৪৬১৪ উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ সালমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে এবং মদিনাতেও তিনি দশবছর অবস্থান করেন (এ সময় তাঁর প্রতি দশবছর কুরআন নাযিল হয়েছে)।
৪৬১৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে অবগত করা হয়েছে যে, একদা জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে আগমন করলেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। জিব্রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা (রাঃ) –কে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? অথবা তিনি এ ধরনের কোন কথা জিজ্ঞেস করলেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন, ইনি দাহইয়া (রাঃ)। তারপর জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষণে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খবর না শুণা পর্যন্ত আমি তাঁকে সে দাহইয়া (রাঃ) ই মনে করেছি। অথবা তিনি (বর্ণনাকারী) অনুরূপ কোন কথা বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী মুতামির (রহঃ) বলেন, আমার পিতা সুলায়মান বলেছেন, আমি উসমান (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কার থেকে এ ঘটনা শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনু যায়দের কাছ থেকে।
৪৬১৬ আবদল্লাহ্ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরাযরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নাবী কে তা৭র যুগের চাহিদা মুতাবিক কিছু মুজিযা দান করতে হয়েছে, যা দেখে লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ওহী- যা আল্লাহ পাক আমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং আমি আশা করি, কিয়ামতের দিন তাদের অনুসারীদের তুলনায় আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।
৪৬১৭ আমর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ধারাবাহিকভাবে ওহী নাযিল করেন। এরপর তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন।
৪৬১৮ আবূ নু’আইম (রহঃ) জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে এক কি দু’রাত তিনি উঠতে পারেননি। জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এস বলল, হে মুহাম্মদ! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছেন। তখন আল্লাহ নাযিল করলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর, যখন তা হয় নিঝুম। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি”।
৪৬১৯ আবূল ইয়ামন (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ), সাঈদ ইবনুল আস (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) এবং আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ)- কে পবিত্র কুরআন গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দিলেন এবং তাদেরকে বললেন, আল কুরআনের কোন শব্দের আরবী হওয়ার ব্যাপারে যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতবিরোধ হলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। অতএব তাঁরা তা-ই করলেন।
৪৬২০ আবূ নু’আয়ইম (রহঃ) ইয়ালা ইবনু উমাইয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলতেন, হায়! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী নাযিল হওয়ার সময় যদি তাঁকে দেখতে পারতাম। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়িররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন এবং চাঁদোয়া দিয়ে তাঁর উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন কতিপয় সাহাবী। এমতাবস্থায়, সুগন্ধি মেখে এক ব্যাক্তি এলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। ঐ সম্পর্কে আপনার মত কী, যে সুগন্ধি মেখে জুব্বা পরে ইহ্রাম বেঁধেছে? কিছু সময়ের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা করলেন, এমনি সময় ওহী এলো। উমর (রাঃ) ইয়ালা (রাঃ) কে ইশারা দিয়ে ডাকলেন। ইয়ালা (রাঃ) এলেন এবং তাঁর মাথা ঐ চাঁদরের ভেতর ঢোকালেন। দেখলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখমন্ডল সম্পূর্ণ রক্তিম বর্ণ এবং কিছু সময়ের জন্য অত্যন্ত জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছেন। তারপর তাঁর থেকে এ অবস্থা সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হওয়ার পর তিনি বললেন, প্রশ্নকারী কোথায়? যে কিছুক্ষণ পূর্বে আমাকে উমরা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল। লোকটিকে তালাশ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সুগন্ধি তুমি তোমার শরীরে মেখেছ, তা তিনবার ধুয়ে ফেলবে আর জুব্বাটি খুলে ফেলবে। তারপর তুমি তোমার উমরাতে ঐ সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করবে, যা তুমি হাজ্জের (হজ্জ) মধ্যে করে থাক।
৪৬২১ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যদ্ধে বহু লোক শহীদ হবার পর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। এ সময় উমর (রাঃ) ও তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। উমর (রাঃ) আমার কাছে এসে বলেছেন, ইয়ামামার যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্তদের মধ্যে কারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশংকা করছি, এমনিভাবে যদি কারীগণ শহীদ হয়ে যান, তাহলে কুরআন শরীফের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব আমি মনে করি যে, আপনি কুরআন সংকলনের নির্দেশ দিন। উত্তরে আমি উমর (রাঃ) কে বললাম, যে কাজ আল্লাহর রাসূল করেন নি, সে কাজ তুমি কিভাবে করবে? উমর (রাঃ) এর জবাবে বললেন, আল্লাহর কসম! এটা একটা উত্তম কাজ। উমরা (রাঃ) এর কথাটি আমার কাছে বার বার বলতে থাকলে অবশেষে আল্লাহ তা’আলা ও কাজের জন্য আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দিলেন এবং এ বিষয়ে উমর যা ভাল মনে করলেন আমিও তাই করলাম। যায় (রাঃ) বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমার কোন সংশয় নেই। অধিকন্তু তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহীর লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কুরআন শরীফের অংশগুলোকে তালাশ করে একত্রিত কর। আল্লাহর শপথ! তারা যদি আমাকে একটি পাহাড় এক স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত, তাহলেও তা আমার কাছে কুরআন সংকলেনর নির্দেশের চাইতে কঠিন বলে মনে হত না। আমি বললাম, যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি, আপনারা সে কাজ কিভাবে করবেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা একটা কল্যাণকর কাজ। এ কথাটি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আমার কাছে বার বার বলতে থাকেন, অবশেষে আল্লাহ পাক আমার বক্ষকে প্রশস্ত ও প্রসন্ন করে দিলেন সে কাজের জন্য, যে কাজের জন্য তিনি আবূ বকর এবং উমর (রাঃ) এর বক্ষকে প্রশস্ত ও প্রসন্ন করে দিয়েছিলেন। এরপর আমি কুরআন অনুসন্ধান কাজে আত্মনিয়োগ করলাম এবং খেজুর পাতা, প্রস্তরখন্ড ও মানুষের বক্ষ থেকে আমি তা সংগ্রহ করতে থাকলাম। এমনকি আমি সূরা তওবার শেষাংশ আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি পাইনি। আয়াতগুলো হচ্ছে এইঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলো, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি (১২৮-১২৯)। তারপর সংকলিত সহীফাসমূহ মৃত্যু পর্যন্ত আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে সংরক্ষিত ছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পর তা উমর (রাঃ) এর কাছে সংরক্ষিত ছিল, যতদিন তিনি জীবিত ছিলেন। এরপর তা উমর-তনয়া হাফসা (রাঃ) এর কাছে সংরক্ষিত ছিল।
৪৬২২ মূসা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) একবার উসমান (রাঃ) এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজানো বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য রণ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযায়ফাকে ভীষণ চিন্তিত করল। সুতরাং তিনি উসমান (রাঃ) কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত মত পার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসামান (রাঃ) হাফসা (রাঃ) এর কাছে জনৈক ব্যাক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব। হাফসা (রাঃ) তখন সেগুলো উসমান (রাঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), সাঈদ ইবনু আস (রাঃ) এবং আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ)- কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় হযরত উসমান (রাঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যাক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল, তখন উসমান (রাঃ) মূল লিপিগুলো হাফসা (রাঃ) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ- সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) খারিজা ইবনু যায়দ ইবনু সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবনু সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থকে হারিয়ে যায়; অথচ আমি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠ করতে শুনেছি। তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে আমরা তা খুযায়মা ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি”। (৩৩:২৩)
৪৬২৩ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো অনুসন্ধান কর। এরপর আমি অনুসন্ধান করলাম। শেষ পর্যায়ে সূরা তওবার শেষ দু’টো আয়াত আমি আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) এর কাছে পেলাম। তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পায়নি। আয়াত দু’টো হচ্ছে এইঃ ‘তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলবে, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের অধিপতি”। (৯:১২৮-১২৯)
৪৬২৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়াতটি নাযিল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যায়দকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল সে যেন কাষ্ঠখন্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখ । এ সময় অন্ধ সাহাবী আমর ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ), রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কি নির্দেশ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে নাযলি হলঃ “মু’মিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়, অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে তারা সমান নয়” (৪:৯৫)।
৪৬২৫ সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলাম এবং পুনঃ পুনঃ অন্যভাবে পাঠ করার জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ করতে থাকলে তিনি আমার জন্য পাঠ পদ্ধতি বাড়িয়ে যেতে লাগলেন। অবশেষে তিনি সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় তিলাওয়াত করে সমাপ্ত করলেন।
৪৬২৬ সাঈদ উব্ন উফায়র (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইবনু হাকীম (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় সূরা ফুরকান তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং গভীর মনোযোগ সহকারে আমি তার কিরাআত শুনেছি। তিনি বিভিন্নভাবে কিরাআত পাঠ করেছেন; অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এভাবে শিক্ষা দেননি। এ কারনে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মাঝে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্যত হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু বড় কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সে সালাম ফিরালে আমি চাঁদর দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে এ সূরা যে ভাবে পাঠ করতে শুনলাম, এভাবে তোমাকে কে শিক্ষা দিয়েছে? সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই আমাকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছ। কারন, তুমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করেছ, এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপর আমি তাকে জোর করে টেনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম, আপনি আমাকে সূরা ফুরকান যে পদ্ধতেত পাঠ করতে শিখিয়েছেন এ লোককে আমি এর থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তা পাঠ করতে শুনেছি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। হিশাম, তুমি পাঠ করে শোনাও। তারপর সে সেভাবেই পাঠ করে শোনাল, যেভাবে আমি তাকে পাঠ করতে শুনেছি। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, এভাবেই নাযিল করা হয়েছে। এরপর বললেন, হে উমর! তুমিও পড়। সুতরাং আমাকে তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবেই আমি পাঠ করলাম। এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।
৪৬২৭ ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইউসুফ ইবনু মাহিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ইরাকী ব্যাক্তি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলঃ কোন ধরনের কাফন শ্রেষ্ঠ? তিনি বললেন, আফসোস তোমার প্রতি! এতে তোমার কি ক্ষতি? তারপর লোকটি বলল, হে উম্মুল মু’মিনীন! আমাকে আপনি আপনার কুরআন শরীফের কপি দেখান। তিনি বললেন, কেন? লোকটি বলল, এ তারতীবে কুরআন শরীফকে বিন্যাস্ত করার জন্য। কারণ লোকেরা তাকে অবিন্যাস্তভাবে পাঠ করে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তোমরা এর যে অংশই আগে পাঠ কর না কেন, এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। মুফাস্সাল সূরাসমূহের মাঝে প্রথমত ঐ সূরাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে জান্নাত ও জাহান্নামের উল্লেখ রয়েছে। তারপর যখন লোকেরা দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিণ হতে লাগল তখন হালাল-হারামের বিভিন্ন সম্বলিত সূরাগুলো নাযিল হয়েছে। যদি সূচনাতেই এ আয়াত নাযিল হত যে, তোমরা মদ পান করো না, তাহলে লোকেরা বলত, আমরা কখনো মদপান ত্যাগ করব না। যদি শুরুতেই নাযিল হতো তোমরা ব্যভিচার করো না, তাহলে তারা বলত আমরা কখনো অবৈধ যৌনাচার বর্জন করব না। আমি যখন খেলাধুলার বয়সী একজন বালিকা তখন মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি নিম্নলিখিত আয়াতগুলো নাযিল হলঃ #### মানে, অধিকন্তু কিয়ামত তাদের শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর”। বিধান সম্বলিত সূরা বাকার ও সূরা নিসা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থাকাকালীন অবস্থায় নাযিল হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে সংরক্ষিত কুরআনের কপি বের করলেন এবং সূরাসমূহ লেখালেন।
৪৬২৮ আদম (রহঃ) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা কাহ্ফ, সূরা মরিয়ম, সূরা তাহা এবং সূরা আম্বিয়া সম্পর্কে বলতেন যে, এগুলো হচ্ছে সূরা সমূহের মাঝে উন্নত এবং এগুলো ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে।
৪৬২৯ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসার পূর্বে আমি সূরাটি শিখেছি।
৪৬৩০ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, সমপর্যায়ের ঐ সূরাগুলো সম্পর্কে আমি খুব অবগত আছি, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাকআতে জোড়া জোড়া পাঠ করতেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) দাড়ালেন এবং আলকামা (রাঃ) তাকে অনুসরণ করলেন। যখন আলকামা (রাঃ) বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলেন তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এগুলো মোট বিশটি সূরা, ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর সংকলন মুতাবিক মুফাসসাল থেকে যার শুরু এবং যার শেষ হচ্ছে অর্থাৎ ‘হামীম’ ‘আদদুখান’ এবং ‘আম্মা ইয়াতাসা আলূন’।
৪৬৩১ ইয়াহইয়া ইবনু কাযা’আ (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের কাজে ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল, বিশেষভাবে রমযান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোন সীমা ছিল না) কেননা, রমযান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাত্রে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যানণর ব্যাপারে প্রবহমান বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল হতেন।
৪৬৩২ খালিদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রতি বছর জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একবার কুরআন শরীফ দাওর করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাভ করেন সে বছর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে দু’বার দাওর করেন। প্রতি বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি ওফাত লাব করেন সে বছর তিনি বিশ দিন ই’তিকাফ করেন।
৪৬৩৩ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদুল্লাহ্ ইবনু আমর আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আমি তাঁকে ঐ সময় থেকে ভালবাসি, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি যে, তোমরা চার ব্যাক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর- আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ), সালিম (রাঃ), মুআয (রাঃ) এবং উবায় ইবনু কা’ব (রাঃ)।
৪৬৩৪ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) শাকীক ইবনু সালামা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, একদা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ। সত্তরেরও কিছু অধিক সূরা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহর কসম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা জানেন, আমি তাঁদের চাইতে আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে সর্বাধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের চাইতে উত্তম নই। শাকীক (রহঃ) বলেন, সাহাবিগণ তাঁর বক্তব্য শুনে কি বলেন এ কথা শোনার জন্য আমি মজলিশে বসেছি, কিন্তু আমি কাউকে তার বক্তব্যে কোন আপত্তি উত্থাপন করতে শুনিনি।
৪৬৩৫ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা হিমস শহরে ছিলাম। এ সময় ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সূরা ইউসুফ তিলাওয়াত করলেন। তখন এক ব্যাক্তি বললেন, এসূরা এভাবে নাযিল হয়নি। এ কথা শনে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এ সূরা তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলেছেন, তুমি সুন্দরভাবে পাঠ করেছ। এসময় তিনি ঐ লোকটির মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলেন। তাই তিনি তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা এবং মদ পান করার মত জঘন্যতম অপরাধ এক সাথে করছ? এরপর তিনি তার ওপর হদ (অপরাধে নির্ধারিত শাস্তি) জারি করলেন।
৪৬৩৬ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরা সম্পর্কে আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যাক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চাইতে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট গিয়ে পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছতাম।
৪৬৩৭ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় কে কে কুরআন সংগ্রহ করেছেন? তিনি বললেন, চারজন এবং তাঁরা চারজনই ছিলেন আনসারী সাহাবী। তাঁরা হলেনঃ উরায় ইবনু কা’ব (রাঃ), মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ), যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং আু যায়দ (রাঃ)। (অন্য সনদে) ফাদল (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে অনুরূপ করেছেন।
৪৬৩৮ মুআল্লা ইবনু আসা’দ (রাঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। তখন চার ব্যাক্তি ছাড়া আর কেউ কুরআন সংগ্রহ করেননি। তাঁরা হলেন আবূদ্ দারদা (রাঃ), মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ), যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং আবূ যায়দ (রাঃ)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা আবূ যায়দ (রাঃ) এর উত্তরসুরি।
৪৬৩৯ সা’দকা ইবনু ফদল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেন, আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবায় (রাঃ) আমাদের মাঝে বর্বোত্তম কারী। এতদসত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করেছেন, আমার তার কতিপয় অংশ বর্জন করছি, অথচ তিনি বলেছেন, আমি তা আল্রাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যবান মুবারক থেকে শুনেছি, কোন কিছুর বিনিময় আমি তা বর্জন করব না। আল্লাহ বলেছেন, আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা বিস্মৃত হতে দিলে তা হতে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি।
৪৬৪০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ ইবনু মু’আল্লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সালাত (নামায/নামাজ)রত ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন; কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম না। পরে আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি সালাত (নামায/নামাজ)রত ছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’আলা কি বলেননি, “হে মু’মিনগণ, আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তোমাদেরকে আহবান করেন তখন আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আহবানে সাড়া দাও”। তারপর তিনি বললেন, মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমি কি তোমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা শিক্ষা দেব না? তখণ তিনি আমার হাত ধরলেন। যখন আমরা মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করলাম তখন আমি বললাম, ইয়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো বলেছেন মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমাকে কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরার কথা বলবেন। তিনি বললেন, তা হলঃ “আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন”। এটা বারবার পাঠিত সাতটি আয়াত (সাবআ মাছানী) এবং কুরআন আজীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।
৪৬৪১ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম। তখন একটি বালিকা এসে বলল, এখানকার গোত্রপ্রধানকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ অনুপস্থি। অতএব, আপনাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন? তখণ আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালকটির সঙ্গে গেলেন। যদিও আমরা ভাবিনি যে সে ঝাড়-ফুঁক জানে। এরপর সে ঝাড়-ফুঁক করল এবং গোত্রপ্রধান সুস্থ্য হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বক্রী দান করলেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করালেন। ফিরে আসার পথে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জানো (অথবা রাবীর সন্দেহ) তুমি কি ঝাড়-ফুঁক করতে পার? সে উত্তর করল, না আমি তো কেবল উম্মুল কিতাব- সূরা ফাতিহা দিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি। আমরা তখন বললাম, যতক্ষণ না আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছে তাঁকে জিজ্ঞেস করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না। এরপর আমরা মদিনায় পৌছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ঘটনাটি তুলে ধরলাম। তিনি বললেন, সে কেমন করে জানোল যে, তা (সূরা ফাতিহা) চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বন্টন করে নাও এবং আমার জন্যও একাংশ রাখো। আবূ মা’মার আবূ সাঈদ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৪৬৪২ মুহাম্মদ ইব্ন কাসীর (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে দু’টি আয়াত তিলাওয়াত করে। আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। উসমান ইব্ন হায়সাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানে প্রাপ্ত যাকাতের মাল হেফাজতের দায়িত্ব দিলেন। এ সময় জনৈক ব্যাক্তি এসে খাদ্য-দ্রব্য উঠিয়ে নিতে উদ্যত হল। আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাব। এরপর পুরো হাদীস বর্ণনা করে। তখন লোকটি বলল, যখন আপনি ঘুমাতে যাবেন, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন। এর ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান আপনার কাছে আসতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ঘটনা শুনে) বললেন, (যে তোমার কাছে এসেছিল) সে সত্য কথা বলেছে, যদিও সে বড় মিথ্যাবাদী শয়তান।
৪৬৪৩ আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি “সূরা কাহ্ফ” তিলাওয়াত করেছিলেন। তার ঘোড়াটি দু’টি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন এক খন্ড মেঘ এসে তার উপর ছায়া বিস্তার করল। মেঘখন্ড ক্রমশ নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। ভোর বেলা যখন লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উক্ত ঘটনার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, এ ছিল আস্সাকিনা (প্রশান্তি), যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।
৪৬৪৪ ইস্মাঈল (রহঃ) আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে রাতের বেলায় চলছিলেন এবং উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। তখন উমর (রাঃ) তাঁর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন উত্তর দিলেন না। তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন; কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এবারও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। এমতাবস্থায়, উমর (রাঃ) নিজকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তিনবার প্রশ্ন করে কোন উত্তর পাওনি। উমর (রাঃ) বললেন, এরপর আমি আমার উটকে দ্রুত চালিয়ে সকলের আগে চলে গেলাম এবং আমি শঙ্কিত হলাম, না জানি আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয়। কিছুক্ষণ পর কেউ আমাকে ডাকছে, এমন আওয়োজ শুনতে পেলাম। আমি মনে আশংকা করলাম যে, হয়তো বা আমার সম্পর্কে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে গেলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন আজ রাতে আমার কাছে এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোক পতিত সকল স্থান হতেও উত্তম। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি”।
৪৬৪৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি অন্য আরেক ব্যাক্তিকে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারন করছিল। (তিনি মনে করলেন এভাবে বারাবার পাঠ করা যথেষ্ট নয়) পরদিন সকালে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এ সম্পর্কে বললেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সো সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন। এ সূরা হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেনঃ আমার ভাই- কাতাদা ইবনু নুমান আমাকে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এক ব্যাক্তি শেষ রাতে সালাত (নামায/নামাজ) শুধুমাত্র “কুল হুআল্লাহু আহাদ” ছাড়া আর কোনো সূরাই তিলাওয়াত করেননি। পরদিন সকালে কোন এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে আসলেন। বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।
৪৬৪৬ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এ-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অসাধ্য মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এমনটি পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখ্লাস কুরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ।
৪৬৪৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখনই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ‘ সূরায়ে মু’আবিযাত’ পাঠ করে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন তাঁর রোগ কঠিন আকার ধারন করল, তখন বরকত লাভের জন্য আমি এই সকল সূরা পাঠ করে হাত দিয়ে শরীর মাসেহ্ করিয়ে দিতাম।
৪৬৪৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয্যা গ্রহনকালে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে দু’হাত একত্রিত করে হাতে ফুঁক দিয়ে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার করে এরূপ করতেন।
৪৬৪৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল আযীয ইবনু রুফাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং শাদ্দাদ ইবনু মা’কিল হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। শাদ্দাদ ইবনু মা’কিল তাকে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু রেকে যাননি? হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই মলাটের মাঝে যা কিছু আছে অর্থাৎ কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু রেখে যাননি। আবদুল আযীয বললেন, আমরা মুহাম্মদ ইবনুল হানাফিয়ার নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনই বললেন যে, দুই মলাটের মাঝে ছাড়া আর কিছু রেখে যাননি।
৪৬৫০ হুদ্বাত ইবনু খালিদ (রহঃ) হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি কুরআন তিলওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ লেবুর ন্যায় সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যাক্তি (মু’মিন) কুরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যাক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হান জাতীয় গুল্মের মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত (তিক্ত)। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারে পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ (তিক্ত) এবং যার কোনো সুঘ্রানও নেই।
৪৬৫১ মূসা দ্দাস (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতীতের জাতিসমূহের সঙ্গে তোমাদের জীবনকালের তুলনা হচ্ছে আসর ও মাগরিব সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের মত। তোমাদের এবং ইহুদী-নাসারাদের উদাহরণ হচ্ছে ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত করে তাদেরকে বলল, “তোমাদের মধ্যে কে কীরাতের বিনিময়ে দ্বি-প্রহর পর্যন্ত কাজ করবে”? ইহুদীরা কাজ করল। তারপর সেই ব্যাক্তি আবার বলল, তোমাদের মধ্যে কে এক কীরাতের বিনিময়ে দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত কাজ করবে? নাসারার কাজ করল। এরপর তোমরা (মুসলামানরা) আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত প্রত্যেক দু’কীরাতের বিনিময়ে কাজ করেছ। তারা বলল, আমরা কম মজুরি নিয়েছি এবং বেশী কাজ করেছি। তিনি (আল্লাহ) বলবেন, আমি কি তোমাদের অধিকারের ব্যাপারে জুলুম করেছি? তারা উত্তরে বলবে, না। এরপর আল্লাহ বলবেন, এটা আমার দয়া, আমি যাকে ইচ্ছা দিতে থাকি।
৪৬৫২ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কোন ওসীয়ত করে গেছেন? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন ওসীয়ত করে যাননি, তখন কি করে মানুষের জন্য ওসীয়ত করাকে (কুরআন মজীদে) বাধ্যতামূলক করা হল এবং তাদেরকে এজন্য নির্দেশ দেয়া হল। জবাবে তিনি বললেন, তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কিতাব (গ্রহণ) এর ওসীয়ত করে গেছেন।
৪৬৫৩ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ কোন নাবী কে ঐ অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন, আর তা হয়েছে কুরআন তিলাওয়াত যথেষ্ট। বারী বলেন, এর অর্থ সুষ্পষ্ট করে আওয়াজের সাথে কুরআন পাঠ করা।
৪৬৫৪ আলী উব্ন আবদুল্লাহ হয়রত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা অন্য কোন নাবী কে অনুমতি দেননি, যা আমাকে দিয়েছেন যে, কুরআন তিলাওয়াত করাই যথেষ্ট। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, কুরআনই তার জন্য যথেষ্ট।
৪৬৫৫ আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, দু’টি বিষয় ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে ঈর্ষা করা যায় না। প্রথমত, যাকে আল্লাহ তা’আলা কিতাবের জ্ঞাণ দান করেছেন এবং তিনি তার থেকে গভীর রাতে তিলাওয়াত করে। দ্বিতীয়ত, যাকে আল্লাহ তা’আলা সম্পদ দান করেছেন এবং তিনি সেই সম্পদ দিন-এরাত দান-খয়রাত করতে থাকেন।
৪৬৫৬ আলী উব্ন ইব্রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’ব্যাক্তি ব্যতীত অন্য কারও সাথে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যাক্তি, যাকে আল্লাহ তা’আলা কুরাআন মিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-এরাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা তাকে বালে, হায়! আমাদেরকে যদি এরূপ জ্ঞান দেয়া হত, যেরূপ জ্ঞাণ অমুককে দেয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মত আমল করতাম। অন্য আর এক ব্যাক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সম্পদ সত্য ও ন্যায়ের পথে ব্যয় করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যাক্তি বলেঃ হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যাক্তির মত সম্পদশালী করা হত, তাহলে সে যেরূপ ব্যয় করছে, আমিও সেরূপ ব্যয় করতাম।
৪৬৫৭ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) উস্মান (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।
৪৬৫৮ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) উসমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা নিজেরা কুরআন শিখে এবং অন্যকেও শিক্ষা দেয়।
৪৬৫৯ আমর ইবনু আউন (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একজন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হয়ে বলল, সে নিজকে আল্লাহর রাসূল -এর জন্য উৎসর্গ করার ইচ্ছা করেছে। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। এক ব্যাক্তি তাঁকে বলল, একে আমার সঙ্গে শাদী করিয়ে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাকে একখানা কাপড় দাও। ঐ ব্যাক্তি তার অক্ষমতার কথা প্রকাশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাকে একখানা লোহার আংটি হলেও দাও। এবারেও লোকটি আগের মত অক্ষমতা প্রকাশ করল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার কি কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ আছে? লোকটি উত্তর করলঃ হ্যাঁ। আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে, তার বিনিময়ে তোমার নিকট এ মহিলাটিকে শাদী দিলাম।
৪৬৬০ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা জনৈকা মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি আমার জীবনকে আপনার জন্য দান করতে এসেছি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে তার আপাদমস্তক অবলোকন করে মাথা নিচু করলেন। মহিলাটি যখন দেখল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না তখন সে বসে পড়ল। এমতাবস্থায়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের একজন বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! যদি আপনার কোন প্রয়োজন না থাকে, তবে এ মহিলাটির সাথে আমার শাদী দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আল্লাহর কসম কিছুই নেই। তিনি বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কি-না! এরপর লোকটি চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি কিছুই পেলাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ একটি লোহার আংটি হলেও! তারপর সে চলে গেল এবং ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! একটি লোহার আংটিও পেলাম না’ কিন্তু এই যে আমার তহবন্দ আছে। হযরত সাহাল (রাঃ) বলেন, তার কোন চাঁদর ছিল না। অথচ লোকটি বলল, আমার তহবন্দের অর্ধেক দিতে পারি। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ তহবন্দ দিয়ে কি হবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহলে মহিলাটির কোন আবরণ থাকবে না। আর যদি সে পরিধান করে, তোমার কোন আবরণ থাকবে না। লোকটি বসে পড়লো, অনেকক্ষন সে বসে থাকল। এরপর উঠে দাঁড়াল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ফিরে যেতে দেখে তাকে ডেকে আনালেন। যখন সে ফিরে আসল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কুরআনের কতটুকু মুখস্থ আছে? সে উত্তরে বলল, অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে। সে এমনিভাবে একে একে উল্লেখ করতে থাকল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ সকল সূরা মুখস্থ তিরাওয়াত করতে পার? সে উত্তর করল, হ্যাঁ! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও তুমি যে পরিমান কুরআন মুখস্থ রেখেছ, উহার বিনিময়ে এ মহিলাটিকে তোমার সঙ্গে শাদী দিলাম।
৪৬৬১ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার উদাহরন হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
৪৬৬২ মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটা খুবই খারাপ কথা যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলবে, আমি কুরআনের অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক কেননা, তা মানুষের অন্তর থেকে উটের চেয়েও দ্রুতবেগে চলে যায়।
৪৬৬৩ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। আল্লাহর কসম! যার কবজায় আমার জীবন! কুরআন বন্ধনমুক্ত উটের চেয়ে দ্রুত বেগে দৌড়ে যায়।
৪৬৬৪ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, মককা বিজয়ের দিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (উটের পিঠে) সওয়ার অবস্থায় ‘ সূরা আল ফাত্হ’ তিলাওয়াত করতে দেখেছি।
৪৬৬৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) যে সকল সূরাকে তোমরা মুফাস্সাল বলো তা হচ্ছে মুহ্কাম। রাবী বলেন, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাসূল ইন্তেকাল করেন, তখন আমার বয়স দশ বছর এবং আমি ঐ বয়সেই মুহ্কাম আয়াত সমূহ শিখে নিয়েছিলাম।
৪৬৬৬ ইয়াকূব ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মুহকাম সূরা সমূহ আল্লাহর রসূল এর জীবদ্দশায় মুখস্থ করেছিলাম। রাবী সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মুহকাম’ অর্থ কি? তিনি বললেন, মুফাস্সাল।
৪৬৬৭ রবী ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যাক্তিকে মসজিদে নববীতে কুরআন পাঠ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, তার প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, সে আমাকে অমুক সূরার অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
৪৬৬৮ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দ ইবনু মায়মূন (রহঃ) হযরত হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদীসের অতিরিক্ত রয়েছে, “ যা ভুলে গেছি অমুক অমুক সূরা থেকে”। আলী এবং আবদা হিশাম থেকে তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।
৪৬৬৯ আহ্মাদ ইবনু আবূ রজা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে রাতে কুরআন পাঠ করতে শুনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন। কেননা, সে আমাকে অমুক অমুক সূরার অমুক অমুক আয়াত স্মরন করিয়ে দিয়েছে, যা আমি ভুলতে বসেছিলাম।
৪৬৭০ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন লোক এ কথা কেন বলে যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি; বরং (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
৪৬৭১ উমর ইবনু হাফ্স (রহঃ) হযরত আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটাই তার জন্য যথেষ্ট।
৪৬৭২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হিশাম ইব্ন হাকীম ইব্ন হিযামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় ‘সূরা ফুরকান’ তিলাওয়াত করতে শুনলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, সে বিভিন্ন কিরাআতে তা পাঠ করছে, যা আল্লাহর রাসূল আমাকে শিখাননি। যার ফলে তাকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যেই ধরতে উদ্যাত হলাম। অবশ্য আমি তার সালাত (নামায/নামাজ) শেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হতেই তার গলায় রুমাল পেঁচিয়ে ধরলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মাত্র তোমাকে যা পাঠ করতে শুনলাম, তা তোমাকে কে শিখিয়েছে? সে উত্তর করল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ শিখিয়েছেন। আমি বললাম, তুমি মিথ্যা বলছো! আল্লাহর কসম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ভিন্ন পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করা শিখিয়েছেন, যা তোমাকে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। এরপর আমি তাকে টেনে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এই ব্যাক্তিকে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে “সূরা ফুরকান” পাঠ করতে শুনেছি, যে পদ্ধতি আপনি আমাকে তিলাওয়াত করতে শিখাননি। অথচ আপনি আমাকে সূরা ফুরকান তিলাওয়াত শিখিয়েছেন। এরপর তিনি বললেন, হে হিশাম! পাঠ করো! সুতরাং আমি যে পদ্ধতিতে পাঠ করতে শুনেছি, সে সেই পদ্ধতিতেই পাঠ করল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে কুরআন নাযিল হয়েছে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর। তুমি পাঠ করো, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যেভাবে শিখিয়েছিলেন, সেভাবে আমি পাঠ করলাম। এরপর তিনি বললেন, কুরআন এভাবেই নাযিল হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, সাত কিরাআত বা পদ্ধতিতে পাঠ করার জন্য কুরআন নাযিল হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে যে পদ্ধতি তোমার জন্য সহজ, সে পদ্ধতিতে পড়।
৪৬৭৩ বাশার ইবনু আদম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কারীকে রাতে মসজিদে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শুনলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলতে বসেছিলাম।
৪৬৭৪ আবূ নু’মান (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) সূত্রে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন সকালে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম। একজন রোক বলল, গতকাল সকালে আমি মুফাস্সালা সূরা পাঠ করেছি। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, এত তাড়াতাড়ি পাঠ করা যেন কবিতা পাঠ করার মতো; অথচ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঠ শুনেছি এবং তা আমার ভালভাবে স্মরণ আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সমস্ত সূরা পাঠ করতে আমি শুনেছি, তার সংখ্যা মুফাস্সাল হতে আঠারটি এবং ‘আলিফ-লাম হামিম’ গতে দু’টি।
৪৬৭৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর বাণীঃ “হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার জিহরাকে তাড়াতাড়ি মুখস্ত করার জন্য নাড়াবেন না”। আল্লাহর এই কালাম সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই হয়রত জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহী নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসতেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব তাড়াতাড়ি জিহবা এবং ঠোঁট নাড়াতেন এবং তার জন্য খুব কষ্টের ব্যাপার হত। আর এ অবস্থা সহজেই অন্য একজন অনুমান করতে পারত। সুতরাং এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত নাযলি করেন। “আমি কিয়ামত দিবসের কসম করছি, হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাড়াতাড়ি ওহী মুখস্থ করার জন্য আপনি আপনার জিহবা নাড়াবেন না। এ মুখস্থ করিয়ে দেয়া ও ফাঠ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমারই। যখন আমি তা পাঠ করিতে থাকি, তখন আপনি সে পাঠকে মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকুন। পরে এর অর্থ বুঝিয়ে দেয়াও আমার দায়িত্ব”। সুতরাং যখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করেন আপনি তার অনুসরণ করুন। এরপর থেকে যখন জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে যেতেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নীরবে শুনতেন। যখন তিনি চলে যেতেন, আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তিনি তা পাঠ করতেন।
৪৬৭৬ মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হযরত কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিরাআত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘায়িত করে পাঠ করতেন।
৪৬৭৭ আমর ইবনু আসিম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আনাস (রাঃ) কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘কিরাআত’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘কিরাআত’ কেমন ছিল? উত্তর তিনি বললেন, কোন কোন ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ করতেন। এরপর তিনি “বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহীম” তিলাওয়াত করে শোনালেন এবং তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বিসমিল্লাহ্’, ‘আর রাহমান’, ‘আর রাহীম’ পড়ার সময় মদ্ করতেন।
৪৬৭৮ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রির পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহণ করা অবস্থায় যখন উষ্ট্রটি চলছিল, তখন আমি তিলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি “সূরা ফাত্হ” এবং “সূরা ফাত্হ’র অংশ বিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ছন্দোময় সুরে পাঠ করছিলেন।
৪৬৭৯ মুহাম্মদ ইবনু খালাফ (রহঃ) হযরত আবূ মুষা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বলরেন, হে আবূ মূসা! তোমাকে হযরত দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুমধুর কন্ঠ দান করা হয়েছে।
৪৬৮০ উমর ইবনু হাফ্ন ইবনু গিয়াস (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আমার সামনে কুরআন পাঠ কর”। আবদুল্লাহ বললেন, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার উপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের নিকট থেকে শুনতে ভালবাসি।
৪৬৮১ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কুরআন পাঠ কর। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করব? অথচ তা তো আপনার ওপরই নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি “সূরা নিসা” পাঠ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত আসলাম “চিন্তা করো আমি যখন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে থেকে একজন করে স্বাক্ষী উপস্থিত করব এবং সকলের ওপরে তোমাকে স্বাক্ষী হিসাবে হাযির করব তখন তারা কি করবে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আপাতত এটুকুই যথেষ্ট। আমি তাঁর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালাম, দেখলাম, তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরছে।
৪৬৮২ আলী (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) বলেন, আমাকে ইবনু সুবরুমা (রহঃ) বললেন, আমি দেখতে চাইলাম, সালাত (নামায/নামাজ) কি পরিমাণ আয়াত পাঠ করা যথেষ্ট এবং আমি তিন আয়াত বিশিষ্ট সূরার চেয়ে ছোট কোন সূরা পাইনি। সুতরাং আমি বললাম, কারো জন্য তিন আয়াতের কম সালাত (নামায/নামাজ) পড়া উচিত নয়। হযরত আবূ মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তখন তিনি বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি কোন ব্যাক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য যথেষ্ট।
৪৬৮৩ মূসা হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে সম্ভ্রান্ত বংশীয়া মহিলার সাথে শাদী দেন এবং প্রায়ই তিনি আমার সম্পর্কে আমার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার স্ত্রী বলত, সে কতইনা ভাল মানুষ যে, সে কখনও আমার বিছানায় আসেনি এবং শাদীর পর থেকে আমার সম্পর্কে খোঁজ খবরও নেয়নি। এ অবস্থা যখন দীর্ঘকাল পর্যন্ত চলতে থাকল তখন আমরা পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার সম্পর্কে অবগত করালেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতাকে বললেন, তাকে আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যবস্থা করুন। এরপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি রকম রোযা পালন কর? আমি উত্তর দিলাম, প্রতিদিন রোযা পালন করি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এ অবস্থায় পূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করতে তোমার কত সময় লাগে? আমি উত্তর দিলাম, প্রত্যেক রাতেই এক খতম করি। তিনি বললেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোযা পালন করবে এবং কুরআন এক মাসে এক খতম দেবে”। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে প্রতি সপ্তাহে তিনদিন রোযা পালন করবে। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার শক্তি রাখি। তিনি বললেন, দু’দিন পর এক দিন রোযা রাখ। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন, তাহলে সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতির রোযা পালন কর। তা হল, হযরত দাঊদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র পদ্ধতি। তিনি এক দিন অন্তর একদিন রোযা পালন করতেন এবং প্রতি সাত দিনে একবার আল্লাহর কিতাব খতম করতেন। আহা! আমি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম! যেহেতু এখন আমি একজন দুর্বল বৃদ্ধ ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছি। হযরত আবূল্লাহ্ (রাঃ) প্রত্যেক দিন তার পরিবারের একজন সদস্যের সামনে কুরআনের সপ্তমাংশ পাঠ করে মোনাতেন। দিব ভাগে পাঠ করে দেখতেন, তার স্মরণশক্তি সঠিক আছে কিনা? যা তিনি রাতে পাঠ করবেন তা যেন সহজ হয় এবং যখনই তিনি শারীরিক শক্তি সঞ্চয়ের ইচ্ছা করতেন তখন কয়েক দিন রোযা রাখা বন্ধ রাখতেন এবং পরবর্তীকালে ঐ ক’দিনের হিসাব করে রোযা পালন করতেন। কেননা, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় যে নিয়ম পালন করতেন পরে সে নিয়ম বর্জন করাটা অপছন্দ মনে করতেন। আবূ আবদুল্লাহ বলেন, কেউ তিন দিনে, কেউ পাঁচ দিনে এবং অধিকাংশ লোক সাত দিনে কুরআন খতম করতেন।
৪৬৮৪ সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, সমগ্র কুরান খতম করতে তোমার কত সময় লাগে?
৪৬৮৫ ইসহাক হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আম্র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “এক মাসে কুরআন খতম কর”। আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার শক্তি রাখি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে প্রতি সাত দিনে একবার খতম করো এবং এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে খতম করো না।
৪৬৮৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি উত্তরে বললাম, আমি আপনার সামনে কুরআন পাঠ করবো; অথচ আপনারই ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কুরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি যখন সূরা নিসা পাঠ করলাম, এমনকি যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলামঃ “তারপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাযির করব এবং এ সকলের ওপরে তোমাকে সাক্ষী হিসাবে হাযির করব’। তখন তারা কি করবে”। তখন তিনি আমাকে বললেন, “থাম”! আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )এর দু’চোখ মুবারক থেকে অশ্রু ঝরছে।
৪৬৮৭ কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমার সামনে কুরআন পাঠ করো। আমি বললাম, আমি আপনার নিকট কুরআন পাঠ করব; অথচ আপনার ওপর কুরআন নাযিল হয়েছেন। তিনি বললেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি।
৪৬৮৮ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) হযরত আলী (রাঃ) বলেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় এমন একদল মানুষের আবির্ভাব ঘটবে, যারা হবে অল্পবয়স্ক এবং যাদের বুদ্ধি হবে স্বল্প। ভাল ভাল কথা বলবে; কিন্তু তারা ইসলাম থেকে এমন ভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশের নীচে পৌঁছবে না। সুতরাং তোমরা তাদের যেখানে পাও, হত্যা কর। এদের হত্যাকারীর জন্য কিয়ামতে পুরস্কার রয়েছে।
৪৬৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর তুলনায় তোমাদের সালাত (নামায/নামাজ)কে, তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করবে না এবং তা লোক দেখানো হবে)। এরা দ্বীন (ইসলাম) থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর অন্য শিকারী সেই তীরের অগ্রভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পাশ্বদেশদ্বয়েও নজর করে অথচ সেখানে কিছু দেখতে পায় না। অবশেষে ঐ ব্যাক্তি কোন পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে।
৪৬৯০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হযরত আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে এবং অনুযায়ী আমল করে , তাঁর ঊদাহরণ ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং গন্ধে মন মাতানো। আর ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে আমল করে। তার ঊদাহরণ হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু গন্ধ নেই। আর সকল মুনাফিক যারা কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের ন্যায়, যার মন মাতানো খুশবু গন্ধ আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ(তিক্ত)। আর ঐ মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ হাঞ্জাল (মাকাল) ফলের ন্যায়, যা খেতেও বিস্বাদ এবং তা দুর্গন্ধযুক্ত।
৪৬৯১ আবূ নু’মান (রহঃ) হযরত জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যতক্ষণ মন চায় তিলওয়াত কর এবং মন যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন ছেড়ে দাও।
৪৬৯২ সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি এক ব্যাক্তিকে আয়াত পাঠ করতে শুনলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যেভাবে পাঠ করতে শুনতেন, তার থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে সে পাঠ করছিল। তখন ঐ ব্যাক্তিকে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে গেলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উভয়ই সঠিকভাবে পাঠ করেছ। সুতরাং এভাবে কুরআন পাঠ করতে থাক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পরস্পরের বিভেদের কারণে।