আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

৩০৯১। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্তা’আলা আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফিরিশ্তা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ফিরিশ্তাদের) বললেন, “আস্‌সালামু আলাইকুম”। ফিরিশ্তাগণ তার উত্তরে “আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রাহামাতুল্লাহ” বললেন। ফিরিশ্তারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পোঁছেছে।

 

৩০৯২-কুতায়বা ইবনুু্‌ সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাদিক দিপ্তমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা না করবে পেশাব আর না করবে পায়খানা। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক হতে শ্লেম্মাও বের হবে না। তাদে র চিরুনি হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মিস্‌কের ন্যায় সুগন্ধপূর্ণ। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। বড় চক্ষু হবে বিশিষ্ট হুরগণ হবেন তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি-পিতা আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আকৃতিতে হবেন। উচ্ছতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত বিশিষ্ট।

 

৩০৯৩-মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ সত্য প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মেয়েদের স্বপ্নদোষ হলে কি তাদের উপর গোসল ফরয হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যখন সে বীর্য দেখতে পারবে। এ কথা শুনে উম্মে সালামা (রাঃ) হাসলেন এবং বললেন, মেয়েদের কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা না হলে সন্তান তার সদৃশ হয় কিভাবে।

 

৩০৯৪-ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সা’দৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সা’দৃশ্য হয়? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সে তো ফিরিস্তাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সা’দৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রতনা করবে। তারপর ইয়াহূদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনুু্‌ সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।

 

৩০৯৫-বিশ্‌র ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধযুক্ত হতো না। আর যদি হাওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন তবে কোন নারীই তাঁর স্বামীর খেয়ানত করত না (১)। ১ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সময় বনী ইসরাইল আল্লাহ তা’আলার আদেশ অমান্য করে ‘সালওয়া’ নামক এক প্রকার পাখির গোশতে পচন ধরে। এ ঘটনা থেকেই গোশতে পচনের সূত্রপাত হয়। হাদিসের দ্বিতীয় অংশে আদম ও হাওয়ার নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার ঘটনার দিকে ইশারা করা হয়েছে। আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ফল খাওয়ার ব্যাপারে স্ত্রী হাওয়ার ভুমিকা ও প্রভাব কম ছিল। আদি-মাতা হাওয়ার ভুমিকা স্বভাবত নারী জাতি এখনও বহন করে যাচ্ছে। এ দু’টো ঘটনাই হাদিসের উভয় বাক্যের তাৎপর্য। (আইনী)

 

৩০৯৬- আবূ কুরায়ব ও মূসা ইবনু হিযাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা নারিদেরকে উত্তম উপদেশ দিবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাকাই থেকে যাবে। কাজেই নারীদের সাথে উপদেশপূর্ণ কথাবার্তা বলবে।

 

৩০৯৭-উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সত্যবাদী-সত্যনিষ্ট হিসাবে স্বীকৃত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান স্বীয় মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত জমা রাখা হয়। এরপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা আলাকারুপে পরিণত হয়। তারপর অনুরূপভাবে (চল্লিশ দিনে) তা গোশ্‌তের টুকরার রূপ লাভ করে। এরপর আল্লাহ তার কাছে চারটি বিষয়ের নির্দেশ নিয়ে একজন ফিরিশ্‌তা পাঠান। সে তার আমল, মৃত্যু, রিয্‌ক এবং সে কি পাপি হবে না পুণ্যবান হবে, এসব লিখে দেন। তারপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। (ভুমিষ্টের পর) এক ব্যাক্তি একজন জাহান্নামীর আমলের ন্যায় আমল করতে থাকে এমনকি তার ও জাহান্নামীদের মধ্যে এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়, এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করে থাকে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যাক্তি (প্রথম হতেই) জান্নাতবাসীদের আমলের অনুরুপ আমল করতে থাকে। এমন কি শেষ পর্যন্ত তার অ জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের ব্যবধান থেকে যায়। এমন সময় তার ভাগ্যের লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জাহান্নামীদের আমলের অনুরূপ আমল করে থাকে এবং পরিণতিতে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।

 

৩০৯৮- আবূ নু’মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফিরিশ্‌তা নিযুক্ত করে রেখেছেন। (সন্তান জন্মের সূচনায়) সে ফিরিশ্‌তা বলেন, হে রব! এ তো বীর্য। হে রব! এ তো আলাকা। হে রব! এ তো গোশ্‌তের টুকরো। এরপর আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান। তাহলে ফিরিশ্‌তা বলেন, হে রব! সন্তানটি ছেলে হবে, না মেয়ে হবে? হে রব! সে কি পাপীষ্ঠ হবে, না পুণ্যবান হবে? তার রিয্‌ক কি পরিমাণ হবে, তার আয়ু কত হবে? এভাবে তার মাতৃগর্ভে সব কিছুই লিখে দেয়া হয়।

 

৩০৯৯-কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) আনাস (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞাসা করবেন, যদি পৃথিবীর সব ধন-সম্পদ তোমার হয়ে যায়, তবে তুমি কি আযাবের বিনিময়ে তা দিয়ে দিবে? সে উত্তর দিবে হাঁ। তখন আল্লাহ বলবেন, যখন তুমি আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পৃষ্ঠদেশে ছিলে, তখন আমি তোমার কাছে এর চেয়েও সহজ একটি জিনিস চেয়েছিলাম। সেটা হল, তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করে শির্‌ক করতে লাগলে।

 

৩১০০-উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যাক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের একাংশ আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রথম ছেলের (কাবিলের) উপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন করেছে।

 

৩১০১। আবদান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, তারপর দাজ্জালের উল্লেখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার থেকে সতর্ক করছি আর প্রত্যেক নাবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোন নাবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি। তা হল তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কানা, আর আল্লাহ কানা নন।

 

৩১০২- আবূ নুআঈম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পরকে এমন আক্তি কথা বলে দেব না, যা কোন নাবী ই তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি? তা হল, নিশ্চয়ই সে হবে কানা, সে সাথে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দু’টি কৃত্রিম ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে এটি জান্নাত প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের ঠিক তেমনি সতর্ক করছি, যেমন নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্প্রদায়কে সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

 

৩১০৩-মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (হাশরের দিন) নূহ এবং তাঁর উম্মত (আল্লাহর দরবারে) হাযির হবেন। তখন আল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, নূহ কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌছিয়েছেন। তারা বলবে, না, আমাদের কাছে কোন নাবী ই আসেন নি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মদ এবং তাঁর উম্মত। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) তখন আমরা সাক্ষ্য দিব। নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর বাণী পৌছিয়েছেন। আর এটই হল আল্লাহর বাণীঃ আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছে, যেন তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হও। (২ : ১৪৩) অর্থ ন্যায়বান।

 

৩১০৪-ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে এক যিয়াফতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু পেশ করা হল, এটা তাঁর কাছে পছন্দনীয় ছিল। তিনি সেখান থেকে এক টুকরা খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। তোমরা কি জানো? আল্লাহ কিভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহ্বানকারীকে ডাক সবার কাছে পোঁচছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এশে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করনি, তোমরা কি অবস্তায় আছে এবং কি পরিস্তিতির সম্মুখীন হয়েছে। তোমরা কি এমন ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিচু লোক বলবে, তোমাদের আদম পিতা আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম আছেন। (চল তাঁর কাছে যাই)। তখন সকলে তাঁর কাছে যাবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকেছেন। তিনি ফিরিশ্‌তাদেরকে (আপনার সম্মানের) নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে আপনাকে সিজ্‌দাও করেছেন এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি দেখেন না আমরা কি অবশ্তায় আছি এবং কি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর তিনি আমাকে বৃক্ষটি থকে (ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। তখন আমি ভুল করেছি। এখন আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তোমরা আমি ব্যতিত অন্য কার কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে চলে যাও। তখন তারা নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসবে এবং বলবে, হে নূহ! পৃথিবীবাসীদের নিকট আপনই প্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহ আপনার নাম রেখেছেন কৃতজ্ঞ বান্দা। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন না, আমরা কি ভয়াবহ অবশ্তায় পরে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কতইনা দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়ে আছি? আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করবেন না? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়ে আছেন, যা ইতিপূর্বে হন নাই এবং এমন রাগান্বিত পরেও হবেন না। এখন আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তোমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুহাম্মদ )–এর কাছে চলে যাও। তখন তারা আমার কাছে আসবে আর আমি আরশের নীচে সিজ্‌দায় পড়ে যাবে। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনারা মাথা উঠান এবং সুপারিশ করুন। আপনারা সুপারিশ গ্রহন করা হবে আর আপনি যা চান, আপনাকে তাই দেওয়া হবে। মুহাম্মদ ইবনু উবাইদ (রহঃ) বলেন, হাদীসের সকল অংশ আমি মুখস্ত করতে পারি নি।

 

৩১০৫-নাসর ইবনু আলী (রহঃ) আবদুল্লাহ‌ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল কারীদের কিরাআতে ন্যায় তিলাওয়াত করেছেন।

 

৩১০৬-আবদান ও আহমাদ ইবনু সালিহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। এরপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুইলেন। এরপর হিক্‌মত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পরিপূর্ণ একখানা সোনার তশ্‌তরী নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে দেলে দিলেন। তারপর আমার বক্ষকে পূর্বের ন্যায় মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। এরপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে। পৌছলেন, তখন জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিব্‌রাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সাথে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মদ আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হাঁ। তারপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আহোরণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যাক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্‌রাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হল তাঁর সন্তান (আত্মাসমূহ) এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো হল জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো হল জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডান দিকে তাখান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। এরপর আমাকে নিয়ে জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লামরও উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, অনুরূপ বলল। তারপর তিনি দরজা খুলে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্‌রীস, মূসা , ঈসা এবং ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্তান কোন আকাশে তিনি আমার কাছে তা বর্ণনা করেন নি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার নিকটর্তী আকাশে আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্‌রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্‌রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেচিলেন, হে নেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্‌রাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্‌রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, ইনি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম)জবাব দিলেন, ইনি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললাম, মারহাবা। হে নেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, ইনি ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহঃ) জানিয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস ও আবূ হাইয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এরপর জিব্‌রাঈল আমাকে উর্ব্ধে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটা সমতল স্থানে গিয়ে পৌছলাম। সেখান থেকে কলমসমুহের খসখস শব্দ শুনছিলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছেন। এরপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে চললাম। যখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের কাছে ফিরে যান (এবং তা কমাবার জন্য আবেদন করুন।)কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )পূর্বের অনুরূপ কথা এবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। এবার আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এরপর জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে করে সিদ্‌রাতুল মুন্‌তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন অনুরূপ রঙে পরিপূর্ণ, যা বর্ণনা করার আমার ক্ষমতা আমার নেই। এরপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হল। দেখলাম এর ইট হচ্ছে মোতির তৈরি আর তার মাটি মিস্‌ক বা কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধযুক্ত।

 

৩১০৭-মুহাম্মদ ইবনু ‘আর‘আরা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে ভোরের বায়ু (পুবালি বাতাস) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে আর আদ জাতিকে দাবুর বা পশ্চিমের (এক প্রকার মারাত্মক) বায়ু দ্বারা ধংস করা হয়েছে। ইবনু কাসীর (রহঃ) আবূ সাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যাক্তির মাঝে বন্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনু হাবেস হান্‌যালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন (২) উআইনা ইবনু বদর ফাযারী (৩) যায়েদ ত্বায়ী, যিনি বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন (৪) আলকামা ইবনু উলাসা আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলতে লাগলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ত তাদেরকে (ইসলামের দিকে) আকৃষ্ট করার জন্য মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যাক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দু’টি কোটরাগত, গণ্ডুদ্বয় জুলে পড়া; কপাল উঁচু, ঘন দাঁড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বললেন, আমই যদি নাফরমানি করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যাক্তি তাঁর কাছে তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। (আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন) আমি তাকে খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) বলে ধারণা করছি। কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিষেধ করলেন। তারপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন। এ ব্যাক্তির বংশ হতে বা এ ব্যাক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পরবে কিন্তু তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবেনা। দিন থেকে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক থেকে তির বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে (মুসলিমদেরকে) হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা থেকে মুক্তি দেবে। আমি যদি তাদের নাগাল পেতাম তবে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যয় হত্যা করতাম।

 

৩১০৮-খালিদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (আদ জাতির ঘটনা বর্ণনায়) এ আয়াতটি পড়তে শুনেছি।

 

৩১০৯-ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর কাছে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকদের জন্য সেই অনিষ্ঠের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে (ছিদ্র হয়ে) গেছে। এ কথার বলার সময় তিনি তাঁর বিদ্ধাংগুলির অগ্রভাগকে তাঁর সাথের শাহাদাতের আংগুলির অগ্রভাগের সাথে মিলিয়ে গোলাকৃতি করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে নেক ও পুণ্যবান লোকজন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বললেন, হাঁ যখন পাপাচার অধিক মাত্রায় বেড়ে যাবে। (তখন অল্প সংখ্যক নেক লোকের বিদ্যমানেই মানুষের ধ্বংস নেমে আসবে।)

 

৩১১০-মুসলিম ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে আল্লাহ এ পরিমাণ ছিদ্র করে দিয়েছেন। এই বলে, তিনি তাঁর হাতে নব্বই সংখ্যার আকৃতি ধারণ করে দেখালেন। (অর্থাৎ তিনি নিজ শাহাদাত আঙ্গুলীর মাথা বৃদ্ধাংগুলের গোড়ায় লাগিয়ে ছিদ্রের পরিমাণ দেখালেন।

 

৩১১১-ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ (হাশরের দিন) ডাকবেন, হে আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হাতেই। তখন আল্লাহ বলবেন জাহান্নামী দলকে বের করে দাও। আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবেন, জাহান্নামী দল কারা? আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাযারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় (চরম ভয়ের কারণে) ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে। প্রত্যেক গর্ভবতী তাঁর গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন (২২:২)। সাহাবাগণ বলবেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (প্রতি হাযারের মধ্যে একজন) আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য থেকে একজন আর এক হাযারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ-মাজুজ হবে। ১ তারপর তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রান, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা (যারা আমার উম্মত) সমস্ত জান্নাতবাসীদের এক চতুর্থাংশ হবে। (আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন) আমরা এ সুসংবাদ শুনে) আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। এরপর তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হবে। আমরা পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমি আশাকরি তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে। একথা শুনে আমরা আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি সাদা পশম।

 

৩১১২-মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর ময়দানে খালি পা, বিবস্ত্র এবং খাতনাবিহীন অবস্তায় উপশ্তিত করা হবে। এরপর তিনি (এ কথার সমর্থনে) পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ যে ভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সুচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই। (২১:১০৪) আর কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপর পরানো হবে তিনি হবেন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর (সে দিন) আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী! এ সময় আল্লাহ বলবেন, যখন আপনি এদের থেকে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহর নেক বান্দা (ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম)যেমন বলেছিলেন ; তেমন আমি বলব, হে আল্লাহ! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (৫:১১৭-১১৮)।

 

৩১১৩-ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বরনিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডল কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহর কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমর থকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইব্‌রাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সরবশরীরে রক্তমাখা আক্তি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। ১ ১ ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আবেদনক্রমে তাঁর পিতার আকৃতি বিবরতন ঘটিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। মহান আল্লাহ এভাবে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে অপমান হতে রক্ষা করবেন।

 

৩১১৪-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মারইয়ামের ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের (কুরাইশদের) কি হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশ্‌তাগণ প্রবেশ করেন না। এ যে ইব্‌রাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নির্ধারক জুয়ার তীর নিক্ষেপরত অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন!

 

৩১১৫- ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা’বা ঘরে ছবিসমূহ দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশ তা মিটিয়ে ফেলা না হল, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইব্‌রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর হাতে ভাগ্য নির্ধারণের তীর। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাদের (কুরায়শদের) অপর লানত বর্ষণ করুক। আল্লাহর কসম, তারা দু’জন কখনও ভাগ্য নির্ধারক তীর করেন নি।

 

৩১১৬- আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেসি মুত্তাকী। তখন তারা বলল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি) আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইউসুফ, যিনি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াকুব)-এর পুত্র, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইসহাক)-এর পৌত্র, এবং আল্লাহর খলিল (ইব্‌রাহীম)-এর প্রপৌত্র। তারা বলল, আমরা আপনাকে এ সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমুহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছ? জাহিলী জুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যাক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যাক্তি যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞানার্জন করেন। আবূ উসামা ও মু’তামির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।

 

৩১১৭-মুআম্মাল ইবনু হিশাম (রহঃ) সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে (স্বপ্নে) আমার কাছে দু’জন লোক আসলেন। তারপর আমরা এক দীর্ঘদেহী লোকের কাছে আসলাম। তারপর দেহ দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমি তাঁর মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম না। মুলতঃ তিনি ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন।

 

৩১১৮-বায়ান ইবনু আম্‌র (রহঃ) আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকজন তাঁর সামনে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর (দাজ্জালের) দু’ চোখের মাঝখানে অর্থাৎ কপালে লেখা থাকবে কাফির বা কাফ, ফা, রা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে শুনে। বরং তিনি বলেছেন, যদি তোমরা ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে চাও তবে তোমাদের সাথীর (আমার) দিকে তকাও আর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন কুকড়ানো চুল, তামাটে রং-এর দেহ বিশিষ্ট। তিনি এমন এক লাল উথঠের উপর উপবিষ্ঠ, যার নাকের রশি হবে খেজুর গাছের চালের তৈরি। আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি, তিনি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিতে দিতে উপত্যকায় অবতরণ করেছেন।

 

৩১১৯-কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূত্রধরদের অস্ত্র দ্বারা নিজের খাত্‌না করেছিলেন এবং তখন তাঁর বয়স ছিল আশি বছর। আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ যিনাদ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় মুগীরা ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন। আজলান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনায় আরজ (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন। আর মুহাম্মদ ইবনু আমর (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

 

৩১২০-সাঈদ ইবনু তালীদ রু‘আইনী ও মুহাম্মদ ইবনু মাহবুব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনবার ব্যতিত কখনও কথাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলেন নি। তন্মধ্যে দু’বার ছিল আল্লাহ প্রসঙ্গে। তার উক্তি ‘‘আমি অসুস্থ’’ (৩৭:৮৯) এবং তাঁর আবার এক উক্তি ‘‘বরং এ কাজ করেছে, এই তো তাদের বড়টি। (২১:৬৩) বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি (ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং (তাঁর পত্নি) সারা অত্যাচারী শাসকগণের কোন এক শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। (তা-ছিল মিসর) তখন তাকে (শাসককে) সংবাদ দেওয়া হল যে, এ এলাকায় একজন লোক এসেছে। তার সাথে একজন সর্বাপেক্ষা সুন্দরী মহিলা রয়েছে। তখন সে (রাজা) তাঁর (ইব্‌রাহীম) কাছে লোক পাঠাল। সে তাঁকে মহিলাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল, এ মহিলাটি কে? তিনি উত্তর দিলেন, মহিলাটা আমার বোন। তারপর তিনি সবার কাছে আসলেন এবং বললেন, হে সারা, তুমি আর আমি ছাড়া পৃথিবীর উপর আর কোন মু’মিন নেই। এ লোকটি আমাকে তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তখন আমি তাকে জানিয়েছে যে, তুমি আমার বোন। কাজেই তুমি আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন কর না। এরপর (অত্যাচারী রাজা) সারাকে আনার জন্য লোক পাঠালো। তিনি (সারা) যখন তার (রাজার) কাছে প্রবেশ করলেন এবং রাজা তাঁর দিকে হাত বাড়ালো তখনই সে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল। তখন অত্যাচারী রাজা সারাকে বলল, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তখন সারা আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। এরপর দ্বিতীয়বার তাকে ধরতে চাইলো। এইবার সে পূর্বের ন্যায় বা তার চেয়ে কঠিনভাবে (আল্লাহর গযবে) পাকড়াও হল। এবারও সে বলল, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ কর। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আবারও তিনি দু’আ করলেন ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। তারপর রাজা তার কোন এক দারোয়ানকে ডাকল। সে তাকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানুষ আননি। বরং এনেছ এক শয়তান। তারপর রাজা সারার খেদমতের জন্য হাযেরাকে ডান করল। এরপর তিনি (সারা) তাঁর (ইব্‌রাহীম) কাছে আসলেন, তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। যখন তিনি (সালাত (নামায/নামাজ) রত অবস্থায়) হাত দ্বারা ইশারা করে সারাকে বললেন, কি ঘটেছে? তখন সারা বললেন, আল্লাহ কাফির বা ফাসিকের চক্রান্ত তারই বক্ষে ফিরিয়ে দিয়েছেন। (অর্থাৎ তাঁর চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছেন।)আর সে (রাজা) হাযেরাকে খেদমতের জন্য দান করেছেন। ১ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘‘হ আকাশের পানির২ সন্তানগণ! এ হাযেরাই তোমাদের আদি মাতা। ১। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উক্ত তিনটি উক্তি ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার অর্থাৎ-প্রথমটি দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানসিক অসুস্থতা। আর দ্বিতীয়টির উদ্দেশ্য ছিল মুরতি-পুজারীদেরকে বোকা সাজানোো এবং স্ত্রীকে বোন বলে পরিচয় দেওয়ার উদ্দেশ্য ধরমিও সম্পর্ক। ২। আকাশের পানির দ্বারা ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বংশের পবিত্রতা বুঝানো হয়েছে।

 

৩১২১-উবাঈদুল্লাহ ইবনু মূসা অথবা ইবনু সালাম (রহঃ) উম্মে শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিট বা কাকলাশ মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তাতে এ গিরগিট ফুঁ দিয়েছিল।

 

৩১২২-উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করনি। (৬:৮২) তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে নিজের উপর যুলুম করেনি? তিনি বললেন, তোমরা যা বল ব্যাপারটি তা নয়। বরং তাদের ঈমানকে ‘যুলুম’ অর্থাৎ শিরক দ্বারা কলুষিত করেনি। তোমরা কি লোকমানের কথা শুননি? তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, ‘‘হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোনরূপ শির্‌ক করো না। নিচ্ছয় শির্‌ক একটা চরম যুলুম। ’’ (৩১:১৩)

 

৩১২৩-ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আকদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সামনে কিছু গোশ্‌ত আনা হল। তখন তিনি বললেন, নিচ্ছয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একই সমতল ময়দানে সমবেত করবেন। তখন আহ্বানকারী তাদের সকলকে তাঁর আহ্বান সমভাবে শোনাতে পারবে। এবং তাদের সকলের উপর সমভাবে দর্শকদের দৃষ্টি পড়বে আর সূর্য তাদের অতি নিকটবর্তী হবে। তারপর তিনি শাফায়াতের হাদিস বর্ণনা করলেন যে, সকল মানুষ ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আসবে এবং বলবে, পৃথিবীতে আপনি আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর খলীল। অতএব আমাদের জন্য আপনি আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন। তখন তিনি ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলা উক্তির কথা স্মরণ করে বলবেন, নাফসি! নাফসি! তোমরা মূসার কাছে যাও। অনুরূপ হাদিস আনাস (রাঃ)-অ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

 

৩১২৪-আহ্‌মদ ইবনু সাঈদ আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি তাড়াতাড়ি না করতেন, তবে যমযম একটির প্রবহমান ঝরণায় পরিণত হত। আনসারী (রহঃ) ইবনু জুরাইজ (রহঃ) সূত্রে বলেন যে, কাসীর ইবনু কাসীর বলেছেন যে আমি ও উসমান ইবনু আবূ সুলায়মান (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি বললেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে এরূপ বলেন নি বরং তিনি বলেছেন, ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম , ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর মাকে নিয়ে আসলেন। মা তখন তাঁকে দুধ পান করাতেন এবং তাঁর সাথে একটি মশ্‌ক ছিল। এ অংশটি মারফুরূপে বর্ণনা করেন নি।

 

৩১২৫-আবদুল্লাহ ইবনুুে মুহাম্মদ (রহঃ) সাঈদ ইবনুুে জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত ইবনুুে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ বানানো শিখেছে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মায়ের (হাযেরা) নিকট থেকে। হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। তারপর (আল্লাহর হুকুমে) ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সাথে নিয়ে বের হলেন, এ অবস্থায় যে, হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কাবা ঘির অবস্থিত, ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের উপরে অবস্থিত একটি বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোন মানুষ না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের কাছে রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা পিছু পিছু ছুটে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, হে ইব্‌রাহীম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সাহায্যকারী আর না আছে (পানাহারের) ব্যবস্থা। তিনি একথা তাকে বারবার বললেন। কিন্তু ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, এ (নির্বাসনের) আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখতে পাচ্চেন না, তখন কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি দু’হাত তুলে এ দু’আ করলেন, আর বললেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারকে কতকে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায় যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। (১৪:৩৭) (এ দু’আ করে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে গেলেন) আর ইসমাঈলের মা ইসমাঈলকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে পিপাসিত হলেন, এবং তাঁর (বুকের দুধ শুখিয়ে যাওয়ায়) শিশু পুত্রটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির প্রতি দেখতে লাগলেন। পিপাসায় তার বুক ধরফড় করেছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের এ করুন অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত ‘সাফা’ কে একমাত্র তাঁর নিকটমত পর্বত হিসাবে পেলেন। এরপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন আর ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও কাউকে দেখা যায় না? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন ‘সাফা’ পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত মানুষের ন্যায় ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দানে অতিক্রম করে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এজন্যই মানুষ (হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরার সময়) এ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। এরপর এরপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। (মনোযোগ দিয়ে শুনি।)তিনি আকাগ্রচিত্তে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ, আর আমিও শুনেছি)। যদি তোমার কাছে কোন সাহায্যকারী থাকে (তাহলে আমাকে সাহায্য কর)। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফিরিশ্‌তা দেখতে পেলেন। সেই ফিরিশ্‌তা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর চারপাশে নিজ হাতে বাঁধা দিয়ে এক হাউযের ন্যায় করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপছে উঠতে থাকলো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, তারপর হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি পান করলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফিরিশ্‌তা তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দু’জনে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তাঁর আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তাঁর দানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এরপর হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে (ইয়ামান দেশীয়) জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করচিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভুমির পথ ধরে এদিক আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভুমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে পানির সকলকে পানির সংবাদ দিল। সনবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন, হাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা হাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার –পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাঈলও যৌবন উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌছে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। এরপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। এরপর তিনি পুত্রবধুকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমরা অতি দুরাবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। এরপর যখন ইসমাঈল বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন (তাঁর পিতা ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমনের) কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদেরকে কাছে কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জজ্ঞাসা করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাঁকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বলল, হাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনি আমার পিতা। এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জন্দের কাছে চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অপর একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। তারপর তিনি আবার এদের দেখতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দেখা পেলেন না। তিনি ছেলের বউয়ের নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বললো, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছলতার মধ্যেই আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন , তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? সে বলল, গোশ্‌ত্‌। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কি? সে বলল, পানি। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদের গোশ্‌ত্‌ ও পানিতে বরকত দিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে বিষয়েও তাদের জন্য দু’আ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতিত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশ্‌ত্‌ ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারেনা। কেননা, শুধু গোশ্‌ত্‌ ও পানি জীবনযাপনের অনুকূল হতে পারে না। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাঁকে আমার সালাম দিবে, আর তাঁকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপর ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলল, হাঁ। একজন সুন্দর আকৃতিকে বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাঁর প্রশংসা করলো, (তারপর বললো) তিনি আমাএক আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন কিচুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বললো, হাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। একথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। এরপর তিনি আবার আসলেন। (দেখতে পেলেন,)যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। যখন তিনি তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যেরূপ করে থাকে তারা উভয়ে তাই করলেন। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে ইসমাঈল। আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে, তখনি তাঁরা উভয়ে কা’বা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথর আনতেন, আর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মাকামে ইব্‌রাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে দু’আ করতে থাকলেন, হে আমাদের রব। আমাদের থেকে (একাজ) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কা’বা ঘর তৈরি করতে থাকেন। এবং কা’বা ঘরের চার দিকে ঘুরে ঘুরে এ দু’আ করতে থাকেন। ‘‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (এ শ্রমটুকু) কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। ’’ (২:১২৭)

 

৩১২৬-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম (শিশুপুত্র) ইসমাঈল এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সাথে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুরু জন্য তাঁর স্তন্যে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় পৌছে হাযেরকে (শিশুপুত্র ইসমাঈলসহ) একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন পরিবার (সারার) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছনে থেকে ডেকে বললেন, হে ইব্‌রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে আসলেন, তিনি মশক থেকে পানি পান করতেন আর শিশুরু জন্য (তাঁর স্তন্যের) দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিকে সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোন মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, এরপর ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। (এরপর যখন নীচু ভূমিতে পৌছলেন) তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন। এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি (মনে মনে) বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে শিশুটি কি করছে। এরপর তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে (আবার) যেতাম এবং এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ববতঃ কাউকে দেখতে পেতাম। এরপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিক সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তূ কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কি করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, যদি আপনার কোন সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে পেলেন। রাবী ইবনু আব্বাস (রহঃ)) বলেন, তখন তিনি (জিবরাঈল) তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা যমীনের উপর আঘাত করলেন। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খনন করতে লাগলেন। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ প্রসঙ্গে আবূল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বলেছেন, হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি একে তার অবস্থায় উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, তখন হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, এরপর জুরহুম গোত্রের (ইয়ামান দেশীয়) একদল লোক উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করচিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পাখি তো পানি ছাড়া কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দুত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাউযূদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের কাছে ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। এরপর তারা হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার কাছে থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার কাছে বসবাস করার অনুমতি দিবেন? (হাযেরা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেতে গেল)। এরপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়ে বিয়ে করলেন। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, পুনরায় ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মনে জাগল (ইসমাঈল এবং তাঁর মা হাযেরার কথা) তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে (সারা) বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, এরপর তিনি (তাদের কাছে) আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাঁকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, ‘‘তুমি ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে। ’’ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন , তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার কাছে চলে যাও। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, অতঃপর (তাদের কথা) ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা) কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি সেখানে আসলেন, এবং (পুত্রবধূকে) জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বললেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের খাদ্য এবং পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশ্‌ত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য হল গোশ্‌ত আর পানীয় হল পানি। তখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ! তাদের খাদ্য এবং পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিন। ’’ রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, আবূল কাসিম বলেছেন, ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দু’আর কারণেই (মক্কার খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে) বরকত রয়েছে। রাবী ইবনু আব্বাস (রাঃ)) বলেন, আবার কিছুদিন পর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা)-কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি আলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। তখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইব্‌রাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। এরপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমারাত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দু’আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন রাবী বলেন, এরি মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইব্‌রাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল তাঁকে পাথর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দু’আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। (২:১২৭)

 

৩১২৭-মূসা ইবনু ইসলামাঈল (রহঃ) আবূ যার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ তৈরি করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আক্‌সা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যাবধান ছিল? তিনি বললেন, চল্লিস বছর। (তিনি আরো বললেন) এরপর তোমার যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হবে, সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে।

 

৩১২৮-আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত ওহোদ পাহাড় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দৃষ্টিগোচর হল। তিনি বললেন, এ পাহাড় আমাদের ভালবাসে আর আমরাও তাকে ভালবাসি। হে আল্লাহ! ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাকে হরম ঘোষণা করছে আর আমি হরম ঘোষণা করছি এ পাহাড়ের উভয় পার্শ্বের মধ্যবর্তী স্থানকে (মদিনাকে)। এ হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ)-ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

 

৩১২৯-আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আয়িশা (রাঃ)-কে বলেছেন, তুমি কি জানো? তোমরা কওম যখন কা’বা ঘর নির্মাণ করেছে , তখন তারা ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ভিত্তি থেকে ছত করেছে? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তা ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করবেন না? তিনি বললেন, যদি তোমার কওম কুফ্‌রী থেকে সদ্য আগত না হতো, (তাহলে আমি তা করে দিতাম।)আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, যদি আয়িশা (রাঃ) এ হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে থাকেন, তবে আমি মনে করি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতীমে কাবার সংলগ্ন দু’টি কোণকে চুমু দেওয়া একমাত্র এ কারণে পরিহার করেছেন যে, কা’বা ঘর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ভিত্তিক উপর পুরাপুরি নির্মাণ করা হয় নি। রাবী ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, ইবনু আবূ বকর হলেন আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রাঃ)।

 

৩১৩০-আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুমাঈদ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবে পড়বে, হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ –এর উপর, তাঁর স্ত্রীগণের উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর রহমত নাযিল করুন, যেরূপ আপনি রহমত নাযিল করেছেন ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধরদের উপর। আর আপনি মুহাম্মদ এর উপর, তার স্ত্রীগণের উপর এবং তার বংশধরদের উপর এমনিভাবে বরকত নাযিল করুন যেমনি আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি অতি প্রশংসিত এবং অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।

 

৩১৩১-কায়স ইবনু হাফস ও মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কা’আব ইবনু উজরা (রাঃ) আমার সাথে দেখা করে বললেন, আমি কি আপনাকে এমন একটি হাদীয়া দেব না যা আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি? আমি বললাম হাঁ, আপনি আমাকে সে হাদীয়াটি দিন। তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতর উপর কিভাবে দরূদ পাঠ করতে হবে? কেননা, আল্লাহ তো (কেবল) আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাম করব। তিনি বললেন, তোমরা এভাবে বল, ‘‘হ্যাঁ আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ –এর উপর এবং মুহাম্মদ -এর বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর বংশধরদের উপর রাহমত বর্ষণ করেছেন। নিচ্ছয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদ –এর বংশধরদের উপর তেমনি বরকত ডান করুন যেমনি আপনি বরকত ডান করেছেন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বংশধরদের উপর। নিচ্ছয়ই আপনি অতি প্রশংসিত, অতি মর্যাদায় অধিকারী।

 

৩১৩২-উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা (ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর জন্য দু’আ পড়ে পানাহ চাইতেন। (দু’আটি হল,)আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাত দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

 

৩১৩৩-আহমদ ইবনু সালিহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চিত্ত প্রশান্তির জন্য মৃতকে কীভাবে জীবিত করা হবে, এ সম্পর্কে আল্লাহর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলেন, একে যদি ‘‘শক’’ বলে অভিহিত করা হয় তবে এরূপ ‘‘শক’’ এর ব্যাপারে আমরা ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাইতে অধিক উপযোগী। যখন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, হে আমার রব! আমাকে দেখিয়ে দিন, আপনি কীভাবে মৃতকে জীবিত করেন। আল্লাহ বললেন, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন, হাঁ, (অবশ্যঁই বিশ্বাস করি।)তা সত্ত্বেও (এ জিজ্ঞাসা এজন্য যে) যাতে আমার চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে। (২:২৬০) এরপর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুত আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ঘটনা উল্লেখ করে বললেন।)আল্লাহ লুত আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি রহম করুন। তিনি (আল্লাহর দ্বীন প্রচারের সহায়তার জন্য) একটি সুদৃঢ় খুঁটির (দলের) আশ্রয় চেয়েছিলেন আর আমি যদি কারাগারে এত দীর্ঘ সময় থাকতাম যত দীর্ঘ সময় ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারাগারে ছিলেন তবে (বাদশাহ পক্ষ থেকে) তার ডাকে সাড়া দিতাম। ১ ১ ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদীর্ঘ সাত বছর পর্যন্ত কয়েদখানায় বন্দী থাকার পর বাদশাহ যখন মুক্তির হুকুম দিলেন, তখন সাথে সাথে তিনি তা কবূল করলেন না। বরং বললেন, আমার প্রতি আরোপিত কলঙ্ক ও অপরাধের তদন্ত করা হোক। এর মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আমি কয়েদখানা ত্যাগ করব না। এখানে তাঁর দৃঢ় মনোবল ও অসীম ধৈর্যের প্রশংসা করা হয়েছে। আর লুত আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।

 

৩১৩৪-কুতায়বা ইবনু (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়ামানের) আসলাম গোত্রের একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তাঁরা তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ইসমাঈল! তোমরা তীরন্দাজী করে যাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ (ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তীরন্দাজ ছিলেন। সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজী করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের সাথে আছি। রাবী বলন, (এ কথা শুনে) তাদের এক পক্ষ হাত চালনা থেকে বিরত হয়ে গেল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল, তোমরা যে তীরন্দাজী করছ না? তখন তারা বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা কিভাবে তীর ছুঁড়তে পারি, অথচ আপনি তো তাদের সাথে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুঁড়তে থাক, আমি তোমাদের সবার সাথেই আছি।

 

৩১৩৫-ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, লোকদের মধ্যে অধিক সম্মানিত ব্যাক্তি কে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহ ভীরু, সে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত। সাহাবা কিরাম বললেন, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম য়াল্লাহ! আমরা আপনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি হলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইউসুফ ইবনু আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াকুব) ইবনু আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইসহাক) ইবনু আল্লাহর খালীল ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁরা বললেন, আমরাও এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তবে কি তোমরা আমাকে আরবদের উচ্চ বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? তারা বলল, হাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাহেলিয়াতের যুগে তোমাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যাক্তি ছিলেন ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই সর্বোত্তম ব্যাক্তি, যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।

 

৩১৩৬- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ লুত -কে ক্ষমা করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন।

 

৩১৩৭-মাহ্‌মুদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দাল সহ) পড়েছেন।

 

৩১৩৮-হুমায়দী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি এবং তিনি যে লোক (সালিহ (আ-এর) উঠনী যখম করেছিল তাঁর উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উট্‌নীকে হত্যা করার জন্য আমীন এক লোক (কিদার) তৈরি হয়েছিল যে তাঁর গোত্রের মধ্যে প্রবল ও শক্তিশালী ছিল, যেমন ছিল আবূ যাম‘আ।

 

৩১৩৯-মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন আবূল হাসান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের যুদ্বের সময় যখন হিজর নামক স্থানে অবতরণ করলেন, তখন তিনি সাহাবাগণকে নির্দেশ দিলেন, তাঁরা যেন এখানে কূপের পানি পান না করে, এবং মশকেও পানি ভরে না রাখে। তখন সাহাবাগন বললেন, আমরা তো এর পানি দ্বারা রুটির আটা গুলে ফেলেছি এবং পানিও ভরে রেখেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সেই আটা ফেলে দেয়ার এবং পানি ঢেলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। সাবরা ইবনু মা‘বাদ এবং আবূশ শামূস (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আর আবূ যার (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, এর পানি দ্বারা যে আটা গুলেছে (সে যেন তা ফেলে দেয়।)

 

৩১৪০-ইব্‌রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সংগে সামূদ জাতির আবাসস্থল ‘হিজর’ নামক স্থানে অবতরণ করলেন আর তখন তাঁরা এক কূপের পানি মশক ভরে রাখলেন এবং এ পানি দ্বারা আটা গুলে নিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হুকুম দিলেন, তারা ঐ কূপ থেকে যে পানি ভরে রেখেছে, তা জেন ফেলে দেয় আর পানিতে গোলা আটা যেন উঠগুলোকে খাওয়ায় আর তিনি তাদের হুকুম করলেন তারা যেন ঐ কূপ থেকে মশক ভরে নেয় যেখান থেকে (শালিহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উটনীটি পানি পান করত। উসামা (রহঃ) নাফি (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩১৪১-মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুকের পথে) যখন ‘হিজর’ নামক স্থান অতিক্রম করলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ করো না যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্‌ম করেছে। তবে প্রবেশ করতে হলে, ক্রন্দনরত অবস্থায়, যেন তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছিল তোমাদের প্রতি অনুরূপ বিপদ না আসে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল্ললাহ্‌ বাহনের উপর বসা অবস্থায় নিজ চাঁদর দিয়ে চেহারা মোবারক ঢেকে নিলেন।

 

৩১৪২-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুকের পথে সাহাবাদেরকে) নিরদেসদিয়েচেন, তোমরা একমাত্র ক্রন্দনরত অবস্থায় এমন লোকদের আবা আবসস্থালে প্রবেশ করবে যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্‌ম করেছে। তাদের উপর যে মুসিবত এসেছে তোমাদের উপরও যেন সে মুসীবত না আসে।

 

৩১৪৩-ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্মানী ব্যাক্তি- যিনি সন্তান সম্মানী ব্যাক্তির, যিনি সন্তান সম্মানী ব্যাক্তির, তিনি হলেন, ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব ইবনু ইসহাক ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

 

৩১৪৪-উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শ)-কে জিজ্ঞাসা জরা হয়েছিল, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যাক্তি কে? তিনি উত্তর দিলেন, তাদের মধ্যে যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে। তারা বললেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যাক্তি হলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইউসুফ ইবনু আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াকুব) ইবনু আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইসহাক) ইবনু আল্লাহর খলিল (ইব্‌রাহীম) আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁরা বললেন, আমরা আপনাকে এ বিষয়েও জিজ্ঞাসা করিনি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আমার কাছে আরবের খনি অর্থাৎ গোত্রগুলোর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ? (তাহলে শুন) মানুষ খনি বিশেষ, জাহিলিয়্যাতের যুগে যারা তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি ছিল, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যাক্তি, যদি তারা ইসলামী জ্ঞান লাভ করে।

 

৩১৪৫-মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (দেখুন হাদিস নম্বর ৩১৪৪)

 

৩১৪৬-বাদল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, আবূ বাক্‌র (রাঃ)_কে বল, তিনি যেন লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিয়ে দেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি একজন কমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার জায়গায় তিনি দাঁড়াবেন, তখন বিনমর অন্তর হয়ে পড়বেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় তাই বললেন, আয়িশা (রাঃ) আবারও সেই উত্তর দিলেন, শোবা (রহঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয় অথবা চতুর্থবার বললেন, (হে আয়িশা (রাঃ)! তোমরা ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ঘটনায় নিন্দুক নারীদের মত। আবূ বকরকে বল, (সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিয়ে দিক)।

 

৩১৪৭-এরাবী ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন, তখন তিনি বললেন, আবূ বকরকে বল, তিনি যেন লোকদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিয়ে দেন। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ বকর (রাঃ) তো এমন একজন (কোমল হৃদয়ের) লোক। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বললেন, তখন আয়িশা (রাঃ) ও তদরূপই বললেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকরকে বল, (যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করিয়ে দেন।)হে আয়িশা! নিশ্চয় তোমরা ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ঘটনার নিন্দুক নারীদের ন্যায় হয়ে পড়েছ। এরপর আবূ বাক্‌র (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জীবনকালে ইমামতী করলেন। রাবী হুসাইন (রহঃ) যায়িদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এখানে এর স্থলে আছে অর্থাৎ তিনি একজন কোমল হৃদয়ের লোক।

 

৩১৪৮- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করেছেন, হে আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবূ রবীআকে (কাফিরদের অত্যাচার হতে) মুক্তি দ্বীন। হে আল্লাহ! সালাম ইবনু হিশামকে বাজাত দ্বীন। হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনু ওয়ালিদকে নাজাত দিন। হে আল্লাহ! দুর্বল মুমিনদেরকেও মুক্তি দিন। হে আল্লাহ! মুযার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াওকে মজবুত করুন , হে আল্লাহ! এ গোত্রের উপর এমন দুর্ভিক্ষ এ অভাব অনটন নাযিল করুন যেমন দুর্ভিক্ষ ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর যামানায় হয়েছিল।

 

৩১৪৯-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুল্লাহ্‌ বলেছেন, আল্লাহ লূত আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর রহম করুন। তিনি একটি সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় নিয়েছিলেন আর ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যত দীর্ঘ সময় জেলখানায় কাটিয়েছেন, আমি যদি অত দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতাম এবং পড়ে বাদশাহর দূত (মুক্তির আদেশ নিয়ে) আমার নিকট আসত তবে নিশ্চয়ই আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিতাম।

 

৩১৫০-মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-এর মা উম্মে রুমানার নিকট আয়িশার বিষয়ে যে সব মিথ্যা অপবাদের কথা বলাবলি হচ্ছিল সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি আয়িশার সাথে একত্রে বসা ছিলাম। এমন সময় একজন আনসারী মহিলা একথা বলতে বলতে আমাদের নিকট প্রবেশ করল। আল্লাহ অমুককে শাস্তি দিক। আর শাস্তি তো দিয়েছেন। একথা শুনে উম্মে রুমানা (রাঃ) বললেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম একথা বলার কারণ কি? সে মহিলাটি বলল, ঐ লোকটই তো কথাটির চর্চা করেছে। তখন আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, বিষয়টি কি আবূ বকর (রাঃ) এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও শুনেছেন? সে বলল, হাঁ! এতে আয়িশা (রাঃ) বেহুশ হয়ে গেলেন। পড়ে তাঁর হুস ফিরে আসল তবে তাঁর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তার কি হল? আমি বললাম, তাঁর সম্পর্কে যা কিছু রটেছে তাতে সে (মনে) আঘাত পেয়েছে ফলে সে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় আয়িশা (রাঃ) উঠে বসলেন, আর বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, আমি যদি কসম খেয়ে বলি তবুও আপনারা আমায় বিশ্বাস করবেন না আর যদি ওজর পেশ করি তাও আপনারা আমার ওজর শুনবেন না। অতএব এখন আমার ও আপানাদের অবস্থা হল ইয়াকুব আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সন্তানদের মতো। আপনারা যা বর্ণনা করেছেন সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া হল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে চলে গেলেন এবং আল্লাহ যা নাযিল করার তা নাযিল করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আয়িশা (রাঃ)-কে এ সংবাদ জানালেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি একমাত্র আল্লাহরই প্রশংসা করব, অন্য কার প্রশংসা নয়।

 

৩১৫১-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ তা’আলার বাণী আয়াতাংশের মধ্যে হবে, না। হবে? (যাল হরফে তাশদীদ সহ পড়তে হবে না তাশদীদ ব্যাতিত)? হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এখানে নয়, হবে) কেননা, তাঁদের কাওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল। (উরওয়াহ (রহঃ) বলেন) আমি বললাম, মহান আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, তাঁদের কাওম তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে, আর তাতো সন্দেহের বিষয় ছিল না। (কাজেই, এখানে হবে কিভাবে?) তখন হযরত আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে উরাইয়্যাহ্‌! এ ব্যাপারে তাদের তো দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। (অর্থাৎ এখানে তিনি -কে অর্থে নিয়েছেন।)(উরওয়াহ্‌ (রহঃ) বলেন) আমি বললাম, সম্ভবতঃ এখানে হবে। হযরত আয়িশা (রাঃ) বললেন, মাআযাল্লাহ্‌ (আল্লাহর পানাহ্‌), রসূলগণ কখনও আল্লাহ্ সম্পর্কে এরূপ ধারণা করতেন না। (অর্থাৎ হলে অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ পাক রসূলগণের সাথে মিথ্যা বলেছেন। অথচ রসূলগণ কখনো এরূপ ধারণা করতে পারে না।)তবে এ আয়াত সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারা রসূলগণের অনুযায়ী যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন এবং রসূলগণের বিশ্বাস করেছেন। তাঁদের উপর আযমায়েশ (ঈমানের পরীক্ষা) দীর্ঘায়িত হয়। তাঁদের প্রতি সাহায্য পৌছতে বিলম্ব হয়। অবশেষে রসূলগণ যখন তাঁদের কাওমের লোকদের মধ্যে যারা তাদেরকে মিথ্যা মনে করেছে, তাদের ঈমান আনার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা এ ধারণা করতে লাগলেন যে তাঁদের অনুসারীগণও তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করবেন, ঠিক এ সময়ই মহান আল্লাহর সাহায্য পৌছে গেল। শব্দটি -এর ওযনে এসেছে। থেকে নিষ্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিরাশ হয়ে গেসে। এর অর্থ- তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

 

৩১৫২-আবদা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সম্মানিত ব্যাক্তি- যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যাক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যাক্তির, যিনি সন্তান সম্মানিত ব্যাক্তির, তিনি হলেন ইউসুফ ইবনু ইয়াকূব ইবনু ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

 

৩১৫৩-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল জু’ফী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা আইয়্যুব আলাইহি ওয়া সাল্লাম নগ্ন দেহে গোসল করেছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর স্বর্ণের এক ঝাঁক পঙ্গপেল পতিত হল। তিনি সেগুলো দু’হাতে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে ডেকে বললেন, হে আইয়্যুব! তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেই নি? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকতের অমুখাপেক্ষী নই

 

৩১৫৪-আবদুল্লাহ ইবনু ইউসূফ (রহঃ) উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হেরা পর্বতের গুহা থেকে) খাদীজা (রাঃ)-এর নিকট ফিরে আসলেন তাঁর হৃদয় কাঁপছিল। তখন খাদীজা (রাঃ) তাঁকে নিয়ে ওয়ারকা ইবনু নাওফলের নিকট গেলেন। তিনি খৃষ্টান ধর্ম অবলম্বন করেছিলেন। তিনি আরবী ভাষায় (অনুবাদ করে) ইনযীল পাঠ করতেন। ওয়ারকা জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি দেখছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সব ঘটনা জানালেন। তখন ওয়ারকা বললেন, এত সেই নামুস (ফিরিশ্‌তা) যাঁকে আল্লাহ তা’আলা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছে নাযিল করেছিলেন। আপনার সে সময় যদি আমি পাই, তবে সর্বশক্তি দিয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করব। নামুস অর্থ গোপন তত্ত্ব ও তথ্যবাহী যাকে কেউ কোন বিষয়ে খবর দেয় আর সে তা অপর থেকে গোপন রাখে।

 

৩১৫৫-হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) মালিক ইবনু সা‘সাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁদের কাছে এও বলেন, তিনি যখন পঞ্চম আকাশে এসে পৌছলেন, তখন হঠাৎ সেখানে হারূন আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথে সাক্ষাৎ হল। জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনি হলেন, হারূন আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা পুণ্যবান ভাই ও পুণ্যবান নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । সাবিত এবং আব্বাদ ইবনু আবূ আলী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণনায় কাতাদা (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩১৫৬-ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে রাতে আমার মিরাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন, হালকা পাতলা দেহবিশিষ্ট ব্যাক্তি, তাঁর চুল কোঁকড়ানো ছিল না। মনে হচ্ছিল তিনি যেন ইয়ামান দেশীয় শানুআ গোত্রের একজন লোক, আর আমি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে পেয়েছি। তিনি হলেন মাধ্যম দেহবিশিষ্ট, গায়ের রং ছিল লাল। যেন তিনি এইমাত্র হাম্মাম থেকে বের হলেন। আর ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বংশধরদের মধ্যে তাঁর সাথে আমার চেহারায় মিল সবচেয়ে বেশী। তারপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। তার একটিতে ছিল দুধ আর অপরটিতে ছিল শরাব। তখন জিব্‌রাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম বোল্লেণ, এ দু’টির মধ্যে যেটি চান আপনি পান করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি নিলাম এবং তা পান করলাম। তখন বলা হল, আপনি ফিত্‌রাত বা স্বভাব ও প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছেন। দেখুন, আপনি যদি শরাব নিয়ে নিতেন, তাহলে আপনার উম্মতগণ পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।

 

৩১৫৭-মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যাক্তির একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )ইউনুস ইবনু মাত্তার চেয়ে উত্তম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলতে গিয়ে ইউনুস আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পিতার নাম উল্লেখ করেছেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রজনীর কথাও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাদামী রং বিশিষ্ট দীর্ঘদেহী ছিলেন। যেন তিনি শানুআ গোত্রের একজন লোক। তিনি আরো বলেছেন যে, ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মধ্যমদেহী, কোঁকড়ানো চুলওয়ালা ব্যাক্তি। আর তিনি দোযখের দারোগা মালিক এবং দাজ্জালের কথাও উল্লেখ করেছেন।

 

৩১৫৮-আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে) মদিনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদিনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে অর্থাৎ সে দিনটি হল আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন। (জিজ্ঞাসা করার পর) তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এ এমন দিন যে দিনে আল্লাহ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে নাজাত দিয়েছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুকরিয়া হিসাবে এদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অধিক ঘনিষ্ঠ। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছেন এবং (সবাইকে) এদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের আদেশ দিয়েছেন।

 

৩১৫৯-মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। এরপর সর্বপ্রথম আমারই হুশ ফিরে আসবে। তখন আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখতে পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিগুলোর একটি খুঁটি ধরে রেখেছেন। আমি জানিনা, আমার আগেই কি তাঁর হুশ আসল, না-কি তূর পাহাড়ে বেহুশ হওয়ার প্রতিদানে তাঁকে দেয়া হল।

 

৩১৬০-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ জু‘ফী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি বনী ইসরাঈল না হত, তবে গোশ্‌ত পচন ধরত না। আর যদি (মা) হাওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন, তাহলে কোন সময় কোন নারী তাঁর স্বামীর খেয়ানত করত না।

 

৩১৬১-আম্‌র ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি এবং হুর ইবনু কায়েস ফাযারি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথীর ব্যাপারে বিতর্ক করছিলেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি হলেন, খাযির। এমনি সময় উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তাদের উভয়ের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁকে দাক্লেন এবং বললেন, আমি এবং আমার এ সাথি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাথী সম্পর্কে বিতর্ক করছি, যাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। আপনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে তাঁর ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি যে, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তখন তাঁর কাছে একজন লোক আসল এবং জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এমন কাউকে জানেন, যিনি আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, না। তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি আল্লাহ ওহী পাঠায়ে জানায়ে দিলেন, হাঁ, (তোমার চেয়েও অধিক জ্ঞানী) আমার বান্দা খাযির। তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাক্ষাতের জন্য পথের সন্ধান চেয়েছিলেন। তখন তাঁর জন্য একটি মাছ নিদর্শন হিসাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল এবং তাকে বলে দেওয়া হল, যখন তুমি মাছটা হারাবে, তখন তুমি পিছনে ফিরে আসবে, তাহলেই তুমি তাঁর সাক্ষাৎ পাবে। তারপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নদীতে মাছের পিছে পিছে চলছিলেন, এমন সময় মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে তাঁর খাদেম বলে উঠল, ‘‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন? আমরা যখন ঐ পাথরটির কাছে অবস্থান করছিলাম, তখন আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বস্তুতঃ তার স্মরণে থেকে একমাত্র শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। ’’(১৮:৬৩) মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা তো সে স্থানেরই অনুসন্ধান করছিলাম। অতএব তাঁরা উভয়ে পিছনে ফিরে চললেন, এবং খাযিবের সাক্ষাৎ পেলেন। (১৮:৬৪) তাঁদের উভয়েরই অবস্থার বর্ণনা ঠিক তাই যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।

 

৩১৬২-আলী ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রহঃ) সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, নাওফল বিক্কালী ধারণা করেছে যে, খাযিরের সঙ্গী মূসা বনী ইসরাঈলের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন; নিশ্চয়ই তিনি অপর কোন মূসা। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র দুশমন মিথ্যা কথা বলেছে। উবাই ইব্‌ন কাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, একবার মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন ব্যাক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বল্লেন, আমি। আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর এ উত্তরে আল্লাহ্‌ তাঁর প্রতি অসুন্তূষ্টি প্রকাশ করলেন। কেননা তিনি জ্ঞানকে আল্লাহ্‌র দিকে সম্পর্কিত করেন নি। আল্লাহ্‌ তাঁকে বললেন, বরং দুই নদীর সংযোগ স্থলে আমার একজন বান্দা আছে, সে তোমার চেয়ে বেশী জ্ঞানী।

মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরয করলেন, হে আমার রব! আমি তাঁর সাথে কিভাবে সাক্ষাৎ করব? আল্লাহ্‌ বললেন, তুমি একটি মাছ ধর এবং তা (ভাজা করে) একটি থলের মধ্যে ভরা রাখ। যেখানে গিয়ে তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন। তারপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি মাছ ধরলেন এবং (তা ভাজা করে) থলের মধ্যে ভরে রাখলেন। এরপর তিনি এবং তাঁর সাথী ইউশা ইব্‌ন নূন চলতে লাগলেন অবশেষে তাঁরা উভয়ে (নদীর তীরে) একটি পাথরের নিকট এসে পৌছে তার উপর উভয়ে মাথা রেখে বিশ্রাম করলেন। এ সময় মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন আর মাছটি (জীবিত হয়ে) নড়াচড়া করতে করতে থলে থেকে বের হয়ে নদীতে নেমে গেল। এরপর সে নদীতে সুড়ঙ্গ আকারে আপন পথ করে নিল আর আল্লাহ্‌ মাছটির চলার পথে পানির গতি থামিয়ে দিলেন। ফলে তার গমন পথটি সুড়ঙ্গের ন্যায় হয়ে গেল। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারা করে বললেন, এভাবে সুড়ঙ্গের মত হয়েছিল। এরপর তাঁরা উভয়ে অবশিষ্ট তার এবং পুর দিন পথ চললেন। অবশেষে যখন পরের দিন ভোর হল তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর যুবক সাথীকে বললেন, আমার ভোরের খাবার আন। আমি এ সফরে খুব ক্লান্তি অনুভব করছি। বস্তুতঃ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে পর্যন্ত আল্লাহ্‌র নির্দেশিত স্থানটি অতিক্রম না করেছেন সে পর্যন্ত তিনি সফরে কোন ক্লান্তই অনুভব করেন নি।

তখন তাঁর সাথী তাঁকে বললেন, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন সেই পাথরটির কাছে বিশ্রাম নিয়েছিলাম (তখন মাছটি পানিতে চলে গেছে) মাছটি চলে যাওয়ার কথা বলতে আমি একেবারেই ভুলে গেছি। প্রকৃতপক্ষে আপনার কাছে তা উল্লেখ করতে একমাত্র শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছি। বস্তুতঃ মাছটি নদীতে আশ্চার্যজনকভাবে নিজের পথ করে নিয়েছি। (রাবী বলেন) পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল একটি আশ্চর্যজনক ব্যাপার। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, সে তাইতো সেই স্থান যা আমার খুঁজে বেড়াচ্ছি। এরপর উভয়ে নিজ নিজ পদচিহ্ন অনুসরণ করতে করতে পিছনের দিকে ফিরে চললেন, শেষ পর্যন্ত তাঁরা উভয়ে সেই পাথরটির কাছে এসে পৌছলেন এবং দেখলেন সেখানে একজন লোক কাপড়ে আবৃত হয়ে আছেন। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সালাম করলেন। তিনি সালামের জওয়াব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা (আমি এ দেশের লোক নই।)তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ইসরাইলের (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )মূসা? তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার নিকট এসেছি, সরল সঠিক জ্ঞানের ঐ সব কথাগুলো শিখার জন্য যা আপনাকে শিখানো হয়েছে। তিনি বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে যা আল্লাহ্‌ আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনি তা জানেন। আর আপনারও আল্লাহ্‌ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আল্লাহ্‌ আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আমি তা জানিনা। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি কি আপনার সঙ্গী হতে পারি? খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি আমার সাথে থেকে ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হবেন না আর আপনি এমন বিষয়ে ধৈর্য রাখবেন কি করে, যার রহস্য অনুধাবন করা আপনার জানানেই? (মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইন্‌শা আল্লাহ্‌ আপনি আমাকে একজন ধৈর্য ধারণকারী হিসেবে দেখতে পাবেন। আমি আপনার কোন নির্দেশই অমান্য করব না। এরপর তাঁরা উভয়ে রওয়ানা হয়ে নদীর তীরে দিয়ে চলতে লাগলেন। এমন সময় একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করচিল। তারা তাদেরকেও নৌকায় উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করলেন। তারা খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে চিনে ফেললেন এবং তারা তাঁকে তাঁর সঙ্গীসহ পারিশ্রমিক ব্যতিরেকেই নৌকায় তুলে নিল। তাঁরা দু’জন যখন নৌকায় আরোহণ করলেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির এক পাশে বসল এবং একবার কি দু’বার নদীর পানিতে সে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার এবং তোমার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্‌র জ্ঞান হতে ততটুকুও হ্রাস পায়নি যতটুকু এ পাখিটি তার ঠোঁটের সাহায্যে পানি হ্রাস করেছে। তারপর খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ করে একটি কুঠায় নিয়ে নৌকার একটি তক্তা খুলে ফেললেন, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অকস্মাৎ দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন তিনি খুঠার দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেন। তখন তাঁকে তিনি বললেন, আপনি এ কি করলেন? লোকেরা আমাদের পারিশ্রমিক ছাড়া নৌকায় তুলে নিল, আর আপনি তাদের নৌকার আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন? এত আপনি একটি গুরুতর কাজ করলেন। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি কখনও আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবেন না? মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যে বিষয়টি ভুলে গেছি, তার জন্য আমাকে দোষারোপ করবেন না। আর আমার এ আচরণে আমার প্রতি কঠোর হবেন না। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পক্ষ থেকে প্রথম এই কথাটি ছিল ভুলক্রমে।

এরপর যখন তাঁরা উভয়ে নদী পার হয়ে আসলেন, তখন তাঁরা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন সে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলছিল। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মাথা ধরলেন এবং নিজ হাতে ছেলেটির ঘাড় পৃথক করে ফেললেন। একথাটি বুঝানোর জন্য সুফিয়ান (রহঃ) তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলোর অগ্রভাগ দ্বারা এমনভাবে ইশারা করলেন যেন তিনি কোন জিনিস ছিড়ে নিচ্ছিলেন। এতে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আপনি কি একটি নিষ্পাপ ছেলেকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? নিশ্চয়ই আপনি এটা গর্হিত কাজ করলেন। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি কি আপনাকে বলিনি যে আপনি আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না? মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তাহলে আপনি আমাকে আর আপনার সঙ্গে রাখবেন না। কেননা আপনার ওজর আপত্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এরপর তাঁরা চলতে লাগলেন শেষ পর্যন্ত তাঁরা এক লোকালয়ে এসে পৌছলেন। তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। কিন্তু তারা তাঁদের মেহ্‌মানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর তাঁরা সেখানেই একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তা একদিকে ঝুঁকে গিয়েছিল। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা নিজের হাতে সোজা করে দিলেন। রাবী আপন হাতে এভাবে ইশারা করলেন। আর সুফিয়ান (রহঃ) এমনিভাবে ইঙ্গিত করলেন যেন তিনি কোন জিনিস উপরের দিকে উচিয়ে দিচ্ছেন। ঝুকে পড়েছে’’ একথাটি আমি সুফিয়ানকে মাত্র একবার বলতে শুনেছি। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা এমন মানুষ যে, আমরা তাদের কাছে আসলাম, তারা আমাদেরকে না খাবার পরিবেশন করল, না আমাদের মেহমানদারী করল আপনি এদের প্রাচীর সোজা করতে গেলেন। আপনি ইচ্ছা করলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। খাযির আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এখানেই আপনার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদ হল। তবে এখনই আমি আপনাকে অবহিত করছি ওসব কথার গুঢ় রহস্য, যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদেরতো ইচ্ছা যে, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধৈর্যধারণ করলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো অনেক বেশী খবর বর্ণিত হতো। সুফিয়ান (রাঃ) বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ্‌ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর করুন। তিনি যদি ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে তাদের উভয়ের ব্যাপারে আমাদের কাছে আরো অনেক ঘটনা বর্ণিত হতো। রাবী (সাইদ ইব্‌ন জুবায়র) বলেন, ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) এখানে পড়েছেন, তাদের সামনে একজন বাদশাহ ছিল, সে প্রতিটি নিখুঁত নৌকা যবরদস্তিমূলক ছিনিয়ে নিত। আর সে ছেলেটি ছিল কাফির, তার মা-বাবা ছিলেন মুমিন। তারপর সুফিয়ান (রহঃ) আমাকে বলেছেন, আমি এ হাদীসটি তাঁর (আমর ইব্‌ন দীনার) থেকে দু’বার শুনেছি এবং তাঁর নিকট হতেই মুখস্থ করেছি। সুফিয়ান (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি আমর ইব্‌ন দীনার (রহঃ) থেকে শোনার আগেই তা মুখস্থ করেছেন না অপর কোন লোকের নিকট শুনে তা মুখস্থ করেছেন? তিনি বললেন, আমি কার নিকট থেকে তা মুখস্থ করতে পারি? আমি ছাড়া আর কেউ কি এ হাদীস আমরের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন? আমি তাঁর কাছ থেকেই শুনেছি দুইবার কি তিনবার। আর তাঁর থেকেই তা মুখস্থ করেছি। আলী ইব্‌ন খুশরম (রহঃ) সুফিয়ান (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

 

৩১৬৩-মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ ইবনু আসবাহানী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খাযীর আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে খাযির নামে অভিহিত করার কারণ হল এই যে, একদা তিনি ঘাস-পাতা বিহীন শুল্ক সাদা জায়গায় বসেছিলেন। সেখান থেকে তাঁর উঠে যাওয়ার পরই হঠাৎ ঐ স্থানটি সবুজ হয়ে গেল। (এ ঘটনা থেকেই তাঁর নাম খাযির হয়ে যায়। )

 

৩১৬৪-ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তোমরা দ্বার দিয়ে অবনত মস্তিকে প্রবেশ কর আর মুখে বল, ‘হিত্তাতুন’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দাও।)কিন্তু তারা এ শব্দটি পরিবর্তন করে ফেলল এবং প্রবেশ দ্বার দিয়ে যেন জাতু নত না করতে হয় সে জন্য তারা নিজ নিজ নিতম্বের উপর ভর দিয়ে শহরে প্রবেশ করল আর মুখে বলল, ‘‘হাব্বাতুন্‌ ফী শা‘আরাতিন’’(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে যবের দানা দাও।)

 

৩১৬৫-ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন, সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তাঁর দেহের কোন অংশ খোলা দেখা যেতনা তা থেকে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশী ঢেকে রাখেন, তাঁর একমাত্র কারণ হল, তাঁর শরীরে কোন দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোন রোগ আছে। আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করলেন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছি তা থেকে তাঁকে মুক্ত করবেন। এরপর একদিন নির্জন স্থানে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তাঁর পরণের কাপর খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপর নেয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটি পেছনে পেছনে ছুঠলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জন সমাবেশে গিয়ে পৌছল। তখন তারা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এবং তারা তাঁকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। আর পাথরটি থামল, তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন এবং তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটই হল আল্লাহর এ বাণীর মর্মঃ হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়োনা যারা মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাঁকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। (৩৩:৬৯)

 

৩১৬৬- আবূল ওয়ালিদ (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কিছু জিনিস (লোকদের মধ্যে) বণ্টন করেন। তখন এক ব্যাক্তি বলল, এতো এমন ধরনের বণ্টন যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়নি। এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে আসলাম এবং তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তিনি খুব অসন্তূষ্ট হোলেণ, এমনকি তাঁর চেহারায় আমি অসন্তূষ্টিড় ভাব দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি রহম করুন তাঁকে এর চেয়ে অনেক কষ্ট দেওয়া হয়েছিল, তবুও তিনি ধৈর্যধারণ করেছিলেন।

 

৩১৬৭-ইয়াই্‌য়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাথে ‘কাবাস’ (পিলু) গাছের পাকা ফল বেছে বেছে নিচ্ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এর মধ্যে কালোগুলো নেওয়াই তোমাদের উচিৎ। কেননা এগুলোই বেশী সুস্বাদু। সাহাবাগণ বললেন, আপনি কি ছাগল চরিয়েছিলেন? তিনি জাওয়াব দিলেন, প্রত্যেক নাবী ই তা চরিয়েছেন।

 

৩১৬৮-ইয়াহ্‌ইয়া মূসা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মওতের ফিরিশ্‌তাকে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট তাঁর (জানো কবযের) জন্য পাঠান হয়েছিল। ফিরিশ্‌তা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তিনি তাঁর চোখে থাপ্‌পর মারলেন। রখন ফিরিশ্‌তা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম দাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবরতে তাকে এক বছর করে হায়াত দেওয়া হবে। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে রব! তারপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এখনই হউক (রাবী) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাঁকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ভুমিথেকে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌছে দেওয়া হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে রাস্তার পার্শ্বে লাল টিলার নীচে কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আব্দুর রায্‌যাক বলেন, মা’মর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

 

৩১৬৯- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এলজন মুসলিম আর একজন ইয়াহূদী পরস্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যাক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ –কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহূদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে সমগ্র জাগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহূদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহূদী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করলো জা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর উপর মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। আর আমই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখব, তিনি আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে তাঁর হুশ এসে গেসে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাঁদেরকে আল্লাহ বেহুশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন।

 

৩১৭০-আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মূসা (রূহানী জগতে) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে, আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত থেকে বের করে দিয়েছিল। আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, আপনি সেই মূসা যে, আপনাকে আল্লাহ তাঁর রিসালাত (নামায/নামাজ) দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। তারপরও আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে দোষারোপ করছেন, জা আমার সৃষ্টির আগেই আমার তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর জয়ী হন।

 

৩১৭১-মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে আসলেন এবং বললেন, আমার নিকট সকল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল। তখন আমি এক বিরাট দল দেখতে পেলাম, জা দিগন্ত ঢেকে ফেলেছিল। তখন বলা হল, ইনি হলেন মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাওমের সাথে।

 

৩১৭২। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু জা‘ফর (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যাতীত আর কেউ কামালিয়াত অর্জনে সক্ষম হয়নি। তবে আয়িশার মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদের (গোশতের ঝোলে ভিজা রুটির) মর্যাদা সর্ব প্রকার খাদ্যের উপর।

 

৩১৭৩-মূসা’দ্দাদ (রহঃ) এবং আবূ নু‘আঈম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে যে, আমি (মুহাম্মদ )ইউনুস আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বাড়িয়ে বললেন, ইউনুস ইবনু মাত্তা।

 

৩১৭৪-হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ইবনুুে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার জন্য এমন কথা বলা শোভনীয় নয় যে, নিশ্চয়ই আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (ইউনুসকে) তাঁর পিতার দিকে সম্পর্কিত করেছেন।

 

৩১৭৫-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক ইয়াহূদী তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাঁকে এমন কিছু দেওয়া হল যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বললো, না! সেই সত্তার কসম, যে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারী (মুসলিম) শুনলেন, তুমি বলছো, সেই সত্তার কসম! যিনি মূসাকে মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। তখন সে ইয়াহূদী লোকটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট গেলো এবং বললো, হে আবূল কাসিম। নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং আহাদ রয়েছে অর্থাৎ আমি একজন যিম্মি। অতএব অমুক ব্যাক্তির কি হল, কি কারণে সে আমার মুখে চড় মারলো? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনসারী ব্যাক্তি ঘটনাটি বর্ণনা করলো। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হলেন। এমনকি তার চেহারায় টা প্রকাশ পেল। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের মধ্যে কাউকে কারো উপর (অন্যকে হেয় করে) মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ব্যতিত আসমান ও যমীনের বাকী সবাই বেহুশ হয়ে যাবে। তারপর দ্বিতীয়বার তাতে ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে। তখনই আমি দেখতে পাব মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশ ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, তূর পর্বতের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুশ হয়েছিলেন, এটা কি তারই বিনিময়, না আমারই আগে তাঁকে উঠানো হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে কোন ব্যাক্তি ইউনুস ইবনু মাত্তার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।

 

৩১৭৬- আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন বান্দার পক্ষেই এ কথা বলা শোভনীয় নয় যে, আমি (মুহাম্মদ) ইউনুস ইবনু মাত্তার চেয়ে উত্তম।

 

৩১৭৭-আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পক্ষে কুরআন (যাবুর) তিলাওয়াত সহজ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর যানবাহনের পশুর উপর গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাধা হতো। তারপর তাঁর যানবাহনের পশুটির উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। তিনি নিজ হাতে উপার্জন করেই খেতেন। মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।

 

৩১৭৮-ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জানোান হল যে, আমি বলছি, আল্লাহর কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন অবশ্যই আমি বিরামহীনভাবে দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবো এবং রাতে ইবাদতে রত থাকবো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমই কি বলছো, ‘আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন দিনে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবো এবং রাতে ইবাদাত রত থাকবো। আমি আরয করলাম, আমই তা বলছি। তিনি বললেন, সেই শক্তি তোমার নেই। কাজেই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)ও পালন কর, ইফ্‌তারও কর অর্থাৎ বিরতি দাও। রাতে ইবাদাতও কর এবং ঘুম যাও। আর প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। কেননা প্রতিটি নেক কাজের কমপক্ষে দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর এটা সারা বছর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার সমান। তখন আরয করলাম। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এর চেয়েও বেশী সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার ক্ষমতা রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আর দু’দিন ইফ্‌তার কর অর্থাৎ বিরতি দাও। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এর চেয়েও অধিক পালন করার শক্তি রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর আর একদিন বিরতি দাও। এটা দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের পদ্ধতি। আর এটাই সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের উত্তম পদ্ধতি। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, এর চেয়ে অধিক কিছু নেই।

 

৩১৭৯-খাল্লাদা ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি অবহিত হইনি যে, তুমি রাত ভর ইবাদাত কর এবং দিন ভর সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর! আমি বল্ললাম, হাঁ। (খবর সত্য) তিনি বললেন, যদি তুমি এরূপ কর; তবে তোমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাবে এবং দেহ অবসন্ন হয়ে যাবে। কাজেই প্রতি মাসে তিন দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। তাহলে তা সারা বছরের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) র সমতুল্য হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি আমার মধ্যে আরো বেশী পাই। মিসআর (রহঃ) বলেন, এখানে শক্তি বুঝানো হয়েছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিতে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন কর। তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন আর একদিন বিরত থাকতেন। আর শত্রুর সম্মুখীন হলে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না।

 

৩১৮০-কুতায়বা ইব্ব, ন সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) হল দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিতে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করা। তিনি একদিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন আর একদিন বিরতি দিতেন। আল্লাহর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় সালাত (নামায/নামাজ) হল দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পদ্ধতিতে (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। তিনি রাতের প্রথমার্ধে ঘুমাতেন, রাতের এক ত্তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর বাকী ষষ্টাংশ আবার ঘুমাতেন।

 

৩১৮১-মুহাম্মদ (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি সূরা ছোয়াদ পাঠ করে সিজদা করবো? তখন তিনি থেকে পর্যন্ত আয়াত তিলাওয়াত করলেন। এরপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মহান ব্যাক্তিদের একজন, যাঁদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। (৬:৮৪-৯০)

 

৩১৮২-মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সূরা ছোয়াদের সিজ্‌দা অত্যাবশ্যকীয় নয়। কিন্তু আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে এ সুরায় সিজ্‌দা করতে দেখেছি।

 

৩১৮৩-মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি অবাধ্য জ্বিন এক রাতে আমার সালাত (নামায/নামাজ) বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ আমাকে তাঁর উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাঁকে পাকড়াও করলাম এবং মসজিদের একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে রাখার মনস্থ করলাম, যাতে তোমরা সবাই সচক্ষে তাঁকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলায়মান আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দু’আটি আমার মনে পড়লো। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুণ এবং আমাকে দান করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমার পরে আমি ছাড়া কেউ না হয়। (৩৮:৩৫) এরপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং অপমানিত করে ছেড়ে দিলাম। জ্বীন অথবা ইনসানের অত্যন্ত পিশাচ ব্যাক্তিকে ইফ্‌রীত বলা হয়। ইফ্‌রীত ও ইফ্‌রীয়াতুন যিব্‌নীয়াতুন-এর ন্যায় এক বচন, যার বহু বচন যাবানিয়াতুন।

 

৩১৮৪-খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সুলায়মান ইবনু দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আজ রাতে আমি আমার সত্তর জন্য স্ত্রীর নিকট যাব। প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে আশারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাঁর সাথী বললেন, ইন্‌শা আল্লাহ (বলুন)। কিন্তু তিনি মুখে তা বলেন নি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন, না। সে যাও এক (পুত্র) সন্তান প্রসব করলেন। তাও তার এক অঙ্গ ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ‘ইন্‌শা আল্লাহ’ মুখে বলতেন, তা হলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতো। শু‘আয়ব এবং আবূ যিনাদ (রহঃ) এখানে নব্বই জন্য স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এটাই সঠিক বর্ণনা।

 

৩১৮৫-উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, এরপর কোন্‌টি? তিনি বললেন, মসজিদে আক্‌সা। আমি বললাম, এ দু’য়ের নির্মাণের মাঝখানে কত ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ (বছরের)১ (তারপর তিনি বললেন,)যেখানেই তোমার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হবে, সেখানেই তুমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিবে। কেননা, পৃথিবীটাই তোমার জন্য মাসজিদ। ১ এ চল্লিশ বছরের ব্যবধান মূল ভিত্তি স্থাপনে; পুনর্নির্মাণে নয়। ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুলায়মান আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাক্রমে মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসার পুনর্নির্মাণ করেছেন মাত্র। মূল ভিত্তি স্থাপন করেছেন, আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

 

৩১৮৬- আবূল ইয়ামান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও অন্যান্য মানুষের উপমা হল এমন যেমন কোন এক ব্যাক্তি আগুন জ্বালাল এবং তাতে পতঙ্গ এবং কীটগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পড়তে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সঙ্গে দু’টি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সাথের একজন মহিলা বললো, ‘‘না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে। ’’ তারপর উভয় মহিলাই দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হল। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। তারপর তারা উভয়ে (বিচারালয় থেকে) বেরিয়ে দাউদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পুত্র সুলায়মান আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর কাছ দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা উভয়ে তাঁকে ঘটনাটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার কাছে ছোরা আনয়ন কর। আমি ছেলেটিকে দু’ টুক্‌রা করে তাদের উভয়ের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। (এটা আমি মেনে নিচ্ছি।)তখন তিনি ছেলেটির ব্যাপারে অল্প বয়স্কা মহিলাটির পক্ষেই রায় দিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! ছোরা অর্থে শব্দটি আমি ঐ দিনই শুনেছি। আর না হয় আমরা তো ছোরাকে ই বলতাম।

 

৩১৮৭- আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াতে কারীমা নাযিল হলঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাদেরকে যারা ঈমানকে যূল্‌মের দ্বারা কলুষিত করে নি। (৬:৮২) তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সাহাবাগণ বললেন, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে, নিজের ঈমানকে যূল্‌মের দ্বারা কলুষিত করেনি? তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ আল্লাহর সাথে শরীক করো না। কেননা শির্‌ক হচ্ছে এক মহা যূল্‌ম। (৩১:১৮)

 

৩১৮৮-ইসহাক (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি লেন, যখন এ আয়াতে কারীমা নাযিল হলঃ যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যূল্‌মের দ্বারা কলুষিত করেনি। তখন তা মুসলমানদের পক্ষে কঠিন হয়ে গেল। তারা আরয করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে নিজের উপর যূল্‌ম করেনি? তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখানে অর্থ তা নয় বরং এখানে যূল্‌মের অর্থ হল শির্‌ক। তোমরা কি কুরআনে শুননি? লুকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ প্রধানকালে কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, ‘‘হে আমার প্রিয় ছেলে! তুমি আল্লাহর সাথে শির্‌ক করো না। কেননা, নিশ্চয়ই শির্‌ক এক মহা যুল্‌ম।

 

৩১৮৯-হুদাবা ইবনু খালিদ (রহঃ) মালিক ইবনু সা‘সাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণের কাছে মিরাজের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, অনন্তর তিনি (জিবরাঈল) আমাকে নিয়ে উপরে চল্লেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হল কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন করা হল। আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ পৌছলাম তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া এবং ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারা উভয়ে খালাত ভাই ছিলেন। জিব্রাইল বললেন, এরা হলেন, ইয়াহইয়া এবং ঈসা। তাদেরকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। তারপর তাঁরা বললেন, নেক ভাই এবং নেক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি মারহাবা।

৩১৯০- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁধে। তবে মারিয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ব্যতিক্রম। তারপর আবূ হুরায়রা বলেন, (এর কারণ হল মারিয়ামের মায়ের এ দু’আ ‘‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

 

৩১৯১-আহমাদ ইবনু আবূ রাজা‘ (রহঃ) আলী (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, (ঐ সময়ের) সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম হলেন সর্বোত্তম আর (এ সময়ে) নারীদের সেরা হলেন খাদীজা (রাঃ)।

 

৩১৯২-আদম (রহঃ) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নারির উপর আয়িশার মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্য সামগ্রির উপর সারীদের মর্যাদা। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অরজন করেছেন। (অতিত যুগে) কিন্তূ নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম এবং ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতিত কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে পারেনি। ইবনু ওহাব (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি কুরাইশ বংশীয় নারীরা উঠে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহময়ী হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, ইমরানের কন্যা মারিয়ামের কখনও উঠে আরোহণ করেন নি। ইবনু আখী যুহরী ও ইসহাক কালবী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ইউনুস (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩১৯৩-সাদাকা ইবনু ফায্‌ল (রহঃ) উবাদা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যাক্তি সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই আর মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর নিশ্চয়ই ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল) তাঁর সেই কালিমা যা তিনি মারিয়ামকে পৌছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য আল্লাহ তাকে জান্নাত প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন। ওয়লীদ (রহঃ) জুনাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে জুনাদা বাড়িয়ে বলেছেন যে, জান্নাতের আট দরজায় যেখানে দিয়েই সে চাইবে। (আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। )

 

৩১৯৪-মুসলিম ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন জন শিশু ব্যতিত আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বনী ইসরাঈলের এক ব্যাক্তি যাকে ‘জুরাইজ’ বলে ডাকা হতো। একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সারা দেব, না সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে থাকব। (জবাব না পেয়ে) তার মা বলল, ইয়া আল্লাহ! ব্যভিচারিণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরায়জ তার ইবাদাত খানায় থাকত। একবার তার কাছে একটি মহিলা আসল। সে (অসৎ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য) তার সাথে কথা বলল। কিন্তু জুরায়জ তা অস্বীকার করল। তারপর মহিলাটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল। এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার কাছে আসল এবং তার ইবাদাত খানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ উযূ (ওজু/অজু/অযু) সেরে ইবাদাত করল। এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা (বনী ইসরাঈলেরা) বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বুলল, না। তবে মাটি দিয়ে (করতে পার)। বনী ইসরাঈলের একজন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। মহিলাটি দু‘আ করল, ইয়া আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল। এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত করনা। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দেখতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। এরপর সেই মহিলাটির পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। মহিলাটি বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার শিশুকে এর মত করো না। শিশুটি তৎক্ষনাৎ তার মায়ের দুধ ছেড়ে দিল। আর বলল, ইয়া আল্লাহ! আমাকে তার মত কর। তার মা জিজ্ঞাসা করল, তা কেন? শিশুটি জবাব দিল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন। আর এ দাসীটি লোকে বলছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে কিছুই করেনি।

 

৩১৯৫-ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা অ মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজ রজনীতি আমি মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দেখা পেয়েছি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দেখা পেয়েছি। এরপর তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা হত বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমই তার বেশী সা’দৃশ্যপূর্ণ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হল, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হল, আপনি ফিত্‌রাত বা স্বভাবিকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।

 

৩১৯৬-মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মিরাজের রাতে) আমি ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম , মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখেছি। ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৌর বর্ণ, সোজা চুল এবং প্রশস্ত বক্ষবিশিষ্ট লোক ছিলেন, মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাআমি রং বিশিষ্ট ছিলেন, তাঁর দেহ ছিল সুঠাম এবং মাথার চুল ছিল কোকড়ানো যেন ‘যুত’ গোত্রের একজন লোক।

 

৩১৯৭-ইব্‌রাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ ট্যারা নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চোখ ট্যারা। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত। আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কাবার কাছে দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যাক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও বেশী সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তার দু’কাঁধ পর্যন্ত ঝূলছিল। তার মাথা থেকে পানি ফোটা ফোটা করে পড়ছিল। তিনি দু’জন লোকের কাঁধে হাত রেখে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মসীহ ইবনু মারিয়াম। তারপর তাঁর পিছনে আর একজন লোককে দেখলাম। তাঁর মাথার চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চোখ ট্যারা, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবনু কাতানের অধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দু’কাঁধে ভর করে কাবার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম , এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।

 

৩১৯৮-আহ্মদ ইবনু মুহাম্মদ মাক্‌কী (রহঃ) সালিম (রাঃ)-এর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তিম বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কা’বা ঘর তাইয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রং বিশিষ্ট একজন লোক দেখলাম। তিনি দু’জন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরে পড়ছে অথবা বলেছেন, তার মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক সেদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক ব্যাক্তি তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোকড়ানো এবং তার ডান চোখ ট্যারা। তার চোখ যেন ফুলা আঙ্গুরের ন্যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মানুষের মধ্যে ইবনু কাতানের সাথে তার অধিক সা’দৃশ্য রয়েছ। যুহরী (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, ইবনু কাতান খুযাআ গোত্রের লোক, সে জাহেলী যুগেই মারা গেছে।

 

৩১৯৯- আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার বেশী নিকটতম। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ পরস্পর আল্লাতী ভাই অর্থাৎ দ্বীনের মূল বিষয়ে এক এবং বিধানে বিভিন্ন। আমার ও তার (ঈসার) মাঝখানে কোন নাবী নেই।

 

৩২০০-মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা ইবনু মারিয়ামের সবচেয়ে নিকটতম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ একে অন্যের আল্লাতী ভাই। তাঁদের মা ভিন্ন ভিন্ন, অর্থাৎ তাদের বিধান ভিন্ন। (কিন্তু তাদের মূল দ্বীন এক (তাওহিদ)। ইব্‌রাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন।

 

৩২০১ আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যাক্তিকে চুরি করতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলল, কখনও নয়। সেই সত্তার কসম, যিনি ব্যাতীত আর কোন ইলাহ নেই। তখন ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি আর আমি আমার দু’নয়নকে বাহ্যত সমর্থন করলাম না।

 

৩২০২ হুমাইদী (রহঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উমর (রাঃ)- কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে অতিরঞ্জিত করো না, যেমন ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে খৃষ্টানরা অতিরঞ্জিত করেছিল। আমি তাঁর (আল্লাহর) বান্দা, বরং তোমরা আমার সম্পর্কে বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।

 

৩২০৩ মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) আবূ মূসা মাশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন লোক তার দাসীকে আদব-কায়দা শিখায় এবং তা ভালভাবে শিখায় এবং তাকে দ্বীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় তারপর তাদের আযাদ করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দু’টি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি ঈমান আনয়ন করে তারপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং তার মনিবদেরকে মেনে চলে তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে।

 

৩২০৪ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হাশরের মাঠে খালি-পা, খালি-গা এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ যেভাবে আমি প্রথবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। এটা আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পুর্ণ করব। (২১ : ১০৪) এরপর (হাশরে) সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইব্‌রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর আমার সাহাবীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে (বেহেশ্‌তে) এবং কিছু সংখ্যককে বাম দিকে (দোযখে) নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী। তখন বলা হবে আপনি তাদের থেকে বিদায় নেয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছে। তখন আমি এমন কথা বলব, যেমন বলেছিল, পুণ্যবান বান্দা ঈসা ইবনু মারিয়াম আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার উক্তিটি হল এ আয়াতঃ আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। এরপর আপনি যখন আমকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনই তাদের হেফাযতকারী ছিলেন। আর আপনি তো সবকিছুর উপরই সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে এরা আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি নিশ্চয়ই পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়। (৫ : ১১৭) কাবীসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরা হল ঐ সব মুরতাদ যারা আবূ বক্‌র (রাঃ)-এর খিলাফতকালে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তখন আবূ বক্‌র (রাঃ) তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।

 

৩২০৫ ইসহাক (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রান, অচিরেই তোমাদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর মেরে ফেলবেন এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহন করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্‌দা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর [ঈসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দ্বীন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন।

 

৩২০৬ ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের অবস্থা কেমন (আনন্দের) হবে যখন তোমাদের মাঝে মারিয়াম তনয় ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবতরণ করবেন আর তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে। ১ ১ ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের ইমাম হবেন বটে কিন্তু তিনি কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শাসনকার্য চালাবেন, ইন্‌জিল মতে নয়। তিনি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে আসবেন। -(আইনী)

 

৩২০৭ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উক্‌বা ইবনু আমর (রাঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা কি আমাদের কাছে বর্ণনা করবেন না? তিনি জবাব দিলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যখন দাজ্জাল বের হবে তখন তার সাথে পানি ও আগুন থাকবে। এরপর মানুষ যাকে আগুনের মতো দেখবে তা হবে আসলে শীতল পানি। আর যাকে মানুষ শীতল পানির ন্যায় দেখবে, তা হবে প্রকৃতপক্ষে দহনকারী আগুন। তখন তোমাদের মধ্যে যে তার দেখা পাবে, সে যেন অবশ্যই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যাকে সে আগুনের ন্যায় দেখতে পাবে। কেননা, প্রকৃতপক্ষে তা সুস্বাদু শীতল পানি। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে] বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মাঝে একজন লোক ছিল। তার কাছে ফিরিশ্‌তা তার জানো কব্‌য করার জন্য এসেছিলেন। (তার মৃত্যুর পর) তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি কি কোন ভাল কাজ করেছ? সে জবাব দিল, আমার জানাবেই। তাকে বলা হল, একটু চিন্তা করে দেখ। সে বলল, এ জিনিসটি ব্যতিত আমার আর কিছুই জানানেই যে, দুনিয়াতে আদি মানুষের সাথে ব্যাবসা করতাম। অর্থাৎ ঋণ দিতাম। আর তা আদায়ের জন্য তাদেরকে তাগাদা দিতাম। আদায় না করতে পারলে আমি স্বচ্ছল ব্যাক্তিকে সময় দিতাম আর অভাবী ব্যাক্তিকে ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এটাও বলতে শুনেছি যে, কোন এক ব্যাক্তির মৃত্যুর সময় এসে হাজির হল। যখন সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেল। তখন সে তার পরিজনকে ওসীয়াত করল, আমি যখন মরে যাব, তখন আমার জন্য অনেকগুলো কাঠ একত্র করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিও। (আর আমকে তাতে ফেলে দিও) আগুন যখন আমার গোশত খেয়ে ফেলবে এবং আমার হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে আর আমার হাড়গুলো বেরিয়ে আসবে, তখন তোমরা তা নিয়ে গুড়ো করে ফেলবে। তারপর যেদিন দেখবে খুব হাওয়া বইছে, তখন সেই ছাই গুলোকে উড়িয়ে দেবে। তার পরিজনেরা তাই করল। তারপর আল্লাহ সে সব একত্র করলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কাজ তুমি কেন করলে? সে জবাব দিল, আপনার ভয়ে। তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উক্‌বা ইবনু আম্‌র (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ঐ ব্যাক্তি ছিল কাফন চোর।

 

৩২০৮ বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের সময় হাজির হল, তখন তিনি আপন চেহারার উপর তাঁর একখানা চাঁদর দিয়ে রাখলেন। এরপর যখন খারাপ লাগল, তখন তাঁর চেহারা মোবারক হতে তা সরিয়ে দিলেন এবং তিনি এ অবস্থায়ই বললেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের ওপর আল্লাহর লা’নত। তাঁরা তাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে রেখেছে। তাঁরা যা করেছে তা থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের সতর্ক করেছেন।

 

৩২০৯ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ হাযিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি পাঁচ বছর যাবত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সহচর্যে ছিলাম। তখন আমি তাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণ তাঁদের উম্মতকে শাসন করতেন। যখন কোন একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করতেন, তখন অন্য একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থলাভিসিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নাবী নেই। তবে অনেক খলিফাহ্‌ হবে। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‌! আপনি আমাদের কি নির্দেশ করছেন? তিনি বললেন, তোমরা একের পর এক করে তাদের বায়’আতের হক আদায় করবে। তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন ঐ সকল বিষয় সম্বন্ধে যে সবের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।

 

৩২১০ সাঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের তরীকাহ্‌ পুরোপুরি অনুসরন করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমকি তারা যদি গো সাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‌! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারার কথা বলছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আর কার কথা?

 

৩২১১ ইমরান ইবনু মাইসারা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবাগণ সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্য) আগুন জ্বালানো এবং ঘন্টা বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। তখনই তাঁরা ইয়াহূদী ও নাসারার কথা উল্লেখ করলেন। এরপর বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দগুলো দু’ দু’ বার করে এবং ইকামতের সব্দগুলো বেজোড় করে বলতে আদেশ দেয়া হল।

 

৩২১২ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি কোমরে হাত রাখাকে না পছন্দ করতেন। আর বলতেন, ইয়াহূদীরা এরূপ করে। শু’বা (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফিয়ান (রহঃ)-এর অনুসরন করেছেন।

 

৩২১৩ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যেসব উম্মত অতীত হয়ে গেছে তাদের তুলনায় তোমাদের স্থিতিকাল হল আসরের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সূর্য ডুবার মধ্যবর্তী সময় টুকুর সমান। আর তোমাদের ও ইয়াহূদী নাসারাদের দৃষ্টান্ত হল ঐ ব্যাক্তির মতো, যে কয়েকজন লোককে তার কাজে লাগালো এবং জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, আমার জন্য দুপুর পর্যন্ত এক এক কিরাতের বিনিময়ে কাজ করবে? তখন ইয়াহূদীরা এক এক কিরাতের বিনিময়ে দুপুর পর্যন্ত কাজ করল। তারপর সে ব্যাক্তি আবার বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, সে দুপুর থেকে আসর সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে আমার কাজটুকু করে দেবে? তখন নাসারারা এক কিরাতের বিনিময়ে দুপুর হতে আসর সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত কাজ করল। সে ব্যাক্তি পুনরায় বলল, কে এমন আছে, যে দু’ দু’ কিরাতের বদলায় আসর সালাত (নামায/নামাজ) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমার কাজ করে দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দেখ, তোমরাই হলে সে সব লোক যারা আসর সালাত (নামায/নামাজ) হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দু’ দু’ কিরাতের বিনিময়ে কাজ করলে। দেখ, তোমাদের পারিশ্রমিক দিগুন। এতে ইয়াহূদী ও নাসারারা অসন্তুষ্ট হয়ে গেল এবং বলল, আমরা কাজ করলাম বেশী আর পারিশ্রমিক পেলাম কম। আল্লাহ বলেন, আমি কি তোমার পাওনা থেকে কিছু যুল্‌ম বা কম করেছি? তারা উত্তরে বলল, না। তখন আল্লাহ বললেন, এ-ই হল আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে ইচ্ছা, তাক দান করে থাকি।

 

৩২১৪ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ অমুক ব্যাক্তিকে ধ্বংস করুক! সে কি জাননা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ইয়াহূদীদের ওপর লা’নত করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল। তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করতে লাগল। জাবির ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস বর্ণনায় ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩২১৫ আবূ আসিম যাহ্‌হাক ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার কথা (অন্যদের নিকট) পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়। আর বনী ইসরাঈলের ঘটনাবলী বর্ণনা কর। এতে কোন দোষ নেই। কিন্তু যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন দোযখকেই তার ঠিকানা নির্ধারিত করে নিল।

 

৩২১৬ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়াহূদী ও নাসারারা (দাঁড়ি ও চুলে) রং লাগায় না বা খেযাব দেয় না। অতএব তোমরা (রং লাগিয়ে বা খেযাব লাগিয়ে) তাদের বিপরীত কাজ কর।

 

৩২১৭ মুহাম্মদ (রহঃ) হাসান (বসরী) (রহঃ) বলেন, জুনদুব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বসরার এর মসজিদে আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন। সে দিন থেকে আমরা না হাদীস ভুলেছি না আশংকা করেছি যে, জুনদুব (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে একজন লোক আঘাত পেয়েছিল তাতে কাতর হয়ে পড়েছিল। এরপর সে একটি ছুরি হাতে নিল এবং তা দিয়ে সে তার হাতটি কেটে ফেলল। ফলে রক্ত আর বন্ধ হল না। শেষ পর্যন্ত সে মারা গেল। মহান আল্লাহ বললেন, আমার বান্দাটি নিজেই প্রান দেয়ার ব্যাপারে আমার চেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করল (অর্থাৎ সে আত্মহত্যা করল)। কাজেই, আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।

 

৩২১৮ আহ্‌মদ ইবনু ইসহাক ও মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে তিন জন লোক ছিল। একজন শ্বেতীরোগী, একজন মাথায় টাকওয়ালা আর একজন অন্ধ। মহান আল্লাহ্‌ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। কাজেই তিনি তাদের কাছে একজন ফিরিশ্‌তা পাঠালেন। ফিরিশ্‌তা প্রথমে শ্বেতী রোগীটির নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাছে কোন্‌ জিনিস বেশী প্রিয়? সে জবাব দিল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা, মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। ফিরিশ্‌তা তার শরীরের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন। ফলে তার রোগ সেরে গেল। তাকে সুন্দর রং এবং সুন্দর চামড়া দান করা হল। তারপর ফিরিশ্‌তা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্‌ ধরনের সম্পদ তোমার কাছ বেশী প্রিয়? সে জবাব দিল, ‘উট’ অথবা সে বলল ‘গরু’। এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়েছে যে শ্বেতরোগী না টাকওয়ালা দু’জনের একজন বলেছিল ‘উট’ আর অপরজন বলেছিল ‘গরু’। অতএব তাকে একটি দশ মাসের গর্ভবতী উটনী দেয়া হল। তখন ফিরিশ্‌তা বললেন, “এতে তোমার জন্য বরকত হোক। ” বর্ণনাকারী বলেন, ফিরিশ্‌তা টাকওয়ালার কাছে গেলেন এবং বললেন, তোমার কাছে কি জিনিস পছন্দনীয়? সে বলল, সুন্দর চুল এবং আমার থেকে যেন এ রোগ চলে যায়। মানুষ আমাকে ঘৃণা করে। বর্ণনাকারী বলেন, ফিরিশ্‌তা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং তৎক্ষণাৎ মাথার টাক চলে গেল। তাকে (তার মাথায়) সুন্দর চুল দেয়া হল। ফিরিশ্‌তা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্‌সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল, ‘গরু’। তারপর তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দান করলেন এবং ফিরিশ্‌তা দু’আ করলেন, এতে তোমাকে বরকত দান করা হোক। তারপর ফিরিশ্‌তা অন্ধের নিকট আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্‌ জিনিস তোমার কাছে বেশী প্রিয়? সে বলল, আল্লাহ যেন আমার চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি মানুষকে দেখতে পারি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন ফিরিশ্‌তা তার চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলেন, তৎক্ষনাৎ আল্লাহ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশ্‌তা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্‌ সম্পদ তোমার কাছে অধিক প্রিয়? সে জবাব দিল ‘ছাগল’। তখন তিনি তাকে একটি গর্ভবতী ছাগী দিলেন। উপরে উল্লেখিত লোকদের পশুগুলো বাচ্চা দিল। ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল। এরপর ঐ ফিরিশ্‌তা তাঁর পূর্ববর্তী আকৃতি প্রকৃতি ধারন করে শ্বেতরোগীর কাছে এসে বললেন, আমি একজন নিঃস্ব ব্যাক্তি। আমার সফরের সকল (সম্বল) শেষ হয়ে গেছে। আজ আমার গন্তব্য স্থানে পৌছার আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই। আমি তোমার কাছে ঐ সত্তার নামে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং কোমল চামড়া এবং সম্পদ দান করেছেন। আমি এর উপর সওয়ার হয়ে আমার গন্তব্যে পৌছাব। তখন লোকটি তাকে বলল, আমার উপর বহু দায় দায়িত্ব রয়েছে। (কাজেই আমার পক্ষে দান করা সম্ভব নয়) তখন ফিরিশ্‌তা তাকে বললেন, সম্ভবত আমি তোমাকে চিনি। তুমি কি এক সময় শ্বেতরোগী ছিলে না? মানুষ তোমাকে ঘৃণা করত। তুমি কি ফকীর ছিলে না? এরপর আল্লাহ তা’আলা তোমাকে (প্রচুর সম্পদ) দান করেছেন। তখন সে বলল, আমি তো এ সম্পদ আমার পূর্বপুরুষ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছি। ফিরিশ্‌তা বললেন, তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে সেরূপ করে দিন, যেমন তুমি ছিলে। তারপর ফিরিশ্‌তা মাথায় টাকওয়ালার কাছে তাঁর সেই বেশভূষা ও আকৃতিতে গেলেন এবং তাকে ঠিক তদ্রূপই বললেন, যেরূপ তিনি শ্বেতী রোগীকে বলেছিলেন। এও তাকে ঠিক অনুরূপ জবাব দিল যেমন জবাব দিয়েছিল শ্বেতীরোগী। তখন ফিরিশ্‌তা বললেন, যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ তোমাকে তেমন অবস্থায় করে দিন, যেমন তুমি ছিলে। শেষে ফিরিশ্‌তা অন্ধ লোকটির কাছে তাঁর আকৃতিতে আসলেন এবং বললেন, আমি একজন নিঃস্ব লোক, মূসা ফির মানুষ ; আমার সফরের সকল সম্বল শেষ হয়ে গেছে। আজ বাড়ি পৌঁছার ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া কোন গতি নেই। তাই আমি তোমার কাছে সেই সত্তার নামে একটি ছাগী প্রার্থনা করছি যিনি তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন আর আমি এ ছাগীটি নিয়ে আমার এ সফরে বাড়ি পৌছতে পারব। সে বলল, বাস্তবিকই আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি ফকীর ছিলাম। আল্লাহ আমাকে ধনী করেছেন। এখন তুমি যা চাও নিয়ে যাও। আল্লাহর কসম। আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি যা কিছু নিবে, তার জন্য আমি তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না। তখন ফিরিশ্‌তা বললেন, তোমার মাল তুমি রেখে দাও। তোমাদের তিন জনকে পরীক্ষা করা হল মাত্র। আল্লাহ তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার সাথী দু’জনের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

 

৩২১৯ ইসমাঈল ইবনু খালীল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের লোকেদের মধ্যে তিনজন লোক ছিল। তারা পথ চলছিল। হঠাৎ তাদের বৃষ্টি পেয়ে গেল। তখন তারা এক গুহায় আশ্রয় নিল। অমনি তাদের গুহার মুখ (একটি পাথর চাপা পড়ে) বন্ধ হয়ে গেল। তাদের একজন অন্যদের বলল, বন্ধুগণ আল্লাহর কসম! এখন সত্য ছাড়া কিছুই তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারবে না। কাজেই, এখন তোমাদের প্রত্যেকের সেই জিনিসের উসিলায় দু’আ করা উচিত, যে ব্যপারে জানারয়েছে যে, এ কাজটিতে সে সত্যতা বহাল রেখেছে। তখন তাদের একজন (এই বলে) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার একজন মযদুর ছিল। সে এক ফারাক১ চাউলের বিনিময়ে আমার কাজ করে দিয়েছিল। পড়ে সে মজুরী না নিয়েই চলে গিয়েছিল। আমি তার এ মজুরী দিয়ে কিছু একটা করতে মনস্থ করলাম এবং কৃষি কাজে লাগালাম। এতে যা উৎপাদন হয়েছে, তার বিনিময়ে আমি একি গাভী কিনলাম। সে মযদুর আমার নিকট এসে তার মজুরী দাবী করল। আমি তাকে বললাম, এ গাভিটির দিকে তাকাও এবং তা হাঁকিয়ে নিয়ে যাও। সে জবাব দিল, আমার তো আপনার কাছে মাত্র এক ‘ফারাক’ চাউলই প্রাপ্য। আমি তাকে বললাম গাভীটি নিয়ে যাও। কেননা (তোমার) সেই এক ‘ফারাক’ দ্বারা যা উৎপাদিত হয়েছে, তারই বিনিময়ে এটি খরীদ করা হয়েছে। তখন সে গাভীটি হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। (হে আল্লাহ) আপনি জানেন যে, তা আমি একমাত্র আপনার ভয়েই করেছি। তাহলে আমাদের (গুহার মুখ) থেকে (এ পাথরটি) সরিয়ে দাও। তখন তাদের কাছ থেকে পাথরটি কিছুটা সরে গেল। তাদের আরেকজন দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার মা-বাপ খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি প্রতি রাতে তাঁদের জন্য আমার বকরীর দুধ নিয়ে তাঁদের কাছে যেতাম। ঘটনাক্রমে এক রাতে তাঁদের কাছে যেতে আমি দেরী করে ফেললাম। তারপর এমন সময় গেলাম, যখন তাঁরা উভয়ে ঘুমিয়ে পরেছেন। এদিকে আমার পরিবার পরিজন ক্ষুধার কারণে চিৎকার করছিল। আমার মাতা-পিতাকে দুধ পান না করান পর্যন্ত ক্ষুধায় কাতর আমার সন্তানদের দুধ পান করাইনি। কেননা, তাঁদেরকে ঘুম থেকে জাগানটি আমি পছন্দ করি নি। অপরদিকে তাঁদেরকে বাদ দিতেও ভাল লাগেনি। কারণ, এ দুধটুকু পান না করালে তাঁরা উভয়ে দুর্বল হয়ে যাবেন। তাই (দুধ হাতে) আমি (সারারাত) ভোর হয়ে যাওয়া পর্যন্ত (তাদের জাগ্রত হবার) অপেক্ষা করছিলাম। আপনি জানেন যে, একাজ আমি করেছি, একমাত্র আপনার ভয়ে, তাই, আমাদের থেকে (পাথরটি) সরিয়ে দিন। তারপর পাথরটি তাদের থেকে আরেকটু সরে গেল। এমনকি তারা আসমান দেখতে পেল। অপর ব্যাক্তি দু’আ করল, হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমার একটি চাচাত বোন ছিল। সবার চেয়ে সে আমার নিকট অধিক প্রিয় ছিল। আমি তার সাথে (মিলনের) বাসনা করেছিলাম। কিন্তু সে একশ দীনার (স্বর্ণ মুদ্রার) প্রদান ব্যতিত ঐ কাজে রাজি হতে চাইল না। আমি স্বর্ণ মুদ্রা অর্জনের চেষ্টা আরম্ভ করলাম এবং তা অর্জনে সমর্থও হলাম। তারপর কথিত মুদ্রাসহ তার নিকটে উপস্থিত হয়ে তাকে তা অর্পণ করলাম। সেও তার দেও আমার ভোগে অর্পণ করলো। আমি যখন তার দুই পায়ের মাঝে বসে পড়লাম। তখন সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, অন্যায় ও অবৈধ ভাবে পবিত্র ও রক্ষিত আবরুকে বিনষ্ট করো না। আমি তৎক্ষনাৎ সরে পড়লাম এবং স্বর্ণ মুদ্রা ছেড়ে আসলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন যে, আমি প্রকৃতই আপনার ভয়ে তা করে ছিলাম। তাই আমাদের রাস্তা প্রশস্ত করে দাও। আল্লাহ (তাদের) সংকট দূরীভূত করলেন। তারা বের হয়ে আসল।

 

৩২২০ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়ারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, একদা একজন মহিলা তার কোলের শিশুকে স্তন্য পান করাচ্ছিল। এমন সময় একজন অশ্বরোহী তাদের নিকট দিয়ে গমন করে। মহিলাটি বলল, হে আল্লাহ! আমার পুত্রকে এই অশ্বরোহীর মতো না বানিয়ে মৃত্যু দান করো না। তখন কোলের শিশুটি বলে উঠল- হে আল্লাহ! আমাকে ঐ অশ্বরোহীর মত করো না, এই বলে পুনরায় সে স্তন্য পানে মনোনিবেশ করল। তারপর একজন মহিলাকে কতিপয় লোক অপমানজনক ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে করতে টেনে টেনে নিয়ে চলছিল। ঐ মহিলাকে দেখে শিশুরু মাতা বলে উঠল- হে আল্লাহ! আমার পুত্রকে ঐ মহিলার মত করো না। শিশুটি বলে উঠল, হে আল্লাহ! আমাকে ঐ মহিলার ন্যায় কর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ অশ্বারোহী ব্যাক্তি কাফির ছিল আর ঐ মহিলাকে লক্ষ্য করে লোকজন বলছিল, তুই ব্যাভিচারিণী, সে বলছিল হাস্‌বি আল্লাহ-আল্লাহ-ই আমার জন্য যথেষ্ট। তারা বলছিল তুই চোর আর সে বলছিল হাস্‌বি আল্লাহ-আল্লাহ-ই আমার জন্য যথেষ্ট।

 

৩২২১ সাঈদ ইবনু তালীদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, একদা একটি কুকুর এক কূপের চারদিকে ঘুরছিল এবং প্রবল পিপাসার কারণে সে মৃত্যুর নিকটে পৌছেছিল। তখন বনী ইসরাঈলের ব্যাভিচারিণীদের একজন কুকুরটির অবস্থা লক্ষ্য করল, এবং তার পায়ের মোজার সাহায্যে পানি সংগ্রহ করে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের প্রতিদানে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

 

৩২২২ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) হুমায়েদ ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মু’আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, হাজ্জ (হজ্জ) পালনের বছর মিম্বরে নববীতে উপবিষ্ট অবস্থায় তাঁর দেহরক্ষীদের নিকট হতে মহিলাদের একগুচ্ছ কেশ নিজ হাতে নিয়ে তিনি বলেন যে, হে মদিনাবাসী! কোথায় তোমাদের আলিম সমাজ? আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ জাতীয় পরচুলা ব্যবহার থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, যখন তাদের মহিলাগণ এ জাতীয় পরচুলা ব্যবহার করতে আরম্ভ করে।

 

৩২২৩ আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে মুহাদ্দাস (ইল্‌হাম প্রেরণাপ্রাপ্ত) ব্যাক্তিবর্গ ছিলেন। আমার উম্মতের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, তবে সে নিশ্চয় উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হবেন।

 

৩২২৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মাঝে এমন এক ব্যাক্তি ছিল, যে নিরানব্বইটি নর হত্যা করেছিল। তারপর (অনুশোচনা করতঃ নাজাতের পথের অনুসন্ধানে বাড়ী থেকে) বের হয়ে একজন পাদরীকে জিজ্ঞাসা করল, আমরা তওবা কবুল হওয়ার আশা আছে কি? পাদরী বলল, না। তখন সে পাদরীকেও হত্যা করল। এরপর পুনরায় সে (লোকদের নিকট) জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। তখন এক ব্যাক্তি তাকে বলল, তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সে রওয়ানা হোল এবং পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমত ও আযাবের ফিরিশ্‌তাগন তার রূহকে নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেন। আল্লাহ সম্মুখের ভূমিকে (যেখানে সে তওবার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল) আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যাক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পশ্চাতে ফেলে আসে স্থানকে (যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল) আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। তারপর ফিরিশ্‌তাদের উভয় দলকে আদেশ দিলেন- তোমরা এখান থেকে উভয় দিকের দূরত্ব পরিমাপ কর। পরিমাপ করা হল, দেখা গেল যে, মৃত লোকটি সম্মুখের দিকে এক বিঘত অধিক অগ্রসরমান। আল্লাহর রহমতে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হল।

 

৩২২৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষে লোকজনের দিকে ঘুরে বসলেন এবং বললেন, একদা এক ব্যাক্তি একটি গরু হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে এটির পিঠে চড়ে বসল এবং ওকে প্রহার করতে লাগল। তখন গরুটি বলল, আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয় নি, আমাদেরকে চাষাবাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ইহা শুনে লোকজন বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ! গরুও কথা বলে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবূ বকর ও উমর ইহা বিশ্বাস করি অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এবং জনৈক রাখাল একদিন তার ছাগল পালের মাঝে অবস্থান করছিল, এমন সময় একটি চিতা বাঘ পেলে ঢুকে একটি ছাগল নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছে ধাওয়া করে ছাগলটি উদ্ধার করল। তখন বাঘটি বলল, তুমি ছাগলটি আমা হতে কেড়ে নিলে বটে তবে ঐদিন কে ছাগল রক্ষা করবে? যেদিন হিংস্র জন্তু ওদের আক্রমন করবে এবং আমি ছাড়া তাদের অন্য কোন রাখাল থাকবে না। লোকেরা বলল, সুবহানাল্লাহ! চিতা বাঘ কথা বলে! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এবং আবূ বকর ও উমর ইহা বিশ্বাস করি অথচ তখন তাঁরা উভয়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

 

৩২২৬ ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে] এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তি হতে একখণ্ড জমি ক্রয় করেছিল। ক্রেতা খরীদকৃত জমিতে একটা স্বর্ণ ভর্তি ঘড়া পেল। ক্রেতা বিক্রেতাকে তা ফেরত নিতে অনুরোধ করে বলল, কারন আমি জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। বিক্রেতা বলল, আমি জমি এবং এতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করে দিয়েছি। তারপর তারা উভয়ই অপর এক ব্যাক্তির নিকট এর মীমাংসা চাইল। তিনি বললেন, তোমাদের কি ছেলে-মেয়ে আছে? একজন বলল, আমার একটি ছেলে আছে। অপর ব্যাক্তি বলল, আমার একটি মেয়ে আছে। মীমাংসাকারী বললেন, তোমার মেয়েকে তার ছেলের সাথে বিবাহ দাও আর প্রাপ্ত স্বর্ণের মধ্যে কিছু তাদের বিবাহে ব্যয় কর এবং অবশিষ্টাংশ তাদেরকে দিয়ে দাও।

 

৩২২৭ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সায়াদ ইবনু আবূ ওয়াক্‌কাস (রাঃ) উসামাহ্‌ ইবনু যায়েদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্লেগ সম্বন্ধে কি শুনেছেন? উসামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্লেগ একটি আযাব। যা বনী ইসরাঈলের এক সম্প্রদায়ের উপর আপতিত হয়েছিল। অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল। তোমরা যখন কোন স্থানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখান যেয়োনা। আর যখন প্লেগ এমন স্থানে দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছো, তখন সে স্থান থেকে পেলানোর উদ্দেশ্যে বের হয়োনা। আবূ নযর (রহঃ) বলেন, পলায়নের উদ্দেশ্যে এলাকা ত্যাগ করো না। তবে অন্য প্রয়োজনে যেতে পার, তাতে বাঁধা নেই।

 

৩২২৮ মূসা ইবনু ইস্‌মাঈল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্লেগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, উত্তরে তিনি বলেলেন, তা একটি আযাব বিশেষ। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন তাদের উপর তা প্রেরন করেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁর মুমিন বান্দাগনের উপর তা (আযাবের সুরতে) রহমত স্বরূপ করে দিয়েছেন। কোন ব্যাক্তি যখন প্লেগাক্রান্ত স্থানে সাওয়াবের আশায় ধৈর্য ধরে অবস্থান করে এবং তার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। তবে সে একজন শহীদের সমান সওয়াব পাবে।

 

৩২২৯ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মাখযূম গোত্রের জনৈক চোর মহিলার ঘটনা কুরাইশের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুললো। এ অবস্থায় তারা (পরস্পর) বলাবলি করতে লাগল এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে কে আলাপ আলোচনা (সুপারিশ) করতে পারে? তারা বলল, একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে -এর প্রিয়তম ব্যাক্তি ওসামা ইবনু যায়িদ (রাঃ) এ জটিল ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীর খেদমতে তাঁকে পাঠান হল তিনি এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে) ক্ষমা করেও দেয়ার সুপারিশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘনকারিণীর সাজা (হাত কাটা) মাওকুফের সুপারিশ করছ? তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুত্‌বায় বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অপরদিকে যখন কোন সহায়হীন দরিদ্র সাধারন লোক চুরি করত, তখন তার উপর হদ্‌ (হাতকাটা দণ্ডবিধি) প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ -এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তবে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে ফেলতাম।

 

৩২৩০ আদম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক ব্যাক্তিকে কুরআনের একটি আয়াত (এমনভাবে) পড়তে শুনলাম যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমার শ্রুত তিলাওয়াতের বিপরীত। আমি তাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি বললাম তখন তাঁর চেহারায় অসন্তোষের ভাব লক্ষ্য করলাম। তিনি বললেন, তোমরা উভয়ই ভাল ও সুন্দর পড়েছ। তবে তোমার ইখ্‌তিলাফ (মতবিরোধ) করো না। তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ইখ্‌তিলাফ ও মতবিরোধের কারণেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

 

৩২৩১ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যেন এখনো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি যখন তিনি একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন যে, তাঁর স্বজাতিরা তাঁকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে রক্ত মুছে ফেলছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তাঁরা অজ্ঞ।

 

৩২৩২ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের পূর্ববর্তী যুগে এক ব্যাক্তি, আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল তখন সে তার ছেলেদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করল, আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা উত্তর দিল, আপনি আমাদের উত্তম পিতা ছিলেন। সে বলল, আমি জীবনে কখনও কোন নেক আমল করতে পারিনি। আমি যখন মারা যাব তখন তোমরা আমার লাশকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে রেখে দিও এবং প্রচণ্ড ঝড়ের দিনে ঐ ভস্ম বাতাসে উড়িয়ে দিও। সে মারা গেল। ছেলেরা ওসিয়াত অনুযায়ী কাজ করল। আল্লাহ তা’আলা তার ভস্ম একত্রিত (পুনঃজীবিত) করে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন অদ্ভুত ওসিয়াত করতে কে তোমাকে উদ্ধুদ্ধ করল? সে জবাব দিল, হে আল্লাহ! তোমার শাস্তির ভয়। ফলে আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে নিল। মু’আয (রহঃ) আবূ সা’য়ীদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।

 

৩২৩৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, এক ব্যাক্তির যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল এবং সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেল। তখন সে তার পরিবার পরিজনকে ওসিয়াত করল, যখন আমি মরে যাব তখন তোমরা আমার জন্য অনেক লাকড়ি জমা করে (তার ভিতরে আমাকে রেখে) আগুন জ্বালিয়ে দিও। আগুন যখন আমার গোশত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হাড় পর্যন্ত পৌছে যাবে তখন (অদগ্ধ) হাড়গুলি পিষে ছাই করে নিও। তারপর সেই ছাই গরমের দিন কিংবা প্রচণ্ড বাতাসের দিনে সাগরে ভাসিয়ে দিও। (তারা তাই করল) আল্লাহ তা’আলা (তার ভস্মীভূত দেহ একত্রিত করে) জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কেন করলে? সে বলল, আপনার ভয়ে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। উকবা (রহঃ) বলেন, আর আমিও তাঁকে [হুযায়ফা (রাঃ)-কে] বলতে শুনেছি। মূসা (রহঃ) আবদুল মালিক (রহঃ) থেকে বরনিত, তিনি বলেন, ( )অর্থাৎ প্রচণ্ড বাতাসের দিনে।

 

৩২৩৪ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পূর্বযূগে কোন এক ব্যাক্তি ছিল, যে মানুষকে ঋণ প্রদান করত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাবীর নিকট টাকা আদায় করতে যাও, তখন তাকে মাফ করে দাও। হয়ত আল্লাহ তা’আলা এ কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (মৃত্যুর পর) যখন সে আল্লাহ তা’আলার সাক্ষাত লাভ করল, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।

 

৩২৩৫ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পূর্বযূগে এক ব্যাক্তি তার নফসের উপর অনেক যুলুম করেছিল। যখন তার মৃত্যুকাল ঘনিয়ে এলো, সে তার পুত্রদেরকে বলল, মৃত্যুর পর আমার দেহ হাড় মাংসসহ পুড়িয়ে দিয়ে ভস্ম করে নিও এবং (ভস্ম) প্রবল বাতাসে উড়িয়ে দিও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ আমাকে ধরে ফেলেন, তবে তিনি আমাকে এমন কঠোরতম শাস্তি দেবেন যা অন্য কাউকেও দেননি। যখন তার মৃত্যু হল, তার সাথে সেভাবেই করা হল। অতঃপর আল্লাহ যমিনকে আদেশ করলেন, তোমার মাঝে ঐ ব্যাক্তির যা আছে একত্রিত করে দাও। (যমিন তৎক্ষণাৎ তা করে দিল) এ ব্যাক্তি তখনই (আল্লাহ সম্মুখে) দাঁড়িয়ে গেল। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিসে তোমাকে এ কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করল? সে বলল, হে প্রতিপালক তোমার ভয়ে, অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হল। অন্য রাবী ( )স্থলে ( )বলেছেন।

 

৩২৩৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলা ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে দানা-পানি কিছুই দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে নিজ খুশিমত যমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।

 

৩২৩৭ আহ্‌মাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ মাসউদ উকবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আম্বিয়া-এ-কিরামের সর্বসম্মত উক্তি সমূহ যা মানব জাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হল, “যখন তোমার লজ্জা-শরম না থাকে, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। ”

 

৩২৩৮ আদম (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথমযুগের আম্বিয়া-এ-কিরামের সর্বসম্মত উক্তি সমূহ যা মানব জাতি লাভ করেছে, তন্মধ্যে একটি হল, “যখন তোমার লজ্জা-শরম না থাকে, তখন তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। ”

 

৩২৩৯ বিশ্‌র ইবনু মুহাম্মদ (রাঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যাক্তি গর্ব ও অহংকারের সহিত লুঙ্গী টাখ্‌নোর নিচে ঝুলিয়ে পথ চলছিল। এমতাবস্থায় তাকে যমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হল এবং কিয়ামত পর্যন্ত সে এমনি অবস্থায় নীচের দিকেই যেতে থাকবে। আবদুর রহমান ইবনু খালিদ (রাঃ) ইমাম যুহরী (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় ইউনুস (রাঃ)-এর অনুসরন করেছেন।

 

৩২৪০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন সর্বশেষ হলেও কিয়ামত দিবসে আমরা অগ্রগামী। কিন্তু, অন্যান্য উম্মতগণকে কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আর আমাদিগকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারপর এ (ইবাদতের) যে সম্পর্কে তারা মতবিরোধ করছে। তা ইয়াহূদীদের মনোনীত শনিবার, খৃষ্টানদের মনোনীত রবিবার। প্রত্যেক মুসলমানদের উপর সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন (অর্থাৎ শুক্রবার) গোসল করা কর্তব্য।

 

৩২৪১ আদম (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন মু’আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) মদিনায় সর্বশেষ আগমন করেন, তখন তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা প্রদানকালে এক গুচ্ছ পরচুলা বের করে বলেন, ইয়াহূদীগণ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যবহার করে বলে আমার ধারনা ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কর্মকে মিথ্যা প্রতারনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ পরচুলা। গুন্‌দর (রহঃ) শু’বা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আদম (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩২৪২ খালিদ ইবনু ইয়াযিদ কাহিলী (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়াতে বর্ণিত ( )অর্থ বড় গোত্র এবং ( )অর্থ ছোট গোত্র।

 

৩২৪৩ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান কে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে সর্বাধিক মুত্তাকী, সে-ই অধিক সম্মানিত। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ ধরনের কথা জিজ্ঞাসা করিনি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

 

৩২৪৪ কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) কুলায়েবা ইবনু ওয়ায়েল (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অভিভাবকত্বে পেলিতা আবূ সালমার কন্যা যায়নাবকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বলুন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি মুযার গোত্রের ছিলেন? তিনি বললেন, বনু নযর ইবনু কিনানা উদ্ভূত গোত্র মুযার ছাড়া আর কোন্‌ গোত্র থেকে হবেন? এবং মুযার গোত্র নাযার ইবনু কিনানা গোত্রের একটি শাখা ছিল।

 

৩২৪৫ মূসা (রহঃ) কুলায়বা বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অভিভাবকত্বে পেলিত কন্যা বলেনঃ আর আমার ধারনা তিনি হলেন যায়নাব। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কদুর বাওশ, সবুজ মাটির পাত্র মুকাইয়ার ও মুযাফ্‌ফাত (আলকাতরা লাগানো পাত্র বিশেষ) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। কুলায়ব বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বলেন ত দেখি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন গোত্রের ছিলেন? তিনি কি মুযার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন? তিনি জবাব দিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযার গোত্র ছাড়া আর কোন গোত্রের হবেন? আর মুযার নাযর ইবনু কিনানার বংশধর ছিল।

 

৩২৪৬ ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মানুষকে খনির ন্যায় পাবে। জাহিলি যুগের উত্তম ব্যাক্তিগন ইসলাম গ্রহনের পরও তারা উত্তম। যখন তারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও নেতৃত্বের ব্যপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যাক্তিকে পাবে যে এই ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচাইতে অধিক অনাসক্ত। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ দু’মুখী ব্যাক্তি যে একদলের সাথে একভাবে কথা বলে অপর দলের সাথে অন্য ভাবে কথা বলে।

 

৩২৪৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশের অনুগত থাকবে। মুসলমানগণ তাদের মুসলমানদের এবং কাফেরগণ তাদের কাফেরদের অনুগত। আর মানব সমাজ খনির ন্যয় জাহিলী যুগের উত্তম ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহনের পরও উত্তম যদি তারা দ্বীনী জ্ঞানার্জন করে। তোমরা নেতৃত্বে ও শাসনের ব্যপারে ঐ ব্যাক্তিকেই সর্বোত্তম পাবে যে এর প্রতি অনাসক্ত, যে পর্যন্ত না সে তা গ্রহন করে।

 

৩২৪৮ মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ( )এ আয়াতের প্রসঙ্গে রাবী তাউস (রহঃ) বলেন যে, সায়িদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, কুরবা শব্দ দ্বারা মুহাম্মদ -এর নিকট আত্মীয়কে বুঝান হয়েছে। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, কুরাইশের এমন কোন শাখা-গোত্র নেই যাঁদের সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আত্মীয়তা ছিল না। আয়াতখানা তখনই নাযিল হয়। অর্থাৎ তোমরা আমার ও তোমাদের মধ্যকার আত্মীয়তার প্রতি দৃষ্টি রাখ।

 

৩২৪৯ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এই পূর্বদিক হতে ফিত্‌না-ফাসা’দর উৎপত্তি হবে। নির্মমতা ও হৃদয়ের কঠোরতা উট ও গরুর লেজের নিকট। পশ্‌মী তাঁবুর অধিবাসীরা রাবী’আ ও মুযার গোত্রের যারা উট ও গরুরর পিছনে চিৎকার করে (হাঁকায়), তাদের মধ্যেই রয়েছে নির্মমতা ও কঠোরতা।

 

৩২৫০ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি যে, গর্ব-অহংকার পশম নির্মিত তাঁবুতে বসবাসকারী যারা (উট-গরু হাঁকাতে চিৎকার করে) তাদের মধ্যে। আর শান্তভাবে বকরী পালকদের মধ্যে রয়েছে। ঈমানের দৃষ্টতা ও হিকমাত ইয়ামানবাসীদের মধ্যে রয়েছে। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইয়ামান নামকরণ করা হয়েছে। যেহেতু ইহা কা’বা ঘরেরে ডানদিকে (দক্ষিন) অবস্থিত এবং শ্যাম (সিরিয়া) কা’বা ঘরের বাম (উত্তর) দিকে অবস্থিত বিধায় তার শ্যাম নামকরন করা হয়েছে। ( )অর্থ বামদিকে, বাম হাতকে ( )এবং বামদিককে ( )বলা হয়েছে।

 

৩২৫১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু জুবায়ের ইবনু মুত্‌’ঈম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু’আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সহিত তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌছলো যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) বর্ণনা করেন, অচিরেই কাহতান বংশীয় একজন বাদশাহর আবির্ভাব ঘটবে। ইহা শুনে মু’আবীয়া (রাঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে খুত্‌বা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছ যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের থেকে সাবধান থাক এবং এরূপ কাল্পনিক ধারনা হতে সতর্ক থাক যা-এর পোষণকারীকে বিপথগামী করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি যে, যতদিন তারা দ্বীন কায়েমে নিয়োজিত থাকবে ততদিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে-ই তাদের সহিত শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে অধঃমুখে নিক্ষেপ করবেন (অর্থাৎ লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন)।

 

৩২৫২ আবূল ওলীদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ বিষয় (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে ন্যাস্ত থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে।

 

৩২৫৩ আবূ নু’য়াঈম ও ইয়া’কুব ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, আশজা’ ও গিফার গোত্রগুলো আমার সাহায্যকারী। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ব্যতীত তাঁদের সাহায্যকারী আর কেউ নেই।

 

৩২৫৪ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুত’ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ‘উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে হাজির হলাম। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি মুত্তালিবের সন্তানগণকে দান করলেন এবং আমাদেরকে বাদ দিলেন। অথচ তারা ও আমরা আপনার বংশগতভাবে সমপর্যায়ের। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিব এক ও অভিন্ন। লায়স ‘উরওয়া ইবনু জুবায়র থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বনূ যুহরার কতিপয় লোকের সাথে আয়িশা (রাঃ)-এর খেদমতে হাজির হলেন। আয়িশা (রাঃ) তাদের প্রতি অত্যন্ত নমর ও দয়ার্দ্র ছিলেন। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে তাঁদের আত্মীয়তা ছিল।

 

৩২৫৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘উর্‌ওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)-এর পর আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট সকল লোকদের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় পাত্র ছিলেন এবং তিনি সকল লোকদের মধ্যে আয়িশা (রাঃ)-এর সবচেয়ে বেশী সদাচারী ছিলেন। আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক স্বরূপ যা কিছু আস্‌ত তা জমা না রেখে সা’দকা করে দিতেন। এতে আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, অধিক দান খয়রাত করা থেকে তাকে বারণ করা উচিত। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমাকে দান করা থেকে বারণ করা হবে? আমি যদি তার সাথে কথা বলি, তাহলে আমাকে কাফ্‌ফারা দিতে হবে এবং আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাঁর নিকট কুরাইশের কতিপয় লোক, বিশেষ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাতৃবংশের কিছু লোক দ্বারা সুপারিশ করালেন। তবুও তিনি তাঁর সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাতৃবংশ বনী যুহরার কতিপয় বিশিষ্ট লোক যাদের মধ্যে আবদুর রহমান ইবনু আস্‌ওয়াদ এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) ছিলেন তার বললেন, আমরা যখন আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করব তখন তুমি পর্দার ভিতরে ঢুকে পড়বে। তিনি তাই করলেন। পরে ইবনু যুবায়র (রাঃ) কাফ্‌ফারা আদায়ের জন্য তার কাছে দশটি ক্রীতদাস পাঠিয়ে দিলেন। আয়িশা (রাঃ) তাদের সকলকে আযাদ করে দিলেন। এরপর তিনি বরাবর আযাদ করতে থাকলেন। এমনকি তার সংখ্যা চল্লিশে পৌছে। আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমি যখন কোন কাজ করার শপথ করি, তখন আমার সংকল্প থাকে যে আমি যেন সে কাজটা করে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাই এবং তিনি আরো বলেন, আমি যখন কোন কার্য সম্পাদনের শপথ করি উহা যথাযথ পূরণের ইচ্ছা রাখি।

 

৩২৫৬ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উসমান (রাঃ), যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), সা’ঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনু হারিস (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তাঁর [হাফসা (রাঃ)-এর নিকট] সংরক্ষিত কুরআনকে সমবেত ভাবে লিপিবদ্ধ করার কাজ আরম্ভ করলেন। উসমান (রাঃ) কুরাইশ বংশীয় তিন জনকে বললেন, যদি যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং তোমাদের মধ্যে কোন শব্দে (উচ্চারন ও লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে) মতোবিরোধ দেখা দেয় তবে কুরাইশের ভাষায় তা লিপিবদ্ধ করো। যেহেতু কুরআন শরীফ তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তা-ই করলেন।

 

৩২৫৭ মূসা’দ্দাদ (রাঃ) সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আসলাম গোত্রের কিছু সংখ্যক লোক বাজারের নিকটে প্রতিযোগিতামূলক তীর নিক্ষেপের অনুশীলন করছিলেন। এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং তাদেরকে দেখে বললেন, হে ইসমাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর বংশধর, তোমরা তীর নিক্ষেপ করো। কেননা তোমাদের পিতাও তীর নিক্ষেপে পারদর্শী ছিলেন এবং আমি তোমাদের অমুক দলের পক্ষে রয়েছি। তখন একটি পক্ষ তাদের হাত গুটিয়ে নিল। বর্ণনাকারী বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন, তোমাদের কি হল? তারা বলল, আপনি অমুক পক্ষে থাকলে আমার কি করে তীর নিক্ষেপ করতে পারি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ করো। আমি তোমাদের উভয় দলের সঙ্গে রয়েছি।

 

৩২৫৮ আবূ মা’মার (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, কোন ব্যাক্তি যদি নিজ পিতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কাকে তার পিতা বলে দাবী করে তবে সে আল্লাহর (নিয়ামতের) কুফরী করল এবং যে ব্যাক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে নসবী সম্পৃক্ততার দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোন নসবী সম্পর্ক নেই, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়।

 

৩২৫৯ আলী ইবনু আইয়াশ (রহঃ) ওয়াসিলা ইবনু আসকা (রাঃ) বলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিঃসন্দেহে ইহা বড় মিথ্যা যে, কোন ব্যাক্তি এমন লোককে পিতা বলে দাবী করা যে তার পিতা নয় এবং বাস্তবে যা দেখে নাই তা দেখার দাবি করা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা।

 

৩২৬০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল! (আমাদের) এ গোত্রটি রাবী’আ বংশের। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মুযার গোত্রের কাফেরগণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা আশহুরে হারাম (সম্মানিত চার মাস) ব্যতীত অন্য সময় আপনার খেদমতে হাজির হতে পারি না। খুবই ভাল হত যদি আপনি আমাদিগকে এমন কিছু নির্দেশ দিয়ে দিতেন যা আপনার কাছ থেকে গ্রহন করে আমাদের পিছনে অবস্থিত লোকদেরকে পৌছে দিতাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ এবং চারটি কাজের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করছি। (এক) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, (দুই) সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, (তিন) যাকাত আদায় করা, (চার) গনীমতের যে মাল তোমরা লাভ করো তার পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য বায়তুল মালে দান করা। আর আমি তোমাদেরকে দুব্বা (কদু পাত্র), হান্তম (সবুজ রং এর ঘড়া), নাকীর (খেজুর বৃক্ষের মূল খোদাই করে তৈরি পাত্র), মাযাফ্‌ফাত (আলকাতরা লাগানো মাটির পাত্র, এই চারটি পাত্রের) ব্যবহার নিষেধ করছি।

 

৩২৬১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট অবস্থায় পূর্ব দিকে ইশারা করে বলতে শুনেছি, সাবধান! ফিত্‌না ফাসা’দর উৎপত্তি ঐদিক থেকেই হবে এবং ঐদিক থেকেই শয়তানের শিং-এর উদয় হবে।

 

৩২৬২ আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কুরাইশ, আনসার, জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, গিফার এবং আশজা’ গোত্রগুলো আমার আপনজন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ব্যতীত অন্য কেহ তাদের আপনজন নেই।

 

৩২৬৩ মুহাম্মাদ ইবনু গুরায়র যুহ্‌রী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর) (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন আর ‘উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর নাফরমানী করেছে।

 

৩২৬৪ মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাহাদিগকে নিরাপদে রাখুন। গিফার গোত্র, আল্লাহ তাহাদেরকে ক্ষমা করুন।

 

৩২৬৫ কাবিসা ও মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ বাক্‌রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবা কিরামকে লক্ষ্য করে) বলেন, বলত জুহায়না, মুযায়না, আসলাম ও গিফার গোত্র যদি আল্লাহর নিকট বানূ তামীম, বানূ আসা’দ, বানূ গাতফান ও বানূ ‘আমের হতে উত্তম বিবেচিত হয় তবে কেমন হবে? তখন জনৈক সাহাবী বললেন, তবে তারা (শেষোক্ত গোত্রগুলো) ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্বোক্ত গোত্রগুলো বানূ তামীম, বানূ আসা’দ, বানূ আবদুল্লাহ ইবনু গাতফান এবং বানূ ‘আমের ইবনু সা’সা’ থেকে উত্তম।

 

৩২৬৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ বাকরা তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, আকরা’ ইবনু হাবিস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ‘আরয করলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়’আত করেছে এবং (রাবী বলেন) আমার ধারনা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইবনু আবূ ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি কি জানো, আসলাম, গিফার ও মুযায়না গোত্রত্রয়, (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি জুহায়না গোত্রের কোথাও উল্লেখ করেছেন যে বনূ তামীম, বনূ ‘আমির, আসা’দ এবং গাত্‌ফান (গোত্রগুলো) যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হয়েছে, তাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রান, পূর্বোক্ত গুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই উত্তম।

 

৩২৬৭ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযাইনা ও জুহানা গোত্রের কিয়দাংশ অথবা জুহানার কিয়দাংশ কিংবা মুযায়নার কিয়দাংশ আল্লাহর নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসা’দ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাত্‌ফান গোত্র থেকে উত্তম বিবেচিত হবে।

 

৩২৬৮ যায়েদ ইবনু আখযাম (রহঃ) আবূ জামরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাদিগকে বললেন, আমি কি তোমাদিগকে আবূ যার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহনের ঘটনা সরববিস্তার বর্ণনা করব? আমার বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, আমি গিফার গোত্রের একজন মানুষ। আমরা জানতে পেলাম মক্কায় এক ব্যাক্তি আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দাবী করেছেন। আমি আমার ভাই (উনাইস)-কে বললাম, তুমি মক্কায় গিয়ে ঐ ব্যাক্তির সহিত সাক্ষাত ও আলোচনা করে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে এস। সে রওয়ানা হয়ে গেল এবং মক্কার ঐ লোকটির সহিত সাক্ষাত ও আলাপ আলোচনা করে ফিরে আসলে আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কি খবর নিয়ে এলে? সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি একজন মহান ব্যাক্তিকে দেখেছি যিনি সৎকাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন। আমি বললাম, তোমার সংবাদে আমি সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। তারপর আমি একটি ছড়ি ও এক পাত্র খাবার নিয়ে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কায় পৌছে আমার অবস্থা দাঁড়াল এই- তিনি আমার পরিচিত নন, কারো নিকট জিজ্ঞাসা করাও আমি সমীচীন মনে করি না। তাই আমি যমযমের পানি পান করে মসজিদে অবস্থান করতে থাকলাম। একদিন সন্ধ্যা বেলায় আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমন কালে আমার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, মনে হয় লোকটি বিদেশী। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। রাস্তায় তিনি আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেন নি। আর আমিও ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন কিছু বলিনি। তাঁর বাড়িতে রাত্রি যাপন করে ভোর বেলায় পুনরায় মসজিদে গমন করলাম যাতে ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। কিন্তু ঐখানে এমন কোন ব্যাক্তি ছিল না যে ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু বলবে। ঐ দিনও আলী (রাঃ) আমার নিকট দিয়ে গমনকালে বললেন, এখনো কি লোকটি তার গন্তব্যস্থল ঠিক করতে পারেনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার সাথে চল। পথিমধ্যে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল, তোমার বিষয় কি? কেন এ শহরে আগমন? আমি বললাম, যদি আপনি আমার বিষয়টি গোপন রাখবেন বলে আশ্বাস দেন তাহলে তা আপনাকে বলতে পারি। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি গোপনীয়তা রক্ষা করব। আমি বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, এখানে এমন এক ব্যাক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি নিজেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দাবী করেন। আমি তাঁর সাথে সবিস্তর আলাপ আলোচনার করার জন্য আমার ভাইকে পাঠিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ফেরত গিয়ে আমাকে সন্তোষজনক কোন কিছু বলতে পারেনি। তাই নিজে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আগমন করেছি। আলী (রাঃ) বললেন, তুমি সঠিক পথপ্রদর্শক পেয়েছ। আমি এখনই তাঁর খেদমতে উপস্থিত হওয়ার জন্য রওয়ানা হয়েছি। তুমি আমার অনুসরন করো এবং আমি যে গৃহে প্রবেশ করি তুমিও সে গৃহে প্রবেশ করবে। রাস্তায় যদি তোমার বিপদজনক কোন ব্যাক্তি দেখতে পাই তাহলে আমি জুতা ঠিক করার ভান করে দেয়ালের প্বার্শে সরে দাঁড়াব, যেন আমি জুতা ঠিক করতেছি। তুমি কিন্তু চলতেই থাকবে। (যেন কেউ বুঝতে না পারে তুমি আমার সঙ্গী)। আলী (রাঃ) পথ চলতে শুরু করলেন। আমিও তাঁর অনুসরন করে চলতে লাগলাম। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট প্রবেশ করলে, আমিও তাঁর সাথে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল , আমার নিকট ইসলাম পেশ করুন। তিনি পেশ করলেন। আর আমি মুসলমান হয়ে গেলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ যার। আপাততঃ তোমার ইসলাম গ্রহন গোপন রেখে তোমার দেশে চলে যাও। যখন আমাদের বিজয় সংবাদ জানতে পারবে তখন এসো। আমি বললাম, যে আল্লাহ আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি কাফির মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে তৌহিদের বাণী ঘোষণা করব। [ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ] এই কথা বলে তিনি মসজিদে হারামে গমন করলেন, কুরাইশের লোকজনও সেথায় উপস্থিত ছিল। তিনি বললেন, হে কুরাইশগণ! আমি নিশ্চিত ভাবে সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল)। ইহা শুনে কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। তারা আমার দিকে এগিয়ে আসল এবং আমাকে নির্মমভাবে প্রহার করতে লাগল ; যেন আমি মরে যাই। তখন আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট পৌছে আমাকে ঘিরে রাখলেন (প্রহার বন্ধ হল)। তারপর তিনি কুরাইশকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তোমরা গিফার বংশের একজন লোককে হত্যা করতে উদ্যোগী হয়েছ অথচ তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের কাফেলাকে গিফার গোত্রের সন্নিকট দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। (ইহা কি তোমাদের মনে নেই?) একথা শুনে তারা সরে পড়ল। পরদিন ভোরবেলা কাবাগৃহে উপস্থিত হয়ে গেল দিনের মতই আমি আমার ইসলাম গ্রহনের পূর্ণ ঘোষণা দিলাম। কুরাইশগণ বলে উঠল, ধর এই ধর্মত্যাগী লোকটিকে। পূর্ব দিনের মত আজও তারা নির্মমভাবে আমাকে মারধর করলো। এই দিনও আব্বাস (রাঃ) এসে আমাকে রক্ষা করলেন এবং কুরাইশদিগকে লক্ষ্য করে ঐ দিনের মতো বক্তব্য রাখলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ইহাই ছিল আবূ যার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহনের প্রথম ঘটনা।

 

৩২৬৯ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত কাহ্‌তান গোত্র থেকে এমন এক ব্যাক্তির১ আবির্ভাব না হবে যে মানবজাতিকে তাঁর লাঠি দ্বারা (শক্তিদ্বারা সুশৃংখলভাবে) পরিচালিত করবে। ১ ইয়ামান বাসীদের পূর্বপুরুষ, মাহদী আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পরে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।

 

৩২৭০ মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিচালনায় যুদ্ধে শামিল ছিলাম। এ যুদ্ধে বহু সংখ্যক মুহাজির সাহাবী অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুহাজিরদের মধ্যে একজন কৌতুক পুরুষ ছিলেন। তিনি কৌতুকচ্ছলে একজন আনসারীকে আঘাত করলেন। তাতে আনসারী সাহাবী ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং উভয় গোত্রের সহযোগিতার জন্য নিজ নিজ লোকদের ডাকলেন। আনসারী সাহাবী বললেন, হে আনসারীগণ। মুহাজির সাহাবী বললেন, হে মুহাজিরগণ সাহায্যে এগিয়ে আস। নব এ শুনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, জাহালী যুগের হাঁকডাক কেন? অতঃপর বললেন, তাদের ব্যপার কি? তাঁকে ঘটনা জানোান হল। মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর কোমরে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ জাতীয় হাঁকডাক ত্যাগ কর, এ অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। (মুনাফিক নেতা) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল বলল, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ডাক দিয়েছে? আমরা যদি মদিনায় নিরাপদে ফিরে যাই তবে সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত ব্যাক্তিগণ অবশ্যই বাহির করে দিবে নিকৃষ্ট ও অপদস্ত ব্যাক্তিগণকে (মুহাজিরদিগকে)। এতে ‘উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল , আপনি কি এই খবীসকে হত্যা করার অনুমতি দিবেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এরূপ করলে) লোকজন বলাবলি করবে, মুহাম্মদ তাঁর সঙ্গীদেরকে হত্যা করে থাকে।

 

৩২৭১ সাবিত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ ব্যাক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় যে, (বিপদ কালিন বিলাপরত অবস্থায়) গন্ডদেশে চপেটাঘাত করে, পরিধেয় বস্ত্র ছিন্ন ভিন্ন করতে থাকে এবং জাহিলিয়াতের যুগের ন্যয় হৈ চৈ করে।

 

৩২৭২ ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমর ইবনু লুহাই ইবনু কাম’আ ইবনু খিনদাফ খুযা’আ গোত্রের পূর্বপুরুষ ছিল।

 

৩২৭৩ আবূল ইয়ামান (রহঃ) যুহরী (রহঃ) বলেন। আমি সা’ঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, বাহীরা বলে দেবতার নামে উৎসর্গীকৃত উটনি যার দুগ্ধ আট্‌কিয়ে রাখা হত এবং কোন লোক তার দুধ দোহন করত না। সাইবা বলা হয় ঐ জন্তুকে যাকে তারা ছেড়ে দিত দেবতার নামে। ইহাকে বোঝা বহন ইত্যাদি কোন কাজ কর্মে ব্যবহার করা হয় না। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমর ইবনু ‘আমির খুয’আইকে তার বেরিয়ে আসা নাড়ী-ভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যাক্তি যে (দেব-দেবীদের নামে) সাইবা উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।

 

৩২৭৪ আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি যদি আরবদের অজ্ঞতা ও মূর্খতা সম্বন্ধে জ্ঞাত হতে আগ্রহী হও, তবে সূরা আন্‌’আমের ১৪০ আয়াতের অংশটুকু মনোযোগের সাথে পাঠ করো। (ইরশাদ হয়েছে) “নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার কারণে নিজ সন্তানদিগকে (দারিদ্রের ভয়ে) হত্যা করেছে। এবং আল্লাহর দেওয়া হালাল বস্তু সমূহকে হারাম করেছে এবং আল্লাহর প্রতি জঘন্য মিথ্যা আরোপ করেছে, নিশ্চয়ই তারা পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী হয়েছে। তারা সুপথগামী হতে পারে নি।

 

৩২৭৫ উমর ইবনু হাফ্‌স (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত “তোমার নিকট আত্মীয়গণকে সতর্ক কর” অবতীর্ন হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ফিহ্‌র, হে বনী ‘আদি, বিভিন্ন কুরাইশ শাখা গোত্রগুলিকে নাম ধরে ধরে ইসলামের দিকে আহ্বান করতে লাগলেন। এবং কাবীসা (রহঃ) — ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত “তোমার নিকট আত্মীয়গণকে সতর্ক কর” অবতীর্ন হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের গোত্র গোত্র করে আহ্বান করতে লাগলেন।

 

৩২৭৬ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, (উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আব্‌দে মানাফের বংশধরগণ, তোমরা (ঈমান ও নেক আমলের দ্বারা) তোমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা কর। হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরগণ, তোমরা (ঈমান ও আমলের দ্বারা) তোমাদের নিজেদেরকে হিফাযত করো। হে যুবায়রের মাতা – রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র ফুফু, হে মুহাম্মদ -এর কন্যা ফাতিমা। তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে (ঈমান ও আমলের দ্বারা) রক্ষা কর। তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচানোর সামান্যতম ক্ষমতাও আমার নাই আর আমার ধন-সম্পদ থেকে তোমরা যা ইচ্ছা তা চেয়ে নিয়ে যেতে পার (দেওয়ার ইখতিয়ার আমার আছে)।

 

৩২৭৭ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বললেন, তোমাদের মধ্যে (এই মজলিশে) অপর গোত্রের কেউ কি আছে? তারা বললেন, না, অন্য কেউ নেই। তবে আমাদের একজন ভাগিনা আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন কোন গোষ্ঠীর ভাগ্নে সে গোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়।

 

৩২৭৮ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে (অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ তারিখে) আবূ বকর (রাঃ) আমার গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর নিকট দু’টি বালিকা ছিল। তারা দফ (একদিকে খলা ছোট বাদ্যযন্ত্র) বাজিয়ে এবং নেচে নেচে (যুদ্ধের বিজয় গাথা) গান করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে ছিলেন। আবূ বক্‌র (রাঃ) এদেরকে ধমকালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মুখ থেকে চাঁদর সরিয়ে বললেন, হে আবূ বক্‌র এদেরকে গাইতে দাও। কেননা, আজ ঈদের দিন ও মিনার দিনগুলির অন্তর্ভুক্ত। আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি (তাঁর পিছনে থেকে) হাবশীদের খেলা উপভগ করছিলাম। মস্‌জিদের নিকটে তারা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। এমন সময় ‘উমর (রাঃ) এসে তাদেরকে ধমকালেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ‘উমর! তাদেরকে বানূ আরফিদাকে নিরাপদে ছেড়ে দাও।

 

৩২৭৯ উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসসান (রাঃ) কবিতার ছন্দে মুশরিকদের নিন্দা করতে অনুমতি চাইলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার বংশকে কিভাবে তুমি পৃথক করবে? হাসসান (রাঃ)-বললেন, আমি তাদের মধ্য থেকে এমনভাবে আপনাকে আলাদা করে নিব যেমনভাবে আটার খামির থেকে চুলকে পৃথক করে নেয়া হয়। ‘উরওয়া (রহঃ) বলেন, আমি হাসসান (রাঃ)-কে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সম্মুখে তিরস্কার করতে উদ্যত হলেন, তিনি আমাকে বললেন, তাকে গালি দিও না। সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ থেকে কবিতার মাধ্যমে শত্রুদের বাক্যাঘাত প্রতিহত করত। আবূল হায়ছম বলেন, ( )(বলা হয়) যখন পশু তার ক্ষুর দ্বারা আঘাত করে আর ( )(বলা হয়) যখন দূর থেকে আঘাত করা হয়।

 

৩২৮০ ইব্‌রাহীম ইবনুল মুন্‌যির (রহঃ) জুবায়ের ইবনু মুত’ঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার পাঁচটি (প্রসিদ্ধ) নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মদ, আমি আহ্‌মদ, আমি আল-মাহি (নিশ্চিহ্নকারী) আমার দ্বারা আল্লাহ কুফ্‌র ও শির্‌ককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি আল-হাশির (সমবেতকারী কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসে) আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হবে। আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষ আগমনকারী আমার পর অন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র আগমন হবে না)।

 

৩২৮১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আশ্চর্যান্বিত হওনা? (তোমরা কি দেখছনা) আমার প্রতি আরোপিত কুরাইশদের নিন্দা ও অভিশাপকে আল্লাহ তা’আলা কি চমৎকারভাবে দূরীভূত করছেন? তারা আমাকে নিন্দিত মনে করে গালি দিচ্ছে, অভিশাপ করছে অথচ আমি মুহাম্মদ-চির প্রশংশিত। (কাজেই তাদের গাল-মন্দ আমার উপর পতিত হয় না)।

 

৩২৮২ মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমার ও অন্যান্য নাবী গণের অবস্থা এমন, যেন কেউ একটি ভবন নির্মাণ করলো আর একটি স্থান শূন্য রেখে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে গৃহটিকে সুন্দর সুসজ্জিত করে নিল। জনগণ (উহার সৌন্দর্য দেখে) মুগ্ধ হল এবং তারা বলাবলি করতে লাগল, যদি একটি ইটের স্থানটুকু খালি রাখা না হত (তবে ভবনটি কতইনা সুন্দর হত! )

 

৩২৮৩ কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের অবস্থা এরূপ, এক ব্যাক্তি যেন একটি ভবন নির্মাণ করল; ইহাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক কোনায় একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন ইহার চারপাশে ঘুরে বিস্ময়ের সহিত বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমই সেই ইট। আর আমই সর্বশেষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।

 

৩২৮৪ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হয় তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। ইবনু শিহাব বলেন; সা’ঈদ ইবনুল মূসা য়্যীব এভাবেই আমার নিকট বর্ণনা করেন।

 

৩২৮৫ হাফ্‌স ইবনু ‘উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বাজারে গিয়েছিলেন। তখন এক ব্যাক্তি হে আবূল কাসিম! বলে ডাক দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিকে ফিরে তাকালেন। (এবং বুঝতে পারলেন, সে অন্য কাকেও ডাকছে)। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার আসন নাম (অন্যের জন্য) রাখতে পার, কিন্তু আমার উপনাম কারো জন্য রেখ না।

 

৩২৮৬ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমার আসল নামে অন্যের নাম রাখতে পার, কিন্তু আমার উপনাম অন্যের জন্য রেখোনা।

 

৩২৮৭ আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূল কাসিম (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন, আমার নামে নামকরণ করতে পার, কিন্তু আমার কুনিয়্যাতে (উপনাম) তোমাদের নাম রেখ না।

 

৩২৮৮ ইসহাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) জু’আইদ ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইনি বলেন, আমি ‘সাইব ইবনু ইয়াযীদকে চুরানব্বই বছর বয়সে সুস্থ-সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেখেছি। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, আমি এখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দু’আর বরকতেই চক্ষু ও কর্ণ দ্বারা উপকৃত হচ্ছি। আমার খালা একদিন আমাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার ভাগিনাটি পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দু’আ করলেন।

৩২৮৯ মুহাম্মদ ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) জু’আইদ (রহঃ) বলেন, আমি সাইব ইবনু ইয়াযীদকে বলতে শুনেছি যে, আমার খালা (একদিন) আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমার ভাগিনা পীড়িত ও রোগাক্রান্ত। (আপনি তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন!)তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বরকতের দু’আ করলেন। তিনি ওযু করলেন, তাঁর ওযুর অবশিষ্ট পানি আমি পান করলাম। এরপর আমি তাঁর পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ালাম তাঁর কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে “মোহরে নাবুওয়্যাত” দেখলাম যা কবুতরের ডিমের ন্যায় অথবা বাসর ঘরের পর্দার বুতামের মত। ইবনু উবায়দুল্লাহ বলেন, ( )অর্থ সাদা চিহ্ন, যা ঘোড়ার কপালের সাদা অংশ এর অর্থ থেকে গৃহীত। আর ইব্রাহীম ইবনু হামযা বলেন, কবুতরের ডিমের মত। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন বিশুদ্ধ হল ( )-এর পূর্বে ( )হবে অর্থাৎ ( )।

 

৩২৯০ আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উক্‌বা ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ বক্‌র (রাঃ) বাদ আসর এর সালাতান্তে (নামাজের পর) বের হয়ে চলতে লাগলেন। (পথিমধ্যে) হাসান (রাঃ)-কে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করতে দেখলেন। তখন তিনি তাঁকে কাঁধে তুলে নিলেন এবং বললেন, আমার পিতা কুরবান হউন! এ-ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সা’দৃশ্য আলীর সা’দৃশ্য নয়। তখন আলী (রাঃ) হাসতেছিলেন।

 

৩২৯১ আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবূ জুহায়ফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি। আর হাসান ইবনু ‘আলী) (রাঃ) তাঁরই সা’দৃশ্য।

 

৩২৯২ ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) ছিলেন তাঁরই সদৃশ (রাবী বলেন) আমি আবূ জুহায়ফাকে বললাম, আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বর্ণনা দিন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৌর বর্ণের ছিলেন। কাল কেশরাজির ভিতর যৎসামান্য সাদা চুলও ছিল। তিনি তেরটি সবল উটনি আমাদিগকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের হস্তগত হওয়ার পূর্বেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হয়ে গেল।

 

৩২৯৩ আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি আর তাঁর নিচের ঠোটের নিম্নভাগের দাঁড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি।

 

৩২৯৪ ইসাম ইবনু খালিদ (রহঃ) হারীয ইবনু ‘উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু বুসরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছেন যে, তিনি বৃদ্ধ ছিলেন? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাচ্চা দাঁড়িতে কয়েকটি চুল সাদা ছিল।

 

৩২৯৫ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) রাবী’আ ইবনু আবূ আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর (দৈহিক গঠন) বর্ণনা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে মাঝারি গড়নের ছিলেন– বেমানান লম্বাও ছিলেন না বা বেঁটেও ছিলেন না। তাঁর শরীরের রং গোলাপী ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। মাথার চুল কুঁকড়ানোও ছিল না আবার সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর উপর ওহী নাযিল হওয়া আরম্ভ হয়। প্রথম দশ বছর মক্কায় অবস্থানকালে ওহী যথারীতি নাযিল হতে থাকে। এরপর দশ বছর মদিনায় অতিবাহিত করেন। অতঃপর তাঁর ওফাত হয় তখন তাঁর মাথা ও দাঁড়িতে কুড়িটি সাদা চুলও ছিল না। রাবি’আ (রহঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি চুল দেখেছি উহা লাল রং-এর ছিল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, বলা হল যে অধিক সুগন্ধী লাগানোর কারণে উহার রং লাল হয়ে গিয়েছিল।

 

৩২৯৬ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেমানান লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার তামাটে রং এরও ছিলেন না। কেশরাজি একেবারে কুঞ্চিত ছিল না, একেবারে সোজাও ছিলনা। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হন। তাঁর নবুওয়্যাত কালের প্রথম দশ বছর মক্কায় এবং পরের দশ বছর মদিনায় অতিবাহিত করেন। যখন তাঁর ওফাত হয় তখন মাথা ও দাঁড়িতে কুড়িটি চুলও সাদা ছিলনা।

 

৩২৯৭ আহমেদ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা মুবারক ছিল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং বেমানান বেঁটেও ছিলেন না।

 

৩২৯৮ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে খেযাব ব্যবহার করেছেন কি? তিনি বললেন, না (তিনি তা ব্যবহার করেননি)। তাঁর কানের পাশে গুটি কয়েক চুল সাদা হয়েছিল মাত্র। (কাজেই চুলে খেযাব ব্যবহারের আবশ্যক হয় নাই)।

 

৩২৯৯ হাফ্‌সা ইবনু ‘উমর (রহঃ) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাঁদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে অধিক সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। ইউসুফ ইবনু আবূ ইসহাক তাঁর পিতা থেকে হাদীস বর্ণনায় বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।

 

৩৩০০ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) আবূ ইসহাক তাবে-ই (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারা (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চেহারা মুবারক কি তরবারীর ন্যায় (চকচকে) ছিল? তিনি বলেন, না, বরং চাঁদের মত (স্নিগ্ধ ও মনোরম) ছিল।

 

৩৩০১ হাসান ইবনু মনসুর আবূ আ’লী (রহঃ) হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আবূ জুহায়ফা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুপুর বেলায় বাতাহার দিকে বেরিয়ে গেলেন। সে স্থানে উযূ (ওজু/অজু/অযু) যুহরের দু’রাকাত ও আসরের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তাঁর সম্মুখে একটি বর্শা পোতা ছিল। বর্শার বাহির দিক দিয়ে নারীগণ যাতায়াত করছিল। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে লোকজন দাঁড়িয়ে গেল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উভয় হাত ধরে তারা নিজেদের মাথা ও চেহারায় বুলাতে লাগলেন। আমিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাত মুবারক ধারণ করতঃ আমার চেহারায় বুলাতে লাগলাম। তাঁর হাত তুষার চেয়ে স্নিদ্ধ শীতল ও কস্তুরীর চেয়ে অধিক সুগন্ধ ছিল।

 

৩৩০২ আবদান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন। তাঁর বদান্যতা অধিক বেড়ে যেতো রমযাদ মোবারকের পবিত্র দিনে যখন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাক্ষাতে আসতেন। জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিরাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কুরআনুল ের দাওর করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণ বিতরণে প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।

 

৩৩০৩ ইয়াহ্ইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত ও প্রফুল্ল চিত্তে তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন। খুশীর আমাজে তাঁর চেহারার খুশীল চিহ্ন ঝলমল করছিল। তিনি তখন আয়িশাকে বললেন, হে আয়িশা! তুমি শুননি, মুদলাজী ব্যাক্তিটি (চেহারার ও আকৃতির গননায় পারদর্শী) যায়েদ ও উসামা সম্পর্কে কি বলেছে? পিতা-পুত্রের শুধু পা দেখে (শরীরের বাকী অংশ ঢাকা ছিল) বলল, এ পাগুলো একটা অন্যটির অংশ (অথ্যাৎ তাদের সম্পর্ক পিতা-পুত্রের)।

 

৩৩০৪ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে তার তাবূক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সালাম দিলাম, খুশী ও আনন্দে তাঁর চেহারা মুবারক ঝলমল করে উঠলো। তাঁর চেহারা এমনি-ই খুশী ও আনন্দে ঝলমল করতো। মনে হতো যেন চাঁদেঁর একটি টুক্রা। তাঁর চেহারা মুবারকের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম।

 

৩৩০৫ কুতায়বা ইবনুু্ সাইদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি মানব জাতির সবোত্তম যুগে আবির্ভূত হয়েছি। যুগের পর যুগ হয়ে আমি সেই যুগেই জন্মেছি যে যুগ আমার জন্য নির্ধারিত ছিল।

 

৩৩০৬ ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল পেছনের দিকে আঁচড়িয়ে রাখতেন আর মুশরিকগণ তাদের চুল দু’ভাগ করে সিঁতি কেটে রাখত। আহলে কিতাব তাদের চুল পেছনের দিকে আঁচড়িয়ে রাখত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন বিষয়ে আল্লাহর আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত আহলে কিতাবের অনুকরণকে ভালোবাসতেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চুল দু’ভাগ করে সিঁতি কেটে রাখতে লাগলেন।

 

৩৩০৭ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুু্ আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশ্লীল ভাষী ও অসদাচারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যাক্তই সর্বশ্রেষ্ঠ যে নৈতিকতায় সবো্ত্তম।

 

৩৩০৮ আবদুল্লাহ ইবনুু্ ইউসুফ (রহঃ)আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (জাগতিক বিষয়ে) যখনই দু’টি জিনিসের একটি গ্রহণের ইখ্তিয়ার দেয়া হত, তখন তিনি সহজ সরলটি গ্রহণ করতেন যদি তা গোনাহ না হত। যদি গোনাহ হত তবে তা থেকে তিনি অনেক দূরে সরে থাকতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাক্তিগত কারনে কারো থেকে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহ্কে রাযী ও সন্তুষ্ট করার মানসে প্রতিশোধ করতেন।

 

৩৩০৯ সুলায়মান ইবনু হারব (রাঃ)… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতের তালু অপেক্ষা মোলায়েম কোন রেশম ও গরদকেও স্পর্শ করি নাই। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শরীর মোবারকের খুশ্বু অপেক্ষা অধিকতর সুঘ্রাণ আমি কখনো পাই নাই।

 

৩৩১০ মূসা’দ্দাদ (রাঃ)… আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তপুরবাসিনী পর্দানশীল কুমারীদের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। মুহাম্মদ (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে অনুরুপ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। (তবে এ বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে যে,)যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কিছু অপছন্দ করতেন তখর তাঁর চেহারা মুবারকে তা (বিরক্তি ভাব) দেখা যেত।

 

৩৩১১ আলী ইবনু জা’দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাদ্যবস্তুকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেয়ে নিতেন নতুবা ত্যাগ করতেন।

 

৩৩১২ কুতায়বা ইবনুু্ সাইদ (রহঃ) ইবনু বুহায়না আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন, তখন উভয় বাহুকে শরীর থেকে এমনভাবে পৃথক করে রাখতেন যে, আমরা তার বগল দেখতে পেতাম। অন্য রেওয়ায়াতে আছে, বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।

 

৩৩১৩ আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ ইস্তিস্কা (বৃষ্টির জন্য সালাত (নামায/নামাজ) আর দু’আ) ব্যতীত অন্য কোন দু’আয় তাঁর বাহুদ্বয় এতটা ঊর্দ্ধে উঠাতেন না ইস্তিস্কা ব্যতীত কেননা এতে হাত এত ঊর্দ্ধে উঠাতেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখা যেত। আবূ মূসা (রহঃ) হাদীস বর্ণনায় বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আর মধ্যে দু’ হাত উপরে উঠিয়েছেন; এবং আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখেছি।

 

৩৩১৪ হাসান ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একদা) আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে নেয়া হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবতাহ নামক স্থানে দুপুর বেলায় একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। বেলাল (রাঃ) তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে যুহরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আযান দিলেন এবং (তাঁবুতে) পুনঃপ্রবেশ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)ব অবশিষ্ট পানি নিয়ে বেরিয়ে এলেন। লোকজন ইহা নেয়ার জন্য ঝাপিয়ে পড়ল। অতঃপর তিনি আবার তাঁবুতে ঢুকে একটি ছোট্ট বর্শা নিয়ে বেরিয়ে এলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও (এবার) বেরিয়ে আসলেন। আমি যেন তাঁর পায়ের গোছার ঔজ্জ্বল্য এখনো দেখতে পাচ্ছি। বর্শাটি সম্মুখে পুতে রাখলেন। এরপর যুহরের দু’রাকাত এবং পরে আসরের দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। বর্শার বাহির দিয়ে গাধা ও মহিলা চলাফেরা করছিল।

 

৩৩১৫ হাসান ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে (থেমে থেমে) কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গণনা করতে চাইলে, তাঁর কথাগুলো গণনা করতে পারত। লায়স (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুমি অমুকের (আবূ হুরায়রা (রাঃ)) অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে আমার হুজরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদীস বর্ণনা করেন। আমি তখন (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) ছিলাম। আমার সালাত (নামায/নামাজ) শেষ হওয়ার পূর্বেই তিনি উঠে চলে যান। তাকে যদি আমি পেতাম তবে অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মত দ্রুত কথা বলতেন না (বরং তিনি ধীরস্থির ও স্পষ্টভাবে কথা বলতেন।

 

৩৩১৬ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, রমযান মাসে (রাতে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে ছিল? আয়িশা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে ও অন্যান্য সব মাসের রাতে এগারো রাকা’তের বেশী সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। প্রথমে চার রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ চার রাকা’আত আদায়ের সৌন্দর্য ও দৈঘ্যের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না (ইহা বর্ণনাতীত)। তারপর আরো চার রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তারপর তিন রাকা’আত (বিতর) আদায় করতেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি বিত্র সালাত (নামায/নামাজ) আদয়ের পূর্বে ঘুমিয়ে পড়েন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার চক্ষু ঘুমায় তবে আমার অন্তর ঘুমায় না।

 

৩৩১৭ ইসমাঈল (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে কা’বা থেকে রাতে অনুষ্ঠিত ইসরা-এর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন যে, তিন ব্যাক্তি (ফিরিস্তা) তাঁর নিকট হাজির হলেন মি’রাজ সম্পর্কে ওহী অবতরণের পূর্বে। তখন তিনি মাসজিদুল হারামে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। তাদেঁর প্রথমজন বলল, তাদেঁর (তিন জনের) কোন জন তিনি? (যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীর পাশে হামযা ও জাফর শুয়ে ছিলেন) মধ্যম জন উত্তর দিল, তিনই (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )তাদেঁর শ্রেষ্ঠ জন। আর শেষ জন বলল, শ্রেষ্ঠ জনকে নিয়ে চল। এ রাত্রে এতটুকুই হল, এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাদেরকে আর দেখেন নাই। অতঃপর আরেক রাতে তাঁরা আগমন করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তর তা দেখতে পাচ্ছিল। যেহেতু, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। সকল আম্বিয়াকেরামের অবস্থা এরুপই ছিল যে, তাঁদের চোখ ঘুমাত কিন্তু তাঁর অন্তর সদা জাগ্রত থাকত। তারপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ভ্রমণের) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নিয়ে আকাশের দিকে চড়তে লাগলেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩১৮ | 3318

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩১৮ আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক সফরে (খায়বার যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন কালে) তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলেন। সারারাত পথ চলার পর যখন ভোর নিকটবর্তী হল, তখন বিশ্রাম গ্রহণের জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর নিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল (কিন্তু কেউই জাগলেন না)। (ইমরান (রাঃ)) বলেন, যিনি সর্বপ্রথম ঘুম থেকে জাগলেন তিনি হলেন আবূ বকর (রাঃ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বেচ্ছায় জাগ্রত না হলে তাকেঁ জাগানো হত না। তারপর উমর (রাঃ) জাগলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর শিয়রের নিকট গিয়ে বসে উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে লাগলেন। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তখন একব্যাক্তি আমাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে রইল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলেন তখন বললেন, হে অমুক, আমাদের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে কিসে বাধা দিল? লোকটি বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি (গোসলের প্রয়োজন হয়েছিল)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পাক মাটি দিয়ে তৈয়াম্মুম করার আদেশ দিলেন, তারপর সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল। (ইমরান (রাঃ)) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অগ্রগামী দলের সাথে পাঠিয়ে দিলেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এমতাবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ এক উষ্ট্রারোহিণী মহিলা আমাদের নযরে পড়লো। সে পানি ভর্তি দু’টি মশকের মধ্যে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম পানি কোথায়? সে বলল, (আশেপাশে) কোথায়ও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলল একদিন ও একরাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট চল। সে বলল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি? আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে নিয়ে গেলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এসেও ঐ জাতীয় কথাবার্তাই বলল যা সে আমাদের সঙ্গে বলেছিল। তবে সে তাঁর নিকট বলল সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মাতা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মশক দু’টি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন। তারপর তিনি মশক দু’টির মুখে হাত বুলালেন। আমরা তৃষ্ণাকাতর চল্লিশজন মানুষ পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করলাম। তারপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলোকে পানি পান করানো হয় নাই। এত সবের পরও মহিলার মশকগুলি এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের নিকট (খাবার জাতীয়) যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু খেজুর আর রুটির টুকরা জমা করে তাকে দেয়া হল। এ নিয়ে মহিলা আনন্দের সাথে তার গৃহে ফিরে গেল। গৃহে গিয়ে সে সকলের কাছে বলল, আমার সাক্ষাত হয়েছিল এক মহাযাদুকরের সাথে অথবা মানুষ যাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে ধারণা করে তার সাথে। আল্লাহ্ এই মহিলার মাধ্যমে এ বস্তিবাসীকে হেদায়াত দান করলেন। মহিলাটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণে ধন্য হল।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩১৯ | 3319

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩১৯ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ)আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি (মদিনার নিকটবর্তী) যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি আঙ্গলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলেন। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের লোক সংখ্যা কত ছিল? আমরা তিনশ’ অথবা তিনশ’ এর কাছাকাছি ছিলাম।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২০ | 3320

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (এমন অবস্থায়) দেখতে পেলাম যখন আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় নিকটবর্তী। সকলেই পেরেশান হয়ে পানি খুঁজছেন কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি (একটি পাত্রসহ আনা হল)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে তাঁর হাত মোবারক রেখে দিলেন এবং সকলকে এ পাত্রের পানি দ্বারা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে আদেশ দিলেন। আমি দেখলাম তাঁর হাত মোবারকের নীচ হতে সজোরে উথ্লে পড়ছিল। কাফিলার শেষ ব্যাক্তিটি পর্যন্ত সকলেই এই পানি দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২১ | 3321

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২১ আবদুর রাহমান ইবনু মুবারক (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফরে বের হয়েছিলেন। তাঁর সাথে সাহাবায়ে কেরামও ছিলেন। তাঁরা চলতে লাগলেন তখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেল কিন্তু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার জন্য কোথাও পানি পাওয়া গেল না। কাফিলার এক ব্যাক্তি (আনাস (রাঃ) নিজেই) সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত করলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তার-ই পানি দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং তাঁর হাতের চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বললেন, উঠ তোমরা সকলে উযূ (ওজু/অজু/অযু) কর। সকলেই ইচ্ছামত উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলন। তাদেঁর সংখ্যা সত্তর বা এর কাছাকাছি ছিল।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২২ | 3322

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২২ আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উপস্থিত হল (কিন্তু পানির ব্যবস্থা ছিল না)যাদের বাড়ী মসজিদের নিকটে ছিল তাঁরা উযূ (ওজু/অজু/অযু) করার জন্য নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেলেন। কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক থেকে গেলেন (যাদের উযূ (ওজু/অজু/অযু)র কোন ব্যবস্থা ছিল না)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট প্রস্তর নির্মিত একটি (ছোট্ট) পাত্র আনা হল। এতে সামান্য পানি ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত মোবারক রাখলেন। কিন্তু পাত্রটি ছোট্ট বিধায় হাতের আঙ্গুল প্রসারিত করতে পারলেন না বরং একত্রিত করে রেখে দিলেন। তারপর উপস্থিত সকলেই ঐ পানি দ্বারাই উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলেন। হুমাইদ (একজন রাবী) (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন, তিনি বললেন, আশি জন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৩ | 3323

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদাবিয়ায় অবস্থান কালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পানির পীপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তাঁর নিকট পানি আছে মনে করে সকলে ঐ দিকে ধাবিত হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত উযূ (ওজু/অজু/অযু) ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি পান করলাম আর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলাম। সালিম (রহঃ) (একজন রাবী)বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? আমরা যদি এক লক্ষও হতাম, তবুও আমারদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ’।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৪ | 3324

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৪ মালিক ইবনু ইসমাইল (রহঃ) বারা’আ ইবনু আযির) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে হুদাবিয়ায় চৌদ্দশ লোক ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কুপ, আমরা তা হতে পানি এমন ভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোঁটা পানিও বাকী থাকলো না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। (সামান্য পানি আনা হল) তিনি কুল্লি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে ভরে গেল। আমরা পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলোও পানি পানে তৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে প্রত্যাবর্তন করল।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৫ | 3325

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ তালহা (রাঃ) তদীয় (পত্নী) উম্মে সুলায়মকে বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুদা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করলেন। তারপর তাঁর একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার উপর অংশ আমার শরীর জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন। রাবী আনাস বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতিপয় লোকসহ মসজিদে অবস্থান করছিলেন। আমি গিয়ে তাদের সম্মুখে দাঁড়ালাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদেরকে বললেন, চলো, আবূ তালহা আমাদেরকে দাওয়াত করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবূ তালহা (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন বার্তা শোনালাম। ইহা শুনে আবূ তালহা (রাঃ) বলেন, হে উম্মে সুলাইম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের নিকট নেই। উম্মে সুলাইম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই ভালো জানেন। আবূ তালহা (রাঃ) তাঁদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বাড়ী হতে কিছুদূর অগ্রসর হলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ করলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ঘরে আসলেন, আর বললেন, হে উম্মে সুলায়ম। তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলো হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হল। উম্মে সুলায়ম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে মুছে কিছু ঘি বের করে তা তরকারী স্বরুপ পেশ করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন এরপর দশজনকে নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন। তারপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেটভরে খেয়ে নিলেন। অনুরূপভাবে সমবেত সকলেই রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন। লোকজন সর্বমোট সত্তর বা আশিজন ছিলেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৬ | 3326

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৬ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (সাহাবাগণ) অলোকিক ঘটনাসমূহকে বরকত ও কল্যাণকর মনে করতাম আর তোমরা (যারা সাহাবী নও) ঐ সব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। আমাদের পানি কমিয়ে আসল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত পানি তালাশ কর। (তালাশের পর) সাহাবাগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভেতর সামান্য পানি ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রের ভেতর ঢুকিয়ে দিলেন এবং ঘোষণা করলেন, বরকতময় পানি নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ তা’লার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। সময় বিশেষে আমরা খাদ্য-দ্রব্যের তাসবীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হতো।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৭ | 3327

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৭ – আবূ নু’আইম (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর পিতা {আবদুল্লাহ (রাঃ) উহুদ যুদ্ধে} ঋণ রেখে শাহাদাত বরণ করেন। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার পিতা অনেক ঋণ রেখে গেছেন। আমার নিকট বাগানের উৎপন্ন কিছু খেজুর ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ নেই। কয়েক বছরের উৎপাদিত খেজুর একত্রিত করলেও তদ্বারা তাঁর ঋণ শোধ হবে না। আপনি দয়া করে আমার সাথে চলুন, যাতে পাওনাদারগণ (আপনাকে দেখে) আমার প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে গেলেন এবং খেজুরের একটি স্তূপের চারদিক ঘুরে দোয়া করলেন। এরপর অন্য স্তূপের নিকটে গেলেন এবং এর নিকটে বসে পড়লেন এবং জাবির (রাঃ) কে বললেন, খেজুর বের করে দিতে থাক। অতঃপর সকল পাওনাদারের প্রাপ্য শোধ করে দিলেন অথচ পাওনাদারদের যা দিলেন তাঁর সমপরিমাণ রয়ে গেল।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৮ | 3328

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৮ মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) বর্ণনা করেন, আসহাবে সুফফায় কতিপয় অসহায় দরিদ্র লোক ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বললেন, যার ঘরে দু’জনের পরিমান খাওয়ার আছে সে যেন এদের মধ্য থেকে তৃতীয় একজন নিয়ে যায়। আর যার ঘরে চার জনের পরিমান খাওয়ার আছে সে এদের মধ্য থেকে পঞ্চম একজন বা ষষ্ঠ একজনকে নিয়ে যায় অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন। আবূ বকর (রাঃ) তিনজন নিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিলেন দশজন। আব্দুর রহমান বলেন, (আমরা বাড়ীতে ছিলাম তিনজন)। আমি আমার আব্বা ও আম্মা। আবূ উসমান (রাঃ) বলেন, আমার মনে নাই আব্দুর রহমান (রাঃ) কি ইহাও বলেছিলেন যে আমার স্ত্রী ও আমাদের পিতা-পুত্রের একজন গৃহভৃত্যও ছিল। আবূ বকর (রাঃ) ঐ রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জির বাড়ীতেই খেয়ে নিলেন এবং ইশার সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করলেন। ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর পুনরায় তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গৃহে গমন করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের আহার গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তথায়ই অবস্থান করলেন। অনেক রাতের পর গৃহে ফিরলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমান পাঠিয়ে দিয়ে আপনি এতক্ষন কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, তাদের কি এখনও রাতের আহার দাওনি? স্ত্রী বললেন, আপনার না আসা পর্যন্ত তারা আহার খেতে রাযী হননি। তাদেরকে ঘরের লোকজন আহার দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অসম্মতির নিকট আমাদের লোকজনকে হার মানতে হয়েছে। আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি (অবস্থা বেগতিক দেখে) তাড়াতাড়ি কেটে পড়লাম। আবূ বকর (রাঃ) (আমাকে উদ্দেশ্য করে) বললেন, ওরে বেওকুফ! আহম্মক! আরো কিছু কড়া কথা বলে ফেললেন। তারপর মেহমান পক্ষকে সম্বোধন করে বললেন, আপনারা খেয়ে নিন। আমি কিছুতেই খাবো না। (মধ্যে আরো কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল অবশেষে সকলেই খেতে বসলেন।)আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা যখন গ্রাস তুলে নেই তখন দেখি পাত্রের খাবার অনেক বেড়ে যায়। খাওয়ার শেষে আবূ বকর (রাঃ) লক্ষ করলেন যে, পরিতৃপ্তভাবে আহারের পরও পাত্রে খাবার পূর্বাপেক্ষা অধিক রয়ে গেছে। তখন স্ত্রীকে লক্ষ করে বললেন, হে বনী ফিরাস গোত্রের বোন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, হে আমার নয়নমণি। খাদ্যের পরিমান এখন তিনগুণের চেয়ে অধিক রয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) তা থেকে কয়েক গ্রাস খেলেন এবং বললেন, আমার কসম শয়তানের প্ররোচনায় ছিল। তারপর অবশিষ্ট খাদ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং ভোর পর্যন্ত ঐ খাদ্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হেফাযতে রইল। রাবী বলেন, আমাদের (মুসলমানদের) ও অন্য একটি গোত্রের মধ্যে সন্ধি ছিল। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে তাদের মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বার জনকে নেতা মনোনীত করা হল। প্রত্যেক নেতার অধীনে আবার কয়েকজন করে লোক ছিল। আল্লাহই ভালো জানেন তাদের প্রত্যেকের সাথে কতজন করে দেয়া হয়েছিল! আব্দুর রহমান (রাঃ) বলেন, এদের প্রত্যেকেই এ খাবার থেকে খেয়ে নিলেন। অথবা তিনি যা বলেছেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩২৯ | 3329

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩২৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার মদিনাবাসী অনাবৃষ্টির দরুন (দুর্ভিক্ষে) পতিত হল। ঐ সময় কোন এক জুম্মার দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিয়েছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি উঠে দাঁড়ালো, এবং বলল ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (অনাবৃষ্টির কারণে) ঘোড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেল, বকরীগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৎক্ষণাৎ দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন আকাশ স্ফটিক সদৃশ্য নির্মল ছিল। হঠাৎ মেঘ সৃষ্টিকারী বাতাস বইতে শুরু করল এবং মেঘ ঘনীভূত হয়ে গেল। তারপর শুরু হল প্রবল বারিপাত যেন আকাশ তার দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। আমরা (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে) পানি ভেঙ্গে বাড়ি পৌঁছলাম। পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত অনবরত বৃষ্টিপাত হল। ঐ শুক্রবারে জুম্মার সময় ঐ ব্যাক্তি বা অন্য কেউ দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , (অতিবৃষ্টির কারণে) গৃহগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেল। বৃষ্টি বন্ধের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর কথা শুনে) মুচকি হাঁসলেন এবং বললেন, (হে আল্লাহ!) আমাদের আশে পাশে বৃষ্টি হউক। আমাদের উপর নয়। {আনাস (রাঃ) বলেন, } তখন আমি দেখলাম, মদিনার আকাশ থেকে মেঘমালা চতুর্দিক সরে গেছে আর মদিনা (যেন মেঘমুক্ত হয়ে) মুকুটের ন্যায় শোভা পাচ্ছে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩০ | 3330

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩০ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) খেজুরের একটি কাণ্ডের সাথে (হেলান দিয়ে) খুৎবা প্রদান করতেন। যখন মিম্বার তৈরি করে দেয়া হল, তখন তিনি মিম্বারে উঠে খুৎবা দিতে লাগলেন। কাণ্ডটি তখন {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরহে} কাঁদতে শুরু করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাণ্ডটির নিকটে গিয়ে হাত বুলাতে লাগলেন। (তখন স্তম্ভটি শান্ত হল।)উপরোক্ত হাদীসটি আবদুল হামীদ ও আবূ ‘আসিম (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩১ | 3331

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩১ আবূ নু’আইম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের উপর কিংবা একটি খেজুর বৃক্ষের কাণ্ডের উপর (হেলান দিয়ে) শুক্রবারে খুৎবা প্রদানের জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা একজন পুরুষ বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার জন্য একটি মিম্বার তৈরি করে দেব কি? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ইচ্ছা হলে দিতে পার। অতঃপর তাঁরা একটি কাঠের মিম্বার তৈরি করে দিলেন। যখন শুক্রবার এল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আসন গ্রহণ করলেন, তখন কাণ্ডটি শিশুরু ন্যায় চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার হতে নেমে এসে উহাকে জড়িয়ে ধরলেন। রাবী বলেন, কিন্তু কান্ডটি এজন্য কাঁদছিল যেহেতু সে খুতবাকালে অনেক যিকর শুনতে পেত।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩২ | 3332

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩২ ইসমাইল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, প্রথম দিকে খেজুরের কয়েকটি কাণ্ডের উপর মসজিদে নববীর ছাদ করা হয়েছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই খুৎবা প্রদানের ইচ্ছা প্রদান করতেন, তখন একটি কান্ডে হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন। অতঃপর তাঁর জন্য মিম্বার তৈরি করে দেওয়া হলে তিনি সেই মিম্বারে উঠে দাঁড়াতেন। ঐ সময় আমরা কাণ্ডটির ভেতর থেকে দশমাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীর স্বরের ন্যায় কান্নার আওয়াজ শুনলাম। অবশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকটে এসে তাকে হাত বুলিয়ে সোহাগ করলেন। তারপর কান্ডটি শান্ত হল।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৩ | 3333

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৩ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ও বিশর ইবনু খালিদ উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (ভবিষ্যতের) ফিতনা সম্পর্কীয় হাদীস স্মরণ রেখেছ? যেমনভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমই সর্বাধিক স্মরণ রেখেছি। উমর (রাঃ) বললেন, বর্ণনা কর, তুমি তো, অত্যন্ত সাহসী ব্যাক্তি। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশী দ্বারা সৃষ্ট ফিতনা-ফাসা’দর ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে সালাত (নামায/নামাজ), সা’দকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদানের দ্বারা। উমর (রাঃ) বললেন, আমি এ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিনি বরং উদ্বেলিত সাগর তরঙের ন্যায় ভীষণ আঘাত হানে ঐ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ জাতীয় ফিতনা সম্পর্কে আপনার শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আপনার এবং এ জাতীয় ফিতনার মধ্যে একটি সুদৃঢ় কপাট বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, এ কপাটটি কি (সাধারণ নিয়মে) খোলা হবে, না (জোরপূর্বক) ভেঙ্গে ফেলা হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, (জোরপূর্বক) ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর (রাঃ) বললেন, তা হলে এ কপাটটি আর সহজে বন্ধ করা যাবে না। আমরা (সাহাবীগণ) হুযায়ফাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উমর (রাঃ) কি জানতেন, ঐ কপাট দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে? তিনি বললেন, অবশ্যই; যেমন নিশ্চিতভাবে জানতেন আগামী দিনের পূর্বে, অদ্য রাতের আগমন অনিবার্য। আমি তাঁকে এমন একটি হাদীস শুনিয়েছি, যাতে ভুলভ্রান্তির অবকাশ নেই। আমরা (সাহাবীগণ) হুযায়ফাকে ভয়ে জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাইনি, তাই মাসরুককে বললাম, (তুমি জিজ্ঞাসা কর) মাসরুক (রহঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ বন্ধ কপাট দ্বারা উদ্দেশ্য কি? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, উমর (রাঃ) স্বয়ং।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৪ | 3334

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৪ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হবে এমন এক জাতির সঙ্গে যাদের পায়ের জুতা হবে পশমের এবং যতক্ষণ না তোমাদের যুদ্ধ হবে তুর্কিদের সহিত যাদের চক্ষু ক্ষুদ্রাকৃতি, নাক চ্যাপটা, চেহারা লাল বর্ণ যেন তাদের চেহারা পেটানো ঢাল। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মানুষ হবে যারা নেতৃত্বে ও শাসন ক্ষমতায় জড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত একে অত্যন্ত ঘৃণা ও অপছন্দ করবে। মানুষ খনির ন্যায় (এতে ভালো মন্দ সবই আছে) যারা জাহিলিয়াতের যুগে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম, ইসলাম গ্রহণের পরও তাঁরা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তোমাদের নিকট এমন যুগ আসবে যখন তোমাদের পরিবার-পরিজনরা, ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার চাইতেও আমার সাক্ষাৎ লাভ তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় মনে হবে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৫ | 3335

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৫ ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংগঠিত হবে না যে পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ না হবে খুয ও কিরমান নামক স্থানে (বসবাসরত) অনারব জাতিগুলোর সাথে, যাদের চেহারা লালবর্ণ, চেহারা যেন পিটানো ঢাল, নাক চ্যাপটা, চক্ষু ক্ষুদ্রাকৃতি এবং জুতা পশমের। ইয়াহইয়া ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ ও আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) থেকে পূর্বের হাদীস বর্ণনায় তার অনুসরণ করেছেন।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৬ | 3336

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহচার্যে তিনটি বছর কাটিয়েছি। আমার জীবনে হাদীস মুখস্ত করার আগ্রহ এ তিন বছরের চেয়ে অধিক আর কখনো ছিল না। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাত দ্বারা এভাবে ইশারা করে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে তোমরা (পরবর্তীরা) এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। এরা হবে পারস্যবাসী অথবা পাহাড়বাসী অনারব।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৭ | 3337

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৭ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা কিয়ামতের পূর্বে এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যারা পশমের জুতা ব্যবহার করে এবং তোমরা এমন এক জাতির সাথে যুদ্ধ করবে যাদের চেহারা হবে পিটানো ঢালের ন্যায়।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৮ | 3338

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৮ হাকাম ইবনু নাফে (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ইয়াহুদীরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। তখন বিজয়ী হবে তোমরাই। (এমনকি পাথরের আড়ালে কোন ইয়াহুদী আত্মগোপন করে থাকলে) স্বয়ং পাথরই বলবে, হে মুসলিম, এই তো ইয়াহুদী; আমার পেছনে আত্মগোপন করেছে, একে হত্যা কর।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৯ | 3339

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৩৯ কুতায়বা (রহঃ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (ভবিষ্যতে) মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যে, তাঁরা জিহাদ করবে। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যাক্তি আছেন কি? যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচার্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ (আছেন)। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপরও তারা আরো জিহাদ করবে। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি সাহাবা কেরামের সাহচার্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ (আছেন)। তখন (ঐ তাবেয়ীর তুফায়েলে) তাদেরকে জয়ী করা হবে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪০ | 3340

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৪০ মুহাম্মদ ইবনুল হাকাম (রহঃ) আদি ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মজলিসে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তারপর আর এক ব্যাক্তি এসে ডাকাতের উৎপাতের কথা বলে অনুযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আদী, তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখতে পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীল মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেন না। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিতনা ফাসা’দর আগুন জ্বালিয়ে দেশকে ছারখার করে দিচ্ছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও, তবে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে যে, কিসরার (পারস্য সমরাট) ধনভাণ্ডার কবজা করা হয়েছে। আমি বললাম, কিসরা ইবনু হুরমুযের? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, কিসরা ইবনু হুরমুযের। তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয় তবে অবশ্যই তুমি দেখতে পাবে, লোকজন মুষ্টিভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হবে এবং এমন ব্যাক্তিকে তালাশ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি মানুষও পাবেনা। তোমাদের প্রত্যেকটি মানুষ কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে। তখন তার ও আল্লাহর মাঝে অন্য কোন দোভাষী থাকবেনা যিনি ভাষান্তর করে বলবেন। আল্লাহ্ বলবেন, আমি কি (দুনিয়াতে) তোমার নিকট আমার বাণী পৌঁছানোর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরণ করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ। প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি দান করিনি এবং দয়া মেহেরবানী করিনি? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, দিয়েছেন। তারপর সে ডান দিকে নজর করবে, জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার সে বাম দিকে নজর করবে, তখনো সে জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। আদী (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, অর্ধেকটি খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর আর যদি তাও করার তৌফিক না হয় তবে মানুষের জন্য মঙ্গলজনক সৎ ও ভাল কথা বলে নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা কর। আদী (রাঃ) বলেন, আমি নিজে দেখেছি, এক উট সাওয়ার মহিলা হীরা থেকে একাকী রওয়ানা হয়ে কা’বাহ শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। আর পারস্য সমরাট কিসরা ইবনু হুরমুযের ধনভাণ্ডার যারা দখল করেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। যদি তোমরা দীর্ঘজীবি হও, তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। (অর্থাৎ মুষ্টিভরা স্বর্ণ দিতে চাইবে কিন্তু কেউ নিতে চাইবে না। )

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪১ | 3341

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৪১ – সাঈদ ইবনু শুরু াহবিল (রহঃ) উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে মৃত ব্যাক্তির সালাত (নামায/নামাজ) জানাযার ন্যায় উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সাহাবায়ে কেরামের কবরের পার্শ্বে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর ফিরে এসে মিম্বারে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের জন্য আগ্রগামী ব্যাক্তি, আমি তোমাদের পক্ষে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য প্রদান করবো। আল্লাহর কসম, আমি এখানে বসে থেকেই আমার হাউজে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম আমার ওফাতের পর তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে এ আশঙ্কা আমার নেই। তবে আমি তোমাদের সম্পর্কে এ ভয় করি যে পার্থিব ধন-সম্পদের প্রাচুর্য ও মোহ তোমাদেরকে আত্মকলহে লিপ্ত করে তুলবে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪২ | 3342

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৪২ আবূ নু’আইম (রহঃ) উসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মদিনায় একটি উচু টিলায় আরোহণ করলেন, তারপর (সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে) বললেন, আমি যা দেখেছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? আমি দেখছি বাড়ি ধারার ন্যায় ফাসা’দ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪৩ | 3343

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৪৩ আবূল ইয়ামান (রহঃ) যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তে পড়তে তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন এবং বলতে লাগলেন, অচিরেই একটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হবে। এতে আরবের ধ্বংস অনিবার্য। ইয়াজুজ ও মাজুজের দেয়ালে এতটুকু পরিমাণ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে, এ কথা বলে দু’টি আঙ্গুল গোলাকৃতি করে দেখালেন। যায়নাব (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি ধ্বংস হয়ে যাব? অথচ আমাদের মাঝে অনেক নেক লোক রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা (ফিসক ও কুফর এবং ব্যাভিচার) বেড়ে যাবে। অন্য একটি বর্ণনায় উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন এবং বলতে লাগলেন, সুবাহানাল্লাহ, আজ কী অফুরন্ত ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং তারই সাথে অগণিত ফিতনা-ফাসা’দ নাযিল করা হয়েছে।

 

হাদিসের মানঃ  সহিহ (Sahih)

 

পুনঃনিরীক্ষণঃ

 

সমস্যা? রিপোর্ট করুন!

 

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)

হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪৪ | 3344

 

 

বাংলা

English

আরবী

ব্যাখ্যা

৩৩৪৪ আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আবূ সা’সা’আতকে বললেন, তোমাকে দেখছি তুমি বকরীকে অত্যন্ত পছন্দ করে এদেরকে সর্বদা লালন-পালন কর, তাই তোমাকে বলছি, এদের যত্ন কর এবং রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কর। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, এমন এক জামানা আসবে, যখন বকরীই হবে মুসলমানদের সর্বোত্তম সম্পদ। ইহাকে নিয়ে পর্বত শিখরে বাড়ি বর্ষণের স্থানে চলে যাবে এবং রক্ষা করবে তাদের দ্বীনকে ফিতনা ফাসা’দ থেকে।

 

৩৩৪৫ আবদুল আযীয ওয়াইসী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে বলেছেন, অচিরেই অসংখ্য সর্বগ্রাসী ফিতনা ফাসা’দ আসতে থাকবে। ঐ সময় বসা ব্যাক্তি দাঁড়ানো ব্যাক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যাক্তি চলমান ব্যাক্তি হতে অধিক রক্ষিত আর চলমান ব্যাক্তি ধাবমান ব্যাক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যাক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোন ব্যাক্তি তাঁর দ্বীন রক্ষার জন্য কোন ঠিকানা ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিৎ হবে। ইবনু শিহাব যুহরী (রহঃ) নাওফাল ইবনু মু’আবিয়া (রাঃ) হতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর হাদীসের অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে অতিরিক্ত আর একটি কথাও বর্ণনা করেছেন যে এমন একটি সালাত (নামায/নামাজ) রয়েছে (আসর) যে ব্যাক্তির ঐ সালাত (নামায/নামাজ) কাযা হয়ে গেল, তার পরিবার পরিজন ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।

 

৩৩৪৬ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অচিরেই স্বজনপ্রীতি প্রকাশ পাবে এবং এমন সব কর্মকান্ড ঘটবে যা তোমরা পছন্দ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তদাবস্থায় আমাদের কী করতে বলেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন কর তোমাদের প্রাপ্যের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ কর।

 

৩৩৪৭ মুহাম্মদ ইবনু আব্দুর রহিম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরাইশ গোত্রের এ লোকগুলো (যুবকগণ) জনগণকে ধ্বংস করে দিবে। সাহাবা কেরাম আরয করলেন, তখন আমাদেরকে আপনি কি করতে বলেন? তিনি বললেন, জনগণ যদি এদের সংশ্রব ত্যাগ করে দিত তবে ভালই হতো। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ মাক্কী (রাঃ) সাঈদ উমাব্বী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এবং মারওয়ানের (রাঃ) কাছে ছিলাম (তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও বিশ্বস্থ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতে লাগলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের ধ্বংস কুরাইশের কতিপয় অল্প বয়স্ক ছেলেদের হাতে এবং মারওয়ানের বললেন, অল্প বয়স্ক ছেলেদের হাতে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি ইচ্ছা করলে তাদের নামও বলতে পারি, অমুকের ছেলে অমুক, অমুকের ছেলে অমুক।

 

৩৩৪৮ ইয়াহইয়া ইবনু মূসা (রহঃ) হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম; এ আশঙ্কায় যেন আমি ঐ সবের মধ্যে নিপাতিত না হই। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমরা জাহিলিয়াতে অকল্যাণকর পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করতাম এরপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর কোন প্রকার অমঙ্গলের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঐ অমঙ্গলের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। তবে তা মন্দ মিশ্রিত। আমি বললাম যে, মন্দ মিশ্রিত কি? তিনি বললেন, এমন একদল লোক যারা আমরা আদর্শ ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভালো-মন্দ সবই থাকবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এরপর কি আরো অমঙ্গল আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ তখন জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারীদের আগমন ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তাঁরা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তাঁরা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পতিত হই তবে আপনি আমাকে কি করতে আদেশ দেন? তিনি বললেন, মুসলমানদের (বৃহৎ) দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়িয়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলমানদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে এবং তোমার দ্বীনকে রক্ষা করবে।

 

৩৩৪৯ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সঙ্গীগণ কল্যাণ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আর আমি জানতে চেয়েছি ফিতনা ফাসা’দ সম্পর্কে।

 

৩৩৫০ হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে যাদের দাবী হবে এক অর্থাৎ উভয় পক্ষ নিজেদেরকে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে।

 

৩৩৫১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করবে।

 

৩৩৫২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণিমতের মাল বন্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ নামে এক ব্যাক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি (বন্টনে) ইনসাফ করুন। তিনি বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, একে যেতে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর তুলনায় নিজের সালাত (নামায/নামাজ) এবং সিয়াম তুচ্ছ বলে মনে করবে। এরা কোরআন পাঠ করে, কিন্তু কোরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন থেকে এমন ভাবে (দ্রুত) বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু (শিকারের) কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তমাংস অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু মেয়ে লোকের স্তনের ন্যায় অথবা মাংস টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে আমি স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে একথা শুনেছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এদের সাথে যুদ্ধ করেছেন। আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী (রাঃ) ঐ ব্যাক্তিকে তালাশ করে বের করতে আদেশ দিলেন। তালাশ করে যখন আনা হল, আমি মনোযোগের সহিত লক্ষ করে তাঁর মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখতে পেলাম, যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন।

 

৩৩৫৩ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রাঃ) সুয়াইদ ইবনু গাফালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, আমি যখন তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন হাদিস বর্ণনা করি, তখন আমার এ অবস্থা হয় যে তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করার চেয়ে আকাশ থেকে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় এবং আমরা পরস্পরে যখন আলোচনা করি তখন কথা হল এই যে, যুদ্ধ ছলচাতুরী মাত্র। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যামানায় একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে স্থুলবুদ্ধির অধিকারী। তারা নীতিবাক্যগুলো আওড়াতে থাকবে। তারা ইসলাম থেকে (এমন দ্রুত গতিতে ও চিহ্নহীনভাবে) বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ অতিক্রম করে (অন্তরে প্রবেশ) করবে না। সেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। এদের হত্যাকারীদের জন্য এই হত্যার প্রতিদান রয়েছে কিয়ামতের দিন।

 

৩৩৫৪ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রাঃ) খাব্বার ইবনু আরত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে (কাফিরদের পক্ষ থেকে যে সব নির্যাতন ভোগ করছিলাম এসবের) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাঁদরকে বালিশ বানিয়ে কা’বা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের (দুঃখ দুর্দশা লাঘবের) জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণের অবস্থা ছিল এই, তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খনন করা হত এবং ঐ গর্তে তাকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তাঁর মস্তক দ্বিখণ্ডিত করা হত। এ (অমানুষিক নির্যাতনেও) তাদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। লোহার চিরুনী দিয়ে আঁছড়িয়ে শরীরের হাঁড় পর্যন্ত মাংস ও শিরা উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এ (লোমহর্ষক নির্যাতন) তাদেরকে দ্বীন থেকে বিমুখ করতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দ্বীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন (এবং সর্বত্র নিরাপদ ও শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে।)তখনকার দিনের একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তাঁর মেঘপালের জন্য নেকড়ে বাঘের আশঙ্কাও করবে না। কিন্তু তোমরা (ঐ সময়ের অপেক্ষা না করে) তাড়াহুড়া করছ।

 

৩৩৫৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিত ইবনু কায়েস (রাঃ) কে (কয়েকদিন) তাঁর মজলিসে অনুপস্থিত পেলেন। তখন এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তার সম্পর্কে জানি। তিনি গিয়ে দেখলেন সাবিত (রাঃ) তাঁর ঘরে নত মস্তকে (গভীর চিন্তায়মগ্ন অবস্থায়) বসে আছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে সাবিত, কি অবস্থা তোমার? তিনি বললেন, অত্যন্ত করুণ। বস্তুতঃ তার গলার স্বর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গলার স্বর থেকে উঁচু হয়েছিল। কাজেই (কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী) তাঁর সব নেক আমল বরবাদ হয়ে গেছে। সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ঐ ব্যাক্তি ফিরে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালেন সাবিত (রাঃ) এমন এমন বলেছে। মূসা ইবনু আনাস (রহঃ) (একজন রাবী) বলেন, ঐ সাহাবী পুনরায় এ মর্মে এক মহাসুসংবাদ নিয়ে হাজির হলেন (সাবিতের খেদমতে) যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি যাও সাবিতকে বল, নিশ্চয়ই তুমি জাহান্নামিদের অন্তর্ভুক্ত নও বরং তুমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত।

 

৩৩৫৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) বার’আ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী (উসায়দ ইবনু হুযায়ব) (রাত্রি কালে) সূরা কাহফ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন (আতঙ্কিত হয়ে) লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখন্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা (প্রশান্তি) ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।

 

৩৩৫৭ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ বকর (রাঃ) আমার পিতার নিকট আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার নিকট থেকে একটি হাওদা ক্রয় করলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সাথে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বহন করে তাঁর সাথে চললাম। আমার পিতাও উহার মূল্য গ্রহণ করার জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বললেন, হে আবূ বকর, দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কি করেছিলেন, যে রাতে (হিজরতের সময়) আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথী ছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা (সাওর গুহা থেকে বের হয়ে) সারারাত চলে পরদিন দুপুর পর্যন্ত চললাম। যখন রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোন মানুষের যাতায়াত ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো, যার পতিত ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে অবতরণ করলাম। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ঐ স্থানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় নিযুক্ত রইলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি বললাম, হে যুবক, তুমি কার অধীনস্থ রাখাল? সে মদিনার কি মক্কার এক ব্যাক্তির নাম বলল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেষপালে কি দুগ্ধবতী মেষ আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তারপর সে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধুলা-বালু, পশম ও ময়লা থেকে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি বারা’কে দেখলাম এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। তারপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সাথেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম। (তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন) তাঁকে জাগানো উচিৎ মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাজির হলাম। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনও কি আমাদের যাত্রা শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের যাত্রা। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবনু মালিক (অশ্বারোহণে) আমাদের পশ্চাঁদ্ধাবন করছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের অনুধাবনে কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিরুদ্ধে দু’আ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তাঁর পেট পর্যন্ত মাটিতে ধেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, আমার ধারণা এরূপ শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলল, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দু’আ করেছেন। আমার (উদ্ধারের) জন্য আপনারা দোয়া করে দিন। আল্লাহর কসম আপনাদের আপনাদের অনুসন্ধানকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দোয়া করলেন। সে রেহাই পেল। ফিরে যাওয়ার পথে যার সাথে তার সাক্ষাৎ হতো, সে বলত (এদিকে গিয়ে পশুশ্রম করো না।)আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে নিয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, সে আমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে।

 

৩৩৫৮ মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন অসুস্থ একজন বেদুঈনকে দেখতে (তার বাড়িতে) গেলেন। রাবী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল যে, পীড়িত ব্যাক্তিকে দেখতে গেলে বলতেন, কোন দুশ্চিন্তার কারণ নেই, ইনশাআল্লাহ (পীড়াজনিত দুঃখ কষ্টের কারণে) গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। ঐ বেদুঈনকেও তিনি বললেন, চিন্তার কারণ নেই গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বেদুঈন বলল, আপনি বলছেন গুনাহ থেকে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তা তো নয়। বরং এতো এমন এক জ্বর যা বয়োবৃদ্ধের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। তাকে কবরের সাক্ষাৎ ঘটিয়ে ছাড়বে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই হউক (পরদিন অপরাহ্নে সে মারা গেল।)

 

৩৩৫৯ আবূ মামার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক খৃস্টান ব্যাক্তি মুসলমান হল এবং সুরা বাকারা ও সুরা আলে ইমরান শিখে নিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সে অহী লিপিবদ্ধ করত। তারপর সে পুনরায় খৃস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মদ কে যা লিখতে দিতাম তার চেয়ে অধিক কিছু তিনি জানেন না। (নাউযূ (ওজু/অজু/অযু)বিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দিলেন। খৃস্টানরা তাকে যথারীতি দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তা দেখে খৃস্টানরা বলতে লাগল – এটা মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবীদের কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়েএসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদুর সম্ভব গভীর করে কবর খুঁড়ে তাতে তাকে দাফন করা হল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাঁকে (গ্রহণ না করে) আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট থেকে পালিয়েআসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে সমাহিত করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাঁকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝতে পারল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা শবদেহটি বাইরেই ফেলে রাখল।

 

৩৩৬০ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা (পারস্য সমরাটের উপাধি) ধ্বংস হবে, তারপর অন্য কোন কিসরার আবির্ভাব হবে না। যখন কায়সার (পারস্য সমরাটের উপাধি) ধ্বংস হবে তখন আর কোন কায়সারের আবির্ভাব হবে না। {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও বলেছেন} ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই এ দুই সামরাজ্যের ধনভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।

 

৩৩৬১ কাবীসা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিসরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোন কিসরা আগমন হবে না এবং কায়সার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোন কায়সারের আগমন হবে না। রাবী উল্লেখ করেন যে, (তিনি আরো বলেছেন) নিশ্চয়ই তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হবে।

 

৩৩৬২ আবূল ইয়ামান (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় মূসা য়লামাতুল কাযযাব আসল এবং (সাহাবা কেরামের নিকট) বলতে লাগল, মুহাম্মদ যদি তাঁর পর আমাকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন, তাহলে আমি তাঁর অনুসরণ করব। তার স্বজাতির এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে সে এসেছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট আসলেন। আর তার সাথী ছিলেন সাবিত ইবনু কায়েস ইবনু শাম্মাম (রাঃ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে খেজুরের একটি ডাল ছিল। তিনি সাথী দ্বারা বেষ্টিত মূসা য়লামার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তুমি যদি আমার নিকট খেজুরের এই ডালটিও চাও, তবুও আমি তা তোমাকে দিবো না। তোমার সম্বন্ধে আল্লাহর যা ফায়সালা তা তুমি লঙ্ঘন করতে পারবেনা। যদি তুমি কিছু দিন বেঁচেও থাক তবুও আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই ধ্বংস করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তুমি ঐ ব্যাক্তি যার সম্বন্ধে স্বপ্নে আমাকে সব কিছু দেখানে হয়েছে। {ইবনু আব্বাস (রহঃ) বলেন, } আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (একদিন) আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখতে পেলাম আমার দু’হাতে সোনার দু’টি বালা শোভা পাচ্ছে। বালা দু’টি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহি এলো, আপনি ফুঁ দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দুজন কাযযাব (চরম মিথ্যাবাদী) আবির্ভূত হবে। এদের একজন আসওয়াদ আনসী, অপরজন ইয়ামামার বাসিন্দা মূসা য়লামাতুল কাযযাব।

 

৩৩৬৩ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হবে। পরে বুঝতে পেলাম, স্থানটি মদিনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াসরিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তরবারী হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল এটা তা-ই। তারপর দ্বিতীয় বার তরবারীটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন তরবারীটি পূর্বাবস্থার চেয়েও অধিক উত্তম হয়ে গেল। এর তাৎপর্য হল যে, আল্লাহ মুসলমানগনকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দেবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম, একটি গরু (যা জবাই করা হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভালো। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল – আল্লাহর তরফ হতে আগত ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরষ্কার যা আল্লাহ আমাদেরকে বদর যুদ্ধের পর দান করেছেন।

 

৩৩৬৪ আবূ নু’আইম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা (রাঃ) আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাঁকে দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ। তারপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে (রাবির সন্দেহ) বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপিচুপি (কি যেন) কথা বললেন। তখন তিনি (ফাতিমা) (রাঃ) কেঁদে দিলেন। আমি আয়িশা (রাঃ) কে বললাম কাঁদছেন কেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , পুনরায় চুপিচুপি তাঁর সাথে কথা বললেন। তিনি {ফাতিমা (রাঃ)} এবার হেঁসে উঠলেন। আমি {আয়িশা (রাঃ)} বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাঁকে {ফাতিমা (রাঃ)} কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } কি বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথাকে প্রকাশ করবো না। পরিশেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি {নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিবছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কোরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসি মহিলাদের অথবা মু’মিন মহিলাদের তুমি সরদার (নেত্রী) হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।

 

৩৩৬৫ – ইয়াহইয়া ইবনু কাযা’আ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগকালে তাঁর কন্য ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে পাঠালেন। এরপর চুপিচাপি কি যেন বললেন। ফাতিমা (রাঃ) তা শুনে কেঁদে ফেললেন। তারপর আবার ডেকে তাঁকে চুপিচাপি আরো কি যেন বললেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) হেঁসে উঠলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি হাঁসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, (প্রথম বার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, যে রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এ রোগেই তাঁর ওফাত হবে; তাই আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। এরপর তিনি চুপিচাপি আমাকে বলেছিলেন, তার পরিবার পরিজনের মধ্যে আমই সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব, এতে আমি হেঁসে দিয়েছিলেন।

 

৩৩৬৬ মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) (তাঁর সভাসদদের মধ্যে) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বিশেষ মর্যাদা দান করতেন। একদিন আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) তাঁকে বললেন, তাঁর মত ছেলে তো আমাদেরও রয়েছে। এতে তিনি বললেন, এর কারণ তো আপনি নিজেও জানেন। তখন উমর (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে ডেকে “ইজা যা আ নাসরুল্লহি ওয়াল ফাতহ” আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) উত্তর দিলেন, এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর ওফাত নিকটবর্তী বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উমর (রাঃ) বললেন, আমিও এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানি, যা তুমি জানো।

 

৩৩৬৭ আবূ নু’আইম (রহঃ) আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর (একদিন বৃহস্পতিবার) একটি চাঁদর পরিধান করে এবং মাথায় একটি কাল কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা মিম্বারের উপর গিয়ে বসলেন। আল্লাহ তা’লার হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, আম্মা বাদ। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, আর আনসারদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থা লোকের মাঝে এ রকম দাঁড়াবে যেমন খাদ্যের মধ্যে লবণ। তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি মানুষকে উপকার বা ক্ষতি করার মত ক্ষমতা লাভ করবে তখন সে যেন আনসারদের ভাল কার্যাবলি কবুল করে এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখে। এটাই ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বশেষ মজলিশ।

 

৩৩৬৮ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন হাসান (রাঃ) কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকে সহ মিম্বারে আরোহণ করলেন। তারপর বললেন, আমার এ ছেলেটি (নাতি) সাইয়েদ (সরদার)। নিশচই আল্লাহ তা’লা এর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসল্মানের আপোস (সমঝোতা) করিয়ে দিবেন।

 

৩৩৬৯ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতার যুদ্ধের শাহাদাত বরণকারী) জাফর এবং যায়েদ ইবনু হারিস (রাঃ)} এর শাহাদাত লাভের সংবাদ (আমাদেরকে) জানিয়ে দিয়েছিলেন, (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) তাদের উভয়ের শাহাদাত লাভের সংবাদ আসার পূর্বেই। তখন তাঁর চক্ষুযুগল অশ্রু বর্ষণ করছিল।

 

৩৩৭০ আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের নিকট আনমাত (গালিচার কার্পেট) আছে কি? আমি বললাম আমরা তা পাব কোথায়? তিনি বললেন, অচিরেই তোমরা আনমাত লাভ করবে। (আমার স্ত্রী যখন শয্যায় তা বিছিয়ে দেয়) তখন আমি তাকে বলি, আমার বিছানা থেকে এটা সরিয়ে নাও। তখন সে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তা বলেন নাই যে, অচিরেই তোমার আনমাত পেয়ে যাবে? তখন আমি তো (বিছান অবস্থায়) থাকতে দেই।

 

৩৩৭১ আহমদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) (আনসারী) ওমরা আদায় করার জন্য (মক্কা) গমন করলেন এবং সাফওয়ানের পিতা উমাইয়া ইবনু খালাফ এর বাড়িতে তিনি অতিথি হলেন। উমাইয়াও সিরিয়ায় গমনকালে (মদিনায়) সা’দ (রাঃ) এর বাড়িতে অবস্থান করত। উমাইয়া সা’দ (রাঃ) কে বলল, অপেক্ষা করুন, যখন দুপুর হবে এবং যখন চলাফেরা কমে যাবে, তখন আপনি যেয়ে তাওয়াফ করে নিবেন। (অবসর মুহূর্তে) সা’দ (রাঃ) তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আবূ জেহেল এসে হাজির হল। সা’দ (রাঃ) কে দেখে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যাক্তি কে? যে কাবার তাওয়াফ করছে? সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি সা’দ। আবূ জেহেল বলল, তুমি নির্বিঘ্নে কাবার তাওয়াফ করছ? অথচ তোমরাই মুহাম্মদ ও তাঁর সাথীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে? সা’দ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। এভাবে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। তখন উমাইয়া সা’দ (রাঃ) কে বলল, আবূল হাকওমের সাথে উচ্চস্বরে কথা বল না, কেননা সে মক্কাবাসীদের (সর্বজন মান্য) নেতা। এরপর সা’দ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তুমি যদি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে বাঁধা প্রদান কর, তবে আমিও তোমার সিরিয়ার সাথে ব্যবসা বানিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিব। উমাইয়া সা’দ (রাঃ) কে তখন বলতে লাগল, তোমার স্বর উচু করো না এবং সে তাঁকে বিরত করতে চেষ্টা করতে লাগল। তখন সা’দ (রাঃ) ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুহাম্মদ কে বলতে শুনেছি, তারা তোমাকে হত্যা করবে। উমাইয়া বলল, আমাকেই? তিনি বলেলন, হ্যাঁ (তোমাকেই) উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। এরপর উমাইয়া তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে বলল, তুমি কি জানো, আমার ইয়াসরিবী ভাই (মদিনা) আমাকে কি বলেছে? স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল কি বলছে? উমাইয়া বলল, সে মুহাম্মদ কে বলতে শুনেছে যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। তার স্ত্রী বলল, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ তো মিথ্যা বলেন না। যখন মক্কার মুশরিকরা বদরের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হল এবং আহ্বানকারী আহ্বান চালাল। তখন উমাইয়ার স্ত্রী তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিল, তোমার ইয়াসরিবী ভাই তোমাকে যে কথা বলছিল সে কথা কি তোমার স্মরণ নেই? তখন উমাইয়া (বদরের যুদ্ধে) না যাওয়াই সিদ্ধান্ত নিল। আবূ জেহেল তাকে বলল, তুমি এ অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। (তুমি যদি না যাও তবে কেউ-ই যাবে না) আমাদের সাথে দুই একদিনের পথ চলো। (এরপর না হয় ফিরে আসবে।)উমাইয়া তাদের সাথে চলল। আল্লাহ তা’লার ইচ্ছায় (বদর প্রান্তে মুসলমানদের হাতে) সে নিহত হল।

 

৩৩৭২ আব্দুর রহমান ইবনু শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা (স্বপ্নে) লোকজনকে একটি মাঠে সমবেত দেখতে পেলাম। তখন আবূ বকর (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং (একটি) কুপ থেকে এক অথবা দুই (রাবির সন্দেহ) বালতি পানি উঠালেন। পানি উঠাতে তিনি দুর্বলতা বোধ করছিলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুণ। তারপর উমর (রাঃ) বালতিটি হাতে নিলেন। বালতিটি তখন বৃহদাকার হয়ে গেল। আমি মানুষের মধ্যে পানি উঠাতে উমরের মত দক্ষ ও শক্তিশালী ব্যাক্তি কখনো দেখিনি। অবশেষে উপস্থিত লোকেরা তাদের উটগুলোকে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। হাম্মাম (রহঃ) (একজন রাবী) বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি আবূ বকর দু’বালতি পানি উঠালেন।

 

৩৩৭৩ আব্বাস ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। তখন উম্মে সালামা (রাঃ) তার নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেন। তারপর উঠে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি? তিনি বললেন, এইতো দেহইয়া। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম। আমি দেহইয়া বলেই বিশ্বাস করছিলাম কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর খুতবায় জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের কথা বলতে শুনলাম। (সুলায়মান (রাবী) বলেন) আমি আবূ উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম এ হাদীসটি আপনি কার কাছে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনু যায়েদ এর নিকট শুনেছি।

 

৩৩৭৪ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ইয়াহুদীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এসে বলল, তাদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ব্যভিচার করেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা সম্পর্কে তাওরাতে কি বিধান পেয়েছে? তারা বলল, আমরা এদেরকে লাঞ্ছিত করবো এবং তাদের বেত্রাঘাত করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধান রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এসে বাহির করল এবং প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করা সংক্রান্ত আয়াতের উপর হাত রেখে তার পূর্বে ও পরের আয়াতগুলি পাঠ করল। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, তোমার হাত সরাও। সে হাত সরাল। তখন দেখা গেল তথায় প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করার বিধান রয়েছে। তখন ইয়াহুদিরা বলল, হে মুহাম্মদ! তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু সালাম) সত্যই বলেছেন। তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধান রয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তর নিক্ষেপে দু’জনকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি (প্রস্তর নিক্ষেপকালে) ঐ পুরুষটিকে মেয়েটির দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখেছি। সে মেয়েটিকে প্রস্তরের আঘাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছিল।

 

৩৩৭৫ সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক।

 

৩৩৭৬ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ও খালিফা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী কাফিররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মুজিযা দেখানোর জন্য দাবী জানালেন তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন।

 

৩৩৭৭ খালাফ ইবনু খালিদ আল-কুরায়শী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।

 

৩৩৭৮ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’জন সাহাবী (আব্বাদ ইবনু বিশর ও উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) অন্ধকার রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবার হতে বের হলেন, তখন তাদের সাথে দু’টি বাতির ন্যায় কিছু তাদের সম্মুখভাগ আলোকিত করে চলল। যখন তারা পৃথক হয়ে গেলেন তখন প্রত্যকের সাথে এক একটি বাতি চলতে লাগল। অবশেষে তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে গেলেন।

 

৩৩৭৯ আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমনকি কিয়ামত আসবে তখনো তারা বিজয়ী থাকবে।

 

৩৩৮০ হুমায়দী (রহঃ) মু’আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দ্বীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা সাহায্য না করবে অথবা তাদের বিরোধীতা করবে, তারা তাদের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা তাদের অবস্থার উপর মজবুত থাকবে। উমাইর ইবনু হানী (রহঃ) মালিক ইবনু ইউখামিরের (রহঃ) বরাত দিয়ে বলেন, মু’আয (রাঃ) বলেছেন, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে। মু’আবিয়া (রহঃ) বলেন, মালিক (রহঃ) এর ধারণা যে, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে বলে মু’আয (রাঃ) বলেছেন।

 

৩৩৮১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উরওয়া বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বকরী ক্রয় করে দেয়ার জন্য তাঁকে একটি দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) দিলেন। তিনি ঐ দীনার দিয়ে দুটি বকরী ক্রয় করলেন। তারপর এক দীনার মূল্যে একটি বকরী বিক্রি করে দিলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে একটি বকরী ও একটি দীনার নিয়ে হাযির হলেন। তা দেখে তিনি তার ব্যবসা বাণিজ্যে বরকত হওয়ার জন্য দু’আ করে দিলেন। এরপর তার অবস্থা এমন হল যে, ব্যবসার জন্য যদি মাটিও তিনি খরীদ করতেন তাতেও তিনি লাভবান হতেন। সুফিয়ান (রহঃ) শাবীব (রহঃ) (একজন রাবী) বলেন, আমি উরওয়া (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। রাবী বলেন, আমি তাঁর গৃহে সত্তরটি ঘোড়া দেখেছি। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য যে বকরীটি ক্রয় করা হয়েছিল, তা ছিল কুরবানীর উদ্দেশ্যে।

 

৩৩৮২ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ ও বরকত নিহিত রয়েছে।

 

৩৩৮৩ কায়স ইবনু হাফস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও বরকত নিহিত রয়েছে।

 

৩৩৮৪ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়া তিন প্রকার। (ঘোড়া পালন) একজনের জন্য পুন্য, আর একজনের জন্য (দারিদ্র ঢেকে রাখার) আবরণ ও অন্য আর একজনের জন্য পাপের কারণ। সে ব্যাক্তির জন্য পুণ্য, যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ করার উদ্দেশ্যে) ঘোড়াকে সদা প্রস্তুত রাখে এবং সে ব্যাক্তি যখন লম্বা দড়ি দিয়ে ঘোড়াটি কোন চারণভূমি বা বাগানে বেঁধে রাখে তখন ঐ লম্বা দড়ির মধ্যে চারণভূমি অথবা বাগানের যে অংশ পড়বে তত পরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। যদি ঘোড়াটি দড়ি ছিড়ে ফেলে এবং দুই একটি টিলা পার হয়ে কোথাও চলে যায় তার পরে তার লেদাগুলিও নেকী বলে গণ্য হবে। যদি কোন নদী নালায় গিয়ে পানি পান করে, মালিক যদিও পানি পান করানোর ইচ্ছা করে নাই তাও তার নেক আমলে গণ্য হবে। আর যে ব্যাক্তি নিজের স্বচ্ছলতা দারিদ্রের গ্লানি ও পরমুখাপেক্ষীতা থেকে নিজকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং তার পর্দান ও পিঠে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা ভুলে না যায়। (অর্থাৎ তার যাকাত আদায় করে) তবে এই ঘোড়া তার জন্য আযাব থেকে আবরণ স্বরূপ। অপর এক ব্যাক্তি যে অহংকার, লোক দেখানো এবং আহলে ইসলামের সাথে শত্রুতার কারণে ঘোড়া লালন-পালন করে এ ঘোড়া তার জন্য পাপের বোঝা হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাধা (পালন) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি বললেন, এ সম্বন্ধে নির্দিষ্ট কোন আয়াত আমার নিকট অবতীর্ণ হয়নি। তবে ব্যাপক অর্থবোধক অনুপম আয়াতটি আমার নিকট নাযিল হয়েছেঃ যে ব্যাক্তি অনু পরিমাণ নেক আমল করবে সে তার প্রতিফল অবশ্যই দেখতে পাবে। আর যে ব্যাক্তি অনু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সেও তার প্রতিফল দেখতে পাবে। (৯৯:৭৮)

 

৩৩৮৫ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব ভোরে খায়বার পৌছালেন। তখন খায়বারবাসী কোদাল নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছিল। তাঁকে {রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম } কে দেখে তাঁরা বলতে লাগল, মুহাম্মদ পুরা সৈন্য বাহিনী নিয়ে এসে পড়েছে। (এ বলে) তাঁরা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের সুরক্ষিত কিল্লায় ঢুকে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, “আল্লাহু আকবার” খায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন জাতির (বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে), তাদের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন এসব আতঙ্কগ্রস্ত লোকদের প্রভাতটি অত্যন্ত অশুভ হয়। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, “ফারাফা’আ ইয়াদাইহি” শব্দটি বর্জন করুন। কেননা আমার ধারণা যে, এ শব্দটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় পাওয়া যায় না। যদিও পাওয়া যায় তবে তা নিশ্চয়ই অপ্রসিদ্ধ হবে।

 

৩৩৮৬ ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার থেকে অনেক হাদীস আমি শুনেছি, তবে তা আমি ভুলে যাই। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার চাঁদরটি বিছাও। আমি চাঁদরটি বিছিয়ে দিলাম। তিনি তার হাত দিয়ে চাঁদরের মধ্যে কি যেন রাখলেন এবং বললেন, চাঁদরটি (গুঁটিয়ে তোমার বুকে) চেপে ধর। আমি (বুকের সাথে) চেপে ধরলাম, তারপর আমি আর কোন হাদীস ভুলি নাই।

 

৩৩৮৭ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জনগনের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ সাহাবী) তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। তারপর জনগনের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী (শত্রুদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচার্য লাভে ধন্য কিংবা কোন ব্যাক্তির (সাহাবীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবেয়ী) তখন তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ তাবেয়ীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কি কেউ আছেন, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের সাহচার্য লাভকারী কোন বক্তির (তাবেয়ীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ী) বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে (ঐ তাবে-তাবেয়ীর বরকতে) জয়ী করা হবে।

৩৩৮৮ ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার (সাহাবীগণের) যুগ। এরপর তৎ-সংলগ্ন যুগ (তাবেয়ীদের যুগ)। এরপর তৎ-সংলগ্ন যুগ (তাবে-তাবেয়ীদের যুগ)। ইমরান (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর যুগের পর দু’যুগ অথবা তিনি যুগ বলেছেন তা আমার স্মরণ নেই। তারপর (তোমাদের যুগের পর) এমন লোকের আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহী হবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তারা মানত করবে কিন্তু পূরণ করবে না। পার্ঠিব ভোগ বিলাশের কারণে তাদের মাঝে চর্বিযুক্ত স্থূলদেহ প্রকাশ পাবে।

 

৩৩৮৯ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর আব্দুল্ললাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। এরপর তৎসংলগ্ন যুগ। তারপর তৎসংলগ্ন যুগ। তারপর এমন লোকদের আগমন হবে যাদের কেউ কেউ সাক্ষ্য প্রদানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (মিথ্যাকে প্রমাণিত করার জন্য সাক্ষ্য, হলফ ইত্যাদি নির্দ্বিধায় করতে থাকবে।)ইব্রাহীম (নাখয়ী;রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহর নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধোর করতেন।

 

৩৩৯০ আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আযিব (রাঃ) এর নিকট থেকে তের দিরহাম মূল্যের একটি হাওদা ক্রয় করলেন। আবূ বকর (রাঃ) আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার কাছে পৌঁছে দিতে বল। আযিব (রাঃ) বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ না আপনি আমাদেরকে (হিজরতের ঘটনা) সবিস্তার বর্ণনা করে শোনাবেন যে, আপনি ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করছিলেন যখন আপনারা (হিজরতের উদ্দেশ্যে) মক্কা থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরীকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমরা মক্কা থেকে বেরিয়ে সারারাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরাম চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্রতর হল আমি চারিদিক চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বৃহদাকার পাথর নযরে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াবিশিষ্ট স্থানটি সমতল করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চতুর্দিকের অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের তালাশে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তাঁর ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাঁথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া তালাশ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে যুবক, তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুগ্ধবতী বকরী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম। তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ দিব। আমি তাকে তা দিতে বললাম। তৎক্ষণাৎ সে বকরীর পালথেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এলো এবং পেছনের পা দুটি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দুটি ঝেড়ে মুছে ধুলাবালি থেকে পরিষ্কার করে নাও এবং তোমার হাত দুটি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের পদ্ধতিটিও) দেখালেন। এরপর সে আমাদিগকে পাত্রভরে দুধ এনে দিল। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য এমন একটি চামড়ার পাত্র সাথে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এরপর আমি দুধ নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি দুধ পান করন। তিনি দুধ পান করলেন; আমি খুশি হলাম। তারপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের রাওয়ানা হয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা রাওয়ানা হয়ে পড়লাম। মক্কাবাসী মুশরীকরা আমাদের অনুসন্ধানে ছুটাছুট করছে। কিন্তু সুরাকা ইবনু মালিক জশাম ব্যতীত আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অনুসন্ধানকারী আমাদের নিকটবর্তী। তিনি বললেন, চিন্তা করনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সাথে রয়েছেন।

 

৩৩৯১ মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন (সাওর) গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম। তখন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, যদি কাফেরগণ তাদের পায়ের নিচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বকর, ঐ দুই ব্যাক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা স্বয়ং আল্লাহ যাঁদের তৃতীয় জন।

 

৩৩৯২ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুৎবা প্রদানকালে বললেন, আল্লাহ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাঁর নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমুহ এ দু’য়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দান করেছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমুহ গ্রহণ করেছে। রাবী বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে (তাতে কান্নার কী কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যাক্তি তার ধন সম্পদ দিয়ে, তার সাহচর্য দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যাক্তি হল আবূ বকর (রাঃ)। আমি যদি আমার রব ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহণ করতাম, তবে অবশ্যই আবূ বকরকে করতাম। তবে তাঁর সাথে আমার দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক মহব্বত রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকরের দরজা ব্যতীত অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না।

 

৩৩৯৩ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় সাহাবীগণের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা নিরূপণ করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবূ বকর (রাঃ) কে তাঁরপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে, তারপর উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কে।

 

৩৩৯৪ মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আমার উম্মতের কাউকে যদি অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বকরকেই গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার (দ্বীনি) ভাই ও সাহাবী।

 

৩৩৯৫ মু’আল্লা ইবনু আসা’দ ও মূসা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আইয়ুব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহণ করলে তাকেই (আবূ বকরকেই) অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই সর্বোত্তম। কুতায়বা (রহঃ) আইয়ুব (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

 

৩৩৯৬ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফাবাসীগণ দাদার (মিরাস) সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইবনু যুবায়রের নিকট পত্র পাঠালেন, তিনি বললেন, ঐ মহান ব্যাক্তি যার সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ উম্মতের কাউকে যদি অন্তরঙ্গ বন্ধুরুপে গ্রহণ করতাম, তবে তাকেই করতাম, (অর্থাৎ আবূ বকর (রাঃ)) তিনি দাদাকে মিরাসের ক্ষেত্রে পিতার সমপর্যায়ভুক্ত করেছেন।

 

৩৩৯৭ হুমাইদী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে এলো। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবূ বকরের নিকট আসবে।

 

৩৩৯৮ আহমদ ইবনু আবূ তৈয়্যেব (রহঃ) আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমন অবস্থায় দেখেছি যে তাঁর সাথে মাত্র পাঁচজন গোলাম, (বিলাল, যায়েদ ইবনু হারিসা, আমির ইবনু ফুহাইরা, আবূ ফুকীহা ও আম্মারের পিতা ইয়াসির) দু’জন মহিলা (খাদিজা ও সুমাইয়া) এবং আবূ বকর (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না।

 

৩৩৯৯ ইবনু হিশাম আম্মার (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) পরিহিত কাপড়ের একপাশে এমনভাবে ধরে রেখে আসলেন যে তাঁর উভয় হাঁটু বেরিয়ে পড়ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ সাথী এইমাত্র কারো সাথে ঝগড়া করে আসছে। (এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) মজলিসে উপস্থিত হয়ে) তিনি সালাম করলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার এবং উমর ইবনু খাত্তাবের মাঝে একটি বিষয়ে কিছু বচসা হয়ে গেছে। আমই প্রথম কটু কথা বলেছি। তারপর আমি লজ্জিত হয়ে তাঁর নিকট ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তিনি ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন আমি আপনার খেদমতে হাযির হয়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন, হে আবূ বকর (রাঃ)। একথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর উমর (রাঃ) লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আবূ বকর (রাঃ) কি বাড়িতে আছেন? তাঁরা বলল না। তখন উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে চলে আসলেন। (তাঁকে দেখে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আবূ বকর (রাঃ) ভীত হয়ে নতজানোু হয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমই প্রথম অন্যায় করেছি। একথাটি তিনি দু’বার বললেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ যখন আমাকে তোমাদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপে প্রেরণ করেছেন তখন তোমরা সবাই বলেছ, তুমি মিথ্যা বলছ আর আবূ বকর বলেছে, আপনি সত্য বলেছেন। তাঁর জানো মাল সর্বস্ব দিয়ে আমার প্রতি যে সহানিভুতি দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন। তোমরা কি আমার খাতিরে আমার সাথীকে অব্যাহতি প্রদান করবে? এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছেন। এরপর আবূ বকর (রাঃ) কে আর কখনও কষ্ট দেয়া হয় নি।

 

৩৪০০ মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) আমর ইবনু আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সেনানায়ক করে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, আয়িশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, আয়িশার পিতা (আবূ বকর)। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোন লোকটি! তিনি বললেন, উমর ইবনু খাত্তাব তারপর আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলেন।

 

৩৪০১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি; একদা একজন রাখাল তার বকরীর পালের কাছে ছিল। এমতাবস্থায় একটি একটি নেড়ে বাঘ আক্রমণ করে পাল থেকে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল নেকড়ে বাঘের পিছনে ধাওয়া করে বকরীটি ছিনিয়ে আনল। তখন বাঘটি তাকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি বকরীটি ছিনিয়ে নিলে? হিংস্র জন্তুর আক্রমণের দিন কে তাকে রক্ষা করবে, যেদিন তার জন্য আমি ব্যতীত অন্য কোন রাখাল থাকবে না। একদা এক ব্যাক্তি একটি গাভীর পিয়ে আরোহণ করে সেটিকে হাকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন গাভীটি তাকে লক্ষ্য করে বলল, আমি এ কাজের জন্য সৃষ্টি হয় নি। বরং আমি কৃষি কাজের জন্য সৃষ্ট হয়েছি। একথা শুনে সকলেই বিস্ময়ের সাথে বলতে লাগল ‘‘সুবহানাল্লাহ! (কি আশ্চর্য গাভী কথা বলে! বাঘ কথা বলে‘‘) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি আবূ বকর এবং উমর ইবনু খাত্তাব এ কথা বিশ্বাস করি (ঐ সময়ে তাঁরা দু’জন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। )

 

৩৪০২ আবদান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, একদা আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখতে পেলাম যেখানে বাতিও রয়েছে, আমি কূপ থেকে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করলেন। তারপর বালতিটি ইবনু আবূ কুহাফা (আবূ বকর) নিলেন এবং এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর উমর ইবনু খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গে।। আমি কোন দক্ষ, শক্তিশালী বাহাদুর ব্যাক্তিকে উমরের ন্যায় পানি উঠাতে দেখিনি। অবশেষ মানুষ (তৃপ্ত হয়ে) নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল।

 

৩৪০৩ মুহাম্মদ ইবনু মুতকাতিল (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি গর্বের সাথে পরিহিত কাপড় টাখ্নুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের নযর করবেন না। এ শুনে আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার অজ্ঞাতসারে কাপড়ের একপাশ কোন কোন সময় নীচে নেমে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তো গর্বের সাথে তা করছ না। মূসা (রহঃ) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবদুল্লাহ (রাঃ) কি ‘যে ব্যাক্তি তার লুঙ্গী ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহঃ) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি।

 

৩৪০৪ আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি কোন জিনিসের জোড়া জোড়া আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে (পরকালে) তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে। বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা, এ দরজাই উত্তম। যে ব্যাক্তি (অধিক নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী হবে তাঁকে সালাত (নামায/নামাজ)-এর দরজা দিয়ে প্রবেশের আহবান জানানো হবে। যেব্যাক্তি জিহাদকারী হবে তাকে জিাহাদের দরজা থেকে আহবান করা হবে। যে ব্যাক্তি (অধিক নফল) সা’দকাঁদানকারী হবে, তাকে সা’দকার দরজা দিয়ে ডাকা হবে। যে ব্যাক্তি (অধিক নফল) সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায়কারী হবে তাকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম)রে দরজা বাবুর রাইয়ান থেকে আহবান করা হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, কোন ব্যাক্তিকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে এমনতো অবশ্য জরুরী নয়, তবে কি এরূপ কাউকে ডাকা হবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, আছে। আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, হে আবূ বকর।

 

৩৪০৫ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যখন ওফাত হয়, তখণ আবূ বকর (রাঃ) (সীয় বাসগৃহ) সুন্হ-এ ছিলেন। ইসমাঈল (রাবী) বলেন, সুন্হ মদিনার উঁচু এলাকার একটি স্থানের নাম। (ওফাতের সংবাদ শোনার সাথে সাথে) ওমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, আল্লাহর কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয় নাই। আয়িশা (রাঃ) বলেন, উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, তখন আমার অন্তরে এ বিশ্বাসই ছিল (তাঁর ওফাত হয় নাই) আল্লাহ্ অবশ্যই তাঁকে পুনরায় জীবিত করবেন। এবং তিনি কিছু সংখ্যক লোকের (মুনাফিকের) হাত-পা কেঁটে ফেলবেন। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারা মোবারক থেকে আবরণ সরিয়ে তাঁর ললাটে চুমু খেলেন এবং বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান। আপনি জীবনে মরণে পূত পবিত্র। ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহ্ আপনাকে কখনও দু’বার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করাবেন না। তারপর তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং (উমর (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন) হে হলফকারী, ধৈর্যধারণ কর। আবূ বকর (রাঃ) যখন কথা বলতে লাগলেন, তখন উমর (রাঃ) বসে পড়লেন। আবূ বকর (রাঃ) আল্লাহ্ পাকের হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, যাহা মুহাম্মদ এর ইবাদতকারী ছিলে তারা জেনে রাখ, মুহাম্মদ ইন্তেকাল করেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করতে তারা নিশ্চিত জেনে রাখ আল্লাহ্ চিরঞ্জীব, তিনি অমর। তারপর আবূ বকল (রাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই আপনি মরণশীল আর তারা সকলও মরণশীল্ (৩৯ঃ৩০) আরো তিলওয়াত করলেনঃ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গত হয়েছেন। তাই যদি তিনি মারা যান অথবা তিনি নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। (৩ঃ১৪৪) আল্লাহ্ তাঁর কৃতজ্থ বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। রাবী বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর এ কথাগুলি শুনে সকলই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাবী বলেন, আনসারগণ সাকীফা বনূ সায়িদায়ে সা’দ ইবনু উবাইদা (রাঃ)-এর নিকট সমবেত হলেন এবং বলতে লাগলেন, আমাদের (আনসারদের) মধ্য হতে একজন আমীর হবেন এবং তোমাদের (মুহাজিরদের) মধ্য হতে একজন আমীর হবেন। আবূ বকর (রাঃ), উমর ইবনু খাত্তাব, আবূ উবাইদা ইবনু জাররাহ (রাঃ)-এ তিনজন আনসারদের নিকট গমন করলেন। উমর (রাঃ) কথা বলতে চাইলে, আবূ বকর (রাঃ) তাকে থামিয়ে দিলেন। উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহ কসম, আমি বক্তব্য রাখতে চেয়েছিলা এই জন্য যে, আমি আনসারদের মাহফিলে বলার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে এমন কিছু চমৎকার ও যুক্তিপূর্ণ কথা তৈরী করেছিলাম। যার প্রেক্ষিতে আমার ধারণা ছিল হয়তঃ আবূ বকর (রাঃ)-এর চিন্তা ভাবনা এতটা গভীরে নাও পৌছতে পারে। কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) অত্যমত্ম জোরালো ও যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য পেশ করলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বললেন, আমীর আমাদের (মুহাজিরদের) মধ্য হতে একজন হবেন এবং তোমাদের মধ্য হতে (আনসারদের) হবেন উযীর। তখন হুবাব ইবনু মুনযির (আনসারী) (রহঃ) বললেন, আল্লাহর কসম। আমরা আমরা এরূপ করব না। রবং আমাদের মধ্যে একজন ও আপনাদের মধ্যে একজন আমীর হবেন। কেননা কুরাইশ গোত্র অবস্থানের (মক্কা) দিক দিয়ে যেমন আরবের মধ্যস্থানে, বংশ ও রক্তের দিকে থেকেও তারা তেমনি শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতায় সবার শীর্ষে। “তোমরা উমর (রাঃ) অথবা আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ)-এর হাতে বায়’আত করে নাও। উমর (রাঃ) বলে উঠলেন, আমরা কিন্তু আপনার হাতেই বায়’আত করব। আপনই আমাদের নেতা। আপনই আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আমাদের মাঝে আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয়তম ব্যাক্তি। এ বলে উমর (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বায়’আত করে নিলেন। সাথে সাথে উপস্থিত সকলেই বায়’আত করলেন। তখন জনৈক ব্যাক্তি বলে উঠলেন, আপনারা সা’দ ইবনু উবায়দা (রাঃ)-কে মেরে ফেললেন? উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ তাকে মেরে ফেলেছেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু সালিম আয়িশা (রাঃ) বলেন, ওফাতের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ দু’টি বার বার উপর দিকে উঠছিল এবং তিনি বার বার বলছিলেন, (হে আল্লাহ্) সর্বোচ্চ বন্ধুর (আল্লাহর) সাক্ষাতের আমি আগ্রহী। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আবূ বকর ও উমর (রাঃ)-এর খুত্বা দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা এ চরম মুহুর্তে উম্মতকে রক্ষা করেছেন। উমর (রাঃ) জনগণকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের অমত্মরে কপটতা রয়েছে আল্লাহ্ তাদের ফাঁদ থেকে উম্মতকে রক্ষা করেছেন। এবং আবূ বকর (রাঃ) লোকদিগকে সত্য সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। হক ও ন্যায়ের পথ নির্দেশ করেছেন, তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তারপর সাহাবা কেরাম ও আয়াত পড়তে পড়তে প্রস্থান করেছেনঃ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র। তাঁর পূর্বে বহু রাসুলগণ গত হয়েছেন কৃতজ্ঞ বারান্দের। (৩:১৪৪)।

 

৩৪০৬ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু হানাফীয়া (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাঃ)। আমি বললাম, এর পর কে? তিনি বললেন, উমর (রাঃ)। আমার আশংকা হল যে, এরপর তিনি উসমান (রাঃ) এর নাম বলবেন, তাই (তাঁকে জিজ্ঞাসা না করে) আমি বললাম, তারপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমি তো মুসলিমদের একজন।

 

৩৪০৭ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধ সফরে গিয়েছিলাম। আমরা যখন বায়দা অথাব যাতুল জায়েশ নামক স্থানে গিয়েছিলাম, তখন আমার হারটি গলা থেকে ছিড়ে যায়। হার তালাশ করার জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবস্থান করেন। এজন্য সাহাবীগণও তার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। যেখানে পানি ছিল না এবং তাদের সাথেও পানি ছিল না। তাই সাহাবীগণ আবূ বকর (রাঃ)-এ নিকট এসে বললেন, আপনি কি দেখছেননা, আয়িশা (রাঃ) কি করলেন? তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সঙ্গে সাহাবীগণকে এমন স্থানে অবস্থান করালেন যেখানে পানি নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। তখন আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমচ্ছিলেন। তিনি (আবূ বকর (রাঃ)) আমাকে বলতে লাগলেন, তুমি লাসূলুল্লাহ কে এবং সাহাবীগণকে এমন এক স্থানে আটকিয়ে রেখেছ, যেখানে পানি নেই এবং তাদের সাথেও পানি নেই। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে অনেক ভৎর্সনা করলেন। এক পর্যায়ে তিনি হাত দ্বারা আমার কোমরে খোচা মারতে লাগলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল। রাহ আমার উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে থাকার করণে আমি নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না। এরূপ পানি না থাকা অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোর পর্যন্ত ঘুমিয়ে রইলেন। (ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল অথচ পানির কোন ব্যবস্থা নেই।)তখন আল্লাহ্ পাক তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন এবং সকলেই তাইয়াম্মুম করলেন। উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ) বলেন, হে আবূ বকর (রাঃ)-এর পরিবারবর্গ, এটা আপনাদের প্রথম (একমাত্র) বরকত নয় ; (ইতিপূর্বেও আমরা এ পরিবার দ্বারা আরো বরকত পেয়েছি।)আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমরা সে উটটিকে উঠালাম যে উটের উপর আমি সাওয়ার ছিলাম। তখন হারটি তার নীচে পাওয়া গেল।

 

৩৪০৮ আদম ইবনুু্ আবূ ইয়াস (রহঃ) সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর উম্মতকে লক্ষ্য করে) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পাহাড় সমান স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, তবে তাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণ সাওয়াব হবে না। জরীর আবদুল্লাহ ইবনু দাউদ, আবূ মুয়াবিয়া ও মুহাযির (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় শুবা (রহঃ)-এর অুসরণ করেছেন।

 

৩৪০৯ মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন (রহঃ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) বর্ণিত যে, তিনি একদিন ঘরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে বের হলেন এবং (মনে মনে স্থির করলেন) আমি আজ সারাদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাথে কাটাব, তার থেকে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে গিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খবর নিলেন, সাহাবীগণ বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন। আমিও ঐ পথ ধরে তাঁর অনুগমন করলাম। তাঁর খুঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌছলেন। আমি (কূপে প্রবেশের) দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরী ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর প্রয়োজন (ইস্তিঞ্জা) সেরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দু’টি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন,

আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং ফিরে এসে দরজার বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে, আজ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দারোয়ানরূপে (পাহারাদারের) দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আবূ বকর! আমি বললাম থামুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি) আমি গিয়ে বললাম, ইয়া সাসূলুল্লাহ! আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকর (রাঃ) কে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডানপাশে কূপের কিনারায় বসে দু’পায়ের কাপড় হাটু পর্যন্ত উঠায়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন্যায় কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে (দরজার পাশে) বসে পড়লাম। আমি (ঘর হতে বের হওয়ার সময়) আমার ভাইকে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছে অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সাথে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তাই আমি (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার (ভাইয়ের) মঙ্গল চান তবে তাকে নিয়ে আসুন।

এমন সময় এক ব্যাক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি উমর ইবনু খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে সালাম পেশ করে আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! উমর ইবনু খাত্তাব (ভিতরে আসার) অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে তাকে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে আসলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামপাশে হাটু পর্যন্ত কাপড় উঠায়ে কূপের ভিতর দিকে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। এরপর আর এক ব্যাক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে? তিনি বললেন, আমি উসমান ইবনু আফ্ফান। আমি বললাম, থামুন (আমি অনুমতি নিয়ে আসছি) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করী এর খেদমতে দিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে দাও। তবে (দুনিয়াতে তার উপর) কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললা, ভিতরে আসুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন ; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের কিনারায় খালি জায়গা নাই। তাই তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। শরীক (রহঃ) বলেন, সাঈদ ইবনু মূসা ইয়্যাব (রহঃ) বলেছেন, আমি এর দ্বারা (পরবর্তী কালে) তাদের কবর এরূপ হবে এই অর্থ করছি।

 

৩৪১০ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একবার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, উসমান (রাঃ) ওহোদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। পাহাড়টি (তাঁদেরকে ধারণ করে আনন্দে) নড়ে উঠল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে ওহোদ, স্থির হও। তোমার উপর একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ রয়েছেন।

 

৩৪১১ আহমদ ইবনু সাঈদ আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদা (স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে) আমি একটি কূপ থেকে (বালতি দিয়ে) পানি টেনে তুলছি। তখন আবূ বকর ও উমর (রাঃ) আসলেন। আবূ বকর (রাঃ) আমার হাত থেকে বালতি তার হাতে নিয়ে এক বালতি কি দু’বালতি পানি টেনে তুললেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারপর (উমর) ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বালতি আবূ বকরের হাত থেকে নিলেন, তার হাতে যাওয়ার সাথে সাথে বালতিটি বৃহদাকার হয়ে গেল। কোন শক্তিশালী বাহাদুরকে তার মত পানি উঠাতে আমি দেখিনি। লোকজন তাদের উটগুলিকে তৃপ্তি ভরে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল। ওয়াহাব (রাবী) বলেন, অর্থ উটশালা। এমনকি উটগুলি পানি পানি পানে তৃপ্ত হয়ে বসে পড়ল।

 

৩৪১২ অলীদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমিও ঐ দলের সাথে দু’আয় রত ছিলাম, যারা উমর ইবনু খাত্তাবের জন্য দু’আ করেছিল। তখন তাঁর মরদেহটি খাটের উপর রাখা ছিল। এমন সময় এক ব্যাক্তি হঠাৎ আমার পিছন দিক থেকে তার কনুই আমার কাঁধের উপর রেখে উমর (রাঃ)- কে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ্ আপনার প্রতি রহম করুন। আমি অবশ্য এ আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ্ আপনাকে আপনার উভয় সঙ্গীর সাথেই রাখবেন। কেননা, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বহুবার বলতে শুনেছি, আমি এবং আবূ বকর ও উমর এক সাথে ছিলাম, আমি এবং আবূ বকর ও উমর এ কাজ করেছি। আমি ও আবূ বকর এবং উমর (একসাথে) চলেছি। আমি এ আশাই পোষণ করি যে, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে তাদের উভয়ের সঙ্গেই রাখবেন। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হলেন, আমি ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)।

 

৩৪১৩ মুহাম্মদ ইবনু ইয়াযিদ কুফী (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, মক্কার মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে সর্বাধিক কঠোর আচরণ কি করেছিল? তিনি বললেন, আমি উক্বা উব্ন আবূ মুআইতকে দেখেছি; সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসল যখন তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। সে নিজের চাঁদর দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গলদেশে জড়িয়ে শক্তভাবে চেপে ধরল। আবূ বকর (রাঃ) এসে উকবাকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা কি এমন ব্যাক্তিকে হত্যা করতে চাও, যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহ্ই আমার রব। যিনি তাঁর দাবীর সত্যতার স্বপক্ষে তোমাদের রবের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি (মুজিযা) সঙ্গে নিয়ে এসেছেন?

 

৩৪১৪ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি স্বপ্নে আমাকে দেখতে পেলাম যে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করছি। হঠাৎ আবূ তালহা (রাঃ)-এর স্ত্রী রুমায়সাকে দেখতে পেলাম এবং আমি পদচারণার শব্দও শুনতে পেলাম। তখণ আমি বললা, এই ব্যাক্তি কে? এক ব্যাক্তি বলল, তিনি বিলাল (রাঃ)। আমি একটি প্রাসা’দও দেখতে পেলাম যার আঙ্গিনায় এক মহিলা রয়েছে। আমি বললাম, ঐ প্রাসা’দটি কার? এক ব্যাক্তি বলল, প্রাসা’দটি উমর ইবনু খাত্তাবের (রাঃ)। আমি প্রাসা’দটিতে প্রবেশ করে (সব কিছু) দেখার ইচ্ছা করলাম। তখন তোমার (উমর (রাঃ)) সূক্ষ্মম মর্যাদাবোধের কথা স্মরণ করলাম। উমর (রাঃ) (এ কথা শুনে) বললেন, আমার বাপ-মা আপনার উপর কুরবান, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার কাছেও কি মর্যাদাবোধ প্রকাশ করতে পারি?

 

৩৪১৫ সাঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সময় আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, একবার আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে আমি নিজেকে জান্নাতে দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, একজন মহিলা একটি প্রাসা’দর আঙ্গিনায় (বসে) উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ প্রাসা’দটি কার? ফিরিশ্তাগণ বললেন, তা উমর (রাঃ)-এর। আমি উমর (রাঃ) সূক্ষ্ম মর্যাদা বোধের স্মরণ করে ফিরে এলাম। উমর (রাঃ) (তা শুনে) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আপনার কাছে কি মর্যাদাবোধ দেখাব ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম?

 

৩৪১৬ মুহাম্মদ ইবনু সালত আবূ জাফর-কুফী (রহঃ) হামযা (রহঃ)-এর পিতা (আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। (স্বপ্নে) দুধ পান করতে দেখলাম যে তৃপ্তির চিহ্ন যেন আমার নখগুলির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। তারপর দুধ (পান করার জন্য) উমর (রাঃ)-কে দিলাম। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যাখ্যা দিচ্ছেন? তিনি বললেন, ইল্‌ম।

 

৩৪১৭ মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, একটি কূপের পারে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবূ বকর (রাঃ) এসে এক বালতি বা দু’বালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাঁর দুর্বলতা ছিল আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করুন। তারপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এলেন। বালতিটি তাঁর হাতে গিয়ে বৃহদাকারে পরিণত হল। তাঁর মত এমন বলিষ্ঠভাবে পানি উঠাতে আমি কোন বাহাদুরকেও দেখিনি। এমনকি লোকেরা পরিতৃপ্তির সঙ্গে পানি পান করে আবাসে বিশ্রাম নিল। ইবনু জুবাইর (রাঃ) বলেন, হল উন্নত মানের সুন্দর বিছানা। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, হল মখমলের সূক্ষ্ম সূতার তৈরী বিছানা। অর্থ প্রসারিত। আর হল গোত্র নেতা।

 

৩৪১৮ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ ও আলী ইবনু আবূদল্লহি (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বুর্ণিত, তিনি বলেন, একবার উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কুরাইশের কতিপয় মহিলা কথা বলছিলেন এবং তাঁরা বেশী পরিমাণ দাবী-দাওয়া করতে গিয়ে তাঁর আওয়াজের চেয়ে তাদের আওয়াজ উচ্চকণ্ঠ ছিল। যখন উমর ইবনু খাত্তাব প্রবেশের অনুমতি চাইলেন তখন তাঁরা (মহিলাগণ) উঠে দ্রুত পর্দার অন্তরালে চলে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। আর উমর (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে হাঁসছিলেন। উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ আপনাকে সদা হাস্য রাখুন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলাদের কান্ড দেখে আমি অবাক হচ্ছি, তাঁরা আমার কাছে ছিল, অথচ তোমার আওয়াজ শোনা মাত্র তারা সব দ্রুত পর্দার অন্তরালে চলে গেল। উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম াল্লহ, আপনাকেই- অধিক ভয় করা উচিত। তারপর উমর (রাঃ) ঐ মহিলাগণকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে নিজ ক্ষতিসাধনকারী মহিলাগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর, অথচ আল্লাহর রাসূল কে ভয় কর না? তারা উত্তরে বললেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক রূঢ় ভাষী ও কঠিন হৃদয়ের। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ ঠিকই হে ইবনু খাত্তাব! যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম, শয়তান যখনই কোন পথে তোমাকে দেখতে পায় তখনই তোমার ভয়ে এ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলে যায়।

 

৩৪১৯ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন উমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন, সেদিন থেকে আমরা অতিশয় বলবান ও মর্যাদাশীল হয়ে আসছি।

 

৩৪২০ আবদান (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তোলে নেয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দু’আ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার কাঁধের উপর হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী (রাঃ)। তিনি উমর (রাঃ)-এর জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতের দু’আ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমর, আমার জন্য আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় এমন কোন ব্যাক্তি আপনি রেখে যাননি, যার আমলের অনুসরণ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহর কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ আপনাকে (জান্নাতে) আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সাথে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি বহুবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বকর ও উমর গেলাম। আমি, আবূ বকর ও উমর প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবূ বকর ও উমর বের হলাম ইত্যাদি।

 

৩৪২১ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহোদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবূ বকর ও উসমান (রাঃ)। তাদেরকে (ধারণ করতে পেরে) নিয়ে পাহাড়টি (আনন্দে) নেচে উঠল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়কে পায়ে আঘাত করে বললেন, হে ওহোদ, স্থির হও। তোমার উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদ্দীক ও শহীদ ব্যতীত অন্য কেউ নেই।

 

৩৪২২ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে উমর (রাঃ)-এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি ইবনু উমর (রাঃ)) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের পরে কাউকে (এসব গুণের অধিকারী) আমি দেখিনি। তিনি (উমর (রাঃ)) অত্যন্ত দৃড়চিত্ত দানশীল ছিলেন। এসব গুণাবলী যেন উমর (রাঃ) পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে।

 

৩৪২৩ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন, তুমি কিয়ামতের জন্য কি (পাথেয়) সংগ্রহ করেছ? সে বলল, কোন কিছুই সংগ্রহ করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) কে (আন্তরিকভাবে) মহববত করি। তখন তিনি বললেন, তুমি (কিয়ামতের দিন) তাঁদের সাথেই থাকবে যাঁদেরকে তুমি মহাববত কর। আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা দ্বারা আমরা এত আনন্দিত হয়েছি যে, অন্য কোন কথায় এত আনন্দিত হইনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মহববত করি এবং আবূ বকর ও উমর (রাঃ) কেও। আশা করি তাঁদেরকে আমার মহববতের কারণে তাদের সাথে জান্নাতে বসবাস করতে পারব; যদিও তাঁদের আমলের মত আমল করতে পারিনি।

 

৩৪২৪ ইয়াহইয়া ইবনু কাযাআ‘ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের মধ্যে অনেক মুহাদ্দাস (যার অন্তরে সত্য কথা অবতীর্ণ হয়) ব্যাক্তি হলেন। আমার উম্মতের মধ্যে যদি কেউ মুহাদ্দাস হন তবে সে ব্যাক্তি উমর। যাকারিয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী বনী ইসরাঈলের মধ্যে এমন কতিপয় লোক ছিলেন, যাঁরা নভী ছিলেন না বটে তবে ফিরিশতাগণ তাঁদের সাথে কথা বলতেন। আমর উম্মতে এমন কোন লোক হলে সে হবে উমর (রাঃ)। ইবনু আববাস (রাঃ) (কুরআনের আয়াতে) অতিরিক্ত বলেছেন।

 

৩৪২৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একদিন এক রাখাল তার বকরীর পালের সাথে ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ পেল আক্রমন করে একটি বকরী নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে বকরীকে উদ্ধার করে আনল। তখন বাঘ রাখালকে বলল, যকন আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকবেনা তখন হিংস্রে জন্তুদের আক্রমণ থেকে তাদেরকে কে রক্ষা করবে? (তা শুনে) সাহাবীগণ বললেন, সুবহানালাল্লাহ। (বাঘ কথা বলে) কথন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তা বিশ্বাস করি এবং আবূ বকর ও উমরও বিশ্বাস করে। অথচ তাঁরা কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

 

৩৪২৬ ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। (স্বপ্নে) দেখতে পেলাম, অনেক লোককে আমার সামনে উপস্থিত করা হল। তাদের গায়ে (বিভিন্ন রকমের) জামা ছিল। কারো কারো জামা এত ছোট ছিল যে, কোন প্রকারে বুক পর্যন্ত পৌছেছে। আবার কারো জামা এর চেয়ে ছোট ছিল। আর উমর (রাঃ)-কেও আমার সামনে পেশ করা হল। তাঁর শরীরে এত লম্বা জামা ছিল যে, সে জামাটি হিঁচড়াইয়া চলতেছিল। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি এ স্বপ্নের কি তাবীর (ব্যাখ্যা) করলেন। তিনি বললেন, দ্বীনদারী (ধর্মপরায়ণতা)।

 

৩৪২৭ সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন উমর (রাঃ) (আবূ লুলু গোলামের খঞ্জরের আঘাতে) আহত হলেন, তখন তিনি বেদনা অনুভব করছিলেন। তখন তাঁকে সান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলতে লাগলেন, হে আমীরুল মু‘মিনীন, এ আঘাত জনিত কারণে (আল্লাহ না করুন) যদি আপনার কিছু (মৃত্যু) ঘঠে (তাতে চিন্তা-ভাবনা) বা দুঃখের কোন কারণ নেই)। আপনি তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর সাহচর্যের হক উত্তমরূপে আদায় করেছেন। এরপর (তাঁর থেকে) আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। তারপর আপনি আবূ বকর (রাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেন এবং এর হকও উত্তমরূপে আদায় করেন। এরপর (তাঁর থেকে) আপনি এ অবস্থায় পৃথক হয়েছেন যে, তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। তারপর আপনি (খলীফা মনোনীত হয়ে) সাহাবা কেরামের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাদের হকও উত্তমরূপে আদায় করেছেন। যদি আপনি তাদের থেকে পৃথক হয়ে পড়েন তবে আপনি অবশ্যই তাদের থেকে এমন অবস্থায় পৃথক হবেন যে তাঁরাও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য ও সন্তুষ্টি লাভ সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছ, তাতো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, যা তিনি আমার প্রতি করেছেন। এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর সাহচর্য ও সন্তুষ্টি লাভের ব্যাপারে যা তুমি উল্লেখ করেছ তাও একমাত্র মহান আল্লাহর অনুগ্রহ যা তিনি আমার উপর করেছেন। আর আমার যে অস্থিরতা তুমি দেখেছ তা তোমার এবং তোমার সাথীদের কারণেই। আল্লাহর কসম, আমার নিকট যদি দুনিয়া ভর্তি স্বর্ণ থাকত তবে আল্লাহর আযাব দেখার পূর্বেই তা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিদয়া হিসাবে এসব বিলিয়ে দিতাম। হাম্মাদ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশ করলাম ।

 

৩৪২৮ ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদিনার কোন একটি বাগানের ভিতর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ)। তাঁকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর আরেক ব্যাক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বলল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জন্নাতের সুসংবাদ দাও। (রাবী বলেন) আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখতে পেলাম যে, তিনি উমর (রাঃ)। তাকে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত সুসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর আর একজন দরজা খুলে দেয়ার জন্য বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। কিন্তু তার উপর কঠিন বিপদ আসবে। (দরজা খুলে) দেখলাম যে, তিনি উসমান (রাঃ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, আমি তাকে তা বলে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন আর বললেন, আল্লাহই সাহায্যকারী।

 

৩৪২৯ ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর হাত ধরা অবস্থায় ছিলেন।

 

৩৪৩০ সুলায়মান ইবনু হার্ব (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাগানে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের দরজা পাহাড়া দেওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করলেন। তখন এক ব্যাক্তি এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আসতে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি (দরজা খুলে) দেখলাম যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ)। তারপর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, তাঁকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। (দরজা খুলে) দেখতে পেলেন, তিনি উমর (রাঃ)। তার পর আর একজন এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পরে বললেন, তাঁকেও প্রবেশের অনুমতি দাও এবং অচিরেই তাঁর উপর বিপদ আসবে। একথাটির সাথে জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। (দরজা খুলে) দেখতে পেলাম যে, তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)। হাম্মাদ (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। আসিম (রহঃ) (একজন রাবী) উক্ত বর্ণনায় আরো বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাগানের এমন এক জায়গায় বসাছিলেন যেখানে পানি ছিল এবং তাঁর হাঁটু অথবা এক হাঁটুর উপর অতিরিক্ত ছিলনা। যখন উসমান (রাঃ) আসলেন তখন হাঁটু কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেললেন।

 

৩৪৩১ আহমদ ইবনু শাবীব ইবনু সাঈদ (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মিসওয়ার ইবনু মাখরামা ও আবদুর রাহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুস (রহঃ) আমাকে বললেন যে, ইসমান (রাঃ)-এর সাথে তাঁর (বৈপিত্রিয় ভাই) অলীদের বিষয় আলোচনা করতে তোমাকে কি সে বাঁধা দেয়? জনগণ তার সম্পর্কে নানারূপ কথাবার্তা বলছে। উসমান (রাঃ) যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে গিয়ে বললাম, আপনার সাথে আমার একটি প্রয়োজন আছে এবং তা আমি আপনার কল্যাণের জন্যই বলবো। উসমান (রাঃ) বললেন, ওহে, আমি তোমা থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাচ্ছি। আমি তাদের কাছে ফিরে আসলাম। তৎক্ষণাৎ উসমান (রাঃ)-এর দূত এস হাযির হল। আমি তার খেদমতে গেলাম। তিনি (আমাকে দেখে) বললেন, বল, তোমার নসিহত (উপদেশ) কি? আমি বললাম, আল্লাহ মুহাম্মদ -কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। কুরআনে তাঁর উপর অবতীর্ণ করেছেন। আপনি ঐ সকল (মহামানব) এর অন্যতম যাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর আহবানে সাড়া দিয়েছেন। আপনি (হাবসা ও মদিনা) উভয় (স্থানে) হিজরত করেছেন এবং আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর চরিত্র মাধুর্য প্রত্যক্ষ করেছেন। (আপনার ভাই) অলীদ সম্পর্কে জনগণ নানারূপ কথাবার্তা বলাবলি করছে। (সে বিষয় অতি সত্বর ব্যবস্থা করা কর্তব্য)। উসমান (রাঃ) আমাকে বললেন তুমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাক্ষাত লাভ করেছ? আমি বললাম না। তবে তাঁর ইল্‌ম আমার পর্দানীশীন কুমারীগণের কাছে যখন পৌছেছে তখন আমার কাছে অবশ্যই পৌছেছে। উসমান (রাঃ) হামদ ও সানা বর্ণনা করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর ডাকসোড়া দানকারীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। তাঁর আনীত শরীয়তের উপর আমিও ঈমান এনেছি। হাবসা এবং মদিনায়) আমি উভয় হিজরত করেছি, যেমন তুমি বলছ। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বয়’আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁর নাফরমানী করি নি ও তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। অবশেষে আল্লাহ তাঁর রাসূল) কে দুনিয়া হতে নিয়ে গিয়েছেন। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এর সাথে অনুরূপ সম্পর্ক ছিল। এরপর উমর (রাঃ) এর সঙ্গেও অনুরূপ সম্পর্ক ছিল। তারপর আমার কাঁধে খিলাফতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমার কি ঐ সকল অধিকার নেই যা তাঁদের ছিল? আমি বললাম হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তোমাদের পক্ষ থেকে কী সব কথাবার্তা আমার নিকট পৌছেছে? অবশ্য অলীদ সম্পর্কে তুমি যা বলছ অতি সত্বর আমি সে সম্পর্কে সঠিক পদক্ষেপ নিব। এ বলে তিনি আলী (রাঃ) কে ডেকে এনে অলীদকে বেত্রাঘাত করার জন্য আদেশ দিলেন। আলী (রাঃ) তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করলেন।

 

৩৪৩২ মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ইবনু বাযী’ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যামানায় (মর্যাদায়) আবূ বকর (রাঃ)-এর সমকক্ষ কাউকে মনে করতাম না, তারপর উমর (রাঃ) কে তারপর উসমান (রাঃ) কে (মর্যাদা দিতাম) তারপর সাহাবাগণের মধ্যে কাউকে কারও উপর প্রাধান্য দিতাম না। আবদুল্লাহ ইবনু সালিহ (রহঃ) আবদুল আযীয (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় শাযান (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩৪৩৩ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উসমান ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক মিসরবাসী মক্কায় এসে হাজ্জ (হজ্জ) সম্পাদন করে দেখতে পেল যে, কিছু সংখ্যক লোক একত্রে বসে আছে। সে বলল, এ লোকজন কারা? তাকে জানানো হল এরা কুরাইশ বংশের লোকজন। সে বলল, তাদের মধ্যে ঐ শায়েখ ব্যাক্তিটি কে? তারা বললেন, ইনি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)। সে ব্যাক্তি (তাঁর নিকট এসে) বলল, হে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ), আমি আপনাকে একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব; আপনি আমাকে বলুন, (১) আপনি কি এটা জানেন যে, উসমান (রাঃ) ওহোদ যুদ্ধ (চলাকালে) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়েগিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। (২) সে বলল, আপনি জানেন কি উসমান (রাঃ) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনু উমর (রাঃ) উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। (৩) আপনি জানেন কি বায়’আতে রিযওয়ানে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলে উঠল, আল্লাহু আকবার। ইবনু উমর (রাঃ) তাকে বললেন, এস, তোমাকে প্রকৃত ঘটনা বলে দেই। উসমান (রাঃ)-এর ওহোদ যুদ্ধ থেকে পালিয়েযাওয়া সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন ও ক্ষমা করে দিয়েছেন। (কুরআনে কারীমে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে) আর তিনি বদর যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্যা তাঁর স্ত্রী (রোকাইয়া (রাঃ)) রোগগ্রস্ত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, বদরে অংশ গ্রহণকারী ব্যাক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব ও গণীমতের অংশ মিলবে। আর বায়’আত রিযওয়ান থেকে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হল, মক্কার বুকে তাঁর (উসমান (রাঃ)) চেয়ে সম্ভ্রান্ত, অন্য কেউ যদি থকতো তবে তাকেই তিনি উসমানের পরিবর্তে পাঠাতেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান (রাঃ) কে মক্কায় প্রেরেণ করেন। এবং তাঁর চলে যাওয়ার পর বায়’আতে রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতের প্রতি ঈঙ্গিত করে বললেন, এটি উসমানের হাত। তারপর ডান বাম হাতে স্থাপন করে বললেন যে, এ হল উসমানের বায়’আত। ইবনু উমর (রাঃ) ঐ (মিসরীয়) লোকটিকে বললেন, তুমি এস এই জবাব নিয়ে যাও।

 

৩৪৩৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহোদ পাহাড়ে আরোহণ করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর (রাঃ), উমর ও উসমান (রাঃ)। তাঁদেরকে পেয়ে পাহাড়টি (আনন্দে) কেঁপে উঠল। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওহোদ স্থির হও। (আনাস (রাঃ) বলেন) আমার মনে হয় তিনি পা দিয়ে পাহাড়কে আঘাত করলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার উপর একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও একজন সিদ্দীক ও দু’জন শহীদ ব্যতীত আর কেউ নেই।

 

৩৪৩৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে আহত হওয়ার কিছুদিন পূর্বে মদিনায় দেখেছি যে তিনি হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাঃ) ও উসমান ইবনু হুনায়ফ (রহঃ) এর নিকট দাঁড়িয়ে তাঁদে কে লক্ষ্য করে বলেছেন, (ইরাক বাসীর উপর কর ধার্যের ব্যাপারে) তোমরা এটা কী করলে? তোমরা কী আশঙ্কা করছ যে তোমরা ইরাক ভূমির উপর যে কর ধার্য করেছ তা বহনে ঐ ভূখন্ড অক্ষম? তারা বললেন, আমরা যে পরিমাণ কর ধার্য করেছি, ঐ ভূ-খন্ড তা বহনে সক্ষম। এতে অতিরিক্ত কোন বোঝা চাপান হয়নি। তখন উমর (রাঃ) বললেন, তোমরা পুনঃচিন্তা করে দেখ যে তোমরা এ ভূখন্ডের উপর যে কর আরোপ করেছ তা বহনে সক্ষম নয়? বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা বললেন, না (সাধ্যাতীত কর আরোপ করা হয় নি) এরপর উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তবে ইরাকের বিধবাগণকে এমন অবস্থায় রেখে যাব যে তারা আমরার পরে কখনো অন্য কারো মুখাপেক্ষী না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর চতুর্থ দিন তিনি (ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন। যেদিন প্রত্যুষে তিনি আহত হন, আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না। উমর (রাঃ) (সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করার প্রাক্কালে) দু’কাতারের মধ্যে দিয়ে চলার সময় বলতেন, কাতার সোজা করে নাও। যখন দেখতেন কাতারে কোন ত্রুটি নেই তখন তাকবীর বলতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সূরা ইউসূফ, সূরা নাহল অথবাএ ধরনের (দীর্ঘ) সূরা (ফজরের) প্রথম রাক’আতে তিলাওয়াত করতেন, যেন অধিক পরিমাণে লোক প্রথম রাকআতে শরীক হতে পারেন। (সেদিন) তাকবীর বলার পরেই আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, একটি কুকুর আমাকে আঘাত করেছে অথবা বললেন, আমাকে আক্রমণ করেছে। ঘাতক ‘‘ইলজ’’ দ্রুত পলায়নের সময় দু’ধারী খঞ্জর দিয়ে ডানে বামে আঘাত করে চলছে। এভাবে তের জনকে আহত করল। এদের মধ্যে সাতজন শহীদ হলেন। এ অবস্থা দৃষ্টে এক মুসলিম তার লম্বা চাঁদরটি ঘাতকের উপর ফেলে দিলেন। ঘাতক যখন বুঝতে পারল সে ধরা পড়ে যাবে তখন সে আত্মহত্যা করল। উমর (রাঃ) আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এর হাত ধরে আগে এগিয়ে দিলেন। উমর (রাঃ) এর নিকটবর্তী যারা ছিল শুধুমাত্র তারাই ব্যপারটি দেখতে পেল। আর মসজিদের প্রান্তে যারা ছিল তারা ব্যাপারটি এর বেশী বুঝতে পারল না যে উমর (রাঃ) এর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না। তাই তারা ‘‘সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ’’ বলতে লাগলেন। আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। যখন মুসল্লীগণ চলে গেলেন, তখন উমর (রাঃ) বললেন, হে ইবনু আববাস (রাঃ) দেখ তো কে আমাকে আঘাত করল। তিনি কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে এস বললেন, মুগীরা ইবনু শো’বা (রাঃ) এর গোলাম (আবূ লুলু)। উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ কারীগর গোলামটি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। আমি তার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমার মৃত্যু ইসলামের দাবীদার কোন ব্যাক্তির হাতে ঘটান নি। হে ইবনু আববাস (রাঃ) তুমি এবং তোমার পিতা মদিনায় কাফির গোলামের সংখ্যা বৃদ্ধি পছন্দ করতে। আববাস (রাঃ) এর নিকট অনেক অমুসলিম গোলাম ছিল। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, যদি আপনি চান তবে আমি কাজ করে ফেলি অর্থাৎ আমি তাদেরকে হত্যা করে ফেলি। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি ভুল বলছ। (তুমি তা করতে পার না) কেননা তারা তোমাদের ভাষায় কথা বলে তোমাদের কেবলামুখী হয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, তোমাদের ন্যায় হাজ্জ (হজ্জ) করে। তারপর তাঁকে তাঁর ঘরে নেয়া হল। আমরা তাঁর সাথে চললাম। মানুষের অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, ইতপিূর্বে তাদের উপর এতবড় মুসীবত আর আসেনি। কেউ কেউ বলছিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আবার কেউ বলছিলেন, আমি তাঁর সম্পর্কে আশংকাবোধ করছি। তারপর খেজুরের শরবত আনা হল তিনি তা পান করলেন। কিন্তু তা তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়ল। এরপর দুধ আনা হল, তিনি তা পান করলেন; তাও তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়ল। তখন সকলই বুঝতে পারলেন, মৃত্যু তাঁর অবশ্যম্ভাবী। আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। অন্যান্য লোকজনও আসতে শুরু করল। সকলেই তার প্রশংসা করতে লাগল। তখন যুবক বয়সী একটি লোক এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন। আপনার জন্য আল্লাহর সু-সংবাদ রয়েছে; আপনি তা গ্রহণ করুন। আপনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগেই আপনি তা গ্রহণ করেছেন, যে সম্পর্কে আপনি নিজেই অবগত আছেন তারপর আপনি খলীফা হয়ে ন্যায বিচার করেছেন। তারপর আপনি শাহাদাত লাভ করেছেন। উমর (রাঃ) বললেন, আমি পছন্দ করি যে তা আমার জন্য ক্ষতিকর বা লাভজনক না হয়ে সমান হয়ে যাক। যখন যুবকটি চলে যেতে উদ্যত হল তখন তার (পরিহিত) লঙ্গিটি মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছিল। (এ দেখে) উমর (রাঃ) বললেন, যুবকটিকে আমার নিকট ডেকে আন। (ছেলেটি আসল) তিনি বললেন- হে ভাতিজা, তোমার কাপড়টি উঠিয়ে নাও। এটা তোমার কাপড়ের পরিচ্ছিন্নতার উপর এবং তোমার রবের নিকটও পছন্দনীয়। (তারপর তিনি বললেন) হে আবদুল্লাহ ইবনু উমর তুমি হিসাব করে দেখ আমার ঋণের পরিমাণ কত। তাঁরা হিসাব করে দেখতে পেলেন ছিয়াশি হাজার (দিরহাম) বা এর কাছাকাছি। তিনি বললেন, যদি উমরের পরিবার পরিজনের মাল দ্বারা তা পরিশোধ হয়ে যায়, তবে তা দিয়ে পরিশোধ করে দাও। অন্যথায় আদি ইবনু কা’ব এর বংশধরদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ কর। তাদের মাল দিয়েও যদি ঋণ পরিশোধ না হয় তবে কুরাইশ কবিলা থেকে সাহায্য গ্রহণ করবে এর বাহিরে কারো সাহায্য গ্রহণ করবে না। আমার পক্ষ থেকে তাড়াতাড়ি ঋণ আদায় করে দাও। উম্মূল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) এর খেদমতে তুমি যাও এবং বল উমর আপনাকে সালাম পাঠিয়েছে। আমীরুল মু’মিনীন, শব্দটি বলবে না। কেননা এখন আমি মু’মিনগণের আমীর নই। তাঁকে বল উমর ইবনু খাত্তাব তাঁর সাথীদ্বয়ের পাশে দাফন হওয়ার অনুমতি চাচ্ছেন। ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর খেদমতে গিয়ে সালাম জানিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি বললেন, প্রবেশ কর, তিনি দেখলেন, আয়িশা (রাঃ) বসে বসে কাঁদছেন। তিনি গিয়ে বললেন, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আপনাকে সালাম পাঠিয়েছেন এবং তাঁর সাথীদ্বয়ের পাশে দাফন হওয়ার অনুমতি চেয়েছেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, তা আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু আজ আমি এ ব্যপারে আমার উপরে তাঁকে অগ্রাধিকার প্রদান করছি। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) যখন ফিরে আসছেন তখন বলা হল- এই যে আবদুল্লাহ ফিরে আসছে। তিনি বললেনম আমাকে উঠিয়ে বসাও। তখন এক ব্যাক্তি তাকে ঠেস দিয়ে বসিয়ে ধরে রাখলেন। উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, কি সংবাদ? তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, আপনি যা আকাঙ্ক্ষা করেছেন, তাই হয়েছে, তিনি অনুমতি দিয়েছেন। উমর (রাঃ) বললেন, আলহামদুল্লিাহ। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আমার নিকট ছিল না। যখন আমার ওফাত হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠিয়ে নিয়ে, তাঁকে (আয়িশা (রাঃ)) আমার সালাম জানিয়ে বলবে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। যদি তিনি অনুমতি দেন, তবে আমাকে প্রবেশ করাবে আর যদি তিনি অনুমতি না দেন তবে আমাকে মাধারণ মুসলমানদের গোরস্থানে নিয়ে যাবে। এ সময় উম্মূল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ) কে কতিপয় মহিলাসহ আসতে দেখে আমরা উঠে পড়লাম। হাফসা (রাঃ) তাঁর কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদলেন। তারপর পুরুষগণ এস প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি ঘরের ভিতর চলে (গেলেন) ঘরের ভেতর হতেও আমরা তাঁর কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, আপনি ওয়াসিয়াত করুন এবং খলীফা মনোনীত করুন। উমর (রাঃ) বললেন, খিলাফতের জন্য এ কয়েকজন ব্যতীত অন্য কাউকে আমি যোগ্যত পাচ্ছিনা, যাঁদের প্রতিনিবী তার ইন্তেকালের সময় রাযী ও খুশী ছিলেন। তারপর তিনি তাদের নাম বললেন, আলী, উসমান, যুবায়র, তালহা, সা’স ও আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এবং বললেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তোমাদের সাথে থাকবে। কিন্তু সে খিলাফত লাভ করতে পারবে না। তা ছিল শুধু সান্তনা হিসাবে। যদি খিলাফতের দায়িত্ব সা’দর (রাঃ) উপর ন্যাস্ত করা হয় তবে তিনি এর জন্য যোগ্যতম ব্যাক্তি। এর যদি তোমাদের মধ্যে অন্য কেউ খলীফা নির্বাচিত হন তবে তিনি যেন সর্ব বিষয়ে সা‘দের সাহায্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেন। আমি তাঁকে (কুফার গভর্নরের পদ থেকে) অযোগতা বা খিয়ানতের কারণে অপসারণ করি না। আমার পরে (নির্বাচিত) খলীফাকে আমি ওয়াসিয়াত করছি, তিনি যেন প্রথম যুগের মুহাজিরগণের হক সম্পর্কে সচেতন থাকেন, তাদের মান-সম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। এবং আমি তাঁকে আনসার সাহাবীগণের যাঁরা মুহাজিরগণের আগমনের পূর্বে এই নগরীতে (মদিনায়) বসবাস করে আসছিলেন এবং ঈমান এনেছেন, তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওয়াসিয়াত করছি যে তাঁদের মধ্যে নেককারগণের ওযর আপত্তি যেন গ্রহণ করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে কারোর ভুলত্রুটি হলে তা যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। আমি তাঁকে এ ওয়াসিয়াতও করছি যে, তিনি যেন রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কেরন। কেননা তাঁরাও ইসলামের হেফাযতকারী। এবং তারাই ধন-সম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের থেকে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের সহিত সদ্ব্যবহার করারও ওয়াসিয়ত করছি। কেননাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর জিম্মীদের (অর্থাৎ সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়) বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদে সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা কোন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবিলম্বে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিযিয়া (কর) যেন চাপানো না হয়। উমর (রাঃ) এর ইন্তেকাল হয়ে গেলে আমরা তাঁর লাশ নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) কে সালাম করলেন এবং বললেন, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি (আয়িশা (রাঃ)) বললেন, তাকে প্রবেশ করাও। এরপর তাঁকে প্রবেশ করান হল এবং তাঁ সঙ্গীদ্বয়ের পার্শ্বে দাফন করা হল। যখন তাঁর দাফন সম্পন্ন হল, তখন ঐ ব্যাক্তিবর্গ একত্রিত হলেন। তখন আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, তোমরা তোমাদের বিষয়টি তোমাদের মধ্য থেকে তিনজনের উপর ছেড়ে দাও। তখন যুবায়ন (রাঃ) বললেন, আমি, আমরা বিষয়টি আলী (রাঃ) এর উপর অর্পণ করলাম। তালহা (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি উসমান (রাঃ) এর উপর ন্যাস্ত করলাম। সা‘দ (রাঃ) বললেন, আমার বিষয়টি আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এর উপর ন্যাস্ত করলাম। তারপর আবদুর রহমান (রাঃ), উসমান ও আলী (রাঃ) কে বললেন, আপনাদের দু’জনের মধ্য থেকে কে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে ইচ্ছা করেন? (একজন অব্যাহতি দিলে) এ দায়িত্ব অপর জনার উপর অর্পণ করব। আল্লাহ ও ইসলামের হক আদায় করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব হবে। কে অধিকতর যোগ্য সে সম্পর্কে দু’জনেরই চিন্তা করা উচিৎ। ব্যাক্তিদ্বয় (উসমান ও আলী (রাঃ)) নীরব থাকলেন। তখন আবদুর রাহমান (রাঃ) নিজেই বললেন, আপনারা এ দায়িত্ব আমার উপর ন্যাস্ত করতে পরেন কি? আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আপনাদের মধ্যকার যোগ্যতম ব্যাক্তিকে নির্বাচিত করতে একটুও ত্রুটি করব না। তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। তাদের একজনের (আলী (রাঃ)-এর) হাত ধরে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আপনার যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ত এবং ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামীতা রয়েছো আপনিও ভালভাবে জানেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এটা আপনার জন্য জরুরী হবে যে যদি আপনাকে খলীফা মনোনীত করি তাহলে আপনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আর যদি উসমান (রাঃ) কে মনোনিত করি তবে আপনি তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত থাকবেন। তারপর তিনি অপরজনের (উসমানের (রাঃ)) সঙ্গে একান্তে অনুরূপ কঅত বললেন। এভাবে অঙ্গীকার গ্রহণ করে, তিনি বললেন, হে উসমান (রাঃ) আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। তিনি (আবদুর রহমান (রাঃ), তাঁর হাতে বায়’আত করলেন। তারপর আলী (রাঃ) তাঁর (উসমান রাঃ) এর বায়’আত করলেন)। এরপর মদিনাবাসীগণ অগ্রসর হয়ে সকলেই বায়’আত করলেন।

 

৩৪৩৬ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রাঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে, পতাকা তাকে দেয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু’আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিলনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে দুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম।

 

৩৪৩৭ কুতায়বা (রাঃ) সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যান নি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেড়িয়ে পড়লেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সান্ধ্যায়) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে এমন এক ব্যাক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) কে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করাবেন। তারপর আমরা দেখতে পেলাম তিনি হলেন আলী (রাঃ), অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করি নি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী (রাঃ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা বিজয় দিলেন।

 

৩৪৩৮ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, মদিনার অমুক আমীর মিম্বরের নিকটে বসে আলী (রাঃ) সম্পর্কে অপ্রিয় কথা বলছে। তিনি বললেন, সে কি বলছে? সে বলল, সে তাকে আবূ তুরাব (রাঃ) বলে উল্লেখ করছে। সাহল (রাঃ) (একথা শুনে) হেসে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, তাঁর এ নাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই রেখে ছিলেন। এ নাম অপেক্ষা তাঁর নিকট অধিক প্রিয় আর কোন নাম ছিল না। আমি (নাম রাখার) ঘটনাটি জানার জন্য সাহল (রাঃ) এর আগ্রহ প্রকাশ করলাম এবং তাকে বললাম, হে আবূ আববাস, এটা কিভাবে হয়েছিল। তিনি বললেন, (একদিন) আলী (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এস মসজিদে শুয়ে রইলেন। (অল্পক্ষণ পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই (আলী) কোথায়? তিনি বললেন, মসজিদে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ে তাঁর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। পরে তিনি তাঁকে এমন অবস্থায় পেলেন যে তাঁর চাঁদর পিঠ থেকে সরে গিয়েছে। তাঁর পিঠে ধূলা-বালি লেগে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিঠ থেকে ধুলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে লাগলেন, উঠে বস হে আবূ তুরাব। এ কথাটি তিনি দু’বার বলেছিলেন।

 

৩৪৩৯ মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) সা’দ ইবনু উবাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ইবনু উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে উসমান (রাঃ) এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করল। তিনি উসমান (রাঃ)-এর কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন। ইবনু উমর (রাঃ) ঐ ব্যাক্তিকে বললেন, মনে হয় এটা তোমার কাছে খারাপ লাগছে। সে বলল, হাঁ। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ (তোমাকে) অপমানিত করুন! তারপর সে ব্যাক্তি আলী (রাঃ) এর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি তাঁরও কতিপয় ভাল গুণ বর্ণনা করলেন এবং বললেন, ঐ দেখ। তাঁর ঘরটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরগুলির মেধ্য অবস্থিত এরপর তিনি বললেন, মনে হয় এসব কথা শুনতে তোমার খারাপ লাগছে। সে বলল, হাঁ। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। যাও আমার বিরুদ্ধে তোমার শক্তি ব্যয় কর।

 

৩৪৪০ মুহাম্মাদ ইবনু মাশ্শার (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদিন (আমার নিকট) অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমা (রাঃ) (এক জন গোলাম পাওয়ার আশা নিয়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে, আয়িশা (রাঃ) এর কাছে তাঁর কথা বলে আসলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমা (রাঃ) এর আগমন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ) তাঁকে অবহিত করলেন। (&আলী (রাঃ) বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝখানে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর পদদ্বয়ের শীতলতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, আমি কি তোমরা যা চেয়েছিলে তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিবনা? (তা হল) তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার ‘‘আল্লাহু আকবার’’ তেত্রিশবার ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ তেত্রিশবার ‘‘আল্ হামদুলিল্লাহ’’ পড়ে নিবে। এটা খাদিম (যা তোমরা চেয়েছিলে) অপেক্ষা অনেক উত্তম।

 

৩৪৪১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের প্রাক্কালে) আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন, তুমি কি এতসেন্তুষ্ট নও যে, যেভাবে হারূন আলাইহি ওয়া সাল্লাম মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করেছিলেন, তুমিও আমার নিকট সেই মর্যাদা লাভ কর।

 

৩৪৪২ আলী ইবনুল জা‘দ (রহঃ) আলী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা পূর্ব থেকে যেভাবে ফয়সালা করে আসছ সেভাবেই কর কেননা পারস্পরিক বিবাদ আমি অপছন্দ করি। যেন সকল লোক এক দল ভুক্ত হয়ে থাকে। অথবা আমি এমতাবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হই যেভাবে আমার সাথীগণ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। (মুহাম্মদ) ইবনু সীরীন (রহঃ) এ ধারণা পোষণ করতেন যে, আলী (রাঃ) এর (১ম খলীফা হওয়া সম্পর্কে) যে সব কথা তার থেকে (রাফেযী সম্প্রদায় কর্তৃক) বর্ণিত তার অধিকাংশই ভিত্তিহীন।

 

৩৪৪৩ আহমদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকজন (অভিযোগের সুরে) বলে থাকেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) অনেক বেশী হাদিস বর্ণনা করে থাকেন। বস্ত্ততঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আত্মতৃপ্তি নিয়ে পড়ে থাকতাম। ঐ সময়ে আমি সুস্বাদু রুটি ভক্ষণ করিনি, দামী বস্ত্র পরিধান করিনি। তখন কেউ আমার খেদমত করত না, এবং আমি ক্ষুধার জ্বালায় পাথরময় যমিনের সাথে পেট চেপে ধরতাম। কোন কোন সময় কুরআনে কারীমের আয়াত বিশেষ, আমার জানাথাকা সত্ত্বেও অন্যদেরকে জিজ্ঞাসা করতাম যেন, তারা আমাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে কিছু আহারের ব্যবস্থা করেন।

গরীব মিসকীনদের জন্য সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যাক্তি ছিলেন জাফর ইবনু তালিব (রাঃ)। তিনি প্রায়ই আমাকে নিজ ঘরে নিয়ে যেতেন এবং যা থাকত তাই আমাকে আহার করিয়ে দিতেন। (কোন সময় এমন হত যে তাঁর ঘরে কিছুই থাকে নাই) ঘিয়ের শূন্য পাত্র এনে তিনি আমাকে সামনে তা ভেঙ্গে দিতেন আর তা চেটে খেতাম।

 

৩৪৪৪ আমর ইবনু আলী (রহঃ) শাবী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) যখন জাফর (রাঃ) এর ছেলে (আবদুল্লাহ) কে সালাম বলতেন তখন বলতেন, হে, দু’বাহু বিশিষ্ট ব্যাক্তির পুত্র। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, বলা হয় অর্থ তুমি আমার পাশে থাক। প্রত্যেক বস্ত্তর দ‘পাশকে দু‘বাহু বলা হয়।

 

৩৪৪৫ হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর (রাঃ) (এর খিলাফত কালে) অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে আববাস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) এর ওয়াসিলা নিয়ে বৃষ্টি বর্ষণের দু‘আ করতেন। তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা অনাবৃষ্টি দেখা দিলে আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লর ওয়াসিলা নিয়ে দু‘আ করতাম তুমি (আমাদের দু‘আ কবূল করে) বৃষ্টি বর্ষণ করতে, এখন আমরা আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা আববাস (রাঃ)-এর ওয়াসিলায় বৃষ্টি বর্ষণের দু‘আ করছি। তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ কর। তখন বৃষ্টি হত।

 

৩৪৪৬ আবূ ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট ফাতিমা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অংশ দাবী করলেন যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিনাযুদ্ধে দান করেছিলেন, যা তিনি সা’দকা স্বরূপ মদিনা, ফাদাকে রেখে গিয়েছিলেন এবং খায়বারের এক-পঞ্চমাংশ হতে যে অবশিষ্ট ছিল তা। আবূ বকর (রাঃ) (তার উত্তরে) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের মালের ওয়ারিস কেউ হয় না। আমরা যা কিছু রেখে যাই তা বই সা’দ্কা। মুহাম্মদ -এর পবিারবর্গ এ মাল থেকে অর্থাৎ আল্লাহর মাল থেকে খেতে পারবে। তবে (আহারের জন্য) প্রয়োজনের অধিক নিতে পারবে না। আল্লাহর কসম, আমি নী এর পরিত্যক্ত মালে তাঁর যুগে যেমন নিয়েম ছিল তার পরিবর্তন করব না। আমি অবশ্যই তা করব যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে গেছন। এরপর আলী (রাঃ) শাহাদত (হামদ-সানা) পাঠ করে বললেন, হে আবূ বকর! আমরা আপনার মর্যাদা ওশ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অবহিত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁদের যে আত্মীয়তা ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তা এবং তাঁদের অধিকারের কথাও উল্লেখ করলেন। আবূ বকর (রাঃ)ও এ বিষয়ে উল্লেখ করে বললেন, আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করার চেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করা আমি অধিক পছন্দ করি।

 

৩৪৪৭ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ -এর পরিবারবর্গের প্রতি তোমরা অধিক সম্মান দেখাবে।

 

৩৪৪৮ আবূ ওয়ালিদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা। যে তাঁকে কষ্ট দিবে, সে যেন আমাকে কষ্ট দিল।

 

৩৪৪৯ ইয়াহইয়া ইবনু মাযা‘আ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাতের সময় যে রোগে আক্রান্ত হন তখন তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে পাঠালেন। (তিনি আসলে) চুপিচুপি কি যেন তাঁকে বললেন, তিনি এতে কাঁদতে লাগলেন। তারপর তিনি তাঁকে ডেকে পুনরায় চুপিচুপি কি যেন বললেন, এবারে তিনি হাসতে লাগলেন। আমি তাঁকে এ (হাস-কান্নার) কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জানালেন যে, তিনি এ রোগে ওফাত লাভ করবেন, এতে আমি কাঁদতে শুরু করি। এরপর তিনি চুপেচুপে বললেন, আমি তাঁর পরিবার বর্গের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব, তখন আমি হাসতে শুরু করি।

 

৩৪৫০ খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) কঠিন নাকের পীড়ায় (নাক দিয়ে রক্তপাত) আক্রান্ত হলেন (একত্রিশ হিজর) সনে যে সনকে নাকের পীড়ার সন বলা হয় এ কারণে তিনি ঐ বছর হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারলেন না এবং ওসিয়াত করলেন। ঐ সময় কুরাইশের এক ব্যাক্তি তাঁর নিকট এস বলল, আপনি কাউকে আপনার খলীফা মনোনীত করুন। উসমান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, জনগণ কি একথা বলেছে? সে বললো, হাঁ। উসমান (রাঃ) বললেন, বলতো কাকে (মনোনীত করব)? রাবী বলেন তখন সে ব্যাক্তি নীরব হয়ে গেল। তারপর অপর এক ব্যাক্তি আসল, (রাবী বলেন) আমার ধারণা সে হারিস ইবনু হাকাম মারওয়ানের ভাই) ছিল। সেও বলল, আপনি খলীফা মনোনীত করুন। ইসমান (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, জনগণ কি চায়? সে বলল, হাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কাকে? রাবী বলেন সে নীরব হয়ে গেল। উসমান (রাঃ) বললেন, সম্ভবতঃ তারা যুবায়র (রাঃ) এর নাম প্রস্তাব করেছে। সে বলল, হাঁ। উসমান (রাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার জানামতে তিনই সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বাধিক প্রিয়পাত্র ছিলেন।

 

৩৪৫১ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) মারওয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি এস তাঁকে বলল, আপনি খলীফা মনোনীত করুন। তিনি বললেন, তা কি বলাবলী হচ্ছে? সে বলল, হাঁ, তিহিচ্ছেন যুবায়র (রাঃ)। এই শুনে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে যুবায়র (রাঃ) তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি। একথাটি তিনি তিনবার বললেন।

 

৩৪৫২ মালিক ইবনু ইসমঈল (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নাবীর হাওয়ারী (বিশেষ সাহায্যকারী) ছিলেন। আর আমার হাওয়ারী হলেন যুবায়র (রাঃ)।

 

৩৪৫৩ আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যাবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন খন্দক যুদ্ধ চলাকালে আমি এবং উমর ইবনু আবূ সালামা (স্বল্প বয়সের কারণে) মহিলাদের দলে চলছিলাম। হঠাৎ (আমার পিতা) যুবায়েরকে দেখতে পেলাম যে, তিনি অশ্বারোহণ করে বনী কুরায়যা গোত্রের দদেক দু‘বার অথবা তিন বার আসা যাওয়া করছেন। যখন ফিরে আসলাম তখন বললাম, হে আববা আমি আপনাকে (বনী কুরায়যার দিকে) কুয়েকবার যাতায়াত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, হে প্রিয়া পুত্র, তুমি কি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন কে বনী কুরায়যা গোত্রের নিকট গিয়ে তাদের খবরা-খবর জেনে আসবে? তখন (সে কাজে) আমই গিয়ে ছিলাম। (সংবাদ নিয়ে) যখন আমি ফিরে আসলাম তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করে বললেন, আমার মাতা-পিতা তোমার জন্য কুরবান হোক।

 

৩৪৫৪ আলী ইবনু হাফস (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইয়ারমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহীদগণ যুবায়েরকে বললেন, আপনি কি আক্রমণ কঠোরতর করবেন না? তা হলে আমরাও আপনার সাথে (সর্বশক্তি নিয়) আক্রমণ করব। এবার তিনি ভীষণভাবে আক্রমণ করলেন। শত্রুরা তাঁর কাঁধে দু‘টি আঘাত করল। ক্ষতদ্বয়ের মধ্যে আরো একটি ক্ষতের চিহ্ন ছিল যা বদর যুদ্ধে হয়েছিল। উরওয়া (রহঃ) বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ঐ ক্ষতস্থানগুলিতে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে খেলা করতাম।

 

৩৪৫৫ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) আবূ উসমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেসব যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছিলেন, তা মধ্য থেকে এক যুদ্ধে (ওহোদ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ল্লহ এর সংগে কোন এক সময় তালহা ও সা‘দ (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না। আবূ উসমান (রাঃ) তাঁদের উভয় থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

 

৩৪৫৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) কাইস ইবনু আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি তালহা (রাঃ)-এর ঐ হাতকে অবশ অবস্থায় দেখেছি, যে হাত দিয়ে (ওহোদ যুদ্ধে শত্রুদের আক্রমণ হতে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হিফাযত করেছিলেন।

 

৩৪৫৭ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহোদ যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করে (বলে) ছিলেন, (তোমার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হউক)।

 

৩৪৫৮ মাক্কী ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমাকে খুব ভালভাবে জানি, ইসলাম গ্রহণে আমি ছিলাম তৃতীয় ব্যাক্তি। (পুরুষদের মধ্যে)

 

৩৪৫৯ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আমার জানামতে) যে দিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি সেদিন (এর পূর্বে খাদীজা (রাঃ) ও আবূ বকর (রাঃ) ব্যতীত) অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। ইম সাতদিন এমনিভাবে অতিবাহিত করেছি যে আমি ইসলাম গ্রহণে তৃতীয় ব্যাক্তি ছিলাম।

 

৩৪৬০ আমর ইবনু আওন (রহঃ) কায়েস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সা‘দ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আরবদের মধ্যে আমই সেই ব্যাক্তি যে আল্লীহর রাস্তায় প্রথম তীর নিক্ষেপ করেছে। আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে থেকে লড়াই করেছি। তখন গাছের পাতা ব্যতীত আমাদের কোন আহার্য ছিল না। এমনকি আমাদেরকে (কোষ্ঠকাঠিন্য হেতু) উট অথবা ছাগলের ন্যায় বড়ির মত মল ত্যাগ করতে হত। আর এখন (এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে,)বনু আসা’দ আমাকে ইসলামের ব্যাপারে লজ্জা দিচ্ছে। আমি তখন অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হব এবং আমার আমলসমূহ বৃথা যাবে। বনূ আসা’দ উমর (রাঃ) এর নিকট সা‘দ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যথা নিয়মে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করার অভিযোগ করছিল। আবূ আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন ইসলামের তৃতীয় ব্যাক্তি একথা দ্বারা তিনি বলতে চান যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যারা প্রথমে ইসলাম এনেছিল আমি এদের তিনজনের তৃতীয়।

 

৩৪৬১ আবূল ইয়ামান (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ জেহেলের কন্যাকে আলী (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমা (রাঃ) এই সংবাদ শুনতে পেরে রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর খেদমতে এসে বলেলন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের খাতিরে রাগান্বিত হন না। আলী তো আবূ জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্ত্তত। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কথা শুনে) খুত্বা দিতে প্রস্ত্তত হলেন। (মিসওয়ার বলেন) যখন তিনি হাম্দ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবূল আস ইবনু রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলাম। যে আমার সাথে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর (শোন) ফাতিমা আমার (দেহের) টুকরা; তাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূল -এর মেয়ে এবং আল্লাহর চরম দুশমনের মেয়ে একই ব্যাক্তির কাছে একত্রিত হতে পারে না। (এ কথা শুনে) আলী (রাঃ) তাঁর বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাহার করলেন। মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু হালহালা (রহঃ) মিস্ওয়ার (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে বনী আবদে শামস গোত্রে তাঁর এক জামাতা সম্পর্কে অত্যন্ত প্রশংসা করতে শুনেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে আমাকে যা বলেছে- সত্য বলেছে। যা অঙ্গীকার করেছে, তা পূরণ করেছে।

 

৩৪৬২ খালিদ ইবনু মাখ্লাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর) একটি সেনাবাহিনী প্রেরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন, এবং উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)কে উক্ত বাহিনীর অধিনায়ক মনোনীত করেন। কিছু সংখ্যাক লোক তাঁর অধিনায়কত্বের উপর মন্তব্য প্রকাশ করতে লাগলো। (ইহা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার নেতৃত্বের প্রতি তোমাদের সমালোচনা অস্বভাবিক কিছু নয়। কেননা, এরূপূর্বে তার পিতার (বায়েদের) নেতৃত্বের প্রতিও তোমরা সমালোনা করেছ। আল্লাহর কসম, নিশ্চয় সে (বায়েদ) নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যাক্তি ছিল এবং আমার প্রিয়জনদের মধ্যে একজন ছিল। তারপর তার পুত্র (উসামা) আমার প্রিয়তম ব্যাক্তিদের অন্যতম।

 

৩৪৬৩ ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাযা’আ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জনৈক কায়িফ (রেখা চিহ্ন বিশেষজ্ঞ) আসে, সে সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ছিলেন। উসামা (রাঃ) ও তাঁর পিতা (পা বাইরে রেখে উভয়ই একটি চাঁদরে আবৃত করে) শুয়ে ছিলেন। কায়িফ (তাদের শুধু পা দেখে বলে উঠলেন, এ পাগুলো একটি অন্যটির অংশ। রাবী বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে (কায়িফের মন্তব্যটি) আয়িশা (রাঃ) কেও অবহিত করলেন (1) ১ ব্যাপার ছিল এই যে, জাহেলী যুগে উসামা (রাঃ) এর পিতৃত্ব সম্পর্কে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করত, যেহেতু উসামা (রাঃ) ছিলেন কাল এবং তার পিতা যায়েদ (রাঃ) ছিলেন গৌরবর্ণ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দিত হলেন একারণে যে, যেহেতু তারা কাফিরদের মন্তব্যে বিশ্বাসী ছিল। সেহেতু তার বক্তব্যে তাদের সন্দেহ ও ভ্রান্ত ধারণা দূরীভূত হয়ে গেল।

 

৩৪৬৪ কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের চুরির ঘটনায় কুরাইশগণ ভীষণভাবে চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা পরষ্পরকে বলাবলি করতে লাগল, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর প্রিয় পাত্র উসামা ইবনু যায়েদ ব্যতীত কে আর তাঁল নিকট (সুপারিশ করার) সাহস করবে?

 

৩৪৬৫ আলী (রহঃ) আয়িশা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাখযুম গোত্রের জনৈকা মহিলা চুরি করেছিল। তখন তারা বলল, দেখত, এ ব্যাপারে কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সাথে কথা বলতে পারবে? কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ-ই কথা বলার সাহস করতে করল না। উসামা (রাঃ) এ ব্যাপারে তাঁর সাথে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেন, বনী ইসরাইল তাদের সভ্রান্ত পরিবারের কেউ চুরি করলে তাকে (বিচার না করে) ছেড়ে দিত। এবং দূর্বল কেউ চুরি করলে তার হাত কেটে দিত। (আমার কন্যা) ফাতিমা (রাঃ) (চুরির অপরাধে দোষিণী) হলেও (আল্লাহ্ তাঁর হিফাযত করুন) তবে অবশ্যই আমি তাঁর হাত কেটে ফেলতাম।

 

৩৪৬৬ হাসান ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু দিনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এক ব্যাক্তিকে দেখতে পেলেন যে, মসজিদের এক কোণে তার কাপড় টেনে নিচ্ছে, তিনি বললেন, দেখতো লোকটি কে? সে যদি আমার নিকট থাকত (তবে আমি তাকে সদুপদেশ দান করতাম) তখন একজন তাঁকে বলল, হে আবূ আবদুর রাহমান, আপনি কি তাকে চিনতে পেরেছেন। তিনি উসামা (রাঃ)- এর পুত্র মুহাম্মদ। এ কথা শুনে ইবনু উমর (রাঃ) মাথা নীচু করে দু’হাত মাটি আছাড়াতে লাগলেন এবং বললেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখলে নিশ্চয়ই আদর করতেন।

 

৩৪৬৭ মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তাঁকে এবং হাসান (রাঃ)-কে এক সাথে (কোলে) তুলে নিতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! তুমি এদের ভালবাস। আমিও এদেরকে ভালবাসি। মু’আইয (রহঃ) উসামা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম (হারমালা) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সে আবদুল্লাহ ইবনু উমরের (রহঃ) এর সঙ্গে ছিল। তখন (উসামা (রাঃ) এর বৈপত্রিয়) ভাই হাজ্জাজ ইবনু আয়মান (মস্জিদে) প্রবেশ করল, এবং সালাত (নামায/নামাজ) রুকু ও সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করেনি। ইবনু উমর (রাঃ) তাকে বললেন, সালাত (নামায/নামাজ) পুনরায় আদায় কর। যখন সে চলে গেল তখন ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাক্তি কে? আমি বললাম, হাজ্জাজ ইবনু আয়মন ইবনু উম্মে আয়মন। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে দেখতেন তবে স্নেহ্ন করতেন। তারপর এ পরিবারের প্রতি রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কত ভালবাসা ছিল তা বর্ণনা করতে লাগালেন এবং উম্মে আয়মানের সন্তানদের কথাও বললেন। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন আমার কোন কোন সাথী আরো বলেছেন যে উম্মে আয়মন (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে শিশুকালে কোলে নিয়েছেন। হাজ্জাজ ইবনু আয়মন ইবনু উম্মে আয়মন (রহঃ) আর আয়মান ছিলেন উসামা (রহঃ) এ বৈপিত্রীয় ভাই হাজ্জাজ হলেন এক আন্সারী ব্যাক্তি। ইবনু উম্মে (রাঃ) তাকে দেখলেন যে সালাত (নামায/নামাজ) রুকু সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করছেন না। তখন তিনি তাকে বললেন, পুনরায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী (রহঃ)) বলেন সুলায়মান ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) হারমালা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর ধাত্রী।

 

৩৪৬৮ ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবনকালে কেউ কোন স্বপ্ন দেখলে, তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিকট বর্ণনা করতেন। আমিও স্বপ্ন দেখার জন্য আকাঙ্খা করতাম এ উদ্দেশ্যে যে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর নিকট বর্ণনা করব। আমি ছিলাম অবিবাহিত একজন যুবক। তাই আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ের যুগে মসজিদেই ঘুমাতাম। এক রাতে স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, যেন দুজন ফিরিশতা আমাকে ধরে জাহান্নামের নিকট নিয়ে গেলেন। আমি দেখতে পেলাম যে কুপের মত দু’টি উঁচু পাড়ও রয়েছে। তাতে এমন এমন মানুষ রয়েছে যাদেরকে আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি (জাহান্নামের আগুন থেকে বার বার আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি) বার বার পাঠ করতে লাগলাম। তখন তৃতীয় একজন ফিরিশতা তাদের দু’জনের সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তিনি আমাকে বললেন, ভয় করোনা (এরপর আমি জেগে গেলাম) স্বপ্নটি (আমার বোন) হাফসা (রাঃ)-এর নিকট বললাম। তিনি তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, আবদুল্লাহ অত্যন্ত ভাল মানুষ। যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদের) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত (তবে আরও ভাল হত) (তাঁর পুত্র) সালিম (রহঃ) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাতে অতি অল্প সময়ই ঘুমাতেন।

 

৩৪৬৯ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট বলেছেন যে, আবদুল্লাহ অত্যন্ত নেক ব্যাক্তি।

 

৩৪৭০ মালিক ইবনু ইসমাইল (রহঃ) আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গমন করলাম (সেখানে পৌছে) দু’রাকাত (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দু’আ করলাম, হে আল্লাহ্, আপনি আমাকে একজন নেক্কার সাথী মিলিয়ে দিন। তারপর আমি একটি জামাআতের নিকট এসে তাদের নিকট বসলাম। তখন একজন বৃদ্ধ লোক এসে আমার পাশেই বসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তারা উত্তরে বললেন, ইনি আবূ দারদা (রাঃ)। আমি তখন তাঁকে বললাম, একজন নেক্কার সাথীর জন্য আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করেছিলাম। আল্লাহ্ আপনাকে মিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি কোথাকার বাসিন্দা? আমি বললাম, আমি কুফার বাসিন্দা। তিনি বললেন, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর জুতা, বালিশ এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পাত্র হন কারী সর্বক্ষণের সহচর ইবনু উম্মে আবদ (রাঃ) কি তোমাদের ওখানে নেই? তোমাদের মাঝে কি ঐ ব্যাক্তি নেই যাকে আল্লাহ্ শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন? (অর্থাৎ আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তোমাদের মধ্যে কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন তথ্য অভিজ্ঞ লোকটি নেই? যিনি ব্যতীত অন্য কেউ এই রহস্য জানেন না (অর্থাৎ হুযায়ফা (রাঃ) তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) সূরা কি ভাবে পাঠ করতেন? তখন আমি তাঁকে সূরাটি পড়ে শোনালামঃ

 

৩৪৭১ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকামা (রাঃ) একবার সিরিয়ায় গেলেন। যখন মসজিদে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ, আমাকে একজন নেককার সাথী মিলিয়ে দিন। তাখন তিনি আবূ দারদা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বসলেন, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করণে, তুমি কোকার বাসিন্দা। তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে কি ঐ ব্যাক্তিটি নেই যাঁকে আল্লাহ্ তাঁর রাসূল) এর জবানীতে শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আম্মার ইবনু ইয়াসির) (রাঃ)। আমি বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন তথ্যভিজ্ঞ ব্যাক্তিটি কি নেই যিনি ব্যতীত অন্য কেউ এ সব গোপন রহস্যাদি জানেন না? অর্থাৎ হুযায়ফা (রাঃ)। আমি বললাম, হাঁ। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মিসওয়াক ও সামান বহনকারী (নিত্য সহচর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)) নেই? আমি বললাম, হাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, (এভাবে পড়ার কারণে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাঃ) থেকে যেভাবে শুনেছিলাম এরা (সিরিয়াবাসী) তা থেকে আমাকে সরিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে।

 

৩৪৭২ আমর ইবনু আলী (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন আমীন (অত্যন্ত বিশ্বস্ত) বক্তি থাকেন আর আমাদের এই উম্মতের মধ্যে আমীন ব্যাক্তি হচ্ছে আবূ উবাইদা ইবনু জাররাহ (রাঃ)।

 

৩৪৭৩ মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজরানবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন; আমি (তোমাদের ওখানে) এমন এক ব্যাক্তিকে পাঠাব যিনি হবেন অত্যন্ত আমীন ও বিশ্বস্ত। একথা শুনে সাহাবয়ে কেরাম আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করতে লাগলেন। পরে তিনি আবূ উবাইদা (রাঃ)কে পাঠালেন।

 

৩৪৭৪ সা’দ্কা ইবনু ফায্ল) (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিন্বরের উপর বলতে শুনেছি, ঐ সময় হাসান (রাঃ) তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার উপস্থিত লোকদের দিকে আবার হাসান (রাঃ)-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমার এ সন্তান।

 

৩৪৭৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এবং হাসান (রাঃ)-কে এক সাথে কোলে তুলে নিয়ে বলতেন, হে আল্লাহ্! আমি এদের দু’জনকে মহববত করি, আপনিও এদেরকে মহববত করুন। অথবা এরূপ কিছু বলেছেন।

 

৩৪৭৬ মুহাম্মদ ইবনু হুসাইন ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদের সম্মুখে হুসাইন (রাঃ)-এর (বিচ্ছেদকৃত) মস্তক আনা হল এবং একটি বড় পাত্রে তা রাখা হল। তখন ইবনু যিয়াদ তাঁর (নাকে মুখে) খুচাতে লাগল এবং তাঁর রূপ লাবণ্য সম্পর্কে কটুক্তি করল। আনাস (রাঃ) বললেন, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর পরিবারবর্গের মধ্যে) হুসাইন (রাঃ) গঠন ও আকৃতিতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অবয়বের সর্বাধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। (শাহাদাত বরণকালে) তাঁর চুল ও দাঁড়িতে ওয়াসমা (এক প্রকার পাতার রস) দ্বারা কলপ লাগানো ছিল।

 

৩৪৭৭। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসানকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাঁধের উপর দেখেছি। তখন তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস।

 

৩৪৭৮। আবদান (রহঃ) উকবা ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ বকর (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি হাসান (রাঃ)-কে কোলে তুলে নিলেন এবং বলতে লাগলেন, এ-ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সদৃশ, আলীর সদৃষ নয়। তখন আলী (রাঃ) (নিকটেই দাঁড়িয়ে) হাঁসছিলেন।

 

৩৪৭৯। ইয়াহইয়া ইবনু মায়ীন ও সাদাকা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, মুহাম্মদ -এর সন্তুষ্টি তাঁর পরিবারবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্জন কর।

 

৩৪৮০। ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিবারে হাসান ইবনু আলী (রাঃ)-এর চেয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অধিক সা’দৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিলেন না। আবদুর রাযযাক (রহঃ) আনাস থেকে অনুরূপ বর্ণিত।

 

৩৪৮১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে ইরাকের জনৈক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, ইহরামের অবস্থায় মশা-মাছি মারা জায়েয আছে কি? তিনি বললেন, ইরাকবাসী মশা-মাছি মারা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে অথচ তারা রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নাতীকে হত্যা করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার কাছে দুনিয়ার দুটি পুষ্প বিশেষ।

 

৩৪৮২ আবূ নু’আঈম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলতেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাদের নেতা এবং মুক্ত করেছেন আমাদের একজন নেতা বিলাল (রাঃ)-কে।

 

৩৪৮৩ ইবনু নুমাইর (রহঃ) কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিশাল (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি যদি আপনার ব্যাক্তিগত কাজের জন্য আমাকে ক্রয় করে থাকেন কবে আপনার খেদমতেই আমাকে রাখুন আর যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের (আযাদ করার) আশায় আমাকে ক্রয় করে থাকেন, তাহলে আমাকে আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদত বন্দেগী করার সুযোগ দান করুন।

 

৩৪৮৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্, তাকে হিকমত শিক্ষা দান করুন।

 

৩৪৮৫ আবূ মামার (রহঃ) আবদুল ওয়ারিস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ কথাটিও বলেছিলেন) ইয়া আল্লাহ্, তাকে কিতাবের (কুরআনের) জ্ঞান দান করুন। মূসা (রাঃ) খালিদ (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমার বুখারী (রহঃ) বলেন অর্থ নবুওয়াতের বিয়ষ ব্যতিত অন্যান্য বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছা।

 

৩৪৮৬ আহম্মদ ইবনু ওয়াকিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুতা যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী যায়েদ ইবনু হারিসা) জাফর ইবনু আবূ তালিব) ও (আবদুল্লাহ) ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-এর মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্রে আসার পূর্বেই আমাদিগকে শুনিয়ে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যায়েদ (রাঃ) পতাকা ধারণ করে শাহাদাত বরণ করেছেন

৩৪৮৭ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর আলোচনা হলে তিনি বললেন, আমি এই ব্যাক্তিকে ঐদিন থেকে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যাক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ সর্বপ্রথম তাঁর নাম উল্লেখ করলেন, আবূ হুযায়ফা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে। শেষোক্ত দু’জনের মধ্যে কার নাম আগে উল্লেখ করছিলেন শুধু এ কথাটুকু আমার স্মরণ নেই।

 

৩৪৮৮ হাফস ইবনু উমর (রহঃ) মাসরূক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে অশ্লীল ভাষী ছিনে না; তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যাক্তই আমার সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি আরো বলেছেন, তোমরা চার ব্যাক্তির নিকট হতে কুরআন শিক্ষা কর, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, সালিম মাওলা আবূ হুযায়ফা, উবাই ইবনু কা’ব ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ)।

 

৩৪৮৯ মূসা (রহঃ) আলকামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়া গেলাম, মস্জিদে দু‘রাকআত (নফল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে দু‘আ করলাম, হে আল্লাহ, আমাকে একজন সৎ সাথী মিলিয়ে দিন। তখন আমি বললাম, আশা করি আমার দু‘আ কবুল হয়েছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন স্থানের বাসিন্দা? আম বললাম, আমার ঠিকানা কুফায়। তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জুতা, বালিস ও উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পাত্র বহনকারী (আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)) কি বিদ্যমান নেই? তোমরেদ মাঝে ঐ ব্যাক্তি কি নেই, যাকে শয়তান থেকে নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে? (অর্থাৎ আম্মার (রাঃ))। তোমাদের মাঝে কি গোপন তথ্যভিজ্ঞ ব্যাক্তিটি (হুযায়ফা (রাঃ)) নেই, যিনি ব্যতীত এসব গোপন রহস্য অন্য কেউ জাননা। (আমি বললাম, আছেন) তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনু মাসউদ (রাঃ) কিভাবে পড়েন? আমি পড়লাম, এভাবে পড়েন। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সুরাটি সরাসরি এভাবে পড়তে শিখিয়েছেন। কিন্তু এসব লোক বার বার বলে আমাকে এ থেকে বিচ্যুতি ঘটানোর উপক্রম করেছে।

 

৩৪৯০ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হুযায়ফা (রাঃ)-কে এমন এক ব্যাক্তির সন্ধান দিতে অনুরোধ করলাম যার আকার আকৃতি, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার এবং স্বভাব-চরিত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সর্বাধিক সা’দৃস্য আছে, আমরা তাঁর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আকার-আকৃতি, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার এবং স্বভাব-চরিত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সর্বাধিকাদৃশ্য রাখেন এমন ব্যাক্তি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউ (রাঃ) ব্যতীত অন্য কাউকে আমি জানিনা।

 

৩৪৯১ মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ মূসা আশআরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান থেকে মদিনায় আগমন করি এবং বেশ কিছুদিন মদিনায় অবস্থান করি। তখন আমরা মনে করতাম যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারেরই একজন সদস্য। কেননা আমরা তাঁকে এবং তাঁর মাকে অহরহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘরে যাতায়াত করতে দেখতাম।

 

৩৪৯২ হাসান ইবনু বিশর (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মু‘আবিয়া (রাঃ) ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর এক রাকআত মিলিয়ে বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তখন তাঁর নিকট ইবনু আববাসের আযাদকৃত গোলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করেন, তখন ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, তাঁকে কিছু বলোনা, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন।

 

৩৪৯৩ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, ইবনু আববাস (রাঃ) কে বলা হলে, আপনি আমীরুল মু’মিনীন মু‘আবিয়া (রাঃ)এর সাথে এ বিষয় আপ করবেন কি? যেহেতু তিনি বিতর সালাত (নামায/নামাজ) এক রাকআত মিলিয়ে আদায় করেছেন। ইবনু আববাস বললেন, তিনি (তাঁর দৃষ্টিতে) ঠিকই করেছেন, কেননা তিনি নিজেই একজন ফকীহ্।

 

৩৪৯৪ আমর ইবনু আববাস (রহঃ) মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা এমন এক সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে কর, আমরা (দীর্ঘদিন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ করেছি আমরা তাঁকে তা আদায় করতে দেখিনি বরং তিনিএ দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আসরের পর দু’রাকআত (নফল)।

 

৩৪৯৫ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফাতিমা আমার (দেহের অংশ। যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করল সে আমাকেই অসন্তুষ্ট করল।

 

৩৪৯৬ ইয়াহ্ইয়া ইবনু মায‘আ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে রোগে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত লাভ করেন সে সময়ে তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে আনলেন এবং তাঁর সাথে চুপে চুপে কিছু বললেন। এতে ফাতিমা (রাঃ) কেঁদে দিলেন। এরপর আবার কাছে ডেকে এনে তার সাথে চুপে চুপে কিছু বললেন। এতে তিনি হেসে দিলেন। আয়িশা (রাঃ)বলেন, আমি এ ব্যাপারে ফাতিমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে অবহিত করলেন যে তিনি এ রোগে ওফাত লাভ করবেন। এতে আমি কেঁদে ছিলাম। তারপর আবার আমাকে চুপে চুপে জানালেন যে আমি তাঁর পরিবার-পরিজনের প্রথম ব্যাক্তি যে তাঁর সাথে মিলিত হব। এতে আমি হেসে ছিলাম।

 

৩৪৯৭ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়িশা, জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি উত্তরে বললাম, ‘‘ওয়া আলাইহিস্ সালাম ওয়া রাহামতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’’। আপনি যা দেখতে পান (জিবরাঈলকে) আমি তা দেখতে পাই না। এ কথা দ্বারা তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বুঝিয়েছেন।

 

৩৪৯৮ আদম ও আমর (রহঃ) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামিল হয়েছে, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে মারইয়াম বিনতে ইমরান (ঈসা আলাইহিস্ সালামের মাতা)ও ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া (রহঃ) ব্যতীত অন্য কেউ তাদের মত কামিল হননি। আর আয়িশা (রাঃ)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য মহিলাদের উপর এমন যেমন সারীদ (গোশত এবং রুটি দ্বারা তৈরী খাদ্য বিশেষ) এর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর উপর।

 

৩৪৯৯ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছি, আয়িশা (রাঃ)-এর মর্যাদা মহিলাদের উপর এমন যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর উপর।

 

৩৫০০ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আয়িশা (রাঃ) যখন (মৃত্যু) রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। তখণ ইবনু আববাস (রাঃ) এসে বললেন, হে উম্মূল মু’মিনীন, আপনি সত্য পূর্বগামী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট যাচ্ছেন।

 

৩৫০১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ)-এর স্বপক্ষে জিহাদে সাহায্য করার জন্য লোক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আম্মার ও হাসান (রাঃ)-কে কুফায় প্রেরণ করেন। আম্মার (রাঃ) তাঁর ভাষণে একদিন বললেন, এ কথা আমি ভালভাবেই জানি যে, আয়িশা (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মানিত সহধর্মিণী। কিন্তু এখন আল্লাহ্ তোমাদেরকে পরীক্ষা করছেন যে তোমরা কি আলী (রাঃ) এর আনুগর্ত করবে না, আয়িশা (রাঃ) এর আনুগত্য করবে।

 

৩৫০২ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি (তাঁর বোন) আসমা (রাঃ)-এর নিকট থেকে একটি হার চেয়ে নিয়েছিলেন। পরে হারটি হারিয়ে যায়। এর অনুসন্ধানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক সাহাবীকে পাঠালেন। ইতিমধ্যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হয়ে গেলে তাঁরা পানির অভাবে উযূ (ওজু/অজু/অযু) ছাড়াই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে এই বিষয়ে অভিযোগ পেশ করলেন। তখন তায়াইম্মুমের আয়াত নাযিল হল। উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) বললেন, (হে আয়িশা) আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে পুরষ্কৃত করুন। আল্লাহর কসম! যখনই আপনি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তখনই আল্লাহ তা’আলা এর সমাধান করে দিয়েছেন এবং মুসলমানদের জন্য এর মধ্যে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।

 

৩৫০৩ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু রোগে আক্রান্ত তখন (পূর্বরীতি অনুযায়ী) সহধর্মিণীগণের ঘরে ঘরে ধারাবাহিকভাবে অবস্থান করতে থাকেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ) এর ঘরে অবস্থানের আগ্রহে এ কথাটি বলতেন, “আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? আগামীকাল আমি কার ঘরে থাকব? আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার ঘরে অবস্থানের নির্ধারিত দিনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন।

 

৩৫০৪ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে হাদীয়া প্রদানের জন্য আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে তাঁর অবস্থানের দিন তালাশ করতেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, একদিন আমার সতীনগণ উম্মে সালামা (রাঃ) এর নিকট সমবেত হয়ে বললেন, হে উম্মে সালামা। আল্লাহর কসম, লোকজন তাদের হাদীয়াসমূহ প্রেরণের জন্য আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থানের দিন তালাশ করেন। আয়িশা (রাঃ) এর ন্যায় আমরাও কল্যাণ আকাঙক্ষা করি। আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলুন, তিনি যেন লোকদের বলে দেন, তারা যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন যেখানেই অবস্থান করেন সেখানেই তারা হাদীয়া পাঠিয়ে দেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পরে আমার গৃহে অবস্থানের জন্য পুনরায় আসলে আমি ঐ কথা তাঁকে বলি। এবারও তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তৃতীয়বারেও আমি ঐ কথা তাঁকে বললাম, তিনি বললেন, হে উম্মে সালামা! আয়িশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে তোমরা আমাকে কষ্ট দিবে না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে আয়িশা (রাঃ) ব্যতীত অন্য কারো শয্যায় শায়িত অবস্থায় আমার উপর ওহী নাযিল হয়নি।

 

৩৫০৫ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) গায়লান ইবনু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমা আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের আনসার নামকরণ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? এ নাম কি আপনারা করেছেন না আল্লাহ্ আপনাদের এ নামকরণ করেছেন? আনাস (রাঃ) বললেন, রবং আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের এ নামকরণ করেছেন। (গায়লান (রহঃ) বলেন)আমরা (বসরায়) যখন আনাস (রাঃ)-এর নিকট যেতাম, তখন তিনি আমাদেরকে আনসারদের গুণাবলী ও কীর্তিসমূহ বর্ণনা করে শোনাতেন। তিনি আমাকে অথবা আয্দ গোত্রের এক ব্যাক্তিকে লক্ষ্য করে বলতেন, তোমার গোত্র অমুক দিন অমুক (কৃতিত্বপূর্ণ) কাজ করেছেন, অমুক দিন অমূক(সাহসীকতা পূর্ণ) কাজ করেছেন।

 

৩৫০৬ উবায়দ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বু’আস যুদ্ধ (যা আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে সংঘঠিত হয়ে দীর্ঘ একশ বিশ বছর স্থায়ী ছিল) এমন একটি যুদ্ধ ছিল, যা আল্লাহ তা’আলা (মদিনার পরিবেশকে) তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুকূল করার জন্য) মদিনা আগমনের পূর্বেই ঘটিয়ে ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন সেখানকার সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ নানা দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিগণ এ যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। তাদের ইসলাম গ্রহণকে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূল) এর জন্য অনুকূল করে দিয়েছিলেন।

 

৩৫০৭ আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ তাইয়্যাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মক্বা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদেরকে মালে গনীমত দিলে কতিপয় আনসার বলেছিলেন যে, এ বড় আশ্চার্যের বিষয় যে, কুরাইশদের আমাদের গনীমতের মাল দিলেন অথচ আমাদের তরবারী থেকে তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ কথা পৌছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে বললেন, আমি তোমাদের থেকে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কি ছিল? যেহেতু তাঁরা মিথ্যা কথা বলতেন না, সেহেতু তাঁরা বললেন, আপনার নিকট যা পৌছেছে তা সত্যই। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে লোকজন গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে আর তোমরা আল্লাহর রাসূল কে নিয়ে নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে। যদি আনসারগণ উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তবে আমি আনসারদের উত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব।

 

৩৫০৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তিনি বলেছেন আবূল কাসিম বলেন, আনসারগণ যদি কোন উপত্যকা বা গিরিপথে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা দিয়েই চলব। যদি হিজরত (এর বিধান) না হত, তবে আমি আনসারদেরই একজন হতাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথায় কোন অত্যুক্তি করেন নাই। আমার মাতা-পিতা তাঁর উপর কুরবান হউক তারা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন, সর্বতোভাবে সাহায্য-সহায়তা করেছেন। অথবা এরূপ কিছু বলেছেন।

 

৩৫০৯ ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মুহাজিরগণ মদিনায় আগমন করলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনু আউফ ও সা’দ ইবনু রাবী (রাঃ) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিলেন। তখন তিনি (সা’দ (রাঃ)) আবদুর রাহমান (রাঃ) কে বললেন, আনসারদের মধ্যে আমই সবচেয়ে অধিক সম্পদশালী ব্যাক্তি। আপনি আমার সম্পদকে দু’ভাগ করে নিন। আমার দ’জন স্ত্রী রয়েছে আপনার যাকে পছন্দ হয় বলুন, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দতান্তে আপনি তাকে বিয়ে করে নিবেন। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবারে এবং সম্পদে বরকত দান করুন। (আমাকে দেখিয়ে দিন) আপনাদের (স্থানীয়) বাজার কোথায়? তারা তাঁকে বনূ কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দিলেন। (কয়েক দিন পর) যখন ঘরে ফিরলেন তখন (ব্যবসায় মুনাফা হিসেবে) কিছু পনীর ও কিছু ঘি সাথে নিয়ে ফিরলেন। এরপর প্রত্যহ সকাল বেলা বাজার যেতে লাগলেন। একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমতাবস্থায় আসলেন যে, তাঁর শরীর ও কাপড়ে হলুদ রং এর চিহ্ন ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ব্যাপার কি! তিনি (আবদুর রাহমান) (রাঃ) বললেন, আমি (একজন আনসারী মহিলাকে) বিয়ে করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমান মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির পরিমান অথবা খেজুরের এক আটির ওজন পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি।

 

৩৫১০ কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাঃ) হিজরত করে আমাদের কাছে এলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সা’দ ইবনু রাবী (রাঃ) এর মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দিলেন। তিনি (সা’দ) (রাঃ) ছিলেন অধিক সম্পদশালী ব্যাক্তি। সা’দ (রাঃ) বললেন, সকল আনসারগণ জানেন যে আমি তাঁদের মধ্যে অধিক বিত্তবান ব্যাক্তি। আমি অচিরেই আমার ও তোমার মাঝে আমার সম্পত্তি ভাগাভাগি করে দিব দুই ভাগে। আমার দ’জন স্ত্রী রয়েছে; তোমার যাকে পছন্দ হয় বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব। ইদ্দত পালন শেষ হলে তুমি তাকে বিয়ে করে নিবে। আবদুর রাহমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ আপনার পরিবার পরিজনের মধ্যে বরকত দান করুন। (এরপর তিনি বাজারে গিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন) বাজার থেকে মুনাফা স্বরূপ ঘি ও পনীর সাথে নিয়ে ফিরলেন। অল্প কয়েকদিন পর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাজির হলেন। তখন তাঁর শরীরে ও কাপড়ে হলুদ রংয়ের চিহ্ন ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিয়ে করেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁকে কি পরিমান মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আটির ওজন পরিমান স্বর্ণ দিয়েছি অথবা (বলেছেন) একটি আটি পরিমান স্বর্ণ দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

 

৩৫১১ সালত ইবনু মুহাম্মদ আবূ হাম্মাম (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল)আমাদের খেজুরের বাগানগুলি আমাদের এবং তাদের (মুহাজিরদের) মাঝে বন্টন করে দিন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )বললেন, না, (ভাগ করে দেয়ার প্রয়োজন নেই।)তখন আনসারগণ (মুহাজিরগণকে লক্ষ্য করে) বললেন, আপনারা বাগানগুলির রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সহায়ক হউন এবং উৎপাদিত ফসলের অংশীদার হয়ে যান। মুহাজিরগণ বললেন, আমরা ইহা (সর্বান্তকরণে) মেনে নিলাম।

 

৩৫১২ হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ছাড়া আনসারগণকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে না। যে ব্যাক্তি তাঁদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ’তা’আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যাক্তি তাঁদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ঘৃণা করবেন।

 

৩৫১৩ মুসলিম ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারদের প্রতি মুহব্বত ঈমানেরই নিদর্শন এবং তাঁদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা মুনাফেকীর পরিচায়ক।

 

৩৫১৪ আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (আনসারদের) কতিপয় বালক-বালিকা ও মহিলাকে রাবী বলেন, আমার মনে হয়- তিনি বলেছিলেন, কোন শাদীর অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ সাক্ষী, তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। একথাটি তিনি তিনবার বললেন।

 

৩৫১৫ ইয়াকুব ইবনু ইব্রাহীম ইবনু কাসীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে আলাপ করলেন এবং বললেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয়জন। একথাটি তিনি দু’বার বললেন।

 

৩৫১৬ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রাঃ) যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদিন কতিপয়) আনসার বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! প্রত্যেক নাবীরই অনুসারী ছিলেন। আমরাও আপনার অনুসারী। আপনি আমাদের উত্তরসুরিদের জন্য দু’আ করুন যেন তারা (সর্বতোভাবে) আপনার অনুসারী হয়। তিনি (আকাঙক্ষা অনুযায়ী) দু’আ করলেন। (আমর একজন রাবী বলেন) আমি এই হাদীসটি (আবদুর রামমান) ইবনু আবূ লায়লার নিকট বর্ণনা করলাম, তিনি বললেন, যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ) এ ভাবেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

 

৩৫১৭ আদম (রহঃ) আবূ হামযা (রাঃ) নামক একজন আনসারী থেকে বর্ণিত, কতিপয় আনসার (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে) বললেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যে (তাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর) অনুসরণকারী একটি দল থাকে। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরাও আপনার অনুসরণ করছি। আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন আমাদের পরবর্তীগন (সর্বক্ষেত্রে) আমাদের (মত আপনার একনিষ্ঠ) অনুসারী হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ্ তাঁদের পরবর্তীগণকে (সম্পূর্ণ) তাদের মত করে দাও। আমর (রহঃ) বলেন। আমি হাদীসটি আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লা (রাঃ)-কে বললাম। তিনি বললেন, যায়েদও এইভাবে হাদীসটি বলেছেন। শুবা (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা, ইনি যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ)-ই হবেন।

 

৩৫১৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল তারপর বনূ হারিস ইবনু কাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা এবং আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ শুনে সা’দ (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রধান্য দান করেছেন? তখন তাকে বল হল; তোমাদেরকে তো অনেক গোত্রের উপর প্রধান্য দান করেছেন। আবদুস সামাদ (রহঃ) আবূ উসাইদ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বলেছেন।

 

৩৫১৯ সা’দ ইবনু হাফস (রহঃ) আবূ উসায়দ (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আনসারদের মধ্যে বা আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হল বানূ নাজ্জার, বানূ আবদুল আশহাল, বানূ হারিস ও বানূ সায়িদা।

 

৩৫২০ খালিদ ইবনু মাখ্লাদ (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদুল আশহাল, তারপর বানূ হারিস এরপর বানূ সায়িদা। আনসারদের সকল গোত্রে রয়েছে কল্যাণ। (আবূ হুমায়দ (রহঃ) বলেন,)আমরা সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। তখন আবূ উসায়দ (রাঃ) বলেন, আপনি কি শোনেননি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আমাদেরকে সকলের শেষ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন? তা শুনে সা’দ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আনসার গোত্রগুলোকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয় হয়েছে এবং আমাদেরকে সকলেন শেষ পর্যায়ে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, এটি কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, তোমরাও শ্রেষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত হয়েছ?

 

৩৫২১ মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উসায়দ ইবনু হুজায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন আনসারী বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না? তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউযে কাওসার।

 

৩৫২২ আবদুল্লাহ ইবনু (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি যখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সঙ্গে ওয়ালীদ ইবনু আবদুল মালিক)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বসরা থেকে দামেস্ক সফর করতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনের জমি তাদের জন্য (জায়গীর হিসাবে) বরাদ্দ করার উদ্দেশ্যে আনসারদিগকে আহবান করলে তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মুহাজির ভাইদের জন্য এরূপ জায়গীর বরাদ্দ না করা পর্যন্ত আমরা তা গ্রহণ করব না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি তা গ্রহণ করতে না চাও, তবে (কিয়ামতের ময়দানে) হাউযে কাওসারের নিকটে আমার সাথে সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করতে থাক। কেননা অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে, আমার পরে তোমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

 

৩৫২৩ আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ্! আনসার ও মুহাজিরদের মঙ্গল করুন। কাতাদা (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন হে আল্লাহ! আনসারকে ক্ষমা করে দিন।

 

৩৫২৪ আদম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দক যুদ্ধের পরিখা খননকালে বলেছিলেন, আমরা হলাম ঐ সমস্ত লোক যারা মুহাম্মদ এর হাতে জিহাদের জন্য বায়’আত করেছি যতদিন আমরা বেঁচে থাকব। এর উত্তরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আখিরারেত জীবনই প্রকৃত জীবন। (হে আল্লাহ!)আনসার ও মুহাজিরদের সম্মান বৃদ্ধি করে দিন।

 

৩৫২৫ মুহাম্মদ ইবনু ওবায়দুল্লাহ (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন পরিখা খনন করে আমাদের কাঁধে করে মাটি বহন করছিলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ! প্রকৃত জীবন একমাত্র আখিরাতের জীবনই। মুহাজির ও আনসারদেরকে আপনি ক্ষমা করে দিন।

 

৩৫২৬ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক (ক্ষুধার্ত) ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে এল। তিনি খাদ্য দ্রব্য কিছু আছে কিনা তা জানার জন্য তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন , আমাদের নিকট পানি ব্যতীত অন্য কিছুই নেই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে আছ যে এই (ক্ষুধার্ত) ব্যাক্তিকে মেহমান হিসাবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন জনৈক আনসারী সাহাবী (আবূ তারহা (রাঃ)) বললেন আমি (পারব)। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে (বাড়িতে) গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মেহমানকে সন্মান কর। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাঁদের আহার্য ব্যতীত আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। (স্বামীর কথা অনুযায়ী) সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাঁদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরী ছিল তা উপস্থিত করল। (তারপর মেহমান সহ তারা খেতে বসলেন) বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই (বাচ্চারা সহ) সারা রাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ তোমাদের গতরাতের কার্যকলাপ দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করেছেন। (আনসারদের অন্যতম গুণ হল এই)ঃ তারা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (৫৯:৯)

 

৩৫২৭ মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া আবূ আলী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত তখন আবূ বকর ও আব্বাস (রাঃ) আনসারদের কোন একটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার কালে দেখতে পেলেন যে, তাঁরা (সকলেই বসে বসে) কাঁদছেন। তাঁদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? তাঁরা বললেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমাদের মজলিস স্মরণ করে কাঁদছি। তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে আনসারদের অবস্থা বললেন, রাবী বললেন, (তা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদরের কিনারা দিয়ে মাথা বেঁধে (ঘর থেকে) বেরিয়ে আসলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। এ দিনের পর আর তিনি মিম্বরে আরোহণ করনে নি। তারপর হামদ ও সানা পাঠ করে সমবেত সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আনসারগণের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখার জন্য তোমাদিগকে নির্দেশ দিচ্ছি; কেননা তাঁরাই আমার অতি আপনজন, তাঁরাই আমার বিশ্বস্ত লোক। তারা তাঁদের উপর আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে। তাঁদের যা প্রাপ্য তা তাঁরা এখনো পায়নি। তাঁদের নেক লোকদের উত্তম কার্যকলাপ সা’দরে গ্রহণ করবে এবং তাঁদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করবে।

 

৩৫২৮ আহমদ ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) ইবনু আবাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অন্তিম পীড়ায় আক্রান্তকালে) একখানা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে, চাঁদরের দু-প্রান্ত দ’কাঁধে পেঁচিয়ে এবং মাথায় একটি কাল রঙের পাগড়ী বেঁধে (ঘর থেকে) বের হলেন এবং মিম্বরে উঠে বসলেন। হামদ ও সানার পর বললেন, হে লোক সকল, সনসংখ্যা উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর আনসারগণের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পেয়ে যাবে! এমনকি তাঁরা খাদ্য-দ্রব্যে লবনের মত (সামান্য পরিমানে) পরিনত হবে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করে সে ইচ্ছা করলে কারো উপকার বা অপকার করতে পারে, তখন সে যেন নেক্কার আনসারদের নেক্ কার্যাবলী কবুল করে এবং তাঁদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেয়।

 

৩৫২৯ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারগন আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আর তাদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। তাই তাদের নেক্কারদের উত্তম কার্যাবলী কবুল কর এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দাও।

 

৩৫৩০ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এক জোড়া রেশমী কাপড় হাদীয়া স্বরূপ দেওয়া হল। সাহাবা কেরাম (রাঃ) তা স্পর্শ করে কোমলতায় অবাক হয়ে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর কোমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ? অথচ সা’দ ইবনু ম’আয (রাঃ)-এর (জান্নাতে প্রদত্ত) রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম, অথবা বলেছেন অনেক মুলায়েম। হাদীসটি কাতাদা ও যুহরী (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।

 

৩৫৩১ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ ত’আলার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, একব্যাক্তি জাবির (রাঃ)-কে বলল, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাঃ) বললেন, সা’দ ও বারা (রাঃ)-এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে (আরবী শব্দ) অর্থাৎ আল্লাহর আরশ্ সা’দ ইবনু মু’আযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।

 

৩৫৩২ মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কতিপয় লোক (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-কে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) নেমে আসে (তিনি আহত ছিলেন) তাঁকে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠানো হল। তিনি গাধায় সাওয়ার হয়ে আসলেন। যখন (যুদ্ধকালীন অস্থায়ী) মস্জিদের নিকটে আসলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের শ্রেষ্ঠতম ব্যাক্তি অথবা (বললেন) তোমাদের সরদার আসছেন তাঁর দিকে দাঁড়াও। তারপর তিনি বললেন, হে সা’দ! তারা (বনী কুরায়যার ইয়াহূদীগণ) তোমাকে সালিশ মেনে (দুর্গ থেকে) বেরিয়ে এসেছে। সা’দ (রাঃ) বললেন, আমি তাদের সম্পর্কে এ ফয়সালা দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হোক এবং শিশু ও মহিলাদেরকে বন্দী করে রাখা হোক। (তাঁর ফয়সালা শুনে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ুতুমি আল্লাহ্ তা’আলার ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা দিয়েছ অথবা (বলে ছিলেন) তুমি বাদশাহর (আল্লাহর) ফায়সালা অনুযায়ী ফায়সালা করেছ।

 

৩৫৩৩ আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, দু’ব্যাক্তি অন্ধকার রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে বের হলেন। হাঠাৎ তারা তাদের সন্মুখে একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পেলেন। রাস্তায় তাঁরা যখন ভিন্ন হয়ে পড়লেন তখন আলোটিও তাঁদের উভয়ের সাথে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। মা’মার (রহঃ) সাবিত (রহঃ)-এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এদের একজন উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) এবং অপরজন এক আনসারী ব্যাক্তি ছিলেন এবং আম্মদ (রহঃ) সাবিত (রহঃ)-এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উসায়দ ইবনু হুযায়র) ও আব্বাস ইবনু বিশর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলেন।

 

৩৫৩৪ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, কুরআন পাঠ শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকেঃ ইবনু মাসউদ, আবূ হুযায়ফার আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব) ও মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে।

 

৩৫৩৫ ইসহাক (রহঃ) আবূ উসাইদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আনসার গোত্রগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ আবদ-ই-আশহাল, তারপর বানূ হারিস ইবনু খাযরাজ তারপর বানু সায়িদা। আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই খায়র ও কল্যাণ রয়েছে। তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) বললেন, তিনি ছিলেন প্রথম যুগের অন্যতম মুসলমান। আমার ধারণা হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যদেরকে আমাদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন (তদুত্তরে তাঁকে বল হল, আপনাদেরকে বহু গোত্রের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আয়িশা সিদ্দীকাহ (রাঃ)-এর বর্ণনার অর্থ এ নয় যে, তিনি ইফ্ক্-এর ঘটনার পর সৎলোক নন।

 

৩৫৩৬ আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর আলোচনা চলছিল। তখন তিনি বললেন; তিনি সে ব্যাক্তি যাঁকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্তব্য শোনার পর থেকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআন শিক্ষা কর চারজনের নিকট থেকে, আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (সর্ব প্রথম তিনি এ নামটি বললেন)। সালিম আবূ হুযাইফার আযাদকৃত গোলাম, মু’আয ইবনু জাবাল ও উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)।

 

৩৫৩৭ মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) কে বললেন আল্লাহ, সুরা তোমাকে পড়ে শোনানোর জন্য আদেশ করেছেন। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ আমার নাম উচ্চারন করেছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যাঁ। তখন তিনি (আনন্দের আতিশজ্যে) কাদলেন।

 

৩৫৩৮ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে (সর্বপ্রথম) যে চার ব্যাক্তি সম্পূর্ণ কুরআনুল কারীম হিফয করেছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন আনসারী। (তাঁরা হলেন) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ), ম’আয ইবনু জাবাল (রাঃ), আবূ যায়েদ (রাঃ), যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ)। কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আবূ যায়েদ কে? তিনি বললেন, উনি আমার চাচাঁদের মধ্যে একজন।

 

৩৫৩৯ আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবূ তালহা (রাঃ) ঢাল হাতে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্মুখে প্রাচীরের ন্যায় অটল হয়ে দাঁড়ালেন। আবূ তালহা (রাঃ) সুদক্ষ তীরন্দায ছিলেন। অনবরত তীর ছুড়তে থাকায় তাঁর হাতে দু’ বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি শরাধার নিয়ে যে কেউ তাঁর নিকট দিয়ে যেতো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেই বলতেন, তোমার তীরগুলি আবূ তালহার জন্য রেখে দাও। এক সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঁচু করে শত্রুদের অবস্থা অবলোকন করতে চাইলে আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হউক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হয়ত শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনাকে রক্ষা করার জন্য ঢাল স্বরূপ। আনাস (রাঃ) বলেন, ঐদিন আমি আবূ বকর (রাঃ)-এর কন্যা আয়িশা (রাঃ)-কে এবং (আমার মাতা) উম্মে সুলায়মকে দেখতে পেলাম যে, তাঁরা পরিধেয় কাপড় এতটুকু পরিমাণ তুলে ফেলেছেন যে, তাঁদের পাঁয়ের খাঁড়ু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা পানির মশক ভরে নিজেদের পিঠে বহন করে এনে আহতদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। পুনরায় ফিরে গিয়ে পানি ভরে নিয়ে আহতদেরকে পান করাচ্ছিলেন। ঐ সময় আবূ তালহা (রাঃ)-এর হাত থেকে (তন্দ্রবশে) তাঁর তরবারীখানা দু’বার অথবা তিনবার পড়ে গিয়েছিল।

 

৩৫৪০ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ব্যতীত ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কারো সম্পর্কে একথাটি বলতে শুনিনি যে, ‘নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী’। সা’দ (রাঃ) বলেন, তাঁরই সম্পর্কে সূরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছেঃ “এ বিষয়ে বনী ইসরাঈলের মধ্যে থেকেও একজন সাক্ষ্য প্রদান করেছে।

 

৩৫৪১ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) কায়েস ইবনু উবাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনায় মস্জিদে বসা ছিলাম। তখন এমন এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন যার চেহারায় বিনয় ও নমরতার ছাপ ছিল। (তাঁকে দেখে) লোকজন বলতে লাগলেন, এই ব্যাক্তি জান্নাতিগণের একজন। তিনি, সংক্ষিপ্তাকারে দু’রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বালাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসগণের একজন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম কারো জন্য এমন কথা বলা উচিৎ নয়, যা সে জানেনা। আমি তোমাকে প্রকৃত ঘটনাটি বলছি কেন ইহা বলা হয়। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় একটি স্বপ্ন দেখে তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি একটি বাগানে অবস্থানরত; বাগানটি বেশ প্রশস্ত, সবুজ, (সুন্দর ও শোভাময়)। বাগানের মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং ঊর্ধ্বভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে; স্তম্ভের ঊর্ধ্বে একটি শক্তকড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উর্ধ্বে আরোহণ কর। আমি বললাম, ইহাতো আমার সামর্থের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক থেকে আমার কাপড় সমেত চেপে ধরে আমাকে আরোহণে সাহায্য করলেন। আমি চড়তে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি আঁকড়ে ধর। তারপর কড়াটি আমার হাতের মোঠায় ধারণ অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি স্বপ্নটির (তা’বীর হিসাবে) বললেন, এ বাগান হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুটিসমূহ (করনীয় মৌলিক বিষয়াদি) কড়াটি হল (কুরআনে ে উল্লেখিত) “উরুয়াতুল উস্কা” (শক্ত ও অটুট কড়া) এবং তুমি আজীবন ইসলামর উপর অটল থাকবে। (রাবী বলেন) এই ব্যাক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)। খলীফা (রাঃ) এর স্থলে বলেছেন।

 

৩৫৪২ সুলায়মান ইবনু হাবর (রহঃ) আবূ বুরদা (রহঃ) বলেন, আমি মদিনায় গেলাম; আবদুল্লাহ ইবনু সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমাদের এখানে আসবে না? তোমাকে আমি খেজুর ও ছাতু খেতে দেব এবং একটি (মর্যাদাপূর্ণ) ঘরে থাকতে দেব। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি এমন স্থানে (ইরাক) বসবাস কর, যেখানে সুদের কারবার অত্যন্ত ব্যাপক। যখন কোন মানুষের নিকট তোমার কোন প্রাপ্য থাকে আর সেই মানুষটি যদি তোমাকে কিছু ঘাস, খড় অথবা খড়ের ন্যায় নগণ্যবস্তুও হাদীয়া পেশ করে তা গ্রহণ করো না, যেহেতু তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। নযর (রাঃ), আবূ দাউদ (রহঃ) ও ওয়াহাব (রহঃ) শু’বাহ্ (রহঃ) থেকে শব্দটি বর্ণনা করেন নি।

 

৩৫৪৩ মুহাম্মদ ও সাদাকা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মরিয়াম আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন (তৎকালীন) নারী সমাজের শ্রেষ্ঠতমা নারী। আর খাদীজা (রাঃ) (এ উম্মদের) নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠা।

 

৩৫৪৪ সাঈদ ইবনু উফাইর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু অভিমান প্রদর্শন করিনি; যতটুকু খাদীজা (রাঃ)-এর প্রতি করেছি। কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর কথা বারবার আলোচনা করতে শুনেছি, অথচ আমাকে বিবাহ করার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেছিলেন। খাদীজা (রাঃ)-কে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসা’দর সু-সংবাদ দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আদেশ করেন। কোন দিন বকরী যবেহ হলে খাদীজা (রাঃ)-এর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের আবশ্যক পরিমাণ গোশত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীয়া স্বরূপ পাঠিয়ে দিতেন।

 

৩৫৪৫ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা প্রকাশ করিনি, যতটুকু খাদীজা (রাঃ)-এর প্রতি করেছি। যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনা অধিক করতেন। তিনি (আরো) বলেন, খাদীজা (রাঃ)-এর (ইন্তেকালের) তিন বছর পর তিনি আমাকে বিবাহ করেন। আল্লাহ স্বয়ং অথবা জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আদেশ করলেন যে, খাদীজা (রাঃ)-কে জান্নাতে মণি-মুক্তা খচিত একটি প্রাসা’দর সু-সংবাদ দিন।

 

৩৫৪৬ উমর ইবনু মুহাম্মদ ইবনু হাসান (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রাঃ)-কে জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন কি? তিনি বললেন, হাঁ। এমন একটি সুরম্য প্রাসা’দর সু-সংবাদ দিয়েছিলেন, যে প্রাসা’দটি তেরী করা হয়েছে এমন মুতী দ্বারা যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকবে না হৈ হুল্লোড়, কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।

 

৩৫৪৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আউফা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রাঃ) কে জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এমন একটি সুরম্য প্রাসা’দর সু-সংবাদ দিয়েছিলেন, যে প্রাসা’দটি তৈরি করা হয়েছে এমন মোতি দিয়ে যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকবে না হৈ হুল্লোড়, কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি।

 

৩৫৪৮ কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ঐ যে খাদীজা (রাঃ) একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাবার দ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। য়খন তিনি পৌছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি সুরম্য প্রাসারেদ সু-সংবাদ দিবেন যার ভিতরদেশ ফাঁকা-মুতি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার হট্টগোল; না কোন প্রকার ক্লেশ ও ক্লান্তি। ইসমাঈল ইবনু খলীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার খাদীজার বোন হালা বিন্তে খুওয়ায়লিদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে করলেন খাদীজার অনুমতি প্রর্থনার কথা। এজন্য তিনি খুশি হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ্, হালা (এর কি খবর)? আয়িশা (রাঃ) বললেন এতে আমি অভিমান করে বললাম, আপনি কি কুরায়শ বংশের লাল গন্ডধারী এক বৃদ্ধার স্মরণ করছেন, যে অনেক আগে মৃত্যু বরণ করেছে? আল্লাহ তো আপনাকে তার চেয়ে উত্তম মহিলা দান করেছেন।!

 

৩৫৪৯ ইসহাক আল ওয়াসিতী (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেন নি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন। জারীর (রাঃ) আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাস’আম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কা’বায়ে ইয়ামানী ও কা’বায়ে শামী বলা হত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সংবাদ শোনালাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।

 

৩৫৫০ ইসমাঈল ইবনু খালীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওহুদের যুদ্ধে (প্রথম দিকে) মুশরিকগণ যখন চরমভাবে পরাজিত হয়ে পড়লো, তখন ইবলিস চীৎকার করে (মুসলমানগণকে) বলল, হে আল্লাহর বান্দাগণ! পিছনের দিকে লক্ষ্য কর। তখন অগ্রবর্তী দল পিছন দিকে ফিরে (শত্রুদল মনে করে) নিজ দলের উপর আক্রমণ করে বসল এবং একে অন্যকে হত্যা করতে লাগল। এমন সময় হুযায়ফা (রাঃ) পিছনের দলে তাঁর পিতাকে দেখতে পেয়ে চীৎকার করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, এই যে আমার পিতা, এই যে আমার পিতা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, তারা কেহই বিরত থাকেনি। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেলল। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ তোমাদিগকে মাফ করে দিন। আমার পিতা উরওয়া (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, এ কথার কারণে হুযায়ফা (রাঃ)-এর মধ্যে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মঙ্গলের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল।

 

৩৫৫১ মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ওহী নাযিল হওয়ার পূর্বে একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার নিম্নাঞ্চলের বালদা নামক স্থানে যায়েদ ইবনু ‘আমর ইবনু নুফায়েলের সাথে সাক্ষাত করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সন্মুখে আহার্য পূর্ণ একটি ‘খানচা’ পেশ করা হল। তিনি তা থেকে কছিু খেতে অস্বীকৃতি জানালেন। এরপর যায়েদ (রাঃ) বললেন, আমিও ঐ সব জন্তুর গোশত খাই না যা তোমরা তোমাদের দেব-দেবীর নামে যবাই কর। আল্লাহর নামে যবাইকৃত ছাড়া অন্যের নামে যবাই করা জন্তুর গোশত আমি কিছুতেই খাইনা। যায়েদ ইবনু ‘আমর কুরাইশের যবাইকৃত জন্তু সম্পর্কে তাদের উপর দোষারোপ করতেন এবং বলতেন; বকরীকে সৃষ্টি করলেন আল্লাহ, তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করলেন। ভূমি থেকে উৎপন্ন করলেন, তৃণ-লতা অথচ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার সমূহদান অস্বীকার করে প্রতিমার প্রতি সন্মান করে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করছ। মূসা (সনদসহ) বললেন, সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। মূসা (রহঃ) বলেন, আমার জানামতে তিনি ইবনু উমর (রাঃ) থেকে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন যে, যায়দ ইবনু আমর সঠিক তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত দ্বীনের তালাশে সিরিয়ায় গমন করলেন। সে সময় একজন ইয়াহূদী আলেমের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হল। তিনি তার নিকট তাদের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এবং বললেন, হয়ত আমি তোমাদের দ্বীনের অনুসারী হব, আমাকে সে সম্পর্কে অবহিত কর। তিনি বললেন, তুমি আমাদের দ্বীন গ্রহণ করবেনা। গ্রহণ করলে যে পরিমান গ্রহণ করবে সে পরিমান আল্লাহর গযব তোমার উপর আপতিত হবে। যায়েদ বললেন, আমি তো আল্লাহর গযব থেকে পালিয়েআসছি। আমি যথাসাধ্য আল্লাহর সামান্যতম গযবকেও আমি বহন করব না। আর আমার ইহা বহনের শক্তি-সামর্থ্য আছে? তুমি কি আমাকে এ ছাড়া অন্য কোন পথের সন্ধান দিতে পার? সে বলল, আমি তা জানিনা, তবে তুমি দ্বীনে হানীফ গ্রহণ করে নাও। যায়েদ জিজ্ঞাসা করলেন, (দ্বীনে) হানীপ কি? সে বলল, তাহল ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দ্বীন। তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না নাসারাও ছিলেন না। তিনি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতেন না। তখন যায়েদ বের হলেন এবং তাঁর সাথে একজন খৃষ্টান আলিমের সাক্ষাত হল। ইয়াহূদী ‘আলীমের নিকট ইতিপূর্বে তিনি যা যা বলেছিলেন তার কাছেও তা বললেন। তিনি বললেন, তুমি আমাদের দ্বীন গ্রহণ করবেনা। তিনি বললেন, তুমি আমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে। গ্রহণ করলে যে পরিমান গ্রহণ করবে সে পরিমান আল্লাহর লা’নত তোমার উপর আপতিত হবে। যায়েদ বললেন, আমি তো আল্লাহর লা’নত থেকে পালিয়েএসেছি এবং আমি আল্লাহর লা’নত ও গযবের সামান্যতম অংশ বহন করতে রাযী নই, এবং আমি তা বহনের শক্তিও রাখি? তুমি কি আমাকে এছাড়া অন্য কোন পথের সন্ধান দেবে। সে বলল, আমি অন্য কিছু জানিনা। শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, তুমি দ্বীনে হানীফ গ্রহণ কর। তিনি বললেন, হানীফ কী? উত্তরে তিনি বললেন, তাহল ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর দ্বীন, তিনি ইয়াহূদীও ছিলেন না এবং খৃষ্টানও ছিলেন না এবং আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত করতেন না। যায়েদ যখন ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তাদের মন্তব্য জানতে পারলেন, তখন তিনি বেড়িয়ে পড়ে দু’হাত উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ্! আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি দ্বীনে ইব্রাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপর আছি। নায়স (রহঃ) বলেন হিশাম তাঁর পিতাসূতে তিনি আসবা বিন্ত আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে আমার কাছে লিখেছেন যে, তিনি (আসমা) বলেন, আমি দেখলাম যায়েদ ইবনু আমর ইবনু নুফায়লকে কা’বা শরীফের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বলছেন, হে কুরাইশ গোত্র, আল্লাহর কসম, আমি ব্যতীত তোমাদের কেউ-ই দ্বীনে ইব্রাহীমের উপর নেই। আর তিনিত যেসব কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়ার জন্য নেওয়া হত তাদেরকে তিনি বাঁচাবার ব্যবস্থা করতেন। যখন কোন লোক তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করার জন্য ইচ্ছা করত, তখন তিনি এসে বলতেন, হত্যা করো না আমি তার জীবিকার ব্যবস্থার ব্যয়ভার গ্রহণ করবো। এ বলে তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতেন। শিশুটি বড় হলে পর তার পিতাকে বলতেন, তুমি যদি তোমার কন্যাকে নিয়ে যেতে চাও, তাহলে আমি দিয়ে দেব। আর তুমি যদি নিতে ইচ্ছুক না হও, তবে আমই –এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করতে থাকব।

 

৩৫৫২ মাহমূদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কা’বা গৃহ পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আব্বাস (রাঃ) (অন্যদের সাথে) পাথর বয়ে আনছিলেন। আব্বাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, তোমার লুঙ্গিটা কাঁধের উপর রাখ, পাথরের ঘর্ষণ হতে তোমাকে রক্ষা করবে। (লুঙ্গিটি খোলার সাথে সাথে) তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে গেলেন। তাঁর চোখ দু’টি আকাশের দিকে নিবিষ্ট ছিল। (কিছুক্ষন পর) তাঁর চেতনা ফিরে এল, তখন তিনি বলতে লাগলেন, আমার লুঙ্গি দাও। আমার লুঙ্গি দাও। তৎক্ষণাৎ তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেওয়া হল।

 

৩৫৫৩ আবূ নু’মান (রহঃ) ‘আমর ইবনু দীনার ও ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে কা’বা গৃহের চতুষ্পার্শ্বে কোন প্রাচীর ছিল না। লোকজন কা’বা গৃহকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত। উমর (রাঃ) (তাঁর খিলাফত কালে) কাবার চতুষ্পার্শ্বে প্রচীর নির্মাণ করেন। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, এ প্রচীর ছিল নীচু, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) (তাঁর যুগে দীর্ঘ ও উঁচু) প্রাচীর নির্মাণ করেন।

 

৩৫৫৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলি যুগে আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন কুরাইশগণ ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন। যখন হিজরত করে মদিনায় আগমন করলেন, তিনি নিজেও আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করতেন এবং অন্যকেও তা পালনে আদেশ দিতেন। যখন রমযানের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ফরয করা হল, (তখন ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ঐচ্ছিক করে দেওয়া হল)। তখন যার ইচ্ছা রোযা রাখতেন আর যার ইচ্ছা রোযা রাখতেন না।

 

৩৫৫৫ মুসলিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাজ্জের (হজ্জ) মাসগুলোতে ‘উমরা পালন করাকে কুরাইশগণ পাপ কাজ বলে মনে করত। তারা মুহাররম মাসের নামকে পরিবর্তন করে সফর মাস নামে আখ্যায়িত করত এবং বলত, (উটের) যখম শুকিয়ে যাবে এবং পদচিহ্ন মুছে যাবে তখন উমরা পালন করা হালাল হবে যারা তা পালন করতে চায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গী সাথীগণ যিলহাজ্জ মাসের চতুর্থ তারিখে হাজ্জের (হজ্জ) তালবিয়া (লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক) পড়তে পড়তে মক্কায় হাযির হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে বললেন, তোমরা (তোমাদের তালবীয়অকে উমরায় পরিণত করে নেও। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আমাদের জন্য কোন কোন বিষয় হালাল হবে? তিনি বললেন, যাবতীয় বিষয় হালাল হয়ে যাবে।

 

৩৫৫৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু মুসুইয়্যাব (রহঃ) তার পিতার মাধ্যমে দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, জাহেলিয়্যাতের যুগে একটি মহা প্লাবন হয়েছিল। যদ্বারা মক্কায় দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছিল। ‘সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, ‘আমর ইবনু দীনার কলতেন, এ হাদীসটির একটি দীর্ঘ কাহিনী রয়েছে।

 

৩৫৫৭ আবূ নু’মান (রহঃ) কাইস ইবনু আবূ হাযিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবূ বকর (রাঃ) আহমাস গোত্রের যায়নাব নান্মী জনৈক মহিলার নিকট গমন করলেন। তিনি গিয়ে দেখতে পেলেন, মহিলাটি কথাবার্তা বলছেনা। তিনি (লোকজনকে) জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাটির এ অবস্থা কেন, কথাবর্তা বলছে না কেন? তারা তাঁকে জানালেন , এ মহিলা নীরব থেকে থেকে হাজ্জ (হজ্জ) পালন করে আসছেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে বললেন, কথা বল কেন না ইহা হালাল নয়। ইহা জাহেলিয়্যাত যুগের কাজ। তখন মহিলাটি কথাবর্তা বলল, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? আবূ বকর (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমি একজন মুহাজির ব্যাক্তি। মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল, আপিনি কোন গোত্রের মহাজির? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, কুরাইশ গোত্রের। মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলেন, কোন কুরাইশের কোন শাখার আপনি? আবয় বকর (রাঃ) বললেন, তুমি তো অত্যধিক উত্তম প্রশ্নকারিণী। আমি আবূ বকর। তখন মহিলাটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, জাহেলিয়্যা যুগের পর যে উত্তম দ্বীন ও কল্যাণময় জীবন বিধান আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন সে দ্বীনের উপর আমরা কতদিন সঠিকভাবে টিকে থাকতে পারব? আবয় বকর (রাঃ) বললেন, যতদিন তোমাদের ইমামগণ তোমাদেরকে নিয়ে দ্বীনের উপর অবিচল থাকবেন। মহিলা জিজ্ঞাসা করল, ইমামগণ কারা? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তোমাদের গোত্রে ও সামাজে এমন সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ কি দেখনি। যারা আদেশ করলে সকলেই তা মেনে চলে। মহিলা উত্তর দিল, হ্যাঁ। আবূ বকর (রহঃ) বললেন, এরাই হলেন জনগণের ইমাম।

 

৩৫৫৮ ফারওয়া ইবনু আবূল মাগারা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আরবের কোন এক গোত্রের জনৈকা (মুক্তিপ্রাপ্ত) কৃষ্ণকায় মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেন। (বসবাসের জন্য) মস্জিদের পাশে ছিল তার একটি ছোট ঘর। আয়িশা (রাঃ) বলেন, সে আমাদের নিকট আসত এবং আমাদের সাথে (নানা রকমের) কথাবার্তা বলত, যখন তার কথাবার্তা শেষ হত তখন প্রায়ই বলতো, ইয়াওমুল বিশাহ (মনিমুক্তা খচিত হারে দিন) আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আশ্চার্যজনক ঘটনাবলীর একটি দিন জেনে রাখুন! আমার প্রতিপালক আমাকে কুফর এর দেশ থেকে নাজাত দিয়েছেন। সে এ কথাটি প্রায়ই বলত। একদিন আয়িশা (রাঃ) ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়ামুল বিশাহ’ কী? তখন সে বলল, যে আমার মুনীবের পরিবারের জনৈক শিশু কন্যা ঘর থেকে বের হল। তার গলায় চামড়ার (উপর মনিমুক্তা খচিত) একটি হার ছিল। হারটি (ছিড়ে) গলা থেকে পড়ে গেল। তখন একটি চিল একে গোশতের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। তারা আমাকে হার চুরির সন্দেহে শাস্তি ও নির্যাতন করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তারা আমার লজ্জাস্থানে তল্লাশী চালাল। যখন তারা আমার চারপাশে ছিল এবং আমি চরম বিষাদে ছিলাম। এমন সময় একটি চিল কোথা থেকে উড়ে আসল এবং আমাদের মাথার উপর এসে হারটি ফেলে দিল। তারা হারটি তুলে নিল। তখন আমি বললাম, এটাই সেই হার যে হার চুরির অপরাধে আমার উপর অপবাদ দিয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

 

৩৫৫৯ কুতায়বা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাবধান! যদি তোমাদের শপথ করতে হয় তবে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকারো নামে শপথ করো না। লোকজন তাদের বাপ-দাদার নামে শপথ করত। তিনি বললেন, সাবধান! বাপ-দাদার নামে শপথ করো না।

 

৩৫৬০ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ‘আমর (লা) হতে বর্ণিত যে, আব্দুর রাহমান ইবনু কাসিম (রাঃ) তার কাছে বলেছেন যে, কাসিম জানাযা বহনকালে আগে আগে চলতেন। জানোযা দেখলে তিনি দাঁড়াতেন না এবং তিনি বর্ণনা করছেন যে, আয়িশা (রাঃ) বলতেন, জাহিলী যুগে মুশরিকগণ জানাযা দেখলে দাঁড়াত এবং মৃত ব্যাক্তির রূহকে লক্ষ্য করে বলত, তুমি তোমার আপনজনদের সাথেই রয়েছ যেমন তোমার জীবদ্দশায় ছিলে। এ কথাটি তারা দু’বার বলত।

 

৩৫৬১ ‘আমর ইবনু ‘আব্বাস (ল) ‘আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, মুশরিকগণ সাবীর পাহাড়ের উপর সূর্যকিরণ পতিত না হওয়া পর্যন্ত মুয্দালাফা থেকে রওয়ানা হত না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা হয়ে তাদের প্রথার বিরোধিতা করেন।

 

৩৫৬২ ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ইা (রহঃ) বলেন, আল্লাহর বাণীঃ এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, শরাব পরিপূর্ণ এবং একের পর এক পেয়ালা। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আব্বাস (রাঃ)-কে ইসলাম পূর্ব যুগে বলতে শুনেছি, আমাদেরকে পাত্রপূর্ণ শরাব একর পর এক পান করাও।

 

৩৫৬৩ আবূ নু’য়াঈম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বাধিক সঠিক বাক্য যা কোন কবি বলেছেন তা হল লাবীদ এর এ পংক্তিটি- সাবধান, আল্লাহ্ ব্যতীত সকল জিনিসই বাতিল ও অসার। এবং কবি উমাইয়্যা ইবনু আবূ সাল্ত (তার কথাবার্তার মধ্য দিয়ে) ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছিল।

 

৩৫৬৪ ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর একজন ক্রীতদাস ছিল। সে প্রত্যহ তার উপর নির্ধারিত কর আদায় করত। আর আাবূ বকর (রাঃ) আর দেওয়া কর থেকে আহার করতেন। একদিন সে কিছু খাবার জিনিস এনে দিল। তা থেকে তিন আহার করলেন। তারপর গোলাম বলল, আপনি জানেন কি উহা কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে যা আপনি খেয়েছেন? তিনি বললেন, বলত ইহা কি? গোলাম উত্তারে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যাক্তির ভবিষ্যৎ গণনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যৎ গণনা করা আমার উত্তমরূপে জানাছিল না। তথাপি প্রতারণামূলকভাবে ইহা করেছিলাম। (কিন্তু ভাগ্যচক্রে আমার গণনা সঠিক হল।)আমার সাথে তার সাক্ষাৎ হলে গণনার বিনিময়ে এ দ্রব্যাদি সে আমাকে হাদীয়া দিল যা থেকে আপনি আহার করলেন। আবূ বকর (রাঃ) ইহা শোনামাত্র মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বমি করে দিলেন এবং পাকস্থলীর মধ্যে যা কিছু ছিল সবই বের করে দিলেন।

 

৩৫৬৫ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইসলাম পূর্ব যুগের মানুষ ‘হাবালুল হাবালা’ রূপে উটের গোশত ক্রয়-বিক্রয় করত। রাবী বলেন, হাবালুল হাবালার অর্থ হল- তারা উট ক্রয়-বিক্রয় করত এই শর্তে যে কোন নির্দিষ্ট গর্ভবর্তী উটনী বাচ্চা প্রসব করলে পর ঐ প্রসবকৃত বাচ্চা যখন গর্ভবর্তী হবে তখন উটের মূল্য পরেশোধ করা হবে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এরূপ ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করে দিলেন।

 

৩৫৬৬ আবূ নু’মান (রহঃ) গায়লান ইবনু জারীর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর কাছ থেকে (কাছে গেলে) তিনি আমাদের কাছে আনসারদের ঘটনা বর্ণনা করতেন। রাবী বলেন, আমাকে লক্ষ্য করে তিনি বলতেন, তোমার স্বজাতি অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে, অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজ করেছে। (জাহিলী যুগের কাসামা (হত্যাকারীর গোত্রের পঞ্চাশ জনের শপথ গ্রহণ)

 

৩৫৬৭ আবূ মা’মার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম কাসামা হত্যাকরী গোত্রের লোকের (শপথ গ্রহণ) জাহিলী যুগে অনুষ্ঠিত হয় আমাদের হাশেম গোত্রে। (এতদ্ সম্পর্কীয় ঘটনা হল এই) কে মজুর হিসাবে নিয়োগ করল। ঐ মজুর তার সাথে উটগুলির নিকট গমন করল। ঘটনাক্রমে বনু হাশিমের অপর এক ব্যাক্তি তাদের নিকট দিয়ে যাচ্চিল। তাদের নিকটবর্তী হওয়ার পর খাদ্যভর্তি বস্তার বাঁধন ছিড়ে গেল। তখন সে মজুর ব্যাক্তিটিকে বলল, আমকে রশি দিয়ে সাহায্য কর, যে তা দিয়ে আমার বস্তার মুখ বাঁধতে পারি এবং উটটিও যেন পালিয়েযেতে না পারে। মজুর তাকে একটি রশি দিল। ঐ ব্যাক্তি তার বস্তার মুখ বেঁধে নিল। যখন তারা অবতরণ করল তখন একটি ব্যতীত সকল উট বেঁধে রাখা হল। মজুর নিযুক্তকারী ব্যাক্তি মজুরকে জিজ্ঞাসা করল, সকল উট বাঁধা হল কিন্তু এ উটটি বাঁধা হল না কেন? মজুর উত্তরে বলল, এ উটটি বাঁধার কোন রশি নেই। তখন সে বলল, এই উটটির রশি কোথায়? রাবী বলেন, একথা শুনে মালিক মজুরকে লাঠি দিয়ে এমনভাবে আঘাত করল যে শেষ পর্যন্ত এ আঘাতেই তার মৃত্যু হল। আহত মজুরটি যখন মুমূর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছিল, তখন ইয়ামানের একজন লোক তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। আহত মজুর তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এবার হাজ্জে (হজ্জ) যাবেন? সে বলল, না, তবে অনেকবার গিয়েছি। আহত মজুরটি বলল, আপনি কি আমার সংবাদটি আপনার জীবনের যে কোন সময় পৌছে দিতে পারেন? ইয়ামানী লোকটি উত্তরে বলল, হাঁ তা পারব। তারপর মজুরটি বলল, আপনি যখন হাজ্জ (হজ্জ) উপলক্ষে মক্কায় উপস্থিত হবেন তখন হে কুরাইশের লোকজন বলে ঘোষনা দিবেন। যখন তারা আপনার ডাকে সাড়া দিবে, তখন আপনি বনু হাশিম গোত্রকে ডাক দিবেন, যদি তারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়, তবে আপনি তাদেরকে আবূ তালিব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং তাকে পেলে জানিয়ে দিবেন যে, অমুক ব্যাক্তি (উটের মালিক) একটি রশির কারণে আমাকে হত্যা করেছে। কিছুক্ষণ পর আহত মজুরটি মৃত্যুবরণ করল। মজুর নিয়োগকারী ব্যাক্তিটি যখন মক্কায় ফিরে এল। তখন আবূ তালিব তার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের ভাইটি কোথায়? তার কি হয়েছে? এখনও ফিরছেনা কেন? সে বলল, আপনার ভাই হঠাৎ ভীষণ রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে। আমি যথাসাধ্য সেবা শুশ্রুষা করেছি (কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারাই গেল)। মারা যাওয়ার পর আমি তাকে যথারীতি সমাহিত করেছি। আবূ তালিব বললেন, তুমি এরূপ করবে আমরা এ আশাই পোষণ করি। এভাবে কিছুদিন কেটে গেল। তারপর ঐ ইয়ামানী ব্যাক্তি যাকে সংবাদ পৌছে দেয়ার জন্য মজুর ব্যাক্তিটি অসিয়ত করেছিল, হাজ্জ (হজ্জ)ব্রত পালনে মক্কায় উপস্থিত হল এবং (পূর্ব অঙ্গীকার অনুযায়ী) হে কুরাইশগণ বলে ডাক দিল। তখন তাকে বলা হল, এই যে, কুরাইশ। সে আবার বলল, হে বনু হাশিম, বলা হল; এই যে, বনু হাশিম। সে জিজ্ঞাসা করল, আবূ তালিব কোথায়? লোকজন আবূ তালিবকে দেখিয়ে দিল। তখন ইয়ামানী লোকটি বলল, আপনাদের অমুক ব্যাক্তি আপনার নিকট এ সংবাদটি পৌছে দেয়ার জন্য আমাকে অসিয়ত করেছিল যে, অমুক ব্যাক্তি মাত্র একটি রশির কারণে তাঁকে হত্যা করেছে। (সে ঘটনাটিও সবিস্তারে বর্ণনা করল) এ কথা শুনে আবূ তালিব মজুর নিয়োগকারী ব্যাক্তির নিকট গমন করে বলল; (তুমি আমাদের ভাইকে হত্যা করেছ) কাজেই আমাদের তিনটি প্রস্তাবের যে কোন একটি তোমাকে মেনে নিতে হবে। তুমি হয়ত হত্যার বিনিময় স্বরূপ একশ উট দিবে অথবা তোমার গোত্রের বিশ্বাসযোগ্য পঞ্চাশ জন লোক হলফ করে বলবে যে, তুমি তাকে হত্যা করনি। যদি তুমি এসব করতে অস্বীকার কর তবে আমরা তোমাকে হত্যার বিনিময়ে হত্যা করব। তখন হত্যাকরী ব্যাক্তিটি স্ব-গোত্রীয় লোকদের নিকট গমন করলে ঘটনা বর্ণনা করল। ঘটনা শুনে তারা বলল, আমরা হলফ করে বলব। তখন বনু হাশিম গোত্রের জনৈক মহিলা যার বিবাহ হত্যাকারীর গোত্রে হয়েছিল এবং তার একটি সন্তানও হয়েছিল, আবূ তালিবের নিকট এসে বলল, হে আবূ তালিব, আমি এ আশা নিয়ে এসেছি যে, আপনি পঞ্চাশজন হলফকারী থেকে আমার এ সন্তানটিকে রেহাই দিবেন এবং ঐ স্থানে তার হলফ নিবেননা যে স্থানে হলফ নেওয়া হয়। (অর্থাৎ রুকনে ইয়ামিনী ও মাকামে ইব্রাহীমের মধ্যবর্তী স্থান) আবূ তালিব তার আবদারটি মনজুর করলেন। তারপর হত্যাকারীর গোত্রের জনৈক পুরুষ আবূ তালিবের নিকট এসে বলল, হে আবূ তালিব, আপনি একশ’ উটের পরিবর্তে পঞ্চাশজনের হলফ নিতে চাচ্ছেন, এ হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি হলফকারীর উপর দু’টি উট পরে। আমার দু’টি উট গ্রহণ করুন এবং আমাকে হলফ করার জন্য দাঁড় করানো হয় সেখানে দাড় করানো থেকে আমাকে অব্যাহতি দেন। অপর আটচল্লিশজন এসে যথাস্থানে হলফ করল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, হলফ করার পর একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই আটচল্লিশ জনের একজনও বেঁচে ছিলনা।

 

৩৫৬৮ ‘উবায়দু ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বু’আস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূল) -এর অনুকূলে (হিজরতের পূর্বেই) সংঘঠিত করেছিলেন। এ দুদ্ধের কারণে তারা (মদিনাবাসীরা) বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছিল এবং এদের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ এই যুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছিল। আল্লাহ্ তা’আলা এ যুদ্ধ ঘটিয়েছিলেন এ কারণে যেন তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। ইবনু ওহাব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী বাতনে ওয়াদী নামক স্থানে সাঈ (দৌড়ান) করা সুন্নত নয়। জাহেলী যুগের লোকেরাই শুধু সেখানে সাঈ করত এবং বলত আমরা বাতহা নামক স্থানটি দ্রুত দৌড়িয়ে অতিক্রম করব।

 

৩৫৬৯ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল জুফী (রহঃ) আবূস্সাফর (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! আমি যা বলছি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং তোমরা যা বলতে চাও আমাকে শোনাও এবং এমন যেন না হয় যে তোমরা এখান থেকে চলে গিয়ে বলবে ইবনু ‘আব্বাস এরূপ বলেছেন। (অতঃপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন) যে ব্যাক্তি বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করতে ইচ্ছা করে সে যেন হিজর এর বাহির থেকে তাওয়াফ করে এবং এ স্থানকে হাতীম বলবেনা কারণ, জাহেলীয়াতের যুগে কোন ব্যাক্তি ঐ জায়গাটিতে তার চাবুক, জুতা তীর ধনু ইত্যাদি নিক্ষেপ করে হলফ করত।

 

৩৫৭০ নুয়া’ঈম ইবনু হাম্মদ (রহঃ) আমর ইবনু মাইমূন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহিলিয়াতের যুগে দেখেছি, একটি বানর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে অনেকগুলো বানর একত্রিত হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম।

 

৩৫৭১ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগের কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম হলঃ কারো বংশ-কুল নিয়ে খোটা দেওয়া (কারো মৃত্যু উপলক্ষে শোক প্রকাশার্থে) বিলাপ করা। তৃতীয় কথাটি (রাবী উবায়দুল্লাহ) ভুলে গেছেন। তবে সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, তৃতীয় কার্যটি হল, নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি কামনা করা।

 

৩৫৭২ আহমদ ইবনু আবূ রাজা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর যখন (ওহী) নাযিল করা হয় তখন তাঁর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। এরপর তিনি মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। তারপর তাঁকে হিজরতের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি হিজরত করে মদিনায় চলে গেলেন এবং তথায় দশ বছর অবস্থান করলেন, তারপর তাঁর ওফাত হয়।

 

৩৫৭৩ আল-হুমায়দী (রহঃ) খাব্বাব (রাঃ) বলেন, আমি (একবার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযর হলাম। তখন তিনি তাঁর নিজের চাঁদরকে বালিশ বানিয়ে কাবা গৃহের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। (যেহেতু) আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে কঠিন নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তাই আমি বললাম, আপনি কি (আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তার) জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন না? তখন তিনি উঠে বসলেন এবং তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদারদের মধ্যে কারো কারো শরীরের হাড় পর্যন্ত সমস্ত মাংস ও শিরা উপশিরাগুলি লোহার চিরুনী দিয়ে আঁচড়ে বের করে ফেলা হত। কিন্তু এসব নির্যাতনও তাদেরকে দ্বীন থেকে বিমুখ করতে পারত না। তাঁদের মধ্যে কারো মাথার মধ্যবর্তী স্থানে করাত স্থাপন করে তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। কিন্তু এ নির্যাতনও তাঁদেরকে তাঁদের দ্বীন থেকে ফিরাতে পারতনা। আল্লাহর কসম, আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যই দ্বীনকে পরিপূর্ণ করবেন, ফলে একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ (শহর) থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে সে ভয় করবে না। রাবী (রহঃ) আরো অতিরিক্ত বর্ণনা করেন এবং তার মেষ পেলেন উপর নেকড়ে বাঘের আক্রমণে সে ভয় করবে না।

 

৩৫৭৪ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনু মাসউদ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আন-নাজ্ম তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। তখন এক ব্যাক্তি ব্যতীত (উপস্থিত) সকলেই সিজ্দা করলেন। ঐ ব্যাক্তিকে আমি দেখলাম, সে এক মুষ্টি কংকর তুলে নিয়ে তার উপর সিজ্দা করল এবং সে বলল, আমার জন্য এরূপ সিজ্দা করাই যথেষ্ট। (আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন) পরবর্তীকালে আমি তাকে কাফির অবস্থায় (বদর যুদ্ধে) নিহত হতে দেখেছি।

 

৩৫৭৫ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজ্দা করলেন। তাঁর আশেপাশে কুরাইশের কয়েকজন লোক বসেছিল। এমন সময় উক্বা ইবনু আবূ মুয়াইত (যবাইকৃত) উটের রাড়ীভুঁড়ি নিয়ে উপস্থিত হল এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিঠের উপর নিক্ষেপ করল। ফলে তিনি তাঁর মাথা উঠাতে পারলেন না। (সাংবাদ পেয়ে) ফাতিমা (রাঃ) এসে তাঁর পিঠের উপর থেকে তা সরিয়ে দিলেন এবং যে এ কাজটি করেছে তার জন্য বদ দু’আ করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাথা উঠিয়ে) বললেন, ইয়া আল্লাহ্! পাকড়াও কর কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে— আবূ জেহেল ইবনু হিশাম, উৎবা ইবনু রাবিয়া, শায়বা ইবনু রাবি’য়া, উমাইয়া ইবনু খালফ অথবা উবাই ইবনু খালাফ। উমাইয়া ইবনু খালফ না উবাই ইবনু খালফ এ বিষয়ে (শো’বা রাবী নন্দেহ করেন) ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন) আমি এদের সবাইকে বদর যুদ্ধে নিহত অবস্থায় দেখেছি। উমাইয়া অথবা উবাই ব্যতীত এদের সবাইকে সে দিন একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তার গ্রন্হিগুলি এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল যে তাকে কূপে নিক্ষেপ করা যায় নি।

 

৩৫৭৬ ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু আবযা (রাঃ) একদিন আমাকে আদেশ করলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে এ আয়াত দু’টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, এর অর্থ কী? আয়াতটি হল এই “আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করবে না। ” এবং “যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু’মিনকে হত্যা করে। ” আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন, যখন সূরা আল-ফুরকানের আয়াতটি নাযিল করা হল তখন মক্কার মুশ্রিকরা বলল, আমরা তো মানুষকে হত্যা করেছি যা আল্লাহ্ হারাম করেছেন এবং আল্লাহর সাথে অন্যকে মা’বুদ হিসাবে শরীক করেছি। আরো নানা জাতীয় অশ্লীল কাজ কর্ম করেছি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করলেন, “কিন্তু যারা তওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে ” সুতরাং এ আয়াতটি তাদের জন্য প্রযোজ্য। আর সূরা নিসার যে আয়াতটি রয়েছে তা, ঐ ব্যাক্তি সম্পর্কে যে ইসলাম ও তার বিধি-বিধানকে জেনে বুঝে কবূল করার পর কাউকে (ইচ্ছাকৃত) হত্যা করেছে। তখন তার শাস্তি, জাহান্নাম। তারপর মুজাহিদ (রহঃ) কে আমি এ বিষয় জানালাম। তিনি বললেন, তবে যদি কেউ অনুতপ্ত হয়।

 

৩৫৭৭ ‘আইয়্যাশ ইবনুল ওয়ালিদ (রহঃ) ‘উরাওয়া ইবনু যাবায়র (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) এর নিকট বললাম, মক্কার মুশ্রিক কর্তৃক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সর্বাপেক্ষা কঠের আচরণের বর্ণনা দিন। তিনি বললেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা শরীফের (পশ্চিম পার্শ্বস্থ) হিজর নামক স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। তখন ‘উকবা ইবনু আবূ মু’য়াইত এল এবং তার চাঁদর দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কন্ঠনালী পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলল। তখন আবূ বকর (রাঃ) এগিয়ে এসে ‘উকবাকে কাঁধে ধরে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট থেকে সরিয়ে দিলেন এবং বললেন, তোমরা এমন ব্যাক্তিকে হত্যা করতে চাও যিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই আমাদের প্রতিপালক।

 

৩৫৭৮ আবদুল্লাহ ইবনু হাম্মাদ আমুলী (রহঃ) আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে এমন অবস্থায় (ইসলাম গ্রহণের জন্য) সাক্ষাত করলাম যে, তখন তাঁর সঙ্গে (ইসলাম গ্রহণ করেছেন) এমন পাঁচজন কৃতদাস, দ’জন মহিলা ও আবূ বকর (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিল না।

 

৩৫৭৯ ইসহাক (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম সেদিনের পূর্বে অন্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। আর আমি সাতদিন পর্যন্ত বয়স্কদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণকারী হিসাবে তৃতীয় ব্যাক্তি ছিলাম।

 

৩৫৮০ উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ (রহঃ) আবদুর রাহমান (রহঃ) বলেন, আমি মাসরূক (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, রাতে জ্বিনরা মনোযোগের সাথে কুরআন শ্রবণ করেছিল ঐ রাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে সংবাদটি কে দিয়েছিল? তিনি বলেন, তোমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তাদের উপস্থিতির সংবাদ একটি বৃক্ষ দিয়েছিল।

 

৩৫৮১ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উযূ (ওজু/অজু/অযু) ও ইস্তিঞ্জার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র বহন করে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলান, হঠাৎ তাকিয়ে বললেন, কে? আমি বললাম, আমি আবূ হুরায়রা। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি উহা দ্বারা ইস্তিঞ্জা করব। তবে, হাঁড় এবং গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় করে কয়েকটি পাথর এনে তাঁর নিকটে রেখে দিলাম এবং আমি তথা হতে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিঞ্জা থেকে অবসর হলেন, তখন আমি অগ্রসর হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হাঁড় ও গোবর এর বিষয় কি? তিনি বললেন এগুলো জ্বিনের খাদ। আমার নিকট নাসীবীন নামক জায়গা থেকে জ্বিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা উত্তম জ্বিন ছিল। তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের প্রার্থনা জানাল। তখন আমি আল্লাহর নিকট দু’আ করলাম যে, যখন কোন হাঁড় বা গোবর (তাদের) হস্তগত হয় তখন যেন উহাতে তাদের খাদ্যদ্রব্য পায়।

 

৩৫৮২ ‘আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আবির্ভাবের সংবাদ যখন আবূ যার (রাঃ) এর নিকট পৌছল, তখন তিনি তাঁর ভাই (উনাইস)কে বললেন, তুমি এই উত্যকায় যেয়ে ঐ ব্যাক্তির সম্পর্কে জেনে আস যে ব্যাক্তি নিজেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শোনাও। তাঁর ভাই (মক্কাভিমুখে) রওয়ানা হয়ে ঐ ব্যাক্তির নিকট পৌছে তাঁর কথাবর্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবূ যারের নিকট প্রত্যাবর্তন করে বললেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম স্বভাব অবলম্বন করার জন্য (লোকদেরকে) নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম (পড়তে শুনলাম) যে পদ্য নয়। এতে আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি যে উদ্দেশ্যে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেনা। আবূ যার (রাঃ) সফরের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তালাশ করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও পছন্দ করলেন না। এমতাবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি (মসজিদে) শুয়ে পড়লেন। আলী (রাঃ) তাঁকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, লোকটি বিদেশী মূসা ফির। যখন আবূ যার আলী (রাঃ)-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবূ যার (রাঃ) পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে আরারেম দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি (পূর্বে দিনের) শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী (রাঃ) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখন কি মূসা ফির ব্যাক্তির গন্তব্য স্থানের সন্ধান লাভের সময় হয়নি? সে এখনও এ জায়গা অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন। (পথিমধ্যে) কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। এমতাবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী (রাঃ) পূর্বের ন্যায় তার পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি আমাকে বলবেনা কি জিনিস এখানে আসতে তোমাকে উদ্ধুদ্ধ করেছে? আবূ যার (রাঃ) বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শনের পাকা পোক্ত অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী (রাঃ)অঙ্গীকার করলেন এবং আবূ যার (রাঃ) ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন। আলী (রাঃ) বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন কিছু আমি দেখতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে। এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবূ যার (রাঃ) তাই করলেন আলী (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐ স্থানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে না। আবূ যার (রাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সন্মুখে উচ্চস্বরে গোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করলেন, (ইহা শোনামাত্র মুশরিক) লোকজন (উত্তেজিত হয়ে) তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করতে করতে তাঁকে পাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস (রাঃ) এসে তাঁকে আগলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অনিবার্য। তোমরা কি জানোনা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী দলগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করতে হয়। একথা বলে তিনি তাদের হাত থেকে আবূ যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন ভোরে তিনি অনুরূপ বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে বেদম প্রহার করতে লাগল। আব্বাস (রাঃ) এসে আজো তাঁকে রক্ষা করলেন।

 

৩৫৮৩ কুতায়বা ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) কায়স (রাঃ) বলেন, আমি সা‘ঈদ ইবনু যায়েদ ইবনু ‘আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ)-কে কুফার মসজিদে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, ‘উমরের ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে তাঁর হাতে আমাকে বন্দী অবস্থায় দেখেছি। তোমরা উসমান (রাঃ) এর সথে যে ব্যবহার করলে এ কারণে যদি ওহুদ পাহাড় দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে যায় তবে তা হওয়া সঙ্গতই হবে।

 

৩৫৮৪ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) যেদিন ইসলাম গ্রহণ করলেন ঐ দিন থেকে আমরা সর্বদা প্রভাব প্রতিপত্তির আসনে সমাসীন রয়েছি।

 

৩৫৮৫ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর পিতা ‘উমর (রাঃ) (ইসলাম গ্রহণের পর) একদিন নিজ গৃহে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। তখন আবূ ‘আমর ‘আস ইবনু ওয়াইল সাহমী তাঁর কাছে আসলেন তার গায়ে ছিল ধারিদার চাঁদর ও রেশমী জরির জামা। তিনি বাসু সাহম গোত্রের লোকছিলেন। জাহেলী যুগে তারা আমাদের হালীফ (বিপদ কালে সাহায্যের চুক্তি যাদের সাথে করা হয়) ছিল। ‘আস ‘উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার অবস্থা কমেন? ‘উমর (রাঃ) উত্তর দিলেন, তোমার গোত্রের লোকজন ইসলাম গ্রহণ করার কারণে অচিরেই আমাকে হত্যা করবে। ইহা শুনে ‘আস (রাঃ) বললেন, তোমার কথা শুনে আমি শঙ্কাহীন হলাম। ‘আস বেরিয়ে পড়লেন এবং দেখতে পেলেন, মক্কা ভূমি লোকে লোকারণ্য। তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? তারা বলল, আমরা ‘উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট যাচ্ছি, সে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে বিধর্মী হয়ে গেছে। ‘আস বললেন, তার নিকট যাওয়া, তাকে কোন কিছু করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। এতে লোকজন ফিরে গেল।

৩৫৮৬ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, যখন উমর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন লোকেরা তাঁর গৃহের পাশে সমবেত হল এবং বলতে লাগল, উমর স্বধর্ম ত্যাগ করেছে। আমি তখন ছোট বালক। আমাদের ঘরের ছাদে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখতে ছিলাম। তখন একজন লোক এসে বলল, তার গায়ে রেশমী জুব্বা লিছ, উমর স্বধর্ম ত্যাগ করেছে, (তাতে কার কি হল?) তবে এ সমাবেশ কিসের আমি তাকে আশ্রয় দিচ্ছি। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, তখন আমি দেখলাম, লোকজন চারদিক ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে গেল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? লোকেরা বলল, ইনি ‘আস ইবনু ওয়াই।

 

৩৫৮৭ ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই উমর (রাঃ) কে কোন ব্যাপারে একথা বলতে শুনেছি যে, আমার ধারণা হয় ব্যাপারটি এমন হবে, তবে তার ধারণা মত ব্যাপারটি সংঘটিত হয়েছে। একবার উমর (রাঃ) বসা ছিলেন, এমন সময় একজন সুদর্শন ব্যাক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উমর (রাঃ) বললেন, আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে তবে আমার মনে হয় লোকটি জাহেলী ধর্মাবলম্বী অথবা ভবিষ্যৎ গণনাকারীও হতে পারে। লোকটিকে আমর কাছে নিয়ে এস। তাকে তাঁর কাছে ডেকে আনা হল। উমর (রাঃ) তার ধারণার কথা তাকে শোনালেন। তখন সে বলল, একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে বলা হল যা আজকার মত আর কোন দিন দেখেনি। উমর (রাঃ) বললেন, আমি তোমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারটা খুলে বল। সে বলল, জাহেলী যুগে আমি তাদের ভবিষ্যৎগণনাকরী ছিলাম। উমর (রাঃ) বললেন, জ্বিনেরা তোমাকে যে সব কথাবার্তা বলেছে, তন্মধ্যে কোন কথটি তোমার নিকট সর্বাধিক বিষ্ময়কর ছিল। সে বলল, আমি একদিন বাজারে অবস্থান করছিলাম। তখন একটি মহিলা জ্বিন আমার নিকট আসল। আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পেলাম। তখন সে বলল, তুমি কি জ্বিন জাতির অবস্থা দেখছনা, তারা কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে? তাদের মধ্যে হতাশা ও বিমূঢ় হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা ক্রমশঃ উটওয়ালাদের এবং চাঁদর জুব্বা পরিধানকারীদের (আরববাসী) অনুগত হয়ে পড়ছে। উমর (রাঃ) বললেন, সে সত্য কথা বলেছে। আমি একদিন তাদের দেবতাদের কাছে ঘুমন্ত ছিলাম। তখন এক ব্যাক্তি একটি গরুর বাছুর নিয়ে হাযির হল এবং সেটা যবাই করে দিল। ঐ সময় এক ব্যাক্তি এমন বিকট চীৎকার করে উঠল, যা আমি আর কখনও শুনিনি। সে চীৎকার করে বলছিল, হে জলীহ! একটি স্বভাবিক কল্যাণময় ব্যাপার অচিরেই প্রকাশ লাভ করবে। তা হল- একজন বিশুদ্ধভাষী লোক বলবেন, (এ ঘোষনা শুনে উপস্থিত) লোকজন ছুটাছুটি করে পলায়ন করল। আমি বললাম, এ ঘোষনার রহস্য উদঘাটন অবশ্যই করব। তারপর আবার ঘোষণা দেওয়া হল। হে জলীহ! একটি স্বভাবিক ও কল্যাণময় ব্যাপার অতি সত্বর প্রকাশ পাবে। তাহল একজন বাগ্মী ব্যাক্তি এর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে। তারপর আমি উঠে দাড়ালাম। এর কিছুদিন পরেই বলা হল যে, তিনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

 

৩৫৮৮ মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) কাইস (রহঃ) বলেন, আমি সা’ঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ)-কে তাঁর কওমকে লক্ষ্য করে একথা বলতে শুনেছি যে, আমি দেখেছি উমর (রাঃ) আমাকে এবং তার বোন ফাতিমাকে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে বেঁধে রেখেছেন। তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তোমরা উসমান (রাঃ)-এর সাথে যে আচরণ করেছ তার কারণে যদি ওহুদ পাহাড় ভেঙ্গে পরে তবে তা হওয়াটাই স্বভাবিক।

 

৩৫৮৯ আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহ্হাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মক্কাবাসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর নবুওয়াতে নিদর্শন হিসাবে কোনরূপ মুজিয দেখানোর দাবী জানাল। তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন। এমনকি তারা চাঁদের দু’খন্ডের মধ্যখানে হেরা পর্বতকে দেখতে পেল।

 

৩৫৯০ আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয় তখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিনায় অবস্থান করছিলাম। তিনি আমাদিগকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। তখন আমরা দেখলাম, চাঁদরে একটি খন্ড হেরা পর্বতের দিকে চলে গেল। আবূ যুহা মাসরূকের বরাত দিয়ে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয় মক্কা শরীফে।

 

৩৫৯১ উসমান ইবনু সালিহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিল।

 

৩৫৯২ উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে) চাঁদ খন্ডিত হয়েছিল।

 

৩৫৯৩ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ আল-জু’ফী (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রহঃ) উরওয়া ইবনু যুবায়েরকে বলেন যে, মিসওয়ার ইবনু মাখরামা এবং আবদুর রাহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু আবদ ইয়াগুস (রাঃ) উভয়ই তাকে বললেন, (হে উবায়দুল্লাহ)! ুতুমি তোমার মামা উসমান (রাঃ)-এর সাথে তার (বৈপিত্রেয়) ভাই ওয়ালীদ ইবনু উকবা সম্পর্কে কোন আলাপ-আলোচনা করছ না কেন? জনগণ তার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করছে। উবায়দুল্লাহ বলেন, উসমান (রাঃ) যখন সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে মসজিদে আসছিলেন তখন আমি তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনার সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে এবং তা আপনার মঙ্গলার্থেই। তিনি বললেন, ওহে, আমি তোমা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করছি। আমি তখন ফিরে আসলাম এবং যখন সালাত (নামায/নামাজ) সমাপ্ত করলাম, তখন মিসওয়ার ও ইবনু আবদ ইয়াগুস (রাঃ)-এর নিকট যেয়ে বললাম, এবং উসমান (রাঃ) কে আমি যা বলেছি এবং তিনি যে উত্তর দিয়েছেন তা উভয়কে শোনালাম। তাঁরা বললেন, তোমার উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল তা তুমি আদায় করেছ। আমি তাদের নিকট বসাই আছি এ সময় উসমান (রাঃ) এর পক্ষ তেকে একজন দূত আমাকে ডেকে নেয়ার জন্য আসলেন। তারা দু’জন আমাকে বললেন, আল্লাহ্ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। আমি চললাম এবং উসমান (রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি উপদেশ যা তুমি কিছুক্ষন পূর্বে বলতে চেয়েছিলে? তখন আমি কালিমা শাহাদত পাঠ করে (তাঁকে উদ্দেশ্য করে) বললাম, আল্লাহ মুহাম্মদ -কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূপে প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর আপনি ঐ দলেরই অন্তর্ভুক্ত যারা আল্লাহ্ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডাকে সাড়া দিয়েছেন, আপনি তাঁর উপর ঈমান এনেছেন এবং প্রথম দু’হিজরতে (মদিনা ও হাবশা) আপনি অংশ গ্রহণ করেছেন, আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং তাঁর স্বভাব-চরিত্র স্বচক্ষে দেখেছেন। জনসাধারণ ওয়ালিদ ইবনু উকবার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করছে, আপনার কর্তব্য তাঁর উপর বিধান দন্ড জারি করা। উসমান (রাঃ) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ভাতিজা, তুমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে পেয়েছ? আমি বললাম, না, পাইনি। তবে তাঁর বিষয় আমার নিকট এমনভাবে নিরঙ্কুশ পৌঁছেছে যেমনভাবে কুমারী মেয়েদের নিকট পর্দার অন্তরালে সংবাদ পৌঁছে থকে। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, উসমান (রাঃ) কালিমা শাহাদত পাঠ করলেন, এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মদ -কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল) -এর ডাকে সাড়া দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আমিও ছিলাম। হযরত মুহাম্মদ -কে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছিল আমি তার প্রতি ঈমান এনেছি। ইসলামের প্রথম যুগের দু’হিজরতে অংশ গ্রহণ করেছি যেমন তুমি বলছ। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্য লাভ করেছি, তাঁর হাতে বায়’আত করেছি। আল্লাহর কসম, আমি তাঁর নাফরমানী করিনি। তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়ে যায়। আরপর আল্লাহ্ তা’আলা আবূ বকর (রাঃ)-কে খলীফা নিযুক্ত করলেন। আল্লাহর কসম আমি তাঁরও নাফরমানী করিনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। অতঃপর উমর (রাঃ) খলীফা মনোনীত হলেন। আল্লাহর কসম, আমি তাঁরও অবাধ্য হইনি, তাঁর সাথে প্রতারণা করিনি। তিনিও ওফাত প্রাপ্ত হলেন এবং তারপর আমাকে খলীফা নিযুক্ত করা হল। আমার উপর তাদের বাধ্য থাকার যেরূপ হক ছিল তোমাদের উপর তাদের ন্যায় আমার প্রতি বাধ্য থাকার কি কোন হক নাই? উবায়দুল্লাহ বললেন, হাঁ। অবশ্যই হক আছে। উসমান (রাঃ) বললেন, তাহলে এসব কথাবর্তা কি, তোমাদের পক্ষ থেকে আমার নিকট আসছে? আর ওয়ালীদ ইবনু উকবা সম্পর্কে তুমি যা বললে, সে ব্যাপারে আমি অতিসত্বর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব ইন্শাল্লাহ। অতঃপর তিনি ওয়ালীদকে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করার রায় প্রদান করলেন এবং ইহা কর্যকরী করার জন্য আলী (রাঃ)-কে আদেশ করলেন। তৎকালে অপরাধীদেরকে শাস্তি প্রদানের দায়িত্বে আলী (রাঃ) নিযুক্ত ছিলেন। ইউনুস এবং যুহরির ভাতিজা যুহরী সূত্রে যে বর্ণনা করেন তাতে রয়েছে; ‘তোমাদের উপর আমার কি হক নেই যেমনটি হক ছিল তাদের জন্য। ’

 

৩৫৯৪ মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন উম্ম হাবীবা ও উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর সাথে আলোচনা করল যে তাঁরা হাবশায় (ইথিওপিয়া) খৃষ্টানদের একটি গির্জা দেখে এসেছেন। সে গির্জায় নানা রকমের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। তাঁরা দু’জন এসব কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে উল্লেখ করলেন। তখন তিনি বললেন (এদের অভ্যাস ছিল যে) তাদের কোন নেক্কার লোক মারা গেলে তার কবরের উপর মসজিদ (উপাসনালয়) নির্মাণ করত এবং এসব ছবি অঙ্কিত করে রাখত, এরাই কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসাবে পরিগণিত হবে।

 

৩৫৯৫ হুমাইদী (রহঃ) উম্মে খালিদ (বিনত খালিদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন হাবশা থেকে মদিনায় আসলাম তখন আমি ছোট্ট বালিকা ছিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি চাঁদর পরিয়ে দিলেন যাতে ডোরা কাটা ছিল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ডোরাগুলির উপর হাত বুলাতে লাগলেন, এবং বলতে ছিলেন সানাহ-সানাহঃ হুমায়দী (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ সুন্দর সুন্দর।

 

৩৫৯৬ ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ইসলামের প্রাথমিক যুগে) সালাত (নামায/নামাজ) রত থাকা অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমরা সালাম করতাম, তিনিও আমাদের সালামের উত্তর দিতেন। যখন আমরা নাজাশীর (হাবশা) কাছ থেকে ফিরে এলাম, তখন সালাত (নামায/নামাজ) রত অবস্থায় তাঁকে সালাম করলাাম, কিন্তু তিনি সালামের জবাব দিলেন না। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমরা (সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে) আপনাকে সালাম করতাম এবং আপনিও সালামের উত্তর দিতেন। কিন্তু আজ আপনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না? তিনি বললেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর মধ্যে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টতা থাকে। রাবী বলেন, আমি ইব্রাহীম নাখয়ীকে জিজ্ঞাসা করলাম, (সালারেত মধ্যে কেউ সালাম করলে) আপনি কি করেন? তিনি বললেন, আমি মনে মনে জবাব দিয়ে দেই।

 

৩৫৯৭ মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আবির্ভাবের সাংবাদ এসে পৌঁছল। তখন আমরা ইয়ামানে অবস্থান করছিলাম। আমরা একটি নৌকায় আরোহণ করলাম। কিন্তু (প্রতিকূল বাতাসের কারণে) আমাদের নৌকা (গন্তব্যস্থানের দিকে না পৌঁছে) হাবশায় নাজাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে জাফর ইবনু আবূ তালিবের (রাঃ) সাথে সাক্ষাৎ হল। আমরা তাঁর সাথে অবস্থান করতে লাগলাম। কিছুদিন পর আমরা সেখান থেকে রওয়ানা হলাম। এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বর বিজয় করলেন তখন আমরা তাঁর সাথে মিলিত হলাম। আমাদেরকে দেখে তিনি বললেন, হে নৌাকারোহীগণ, তোমাদের জন্য দু’টি হিজরতের মর্যাদা রয়েছে।

 

৩৫৯৮ আবূর রাবী (রহঃ) যাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাজাশীর (আসহাম) মৃত্যু হল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ একজন সৎ ব্যাক্তি মারা গেছেন। উঠো, এবং তোমাদের (ধর্মীয়) ভাই আসহামার জন্য জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।

 

৩৫৯৯ আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম।

 

৩৬০০ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসহাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন এবং চারবার তাক্‌বীর বলেন।

 

৩৬০১ যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আব্দুর রাহমান ও ইবনুল মূসা ইয়ার (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাদেরকে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে হাবাশা (ইথিওপিয়া)-এর বাদশাহ নাজাশীর মৃত্যু সংবাদ সেদিন শোনালেন, যেদিন তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের (দ্বীনী) ভাই এর জন্য মাগফিরাত কামনা কর। আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে এরূপও বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা কেরামকে নিয়ে ঈদগাহে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন এবং নাজাশীর উপর জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং তিনি চারবার তাকবীরও উচ্চারণ করলেন।

 

৩৬০২ আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়ন যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি বললেন, আমরা আগামীকাল খায়েফে বনী কেনানায় অবতরন করব ‘ইনশা আল্লাহ’ যেখানে তারা (কুরাইশ) সকলে কুফর ও শিরক্‌ এর উপর অটল থাকার শপথ গ্রহণ করেছিল।

 

৩৬০৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, আমি একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি আপনার চাচা আবূ তালিবের কি উপকার করলেন অথচ তিনি (জীবিত থাকাবস্থায়) আপনাকে দুশমনের সকল আক্রমণ ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে হিফাজত করেছেন। (আপনাকে যারা কষ্ট দিয়েছে) তাদের বিরুদ্ধে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হতেন। তিনি বললেন, সে জাহান্নামে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে আছে। যদি আমি না হতাম তবে সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করত।

 

৩৬০৪ মাহমূদ (রহঃ) ইবনু মূসা ইয়্যাব তার পিতা মূসা ইয়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন আবূ তালিবের মুমূর্ষু অবস্থা তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, চাচাজানো, ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কলেমাটি এরবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকট কথা বলতে পারব। তখন আবূ জেহেল ও আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া বলল, হে আবূ তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে ফিরে যাবে? এরা দু’জন তার সাথে একথাটি বারবার বলতে থাকল। সর্বশেষ আবূ তালিব তাদের সাথে যে কথাটি বলল, তাহল, আমি আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের উপরেই আছি। এ কথার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকব যে পর্যন্ত আপনার ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করা না হয়। এ প্রসঙ্গে এ আয়াতটি নাযিল হলঃ আত্মীয় স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মু’মিনদের পক্ষে সংগত নয়-যখন তা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা জাহান্নামী। (৯ তওবা ১১৩) আরো নাযিল হলঃ আপনি যাকে ভালবাসেন ইচ্ছা করলেই সৎপথে আনতে পারবেন না। (২৮ কাসাস ৫৬)।

 

৩৬০৫ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁরই সামনে তাঁর চাচা আবূ তালিবের আলোচনা করা হল, তিনই বললেন, আশা করি কিয়ামতের দিনে আমার সুপারিশ তার উপকারে আসবে। অর্থাৎ আগুনের হালকা স্তরে তাকে নিক্ষেপ করা হবে, যা তার পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পোঁছাবে এবং তাতে তার মগজ বলকাবে।

 

৩৬০৬ ইব্‌রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) ইয়াযিদ (রহঃ)-ও এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং আরো বলেছেন, এর তাপে মস্তিষ্কের কেন্দ্র পর্যন্ত বলকাবে।

 

৩৬০৭ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়ের (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, যখন (মিরাজের ব্যাপারে) কুরাইশরা আমাকে অস্বীকার করল, তখন আমি কা’বা শরীফের হিজর অংশের দাঁড়ালাম। আল্লাহ তাআলা তখন আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে প্রকাশ করে দিলেন, যার ফলে আমি দেখে দেখে বায়তুল মুকাদ্দাসের সমূহ নিদর্শনগুলো তাদের কাছে বর্ণনা করছিলাম।

 

৩৬০৮ হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) মালিক ইবনু সা’সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কা’বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলেম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এস্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা(চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্‌কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকুমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত। তারপর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিণ্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিণ্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল। তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারূদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস (রাঃ) বললেন, হাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খোলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, ইনি কে? তিনি বললেন জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি যখন পোঁছালাম, তখন তথায় আদমআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদমআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তারপর বলা হল- তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছালাম। তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি(জিবরাঈল) বললেন, এরা হলেন ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে পৌঁছে জিবরাঈল বললেন খুলে দাও। তাঁকে বলা হল কে? তিনি উত্তর দিলেন, জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি তথায় পৌঁছে ইউসুফআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈল বললেন, ইনি ইউসুফআলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। আর (ফিরিশ্‌তাকে)দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তখন বলা হল- তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তখন খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীসআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে জিবরাঈল বললেন, ইনি ইদ্রীসআলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও জবাব দিলেন। তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। এরপর তিনি(জিবরাঈল) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করে পঞ্চম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হল। তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে হারূনআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলাম। জিবরাঈল বললেন, ইনি হারূনআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনিও জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে নিয়ে যাত্রা করে ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। ফিরিশ্‌তা বললেন, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগন্তুক এসেছেন। তথায় পৌঁছে আমি মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পেলাম। জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনি মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনি জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হল, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। আমি সেখানে পৌঁছে ইব্‌রাহীমআলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখতে পেলাম। জিবরাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইনি আপনার পিতা। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুন্‌তাহা(জড় জগতের শেষ প্রান্ত)। সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দু’টি ছিল অ্যপ্রকাশ্য দু’টি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করলাম, এ নহরগুলো কী? অ্যপ্রকাশ্য দু’টি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামনে ‘আল-বায়তুল মামুর’ প্রকাশ করা হল, এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরাঈল বললেন, এ-ই হচ্ছে ফিতরাত (দ্বীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাম ফরয করা হল। এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)-এর আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের(বোঝা) হাল্কা করার জন্য আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে (দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তা’আলা আর দশ (ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ)) কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পৌঁছালে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আর দশ(ওয়াক্ত) হ্রাস করলেন। আমি মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললেন আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে দশ(ওয়াক্ত) সালাত (নামায/নামাজ)-এর আদেশ দেওয়া হয়। আমি(তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ(ওয়াক্ত) সালাত (নামায/নামাজ)-এর আদেশ করা হয়। তারপর মূসারআলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, দৈনিক পাঁচ(ওয়াক্ত) সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেও সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট(অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন (মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অতিক্রম করে) অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।

 

৩৬০৯ আল হুমাইদী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তা’আলার বানী “আর আমি যে দৃশ্য আপনাকে দেখিয়েছি তা কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্য” এর তাফসীরে বলেন, এটি হল চোখের দেখা চাক্ষুস যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সে রাতে দেখানো হয়েছে। যে রাতে তাঁকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করানো হয়েছিল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আরো বলেন, কুরআন শরীফে যে আভিশপ্ত বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে, তা হল যাক্‌কুম বৃক্ষ।

 

৩৬১০ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়ের (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রহঃ) যিনি কা’ব এর পথ প্রদর্শক ছিলেন যখন কা’ব অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি বলেন, আমি কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে তাবুক যুদ্ধকালে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর পশ্চাতে থেকে যাওয়ার ঘটনাটি সবিস্তরে বর্ণনা করতে শুনেছি। ইবনু বুকায়র তাঁর বর্ণনায় এ কথাটিও বলেন যে, কা’ব (রাঃ) বলেছেন, আমি ‘আকাবার রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। যখন আমরা ইসলামের উপর অটল থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম। সে রাত্রের পরিবর্তে বদর যুদ্ধে উপস্থিত হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয় নয়, যদিও বদর যুদ্ধ জনগণের মধ্যে ‘আকাবার তুলনায় অধিক আলোচিত ছিল।

 

৩৬১১ ’আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আকাবার রাতে আমার দু’জন মামা আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, ইবনু উয়ায়না বলেন, দু’জন মামার একজন হলেন বারা‘ ইবনু মারূর (রাঃ)।

 

৩৬১২ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ’আতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জাবির (রাঃ) বলেন, আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ এবং আমার মামা ‘আকাবায় (বায়’আতে) অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলাম।

 

৩৬১৩ ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ ইদরীস আইযুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বদর যুদ্ধে এবং আকাবার রাতে উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে ছিলেন- তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একটি দলকে লক্ষ্য করে বললেন, এস তোমরা আমার কাছে একথার উপর বায়’আত কর যে, তোমরা আল্লাহ তা’আলার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, তোমরা চুরি করবেনা, তোমরা ব্যাভিচার করবেনা; তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবেনা, তোমরা (কারো প্রতি) অপবাদ আরোপ করবেনা যা তোমরা নিজে থেকে বানিয়ে নাও, তোমরা নেক কাজে আমার নাফরমানী করবেনা, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি এসব শর্ত পূরণ করে চলবে সে আল্লাহর পাকের নিকট তার প্রতিদান অবশ্যই পাবে। আর যে এসবের কোন কিছুতে লিপ্ত হয় এবং তাকে এ কারণে দুনিয়াতে আইনানুগ শাস্তি দেয়া হবে, তবে এ শাস্তি তার কাফ্‌ফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যাক্তি এ সবের কোনটিতে লিপ্ত হল আর আল্লাহ তা গোপন রাখেন, তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহ পাকের ওপর ন্যাস্ত। তিনি ইচ্ছে করলে শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছে করলে মাফ করবেন। উবাদা (রাঃ) বলেন, আমিও এসব শর্তের উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে বায়’আত করেছি।

 

৩৬১৪ কুতায়বা (রহঃ) উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঐ মনোনীত প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম, যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা তাঁর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলাম জান্নাত লাভের জন্য যদি আমরা এই কাজগুলু করি এই শর্তে যে, আমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকেই শরীক করবনা, ব্যাভিচারে লিপ্ত হব না, চুরি করবনা। আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, তাকে না হক হত্যা করব না এবং নাফরমানী করব না। আর যদি আমরা এর মধ্যে কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফয়সালা আল্লাহ তা‘আলার উপর ন্যাস্ত।

 

৩৬১৫ ফারওয়া ইবনু আবূ মাগরা (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আমাকে বিবাহ করেন, তখন আমার বয়স ছিল ছয় বছর। তারপর আমরা মদিনায় এলাম এবং বনু হারিস গোত্রে অবস্থান করলাম। সেখানে আমি জ্বরে আক্রান্ত হলাম। এতে আমার চুল পড়ে গেল। (সুস্থ হওয়ার) পরে যখন আমার মাথার চুল জমে উঠল। সে সময় আমি একদিন আমার বান্ধবীদের সাথে দলনায় খেলা করছিলাম। তখন আমার মাতা উম্মে রূমান আমাকে উচ্চস্বরে ডাকলেন। আমি তাঁর কাছে এলাম। আমি বুঝতে পারিনি তার উদ্দেশ্য কি? তিনি আমার হাত ধরে ঘরের দরজায় এসে আমাকে দাড় করালেন। আর আমি হাফাচ্ছিলাম। অবশেষে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা স্থির হল। এরপর তিনি কিছু পানি নিলেন এবং এর দ্বারা আমার মুখমণ্ডল ও মাথা মাসেহ করে দিলেন। তারপর আমাকে ঘরের ভিতর প্রবেশ করালেন। সেখানে কয়েকজন আনসারী মহিলা ছিলেন। তাঁরা বললেন, (তোমার আগমন) কল্যাণময়, বরকতময় এবং সৌভাগ্যময় হউক। আমাকে তাদের কাছে সোপর্দ করে দিলেন। তাঁরা আমার অবস্থান ঠিকঠাক করে দিলেন, তখন ছিল পূর্বাহ্ণ। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আগমন আমাকে সচকিত করে তুলল। তাঁরা আমাকে তাঁর কাছে সোপর্দ করে দিলেন। সে সময় আমি নয় বছরের বালিকা।

 

৩৬১৬ মু‘আল্লা (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেন, দু’বার তোমাকে আমায় স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমী বস্ত্রে বেষ্টিত এবং আমাকে বলছে ইনি আপনার স্ত্রী আমি তাঁর ঘুমটা সরিয়ে দেখলাম, সে মহিলা তুমই। তখন আমি(মনে মনে) বলছিলাম, যদি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে, তবে তিনি তা কার্যকর করবেন।

 

৩৬১৭ উবায়েদ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) হিশাম এর পিতা থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদিনার দিকে বেরিয়ে আসার তিন বছর আগে খাদীজা (রাঃ)-এর ওফাত হয়। তারপর দু’বছর অথবা এর কাছাকাছি সময় করে তিনি আয়শা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। যখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা, তারপর নয় বছর বয়সে বাসর উদ্‌যাপন করেন।

 

৩৬১৮ হুমায়দী (রহঃ) আবূ ওয়াইল (রাঃ) বলেন, আমরা পীড়িত খাব্বাব (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হিজরত করেছিলাম- আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহর নিকট আমাদের সাওয়াব রয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন প্রতিদানের কিছু না নিয়েই চলে গেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন মুন‘আব ইবনু উমায়ের (রাঃ)। তিনি ওহোদের দিন শহীদ হন। তিনি একখানা চাঁদর রেখে যান। আমরা যখন (কাফন) হিসেবে এটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দিতাম তখন তাঁর পা বেরিয়ে পড়ত, আর যখন আমরা পা ঢেকে দিতাম, তখন তাঁর মাথা বেরিয়ে পড়ত। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, আমরা যেন তাঁর মাথা ঢেকে দই এবং তাঁর পায়ের উপর কিছু ইয্‌খির(ঘাস) রেখে দই। আর আমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ রয়েছেন, যাদের ফল পরিপক্ক হয়েছে এবং তাঁরা তা পেড়ে খাচ্ছেন।

 

৩৬১৯ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উমর (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর। সুতরাং যার হিজরত হয় দুনিয়া লাভের জন্য কিংবা কোন স্ত্রীলোককে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে তার। আর যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর উদ্দেশ্যে, তবে তাঁর হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এরই জন্য।

 

৩৬২০ ইসহাক ইবনু ইয়াযীদ দামেশ্‌কী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলতেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। আওযায়ী ‘আতা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি উবায়দা ইবনু উমায়র লাইসী (রাঃ)-এর সঙ্গে আয়িশা (রাঃ) এর সাথে সাক্ষত করলাম। তারপর তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এখন হিজরতের কোন প্রয়োজন নেই। অতীতে মু’মিনদের কেউ তার দ্বীনের জন্য তার প্রতি ফিত্‌নার ভয়ে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি হিজরত করতেন আর আজ আল্লাহ ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। এখন কোন মু’মিন তার রবের ইবাদাত যেখানে ইচ্ছে (নির্বিঘ্নে) করতে পারে। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত(কল্যাণ ও ফজিলতের) রয়েছে।

 

৩৬২১ যাকারিয়্যা ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (খন্দকের যুদ্ধে মারাত্নকভাবে আহত হওয়ার পর) সা’দ (রাঃ) দু’য়া করলেন, ইয়া আল্লাহ আপনি ত জানেন, আমার নিকট আপনার রাহে এ কওমের বিরুদ্ধে, যারা আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবিশ্বাস করেছে ও তাঁকে (মাতৃভূমি থেকে) বিতাড়িত করেছে জিহাদ করা এত প্রিয় যতটুকু অন্য কারো বিরুদ্ধে নয়। ইয়া আল্লাহ আমার ধারণা আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যকার লড়াই খতম করে দিয়েছেন। আবান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সে কাওম যারা তোমের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে অবিশ্বাস করেছে এবং তাকে(স্বদেশ থেকে) বের করে দিয়েছে, তারা কুরাইশ গোত্রেই।

 

৩৬২২ মাতার ইবনু ফাযল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে নবুওয়াত দেওয়া হয় চল্লিশ বছর বয়সে, এরপর তিনি তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। এ সময় তাঁর প্রতি ওহী নাযিল হচ্ছিল। তারপর হিজরতের নির্দেশ পান। এবং হিজরতের পর দশ বছর (মদিনায়) অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

 

৩৬২৩ মাতার ইবনু ফাযল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় তের বছর অবস্থান করেন। আর তিনি তেষট্টি বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

 

৩৬২৪ ইসমাইল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটির ইখতিয়ার দিয়েছেন। তাঁর একটি হল- দুনিয়ার ভোগ-সম্পদ আর একটি হল আল্লাহর নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবূ বকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দার সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ পার্থিব ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তাঁর কাছে যা হয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে ইখতিয়ার দিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। (প্রকৃতপক্ষে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবূ বকর (রাঃ)ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যাক্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি তার সহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবূ বকর (রাঃ)। যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যাক্তিকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকর (রাঃ) এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।

 

৩৬২৫ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা পিতাকে কখনো ইসলাম ব্যাতীত অন্য কোন দ্বীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন অতিবাহিত হয়নি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বাড়ীতে আসেন নি। যখন মুসলমানগণ (মুশ্‌রিকদের নির্যাতনে)অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন। অবশেষে বারকুল গিমাদ(নামক স্থানে) পোঁছালে ইবনু দাগিনার সাথে তাঁর সাক্ষ্যাত হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবূ বকর, কথায় যাচ্ছেন? উত্তরে আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি পৃথিবী ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনু দাগিনা বলল, হে আবূ বকর (রাঃ) আপনার মত ব্যাক্তি(দেশ থেকে) বের হতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারী করে থাকেন, এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদ আপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবূ বকর (রাঃ) ফিরে এলেন। তাঁর সঙ্গে ইবনু দাগিনাও এল। ইবনু দাগিনা বিকেল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের নিকত গেল এবং তাদের বলল, আবূ বকরের মত লোক দেশ থেকে বের হতে পারে না এবং তাকে বের করে দেওয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যাক্তিকে বের করবেন, যে নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানের মেহমানদারী করন এবং ন্যায়ের উপর থাকার দরুন বিপদ এলে সাহায্য করেন। ইবনু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশগণ মেনে নিল, এবং তারা ইবনু দাগিনাকে বলল, তুমি আবূ বকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। সালাত (নামায/নামাজ) তথায়ই আদায় করেন, ইচ্ছামাফিক কুরাআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা, আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিত্‌নায় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করি। ইবনু দাগিনাকে আবূ বকরকে (রাঃ)-কে এসব কথা বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবূ বকর (রাঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। সালাত (নামায/নামাজ) প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কোরআন তিলওয়াত করতেন। এরপর আবূ বকরের মনে(একটি মসজিদ নির্মাণের কথা) উদিত হল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পাশেই একটি মসজিদ তৈরী করে নিলেন। এতে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে এবং কোরআন তিলওয়াত করতেন। এতে তার কাছে মুশরিক মহিলা ও যুবকগণ ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবূ বকর (রাঃ)-এর একাজে বিস্মিত হত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন একজন ক্রন্দনশীল ব্যাক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তের তখন তাঁর চোখের অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের আতঙ্কিত করে তুলল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠান। সে এল। তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবূ বকর কে আশ্রয় দিয়েছিলাম, এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন কিন্তু সে শর্ত তিনি লংঘন করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করলে, তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অস্বীকার করে প্রকাশ্যে তা করতে চান তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায় দায়িত্বকে প্রত্যার্পণ করতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় প্রদানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করাকে অত্যন্ত অপছন্দ করি, আবার আবূ বকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারিনা। আয়শা (রাঃ) বলেন, ইবনু দাগিনা এসে আবূ বকর (রাঃ)-কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয়ত তাতে সীমিত থাকবেন অন্যথায় আমার জিম্মাদারী আমাকে ফিরত দিবেন। আমি এ কথা আদৌ পছন্দ করিনা যে আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যাক্তির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হউক। আবূ বকর (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপরই সন্তুষ্ট আছি। এসময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান(স্বপ্নে) দেখান হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দুইটি প্রস্তরময় প্রান্তরে অবস্থিত। এরপর যারা আবিশিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাদেরও অধিকাংশ সেখান থেকে ফিরে মদিনায় চলে আসলেন। আবূ বকর (রাঃ)ও মদিনায় দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান! আপনিও কি হজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবূ বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহচর্য লাভের জন্য নিজেকে হিজরত থেকে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দুটি চার মাস পর্যন্ত(ঘরে রেখে) বাবলা গাছের পাতা(ইত্যাদি) খাওয়াতে থাকেন। ইবনু শিহাব উরওয়া (রাঃ) সূত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবূ বকর (রাঃ) এর ঘরে বসাছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এসে আবূ বকরকে সংবাদ দিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা ঢাকা অবস্থায় আসছেন। তা এমন সময় ছিল যে সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেননি। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আগমন বার্তা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান। আল্লাহর কসম, তিনি এ সময় নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কারনেই আসছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌঁছে (প্রবেশের) অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেওয়া হল। প্রবেশ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান! এখানেতো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ , আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান! আমি আপনার সফরসঙ্গী হতে ইচ্ছুক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক আছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতামাতা কুরবান! আমার এ দু’টি উট থেকে আপনি যে কোন একটি গ্রহণ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা দ্রুততার সহিত সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে, তাঁদের খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) তার কোমর বন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারনেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমর বন্ধ বিশিষ্ট) বলা হত। আয়শা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) (রওনা হয়ে) সাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান খেকে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সহিত ভোর বেলায় মিলিত হতেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, ও স্মরণ রাখতেন। যখন আঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবূ বকর (রাঃ)-এর গোলাম আমির ইবনু যুহাইরা তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পালচড়িয়ে বেড়াত। রাত্রের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে বকরীর পালনিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন। তারপর শেষ রাতে আমির ইবনু ফুহাইরা বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিনটি রাতের প্রত্যেক রাতে সে এরুপই করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ) বনী আবদ ইবনু গোত্রের এক ব্যাক্তিকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ‘খির্‌রীত’ পথ প্রদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। পারদর্শী পথ প্রদর্শককে ‘খির্‌রীত’ বলা হয়। আদী গোত্রের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি সাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথা সময়ে তা পৌঁছিয়ে দিল। আর আমির ইবনু ফুহাইরা ও পথ প্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূল পথ ধরে চলতে লাগল। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাকা ইবনু জু’শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশ কাফিরদের দূত আসল এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) এ দুই জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে (একশ উট) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলীজের এক মজলিসে বসা ছিলাম। তখন তাদের নিকট থেকে এক ব্যাক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাকা, আমি এই মাত্র উপকুলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা এরা মুহাম্মদ ও তাঁর সহগামীগণ হবেন। সুরাকা বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এরা তারা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখেছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষন মজলিসে অবস্থান করে (বাড়ী) চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অন্য প্রান্ত মাটি সংলগ্ন অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় মাটি সংলগ্ন অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট নিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাঁকে খুব দ্রুত চুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাঁদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তাঁর পিঠ থেকে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকে হাত বাড়ালাম এবং তা থেকে তীরগুলু বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে আমি তাঁদের কোন ক্ষতি করতে পারব কিনা। তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমনটি হওয়া পছন্দ করিনা। আমি পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাঁর তিলয়াতের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি (আমার দিকে) ফিরে তাকাচ্ছিলেন কিন্তু আবূ বকর (রাঃ) বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর থেকে পড়ে গেলাম। তখন আমি ঘোড়াকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিলনা। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি যেস্থানে গেড়ে ছিল সেস্থান থেকে থেকে ধুঁয়ার ন্যায় ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপছন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন ইত্যাকার অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পতিত হচ্ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছিল যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম আপনার কওম আপনাকে ধরে দিলে পারলে একশ উট পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। মক্কায় কাফিরগণ তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম। এবং আমি তাঁদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যানা সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা থেকে কিছুই নিলেননা। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন না, আমাদের সংবাদটি গোপন রেখ। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লেখে দেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমের ইবনু ফুহাইরাকে আদেশ করলেন। তিনি একখণ্ড চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন। ইবনুুে শিহাব (রহঃ) বলেন, উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়েরর সঙ্গে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বানিজ্যিক কাফেলার সাথে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন। তখন জুবায়ের (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) কে সাদা রঙের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদিনায় মুসলমানগণ শুনলেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রত্যহ সকালে মদিনার (বাইরে) হার্‌রা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করে থাকতেন, দুপুরে রোদ প্রখর হলে তাঁরা ঘরে ফিরে আসেতেন। একদিন তাঁরা পূর্বাপেক্ষা অধিক সময় অপেক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় একজন ইয়াহুদী তার নিজ প্রয়োজনে একটি টিলায় আরোহন করে এদিক ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথী সঙ্গীদেরকে সাদা পোশাক পরিহিত অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভুমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল। ইয়াহুদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চস্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যাক্তি- যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলমানগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে এবং মদিনার হাররার উপকন্ঠে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে বনী আমর ইবনু আউফ গোত্রে অবতরন করলেন। এদিনটি ছিল রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরব রইলেন। আনসারদের মধ্য থেকে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেননি তাঁরা আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে সমবেত হতে লাগলেন, তারপর যখন রৌদ্রত্তাপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামজীর উপর পড়তে লাগল এবং আবূ বকর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাঁদর দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর ছায়া করে দিলেন। তখন লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিনতে পারল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর ইবনু আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশী সময় অতিবাহিত করলেন, এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা (কুরআনের ভাষায়) তাক্‌ওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উঠে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদিনায় (বর্তমান)মসজিদে নব্বীর স্থানে পৌঁছে উটটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কপিতয় মুস্লিম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আসআদ ইবনু যুরারার আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে উটটি যখন এস্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাল্লাহ, এ স্থান্তটই হবে মানযিল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের নিকট জায়গাটির মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের আলচনা করলেন। তাঁরা বলল ইয়া রাসুলুল্লাহ! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামুল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছ থেকে বিনামুল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের থেকে খরিদ করে নিলেন। তারপর সেই স্থানে তিনি মসজিদ নির্মাণ করলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ নির্মাণ কালে সাহাবাকেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন এ বোঝা খায়বারের(খাদ্যদ্রব্য) বোঝা নয়। ইয়া রব, এর বোঝা অত্যন্ত পুন্যময় ও পবিত্রে। তিনি আরো বলছিলেন, ইয়া আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান। সুরতাং আনসার ও মুজাহিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কবিতাটি ছাড়া অপর কোন পূর্ণাঙ্গ কবিতা পাঠ করেছেন বলে, কোন বর্ণনা আমার কাছে পৌঁছেনি।

 

৩৬২৬ আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) যখন মদিনায় যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য সফরের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুত করলাম। আর আমার পিতাকে বললাম, থলের মুখ বেঁধে দেয়ার জন্য আমার কোমরবন্দ ব্যতীত অন্য কিছু পাচ্ছিনা(এখন কি করি) তিনি বললেন, এটি তুমি টুকরো করে নাও। আমি তাই করলাম। এ কারণে আমার নাম হয়ে গেল, ‘যাতুন্‌ নেতাকাইন’ (কোমরবন্দ দুই ভাগে বিভক্তকারিনী)।

 

৩৬২৭ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) বারা‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জুশাম তাঁর পশ্চাঁদ্ধাবন করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য বদ্‌দু‘আ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকেসহ মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলল, আপনি, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু’আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিপাসার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, তখন আমি একটা পেয়ালা নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করলেন যে, আমি তাতে খুশী হলাম।

 

৩৬২৮ যাকারিয়্যা ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তখন তাঁর গর্ভে ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের, তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মদিনায় এসে কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবায়ই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনলেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আবদুল্লাহর পাকস্থলীতে প্রবেশ করল তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর থুথু। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিবান খেজুরের সামান্য অংশ নবজাতকের মুখের ভিতর-এর তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দু’আ করলেন এবং বরকত কামনা করলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি(হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খালিদ ইবনু মাখলদ (রহঃ) উক্ত রেওয়াত বর্ণনায় যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। এতে রয়েছে যে, আস্মা (রাঃ) গর্ভাবস্থায় হিজরত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আসেন।

 

৩৬২৯ কুতায়বা (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মদিনায় হিজরতের পর) মুসলিম পরিবারে সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়েরই জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা তাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন। তিনি একটি খেজুর নিয়ে তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। সুতরাং সর্বপ্রথম যে বস্তুটি তার পেটে প্রবেশ করল তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর থুথু।

 

৩৬৩০ মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন উঠের পিঠে আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পেছনে ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান ও অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবূ বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আব বকর (রাঃ) তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যাক্তি কে? আবূ বকর (রাঃ) বলতেন তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবূ বকর) সত্যপথ উদ্দেশ্যে করতেন। তারপর একবার আবূ বকর (রাঃ) পিছনে তাকিয়ে হটাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাঁদের প্রায় নিকটে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই যে একজন অশ্বারোহী আমাদের পিছনে প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে তাকিয়ে দু’আ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হ্রেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার হারারায় একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদিনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন, আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবূ আইয়ুব (রাঃ) এর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন। আবূ আইয়ুব (রাঃ) ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাযির হলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবূ আইয়ুব (রাঃ) বললেন, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ইয়াহূদী সম্প্রদায় জানে যে আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় কর, তিনি ছাড়া মাবুদ নেই। তোমরা নিচ্ছয়ই জানো যে আমি সত্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারেনা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলমান হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন, তিনি মুসলমান হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনু সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জানো তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বের করে দিলেন।

 

৩৬৩১ ইব্‌রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মুহাজিরদের জন্য চার কিস্তিতে বাৎসরিক চার হাজার দেরহাম ধার্য করলেন, এবং (তাঁর ছেলে) ইবনু উমরের জন্য ধার্য করলেন তিন হাজার পাঁচশ। তাঁকে বলা হল, তিনিও তো মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর জন্য চার হাজার থেকে কম কেন করলেন? তিনি বললেন। সে তো তাঁর পিতামাতার সাথে হিজরত করেছে। কাজেই ঐ ব্যাক্তির সমকক্ষ হতে পারেনা যে একাকী হিজরত করেছে।

 

৩৬৩২ মুহাম্মদ ইবনু কাসীর ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) খাববাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে হিজ্রত করেছি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর নিকটই নির্ধারিত। আমাদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের ত্যাগ ও কুরবানীর ফল কেহই ইহজগতে ভোগ না করে আখিরাতে চলে গিয়েছেন; তন্মধ্যে মুসহাব ইবনু উমায়ের (রাঃ) অন্যতম। তিনি ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হন। তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য তার একটি চাঁদর চাঁদর ব্যতীত আর অন্য কিছুই আমরা পাচ্ছিলাম না।। আমরা চাঁদরটি দিয়ে তাঁর মাথা আবৃত করলাম তাঁর পা বের হয়ে গেল আর যখন আমরা তাঁর পা ঢেকতে গেলাম তখন তাঁর মাথা বের হয়ে গেল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ করলেন, চাঁদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পা দু’টির উপর ইয্‌খির ঘাস রেখে দাও। আর আমাদের মধ্যে রয়েছেন যাদের ফল পেকে গেছে এবং এখন তাঁরা তা আহরণ করছেন।

 

৩৬৩৩ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু বিশর (রহঃ) আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জানো আমার পিতা তোমার পিতাকে কি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, আমার পিতা তোমার পিতাকে বলেছিলেন, হে আবূ মূসা, তুমি কি ইহাতে সন্তুষ্ট আছ যে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাঁর সঙ্গে হিজরত করেছি, তাঁর সঙ্গে জিহাদ করেছি এবং তাঁর জীবদ্দশায় কৃত আমাদের প্রতিটি আমল যা করেছি তা আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক। তাঁর ওফাতের পর, আমরা যে সব আমল করেছি, তা (জবাবদিহি) আমাদের জন্য সমান হউক। অর্থাৎ সওয়াবও না হউক আযাবও না হউক। তখন তোমার পিতা আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, না (আমি এতে সন্তুষ্ট নই) কেননা, আল্লাহর কসম, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পর জিহাদ করেছি, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করেছি এবং বহু নেক আমল করেছি। আমাদের হাতে অনেক মানুষ ইসলাম গরহণ করেছে। আমরা এসব কাজের সওয়াব-এর আশা রাখিি। তখন আমার পিতা (উমর (রাঃ)) বললেন, কিন্তু আমি ঐ সত্তার কসম, যার হাতে উমরের প্রাণ, এতেই সন্তুষ্ট যে, (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় তাঁর সাথে কৃত আমল)আমাদের জন্য সঞ্চিত থাকুক আর তাঁর ওফাতের পর আমরা যে সব আমল করেছি তা থেকে যেন আমরা অব্যাহতি পাই সমান সমান ভাবে। তখন আমি বললাম, আল্লাহর কসম নিশ্চয়ই তোমার পিতা আমার পিতা থেকে উত্তম।

 

৩৬৩৪ মুহাম্মদ ইবনু সাব্‌বাহ (রহঃ) আবূ উসমান (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তাঁকে বলা হলে, “আপনি আপনার পিতার আগে হিজরত করেছেন” তিনি রাগ করতেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, (প্রকৃত ঘটনা এই যে,)আমি এবং উমর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খেদমতে হাযির হলাম। তখন তাঁকে কায়লুলা অবস্থায়(দুপুরের বিশ্রাম) পেলাম। কাজেই আমরা আমাদের আবাসস্থলে ফিরে এলাম। কিছুক্ষন পর উমর (রাঃ) আমাকে পাঠালেন এবং বললেন যাও; গিয়ে দেখ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগেছেন কিনা? আমি এসে তাঁর কাছে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কাছে বায়‘আত করলাম। তারপর উমর (রাঃ) এর কাছে এসে তাঁকে খবর দিলাম যে, তিনি জেগে গেছেন। তখন আমরা তাঁর নিকট গেলাম দ্রুতবেগে। তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করে বায়‘আত করলেন। তারপর আমিও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে (দ্বিত্বীয় বার উমর (রাঃ)) বায়‘আত করলাম।

 

৩৬৩৫ আহমদ ইবনু উসমান (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি বারা (রাঃ) –কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমার পিতা আযিব (রাঃ) –এর নিকট হাওদা খরিদ করলেন। আমি আবূ বকরের সাথে খরীদা হওদাটি বহন করে নিয়ে চললাম। তখন আমার পিতা আযিব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সহিত তাঁর হিজরতের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমাদের অনুসন্ধান করার জন্য মুশরিকরা লোক নিয়োগ করেছিল। অবশেষে আমরা রাত্রিকালে বেরিয়ে পড়লাম এবং একরাত ও একদিন অবিরাম চলতে থাকলাম। যখন দুপুর হয়ে গেল, তখন একটি বিরাটকায় পাথর নযরে পড়ল। আমরা সেটির কাছে এলাম, পাথরটির কিছু ছায়া পড়ছিল। আমি সেখানে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জন্য আমার সঙ্গের চামড়াখানি বিছিয়ে দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর উপর শুয়ে পড়লেন। আমি এদিক-ওদিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাত্‌ এক বকরী রাখালকে দেখতে পেলাম। সে তার বকরীগুলো নিয়ে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের (ছায়ায়) আশ্রয় নিতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কার গোলাম? সে বলল, আমি ওমুকের। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বকরীর পালে দুধ আছে কি? সে বলল, হাঁ। আমি বললাম, তুমি কি (আমাদের জন্য) কিছু দোহন করে দিবে? সে বলল, হাঁ। সে তার পাল থেকে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে সাফ করে নাও। সে একপাত্র ভর্তি দুধ দোহন করল। আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর জন্য কাপড় দিয়ে তার মুখ বেধে রেখেছিলাম। আমি তা থেকে দুধের মধ্যে কিছু পানি ঢেলে দিলাম। ফলে পাত্রের তলা পর্যন্ত শীতল হয়ে গেল। আমি তা নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে এসে বললাম, পান করুন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতখানি পান করলেন যে, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এরপর আমরা রওয়ানা হলাম এবং অনুসন্ধানকারী আমাদের পিছনে ছিল। বারা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ বকরের সঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন দেখলাম তাঁর মেয়ে আয়িশা (রাঃ) বিছানায় শুয়ে আছেন। তাঁর জ্বর হয়েছে। তাঁর পিতা আবূ বকর (রাঃ) –কে দেখলাম তিনি মেয়ের গালে চুমু খেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, মা তুমি কেমন আছ?

 

৩৬৩৬ সুলায়মান ইবনু আবদুর রাহমান (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর খাদেম আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদিনায়) আগমন করলেন। এই সময় তাঁর সাহাবীদের মধ্যে সাদা কাল চুল বিশিষ্ট আবূ বকর (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউ ছিলেন না। তিনি তাঁর চুলে মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ(এক প্রকার কালো ঘাস) লাগিয়েছিলেন। দোহায়েম অন্য সূত্রে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন সব চাইতে বয়স্ক। তিনি মেহেদী ও কতম একত্র করে কলপ লাগিয়েছিলেন। এতে তাঁর চুল (ও দাঁড়ি) টকটকে লাল রং ধারণ করেছিল।

 

৩৬৩৭ আসবাগ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) কালব গোত্রের উম্মে বাকর নামে একজন মহিলাকে শাদী করলেন। যখন আবূ বকর (রাঃ) হিজরত করেন, তখন তাকে তালাক দিয়ে যান। তারপর ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই শাদী করে নিল। এই ব্যাক্তিটই হল সেই কবি যে বদর যুদ্ধে নিহত কুরাইশ কাফিরদের শোকগাঁথা রচনা করেছিল। “বদর প্রান্তে কালীব নামক কূপে নিক্ষিপ্ত ঐ সব কাফিরগণ আজ কোথায় যাদের শিযা নামক কাঠের তৈরী খাদ্য-পাত্রে উটের কুঁজের গোশতে সুসজ্জিত থাকত। বদরের কালীব কূপে নিক্ষিপ্ত ব্যাক্তিগণ আজ কোথায় যারা গায়িকা ও সম্মানিত মদ্যপানকারী নিয়ে নিমগ্ন ছিল। উম্মে বাকর শান্তির স্বাগত জানোাচ্ছে। আর আমার কাওমের(ধবংস হয়ে যাওয়ার) পর আমার জন্য শান্তি কোথায়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন যে, অচিরেই আমাদের জীবিত করা হবে। কিন্তু উড়ে যাওয়া আত্মা ও মাথার খুলীর জীবন কেমন করে?”

 

৩৬৩৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে (সাওর পর্বতের)গুহায় ছিলাম। আমি আমার মাথা তুলে উপরের দিকে তাকালাম এবং লোকের পা দেখতে পেলাম। তখন আমি বললাম, ইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ! তাদের কেউ নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই আমাদের দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বকর! নীরব থাক। আমরা দু’জন আল্লাহ হলেন যাদের তৃতীয়।

 

৩৬৩৯ আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এল এবং তাঁকে হিজরত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেন, ওহে! হিজরত বড় কঠীন ব্যাপার। এরপর বললেন তোমার কি উট আছে? সে বলল, হাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটের সা’দকা আদায় কর? সে বলল হাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি উটনীর দুধ অন্যকে পান করতে দাও। সে বলল হাঁ। তিনি বললেন, যেদিন পান করানোর উদ্দেশ্যে উটগুলি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন কি তুমি দোহন করে(ফকির মিসকিনদের) দান কর? সে বলল হাঁ। তিনি বললেন, তবে তুমি সমুদ্রের ওপার থেকেই নেক আমল করতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমার আমলের কিছুই হ্রাস করবেন না।

 

৩৬৪০ আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদিনায়) আগমন করেন মুস’আব ইবনু উমায়ের ও ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ)। তারপর আমাদের কাছে আসেন, আম্মার ইবনু ইয়াসির ও বিলাল (রাঃ)।

 

৩৬৪১ মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) বারা‘ইবনু আযিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদিনায়) আগমন করলেন মুস’আব ইবনু উমায়ের ও ইবনু উম্মে মাকতুম। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসেলন, বিলাল, সা’দ ও আম্মার ইবনু ইয়াসির এরপর উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশজন সাহাবীসহ মদিনায় আসলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তাঁর আগমনে মদিনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমান আনন্দ হতে কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীগণও বলছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুভাগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তাঁর আগমনের আগেই মুফাস্‌সালের কয়েকটি সূরাসহ আমি (আরবি) সূরা পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম।

 

৩৬৪২ আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাদেরকে দেখতে গেলাম এবং বললাম, আব্বাজান কেমন আছেন? হে বিলাল, আপনি কেমন আছেন? আবূ বকর (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হলেই এ পংক্তিগুলু আবৃত্তি করতেন। “প্রতিটি ব্যাক্তিকে নিজ পরিবারে সুপ্রভাত বলা হয় অথচ মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও অধিক নিকটবর্তী। ” আর বিলাল (রাঃ) এর অবস্থা ছিল এই যখন তাঁর জ্বর ছেড়ে যেত তখন কণ্ঠস্বর উঁচু করে এ কবিতাটি আবৃত্তি করতেনঃ “হায়, আমি যদি জানতাম আমি ঐ মক্কা উপত্যাকায় পুনরায় রাত্রি যাপন করতে পারব কিনা যেখানে ইয্‌খির ও জলীল ঘাস আমার চারপাশে বিরাজমান থাকত। হায়, আর কি আমার ভাগ্যে জিতবে যে, আমি মাজানো্না নামক কূপের পানি পান করতে পারব! এবং শামা ও তাফিল পাহাড় কি আর আমার দৃষ্টিগোচর হবে!” আয়শা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গিয়ে এ সংবাদ জানালাম। তখন তিনি দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের প্রিয় করে দাও যেমন প্রিয় ছিল আমাদের মক্কা বরং তার চেয়েও অধিক প্রিয় করে দাও। আমাদের জন্য মদিনাকে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। মদিনার সা ও মুদ এর বরকত দান কর। আর এখাঙ্কার জ্বর রোগকে স্থানান্তর করে জুহ্‌ফায় নিয়ে যাও।

 

৩৬৪৩ আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘উহায়দুল্লাহ ইবনু ‘আদী (রহঃ) বলেন, আমি ‘উসমান (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি আমার বক্তব্য শোনার পর তাশাহ্‌হুদ পাঠের পর বললেন, আম্মা বা’দু। আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ -কে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -এর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন, মুহাম্মদ -কে যে সত্যসহ প্রেরণ করে হয়েছিল তৎপ্রতি ঈমান এনেছিলেন আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। উভয় হিজরতের(হাবাশায় ও মদিনায়) অংশ গ্রহণ করেছি। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জামাতা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমি তাঁর হাতে বায়‘আত করেছি, আল্লাহর কসম আমি কখনো তাঁর নাফরমানী করিনি তাঁর সাথে প্রতারণামূলক কোন কিছু করিনি। এমতাবস্থায় তাঁর ওফাত হয়েছে। ইসহাক কাল্বী শু‘য়ায়বের অনুসরণ করতঃ যুহরী সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

 

৩৬৪৪ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যে বছর উমর (রাঃ) শেষ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেন সে বছর আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) মিনায় তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে আসেন এবং সেখানে আমার সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। ‘(উমর (রাঃ) লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে চাইলে) আবদুল রাহ্মান (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন হাজ্জ (হজ্জ) মওসুমে বুদ্ধিমান ও নিরবোধ সব রকমের মানুষ একত্রিত হয়। তাই আমার বিবেচনায় আপনি ভাষণ দান থেকে বিরত থাকুন। এবং মদিনা গমন করে ভাষণ দান করুন। মদিনা হল দারুল হিজরত, (হিজরতের স্থান) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতের পবিত্র ভূমি। সেখানে আপনি অনের জ্ঞানী, গুনী ও বুদ্ধিমান লোককে একান্তে পাবেন। ‘উমর (রাঃ) বললেন, মদিনায় গিয়েই সর্বপ্রথম আমার ভাষণটি অবশ্যই প্রদান করব।

 

৩৬৪৫ মূসা ইবনু ইসমা‘ঈল (রহঃ) খারিজা ইবনু যায়েদ ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) নামক জনৈক আনসারী মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বায়‘আত করেন। তিনি বর্ণনা করেন, যখন মুহাজিরদের অবস্থানের ব্যাপারে আনসারদের মধ্যে লটারী অনুষ্ঠিত হল তখন উসমান ইবনু মায‘উনের বসবাস আমাদের ভাগে পড়ল। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাদের এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তার সেবা শুশ্রূষা করলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ওফাত হয়ে গেল। আমরা কাফনের কাফড় পরিয়ে দিলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে তশরীফ আনলেন। ঐ সময় আমি ‘উসমান (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলছিলাম। হে আবূ সায়িব! তোমার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তোমার ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে সম্মানিত করেছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কেমন করে জানলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন? আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক। ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো জানিনা। (তবে তাকে যদি সম্মানিত করা না হয়) তবে কাকে আল্লাহ সম্মানিত করবেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! ‘উসমানের মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর কসম! আমি তার সম্বন্ধে কল্যাণের আশা পোষণ করছি। আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্তেও জানিনা আল্লাহ তাঁর সাথে কি ব্যাবহার করবেন। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আমি এ কথা শোনার পর আর কাউকে (দৃঢ়তার সহিত) পূত-পবিত্র বলব না। উম্মুল ‘আলা’ (রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ কথা আমাকে চিন্তিত করল। এরপর আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, ‘উসমান ইবনু মায‘উন (রাঃ) এর জন্য একটি নহর প্রবাহিত রয়েছে। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর নিকট গিয়ে আমার স্বপ্নটি ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, এ হচ্ছে তার (নেক) আমল।

 

৩৬৪৬ উবায়দুল্লাহ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বু‘আস যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ ছিল যা আল্লাহ তাঁর রাসূল) -এর অনুকূলের তাঁর হিজরতের পূর্বেই সংঘটিত করিয়েছিলেন, যা তাদের (মদিনাবাসীদের) ইসলাম গ্রহণের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন তাদের গোত্রগুলো ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অনেক নেতৃবৃন্দ নিহত হয়েছিল।

 

৩৬৪৭ মূহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবূ বকর (রাঃ) ঈদুল ফিত্‌র অথবা ঈদুল আযহার দিনে তাঁকে দেখতে এলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশা (রাঃ)-এর গৃহে অবস্থান করছিলেন। ঐ সময় দু‘জন অল্প বয়সী বালিকা এ কবিতাটি উচ্চঃস্বরে আবৃত্তি করছিল যা আন্সারগণ বু‘আস যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবূ বকর (রাঃ) দু‘বার বললেন, এ হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ বকর, তাদেরকে ছেড়ে দাও। কেননা প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ‘ঈদ রয়েছে আর আজকের দিন হল আমাদের ‘ঈদের দিন।

 

৩৬৪৮ মূসা’দ্দাদ ও ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন তখন মদিনার উঁচু এলাকার ‘আমর ইবনু ‘আউফ গোত্র অবস্থান করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সেখানে তিনি চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। এরপর তিনি বানু নাজ্জারের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের নিকট সংবাদ পাঠালেন। তারা সকলেই তরবারী ঝুলিয়ে উপস্থিত হলেন। আনাস (রাঃ) বলেন সেই দৃশ্য এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর (রাঃ) তাঁর পিছনে উপবিষ্ট রয়েছেন, আর বনু নাজ্জারের প্রধানগণ রয়েছেন তাদের পার্শ্বে। অবশেষে আবূ আইয়ুব (রাঃ)-এর বাড়ীর চত্বরে উটটি বসে পড়ল। রাবী বলেন, ঐ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হত সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নিতেন। এবং তিনি কোন কোন সময় ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। রাবী বলেন, তারপর তিনি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন। তিনি বনী নাজ্জারের নেতাদের ডাকলেন এবং তারা এলে তিনি বললেন, তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও। তারা বলল, আল্লাহর কসম, আমরা বিক্রি করবনা। আল্লাহর কসম-এর বিনিময় আল্লাহর নিকটই চাই। রাবী বলেন এই স্থানে তখন ছিল মুশরিকদের পুরাতন কবর, বাড়ী ঘরের কিছু ভগ্নাবশেষ কয়েকটি খেজুরের গাছ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে মুশরিকদের কবরগুলি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হল। ভগ্নাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলা হল। রাবী বলে, কর্তিত খেজুর গাছের কান্ডগুলি মসজিদের কেব্লার দিকে এর খুঁটি হিসেবে এক লাইনে স্থাপন করা হল এবং খুঁটির ফাঁকা স্থানে রাখা হল পাথর। তখন সাহাবায়ে কেরাম পাথর বহন করে আনছিলেন এবং ছন্দ যুক্ত কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেনঃ আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! প্রকৃত কল্যাণ একমাত্র আখিরাতের কল্যানই। হে আল্লাহ! তুমি মুহাজির ও আনসারদের সাহায্য কর।

 

৩৬৪৯ ইব্‌রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) ‘উমর ইবনু আবদুল আযীয (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি সাইব ইবনু উখতে নাম্‌র (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি(মুহাজিরদের হাজ্জ (হজ্জ) সম্পাদানান্তে) মক্কায় অবস্থান সম্পর্কে কি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ)-এর নিকট শুনেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুহাজিরদের জন্য তাওয়াফে সদর আদায় করার পর তিন দিন মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি রয়েছে।

 

৩৬৫০ আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, লোকেরা বছর গণনা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নবুওয়াত লাভের দিন থেকে করেনি এবং তাঁর ওফাত দিবস থেকেও করেনি বরং তাঁর মদিনায় হিজরত থেকে বছর গণনা করা হয়েছে।

 

৩৬৫১ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ‘আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় দু‘ দু‘ রাক‘আত করে সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছিল। আতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করলেন, ঐ সময় সালাত (নামায/নামাজ) চার রাক‘আত করে দেয়া হয়। এবং সফরকালে পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ দু‘রাক‘আত বহাল রাখা হয়। আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) মা‘মর সূত্রে রেওয়াত বর্ণনায় যাদীদ ইবনু যুবার-এর অনুসরণ করেছেন।

 

৩৬৫২ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু কায‘আ (রহঃ) সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর আমি মারাত্নক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে পড়ি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার রোগ কি পর্যায়ে পৌছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সা’দকা দিব? তিনি বললেন না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সা‘দ এক-তৃতীয়াংশ দান কর। এ তৃতীয়াংশই অনেক বেশী। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে বিত্তবান রেখে যাও ইহাই উত্তম, এর চাইতে যে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করে। আহ্‌মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইব্‌রাহীম (রহঃ) থেকে এ কথাগুলুও বর্ণনা করেছেন। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা ব্যয় করবে, আল্লাহ তাঁর প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোক্মাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহ তোমাকে দেবে। আমি বললাম, ইয়া আল্লাহ! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের থেকে পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কখনই পিছনে পড়ে থাকবেনা আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে কোন নেক ‘আমল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে। সম্ভবতঃ তুমি পিছনে থেকে যাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরতকে অক্ষুন্ন রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখি করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্থ সা‘দ ইবনু খওলার মক্কায় মৃত্যুর কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ও মূসা (রহঃ) ইব্রাহীম সূত্রে বর্ণনা করেছেন, (আরবি)তোমরা উত্তরাধিকারীদের রেখে যাওয়া ।

 

৩৬৫৩ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবদুর রাহমান ইবনু ‘আউফ (রাঃ) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও সা‘দ ইবনু রাবী‘ আনসারী (রাঃ) এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন। সা‘দ (রাঃ) তাঁর সম্পত্তি ভাগ করে অর্ধেক সম্পত্তি এবং দু‘জন স্ত্রীর যে কোন একজন নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদুর রাহমানকে অনুরোধ করলেন। তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ আপনার পরিবারবর্গ ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। আমাদের স্থানীয় বাজারের রাস্তাটি দেখিয়ে দিন। তিনি (বাজারে গিয়ে ব্যাবসা আরম্ভ করলেন এবং) মুনাফা স্বরূপ কিছু ঘি ও পনীর লাভ করলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হল। তিনি তখন তার গায়ে ও কাপড়ে হলুদ রং –এর চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, হে আবদুর রাহমান, ব্যাপার কি! তিনি বললেন, আমি একজন আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কি পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি বললেন, তাকে নাওয়াত(খেজুর বিচি) পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা করে নাও।

 

৩৬৫৪ হামীদ ইবনু ‘উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর নিকট নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মদিনায় আগমনের সংবাদ পৌছালে তিনি এসে তাঁকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, আমি আপনাকে তিনটি প্রশ্ন করছি। এগুলোর সঠিক উত্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কেউ জাননা। (১) কিয়ামতের সর্বপ্রথম ‘আলামত ও লক্ষণ কি? (২) জান্নাতবাসীদের সর্বপ্রথম আহার্য কি? (৩) কি কারণে সন্তান আকৃতিতে কখনও পিতার আনুরূপ কখনো বা মায়ের অনুরূপ হয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবিষয়গুলি সম্পর্কে এইমাত্র জিব্‌রাঈলআলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে জানিয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) একথা শুনে বললেন, তিনই ফিরিশ্‌তাদের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (১) কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সর্বপ্রথম লক্ষণ হল লেলীহান আগুন যা মানুষকে পুর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে ধাওয়া করে নিয়ে যাবে এবং সবাইকে সমবেত করবে। (২) সর্বপ্রথম আহার্য যা জান্নাতবাসী ভক্ষণ করবে তা হল মাছের কলীজার অতিরিক্ত অংশ (৩) যদি নারীর আগে পুরুষের বীর্যপাত ঘটে তবে সন্তান পিতার আনুরূপ হয় আর যদি পুরুষের আগে নারীর বির্যপাত ঘটে তবে সন্তান মায়ের অনুরূপ হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , ইয়াহূদীগণ এমন একটি সম্প্রদায় যারা অন্যের কুৎসা রটনায় অত্যন্ত পটু। আমার ইসলাম গ্রহণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে আমার অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডাকলেন, তারা হাযির হল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাক্তির পুত্র। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা বলত, যদি ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম ইসলাম গ্রহণ কর তবে কেমন হবে? তারা বলল, আল্লাহ একাজ থেকে রক্ষা করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার একথাটি বললেন, তারাও পূর্বরূপ উত্তর দিল। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম বেরিয়ে আসলেন, এবং বললেন, (আরবি) ইহা শুনে ইয়াহূদীগণ বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে মন্দ লোক এবং মন্দ লোকের ছেলে। অতঃপর তারা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে আরো অনেক কথাবার্তা বলল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ইহাই আশংকা করছিলাম।

 

৩৬৫৫ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু মুত্‌‘ঈম (রাঃ) বলেন, আমার ব্যবসায়ের একজন অংশীদার কিছু দিরহাম(রৌপ্য মুদ্রা) বাজারে নিয়ে বাকীতে বিক্রি করে। আমি বললাম, সুবাহানাল্লাহ। এরূপ ক্রয়-বিক্রয় কি জায়িয? তিনিও বললেন, সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি ইহা খোলা বাজারে বিক্রি করেছি তাতে কেউ ত আপত্তি করেন নি। এরপর বারা‘ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন তখন আমরা এরূপ বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম; তখন তিনি বললেন যদি নগদ হয় তবে তাতে কোন বাঁধা নেই। আর যদি ধারে হয় তবে যায়িয হবে না। তুমি যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞাসা করে নাও। কেননা তিনি আমাদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। এরপর আমি যায়েদ ইবনু আরকামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন। সুফিয়ান (রহঃ) রাবী হাদীসটি কখনও এরূপ বর্ণনা করেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আমাদের নিকট আসেন, তখন আমরা হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুম পর্যন্ত মিয়াদে বাকীতে ক্রয়-বিক্রয় করতাম।

 

৩৬৫৬ মুসলিম ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি আমার উপর দশজন ইয়াহূদী ঈমান আনত তবে সমগ্র ইয়াহূদী সম্প্রদায়ই ঈমান গ্রহণ করত।

 

৩৬৫৭ আহ্‌মদ অথবা মুহাম্মদ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ আল-গুদানী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের কিছু লোক আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবসকে অত্যন্ত সম্মান করত এবং সেদিন তারা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়াহূদী অপেক্ষা ঐ দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার আমরা অধিক হকদার। তারপর তিনি সকলকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করার আদেশ দিলেন।

 

৩৬৫৮ যিয়াদ ইবনু আইয়ুব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্নণা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন দেখতে পেলেন ইয়াহূদীগণ ‘আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা) দিবসে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে। তাদেরকে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলল, এদিনই আল্লাহ তা‘আলা মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের উপর বিজয় দান করেছিলেন। তাই আমা ঐ দিনের সম্মানার্থে সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে থাকি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের চাইতে আমরা মূসাআলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনের আদেশ দেন।

 

৩৬৫৯ ‘আবদান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুলে সিঁথি না কেটে সোজা পিছনের দিকে ছেড়ে দিতেন। আর মুশরিকগণ তাদের চুলে সিঁথি কাটত। আহলে কিতাব সিঁথি কাটত না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আদেশ না আসা পর্যন্ত আহলে কিতাবের আনুকরণকে পছন্দ করতেন। তারপর (আদেশ আসলে) তাঁর মাথায় সিঁথি কাটলেন।

 

৩৬৬০ যিয়াদ ইবনু আইয়ুব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরাই তো সেই আহলে কিতাব যারা(তাওরাত ও কুরআনকে) ভাগাভাগি করে ফেলেছে, কিছু অংশের উপর ঈমান এনেছে এবং কিছু অংশকে অস্বীকার করেছে।

 

৩৬৬১ হাসান ইবনু ‘উমর ইবনু শাকীক (রহঃ) সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি(অন্যায়ভাবে) দশজনের অধিক মালিকের হাত বদল হয়েছি।

 

৩৬৬২ মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ ‘উসমান (রাঃ) বলেন, আমি সালমান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেন, আমি (পারস্যের) রাম হুরমুয শহরের অধিবাসী।

 

৩৬৬৩ হাসান ইবনু মুদরিক (রহঃ) সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, ‘ঈসা এবং মুহাম্মদ -এর আগমনের মধ্যে ছয়শ’ বছরের ব্যবধান ছিল।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/ambiakeram.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/10/ambiakeram.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy