সালাত বা নামাজ

পরিচ্ছেদঃ ২৪২। মি’রাজে কিভাবে সালাত ফরজ হল?

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ حَدَّثَنِي أَبُو سُفْيَانَ فِي حَدِيثِ هِرَقْلَ فَقَالَ يَأْمُرُنَا- يَعْنِي النَّبِيَّ- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالصَّلاَةِ وَالصِّدْقِ وَالْعَفَافِ

ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে আবূ সুফিয়ান ইবন হারব (রাঃ) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।

৩৪২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরীল (আঃ) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরযা খোল। তিনি বললেনঃ কে? উত্তর দিলেনঃ আমি জিবরীল, আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ হাঁ।

তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নাবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (আঃ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন।

আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম (আঃ), ঈদরীস (আঃ), মূসা (আঃ), ‘ঈসা (আঃ), ও ইবরাহীম (আঃ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (আঃ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইদরীস (আঃ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (আঃ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (আঃ)। তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পূণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ মূসা (আঃ)। তারপর আমি ঈসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈসা (আঃ)।

তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নাবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ইবরাহীম (আঃ)। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রাঃ) উভয়ে বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।

আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা (আঃ) এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা (আঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরীল(আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।

পরিচ্ছেদঃ ২৪২। মি’রাজে কিভাবে সালাত ফরজ হল?

৩৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... উম্মু’ল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মুকীম অবস্থায় ও সফরে দুই রাক’আত করে সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করেছিলেন। পরে সফরে সালাত পূর্বের মত রাখা হল আর মুকীম অবস্থায় সালাত বৃদ্ধি করা হল।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৩। সালাত আদায়ের সময় কাপড় পরার প্রয়জনীয়তা।

وَقَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: (خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ). وَمَنْ صَلَّى مُلْتَحِفًا فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ، وَيُذْكَرُ عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَزُرُّهُ وَلَوْ بِشَوْكَةٍ». فِي إِسْنَادِهِ نَظَرٌ، وَمَنْ صَلَّى فِي الثَّوْبِ الَّذِي يُجَامِعُ فِيهِ مَا لَمْ يَرَ أَذًى، وَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ لاَ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ عُرْيَانٌ

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- (خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ) "তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান করবে" (৭ : ৩১)।

এক বস্ত্র শরীরে জড়িয়ে সালাত আদায় করা। সালামা ইবনুল আকওয়া’ (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা জামায় বোতাম লাগিয়ে নাও এমন কি কাটা দিয়ে হলেও। এই হাদীসের সনদ সম্পর্কে কথা আছে। যে কাপড় পরে স্ত্রী সহবাস করা হয়েছে তাতে কোন নাপাকি দেখা না গেলে তা পরিধান করে সালাত আদায় করা যায়। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, উলঙ্গ অবস্থায় যেন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে।

৩৪৪। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) ..... উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে ঋতুবতী এবং পর্দানশীন মহিলাদের বের করে আনার নির্দেশ দিলেন, যাতে তাঁরা মুসলমানদের জামা’আত ও দু’আয় শরীক হতে পারে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলারা সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান থেকে দূরে থাকবে। এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কারো কারো ওড়না নেই। তিনি বললেনঃ তাঁর সাথীর উচিত তাঁকে নিজের ওড়না থেকে পরিয়ে দেওয়া।

আবদুল্লাহ ইবনু রাজা (রহঃ) সুত্রে উম্মে ‘আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ বলতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৪। সালাতে কাঁধে তহবন্দ বাঁধা।

وَقَالَ أَبُو حَازِمٍ عَنْ سَهْلٍ صَلَّوْا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاقِدِي أُزْرِهِمْ عَلَى عَوَاتِقِهِمْ

আর আবূ হাযিম (রহঃ) সাহল ইবন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, সাহাবায়ে কিরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তহবন্দ কাঁধে বেঁধে সালাত আদায় করেছিলেন

৩৪৫। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ..... মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাঃ) কাঁধে তহবন্দ বেঁধে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। আর তাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রক্ষিত ছিল। তখন তাঁকে এক ব্যাক্তি বললঃ আপনি যে এক তহবন্দ পরে সালাত আদায় করলেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ তোমার মত আহাম্মকদের দেখানর জন্য আমি এরূপ করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমাদের মধ্যে কারই বা দু’টো কাপড় ছিল?

পরিচ্ছেদঃ ২৪৪। সালাতে কাঁধে তহবন্দ বাঁধা।

৩৪৬। মুতাররিফ আবূ মূসাআব (রহঃ) .... মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।

قَالَ الزُّهْرِيُّ فِي حَدِيثِهِ الْمُلْتَحِفُ الْمُتَوَشِّحُ، وَهْوَ الْمُخَالِفُ بَيْنَ طَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقَيْهِ، وَهْوَ الاِشْتِمَالُ عَلَى مَنْكِبَيْهِ. قَالَ وَقَالَتْ أُمُّ هَانِئٍ الْتَحَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَوْبٍ، وَخَالَفَ بَيْنَ طَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقَيْهِ

যুহরী (রহঃ) তাঁর হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, ملٔتحف এর অর্থ متوشح -অর্থাৎ যে চাদরের উভয় অংশ বিপরীত কাঁধে রাখে। এভাবে কাঁধের উপর চাদর রাখাকে ইশতিমাল বলে। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক চাদর গায়ে দিলেন এবং তিনি চাদরের উভয় প্রান্ত বিপরীত কাঁধে রাখলেন।

৩৪৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু মূসা (রহঃ) .... উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কাপড় পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁর উভয় প্রান্ত বিপরীত দিকে রাখলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।

৩৪৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ..... উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছেন। তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সে কাপড়ের উভয় প্রান্ত নিজের উভয় কাঁধে রেখেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।

৩৪৯। উবায়দ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ..... উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড় জড়িয়ে উম্মে সালামা (রাঃ)-এর ঘরে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি, যার উভয় প্রান্ত তাঁর উভয় কাঁধের উপর রেখেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।

৩৫০। ইসমা’ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) .... উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কে? আমি উত্তর দিলামঃ আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পরে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত শেষ করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই [‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি সে লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেনঃ তখন ছিল চাশতের সময়।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।

৩৫১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে কাপড় আছে?

পরিচ্ছেদঃ ২৪৬। কেউ এক কাপড়ে সালাত আদায় করলে সে যেন উভয় কাঁধের উপর (কিছু অংশ) রাখে

৩৫২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড়ে পরে এমনভাবে যেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে যে, তার উভয় কাঁধে এর কোন অংশ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৬। কেউ এক কাপড়ে সালাত আদায় করলে সে যেন উভয় কাঁধের উপর (কিছু অংশ) রাখে

৩৫৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, সে যেন কাপড়ের দু’প্রান্ত বিপরীত পার্শ্বে রাখে।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৭। কাপড় যদি সংকীর্ণ হয়

৩৫৪। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) ... সাঈদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কোন সফরে বের হয়েছিলাম। এক রাতে আমি কোন প্রয়োজনে তাঁর কাছে গেলাম। দেখলাম, তিনি সালাতরত আছেন। তখন আমার শরীরে মাত্র একখানা কাপড় ছিল। আমি কাপড় দিয়ে শরীর জড়িয়ে নিলাম আর তাঁর পার্শ্বে সালাতে দাঁড়ালাম। তিনি সালাত শেষ করে জিজ্ঞাসা করলেনঃ জাবির! রাতের বেলা আসার কারণ কি? তখন আমি তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা জানালাম। আমার কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ এ কিরূপ জড়ানো অবস্থায় তোমকে দেখলাম? আমি বললামঃ কাপড় একটই ছিল (তাই এভাবে করেছি)। তিনি বললেনঃ কাপড় যদি বড় হয়, তাহলে শরীরে জড়িয়ে পরবে। আর যদি ছোট হয়, তাহলে তহবন্দরূপে ব্যাবহার করবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৭। কাপড় যদি সংকীর্ণ হয়

৩৫৫। মূসাদ্দাদ (রহঃ) .... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা বাচ্চাদের মত নিজেদের তহবন্দ কাঁধে বেঁধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর মহিলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, তাঁরা যেন পুরুষদের ঠিকমত বসে যাওয়ার পূর্বে সিজদা থেকে মাথা না উঠায়।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৮। শামী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা।

وَقَالَ الْحَسَنُ فِي الثِّيَابِ يَنْسُجُهَا الْمَجُوسِيُّ لَمْ يَرَ بِهَا بَأْسًا. وَقَالَ مَعْمَرٌ رَأَيْتُ الزُّهْرِيَّ يَلْبَسُ مِنْ ثِيَابِ الْيَمَنِ مَا صُبِغَ بِالْبَوْلِ. وَصَلَّى عَلِيٌّ فِي ثَوْبٍ غَيْرِ مَقْصُورٍ

হাসান (রহঃ) বলেনঃ মাজূসী (অগ্নিপূজক)-দের তৈরি কাপড়ে সালাত আদায় করার কোন ক্ষতি নেই। আর মা’মার (রহ") বলেনঃ আমি যুহরী (রহঃ)-কে ইয়ামানের তৈরি কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি, যা পেশাবের (কাপড় ধৌত করার পরও পেশাবের দাগ যায়নি এমন কাপড়) দ্বারা রঞ্জিত ছিল। ‘আলী ইবন আবূ তালিব (রাঃ) অধোয়া নতুন কাপড়ে সালাত আদায় করতেন।

৩৫৬। ইয়াহইয়া (রহঃ) .... মুগীর ইবনু শু’বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুগীরা! লোটাটি লও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির বাইরে গিয়ে প্রয়োজন সমাধা করলেন। তখন তাঁর দেহে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন থেকে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সালাতের উযূর ন্যায় উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। আর তাঁর উভয় মোজার উপর মাসেহ করলেন ও পরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৪৯। সালাতে ও তার বাইরে বিবস্ত্র হওয়া অপছন্দনীয়

৩৫৭। মাতার ইবনু ফযল (রহঃ) ... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নবুওয়াতের পূর্বে) কুরাইশদের সাথে কাবার (মেরামতের) জন্য পাথর তুলে দিচ্ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গী। তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন; ভাতিজা! তুমি লুঙ্গী খুলে কাঁধে পাথরের নীচে রাখলে ভাল হত। জাবির (রাঃ) বলেনঃ তিনি লুঙ্গী খুলে কাঁধে রাখলেন এবং তৎক্ষণাত বেহুশ হয়ে পড়লেন। এরপর তাঁকে আর কখনও বিবস্ত্র অবস্থাই দেখা যায়নি।

পরিচ্ছেদঃ ২৫০। জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া কাবা পরে সালাত আদায় করা

৩৫৮। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দাঁড়িয়ে এক কাপড়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের হুকুম জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কি দু’খানা করে কাপড় আছে? এরপর এক ব্যাক্তি ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ যখন তোমাদের সামর্থ্য দিয়েছেন তখন তোমরাও নিজেদের সামর্থ্য প্রকাশ কর। লোকেরা যেন পুরো পোশাক একত্রে পরিধান করে অর্থাৎ মানুষ তহবন্দ ও চাঁদর, তহবন্দ ও জামা, তহবন্দ ও কাবা*, পায়জামা ও চাঁদর, পায়জামা ও জামা, পায়জামা ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও কাবা, জাঙ্গিয়া ও জামা পরে সালাত আদায় করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমার মনে হয় ‘উমর (রাঃ) জাঙ্গিয়া ও চাঁদরের কথাও বলেছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৫০। জামা, পায়জামা, জাঙ্গিয়া কাবা পরে সালাত আদায় করা

৩৫৯। আসিম ইবনু ‘আলী (রহঃ) ... ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলো, ইহরামকারী কি পরিধান করবে? তিনি বললেনঃ সে জামা পরবে না, পায়জামা পরবে না, টুপি পরবে না, যাফরান বা ওয়ারস* রঙে রঞ্জিত কাপড় পরবে না। আর জুতা না পেলে মোজা পরবে। তবে তা পায়ের গিরার নীচে পর্যন্ত কেটে নেবে।

নাফি’ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৫১। লজ্জাস্থান ঢাকা

৩৬০। কুতায়বা (রহঃ) .... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশতিমালে সাম্মা* এবং কাপড়ে ইহতিবা* করতে নিষেধ করেছেন যাতে তাঁর লজ্জাস্থানে কাপড়ের কোন অংশ না থাকে।

*সাম্মাঃ একই কাপড়ে সমস্ত শরীর এমনভাবে জড়ানো যাতে হাত-পা নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হয়।

*ইহতিবাঃ পা ও হাঁটু দাড় করিয়ে বাহু বা কাপড় দিয়ে তা এমন ভাবে বেষ্টন করে নিতম্বের উপর বসা যাতে লজ্জাস্থান খুলে যাওয়ার আশংকা থাকে।

পরিচ্ছেদঃ ২৫১। লজ্জাস্থান ঢাকা

৩৬১। কাবীসা ইবনু ‘উকবা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। তা হল লিমাস ও নিবায* আর ইশ্তিমালে সাম্মা এবং এক কাপড়ে ইহতিবা করতে নিষেধ করেছেন।

*জাহিলী যুগের ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি পদ্ধতি। লিমাস বলতে ক্রেতা কতৃক কোন বস্তুকে স্পর্শ করামত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায়। আর নিবায বলতে ক্রেতা বা বিক্রেতা কতৃক কোন বস্তুর উপর পাথর ছুড়ে মারামাত্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রয় করতে বাধ্য হওয়া বুঝায় (বুখারী ১ম খণ্ড, হাশিয়া নং৪ পৃ ৫৬)। বিস্তারিত জানার জন্য ক্রয়-বিক্রয় (بيع) অধ্যায় দেখুন।

পরিচ্ছেদঃ ২৫১। লজ্জাস্থান ঢাকা

৩৬২। ইসহাক (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমাকে আবূ বকর (রাঃ) [যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাঁকে হাজ্জের আমীর বানানো হয়েছিল] কুরবানীর দিন ঘোষকদের সাথে মিনায় এ ঘোষণা করার জন্য পাঠালেন যে, এ বছরের পরে কোন মুশরিক বায়তুল্লাহর হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না। আর কোন উলঙ্গ লোকও বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না। হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে আবূ বকর (রাঃ) এর পেছনে প্রেরণ করেন আর তাঁকে সুরা বারাআতের (প্রথম অংশের) ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমাদের সঙ্গে ‘আলী (রাঃ) কুরবানীর দিন মিনায় ঘোষণা দেন যে, এ বছরের পর থেকে আর কোন মুশরিক হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারবে না এবং কোন উলঙ্গ ব্যাক্তিও তাওয়াফ করতে পারবে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৫২। চাদর গায়ে না দিয়ে সালাত আদায় করা

৩৬৩। আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-এর কাছে গিয়ে দেখি তিনি একটি মাত্র কাপড় নিজের শরীরে জড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন অথচ তাঁর একটা চাঁদর সেখানে রাখা ছিল। সালাতের পর আমার বললামঃ হে আবূ আবদুল্লাহ! আপনি সালাত আদায় করছেন, অথচ আপনার চাঁদর তুলে রেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের মত নির্বোধদের দেখানোর জন্য আমি এরূপ করেছি। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৩। ঊরু সম্পর্কে বর্ণনা।

وَيُرْوَى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَجَرْهَدٍ وَمُحَمَّدِ بْنِ جَحْشٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْفَخِذُ عَوْرَةٌ». وَقَالَ أَنَسٌ حَسَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ فَخِذِهِ. وَحَدِيثُ أَنَسٍ أَسْنَدُ، وَحَدِيثُ جَرْهَدٍ أَحْوَطُ حَتَّى يُخْرَجَ مِنِ اخْتِلاَفِهِمْ. وَقَالَ أَبُو مُوسَى غَطَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُكْبَتَيْهِ حِينَ دَخَلَ عُثْمَانُ. وَقَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفَخِذُهُ عَلَى فَخِذِي فَثَقُلَتْ عَلَيَّ حَتَّى خِفْتُ أَنْ تُرَضَّ فَخِذِي

আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, বর্ণিত আছে যে, ইবন ‘আব্বাস, জারহাদ ও মুহাম্মদ ইবন জাহশ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ঊরু সতরের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাস (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঊরু থেকে কাপড় সরিয়েছিলেন [আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ)] সনদের দিক থেকে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস অধিক সহীহ আর জারহাদ (রাঃ)-এর হাদীস অধিকতর সতর্কতামূলক। এভাবেই আমরা (উম্মতের মধ্যে) মতবিরোধ এড়াতে পারি। আর আবূ মূসা (রাঃ) বলেছেনঃ ‘উসমান (রাঃ)-এর আগমনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাঁটু ঢেকে নেন। যায়িদ ইবন সাবিত (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ওহী নাযিল করেছেন এমন অবস্থায় যখন তাঁর ঊরু ছিল আমার উরুর উপর। আমার কাছে তাঁর ঊরু এত ভারি বোধ হচ্ছিল যে, আমি আশংকা করছিলাম, হয়ত আমার ঊরুর হাড় ভেঙ্গে যাবে

৩৬৪। ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়রব যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) খুব ভোরে আদায় করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হলেন। আবূ তালহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবূ তালহার পেছনে বসা ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সওয়ারীকে খায়বরের পথে চালিত করলেন। আমার হাঁটু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊরুতে লাগছিল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊরু থেকে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঊরুর উজ্জলতা এখনও আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করলেন তখন বললেনঃ আল্লাহ আকবার। খায়বর ধ্বংস হউক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গনে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারন করলেন।

আনাস (রাঃ) বলেনঃ খায়বরের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মদ! ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” (ওয়াল খামীস) শব্দও যোগ করেছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম। তখন যুদ্ধবন্দীদের সমবেত করা হল। দিহরা (রাঃ) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর নাবী! বন্দীদের থেকে আমাকে একটি দাসী দিন। তিনি বললেনঃ যাও তুমি একটি দাসী নিয়ে যাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ)-কে নিলেন। তখন এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললঃ ইয়া নাবিয়াল্লাহ! বনূ কুরাইযা ও বনূ নাযীরের অন্যতম নেত্রী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে আপনি দিহয়াকে দিচ্ছেন? তিনি তো একমাত্র আপনার এ যোগ্য। তিনি বললেনঃ দিহয়াকে সাফিয়্যাসহ ডেকে আন। তিনি সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে দেখলেন তখন (দিহয়াকে) বললেনঃ তুমি বন্দীদের থেকে অন্য একটি দাসী দেখে নাও। রাবী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ)-কে আযাদ করে দিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন।

রাবী সাবিত (রহঃ) আবূ হামযা (আনাস) (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কি মাহর দিলেন? আনাস (রাঃ) জওয়াব দিলেন তাঁকে আযাদ করাই তাঁর মাহর। এর বিনিময়ে তিনি তাঁকে বিয়ে করেছেন। এরপর পথে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে সাজিয়ে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে পেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাসর রাত যাপন করে ভোরে উঠলেন। তিনি ঘোষণা দিলেনঃ যার কাছে খানার কিছু আছে সে যেন তা নিয়ে আসে। এ বলে তিনি একটা চামড়ার দস্তরখান বিছালেন। কেউ খেজুর নিয়ে আসলো, কেউ ঘি আনলো। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় আনাস (রাঃ) ছাতুর কথাও উল্লেখ করেছেন। তারপর তাঁরা এসব মিশিয়ে খাবার তৈরি করলেন। এ-ই ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওয়ালীমা।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৪। মহিলারা সালাত আদায় করতে কয়টি কাপড় পরবে।

وَقَالَ عِكْرِمَةُ لَوْ وَارَتْ جَسَدَهَا فِي ثَوْبٍ لأَجَزْتُهُ

ইকরিমা (রহঃ) বলেনঃ যদি একটি কাপড়ে মহিলার সমস্ত শরীর ঢেকে যায় তবে তাতেই সালাত জায়েয হবে।

৩৬৫। আবূল ইয়ামান (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তাঁর সঙ্গে অনেক মু’মিন মহিলা চাদর দিয়ে গা ঢেকে শরীক হতো। তারপর তাঁরা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতো। আর তাঁদের কেউ চিনতে পারত না।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৫। কারুকার্য খচিত কাপড়ে সালাত আদায় করা এবং ঐ কারুকার্যে দৃষ্টি পড়া

৩৬৬। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা একটি কারুকার্য খচিত চাদর গায়ে দিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর সালাতে সে চাদরের কারুকার্যের প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়ল। সালাত শেষে তিনি বললেনঃ এ চাদরখানা আবূ জাহমের কাছে নিয়ে যাও, আর তার কাছ থেকে আমবিজানিয়্যা (কারুকার্য ছাড়া মোটা চাঁদর) নিয়ে আস। এটা তো আমাকে সালাত থেকে অমনোযোগী করে দিচ্ছিল।

হিশাম ইবনু ‘উরওয়া (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সালাত আদায়ের সময় এর কারুকার্যের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে। তখন আমি আশংকা করছিলাম যে, এটা আমাকে ফিতনায় ফেলে দিতে পারে।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৬। ক্রুশ চিহ্ন অথবা ছবিযুক্ত কাপড়ে সালাত ফাসিদ হবে কিনা এবং এ সম্মন্ধে নিষেধাজ্ঞা

৩৬৭। আবূ মা’মার ‘আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে একটা বিচিত্র রঙের পাতলা পর্দার একটা কাপড় ছিল। তিনি তা ঘরের একদিকে পর্দা হিসাবে ব্যাবহার করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার সম্মুখ থেকে এই পর্দা সরিয়ে নাও। কারণ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার সময় এর ছবিগুল আমার সামনে ভেসে ওঠে।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৭। রেশমী জুব্বা পরে সালাত আদায় করা ও পরে তা খুলে ফেলা

৩৬৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটা রেশমি জুব্বা হাদিয়া হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা পরিধান করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। কিন্তু সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত তা খুলে ফেললেন, যেন তিনি তা পরা অপছন্দ করছিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ মুত্তাকীদের জন্য এই পোশাক সমীচীন নয়।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৮। লাল কাপড় পরে সালাত আদায় করা

৩৬৯। মুহাম্মদ ইবনু ‘আর’আর (রহঃ) .... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে চামড়ার একটা লাল তাঁবুতে দেখলাম এবং তাঁর জন্য উযূর পানি নিয়ে বিলাল (রাঃ)-কে উপস্থিত দেখলাম। আর লোকেরা তাঁর উযূর পানির জন্য প্রতিযোগিতা করছে। কেউ সামান্য পানি পাওয়া মাত্র তা দিয়ে শরীর মুছে নিচ্ছে। আর যে পায়নি সে তাঁর সাথীর ভেজা হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছে। তারপর বিলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি লৌহফলকযুক্ত ছড়ি নিয়ে এসে তা মাটিতে পুতে দিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা লাল ডোরাযুক্ত পোশাক পরে বের হলেন, তাঁর তহবন্দ কিঞ্চিত উঁচু করে পরা ছিল। সে ছড়িটি সামনে রেখে লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর মানুষ ও জন্তু -জানোয়ার ঐ ছড়িটির বাইরে চলাফেরা করছিল।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৯। ছাদ, মিম্বর ও কাঠের উপর সালাত আদায় করা।

قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَلَمْ يَرَ الْحَسَنُ بَأْسًا أَنْ يُصَلَّى عَلَى الْجَمْدِ وَالْقَنَاطِرِ، وَإِنْ جَرَى تَحْتَهَا بَوْلٌ أَوْ فَوْقَهَا أَوْ أَمَامَهَا، إِذَا كَانَ بَيْنَهُمَا سُتْرَةٌ. وَصَلَّى أَبُو هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ بِصَلاَةِ الإِمَامِ. وَصَلَّى ابْنُ عُمَرَ عَلَى الثَّلْجِ

আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ হাসান বসরী (রহঃ) বরফ ও পুলের উপর সালাত আদায় করা দূষণীয় মনে করতেন না–যদিও তার নীচ দিয়ে, উপর দিয়ে অথবা সামনের দিক দিয়ে পেশাব প্রবাহিত হয়; যদি উভয় মাঝে কোন ব্যবধান থাকে। আবূ হুরায়ারা (রাঃ) মসজিদের ছাদে ইমামের সাথে সালাত আদায় করেছিলেন। ইবন ‘উমর (রাঃ) বরফের উপর সালাত আদায় করেছেন।

৩৭০। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আবূ হাযিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, লোকেরা সাহল ইবনু সাদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলঃ (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) মিম্বর কিসের তৈরি ছিল? তিনি বললেনঃ এ বিষয়ে আমার চাইতে জ্ঞাত আর কেউ নেই। তা ছিল গাবা নামক স্থানের ঝাউগাছের কাঠ দিয়ে তৈরী। অমুক মহিলার আযাদকৃত দাস অমুক ব্যাক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য তা তৈরী করেছিলেন। তা পুরোপুরি তৈরী ও স্থাপিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উপর দাড়িয়ে কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বললেন। লোকেরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি কিরাআত পড়লেন ও রুকূতে গেলেন। সকলেই তাঁর পেছনে রুকূতে গেলেন। তারপর তিনি মাথা তুলে পেছনে সরে গিয়ে মাটিতে সিজদা করলেন। এ হল মিম্বরের ইতিহাস।

আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেনঃ ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেছেন যে, আমাকে আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আমার ধারনা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচাইতে উঁচু স্থানে ছিলেন। সুতরাং ইমামের মুক্তাদীরের চাইতে উঁচু স্থানে দাঁড়ানোতে কোন দোষ নেই।

‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ আমি আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)-কে বললামঃ সুফিয়ান ইবনু ‘উয়ায়না (রহঃ)-কে এ বিষয়ে বহুবার প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি তাঁর কাছে এ বিষয়ে কিছু শোনেন নি? তিনি জবাব দিলেনঃ না।

পরিচ্ছেদঃ ২৫৯। ছাদ, মিম্বর ও কাঠের উপর সালাত আদায় করা।

৩৭১। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রহীম (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন, এতে তাঁর পায়ের ‘গোছায়’ অথবা (রাবী বলেছেন) ‘কাঁধে’ আঘাত পান। তিনি তাঁর স্ত্রীদের থেকে এক মাসের জন্য পৃথক হয়ে থাকেন। তখন তিনি ঘরের উপরের কক্ষে অবস্থান করেন যার সিড়ি ছিল খেজুর গাছের কান্ডের তৈরী। সাহাবীগণ তাঁকে দেখতে এলেন, তিনি তাঁদের নিয়ে বসে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, আর তাঁরা ছিল দাঁড়ানো। সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ ইমাম এজন্য যে মুক্তাদীরা তার অনুসরণ করবে। সুতরাং ইমাম তাকবীর বললে তোমরাও তাকবীর বলবে, তিনি রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। তিনি সিজদা দিলে তোমরাও করবে। ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। তারপর ঊনত্রিশ দিন পূর্ণ হলে তিনি নেমে আসলেন। তখন লোকেরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো এক মাসের শপথ করেছিলেন। তিনি বললেনঃ এ মাস ঊনত্রিশ দিনের।

পরিচ্ছেদঃ ২৬০। মুসল্লীর কাপড় সিজদা করার সময় স্ত্রীর গায়ে লাগা

৩৭২। মূসাদ্দাদ (রহঃ) ..... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সিজদা করার সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬১। চাটায়ের উপর সালাত আদায় করা।

وَصَلَّى جَابِرٌ وَأَبُو سَعِيدٍ فِي السَّفِينَةِ قَائِمًا. وَقَالَ الْحَسَنُ تُصَلِّي قَائِمًا مَا لَمْ تَشُقَّ عَلَى أَصْحَابِكَ، تَدُورُ مَعَهَا وَإِلاَّ فَقَاعِدًا

জাবির ইবন ‘আবদুল্লাহ ও আবূ সাঈদ (রাঃ) নৌকায় দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন। হাসান (রহঃ) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সাথীদের জন্য কষ্টকর না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। আর নৌকার দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুরে যাবে। অন্যথায় বসে সালাত আদায় করবে।

৩৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলায়কাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরী করেছিলেন। তিনি তা থেকে খেলেন, এরপর বললেনঃ উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যাবহারে কাল হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য দাঁড়ালেন। আমি ও একজন ইয়াতীম বালক (যুমায়রা) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমার পেছনে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু’রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬২। ছোট চাটায়ের উপর সালাত আদায় করা

৩৭৪। আবূল ওলীদ (রহঃ) ... মায়মূনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট চাটায়ের উপর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৩। বিছানায় সালাত আদায় করা।

وَصَلَّى أَنَسٌ عَلَى فِرَاشِهِ. وَقَالَ أَنَسٌ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَسْجُدُ أَحَدُنَا عَلَى ثَوْبِهِ

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) নিজের বিছানায় সালাত আদায় করতেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ নিজ কাপড়ের উপর সিজদা করতো

৩৭৫। ইসমা’ঈল (রহঃ) .... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু’খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু’খানা সঙ্কুচিত করতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু’খানা সপ্রসারিত করতাম। তিনি বলেনঃ সে সময় ঘরগুলোতে বাতি ছিল না।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৩। বিছানায় সালাত আদায় করা।

৩৭৬। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) ‘উরওয়া (রহঃ)-কে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর তিনি [আয়িশা (রাঃ)] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কিবলার মধ্যে পারিবারিক বিছানায় জানাযার মত আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকতেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৩। বিছানায় সালাত আদায় করা।

৩৭৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, আর আয়িশা (রাঃ) তাঁর ও তাঁর কিবলার মাঝাখানে তাঁদের বিছানায় শুয়ে থাকতেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৪। প্রচণ্ড গরমের সময় কাপড়ের উপর সিজদা করা।

وَقَالَ الْحَسَنُ كَانَ الْقَوْمُ يَسْجُدُونَ عَلَى الْعِمَامَةِ وَالْقَلَنْسُوَةِ وَيَدَاهُ فِي كُمِّهِ

হাসান বসরী (রহঃ) বলেন, লোকেরা পাগড়ী ও টুপির উপর সিজদা করতো আর তাঁদের হাত থাকতো আস্তিনের ভিতর

৩৭৮। আবূল ওলীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। আমাদের কেউ কেউ সিজদার সময় অধিক গরমের কারণে কাপড়ের প্রান্ত সিজদার স্থানে রাখতো।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৫। জুতা পরে সালাত আদায় করা

৩৭৯। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) .... আবূ মাসলামা সাঈদ ইবনু ইয়াজীদ আল-আযদী (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর না'লাইন (চপ্পল) পরে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৬। মোজা পরে সালাত আদায় করা

৩৮০। আদম (রহঃ) ..... হাম্মাম ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। তারপর উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসেহ করলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও এরূপ করতে দেখেছি।

ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীস মুহাদ্দিসীনের কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। কারণ জারীর (রাঃ) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেষ যুগের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৬। মোজা পরে সালাত আদায় করা

৩৮১। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) .... মুগীর ইবনু শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–কে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করিয়েছি। তিনি উযূর সময় মোজা দু’টির উপর মাসেহ করলেন ও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৭। সিজদা পূর্ণভাবে না করলে

৩৮২। সালত ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ..... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি তাঁর রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করলো তখন তাকে হুযায়ফা (রাঃ) বললেনঃ তোমার সালাত (নামায/নামাজ) ঠিক হয়নি। রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় তিনি (হুযায়ফা) এ কথাও বলেছেন, (এ অবস্থায়) তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকা অনুযায়ী হবে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৮। সিজদায় বাহুমূল খোলা রাখা এবং দু’পাশ আলগা রাখা

৩৮৩। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় উভয় বাহু পৃথক রাখতেন। এমনকি তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেতো।

লাইস (রহঃ) বলেনঃ জা’ফর ইবনু রবী’আহ (রহঃ) আমার কাছে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৯। কিবলামূখী হওয়ার ফযীলত।

يَسْتَقْبِلُ بِأَطْرَافِ رِجْلَيْهِ. قَالَ أَبُو حُمَيْدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

পায়ের আঙ্গুলকেও কিবলামূখী রাখবে। আবূ হুমায়দ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন।

৩৮৪। আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি আমাদের ন্যায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী আর আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম, যার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর যিম্মাদারীতে খিয়ানত করো না।

পরিচ্ছেদঃ ২৬৯। কিবলামূখী হওয়ার ফযীলত।

৩৮৫। নু’আইম (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' স্বীকার করবে। যখন তারা তা স্বীকার করে নেয়, আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, তখন তাদের জান ও মালসমূহ আমাদের জন্য হারাম হয়ে যায়। অবশ্য রক্তের বা সম্পদের দাবীর কথা ভিন্ন। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে।

‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মায়মূন ইবনু সিয়াহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আবূ হামযাহ, কিসে কিসে মানুষের জান ও মাল হারাম হয়? তিনি জবাব দিলেন, যে ব্যাক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর সাক্ষ্য দেয়, আমাদের কেবলামূখী হয়, আমাদের সালাত আদায় করে, আমাদের যবেহ করা প্রাণী খায়, সে-ই মুসলিম। অন্য মুসলমানদের মতই তার অধিকার রয়েছে। আর অন্য মুসলমানদের মতই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।

ইবনু আবূ মারয়াম, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যূব (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (অনুরূপ) বর্ণনা করেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭০। মদীনা, সিরিয়া ও (মদীনার) পূর্ব দিকের অধিবাসীদের কিবলা কিবলা পূর্বে বা পশ্চিমে নয়। কারণ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা পায়খানা বা পেশাব করতে কিবলামুখী হবে না, বরং তোমরা (উত্তর অঞ্চলের অধিবাসীরা) পূর্বদিকে কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে

৩৮৬। আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) .... আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্বদিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তা’লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতাম।

যুহরী (রহঃ) ‘আতা (রহঃ) সুত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আমি আবূ আয়্যূব (রাঃ)-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৭১। মহান আল্লাহর বাণীঃ মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান রূপে গ্রহন কর (২:১২৫)

৩৮৭। হুমায়দী (রহঃ) ..... আমর ইবনু দ্বীনার (রহঃ) বলেনঃ আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম—যে ব্যাক্তি উমরার জন্য বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন কিন্তু সাফা-মারওয়া সাঈ করে নি, সে কি তাঁর স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হতে পারবে? তিনি জবাব দিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছেন, মাকামে ইবরাহীমের কাছে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন আর সাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ায় সাঈ করার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর কাছে যাবে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৭১। মহান আল্লাহর বাণীঃ মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান রূপে গ্রহন কর (২:১২৫)

৩৮৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি উমর (রাঃ)-এর নিকট এলেন, এবং বললেনঃ ইনি হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি কাবা ঘরে প্রবেশ করেছেন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম এবং দেখলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। আমি বিলাল (রাঃ)-কে উভয় কপাটের মাঝখানে দাঁড়ানো দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা ঘরের অভ্যন্তরে সালাত আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, কা’বায় প্রবেশ করার সময় তোমার বাঁ দিকের দুই স্তম্ভের মধ্যখানে দুই রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তারপর তিনি বের হলেন এবং কাবার সামনে দুই রাক’আত সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭১। মহান আল্লাহর বাণীঃ মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান রূপে গ্রহন কর (২:১২৫)

৩৮৯। ইসহাক ইবনু নসর (রহঃ) ..... ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বায় প্রবেশ করেন, তখন তাঁর সকল দিকে দুয়া করেছেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করেই বেরিয়ে এসেছেন এবং বের হওয়ার পর কাবার সামনে দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছেন, আর বলেছেন, এই কিবলা।

পরিচ্ছেদঃ ২৭২। যেখানেই হোক (সালাতে) কিবলামুখী হওয়া।

وَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اسْتَقْبِلِ الْقِبْلَةَ وَكَبِّرْ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিবলামুখী হও তাকবীর বল।

৩৯০। আবদুল্লাহ ইবনু রাজা’ (রহঃ) .... বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার দিকে কিবলা করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করেছি। (২ : ১৪৪) তারপর তিনি কাবার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা–তারা ইয়াহুদী, বলতো, "তারা এ যাবত যে কিবলা অনুসরণ করে আসছিলো, তা থেকে কিসে তাঁদের কে ফিরিয়ে দিল"? বলুনঃ (হে রাসূল) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করেন। (২ : ১৪২)

তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সালাতের সময় আনসারগনের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে তিনি সালাত আদায় করেছেন, আর তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাবার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কাবার দিকে মুখ করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭২। যেখানেই হোক (সালাতে) কিবলামুখী হওয়া।

৩৯১। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সাওয়ারীর উপর (নফল) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন—সওয়ারী তাঁকে নিয়ে যে দিকেই মুখ করত না কেন। কিন্তু যখন ফরয সালাত আদায়ের ইচ্ছা করতেন, তখন নেমে পড়তেন এবং কিবলার দিকে মুখ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭২। যেখানেই হোক (সালাতে) কিবলামুখী হওয়া।

৩৯২। উসমান (রহঃ) .... আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রাবী ইবরাহীম (রহঃ) বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন। সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সালাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুয়িয়ে কিবলামুখী হলেন। আর দু’টি সিজদা আদায় করলেন। এরপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সালাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সালাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হওয়ার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সালাত পূর্ণ করে। তারপর সে সালাম ফিরিয়ে দু'টি সিজদা আদায় করে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৩। কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা।

وَمَنْ لاَ يَرَى الإِعَادَةَ عَلَى مَنْ سَهَا فَصَلَّى إِلَى غَيْرِ الْقِبْلَةِ - وَقَدْ سَلَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَكْعَتَيِ الظُّهْرِ، وَأَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ بِوَجْهِهِ، ثُمَّ أَتَمَّ مَا بَقِيَ

ভুলবশত কিবলার পরিবর্তে অন্যদিকে মুখ করে সালাত আদায় করলে তা পুনরায় আদায় করা যাদের মতে আবশ্যকীয় নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের দু’রাক’আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে মুসল্লিগণের দিকে মুখ করলেন। তারপরে বাকী সালাত পূর্ণ করলেন।

৩৯৩। আমার ইবনু ‘আওন (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى‏) “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও” (২ : ১২৫)

(দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি আপনার সহধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়।

আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। (৬৬ : ৫) তখন এ আয়াত নাযিল হয়।

[অপর সনদে ইবন আবু মারয়াম (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।]

পরিচ্ছেদঃ ২৭৩। কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা।

৩৯৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক সময় লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফযরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এমন সময় তাঁদের নিকট এক ব্যাক্তি এসে বললেন যে, এ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। আর তাঁকে কাবামুখী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা কাবার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে। একথা শুনে তাঁরা কাবার দিকে মুখ করে নিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৩। কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা।

৩৯৫। মূসাদ্দাদ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ [ইবনু মাস’উদ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরেরে সালাত (নামায/নামাজ) পাঁচ রাক’আত আদায় করেন। তখন মুসল্লীগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ সালাতে কি কিছু বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ তা কি? তাঁরা বললেনঃ আপনি যে পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করেছেন। রাবী বলেন, তিনি নিজের পা ঘুরিয়ে (কিবলামুখী হয়ে) দুই সিজদা (সিজদা সাহু) করে নিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৪। মসজিদে থুথু হাতের সাহায্যে পরিষ্কার করা

৩৯৬। কুতায়বা (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তাঁর কাছে কষ্টদায়ক মনে হল। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে দিয়ে তা হাত দিয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন সে তাঁর রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তাঁর ও কিবলার মাঝখানে তাঁর রব আছেন। কাজেই, তোমাদের কেউ যখন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে। বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে বা পায়ের নীচে তা ফেলে। তারপর চাঁদরের আঁচল দিয়ে তিনি তাতে থুথু ফেললেন এবং তাঁর এক অংশকে অন্য অংশের উপর ভাঁজ করলেন এবং বললেনঃ অথবা সে এরূপ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৪। মসজিদে থুথু হাতের সাহায্যে পরিষ্কার করা

৩৯৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে দেওয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। তারপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সে যেন তাঁর সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সালাত আদায় করে তখন তাঁর সামনের দিকে আল্লাহ তা’আলা থাকেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৪। মসজিদে থুথু হাতের সাহায্যে পরিষ্কার করা

৩৯৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকের দেয়ালের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৫। কাঁকর দিয়ে মসজিদ থেকে নাকের শ্লেস্মা পরিষ্কার করা।

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ إِنْ وَطِئْتَ عَلَى قَذَرٍ رَطْبٍ فَاغْسِلْهُ، وَإِنْ كَانَ يَابِسًا فَلاَ

ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ যদি আর্দ্র আবর্জনায় তোমার পা ফেল, তখন তা ধুইয়ে ফেলবে, আর শুকনো হলে ধোয়ার প্রয়োজন নেই।

৩৯৯। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা ও আবূ সাইদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেওয়ালে কফ দেখে কাঁকর দিয়ে তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তাঁর বাম দিকে অথবা তাঁর পায়ের নীচে ফেলে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৬। সালাতে ডান দিকে থুথু ফেলবে না

৪০০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (খুদরী) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সামনে অথবা ডানে না ফেলে বরং (প্রয়োজনে) সে বাঁ দিকে অথবা বাঁ পায়ের নিচে ফেলবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৬। সালাতে ডান দিকে থুথু ফেলবে না

৪০১। হাফসা ইবনু উমর (রহঃ) ..... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুথু না ফেলে; বরং তার বাঁয়ে বা পায়ের নীচে ফেলে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৭। থুথু যেন বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে

৪০২। আদম (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মু'মিন যখন সালাতে থাকে, তখন সে তার রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে। বরং তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৭। থুথু যেন বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলে

৪০৩। আলী (রহঃ) .... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। তারপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে ফেলতে বললেন।

যুহরী (রহঃ) হুমাইদ (রহঃ) এর মাধ্যমে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৮। মসজিদে থুথু ফেলার কাফফারা

৪০৪। আদম (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহ, আর তার কাফফারা (প্রতিকার) হল তা পুঁতে ফেলা।

পরিচ্ছেদঃ ২৭৯। মসজিদে কফ পুঁতে ফেলা

৪০৫। ইসহাক ইবনু নাসর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। সে যতক্ষণ তার মুসাল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। কেননা তার ডান দিকে থাকেন ফিরিশতা। সে যেন তার বাঁ দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা পুঁতে ফেলে।

পরিচ্ছেদঃ ২৮০। থুথু ফেলতে বাধ্য হলে তা কাপড়ের কিনারে ফেলবে।

৪০৬। মালিক ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল বা সে কারণে তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল এবং এর প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেন যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, তখন তার রবের সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার রব কিবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে যেন কিবলার দিকে থুথু না ফেলে, বরং (প্রয়োজনে) বাঁ দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। তারপর তিনি চাঁদরের কোণ ধরে তাতে থুথু ফেলে এক অংশের উপর অপর অংশ ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেনঃ অথবা এরূপ করবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৮১। সালাত পূর্ণ করার ও কিবলার ব্যাপারে লোকদেরকে ইমামের উপদেশ দান।

৪০৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি।

পরিচ্ছেদঃ ২৮১। সালাত পূর্ণ করার ও কিবলার ব্যাপারে লোকদেরকে ইমামের উপদেশ দান।

৪০৮। ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং ইরশাদ করলেন, তোমাদের সালাতে রুকুতে আমি অবশ্যই তোমাদের আমার পেছন থেকে দেখি, যেমন এখন তোমাদের দেখছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৮২। অমুক গোত্রের মসজিদ বলা যায় কি?

৪০৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের জন্য তৈরী ঘোড়াকে ‘হাফয়া’ (নামক স্থান) থেকে ‘সানিয়াতুল ওয়াদা’ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর যে ঘোড়া যুদ্ধের জন্য তৈরী নয়, সে ঘোড়াকে ‘সানিয়া’ থেকে যুরাইক গোত্রের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর এই প্রতিযোগিতায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) অগ্রগামী ছিলেন।

পরিচ্ছেদ:২৮৩। মসজিদে কোন কিছু ভাগ করা (খেজুরের) ছড়া ঝুলানো।

আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন,الْعِذْقُ - الْقِنْوُ একই জিনিসের নাম। এর দ্বিবচনقِنْوَانِ এবং বহুবচনেও قِنْوَانٌ যেমন صِنْوٍ ও وَصِنْوَانٍ।

ইব্রাহীম (রহঃ) ... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বাহরাইন থেকে কিছু মাল এলো। তিনি বললেনঃ এগুলো মসজিদে রেখে দাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ যাবত যত মাল আনা হয়েছে তার মধ্যে এ মালই ছিল পরিমাণে সবচে বেশী। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে চলে গেলেন এবং এর দিকে ভ্রুক্ষেপও করলেন না। সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি এসে মালের কাছে গিয়ে বসলেন। তিনি যাকেই দেখলেন, কিছু মাল তাকে দিয়ে দিলেন। ইতিমধ্যে আব্বাস (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকেও কিছু দিন। কারণ আমি নিজে ও আকিলের (এ দু’জন বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের কয়েদি ছিলেন) পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দিয়েছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ নিয়ে যান। তিনি তা কাপড়ে ভরে নিলেন। তারপর তা উঠাতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাউকে বলুন, যেন আমাকে এটি উঠিয়ে দেয়। তিনি বললেনঃ না। আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তাহলে আপনি নিজেই তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) তা থেকে কিছু মাল রেখে দিলেন। তারপর আবার তা তুলতে চেষ্টা করলেন। (এবারও তুলতে না পেরে) তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাউকে আদেশ করুন যেন আমাকে তুলে দেয়। তিনি বললেনঃ না। তাহলে আপনিই আমাকে তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। তারপর আব্বাস (রাঃ) আরো কিছু মাল নামিয়ে রাখলেন। এবার তিনি উঠাতে পারলেন এবং তা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার লোভ দেখে এতই অবাক হয়েছিলেন যে, তিনি চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত আব্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দিরহাম বাকী থাকা পর্যন্ত উঠলেন না।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৪। মসজিদে যাকে খয়ার দাওয়াত দেয়া হয়, আর যিনি তা কবুল করেন।

৪১০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে পেলাম আর তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন সাহাবী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছেন? আমি বললামঃ জী হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ খাবারের জন্য? আমি বললামঃ জী হ্যাঁ তখন তার আশেপাশে যারা ছিলেন, তাঁদেরকে বললেনঃ উঠ। তারপর তিনি চলতে শুরু করলেন। (রাবী বলেন) আমি তাঁদের সামনে সামনে চললাম।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৫। মসজিদে বিচার করা ও নারী-পুরুষের মধ্যে লি’য়ান করা।

৪১১। ইয়াহইয়া (রহঃ) .... সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যাক্তি বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যাক্তিকে দেখতে পেলে কি সে তাকে হত্যা করবে? পরে মসজিদে সে ও তার স্ত্রী একে অন্যকে লি’আন করল। তখন আমি উপস্থিত ছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৬। কারো ঘরে প্রবেশ করলে যেখানে ইচ্ছা বা যেখানে নির্দেশ করা হয় সেখানেই সালাত আদায় করবে। এ ব্যাপারে বেশী খোঁজাখুঁজি করবে না।

৪১২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ..... ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে এলেন এবং বললেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন, তখন আমি তাঁকে একটি স্থানের দিকে ইশারা করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বললেন। আমরা তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম তিনি দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৭। ঘরে মসজিদ তৈরী করা।

وَصَلَّى الْبَرَاءُ بْنُ عَازِبٍ فِي مَسْجِدِهِ فِي دَارِهِ جَمَاعَةً

বারা ইবন আযিব (রাঃ) নিজের মসজিদে জামা'আত করে সালাত আদায় করেছিলেন

৪১৩। সাঈদ ইবনু উফায়র (রহঃ) ..... মাহমুদ ইবনু রাবী আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ), যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাযির হয়ে আরজ করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা আর পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে তাশরিফ নিয়ে কোন এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবি বলেন, তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব।

ইতবান (রাঃ) বলেন: পরদিন সূর্যোদয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) আমার ঘরে তাশরিফ আনেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞাসা করলেন: তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেন: আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইংগিত করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাকাত সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।

তিনি (ইতবান) বলেন, আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর তৈরী ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেন, এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন তিনি উপস্থিত লোকদের মধ্য থেকে এক ব্যাক্তি বলে উঠলেন, ‘মালিক ইবনু দুখাইশিন কোথায়? অথবা বললেন ‘ইবনু দুখশুন’ কোথায়? তখন একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে? তখন সে ব্যাক্তি বললেনঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমরা তো তাঁর সম্পর্ক ও হিত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তো এমন ব্যাক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।

রাবী ইবনু শিহাব বলেনঃ তারপর আমি মাহমুদ ইবনু রাবী (রাঃ) এর হদীস সম্পর্কে হোসাইন ইবনু মুহম্মদ আনসারী (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যিনি বানূ সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি এ হদীস সমর্থন করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৮। মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডান দিক থেকে আরম্ভ করা।

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَبْدَأُ بِرِجْلِهِ الْيُمْنَى، فَإِذَا خَرَجَ بَدَأَ بِرِجْلِهِ الْيُسْرَى

ইবন উমর (রাঃ) প্রবেশের সময় ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং বের হওয়ার সময় বাম পা দিয়ে শুরু করতেন।

৪১৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। পবিত্রতা হাসিলের সময়, মাথা আঁচড়ানোর সময় এবং জুতা পরিধানের সময়ও।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৯। জাহিলি যুগের মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলে মসজিদ নির্মাণ করা।

لِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ». وَمَا يُكْرَهُ مِنَ الصَّلاَةِ فِي الْقُبُورِ. وَرَأَى عُمَرُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يُصَلِّي عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ الْقَبْرَ الْقَبْرَ. وَلَمْ يَأْمُرْهُ بِالإِعَادَةِ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা নবীগণের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। আর কবরের উপর সালাত আদায় করা মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে ‘উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে একটি কবরের কাছে সালাত আদায় করতে দেখে বললেন: কবর! কবর! কিন্তু তিনি তাঁকে সালাত পুনরায় আদায় করতে বলেন নি।

৪১৫। মুহম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উম্মে হাবীবা ও উম্মে সালমা (রাঃ) হাবশায় তাঁদের দেখা একটি গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরী করে রাখতো। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর কাছে সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি বলে গণ্য হবে।

পরিচ্ছেদঃ ২৮৯। জাহিলি যুগের মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলে মসজিদ নির্মাণ করা।

৪১৬। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ...... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় পৌঁছে প্রথমে মদিনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বানূ ‘আমর ইবনু আউফ’ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। তারপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হল। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তার বাহনের উপর, আবূ বকর (রাঃ) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে।

অবশেষে তিনি আবূ আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) এর ঘরে সামনে অবতরণ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোয়াড়েও সালাত আদায় করতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরী করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ না, আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশা করি।

আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুরের গাছ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুড়ে ফেলা হল। তারপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হল, খেজুরের গাছ গুলো কেটে ফেলা হল এবং এর দুই পাশে পাথর বসানো হল। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেনঃ

اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ

হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ছাড়া (প্রকৃতপক্ষে) আর কোন কল্যাণ নেই। আপনি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা করে দিন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯০। ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করা।

৪১৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগল থাকার স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছেন। রাবী বলেন, তারপর আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মসজিদ নির্মাণের আগে তিনি (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯১। উট রাখার স্থানে সালাত আদায় করা।

৪১৮। সাদাকা ইবনু ফাযল (রহঃ) ... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ)-কে তাঁর উটের দিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখছি। আর ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা করতে দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ২৯২। চুলা আগুন বা এমন কোন বস্তু যার উপাসনা করা হয়, তা সামনে রেখে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করারই উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা।

وَقَالَ الزُّهْرِيُّ: أَخْبَرَنِي أَنَسٌ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ وَأَنَا أُصَلِّي

যুহরী (রহঃ) বলেনঃ আমাকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) জানিয়েছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সামনে আগুন (জাহান্নাম) পেশ করা হলো, তখন আমি সালাতে ছিলাম।

৪১৯। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সূর্য গ্রহণ হল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বললেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য আমি আর কখনো দেখিনি।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৩। কবরস্থানে সালাত আদায় করা মাকরূহ।

৪২০। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবরে পরিণত করবে না।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৪। আল্লাহর গযবে বিধ্বস্ত ও আযাবের স্থানে সালাত আদায় করা।

وَيُذْكَرُ أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ كَرِهَ الصَّلاَةَ بِخَسْفِ بَابِلَ

উল্লেখ রয়েছে যে, আলী (রাঃ) ব্যাবিলনের ধ্বংসস্তূপে সালাত আদায় করা মাকরূহ মনে করতেন।

৪২১। ইসমা’ঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। কান্না না আসিলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তোমাদের প্রতিও এমন আযাব না আসে যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৫। গির্জায় সালাত আদায় করা।

وَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّا لاَ نَدْخُلُ كَنَائِسَكُمْ مِنْ أَجْلِ التَّمَاثِيلِ الَّتِي فِيهَا الصُّوَرَ
وَكَانَ ابْنُ عَبَّاسٍ يُصَلِّي فِي الْبِيعَةِ إِلاَّ بِيعَةً فِيهَا تَمَاثِيلُ

উমর (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা তোমাদের গির্জাসমূহে প্রবেশ করি না, কারণ তাতে মূর্তি রয়েছে।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) গির্জায় সালাত আদায় করতেন। তবে যেগুলোতে মূর্তি রয়েছে সেগুলোতে নয়।

৪২২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উম্মে সালমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর হাবশায় দেখা মারিয়া নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। তিনি সেখানে যে সব প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত। আর তাতে ঐ সব ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৬। পরিচ্ছেদ নাই।

৪২৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) .... উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আয়িশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাত নিকটবর্তী হলে তিনি তাঁর একটা চাঁদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল, তখন মুখ থেকে চাঁদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। (এ বলে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা থেকে তিনি সতর্ক করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৬। পরিচ্ছেদ নাই।

৪২৪। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৭। নবী (ﷺ) এর উক্তিঃ আমার জন্য জমিনকে সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্র হাসিলের উপায় করা হয়েছে।

৪২৫। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) .... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।

১. আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়।

২. সমস্ত জমিন আমার জন্য সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাতের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত আদায় করে নেয়।

৩. আমার জন্য গণীমত হালাল করা হয়েছে।

৪. অন্যান্য নাবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।

৫. আমাকে (ব্যাপক) শাফা’আতের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৮। মসজিদে মহিলাদের ঘুমানো

৪২৬। উবাইদ ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, কোন আরব গোত্রের একটি কালো দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল। সে তাদেরই সাথে থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার ওপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছে, সে হারটা হয়তো নিজে কোথাও রেখে দিয়েছিল, অথবা কোথায় পড়ে গিয়েছিল। তখন চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশতের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছেঃ তারপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল।

সে বলেছেঃ তারা আমার উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমনকি আমার লজ্জা-স্থানেও তল্লাশী চালাল। দাসীটি বলেছেঃ আল্লাহর কসম! আমি তাদের সাথে সে অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল। সে বলেছে তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললামঃ তোমরা তো এর জন্যই আমার উপর দোষ চাপিয়ে ছিলে! তোমরা আমার উপর সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই হার! সে বলেছেঃ তারপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো।

আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তাঁর জন্য মসজিদে (নববীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। আয়িশা (রাঃ) বলেন (দাসীটি) আমার কাছে আসতো আর আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। সে আমার কাছে যখনই বসত তখনই বলতোঃ

وَيَوْمَ الْوِشَاحِ مِنْ أَعَاجِيبِ رَبِّنَا * أَلاَ إِنَّهُ مِنْ بَلْدَةِ الْكُفْرِ أَنْجَانِي

“সেই হারের দিনটি আমার রবের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ। জেনে রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর থেকে মুক্তি দিয়েছে”।

আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললামঃ কি ব্যাপার, তুমি আমার কাছে বসলেই যে এ কথাটা বলে থাক? আয়িশা (রাঃ) বলেন, সে তখন আমার কাছে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৯। মসজিদে পুরুষের ঘুমানো।

وَقَالَ أَبُو قِلاَبَةَ عَنْ أَنَسٍ قَدِمَ رَهْطٌ مِنْ عُكْلٍ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَانُوا فِي الصُّفَّةِ. وَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ كَانَ أَصْحَابُ الصُّفَّةِ الْفُقَرَاءَ

আবূ কিলাবা (রহঃ) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, উকল গোত্রের কতিপয় ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন এবং সুফ্‌ফায় অবস্থান করলেন। আবদুর রহমান ইবনে আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ সুফ্‌ফাবাসিগণ ছিলেন ছিলেন দরিদ্র।

৪২৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর কোন পরিবার-পরিজন ছিল না।

পরিচ্ছেদঃ ২৯৯। মসজিদে পুরুষের ঘুমানো।

৪২৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) .... সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ) এর ঘরে এলেন, কিন্তু আলী (রাঃ)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে কিছু ঘটেছে। তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেন নি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যাক্তি খোঁজে এসে বললোঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন, তখন আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাঁদর পড়ে গিয়েছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব!

পরিচ্ছেদঃ ২৯৯। মসজিদে পুরুষের ঘুমানো।

৪২৯। ইউসুফ ইবনু ঈসা (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সত্তরজন আসহাবে সুফ্‌ফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাঁদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল তহবন্দ কিংবা ছোট চাদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিসফে সাক বা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জা-স্থান দেখা যাওয়ার ভয়ে কাপড় হাতে ধরে একত্র করে রাখতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০০। সফর থেকে ফিরে আসার পর সালাত।

وَقَالَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতেন।

৪৩০। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ...... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। তখন মিস’আর (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহঃ) চাশতের সময়ের কথা বলেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। জাবির (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা দিয়ে দিলেন এবং কিছু বেশীও দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০১। তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করে নেয়।

৪৩১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ কাতাদা সালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩০২। মসজিদে হাদাস হওয়া (উযূ নষ্ট হওয়া)

৪৩২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে সালাতের পর হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত যেখানে সে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। তাঁরা বলেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন! হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৩। মসজিদ নির্মাণ করা।

وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ كَانَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ مِنْ جَرِيدِ النَّخْلِ. وَأَمَرَ عُمَرُ بِبِنَاءِ الْمَسْجِدِ وَقَالَ أَكِنَّ النَّاسَ مِنَ الْمَطَرِ، وَإِيَّاكَ أَنْ تُحَمِّرَ أَوْ تُصَفِّرَ، فَتَفْتِنَ النَّاسَ. وَقَالَ أَنَسٌ يَتَبَاهَوْنَ بِهَا، ثُمَّ لاَ يَعْمُرُونَهَا إِلاَّ قَلِيلاً. وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَتُزَخْرِفُنَّهَا كَمَا زَخْرَفَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى

আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, মসজিদে নববীর ছাদ ছিল খেজুর গাছের ডালের তৈরী। উমর (রাঃ) মসজিদ নির্মাণের হুকুম দিয়ে বলেনঃ আমি লোকদেরকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে চাই। মসজিদে লাল বা হলুদ রঙ লাগানো থেকে সাবধান থাক, এতে মানুষকে তুমি ফিতনায় ফেলবে। আনাস (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে অথচ তারা একে কমই (ইবাদতের মাধ্যমে) আবাদ রাখবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তোমরা তো ইয়াহূদী ও নাসারাদের মত মসজিদকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে ফেলবে।

৪৩৩। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে মসজিদ তৈরী হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবূ বকর (রাঃ) এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর (রাঃ) বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। তারপর উসমান (রাঃ) তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেওয়াল তৈরী করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, ছাদ বানান সেগুন কাঠ দিয়ে।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৪। মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা।

مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَنْ يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّهِ شَاهِدِينَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ أُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللَّهَ فَعَسَى أُولَئِكَ أَنْ يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ

আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ এমন হতে পারে না যে, মুশরিকরা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে ... (৯ : ১৭)

৪৩৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... ইকরিমা (রহঃ) বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে ও তার ছেলে আলী (রহঃ)-কে বললেনঃ তোমরা উভয়ই আবূ সাঈদ (রাঃ) এর কাছে যাও এবং তাঁর থেকে হদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদিস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেনঃ আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার (রাঃ) দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ তখন আম্মার (রাঃ) বললেনঃ আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৫। কাঠের মিম্বর তৈরী ও মসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ করা।

৪৩৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) .... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার বসার জন্য কাঠের মিম্বর তৈরী করে দেয়।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৫। কাঠের মিম্বর তৈরী ও মসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ করা।

৪৩৬। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) .... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি আপনার বসার জন্য কিছু তৈরী করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেনঃ যদি তোমার ইচ্ছা হয়। তারপর তিনি একটি মিম্বর তৈরী করিয়ে দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৬। যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে।

৪৩৭। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) .... উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি যখন মসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেনঃ তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় রাবী ‘আসিম’ (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৭। মসজিদ অতিক্রম কালে তীরের ফলক ধরে রাখবে।

৪৩৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি তীর সাথে করে মসজিদে নববী অতিক্রম করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ এর ফলকগুলো হাতে ধরে রাখ।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৮। মসজিদ অতিক্রম করা।

৪৩৯। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) .... আবূ বুরদা (রহঃ) এর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি তীর নিয়ে আমাদের মসজিদ অথবা বাজার দিয়ে চলে সে যেন তার ফলক হাতে ধরে রাখে, যাতে করে তার হাতে কোন মুসলমান আঘাত না পায়।

পরিচ্ছেদঃ ৩০৯। মসজিদে কবিতা পাঠ

৪৪০। আবূল ইয়ামান (রহঃ) ..... আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হাস্‌সান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে আল্লাহর কসম দিয়ে এ কথার সাক্ষ্য চেয়ে বলেনঃ আপনি কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একথা বলতে শুনেছেন, হে হাস্‌সান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে (কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের) জওয়াব দাও। হে আল্লাহ! হাসসানকে রূহুল কুদুস (জিবরীল আলাইহিস সালাম) দ্বারা সাহায্য করুন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) জওয়াবে বললেনঃ হ্যাঁ।

পরিচ্ছেদঃ ৩১০। বর্শা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ

৪৪১। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ঘরের দরজায় দেখলাম। তখন হাবশার লোকেরা মসজিদে (বর্শা দ্বারা) অনুশীলন করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাঁদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন। আমি ওদের অনুশীলন দেখছিলাম।

ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম এমতাবস্থায় হাবশীরাা তাদের বর্শা নিয়ে অনুশীলন করছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩১১। মসজিদের মিম্বরে ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা

৪৪২। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বারীরা (রাঃ) তাঁর কাছে এসে কিতাববের দেনা শোধের জন্য সাহায্য চাইলেন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি চাইলে আমি (তোমার মূল্য) তোমার মালিককে দিয়ে দিব এ শর্তে যে, উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকবে আমার। তাঁর মালিক আয়িশা (রাঃ)-কে বললোঃ আপনি চাইলে বাকী মূল্য বারীরাকে দিতে পারেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেছেনঃ আপনি চাইলে তাকে আযাদ করতে পারেন, তবে উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকবে আমাদের। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আমি তাঁর কাছে ব্যাপারটি বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কারণ উত্তরাধিকার-স্বত্ব থাকে তারই, যে আযাদ করে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। সুফিয়ান (রহঃ) আর একবার বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করে বললেনঃ লোকদের কি হল? তারা এমন সব শর্ত করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। কেউ যদি এমন শর্ত আরোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তাঁর সে শর্তের কোন মূল্য নেই। এমনকি এরূপ শর্ত একশবার আরোপ করলেও।

মালিক (রহঃ) .... আমরা (রহঃ) থেকে রাবী’য়া (রাঃ) এর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তবে মিম্বরে আরোহণের কথা উল্লেখ করেন নি।

আলী (রহঃ) .... আমরা (রহঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। জাফর ইবনু আওন (রহঃ) ইয়াহইয়া (রহঃ) এর মাধ্যমে আমরা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৩১২। মসজিদে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দেওয়া ও চাপ সৃষ্টি করা

৪৪৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) .... কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মসজিদের ভিতরে ইবনু আবূ হাদরাদ (রাঃ) এর কাছে তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চস্বরে কথাবার্তা হল। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকেই তাদের কথার আওয়াজ শুনলেন এবং তিন পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা’ব! কা’ব (রাঃ) উত্তর দিলেন, লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমর পাওনা ঋণ থেকে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইশারা করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আমি তাই করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন তিনি ইবনু আবূ হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৩। মসজিদে ঝাড়ু দেয়া এবং ন্যাকড়া, আবর্জনা ও কাঠ খড়ি কুড়ানো

৪৪৪। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন কালো বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কাল বর্ণের মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে ইন্তেকাল করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাহাবীগণ বললেন, সে ইন্তেকাল করেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। তারপর তিনি তার কবরের কাছে গেলেন এবং তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৪। মসজিদে মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করা

৪৪৫। আবদান (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মদ সম্পর্কীয় সূরা বাকারার আয়াতসমূহ নাযিল হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে গিয়ে সে সব আয়াত সাহাবীগণকে পাঠ করে শোনালেন। তারপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৫। মসজিদের জন্য খাদিম।

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: (نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا) لِلْمَسْجِدِ يَخْدُمُهُ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) (এ আয়াত) ‘আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম’ (৩ : ৩৫)। এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ মসজিদের খিদমতের জন্য উৎসর্গ করলাম।

৪৪৬। আহমদ ইবনু ওয়াফিদ (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন পুরুষ অথবা বলেছেন একজন মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। [রাবী সাবিত (রহঃ) বলেন] আমার মনে হয় তিনি বলেছেন একজন মহিলা। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হদীস বর্ণনা করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবরে জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৬। কয়েদী অথবা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে মসজিদে বেঁধে রাখা

৪৪৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গত রাতে একটা অবাধ্য জ্বীন হঠাৎ করে আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যেন সে আমার সালাতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোরবেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (আলাইহিস সালাম) এর উক্তি আমার স্মরণ হল, “হে রব! আমাকে দান কর এমন রাজত্ব যার অধিকারী আমার পরে কেউ না হয়।” (৩৮ : ৩৫) (বর্ণনাকারী) রাওহ (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই শয়তানটিকে অপমানিত অবস্থায় তাড়িয়ে দিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৭। ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা এবং এবং কয়েদীকে মসজিদে বাঁধা।

وَكَانَ شُرَيْحٌ يَأْمُرُ الْغَرِيمَ أَنْ يُحْبَسَ إِلَى سَارِيَةِ الْمَسْجِدِ

কাযী শুরাইহ (রহঃ) দেনাদার ব্যক্তিকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখার নির্দেশ দিতেন।

৪৪৮। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসালা নামক এক ব্যাক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন এবং বললেনঃ সুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নববীর নিকটে এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করলেন, এরপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেনঃ (أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ) “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল।”

পরিচ্ছেদঃ ৩১৮। রোগী ও অন্যদের জন্য মসজিদে তাঁবু স্থাপন

৪৪৯। যাকারিয়্যা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধে সাদ (রাঃ) এর হাতের শিরা যখম হয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে (তাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করলেন। যাতে কাছে থেকে তাঁর দেখাশোনা করতে পারেন। মসজিদে বানূ গিফারেরও একটা তাঁবু ছিল। সাদ (রাঃ) এর প্রচুর রক্ত তাদের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে তাঁবুর লোকেরা! তোমাদের তাঁবু থেকে আমাদের দিকে কি প্রবাহিত হচ্ছে? তখন দেখা গেল যে, সাদের যখম থেকে প্রচুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে এতেই তিনি ইন্তেকাল করলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩১৯। প্রয়োজনে উট নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।

وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ طَافَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى بَعِيرٍ

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের উটে সওয়ার হয়ে তাওয়াফ করেছেন।

৪৫০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (বিদায় হাজ্জে (হজ্জ) আমার অসুস্থতার কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ সওয়ার হয়ে লোকদের হতে বাইরে থেকে তওয়াফ করে নাও। তখন আমি (সেভাবে) তাওয়াফ করলাম। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর পাশে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন, তিনি “সূরা ওয়াত-তুরি ওয়া কিতাবিম-মাসতূর” তিলাওয়াত করছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২০। পরিচ্ছেদ নাই।

৪৫১। মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) .... আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’জন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে অন্ধকার রাতে বের হলেন। তাঁদের একজন আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ) আর সাহাবী দ্বিতীয় জন সম্পর্কে আমার ধারণা যে, তিনি ছিলেন উসাইদ ইবনু হুযাইর (রাঃ), আর উভয়ের সাথে চেরাগ সদৃশ কিছু ছিল, যা তাঁদের সামনের দিকটাকে আলোকিত করছিল। তাঁরা উভয়ে যখন পৃথক হয়ে গেলেন, তখন প্রত্যেকের সাথে একটা করে রয়ে গেল। অবশেষে এভাবে তাঁরা নিজেদের বাড়ীতে পৌছলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২১। মসজিদে ছোট দরজা ও পথ বানানো

৪৫২। মুহাম্মদ ইবনু সিনান (রহঃ) .... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে যা আছে-এ দুয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে, তা গ্রহণ করলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধ কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর কাছে রয়েছে, এ দুয়ের একটা গ্রহণ করার এখতিয়ার দিলে তিনি আল্লাহর কাছে যা আছে তা গ্রহণ করেছেন (এতে কাঁদার কি আছে?)। মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই ছিলেন সেই বান্দা। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন আমাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবূ বকর, তুমি কাঁদবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমাকে যিনি সবচাইতে বেশী ইহসান করেছেন তিনি আবূ বকর। আমার কোন উম্মতকে যদি আমি খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করতাম, তবে তিনি হতেন আবূ বকর। কিন্তু তাঁর সাথে রয়েছে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। আবূ বকরের দরজা ব্যতীত মসজিদের কোন দরজাই রাখা হবে না, সবই বন্ধ করা হবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩২১। মসজিদে ছোট দরজা ও পথ বানানো

৪৫৩। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ জু’ফী (রহঃ) ..... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগের সময় এক টুকরা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে বাইরে এসে মিম্বরে বসলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা সিফাত বর্ণনার পর বললেনঃ জান ও মাল দিয়ে আবূ বকর ইবনু আবূ কুহাফার চাইতে অধিক কেউ আমার প্রতি ইহসান করেনি। আমি কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে অবশ্যই আবূ বকরকে গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামের বন্ধুত্বই উত্তম। আবূ বকরের দরজা ব্যতীত এই মসজিদের সকল দরজা বন্ধ করে দাও।

পরিচ্ছেদঃ ৩২২। বায়তুল্লাহ ও অন্যান্য মসজিদের দরজা রাখা ও তালা লাগানো।

قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ وَقَالَ لِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ قَالَ: قَالَ لِي ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ يَا عَبْدَ الْمَلِكِ، لَوْ رَأَيْتَ مَسَاجِدَ ابْنِ عَبَّاسٍ وَأَبْوَابَهَا

আবূ আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] বলেনঃ আমাকে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ বলেছেন যে, আমাকে সুফিয়ান (রহঃ) ইবনে জুরাইজ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমাকে ইবনে আবী মুলায়কা (রহঃ) বলেছেন, হে আবদুল মালিক! তুমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর মসজিদ ও তাঁর দরজাগুলো যদি দেখতে।

৪৫৪। আবূ নু’মান ও কুতায়বা (রহঃ) ..... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় আসেন তখন উসমান ইবনু তালহা (রাঃ)-কে ডাকলেন। তিনি দরজা খুলে দিলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বিলাল, উসামা ইবনু যায়েদ ও উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) ভিতরে গেলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ থাকলেন। তারপর সবাই বের হলেন। ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বিলাল (রাঃ) কে (সালাতের কথা) জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ কোন স্থানে? তিনি বলেনঃ দুই স্তম্ভের মাঝামাঝি। ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ কয় রাকা’আত আদায় করেছেন তা জিজ্ঞাসা করতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৩। মসজিদে মুশরিকের প্রবেশ

৪৫৫। কুতায়বা (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় অশ্বারোহী সৈন্য নজদ অভিমুখে পাঠালেন। তারা বানূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক এক ব্যাক্তিকে নিয়ে এলেন। তারপর তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৪। মসজিদে আওয়াজ উঁচু করা

৪৫৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করলো। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। তিনি বললেনঃ যাও, এ দু’জনকে আমার কাছে নিয়ে এস। আমি তাদের নিয়ে তাঁর কাছে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেনঃ তোমরা কোন স্থানের লোক? তারা বললোঃ আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেনঃ তোমরা যদি মদিনার লোক হতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা দু’জনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছো!

পরিচ্ছেদঃ ৩২৪। মসজিদে আওয়াজ উঁচু করা

৪৫৭। আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) ..... কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তিনি ইবনু আবূ হাদরাদের কাছে তাঁর প্রাপ্য সম্পর্কে মসজিদে নববীতে তাগাদা করেন। এতে উভয়ের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। এমনকি সে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘর থেকে শুনতে পেলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে বের হয়ে এলেন এবং কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে বললেনঃ হে কা’ব! উত্তরে কা’ব (রাঃ) বললেনঃ লাব্বায়কা ইয়া রাসুলাল্লাহ! তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে ইশারা করলেন যে, তোমার প্রাপ্য থেকে অর্ধেক ছেড়ে দাও। কা’ব (রাঃ) বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তাই করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু আবূ হাদরাদ (রাঃ)-কে বললেনঃ উঠ এবার (বাকী) ঋণ পরিশোধ কর।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৫। মসজিদে হাল্কা বাঁধা ও বসা

৪৫৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করলেন, তখন তিনি মিম্বরে ছিলেন; আপনি রাতের সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতে বলেন? তিনি বললেনঃ দু-দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। যখন তোমাদের কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশংকা হয় তখন সে আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। আর এইটি তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দেবে।

[নাফি (রহঃ) বলেন] ইবনু উমর (রাঃ) বলতেনঃ তোমরা বিতরকে রাতের শেষ সালাত হিসাবে আদায় কর। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৫। মসজিদে হাল্কা বাঁধা ও বসা

৪৫৯। আবূ নু’মান (রহঃ) ... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন সময় আসলেন যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ রাতের সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতে হয়? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দু’রাকা’আত দু’রাকা’আত করে আদায় করবে। আর যখন ভোর হওয়ার আশংকা করবে, তখন আরো এক রাকা’আত আদায় করে নিবে। সে সালাত তোমার আগের সালাতকে বিতর করে দিবে। ওয়ালীদ ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেনঃ উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আমার কাছে বলেছেন যে, ইবনু উমর (রাঃ) তাঁদের বলেছেনঃ এক সাহাবী নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্বোধন করে বললেন, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৫। মসজিদে হাল্কা বাঁধা ও বসা

৪৬০। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ছিলেন। এমন সময় তিনজন লোক এলেন। তাঁদের দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এগিয়ে এলেন আর একজন চলে গেলেন। এ দু’জনের একজন হালাকায় খালি স্থান পেয়ে সেখানে বসে পড়লেন। দ্বিতীয় ব্যাক্তি মজলিসের পেছনে বসলেন। আর তৃতীয় ব্যাক্তি পিঠটান দিয়ে সরে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাবার্তা থেকে অবসর হয়ে বললেনঃ আমি কি তোমাদের ঐ তিন ব্যাক্তি সম্পর্কে খবর দেব? এক ব্যাক্তি তো আল্লাহর দিকে অগ্রসর হল। আল্লাহও তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় ব্যাক্তি লজ্জা করলো, আর আল্লাহ তা’আলাও তাকে (বঞ্চিত করতে) লজ্জাবোধ করলেন। তৃতীয় ব্যাক্তি মুখ ফিরিয়ে নিলো, কাজেই আল্লাহও তাঁর থেকে ফিরে থাকলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৬। মসজিদে চিত হয়ে শোয়া

৪৬১। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (তাঁর চাচা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমর ও উসমান (রাঃ) এরূপ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৭। লোকের অসুবিধা না হলে রাস্তায় মসজিদ বানানো বৈধ।

وَبِهِ قَالَ الْحَسَنُ وَأَيُّوبُ وَمَالِكٌ

হাসান বসরী, আইয়্যুব এবং মালিক (রহঃ) এরূপ বলেছেন।

৪৬২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) .... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ আমার জ্ঞানমতে আমি আমার পিতা মাতাকে সব সময় দ্বীনের অনুসরণ করতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের কাছে আসেন নি। তারপর আবূ বকর (রাঃ) এর মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাঁর ঘরের আঙ্গিনায় একটি মসজিদ তৈরী করলেন। তিনি এতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন ও কুরান তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াত এবং তারা বিস্মিত হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন একজন অধিক রোদনকারী ব্যাক্তি। তিনি কুরআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। তাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের শঙ্কিত করে তুলল।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৮। বাজারের মসজিদে সালাত আদায়।

وَصَلَّى ابْنُ عَوْنٍ فِي مَسْجِدٍ فِي دَارٍ يُغْلَقُ عَلَيْهِمُ الْبَابُ

ইবনে আওন (রহঃ) ঘরের মসজিদে সালাত আদায় করতেন যার দরজা বন্ধ করা হতো।

৪৬৩। মূসাদ্দাদ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জামা’আতের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলে ঘর বা বাইরে সালাত আদায় করার চাইতে পঁচিশগুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে কেবল সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ তাকে সালাতই গণ্য করা হয়। আর সালাতের শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ ফিরিশতাগণ তার জন্য এ বলে দুয়া করেন: ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, ইয়া আল্লাহ! তাকে রহম করুন, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, সেখানে উযূ ভঙ্গের কাজ না করে।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৯। মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুল প্রবেশ করানো

৪৬৪। হামিদ ইবনু উমর (রহঃ) .... ইবনু উমর বা ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাতের আঙুল অন্য এক হাতের আঙুলে প্রবেশ করান।

আসিম ইবনু আলী (রহঃ) থাকে বর্ণিত, আসিম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) বলেনঃ আমি এ হদীস আমার পিতা থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। এরপর এ হাদীসটি আমাকে ঠিকভাবে বর্ণনা করেন ওয়াকিদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে। তিনি বলেনঃ আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করবে, তখন তোমার অবস্থা কি হবে?

পরিচ্ছেদঃ ৩২৯। মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুল প্রবেশ করানো

৪৬৫। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) .... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন মু’মিন আরেকজন মু’মিনের জন্য ইমারততুল্য, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩২৯। মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুল প্রবেশ করানো

৪৬৬। ইসহাক (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের বিকালে সালাতে ইমামতি করলেন। ইবনু সীরীন (রহঃ) বলেনঃ তিনি আমাদের নিয়ে দু’রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে সালাম ফিরালেন। তারপর মসজিদে রাখা এক টুকরা কাঠের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁকে রাগান্বিত মনে হচ্ছিল। তিনি তাঁর ডান হাত বাঁ হাতের উপর রেখে এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন। আর তাঁর ডান গাল বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাঁদের তাড়া ছিল তাঁরা মসজিদের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। সাহাবীগণ বললেনঃ সালাত কি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে? উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-ও ছিলেন। কিন্তু তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলেন।

আর লোকজনের মধ্যে লম্বা হাত বিশিষ্ট এক ব্যাক্তি ছিলেন, যাকে “যুল-ইয়াদাইন” বলা হতো, তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি সালাত সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলিনি এবং সালাত সংক্ষেপও করা হয়নি। এরপর (অন্যদের) জিজ্ঞাসা করলেনঃ যুল-ইয়াদাইনের কথা কি ঠিক? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি এগিয়ে এলেন এবং সালাতের বাদপড়া অংশটুকু আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন ও তাকবীর বললেন এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদার মতো বা একটু দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। পরে আবার তাকবীর বললেন এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদার মতো বা একটু দীর্ঘ সিজদা করলেন। তারপর তাকবীর বলে মাথা উঠালেন। লোকেরা প্রায়ই ইবনু সীরীন (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করতো “পরে কি তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন?” তখন ইবনু সীরীন (রহঃ) বলতেনঃ আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেছেনঃ তারপর তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩০। মদীনার রাস্তার মসজিদসমূহ এবং যে সকল স্থানে নবী (ﷺ) সালাত আদায় করেছিলেন

৪৬৭। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) ..... মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে রাস্তার বিশেষ স্থান অনুসন্ধান করে সে সব স্থানে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি এবং তিনি বর্ণনা করতেন যে, তাঁর পিতাও এসব স্থানে সালাত আদায় করতেন। আর তিনিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এসব স্থানে সালাত আদায় করতে দেখেছেন।

মূসা ইবনু উকবা (রহঃ) বলেনঃ নাফি (রহঃ)-ও আমার কাছে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সেসব স্থানে সালাত আদায় করতেন। তারপর আমি সালিম (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করি। আমার জানামতে তিনিও সেসব স্থানে সালাত আদায়ের ব্যাপারে নাফী (রহঃ) এর সাথে একমত পোষণ করেছেন; তবে ‘শারাফুর-রাওহা’ নামক স্থানের মসজিদের ব্যাপারে তাঁরা ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩০। মদীনার রাস্তার মসজিদসমূহ এবং যে সকল স্থানে নবী (ﷺ) সালাত আদায় করেছিলেন

৪৬৮। ইবরাহীম ইবনু মুনযির আল-হিযামী (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরা ও হজ্জের জন্য রওয়ানা হলে ‘যুল-হুলায়ফায়’ অবতরণ করতেন, বাবলা গাছের নীচে যুল-হুলায়ফার মসজিদের স্থানে। আর যখন কোন যুদ্ধ থেকে অথবা হাজ্জ (হজ্জ) বা উমরা করে সেই পথে ফিরতেন, তখন উপত্যকার মাঝখানে অবতরণ করতেন। যখন উপত্যকার মাঝখান থেকে উপরের দিকে আসতেন, তখন উপত্যকার তীরে অবস্থিত পূর্ব নিম্নভূমিতে উট বসাতেন। সেখানে তিনি শেষ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করতেন। এ স্থানটি পাথরের উপর নির্মিত মসজিদের কাছে নয় এবং যে মসজিদ টিলার উপর, তার নিকটেও নয়। এখানে ছিল একটি ঝিল, যার পাশে আবদুল্লাহ (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এর ভিতরে কতগুলো বালির স্তূপ ছিল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানেই সালাত আদায় করতেন। তারপর নিম্নভূমিতে পানির প্রবাহ হয়ে আবদুল্লাহ (রাঃ) যে স্থানে সালাত আদায় করতেন তা সমান করে দিয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) [নাফি (রহঃ) কে] বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শারাফুর-রাওহা’র মসজিদের কাছে ছোট মসজিদের স্থানে সালাত আদায় করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে সালাত আদায় করেছিলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) সে স্থানের পরিচয় দিতেন এই বলে যে, যখন তুমি মসজিদে সালাতে দাঁড়াবে তখন তা তোমার ডানদিকে। আর সেই মসজিদটি হল যখন তুমি (মদিনা থেকে) মক্কা যাবে তখন তা ডানদিকের রাস্তার এক পাশে থাকবে। সে স্থান ও বড় মসজিদের মাঝখানে ব্যবধান হল একটি ঢিল নিক্ষেপ পরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি। আর ইবনু উমর (রাঃ) রাওহার শেষ মাথায় ‘ইরক’ (ছোট পাহাড়) এর কাছে সালাত আদায় করতেন। সেই ‘ইরক’ এর শেষ প্রান্ত হল রাস্তার পাশে মসজিদের কাছাকাছি মক্কা যাওয়ার পথে রাওহা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখনে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এই মসজিদে সালাত করতেন না, বরং সেটাকে তিনি বামদিকে ও পেছনে ফেলে অগ্রসর হয়ে ‘ইরক’ এর নিকটে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাওহা থেকে বেরিয়ে ঐ স্থানে পৌছার আগে যোহরের সালাত আদায় করতেন না। সেখানে পৌঁছে যোহর আদায় করতেন। মক্কা থেকে আসার সময় এ পথে ভোরের এক ঘণ্টা আগে বা শেষ রাতে আসলে তথায় অবস্থান করে ফজরের সালাত আদায় করতেন।

আবদুল্লাহ (রাঃ) আরো বর্ণনা করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুওয়ায়ছা'র নিকটে রাস্তার ডানদিকে রাস্তা সংলগ্ন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে একটা বিরাট গাছের নীচে অবস্থান করতেন। তারপর তিনি রুওয়ায়ছা'র ডাকঘরের দু’মাইল দূরে টিলার পাশ দিয়ে রওয়ানা হতেন। বর্তমানে গাছটির উপরের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে মাঝখানে ঝুঁকে গেছে। গাছের কাণ্ড এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আর তার আশেপাশে অনেকগুলো বালির স্তূপ বিস্তৃত রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেনঃ আরজ গ্রামের পরে পাহাড়ের দিকে যেতে যে উচ্চভূমি রয়েছে, তার পাশে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন। এই মসজিদের পাশে দু’তিনটি কবর আছে। এসব কবরে পাথরের বড় বড় খণ্ড পড়ে আছে। রাস্তার ডান পাশে গাছের নিকটেই তা অবস্থিত। দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়লে আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘আরজ’ এর দিকে থেকে এসে গাছের মধ্য দিয়ে যেতেন এবং ঐ মসজিদে যোহরের সালাত আদায় করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাস্তার বাঁ দিকে বিরাট গাছগুলির কাছে অবতরণ করেন যা ‘হারশা’ পাহাড়ের নিকটবর্তী নিম্নভূমির দিকে চলে গেছে। সেই নিম্নভূমিটি ‘হারশা’-এর এক প্রান্তের সাথে মিলিত। এখানে থেকে সাধারণ সড়কের দূরত্ব প্রায় এক তীর নিক্ষেপের পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) সেই গাছগুলির মধ্যে একটির কাছে সালাত আদায় করতেন, যা ছিল রাস্তার নিকটবর্তী এবং সবচাইতে উঁচু।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন ‘মাররুয যাহরান’ উপত্যকার শেষ প্রান্তে নিম্নভূমিতে, যা মদিনার দিকে যেতে ছোট পাহাড়গুলোর নীচে অবস্থিত। তিনি সে নিম্নভূমির মাঝখানে অবতরণ করতেন। এটা মক্কা যাওয়ার পথে বাম পাশে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মনযিল ও রাস্তার মাঝে দূরত্ব এক পাথর নিক্ষেপ পরিমাণ।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) আরো বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যূ-তুওয়া’য় অবতরণ করতেন এবং এখানেই রাত যাপন করতেন আর মক্কায় আসার পথে এখানেই ফজরের সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাত আদায়ের সেই স্থানটা ছিল একটা বড় টিলার উপরে। যেখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেখানে নয় বরং তার নীচে একটা বড় টিলার উপর।

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তাদের কাছে আরো বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাহাড়ের দু’টো প্রবেশপথ সামনে রাখতেন যা তার ও দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝখানে কাবার দিকে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে মসজিদ নির্মিত করা হয়েছে, সেটিকে তিনি [ইবনু উমর (রাঃ)] টিলার প্রান্তের মসজিদের বাম পাশে রাখতেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের স্থান ছিল এর নীচে কাল টিলার উপরে। টিলা থেকে প্রায় দশ হাত দূরে দু’টো পাহাড়ের প্রবেশপথ যা তোমার ও কাবার মাঝখানে রয়েছে—সামনে রেখে তুমি সালাত আদায় করবে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩১। ইমামের সুতরাই মুকতাদীর জন্য যথেষ্ট

৪৬৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি একটা মাদী গাধার উপর সওয়ার হয়ে এলাম, তখন আমি ছিলাম সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে দেওয়াল ব্যতীত অন্য কিছুকে সুতরা বানিয়ে মিনায় লোকদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। কাতারের কিছু অতিক্রম করে আমি সওয়ারী থেকে অবতরণ করলাম। গাধীটিকে চরাতে দিয়ে আমি কাতারের শামিল হয়ে গেলাম। আমাকে কেউই এ কাজে বাধা দেয়নি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩১। ইমামের সুতরাই মুকতাদীর জন্য যথেষ্ট

৪৭০। ইসহাক (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন যখন বের হতেন তখন তাঁর সামনে ছোট নেযা (বল্লম) পুঁতে রাখতে নির্দেশ দিতেন। সেদিকে মুখ করে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর লোকজন তাঁর পেছনে দাঁড়াত। সফরেও তিনি তাই করতেন। এ থেকে শাসকগণও এটা অবলম্বন করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩১। ইমামের সুতরাই মুকতাদীর জন্য যথেষ্ট

৪৭১। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ..... আওন ইবনু জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে ‘বাতহা’ নামক স্থানে যোহরের দু’রাকা’আত ও আসরের দু’রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তখন তাঁর সামনে ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তাঁর সম্মুখ দিয়ে (সুতরার বাইরে) মহিলা ও গাধা চলাচল করতো।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩২। মুসল্লী ও সুতরার মাঝখানে কি পরিমাণ দূরত্ব থাকা উচিত

৪৭২। আমর ইবনু যূরারা (রহঃ) ..... সাহল ইবনু সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সালাতের স্থান ও দেওয়ালের মাঝখানে একটা বকরী চলার মত ব্যবধান ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩২। মুসল্লী ও সুতরার মাঝখানে কি পরিমাণ দূরত্ব থাকা উচিত

৪৭৩। মাক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) .... সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ মসজিদের দেওয়াল ছিল মিম্বরের এত কাছে যে, মাঝখান দিয়ে একটা বকরীরও চলাচল কঠিন ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৩। বর্শা সামনে রেখে সালাত আদায়

৪৭৪। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বর্শা পুঁতে রাখা হতো, আর তিনি সেদিকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৪। লৌহযুক্ত ছড়ি সামনে রেখে সালাত আদায়

৪৭৫। আদম (রহঃ) ..... আওন ইবনু আবূ জুহায়ফা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ একদিন দুপুরে আমাদের সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন। তাঁকে উযূর পানি দেওয়া হল। তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং আমাদের নিয়ে যোহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাতের সময় তাঁর সামনে ছিল লৌহযুক্ত ছড়ি, যার বাইরের দিক দিয়ে মহিলা ও গাধা চলাচল করতো।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৪। লৌহযুক্ত ছড়ি সামনে রেখে সালাত আদায়

৪৭৬। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু বযী (রহঃ) ..... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হতেন, তখন আমি ও একজন বালক তাঁর পিছনে যেতাম। আর আমাদের সাথে থাকতো একটা লাঠি বা একটা ছড়ি অথবা একটা ছোট নেযা, আরো থাকতো একটা পানির পাত্র। তিনি তাঁর প্রয়োজনে সেরে নিলে আমরা তাঁকে ঐ পাত্রটি দিতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৫। মক্কা ও অন্যান্য স্থানে সুতরা

৪৭৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) .... আবূ জুহায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন দুপুরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে তাশরীফ আনলেন। তিনি ‘বাতহা’ নামক স্থানে যোহর ও আসরের সালাত (নামায/নামাজ) দু’রাকা’আত করে আদায় করলেন। তখন তাঁর সামনে একটা লোহযুক্ত ছড়ি পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিনি যখন উযূ (ওজু/অজু/অযু) করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁর উযূর পানি নিজেদের শরীরে (বরকতের জন্য) মাসেহ করতে লাগলো।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৬। স্তম্ভ (থাম) সামনে রেখে সালাত আদায়।

وَقَالَ عُمَرُ الْمُصَلُّونَ أَحَقُّ بِالسَّوَارِي مِنَ الْمُتَحَدِّثِينَ إِلَيْهَا. وَرَأَى عُمَرُ رَجُلاً يُصَلِّي بَيْنَ أُسْطُوَانَتَيْنِ فَأَدْنَاهُ إِلَى سَارِيَةٍ فَقَالَ صَلِّ إِلَيْهَا

উমর (রাঃ) বলেনঃ বাক্যালাপে রত ব্যক্তিদের চাইতে মুসল্লীরাই স্তম্ভ সামনে রাখার বেশী অধিকারী। এক সময় ইবনে উমর (রাঃ) দেখলেন, এক ব্যক্তি দুটো স্তম্ভের মাঝখানে সালাত আদায় করছে। তখন তিনি তাকে একটি স্তম্ভের কাছে এনে বললেনঃ এটি সামনে রেখে সালাত আদায় কর

৪৭৮। মক্কী ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... ইয়াযিদ ইবনু আবূ উবায়দা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি সালামা ইবনুল আকওয়া (রাঃ) এর কাছে আসতাম। তিনি সর্বদা মসজিদে নববীর সেই স্তম্ভের কাছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন যা ছিল মাসাহাফের নিকটবর্তী। আমি তাঁকে বললাম হে আবূ মুসলিম! আমি আপনাকে সর্বদা এই স্তম্ভ খুজে বের করে সামনে রেখে সালাত আদায় করতে দেখি (এর কারণ কি?) তিনি বললেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটি খুঁজে বের করে এর কাছে সালাত আদায় করেত দেখেছি।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৬। স্তম্ভ (থাম) সামনে রেখে সালাত আদায়।

৪৭৯। কাবীসা (রহঃ) .... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশিষ্ট সাহাবীদের পেয়েছি। তারা মাগরিবের সময় দ্রুত স্তম্ভের কাছে যেতেন। শু’বা (রহঃ) আমর (রহঃ) সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে (এ হাদীসে) অতিরিক্ত বলেছেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসা পর্যন্ত।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৭। জামা’আত ব্যতীত স্তম্ভসমূহের মাঝখানে সালাত আদায় করা

৪৮০। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহ-এ প্রবেশ করেছিলেন। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ), উসমান ইবনু তালহা (রাঃ) এবং বিলাল (রাঃ)। তিনি অনেকক্ষণ ভিতরে ছিলেন। তারপর বের হলেন। আর আমিই প্রথম ব্যাক্তি যে তাঁর পরে প্রবেশ করেছে। আমি বিলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন? তিনি জবাব দিলেনঃ সামনের দুই স্তম্ভের মাঝে।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৭। জামা’আত ব্যতীত স্তম্ভসমূহের মাঝখানে সালাত আদায় করা

৪৮১। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) .... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর উসামা ইবনু যায়েদ, বিলাল এবং উসমান ইবনু তালহা হাজাবী (রাঃ) কা’বায় প্রবেশ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রবেশের সাথে সাথে উসমান (রাঃ) কাবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। তাঁরা কিছুক্ষণ ভিতরে ছিলেন। বিলাল (রাঃ) বের হলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি করলেন? তিনি জওয়াব দিলেনঃ একটা স্তম্ভ বামদিকে, আর স্তম্ভ ডানদিকে আর তিনটা স্তম্ভ পেছনে রাখলেন। আর তখন বায়তুল্লাহ ছিল ছয় স্তম্ভ বিশিষ্ট। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

[ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন] ইসমাঈল (রহঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন যে, তাঁর (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) ডান পাশে দুটো স্তম্ভ ছিল।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৮। পরিচ্ছেদ নাই।

৪৮২। ইবরাহিম ইবনু মুনযির (রহঃ) .... নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন কা’বা গৃহে প্রবেশ করতেন তখন সামনের দিকে চলতে থাকতেন এবং দরজা পেছনে রাখতেন। এভাবে এগিয়ে গিয়ে যেখানে তাঁর ও দেয়ালের মাঝে প্রায় তিন হাত পরিমাণ ব্যবধান থাকতো, সেখানে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি সে স্থানেই সালাত আদায় করতে চাইতেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছিলেন বলে বিলাল (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছিলেন। তিনি বলেনঃ কা’বা ঘরের যে-কোন প্রান্তে ইচ্ছা, সালাত আদায় করায় আমাদের কারো কোন দোষ নেই।

পরিচ্ছেদঃ ৩৩৯। উটনী, উট, গাছ ও হাওদা সামনে রেখে সালাত

৪৮৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী বসরী (রহঃ) .... ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীকে সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (রাবী রাফি (রহঃ) বলেন) আমি (আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে) জিজ্ঞাসা করলামঃ যখন সওয়ারী নড়াচড়া করতো তখন (তিনি কি করতেন)? তিনি বলেনঃ তিনি তখন হাওদা নিয়ে সোজা করে নিজের সামনে রাখতেন, আর তার শেষাংশের দিকে সালাত আদায় করতেন। (নাফি (রহঃ) বলেন) ইবনু উমর (রাঃ)-ও এরূপ করতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪০। চৌকি সামনে রেখে সালাত আদায় করা

৪৮৪। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুর, গাধার সমান করে ফেলেছ! আমি নিজে এ অবস্থায় ছিলাম যে, আমি চৌকির উপর শুয়ে থাকতাম আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে চৌকির মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এভাবে আমি সামনে থাকা পছন্দ করতাম না। তাই আমি চৌকির পায়ের দিকে সরে গিয়ে চুপি চুপি নিজের থেকে বেরিয়ে পড়তাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪১। সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারীকে মুসল্লীর বাধা দেয়া উচিত।

وَرَدَّ ابْنُ عُمَرَ فِي التَّشَهُّدِ وَفِي الْكَعْبَةِ وَقَالَ إِنْ أَبَى إِلاَّ أَنْ تُقَاتِلَهُ فَقَاتِلْهُ

ইবনে উমর (রাঃ) তাশাহহুদে বসা অবস্থায় এবং কা’বাকেও (অতিক্রমকারীকে) বাধা দিয়েছেন এবং তিনি বলেন, সে অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকতে অস্বীকার করে লড়তে চাইলে মুসল্লী তার সাথে লড়বে।

৪৮৫। আবূ মা’মার (রহঃ) ও আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) .... আবূ সালেহ সম্মান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখেছি। তিনি জুম্মার দিন লোকদের জন্য সুতরা হিসাবে কোন কিছু সামনে রেখে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আবূ মু’আইত গোত্রের এক যুবক তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তার বুকে ধাক্কা মারলেন। যুবকটি লক্ষ্য করে দেখলো যে তাঁর সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। এজন্য সে পুনরায় তাঁর সামনে দিয়ে যেতে চাইল। এবার আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রথম বারের চাইতে জোরে ধাক্কা দিলেন। ফলে আবূ সাঈদ (রাঃ)-কে তিরস্কার করে সে মারওয়ানের কাছে গিয়ে আবূ সাঈদ (রাঃ)-এর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল। এদিকে তার পরপরই আবূ সাঈদ (রাঃ)-ও মারওয়ানের কাছে গেলেন। মারওয়ান তাঁকে বললেনঃ হে আবূ সাঈদ! তোমার এই ভাতিজার কি ঘটেছে? তিনি জবাব দিলেনঃ আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের কেউ যদি লোকদের জন্য সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করে, আর কেউ যদি তার সামনে দিয়ে যেতে চায়, তাহলে যেন সে তাকে বাধা দেয়। সে যদি না মানে, তবে সে ব্যাক্তি (মুসল্লী) যেন তার সাথে মুকাবিলা করে, কারণ সে শয়তান।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪২। মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে গমন কারীর গুনাহ

৪৮৬। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... বুসর ইবনু সাঈদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, যায়েদ ইবনু খালিদ (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ) এর কাছে পাঠালেন, যেন তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কি শুনেছেন। তখন আবূ জুহায়ম (রাঃ) বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি মুসল্লীর সামনে অতিক্রমকারী জানতো এটা তার কত বড় অপরাধ, তাহলে সে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে চল্লিশ দিন/মাস/বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো। আবূন-নাযর (রহঃ) বলেনঃ আমার জানানেই তিনি কি চল্লিশ দিন বা চল্লিশ মাস বা চল্লিশ বছর বলেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৩। কারো দিকে মুখ করে সালাত আদায়।

وَكَرِهَ عُثْمَانُ أَنْ يُسْتَقْبَلَ الرَّجُلُ وَهُوَ يُصَلِّي، وَإِنَّمَا هَذَا إِذَا اشْتَغَلَ بِهِ، فَأَمَّا إِذَا لَمْ يَشْتَغِلْ فَقَدْ قَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ مَا بَالَيْتُ إِنَّ الرَّجُلَ لاَ يَقْطَعُ صَلاَةَ الرَّجُلِ

উসমান (রাঃ) সালাতরত অবস্থায় কাউকে সামনে রাখা মাকরূহ মনে করতেন। এ হুকুম তখনই প্রযোজ্য যখন তা মুসল্লীকে অন্যমনস্ক করে দেয়। কিন্তু যখন অন্যমনস্ক করে না, তখন যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) এর মতানুসারে কোন ক্ষতি নেই। তিনি বলেনঃ একজন আরেক জনের সালাত নষ্ট করতে পারে না।

৪৮৭। ইসমা’ঈল ইবনু খলীল (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তাঁর সামনে সালাত (নামায/নামাজ) নষ্টকারী জিনিসের আলোচনা করা হল। লোকেরা বললোঃ কুকুর, গাধা ও মহিলা সালাত নষ্ট করে দেয়। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমাদের কুকুরের সমান করে দিয়েছ! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, সালাত আদায় করেছেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝে চৌকির উপর কাত হয়ে শুয়ে থাকতাম। কোন কোন সময় আমার বের হওয়ার দরকার হতো এবং তাঁর সামনের দিকে যাওয়া অপছন্দ করতাম। এজন্য আমি চুপি চুপি সরে পড়তাম।

আ’মাশ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৪। ঘুমন্ত ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায়

৪৮৮। মুসাদ্দাদ (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি তখন তাঁর বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতাম। বিতর পড়ার সময় তিনি আমাকেও জাগাতেন, তখন আমিও বিতর পড়তাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৫। মহিলার পেছন থেকে নফল সালাত আদায়

৪৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে শুয়ে থাকতাম আর আমার পা দুটো থাকত তাঁর কিবলার দিকে। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন আমাকে টোকা দিতেন, আর আমি আমার পা সরিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে পুনরায় পা দুটো প্রসারিত করে দিতাম। আয়িশা (রাঃ) বলেন তখন ঘরে কোন বাতি ছিল না।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৬। কোন কিছু সালাত নষ্ট করে না বলে যিনি মত পোষণ করেন

৪৯০। উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ..... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁর সামনে সালাত নষ্টকারী, কুকুর, গাধা ও মহিলা সম্বন্ধে আলোচনা চলছিল। আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমাদেরকে গাধা ও কুকুরের সাথে তুলনা করছ? আল্লাহর কসম! আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি। তখন আমি চৌকির উপরে তাঁর ও কিবলার মাঝখানে শায়িত ছিলাম। আমার প্রয়োজন হলে আমি উঠে বসা পছন্দ করতাম না। কেননা, তাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কষ্ট হতে পারে। আমি তাঁর পায়ের পাশ দিয়ে চুপে চুপে বের হয়ে পড়তাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৬। কোন কিছু সালাত নষ্ট করে না বলে যিনি মত পোষণ করেন

৪৯১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে উঠে সালাতে দাঁড়াতেন আর আমি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে তাঁর পারিবারিক বিছানায় শুয়ে থাকতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৭। সালাতে নিজের ঘাড়ে কোন ছোট মেয়েকে তুলে নেয়া

৪৯২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ..... আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবূল আস ইবনু রাবী’য়া ইবনু আবদে শামস (রহঃ) এর ঔরসজাত কন্যা উমামা (রাঃ)-কে কাঁধে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। তিনি যখন সিজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৮। এমন বিছানা সামনে রেখে সালাত আদায় করা যাতে ঋতুবতী মহিলা রয়েছে

৪৯৩। আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) .... মায়মুনা বিনতে হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার বিছানা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুসল্লার বরাবর ছিল। আর আমি আমার বিছানায় থাকা অবস্থায় কোন কোন সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ের উপর এসে পড়তো।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৮। এমন বিছানা সামনে রেখে সালাত আদায় করা যাতে ঋতুবতী মহিলা রয়েছে

৪৯৪। আবূ নু’মান (রহঃ) ..... মায়মুনা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন আর আমি তাঁর পাশে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর কাপড় আমার গায়ের উপর পড়তো। সে সময় আমি হায়েয অবস্থায় ছিলাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৪৯। সিজদার সুবিধার্থে নিজ স্ত্রীকে সিজদার সময় স্পর্শ করা

৪৯৫। আমর ইবনু আলী (রহঃ) .... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমরা আমাদেরকে কুকুর ও গাধার সমান করে বড়ই খারাপ করেছ। অথচ আমি নিজেকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের সময় আমি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে শুয়ে থাকতাম। তিনি যখন সিজদা করার ইচ্ছা করতেন তখন আমার পা দু’টোতে টোকা দিতেন। আমি তখন আমার পা দু’টো গুটিয়ে নিতাম।

পরিচ্ছেদঃ ৩৫০। মুসল্লীর দেহ থেকে মহিলা কর্তৃক নাপাকী পরিষ্কার করা

৪৯৬। আহমদ ইবনু ইসহাক সারমারী (রহঃ) .... আবদুল্লাহ [ইবনু মাস’উদ (রাঃ)] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার নিকটে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আর কুরাইশের একদল তাদের মজলিসে ছিল। এমন সময় তাদের একজন বললঃ তোমরা কি এই রিয়াকারকে দেখনি? তোমাদের এমন কে আছে, যে অমুক গোত্রের উট যবেহ করার স্থান পর্যন্ত যেতে রাযী? সেখানে থেকে গোবর, রক্ত ও গর্ভাশয় নিয়ে এসে অপেক্ষায় থাকবে যখন এ ব্যাক্তি সিজদায় যাবে, তখন এগুলো তার দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিবে। এ কাজের জন্য চরম হতভাগ্য ব্যাক্তি (উকবা ইবনু আবূ মু’আইত) উঠে দাঁড়াল (এবং তা নিয়ে আসলো)। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন তখন সে তাঁর দু'কাঁধের মাঝখানে সেগুলো রেখে দিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় স্থির রয়ে গেলেন। এতে তারা হাসাহাসি করতে লাগলো। একজন আরেক জনের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগল।

(এই অবস্থা দেখে) এক ব্যাক্তি ফাতিমা (রাঃ) এর কাছে গেল। তিনি তখন ছোট বালিকা ছিলেন। তিনি দৌড়ে চলে আসলেন। তখনও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদারত ছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) সেগুলো তাঁর উপর থেকে ফেলে দিলেন এবং মুশরিকদের লক্ষ্য করে গালমন্দ করতে লাগলেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করলেন তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহ! তুমি কুরাইশদের ধ্বংস কর”। তারপর তিনি নাম ধরে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমর ইবনু হিশাম, উতবা ইবনু রাবী’য়া, শায়বা ইবনু রাবী’য়া, ওয়ালীদ ইবনু উতবা, উমাইয়া ইবনু খালাফ, উকবা ইবনু আবূ মু’আইত এবং উমারা ইবনু ওয়ালিদকে ধ্বংশ কর”।

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: সালাত বা নামাজ
সালাত বা নামাজ
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2020/08/blog-post_17.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/08/blog-post_17.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy