ফিতনা

৬৫৭২ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার হাউযের পাশে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সন্মুখ থেকে কতিপয় লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ ছেড়ে) পিছনে চলে গিয়েছিল। (বর্ণনাকারী) ইবনু আবূ মুলায়কা বলেনঃ হে আল্লাহ! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।

৬৫৭৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি হাউযে কাওসারের নিকট তোমাদের আগেই উপস্থিত থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে অগ্রসর হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমি বলবঃ হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতূন কি ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।

৬৫৭৪ ইয়াইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউযের পাড়ে তোমাদের আগে উপস্থিত থাকব। যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে একবার সে হাউয থেকে পান করবে সে কখনই তৃষার্ত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে উপস্থিত হবে যাদেরকে আমি (আমার উম্মাত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এর পরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেনঃ আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমতাবস্হায় নুমান ইবনু আবূ আয়াস আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি অনুরুপ ওনেছেন। আমি বললাম, হ্যা। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে এ হাদীসে অভিড়িক্ত বলতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলবেনঃ এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয়ই অবহিত নন যে আপনার পরে এরা দ্বীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এ শুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দুর হোক।

৬৫৭৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসডদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যাক্তি স্বার্খকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে আমাদের জন্য কি হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তাদের হক পরিপূর্নরুপে আদায় করবে, আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।

৬৫৭৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যাক্তি সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলি যুগের মৃত্যুর ন্যায়।

৬৫৭৭ আবূ নূমান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি স্বীয় আমীরের নিকট থেকে অপছন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন এতে ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যাক্তি জামাআত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মরবে তার মৃত্যু হবে অবশ্যই জাহেলী মৃত্যুর ন্যায়।

৬৫৭৮ ইসমাঈল (রহঃ) জুতাদা ইবনু আবূ উমাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলান। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করে দিন। আপনি আমাদের এরুপ একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনাকে উপকৃত করবে এবং যা আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছেন। তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আহবান করলেন। আমরা তার কাছে বায়আত করলাম। এরপর তিনি (উবাদা) বললেনঃ আমাদের থেকে যে অস্বীকার তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরুপে শোনা ও মানার উপর বায়আত করলাম। আরও (বায়আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্যে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফূরী দেখ, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তবে ভিন্ন কথা।

৬৫৭৯ মুহাম্মাদ ইবনু আরআরা (রহঃ) উসায়দ ইবনু হুযাহার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি অমুক ব্যাক্তিকে প্রশাসক নিমুক্ত করলেন, অথচ আমাকে নিযুক্ত করলেন না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা আমার পর অগ্রাধিকারের প্রবণতা দেখবে। সে সময় তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে- যতক্ষন না আমার সঙ্গে মিলিত হও।

৬৫৮০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আমর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার দাদা আমাকে জানিয়েছেন যে, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদিনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে বসা ছিলাম। আমাদের সাথে মারওয়ানও ছিল। এ সময় আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি আস-সা’দিকুল মাসদুক (সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে স্বীকৃত)-কে বলতে শুনেছি আমার উম্মাতের ধ্বংস কুরাইশের কতিপয় বালকের হাতে হবে। তখন মারওয়ান বলল, এ সকল বালকের প্রতি আল্লাহর ‘লানত, বর্ষিত হোক। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি যদি বলার ইচ্ছা করি যে তারা অমুক অমুক গোত্রের লোক তাহলে বলতে সক্ষম। আমর ইবনু ইয়াহইয়া বলেনঃ মারওয়ান যখন সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হল, তখন আমি আমার দাদার সঙ্গে তাদের সেখানে গেলাম। তিনি যখন তাদের অল্প বয়ষ্ক বালক দেখতে পেলেন তখন তিনি আমাদের বললেনঃ সম্ভবত এরা সেই দলেরই অন্তর্ভুক্ত। আমরা বললাম, এ বিষয়ে আপনই ভাল বোঝেন।

৬৫৮১ মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) যায়নাব বিরত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রক্তবর্ণ চেহারা নিয়ে নিদ্রা থেকে জাগলেন এবং বলতে লাগলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ! আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। অত্যাসন্ন এক দুর্যোগে আরব ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াজুজ-মাজুজের (প্রতিরোধ) প্রাচীর আজ এতটুকু পরিমাণ খুলে গেছে। সুফিয়ান নববই কিংবা একশতের রেখায় আঙ্গুল রেখে গিট বানিয়ে পরিমাণটুকু দেখালেন। জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব অথচ আমাদের মধ্যে নেককার লোকও থাকবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা, যখন পাপাচার বৃদ্ধি পাবে।

৬৫৮২ আবূ নূআয়ম (রহঃ) ও মাহমূদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার টিলাসমুহের একটির উপর উঠে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাও? উত্তরে সাহাবা-ই-কিরাম বললেনঃ না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিঃসন্দেহে আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমাদের ঘরগুলোর ফাঁকে ফাকে ফিতনা বৃষ্টি ধারার মতো নিপতিত হচ্ছে।

৬৫৮৩ আইয়্যাস ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সময় নিকটবর্তী হতে থাকবে, আর আমল হ্রাস পেতে থাকবে, কার্পণ্য ছড়িয়ে -দেওয়া হবে, ফিতনার বিকাশ ঘটরে এবং হারজ ব্যাপকতর হবে। সাহাবা-ই-কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হত্যা, হত্যা। শুআয়ব, ইউনূস, লাইস এবং যুহরীর ভ্রাতুষ্পূত্র আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে।

৬৫৮৪ উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) শাকিক থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তাঁরা বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ইল্‌ম উঠিয়ে নেওযা হবে। সে সময় হারজ- ব্যাপকতর হবে। আর হারজ- হল (মানুষ) হত্যা।

৬৫৮৫ উমর ইবনু হাযবল (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের পুর্বে এমন একটি সময় আসবে ইল্‌ম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, আর তখন হারজ ব্যাপকতর হবে। হারজ, হলো হত্যা।

৬৫৮৬ কুতায়বা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পূর্বোক্ত হাদীসের ন্যায় একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। আর হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা।

৬৫৮৭ মুহাম্মাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তার ব্যাপারে আমার ধারণা, তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফূ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের পূর্বে হারজ অর্থাৎ হত্যার যুগ শুরু হবে। তখন ইল্‌ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং মূর্খতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ হাবশী ভাষায় হারজ অর্থ (মানুষ) হত্যা। আবূ আওয়ানা তাঁর বর্ননা সুত্রে আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তিনি আবদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যুগকে ‘হারজ’ এর যুগ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সে যুগ সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি? এর উত্তরে তিনি পূর্বোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত যাদের জীবদ্দশায় কায়েম হবে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক।

৬৫৮৮ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) যুবায়র ইবনু আদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের পক্ষ থেকে মানুষ যে নির্যাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বললেনঃ ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সহিত মিলিত হওয়ার পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পুর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতিবাহিত হবে না, যার পরবর্তী যুগ তার চেয়েও নিকৃষ্টতর নয়। তিনি বলেনঃ এ কথাটি আমি তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি।

৬৫৮৯ আবূল ইয়ামান (রহঃ) ও ইসমাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -পত্নী উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত অবস্হায় নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে বলতে লাগলেন, সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা কতই না খাযানা নাযিল করেছেন আর কতই না ফিতনা অবতীর্ণ হয়েছে। কে আছে যে হুজরাবাসিনীদেরকে জাগিয়ে দেবে যেন তারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। এ বলে তিনি তার স্ত্রীগণকে উদ্দেশ্য করেছিলেন। তিনি আরও বললেনঃ দুনিয়ার মধ্যে বহু বস্ত্র পরিহিতা পরকালে বিবস্ত্রা থাকবে।

৬৫৯০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

৬৫৯১ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

৬৫৯২ মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার অপর কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করে ইশারা না করে। কেননা সে জাননা হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে (এক মুসলমানকে হত্যার অপরাধে) সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে।

৬৫৯৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমরকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবূ মুহাম্মাদ! আপনি কি জাবির ইবনু আবদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যাক্তি মসজিদে কতক তীর নিয়ে যাচ্ছিল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তীরের লৌহ ফলাগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রাখ। উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা।

৬৫৯৪ আবূ নুঁমান (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি কতক তীর নিয়ে মসজিদে এলো। সেগুলোর ফলা খোলা অবস্থায় ছিল। তখন তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন সে তার তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, যাতে কোন মুসলমানের গায়ে আঘাত না লাগে।

৬৫৯৫ মুহাম্মাদ ইবনু আঁলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায় তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলমানের গায়ে লেগে না যায়।

৬৫৯৬ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকী (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলমানকে হত্যা করা কুফরী।

৬৫৯৭ হাজ্জাজ ইরন মিনহাল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, আমার পর তোমরা পরস্পরে হানাহানি করে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না।

৬৫৯৮ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদা) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনতার উদেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ তোমরা কি জানো না আজকোন দিন! তারা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। (বর্ণনাকারী বলেন) এতে আমরা মনে করলাম হয়ত তিনি অন্য কোন নামে এ দিনটির নামকরণ করবেন। এরপর তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেনঃ এটি কি ইয়াওমুন নাহর (কুরবানীর দিন) নয়? আমরা বললাম হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ। এরপর তিনি বললেনঃ এটি কোন নগর! এটি -হারম নগর- (সংরক্ষিত নগর) নয়? আমরা বললাম হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহ তোমাদের এ নগরে, এ মাসের এ দিনটি তোমাদের জন্য যেরুপ হারাম, তোমাদের (একের) রক্ত, সম্পদ, ইজ্জত ও চামড়া অপরের জন্য তেমনি হারাম। শোন! আমি কি তোমাদের নিকট পৌছিয়েছি? আমরা বললাম, হ্যা। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন) উপস্থিত ব্যাক্তি যেন (আমার বানী) অনুপস্হিতের নিকট পৌছিয়ে দেয়। কেননা অনেক প্রচারক এমন ব্যাক্তির নিকট (আমার বানী) পৌছাবে যারা তার চাইতে অধিক সংরক্ষণকারী হবে। বস্তুত ব্যাপারটি তাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার পরে একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না। যে দিন জারিয়্যাহ ইবনু কুদামা কত্যৃক আলা ইবনু হাযরামীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, সেদিন জারিয়্যাহ তার বাহিনীকে বলেছিল, আবূ বাকরার খবর লাভ। তারা বলেছিল এই তো আবূ বাকরা (রাঃ) আপনাকে দেখছেন। আবদুল রহমান বলেনঃ আমার মা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। আবূ বাকরা (রাঃ) বলেছেনঃ (সেদিন) যদি তারা আমার গৃহে প্রবেশ করত, তাহলে আমি তাদেরকে একটি বাশের লাঠি নিক্ষেপ (প্রতিহত) করতাম না। আবূ আবদুল্লাহ বলেনঃ হাদীসে ব্যবহৃত ‘বাহিশতু’ শব্দের অর্থ ‘রামিতু’ অর্থাৎ আমি নিক্ষেপ করেছি।

৬৫৯৯ আহমাদ ইবনু ইশকাব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না।

৬৬০০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন যে, বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ লোকদেরকে নীরব হতে বল। তারপর তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান মেরে কুফরীর দিকে ফিরে যেয়ো না।

৬৬০১ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যাক্তি দাঁড়ানো ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। দাড়ানো ব্যাক্তি পদাচারী ব্যাক্তির চাইতে উত্তম। পদাচারী ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির চাইতে উত্তম হবে। যে ব্যাক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। তখন কেউ যদি কোন আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন তথায় আত্নরক্ষা করে।

৬৬০২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যাক্তি-দাড়ানো ব্যাক্তির তুলনায় ভাল (ফিতনামুক্ত) থাকবে, দাঁড়ানো ব্যাক্তি চলমান ব্যাক্তির তুলনায় ভাল থাকবে, চলমান ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির তুলনায় ভাল থাকবে। যে ব্যাক্তি সে ফিতনার দিকে তাকাবে, ফিতনা তাকে পেয়ে বসবে। সুতরাং তখন কেউ যদি (কোথাও) কোন নিরাপদ আশ্রয়স্থল কিংবা আত্নরক্ষার ঠিকানা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আশ্রয় নেয়।

৬৬০৩ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহাব (রহঃ) হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন ফিতনা কবলিত রজনীতে (অর্থাৎ জঙ্গে জামাল কিংবা জঙ্গে সিফফীনে) আমি হাতিয়ার নিয়ে বের হলাম। হঠাৎ আবূ বাকরা (রাঃ) আমার সামনে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাত ভাইয়ের সাহায্যার্থে যাচ্ছি। তখন তিনি বললেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দু-জন মুসলিম তরবারী নিয়ে পরস্পর সংঘর্যের জন্য মুখোমুখী হয়, তাহলে উভয়েই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হত্যাকারী তো জাহান্নামী। কিন্তু নিহত ব্যাক্তির কি অপরাধ? তিনি বললেনঃ সেও তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল। বর্ণনাকারী হাম্মাদ ইবনু যায়িদ বলেনঃ আমি এ হাদীসটি আইউব ও ইউনূস ইবনু আবদুল্লাহর কাছে পেশ করলাম। আমি চাচ্ছিলাম তাঁরা এ হাদীসটি আমাকে বর্ননা করবেন। তারা বললেনঃ এ হাদীসটি হাসান বসরী (রহঃ) আহনাফ ইবনু কায়সের মধ্যস্থতায় আবূ বাকরা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

৬৬০৪ সুলায়মান ইবনু হারব ও মুআম্মাল (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া মাঁমার আইউব থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। বাক্কার ইবনু আবদুল আযীয স্বীয় পিতার মধ্যস্থতায় আবূ বাকরা (রহঃ) থেকে এটি বর্ননা করেছেন এবং শুনদার ও আবূ বাকরা (রাঃ)-এর বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) মানসুর থেকে (পূর্বোক্ত সনদে হাদীসটি বর্ননা করার সময়) মারফূতি রুপে উল্লেখ করেননি।

৬৬০৫ মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (বা) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কল্যাণের বিষয়াদি জিজ্ঞাসা করত। কিন্তু আমি তাকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা তো জাহিলিয়্যতে ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যান আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে অকল্যাণের পর আবার কি কোন কল্যাণ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূমরাচ্ছনতা থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম এর ধূমরাচ্ছনতা কিরুপ? তিনি বললেনঃ এক জামাআত আমার তরীকা ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যা। জাহান্নামের প্রতি আহবানকারী এক সম্প্রদায় হবে। যে ব্যাক্তি তাদের আহবানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাদের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেনঃ তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এরুপ পরিস্থিতি আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কি করতে নির্দেশ দেন? তিনি বললেনঃ মুসলিমদের জামাআত ও ইমামকে আকড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তখন মুসলমানদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেনঃ তখন সকল দলমত পরিত্যাগ করে সম্ভব হলে কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকবে, যতক্ষন না সে অবস্হায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।

৬৬০৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ ও লাইস (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ একবার মদিনাবাসীদের উপর একটি যোদ্ধাদল প্রভুত্বের সিদ্ধান্ত হল। আমার নামও সে দলের অন্তভুক্ত করা হল। এরপর ইকরামা (রহঃ)-এর সঙ্গে দেখা হলে আমি তাকে এ সংবাদ জানোানাম। তিনি আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ) অবগত করেছেন যে, মুসলিমদের কতিপয় লোক মুশরিকদের সাথে ছিল। এতে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মুকাবিলায় মুশরিকদের দল ভারী করছিল। তখন কোন তীর আসত যা নিক্ষিপ্ত হত এবং তাদের কাউকে আঘাত করে এটি তাকে হত্যা করত। অথবা কেউ তাকে তরবারীর আঘাতে হত্যা করত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা আয়াত অবতীর্ন করলেনঃ যারা নিজেদের উপর যুলুম করে তাদের প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতারা বলে (৪- ৯৭)।

৬৬০৭ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুটি হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি দেখেছি (বাস্তবায়িত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেনঃ আমানত মানুষের অন্তর্মুলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানত বিলুপ্ত সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মানুষ এক সময় ঘূমাবে। তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর ন্যায় চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘূমাবে। তারপর আবার তুলে নেওয়া হবে, তখন ফোসকার ন্যায় তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোসকা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানত আদায় করবে না। তখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন আমানতদার ব্যাক্তি আছেন। কোন কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। এরপর হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ আমার উপর দিয়ে এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সাথে লেনদেন করছি এ-সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতাম না। কেননা, সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তার দ্বীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খৃষ্টান হয়, তাহলে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমূক অমুককে ছাড়া কারো সঙ্গে বেচাকেনা কারব না।

৬৬০৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার হাজ্জাজ আমার কাছে এলেন। তখন সে তাঁকে বলল, হে ইবনু আকওয়া! আপনি সাবেক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেন না কি- যে বেদুঈন সূলভ জীবন যাপন করতে শুরু করেছেন? তিনি বললেনঃ না। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বেদুঈন সূলভ জীবন যাপনের অনুমতি প্রদান করেছেন। ইয়াযীদ ইবনু আবূ উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, যখন উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) নিহত হলেন, তখন সালমা ইবনু আকওয়া (রাঃ) ‘রাবাযায় চলে যান এবং সেখানে তিনি এক মহিলাকে বিয়ে করেন। সে মহিলার ঘরে তার কয়েকজন সন্তান জন্মলাভ করে। মৃত্যুর কয়েক দিন পূর্বে তিনি মদিনায় আগমন করেন। এর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসবাসরত ছিলেন।

৬৬০৯ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদূর ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে যখন মুসলমানদের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ হবে ছাগল। ফিতনা থেকে দ্বীন রক্ষার্থে পলায়নের জন্য তারা এগুলো নিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় এবং বারিপাতের স্থানসমূহ গিয়ে আশ্রয় নেবে।

৬৬১০ মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে প্রশ্ন করত। এমন কি প্রশ্ন করতে করতে তারা তাঁকে বিরক্ত করে তূলত। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা (আজ) আমাকে যাই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি ডানে বামে তাকাচ্ছিলাম। দেখতে পেলাম প্রত্যেকেই আপন বস্ত্রে মাথা গুজে কাঁদছে। তখন এমন এক ব্যাক্তি পারস্পরিক বাকবিতণ্ডার সময় যাকে অন্য এক ব্যাক্তির (যে প্রকৃতপক্ষে তার পিতা নয়) সন্তান বলে সন্মোধন করাতে উঠে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ হুযাফা তোমার পিতা। এরপর উমর (রাঃ) সন্মুখে এলেন আর বললেনঃ আমরা রব হিষেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসাবে ইসলামকে এবং মুহাম্মাদ -কে রাসুল হিসেবে মেনে পরিতূষ্ট। ফিতনার অনিষ্ট থেকে আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজকের মত এত উত্তম বস্তু এবং এত খারাপ বস্তু আমি আর কখনো প্রত্যক্ষ করিনি। আমার সম্মুখে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। এমনকি আমি সে দুটোকে এ দেয়ালের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম। কাতাদা বলেনঃ উপরে বর্ণিত হাদীসটি নিন্নোক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলে উল্লেখ করা হয়। ইরশাদ হলোঃ হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশিত হলে তোমরা দুঃখিত হবে। (৫:১০১)।

৬৬১১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) সালিমের পিতা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একদা তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )মিম্বরের পাশে দণ্ডায়মান হয়ে বলেছেনঃ ফিতনা এ দিকে, ফিতনা সে দিকে যেখান থেকে শয়তানের শিং উদিত হবে। কিংবা বলেছিলেনঃ সূর্যের মাথা উদিত হয়।

৬৬১২ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পূর্ব দিকে মুখ করে বলতে শুনেছেন, সাবধান! ফিতনা সে দিকে যে দিক থেকে শয়তানের শিং উদিত হয়।

৬৬১৩ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের ইয়ামানে বরকত দাও। লোকেরা বলল, আমাদের নজদেও। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের সিরিয়ায় বরকত দাও। হে আল্লাহ আমাদের জন্য বরকত দাও আমাদের ইয়ামানে। লোকেরা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের নজদেও। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয়, তৃতীয়বারে তিনি বললেনঃ সেখানে তো কেবল ভূমিকস্প আর ফিতনা। আর তথা হতে শয়তানের শিং উদিত হবে।

৬৬১৪ ইসহাক আল ওয়াসেতী (রহঃ) সাঈদ ইবনু যূবায়র (রহঃ) থেকে বর্নিতা তিনি বলেনঃ একদা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আমাদের নিকট আসলেন। আমরা আশা করছিলাম যে, তিনি আমাদের একটি উত্তম হাদীস বর্ননা করবেন। একব্যাক্তি তার দিকে আমাদের চেয়ে অগ্রসর হয়ে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! ফিতনার সময় যুদ্ধ করা সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ তাদের সাথে যুদ্ধ কর, তাবত ফিতনার অবসান ঘটে। তখন তিনি বললেনঃ তোমার মা তোমার জন্য বিলাপ করুক। ফিতনা কাকে বলে জানো কি? মুহাম্মাদ তো যুদ্ধ করতেন মুশরিকদের বিরুদ্ধে। কেননা, তাদের শিরকের মধ্যে থাকাটাই মুলত ফিতনা। কিন্তু তা তোমাদের রাজ্য নিয়ে লড়াইর মতো ছিল না।

৬৬১৫ উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেনঃ এক সময় আমরা উমর (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেনঃ ফিতনা সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে , স্বরণ রেখেছে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ) মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী সংক্রান্ত ব্যাপারে যে ফিতনায় নিপতিত হয় সালাত (নামায/নামাজ), সাদাকা, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মোচন করে দেয়। তিনি বললেনঃ আনি তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি এবং সে ফিতনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি যা সাগর লহরীর মত ঢেউ খেলবে। হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! সে ফিতনায় আপনার কোন অসুবিধা হবে না। কেননা, সে ফিতনা ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর (রাঃ) বললেনঃ দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে? তিনি বললেনঃ না বরং ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেনঃ তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। (হুযায়ফা বলেন) আমি বললাম, হ্যা। (আকীক বলেন) আমঁরা হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, উমর (রাঃ) কি দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা। যেরুপ আমি সুনিশ্চিতভাবে জানি যে আগামী দিনের পর রাত আসবে। কেননা আমি তাকে এরুপ একটি হাদীস বর্ননা করেছিলাম যা ভ্রান্তিতে। (শাফীক বলেন) দরজাটি কে সে সম্পর্কে হুযায়ফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই আমরা মাসরুককে জিজ্ঞাসা করতে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেনঃ উমর (রাঃ) (নিজেই)।

৬৬১৬ সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়াম (রহঃ) আবূ-মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনবশত মদিনার (দেয়াল ঘেরা) বাগানসমূহের কোন একটি বাগানের উদ্দেশ্যে বের হলেন আমি তার পিছনে গেলাম। তিনি যখন বাগানে প্রবেশ করলেন আমি এর দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে বললাম, অদ্য আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রহরীর কাজ আঞ্জাম দিব। অবশ্য তিনি আমাকে এর নির্দেশ দেননি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে গেলেন এবং স্বীয় প্রয়োজন সেরে নিলেন। এরপর একটি কুপের পোস্তার উপর বসে পড়লেন এবং হাটুর নিচের অংশের কাপড় তুলে নিয়ে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে তার নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি বললাম, আপনি অপেক্ষা করুন, যতক্ষন না আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসছি। তিনি অপেক্ষা করলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আবূ বকর (রাঃ) আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইছেন। তিনি বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের শুভ সংবাদ দাও। আনু বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডান পার্শে গিয়ে বসলেন। এরপর তিনিও হাঁটুর নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এরপর উমর (রাঃ) আসলেন। আমি বললাম, আপনি স্বস্থানে অপেক্ষা করুন। আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি। (অনুমতি প্রার্থনা করলে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং জানাতের সুসংবাদ দাও। এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাম দিকে বসলেন এবং তিনি নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুপের মধ্যে ঝূলিয়ে দিলেন। এতে কুপের পোস্তা পরিপূর্ন হয়ে গেল এবং সেখানে বসার আর কোন স্হান অবশিষ্ট রইল না। এরপর উসমান (রাঃ) আসলেন। আমি বললাম, আপনি স্বস্থানে অপেক্ষো করুন, যতক্ষন আমি আপনার জন্য অনুমতিনিয়ে না আসি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তাঁকে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে বিপদাক্রান্ত হওয়াসহ জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তিনি প্রবেশ করলেন। বিচ্ছু তাদের সঙ্গে বসার কোন স্হান পেলেন না। ফলতঃ তিনি বিপরীত দিকে এসে তাদের মুখোমুখী হয়ে কুয়ার পাড়ে বসে গেলেন এবং হঁস্তদ্বয়ের নিচের অংশ অনাবৃত করে উভয় পা কুয়ার অভ্যন্তরে ঝূলিয়ে দিলেন। আমি তখন আমার অপর এক ভাই-এর (আগমন) কামনা করছিলাম এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করছিলাম যেন সে (এ মুহূর্তে) আগমন করে। ইবনু মূসা ইয়্যাব বলেনঃ আমি এ ঘটনার মর্মার্থ এভাবে গ্রহণ করেছি যে, তা হল তাদের তিনজনের কবরের নমুনা যা এখানে একসঙ্গে হয়েছে। আর উসমান (রাঃ) ভিন্ন স্থানে।

৬৬১৭ বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উসামা (রাঃ)-কে বলা হল আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না? তিনি বললেনঃ আমি এ ব্যাপারে বলেছি, তবে এমন পন্হায় নয় যে, আমি তোমার জন্য একটি দার (ফিতনার) উন্মোচিত করব যাতে আমই হব এর প্রথম উন্মোচনকারী এবং আমি এমন ব্যাক্তি নই- যে, কোন লোক দুই ব্যাক্তির আমীর নিযুক্ত হওয়ার পর তার সম্পর্কে বলব, আপনি উত্তম। কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে (কিয়ামতের দিন) এক ব্যাক্তিকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে গাধা দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে যেমন গম পিষা হয়, সেরুপ পিষে ফেলা হবে। দোযখবাসীরা তার পাশে এসে সমবেত হবে এবং বলবে, হে অমুক! তুমই কি আমাদের ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে না? তখন সে বলবে, হ্যা, আমি ভাল কাজের আদেশ করতাম, তবে আমি নিজে তা করতাম না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, তবে আমি নিজেই তা করতাম।

৬৬১৮ উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একটি কথা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (সে কথাটি হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছলে যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনই সফলকাম হবে না যারা তাদের শাসনভার কোন রমনীর হাতে অর্পণ করে।

৬৬১৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ মারিয়াম আবদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ আসা’দী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তালহা, যুবায়র ও আয়িশা (রাঃ) যখন বসরার দিকে গমন করলেন, তখন আলী (রাঃ) আম্মার ইবনু ইয়াসির ও হাসান ইবনু আলী (রাঃ) -কে প্রেরণ করলেন। তাঁরা আমাদের কুফায় আগমন করলেন এবং (মসজিদের) নিম্বরে উপবেশন করলেন। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) মিম্বরের সর্বোচ্চ ধাপে উপবিষ্ট ছিলেন, আর আম্মার (রাঃ) হাসান (রাঃ)-এর নিচের ধাপে দণ্ডায়মান ছিলেন। আমরা এসে তার নিকট সমবেত হলাম। এ সময় আমি শোনলাম, আম্মার (রাঃ) বলছেন, আয়িশা (রাঃ) বসরা অভিমুখে রওনা হয়ে গেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাদের (আমাদের) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এ কথা স্পষ্ট করে জেনে নেওয়ার জন্য তোমাদের পরীক্ষায় ফেলেছেন যে, তোমরা কি তাঁরই আনুগত্য কর, না তার অর্থাৎ আয়িশা (রাঃ)-এর আনুগত্য কর।

৬৬২০ আবূ নূআয়ম (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আাম্মার (রাঃ) কুফার (মসজিদের) মিন্বরে দণ্ডায়মান হলেন এবং তিনি আয়িশা (রাঃ)-ও তার সফরের কথা উল্লেখ করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তিনি (আয়িশা (রাঃ) ইহলক ও পরলোকে তোমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী। কিন্তু বর্তমানে তোমরা তাঁকে নিয়ে ভীষণ পরীক্ষার মুখোমুখী হয়েছ।

৬৬২১ বাদাল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) যখন আম্মার (রাঃ)-কে যূদ্ধে অংশ গ্রহনের আহবান জানাতে কুফাবাসীদের নিকট প্রেরণ করলেন, তখন আবূ মূসা ও আবূ মাসউদ (রাঃ) তার নিকট উপস্হিত হয়ে বললেনঃ তোমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমাদের জানামতে বর্তমান বিষয়ে (যুদ্ধের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করার বিষয়ে) দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করার চেয়ে অপছন্দনীয় কোন কাজ করতে আমরা তোমাকে দেখিনি। তখন আম্মার (রাঃ) বললেনঃ যখন থেকে আপনারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন আমি আপনাদের কোন কাজ দেখিনি যা আমার কাছে অপছন্দনীয় বিবেচিত হয়েছে বর্তমানের এ কাজে দেরী করা ব্যতীত। তখন আবূ মাসউদ (রাঃ) তাদের দু-জনকেই একজোড়া করে পোশাক পরিধান করিয়ে দিলেন। এরপর সকলেই (কুফা) মসজিদের দিকে রওনা হলেন।

৬৬২২ আবদান (রহঃ) শাকীক ইবনু সালমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ মাসউদ (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) ও আলার (রাঃ)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন আবূ মাসউদ (রাঃ) বললেনঃ তুমি ব্যতীত তোমার সঙ্গীদের মাঝে এমন কেউ নেই, যার সম্পর্কে আমি ইচ্ছা করলে কিছু না কিছু বলতে না পারি। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গ লাভ করার পর থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার চাইতে আমার দৃষ্টিতে দুষনীয় কোন কাজ তোমার কাছ থেকে দেখিনি। তখন আাম্মার (রাঃ) বললেন, হে আবূ মাসউদ! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে তোমাদের সঙ্গ লাভ করার পর থেকে এ ব্যাপারে গড়িমসি করার চাইতে আমার দৃষ্টিতে অধিক দূন্ননীয় কোন কাজ তোমার থেকে এবং তোমার এ সঙ্গী থেকে দেখিনি। আবূ মাসউদ (রাঃ) ধনবান ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি (তার চাকরকে) বললেনঃ হে বৎস! দু-জোড়া পোশাক নিয়ে এস। এরপর তিনি তার একটি আবূ মূসা (রাঃ)-কে ও অপরটি আম্মার (রাঃ)-কে দিলেন এবং বললেনঃ এগুলো পরিধান করে জুম আর সালাত (নামায/নামাজ) যাও।

৬৬২৩ আবদুল্লাহ ইবনু উসমান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ কোন কাওমের উপর আযাব নাযিল করেন তখন সেখানে বসবাসরত সকঁলের উপরই সেই আযাব নিপতিত হয়। অবশ্য পরে (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেককে তার আমল অনুসারে উঠানো হবে।

৬৬২৪ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হাসান বসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সেনাবাহিনী নিয়ে মুআবিয়া (রাঃ)-এর মুকাবিলায় রওনা হলেন, তখন আমর ইবনু আস (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ)-কে বললেনঃ আমি এরুপ এক সেনাবাহিনী দেখছি, যারা বিপক্ষকে না ফিরিয়ে কিছু হবে না। মুআবিয়া (রাঃ) বললেনঃ তাহলে মুসলমানদের সন্তান-সন্ততির তত্তাবধান কে করবে? আমর ইবনু আস (রাঃ) বললেনঃ আমি। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু আমির (রাঃ) ও আব্দুর রহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) বললেনঃ আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করব এবং তাকে সন্ধির কথা বলবঃ হাসান বসরী (রহঃ) বলেনঃ আমি আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেনঃ একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন। এমন সময় হাসান (রাঃ) আসলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখে) বললেনঃ আমার এ পৌত্র সরদার আর সম্ভবত আল্লাহ-তা-আলা তার মাধ্যমে মুসলমানদের দূটি (বিবদমান) দলের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করবেন।

৬৬২৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উসামা (রাঃ) –এর গোলাম হারমালা (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ উসামা (রাঃ) আমাকে আলী (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। আর তিনি বলে দিলেন যে, সেখানে যাওয়ার পরই (আলী (রাঃ)) তোমাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, তোমার সঙ্গীকে (আমার সহযোগিতা থেকে) কিসে পিছনে (বিরত) রেখেছে? তুমি তাঁকে বলবে, তিনি আপনার কাছে এ কথা বলে পাঠিয়েছেন যে, যদি আপনি সিংহের মুখে পতিত হন, তবুও আমি আপনার সঙ্গে সেখানে থাকাকে ভাল মনে করব। তবে এ বিষয়টি (অর্থাৎ মূসলমানদের পরস্পরিক যুদ্ধ) আমি ভাল মনে করছি না। (হারমালা বলেন) তিনি (আলী (রাঃ)) আমাকে কিছুই দিলেন না। এরপর আমি হাসান, হুসাইন ও আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তাঁরা আমার বাহন (মাল বোঝাই করে দিলেন।

৬৬২৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ যখন মদিনার লোকেরা ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়া (রাঃ)-এর বায়আত ভঙ্গ করল, তখন ইবনু উমর (রাঃ) তার বিশেষ ভক্তবৃন্দ ও সন্তানদের সমবেত করলেন এবং বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে ঝাণ্ডা (পতাকা) উত্তোলন করা হবে। আর আমরা এ লোকটির (ইয়াযীদের) প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুলের বর্ণিত শর্তানুযায়ী বায়আত গ্রহণ করেছি। বস্তুত কোন একজন লোকের প্রতি আল্লাহ ও তার রাসুলের বর্নিত শর্তানুযারী বায়আত গ্রহণ করার পর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের চেয়ে বড় কোন বিশ্বাসঘাতকতা আছে বলে আমি জানিনা। আমি যেন কারো সম্পর্কে ইয়াযীদের বায়আত ভঙ্গ করেছে, কিংবা সে আনুগত্য করছে না জানতে না পাই। অন্যথায় তার ও আমার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

৬৬২৭ আহমাদ ইবনু ইউনূস (রহঃ) আবূল মিনহাল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু বিয়াদ ও মারওয়ান যখন সিরিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত ছিলেন এবং ইবনু যুবায়র (রাঃ) মকার শাসনক্ষমতা দখল করে নিলেন, আর কারী নামধারীরা (খারেজীরা) বসরায় ক্ষমতায় চেপে বসল, তখন একদিন আমি আমার পিতার সঙ্গে আবূ বারযা আসলামী (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে রওনা করে আমরা তার ঘরে প্রবেশ করলাম। এ সময় তিনি তার বাশের তৈরি কুঠরীর ছায়াতলে বসা ছিলেন। আমরা তার কাছে বসলাম। আমার পিতা তার কাছ থেকে কিছু হাদীস শুনতে চাইলেন। পিতা বললেনঃ হে আবূ বারযা! লোকেরা কি ভীষণ সংকটে পতিত হয়েছে তা কি আপনি লক্ষ্য করছো না? সর্বপ্রথম যে কথাটি তাঁকে বলতে শোনলাম তা হল, আ মি যে কুরায়শের গোত্রসমূহের প্রতি বিরুপ ভাব পোষণ করি, এজন্য আল্লাহর কাছে অবশ্যই সাওয়াবের প্রত্যাশা করি। হে আরববাসীরা! তোমরা যে কিরুপ গোমরাহী, অভাব-অনটন ও লাঞ্চনাকর অবস্হায় ছিলে তা তোমরা জানো। মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ও মুহাম্মাদ -এর মাধ্যমে সে অবস্হা থেকে মুক্ত করে তোমাদের বর্তমান অবস্থায় পৌছিয়েছেন, যা তোমরা দেখছ। আর এ পার্থিব দূনিয়াই তোমাদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। ঐ যে লোকটা সিরিয়ায় (ক্ষমতা দখল করে) আছে, আল্লাহর কসম। একমাত্র দুনিয়ার সার্থ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সে লড়াই করেনি।

৬৬২৮ আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) হুযায়ফা ইবনুু-ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ বর্তমান যুগের মুনাফিকরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের মুনাফিকদের চাইতেও জঘন্য। কেননা, সে যূগে তারা (মুনাফিকী) করত গোপনে আর আজ করে প্রকাশ্যে।

৬৬২৯ খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নিফাক বস্তুত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে ছিল। আর এখন হল তা ঈমান গ্রহণের পর কুফরী।

৬৬৩০ ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কিয়ামত কায়ম হবে না যতক্ষন এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কবরের পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় না বলবে হায়! যদি আমি তার স্থলে হতাম।

৬৬৩১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত কায়েম হবে না, যতক্ষন ‘যূলখালাসার’ পাশে দাওস গোত্রীয় রমনীদের নিতম্ব দোলায়িত না হবে। ‘যুলখালাসা’ হল দাওস গোত্রের একটি মূর্তি। জাহিলি যুগে তারা এর উপাসনা করত।

৬৬৩২ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না কাহতান গোত্র থেকে এমন এক ব্যাক্তি আবির্ভূত হবে, যে মানুষকে লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে নেবে।

৬৬৩৩ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা বসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।

৬৬৩৪ আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ কিন্দী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অদ্য ভবিষ্যতে ফোরাত নদী তার গর্তস্ত্র স্বর্ণের খনি বের করে দেবো সে সময় যারা উপস্থিত থাকবে তারা যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে। উকবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীসটি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে সেখানে ‘কাঞ্জু মিন দাহবি’ এর স্থলে ‘জাবালু মিন জাহাবি’ (স্বর্ণের পাহাড়) উল্লেখ আছে।

৬৬৩৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হারিসা ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা সাদাকা কর। কেননা, অচিরেই এমন এক যুগ আসবে যে মানুষ সাদাকা নিয়ে ঘোরাফেরা করবে। কিন্তু সাদাকা গ্রহণ করে এমন কাউকে পাবে না। মুসবদ্দাদ (রহঃ) বলেনঃ হারিসা উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)-এর বৈপিত্রেয় ভাই।

৬৬৩৬ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন দুটি বড় দল পরস্পরে মহাযুদ্ধে লিপ্ত না হবে। উভয় দলের দাবি হবে অভিন্ন। আর যতক্ষন ত্রিশের কাছাকাছি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল-এর প্রকাশ না পাবে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল বলে দাবি করবে এবং যতক্ষন ইল্‌ম তুলে নেওয়া না হবে। আর ভূমিকম্প অধিক হারে না হবে। আর যামানা (কাল) সংক্ষিপ্ত না হবে এবং (ব্যাপক হারে ফিতনা প্রকাশ না পাবে। আবূ হারজ ব্যাপকতর হবে। হারজ হল হত্যা। আর যতক্ষন তোমাদের মাঝে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি না পাবে। তখন সম্পদের এমন সয়লাব শুরু হবে যে, সম্পদের মালিক তার সাদাকা কে গ্রহণ করবে- এ নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এমন কি যার নিকট সে সম্পদ পেশ করবে সে বলবে আমার এ মালের কোনই প্রয়োজন নেই। আর যতক্ষন মানুষ সুউচ্চ প্রাসা’দ নির্মাণের ক্ষেত্রে পরস্পরে প্রতিযোণিতায় অবতীর্ন না হবে। আর যতক্ষন এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলবে হায়! আমি যদি এ কবরবাসীর স্থলে হতাম এবং যতক্ষন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত না হবে। যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে এবং সকল লোক তা দেখবে। এবং সেদিন সকলেই ঈমান আনবে। কিন্তু সে দিন তার ঈমান কাজে আসবে না, যে ব্যাক্তি এর আগে ঈমান আনেনি। কিংবা ইতিপূর্বে যারা ঈমান আনেনি কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি (৬-১৫৮) আর অবশ্যই কিয়ামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে দুব্যাক্তি (পরস্পরে বেচাকেনার উদ্দেশ্যে) কাপড় খুলবে। কিন্তু তারা বেচাকেনা ও গুটিয়ে রাখা শেষ করতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামত এমন অবস্হায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি তার উটের দুধ দোহন করে নিয়ে ফিরেছে কিন্তু সে তা পান করতে পারবে না। কিয়ামত এমন অবস্হায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি তার হাওয আন্তর করছে, কিন্তু সে পানি পান করাতে পারবে না। অবশ্যই কিয়ামত এমন (অতর্কিত) অবস্থায় কায়েম হবে যে, এক ব্যাক্তি মুখের কাছে লোকমা তুলবে কিন্তু সে তা আহার করতে পারবে না।

৬৬৩৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত বেশি প্রশ্ন করতাম সেরুপ আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেনঃ তা থেকে তোমার কি ক্ষতি হবে? আমি বললাম, লোকেরা বলে যে, তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কাছে তা অতি সহজ।

৬৬৩৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জালের ডান চক্ষুটি কানা হবে, যেন তা ফোলা আতরের ন্যায়।

৬৬৩৯ সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দাজ্জাল আসবে। অবশেষে মদিনার এক পার্শে অবতরণ করবে। (এ সময় মদিনা) তিনবার প্রকম্পিত হবে। তখন সকল কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে তার কাছে চলে আসবে।

৬৬৪০ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ মাসীহ দাজ্জালের ভয় থেকে মদিনায় প্রবেশ করবে না। সে সময় মদিনায় সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে দুঁজন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবেন। ইবনু ইসহাক ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন যে, আমি যখন বসরায় আগমন করলাম তখন আবূ বাকরা (রাঃ) আমাকে বললেনঃ যে, এ হাদীসটি আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

৬৬৪১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ মদিনায় মাসীহ দাজ্জাল-এর প্রভাব পড়বেনা। সে সময় মদিনার সাতটি প্রবেশদার থাকবে। প্রতি প্রবেশদ্বারে দু-জন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবেন।

৬৬৪২ আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোক সমাবেশে দাড়ালেন এবং মহান আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য প্রসংসা করলেন। এরপর তিনি দাজ্জাল প্রসঙ্গে কথা বললেনঃ তার সম্পর্কে আমি তোমাকে সতর্ক করছি। এমন কোন নাবী নেই তিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলবঃ যা কোন নাবী তার কাওমকে বলেননি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ তাআলা অবশ্যই কানা নন।

৬৬৪৩ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইরন উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি নিদ্রিত অবস্থায় দেখতে পেলাম যে, আমি কাবার তাওয়াফ করছি। হঠাৎ একজন লোককে দেখতে পেলাম ধূসর বর্ণের আলুথালু কেশধারী, তার মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কিংবা টপকে পড়ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি মারিয়ামের পুত্র। এরপর আমি তাকাতে লাগলাম, হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যাক্তি স্থলকায় লাল বর্ণের কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙুরের ন্যায়। লোকেরা বলল এ-হল দাজ্জাল! তার সাথে অধিকতর সা’দৃশ্যপূর্ন লোক হল ইবনু কাতান, বনী খুযা আর এক ব্যাক্তি।

৬৬৪৪ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাত (নামায/নামাজ)-এর মাঝে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পানাহ চাইতে শুনেছি।

৬৬৪৫ আবদান (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি দাজ্জাল সম্পর্কে বলেছেনঃ তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। বস্তুত তার আগুনই হবে শীতল পানি, আর তার পানি হবে আগুন। আবূ মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমিও এ হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি।

৬৬৪৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন নাবী প্রেরিত হন নাই যিনি তার উম্মতকে এই কানা মিথ্যুক সম্পর্কে সতর্ক করেননি। জেনে রেখো, সে কিন্তু কানা, আর তোমাদের রব কানা নন। আর তার দুই চোখের মাঝখানে কাফের শব্দটি লিপিবদ্ধ থাকবে। এ বিষয়ে আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

৬৬৪৭ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আর সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন। তিনি তার সম্পর্কে আমাদেরকে যা কিছু বলেছিলেন, তার মাঝে এও বলেছেনঃ যে, দাজ্জাল আসবে তবে মদিনার প্রবেশপথে তার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকবে। মদিনার সংলগ্ন বালুময় একটি স্থানে সে অবস্থান গ্রহণ করবে। এ সময় তার দিকে এক ব্যাক্তি গমন করবে। যিনি মানুষের মাঝে উত্তম। কিংবা উত্তম ব্যাক্তিদের একজন। সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তূই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাঁর হাদীস বর্ননা করেছেন। তখন দাজ্জাল বলবে, তোমরা দেখ – আমি যদি একে হত্যা করে আবার জীবিত করে দেই তাহলে কি তোমরা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে? লোকেরা বলবে, না। এরপর সে তাকে হত্যা করবে এবং পূনরায় জীবিত করবে। তখন সে লোকটি বলবে, আল্লাহর কসম! তোর সম্পর্কে আজকের মত দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলাম না। তখন দাজ্জাল তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু সে তা করতে সক্ষম হবে না।

৬৬৪৮ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার প্রবেশ পথ সমূহে ফেরেশতা-নিয়োজিত রয়েছে। অতএব সেখানে রোগ ও দাজ্জাল প্রবেশ করবে না।

৬৬৪৯ ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ যে, মদিনার দিকে দাজ্জাল আসবে, সে ফেরেশতাদেরকে মদিনা পাহারা দেওয়া অবস্হায় দেখতে পাবে। অতএব দাজ্জাল ও প্লেগ এর (মদিনার) নিকটস্থ হবে না ইনশা আল্লাহ।

৬৬৫০ আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্বিগ্ন অবস্হায় এরুপ বলতে বলতে আমার গৃহে প্রবেশ করলেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই। আক্ষেপ আরবের জন্য মন্দ থেকে যা অতিনিকটবতী। বৃদ্ধাঙ্গুল ও তৎসংলগ্ন আদুল গোলাকৃতি করে তার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ উন্মোচিত হয়েছে। যায়নাব বিনত জাহাশ (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! -আমাদের মাঝে সৎ লোকেরা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধরুংস হয়ে যাব? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যা। যদি পাপাচার বেড়ে যায়।

৬৬৫১ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ ইয়াজুজ-মাজূর প্রাচীরটি এ পরিমাণ উন্মোচিত হয়েছে। রাবী শুহায়ব নববই সংখ্যা নির্দেশক গোলাকৃতি তৈরি করে (দেখালেন)।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: ফিতনা
ফিতনা
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/blog-post_80.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/blog-post_80.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy