দু’আ

৫৮৬৭ আবূ মামার (রহঃ) শাদ্দাদ ইবনু উস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো বান্দার এ দু’আ পড়া–হে আল্লাহ তুমই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়াঁমত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। যে ব্যাক্তি দিনের (সকাল) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধা হওয়ার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যাক্তি রাতের (প্রথম) বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দু’আ পড়ে নেবে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে।

((اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ )

উচ্চারণ:“আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্‌দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্‌রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্‌ফির্‌লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্‌যুনূবা ইল্লা আনতা”

৫৮৬৮ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহব কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে বেশী ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।

৫৮৬৯ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) দুটি হাদীস বর্ননা করেছেন। একটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর অন্যটি তার নিজ থেকে। তিনি বলেন, ঈমানদার ব্যাক্তি তার গুনাহ গুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পাহাড়ের নীচে বসা আছে, আর সে আশংকা করছে যে- সম্ভবত পাহাড়টা তার উপর ধসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যাক্তি তার গুনাহুগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবূ শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন। তারপর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মনে কর কোন এক ব্যাক্তি (সফরের অবস্থায় বিশ্রামের জন্য) কোন এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রানেরও ভয় ছিল। তার সাথে তার সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। রাবী বলেনঃ আল্লাহ যা চাইলেন তা হল। তখন সে বললো যে, আমি যে জায়গায় ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে তার বাহনটি তার পাশে দাড়িয়ে আছে। তখন সে ব্যাক্তি যে পরিমাণ খুশী হলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার তাওবা করার কারণে এর চাইতেও অনেক বেশী খুশী হন। আবূ আওয়ানা ও জারীর আমাশ (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫৮৭০ ইসহাক ও হুদবাহ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবার কারণে সেই লোকটির চাইতেও বেশী খুশী হন, যে লোকটি মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে পরে তা পেয়ে যায়।

৫৮৭১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের শেষ দিকে এগার রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর যখন সুবহে সা’দিক হতো, তখন তিনি দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এরপর তিনি নিজের ডান পাশে কাত হয়ে বিশ্রাম নিতেন। যতক্ষন না মুয়াযযিন এসে তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর খবর দিতেন।

৫৮৭২ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারা-আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ যখন তুমি শোয়ার বিছানায় যেতে চাও, তখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করবে। এরপর ডান পাশের উপর কাত হয়ে শুয়ে পড়বে। আর এ দুআ পড়বে, হে আল্লাহ! আমি আমার চেহারাকে (অর্থাৎ যাবতূয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে) তোমার হাতে সঁপে দিলাম। আর আমার সকল বিষয় তোমারই নিকট সমর্পন করলাম এবং আমার পিঠখানা তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। আমি তোমার গযবের ভয়ে ভীত ও তোমার রহমতের আশায় আশান্নিত। তোমার নিকট ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই এবং নেই মুক্তি পাওয়ার স্থান। তুমি যে কিতাব নাযিল করেছ, আমি তার উপর ঈমান এনেছি এবং তুমি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছ আমি তার উপর ঈমান এনেছি। যদি তুমি এ রাতেই মরে যাও, তোমার সে মওত স্বভাবধর্ম ইসলামের উপরই হবে। অতএব তোমার এ দুআ যেন তোমার এ রাতের সর্বশেষ কথা হয়।

৫৮৭৩ কাবীসা (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করতে যেতেন, তখন তিনি এ দু’আ পড়তেন: হে আল্লাহ! আপনারই নাম নিয়ে মরি আর আপনার নাম নিয়েই জীবিত হই। আর তিনি যখন জেগে উঠতেন তখন পড়তেন: যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) মৃত্যুদানের পর আবার আমাদের পুনজীবিত করেছেন। (অবশেষে) আমাদের তারই দরবারে মিলিত হতে হবে।

৫৮৭৪ সাঈদ ইবনু রাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আর-আরা (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিলেন, অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে অসিয়ত করলেন যে, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি এ দু’আ পড়বে ইয়া আল্লাহ! আমি আমার প্রাণকে আপনার কাছে সোপর্দ করলাম-আর আমার বিষয় ন্যাস্ত করলাম আপনার দিকে এবং আমার চেহারা আপনার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আপনার রহমতের আশায় এবং আপনার গযবের ভয়ে। আপনার নিকট ছাড়া আপনার গযব থেকে পালিয়েযাওয়ার এবং আপনার আযাব থেকে বেঁচে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস করছি এবং আপনি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠিয়েছেন, আমি তার উপর পূর্ণবিশ্বাস স্থাপন করেছি। যদি তুমি এ অবস্থায়ই মরে যাও, তবে তুর্মি স্বভাবধর্ম ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে।

৫৮৭৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাতখানা গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেন ইয়া আল্লাহ! আপনার নামেই মরি। আপনার নামেই জীবিত হই। আর যখণি জাগতেন তখন বলতেন সে আল্লাহর জন্য প্রশংসা, তিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তারই দিকে আমাদের পুনরুত্থান।

৫৮৭৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপর ঘুমাতেন এবং বলতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি আমার সর্তাকে আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আমার চেহারা আপনারই দিকে ফিরিয়ে দিন। আর আমার বিষয় ন্যাস্ত করলাম আপনার দিকে আপনার রহমতের আশায়। আপনি ছাড়া কারো আশ্রয় নেই আর নেই কোন গন্তব্য। আপনার নাযিলকৃত কিতাবে ঈমান আনলাম এবং আপনার প্রেরিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতিও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি শোয়ার সময় এ দু’আগুলো পড়বে, আর সে এ রাতেই তার মৃত্যু হবে সে স্বভাব ধর্ম ইসলামের উপরই মরবে।

৫৮৭৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত কাটালাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে তার প্রয়োজনাদি সেরে মুখ-হাত ধুয়ে শুইয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবার জেগে উঠে পানির মাশকের নিকট গিয়ে এর মুখ খুললেন। এরপর মাঝারি রকমের এমন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন যে; তাতে বেশী পানি লাগালেন না। অথচ পূরা উযূ (ওজু/অজু/অযু)ই করলেন। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে গাগলেন। তখন আমিও জেগে উঠলাম। তবে আমি কিছু দেরী করে উঠলাম। এজন্য যে, আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তিনি আমার অনুসরণকে দেখে ফেলেন। যা হোক আমি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। তখনও তিনি দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। সুতরাং আমি গিয়ে তাঁর বাম দিকে দাড়িয়ে গেলাম। তখন তিনি আমার কান ধরে তার ডান দিকে আমাকে ঘুরিয়ে নিলেন। এরপর তার তেরো রাকা আত সালাত (নামায/নামাজ)পূর্ন হলো। তারপর তিনি আবার কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমন কি নাক ডাকাতেও লাগলেন। তার অভ্যাস ছিল যে, তিনি ঘুমে নাক ডাকাতেন। এরপর বিলাল (রাঃ) এসে তাকে জাগালেন। তখন তিনি নতুন উযূ (ওজু/অজু/অযু) না করেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তার দু আর মধ্যে এ দু’আও ছিলঃ “ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে বামে, আমার উপর-নীচে, আমার সামনে-পেছনে, আমার জন্য নূর দান করুন। কুরায়ব (রহঃ) বলেন, এ সাতটি আমার তাবুতের মত। এরপর আমি আববাসের পুত্রদের একজনের সঙ্গে সাক্ষাত করলাম, তিনি আমাকে এ সাতটি অঙ্গের কথা বর্ণনা করলেন এবং রগ, গোশত! রক্ত, চুল ও চামড়ার উল্লেখ করলেন এবং আরো দুটির কথা উল্লেখ করেন।

৫৮৭৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) দাড়াতেন, তখন বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! সন্মুখে প্রশংসা আপনারই জন্য, আপনি রক্ষক আসমান ও যমীনের এবং যা কিছু এগুলোর মধ্যে আছে, আপনই তাদের নূর। আর যাবতীয় প্রশংসা শুধূ আপনারই। আসমান যযীন এবং এ দুএর মধ্যে যা আছে, এসব কিছুকে সুদৃঢ় ও কায়েম রাখার একমাত্র মালিক আপনই। আর সমস্থ প্রশংসা একমাত্র আপনারই। আপনই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার কথা সত্য, আখিরাতে আপনার সাক্ষাত লাভ করা সত্য, বেহেশত সত্য, দোযখ সত্য, কিয়ামত সত্যা পয়গাম্বরগন সত্য, এবং মুহাম্মদ সত্য। ইয়া আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পন করেছি। আমি একমাত্র আপনারই উপর ভরসা রাখি। একমাত্র আপনারই উপর ঈমান এনেছি। আপনারই দিকে ফিরে চলছি। শত্রু দের সাথে আপনারই খাতিরে শত্রুতা করি। আপনারই নিকট বিচার চাই। অতএব আমার আগের পরের এবং লুকায়িত প্রকাশ্য গুনাহ আপনি মাফ করে দিন। আপনই কাউকে এগিয়ে দাতা, আর কাউকে পিছিয়ে দাতা আপনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই।

৫৮৭৯ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত। একবার গম পেষার চাক্কি ঘূরানোর কারনে ফাতিমা (রাঃ)-এর হাতে ফোস্কা পড়ে গেল। তখন তিনি একটি খাদেম চেয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন তিনি তাকে পেলেন না। তখন তিনি আসার উদ্দেশ্যটি আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট ব্যক্ত করে গেলেন। এরপর তিনি যখন ঘরে এলেন তখন আয়িশা (রাঃ) এ বিষয়টি তাকে জানালেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এমন সময় আসলেন যখন আমরা বিছানায় বিশ্রাম গ্রহণ করেছি। তখন আমি উঠতে চাইলে তিনি বললেন নিজ জায়গায়ই থাকো। তারপর আমাদের মাঝখানেই তিনি এমনিভাবে বসে গেলেন যে, আমি তার দু-পায়ের শীতল স্পর্শ আমার বুকে অনুভব করলাম। তিনি বললেন আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল বাতলে দেবনা যা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী উত্তম। যখন তোমরা শয্যা গ্রহন করতে যাবে, তখন তোমরা আল্লাহ আল্লাহ ৩৩ বার, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার। আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চাইতেও অনেক বেশী মঙ্গলজনক। ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেনঃ তাসবীহ হল ৩৪ বার।

৫৮৮০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (ঘূমাবার জন্য) বিছানায় যেতেন, তখন মুয়াওবিযাত (ফালাক ও নাস) পড়ে তাঁর দুহাতে ফুক দিয়ে তা শরীরে মাসেহ করতেন।

৫৮৮১ আহমদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহন করতে যায় তখন সে যেন তার লুঙ্গীর ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানটি ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানেনা যে, বিছানার উপর তার অবর্তমানে কষ্টদায়ক কোন কিছু রয়েছে কিনা। তারপর পড়বে: হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহখানা বিছানায় রাখলাম এবং অপনারই নামে আবার উঠাবো। যদি আপনি ইতিমধ্যে আমার জানো কবয করে নেন; তা হলে, তার উপর দয়া করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযত করবেন! সেভাবে আপনি আপনার নেক বান্দাদের হিফাযত করে থাকেন।

৫৮৮২ আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যকে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে আমাদের প্রতিপালক আমাদের নিকটতম আসমানে অবতরন করে বলতে থাকেনঃ আমার নিকট দুআ করবে কে? আমি তার দুআ কবুল করবো। আমার নিকট কে চাবে? আমি তাকে দান করবো। আমার কাছে কে তার গুনাহ মাফ চাইবে? আমি তারে মাফ করে দেবো।

৫৮৮৩ মুহাম্মদ ইবনু আর-আরা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে যাবতীয় পূরুষ ও স্ত্রী জাতীয় শয়তানদের থেকে পানা চাচ্ছি।

৫৮৮৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) সা’দ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সাইয়্যিদুল ইন্তিগফার হলঃ -ইয়া-আল্লাহ! আপনই আমার পালনকর্তা। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আপনই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনারই গোলাম। আর আমি আমার সাধ্যানূযায়ী আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর সুদৃঢ়ভারে কায়েম আছি। আমি আমার প্রতি আপনার নিয়ামাত স্বীকার করছি এবং স্বীকার করছি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আমি আমার কৃতগুনাহের মন্দ পরিণাম থেকে আপনারা কাছে পানাহ চাচ্ছি। যে ব্যাক্তি সন্ধ্যা বেলায় এ দুআ পড়বে! আর এ রাতেই মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাবী বলেন, অথবা তিনি বলেছেনঃ সে হবে জান্নাতী। আর যে ব্যাক্তি সকালে এ দুআ পড়বে, আর এ দিনই মারা যায় সেও অনুরুপ জান্নাতী হবে।

৫৮৮৫ আবূ নুয়ায়ম (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমাতে চাইতেন, তখন বলতেন:- ইয়া আল্লাহ! আমি আপনায় নামেই মরি এবং জীবিত হই। আর তিনি যখন ঘূম থেকে সজাগ হতেন তখন বলতেন আল্লাহ তা আল্লাহরই যাবতীয় প্রসংসা যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) ওফাত দেওয়ার পর আবার নতুন জীবন দান করেছেন। আর অবশেষে তারই কাছে আমাদের পুনরুত্থান হবে।

৫৮৮৬ আবদান (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে বিছানায় যেতেন তখন দুআ পড়তেন ইয়া আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মরি এবং জীবিত হই। আর যখন তিনি জেগে উঠতেন তখন বলতেন: সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদের জীবিত করেছেন- (নিদ্রা জাতীয়) মৃত্যর পর এবং তারই কাছে পুনরুত্থান সুনিশ্চিত।

৫৮৮৭ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ বকর সিদ্দিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললেনঃ আপনি আমাকে এমন একটি দুআ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) দু’আ করব। তিনি বললেনঃ তুমি সালাত (নামায/নামাজ) পড়বে: ইয়া আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলম করে ফেলেছি। আপনি ছাড়া আমার গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই। অতএব আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দিন। আর আমার প্রতি দয়া করূন। নিশ্চইয় আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু।

৫৮৮৮ আলী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে (আল্লাহর বানী) – সালাত (নামায/নামাজ) স্বর উচ্চ করবে না এবং অতিশয় ক্ষীণও করবে না । ” এ আয়াতটি দুআ সম্পর্কেই নাযিল করা হয়েছে।

৫৮৮৯ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) বলতামঃ আসসালামু আলাল্লাহ, আসসালামু আলা ফূলানিন” তখন একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বললেন আল্লাহ তাআলা তিনি নিজেই সালাম। সূতরাং তোমাদের কেউ যখন সালাত (নামায/নামাজ) বসবে, তখন সে যেন ‘আত্যহিয়্যাতু লিল্লাহি’ পড়ে। সে যখন এতটুকু পড়বে তখন আসমান যমীনের আল্লাহর সব নেক বান্দাদের নিকট তা পৌছে যাবে। তারপর বলবেঃ ‘আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অ আশ হাদু আননা মুহাম্মাদান আব্দুহু ও রাসুলুলহু’ তারপর হামদ সানা যা ইচ্ছা পড়তে পারবে।

৫৮৯০ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। গরীব সাহাবীগণ বলেন: ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ধনশীল লোকেরা-তো উচ্চমর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তা কেমন করে? তারা বললেনঃ আমরা যে রকম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি, তারাও সে রকম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমরা সে রুপ জিহাদ করি, তারাও সেরুপ জিহাদ করেন এবং তারা তাদের অতিরিক্ত মাল দিয়ে সাদাকা-খায়রাত করেন; কিন্তু আমাদের কাছে সম্পদ নেই। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদের একটি আমল বাতলে দেবনা, যে আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে, আর তোমাদের অনুরুপ আমল কেউ করতে পরেবে না, কেবলমাত্র যারা তোমাদের ন্যায় আমল করবে তারা ব্যতীত। সে আমল হলো তোমরা প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ্‌  এবং ১০ বার আল্লাহ আকবর- পাঠ করবে।

৫৮৯১ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মুগীরা (রাঃ) আবূ সুফিয়ানের পূত্র মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট এক পত্র লিখেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ) সালাম ফিরানর পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি একাই মাবুদ। তার কোন শরীক নেই। মুলক তারই, যাবতীয় প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। ইয়া আল্লাহ! আপনি কাউকে যা দান করেন তাকে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর আপনি যাকে কোন কিছু দিতে বিরত থাকেন তাকে তা দেওয়ার মতো কেউ নেই। আপনার রহমত না হলে কারো চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না।

৫৮৯২ মুহাম্মাদ (রহঃ) সালামা ইবনু আফওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। সেনাবাহিনীর এক ব্যাক্তি বললেনঃ ওহে আমির! যদি আপনি আপনার ছোট ছোট কবিতা থেকে কিছুটা আমাদের শোনাতেন? তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে হুদী গাইতে গাইতে বাহন হাকিয়ে নিতে শুরু করলেন। তাতে উল্লেখ করলেনঃ আল্লাহ তাআলা না হলে আমরা হেদায়েত পেতাম না। (রাবী বলেন) এ ছাড়া আরও কিছু কবিতা তিনি আবৃতি করলেন, যা আমি স্বরন রাখতে পরিনি। তখন রাসুলুলাহ জিজ্ঞাসা করলেন: এ উট চালক সোকটি কে? সাথীরা বললেনঃ উনি আমির ইবনু আকওয়া। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহম করুন। তখন দলের একজন বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি তার দু’আর সাথে আমাদেরকেও শামিল করলে ভাল হতো না? এরপর যখন মুজাহিদগন কাতার বন্ধী হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করলেন। এ সময় আমির (রাঃ) তাঁর নিজের তরবারীর অগ্রভাগের আঘাতে আহত হলেন এবং এ আঘাতের দরুন তিনি মারা গেলেন। এদিন লোকেরা সন্ধ্যার পর (পাকের জন্য) বিচ্ছিন্নভাবে অনেক আগুন জানালেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ সব আগুন কিসের? এসব আগুন দিয়ে তোমরা কি জাল দিচ্ছ। তারা বললেন আমরা গৃহপালিত গাধার মাংস জাল দিচ্ছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে, তা সব-ফেলে দাও এবং ভেগগুলোও ভেংগে ফেল। এক ব্যাক্তি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! ডেগগুলোর মধ্যে যা আছে তা ফেলে দিলে এবং পাত্রগুলো ধূয়ে নিলে চলবে না? তিনি বললেনঃ তবে তাই কর।

৫৮৯৩ মুসলিম (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) বর্ণনা করতেন, যখন কেউ কোন সাদাকা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসতো তখন তিনি দুআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি অমুকের পরিজনের উপর রহম নাযিল করেন। একবার আমার আব্বা তার কাছে কিছু সাদাকা নিয়ে এলে তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি আবূ আওফার বংশ ধরের উপর রহমত করুন।

৫৮৯৪ আলী ইবনু অব্দুলাহ (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি যুল-খালাসাহকে নিশ্চিহ্ন করে আমাকে চিন্তামুক্ত করবে? সেটা ছিল এক মূর্তি। লোকেরা এর পূজা করতো। সেটাকে বলা হতো ইয়ামানী কাবা। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পরি না। তখন আমার বুকে জোরে একটা থাবা মারলেন এবং বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে স্থির রাখূন এবং তাকে হিদায়েতকারী ও হিদারেতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন। তখন আমি আমারই গোত্র আহমাসের পঞ্চাশ জন যোদ্ধাসহ বের হলাম। সুফিয়ান (রহঃ) বলেছেনঃ কোন কোন সময় বলেছেনঃ আমি আমার গোত্রের একদল যোদ্ধার মধ্যে গেলাম। তারপর আমি সেই মুর্তিটির নিকট গিয়ে তাকে জালিয়ে ফেললাম। এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি যুল-খালাসাকে জালিয়ে পূড়িয়ে পাচড়াযুক্ত উটের ন্যায় করে ছেড়েই আপনার কাছে এসেছি। তখন তিনি আহমাস গোত্র ও তার যোদ্ধাদের জন্য দুআ করলেন।

৫৮৯৫ সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন উম্মে সুলায়ম (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেনঃ আনাস তো আপনারই খাদেম। তিখন তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ সন্তান সন্ততি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা কিছু দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।

৫৮৯৬ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত করতে বললেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহমত করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্বরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।

৫৮৯৭ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আব্দুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল বন্টন করে দিলেন তখন এক ব্যাক্তি মন্তব্য করলেনঃ এটা এমন বাটোয়ারা হল যার মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টির খেয়াল রাখা হয়নি। আমি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালে তিনি রাগান্বিত হলেন। এমনকি আমি তার চেহারার মধ্যে রাগের আলামত দেখতে পেলাম। তিনি বললেনঃ মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর প্রতি আল্লাহ রহম করুন তাকে এর চাইতে অধিকতর কষ্ট দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন।

৫৮৯৮ ইয়াহইয়া ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সাকান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তুমি প্রতি জুমুআয় লোকদের হাদীস শোনাবে। যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দুবার। আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার। আরও অধিক ওয়ায করে এ কুরআনের প্রতি মানূষের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করো না। লোকেরা তালের কথাবার্তায় মশগুল থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের উপদেশ দেবে আমি যেন এমন অবস্থায় তোমাকে না পাই। কারন এতে তাদের কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্তি বোধ করবে। বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে। যদি তারা আগ্রহকরে তোমাকে উপদেশ দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের উপদেশ দেবে। আর তুমি দু’আর মধ্যে ছন্দবাক্য কবিতা পরিহার করবে। কারন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণকে তা পরিহার করতেই দেখেছি।

৫৮৯৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দু আ করলে দু’আর সময় ইয়াকীনের সাথে দু’আ করবে এবং একথা বলবেনা ইয়া আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দান করুন। কারর আল্লাহকে বাধ্য করার মত কেউ নেই।

৫৯০০ সুলাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো একথা বলবেনা যে, ইয়া আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে মাফ করে দিন। ইয়া আল্লাহ আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে দয়া করুন। বরং দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দু’আ করবে। কারণ আল্লাহকে বাধ্য করার মত কেউ নেই।

৫৯০১ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাঁদের প্রত্যেকের দূআ কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে। আর বলে যে, আমি দুআ করলাম। কিন্তু আমার দু’আ তো কবুল হলো না।

৫৯০২ মুহাম্মদ ইবনু মাহবুব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন। একব্যাক্তি দাড়িয়ে বললোঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের উপর বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। (তিনি দুআ করলেন) তখনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল এবং এমন বৃষ্টি হল যে, মানুষ আপন ঘরে পৌছতে পারলো না এবং পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত একাধারে বৃষ্টি হতে থাকলো। পরবর্তী জুমুআর দিনে সেই ব্যাক্তি অথবা অন্য একব্যাক্তি দাড়িয়ে বললো: আপনি আল্লাহর কাছে দুঁআ করুন; তিনি যেন আমাদের উপর মেঘ সরিয়ে নেন। আমরা তো ড়ুবে গেলাম। তখন তিনি দু’আ করলেন: ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের আশে-পাশে বর্ষণ করুন। আমাদের উপর (আর) বর্ষণ করবেন না। তখন মেঘ বিক্ষিপ্ত হয়ে আশে-পাশে ছড়িয়ে পড়লো। মদিনাবাসীর উপর আর বৃষ্টি হলো না।

৫৯০৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিসকার (বৃষ্টির) সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে এ ঈদগাহে গমন করলেন এবং বৃষ্টির জন্য দুঁআ করলেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে নিজের চাঁদরখানা উলটিয়ে গায়ে দিলেন।

৫৯০৪ আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার মা বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনারই খাদেম। আপনি তার জন্য দু’আ করুন। তিনি দূআ করলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন। আর তাকে আপনি যা কিছু দান করেছেন তাতে বরকত দান করুন।

৫৯০৫ মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদের সময় এ দু’আ পড়তেন: আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যিনি মহান ও ধৈর্ঘশীল। আল্লাহ ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই। তিনই আসমান যমীনের রব ও মহান আরশের প্রভু।

৫৯০৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। সংকটের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু আ পড়তেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসপন্ন ও অশেষ ধৈর্যশীল আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আরশে আযীমের প্রভূ। আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। আসমান যমীনের প্রতিপালক ও সম্মানিত আরশের মালিক।

৫৯০৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালামুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিঃপতিত হওয়া, নিয়তির অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশী হওয়া থেকে পানাহ চাইলেন। সুফিয়ান (রহঃ) হাদীসে তিনটির কথা বর্নিত হয়েছে। একটি আমি বৃদ্ধি করেছি। জানিনা তা এগুলোর কোনটি।

৫৯০৮ সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুবস্থায় বলতেনঃ জান্নাতের স্থান না দেখিয়ে কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র জানোকবয করা হয় না, যতক্ষণ না তাকে তার ঠিকানা দেখানো হয় এবং তাকে ইখতিয়ার দেওয়া হয় (দূনিয়াতে থাকবেন না আখিরাতকে গ্রহন করবেন)। এরপর যখন তার মৃত্যুকাল উপস্থিত হলো! তখন তার মাথাটা আমার উরুর উপর ছিল। কিছুক্ষন অজ্ঞান থাকার পর তার জ্ঞান ফিরে এলো। তখন তিনি ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “আল্লাহুম্মা রাফীকাল আলা- ইয়া আল্লাহ! আমি রফীকে আলা (শ্রেষ্ট বন্ধুকে) গ্রহন করলাম। আমি বললামঃ এখন থেকে তিনি আর আমাদের পছন্দ করবেন না। আর এটাও বুঝতে পারলাম যে, তিনি সুস্থ অবস্থায় আমাদের কাছে যা বলতেন এটি তাই। আর তা সঠিক। আয়িশা (রাঃ) এটি ছিল তার সর্বশেষ বাক্য যা তিনি বললেনঃ ইয়া-আল্লাহ! আমি শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে গ্রহণ করলাম।

৫৯০৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খব্বাব (রাঃ)-এর কাছে এলাম। তিনি লোহা গরম করে শয়ীরে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তিনি বললেনঃ যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দু’আ করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে আমি এর জন্য দু’আ করতাম।

৫৯১০ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কায়স (রহঃ) বলেন, আমি খাব্বাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম তিনি তার পেটে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তখন আমি তাকে বলতে শুনলাম যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মৃত্যুর জন্য দুআ করতে নিষেধ না করতেন! তবে আমি এর জন্য দু’আ করতাম।

৫৯১১ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যুর কামনা করতেই হয় তবে সে (মৃত্যু কামনা না করে) দু’আ করবে ইয়া আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আমার মৃত্যু দাও।

৫৯১২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এ ভাগ্নেটি অসুস্থ। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলে, আমি তার উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি থেকে কিছুটা পান করলাম। তারপর আমি তার পিঠের দিকে গিয়ে দাড়ালাম। তখন আমি তার উভয় কাঁধের মাঝে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলাম। সেটা ছিল খাটের চাঁদোয়ার ঝালরের মত।

৫৯১৩ আবদুল্লাহ ইবনুু- ইউসুফ (রহঃ) আবূ আকীল (রাঃ) বর্ণনা করেন। তার দাদা আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) তাকে নিয়ে তিনি বাজারের দিকে বের হতেন। সেখান থেকে খাদ্রদ্রব্য কিনে নিতেন। তখন পথে ইবনু যুবায়র (রাঃ) ও ইবনু উমর (রাঃ)-এর দেখা হয়ে, তারা তাকে বলতেন যে, এর মধ্যে আপনি আমাদেরও শরীক করে নিন। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দুআ করেছেন। তখন তিনি তাঁদের শরীক করে নিতেন। তিনি বাহনের পিঠে লাভের শস্যাদি পুরোপুরি পেতেন, আর তা ঘরে পাঠিয়ে দিতেন।

৫৯১৪ আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) বর্ণনা করেন। মাহমূদ ইবনু রাবী বর্ণনা করেছেন যে, তিনই ছিলেন সে ব্যাক্তি, শিশুকালে তাদেরই কুপ থেকে পানি মুখে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার চেহারার উপর ছিটে দিয়েছিলেন।

৫৯১৫ আবদান (রহঃ) -আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে শিশুদের নিয়ে আসা হতো। তিনি তাদের জন্য দুআ করতেন। একবার একটি শিশুকে আনা হালা। শিশুটি তার কাপড়ের উপর পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনালেন এবং তা তিনি কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন আর তিনি কাপড় ধুলেন না।

৫৯১৬ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সা-আলাবা ইবনু সুয়ায়র (রাঃ), যার মাথায় (শৈশবে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত বুলিয়ে ছিলেন, তিনি বর্ননা করেন যে, তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওকাসকে বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকা-আত আদায় করতে দেখেছেন।

৫৯১৭ আদম (রহঃ) আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমার সঙ্গে কাব ইবনু উজরাহ (রাঃ)-এর সাক্ষাত হলো। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেবো না। তা হল এই: একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনাকে কেমন করে সালাম দেব, আমরা আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা বলবে, ইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর খাস রহমৎ বর্ষন করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারের উপর খাস রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, উচ্চ মর্যাদাশীল। ইইয়া আল্লাহ আপনি মুহাম্মদের উপর ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি ইববাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযীল করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত উচ্চ মর্যাদাশীল।

৫৯১৮ ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন। একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই যে আসসালামু আলাইকা- তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে ইয়া আল্লাহ আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাম্মাদ -এর উপর খাছ রহমত বর্ষন করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষন করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর এবং ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাবিল করেছেন।

৫৯১৯ সূলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ আওফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, যখন কেউ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তার সাদাকা নিয়ে আসতেন, তখন তিনি দুআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তারউপর রহমত বর্ষণ করুন। এভাবে আমার পিতা একদিন সাদাকা নিয়ে তার কাছে এলে তিনি দু আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি আবূ আওফার পরিবারবর্গের উপর রহমত করুন।

৫৯২০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রহঃ) বর্ণনা করেন। একবার লোকেরা বললো: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার উপর কিভাবে দরুদ পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে, ইয়া আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদের ও তার সহধর্মিনাগণ এবং তার সন্তান-সন্ততিগণের উপর রহমত নাযিল করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ, তার সহধর্মিনাগণ এবং তার আওলাদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেমনভাবে আপনি ইবরাহীম (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাষিল করেছেন। আপনি অতি প্রশংসিত এবং উচ্চ মর্যাদাশীল।

৫৯২১ আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ দু’আ করতে শুনেছেন: ইয়া আল্লাহ! যদি আমি কোন মুমিন ব্যাক্তিকে মন্দ বলে থাকি, তবে আপনি সেটাকে কিয়ামতের দিন তার জন্য আপনার নৈকট্য লাভের উপায় বানিয়ে দিন।

৫৯২২ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। একবার লোকজন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নানা প্রশ্ন করতে লাগল, এমনকি প্রশ্ন করতে করতে তাকে বিরক্ত তবে ফেললো। এতে তিনি রাগ করলেন এবং মিম্বরে আরোহন করে বললেনঃ আজ তোমরা যত প্রশ্ন করবে আমি তোমাদের সব প্রশ্নেরই বর্ণনা সহকারে জবাব দিব। এ সময় আমি ডানে ও বামে তাকাতে লাগলাম এবং দেখলাম যে, প্রতিটি লোকই নিজের কাপড় দিয়ে মাথা পেচিয়ে কাঁদছে। এমন সময় একজন লোক, যাকে লোকের সাথে বিবাদের সময় তার বাপের নাম নিয়ে ডাকা হতো না, সে প্রশ্ন করলো: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ ইসায়ফা। তখন উমর (রাঃ) বলতে লাগলেন আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ কে রাসুল হিসেবে গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট। আমরা ফিতনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি ভাল মন্দের যে দৃশ্য আজ দেখলাম, তা আর কখনো দেখিনি। জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য আমাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে যে, যেন এ দুটি এ দেয়ালের পেছনেই অবস্থিত। রাবী কাতাদাহ (রহঃ)- হাদীস উল্লেখ করার সময় এ আয়াতটি পড়তেন। (অর্থ) হে মুমিনগণ! তোমরা সে সব বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে।

৫৯২৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ননা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে আমার খিদমত করার জন্য একটি ছেলে নিয়ে এস। আবূ তালহা (রাঃ) গিয়ে আমাকে তার সাওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নিয়ে এলেন। তখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমত করে আসছি। যখনই কোন বিপদ দেখা দিত, তখন আমি তাঁকে বেশী করে এ দুআ পড়তে শুনতাম: ইয়া আল্লাহ! আমি দুশ্চিতা, পেরেশানী, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা! ঋন এর বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি সর্বদা তার খিদমত করে আসছি , এমন কি যখন আমরা খায়বার অভিযান থেতে ফিরে আসছিলাম, তখন তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন, তিনি তাকে গনীমতের মাল থেকে নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তখন আমি তাকে দেখছিলাম যে, তিনি তাকে একখানা চাঁদর অথবা একখানা কম্বল দিয়ে ঢেকে নিজের পেছনে বসিয়েছিলেন। যখন আমরা সবাই সাহবা নামক স্থানে পৌছলাম, তখন আমরা (সেখানে থেমে) -হাইস- নামক খাবার তৈরী করে এবং চামড়ার দস্তরখানে রাখলাম। তিনি আমাকে পাঠালেন, আমি গিয়ে কয়েক জন লোককে দাওয়াত করলাম। তারা এসে খেয়ে গেলেন। এটি ছিল সাফিয়্যার সঙ্গে তার বাসর যাপন। তারপর তিনি রওয়ানা হলে ওহোদ পর্বত তাঁর সামনে দেখা গেল তখন তিনি বললেনঃ এ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসী। তারপর যখন মদিনার কাছে পৌছলেন, তখন তিনি বললেন ইয়া আল্লাহ! আমি মদিনার দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম (সম্মানিত) করছি, যে রকম ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে হারাম (সম্মানিত) করেছিলেন। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ্দ ও সা এর মধ্যে বরকত দিন।

৫৯২৪ হুমায়দী (রহঃ) মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বর্ননা করেছেন। উম্মে খালিদ বিনত খালিদ (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে শুনেছি। রাবী বলেন যে, এ হাদীস আমি উম্মে খালিদ ব্যতীত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর কাউকে বলতে শুনি নি।

৫৯২৫ আদম (রহঃ) মুসআব (রহঃ) বর্ণনা করেন, সা-দ (রাঃ) পাচটি জিনিস থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে নির্দেশ দিতেন এবং তিনি এগুলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উল্লেখ করতেন। তিনি এগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে এ দুআ পড়তে নির্দেশ দিতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি। আমি কাপুরষতা থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি , আমি অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আর আমি দুনিয়ার ফিতনা অর্থাৎ দাজ্জালের ফিতনা থেকেও আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এবং আমি কবরের আযাব থেকেও আপনার আশ্রয় চাচ্ছি।

৫৯২৬ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ঁআয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার আমার নিকট মদিনার দু-জন ইয়াহুদী বৃদ্ধা মহিলা এলেন। তারা আমাকে বললেন যে, কবরবাসীদের তাদের কবরে আযাব দেওয়া হয়ে থাকে। তখন আমি তাদের একথা মিথ্যা বলে অভিহিত করলাম। আমার বিবেক তাদের কথাটিকে সত্য বলে মানতে চাইল না। তারা দুজন বেরিয়ে গেলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন। আমি তাকে বললাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার নিকট দু-জন বৃদ্ধা এসেছিলেন। তারপর আমি তাকে তাদের কথা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তারা দু-জন সত্যই বলেছে। নিশ্চয়ই কবরবাসীদের এমন আযাব দেওয়া হয়ে থাকে যা সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনে থাকে। এরপর থেকে আমি তাকে সর্বদা প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ) কবরের আযাব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে দেখেছি।

৫৯২৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপূরষতা এবং বার্ধক্য থেকে। আরও আশ্রয় চাচ্ছি, কবরের আযাব থেকে। আরও আশ্রয় চাচ্ছি জীবন ও মুত্যুর ফিতনা থেকে।

৫৯২৮ মুআল্লাহ ইবনু আস্বাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাই অলসতা, অতিরিক্ত বার্ধক্যা গুনাহ আর ঝণ থেকে, আর কবরের ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে। আর জাহান্নামের ফিতনা এবং এর আযাব থেকে, আর ধনবান হওয়ার পরীক্কার মন্দ পরিনাম থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই দারিদ্রের অভিশাপ থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই মসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ইয়া আল্লাহ! আমার গুনাহ-এর দাগগুলো থেকে আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দ্বারা ধুয়ে পরিস্কার করে দিন এবং আমার অন্তরকে সমস্ত গুনাহ এর ময়লা থেকে এমনভাবে পরিস্কার করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে সাফ করার ব্যবস্থা করে থাকেন। আর আমার ও আমার গুনাহগুলোর মধ্যে এতটা দূরত্ব করে দিন, যত দূরত্ব আপনি দুনিয়ার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন।

৫৯২৯ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই-দুশ্চিতা, পেরেশানী, অক্ষমতা, অলসতা, কাপূরষতা! কৃপণতা, ঋণের বোঝা ও লোকজনের আধিপত্য থেকে।

৫৯৩০ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি পাচটি কাজ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন। তিনি দু’আ-করতেন: ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আমি আশ্রয় চাই কাপুরষতা থেকে, আমি আশ্রয় চাই অবহেলিত বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই দুনিয়ার বড় ফিতনা (দাজ্জালের ফিতনা) থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে।

৫৯৩১ আবূ মামার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই এবং আমি আপনার কাছে কাপূরষতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আপনার কাছে আরও আশ্রয় চাই দুঃসহ দীর্ঘায়ু থেকে এবং আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

৫৯৩২ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি যেভাবে মক্কাকে আমাদের জন্য প্রিয় করে দিয়েছেন, মদিনাকেও সেভাবে অথবা এর চাইতে বেশী আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। আর মদিনার জুর “জুহফা” নামক স্থানের দিকে সরিয়ে দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের মাপের ও ওযনের পাত্রে বরকত দিন।

৫৯৩৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় আমি রোগে আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হয়ে পড়েছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সময় আমাকে দেখতে এলেন। তখন আমি বললাম আমি যে রোগ-ষন্ত্রনায় আক্রান্ত তাতো আপনি দেখছেন। আমি একজন ধনবান লোক। আমার একাটি মেয়ে ছাড়া আর কেউ ওয়ারিস নেই। তাই আমি কি আমার দু তৃতীয়াংশ মাল সাদাকা করে দিতে পারি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললাম তবে অর্ধেক মাল? তিনি বললেনঃ না। এক তৃতীমাংশ অনেক। তোমার ওয়ারিসদের লোকের কাছে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করার মত অভাবী রেখে যাওয়ার চাইতে তাদের ধনবান রেখে যাওয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম। আর তুমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিটি লাভের জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে নিশ্চয়ই তার প্রতিদান দেওয়া হবে। এমন কি (সে উদ্দেশ্যে) তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে লুকমাটি তুলে দিয়ে থাকো তোমাকে এর প্রতিদান দেওয়া হবে। আমি বললাম তা হলে আমার সঙ্গীগণের পরেও কি আমি বেচে থাকবো? তিনি বললেন নিশ্চয়ই তুমি তাদের পরে বেচে থাকলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যা কিছু নেক আমল করনা কেন, এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা ও সম্মান আরও বেড়ে যাবে। আশা করা যায় যে, তুমি আরও কিছু দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। এমন কি তোমার দ্বারা অনেক কাওম উপকৃত হবে। আর অনেক কাওম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তারপর তিনি দুআ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার (মুহাজির) সাহাবীগণের হিজরতকে বহাল রাখুন। আর তাদের পেছনে ফিরে যেতে দিবেন না। স্বাদ ইবনু খাওলাহ (রাঃ)-এর দূর্ভাগ্য (কারণ তিনি ইচ্ছা না থাকা সত্তেও বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় মক্কায় মারা যান) সা’দ (রাঃ) বলেন মক্কাতে ওফাতের কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।

৫৯৩৪ ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । যে সব বাক্য দিয়ে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন, সে সব বাক্যদ্বারা তোমরাও আশ্রয় চাও। তিনি বলতেন “ইয়া আল্লাহ! আমি কাপুরষতা থেকে, আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আমি বয়সের অসহায়ত্ব থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আমি দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

৫৯৩৫ ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেনঃ হে আল্লাহ! আমি অলসতা, অতি বার্ধক্য, ঝণ আর থেকে আপনার আশ্রয় চাই। ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব, জাহান্নামের ফিতনা, কবরের আযাব, প্রাচুর্যের ফিতনার কুফল, দারিদ্রের ফিতনার কুফল এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ইইয়া আল্লাহ আপনি আমার সমুদয় গুনাহ বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধূয়ে দিন। আমার অন্তর যাবতীয় পাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করুন, যেভাবে সাদা কাপড় ময়লাথেকে পরিচ্ছন্ন করা হয়। আঁমার ও আমার গুনাহ সমূহের মধ্যে এতটা ব্যবধান করে দিন যতটা ব্যবধান আপনি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের মধ্যে করেছেন।

৫৯৩৬ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) -আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে বলতেন ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই জাহান্নামের ফিতনা, জাহান্নামের আযাব থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই কবরের ফিতনা থেকে এবং আপনার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই প্রাচুর্যের ফিতনা থেকে, আর আমি আশ্রয় চাই আজাবের ফিতনা থেকে। আমি আরও আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।

৫৯৩৭ মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’আ পাঠ করতেন ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দোযখের সংকট, দোযখের আযাব, কবরের সংকট, কবরে আযাব, প্রাচুর্যের ফিতনা, ও অভাবের ফিতনা থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট মসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাই। আয় আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধূয়ে দিন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে সাফ করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়ের ময়লা পরিস্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দুরে রেখেছেন। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অলসতা গুনাহ এবং রোগ থেকে।

৫৯৩৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উম্মে সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনার খাদিম আপনি আল্লাহর নিকট তার জন্য দুআ করুন। তিনি দুআ করলেন: ইয়া আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন, আর আপনি তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন। হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে অনুরুপ বর্ণনা করতে শুনেছি।

৫৯৩৯ আবূ যায়েদ সাঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে সূলায়ম বলেন, ইইয়া রাসুলুল্লাহ! আনাস আপনার খাদিম। তখন তিনি দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।

৫৯৪০ মুতাররিফ ইবনু আবদুল্লাহ আবূ মুসআব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন; নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যাবতীয় কাজের জন্য ইতিখারা শিক্ষা দিতেন, যেমনভাবে তিনি কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। (আর বলতেন) যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন দূ”রাক আত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে এরুপ দূ”আ করে। (অর্থ ৪) ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের দ্বারা আমার উদ্দিষ্ট কাজের মঙ্গলামংল জানতে চাই এবং আপনার ক্ষমতা বলে আমি কাজে সক্ষম হতে চাই। আহা আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। কারণ, আপনি ক্ষমতাবান আর আমার কোন ক্ষমতা নেই এবং আপনি জানেন আর আমি জানিনা। আপনই গায়িব সম্পর্কে জ্ঞাল রাখেন। ইয়া আল্লাহ! যদি আপনার জানে এ কাজটিকে আমার দ্বীনের ব্যাপারে, আমার জীবন ধারণে ও শেষ পরিণতিতে; রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেনঃ আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে মঙ্গলজনক বলে জানেন তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর যদি আমার এ কাজটি আমার দ্বীনের ব্যাপারে, জীবন ধারণে ও শেষ পরিণতিতে রাবী বলেন কিংবা তিনি বলেছেন দুনিয়ায় আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে, আপনি আমার জন্য অমঙ্গলজনক মনে করেন, তবে আপনি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নিন। আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আর যেখানেই হোক, আমার জন্য মঙ্গলজনক কাজ নির্ধারিত করে দিন। তারপর আমাকে আমার নির্ধারিত কাজের প্রতি তৃপ্ত রাখুন। রাবী বলেন, সে যেন এসময় তার প্রয়োজনের বিষয়ই উল্লেখ করে।

৫৯৪১ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার পানি আনিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তারপর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি উবায়দ আবূ আমরকে ক্ষমা করে দিন। আমি তখন তার বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। আরও দু’আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে কিয়ামতের দিন অনেক লোকের উপর মর্যাদাবান করুন।

৫৯৪২ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। যখন আমরা উচু জায়গায় উঠতাম তখন উচ্চস্বরে আল্লাহ আল্লাহ বলতাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া করো। কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে আহবান করছ না বরং তোমরা আহবান করছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা সত্তাকে। কিছুক্ষণ পর তিনি আমার কাছে এলেন- তখন আমি মনে মনে পড়ছিলাম: লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ তখন তিনি বলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! তুমি পড়বে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। কারণ এ দু’আ হল বেহেশ্তের রত্ন ভাণ্ডার সমূহের অন্যতম। অথবা তিনি বললেন আমি কি তোমাকে এমন একটি বস্তুর সন্ধান দেব না যে বাক্যটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? সেটি থেকে একটি রত্নভাণ্ডার হল লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

৫৯৪৩ ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা থেকে ফিরতেন, তখন প্রতিটি উচু জায়গার উপর তিনবার আল্লাহ আল্লাহ- বলতেন। তারপর বলতেন আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তার কোন শরীক নেই। রাজত্ব, হামদও তারই জন্য, তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, আপন প্রতিপালকের প্রশংসাকারী, আল্লাহ তা-আলা নিজ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর বান্দা-কে সাহায্য করেছেন, আর মুশরীক দলকে তিনি একাই প্রতিহত করেছেন।

৫৯৪৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) বর্ননা করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমান ইবনু আওফের গায়ে হলুদ রং দেখে জিজ্ঞাসা করলেন: ব্যাপার কি? তিনি বললেনঃ আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি এক খণ্ড সোনার বিনিময়ে। তিনি দুআ করলেন: আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন। একটা বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওলীমা করো।

৫৯৪৫ আবূ নূমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) -বলেন- আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেন। তারপর আমি একজন-মহিলাকে বিয়ে করি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললামঃ হা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, সে মহিলাটি কুমারী না অকুমারী? আমি বললামঃ অকুমারী। তিনি বললেন, তুমি একজন কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তা হলে তুমি তার সঙ্গে ক্রীড়া -কৌতুক করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে ক্রীড়া কৌতুক করত। আর তুমি তার সাথে এবং সেও তোমার সাথে হাসীখুশী করতো। আমি বললাম: আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেছেন। সূতরাং আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তাদের মত কুমারী বিয়ে করে আনি। এজন্য আমি এমন একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি যে তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। তখন তিনি দুআ করলেন আল্লাহ! তোমাকে বরকত দিন।

৫৯৪৬ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ স্ত্রীর সঙ্গে সংত হওয়ার ইচ্ছা করলে সে বলবে আল্লাহর নামে! হে আল্লাহ আপনি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আপনি আমাদেরকে যা দান করেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন তারপর তাদের এ মিলনের মধ্যে যদি কোন সন্তান নির্ধারিত থাকে তা হলে শয়তান এ সন্তানকে কখনো ক্ষতি করতে পরবে না।

৫৯৪৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই এ দুআ পড়তেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের অগ্নিযন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর। (২: ২০১)

৫৯৪৮ ফারওয়া ইবনু আবূল মাগরা (রহঃ) স্বাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যেভাবে লেখা শিখাণো হতো ঠিক এভাবেই আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুঁআ শিখাতেন। ইয়া আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আমি ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আর আপনার আশ্রয় চাই আমাদের বার্ধক্যের অসহায়ত্বের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে। আর আনি আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা এবং কবরের আযাব থেকে।

৫৯৪৯ ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আয়িশা। (রাঃ) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর উপর যাদু করা হলো। এমন কি তার খেয়াল হতো যে! তিনি একটা কাজ করেছেন। অথচ তিনি তা করেন নি। সে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। এরপর তিনি (আয়িশা (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি জানতে পেরেছ কি? আমি যে বিষয়টা আল্লাহর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। -আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ তা কি? তিনি বললেনঃ (স্বপ্নের মধ্যে) আমার নিকট দু-জন লোক আসলেন এবং একজন আমার মাথার কাছে, আরেক জন আমার উভয় পায়ের কাছে বসলেন। তারপর একজন তার সাথীকে জিজ্ঞাসা করলেন এ ব্যাক্তির রোগটা কি? তখন অপর জন বললেনঃ তিনি যাদুতে আক্রান্ত। আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন তাকে কে যাদু করেছে? অপর জন বললেনঃ লাবীদ ইবনু আসাম। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তা কিসের মধ্যে করেছে? তিনি বললেন! চিরুনী, ছেড়া চুল ও কাঁচা খেজুর গাছের খোশার মধ্যে। পূনরায় তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এটা কোথায়? তিনি বললেনঃ যুরাইক গোত্রের -মুআরওয়ান- নামক কুপের মধ্যে। আয়িশা। (রাঃ) বর্ণনা করেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং (তা কুপ থেকে বের করিয়ে নিয়ে) আয়িশার কাছে ফিরে এসে বললেনঃ আল্লাহর কসম! সেই কুপের পানি যেন মেহেন্দি তলানী পানি এবং এর (নিকটস্থ) খেজুর গাছগুলো ঠিক যেন শয়তানের মাথা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে তার কাছে কুপের বিস্তারিত অবস্থা জানালেন। তখন আমি বললাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এ ব্যাপারটা লোক সমুক্ষে প্রকাশ করে দিলেন না কেন? তিনি বললেন আল্লাহ তা-আলা তো আমাকে রোগমুক্ত করেছেন। সুতরাং আমি লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিস্তার করা পছন্দ করি না। ঈসা ইবনু ইউনূস ও লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু করা হলে তিনি বারবার দুআ করলেন, এভাবে পূর্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

৫৯৫০ ইবনু সালাম (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খন্দকের যুদ্ধে) শত্রু বাহিনীর উপর বদ দু আ করেছেন: ইয়া আল্লাহ! হে কিতাব অবর্তীর্ণকারী! হে ত্বরিৎ হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করুন। তাদের পরাস্ত করুন। এবং তাদের প্রকিম্পত করুন।

৫৯৫১ মুয়ায ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর শেষ রাকঁআতে যখন সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ- বলতেন তখন কুনূতে (নাবিলা) পড়তেন ইয়া আল্লাহ! আইয়্যাশ ইবনু আবূ রাবীয়াকে নাযাত দিন। ইয়া আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে মুক্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! সালামা ইবনু হিশামকে মুক্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি দুর্বল মুমিনদের নাযাত দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি মুযার গোত্রকে কঠোর শাস্তি দিন। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের উপর ইউসুফ (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময়ের দুর্ভিক্ষের বছরের ন্যায় দূর্ভিক্ষ দিন।

৫৯৫২ হাসান ইবনু রাবী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা সারিয়্যা (ক্ষুদ্র বাহিনী) পাঠালেন। তাদের কুররা বলা হতো। তাদের হত্যা করা হলো। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এদের ব্যাপারে যেরুপ রাগাম্বিত দেখেছি অন্য কারণে সেরুপ রাগান্বিত দেখিনি। এজন্য তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) মাসব্যাপি কুনুত পড়লেন। তিনি বলতেন: উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর নাফফরমানী করেছে।

৫৯৫৩ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম করার সময় বলতো -আসসামু আলাইকা” (ধংস তোমার প্রতি)। আয়িশা (রাঃ) তাদের এ বাক্যের কুমতলব বুঝতে পেরে বললেন -আলাইকুমুসসাম ওয়াললানত- (ধংস তোমাদের প্রতি ও লা-নত)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আয়িশা থামো! আল্লাহ তাআলা সমুদয় বিষয়েই নমরতা পছন্দ করেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন তারা কি বলেছে আপনি কি তা শুনেনি? তিনি বললেন- আমি তাদের প্রতি উত্তরে -ওয়াআলাকুম- বলেছি – তা তুমি শুননি? আমি বলেছি তোমাদের উপর।

৫৯৫৪ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তাদের গৃহ এবং কবরকে আগুন ভর্তি করে দিন। কেননা তারা আমাদের সালাতুল (নামায) উস্তা- থেকে বিরত রেখেছে। এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল। আর , সালাতুল (নামায) উস্তা- হল আসর সালাত (নামায/নামাজ)।

৫৯৫৫ আলী ইনন আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তুফাইল ইবনু আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন দাওস গোত্র নাফরমানী করেছে ও অবাধ্য হয়েছে এবং ইসলাম গ্রহন করতে অস্বীকার করেছে। সুতরাং আপনি তাদের উপরবদ দুআ করুন। সাহাবীগণ ধারণা করলেন যে! তিনি তাদের উপর বদ দু’আই করবেন। কিন্তু তিনি (তাদের জন্য-) দু আ করলেন ইয়া আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন। আর তাদের মুসলমান বানিয়ে নিয়ে আসুন।

৫৯৫৬ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ)তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরুপ দুআ করতেন হে আল্লাহ! আপনি মাফ করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আমার যেসব গুনাহ আপনি আমার চাইতে বেশী জানেন। ইয়া আল্লাহ আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটিআমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ ও আমার অজ্ঞতা এবং আমার উপহাসমূলক গুনাহ আর এ রকম গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। ইয়া আল্লাহ আপনি আমাকে মাফ করে দিন; যেসব গুনাহ আমি আগে করেছি। আপনই আগে বাড়ান আপনই পশ্চাতে ফেলেন এবং আপনই সব কিছুব উপর সর্বশক্তিমান।

৫৯৫৭ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঁআ করতেন ইয়া আল্লাহ! আপনি মাফ করে দিন আমার ভূল-ক্রটিজনিত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আর যা আপনি আমার চাইতে অধিক জানেন। ইয়া আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার হাসি-তামাশামুলক গুনাহ, আমার অবাধ্যতামূলক গুনাহ, আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ এবং ইচ্ছাকৃত গুনাহ, আর এসব গুনাহ যে আমার মধ্যে রয়েছে।

৫৯৫৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আবূল কাসিম বলেন, জুমু আর দিনে এমন একটি মুহর্ত আছে যদি সে মুহর্তটিতে কোন মুসলমান দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণের জন্য দুআ করে, তবে তা আল্লাহ তাকে দান করবেন। তিনি এ হাদীস বর্ণনার সময় আপন হাত দিয়ে ইশারা করেন (ইশারাতে) আমরা বুঝলাম যে, তিনি মুহর্তটির সংক্ষিপ্ততার দিকে ইংগিত করেছেন।

৫৯৫৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার একদল ইয়াহুদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে সালাম দিতে গিয়ে বললো:- আসসামু আলাইকা-। তিনি বললেনঃ ওয়াআলাইকুম-। কিন্তু আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ -আলসামু আলাইকুম ওয়া লালানাকুমূল্লাহ ওয়া গাযাবা আলাইকুম” (তোমাদের উপর ধংস নাযিল হোক, আল্লাহ তোমাদের উপর লানত করুন আর তোমারদের উপর গযব নাযিল করুন)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আয়িশা তুমি থামো! তুমি নমর ব্যবহার করো, আর তুমি কঠোরতা পরিহার করো। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তারা কি বলেছে আপনি কি শুনেন নি? তিনি বললেনঃ আমি যা বললাম, তা কি তুমি শুননি? আমি তো তাদের কথাটা তাদের উপরই ফিরিয়ে দিলাম। সূতরাং তাদের উপর আমার বদ দুআ কবুল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার সম্বন্ধে তাদের বদ দুআ কবুল হবে না।

৫৯৬০ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কারী (ইমাম) আমীন বলবে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কারন এ সময় ফিরিশতাগণ আমীন বলে থাকেন। সুতরাং যার আমীন বলা ফিরিশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যাবে! অগ্র পূর্বের সবগুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

৫৯৬১ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আলা কুল্লি সায়ইন কাদির) যে ব্যাক্তি দিনের মধ্যে একশ বার পড়বে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, হামদ তারই, সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান- সে একশ- গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য একশটি নেকী লেখা হবে, আর তার একশ-টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওইয়ালা আমল আর কারো হবে না। তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে।

৫৯৬২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আমর ইবনু মায়মুন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (এ কালেমাগুলি) দশবার পরবে সে ঐ ব্যাক্তির সমান হয়ে যাবে, যে ব্যাক্তি ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশ থেকে একটা গোলাম আযাদ করে দিয়েছে। আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসটা তার কাছেও বলেছেন।

৫৯৬৩ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি প্রত্যহ একশত বার সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলি মাফ করে দেওয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমান হলেও।

৫৯৬৪ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুটি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারন অতি সহজ কিন্তু পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলঃ সুবাহানআল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবাহানআল্লাহিল আযীম।

৫৯৬৫ মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তার রবের যিকর করে, আর যে ব্যাক্তি যিকর করে না, তাদের দু-জনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের।

৫৯৬৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর একদল ফেরেশতা আছেন, যারা আল্লাহর যিকরে রত লোকদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। যখন তারা কোথাও আল্লাহর যিকরে রত লোকদের দেখতে পান, তখন তাঁদের একজন অন্যজনকে ডাকাডাকি করে বলেনঃ তোমরা নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদনের জন্য এদিকে চলে এসো। তখন তাঁরা সবাই এসে তাদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটস্থ আসমান পর্যন্ত। তখন তাদের রব তাদের জিজ্ঞাসা করেন (অথচ এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের চাইতে তিনই বেশি জানেন) আমার বান্দ্বারা কি বলছে? তখন তারা জবাব দেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করছে, তারা আপনার প্রশংসা করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ব বর্ণনা করয়ে তখন তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তারা বলবেনঃ হে আমাদের রব, আপনার কসম! তালা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তারা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও বেশি আপনার ইবাদত করত, আরো অখিক আপনার মাহাত্ব বর্ননা করত, আর বেশি বেশি আপনার পবিত্রতা বর্ননা করত। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি বলবেন, তারা আমার কাছে কি চায়? তারা বলবেন! তারা আপনার কাচে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম হে রব। তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন যদি তারা তা দেখত তবে তারা কি করত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো বেশি লোভ করত, আরো অধিক চাইত এবং এর জন্য আরো অতিশয় উৎসাহী হয়ে উঠত। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কিসের থেকে আল্লাহর আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দিবেন, আল্লাহর কসম! হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কি হত? তারা বলবেন, যদি তারা তা দেখত, তবে তারা এ থেকে দ্রুত পালিয়েযেত এবং একে সাংঘাতিক ভয় করত। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবেন, তাদের মধ্যে অমুক ব্যাক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তারা এমন উপবিষ্টকারীবৃন্দ যাদের বৈঠকে অংশগ্রহনকারী বিমুখ হয় না।

৫৯৬৭ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল আবূল হাসান (রহঃ) আবূ মূসা আল আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গিরিপথ দিয়ে অথবা বর্ণনাকারী বলেনঃ একটি চুড়া হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এর উগরে উঠে জোরে বললঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। আবূ মূসা বলেনঃ তখন রাসুল তার খচ্চরে আরোহী ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তো কোন বধির কিংবা কোন অনুপস্হিত কাউকে ডাকছো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা অথবা বললেনঃ হে আবদুল্লাহ আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধনাগারের একটি বাক্য বাতলে দেব না? আমি বললাম, হ্যা, বাতলে দিন। তিনি বললেনঃ তা হল “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।

৫৯৬৮ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাঁআলার নিরানব্বই নাম আছে (এক কম একশ নাম)। যে ব্যাক্তি এগুলোর হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা-আলা বেজোড়। তাই তিনি রেজোড়ই পছন্দ করেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেনঃ “মান আহসাহা” অর্থ যে হিফাযত করল।

৫৯৬৯ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) শাকীক (রহঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর (ওয়ায শোনার) জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ ইয়াযিদ ইবনু মুয়াবিয়া (রাঃ) এসে পড়লেন। তখন আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি বসবেন না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি ভেতরে প্রবেশ করব এবং আপনাদের কাছে আপনাদের সঙ্গীকে নিয়ে আসব। নতূবা আমি ফিরে এসে বসব। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বেরিয়ে এলেন। তিনি আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমি তো আপনাদের এখানে উপস্থিতির কথা অবহিত ছিলাম। কিন্তু আপনাদের নিকট বেরিয়ে আসতে আমাকে বাধা দিচ্ছি এ কথাটা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়ায নসীহত করতে আমাদের অবকাশ দিতেন, যাতে আমাদের বিরক্তির কারণ না হয়।

৬১০৯ কুতায়বা (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমার উম্মাত থেকে সত্তর হাজার অথবা সাত লক্ষ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাবী আবূ হাযিম জানেন না যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত দুটি সংখ্যার মাঝে কোনটি বলেছেনঃ (তিনি এই মর্মে আরও বলেন যে) তারা একে অপরের হাত দৃঢ়ভাবে ধারন করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রথম ব্যাক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষন না সর্বশেষ ব্যাক্তি প্রবেশ করবে। তাদের চেহারাগুলো হবে পূর্নিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল।

৬১১০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ জান্নাতীরা জান্নাতের মাঝে তাদের কামরাসমূহ দেখতে পাবে, যেমন আকাশের মাঝে তোমরা তারকাসমূহ দেখতে পাও। (সনদান্তভুক্ত) রাবী আবদুল আযীয বলেনঃ আমার পিতা বলেছেনঃ যে, আমি এই হাদীসটি নূমান ইবনু আবূ আইয়্যাশকে বলেছি। অতঃপর তিনি বলেছেনঃ, আমি এই মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অবশ্যই আবূ সাঈদকে এ হাদীস বর্ণনা করতে আমি শুনেছি। এবং এতে তিনি এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। যেরুপ অস্তমান তারকাকে আকাশের পুর্বও পশ্চিম প্রান্তে তোমরা দেখে থাক।

৬১১১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কম আযাব প্রাপ্ত লোককে আল্লাহ তাআলা বলবেন, দূনিয়ার মাঝে যত কিছু আছে তার তূল্য কোন সম্পদ যদি (আজ) তোমার কাছে থাকত, তাহলে কি তুমি তার বিনিময়ে নিজকে (আযাব থেকে) মুক্ত করতে? সে বলবে, হ্যা। এরপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি তোমার থেকে এর চেয়েও সহজতর বস্তুর প্রত্যাশা করেছিলাম, যখন তুমি আদমের পৃষ্টদেশে বর্তমান ছিলে। আর তা হচ্ছে এই যে, তুমি আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। এরপর তুমি তা অস্বীকার করলে আর আমার সাথে অংশী স্থাপন করলে।

৬১১২ আবূ নুমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শাফাআতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যেমন তারা সা’আরীর। (রাবী জাবির বলেন) আমি বললাম সা আরীর কি? তিনি বললেনঃ সা-আরীর মানে যাগাবীস (শৃগালের বাচ্চাসমুহ) বের হওয়ার সময় তাদের মুখ থাকবে ভাঙ্গা (দাঁত পড়া)। (সনদান্তভূক্ত রাবী হাম্মাদ বলেন) আমি আবূ মুহাম্মাদ আমর ইবনু দীনারকে জিজ্ঞাসা করি যে, আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ শাফাআতের দ্বারা জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তিনি বললেনঃ হাঁ।

৬১১৩ হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আযাবে চর্ম বিবর্ন হয়ে যাওয়ার পর একদল লোককে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতীগণ তাদেরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করবে।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: দু’আ
দু’আ
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/doa.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/doa.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy