পরিচ্ছদঃ ১/ ঈমান, ইসলাম ও ইহসান প্রসঙ্গ, তাকদীরে বিশ্বাসের আবশ্যিকতা, যে ব্যাক্তি তাকদীর অবিশ্বাস করে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ অপরিহার্য হওয়ার দলীল ও তাঁর সম্পর্কে কঠোর ভাষা ব্যবহার। আবুল হুসায়ন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশায়রী (রহঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্যে শুরু করছি এবং প্রার্থনা করছি যেন তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বস্তুত মহান আল্লাহ্র সাহায্য ছাড়া আমরা কোন কিছুই করতে সমর্থ নই।
৬। মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র আবূ হায়্যান আত তায়মী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় দাসী তার স্বামীকে জন্ম দেবে, কথাটির উল্লেখ রয়েছে।
পরিচ্ছদঃ ১/ ঈমান,
ইসলাম ও ইহসান প্রসঙ্গ,
তাকদীরে বিশ্বাসের আবশ্যিকতা,
যে ব্যাক্তি তাকদীর অবিশ্বাস
করে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ অপরিহার্য হওয়ার দলীল ও তাঁর সম্পর্কে কঠোর ভাষা ব্যবহার।
আবুল হুসায়ন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশায়রী (রহঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্যে শুরু করছি এবং প্রার্থনা
করছি যেন তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বস্তুত মহান আল্লাহ্র সাহায্য ছাড়া আমরা
কোন কিছুই করতে সমর্থ নই।
৭। যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর
একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল বললেনঃ ইসলাম হল, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন,
আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন,
হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী?
রাসুল বললেনঃ আল্লাহর প্রতি,
তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি,
তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি,
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি,
উত্থানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি
তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল বললেনঃ আল্লাহকে
এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ,
যদি তাকে নাও দেখ ;
তাহলে ধারণা করবে যে তোমাকে
দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন।
তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!
কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যাক্তি প্রশ্লকারীর
চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে,
দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে,
এটা কিয়ামতের একটি আলামত।
আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন,
বধির ও মূকেরা দেশের শাসক
হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত।
আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট
অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি
আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানেনা। তারপর (তিনি কুরআনুল -এর
আয়াত) তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন,
যা রয়েছে মাতৃগর্ভ জাননা কেউ,
কি কামাই করবে সে আগামীকাল।
আর জাননা কেউ, কোন মাটিতে (দেশে)
সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব
জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা লুকমানঃ
৩৪) তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের
বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হল, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমরা প্রশ্ন না করায়,
তিনি চাইলেন যেন তোমরা দ্বীন
সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর।
পরিচ্ছদঃ ২/ নামাযসমুহ
যা ইসলামের একটি রুকন
৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ
ইবনু আমিল ইবনু তারীফ ইবনু আবদুল্লাহ আল সাকাফী (রহঃ) তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন। তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, নাজদের বাসিন্দা এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন। তাঁর মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার অস্পষ্ট
আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি যা বলছিলেন তা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছাকাছি এলেন। তারপর তাঁর কাছে ইসলাম সমন্ধে জানতে
চাইলেন। জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দিনেরাতে পাচবার
ফরয সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা। আগন্তুক জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাপারে আরো কিছু আছে কি? তিনি বললেনঃ না, তবে নফল সালাত (নামায/নামাজ) করা যায়। আর রামাযান
মাসে রোযা পালন করা। আগন্তুক জানতে চাইলেন, এ ছাড়া আরও কিছু আছে কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
না, তবে নফল রোযা পালন করা যায়।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। আগন্তুক
জানতে চাইলেন, এ ছাড়া আরও কিছু আছে
কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে অতিরিক্ত দান করা যায়। রাবী বললেন, তারপর আগন্তুক এ কথা বলতে বলতে চলে গেলেন। আল্লাহর
কসম, আমি এর চাইতে বেশি করব না
এবং কমও করব না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি সত্য বলে
থাকলে সফল হবে।
পরিচ্ছদঃ ২/ নামাযসমুহ
যা ইসলামের একটি রুকন
৯। ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব
ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) – তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীসটি মালিক-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে
তাঁর বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার পিতার কসম,
সে সত্য বলে থাকলে সফলকাম
হবে। কিংবা তার পিতার কসম সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতে দাখিল হবে।
পরিচ্ছদঃ ৩/ ইসলামের
রুকনসমূহ সম্পর্কে (জানার জন্য) প্রশ্ন করা
১০। আমর ইবনু মুহাম্মাদ
ইবনুুবুকায়র আল নাকিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই
আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান
ব্যাক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যাক্তি
এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দুত এসে বলেছে,
আপনি দাবি করেছেন যে,
আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে
পাঠিয়েছেন। রাসুল বললেনঃ সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমানা কে স্হাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা
কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন
এবং এসব পর্বতমালা স্হাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে,
আমাদের উপর দিনে ও রাতে পাচ
ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে
পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে
এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঠিকই বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের রোযা পালন করা আমাদের উপর
ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর
হাজ্জ (হজ্জ) ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সত্যি বলেছে।
রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে
যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ
প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও
করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই
সে জান্নাতে যাবে।
পরিচ্ছদঃ ৩/ ইসলামের
রুকনসমূহ সম্পর্কে (জানার জন্য) প্রশ্ন করা
১১। আবদুল্লাহ ইবনু
হাশিম আল আবদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে কোন প্রশ্ন করতে কুরআন মজীদে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারপর তিনি হাদীসটির বাকি
অংশ (উল্লেখিত হাদীসের) অনুরুপ বর্ণনা করেন।
১২। মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়ের (রহঃ) আবূ আইয়ুব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আবূ আইয়ুব (রাঃ) বলেন,
এক সফরে জনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে এসে দাড়াল। সে তাঁর আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল! অথবা বলেছিল, হে মুহাম্মাদ! আমাকে এমন কিছু বলেদিন যা আমাকে জান্নাতের
কাছে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থামলেন এবং
সাহাবীদের দিকে তাকালেন। পরে তিনি বললেন, তাকে তাওফীক দেওয়া হয়েছে অথবা বললেন, তাঁকে হিদায়াত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস
করলেনঃ তুমি কী বললে? রাবী বলেন,
সেঁ তার পূনরাবৃত্তি করল।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং আত্নীয়তার সস্পর্ক বজায় রাখবে,
(এবারে) উটনী ছেড়ে দাও।
১৩। মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম ও আবদুর রহমান বিশর (রহঃ)- আবূ আইয়্যুব (রাঃ) থেকে এবং তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসের অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।
১৪। ইয়াহইয়াহ ইবনু
ইয়াহইয়াহ আত তামিমী (রহঃ) ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ আইয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, এক ব্যাক্তি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাযির হল এবং আরয করল, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বাতলে দিন, যে কাজ আমাকে জান্নাতের কাছে পৌছে দেবে এবং জাহান্নাম
থেকে দুরে রাখবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং আত্নীয়তার সস্পর্ক বজায় রাখবো সে
ব্যাক্তি চলে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে যে কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা দৃঢ়তার সাথে
পালন করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আবূ শায়বার বর্ণনায় এর স্হলে রয়েছে।
১৫। আবূ বকর ইবনু
ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক বেদূঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে এসে আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল!
আমাকে এমন একটি আমল বাতলে দিন, যা করলে আমি জান্নাতে
যেতে পারব। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত
করবে, তার সঙ্গে কোন কিছু শরীক করবে
না, ফরয সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম
করবে, নির্ধারিত যাকাত দিবে এবং
রামাযানের রোযা পালন করবে। তারপর সে বলল, যার হাতে আমার প্রান তাঁর কসম, আমি এর উপর কখনো কিছু
বাড়াব না এবং তা থেকে কমও করব না। লোকটি চলে গেলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে
খুশি হতে চাইলে, একে দেখুক।
১৬। আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নূমান ইবনু কাওকাল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাযির হলেন। তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অবহিত করুন, যদি আমি ফরয সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি,
হারামকে হারাম বলে জানি,
হালালকে হালাল জ্ঞান করি,
তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারব? নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা।
১৭। হাজ্জাজ ইবনু
শায়ির ও কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নূ’মান ইবনু কাওকাল (রাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহর রাসুল! বাকি অংশ উপরোক্ত বর্ণনার অনুরুপ।
তরে তিনি তাঁর বর্ণনায় কথাটি অতিরিক্ত উল্লেখ করেছেন।
১৮। সালামা ইবনু শাবীব
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছন যে, কোন এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে আরয করলেন,
আমাকে অবহিত করুন,
যদি আমি ফরয সালাত (নামায/নামাজ)সমূহ
আদায় করি, রামাযানের রোযা পালন
করি, হালালকে হালাল জানি এবং হারামকে
হারাম জানি; যদি এর অতিরিক্ত কিছু
না করি, তাহলে আমি কি জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারব? রাসুল বললেন,
হ্যা। সে ব্যাক্তি বললেন,
আল্লাহর কসম! আমি এর উপর কিছুমাত্র
বাড়াব না।
১৯। মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নু’মায়র আল হামদানী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের বুনিয়াদ পাচটি
বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রামাযানের রোযা পালন করা এবং হাজ্জ (হজ্জ) করা।
এক ব্যাক্তি (এ ক্রম পাচটিকে) বলল, হাজ্জ (হজ্জ) করা
ও রামাযানের রোযা পালন করা। রাবী বললেন, না রামাযানের রোযা পালন করা ও হাজ্জ (হজ্জ) করা এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।
২০। সাহল ইবনু উসমান
আল আসকারী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের
বুনিয়াদ রচিত। আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁকে ছাড়া অন্যকে অস্বীকার করা, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) করা ও রামাযানের রোযা পালন
করা।
২১। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, পাচটি বিষয়ের উপর ইসলামের
ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই, আর মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও
রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করা, যাকাত দেয়া,
বায়তুল্লাহর জেয়ারত করা ও
রামাযানের রোযা পালন করা।
২২। ইবনু নুমায়র
(রহঃ) তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি কেন যুদ্ধে অংশ-গ্রহণ করছেন না? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি, ইসলামের ভিত্তি পাচটি
বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত, আল্লাহ ছাড়া আর কোন
ইলাহ নেই সাক্ষ্য দেয়া, সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করা, যাকাত দেওয়া,
রামাযানের রোযা পালন করা ও
বায়তুল্লাহ হাজ্জ (হজ্জ) করা।
২৩। খালাফ ইবনু হিশাম
ও ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল কায়সের (গোত্রের) একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক। আমাদের
এবং আপনার মধ্যে কাফির মুযার গোত্র বিদ্যমান। আমরা শাহরুল হারাম ব্যতীত আপনার কাছে
নিরাপদে পৌছতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু -আদেশ দিন আমরা যে সবের আমল করতে
পারি এবং আমাদের অন্যদের তৎপ্রতি আহবান জানাতে পারি। রাসুল বললেন, তোমাদের আমি চারটি বিষয় পালনের আদেশ করছি এবং চারটি
বিষয়ে নিষেধ করছি। তারপর তিনি তাদের এ সমন্ধে বর্ণনা দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করা। অতঃপর এর ব্যাখ্যায়
তাদেরকে বললেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং তোমাদের গনীমতলব্ধ সামগ্রীর এক-পঞ্চমাংশ
আদায় করা। আর আমি তোমাদের নিষেধ করছি দূব্বা, হানতাম, নাকীর, মুকায়্যার থেকে। খানাফ তাঁর বর্ণনায় আরও উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আঙ্গুল বন্ধ করেন।
২৪। আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ জামরা (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু
আব্বাস (রাঃ)-এর কথা লোকদের বোঝাবার দায়িত্ব পালন করতাম। একজন স্ত্রীলোক তাঁর কাছে
এসে কলসির নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য সম্পর্কে জানতে চাইল। ইবনু আব্বাস
(রাঃ) বললেন, আবদুল কায়স গোত্রের
এক প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে হাযির হলে,
তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
কাদের প্রতিনিধি অথবা বললেন,
কোন গোএের পক্ষ থেকে?
তারা বলল- আমরা রাবী’আ গোত্রের।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন,
তোমরা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার
আগেই এসেছ বলে মুবারকবাদ। রাবী বলেন- তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল আমরা বহু দূর থেকে আপনার খিদমতে
হাযির হয়েছি। আমাদের ও আপনার মধ্যে কাফির মুযার গোত্র বিদ্যমান। আমরা শাহরুল হারাম
ব্যতীত আপনার কাছে নিরাপদে পৌছতে অপারগ। সুতরাং আপনি আমাদের ইসলামের সূস্পষ্ট বিধান
সম্পর্কে নির্দেশ দান করুন, যেন আমরা আমাদের পশ্চাতের
লোকজনকে তা অবহিত করতে পারি এবং তদনূযায়ী আমল করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি।
বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের চারটি বিষয় পালনের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি বিষয় থেকে
নিষেধ করলেন এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, তোমরা জানো এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা কী?
আরয করলেন, আল্লাহ ও তার রাসুল এ বিষয়ে ভাল জানেন। রাসুল বললেন,
এ সাক্ষ্য দেওয়া যে,
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই
এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল আর তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে এবং গনীমত-লব্ধ সামগ্রীর
এক-পঞ্চমাংশ দান করবে। তিনি তাদের চারটি বিষয়ে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। তা হচ্ছে- দুব্বা,
হানতাম, মুযাফফাত। চতুর্থটি সমন্ধে শু’বা বলেন, এরপর রাবী কখনো ‘নাকির’ কখনোবা ‘মুকায়্যার’ শব্দ
উল্লেখ করেছেন। * রাসুল বললেন, এসব বিধান হিফাজত
করবে এবং যারা আসেনি তাদের তা জানিয়ে দিবে। আবূ বকর (রহঃ)-এর রিওয়ায়েতে , (যারা আসেনি) কথাটি রয়েছে কিন্তু শব্দটি নেই।
২৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে শুবার বর্ণনার অনুরুপ রিওয়ায়েত করেছেন। রাসুল বলেছেন
, আমি তোমাদের দুব্বা,
হানতাম, মুযাফফাত নামক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
য* তৈরির পাত্রের ব্যবহার নিষেধ করছি। ইবনু মু’আয (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত রিওয়ায়েতে
আরো উল্লেখ করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ)
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়েস গোত্রের ‘আশাজ্জ’ আশাজ্জ্ব আবদুল কায়েসকে বললেন,
তোমার দুটি বিশেষ গুন রয়েছে,
যা আল্লাহ পছন্দ করেন -ধৈর্য
ও সহিষ্ণুতা।
২৬। ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়্যুব (রাঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল কায়স গোত্রের কয়েকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্হিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক। আপনার ও আমাদের মধ্যবতী যাতায়াত পথে মুযার গোত্রের কাফিররা
অবস্হান করয়ে ‘শাহরুল’ হারাম ছাড়া আমরা আপনার কাছে আসতে পারি না। অতএব আপনি আমাদের
এমন কাজের আদেশ দিন, আমাদের যারা আসেনি
তাদের জানাতে পারি এবং যা পালন করে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চারটি বিষয়
পালনের এবং চারটি বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিচ্ছি। পালনীয় চারটি বিষয় হলোঃ তোমরা
আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্য কাউকে
শরীক করবে না, সালাত (নামায/নামাজ)
কায়েম করবে, যাকাত দিবে,
রামাযানের রোযা পালন করবে
এবং গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। আমি তোমাদের চারটি বিষয়ে নিষেধ করছিঃ দুববা,
হানতাম, মুয়াফফাত ও নাকীর-এর ব্যবহার। তারা আরয করল,
হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি নাকীর সম্পর্কে কতটুকু জানেন? তিনি বললেন, এ হলো খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্র।
এতে কুতাইয়া* নামক খেজুর দিয়ে তাতে পানি ঢেলে, জোশ স্তব্ধ হওয়া পর্যন্ত রেখে তা পান করে থাক।
ফলে তোমাদের কেউ বা তাদের কেউ (নেশাগ্রস্ত হয়ে) আপন চাচাত ভাইকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে
বস। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)বলেন, উপস্হিত লোকদের মধ্যে
এভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এক ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি বলেন, লজ্জায় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে আঘাতটি গোপন করছিলাম! আমি বললাম, হে আল্লাহর -এরাসুল! আমরা কিসে পান করব? রাসুল বললেন, রশি দ্বারা মুখবন্ধ চামড়ার পাত্রে। তারা আরয করল,
হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের দেশে ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। সেখানে চামড়ার পাত্র অক্ষত রাখা
যায় না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে, যদিও তা ইঁদুরে কেটে ফেলে। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল কায়স
গোত্রের আশাজ্জ সম্পর্কে বললেন, তোমার মধ্যে দুটি
বিশেষ গুন রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন –ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা।
২৭। মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল । হাদীসটির বাকি অংশ ইবনু উলায়্যার বর্ণনায়
অনুরুপ। তবে এ বর্ণনায় রয়েছে তোমরা এর মধ্যে ‘কুতাইয়া’ বা ‘তামার’ ও পানি ঢেলে দাও।
২৮। মুহাম্মাদ ইবনু
বাককার আল বাসরী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধিদল নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
আল্লাহ আপনার জন্য আমাদের কুরবান করুন। আমাদের জন্য কোন ধরনের পাত্র ব্যবহারযোগ্য?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নাকীরে পান
করবে না। তারা আরয করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার জন্য আল্লাহ আমাদের কুরবান করুন। আপনি কি জানেন নাকীর কি?
তিনি বললেন, হ্যা, নাকীর এক ধরনের পাত্র যা খেজুর বৃক্ষমূল খোদাই করে তৈরি হয়। তিনি আরো বললেন,
দুব্বা, হানতামেও তোমরা পান করবে না এবং তোমরা মুখবন্ধী
পাত্র ব্যবহার করবে।
২৯। আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
মু’আয বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
ইয়ামনের প্রশাসক নিযুক্ত করে পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের
কাছে যাচ্ছ তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে এ কথার আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল।
যদি তারা তা মেনে নেয় তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে দিনে এবং রাতে আল্লাহ তাদের উপর পাঁচ
ওয়াক্তের সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। ধনীদের থেকে
তা আদায় করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হবে। তারা এ কথাটি মেনে নিলে,
সাবধান, যাকাত হিসেবে তুমি তাদের থেকে বাছাই করে উত্তমগুলো
নিবে না। আর মযলুমের (বদ) দুআ থেকে সাবধান! কেননা আল্লাহর ও মযলূমের দুআর মধ্যে কোন
অন্তরায় নেই।
৩০। ইবনু আবূ উমর
(রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয ইবনু
জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনের প্রশাসক করে পাঠালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, নিশ্চয়ই তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের
কাছে যাচ্ছ বাকি অংশ ওয়াকীর বর্ণনার অনুরুপ।
৩১। উমায়্যা ইবনু
বিসতাম আল আয়শী (রাঃ)ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয
ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনে প্রাশাসক করে পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ তাদের প্রথম
যে দাওয়াত দিবে তা হল, মহান আল্লাহর ইবাদতের
দিকে আহবান করা। যখন তারা আল্লাহকে চিনে নিবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ জন্য তাদের জন্য দিন ও রাতে পাচ ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। তারা তা করলে তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। তাদের সম্পদ
থেকে আদায় করা হবে এবং তা তাদের গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন
করলে তুমি তাদের থেকে তা আদায় করবে; কিন্তু তাদের উত্তম মাল থেকে সাবধান থাকবে।
৩২। কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
ইন্তেকালের পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) খলীফা হলে আরবের একদল লোক কাফির হয়ে যায়। * উমর
ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর কাছে আরয করলেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে কিরুপে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই-এ কথা স্বীকার না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার
জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই – এ কথা স্বীকার করবে,
সে আমার থেকে তার জানোমালের
নিরাপত্তা লাভ করল। তবে শরীআতসম্মত কারণ থাকলে ভিন্ন কথা; তার হিসাব তো আল্লাহর কাছে। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)
বললেন, আল্লাহর কসম! আমি সে ব্যাক্তির
বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করব, যে ব্যাক্তি সালাত
(নামায/নামাজ) ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে। * কেননা যাকাত মালের হক। আল্লাহর কসম,
যদি তারা একটি উটের রশিও দিতে
অস্বীকার করে যা তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় যাকাত
হিসাবে দিত, তবুও আমি তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করব। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, যুদ্ধের ব্যাপারে
আল্লাহ আবূ বকর (রাঃ)-এর বক্ষ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং আমিও উপলব্ধি করলাম যে,
এ ই হক।
৩৩। আবূ তাহির,
হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ও আহমাদ
ইবনু ঈসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই
– এ কথার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি।
সূতরাং যে কেউ আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই স্বীকার করবে, সে আমা হতে তার জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে;
তবে শরীআতসম্মত কারণ ব্যতীত।
আর তার হিসাব আল্লাহর কাছে।
৩৪। আহমাদ ইবনু আবদ
আয-যাবিব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই
-এ কথার সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত এবং আমার প্রতি ও আমি যা নিয়ে এসেছি তার প্রতি ঈমান
না আনা পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। এগুলো মেনে নিলে
তারা তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া। আর তাদের হিসাব-নিকাশ
আল্লাহর কাছে।
৩৫। আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও জাবির (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার
জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। বাকি অংশ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইবনু মূসায়্যাব-এর বর্ণিত
হাদীসের অনুরুপ। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন
ইলাহ নেই, এ কথার স্বীকৃতি না
দেওয়া পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নেই- এ কথা স্বীকার করলে তারা আমার থেকে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করবে।
তবে শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া এবং তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত
করলেনঃ (অর্থ) “আপনি তো একজন উপদেশদাতা। আপনি এদের উপর কর্মনিয়ন্ত্রক নন”। ” (৮৮ ২১-২২)
৩৬। আবূ গাসসান-আল
মিসমাঈ মালিক ইবনু আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লোকদের সাথে যুদ্ধ
করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য
দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই
এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল এবং সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করে, যাকাত দেয়। যদি এগুলো করে তাহলে আমা থেকে তারা জানোমালের
নিরাপত্তা লাভ করবে, তবে শরীআতসম্মত কারন
ছাড়া। আর তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে।
৩৭। সূয়ায়দ ইবনু সাঈদ
ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ)। আবূ মালিক তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি;
আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই,
এ কথা স্বীকার করে এবং আল্লাহ
ছাড়া অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করে, তবে তার জানোমাল নিরাপদ। আর তার হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে।
৩৮। আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মালিক (রহঃ)-এর সুত্রে তার পিতা তারিক (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ তা’আলাকে একঁ বলে স্বীকার করেতারপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন।
৩৯। হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া আত তূজীবী (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসা য়্যাব (রহঃ)-এর সুত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ননা
করেন যে, আবূ তালিবের মৃত্যুর
সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে উপস্থিত হলেন। সেখানে আবূ
জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমায়্যা ইবনু মুগীরাকে দেখতে পেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচাজানো! আপনি
কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন। আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য (এর উসিলায়) সাক্ষ্
দিব। আবূ জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমায়্যা বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের দ্বীন
থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার ঐ কথার পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছিলেন। আবূ তালিব শেষ কথাটি এ
বললেন যে, তিনি আবদুল মুত্তালিবের
দ্বীনের উপরই রয়েছেন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- বলতে অস্বীকার করলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আপনার জন্য অবশ্যই ইসতিগফার- করতে থাকব, যতক্ষন না আমাকে তা থেকে নিষেধ করা হয়, এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তায়াআলা নাযিল করেনঃ “(অর্থ)
আন্তীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এবং মুমিনদের সঙ্গত নয় যখন সূস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী। “ (৯-১১৩) আবূ আল্লাহ জন্য বিশেষভাবে
আবূ তালিবের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে লক্ষ করে ইরশাদ
করেনঃ (অর্থ) (হে রাসুল) আপনি যাকে চাইবেন তাকে পথ দেখাতে পারবেন না কিন্তু আল্লাহ
পথ দেখান, যাকে ইচ্ছা করেন।
আর তিনই সম্যক জ্ঞাত আছেন কাদের ভাগ্যে হিদায়াত আছে সে সষ্পর্কে। ”
৪০। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)যুহুরির সুত্রে এ সনদেই অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সালিহ-এর
হাদীসটি এ বাক্যেই শেষ হয়েছে এবং তিনি আয়াত দুটির উল্লেখ করেননি। তিনি তার বর্ণনায়
আরও উল্লেখ করেন তারা উভয়ই এ বক্তব্যটি পুনরাবৃত্তি করেন। -মা’মার বর্ণিত হাদীসে -এর
স্থলে তারা উভয়ই তার কাছে একথার পূনরাবৃত্তি করতে থাকে কথার উল্লেখ রয়েছে।
০০৪১ মুহাম্মাদ ইবনু
আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
চাচা আবূ তালিবের অন্তিমকালে তাকে বলেছিলেন, আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন, কিয়ামত দিবসে আমি আপনার জন্য এর সাক্ষ্য দিব। কিন্তু
তিনি অস্বীকার করলেন। অনন্তর আল্লাহ জন্য নাযিল করেনঃ
০০৪২ মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম ইবনু মায়মুন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার
চাচাকে বললেন, আপনি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-
বলুন, কিয়ামত দিবসে আপনার পক্ষে
আমি এর সাক্ষ্য দেব! তিনি বললেন, আবূ তালিব ভীত হয়ে
এ কথা বলেছেন, কুরায়শ কর্তৃক এরুপ
দোষারোপ করার আশঙ্কা যদি না থাকত, তাহলে আমি কালিমা
তাওহীদ পাঠ করে তোমার চোখ জুড়াতাম। এ প্রেক্ষিতে আল্লাহ নাযিল করেনঃ (অর্থ) আপনি যাকে
চাইবেন পথ দেখাতে পারবেন না ; কিন্তু আল্লাহ যাকে
ইচ্ছা পথ দেখান।
০০৪৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যাক্তি -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ–এর
নিশ্চিত বিশ্বাস নিয়ে ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
০০৪৪ মুহাম্মাদ ইবনু
আবূ বকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে অনুরুপ বলতে শুনেছ। বাকি অংশ পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরুপ।
০০৪৫ আবূ বকর ইবনু
নাযর ইবনু আবূ নাযর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাথে একটি সফরে ছিলাম। এক পর্যায়ে দলের রসদপত্র নিঃশেষ হয়ে গেল। পরিশেষে রাসুল
তাদের কিছু সংখ্যক উট যবেহ করার মনস্হ করলেন। রাবী বলেন যে, এতে উমর (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি সকলের রসদ সামগ্রী একত্র
করে আল্লাহর কাছে দুআ করতেন, তবে ভাল হতো। রাসুল
তাই করলেন। যার কাছে গম ছিল সে গম এবং যার কাছে খেজুর ছিল সে খেজুর নিয়ে হাযির হল,
(তালহা ইবনু মূসা ররিফ বলেন)
মুজাহিদ আরো বর্ণনা করেন যে, যার কাছে খেজুরের
আটি ছিল, সে তাই নিয়ে হাযির
হল। আমি (তালহা) আরয করলাম, আটি দিয়ে কি করতেন?
তিনি বললেন, তা চুষে পানি পান করতেন বর্ণনাকারী বললেন,
তারপর রাসুল সংগৃহীত খাদ্য
সামগ্রীর উপর দুআ করলেন। রাবী বলেন, অবশেষে লোকেরা রসদে নিজেদের পাত্র পুর্ণ করে নিল। রাবী বলেন যে, তখন রাসুল বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যে
এ দুটি বিষয়ের প্রতি সন্দেহাতীত বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে।
০০৪৬ সাহল ইবনু উসমান
ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) অথবা আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেন, (সন্দেহ রাবী আমাশের)
তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হল। তারা আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই
এবং অর চর্বি ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
যবেহ করতে পার। রাবী বলেন,
ইত্যবসরে উমর (রাঃ)আসলেন এবং
আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
যদি এরুপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে
বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্হিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দুআ করুন।
আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত
দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা- ঠিক আছে। একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা
বিছালেন, এরপর সকলের উদ্বৃত্ত
রসদ চেয়ে পাঠালেন। রাবী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম
নিয়ে হাযির হল, কেউ একমুঠো খেজুর
নিয়ে হাযির হল, কেউ এক টুকরা রুটি
নিয়ে আসল, এভাবে কিছু পরিমাণ
রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের
দুআ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে
রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিল, এমনকি এ বাহিনীর কোন পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর
সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই
এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল-যে ব্যাক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দুটির উপর বিশ্বাস
রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত
হবে না।
০০৪৭ দাউদ ইবনু রুশায়দ
(রাঃ)উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যে ব্যাক্তি একথার সাক্ষ্য
দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই, তিনি এক এবং মুহাম্মাদ তাঁর
বান্দা ও রাসুল, ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আল্লাহর বান্দা ও তার-বন্দীর পূত্র, তাঁর কথা দ্বারা পয়দা হয়েছেন যা তিনি মারিয়ামের মধ্যে ডেলেছিলেন (অর্থাৎ কালিমায়ে
‘কুন’ দ্বারা মারিয়ামের গর্ভে তাঁকে পয়দা করেছেন) তিনি তাঁর আত্মা, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য। সে ব্যাক্তিকে আল্লাহ জান্নাতের
আটটি তোরণের যেখান দিয়ে ইচ্ছা করবেন তাতে প্রবেশ করাবেন।
০০৪৮ আহমাদ ইবনু ইবরাহীম
আল দাওরাকী (রহঃ) উমায়ের ইবনু হানী (রাঃ)-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তবে তার বর্ণনায় একটু পার্থক্য দেখা যায়। তিনি বলেন, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, সে যে আমলের উপর থাকুক না কেন। জান্নাতের আটটি তোরণের
যেটি দ্বারা ইচ্ছা সে প্রবেশ করতে পারবে” কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি।
০০৪৯ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রাঃ)উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, সুনাবিহ (রহঃ) বলেন, আমি উবাদার কাছে গেলাম, তখন তিনি মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, আমি কেঁদে ফেললাম। আমাকে বললেন, চুপ থাক, কাঁদছ কেন? আল্লাহর শপথ! যদি আমাকে সাক্ষী বানানো হয়,
তাহলে আমি তোমার পক্ষে সাক্ষ্য
দেবো, যদি আমাকে সুপারিশকারী বানানো
হয়, তাহলে অবশ্যই আমি তোমার জন্য
সুপারিশ করব এবং যদি আমার সাধ্য থাকে, তবে আমি তোমার উপকার করব। তারপর উবাদা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি ছাড়া সব হাদীসই তোমাকে শুনিয়েছি, যাতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে। তোমাদের কাছে সে হাদীসটি
আজ বর্ণনা করছি, কেননা আজ আমি মৃত্যুর
দুয়ারে উপস্হিত। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি,
যে ব্যাক্তি সাক্ষ্য দেবে
যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই
এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তাঁর জন্য
জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।
০০৫০ হাদ্দাব ইবনু
খালিদ আল আযদী (রহঃ)মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
আমি এক সময় নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাহনের পিছনে বসা ছিলাম। আমার ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর মাঝে হাওদার কাঠখন্ড ছাড়া আর কোন ব্যবধান ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে মু’আয ইবনু জাবাল! আমি
বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! বান্দা হাযির; আপনার আনুগত্য শিরোধার্য! তারপর তিনি কিছুদুর অগ্রসর হয়ে আবার বললেন, হে মু’আয ইবনু জাবাল! আমি বললাম, বান্দা আপনার খেদমতে হাযির, আপনার আনুগত্য শিরোধার্য, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর তিনি কিছুদুরে আগ্রসর হয়ে
আবার বললেন, হে মু’আয ইবনু জাবাল!
আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!
বান্দা আপনার খেদমতে হাযির, আপনার আনুগত্য শিরোধার্য।
তিনি বললেন, তুমি কি জানো বান্দার
উপর আল্লাহ তায়ালার কী হক রয়েছে? আমি আরয করলাম,
আল্লাহ এবং তার রাসুলই তা
ভাল জানেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে
শরীক করবে না। তারপর কিছুদুর চললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন,
হে মু’আয ইবনু জাবাল। আমি
আরয করলাম, বান্দা আপনার খেদমতে
হাযির, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার আনুগত্য
শিরোধার্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি জানো, এগুলো করলে আল্লাহর কাছে বান্দার কী হক আছে?
আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে
শাস্তি দিবেন না।
০০৫১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি এক সফরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর গাধা উফায়রের পিঠে তার পিছনে বসা ছিলাম। রাসুল বললেন, হে মু’আয! তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর হক
কী এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী? আমি বললাম,
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন।
রাসুল বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর
হক হল, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং
তাঁর সঙ্গে কোনকিছু শরীক করবে না। আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, যে তাঁর সঙ্গে শরীক করবে না, তাকে তিনি শাস্তি দিবেন না। মু’আয (রাঃ) বললেন,
আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি লোকদের এ সংবাদ জানিয়ে
দেব? তিনি বললেন, না, লোকদের এ সংবাদ দিও না, দিলে এর উপরই তারা
ভরসা করে থাকবে।
০০৫২ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার – (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেন, রাসুল বললেন, ছে মু’আয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর কী হক? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভাল জানেন। রাসুল বললেন,
তা হল, যেন আল্লাহরই ইবাদত করা হয় এবং তার সঙ্গে যেন অন্য
কিছু শরীক না করা হয়। তিনি বললেন, তুমি কি জানো,
তা করলে আল্লাহর কাছে বান্দার
হক কী? মু’আয (রাঃ) বললেন,
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল
জানেন। তিনি বললেন, তাদের তিনি শাস্তি
দিবেন না।
০০৫৩ কাসিম ইবনু যাকারিয়া
(রহঃ) মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
ডাকলেন। আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম। তিনি বললেন, তুমি কি জানো, মানুষের উপর আল্লাহর হক কী? বাকি অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
০০৫৪ যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা কর্রেন যে, তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বসা ছিলাম। আমাদের মধ্যে আবূ বকর ও উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। এমন সময়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য- থেকে উঠে চলে গেলেন। তিনি
আমাদের মাঝে আসতে বিলম্ভ করলেন। এতে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের অনুপস্হিতিতে তিনি কোন বিপদে পড়লেন কিনা।
আমরা শঙ্কিত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভীত-সন্ত্রস্তদের মধ্যে আমি ছিলাম প্রথম। তাই আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। তালাশ করতে করতে বনী নাজ্জার
গোত্রের আনসারদের বাগানের কাছে পৌছলাম। আমি বাগানের চারদিকে ঘুরে কোন দরজা পেলাম
না। হঠাৎ দেখতে পেলাম বাইরের কুয়া থেকে একটি ‘রবি’ (ঝরনা, প্রণালী, নালা) বাগানের ভিতর প্রবেশ করেছে। আমি নিজেকে শিয়ালের
মত সংকুচিত করে প্রণালীর পথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! আমি
আরয করলাম, জি হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার অবস্হা কি? আমি আরয করলাম, আপনি আমাদের মধ্যে ছিলেন। তারপর আমাদের মধ্য থেকে
উঠে চলে এলেন। আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম যে আমাদের অবর্তমানে আপনি
বেশি বিপদে পড়লেন কি না? এ আশঙ্কায় আমরা সকলেই
তীত হয়ে পড়লাম। আমি সর্বপ্রথম বেরিয়ে গিয়ে এ বাগানে উপস্হিত হই, আমি শিয়ালের মত সংকুচিত হয়ে এ বাগানে প্রবেশ করি।
আর সেসব লোক আমার পেছনে রয়েছেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হে আবূ হুরায়রা বলে তার পাদুকা জোড়া প্রদান করলেন, আর বললেন, আমার এ পাদুকা জোড়া নিয়ে যাও এবং বাগানের বাইরে
যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে এ সুসংবাদ শুনিয়ে দাও, যে ব্যাক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেয়
যে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই,
সে জান্নাতী হবে। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেন, বাইরে এসে প্রথমেই
উমরের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! এ জুতা জোড়া কি? আমি বললাম, এ তো রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাদুকা মুবারক। তিনি আমাকে এ দুটি দিয়ে পাঠিয়েছেন
যে, যার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়,
সে যদি আন্তরিক বিশ্বাসে সাক্ষ্য
দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই,
তাকে যেন জান্নাতের সুসংবাদ
দেই। একথা শুনে উমর (রাঃ) আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি পেছনে পড়ে গেলাম। তখন তিনি বললেন, ফিরে যাও, হে আবূ হুরায়রা! আমি কাঁদো কাঁদো অবস্হায় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে ফিরে এলাম। আর সাথে সাথে উমরও আমার পিছনে
পিছনে এলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ হুরায়রা! তোমার কি হয়েছে? আরয করলাম, -উমর (রাঃ)-এর সাথে আমার দেখা হয়। আপনি যা বলে আমাকে
পাঠিয়েছিলেন আমি তা উমরকে জানাই। এতে তিনি আমার বুকে আঘাত করলেন যে আমি পিছনের দিকে
পড়ে যাই। তিনি আমাকে ফিরে আসতে বলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
হে উমর! কি সে তোমাকে এ কাজে
উত্তেজিত করেছে?
তিনি উত্তর দিলেনঃ
হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার পিতামাতা কুরবান হোক। আপনি কি আপনার পাদুকা মুবারকসহ
আবূ হুরায়রাকে পাঠিয়েছেন যে, তার সাথে যদি এমন
লোকের সাক্ষাৎ হয়, যে আন্তরিকতার সাথে
সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ
নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ
দাও। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা। উমর (রাঃ) বললেন, এরুপ করতে যাবেন না। আমি আশঙ্কা করি যে,
লোকেরা এর উপরই ভরসা করে বসে
থাকবে ; আপনি তাদের ছেড়ে দিন,
তারা আমল করুক। তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, তাদের ছেড়ে দাও।
০০৫৫ মু’আয ইবনু জাবাল
(রাঃ) একই বাহনের পৃষ্ঠে সওয়ার হয়েছিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হে মু’আয ইবনু জাবাল! মু’আয
(রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল!
বান্দা হাযির, আপনার আনুগত্য শিরোধার্যারাসুল
আবার বললেন, হে মু’আয! মু’আয উত্তর
দিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! বান্দা হাযির,
আপনার আনুগত্য শিরোধার্য।
রাসুল আবার বললেন, হে মু’আয মু’আয উত্তর
করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! বান্দা
হাযির, আপনার আনুগত্য শিরোধার্য।
রাসুল বললেন, যদি কোন বান্দা সাক্ষ্য
দেয় যে, আল্লাহ ছাড়! কোন ইলাহ নেই
এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসুল, তবে আল্লাহ তার উপর
জাহান্নামের আগুন হারাম করবেন। মু’আয (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এ খবর লোকদের দিয়ে দিব কি,
যাতে তারা সুসংবাদ পায়। রাসু
ল বললেন, তা হলে লোকেরা এর
উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। পরে সত্য কথা গোপন রাখার শোনাহের ভয়ে মু’আয (রাঃ) অন্তিমকালে
এ খবর শুনিয়ে গিয়েছেন।
০০৫৬ শায়বান ইবনু
ফাররুখ (রহঃ)মাহমুদ ইবনুুর রাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি মদিনায় এসে ইতবানের সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম,
আপনার কাছ থেকে একটি হাদীস
আমার কাছে পৌচেছে ইতবান বললেন, আমার চোখে কোন এক
রোগ দেখা দিলে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে খবর পাঠালাম
যে, আমার একান্ত আকাঙ্ক্ষা,
আপনি আমার কাছে তাশরীফ আনবেন
এবং আমার গৃহে দু-রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবেন। আপনার সালাত (নামায/নামাজ)
আদায়ের ন্হানটিকে আমি নিজের জন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের স্হান বানিয়ে নেব। তারপর
আল্লাহ যাদের মনযুর করলেন, তাঁদের সাথে নিয়ে
রাসুল তাশরীফ আনলেন, রাসুলাল্লাহ ঘরে ঢূকে
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকলেন আর তাহার সাহাবীরা পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন।
তারপর মালিক ইবনু দুখশুম-এর প্রতি তাদের দূষ্টি আকৃষ্ট হল। তারা ইচ্ছা পোষণ করছিলেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মলিক ইবনু দুখশুম-এর জন্য বদ দুআ করুন যেন সে ধ্বংস হয়। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন করলেন এবং বললেন,
সে কি সাক্ষ্য দেয় না যে,
আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং
আমি আল্লাহর রাসুল? তাঁরা আরয করলেন,
সে এ কথা বলে বটে,
কিন্তু তার অন্তরে ঈমান নেই।
রাসুল বললেন, যে ব্যাক্তি-আল্লাহ
ছাড়া ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল- এ কথার সাক্ষ্য না দেবে সে জাহান্নামে প্রবেশ
করবে! অর্থাৎ আগুন তাকে দগ্ধ করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, হাদীসটি আমাকে বিষ্মিত করেছিল। আমি আমার পুত্রকে
বললাম, হাদীসটি লিখে নাও। তারপর সে
তা লিখে রাখল।
০০৫৭ আবূ বকর ইবনু
নাফি আল আবদী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ইতবান (রাঃ) অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ বলে খবর পাঠালেন, আপনি আমার ঘরে তাশরীফ আনুন এবং আমার জন্য একটি সালাত
(নামায/নামাজ)-এর স্হান নিদিষ্ট করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে তাশরীফ আনলেন এবং মালিক ইবনু দুখশুম নামক এক ব্যাক্তির কথা সেখানে
উল্লেখ করা হলতারপর বর্ণনাকারী সুলায়মান ইবনু মুগীরার অনুরুপ হাদীসটি রিওয়ায়েত করেন।
০০৫৮ মুহাম্মদ ইবনু
ইয়াহইয়া ইবনু আবূ উমর আল মাক্কী ও বিশর ইবনু হাকাম (রহঃ)আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ সে ব্যাক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে
যে রব হিসাবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসাবে ইসলামকে
এবং রাসুল হিসাবে মুহাম্মদ -কে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছে।
০০৫৯ উবায়দুল্লাহ
ইবনু সাঈদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও
কিছু বেশি। আর লজ্জা-শরম ঈমানের একটি শাখা।
০০৬০ যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু
বেশি। অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে “আল্লাহ ব্যাতিত ইলাহ নেই” এ
কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা
হচ্ছে-;রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু
অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা।
০০৬১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আমর আন-নাকিদ ও যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ)সালিমের পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যাক্তি তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে নসীহত করছিলেন
শুনতে পেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।
০০৬২ আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর বর্ণনায় আছে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ; সে আনসারী তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে নসীহত করছিলেন।
০০৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্নন করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লজ্জা কল্যাণ বয়ে
আনে। এ রিওয়ায়েত শুনে বুশায়র ইবনু কা’ব বলেছেন, হিকমতের গ্রন্থে লিখিত আছে ষে, লজ্জা মর্যাদা, গম্ভিড়্য ও ধৈর্যের উৎস। ইমরান (রাঃ) বলেন,
আমি তোমার কাছে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস বর্ণনা করছি আর তুমি আমার কাছে তোমার কথা
শোনাচ্ছ।
০০৬৪ ইয়াহইয়া ইবনু
হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমাদের একদল ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ)-এর কাছে উপস্হিত
ছিলাম। আমাদের মাঝে বুশায়র ইবনু কাবও ছিলেন। তখন ইমরান (রাঃ) আমাদের কাছে হাদীস রিওয়ায়েত
প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লজ্জা মঙ্গলজনক সবটাই।
রাবী বলেন যে, কিংবা রাসুল বলেছেনঃ
লজ্জা সবটাই মঙ্গলজনক। বুশায়র ইবনু কাব (রহঃ) বলেন, কোন কোন কিতাবে বা হিকমতের গ্রন্থে আমরা পেয়েছি
যে, লজ্জা থেকেই প্রশান্তি ও আল্লাহর
জন্য গম্ভিড়্য এবং তা থেকে দুর্বলতারও উৎপত্তি। রাবী বলেন, একথা শুনে ইমরান (রাঃ) রাগান্বিত হলেন, এমন কি তার দু চোখ লাল হয়ে গেল। ইমরান (রাঃ) বলেনঃ
সাবধান! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস রিওয়ায়েত করছি,
পক্ষান্তরে তুমি তার মুকাবিলায়
পূঁথির কথা পেশ করছ। এরপর ইমরান (রাঃ) পুনরুক্তি করলেন। আর বুশায়রও তার কথার পূনরাবৃত্তি
করলেন। এতে ইমরান (রাঃ) খুবই রাগান্বিত হলেনা রাবী বলেন যে, আমরা বলতে লাগলাম, হে আবূ নূজায়দ! (ইমরানের উপনাম) সে আমাদেরই লোক।
তার মধ্যে ক্রটি নেই।
০০৬৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
হাম্মাদ ইবনু যায়দের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
০০৬৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব,
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবদুল্লাহ আল সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাকে ইসলাম সমন্ধে এমন কথা
বলে দিন, আপনার পরে যেন তা
আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। আবূ উসামার হাদীসে -এর স্হলে রয়েছে। রাসুল
বললেনঃ তুমি বল, আমি আল্লাহর প্রতি
ঈমান এনেছি। তারপর এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাক।
০০৬৭ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর খেদমতে আরয করল যে, কোন ইসলাম উত্তম
(অর্থাৎ ইসলামের সর্বোত্তম আমল কোনটি?) রাসুল বললেনঃ তুমি লোকদের পানাহার করাবে এবং সালাম দিবে, তোমার পরিচিত কিংবা অপরিচিত যেই হোক না কেন।
০০৬৮ আবূ তাহির আহমাদ
ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ আল মিসরী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম মুসলিম কে? তিনি বললেনঃ সেই ব্যাক্তি যার মুখ ও হাত থেকে সকল
মুসলিম নিরাপদ থাকে।
০০৬৯ হাসান আল হুলঅয়ানী
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ)জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে
শুনেছি যে, সত্যিকার মুসলিম সেই
ব্যাক্তি যার মুখ ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।
০০৭০ সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া
ইবনু সাঈদ আল উমুবী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বললেন উত্তম ইসলাম হল তার, যার মুখ ও হাত থেকে সকল মুসলমান নিরাপদ থাকে। ইবরাহীম
ইবনু সাঈদ আল জাওহারী (রহঃ) বুরাইদ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে এ সনদে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সর্বোত্তম মুসলিম কে? রাবী হাদীসের বাকি অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেন।
০০৭১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম,
মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু
আবূ উমর ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ)একত্রে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে, সেই ঈমানের প্রকৃত মিষ্টতা অনুভব করবে। (১) যার
কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্যসব থেকে অধিক প্রিয়, (২) যে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তাঁর
বান্দাকে ভালবাসে এবং (৩) যাকে আল্লাহ কুফূর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে,
যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে
অপছন্দ করে।
০০৭২ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তিনটি গুন যার মধ্যে বিদ্যমান, সে ঈমানের প্রকৃত
সা’দ পায় (১) যে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কাউকে ভালবাসে,
(২) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর
রাসুল অন্য সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় এবং (৩) যাকে আল্লাহ কুফর থেকে নাজাত দিয়েছেন ;
তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে
যাওয়া থেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অধিক পছন্দ করে।
০০৭৩ ইসহাক ইবনু মানসূর
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীদের অনুরুপ;
তবে এতে রয়েছে, ইহুদি অথবা নাসারার দিকে ফিরে যাওয়া থেকে ।
০০৭৪ যুহায়র ইবনু
হারব ও শায়বান ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দা (রাবী আবদুল ওয়ারিসের বর্ণনায় কোন ব্যাক্তি,)ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন আমি তার কাছে তার পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ ও অন্য লোকদের চাইতে অধিক প্রিয় না হব।
০০৭৫ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কেউই ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না আমি তার কাছে তার সন্তান-সন্ততি,
পিতামাতা এবং অন্য লোকদের
চাইতে অধিক প্রিয় না হব।
০০৭৬ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন সে তার ভাই-এর জন্য, অন্য বর্ণনায় তার প্রতিবেশীর জন্যও তা পছন্দ করবে
না, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।
০০৭৭ যুহায়র ইবনু
হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, কোন বান্দা ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না,
যতক্ষন সে তার প্রতিবেশী
(অন্য বর্ণনায় ভাই-এর) জন্য তা পছন্দ না করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।
০০৭৮ ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সা-ঈদ ও আলী
ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যাক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
০০৭৯ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে,
তার ভাল কথা বলা উচিত,
অন্যথা নীরবতা অবলম্বন করা
উচিত। যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তার প্রতিবেশীকে সম্মান
প্রদর্শন করা উচিত। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার মেহমানের সম্মান করা উচিত।
০০৮০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট
না দেয়। যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার মেহমানের সম্মান
প্রদর্শন করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল
কথা বলে অন্যথা চুপ থাকে।
০০৮১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
পরবর্তী অংশ রাবী আবূ হাসীনের হাদীসের অনুরুপ। তবে এতে রয়েছে “তার প্রতিবেশীর প্রতি
সে যেন ভাল ব্যাবহার করে”।
০০৮২ যুহায়র ইবনু
হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ সুরাইয়া আন-খুযায়ী (রাঃ) থেকে
বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে,
সে যেন তার মেহমানের সম্মান
করে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অন্যথা নীরবতা অবলম্বন করে।
০০৮৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রাঃ) তাঁরিক ইবনু শিহাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর
পুর্বে মারওয়ান ইবনু হাকাম সর্বপ্রথম খুতবা প্রদান আরম্ভ করেন। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে
বললেন, খুতবার আগে হবে সালাত (নামায/নামাজ)।
মারওয়ান বললেন, এ নিয়ম রহিত করা হয়েছে।
এতে আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, ‘এ ব্যাক্তি তো কর্তব্য
পালন করেছে ’। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি,
তোমাদের কেউ যদি অন্যায় কাজ
দেখে, তাহলে সে যেন হাত দ্বারা এর
সংশোধন করে দেয়। যদি এর ক্ষমতা না থাকে, তাহলে মুখের দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না
হয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (উক্ত
কাজকে ঘূণা করবে), আর এটাই ঈমানের নিম্নতম
স্তর।
০০৮৪ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আলা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ)-এর সুত্রে মারওয়ানের ঘটনা বর্ননা করেছেন। আর এই
হাদীসটি শু’বা ও সুফিয়ানের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
০০৮৫ আমর আন-নাকিদ,
আবূ বকর ও ইবনু হুমায়দ (রহঃ)আবদুল্লাহ
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তায়াআলা আমার পুর্বে যখনই কোন জাতির মাঝে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রেরণ করেছেন তখনই উম্মাতের মধ্যে তাঁর এমন হাওয়ারী ও সাথী দিয়েছেন, যারা তাঁর পদাংক অনুসরণ করে চলতেন, তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। অনন্তর
তাদের পরে এমন সব লোক তাদের স্হলাভিষিক্ত হয়েছে, যারা মুখে যা বলে বেড়াত কাজে তা পরিণত করত না,
আর সেসব কর্ম সস্পাদন করত
যেগুলোর জন্য তারা আদিষ্ট ছিল না। এদের বিরুদ্ধে যারা হাত দ্বারা জিহাদ করবে,
তারা মুমিন; যারা এদের বিরুদ্ধে মুখের কথা দ্বারা জিহাদ করবে,
তারাও মুমিন এবং যারা এদের
বিরুদ্ধে অন্তরে (ঘূণা পোষণ দ্বারা) জিহাদ করবে তারাও মুমিন। এর বাইরে সরিষার দানার
পরিমাণেও ঈমান নেই। রাবী আবূ রাফি (রহঃ) বলেন, আমি হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা
করলাম, তিনি আমার বিবরণ অস্বীকার
করলেন। ঘটনাক্রমে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) উপাস্থিত হলেন এবং কানাত নামক (মদিনার
নিকটবতী একটি) স্হানে অবতরণ করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)অসুস্হ ইবনু মাসঊদকে দেখার
উদ্দেশ্যে আমাকে সাথে নিয়ে গেলেন। আমি তার সাথে গেলাম। যখন আমরা বসে পড়ল। ম তখন আমি
এই হাদীস সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি তদ্র্যুপ বর্ণনা করলেন যেরুপ আমি ইবনু উমরের
কাছে বর্ণনা করেছিলাম। সালিহ ইবনু কায়সার বলেন, এ হাদীসটি আবূ রাফি থেকে অনুরুপভাবে বর্ণিত হয়েছে।
০০৮৬ আবূ বকর ইবনু
ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে,
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এমন কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিবাহিত হননি যার এমন হাওয়ারী ছিল না,
যারা তাঁর প্রদর্শিত পথে চলতেন
না এবং তার প্রতিষ্ঠিত আদর্শের উপর আমল করতেন না। তারপর তিনি সালিহ বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ রিওয়ায়েত করেছেন। তবে এ বর্ণনায় ইবনু মাসঊদের আগমন এবং তাঁর সাথে ইবনু উমরের
মিলিত হওয়ার বিষয় উল্লেখ নেই।
০০৮৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র,
আবূ কুরায়ব এবং ইয়াহইয়া ইবনু
হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে
ইয়ামনের দিকে ইশারা করে বললেনঃ জেনে* রাখ, ঈমান সেখানেই। কঠোর ও পাষাণ-হৃদয় হচ্ছে শয়তানের দুই শিং এর স্হলে বসবাসকারী সেসব
লোক, দ্বারা উটের লেজের গোড়ায় থেকে
চিৎকার দিয়ে থাকে, অর্থাৎ রাবীআ ও মূযার
গোত্র।
০০৮৮ আবূ রাবী আয
যাহার্নী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ইয়ামনের অধিবাসীরা এসেছে, তাদের হৃদয় বড়ই কোমল।
ঈমান রয়েছে ইয়ামেনবাসীদের মধ্যে, ধর্মীয় প্রজ্ঞা রয়েছে
ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হীকমতও রয়েছে ইয়ামনবাসীদের মধ্যে।
০০৮৯ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না এবং আমর আল নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
০০৯০ আমর আবূ-নাকিদ
ও হাসান আল হুলওয়ানি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কাছে ইয়ামনবাসীরা এসেছো তারা নমরচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ধর্মীয় প্রজ্ঞা
ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে রয়েছে।
০০৯১ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কুফুরের মূল পুর্ব দিকে। অহংকার ও দাম্ভিকতা রয়েছে উচ্চঃসূরে চিৎকারকারী পশুপালক ঘোড়া
ও উটওয়ালাদের মধ্যে। আর নমরতা রয়েছে বকরিওয়ালাদের মধ্যে।
০০৯২ ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে, কুফূর পূর্বদিকে এবং
নমরতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে। আর অহংকার ও রিয়া চিৎকারকারী ঘোড়া ও উট-পালকদের মধ্যে।
০০৯৩ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি যে, অহংকার ও দাম্ভিকতা
চিৎকারকারী উট-পালকদের মধ্যে এবং নমরতা বকরিওয়ালাদের মধ্যে।
০০৯৪ আবদুল্লাহ ইবনু
আবদুর রহমান আদ দারমী (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে
এতে এ বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে, ঈমান ইয়ামনবাসীদের
মধ্যে এবং হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে।
০০৯৫ আবদুল্লাহ ইবনু
আবদুর রহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ ইয়ামনবাসীরা এসেছে। তারা কোমল-হৃদয় ও নমরচিত্ত। ঈমান ইয়ামনবাসীদের মধ্যে এবং
হিকমতও ইয়ামনবাসীদের মধ্যে। নমরতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে এবং অহংকার ও দাম্ভিকতা চিৎকারকারী
উট-পালকদের মধ্যে যাদের অবস্হান সুর্যোদয়ের দিকে।
০০৯৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের কাছে ইয়ামনের লোকেরা উপস্হিত হয়েছে। তারা নমরচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী।
ঈমান ইয়ামনীদের মধ্যে এবং হিকমত ইয়ামনীদের। আর কুফরের মূল রয়েছে পূর্বদিকে।
০০৯৭ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ)আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে এ সনদেই অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তবে তাঁর রিওয়ায়েতে -কুফরের মূল রয়েছে পূর্ব দিকে, কথাটি উল্লেখ করেননি।
০০৯৮ মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ)আমাশ (রহঃ)এর সুত্রে এ সনদে জারীর (রাঃ) বর্নিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে বর্ণনাকারী শু’বা, অহংকার ও দাম্ভিকতা উট-মালিকদের মধ্যে আর নমরতা
ও মর্যাদা বকরীর মালিকদের মধ্যে, অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন।
০০৯৯ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) জারির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মনের কঠোরতা ও গোয়ার্তুমি পূর্বাঞ্চলে আর ঈমান হিজাযবাসীদের মধ্যে।
১০০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষন না ঈমান আন আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে
না যতক্ষন না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বাতলে দেব না যা করলে তোমাদের
পারস্পরিক ভালবাসার সৃষ্টি হবে? তা হল, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে।
১০১ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আ’মাশ (রহঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ,
তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে
পারবে না, যতক্ষন না তোমরা ঈমান
আন। পরবর্তী অংশ আবূ মুআবিয়া ও ওয়াকী-এর হাদীসের অনুরুপ।
১০২ মুহাম্মদ ইবনু
আব্বাদ আল মাক্কী (রহঃ) তামীমদারী (রহঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কল্যাণ
কামনাই দ্বীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা?
তিনি বললেনঃ আল্লাহর,
তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসুলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের।
১০৩ মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম (রহঃ) তামীমদারী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরোক্ত
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১০৪ উমায়্যা ইবনু
বিসতাম (রহঃ) তামীমদারী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১০৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের, যাকাত দেওয়ার এবং প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার
জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়আত করেছি।
১০৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব
ও ইবনু নূমায়ের (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার শর্তে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বায়ঁআত করেছি।
১০৭ সুরায়হ ইবনু ইউনূস
ও ইয়াকুব আদু-দাওরাকী (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
বায়আত করলাম শোনার ও মান্য করার। তিনি আমাকে বলে দিলেনঃ “আমার সাধ্যানুসারে ” একথাটিও
বল। আর প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য বায়আত করলাম। ইয়াকুব এক বর্ণনায় হুমায়শ–এর
নাম না বলে সাইয়ার-এর নাম উল্লেখ করেন।
১০৮ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইমরান আত তূর্জীবী আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যবিচারী ব্যাক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মুমিন
থাকে না, চুরি করার সময় চোরও
ঈমানদার থাকে না, মদ্যপায়ীও মদ্যপান
করার সময় মুমিন থাকে না। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অন্য সুত্রে এর সাথে এও বলেছেনঃ জনসমুক্ষে
মূল্যবান সামগ্রী লুটেরা যখন লুট করতে থাকে, তখন সে মুমিন থাকে না।
১০৯ আবদুল মালিক ইবনু
শুআইব ইবনু লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না বাকি অংশ লুটতরাজের বর্ণনাসহ উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ।
তবে এতে মূল্যবান সামগ্রী- কথাটির উল্লেখ নেই। ইবনু শিহাব বলেন, সাঈদ ইবনুল মূসা য়্যাব ও আবূ সালামা ইবনু আবদুর
রহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে আবূ বকরের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে ‘লুটের’ কথা উল্লেখ করেননি।
১১০ মুহাম্মাদ ইবনু
মিহরান আল রাযী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে উকায়লের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন
এবং -লুটের- কথাও বর্ণনা করেছেন, কিন্তু ‘মুল্যবান’-
কথাটি বলেন নি।
১১১ হাসান ইবনু আলী
আল হুলওয়ানী, কুতায়বা ইবনু সাঈদ
ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে সকলেই মুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ
বর্ণনা করেছেন। তবে আ’লা ও সাফওয়ান ইবনু সুলায়মের বর্নিত হাদিসে জনসম্মক্ষে- কথাটি
নেই “যখন লুটে লিপ্ত আর মুমিনরা তারপ্রতি চোখ তুলে তাকিয়ে আছে, এমতাবস্হায় সে মুমিন থাকে না, কথাটির উল্লেখ রয়েছে। হাম্মাম তাঁর হাদীসে আরো
বলেছেন, খেয়ানতকারী যখন খেয়ানত করে,
তখন মুমিন থাকে না। সুতরাং
তোমরা সাবধান থেকে, তোমরা সাবধান থেকে।
১১২ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ব্যভিচারী
যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে
না। চোর যখন চৌর্যবৃত্তিতে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ ব্যাক্তি যখন মদ পানে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। তরে এর পরও তওবার দরজা খোলা
থাকে।
১১৩ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি (রহঃ) মারুফ সনদে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত এরপর শু’বার হাদীসের
অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।
১১৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, ইবনু নুনায়র এবং যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
চারটি স্বভাব যার মধ্যে রয়েছে সে সত্যিকার মুনাফিক; যার মধ্যে উক্ত চারটির একটিও থাকে সে তা না ছাড়া
পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকীর একটি স্বভাব রয়ে যায়। (১) সেকথা বললে মিথ্যা বলে,
(২)চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে,
(৩) ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং
(৪) ঝগড়া করলে কটূক্তি করে। রাবী সুফিয়ানের বর্ণনায় হাদিসটিতে শব্দের স্হলে রয়েছে,
(উভয় শব্দের অর্থ একই)।
১১৫ ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়্যুব ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুনাফিকের আলামত তিনটি — (১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) ওয়াদা করলে খেলাফ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত
রাখা হলে সে তা খেয়ানত করে।
১১৬ আবূ বকব ইবনু
ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
মুনাফিকদের আলামত তিনটি -(১) সে কথা বললে মিথ্যা বলে, (২) ওয়াদা করলে সে খেলাফ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত
রাখা হলে সে খেয়ানত করে।
১১৭ উকবা ইবনু মুকরাম
আল উম্মি (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি উপরোক্ত সনদে
আলা ইবনু আবদুর রহমান থেকে শুনেছি, তিনি বলেন,
মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি,
যদিও সে রোযা পালন করে এবং
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আর মনে করে যে সে মুসলমান।
১১৮ আবূ নাসর আত তামমার
ও আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ)-এর
সুত্রে বর্ণিত ‘আলা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এতে আছে যদিও সে রোযা পালন
করে, সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করে এবং মনে করে যে সে মুসলিম।
১১৯ আবূ বকর ইবনু
শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুল বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি তার ভাইকে কাফির বলে
আখ্যায়িত করলে সে কুফরী তাদের উভয়ের কোন একজনের উপরে বর্তাবে।
১২০ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া আত তামীমী, ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব,
কুতায়বা ইবনু সাঈদ এবং আলী
ইবনু হুজর (রহঃ)ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কেউ তার ভাইকে কাফির- বলে সম্মোধন করলে উভয়ের একজনের উপর কাফির, শব্দটি বর্তাবে। যাকে কাফির বনা হয়েছে সে কাফির
হলে তো হলই নতুবা কথাটি বক্তার উপরই ফিরে আসবে।
১২১ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যাক্তি
জেনেশুনে আপন পিতার পরিবর্তে অন্য কাউকে পিতা বলে, সে কুফরী করল। আর যে ব্যাক্তি এমন কিছু দাবি করে
যা তার নয়, সে আমাদের দলভুক্ত
নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার আবাসস্হল বানিয়ে নেয়। আর কেউ কাউকে কাফির বলে সম্মোধন
করলে বা ‘আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকলে, সম্ভোধিত ব্যাক্তি যদি অনুরুপ না হয়, তা হলে এ কুফরী সম্ভোধনকারীর প্রতি ফিরে আসবে।
১২২ হারুন ইবনু সাঈদ
আল আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমরা আপন পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। যে ব্যাক্তি তার পিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়
সে কাফির।
১২৩ আমর আন নাকিদ
(রহঃ) আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার উভয় কর্ণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছে যে, ইসলাম গ্রহণের পর
যে ব্যাক্তি জেনেশুনে নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেয়, তার উপর জান্নাত হারাম। রাবী আবূ বকর (রাঃ) বললেন,
আমিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস শুনেছি।
১২৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) সা’দ ও আবূ বকর (রাঃ) উভয় থেকে বর্ণনা করেন যে, তারা প্রত্যেকে বলেন, মুহাম্মাদ থেকে আমার দুই কান শুনেছে এবং আমার অন্তর
স্বরন রেখেছে যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি
আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দেয় অথচ সে জানে যে সে তার পিতা নয়, তার উপর জান্নাত হারাম।
১২৫ মুহাম্মদ ইবনু
বাককার ইবনু আবূ-এরাইয়ান, ও আওন ইবনু সালাম
এবং মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি দেওয়া শোনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারিতে
প্রবৃত্ত হওয়া কুফুরি। রাবী যুবায়দ বলেন, আমি (আমার উস্তাদ) আবূ ওয়ায়েলকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রেওয়ায়েত করতে শুনেছেন? তিনি (আবূ ওয়াহোল) বললেন, হ্যা। তবে রাবী শু’বার হাদীসে আবূ ওয়ায়েলের সঙ্গে
যুবায়েরের উক্ত কথার উল্লেখ নেই।
১২৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না এবং ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের
সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১২৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার
ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়
হাজ্জের (হজ্জ) দিনে আমাকে বললেন, লোকদের চুপ করাও।
তারপর। তিনি রাসুল বললেনঃ আমার পরে পরস্পর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে তোমরা কাফিরে পরিণত
হরো না।
১২৮ উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ
হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১২৯ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ বকর ইবনু খাল্লাদ আল বাহিলী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর সূত্রে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) দিন তিনি বলেছেনঃ তোমাদের
জন্য আফসোস অথবা (বললেন) দুর্ভোগ তোমাদের। আমার পরে তোমরা পরস্পর হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত
হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।
১৩০ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
ওয়াকিদের সুত্রে শু’বার বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
১৩১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
দুটি স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যে দুটি কুফুর বলে
গণ্য (১) বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং (২) মৃতের জন্য উচ্চঃস্বরে বিলাপ করা।
১৩২ আলী ইবনু হুজর
আস সা’দী (রহঃ) শা’বী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জারীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যে দাস তার মনিবের কাছ থেকে পালিয়েগেল, সে কুফরী করল, যতক্ষন না সে তার প্রভুর কাছে ফিরে আসে। মনসূর বলেন,
আল্লাহর কসম! এ হাদীস নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এখানে বসরায় আমার থেকে এ হাদীস বর্ণিত হোক
তা আমি অপছন্দ করি।
১৩৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
যে দাস পালিয়েযায়, তার থেকে (আল্লাহ
ও রাসুলের) যিম্মাদারী শেষ হয়ে যায়।
১৩৪ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ)জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন
দাস পালিয়েযায়, তখন তার সালাত (নামায/নামাজ)
কবুল হয় না।
১৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
হুদায়বিয়া প্রান্তরে রাতে (বৃষ্টিপাতের পরে) ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
সালাত (নামায/নামাজ) সম্পন্ন করে তিনি উপস্হিত লোকদের লক্ষ করে বললেনঃ তোমরা কি জানো
তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা উত্তরে বললেনঃ
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল -ই সম্যক অবগত আছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ কতিপয় বান্দা
সকালে উঠেছে আমার প্রতি মুমিনরুপে এবং কতিপয় বান্দা উঠেছে কাফিররুপে। যারা বলেছে,
আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে বৃষ্টিপাত
হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী
এবং নক্ষত্রের প্রতি অবিশ্বাসী, আর যারা বলেছে যে,
অমুক অমূক নক্ষত্রের প্রভাবে
বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমার প্রতি অবিশ্বাসী
এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী।
১৩৬ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া ও আমর ইবনু সাওয়াদ আল আমিরী এবং মুহাম্মাদ ইবনু সালামা, আল মুরাদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো না, – তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ আমি যখন আমার বান্দার উপর অনুগ্রহ
করি, তখনই তাদের একদল তা অস্বীকার
করে এবং বলতে থাকে নক্ষত্র, নক্ষত্রের প্রভাবে
আমাদের কাজ হয়।
১৩৭ মুহাম্মাদ ইবনু
নালামা আন মুরাদী এবং আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে কোন বরকত (বৃষ্টি) অবতীর্ণ করলে,
একদল লোক প্রত্যুষে তা অস্বীকার
করে, বৃষ্টিপাত করান আল্লাহ তায়ালা
আর তারা বলতে থাকে যে, অমুক অমুক নক্ষত্র।
মুরাদীর হাদীসে অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে, কথার উল্লেখ রয়েছে।
১৩৮ আব্বাস ইবনুুআবদুল
আযীম আল আম্বারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায়
একবার বৃষ্টিপাত হলে, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকদের কেউবা শোকরগোযার রয়েছে আর কেউবা অকৃতজ্ঞ রয়েছে। একদল
বলে আল্লাহর রহমত, অপর দল বলে অমুক অমুক
নক্ষত্রের প্রভাবে তা প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেনঃ আমি নক্ষত্ররাজির
অস্তাচলের শপথ করছি, অবশ্যই এটা এক মহা
শপথ, যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয়ই
এটা সম্মানিত কুরআন, যা লাওহে মাহফূযে
সংরক্ষিত রয়েছে। যারা পবিত্র তারা ব্যতীত কেউ তা স্পর্শ করতে পারবে না, এ বিশ্বজগৎসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ
তবুও কি তোমরা এ বানীকে তুচ্ছ মনে করবে? আর মিথ্যাচারকেই তোমরা তোমাদের জীবনের সম্বল করে নিয়েছ? (সূবা ওয়াকিয়াহঃ ৭৫-৮২)
১৩৯ মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (ব) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ মুনাফিকের চিহ্ন এবং আনসারদের প্রতি মুহব্বত মুমিনের চিহ্ন।
১৪০ ইয়াহইয়া ইবনু
হাবীব আল হারিসী (রহঃ)আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারদের
প্রতি মুহাব্বত ঈমানের চিহ্ন এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ নিফাকের চিহ্ন।
১৪১ যুহায়র ইবনু হারব
এবং উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের সম্পর্কে
বলেছেনঃ মুমিনরাই তাদের মুহব্বত করে থাকে এবং মুনাফিকরাই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন
করে। যারা তাঁদের ভালবাসে আল্লাহ তাদের ভালবাসেন, যারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে আল্লাহ তাদের
ঘূণা করেন। শু’বা বলেন, আমি রাবী আদীকে জিজ্ঞেস
করলাম, আপনি কি বারাআ (রাঃ) থেকে
এটি শুনেছেন? তিনি বললেন,
বারাআ (রাঃ) স্বয়ং আমার কাছে
এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৪২ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী ব্যাক্তি আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে
না।
১৪৩ উসমান ইবনু মুহাম্মাদ
ইবনু আবূ শায়বা এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে,
সে আনসারদের সাথে দুশমনী রাখতে
পারে না।
১৪৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অংকুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি
করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যাক্তই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যাক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।
১৪৫ মুহাম্মাদ ইবনু
রুমহ ইবনু মুহাজির আল মিসরি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে রমনীগন! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাক এবং বেশি করে ইস্তিগফার
কর। কেননা আমি দেখেছি যে, জাহান্নামের অধিবাসীদের
অধিকাংশই নারী। জনৈকা বুদ্ধিমতী মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার
কারণ কি? বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর
প্রতি (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করে থাকো। আর দ্বীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ক্রটিপূর্ণ কোন সম্প্রদায়,
জ্ঞানীদের উপর তোমাদের চেয়ে
প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখিনি। প্রশ্নকারিনা জিজ্ঞেস করল, হে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনে আমাদের কমতি কিসে? তিনি বললেনঃ তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির ক্রটি হলো দু-জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন
পুরুষের সাক্ষ্যের সমান ; এটাই তোমাদের বুদ্ধির
ক্রটির প্রমাণ। স্ত্রীলোক (প্রতিমাসে) কয়েকদিন সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত থাকে
আর রমযান মাসে রোযা ভঙ্গ করে; (ঋতুমতী হওয়ার কারণে)
এটাই দ্বীনের ক্রটি। আবূ তাহির ইবনু হাদ-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৪৬ হাসান ইবনু আলী
আল হুলওয়ানী (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) সুত্রে এবং ইয়াহইয়া ইবনু আইয়্যুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা
(রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৪৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
বনী আদম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দুরে সরে পড়ে এবং বলতে
থাকে হায়! তার দুর্ভাগ্যা ইবনু কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার। দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হল। তারপর সে সিজদা করল এবং এর বিনিময়
তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হল। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হল, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হল।
১৪৮ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আমাশ (রাঃ)-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে “আমি
অমান্য করলাম; ফলে আমার জন্য নির্ধারিত
হল জাহান্নাম”।
১৪৯ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়াহ আততামীমী এবং উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক ও
কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা।
১৫০ আবূ গাসসান আল
মিসমাঈ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি, বান্দা এবং শিরক-কুফরের
মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) পরিত্যাগ করা।
১৫১ মানসুর ইবনু আবূ
মুযাহিম এবং মুহাম্মাদ ইবনু জাফর ইবনু যিয়াদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, সুলুল্লাহ -কে প্রশ্ন করা
হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি?
তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি
ঈমান আনা। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তারপর কোনটি?
তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হল, তারপর কোনটি?
তিনি বললেন, পাপমুক্ত হাজ্জ (হজ্জ)। মুহাম্মাদ ইবনু জাফরের রেওয়ায়েতে
আছেঃ তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল
-এর প্রতি ঈমান আনা। মুহাম্মদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরীর সুত্রেও এ
সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৫২ আবূ রাবী- আয
যাহরানী এবং খালফ ইবনু হিশাম (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করা। আমি আবার প্রশ্ন করলামঃ কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম?
তিনি বললেনঃ সে গোলাম আযাদ
করা উত্তম, যে মুনীবের কাছে অধিক
প্রিয় এবং অধিক মূল্যবান। আমি আরয-করলাম আমি যদি তা করতে না পারি? তিনি বললেনঃ তা হলে অন্যের কর্মে সাহায্য করবে অথবা
কর্মহীনের কাজ করে দেবে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি এমন কোন কাজ করতে অক্ষম হই? তিনি বললেন?, তোমার মন্দ আচরণ থেকে লোকদের মুক্ত রাখবে। এ হল
তোমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি সা’দকা।
১৫৩ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি এবং আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তার বর্ণনার একটু শাব্দিক পার্থক্য
রয়েছে, অর্থ একই।
১৫৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে প্রশ্ন করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি?
তিনি বললেনঃ সময়মত সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি, জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। পাছে তিনি বিরক্ত
হন, এ ভেবে আমি অতিরিক্ত প্রশ্ন
করা থেকে বিরত রইলাম।
১৫৫ মুহাম্মদ ইবনু
আবূ উমর আল মাক্কী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা-করেন যে, তিনি বললেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
কোন আমল জান্নাতের অধিক নিকটবতী করে? তিনি বললেনঃ সালাত (নামায/নামাজ) তার সঠিক সময়ে আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আর কোনটি হে আল্লাহর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ? তিনি বললেনঃ মাতাপিতার
সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম আর কোনটি হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ? তিনি বললেনঃ আল্লাহর
পথে জিহাদ করা।
১৫৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু
মুয়ায আল আনবারি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর সর্বাধিক
প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ সালাত
(নামায/নামাজ) সঠিক সময়ে আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তারপর পিতামাতার প্রতি সদ্বব্যাবহার
করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর কোনটি হে আল্লাহর
রাসুল? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্থায়
জিহাদ করা। তিনি আমাকে একথা গুলো ইরশাদ করলেন, যদি আমি আরো প্রশ্ন করতাম, তাহলে তিনি আরও অতিরিক্ত বিষয় বলতেন।
১৫৭ মুহাম্মদ ইবনু
বাশশার (রহঃ) শু’বার সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে , তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের ঘরের দিকে ইঙ্গিত করলেন।
কিন্তু আমাদের সামনে তার নাম উল্লেখ করেননি। কথাগুলো অতিরিক্ত রয়েছে।
১৫৮ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত
(নামায/নামাজ) সঠিক সময়ে আদায় করা এবং পিতামাতার প্রতি সদ্যবহার করা আমল সমূহের মধ্যে
বা আমলের মধ্যে সর্বোত্তম আমল।
১৫৯ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা
বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর
জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী স্থির করা; অথচ তিনি তোমাকে
সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা তো বড় গোনাহ বটে।
এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আপন সন্তানকে
এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে, সে তোমার আহারের
সঙ্গী হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি?
তিনি বললেনঃ তোমার প্রতিবেশীর
স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
১৬০ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় শোনাহ
কোনটি? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী সাব্যস্ত করবে
অথচ তিনই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তুমি
তোমার সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করবে যে, সে তোমার আহারের সঙ্গী হবে। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ তোমার
প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে! এ উক্তির সমর্থনে আল্লাহ তাঁআলা নাযিল
করেনঃ আর তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার
করে না। যে ব্যাক্তি এগুলো করে, সে শাস্তি-ভোগ করবে।
(২৫- ৬৮)।
১৬১ আমর ইবনু মুহাম্মাদ
ইবনু বুকায়র ইবনু মুহাম্মাদ আবূ-নাকিদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের সবচেয়ে
বড় শোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি এ কথাটি তিনবার
বললেন। (তারপর বললেনঃ সেগুলো হল) (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং (৩) মিথ্যা সাক্ষ্য
দেওয়া কিংবা মিথ্যা কথা বলা। এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেলান
দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হায় বসলেন এবং (শেষোক্ত) কথাটি বারবার বলতে লাগলেন। এমন
কি আমরা মনে মনে বললাম, আহা, তিনি যদি থামতেন!
১৬২ ইয়াহইয়া ইবনু
হাবীব আল হারিসী (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
কবিরা শোনাহ সষ্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তা হল, আল্লাহর সাথে শরীক
করা, পিতামাতার নাফরমানী করা;
কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা
কথা বলা।
১৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু
ওয়ালীদ ইবনু আবদুল হামীদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবীরা শোনাহর বর্ণনা করেন অথবা তাঁকে কবীরা শোনাহর ব্যাপারে প্রশ্ন
করা হয়। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর সাথে শরীক করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, পিতামাতার নাফরমানী করা। আর তিনি বললেনঃ আমি কি
তোমাদের সবচেয়ে বড় শোনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? তিনি বললেনঃ মিথ্যা কথা বলা অথবা মিথ্যা সাক্ষ্য
দেওয়া। রাবী শু’বা বলেন, আমার প্রবল ধারণা
যে, কথাটি হল মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
১৬৪ হারুন ইবনু সাঈদ
আল আয়লী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
ধবংসকারী সাতটি কাজ থেকে তোমরা বেচে থেকে। আরয করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কি? তিনি বললেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা,
(২) যাদু করা, (৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া
তাকে হত্যা করা, (৪) ইয়াতীমের মাল
(অন্যায়ভাবে)খাওয়া, (৫) সুদ খাওয়া,
(৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন
করা এবং (৭) সধবা, সরলমনা ও ঈমানদার
নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা।
১৬৫ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পিতামাতাকে গালমন্দ করা কবীরা শোনাহ। সাহাবা কিরাম আরয করলেন,
হে আল্লাহর রাসুল! কেউ কি
তার পিতামাতাকে গালমন্দ করতে পারে? বললেন, হ্যা। কোন ব্যাক্তি অন্যের পিতাকে গালি দেয়,
প্রতি উত্তরে সেও তার পিতাকে
গালি দেয়। কেউবা অন্যের মাকে গালি দেয়, জবাবে সেও তার মাকে গালি দেয়।
১৬৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
ও ইবনু বাশশার এবং মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) সাঈদ ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) সুত্রে এ সনদে
অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৬৭ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার
ও ইবরাহীম ইবনু দ্বীনার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে ,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অনু পরিমান অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস
করল, মানুষ চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এও কি অহংকার? রাসুল বললেনঃ আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। অহমিকা হচ্ছে দম্ভভরে সত্য
ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।
১৬৮ মিনজাব ইবনু হারিস
আত তামীমী ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমান ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে
প্রবেশ করবে না। আর যে ব্যাক্তির অন্তরে এক সরিষার দানা পরিমাণ অহমিকা থাকবে সেও জান্নাতে
প্রবেশ করবে না।
১৬৯ মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, নবা বলেছেনঃ যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে
সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৭০ মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অন্য বর্ণনায় রাসুল -কে বলতে শুনেছি আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে শরীক করা অবস্হায় যার মৃত্যু হয় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি
(আবদুল্লাহ) বলি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর
সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
১৭১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
ওয়াজিবকারী (অবশ্যম্ভাবী) দুটি বিষয় কি? তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কোনকিছু শরীক না করা অবস্হায় মারা যাবে সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কোনকিছু শরীক করা অবস্থায় মারা
যাবে সে জাহান্নামে যাবে।
১৭২ আবূ আইয়্যুব গায়লানী
সুলায়মান ইবনু উবায়দুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণনা করেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর সম্মুখে হাযির হবে এমন অবস্হায় যে, আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক করে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি তার সম্মুখে
উপস্হিত হবে এমন অবস্হায় যে, সে আল্লাহর সাথে শরীক
স্থির করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ
করবে।
১৭৩ ইসহাক ইবনু মানসুর
(রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ …পরবর্তী অংশ পূর্ববতী হাদীসের অনুরুপ।
১৭৪ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাঈল
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে এসে সুসংবাদ দিলেন যে, আপনার উম্মাতের যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে
শরীক না করে ইন্তেকাল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে। তিনি বললেনঃ
যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে।
১৭৫ যুহায়র ইবনু হারব
ও আহমাদ ইবনু খিরাশ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে
হাযির হলাম। সে সময় তিনি ঘুমাচ্ছিলাম এবং তার গায়ের উপর একথানা সাদা চাঁদর ছিল। আবার
এসে তাকে ঘুমন্ত অবস্হায় পেলাম। পরে আবার এসে দেখি, তিনি ঘুম থেকে উঠেছেন। আমি তাঁর কাছে বসলাম। তারপর
বললেনঃ যে কোন বান্দা (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) বলবে এবং এ বিশ্বাসের উপর মারা
যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি আরয করলাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তবুও? রাসুল বললেনঃ যদিও সে ব্যভিচার ও চুরি করে। আমি
আবার আরয করলাম, যদি সে যিনা করে এবং
চুরি করে তবুও? রাসুল বললেনঃ যদিও
সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে। এ কথাটি তিনবার পূনরাবৃত্তি করা হল। চতুর্থবারে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদিও আবূ যারের নাক ধূলিমলিন হয়
(অর্থাৎ আবূ যারের অপছন্দ হলেও)। রাবী বলেন, আবূ যার (রাঃ) এ কথা বলতে বলতে বের হলেন,
যদিও আবূ যারের নাক ধূলিমলিন
হয়।
১৭৬ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন,
যদি আমি কোন কাফিরের সম্মুখীন
হই এবং সে আমার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তার তলোয়ার দ্বারা আমার একটি হাত উড়িয়ে দেয়, এরপর কোন গাছের আড়ালে গিয়ে বলে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে
ইসলাম গ্রহণ করলাম তা হলে ইয়া রাসুলুল্লাহ! এ কথা বলার পরও আমি কি তাকে কতল করতে পারি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে হত্যা করো না। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলে এ
কথা বলেছে, তবুও কি আমি তাকে
হত্যা করব না? তিনি বললেনঃ না,
হত্যা করতে পারবে না। যদি
তুমি তাকে হত্যা কর (তবে) এ হত্যার পুর্বে তোমার যে অবস্হান ছিল সে ব্যাক্তি সে স্হানে
পৌছবে এবং কালিমা পড়ার আগে সে ব্যাক্তি যে অবস্হানে ছিল তুমি সে স্হানে পৌছবে।
১৭৭ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম,
আবদ ইবনু হুমায়দ, ইসহাক ইবনু মূসা আনসারী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি
(রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে আওযায়ী ও ইবনু জুরায়জ তাদের
হাদীসে বলেন, সে লোকটি বলেছিল,
আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইসলাম
গ্রহণ করলাম, যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে
লায়স বর্ণনা করেছেন। আর মা’মার বর্ণিত হাদীসে যখন আমি তাকে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলাম,
তখন সে বলল, কথাটির উল্লেখ আছে।
১৭৮ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) মিকদাদ ইবনু আমর ইবনু আসওয়াদ আল কিন্দী (রাঃ) যিনি বনী যুহরার মিত্র
এবং বদরের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে হাযির ছিলেন
তার থেকে বর্ণিত। তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আমি যুদ্ধের ময়দানে কোন কাফিরের সমুখীন হই। বাকি অংশ লায়স বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
১৭৯ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক
ইবনু ইব্রাহিম (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
জুহায়ানা গোত্রের হুরাকা শাখার বিরুদ্বে যুদ্বের জন্য পাঠালেন আমরা অতি প্রত্যুষে সেখানে
পৌছলাম এবং যুদ্ধে আমি এক ব্যাক্তিকে মুখোমুখি পেয়ে গেলাম। সে বলে উঠল আমি তাকে বর্শা
দ্বারা আঘাত হানলাম। এতে আমার অন্তরে খটকা সৃষ্টি হল। পরে আমি রাসুল -এর খেদমতে ঘটনাটি
উল্লেখ করি। তিনি বললেনঃ সেকি “লা ইলাহা ইল্লাহ” বলেছিল, আর তুমি তাকে হত্যা করে ফেললে? আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে তো এ কথা আমার অস্ত্রের ভয়ে
বলেছিল। তিনি বললেনঃ তুমি কি তার অন্তর ছিড়ে দেখেছ, যাতে তুমি জানতে পারলে যে সে এ কথাটি ভয়ে বলেছিল?
তিনি বারবার এ কথাটির পুনরাবৃত্তি
করছিলেন। ফলে আমার মনে হচ্ছিল যে, আজই যদি আমি ইসলাম
কবুল করতাম! সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কোন মুসলমানকে হত্যা করবনা,
যতক্ষন না “যুল বুতায়ন” (ভুড়িওয়ালা)
উসামা তাকে হত্যা করে। এক ব্যাক্তি আরয , আল্লাহ কি ইরশাদ করেননিঃ “তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যতক্ষন পর্যন্ত ফিতনা
বিদুরিত না হয় এবং এবং দ্বীন পরিপূর্ণ রুপে আল্লাহর জন্য। প্রতিষ্ঠিতনা হয়। ” (২-১৯৩)সা’দ
বললেন, আমরা তো কাফিরদের বিরুদ্ধে
এ জন্য লড়াই করেছি যে, ফিতনা যেন দূর হয়।
আর তুমি ও তোমার সঙ্গীরা (খারিজী সম্প্রদায়) তো এজন্যই লড়ছ, যাতে ফিতনা সৃষ্টি হয়।
১৮০ ইয়াকুব আল দাওরাকী
(রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ ইবনু হারিছা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুহায়না
গোত্রের হুরাকা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের পাঠালেন। আমরা অতি প্রত্যুষে
সে সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করলাম এবং আমরা তাদের পরাজিত করলাম। আমি এবং একজন আনসার
এক ব্যাক্তির পশ্চাঁদ্ধাবন করলাম। আমরা যখন তা কে ঘিরে ফেললাম তখন সে “লা ইলাহা ইল্লাহ”
বলল আনসার তার মুখে কালিমা শুনে নিবৃত্ত হলেন। কিন্তু আমি তাকে বল্লম দ্বারা এমন আঘাত
করলাম যে, তাকে মেরেই ফেললাম।
আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ খবরটি
পৌছল। তিনি আমাকে ডেকে বললেনঃ হে উসামা! তুমি কি তাকে “লা ইলাহা ইল্লাহ” বলার পরেও
হত্যা করে ফেলেছ? আমি আরয করলাম,
হে আল্লাহর রাসুল! সে ব্যাক্তি
তো আত্নরক্ষার জন্য একথা বলেছিল। রাসুল আবার বললেনঃ তুমি কি তাকে “লা ইলাহা ইল্লাহ”
বলার পরে হত্যা করেছ? এভাবে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার আমার প্রতি একথা বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আমার
মনে এ আকাঙ্ক্ষা উদয় হল যে হায়! যদি আজকের দিনের আগে আমি ইসলাম ধর্মগ্রহণ না করতাম।
১৮১ আহমাদ ইবনু হাসান
ইবনু খিরাশ (রহঃ)জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মুবায়রের ফিতনার যুগে আস ’
আস ইবনু সালামাকে বলে পাঠালেন যে, তুমি তোমার কিছু বন্ধু
আমার জন্য একত্র করবে, আমি তাদের সাথে কথা
বলব। আস ‘আস তাদের কাছে লোক পাঠালেন। তারা যখন সমবেত হল, জুনদুব তখন হলুদ বর্ণের বুরনূস (এক ধরনের টূপি)
পরে উপস্হিত হলেন এবং বললেন, তোমরা আগের মত কথাবার্তা
বলতে থাক। এক পর্যায়ে যখন জুনদুব কথা বললেন, তখন তিনি তাঁর মাথার বুরনূস নামিয়ে ফেললেন। বললেন,
আমি তোমাদের কাছে এসেছি। আমি
তোমাদের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কিছু হাদীস বর্ণনা করতে চাই।
তা হলঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বাহিনী মুশরিক
সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠালেন। উভয় দল পরস্পর সম্মুর্খীন হল। মুশরিক বাহিনীতে এক ব্যাক্তি
ছিল। সে যখনই কোন মুসলিমকে হামনা করতে ইচ্ছা করত, সে তাকে লক্ষ করে ঝাপিয়ে পড়ত এবং শহীদ করে ফেলত।
একজন মুসলিম তার অসতর্ক মূহৃর্তের অপেক্ষা করতে নাগলেন। জুনদুব বললেন, আমাদের বলা হলো যে, সে ব্যাক্তি ছিল উসামা ইবনু যায়িদ। তিনি যখনঁ তার
উপর তলোয়ার উত্তোলন করলেন তখন সে বলল, “লা ইলাহা ইল্লাহ” তবুও উসামা (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন। দুত যুদ্ধে জয়লাভের সুসংবাদ
নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবীম -এর খেদমতে হাযির হল। তিনি তার কাছে
যুদ্ধের পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। সে সব ঘটনাই বর্ণনা করল, এমন কি সে ব্যাক্তির ঘটনাটিও বলল যে তিনি কি করেছিলেন।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামাকে ডেকে পাঠালেন এবং প্রশ্ন করলেন,
তুমি সে ব্যাক্তিকে হত্যা
করলে কেন? উসামা বললেন,
হে আল্লাহর রাসুল! সে অনেক
মুসলিমকে ঘায়েল করেছে এবং অমুক অমুককে শহীদ করে দিয়েছে। এ বলে কয়েকজনের নাম উল্লেখ
করলেন। আমি যখন তাকে আক্রমণ করলাম এবং সে তলোয়ার দেখল অমনি সে “লা ইলাহা ইল্লাহ” বলে
উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি তাকে মেরে ফেললে?
তিনি বললেন, জি হ্যা। রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে “লা
ইলাহা ইল্লাহ” (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে?
তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মাগফিরাতের জন্য দু’আ করুন।
রাসুল বললেনঃ কিয়ামত দিবসে যখন সে “লা ইলাহা ইল্লাহ” (কালিমা) নিয়ে আসবে তখন তুমি কি
করবে? তারপর তিনি কেবল এ কথাই বলছিলেনঃ
কিয়ামতের। দ্বীন যখন সে ““লা ইলাহা ইল্লাহ”” (কালিমা) নিয়ে আসবে, তখন তুমি কি করবে? তিনি এর অতিরিক্ত কিছু বলেন নি।
১৮২ যুহায়র ইবনু হারব
ও মুহাম্মাদ ইবনু মুনান্না, আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে সে আমাদের দলভূক্ত
নয়।
১৮৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত
নয়।
১৮৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ
আল আশয়ারী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে
ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তলোন করবে সে আমাদের দলভূক্ত নয়।
১৮৫ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ এবং আবূল আহওয়াস মুহাম্মাদ ইবনু হাইয়ান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, আর যে ব্যাক্তি আমাদের ধোকা দিবে সেও আমাদের দলভূক্ত
নয়।
১৮৬ ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়া
যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকালেন। তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো আদ্র দেখতে
পান। তিনি বললেনঃ হে খাদ্যশস্যের মালিক! এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসুল বললেনঃ
কেন তুমি ভিজা অংশ খাদ্যশস্যের উপরে রাখনি, যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। যে ব্যাক্তি ধোকা দেয়
সে আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।
১৮৭ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (মৃতের জন্য) গাল চাপড়াবে, জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলবে অথবা জাহিলী যুগের মত বিলাপ
করবে, সে আমাদের দলভূক্ত নয়। ইবনু
নূমায়ের ও আবূ বকর -এর স্হলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৮ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম এবং আলী
ইবনু খাশরাম (রহঃ) আমাশ (রহঃ)-এর সুত্রে উপরোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁ
(রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
১৮৯ আল হাকাম ইবনু
মূসা আল কানতারী (রহঃ) আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা – (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
– আবূ মূসা (রাঃ) কঠিন রোগে
আক্রান্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার মাথা তার পরিবারের এক মহিলার কোলে ছিল। সে মহিলা
চিৎকার করে উঠল। তিনি তাকে তা থেকে বাধা দিতে পারেন নি। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে ফেলেন
তখন বললেন, আমি তার থেকে সস্পর্কহীন,
যার থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কছেদ করেছেন। যে ব্যাক্তি (মৃতের শোকে) সজোরে রোদন করে,
কেশ মুন্ডন করে এবং কাপড় ছিঁড়ে
ফেলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
১৯০ আবদ ইবনু হুমায়দ
ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ও আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রহঃ)-এর
সুত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ মূসা আশ’আরী
(রাঃ) বেহুশ হয়ে পড়েন। তাঁর ন্ত্রী উম্মে আবদুল্লাহ চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর
কাছে আসলেন। তারা বলেন, অতঃপর তিনি জ্ঞান
ফিরে পেলেন এবং বললেন, তুমি কি জানো না?
তারপর তিনি তাকে এ হার্দীস
শোনান যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সে ব্যাক্তি থেকে বিভিন্ন, যে ব্যাক্তি মাথার কেশ মুন্ডন করে, চিৎকার করে কান্নাকাটি করে এবং জামা-কাপড় ছিঁড়ে
ফেলে।
১৯১ আবদুল্লাহ ইবনু
মুতী, হাজ্জাজ ইবনু শাইর এবং হাসান
ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে
রাবী ইয়ায আল আশ আরীর হাদীসে (সে আমার দলভূক্ত নয়) কথাটি রয়েছে। তিনি (তিনি বিচ্ছিন্ন)
শব্দটি বলেন নি।
১৯২ শায়বান ইবনু ফাররুখ
ও আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা আয-যুবায়ী (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রহঃ)-এর থেকে বর্ণনা
করেন যে, হুযায়ফা (রাঃ)-এর
কাছে খবর পৌছল যে, এক ব্যাক্তি চোগলখুরী
করে বেড়ায়। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ কোন চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৯৩ আলী ইবনু হুজর
আল সা’দী ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হাম্মাম ইবনু হারীস (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন
যে এক ব্যাক্তি সাধারণ লোকজনের কথাবার্তা শাসনকর্তার কাছে পৌছাত। একদা আমরা মসজিদে
বসা ছিলাম। উপবিষ্ট লোকেরা বলল এ সে ব্যাক্তি যে লোকের কথাবার্তা শাসনকর্তার কাছে
পৌছায়। রাবী বললেন, এরপর সে উপস্থিত হল
এবং আমাদের প্যশে বসে পড়ল। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি? কোন পরনিন্দাকারী
জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
১৯৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা এবং মিনজাব ইবনু হারিস তামীমী (রহঃ) হাম্মাম ইবনু হারিস (রহঃ) এর সুত্রে
বর্ণনা করেন যে, আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-এর
সাথে মসজিদে বসা। ছিলাম! তখন এক ব্যাক্তি হাযির হলো ও আমাদের সাথে বসে পড়ল। তখন হুযায়ফা
(রাঃ)-এর কাছে আরয করা হল, এ ব্যাক্তি শাসকের
কাছে নানা বিষয়ে খবরাখবর পৌছায়। হুযায়ফা (রাঃ) তাকে শোনানোর উদ্দেশ্যে বললেন,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
১৯৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না
ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন
ব্যাক্তির সাথে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ জন্য কথা বলবেন না। তাদের প্রতি তাকালেন না,
তাদের পবিত্র করবেন না,
আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর
শাস্তি। রাবী বলেন, তিনি এ আয়াতটি তিনবার
পাঠ করলেন। আবূ যার (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে-
যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে ঝূলিয়ে কাপড় পরে, সে ব্যাক্তি দান করে খোটা দেয় এবং যে ব্যাক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি
করে।
১৯৬ আবূ বকর ইবনু
খাল্লাদ আল বাহিলী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন
ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ জন্য কথা বলবেন না। (১) খোটা দাতা – যে ব্যাক্তি
কিছু দান করেই খোটা দেয়, (২) যে ব্যাক্তি মিথ্যা
শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করে এবং (৩) যে ব্যাক্তি টাখনুর নিচে ঝূলিয়ে ইযার পরিধান
করে। বিশর ইবনু খালিদ (রাঃ) শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি সুলায়মানকে এ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করতে শুনেছি।
তিনি বলেছেন, তিন ব্যাক্তির সাথে
আল্লাহ জন্য কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন
না এবং তাদের (শোনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৯৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়াআলা কথা বলবেন না, তাদের (শোনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। রাবী আবূ মূআবিয়া
বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেনও না।
আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হল) যিনাকারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী বাদশাহ ও অহংকারী দরিদ্র ব্যাক্তি।
১৯৮ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তিন ব্যাক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাড়িআলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকাবেন না, তাদের (শোনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য
রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (তারা হল) সে ব্যাক্তি, যে কোন প্রান্তরে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রাখে
এবং মূসা ফিরকে তা থেকে দেয় না, যে ব্যাক্তি আসরের
(সালাত (নামায/নামাজ)-এর) পর কারো কাছে কোন পণ্য বিক্রি করে এবং আল্লাহর শপথ করে বলে
যে, সে এত দামে কিনেছে আর ক্রেতা
তার কথায় বিশ্বাস করে অথচ শপথকারী সে মুল্যে উক্ত পণ্য খরিদ করেনি। যে ব্যাক্তি পার্থিব
ইমামের কাছে বায়আত করে এবং ইমাম যদি তার পার্থিব স্বার্থ পূর্ণ করে তবে সে ওয়াফাদারী
করে; আর যদি পার্থিব স্বার্থ পূর্ণ
না করে তাহলে সে ওয়াফাদারী করে না।
১৯৯ যুহায়র ইবনু হারব
এবং সাঈদ ইবনু আমর আল আশআসী (রাঃ)আমাশ (রাঃ)-এর সুত্রে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন। তবে রাবী জারীর বর্ণিত হাদীসে -যে ব্যাক্তি তার পণ্যের ব্যাপারে অন্যের সাথে
দামদর করে কথাটির উল্লেখ আছে।
২০০ আমর আন নাকিদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে যতদূর সম্ভব মারফূহ সনদে ঢ়ুঅর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে্যে বর্ণনা করেন যে, তিন ব্যাক্তির সাথে আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না,
তাদের প্রতি রহমতের নযরে তাকাবেন
না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তিা (তারা হচ্ছেন) যে ব্যাক্তি আসরের সালাত
(নামায/নামাজ)-এর পর কোন মুসলমানের মালের উপর শপথ করে, তা আত্মসাৎ করে। হাদীসের বাকি অংশ আ*মাশের হাদীসের
অনুরুপ।
২০১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি কোন ধারাল অস্ত্র দ্বারা আত্নহত্যা করবে,
সে অস্ত্র তার হাতে থাকবে,
জাহান্নামের মধ্যে সে অস্ত্র
দ্বারা সে তার পেটে আঘাত করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্হান করবে। আর যে ব্যাক্তি বিষপানে আত্নহত্যা করবে,
সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে
অবস্হান করে উক্ত বিষ পান করতে থাকবে, এভাবে সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যাক্তি নিজকে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ
করে আত্নহত্যা করবে, সে ব্যাক্তি সর্বদা
পাহাড় থেকে নিচে গড়িয়ে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যাক্তি সেখানে চিরকাল অবস্হান করবে।
২০২ যুহায়র ইবনু হারব,
সাঈদ ইবনু আমর আল আশ-আসী এবং
ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব আল হারিসী (রহঃ) তাঁরা সবাই উপরোক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
শু’বার বর্ণনায় সুলায়মানের সুত্রে বর্ণিত আছে, “আমি যাকওয়ানকে বলতে শুনেছি, ”।
২০৩ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (হুদায়বিয়া প্রান্তরে) বৃক্ষের নিচে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়অোত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের উপর মিথ্যা শপথ
করে, সে সেই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে।
আর যে ব্যাক্তি কোন বস্তু দ্বারা আত্নহত্যা করবে, কিয়ামত দিবসে উক্ত বস্তু দ্বারা তাকে শাস্তি দেওয়া
হবে। যে ব্যাক্তি এমন বস্তুর মানত করে যার মালিক সে নয় এরুপ মানত কার্যকরি নয়।
২০৪ আবূ গাসশান আল
মিসমাঈ (রহঃ) সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুল বলেছেন ৪ সে বস্তুর মানত কার্যকলূ নয়,
যার মালিক সে নয় মুমিনকে অতিসম্পাত
করা তাকে হত্যা করার শামিল। যে ব্যাক্তি দুনিয়াতে কোন বস্তু দ্বারা আত্মহত্যা করবে,
কিয়ামত দিবসে উক্ত বস্তু দ্বারা
তাকে শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যাক্তি সম্পদ বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা দাবি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য স্বল্পতরই বৃদ্ধি করবেন।
আর যে ব্যাক্তি বিচারকের সামনে মিথ্যা শপথ করবে (তার অবস্হাও মিথ্যা দাবিদারদের অনুরুপ
হবে)।
২০৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম,
ইসহাক ইবনু মানসুর,
আবদুল ওয়ারিস ইবনু আবদস সামাদ
ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি (রহঃ) সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
৪ যে ব্যাক্তি সেচ্ছায় ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করবে, সে যেরুপ বলেছে সেরুপ হবে। আর যে ব্যাক্তি কোন
বস্তু দ্বারা আত্নহত্যা করবে, তাকে আল্লাহ জন্য
জাহান্নামে সে বস্তু দ্বারা শাস্তি দিবেন। এ হল রাবী সুফিয়ানের বর্ণনা। আর রাবী শুবার
বর্ণনা হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করবে,
সে যেরুপ বলেছে সেরুপই হবে।
যে ব্যাক্তি কোন বস্তু দ্বারা নিজকে যবেহ করবে, কিয়ামত দিবসে উক্ত জিনিস দ্বারা তাকে যবেহ করা হবে।
২০৬ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে হুনায়নে উপস্তিত ছিলাম। তখন তিনি ইসলামের দাবিদার এক ব্যাক্তি সম্পর্কে বললেন
যে, এ ব্যাক্তি জাহান্নামী। তারপর
যুদ্ধ শুরু হল, উক্ত লোকটি ভীষণভাবে
যুদ্ধ করল, পরে সে আঘাতে আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত হল। আরয করা হলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এইমাত্র যে ব্যাক্তিকে জাহান্নামী
বলেছেন, সে তো আজ খুব লড়েছে এবং মারা
গিয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে জাহান্নামে গিয়েছে। ব্যাপারটি
কিছুসংখ্যক মুসলিমের কাছে সন্দেহজনক লাগছিল। ইত্যবসরে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে, সে মরে নি, কিন্তু ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। রাতের বেলায় সে ক্ষতের
কষ্ট বরদাশত করতে পারছিল না। তাই সে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলল। এ খবর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ আকবার, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তার বান্দা এবং তাঁর প্রেরিত রাসুল। তারপর বিলালকে
ডেকে তিনি নির্দেশ দিলেন, লোকদের মাঝে ঘোষণা
করে দাও যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ
জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ তায়ালা পাপী বান্দা দ্বারাও এ দ্বীনের (ইসলামের)শক্তি
বাড়িয়ে দেন।
২০৭ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) সাথী ইবনু সা’দ আল সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও মুশরিকরা পরস্পর মুখোমুখি হলেন এবং যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে গেল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সেনাবাহিনীর দিকে অগ্রসর হলেন এবং অপরপক্ষও তাদের সেনাবাহিনীর
সাথে মিলিত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গীদের মধ্যে সে
সময় এমন এক ব্যাক্তি ছিল যে সেদিন বীরত্বের সাথে লড়েছিল। কোন কাফিরকে দেখামাত্র সে
তার পিছনে লেগে যেত এবং তরবারি দ্বারা খতম করে দিত। লোকেরা তার বীরত্ব দেখে বলাবলি
করছিল যে, অমুক ব্যাক্তি আজ
যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে, আমাদের কেউ তা পারেনি।
রাসুল বলেনঃ মনে রেখ, সে ব্যাক্তি জাহান্নামবাসী।
উপস্হিত লোকদের একজন বলল, আমি সর্বক্ষণ তার
সাথে থাকব। তারপর সে ব্যাক্তি তার পিছনে থাকল। যেখানে সে থামত, সেও সেখানে থেমে যেত। যখন সে দ্রুতবেগে কোথাও যেত,
সেও তার সাথে দ্রুতবেগে সেখানে
গমন করত। শেষ পর্যন্ত সে ব্যাক্তি মারাত্মকভাবে যখম হল। তারপর ক্ষতের জ্বালার তীব্রতা
সহ্য করতে না পেরে ত্বরায় মৃত্যু কামনা করল। সে তার তরবারি যমীনে রেখে এর অগ্রভাগ তার
উভয় স্তনের মাঝামাঝি ঠেকিয়ে তার উপর ঝুঁকে পড়ল এবং নিজেকে হত্যা করল। তাকে অনুসরণকারী
লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেল এবং সাক্ষ্য প্রদান
করল, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল।
তিনি বললেনঃ ব্যাপার কি? সে বলল, আপনি একটু আগে যে ব্যাক্তিকে জাহান্নামী বলেছিলেন
এবং লোকেরা এতে আশ্চর্যানিত হয়েছিল; আমি বলেছিলাম, আমি তার সাথে থেকে
তোমাদেরকে খবর পৌছাব। আমি অপেক্ষায় রইলাম। অবশেষে সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং ত্বরায়
মৃত্যুর জন্য নিজের তরবারি যমীনে রেখে এর অগ্রভাগ তার উভয় ন্তনের মাঝামাঝি ঠেকিয়ে দিল।
তারপর এর উপর ঝুঁকে পড়ল এবং নিজেকে হত্যা করল। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকের দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তি জান্নাতের কাজ করছে অথচ সে জাহান্নামী
হয়। আবার লোকের দৃষ্টিতে কোন ব্যাক্তি জাহান্নামের কাজ করছে; অথচ সে জান্নাতবাসী হয়।
২০৮ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি (রহঃ) শায়বান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাসান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের আগের যুগের এক ব্যাক্তির ফোঁড়া হয়েছিল,
ফোঁড়ার যন্ত্রনা অসহ্য হওয়ায়
সে তার তূণ থেকে একটি তীর বের করল আর তা দিয়ে আঘাত করে ফোঁড়াটি চিরে ফেলল। তখন তবু
হতে সজোরে রক্তক্ষরণ শুরু হল, অবশেষে সে মারা গেল।
তোমাদের প্রতিপালক বলেন, আমি তার উপর জান্নাত
হারাম করে দিয়েছি। তারপর হাসান আপন হাত মসজিদের দিকে প্রসারিত করে বললেন, আল্লাহর কসম, জুন্দুব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী) এ মসজিদেই রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন।
২০৯ মুহাম্মাদ ইবনু
আবূ বকর আল মুকাদ্দামী (রহঃ) হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী এ মসজিদে বসেই আমাদিগকে
নসীহত করেছেন। তারপর আমরা তা ভুলে যাইনি। আর আমরা আশঙ্কা করি না যে, জুনদুব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ৪ তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মতের
মধ্যে এক ব্যাক্তির ফোঁড়া হয়েছিল তারপরের অংশ উপরের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ।
২১০ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, খাছাবারে অমুক শহীদ হয়েছেন। এভাবে কথাবার্তা চলছিল,
অবশেষে এক ব্যাক্তি প্রসঙ্গে
তাঁরা বললেন যে, সেও শহীদ হয়েছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনই না। এ আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি,
সে চাঁদর বা জোব্বার কারণে
(যা সে ব্যাক্তি গনীমতের মাল থেকে আড়াসাৎ করেছিল)। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র! যাও লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে,
জান্নাতে কেবলমাত্র প্রকৃত
মুমিন ব্যাক্তিরাই প্রবেশ করবে। উমর ইবনু খাত্তাব বলেন, তারপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করে দিলাম,
“সাবধান! শুধু প্রকৃত মুমিনরাই
জান্নাতে প্রবেশ করবে। ”
২১১ আবূ তাহির ও কুতায়বা
ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে
খায়বার প্রান্তরে গমন করলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদিগকে বিজয়ী করলেন। গনীমতের মধ্যে আমরা
স্বর্ণ, রৌপ্য পাইনি পেয়েছি আসবাবপত্র,
খাদ্যশস্য ও কাপড়-চোপড়। তারপর
আমরা সেখান থেকে একটি উপত্যকার দিকে রওয়ানা হলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে তার একটি গোলাম ছিল। যুযাম গোত্রের যুবাইব শাখার রিফা’আ ইবনু
যায়দ নামে এক ব্যাক্তি তাঁকে গোলামটি উপহার দিয়েছিল। আমরা সে উপত্যকায় উপনীত হলে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সে গোলামটি তার হাওদা খুলতে লাগল। এ সময় তার গায়ে
একটি তীর এসে লাগল এবং তার মৃত্যু ঘটল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তার শাহাদতের সৌভাগ্যের জন্য
মূবারকবাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখনো নয়, সে মহান সত্তার। পথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ,
যে চাঁদরখানা খায়বার যুদ্বের
গনীমত বনানের পূর্বেই সে নিয়ে গিয়েছিল, তা আগুন হায় তার উপর জ্বলতে থাকবে। রাবী বলেন, এতে লোকেরা ঘাবড়ে গেল। এক ব্যাক্তি জুতার একটি কিংবা
দুঁটি ফিতা নিয়ে হাযির হলো। সে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসুল! খায়বারের দিন আমি এটি পেয়েছিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ একটি ফিতা আগুনের ; কিংবা বললেনঃ এ দুটিফিতা আগুনের।
২১২ আবূ বকর ইবনু
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তুফায়ল ইবনু আমর দাওসী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলেন এবং আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি চান যে, আপনার জন্য একটি মযবুত দুর্গ ও সেনাবাহিনী হোক?
রাবী বলেন, দাওসী গোত্রের জাহিলিয়্যাহ যুগের একটি দুর্গ ছিল।
(তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করেন)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কবুল করলেন না।
কারণ আল্লাহ তাআলা আনসারদের জন্য এ সৌভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিযরত করলেন, তখন তুফায়ল ইবনু আমর এবং তার গোত্রের একজন লোকও তাঁর সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন।
কিন্তু মদিনার আবহাওয়া তাদের অনুকুল হয়নি। তুফায়ল ইবনু আমর (রাঃ)-এর সাথে আগত লোকটি
অসুস্হ হয়ে পড়ল। রোগযন্ত্রণা বরদাশত করতে না পেরে তীর নিয়ে তার হাতের আঙ্গুলগুলো কেটে
ফেলল। এতে উভয় হাত থেকে রক্ত নির্গত হতে থাকে। অবশেষে সে মারা যায়। তুফায়ল ইবনু আমর
দাওসী (রাঃ) স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্হায় দেখতে পেলেন, কিন্তু তিনি তার উভয় হাত আবৃত দেখে তাকে জিজ্ঞেস
করলেন, তোমার রব তোমার সাথে কিরুপ
ব্যবহার করেছেন? সে বলল, আল্লাহর জন্য তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়ল (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
তোমার কি হয়েছে যে,
আমি তোমার হাত দুটি আবৃত দেখছি?
সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, আমি তা দুরস্ত করব না, তুমি সেচছায় যা নষ্ট করেছ। তুফায়ল (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার হাত দুটিকেও ক্ষমা করে দিন।
২১৩ আহমাদ ইবনু আবদা
আয যাব্বী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন:আল্লাহ জন্য কিয়ামতের আগে ইয়ামন থেকে এক বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা হবে রেশম অপেক্ষাও নরম। যার অন্তরে দানা পরিমাণ
ঈমান থাকবে, তার রুহ ঐ বাতাস কবয
করে নিয়ে যাবে। আবূ আল কামাহ বলেছেন এবং রাবী আবদুল আযীয (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় স্হলে
উল্লেখ করেছেন।
২১৪ ইয়াহইয়া ইবনু
আইউব , কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:অন্ধকার রাতের মত ফিতনা
আসার আগেই তোমরা নেক আমলের প্রভি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির
হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার
দ্বীন বিক্রি করে বসবে।
২১৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ এ আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) “হে মুমিনগণ,
তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম র কণ্ঠের উপর নিজেদের কন্ঠ উচু করবে না! এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে
কথা বল তাঁর সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলবে না। এতে তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা রয়েছে; অথচ তোমরা টেরও পাবে
না। ” (৪৯ :২) (উপরোক্ত আয়াত নাযিল হলে) সাবিত (রাঃ) নিজের ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে
নাগলেন ৪ আমি একজন জাহান্নামী। এরপর থেকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবী সা’দ ইবনু মু’আযকে সাবিত (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললেনঃ হে আবূ আমর ,
সাবিতের কি হল? সা’দ (রাঃ) বললেন, সে তো আমার প্রতিবেশী, তার কোন অসূখ হয়েছে বলে তো জানিনা। আনাস (রাঃ) বলেন,
পরে সা’দ (রাঃ) সাবিতের কাছে
গেলেন এবং তার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্তব্য উল্লেখ
করলেন। সাবিত (রাঃ) বললেন, এ আয়াত নাযিল হয়েছে।
আর তোমরা জানো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর আমার কন্ঠস্বর সবচেয়ে উচু হয়ে যায়। সূতরাং আমি তো জাহান্নামী।
সা’দ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে সাবিতের কথা বললেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ না, বরং সে তো জান্নাতী।
২১৬ কাতান ইবনু নুসায়র
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শাম্মাস ছিলেন আনসারদের খাতীব।
এ আয়াত নাযিল হলোঃ (অর্থ) তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র কণ্ঠের উপর
নিজেদের কণ্ঠ উচু করো না। ” বাকি অংশ হাম্মাদ বর্ণিত উল্লেখিত রেওয়ায়েতের অনুরুপ। তবে
এ রেওয়ায়েতে সা’দ ইবনু মু’আয-এর উল্লেখ নাই। আহমাদ ইবনু সাঈদ ইবনু সাখর আদ দারিমী
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন এ আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম র কণ্ঠের উপর নিজেদের কণ্ঠ উচু করো না। ” এ বর্ণনায় সা’দ ইবনু মু’আয-এর
উল্লেখ নাই।
২১৭ হুরায়ম ইবনু আবদুল
আলা আল আসা’দী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হালা । এতেও সা’দ ইবনু মূআযের
উল্লেখ নাই। তবে শেষে আছে, আমরা তাঁকে ভাবতাম,
একজন জান্নাতী লোক আমাদের
মাঝে বিচরন করছেন।
২১৮ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, কিছু সংখ্যক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, জাহিলী যুগে আমরা
যা করেছি, এর জন্যও কি আমাদের
পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেনঃ ইসলাম
অবস্হায় যে ব্যাক্তি ভাল করবে, তার জন্য জাহিলী যুগের
আমলের জন্য পাকড়াও হবে না। কিন্তু যে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণের পরও মন্দ করবে,
তাকে জাহিলী ও ইসলাম উভয় যুগের
আমলের জন্য পাকড়াও করা হবে।
২১৯ মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল!
আমরা জাহেলী যুগে যা করেছি, এর জন্যও কি আমাদের
পাকড়াও করা হবে? তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি
ইসলাম অবস্থায় ভাল করবে, জাহেলী যুগে সে কি
করেছে, তার জন্য পাকড়াও করা হবে না।
আর ইসলাম। গ্রহনের পর যে মন্দ করে, তাকে প্রথম ও শেষ,
সব আমলের জন্য পাকড়াও করা
হবে।
২২০ মিনজাব ইবনু হারিস
আত তামীমী (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।
২২১ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না আল আনাযী, আবূ মাআন আল রাকাশী
ও ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু ওমাসা আল মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনু আস (রাঃ)-এর মুমুর্ষ অবস্হায় তাকে
দেখতে উপস্হিত হলাম। তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। তার পুত্র
তাঁকে তাঁর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত বিভিন্ন সুসংবাদের
উল্লেখ পূর্বক প্রবোধ দিচ্ছে যে, আব্বা! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি
আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাবী বলেন,
তখন তিনি পুত্রের দিকে মুখ
ফিরালেন এবং বললেন, আমার সর্বোৎকৃষ্ট
পাথেয় হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
– এ কালিমার সাক্ষ্য দেয়া। আর আমি অতিক্রম করেছি আমার জীবনের তিনটি পর্যায়। এক সময়
তো আমি এমন ছিলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোরতর আর কেউই ছিল না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কবজায় পেতাম আর হত্যা করতে পারতাম, এ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় ভাবনা। যদি সে অবস্হায়
আমার মৃত্যু হতো, তবে নিশ্চিত আমাকে
জাহান্নামে যেতে হতো। এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন,
তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানোানাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বায়আত করতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন, তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আমর , কি ব্যাপার? বললাম, পূর্বে আমি শর্ত করে নিতে চাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস
করলেনঃ কি শর্ত করবে? আমি উত্তর করলাম,
আল্লাহ যেন আমার সব শোনাহ
মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমর! তুমি কি জানো
না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায়
মিটিয়ে দেয়। হিজরত পূর্বেকৃত শোনাহসমুহ মিটিয়ে দেয় এবং হাজ্জ (হজ্জ)ও পূর্বের সকল শোনাহ
মিটিয়ে দেয়। আমর বলেন, এ পর্যায়ে আমার অন্তরে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা বেশি প্রিয় আর কেউ ছিল না। আমার
চোখে তিনি অপেক্ষা মহান আর কেউ ছিল না। অপরির্সীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তার প্রতি চোখ
ভরে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তাঁর দেহ আকৃতির বর্ণনা করতে বলা হয়, তবে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠবে না। কারণ চোখভরে
আমি কখনোই তাঁর প্রতি তাকাতে পারি নি। ঐ অবস্হায় যদি আমার মৃত্যু হতো তবে অবশ্যই আমি
জান্নাতী হওয়ার আশাবাদী থাকতাম। পরবর্তীকালে আমরা নানা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছি,
তাই জানিনা, এতে আমার অবস্হান কোথায়? সুতরাং আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিনা অথবা আগুন যেন আমার জানাযার
সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে
একটি উট যবাই করে তার গোশত বল্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের
উপস্হিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্হায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার প্রতিপালকের দূতের কি জবাব দেব।
২২২ মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম ইবনু মায়মূন ও ইবরাহীম ইবনু র্দ্বীনার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন
যে, তিনি বলেন, মুশরিকদের কতিপয় লোক যারা ব্যাপকভাবে হত্যা ও ব্যাভিচারে
লিপ্ত ছিল, তারা মুহাম্মাদ -এর
দরবারে এসে জিজ্ঞেস করল, আপনি যে দ্বীনের প্রতি
মানুষদের আহবান জানোাচ্ছেন, এ তো অনেক উত্তম বিষয়।
তবে আমাদের পূর্বকৃত শুণাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত সম্পর্কে আপনি যদি আমাদের নিশ্চিতভাবে
কিছু অবহিত করতেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) “এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে কোন ইলাহকে
ডাকে না, আল্লাহ যার হত্যা
নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো
করে সে শাস্তি ভোগ করবে। (২৫- ৬৮) আরো নাযিল হয়ঃ (অর্থ) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার
করেছ, আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো
না। ” (৩৯-৫৩)
২২৩ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, জাহিলী যুগে আমি যেসব
নেক কাজ করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান
পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ তোমার সৎকর্মের ফলেই তুমি ইসলাম গ্রহনের সৌভাগ্য লাভ
করেছ। রাবী বলেন, হাদীসে উক্ত শব্দটির
অর্থ – –‘নির্জনে ইবাদত করা’।
২২৪ হাসান আল হুলওয়ানী
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ)- থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সা’দকা, দাসমুক্তি ও আত্নীয়-স্বজনদের
সাথে সুসস্পর্ক রাখা ইত্যাদি যেসব নেক কাজ জাহির্লী যুগে আমি করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে
বললেনঃ তোমার পূর্বেকৃত সৎকর্মের ফলেই তুমি ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছ।
২২৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
ও আবদ ইবনু হুমায়দ হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে- তিনি বলেন,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
কিছু কিছু বিষয় যা আমি যাহিলী যুগে নেক কাজ হিসাবে করতাম, আমি কি তার কোন প্রতিদান পাব? তদুত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করলেনঃ তোমার সেসব নেক কাজের ফলেই তুমি ইসলাম। গ্রহনের সৌভাগ্য লাভ করেছ। আমি
বললাম, আল্লাহর কসম! জাহেলী যুগে
যেসব নেক কাজ আমি করেছি, ইসলামী জ্বীন্দেগীতেও
আমি তা করে যাব।
২২৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, হাকীম ইবনু হীনযাম (রাঃ) জাহিলী যুগে একশ ,
ক্রীত দাস আযাদ করেছিলেন ,
মাল বোঝাই একশ , উট দান করেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পরেও তিনি একশ, ক্রীতদাস আযাদ করেন এবং মালামাল বোঝাই একশ উট সা’দকা
করেন। পরে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে এসে প্রশ্ন
করেন। এরপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
২২৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, (আল্লাহ তা’আলার বানী):‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের
ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করে নাই নিরাপত্তা তাদের জন্য, তারাই সৎ পথ প্রাপ্ত” (৬- ৮২)। এ আয়াতটি অবতীর্ণ
হলে বিষয়টি সাহাবীদের কাছে খুবই কঠিন মনে হল। তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে নিজের উপর আদৌ জুলুম করে নাই? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন:তোমরা যা মনে করেছ বিষয়টি তা নয়, বরং লূকমান তাঁর পুত্রকে সম্মোধন করে যা বলেছিলেন
এর মর্ম, হে বৎস! আল্লাহর সাথে
কোন শরীক করো না, নিশ্চয়ই শিরক চরম
জুলুম। ” (৩১- ১৩)
২২৮ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
আলী ইবনু খাশরাম, মিনজাব ইবনু হারিস
আত তামীমী এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। আবূ কুরায়ব
(রহঃ) বলেন, ইবনু ইদরীস (রহঃ)
বলেছেন, প্রথমত আমার পিতা আমাকে আবান
ইবনু তাগলিব থেকে আমাশ এ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, পরবর্তীকালে আমি নিজেই আমাশ থেকে সরাসরি এ হাদীস
শুনেছি।
২২৯ মুহাম্মাদ ইবনু
মিনহাল আয যারীর ও উমায়্যা ইবনু বিসতাম আল আয়শী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেন যে, (মহান আল্লাহর বানী)
“আসমান ও যমীনে যত কিছু আছে, সমস্ত আল্লাহরই। তোমাদের
মনের অভ্যন্তরে যা আছে তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন
এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি
দিবেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। ” (২- ২৮৪) এ আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাহাবীদের
কাছে খুবই কঠিন মনে হল। তাই সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে
আসলেন এবং হাটু গেড়ে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল!
সালাত (নামায/নামাজ), রোযা, জিহাদ, সা’দকা প্রভৃতি যে সমস্ত আমল আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ছিল এ যাবত আমাদেরকে সেগুলোর
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এ বিষয়টি তো আমাদের ক্ষমতার বাইরে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আহলে কিতাব-;ইহুদি ও খৃষ্টানের মত তোমরাও কি এমন কথা বলবে যে,
শুনলাম কিন্তু মাননাম না!
বরং তোমরা বলো ; শুনলাম ও মানলাম।
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন স্হল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ নির্দেশ শুনে সাহাবা কিরাম বললেন, আমরা শুনেছি ও মেনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করছি, তুমিই আমাদের শেষ প্রত্যাবর্তন
স্হল। রাবী বলেন, সাহাবীদের সকলে এ
আয়াত পাঠ করলেন এবং বিনয়াপূত হয়ে মনেপ্রাণে তা গ্রহণ করে নিলেন। অনন্তর আল্লাহ তা’আলা
এ আয়াত নাযিল করেনঃ রাসুল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের
পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তিনি ঈমান আনয়ন করেছেন এবং মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহতে,
তার ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমুহে এবং তাঁর রাসুলগনে ঈমান আনয়ন করেছেন
তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলগণের
মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর তাঁরা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম! হে আমাদের রব! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই আর তোমারই কাছে
আমাদের প্রত্যাবর্তন স্হল। (২:২৮৪) যখন তাঁরা সর্বতোভাবে আনুগত্য জ্ঞাপন করলেন তখন
আল্লাহ তা’আলা উক্ত আয়াতের হুকুম রহিত করে নাযিল করলেনঃ “আল্লাহ কারো উপর এমন কোন
কষ্টদায়ক দায়-দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার জন্য সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে
তা তারই এবং মন্দ যা উপার্জন করে তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিম্মৃত হই কিংবা
ভুল করে ফেলি তবে তুমি আমাদিগকে পাকড়াও করো না। ” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, মেনে নিলাম। আরো ইরশাদ
হলঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন,
আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ
করো না। ”, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, (মেনে নিলাম)। আরো
ইরশাদ হলঃ হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, (মেনে নিলাম)। আরো
ইরশাদ হল “আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে মাফ কর,
রহম কর, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে আমাদিগকে জয়যুক্ত কর। ” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
হ্যা, (মেনে নিলাম)।
২৩০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বানী) “তোমাদের মনে যা আছে,
তা প্রকাশ কর কিংবা গোপন
রাখ, আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার
হিসাব গ্রহণ করবেন। ” (২:২৮৪) আয়াতটি নাযিল হলে সাহাবীগণ খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন।
আর কোন বিষয়ে তারা এমন উদ্বিগ্ন হননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করলেন ৪ বরং তোমরা বলোঃ শুনলাম, আনুগত্য স্কীকার করলাম
এবং মেনে নিলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন। তিনি নাযিল করলেনঃ আল্লাহ তা’আলা
কারুর উপর এমন কোন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভাল যা উপার্জন করে তা তারই,
আর মন্দ যা উপার্জন করে,
তাও তারই। হে আমাদের রব! যদি
আমরা বিম্মৃত হই অথবা ভুল করে ফেলি তবে আমাদের পাকড়াও করো না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম। আল্লাহ জন্য আরো ইরশাদ করলেনঃ হে আমাদের
রব! আমাদের -পূর্বতীগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম। আল্লাহ জন্য আরো ঘোষণা করলেনঃ
(বলুন) “আমাদের পাপ মোচন কর, আমাদেরকে ক্ষমা কর
এবং আমাদের প্রতি দয়া কর, তুমিই আমাদের রব।
” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অবশ্যই মেনে নিলাম।
২৩১ সাঈদ ইবনু মানসুর,
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ
ইবনু জুবায়দ আলগুবারি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত আল্লাহ জন্য আমার উম্মতের মনের কল্পনাগুলো
মাফ করে দিয়েছেন।
২৩২ আমর আবূ নাকিদ
ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের ক্ষেত্রে কথা বা কাজে পরিণত না করা পর্যন্ত তাদের
মনের কল্পনাগুলো মাফ করে দিয়েছেন।
২৩৩ যুহায়র ইবনু হারব,
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) কাতাদা
(রহঃ) সুত্রেও হাদীসটি অনুরুপভাবে বর্ণিত আছে।
২৩৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আল্লাহ তাআলা (ফেরেশতাদেরকে) বলেছেনঃ আমার বান্দা কোন পাপ কর্মের কথা ভাবলেই তা লিখবে
না: বরং সে যদি তা কার্যে পরিণত করে তবে একটি পাপ লিখবে। আর যদি সে কোন নেক কাজের নিয়ত
করে কিন্তু তা সে কার্যে , পরিণত না করে,
তাহলেও এর জন্য প্রতিদানে
তার জন্য একটি সাওয়াব লিখবে আর তা সম্পাদন করলে লিখবে দশটি সাওয়াব!
২৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু
আইউব , কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
আমার বান্দা যখন কোন সৎকর্মের সংকল্প গ্রহণ করে অথচ এখনও তা সম্পাদন করে নি তখন আমি
তার জন্য একটি সাওয়াব লিখি; আর যদি কার্যত সম্পাদন
করে তবে দশ থেকে সাতশ- গুন পর্যন্ত সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি অসৎ কর্মের ইচ্ছা করে
অথচ এখনো সম্পাদন করে নি তবে এর জন্য কিছুই লিখি না। আর তা কার্যে পরিণত করলে একটি
মাত্র পাপ লিখি।
২৩৬ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি ে (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ূরৃবাহু বলেছেনঃ
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ আমার বান্দা কোন নেক কাজ করবে বলে যদি মনে মনে ভাবে,
তবে তা সস্পাদন করার পূর্বে
আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখে দেই। পরে যদি কার্যত তা সম্পাদন করে নেয় তবে তার দশগুন
সাওয়াব লিখি। পক্ষান্তরে যদি কোন অসৎ কাজ করবে বলে মনে মনে ভাবে তবে তা কাজে পরিণত
না করা পর্যন্ত মাফ করে দেই। কিন্তু তা সম্পাদন করলে তদনূরুপ একটি শোনাহ লিখি। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ আল্লাহর চোখে সমুদয় বস্তু উদ্ভাসিত থাকা
সত্ত্বেও ফেরেশতাগণ আবেদন জানায়: প্রতিপালক! এ তোমার বান্দা, পাপ কর্মের ইচ্ছা করছে। আল্লাহ তা’আলা উত্তর করেন
অপেক্ষা করো, যদি সম্পাদন করে ফেলে,
তবে সে অনুপাতে লিখবে,
আর যদি তা পরিত্যাগ করে তবে
সে স্হলে একটি সাওয়াব লিখে দিবে। কারণ আমার জন্যই সে তা পরিত্যাগ করেছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যে তার ইসলামে নিষ্ঠাবান হয়
তার কৃত প্রত্যেকটি নেক কাজের বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত সাওয়াবলেখা হয়। পক্ষান্তরে
তার কৃত প্রত্যেকটি বদ কাজের বিনিময়ে তদনুরুপ লেখা হয়। মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে
তার সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে।
২৩৭ আবূ কুরায়ব (রহঃ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি নেক কাজের ইচ্ছা
করে অথচ সস্পাদন করে নি, তার জন্য একটি সাওয়াবলেখা
হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্যত সস্পাদন করে, তবে তার ক্ষেত্রে দশ থেকে সাতশ, গুন পর্যন্ত সাওয়াবলেখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোন
মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে তবে কোন শোনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) শোনাহ লেখা হয়।
২৩৮ শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ
তা’আলার পক্ষ থেকে হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সমুদয় সৎ ও অসৎ কর্মের হিসাবলেখেন।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে আরও বিস্তূত করে বলেনঃ সুতরাং
যে ব্যাক্তি নেক কাজের ইচ্ছা গ্রহণ করেছে অথচ তা সম্পাদন করে নি আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে
তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সাওয়াব লিখে দেন। তার ইচ্ছার পর কাজে পরিণত করলে আল্লাহ তায়ালা
এর বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত সাওয়াব লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি কোন মন্দ কর্মের
অভিপ্রায় করে এবং তা কাজে পরিণত না করে তবে আল্লাহ তা’আলা তার বিনিময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ
সাওয়াব লিখে দেন। আর অভিপ্রায়ের পর তা সম্পাদন করে ফেললে তিনি একটি মাত্র শোনাহ লেখেন।
২৩৯ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) জা’দ আবূ উসমান (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ রেওয়ায়েত করেন। তবে এ হাদীসের বর্ণনাকারী নিম্নের বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন,
আল্লাহ উক্ত শোনাহ মাফ করে
দেন। আল্লাহর বিরুদ্ধে গিয়ে একমাত্র সে ধ্বংস হয়, যার ধ্বংস অনিবার্য।
২৪০ যুহায়ের ইবনু
হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয়
সাহাবী তাঁর সমীপে এসে বললেন, আমাদের অন্তরে এমন
কিছু সংশয়ের উদয় হয়, যা আমাদের কেউ মুখে
উচ্চারণ করতেও মারাত্মক মনে করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে
বললেনঃ সত্যই তোমাদের তা হয়? তারা জবাব দিলেন,
জ্বী, হ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এটই স্পষ্ট ঈমান। (কারণ ঈমান আছে বলেই সে সম্পর্কে ওয়াসওয়াসা ও সংশয়কে মারাত্মক
মনে করা হয়।)
২৪১ মুহাম্মদ ইবনু
বাশশার, মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু জাবালা
ইবনু আবূ রাওয়াদ ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
২৪২ ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব
আল সাফফার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওয়াসওয়াসা
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তা প্রকৃত ঈমান।
২৪৩ হারুন ইবনু মা’রুফ
ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ মানুষের মনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়। এক পর্যায়ে এমন প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয়যে,
এ সৃষ্টি জগততো আল্লাহ সৃষ্টি
করেছেন, তাহলে কে আল্লাহ কে সৃষ্টি
করেছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যার অন্তরে এমন প্রশ্নের উদয় হয়, সে যেন বলে, “আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করেছি। ”
২৪৪ মাহমুদ ইবনু গায়লান
(রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রহঃ) এর সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ শয়তান তোমাদের কাছে এসে বলে, আকাশ কে সৃষ্টি করেছেন?
যমীন কে সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরে সে বলে, আল্লাহ। এরপর রাবী পূর্ব হাদীসটির অনুরুপ এ হাদীস
বর্ণনা করেন। তবে তিনি এর সাথে শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেন।
২৪৫ যুহায়র ইবনু হারব
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ শয়তান তোমাদের কারো কাছে আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, কে তোমার রব কে সৃষ্টি করেছে? এই পর্যায়ে পৌছলে, আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো এ ধরনের ভাবনা থেকে
বিরত হও।
২৪৬ আবদুল মালিক ইবনু
শু’আয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ শয়তান আল্লাহর বান্দার কাছে আসে এবং কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে এটা কে সৃষ্টি করেছেন?
(বাকি অংশ) পূর্ববতী হাদীসের
অনুরুপ।
২৪৭ আবদুল ওয়ারিস
ইবনু আবদস সামাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
মানুষ তোমাদেরকে জ্ঞানের বিষয়ে কথা জিজ্ঞেস করবে, এক পর্যায়ে তারা এ কথাও জিজ্ঞেস করে বসবে,
আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টি করেছেন,
তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি
করেছেন? রাবী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যাক্তির হাত ধরা অবস্হায়
ছিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল
সত্যই বলেছেন। আমাকে দুই ব্যাক্তি এ ধরনের প্রশ্ন করেছে, আর এ হলো তৃতীয়জন। বর্ণনাকারী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, আমাকে এক ব্যাক্তি প্রশ্ন করেছে আর এ হল দ্বিতীয়জন।
যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব আদ-দাওরাকী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
তিনি বলেন, মানুষ সর্বদা এরপর রাবী আবদুল ওয়ারিসের রেওয়ায়েতের
মত বর্ণনা করেন। তবে তিনি এই সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উল্লেখ
করেননি। তবে হাদীসটির শেষে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সত্যই বলেছেন- কথাটি সংযুক্ত করেন।
২৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু
রুমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে
একদিন বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! মানুষ তোমাকে প্রশ্ন করতে থাকবে। এমন কি এ প্রশ্নও করবে,
আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন;
তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি
করেছে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
পরবর্তীকালে একদিন আমি মসজিদে
(নববীতে) উপস্হিত ছিলাম। ইত্যবসরে কতিপয় বেদুঈন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল,
হে আবূ হুরায়রা! এ তো আল্লাহ
তা’আলা। তা হলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবূ হুরায়রা
(রাঃ) হাতে কিছু কংকর নিয়ে তাদের প্রতি তা নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, আমার বন্ধু রাসুল। সত্য কথা বলে গিয়েছেন।
২৪৯ মুহাম্মাদ ইবনু
হাতিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ অবশ্যই লোকেরা তোমাদিগকে সব বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে। এমনকি তারা বলবে, আল্লাহ তো সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাকে কে সৃষ্টি করেছে?
২৫০ আবদুল্লাহ ইবনু
আমির ইবনু যুরারা আল হাযরামী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ আপনার উম্মাত সর্বদা এটা কে সৃষ্টি করল, ওটা কে সৃষ্টি করল এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকবে। এমনকি
এ প্রশ্নও জিজ্ঞেস করবে যে, সকল সৃষ্টই আল্লাহ
সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আল্লাহকে কে
সৃষ্টি করেছে?
২৫১ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ রেওয়ায়েত করেছেন। তবে রাবী ইসহাক তার রেওয়ায়েতে আল্লাহ
তা’আলা বলেছেন, আপনার উম্মাত-এ কথাটি
উল্লেখ করেননি।
২৫২ ইয়াহইয়া ইবনু
আইয়ুব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু
হুজর (রহঃ) আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ যে ব্যাক্তি কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের হক বিনষ্ট করে তার জন্য আল্লাহ জাহান্নাম
অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত হারাম করে রেখেছেন। তখন জনৈক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করল,
হে আল্লাহর রাসুল! অতি সামান্য
বস্তু হলেও? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আরাক (বাবলা গাছের মত এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছের) গাছের ডাল
হলেও এ শাস্তি দেয়া হবে।
২৫৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ উমানী আল হারিসী (রাঃ) থেকে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা
করেছেন।
২৫৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, ইবনু নুমায়র এবং ইসহাক
ইবনু ইবরাহীম আল হানযালী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ যে ব্যাক্তি তার উপর অর্পিত চুড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের সম্পদ গ্রাস
করে অথচ সে মিথ্যাবাদী। এমন অবস্হায় আল্লাহর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধাম্বিত থাকবেন। রাবী বলেন,
আশ ‘আস ইবনু কায়স সেখানে প্রবেশ
করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, আবূ আবদুর রহমান
(আবদুল্লাহ) তোমাদেরকে কি বর্ণনা করলেন? তদুত্তরে সকলে উক্ত হাদীসটির কথা বললেন। তিনি বললেন, আবূ আবদুর রহমান সত্যই বর্ণনা করেছেন, ঘটনাটি আমাকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিল। ব্যাপার হলো,
ইয়ামনে জনৈক ব্যাক্তির সাথে
আমারও এক খন্ড ভূমি ছিল। এর মীমাংসা করার নিমিত্ত আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে উপস্হিত হইা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন, তোমার দাবির স্বপক্ষে
তোমার কাছে কোন প্রমাণ আছে কি? আমি বললাম,
না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তা হলে বিবাদীর কসম লওয়া হবে। আমি বললাম, এ ব্যাক্তি তো কসম করবেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি তার উপর অর্পিত চুড়ান্ত কসমের মাধ্যমে কোন মুসলমানের
সম্পদ গ্রাস করে অথচ সে মিথ্যাবাদী, আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধানিত থাকবেন। এরপর এই আয়াত
নাযিল হয়ঃ “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মুল্যে বিক্রি
করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই।
কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ব করবেন
না; তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ
শাস্তি। ” (৩:৭৭)
২৫৫ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
(রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিঁনি বলেন, যে ব্যাক্তি মিথ্যা
কসমের মাধ্যমে কোন সম্পদ গ্রাস করে, এমন অবস্হায় আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন। পরে বর্ণনাকারী আ’মাশ
বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি (ইয়ামনের ভূমির স্হলে) একথা বলেন,
জনৈক ব্যাক্তির সাথে আমার
একটি কুপ নিয়ে বিরোধ ছিল। আমরা এর মীমাংসার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে উপস্হিত হই। তখন তিনি বললেনঃ তোমার দু-জন সাক্ষী লাগবে অথবা বিবাদী থেকে কসম
নেওয়া হবে।
২৫৬ ইবনু আবূ উমর
আল মাক্কী (রহঃ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ গ্রাসের জন্য মিথ্যা কসম করবে,
এমন অবস্হায় আল্লাহর সঙ্গে
তার সাক্ষাৎ ঘটবে যে, তিনি তার প্রতি ক্রোধানিত
থাকবেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রমাণ হিসাবে এ আয়াত পাঠ করেনঃ ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে
কৃত প্রতিশ্রতি এবং নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন
না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না; তাদের জন্য মর্মন্তুদ
শান্তি রয়েছে। ” (৩:৭৭)
২৫৭ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা,
হান্নাদ ইবনু সারী এবং আবূ
আসিম আল হানাফী (রহঃ) ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ওয়াইল (রাঃ) বলেন, হাযরামাউতের জনৈক ব্যাক্তি কিনদার এক ব্যাক্তিকে
নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্হিত হয়! হাযরামাউতবাসী
লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল!
এ ব্যাক্তি আমার পৈতৃক ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। কিনদী বলে উঠল, না, এতো আমারই সম্পত্তি এবং আমারই দখলে আছে। এতে আমি চাষাবাদ করি, এতে কারো কোন অধিকার নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযরামাউতবাসীকে বললেনঃ তোমার কোন সাক্ষী আছে? সে উত্তর করল, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তা হলে এ বিষয়ে বিবাদী কসম করবে। হাযরামাউতবাসী বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এ তো অসৎ লোক, কসম করার বিষয়ে তার আদৌ পরোয়া নেই। আর সে কোন কিছুরই
বাছবিচার করে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার কাছ থেকে
তোমার এতটুকু প্রাপ্য। এরপর হাযরামাউতবাসী শপথ করতে উদ্যোগ নিল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেনঃ যদি সে (কিনদী) অন্যায়ভাবে সম্পদ গ্রাস করার জন্য শপথ
করে থাকে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহর
কাছে এমন অবস্হায় উপস্হিত হবে যে, তিনি তার থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিবেন অর্থাৎ তিনি তার উপর ক্রোধাম্বিত থাকবেন।
২৫৮ যুহায়র ইবনু হারব
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ওয়াইল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে উপস্হিত ছিলাম। ইত্যবসরে দুব্যাক্তি তাঁর কাছে এসে একটি ভূমি সম্পর্কে বিচার
প্রার্থনা করে। তন্মধ্যে একজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল!
জাহিলিয়্যাত যুগে এ ব্যাক্তি আমার ভূমি জবরদখল করে নিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন,
বিচার প্রার্থনাকারী ছিল ইমরাউল
কায়স ইবনু আবিস আল কিনদী আর তার বিবাদী ছিল রাবীআ ইবনু আবদান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার সাক্ষী পেশ কর। লোকটি বলল, আমার কোন সাক্ষী নাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে বিবাদী থেকে কসম নেয়া হবে। লোকটি বলল, তবে তো সে মিথ্যা কসম করে সম্পতি গ্রাস করে ফেলবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার কাছ থেকে তোমার এতটুকু প্রাপ্য।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর বাদী যখন শপথ
করার জন্য প্রস্তুত হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে সম্পতি গ্রাস করবে, সে আল্লাহর কাছে এমন অবস্হায় উপস্হিত হবে যে,
তিনি তার প্রতি ক্রোধান্বিত
থাকবেন। রাবী ইসহাক তার বর্ণনায় এর স্হলে উল্লেখ করেন।
২৫৯ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থের্কে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল!
যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয়, তবে আমি কি করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দিবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সাথে এ নিয়ে লড়াই করে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তুমি তার মুকাবিলায় লড়বে। লোকটি বলল, আপনার কি অভিমত যদি সে আমাকে হত্যা করে বসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তা হলে তুমি শহীদ বলে গণ্য হবে। লোকটি বলল, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
সে জাহান্নামী।
২৬০ আল হাসান ইবনু
আলী আল হুলওয়ানী, ইসহাক ইবনু মানসুর
ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ)উমর ইবনু আবদুর রহমানের আযাদকৃত গোলাম সাবিত (রাঃ) থেকে
বর্ণিত আছে যে, বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর ও আমবাসা ইবনু আবূ সুফিয়ানের
মধ্যে কিছু সম্পদ নিয়ে বিবাদ দেখা দেয়। আর তারা উভয়ে লড়াইয়ের জন্য উদ্যত হয়ে পড়ে। তখন
খালিদ ইবনু আস আবদুল্লাহ ইবনু আমরের কাছে গেলেন এবং বোঝাতে চেষ্টা করলেন। তখন আবদুল্লাহ
ইবনু আমর বললেন, তুমি কি জানো না রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ৪ যে ব্যাক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয়
সে শহীদ। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও আহমাদ ইবনু উসমান নাওফালী (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ)
থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ রেওয়ায়েত করেছেন।
২৬১ শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,
মাকিল ইবনু ইয়াসারের মৃত্যু
শয্যায় উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ তার সাক্ষাতে যান। মাকিল তাকে বললেন, আজ তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে শোনা এমন একটি হাদীস শোনাব যা আমি আরো বেঁচে থাকব বলে জানলে তা কিছুতেই শোনাতাম
না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে,
আল্লাহ তা’আলা যে বান্দাকে
জনগণের দায়িত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তাদের সঙ্গে
খেয়ানতকারীরুপে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।
২৬২ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, মাকিল ইবনু ইয়াসারের অসুস্হ অবস্হায় উবায়দুল্লাহ
ইবনু যিয়াদ তার সাক্ষাতে গেলেন এবং কিছু জানতে চাইলেন। তখন মা’কিল (রাঃ) বলেন,
আজ তোমাকে এমন একটি হাদীস
বর্ণনা করব, যা আমি আগে তোমাকে
বর্ণনা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যে বান্দাকে জনগণের শাসনভার প্রদান করেন আর সে যদি তাদের সঙ্গে
খেয়ানতকারীরুপে মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তার জন্য
জান্নাত হারাম করে দিবেন। উবায়দুল্লাহ বললেন, আপনি কি আজ পর্যন্ত এ হাদীস আমাকে বর্ণনা করেননি?
তিনি বললেন, না কখনো বর্ণনা করি নি। অথবা রাবী এ কথা বলেছেন,
না, বর্ণনা করতে ইচ্ছুক ছিলাম না।
২৬৩ আল কাসিম ইবনু
যাকারিয়্যা (রহঃ) হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)-এর অসুস্থতাকালে
তাঁর কুশলাদি জানতে গিয়েছিলাম। ইত্যবসরে উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ (রাঃ) সেখানে উপস্হিত
হন। মা’কিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তাকে বললেন, আজ তোমাকে একটি হাদীস শোনাব, যা আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি । পরে তিনি উল্লেখিত হাদীসদ্বয়ের
অর্থের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
২৬৪ আবূ গাসসান আল
মিসমাঈ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূল মালীহ (রহঃ) থেকে
বর্ণিত আছে যে, উবায়দুল্লাহ মা’কিল
ইবনু ইয়াসার-এর অসুস্হকালে তার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আজ আমি তোমাকে একটি হাদীস বলব আমি মূত্যুশয্যায়
না থাকলে তা বর্ণনা করতাম না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি যে, মুসলিমদের দায়িত্বে
নিযূক্ত কোন আমীর (শাসক) যদি তাদের কল্যাণ কামনা না করে এবং তাদের সার্থ রক্ষায় সর্বাত্নক
প্রয়াস না চালায়, তবে সে মুসলিমদের
সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
২৬৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে
দুটি কথা বলেছিলেন, সে দুটির একটি তো
আমি সূচোখেই দেখেছি আর অপরটির জন্য অপেক্ষা করছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানব হরদয়ের মূলে আমানত নাযিল হয়, তারপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অনন্তর তারা কুরআন শিখেছে
এবং সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছেন তারপর তিনি আমাদেরকে আমানত উঠিয়ে নেওয়ার বর্ণনা দিলেন।
বললেনঃ মানুষ ঘুমাবে আর তখন তার অন্তর হতে আমানত ভুলে নেয়া হবে। ফলে তার চিহ্ন থেকে
যাবে একটি নুকতার মত। এরপর আবার সে ঘূমায় তখন তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেয়া হবে।
ফলে তার চিহ্ন থেকে যাবে ফোস্কার মত যেন একটি অঙ্গার, তা তুমি তোমার পায়ে রগড়ে দিলে। তখন তাতে ফোস্কা
পড়ে যায় এবং তুমি তা ফোলা দেখতে পাও অথচ তাতে (পুঁজ-পানি ব্যতীত) কিছু নেই। তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি কাকর নিয়ে তার পায়ে ঘষলেন এবং বললেনঃ যখন এমন
অবস্থা হয়ে যাবে, তখন মানুষ বিকিকিনি
করবে কিন্তু কেউ আমানত শোধ করবে না। (আমানতদার ব্যাক্তি এত কমে যাবে যে) এমন কি বলা
হবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার আছেন।
এমন অবস্হা হবে যে, কাউকে বলা হবে বড়ই
বাহাদুর, বড়ই হুশিয়ার,
বড়ই বুদ্ধিমান অথচ তার অন্তরে
দানা পরিমাণ ঈমান নেই। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, এমন এক যুগও গেছে যখন যে কারো সাথে লেনদেন করতে
দ্বিধা করতাম না। কারণ সে যদি মুসলমান হতো। তবে তার দ্বীনদারীই তাকে আমার হক পরিশোধ
করতে বাধ্য করত। আর যদি সে খৃষ্টান বা ইহুদী হতো তবে তার প্রশাসক তা শোধ করতে তাকে
বাধ্য করত্য কিন্তু বর্তমানে আমার অমুক অমুক ব্যতীত কারোর সাথে লেনদেন করার নই।
২৬৬ ইবনু নুমায়র ও
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আমাশ (রহঃ)-এর সূত্রে পূর্ব বর্ণিত সনদের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৬৭ মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন আমরা উমর (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন,
তোমাদের মধ্যে কে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছ? উপস্হিত একদল বললেন, আমরা শুনেছি। উমর (রাঃ) বললেন, তোমরা হয়ত একজনের পরিবার ও প্রতিবেশীর ফিতনার কথা
মনে করেছ। তারা বললেন, হ্যা, অবশ্যই। তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ), রোযা ও সা’দকার মাধ্যমে এগুলোর কাফফারা হয়ে যায়।
উমর (রাঃ) বললেন, না, আমি জানতে চেয়েছি, তোমাদের কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সে বৃহৎ ফিতনার কথা আলোচনা করতে শুনেছে, যা সমুদ্র তরঙের মত ধেয়ে আসবে। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন,
প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ হয়ে
গেল। আমি বললাম, আমি (শুনেছি)। উমর
(রাঃ) বললেন, তুমি শুনেছ,
মা-শা আল্লাহ। হুযায়ফা (রাঃ)
বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, চাটাই বুননের মত এক এক করে ফিতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে
যায়, তাতে একটি করে কাল দাগ পড়ে।
আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে, তাতে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল
চিহ্ন পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দুধরনের হয়ে যায়। একটি শ্বেত পাথরের মত; আসমান ও যমীন যতদিন থাকবে ততদিন কোন ফিতনা তার কোন
ক্ষতি করতে পারবে না। আর অপরটি হযে যায় উল্টানো কাল কলসির মত, প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা সেঁধে দিয়েছে তা ছাড়া ভালমন্দ
বলতে সে কিছুই সে চিনে না। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, উমর (রাঃ)-কে আমি আরো বললাম, আপনি এবং সে ফিতনার মধ্যে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে।
অচিরেই সেটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেন, সর্বনাশ! তবু ভেঙে ফেলা হবে? যদি ভেঙে ফেলা না হতো, তাহলে হয়ত পূনরায় বন্ধ করা যেত। হুযায়ফা (রাঃ) উত্তর
করলেন, না ভেঙে ফেলাই হবে। হুযায়ফা
(রাঃ) বলেন, আমি উমর (রাঃ)-কে
এ কথাও শুনিয়েছি, সে দরজাটি হল একজন
মানুষ; সে নিহত হবে কিংবা সাভাবিক
মৃত্যুবরণ করবে। এটি কোন গল্প নয় বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর হাদীস। বর্ণনাকারী আবূ খালিদ বলেন, আমি সা’দকে জিজ্ঞেস করলাম,। -এর অর্থ কি?
উত্তরে তিনি বললেন,
‘যকালো-সাদায় মিশ্রিত রং-।
আমি বললাম, -এর অর্থকি?
তিনি বললেন ‘উল্টান কলসি’।
২৬৮ ইবনু আবূ উমর
(রহঃ) রিবঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,
হুযায়ফা (রাঃ) উমর (রাঃ)-এর
কাছ থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বললেন, গতকাল যখন আমি আমীরুল মুমিনীন উমর (রাঃ)-এর কাছে
বসা ছিলাম, তখন তাঁর সঙ্গীদের
জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কার
ফিতনা সষ্পকীয় হাদীস স্মরণ আছে । এরপর রাবী আবূ খালিদ বর্ণিত পূর্বের হাদীসটির মত বর্ণনা
করেন। তবে তিনি -এর আবূ মালিক বর্ণিত ব্যাখ্যার উল্লেখ করেননি।
২৬৯ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না, আমর ইবনু আলী ও উকবা
ইবনু মুকরাম আল আাম্মী (রহঃ) রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদিন উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা
সম্পর্কে কি ইরশাদ করেছেন-এ সম্পর্কে তোমাদের কেউ আমাকে হাদীস বর্ণনা করতে পারবে?
তখন হুযায়ফা (রাঃ)-ও সেখানে
উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি পারব । এরপর রিবঈ-এর
সুত্রে বর্ণিত আবূ মালিকের রেওয়ায়েতের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনাকারী এ হাদীসে
এও উল্লেখ করেন যে, হুযায়ফা (রাঃ) বলেছেন,
আমি উমর (রাঃ)-কে যে হাদীস
বর্ণনা করেছি, তা কোন বানোয়াট কথা
নয় বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই তা বর্ণনা করেছি।
২৭০ মুহাম্মাদ ইবনু
আব্বাদ ও ইবনু আবূ উমর (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ ইসলাম শুরুতে অপরিচিত ছিল, অচিরেই তা আবার শুরুর
মত অপরিচিত হয়ে যাবে। সূতরাং এরুপ অপরিচিত অবস্হায়ও যারা ইসলামের উপর কায়েম থাকবে,
তাদের জন্য মুবারকবাদ।
২৭১ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি ও আল ফাযল ইবনু সাহল আল আরাজ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইরশাদ করেন:অপরিচিতের
বেশে ইসলাম শুক হয়েছিল, অচিরেই তা আবার অপরিচিত
অবস্হায় ফিরে যাবে। সাপ যেমন সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে তদ্রুপ ইসলামও দুই মসজিদের
মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
২৭২ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও ইবনু নূমায়র (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ সাপ যেমন সঙ্কুচিত হয়ে আপন গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তদ্রুপ ইসলামও সঙ্কুচিত
হয়ে মদিনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।
২৭৩ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পৃথিবীর বুকে ‘আল্লাহ আল্লাহ’
বলার মত লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যতক্ষন পর্যন্ত এরুপ
অবস্হার সৃষ্টি না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত কিয়ামত
হবে না।
২৭৪ আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ) – আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ আল্লাহ বলার মত
একটি মানুষ অবশিষ্ট থাকতেও কিয়ামত হবে না।
২৭৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ
ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ)হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সঙ্গে। ছৗ-বাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে বললেনঃ
গণনা কর তো, কতজন মানুষ ইসলামের
কথা স্বীকার করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!
আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন? আমরা তো প্রায় ছয়শত থেকে সাতশ” লোক আছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন?, তোমরা জানো না, অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সাহাবী বলেন,
পরবর্তীকালে সত্যই আমরা পরীক্ষার
সম্মুখীন হই, এমন কি আমাদের কোন
কোন ব্যাক্তিকে গোপনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে হতো।
২৭৬ ইবনু আবূ উমর
(রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার কিছু মাল বন্টন করছিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে কিছু দিন, কেননা সে নিশ্চয়ই একজন মুমিন ব্যাক্তি। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল যে, সে একজন মুসলিম। সাহাবী বললেন, আমি কথাটি তিনবার
পূনরাবৃত্তি করেছি, তিনিও তিনবারই আমাকে
ঐ একই উত্তর দিয়েছেন এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অপরজন
আমার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি কাউকে এ কারণেও দিয়ে থাকি যে, আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে উপূড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ
না করেন।
২৭৭ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে কিছু মাল দিলেন! তখন সা’দ (রাঃ) তাদের মধ্যে বসা ছিলেন।
সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে এক ব্যাক্তিকে কিছু দিলেন না; অথচ আমার দৃষ্টিতে সে ছিল পাওয়ার বেশি উপযুক্ত।
তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!
অমুককে না দেওয়ার কারণ কি? আল্লাহর কসম,
অবশ্যই আমি তাকে তো মুমিন
বলে জানি! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল সে মুসলিম! আমি
কিছুক্ষণ র্নীরব থাকলাম। তার সম্পর্কে আমি যা জানি তা আমার কাছে প্রবল হয়ে উঠল,
তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেওয়ার কারণ কি?
আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে ধারনা করি! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল, সে মুসলিম। আমি কিছুক্ষণ চুপ রইলাম। পূনঃ তার সম্পর্কে
আমি যা জানি, তা প্রবল হয়ে উঠল,
তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেয়ার কারণ কি?
আল্লাহর কসম, আমি তো তাকে অবশ্যই মুমিন বলে জানি! রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বরং বল, সে মুসলিম। অন্যজন আমার কাছে অধিক প্রিয় হওয়হ সত্ত্বেও
আমি কাউকে এ আশঙ্কায় কিছু দান করে থাকি যে, আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে নিম্নমুখি করে জাহান্নামে
নিক্ষেপ না করেন।
২৭৮ আল হাসান ইবনু
আলী আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রাঃ)সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয়
লোককে কিছু দিলেন। তখন আমি তাদের মধ্যে বসা ছিলাম। এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে গেলাম এবং চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! অমুককে না দেওয়ার কারণ কি?
২৭৯ আল হাসান আল হুলওয়ানী
(রহঃ) ইসমাঈল ইবনু মুহাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি মুহাম্মদ ইবনু সা’দকে এ হাদীস বর্ননা করতে শুনেছি।
তবে তিনি তাঁর বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেন যে, সা’দ (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমার গ্রীবা ও কাঁধের মাঝখানে সজোরে হাত রেখে বললেনঃ হে সা’দ তুমি কি এজন্য বিতর্ক
করতে চাও? আমি কাউকে দান করি।
২৮০ হারামালা ইবনু
ইয়াহঁইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
৪ ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তূলনায় আমাদের মনে অধিক সন্দেহ জাগতে পারো তিনি
বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক!
কিভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। আল্লাহ
বললেনঃ তবে কি তুমি বিশ্বাস কর নি? তিনি উত্তরে বললেন,
কেন করব না? তবে তা কেবল আমার চিত্ত প্রশান্তির জন্য। * (২:
২৬০)। আল্লাহ তা’আলা . লূত (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর রহমত বর্ষণ করুন, তিনি কোন শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর আশ্রয় গ্রহণের ইচ্ছা
প্রকাশ করেছিলেন। . ইউসুফের দীর্ঘ কারাবরণের মত আমাকেও যদি কারাগারে অবস্হান করতে হতো,
তবে আমি রাজদুতের- আহবানে
সাড়া দিতাম। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা আয যুবাঈ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রেও
ইউনুস যুহুরি (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত হয়েছে। তবে মালিক (রহঃ) তাঁর হাদীসে
কথাটির উল্লেখ করেন যে, এরপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন।
২৮১ আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে মালিকের সুত্রে বর্নিত হাদীসেঁর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি
বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করেন।
২৮২ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে এমন মুজিযা দেয়া হয়েছে, যে মুজিযা অনুযায়ী মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে।
পক্ষান্তরে আমাকে যে মুজিযা প্রদান করা হয়েছে, তা হতে আল্লাহ প্রেরিত ওহী। সূতরাং কিয়ামতের দিন
আমার অনুসারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে বলে আমি আশা রাখিি।
২৮৩ ইউনূস ইবনু আবদুল
আ’লা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের
প্রাণ, ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক,
যে ব্যাক্তই আমার এ আহবান
শুনেছে, অথচ আমার রিসালতের উপর ঈমান
না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী
হবে।
২৮৪ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) সালিহ ইবনু সালিহ আল হামদানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ইমাম শাবীর কাছে এসে জনৈক খুরাসানী ব্যাক্তিকে প্রশ্ন
করতে দেখলাম। সে বলল, হে আবূ আমর! আমাদের
অঞ্চলে কতিপয় খুরাসানীর মতামত হল, যে-ব্যাক্তি নিজের
দাসীকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করল, সে যেন নিজ কুরবানীর উটের উপর সাওয়ার হলো (অর্থাৎ তারা তা নিন্দনীয় কাজ মনে করে)।
শা’বী উত্তরে বললেন, আমাকে আবূ বুরদা
(রাঃ) তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ তিন ধরনের লোককে দ্বিগুন সাওয়াব দান করা হবে। (তারা হলঃ) (১) যে আহলে কিতাব
তার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি ঈমান এনেছে এবং পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পেয়ে তার প্রতিও বিশ্বাস স্হাপন করেছে, তাঁকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে এবং তাঁর অনুসরণ করেছে
সে দ্বিগুন সাওয়াব পাবে। (২) যে দাস আল্লাহ তা’আলার হক আদায় করেছে এবং তার মালিকের
হুকুমও আদায় করেছে, সেও দ্বিগুন সাওয়াব
লাভ করবে। (৩) যে ব্যাক্তি তার দাসীকে উত্তম খাবার দিয়েছে, উত্তমরুপে আদব কায়দা শিখিয়েছে, তারপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে; সেও দ্বিগুন সাওয়াবের অধিকারী হবে। বর্ণনাকারী বলেন,
এরপর শা’বী উক্ত খুরাসানীকে
বললেন, কোন বিনিময় ছাড়াই তুমি এ
হাদীস নিয়ে যাও; অথচ এর চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ
হাদীসের জন্যও এক সময় মদিনা পর্যন্ত লোকেরা সফর করত।
২৮৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও ইবনু আবূ উমর ও ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায (রহঃ) সালিহ (রহঃ) থেকে পূর্বোল্লিখিত
সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
২৮৬ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ সে সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ,
শীঘ্রই তোমাদের মাঝে ঈসা ইবনু
মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে অবতীর্ন করা হবে।
তখন তিনি ক্রুশ (চিহ্ন) ধ্বংস করবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া রহিত করবেন। তখন সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে,
তা গ্রহণ করার কেউ থাকবে না।
২৮৭ আবদুল আলা ইবনু
হাম্মাদ, আবূ বকর ইবনু আবূ
শায়বা, যূহায়র ইবনু হারব হারামালা
ইবনু ইয়াহইয়া, হাসান আল হুলওয়ানী
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
(তবে প্রত্যেক রেওয়ায়েতে কিছু শব্দের হেরফের বিদ্যমান, যেমন) ইবনু উআয়না তার রেওয়ায়েতে , কথাটির উল্লেখ করেন। ইউনুস তার রেওয়ায়েতে -এর উল্লেখ
করেছেন- উল্লেখ করেননি। সালিহ তাঁর রেওয়ায়েতে লাইস বর্নিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
তাঁর বর্ণনায় আরও রয়েছে, সে সময় এক একটি সিজদা
পৃথিবী ও পৃথিবীর সমুদঁয় সম্পদ অপেক্ষা অধিক শ্রেয় বলে বিবেচিত হবে। এরপর আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বলেনঃ ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পড়তে পারঃ (অর্থ) “আহলে কিতাব-এর মধ্যে প্রত্যেকে
তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে . ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- কে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের
দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। ” (৪: ১৫৯)
২৮৮ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন:আল্লাহর কসম! ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ প্রশাসকরুপে
অবতীর্ণ হবেন এবং ক্রশ চুর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিযিয়া রহিত করবেন।
মোটাতাজা উটগুলো বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে; কিন্তু তা নেবার জন্য কেউ চেষ্টা করবে না। পরস্পর হিংসা, বিদ্বেষ, শক্রতা বিদায় নিবে এবং সস্পদ গ্রহণের জন্য মানুষকে
আহবান করা হবে; কিন্তু তা কেউ গ্রহণ
করবে না।
২৮৯ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যখন ইবনু মারইয়াম
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের ইনাম হবেন।
২৯০ মুহাম্মদ ইবনু
হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ তোমাদের জীবন কতই না ধন্য হবে, যে সময়ে ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হবে আর
তিনি তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।
২৯১ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন?, তোমরা কতই না ধন্য হবে, যে সময়ে ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবতীর্ণ
হবেন এবং তোমাদেরই একজন তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন। ওয়ালীদ বলেন, আমি ইবনু আবূ যিবকে জিজ্ঞেস করলাম, আওযায়ী আবূ হুরায়রা (রাঃ) এ সুত্রে আমাদেরকে শব্দে
হাদীস বর্ণনা করছেন। তদুত্তরে তিনি বললেন, কথাটির মর্ম জানো কি? আমি বললাম,
বলুন। তিনি বললেন,
অর্থাৎ তোমাদের প্রতিপালক
প্রেরিত কিতাব ও তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসৃত আদর্শ অবলম্বনে
তিনি তোমাদের নেতৃত্ব প্রদান করবেন।
২৯২ আল ওয়ালীদ ইবনু
শুজা, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ
ইবনু শাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে
শুনেছি, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের
একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে . ঈসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) অবতরণ করবেন। মুসলমানদের আমীর বলবেন, আসুন। সালাত (নামায/নামাজ) আমাদের ইমামত করুন! উত্তর
দিবেনঃ না, আপনাদেরই একজন অন্যদের
জন্য ইমাম নিতে হবেন। এ হল আল্লাহ জন্য প্রদত্ত এ উম্মাতের সমান।
২৯৩ ইয়াহইয়া ইবনু
আইউব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু
হুজর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
পশ্চিমাকাশে সুর্যোদয়ের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবে না, আর যখন পশ্চিম গগনে সূর্য উদিত হবে, তখন সকল মানুষ একত্রে ঈমান আনবে। কিন্তু যে ইতিপূর্বে
ঈমান আনেনি অথবা যে ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করেনি সে সময়ে ঈমান আনায় তার কোন উপকার হবে
না।
২৯৪ আবূ বকর ইবনু
শায়বা, ইবনু নুমায়র, আবূ কুরায়ব, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ
হুরায়রা (রাঃ) থেকে আলী (রাঃ) ও আবদুর রহমান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা
করেছেন।
২৯৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব
ও আবূ কুরায়ব (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি
বিষয় প্রকাশিত হলে ইতিপূর্বে ঈমান আনেনি বা ঈমান অনুযায়ী নেক কাজ করেনি, সে সময়ে ঈমান আনায় তার কোন উপকার হবে না,
(সে তিনটি বিষয় হল)১/ পশ্চিামাকাশে
সূর্যোদয় , ২/ দাজ্জাল ও ৩/ দাব্বাতূল
আরদ।
২৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু
আইউব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তোমরা কি জানো, এ সূর্য কোথায় যায়?
সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। বললেনঃ এ সূর্য
চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নিচে অবস্হিত তার অবস্হানস্হলে যায়। সেখানে সে
সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর
সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্হল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে
অবস্হিত তার অবস্হানস্হলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্হায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে
বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে
সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়লে হয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে
থাকে এবং আরশের নিচে অবস্হিত তার অবস্হান স্হলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্হায় পড়ে
থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে
এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্হল হয়েই সে উদিত হয়।
এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক
কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথার্রীতি আরশের নিচে তার নিদিঁষ্টস্হলে যাবে।
তাকে বলা হবে, ওঠ এবং অস্তাচল থেকে
উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিম গগনে উদিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জানো? সে দিন ঐ ব্যাক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না,
যে ব্যাক্তি পুর্বে ঈমান আনেনি
কিংবা যে ব্যাক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি।
২৯৭ আবদুল হামীদ ইবনু
বায়ান আল ওয়াসিতী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে
লক্ষ করে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এ সুর্য কোথায় গমন
করে? এরপর রাবী ইবনু উলায়্যা বর্ণিত
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন।
২৯৮ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। সূর্য অন্তমিত হলে তিনি বললেনঃ
হে আবূ যার! জানো, এ সূর্য কোথায় যায়?
আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তার গন্তব্য স্হলে যায় এবং আল্লাহর কাছে সিজদার অনুমতি
চায়। তখন তাকে অনুমতি দেয়া হয়। পরে একদিন যখন তাকে বলা হবে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকে
ফিরে যাও। অনন্তর তা অস্থাচল থেকে উদিত হবে। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের কিরাআত
অনুসারে তিলাওয়াত করেনঃ এ তার গন্তব্যস্থল
২৯৯ আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আামরা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
“এবং সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিবে” (৩৬: ৩৮) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলে তিনি বললেনঃ আরশের নিচে তার গন্তব্য স্থল।
৩০০ আবূ তাহির আহমাদ
ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ওহীর সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। আর তিনি যে স্বপ্নই
দেখতেন, তা প্রভাত জ্যোতির মত সুষ্পষ্টরুপে
সত্যে পরিণত হতো। তাঁর কাছে একাকী থাকা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তারপর তিনি হেরা শুহায় নির্জনে
কাটাতে থাকেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসার পুর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি একাধারে বেশ
কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন এবং এর জন্য কিছু খাদ্য-সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যেতেন তারপর
তিনি খাদীজার কাছে ফিরে যেতেন এবং আরও কয়েকদিনের জন্য অনুরুপ খাদ্য-সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে
আসতেন। তিনি হেরা শুহায় যখন ইবাদতে রত ছিলেন, তঁখন তাঁর কাছে ফেরেশতা আসলেন। বললেনঃ পড়ুন! তিনি
বললেনঃ আমি তো পড়তে জানিনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন
ফেরেশতা আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হয়। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ
পড়ুন! -আমি বললাম, আমি তো পড়তে সক্ষম
নই। তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং দ্বিতীয়বারও এমন জোরে চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। পরে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন!
আমি বললাম আমি তো পড়তে পারি না। এরপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তৃতীয়বারও এমন জোরে
চাপ দিলেন যে, আমার খুবই কষ্ট হল।
এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পাঠ করুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, করেছেন; সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক- হতে। পাঠ করুন! আর
আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে
শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে
যা সে জানত না। ” (৯৬:-১-৫)। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ওহী
নিয়ে ফিরে এলেন। তার স্কন্ধের পেশিগুলো কাপছিল। খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেনঃ তোমরা
আমাকে চাঁদরাবৃত কর, তোমরা আমাকে চাঁদরাবৃত
-কর, তোমরা আমাকে চাঁদরাবৃত কর।
তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে
তার ভীতি দূর হল। এরপর খাদীজা (রাঃ)-কে সকল ঘটনা উল্লেখ করে বললেনঃ খাদীজা,
আমার কি হল? আমি আমার নিজের উপর আশঙ্কা করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন
না, কখনো তা হবে না ;
বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর
কসম! তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি স্বজনদের খোজখবর রাখেন,
সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্হা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য
করেন। এরপর খাদীজা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ওরাকা ইবনু
নাওফাল ইবনু আসা’দ ইবনু আবদুল উযযা-এর কাছে নিয়ে আসেন। ওরাকা হলেন খাদীজা (রাঃ)-এর
চাচাত ভাই। ইনি জাহিলিয়াতের যুগে খৃষ্টানধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আরবী লিখতে জানতেন
এবং ইনজীল কিতাবের আরবী অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ এবং দূষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন।
খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ চাচা, (সম্মানার্থে চাচা
বলে সম্মোধন করেছিলেন। অন্য রেওয়ায়েতে ‘হে চাচাত ভাই’ এ কথার উল্লেখ রয়েছে) আপনার ভ্রাতুষ্পূত্র
কি বলছে শুনুন তো! ওরাকা ইবনু নাওফাল বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! কি দেখেছিলেন? রাসুল যা দেখেছিলেন, সবকিছু বিবৃত করলেন। ওরাকা বললেন, এ তো সে সংবাদবাহক যাকে আল্লাহ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
কাছে প্রেরণ করেছিলেন। হায়! আমি যদি সে সময় যুবক থাকতাম, হায়! আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম, যখন আপনার জাতিগোষ্ঠী আপনাকে দেশ থেকে বের করে দিবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সত্যি কি আমাকে তারা বের করে দিবে?
ওরাকা বললেন, হ্যা। যে ব্যাক্তই আপনার মত কিছু (নবুওয়াত ও রিসালাত
(নামায/নামাজ) নিয়ে আগমন করেছে, তাঁর সঙ্গেই এরুপ
দুশমনী করা হয়েছে। আর আমি যদি আপনার সে যুগ পাই, তবে আপনাকে অবশ্যই পূর্ণ সহযোগিতা করব।
৩০১ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে ওহীর সুচনা হয়ে এরপর বর্ণনাকারী ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপই বর্ণনা করেন। তবে
তিনি অর্থাৎ আল্লাহ তায়াআলা আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না-এর স্হলে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা
কখনো আপনাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করবেন না উল্লেখ করেছেন এবং অন্যত্র বলেছেন।
৩০২ আবদুল মালিক ইবনু
শুয়াইব ইবনু লাইস (রহঃ) উম্মুল মূমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে এ রেওয়ায়েতে
রাসুল কম্পিত হৃদয়ে খাদিজা (রাঃ)-এব কাছে ফিরে এলেন একথার উল্লেখ রয়েছে। এরপর রাবী
ইউনুস ও মা’মারের অনুরুপ বর্ননা করেন, তবে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ওহীর সুচনা হয়েছিল সত্য
স্বপ্নের মাধ্যমে। ”- এ কথার উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে আল্লাহর শপথ, তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। এতটুকু ইউনুসের
অনুরুপ বর্ণনা কঁরেছেন। আর খাদীজার সম্বোধন এভাবে উল্লেখ করেছেন “ চাচাত ভাই! শুন তো
আপনার ভাতিজা কি বলছেন?”
৩০৩ আবূ তাহির (রহঃ)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সাহাবীগণ ওহীর বিরতি প্রসঙ্গে পরস্পর কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর
বিরতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, আমি পথ চলছিলাম,
সে মুহূর্তে আকাশ হতে একটি
শব্দ শুনে মাথা ভুলে তাকালাম, দেখি, সেই হেরা শুহায় যে ফেরেশতা আমার কাছে এসেছিলেন সে
ফেরেশতা যমীন ও আসমানের মধ্যস্হলে কুরসীর উপর বসে আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আর জলদি বাড়ি ফিরে এসে বলতে লাগলাম: আমাকে
বস্ত্রাচ্ছাদিত কর, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত
কর। তারা আমায় বস্ত্রাচ্ছাদিত করল। এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “হে বস্ত্রাচ্ছাদিত,
উঠূন! সতর্কবানী প্রচার করুন,
আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব
ঘোষণা করুন, আপনার পরিচছদ পবিত্র
রাখুন এবং অপবিত্রতা হতে দুরে থাকুন” (৭৪: ১-৫)। এখানে অপবিত্রতা- বলে প্রতিমাকে-বোঝানো
হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তারপর ধারাবাহিকভাবে
ওর্হীর অবতরণ আরম্ভ হয়।
৩০৪ আবদুল মালিক ইবনু
শু’আইব ইবনু লাইস (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছেন – তারপর কিছুদিন যাবত আমার প্রতি ওহীর অবতরণ বন্ধ ছিল। পরে একদিন
আমি পথ চলছিলাম । এরপর রাবী ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে উকায়ল স্হলে
বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন তিনি বর্ণনা করেছেন
৩০৫ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি (রহঃ) যুহুরি (রহঃ) থেকে ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী
এ হাদীসে উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ (অর্থ)
“হে বস্ত্রাচ্ছাদিত এবং অপবিত্রতা থেকে দুরে থাকুন”। (৭৪: ১-৫) এ আয়াতটি সালাত (নামায/নামাজ)
ফরয হওয়ার পূর্বেই নাযিল হয়। অর্থ প্রতিমা- এবং মাঁ’মার এ হাদীসে উকায়লের মতো স্হলে
বর্ণনা করেন।
৩০৬ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি আবূ সালামাকে
জিজ্ঞেস করলাম, কুরআনের কোন আয়াতটি
সর্বপ্রথম অবতীর্ন হায়ছে? তিনি বললেন,
(৭৪: ১-৫)। আমি বললাম (৯৬:
১-৫)। তিনি বললেন, আমিও জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে
জিজ্ঞেস করেছিলাম, কুরআনের কোন আয়াতর্টি
প্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেছেন , আমি বললাম, জাবির (রাঃ) বললেন,
আমি তোমাদের তাই বর্ণনা করছি,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন ৪ আমি একমাস হেরা শুহায় অবস্হান
করি। অবস্হান শেষে আমি নিচে নেমে এলাম। উপত্যকার মাঝখানে যখন পৌছলাম তখন আমাকে ডাকা
হল। আমি সামনে পেছনে ডানে-বায়ে তাকালাম, কাউকে দেখলাম না। তারপর আমাকে ডাকা হল, তখনো কাউকে দেখতে পেলাম না। পূনঃ আমাকে ডাকা হল।
আমি তাকালাম, দেখি সে ফেরেশতা অর্থাৎ
জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শূন্যে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট। আমার প্রবল কম্পন গুরু
হল। অনন্তর খাদীজার কাছে আসলাম। বললাম তোমরা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো। তারা আমাকে
চাঁদর দিয়ে ঢেকে দিল। আমার উপর পানি ঢালল। অনন্তর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ
হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠূন, সতর্কবানী প্রচার
করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব
ঘোষণা করুন, আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র
রাখুন। ” (৭৪: ১-৪)
৩০৭ মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত সনদে বর্ননা করেছেন। তবে
তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন:‘সে ফিরিশতা, আসমান যমীনের মাঝখানে একটি কুরসীর উপর উপবিষ্ট।
৩০৮ শায়বান ইবনু ফাররূখ
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ আমার জন্য বুরাক পাঠানো হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি
সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মধিঢ়ৃদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে
কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতেঁ আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম। জিবরাঈল একটি শরারের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র
নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন,
আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন।
তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে ঊধর্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত
পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে
পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন। তারপর
জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ঊধর্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত
পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরাঈল।
বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। তারপর
আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন,
আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে ঊধর্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের
দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সাথে কে?
তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল ডাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন
এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর জিবরাঈল আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে
পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সাথে কে?
তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যা পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ
করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন: –“এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ
মর্যাদায়—” (৫৭: ১৯)। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের
দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর
জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে
বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। তারপর
আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ পেলাম।
তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরাঈল। বলা হলো,
আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যা, পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে . ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে
প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের
পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত
হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ
তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ) ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসলাম।
তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার
উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ)। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের
কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে
সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে
ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার
উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাচ ওয়াক্ত কমান হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো
সহজ করার আবেদন করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি
একবার মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে
আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ) দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত
হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল
এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি
সাওয়াব লিখব ; অ্যর তা কাজে রুপায়িত
করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল,
অথচ তা কাজে পরিণত করল না
, তার জন্য কোন শোনাহ লেখা হয়
না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র শোনাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে নেমে এলাম এবং
তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা
করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার
রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা
হচ্ছে।
৩০৯ আবদুল্লাহ ইবনু
হাশিম আল আবদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আমার কাছে ফেরেশতা আসলেন এবং তাঁরা আমাকে নিয়ে যমযমে গেলেন। আমার বক্ষ বিদীর্ন করা
হল। তারপর যমযমের পানি দিয়ে আমাকে গোসল করান হল। এরপর নির্ধারিত স্হানে আমাকে ফিরিয়ে
আনা হল।
৩১০ শায়বান ইবনু ফাররুখ
(রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে
তাঁর হৎপিশুটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিশু বের করলেন এবং
বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিশুটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে
ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্হানে পূনঃস্থাপন করলেন। তখন ঐ শিশুরু
া দৌড়ে তাঁর দুধমায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মাদ -কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে
বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্ষে সে সেলাই-এর চিহ্ন দেখেছি।
৩১১ হারুন ইবনু সাঈদ
আল আয়লী (রহঃ) শারীক ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ নামির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে কাবার মসজিদ থেকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাত সম্পর্কে আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বর্ণনা
করতে শুনেছি যে, ওহী প্রাপ্তির পূর্বে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মাসজিলে হারামে নিদ্রিত অবস্থায়
ছিলেন। এরুপে বর্ণনাকারী পূর্ব বর্ণিত সাবিতুল বুনানীর হাদীসেরই অনুরুপ বর্ণনা করে
যান। তবে এ বর্ণনায় শব্দের কিছু আগপাছ ও শব্দের কিছু বেশকম রয়েছে।
৩১২ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া আত তুজিবী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল ইরশাদ করেনঃ আমি মক্কাতে ছিলাম। আমার ঘরের
ছাদ ফাঁক করা হলো। তখন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবতরণ করলেন। তিনি আমার বক্ষ
বিদীর্ণ করলেন। এরপর তা যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন। তারপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ
একটি পাত্র আনা হলো এবং এতে তা রাখা হল ; পূনঃ তা আমার বক্ষে ঢেলে বক্ষ বন্ধ করে দিলেনা এরপর আমার হাত ধরলেন এবং ঊধর্বাকাশে
যাত্রা করলেন। আমরা যখন প্রথম আসমানে গিয়ে পৌছলাম, তখন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ আসমানের দ্বাররকীকে
বললেন, দরজা খুলুন! তিনি বললেন,
কে? বললেন, জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি অন্য
কেউ আছে? তিনি বললেন,
হ্যা। আমার সাথে মুহাম্মদ
আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে
পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন,
হ্যা। এরপর দরজা খুলে দেওয়া
হলো। আমরা প্রবেশ করে দেখি, এক ব্যাক্তি,
তাঁর ডানে একদল মানুষ এবং
বায়ে একদল মানুষ। যখন তিনি ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আর যখন বাঁ দিকে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি আমাকে বললেন
মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , হে সুযোগ্য সন্তান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিবরাঈলকে বললাম, ইনি কে? তিনি বললেন,
ইনি . আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
আর ডানে ও বায়ের এ লোকগুলো তার বংশধর। ডান পার্বস্হরা হচ্ছে জান্নাতবাসী আর বাম পার্বস্হরা
হচ্ছে জাহান্নামবাসী। আর এ কারণেই তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন এবং বাঁ দিকে তাকালে
কাদেন। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে ঊধর্বারোহণ করলেন এবং দ্বিতীয়
আসমানে পৌছলেন এবং এর দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি প্রথম আসমানের দ্বাররক্ষীর মত
প্রশ্নোত্তর করে দরজা খূলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেছেন যে, তিনি আসমানসমূহে
. আদম, ইদূরীস, মূসা ও ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ
লাভ করেছেন। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
ষষ্ঠ আসমানে। এছাড়া অন্যান্য নাবী র অবস্হান সম্পর্কে এ রেওয়ায়েতে কিছু উল্লেখ নেই।
আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও . জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) . ইদরীস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন,
মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
! সুযোগ্য ভ্রাতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম,
ইনি কে? জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিলেন;
ইনি ইদরীস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তারপর আমরা . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনিও বললেন,
মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম , সুযোগ্য ভ্রাতা। জিজ্ঞেস
করলাম, ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর আমরা ঈসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
, সুযোগ্য ভ্রাতা! জিজ্ঞেস করলাম
ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি . ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর আমরা . ইবরাহীম
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তিনিও বললেন, মারহাবা হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
, সুযোগ্য সন্তান! জিজ্ঞেস করলাম,
ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি . ইবরাহিম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ইবনু শিহাব,
ইবনু হাযম, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ৪ তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে নিয়ে আরো ঊধের্ব
চললেন। আমরা এমন এক স্তরে পৌঁছলাম যে, তথায় আমি কলম-এর খশমশ (লেখার) শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ইবনু হাযম ও আনাস ইবনু মালিক
বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তখন আল্লাহ
তা’আলা আমার ওপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তন
করার পথে . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
আপনার প্রতিপালক আপনার উম্মতের
ওপর কি ফরয করেছেন? আমি উত্তরে বললাম,
তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত
(নামায/নামাজ) , ফরয করা হয়েছে। .
মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলাম।
তখন আল্লাহ এর অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি আবার ফিরে এসে . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
জানালে তিনি বললেন, না, আপনি পুনরায় ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত এতেও সক্ষম হবে না। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি আল্লাহর দরবারে ফিরে গেলে তিনি বললেন,
এ নির্দেশ পাচ, আর পাঁচই পঞ্চাশের সমান করে দিলাম, আমার কথার কোন রদবদল নেই। এরপর আমি . মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে ফিরে আসি। তিনি তখনো বললেন, আপনি ফিরে যান আল্লাহর দরবারে। আমি বললাম আমার লজ্জা
অনুভূত হচ্ছে। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে সেদরাতুল মুনতাহা-চললেন,
আমরা পৌছলাম। তা এত বিচিত্র
রঙে আবৃত যে, আমি বুঝতে পারছি না
যে, আসলে তা কী। তারপর আমাকে জান্নাতে
প্রবেশ করান হল। সেখানে ছিল মুক্তার গম্বুজ আর তার মাটি ছিল মিশকের।
৩১৩ মুহাম্মদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু
সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি
অবস্হায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি
আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল,
তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর
তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন,
আমি আমার পার্শস্হ একজনকে
জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত-
বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন? তিনি জবাব দিলেন,
“বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিন্ডটি বের করা হল
এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্হানে স্হাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে
আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ‘বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্হিত
করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে
সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত
পৌছলাম। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। বলা হল,
আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন,
তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল
কি? তিনি বললেন, হ্যা। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগুন্তকের আগমন হয়েছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা . আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে
আসলামএভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে . ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে . ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে . ইদরীস, পঞ্চম আসমানে . হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে
সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং . মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা
ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম
ও . ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ
করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন ৪ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য
ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন,
অপ্রকাশ্য নহর দ্বয় তো জান্নাতের
নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সা’দূশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ
দুটি নহরের সাথে। এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরাঈল! এ কি?
তিনি বললেন, এ হচ্ছে ‘বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার
ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের
সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, -একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাএটি গ্রহণ করলাম। তিনি
আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন।
আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত-এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ
ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা
করেন।
৩১৪ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী এতে এরপর
আমার কাছে ঈমান ও হিকমত ভর্তি একটি স্বর্ণের রেকাবি আনা হলো এবং আমার বক্ষের উপরিভাগ
হতে নিয়ে পেটের নিম্নাংশ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল ও যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করে হিকমত
ও ঈমান দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো, এ অংশটূকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
৩১৫ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
মিরাজ ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হচ্ছে শানূয়া গোত্রীয়
লোকদের মত দীর্ঘদেহী, গন্দুম (গম) বর্ণের।
ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মধ্যমাকৃতির সূঠাম দেহ বিশিষ্ট। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের রক্ষী মালিক এবং দাজ্জালের উল্লেখ করেছিলেন।
৩১৬ আবদ ইবনু হুমায়দ
(রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ মিরাজ রজনীতে আমি মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে গিয়েছি। তিনি
দেখতে গন্দুম বর্নের, দীর্ঘদেহী,
অনেকটা যেন শানূয়া গোত্রীয়
লোকদের মত। ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছি, তার রং ছিল শ্বেত-লোহিত; সুঠামদেহী আর তার চুলগুলো ছিল স্বাভাবিক। বর্ণনাকারী
বলেন, যে নিদর্শনসমুহ কেবল তাঁকেই
দেখান হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে জাহান্নামের রক্ষী মালিককে এবং দাজ্জালকে দেখান হয়। তারপর
রাবী কাতাদা (রাঃ) “অতএব তুমি তার সাক্ষাৎ সমন্ধে সন্দেহ কর না-”, (২:৩২) এ আয়াতের তাফসীরে বলতেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম . মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
৩১৭ আহমাদ ইবনু হানবাল
ও সুবায়হ ইবনু ইউনূস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গিগণ উত্তর দিলেন,
আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি যেন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে গিরিপথ
থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া
পাঠ করছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারশা গিরিপথে আসলেন।
তিনি বললেনঃ এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন,
হারশা গিরিপথ। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন ইউনূস ইবনু মাত্তা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে
দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি,
তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন।
ইবনু হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন,
এর অর্থ খেজুর বৃক্ষের ছাল।
৩১৮ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এার
সাথে আমরা মক্কা ও মদিনার মধ্যকার এক স্হানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম
করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এটি কোন উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখতে পাচ্ছি,
তিনি তাঁর কর্ণদ্বয়ের ছিদ্রে
আঙ্গূল স্হাপন পূর্বক উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী
বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেহের বর্ণ ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে
উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাঊদ তা স্বরণ রাখতে পারেন নি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর
হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস
করলেন, এটি কোন গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা কিংবা লিফত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যেন এখনও ইউনূস (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়া
পাঠ করা অবস্হায় তিনি গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমী জোব্বা আর তিনি
একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রির পিঠে আরোহিত। তাঁর উষ্ট্রির রশিটি খেজুর বৃক্ষের ছাল দ্বারা
তৈরি।
৩১৯ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে উপস্হিত ছিলাম।
উপস্থিত সবাই দাজ্জালের আলোচনা উঠালেন। তখন কোন একজন বললেন, তার (দাজ্জালের) দুই চোখের মাঝামাঝিতে ‘কাফির’ শব্দ
খচিত থাকবে। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু বলেছেন বলে আমি শুনিনি। তবে
এতটুকু বলতে শুনেছি যে, ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
আকৃতি জানতে হলে তোমাদের এ সাথীরই (নিজের দিকে ইঙ্গিত)দিকে তাকাও। (তিনি অনুরুপই ছিলেন)
আর মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন গন্দুম বর্ণের সুঠামদেহী। তাঁকে লাল বর্নের একটি
উষ্টের পিঠে আরোহিত দেখেছি। আমি যেন এখনও তাঁকে তালবিয়া পাঠ করা অবস্হায় উপত্যকার ঢাল
দিয়ে নামতে দেখছি।
৩২০ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রুমুহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণকে উপস্হিত
করা হল। তখন মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখলাম, একজন মধ্যম ধরনের মানুষ, অনেকটা শানূয়া গোত্রীয় লোকদের মত। আর ঈসা ইবনু মারইয়াম
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখলাম, তাঁর নিকটতম ব্যাক্তি
হলেন উরওইয়া ইবনু মাসঊদ। ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখলাম; তার অনেকটা কাছাকাছি সদৃশ ব্যাক্তি হচ্ছে তোমাদের
এ সাথী অর্থাৎ স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিবরাঈল (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-কে দেখলাম; তাঁর কাছাকাছি সদৃশ
ব্যাক্তি হচ্ছেন দাহইয়া। ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে, দাহইয়া ইবনু খলীফার মত।
৩২১ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরুশাদ করেছেনঃ
মিরাজ রজনীতে আমি . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্রীম তাঁর দেহের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন,
সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্রীম এ শব্দ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মৃদু কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট। দেখতে শানূয়া
গোত্রের লোকদের মত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি . ঈসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এরপর তিনি ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আকৃতি
বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ তিনি মধ্যম ধরনের লোহিত বর্ণের পুরুষ। মনে হচ্ছিল যেন এক্ষণি
স্নানাগার থেকে বেরিয়ে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি
ইবরাহিম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি তাঁর
সা’দৃশ্যের অধিকারী। এরপর আমার সন্মুখে দুটি পাত্র পেশ করা হয়, এর একটি দুধের ও অপরটি শরাবের। আমাকে বলা হল,
এর মধ্যে যেটা আপনার ইচ্ছা
সেটা গ্রহণ করুন। আমি দুধ গ্রহণ করে তা পান করলাম। জিবরাঈল (আ)আমাকে বললেনঃ আপনাকে
ফিতরাতেরই হিদায়াত করা হয়েছে। আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তবে আপনার উম্মাত গুমরাহ হয়ে যেত।
৩২২ ইয়াহইয়া ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) – আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন ৪ একরাতে (স্বপ্নে) আমি কা’বা শরীফের কাছে আমাকে দেখতে পেলাম। গোন্দুম (গম) বর্ণের
এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যতলোক তোমরা দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। ঘাড় পযন্ত
লম্বা কেশ ছিল তাঁর। এ ধরনের কেশের অধিকারী যত ব্যাক্তি তোমরা দেখেছ, তাদের মধ্যে তিনি হলেন সবচেয়ে সুন্দর। তিনি এ কেশ
আচড়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দু-জনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দূ-জনের কাঁধের উপর ভর করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছেন।
জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হল ৪ ইনি মাসীহ
ইবনু মারইয়াম। তারপর দেখি আরেক ব্যাক্তি, ঘন কোঁকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা,
যেন একটি আঙ্গুল ফুলে রয়েছে।
জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, এ হচ্ছে মাসীহুদ দাজ্জাল।
৩২৩ মুহাম্মাদ ইবনু
ইসহাক আল মূসা য়্যাবী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেন ৪ অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা টেরাচোখ
বিশিষ্ট নন। জেনে রাখ, দাজ্জালের ডান চোখ
টেরা, যেন ফোলা একটি আংগুর। ইবনু
উমর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বা শরীফের কাছে পেলাম।
গোন্দুম বর্ণের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। কেশ তাঁর
গ্রীবার উপর ঝুলছিল। তার কেশ গুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দুব্যাক্তির
কাঁধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলামঃ ইনি কে? বলা হল, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তাঁরই পেছনে দেখলাম আরেক
ব্যাক্তি, ঘন কোকড়ানো চুল। তার
ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতানের মত। সেও দু’ ব্যাক্তির কাঁধে হাত রেখে
বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছে। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল।
৩২৪ ইবনু নুমায়র
(রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ৪ কাবা গৃহের কাছে গোন্দুম বর্ণের
এক ব্যাক্তিকে দেখলাম, দু’জনের কাঁধে হাত
রেখে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর চুল থেকে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হয়তো শব্দ অথবা শব্দ ব্যবহার করেছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। বর্ণনাকারী
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ দেখলাম, তার পশ্চাতেই আরে-ক
ব্যাক্তি , ঘন কুঞ্চিত কেশ। গায়ের
রং তার লাল। দেখতে ইবনুুকাতানের মত , ডান চোখটি তার বাকা। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল।
৩২৫ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
(মিরোজের সংবাদে) কুরায়শরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিল। তখন আমি হাজরে আসওয়াদের
পার্শে গিয়ে দাঁড়ালে” আল্লাহ তায়ালা আমার সন্মুখে বায়তুল মাকদাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন,
আর আমি চোখে দেখেই তার সকল
নিদর্শন উল্লেখ করে যেতে লাগলাম।
৩২৬ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে
ছিলাম। তখন দেখি যে, আমি কা’বা শরীফ তাওয়াফ
করছি। গোন্দুম বর্ণের মধ্যমাকৃতির এক ব্যাক্তিকে সেখানে দেখলাম। তাঁর কেশগুলো ছিল সোজা।
তিনি দু-জনের কাঁধে ভর করে তাওয়াফ করছেন। আর তাঁর মাথা হতে টপটপ করে পানি ঝরছে বর্ণনাকারী
বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো অথবা শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ইনি ইবনু মারইয়াম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তারপর আমি
চোখ ফিরিয়ে তাকালাম, লোহিত বর্ণের মোটা
এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। তার চুলগুল ছিল কুঞ্চিত। তার চোখ ছিল টেরা, যেন একটি ফোলা আঙ্গূর। জিজ্ঞেস করলামঃ এ কে?
বলা হল, এ হলো দাজ্জাল। তার নিকটতম সদৃশ হল ইবনু কাতান।
৩২৭ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
আমি হাজরে আসৃওয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন
করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল,
থী আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে
আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর
আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম।
তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম।
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের এক জামাতেও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম।
মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সালাত (নামায/নামাজ) দণ্ডায়মান দেখলাম তিনি শানূয়া গোত্রের
লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। . ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কেও সালাত
(নামায/নামাজ) দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবনু মাসঊদ আবূ সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ।
ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কেও সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের
এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর সালাত (নামায/নামাজ)-এর
সময় হল, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। সালাত
(নামায/নামাজ) শেষে এক ব্যাক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’,
ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর
দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।
৩২৮ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, ইবনু নূমাঁয়র ও যুহায়র
ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে
মি’রাজ রজনীতে সিদরাতূল মুনতাহা- পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হল। এটি ৬ আসমানে অবস্হিত। যমীন
থেকে যা কিছু উন্থিত হয়, তা সে পর্যন্ত গিয়ে
পৌছে এবং সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হয়। তদ্রূপ ঊধর্বলোক থেকে যা কিছু অবতরণ হয়,
তাও এ পর্যন্ত এসে পৌছে এবং
সেখান থেকে তা নেওয়া হয়। এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) তিলাওয়াত করলেনঃ “যখন প্রান্তবর্তী
(৫৩: ১৬) এবং বলেন, এখানে যদ্দ্বারা কথাটির
অর্থ স্বর্ণের পতঙ্গ। তিনি বলেন, তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তিনটি বিষয় দান করা হলঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ),
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
এবং শিরক মুক্ত উম্মাতের মারাত্মক শোনাহ ক্ষমার সুসংবাদ।
৩২৯ আবূ রাবী আয যাহরানি
(রহঃ) শায়বানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যির ইবনু হুবায়শকে
তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান থাকল কিংবা তারও কম– (৯: ৫৩)-এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করেছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু মাসঊদ (রাঃ)
আমাকে বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ ডানা আছে।
৩৩০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যা দেখেছেন তাঁর অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি”
(১১: ৫৩) আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম . জিবরাঈল
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছিলেন, তাঁর ছয়শ, ডানা আছে।
৩৩১ উবায়দুল্লাহ ইবনু
মু’আয আল আম্বারী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি “তিনি যা দেখেছেন তা তার প্রতিপালকের মহান
নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন (১৮: ৫৩) এ আয়াত তিলাওয়াত কঁরলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বললেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম . জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাঁর আকৃতিতে দেখেছিলেন- তার
ছয়শ ডানা আছে।
৩৩২ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন– (১৩:৫৩)-এর
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম . জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছিলেন।
৩৩৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
(আল্লাহকে) অন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন।
৩৩৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি “তিনি যা দেখেছেন, তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করে নাই নিশ্চয়ই তিনি তাকে
আরেকবার দেখেছিলেন” (৫৩: ১১ ও ১৩) আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করলেন এবং এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে
বললেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় অন্তদৃষ্টিতে তাঁকে (আল্লাহকে) দুবার দেখেছিলেন।
৩৩৫ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, হাফস ইবনু গিয়াস ও
আঁমাশ (রহঃ) থেকে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্নিত হয়েছে।
৩৩৬ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর
কাছে হেলান দিয়ে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে আবূ আয়িশা! তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বলল, সে আল্লাহ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস
করলাম, সেগুলো কি? তিনি বললেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ তার প্রতিপালককে দেখেছেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। আমি তো হেলান অবস্থায়
ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম,
হে উমুল মু”মিনীন! থামুন।
আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হবেন না। আল্লাহ
তা’আলা কুরআনে কি ইরশাদ করেননি:“তিনি (রাসুল) তো তাঁকে (আল্লাহকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন-,
(২৩: ৮১), অন্যত্র “নিশ্চয়ই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন”
(৫৩:১৩) আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমিই এ উষ্মতের প্রথম
ব্যাক্তি, যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন ৪ তিনি সে তো ছিলেন
. জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেবলমাত্র এ দু-বারই আমি তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি।
আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও যমীনের
মধ্যবতী সবটুকু স্হান। আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তিনি (আল্লাহ) দৃষ্টির অধিগম্য
নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত
এবং তিনই সূক্ষ্মমদশী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” (৬:১০৩) এরুপ তুমি কি শোননি? আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নাই
যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন
ওহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দুত প্রেরণ ব্যতিরেকে
যে তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়” , (৪২:৫১)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আর ঐ ব্যাক্তিও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়,
যে এমন কথা বলে যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ জন্য ইরশাদ
করেছেনঃ হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার রুকন,
যদি তা না করেন তবে আপনি তার
বার্তা প্রচারই করলেন না। (৫: ৬৭) তিনি (আয়িশা (রাঃ) আরো বলেন, যে ব্যাক্তি এ কথা বলে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর
ওহী ব্যতীত কাল কি হবে তা অবহিত করতে পারেন, সেও আল্লাহর উপর ভীষন অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা
বলেনঃ “বল, আসমান ও যমীনে আল্লাহ
ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জাননা। ” (২৭ঃ ৬৫)
৩৩৭ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে ইবনু উলায়্যার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এতে
এতটুকু অতিরিক্ত আছে, আয়িশা (রাঃ) বলেন,
যদি- মুহাম্মদ তাঁর উপর অবতীর্ণ
ওহীর কোন অংশ গোপন করতেন, তবে তিনি এ আয়াতটি
অবশ্য গোপন করতেন ৪ (অর্থ) “স্মরণ করুন, আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ দান করেছেন এবং আপনিও যার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর পোষ্যপূত্র যায়িদ এর প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, আপনি তাকে বলেছিলেন, তুমি তোমার ন্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহকে
ভয় কর। আপনি আপনার অন্তরে যা গোপন করেছেন, আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিয়েছেন। আপনি লোকভয় করছিলেন; অথচ আল্লাহকে ভয় করা আপনার জন্য অধিকতর সঙ্গত”
(৩৩:৩৭)
৩৩৮ ইবনু নুমায়র
(রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ কি তাঁর প্রতিপালককে দেখেছিলেন?
তিনি বললেন, আপনার কথা শুনে আমার শরীরের পশম খাড়া হয়ে যাচ্ছে
বর্ণনাকারী পূর্ন হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে দাঊদ বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও
সুদীর্ঘ।
৩৩৯ ইবনু নুমায়র
(রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন। মাসরুক (রহঃ) বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, রাসুল মি’রাজ রজনীতে যদি আল্লাহর দর্শন না পেয়ে
থাকেন, তাহলে আল্লাহর এ বলার অর্থ
কি দাঁড়াবে। -“এরপর তিনি। রাসুল তাঁর (আল্লাহর) নিকটবর্তী হলেন এবং আরো নিকটবর্তী
; ফলে তাদের মধ্যে ধনুকের ব্যবধান
রইল বা তারও কম ; তখন আল্লাহ তার বান্দার
প্রতি যা ওহী করবার তা ওহী করলেন। ” (৫৩:৮-১০)। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো ছিলেন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তিনি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে (সাধারণ) পুরুষের আকৃতিতে আসতেন।
কিন্তু তিনি এবার (আয়াতে উল্লেখিত সময়) নিজস্ব আকৃতিতেই এসেছিলেন। তাঁর দেহ আকাশের
সীমা ঢেকে ফেলেছিল।
৩৪০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে
দেখেছেন? তিনি রাসুল বললেনঃ
“তিনি (আল্লাহ) নূর, আমি কি করে তা দৃষ্টির
অধিগম্য করব”।
৩৪১ মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার, হাজ্জাজ ইবনু শাইর (রহঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আবূ যার (রাঃ)-কে বললাম, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর সাক্ষাৎ পেতাম, তবে অবশ্যই তাঁকে
একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। আবূ যার (রাঃ) বললেন, কি জিজ্ঞেস করতেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেনঃ আমি নূর দেখেছি।
৩৪২ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের সামনে পাঁচটি কথা বললেনঃ (১) আল্লাহ কখনো নিদ্রা যান না। (২) নিদ্রিত হওয়া তাঁর
সাজেও না। (৩) তিনি তাঁর ইচ্ছানূসারে তুলাদন্ড নামান এবং উত্তোলন করেন। (৪) দিনের পূর্বেই
রাতের সকল আমল তার কাছে উত্থিত করা হয় এবং রাতের পূর্বেই দিনের সকল আমল তাঁর কাছে উত্থিত
করা হয়। (৫) তিনি নূরের পর্দায় আচ্ছাদিত। আবূ বকরের অন্য এক বর্ণনায় এর স্হলে শব্দের
উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যদি সে আবরণ খুলে দেয়া
হয়, তবে তাঁর নূরের বিভা সৃষ্টি
জগতের দূশ্যমান সব কিছু ভস্ম করে দেবে। আবূ বকরের অন্য রেওয়ায়েতে। শব্দের স্থলে শব্দের
উল্লেখ আছে।
৩৪৩ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম
আ”মাশ (রহঃ) থেকে পূর্ববর্ণিত সুত্রে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে
বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্মূখে চারটি কথা নিয়ে দাঁড়ালেন । বর্ণনাকারী আবূ মুআবিয়ার
হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি ” শব্দ উল্লেখ করেন নাই এবং না বলে বলেছেন। ৩৪৪
মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
সন্মুখে চারটি কথা নিয়ে আলোচনা করে বলেনঃ আল্লাহ তাআলা কখনো নিদ্রা যান না,
আর নিদ্রা তাঁর জন্য শোভাও
পায় না, তুলাদন্ড উচু এবং নিচু করেন,
তাঁর কাছে রাতের পূর্বে দিনের
আমল উত্থিত হয় এবং দিনের পূর্বে রাতের আমল উত্থিত হয়।
৩৪৫ নাসর ইবনু আলী
আল জাহযামী, আবূ গাসনান আল মিসমাঈ
ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
দুটি জান্নাত এমন যে, এগুলোর পাত্রাদি ও
সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত এমন, যেগুলোর পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি।
“আদন” নামক জান্নাতে জান্নাতিগণ আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। এ সময় তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে
তাঁর মহিমার চাঁদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না।
৩৪৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু
উমর ইবনু মায়সারা (রহঃ) সুহায়ব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ জান্নাতিগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবেন-তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বলবেনঃ
তোমরা কি চাও আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবেঃ আপনি কি আমাদের চেহারা আলোকোজ্জ্বল করে
দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেননি
এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আল্লাহ তা’আলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দীদার অপেক্ষা
অতি প্রিয় কোন বস্তু তাদের দেওয়া হয়নি।
৩৪৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়ঁবা (রহঃ) হাম্মাদ ইবনু সালামা (রাঃ) সুত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তঁবে এতে
তিনি আরও বলেন, “তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (অর্থ) ‘যারা ভাল করে তাদের
জন্য আছে মঙ্গল এবং আরো অধিক কিছু। ”
৩৪৮ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকেি বর্ণিত যে, কতিপয় সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের
প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে তোমাদের পরস্পরের মাঝে কি ধাক্কাঁধাক্কি
কি হয়? সাহাবীগণ বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের পরস্পরের কি ধাক্কাঁধাক্কির সৃষ্টি হয়?
তাঁরা বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইর শাদ করেনঃ তদ্রূপ তোমরাও তাঁকে দেখবে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ সকল মানুষকে জমায়েত করে
বলবেন, পৃথিবীতে তোমাদের যে যার ইবাদত
করেছিলে আজ তাঁকেই অনুসরণ কর। তখন সূর্যের উপাসক দল পেছান, চন্দ্রের উপাসক দল চন্দ্রের পেছনে এবং তাগুতের উপাসকদল
দেবদেবীর পিছনে চলবে। কেবল এ উম্মাত অবশিষ্ট থাকবে। তন্মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। তখন
আল্লাহ তায়াআলা তাদের কাছে এমন আকৃতিতে উপস্হিত হবেন যা তারা চেনে না। তারপর (আল্লাহ
তা-আলা) বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক
(সূতরাং তোমরা আমার পেছনে চল)। তারা বলবে, নাউযূ (ওজু/অজু/অযু)বিল্লাহ। আমাদের প্রভূ না আসা
পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব। আর তিনি যখন আসবেন, তখন আমরা তাঁকে চিনতে পারব। এরপর আল্লাহ তায়াআলা
তাদের কাছে তাদের পরিচিত আকৃতিতে আসবেন, বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভূ। তারা বলবে, হ্যা, আপনি আমাদের প্রভূ।
এ বলে তারা অনুসরণ করবে। ইত্যবসরে জাহান্নামের উপর দিয়ে সিরাত (রাস্তা) স্হাপন করা
হবে। আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রাসুলগণ ব্যতীত অন্য
কেউ মুখ খোলারও সাহস করবে না। আর রাসুলগণও কেবল এ দুআ করবেনঃ হে আল্লাহ! নিরাপত্তা
দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে
থাকবে সাদান বৃক্ষের কাটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহ দন্ড। তোমরা সাদান বৃক্ষটি দেখেছ
কি? সাহাবীগণ বললেন, হ্যা দেখেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তা সাদান বৃক্ষের কাটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জাননা। মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও
করা হবে। কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে, আর কেউ আমলের শাস্তি ভোগ করবে যতদিন না তারা নাজাত
পেয়েছে। এরুপে বান্দাদের মধ্যে যখন আল্লাহ তা’আলা বিচারকার্য সমাপ্ত করবেন,
এবং দয়া করে কিছু জাহান্নামীকে
জাহান্নাম হতে মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যেন কালিমায় বিশ্বাসীদের মধ্যে যাদের উপর আল্লাহ জন্য রহম করতে চাইবেন এবং
যারা আল্লাহর সাথে শিরক করেনি, তাদেরকে জাহান্নাম
থেকে বের করে নিয়ে আস। অনন্তর ফেরেশতাগণ জান্নাতীদের শনাক্ত করবেন। তারা সিজদার চিহ্নের
সাহায্যে তাদের চিনবেন। কারণ অগ্নি মানুষের সবকিছু ভস্ম করে দিলেও সিজদার স্হান অক্ষত
থাকবে। আল্লাহ তায়াআলা সিজদার চিহ্ন নষ্ট করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। মোট কথা ফেরেশতাগণ
এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন। তাদের দেহ আগুনে দগ্ধ। তাদের উপর আবে-হায়াত
(সঞ্জীবনী পানি) ঢেলে দেওয়া হবো তখন তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অংকুর স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে
উঠে। আল্লাহ জন্য বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন। শেষে এক ব্যাক্তি থেকে যাবে। তার মুখমন্ডল
হবে জাহান্নামের দিকে। এই হবে সর্বশেষ জান্নাতী। সে বলবে, হে প্রভূ! (অনুগ্রহ করে) আমার মুখটি জাহান্নামের
দিক থেকে ফিরিয়ে দিন। জাহান্নামের উত্তপ্ত বায়ু আমাকে ঝলসে দিচ্ছে; এর লেলিহান শিখা আমাকে দগ্ধ করে দিচ্ছে আল্লাহ যতদিন
চান ততদিন পর্যন্ত সে তাঁর কাছে দুআ করতে থাকবে। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার এ দুআ কবুল করলে তুমি কি আরো কিছু কামনা করবে?
সে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গীকার
করে বলবে, হে আল্লাহ! আমি আর
কিছু চাইব না। আল্লাহ তা’আলা তার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। তার চেহারা
যখন জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, আর জান্নাত তার চোখে ভেসে উঠবে, তখন আল্লাহ যতদিন চান সে নীরব থাকবে। পরে আবার বলবে, হে প্রতিপালক! কেবল জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত আমাকে
এগিয়ে দিন! আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি না কথা দিয়েছিলে
যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তাছাড়া
আর কিছু চাইবে না। হতভাগা, তুমি তো সাংঘাতিক
ওয়াদাভঙ্গকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! এই বলে
মিনতি জানাতে থাকবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি যা চাও তা যদি
তাই দেই, তবে আর কিছু চাইবে
না তো? সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম, আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তখন তার থেকে এ বিষয়ে ওয়াদা
এবং অঙ্গীকার নিবেন। এরপর তাঁকে জান্নাতের তোরণ পর্যন্ত এগিয়ে আনা হবে। এবার যখন সে
জান্নাতের তোরণে দাড়াবে, তখন জান্নাত সুনিশ্চিত
হয়ে তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে জান্নাতের সুখ-সমূদ্ধি দেখতে থাকবে। সেখানে আল্লাহ
যতক্ষন চান সে ততক্ষন চুপ করে থাকবে। পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ
বলবেন, তুমি না সকল ধরনের ওয়াদা ও
অঙ্গীকার করে বলেছিলে, আমি যা দান করেছি,
এর চাইতে বেশি আর কিছু চাইবে
না? দূর হতভাগা! তুমি তো ভীষণ
ওয়াদাভঙ্গকারী। সে বলবে, হে আমার রব! আমি যেন
সৃষ্টির সবচেয়ে দুর্ভাগা না হই। সে বারবার দুআ করতে থাকবে। পরিশেষে এক পর্যায়ে সে আল্লাহকে
হাসিয়ে ফেলবেন। আল্লাহ তা’আলা হেসে উঠে বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ
তাকে বলবেন, যা চাওয়ার চাও। তখন
সে তার সকল কামনা চেয়ে শেষ করবে। এরপর আল্লাহ নিজেই স্বরণ করিয়ে বলবেন, অমুক অমূকটা চাও। এভাবে তার কামনা শেষ হয়ে গেলে
আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর
সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো। আতা ইবনু ইয়াযীদ বলেন, আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা
(রাঃ)-এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের কোন কথাই রদবদল
করেননি। তবে আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন এ কথা উল্লেখ করলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে এসব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেওয়া হলো” তখন
আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা! বরং তাসহ আরো দশগুন দেয়া হবে। আবূ হুরায়রা
(রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘এর সমপরিমাণ’- এ-শব্দ ম্মরণ রেখেছি। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন,
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘আরো দশগুন’- এ শব্দ সংরক্ষিত রেখেছি। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) পরিশেষে বলেন, এ ব্যাক্তি হরে জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী ব্যাক্তি।
৩৪৯ আবদুল্লাহ ইবনু
আবদুর রহমান আদ দারিমী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, সাহাবীগন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল!
কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? এরপর রাবী ইবরাহীম ইবনু সা’দ বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ
উল্লেখ করেন।
৩৫০ মুহাম্মাদ ইবনু
রাফি (রহঃ) হাম্মান ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদেরকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা
করেন। তন্মধ্যে এটিও ছিল। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতীকে বলা হবে যে, তুমি আকাঙ্ক্ষা কর। সে আকাঙ্ক্ষা করতে থাকবে। আল্লাহ
তাকে বলবেন, তোমার যা আকাঙ্ক্ষা
করার তা কি করেছ? সে বলবে, জ্বী! আল্লাহ বলবেন, যা আকাঙ্ক্ষা করেছ তা এবং এর অনুরুপ তোমাকে প্রদান
করা হল।
৩৫১ সুওয়াইদ ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
যুগে কতিপয় সাহাবী তাঁকে বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল!
কিয়ামত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
হ্যা। তিনি আরো বললেনঃ দুপূরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য অবলোকন করতে কি তোমাদের ধাক্কাঁধাক্কির
সৃষ্টি হয়? সকলে বললেন,
হে আল্লাহর রাসুল! না,
তা হয় না। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী বললেনঃ ঠিক তদ্রুপ কিয়ামত দিবসে তোমাদের প্রতিপালককে অবলোকন করতে
কোনই বাধার সৃষ্টি হবে না। সেদিন এক ঘোষনাকারী ঘোষণা দিবে, “যে যার উপাসনা করতে, সে আজ তার অনুসরণ করুক”। , তখন আল্লাহ ব্যতীত যারা অন্য দেব-দেবী ও বেদীর উপাসনা
করত, তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না
; সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত
হবে। সৎ হোক বা অসৎ যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তারাই কেবল অবশিষ্ট থাকবে এবং কিতাবীদের যারা দেব-দেবী
ও বেদীর উপাসক ছিল না তারাও বাকি থাকবে। এরপর ইহুদীদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হবে! তোমরা
কার ইবাদত করতে? তারা বলবে,
আল্লাহর পূত্র উযায়েরের। তাদেরকে
বলা হবে মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও?
তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের খুবই পিপাসা পেয়েছে। আমাদের পিপাসা
নিবারণ রুকন। প্রার্থনা শুনে তাদেরকে ইঙ্গিত করে মরীচিকাময় জাহান্নামের দিকে জমায়েত
করা হবে। এর একাংশ আরেক অংশকে গ্রাস করতে থাকবে। তারা এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এরপর খৃষ্টানদেরকে
ডাকা হবে, বলা হবে, তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবে, আল্লাহর পুএ মসীহের উপাসনা করতাম। বলা হবে,
মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন পত্নী
বা সন্তান গ্রহণ করেননি। জিজ্ঞেস করা হরে, এখন কি চাও? তারা বলবে,
হে আমাদের রব! আমাদের দারুন
তৃষ্ণা পেয়েছে, আমাদের তৃষ্ণা নিবারণ
করুন। তখন তাদেরকেও পানির ঘাটে যাবার ইঙ্গিত করে জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হবে।
একে মরীচিকার মত মনে হবে। এর এক অংশ অপর অংশকে গ্রাস করে নিবে। তারা তখন জাহান্নামে
ঝাপিয়ে পড়তে থাকবে। শেষে মুমিন হউক বা শোনাহগার, এক আল্লাহর উপাসক ব্যতীত আর কেউ (ময়দানে) অবশিষ্ট
থাকবে না। তখন আল্লাহ জন্য তাদের কাছে আসবেন। বলবেন, সবই তাদের স্ব স্ব উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে,
আর তোমরা কার অপেক্ষা করছ?
তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেখানে আমরা বেশি মুখাপেক্ষী ছিলাম,
সেই দুনিয়াতে আমরা অপরাপর
মানুষ থেকে পৃথক থেকেছি এবং তাদের সঙ্গী হইনি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রভূ। মুমিনরা বলবে, “আমরা তোমার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি-
আল্লাহর সঙ্গে আমরা কিছুই শরীক করি না। এই কথা তারা দুই বা তিনবার বলবে। এমন কি কেউ
কেউ অবাধ্যতা প্রদর্শনেও অবতীর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলবেন, আচ্ছা, তোমাদের কাছে এমন কোন নিদর্শন আছে যদ্দ্বারা তাকে তোমরা চিনতে পার? তারা বলবে, অবশ্যই আছে। এরপর “সাক” উন্মোচিত হবে, তখন পৃথিবীতে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশে
সিজদা করত, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা
সিজদা করার অনুমতি দিবেন। আর যারা লোক দেখানো বা লোকভয়ে আল্লাহকে সিজদা করত,
সে মুহূর্তে তাদের মেরুদন্ড
শক্ত ও অনমনীয় করে দেয়া হবে। যখনই তারা সিজদা করতে ইচ্ছা করবে তখনই তারা চিত হয়ে পড়ে
যাবে। তারপর তারা মাথা তুলবে। ইত্যবসরে তারা আল্লাহকে প্রথমে যে আকৃতিতে দেখেছিল তা
পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তিনি তার আসল রুপে আবির্তূত হবেন। অনন্তর বলবেন, আমি তোমাদের রব, তারা বলবে হ্যা, আপনি আমাদের প্রতিপালক। তারপর জাহান্নামের উপর জিসর
(পূল) স্হাপন করা হবে। শাফায়াতেরও অমুমতি দেয়া হবে। মানুষ বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল জিসর কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
এটি এমন স্হান, যেখানে পা পিছলে যায়।
সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাঁটা, দেখতে নজদের নাদান বৃক্ষের কাঁটার মত। মুমিনগণের
কেউ এ পথ পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে,
কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ অশ্বগতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ অক্ষত অবস্হায়
নাজাত পাবে আর কেউ হবে ক্ষতবিক্ষত অবস্হায় নাজাতপ্রাপ্ত। – আর কতককে কাঁটাবিদ্ধ অবস্হায়
জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাঁদের ঐসব ভাইয়ের স্বার্থে আল্লাহর
সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে, যারা জাহান্নামে রয়ে
গেছে। তোমরা পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হও না। তারা বলবে,
হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত,
হাজ্জ (হজ্জ) করত। তখন আল্লাহ
তাদেরকে নির্দেশ দিবেনঃ যাও তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য, এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমন্ডল আযাব থেকে রক্ষিত
থাকবে। (তাই তাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হবে না।)মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে এক বিরাট দলকে
উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্হা এমন হবে যে, কারোর পায়ের অর্ধ গোড়ালি পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ অগ্নি ভস্ম করে দিয়েছে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে,
হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি
নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাদের মাঝে আর কেউ
অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বলবেন, পূনরায় যাও,
যার অন্তরে এক দ্বীনার পরিমাণও
ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরও একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে,
হে রব! অনুমতি প্রাপ্তদের
কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন, আবার যাও,
যার অন্তরে অর্ধ দ্বীনার পরিমাণও
ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে
হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করতে বলেছিলেন, তাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেনঃ আবার যাও, যার অন্তরে অণূ পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার
করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা
বলেছিলেন, তাদের কাউকেই রেখে
আসিনি। সাহাবী আবূ সাঈদ আল খূদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে
না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটিও তিলাওয়াত করতে পারঃ (অর্থৎ আল্লাহ অণূ পরিমাণও
জুলুম করেন না এবং অণূ পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুন করে করে দেন এবং তাঁর
কাছ থেকে মহা-পুরস্কার প্রদান করেন। ” (৪:৪০) এরপর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেনঃ ফেরেশতারা
সুপারিশ করলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণও সুপারিশ করলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবল আরহামূর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর
তিনি জাহান্নাম থেকে একু মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে, যারা কখনো কোন সৎকর্ম
করেনি, এবং আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে
গেছে। পরে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ মুখের ‘নাহরুল হায়াতে’ ফেলে দেয়া হবে। তারা এতে
এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অস্কুর
স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়ালে কোন শস্য দানা অস্কুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থাকে সেগুলো হলদে ও সবুজ
রুপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়ামুক্ত স্হানে থাকে, সেগুলো সাদা হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে
পশু চরিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর তারা নহর থেকে
মূক্তার মত ঝকঝকে অবস্হায় উঠে আসবে এবং তাদের গ্রীবাদেশে মোহরাঙ্কিত থাকবে,
যা দেখে জান্নাতিগণ তাদের
চিনতে পারবেন। এরা হলো ‘উতাকাউল্লাহ’ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। ”আল্লাহ তায়ালা
সৎ আমল ব্যতীতই তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এরপর আল্লাহ তাদেরকে লক্ষ করে বলবেনঃ
যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা
কিছু দেখছ সবকিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব! আপনি আমাদেরকে এতই দিয়েছেন যা সৃষ্ট-জগতের কাউকে দেননি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের
জন্য আমার কাছে এর চেয়েও উত্তম বস্তু আছে। তারা বলবে, কি সে উত্তম বস্তু? আল্লাহ বলবেনঃ সে হল আমার সন্তুষ্টি। এরপর আর কখনো
তোমাদের উপর অন্তুষ্ট হবো না। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ শাফা’আত সম্পর্কীয় এ হাদীসটি
আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদ যুগবা আল মিসরী-এর কাছে পাঠ করে বললাম, আপনি লায়স ইবনু সা’দ থেকে নিজে এ হাদীসটি শুনেছেন?
আমি কি আপনার পক্ষ থেকে এ
হাদীসটি এরুপ বর্ণনা করতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন,
হ্যা। এরপর আমি ঈসা ইবনু হাম্মাদকে
হাদীসটি এ সুত্রে শুনিয়েছি যে, ঈসা ইবনু হাম্মাদ
(রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল!
আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ মেঘমূক্ত আকাশে সূর্য দর্শনে ভিড়ের কারণে তোমাদের কি
কোন অসুবিধা হয়? আমরা বললাম,
না । এভাবে হাদীসটির শেষ পর্যন্ত
তুলে ধরলাম। এ হাদীসটি হাফস ইবনু মায়সারা বর্ণিত হাদীসেরই অনুরুপ। তিনি এই অংশটূকুর
পর অর্থাৎ তোমাদের জন্য যা রয়েছে যা তোমরা দেখছ তা এবং তদসঙ্গে অনুরুপ আরও কিছু। আবূ
সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, আমার কাছে রেওয়ায়েত
পৌছেছে যে, “জিসর (সিরাত) চুল
অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম ও তরবারি অপেক্ষা অধিক তীক্ষ্ণ। তা ছাড়া লায়সের হাদীসে বাক্যটি
এবং এর পরবর্তী অংশটির উল্লেখ নেই। ঈসা ইবনু হাম্মাদ তা স্বীকার করেন।
৩৫২ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের সনদের হাফস ইবনু
সা’দের অনুররূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে শব্দগত কিছু বেশকম আছে।
৩৫৩ হারুন ইবনু সাইদ
আল আয়লী (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ জান্নাতবাসীদেরকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাঁর রহমতেই তিনি
যাকে ইচ্ছা তা করবেন। আর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তারপর (ফেরেশতাদেরকে)
বলবেন: যার অন্তরে সরিষাদানা পরিমাণও ঈমান দেখতে পাবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনবে এবং অনন্তর
ফেরেশতাগণ তাদেরকে দগ্ধ অঙ্গার অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এবং ‘হায়াত” বা
‘হায়া’, নামক নহরে নিক্ষেপ করবে। তখন
তারা এতে এমন সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন শস্য অস্কুর
স্রোতবাহিত পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। তোমরা কি দেখনি, কত সুন্দররুপে সে শস্যদানা কেমনভাবে হরিদ্রাভ মাথা
মোড়ানো অবস্হায় অস্কুরিত হয়?
৩৫৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা, হাজ্জাজ ইবনু শাইর
(রহঃ) আমর ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) থেকে উল্লেখিত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি দ্ব্যর্খহীনভাবে-
শব্দ উল্লেখ করেছেন। খালিদ বর্ণিত রেওয়ায়েতে এবং উহায়বের রেওয়ায়েতে বাক্যের উল্লেখ
রয়েছে।
৩৫৫ নাসর ইবনু আলী
আল জাহযামী (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে যারা প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামী, তাদের মৃত্যুও ঘটবে না এবং তারা পূনর্জীবিতও হবে
না। তবে তন্মধ্যে তোমাদের এমন কতিপয় লোকও থাকবে, যারা শোনাহের দায়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা’আলা (তাদের উপর পড়িত আযাবের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে) তাদেরকে
কিছুক্ষন নির্জীব করে রেখে দিবেন। অবশেষে তারা পূড়ে সম্পূর্ণ অঙ্গার হয়ে যাবে। এ সময়ে
আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফাআতের অনুমতি হবে। তখন এদেরকে দলে দলে নিয়ে আসা হবে এবং জান্নাতের
নহর গুলিতে ছড়িয়ে দেয়া হবে। পরে বলা হবে, হে জান্নাতীরা তোমরা এদের গায়ে পানি ঢেলে দাও! ফলত স্রোতবাহিত পানিতে গজিয়ে ওঠা
শস্যদানার মত তারা সজীব হয়ে উঠবে। উপস্হিতদের মধ্যে একজন বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন
এককালে গ্রামে অবস্হান করেছেন।
৩৫৬ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে কথাটি পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তবে পরবর্তী অংশটূকু উল্লেখ করেননি।
৩৫৭ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহিম আল হানযালী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সর্বশেষ
প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। যে নিতান্ত হেঁচড়ে হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে
আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেনঃ যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে সেখানে আসবে। তার ধারণা হাব যে এটা পরিপূর্ণ। তাই ফিরে
গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! আমি
জান্নাতকে পরিপূর্ন দেখলাম। আল্লাহ আবার বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে আবার
এসে দেখবে, এ তো ভরপূর হয়ে আছে।
তাই ফিরে গিয়ে আল্লাহকে বলবে, হে প্রতিপালক! এ তো
ভরপূর হয়ে আছে। আল্লাহ পূনরায় বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমাকে পৃথিবী ও পৃথিবীর
দশগুন পরিনাণে প্রদান করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে
বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে নিয়ে
কি ঠাট্টা করছেন। অথচ আপনি তো মহান রাজাধিরাজ! সাহাবী বলেন এ সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত হেসে উঠলেন যে তাঁর মাড়ি প্রান্তের দাঁতগুলোও প্রকাশিত হয়ে পড়ল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর ঘোষণা করা হবে, এ ব্যাক্তই জান্নাতের সর্বনিম্নস্তরের অধিবাসী।
৩৫৮ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ জাহান্নাম থেকে সর্বশেষ উদ্ধারপ্রাপ্ত লোকটিকে অবশ্যই আমি জানি। সে নিতম্ব হেঁচড়ে
হেঁচড়ে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। তারপর তাকে বলা হবে যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে জান্নাতে প্রবেশ করে দেখবে,
লোকেরা পূর্বেই জান্নাতের
সকল স্হান দখল করে রেখেছে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার কি পূর্বকালের কথা স্মরণ আছে? সে বলবে, হ্যা। আল্লাহ বলবেন, তুমি আমার কাছে কামনা কর। সে তখন কামনা করবে। তখন
তাকে বলা হবে, যাও তোমার আশা পূর্ণ
করলাম। সেই সাথে পৃথিবীর আরও দশগুন বেশি প্রদান করলাম। লোকটি হতভম্ব হয়েঁ বলবে,
ওগো প্রতিপালক! আপনি আমাদের
প্রভূ, আর আপনি আমার সাথে কৌতুক
করছেন? সাহাবী বলেন, এ কথাটি বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এত হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত মুবারক
প্রকাশিত হয়ে গেল।
৩৫৯ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
সবার শেষে এক ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে হাটবে আবার উপূড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের
আগুন তাকে ঝাপটা দেবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে,
সে সত্তা কত মহিমাময়,
যিনি আমাকে তোমা থেকে নাজাত
দিয়েছ্যৈব। তিনি আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা ঢ়র্রোপর কাউকেও প্রদান করেননি। এরপর তাঁর সখূখে
একটি বৃক্ষ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, (যা দেখে) সে বলবে,
হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির
নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহন
করতে পারি এবং এর নিচে প্রবাহিত পানি থেকে পিপাসা নিবারণ করতে পারি। আল্লাহ তা’আলা
বলবেন: হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে তা দান করি, তবে হয়তো তুমি আবার অন্য একটি প্রার্থনা করে বসবে।
তখন সে বলবে, না, হে প্রভু! সে এর পর আর চাইবে না বলে আল্লাহ তা’আলার
কাছে অঙ্গীকার করবে এবং আল্লাহও তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ
করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। অতএব,
আল্লাহ জন্য তাকে ঐ বৃক্ষটির
নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে এর ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। তারপর আবার একটি বৃক্ষ
উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে; যেটি প্রথমটি অপেক্ষা
অধিক সুন্দর। তা দেখেই সে প্রার্থনা করবে, হে পরওয়ারদিগার! আমাকে এর নিকটবর্তী করে দিন যেন আমি তা থেকে পানি পান করতে পারি
এবং এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি। তারপর আর কিছুর প্রার্থনা করব না। আল্লাহ উত্তর দিবেনঃ
আদম সন্তান! তুমি না আমায় কসম করে বলেছিলে আর কোনটি প্রার্থনা জানাবে না। তিনি আরো
বলবেনঃ যদি আমি তোমাকে তার নিকটবতী করে দেই, তরে তুমি হয়তো আরও- জন্য প্রার্থনা করবে। সে আর
কিছু চাইবে না বলে অঙ্গীকার করবে। আল্লাহ জন্য তার এ ওযর কবুল করবেন। কারণ সে এমন সব
জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে যা দেখে সবর কবা যায় না। যাহোক তিনি তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন।
আর সে ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। এরপর আবার জান্নাতের দরজার কাছে আরেকটি বৃক্ষ
উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, এটি পূর্বের বৃক্ষদ্বয়
অপেক্ষাও নয়নাভিরাম। তাই সে বলে উঠবে, হে প্রতিপালক! আমাকে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করতে ও পানি পান করতে পারি।
আমি আর কিছু প্রর্থেনা করব না। আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার কাছে আর কিছু
চাইবে না বলে কসম কর নি? সে উত্তরে বলবে,
অবশ্যই করেছি। হে প্রভু! তবে
এটই আর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ
করেছে, যা দেখে সবর করা যায় না। তিনি
তাকে এর নিকটবতী করে দিবেন। যখন তাকে নিকটবতী করে দেওয়া হবে, আর জান্নাতীদের কণ্ঠসূর তাঁর কানে ধ্বনিত হরে,
তখন সে বলবে, হে প্রতিপালক! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন।
আল্লাহ বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার কামনা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আমি যদি অেমাকে পৃথিবী এবং তার সমপরিমাণ বস্তু দান
করি তবে কি তুমি পরিতৃপ্ত হবে? সে বলবে, হে প্রতিপালক! আপনি কৌতূক করছেন! আপনি তো সারা
জাহানের প্রভূ। এ কথাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ণনাকারী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হেসে ফেললেন।
আর বললেন, আমি কেন হেসেছি তা
তোমরা জিজ্ঞেস করলে না? তারা বলল,
কেন হেসেছেন? তখন তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরুপ
হেসেছিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেন হাসছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এজন্য যে, ব্যাক্তিটির এ উক্তি “আপনি আমার সাথে কৌতূক করছেন, আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক?- শুনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেসেছেন বলে আমিও হাসলাম।
যা হোক, আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তোমার
সাথে কৌতুক করছি না। মনে রেখ, আমি আমার সকল ইচ্ছার
ওপর ক্ষমতাবান।
৩৬০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ নিম্নতম জান্নাতী ঐ ব্যাক্তি, যার মুখমন্ডলটি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে সরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দিবেন।
তার সামনে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ উদ্ভাসিত করা হবে। সে ব্যাক্তি প্রার্থনা জানাবে,
হে প্রতিপালক। আমাকে এ বৃক্ষ
পর্যন্ত এগিয়ে দিন। আমি এ ছাতায় অবস্হান করতে চাইএভাবে তিনি ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীসের
অনুরুপ বর্ননা করেন। তবে এ হাদীসে এর উল্লেখ নেই। অবশ্য এতটুকু বলেছেন যে, আল্লাহ তাঁকে বিভিন্ন নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে
দিয়ে বলবেনঃ এটা চাও। এভাবে যখন তার সকল আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেনঃ যাও, তোমাকে এসব সস্পদ প্রদান করলাম সে সাথে আরও দশগুন
দান করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন লোকটি জান্নাতে তার
গৃহে প্রবেশ করবে। তার সাথে ডাগর চোখ বিশিষ্ট দু-জন হুর তার পত্নী হিসাবে প্রবেশ করবে।
আর তারা বলবে, সকল প্রশংসা সে আল্লাহর
জন্য, যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জীবন
দান করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জীবন দান করেছেন। লোকটি বলবে, আমাকে যা দেয়া হয়েছে, এমন আর কাউকে দেওয়া হয়নি।
৩৬১ সাঈদ ইবনু আমর
আল আশআসী, ইবনু আবূ উমর এবং
বিশর ইবনু হাকাম (রহঃ) মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ)-এর সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন,
জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের
লোকটি কে হবে? আল্লাহ বললেনঃ সে
হল এমন এক ব্যাক্তি, যে জান্নাতীদেরকে
জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে। তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হে প্রতিপালক! তা কিরুপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন।
তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন। তাকে বলা হবে, পৃথিবীর কোন সমরাটের সামরাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ
নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে, হে প্রভু! আমি এতে খুশি। আল্লাহ বলবেনঃ তোমাকে উক্ত
পরিমাণ সস্পদ দেওয়া হলো। সাথে দেওয়া হল আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ, আরো সমপরিমাণ। পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন, আরো দশগুন দেওয়া হল। এ সবই তোমার জন্য। তাছাড়া
তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যদ্বারা মন তৃপ্ত
হয়, চোখ জুড়ায়। লোকটি বলবে,
হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত।
. মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ এরা তারাই যাদের মর্যাদা আমি
চুড়ান্তভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি, কারো অন্তরে কখনও কল্পনায়ও উদয় হয়নি। বর্ণনাকারী
বলেন, কুরআন ের এ আয়াতটি এর প্রমাণ
বহন করেঃ (অর্থ) “কেউ জাননা , তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর
কি লুকায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পূরস্কারস্বরুপ।
” (৩২ ৪ ১৭)
৩৬২ আবূ কুরায়ব (রহঃ)
মুগীরা ইবনু শু’বা (রাঃ) থেঁকে বর্ননা করেন। তিনি বলেন, . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তাঁআলাকে জান্নাতের
সর্বনিম্ন ব্যাক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন এরপর বর্ণনাকারী পূর্ববর্ণিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ জাহান্নাম হতে সবার শেষে উদ্ধারপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সবার শেষে প্রবেশকারী লোকটিকে
আমি অবশ্যই জানি। কিয়ামতের দিন তাকে উপস্হিত করে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে যে,
এ ব্যাক্তির সগীরা শোনাহগুলো
তার সামনে পেশ কর, আর কবীরা শোনাহগুলো
আনাদা তুলে রাখ। ফেরেশতাগণ তার সম্মুখে সগীরা শোনাহগুলো উপস্হিত করবেন। ঐ ব্যাক্তিকে
বলা হবে, তুমি অমুক দিন এ পাপ
কাজ করেছিলে? অমুক দিন এ কাজ করেছিলে?
সে বলবে, হ্যা। সে কোনটার অস্বীকার করতে পারবে না। আর কবীরা
শোনাহগুলো পেশ করা হলে সে ভয় করতে থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার এক একটি গুনাহর স্হলে একটি নেকী দেওয়া হল।
লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! আমি
আরও অনেক অন্যায় কাজ করেছি, যেগুলো এখানে দেখছি
না। এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে,
তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত
ভেসে উঠল।
৩৬৪ ইবনু নুমায়র,
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও
আবূ কুরায়ব আ’মাশ (রহঃ) সুত্রে এ সনদে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৩৬৫ উবায়দুল্লাহ ইবনু
সাঈদ ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আবূ যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে কুরআনে উল্লেখিত অর্থাৎ
“অতিক্রম করতে হবে” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, কিয়ামতের দিন সকল মানুষ একত্রিত হবে। আমি মানুষের
উপর থেকে-তা দেখব। (এ উম্মাতকে একত্র করা হবে একটি টিলায়) এরপর একে একে প্রতিটি জাতিকে
তাদের নিজ নিজ দেব-দেবী ও উপাস্যের নামসহ ডাকা হবে। তারপর আল্লাহ আমাদের (মুমিনদের)
কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কার অপেক্ষায়
রয়েছ? মুমিনগন বলবে, আমাদের প্রতিপালকের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলবেন,
আমিই তো তোমাদের প্রতিপালক।
তারা বলবে, যতক্ষন পর্যন্ত আপনাকে
না দেখব (আমরা তা মানছি না)। এরপর আল্লাহ তখন সহাস্যে স্বীয় তাজাল্লী তে উদ্ভাসিত হবেন।
অনন্তর তিনি তাদের নিয়ে চলবেন এবং মুমিনগণ তাঁর অনুসরণ করবে। মুনাফিক কি মুমিন,
প্রতিটি মানুষ কেই নূর প্রদান
করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পূলের উপর থাকবে কাটাযুক্ত লৌহ শলাকা।
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে। মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ
নাজাত পাবেন। প্রথম দল হবে সত্তর হাজার লোকের, তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তাঁদের চেহারা হবে
পূর্নিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত
দীপ্ত। এভাবে পর্বায়ক্রমে সকলে পার হয়ে যাবে। তারপর শাফাআতের অনুমতি প্রদান করা হবে।
ফলে সকলেই শাফাআত লাভ করবে। এমন কি যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করেছে,
এবং যার অ”ন্তরে সামান্য যব
পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে। পরে এদেরকে জান্নাতের
আঙ্গিনায় জমায়েত করা হবে, আর জান্নাতিগণ তাদের
গাত্রে পানি সিঞ্চন করবেন, ফলে তারা এমন সতেজ
হয়ে উঠবেন, যেমন কোন উদ্ভিদ স্রোতবাহিত
পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে। আগুনে পোড়া দাগসমূহ মুছে যাবে। এরপর তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে
প্রার্থনা জানাবে। আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করবেন। তাদের প্রত্যেককে পৃথিবীর মত
এবং তৎসহ আরো পৃথিবীর দশগুন প্রতিদান দেওয়া হবে।
৩৬৬ আবূ বকর ইবনু
শায়বা (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ইরশাদ
করতে শুনেছেন ৪ আল্লাহ তায়ালা কতিপয় লোককে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন।
৩৬৭ আবূ রাবী (রহঃ)
হাম্মাদ ইবনু যায়িদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমর ইবনু দ্বীনারকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বরাত দিয়ে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন যে,
আল্লাহ তা’আলা কতিপয় মানুষকে
শাফাআতের ম্যধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তখন তিনি বললেন- হ্যা।
৩৬৮ হাজ্জাজ ইবনু
শাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদূল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ আল্লাহ জন্য কতিপয় মানুষকে এমতাবস্হায় জাহান্নাম থেকে বের করবেন, যখন জাহান্নামে তাদের মুখমন্ডলের চারপাশ ব্যতীত
অন্য সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, অবশেষে তারা (আল্লাহর
অনুগ্রহে) জান্নাতে প্রবেশ করবে।
৩৬৯ হাজ্জাজ ইবনু
শাইর (রহঃ) ইয়াযীদ আল ফাকীর (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খারিজীদের একটি মত, আমাকে বড়ই উদ্বিগ্ন করছিল। বিষয়টি নিয়ে অন্য লোকদের
সাথে আলোচনা করাও আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আমরা একবার একটি দলের সাথে হাজ্জে (হজ্জ) যাত্রা
করি। আমরা মদিনা দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) একটি খুঁটির পাশে
বসে লোকদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ননা করছেন। বর্ননাকারী
বলেন, আর একটু এগিয়ে দেখি,
তিনি জাহান্নামীদের আলোচনা
তুলেছেন। আমি বললাম, হে রাসুলের সাহাবী!
আপনারা এ কি বলছেন? অথচ আল্লাহ তায়াআলা
ইরশাদ করেছেনঃ (অর্থ) “কাকেও আপনি অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো আপনি নিশ্চয়ই হেয় করলেন
” (৩:১১২)। আরো ইরশাদ করেন: (অর্থ) …যখনই তারা জাহান্নাম হতে বেরোবার চেষ্টা করবে,
তখনই ফিরিয়ে দেয়া হবে। ”
(৩২: ২৫) জাবির (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরআন পাঠ কর? আমি বললাম,
হ্যা। তিনি বললেন,
তা হলে কুরআনে তুমি মুহাম্মদ
-এর সে সম্মানিত আসন , যেখানে আল্লাহ তাঁকে
(কিয়ামত দিবসে) সমাসীন করবেন, সে আসনের কথা শুননি?
বললাম, হ্যা। জাবির (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সে আসনটি হচ্ছে “মাকামে মাহমুদ” যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা যাকে জাহান্নাম থেকে বের
করার, বের করবেন। বর্ণনাকারী বলেন,
এরপর জাবির (রাঃ) পুলসিরাত
স্থাপন ও মানুষ তা অতিক্রম করার কথা বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আলোচনাটি পুরোপুরি সংরক্ষণ করতে পারিনি বলে আমার
আসঙ্কা হয়। তবে তিনি অনশ্যই একথা উল্লেখ করেছেন যে, কতিপয় মানুষ কিছু কাল জাহান্নামে অবস্থান করার পর,
তাদেরকে বের করা হবে। জাহান্নামে
আগ্নি দগ্ন হয়ে রোদেপোড়া তিল গাছের মত কালো বর্ণ ধারণ করবে, তখন তাদেরকে বের করে আনা হবে। এরপর তারা জান্নাতের
একটি নহরে নেমে গোসল করবে। পরে সকলে কাগজের মত সাদা ধবধবে হয়ে সে নহর থেকে উঠে আসবে।
ইয়াযীদ বলেন, এ হাদীস নিয়ে আমরা
আমাদের এলাকায় ফিরে এলাম এবং সকলকে বললাম, অমঙ্গল হোক তোমাদের! তোমরা কি মনে কর যে, এ বৃদ্ধ (জাবির) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -এর ওপর মিথ্যা আরোপ করতে পারেন? পরিশেষে আমাদের সকলেই ঐ ভ্রান্ত বিশ্বাস) থেকে ফিরে
আসে। আল্লাহর কসম! মাত্র এক ব্যাক্তি ছাড়া কেউ আমাদের এ সঠিক আকীদা পরিত্যাগ করে নাই,
বা আবূ নূয়ায়ম যা বলেছেন তার
অনুরুপ।
৩৭০ হাম্মাদ ইবনু
খালিদ আল আযদী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন: চার ব্যাক্তিকে (বিচারের জন্য) জাহান্নাম থেকে বের করে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত
করা হবে। তন্মধ্যে একজন বারবার পশ্চাৎ দিকে ফিরে তাকারে আর বলবে, হে আমার রব! যখন আমাকে এ জাহান্নাম থেকে বের করেছেন,
তখন আমাকে আর সেখানে ফিরিয়ে
নেবেন না। আল্লাহ তা’আলা এ লোকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।
৩৭১ আবূ কামিল ফূযায়ল
ইবনু হুসায়ন আল জাহদারী ও মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ আল শুবারী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হাশরের মাঠে আল্লাহ জন্য সকল মানুষকে একত্র করবেন। তখন
সংকটমুক্তির জন্য সুপারিশ প্রার্থনার ব্যাপারে তারা তৎপর হবে। এখানে বর্ণনাকারী ইবনু
উবায়দ শব্দ ব্যবহার করেছেন। অর্থ, অন্তরে উদয়! হওয়া।
তারা বলবে, আমরা যদি কাউকে আল্লাহর
কাছে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করতাম, যেন তিনি আমাদের সংকটময়
স্থান থেকে মুক্তি দেন। সে মতে তারা . আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বলবে,
আপনি আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম),
আপনি মানুষের আদি পিতা,
আল্লাহ তা’আলা স্বহস্তে আপনাকে
করেছেন, আপনার দেহে আত্না ফুকেছেন,
আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা আপনাকে সিজদাও
করেছেন। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন, যেন তিনি আমাদেরকে এ সংকটময় স্হান থেকে মুক্তি দেন।
তিনি তাঁর ক্রটির কথা , স্বরণ করবেন এবং প্রতিপালকের
কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। তোমরা নূহের কাছে যাও। তিনি প্রথম
রাসুল। আল্লাহ তায়ালা তাঁকেই সর্বপ্রথম রাসুলরুপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তখন সকল মানুষ
. নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে অনুরোধ করবে। তিনিও তার ক্রটির কথা স্মরণ করবেন
এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন। বলবেনঃ আমি এর যোগ্য নই। তোমরা
ইবরাহীমের কাছে যাও। তাকে আল্লাহ তা’আলা বন্ধুরুপে গ্রহণ করেছেন। তখন সবাই . ইবরাহীম
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি স্বীয় ক্রটির কথা স্মরণ করবেন এবং প্রতিপালকের
কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ করবেন এবং বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা মূসা র কাছে যাও। আল্লাহ তার সাথে কথোপকথন
করেছেন। তাঁকে আল্লাহ তাওরাত প্রদান করেছেন। তখন সবাই . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
কাছে আসবে। তিনি তাঁর ক্রটির কথা স্বরণ করবেন এবং প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করতে লজ্জাবোধ
করবেন এবং বলবেন, আমি এর উপযুক্ত নই।
তোমরা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত “কালিমা”। তখন সবাই . ঈসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর
এমন বান্দা যে, তার পূর্বাপর সকল
ক্রটি ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তখন সবাই আমার কাছে আসবে,
আর আমি আল্লাহর কাছে অনুমতি
প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। তখন আমি তাঁকে দেখামাত্র সিজদাবনত হয়ে যাব।
যতক্ষণ আল্লাহ ইচ্ছা করবেন আমাকে এ অবস্হায় রেখে দিবেন। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে, আপনি প্রার্থনা করুন,
তা পূর্ণ করা হবে,
আপনি শাফা’আত করুন,
আপনার শাফাআত কবুল করা হবে।
তারপর আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। এরপর আমি সুপারিশ
করব। আমার জন্য (শাফাআতের) সীমা নির্ধারিত করে দেয়া হবে। সেমতে আমি তাদেরকে জাহান্নাম
থেকে উদ্ধার করে এনে জান্নাতে প্রবেশ করাব। পূনরায় আমি শাফাআতের জন্য আসব এবং সিজদাবনত
হব। যতক্ষন আল্লাহ এ অবস্হায় আমাকে রাখতে ইচ্ছা করবেন ততক্ষন রেখে দিবেন। পরে বলা
“ হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন,
বলুন, আপনার অনুরোধ শোনা হবে; প্রার্থনা করুন, তা পূর্ণ করা হরে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। তারপর আমি মাথা তুলব
এবং আমার প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করব, যা আমার রব আমাকে শিখিয়ে দিবেন। আমার জন্য (শাফা’আতের) সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া
হবে। সে মতে আমি এদেরকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। বর্ণনাকারী
বলেন, নিশ্চিতভাবে স্বরন নেই,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় কিংবা চতূর্থবারে এ কথা উল্লেখ করেছিলেন যে, আমি বলব ৪ হে আমার প্রতিপালক! কুরআন যাদেরকে আটকে
দিয়েছে (অর্থাৎ কুরআনের আলোকে যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকা নির্ধারিত) তারা ছাড়া জাহান্নামে
আর কেউ অবশিষ্ট নেই। ইবনু উবায়দ-এর বর্ণনায় রয়েছে (অর্থ ৪ তার জন্য চিরদিন জাছান্নামে
থাকা নির্ধারিত)।
৩৭২ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কিয়ামতের দিন মুমিনগণ (হাশরের ময়দানে) একত্র হবে। বর্ণনাকারী
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে শব্দ ব্যবহার করেছেন। তারপর বর্ণনাকারী পূর্বোল্লিখিত আবূ
আওয়ানার হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, এরপর আমি চতুর্থবার এসে বলব ৪ হে প্রভূ! আর কেউ
অবশিষ্ট নেই, কেবল তারাই আছে,
যাদেরকে কুরআন আটকে রেখেছে।
৩৭৩ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়াআলা মুমিন বান্দাদেরকে একত্র করবেন। বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত
হাদীসদ্বয়ের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ রেওয়ায়েতে চতুর্থবারের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন
যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (চতুর্থবারে) তারপর আমি বলব ৪ হে প্রতিপালক! আর কেউ অবশিষ্ট
নেই, তবে তারাই আছে, যাদেরকে পবিত্র কুরআন আটকে রেখেছে। অর্থাৎ যাদের
ব্যাপারে চিরকালের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।
৩৭৪ মুহাম্মাদ ইবনু
মিনহাল আয যারীর, আবূ গাসসান আল মিসমাঈ
ও মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
ঐ ব্যাক্তিকেও জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনা হবে, যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে
একটি যবের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে,
যে বলেছে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তার অন্তরে সামান্য
একটি গমের পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। এরপর তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে,
যে বলেছে “আল্লাহ ছাড়া কোন
ইলাহ নেই” আর তার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান অবশিষ্ট আছে। ইবনু মিনহাল তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ
করেন যে, ইয়াযীদ (রহঃ) বলেছেন,
এরপর আমি শু’বার সাথে সাক্ষাৎ
করে তাঁকে এ হাদীস শোনলাম। তখন তিনি বললেন, আমাদেরকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কাতাদা (রাঃ),
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূত্রে। তবে শু’বা শব্দের স্হলে বর্ণনা করেছেন।
ইয়াযীদ (রহঃ) বলেন, আবূ বিসতাম এতে তাসহীফ
(এক শব্দ স্হলে অন্য শব্দ ব্যবহার) করেছেন।
৩৭৫ আবূ রাবী আল আতাকী,
সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) মা’বাদ
ইবনু হিলাল আল আনাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে
যাত্রা করি এবং সুপারিশকারী হিসাবে সাবিতকে সাথে নিয়ে যাই। বর্ণনাকারী বলেন,
আমরা যখন আনাসের কাছে গিয়ে
পৌছি, তখন তিনি সালাত (নামায/নামাজ)ুদ্দোহা
আদায় করছিলেন। সাবিত (রাঃ) প্রার্থনা করলেন, অনুমতি হল। আমরা আনাস (রাঃ)-এর মজলিসে প্রবেশ করলাম।
আনাস (রাঃ) সাবিতকে চৌকিতে তাঁর পাশে বসালেন। তারপর সাবিত (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে বললেন,
হে আবূ হামযা! আপনার এ বাসরী
ভাইয়েরা আপনার কাছ থেকে শাফাআত বিষয়ক হাদীস জানতে চাচ্ছে। তখন আনাস (রাঃ) বললেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষ বিপর্যন্ত অবস্থায় এদিক-সেদিক
ছুটাছুটি করতে থাকবে। অবশেষে সবাই . আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে বসবে,
আপনার বংশধরদের জন্য সুপারিশ
করুন। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, বরং তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর বন্ধু। সবাই . ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসলে, তিনি বলবেনঃ আমি এর
যোগ্য নই, তবে তোমরা মূসা (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী। তখন সকলে তার কাছে
আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত রুহ ও তাঁর
কালিমা। এরপর তারা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এর যোগ্য
নই, তবে তোমরা মুহাম্মাদ -এর কাছে
যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব: ‘আমিই এর জন্য, আমি যাচ্ছি। অনন্তর আমি আমার পরওয়ারদিগারের অনুমতি
প্রার্থনা করব। আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে। আমি তাঁর সন্মুখে দাঁড়াব এবং এমন প্রশংসাসূচক
বাক্যে তার প্রশংসা করতে থাকব, যা তখনই আল্লাহ আমার
প্রতি ইলহাম করবেন; এখন আমি তা বর্ণনা
করতে পারছি না। এরপর আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে ৪ হে মুহাম্মাদ! বলুন,
আপনার কথা শোনা হবে;
প্রার্থনা করুন, কবুল করা হবে; শাফা’আত করুন, আপনার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব ৪ হে
পরওয়ারদিগার, ‘উাম্মাতী” ‘উম্মাতী’
, আমার উম্মাত, আমার উম্মাত। এরপর আমাকে বলা হবে ৪ চলূন,
যার অন্তরে গম বা যবের পরিমাণও
ঈমান অবশিষ্ট পাবেন তাকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করে আনুন। আমি যাব এবং তদনূসারে উদ্ধার
করব। পূনরায় আমার পরওয়ারদিগারের-দরবারে ফিরে যাব এবং পূর্বানুরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে
তার প্রশংসা করব, এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে
পড়ব। আমাকে বলা হবে ৪ হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন,
কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। তখন আমি বলব: হে পরওয়ারদিগার!
উম্মাতী , উম্মাতী আমার উম্মাত,
আমার উম্মাত”। আল্লাহ বলবেনঃ
যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে একটি
সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও অবশিষ্ট থাকবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত করুন। এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব। পূনরায়
আমি পরওয়ারদিগারের দরবারে ফিরে যাব এবং পৃর্বানূরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর প্রশংসা
করব। এরপর আমি সিজদায় লূঁটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা তুলুন, বলুন, আপনার কথা শোনা হবে; প্রার্থনা করুন,
কবুল করা হবে; শাফাআত করুন, শাফা’আত গৃহীত হবে। আমি বলব ৪ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী
, উম্মাতী , – আমার উম্মাত, আমার উম্মাত”। আল্লাহ বলবেন, যান, যে ব্যাক্তির অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও আরো আরো কম পরিমাণ ঈমান পারেন,
তাকেও জাহান্নাম থেকে মুক্ত
করুন। এরপর আমি যাব এবং তাদের উদ্ধার করে আনব। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) এ পর্যন্ত আমাদেরকে বলেছেন। এরপর আমরা
সেখান থেকে বের হয়ে পথ চলতে শুরু করলাম। এভাবে যখন “জাব্বান” এলাকায় পৌছলাম,
তখন নিজেরা বললাম,
আমরা যদি হানান বসরীর সাথে
সাক্ষাৎ করতাম এবং তাঁকে সালাম পেশ করতাম, কতই না ভাল হতো! সে সময় তিনি আবূ খলীফার ঘরে আত্মগোপন করেছিলেন। আমরা তাঁর বাড়িতে
গেলাম এবং তাঁকে সালাম পের্শ করলাম। আমরা তাঁকে বললাম, আবূ সাঈদ! আমরা আপনার ভাই আবূ হামযার দরবার থেকে
আসছি। আজ তিনি আমাদেরকে সাফা’আত সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছেন, যা আর কখনও শুনিনি। তিঁনি বললেন, আচ্ছা শোনাও তো? তখন আমরা তাঁকে হাদীসটি শোনালাম। তারপর তিনি বললেন,
আরও বল। আমরা বললাম,
এর চেয়ে বেশি কিছু তো আনাস
(রাঃ) বর্ণনা করেননি। তখন তিনি বললেন, অথচ আনাস (রাঃ) আমাদের কাছে আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি সুস্হ-সবল ছিলেন,
তখন এ হাদীসটি শুনিয়েছেন।
কিন্তু আজ তোমাদের কাছে কিছু ছেড়ে দিয়েছেন মনে হচ্ছে। জানিনা, তিনি তা ভুলে গেছেন, না তোমরা এর উপর ভরসা করে আমলের ব্যাপারে শিথিলতা
প্রদর্শন করবে, আশংকায় তিনি তা বর্ণনা
করাটা পছন্দ করেননি। আমরা বললাম আমাদের তা বর্ণনা করুন। তিনি ঈষৎ হেসে উত্তর করলেন,
মানূষ তো খুব ত্বরাপ্রিয়।
তোমাদের তা বর্ণনা করব বলেই তো এর উল্লেখ করলাম। তারপর তিনি হাদীসটির অবশিষ্ট অংশ এরুপ
বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এরপর আমি পুনরায়
আমার পরওয়ারদিগারের কাছে ফিরে আসব এবং চতুর্থবারও উক্তরুপ প্রশংসাসূচক বাক্যে তাঁর
প্রশংসা করব। এরপর আমি সিজদায় লূটিয়ে পড়ব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনার কথা শোনা হবে ; প্রার্থনা করুন, তা কবুল করা হবে; সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে। আমি বলব: হে পরওয়ারদিগার!
আমাকে সেসব মানুষের জন্য অনুমতি দিন, যারা “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই” একথা স্বীকার করেছে। আল্লাহ বলবেনঃ না,
এটা আপনার দায়িত্বে নয়;
বরং আমার ইজ্জত, প্রতিপত্তি, মহত্ত্ব ও পরাক্রমশীলতার কসম! আমি নিজেই অবশ্য এদের
মুক্তি দেব, যারা একথার স্বীকৃতি
দিয়েছে যে, “আল্লাহ ব্যতীত কোন
ইলাহ নেই”। হাদীসটি শেষ করে বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হাসান আমাদেরকে হাদীসটি আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছেন
বলে বর্ণনা করেছেন। অবশ্য আমার বিশ্বাস তিনি এ কথা বলেছেন যে, বিশ বছর পূর্বে যখন তিনি পূর্ণ সুস্হ-সবল ছিলেন।
৩৭৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘরে কিছু গোশত (হাদিয়া) এল, পরে এর বাছর অংশটি তার সামনে (আহারের উদ্দেশ্যে)
পেশ করা হলো। বাহুর গোশত তার কাছে খুবই পছন্দনীয় ছিল। এরপর তিনি তা থেকে এক কামড় গ্রহণ
করলেন। তারপর বললেন, কিয়ামত দিবসে আমিই
হব সকল মানুষের সর্দার। তা কিভাবে তোমরা জানো? কিয়ামত দিবসে যখন আল্লাহ তা’আলা শুরু থেকে নিয়ে
শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একই মাঠে এমনভাবে জমায়েত করবেন যে, একজনের আহবান সকলে শুনতে পাবে, একজনের আহবান সকলকে দেখতে পাবে। সূর্য নিকটবতী হবে।
মানুষ অসহনীয় ও চরম দুঃখ-কটূ ও পেরেশানীতে নিপতিত হবে। নিজেরা পরস্পর বলাবলি করবে,
কী দুর্দশায় তোমরা আছ ,
দেখছ না? কী অবস্হায় তোমরা পৌছেছ উপলব্ধি করছ না?
এমন কাউকে দেখছ না,
যিনি তোমাদের পরওয়ারদিগারের
কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবেন? তারপর একজন আরেকজনকে
বলবে, চল, আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাই। অনন্তর তারা
আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি মালবকুলের পিতা, আল্লাহ- স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার
দেহে রুহ ফুকে দিয়েছেন। আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন ;
তাঁরা আপনাকে সিজদা করেছে।
আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা
কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি? আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
উত্তরে বলবেনঃ আজ পরওয়ারদিগার এত বেশি ক্রোধাম্বিত আছেন যা পূর্বে কখনো হননি,
আর পরেও কখনও হবেন না। তিনি
আমাকে একটি বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, আর আমি সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ফেলেছি, ‘নাফসী’, নাফসী’, আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে
গিয়ে চেষ্টা কর, তোমরা নূহের কাছে
যাও। তখন তারা নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে ; বলবে, হে নূহ! আপনি আমাদের প্রথম রাসুল। আল্লাহ আপনাকে “চির কৃতজ্ঞ বান্দা” বলে উপাধি
দিয়েছেন। আপনার পরুওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি? অ্যমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? নূহ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবেনঃ আজ আমার পরওয়ারদিগার
এত ক্রোধানিত আছেন যে এমন পূর্বেও কখনো হননি আর কখনও হবেন না। আমাকে তিনি একটি দুঁআ
কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আর তা আমি আমার জাতির
বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে ফেলেছি ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি
পেরেশান। তোমরা ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তখন তারা ইবরাহীম (আলাইহি
ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে। বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি
আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনি আল্লাহর খলীল ও অন্তরঙ্গ
বন্ধু। আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না,
আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং
আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে পৌছেছে? ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বলবেনঃ আল্লাহ আজ এতই ক্রোধানিত আছেন যে,
পূর্বে এমন কখনও হন নাই আর
পরেও কখনও হবেন না। তিনি তাঁর কিছুঁ বহ্যিক অসত্য কথনের বিষয় উল্লেখ করবেন। বলবেন,
-‘নাফসী”, ‘সাফসী’ , -আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা অন্য কারো কাছে
যাও। মূসা র কাছে যাও। তারা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে, বলবে, হে মূসা! আপনি আল্লাহর রাসুল, আপনাকে তিনি তাঁর
রিসালাত (নামায/নামাজ) ও কালাম দিয়ে মানুষের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আপনার পরওয়ারদিগারের
কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে
পৌছেছে? মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
তাদেরকে বলবেনঃ আজ আল্লাহ এতই ক্রোধানিত অবস্হায় আছেন যে, পূর্বে এমন কখনো হন নাই আর পরেও কখনো হবেন না। আমি
তার হুকুমের পূর্বে এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। ‘নাফসী’, ‘নাফসী’ আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা ঈসা
(আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে যাও। তারা ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে আসবে এবং
বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল,
দোলনায় অবস্হানকালেই আপনি
মানুষের সাথে বাক্যালাপ করেছেন, আপনি আল্লাহর দেওয়া
বানী, যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে ঢেলে
দিয়েছিলেন, আপনি তাঁর দেওয়া আত্মা।
সুতরাং আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেকছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন অবস্হায়
পৌছেছে? ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলবেনঃ আজ আল্লাহ তা’আলা এতই ক্রোধান্বিত অবস্হায় আছেন যে, এরুপ না পূর্বে কখনও হয়েছেন, আর না পরে কখনো হবেন। উল্লেখ্য, তিনি কোন অপরাধের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন,
‘নাফসী’, ‘নাফসী’-আজ আমার চিন্তায় আমি পেরেশান। তোমরা জন্য
কারো কাছে যাও। মুহাম্মাদ -এর কাছে যাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেনঃ তখন তারা আমার কাছে আসবে এবং বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রাসুল, শেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আপনি আপনার পরওয়ারদিগারের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। দেখছেন না, আমরা কোন অবস্হায় আছি এবং আমাদের অবস্হা কোন পর্যায়ে
পৌছেছে? তখন আমি সুপারিশের
জন্য যাব এবং আরশের নিচে এসে পরওয়ারদিগারের উদ্দেশে সিজদাবনত হব। আল্লাহ আমার অন্তরকে
সূপ্রশস্ত করে দিবেন এবং সর্বোত্তম প্রশংসা ও হামদ জ্ঞাপনের ইলহাম করবেন, যা ইতিপূর্বে কাউকেই দেয়া হয়নি। এরপর আল্লাহ বলবেন,
হে মুহাম্মাদ! মাথা উত্তোলন
করুন, প্রার্থনা করুন, আপনার প্রার্থনা কবুল করা হবে। সুপারিশ করুন,
আপনার সুপারিশ “গ্রহণ করা
হবে”। অনন্তর আমি। মাথা তুলব। বলব ৪ হে পরওয়ারদিগার! উম্মাতী, উম্মাতী, -আমার উাম্মাত, আমার উম্মাত, (এদেরকে মুক্তি দান করুন)। আল্লাহ বলবেন,
হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের
যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের
ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। অবশ্য অন্য তোরণ দিয়েও অন্যান্য লোকের সঙ্গে তারা
প্রবেশ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ শপথ সে সত্তার,
যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ,
জান্নাতের দুই চৌকাঠের মধ্যকার
দূরত্ব মক্কার ও হাজরের দূরত্বের মত ; অথবা বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ও বসরার দূরত্বের
মত।
৩৭৭ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেঁন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
সম্মুখে সারীদ ও গোশতের একটি পেয়ালা পেশ করা হলে তিনি তা থেকে গোশতের একটি বাহু নিয়ে
এক কামড় গ্রহণ করলেন। আর বকরীর গোশতের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর কাছে বাহু অধিকতর পছন্দনীয় ছিল। তিনি ইরশাদ করলেন ৪ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের
সর্দার। এরপর আরেক কামড় গ্রহণ করে বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের সর্দার।
তিনি যখন দেখলেন সাহাবীগণ কোন প্রশ্ন করছেন না, তখন নিজেই বললেন, তোমরা কেন জিজ্ঞাসা করছ না যে তা কেমন করে হবে?
সাহাবীগন বললেন, বলুন হে সম্মূখে উপস্হিত হবে। অবশিষ্টাংশ আবূ হায়্যান
আবূ যুর’আ সূত্রে বর্নিত হাদীসেরই অনুরুপ। তবে এ হাদীসে . ইবরাহিম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
প্রসঙ্গে তিনি নক্ষত্র সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি আমার প্রতিপালক; দেব—দেবীর সম্পর্কে
বলেছিলেন, বরঞ্চ এদের বড়টাই
তো হত্যা করেছে ও আমি অসুস্থ”-এ কথা অতিরিক্ত আছে। শপথ সে সত্তার, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, জান্নাতের দু’চৌকাঠের মধ্যকার দূরত্ব মক্কা ও হাজরের
দূরত্বের মত বা হাজর ও মক্কার দুরত্বের মত, কোনটি বলেছেন আমি জানিনা।
৩৭৮ মুহাম্মাদ ইবনু
ড়ূরায়ফ ইবনু খলীফা অণিবা জালী ও আবূ মাজি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ জন্য সকল মানুষকে একত্র করবেন। মুমিনগণ দাঁড়িয়ে
থাকবে। জান্নাত তাদের নিকটবতী করা হবে। অবশেষে সবাই আদমের কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য জান্নাত খুলে দেওয়ার প্রার্থনা করুন।
আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের পিতা আদমের
পদন্থলনের কারনেই আমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং আমি এর যোগ্যনই।
তোমরা পুত্র কাছে যাও। তিনি আল্লাহর বন্ধু। এরপর সবাই ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর
কাছে এলে তিনি বলবেনঃ না, আমিও এর যোগ্য নই,
আমি আল্লাহর বন্ধু ছিলাম বটে,
তবে তা। ছিল অন্তরাল থেকে।
তোমরা মূসা র কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি বাক্যালাপ করতেন। সবাই মূসা
র কাছে আসবে। বলবেনঃ আমিও এর যোগ্য নই; বরং তোমরা ঈসার কাছে যাও। আল্লাহর দেওয়া কালিমা ও রুহ। সবাই তাঁর কাছে আসলে তিনি
বলবেনঃ আমিও তার উপযুক্ত নই। তখন সকলে মুহাম্মদ -এর কাছে আসবে। তিনি দু’আর নিমিত্তে
দাড়াবেন এবং তাঁকে অনুমতি প্রদান করা হবে। আমানতকারী আত্নীয়তার সম্পর্ক পুলসিরাতের
ডানে-বামে এসে দাঁড়াবে। আর তোমাদের প্রথম দলটি এ সিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে।
সাহাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আপনার জন্য আমার পিতামাতা
উৎসর্গ হউক। আমাকে বলে দিন “বিদ্যুৎ গতির ন্যায়” কথাটির অর্থ কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
আকাশের বিদ্যুৎ চমক কি কখনো দেখনি? চক্ষের পলকে এখান থেকে সেখানে চলে যায় আবার ফিরে আসে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর পরবর্তী দলশুলি যথাক্রমে বায়ুর বেগে, পাখির গতিতে, তারপর লম্বা দৌড়ের গতিতে পার হয়ে! যাবে। প্রত্যেকেই
তার আমল হিসাবে তা অতিক্রম করবে। আর তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে
অবস্হায় পুলসিরাতের উপর দাঁড়িয়ে এ দুআ করতে থাকবে ৪ আল্লাহ এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন,
এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন,
এদেরকে নিরাপদে পৌছে দিন।
এরুপে মানুষের আমল মানুষকে চলতে অক্ষম করে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা এ সিরাত অতিক্রম
করতে থাকবে। শেষে এক ব্যাক্তিকে দেখা যাবে, সে নিতম্বের উপর ভর করে পথ অতিক্রম করছে। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেনঃ সিরাতের উভয় পার্শের ঝূলান থাকবে কাঁটাযুক্ত
লৌহশলাকা। এরা আল্লাহর নির্দেশক্রমে চিহ্নিত পাপীদেরকে পাকড়াও করবে। তন্মধ্যে কাউকে
তো ক্ষত-বিক্ষত করেই ছেড়ে দিবে; সে নাজাত পাবে। আর
কতক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জাহান্নামের গর্ভে নিক্ষিপ্ত হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
শপথ সে সত্তার, যার হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ। জেনে রাখ,
জাহান্নামের গভীরতা সত্তর
খারীফ (অর্থাৎ সত্তর হাজার বছরের মত। )
৩৭৯ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ আমি প্রথম ব্যাক্তি যে জান্নাত সম্পর্কে আল্লাহর কাছে শাফা’আত করব। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের মধ্যে আমার অনুসারীর সংখ্যাই হবে সবচেয়ে বেশি।
৩৮০ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আলো (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই সবার আগে জান্নাতের কড়া নাড়ব।
অর্থাৎ সরাসবি আল্লাহর সাথে আমার কথা হসুনি, যেমন মূসা র হযেছিল।
৩৮১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস ইবনু মানিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন জান্নাত সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং এত অধিক সংখ্যক মানুষ আমার
প্রতি ঈমান আনবে, যা অন্য কোন নাবী
র বেলায় হবে না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দের কেউ কেউ তো এমতাবস্হায়ও আসবেন,
যার প্রতি মাত্র এক ব্যাক্তই
ঈমান এনেছে।
৩৮২ আমর আন নাকিদ
ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন ৪ কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের গেইটে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইব। তখন খাজাঞ্চি
বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করব, মুহাম্মাদ। খাজাঞ্চি বলবেন, “আপনার জন্যই দরজা খুলতে আমি নির্দেশিত হয়েছি। আপনার
পূর্বে অন্য কারোর জন্য দরজা খুলব না।
৩৮৩ ইউনূস ইবনু আবদুল
আ ’লা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
৪ প্রত্যেক নাবীর জঁন্যই বিশেষ একটি দু’আ নির্ধারিত আছে, যা তিনি করবেন। আমি আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে
আমার উম্মতের শাফাআতের জন্য সংরক্ষিত রাখার সংকল্প নিয়েছি।
৩৮৪ যুহায়র ইবনু হারব
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে। আমার বিশেষ দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার
উম্মাতের শাফা’আতের জন্য সংরক্ষিত রাখব বলে ইচ্ছা করেছি, ইনশাআল্লাহ।
৩৮৫ যুহায়র ইবনু হারব
ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আমর ইবনু আবূ সুফিয়ান ইবনু আর্সীদ ইবনু জারিয়া আল সাকাফী
(রহঃ) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৩৮৬ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন কাঁব আল আহবারকে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন : প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি বিশেষ দুঁআ আছে। আমি আমার দুআটি কিয়ামত দিবসে আমার
উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি। কা’ব (রাঃ) আবূ হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করলেন,
আপনি কি এ হাদীস রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি শুনেছেন? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন- হ্যা।
৩৮৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন :প্রত্যেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র জন্য একটি বিশেষ দু’আ আছে তন্মধ্যে
সকলেই তাদের দু’আ পৃথিবীতেই করে নিয়েছেন। আমি আমার দুঁআটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের
জন্য রেখে দিয়েছি। আমার উম্মতের যে ব্যাক্তি কোন প্রকার শিরক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করবে সে ইনশাআল্লাহ আমার এ দুআ পাবে।
৩৮৮ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি বিশেষ দুআর অনুমতি প্রদান করা হয়েছে; এর মাধ্যমে তিনি যে দুআ করবেন, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করবেন। সকল নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দুআ করে ফেলেছে। আবূ আমি আমার দুআটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের
শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।
৩৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু
মু’আয আল আনবারি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন: প্রত্যেক নাবী কে তাঁর উম্মাতের ব্যাপারে একটি করে এমন দু’আর অনুমতি দেয়া হয়েছে,
যা অবশ্যই কবুল করা হবে। আমি
সংকল্প করেছি, আমার দু’আটি পরে আমার
উম্মাতের শাফা’আতের জন্য করব।
৩৯০ আবূ গাসসান আল
মিসমাঈ, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও
ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেনঃ প্রত্যেক নাবীর কাছে তাঁর উম্মাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য একটি দু’আর অনুমতি
আছে। আমি আমার দু’আটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাওয়াতের জন্য রেখে দিয়েছি। যুহায়র
ইবনু হারব, ইবনু আবূ খালাফ,
আবূ কুরায়ব, ইবরাহিম ইবনু সা’দ আল জাওহারী (রাঃ) ও মিসআর (রহঃ)
এ সুত্রে কাতাদা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৩৯১ মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল আ’লা (রাঃ) আনাস (রাঃ) থেকে কাতাদা এর অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৩৯২ মুহাম্মাদ ইবনু
আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ প্রত্যেক নাবী কে একটি করে কবুল দুআর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সবাই তাদের দুআ করে ফেলেছিল, তবে আমি আমার দু’আটি
কিয়ামত দিবসে আমার উম্মাতের শাফাআতের জন্য রেখে দিয়েছি।
৩৯৩ ইউনূস ইবনু আবদুল
আলা আস সাদাফী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরআনে ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দুআ সম্বলিত আয়াত ৪ (অর্থ) হে আমার প্রতিপালক!
এ সকল প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভূক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল পরম
দয়ালূ” (১৪: ৩৬) তিলাওয়াত করেন। আর ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ (অর্থ) “তুমি
যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তো তোমারই
বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর,
তরে তো তুমি পরাক্রমশালী,
প্রজ্ঞাময়” (৫: ১১৮)। তারপর
তিনি তাঁর উভয় হাত উঠালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মাত, আমার উম্মাত! আর কেঁদে
ফেললেন। তখন মহান আল্লাহ বললেনঃ হে জিবরাঈল! মুহাম্মদের কাছে যাও, তোমার রব তো সবই জানেন, তাঁকে জিজ্ঞেস কর, তিনি কাঁদছেন কেন? জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যা বলেছিলেন, তা তাঁকে অবহিত করলেন।
আর আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে জিবরাঈল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে
যাও এবং তাঁকে বল, আপনার উম্মাতের ব্যাপারে
আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেব, আপনাকে অন্তুষ্ট করব
না।
৩৯৪ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল!
আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ
জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন পিছনে ফিরে
যাচ্ছিল, তখন তিনি ডাকলেন এবং
বললেনঃ আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে। ”
৩৯৫ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে
সতর্ক করে দাও—” (২৬: ২১৪) তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের ডাকলেন।
তারা একত্রিত হল। তারপর তিনি তাঁদের সাধারণ ও বিশিষ্ট সকলকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে
কা”ব ইবনু লূওয়াইর বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে মুররা ইবনু কাবের বংশধর!
জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে আবদ শামসের বংশধর! জাহান্নাম থেকে আত্নরক্ষা কর। হে
আবদ মানাফের বংশধর! জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাঁচাও। হে হাশিমের বংশধর! জাহান্নাম থেকে
আত্মরক্ষা কর। হে আব্দুল মূত্তালিবের বংশধর! জাহান্নাম থেকে নিজেদের বাচাও। হে ফাতিমা!
জাহান্নাম থেকে নিজেকে বাঁচাও! কারন আল্লাহর (আযাব) থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার
কোন ক্ষমতা নেই। অবশ্য তোমাদের সঙ্গে আমার আত্নীয়তার রসে আমিও আপ্লুত হবো।
৩৯৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু
উমর আল কাওয়ারীরী (রহঃ) আবদুল মালিক ইবনু উমায়র (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন;
তবে জারীর বর্ণিত হাদীসটি
পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক।
৩৯৭ মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থ) তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে
সতর্ক করে দাও (২৬: ২১৪); তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বললেন, হে ফাতিমা বিনূত মুহাম্মাদ! হে নাফিয়্যরূ বিনূত
অধি-দুল মুত্তালিব! হে আবদুল মূত্তালিবের বংশধর! আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদেরকে রক্ষা
করার আমার কোন ক্ষমতা নেই। তোমরা আমার কাছে আমার সম্পদের যা খুশি চাইতে পার।
৩৯৮ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত অবতীর্ণ হলঃ (অর্থ) “তোমার নিকট
আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও। ” (২৬ঃ ২১৪) তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ হে কুরাইশগণ! আল্লাহর (আযাব) থেকে তোমরা নিজেদের কিনে নাও (বাচাও) আল্লাহর
(আযাব) থেকে তোমাদের রক্ষা করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। ওহে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর!
তোমাদের আমি রক্ষা করতে পারব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! তোমাকেও আমি রক্ষা
করতে পারব না। হে সাফিয়্যা! তোমাকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারব না। হে ফাতিমা
বিনূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তোমার যা ইচ্ছা চাইতে পার। আল্লাহর
(আযাব) থেকে তোমাকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই।
৩৯৯ আমর আন নাকিদ
(রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০০ আবূ কামিল আল
জাহদারী (রহঃ) কাবীসা ইবনু মুখারিক ও যুহায়র ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেন,
যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয়ঃ
(অর্থ)“তোমার নিকট- আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও” (২৬ঃ ২১৪)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্বতের স্তরে স্তরে সাজানো বৃহদাকার পাথরের দিকে গেলেন এবং তার
মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ প্রস্তর খণ্ডে আরোহণ করলেন। এরপর তিনি আহবান জানালেন , ওহে আবদ মানাফের বংশধর! আমি (তোমাদের) সতর্ককারী।
আমার ও তোমাদের উপমা হল এমন এক ব্যাক্তির মত, যে শক্রকে দেখতে পেয়ে তার লোকদের রক্ষা করার জন্য
অগ্রসর হল। পরে সে আশঙ্কা করল যে, শক্র তার আগেই এসে
যাবে। তখন সে ইয়া সাবাহ- (হায় মন্দ প্রভাত!)বলে চিৎকার শুরু ু, করল।
৪০১ মুহাম্মদ ইবনু
আবদুল আলা (রহঃ) যুহায়র ইবনু আমর ও কাবীসা ইবনু মুখারিক (রাঃ) থেকে উল্লেখিত হাদীসের
অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৪০২ আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ
ইবনু আ’লা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয় (অর্থ): “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে
সতর্ক করে দাও, (২৬:২১৪)। এবং তাদের
মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও। ” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বের হয়ে এলেন এবং সাফা পর্বতে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত! সকলে বলাবলি করতে লাগল, কে এই ব্যাক্তি যে ডাক দিচ্ছে? লোকেরা বলল, মুহাম্মাদ। তারপর সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হল। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের বংশধর! হে অমূকের বংশধর! হে অমুকের
বংশধর! হে আবদ মানাফের বংশধর! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! এতে সবাই তাঁর কাছে সমবেত
হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী জিজ্ঞেস করলেনঃ দেখ যদি আমি তোমাদের এই
সংবাদ দেই যে, এই পর্বতের পাদদেশে
শক্র সৈন্য এসে পড়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে
বিশ্বাস করবে? তারা উত্তর করল,
তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে তো
আমরা দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের সতর্ক
করছি সামনের কঠোর আযাব সম্পর্কে। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ লাহাব তখন এই বলে উঠে গেল “ধ্বংস হও,
তুমি এ জন্যই কি আমাদের একত্র
করেছিলে? তখন এই সূরা অবতীর্ণ
হয়ঃ ধবংস আবূ লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হউক সে নিজেও সূরার শেষ পর্যন্ত। (১১১: ১-৫)।
অবশ্য রাবী আমাশ -এর স্থলে পাঠ করেন।
৪০৩ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণিত। তিঁনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাফা পর্বতে আরোহণ করেন এবং বলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত”! (বাকী অংশ) আবূ উসামা বর্ণিত হার্দীসের
অনুরুপ। অবশ্য তিনি ( )আয়াতটি অবতরণের কথা উল্লেখ করেননি।
৪০৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু
উমর আল কাওয়ারীরী, মুহাম্মাদ ইবনু আবূ
বকর আল মূকাদ্দামী ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক আন উমাবী (রহঃ) আব্বাস ইবনু আবদুল
মুত্তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আবূ তালিবের কোন উপকার
করতে পেরেছেন? তিনি তো আপনার হিফাযত
করতেন, আপনার পক্ষ হয়ে (অন্যের প্রতি)
ক্রোধান্বিত হতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হ্যা,
তিনি কেবল পায়ের গ্রন্থি পর্যন্ত
জাহান্নামের আগুনে থাকবেন, আর যদি আমি না হতাম, তবে জাহান্নামের অতল
তলেই তাকে অবস্হান করতে হতো।
৪০৫ ইবনু আবূ উমর
(রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আবূ তালিব তো আপনার হিফাযত করতেন,
আপনাকে সাহায্য করতেন এবং
আপনার পক্ষ হয়ে (অন্যের প্রতি) রাগ করতেন। তার এই কর্ম তার কি কোন উপকারে এসেছে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হ্যা। আমি তাকে জাহান্নামের গভীরে পেয়েছিলাম এবং সেখান
থেকে (তার পায়ের) গ্রন্থি পর্যন্ত বের করে নিয়ে এসেছি। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ)
আব্বাস ইবনু আবদুল মূত্তালিব (রাঃ) থেকে এবং আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সুফিয়ান
(রহঃ) থেকে ঐ সনদে পুর্ব বর্ণিত আবূ-আওয়ানার হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৪০৬ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর
কাছে তাঁর চাচা আবূ তালিবের কথা আলোচিত হলে তিনি বলেনঃ কিয়ামত দিবসে তাঁর ব্যাপারে
আমার সুপারিশ কাজে আসবে বলে আশা রয়েছে। তাঁকে জাহান্নামের উপরিভাগে এমনভাবে রাখা হবে
যে, আগুন তার পায়ের গিরা পর্যন্ত
পৌছবে; এতেই তার মগজ উথলাতে থাকবে।
৪০৭ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
জাহান্নামের সবচেয়ে কম আযাব
সে ব্যাক্তির হবে, যাকে আগুনের দুটি
জুতা পরান হবে, ফলে এই দুটির কারণে
তার মগজ উথলাতে থাকবে।
৪০৮ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
(চির) জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে আবূ তালিবের। তাকে দুটি (আগুনের)
জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, ফলে এ দুটির কারণে
তার মগজ পর্যন্ত উথলাতে থাকবে।
৪০৯ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও ইবনু বাশশার নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত দিবসে জাহান্নামীদের
মধ্যে সবচেয়ে হালকা শাস্তি হবে ঐ ব্যাক্তির, যার দুপায়ের তলায় দুটি (জ্বলন্ত) অঙ্গার রাখা হবে,
যার কারণে তার মগজ উথলাতে
থাকবে।
৪১০ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) নূ”মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব ঐ ব্যাক্তির হবে, যাকে এমন দুটি পাদুয়া পরিয়ে দেয়া হবে, যার তলা এবং ফিতা হবে আগুনের। ফলে এর দহনে (তার
উপরে রাখা) পাতিলের মত মগজ উথলাতে থাকবে। আর তার অনুভব হবে যে, সে-ই বুঝি সর্বাপেক্ষা বেশি শান্তি ভোগ করছে;
অথচ এটি হচ্ছে সবচেয়ে হালকা
আযাব।
৪১১ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ইবনু জুদআন জাহেলী যুগে আত্নীয়-স্বজনদের
হক আদায় করত এবং দরিদ্রদের আহার দিত। আখিরাতে এসব কর্ম তার উপকারে আসবে কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন উপকারে আসবে না। সে তো কোনদিন এ কথা বলেনি যে হে আমার
রব! কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করে দিও।
৪১২ আহমদ ইবনু হাম্বল
(রহঃ) আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে চুপে চুপে নয়, স্পষ্ট বলতে শুনেছি
যে, জেনে রাখ- অমুক বংশ (আত্নীয়তার
কারণে) আমার বন্ধু নয়, বরং আল্লাহ এবং নেককার
মুমিনগণই হলেন আমার বন্ধু।
৪১৩ আব্দুর রহমান
ইবনু সাল্লাম ইবনু উবায়দুল্লাহ জুমাহী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে,
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
জনৈক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, আমাকে যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত
করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন, ইয়া আল্লাহ! ওকে এদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। তারপর
আরেকজন সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন আমাকেও তাঁদের অন্তভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ এই সুযোগ লাভে উককাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৪ মুহাম্মাদ ইবনু
বাশশার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি পরবর্তী অংশ উপরোল্লিখিত হাদীসের অনুরুপ।
৪১৫ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একটি
দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সংখ্যা হবে সত্তর হাজার। তাঁরা পূর্ণিমার চাঁদের মত
চমকাতে থাকবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তখন উককাশা ইবনু মিহসান আসা’দী দাড়ালেন। তার গায়ে একটি চাঁদর ছিল। বললেন,
ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর
কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের
অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ!
একে তাঁদের অন্তভুক্ত করে নিন। এরপর আরেকজন আনসারী দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন,
তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত
করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এই সুযোগ লাভে উককাশা
তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৬ হারামালা ইবনু
ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজারের একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তাদের একটি
দলের চেহারা হবে চাঁদের মত (উজ্জ্বল)।
৪১৭ ইয়াহইয়া ইবনু
খালাফ বাহিলী (রহঃ) ইমরান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
তারা কে? রাসুল বললেনঃ যারা
লোহার দাগ লাগায় না এবং ঝারফুক করায় না; বরং তাদের রবের উপর নির্ভরশীল থাকে। তখন উককাশা (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাদেরই একজন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
এরপর আরেক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে
বলল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর কাছে দুআ করুন, যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে দেন। রাসুল বললেনঃ
এই সূযোগ লাভে উককাশা তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪১৮ যুহায়র ইবনু হারব
(রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ
জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
এরা কারা? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যারা ঝাড়ফুক করায় না, শুভাগমনের লক্ষণ মেনে চলে না, অগ্নি দাগ গ্রহন করে না বরং সর্বদাই আল্লাহর উপর
নির্ভর করে (তারাই)।
৪১৯ কুতায়বা ইবনু
সাঈদ (রহঃ) সাথী ইবনু সা”দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মাতের মধ্য থেকে সত্তর হাজার বা সাত লক্ষ (এখানে রাবী আবূ হাযিম কোন সংখ্যাই
নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি) লোক পাশাপাশি দাড়িয়ে একে অন্যের হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। তাদের প্রথম ব্যাক্তি শেষ ব্যাক্তির প্রবেশের আগে প্রবেশ করবে না, বরং সবাই একত্রে প্রবেশ করবে! তাদের চেহারা পূর্মিমার
চাঁদের মত চমকাবে।
৪২০ সাঈদ ইবনু মানসূর
(রহঃ) হুসায়ন ইবনু আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনু আবদুর রহমানের কাছে উপস্হিত ছিলাম।
তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, গতকাল রাতে যে তারকাটি
বিচ্যুত হয়োছিল তা তোমরা কেউ দেখেছ কি? আমিঁ বললাম, আমি দেখেছি। অবশ্য
আমি রাতের সালাত (নামায/নামাজ) রত ছিলাম না; আমাকে বিচ্ছু দংশন করেছিল। সাঈদ বললেন, দংশন করার পরে তুমি কি করেছিলে? আমি বললাম, ঝাড়ফক করিয়েছি। তিনি বললেন, তোমাকে এই ঝাড়ফুক গ্রহণে কিসে উদ্বুদ্ধ করল?
আমি বললাম, সেই হার্দীস যা আমি শাবী থেকে শুনেছি। তিনি বললেন,
শাবী কী হাদীস বর্ণনা করেছেন?
আমি বললাম, শাবী বুরায়দা ইবনু হুসায়ন আল আসলামী (রাঃ) সুত্রে
বর্ণনা করেন যে, কুদৃষ্টি বা বিচ্ছু
দংশন ব্যতীত অন্য বিষয়ে ঝাঁড়ফুঁক করান উচিত নয়। তিনি বললেন, ভাল বলেছেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, স্বপ্নে আমার সামনে সকল উম্মাতকে উপস্হিত করা হয়, তখন কোন কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে দেখলাম যে, তাঁর সঙ্গে ছোট্ট
একটি দল রয়েছে; আর কাউকে দেখলাম,
তাঁর সঙ্গে একজন কিংবা দুজন
লোক; আবার কেউ এমনও ছিলেন যে,
তাঁর সাথে কেউ নেই। হঠাৎ আমার
সামনে এক বিরাট দল দেখা গেল। মনে হল, এরা আমার উম্মাত। তখন আমাকে বলা হল, ইনি . মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর উম্মাত; তবে আপনি উপর দিগস্তে তাকিয়ে দেখুন। আমি ওদিকে তাকালাম,
দেখি বিরাট এক দল। আবার বলা
হল, আপনি উপর দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন,
(আমি ওদিকে তাকালাম) এক বিরাট
দল। বলা হচ্ছেন, এরা আপনার উম্মাত।
এদের মধ্যে সত্তর হাজার এমন লোক আছে যারা শাস্তি ব্যতীত হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ
করবে। এই বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে চলে গেলেন। আর উপস্হিত
সাহাবীগণ তখন এই হিসাব ও আযাব বিহীন জান্নাতে প্রবেশকারী কারা হবেন, এই নিয়ে বিতর্ক শুরু করলেন। কেউ বললেন, তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
-এর সাহাবী। কেউ বললেন, তাঁরা সেসব লোক যাঁরা
ইসলামের উপর জন্মলাভ করেছে এবং আল্লাহর সঙ্গে কোন প্রকার শিরক করেনি। এসব বিতর্ক শুনে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তোমরা কি নিয়ে বিতর্ক করছ? সবাই বিষয়টি খুলে বললেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা সেই সব লোক, যারা ঝাঁড় ফুক করে না বা তা গ্রহণও করে না, শুভাগমনের শুভ লক্ষণ মানে না বরং সর্বদাই আল্লাহর
উপর নির্ভর করে। তখন উককাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জন্য দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের অন্তভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাদেরই একজন থাকবে। তারপর আরেক ব্যাক্তি
দাঁড়িয়ে বলল, আমার জন্যও দু’আ করুন,
আল্লাহ যেন আমাকেও তাঁদের
অন্তর্ভুক্ত করে নেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেনঃ এই
সুযোগ লাভে উককাশা তোমার চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে।
৪২১ আবূ বকর আবূ ইবনু
শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
স্বপ্নে আমার সামনে সকল উম্মাতকে পেশ করা হয় এভাবে বর্ণনাকারী হুসায়ন বর্ণিত হাদীসের
অনুরুপই বর্ণনা করেন। কিন্তু হাদীসটির প্রথমাংশ উল্লেখ করেননি।
৪২২ হান্নাদ ইবনু
সারী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের
জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট
যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের এক
চতুর্থাংশ হবে। (আবদুল্লাহ বলেন) এ শুনে আমরা (খুশিতে) অোল্লাহু আকবার- ধ্বনি দিলাম।
রাসুল বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরাই জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হবে? সাহাবী বলেন, আমরা আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিলাম তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে আমি আশা করি তোমরাই জান্নাতবাসীদের অর্ধেক
হবে। আর এ সম্পর্কে তোমাদের আরও বলছি কাফিরদের ভিড়ে তোমাদের অবস্হান এমনই স্পষ্ট হবে,
যেমন কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি
সাদা পশম অথবা একটি শ্বেত ষাঁড়ের গায়ে কালো পশম।
৪২৩ মুহাম্মাদ ইবনু
মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমরা প্রায় চল্লিশজনের মত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে একটি গম্বুজের নিচে অবস্হান করছিলাম।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে,
তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ
হবে? আমরা বললাম, হ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেনঃ তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট যে, তোমরা জান্নাতীদের
এক তৃতীয়াংশ হবে? আমরা বললাম,
হ্যা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম তাঁর, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আশা করি যে,
অবশ্যই তোমরা জান্নাতীদের
অর্ধেক হবে। কেননা কেবল মুসলিমই সেখানে প্রবেশের অনুমতি লাভ করবে। আর মুশরিকদের মধ্যে
তোমাদের অবস্হান হবে, যেমন কালো ষাড়ের গায়ে
একটি সাদা পশম অথবা লাল ষাড়ের গায়ে একটি কাল পশমের মতো।
৪২৪ মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চর্ম নির্মিত গম্বুজে হেলান দিয়ে বসে আমাদের সম্মোধন করে বললেনঃ
জেনে রাখ, মুসলিম ব্যতীত কেউ-ই
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর বললেনঃ আল্লাহ! আমি পৌছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। তারপর বললেনঃ তোমরা
কি পছন্দ কর যে, তোমরা জান্নাতীদের
এক চতুর্থাংশ হবে? আমরা বললাম,
হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি পছন্দ
কর যে, তোমরা জান্নাতীদের এক-তৃতীয়াংশ
হবে? আমরা বললাম, হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে আমি আশা
করি যে, তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক
হবে। তোমরা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অথবা (সংখ্যায়) সাদা ষাড়ের গায়ে একটি কাল পশমের
মত অথবা কাল ষাড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত।
৪২৫ উসমান ইবনু আবূ
শায়বা-আবাসী (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ (কিয়ামত দিবসে) আহবান করবেন, হে আদম তিনি উত্তরে বলবেন, আমি আপনার সামনে হাজির, আপনার কাছে শুভ কামনা করি এবং সকল মঙ্গল আপনারই
হাতে। মহান আল্লাহ বলবেনঃ জাহান্নামী দলকে বের কর। আদম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস
করবেনঃ জাহান্নামী দল কতজনের? মহান আল্লাহ বলবেনঃ
প্রতি হাজার থেকে নয়শ নিরানব্বই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
এই-ই সেই মুহর্ত, যখন বালক হয়ে যাবে
বৃদ্ধ, সকল গর্ভবতী তাদের গর্ভপাত
করে ফেলবে আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বস্তুত আল্লাহর আযাব
বড়ই কঠিন। রাবী বলেন, কথাগুলো সাহাবাগণের
কঠিন মনে হল। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আম্যদের মধ্যে কে সেই ব্যাক্তি? বললেনঃ আনন্দিত হও।
ইয়াজুজ ও মাজুজের সংখ্যা এক হাজার হলে তোমাদের সংখ্যা হবে একজন। ” তারপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্যই আমি আশা রাখিি যে,
তোমরা জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ
হবে। সাহাবী বলেন, আমরা আল্লাহর প্রশংসা
করলাম এবং ‘আল্লাহু আকবার’- ধ্বনি দিলাম। তারপর আবার বললেন, শপথ সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রান! অবশ্যই আমি আশা রাখিি,
জান্নাতীদের মধ্যে তোমরা তাদের
এক তৃতীয়াংশ হবে। সাহাবী বলেন, আমরা বললাম,
আলহামদু লিলাহ- এবং আল্লাহু
আকবার, ধ্বনি দিলাম। তারপর আবার রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কসম সে সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি আশা রাখিি যে,
তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক
হবে এবং তোমরা অন্যান্য উম্মাতের মধ্যে কালো ষাড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত অথবা গাধার
পায়ের চিহ্নের মত।
৪২৬ আবূ বকর ইবনু
আবূ শায়বা (রহঃ)&hصلى الله عليه وسلمllip;&hصلى الله عليه وسلمllip;আ’মাশ (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তারা উভয়ে বর্ণনা করেন, তোমরা সকল মানুষের
মধ্যে কালো ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা পশমের মত হবে অথবা সাদা ষাঁড়ের গায়ে কালো পশমের
মত হবে। ” তাঁরা “গাধার পায়ের চিহ্নের মত” এ কথা উল্লেখ করেননি।