মান থাকবে। তারপর সিজদা করবে। (কিছুক্ষণ) নিবিষ্ট ভাবে সিজদারত থাকবে। তারপর উঠে বসবে। এবং (কিছুক্ষণ) সোজা ভাবে বসে থাকবে। তোমার গোটা সালাত (নামায/নামাজ)ই এরুপ করবে।
৭৬৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এক পাশে ছিলেন। এরপর রাবী উপরোক্ত ঘটনার অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়ায়াতটিতে রাবীদ্বয় আরেকটু যোগ করেছেন যে, “যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন সুন্দর করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে তারপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর বলবে”।
৭৭০ সাঈদ ইবনু মানসূর ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (একবার) আমাদের কে নিয়ে যুহর অথবা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) তিনি বললেন , তোমাদের কে আমার পেছনে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ সুরাটি পড়ছিলে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। আর এর দ্বারা মঙ্গল লাভ ছাড়া আমার ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য ছিলনা। তিনি বললেন , আমার মনে হল, তোমরা কেউ এ নিয়ে আমার পাঠে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭১ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এক লোক তার পেছনে সূরাটি পড়ল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন , তোমাদের মধ্যে কে কিরা’আত পাঠ করেছ? অথবা বললেন , তোমাদের মধ্যে কিরা’আত পাঠ কারী কে? এক ব্যাক্তি বলল, আমি। তিনি বললেন , আমার মনে হচ্ছিল তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বললেন , আমি মনে করলাম তোমাদের কেউ এ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।
৭৭৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর, উমার ও উসমান (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি, কিন্তু তাঁদের কাউকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম সরবে পড়তে শুনিনি।
৭৭৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি (নিজে) কি এটা আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন , হ্যা, আমরা এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করে ছিলাম।
৭৭৫ মুহাম্মাদ ইবনুল মিহরান আর রাযী (রহঃ) আবদা থেকে বর্ণিত যে, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এই বাক্যগুলি সরবে পাঠ করতেন। কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমার ও উসমান (রাঃ) -এর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছি। তারা সবাই সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করতেন ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ পাঠ দিয়ে। তারা কিরাআতের শুরুতেও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম উল্লেখ করতেন না, শেষেও না।
৭৭৬ মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা থেকে বর্ণিত যে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে এই হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন।
৭৭৭ আলী ইবনু হূজর আাস সা’দী ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব হল, এরপর তিনি মুচকি হেসে মাথা উঠালেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কিসে আপনার হাসি এল? তিনি বললেন , এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এই বলে তিনি পড়লেন, এরপর বললেন , তোমরা কি জানো (কাওসার) কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন , সেটা হল একটি নহর। আল্লাহ তাআলা আমাকে যার ওয়াদা করেছেন। সেখানে বহু কল্যাণ রয়েছে। সেটি একটি জলাশয়। কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাত (পানি পানের জন্য) সেখানে আসবে। তার গ্লাসের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমান। অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে এক জন বান্দাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, পরোয়ারদেগার! সে তো আমার উম্মত। বলা হবে, আপনার জানানেই যে, আপনার পরে এরা কি নতুন রীতি (বিদাআত) উদ্ভাবন করেছিল। ইবনু ছুজর আরো একটু যোগ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে মসজিদে বসা ছিলেন। শেষে আছে আল্লাহ বলবেন, এ সেই ব্যাক্তি যে আপনার পর বিদআত করেছিল।
৭৭৮ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইবনু মুসহির বর্ণিত (উপরিউক্ত) হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন যে, এক বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিছুটা তন্দ্রার ভাব দেখা দিল । এ রিওয়াতে ‘হাউযের গ্লাসের সংখ্যা তারকার সমপরিমাণ কথাটির উল্লেখ নেই’। শুধূ এতটুকু বলা হয়েছে যে, তা (কাওসার) হল জান্নাতের একটি নহর যা আমার রব আমাকে দেয়ার ওয়াদা করেছেন।
৭৭৯ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দেখেছেন তিনি যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে তাকবীর বললেন। রাবী হুমাম বলেন, উভয় হাত কান বরাবর উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে নিলেন (গায়ে চাঁদর দিলেন)। তারপর তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন। তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড় থেকে বের করলেন। পরে উভয় হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন। যখন বললেন , তখন উভয় হাত তুললেন। পরে উভয় হাতের মাঝখানে সিজদা করলেন।
৭৮০ আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ার সময় (বৈঠকে) বলতাম, ‘আল্লাহর উপর সালাম হোক, অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন- বস্তুত আল্লাহ নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)। অতএব তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) বসে সে যেন বলে, যাবতীয় মান-মর্যাদা, প্রশংসা এবং পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি নেমে আসুক। যখন সে একথাগুলো বলে তখন তা আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দার কাছে পৌঁছে যায়, সে আসমানেই থাক অথবা জমীনে। “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ” অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছা অনুযায়ী সে যে কোন দোয়া পড়তে পারে।
৭৮১ উল্লেখিত সনদ সূত্রে মানসুর থেকে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় “অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দোয়া পড়তে পারে” এ কথাটুকু উল্লেখ নেই।
৭৮২ একই সনদে মানসূর থেকে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনার শেষ অংশ হচ্ছে- অতঃপর সালাত (নামায/নামাজ)ী তার ইচ্ছা অনুযায়ী অথবা নিজের পছন্দমত যে কোন দোয়া পড়তে পারে।
৭৮৩ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে বসতাম মনসূরের হাদীসের অনুরূপ। এর শেষাংশের বর্ণনা হচ্ছে- এর পর সে যে কোন দোয়া পাঠ করবে।
৭৮৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়েছেন আমার হাত তাঁর হাতের মধ্যে রেখে যেমনিভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। এবং তিনি অন্যান্য রাবীর তাশাহুদের ন্যায় বর্ণনা করেছেন।
৭৮৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনি ভাবে আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তেমনি ভাবে আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন। ইবনু রুমহ এর বর্ণনায় রয়েছে তিনি যে ভাবে আমাদের কুরআন শিক্ষা দিতেন।
৭৮৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন, যেমনি ভাবে শিক্ষা দিতেন আমাদেরকে কুরআনের সূরা।
৭৮৭ সাঈদ ইবনু মানসূর, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ কামিল আল জাহদারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আল উমাবী (রহঃ) হিত্তান ইবনু আবদুল্লাহ আর রুকাশী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন (একবার) আমি আবূ মূসা (রাঃ) -এর সাথে এক সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি তখন তাশালূদের বৈঠকে ছিলেন তখন মুসল্লীদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি বলে উঠল, (সালাত (নামায/নামাজ) নেকী ও যাকাতের সাথে ফরয করা হয়েছে)। হিত্তান বলেন, আবূ মূসা যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন এবং সালাম ফিরালেন তখন বললেন , তোমাদের মধ্যে এই ধরনের কথা কে বলেছে? সবাই চুপ করে রইল। তিনি আবার বললেন , এরকম কথা তোমাদের কে বলেছে? সবাই চুপ রইল। তিনি বললেন , “হিত্তান! তুমিই হয়ত এরকম বলেছ। হিত্তান বললেন , আমি এটা বলিনি আমি ভয় করলাম যে, তিনি একারনে হয়তোবা আমার ওপর রাগ হয়ে যাবেন। অতঃপর এক ব্যাক্তি বলল, আমি এটা বলেছি। আর আমি এটা কেবলমাত্র সাওয়াব হাসিলের জন্য বলেছি”। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন , তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) কি বলবে তা জাননা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে খুতবা দিলেন। তিনি আমাদের করনীয় কাজ সমূহ পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করলেন এবং আমাদেরকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিয়ে বললেন যখন তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইচ্ছা করবে তখন তোমাদের কাতার সোজা করবে। তারপর তোমাদের একজন ইমামত করবে। ইমাম যখন তাকবীর বলবে তখন তোমরা সবাই তাকবীর বলবে আর যখন ‘গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওলাদদল্লীন’ বলবে তখন তোমরা আমীন বলবে এতে আল্লাহ তোমাদের দুই দু’আ কবুল করবেন। অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং রুকু করবে। কারন ইমামকে তোমাদের আগে রুকুতে যেতে হয় এবং তোমাদের আগে উঠতে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , ফলে তোমাদের এই দেরি ইমাম কতৃক কিছু আগে তাকবীর ও রুকু করার সময়ের গণ্য হবে। আর যখন ইমাম ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা বলবে ‘আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ’ আল্লাহ তাআলা তোমাদের দুয়া শুনেন। কারন তিনি তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র যবানিতে বলেছেন যে, যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা শুনেন। আর যখন ইমাম তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে এবং সিজদা করবে। কারণ ইমামকে তোমাদের আগে তাকবীর বলতে হয় এবং তোমাদের কিছু আগে উঠতে হয়। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , ফলে তোমাদের এই দেরী ইমাম কতৃক কিছু আগে তাকবীর ও রুকু করার সময়ের সমান গণ্য হবে। ইমাম যখন তাশাহুদে বসবে তখন সর্বপ্রথমে তোমরা বলবে, ‘আত্তাহিয়াতু তাইয়্যেবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহি আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হু। ’
৭৮৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) আরো একটু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, “ইমাম যখন কিরা’আত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে”। আবূ কামিল (রহঃ) আবূ আওয়ানা (রহঃ) থেকে যে রিওয়াত করেছেন সেটিতে ছাড়া আর কারো বর্ণনায় এ বাক্যটি নেই যে, কারণ আল্লাহ তাআলা তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যবানীতে বলেছেন, যে তার প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন। ”ইসহাক (ইমাম মূসলিমের ছাত্র) বলেন, আবূ নযর-এর ভাগিনা আবূ বাকর (রহঃ) এ রিওয়াত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বললেন , তুমি কি কাউকে সুলায়মান থেকে বেশী স্মরণশক্তি সম্পন্ন বলে মনে কর? আবূ বাকর (রহঃ) বললেন , তাহলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর হাদীস? অর্থাৎ ইমাম যখন কিরা’আত পড়ে তখন তোমরা চুপ থাক” (এটার কি হবে?) তিনি বললেন , এটা আমার কাছে সহীহ। আবূ বাকর বললেন , তাহলে সেটা আপনি এখানে কেন আনলেন না? তিনি জবাব দিলেন, আমি সব সহীহ হাদীসই এখানে আনছি না বরং এখানে কেবল সেগুলোই আনছি যার উপর মুহাদ্দিসগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
৭৮৯ কাতাদা থেকে উল্লেখিত সনদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় জানিয়ে দিলেন- যে আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শোনেন।
৭৯০ আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, আমরা তখন সা’দ ইবনু উবাদার (রাঃ) বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। বশীর ইবনু সা‘দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহান আল্লাহ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা কী ভাবে আপনার উপর দুরূদ পাঠ করব? রাবী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন। এমনকি আমরা আপসোস করে বললাম, সে যদি তাঁকে এ প্রশ্ন না করত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেলন- তোমরা বল “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”। আর সালাম দেয়ার নিয়ম তোমাদের জানা আছে। দুরূদ শরীফের অর্থঃ “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ কর- যে ভাবে তুমি ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বরকত ও প্রাচুর্য দান কর- যে ভাবে তুমি ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখেরাতে বরকত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। “
৭৯১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এক বার কাবা ইবনু উজরা (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন , আমি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না? একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন! আমরা বললাম, (ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আপনাকে কিভাবে সালাম দিতে হয় তাতো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দুরুদ আমরা কি ভাবে পাঠ করব? তিনি বললেন , তোমরা বলবে “আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ”।
৭৯২ যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব এর সুত্রে হাকাম থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি ‘আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না’ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি।
৭৯৩ মুহাম্মাদ ইবনু বাককার-এর সুত্রে হাকাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তিনি তার রিওয়াতে শুধু “ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিন” এর উল্লেখ করেছেন। “আল্লাহুমা” শব্দটির উল্লেখ করেন নি।
৭৯৪ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) – আবূ হুমায়দ আস সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার উপর দুরুদ পাঠ করব? তিনি বললেন , তোমরা বলবে, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সাল্লাইতা আলা আলে ইবরাহীমা (ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ) ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আলে ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। ’’
৭৯৫ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত নাযিল করবেন।
৭৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুল বলেছেন, ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামীদা’ বলেন, তোমরা তখন আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ” বলবে। কেননা, যার বাক্য ফিরিশতাদের বাক্যের অনুরুপ হবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে।
৭৯৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন ইমাম আমীন বলবেন, তোমরাও তখন আমীন বলবে। কেননা, যে ব্যাক্তি ফিরিস্তাদের আমীন বলার সাথে একই সময় আমীন বলবে, তার পূর্ববতী সমস্ত পাপ মোচন হয়ে যাবে। রাবী ইবনু শিহাব বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলতেন।
৭৯৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিকট শুনেছি এই বলে মালিকের হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনু শিহাবের কথা উল্লেখ করেননি।
৮০০ হারামাল ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আমীন বলবে ও ফিরিস্তারা আকাশের উপর আমীন বলবে এবং উভয়টি একই সময় হবে, যখন তার অতীতের সমস্ত শোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা আল কানাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমীন বলবে এবং ফিরিস্তারা আকাশের ওপর আমীন বলবেন, আর উভয়টি একই সময় উচ্চারিত হবে তখন তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮০২ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্তরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮০৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন পাঠকারী (ইমাম) যখন বলবেন এবং তাঁর পিছনের ব্যাক্তি (মুকতাদী) আমীন বলবে, এবং তার বাক্য আকাশ বাসীর (ফিরিশতার) বাক্যর অনুরুপ একই সময় উচ্চারিত হবে, তখন তার পূর্ববর্তী সমুদয় পাপমোচন হয়ে যাবে।
৮০৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ার দরুণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের দক্ষিন পাশ ছিলে যায়। আমি তাকে সেবা করতে গেলাম। ইতিমধ্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত হল। আমাদের নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আমরাও বসে বসে তার পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম, সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পর বললেন , অনুসরণ করার জন্য ইমাম মনোনীত হন। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বল, তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা কর, তিনি যখন উঠেন, তোমরাও উঠবে তিনি যখন তোমরা তখন বল। আর যখন বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তোমরাও তখন বসেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৮০৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্ব পিঠ হতে পড়ে গিয়ে তাঁর ডান পাজরে আঘাত প্রাপ্ত হলেন। অতঃপর বসে বসে আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন! হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরোক্ত রুপ বর্ণনা করেন।
৮০৬ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া হতে পড়ে গেলেন। তাঁর ডানপাশ আঘাত প্রাপ্ত হলো। তারপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি একটি কথা বেশী বলেছেন তাহল, ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তোমরাও তখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮০৭ ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় সাওয়ার হলেন। তারপর পড়ে গিয়ে তার ডান পার্শ্বদেশ যখম হলো। এরপর তিনি উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ননা করেন। এতেও বলা হয়েছে যে, “ইমাম যখন দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন তখন তোমরাও দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।
৮০৮ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং দক্ষিণ পার্শ্বদেশ যখম প্রাপ্ত হয়। তারপর তিনি পূর্বানুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। কিন্তু এতে ইউনুস ও মালিকের বর্ণিত অতিরিক্ত কথাটি নেই।
৮০৯ আবূ বাকর ইবনু আল শায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঘাত প্রাপ্ত হলে তার শুশ্রষার জন্য সাহাবায়ে কিরাম আগমন করলেন। তাদেরকে নিয়ে বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিছুলোক দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করলে তিনি তাদেরকে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে ইশারা করলেন। তাই তারা বসে পড়লেন। সালাত (নামায/নামাজ) সমাপনান্তে বললেন , ইমাম নিয়োগ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তুলবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১০ আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) … হিশাম ইবনু উরওয়া থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮১১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) জাবির (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগ্নবস্হায় আমরা তাঁর পেছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) (মুকাব্বির হিসাবে) লোকদেরকে তাঁর তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে দেখলেন যে, আমরা দাঁড়িয়ে। তিনি আমাদের প্রতি ইঙ্গিত করলেন আমরা বসলাম। এবং আমরা তার পেছনে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। অতঃপর সালামান্তে তিনি বললেন , এই মুহূর্তে যে কাজটি করেছ, তা পারস্য ও রোমবাসীদের অনুরুপ। তারা তাদের সমরাটের সন্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে এবং সমরাট থাকে বসে। তোমরা এরুপ কখনো করবে না। বরং সর্বদা স্বীয় ইমামের অনুসরণ করবে। তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়ালে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে আদায় করবে।
৮১২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং আবূ বাকর তার পিছনে ছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলতেন আবূ বকরও আমাদেরকে শোনাবার জন্য তাকবীর বলতেন। তারপর লায়স কত্রিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮১৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অনুসরণের জন্য ইমাম মনোনীত হন। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। ইমাম রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে।। তিনি সিজদা করলে তোমরাও সিজদা করবে। আর তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও সকলে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮১৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু খাশরাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনিবলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তালিম দিতেন এবং বলতেন যে, তোমরা ইমামের থেকে আগে বেড়ে যেওনা তাকবীর বললে তোমরা তাকবীর বলবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে।
৮১৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এই সনদের বর্ণনায় এরপর বলার কথাটি নেই। তবে এই কথাটি বেশী আছে, তোমরা ইমামের আগে (মাথা) উঠাবে না।
৮১৭ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) অবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম হলেন ঢালস্বরুপ। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। পৃথিবীবাসীর (মুসল্লির) কথা যখন আকাশবাঁসীর (ফিরিস্তার) কথার অনুরুপ হবে, তখন তার বিগত সমস্ত শোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
৮১৮ আবূ তাহির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা! হয় অনুসরণের উদ্দেশ্যে। তিনি তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে। তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি বললে তোমরাও বলবে। তিনি দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও দাড়িয়ে আদায় করবে। তিনি বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে তোমরাও বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।
৮১৯ আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) -এর নিকট উপস্হিত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুখের বৃত্তান্ত জানতে চাইলাম। তিনি বললেন , নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগাক্রান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন লোকজন কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না। তারা আপনার প্রতীক্ষায় আছে। তিনি বললেন – আমার জন্য গামলায় পানি রাখ। আমি পানি দিলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমনোদ্যত হলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। চেতনা পেয়ে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষা করছে তিনি বললেন , গামলায় পানি দাও আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন। অতঃপর গমণৌদ্যত হলে পূনরায় সংজ্ঞাহারা হলেন। সংজ্ঞা পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে? আমি বললাম, জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার অপেক্ষায় রয়েছে তিনি বললেন , গামলায় পানি দাও। আমি তাই করলাম। তিনি গোসল করলেন এবং গমনোদ্যত হয়ে বেহুশ হয়ে পড়লেন। অতঃপর হুশ হলে পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, লোকেরা কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে। আমি বললাম জী না, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের অপেক্ষায় মসজিদে বসেছিল। অবশেষে তিনি লোক মারফত আবূ বকর (রাঃ) কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বলে পাঠালেন। লোকটি আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এসে বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আপনাকে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করার আদেশ করেছেন। আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাই উমার (রাঃ) – কে বললেন হে উমার! তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দাও। উমার (রাঃ) বললেন জী না, আপনই এই কাজের অধিক যোগ্য ব্যাক্তি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, সুতরাং আবূ বকর (রাঃ) ঐ কয়েক দিন সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করেন। ইত্যবসরে একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিত সুস্হবোধ করলেন। এবং দুই জন মানুষের কাঁধে ভর করে যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে মসজিদে গেলেন। ঐ দু’জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। রাসুলূল্লাহ মসজিদে পৌছে দেখেন যে, আবূ বকর (রাঃ) ইমাম হিসাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। তিনি তাঁকে দেখে পিছে হাটতে চাইলেন। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাঁকে পিছে হটতে বারণ করলেন। এবং স্বীয় সঙ্গী দু’জনকে বললেন যে, আমাকে আবূ বকর (রাঃ) – এর পাশে বসিয়ে দাও তারা তাঁকে আবূ বকর (রাঃ) –এর পাশে বসিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করতে লাগলেন। লোকজন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে আবূ বকর (রাঃ) – এর অনুসরণ করছিল। উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) – এর নিকট পোছে বললাম, আমি কি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগকালীন সালাত (নামায/নামাজ)-এর আয়িশা (রাঃ) কতৃক বর্ণিত হাদীসটি শোনাবো? তিনি বললেন , বর্ণনা কর। আমি তাঁকে হাদীসটি শোনালাম, তিনি পুরা হাদীসের কোথাও আপত্তি করলেন না বটে, কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আব্বাস (রাঃ) -এর সাথে অপর ব্যাক্তিটির নাম কি তোমার কাছে আয়িশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম, জী না! তিনি বললেন , সেই ব্যাক্তি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২০ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম মায়মুনা (রাঃ) -এর গৃহে অসুস্হ হয়ে পড়েন! অতঃপর তাঁর সকল সহধর্মিনীর নিকট আয়িশা (রাঃ) এর গৃহে পরিচর্যা লাভের আকাংখা প্রকাশ করেন। তারা সকলেই অমুমতি প্রকাশ করলেন। একদিন তিনি মসজিদে যাওয়ার জন্য বের হলেন। তার একখানা হাত ফযল ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর কাঁধের উপর এবং অপর হাত খানা অন্য এক ব্যাক্তির কাঁধের উপর ছিল। দুর্বলতার জন্য মাটিতে পা হেঁচড়িয়ে হেঁচড়িয়ে চলছিলেন উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীসটি ইবনু আববাস (রহঃ) কে শোনালে তিনি বললেন , আয়িশা (রাঃ) অন্য যে ব্যাক্তির নাম উচ্চারণ করেননি, তাঁর নাম কি তুমি জানো? তিনি ছিলেন আলী (রাঃ)।
৮২১ আব্দুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পড়লেন এবং ক্রমেই পীড়া বৃদ্ধি পেয়ে চলল, তখন তিনি তার স্ত্রীগণের নিকট অনুমতি চাইলেন আমার গৃহে পরিচর্যা লাভের নিমিত্ত। তারা সকলেই তাঁকে অনুমতি প্রদান করলেন। (ঐ সময়ে একদিন) তিনি দুই ব্যাক্তির সহায়তায় মাটিতে দুই পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন। একজন আব্বাস ইবনু আবাদুল মুত্তালিব (রাঃ) এবং আরেকজন অন্য ব্যাক্তি। উবায়দুল্লাহ বলেন, আয়িশা (রাঃ) -এর এই বর্ণনাটি আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে অবহিত করলে তিনি বললেন , আয়িশা (রাঃ) যে ব্যাক্তির নাম উচচারণ করেননি, তার নাম কি তুমি জানো? আমি বললাম , না! তিনি বললেন , তিনি আলী (রাঃ)।
৮২২ আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনুল লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমার পিতা আবূ বাকর (রাঃ) -কে সালাত পড়াবার আদেশ দিলেন তখন আমি এই নির্দেশ প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাঁকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলাম। আমার এই পূনঃপূনঃ অনুরোধ এই কারণে ছিল আমার মনে এই ধারণার উদ্রেক যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্হানে যে দাঁড়াবে (ইমামত করবে) লোকেরা তাকে সর্বদা ভালবাসবে, বরং আমার ধারণা হল যে, তারপর যে ব্যাক্তি তাঁর স্হানে দাঁড়িয়ে ইমামত করবে লোকেরা তাকে অপয়া বলবে, তাই আমি চেয়েছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই নির্দেশ আবূ বকর (রাঃ) হতে অন্যত্র সরে যাক।
৮২৩ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পীড়িত অবস্হায়) আমার গৃহে প্রবেশ করে পরে বললেন , আবূ বকরকে আদেশ (শুনিয়ে) দাও, সে যেন লোকদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয় ব্যাক্তি। তিনি যখন কুরআন পাঠ করেন, তখন অশ্রু সংবরণ করতে পারেননা। আপনি যদি আবূ বকর (রাঃ) -কে ব্যতীত অন্য কাউকে আদেশ করতেন (তবে উত্তম হতো)। আল্লাহর কসম! আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল, যেন লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্হানে সর্বপ্রথম দাড়ানোর কারনে তাঁর সম্পর্কে অপয়া হবার ধারণা করতে না পারে। তাই আমি এ ব্যাপারে তাঁর সাথে দু-তিন বার অনুরোধের পীড়াপীড়ি করেছি। এরপরেও তিনি বললেন , আবূ বাকর যেন লোকের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করে। (এবং বললেন)তোমরা হচ্ছ ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গিনীদের অনুরুপ।
৮২৪ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসুস্হ অবস্হায় বিলাল (রাঃ) তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামতের জন্য ডাকতে আসলেন। তিনি বললেন , যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি নিতান্ত নরম মানুষ। তিনি আপনার স্হানে দাড়িয়ে লোকদেরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতে পারবেন না। আপনি উমারকে আদেশ করলে উত্তম হবে। কিন্তু তিনি তবুও বললেন , যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। এরপর আমি হাফসাকে বললাম, তুমি তাঁকে বল যে, আবূ বকর অতি নরম লোক। তিনি আপনার স্থানে দাঁড়িয়ে মানুষকে কুরআন শোনাতে পারবেন না! আপনি উমারকে আদেশ করলে ভাল হবে। হাফসা তাঁকে তাই বললেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গিনীদের ন্যায়। যাও, আবূ বকরকে ইমামত করতে বল। শেষ পর্যন্ত লোকেরা আবূ বকর (রাঃ) -কে নির্দেশ শোনালেন এবং তিনি লোকদের ইমামত করলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আরম্ভ করার এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্হবোধ করলেন। তিনি দুই জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মসজিদে প্রবেশ করলে তাঁর আগমন শব্দ পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পিছনে সরে আসার উপক্রম করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাকে তাঁর স্থানে দন্ডায়মান থাকতে বললেন এবং নিজে এসে আবূ বকর (রাঃ) -এর বামপাশে বসে পড়লেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমামত করছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দন্দায়মান অবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করছিলেন। আর অন্য মুসল্লীগণ আবূ বকর (রাঃ) -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করছিল।
৮২৫ মিনজাব ইবনুল হারিস আত তামীমী (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আঁমাশ (রহঃ) থেকে উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। এদের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু রোগে যখন আক্রান্ত হলেন। ইবনু মুসহিরের হাদীসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে এসে তার ( আবূ বকর (রাঃ) -এর) পাশে বসিয়ে দেওয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের ইমামতি কর ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাদেরকে তাকবীর শোনাচ্ছিলেন। ঈসার হাদীসে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পাশে থেকে লোকদের কে শোনাচ্ছিলেন।
৮২৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) এবং ইবনু নুমায়র (রহঃ)-… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত অবস্হায় আবূ বকর (রাঃ) -কে ইমামতি করার নির্দেশ দান করেন। সে মতে তিনি ইমামতি করতে থাকেন। রাবী উরওয়া (রহঃ) বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিঞ্চিৎ সুস্হ্য বোধ করলে মসজিদে গমন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকদের ইমামতি করছিলেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে আবূ বকর (রাঃ) পশ্চাতে সরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইশারায় তাঁর স্হানে থাকতে বললেন এবং নিজে তাঁর বরাবর পাশে বসে পড়লেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর ইমামতিতে আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং অন্য মুসল্লীগণ আবূ বকরের ইমামতিতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
৮২৭ আমর আন নাকিদ (রহঃ), হাসান আল হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুরোগ শয্যায় শায়িতাবস্হায় আবূ বকর (রাঃ) তাদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করতে থাকেন। এভাবে যখন সোমবার দিন সকলে সারিবদ্ধ হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ছিলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কক্ষের পর্দা উত্তোলন করে দাঁড়ানো অবস্হায় আমাদের দিকে তাকালেন। এবং তাঁর পবিত্র মুখমন্ডল স্বর্ণ পাতার ন্যায় জ্বল জ্বল করছিল তিনি আনন্দে হেসে উঠলেন। এদিকে আমরাও সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই তাঁর আগমন লক্ষ্য করে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। আবূ বকর (রাঃ) মনে করলেন যে, সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হচ্ছেন। তাই পিছনে সরে আসতে উদ্যত হলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন কর। অতঃপর তিনি তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে দরজার পর্দা ফেলে দিলেন। এবং ঐ দিনই তিনি ইন্তেকাল করেন। আমর আন নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শেষ বারের মত দেখেছিলাম যখন তিনি সোমবার দিন হূজরার পর্দা উত্তোলন করে ছিলেন। এবং এ প্রসঙ্গে রাবী সালিহ কতৃক বর্ণিত হাদীসটি অধিক পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ।
৮২৮ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যখন সোমবার হল, তারপর উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮২৯ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তিন দিন যাবত বের হননি। (তিন দিনের পরের ঘটনা) এক সালাত (নামায/নামাজ) ইকামত দেয়া হল। আবূ বকর (রাঃ) সামনে অগ্রসর হবেন ইত্যবসরে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্দা উত্তোলন করলেন। আমরা তাঁর চেহারা মুবারক অবলোকন করলাম তাকে এমন দেখা যাচ্ছিল যে, সেরুপ অপূর্ব দৃশ্য আগে আর আমরা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। তিনি হাতের ইশারায় আবূ বাকর (রাঃ) -কে সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। এরপর আর তিনি বের হতে পারেননি, ওফাত পর্যন্ত।
৮৩০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পীড়িত হয়ে পরলেন। তার পীড়া বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিনি বললেন , আবূ বকরকে নির্দেশ শুনিয়ে দাও যেন সে লোকদের ইমামতি করে। আয়িশা (রাঃ) বললেন , ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর হচ্ছেন নরম মানুষ। তিনি আপনার স্হানে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) পড়াতে পারবেননা। তবু তিনি বললেন, যাও আবূ বকরকেই ইমামতি করতে বল। তোমরা হচ্ছো ইউসুফের সঙ্গিনীদের অনুরূপ। এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় আবূ বকর (রাঃ) ‘ই লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করেন।
৮৩১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … সাহল ইবনু সারীদ আস-সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে তাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসার কাজে গমন করলেন। ইত্যবসরে সালাত (নামায/নামাজ)-এর ওয়াক্ত উপস্হিত হলে মু’আযযিন (আযান দিয়ে) আবূ বকর (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে বললেন , আপনি কি ইমামত করবেন? আমি ইকামত বলছি। আবূ বকর (রাঃ) বললেন -হ্যা। আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) পড়াচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন দিক হতে আগমন করেন এবং মানুষের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ)-এর কাতারে শরীক হলেন। মুকতাদীগণ তালি বাজাতে লাগলেন। কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে অন্য কোন দিকে মনোযোগ দিতেন না। যখন মুকতাদীগণ অধিক তালি বাজাতে লাগলে তখন তিনি ফিরে তাকালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেয়ে পিছনে হটতে চাইলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করে বললেন , তুমি তোমার জায়গায় দণ্ডায়মান থাক। আবূ বকর (রাঃ) দুই হাত উপরে তুলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃক তাকে এই ইমামতির মর্যাদা প্রদানে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করলেন এবং পশ্চাতে হটে এসে মুকতাদীর কাতারে দাঁড়ালেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ বকর! তুমি তোমার জায়গায় দন্ডায়মান থাকলে না কেন? আমি তো তোমাকে দণ্ডায়মান থাকতেই বলেছিলাম। আবূ বকর (রাঃ) বললেন , আবূ কুহাফার পূত্রের এমন দুঃসাহস নেই যে, আল্লাহর রাসূল -এর সামনে ইমামত করে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুকতাদীদের প্রতি তাকিয়ে) বললেন , কী ব্যাপার! তোমরা এত তালি বাজালে কেন? তোমাদের কারো সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে যখন কোন সমস্যা দেখা দেয়, তখন তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’বলবে, তোমরা ‘সূবহানাল্লাহ’ বললেই ইমাম তোমাদের প্রতি মনোযোগ দিবেন। তালি বাজানোর বিধান তো নারীদের জন্য।
৮৩২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুহায়ল ইবনু মা’দ (রাঃ) থেকে মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ননা করেছেন। এবং এদের উভয়ের বর্ণনায় আছে, আবূ বাকর (রাঃ) তার হস্তদয় উত্তোলন করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং পিছনে সরে এসে সারিতে দন্ডায়মান হলেন।
৮৩৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) … সাহল ইবনু সা’দ আস- সাঈদী (রাঃ) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আওফ গোত্রে একটি আপোস-মীমাংসার কাজে গমন করেন। সেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে পিছনের কাতার সমুহ ভেদ করে সামনের কাতারে এসে দাঁড়ালেন এবং . আবূ বকর (রাঃ) পাশ্চাৎ দিকে হটে আসলেন।
৮৩৪ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও হাসান ইবনু আলী আল হূলওয়ানী (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করে ছিলেন। মুগীরা (রাঃ) বলেন, একদিন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে (উক্ত তাবূক নামক স্হানে) রাসূলল্লাহ ইস্তেঞ্জা করার জন্য রওয়ানা হলেন আমি পানির পাত্র নিয়ে তার সঙ্গে গেলাম। যখন তিনি আমার নিকট ফিরে আসলেন আমি তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। প্রথমে তিনবার হাত ধৌত করলেন, অতঃপর মুখমন্ডল। তারপর তাঁর জুব্বার আস্তিন হাতের উপর দিকে উঠাতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন ছোট ছিল বিধায় তিনি জুব্বার নিচের দিকদিয়ে হাত ঢূকায় দুই হাত জুব্বার নিচ দিয়ে বের করে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুইলেন। তারপর উভয় মোজার উপর মাসহ করলেন। তারপর রওয়ানা হলেন এবং আমিও তার সাথে রওয়ানা হলাম। ফিরে এসে দেখতে পেলাম, লোকজন আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) -কে আগে বাড়িয়ে দিয়েছে, তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাক’আত পেলেন এবং লোকজনের সাথে দ্বিতীয় রাক’আত আদায় করলেন। আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) যখন সালাম ফিরালেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) পূর্ন করার নিমিত্তে দাঁড়ালেন। মুসলমানগণ এই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে গেলেন এবং বেশী করে তাসবীহ পড়তে নাগলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তাদের লক্ষ্য করে বললেন তোমরা উত্তম কাজ করেছ। সঠিক ওয়াক্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে লাগলেন।
৮৩৫ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ও আল হূলয়ানী (রহঃ) হামযা ইবনুল মুগীরা (রাঃ) থেকে আব্বাদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস সদৃশ বর্ণনা করেছেন। মুগীরা (রহঃ) বলেন, আমি অব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) -কে পিছনে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তাকে ছেড়ে দাও।
৮৩৬ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ), আমর আন নাকিদ (রহঃ), হরুন ইবনু মারুফ (রহঃ), ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন পুরুষের জন্য ‘সূবহানাল্লাহ’ এবং নারীদের জন্য হল হাত চাপড়ানো। হারামালা তাঁর বর্ণনায় আরও বলেন যে, ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেছেন, আমি কতিপয় আলেমকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে সুবহানাল্লাহ, বলতে এবং ইশারা করতে দেখেছি।
৮৩৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), আবূ কুরায়ব (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) – এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৩৮ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তার বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে ‘সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে’ কথাটি।
৮৩৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল-হামদাযী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় শেষে বললেন , হে অমূক! তোমার সালাত (নামায/নামাজ) উত্তমরূপে আদায় করবে না কি? মুসুল্লী যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে কি রুপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তা কি সে লক্ষ্য করে না? অথচ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কারী তার নিজের কল্যাণের জন্যই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি যেমন সামনের দিকে দেখি, তেমনি পিছনের দিকেও দেখি।
৮৪০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি দেখছ-আমার কিবলা এই দিকে? অথচ আল্লাহর শপথ! আমার নিকট তোমাদের রুকু এবং সিজদা কোনটাই গোপন নয়। আমি তোমাদেরকে পিছন হতেও দেখছি।
৮৪১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু এবং সিজদা যথাযথভাবে আদায় করবে। আল্লাহর শপথ! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তখন তা আমি পিছন দিক হতে (রাবী কখনও বলেছেন)আমি পৃষ্ঠদেশের দিক হতে দেখে থাকি।
৮৪২ আবূ গাসসান আল মিসমাঈ (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের রুকু-সিজদা গুলো পুর্ণরুপে আদায় করবে। আল্লাহর কসম! তোমরা যখন রুকু-সিজদা কর, তা আমি পিছন দিক হতে অবলোকন করি।
৮৪৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আলী ইবনু হুজর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের অব্যবহিত পরই আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন , হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। সুতরাং রুকু, সিজদা, কিয়াম ও সালাম করার ক্ষেত্রে আমার হতে আগে বাড়িও না। কারণ আমি সম্মুখ ও পাশ্চাৎ হতে তোমাদেরকে দেখতে পাই। অতঃপর বললেন , যার হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ করে বলছি, আমি যা দেখছি, তোমরা তা দেখতে পেলে হাসতে কম, কাঁদতে বেশী। সাহাবা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কী দেখেছেন? তিনি বললেন , আমি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছি।
৮৪৪ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ), ইবনু নুমায়র (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু জারীর কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে ‘সালাম ফিরাবে না’ কথাটি নেই।
৮৪৫ খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ), আবূ রাবী আয যাহরানী (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ বলেছেন, ইমামের পূর্বে সিজদা হতে যে ব্যাক্তি মাথা তুলবে, তার ভয় করা উচিত, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথার মত করে দিবেন।
৮৪৬ আমর আন-নাকিদ (রহঃ) ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইমামের পূর্বে সিজদা হতে তার শির উত্তোলন করবে, সে কি নিশঙ্ক হয়ে গেল যে, আল্লাহ তার চেহারাকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
৮৪৭ আব্দুর রহমান ইবনু সালাম আল-জুমাহী (রহঃ), আবদুর-এরাহমান ইবনুুর রাবী ইবনু মুসলিম (রহঃ), উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয ও আবূ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত রুপ বর্ণনা করেছেন। তবে আর-এরাবী ইবনু মুসলিমের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তার মুখমন্ডলকে গাধার চেহারায় রূপান্তরিত করে দিবেন।
৮৪৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আকাশের দিকে তাকায়, অবশ্যই তাদের তা হতে বিরত হওয়া উচিত, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি আর না আসতে পারে।
৮৪৯ আবূ তাহির ও আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে দু’আর সময় আকাশের দিকে না তাকায় অন্যথায় তার দৃস্টি শক্তি নষ্ট করে দেয়া হবে।
৮৫০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করে বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজের মত হাত উঠাচ্ছ কেন? সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে নিশ্চল থাকবে (কোন অঙ্গ ভঙ্গি করবে না) একবার তিনি আমাদেরকে দলে দলে বিভক্ত দেখে বললেন , তোমরা পৃথক পৃথক রয়েছ কেন? আরেকবার আমাদের সামনে এসে বললেন , তোমরা এমন ভাবে কাতার বাধবে, যেমনিভবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতার বন্দী হয়ে থাকেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ফেরেশতাগণ তাঁদের রবের সামনে কীভাবে কাতার বন্দী হন? তিনি বললেন , ফেরেশতাগণ সামনের কাতারগুলী আগে পূর্ণ করেন এবং গায়ে গায়ে লেগে দাড়ান।
৮৫১ আবূ সাঈদ আল-আশাজ্জ (রহঃ) ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
৮৫২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সংগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষে ডান-বাম দিকে হাত ইশারা করে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’- বলতাম। তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমরা চঞ্চল ঘোড়ার লেজ নাড়ার মত হাত ইশারা করছ কেন? (সালাত (নামায/নামাজ)-এর বৈঠকে) উরুর ওপর হাত রেখে ডানে-বামে অবস্হিত তোমাদের ভাইকে (মুখ ফিরিয়ে) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতূল্লাহ’ বলাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট।
৮৫৩ জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) পড়েছি। আমরা যখন সালাম ফিরাতাম, হাত দিয়ে ইশারা করে বলতাম, ‘আসসালামু আলাইকুম’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বললেনঃ কি ব্যাপার তোমরা হাত দিয়ে ইশারা করছ- মনে হচ্ছে যেন দুষ্ট ঘোড়ার লেজ। তোমাদের কেউ যখন সালাম করে সে যেন তার সাথের লোকের দিকে ফিরে সালাম করে এবং হাত দিয়ে ইশারা না করে।
৮৫৪ আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আমাদের কাঁধ স্পর্শ করে বলতেনঃ তোমরা সমান্তরালভাবে দাঁড়াও এবং আগে-পেছে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দাঁড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তর মতভেদে লিপ্ত হয়ে পড়বে। বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যাক্তিরা আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে। অতঃপর এই গুণে যারা তাদের নিকটবর্তী তারা পর্যাক্রমে এদের কাছাকাছি দাঁড়াবে। আবূ মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিন্তু আজকাল তোমাদের মধ্যে চরম বিভেদ-বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে।
৮৫৫ ইবনু উয়ানায়া হতে এই সূত্রেও উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
৮৫৬ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও জ্ঞানী লোকেরা আমার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তাদের কাছাকাছি যোগ্যতাসম্পন্ন লোকেরা দাঁড়াবে। তিনি একথা তিনবার বলেছেন। সাবধান! তোমরা (মসজিদে) বাজারের মত শোরগোল করবে না।
৮৫৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা রাখবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্ণতার অংশ।
৮৫৮ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাতার পূরা কর। কেননা আমি তোমাদেরকে পিছন হতে দেখে থাকি।
৮৫৯ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রহঃ) কতিপয় হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে আমাদের নিকট বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে কাতার সোজা রাখবে। কেননা, কাতার সোজা করা সালাত (নামায/নামাজ)-এর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
৮৬০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ও ইবনু বাশশার (রহঃ) নুমান ইবনু বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের কাতার সমূহ সোজা রাখবে। নতুবা আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।
৮৬১ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … নুমান ইবনু বাশীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতার গুলোকে এমন ভাবে সোজা করে দিতেন যেন তিনি ধনুকের কাঠিটি সোজা করছেন। যতক্ষন না তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা বিষয়টি তাঁর নিকট হতে যথাযথ ভাবে বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন (হুজরা হতে) বের হয়ে এসে স্বীয় স্হানে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবেন, এমন সময় দেখতে পেলেন যে, এক ব্যাক্তির বক্ষদেশ কাতার হতে আগে বেড়ে আছে। তখন বললেন , আল্লাহর বান্দ্বারা! তোমরা তোমাদের কাতার অবশ্যই সোজা কর। নতুবা আল্লাহ তোমাদের বিভেদ করে দিবেন।
৮৬২ হাসান ইবনুুর-এরাবী (রহঃ), আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ আওইয়ানাহ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে আপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৬৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানত এবং লটারী ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকত তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারী করত এবং যদি (যূহরের সালাত (নামায/নামাজ) আওওয়াল ওয়াক্তে গমনের – ফযিলত যদি তারা জানত তবে তারা এর জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের মাহাত্ম্য যদি অবহিত হত, তবে তারা ঐ দুটির জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আগমন করত।
৮৬৪ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাগণকে পিছনের কাতারে দেখে- বললেন , আমার নিকটে আস এবং প্রথম কাতার পূরা কর, অতঃপর দ্বিতীয় কাতারের লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করবে। এমন কিছু লোক সবসময় থাকবে যারা সালাত (নামায/নামাজ) পিছনে আল্লাহ তাদেরকে (নিজ রহমত হতেও) পিছনে রাখবেন।
৮৬৫ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল-এরহমান আদ-দারিমী (রহঃ) … আবূ সাঈদ আল-খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে দেখলেন, তারা মসজিদের পেছনের দিকে আছেন। তারপর উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৮৬৬ ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনু হারব আন-ওয়াসিতী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (অথবা বলেছেন তারা) যদি প্রথম কাতারের মাহাত্ম্য অবগত হতো, তবে লটারী করতে হতো। ইবনু হারব (রহঃ) বর্ণনা করেছেন, প্রথম কাতারে লটারী করা ছাড়া কেউ যেতে পারত না।
৮৬৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার। আর স্ত্রী লোকদের কাতারের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে শেষ কাতার (যা পুরুষের কাতার হতে দুরে থাকে), এবং সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রথম কাতার (যদি পুরুষদের কাতারের নিকটে হয়)।
৮৬৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূহায়ল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উপরোক্ত রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৮৬৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি তহবন্দ খাটো হবার দরুন মানুষকে বালকের ন্যায় তাদের তহবন্দ গলায় বেঁধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তখন জনৈক ব্যাক্তি বলল, হে নারী সমাজ! পুরুষরা তাদের শির উত্তোলন না করা পর্যন্ত তোমরাও সিজদা হতে শির উত্তোলন করবে না।
৮৭০ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … সালিমের পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কারো ন্ত্রী মসজিদে যেতে চাইলে তাকে নিষেধ করবে না।
৮৭১ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের স্ত্রী লোকগণ মসজিদে যেতে চাইলে তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিবে না। রাবী (সালেম) বলেন, বিলাল ইবনু আবদুল্লাহ বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব। রাবী (সালেম) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) তার দিকে ফিরে অকথ্য ভাষায় তাকে তিরস্কার করলেন। আমি তাকে এর পূর্বে কখনো এভাবে তিরস্কার করতে শুনিনি। তিনি আরো বললেন, আমি তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করছি, আর তুমি বলছঃ আল্লাহর শপথ! আমরা অবশ্যই তাদেরকে বাধা দিব।
৮৭২ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর বাঁদীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিওনা।
৮৭৩ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মহিলারা মসজিদে যাওয়ার জন্য তোমাদের কাছে অনুমতি চাইলে তাদেরকে অনুমতি দিও।
৮৭৪ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদেরকে রাতের বেলা, মসজিদে যেতে বাধা দিওনা। আবদুল্লাহ ইবনু উমারের এক ছেলে (বিলাল) বলল, আমরা তাদেরকে বের হতে দিবনা। কেননা লোকেরা একাকে ফ্যাসা’দর রূপ দিবে। বারী বলেন, ইবনু উমার তার বুকে ঘুষি মেরে বললেন, আমি বলছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তুমি বলছ আমরা তাদেরকে (বাইরে যেতে) ছেড়ে দিব না!
৮৭৫ এই সনদে আ’মাশ থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৮৭৬ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকদের রাতে মসজিদে যেতে অনুমতি দিবে। তখন ওয়াকিদ নামক তার এক পূত্র বলল যে, তারা সেখানে গিয়ে প্রতারণা করবে। একথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) তার বুকে হাত মেরে বললেন, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি বলছ, তাদেরকে যেতে দিবে না?
৮৭৭ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, তোমরা তোমাদের ন্ত্রীলোকগণকে রাতে মসজিদে পূণ্য লাভের জন্য যেতে নিষেধ করনা, যখন তারা তার অনুমতি চাইবে। তখন বিলাল বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তাদেরকে নিষেধ করব। একথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন , আমি বলছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আর তুমি বলছ, আমরা তাদেরকে নিষেধ করব!
৮৭৮ হারুন ইবনু সাঈদ আন-আয়লী (রহঃ) যায়নাব আস-সাকাফিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন স্ত্রীলোক যখন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে (মসজিদে) আসে, তখন সে যেন ঐ রাতে খোশবূ না লাগায়।
৮৭৯ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী মসজিদে আসবে, সে যেন খোশবূ ষ্পর্শও না করে।
৮৮০ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী কোন সুগন্ধির ধুনি নিবে, সে যেন ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের সাথে শরীক না হয়।
৮৮১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) … আমরা বিনতে আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর স্ত্রী আয়িশা (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি এ যুগের নারীদের আচরণের অবস্হা দেখতেন, তবে তাদেরকে বনী ইসরাঈলী নারীদের ন্যায় মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন। রাবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বনী ইসরাঈলী নারীদেরকে কি মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন , হ্যা।
৮৮২ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, আমর আন-নাকিদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি অনুরুপ সনদে হাদীস বর্ণনা
৮৮৩ আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনুুস-সাব্বাহ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহ তায়াআলার পবিত্র বাণী সম্পর্কে বলেন, (মধ্যম আওয়াজে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ সম্বলিত) এই আয়াত এমন সময় অবতীর্ণ হয়, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আত্মগোপন করে অবস্থান করছিলেন। রাসূলল্লাহ তার সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় উচ্চস্বরে কিরা-আত পাঠ করতেন। মুশরিকরা তা শ্রবণ করে কুরআন, তা অবতীর্ণকারী এবং যার প্রতি তা অবতীর্ণ হয়েছে তাকে গালি-গালাজ করত। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন আপনি সালাত (নামায/নামাজ) এত উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করবেন না যে, মুশরিকগণ তা শুনতে পায় এবং এত নিম্নস্বরেও পাঠ করবেন না যে, আপনার সাহাবীগণ তা শুনতে না পায়। বরং মধ্যম আওয়াজে কুরআন পাঠ করুন।
৮৮৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশ দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে (অথাৎ অধিক উচ্চস্বরেও দুআ করবে না, আর অধিক নিম্নস্বরেও দুআ করবে না)
৮৮৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) সুত্রে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৮৮৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণীঃ সম্পর্কে বলেন, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ওহী নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসতেন তখন তার জিব্বা ও ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন এতে তাঁর ভীষণ কষ্ট হতো। এবং এ তার চেহার দেখে চিনা যেত। অতঃপর আল্লাহ তা’য়াআলা নাযিল করলেন, অর্থাৎ তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্তে ওন্ঠ সঞ্চালন করবেন না, আপনার সীনায় আমিই তো সংরক্ষন করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন। আপনি মনোযোগ সহকারে শুনূন এবং চুপ থাকুন। আপনার যবানে পাঠ করানোর দায়িত্ব আমারই। রাবী বলেন এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আগমণ করতেন তখনঁ মাথা নত করে করে থাকতেন এবং জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্গমন করলে তিনি আল্লাহর অঙ্গীকার মুতাবিক হুবহু তা আবৃত্তি করতেন।
৮৮৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণী সম্পর্কে বলেন, কুরআন নাযিলের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তড়িঘড়ি তা আয়ত্ত করার নিমিত্ত ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন। এতে তাঁর অত্যধিক কষ্ট হতো। (রাবী বলেন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রহঃ) আমাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ ওষ্ঠ সঞ্চালন করতেন আমি সেরুপ ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করব। সাঈদ বলেন, যে ভাবে ইবনু আব্বাস (রাঃ) ম্বীয় ওষ্ট নাড়াচ্ছিলেন, আমিও তদ্রূপ ওষ্ট নাড়াচ্ছি এরপর তার ওষ্ঠদ্বয় সঞ্চালন করলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়াআলা এই আয়াত নাযিল করলেন: আপনার সীনায় তা সংরক্ষণ করব। যেন পরে আপনি তা পাঠ করতে পারেন। “আপনি মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং চুপ থাকুন। এরপর তা আপনার দ্বারা পাঠ করানোর দায়িত্ত আমারই”। রাবী বলেন, এরপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ওহীসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করতেন, তখন তা নীরবে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতেন এবং জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্গমন করলে পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু তা আবৃতি করতেন।
৮৮৮ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বীনদের নিকট কুরআন পাঠ করেন নি এবং তাদের দেখেন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সাহাবীর সঙ্গে উকায বাজারে গমন করেন তখন শয়তানদের জন্য আকাশের সংবাদ সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তানদের উপর অগ্নিশিখা নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। তাই একদল শয়তান তাদের নিকট গিয়ে বলল, যে, আকাশের খবরাখবর জ্ঞাত হওয়া আমাদের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং আমাদের উপর আগুনের শিখা বর্ষিত হচ্ছে। তারা বলল, নিশ্চয়ই কোন নতূন ঘটনা ঘটে থাকবে। তোমরা দুনিয়ার পূর্ব হতে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত খোজ নিয়ে দেখ, কি কারণে আমাদের নিকট আকাশের খবর আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং তারা দুনিয়ার পূর্ব-পশ্চিম ঘূরে বেড়াতে লাগল। তাদের কিছু সংখ্যক লোক তেহামার পথে উকায বাজারে গমন করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ‘নাখল’- নামক স্হানে স্বীয় সাহাবীগণ সহ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর ছিলেন। তারা (জ্বীন সম্প্রদায়) যখন কুরআন পাঠ শুনল, তখন তাতে মনোনিবেশ করল এবং বলল আকাশের খবরাখবর বন্ধ হওয়ার কারণ একমাত্র এটাই এরপর তারা তাদের কাওমের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমাদের কাওম। আমরা এক আশ্চর্য কুরআন শ্রবণ করেছি, যা সত্য পথ-নির্দেশক। আমরা তাতে বিশ্বাস স্হাপন করেছি এবং এবং আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না। তখন আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ এর উপর (এ ওহী) –অবতীর্ণ করেন- বলুন: আমার প্রতি ওহী নযিল হয়েছে যে, জ্বীনদের একটি দল শুনেছে -।
৮৮৯ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলকামাকে জিজ্ঞাসা করলাম জ্বীন-এরজনী -(অর্থাৎ যে রাত্রিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জ্বীনদের সহিত সাক্ষাৎ হয়েছিল) তে কি ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বললেন , আমি ইবনু মাসঊদ (রাঃ) -কে জিজ্ঞাসা করেছি, জ্বীন-এরজনী –তে কি তোমাদের মধ্য হতে কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিল? তিনি বললেন , না! কিন্তু একরাত্রি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ আমরা তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। এবং তাঁকে পর্বতের উপত্যকা ও ঘাঁটিসমূহে খোঁজাখুজি করলাম। আমরা ভাবলাম জ্বীনেরা তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে কিংবা শুপ্ত ঘাতক তাকে মেরে ফেলেছে। আমরা রাত্রটি দ্বারুন উদ্বেগে কাটালাম। ভোরবেলা আমরা (দেখলাম যে,) তিনি হিরা (জাবাল-ই-নূর পর্বত, যা মক্কা ও মীনার মধ্যস্হলে অবস্হিত) পর্বতের দিক হতে আসছেন। রাবী বলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনাকে আমরা হারিয়ে বহু খোঁজাথুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। ফলে দারুন উদ্বেগের মধ্যে আমরা রাত কাটিয়েছিা তিনি বললেন , জ্বীনদের একজন প্রতিনিধি আমাকে নেওয়ার জন্য এসেছিল। আমি তার সঙ্গে গেলাম এবং তাদের নিকট কুরআন পাঠ করলাম। এরপর তারা আমাকে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেল এবং তাদের নিদর্শন ও তাদের আগুনের নিদর্শনগুলো দেখাল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করল। তিনি বললেন , যে সমস্ত প্রাণী আল্লাহর নামে যবেহ হবে, তাদের হাড্ডি তোমাদের খাদ্য। তোমাদের হস্তগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা গোস্তে পরিণত হয়ে যাবে, এবং সকল উষ্ট্রের বিষ্ঠা তোমাদের জীব জন্তুর খাদ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , তোমরা ঐ দুটি জিনিস (অস্হি ও উষ্ট্রের বিষ্ঠা) দ্বারা ইস্তিঞ্জা করবে না। কেননা, ওগুলো তোমাদের ভাই (জ্বীন ও তাদের জানোয়ার) দের খাদ্য।
৮৯০ আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) দাঊদ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে পর্যন্ত আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। শাবী বলেন, জ্বীনেরা তার নিকট তাদের খাদ্যের জন্য গ্রার্থনা করেছিল এবং তারা ছিল জাযীরার অধিবাসী।
৮৯১ আবূ বাবর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পর্যন্ত বর্ণনা করেন। পরের অংশ তিনি বর্ণনা করেন নি।
৮৯২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জ্বীন-এরজনী-তে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম না। কিন্তু আমার বাসনা জাগে যে, আহা! সেদিন যদি আমি তাঁর সঙ্গে থাকতাম।
৮৯৩ সাঈদ ইবনু মুহাম্মাদ আল জারমী ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … মা’ন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতার নিকট শুনেছি, তিনি বলেন আমি মাসরূককে জিজ্ঞাসা করেছি যে রাতে জ্বীনেরা এসে কুরআন শ্রবণ করল সে রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কে তাদের উপস্হিতি সংবাদ দিয়েছিল? তিনি বলেন, আমাকে তোমার পিতা অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, তাঁকে জ্বীনের উপস্হিতি একটি বৃক্ষ সংবাদ দিয়েছিল।
৮৯৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না আল আনাযী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও কখনও আমরা আয়াত শুনতে পেতাম। আর যুহারের প্রথম রাকআত সূরা ফতিহা ও দুটি সূরা পাঠ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত খাট করতেন। অনুরুপ ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)ও।
৮৯৫ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও আসরের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতিহা ও আরও একটি সূরা পাঠ করতেন এবং কখনও আয়াত আমাদেরকে শোনাতেন। আর শেষের দু রাকআতে শুধু-সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।
৮৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিয়াম (দাঁড়ান)-এর পরিমাপ করতাম। যুহরের প্রথম দুই রাকআতে তাঁর কিয়াম, আলিফ লা-ম মীম তানযীল আস-সিজদাহ পাঠের সময়ের পরিমাণ হত। আর শেষ দুই রাকআতে তার অর্ধেক পরিমাণ। আসরের প্রথম দুই রাকআত যুহুরের শেষ দু-রাকআতের পরিমাণ দাড়াতেন এবং আসরের শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ এবং আবূ বাকর (রাঃ) তার রিওয়ায়াতে সূরা আলিফ লা-ম মীম তানযীল-এর উল্লেখ করেন নি, বরং ত্রিশ আয়াত পরিমাণ বলেছেন।
৮৯৭ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের প্রথম দুই রাআতের প্রত্যেক রাকআতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ কিরা’আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকাআত পনের আয়াত পরিমাণ। অথবা বলেন, এর অর্ধেক পরিমাণ। এবং আসরের প্রথম দুই রাকআতের প্রত্যেক রাকআতে পনের আয়াত পরিমাণ কিরা-আত পাঠ করতেন এবং শেষ দুই রাকআতে এর অর্ধেক পরিমাণ।
৮৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, কুফাবাসিগণ সা’দের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে উমার ইবনুল খাত্তাবের নিকট অভিযোগ করল। উমার (রাঃ) তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি আগমন করলে উমার তাঁর সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে কুফা বাসীদের অভিযোগের কথা অবহিত করলেন। সা’দ (রাঃ) বললেন , আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতই তাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে থাকি। তাতে একটুকুও ক্রটি করিনা। আমি প্রথম দুই রাকআত লম্বা করি এবং শেষের দুই রাকআত সংক্ষেপে আদায় করে থাকি। তখন উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন , হে আবূ ইসহাক! তোমার নিকট হতে এটাই আশা করা যায়।
৮৯৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল মালিক উমায়র (রাঃ) সুত্রে এই সনদে বর্ণনা করেন।
৯০০ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার (রাঃ) সা’দ (রাঃ) কে বললেন , মানুষ তোমার বিরুদ্ধে সকল ব্যাপারে অভিযোগ করছে এমন কি সালাত (নামায/নামাজ)-এর ব্যাপারেও। সা’দ (রাঃ) বললেন , আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর অনুসরণ করার ক্ষেত্রে মোটেই কসুর করি না। উমার (রাঃ) বললেন , তোমার থেকে এটাই আশা করা যায়। অথবা বললেন , তোমার সম্পর্কে আমার এই রূপই ধারণা।
৯০১ আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত। অবশ্য তিনি কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ (রাঃ) বললেন, আরব বেদূঈনগণ আমাকে সালাত (নামায/নামাজ) শিক্ষা দিবে।
৯০২ দাউদ ইবনু রুশায়দ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। অতঃপর কোনও আগমনকারী ‘বাকী’ নামক স্হানে গমন করত এবং তার প্রয়োজন সেরে পরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে ফিরে আসত। তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কিরা’আত) দীর্ঘ করার কারণে প্রথম রাকআতেই থাকতেন।
৯০৩ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) কাযা’আহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট আগমন করলাম। তখন তাঁর নিকট অনেক লোকের সমাগম ছিল। তারা চলে গেলে আমি বললাম, এরা যা জিজ্ঞাসা করেছে, আমি আপনার নিকট তা জিজ্ঞাসা করব না, বরং আমি আপনাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সার্গীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। তিনি বললেন, এতে তোমার কোনও ফায়দা নেই (কেননা, তুমি ঐরূপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সক্ষম হবে না) তিনি (কাযা’আহ) পূনরায় তাই জিজ্ঞাস করলেন। তখন আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করা হত। তারপর আমাদের মধ্য হতে কেউ ‘বাকী’ পর্যন্ত যেত এবং (প্রাকৃতিক) প্রয়োজন সেরে নিজ গৃহে এসে উযূ (ওজু/অজু/অযু) বানাত। অতঃপর মসজিদে ফিরে যেত, তখনও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাক’আতেই থাকতেন।
৯০৪ হারূন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সাইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং সূরা মু’মিনূন শুরু করলেন। যখন মূসা ও হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অথবা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নামের উল্লেখিত আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাশি আসল। তিনি রুকুতে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনুুস সাইব (রাঃ) তখন উপস্থিত ছিলেন। আব্দুর রাযযাকের রিওয়ায়াতে আছে, তিনি কিরা’আত বন্ধ করে দিলেন এবং রুকুতে গেলেন।
৯০৫ যুহায়র ইবনু হারব, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) । আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তাকভীর পাঠ করতে শুনেছেন।
৯০৬ আবূ কামিল আল-জাহদারী, ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) কুতুবা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তিনি যখন সূরা কাফ তিলাওয়াত শুরু করে আয়াত পর্যন্ত পৌছলেন (রাবী বলেন) আমি আয়াতটি বারবার আবৃত্তি করতে লাগলাম।
৯০৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কুতবা ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সমুন্নত খেজুর গাছ যাতে আছে গুচ্ছ খেজুর (সূরা ক্বাফ, ৫০:১০) পড়তে শুনেছি।
৯০৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) যিয়াদ ইবনু ইলাকা-এর চাচার সুত্রে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )প্রথম রাক’আতে এই আয়াত পড়লেন এবং কখনও বলেছেন, সূরা ‘ক্বাফ’ (পড়েছেন)।
৯০৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা পড়তেন। তাঁর অন্যান্য সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত হত।
৯১০ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি সিমাক সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করতেন ঐ সকল লোকের মত (দীর্ঘ করে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালতে কিংবা তৎসদৃশ (সুরা সমূহ) পড়তেন।
৯১১ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) পড়তেন এবং আসরের সালাত (নামায/নামাজ)ও অনুরুপ সূরা এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) তার চেয়েও দীর্ঘ সুরা পড়তেন।
৯১২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু সামূরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) তদপেক্ষা দীর্ঘ সূরা পাঠ করতেন।
৯১৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) ষাট হতে একশ’ আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৪ আবূ কুরায়র (রহঃ) আবূ বারযা আন-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) ষাট হতে একশ, আয়াত পাঠ করতেন।
৯১৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উম্মল ফযল বিনত হারিস (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে সূরা পাঠ করতে শুনে বললেন, হে আমার পুত্র! তুমি এই সূরাটি পাঠ করে আমাকে ম্মরণ করিয়ে দিলে যে , এটি এমন এক সূরা যা আমি সর্বশেষে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতে শুনেছি।
৯১৬ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) যুহরি (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন। কিন্তু সাহিল কর্তুক বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত এই কথাটি আছে, এরপর ওফাত পর্যন্ত তিনি আর কোনও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি।
৯১৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) সূরা তূর পাঠ করতে শুনেছি।
৯১৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব, হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেন।
৯১৯ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ছিলেন। তিনি ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং এক রাকআতে সূরাটি পাঠ করেন।
৯২০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। তিনি তাতে সূরা পাঠ করলেন।
৯২১ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পাঠ করতে শুনেছি। আমি তার থেকে অধিক সুন্দর আওয়াজ কারও কাছে শুনিনি।
৯২২ মুহাম্মাদ ইবনু আববাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ফিরে আসতেন এবং তার নিজ লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করতেন। এক রাতে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। অতঃপর স্বীয় লোকদের কাছে আসলেন। এবং তাদের ইমামত করলেন। এতে তিনি সূরা বাকারা পড়া শুরু করেন। এতে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে সালাম ফিরাল এবং একাকী সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে চলে গেল। লোকেরা তাকে বলল, তুমি কি মুনাফিক হয়ে গিয়েছ? সে বলল, না আল্লাহর কসম আমি মুনাফিক নই। আমি অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যাব এবং তাকে একথা জানাব। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসল এবং বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো দিনে উট দিয়ে পানি সেচের কাজ করি। আর মু’আয (রাঃ) আপনার সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আসেন এবং সূরা বাকারা পাঠ করা শুরু করেন। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুা’আযের প্রতি ফিরলেন এবং বললেন, হে মু’আয তুমি কি ফেৎনা সৃষ্টি কারী? তুমি এই সূরা পাঠ করবে। সুফিয়ান বলেন, আমি আমরকে বললাম, আবূ যুবায়র (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, পাঠ করবে। আমর (রাঃ) বললেন এমনই।
৯২৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু রুমহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু’আয ইবনু জাবাল আল-আনসারী (রাঃ) তাঁর লোকজনদের নিয়ে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন এবং তা খুবই দীর্ঘ করেন। আমাদের মধ্যে জনৈক ব্যাক্তি সরে গিয়ে একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। মু’আযকে এ বিষয়ে অবগত করা হল। তখন বললেন, ঐ ব্যাক্তি মুনাফিক! এই খবর ঐ ব্যাক্তির নিকট পৌছল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেল এবং মু’আযের উক্তি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয (রাঃ)-কে বললেন, হে মু’আয তুমি ফিতনা সৃষ্টি কারী হতে চাও? তুমি যখন সালাত (নামায/নামাজ) ইমামতি করবে, তখন পাঠ করবে।
৯২৪ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রহঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর ম্বীয় লোকদের নিকট আসতেন এবং তাদের নিয়ে সেই সালাত (নামায/নামাজ)ই ইমামতি করতেন।
৯২৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূর রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। অতঃপর স্বীয় কাওমের মসজিদে এসে তাদেরকে নিয়ে সেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৯২৬ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মাসঊদ আল আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করে বলল, আমি অমুক ব্যাক্তির কারণে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আসছি না। কেননা, সে আমাদের নিয়ে (সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘ করে। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নসীহত করার ক্ষেত্রে কখনও এত অধিক রাগান্বিত হতে দেখি নি, যতটা দেখলাম সে দিন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা (দ্বীন সম্পর্কে) ঘৃণা তৈরি করেছে। তোমাদের যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, সে যেন সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করে। কেননা, তার পিছনে বৃদ্ধ, দুর্বল ও অভাবগ্রস্ত (মানুষ) থাকে।
৯২৭ আবূ বকর ইবনু শায়বা, ইবনু নুমায়র ও ইবনু আবূ আমর (রহঃ) ইসমাঈল সুত্রে উপরোক্ত সনদে হুশায়মের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৯২৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যখন তোমাদের মধ্যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, তখন (সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা, তাদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল, ও রুগ্ন, লোক থাকে। আর যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন যেভাবে মন চায় তা আদায় করবে।
৯২৯ ইবনু রাফি (রহঃ) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রহঃ) আমাদের নিকট মুহাম্মাদুর বাসূলূল্লাহ -এর কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। রাবী আরও বলেন, তার মধ্যে একটি এই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সংক্ষিপ্ত ভাবে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। কেননা, তাদের মধ্যে বৃদ্ধ ও দুর্বল (লোক) থাকে। আর যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন যত ইচ্ছা তা আদায় করবে।
৯৩০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সংক্ষিপ্ত করবে। কেননা, লোকদের মধ্যে দুর্বল, রুগ্ন ও অভাবী (মানুষ) থাকে।
৯৩১ আব্দুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনুল লাইস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এই সনদে) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রুগ্ন এর স্থলে বৃদ্ধ বলেছেন।
৯৩২ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল-আস আস-সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, তুমি তোমার কাওমের ইমামত করবে। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এই ব্যাপারে ভয় পাই। তিনি বললেন, আমার কাছে আস। এবং আমাকে তাঁর সামনে বসালেন। অতঃপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। এরপর বললেন, ফিরে বস এবং আমার পিঠের ওপর দুই কাঁধের মাঝে তার হাত রাখলেন। অতঃপর বললেন, নিজ কাওমের ইমামত কর। আর যে কেউ তার কাওমের ইমামত করবে, সে যেন তার সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষিপ্ত করে। কেননা, তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, রুগ্ন, দুর্বল এবং এমন লোকও রয়েছে যার কোন প্রয়োজন আছে। অবশ্য যখন একাকী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সে যেরুপ ইচ্ছা করতে পারে।
৯৩৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) উসমান ইবনু আবূল আস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে শেষ উপদেশ দিয়েছিলেন তা হচ্ছে, যখন তুমি তোমার কাওমের ইমামত করবে, তখন তাদের সালাত (নামায/নামাজ) সংক্ষেপ করবে।
৯৩৪ খালাফ ইবনু হিশাম ও আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -সংক্ষেপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন কিন্তু তা হতো পূর্ণাঙ্গ।
১৪৩৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা রাতে পথ চলছিলাম। রাত যখন শেষ হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকট বর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য হয়ে এলো এবং প্রভাত নিকটবর্তী হল, তখন আমরা শুয়ে পড়লাম। এটি মুসাফিরের জন্য এমন একটি কাঙ্খিত বস্তু যার তুলনা হয় না। তারপর সূর্য কিরণ ছাড়া আমাদের কেউ জাগাতে পারেনি। পরে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সহ সালম ইবনু যারীরের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেনা উক্ত হাদীসে এই বর্ণনাও রয়েছে যে, উমর (রাঃ) জেগে উঠে লোকদের অবস্হা দেখলেন। তিনি ছিলেন উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী এবং খুবই শক্তিশালী। তারপর তিনি উচচঃস্বরে তাক্ববীর দিতে লাগলেন। তাঁর শব্দের উচ্চ সূরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তাঁর জাগার পর লোকেরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে নানা অভিযোগ করতে লাগল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন ক্ষতি নেই, এই স্হান ত্যাগ কর পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৯৩৯ হামিদ ইবনু উমার আল-বাকরাবী ও আবূ কামিল ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন আল-জাহদারী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) গতীর ভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। অতএব, তাঁর কিয়াম (সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ান), রুকু, রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ান, অতঃপর সিজদা এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী বসা অতঃপর (দ্বিতীয়) সিজদা এবং সালাম ও (মূসা ল্লীদের দিকে) ফিরে বসার মধ্যবতী বৈঠক-এই সবগুলোকে প্রায়ই সমান সমান পেয়েছি।
৯৪০ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আল-আম্বারী (রহঃ) আল হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আশ’আসের শাসন কালে জনৈক ব্যাক্তি যার নাম তিনি উল্লেখ করেছিলেন কুফা বাসীদের উপর তার আধিপত্য স্হাপন করেছিল। আবূ উবায়দা ইবনু আবদুল্লাহ কে সালাত (নামায/নামাজ) ইমামত করতে নির্দেশ দিলেন। সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কালে তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন আমার এ দু’আটি পাঠ করা পরিমাণ সময় পর্যন্ত দাড়িয়ে থাকতেন। (হেআল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমান ও যমীন পরিপূর্ণ এবং পরিপূর্ণ-তা ছাড়াও যত টূকু আপনি ইচ্ছা করেন। হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। আপনি যা দান করবেন তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি যা রোধ করবেন তা দান করারও কেউ নেই। এবং কোনও সম্পদশালী কেই তার সস্পদ আপনার শাস্তি থেকে বাচাতে পারবে না। ) হাকাম বলেন, আমি একথা আব্দুর-এরাহমান ইবনু আবূ লায়লার নিকট বললাম। তিনি বললেন, আমি বারা ইবনু আযিব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রুকু এবং রুকু হতে দাঁড়ান, তারপর সিজদা এবং দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময় এ সকল প্রায়ই সমান সমান হত। শুবা (রহঃ) বলেন, আমি আমর ইবনু মুররা’র সাথে এ হাদীস নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি বললেন, আমি আব্দুর-এরাহমান ইবনু আবূ লায়লাকে দেখেছি, তার সালাত (নামায/নামাজ) এরুপ ছিল না।
৯৪১ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আল-হাকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাতার ইবনু নাজিয়া যখন কুফার উপর আধিপত্য স্হাপন করলেন তখন আবূ উবায়দাকে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করলেন।
৯৪২ খালাফ ইবনু হিশাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিয়ে ঐরুপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে ক্রটি করব না, যে রুপ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে আমাদেরকে নিয়ে রাবী বলেন, আমি আনাসকে কিছু কাজ করতে দেখতাম, তোমাদেরকে তা করতে দেখিনা, তিনি যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা ভাবে দাড়িয়ে যেতেন, এমনকি কেউ কেউ মনে করত যে, তিনি (হয়ত) ভুলে গেছেন। প্রথম সিজদা থেকে মাথা তুলেও এরুপ বসে যেতেন যে, কেউ কেউ মনে করত, তিনি (হয়ত) ভূলে গেছেন।
৯৪৩ আবূ বাকর ইবনু নাফি আল আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)কে পূর্ণরুপে আদায় করা সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত সালাত (নামায/নামাজ) আমি আর কারও পিছনে আদায় করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর রুকন সমূহ প্রায় সমান সমান হত। আবূ বকরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর (রুকন সমূহ) ও প্রায় সমান সমান হত। যখন ওমর (রাঃ)-এর যামানা আসল, তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) দীর্ঘ করলেন। রাসূলল্লাহ যখন বলতেন, তখন এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, আমরা মনে করতাম সম্ভবত তিনি বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন। তারপর সিজদা করতেন এবং দুই সিজদার মাঝে এত দীর্ঘ সময় বসে থাকতেন যে, আমরা মনে করতাম তিনি সম্ভবত বেখেয়াল হয়ে পড়েছেন।
৯৪৪ আহমাদ ইবনু ইউনুস ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) আমার নিকট বলেছেন, তিনি অসত্য বলেন নি। তাঁরা (সাহাবায়ে কিরাম) রাসূলল্লাহ -এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন ‘রুকু” থেকে মাথা তুলতেন, তখন তার কপাল মাটিতে না রাখা পর্যন্ত আমাদের কাউকে পিঠ ঝুকাতে দেখিনি। অতঃপর তার পিছনের সবাই সিজদায় চলে যেতেন।
৯৪৫ আবূ বাকর ইবনু খাল্লাদ আল-বাহিলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) আমার নিকট বলেছেন এবং তিনি অসত্য বলেন নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন – বলতেন, আমাদের মধ্যে কেউ পিঠ ঝুকাতনা যে পর্যন্ত না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় যেতেন। (তিনি সিজদায় তারপর আমরা সিজদায় যেতেন)।
৯৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুর-এরহমান ইবনু সাহম আনতাকী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে, তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন, তাঁরাও রুকু করতেন। যখন তিনি রুকু হতে মাথা উঠাতেন এবং বলতেন। বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বলেন তখন আমরা দাড়িয়ে থাকতাম। তারপর যখন তাকে মাটির উপর কপাল রাখতে দেখতাম, তখন আমরাও তার অনুসরণ করতাম।
৯৪৭ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) বারা ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়) আমাদের এ নিয়ম ছিল আমরা যতক্ষন পর্যন্ত তাঁকে সিজদা করতে না দেখতাম, ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুঁকাত না।
৯৪৮। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু সাহম আল আনতাকী (রহঃ) বাড়া ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত আদায় করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন, তারাও রুকু করতেন। যখন তিনি রুকু হতে মাথা উঠাতেন এবং সামিয়াল্লা হুলিমান হামিদাহ বলতেন, তখন আমরা দাড়িয়ে থাকতাম। তারপর যখন তাকে মাটির উপর কপাল রাখতে দেখতাম, তখন আমরাও তাঁর অনুসরণ করতাম।
৯৪৯। যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) বাড়া (ইবনু আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (সালাত আদায়ে) আমাদের নিয়ম ছিল আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সিজদা করতে না দেখতাম, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুকাত না।
৯৫০। মুহরিয ইবনু আবূ আওন (রহঃ) আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে ফজরের সালাত আদায় করলাম। তখন তাকে পড়তে শুনলাম, অর্থাৎ “আমি শপথ করি পশ্চাঁদপসরণকারী নক্ষত্রের, যা প্রত্যাগমন করে ও অদৃশ্য হয়। (সূরা আত-তাকবীরঃ ১৫-১৬) এবং তিনি পূর্ণভাবে সিজদায় না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের কেউ পিঠ ঝুকাত না।
৯৫১। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে পিঠ উঠাতেন, তখন বলতেন, অর্থাৎ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ, আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ, মিলাসসামাওয়াতি ওয়া মিল আরদি ওয়া মিল —- (অর্থাৎ প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ্ শুনেন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! সকল প্রশংসা আপনারই জন্য যা আসমানপূর্ণ ও যমিনপূর্ণ এবং পূর্ণতা ছাড়াও যা আপনি ইচ্ছা করেন)
৯৫২ উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ও যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে ‘ওয়াসখ” শব্দের স্হলে ‘দ্বারান, উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইয়াযীদের বর্ণনায় ‘ওয়াসাখ’- শব্দের স্হলে “দানাস’ বলা হয়েছে।
৯৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর-এরাহমান আদ-দারিমী (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন বলতেনঃ
৯৫৪. আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন এই দুআ পড়তেন :
৯৫৫ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পর্যন্ত বর্ণিত আছে এই রিওয়ায়াতে (বর্ণিত দু’আর) পরবর্তী অংশের উল্লেখ নাই।
৯৫৬ সাঈদ ইবনু মানসূর, আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মৃত্যু রোগে আক্রান্ত অবস্হায় হুজ্বরা শরীফের) পর্দা খুলে দিলেন। তখন লোকেরা আবূ বকরের পিছনে কাতার বন্দী অবস্হায় ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোকগণ। এখন আর সত্য স্বপ্ন ব্যতীত নবূওয়াতের সুসংবাদ দেওয়ার কিছু অবশিষ্ট থাকবে না (কেননা, আমার উপর নবুওয়াতের সমাপ্তি ঘটেছে) মুসলমানগণ তা দেখবে। তোমরা সাবধান হও। আমাকে রুকূ এবং সিজদায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তোমরা রুকুতে তোমাদের রবের মহত্ত বর্ণনা করবে। এবং সিজদায় অধিক পরিমাণ দুআ পড়বে। তোমাদের দু’আ কবুল হওয়ার উপযুক্ত হাদীসটি আবূ বকর বলে বর্ণনা করেছেন।
৯৫৭ ইয়াহইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ইন্তেকাল করেছেন, সে রোগে আক্রান্ত অবস্হায় আমাদের উদ্দেশ্যে পর্দা খূলে দিলেন। তাঁর মাথায় তখন পট্টি বাধা ছিল। এরপর বললেন, হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছয়েছি? এরুপ তিন বার বললেন। বস্তুত আমার পরে নবুওয়াতের কোনও সুসংবাদ দান কারী থাকবে না। কিন্তু সত্য স্বপ্ন থেকে যাবে। নেক বান্দা তা দেখবে অথবা তাকে দেখানো হবে। তারপর রাবী সুফিয়ানের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।
৯৫৮ আবূ তাহির ও হারামালা (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় (কুরআন) পড়তে নিষেধ করেছেন।
৯৫৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করেছেন।
৯৬০ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু এবং সিজদায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন। আমি বলি না যে, তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
৯৬১ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার হাবীব আমাকে রুকু এবং সিজদারত অবস্হায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন।
৯৬২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ঈসা ইবনু হাম্মাদ আল মিসরী, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ আল মুকাদ্দামী, হারুন ইবনু সাঈদ আল আয়লী, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ইবনু হুজর এবং হান্নাদ ইবনুুস সারী (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু করা কার্লীন কিরাআত পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। তারা সকলেই আলী (রাঃ) সুত্রে বলেছেন যে, তিনি আমাকে রুকু অবস্থায় কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন, কিন্তু সিজদায় কিরাআত পড়ার নিষেধ সম্পর্কে তারা তাদের রিওয়াতে কোন উল্লেখ করেননি। যে রুপ যুহুরী, যায়দ ইবনু আসলাম, ওয়ালীদ ইবনু কাসীর ও দাঊদ ইবনু কায়স উল্লেখ করেছেন।
৯৬৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে সিজদা অবস্হায় (কিরাআত পড়ার) কথার উল্লেখ নেই।
৯৬৪ আমর ইবনু আলী (রাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে রুকুতে থাকাকালীন অবস্হায় কিরাআত পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সনদে আলীর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
৯৬৫ হারুন ইবনু মারূফ ও আমর ইবনু সাওওয়াদ (রহঃ) আবূ হূরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সিজদার অবস্থায়ই বান্দা তার রবের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব, তোমরা (সিজদায়) অধিক পরিমাণ দুআ পড়বে।
৯৬৬ আবূ তাহির ও ইউনূস ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় (এ দু’আটি) পড়তেন – হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন। সল্প এবং অধিক, প্রথম এবং শেষ, প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য।
৯৬৭ যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু এবং সিজদাসমূহে অধিকাংশ সময় এই দু’আটি পাঠ করতেন- তিনি কুরআনের উপর আমল করতেন।
৯৬৮ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের পূর্বে এই দুআটি পাঠ করতেন- আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি দেখছি যে আপনি নতূন নতুন বাক্য বলছেন? এ সব কি? তিনি বললেন আমার উম্মাতের মধ্যে আমার নিদর্শন রাখা হয়েছে। আমি যখন তা দেখি, তখন আমি এই বাক্যগুলো বলতে থাকি নাসর সূরার শেষ পর্যন্ত।
৯৬৯ মুহাষ্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর আমি লক্ষ্য করেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই সালাত (নামায/নামাজ) পড়তেন, তখনই দুআ করতেন এবং বলতেন
৯৭০ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এ দু’আ পড়তেন- আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আামি লক্ষ্য করছি যে, আপনি প্রায় দু’আটি পাঠ করে থাকেন। তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল ইযযাত আমাকে সংবাদ প্রদান করেছেন যে, আমি আমার উস্মাতের মধ্যে অচিরেই একটি নিদর্শন দেখব। তাই যখন আমি তা দেখছি, অধিক মাত্রায় পড়ছি। ঐ নিদর্শন সম্ভবত এই যে, অর্থাৎ মক্কা বিজয় এ কথা বলে তিনি সূরাটি শেষ অবধি পাঠ করলেন:
৯৭১ হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আতাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি রুকু’তে কি বলছ? তিনি বললেন, আমি বলছি। কেননা, ইবনু মুলায়কা আয়িশা (রাঃ) হতে আমর নিকট বর্ণনা করেনঃ আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, আমি এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাছে না পেয়ে মনে করলাম যে, সম্ভবত তিনি তাঁর অন্য কোন ন্ত্রীর নিকট গমন করেছেন। আমি গোপনে তালাশ করলাম এবং (না পেয়ে) ফিরে এলাম। দেখলাম, তিনি রুকু কিংবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) সিজদায় আছেন এবং বলন আমি বললাম, আমার মা-বাপ আপনার জন্য (উৎসর্গিত) আমি এক ধারণায় ছিলাম আর আপনি অন্য কাজে মগ্ন আছেন।
৯৭২ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়রা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বিছানায় না পেয়ে (অন্ধকারে) হাতড়াতে লাগলাম। হঠাৎ আমার হাত খানি তাঁর পায়ের তালুতে গিয়ে লাগল। তিনি সিজদারত আছেন, পা দু-খানি খাড়া রয়েছে। তিনি বলছিলেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার অসন্তোষ থেকে তোমার সন্তোষের মাধ্যমে এবং তোমার আযাব হতে তোমার ক্ষমার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এবং আমি তোমার (শাস্তি) হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে সক্ষম নই। তুমি তেমনই যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছ।
৯৭৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু এবং সিজদায় এ দুআ পড়তেন;
৯৭৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৯৭৫ যুহায়র ইবনু হারব (রাঃ) মাঁদান ইবনু আবূ তালহা ইয়ামুরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আযাদকৃত গোলাম সাওবন (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি বললাম, আপনি আমাকে এমন একটি আমলের সংবাদ দান করুন, যার উপর আমল করলে আল্লাহ আমাকে জানো্নতে দাখিল করাবেন কিংবা তিনি বললেন, আপনি আমাকে আল্লাহর একটি প্রিয়তম আমলের সংবাদ দিন। তিনি নীরব রইলেন। আমি আবার বললাম, তিনি এবারও কিছু বললেন না। অতঃপর আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক সিজদা কর। কেননা, তুমি যখনই আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি সিজদা করবে, তখন এ দিয়ে আল্লাহ তা’আলা তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করে দিবেন। মা’দান বলেন, অতঃপর আবূদ দারদা (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তাঁর নিকটও আমি একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও সাওবান (রাঃ)-এর অনুরুপই বললেন।
৯৭৬ আল-হাকাম ইবনু মূসা আবূ সালিহ (রহঃ) রাবী’আ ইবনু কা’ব আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রাত যাপন করি। আমি তার পানি এবং তার যা প্রয়োজন তা এগিয়ে দই। তখন তিনি আমাকে বললেন, চাও। আমি এ-ই চাই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি অধিক সিজদা দ্বারা তোমার নিজের ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে।
৯৭৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ রাবী আয-যাহরানী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তার চুল ও কাপড় গুটানো নিষেধ করা হয়েছে। ইহা ইয়াহইয়ার বর্ণনা। আবূ রাবী- বলেন, সাতটি অঙ্গের উপর (সিজদা করতে আদেশ করা হয়েছে) এবং চুল ও কাপড় গুটাতে নিষেধ করা হয়েছে। (আর ঐ সাতটি অঙ্গ হচ্ছে) দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা এবং কপাল।
৯৭৮ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে এবং কাপড় ও চুল না গুটাতে।
৯৭৯ আমর আবূ-নাকিদ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাত (অঙ্গ)-এর উপর সিজদা করতে আদেশ করা হয়েছে এবং চুল ও কাপড় গুটাতে নিষেধ করা হয়েছে।
৯৮০ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি-কপাল, (বর্ণনা কারী বলেন) তিনি এই সময় তাঁর নাকের দিকে ইশারা করলেন, দুই হাত, দুই হাটূ এবং দুই পায়ের অগ্রভাগ। আর কাপড় ও চুল না গুটাতে।
৯৮১ আবূ তাহির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ূলাহ বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাতটির উপর সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে। (সাতটি হল) কপাল ও নাক, দুই হাত, দুই হাটু এবং দুই পা।
৯৮২ আমর ইবনু সাওয়াদ আমিরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস কে দেখতে পেলেন যে, তিনি তার চুলগুলোকে পিছনে বেধে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তা খুলে দিলেন। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে ইবনু আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আমার মাথার এবং আপনার (এ কর্মের) ব্যাপারটি কি? আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, এই ব্যাক্তির উদাহরণ (যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর অবস্হায় মাথার চুল বেধে রাখে) ঐ ব্যাক্তির মত যে তার হাত বাধা অবস্হায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে।
৯৮৩ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , তোমরা সিজদার সময় অংগসমূহ সঠিক রাখবে-কুকুরের মত দুই হাত দিবেনা।
৯৮৪ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না, ইবনু বাশশার ও ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব মুহাম্মাদ ইবনু জাফর এবং জাফর ইবনু খালিদ (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে শুবা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তবে ইবনু জাফরের হাদীসে উক্ত হাদীসের – এর স্হলে – রয়েছে।
৯৮৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তুমি সিজদা করবে, তখন তোমার দুই হাতের তালূ (ভূমিতে) রাখবে এবং দুই কনূই (ভূমি থেকে) উঠিয়ে রাখবে।
৯৮৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় (সিজদা) করতেন তখন তাঁর উভয় হাত পার্শ্বদেশ থেকে এতখানি পৃথক রাখতেন যে তার বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেত।
৯৮৭ আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আমর ইবনুল হারিস এবং লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) সুত্রে উভয়ই জাফর ইবনু রাবী’আ (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন তবে আমর ইবনু হারিসের বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত এমন ভাবে পৃথক করে রাখতেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। লায়সের বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত বগল থেকে এমন ভাবে পৃথক রাখতেন যে, আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।
৯৮৮ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন কোন মেসশাবক ইচ্ছা করলে তাঁর দুহাতের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারত।
৯৮৯ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুই হাত (পার্শ্বদেশ থেকে) এরুপ দুরে রাখতেন যে, তাঁর বগলের উজ্জ্বলতা পিছন হতে দেখা যেত। এবং যখন বসতেন, তখন তাঁর বাম উরুর উপর শান্ত হয়ে বসতেন।
৯৯০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শব্দ গুলো আমরের, মায়মূনা বিনতুল হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন তাঁর দুবাহু পৃথক করে রাখতেন। যারা তাঁর পিছনে থাকতেন, তারা তাঁর বগলের উজ্জ্বল্য দেখতে পেতেন। ওয়াকী (রহঃ) বলেন, মায়মুনা (রাঃ) ঔজ্জ্বল্য দ্বারা শুভ্রতা বুঝিয়েছেন।
৯৯১ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) শব্দ ইসহাকের, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -, তাকবীর দ্বারা সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করতেন এবং সূরা ফাতিহা দ্বারা কিরা’আত আরম্ভ করতেন। যখন রুকু করতেন তখন তাঁর মাথা উঠিয়েও রাখতেন না, ঝুঁকিয়েও রাখতেন না; বরং মাঝামাঝি রাখতেন। আর যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সিজদায় যেতেন না। আর যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, তখন সোজা হয়ে না বসে (দ্বিতীয়) সিজদায় যেতেন না। এবং প্রতি দু-রাক’আতে আততাহিয়্যাতু পড়তেন বাম পা বিছিয়ে রাখতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। শয়তানের মত পাছার উপর বসা থেকে নিষেধ করতেন। পূরুষকে তার দু’বাহু হিংস্র জন্তুর মত বিছিয়ে রাখতে নিষেধ করেছেন। তিনি সালামের দ্বারা সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করতেন।
৯৯২ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে কেউ তার সম্মুখে হাওদার পিছনের খাড়া কাঠের পরিমাণ কিছু স্হাপন করে, যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এরপর সেটির পিছন কেউ গেলে কোন পরোয়া করবে না।
৯৯৩ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম এবং আমাদের সম্মুখ দিয়ে পশুগুলো যাতায়াত করত আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমাদের কারও সম্মুখে হাওদার পিছনের কাঠ পরিমাণ কোনও কিছু থাকবে সেটির বহিরে দিয়ে কোন কিছুর যাতায়াত তার কোন ক্ষতি করবে না। ইবনু নুমায়র (রহঃ) বলেন, তার বাইরে দিয়ে ‘কোনও ব্যাক্তির’ যাতায়াত ক্ষতি করবে না।
৯৯৪ যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুসল্লীর সূতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, হাওদার পিছনের কাঠের পরিমাণ।
৯৯৫ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুকের যুদ্ধকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুসল্লীর সূতরা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, তা হাওদার পিছনের কাঠটির মত।
৯৯৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হতেন, তখন ক্ষুদ্র বর্শা সংগে নেয়ার জন্য আদেশ করতেন। তারপর তা তার সামনে স্থাপন করা হতো এবং তিনি সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর লোকেরা তার পিছনে থাকত। সফরেও তিনি এরূপ করতেন। এ থেকেই শাসকগনও তা গ্রহন করেছেন।
৯৯৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণীত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাঠি গেড়ে রাখতেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, পুতে রাখতেন। এবং সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ইবনু আবূ শায়বা বাড়িয়ে বলেন, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন, তা হল ক্ষুদ্রাকৃতির বর্শা।
৯৯৮ আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাওয়ারীকে সামনে রেখে সেটির দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
৯৯৯ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাওয়ারির দিকে ফিরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। ইবনু নূমায়র (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
১০০০ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম। তখন তিনি আবতাহ নামক স্হানে লাল চামড়ার তাবুতে অবস্হান করছিলেন। বিলাল (রাঃ) তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি নিয়ে বের হলেন, অতঃপর কেউ অবশিষ্ট পানি পেল আর কেউ অন্যের নিকট থেকে পানির ছিটা নিল। আবূ জুহায়ফা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল চাঁদর গায়ে দিয়ে বের হলেন। আমি যেন এখনও তাঁর পায়ের গোছাদ্বয়ের শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং বিলাল (রাঃ) আযান দিলেন। আমি এদিক-ওদিক মুখ ফিরিয়ে তাঁর অনুসরণ করলাম। বিলাল (রাঃ) যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ফিরালেন ও বললেনঃ বলার পর অগ্রভাগে লৌহযুক্ত ছোট যষ্টি (আনাযা) পুঁতে দেয়া হল। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং যুহরের দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁর সামনে দিয়ে গাধা, কুকুর আসা-যাওয়া করছিল। তিনি তাদের বাধা দেননি। তারপর আসরের দু-রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরূপে মদিনায় পৌছা পর্যন্ত তিনি দুই দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।
১০০১ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আওন ইবনু আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে লাল চামড়ার তাবুতে দেখেছেন। তিনি বলেন, আমি বিলাল (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র অবশিষ্ট পানি বের করতে দেখলাম। আর দেখলাম লোকেরা ঐ পানির জন্য তাড়াহুড়া করছে। যে ঐ পানি পেল, সে তা তার গায়ে মাখল। আর যে তা পালনা সে তার সাথীর হাতের অদ্রতা থেকে কিছু নিল। তারপর দেখলাম একটি অগ্রভাগে লৌহযুক্ত যষ্ঠি বের করে গেড়ে দিলেন। এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল ডোরা যুক্ত চাঁদর পরিধান করে তা উঠিয়ে বের হলেন। অতঃপর লোক জনকে নিয়ে যষ্ঠি সামনে রেখে দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর দেখলাম মানুষ ও জীবজন্তুকে বর্শার সম্মুখ দিয়ে চলা ফেরা করছে।
১০০২ ইসহাক ইবনু মানসূর, আবদ ইব হূমায়দ ও আল কাসিম ইবনু যাকারিয়া আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে মালিক ইবনু মিগওয়াল বর্ণিত হাদীসে আছে, যে, যখন দুপূর হলো, তখন বিলাল (রাঃ) বের হলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিলেন।
১০০৩ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশার (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপূর বেলা বাতহার দিকে বের হয়ে গেলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে দু-রাকআত যুহরের ও দু’রাকআত আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁর সামনে একটি বর্শা প্রোথিত ছিল। তার অপর দিক দিয়ে নারী ও গাধা যাতায়াত করছিল।
১০০৪ যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) শুবা থেকে বর্ণিত যে, এ হাদীসটি উপরোক্ত হাদীসের অনূরুপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আল-হাকওমের বর্ণনায় ‘লোকেরা তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি সংগ্রহ করতে লাগল’ কথাটি বেশি আছে।
১০০৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, আমি গাধার উপর সাওয়ার হয়ে মীনার দিকে এলাম। আমি তখন যৌবনে উপনীত প্রায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজন নিয়ে সেখানে সালাত (নামায/নামাজ)রত ছিলেন। আমি কাতারের সামনে এসে অবতরণ করলাম এবং গাধাটিকে চরবার জন্য ছেড়ে দিয়ে কাতারে প্রবেশ করলাম। এতে কেউই আমার উপর আপত্তি তোলেন নি।
১০০৬ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া উবায়াদূল্লহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে জানিয়েছেন সে, তিনি গাধার উপর আরোহণ করে মীনার দিকে আসেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বিদায় হাজ্জ (হজ্জ) উপলক্ষে লোকজনসহ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, গাধাটি কাতারের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করল। তারপর তা থেকে নামলেন এবং লোকদের সাথে কাতারে শামিল হলেন।
১০০৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আমর আন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
১০০৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ হুমায়দ (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এই রিওয়াতে মীনা ও আরাফাত কোনও উল্লেখ করেন নি। বরং বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)- কিংবা –মক্কা বিজয়- উল্লেখ করেছেন।
১০০৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে, তখন তার সম্মুখ দিয়ে কাউকে যেতে দিবে না। বরং যথাসাধ্য তাকে বাধা দিবে। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা, সে একটি শয়তান।
১০১০ শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) হুমায়দ ইবনু হীলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও আমার এক জন সঙ্গী একটি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সহসা আবূ সালিহ আস-সাম্মান বলে উঠল, আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট যা শুনেছি এবং দেখেছি, – তা এখন তোমার নিকট বলব। আমি আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। একটি ‘সুতরা’ সামনে রেখে শুক্রবার দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। ইত্যবসরে আবূ মু’আয়ত গোত্রের একজন জওয়ান এসে উপস্থিত হলো এবং সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সাঈদ (রাঃ) তার বুকে হাত দিয়ে বাধা দিলেন। কিন্তু সে আবূ সাঈদ (রহঃ)-এর সম্মুখ ছাড়া অন্য কোনও পথ পালনা। তাই সে পূনরায় যেতে চাইল। আবূ সাঈদ (রাঃ) এবার আরও জোরে তার বুকে ধাক্কা দিলেন। এবার সে ছবির মত গেল এবং আবূ -সাঈদ (রাঃ)-এর নিকট থেকে তিরস্কার পেল। তারপর লোকজন এসে ভিড় জমালে সে মদিনার গভর্ণর মারওয়ানের নিকট গিয়ে অভিযোগ দায়ের করল। আবূ সাঈদ (রাঃ) ও মারওয়ানের দরবারে প্রবেশ করলেন। তারপর মারওয়ান তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি ও আপনার ভাতিজার মধ্যে কি ঘটেছে? সেতো এসে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে আবূ সাঈদ (রাঃ) জওয়াব দিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মানুষকে আড়াল করবার নিমিত্ত সুতরা রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং কোনও ব্যাক্তি তার সম্মুখ দিয়ে যেতে চাইবে, সে যেন তার বুকে হাত দিয়ে বাধা দেয়। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা সে একটি শয়তান।
১০১১ হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে কাউকে তার সম্মুখ দিয়ে যেতে দিবে না। যদি সে না মানে, তবে তার সাথে লড়াই করবে। কেননা, তার সাথে একটি সহচর (শয়তান) রয়েছে।
১০১২ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০১৩ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইহা (রহঃ) বুসর ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ)-এর নিকট এ কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন যে, সালাত (নামায/নামাজ)রত ব্যাক্তির সম্মুখ দিয়ে গমন কারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে তিনি কী শুনেছেন। আবূ জুহাহাম (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি সালাত (নামায/নামাজ)রত ব্যাক্তির সম্মুখ দিয়ে গমনকারী ব্যাক্তি জানত যে, তার উপর কি পাপের বোঝা চেপেছে, তবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকাও তার পক্ষে তা অপেক্ষা উত্তম হতো। আবূন-নাযর বলেন, আমি জানিনা, তিনি চল্লিশ দিন বলেছেন কিংবা মাস অথবা বছর।
১০১৪ আবদুল্লাহ ইবনু হাশিম ইবনু হায়্যান আল-আবদী (রহঃ) জুহায়ম আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা কয়েছেন।
১০১৫ ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম আদ-দাওরাকী (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্হান এবং সুতরার মধ্যকার ব্যবধান এই পরিমাণ প্রশস্ত ছিল যে, একটি বকরী যেতে পারে।
১০১৬ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সালামা ইবনুল আকওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাসবীহ ও নফল সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মিসহাফ নামক স্হানে আসন গ্রহণ করতেন এবং বলতেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্হানটিতে আসন গ্রহণ করতেন। ঐ স্থানটি মিম্বার ও কিবলার মধ্যকার একটি যেতে পারে এই পরিমাণ ছিল।
১০১৭ মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, সালামা (রাঃ) মিসহাফের নিকটে অবস্হিত খুটির পাশে সালাত (নামায/নামাজ)-এর আসন গ্রহণ করতেন। রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, হে আবূ মুসলিম! আমি লক্ষ্য করছি, আপনি বরাবর এই খুঁটিটির নিকটেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্হান নির্বাচন করেন। তিনি জওয়াব দিলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এর নিকটেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
১০১৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ-সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে, তখন তার সম্মুখে হাওদার পিছনের কাণ্ঠ পরিমাণ কোনও বস্তু রেখে দিবে। যদি এরূপ কোনও বস্তু না থাকে, তবে তার সম্মুখ দিয়ে গাধা স্ত্রীলোক ও কালো কুকুর গমন করলে তার সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যাবে। রাবী ইবনু সামিত বলেন, আমি বললাম, হে আবূ যার! গমন করলে তার সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যাবে। রাবী ইবনু সামিত বলেন, আমি বললাম, হে আবূ যার! লাল কুকুর ও হলুদ কুকুর থেকে কালো কুকুরকে পৃথক করার কারণ কি? তিনি জওয়াব দিলেন, হে ভাতিজা, আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তোমার মত এই বিষয়টি জিজ্ঞাস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, কালো কুকুর একটি শয়তান।
১০১৯ শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) হুমায়দ হিলাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইউনুস কর্তূক বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০২০ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-মাখযুমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারী, গাধা ও কুকুর সম্মুখ দিয়ে গেলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যায়। তা রক্ষার উপায় হলো, মুসল্লীর সামনে হাওদার কাণ্ঠ পরিমাণ কোনও বস্তু রাখা।
১০২১ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আবূ-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি কিবলার দিকে তার সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতাম।
১০২২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) সষ্পূর্ণ আদায় করতেন, আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকতাম। যখন বিতর আদায় করতে ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগ্রত করতেন। আমিও তখন বিতর (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম।
১০২৩ আমর ইবনু আলী (রহঃ) উরওয়া ইবনুুয যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বললেন সামনে দিয়ে কী অতিক্রম করলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়? আমরা বললাম, ন্ত্রীলোক ও গাধা। তিনি বললেন, স্ত্রীলোক একটি মন্দ প্রাণী? অথচ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে জানাযার মত আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে খাকতাম আর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
১০২৪ আমর আবূ-নাকিদ ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আল আসওয়েদি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ)-এর সামনে আলোচনা হচ্ছিল যে, কুকুর গাধা ও স্ত্রীলোক সামনে দিয়ে গেলে সালাত (নামায/নামাজ) ভঙ্গ হয়ে যায়। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদের গাধা ও কুকুরের সমতুল্য গণ্য করছ? আল্লাহর কসম, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি আর আমি তাঁর সামনে কিবলার দিকে তখন পাশে শুয়ে থাকতাম। যখন ওঠার প্রয়োজন হতে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে বসা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কষ্ট দেয়া আমি অপছন্দ করতাম। আমি তখন পাশের পায়ের দিক দিয়ে সরে পড়তাম।
১০২৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা আমাদের কুকুর ও গাধার পর্যায় ভুক্ত করছ। অথচ আমি তখন পোশের উপর শুয়ে থাকতাম, আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তখন পোশের মাঝখানে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াতেন। তাঁকে কষ্ট দেওয়া আমার অপছন্দ হতো তাই আমি তখতপোশের পায়ের দিক দিয়ে লেপের নিচ থেকে সরে পড়তাম।
১০২৬ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম। অমার পা দু’টি তার কিবলার দিকে থাকতো। যখন সিজদা দিতেন তখন আমাকে ঠেলা দিতেন, আর আমি পা টেনে নিতাম। আর তিনি যখন দাড়িয়ে যেতেন আমি পা ছড়িয়ে দিতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন ঘরে বাতি থাকত না।
১০২৭ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর আবূ শায়বা (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি ঋতুমতী অবস্হায় তাঁর পাশে থাকতাম। কখনও সিজদা করতে তাঁর কাপড় আমার গায়ে লেগে যেত।
১০২৮ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আমি ঋতূমতী অবস্থায় তার পাশে থাকতাম। আমি একটি চাঁদর গায় দিতাম, তার কিছু অংশ তাঁর গায়েও থাকত।
১০২৯ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে একটি মাত্র কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুই কাপড় আছে?
১০৩০ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০৩১ আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উদ্দেশ্য করে বলল, আমাদের মধ্যে কেউ কি একটি কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারবে? তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই কি দুটি করে কাপড় রয়েছে?
১০৩২ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তার কাঁধের উপর একাংশ থাকে না- এই ভাবে এক কাপড় পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না।
১০৩৩ আবূ কুরায়ব (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার গৃহে এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি আর দুই প্রান্ত কাঁধের উপর রেখেছিলেন।
১০৩৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) উরুওয়া থেকে বর্নিত। তিনি এরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১০৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে উম্মু সালামার ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তার উভয় প্রান্ত তিনি বিপরীত দিকে দিয়ে ছিলেন।
১০৩৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ঈসা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) উমার ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তিনি তার দু প্রান্ত দুই বিপরীত দিকে নিয়ে জড়িয়ে রেখে ছিলেন। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তাঁর বর্ণনায় দুই কাঁধের উপর কথাটি অতিরিক্ত বলেছেন।
১০৩৭ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক কাপড়ে ‘তাওয়াশগুহ’ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
১০৩৮ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছে তবে ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় ‘আমি দেখেছি’ কথাটির স্হানে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করলাম কথাটি বলা হয়েছে।
১০৩৯ হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ যূবায়র আল মাক্কী (রহঃ) বলেন, তিনি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। অথচ তাঁর নিকট একাধিক কাপড় ছিল। জাবির (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ঐরুপ করতে দেখেছেন।
১০৪০ আমর আন-নাকিদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদূরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশ করলাম এবং তাঁকে দেখলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন ও তার উপর সিজদা করছেন। আরও দেখলাম, এক কাপড়ে তাওয়াশগুহ করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
১০৪১ আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আল আমাশ থেকে বর্ণিত। তিনি উপরোক্তরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ কুরায়বের রিওয়ায়াতে কাপড়ের দুপ্রান্ত দুই কাঁধের উপরে রাখার কথা উল্লিখিত হয়েছে এবং আবূ বকর ও সুওয়ায়দের রিওয়ায়েতে তাওয়াশগুহ এর কথা বলা হয়েছে।