রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনের ইসলামী পদ্ধতি কী?

লিখেছেন :- মাওলানা ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার

আলহামদুলিল্লাহ। রাষ্ট্র ব্যবস্হায় ইসলাম প্রয়োজন, এ নিয়ে আলেমদের মাঝে এখন আর খুব একটা দ্বিমত নেই। যারা সামান্য দ্বিধায় ছিলেন, তারাও এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আর এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোন অবকাশও নেই। কেননা এটাকে অস্বীকার করা মানে রাসূল সা, এর মাদানী জীবনের বিশাল একটি অংশকে অস্বীকার করা। আর যা সুস্পষ্ট কুফরী।

এখন প্রশ্ন হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনের ইসলামী পদ্ধতি কী? অনেক ভাইকে বলতে শুনা যায়, আমরাও রাষ্ট্র ক্ষমতায় ইসলাম চাই, তবে রাসূল সা, এর পদ্ধতিতে হওয়া লাগবে, ভোটাভুটিতে নয়। ইসলামের ইতিহাসের দিকে দৃকপাত করলে দেখা যায়, রাসূল সা, এর পর হযরত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী ও মুয়াবিয়া রা, সহ মোট পাঁচজন সাহাবী দীর্ঘ মেয়াদে ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মজার ব্যাপার হলো, তাদের নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি কিন্তু একরকম ছিল না।

১. রাসূল সা, ইন্তিকালের পূর্বে পরবর্তী রাষ্ট্র প্রধান হিসেব কারো ঘোষণা করেন নি; বরং তা সাহাবাগণের মতামতের উপর ছেড়ে গেলেন। সাহাবাগণ তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে আবুবকর রা, কে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত করেন।

২. আবু বকর রা, ইন্তেকালের পূর্বে পরবর্তী রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে হযরত ওমর রা, এর নাম ঘোষণা করেন।

৩. হযরত ওমর রা, ইন্তকালের পূর্বে পরবর্তী রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে ছয় জন সাহাবার প্যানেল ঘোষণা করে অসিয়ত করেন, তোমরা এদের থেকে একজনকে রাষ্ট্র প্রধান বানাবে।

৪. হযরত ওসমান রা, তার ইন্তেকালর সময় কারো নাম ঘোষণা করেন নি। সাহাবাগণ তাদের মতামতের ভিত্তিতে আলী রা, কে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত করেন।

৫. আলী রা, এর ওফাতকালে লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, আমরা আপনার পুত্র হযরত হাসান রা, কে রাষ্ট্র প্রধান বানাবে? তিনি বললেন- আমি নির্দেশও দিচ্ছি না, নিষেধও করছি না।

৬. পরবর্তীতে মুয়াবিয়া রা, এর রাষ্ট্র প্রধান হওয়া এবং তাঁর সন্তান ইয়াজিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইতিহাস কারো অজানা নয়। উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনে ইসলামে নির্ধারিত কোন পদ্ধতি নেই। এটা স্হান ও কাল ভেদে নির্ধারিত হবে। কিন্তু রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, তার পদ্ধতি ইসলামে সুনির্দিষ্ট। এর কোন ব্যতিক্রম হবে না। আর সেটা হলো- সৃষ্টি যার আইন চলবে শুধু তার, (সূরা আরাফ- ৫৪)। তাহলে, বুঝা গেলো- রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনে জনগণের মতামতের গুরুত্ব রাসূল সা, নিজে দেখিয়ে গেছেন। আর মতামত প্রধানের আধুনিক পদ্ধতির নাম হলো ভোট।

এখন যারা রাসূলের পদ্ধতি লাগবে, এমন কথা বলে ভোট প্রধানের বিরোধীতা করে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্হার বিরোধীতা করছেন, আসলে এটা তাদের বাহানা মাত্র। তারা বলছেন, সব মানুষের ভোটের মূল্য সমান, এ জন্য নাকি ভোট হারাম। আজব ফাতওয়া! আমি, আর আপনি হারাম ফাতওয়া দিলেই কোন বস্তু হারাম হয়ে যাবে? হারাম সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দালীলে কাতঈ বা অকাট্য দলীল লাগবে। রাসূল সা, এর সাহাবাগণের মাঝেও কি সবার শিক্ষা ও বুদ্ধি একরকম ছিল? অথচ সবার পরামর্শক্রমে আবু বকর ও আলী রা, কে রাষ্ট্র প্রধান করা হয়েছিল। তখন তো তুলনা মূলক কম জ্ঞানীদের কে উপেক্ষা করা হয় নি।

তাহলে, আজ এ প্রশ্ন উঠবে কেন? আবার বলে, অধিকাংশ লোকের মতামতের ভিওিতে রাষ্ট্র প্রধান নিযুক্ত হয়, তাই এটা নাজায়েজ। দলীল হিসেবে বলে- "আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে বিপথগামী করে দেবে", (সূরা আনআম- ১১৬)। অথচ, এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে তাবারী ও তাফসীরে করতুবি প্রণেতাসহ অসংখ্য মুফাসসির বলেছেন, এখানে "অধিকাংশ" বলে কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। "অধিকাংশ" মানেই খারাপ এটা আপনাকে বলেছে? ফাতওয়ার কিতাবের অসংখ্য জায়গায় লেখা থাকে- "এটা অধিকাংশ আলেমের মত"। আমরাও বলে থাকি- "এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মুফাসসির বলেন।" আলী রা, এর খলীফা হওয়ার ব্যাপারে ১৭/১৮ জন ব্যতীত সবাই একমত হয়েছিলেন বিধায় তিনি খলীফা হতে রাজি হয়েছেন, প্রথমে তিনি খলীফা হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

কই হযরত আলী রা, তো "অধিকাংশের মতামত" এর কোন দোষ খুজলেন না। আপনি এ দোষ খুজছেন কেন? এরপর বলে গণতন্ত্র হারাম, তাই এটা দিয়ে হবে না। আরে ভাই, আব্রহাম লিংকনের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো কুফরী- "মানুষের সার্বভৌমত্ব্য"। এটাতো কোন মুসলমানই মানতে পারে না। তাই তো আমরা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব্য মেনে নিয়েই তাঁর উপর ঈমান এনেছি। এখন, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব্য মেনে নেয়ার পর জনগণের মতামত তথা ভোটের ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনের বিপক্ষ কোন দলীল আছে কী? যদি না থাকে, তাহলে আসুন কোন বাহানা তালাশ না করে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে তাওহীদের ভিত্তিতে ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত পুরোটা জীবন কুরআনের আদলে ঢেলে সাজাই। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন। আমীন।
নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনের ইসলামী পদ্ধতি কী?
রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনের ইসলামী পদ্ধতি কী?
সহী আকীদা
https://soheeaqida.blogspot.com/2018/08/blog-post_26.html
https://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2018/08/blog-post_26.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy