পরিচ্ছেদঃ ১৭৪২. জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য। তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা্ আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে। (আত তাওবাহ : ৯:১১১-১১২)
২৫৯১।
হাসান ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন কাজ সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ‘সময় মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি? তিনি
বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ।’ তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে আমি চুপ
রইলাম। আমি যদি (কথা) বাড়াতাম তবে তিনি আরো অধিক বলতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪২. জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত।
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও সম্পদ ক্রয় করে
নিয়েছেন এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর
মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ
সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান
সাফল্য। তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা্ আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে
নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও
ঈমানদারদেরকে। (আত তাওবাহ : ৯:১১১-১১২)
২৫৯২।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(মক্কা) বিজয়ের পর আর হিজরত নেই। বরং রয়েছে কেবল জিহাদ ও
নিয়্যাত। যদি তোমাদের জিহাদের ডাক দেওয়া হয়, তা
হলে বেরিয়ে পড়।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪২. জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত। আল্লাহ
তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন এর
বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও
মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ
সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান
সাফল্য। তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা্ আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে
নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।
(আত তাওবাহ : ৯:১১১-১১২)
২৫৯৩।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা
জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা জিহাদ করব না?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ
হচ্ছে মকবুল হাজ্জ (হজ্জ)।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪২. জিহাদ ও যুদ্ধের ফযীলত। আল্লাহ
তা’আলার বাণীঃ আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন এর
বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও
মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ
সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান
সাফল্য। তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা্ আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে
নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও
ঈমানদারদেরকে। (আত তাওবাহ : ৯:১১১-১১২)
২৫৯৪।
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (এরপর বললেন) তুমি কি এতে
সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে এবং
দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে এবং (এতটুকু) আলস্য করবে না, আর
সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। লোকটি বলল, তা কার সাধ্য? আবূ
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘মুজাহিদের ঘোড়া রশিতে
বাঁধা থাকা অবস্থায় ঘোরাফেরা করে, এতেও তার জন্য নেকি লেখা
হয়।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৩. মানুষের মধ্যে সে মুমিন মুজাহিদ, উত্তম, যে
স্বীয় জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান
দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে
মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে ... এ-ই
মহাসাফল্য। (আস-সফ : ৬১:১০-১২)
২৫৯৫।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা
করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের
মধ্যে কে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেই মুমিন যে নিজ জান ও
মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সাহাবীগণ বললেন, তারপর
কে? তিনি বললেন, সেই
মুমিন যে, পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান
করে আল্লাহকে ভয় করে এবং নিজ অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদে রাখে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৩. মানুষের মধ্যে সে মুমিন
মুজাহিদ, উত্তম, যে স্বীয় জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ
করে। আল্লাহ বলেনঃ হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক
বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা
এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে
জেহাদ করবে ... এ-ই মহাসাফল্য। (আস-সফ : ৬১:১০-১২)
২৫৯৬।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর পথের মুজাহিদ, অবশ্যই আল্লাহই অধিক জ্ঞাত কে তাঁর পথে জিহাদ
করছে, সর্বদা সিয়াম পালনকারী ও
সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারীর ন্যায়। আল্লাহ তাআলা তাঁর পথের মুজাহিদের জন্য এই
দায়িত্ব নিয়েছেন, যদি তাকে মৃত্যু দেন তবে
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা পুরস্কার বা গানীমতসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৪. পুরুষের এবং নারীর জন্য জিহাদ
ও শাহাদাতের দু'আ। উমর (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ আমাকে আপনার রাসুলের শহরে শাহাদাত
নসীব করুন।
২৫৯৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) এর কাছে যাতায়াত
করতেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খেতে দিতেন। উম্মে
হারাম (রাঃ) ছিলেন, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর
স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে
গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাসির কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার
সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ সিংহাসনের উপর
অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত সিংহাসনে
উপবিষ্ট। ’এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহঃ) সন্দেহ করেছেন।
উম্মে
হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন যেন
আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তার জন্য দু‘আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা
রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, আমার
উম্মাতের মধ্যে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেশ করা হয়।’
পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, যেন
আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি
তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ।
তারপর
মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর সময় উম্মে হারাম (রাঃ) জিহাদের উদ্দেশ্যে
সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে
ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৫. আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা।
বলা হয় هَذِهِ سَبِيلِي
স্ত্রীলিঙ্গ ও هَذَا سَبِيلِي পুংলিঙ্গ অর্থাৎ উভই ব্যবহার হয়, আবু
আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, غزي এর একবচন হল غاز এবং هم دَرَجَاتِ এর অর্থ لهم دَرَجَاتِ অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদা
২৫৯৮।
ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা
স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক, তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ
পৌঁছে দিব না? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা'আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত
রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের ন্যায়। তোমরা আল্লাহর কাছে
চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হল সবচাইতে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে
হয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ-ও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান।
আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। মুহাম্মদ ইবনু ফুলাইহ্ (রহঃ)
তাঁর পিতার সূত্রে (নিঃসন্দেহে) বলেন, এর
উপরে রয়েছে আরশে রহমান।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৫. আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের মর্যাদা।
বলা হয় هَذِهِ سَبِيلِي
স্ত্রীলিঙ্গ ও هَذَا سَبِيلِي পুংলিঙ্গ অর্থাৎ উভই ব্যবহার হয়, আবু
আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, غزي এর একবচন হল غاز এবং هم دَرَجَاتِ এর অর্থ لهم دَرَجَاتِ অর্থাৎ তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদা
২৫৯৯।
মূসা (রহঃ) ... সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি আজ রাতে (স্বপ্নে)
দেখতে পেলাম যে, দু’ব্যাক্তি আমার নিকট এল
এবং আমাকে নিয়ে একটি গাছে উঠলো। তারপর আমাকে এমন সুন্দর উৎকৃষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ
করিয়ে দিল; এর আগে আমি কখনো এর চাইতে সুন্দর
ঘর দেখিনি। সে দু’ব্যাক্তি আমাকে বলল, এই
ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৬. আল্লাহর রাস্তায় সকাল ও সন্ধা
অতিবাহিত করা জান্নাতে তোমাদের কারোর একটি ধনুক পরিমান স্থান
২৬০০।
মুআল্লা ইবনু আসাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল
অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু রয়েছে, তা
থেকে উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৬. আল্লাহর রাস্তায় সকাল ও সন্ধা
অতিবাহিত করা জান্নাতে তোমাদের কারোর
একটি ধনুক পরিমান স্থান
২৬০১।
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান, তা (পৃথিবী) থেকে উত্তম যার উপর সূর্যোদয় ও
সূর্যাস্ত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল
অতিবাহিত করা সূর্যের উদয়াস্তের স্থান (পৃথিবী) এর চাইতে উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৬. আল্লাহর রাস্তায় সকাল ও সন্ধা
অতিবাহিত করা জান্নাতে তোমাদের কারোর একটি ধনুক পরিমান স্থান
২৬০২।
কাবীসা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর
রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার সকল কিছু থেকে
উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৭. ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট হুর ও তাদের
গুণাবলী। তাদের দর্শনে দৃষ্টি স্থির থাকে না এবং তাদের চোখের মনি অতীব কালো ও
চোখের সাদা অংশ অতীব শুভ্র। (এ জন্যই তাদের হুরে'ঈন
বলা হয়) وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ
অর্থ - জান্নাতীদের আমি হুরে'ঈনের সাথে বিয়ে করিয়ে দিব।
২৬০৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, আল্লাহর কোন বান্দা
এমতাবস্থায় মারা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার সাওয়াব
রয়েছে তাকে দুনিয়াতে এর সব কিছু দিলেও দুনিয়াতে ফিরে আসতে আগ্রহী হবে না। একমাত্র
শহীদ ব্যাতীত। সে শাহাদাতের ফযিলত দেখার কারণে আবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহর পথে
শহীদ হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে। রাবী হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে এ কথাও বর্ণনা করতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল
অতিবাহিত করা দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। তোমাদের কারোর ধনুক কিংবা চাবুক
রাখার মত জান্নাতের জায়গাটুকু দুনিয়া ও এর সব কিছু থেকে উত্তম। জান্নাতি কোন মহিলা
যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তীর সবকিছু আলোকিত
এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার উড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু থেকে উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৮. শাহাদাতের আকাঙক্ষা করা
২৬০৪।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, যদি মুমিনদের এমন একটি দল না থাকত, যারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে না এবং
যাদের সকলকে সাওয়ারী দিতে পারব না বলে আশংকা করতাম, তা
হলে যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে, আমি
সেই ক্ষুদ্র দলটির সঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকতাম না। সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার
প্রাণ, আমি পছন্দ করি আমাকে যেন
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, এরপর
শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়। তারপর
জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৮. শাহাদাতের আকাঙক্ষা করা
২৬০৫।
ইউসুফ ইবনু ইয়াকুব আস সাফফার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মুতার যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণের পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিতে গিয়ে বলেন, যায়দ
(রাঃ) পতাকা ধারন করল এবং শহীদ হল, তারপর
জাফর (রাঃ) পতাকা ধারন করল, সেও শহীদ হল। তারপর
আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা ধারন করল এবং সেও শহীদ হল। এরপর খালিদ বিন
ওয়ালিদ (রাঃ) বিনা নির্দেশেই পতাকা ধারণ করল এবং সে বিজয় লাভ করল। তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা আমাদের নিকট
আনন্দদায়ক নয়। আইয়ুব (রহঃ) বলেন, অথবা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তারা
আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক তা তাদের নিকট আদৌ আনন্দদায়ক না, এ সময়ে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৪৯. যে আল্লাহর রাস্তায় সওয়ারী
থেকে পড়ে মারা যায়, সে জিহাদকারীদের
অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় এবং
(পথিমধ্যে) তার মৃত্যু ঘটে তাকে পুরস্কৃত করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় (৪ঃ ১০০)
২৬০৬।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকটবর্তী একস্থানে শুয়েছিলেন, এরপর জেগে উঠে মুচকি হাসতে লাগলেন। আমি বললাম
আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেন, আমার উম্মতের এমন কিছু লোককে আমার সামনে
উপস্থিত করা হল যারা এই নীল সমুদ্রে আরোহণ করেছে, যেমন
বাদশাহ সিংহাসনে আরোহণ করে।
উম্মে
হারাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে দু'আ করুন, তিনি
যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তার জন্য দুআ করলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার
নিদ্রা গেলেন এবং আগের মতই আচরণ করলেন। উম্মে হারাম আগের মতই বললেন এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগের মতই জবাব দিলেন। উম্মে হারাম
(রাঃ) বললেন, আল্লাহর কাছে দুআ করুন
তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি প্রথম দলের
অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মুআবিয়া
(রাঃ)-এর সাথে মুসলমানরা যখন প্রথম সমুদ্রপথে অভিযানে বের হয়, তখন তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনু সামিতের
সঙ্গে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে তাদের কাফেলা সিরিয়ায় থামে। আরোহনের
জন্য উম্মে হারামকে একটি সওয়ারী দেয়া হল, তিনি
সওয়ারীর উপর থেকে পড়ে মারা গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫০. যে আল্লাহর রাস্তায় আহত হলো
কিংবা বর্শা বিদ্ধ হল
২৬০৭।
হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বনু সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে
বানু আমিরের কাছে পাথান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা (হারাম ইবনু মিলহান) তাদেরকে
বললেন, আমি সবার আগে বানু আমিরের
কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পৌছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে।
তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী শোনাতে লাগলেন, সেই
সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যাক্তি তাঁর প্রতি তীর
মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবর, কাবার রবের কছম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপরে
কাফিররা তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যাক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন।
হাম্মাম
(রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তাঁর সাথে
অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে খবর দিলেন, প্রেরিত দলটি তাদের রবের
সাথে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট
করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের
কওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাথে
মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে
এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি’ল, যাকওয়ান, বানু
লিহয়ান ও বানু উসায়্যার বিরুদ্ধে দু'আ
করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫০. যে আল্লাহর রাস্তায় আহত হলো
কিংবা বর্শা বিদ্ধ হল
২৬০৮।
মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... জুনদুব ইবনু সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি (এই কবিতাটি) পড়েছিলেনঃهَلْ أَنْتِ إِلاَّ إِصْبَعٌ دَمِيتِ، وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا لَقِيتِ
তুমি তো একটি আঙ্গুল মাত্র; তুমি তো রক্তাক্ত হয়েছ
আল্লাহরই পথে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫১. যে মহান আল্লাহর পথে আহত হয়
২৬০৯।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়ারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যাক্তি আল্লাহর পথে আহত হলে সে
কিয়ামতের দিন সে তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়ে আসবে এবং তা থেকে মিশকের সুগন্ধি ছাড়াবে
এবং আল্লাহই ভাল জানেন কে তাঁর পথে আহত হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫২. আল্লাহর তা আলার বাণীঃ হে
নবী, আপনি বলে দিন, তোমরা
কি আমাদের ব্যাপারে দুটি কল্যাণের যে কোন একটি অপেক্ষা করছ? যুদ্ধ হচ্ছে বড় অয়ানি পাত্রের ন্যায়
২৬১০।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন
যে, হিরাকল (রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস) তাঁকে
বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর (রাসূলুল্লাহ) সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধের
ফলাফল কিরূপ ছিল? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ বড় পানির পাত্র এবং ধন সম্পদের মত।
রাসূলগণ এভাবেই পরীক্ষিত হয়ে থাকেন। তারপর পরিনতি তাদেরই হয় (তাঁরাই পুরস্কারপ্রাপ্ত
হন)।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৩. মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর
সংগে তাদের কৃত অঙ্গীরকার পূর্ণ করে দেখিয়েছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা
তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (৩৩ঃ ২০)
২৬১১।
মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ খুজায়ী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার
চাচা আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বদরের যুদ্ধের সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম
যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময়ে অনুপস্থিত
ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হওয়ার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ দেখতে পাবেন যে, আমি কি করি।’ তারপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা
ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইবনু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, ইয়া
আল্লাহ! এরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তাঁর
সম্বন্ধে আপনার কাছে ওজর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে
নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সাদ ইবনু মুয়াযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হল।
তিনি বললেন, হে সাদ ইবনু মুয়ায, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ
পাচ্ছি।
সাদ
(রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি, আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তাঁর দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের জখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত
অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তাঁর দেহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তাঁর বোন ছাড়া কেউ তাকে
চিনতে পারেনি এবং তার বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারনা কুরআনের এই আয়াতটিঃمِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ
তাঁর এবং তাঁদের মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
আনাস
(রাঃ) আরো বলেন, রুবায়্যি নামক তাঁর এক বোন
কোন এক মহিলার সামনের দাঁত ভেঙ্গে দিলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁর কিসাসের নির্দেশ দেন। আনাস (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে হকসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না।’ পরবর্তীতে তাঁর
বাদীপক্ষ কিসাসের পরিবর্তে ক্ষতিপূরন নিতে রাজি হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর এমন কিছু বান্দা
আছেন, যারা কসম করলে আল্লাহ তা
পূরণ করে দেন।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৩. মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর
সংগে তাদের কৃত অঙ্গীরকার পূর্ণ করে দেখিয়েছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা
তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (৩৩ঃ ২০)
২৬১২।
আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) ... যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত কতে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত পেলাম না। যা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমা
আনসারী (রাঃ)-এর কাছে পেলাম। যার সাক্ষ্যকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দু’ব্যাক্তির সাক্ষ্যের সমান সাব্যস্ত করেছিলেন। সে আয়াতটি হলঃمِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত তাদের ওয়াদা পূরণ করেছেন। (৩৩ঃ ২৩)
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৪. যুদ্ধের আগে নেক আমল। আবু
দারাদা (রাঃ) বলেন, আমল অনুসারে তোমরা জিহাদ
করে থাকো। আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা
কেন এমন কথা বল, যা তোমরা কর না? তা আল্লাহর দৃষ্টিতে অত্যান্ত অসন্তোষজনক।
... সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়। (৬১ঃ ২-৩)
২৬১৩।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লৌহ
বর্মে আবৃত এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে
বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে শরীক হব, না ইসলাম গ্রহন করব?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম গ্রহন কর, তারপর
যুদ্ধে যাও।’ তারপর সে ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহন করে যুদ্ধে গেল এবং শাহাদাত বরণ করল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে অল্প আমল করে বেশী পুরস্কার পেল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৫. অজ্ঞাত তীর এসে যাকে হত্যা
করে
২৬১৪।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মে রুবায়্যি বিনতে বারা, যিনি হারিসা ইবনু সুরাকার মা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে এসে বললেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ! আপনি
হারিসা (রাঃ) সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবেন কি? হারিসা
(রাঃ) বদরের যুদ্ধে অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে
থাকে তবে আমি সবর করব, তা না হলে আমি অবিরত
কাঁদতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হারিসার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে, আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফেরদাউস
লাভ করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা
(দীন) বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে
২৬১৫।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বলল, এক ব্যাক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যাক্তি প্রসিদ্ধির জন্য এবং এক ব্যাক্তি
বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহাদে শরীক হল। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল? তিনি বললেন, ‘যে ব্যাক্তি আল্লাহর কলিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ
করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৭. যার দু’পা আল্লাহর পথে ধুলি
ধুসরিত হয়, আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
মদীনাবাসী ও তাদের পার্শ্ববর্তী মরুবাসীদের জন্য সঙ্গত নয়, তারা আল্লাহর রাসুলের সহগামী না হয়ে পেছনে
থেকে যাওয়া ...... আল্লাহ সৎকর্মশীলদের শ্রমফল নষ্ট করেন না। (৯ঃ ১২০)
২৬১৬।
ইসহাক (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু জাবর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, আল্লাহর পথে যে বান্দার
দু’পা ধুলিধূসরিত হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন
স্পর্শ করবে এরূপ হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৮. আল্লাহর পথে মাথায় লাগা ধুলি
মুছে ফেলা
২৬১৭।
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... ইকরিমা (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে ও আলী ইবনু
আবদুল্লাহকে বলেছিলেন যে, তোমরা আবূ সায়ীদ (রাঃ) এর
কাছে যাও এবং তাঁর কিছু বর্ণনা শোন। তারপর আমরা তাঁর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি ও
তাঁর ভাই বাগানে পানি সেঁচের কাজে ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি আসলেন এবং দু’হাটু
বুকের সাথে লাগিয়ে বসে বললেন, মসজিদে নববীর জন্য আমরা এক
একটি করে ইট বহন করছিলাম। আর আম্মার (রাঃ) দু’দুটি করে বহন করছিলেন। সে সময় নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশ দিয়ে গেলেন এবং তাঁর মাথা থেকে ধুলাবালি
মুছে ফেললেন এবং বললেন, আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। সে (আম্মার)
(রাঃ) তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে এবং তারা আম্মারকে জাহান্নামের পথে ডাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৯. যুদ্ধের পর ও ধূলিবালি লাগার
পর গোসল করা
২৬১৮।
মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, খন্দকের যুদ্ধ থেকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে অস্ত্র রাখলেন এবং গোসল করলেন, তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর কাছে এলেন, আর তাঁর মাথায় পট্টির ন্যায় ধুলি জমেছিল।
তিনি বললেন, আপনি অস্ত্র রেখে দিলেন
অথচ আল্লাহর কসম, আমি এখনো অস্ত্র রাখিনি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোথায়
যেতে হবে? তিনি বনু কুরায়যার প্রতি
ইঙ্গিত করে বললেন, এদিকে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে বেরিয়ে গেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬০. আল্লাহ তা’আলার এ বাণী যাদের
সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা
আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং
তারা জীবিত .... আল্লাহ মুমিনগণের শ্রমফল নষ্ট করে দেন না। (আলে 'ইমরান : ৩:১৬৯ - ১৭১)
২৬১৯।
ইসমাইল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা
বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদের শহীদ করেছিল, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রি’ল ও যাকওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত
ফজরে দুয়া করেছিলেন এবং উসাইয়্যা গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের
বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, বী'রে মাউনার কাছে শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে
কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা, মানসুখ হয়ে যায়। (আয়াতটি হলঃ)
بَلِّغُوا قَوْمَنَا أَنْ قَدْ لَقِينَا رَبَّنَا فَرَضِيَ عَنَّا وَرَضِينَا عَنْهُ
অর্থঃ
তোমরা আমাদের কওমের কাছে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা
আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তার প্রতি
সন্তুষ্ট।"
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬০. আল্লাহ তা’আলার এ বাণী যাদের
সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা
আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং
তারা জীবিত .... আল্লাহ মুমিনগণের শ্রমফল নষ্ট করে দেন না। (আলে 'ইমরান : ৩:১৬৯ - ১৭১)
২৬২০।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের
যুদ্ধের দিন কিছু সংখ্যক সাহাবী সকাল বেলায় শরাব পান করেন, এরপর যুদ্ধে তারা শাহাদাত বরণ করেন। সুফিয়ান
(রহঃ) কে প্রশ্ন করা হলঃ সেই দিনের শেষ বেলায়? তিনি
বললেন, এ কথাটি তাতে নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬১. শহীদের উপর ফিরিশতাদের
ছায়াদান
২৬২১।
সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উহুদের
যুদ্ধের শেষে আমার পিতাকে (তাঁর লাশ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
অঙ্গ-প্রতঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে
চাইলাম; আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে
নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিনীর বিলাপ শুনতে পেলেন। বলা হল, সে আমরের কন্যা বা ভগ্নি। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বললেন, সে
যেন না কাঁদে। ফিরিশতারা তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন। আমি (ইমাম বুখারী (রহঃ)
বলেন) সাদাকা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম এও কি বর্ণিত আছে যে, তাকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত? তিনি বললেন, [জাবির (রাঃ)] কখনো তাও বলেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬২. মুজাহিদের দুনিয়ায় ফিয়ে আসার
আকাঙ্ক্ষা
২৬২২।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর একমাত্র শহীদ ছাড়া আর
কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা পোষণ করবে না, যদিও
দুনিয়ার সকল জিনিস তাঁর কাছে বিদ্যমান থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্খা করবে
যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৩. তরবারীর ঝলকের নীচ জান্নাত।
وَقَالَ الْمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ أَخْبَرَنَا نَبِيُّنَا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رِسَالَةِ رَبِّنَا: «مَنْ قُتِلَ مِنَّا صَارَ إِلَى الْجَنَّةِ». وَقَالَ عُمَرُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَيْسَ قَتْلاَنَا فِي الْجَنَّةِ وَقَتْلاَهُمْ فِي النَّارِ قَالَ: بَلَى
মুগীরা
ইবন শু'বা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের মধ্যে যে শহীদ হল সে জান্নাতে পৌঁছে
গেল। উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) কে বলেন, আমাদের শহীদগন জান্নাতবাসী আর তাদের নিহতরা
কি জাহান্নামী নয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ।
২৬২৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর আযাদকৃত গোলাম ও
তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা
(রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারীর ছায়ার নীচেই জান্নাত। উয়াইসী (রহঃ)
ইবনু আবূয যিনাদ (রহঃ) এর মাধ্যমে মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে হাদিস বর্ণনায়
মুয়াবিয়া ইবনু আমর (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে
বর্ণিত হাদীসের অনুকরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৫. যুদ্ধে বীরত্ব ও ভীরুতা
بَاب مَنْ طَلَبَ الْوَلَدَ لِلْجِهَادِ
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي جَعْفَرُ بْنُ رَبِيعَةَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ هُرْمُزَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ عَلَيْهِمَا السَّلَام لَأَطُوفَنَّ اللَّيْلَةَ عَلَى مِائَةِ امْرَأَةٍ أَوْ تِسْعٍ وَتِسْعِينَ كُلُّهُنَّ يَأْتِي بِفَارِسٍ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَالَ لَهُ صَاحِبُهُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ فَلَمْ يَقُلْ إِنْ شَاءَ اللَّهُ فَلَمْ يَحْمِلْ مِنْهُنَّ إِلَّا امْرَأَةٌ وَاحِدَةٌ جَاءَتْ بِشِقِّ رَجُلٍ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ قَالَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فُرْسَانًا أَجْمَعُونَ
১৭৬৪.
পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য সন্তান আকাঙ্ক্ষা করে।
লায়স
... আবু হুরায়রা(রাঃ)থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, সুলাইমান ইবনু
দাউদ(আঃ)বলেছিলেন, আজ রাতে আমি একশ’ অথবা বলেছিলেন
নিরান্নবই স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হব। তাদের প্রত্যেকেই একজন বীর মুজাহীদ প্রসব করবে।
তার একজন সাথী বললেন, বলুন, ইনশাআল্লাহ! তিনি ইনশাআল্লাহ বলেন নি। ফলে
একজন স্ত্রী ছাড়া কেই গর্ভবতী হলেন না। তিনিও একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করলেন।
সেই সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, যদি তিনি ইনশাআল্লাহ বলতেন, তবে সকলের সন্তান হতো এং তারা সকলেই ঘোড়
সওয়ার হয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করত।
২৬২৪।
আহমাদ ইবনু আবদুল মালেক (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাপেক্ষা সুশ্রী, সাহসী
ও দানশীল ছিলেন। মদিনাবাসীগণ একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়ায় চড়ে সবার আগে আগে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমরা (ঘোড়াটিকে) একটি সমুদ্রের ন্যায় দ্রুত
গতিসম্পন্ন পেয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৫. যুদ্ধে বীরত্ব ও ভীরুতা
২৬২৫।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুনাইন থেকে ফেরার সময় তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে চলছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরো অনেক সাহাবী
ছিলেন। এমন সময় কিছু গ্রাম্য লোক এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরল এবং তাদের কিছু দেওয়ার জন্য
পীড়াপীড়ি শুরু করল। এমনকি তারা তাঁকে একটি গাছের কাছে নিয়ে গেল এবং তাঁর চাঁদর
(গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়িয়ে
গেলেন এবং বললেন, আমার চাঁদরটি ফিরিয়ে দাও।
আমার কাছে যদি এই সব কাঁটাযুক্ত গাছের সমপরিমাণ বকরী থাকত, তাহলে এর সবই তোমাদের ভাগ করে দিতাম। আর
তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যাবাদী ও কাপুরুষ
দেখতে পেতে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৬. কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাওয়া
২৬২৬।
মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... আমর ইবনু মায়মুন আউদী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, শিক্ষক যেমন ছাত্রদের লেখা শিক্ষা দেন, সাদ (রাঃ) তেমনি তাঁর সন্তানদের এ বাক্যগুলো
শিক্ষা দিতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর এগুলো থেকে পানাহ চাইতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি ভীরুতা, অতি বার্ধক্য, দুনিয়ার
ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই।’ রাবী বলেন, আমি মুসআব (রাঃ) এর নিকট হাদিসটি বর্ণনা করলে
তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৬. কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাওয়া
২৬২৭।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আক্ষমতা, ভীরুতা
ও বার্ধক্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কবরের
আযাব থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৭. যে ব্যক্তি যুদ্ধকালীন তার
নিজের ঘটনাবলী বর্ণনা করে। আবু উসমান (রহঃ) তা সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
২৬২৮।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ সাদ, মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ এবং
আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এর সঙ্গ লাভ করেছি। আমি তাদের কাউকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনিনি। তবে তালহা
(রাঃ)-কে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৮. জিহাদে বের হওয়া ওয়াজিব এবং
জিহাদ ও তার নিয়্যাতের আবশ্যকতা। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ অভিযানে বের হয়ে পড় হালকা
অবস্থায় হউক অথবা ভারি অবস্থায় এবং জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন
দ্বারা। এই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আশু লাভের সম্ভাবনা থাকলে এবং সফর
সহজ হলে ...... তারা যে মিথ্যাচারী তা তো আল্লাহ্ জানেন (৪১ঃ ৪২) আল্লাহ্ তা’আলা
আরো বলেনঃ হে মু’মিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন
তোমাদের আল্লাহ্র পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তখন
তোমরা ভরাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা
কি পরকালের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ? পরকালের
তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অতিকিঞ্চিৎকর। (৯ঃ ৩৮) ইবন আব্বাস (রাঃ)
থেকে উল্লেখ রয়েছে, فانفروا ثبات
অর্থ হলো- বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তোমরা জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়। ثبات
শব্দটির একবচন ثبة অর্থ ছোট দল।
২৬২৯।
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা
বিজয়ের দিন বলেছিলেন, এই বিজয়ের পর আর হিজরতের
প্রয়োজন নেই। এখন কেবল জিহাদ আর নিয়্যাত। যখনই তোমাদের বের হওয়ার আহ্বান জানোান
হবে, তখনই তোমরা বেরিয়ে পড়বে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৯. কোন কাফির যদি কোন মুসলিমকে
হত্যা করার পর ইসলাম গ্রহন করে ও দ্বীনের উপর অবিচল থেকে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়
২৬৩০।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, দু’ব্যাক্তির প্রতি আল্লাহ
সন্তুষ্ট থাকবেন। তারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ
কারনে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করে
শহীদ হয়েছে। তারপর আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীর তাওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর
রাস্তায় শহীদ হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬৯. কোন কাফির যদি কোন মুসলিমকে
হত্যা করার পর ইসলাম গ্রহন করে ও দ্বীনের উপর অবিচল থেকে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়
২৬৩১।
হুমায়দী (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, খায়বার বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেখানে অবস্থানকালেই আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, ‘ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকেও (গনীমতের) অংশ দিন।’
তখন সাঈদ ইবনু আসের কোন এক পুত্র বলে উঠল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাঁকে অংশ দিবেন না।’ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বললেন, সে ত ইবনু কাউকালের হত্যাকারী।
তা শুনে সাঈদ ইবনু আসের পুত্র বললেন, দান
(ضَأْنٍ)
পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আমাদের কাছে আগত বিড়াল মাশি জন্তুটি, (সেই ব্যাক্তির) কথায় আশ্চর্যবোধ করছি, সে আমাকে এমন একজন মুসলিমকে হত্যার দায়ে
অভিযুক্ত করেছে যাকে আল্লাহ তায়ালা আমার হাতে সম্মানিত করেছেন এবং যার দ্বারা
আমাকে লাঞ্ছিত করেননি। আব্বাস (রাঃ) বলেন, পরে
তাঁকে অংশ দিয়েছেন কি দেননি তা আমাদের জানা নেই।
সুফইয়ান
(রহঃ) বলেন, আমাকে সাঈদী (রহঃ) তাঁর
দাদার মাধ্যমে আবূ হুরায়রা (রহঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম
বুখারী) (রহঃ) বলেন সাঈদী হলেন, আমর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু
সাঈদ ইবনু আমর ইবনু সাঈদ ইবনু আস।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭০. যে ব্যক্তি জিহাদকে সওমরে
উপর অগ্রাধিকার দেয়
২৬৩২।
আদম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর জীবনকালে আবূ তালহা (রাঃ) জিহাদের কারণে সিয়াম পালন করতেন না।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল
আযহা ব্যতীত তাঁকে আর কখনো সিয়াম ছেড়ে দিতে দেখিনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭১. নিহত হওয়া ছাড়াও সাত
প্রকারের শাহাদত রয়েছে
২৬৩৩।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত ব্যাক্তি
শহীদঃ মহামারীতে মৃত ব্যাক্তি, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যাক্তি, পানিতে ডুবে মৃত ব্যাক্তি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত ব্যাক্তি এবং যে
আল্লাহর পথে শহীদ হল, সে ব্যাক্তি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭১. নিহত হওয়া ছাড়াও সাত
প্রকারের শাহাদত রয়েছে
২৬৩৪।
বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া
প্রত্যেক মুসলিমের জন্য শাহাদাত।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭২. আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়; অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয়
ধন প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয় ....আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আন-নিসা ৪:৯৫-৯৬)
২৬৩৫।
আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন,لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ আয়াতটি নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ (রাঃ) কে ডেকে আনলেন। তিনি কোন জন্তুর একটি চওড়া হাড় নিয়ে
আসেন এবং ততে উক্ত আয়াতটি লিখে রাখেন। ইবনু উম্মে মাকতুম জিহাদে অংশ ব্যাপারে তাঁর
অক্ষমতা প্রকাশ করলেلاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ আয়াতটি নাযিল হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭২. আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ মুমিনদের মধ্যে যারা অক্ষম নয়; অথচ ঘরে বসে থাকে ও যারা আল্লাহর পথে স্বীয়
ধন প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয় ....আল্লাহ
ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (আন-নিসা ৪:৯৫-৯৬)
২৬৩৬।
আবদুল আজীজ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি
মারওয়ান ইবনু হাকামকে মসজিদে বসা অবস্থায় দেখলাম। তারপর আমি তাঁর দিকে এগিয়ে গেলাম
এবং তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর উপর অবতীর্ণ আয়াত,لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ (মুসলমানদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং
আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারা পরস্পর সমান নয়) যখন তাকে দিয়ে লিখিয়েছিলেন, ঠিক সে সময় অন্ধ ইবনু উম্মে মাকতুম (রাঃ) সেখানে
উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি
জিহাদে যেতে সক্ষম হতাম, তবে অবশ্যই অংশগ্রহন
করতাম।’ সে সময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলের উপর ওহী নাযিল করেন। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরু আমার উরুর উপর রাখা ছিল এবং তা আমার কাছে
এতই ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আমার উরু ভেঙ্গে
যাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। এরপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার অবস্থা কেটে গেল, এ সময়غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ আয়াতটি নাযিল করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৩. যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ
২৬৩৭।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... সালিম আবূ নাযর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) লিখে পাঠালেন, আর আমি এতে পড়লাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যখন তোমরা তাদের
(শত্রুদের) মুখোমুখি হবে তখন ধৈর্যধারন করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৪. জিহাদে উদ্ধুদ্ধকরণ, আল্লাহর তা আলার বাণীঃ মু মিনদের জিহাদের
জন্য উদ্ধুদ্ধ করুণ। (আল-আনফাল : ৮:৬৫)
২৬৩৮।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খন্দকের দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও
মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য
তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে , তারা কষ্ট ও ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে
আল্লাহ! সুখের জীবন আখিরাতের জীবন। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও।
প্রত্যুত্তরে তারা বলে উঠেনঃ আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হাতে জিহাদের বায়আত গ্রহন করেছি, যতদিন
আমরা বেঁচে থাকি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৫. পরিখা খনন
২৬৩৯।
আবূ মা’মার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আনসার ও মুহাজিরগণ মদিনার
পাশে পরীখা খনন করছিলেন এবং তারা পিঠে করে মাটি বহন করছিলেন। আর তারা এই কবিতা
আবৃত্তি করতেছিলেনঃ আমরা ইসলামের উপর মুহাম্মদের হাতে বায়আত নিয়েছি, ততদিন পর্যন্ত যতদিন আমরা বেঁচে থাকি। আর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উত্তরে বলেছিলেনঃ হে আল্লাহ! আখিরাতের
কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই। তাই আনসার ও মুহাজিরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৫. পরিখা খনন
২৬৪০।
আবূ ওয়ালীদ (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাটি উঠাচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, যদি আপনি না হতেন তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম
না।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৫. পরিখা খনন
২৬৪১।
হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আহযাবের দিন আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছি যে, তিনি মাটি বহন করছেন। আর তাঁর পেটের শুভ্রতা
মাটি ঢেকে ফেলেছে। সে সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন, (ইয়া আল্লাহ), আপনি
না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না; সাদকা দিতাম না এবং সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করতাম না। তাই আমাদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করুন। যখন আমরা
শত্রুর সম্মুখিন হই তখন আমাদের পা সুদৃঢ় করুন। ওরা (মুশরিকরা) আমাদের বিরুদ্ধাচরণ
করেছে। তারা যখনই কোন ফিতনা সৃষ্টি করতে চায় তখনই আমরা তা থেকে বিরত থাকি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৬. ওযর যাকে জিহাদে যেতে বাধা
দেয়
২৬৪২।
আহমাদ ইবনু ইউনুস ও সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক
যুদ্ধে ছিলেন, তখন তিনি বললেন, কিছু লোক মদিনায় আমাদের পেছনে রয়েছে। আমরা
কোন ঘাঁটি বা উপত্যকায় চলিনি, কিন্তু তারাও এতে আমাদের
সঙ্গে আছে। ওযরই তাদের বাধা দিয়েছে।
মূসা
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আবূ আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহঃ) বলেন, প্রথম সনদটি আমার নিকট অধিক সহীহ।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৭. আল্লাহর পথে জিহাদের
অবস্থায় সওম পালনের ফযীলত
২৬৪৩।
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম
পালন করে, আল্লাহ তাঁর মুখমণ্ডলকে
(অর্থাৎ তাঁকে) দোযখের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৮. আল্লাহর পথে খরচ করার ফযীলত
২৬৪৪।
সাদ ইবনু হাফস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় দুটি করে কোন
জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজার
প্রহরী তাঁকে আহ্বান করবে। (তারা বলবে), হে
অমুক এদিকে আস। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে তো তাঁর জন্য কোন ক্ষতি নেই।’ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি আশা করি যে, তুমি
তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৮. আল্লাহর পথে খরচ করার ফযীলত
২৬৪৫।
মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিম্বারে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমি আমার পর তোমাদের জন্য
ভয় করি এ ব্যাপারে যে, তোমাদের জন্য দুনিয়ার
কল্যাণের (মঙ্গলের) দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর তিনি দুনিয়ার নিয়ামতের উল্লেখ করেন।
এতে তিনি প্রথমে একটির কথা বলেন, পরে দ্বিতীয়টির বর্ণনা
করেন। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! কল্যাণও কি অকল্যাণ বয়ে আনবে? ’নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব
রইলেন, আমরা বললাম, তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। সমস্ত লোকও
এমনভাবে নীরবতা অবলম্বন করল, যেন তাদের মাথার উপর পাখি
বসে আছে।
তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখের ঘাম মুছে বললেন, এখনকার সেই প্রশ্নকারী কোথায়? তাঁকে কল্যাণকর? তিনি তিনবার এ কথাটি বললেন। কল্যাণ কল্যাণই
বয়ে আনে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বসন্তকালীন
উদ্ভিদ (পশুকে) ধংস অথবা ধ্বংসোন্মুখ করে ফেলে। কিন্তু যে পশু সেই ঘাস এই পরিমাণ
খায় জাতে তাঁর ক্ষুধা মিটে, তারপর রোদ পোহায় এবং মলমুত্র
ত্যাগ করে, এরপর আবার ঘাস খায়।
নিশ্চয়ই এ মাল সবুজ শ্যামল সুস্বাদু। সেই মুসলিমের সম্পদই উত্তম যে ন্যায়ত তা
উপার্জন করেছে এবং আল্লাহর পথে, ইয়াতিম ও মিসকীন ও
মুসাফিরের জন্য খরচ করেছে। আর যে ব্যাক্তি অন্যায়ভাবে অর্জন করে তাঁর দৃষ্টান্ত
এমন ভক্ষণকারীর ন্যায় যার ক্ষুধা মিটে না এবং তা কিয়ামতের দিন তাঁর বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য দিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৯. যে ব্যক্তি কোন সৈনিককে সাজ
আসবাবপত্র দিয়ে অথবা যুদ্ধে গমনকারী সৈনিকের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য করে তার ফযীলত
২৬৪৬।
আবূ মা’মার (রহঃ) ... যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে
জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করে সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে
কোন জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করে, সেও যেন জিহাদ করল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৭৯. যে ব্যক্তি কোন সৈনিককে সাজ
আসবাবপত্র দিয়ে অথবা যুদ্ধে গমনকারী সৈনিকের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য করে তার ফযীলত
২৬৪৭।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় উম্মে সুলাইম ব্যতীত কারো ঘরে যাতায়াত
করতেন না কিন্তু তাঁর স্ত্রীদের কথা ভিন্ন। এ ব্যপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘উম্মে সুলাইমের ভাই আমার সাথে জিহাদে শরীক হয়ে সে শহীদ
হয়েছে, তাই আমি তাঁর প্রতি
সহানুভুতি জানোাই।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮০. যুদ্ধের সময় সুগন্ধি ব্যবহার
করা
২৬৪৮।
আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) ... মূসা ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইয়ামামার যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, তিনি সাবিত ইবনু কায়সের নিকট গিয়ে দেখতে
পেলেন যে, তিনি তাঁর উভয় উরু থেকে
কাপড় সরিয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করছেন। আনাস (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে চাচা! যুদ্ধে যাওয়া থেকে আপনাকে কিসে বিরত
রাখল?’ তিনি বললেন, ‘ভাতিজা, এখনই
যাব।’ এরপরও তিনি সুগন্ধি মালিশ করতে লাগলেন। তারপর তিনি বসলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র
থেকে লোকেদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘তোমরা আমাদের সম্মুখ থেকে সরে পড়। যাতে আমরা
শত্রুদের সাথে মুখোমুখি লড়তে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সঙ্গে আমরা কখনো এরূপ করিনি। কত খারাপ তা যা তোমরা শত্রুদেরকে অভ্যস্ত করেছ।’
হাম্মাদ (রহঃ) সাবিত (রহঃ) সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮১. শত্রুদের তথ্য সংগ্রহকারী
দলের ফযীলত
২৬৪৯।
আবূ নুআইম (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কে আমাকে শত্রু শিবিরের খবরাখবর এনে দিবে?’ যুবায়র (রাঃ) বললেন, ‘আমি আনব।’ তিনি আবার বললেন, ‘কে আমাকে শত্রু শিবিরের খবরাখবর এনে দিবে?’ যুবায়র (রাঃ) আবারও বললেন, ‘আমি আনব।’ তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘প্রত্যেক নাবীরই
সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবায়র।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮২. একজন তথ্য সংগ্রহকারী পাঠানো
যায় কি?
২৬৫০।
সাদাকা (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের
আহ্বান জানালেন। সাদাকা (রহঃ) বলেন, আমার
মনে হয়, এটি খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা।
যুবাইর (রাঃ) তাঁর আহবানে সাড়া দিলেন। তিনি আবার লোকদের আহ্বান করলেন। এবারও কেবল
যুবাইর (রাঃ) সাড়া দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘প্রত্যেক নাবীর জন্য বিশেষ সাহায্যকারী থাকে।
আমার বিশেষ সাহায্যকারী যুবাইর ইবনু আওয়াম (রাঃ)।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৩. দু' জনের ভ্রমণ
২৬৫১।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... মালিক ইবনু হুয়ায়রিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে ফিরে এলাম। তিনি আমাকে ও আমার এক
সঙ্গীকে বললেন, তোমরা আজান দিবে ও ইকামত দিবে
এবং তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতী করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৪. ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে
কল্যাণ নিবদ্ধ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত
২৬৫২।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার
কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৪. ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে
কল্যাণ নিবদ্ধ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত
২৬৫৩।
হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... উরওয়া ইবনু জা’দ সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত
কল্যাণ রয়েছে। সুলাইমান (রহঃ) শুবা (রহঃ) সূত্রে উরওয়া ইবনু আবূল জা’দ (রহঃ) থেকে
বর্ণনা করেছেন। হাদীস বর্ণনায় সুলাইমান (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন মুসাদ্দাদ (রহঃ)
... উরওয়া ইবনু আবূল জা’দ (রহঃ) থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৪. ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে
কল্যাণ নিবদ্ধ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত
২৬৫৪।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে
বরকত রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৫. জিহাদ অব্যাহত থাকবে
নেতৃত্বদানকারী সৎ হোক অথবা সীমালংকারী। কেননা নবী (সাঃ) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ নিবদ্ধ রয়েছে
কিয়ামত পর্যন্ত।
২৬৫৫।
আবূ নুআইম (রহঃ) ... উরওয়া বারিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত
পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরস্কার এবং গনীমতের মাল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৬. যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রস্তুত রাখে। মহান আল্লাহর বাণীঃ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ
যে জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘোড়া পালন করে
২৬৫৬।
আলী ইবনু হাফস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে
ব্যাক্তি আল্লাহর উপর ঈমান ও তার যত প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাস রেখে আল্লাহর পথে
জিহাদের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখে, কিয়ামতের দিন সেই
ব্যাক্তির পাল্লায় ঘোড়ার খাদ্য, পানীয়, গোবর ও পেশাব ওজন করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৭. ঘোড়া ও গাধার নামকরণ
২৬৫৭।
মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হন। কিন্তু তিনি কয়েকজন সঙ্গীসহ পেছনে পড়ে গেলেন। আবূ
কাতাদা (রাঃ) ব্যতীত তার সঙ্গীরা সকলেই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ)
ব্যতীত তার সঙ্গীরা একটি বন্য গাধা দেখতে পান এবং তাঁকে চলে যেতে দেন; আবূ কাতাদা (রাঃ) গাধাটি দেখামাত্রই জারাদা
নামক তার ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন এবং ঘোড়ার চাবুকটি উঠিয়ে দিতে বলেন; কিন্তু সঙ্গীরা অস্বীকার করলে তখন আবূ কাতাদা
(রাঃ) নিজেই চাবুকটি তুলে নেন এবং গাধাটি শিকার করে সঙ্গীদের নিয়ে এর গোশত আহার
করেন। (সঙ্গীগণ) এতে তারা লজ্জিত হন। তারপর তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি বলেন, গাধাটির
কোন অংশ তোমাদের কাছে অবশিষ্ট আছে কি? তারা
বললেন, আমাদের সাথে একটি পায়া
আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিয়ে আহার করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৭. ঘোড়া ও গাধার নামকরণ
২৬৫৮।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফর (রহঃ) ... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের
বাগানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি ঘোড়া থাকত, যাকে লুহাইফ বলা হত। আর কেউ কেউ বলেছেন, “লুখাইফ” খা আমর দিয়ে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৭. ঘোড়া ও গাধার নামকরণ
২৬৫৯।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... মুয়ায (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উফাইর
নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে
আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মুয়ায, তুমি কি জানো বান্দার ঊপর আল্লাহর হক কি? এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি? আমি বললাম, আল্লাহ
ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, বান্দার
উপর আল্লাহর হক হল, বান্দা তার ইবাদত করবে এবং
তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক না করলে আল্লাহ তাঁকে
শাস্তি দিবেন না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি
লোকদের এ সুসংবাদ দিব না? তিনি বললেন, তুমি তাদের সুসংবাদটি দিও না, তাহলে লোকেরা (এর উপরই) নির্ভর করে বসবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৭. ঘোড়া ও গাধার নামকরণ
২৬৬০।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক সময় মদিনায় ভীতি ছড়িয়ে পড়লে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদের মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন। পরে তিনি
বললেন, ভীতির কোন কারণ তো আমি দেখতে
পেলাম না। আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্র স্রোতের ন্যায় (দ্রুতগামী) পেয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৮. ঘোড়ার অকল্যাণ সম্পর্কে যা
উল্লেখ করা হয়
২৬৬১।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনটি জ্বীনিসে অকল্যাণ রয়েছেঃ ঘোড়া, নারী ও বাড়ীতে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৮. ঘোড়ার অকল্যাণ সম্পর্কে যা
উল্লেখ করা হয়
২৬৬২।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যদি কোন কিছুতে অকল্যাণ
থাকে, তবে তা নারী, ঘোড়া ও বাড়ীতে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৮৯. ঘোড়া তিন প্রকার লোকের জন্য।
আর আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমাদের
আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর
ও গাধা। (১৬ঃ ৮)
২৬৬৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের
জন্য। একজনের জন্য পুরস্কার; একজনের জন্য আবরণ এবং
একজনের জন্য (পাপের) বোঝা। আর যার জন্য পুরস্কার, সে
হল, ঐ ব্যাক্তি যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের
জন্য) ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়, আর ঘোড়াটি সে চারণভূমি বা বাগানে ঘাস খায়, তবে এর জন্য তাঁর নেকী রয়েছে। আর ঘোড়াটি যদি
রশি ছিঁড়ে এক বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপ সমূহের বিনিময়ে
তাঁর জন্য নেকী রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তাঁর মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছা করেনি, তবে এর ফলেও তাঁর জন্য নেকী রয়েছে। আর যে
ব্যাক্তি অহংকার, লোকিকতা প্রদর্শন এবং
মুসলমানদের সাথে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা (পাপের) বোঝা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে
তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর
কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থবোধক এই একটি
আয়াত ছাড়া। (আল্লাহর বাণীঃ) কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু
পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখবে। (৯৯ঃ ৭-৮)
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯০. জিহাদে যে ব্যক্তি অপরের
জানোয়ারকে চাবুক মারে
২৬৬৪।
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবূল মুতাওয়াক্কিল নাজী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) এর নিকট গিয়ে তাঁকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছ থেকে যা শুনেছেন, তা থেকে আমার কাছে কিছু
বর্ণনা করুন। তখন জাবির (রাঃ) বললেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলাম। আবূ
আকীল বললেন, সেটি কি জিহাদের সফর ছিল, না উমরা পালনের, তা আমাদের জানা নেই। আমরা যখন প্রত্যাবর্তনের
জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা পরিজনদের কাছে তাড়াতাড়ি
যেতে আগ্রহী, তারা তাড়াতাড়ি যাও। জাবির
(রাঃ) বলেন, তারপর আমি একটি উটের পিঠে
চড়ে বেরিয়ে পরলাম, সেটির দেহে কোন দাগ ছিল না
এবং বর্ণ ছিল লাল-কালো মিশ্রিত।
পথিমধ্যে
আমার উটটি ক্লান্ত হয়ে থেমে পড়লে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে জাবির! তুমি থাম। তারপর তিনি চাবুক দিয়ে
উটটিকে একটি আঘাত করলেন, আর উটটি আকস্মাৎ দ্রুত
চলতে লাগল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
কি উটটি বিক্রি করবে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর মদিনায় পৌছলে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের একদল সহ মসজিদে প্রবেশ করলেন। আমি আমার উটটিকে মসজিদে
বালাত-এর পাশে বেঁধে রেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে
এগিয়ে গেলাম এবং বললাম, এই আপনার উট। তখন তিনি
বেরিয়ে এসে উটটি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, হ্যাঁ, উটটি
আমারই। তারপর তিনি কয়েক উকিয়া স্বর্ণসহ এই বলে পাঠালেন যে, এগুল জাবিরকে দাও। তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা
করলেন, তুমি কি উটের পুরা মূল্য
পেয়েছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, মুল্য ও উট তোমারই।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯১. অবাধ্য পশু ও তেজস্বী অশ্ব
আরোহণ করা। রাশীদ ইবন সাদ (রহঃ) বলেন, সালফ
সালেহীন তেজস্বী অশ্বে আরোহণ করতে পছন্দ করতেন। কেননা এ (শ্রেনীর) ঘোড়া অতি
দ্রুতগামী ও খুব সাহসী
২৬৬৫।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এক
সময় মদিনাতে ভীতি দেখা দিলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহার
মানদূব নামক ঘোড়াটি চেয়ে নিলেন এবং এর উপর আরোহণ করলেন আর বললেন, আমি কোন ভীতি দেখিনি। কিন্তু ঘোড়াটি সমুদ্রের
স্রোতের ন্যায় (দ্রুতগামী) পেয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯২. গনীমাতে ঘোড়ার অংশ। মালিক
(রহঃ) বলেন, ঘোড়া ও বিশেষ করে তুর্কী
ঘোড়ার গনীমতে অংশ দেওয়া হবে। আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের আরোহণের জন্য তিনি সৃষ্টি
করেছেন ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা। (১৬ঃ ৮)
একটি ঘোড়ার অধিক হলে এর কোন অংশ দেওয়া হবে না
২৬৬৬।
উবাইদ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলূল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গনীমতের মাল থেকে ঘোড়ার জন্য দু’ অংশ এবং আরোহীর জন্য এক অংশ নির্ধারিত করে
দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৩. জিহাদে যে ব্যক্তি অন্যের
বাহন পরিচালনা করে
২৬৬৭।
কুতাইবা (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক
ব্যাক্তি বারা’ ইবনু আযিব (রাঃ) বলল, আপ্নারা
কি হুনায়নের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ময়দানে রেখে
পলায়ন করেছিলেন?বারা’ ইবনু আযিব (রাঃ)
বলেন, কিন্তু
রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পলায়ন করেননি। হাওয়াযিনরা ছিল সুদক্ষ
তীরন্দাজ। আমরা সামনা-সামনি যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করলে তারা পালিয়ে যায়। এমতাবস্থায়
মুসলমানরা তাদের পিছু ধাওয়া না করে গনীমতের মাল সংগ্রহে মনোনিবেশ করল। এই সুযোগে
শত্রুরা তীর বর্ষণের মাধ্যমে আমাদের আক্রমন করে বসল। তবে রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থান ত্যাগ করেননি। আমি তাঁকে তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর অটল
অবস্থায় দেখেছি। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর বাহনের লাগাম ধরে টানছেন; আর রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলছেন, ‘আমি নাবী তা মিথ্যা নয়, আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৪. সাওয়ারীর রিকার ও পা-দানী
প্রসঙ্গে
২৬৬৮।
উবাইদ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার
হয়ে পা-দানীতে কদম মুবারক রাখার পর উটটি দাঁড়িয়ে গেলে জুল-হুলাইফা মসজিদের নিকট
তিনি ইহরাম বেঁধে নিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৫. গাদিবিহীন ঘোড়ার পিঠে আরোহন
২৬৬৯।
আমর ইবনু আওন (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলূল্লাহসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম গদিবিহীন ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে লোকেদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন; তাঁর কাঁধে ছিল ঝুলন্ত তলোয়ার।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৬. ধীরগতিসম্পন্ন ঘোড়া
২৬৭০।
আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার মদিনাবাসীগন ভীত হয়ে পড়লে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) এর ধীর গতিসম্পন্ন ঘোড়ায় আরোহণ
করেন। তিনি (শহর প্রদক্ষিণ করে) ফিরে এসে বললেন, আমি
তোমার ঘোড়াটিকে সমুদ্র স্রোতের ন্যায় (দ্রুতগতি সম্পন্ন) পেয়েছি। পরবর্তীকালে
ঘোড়াটিকে আর কখনো পেছনে ফেলা যেতো না।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৭. ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতা
২৬৭১।
কাবীসা (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ঘোড়ার জন্য হাফ্য়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদা পর্যন্ত
এবং প্রশিক্ষণবীহীন ঘোড়ার জন্য সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়াকের মসজিদ পর্যন্ত দৌড়
প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি
উক্ত প্রতিযোগিতার একজন অংশগ্রহণকারী ছিলাম। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, হাফয়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদার দূরত্ব পাঁচ বা
ছয় মাইল এবং সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়াকের মসজিদের দূরত্ব এক মাইল।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৮. প্রতিযোগিতার জন্য অশ্বের
প্রশিক্ষন দান
২৬৭২।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রশিক্ষণবিহীন ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন এবং এই দৌড়ের
সীমানা ছিল সানিয়্যা থেকে বানূ যুরায়াকের মসজিদ পর্যন্ত। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেছিলেন। আবু আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন, أَمَدًا এর অর্থ সীমা।
পরিচ্ছেদঃ ১৭৯৯. প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত অশ্বের দৌড়
প্রতিযোগিতার সীমা
২৬৭৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতা হাফয়া থেকে শুরু
হয়েছে এবং সানিয়্যাতুল বিদায় শেষ হয়েছে। (রাবী আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন), আমি মূসা (রহঃ) কে বললাম, এর দূরত্ব কী পরিমাণ হবে? তিনি বললেন, ছয়
অথবা সাত মাইল। প্রশিক্ষণহীন ঘোড়ার প্রতিযোগিতা শুরু হত সানিয়্যাতুল বিদা থেকে এবং
শেষ হতো বানূ যুরায়াকের মসজিদে। আমি বললাম, এর
মধ্যকার দূরত্ব কত? তিনি বললেন, এক মাইল বা তাঁর অনুরূপ। ইবনু উমর (রাঃ) এতে
অংশ গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০০. নাবী (সাঃ)-এর উষ্ট্রী
প্রসঙ্গে। ইবন উমর (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) উসামাকে কাসওয়া
নামক উষ্ট্রীর পিঠে তার পেছনে বসান। মিসওয়ার (রহঃ) বলেব, নবী (সাঃ) বলেছেন তার উষ্ট্রী কাসওয়া কখনো
অবাধ্যতা প্রকাশ করেনি।
২৬৭৪।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি
উষ্ট্রী ছিল যাকে আযবা বলা হত।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০০. নাবী (সাঃ)-এর উষ্ট্রী
প্রসঙ্গে। ইবন উমর (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) উসামাকে কাসওয়া
নামক উষ্ট্রীর পিঠে তার পেছনে বসান। মিসওয়ার (রহঃ) বলেব, নবী (সাঃ) বলেছেন তার উষ্ট্রী কাসওয়া কখনো
অবাধ্যতা প্রকাশ করেনি।
২৬৭৫।
মালিক ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
আযবা নামক একটি উষ্ট্রী ছিল। কোন উষ্ট্রী তাঁর আগে যেতে পারত না। হুমাইদ (রহঃ)
বলেন, কোন উষ্ট্রী তাঁর আগে যেতে
সক্ষম হত না। একদিন এক বেদুইন একটি জওয়ান উটে চড়ে আসল এবং আযবা এর আগে চলে গেল।
এতে মুসলমানদের মনে কষ্ট হল। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তা বুঝতে
পারলেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর বিধান এই যে, ‘দুনিয়ার সবকিছুরই উত্থানের পর পতন রয়েছে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮০১. নাবী (সাঃ)-এর সাদা খচ্চর।
আনাস (রাঃ) তা বর্ণনা করেছেন। আবু হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আয়লার শাসক নবী (সাঃ) কে একটি সাদা খচ্চর
উপহার দিয়েছিলেন
২৬৭৬।
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... আমর ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইন্তেকালের সময়) তাঁর সাদা খচ্চর, কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম ও সামান্য ভূমি ব্যতীত আর
কিছুই রেখে যাননি। এগুলোও তিনি সাদকা স্বরূপ ছেড়ে যান।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০১. নাবী (সাঃ)-এর সাদা খচ্চর।
আনাস (রাঃ) তা বর্ণনা করেছেন। আবু হুমাইদ (রহঃ) বলেন, আয়লার শাসক নবী (সাঃ) কে একটি সাদা খচ্চর
উপহার দিয়েছিলেন
২৬৭৭।
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন ব্যাক্তি তাঁকে বললেন, হে আবূ উমারা। আপনারা হুনায়নের যুদ্ধে পলায়ন
করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহর
কসম, না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কখনো পলায়ন করেননি। বরং অতি উৎসাহী অগ্রবর্তী কিছু লোক হাওয়াজযিনদের তীর নিক্ষেপের
ফলে পলায়ন করেছিল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাদা খচ্চরটির উপর
উপবিষ্ট ছিলেন এবং আবূ সূফিয়ান ইবনু হারিস (রাঃ) এর লাগাম ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘আমি যে নাবী তা মিথ্যা নয়, আমি
আবদুল মুত্তালিবের বংশধর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮০২. মহিলাদের জিহাদ
২৬৭৮।
মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কাছে জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তোমাদের
জন্য জিহাদ হল হাজ্জ (হজ্জ)।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০২. মহিলাদের জিহাদ
২৬৭৯।
কাবীসা (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে তাঁর সহধর্মিণীগণ জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, (মহিলাদের জন্য) উত্তম জিহাদ হল হাজ্জ (হজ্জ)।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৩. সামুদ্রিক যুদ্ধে মহিলাদের
অংশগ্রহন
২৬৮০।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিলহানের কন্যার কাছে গেলেন এবং সেখানে তিনি
বিশ্রাম করলেন। তারপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান (রাঃ)-এর কন্যা তাঁকে জিজ্ঞাসা
করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন
হাসছেন?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে কিছু
লোক আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করবে। তাদের দৃষ্টান্ত
সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহর ন্যায়। মিলহান (রাঃ) এর কন্যা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কাছে আমার জন্য
দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের
অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত
করুন।
আবার
তিনি বিশ্রাম নিলেন, এরপর হেসে উঠলেন। মিলহান
(রাঃ) এর কন্যা বললেন, আমার জন্য আল্লাহর কাছে
দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের
অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, তারপর তিনি উবাদা ইবনু সামিতের সাথে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র সফর করেন। তারপর ফেরার সময় নিজের
সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড়
মটকে ইন্তেকাল করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৪. কয়েক স্ত্রীর মধ্যে একজনকে
নিয়ে জিহাদে যাওয়া
২৬৮১।
হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) ... উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর
সহধর্মিণীদের মধ্যে কুরআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং এতে যার নাম আসত তাকেই নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে নিয়ে যেতেন। কোন এক যুদ্ধে এভাবে তিনি
আমাদের মধ্যে কুরআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহন করলেন। তাতে আমার নাম আসল এবং আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাযিল
হওয়ার পরের ঘটনা।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৫. মহিলাদের যুদ্ধে গমন এবং
পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহন
২৬৮২।
আবূ মা’মার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন আমি দেখলাম, আয়িশা বিনতে আবূ বকর ও উম্মে সুলাইম (রাঃ)
তাদের আঁচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে, আমি
তাদের পায়ের অলংকার দেখছিলাম। তাঁরা উভয়ই মশক পিঠে বহন করে সাহাবীগনের মুখে পানি
দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশক ভরতি করে নিয়ে এসে সাহাবীগনের মুখে পানি ঢেলে ঢেলে
দিচ্ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৬. যুদ্ধে মহিলাদের মশক নিয়ে
লোকদের নিকট যাওয়া
২৬৮৩।
আবদান (রহঃ) ... সালাবা ইবনু আবূ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মদিনার কিছু সংখ্যক
মহিলার মধ্যে কয়েকখানা (রেশমি) চাঁদর বন্টন করেন। তারপর একটি ভাল চাঁদর অবশিষ্ট
রয়ে গেল। তাঁর কাছে উপস্থিত একজন তাঁকে বললেন, হে
আমিরুল মুমীনিন! এ চাঁদরটি আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নাতিন উম্মে কুলসুম বিনতে আলী (রাঃ) যিনি আপনার কাছে আছেন, তাঁকে দিয়ে দিন। উমর (রাঃ) বলেন, উম্মে সালীত (রাঃ) এই চাঁদরটির অধিক হকদার।
উম্মে সালীত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়আত
গ্রহণকারিণী আনসার মহিলাদের একজন। উমর (রাঃ) বলেন, কেননা, উম্মে সালীত (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে আমাদের কাছে
মশক (ভর্তি পানি) বহন করে নিয়ে আসতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৭. মহিলা কতৃক যুদ্ধাহতদের
পরিচর্যা
২৬৮৪।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... রুবাইয়ি’ বিনত মুআব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
(যুদ্ধের ময়দানে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে থাকতাম। আমরা
লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং
নিহতদের মদিনায় পাঠাতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৮. মহিলা কর্তৃক আহত ও নিহতদের ফেরত
পাঠান
২৬৮৫।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... রুবাইয়ি’ বিনত মুআব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে যুদ্ধে
অংশ গ্রহন করে লোকেদের পানি পান করাতাম ও তাদের পরিচর্যা করতাম এবং আহত ও নিহত
লোকদের মদিনায় ফেরত পাঠাতাম।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮০৯. শরীর থেকে তীর বের করা
২৬৮৬।
মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (এক যুদ্ধে) আবূ আমিরের হাঁটুতে তীর বিদ্ধ হল, আমি তাঁর কাছে গেলাম। আবূ আমির (রাঃ) বললেন, এই তীরটি বের কর। তখন আমি তীরটি টেনে বের
করলাম। ফলে সে স্থান থেকে পানি প্রবাহিত হতে লাগল। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আবূ আমির
উবায়দকে ক্ষমা করুন।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১০. মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে
পাহারাদারি করা
২৬৮৭।
ইসমাঈল ইবনু খলীল (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (এক রাতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে
কাটান। তারপর তিনি যখন মদিনায় এলেন এই আকাঙ্খা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যাক্তি যদি
রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন, ইনি কে? লোকটি বলল, আমি
সাদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি।
তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১০. মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে
পাহারাদারি করা
২৬৮৮।
ইয়াহহিয়া ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দ্বীনার ও দিরহামের গোলাম এবং
চাঁদর ও শালের গোলাম। তাঁকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না
দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এই হাদীসটির সনদ ইসরাইল এবং মুহাম্মদ ইবনু জুহাদা, আবূ হুসাইনের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌছাননি। আর আমর, আবদুর
রাহমান ইবনু আবদুল্লাহ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে আমাদেরকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দ্বীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাঁকে দেওয়া
হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট
হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে)
কাঁটা বিদ্ধ হলে কেউ তা তুলে দিবে না। ঐ ব্যাক্তির জন্য সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত
রয়েছে, যার মাথার চুল এলোমেলো এবং
পা ধূলিধূসরিত। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (সৈন্য দলের) পেছনে
রাখলে পেছনেই থাকে। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না এবং
কোন বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ গ্রহন করা হয় না।
تَعْسًا
বলা হয় فَأَتْعَسَهُمُ اللَّهُ
অর্থাৎ আল্লাহ তাদের অপমানিত করুক। طُوبَى অর্থ উত্তম। ... فُعْلَى এর কাঠামোতে গঠিত। মুলত طيبى
ছিল। يَاءٌ
কে وَاوِ
দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১১. যুদ্ধে খিদমতের ফযীলত
২৬৮৯।
মুহাম্মদ ইবনু আরআরা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক) সফরে আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে
ছিলাম। তিনি আমার খেদমত করতেন। অথচ তিনি আনাস (রাঃ) এর চাইতে বয়সে বড় ছিলেন। জারীর
(রাঃ) বলেন, আমি আনসারদের এমন কিছু কাজ
দেখেছি, যার ফলে তাদের কাউকে পেলেই
সম্মান করি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১১. যুদ্ধে খিদমতের ফযীলত
২৬৯০।
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে গিয়েছিলাম আর
আমি তাঁর খেদমত করছিলাম। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে ফিরলেন
এবং উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল, তিনি
বললেন, ‘এই পাহাড় আমাদের ভালবাসে
এবং আমরাও তাকে ভালবাসি।’ তারপর তিনি হাত দ্বারা মদিনার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ! ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) যেমন
মক্কাকে হারাম (সম্মানিত স্থান) বানিয়েছিলেন, তেমনি
আমিও এ দুই কঙ্করময় ময়দানের মধ্যবর্তী স্থান(মদিনা)-কে হারাম ঘোষণা করছি। ইয়া
আল্লাহ! আপনি আমাদের সা ও মুদে বরকত দান করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১১. যুদ্ধে খিদমতের ফযীলত
২৬৯১।
সুলায়মান ইবনু দাউদ আবূ রাবী’ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
(কোন এক সফরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের
মধ্যে সেই ব্যাক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তাঁর চাঁদর দ্বারা ছায়া গ্রহন করছিল।
তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তাঁরা কোন কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তাঁরা উটের তত্ত্বাবধান করছিল, খেদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের
কাজ করছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন
করেনি তারাই আজ অধিক সওয়াব হাসিল করল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১২. সফর-সঙ্গির আসবাবপত্র
বহনকারীর ফাযীলত
২৬৯২।
ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে
সাদকা রয়েছে। কোন লোককে তাঁর সাওয়ারীর উপর উঠতে সাহায্য করা, অথবা তাঁর মাল-সরঞ্জাম তুলে দেয়া সাদকা।
উত্তম কথা বলা ও সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকা এবং
(পথিককে) রাস্তা বাতলিয়ে দেওয়া সাদকা।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৩. আল্লাহর রাস্তায় একদিন
প্রহরারত থাকার ফযীলাত। মহান আল্লাহর বাণীঃ হে ইমানদারগন! তোমরা ধৈর্যধারন কর, অপরকেও ধৈর্যে উৎসাহিত কর। এবং (প্রতিরক্ষায়)
সদা প্রস্তুত থাক ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত (৩ঃ ২০০)
২৬৯৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মুনীর (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ সায়ি’দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত
পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তাঁর চাইতে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের
কারো চিবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চাইতে উত্তম।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৪. যুদ্ধে যে ব্যক্তি খিদমতের
জন্য কিশোর নিয়ে যায়
২৬৯৪।
কুতাইবা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ
তালহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে
একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে।
এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। তারপর আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে তাঁর
সওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরন করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দুয়া করতে শুনতামঃ ‘ইয়া
আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা
ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে
পানাহ চাচ্ছি।’ পরে আমরা খায়বারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। তারপর যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে
দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তাঁর কাছে সাফিয়্যা
বিনতে হুয়াই ইবনু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হল, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। তারপর
তাঁকে নিয়ে রওয়ানা হলেন।
আমরা
যখন সাদ্দুস সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সাফিয়া (রাঃ) হায়েজ থেকে পবিত্র হন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে তাঁর সাথে বাসর যাপন করেন।
এরপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়সা (এক প্রকার খাদ্য) প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের
লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। তারপর আমরা মদিনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ)
বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর পেছনের চাঁদর দিয়ে সাফিয়্যাকে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উপর পা রেখে উটে
আরোহণ করতেন। এভাবে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি
এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাঁকে ভালবাসি। তারপর মদিনার দিকে
তাকিয়ে বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ, এই কঙ্করময় দুটি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে
আমি ‘হারাম’(সম্মানিত স্থান) ঘোষণা করছি। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ এবং সা তে
বরকত দান করুন।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৫. সমুদ্র সফর
২৬৯৫।
আবূ নুমান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মে
হারাম (রাঃ) আমাকে বলেছেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে ঘুমিয়ে ছিলেন, পরে
তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মে হারাম (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি
আমার উম্মাতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তাঁরা
সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করবে। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দু’আ
করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের
অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে।
তারপর
তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। আর তিনি এরূপ দু’বার অথবা তিনবার
করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি
আল্লাহর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) তাঁকে বিয়ে করেন এবং
তাঁকে নিয়ে জিহাদে বের হন। যখন তাঁর আরোহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের
নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৬. দুর্বল ও সৎ লোকদের (দু‘আয়)
উসিলায় যুদ্ধে সাহায্য চাওয়া।
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَخْبَرَنِي أَبُو سُفْيَانَ قَالَ لِي قَيْصَرُ سَأَلْتُكَ أَشْرَافُ النَّاسِ اتَّبَعُوهُ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ فَزَعَمْتَ ضُعَفَاؤُهُمْ وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ
ইবন
আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আবু সুফইয়ান (রাঃ) আমার
কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রোম সম্রাট কায়সার আমাকে
বললেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম তার অনুসরন করছে প্রভাবশালী লোক, না তাদের মধ্যে দুর্বলরা? তুমি বলেছ যে, তাদের মধ্যকার দুর্বলরা–
এরাই রাসুলদের অনুসারী হয়।
২৬৯৬।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... মুসআব ইবনু সাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন সাদ (রাঃ) এর ধারণা ছিল অন্যদের
চাইতে তাঁর মর্যাদা বেশী। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দুর্বলদের উসিলায়ই সাহায্য ও রিযক
প্রাপ্ত হচ্ছো।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৬. দুর্বল ও সৎ লোকদের (দু‘আয়)
উসিলায় যুদ্ধে সাহায্য চাওয়া।
২৬৯৭।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ সাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর পথে
জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের
সাথে কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কেউ আছেন। বলা হবে, হ্যাঁ। তারপর (তাঁর বরকতে) বিজয় দান করা হবে।
তারপরে এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞাসা করা হবে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবীদের সহচরদের (তাবেঈন) মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ, তারপর তাদের বিজয় দান করা হবে। তারপর এমন এক
যুগ আসবে যে, জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে (তাবে-তাবেঈন)? বলা
হবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরও বিজয় দান করা হবে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৭. অমুক লোক শহীদ এ কথা বলবে
না। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে কে জিহাদ করেছে, তা তিনিই ভাল জানেন এবং কে তার পথে আহত হয়েছে
আল্লাহই সমাধিক অবগত আছেন
২৬৯৮।
কুতাইবা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ সাই’দী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এলেন, মুশরিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যাক্তি
ছিল, যে কোন মুশরিককে একাকী দেখলেই তাঁর
পশ্চাদ্ধাবন করত এবং তাঁকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমন করত। বর্ণনাকারী [সাহল ইবনু সাদ
(রাঃ)] বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত
যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে ত জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। একজন সাহাবী
বলে উঠলেন, আমি তাঁর সঙ্গী হব। তারপর
তিনি তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন
এবং সে দ্রুত চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক
সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হল এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের
বাট মাটিতে রাখল এবং তাঁর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে আত্মহত্যা করল।
অনুসরণকারী
লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কী
ব্যাপার? তিনি বললেন, যে লোকটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষন আগেই
বলছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে। তা
শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। তারপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম
এমন সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শিঘ্রই মৃত্যুকামনা করতে থাকে। তারপর
তাঁর তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তাঁর উপরে ঝাপিয়ে
পড়ে আত্মহত্যা করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন
ব্যাক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করতে থাকে, প্রকৃতপক্ষে
সে জাহান্নামী হয় এবং অনুরূপভাবে মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যাক্তি জাহান্নামীর
মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতবাসী হয়।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৮. তীরন্দাজীর প্রতি উৎসাহিত
করা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা তাদের
মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এ দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর
শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে। (৮ঃ ৬০)
২৬৯৯।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তাঁরা তীরন্দাজীর অনুশীলন করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বানূ ইসমাঈল! তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক।
কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন এবং আমি অমুক গোত্রের সঙ্গে আছি।
রাবী বলেন, এ কথা শুনে দু’দলের একদল
তীর নিক্ষেপ বন্ধ করে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল যে, তোমরা তীর নিক্ষেপ করছ না? তাঁরা জবাব দিল, আমরা কেমন করে তীর নিক্ষেপ করতে পারি, অথচ আপনি তাদের সাথে রয়েছেন? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে আছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৮. তীরন্দাজীর প্রতি উৎসাহিত
করা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা তাদের
মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, এ দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর
শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে। (৮ঃ ৬০)
২৭০০।
আবূ নু’আইম (রহঃ) ... আবূ উসাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বদরের দিন বলেছেন, আমরা যখন কুরাইশদের
বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়েছিলাম এবং কুরাইশরা আমাদের বিরুদ্ধে হয়েছিল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের বললেন, যখন তাঁরা তোমাদের
নিকটবর্তী হবে, তখন তোমরা তীর নিক্ষেপ
করবে। আবু আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, أَكْثَبُوكُمْ
এর অর্থ যখন অধিক সংখ্যক সমবেত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮১৯. বর্শা বা তদ্রুপ কিছু নিয়ে
খেলা করা
২৭০১।
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
একদল হাবশী লোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বর্শা নিয়ে খেলা
করছিলেন। এমন সময় উমর (রাঃ) সেখানে এলেন এবং হাতে কঙ্কর তুলে নিয়ে তাদের দিকে
নিক্ষেপ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমর! তাদের করতে দাও। আলী ... মা‘মার
(রহঃ) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, (এ ঘটনা) মসজিদে ঘটেছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২০. ঢালের বর্ণনা এবং যে ব্যক্তি
তার সঙ্গির ঢাল ব্যবহার করে
২৭০২।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ
তালহা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একই ঢাল ব্যবহার
করেছেন। আর আবূ তালহা (রাঃ) ছিলেন একজন ভাল তীরন্দাজ। তিনি যখন তীর নিক্ষেপ করতেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মাথা উঁচু করে তীর যে স্থানে পড়ত তা লক্ষ্য রাখতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২০. ঢালের বর্ণনা এবং যে ব্যক্তি
তার সঙ্গির ঢাল ব্যবহার করে
২৭০৩।
সাঈদ ইবনু উফাইর (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যুদ্ধের
ময়দানে যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও
তাঁর মুখমন্ডল রক্তাক্ত হয়ে গেল এবং তাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, তখন আলী (রাঃ) ঢালে করে ভরে ভরে পানি আনতেন
এবং ফাতিমা (রাঃ) ক্ষতস্থান ধুতে ছিলেন। যখন ফাতিমা (রাঃ) দেখলেন যে, পানির চাইতে রক্তক্ষরণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার
ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২০. ঢালের বর্ণনা এবং যে ব্যক্তি
তার সঙ্গির ঢাল ব্যবহার করে
২৭০৪।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু
নযীরের সম্পদ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘ফায়’
হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলমানগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারনে তা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এই সম্পদ থেকে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং
অবশিষ্ট আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতি স্বরূপ হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয়
করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২১. পরিচ্ছেদ নাই
২৭০৫।
কাবীসা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাদ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো জন্য তাঁর
পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলতে দেখিনি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, ‘তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ (ফিদা)
হোক।'
পরিচ্ছেদঃ ১৮২২. চামড়ার ঢাল প্রসঙ্গে
২৭০৬।
ইসমাঈল (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। সে সময় দু‘টি বালিকা বু‘আস যুদ্ধ সম্পর্কীয়
গৌরবগাঁথা গাইছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মূখ ফিরিয়ে রাখলেন।
এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন এবং আমাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূলের কাছে শয়তানের বাদ্য? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর দিকে ফিরে বললেন, ওদের ছেড়ে দাও। তারপর যখন
তিনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি বালিকা দু’টিকে (হাত দিয়ে) খোঁচা দিলাম। আর
তারা বেরিয়ে গেল।
আয়িশা
(রাঃ) বলেন, ঈদের দিনে হাবশী লোকেরা
ঢাল ও বর্শা নিয়ে খেলা করত। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেছিলাম কিংবা তিনিই আমাকে
বলেছিলেন, তুমি কি দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হ্যাঁ।
তারপর তিনি আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তাঁর গালের উপর ছিল। তিনি
বলছিলেন, হে বানূ আরফিদা, চালিয়ে যাও। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তিনি আমাকে বললেন, যথেষ্ট হয়েছে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এখন যাও। আহমদ (রহঃ) ইবনু ওয়াহব (রহঃ) সূত্রে
বলেন, তিনি যখন অন্য মনস্ক হলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৩. খাপ এবং কাঁধে তরবারী ঝুলান
২৭০৭।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল লোকের চাইতে সুন্দর ও সাহসী ছিলেন। একরাতে
মদিনার লোকেরা আতংকিত হয়ে উত্থিত শব্দের দিকে বের হল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি
শব্দের যথার্থতা অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবূ তালহার জ্বীনবিহীন ঘোড়ার পিঠে
সাওযার ছিলেন এবং তার কাঁধে তরবারী ঝুলান ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। তারপর তিনি বললেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের ন্যায় গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বললেন, এটি সমুদ্র অর্থাৎ অতি বেগবান।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৪. তলোয়ারে সোনা রুপার কাজ
২৭০৮।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই
সব বিজয় এমন লোকদের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল, যাদের
তলোয়ার স্বর্ণ বা রোপ্য খচিত ছিল না, বরং
তাদের তলোয়ার ছিল উটের গর্দানের চামড়া এবং লৌহ কারুকার্য মন্ডিত।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৫. সফরে দ্বিপ্রহরের বিশ্রামের
সময় তলোয়ার গাছে ঝুলিয়ে রাখা
২৭০৯।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সঙ্গে নাজদের দিকে কোন এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রত্যাবর্তন করলে তিনিও তাঁর সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যখন
কন্টকাকীর্ণ বৃক্ষরাজীতে ঢাকা এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন তখন তাঁদের দিবা বিশ্রামের
সময় এলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা
ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি
বাবলা গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রাখলেন। তারপর আমরা
সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাঁর পার্শ্বে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বললেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যাক্তি আমারই তরবারী
আমারই উপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখতে পেলাম যে, তার
হাতে খোলা তরবারী। সে বলল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা
করবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। এবং তার উপর তিনি
কোন প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৬. শিরস্ত্রান পরিধান করা
২৭১০।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাকে উহুদের দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
মূখমন্ডল আহত হল এবং তাঁর সামনের দু’টি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতিমা
(রাঃ) রক্ত ধুইতে ছিলেন আর আলী (রাঃ) পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখতে পেলেন
যে, রক্তক্ষরণ বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করলেন এবং
তা ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। তারপর রক্তক্ষরণ বন্ধ হল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৭. কারো মৃত্যকালে তার অস্ত্র
ধ্বংস করা যারা পছন্দ করে না
২৭১১।
আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) ... আমর ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুই রেখে যাননি, শুধু
তাঁর অস্ত্র, একটি সাদা খচ্চর ও একখন্ড
জমি, যা তিনি সাদকা করে গিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৮. দুপুরের বিশ্রামের সময় ইমাম
থেকে পৃথক হওয়া এবং গাছের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করা
২৭১২।
আবূল ইয়ামান ও মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তাদের দুপুরের বিশ্রামের সময়
হল এমন একটি উপত্যকায় যাতে কাঁটাযুক্ত প্রচুর বৃক্ষ ছিল। লোকেরা কাঁটাযুক্ত
বৃক্ষরাজির ছায়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একটি বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন এবং একটি বৃক্ষে তাঁর তরবারী ঝুলিয়ে
সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি জেগে উঠলেন এবং হঠাৎ তাঁর পার্শ্বে দেখতে পেলেন যে, একজন লোক, অথচ
তিনি তার সম্পর্কে টের পাননি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই লোকটি হঠাৎ আমার তরবারীটি উঁচিয়ে বলল, কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ!
তখন সে লোক তলোয়ারটি কোষবদ্ধ করল। আর এই সে লোক, এখানে
বসা, কিন্তু তিনি তাকে কোন শাস্তি দেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮২৯. তীর নিক্ষেপ প্রসঙ্গে ইবনু
উমার (রাঃ) সূত্রে নবী (ﷺ) থেকে উল্লেখ রয়েছে যে, তীরের
ছায়াতলে আমার রিযিক রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি আমার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তার জন্য অপমান ও লাঞ্ছনা নির্ধারিত।
২৭১৩।
আবদূল্লাহ ইবনু ইউছুফ (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার পথে কোন এক স্থানে পৌছার পর আবূ কাতাদা (রাঃ)
কতিপয় সঙ্গী সহ তাঁর পেছনে রয়ে গেলেন। সঙ্গীরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায় আর তিনি ছিলেন
ইহরাম বিহীন। এ সময় তিনি বন্য গাধা দেখতে পান এবং (তা শিকারের উদ্দেশ্যে) তাঁর
ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদের তাঁর চাবুকটি উঠিয়ে দিতে বলেন; কিন্তু তারা তা দিতে অস্বীকার করলেন। আবার
তিনি তাঁর বর্শ্বাটি উঠিয়ে দিতে বলেন। তারা তাও দিতে অস্বীকার করলেন। তখন তিনি
নিজেই তা উঠিয়ে নিলেন। এরপর গাধাটির উপর আক্রমণ চালালেন এবং তাকে হত্যা করলেন।
সাথীর কেউ কেউ এর গোশত খেলেন এবং কেউ কেউ খেতে অস্বীকার করলেন। তারপর তারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছে এ সম্পর্কে তাঁর কাছে
জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, এটি একটি আহার্য বস্তু, যা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের আহারের জন্য
দিয়েছেন।
যায়িদ
ইবনু আসলাম (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে আবূ নাযর (রাঃ) এর অনুরূপ বন্য গাধা
সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে আছে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের
সাথে তার কিছু গোশত আছে কি?
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩০. নাবী (ﷺ)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাঁর জামা
সম্পর্কিত। নবী (সাঃ) বলেন, খালিদ (ইবন ওয়ালীদ) তো তার
বর্মগুলো আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) ওয়াকফ করে দিয়েছেন
২৭১৪।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন একটি গুম্বুরাজি তাঁবুতে অবস্থান কালে
দু‘আ করছিলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা
ও ওয়াদার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হবে
না’। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার মিনতির সঙ্গে
আপনার রবের কাছে দু‘আ করেছেন’। সে সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম
পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে করতে বেরিয়ে এলেনঃ শীঘ্রই দুশমনরা
পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে অধিকন্তু কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং
কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। (৫৪ঃ ৪৫, ৪৬)
ওহাইব (রহঃ) বলেন, খালিদ (রহঃ) বলেছেন, ‘বদরের দিন’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩০. নাবী (ﷺ)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাঁর জামা
সম্পর্কিত। নবী (সাঃ) বলেন, খালিদ (ইবন ওয়ালীদ) তো তার
বর্মগুলো আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) ওয়াকফ করে দিয়েছেন
২৭১৫।
মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের সময় তাঁর বর্মটি ত্রিশ সা এর
বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর কাছে বন্ধক ছিল। মুআল্লা আবদুল ওয়াহিদ (রহঃ) সূত্রে আ‘মাশ
(রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
লৌহবর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর ইয়ালা (রহঃ) আমাশ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বর্মটি ছিল লোহার।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩০. নাবী (ﷺ)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাঁর জামা
সম্পর্কিত। নবী (সাঃ) বলেন, খালিদ (ইবন ওয়ালীদ) তো তার
বর্মগুলো আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) ওয়াকফ করে দিয়েছেন
২৭১৬।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কৃপন ও দানশীল ব্যাক্তির উদাহরণ এমন দু’
ব্যাক্তির ন্যয়, যারা লৌহ বর্ম পরিহিত।
বর্ম দু‘টি এত আটসাঁট যে, তাদের উভয়ের হাত কব্জায়
আবদ্ধ রয়েছে। দানশীল ব্যাক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে, তখন বর্মটি তার শরীরের উপর প্রসারিত হয়, এমনকি ত তার পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ
ব্যাক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে তখন বর্মের কড়াগুলো পরস্পর গলে গিয়ে তার শরীরকে
আঁকড়ে ধরে এবং তার উভয় হাত কণ্ঠের সাথে লেগে যায়। তারপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
বলতে শুনেছেন, সে হাত দু’টিকে প্রসারিত
করতে চেষ্টা করে; কিন্তু প্রসারিত করতে পারে
না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩১. সফরে এবং যুদ্ধে জোব্বা
পরিধান করা
২৭১৭।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন (প্রাকৃতিক) হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান
থেকে ফিরে এলে আমি তাঁর কাছে পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু)
করেন। তাঁর পরিধানে ছিল শামী (সিরিয়া) জোব্বা। তিনি কুলি করেন, নাকে পানি দেন ও মুখমন্ডল ধৌত করেন। এরপর
তিনি জামার আস্তিন গুটিয়ে দু’টি হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন দু’টি ছিল
খুবই আটসাঁট। তাই তিনি ভেতর দিক দিয়ে হাত বের করে উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মাসেহ
করলেন এবং উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩২. যুদ্ধে রেশমী কাপড় পরিধান
করা
২৭১৮।
আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর
রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ) কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকার কারনে রেশমী
জামা পরিধান করার অনুমতি দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩২. যুদ্ধে রেশমী কাপড় পরিধান
করা
২৭১৯।
আবূল ওয়ালিদ ও মুহাম্মাদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুর রাহমান ও যুবায়র (রাঃ) নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উকুনের অভিযোগ করলে তিনি তাদের রেশমী
পোষাক পরিধানের অনুমতি দেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি
যুদ্ধে তাদের শরীরে তা দেখেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩২. যুদ্ধে রেশমী কাপড় পরিধান
করা
২৭২০।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রাহমান ইবনু আওফ ও যুবায়র ইবনুল আওয়ামকে
রেশমী বস্ত্র পরিধানের অনুমতি দেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩২. যুদ্ধে রেশমী কাপড় পরিধান
করা
২৭২১।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, শরীরে চুলকানীর জন্য তাদের দু’জনকে (আবদুর
রাহমান ও যুবায়ের) রেশমী বস্ত্র পরিধানের অনুমতি দিয়েছিলেন বা দেয়া হয়েছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৩. ছুরি সম্পর্কে বর্ণনা
২৭২২।
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আমর ইবনু উমায়্যা যামরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (বকরীর) বাহু থেকে কেটে কেটে খেতে দেখেছি।
তারপর তাঁকে সালাতের জন্য ডাকা হলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন; কিন্তু তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন নি। আবূল
ইয়ামান (রহঃ) শুয়াইব সূত্রে যুহরী (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি
রেখে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৪. রোমকদের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে
২৭২৩।
ইসহাক ইবনু ইয়াযীদ দিমাশকী (রহঃ) ... উমাইর ইবনু আসওয়াদ আনসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) এর কাছে আসলেন।
তখন উবাদা (রাঃ) হিমস উপকুলে তাঁর একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন
উম্মে হারাম। উমাইর (রহঃ) বলেন, উম্মে হারাম (রাঃ) আমাদের
কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, আমার
উম্মাতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করবে তারা যেন জান্নাত অনিবার্য
করে ফেলল। উম্মে হারাম (রাঃ) বলেন, আমি
কি তাদের মধ্যে হবো? তিনি বললেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে। উম্মে হারাম (রাঃ)
বলেন, তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মাতের প্রথম যে
দলটি কায়সার (রোমক সম্রাট) এর রাজধানী আক্রমন করবে, তারা
ক্ষমাপ্রাপ্ত। তারপর আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি
তাদের মধ্যে হবো? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৫. ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৭২৪।
ইসহাক ইবনু মুহাম্মদ ফারবী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে আল্লাহর বান্দা, আমার পেছনে ইয়াহুদী রয়েছে, তাকে হত্যা কর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৫. ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৭২৫।
ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত
সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি কোন
ইয়াহুদী পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকলে, পাথর
বলবে ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদী রয়েছে, তাকে হত্যা কর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৬. তুর্কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৭২৬।
আবূ নুমান (রহঃ) ... আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিয়ামতের আলামত সমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। কিয়ামতের আর
একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মূখ হবে চওড়া, যেন তাদের মুখমন্ডল পিটানো চামড়ার ঢাল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৬. তুর্কদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৭২৭।
সাঈদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততদিন
কিয়ামত সংঘটিত হবে না, তোমরা এমন তুর্কি জাতির
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক
চেপটা এবং মুখমন্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করবে, যাদের জুতা হবে পশমের।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৭. পশমের জুতা পরিধানকারীদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২৭২৮।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন
জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন
না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের
মুখমন্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আ‘রাজ সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে
আবূযযিনাদ এই রেওয়ায়তে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; তাদের
চোখ হবে ছোট, নাক হবে চেপটা, তাদের চেহারা যেন পিটানো ঢালের ন্যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৮. পরাজয়ের সময় সঙ্গীদের
সারিবদ্ধ করা, নিজের সওয়ারী থেকে নামা ও
আল্লাহর সাহায্য কামনা করা
২৭২৯।
আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... বারা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে
এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আবূ উমারা! হুনায়নের
যুদ্ধে আপনারা কি পরায়ন করেছিলেন? তিনি বললেন, না, আল্লাহর
কসম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
পলায়ন করেন নি। বরং তাঁর কিছু সংখ্যক নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার বিহীন অবস্থায় অগ্রসর
হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বানূ হাওয়াযিন ও বানূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের
সম্মুখীন হন। তাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর
বর্ষণ করল যে, তাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়
নি। সেখান থেকে তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে উপস্থিত
হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর শ্বেত খচ্চরটির পিঠে ছিলেন
এবং তাঁর চাচাতো ভাই আবূ সুফিয়ান ইবনু হারিস ইবনু আবদুল মুত্তালিব তাঁর লাগাম ধরে
ছিলেন। তখন তিনি অবতরণ করলেন এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপর তিনি বলেন, আমি নাবী, এ
কথা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র। এরপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৯. মুশরিকদের পরাজয় ও পর্যুদস্ত
করার দু’আ
২৭৩০।
ইব্রাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব
যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেন, ‘আল্লাহ্ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে
পূর্ণ করুন। কেননা তারা আসরের সালাত (নামায/নামাজ) থেকে আমাদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৯. মুশরিকদের পরাজয় ও পর্যুদস্ত
করার দু’আ
২৭৩১।
কাবীসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কুনূতে নাযিলায় এই দু‘আ করতেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আপনি সালামা ইবনু হিশামকে নাজাত দিন। ইয়া
আল্লাহ্ ওয়ালীদ ইবনু ওয়ালীদকে নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ! আয়্যাশ ইবনু আবী রাবী‘আ-কে
নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ্! দুর্বল মুমিনদের নাজাত দিন। ইয়া আল্লাহ মুযার গোত্রকে
সমূলে ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! (মুশরিকদের উপর) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সময়কালীন
দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষ নাযিল করুন’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৯. মুশরিকদের পরাজয় ও পর্যুদস্ত
করার দু’আ
২৭৩২।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাবের
দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এই বলে মুশরিকদের বিরুদ্ধে দু‘আ করেছিলেন যে, হে কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ! ইয়া আল্লাহ!
তাদের সকল দলকে পরাজিত কর। ইয়া আল্লাহ! আপনি তাদের পরাভূত করুন এবং পর্যুদস্ত
করুন’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৯. মুশরিকদের পরাজয় ও পর্যুদস্ত
করার দু’আ
২৭৩৩।
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার ছায়ায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন।
তখন আবূ জাহল ও কুরায়েশদের কিছু লোক পরামর্শ করে। সেই সময় মক্কার বাইরে একটি উট
যবেহ হয়েছিল। কুরায়শরা একজন পাঠিয়ে সেখান থেকে এর গর্ভথলি নিয়ে এলো এবং তারা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে ঢেলে দিল। তারপর ফাতিমা (রাঃ) এসে এটি
তাঁর থেকে সরিয়ে দিলেন। এই সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের
বিরুদ্ধে দু‘আ করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি
কুরায়শদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি কুরায়শদের ধ্বংস করুন। ইয়া আল্লাহ! আপনি
কুরায়শদের ধ্বংশ করুন। অর্থাৎ আবূ জাহল, ইবনু
হিশাম, উতবা ইবনু রবী‘আ, শায়বা ইবনু রবীআ’, ওয়ালীদ ইবনু উতবা, উবাই ইবনু খালফ এবং উকবা ইবনু আবী মু‘আইত
(তাদের ধ্বংস করুন)।
আবদুল্লাহ
(রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাদের সকলকে
বদরের একটি পরিত্যক্ত কূপে নিহত দেখেছি। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমি সপ্তম ব্যাক্তির নাম ভূলে গিয়েছি। শুবা
(রহঃ) বলেন, উমাইয়া অথবা উবাই। তবে
সহীহ হল উমাইয়া। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইউসুফ
ইবনু আবূ ইসহাক (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) সূত্রে উমাইয়া ইবনু খালফ।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৩৯. মুশরিকদের পরাজয় ও পর্যুদস্ত
করার দু’আ
২৭৩৪।
সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একদিন কয়েকজন ইয়াহুদী
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসল এবং বলল, তোমার মৃত্যু ঘটুক। (তা শুনে) আয়িশা (রাঃ)
তাদের অভিশাপ দিলেন। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে
জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হল? আয়িশা (রাঃ) বললেন, তারা কি বলেছে, আপনি
কি তা শুনেন নি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যে বলেছি, তোমাদের উপর, তা
কি তুমি শোননি?
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪০. মুসলিম কি আহলে কিতাবকে
পথপ্রদর্শন করবে কিংবা তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিবে?
২৭৩৫।
ইসহাক (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কায়সারের
কাছে চিঠি লিখেছিলেন এবং এতে বলেছিলেন, যদি
তুমি এই সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখ তাহলে প্রজাদের পাপের বোঝা তোমারই উপর বর্তাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪১. মুশরিকদের জন্য হিদায়াতের দু'আ, যাতে
তাদের মন আকৃষ্ট হয়
২৭৩৬।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফাইল
ইবনু আমর দাওসী ও তাঁর সঙ্গীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে
বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম
গ্রহণে অবাধ্য হয়েছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দু‘আ করুন’। তারপর বলা
হল, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদের
(ইসলামে) নিয়ে আসুন’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪২. ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি
ইসলামের দাওয়াত এবং কোন অবস্থায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়? নবী (ﷺ) কায়সার ও কিসরা এর কাছে যা লিখিয়েছেন এবং যুদ্ধের পূর্বে ইসলামের
দাওয়াত দেওয়া
২৭৩৭।
আলী ইবনু জা‘দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমের (সম্রাটের) প্রতি লেখার ইচ্ছা করেন।
তখন তাকে বলা হল যে, তারা মোহরকৃত পত্র ছাড়া
পাঠ করে না। তারপর তিনি রূপার একটি মোহর নির্মাণ করেন। আমি এখনো যেন তাঁর হাতে এর
শুভ্রতা দেখছি। তিনি তাতে খোদাই করেছিলেন, “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪২. ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের প্রতি
ইসলামের দাওয়াত এবং কোন অবস্থায় তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়? নবী (ﷺ) কায়সার ও কিসরা এর কাছে যা লিখিয়েছেন এবং যুদ্ধের পূর্বে ইসলামের
দাওয়াত দেওয়া
২৭৩৮।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর পত্র সহ কিসরার কাছে (দূত) পাঠালেন এবং দূতকে নির্দেশ দেন যে, তা যেন বাহরাইনের শাসনকর্তার হাওলা করে। পরে
বাহরাইনের শাসনকর্তা তা কিসরার কাছে পৌছিয়ে দেন। কিসরা যখন তা পড়ল তা ছিঁড়ে টুকরা
করে ফেলল। আমার মনে হয়, সাঈদ ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ)
বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে দু’আ করেন, যেন
তাদেরকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৩. ইসলাম এ নবুওয়াতের দিকে নাবী
(ﷺ) এর আহবান আর মানুষ যেন আল্লাহ ব্যতীত তারে
পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহন না করে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত
ও নবুয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে যে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার বান্দা হয়ে যাও। তা তার জন্য শোভনীয় নয়। আয়াতের শেষ পর্যন্ত
(৩ঃ ৭৯)
২৭৩৯।
ইব্রাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কায়সারকে ইসলামের প্রতি আহবান সম্বলিত চিঠি লেখেন এবং দেহইয়া কালবীর (রাঃ) এর
মারফত সে চিঠি পাঠান এবং তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ
দেন যেন তা বুসরার গভর্নরের কাছে অর্পন করেন, যাতে
তিনি তা কায়সারের কাছে পৌছিয়ে দেন। আল্লাহ যখন পারস্যের সৈন্য বাহিনীকে কায়সারের
এলাকা থেকে হটিয়ে দেন, তখন আল্লাহর অনুগ্রহের এই
শুকরিয়া হিসাবে কায়সার হিমস থেকে পায়ে হেঁটে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করেন। এ সময়
তাঁর নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিঠি এস পৌছলে তা পাঠ করে তিনি
বললেন যে, তাঁর গোত্রের কাউকে খোঁজ
কর যাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারি।
ইবনু
আব্বাস (রাঃ) বলেন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, সে সময় আবূ সুফিয়ান (রাঃ) কুরাইশদের কিছু
লোকের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। এ সময়টি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কাফির কুরাইশদের মধ্যে সন্ধির যুগ। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বর্ণনা
করেন যে, কায়সারের সেই দূতের সঙ্গে
সিরিয়ার কোন স্থানে আমাদের দেখা হলে সে আমাকে আমার সঙ্গী-সাথী সহ বায়তুল মুকাদ্দাসে
নিয়ে গেল। তারপর আমাদের কায়সারের নিকটে হাজির করা হল। তখন কায়সার মুকুট পরিধান করে
রাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। রোমের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ তাঁর পার্শ্বে ছিলেন।
তারপর তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের জিজ্ঞাসা কর, যিনি নিজেকে নাবী বলিয়া দাবী করেন, এদের মধ্যে তাঁর নিকটাত্মীয় কে?
আবূ
সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আমি বললাম বংশের দিক দিয়ে
আমি তাঁর সর্বাধিক নিকটতম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার
ও তাঁর মধ্যে কি ধরনের আত্মীয়তা রয়েছে? আমি
বললাম, তিনি আমার চাচাতো ভাই। সে
সময় উক্ত কাফেলায় আমি ছাড়া আবদ মানাফ গোত্রের আর কেউ ছিল না। কায়সার বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এস। তারপর বাদশাহর
নির্দেশে আমার সকল সঙ্গীকে আমার পেছনে কাঁধের কাছে সমবেত করা হল। এরপর কায়সার দোভাষীকে
বললেন, লোকটির সাথীদের জানিয়ে দাও, আমি তার কাছে সেই লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করতে চাই, যিনি নাবী বলিয়া দাবী
করেন। যদি সে মিথ্যা বলে, তবে তোমরা তার প্রতিবাদ
করবে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি এ
ব্যাপারে লজ্জাবোধ না করতাম যে, আমার সাথীরা আমাকে
মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে, তাহলে তাঁর প্রশ্নের জবাবে
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কিছু (মিথ্যা) কথা বলতাম। কিন্তু
আমি লজ্জাবোধ করলাম যে, আমার সঙ্গীরা আমি মিথ্যা
বলেছি প্রচার করবে। ফলে আমি সত্যই বললাম।
তারপর
তিনি তাঁর দোভাষীকে বললেন, জিজ্ঞাসা করো, তোমাদের মধ্যে নাবীর বংশ মর্যাদা কিরূপ? আমি বললাম, আমাদের
মধ্যে তিনি উচ্চ বংশীয়। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর
বংশের অন্য কোন লোক কি ইতিপূর্বে এরূপ দাবী করেছে? জবাব
দিলাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর এ নবুওয়াতের আগে কোন সময় কি তাঁকে
মিথ্যার অভিযোগে তোমরা অভিযুক্ত করেছ? আমি
বললাম, না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁর পূর্ব পুরুষদের কেউ কি বাদশাহ ছিল? আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর
অনুসারী হচ্ছে, না দুর্বল (শ্রেণীর)
লোকেরা? আমি বললাম, বরং দুর্বলরাই। তিনি বললেন, এদের সংখ্যা কি বৃদ্ধি পাচ্ছে না কমছে? আমি বললাম, বরং
বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বললেন, তাঁর দ্বীনে প্রবেশ করার
পর কেউ কি সে দ্বীনের প্রতি অপছন্দ করে তা পরিত্যাগ করেছে? আমি বললাম, না।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেছেন? আমি বললাম, না।
তবে আমরা বর্তমানে তাঁর সঙ্গে একটি চুক্তির মেয়াদে আছি এবং আশঙ্কা করছি যে, তিনি তা ভঙ্গ করতে পারেন।
আবূ
সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমার বক্তব্যে এই কথা
ব্যতীত এমন কোন কথা লুকানো সম্ভব হয়নি। যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে খাটো করা হয় আর আমার প্রতি অপপ্রচারেরআশংকা না হয়। কায়সার জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি তাঁর বিরুদ্ধে এবং তিনি কি তোমাদের
বিরুদ্ধে কখনো যুদ্ধ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাঁর ও তোমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল কি? আমি বললাম যুদ্ধ কূয়ার বালতির মত। কখনো তিনি
আমাদের উপর বিজয়ী হন, কখনো আমরা তাঁর উপর বিজয়ী
হই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি বিষয়ে আদেশ করেন? আমি বললাম, তিনি
আমাদের আদেশ করেন, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত
করতে এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না করতে। আমাদের পিতৃ পুরুষেরা যে সবের ইবাদত করত, তিনি সে সবের ইবাদত করতে আমাদের নিষেধ করেন।
আর তিনি আমাদের আদেশ করেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে; সাদকা দিতে, পূত
পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে এবং
আমানত আদায় করতে।
আমি
তাকে এসব জানালে তিনি দোভাষীকে আদেশ দিলেন, তাকে
বলো, আমি তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে
জানতে চাইলে তুমি বলেছ যে, তিনি উচ্চ বংশীয়। সেরূপই
রাসূলগণ, তাঁদের কাওমের উচ্চ বংশেই
প্রেরিত হন। আমি তোমাদের নিকট জানতে চেয়েছিলাম যে, তোমাদের
কেউ কি ইতিপূর্বে এ ধরনের দাবী করেছে? তুমি
বললে, না। তোমাদের মধ্যে
ইতিপূর্বে যদি কোন ব্যাক্তি এরূপ কথা বলে থাকতো, তাহলে
আমি বলতাম, লোকটি পূর্ব কথিত একটি
কথারই অনুসরণ করেছে। আমি জানতে চেয়েছি, তাঁর
এ (নবুওয়্যাত) দাবীর পূর্বে কি তোমরা তাঁকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলে? তুমি বলেছ, না।
এতে আমি বুঝতে পেরেছি যে, যে ব্যাক্তি মানুষের
ব্যাপারে মিথ্যা বলেননি, তিনি আল্লাহর ব্যাপারে
মিথ্যা বলবেন, এমন হতে পারে না।
আমি
তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর পিতৃ পুরুষদের কেউ কি
বাদশাহ ছিলেন? তুমি বলেছ, না। আমি বলছি, যদি
তাঁর পিতৃ পুরুষদের কেউ বাদশাহ থাকতো, তাহলে
আমি বলতাম, সে পিতৃ পুরুষদের রাজত্ব
উদ্ধার করতে ইচ্ছুক। আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি যে, প্রভাশালী লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বল (শ্রেণীর) লোকেরা? তুমি বলেছ, দুর্বলরাই।
প্রকৃতপক্ষে এ ধরণের (দুর্বল) লোকেরাই রাসূলগণের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি তোমার কাছে
জানতে চেয়েছি, তাদের সংখ্যা বাড়ছে না
কমছে? তুমি বলেছ, বাড়ছে। ঈমান এভাবেই (বাড়তে বাড়তে) পূর্ণতা
প্রাপ্ত হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর
দ্বীন গ্রহণ করার পর কেউ কি অসন্তুষ্ট হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে? তুমি বলেছ, না।
ঈমান এরূপই হয়ে থাকে, যখন তা হৃদয়ের গভীরে পৌছে, তখন কেউ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় না।
আমি
জিজ্ঞাসা করেছি যে, তিনি কি চুক্তিভঙ্গ করেন? তুমি বলেছ, না।
ঠিকই রাসূলগণ কখনো চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি কখনো তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছ এবং তিনি
কি কখনো তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন? তুমি
বলেছ, করেছেন। তোমাদের ও তাঁর
মধ্যকার লড়াই কূপের বালতির মতো। কখনো তোমরা তাঁর উপর জয়ী হয়েছ, আবার কখনো তিনি তোমাদের উপর জয়ী হয়েছেন।
এভাবেই রাসূলগণ পরীক্ষিত হন এবং পরিণাম তাঁদেরই অনুকূল হয়। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি তোমাদের কি কি বিষয়ে আদেশ করে থাকেন? তুমি বলেছ, তিনি
তোমাদের আদেশ করেন যেন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কিছুই শরীক না কর।
আর তিনি তোমাদের পিতৃপুরুষেরা যে সবের ইবাদত করত তা থেকে নিষেধ করেন আর তোমাদের
নির্দেশ দেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করতে, সাদকা দিতে, পূত পবিত্র থাকতে, চুক্তি পালন করতে, আমানত আদায় করতে। এসব নাবীগণের গুণাবলী।
আমি
জানতাম, তাঁর আগমন ঘটবে। কিন্তু
তিনি তোমাদের মধ্যে আগমন করবেন, সে ধারণা আমার ছিল না।
তুমি যা যা বললে, তা যদি সত্য হয়, তবে অচিরেই তিনি আমার এই পায়ের নীচের জায়গার
মালিক হয়ে যাবেন। আমি যদি আশা করতে পারতাম যে, তাঁর
কাছে পৌছতে পারবো, তবে কষ্ট করে তাঁর
সাক্ষাতের চেষ্টা করতাম। যদি আমি তাঁর নিকট থাকতাম, তবে
তাঁর পদযুগল ধুইয়ে দিতাম।
আবূ
সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি তাঁর পত্রখানি
চেয়ে নিলেন। তা পাঠ করে শোনানো হল। তাতে ছিলঃ
বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহীম
আল্লাহর
বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি ...
যারা হিদায়াতের অনুসরাণ করে তাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক। আমি আপনাকে ইসলামের
দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আপনি
ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিফল দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন
তাহলে রোমের সমস্ত প্রজার পাপ আপনার উপর বর্তাবে। ‘হে কিতাবীগণ! এসো এমন একটি কথার
দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই, যেন
আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলঃ তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম’।
আবূ
সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, তার কথা শেষ হলে তার পার্শ্বের
রোমের পদস্থ ব্যাক্তিরা চিৎকার করতে লাগল এবং হৈ চৈ করতে লাগল। তারা কি বলছিল তা
আমি বুঝতে পারিনি এবং নির্দেশক্রমে আমাদের বের করে দেয়া হল। আমি সঙ্গীদের নিয়ে
বেরিয়ে এসে তাদের সাথে একান্তে মিলিত হয়ে, তাদের
বললাম, নিশ্চয়
মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপার তো বিরাট আকার ধারণ করেছে। এই
যে রোমের বাদশাহ তাঁকে ভয় করছে। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এরপর থেকে আমি অপমানবোধ করতে
লাগলাম এবং এ ব্যাপারে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল যে, মুহাম্মদের
দাওয়াত অচিরেই বিজয় লাভ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্
তা‘আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করিয়ে দিলেন, অথচ
তখনও আমি তা অপছন্দ করছিলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৩. ইসলাম এ নবুওয়াতের দিকে নাবী
(ﷺ) এর আহবান আর মানুষ যেন আল্লাহ ব্যতীত তারে
পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহন না করে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত
ও নবুয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে যে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার বান্দা হয়ে যাও। তা তার জন্য শোভনীয় নয়। আয়াতের শেষ পর্যন্ত
(৩ঃ ৭৯)
২৭৪০।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাআদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, আমি
এমন এক ব্যাক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় অর্জিত হবে। এরপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই
এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে।
কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী
কোথায়? তাঁকে জানানো হল যে, তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তখন তিনি আলীকে
ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষনাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন
যে, তাঁর কোন অসুখই ছিল না। তখন আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের দিকে
আহ্বান কর এবং তাদের করণীয় সম্বন্ধে তাদের অবহিত কর। আল্লাহর কসম, যদি একটি লোকও তোমার দ্বারা হিদায়াত প্রাপ্ত
হয়, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চাইতেও
শ্রেয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৩. ইসলাম এ নবুওয়াতের দিকে নাবী
(ﷺ) এর আহবান আর মানুষ যেন আল্লাহ ব্যতীত তারে
পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহন না করে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত
ও নবুয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে যে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার বান্দা হয়ে যাও। তা তার জন্য শোভনীয় নয়। আয়াতের শেষ পর্যন্ত
(৩ঃ ৭৯)
২৭৪১।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কাওমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে সকাল না হওয়া
পর্যন্ত আক্রমন করতেন না। যদি আযান শুনতে পেতেন, তাহলে
আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে সকাল হওয়ার সাথে সাথে আক্রমণ করতেন।
আমরা খায়বারে রাত্রিকালে পৌছলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৩. ইসলাম এ নবুওয়াতের দিকে নাবী
(ﷺ) এর আহবান আর মানুষ যেন আল্লাহ ব্যতীত তারে
পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহন না করে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত
ও নবুয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে যে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার বান্দা হয়ে যাও। তা তার জন্য শোভনীয় নয়। আয়াতের শেষ পর্যন্ত
(৩ঃ ৭৯)
২৭৪২।
কুতাইবা ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
খায়বারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে রাতে সেখানে পৌছলেন। তিনি জিহাদের উদ্দেশ্যে
রাত্রিকালে কোন জনপদে গেলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমন করেন না। যখন
সকাল হল ইয়াহুদীরা কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে বর হল এবং যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলো, তখন তারা বলে উঠল, মুহাম্মদ, আল্লাহর
কসম! মুহাম্ম তাঁর পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন আল্লাহু আকবর ধ্বনি উচ্চারণ করেন এবং বললেন, খায়বার ধ্বংস হল, নিশ্চয়ই আমরা যখন কোন জনপদের আঙ্গিনায় উপস্থিত
হই, তখন সতর্ককৃতদের সকাল কত মন্দ!
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৩. ইসলাম এ নবুওয়াতের দিকে নাবী
(ﷺ) এর আহবান আর মানুষ যেন আল্লাহ ব্যতীত তারে
পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহন না করে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত
ও নবুয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে যে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার বান্দা হয়ে যাও। তা তার জন্য শোভনীয় নয়। আয়াতের শেষ পর্যন্ত
(৩ঃ ৭৯)
২৭৪৩।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে
ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের সাথে লড়াইয়ের আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে
আর যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে সে তার জানো ও মাল আমার হাত থেকে হিফাজত করে
নিল। অবশ্য ইসলামের বিধান আলাদা, আর তার (প্রকৃত) হিসাব
আল্লাহর উপর ন্যাস্ত।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৪. যে ব্যক্তি যুদ্ধ করার ইচ্ছা
করে ও অন্যদিকে আকর্ষনের মাধ্যমে তা গোপন রাখে আর যে বৃহস্পতিবারে সফরে বের হতে
পছন্দ করে
২৭৪৪।
ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ছিলেন কা‘বের পুত্রদের মধ্যে পথপ্রদর্শক, তিনি বলেন, আমি
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে শুনেছি, যখন
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোথাও যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি অন্য দিকে আকৃষ্ট করে তা গোপন
রাখতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৪. যে ব্যক্তি যুদ্ধ করার ইচ্ছা
করে ও অন্যদিকে আকর্ষনের মাধ্যমে তা গোপন রাখে আর যে বৃহস্পতিবারে সফরে বের হতে
পছন্দ করে
২৭৪৫।
আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অধিকাংশ
সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নির্দিষ্ট জায়গায় যুদ্ধের
ইচ্ছ করলে অন্য দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট করে তা গোপন রাখতেন কিন্তু যখন তাবুক যুদ্ধ এল, যে যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রওয়ানা দিলেন, প্রচন্ড-গরম এবং সম্মুখীন
হলেন দীর্ঘ সফরের ও মরুময় পথের আর অধিক সংখ্যক সৈন্যের মোকাবিলায় অগ্রসর হলেন। তাই
তিনি মুসলমানদের সামনে বিষয়টি প্রকাশ করলেন, যাতে
তারা শত্রুর মুকাবিলার উপযোগী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে এবং যুদ্ধের লক্ষ্যস্থল
সবাইকে জানিয়ে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৪. যে ব্যক্তি যুদ্ধ করার ইচ্ছা
করে ও অন্যদিকে আকর্ষনের মাধ্যমে তা গোপন রাখে আর যে বৃহস্পতিবারে সফরে বের হতে
পছন্দ করে
২৭৪৬।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুকের
যুদ্ধে বৃহস্প্রতিবার বের হন আর বৃহস্প্রতিবার রওয়ানা হওয়াই তিনি পছন্দ করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৫. যুহরের পর সফরে বের হওয়া
২৭৪৭।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে
যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) চার রাকআত আদায় করেন এবং যুল-হুলায়ফাতে পৌছে দু’রাকআত
আসর সালাত আদায় করেন। আমি তাদের হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা উভয়টির তালবিয়া পাঠ করতে
শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৬. মাসের শেষ ভাগে সফরে বের
হওয়া। কুরাইব (রহঃ) ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাঃ) যুল কা'দার পাঁচ দিন থাকতে মদীনা থেকে রওনা হন এবং যুল
হিজ্জার ৪ তারিখে মক্কায় পৌঁছেন
২৭৪৮।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
যুল-কাদার ৫ রাত থাকতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওয়ানা
হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় ব্যতীত আমাদের আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। মক্কার নিকটবর্তী
হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আদেশ দিলেন যাদের নিকট
কুরবানীর জন্তু নেই, তারা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ
এবং সাফা মারওয়ার সাঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেলবে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন আমাদের নিকট গরুর গোশত পৌছানো
হল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কিসের? বলা হল, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীগণের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায়
করেছেন। ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, আমি হাদীসটি কাসেম ইবনু
মুহাম্মদ (রহঃ) এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহর
কসম বর্ণনাকারিণী এ হাদীসটি আপনার নিকট যথাযথ বর্ণনা করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৭. রমাযান মাসে সফর করা
২৭৪৯।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে সফরে বের হন এবং সিয়াম পালন করেন। যখন
তিনি কাদীদ নামক স্থানে পৌছলেন তখন সিয়াম ছেড়ে দেন।
সুফিয়ান
(রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ আবদুল্লাহ
(রহঃ) বলেন, এটা যুহরী (রহঃ) এর উক্তি
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বশেষ কার্যই গ্রহণযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৪৯. ইমামের কথা শুনা ও আনুগত্য
করা যতক্ষন সে গুনাহর কাজের নির্দেশ না দেয়
بَاب التَّوْدِيعِ
وَقَالَ ابْنُ وَهْبٍ أَخْبَرَنِي عَمْرٌو عَنْ بُكَيْرٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ بَعَثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْثٍ وَقَالَ لَنَا إِنْ لَقِيتُمْ فُلَانًا وَفُلَانًا لِرَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ سَمَّاهُمَا فَحَرِّقُوهُمَا بِالنَّارِ قَالَ ثُمَّ أَتَيْنَاهُ نُوَدِّعُهُ حِينَ أَرَدْنَا الْخُرُوجَ فَقَالَ إِنِّي كُنْتُ أَمَرْتُكُمْ أَنْ تُحَرِّقُوا فُلَانًا وَفُلَانًا بِالنَّارِ وَإِنَّ النَّارَ لَا يُعَذِّبُ بِهَا إِلَّا اللَّهُ فَإِنْ أَخَذْتُمُوهُمَا فَاقْتُلُوهُمَا
১৮৪৮.
পরিচ্ছেদঃ সফরকালে বিদায় দান করা।
ইবনু
ওহব (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা(রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন। কুরাইশদের দুইজন লোকের নাম
উল্লেখ করে আমাদেরকে বললেন, তোমরা যদি অমুক অমুকের
সাক্ষাত পাও তবে তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, তারপর আমরা রওয়ানা করার প্রক্কালে বিদায়
গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট উপস্থিত হলাম।
তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে অমুক আমুককে
আগুনে জ্বালিয়ে ফেলতে আদেশ করেছিলাম, কিন্তু
আগুনের মাধ্যমে শাস্তি দান করা আল্লাহ তা'আলা
ব্যতীত আর কারো অধিকার নেই। তাই তোমরা যদি তাদেরকে পাকরাও করতে সক্ষম হও, তবে তাদের উভয়কে হত্যা করবে।
২৭৫০।
মুসাদ্দাদ এবং মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাপ কার্যের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের কথা
শোনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কার্যের আদেশ করা হলে তা শোনা ও
আনুগত্য করা যাবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫০. ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা ও
তাঁর মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা
২৭৫১।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমরা সর্বশেষে আগমনকারী (পৃথিবীতে) সর্বাগ্রে
প্রবেশকারী (জান্নাতে)। আর এ সনদেই বর্ণিত হয়েছে যে, (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,) যে ব্যাক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যাক্তি আল্লাহ তাআলারই আনুগত্য করল আর
যে ব্যাক্তি আমার নফরমানী করল, সে ব্যাক্তি আল্লাহ
তাআলারই নাফরমানি করল আর যে ব্যাক্তি (শরীয়ত স্বীকৃত) আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যাক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে
ব্যাক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যাক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ।
তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অনন্তর যদি সে
আল্লাহর তাকওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য এর প্রতিদান রয়েছে আর যদি সে এর
বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণতি তার উপরই বর্তাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫১. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার
ব্যাপারে বায়’আত করা। আর কেউ বলেছেন মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা
আপনার নিকট বৃক্ষতলে বায়আত গ্রহন করেছিলেন (৪৮ঃ ১৮)
২৭৫২।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা যখন হুদায়বিয়া সন্ধির পরবর্তী বছর প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন আমাদের মধ্য হতে দু‘জন লোকও যে বৃক্ষের
নীচে আমরা বায়আত করেছিলাম সেটি চিহ্নিত করার ব্যাপারে একমত হতে সক্ষম হয় নি। তা
ছিল আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ’। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমি নাফি (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তাঁদের নিকট হতে কিসের বায়আত গ্রহণ করা
হয়েছিল? তা কি মৃত্যুর উপর?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট হতে অটল থাকার উপর বায়আত গ্রহণ
করেছিলেন’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫১. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার
ব্যাপারে বায়’আত করা। আর কেউ বলেছেন মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা
আপনার নিকট বৃক্ষতলে বায়আত গ্রহন করেছিলেন (৪৮ঃ ১৮)
২৭৫৩।
মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাররা
নামক যুদ্ধের সময়ে তাঁর নিকট জনৈক ব্যাক্তি এসে বললো, ‘ইবনু হানযালা (রাঃ) মানুষের নিকট থেকে
মৃত্যুর উপর বায়আত গ্রহণ করেছেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আমি তো কারো নিকট এরূপ বায়আত করব না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫১. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার
ব্যাপারে বায়’আত করা। আর কেউ বলেছেন মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা
আপনার নিকট বৃক্ষতলে বায়আত গ্রহন করেছিলেন (৪৮ঃ ১৮)
২৭৫৪।
মাক্কী ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত
করলাম। তারপর আমি একটি বৃক্ষের ছায়াতলে গেলাম। মানুষের ভীড় কমে গেলে, (তাঁর নিকট উপস্থিত হলে) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘ইবনু আকওয়া! তুমি কি বায়আত করবে না?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো বায়আত করেছি’। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আরেকবার হোক না’। তখন আমি দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত করলাম। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আবূ মুসিলম! সেদিন তোমরা কোন্ বিষয়ের উপর
বায়আত করেছিলে?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যুর উপর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫১. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার
ব্যাপারে বায়’আত করা। আর কেউ বলেছেন মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা
আপনার নিকট বৃক্ষতলে বায়আত গ্রহন করেছিলেন (৪৮ঃ ১৮)
২৭৫৫।
হাফস ইবনু উমর (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ
খন্দকের যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেনঃ “আমরাই হচ্ছি সে সকল লোক, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর হস্তে জিহাদ করার উপর বায়আত গ্রহণ করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকব”। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তদুত্তরে ইরশাদ করেনঃ হে আল্লাহ্! আখিরাতের
সুখ-স্বাচ্ছন্দ হচ্ছে প্রকৃত সুখ; সুতরাং আপনি আনসার ও
মুহাজিরদেরকে সম্মানিত করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫১. যুদ্ধ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার
ব্যাপারে বায়’আত করা। আর কেউ বলেছেন মৃত্যুর উপর বায়আত করা। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা
আপনার নিকট বৃক্ষতলে বায়আত গ্রহন করেছিলেন (৪৮ঃ ১৮)
২৭৫৬।
ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... মুজাশি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আমার ভাতিজাকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে হিজরতের উপর বায়আত নিন’। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘হিজরত তো হিজরতকারীগণের জন্য অতীত হয়ে গেছে’।
আমি বললাম, ‘তাহলে আপনি আমাদের কিসের
উপর বায়আত নিবেন?’ তদুত্তরে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘ইসলাম ও জিহাদের উপর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫২. জনসাধারণের জন্য যথাসাধ্য
ইমামের নির্দেশ পালন
২৭৫৭।
উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আজ আমার নিকট জনৈক ব্যাক্তি আগমন করে। সে আমাকে একটি বিষয়ে
প্রশ্ন করে, যার উত্তর কি দিব, তা আমার বুঝে আসছিল না’। লোকটি বললো, ‘বলুন তো, এক
ব্যাক্তি সশস্ত্র অবস্থায় সন্তুষ্টচিত্তে আমাদের আমীরের সঙ্গে যুদ্ধে বের হল।
কিন্তু সেই আমীর এমন সব নির্দেশ দেন যা পালন করা সম্ভব নয়। আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের এ প্রশ্নের কি উত্তর দিব? হ্যাঁ, তবে
এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সাধারণত আমাদেরকে কোন বিষয়ে কঠোর নির্দেশ
দিতেন না। কিন্তু একবার মাত্র এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমরা তা পালন করেছিলাম। আর তোমাদের যে কেউ
ততক্ষণ ভাল থাকবে, যতক্ষণ সে আল্লাহ্
তা‘আলাকে ভয় করতে থাকবে। আর যখন সে কোন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়বে, তখন সে এমন ব্যাক্তির নিকট প্রশ্ন করে নিবে, যে তাকে সন্দেহ মুক্ত করে দিবে। আর সে যুগ
অত্যাসন্ন যে, তোমরা এমন লোক পাবে না।
শপথ সেই সত্তার যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। দুনিয়ায় যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার উদাহরণ এরূপ যেমন একটি পুকুরের মধ্যে
পানি সঞ্চিত হয়েছে। এর স্বচ্ছ পানি তো পান করা হয়েছে, আর নীচের ঘোলা পানি অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫৩. নাবী (ﷺ) যদি দিনের শুরুতে যুদ্ধ আরম্ভ না করতেন, তবে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ আরম্ভ
বিলম্ব করতেন।
২৭৫৮।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব
সালিম আবূ নাযর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা
(রাঃ) তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাতে
ছিল যে, শত্রুদের সাথে কোন এক
মুখোমুখি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়া
পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেনঃ হে
লোক সকল! শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার কামনা করবে না এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট
নিরাপত্তার দু‘আ করবে। তারপর যখন তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ
করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়াতলে অবস্থিত।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্যদলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং
আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫৪. কোন ব্যক্তির ইমামের অনুমতি
গ্রহন। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তারাই প্রকৃত
মুমিন যারা আল্লাহ তা'আলা ও তার রাসুল (সাঃ) এর
উপর ঈমান এনেছে, আর যখন তারা তার সঙ্গে কোন
সমষ্টিগত বিষয়ে একত্রিত হয়, তখন তারা তার অনুমতি
ব্যতিরেকে চলে যায় না (২৪ঃ ৬২)
২৭৫৯।
ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী
ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত
হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনীটির পেছন দিক থেকে
গিয়ে উটনী-টিকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দুআ করলেন। এরপর এটি সবক’টি উটের আগে আগে
চলতে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন তোমার উটনীটির কিরূপ মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই।
এটি আপনার বরকত লাভ করেছে।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি
কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার
নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনকারী অন্য কোন উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ (বিক্রয় করব)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয়
কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদিনায় পৌছা পর্যন্ত এর উপর আরোহন করব। আমি
বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সদ্য
বিবাহিত একজন পুরুষ। তারপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।
আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদিনায় পৌছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে
সাক্ষাত করলেন। তিনি আমাকে উটনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত
করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন।
তিনি
(রাবী) বলেন, আর যখন আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ
হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ
হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না
কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলাধূলা করতে এবং সেও তোমার
সঙ্গে খেলাধূলা করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার
পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমবয়সের কোন মেয়ে
বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক
শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না।
তাই
আমি একজন পূর্ব বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি; যাতে সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে এবং
তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসেন, পরদিন
আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও
ফেরত দিলেন। মুগীরা বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি
উত্তম। আমরা এতে কোন দোষ মনে করি না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫৭. ভয়-ভীতির সময় ইমামের (সকলের
আগে) অগ্রসর হওয়া
بَابُ مَنْ غَزَا وَهُوَ حَدِيثُ عَهْدٍ بِعُرْسِهِ
فِيهِ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
১৮৫৫.
পরিচ্ছেদঃ সদ্য বিবাহিত অবস্থায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করা।
এ
প্রসঙ্গে জাবির (রাঃ) কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে
হাদীস বর্ণিত আছে।
بَابُ مَنِ اخْتَارَ الْغَزْوَ بَعْدَ الْبِنَاءِ
فِيهِ أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
১৮৫৬.
পরিচ্ছেদঃ নববিবাহিত ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম মিলনের পর যুদ্ধে অংশগ্রহন করা।
এ
প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস
বর্ণিত আছে।
২৭৬০।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার
মদিনায় ভীতির সঞ্চার হল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ
তালহা (রাঃ) এর ঘোড়ায় আরোহণ করেন এবং বলেন যে, আমি
তো ভয়ের কিছু দেখতে পেলাম না। তবে আমি এ ঘোড়াটিকে দ্রুতগামী পেয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫৮. ভয়-ভীতির সময় ত্বরা করা ও
দ্রুত ঘোড়া চালনা করা
২৭৬১।
ফায্ল ইবনু সাহল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
সময় লোকেরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আবূ তালহা (রাঃ) এর মন্থর গতি সম্পন্ন একটি ঘোড়ার উপর আরোহণ করলেন এবং একাকী
ঘোড়াটিকে হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। লোকেরা তখন তাঁর পিছু পিছু ঘোড়ায় চড়ে ছুটে চলল।
(ফিরে এসে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছুই না, তোমরা
ভয় করো না। এ ঘোড়াটি তো দ্রুতগামী। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন
হতে আর কখনো সে ঘোড়াটি কারো পেছনে পড়েনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬০. কাউকে পারিশ্রমিক দানপূর্বক
নিজের পক্ষ হতে যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহর রাহে সাওয়ারী দান করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবন উমর (রাঃ) কে বললাম, আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাই।
আমি বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলা আমাকে
আর্থিক সচ্ছলতা দান করেছেন। তিনি [ইবন উমর (রাঃ)]
বললেন, তোমার সচ্ছলতা তোমার জন্য।
আমি চাই আমার কিছু সম্পদ এ পথে ব্যয় হোক। উমর (রাঃ) বলেন, এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা জিহাদ করার জন্য (বায়তুল মাল হতে) অর্থ
গ্রহন করে, পরে জিহাদ করে না। যারা
এরূপ করে, আমরা তার সম্পদে অধিক
হকদার এবং আমরা তা ফিরত নিয়ে নিব, যা সে গ্রহন করেছে। তাউস ও
মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাহে বের
হওয়ার জন্য তোমাকে কিছু দান করা হয়, তা
দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পার আর তোমার পরিবার-পরিজনের কাছেও রেখে দিতে পার।
بَابُ الْخُرُوجِ فِي الْفَزَعِ وَحْدَهُ
১৮৫৯.
পরিচ্ছেদঃ ভয়-ভীতির সময় একা বের হওয়া।
২৭৬২।
হুমায়দী (রহঃ) ... উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব আরোহণের জন্য দান করেছিলাম। তারপর আমি তা বিক্রয় হতে দেখতে
পাই। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমি কি তা ক্রয় করে নিব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘না, তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার (প্রদত্ত)
সাদকা ফেরত নিও না’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬০. কাউকে পারিশ্রমিক দানপূর্বক
নিজের পক্ষ হতে যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহর রাহে সাওয়ারী দান করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবন উমর (রাঃ) কে বললাম, আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাই।
আমি বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলা আমাকে
আর্থিক সচ্ছলতা দান করেছেন। তিনি [ইবন উমর (রাঃ)] বললেন, তোমার সচ্ছলতা তোমার জন্য। আমি চাই আমার কিছু
সম্পদ এ পথে ব্যয় হোক। উমর (রাঃ) বলেন, এমন
কিছু লোক রয়েছে, যারা জিহাদ করার জন্য
(বায়তুল মাল হতে) অর্থ গ্রহন করে, পরে জিহাদ করে না। যারা
এরূপ করে, আমরা তার সম্পদে অধিক
হকদার এবং আমরা তা ফিরত নিয়ে নিব, যা সে গ্রহন করেছে। তাউস ও
মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাহে বের
হওয়ার জন্য তোমাকে কিছু দান করা হয়, তা
দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পার আর তোমার পরিবার-পরিজনের কাছেও রেখে দিতে পার।
২৭৬৩।
ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) জনৈক অশ্বারোহীকে
আল্লাহর রাহে একটি অশ্ব দান করেন। এরপর তিনি দেখতে পান যে, তা বিক্রয় করা হচ্ছে। তখন তিনি তা ক্রয় করার
ইচ্ছা করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা
করলেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তুমি তা ক্রয় করো না এবং তোমার প্রদত্ত সাদকা
ফেরত নিও না’
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬০. কাউকে পারিশ্রমিক দানপূর্বক
নিজের পক্ষ হতে যুদ্ধ করানো এবং আল্লাহর রাহে সাওয়ারী দান করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবন উমর (রাঃ) কে বললাম, আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চাই।
আমি বললাম, আমি আল্লাহ তা’আলা আমাকে
আর্থিক সচ্ছলতা দান করেছেন। তিনি [ইবন উমর (রাঃ)] বললেন, তোমার সচ্ছলতা তোমার জন্য। আমি চাই আমার কিছু
সম্পদ এ পথে ব্যয় হোক। উমর (রাঃ) বলেন, এমন
কিছু লোক রয়েছে, যারা জিহাদ করার জন্য
(বায়তুল মাল হতে) অর্থ গ্রহন করে, পরে জিহাদ করে না। যারা
এরূপ করে, আমরা তার সম্পদে অধিক
হকদার এবং আমরা তা ফিরত নিয়ে নিব, যা সে গ্রহন করেছে। তাউস ও
মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহর রাহে বের হওয়ার
জন্য তোমাকে কিছু দান করা হয়, তা দিয়ে তুমি যা ইচ্ছা তা
করতে পার আর তোমার পরিবার-পরিজনের কাছেও রেখে দিতে পার।
২৭৬৪।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আমার উম্মাতের
জন্য কষ্টকর হবে মনে না করতাম, তবে আমি কোন সেনা অভিযান
থেকে পিছিয়ে থাকতাম না। কিন্তু আমি তো (সকলের জন্য) সাওয়ারী সংগ্রহ করতে পারছি না
এবং আমি এতগুলো সাওয়ারী পাচ্ছি না যার উপর আমি তাদের আরোহণ করাতে পারি। আর আমার
জন্য এটা কষ্টদায়ক হবে যে, তারা আমার থেকে পেছনে পড়ে
থাকবে। আমি তো এটাই কামনা করি যে, আমি আল্লাহর রাহে জিহাদ
করব এবং শহীদ হয়ে যাবো, এরপর আমাকে পুনরায় জীবিত
করা হবে এবং আমি পুনরায় শহীদ হবো। এরপর আমাকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬১. মজুরী গ্রহণ করে জিহাদে অংশ
গ্রহন করা।
وَقَالَ الْحَسَنُ وَابْنُ سِيرِينَ يُقْسَمُ لِلأَجِيرِ مِنَ الْمَغْنَمِ. وَأَخَذَ عَطِيَّةُ بْنُ قَيْسٍ فَرَسًا عَلَى النِّصْفِ، فَبَلَغَ سَهْمُ الْفَرَسِ أَرْبَعَمِائَةِ دِينَارٍ، فَأَخَذَ مِائَتَيْنِ وَأَعْطَى صَاحِبَهُ مِائَتَيْنِ
হাসান
বসরী ও ইবন সীরীন (রহঃ) বলেন, মজদুরকেও গনীমত লব্ধ সম্পদে
অংশ দান করা হবে। আতিয়্যা ইবন কায়েস (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি থেকে একটি অশ্ব এ শর্তে
গ্রহন করেন যে, গনীমত লব্ধ সম্পদে প্রাপ্ত
অংশ অর্ধেক করে বন্টিত হবে। তিনি অশ্বটির অংশে চারশ দীনার লাভ করেছিলেন। তখন তিনি
দু'শ দীনার গ্রহন করেন এবং দু'শ দীনার অশ্বের মালিককে দিয়ে দেন।
২৭৬৫।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে জিহাদে
অংশগ্রহণ করি। আমি একটি জওয়ান উট (জিহাদে) আরোহণের জন্য (জনৈক ব্যাক্তিকে) দেই।
আমার সঙ্গে এটই ছিল আমার অধিক নির্ভরযোগ্য কাজ। আমি এক ব্যাক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে
নিয়োগ করলাম। তখন সে এক ব্যাক্তির সহিত ঝগড়ায় লিপ্ত হয়, একজন অপরজনের হাত কামড়িয়ে ধরে সে তার হাত
কামড়দাতার মুখ হতে সজোরে বের করে আনে। ফলে তার সামনের দাত উপড়ে আসে। উক্ত ব্যাক্তি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হল। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দাঁতের কোন প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন
নি। আর তিনি বললেন, সে কি তার হাতটিকে তোমার
মুখে রেখে দিবে, আর তুমি তাকে উটের ন্যায়
কামড়াতে থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬২. নবী (ﷺ) এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
২৭৬৬।
সাঈদ ইবনু আবূ মারিয়ম (রহঃ) ... কায়েস ইবনু সাদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আর তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পতাকা বহনকারী, তিনি
হাজ্জের (হজ্জ) সংকল্প করেন, তখন তিনি মাথার চুল
আচঁড়িয়ে নিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬২. নবী (ﷺ) এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
২৭৬৭।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বার
যুদ্ধে আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে পিছিয়ে থাকব? এরপর আলী (রাঃ) বেরিয়ে
পড়লেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত
এল, যে রাত শেষে সকালে আলী (রাঃ) খায়বার জয়
করেছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক
ব্যাক্তিকে পতাকা অর্পণ করব, কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন
এক ব্যাক্তি পতাকা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।
আল্লাহ্ তাআলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে, আলী (রাঃ এসে উপস্থিত, অথচ তাঁর আগমন প্রত্যাশা করিনি। তারা বললেন, এই যে আলী (রাঃ) এসে গিয়েছিলেন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পতাকা অর্পণ করলেন। আর আল্লাহ্
তাআলা তাঁরই হাতে খায়বারের বিজয় দান করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬২. নবী (ﷺ) এর পতাকা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
২৭৬৮।
মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি যুবাইর (রাঃ) কে বলেছিলেন, এখানেই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনাকে পতাকা পুঁতে রাখতে আদেশ করেছিলেন?
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৩. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দুরত্ব থেকে
(শত্রুর মনে) ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার
করব। যেহেতু তারা আল্লাহর শরীক করেছে। (৩ঃ ১৫১) (এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন
২৭৬৯।
ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক
অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমি প্রেরিত হয়েছি এবং শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চারের
মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, এমতাবস্থায় পৃথিবীর ধনভান্ডার সমূহের চাবি
আমার হাতে অর্পণ করা হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো চলে গেছেন আর তোমরা তা বের করছ।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৩. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দুরত্ব থেকে
(শত্রুর মনে) ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার
করব। যেহেতু তারা আল্লাহর শরীক করেছে। (৩ঃ ১৫১) (এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাঃ)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন
২৭৭০।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁকে আবূ সুফিয়ান জানিয়েছেন, (রোম সম্রাট) হিরাকল (হিরাক্লিয়াস) আমাকে ডেকে
পাঠান। তখন তিনি ইলিয়া (বর্তমান ফিলিস্তিন) নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তারপর
সম্রাট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্রখানি আনতে আদেশ করেন, যখন পত্র পাঠ সমাপ্ত হল, তখন বেশ হৈ চৈ ও শোরগোল পড়ে গেল। এরপর
আমাদেরকে (দরবার হতে) বাইরে নিয়ে আসা হল। তখন আমি আমার সঙ্গীদের উদ্দেশ করে বললাম, যখন আমরা বহিষ্কৃত হচ্ছিলাম, আবূ কাবশার পুত্রের* বিষয়ের গুরুত্ব অনেক
বেড়ে গেল। রোমের বাদশাহও তাঁকে ভয় করে।
* আবূ কাবশা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুধ মা হালীমা (রাঃ) এর স্বামী ছিলেন। আবূ
সুফিয়ান (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বেকার ঘটনা হিসাবে তাচ্ছিল্য করে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আবূ কাবশার পুত্র বলেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৪. যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।
আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা পাথেয়ের
ব্যবস্থা কর। আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। (২ঃ ১৯৭)
২৭৭১।
উবাইদ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আবূ বকর (রাঃ) এর গৃহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাথেয়
গুছিয়ে দিয়েছিলাম, যখন তিনি মদিনায় হিজরত
করার সংকল্প করেছিলেন। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি
তখন মালপত্র কিংবা পানির মশক বাঁধার জন্য কিছুই পাচ্ছিলাম না। তখন আবূ বকর (রাঃ)
কে বললাম, আল্লাহর শপথ! আমি আমার
কোমর বন্ধনী ব্যতীত বাঁধার কিছুই পাচ্ছি না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, একে দ্বিখন্ডিত কর। এক খন্ড দ্বারা মশক এবং
অপর খন্ড দ্বারা মালপত্র বেঁধে দাও। আমি তাই করলাম। এজন্যই আমাকে বলা হত দু’ কোমর
বন্ধনীর অধিকারীণী।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৪. যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।
আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা পাথেয়ের
ব্যবস্থা কর। আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। (২ঃ ১৯৭)
২৭৭২।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের কুরবানীর গোশত মদিনা পর্যন্ত
পাথেয়রূপে গ্রহণ করতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৪. যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।
আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা পাথেয়ের
ব্যবস্থা কর। আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। (২ঃ ১৯৭)
২৭৭৩।
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... সুয়াইদ ইবনু নুমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, খায়বার
যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তিনি জিহাদে অংশ
গ্রহণ করেন। তাঁরা যখন খায়বারের উপকণ্ঠে অবস্থিত সাহবা নামক স্থানে পৌছলেন, তাঁরা সেখানে আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার নিয়ে আসতে বললেন।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যবের ছাতু ব্যতীত কিছুই উপস্থিত
করা হয়নি। আমরা তা পানির সাথে মিশিয়ে আহার করলাম ও পান করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দঁড়ালেন এবং কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম ও সালাত আদায় করলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৪. যুদ্ধে পাথেয় বহন করা।
আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা পাথেয়ের
ব্যবস্থা কর। আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। (২ঃ ১৯৭)
২৭৭৪।
বিশর ইবনু মারহুম (রহঃ) ... সালামা (ইবনু আকওয়া) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
সফরে লোকদের পাথেয় কমে যায় এবং তারা অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাজির হয়ে তাদের উট যবেহ করার অনুমতি চাইলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিলেন। সে সময় উমর (রাঃ) এর সাথে
তাদের সাক্ষাত হল। তারা তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তিনি বললেন, উট যবেহ করে তারপর তোমরা কিরূপে টিকে থাকবে? উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ সকল
লোক উট যবেহ করে খেয়ে ফেলার পর কিরূপে বাঁচবে? তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজ
নিজ অবশিষ্ট পাথেয় নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ঘোষণা দাও। তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের জন্য বরকতের দুআ করলেন। তারপর
তাদেরকে নিজ নিজ পাত্র নিয়ে উপস্থিত হতে আদেশ করলেন। তারা তাদের পাত্র ভরে নিতে
লাগলো অবশেষে সকলই নিয়ে নিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। আর আমি
আল্লাহর রাসূল’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৫. কাঁধে পাথেয় বহন করা
২৭৭৫।
সাদাকা ইবনু ফাযৃল (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
এক জিহাদে বের হলাম এবং আমরা সংখ্যায় তিনশ’ ছিলাম। প্রত্যেকে নিজ নিজ পাথেয়
নিজেদের কাঁধে বহন করছিলাম। পথে আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে গেল। এমনকি আমরা দৈনিক
একটি মাত্র খেজুর খেতে থাকলাম। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আবূ আবদুল্লাহ! একটি মাত্র খেজুর একজন
লোকের কি করে যথেষ্ট হত? তিনি বললেন, যখন আমরা তাও হারালাম তখন এর হারানোটা অনুভব
করলাম। অবশেষে আমরা সমুদ্র তীরে এসে উপস্থিত হলাম। হঠাৎ সমুদ্র একটি বিরাট মাছ
তীরে নিক্ষেপ করল। আমরা সে মাছটি তৃপ্তি সহকারে আঠার দিন পর্যন্ত খেলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৬. উটের পিঠে আপন ভাইয়ের পেছনে
মহিলাকে বসানো
২৭৭৬।
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার
সাহাবীগণ তো হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরার সাওয়াব নিয়ে প্রত্যাবর্তন করছেন, আর আমিতো হাজ্জ (হজ্জ) থেকে অতিরিক্ত কিছুই
করতে পারলাম না’। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি যাও, আবদুর
রহমান তোমাকে তার পেছনে সাওয়ারীতে বসিয়ে নিবে। তিনি আবদুর রহমানকে আদেশ করলেন, তাঁকে তানয়ীম থেকে উমরার ইহরাম করিয়ে আনতে।
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় উঁচুভূমিতে তাঁর জন্য
অপেক্ষায় থাকলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৬. উটের পিঠে আপন ভাইয়ের পেছনে
মহিলাকে বসানো
২৭৭৭।
আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশা (রাঃ)-কে আমার পেছনে বসিয়ে তানয়ীম থেকে
উমরার ইহরাম করিয়ে আনতে আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৭. যুদ্ধ ও হজ্জে একই সাওয়ারীতে
একে অপরের পেছনে বসা
২৭৭৮।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আবূ তালহা (রাঃ) এর পেছনে একই সাওয়ারীতে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন লোকেরা হাজ্জ (হজ্জ) ও
উমরা পালনার্থে লাব্বায়েক ধ্বনি উচ্চারণ করছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৮. গাধার পিঠে একে অপরের পেছনে
বসা
২৭৭৯।
কুতাইবা (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
গাধার পিঠে পালান লাগিয়ে তার উপর চাঁদর বিছিয়ে তাতে আরোহণ করেন। আর উসামা (রাঃ) কে
তাঁর পেছনে বসালেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৮. গাধার পিঠে একে অপরের পেছনে
বসা
২৭৮০।
ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মক্কা বিজয়ের দিন আপন সাওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে বসিয়ে মক্কার
উঁচু ভূমির দিক থেকে আগমন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিলাল (রাঃ) এবং চাবি সংরক্ষক
উসমান ইবনু তলহা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের পার্শ্বে
উটটিকে বসালেন। তারপর উসমান (রাঃ) কে কা’বা গৃহের চাবি নিয়ে আসতে আদেশ করলেন।
কাবার (দ্বার) খুলে দেওয়া হল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ভেতরে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা, বিলাল
ও উসমান (রাঃ)। দিনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করলেন। তারপর সেখান
হতে বেরিয়ে এলেন। এ সময়ে লোকেরা প্রবেশ করার জন্য দৌঁড়িয়ে আসল। সকলের আগে আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ) ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং বিলাল (রাঃ) কে দরজার পেছনে দাঁড়ানো
অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন স্থানে সালাত আদায় করছিলেন? আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে একথা জিজ্ঞাসা করতে ভূলে গিয়েছিলাম
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কত রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬৯. রিকাব বা অন্য কিছু ধরে
আরোহণে সাহায্য করা
২৭৮১।
ইসহাক (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, প্রত্যেক দিন যাতে সূর্য উদিত
হয়, তাতে মানুষের দেহের প্রতিটি জোড়া হতে একটি
মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদকা রয়েছে। প্রতিদিন যাতে সূর্য উদিত হয়। দু’জন
লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সাদকা। কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেওয়া
বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেওয়াও সাদকা। ভাল কথাও সাদকা। সালাত (নামায/নামাজ)
আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সাদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ
করাও সাদকা।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭০. কুরআন মাজিদ সহ শত্রু
ভূখণ্ডে সফর করা অপছন্দনীয়। অনুরূপ মুহাম্মাদ ইবন বিশর (রহঃ) ... ইবন উমর (রাঃ) এর
মাধ্যমে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত। উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর অনুসরণকারী ইবন ইসহাকও ...
ইবন উমর (রাঃ) এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অবশ্য রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও তার সাহাবীগন (রাঃ) শত্রুর ভূখন্ডে সফর
করেছেন এবং তারা কুরআনুল কারীম জানতেন।
২৭৮২।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কুরআন সঙ্গে নিয়ে শত্রুর ভূখন্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭১. যুদ্ধের সময় তাকবীর বলা
২৭৮৩।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতি প্রত্যুষে খায়বার প্রান্তরে প্রবেশ করেন। সে
সময় ইয়াহুদীগণ কাঁধে কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারা যখন তাঁকে দেখতে পেল, তখন বলতে লাগল, মুহাম্মদ
সেনাদলসহ আগমন করেছে, মুহাম্মদ সেনাদল সহ আগমন
করেছে। ফলে তারা দুর্গে ঢুকে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর উভয় হাত তুলে বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের
অঞ্চলে অবতরণ করি, তখন ভয় প্রদর্শিতদের সকাল
মন্দ হয় এবং আমরা সেখানে কিছু গাধা পেয়ে গেলাম। তারপর আমরা এগুলোর গোশত রান্না
করলাম। এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হতে ঘোষান
দানকারী ঘোষণা দিল, নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা ও
তাঁর রাসূল তোমাদেরকে গাধার গোশত (আহার করা) হতে নিষেধ করেছেন। (এতদশ্রবণে)
ডেকগুলো উল্টিয়ে দেওয়া হল তাতে যা ছিল তা সহ। আলী (রাঃ) সুফিয়ান (রাঃ) সূত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু’হাত উপরে উঠান বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ
(রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭২. তাকবীর জোরে জোরে বলা
অপছন্দীয়
২৭৮৪।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন
কোন উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন লাইলাহা ইল্লাল্লাহ
এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, হে
লোক সকল! তোমরা নিজেদের উপর রহম কর। কেননা, তোমরা
তো বধির বা দূরবর্তী সত্তাকে ডাকছ না। বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি তো শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৩. কোন উপত্যকায় আক্রমণ করাকালে
তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ্) পড়া
২৭৮৫।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
যখন কোন উঁচু স্থানে আরোহণ করতাম, তখন আল্লাহু আকবার বলতাম
আর যখন কোন উপত্যকায় অবতরণ করতাম, তখন সুবহানাল্লাহ্ বলতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৪. উঁচু স্থানে আরোহণকালে
তাকবীর বলা
২৭৮৬।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
যখন উঁচু স্থানে আরোহন করতাম, তখন আল্লাহু আকবার বলতাম
আর যখন নিম্ন ভূমিতে অবতরণ করতাম, তখন সুবহানাল্লাহ্ বলতাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৪. উঁচু স্থানে আরোহণকালে
তাকবীর বলা
২৭৮৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন
করতেন, বর্ণনাকারী বলেন, আমি জানিনা, নাকি
এরূপ বলেছেন যে, যখন জিহাদ থেকে
প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনি ঘাঁটি অথবা
প্রস্তরময় ভূমিতে পৌছে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। তারপর এ দু‘আ পাঠ করতেন, “আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর
কোন শরীক নেই, কর্তৃত্ব তাঁরই এবং
প্রশংসা তাঁরই; তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
আমরা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ থেকে তাওবাকারী, ইবাদত পালনকারী, সিজদাকারী, আমাদের
প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাহকে সাহায্য করেছেন, কাফির সৈন্যদলকে তিনি একাই পরাভূত করেছেন”।
সালেহ (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, আবদুল্লাহ কি ইনশাআল্লাহ্ বলেন নি? তিনি বললেন, না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৫. মুসাফিরের জন্য তা-ই লিখিত হবে, যা সে আমল করত ইকামত (আবাস) অবস্থায়
২৭৮৮।
মাতার ইবনু ফাযল (রহঃ) ... আবূ বুরদা ইবনু আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি এবং ইয়াযিদ ইবনু আবূ কাবশা (রাঃ) সফরে ছিলেন।
আর ইয়াযিদ (রাঃ) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন। আবূ বুরদা (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি আবূ মূসা (আশআরী) (রাঃ) কে একাধিকবার
বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যখন বান্দা রোগাক্রান্ত হয়
কিংবা সফর করে, তখন তার জন্য তা-ই লিখিত
হয়, যা সে মুকীম অবস্থায় বা সুস্থ অবস্থায় আমল
করত।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৬. একাকী ভ্রমণ করা
২৭৮৯।
হুমাইদী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধের দিন লোকদেরকে আহ্বান করেন। যুবাইর
(রাঃ) সে আহ্বানে সাড়া দিলেন, পুনরায় তিনি লোকদের আহ্বান
করলেন, আবারও যুবাইর (রাঃ) সে আহ্বানে
সাড়া দিলেন। পুনরায় তিনি লোকদের আহ্বান করলেন, এবারও
যুবাইর (রাঃ) সে আহ্বানে সাড়া দিলেন। এরূপ তিনবার বললেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘প্রত্যেক নাবীর জন্য একজন
বিশেষ মদদগার থাকে আর আমার বিশেষ মদদগার হচ্ছে যুবাইর’। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, হাওয়ারী সাহায্যকারীকে বলা হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৬. একাকী ভ্রমণ করা
২৭৯০।
আবূল ওয়ালীদ ও আবূ নুআইম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি লোকেরা একা সফর করতে কি অনিষ্ট রয়েছে তা
জানত, যা আমি জানি, তবে কোন আরোহী রাতে একাকী ভ্রমণ করত না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৭. ভ্রমনকালে তাড়াতাড়ি করা।
قَالَ أَبُو حُمَيْدٍ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي مُتَعَجِّلٌ إِلَى الْمَدِينَةِ، فَمَنْ أَرَادَ أَنْ يَتَعَجَّلَ مَعِي فَلْيُعَجِّلْ
আবু
হুমায়দ (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি দ্রুত মদিনায় পৌঁছতে
ইচ্ছুক, কাজেই যে ব্যক্তি আমার
সাথে তাড়াতাড়ি যেতে চায় সে যেন তাড়াতাড়ি চলে।
২৭৯১।
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... হিশাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার
পিতা বর্ণনা করেছেন যে, উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) কে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিরূপ গতিতে পথ চলেছিলেন। রাবী ইয়াহয়া (রহঃ) বলতেন, উরওয়া (রহঃ) বলেন, “আমি শুনতেছিলাম, তবে আমার বর্ণনায় তা বাদ পড়েছে। উসামা (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ দ্রুতগতিতে চলতেন আর যখন প্রশস্ত খালি জায়গা পেতেন, তখন দ্রুত চলতেন। নাস হচ্ছে সহজ গতির চাইতে
দ্রুত গতিতে চলা।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৭. ভ্রমনকালে তাড়াতাড়ি করা।
২৭৯২।
সাঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) ... আসলাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
মক্কার পথে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। পথে তাঁর নিকট সাফিয়্যা
বিনতে আবূ উবাইদ (রাঃ) এর ভীষণ অসুস্থতার সংবাদ পৌঁছে। তখন তিনি দ্রুতগতিতে চলতে
থাকেন। এমনকি যখন সূর্যাস্তের পরে লালিমা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন তিনি উট থেকে অবতরণ করে মাগরিব ও এশার সালাত
একত্রে আদায় করেন। আর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
দেখেছি, যখন তাঁর দ্রুত চলার
প্রয়োজন হতো, তখন তিনি মাগরিবকে
বিলম্বিত করে মাগরিব ও এশার উভয় সালাত (নামায/নামাজ) পরপর এক সাথে আদায় করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৭. ভ্রমনকালে তাড়াতাড়ি করা।
২৭৯৩।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, সফর যেন আযাবের একটি অংশ।
যা তোমাদেরকে নিদ্রা, আহার ও পান করা থেকে বিরত
রাখে। কাজেই তোমাদের কেউ যখন সফরে নিজ কাজ সম্পন্ন করে ফেলে, সে যেন তারপর নিজ পরিবার পরিজনের কাছে দ্রুত
চলে আসে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৮. আরোহণের জন্য ঘোড়া দান করার
পর তা বিক্রয় হতে দেখলে
২৭৯৪।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রাহে আরোহণের
জন্য একটি ঘোড়া দান করেন। তারপর তিনি সে ঘোড়াটিকে বিক্রি হতে দেখতে পান। তিনি তা
ক্রয় করে নিতে ইচ্ছা করলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তখণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তুমি তা ক্রয় করো না এবং
তোমার দেওয়া সাদকা ফেরত নিও না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৮. আরোহণের জন্য ঘোড়া দান করার
পর তা বিক্রয় হতে দেখলে
২৭৯৫।
ইসমাঈল (রহঃ) ... উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আল্লাহর রাহে একটি ঘোড়া দান করি। সে তা বিক্রি করতে চেয়েছিল কিংবা যার নিকট সেটা
ছিল সে তাকে বিনষ্ট করার উপক্রম করেছিল। আমি ঘোড়াটি ক্রয় করতে ইচ্ছা করলাম। আর আমি
ধারণা করেছিলাম যে, সে তাকে সস্তায় বিক্রি করে
দিবে। আমি এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তুমি
তা ক্রয় কর না, যদিও তা একটি মাত্র
দিরহামের বিনিময়ে হয়। কেননা সাদকা দান করত ফেরত গ্রহণকারী এমন কুকুরের তুল্য, যে বমি করে পুনরায় তা খায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭৯. পিতামাতার অনুমতি নিয়ে
জিহাদে যাওয়া
২৭৯৬।
আদম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি
চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন
কি? সে বলল, হ্যাঁ।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে তাঁদের খেদমত করতে চেষ্টা কর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮০. উটের গলায় ঘন্টা ইত্যাদি
বাঁধা প্রসঙ্গে
২৭৯৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ বাশীর আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন
এক সফরে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলেন। (রাবী)
আবদুল্লাহ বলেন, আমার মনে হয়, তিনি (আবূ বাশীর আনসারী) বলেছেন যে, মানুষ শয্যায় ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সংবাদ বাহককে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে, কোন উটের গলায় যেন ধনুকের রশির মালা কিংবা
মালা না থাকে, থাকলে তা যেন কেটে ফেলা
হয়।*
* জাহেলী যুগের উটের গলায় এক
ধরনের মালা এ উদ্দেশ্যে লটকানো হতো যাতে উট নজর থেকে রক্ষা পায়। রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণার্থে এ নির্দেশ প্রদান
করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮১. যার নাম জিহাদে জাওয়ার জন্য
তালিকাভুক্ত করা হয়েছে আর তার স্ত্রী হজ্জে বের হওয়ার ইচ্ছা করলে অথবা তার কোন ওজর
দেখা দিলে, তবে তাকে (তবে তাকে জিহাদ
থেকে বিরত থাকার) অনুমতি দেওয়া হবে কি?
২৭৯৮।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে
অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন
মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য
আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমর স্ত্রী হাজ্জে যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) কর’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮২. গোয়েন্দগিরী করা। তাজাসসুস
শব্দের অর্থ হচ্ছে খোঁজ খবর নেওয়া। আর আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহন করো না (৬০ঃ ১)
২৭৯৯।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং
যুবায়র ও মিকদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ) কে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে
পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা
নিয়ে আসবে’। তখন আমরা রওনা করলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল।
অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে
পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর’। সে বলল, ‘আমার কাছে তো কোন পত্র নেই’। আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে’। তখন সে তার
চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবনু আবূ বালতা'আ (রাঃ) এর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিক
ব্যাক্তির নিকট লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।
তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে হাতিব! একি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করবেন না। মূলত আমি কুরাইশ বংশীয় লোক ছিলাম না। তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আর
যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের
সকলেরই মক্কাবাসীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন
ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু
আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন
কিছু কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করি নি এবং ইসলাম গ্রহণের পর পুনঃ
কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়’।
রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছে’। তখন উমর (রাঃ) বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই’।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের
ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা
করে দিয়েছি’।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৩. বন্দীদের পোশাক প্রদান
২৮০০।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
বদর যুদ্ধের দিন কাফির বন্দীদেরকে হাযির করা হল এবং আব্বাস (রাঃ)-কেও আনা হল আর তখন
তাঁর শরীরে পোশাক ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের
জন্য উপযোগী জামা খুঁজতে গিয়ে দেখলেন, আবদুল্লাহ
ইবনু উবাই এর জামা তাঁর গায়ের উপযোগী। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে
জামাটি তাঁকেই পরিয়ে দেন। এ কারণেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ জামা
খুলে আবদুল্লাহ ইবনু উবাইকে (তার মৃত্যুর পর) পরিয়ে দিয়েছিলেন। ইবনু উয়াইনাহ্
(রাঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর একটি সৌজন্য আচরণ ছিল, তাই তিনি তার প্রতিদান দিতে চেয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৪. যার হাতে কোন ব্যক্তি ইসলাম
গ্রহণ করেছ, তার ফযীলত
২৮০১।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যাক্তির হাতে পতাকা
দিব, যার হাতে আল্লাহ তালা বিজয় দান করবেন। সে
আল্লাহ তালা ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে, আর
আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসেন। লোকেরা এ চিন্তায় সারা রাত কাটিয়ে দেয়, কাকে এ পতাকা দেওয়া হয়? আর পর দিন সকালে প্রত্যেকেই তা পাওয়ার
আকাঙ্খা পোষণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? বলা
হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে আপন মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দুয়া
করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন আদৌ তাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না।
তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। আলী (রাঃ)
জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাদের সাথে ততক্ষণ
যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘তুমি স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর
হয়ে তাদের আঙ্গিনায় অবতরণ কর। তারপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান কর এবং ইসলাম
গ্রহণ করার পর তাদের জন্য যা অপরিহার্য তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম!
আল্লাহ তাআলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যাক্তিকে হেদায়েত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লালবর্ণের উটের মালিক হওয়া
অপেক্ষা উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৫. শৃংখলে আবদ্ধ কয়েদী
২৮০২।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ
তাআলা সে সকল লোকের উপর সন্তুষ্ট হন, যারা
শৃংখলে আবদ্ধ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৬. ইয়াহুদী ও নাসারাদের থেকে যে
ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে তার মর্যাদা
২৮০৩।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন প্রকারের ব্যাক্তিকে দ্বিগুন সওয়াব
প্রদান করা হবে। যে ব্যাক্তির একটি বাদী আছে সে তাকে শিক্ষা দান করে, শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং তাকে উত্তমরূপে
শিষ্টাচার দান করে। তারপর তাকে আযাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করে। সে ব্যাক্তির জন্য
দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। আর আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে মু‘মিন ব্যাক্তি যে তার নাবীর
প্রতি ঈমান এনেছিল। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান
এনেছে। তাঁর জন্য দিগুন সওয়াব রয়েছে। যে গোলাম আল্লাহর হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং
স্বীয় মনীবের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, (তার জন্যও দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে) শা‘বী (রহঃ) এ হাদীসটি
বর্ণণা করে সালেহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি
তোমাকে এ হাদীসটি কোন বিনিময় ছাড়াই শুনিয়েছি। অথচ এর চেয়ে সহজ হাদিস শোনার জন্য
লোকেরা মদিনা পর্যন্ত সফর করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৭. রাত্রীকালীন আক্রমণে
মুশরিকদের মহিলা ও শিশু নিহত হলে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত بَيَاتًا لَنُبَيِّتَنَّهُ بَيِّتُ
এ শব্দগুলোর অর্থের মধ্যে রাতের সময় বুঝানো হয়েছে
২৮০৪।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... সাব ইবনু জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে পথ
অতিক্রম করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে
সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমনে
তাদের মহিলা ও শিশুগণ নিহত হয়, তবে কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
আর আমি তাকে আরও বলতে শুনেছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ
তালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো জন্য হতে পারে
না।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৮. যুদ্ধে শিশুদের হত্যা করা
২৮০৫।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত পাওয়া যায়, তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা ও শিশুদের হত্যা করা সম্পর্কে
অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৮৯. যুদ্ধে মহিলাদের হত্যা করা
২৮০৬।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায়
পাওয়া যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলা ও শিশুদের হত্যা
করতে নিষেধ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯০. আল্লাহ তা আলার শাস্তি
দ্বারা কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না
২৮০৭।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কোন এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, ‘তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যাক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে দিবে।’ তারপর
আমরা যখন বের হতে চাইলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু আগুন দ্বারা শাস্তি
দেওয়া আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো জন্য সমীচিন নয়। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে
পেয়ে যাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯০. আল্লাহ তা আলার শাস্তি
দ্বারা কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না
২৮০৮।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইকরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আলী (রাঃ) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে
ফেলেন। এ সংবাদ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে তিনি বলেন, ‘যদি আমি হতাম, তবে
আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা
আল্লাহ নির্ধারিত শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা
করতাম। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করে ফেল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৩. মুশরিক যদি কোন মুসলিমকে
আগুনে জ্বালিয়ে দেয় তবে তাকে কি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে?
بَاب فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاءً فِيهِ حَدِيثُ ثُمَامَةَ وَقَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ تَكُونَ لَهُ أَسْرَى حَتَّى يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ يَعْنِي يَغْلِبَ فِي الْأَرْضِ تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا الْآيَةَ
১৮৯১.
পরিচ্ছেদঃ (বন্দী সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন) এর পর হয় অনুকম্পা নয় মুক্তিপণ। যতক্ষন
না যুদ্ধ তার অস্র নামিয়ে ফেলে (৪৭ঃ ৪) প্রসঙ্গে সুমামা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসটি
রয়েছে আর আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট বন্দি থাকবে দেশে
ব্যাপক ভাবে শত্রুপরাভূত না করা পর্যন্ত অর্থাৎ দেশে বিজয় লাভ না করা পর্যন্ত। তোমরা
কামনা কর পার্থিব সম্পদ। (৮ঃ ৬৭)
بَاب هَلْ لِلْأَسِيرِ أَنْ يَقْتُلَ وَيَخْدَعَ الَّذِينَ أَسَرُوهُ حَتَّى يَنْجُوَ مِنْ الْكَفَرَةِ فِيهِ الْمِسْوَرُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
১৮৯২.
পরিচ্ছেদঃ কোন মুসলমান কাফিরদের হাতে বন্দি হলে সে বন্দিকারীকে হত্যা করবে কি? অথবা যারা বন্দি করেছে, তাদের সাথে কৌশল করত তাদের
থেকে নিজেকে মুক্ত করবে কি? এ প্রসঙ্গে মিসওয়ার (রহঃ) সুত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।
২৮০৯।
মুআল্লাহ ইবনু আসাদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উকল নামক গোত্রে আট ব্যাক্তির একটি দল নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। মদিনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী
উটনীর ব্যবস্থা করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা বরং
সাদকার উটের পালের কাছে যাও। তখন তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে
সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। তারপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পেল হাকিয়ে
নিয়ে গেল এবং মুসলমান হওয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেল। তখন জনৈক সংবাদদাতা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অশ্বারোহীদেরকে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো পূর্ণতা লাভ করেনি।
ইতোমধ্যেই
তাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। তারপর তাঁর নির্দেশে লৌহশলাকা উতপ্ত করে তাদের চোখে
প্রবেশ করানো হয় এবং তাদেরকে প্রস্তরময় উতপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি
চেয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে পানি দেওয়া হয়নি। অবশেষে তারা মারা যায়। আবূ কিলাবা (রাঃ)
বলেন, (তাদের এরূপ শাস্তি এ জন্য
দেওয়া হয়েছে যে,) তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ
তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (ধর্ম ত্যাগী হয়ে)
যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা ছাড়াতে চেষ্টা করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৪. পরিচ্ছেদ নাই
২৮১০।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যেকোন একজন নাবীকে
পিপিলীকা কামড় দেয়। তিনি পিপিলীকার সমস্ত আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা
জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তালা তার প্রতি ওহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপিলীকা কামড় দিয়েছে আর তুমি
আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারী জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান জ্বালিয়ে
দেওয়া
২৮১১।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি
কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শাস্তি দিবে না? খাশআম
গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ)
বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’
আশ্বরোহী সাথে নিয়ে রওনা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলীর চিহৃ দেখতে
পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দোয়া করলেন যে, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’
তারপর
জারীর (রাঃ) সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেন।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যাক্তিকে তাঁর
নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তা‘আলার! যিনি আপনাকে
সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি
যখনই যুলখালাসাকে আমরা ধংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাচঁবার বরকতের দু‘আ করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান
জ্বালিয়ে দেওয়া
২৮১২।
মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বণী নাযির ইয়াহুদীদের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে
দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৬. ঘুমন্ত মুশরিককে হত্যা করা
২৮১৩।
আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একটি দল আবূ রাফে ইয়াহুদীদের হত্যা
করার জন্য প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে ঢুকে
পড়ল। তিনি বললেন, তারপর আমি তাদের পশুর
আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। এরপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি
গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে
পড়লাম।
তাদেরকে
আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধাঁর
খোজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ
করলাম। রাতে তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলি একটি কুলুঙ্গির
মধ্যে রেখে দিল। আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলি নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা
খুললাম। তারপর আমি আবূ রাফের নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি
আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারির আঘাত হানলাম, অমনি
সে চিৎকার দিয়ে উঠল।
আমি
বেরিয়ে এলাম। আমি পুনরায় প্রবেশ করলাম, যেন
আমি তার সাহাযার্থে এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফে! সে বলল, তোমার কি হল, তোমার
ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কি অবস্থা? সে বলল, আমি
জানিনা, কে বা কারা আমার এখানে
এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, তারপর
আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সবশক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তাঁর হাড় পর্যন্ত পৌঁছে কট করে উঠল। এরপর
আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিড়ির কাছে
এলাম।
যখন
আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল।
আমি আমার সাথীগণের সাথে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষন পর্যন্ত যাব না, যাবত না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারীনীর
আওয়াজ শুনতে পাই। হিযাজবাসীদের বণিক আবূ রাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা না শোনা
পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলেন, তখন
আমি উঠে পড়লাম এবং আমার তখন কোনরূপ ব্যথা বেদনাই অনুভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছে এ বিষয়ে তাঁকে সংবাদ দিলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৬. ঘুমন্ত মুশরিককে হত্যা করা
২৮১৪।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের এক দলকে আবূ রাফে ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ
করেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আতিক (রাঃ) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায়
হত্যা করে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৭. তোমার শত্রুর মুখোমুখী হওয়ায়
আকাঙ্ক্ষা পোষণ করো না
২৮১৫।
ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) ... উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলামা আবূন নাযার (রহঃ)
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তিনি
বলেন, তাঁর নিকট আবদুল্লাহ ইবনু
আবূ আওফা (রাঃ) একখানি পত্র লিখেন। যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি
পত্রটি পাঠ করলাম তাতে লেখা ছিল যে, শত্রুর
সাথে কোন এক মুখোমুখি যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য
ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তাঁর সাহাবীদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা
দিলেন, ‘হে লোক সকল, তোমরা শত্রুর সাথে মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়ার
কামনা করবে না এবং আল্লাহ তা‘য়ালার নিকট নিরাপত্তার দুআ করবে। তারপর যখন তোমরা
শত্রুর সম্মুখীন হবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারীর ছায়া তলে অবস্থিত।’
এরপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআ করলেন, ‘হে আল্লাহ, কুরআন
অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাজয় দানকারী, আপনি কাফির সম্প্রদায়কে পরাজিত করুন এবং
আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।’ মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বলেন, সালিম আবূ নাযর আমাকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি
উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তখন তার কাছে আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)-এর
একখানা পত্র পৌছালো এই মর্মে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী
হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করবে না। আবূ আমির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করবে
না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখী হবে তখন ধৈর্যধারণ করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৮. যুদ্ধ হল কৌশল
২৮১৬।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, (পারস্য সম্রাট) কিসরা ধ্বংস হবে, তারপর আর কিসরা হবে না। আর (রোমক সম্রাট)
কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হবে, তারপর আর কায়সার হবে না।
এবং এটাই নিশ্চিত যে, তাদের ধনভান্ডার আল্লাহর
রাহে বন্টিত হবে। আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৮. যুদ্ধ হল কৌশল
২৮১৭।
বকর ইবনু আসরাম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধকে কৌশল নামে আখ্যায়িত করেছেন। আবূ আবদুল্লাহ
(রহঃ) বলেন, আবূ বকর হলেন বূর ইবনু
আসরাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৮. যুদ্ধ হল কৌশল
২৮১৮।
সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যুদ্ধ হল কৌশল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৯. যুদ্ধে কথা ঘুরিয়ে বলা
২৮১৯।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বললেন, ‘কে আছ যে, কা‘ব ইবনুু আশরাফ এর (হত্যার)
দায়িত্ব নিবে? কেননা, সে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলসাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কষ্ট দিয়ছে।’ মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) কা'ব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বললেন, এ ব্যাক্তি অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের থেকে সাদাকা চাচ্ছে।’ রাবী বলেন, তখন কা‘ব বলল, ‘এখন আর কি হয়েছে? তোমরা
তো তার থেকে আরও অতিষ্ট হয়ে পড়বে।’ মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘আমরা তার অনুসরণ করছি, এখন তার পরিণতি না দেখা পর্যন্ত তাকে সম্পূর্ণ
ত্যাগ করা পছন্দ করি না।’ রাবী বলেন, মুহাম্মদ
ইবনু মাসলামা (রাঃ) এভাবে তার সাথে কথা বলতে থাকেন এবং সুযোগ পেয়ে তাকে হত্যা করে
ফেলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০০. হারবীকে গোপনে হত্যা করা
২৮২০।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কাব’ ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে
নিবে? তখন মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা
(রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি এ পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনু
মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি প্রদান করলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০২. যুদ্ধক্ষেত্রে কবিতা আবৃত্তি
করা ও পরিখা খননকালে স্বর উঁচু করা। এ প্রসঙ্গে সাহল ও আনাস (রাঃ) সুত্রে নবী (সাঃ)
থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, আর ইয়াযীদ সালামা (রাঃ)
থেকেও বর্ণিত আছে
باب مَا يَجُوزُ مِنَ الاِحْتِيَالِ وَالْحَذَرِ مَعَ مَنْ يَخْشَى مَعَرَّتَهُ
قَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ قَالَ انْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَعَهُ أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ قِبَلَ ابْنِ صَيَّادٍ، فَحُدِّثَ بِهِ فِي نَخْلٍ، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم النَّخْلَ، طَفِقَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ، وَابْنُ صَيَّادٍ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا رَمْرَمَةٌ، فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا صَافِ، هَذَا مُحَمَّدٌ، فَوَثَبَ ابْنُ صَيَّادٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ
১৯০১
পরিচ্ছেদঃ যার থেকে ক্ষতির আশংকা থাকে তার সাথে কৌশল ও সতর্কতা অবলম্বন করা বৈধ।
লায়স
(রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবন কা’ব (রাঃ) কে সাথে নিয়ে ইবন সাইয়াদের নিকট গমন করেন।
তখন লোকেরা বলল, সে খেজুর বাগানে আছে। যখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট খেজুর বাগানে পৌঁছলেন, তখন তিনি খেজুর বৃক্ষের কান্ডের আড়াল করতে
লাগলেন। ইবন সাইয়াদ তখন তার চাদর জড়িয়ে গুন গুন করছিল। তখন ইবন সাইয়াদ এর মা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে বলে উঠল, হে সাফ! (ইবন সাইয়াদের সংক্ষিপ্ত নাম) এই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তখন ইবন সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি এ মহিলা তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দিত তবে
ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে যেত।
২৮২১।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি
স্বয়ং মাটি বহন করেছেন। এমনকি তাঁর সমগ্র বক্ষদেশের কেশরাজিকে মাটি আবৃত করে
ফেলেছে আর তাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু রাওহায়া (রাঃ) রচিত
কবিতা অবৃত্তি করছিলেনঃ
‘হে আল্লাহ আপনি যদি
আমাদেরকে হিদায়েত না করতেন, তাহলে আমরা হিদায়াত পেতাম
না। আর আমরা সাদকা করতাম না এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম না। আপনি আদের
প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করুন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে অবিচল রাখুন। শত্রুগণ
আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, যখন তারা ফিৎনা সৃষ্টি
সংকল্প করেছে, আমরা তা অস্বীকার করেছি।’
আর তিনি এ কবিতাগুলো অবৃত্তিকালে স্বর উঁচু করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৩. যে ব্যক্তি ঘোড়ার পিঠে স্থির
থাকতে পারে না
২৮২২।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ... জারির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনি তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন
তিনি মুচকি হাসতেন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আমার
অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি ঘোড়ার পিঠে স্থির
থাকতে পারি না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হাত
দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে (ঘোড়ার পিঠে) স্থির রাখুন এবং তাকে
হিদায়তকারী ও হিদায়তপ্রাপ্ত বানান।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৪. চাটাই পুড়ে যখমের চিকিৎসা
করা এবং মহিলা কর্তৃক নিজ পিতার মুখমন্ডলের রক্ত ধৌত করা, ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করে আনা
২৮২৩।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে লোকেরা জিজ্ঞাসা করছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর যখম কিভাবে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন
সাহল (রাঃ) বলেন, এখন আর এ বিষয়ে আমার চেয়ে
অধিক জ্ঞাত কেউ অবশিষ্ট নেই। আলী (রাঃ) তাঁর ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা (রাঃ) তাঁর মুখমন্ডল হতে রক্ত ধৌত
করছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর যখমের মধ্যে পুরে দেওয়া হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৫. যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও
মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের আবাধ্যতা করে তার শাস্তি। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আর তোমরা ঝগড়া-বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের
শক্তি বিলুপ্ত হবে। (৮ঃ ৪৬) الرِّيحُ অর্থ যুদ্ধ
২৮২৪।
ইয়াহইয়া (রহঃ) ... আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মুআয ও আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও নির্দেশ দেন যে, ‘লোকদের প্রতি নম্রতা করবে, কঠোরতা করবে না, তাদের সুসংবাদ দিবে, ঘৃনা সৃষ্টি করবে না। পরস্পর মতৈক্য পোষণ
করবে, মতভেদ করবে না।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৫. যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও
মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের আবাধ্যতা করে তার শাস্তি। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আর তোমরা ঝগড়া-বিবাদ করবে না, করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের
শক্তি বিলুপ্ত হবে। (৮ঃ ৪৬) الرِّيحُ অর্থ যুদ্ধ
২৮২৫।
আমর ইবনু খালিদ (রহঃ) ... বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) কে
পঞ্চাশজন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিযুক্ত করেন এবং বলেন, তোমরা দেখ যে, আমাদের
কে পক্ষীকুল ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি
তোমরা আমার নিকট হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি
তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত
করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও
আমার পক্ষ হতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করবে না। অনন্তর মুসলমানগণ
কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর
শপথ! আমি মুশরিকদের মহিলাদেরকে দেখতে পেলাম তারা নিজ পরিধেয় বস্ত্র উপরে উঠিয়ে
পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছ।
তখন
আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) এর সহযোগীগণ বলতে লাগলেন, ‘লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর।
তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছ। আর অপেক্ষা কিসের? তখন
আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে যা
বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছ?’ তারা বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমরা
লোকদের সাধে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে অংশগ্রহণ করব।’ তারপ যখন তারা
স্ব-স্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন
(কাফিরগণ কর্তৃক) তাদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তারা পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে থাকেন।
এটা সে সময় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পেছন থেকে
ডাকছিলেন।
তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বারজন লোক ব্যতীত অপর কেউই অবশিষ্ট
ছিল না। কাফিরগণ এ সুযোগে মুসলমানদের সত্তর বক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বদর
যুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে
বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবূ সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মদ জীবিত আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাঁর উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল লোকদের মধ্যে কি আবূ কুহাফার
পুত্র (আবূ বকর (রাঃ) জীবিত আছে?’ পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, ‘লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র (উমর (রাঃ)
জীবিত আছে?’ তারপর সে নিজ লোকদের নিকট
গিয়ে বলল, ‘এরা সবাই নিহত হয়েছে।’ এ
সময় উমর (রাঃ) ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওহে আল্লাহর শত্রু! আল্লাহর শপথ, তুমি মিথ্যা বলেছো। যাদের তুমি নাম উচ্চারণরণ
করেছো তারা সবাই জীবিত আছেন। তোমাদের জন্য চরম পরিণতি অবশিষ্ট রয়েছে।’
আবূ
সুফিয়ান বলল, আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ।
যুদ্ধ তো বালতির ন্যায়। তোমরা তোমাদের লোকজনের মধ্যে নাক-কান কর্তিত দেখবে, আমি এর আদেশ করিনি কিন্তু তা আমি অপছন্দও
করিনি। এরপর বলতে লাগল, ‘হে হুবাল (মূর্তি)! তুমি
উন্নত শির হও।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণকে
উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমরা এর উত্তর দিবে না?’ তারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ তা‘আলাই সর্বোচ্চ
মর্যাদাবান, তিনই মাহিমান্বিত।’ আবূ
সুফিয়ান বলল, আমাদের উয্যা (দেবতা)
রয়েছে, তোমাদের উয্যা নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা
কি এর উত্তর দিবে না?’ বারা (রাঃ) বলেন, ‘সাহাবাগণ বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি বলব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘তোমরা বল আল্লাহ আমাদের
সাহায্যকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সাহায্যকারী
বন্ধু নেই।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৬. রাতে যখন (শত্রুর) ভয়ে
ভীত-সন্ত্রস্ত হয়
২৮২৬।
কুতায়বা (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক সুন্দর, সর্বাধিক
দানশীল ও সর্বাধিক শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, একবার এমন হয়েছিল যে, মদিনাবাসী একটি আওয়াজ শুনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে
গিয়েছিল। তিনি বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহা (রাঃ) এর গদিবিহীন ঘোড়ায় আরোহন করে তরবারী ঝুলিয়ে
তাদের সম্মুখে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি এ ঘোড়াটিকে দ্রুতগামী পেয়েছি।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৭. যে ব্যক্তি শত্রু দেখে
উচ্ছস্বরে বলে, “বিপদ আসন্ন!” যাতে
লোকদেরকে তা শুনাতে পারে
২৮২৭।
মক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
গাবাহ নামক স্থানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মদিনা থেকে বের হলাম। যখন আমি গাবাহার
উচ্চস্থানে পৌঁছলাম, সেখানে আমার সাথে আবদুর
রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) এর গোলামের সাক্ষাত হল। আমি বললাম, আশ্চর্য! তোমার কি হয়েছে? সে বলল, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুগ্ধবতী উটনীগুলো ছিনতাই হয়েছে। আমি বললাম, কারা ছিনতাই করেছে? সে বলল, গাতফান
ও ফাযারাহ গোত্রের লোকেরা। তখন আমি বিপদ, বিপদ
বলে তিনবার চিৎকার দিলাম। আর মদিনার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে যতলোক ছিল সকলকে
আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। এরপর আমি দ্রুত গিয়ে ছিনতাইকারীদের পেয়ে গেলাম। তারা উটনীগুলোকে
নিয়ে যাচ্ছিল।
আমি
তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। আর বলতে লাগলাম, আমি আকওয়ায়ের পুত্র (সালামা) আর আজ কলিনাদের
ধ্বংসের দিন। আমি তাদের থেকে উটগুলো ছিনিয়ে নিলাম, তখনও
তারা পানি পান করতে পারেনি। আর আমি সেগুলোকে হাকিয়ে নিয়ে আসছিলাম। এ সময় নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথ আমার সাক্ষাত হয়, তখন আমি বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! লোকগুলো পিপাসার্ত। আমি এত দ্রুততার সাথে কাজ সেরেছি যে, তারা পানি পান করার অবকাশ পায়নি। শীঘ্র তাদের
পেছনে সৈন্য পাঠিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, ‘হে ইবনুু আকওয়া! তুমি তাদের উপর জয়ী হয়েছ, এখন তাদের ব্যাপার ছাড়। তারা তাদের গোত্রের
নিকট পৌঁছে গেছে, তথায় তাদের আতিথেয়তা
হচ্ছে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৮. তীর নিক্ষেপ কালে যে বলেছে, এটা লও (পালিও না) আমি অমুকের পুত্র। আর
সালামা (ইবন আকওয়া (রাঃ) তীর নিক্ষেপকালে) বলেছেন, এটা
লও (পালিও না) আমি আকওয়ার পুত্র
২৮২৮।
উবাইদুল্লাহ (রহঃ) ... আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, এক ব্যাক্তি বারা ইবনু
আযিব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল এবং বলল, হে
আবূ উমারাহ! আপনারা কি হুনায়নের যুদ্ধে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? বারা (রাঃ) বললেন, (আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন), আর আমি তা শুনেছিলাম, সেদিন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। আবূ সফিয়ান ইবনু হারিস (রাঃ) তাঁর খচ্চরের
লাগাম ধরেছিলেন। যখন মুশরিকগণ তাঁকে ঘিরে ফেলল, তখন
তিনি অবতরণ করলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি
আল্লাহর নাবী, মিথ্যা নয়। আমি আবদুল
মুত্তালিবের সন্তান। তিনি (বারা) (রাঃ) বলেন, সেদিন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা সুদৃঢ় আর কাউকে দেখা যায়নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯০৯. শত্রুপক্ষ কারো মীমাংসা মেনে
(দুর্গ থেকে) বেরিয়ে আসলে
২৮২৯।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়যার ইয়াহুদীরা সাদ ইবনু মুআয (রাঃ)-এর
মীমাংসায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তখন তিনি ঘটনাস্থলের নিকটেই ছিলেন। তখন সাদ
(রাঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি নিকটবর্তী হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা, তোমাদের নেতার প্রতি দন্ডায়মান হও।’ তিনি এসে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘এরা তোমার মীমাংসায় সম্মত হয়েছে। (কাজেই
তুমিই তাদের ব্যাপারে ফয়সালা কর)।’ সাদ (রাঃ) বলেন, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের
মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হবে এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা
হবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালার
অনুরূপ ফয়সালাই করেছ।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯১০. বন্দীকে হত্যা করা এবং হাত
পা বেঁধে হত্যা করা
২৮৩০।
ইসমাঈল (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথায় শিরস্ত্রান পরিহিত অবস্থায় (মক্কায়) প্রবেশ করেন। যখন
তিনি তা খুলে ফেললেন, এক ব্যাক্তি এসে বলল, ইবনু খাতাল কাবার পর্দা ধরে জড়িয়ে আছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তাকে হত্যা কর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯১১. স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ করবে
কি? এবং যে বন্দীত্ব বরণ করেনি আর যে ব্যক্তি
নিহত হওয়ার সময় দু' রাক'আত (সালাত) আদায় করল
২৮৩১।
আবূল ইয়অমান (রহঃ) ... আমর ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ব্যাক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য
প্রেরণ করেন এবং আসিম ইবনু সামিত আনসারীকে তাদের দলপতি নিযুক্ত করেন। যিনি আসিম
ইবনু উমর খাত্তাবের মাতামহ ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদআত
নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি
প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের কাছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তারা
প্রায় দু’শত তীরন্দাজ ব্যাক্তিকে তাদের পচাদ্ধবনে প্রেরণ করে। এরা তাঁদের চিহৃ
অনুসরণ করে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদিনা থেকে সাথে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে
খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের
সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। এরপর এরা তাঁতের পদচিহৃ
অনুসরণ করে চলতে লাগল।
যখন
আসিম ও তার সাথীগণ তাদের দেখলেন, তখন তাঁর একটি উচু স্থানে
আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিরগণ তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর।
আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের
মধ্য থেকে কাউকে আমরা হতা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেত আসিম ইবনু সাবিত (রাঃ)
বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ
কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ হতে আপনার নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিন।’ অবশেষে কাফিরগণ তীর নিক্ষপ
করতে শুরু করল আর তারা আসিম (রাঃ) সহ সাতজনকে শহীদ করল।
এরপর
অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইবনু দাসিনা (রাঃ) ও
অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ
করলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন
তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে (সেই রশি দিয়ে) তাঁদের বেধে ফেললো। তখন তৃতীয়জন
বলে উঠলেন, ‘সূচনাতেই বিশ্বাসঘাতকতা!
আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাবো না, আমি
তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব, যারা শাহাদাত বরণ করেছে।’
কাফিরগণ তাঁকে তাদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার
করেন। তখন তারা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাই ও ইবনু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়।
অবশেষে
তাদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এ বদর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কথা। তখন
খুবাইবকে হারিস ইবনু আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব
(রাঃ) হারিস ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রাঃ) কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী
থাকেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে উবাইদুল্লাহ ইবনু
আয়ায অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা
জানিয়েছেন যে, যখন হারিসের পুত্রগণ
খুবাইব (রাঃ)-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন
তিনি তাঁর নিকট থেকে ক্ষৌর কাট সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন
হারিসের কন্যা তাকে এক খানা ক্ষুর ধার দির। (সে বলেছে) সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক
ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং
খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহেরা দেখে বুঝতে
পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি
বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনো আমি তা করবো না।
(হারিসের কন্যা বলল)
আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের ন্যায় উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদিন
দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায়
আঙ্গুর ছাড়া থেকে খাচ্ছেন, যা তার হাতেই ছিল। অথচ এ
সময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত
জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান
করেছেন। এরপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হেরেম থেকে হিল্লের দিকে নিয়ে বের
হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব (রাঃ) তাদের
বললেন, আমাকে দু’ রাকাআত সালাত
(নামায/নামাজ) আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দান করল। তিনি দু’ রাকাআত
সালাত আদায় করে নিলেন।
তারপর
তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে
যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাত
(নামায/নামাজ)কে দীর্ঘায়িত করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন।’
তারপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেনঃ ‘‘যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন
আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না
কেন, (তাতে আমার কিছু যায় আসে না)। আমার এ মৃত্যু
আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে
আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।’’ অবশেষে হারিসের
পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয়
তার জন্য দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের এ রীতি খুবাইব (রাঃ)-ই প্রবর্তন করে
গেছেন।
যেদিন
আসিম (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর
দুআ কবুল করেছিলেন। সেদিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর
সাহাবাগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা’ যা’ আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন।
আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানে হয় যে, আসিম
(রাঃ)-কে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর নিকট এক ব্যাক্তিকে প্রেরণ করে, যাতে সে ব্যাক্তি তাঁর মরদেহ থেকে কিছু অংশ
কেটে নিয়ে আসে। যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর
যুদ্ধের দিন আসিম (রাঃ) কুরাইশদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিকে হত্যা করেছিলেন।
আসিমের মরদেহের (হেফাজতের জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিক হল (এই মৌমাছিরা) তাঁর দেহ
আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করল। ফলে তারা তাঁর দেহে হতে কোন এক
টুকরা গোশত কেটে নিতে সক্ষম হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৯১২. বন্দীকে মুক্ত করা। এ বিষয়ে
আবু মুসা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে
২৮৩২।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবূ মূসা (আশআরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা
বন্দীকে মুক্ত কর, ক্ষুধার্তকে আহার দান কর
এবং রোগীর সেবা-শুশ্রুষা কর।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১২. বন্দীকে মুক্ত করা। এ বিষয়ে
আবু মুসা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে
২৮৩৩।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কোরআনে যা কিছু
আছে তা ছাড়া আপনাদের নিকট ওহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি
বললেন, না, সে আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে
বিদীর্ন করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান
করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ
ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। আমি বললাম, এ
সহীফাটিতে কি আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান, বন্দী
মুক্তকরণ এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় (এ সম্পর্কিত
নির্দেশ)।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৩. মুশরিকদের মুক্তিপণ
২৮৩৪।
ইসমাঈল ইবনু উয়াইস (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আনসারীগণের কয়েকজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুমতি চেয়ে বললেন, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি যদি আমাদের অনুমতি দান করেন, তবে
আমরা আমাদের ভাগ্নে আব্বাসের মুক্তিপণ ছেড়ে দিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, একটি দিরহামও ছেড়ে দিবে না।
ইব্রাহীম
(রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বাহরাইন থেকে অর্থ সম্পদ আনা হয়। তখন তার
নিকট আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে
কিছু দিন। আমি আমার নিজের মুক্তিপণ আদায় করেছি এবং আকীলেরও মুক্তিপণ আদায় করেছি।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিয়ে নিন এবং তার কাপড়ে দিয়ে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৩. মুশরিকদের মুক্তিপণ
২৮৩৫।
মাহমুদ (রহঃ) ... জুবাইর (ইবনু মুতয়িম) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আর তিনি (কাফির থাকা অবস্থায়) বদর যুদ্ধে
বন্দীদের মুক্ত করার জন্য (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট)
এসেছিলেন। তিনি বললেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মাগরিবের সালাতে সূরায়ে তূর পড়তে শুনেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৪. হারবী (দারুল হারনের
অধিবাসী) যদি নিরাপত্তা ব্যতীত দারুল ইসলামে প্রবেশ করে
২৮৩৬।
আবূ নুআইম (রহঃ) ... সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক সফরে মূশরিকদের একদল গুপ্তচর তাঁর নিকট
এল এং তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল ও কিছুক্ষণ পরে চলে গেল। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাকে খুজে আন এবং হত্যা কর।’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার মালপত্র হত্যাকারীকে দিয়ে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৫. জিম্মীদের নিরাপত্তার জন্য
যুদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে গোলাম বানানো যাবে না
২৮৩৭।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, (আমার পর যিনি খলিফা হবেন)
আমি তাঁকে এ অসীয়ত করছি যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর
রাসূল এর পক্ষ থেকে কাফিরদের সাথে কৃত অঙ্গীকার যেন যথাযথভাবে পূরণ করা হয়, তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধ করা হয়, তাদের সামর্থ্যের বাইরে তাদের উপর যেন জিযিয়
(নিরাপত্তা কর) ধার্য করা না হয়।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৭. প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন
প্রদান
باب هَلْ يُسْتَشْفَعُ إِلَى أَهْلِ الذِّمَّةِ وَمُعَامَلَتِهِمْ
১৯১৬.
পরিচ্ছেদঃ জিম্মিদের জন্য সুপারিশ করা যাবে কি এবং তাদের সাথে আচার-আচরণ
২৮৩৮।
কাবীসা (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
(কোন এক সময়) বললেন, বৃহস্পতিবার! হায়
বৃহস্পতিবার! এরপর তিনি কাঁদতে শুরু করলেন, এমনকি
তাঁর আশ্রুতে (যমিনের) কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলতে লাগলেন, বৃহস্পতিবারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, তোমার আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে আস, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে এরপর
তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হয। এতে সাহাবীগণ পরস্পর মতপার্থক্য করেন। অথচ নাবীর
সম্মুখে মতপার্থক্য সমীচীন নয়। তাদের কেউ কেউ বললেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া ত্যাগ করেছেন?’
তিনি
বললেন, ‘আচ্ছা’ আমাকে আমার অবস্থায়
থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহবান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি
তা উত্তম। ’ অবশেষে তিনি ইন্তেকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। (১) মুশরিকদেরকে
আরব উপদ্বীপ থেকে বিতাড়িত কর, (২) প্রতিনিধি দলকে আমি
যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও আনুরূপ দিও (রাবী বলেন) তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে
গিয়েছি। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইবনু
মুহাম্মদ (রহঃ) ও ইয়াকুব (রহঃ) বলেন, আমি
মুগীরা ইবনু আবদুর রাহমানকে জাযীরাতুল আরব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, তাহল
মক্কা, মদিনা ইয়ামামা ও ইয়ামান।
ইয়াকূব (রহঃ) বলেন, ‘তিহামা আরম্ভ হল ‘আরজ
থেকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৮. প্রতিনিধিদলের আগমন উপলক্ষে
সুসজ্জিত হওয়া
২৮৩৯।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... (আবদুল্লাহ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর
(রাঃ) একজোড়া রেশমী কাপড় বাজরে বিক্রি হতে দেখতে পেলেন। তিনি তা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ রেশমী কাপড় জোড়া আপনি
খরিদ করুন এবং ঈদ ও প্রতিনিধিদল আগমন উপলক্ষে এর দ্বারা আপনি সজ্জিত হবেন। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ লেবাস তো তার (আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই। অথবা (বলেন, রাবীর সন্দেহ) এরূপ লেবাস সে-ই পরিধান করে
(আখিরাতে) যার কোন অংশ নেই।’ এমতাবস্থায় উমর (রাঃ) কিছু দিন অবস্থান করেন, যে পরিমান সময় আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছে ছিল।
এরপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি রেশমী জুব্বা উমর (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে
দেন। তিনি তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে আরজ
করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি
বলেছিলেন যে, এ তো তারই লেবাস (আখিরাতে)
যার কোন অংশ নাই, কিংবা (রাবীর সন্দেহ) এ
লেবাস তো সে-ই পরিধান করে, যার (আখিরাত) কোন অংশ নাই।
এরপরও আপনি তা আমার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, (এজন্য প্রেরণ করেছি যে,) তুমি তা বিক্রয় করে ফেলবে অথবা (রাবীর সন্দেহ)
বলেছেন, (এ জন্য প্রেরণ করেছি যে), তুমি তা তোমার কোন কাজে লাগাবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯১৯. কিভাবে শিশু-কিশোরদের নিকট
ইসলাম পেশ করা হবে?
২৮৪০।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর
(রাঃ) কয়েকজন সাহাবীসহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ইবনু
সাইয়াদের কাছে যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে
খেলা-ধুলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইবনু সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (আগমন সম্পর্কে) সে কোন কিছু টের
না পেতেই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করলেন।
এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (হে ইবনু সাইয়াদ!) তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল? তখন ইবনু সাইয়াদ তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মি লোকদের রাসূল। ইবনু সাইয়াদ নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আপনি
এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
বললেন, আমি আল্লাহ্ তা'আলা ও তাঁর সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি।
নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি
কি দেখ? ইব্ন সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য সংবাদ ও মিথ্যা সংবাদ সবই
আসে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্র্রকৃত
অবস্থা তোমার নিকট সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে আছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, আচ্ছা! আমি আমার অন্তরে
তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছে (বলতো তা’ কি?) ইবনু সাইয়াদ বলল, তা’
হচ্ছে ধুয়া। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আরে থাম, তুমি
তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর (রাঃ) বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই।
নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি
সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে
পারবে না আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে
তাকে হত্যা করে তোমার কোন লাভ নেই। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও উবাই ইবনু কাব (রাঃ) উভয়ে সে খেজুর বৃক্ষের নিকট গমন করেন, যেখানে ইবনু সাইয়াদ অবস্থান করছিল। যখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে পৌঁছলেন, তখন
তিনি খেজুর ডালের আড়ালে চলতে লাগলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল যে, ইবনু সাইয়াদের অজ্ঞাতসারে তিনি তার কিছু কথা
শুনে নিবেন। ইবনু সাইয়াদ নিজ বিছানা পেতে চাঁদর মুড়ি দিয়ে শুয়েছি এবং কি কি যেন
গুন গুন করছিল। তার মা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখে ফেলেছিল যে, তিনি খেজুর বৃক্ষের আড়ালএ আসছেন।
তখন
সে ইবনু সাইয়াদকে বলে উঠল, হে সাফ! আর এ ছিল তার নাম।
সে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলাটি যদি তাকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে তার ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়ে যেত। আর সালিম
(রহঃ) বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা
করেছেন যে, এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে দাঁড়ালেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলার যথাযথ প্রশংসা
করলেন। তারপর দাজ্জাল সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। আর বললেন, আমি তোমাদের দাজ্জাল থেকে সতর্ক কদদিচ্ছি।
প্রত্যেক নাবীই তার সম্প্রদায়কে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। নূহ (আলাইহিস
সালাম) তাঁর সম্প্রদায়কেও দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে
তার সম্পর্কে এমন একটি কথা জানিয়ে দিব, যা
কোন নাবী তাঁর সম্প্রদায়কে জানান নি। তোমরা যেন রেখ যে, সে হবে কানা আর অবশ্যই আল্লাহ কানা নন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২১. যদি কোন সম্প্রদায় দারুল
হারবে ইসলাম গ্রহন করে, আর তাদের ধন-সম্পদ ও
জমিজামা থাকলে তা তাদেরই থাকবে
بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْيَهُودِ: أَسْلِمُوا تَسْلَمُوا
قَالَهُ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
১৯২০.
ইয়াহুদিদের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ ইসলাম
গ্রহন কর, নিরাপত্তা লাভ করবে। এ
বাণী মাকবুরী আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
২৮৪১।
মাহমুদ (রহঃ) ... উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
বিদায় হাজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আগামীকাল আপনি মক্কায় পৌঁছে
কোথায় অবতরণ করবেন? তিনি বললেন, আকীল কি আমাদের জন্য কোন ঘর বাড়ী অবশিষ্ট
রেখেছে? এরপর বললেন, আমরা আগামীকাল খালফে বানূ কানানার মূহাসসাব
নামক স্থানে অবতরণ করব। যেখানে কুরায়েশ লোকেরা কুফুরীর উপর শপথ করেছিল। আর তা
হচ্ছে এই যে, বানূ কানানা ও কুরায়েশগণ
একত্রে এ শপথ করেছিল যে, তারা বানূ হাশেমের সহিত
ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তাদের নিজ গৃহে আশ্রয়ও দিবে না।
যুহরী
(রহঃ) বলেন, খালফ হচ্ছে একটি উপত্যকা।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২১. যদি কোন সম্প্রদায় দারুল
হারবে ইসলাম গ্রহন করে, আর তাদের ধন-সম্পদ ও
জমিজামা থাকলে তা তাদেরই থাকবে
২৮৪২।
ইসমাঈল (রহঃ) ... আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর
(রাঃ) হুনাইয়া নামক তার এক আযাদকৃত গোলামকে সরকারী চারণভূমির তত্ত্বাবধানে নিয়োগ
করেন। আর তাকে আদেশ করেন, হে হুনাইইয়া! মুসলমানদের
সাথে অত্যন্ত বিনয়ী থাকবে, মজলুমের বদ দুআ থেকে বেঁচে
থাকবে। কারণ মজলুমের দু‘আ কবূল হয়! আর স্বল্প সংখ্যক উট ও স্বল্প সংখ্যক বকরীর
মালিককে এ (চারণভূমিতে) প্রবেশ করতে দিবে। আর আবদুর রাহমান ইবনু আওফ ও উসমান ইবনু
আফফান (রাঃ)-এর পশুর ব্যাপারে সতর্ক থাকবে (প্রবেশ করতে দিবে না)।কেননা, যদি তাদের পশুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে তারা তাদের কৃষি ক্ষেত ও খেজুর বাগানের
প্রতি মনোনিবেশ করবেন।
কিন্তু
স্বল্প সংখ্যক উট-বকরীর মালিকদের পশু ধ্বংস হয়ে গেলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আমার
নিকট উপস্থিত হবে। আর বলবে, হে আমিরুল মুমিনীন! হে
আমিরুল মুমিনীন আমি কি তাদের বঞ্চিত করতে পারব? হে
অবুঝ! সুতরাং পানি ও ঘাস দেওয়া আমার পক্ষে সহজ, স্বর্ণ-রৌপ্য
দেওয়ার চাইতে। আল্লাহর শপথ! এ সব লোকেরা মনে করবে, আমি
তাদের প্রতি জুলুম করেছি। এটা তাদেরই শহর, জাহেলী
যুগে তারা এতে যুদ্ধ করেছে, ইসলামের যুগে তারা এতে
ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে মহান আল্লাহ্র শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, যে সব ঘোড়ার উপর আমি যোদ্ধাগণকে আল্লাহর
রাস্তায় আরোহণ করিয়ে থাকি যদি সেগুলো না হতো তবে আমি তাদের দেশের এক বিঘত পরিমাণও
জমিও সংরক্ষণ করতাম না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২২. ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম
তালিকাভুক্ত করা
২৮৪৩।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের
মধ্যে যারা ইসলামের কলেমা উচ্চারণ করেছে, তাদের
নাম তালিকাভুক্ত করে আমাকে দাও। হুযাইফা (রাঃ) বলেন, তখন
আমরা এক হাজার পাঁচশ লোকের নাম তালিকাভুক্ত করে তাঁর নিকট পেশ করি। তখন আমরা বলতে
লাগলাম, আমরা একহাজার পাঁচশত লোক
এক্ষণে আমাদের ভয় কিসের? (রাবী) হুযাইফা (রাঃ) বলেন, পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি যে, আমরা এমনভাবে ফিতনা পতিত হয়েছি যাতে লোকেরা
ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় একা একা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২২. ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম
তালিকাভুক্ত করা
২৮৪৪।
আবদান (রহঃ) ... আ‘মাশ (রহঃ) থেকে এ রিওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন, তাতে উল্লেখ হয়েছে, আমরা তাদের পাঁচশ পেয়েছি। আবূ মু‘আবিয়ার
বর্ণনা হয়েছে, ছয়শ’ হতে সাতশ’ এর
মাঝামাঝি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২২. ইমাম কর্তৃক লোকদের নাম
তালিকাভুক্ত করা
২৮৪৫।
আবূ নু‘আইম (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম
তালিকাভুক্ত করা হয়েছে আর আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ের সংকল্প করেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফিরে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করে নাও।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৩. আল্লাহ তা’আলা মন্দ লোকের
দ্বারা কখনো দ্বীনের সাহায্য করেন
২৮৪৬।
আবূল ইয়ামান ও মাহমুদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। তখন
তিনি ইসলামের দাবিদার এক ব্যাক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এ ব্যাক্তি জাহান্নামী অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল, তখন সে লোকটি ভীষণ যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন
বলা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে লোকটি
সম্পর্কে আপনি বলেছিলেন, সে লোকটি জাহান্নামী। আজ
সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামে গেছে। রাবী বলেন, একথার উপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ
সৃষ্টির উপক্রম হয় হয় এবং তারা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন, এসময় সংবাদ এল যে, লোকটি মরে যায়নি বরং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
যখন রাত্রি হল, সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ
করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
এ সংবাদ পৌঁছানো হল, তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহ আকবার! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার বান্দা এবং তাঁর রাসূল।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকদের মধ্যে ঘোষণা দিলেন য়ে, মুসলমান ব্যতীত কেউ বেহেশতে প্রবেশ করবে না।
আর আল্লাহ তা‘আলা (কখনো কখনো) এই দ্বীনকে মন্দ লোকের দ্বারা সাহায্য করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৪. শত্রুর আশংকা দেখা দিলে
আমীরের অনুমতি ব্যতীত নিজেই সেনাদলেরে অধিনায়কত্ব গ্রহণ করা
২৮৪৭।
ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে গিয়ে বললেন, (মোতার যুদ্ধে) যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) পতাকা
ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন, এরপর
(জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। তারপর
আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) পতাকা ধারণ করেছেন এবং শাহাদাত বরণ করেছেন। এরপর
খালিদ ইবনু অলীদ (রাঃ) মনোনয়ন ছাড়াই পতাকা ধারণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে বিজয় দান করেছেন
আর বললেন, এ আমার নিকট পছন্দনীয় নয়
অথবা রাবী বলেন, তাদের কাছে পছন্দনীয় নয় যে, তারা দুনিয়ায় আমার নিকট অবস্থান করতো। রাবী
বলেন, (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছিলেন) আর তাঁর চক্ষু যুগল হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৫. সাহায্যকারী দল প্রেরণ করা
২৮৪৮।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
রি-ল যাকওয়ান, উসাইয়া ও বানূ লাহইয়ান
গোত্রের কিছু লোক এসে বলল, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি।
এবং তারা তাঁর নিকট তাদের সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় সাহায্য প্রার্থনা করলো। তখন নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্তর জন আনসার পাঠিয়ে তাদের সাহায্য করলেন। আনাস
(রাঃ) বলেন, আমরা তাদের ক্বারী নামে
আখ্যায়িত করতাম তারা দিনের বেলায় লাকড়ী সংগ্রহ করতেন, আর রাত্রিকালে সালাত (নামায/নামাজ) মগ্ন
থাকতেন। তারা তাঁদের নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল।
যখন
তাঁরা বীরে মাউনা নামক স্থানে পৌঁছালো, তখন
তারা বিশ্বাসঘাতকতা করল এবং তাঁদের হত্যা করে ফেলল। এ সংবাদ শোনার পর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিল, যাকওয়ান
বানূ লাহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে দু‘আ করে একমাস যাবত কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। কাতাদা
(রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) আমার নিকট
বর্ণনা করেছেন যে, তারা তাঁদের সম্পর্কে
কিছুকাল যাবৎ কুরআনের এ আয়াতটি পড়তে থাকেনঃ ‘আমাদের সংবাদ আমাদের কওমের নিকট
পৌঁছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের
সাক্ষাত পেয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তিনি আমাদের সন্তুষ্ট
করেছেন।’ এরপর এ আয়াত পাঠ করা বন্ধ করে দেওয়া হয় অর্থাৎ মানসুখ হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৬. শত্রুর উপর বিজয় লাভ করে
তাদের বহিরাঙ্গনের তিন দিন অবস্থান করা
২৮৪৯।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) ... আবূ তালহা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর বিজয় লাভ করতেন, তখন
তিনি তাদের বহিরাঙ্গনে তিন রাত অবস্থান করতেন। মু‘আয ও আবদুল আ‘লাও আবূ তালহা
(রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় রাওহা ইবনু
উবাদা (রাঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৭. সফর ও যুদ্ধক্ষেত্রে গনীমতের
মাল বন্টন করা। রাফে (রাঃ) বলেন, আমরা যুল-হুলাইফা নামক
স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম । তখন আমরা (গনীমত স্বরূপ) উট ও বকরী লাভ
করলাম । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দশটি বকরীকে একটি উটের সমান গন্য করেন।
২৮৫০।
হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জিরানা নামক স্থান থেকে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলেন, যেখানে তিনি হুনাইন যুদ্ধের গনীমত বণ্টন
করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৮. যদি মুশরিকরা মুসলিমের মাল
লুট করে নেয় তারপর মুসলিমগণ (বিজয় লাভের) মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হয়।
قَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ ذَهَبَ فَرَسٌ لَهُ، فَأَخَذَهُ الْعَدُوُّ، فَظَهَرَ عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ فَرُدَّ عَلَيْهِ فِي زَمَنِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، وَأَبَقَ عَبْدٌ لَهُ فَلَحِقَ بِالرُّومِ، فَظَهَرَ عَلَيْهِمُ الْمُسْلِمُونَ، فَرَدَّهُ عَلَيْهِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ بَعْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
ইবনু
নুমায়র (র) ...... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন যে, তাঁর একটি ঘোড়া ছুটে গেলে
শত্রু তা আটক করে। এরপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় অর্জন করেন। তখন সে ঘোড়াটি
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আমলেই তাকে ফেরত দেওয়া হয় । আর একটি গোলাম পলায়ন করে রোমের
কাফিরদের সাথে মিলিত হয়। এরপর মুসলিমগণ তাদের উপর বিজয় লাভ করেন। তখন খালিদ ইবনু
ওয়ালিদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগের পর তা তাঁকে ফেরত দেন।
২৮৫১।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু উমর (রাঃ) এর একটি গোলাম পলায়ন করে
রোমের মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়। এরপর খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) রোম জয় করেন। তখন সে
গোলামটি আবদুল্লাহ ইবনু উমর) (রাঃ) কে ফেরত দিয়ে দেন। আর আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
এর একটি ঘোড়া ছুটে গিয়ে রোমে পৌঁছে যায়। এরপর উক্ত এলাকা মুসলমানদের করতলগত হলে
তারা ঘোড়াটি ইবনু উমর (রাঃ) কে ফেরত দিয়ে দেন। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন,عَارَ শব্দটিعَيْر থেকে উদগত। আর তা হল বন্য গাধা।عَارَ
এর অর্থهَرَبَ
অর্থাৎ পলায়ন করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৮. যদি মুশরিকরা মুসলিমের মাল
লুট করে নেয় তারপর মুসলিমগণ (বিজয় লাভের) মাধ্যমে তা প্রাপ্ত হয়।
২৮৫২।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত য়ে, তিনি একটি ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন, যখন মুসলমানগণ রোমীদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, সে সময় মুসলমানদের অধিনায়ক হিসাবে খালিদ ইবনু
ওয়ালিদ (রাঃ) কে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) নিয়োগ করেছিলেন। সে সময় শত্রুরা তাঁর
ঘোড়াটিকে নিয়ে যায়। এরপর যখন শত্রুদল পরাজিত হল তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) তাঁর
ঘোড়াটি তাঁকে ফেরত দেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৯. যে ব্যক্তি ফার্সি অথবা অন্য
কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার মধ্যে (৩০ঃ ২২) এবং তিনি আরো বলেছেনঃ
আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি (১৪ঃ ৪)
২৮৫৩।
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের
যুদ্ধের দিন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার
একটি বকরী ছানা যবেহ করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যবের আটা পাকিয়েছে। আপনি কয়েকজন সঙ্গীসহ
আসুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, হে আহলে খন্দক! জাবির তোমাদের জন্য খাবার
আয়োজন করেছে, তাই তোমরা চল।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৯. যে ব্যক্তি ফার্সি অথবা অন্য
কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার মধ্যে (৩০ঃ ২২) এবং তিনি আরো বলেছেনঃ
আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি (১৪ঃ ৪)
২৮৫৪।
হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) ... উম্মে খালিদ বিনতে খালিদ ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী) আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত। উম্মে
খালিদ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাঁর মহরে
নব্যুতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছোট
মেয়ে তাকে করতে দাও।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে
বললেন, এ কাপড় পরিধান কর আর
পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর, পুরানো
কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর। (অর্থাৎ দীর্ঘ দিন পরিধান কর)।
আবদুল্লাহ (ইবনু মুবারক) (রহঃ) বলেন, উম্মে
খালিদ (রাঃ) এতদিন জীবিত থাকেন যে, তাঁর
আলোচনা চলতে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯২৯. যে ব্যক্তি ফার্সি অথবা অন্য
কোন অনারবী ভাষায় কথা বলে। আল্লাহ তা'আলার
বাণীঃ আর তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতার মধ্যে (৩০ঃ ২২) এবং তিনি আরো বলেছেনঃ
আর আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি (১৪ঃ ৪)
২৮৫৫।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাসান ইবনু আলী (রাঃ) সাদকার খেজুর থেকে একটি
খেজুর নিয়ে তা তাঁর মুখে রাখেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কাখ্-কাখ্ (ফেলে দাও, ফেলে দাও) বললেন, তুমি কি জানো না যে, আমরা (বানূ হাশিম) সাদকা খাই না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩০. গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।
আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আর যে ব্যক্তি
গনীমতের মাল আত্মসাৎ করে, সে কিয়ামতের দিন সেই মালসহ
উপস্থিত হবে। (৩ঃ ১৬১)
২৮৫৬।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং গনীমতের মাল আত্মসাত প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।
আর তিনি তা মারাত্মক অপরাধ হওয়া ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় কিয়ামতের
দিন না পাই যে, তার কাঁধে বকরী বয়ে
বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা
হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যাক্তি আমাকে বলবে, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি
তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে
দিয়েছি। অথবা কেউ তাঁর কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন, আমি বলব, আমি
তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা
কেউ তাঁর কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, ইয়া রাসূলল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না; আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩১. গনীমতের সামান্য পরিমান মাল
আত্মসাৎ করা। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে এ বর্ণনায় তিনি
আত্মসাৎকারীর মালপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন" কথাটি উল্লেখ করেন নি। আর এটাই
বিশুদ্ধ।
২৮৫৭।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাহারা দেওয়ার জন্য এক ব্যাক্তি নিযুক্ত ছিল।
তাকে কার্কারা নামে ডাকা হত। সে মারা গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, সে জাহান্নামী! লোকেরা তার
অবস্থা দেখতে গেল তারা একটি আবা পেল যা সে আত্মসাত করেছিল। আবূ আবদুল্লাহ (রহঃ)
বলেন, ইবনু সালাম (রহঃ) বলেছেন, কারকারা।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩২. গনীমতের উট ও বকরী (বন্টনের
পূর্বে) যবেহ করা মাকরুহ
২৮৫৮।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... রাফী ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুল-হুলাইফায় অবস্থান করছিলাম।
লোকেরা ক্ষুধার্ত হয়েছিল। আর আমরা গনীমত স্বরূপ কিছু উট ও বকরী লাভ করেছিলাম। তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের পিছন সারিতে ছিলেন। লোকেরা তাড়াতাড়ি
করে (জন্তু যবেহ করে) ডেগ চড়িয়ে দিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ডেকগুলো (উপুড় করে ফেলার) নির্দেশ দিলেন এবং উপুড় করে ফেলে দেওয়া হল।
এরপর তিনি দশটি বকরীকে একটি উটের সমান ধরে তা বণ্টন করে দিলেন। তার মধ্য থেকে একটি
উট পালিয়ে গেল। লোকদের নিকট ঘোড়া কম ছিল। তারা তা অনুসন্ধানে বেরিয়ে গেল এবং তারা
ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
এরপর
এক ব্যাক্তি উটটির প্রতি তীর নিক্ষেপ করল, আল্লাহ
তা‘আলা তার গতিরোধ করে দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘এ সকল গৃহ পালিত জন্তুর
মধ্যে কতক বন্য জন্তুর মত অবাধ্য হয়ে যায়। সুতরাং যা তোমাদের নিকট হতে পলায়ন করে
তার সঙ্গে এরূপ আচরণ করবে।’ রাবী বলেন, আমার
দাদা রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) বলেছেন, আমরা
আশা করি কিংবা বলেছেন আশংকা করি যে, আমরা
আগামীকাল শত্রুর মুখোমুখী হব। আর আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই। আমরা কি বাঁশের ধারালো
চোকলা দ্বারা যবেহ করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং
(যার যবেহকালে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে (বিসমিল্লাহ পাঠ করা হয়েছে) তা আহার
কর। কিন্তু দাঁত ও নখ দিয়ে নয়। কারণ আমি বলে দিচ্ছিঃ তা এই যে, দাঁত হল হাঁড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৩. বিজয়ের সুসংবাদ দান করা
২৮৫৯।
মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ... জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তুমি কি যুলখালাসা মন্দিরটিকে ধ্বংস করে আমাকে সান্ত্বনা
দিবে না? এ ঘরটি খাসাম গোত্রের একটি
মন্দির ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা বলা হত। এরপর আমি আহমাস গোত্রের দেড়‘শ লোক নিয়ে
রওয়ানা দিলাম। তাঁরা সবাই নিপুন অশ্বারোহী ছিলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে জানালাম যে, আমি ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে
পারি না। তখন তিনি আমার বুকে হাত দ্বারা আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তা
আঙ্গুলির ছাপ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য দু‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাকে ঘোড়ার পিঠে স্থির রাখ এবং
তাকে পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত করুন।’
অবশেষে
জারীর (রাঃ) তথায় গমন করলেন। ঐ মন্দিরিটি ভেঙ্গে দিলেন ও জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সুসংবাদ প্রদানের জন্য দূত প্রেরণ করলেন।
জারীর (রাঃ) এর দূত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, সে সত্তার কসম! আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার
নিকট আসিনি, যতক্ষণ না আমি তাকে
জ্বালিয়ে কাল উটের ন্যায় করে ছেড়েছি। (অর্থাৎ তা জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছি)। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক
লোকদেল জন্য পাঁচবার বরকতের দুআ করলেন। মুসাদ্দাদ (রহঃ) বলেন, হাদীসে উল্লেখিত যুলখালাসা অর্থ খাসাম
গোত্রের একটি ঘর।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৫. (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের
প্রয়োজন নেই
بَابُ مَا يُعْطَى الْبَشِيرُ
وَأَعْطَى كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ ثَوْبَيْنِ حِينَ بُشِّرَ بِالتَّوْبَةِ
১৯৩৪.
পরিচ্ছেদঃ সুসংবাদদাতাকে পুরস্কৃত করা।
কা'ব ইবন মালিক (রাঃ) কে যখন তাওবা কবুলের
সুসংবাদ দান করা হয়, তখন তিনি সংবাদদাতাকে
পুরস্কার স্বরূপ দু'খানা কাপড় দান করেন।
২৮৬০।
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বলেছেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর থেকে (মক্কা থেকে) হিজরতের
প্রয়োজন নেই। কিন্তু জিহাদ ও নেক কাজের নিয়্যাত অবশিষ্ট রয়েছে আর যখন তোমাদের
জিহাদের আহবান জানোান হবে তোমরা বেরিয়ে পড়বে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৫. (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের
প্রয়োজন নেই
২৮৬১।
ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... মুজাশি ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুজাশি‘
তাঁর ভাই মুজালিদ ইবনু মাসউদ (রাঃ) কে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাচে এসে বললেন, ‘এ মুজালিদ আপনার কাছে
হিজরত করার জন্য বাইয়াত করতে চায়। ‘তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর আর
হিজরতের প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বায়য়াত নিচ্ছি।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৫. (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরতের
প্রয়োজন নেই
২৮৬২।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
উবাইদ ইবনু উমাইর (রাঃ) সহ আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গমন করি। তখন তিনি সাবিত পাহাড়ের
উপর অবস্থান করছিলেন। তিনি আমাদের বললেন, ‘যখন থেকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে মক্কা বিজয় দান করেছেন, তখন
হিজরত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৬. প্রয়োজনবোধে জিম্মী অথবা
মুসলিম মহিলার চুল দেখা এবং তাদের বিবস্ত্র করা, যখন
তারা আল্লাহ তা’আলার নাফরমানী করে
২৮৬৩।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাওশাব তায়িফী (রহঃ) ... আবূ আবদুর রাহমান (রহঃ)
থেকে বর্ণিত, আর তিনি ছিলেন উসমান (রাঃ)
এর সমর্থক। তিনি ইবনু আতিয়্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি
আলী (রাঃ) এর সমর্থক ছিলেন, কোন বস্তু তোমাদের সাথী
[আলী (রাঃ)] কে রক্তপাতে সাহস যুগিয়েছে, তা
আমি জানি। আমি তাঁর কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে এবং যুবাইর ইবনু আওয়াম) (রাঃ) কে প্রেরণ করেছেন, আর বলেছেন, তোমরা
খাক বাগান অভিমুখে চলে যাও, সেখানে তোমরা একজন মহিলাকে
পাবে, হাতিব তাকে একটি পত্র
দিয়েছে।’ আমরা সে বাগানে পৌঁছলাম এবং মহিলাটিকে বললাম, পত্রখানি দাও, সে
বলল, (হাতিব) আমাকে কোন পত্র দেয়নি। তখন আমরা বললাম, ‘হয় তুমি পত্র বের করে দাও, নচেৎ আমরা তোমাকে বিবস্ত্র করব। তখন সে মহিলা
কেশের ভাজ থেকে পত্রখানা বের করে দিল।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের পত্রসহ প্রত্যাবর্তনের পর) হাতিবকে ডেকে
পাঠান। তখন সে বলল, ‘আমার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো
করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি কোন কুফরী করিনি, আমার
হৃদয়ে ইসলামের প্রতি অনুরাগ বর্ধিত হয়েছে। আপনার সাহাবীগণের মধ্যে কেউ এমন নেই, মক্কায় যার সাহায্যকারী আত্মীয়-স্বজন না আছে।
যদ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাঁর পরিবার-পরিজন
ধন-সম্পদ রক্ষা করেছেন। আর আমার এমন কেউ নেই। তাই আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে
চেয়েছি। (যার বিনিময়ে তারা আমার মাল-আওলাদ হিফাজত করবে।)’
তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সত্যবাদীরূপে স্বীকার করে নিলেন। উমর
(রাঃ) বললেন, ‘লোকটিকে আমার হাতে ছেড়ে
দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, সে তো মুনাফিকী করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি জানো কি? অবশ্যই
আল্লাহ তা‘আলা আহলে বদর সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কে তিনি
বলেছেন, ‘তোমরা যেমন ইচ্ছা আমল কর।’
একথাই তাঁকে [আলী (রাঃ)] দুঃসাহসী করেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৭. বিজয়ী যোদ্ধাগণকে অভ্যর্থনা
জানানো
২৮৬৪।
আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ... ইবনু আবূ মূলাইকা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু যুবাইর (রাঃ), ইবনু জাফর (রাঃ) কে বললেন, তোমার কি স্মরণ আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইবনু জাফর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, স্মরণ
আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে
ছেড়ে আসেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৭. বিজয়ী যোদ্ধাগণকে অভ্যর্থনা
জানানো
২৮৬৫।
মালিক ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অন্যান্য
শিশুদের সঙ্গে আমরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অভ্যর্থনা
জানানোর জন্য সান্যিয়াতুল বিদা পর্যন্ত গিয়েছিলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৮. জিহাদ হতে প্রত্যাবর্তনের
সময় যা বলবে
২৮৬৬।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনবার তাকবীর বলতেন।
এরপর বলতেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা
প্রত্যাবর্তনকারী, গুনাহ থেকে তাওবাকারী, তাঁরই ইবাদতকারী, প্রশংসাকারী, আমাদের
প্রতিপালকের সিজদাকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অঙ্গিকার সত্য প্রমাণিত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রু
দলকে পরাস্ত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৮. জিহাদ হতে প্রত্যাবর্তনের
সময় যা বলবে
২৮৬৭।
আবূ মা'মার (রহঃ) ... আনাস ইবনু
মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসফান থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আমরা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম, আর
রাসূলল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাওয়ারীর উপর আরোহী ছিলেন। তিনি
সাফিয়্যা বিনতে হুযাই (রাঃ) কে তাঁর পেছনে সাওয়ারীর উপর বসিয়েছিলেন। এই সময় উট
পিছলিয়ে গেল এবং তাঁরা উভয়ে ছিটকে পড়েন। এ দেখে আবূ তালহা (রাঃ) দ্রুত ছুটে এসে
বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ
তা‘আলা আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, আগে মহিলার খোজ নাও। আবূ
তালহা (রাঃ) তখন একখানা কাপড় দিয়ে নিজ মুখমন্ডল ঢেকে তাঁর নিকট আসলেন এবং উক্ত
কাপড়খানি দিয়ে তাঁকে ঢেকে দিলেন। এরপর তাঁদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীকে ঠিক করলেন।
তাঁরা উভয়ে আরোহণ করলেন, আর আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চারপাশে বেষ্টন করে চললাম। যখন আমরা মদিনার
নিকটবর্তী হলাম, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু‘আ পড়লেন,آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, আমরা
তাওবাকারী, আমরা ইবাদাতকারী, আমরা আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী। আর
মদিনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু‘আ পড়তে থাকলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৮. জিহাদ হতে প্রত্যাবর্তনের
সময় যা বলবে
২৮৬৮।
আলী (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ও আবূ তালহা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে চলছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সঙ্গে সাফিয়্যা (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাঁকে নিজ সাওয়ারীতে তাঁর পিছনে বসিয়ে ছিলেন।
পথিমধ্যে এক জায়গায় উটনীটির পা পিছলিয়ে গেল। এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও সাফিয়্যা (রাঃ) ছিটকে পড়ে গেলেন। আর আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর উট থেকে
তাড়াতাড়ি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বললেন, ‘ইয়া নাবী আল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা আমাকে আপনার
জন্য কুরবান করুন। আপনার কি কোন আঘাত লেগেছে? রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না।
তবে তুমি মহিলাটির খোঁজ নাও।’
আবূ
তালহা (রাঃ) একখানা কাপড় দিয়ে মুখমন্ডল ঢেকে তাঁর কাছে গেলেন আর সেই কাপড় দিয়ে
তাঁকে ঢেকে দিলেন। তখন সাফিয়্যা (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি [আবূ তালহা (রাঃ)]
তাঁদের উভয়ের জন্য সাওয়ারীটি উত্তমরূপে বাঁধলেন। আর তাঁরা উভয়ে (তার উপর) আরোহণ
করে চলতে শুরু করলেন। অবশেষে তাঁরা যখন মদিনার উপকন্ঠে পৌঁছলেন অথবা বর্ণণাকারী
বলেন, যখন মদিনার নিকটবর্তী হলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
দু‘আ পড়লেন, ‘‘আমরা প্রত্যাবর্তকারী, তাওবাকারী, ইবাদাতকারী
এবং আমাদের প্রতিপালকের প্রশংসাকারী।’ আর মদিনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি এ দু‘আ
পড়তে থাকেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৯. সফর থেকে পত্যাবর্তনের পর সালাত
আদায় করা
২৮৬৯।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক
সফরে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা যখন মদিনায়
পৌঁছলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘হে জাবির!) মসজিদে প্রবেশ কর এবং দু‘রাকাআত
সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৩৯. সফর থেকে পত্যাবর্তনের পর
সালাত আদায় করা
২৮৭০।
আবূ আসিম (রহঃ) ... কাব (ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
চাশতের সময় সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন
মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪০. সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে
আহার করা, আর আবদুল্লাহ্ ইব্নে উমর
(রাঃ) আগত মেহমানের সম্মানে সওম পালন করতেন না
২৮৭১।
মুহাম্মদ (ইবনু সালাম) (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যখন মদিনায় প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন তিনি একটি উট অথবা
একটি গাভী যবেহ করতেন। আর মুআয (রাঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে অতিরিক্ত
বর্ণনা করেছেন যে, (জাবির (রাঃ) বলেন)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট থেকে একটি উট দু’ উকিয়া ও
এক দিরহাম কিংবা দু’ দিরহাম দ্বারা ক্রয় করেন এবং তিনি যখন সিরার নামক স্থানে
পৌঁছেন, তখন একটি গাভী যবেহ করার
নির্দেশ দেন। এরপর তা যবেহ করা হয় এবং সকলে তাহার গোশত আহার করে। আর তিনি যখন
মদিনায় পৌঁছলেন তখন আমাকে মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়
করার আদেশ দিলেন এবং আমাকে উটের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪০. সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে
আহার করা, আর আবদুল্লাহ্ ইব্নে উমর
(রাঃ) আগত মেহমানের সম্মানে সওম পালন করতেন না
২৮৭২।
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি এক সফর থেকে প্রত্যাবর্তন
করলাম! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘দু’রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে
নাও।’ সিরার হচ্ছে মদিনার উপকন্ঠে একটি স্থানের নাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪১. খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ)
নির্ধারিত হওয়া
২৮৭৩।
আবদান (রহঃ) ... আলী (রাঃ) বর্ণিত, তিনি
বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের
মধ্যে থেকে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম, তাতে একটি জওয়ান উটনীও ছিল।
আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুমুসের মধ্য থেকে আমাকে একটি জওয়ান উটনী
দান করেন। আর আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা
(রাঃ) এর বাসর যাপন করব, তখন আমি বানূ কায়নূকা
গোত্রের জনৈক স্বর্ণকারের সাথে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির
ঘাস (জঙ্গল হতে) সংগ্রহ করে আনব। আমার ইচ্ছা তা স্বর্ণকরদের কাছে বিক্রয় করে তা
দিয়ে আমার বিবাহের ওয়ালিমা সম্পন্ন করব।
ইতিমধ্যে
আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাবপত্র যেমন পালান (বসার আসন) থলে ও রশি ইত্যাদি
একত্রিত করেছিলাম, আর আমার উটনী দুটি জনৈক
আনসারীর হুজরার পার্শ্বে বসা ছিল। আমি আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুজ
কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয় হয়েছে। উটনী দুটির এ
দৃশ্য দেখে আমি অশ্রু সম্বরণ করতে পারলাম না। আমি বললা, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলল, হামযা
ইবনু আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর
সাথে আছে।
আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়দ ইবনু
হারিসা (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার
চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করতে পারলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখিনি। হামযা আমার উট দুটির উপর
অত্যাচার করেছে। সে দু’টির কুজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর ফেড়ে ফেলেছে। আর এখন সে অমুক
ঘরে শরাব পানকারী দলের সাথে আছে।’
তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদরখানি আনতে আদেশ করলেন এবং
চাঁদরখানি জড়ায়ে পাযে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসা (রাঃ) তাঁর অনুসরণ
করলাম। হামযা যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে মত্ত ছিল।
রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাকে তাঁর কাজের জন্য তিরস্কার করতে
লাগলেন। হামযা তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্থ। তার চক্ষু দু’টি ছিল রক্তলাল।
হামযা
তখন রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তাকাল। তারপর সে তীক্ষ্ণ
দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাঁর হাঁটু পানে তাকাল। পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর নাভির
প্রতি তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর মুখমন্ডলের প্রতি তাকাল। এরপর হামযা
বলল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বুজতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্থ
আছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর
আমরাও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম। (এ ছিল মদ হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা)।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪১. খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ)
নির্ধারিত হওয়া
২৮৭৪।
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... উম্মূল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা
বিনতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) এর নিকট
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর তাঁর মিরাস বন্টনের দাবী
করেন। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ
সম্পদ) হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাঁকে প্রদত্ত সম্পদ থেকে রেখে গেছেন। তখন আবূ
বাকর (রাঃ) তাঁকে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের পরিত্যাক্ত সম্পদ
বন্টিত হবে না আমরা যা ছেড়ে যাই, তা সাদকা রূপে গণ্য হয়।’
এতে ফাতিমা বিনতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হলেন এবং
আবূ বকর (রাঃ) সিদ্দীক এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাঁর মৃত্যু
পর্যন্ত বহাল ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর
ফাতিমা (রাঃ) ছয় মাস জীবিত ছিলেন।
আয়িশা
(রাঃ) বলেন, ফাতিমা (রাঃ) আবূ বাকর
সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার
ও ফাদাকের ভূমি এবং মদিনার সাদকাতে তাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে
তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমল করতেন, আমি
তাই আমল করব। আমি তাঁর কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা, আমি আশঙ্কা করি যে, তাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না
যাই। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনার সাদকাকে উমর
(রাঃ) তা আলী ও আব্বাস (রাঃ) কে হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে
পূর্ববৎ রেখে দেন।
উমর
(রাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ সম্পত্তি দু’টিকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপথকালীন সময়ে
ব্যায়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দু’টি তারই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, যিনি মুসলমানদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী খলিফা
হবেন।’ যুহরী (রহঃ) বলেন, এ সম্পত্তি দু’টির ব্যবস্থাপনা
অদ্যবধি সেরূপই রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪১. খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) নির্ধারিত
হওয়া
২৮৭৫।
ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ ফারবী (রহঃ) ... মালিক ইবনুু আউস ইবনু হাদাসান (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আমার পরিবার-পরিজনের সাথে বসা ছিলাম, যখন রোদ প্রখর হল তখন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ)
এর দূত আমার নিকট এসে বলল, আমীরুল মুমিনীন আপনাকে
ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে উমর (রাঃ) এর নিকট পৌঁছলাম। দেখতে পেলাম, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর বসা ছিলেন। যাতে কোন
বিছানা ছিল না। আর তিনি চামড়ার একটি বালিশে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে সালাম
করে বসে পড়লাম। তিনি বললেন, হে মালিক! তোমার গোত্রের
কতিপয় লোক আমার নিকট এসেছেন। আমি তাদের জন্য স্বল্প পরিমাণ দান সামগ্রী প্রদানের
আদেশ দিয়েছি। তুমি তা বুঝে নিয়ে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দাও।
আমি
বললাম, হে আমিরুল মুমিনীন! এ
কাজটির জন্য আমাকে ছাড়া যদি অন্য কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি বললেন, ওহে তুমি তা গ্রহণ কর। আমি তাঁর কাছেই বসা ছিলাম। এমন সময়
তাঁর দারোয়ান ইয়ারফা এসে বলল, উসমান ইবনুু আফফান, আবদুর রাহমান ইবনু আওফ, যুবাইর ইবনু আওয়াম ও সাদ ইবনু আবূ ওয়াককাস
(রাঃ) আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। উমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তাঁদের
আসতে দাও। তাঁরা এসে সালাম করে বসে পড়লেন। ইয়ারফা ক্ষণিক সময় পরে এসে বলল, আলী ও আব্বাস (রাঃ) আপনার সাক্ষাতের জন্য
অনুমতির অপক্ষোয় আছেন। উমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তাঁদেরকে আসতে দাও। এরূপ তাঁরা উভয়ে প্রবেশ
করে সালাম করলেন এবং বসে পড়লেন। আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে
আমিরুল মুমিনীন! আমার এ ব্যাক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দিন।
বানূ
নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা দান করেছিলেন, তা
নিয়ে তাঁরা উভয়ে বিরোধ করছিলেন। উসমান (রাঃ) এবং তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, আমীরুল
মুমিনীন! এদের মধ্যে মীমাংসা করে দিন এবং তাঁদের একজনকে অপরজন থেকে নিরুদ্ধেগ করে
দিন। উমর (রাঃ) বললেন, একটু থামুন। আমি আপনাদেরকে
সে মহান সত্তার শপথ দিয়ে বলছি, যার আদেশ আসমান ও যমীন স্থির
রয়েছে। আপনারা কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের (নাবীগণ) মীরাস
বন্টিত হয় না। আমরা যা রেখে যাই তা সাদকারূপে গণ্য হয়? এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম নিজেকেই উদ্দেশ্য করেছেন। উসমান (রাঃ) ও তাঁর সাথীগণ বললেন, হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন।
এরপর
উমর (রাঃ) আলী এবং আব্বাস (রাঃ) এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি। আপনারা
কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলেছেন? তাঁরা উভয়ে বললেন, হ্যাঁ, তিনি
এরূপ বলেছেন। উমর (রাঃ) বললেন, এখন এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি
আপনাদের বুঝিয়ে বলছি। ব্যাপার হল এই যে, আল্লাহ
তা‘আলা ফায় (যুদ্ধ ব্যতীত লব্ধ সম্পদ) এর সম্পদ থেকে স্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিশেষভাবে করেছেন যা তিনি ছাড়া কাউকে দান করেন নি। এরপর উমর
(রাঃ) নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ
وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلَا رِكَابٍ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
আর
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল কে তাদের অর্থাৎ ইয়াহুদীদের নিকট থেকে যে ফায় (যুদ্ধ
ব্যতীত লব্ধ সম্পদ) দিয়েছেন, তজ্জন্য তোমরা ঘোড়া কিংবা
উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করোনি। আল্লাহ তা‘আলাই তো যাদের উপর ইচ্ছা তাঁর রাসূলগণকে
কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ তা‘আলা সর্ববষিয়ে সর্বশক্তিমান (৫৯ঃ ৬)।
সুতরাং
এ সকল নির্দিষ্টরূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য
নির্ধারিত ছিল। কিন্তু আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ
সকল সম্পত্তি নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেন নি এবং আপনাদের বাদ দিয়ে অন্য কাউকে
দেননি। বরং আপনাদেরকেও দিয়েছেন এবং আপনাদের কাজেই ব্যয় করেছেন। এ সম্পত্তি থেকে যা
উদ্ধৃত্ত রয়েছে, তা থেকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিজ পরিবার-পরিজনের বাৎসরিক খরচ নির্বাহ করতেন।
এরূপ যা অবশিষ্ট থাকতো, তা আল্লাহর সম্পদে (বায়তুল
মালে) জমা করে দিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজীবন এরূপ
করেছেন। আপনাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা
কি তা অবগত আছেন? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, আমরা
অবগত আছি।
এরপর
উমর (রাঃ) আলী ও আব্বাস (রাঃ) কে লক্ষ্য কবেললেন, আমি
আপনাদের উভয়কে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, আপনারা
কি এ বিষয়ে অবগত আছেন? এরূপ উমর (রাঃ) বললেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওফাত দিলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত একথা বলে তিনি এ সকল সম্পত্তি তিনি নিজ দায়িত্বে
নিয়ে নেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সবের আয় উৎপাদন যে সব
কাজে ব্যয় করতেন, সে সকল কাজে ব্যয় করেন। আল্লাহ
তা‘আলা জানেন যে, তিনি এ ক্ষেত্রে সত্যবাদী, পূণ্যবান, সপথপ্রাপ্ত
ও সত্যাশ্রয়ী ছিলেন।
এরপর
আল্লাহ তা‘আলা আবূ বকর (রাঃ) কে ওফাত দেন। এখন আমি আবূ বকর (রাঃ) এর পক্ষ থেকে
দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমি আমার খিলাফতকালের প্রথম দু’বছর এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে
রেখেছি এবং এর দ্বারা রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)
যা যা করতেন তা করেছি। আল্লাহ তা‘আলাই জানেন যে, আমি
এক্ষেত্রে সত্যবাদী, পূণ্যবান, সুপথপ্রাপ্ত ও সত্যাশ্রয়ী রয়েছি। এরপর এখন
আপনার উভয়ে আমার নিকট এসেছেন। আর আমার সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং আপনাদের
উভয়ের কথা একই। আর আপনাদের ব্যাপার একই। হে আব্বাস (রাঃ)! আপনি আমার নিকট আপনার
ভ্রাতুষ্পুত্রের সম্পত্তির অংশের দাবী নিয়ে এসেছেন আর আলী (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে
বলেছেন যে, ইনি আমার নিকট তাঁর স্ত্রী
কর্তৃক পিতার সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশ নিতে এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘আমারা নাবীগণের সম্পদ
বন্টিত হয় না আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাদকারূপে গণ্য হয়।’ এরপর আমি সঙ্গত মনে করছি যে, এ সম্পত্তিকে আপনাদের দায়িত্বে অর্পণ করব।
এখন
আমি আপনাদের বলছি যে, আপনারা যদি চান, তবে আমি এ সম্পত্তি আপনাদের নিকট সমর্পণ করে
দিব। এ শর্তে যে, আপনাদের উপর আল্লাহ
তা‘আলার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার থাকবে, আপনারা
এ সম্পত্তি আয় আমদানী সে সকল কাজে ব্যয় করবেন যে সকল কাজেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর (রাঃ) ও আমি আমার
খিলাফতকালে এযাবৎ ব্য্য করে এসেছি। তদুত্তরে আপনারা বলেছেন, এ সম্পত্তিকে আমাদের নিকট সমর্পণ করুন। আমি
উক্ত শর্তের উপর আপনাদের প্রতি সমর্পণ করেছি।
আপনাদেরকে
(উসমান (রাঃ) ও তাঁর সাথীগণ) উদ্দেশ্য করে আমি আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, বলুন তো আমি কি তাদেরকে এ শর্তে এ সম্পত্তি
সমর্পণ করেছি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমর (রাঃ) আলী ও আব্বাস (রাঃ) এর
প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহর
কসম দিচ্ছি, বলুন তো আমি কি এ শর্তে
আপনাদের প্রতি এ সম্পত্তি সমর্পণ করেছি? তাঁরা
উভয়ে বললেন, হ্যাঁ। এরপর উমর (রাঃ)
বললেন, আপনারা কি আমার নিকট এ
ছাড়া অন্য কোন মীমাংসা চান? আল্লাহর কসম! যাঁর আদেশে
আকাশ ও পৃথিবী আপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত আছে, আমি
এ ক্ষেত্রে এর বিপরীত কোন মীমাংসা করব না। যদি আপনারা এ শর্ত পালনে অপারগ হন, তবে এ সম্পত্তি আমার দায়িত্বে অর্পণ করুন।
আপনাদের উভয়ের পক্ষ থেকে এ সম্পত্তি তত্ত্বাবধানে আমিই যথেষ্ট।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪২. খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) আদায়
করা দ্বীনের অংশ
২৮৭৬।
আবূ নু‘মান (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল
কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা
রাবী‘আ গোত্রের একটি উপদল। আপনার ও আমাদের মাঝে মুযার (কাফির) গোত্রের বসবাস। তাই
আমরা আপনার নিকট নিষিদ্ধ মাসসমূহ ব্যতীত অন্য সময় আসতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের
এমন কাজের আদেশ করুন, যার উপর আমরা আমল করব এবং
আমাদের পশ্চাতে যারা রয়ে গেছে, তাদের কেও তা আমল করতে
আহবান জানাবো। তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমদেরকে চারটি কাজের আদেশ করছি এবং
চারটি কাজ থেকে নিষেধ করছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের
অঙ্গুলিতে তা গণনা করে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান
আন। আর তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ
ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই আর সালাত
(নামায/নামাজ) প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত দান করা, রামাযান মাসে সিয়াম পালন করা এবং আল্লাহর
জন্য গনীমাত লব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের শুষ্ক লাউয়ের খোলে
তৈরী পাত্র, খেজুর গাছের মূল দ্বারা
তৈরী পাত্র, সবুজ মটকা, আলকাতরা প্রলিপ্ত মটকা ব্যবহার করতে নিষেধ
করছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৩. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর
ওফাতের পর তাঁর সহধর্মিণীগণের ভরণ-পোষণ
২৮৭৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, (আমার ওফাতের পর) আমার
উত্তরাধিকারীগণ একটি দ্বীনারও ভাগবণ্টন করে নিবে না। আমি যা রেখে যাব, তা থেকে আমার সহধর্মিনীগণের ব্যায়ভার ও আমার
কর্মচারীদের ব্যয় নির্বাহের পর অবশিষ্ট যা থাকবে, তা
সাদকারূপে গণ্য হবে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৩. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর
ওফাতের পর তাঁর সহধর্মিণীগণের ভরণ-পোষণ
২৮৭৮।
আবদুল্লাহ ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হল, তখন আমার ঘরে এমন কোন বস্তু ছিল না, যা খেয়ে কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে।
শুধুমাত্র তাকের উপর আধা ওয়াসাক আটা পড়ে রয়েছিল। আমি তা থেকে খেতে থাকলাম এবং বেশ
কিছু দিন কেটে গেল। এরপর আমি তা মেপে দেখলাম, ফলে
তা নিঃশেষ হয়ে গেল।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৩. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর
ওফাতের পর তাঁর সহধর্মিণীগণের ভরণ-পোষণ
২৮৭৯।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আমর ইবনু হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুদ্ধাস্র সাদা খচ্চর
ও কিছু যমীন ব্যতীত কিছুই রেখে যান নি এবং তাও তিনি সাদকারূপে রেখে গেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮০।
হিব্বান ইবনু মূসা ও মুহাম্মদ (রহঃ) ... উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা
ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন অত্যধিক
বেড়ে গেল তখন তিনি আমার ঘরে অবস্থান করে রোগের পরিচর্যা বিষয়ে তাঁর অপর
সহধর্মিনীগণের নিকট অনুমতি চান। তাঁরা তাঁকে অনুমতি প্রদান করেন।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮১।
ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার
ঘরে আমার পালার দিন আমার কণ্ঠ ও বুকের মধ্যে মাথা রাখা অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা (মৃত্যুকালেও) তাঁর ও আমার মুখের
লালাকে একত্রিত করেছেন। তিনি বলেন, আবদুর
রাহমান (রাঃ) একটি মিসওয়াক নিয়ে প্রবেশ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা চিবুতে অপারগ হন। তখন আমি সে মিসওয়াকটি নিয়ে নিজে চিবিয়ে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাঁত মেজে দেই।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮২।
সাঈদ ইবনু উফাইর (রহঃ) ... আলী ইবনু হুসাইন (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সহধীর্মণী সাফ্যিয়া (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন যে, তিনি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাত করার জন্য আসেন। তখন তিনি
রমযানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ রত ছিলেন। এরপর যখন তিনি [সাফিয়্যা (রাঃ)] ফিরে
যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপর সহধর্মিণী উম্মে সালামা (রাঃ)-এর দরজার
নিকটবর্তী মসজিদের দরজার নিকট পৌঁছলেন তখর দু’জন আনসার তাঁদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, একটু থাম, (এ মহিলা আমার স্ত্রী) তারা বলল, সুবানাল্লাহ! ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ বলাটা তাদের নিকট কষ্টদায়ক মনে হল। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘শয়তান মানুষের রক্ত কনিকার ন্যায় সর্বত্র বিচরণ করে। আমার
আশঙ্কা হয়েছিল, না জানি সে তোমাদের মনে
কোন সন্দেহের উদ্রেক করে দেয়।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮৩।
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
(আমার বোন) হাফসসা (রাঃ) এর ঘরের উপর (ছাদে) আরোহণ করি। তখন আমি দেখতে পেলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলাকে
পেছন দিক রেখে শাম (সিরিয়া) মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে নিচ্ছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮৪।
ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের সালাত (নামায/নামাজ) তখন আদায় করতেন, যখন সূর্যের আলো তাঁর আঙ্গিনা থেকে বেরিয়ে
যায়নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮৫।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুদবা দিতে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় তিনি আয়িশা
(রাঃ) এর ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, এ
দিক থেকেই (পূর্বদিক) ফিতনা, যে দিক থেকে সূর্য উদয়ের
সময় শয়তান দাঁড়িয়ে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৪. নবী (সাঃ)-এর সহধর্মিণীগণের
ঘর এবং যে সব ঘর তাঁদের সাথে সম্পর্কিত সে সবের বর্ণনা। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান কর।
(৩৩ঃ ৩৩) (হে মুসলমানগন) তোমরা নবী (সাঃ) এর ঘরে অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করবে না।
(৩৩ঃ ৫৩)
২৮৮৬।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আমরা বিনত আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সহধীর্মণী আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁর নিকট ছিলেন। তখন আয়িশা (রাঃ) আওয়াজ
শুনতে পেলেন যে, জনৈক ব্যাক্তি হাফসা (রাঃ)
এর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। আমি বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! এ ব্যাক্তি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছেন। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার
মনে হয়, সে অমুক, হাফসা (রাঃ) এর দুধ চাচা। (নাবীজি বললেন)
দুধপান তা-ই হারাম করে, যা জন্মগত সম্পর্কে কারণে
হারাম হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার সাহাবীগন
ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৮৭।
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রহঃ) ... আনাস (ইবনু মালিক) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন আবূ বকর (রাঃ) খলীফা হন, তখন তিনি তাঁকে বাহরাইনে প্রেরণ করেন এবং
তাঁর এ বিষয়ে একটি নিয়োগ পত্র লিখে দেন। আর তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর মুহর দ্বারা মুহরাংকিত করে দেন। উক্ত মুহরে তিনটি লাইন খোদিত ছিল।
এক লাইনে মুহাম্মদ, এক লাইনে রাসূল ও এক লাইনে
আল্লাহ।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার সাহাবীগন
ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৮৮।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... ঈসা ইবনু তাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস
(রাঃ) দু’টি পশম বিহীন পুরাতন চপ্পল বের করলেন, যাতে
দু’টি ফিতা লাগানো ছিল। সাবিত বুনানী (রহঃ) পরে আনাস (রাঃ) থেকে এরূপ বর্ণণা
করেছেন যে, এ দু’টি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাদুকা (মুবারক) ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার সাহাবীগন
ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৮৯।
মুহাম্মদ ইবনু বাশ্শার (রহঃ) ... আবূ বুরদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়িশা
(রাঃ) একটি মোটা তালি বিশিষ্ট কম্বল বের করলেন আর বললেন, এ কম্বল জড়ানো অবস্থায়ই নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত হয়েছে।
আর
সুলাইমান (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) সূত্রে আবূ বুরদা (রহঃ) থেকে বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশা (রাঃ) ইয়ামানে তৈরী একটি মোটা তহবন্দ
এবং একটি কম্বল যাকে তোমরা জোড়া লাগানো বলে থাকে, আমাদের
কাছে বের করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার সাহাবীগন
ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৯০।
আবদান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
পেয়ালা ভেঙ্গে যায়। তখন তিনি ভাঙ্গার স্থানে রূপার পাত দিয়ে জোড়া লাগালেন। আসিম
(রহঃ) বলেন, আমি সে পেয়ালাটি দেখেছি
এবং তাতে আমি পান করেছি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার
সাহাবীগন ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৯১।
সাঈদ ইবনু মুহাম্মদ জারমী (রহঃ) ... আলী ইবনু হুসাইন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, যখন
তারা ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়ার নিকট থেকে হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের পর মদিনায় আসলেন, তখন তাঁর সঙ্গে মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) মিলিত
হলেন এবং বললেন, আপনার কি আমার কাছে কোন
প্রয়োজন আছে? তবে তা বলুন। তখন আমি
তাঁকে বললাম, না। যখন মিসওয়ার (রাঃ)
বললেন, আপনি কি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরবারীটি দিবেন? আমার
আশঙ্কা হয়, লোকেরা আপনাকে কাবূ করে তা
ছিনিয়ে নিবে। আল্লাহর কসম! আপনি যদি আমাকে এটি দেন, তবে
আমার জীবন থাকা পর্যন্ত কেউ আমার নিকট থেকে তা নিতে পারবে না।
একবার
আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) থাকা অবস্থায় আবূ জাহল কন্যাকে বিবাহ করার
প্রস্তাব দেয়। আমি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর
মিঁম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের এ খুতবা দিতে শুনেছি, আর
তখন আমি সাবালক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উক্ত ভাষণে) বললেন, ‘ফাতিমা আমার থেকে (অতি আদরের)। আমি আশঙ্কা
করছি সে দিনের ব্যাপারে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পড়ে।’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ আবদে শামস গোত্রের এক জামাতার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি
তাঁর জামার সম্পর্কের প্রশংসা করেন এবং বলেন, সে
আমার সঙ্গে যা বলেছে, তা সত্য বলেছে, আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছে, তা পূরণ করেছে। আমি হালালকে হারামকারী নই এবং
হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের কন্যা এবং আল্লাহর
শত্রুর কন্যা একত্রিত হতে পারে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৫. নবী (ﷺ)-এর বর্ম, লাঠি, তরবারী, পেয়ালা
ও মোহর এবং তার পরবর্তী খলিফাগন সে সব থেকে যা ব্যবহার করেছেন, আর তা যার বণ্টনের উল্লেখ করা হয়নি এবং তার
চুল, পাদুকা ও পাত্র নবী (সাঃ) এর ওফাতের পর তার সাহাবীগন
ও অন্যরা (বরকত হাসিলে) শরীক ছিলেন।
২৮৯২।
কুতাইবা (রহঃ) ... ইবনু হানাফিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী
(রাঃ) যদি উসমান (রাঃ) এর সমালোচনা করতেন, যেদিন
তাঁর নিকট কিছু লোক এসে উসমান (রাঃ) কর্তৃক কিছু যাকাত উসূলকারী কর্মীদের বিরুদ্ধে
অভিযোগ করেছিলেন। আলী (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন, উসমান
(রাঃ) এর নিকট যাও এবং তাঁকে সংবাদ দাও যে, এটি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফরমান। কাজেই আপনার কর্মচারীদের
কাজ করার আদেশ দিন। তারা যেন সে অনুসারে কাজ করে। তা নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম।
তখন তিনি বললেন, আমার এটির দরকার নেই।
তারপর আমি তা নিয়ে আলী (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করি। তখন
তিনি বললেন, এটি যেখান থেকে নিয়েছ
সেখানে রেখে দাও।
হুমাইদী
(রহঃ) ... ইবনু হানাফিয়্যা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেন, আমাকে পাঠিয়ে বলেন, এ ফরমানটি নাও এবং এটি উসমান (রাঃ) এর কাছে
নিয়ে যাও, এতে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকা (যাকাত) সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৬. রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সময়ে আকস্মিক প্রয়োজনাদি ও
অভাবগ্রস্তদের জন্য গণীমতের এ-পঞ্চমাংশ। যখন ফাতিমা (রাঃ) তার নিকট আটা পিষার
কষ্টের কথা জানিয়ে বন্দীদের থেকে তার খেদমতের জন্য দাসী চাইলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আহলে সুফফা ও বিধবাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি তাকে আল্লাহর সোপর্দ
করেন
২৮৯৩।
বদল ইবনু মুহাব্বার (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ফাতিমা (রাঃ) আটা পিষার কষ্টের কথা জানান।
তখন তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কয়েকজন বন্দী আনা হয়েছে। ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে একজন খাদিম চাইলেন। তিনি তাঁকে পেলেন
না, তখন তিনি তা আয়িশা (রাঃ) এর কাছে উল্লেখ
করেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে আয়িশা (রাঃ) তাঁর কাছে
বিষয়টি বললেন। (রাবী বলেন) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন।
তখন আমরা শয্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমরা উঠতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাক। আমি তাঁর পায়ের
শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ, আমি
কি তোমাদের তার চাইতে উত্তম বস্তুর সন্ধান দিব না? (তিনি বললেন) যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহ আকবার’ তেত্রিশবার ‘আলহামদু
লিল্লাহ’ এবং তেত্রিশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, এ-ই
তোমাদের জন্য তার চাইতে উত্তম, যা তোমরা চেয়েছ।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
নিশ্চয় এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার
রাসুলেরই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি
বণ্টনকারী ও হেফাজতকারী আর আল্লাহ তা'আলাই
দিয়ে থাকেন
২৮৯৪।
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের
আনসারীর এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সে তার নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা করল। মানসূর
(রহঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে শুবা বলেন, সে
আনসারী বলল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে
নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। আর সুলাইমান (রহঃ) বর্ণিত
হাদীসে শুবা বলেন, সে আনসারী বলল, আমি তাকে আমার ঘাড়ে তুলে নিয়ে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। আর সুলাইমান (রহঃ) হাদীসে বর্ণিত
রয়েছে যে, তার একটি পুত্র সন্তানের
জন্ম হয়। তখন সে তার নাম মুহাম্মদ রাখার ইচ্ছা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখ।
কিন্তু আমার কুনিয়াতের অনুরূপ কুনিয়াত রেখনা। আমাকে বণ্টনকারী করা হয়েছে। আমি
তোমাদের মধ্যে বণ্টন করি।’ আর হুসাইন (রহঃ) বলেন, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি বণ্টনকারীরূপে প্রেরিত হয়েছি। আমি তোমাদের মধ্যেবণ্টন
করি।’ আর আমর জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সে
ব্যাক্তি তার সন্তানের নাম কাসিম রাখতে চেয়েছিল, তখন
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখ, আমার
কুনিয়াতের অনুরূপ কুনিয়াত রেখ না।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
নিশ্চয় এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার
রাসুলেরই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি
বণ্টনকারী ও হেফাজতকারী আর আল্লাহ তা'আলাই
দিয়ে থাকেন
২৮৯৫।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের
মধ্যে একজনের পুত্র সন্তান জন্ম হয়। সে তার নাম রাখল কাসিম। তখন আনসারগণ বললেন, আমরা তোমাকে আবূল কাসিম কুনিয়াত ব্যবহার করতে
দিব না এবং এর দ্বার তোমার চক্ষু শীতল করব না। সে ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আমার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে। আমি তার নাম রেখেছি কাসিম। তখন
আনসারগণ বললেন, আমরা তোমাকে আবূল কাসিম
কুনিয়াত ব্যবহার করতে দিব না এবং এর দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল করব না। নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আনসারগন ভালই করেছে। তোমরা আমার নামে রাখ, কিন্তু কুনিয়াত ব্যবহার কর না। কেননা, আমি তো কাসিম (বণ্টনকারী)।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
নিশ্চয় এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার
রাসুলেরই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি
বণ্টনকারী ও হেফাজতকারী আর আল্লাহ তা'আলাই
দিয়ে থাকেন
২৮৯৬।
হিব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) ... মু‘আবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যার মঙ্গল চান, তাকে
দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন। আল্লাহই দানকারী আর আমি বণ্টনকারী। এ উম্মাত সর্বদা
তাদের প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর
আদেশ (কিয়ামত) আসা পর্যন্ত আর তারা থাকবে বিজয়ী।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
নিশ্চয় এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার
রাসুলেরই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি
বণ্টনকারী ও হেফাজতকারী আর আল্লাহ তা'আলাই
দিয়ে থাকেন
২৮৯৭।
মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, ‘আমি তোমাদের দানও করি না
এবং তোমাদের বঞ্চিতও করি না। আমি তো কেবল বণ্টনকারী, যেভাবে
আদিষ্ট হই, সেভাবে ব্যয় করি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৭. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
নিশ্চয় এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর ও রাসূলের (সূরা আনফাল ৮:৪১) তা বণ্টনের ইখতিয়ার
রাসুলেরই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি
বণ্টনকারী ও হেফাজতকারী আর আল্লাহ তা'আলাই
দিয়ে থাকেন
২৮৯৮।
আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ... খাওলাহ
আনসারীয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে
বলতে শুনেছি যে, কিছু লোক আল্লাহ প্রদত্ত
সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য
জাহান্নাম অবধারিত।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৮৯৯।
মূসাদ্দাদ (রহঃ) ... উরওয়া আল বারেকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঘোড়ার কপালে উপরিভাগের কেশগুচ্ছ বাঁধা রয়েছে
কল্যাণ, সাওয়াব ও গনীমত কিয়ামত
পর্যন্ত।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৯০০।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যখন কিসরা ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপর কোন কিসরা হবে না। আর যখন কায়সার ধ্বংস
হয়ে যাবে, তারপর আর কোন কায়সার হবে
না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তোমরা
অবশ্যই ব্যয় করবে উভয় সামরাজ্যের ধন ভান্ডার আল্লাহর পথে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৯০১।
ইসহাক (রহঃ) ... জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, যখন কিসরা ধংস হয়ে যাবে
তখন আর কোন কিসরা হবে না। আর যখন কায়সার ধংস হয়ে যাবে তারপরে আর কোন কায়সার হবে না, যার হাতে আমার প্রান তার কসম, অবশ্যয় ব্যয় হবে উভয় সমরাজ্যের ধনভাণ্ডার
আল্লাহর পথে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৯০২।
মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার
জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৯০৩।
ইসমাঈল (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে
ব্যাক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তাঁরই বাণীর প্রতি দৃঢ় আস্থায় তাঁরই পথে
জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহ তার জিম্মা গ্রহণ
করেছেন, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ
করাবেন অথবা সে যে সাওয়াব ও গনীমত অর্জন করেছে তা সহ তাকে ঘরে ফিরাবেন, যেখানে সে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৮. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল
করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ
তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের, যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি তা তোমাদের জন্য
ত্বরান্বিত করেছিলেন (সূরা ফাতহঃ ২০) [আয়াতের শেষ পর্যন্ত] গনীমত সাধারণ মুসলমানের
জন্য ছিল কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তা ব্যাখ্যা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন
(যোদ্ধাদের জন্য)
২৯০৪।
মুহাম্মদ ইবনু ‘আলা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোন একজন নাবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোন ব্যাক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে
মিলিত হওয়ার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত
হয়নি। এমন ব্যাক্তিও না যে ঘর তৈরী করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যাক্তিও
না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষা করছে। তারপর তিনি
জিহাদে গেলেন এবং আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ের একটি
জনপথের নিকটবর্তী হলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও
আদিষ্ট আর আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেওয়া
হল। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করেন।
এরপর
তিনি গনীমত একত্রিত করলেন। তখন সেগুলি জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা
জ্বালালো না। নাবী তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে (গনীমতের)
আত্মসাতকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন যেন আমার কাছে বাইয়াত করে। সে সময়
একজনের হাত নাবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎ রয়েছে। কাজেই তোমার
গোত্রের লোকেরা যেন আমার কাছে বাইয়অত করে। এ সময় দু’ব্যাক্তির বা তিন ব্যাক্তির হাত
তাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের
মধ্যেই আত্মসাৎ রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর মস্তক সমতুল্য স্বর্ণ উপস্থিত করল
এবং তা রেখে দিল। তারপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। এরপর আল্লাহ আমাদের জন্য গনীমত
হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য তা
হালাল করে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৪৯. গনীমত তাদের জন্য, যারা অভিযানে হাযির হয়েছে
২৯০৫।
সাদাকা (রহঃ) ... যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর
(রাঃ) বলেছেন, যদি পরবর্তী মুসলিমদের
ব্যাপার না হতো, তবে যে জনপদই বিজিত হতো, তাই আমি সেই জনপদবাসীদের মধ্যে বণ্টন করে
দিতাম, যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার এলাকা বন্ঠন করে দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫০. যে ব্যক্তি গনীমতের উদ্দেশে
জিহাদ করে তার সাওয়াব কি কম হবে?
২৯০৬।
মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ... আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
প্রশ্ন করল যে, কেউ যুদ্ধ করে গনীমতের
জন্য, কেউ যুদ্ধ করে জনসাধারণ্যে
খ্যতি লাভের উদ্দেশ্যে আর যুদ্ধ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করল? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যাক্তি আল্লাহর
কালিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, সেই
আল্লাহর রাহে জিহাদকারী।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫১. ইমামের নিকট যা আসে, তা বন্টন করা এবং যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত
হয় নি কিংবা যে দূরে আছে তার জন্য রেখে দেওয়া
২৯০৭।
আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওহহাব (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মূলায়কা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কে সোনালী কারুকার্য খচিত কিছু রেশমী কাবা জাতীয় পোষাক হাদীয়া দেয়া হল।
তিনি তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে তা বণ্টন করে দেন এবং তা থেকে একটি কাবা
মাখরামা ইবনু নাওফল (রাঃ)-এর জন্য আলাদা করে রাখেন। তারপর মাখরামা (রাঃ) তাঁর
পুত্র মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) কে সাথে নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়ালেন আর পুত্রকে
বললেন, তাঁকে আমার জন্য আহবান কর।
তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি একটি কাবা
নিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। আর এর কারুকার্য খচিত অংশ তাঁর সামনে তুলে ধরে বললেন, হে আবুল মিসওয়ার! আমি এটি তোমার জন্য রেখে
দিয়েছি। আমি এটি তোমার জন্য রেখে দিয়েছি। আর মাখরামা (রাঃ) কিছুটা স্বভাবে কিছুটা
রুঢ়তা ছিল।
এ
হাদীসটি ইসমাঈল ইবন উলাইয়া (রহঃ)-ও আইউব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হাতিম ইবনু
ওয়ারদান (রহঃ) বলেন, আইউব (রহঃ) ইবনু আবূ
মুলায়কা (রহঃ) সূত্রে মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণণা করেছেন। তিনি বলেন
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর কাছে কয়েকটি কাবা জাতীয় পোষাক এসেছিল। (বাকী অংশ আগের মত) লাইস (রহঃ) ইবনু আবূ
মূলাইকা (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আইয়ূব (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫২. নবী (ﷺ) কিরূপে কুরায়যা ও নাযীরের ধন-সম্পদ বন্টন
করেছেন এবং প্রয়োজনে কিভাবে ব্যয় করেছেন
২৯০৮।
আবদুল্লাহ ইবনু আবূল আসওয়াদ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন
ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য কিছু খেজুর গাছ
নির্দিষ্ট করতেন কুরায়যা ও নাযিরের উপর বিজয় লাভ করা পর্যন্ত। তারপর তিনি সে
গাছগুলো তাদের ফেরত দিয়ে দেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও ইসলামী শাসকদের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ অংশ
গ্রহণকারী যোদ্ধাদের সম্পদ, জীবনে ও মৃত্যুর পরে যে
বরকত সৃষ্টি হয়েছে
২৯০৯।
ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্রযুদ্ধের
দিন যুবায়র (রাঃ) যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে
গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম
অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি
আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশি চিন্তিত। তুমি কি মনে কর
যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদে কিছু
অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋন
পরিশোধ করে দিও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক
তৃতীয়াংশ ওসীয়াত করেন। তাঁর (আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রের) পুত্রদের জন্য তাঁর অর্থাৎ
আবদুল্লাহ, তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশকে এক তৃতীয়াংশে বিভক্ত করবে ঋণ
পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য।
হিশাম
(রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ)-এর কোন কোন পুত্র যুবায়র (রাঃ)-এর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন খুবায়েদ ও
আব্বাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করেছিলেন
এবং বলেছিলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোন
বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার
মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে
উঠতে পারি নি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে
উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে
পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোন
সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবায়রের মাওলা! তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ
আদায় করে দিন। আর তাঁর কর্য শোধ হয়ে যেত।
এরপর
যুবায়র (রাঃ) শহীদ হলেন এবং তিনি নগদ কোন দ্বীনার রেখে যাননি আর না কোন দিরহাম।
তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদিনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দু’টি, কূফায়
একটি ও মিসরে একটি। আবূদল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, যুবায়র (রাঃ)-এর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর নিকট কেউ যখন কোন মাল আমানত রাখতে আসতো
তখন যুবায়র (রাঃ) বলতেন, না, এভাবে নয়’ তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে
যাও। কেননা, আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবায়র (রাঃ)
কখনো কোন প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোন কাজের দায়িত্ব গ্রহণ
করেননি। অবশ্যই তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গী হয়ে অথবা আবূ
বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশ
গ্রহণ করেছেন।
আবদুল্লাহ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, তারপর আমি তাঁর ঋণের
পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) আবদুল্লাহ
ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে
ভাতিজা। বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি
তা প্রকাশ না করে বললেন, এক লাখ। তখন হাকিম ইবনু
হিযাম (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ
দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন
আবূদল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, যদি
ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কি ধারণা করেন? হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এ সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে সক্ষম
হও, তবে আমার সহযোগীতা গ্রহণ করবে।
আবদুল্লাহ
ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, যুবায়র (রাঃ) গাবাস্থিত
ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তা ষোল লাখের
বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবায়র
(রাঃ)-এর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা
আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন।
যুবায়র (রাঃ) এর নিকট তাঁর চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ)-কে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা
তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, না। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অন্তর্ভুক্ত করতে পার।
আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, না।
তখন আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) বললেন, তবে
আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত জমি আপনার।
রাবী
বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবনু
যুবায়র (রাঃ) গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট
গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর কাছে
এলেন। সে সময় তাঁর কাছে আমর ইবনু উসমান, মুনযির
ইবনু যুবায়র ও আবদুল্লাহ ইবনু যামআ (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়া (রাঃ) তাঁকে
বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত
হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন, কত অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবনু যুবায়র (রাঃ)
বললেন, আমি এক অংশ এক লাখে নিলাম।
আমর ইবনু উসমান (রাঃ) বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম।
আর আবদুল্লাহ ইবনু যামআ (রাঃ) বললেন, আমি
একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মু‘আবিয়া (রাঃ) বললেন, আর
কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র
(রাঃ) বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে।
মু‘আবিয়া (রাঃ) বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম।
রাবী
বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ)
তাঁর অংশ মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবনু যুবায়র
(রাঃ) তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন, তখন
যুবায়র (রাঃ) এর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন।
তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হাজ্জ (হজ্জ) মৌসুমে এ
ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবায়র (রাঃ) এর
কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুমে ঘোষণা
প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন
তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবায়র
(রাঃ)-এর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার
লাখ করে পেলেন। আর যুবায়র (রাঃ) এর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৪. ইমাম যদি কোন দূতকে কোন কাজে
পাঠান কিংবা তাকে অবস্থান করার নির্দেশ দেন; তবে
তার জন্য অংশ নির্ধারিত হবে কিনা?
২৯১০।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উসমান
(রাঃ) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী আর তিনি ছিলেন
পীড়িত। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব ও
(গনীমাতের) অংশ তুমি পাবে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
২৯১১।
সাঈদ ইবনু উফাইর (রহঃ) ... উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, তাঁকে মারওয়াম ইবনু হাকাম
ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) রেওয়ায়ত করেছেন যে, যখন
হাওয়াযিন গোত্রের প্রতিনিধি দল মুসলমান হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট এসে বলল যে, তাদের মাল ও বন্দী উভয়ই
ফেরত দেওয়া হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, আমার নিকট সত্য কথা অধিক প্রিয়। তোমরা দু’য়ের
মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ কর। হয় বন্দী, নয়
মাল। আর আমি তো তাদের (হাওয়াযিন গোত্রের) প্রতিক্ষা করেছিলাম আর তায়েফ থেকে ফেরার
সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ দিন থেকে বেশী সময় তাদের জন্য
অপেক্ষা করেছিলেন। অবশেষে যখন তাদের কাছে স্পষ্ট হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাদের দু'টোর মধ্যে যে কোন একটই
ফেরত দিবেন, তখন তারা বলল, আমরা আমাদের বন্দীদের ফেরত লাভই অধিক পছন্দ
করি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের সামনে দাঁড়ালেন।
প্রথমে
তিনি আল্লাহ তা‘আলা যথোযযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেন, তোমাদের এ সকল ভাই তাওবা করে আমার নিকট
এসেছে। আর আমি সমীচীন মনে করিছি যে, তাদের
বন্দীদের ফেরত দিব। যে ব্যাক্তি সন্তুষ্টচিত্তে তা করতে চায়, সে যেন তা করে আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি
চায় যে, তার অংশ বহাল থাকুক, সে যেন অপেক্ষা করে (কিংবা) আল্লাহ তা‘আলা
আমাদেরকে প্রথম যে গনীমতের মাল দান করেছেন, আমি
তাকে তা থেকে দিয়ে দিব, তাও করতে পারে। সমবেত
লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা
সন্তুষ্টিচিত্তে সেটি গ্রহণ করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, আমি সঠিক জানতে পারিনি, তোমাদের মধ্যে কে এতে সম্মতি দিয়েছে, আর কে দেয়নি। কাজেই, তোমরা ফিরে যাও এবং নিজ নিজ প্রতিনিধির
মাধ্যমে আমাকে তোমাদের সিদ্ধান্ত জানাও। লোকেরা চলে গেল। আর তাদের প্রতিনিধিরা
নিজেদের লোকের সঙ্গে আলোচনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট ফেরত এল এবং তাঁকে জানাল যে, তারা সন্তুষ্টিচিত্তে
(বন্দী দানের ব্যাপারে) সম্মতি দিয়েছে। (ইবনু শিহাব বললেন) হাওয়াযিনের বন্দীগণ
সম্পর্কিত বিবরণ আমাদের নিকট এরূপই পৌঁছেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
২৯১২।
আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) ... যাহদাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
আবূ মূসা (রাঃ) এর কাছে ছিলাম, এ সময় মুরগীর (গোশত)
সম্বন্ধে আলোচনা উঠল। তথায় তাইমুল্লাহ গোত্রের এমন লাল বর্ণের এক ব্যাক্তিও উপস্থিত
ছিল, যেন সে মাওয়ালী (রোমক কৃতদাস) এর একজন। তাকে
খাওয়ার জন্য ডাকলেন। তখন সে বলে উঠল, আমি
মুরগীকে এমন বস্তু খেতে দেখেছি, যাতে আমার ঘৃণা জন্মেছে।
তাই আমি শপথ করেছি যে, তা খাব না। আবূ মূসা (রাঃ)
বললেন, আস, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে হাদীস শোনাচ্ছি। আমি
কয়েকজন আশআরী ব্যাক্তির পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
সাওয়ারী চাইতে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাওয়ারী দিব না এবং
আমার কাছে তোমাদের দেওয়ার মত কোন সাওয়ারীও নেই। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গনীমতের কয়েকটি উট আনা হল।
তখন
তিনি আমাদের খোজ নিলেন এবং বললেন, সেই আশ‘আরী লোকেরা কোথায়? তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম উচু সাদা চুলওয়ালা পাঁচটি উট আমাদের দিতে বললেন। যখন আমরা উট নিয়ে
রওয়ানা হলাম বললাম, আমরা কী করলাম? আমাদের মঙ্গল হবে না। আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ফিরে এলাম এবং বললাম, আমরা আপনার নিকট সাওয়ারীর জন্য আবেদন
করেছিলাম, তখন আপনি শপথ করে বলেছিলেন, আমাদের সাওয়ারী দিবেন না। আপনি তা ভুলে
গিয়েছিলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের সাওয়ারী দেইনি
বরং আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদের সাওয়ারী দান করেছেন। আল্লাহর কসম, আমার অবস্থা এই যে, ইনশাআল্লাহর আমি কোন বিষয়ে আমি কসম করি এবং
তার বিপরীতটি মঙ্গলজনক মনে করি, তখন সেই মঙ্গলজনকটি আমি
করি এবং কাফফারা দিয়ে কসম থেকে মুক্ত হই।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
১৯১৩।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নাজদের দিকে একটি সেনাদল পাঠালেন, যাদের মধ্যে আবদুল্লাহ
ইবনু উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। এ যুদ্ধে গনীমত স্বরূপ তাঁরা বহু সংখ্যক উট লাভ করেন।
তাঁদের প্রত্যেকের ভাগে এগারোটি কিংবা বারোটি করে পড়েছিল এবং তাঁদেরকে
পুরস্কারস্বরূপ আরো একটি করে উট দেওয়া হয়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
১৯১৪।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কর্তৃক কোন কোন সেনা দলে কোন কোন ব্যাক্তিকে সাধারণ সেনাদের প্রাপ্য অংশের
অতিরিক্ত দান করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর জন্য।
এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
১৯১৫।
মুহাম্মদ ইবনু আ‘লা (রহঃ) ... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
ইয়ামানে থাকতেই আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত
করার সংবাদ পৌঁছে। তখন আমরাও তাঁর নিকট হিজরত করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আমি
এবং আমরা আরো দু’ভাই এর মধ্যে ছিলাম। আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ট। তাদের একজন হলেন আবূ
বুরদাহ, অপরজন আবূ রুহম। রাবী হয়ত
বলেছেন, আমার গোত্রের আরো কতিপয়
লোকের মধ্যে; কিংবা বলেছেন, আমার গোত্রের তিপ্পান্ন অথবা বায়ান্ন জন
লোকের মধ্যে। তারপর আমরা একটি নৌযানে আরোহণ করলাম। ঘটনাক্রমে আমাদেরকে নৌযানটি
হাবশার নাজ্জাশী বাদশাহের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ও
তাঁর সঙ্গীদের সাথে মিলিত হই।
জাফর
(রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশ
দিয়েছেন। তাই আপনারাও আমাদের সঙ্গে এখানে অবস্থান করুন। তখন আমরা তাঁর সঙ্গে থেকে
গেলাম। অবশেষে আমরা সকলে একত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট এলাম। এমন সময় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
পৌঁছলাম, যখন তিনি খায়বার বিজয়
করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার লব্ধ গনীমতে) আমাদের
জন্য অংশ নির্ধারণ করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), কিংবা
তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমাদেরও
তা থেকে দিয়েছেন। আমাদের ব্যতীত খায়বার বিজয়ে অনুপস্থিত কাউকেই তা থেকে অংশ দেননি, জাফর (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণের সাথে আমাদের এ
নৌযানে আরোহীদের মধ্যে বণ্টন করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
২৯১৬।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি
আমার নিকট বাহরাইনের মাল আসে, তবে আমি তোমাকে (দুই হাত
মিলিয়ে) এ পরিমান ও এ পরিমান দান করব। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
ইন্তেকাল অবধি তা এলো না। তারপর যখন বাহরাইনের মাল এল, তখন আবূ বকর ঘোষণা দানকারীকে এ ঘোষণা দেয়ার
আদেশ করলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যার কোন ঋণ বা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, সে যেন আমার নিকট আসে। এরপর আমি তার নিকট
গিয়ে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এত এত ও এত দেয়ার কথা বলেছেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) তিনবার
অঞ্জলি ভরে দান করেন। সুফিয়ান (রহঃ) তার দুই হাত একত্র করে অঞ্জলি করে আমাদের
বললেন, ইবনু মুনকাদির এরূপই
বলেছেন।
জাবির
(রাঃ) বলেন, তারপর আমি (জাবির) আবূ বকর
(রাঃ) এর নিকট এলাম এবং তার কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তার কাছে
এলাম। তখনও তিনি আমাকে দিলেন না। আবার আমি তার নিকট তৃতীয়বার এসে বললাম, আমি আপনার নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। আবার আমি আপনার নিকট চেয়েছি, তখনও আপনি আমাকে দেননি। পুনরায় আমি আপনার
নিকট চেয়েছি, আপনি আমাকে দেননি। এখন
আমাকে আপনি দেবেন, না হয় আমার সঙ্গে কার্পণ্য
করবেন।
আবূ
বকর (রাঃ) বললেন, তুমি আমাকে বলছ, কার্পণ্য করবেন? আমি যতবারই তোমাকে দিতে অস্বীকার করি না কেন, আমার ইচ্ছা ছিল যে, আমি তোমাকে দেই। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, আমর (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আলী (রহঃ) সুত্রে
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, (তিনি বলেন) আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে এক অঞ্জলি দিয়ে বললেন, এটা গুনে নাও। আমি গণনা
করে দেখলাম, পাঁচ শত। তখন তিনি বললেন, এরুপ আরও দু’বার নিয়ে নাও। আর ইবনুল মুনকাদিরের
বর্ণনায় আছে যে, (আবূ বকর (রাঃ) বলেছেন)
‘কার্পণ্য অপেক্ষা বড় রোগ কি হতে পারে?’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৫. যিনি বলেন, এক-পঞ্চমাংশ মুসলিমগণের প্রয়োজন মিটানোর
জন্য। এর প্রমান হাওয়াযিন, তাদের গত্রে নবী (ﷺ) এর দুধ পানের সৌজন্যে তারা যে আবেদন করেছিল
তারই প্রেক্ষিতে মুসলিমগন থেকে তাদের সে দাবী আদায় করে নেন। নবী (সাঃ) লোকদেরকে
ফায় ও গনীমত এর অংশ থেকে খুমুস দানের যে প্রতিশ্রুতি দান করতেন। 'আর যা তিনি আনসারদের প্রদান করেছেন' এবং যা তিনি খায়বারের খেজুরের থেকে জাবির ইবন
আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দান করেছেন
২৯১৭।
মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি’য়রানা নামক স্থানে গনীমতের মাল
বণ্টন করেছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি বলল, (বণ্টন) ইনসাফ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে
তুমি হবে হতভাগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৬. খুমুস পৃথক না করেই বন্দীদের
প্রতি নবী (ﷺ)-এর
অনুগ্রহ
২৯১৮।
ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের
যুদ্ধে বন্দীদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি মুতয়িম ইবনু আদী (রাঃ)
জীবিত থাকতেন আর আমার নিকট এ সকল নোংরা লোকের ব্যাপারে সুপারিশ করতেন, তবে আমি তাঁর খাতিরে এদের ছেড়ে দিতাম।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৭. খুমুস ইমামের জন্য, তাঁর ইখতিয়ার রয়েছে আত্মীয়গণের মধ্যে যাকে
ইচ্ছা দিবেন, যাকে ইচ্ছা দিবেন না। এর
দলীল এই যে, নবী (ﷺ) খায়বারে খুমুস থেকে বানূ হাশিম ও বানূ
মুত্তালিবকেই দিয়েছেন। উমর ইবন আবদুল আযীয (রহঃ) বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) সাধারণভাবে সকল কুরায়শকে দেননি এবং যে ব্যক্তি অধিক অভাবগ্রস্থ
তার উপর কোন আত্মীয়কে অগ্রাধিকার দেননি। যদিও তিনি তাদের দিয়েছেন তা এ হিসেবে যে, তারা তার নিকট তার অভাবের কথা তাকে জানিয়েছেন
আর এ হিসেবে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পক্ষ অবলম্বন করায় তারা স্বগোত্র ও
স্বজনদের দ্বারা অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন।
২৯১৯।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
এবং উসমান ইবনুু আফফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
গেলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি
বানূ মুত্তালিবকে দিয়েছেন, আমাদের বাদ দিয়েছেন। অথচ
আমরা এবং তারা আপনার সাথে একই পর্যায়ে সম্পর্কিত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বানূ মুত্তালিব ও বানূ
হাশিম একই পর্যায়ের।
লায়স
(রহঃ) বলেন, ইউনুস (রহঃ) এ হাদীসটিতে
আমাকে অতিরিক্ত বলেছেন যে, জুবাইর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বানূ আবদ শামস ও বানূ নাওফলকে অংশ দেননি। ইবনু ইসহাক (রহঃ) বলেন, আবদ শামস, হাশিম
ও মুত্তালিব একই মায়ের গর্ভজাত সহোদর ভাই। তাদের মা আতিকা বিনতে মুররা আর নাওফল তাদের
বৈমাত্রেয় ভাই ছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৮. নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত
মাল সামানের খুমুস বের না করা; যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা
করল, সেক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল
সামানের খুমুস বের না করেই তা তারই প্রাপ্য আর ইমাম কর্তৃক এরূপ আদেশ দান করা
২৯২০।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দন্ডায়মান, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে
দেখলাম, অল্প বয়স্ক দু’জন আনসার
যুবকের মাঝখানে রয়েছি। আমার আকাঙ্খা ছিল, তাদের
অপেক্ষা শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি, তখন তাঁদের একজন আমাকে
খোচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, চাচা! আপনি কি আবূ জাহেলকে
চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা; তাতে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমাকে
অবহিত করা হয়েছে যে, সে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালমন্দ করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে
আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে
আমার দেহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে
অবধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায়
বিস্মিত হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে অনুরূপ খোঁচা দিয়ে বলল। তৎক্ষণাত আমি আবূ
জাহেলকে দেখলাম, সে মানুষের মাঝে ঘুরে
বেড়াচ্ছে।
তখন
আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই
ব্যাক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী
নিয়ে তার দিকে ঝাপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। এরপর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করল। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের
মধ্যে কে তাঁকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করল, আমি তাকে হত্যা করেছি। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের
তরবারী তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তখন তাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার থেকে
প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনুু আমর ইবনু জামুহের জন্য। তারা দু’জন হল, মুআয ইবনু আ’ফরা ও মুআয ইবনু ‘আমর ইবনু
জামূহ।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৮. নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত
মাল সামানের খুমুস বের না করা; যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা
করল, সেক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল
সামানের খুমুস বের না করেই তা তারই প্রাপ্য আর ইমাম কর্তৃক এরূপ আদেশ দান করা
২৯২১।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের
বছর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন
শত্রুর মুখোমুখী হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে
ছুটোছুটি আরম্ভ হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যাক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চড়ে বসেছে। আমি ঘুরে
তার পিছন দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত হানলাম। তখন সে আমার দিকে
এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি
তাতে মৃত্যুর আশংকা করছিলাম। মৃত্যু তাকেই পাকড়াও করল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। তারপর
আমি উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করে বললাম, লোকদের
কি হয়েছে? উমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর হুকুম! এরপর লোকজন ফিরে এলা এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন, তখন
তিনি বললেন, যে ব্যাক্তি কাউকে হত্যা
করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার
নিকট থেকে প্রাপ্ত মাল সামান তারই প্রাপ্য। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছে যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? তারপর আমি বসে পড়লাম।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তৃতীয়বার অনুরূপ বললেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবূ কাতাদা! তোমার কি
হয়েছে? আমি তখন সম্পূর্ণ ঘটনা
বললাম। তখন এক ব্যাক্তি বলে উঠল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবূ
কাতাদা (রাঃ) সত্য বলেছে। সে ব্যাক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি
আমার পক্ষ থেকে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবূ বকর (রাঃ) সিদ্দীক বলে উঠলেন, কখনো না, আল্লাহর
শপথ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহর সিংহদের মধ্যে থেকে কোন সিংহ আল্লাহ
ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে যুদ্ধ করবে আর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিহত ব্যাক্তি থেকে প্রাপ্ত মাল-সামান তোমাকে
দিবেন! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ বকর (রাঃ) ঠিকই বলেছে। ফলে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আমাকে দিলেন। আমি তা থেকে একটি বর্ম বিক্রি করে
বানূ সালমায় একটি বাগান ক্রয় করি। এটাই ইসলাম গ্রহণের পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি লাভ করি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২২।
মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলাম। তখন তিনি আমাকে
দিলেন। আমি আবার চাইলাম। তিনি আমাকে দিলেন। এরপর আমাকে বললেন, হে হাকীম, এ
সকল মাল সবুজ শ্যামল ও সুমিষ্ট। যে ব্যাক্তি তা নির্লোভ অন্তরে গ্রহণ করে, তার তাতে বরকত দেওয়া হয়। আর যে ব্যাক্তি তা
লোভনীয় অন্তরে গ্রহণ করে তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হয় না। তার উদাহরণ সে ব্যাক্তি
ন্যায়, যে আহার করে কিন্তু উদর
পূর্ণ হয় না। আর উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইয়া
রাসূলাল্লাহ! সে মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য পাঠিয়েছেন আপনার পর আমি দুনিয়া
থেকে বিদায় নেওয়া পর্যন্ত আর কারো মাল কামনা করব না।’
পরে
আবূ বকর (রাঃ) (তাঁর খিলাফত কালে) হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ)-কে ভাতা নেওয়ার জন্য
আহবান করতেন কিন্তু তিনি কোন কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। তারপর উমর (রাঃ)
তাকে ভাতা দানের উদ্দেশ্যে আহবান করেন কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ
করতে অস্বীকার করেন। তখন উমর (রাঃ) বলেন, হে
মুসলিমগণ। আমি হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) কে তার জন্য সে প্রাপ্য দিতে চেয়েছি। যা
আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য সম্পদ থেকে হিসসা রেখেছেন। আর সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার
করেছে। এভাবে হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর পরে আর কারো নিকট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিছুই গ্রহণ করেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৩।
আবুন নু‘মান (রহঃ) ... নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর
ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাহেলী
যুগে আমার উপর একদিনের ইতিকাফ (মান্নত) ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁকে তা পূরণ করার আদেশ করেন। নাফি (রহঃ) বলেন, উমর (রাঃ) হুনাইনের যুদ্ধের বন্দী থেকে দু’টি
দাসী লাভ করেন। তখন তিনি তাদেরকে মক্কায় একটি গৃহে রেখে যান। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধের বন্দীদেরকে সৌজন্যমূলক ছেড়ে দেয়ার আদেশ দান করলেন।
তারা মুক্ত হয়ে অলি-গলিতে ছুটোছুটি করতে লাগল। উমর (রাঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) কে বললেন, দেখ তো ব্যাপার কি?
তিনি
বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। উমর (রাঃ) বললেন, তবে তুমি গিয়ে সেই দাসী দু’জনকে ছেড়ে দাও।
নাফি (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়েররানা থেকে উমরা করেন নি। যদি তিনি উমরা করতেন তবে তা
আবদুল্লাহ থেকে গোপন থাকত না। আর জারির ইবনু হাযিম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ)
থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করতেন না যে, (উমর (রাঃ) দাসী দু’টি) খুমুস থেকে পেয়েছিলেন। মা‘আমার (রহঃ)
ইবনু উমর (রাঃ) থেকে নযরের (মান্নতের) ব্যাপারটির উল্লেখ করেন, কিন্তু একদিনের কথা বলেন নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৪।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... আমার ইবনু তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দলকে দিলেন আর এক দলকে দিলেন না। তারা যেন এতে
মনক্ষুন্ন হলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এমন লোকদের দেই, যাদের সম্পর্ক বিগড়ে যাওয়া কিংবা ধৈর্যহারা
হওয়ার আশঙ্কা করি। আর অন্যদল যাদের অন্তরে আল্লাহ তা‘আলা কল্যাণ ও অমুখাপেক্ষিতা
দান করেছেন, তার উপর ছেড়ে দই। আর আমর
ইবনু তাগলিব (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত।
আমর
ইবনু তাগলিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার
পরিবর্তে যদি আমাকে লাল বর্ণের উট দেওয়া হতো তাতে আমি এতখানি খুশী হতাম না। আর আবূ
আসিম (রহঃ) জারীর (রহঃ) থেকে হাদীসটি এতটুকু অতিরিক্তসহ বর্ণনা করেছেন যে, হাসান (রহঃ) বলেন, আমাকে আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর নিকট কিছু মাল অথবা বন্দী আনীত হয়, তখন
তিনি তা বণ্টন করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৫।
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কুরাইশদের দিয়ে থাকি
তাদের মন রক্ষা করার জন্য। কেননা, তারা জাহেলী যুগের
কাছাকাছি।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৬।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাওয়াযিন গোত্রের মাল থেকে যা দেওয়ার তা দান করলেন। আর তিনি
কুরাইশ গোত্রের লোকদের একশ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের থেকে কিছু সংখ্যক লোক
বলতে লাগল, আল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তরবারী থেকে
তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাদের উক্তি পৌঁছান হল। তখন তিনি
আনসারদেরকে ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাবুতে তাদের একত্রিত করলেন আর
তাঁদের সঙ্গে তাঁদের ছাড়া আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তাঁরা সকলে একত্রিত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘আমার নিকট তোমাদের সম্পর্কে যে কথা পৌঁছেছে তা কি?
তাদের
মধ্যে সমঝদার লোকেরা তাঁকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের
মধ্য থেকে মুরব্বীরা কিছুই বলেন নি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছেঃ আল্লাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে
কুরাইষদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারী থেকে
তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি এমন লোকদের দিচ্ছি, যাদের কুফরীর যুগ সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। তোমরা
কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকেরা পার্থিব সম্পদ নিয়ে
(মনযিলে) ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহর রাসূল
রাসূলুল্লাহ কে নিয়ে মনযিলে ফিরবে, আল্লাহর
কসম, তোমরা যা নিয়ে মনযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চাইতে উত্তম।’
তখন
আনসারগণ বললেন, ‘হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এতে সন্তুষ্ট।’ তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের প্রাধান্য দেখতে পাবে।
তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করে থাকবে, যে পর্যন্ত না তোমরা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাউযে (কাউসারে)
মিলিত হবে।’ আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু আমরা (আনসারগণ)
ধৈর্যধারণ করতে পারি নি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৭।
আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ ওয়াইসী (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু মুতয়ীম (রাঃ) থেকে বর্ণিত
যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন, আর তখন তাঁর সঙ্গে আরো লোক
ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন হুনাইন থেকে আসছিলেন। বেদুঈন
লোকেরা তাঁর কাছে গনীমতের মাল চাইতে এসে তাঁকে আকড়িয়ে ধরল। এমনকি তারা তাঁকে একটি
বাবলা গাছের সাথে ঠেকিয়ে দিল এবং কাঁটা তার চাদর আটকে ধরল। তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থামলেন। তারপর বললেন, ‘আমার চাঁদরখানি দাও। আমার নিকট যদি এ সকল
কাঁটাদার বন্য বৃক্ষের সমপরিমাণ পশু থাকত, তবে
সেগুলো তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। এরপরও আমাকে তোমরা কখনো কৃপণ, মিথ্যাবাদী এবং দুর্বল চিত্ত পাবে না।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৮।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রাস্তায় চলছিলাম। তখন তিনি মোটা
পাড়ের নাজরানে প্রস্তুত চাদর পরিহিত ছিলেন। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে খুব জোরে টেনে
ধরল। অবশেষে আমি লক্ষ্য করলাম, তার জোরে টানার কারণে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধে চাঁদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর
বেদুঈন বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ আপনার
নিকট রয়েছে তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিলেন, আর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯২৯।
উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ... আবূদল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের
দিনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন লোককে বন্টনে অন্যদের উপর
প্রাধান্য দেন। তিনি আকরা‘ ইবনু হাবিছকে একশ’ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন।
সম্ভ্রান্ত আরব ব্যাক্তিদের দিলেন। এক ব্যাক্তি বলল, আল্লাহর
কসম। এখানে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলল, এতে
আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। (রাবী বলেন), তখন আমি বললাম, আল্লাহর
কসম! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে অবশ্যই জানিয়ে দিব। তখন আমি তাঁর
কাছে এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর
রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করবে? আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি
রহমত নাযিল করুন, তাঁকে এ চাইতেও অধিক কষ্ট দেওয়া
হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার
প্রয়োজন তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন
যায়দ (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯৩০।
মাহমুদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ... আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নিজ মাথায় করে সে জমিন থেকে খেজুর দানা বহন করে আনতাম, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম যুবায়র (রাঃ) কে দান করেছিলেন। যে জমীনটি আমার ঘর থেকে এক ‘ফারসাখে’
দু’তৃতীয়াংশ ব্যবধানে অবস্থিত ছিল। আর আবূ যামরাহ (রাঃ) হিশামের পিতা উরওয়া (রাঃ) থেকে
বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবায়র (রাঃ) কে বানূ নাযীর গোত্রের সম্পত্তি থেকে একখন্ড জমি
দিয়েছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৫৯. নবী (ﷺ) ইসলামের প্রতি যাদের মন আকৃষ্ট করার প্রয়োজন
তাদেরকে ও অন্যদেরকে খুমুস ইত্যাদি থেকে দান করতেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন যায়দ
(রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন
২৯৩১।
আহমদ ইবনু মিকদাম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) ইয়াহুদী ও
খৃষ্টানদেরকে হিজায ভূখন্ড থেকে নির্বাসিত করেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বার জয় করেন, তখন
তিনিও ইয়াহুদীদের সেখান থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। আর সে জমীন বিজিত হওয়ার পর
আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণের অধিকারে এসে গিয়েছিল। তখন ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আবেদন করল, যেন
তিনি তাদের এ শর্তে থাকার অনুমতি দেন যে, তারা
কৃষি কাজ করবে এবং তাদের জন্য অর্ধেক ফসল থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, যতদিন আমরা চাই তোমাদের এ
শর্তে থাকার অনুমতি দিচ্ছি। তারা এভাবে রয়ে গেল। অবশেষে উমর (রাঃ) তাঁর শাসনামলে
তাদের তায়মা আরীহা নামক স্থানের দিকে নির্বাসিত করেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬০. দারুল হরবে যে সব খাদ্য
সামগ্রী পাওয়া যায়
২৯৩২।
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
খায়বারের দুর্গ অবরোধ করেছিলাম। কোন এক ব্যাক্তি একটি থলে ফেলে দিল; তাতে ছিল চর্বি। আমি তা নেয়ার জন্য উদ্যত
হলাম। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আছেন। তখন আমি তা নেয়ার ব্যাপারে লজ্জিত হয়ে পড়লাম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬০. দারুল হরবে যে সব খাদ্য
সামগ্রী পাওয়া যায়
২৯৩৩।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
যুদ্ধকালে মধু ও আঙ্গুর পেতাম। আমরা তা খেয়ে নিতাম এবং জমা রাখতাম না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬০. দারুল হরবে যে সব খাদ্য
সামগ্রী পাওয়া যায়
২৯৩৪।
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ... (আবদুল্লাহ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খায়বারের
যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছিলাম। খায়বার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার
দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যবেহ করলাম। যখন তা হাঁড়িতে বলক আসছিল তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিলঃ তোমরা হাড়িগুলো উপুড়
করে ফেল। গাধার গোশত থেকে তোমরা কিছুই খাবে না। আবদুল্লাহ (ইবনু আবূ আওফ) (রাঃ)
বলেন, আমরা (কেউ কেউ) বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এজন্য নিষেধ করেছেন, যেহেতু তা থেকে খুমুস বের
করা হয় নি। (রাবী বলেন) আর অন্যরা বললেন, বরং
তিনি এটাকে নিশ্চিতভাবে হারাম করেছেন। (শায়বানী বলেন) আমি এ ব্যাপারে সাঈদ ইবনু
জুবায়র (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চিতভাবে
তিনি তা হারাম করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬১. যিম্মীদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ
এবং হারবীদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি। আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা আল্লাহর
প্রতি ঈমান আনে না, এবং শেষ দিনের উপর বিশ্বাস
করে না, আর আল্লাহ তা’আলা ও তার
রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম বলে মানে না, তোমরা
তাদের সাথে যুদ্ধ কর ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (৯ঃ ২৯) আয়াতে উল্লেখিত مسكين
শব্দের মুল হল مسكنة অর্থ হল অভাবগ্রস্ত اسكن من فلان এর অর্থ সে অমুক থেকে অধিক অভাবগ্রস্থ। এ শব্দটি سكون
থেকে নিশপন্ন নয়। صاغرون এর অর্থ লাঞ্চিত। ইয়াহুদি, খ্রিস্টান, অগ্নিপুজক ও আজমীদের থেকে জিযিয়া গ্রহন। ইবন
উয়াইনা (রহঃ) (আবদুল্লাহ) ইবন নাজীহ (রহঃ) থেকে বলেন, আমি মুজাহিদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারন কি যে, সিরিয়া
বাসীদের উপর চার দীনার এবং ইয়ামান বাসীদের উপর এক দীনার করে জিযিয়া গ্রহন করা হয়।
তিনি বললেন, তা স্বচ্ছলতার প্রেক্ষিতে
ধার্য করা হয়েছে।
২৯৩৫।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... (আমর) ইবনু দ্বীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
জাবির ইবনু যায়দ ও আমর ইবনু আউস (রহঃ) সহ যমযমের সিড়ির নিকট বসাছিলাম, হিজরী সত্তর সনে যে বছর মুসআব ইবনু যুবায়র
(রাঃ) বসরাবাসীদের নিয়ে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করেছিলেন। তখন বাজালাহ তাদের উভয়কে এ
হাদীস বর্ণনা করেন, আমি আহনাফের চাচা জাযই
ইবনু মুআবিয়া (রাঃ) এর লেখক ছিলাম। আমাদের নিকট উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এর পক্ষ
থেকে তাঁর মৃত্যুর এক বছ আগে একখানি পত্র আসে যে, যে
সব মাজুসী মাহরামদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ তাদের বিচ্ছিন্ন করে দাও। আর উমর
(রাঃ) মাজুসীদের কাছ থেকে জিযিয়া গ্রহণ করতেন না, যে
পর্যন্ত না আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাঃ) এ মর্মে সাক্ষী দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
হাজার এলাকার মাজুসীদের কাছ থেকে তা গ্রহণ করেছেন।
[পারসিক অগ্নিপূজকদের
মাজুসী বলে]
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬১. যিম্মীদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ
এবং হারবীদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি। আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা আল্লাহর
প্রতি ঈমান আনে না, এবং শেষ দিনের উপর বিশ্বাস
করে না, আর আল্লাহ তা’আলা ও তার
রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম বলে মানে না, তোমরা
তাদের সাথে যুদ্ধ কর ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (৯ঃ ২৯) আয়াতে উল্লেখিত مسكين
শব্দের মুল হল مسكنة অর্থ হল অভাবগ্রস্ত اسكن من فلان এর অর্থ সে অমুক থেকে অধিক অভাবগ্রস্থ। এ শব্দটি سكون
থেকে নিশপন্ন নয়। صاغرون এর অর্থ লাঞ্চিত। ইয়াহুদি, খ্রিস্টান, অগ্নিপুজক ও আজমীদের থেকে জিযিয়া গ্রহন। ইবন
উয়াইনা (রহঃ) (আবদুল্লাহ) ইবন নাজীহ (রহঃ) থেকে বলেন, আমি মুজাহিদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারন কি যে, সিরিয়া
বাসীদের উপর চার দীনার এবং ইয়ামান বাসীদের উপর এক দীনার করে জিযিয়া গ্রহন করা হয়।
তিনি বললেন, তা স্বচ্ছলতার প্রেক্ষিতে
ধার্য করা হয়েছে।
২৯৩৬।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমর ইবনু আউফ আনসারী (রাঃ) যিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমির ইবনু লুয়াইয়ের মিত্র ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে
শরীক হয়েছিলেন, তিনি তাঁকে বলেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আবূ উবাইদা ইবনু জাররাহ (রাঃ) কে বাহরাইনে জিযিয়া আদায় করার জন্য পাঠালেন। আর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনবাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন
এবং আলা ইবনু হাযরামী (রাঃ) কে তাদের আমির নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবাইদা (রাঃ)
বাহরাইন থেকে অর্থ সম্পদ নিয়ে এলেন। আনসারগণ আবূ উবাইদার আগমনের সংবাদ শুনে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ফজরের সালাতে সবাই উপস্থিত
হন।
যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)
আদায় করে ফিরলেন, তখন তারা তাঁর সামনে
উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের দেখে মুচকি
হাসলেন এবং বললেন, আমার মনে হয় তোমরা শুনেছ, আবূ উবাইদা (রাঃ) কিছু নিয়ে এসেছেন, তারা বলল, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং যা
তোমাদের খুশী করে তা আশা রাখ। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্রের আশঙ্কা
করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে, তোমাদের
উপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর প্রসারিত
হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন
তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন
তাদের ধ্বংস করেছে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬১. যিম্মীদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ
এবং হারবীদের সাথে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি। আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ যারা আল্লাহর
প্রতি ঈমান আনে না, এবং শেষ দিনের উপর বিশ্বাস
করে না, আর আল্লাহ তা’আলা ও তার
রাসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম বলে মানে না, তোমরা
তাদের সাথে যুদ্ধ কর ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (৯ঃ ২৯) আয়াতে উল্লেখিত مسكين
শব্দের মুল হল مسكنة অর্থ হল অভাবগ্রস্ত اسكن من فلان এর অর্থ সে অমুক থেকে অধিক অভাবগ্রস্থ। এ শব্দটি سكون
থেকে নিশপন্ন নয়। صاغرون এর অর্থ লাঞ্চিত। ইয়াহুদি, খ্রিস্টান, অগ্নিপুজক ও আজমীদের থেকে জিযিয়া গ্রহন। ইবন
উয়াইনা (রহঃ) (আবদুল্লাহ) ইবন নাজীহ (রহঃ) থেকে বলেন, আমি মুজাহিদ (রহঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, এর কারন কি যে, সিরিয়া
বাসীদের উপর চার দীনার এবং ইয়ামান বাসীদের উপর এক দীনার করে জিযিয়া গ্রহন করা হয়।
তিনি বললেন, তা স্বচ্ছলতার প্রেক্ষিতে
ধার্য করা হয়েছে।
২৯৩৭।
ফাযল ইবনু ইয়াকূব (রহঃ) ... জুবাইর ইবনু হাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর
(রাঃ) মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরে সেনাদল পাঠালেন। সে
সময় হুরমযান (মাদায়েনের শাসক) ইসলাম গ্রহণ করে। উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি এ সব ব্যাপারে তোমার পরামর্শ গ্রহণ করতে
চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে। এ সকল দেশ এবং
দেশে মুসলিমদের দুশমন যেসব লোক বাস করছে, তাদের
উদাহরণ একটি পাখির ন্যায়, যার একটি মাথা, দু’টি পা রয়েছে। যদি একটি ডানা ভেঙ্গে দেওয়া
হয়, তবে দু’টি পা ও মাথার সাহায্যে উঠে দাঁড়াবে।
আর যদি মাথা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তবে উভয় পা, উভয় ডানা ও মাথা সবই অকেজো হয়ে যাবে। কিসরা
শত্রুদের হল মাথা, কায়সার হল একটি ডানা, আর পারস্য হল অপর ডানা। কাজেই মুসলিমগণকে এ
আদেশ করুন, তারা যেন কিসরার উপর
আক্রমন করে।
বকর
ও যিয়াদ (রহঃ) উভয়ে জুবাইর ইবনু হাইয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারপ
উমর (রাঃ) আমাদের ডাকলেন আর আমাদের উপর নু‘মান ইবনু মুকাররিনকে আমির নিযুক্ত করেন।
আমরা যখন শত্রু দেশে পৌঁছলাম, কিসরা এক সেনাপতি চল্লিশ
হাজার সৈন্য নিয়ে আমাদের মুকাবিলায় আসল। তখন তার পক্ষ থেকে একজন দোভাষী দাঁড়িয়ে
বলল, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমার সঙ্গে আলোচনা করুক।
তখন মুগীরা ইবনু (শু‘বা) (রাঃ) বললেন, যা
ইচ্ছা প্রশ্ন করতে পার। সে বলল, তোমরা কারা? তিনি বললেন,আমরা
আরবের লোক। দীর্ঘ দিন আমরা অতিশয় দুর্ভাগ্য (কুফরীতে) এবং কঠিন বিপদে (দারিদ্রে)
ছিলাম। ক্ষুধার তাড়নায় আমরা চামড়া ও খেজুর গুটি চুষতাম। চুল ও পশম পরিধান করতাম
বৃক্ষ ও পাথর পূজা করতাম। আমরা যখন এ অবস্থায় পতিত তখন আসমান ও জমীনের প্রতিপালক
আমাদের মধ্য থেকে একজন নাবী করেন। তাঁর পিতা-মাতাকে আমরা চিনি। আমাদের নাবী ও
আমাদের রবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা এক
আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত কর কিংবা জিযিয়া দাও।
আর
আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রবের পক্ষ থেকে আমাদেরকে
জানিয়েছেন যে, আমাদের মধ্য থেকে যে নিহত
হবে, সে জান্নাতে এমন নিয়মত লাভ করবে, যা কখনো দেখা যায়নি। আর আমাদের মধ্য থেকে যারা
জীবিত থাকবে তোমাদের গর্দানের মালিক হবে। নু‘মান (রহঃ) (মুগীরাকে) বললেন, আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা এরূপ যুদ্ধে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথী করেছেন আর তিনি আপনাকে লজ্জিত
ও লাঞ্চিত করেনি আর আমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অনেক
যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি। তাঁর নিয়ম এ ছিল যে, যদি
দিনের পূর্বাহ্নে যুদ্ধ শুরু না করতেন, তবে
তিনি বাতাস প্রবাহিত হওয়া এবং সালাত (নামায/নামাজ) এর সময় হওয়া পর্যন্ত অপক্ষো
করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬২. ইমাম যদি কোন জনপদের
প্রশাসকের সাথে সন্ধি করে তবে কি তা অবশিষ্ট লোকদের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে?
২৯৩৮।
সাহল ইবনু বাক্কার (রহঃ) ... আবূ হুমাইদ সাঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করেছি। তখন আয়লার অধিপতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি সাদা
খচ্চর হাদীয়া দিল আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে চাঁদর দান
করলেন এবং এলাকা তারই জন্য লিখে দিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে যাদের অঙ্গীকার আছে তাদের
সম্পর্কে ওয়াসিয়াত। ذِمَّةُ শব্দের অর্থ অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি, আর
ال
শব্দের অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্ক
২৯৩৯।
আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... জুয়াইরিয়া ইবনু কুদামা তামীমী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) কে বললাম, ‘হে আমূরুল মুমিনীন! আমাদের
কিছু অসীয়্যাত করুন।’ তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের আল্লাহর
অঙ্গীকার রক্ষার অসীয়্যাত করছি। কারণ এ হল তোমাদের নাবীর অঙ্গীকার এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনের
জীবিকা।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৪. নবী (ﷺ) বাহরাইনের ভূমি থেকে যা বন্দোবস্ত দেন ও
সম্পদ ও জিযিয়া থেকে যা দেওয়ার ওয়াদা করেন। আর ফায় ও জিযিয়া কাদের মধ্যে বন্টিত
হবে?
২৯৪০।
আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইনের ভূমি লিখে দেওয়ার জন্য আনসারদের ডাকলেন।
তখন তারা বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমরা সে পর্যন্ত গ্রহন করব না, যে পর্যন্ত আপনি আমাদের ভাই কুরাইশদের জন্যও
অনুরূপ লিখে না দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সম্পদ তো তাদের জন্য যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলা
চাইবেন। কিন্তু তারা সেই কথাই পুনরাবৃত্তি করতে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরে দেখতে পাবে যে, অন্যকে তোমাদের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তখন তোমরা (হাউযে কাওসারে) আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত সবর করবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৪. নবী (ﷺ) বাহরাইনের ভূমি থেকে যা বন্দোবস্ত দেন ও
সম্পদ ও জিযিয়া থেকে যা দেওয়ার ওয়াদা করেন। আর ফায় ও জিযিয়া কাদের মধ্যে বন্টিত
হবে?
২৯৪১।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছলেন, যদি
আমার নিকট বাহরাইনের মাল আসে তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ, এ
পরিমাণ দিব। পরে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন আর
বাহরাইনের মাল এসে যায় তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যে ব্যাক্তির প্রতিশ্রুতি থাকে, সে যেন আমার কাছে আসে। তখন আমি তাঁর নিকট
গেলাম এবং বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, যদি
আমার নিকট বাহরাইনের মাল আসে, তবে আমি তোমাকে এ পরিমাণ, এ পরিমাণ ও এ পরিমাণ দিব। আবূ বকর (রাঃ)
আমাকে বললেন, তুমি অঞ্জুলি ভরে নাও। আমি
এক অঞ্জুলি উঠালাম। তিনি আমাকে বললেন, এগুলো
গুনে দেখ। আমি গুনে দেখলাম যে, তাতে পাঁচশ রয়েছে। তখন তিনি
আমাকে এক হাজার পাঁচশ দিলেন।
আর
ইব্রাহীম ইবনু তাহমান (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণণা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট
বাহরাইনের মাল এল। তখন তিনি বললেন, তোমরা
এগুলো মসজিদে ঢেলে দাও আর এ মাল এর আগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
নিকট আগত মালের চাইতে অনেক বেশী ছিল। এ সময় আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে দান করুন। আমি আমার
এবং আকিলের মুক্তিপণ দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আচ্ছা নাও। তিনি তার কাপড়ে অঞ্জুলি ভরে নিতে
লাগলেন। তারপর তা উঠাতে চাইলেন কিন্তু উঠাতে পারলেন না। তখন তিনি বললেন, কাউকে আমার উপর এ বোঝা উঠিয়ে দিতে বলুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না।
তখন তিনি বললেন, আচ্ছা আপনই আমার উপর উঠিয়ে
দিন।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি
তা থেকে কিছু কমিয়ে ফেললেন এবং উঠাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু
উঠাতে পারলেন না। তারপর বললেন, কাউকে আমার উপর বোঝাটি
উঠিয়ে দিতে বলুন। তিনি বললেন, না। তখন আব্বাস (রাঃ)
বললেন, আপনই একটু আমার উপর উঠিয়ে
দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তারপর তিনি আবার তা থেকে কমালেন, এরপর কাঁধের উপর উঠিয়ে রওয়ানা হলেন। তাঁর এ
আগ্রহ দেখে বিস্ময়ের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকিয়ে
থাকলেন, ---যতক্ষণ না তিনি আমাদের
দৃষ্টির আড়ালে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থানে একটি
দিরহাম থাকা পর্যন্ত সেখান থেকে উঠে দাঁড়াননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৫. বিনা অপরাধে জিম্মীকে যে
হত্যা করে, তার পাপ
২৯৪২।
কাইস ইবনু হাফস (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যাক্তি কোন যিম্মিকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের
ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৬. ইয়াহুদিদের আরব উপদ্বীপ থেকে
বহিস্কার করা। উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যতদিন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের (ইয়াহুদিদের) এখানে রাখেন, ততদিন আমি তোমাদের এখানে রাখব
২৯৪৩।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার
আমরা মসজিদে নববীতে বসা ছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বের হলেন এবং বললেন, তোমরা ইয়াহুদীদের নিকট চল।
আমরা চললাম এবং তাদের তাওরাত পাঠকেন্দ্রে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা
ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে নিরাপত্তা লাভ করবে
আর জেনে রাখ, সমগ্র পৃথিবী আল্লাহ
তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের। আমি ইচ্ছা করেছি, আমি
তোমাদের এ দেশ থেকে নির্বাসন করব। যদি তোমাদের কেউ তাদের মালের বিনিময়ে কিছু পায়, তবে সে যেন তা বিক্রি করে ফেলে। আর জেনে রাখ, সমগ্র পৃথিবী আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৬. ইয়াহুদিদের আরব উপদ্বীপ থেকে
বহিস্কার করা। উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যতদিন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের (ইয়াহুদিদের) এখানে রাখেন, ততদিন আমি তোমাদের এখানে রাখব
২৯৪৪।
মুহাম্মদ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ
বৃহস্পতিবার! তুমি জানো কি বৃহস্পতিবার কেমন দিন? এ
বলে তিনি এমনভাবে কাঁদলেন যে, তাঁর অশ্রুতে কঙ্কর ভিজে
গেল। (সাঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) বলেন) আমি বললাম, হে
ইবনু আব্বাস (রাঃ)! বৃহস্পতিবার দিন কি হয়েছিল? তিনি
বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগযন্ত্রনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন, আমার নিকট গর্দানের হাড়
নিয়ে এস, আমি তোমাদের নিকট এমন একটি
লিপি লিখে দিব এরপর তোমরা কখনো পখভ্রষ্ট হবে না। তখন উপস্থিত সাহাবীগণের বিতর্ক
হল। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বিতর্ক করা শোভনীয় নয়।
সাহাবীগণ
বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর কি হয়েছে? তিনি কি অর্থহীন কথা বলছেন? আবার জিজ্ঞাসা করে দেখ। তখন তিনি বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, তা তোমার আমাকে যার প্রতি ডাকছ তার চাইতে
উত্তম। তারপর তিনি তাদের তিনটি বিষয়ে আদেশ দিলেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ থেকে
বের করে দিবে, (২) বহিরাগত প্রতিনিধিদের
সেভাবে উপঢৌকন দিবে যেভাবে আমি তাদের দিতাম। (বর্ণনাকারী বলেন যে) তৃতীয়টি হয়ত
তিনি বলেননি, নয়ত তিনি বলেছলেন, আমি ভুলে গিয়েছি। সুফিয়ান (রহঃ) বলেন, এই উক্তিটি বর্ণনাকারী সুলাইমান (রহঃ) এর।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৭. মুসলিমদের সঙ্গে যদি
মুশরিকরা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে তাদের কি তা ক্ষমা করা যায়?
২৯৪৫।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
খায়বার বিজিত হয়, তখন রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একটি (ভুনা) বকরী হাদীয়া দেওয়া হয়; যাতে বিষ ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন যে, এখানে যত ইয়াহুদী আছে, সকলকে একত্রিত কর, তাদের সকলকে তাঁর সামনে একত্রিত করা হল। তখন
তিনি বললেন, আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন
করব। তোমরা কি আমাকে তার সত্য উত্তর দিবে? তারা
বলল, হ্যাঁ, সত্য
উত্তর দিব, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মিথ্যা বলেছ, বরং
তোমাদের পিতা অমুক।’ তারা বলল, ‘আপনি সত্য বলেছেন।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, দিব, হে
আবূল কাসিম! আর যদি আমরা মিথ্যা বলি, তবে
আপনি আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলবেন, যেমন আমাদের পিতা সম্পর্কে
আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলেছেন।’
তখন
তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কারা দোযখবাসী?’ তারা বলল, আমরা
তথায় অল্প কিছু দিন অবস্থান করব, তারপর আপনারা (মুসলিমরা)
আমাদের পেছনে সেখানে থেকে যাবেন।’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দুর হও, তোমরাই
তথাই থাকবে। আল্লাহর কসম। আমরা কখনো তাতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না।’ তারপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা
কি এ বকরীটিতে বিষ মিশিয়েছ?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ। ’ তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্বুদ্ধ করল?’ তারা বলল, ‘আমরা চেয়েছি আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে স্বস্তি লাভ করব আর আপনি
যদি নাবী হন তবে তা আপনার কোন ক্ষতি করবে না।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৮. চুক্তি ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে
ইমামের দু’আ
২৯৪৬।
আবূ নু‘মান (রহঃ) ... আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে কুনুত
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রুকুর
আগে। আমি বললাম, অমুক তো বলে যে, আপনি রুকুর পরে বলেছেন। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। তারপর তিনি নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এক মাস পর্যন্ত রুকুর পরে কুনূত পড়েন। তিনি বানূ সুলাইম গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে দু‘আ
করেছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশজন কিংবা সত্তরজন ক্বারী কয়েকজন মুশরিকদের নিকট পাঠালেন।
তখন বানূ সুলাইমের লোকেরা তাদের আক্রমণ করে তাদের হত্যা করে। অথচ তাদের এবং
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে সন্ধি ছিল। আনাস (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কে এ ক্বারীদের জন্য যতখানি ব্যথিত হতে দেখেছি আর কারো জন্য এতখানি ব্যথিত হতে
দেখেনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৯. মহিলাদের পক্ষ থেকে কাউকে
নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান
২৯৪৭।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ... উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা
বিজয়ের বছর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন
তাঁকে এ অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন এবং
তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ইনি কে? আমি
বললাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবূ
তালিব। তখন তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী!
যখন তিনি গোসল থেকে ফারেগ হলেন, একখানি কাপড় শরীরে জড়িয়ে
আট রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে আদায় করলেন। তারপর আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই আলী (রাঃ)
হুবাইরার অমুক পুত্রকে হত্যা করার সংকল্পে করছে, আর
আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিয়েছি। উম্মে হানী (রাঃ)
বলেন, তা চাশতের সময় ছিল।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭০. মুসলিমদের পক্ষ থেকে
নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান একই পর্যায়ের। কোন সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে
তা রক্ষা রক্ষা করতে হবে
২৯৪৮।
মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ... ইবরাহীম ইবনু তাইমী (রহঃ) এর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী
(রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আমাদের
কাছে আল্লাহর কিতাব ও এই সাহীফায় যা আছে, তা
ছাড়া অন্য কোন কিতাব নেই, যা আমরা পাঠ করে থাকি।
তিনি বলেন, এ সাহীফায় রয়েছে, যখমসমূহের দন্ড বিধান, উটের বয়সের বিবরণ, এবং আইর পর্বত থেকে সত্তার পর্যন্ত মদিনা
হারাম হওয়ার বিধান। যে ব্যাক্তি এর মধ্যে (সুন্নাত বিরোধী) বিদআত উদ্ভাবন করে
কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সকল মানুষের লানত। আল্লাহ তাঁর কোন
নফল ও ফরয ইবাদত কবূল করেন না। আর যে নিজ মাওলা (প্রভু) ব্যতীত অন্যকে (প্রভু)
মাওলা রূপে গ্রহণ করে, তার উপর অনুরূপ লানত। আর
নিরাপত্তা দানে সর্বস্তরের মুসলিমগণ একই স্তরের এবং যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের
চুক্তি ভঙ্গ করে তার উপরও অনুরূপ লা'নত।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭২. মুশরিকদের সাথে পণ্য-সামগ্রী
ইত্যাদির বিনিময়ে সন্ধিচুক্তি এবং যে অঙ্গীকার পূরণ করে না তার গুনাহ। আর (আল্লাহ
তা'আলার বাণীঃ) "তারা (কাফির) যদি সন্ধির
প্রতি ঝুঁকে পড়ে তবে আপনিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবেন এবং মহান আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন, তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ (আনফালঃ ৬১)
بَابُ إِذَا قَالُوا صَبَأْنَا وَلَمْ يُحْسِنُوا أَسْلَمْنَا
وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ فَجَعَلَ خَالِدٌ يَقْتُلُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ
وَقَالَ عُمَرُ إِذَا قَالَ مَتْرَسْ. فَقَدْ آمَنَهُ، إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ الأَلْسِنَةَ كُلَّهَا
وَقَالَ تَكَلَّمْ لاَ بَأْسَ
১৯৭১.
পরিচ্ছেদঃ যদি কাফিররা যুদ্ধকালে ভালরূপে “আমরা ইসলাম গ্রহন করেছি” বলতে না পারে
এবং “আমরা দ্বীন পরিবর্তন করেছি” বলে।
আবদুল্লাহ
ইবন উমর (রাঃ) বলেন, খাদিদ ইবন ওয়ালীদ (রাঃ) সে
সব লোকদের কতল করলেন। (এ সংবাদ পৌছার পর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়
আল্লাহ্! খালিদের একাজে আমি সম্পর্কহীন প্রকাশ করেছি। উমর (রাঃ) বলেন,
কেউ
যদি বলে مترس
(মারাতাস) ভয় করো না, তবে সে তাকে নিরাপত্তা দান
করল। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা সকল ভাষা জানেন। উমর (রাঃ) (হারমুযান পারসীকে) বললেন, কথা বল, কোন
অসুবিধা নেই। (এতে নিরাপত্তা দান করা হল)
২৯৪৯।
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ
ইবনু সাহল মুহায়্যিসা ইবনু মাসউদ ইবনু যায়দ (রাঃ) খায়বারের দিকে গেলেন। তখন
খায়বারের ইয়াহুদীদের সাথে সন্ধি ছিল। পরে তারা উভয়ে পৃথক হয়ে গেলেন। তারপর
মুহায়্যিসা আবদুল্লাহ ইবনু সাহলে কাছে আসেন এবং বলেন যে, তিনি মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফচ করছেন। তখন
মুহায়্যিসা তাকে দাফন করলেন। তারপর মদিনায় এলেন। আবদুর রাহমান ইবনু সাহল ও মাসউদের
দুই পুত্র মুহায়্যিসা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলেন। আবদুর
রহমান (রাঃ) কথা বলতে এগিয়ে এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, বড়কে আগে বলতে দাও, বড়কে আগে বলতে দাও। আর আবদুর রহমান ইবনু সাহল
(রাঃ) ছিলেন সর্বকনিষ্ট। এতে তিনি চুপ রইলেন এবং মুহায়্যিসা ও হুওয়ায়্যিসা উভয় কথা
বললেন।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা
কি শপথ করে বলবে এবং তোমাদের হত্যাকারীর অথবা বলেছেন, তোমাদের সঙ্গীর রক্ত পানের অধিকারী হবে? তারা বললেন, আমরা
কি রূপে শপথ করব? আমরা তো উপস্থিত ছিলাম না
এবং স্বচক্ষে দেখিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে ইয়াহুদীরা পঞ্চাশটি শপথের মাধ্যমে
তোমাদের থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। তারা বললেন, তারা
তো কাফির সম্প্রদায়। আমরা কি রূপে তাদের শপথ গ্রহণ করতে পারি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নিজের পক্ষ থেকে আবদুর রহমানকে তার ভাইয়ের দীয়াত পরিশোধ করলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৩. অঙ্গীকার পূর্ণ করার ফযীলত
২৯৫০।
ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) ... আবূ সুফিয়ান ইবনু হারব ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত যে, (রোমান সম্রাট) হিরাকল
(হিরাক্লিয়াস) তাঁকে ডেকে পাঠালেন, কুরাইশদের
সেই কাফেলাসহ যারা সিরিয়ায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। তা সে সময় যখন কুরাইশ
কাফিরদের পরীক্ষায় আবূ সুফিয়ানের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সন্ধি চুক্তি করেছিলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৪. যদি কোন যিম্মী যাদু করে, তবে কি তাকে ক্ষমা করা হবে? ইবন ওহাব (রহঃ) ... ইবন শিহাব (রহঃ) থেকে
বর্ণনা করেন যে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যদি কোন যিম্মী যাদু করে, তবে কি তাকে হত্যা করা হবে? তিনি বলেন, আমার
নিকট এই হাদিস পৌঁছেছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে যাদু
করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যাদুকরকে হত্যা করেন নি। সে আহলে কিতাব ছিল।
২৯৫১।
মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যাদু
করা হয়েছিল। ফলে তাঁর ধারণা হতো যে, তিনি
এ কাজ করেছেন অথচ তিনি এ কাজ করেননি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৫. বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে
সর্তকবাণী। আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ যদি তারা
আপনাকে প্রতারিত করতে চায়, তবে আপনার জন্য আল্লাহই
যথেষ্ট, তিনি আপনাকে স্বীয় সাহায্য
ও মুসলিমদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন ...... (আয়াতের শেষ পর্যন্ত) (৮ঃ ৬২)
২৯৫২।
হুমাইদী (রহঃ) ... আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি তখন
একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি
আলামত গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, তারপর
বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপরও তোমাদের মাঝে ঘটবে
মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যাক্তিকে একশ’ দ্বীনার দেওয়া
সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ
করবে। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে
সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের
মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার
হাজার সৈন্য দল থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৬. চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের
চুক্তি বিভাবে বাতিল করা হবে? আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ যদি আপনি কোন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস
ভঙ্গের আশংকা করেন, তবে আপনার চুক্তিও যথাযথ
বাতিল করবেন। (৮ঃ ৫৮)
২৯৫৩।
আবূল ইয়ামান (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ
বকর (রাঃ) আমাকে সে সকল লোকের সঙ্গে পাঠান যারা মিনায় কুরবানীর দিন এ ঘোষণা দিবেনঃ
এ বছরের পর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না আর বায়তুল্লাহ শরীফে কোন উলঙ্গ
ব্যাক্তি তাওয়াফ করতে পারবে না আর কুরবানীর দিনই হল হাজ্জে আকবরের দিন। একে অকবর এ
জন্য বলা হয় যে, লোকেরা (উমরাহকে) হাজ্জে
আসগার (ছোট) বলেন। আবূ বকর (রাঃ) সে বছর মুশরিকদের চুক্তি রহিত করে দেন। কাজেই
হুজ্জাতুল বিদার বছর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ)
করেন, তখন কোন মুশরিক হাজ্জ
(হজ্জ) করেনি।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৭. যারা অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ
করে তাদের গুনাহ এবং আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আপনি যাদের
সাথে অঙ্গীকার করেছেন, তারপর তারা প্রতিবার তাদের
অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ... (শেষ পর্যন্ত) (সুরা আনফালঃ ৫৬)
২৯৫৪।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটি
স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে খালিস মুনাফিক গণ্য
হবে। যে কথা বলার সময় মিথ্যা বলে, আর যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ
করে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে, যখন ঝগড়া করে গালমন্দ করে। যার মধ্যে এগুলোর
কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে, তার মধ্যে নিফাকের একটি
স্বভাব পাওয়া গেল, যে পর্যন্ত না সে পরিত্যাগ
করে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৭. যারা অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ
করে তাদের গুনাহ এবং আল্লাহ তা'আলার বাণীঃ আপনি যাদের
সাথে অঙ্গীকার করেছেন, তারপর তারা প্রতিবার তাদের
অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ... (শেষ পর্যন্ত) (সুরা আনফালঃ ৫৬)
২৯৫৫।
মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ... আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কুরআন এবং এ কাগজে যা লিখা আছে
তা ছাড়া কোন কিছু লিপিবদ্ধ করিনি। (উক্ত লিপিতে রয়েছে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আয়ির পর্বত থেকে এ পর্যন্ত
মদিনার হরম এলাকা। যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত উদ্ভাবন করে কিংবা কোন বিদআতীকে
আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ তা‘‘আলা ফিরিশতা ও সকল মানুষের লা‘নত। তা কোন ফরয কিংবা
নফল ইবাদত কবূল হবে না। আর সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা একই পর্যায়ের।
সাধারণ মুসলিম নিরাপত্তা দিলে সকলকে তা রক্ষা করতে হবে। যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের
দেওয়া নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তার উপর আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত এবং ফিরিশতাগণ ও সকল
মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদত কবূল হবে না। আর যে স্বীয় মনীবের অনুমতি
ব্যতীত অন্যদের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি করে, তার
উপর আল্লাহ তা‘‘আলার লা‘নত এবং ফিরিশ্তাগণ ও সকল মানুষের। তার কোন নফল কিংবা ফরয
ইবাদত কবূল হবে না।
আবূ
মূসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, অমুসলিমদের কাছে থেকে
(জিযিয়া স্বরূপ) একটি দ্বীনার বা দিরহামও তোমরা পাবে না, তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাকে বলা হল, হে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) আপনি কিভাবে মনে করেন যে, এমন
অবস্থা দেখা দিবে, তিনি বললেন, হ্যাঁ, কসম
সে মহান সত্তার যাঁর হাতে আবূ হুরায়রার প্রাণ, যিনি
সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত (অর্থাৎ মুহাম্মদ) এর উক্তি থেকে আমি বলছি।
লোকেরা বলল, কি করণে এমন হবে? তিনি বলেন, আল্লাহ
তা‘‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রদত্ত নিরাপত্তা
ক্ষুন্ন করা হবে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা যিম্মিদের অন্তরকে কঠোর করে দিবেন; তারা তাদের হাতে সম্পদ দিবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৮. পরিচ্ছেদ নাই
২৯৫৬।
আবদান (রহঃ) ... আ‘মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমি আবূ ওয়াইল (রাঃ) কে
জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি সিফফিনের যুদ্ধে
উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি
সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা
নিজ মতামতকে নির্ভুল মনে করো না। আমি নিজেকে আবূ জান্দালের দিন (হুদায়বিয়ার দিন)
দেখেছি। আমি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ প্রত্যাখান করতে
পারতাম, তবে তা নিশ্চই প্রত্যাখান
করতাম। বস্তুত আমরা যখনই কোন ভয়াবহ অবস্থায় আমাদের কাঁধে তলোয়ার তুলে নিয়েছি, তখন তা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছে এমনভাবে
যা আমরা উপলব্ধি করেছি। কিন্তু বর্তমান অবস্থা তার ব্যতিক্রম।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৮. পরিচ্ছেদ নাই
২৯৫৭।
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ... আবূ ওয়ায়েল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা সিফফীন যুদ্ধে শরীক ছিলাম। সে
সময় সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে
লোক সকল! তোমরা নিজ মতামতকে নির্ভুল মনে করো না। আমরা হুদায়বিয়ার দিন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। যদি আমরা যুদ্ধ করা যথোচিত মনে
করতাম, তবে আমরা যুদ্ধ করতাম। পরে
উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া
রাসুলাল্লাহ! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা (মুশরিকরা) বাতিলের উপর? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি বললেন, আমাদের নিহত ব্যাক্তিগন কি জান্নাতী নন এবং
তাদের নিহত ব্যাক্তিরা কি জাহান্নামী নয়? রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আমাদের নিহতগন অবশ্যই জান্নাতী।
উমর
(রাঃ) বললেন, তবে কি কারনে আমরা আমাদের
দ্বীনের ব্যাপারে হীনতা স্বীকার করব? আমরা
কি ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ ত’আলা আমাদের ও
তাদের মধ্যে কোন ফয়সালা করেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনু খাত্তাব! আমি
নিশ্চয় আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ আমাকে কখনো হেয়
করবেন না। তারপর উমর (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট গেলেন এবং নাবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যা বলেছিলেন, তা
তার নিকট বললেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তিনি
আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তা’আলা কখনও তাকে
হেয় করবেন না। তারপর সুরা ফাতহ নাযিল হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তা শেষ পর্যন্ত উমর (রাঃ) কে পাঠ করে শোনান। উমর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটা কি বিজয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, হ্যাঁ।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৮. পরিচ্ছেদ নাই
২৯৫৮।
কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার
মা যিনি মুশরিক ছিলেন, তাঁর পিতার সাথে আমার নিকট
এলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কুরাইশরা চুক্তি করেছিলেন তখন আসমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ বলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মা আমার নিকট এসেছেন। তিনি
ইসলামের প্রতি আগ্রহী নন। আমি কি তাঁর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর সাথে সদাচরণ কর।’
পরিচ্ছেদঃ ১৯৭৯. তিন দিন কিংবা নির্দিষ্ট
সময়ের জন্য সন্ধি করা
২৯৫৯।
আহমদ ইবনু উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) ... বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উমরা করার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি মক্কায় আসার অনুমতি চেয়ে মক্কার
কাফিরদের নিকট দূত পাঠান। তারা শর্তারোপ করে যে, তিনি
সেখানে তিন রাতের অধিক থাকবেন না এবং অস্ত্রকে কোষাবদ্ধ না করে প্রবেশ করবেন না।
আর মক্কাবাসীদের কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবেন না। বারা (রাঃ) বলেন, এ সকল শর্ত আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) লেখা
আরম্ভ করলেন এবং সন্ধিপত্রে লিখলেন, ‘‘এটা সে সন্ধিপত্র যার উপর আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ ফায়সালা
করেছেন।’’ তখন কাফিররা বলে উঠল, ‘আমরা যদি এ কথা মেনে নিতাম
যে, আপনি আল্লাহর রাসূল, তবে তো আমরা আপনাকে বাঁধাই দিতাম না এবং
আপনার হাতে বায়আত করে নিতাম। কাজেই এরূপ লিখুন, এটি
সেই সন্ধিপত্র যার উপর মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ফায়সালা করেছেন।’
তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর
কসম! আমি মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ এবং আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর রাসূল। বারা (রাঃ)
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখতেন না। তাই তিনি আলী (রাঃ) কে বললেন, রাসূলুল্লাহ (শব্দটি) মুছে ফেল। আলী (রাঃ)
বললেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা
মুছব না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আমাকে দেখিয়ে দাও। তখন আলী (রাঃ) তাঁকে
সে স্থান দেখিয়ে দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজ
হাতে তা মুছে ফেললেন। এরপর যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং সেই দিনগুলি অতিবাহিত
হয়ে গেল, তখন তারা আলী (রাঃ)-এর
নিকট এসে বলল, তোমার সঙ্গীকে বল, যেন তিনি চলে যান। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা বললেন। তিনি বললেন, ঠিক
আছে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮১. মুশরিকদের লাশ কূপে নিক্ষেপ
করা এবং তাদের বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ না করা
بَابُ الْمُوَادَعَةِ مِنْ غَيْرِ وَقْتٍ
وَقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمُ اللَّهُ بِهِ
১৯৮০.
পরিচ্চছেদঃ সময় নির্ধারণ না করে সন্ধি করা এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বাণীঃ আমি তোমাদের ততদিন সেখানে থাকতে দিব, যতদিন আল্লাহ তা'আলা তোমাদের রাখেন।
২৯৬০।
আহমদ ইবনু উসমান (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (ইবন মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [কাবা শরীফে] সিজদারত ছিলেন, তার আশে-পাশে কুরাইশ মুশরিকদের কিছু লোক ছিল।
এ সময় উকবা ইবন আবূ মুআইত উটনীর গর্ভ থলে এনে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর পিঠে ফেলে দেয়। ফলে তিনি তার মাথা উঠালেন না। অবশেষে ফাতিমা (রাঃ) এসে তার পিঠ
থেকে তা অপসারণ করেন আর যে ব্যাক্তি একাজ করেছে তার বিরুদ্ধে বদদুয়া করেন।
তারপর
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়া
আল্লাহ! কুরাইশদের এ দলের বিচার আপনার উপর ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ! আপনি শাস্তি দিন
আবূ জাহল ইবন হিশাম, উতবা ইবন রাবীআ, উকবা ইবন আবূ মূআইত ও উমাইয়া ইবন খালফ (অথবা
রাবী বলেছেন), উবাই ইবন খালফকে। [ইবন
মাসউদ (রাঃ) বলেন], আমি দেখেছি, তারা সবাই বদর যুদ্ধে নিহত হয়। তাদের সকলকে
কূপে নিক্ষেপ করা হয়। উমাইয়া অথবা উবাই ব্যাতিত। কেননা, সে ছিল স্থুলদেহী। যখন তার লাশ টেনে নেয়া
হচ্ছিল, তখন কূপে ফেলার আগেই তার
জোড়াগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮২. নেক বা বদ যে কোন লোকের সাথে
কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গীকারীর পাপ
২৯৬১।
আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ... আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) ও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, প্রত্যেক অঙ্গীকার
ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন একটি পতাকা হবে। (আবদুল্লাহ ও আনাস (রাঃ)-এর মধ্যে)
একজন বলেছেন, পতাকাটি স্থাপিত হবে অপরজন
বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রদর্শিত
হবে এবং তা দিয়ে তাকে চেনানো হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮২. নেক বা বদ যে কোন লোকের সাথে
কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গীকারীর পাপ
২৯৬২।
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, (কিয়ামতের দিন) অঙ্গীকার ভঙ্গের নির্দেশ
স্বরূপ প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য (কিয়ামতের দিন) একটি পতাকা স্থাপন করা
হবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮২. নেক বা বদ যে কোন লোকের সাথে
কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গীকারীর পাপ
২৯৬৩।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন বললেন, (মক্কা থেকে এখন আর) হিজরত নেই, কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত রয়েছে আর যখন তোমাদের
জিহাদে যাওয়ার জন্য ডাক দেওয়া হয় তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে আর তিনি মক্কা বিজয়ের দিন
এও বলেন, এ নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা
আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে সম্মানিত করেছেন। কাজেই তা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মনের
দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার আগে এখানে যুদ্ধ করা কারো জন্য হালাল
ছিল না আর আমার জন্যও তা দিনের মাত্র কিছু সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল। অতএব আল্লাহ
তা‘আলা প্রদত্ত সম্মানের দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত তা সম্মাণিত থাকবে। এখানকার কাঁটা
কর্তন করা যাবে না; শিকারকে উত্যক্ত করা যাবে
না আর পথে পড়ে থাকা বস্তু কেউ উঠাবে না। তবে সে ব্যাক্তি উঠাতে পারবে, যে তা ঘোষণা করবে। এখানকার ঘাস কাঁটা যাবে
না।’ তখন আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইযখির
ব্যতীত। কেননা, তা কর্মকারের ও ঘরের কাজে
লাগে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ইযখির ব্যতীত।’