৫০৮০ আবূ নুআইম (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তীরের ফলকের আঘাতের দ্বারা লদ্ধ শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তীরের ধারাল অংশের দ্বারা সেটি নিহত হয়েছে সেটি খাও। আর ফলকের বাঁটের আঘাতে যেটি নিহত হয়েছে সেটি অকীয- (অর্থাৎ থেতলিয়ে যাওয়া মৃতের অভভূক্ত)। আমি তাকে কুকুরের দ্বারা লদ্ধ শিকার সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেনঃ যে শিকারকে কুকুর তোমার জন্য ধরে রাখে সেটি খাও। কেননা, কুকুরের ঘায়েল করা যবাহর হুকুম রাখে। তবে তুমি যদি তোমার কুকুর বা কুকুকুগু৩লোর সঙ্গে অন্য কুকুবু , থাকে এবং তুমি আশংকা কর যে, অন্য কুকুরটিও তোমার কুকুরের শিকার পাকড়াও করেছে এবং হত্যা করেছে, তা হলে তা খেও না। কেননা, তুমি তো কেবল নিজের কুকুর ছাড়াকালে বিসমিল্লাহ বলেছ। অন্যের কুকুরের ক্ষেত্রে তা বলনি।
৫০৮১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজাসা করলাঁম। তিনি বললেনঃ যদি তীরের ধারাল অংশ দ্বারা আঘাত করে থাক তাহলে খাও আর যদি ফলকের আঘাত লেগে থাকে এবং শিকারটি মারা যায়, তা-হলে খেওনা। কেননা, সেটি , ওয়াকীয বা থেতলিয়ে মরার অতভুক্ত। আমি বললামঃ আমি তো শিকারের জন্য কুকুর ছেড়ে দেই। তিনি উত্তর দিলেনঃ যদি তোমার কুকুরকে তুমি বিসমিল্লাহ পড়ে ছেড়ে থাক, তা হলে খাও। আমি আবার বললামঃ যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে? তিঁনি বললেনঃ তা হলে খেও না। কননা, সে তা তোমার জন্য ধরে রাখেনি বরং সে ধরেছে নিজেব জন্যই। আমি বললামঃ আমি আমার কুকুরকে পাঠাবার পর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুরকেও দেখতে পাই, তখন? তিনি বললেনঃ তাহলে খেওনা। কেননা, তুমি তো কেবল তোমার কুকুর ছাড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলেছ, অন্য কুকুরের ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলনি।
৫০৮২ কাবীসা (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে শিকারে পাঠিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কুকুরগুলো তোমার জন্য যেটি ধরে রাখে সেটি খাও। আমি বললামঃ যদি ওরা হত্যা করে ফেলে? তিনি বললেনঃ যদি ওরা হত্যাও করে ফেলে। আমি বললাম আমরা তো ফলকের সাহায্যেও শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ সেটি খাও যেটি তীরে যখম করেছে। আর যেটি তীরের পার্শের আঘাতে মারা গেছে সেটি খেওনা।
৫০৮৩ আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আবূ সালাবা আল খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি। আমরা কি তাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি ও এমতাবস্হায় আমার জন্য কোনটী দুরস্ত হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করণি তাতে বিধান হল যদি ভিন্ন পাও তাহলে তাদের পাত্রে খাবে না। আর যদি না পাও তাহলে তাদের পাত্রগুলো ধৌত করে নাও। তারপর তাতে আহার কর। আর যে প্রানীকে তুমি তোমার তীর ধনূকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ সেটি খাও। আর যে প্রানীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কুকুরের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ। সেটি খাও আর যে প্রানীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ সেটি যদি যবাহ করার সুযোগ পাও, তা হলে খেতে পার।
৫০৮৪ ইউসুফ ইবনু রাশেদ (রহঃ) আবদূলাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এক ব্যাক্তিকে দেখলেন সে ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি তাকে বললেনঃ পাথর নিক্ষেপ করোনা। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর করতে নিষেধ করেছেন অথবা রাবী বলেছেনঃ পাথর ছোড়াকে তিনি অপছন্দ করতেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেতেনঃ এর দ্বারা কোন প্রানী শিকার করা হয় না এবং কোন কাজকেও ঘায়েল করা হয় না। তবে এটি কারো দাত ভেংগে ফেলতে পারে এবং চোখ উপড়ে দিতে পারে। তারপর তিনি আবার তাকে পাথর ছুড়তে দেখলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যে, তিনি পাথর নিহ্মেপ করতে নিষেধ করেছেন অথবা তিনি তা অপছন্দ করেছেন। অথচ তুমি পাথর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলব না এতকাল এতকাল পর্যন্ত।
৫০৮৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন তিনি বলতেনঃ যে ব্যাক্তি এমন কুকুর পালন করে যেটি পশু রক্ষার জন্যও নয় কিংবা শিকারের জন্যও নয়। তার আমল থেকে প্রত্যহ দুই কীরাত পরিমাণ হ্রাস পাবে।
৫০৮৬ মাককী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যাক্তি শিকারী কুকুর কিংবা , পশু রক্ষাকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কোন কুকুর পোষে, সেই ব্যাক্তির আমলের সাওয়াব থেকে প্রত্যহ দুই কীরাত পরিমাণ কমে যায়।
৫৩৮৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি পশু রক্ষাকারী কিংবা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করে, তার আমল থেকে প্রতিদিন দুই কীরাত পরিমান সওয়াব কমে যায়।
৫০৮৮ কুতায়বা ইবনু সা-ঈদ (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) খেবো বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলামঃ আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ তুমি যদি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠিয়ে থাক তাহলে ওরা যেগুলো তোমাদের জন্য ধরে রাখে, তা খাওই যদিও শিকারকে কুকুর হত্যা করে ফেলে। তবে যদি কুকুর শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে (তাহলে খাবে না)। কেননা, তখন আমার আশংকা হয় যে সে শিকার নিজের জন্য ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুর মিলে যায় তাহলে খাবে না।
৫০৮৯ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেছেনঃ হা যদি তোমার কুকুরকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠাও, এরপর কুকুর শিকার পাকড়াও করে এবং মেরে ফেলে, তবে তা খেতে পার। আর যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে খাবে না। কেননা! সে তো নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি এমন কুকুরদের সঙ্গে মিশে যায়, যাদের উপর বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি এবং সেজন্য শিকার ধরে মেরে ফেলে, তা হলে তা খাবে না। কেননা, তুমি তো জানো না যে কোন কুকুরটি হত্যা করেছে? আর যদি তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে থাক; এরপর তা একদিন বা দুইদিন পর এমতাবস্থায় হাতে পাও যে, তার গায়ে তোমার তীরের আঘাত ছাড়া অন্য কিছু নেই, তাহলে খাও। আর যদি তা পানির মধ্যে পড়ে থাকে, তা হলে তা খাবে না। আবদুল আলা দাউদ সুত্রে আদী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ যদি কোন বাক্তি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে এবং দুই তিন দিন পর্যন্ত সেই শিকারের অনুসন্ধানের পর মৃত অবস্থায় পায় এবং দেখে যে, তার গায়ে তার তীর লেগে রয়েছে (তখন সে কি করবে)? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইচ্ছা করলে সে তা খেতে পারে।
৫০৯০ আদম (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আমার কুকুরকে পাঠিয়ে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যদি বিসমিল্লাহ পড়ে তোমার কুকুরটিকে পাঠিয়ে থাক, এরপর সে শিকার ধরে মেরে ফেলে এবং কিছুটা খেয়ে ফেলে, তা হলে তুমি খেয়ো না। কেননা, সে তো নিজের জন্যই তা ধরেছে। আমি বললামঃ আমি আমার কুকুরটিরে পাঠালাম পরে তার সঙ্গে অন্য কুকুরও দেখতে পেলাম। আমি ঠিক জানিনা উত্তরের কে শিকার ধরেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তা খেয়ো না। কেননা, তুমি তো তোমার কুকুরের উপরই বিসমিল্লাহ পড়েছ, অন্যটির উপর পড়নি। আমি তাকে তীরের শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তুমি তীরের ধার দিয়ে আঘাত করে থাক, তাহলে খাও। আর যদি পার্শের দ্বারা আঘাত কর আর তাতে তা মারা যায় তাহলে সেটি থেতলিয়ে মারার অন্তভুক্ত। সুতবাং তা খেয়ো না।
৫০৯১ মুহাম্মদ (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করে বলছিলামঃ আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করতে অভ্যস্ত। তিনি বললেনঃ তুমি যদি আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে (বিসমিল্লাহ বলে) তোমার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কুকুরগুলোকে পাঠাও, তাহলে কুকুরগুলো তোমার জন্য যা ধরে রাখবে, তুমি তা খেতে পার। তবে কুকুর যদি কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে তুমি খেয়ো না। কেননা, আমার আশংকা হয় যে, সে তখন নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্যান্য কুকুর মিলিত হয়, তাহলেও খেয়ো না।
৫০৯২ আবূ আসিম ও আহমাদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) আবূ সালাবা খুশানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা আহলে কিট্যাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি, তাদের পাত্রে আহার করি। আর আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি, শিকার করি তীর ধনুক দিয়ে, প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয় এমন কুকুর দিয়েও। অতএব আমাকে বলে দিন, এর মধ্যে আমাদের জন্য কোনটি হালাল? তিনি বললেনঃ তুমি যা উল্লেখ করেছো তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস কর, তাদের পাত্রে খানা খাও। ভরে যদি তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র , পাও, তাহলে তাদের পাত্রে আহার করো না। আর যদি না পাও। তাহলে ঐ গুলো ধৌত করে তারপর তাতে আহার করবে। আর তুমি উল্লেখ করেছ যে তুমি শিকারের অধীনে থাক। তুমি যা তীর ধনুক দ্বারা শিকার কর, তাতে তুমি বিসমিল্লাহ পড়বে এবং তা খাবে। তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর নিয়ে যা শিকার কর, তাতে বিসমিল্লাহ পড়বে এবং তা খাবে। আর তুমি যা শিকার কর তোমার এমন কুকুরের দ্বারা যেটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয় সেখানে যদি যবাহ করার সুযোগ পাও তাহলে খেতে পার।
৫০৯৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন আমরা মাক্কার যাহরান নামক স্থানে একটি খরগোশ ধাওয়া ফরলাম। লোকজন তার পেছনে ছুটতে থাকে এবং তারা ব্যর্থ হয়। এরপর আমি তার পেছনে ছুটলাম। অবশেষে সেটি ধরে ফেললাম। তারপর আমি এটিকে আবূ তালহার নিকট নিয়ে এলাম। তিনি এটির উভয় রান ও নিতম্ব নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটি গ্রহণ করেন।
৫০৯৪ ইসমাঈল (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলেন। অবশেষে তিনি মক্কার কোন এক রাস্তা পর্যন্ত পৌছলে তিনি তার কয়েকজন সঙ্গীসহ পেছনে পড়ে গেলেন। তারা ছিলেন ইহরাম বাধা অবস্থায়। আর তিনি ছিলেন ইহরাম ছাড়া অবস্থায়। তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে তার ঘোড়ার উপর আরোহণ করলেন। তারপর সাথীদের তার হাতে তাঁর চাকু তুলে দিতে অনুরোধ করলেন। তারা অস্বীকার করলেন। অবশেষে তিনি নিজেই সেটি তুলে নিলেন এবং গাধাটির পিছনে দ্রুতবেগে ছুটলেন এবং সেটিকে হত্যা করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের কেউ কেউ তা খেলেন আবাব কেউ কেউ তা খেতে অস্বীকার করলেন। পরিশেষে তারা যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পৌছলেন তখন তারা বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেনঃ এটি তো এমন খাদা যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের খাওয়ার জনা দিয়েছেন।
৫০৯৫ ইসমাঈল (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ)-এর সুত্রে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে এতে রয়েছে যে- তিনি বললেনঃ তোমাদের সাথে কি তার কিছু গোশত আছে?
৫০৯৬ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী সফরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলাম। অন্যরা ছিলেন ইহরাম বাধা অবস্থায়। আর আমি ছিলাম ইহরাম বিহীন এবং ঘোড়ার উপর সাওয়ার। পর্যন্ত আরোহনে আমি ছিলাম দৃঢ়। এমন সময়ে আমি লোকজনকে দেখছিলাম যে, তারা আগ্রহ সহকারে কি যেন দেখছে। কাজেই আমিও দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি একটি বন্য গাধা। আমি লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম: এটি কি? তারা উত্তর দিল: আমরা জানিনা। আমি বসলাম: এটি বন্য গাধা? তারা বললঃ এটি তাই তুমি যা দেখছ। আমি আমার চাকুর কথা ভুলে গিয়েছিলাম তাই তাদের বললামঃ আমাকে আমার চাবুকটি তুলে দাও। তারা বললঃ আমরা তোমাকে এ কাজে সাহয্য করব না। অগত্যা আমি নেমে চাবুকটি তুলে নিলাম। তারপর সেটির পেছনে ছুটলাম। অবশেষে আমি সেটিকে ঘায়েল করলাম এবং তাদের কাছে এসে বললাম: যাও, এটাকে তুলে নিয়ে আসো।। তারা বললঃ আমরা ওটিকে স্পর্শ করবো না। তখন আমি নিজেই সেটিকে তুলে তাদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন তা খেতে অসম্মতি প্রকাশ করল। আর কয়েকজন তা খেল। আমি বললামঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে তোমাদের জন্য বিষয়টি জেনে নেব। এরপর আমি তাকে পেলাম এবং এ ঘটনা শুনলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাদের সংগে সেটির অবশিষ্ট কিছু আছে কি? আমি বললাম: হাঁ। তিনি বললেনঃ খাও। কেননা, এটি তো এমন খাবারের জিনিস যা আল্লাহ তোমাদের খাওয়ার জন্য দিয়েছেন।
৫০৯৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ‘জায়শুল খাবত’ অভিযানে ছিলাম। আমাদের সেনাপতি নিয়োগ করা হয়েছিল আবূ উবায়দা (রাঃ)-কে। এক সময় আমরা ভীষনভাবে ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে, সমুদ্র এমন একটি মৃত মাছ তীরে নিক্ষেপ করল যে এত বড় মাছ কখনো দেখা যায়নি। এটিকে -আম্বর- বলা হয়। আমরা অর্ধমাস যাবত এটি খেলাম। আবূ উবায়দা (রাঃ) এর একটি হাড় তুলে ধরলেন এবং এর নীচে দিয়ে একজন অশ্বারোহী অনায়াসে বেরিয়ে গেল।
৫০৯৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তিনশ- সাওয়ার পাঠালেন আমাদের সেনাপতি ছিলেন আবূ উবায়দা (রাঃ)। উদ্দোশ্য ছিল আমরা যেন কুরাইশদের একটি কাফেলার অপেক্ষা করি। তখন আমাদের ভীষণ ক্ষিধে পেল। এমন কি আমরা ‘খাবত’, (গাছের পাতা) খেতে আরম্ভ করলাম। ফলে এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় “জায়শুল খাবত”। তখন সমুদ্র আম্বর নামক একটি মাছ পাড়ে তুলে দেয়। আমরা এটি থেকে অর্ধমাস যাবত আহার করলাম। আমরা এর চর্ষি তেল রুপে গায়ে মাখতাম। ফলে আমাদের শরীর সতেজ হয়ে উঠে। আবূ উবায়দা (রাঃ) মাছটির পাজরের ফাকলোর একটি খাড়া করে ধরলেন, তখন একজন অশ্বারোহী তার নীচ দিবে অতিক্রিম করে গেল। আমাদের মধ্যে (কোরস ইবনু নাদ) এক ব্যাক্তি ছিলেন, খাদ্যাভাব তখন ভীষণ আকার ধারণ করেছিল। তখন তিনি তিনটি উট যবাহকরেন। তারপর আরো তিনটি যবাহ করেন। এরপর আবূ উবায়দা (রাঃ) তাকে বারণ করলেন।
৫০৯৯ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে সাতটি কিংবা ছয়টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। আমরা তার সংগে ফড়িং ও খাই। সুফিয়ান, আবূ আওয়ালা ও ইসরাইল এরা আবূ ইসাফুর ইবনু আওফার সুত্রে বর্ননা করেছেন সাতটি যুদ্ধে।
৫১০০ আবূ আসিম (রহঃ) আবূ সালাবা খুশানী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা আহলে কিরাবের এলাকায় বাস করি। তাদের পাত্রে খাই এবং আমরা শিকারের এলাকায় বাস করি, তীর-ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সাহায্যে শিকার করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যে বলেছো তোমরা আহলে কিতাবের ভুখণ্ডে থাক, অপহরন না হয়ে তাদের বাসন পত্রে খেও না যদি কোন উপায় না পাও তাহলে সেগুলো ধুয়ে তাতে খেয়ো। আর তুমি যে বললে তোমরা শিকারের অঞ্চলে বাস কর যদি তুমি তোমার তীরের দ্বারা যা শিকার করতে চাও সেখানে আল্লাহর নাম নাও এবং খাও। আর তুমি যা তোমার প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কুকুরের সাহায্যে শিকার কর, সেখানে আল্লাহর নাম নাও এবং খাও। আর তুমি যা শিকার কর তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুরের সাহায্যে এবং তা যবাহ করার সুযোগ (অর্থাৎ জীবিত) পাও তবে তা (যবাহ করে) খাও।
৫১০১ মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খায়বার বিজয়ের দিন সন্ধায় মুসলমানগন আশুন জ্বালালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কি জন! এ সব আগুন জালিয়েছ? তারা বললঃ গৃহ পেলিত গাধার গোশত। তিনি বললেনঃ পাতিলের সব কিছু ফেলে দাও এবং পাতিলগুলো ভেঙ্গে ফেল। দলের একজন দাড়িয়ে বললঃ পাতিলের সব কিছু ফেলে দেই এবং পাতিলগুলো ধূয়ে নেই? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাও করতে পার।
৫১০২ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে যুল হুলায়ফা- নামক স্থানে ছিলাম। লোকজন ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। তখন আমরা কিছু সংখ্যাক উট ও বকরী (গনীমত স্বরুপ) লাভ করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সকলের পেছনে। সবাই তাড়াতাড়ি করল এবং পাতিল চড়িয়ে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে এসে পৌছলেন। তখন তিনি পাতিলগুলো ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন। পাতিলগুলো ঢেলে দেওয়া হল। তারপর তিনি (প্রাপ্ত গনীমত) বণ্টন করলেন। দশটি বকরী একটি উটের সমান গণ্য করলেন। এ সময়ে একটি উট পালিয়েগেল। দলে অশ্বারোহীর সংখ্যা ছিল খুব কম। তারা উটটির পেছনে ছুটল কিন্তু তারা সেটি কাবু করতে ব্যর্থ হল। অবশেষে একজন উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ উটটিকে থামিয়ে দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সকল চতুষ্পদ প্রানীর মধ্যে বন্য ন্যায় পালিয়েযাওয়ার স্বভাব আছে। কাজেই যখন কোন প্রানী তোমাদের থেকে পালিয়েযায়, তখন তার সাথে তোমরা অনুরুপ ব্যবহার করবে। বর্ণনাকারী বলেন আমার দাদা বলেছেন, আমরা আশা করছিলাম কিংবা তিনি বলেছেন, আমরা আশংকা করছিলাম যে আগামীকাল আমরা তাদের সম্মুখীন হতে পারি। অথচ আমাদের নিকট কোন ছুরি নেই। তাহলে আমরা কি বাঁশের (বাখায়ী) দিয়ে যবাহ কববো? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে জিনিস রক্ত প্রবাহিত করে দেয় এবং তাতে বিসমিল্লাহ বলা হয় তা খাও। তবে দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। এ সম্পর্কে আমি তমাদের অবহিত করছি যে , দাঁত হল হাড় বিশেষ, আর নখ হল হাবশী সম্প্রদায়ের ছুরি।
৫১০৩ মুআলা ইবনু আস্বাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বালদাহ’ নামক স্থানে নিম্ন অঞ্চলে সায়েদ ইবনু আমর ইবনু নূফায়লের সংগে সাক্ষাত করেন। ঘটনাটি ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অহী নাযিল হওয়ার আগের। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে দস্তরখান বিছানো হল। তাতে ছিল গোশত। তখন যায়েদ ইবনু আমর তা থেকে খেতে অস্বীকার করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের দেব-দেবীর নামে সা যবাহ কর, তা থেকে আমি খাই না। আমি কেবল তাই খাই যা আল্লাহর নামে যবাহ করা হয়েছে।
৫১০৪ কুতায়বা (রহঃ) জুনদুব ইবনু সুফিয়ান বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে কুরবানী উদযাপন করলাম। তখন কতক লোক সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই তাদের কুরবানীর পশুগুলো যবাহ করে নিয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ী সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ফিরে যখন দেখলেন, তারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই যবাহ করে ফেলেছে। তখন বললেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে যবাহ করেছে! সে সেন তার বদলে আরেকটি যবাহ করে নেয়। আর যে ব্যাক্তিআমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পর্যন্ত যবাহ করেনি। সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবাহ করে।
৫১০৫ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ইবনু কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি ইবনু উমর (রাঃ)-কে জানিয়েছেন যে তার পিতা (কা’ব) তাকে বলেছেনঃ তাদের একটি দাসী -সালা- নামক স্থানে বকরী চরাত। এক সময় সে দেখতে , পেল পালের একটি বকরী মারা যাচ্ছে। সে একটি পাথর ভেঙ্গে তা দিয়ে সেটি যবাহ করল। তখন তিনি (কাব) পরিবারের লোকজনকে বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আসার আগে তোমরা তা খেয়ো না। অথবা তিনি বললেনঃ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করার এমন কাউকে পাঠিয়ে জেনে নেওয়ার আগে তোমরা তা খেয়ো না। এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন অথবা তিনি কাউকে তার নিকট পাঠালেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটি খেতে আদেশ দিলেন।
৫১০৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যে- কা’ব ইবনু মালিকের একটি দাসী বাজারের কাছে অবস্থিত ‘সালা’- নামক ছোট পাহাড়ের উপর তার বকরী চরাতো। তন্মধ্যে একটি বকরি মরণাপন্ন হয়ে পড়ে। সে এটিকে ধরল এবং পাথর ভেংগে তা দিয়ে সেটিকে যবাহ করে। তখন লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ঘটনাটি উল্লেখ করলে তিনি তাদের তা খাওয়ার অনুমতি দেন।
৫১০৭ আবদান (রহঃ) রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে কোন ছুরি নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন যে জিনিস রক্ত প্রবাহিত করে এবং যার উপর আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তা খাও। তবে দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। নখ হল হাবশীদের ছুরি, আর দাত হল হাড়। তখন একটি উট পালিয়েগেল। তীর নিক্ষেপ করে সেটিকে আটকানো হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সকল উটৈর মধ্যে বন্য জন্তুর মত পেলিযে যাওয়ার অভ্যাস আছে। কাজেই তন্মধ্যে কোনটি যদি তোমাদের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়, তাহলে তার সাথে এরুপ ব্যবহার কর।
৫১০৮ স্বাদকা (রহঃ) কাব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে জনৈক মহিলা পাথরের সাহায্যে একটি বকরী যবাহ করেছিস। এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সেটি খাওয়ার নির্দেশ দেন। লায়স (রহঃ) নাফি (রহঃ) সুত্রে বলেন: তিনি জনৈক আনসারকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবদুল্লাহ সম্পর্কে বলতে শুনেছেন যে, কাঁব (রাঃ)-এর একটি দাসী। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরুপ।
৫১০৯ ইসমাঈল (রহঃ) জনৈক আনসারী থেকে তিনি মু’আয ইবনু স্বাদ কিংবা স্বাদ ইবনু মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, কাব ইবনু মালিক (রাঃ)-এর একটি দাসী ‘সালা’ পাহাড়ে বকরী চরাতো। বকরীগুলোর মধ্যে একটিকে মরে যাচ্ছে দেখে সে একটি পাথর দিয়ে সেটিকে যবাহ কবল। এই ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি বললেনঃ সেটি খাও।
৫১১০ কাবীসা (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাও অর্থাৎ যা রক্ত প্রবাহিত করে তবে দাঁত ও নখের দ্বারা নয়।
৫১১১ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুম্লাহ (রহঃ) ড়ূআয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদল লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললঃ কিছু সংখ্যক মানুষ আমাদের নিকট গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানিনা যে, পশুটির যবাহের সময় বিসমিল্লাহ বলা হয়েছিল কিনা। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরাই এতে বিসমিল্লাহ পড় এবং তা খাও। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ প্রশ্নকারী দলটি ছিল কুফর থেকে নতুন ইসলাম গ্রহনকারী। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ দ্বারাওয়ারদী (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূ খালিদ ও তুফাবী (রহঃ) অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫১১২ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন আমরা খায়বরের একটি কিল্লা অবরোধ করে রেখেছিলাম। এমন সময়ে এক ব্যাক্তি চর্বি ভর্তি একটি থলে ছুড়ে মারল। আমি সেটি তুলে নেয়ার জন্য ছুটে গেলাম। ফিরে তাকিয়ে দেখি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । তাকে দেখে আমি লজ্জিত হয়ে গেলাম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তাদের খাবার দ্বারা তাদের যবাহকৃত জন্তু বুঝান হয়েছে।
৫১১৩ আমর ইবনু আলী (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আগামী দিন শত্রুর সন্মিখীন হব, অথচ আমাদের কাছে কোন ছুরি নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি ত্বরান্বিত করবে কিংবা তিনি বলেছেনঃ তাড়াতাড়ি (যবাহ) করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং এতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তা খাও। তবে দাত ও নখ দ্বারা নয়। তোমাকে বলছিঃ দাত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি। আমরা কিছু উট ও কস্তুরী গনীমত হিসাবে পেলাম। সেগুলো থেকে একটি উট পালিয়েযায়। একজন সেটির উপর তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ উটটি আটকিয়ে দেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ-এ সকল গৃহপালিত উটের মধ্যে বন্যপশুর স্বভাব রয়েছে। কাজেই তন্মধ্যে কোনটি যদি তোমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়, তা হলে তার সাথে অনুরুপ ব্যবহার করবে।
৫১১৪ খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আসমা বিনত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া নহর করে তা খেয়েছি।
৫১১৫ ইসহাক (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলে আমরা একটি ঘোড়া যবাহ করেছি। তখন আমরা মদিনায় থাকতাম। পরে আমরা সেটি খেয়েছি।
৫১১৬ কুতায়বা (রহঃ) আসমা বিনত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আমলে আমরা একটি ঘোড়া নহর করেছি। এরপর তা খেয়েছি। নহর কথাটির বর্ণনা এ সঙ্গে হিশামের সূত্র দিয়ে ওয়াকী ও ইবনু উমায়না অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫১১৭ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) হিশাম ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-এর সংগে হাকাম ইবনু আইয়্যুবের কাছে গেলাম। তখন আনাস (রাঃ) দেখলেন, কয়েকটি বালক, কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন কয়েকজন তরুণ একটি মুরগি বেঁধে তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে। আনাস (রাঃ) বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবন্তকে বেধে এভাবে তীর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন।
৫১১৮ আহমাদ ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদের কাছে গিয়েছিলেন। এ সময় ইয়াহইয়া পরিবারের একটি বালক একটি মুরগীকে বেঁধে তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করছিল। ইবনু উমর (রাঃ) মুরগীটির দিকে এগিয়ে গিয়ে সেটি মুক্ত করে দিলেন। তারপর মুরগী ও বালকটিকে সংগে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেনঃ তোমরা তোমাদের বালকদের হত্যার উসেশ্যে এভাবে বেঁধে পাখি মারতে বাধা দিও। কেননা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি: তিনি হত্যার উদেশ্যে জন্তু জানোয়ার বেধে তীর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন।
৫১১৯ আবূ নুমান (রহঃ) সাঈদ-ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বললেনঃ আমি ইবনু উমর (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। এরপর আমরা একদা তরুণ, কিংবা তিনি বলেছেন, একদল মানুষের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, তারা একটি মুরগি বেধে তার প্রতি তীর ছুড়ছে। তারা যখন ইবনু উমর (রাঃ)-কে দেখতে পেল, তখন তারা তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইবনু উমর (রাঃ) বললেনঃ এ কাজ কে করেছে? এ কাজ যে করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর অভিশাপ দিয়েছেন। শুবা (রহঃ) থেকে সুলায়মান অনুরুপ বর্ননা করেছেন। মিনহাল ইবনু উমার (রাঃ) এর সুত্রে বলেন, যে ব্যাক্তি পশুর অঙ্গহানি ঘটায় তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
৫১২০ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত আছে যে তিনি লুটতরাজ ও অঙ্গহানি ঘটাতে নিষেধ করেছেন।
৫১২১ ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ মূসা আশ-আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুরগীর গোশত খেতে দেখেছি। আবূ মামার (রহঃ) যাহদাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। জারমের এ গোত্র ও আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ছিল। আমাদের কাছে খাবার আনা ছিল। তাতে ছিল মোরগের গোশত। দলের মধ্যে লালচে রংয়ের এক ব্যাক্তি বসা ছিল। সে খাবারের দিকে অগ্রসর হল। আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) তখন বলেনঃ এগিয়ে এসো, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মোরগের গোশত খেতে দেখেছি। সে বললঃ আমি এটিকে এমন কিছু খেতে দেখেছি, যে কারণে তা খেতে আমি অপছন্দ করি। তখন আমি কসম করেছি যে, আমি তা খাব না। তিনি বললেনঃ এগিয়ে এসো, আমি তোমাকে জানাবো। কিংবা তিনি বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে হাদীস বর্ননা করবো। আমি আশআরীদের এক দল সহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলাম। এরপর আমি তার সামনে এসে উপস্থিত হই যখন তিনি ছিলেন রাগান্বিত। তখন তিনি বণ্টন করছিলেন সাদাকার কিছু জানোয়ার। আমরা তার কাছে সাওয়ারী চাইলাম। তখন তিনি কসম করে বললেনঃ আমাদের কোন সাওসারী , দিবেন না এবং বললেনঃ তোমাদের সাওয়ারীর জন্য দিতে পারি এমন কোন জন্তু আমার কাছে নেই। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গনীমতের-কিছু উট আনা হল। তিনি বললেনঃ আশ আরীগণ কোথায়? আশ আরীগণ কোথায়? আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) বলেনঃ এরপর তিনি আমাদের সাদাচুল বিশিষ্ট বলিষ্ট পাচটি উট দিলেন। আমরা কিছু দুরে গিয়ে অবস্থান করলাম। তখন আমি আমার সঙ্গীদের বললাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কসমের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। আল্লাহর কসম যদি আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার কসমের ব্যাপারে গাফিল রাখি, তাহলে আমরা কোনদিন সফলকাম হবো না। কাজেই আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ফিরে গিয়ে তাকে বলা হলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা আপনার নিকট সাওয়ায়ী চেয়েছিলাম তখন আপনি আমাদের সাওসারী দেবেন না বলে কসম করেছিলেন। আমাদের মনে হয় আপনি আপনার কসমের কথা ভুলে গিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ নিজেই তো আমাদের সাওয়ারীর জানোয়ার দিয়েছেন। আল্লাহর কসম, আমি যখন কোন ব্যাপারে কসম করি। এরপর কসমের বিপরীত কাজ তার চাইতে মঙ্গলজনক মনে করি- আনি আমি মঙ্গলজনঁক কাজটিকে করি এবং কাফফারা দিয়ে হালাল হয়ে যাই।
৫১২২ হুমায়দী (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে আমরা একটি ঘোড়া নহর করেছি এবং সেটি খেলাম।
৫১২৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খায়বারের দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। আর ঘোড়ার গোশতের ব্যাপারে তিনি অনুমতি দিয়েছেন।
৫১২৪ সাদাকা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, খায়বরের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
৫১২৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। ইবনু মুবারক, উবায়দুল্লাহ (রহঃ) সুত্রে থেকে অনুরুপ বর্ননা করেছেন। উবায়দুল্লাহ সালিম সুত্রে আবূ উসামা (রহঃ) অনুরুপ বর্ননা করেছেন।
৫১২৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ খায়বারের বছর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুতআ (স্বল্পকালের জন্য বিয়ে করা) থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
৫১২৭ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খায়বারের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। তবে ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।
৫১২৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারাআ ও ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তারা বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
৫১২৯ ইসহাক (রহঃ) আবূ সালাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া হারাম করেতো। ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে যুবায়দী ও উকায়ল অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। যুহরী (রহঃ)-এর বরাত দিয়ে মালিক, মামার, মাজিশুন, ইউনুস ও ইবনু ইসহাক বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাত বিশিষ্ট সকল হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন।
৫১৩০ মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)- থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনেক আগন্তুক এসে বললঃ গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। তারপর আরেক-জন আগন্তক এসে বললঃ গাধাগুলো খেয়ে ফেলা হচ্ছে। তারপর আরেকজন আগন্তক এসে বলল: গাধাগুলোকে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা কারীকে ঘোষণার আদেশ দিলেন। সে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলঃ আল্লাহ ও তার রাসুল তোমাদের গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা, এগুলো ঘ্রিন্য। তখন ডেকটিগুলোকে উলটিয়ে দেয়া হল, অথচ তাতে গোশত টগবগ করছিল।
৫১৩১ আলী ইবনু আবদূলাহ (রহঃ) আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি জাবির ইবনু সায়দভে জিজ্ঞাসা করলাম: মনে করে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। তিনি বললেনঃ হাকাম ইবনু আমর গিফারীও বসরায় আমাদের কাছে এ কথা বলতেন। কিন্তু ইবনু আব্বাস (রাঃ) তা অস্বীকার করেছেন। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেছেনঃ বলুন আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে তাতে, লোকজন যা আহার করে তার মধ্যে আমি কিছুই নিষিদ্ধ পাই না শেষ পর্যন্ত। (সুরা আন-আমঃ ১৪৫)।
৫১৩২ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সালাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাত বিশিষ্ট সর্বপ্রকার হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন। যুহরী (রহঃ) থেকে ইউনূস, মামার ইবনু উয়ায়না ও মাজিশুন অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।
৫১৩৩ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মৃত বকরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ তোমরা এটির চামড়াটি কেন কাজে লাগালে না? লোকজন উক্তি করলঃ এটি মৃত জানোয়ার। তিনি বললেনঃ শুধূ তার খাওয়া হারাম করা হয়েছে।
৫১৩৪ খাত্তাব ইবনু উসমান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মৃত বকরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ এটির মালিকের কি হল? যদি এটির চামড়া থেকে তারা উপকার গ্রহণ করত।
৫১৩৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন আঘাত প্রাপ্ত লোক যে আল্লাহর পথে আঘাত পায়, সে কিয়ামতেয় দিন এমতাধস্থায় আসবে যে তার ক্ষত স্থান থেকে টকটকে লাল রক্ত ঝরছে এবং তার সুগন্ধি হবে কস্তুরীর সুগন্ধির ন্যায়।
৫১৩৬ মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হল কস্তুরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও কামারের হাপরের ন্যায়। মৃগ-কস্তুরী বহনকারী হযত তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি লাভ করবে সুবাস। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে পাবে দুর্গন্ধ।
৫১৩৭ আল ওয়ালাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা ‘মাররুয যাহরান’ নামক স্থানে একটি খরগোশ ধাওয়া করলাম। তখন লোকজনও এর পেছনে ছুটল এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এরপর আমি সেটিকে ধরতে সক্ষম হালাম এবং আবূ তালহার নিকই নিয়ে এলাম। তিনি এটিকে যবাহ করলেন এবং তার পিছনের অংশ কিংবা তিনি বলেছেন দুই রান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাহে পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন।
৫১৩৮ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুই সাপ আমি খাই না, আর হারামও বলিনা।
৫১৩৯ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে মায়মুনা (রাঃ)-এর গৃহে গেলেন। সেখানে ভুনা করা গুই পেস করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে হাত বাড়ালেন। এ সমমু জনৈক মহিলা বললঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানিয়ে দাও, তিনি কি জিনিস খেতে যাচ্ছেন। তখন তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি গুহ সাপ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে হাত সরিয়ে নিলেন। খালিদ (রাঃ) বলেনা আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এটি কি হারাম? তিনি বললেনঃ না, হারাম নয়। তবে আমাদের অঞ্চলে এটি নেই। তাই আমি একে ঘৃণা করি। খালিদ (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি তা আমার দিকে এনে খেতে লাগলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকিয়ে দেখছিলেন।
৫১৪০ হুমায়দী (রহঃ) মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একটি ইদুর ঘিয়ের মধ্যে পড়ে মরে গিয়েছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ ইদুরটি এবং তার আশ-পাশের অংশ ফেলে দাও। এরপর তা খাও। সুফিয়ান (রহঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হয় যে মামার এ হাদীসটি যুহরী সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সনদে বর্ননা করেন। তিনি বললেনঃ আমি যুহরী (রহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্বাস, মায়মুনা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছেন। তিনি আরো বলেন যে, আমি যুহরী থেকে উক্ত সনদে এ হাদীসটি একাধিকবার শুনেছি।
৫১৪১ আবদান (রহঃ) যুহরী (রহঃ) কে জুজ্ঞাসা করা হয় জমাট কিংবা তরল তৈল বা ঘিয়ের মধ্যে ইদুর ইত্যাদি জানোয়ার পড়ে মারা গেলে তার কি হুকুম? তিনি বললেনঃ আমাদের কাছে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ সূত্রে হাদীস পৌছেছে যে, ঘিয়ের মধ্যে পড়ে একটি ইদূর মারা গিয়েছিল, সেটির ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিয়েছিলেন, ইদূর ও এর সংলগ্ন অংশ ফেলে দিতে, এরপর তা ফেলে দেওয়া হয় এবং খাওয়া হয়।
৫১৪২ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এমন একটি ইদুর সম্পর্কে যা ঘিয়ের মধ্যে পড়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন ইদুরটি এবং তার আশপাশের অংশ ফেলে দাও এবং অবশিষ্ট অংশ খাও।
৫১৪৩ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি জানোয়ারের মুখে চিহ্ন লাগানোকে মাকরুহ মনে করতেন। ইবনু উমর (রাঃ) আরো বলেছেন: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানোয়ারের মুখে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। আনকাযী (রহঃ) হানযালা সূত্রে কুতায়বা (রহঃ) অনুরুপ বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ অর্থাৎ মুখে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন।
৫১৪৪ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার এক ভাইকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম, যেন তিনি তাখে তাহনীক করেন অর্থাৎ খেজুর বা অন্য কিছু একবার চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে দেন। এ সময়ে তিনি তার উট বাধার স্থানে ছিলেন। তখন আমি তাকে দেখলাম তিনি একটি বকরীর গায়ে চিহ্ন লাগাচ্ছেন। বর্ননাকারী বলেন আমার মনে হয় তিনি (হিশাম) বলেছেন বকরীর কানে চিহ্ন লাগাচ্ছেন।
৫১৪৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম। আগামী দিন আমরা শক্রর মুকাবিলা করবো; অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। তিনি বললেনঃ সতর্ক দৃষ্টি রাখো কিংবা তিনি বলেছেনঃ জলদি করো। যে জিনিস রক্ত বহায় এবং যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, সেটি খাও। যতক্ষন না সেটি দাত কিংবা নখ হয়। এ ব্যাপারে তোমাদের জানোাচ্ছি, দাঁত হলো হাড়, আর নখ হল হাবশীদের ছুরি। দলের দ্রুতগামী লোকেরা আগে বেড়ে গেল এবং গনীমতের মালামাল লাভ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন লোকজনের পেছনে। তারা ডেকচি চড়িয়ে দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তা উল্টিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন, তারপর সেজলো উল্টিয়ে দেয়া হল। এরপর তিনি তাদের মধ্যে মালে গনীমত বণ্টন করলেন এবং দশটি বকরীকে একটি উটের সমান গন্য করলেন। দলে অগ্রবর্তীদের কাছ থেকে একটি উট ছুটে গিয়েছিল। অথচ তাদের সংগে কোন অশ্বারোহী ছিল না। এ অবস্থায় এক ব্যাক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ উটটিকে থামিয়ে দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বন্য পশুর স্বভাব রয়েছে। কাজেই, তন্মধ্যে কোনটি যদি এরুপ করে, তাহলে তার সংগে অনুরুপ ব্যবহার করবে।
৫১৪৬ মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) রাফী ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন এক সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে ছিলাম। তখন উটগুলোর মধ্য থেকে একটি উট পালিয়েযায়। তিনি বলেন তখন এক ব্যাক্তি সেটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ সেটিকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ সকল পশুর মধ্যে বন্যপশুর চাঞ্চল্য আছে। সুতরাং তার মধ্যে যেটি তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠলে সেটির সংগে অনুরুপ ব্যবহার করো। তিনি বলেন আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা অনেক সময় যুদ্ধ অভিযানে বা সফরে থাকি যবাহ করতে ইচ্ছা করি কিন্তু ছুরি থাকে না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আঘাত করো এমন জিনিস দ্বারা যা রক্ত প্রবাহিত করে অথবা তিনি বলেছেনঃ এমন জিনিস দ্বারা যা রক্ত ঝরায় এবং যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে সেটি খাও, তবে দাত ও নখ ব্যতীত। কেননা দাত হল হাড়, আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।