সাহাবী(রাঃ)গণের ফযীলত

৫৯৫৩। যুহায়র ইবনু হারব, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা গুহায় থাকা অবস্হায় আমাদের মাথার উপর মুশরিকদের পা দেখতে পেলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকে তাকায়, তা হলে পায়ের নিচেই আমাদের দেখতে পাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ বকর! তুমি এ দুজন সম্পর্কে কি মনে কর যাদের সাথে তৃতীয়জন হিসেবে আল্লাহ রয়েছেন।

৫৯৫৪। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু খালিদ (রহঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর বসলেন এবং বললেন, আল্লাহর একজন বান্দা, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ইখতিয়ার দিয়েছেন যে, তাকে পার্থিব সম্পদ দিবেন, না আল্লাহর কাছে যা আছে, তা। অতএব এ বানী আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা বেছে নিলেন। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমাদের পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক। ইখতিয়ার প্রাপ্ত এ বান্দাটি ছিলেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে আবূ বকরই আমাদের সবার চেয়ে জ্ঞানী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উপর সর্বাধিক অনুগ্রহ আবূ বকরের, সম্পদে ও সঙ্গ দানেও। আমি যদি কাউকে পরম বন্ধু বলে গ্রহণ করি, তাহল আবূ বকরকেই করব। এখন তো ইসলামী ভ্রাতৃত্বই আছে। মসজিদে যেন কারো দরজা না থাকে, শুধু আবূ বকরেরই থাকবে।

৫৯৫৫। সাঈদ ইবনু মানসূর (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে ভাষন দিলেন তিনি এরপর মালিক (রহঃ)-এর অনুরুপ হাদীসই বললেন।

৫৯৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আল আবদী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি বন্ধু গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম। কিন্তু তিনি আমার ভাই এবং সাহাবী। আর তোমাদের সাথীকে আল্লাহ তা’আলা বন্ধু বানিয়েছেন।

৫৯৫৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে যদি আমি বন্ধু বানাতাম, তাহলে আবূ বকরকেই বানাতাম।

৫৯৫৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোন বন্ধু বানাতাম তবে আবূ কুহাফার পূত্রকেই বানাতাম।

৫৯৫৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা, যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কাউকে যদি আমি পরম বন্ধু বানাতাম তবে আবূ কুহাফার পূত্রকেই বানাতাম; কিন্তু তোমাদের সাথী আল্লাহর বন্ধু।

৫৯৬০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, ইবনু আবূ উমার, মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ সাঈদ আশাজ্জ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জেনে রাখো! কারো সঙ্গে আমার একান্ত বন্ধুত্ব নেই, যদি এমন কোন বন্ধু বানাতাম তবে আবূ বকরকেই বানাতাম। আর তোমাদের সাথী আল্লাহর পরম বন্ধু।

৫৯৬১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে যাতুস-সালাসিলের সৈন্য বাহিনীর সাথে পাঠালেন, তখন আমি রাসূলের কাছে এসে বললাম, আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় কে? তিনি বললেন, আয়িশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেনঃ আয়িশার পিতা। আমি বললাম- এরপর? তিনি বললেনঃ উমর। এরপর তিনি আরো কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন।

৫৯৬২। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কাউকে খলীফা বানাতেন তাহলে কাকে বানাতেন? আয়িশা (রাঃ) বললেন,আবূ বকরকে। প্রশ্ন করা হলো, আবূ বকরের পর কাকে? বললেন, উমরকে। প্রশ্ন করা হলো, উমরের পর কাকে? তিনি বললেন,আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহকে। এ পর্যন্ত বলেই তিনি শেষ করলেন।

৫৯৬৩। আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কিছু জিজ্ঞাসা করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অন্য সময় আসার জন্য বললেন। মহিলাটি বললো, যদি আমি এসে আপনাকে আর না পাই তবে (মহিলাটি মৃত্যুর ব্যাপারেই বলেছিলেন)? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি আমাকে না পাও তবে আবূ বকর-এর কাছে এসো।

৫৯৬৪। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুতইম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর পিতা যুবায়র ইবনু মুতইম তাকে বলেছেন যে, একজন স্ত্রীলোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তাঁকে কিছু বললে তিনি স্ত্রীলোকটিকে আব্বাদ ইবনু মূসা (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ নির্দেশ দিলেন।

৫৯৬৫। উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর রোগ শয্যায় বললেনঃ তোমার আব্বা ও ভাইকে তুমি ডাক। আমি একটা পত্র লিখে দই। কেননা আমি ভয় করছি যে, কোন আশা পোষণকারী আশা করবে, আর কেউ বলবে, আমিই শ্রেষ্ঠ। অথচ আবূ বকর ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ অস্কীকার করেন এবং মুসলমানরাও অস্বীকার করে।

৫৯৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমর মাক্কী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজ তোমাদের মধ্যে কে সিয়াম পালনকারী? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ একটা জানাযাকে অনুসরণ করেছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে একজন মিসকীনকে আজ আহার করিয়েছ? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ একজন রোগীকে দেখতে গিয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মাঝে এ কাজগুলোর সমাবেশ ঘটেছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

৫৯৬৭। আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ব্যক্তি পিঠে বোঝা দিয়ে একটি গাভীকে হাঁকাচ্ছিল। গাভীটি লোকটির দিকে চেয়ে বললো, আমাকে তো এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমার সৃষ্টি তো হাল-চাষ করার জন্য। লোকেরা আশ্চার্যাম্বিত ও ভীত হয়ে বলে উঠলো, সুবহানাল্লাহ! গাভী কথা বলে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এট! আমি বিশ্বাস করি এবং আবূ বকর, উমারও বিশ্বাস করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক রাখাল ছাগল চরাচ্ছিল। এমন সময় একটি নেকড়ে এসে একটী ছাগল নিয়ে গেলে রাখাল নেকড়ের থেকে ছাগলটিকে মুক্ত করলো। তখন নেকড়ে রাখালটির দিকে তাকিয়ে বললো, যে দিন আমি ছাড়া আর কোন রাখাল থাকবে না, সেদিন বকরীগুলোকে কে রক্ষা করবে? লোকেরা বলে উঠলো, সূবহানাল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি, আবূ বকর এবং উমার এ ব্যাপারটি বিশ্বাস করি।

৫৯৬৮। আব্দুল মালিক ইবনু শুয়ায়ব ইবনু লাইস (রহঃ) এ সনদেই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, যাতে রাখাল ও ছাগলের কাহিনী রয়েছে, কিন্তু গাভীর বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেননি।

৫৯৬৯। মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর বরাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যুহরী (রহঃ) সুত্রে ইউনুস বর্ণিত হাদীসের সমর্থনে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাদের হাদীসে একই সাথে গাভী ও ছাগলের কাহিনী রয়েছে। তাদের দু-জনের বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এ ব্যাপারটি আমি, আবূ বকর এবং উমার বিশ্বাস করি। তাঁরা দুঁজন তখন সামনে ছিলেন না।

৫৯৭০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫৯৭১। সাঈদ ইবনু আমর আশ-আশ আসী, আবূর রবীহ আল আতাকী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উমার (রাঃ)-কে তাঁর খাটিয়ায় রাখা হলে লোকেরা তার পাশে জমা হয়ে দুআ, প্রশংসা ও রহম কামনা করছিলো, তখনও তাঁর জানাযা হয় নি। আমিও লোকদের সঙ্গে ছিলাম। এক ব্যক্তি পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলে আমি ভয় পেলাম। ফিরে দেখি আলী (রাঃ)। তিনি বললেন, আল্লাহ উমার (রাঃ)-এর উপর রহম করুন। তারপর উমারকে সম্বোধন করে বললেন, হে উমার! আপনি আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় কোন ব্যক্তি রেখে যাননি যার আমল এমন যে, তার মত আমল নিয়ে আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে পছন্দ করি। আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয়, আল্লাহ আপনাকে আপনার দুই সাথীর সংগেই রাখবেন। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে প্রায়ই বলতে শুনেছি, আমি,-আবূ বকর ও উমার এসেছি; প্রবেশ করেছি আমি আবূ বকর ও উমার; বেরও হয়েছি আমি,আবূ বকর ও উমার। এ জন্যে আমার দূঢ় আশা ও বিশ্বাস এই যে, আল্লাহ আপনাকে তাঁদের সাথেই রাখবেন।

৯৯৭২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) উমার ইবনু সাঈদ (রাঃ) থেকে একই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৫৯৭৩। মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, দেখি আমার সামনে লোকদের আনা হচ্ছে, এদের পরনে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত কারো বা এর নীচে। উমারকে আনা হলো তার গায়ের জামাটির ঝূল মাটিতে গিয়ে ঠেকেছিল। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি এর ব্যাখ্যা কি করেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দ্বীন।

৫৯৭৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে আছি, দেখলাম দুধ ভর্তি একটি পেয়ালা আনা হলো। আমি তা থেকে পান করলাম এবং আমার মূখে তৃপ্তি ও সজীবতা ফূটে উঠলো। এরপর যা বেচে রইল তা উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। লোকেরা বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এর ব্যাখ্যা কি? তিনি বললেন, ইলম।

৫৯৭৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সালিহ (রাঃ) থেকে ইউনূসের সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৫৯৭৬। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আমি ঘুমের মধ্যে দেখলাম একটি কুপ, এতে একটি বালতি। আমি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা মতো পানি তুললাম। এরপর আবূ কুহাফার পূত্র বালতি হাতে নিলো এবং এক বা দুই বালতি পানি তূললো। তাঁর উত্তোলনে দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন। বালতিটি এবার বড় হয়ে গেল। ইবনু খাত্তাব সেটি নিলো। আমি উমার ইবনু খাত্তাবের মতো পারদশী পানি উত্তোলনকারী আর কাউকে দেখি নি। তখন লোকেরা নিজেদের উটগুলোকে পানি পান করিয়ে বিশ্রামের স্থানে নিয়ে গেলো।

৫৯৭৭। আব্দুল মালিক ইবনু শুয়ায়ব ইবনু লাইস (রহঃ) সালিহ (রহঃ) থেকে ইউনুস (রহঃ)-এর সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৫৯৭৮। হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইবনু আবূ ফূহাফাকে পানি তূলতে দেখেছি পরবর্তী অংশ যুহরীর হাদীসের অনুরুপ।

৫৯৭৯। আহমদ ইবনু আব্দুর রহমান ইবনু ওয়াহব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘুমের মধ্যে আমি দেখলাম, আমার হাউয হতে পানি উত্তোলন করছি। আর লোকদের পানি দিচ্ছি। আবূ বকর এসে আমাকে বিশ্রাম করতে দেয়ার জন্য আমার হাত থেকে বালতি নিয়ে দুবালতি পানি উঠালেন এবং তার উত্তোলনে দুর্বলতা ছিলো। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর ইবনু খাত্তাব এসে তার হাত থেকে বালতি নিলেন। তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী উত্তোলনকারী আমি আর কোনদিন দেখি নি। লোকেরা তৃপ্ত হয়ে ফিরে গেলো আর তখন হাউয পরিপূর্ণ প্রবাহিত ছিল।

৫৯৮০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি স্বপ্লে দেখলাম যেন ভোরে বালতি দ্বারা একটি কুয়া থেকে পানি উঠাচ্ছিলাম। তখন আবূ বকর এসে এক বালতি বা দুই বালতি তূললেন। তাঁর উত্তোলনে ছিল দূর্বলভাব। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। এরপর উমার এসে পানি তোলা শুরু করলেন। আর বালতিটি বিরাট আকার ধারণ করল। লোকদের মাঝে এত বড় সবল জওয়ান আমি আর দেখি নি যে, তার মত কাজ করে। এমন কি লোকেরা তৃণ্ডি লাভ করল এবং সেখানে উটশালা বানিয়ে ফেলল।

৫৯৮১। আহমাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আবদুল্লাহ তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে আবূ বকর ও উমার (রাঃ) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর স্বপ্ন তাঁদের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেলেন।

৫৯৮২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করনাম, ওখানে একটা বাড়ি বা প্রাসা’দ দেখলাম। বললাম, এটা কার? লোকেরা বললো, উমার ইবনুল খাত্তাবের। আমি এতে প্রবেশের ইচ্ছা করলাম। তখনি তোমার আত্নসম্মানবোধের কথা আমার মনে পড়লো। এ কথা শুনে উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আত্নমর্যাদাবোধ কি আপনার প্রতিও চলে?

৫৯৮৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে ইবনু নুমায়র ও যুহায়রের সুত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫৯৮৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমাকে আমি জান্নাতে দেখতে পাই। ওখানে একটি প্রাসা’দর কোণে একজন মহিলা উযু করছিল। আমি জিজ্ঞাঁসা করলাম, এটি কার? তারা বললো উমার ইবনুল খাত্তাবেরা তখন উমারের আত্নসম্মানবোধের কথা আমার মনে পড়ে, আমি ফিরে চলে এলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ একথা শুনে উমার (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে আমরা সবাই এ মজলিসে ছিলাম। তারপর উমার (রাঃ) বললেন, আপনার উপর আমার মা-বাবা কুরবান হোক, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি কি আমি আত্মসম্মানবোধ দেখাবো? আমরুন-নাকিদ, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৫৯৮৫। মানসুর ইবনু আবূ মুযাহিম, হাসান হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তখন কুরায়শ মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আলাপরত ছিল এবং উচ্চস্বরে তারা বেশি বেশি কথা বলছিল। যখন উমার (রাঃ) অনুমতি চাইলেন, এরা উঠে আড়ালে চলে গেলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসছিলেন। উমার বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর আপনার মূখকে হাস্যোজ্জ্বল রাখুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি এদের ব্যাপারে আশ্চোর্যবোধ করছি যারা আমার কাছে বসা ছিল। আর তোমার শব্দটি শোনামাত্রই আড়ালে চলে গেল! উমার (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকেই তো এদের বেশি ভয় কলা উচিত। এরপর উমার (রাঃ) বললেন, ওহে! নিজের প্রাণের শক্ররা! তোমরা আমাকে ভয় কর আর আল্লাহর রাসুলকে ভয় কর না! তারা বললো, হ্যা, তুমি তো আল্লাহর রাসূলের চেয়ে বেশি কঠোর এবং রাগী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! শয়তান যখন তোমাকে কোন পথে চলতে দেখে, তখন সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথ ধরে চলে।

৫৯৮৬। হারুন ইবনু মারুফ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট কিছু স্ত্রীলোক উচ্চস্বরে কথা বলছিল। যখন উমার প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, মহিলারা সব ততক্ষণাৎ আড়ালে চলে গেল। পরবর্তী অংশ যুহরী (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫৯৮৭। আবূ তাহির আহমদ ইবনু আমর ইবনু সারহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মাতসমূহের মধ্যে কিছু লোক ছিলেন মুহাদ্দাস, আমার উম্মাতের মধ্যে যদি কেউ এমন থেকে থাকে তবে সে উমার ইবনুল খাত্তাবই হবে। ইবনু ওয়াহব (রাঃ) বলেন ‘মুহাদ্দাস–এর ব্যাখ্যা হল যার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম হয়।

৫৯৮৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, আমরুন-নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৫৯৮৯। উকবা ইবনু মুকরিম আলী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত উমার (রাঃ) বলেছেনঃ যে, তিনটি বিষয়ে আমি আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার অনুরুপ পূর্বেই মত ব্যক্ত করেছি। মাকামে ইবরাহীমে সালাত আদায় সম্পর্কে, মাহিলাদের পর্দা এবং বদরের যুদ্ধ বন্দীদের ব্যাপারে।

৫৯৯০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল মারা যায়, তখন তার পূত্র আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে আরয করলেন, তিনি যেনঁ নিজ জামা তার পিতার কাফনের জন্য দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দান করলেন। তারপর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর পিতার জানাযা পড়ার অনুরোধ জানালেন। তিনি তার জানাযা পড়ার জন্য উঠে দাড়ালেন। তখন উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পরিধেয় বস্ত্র ধরে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি ওর জানাযা পড়বেন অথচ আল্লাহ আপনাকে তার জানাযা পড়তে নিষেধ করেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ অবশ্য আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। বলেছেনঃ আপনি তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর নাই করুন যদি আপনি সত্তরবারও এদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন’ (৯-৮০) সুতরাং আমি সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা চাইবো। উমর (রাঃ) বললেন, সে তো মুনাফিক। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযা পড়লেন। তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘মুনাফিকদের মধ্যে কেউ মরে গেলে কখনো তার জানাযা পড়বেন না; আর তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না’ (৯ –৮৪)।

৫৯৯১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও উবায়দুল্লাহ ইবনু সাঈদ উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে এ সনদে আবূ উসামার হাদীসের সমার্খক হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং অতিরিক্ত বলেছেন, ‘এরপর তিনি তাদের উপর জানাযা পড়া ছেড়ে দেন।’

৫৯৯২। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আয়্যুব, কুতায়বা ও ইবনু হাজর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে শোয়া ছিলেন তার উরু অথবা পা খোলা ছিল। আবূ বকর (রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্হাতেই কথাবার্তা বললেন। এরপর উমর (রাঃ)অনুমতি চাইলে অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্হায়ই কথাবার্তা বললেন। উসমান (রাঃ) অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করলেন। রাবী মুহাম্মাদ বলেনঃ এ ব্যাপারটি একই দিনে ঘটেছে বলে আমি বলতে পারি না। এরপর উসমান (রাঃ) এসে কথা বলে চলে যাওয়ার পর আয়িশা (রাঃ) বললেন,’আবূ বকর (রাঃ) এলেন, আপনি আনন্দিত হলেন না এবং কোন খেয়াল করলেননা। উমর (রাঃ) এলেন, আপনি আনন্দিত হলেননা এবং কোন খেয়াল করলেননা। উসমান (রাঃ) আসতেই আপনি উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করে নিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি সে ব্যক্তিকে লজ্জা করবো না, ফিরিশতারা যাকে লজ্জা করে থাকেন।

৫৯৯৩। আবদুল মালিক ইবনু শুয়ায়ব ইবনু লাইস ইবনু সা’দ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা ও উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বকর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজের বিছানায় আআয়িশার চাঁদর গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তিনি আবূ বকরকে অনুমতি দিলেন। আর তিনি এ অবস্হায়ই রইলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর প্রয়োজনে শেষ করে চলে গেলেন। এরপর উমার (রাঃ)অনুমতি চাইলে তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এ অবস্হায়ই রইলেন। উমার (রাঃ) তাঁর কাজ সেরে চলে গেলেন। উসমান (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি অনুমতি চাইলাম, তিনি উঠে বসে পড়লেন এবং আমাকে বললেন, ভালোমতো তোমার গায়ে কাপড় ঠিক করে নাও। আমি আমার কাজ শেষ করে চলে গেলে আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কি ব্যাপার, আবূ বকর ও উমার (রাঃ) এলে আপনাকে এমন ব্যতিব্যস্ত হতে দেখলাম না, যেমন উসমান আসতেই আপনি ব্যাতিব্যস্ত হলেন! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উসমান (রাঃ) বড়ই লাজুক পূরুষ। তাই আমি ভাবলাম, এ অবস্হায় তাকে আসতে বললে হয়ত সে তার প্রয়োজন আমার কাছে পেশ করতে পারবে না।

৫৯৯৪। আমরুন-নাকিদ, হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) উসমান ও আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন পরবর্তী অংশ যুহরী (রহঃ) থেকে উকায়ল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেছেন।

৫৯৯৫। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার একটি বাগানে হেলান দিয়ে বসা অবস্হায় একটি লাকড়ি কাদামাটিতে গাড়তে চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় কেউ দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি দেখি তিনি আবূ বকর (রাঃ)। আমি দরজা খুললাম এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। এরপর আরেক ব্যক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। তখন আমি গিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাঃ)। দরজা খুলে দিলাম এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। এরপর আরেক ব্যক্তি দরজা খোলার অনুমতি চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা হয়ে বসে পড়লেন এবং বললেনঃ দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে আসন্ন বিপদসহ জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। আমি গিয়ে দেখি তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)। আমি দরজা খূলে দিয়ে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার উল্লেখ করলাম। উসমান (রাঃ) বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দান কর। আল্লাহর কাছে আমি সাহায্য প্রার্থনা করছি।

৫৯৯৬। আবূ রবী আতাকী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাগানে গেলেন এবং আমাকে দরজায় প্রহরা দিতে বললেন এরপর উসমান ইবনু গিয়াস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন।

৫৯৯৭। মুহাম্মদ ইবনু মিসকীন ইয়ামামী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর বাড়ি থেকে উযু করে বের হয়ে এসে বলেনঃ আজকের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে থাকব। তিনি মসজিদে আসলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বললো, এ দিকে গিয়েছেন। আবূ মূসা (রাঃ) লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করে করে তার পদাংক অনুসরণ করে বীরে আরীসে গিয়ে পৌছলেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেনঃ আমি দরজায় বসলাম। এর দরজাটি ছিল কাঠের। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাজ সেরে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলে আমি তাঁর কাছে গিয়ে দাড়ালাম। তিনি আরীস কুপের উপর বসা ছিলেন অর্থাৎ তার কিনারের মধ্যে তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা এবং কুপের ভেতর ঝূলন্ত ছিল। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে দরজার কাছে চলে গেলাম। বললাম, আমি আজ অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দারোয়ান হবো। আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ডাক দিলে আমি বললাম কে? বললেন,আবূ বকর। আমি বললাম, দাড়ান! এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আবূ বকর (রাঃ) এসেছেন এবং অনুমতি চাইলেন। বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এগিয়ে গিয়ে আবূ বকরকে বললাম, প্রবেশ করুন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ডানদিকে কুপের কিনারায় কুপে পা ঝূলিয়ে বসলেন আর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা রাখলেন যেমনটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। এরপর আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে রেখে এসেছিলাম, তিনি উযু করছিলেন। তিনি আমার সাথে দেখা করবেন। আমি মনে করলাম, আল্লাহ তায়াআলা যদি তাঁর কল্যাণ চান তাহলে তাঁকে এখনই এনে দিবেন। এমন সময় একজন মানুষ দরজা নাড়লো। বললাম, কে? উত্তর দিলো, উমার (রাঃ) ইবনুল খাত্তাব। বললাম, দাঁড়ান! পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললাম, উমার (রাঃ) এসেছেন, তিনি প্রবেশর অনুমতি চান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাওঁ। উমরের কাছে এসে বললাম, আসুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। উমার (রাঃ) প্রবেশ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বামপাশের কিনারায় কুপে পা ঝূলিয়ে বসলেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম, বললাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের কল্যাণ চান তা-হলে তাঁকে এনে দিবেন। একজন লোক এসে দরজা নাড়লো। আমি বললাম, কে? বললো, উসমান ইবনু আফফান। বললাম, দাঁড়ান! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে খবর দিলাম। তিনি বললেনঃ তাকে ঢুকতে দাও এবং আসন্ন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, প্রবেশ করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে একটি আসন বিপদের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। উসমান (রাঃ) প্রবেশ করে দেখলেন কুপের একপাশ ভরে গেছো তিনি তাঁদের মুখোমুখি হয়ে কুপের অন্যপার্শে বসলেন। শুরাইক (রহঃ) বলেনঃ সাঈদ ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) বলেনঃ আমি এ বৈঠকের ব্যাখ্যা করলাম যে, এ হচ্ছে তাদের কবর-এর অবস্থান। আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুঁজতে বের হয়ে দেখলাম, তিনি মালসমুহের দিকে গিয়েছেন। আমি তাঁর পিছনে গিয়ে দেখি তিনি মালে ঢূকে কুয়ার চাকের উপর পবু দু-টো ঝূলিয়ে বসে আছেন, তাঁর পা দুটো নলা পর্যন্ত খোলা। এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করলেন। এখানে সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যিব (রহঃ)-এর কথা আমি ব্যাখ্যা করলাম যে, তাঁদের কবরও এভাবেই- কথাটি নেই।

৫৯৯৮। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী ও আবূ বকর ইবনু ইসহাক (রহঃ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন প্রয়োজনে মদিনার এক বাগানে গেলেন। আমি তাঁর পদাংক অনুসরণ করলাম। অতঃপর সুলায়মান ইবনু বিলাল-এর হাদীসের অনুরুপভাবে রাবী এ হাদীস বর্ণনা করেন। এ হাদীসে এও উল্লেখ আছে যে, ইবনু মূসায়্যিব (রহঃ) বলেন আমি এ ব্যাখ্যা করলাম যে, তা হচ্ছে তাঁদের কবরের নমুনা। সবাই একত্রে, আর পৃথকভাবে আছেন। উসমান (রাঃ)।

৫৯৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী, আবূ জাফর মুহাম্মদ ইবনুুস সাব্বাহ, উবায়দুল্লাহ কাওয়ারীরী ও সুরায়জ ইবনু ইউনুস (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে বলেছেনঃ তুমি আমার জন্য মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হারুন-এর মতো। কিন্তু আমার পর কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসবেন না। সাঈদ (রহঃ) বলেনঃ আমি ভাল মনে করলাম যে, হাদীসটি প্রত্যক্ষভাবে সা’দ (রাঃ) থেকে শুনেছেন। অতএব আমি সা’দর সাথে মিলিত হলাম এবং আমের আমাকে যা বলেছেন, আমি তাঁকে তা বললাম। তিনি বললেন, আমি এ কথা শুনেছি। আমি বললাম, আপনি কি এ কথা শুনেছেন? তিনি দু-কানে দুটো আংগুল দিয়ে বললেন, হ্যা শুনেছি, না শুনে থাকলে এ কান দুটো বধির হয়ে যাবে।

৬০০০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাবুকের যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে মদিনায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলেন। আলী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে কি মহিলা ও শিশুদের কাছে রেখে যাচ্ছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি খুশি হবে না যে, তোমার মর্যাদা আমার কাছে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মতো। এ কথা ভিন্ন যে, আমার পর আর কোন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসবেন না।

৬০০১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) শুবা থেকে এ সনদেই বর্ণনা করেছেন।

৬০০২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুআবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) সা’দ (রহঃ)-কে আমীর বানালেন এবং বললেন , আপনি আলী (রাঃ)-কে কেন মন্দ বলেন না? সা’দ বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে যে তিনটি কথা বলেছেনঃ তা মনে করে এ কারণে আমি কখনও তাকে মন্দ বলবো না। ওসব কথার মধ্য হতে যদি একটিও আমি লাভ করতে পারতাম তাহলে তা আমার জন্য নাল উটের চেয়েও বেশি ভালো হতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আলী (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে বলতে শুনেছি, আলী (রাঃ)-কে কোন যুদ্ধের সময় প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলে তিনি বললেন, মহিলা ও শিশুদের মাঝে আমাকে রেখে যাচ্ছে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি এতে আনন্দবোধ কর না যে, আমার কাছে তোমার মর্যাদা মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে হারুন (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মতো। এ কথা ভিন্ন যে, আমার পর আর কোন নাবী নেই! খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বলতে শুনেছি, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দেবো যে আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসে আর আল্লাহ ও তার রাসুলও তাকে ভালবাসেন। এ কথা শুনে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তাঁর হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ। আর যখন আয়াতঃ “আমরা আমাদের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি” (৩ –৬১) অবতীর্ণ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার।

৬০০৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ)-কে বলেছেনঃ তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমার মর্যাদা আমার কাছে মূসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে হারুন-এর মত?

৬০০৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অবশ্যই খায়বরের দিন আমি ঐ ব্যক্তির কাছে পতাকা অর্পণ করবো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালবাসে। তাঁর হাতেই আল্লাহ তা-আলা বিজয় দিবেন। উমার (রাঃ) বলেনঃ শুধু ঐ দিনটি ছাড়া আমি কখনো নেতৃত্বকে ভালবাসি নি। এ আশা নিয়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে দৌড়িয়ে গেলাম, হয়ত এ কাজের জন্য আমাকে ডাকা হতে পারে। রাবী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবনু আবূ তালিবকে ডেকে তার হাতে পতাকা দিলেন এবং বললেনঃ এগিয়ে চলো, এদিক ওদিক তাকিও না। তোমার হাতেই আল্লাহ বিজয় তুলে দিবেন। রাবী বলেনঃ এরপর আলী (রাঃ) কিছু দুরে চললেন, মৃদু স্বরে কিছু বললেন এবং থামলেন, এদিক সেদিক দেখেন নি। এরপর চিৎকার করে বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! কোন কথার উপর আমি লোকদের সাথে লড়াই করবো? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাও যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই আর নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল। যখনই তারা এ সাক্ষ্য প্রদান করবে, তখনই তারা তাদের প্রাণ ও ধনমাল তোমার হাত থেকে রক্ষা করে ফেলবে। তবে কোন প্রাপ্য অধিকারের প্রশ্নে রক্ষা হবে না। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে।

৬০০৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন বলেছেনঃ আমি অবশ্যই এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা অর্পণ করবো যার হাতে আল্লাহর তা-আলা বিজয় দান করবেন। সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে ভালবাসে আর আল্লাহ তা-আলা ও তাঁর রাসুলও তাকে ভালবাসেন। রাবী বলেনঃ অতঃপর লোকেরা রাতভর এ আলোচনাই করতে থাকলো যে, কাকে এ পতাকা অর্পণ করা হয়। তিনি বলেনঃ তারপর সকাল হলে সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলো। প্রত্যেকের এটাই আশা যে আমাকেই হয়ত দেয়া হবে এ পতাকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? লোকেরা বললো, ইযা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাঁর চোখে অসূখ। তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে ডেকে পাঠাও, পরে তাকে আনা হলো। তিনি তার চোখে লালা লাগালেন এবং দু’আ করলেন তার জন্য। তিনি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেলেন, এমনভাবে, যেন তাঁর কোন রোগই ছিল না। রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পতাকা দিলেন। আলী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তাদের সাথে লড়াই করবো যতক্ষন না তারা আমাদের মতো হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তোমার পথে চলে যাও এবং ওদের মাঠে অবতীর্ণ হয়ে তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দাও। আর তাদের উপর বর্তিত আল্লাহর হকগুলো সম্পর্কে খবর দিয়ে দাও। কেননা আল্লাহর শপথ! তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একটা মানুষকেও হিদায়েত করেন তবে তা তোমার জন্য লাল উট থেকেও উত্তম।

৬০০৬। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালামা ইবনু আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খায়বারের দিন আলী (রাঃ) পেছনে রয়ে গেলেন। তাঁর চোখ উঠেছিল। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ছেড়ে পিছনে পড়ে থাকবো? তিনি বের হলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মিলিত হলেন। বিজয় প্রভাভের আগের দিন বিকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করবো, অথবা পতাকা এমন এক ব্যক্তি গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালবাসেন। অথবা যিনি আল্লাহ ও তাঁবু রাসুলকে ভালবাসেন। তার হাতেই আল্লাহ বিজয় দিবেন। হঠাৎ আমরা আলী (রাঃ)-কে দেখলাম। আমরা তাঁকে আশা করি নি। লোকেরা বললো, ইনি তো আলী। আর একেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পতাকা দিলেন এবং আর আল্লাহ বিজয় দান করলেন!

৬০০৭। যুহায়র ইবনু হারব ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইয়াযীদ ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি, হুসায়ন ইবনু সাবুরা এবং উমার ইবনু মুসলিম- আমরা যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমরা যখন তার কাছে বসি, তখন হুসায়ন (রাঃ) বললেন, হে যায়দ! আপনি তো বহু কল্যাণ প্রত্যক্ষ করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছেন, তার তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পেছনে সালাত আদায় করেছেন। আপনি বহু কল্যাণ লাভ করেছেন, হে যায়দ! আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমাদের বলুন না। যায়দ (রাঃ) বললেন, ভ্রাতূষ্পূত্র! আমার বয়সে হয়েছে, আমি পূরানো যুগের মানুষ। সূতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছ থেকে যা আমি সংরক্ষণ করোছিলাম, এর কিছু অংশ ভুলে গিয়েছি। তাই আমি যা বলি, তা কবুল কর আর আমি যা না বলি, সে ব্যাপারে আমাকে কষ্ট দিও না। তারপর তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “খুম” নামক স্থানে দাড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা শেষে ওয়ায-নসীহত করলেন। তারপর বললেন, সাবধান, হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফিরিশতা আসবে, আর আমিও তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে ভারী দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি! এর প্রথমটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে হিদায়াত এবং নূর রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে অবলম্বন কর, একে শক্ত করে ধরে রাখো। এরপর কুরআনের প্রতি আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা দিলেন। তারপর বলেনঃ আর হলো আমার আহলে বাইত। আর আমি আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছি, আহলে বাইতর ব্যাপারে তোমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি হুসায়ন (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ‘আহলে বাইত- কারা, হে যায়দ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিগণ কি আহলে বাইতর অন্তভুক্ত নন? যায়দ (রাঃ) বললেন, বিবিগণও আহলে বাইতর অন্তর্ভুক্ত; তবে আহলে বাইত তাঁরাই, যাদের উপর যাকাত গ্রহন হারাম। সূলায়ন (রহঃ) বললেন, এ সব লোক কারা? যায়দ (রাঃ) বললেন, এরা আলী, আকীল, জাফের ও আব্বাস (রাঃ)-এর পরিবার-পরিজন। হুসায়ন (রাঃ) বললেন, এদের সবার জন্য যাকাত হারাম? যায়দ (রাঃ) বললেনঃ হ্যা।

৬০০৮। মুহাম্মদ ইবনু বাক্কার ইবনু রাইয়্যান (রহঃ) যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬০০৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু হায়্যান (রহঃ) থেকে এ সনদেই ইসমাঈলের হাদীসের অনুরুপ বর্ননা করেন। জারীরের হাদীসে “আল্লাহর কিতাব, তাতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো, যে এটাকে ধরে রাখরে, হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর যে এটা ছেড়ে দেবে, সে পথ হারিয়ে ফেলবে বাক্যটি অতিরিক্ত উল্লেখ আছে।

৬০১০। মুহাম্মাদ ইবনু বাক্কার ইবনু রায়্যান (রহঃ) যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমরা তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, আপনি তো বর কল্যান প্রত্যক্ষ করেছেন, আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্যে রয়েছেন, তার পেছনে নামায পড়েছেন। এরপর আবূ হায়্যানের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে এ হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মাঝে দুটো ভারী জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। আল্লাহর কিতাব যেটি আল্লাহর রশি, যে এর অনুসরণ করবে- হিদায়াতের উপর থাকবে; আর যে একে ছেড়ে দেবে, সে পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। এ বর্ণনায় আরো আছে যে, আমরা বললাম, রাসূলের আহলে বায়াতের মধ্যে কি তাঁর বিবিরা অন্তভুক্ত রয়েছেন? যায়দ (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! স্ত্রীরা একটা সময় পূরুষদের সাথে থাকে, এরপর তাকে স্বামী তালাক দিলে সে তার পিতা এবং গোষ্ঠীর কাছে ফিরে যায়। আহলে বাইত হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মূল বংশ এবং তাঁর স্বগোত্রীয়রা, যাদের জন্য নাবীর তিরোধানের পর যাকাত হারাম।

৬০১১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মারওয়ানের বংশের এক ব্যক্তি মদিনার শাসনকর্তা নিহত হলো, সে সাহলকে ডেকে এনে আলী (রাঃ)-কে গালি দিতে বলল সালব (রাঃ) অস্বীকার করলেন। শাসক ব্যক্তিটি বললো, তুমি যদি গালি নাই দাও তবে অন্তত বল যে, আবূ তুরাবের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। সা’দ (রাঃ) বললেন, আলী (রাঃ)-এর কাছে কোন নামই এর চেয়ে বেশি পছন্দনীয় ছিল না। এ নামে ডাকলে তিনি খূশি হতেন। সে ব্যক্তি বললো, তা হলে আবূ তুরাব নাম হওয়ার ঘটনা বর্ণনা কর। তিনি বললেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরে পদার্পণ করলেন; কিন্তু আলী (রাঃ)-কে ঘরে পেলেন না। ফাতিমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাত ভাই কোথায়? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তাঁর আর আমার মাঝে একটা কিছু ঘটেছিল, যার ফলে তিনি রাগ করে চলে গেছো, আর তিনি আমার কাছে ঘুমোন নি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন, দেখ তো, আলী কোথায়। লোকটি এসে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! মসজিদে শুয়ে আছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন। আলী (রাঃ) শুয়েছিলেন। তাঁর এক পাশের চাঁদর সরে গিয়েছিল, ফলে শরীরে মাটি লেগে গিয়েছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মাটি ঝাড়তে শুরু করলেন এবং বললেন, হে আবূ তুরাব, উঠ! হে আবূ তূরাব, উঠ!

৬০১২। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন আর তিনি বললেন, যদি আমার কোন সৎকর্মশীল সাহাবী এ রাতটিতে আমাকে প্রহরা দিতো! এমন সময় আমরা অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনি কে? উত্তর এলো, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস। আপনাকে পাহারা দিতে এসেছি ইয়া রাসুলুল্লাহ! আয়িশা (রাঃ) বললেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দও শুনতে পেলাম।

৬০১৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মদিনা আগমনের প্রথম সময়ে এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন। আর তিনি বললেনঃ আমার সাহাবীদের মধ্য হতে কোন নেক ব্যক্তি আমাকে এ রাত্রে পাহারা দিলে কতই না ভালো হতো! আয়িশা (রাঃ) বলেন যে, এমতাবস্হায়ই আমরা অস্ত্রের ঝনঝন শব্দ শুনতে পেলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইনি কে? বললেন, সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেন এসেছো? সা’দ (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে আমার মনে ভয় জেগেছে, তাই তাকে পাহারা দিতে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্যে দুঃআ করলেন, তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ইবনু রুমহের বর্ণনায় আছে, “আমরা বললাম, ইনি কে”?

৬০১৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত রইলেন। (পরবর্তী অংশ) সূলায়মান ইবনু বিলালের অনুরুপ হাদীস বর্ণিত আছে।

৬০১৫। মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) ছাড়া আর কারো জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাতাপিতা উভয়ের উল্লেখ এক সাথে করেননি। ওহুদ যুদ্ধের দিন তিনি। সা’দকে বলেছিলেন, তীর নিক্ষেপ কর সা’দ! আমার মা-বাবা তোমার উপর উৎসর্গ হোন।

৬০১৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব, ইসহাক হানযালী ও ইবনু আবূ উমার (রাঃ) আলী (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ হাদিস হাদীস বর্ণিত আছে।

৬০১৭। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ওহুদ দিবসে আমার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পিতা ও মাতাকে একত্রে উল্লেখ করেছেন।

৬০১৮। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, ইবনু রুমহ ও ইবনু মূসান্না (রাঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রাঃ) সুত্রে এ সনদেই বর্ণনা করেছেন।

৬০১৯। মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের দিন তাঁর জন্য তাঁর স্বীয় পিতা ও মাতাকে একত্রে উল্লেখ করেছিলেন। সা’দ (রাঃ) বলেনঃ মুশরিকদের একটা লোক মুসলমানদের জ্বালিয়ে মারছিলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে সা’দ তীর মারো। আমার পিতামাতা তোমার জন্য উৎসর্গ। আমি তার উদ্দেশ্যে একটা তীর বের করলাম যাতে ফলা (ধারালো অংশটি) ছিলো না, ওটা তার পাঁজরে লাগলে সে পড়ে গেলো, এতে তার লজ্জাস্হান প্রকাশিত হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হাসলেন আমি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত দেখতে পেলাম।

৬০২০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকারনা করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মালতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯- ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১- ১৫) সা’দ বলেনঃ একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাতে বিপূল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সস্পদ আসলো। এতে একটি তলোয়ারও ছিল। আমি সেটা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম, বললাম এ তলোয়ারটি আমায় দান করুন। আর আমার অবস্হা তো আপনি জানেনই। তিনি বললেন এটা যেখান থেকে নিয়েছ সেখানেই রেখে দাও। আমি গেলাম এবং ইচ্ছে করলাম যে, এটাকে ভাণ্ডারে রেখে দেই; কিন্তু আমার মন আমাকে ধিক্কার দিল। অমনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ফিরে এলাম। বললাম, আমায় এটা দান করুন তিনি উচু আওয়াযে বললেন, এটা যেখানে থেকে এনেছ সেখানে রেখে দাওা তখন আল্লাহ তা’আলা অবতীর্ণ করলেনঃ তারা আপনাকে যূদ্ধ লব্ধ মাল সম্পর্কে প্রশ্ন করে।” (৮–০১)। তিনি বলেনঃ অসুস্থ হয়ে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আসতে বললাম, তিনি আসলেন! আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দান করতন, আমি যাকে ইচ্ছা তাকে আমার ধন-মাল বণ্টন করে দিয়ে দই। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। আমি বললাম, আচ্ছা অর্ধেক ধন-মাল বণ্টন করি। তিনি তাও অস্বীকৃতি জানালেন। আমি বললাম আচ্ছা তবে এক-তৃতীয়াংশ মালই দিয়ে দই। তিনি চুপ হয়ে রইলেন। পরবর্তীতে এক-তৃতীয়াংশ ধন-মাল দান করাই অনুমোদিত হলো। সা’দ বলেন একবার আমি আনসার ও মুহাজিরদের কিছু লোকের কাছে গেলাম। তারা আমাকে বললো, এসো, তোমায় আমরা আহার করাবো এবং মদ পান করাবো। এ ঘটনা মদ হারাম হওয়ার পুর্বের। আমি তাদের কাছে একটি বাগানে গেলাম। সেখানে উটের মাথার গোশত ভূনা হয়েছিল আর মদের একটা মশক ছিল। আমি তাদের সাথে গোশত খেলাম এবং মদ পান করলাম। সেখানে মুহাজির ও আনসারদের আলোচনা উঠলে আমি বললাম, মুহাজিররা আনসারদের চেয়ে উত্তম। এক লোক মাথার একটি হাড় দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমার নাকে যখম হয়ে গেলো। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তা বর্ণনা করলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আমার সম্পর্কে আয়াত নাযিল করলেনঃ “মদ, জুয়া, মুর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ (৫:৯০)।

৬০২১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমার পিতার প্রসঙ্গে নিয়ে চারটি আয়াত অবতীর্ন হয়েছে। অতঃপর তিনি হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করলেন। শু’বা শুধু এটূকু কথা বেশি বলেছেন- “সা’দ (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা আমার মাকে খানা খাওয়ানোর সময় একটি কাঠি দিয়ে তার মুখ খুলতো- পরে তার মুখে খাদ্য দিতো।” এ বর্ণনায় এরুপ আছে, “সা’দর নাকে আঘাত করলো, এতে তার নাক ভেঙ্গে গেলো। এরপর সব সময়ই তাঁর নাক ভাংগাই ছিল।

৬০২২। যূহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে, তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না।” (৬ -৫২)-এ আয়াতটি ছয় ব্যক্তি প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়। তন্মধ্যে আমিও একজন ছিলাম এবং আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদও ছিলেন। মুশরিকরা বলতো, এ সব লোককে আপনি সাথে রাখবেন না।

৬০২৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা ছয় ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে ছিলাম। মুশরিকরা বললো, আপনি এসব লোককে আপনার কাছে থেকে তাড়িয়ে দিন। তারা আমাদের মাঝে আসার সাহস করবে না। সা’দ (রাঃ) বলেনঃ তাদের মধ্যে আমি, ইবনু মাসউদ, বনূ হুযায়লের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং আর দু”জন ব্যক্তি ছিলাম, যাদের নাম আমি নিচ্ছি না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মনে আল্লাহ তাআলার অবতীর্ণ করলেনঃ ”যারা তাদের প্রতিপালককে প্রভাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভার্থে ডাকে, তাদের আপনি বিতাড়িত করবেন না (৬-৫২)।”

৬০২৪। মুহামাদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী, হামিদ ইবনু আমর বকরাবী ও মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল আ’লা (রহঃ) আবূ উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের সাথে লড়াই করছিলেন, তখন কোন কোন দিন তালহা এবং সা’দ (রাঃ) ব্যতীত আর কেউই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে থাকতো না। এটা তাদের দু’জনের বর্ণনামতে।

৬০২৫। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের জিহাদের প্রেরণা দিলেন। যুবায়র (রাঃ) ডাকে সাড়া দিলেন। আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডাকলেন। তখনও যুবায়রই সাড়া দিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার ডাকলেন। যুবায়রই সাড়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক নাবীরই একজন একান্ত সাহায্যকারী থাকে, আর আমার একান্ত সাহায্য- কারী হল যুবায়র।

৬০২৬। আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, হাদীসটি তিনি ইবনু উয়ায়নার হাদীসের সমার্থক বর্ণনা করেছেন।

৬০২৭। ইসমাঈল ইবনু খলীল ও সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের দিন আমি এবং উমর ইবনু আবূ সালামা, হাসসান ইবনু সাবিত)-এর কিল্লায় আমাদের সাথে ছিলাম। কখনো তিনি আমার দিকে যুকে পড়তেন, আমি দেখতাম, আর কোন সময় আমি ঝুঁকে পড়তাম, তিনি দেখতেন। আমার পিতাকে আমি চিনে ফেলতাম, যখন তিনি সমস্ত্র অবস্হায় ঘোড়ায় চড়ে বনূ কুরায়যার দিকে যেতেন। অন্য সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি পিতাকে এ কথার উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, বাছা, তুমি আমায় দেখেছিলে,? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! সেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তাঁর পিতামাতা উভয়কে একত্রে উল্লেখ করেছেন। আর বলেছেনঃ তোমার উপর আমার মা-বাবা উৎসর্গ হোন।

৬০২৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খন্দকের দিন আমি এবং উমর ইবনু আবূ সালামা (রাঃ) ঐ কিল্লায় ছিলাম, যেখানে মহিলারা ছিলেন অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নীগণ। এ সনদেই ইবনু মুসহিরের হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে আবদুল্লাহ ইবনু উরওয়ার উল্লেখ করেননি। কিন্তু হিশাম তাঁর পিতা সুত্রে ইবনু যুবায়র থেকে বর্ণিত হাদীসে এ ঘটনাটি বিবৃত করেছেন।

৬০২৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতের উপর ছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর, উমর, উসমান আলী, তালহা ও যুবায়র (রাঃ)। তখন পাথরটি কেঁপে উঠল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ থাম। তোর উপর নাবী, সিদ্দীক বা শহীদ ছাড়া আর কেউ নয়।

৬০৩০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু ইয়াযীদ ইবনু খুনায়স ও আহবদ ইবনু ইউসূফ আযদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতের উপর ছিলেন, পর্বত নড়ে উঠলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শান্ত হও, হেরা! তোমার উপর নাবী, সিদ্দীক বা শহীদ ছাড়া অরে কেউ নয়। এর উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ। বকর, উমর, উসমান, আলী, তালহা, যুবায়র ও সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) ছিলেন।

৬০৩১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) আমাকে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমার উভয় পৃর্ব পূরুষ ঐ সব লোকের অন্তভুক্ত ছিলেন, যাদের কথা এ আয়াতে রয়েছে- যখম হওয়ার পর যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে (৩- ১৭২)।

৬০৩২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম (রাঃ) থেকে একই সনদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি অর্থাৎ আবূ বকর এবং যুবায়র কথাটি বর্ধিত করেছেন।

৬০৩৩। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) উরওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন, আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও” তোমার পিতারা তাঁদেরই অন্তভুক্ত।

৬০৩৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক উম্মাতের একজন আমীন থাকে। আর হে উম্মাত! আমাদের আমীন হলেন, আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ)।

৬০৩৫। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইয়েমেন থেকে কিছু লোক এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলছেন, আমাদের সঙ্গে একজন লোক প্রেরণ করুন, যিনি আমাদের ইসলাম ও সুন্নাত শিখাবেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আবূ উবায়দার হাত ধরে বললেন, তিনি হলেন এ উম্মাতের আমীন।

৬০৩৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাজরান থেকে লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদেরকে একজন আমীন (বিশ্বস্ত) লোক দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের মাঝে একজন আমীন (বিশ্বস্ত) লোককে পাঠাবো, তিনি সত্যই আমীন, সত্যই আমীন। রাবী বললেন, লোকেরা অপেক্ষায় ছিল যে, তিনি কাকে পাঠান। রাবী বলেনঃ অবশেষে আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রাঃ)-কে পাঠালেন।

৬০৩৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে একই সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৬০৩৮। আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান (রাঃ) সম্পর্কে বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি! তুমিও তাকে ভালবাসো, আর যে তাকে ভালবাসে, তাকেও ভালবাসে।

৬০৩৯। ইবনু আবূ উমার (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ দিনের এক প্রহরে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে বের হলাম। তিনি আমার সাথে কথা বলেন নি, আমিও তাঁর সাথে কথা বলছিলাম না। অবশেষে বনূ কায়নুকা-এর বাজারে পৌছলেন, এরপর চললেন এবং ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরে গেলেন। বললেন, এখানে খোকা আছে, খোকা আছে, অর্থাৎ হাসান। আমরা ধারণা করলাম যে, তাঁর মা তাকে আটকিয়ে রেখেছেন গোছল করানো এবং সূবাসিত মালা পরানোর জন্য। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসান দৌড়ে চলে এলেন এবং তাঁরা একে অপকে গলায় জড়িয়ে ধরলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি তাকে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাসো, আর ভালবাসো ঐ লোককে, যে তাকে ভালবাসে।

৬০৪০। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি হাসান ইবনু আলী। হুসাইন আলী (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাঁধের উপর দেখেছি। তিনি বলছেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাসো।

৬০৪১। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার ও আবূ বকর ইবনু নাফি বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখলাম, হাসান ইবনু আলীকে তাঁর কাঁধে বসিয়ে রেখেছেন। তিনি বলছেন:হে আল্লাহ! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাসো।

৬০৪২। আবদুল্লাহ ইবনু রুমী ইয়ামামী ও আব্বাস ইবনু আবদূল আযীম আম্বারী (রহঃ) আয়াস তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি একটি সাদা খচ্চরকে টেনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হুজরা পর্যন্ত নিয়ে গেলাম। এর উপর আরোহী ছিলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসায়ন। একজন সামনে, একজন পেছনে।

৬০৪৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নূমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল চুন দ্বারা খটিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের পবিত্রময় করতে চান।

৬০৪৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ তাঁর পিতা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমরা যায়দ ইবনু হারিসাকে যায়দ ইবনু মুহাম্মাদ বলতাম, যতক্ষন না কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই অধিক ন্যায়সংগত (৩৩:৫)।”

৬০৪৫। আহমদ ইবনু সাঈদ দারিমী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে এর অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬০৪৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইয়াহইয়া ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা সৈন্যদল প্রেরণ করলেন, এতে উসামা ইবনু যায়দকে আমীর নিয়োগ করলেন। লোকেরা তাঁর নের্তৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেনঃ এর নেতৃত্বের যদি তোমরা সমালোচনা কর, তোমরা এর পিতার নেতৃত্ব নিয়েও তোমরা সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! তার পিতা নের্তৃত্বের যোগ্য ছিল। সে আমার কাছে সবচে প্রিয় ছিল। আর-যায়দের পর এখন আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হলো উসামা (রাঃ)।

৬০৪৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলেছেনঃ তোমরা যদি তাঁর নেতৃত্বের ব্যাপারে সমালোচনা কর এখানে উসামা ইবনু যায়দকে বুঝাতে চেয়েছেন, তোমরা তো পূর্বে এর পিতার নেতৃত্ব নিয়েও সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহর শপথ! সে নেতৃত্বের যোগ্য ছিল। সে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় ছিল। এও খুব যোগ্য- এখানেও তিনি উসামাকে বুঝাতে চেয়েছেন; তার পরে এই আমার সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি, উসামার সাথে সুন্দর ব্যবহার কর। সে তোমাদের মাঝে সর্বাধিক সৎকর্মশীল।

৬০৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ মুলায়কা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বললেন, তোমার মনে আছে কি যখন আমি, তুমি এবং ইবনু আব্বাস, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে মিলিত হয়েছিলাম? তখন আমাকে তিনি আরোহণ করালেন, আর তোমাকে ছেড়ে দিলেন। তিনি বললেন, হ্যা।

৬০৪৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হাবীব ইবনু শাহীদ (রহঃ) থেকে ইবনু উলাইয়ার সনদ ও হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬০৫০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন বাড়ির শিশুদের সাথে তিনি মিলিত হতেন। রাবী বলেনঃ একবার তিনি সফর থেকে এলেন, প্রথমে আমার সাথে সাক্ষাত হয়, তখন তিনি আমাকে তাঁর সামনে বসিয়ে দিলেন, এরপর ফাতিমা-এর (রাঃ) এক ছেলেকে নিয়ে আসা হলে তাকে তিনি পেছনে বসালেন। আমরা তিনজন একই সওয়ারে-চড়ে মদিনায় প্রবেশ করলাম।

৬০৫১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে আসতেন, তখন আমাদের সাথে মিলিত হতেন। তিনি বলেনঃ একবার আমার সাথে মিললেন এবং হাসান অথবা হুসায়নের সাথেও মিলিত হলেন। আমাদের একজনকে বসালেন তার সামনে, অন্য জনকে পেছলে। এভাবে আমরা মদিনায় প্রবেশ করলাম।

৬০৫২। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর পিছনে সওয়ারীতে বসালেন এবং চুপি চুপি আমাকে একটা কথা বললেন, এটা আমি লোকদের মধ্যে কাঁউকে বলবো না।

৬০৫৩। আবূ বকর ইবনু শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আলীকে কুফায় বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন সে যুগে মরিয়ম বিনত ইমরান, আর এ যুগে খাদীজা বিনত খুওয়াইলিদ। রাবী আবূ কুরায়ব (রহঃ) বলেনঃ ওয়াকী- ইংগিত করলেন আসমান ও যমীনের প্রতি।

৬০৫৪। আবূ শায়বা, আবূ কুয়ায়ব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না- ইবনু বাশশার ও ইবনু মুআয আম্বারী (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছেন, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে মরিয়ম বিনত ইমরান ও ফির আউনের স্ত্রী আসিয়া (রাঃ) ছাড়া আর কেউ পূর্নতা লাভ করেননি। আর অন্যান্য মাহিলাদের উপর আয়িশার ফযীলত অন্যান্য খাদ্যের উপর সারীদের ফযীলতের মত।

৬০৫৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও উবন নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই তো খাদীজা আপনার কাছে একটা পাত্র নিয়ে আসছেন, যারা মধ্যে কিছু তরকারি, খাদ্য ও পানীয় রয়েছেন। তিনি যখন আপনার কাছে আসবেন তখন তাকে তার প্রভূর এবং আমার পক্ষ হতে সালাম দিবেন। আর তাঁকে জান্নাতের একটি ঘরের সুসংবাদ দিবেন, যা এমন একটি মুক্তা দিয়ে তৈরি, যার ভিতর খোলা। যেখানে কোন হৈচৈ আর দুঃখ-কষ্ট নেই। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে তার বর্ণনায় বলেছেন এবং আমি শুনেছি বলেন নি এবং আমরা হাদীসে ‘অ মিন্নি’ অর্থাৎ আমা হতে ও বলেন নি।

৬০৫৬। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রহঃ)-কে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি খাদীজা (রাঃ)-কে কোন ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন জান্নাতের মধ্যে? বললেন, হ্যা, তাকে জান্নাতের মধ্যে একটি মুক্তা দ্বারা নির্মিত ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন। যেখানে কোন হৈ চৈ আর দুঃখ-কষ্ট নেই।

৬০৫৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬০৫৮। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাকে জান্নাতের একটা ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন।

৬০৫৯। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন মহিলার প্রতই আমি এত ঈর্ষা পোষণ করি নি যতটুকু খাদীজার প্রতি করেছি; অথচ তিনি আমাদের বিয়ের তিন বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন। কারণ আমি শুনতাম যে, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কথা আলোচনা করতেন, আল্লাহ তায়াআলা তাকে আদেশ করেছিলেন যে, আপনি খাদীজাকে জান্নাতে একটি মুক্তা দ্বারা নির্মিত ঘরের সুসংবাদ দিন। এবং তিনি বকরী যবেহ করলে খাদীজার বান্ধবীদের গোশত উপহার দিতেন।

৬০৬০। সাহল ইবনু উসমান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি খাদীজা ছাড়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নীদের আর কাউকে ঈর্ষা করি নি, যদিও আমি তাঁকে পাই নি। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবেহ করতেন তখন বলতেন, এর গোশত খাদীজার বান্ধবীদের পাঠিয়ে দাও। একদিন আমি তাঁকে রাগান্বিত করলাম, আর বললাম, খাদীজাকে এতই ভালবাসেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেনঃ তার ভালোবাসা আমার অন্তরে গেঁথে দেয়া হয়েছে।

৬০৬১। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রাঃ) থেকে একই সনদে আবূ উসামার হাদীসের বকরীর ঘটনা পর্যন্ত অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এর পরবর্তী কথাগুলো তিনি উল্লেখ করেননি।

৬০৬২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নীদের কারো উপর আমি এত ঈর্ষা করি নি যতটুকু ঈর্ষা খাদীজাকে করেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁকে অধিক আলোচনা করার কারণে। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখি নি।

৬০৬৩। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা থাকা অবস্হায় আর কোন বিবাহ করেননি। যতদিন না তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

৬০৬৪। সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ খাদীজা (রাঃ)-এর বোন হালা বিনত খূওয়াইলিদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্বরণ করে উৎফূল্ল হয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ! এতো খূওয়াইলিদের কন্যা হালা। এতে আমি ঈর্ষানিত হয়ে বললাম, আপনি কি স্বরণ করছেন কুরায়শের এক লাল মাড়ি এবং সরু পায়ের গোছাওয়ালা বৃদ্ধাকে, যুগের আবর্তনে বিলীন হয়ে গেছেন! এরপর আল্লাহ তায়াআলা আপনাকে তাঁর পরিবর্তে উত্তম সহধর্মিনাদান করেছেন।

৬০৬৫। খালফ ইবনু হিশাম ও আবূর রাবি (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বপ্নযোগে তিনদিন আমাকে তোমায় দেখানো হয়েছে একজন ফিরিশতা তোমাকে একটি রেশম বস্ত্র খণ্ডে আবৃত করে নিয়ে এসে বললো, এটা আপনার স্ত্রী। আমি তোমার মুখের কাপড় সরিয়ে দেখি সেটি তুমিই। আমি বললাম, যদি এ স্বপ্ল আল্লাহর পক্ষ হতে হয়, তবে তাই বাস্তবায়িত হবে।

৬০৬৬। ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে উত্তম সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬০৬৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমায় বলেছেনঃ আমি বুঝতে পারি তুমি কখন আমার উপর খূশি থাকো, আর কখনো আমার উপর রাগ করো। আমি বললাম, এটা কিসের দ্বারা বুঝতে পারেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যখন তুমি আমার উপর খূশি থাকো তখন তুমি বলে থাকো, না, মুহাম্মাদের রব্বের শপথ! আর যখন তুমি রেগে যাও তখন বল, না, ইবরাহীমের রব্বের কসম! আমি বললাম, হ্যা। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আপনার নামটা শুধু বাদ দেই।

৬০৬৮। ইবনু নুমায়র (রহঃ) হিশাম (রহঃ) সুত্রে উক্ত সনদে “না, ইবরাহীমের রব্বের কসম” পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি।

৬০৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পূতূল নিয়ে খেলতেন। বলেনঃ আমার কাছে আমার বান্ধবীরা আসতো। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখে সরে পড়তো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন।

৬০৭০। আবূ কুরায়ব, যুহায়র ইবনু হারব ও ইবনু নূমায়র (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। জারীর-এর হাদীসে আছে, আমি পূতুল নিয়ে তাঁর ঘরে খেলা করতাম, আর পুতুল হলো খেলনা। “

৬০৭১। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। লোকেরা আমার পালার অপেক্ষা করতো। যে দিন আমার পালা হতো, সে দিন তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খুশি করার জন্য উপটৌকন পাঠাতো।

৬০৭২। হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী, আবূ বকর ইবনু নযর ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত! তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নীগণ রাসুল তনয়া ফাতিমাকে তাঁর কাছে পঠেলেন। সে এসে অনুমতি চাইলো। তিনি তখন আমার চাঁদর গায়ে, আমার সাথে শোয়া ছিলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার বিবিগণ আমাকে পাঠিয়েছেন, আবূ কুহাফার কন্যার ব্যাপারে তাঁরা আপনার সুবিচার চান। আমি চুপ করে রইলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ হে স্নেহের মেয়ে! আমি যা ভালবাসি, তা কি তুমি ভালবাস না? সে বলল, হ্যা, অবশ্যই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে একে ভালবাসো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এ কথা শুনে ফাতিমা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পত্নীদের কাছে ফিরে গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তিনি যা বলেছেন, আর তিনি তাঁকে যা উত্তর দিয়েছেন, তা তাঁদেরকে বললেন। বিবিরা বললেনঃ তুমি আমাদের কোন উপকার করতে পারলে না। তুমি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে তাঁকে বল, আপনার বিবিগণ আবূ কুহাফার মেয়ের ব্যাপারে আপনার কাছে সুবিচার চাচ্ছে। ফাতিমা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আয়িশার প্রশ্নে আমি কোনদিন কথা বলতে যাবো না। আয়িশা বলেনঃ এরপর রাসুল-পত্নীগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী যয়নবকে তাঁর কাছে পাঠালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চোখে তিনি ছিলেন আমার সম পর্যায়ের। যয়নবের চেয়ে দ্বীনদার, আল্লাহভীরু, সত্যভাষিনা, মায়ামযী, দানশীনা এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের পথে ও দান-খয়রাতের জন্যে নিজেকে শক্তভাবে ব্যবহার করার মত কোন মহিলা আমি দেখি নি। তবে তাঁর মাঝে শুধূ একটা ক্ষিপ্ততা ছিল, এটা থেকেও তিনি খুব দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যেতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে অনুমতি চাইলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চাঁদরে আবৃত থাকা অবস্হায়ই অনুমতি দিলেন, যে অবস্হায় ফাতিমা (রাঃ) তার কাছে এসেছিল। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার বিবিগণ আমাকে পাঠিয়েছেন। আবূ কুহাফার মেয়ের ব্যাপারে তাঁরা আপনার সুবিচার চান। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমার কাছে এলেন এবং কিছু বড় বড় কথা বললেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখের দিকে দেখছিলাম, তিনি আমায় কিছু বলার অনুমতি দিবেন কিনা? আমি বুঝতে পারলাম যে, যয়নবের কথার উত্তর দিলে তিনি কিছু মনে করবেন না। তিনি বলেনঃ তখন আমিও তাঁর উপর কথা বলতে লাগলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁকে চুপ করিয়ে দিলাম। তিনি বলেনঃ পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে বললেনঃ এটা তো আবূ বকরের মেয়ে। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু কুহযায (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে এর সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি যখন আমিও তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করলাম তখন অল্প সময়েই তাকে পরাজিত করে দিলাম বলেছেন।

৬০৭৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করতেন, আজ আমি কোথায় থাকব কাল আমি কোথায় থাকব? একথা ভেবে যে আয়িশার পালা হয়ত বহু দেরী। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ যখন আমার কাছে তাঁর অবস্থানের দিন এলো, তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে আমার বুক থেকে তুলে নিলেন।

৬০৭৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহৃর্তে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন তিনি তাঁর বুকে হেলান দেওয়া অবস্হায় ছিলেন, আর আমি কান লাগিয়ে রেখোছিলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, রহম কর এবং আমাকে বন্ধুর সাথে মিলিত কর।

৬০৭৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা,আবূ কুরায়ব ইবনু নুমায়র ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদেই অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৬০৭৬। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি শুনতাম যে, কোন নাবীই মৃত্যুবরণ করবেন না, যতক্ষন না তাঁকে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্য থেকে একটি বেছে নেয়ার সাধীনতা দেওয়া হবে। মৃত্যু শয্যায় শায়িতাবস্হায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তখন তাঁর আওয়াজ ভারী হয়ে গিয়েছিল, ওদের সাথে, যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল লোকদের সাথে, তাঁরা কতই না ভালো বন্ধু।” আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমার ধারণা তখনই তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।

৬০৭৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও উবায়দূল্লাহ ইবনু মুয়ায (রাঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।

৬০৭৮। আব্দুল মালিক ইবনু শুয়ায়র ইবনু লাইস (রহঃ) নাবী-পত্নী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্হবস্হায় বলেছেনঃ কোন নাবীই মৃত্যুবরণ করেননি যতক্ষন না তিনি জান্নাতে তাঁর স্হানটি দেখে নিয়েছেন। আর তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর সময় হলো আর তাঁর মাথা আমার রানের উপর, কিছুক্ষণ তিনি বেহুশ হয়ে রইলেন। হুশ ফিরে এলে তিনি ছাদের দিকে চেয়ে রইলেন। অতঃপর বলবেন, আল্লাহ, সূউচ্চ বন্ধুদের সাথে মিলিত কর। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, এখন আপনি আর আমাদের গ্রহণ করবেন না। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমার ঐ হাদীসটি মনে পড়লো যেটি তিনি সুস্হ থাকাকালে বলেছিলেন যে, কোন নাবী মৃত্যুবরণ করেন না, যতক্ষন না তিনি জান্নাতে তাঁর স্হানটি দেখে নেন। এরপর তাঁকে ইখতিয়ার দেওয়া হয়। আযেশা (রাঃ) বলেনঃ এটাই সেই শেষ কথা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বন্ধুদের সাথে”।

৬০৭৯। ইসহাক ইবনু ইরুরাহীম হানযালী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে বের হতেন, তখন নিজ বিবিদের ব্যপারে লটারি করতেন। একবার লটারিতে আয়িশা ও হাফসার নাম উঠলো। উভয়েই তার সাথে বের হলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সফর করতেন তখন তিনি আয়িশার সাথে আলাপ করে করে চলতেন। হাফসা (রাঃ) আয়িশাকে বললেন, আজ রাত তুমি আমার উটে চড় আর আমি তোমার উটে চড়ি। এরপর তুমি অপেক্ষা করবে আমিও অপেক্ষা করব। অতঃপর আয়িশা (রাঃ) হাফসার উটে আর হাফসা (রাঃ) আয়িশার উটে আরোহণ করলেন। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়িশার উটের কাছে এলেন এবং এতে সওয়ার ছিলেন হাফসা (রাঃ) তখন তিনি সালাম দিলেন এবং তাঁর সাথে চললেন। অবশেষে মনযিলে গিয়ে অবতরণ করলেন। আয়িশা (রাঃ) তাঁকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়লেন। যখন সবাই মনযিলে গিয়ে নামলেন, আয়িশা তাঁর পা ইযখির- ঘাসের উপর রেখে বলতে লাগলেন, হে রব্ব! একটা সাপ বা বিচ্ছু আমার দিকে ধাবিত করে দিন যেন আমাকে দংশন করে। তিনি তো আপনার রাসুল, আমি তাঁকে কিছু বলতেও পারি না।

৬০৮০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, অন্যান্য মহিলাদের উপর আছে আয়িশার শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত খাদ্যের উপর সারীদের” শ্রেষ্ঠত্বের মতো।

৬০৮১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেন। তাদের দুঁজনের হাদীসে “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”, থেকে শুনেছি নেই। ইসমাঈলের হাদীসে “আনাস (রাঃ) থেকে শুনেছি” রয়েছে।

৬০৮২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, জিবরাইল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। আমি বললাম, তার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত।

৬০৮৩। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে তাঁদের হাদীসের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন। ইসহাক (রহঃ) যাকারিয়া (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৬০৮৪। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আয়িশা! এই যে জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাকে সালাম বলছেন। আয়িশা (রাঃ) বললেন, ওয়া আলাইহিল সালাম ওয়া রাহমাতূল্লাহ- তাঁর উপরও সালাম এবং আল্লাহর রহমত। এরপর আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি তো এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না।

৬০৮৫। আলী ইবনু হুজর সা’দী ও আহমদ ইবনু জানাব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এগারজন মহিলা বসে অঙ্গীকার ও চুজিবদ্ধ হলো যে, তারা নিজ নিজ স্বামীর ব্যাপারে কিছু গোপন করবে না। প্রথম মহিলা বললো, আমার স্বামী লাল উটের গোশতেরমতো, যা দুর্গম এক পাহাড়ের চুড়ায় রক্ষিত। না ওখানে আরোহণ করা সম্ভব, আর না এমন মোটা তাজা যা সংরক্ষণ করা যায়। দিতীয় মহিলা বললো, আমি আমার স্বামীর খবর ছড়াতে পারবো না। আমার ভয় হয়, আমি তাকে ছেড়ে না দেই। আমি যদি তার বিবরণ দিতে যাই তবে তার গোপনীয় ও প্রকাশ্য সব দোষই বর্ণনা করতে হবে। মহিলা বললো, আমার স্বামী খুব লম্বা। ওর দোষ বললে আমি পরিত্যক্ত হবো, আর চুপ থাকলে ঝূলে থাকবো। চতুর্থ মহিলা বললো, আমার স্বামী ‘তিহামা ’এর রজনীর মতো। নাতিশীতোষ্ণ (গরমও নয় আর ঠাণ্ডাও নয়) ভয়ও নেই, ক্লান্তিও নেই। পঞ্চম মহিলা বললো, আমার স্বামী যখন ঘরে আসে তখন চিতা বাঘ, আর যখন বাইরে যায় তখন সিংহ। রক্ষিত মাল-সম্পদ নিয়ে সে কোন প্রশ্ন করে না। ষষ্ঠ মহিলা বললো, আমার স্বামী খেতে বসলে সব খেয়ে ফেলে পান করলে একেবারে নিঃশেষ করে ফেলে। আর শুতে গেলে একদম হাত পা শুটিয়ে রয়। আমার প্রতি হাত বাড়ায় না, যাতে আমার অবস্হা বুঝতে পারে। সপ্তম মহিলা বললো, আমার স্বামী নির্বোধ, অক্ষম ও বোবার মতা সব দোষই তার মধ্যে বিদ্যমান। চাইলে তোমার মাথায় আঘাত করবে অথবা অঙ্গে প্রহার করবে অথবা উভয়ই একত্রে সংঘটিত করবে। অষ্টম মহিলা বললো, আমার স্বামীর গন্ধ যারনাবের সুগন্ধির মতো, তার স্পর্শ খরগোশের মতো। নবম মহিলা বললো, আমার স্বামী এমন যার প্রাসা’দর খাম্বাগুলো সূউচ্চ, তরবারির খাপগুলো দীর্ঘ, বাড়ির আঙ্গিনায় অধিক ছাই। মজলিসের পাশে তার বাড়ি। দশম মহিলা বললো, আমার স্বামী মালিক। আর মালিক-এর কথা কি বলব, আমার এ প্রশংসার চেয়ে আরো শ্রেষ্ঠ সে। তার আছে অনেক উট, তাদের জন্য উটশালাও অনেক, তবে চারণভূমি কম। উটেরা যখন বাদ্য-বাজনার শব্দ শোনে, তখন নিজেদের যবেহের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পড়ে। একাদশ মহিলা বললো, আমার স্বামীর নাম আবূ যারা কি চমৎকার আবূ যারা-। অলংকার দিয়ে সে আমর দুকান ঝূলিয়ে দিয়েছে, বাহুদ্বয় ভরপূর করেছে চর্বিতে। আমাকে সম্মান দিয়েছে, আমিও নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি! সে আমাকে পাহাড়ের পাদদেশে ভেড়া ও বকরীওয়ালাদের মাঝে পেয়েছিলাম। এরপর সে আমাকে উট, ঘোড়া, জমি-জমা ও ফসলাদির অধিকারী বানিয়েছে। তার কাছে আমি কথা বললে সে তা ফেলে না। আমি ঘূমালে ভোর পর্যন্ত শুয়ে থাকি আর পান করলে তৃপ্তি অর্জন করি। আবূ যারা এর মা, কতই না ভালো আবূ যারা এর মা। তার সম্পদ কোষ বিরাট আকারের। তার কুঠুরি প্রশ্বস্ত। আবূ যারা-এর ছেলে, কত ভালো আবূ যারা-এর ছেলে, তার শয্যা যেন তরবারির খাপ। বকরির একটি হাতা খেয়েই সে তৃপ্তি বোধ করে। আবূ যারা-এর মেছো, কতই না ভালো আবূ যারা-এর মেয়ে। মা-বাবার অনুগত, পোশাকভরা শরীর, প্রতিবেশীর ঈর্ষার পাত্রী। আবূ যারা–এর বাদী, কত ভালো আবূ যারা-এর বাদী। আমাদের কথা প্রচার করে বেড়ায় না। আমাদের খাদ্য নষ্ট করে না, ঘর-বাড়ি আবর্জনা পূর্ণ রাখে না। উম্মে যারা বলেনঃ একদা আবূ যারা বাইরে বের হলেন। তখন আমাদের অবস্হা ছিল, বড় বড় দুধের পাত্র থেকে মাখন তোলা হতো। তখন এক মহিলার সাথে তার সাক্ষাত ঘটে। তার সাথে ছিলো দুটো শিশু। শিশু দুটো ছিল দুটি চিতার মত। তারা তার কোকের নীচ দিয়ে দুটি ডালিম নিয়ে খেলা করছিল। তখন আবূ যারা আমাকে তালাক দেয় এবং সে মহিলাকে বিয়ে করে। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে বিবাহ করলাম। সে ছিল সরদার, খুব ভালো ঘোড় সওয়ার ও বর্শা ধারণকারী। সে আমার আস্তাবলে বহু চতূষ্পদ জন্তু সমবেত করে। প্রত্যেক প্রকার থেকে সে আমাকে একেক জোড়া দান করে এবং সে আমাকে বলে, হে উম্মে যারা”! তুমি খাও এবং তোমার আপনজনকে দান কর। অতএব সে সামী আমায় যা কিছু দিয়েছে তার সব যদি জমা করি, তবু আবূ যারার-এর ছোট্ট একটি পাত্রের সমান হবে না। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ তোমার জন্য আমি উম্মে যারা- এর জন্য আবূ যারা-এর মতো। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রাঃ) থেকে উক্ত সনদে বর্ননা করেছেন।

৬০৮৬। আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইউনূস ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরের উপর থেকে বলতে শুনেছেন, হিশাম ইবনু মুগীরার ছেলেরা আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে যে, তাদের কন্যাকে আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তারা বিয়ে দিতে চায়। আমি তাদের অনুমতি দেব না, আমি তাদের দেব না। তবে যদি আলী ইবনু আবূ তালিব আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, তা ভিন্ন কথা। কেননা আমার মেয়ে আমারই একটা অংশ। যা তাকে বিষন্ন করে, তা আমাকেও বিষন্ন করে, তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তা কষ্ট দেয়।

৬০৮৭। আবূ মা-মার ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম বুযালী (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফাতিমা আমারই অঙ্গ, তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।

৬০৮৮। আহমদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ)-এর শাহাদতের পর ইয়াযীদ ইবনু মু-আবিয়া (রাঃ)-এর কাছ থেকে তারা যখন মদিনায় এলেন, মিসওয়ার ইবনু মাখরামা তখন ডাঁর সাথে দেখা করলেন এবং তাকে বললেন আপনার কোন প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলবেন। আমি বললাম, না। মিসওয়ার বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারিখানা কি আপনি আমাকে দান করবেন? কারণ আমার ভয় হয় যে, আপনার লোকেরা এটি আপনার কাছ থেকে কবজা করে নিবে। আল্লাহর কসম, আপনি যদি সে তরবারিটি আমাকে দিয়ে দেন তাহলে যতক্ষন আমার প্রাণ থাকে- এটি কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। (মিসওয়ার আরো বলেনঃ) ফাতিমার জীবিত থাকাকালে আলী (রাঃ) আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রন্তাব দিয়েছিলেন। তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ বিষয় নিয়ে লোকদের সামনে এ মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে শুনেছি। আমি সে সময় সদ্য বালিগ বয়সের। তখন তিনি বললেন, ফাতিমা আমারই অঙ্গ। আমার ভয় হচ্ছে, সে তার দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনায় না পতিত হয়। অতঃপর তিনি আবদ ই-শামস গোত্রীয় তাঁর জামাতার আলোচনা করলেন তার আত্নীয়তার সুন্দর প্রশংসা করলেন, এবং বললেন, সে আমায় যা বলেছে সত্য বলেছে, সে অংগীকার করেছে, আর আমি কোন হালালকে হারাম করি না বা হারামকে হালাল করি না। তবে আল্লাহর কসম, আল্লাহর রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কখনো এক জায়গায় একত্রিত হতে পারে না।

৬০৮৯। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল রহমান দারিমী (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তনয়া ফাতিমাকে ঘরে রেখেই আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন এ খবর শুনলেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের ব্যাপারে রাগ প্রকাশ করেন না। আর এই যে আলী (রাঃ) আবূ জাহলের মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। এ সময় আমি শুনলাম তিনি তাশাহুদ পড়লেন এবং বললেনঃ আমি আবূল আস ইবনুল রাবীর কাছে বিয়ে দিয়েছি, সে আমাকে যা বলেছে, তা সত্য পরিণত করেছে। আর মুহাম্মাদ তনয়া ফাতিমা আমারই একটা টূক্বরা, আমি পছন্দ করি না যে, লোকে তাকে ফিতনায় ফেলূক। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূলের মেয়ে ও আল্লাহর দুশমনের মেয়ে কোন ব্যাক্তির কাছে কখনো একত্রিত হতে পারে না। মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, এরপর আলী (রাঃ) প্রস্তাব ছেড়ে দেন। আবূ মাআন রাক্কাশী (রাঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৬০৯০। মানসূর ইবনু আবূ মুযাহিম ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে ডেকে চুপি চুপি কিছু বললেন। তখন তিনি কাদলেন। আবার চুপে চুপে তিনি কিছু বললেন। তখন তিনি হেসে ফেললেন। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ আমি ফাতিমাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে চুপেচুপে কি বললেন যে, কেঁদে ফেললে এবং তারপর কি বললেন যে, তুমি হেসে ফেললে? ফাতিমা বললেন চুপে চুপে তিনি আমাকে তাঁর মৃত্যু সংবাদ দিলেন, তাই আমি কাঁদলাম। এরপর চুপি চুপি তিনি বললেন, তাঁর পরিজনদের মধ্যে সর্বপ্রথম তার পেছনে যাবো আমি, তাই হাসলাম।

৬০৯১। আবূ কামিল জাহদারী ফূযায়ল ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিবিরা সকলেই তার কাছে ছিলেন, তাদের মধ্যে কেউ বাদ ছিলেন না। এমন সময় ফাতিমা (রাঃ) এলেন। তাঁর চলার ভঙ্গি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চলার ভঙ্গি থেকে একটুও পৃথক ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁকে দেখলেন তখন তিনি এ বলে খোশ আমদেদ জানালেন মারহাবা, হে আমার স্নেহের কন্যা! এরপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপে চুপে কিছু বললেন। এতে তিনি খুব কাঁদলেন। যখন তিনি তাঁর অস্হিরতা দেখলেন, তিনি পুনরায় তাঁর সাথে চুপেচুপে কিছু বললেন, তখন তিনি হেসে দিলেন। আমি তাঁকে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীগণের মধ্যে (কাউকে না বলে) তোমার সঙ্গে বিশেষভাবে কোন গোপন কথা বলেছেন। আবার তুমি কাঁদছো? অতঃপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে গেলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে কি বলেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন কথা প্রকাশ করবো না। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হয়ে গেলো, তখন আমি তার উপর আমার অধিকারের শপথ দিয়ে বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছেন, অবশ্যই আমাকে বলতে হবে। তিনি বললেন, আচ্ছা। এখন তবে, হ্যা। প্রথমবার তিনি আমাকে গোপনে বললেনঃ জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছর একবার কি দু-বার আমাকে কুরাআন পূনরাবৃত্তি করান। এ বছর তিনি দু-বার পূনরাবৃত্তি করালেন। আমার মনে হয় আমার সময় কাছে এসে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। কেননা আমি তোমার জন্য কত উত্তম পূর্বসূরী। তখন আমি কঁদলাম যা আপনি দেখেছেন। এরপর আমার অস্হিরতা দেখে তিনি দ্বিতীয়বার চুপি চুপি বললেন, হে ফাতিমা! মুমিন রমনীদের প্রধান ও এ উম্মাতের সকল মহিলাদের সরদার হওয়া কি তুমি পছন্দ কর না? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, তখন আমি হাসলাম। আমার যে হাসি আপনি দেখেছেন।

৬০৯২। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সকল বিবি একত্রিত হলেন। তাঁদের মধ্যে একজনও বাদ রইলেন না। তখন ফাতিমা (রাঃ) হেঁটে আসলেন। তার হাটার ভঙ্গী যেন একেবারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চলার মত। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ হে মেয়ে আমার! অতঃপর তাকে তাঁর ডানদিকে কিংবা তাঁর বামদিকে বসালেন এবং চুপি চুপি কিছু কথা বললেনঃ এতে ফাতিমা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। তারপর তিনি তাঁকে চুপি চুপি আবার কিছু বললেন, এতে তিনি হাসলেন। আমি তাঁকে বললাম, কিসে তোমাকে কাদালো? তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন কথা ফাস করতে পারি না। আমি বললাম আমি আজকের মতো কোন আনন্দকে বেদনার এতো নিকটবর্তী দেখি নি। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ছেড়ে তোমাকে তাঁর কথা বলার জন্য বিশেষত্ব দান করলেন। আর তুমি কাঁদছো? আবার তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলেছেন:তা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন কথা প্রকাশ করতে পারি না। অবশেষে যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছর একবার তাঁর সঙ্গে কুরআন আবৃতি করতেন। আর এ বছর তিনি তাঁর সঙ্গে দু-বার আবৃতি করেছেন। এতে আমার মনে হয় নিশ্চয়ই মৃত্যু আমার নিকটবর্তী। আর তুমিই আমার পরিজনদের মাঝে সর্বপ্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হবে। তোমার জন্য আমি কতই না উত্তম অগ্রগামী। তখন আমি কেঁদেছি। -এরপর তিনি আমাকে চুপ চুপি বললেন, তুমি ঈমানদার মহিলাদের প্রধান অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের সরদার হওয়া কি পছন্দ কর না? একথা শুনে আমি হেসেছি।

৬০৯৩। আব্দুল আলা ইবনু হাম্মাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ-লা কায়সী (রহঃ) সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। বলেনঃ যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে বাজারে প্রবেশকারীদের মধ্যে তুমি প্রথম হয়ো না এবং তথা হতে বহির্গমণকারীদের মধ্যে তুমি শেষ ব্যক্তি হয়ো না। বাজার হলো শয়তানের আড্ডাখানা। আর তথায়ই সে তার ঝান্ডা উত্তোলন করে রাখে। সালমান (রাঃ) বলেনঃ আমাকে এ খবরও দেওয়া হয়েছে যে, জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এলেন। তখন তাঁর পাশে উম্মে সালামা (রাঃ) ছিলেন। রাবী বলেনঃ অতঃপর জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথা বলতে লাগলেন এবং পরে চলে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে ছিলেন? বা এরুপ কথা বললেন। উম্মে সালামা (রাঃ) উত্তর দিলেন, দাহইয়া কালবী। তিনি বলেনঃ উলে সালামা (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে দাহইয়া কালবী বলেই ধারণা করেছিলাম। যতক্ষন না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ভাষণ শুনলাম। তিনি আমাদের কথা বলছিলেন অথবা এরুপ বলেছিলেন। অর্থাৎ জিবরাঈলের আগমনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি রাবী আবূ উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি এ হাদীস কার মাধ্যমে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে।

৬০৯৪। মাহমুদ ইবনু গায়লান আবূ আহমদ (রহঃ) উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাথে মিলিত হবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা। সুতরাং সব বিবিরা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ অবশেষে আমাদের মধ্যে যয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা বলে স্হির হল। কারণ তিনি হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।

৬০৯৫। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে আয়মানের কাছে গেলেন। আমিও তাঁর সংগে গেলাম। তিনি তাঁর দিকে একটি শরবতের পাত্র এগিয়ে দিলেন। তিনি বলেনঃ আমি জানি না যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম পালন করছিলেন, না এমনই তা ফিরিয়ে দিলেন। উম্মে আয়মান (রাঃ) এতে চীৎকার করে উঠলেন এবং তাঁর উপর রাগ প্রকাশ করতে লাগলেন।

৬০৯৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাতের পর আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে বললেন, চলো উম্মে আয়মানের কাছে যাই, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাবো যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাক্ষাতে যেতেন। যখন আমরা তার কাছে গেলাম, তখন তিনি কাদতে লাগলেন। তাঁরা দুজন বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ তালার কাছে যা কিছু রয়েছে তা তাঁর রাসুলের জন্য বেশি উত্তম। উম্মে আয়মান (রাঃ) বললেন, এজন্য আমি কাদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জন্য উত্তম; বরং এ জন্য আমি কাদছি যে, আসমান থেকে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেলো। উম্মে আয়মানের এ কথা তাঁদের মধ্যেও কান্নার আবেগ সৃষ্টি করল। সুতরাং তারাও তার সাথে কাঁদতে লাগলেন।

৬০৯৭। হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন বিবিদের ছাড়া অন্য কোন মহিলার বাড়িতে প্রবেশ করতেন না। কিন্তু উম্মু সুলায়মের কাছে যেতেন। লোকেরা’এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এর উপর আমার বড় করুণা হয়। আমার সংগে থেকে তার ভাই নিহত হয়েছে।

৬০৯৮। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি জান্নাতে গেলাম, সেখানে আমি কারও চলার শব্দ পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কে? লোকেরা বললো, তিনি শুমায়সা বিনত মিলহান (রাঃ), আনাস ইবনু মালিকের মা।

৬০৯৯। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু ফারাজ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে জান্নাত দেখানো হয়েছে যে, আমি আবূ তালহার স্ত্রীকে দেখলাম। অতঃপর আমার সামনে পদধ্বনি শুনতে পেলাম তাকিয়ে দেখি বিলাল।

৬১০০। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম ইবনু মায়মূন (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ তালহার ঔরষ জাত উম্মু সুলায়মের ছেলে মারা গেলো। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার পরিবারে লোকদের বললো, আবূ তালহাকে তাঁর ছেলের খবর দিও না, যতক্ষন আমি না বলি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) এলেন। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রাতের খানা সামনে আনলে তিনি পানাহার করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম ভালোমতো সাজগোজ করলেন। আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর সাথে মিলিত হলেন। যখন উস্মু সুলায়ম (রাঃ) দেখলেন যে, তিনি মিলনে পরিতৃপ্ত, তখন তাঁকে বললেন, হে আবূ তালহা! কেউ যদি কাউকে কোন জিনিস রাখতে দেয়, এরপর তা নিয়ে নেয়, তবে কি সে তা ফিরাতে পারে? আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, না। উম্মে সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আমি তোমার ছেলের মৃত্যু সংবাদ দিচ্ছি। আবূ তালহা (রাঃ) রেগে গিয়ে বললেন, তুমি আমাকে আগে বল নি, আর এখন আমি অপবিত্র, এখন খবরটা দিলে? তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গিয়ে খবরটা দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমাদের বিগত রাতটিতে আল্লাহ তা-আনা বরকত দিন, উযু সূলায়ম অন্তসত্তা হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ছিলেন। উম্মু সূলায়মও এ সফরে ছিলেন। তিনি যখন সফর থেকে ফিরতেন, তখন রাতের বেলা মদিনায় প্রবেশ করতেন না। লোকেরা যখন মদিনার কাছে পৌছলো তখন উম্মু সুলায়মের প্রসব বেদনা শুরু হচ্ছেন। আবূ তালহা (রাঃ) তাঁর কাছে রয়ে গেলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে পরোয়ারদিগার তুমি তো জানো যে, তোমার রাসূলের সাথে বের হতে আমার ভাল লাগে যখন তিনি বের হন, আর তাঁর সাথে যেতে আমার ভালো লাগে যখন তিনি যান। কিন্তু তুমি জানো কেন আমি থেকে গিয়েছি। রাবী বলেনঃ উম্মূ সূলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আবূ তালহা! আগের মতো বেদনা আমার নেই। চলূন আমরা চলে যাই। স্বামী-স্ত্রী মদিনায় পৌছলে উম্মু সূলায়মের বেদনা পূনরায় শুরু হলো। আর তিনি একটি শিশু পুত্র প্রসব করলেন। আমার মা বললেন, হে আনাস! শিশুটিকে যেন কেউ দুধপান না করায় যতক্ষন তুমি তাকে ভোরবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাও। সকাল হলে আমি শিশুটিকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে গেলাম। আমি দেখলাম তাঁর হাতে উট দাগানোর যন্ত্র। আমাকে যখন তিনি দেখলেন, বললেন, সম্ভবত উম্মু সূলায়ম এ ছেলেটি প্রসব করেছে। আমি বললাম, হ্যা। বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি সে যন্ত্রটি হাত থেকে রেখে দিলেন। আমি শিশুটিকে নিয়ে তার কোলে রাখলাম। তিনি মদিনার আজওয়া খেজুর আনালেন এবং নিজের মুখে দিয়ে চিবুলেন। যখন খেজুর গলে গেল, তখন শিশুটির মুখে দিলেন। শিশুটি তা চুষতে লাগলো। তিনি বললেন, দেখো আনসারদের খেজুর প্রীতি। পরে তিনি শিশুর মুখে হাত বুলালেন এবং এর নাম রাখলেন আবদুল্লাহ।

৬১০১। আহমদ ইবনু হাসান ইবনু খারাশ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ তালহার একটি ছেলে মারা গেল এর পরের অংশ উল্লেখিত হাদীসের অনুরুপ।

৬১০২। উবায়দ ইবনু ইয়াইশ, মুহাম্মদ ইবনু আলা হামদানী ও মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভোরের সালাতের সময় বিলাল (রাঃ)-কে বলেনঃ হে বিলাল! তুমি আমাকে বল, ইসলামের পর তুমি এমন কোন আমল করেছ যার উপকারের ব্যাপারে তুমি বেশি আশাবাদী। কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি। বর্ণনাকারী বলেনঃ বিলাল বলেনঃ ইসলামের মধ্যে এর চেয়ে বেশি লাভের আশা আমি অন্য কোন আমলে করতে পারি না যে, আমি দিনে বা রাতে যখনই পূর্ণ উযূ (ওজু/অজু/অযু) করি, তখনই আল্লাহ তা-আলা আমার ভাগ্যে যতক্ষন লিখেছেন, ততক্ষন ঐ উযু দিয়ে সালাত আদায় করে থাকি।

৬১০৩। মিনজাব ইবনু হারিস তায়মী, সাহল ইবনু উসমান, আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু যুরারাহ হাজরামী, সুয়ায়দ ইবনু সাঈদ ও ওয়ালীদ ইবনু শুজা- (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যখন এ-আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের রক্ষিত বস্তুর মধ্যে কোন অসুবিধা নেই যখন তারা আল্লাহকে ভয় করে এবং ঈমানদার হয়” শেষ পর্যন্ত (৫- ৯৩), রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাকে বললেন, “আমাকে বলা হয়েছে যে, তুমিও এদের অন্তর্ভুক্ত।”

৬১০৪। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি এবং আমার ভাই ইয়েমেন থেকে এলাম। আমরা দীর্ঘদিন থাকার পর ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও তার মাকে রাসুল পরিবারেরই লোক বলে মনে করেছি। কেননা তারা রাসুলের কাছে খুব যাওয়া-আসা করতেন এবং সংগে থাকতেন। মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি এবং আমার ভাই ইয়েমেন থেকে এলাম পরবর্তী অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরুপ।

৬১০৫। যুহায়র ইবনু হারব, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে এলাম আমার ধারণা ছিল যে, আবদুল্লাহ তাঁরই পরিজনের অন্তভুক্ত অথবা তিনি অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১০৬। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এর ইন্তেকালের সময় আমি আবূ মাসউদ ও আবূ মূসার পাশে ছিলাম। তাঁরা একজন আরেকজনকে বললেন, আপনার কি মনে হয়, তাঁর পর তার মতো আর কাউকে কি রেখে গেছেন? অন্যজন বললেন, তুমি এ কথা বলছো, তার অবস্হাই ছিলো এ রকম যে, [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রবেশের ব্যাপারে] আমাদের বাধা দেওয়া হতো, আর তাকে অনুমতি দেওয়া হতো; আমরা অনুপস্হিত থাকতাম, আর সে উপস্থিত থাকতো।

৬১০৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবূ মূসা (রাঃ)-এর বাড়িতে ছিলাম। আবদুল্লাহ কতিপয় সাহাবীর সংগে তাঁরা একটি কুরআন শরীফ দেখছিলেন। আবদুল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন। তখন আবূ মাসউদ বললেন, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব সম্পর্কে দন্ডায়মান ব্যক্তির চেয়ে বেশি পরিজ্ঞাত কোন মানুষ তাঁর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গেছেন বলে আমি জানি না। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আপনি যদি এ কথা বলেনঃ তবে তার কারণ, তাঁর অবস্হা এ ছিল যে, যখন আমরা অনুপস্হিত থাকতাম, তখন সে থাকতো উপস্থিত; আর আমাদের যখন বাধা দেওয়া হতো, তখন তাঁকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হতো।

৬১০৮। কাসিম ইবনু যাকারিয়া (রহঃ) আবূল আহওয়াস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি আবূ মূসার কাছে এলাম। তখন আবদুল্লাহ ও আবূ মূসাকে পেলাম আবূ কুরায়ব যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি হুযায়ফা ও আবূ মূসার সংগে বসা ছিলাম। এরপর হাদীসের বাকী অংশ বর্ণনা করেছেন এবং কুতায়বা বর্ণিত হাদীস পূর্ণ ও অধিক নির্ভরযোগ্য।

৬১০৯। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আর যে ব্যক্তি কোন কিছু গোপন করবে, কিয়ামতের দিন তা নিয়ে সে উঠবে।” অতঃপর বললেন, তোমরা আমাকে কার মতো কিরা-আত পড়ার কথা বল? আমি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সামনে সত্তরের ঊধের্ব সুরা পড়েছি। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ জানেন যে, আমি তাঁদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। আমি যদি জানতাম যে, আর কেউ আমার চেয়ে বেশি কুরআন জানে, তবে আমি তার দিকে সফর করে যেতাম। শাকীক (রহঃ) বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের বিভিন্ন মজলিসে বসেছি। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের এ বক্তব্যকে রদ করতে কাউকে শুনি নি এবং তার উপর অভিযোগ আনতেও শুনি নি।

৬১১০। আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তার শপথ! আল্লাহর কিতাবে এমন কোন সূরা নেই যার অবতীর্ণ হওয়ার স্হান সম্পর্কে আমীনা জানি, এমন কোন আয়াত নেই যার অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমি না জানি। আমি যদি এমন কোন ব্যক্তিকে জানতাম যিনি। আমার চেয়েও বেশি কুরআন জানেন, আর তার কাছে উট যেতে পারে, তবে আমি তার কাছে সওয়ার হয়ে রওয়ানা দিতাম।

৬১১১। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমরের কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতাম। একদিন আমরা আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের উল্লেখ করলাম, তিনি বললেন, তোমরা এমন এক ব্যক্তির উল্লেখ করেছ, যাকে এ হাদীসে শোনার পর থেকে আমি ভালোবেসে আসছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, তোমরা চারজনের কাছে কুরআন শিখ। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব প্রথম আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ করেন; মুয়ায ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব ও আবূ হুযায়ফার ক্রীতদাস সালিমের কাছ থেকে।

৬১১২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মাসরীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন আমরা ইবনু মাসউদ (রাঃ)-এর একটি হাদীসের উল্লেখ করি। এ সময় আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বললেন, ইনি ঐ ব্যক্তি যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একটি কথা শোনার পর থেকে ভালোবেসে আসছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যক্তির কাছ থেকে কুরআন পড়। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ তাঁর নামই প্রথমে বললেন এবং উবাই ইবনু কা’ব, সালিম –আবূ হুযায়ফার ক্রীতদাস ও মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ)। আর একটি অক্ষর যা যুহায়র ইবনু হারব উল্লেখ করেননি, ওটা হলো তার কথা যে, তিনি ওটা বলেছেন।

৬১১৩। আবূ বকর ইবনু শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে জারীর ও ওয়াকীর সনদে আবূ মুআবিয়া থেকে আবূ বকর বর্নিত রিওয়াতে মুয়ায (রাঃ)- কে উবাইয়ের পুর্বে আনা হয়েছে। আর আবূ কুরায়বের বর্ণনায় উবাই-এর নাম মুয়ায (রাঃ)-এর আগে।

৬১১৪। ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার ও বিশর ইবনু খালিদ (রহঃ) আমাশ (রহঃ) থেকে তাঁদের সনদে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে ও-বার সুত্রে চারজনের ধারাবাহীকতায় বিরোধ রয়েছে।

৬১১৫। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) মাসরুক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তাঁরা ইবনু আমর (রহঃ)-এর সামনে আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের আলোচনা করলে তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ কথা শোনার পর থেকে আমি ঐ লোকটিকে ভালোবেসে আসছিঃ চারজনের কাছ থেকে তোমরা কুরআন পড়, ইবনু মাসউদ,আবূ হুযায়ফার আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব ও মুয়ায ইবনু জাবাল (রাঃ)।

৬১১৬। উবায়দুল্লাহ ইবনু মুআয তার পিতা মু’আয (রাঃ) থেকে শুবা সুত্রে উক্ত সনদে বর্ণনা করেন। মুয়ায (রাঃ) অতিরিক্ত বলেছেন “এ দু-জনকে দিয়ে শুরু করা হয়েছে, কিন্তু কার নাম প্রথমে, তা আমি জানি না।”

৬১১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগেই চারজন কুরআন সংকলন করেছেন। ঐদের সবাই আনসার। মুয়ায ইবনু জাবাল, উবাই ইবনু কা’ব, যায়দ ইবনু সাবিত ও আবূ যায়িদ (রাঃ)। কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাসকে জিজ্ঞাসা করলাম,আবূ যায়দ কে? তিনি বললেন আমার চাচাঁদের মধ্যে একজন।

৬১১৮। আবূ দাঊদ সুলায়মান ইবনু মা’বাদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে কে কুরআন একত্রিত করেছিলেন? তিনি বললেন, চারজন, ঐদের সবাই আনসারা উবাই ইবনু কা’ব, মুয়ায ইবনু জাবাল, যায়দ ইবনু সাবিত ও আনসারদের মধ্যে একজন তাঁর কুনিয়াত আবূ যাহাদ (রাঃ)।

৬১১৯। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাইকে বললেন, তোমাকে কুরআন পড়ে শোনানোর জন্যে আল্লাহ জন্য আমাকে আদেশ করেছেন। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা কি আপনার কাছে আমার নাম নিয়ে বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যা, আল্লাহই আমার কাছে তোমার নাম নিয়েছেন। এতে উবাই (রাঃ) কাঁদতে আরম্ভ করলেন।

৬১২০। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনু কাব (রাঃ)-কে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ করেছেন, তোমাকে ‘লাম ইয়াকুনিল্লাজ্বীনা কাফারু’ পড়ে শোনাবার জন্য। উবাই (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা-আলা কি আমার নাম নিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যা। আনাস (রাঃ) বলেনঃ উবাই (রাঃ) তখন কেঁদে ফেললেন। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আনাসকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাইকে অরেপ কথা বলেছেন।

৬১২১। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন সা’দ ইবনু মুয়ায (রাঃ)-এর জানাযা সামনে রাখা হয়েছিলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার জন্যে দয়ালূ আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে।

৬১২২। আমরুন-নাকিদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মান ইবনু মুয়াযের মৃত্যুতে দয়ালু আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে।

৬১২৩। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ রাযযী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যখন মুআযের জানাযা রাখা ছিল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার জন্য দয়ালূ আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে।

৬১২৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) বারাআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এক জোড়া রেশমী পোশাক হাদিয়া দেওয়া হল। সাহাবারা তখন তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় আশ্চর্যবোধ করতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এ কোমলতায় আশ্চর্যাম্বিত হচ্ছো? জান্নাতের মধ্যে সা’দ ইবনু মুআয এর রুমালগুলো হবে এর চেয়েও উত্তম ও মোলায়েম।

৬১২৫। আহমদ ইবনু আবদাহ দাব্বী (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রেশমী বস্ত্র দেওয়া হলো তারপর তিনি পুর্ববর্তী হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। ইবনু আবদাহ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকেও অনুরুপ হাদীসে বর্ণনা করেছেন।

৬১২৬। মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু জাবাল (রহঃ) শুবা (রহঃ) থেকে এ দুটো সনদেই আবূ দাউদের মতো বর্ণনা করেন।

৬১২৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিহি রেশমের একটি জোব্বা হাদিয়া দেওয়া হলো। অবশ্য নাবীরেশম পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা এতে আশ্চর্যাম্বিত হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার কবজায় মুহাম্মদের জীবন, তাঁর কসম! জান্নাতে সা’দ ইবনু মূআযের রুমালগুলো এর চেয়েও উৎকৃষ্ট।

৬১২৮। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, দাওমাতুল জান্দালের বাদশাহ উকায়দির রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে একজোড়া পোশাক উপহার পাঠালো তারপর তিনি অনুরুপ বর্ণনা করলেন। তবে এতে তিনি রেশম পরতে নিষেধ করতেন একটি উল্লেখ করেননি।

৬১২৯। আবূ ববহর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্বের দিন একটি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন এটা আমার কাছ থেকে কে গ্রহণ করবে? তখন তাঁদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তই হাত বাড়িয়ে বলতে লাগল, আমি, আমি। তিনি বললেন, এর হক আদায় করে কে গ্রহণ করবে? এ কথা শুনেই লোকজন দমে গেল। তখন সিমাক ইবনু খারাশাহ আবূ দুজনাহ (রাঃ) বললেন, আমি এটির হক আদায় করার অঙ্গীকার গ্রহণ করব। রাবী বলেনঃ অতঃপর তিনি এটি নিয়ে নিলেন আর এ দ্বারা মুশরিকদের মাথার খুলি বিদীর্ণ করলেন।

৬১৩০। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর আল কাওয়ারীরী ও আমর নাকিদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ওহুদ যুদ্ধের দিন আমার পিতাকে কাপড়ে আবৃত করে আনা হলো, তার কান-নাক, হাত-পা কেটে ফেলা হয়েছে। আমি তার কাপড় সরাতে চাইলে লোকেরা আমায় নিষেধ করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় সরালেন অথবা তিনি সরানোর আদেশ দেওয়ায় সরানো হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ক্রন্দসী রমনীর আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? লোকেরা বললো, আমরের মেয়ে অথবা আমরের বোন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কাদছো কেন? উঠিয়ে নেওয়া পর্যন্ত ফিরিশতারা পাখা মেলে তাকে ছায়া দিয়েছে।

৬১৩১। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা ওহুদের দিন শহীদ হলেন, আমি তাঁর মুখ থেকে কাপড় সরাই আর কাদি। লোকেরা আমাকে বারণ করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিষেধ করেননি। আর আমরের মেয়ে ফাতিমাও তার জন্য কাঁদতে থাকলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি কাঁদো আর নাই কাদো, ফিরিশতা তার উপর আপন পাখার ছায়া বিস্তার করে রয়েছে, যতক্ষন না তোমরা তাকে উঠিয়ে নাও।

৬১৩২। আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) জাবির (রাঃ) সুত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে জুরায়েজের বর্ণনায় ফিরিশতা ও ক্রন্দসীর কান্নার উল্লেখ নেই।

৬১৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালফ (রাঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে বস্ত্রাবৃত অবস্হায় আনা হলো এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সম্মুখে রাখা হল অতঃপর তাদের অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেন।

৬১৩৪। ইসহাক ইবনু আমর ইবনু সালীত (রহঃ) আবূ বারযাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জিহাদে ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে গনীমতের সম্পদ দিলেন। তিনি তার সাহাবাদের বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, হাঁ, অমুক, অমূক ও অমুককে। তিনি বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, হা, অমুক, অমুক এবং অমুককে। তিনি আবার বললেন, তোমরা কি কাউকে হারিয়েছ? লোকেরা বললো, জি-না। তিনি বললেন, কিস্তু আমি জুলায়বীবকে হারিয়েছি। তোমরা তাঁকে খোঁজ কর। তখন নিযেদের মধ্যে তাকে খোঁজ করা হল। এরপর তারা সাতটা লাশের পাশে তাকে পেলো। তিনি এই সাতজনকে হত্যা করেছিলেন। এরপর দুশমনরা তাকে হত্যা করে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এলেন এবং ওখানে দাঁড়িয়ে বললেন, সে সাতজন হত্যা করেছে; এরপর দুশমনরা তাঁকে হত্যা করে। সে আমার আর আমিও তার। সে আমার আর আমি তাঁর। অতঃপর তিনি তাঁকে দুঁবাহুব উপর তুলে ধরলেন। একমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাহুই তাঁকে বহন করছিল। তাঁর কবর খোঁড়া হল এবং তাকে তার কবরে রাখলেন। বর্ণনাকারী তাঁর গোসলের উল্লেখ করেননি।

৬১৩৫। হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমাদের গিফার গোত্র থেকে বের হলাম। তারা হারাম মাসগুলোকে হালাল গণ্য করত। আমি আমার ভাই উনায়স এবং আমাদের মা সহ বের হলাম এবং আমরা আমাদের এক মামার কাছে উঠলাম। আমাদের মামা খুব সম্মান দেখালেন এবং আমাদের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করলেন। এতে তাঁর গোত্রের লোকেরা আমাদের প্রতি হিংসা করতে লাগল। তারা বলল, তুমি যখন তোমার পরিবার থেকে বের হও তখন উনায়স (রাঃ) তোমার অনুপস্হিতিতে তাদের কাছে যাতায়াত করে। এরপর আমাদের মামা আসলেন এবং তাকে যা বলা হয়েছে তিনি তা আমাদের নিকট প্রকাশ করে দিলেন। তখন আমি বললাম আপনি আমাদের সাথে অতীতে যে সদ্ব্যবহার করেছেন তাকে ম্লান করে দিলেন। এরপর আপনার সঙ্গে আমাদের একত্রে থাকার অবকাশ নেই। তারপর আমরা আমাদের উটগুলোকে নিকটবর্তী করলাম এবং তাদের উপর আরোহণ করলাম। তখন আমাদের মামা তাঁর কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে কাঁদতে শুরু করলেন। আমরা রওনা হয়ে মক্কার নিকটে অবতরণ করলাম। উনায়স আমাদের পশুগুলো এবং সে পরিমাণ পশুরু মধ্যে বাজি ধরল। তারপর তারা উভয়ে এক গণকের কাছে গেল। গণক উনায়সকে শ্রেন্ঠ বলে ঘোষণা করল। এরপর উনায়স আমাদের উটগুলো এবং তার সমপরিমাণ উট নিয়ে আমাদের নিকট ফিরে এল। আবূ যার (রাঃ) বললেন, হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাতের তিন বছর পূর্বে সালাত আদায় করেছি। আমি (রাবী) বললাম, কার জন্যে? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্যে। আমি (রাবী) “ বললাম, কোন দিকে মুখ ফিরাতেন? তিনি বললেন, আমার মহান প্রতিপালক যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সে দিকে মুখ ফিরাতাম। আমি ইশা-র সালাত আদায় করতে করতে রাতের শেষ অংশে নিদ্রার চাঁদরে ঢলে পড়তাম, যতক্ষননা সূর্য আমার উপর পড়ত। তারপর উনায়স (রাঃ) বললেন, মক্কায় আমার একটু প্রয়োজন আছে। কাজেই আপনি আমার সংসার তত্ত্বাবধান করবেন। তারপর উনায়স (রাঃ) চলে গেল এবং মক্কায় পৌছলো এবং সে বিলম্বে আমার কাছে ফিরে এল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী করলে? সে বলল, আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ লাভ করেছি, যে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি দাবী করেন যে, আল্লাহতাকে (রাসুল হিসেবে) প্রেরণ করেছেন। [আমি আবূ যার (রাঃ)] বললাম, লোকেরা তাঁর সম্পর্কে কী বলে সে বলল, তারা তাঁকে কবি, গণক ও যাদুকর বলে। উনায়স (রাঃ) নিজেও একজন কবি ছিল। উনায়স (রাঃ) বলল, আমি অনেক গণকের কথা শুনেছি; কিন্তু ঐ ব্যক্তির কথা গণ-কের মত নয়। আমি তাঁর বাক্যকে কবিদের রচনার সাথে তুলনা করে দেখেছি; কিন্তু কোন কবির ভাষার সাথে তার কোন মিল নেই। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তিনি সত্যবাদী এবং ওরা মিথ্যাবাদী। তিনি বললেন, আমি বললাম, তুমি আমার সংসার দেখাশোনা কর এবং আমি গিয়ে একটু দেখে নই। তিনি বললেন, আমি মক্কায় এলাম এবং তাদের এক দুর্বল ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললাম, সে ব্যক্তি কোথায়, যাকে তোমরা সাবী (বিধর্মী) বলে ডাক? সে আমার প্রতি ইশারা করল এবং বলল, এই সাবী। এরপর মক্কা উপত্যকার লোকের! টিল ও হাড়সহ আমার উপর চড়াও হল, এমন কি আমি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলাম। তিনি বললেন, আমি যখন উঠলম তখন লাল মূর্তির (অর্থাৎ রক্তে রঞ্জিত) অবস্থায় উঠলাম। তিনি বলেন, এরপর আমি যমযম কুপের কাছে এসে আমার রক্ত ধুয়ে নিলাম। এরপর তার পানি পান করলামা হে ভ্রাতুষ্পূত্র! আমি সেখানে ত্রিশ রাত্র-দিন অবস্হান করেছিলাম। সে সময় যমযমের পানি ছাড়া আমার কাছে কোন খাদ্য ছিলনা। অতঃপর আমি স্থুলদেহী হয়ে গেলাম। এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়ে গেল। আমি আমার অন্তরে খুধার কষ্ট অনুভব করিনি। তিনি বললেন, ইতিমধ্যে মক্কাবাসীরা যখন এক উজ্জল চাঁদনী রাতে ঘুমিয়ে পড়ল, তখন কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিল না। সে সময় তাদের মধ্য থেকে দুজন মহিলা ইসাফ ও নায়েলাকে (১)ডাকাছিল। তিনি বললেন, তারা তাওয়াফ করতে করতে আমার কাছে এসে পড়ল। আমি বললাম, তাদের একজনকে অপরজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও। বললেন, তবু তারা তাদের কথা থেকে বিরত হল না। তিনি বলেন, তারা আবার আমার সম্মূখ দিয়ে এল। আমি (বিরক্ত হয়ে) বললাম, লজ্জাস্হল কাঠের মত। তিনি বললেন, আমি তাদের নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করিনি। এতে তারা অভিশাপ দিতে দিতে চলে গেল এবং বলতে লাগল- এখানে যদি আমাদের লোকদের কেউ থাকত (তাহলে এই বে-আদবকে শাস্তি দিত)! প্রতিমধ্যে এই দুই মহিলার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) এর সাক্ষাৎ হল। তখন তারা দু’জন নীচে (অর্থাৎ বাইরে থেকে কা’বা চত্বরে) অবতরন করছিলেন। তিনি তাদের দু’জনকে বললেন, তোমাদের কি হয়েছে? তারা বলল কা’বা ও তাঁর পর্দার মাঝখানে এক বিধর্মী অবস্থান করছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে তোমাদের কি বলেছে? তারা বলল, সে এমন কথা বলেছে যাতে মুখ ভোরে যায় (অর্থাৎ মুখে উচ্চারন করা সম্ভব নয়)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে তাঁর সঙ্গীসহ হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি তাঁর সালাত সমাপন করলেন [তখন আবূ যার (রাঃ) বললেন] আমিই প্রথম ব্যাক্তি, যে তাকে ইসলামী কায়দায় সালাম জানিয়ে বললাম, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ (হে আল্লাহর রাসুল, আপনার প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক)। উত্তরে তিনি বলেলেন, ওয়া আলায়কা ওয়া রাহমাতুল্লাহ (তোমার প্রতিও শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি গিফার গোত্রের লোক। তিনি বললেন, তখন তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন, এবং তাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো কপালে রাখলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, গিফার গোত্রের প্রতি আমার সম্পর্ককে তিনি অপছন্দ করছেন। এরপর আমি তাঁর হাত ধরতে চাইলাম। তাঁর সঙ্গী আমাকে বাঁধা দিলেন। তিনি তাকে আমার চাইতে অনেক বেশি ভালো জানতেন। তারপর তিনি মাথা তুলে তাকালেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কতদিন জাবত এখানে আছ? আমি বললাম, আমি এখানে ত্রিশটি রাতদিন অবস্থান করছি। তিনি বললেন, তোমাকে কে খাওয়াত? আমি বললাম, যমযম কুপের পানি ছাড়া আমার জন্য কোন খাদ্য ছিল না। এই পানি পান করেই আমি মোটাতাজা হয়ে গেছি, এমনকি আমার পেটের চামড়ায় ভাজ পড়েছে এবং আমি কখনো ক্ষুধা (জঠর জ্বালা) অনুভব করি নি। তিনি বললেন, তাতো বরকতময় এবং তা অনেক খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ খাবার। এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাঁর আজ রাতের খানার (মেহমানদারীর) জন্য আমাকে অনুমতি দিন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ) রওনা হলেন এবং আমিও তাদের সাথে চললাম। আবূ বকর (রাঃ) একটি দরজা খুললেন এবং আমাদের জন্য তিনি মুষ্টি ভোরে তায়েফের কিসমিস পরিবেশন করলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম খাদ্য যা সেখানে (মক্কায়) আমি খেলাম। তারপর যতদিন থাকার ততদিন রইলাম। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমাকে খেজুর গাছ সমৃদ্ধ একটি দেশের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আমার ধারনা সেটি ইয়াসরিব (মদিনার পূর্ব নাম) ছাড়া অন্য কোন স্থান নয়। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমার পক্ষ থেকে তোমার গোত্রের কাছে আমার পয়গাম পৌঁছিয়ে দিবে? হয়ত তোমার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তাদের উপকৃত করবেন এবং এদের (হিদায়াতের) কারনে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। এরপর আমি উনায়সের কাছে ফিরে এলাম। সে বলল, আপনি কি করেছেন? আমি বললাম, আমি তো ইসলাম গ্রহন করেছি এবং বিশ্বাস করেছি। সে (উনায়স) বলল, আপনার দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই। আমিও ইসলাম গ্রহন করেছি এবং বিশ্বাস করছি। এরপর আমরা উভয়ে মায়ের কাছে এলাম, তিনি বললেন, তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আমার কোন আপত্তি নেই, আমিও ইসলাম গ্রহন করলাম এবং বিশ্বাস করলাম। তারপর আমরা সাওয়ার হয়ে আমদের গিফার গোত্রের কাছে এলাম। তাদের অর্ধেক লোক ইসলাম গ্রহন কর এবং ঈমা ইবনু রাহাদা গিফারী তাদের ইমমত করেন। তিনি ছিলেন তাদের সর্দার। তাদের বাকী অর্ধেক বলল, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আসবেন তখন আমরা ইসলাম গ্রহন করব। পড়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাতে আসলেন এবং তাদের (গিফার গোত্রের) অবশিষ্ট অর্ধেক লোক ইসলামে দীক্ষিত হল। তারপর আসলাম গোত্রের লোকেরা এল, তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের ভাইয়েরা (মিত্রেরা) যার উপরে ইসলাম কবুল করছেন আমরাও তাদের মত ইসলাম গ্রহন করলাম। এভাবে তারাও ইসলামে দীক্ষিত হল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, গিফার গোত্রকে আল্লাহ্‌ তা’আলা মাগফিরাত দান করুন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ্‌ তা’আলা সালামাত (নিরাপত্তা) দান করুন। (১) ইসাফ ও নায়েলা নামে সাফা ও মারওযাতে দুটি মুর্তি ছিল। ইসাফ ছিল পুরুষ এবং নায়েলা স্ত্রী। মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল যে এরা উভয়ে হারামে যিনায় লিপ্ত হয়েছিল বলে শাস্তিস্বরূপ ওদের বিকৃত করে পাথরে ব্ধপান্তরিত করে দেওয়া হয়, কিন্তু তারা প্রতীমা হিসেবে এগুলির পৃজা করত।

৬১৩৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী (রহঃ) হুমায়দ ইবনু হিলাল (রাঃ) থেকে এই সনদে (রাবী) আবূ যার (রাঃ) – এর কথা “আমি বললাম, তুমি এখানে অবস্থান কর, আমি গিয়ে সে ব্যক্তিকে দেখে নই।” এরপরে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বললেন, আচ্ছা, তবে মক্কাবাসীদের ব্যপারে সতর্ক থাকবেন। তারা তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং কঠোর ও রুঢ় আচরণ করে।

৬১৩৭। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না আনাযী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) বলেছেন , হে ভ্রাতুষ্পুত্র! নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর আবির্ভাবের পূর্বে আমি দুই বছর সালাত আদায় করেছি। রাবী বললেন, আমি বললাম, আপনি কোন দিকে মুখ করতেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বললেন, আল্লাহ্‌ যে দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দিতেন সেদিকে। এরপর তিনি সুলায়মান ইবনু মুগীরা (রহঃ) – এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। আর তিনি হাদীসে বলেছেন, এরপর (কাব্য রচনায় শ্রেষ্ঠত্বের বাজি ধরেন) উভয়ে এক জ্যোতিষীর কাছে গেলেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বলেন, আমার ভাই উনায়স কবিতায় এই জ্যোতিষীর প্রশংসা করতে লাগল, অবশেষে প্রতিপক্ষের উপর জয়ী হল। রাবী বলেন, তারপর আমরা তার পশুগুলো নিলাম এবং আমাদের পশুগুলোর সাথে মিলিয়ে ফেললাম। তিনি তার হাদীসে আরও বলেছেন, তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। এরপর মাকামে ইবরাহীম এর পিছনে দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বলেন, আমি তাঁর [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] – এর নিকট এলাম এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তাঁকে ইসলামী নিয়মে সালাম করলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, আস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (হে আল্লাহর রাসূল আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক!)তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘ওয়া আলাইকাস সালাম’ (তোমার প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক)। তুমি কে? তার বর্ণিত হাদীসে আরও আছে যে, তারপর তিনি বললেন, তুমি এখানে কতদিন যাবৎ আছ? আমি বললাম, পনের (দিন) ধরে অবস্থান করছি। এই হাদীসে আরও আছে, তারপর আবূ বকর(রাঃ) বললেন , তাঁকে এক রাত্রির মেহমানদারীর সুযোগ আমাকে দিন।

৬১৩৮। ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা সামী ও-মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আবূ যার (রাঃ)-এর কাছে খবর পৌছল যে, মক্কায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন, তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি সওয়ারীতে আরোহণ করে সেই (মক্কা) উপত্যকায় যাও এবং সেই ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে জানাও, তিনি ধারণা করেন যে, আসমান থেকে তাঁর কাছে ওহী আসে। তাঁর কথা ভাল করে শুনবে এবং তারপর তুমি আমার কাছে আসবে। তখন অপর ব্যক্তি (তার ভাই) রওনা হয়ে মক্কা এল এবং তার কথা শুনল। তারপর সে আবূ যার (রাঃ)-এর কাছে ফিরে এল এবং সে বলল, আমি তাঁকে লক্ষ্য করেছি যে, তিনি উত্তম চরিত্রের নির্দেশ দেন এবং এমন বানী শোনান, যা কবিতা নয়। তখন তিনি (আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি যা চেয়েছি তা তুমি পূর্ণ করতে পারনি। তারপর তিনি পাথেয় জোগাড় করলেন এবং একটি পানি ভর্তি মশক নিলেন। অবশেষে মক্কায় পৌছলেন তিনি মসজিদে এলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে চিনতে পারলেন না। আর তাঁর সম্পর্কে (কারও কাছে) জিজ্ঞাসা করাও অপছন্দ করলেন। অবশেষে রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পরলেন। তখন আলী (রাঃ) তাকে দেখলেন এবং তিনি বুঝতে পারলেন যে ইনি একজন আগন্তুক। যখন তিনি তাকে দেখলেন (তাঁর আহবানে) তাঁর [আলী (রাঃ)] অনুসরণ করলেন; কিন্তু কেউ কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি (এভাবে) ভোর হয়ে গেল। এরপর তিনি (আবূ যার-(রাঃ) তাঁর আসবাবপত্র ও মশক মসজিদে রাখলেন এবং সেদিনটি সেখানে অতিবাহিত করলেন। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে পেলেন না, এমনকি সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর তিনি তাঁর শোবার জায়গায় ফিরে এলেন। আলী (রাঃ) তাঁর কাছে এলেন, তিনি বললেন, এখনো সময় আসেনি, যে সে ব্যাক্তি (আপনি) তাঁর উদ্দিষ্ট স্থান সম্পর্কে অবগত হবে। এরপর তিনি তাকে উঠিয়ে সঙ্গে নিয়ে চললেন। তবে কেউ কারোর কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন না। এমনকি তৃতীয় দিন এসে গেল। এই দিনও সেইরুপ করলেন। আলী (রাঃ) তাকে তাঁর সঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে নিলেন এবং তাকে বললেন, আপনি কি আমাকে জানাবেন না, কিসে আপনাকে এই শহরে এনেছে? তিনি (আবূ যার (রাঃ) বললেন, আপনি যদি আমাকে সঠিক পথ দেখানোর পতিশ্রুতি দেন ও প্রতিজ্ঞা করেন তাহলে আমি আপনার কাছে বলব। তিনি ওয়াদা করলেন। তখন (আবূ যার (রাঃ) তাকে সব অবহিত করলেন। এরপর আলী (রাঃ) বললেন, তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সত্য এবং তিনি আল্লাহর রাসুল। সকাল হলে আপনি আমাকে অনুসরন করবেন। আমি যদি এমন কিছু দেখতে পাই যাতে আপনার আশংকা আছে, তখন আমি দাড়িয়ে যাব, যেন আমি মুত্র ত্যাগ করছি। আর যদি আমি চলতে থাকি তাহলে আমাকে অনুসরণ করবেন। অবশেষে আমার প্রবেশস্থলে আপনি ঢুকে পড়বেন। তিনি তাই করলেন। তিনি তাঁর পিছনে চললেন, শেষ পর্যন্ত তিনি [আলী (রাঃ)] নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রবেশ করলেন আর আবূ যার (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করলেন। তারপর তিনি নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শুনলেন এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহন করলেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি তোমার গোত্রের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দাও। এ আমার নির্দেশ তোমার কাছে পৌছা পর্যন্ত (এভাবে থাকবে)। এরপর তিনি [আবূ যার (রাঃ)] বললেন, সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রান, আমি তা মক্কাবাসীদের মাঝে চিৎকার করে ঘোষণা করব। তারপর তিনি বেরিয়ে পড়লেন এবং মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন। তারপর উচ্চস্বরে ঘোষণা করেলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। এতে লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলল। আব্বাস (রাঃ) সেখানে এলেন এবং ঝুকে পড়ে তাকে দেখলেন। তিনি [আব্বাস (রাঃ)] বললেন, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি জাননা যে, ইনি গিফার গোত্রের লোক? তোমাদের সিরিয়া দেশে বানিজ্যের যাতায়াতের রাস্তা তাদের এলাকায়। তারপর তিনি তাকে তাদের কাছ থেকে ছারিয়ে আনলেন। পরের দিন তিনি আবার আগের দিনের মতই করলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করল। আব্বাস (রাঃ) তাকে আড়াল করলেন এবং তাকে তিনি মুক্ত করলেন।

৬১৩৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী ও আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহন করার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (তাঁর কাছে প্রবেশে) বাধা দেননি। আর তিনি আমার প্রতি হাসিমুখে ছাড়া তাকাতেন না।

৬১৪০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ উসামা ও ইবনু নুমায়র (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (প্রবেশে) বাধা দেন নি। তিনি আমার চেহারায় মৃদু হাসি ছাড়া আমার চেহারার দিকে দেখেননি। ইবনু নুমায়র (রহঃ) তাঁর হাদীসে ইবনু ইদরীস (রহঃ) থেকে অধিক বর্ণনা করেছেন, “আমি তার কাছে অভিযোগ করলাম যে, আমি ঘোড়ার পিঠে দৃঢ়ভাবে থাকতে পারি না। তখন তিনি তাঁর হাতে আমার বুকে মৃদু আঘাত করে দু’আ করলেনঃ (আরবিতে লিখা আছে) হে আল্লাহ্‌! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন। ”

৬১৪১। আবদুল হামীদ ইবনু বায়ান (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে একটি ঘর ছিল, যেটিকে ‘যুলখালাসা’ বলা হত এবং এটাকে ইয়ামানী কা’বা আর (প্রকৃত) কা’বা কেবলা হত ‘শামিয়া’র (ঝঞ্জাট)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জারীরকে) বললেন, তুমি কি আমাকে যুলখালাসা এবং ইয়ামানী কা’বা ও শামী কা’বা থেকে চিন্তা মুক্ত করতে পারবে? তখন আমি গোত্রের একশ পঞ্চাশজনসহ আহমাসকে সংগে নিয়ে রওনা হলাম। যুলখালাসাকে ভেংগে ফেললাম এবং সেখানে যাদের পেলাম তাদের হত্যা করলাম। এরপর আমি তাঁর কাছে ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করলাম। বারী বলেন, তখন তিনি আমাদের জন্য ও আহমাসের জন্য দু’আ করলেন।

৬১৪২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে জারীর! তুমি কি আমাকে খাছ’আম গোত্রের গৃহ (প্রতিমা মন্দির) যুলখালাসা থেকে চিন্তা মুক্ত করবে না? যেটিকে ইয়ামানী কা’বাও বলা হত। জারীর বলেন, আমি দেড়শ অশ্বারোহীসহ সেদিকে রওনা হলাম। আমি অশ্বপৃষ্ঠে স্থিরভাবে থাকতে পারতাম না। আমি এই বিষয়টি রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি আমার বুকে তাঁর হাত মারলেন এবং দু’আ করলেনঃ (আরবিতে লিখা আছে) “হে আল্লাহ্‌! তাকে (অশ্বপৃষ্ঠে) স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।” রাবী বলেন, এরপর তিনি চলে গেলেন এবং সেটি(যুল খালাসা মন্দির) আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। তারপর জারীর (রাঃ) আমাদের মধ্যে থেকে আবূ আরতাত (রাঃ) নামে এক ব্যক্তিকে সুসংবাদ পৌঁছানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে পাঠালেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে তাঁকে বললেন, আমরা যুলখালাসাকে পাঁচড়ার কারণে আলকাতরার প্রলেপযুক্ত (কালো) উটের মত করে দিয়ে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আহমাস’ – এর ঘোড়া সওয়ার ও পদাতিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু’আ করলেন।

৬১৪৩। বিভিন্ন সনদে আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু আব্বাদ (রহঃ) ইবনু আবূ উমর (রহঃ) ও মুহাম্মদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ইসমাঈল (রহঃ) সূত্রে উক্ত সনদে (পূর্বানুরুপ হাদীস বর্ণিত) মারওয়ান (রহঃ) থেকে ইবনু আবূ উমরের হাদীসে বলেছেন যে, জারীর (রাঃ) – এর সুসংবাদদাতা আবূ আরতাত হুসায়ন ইবনু রাবীআ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসলেন।

৬১৪৪। যুহায়র ইবনু হারব ও আবূ বকর ইবনু নযর (রহঃ) ইবনু আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইস্তিঞ্জায় গেলেন। আমি তাঁর জন্য উযূ (ওজু/অজু/অযু)র পানি রাখলাম। তিনি হাজত সেরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এই পানি কে রেখেছে? [যুহায়র (রহঃ)- এর বর্ণনায়] ‘তারা বলল’ অথবা [এবং আবূ বকর (রাঃ)- এর বর্ণনায়] ‘আমি বললেন,’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) (রেখেছে)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, (আরবিতে লিখা আছে) “হে আল্লাহ্‌! তাকে দিনের ‘ফিকর’ (সূক্ষ গভীর জ্ঞান) দান করুন।”

৬১৪৫। আবূর রাবী আতাকী, খালফ ইবনু হিশাম ও আবূ কামিল জাহদারী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমার হাতে সুক্ষ রেশমী বস্ত্রের একটি টুকরা এবং জান্নাতের যেথায় আমি ইচ্ছা করতাম সেই বস্ত্র খন্ডটি আমাকে সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যেত। তিনি বলেন, এরপর আমি হাফসা (রাঃ)-এর কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। হাফসা (রাঃ) তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্ণনা করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আবদুল্লাহকে একজন সৎলোক বলে জানি।

৬১৪৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে বর্ণনা করতেন। আমি আশা করেছিলাম যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা বর্ণনা করি। রাবী বলেন, সে সময় আমি নওজোয়ান অবিবাহিত যুবক ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর জীবদ্দশায় আমি মসজিদে নিদ্রা যেতাম। তখন আমি স্বপ্ন দেখলাম যেন দুজন ফিরিশতা আমাকে পাকড়াও করলেন এবং তাঁরা আমাকে জাহান্নামের নিকট নিয়ে গেলেন। তখন দেখলাম যে, সেটি একটি গভীর গর্ত, একটি কুপের গর্তের মতা তাতে দুইটি কাষ্ঠখন্ড দেখলাম যা কুপের উপরে স্বাভাবিকভাবে থাকে। সেখানে কিছু লোক ছিল যাদের আমি চিনলাম। আমি তখন বলতে শুরু করলাম -আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই, আমি জাহান্নাম থেকে আল্লাহর পানাহ চাই”। রাবী বলেন, সে দুই ফিরিশ্তার সঙ্গে আরও একজন ফিরিশতা মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই। তারপর আমি এই স্বপ্নের কথা হাফসা (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। হাফসা (রাঃ) তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে ব্যক্ত করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবদুল্লাহ কতই না ভাল লোক! যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদ) সালাত আদায় করত। সালিম (রাঃ) বলেন, এরপর আবদুল্লাহ (রাঃ) রাত্রে খুব কম সময়ই নিদ্রা যেতেন।

৬১৪৭। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রাহমান দারিমী (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মসজিদে রাত্রি যাপন করতাম। সে সময় আমার কোন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ছিল না। একবার আমি স্বপ্নে দেখলাম যেন আমাকে একটি কূপের নিকট নেয়া হয়েছে। অতঃপর রাবী (উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর) সালিম (রহঃ) তার পিতা সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যূহরীর হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেন।

৬১৪৮। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস (রাঃ) সূত্রে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার খাদিম আনাসের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। তখন তিনি দু’আ করলেন, (আরবিতে লিখা আছে) “ইয়া আল্লাহ্‌! তাকে ধন-সম্পদ ও তার সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাঁকে যা দান করবেন তাতে বরকত দিন।”

৬১৪৯। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রাঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ)- কে বলতে শুনেছেন যে, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার খাদিম আনাস তারপর তাঁর পূরবানুরুপ উল্লেখ করেন।

৬১৫০। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ)আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৬১৫১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন। সে সময় আমি, আমার মা ও আমার খালা উম্মু হারাম ছাড়া সেখানে কেউ ছিল না। আমার মা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার ছোট খাদিমের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। রাবী বলেন, তিনি আমার জন্য সব রকমের কল্যাণের দু’আ করলেন। তিনি আমার জন্য যে দু’আ করেছিলেন তার শেষাংশ ছিল (আরবিতে লিখা আছে) “হে আল্লাহ্‌! তাঁকে ধনে-জনে বাড়িয়ে দিন এবং তাতে তাঁকে বরকত দিন। ”

৬১৫২। আবূ মা’আনি রাকাশী (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা উম্মু আনাস (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর কাছে নিয়ে গেলেন। তখন তিনি তাঁর ওড়নার অর্ধেক দিয়ে আমার ইযার (লুঙ্গী) এবং বাকী অর্ধেক দিয়ে আমার চাঁদর বানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই আমার বালক ছেলে উনায়স (ছোট আনাস), আমি তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি, সে আপনার খিদমত করবে। তার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। তখন তিনি দু’আ করলেন, (আরবিতে লিখা আছে) “ইয়া আল্লাহ্‌! তাঁর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন।” আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমার ধন-সম্পদ প্রচুর আর আজ আমার সন্তান ও সন্তানের সন্তান-সন্ততি গণনায় একশ’র মত।

৬১৫৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচ্ছিলেন। তখন আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন এবং তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এই ছোট আনাস। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য তিনটি দু’আ করলেন। এর দু’টি আমি দুনিয়াতেই পেয়েছি এবং তৃতীয়টি পাওয়ার দৃঢ় আশা রাখিি।

৬১৫৪। আবূ বকর ইবনু নাফি” (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি তখন বালকদের সাথে খেলছিলাম। তিনি বলেন তিনি আমাদের সালাম জানালেন। তিনি আমাকে একটি বিশেষ প্রয়োজনে পাঠালেন। আমি আমার মায়ের কাছে ফিরতে দেরী করলাম। আমি মায়ের কাছে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কিসে আটকিয়ে ছিল? আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে একটি প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন। তিনি বললেন, প্রয়োজনটি কিছিল আমি বললাম, তা গোপনীয়। তিনি বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোপন তথ্য কখনো কাউকে বলবে না। আনাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, হে সাবিত! সেই গোপন তথ্য কারও কাছে ব্যক্ত করলে তা তোমাকে অবশ্যই জানাতাম।

৬১৫৫। হাজ্জাজ ইবনু শায়ির (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গোপনীয় বিষয় আমার কাছে বলেছিলেন। পরে আমি কারও কাছে তা ব্যক্ত করিনি এমনকি (আমার মা) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন; কিন্তূ আমি তাঁকেও তা অবহিত করিনি।

৬১৫৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) ব্যতিরেকে ভুপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন জীবিত ব্যক্তি সম্পর্কে বলতে শুনিনি যে, সে জান্নাতে অবস্হান করছে।

৬১৫৭। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) কায়স ইবনু আব্বাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনাতে এমন লোকদের মধ্যে ছিলাম, যাদের মাঝে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করিপয় সাহাবী বিদ্যমান ছিলেন। সে সময় এক ব্যাক্তি এল, যার মুখমণ্ডলে ভয় ভীতির চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। তখন লোকদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বললেন, এই ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন, এই ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন। তিনি সেখানে দুই রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং তা সংক্ষেপ করলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন, আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। আমিও প্রবেশ করলাম। তারপর আমরা আলাপ আলোচনা করলাম। যখন তিনি অন্তরঙ্গ হলে তখন আমি তাকে বললাম, আপনি যখন একটু আগে (মসজিদে) প্রবেশ করেছিলেন, তখন এক ব্যাক্তি এইরুপ এইরুপ বলেছিল (এ ব্যাক্তি জান্নাতিদের একজন)। তিনি বললেন, সুবহানআল্লাহ! কারো পক্ষে এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যা সে (নিশ্চিত) জানে না। তিনি বললেন, আমি আপনাকে বলছি, কেন এরুপ বলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় একবার আমি একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি সেই স্বপ্নের কথা তাঁর কাছে ব্যাক্ত করেছিলাম। আমি আমাকে একটি বাগানে দেখতে পাই। এই বাগানের প্রশস্ততা, ঘাসপাতা (সজীবতা) ও সৌন্দর্যের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। এই বাগানের মধ্যভাগে একটি লৌহদণ্ড ছিল যার নিম্নভাগ ছিল মাটির মধ্যে আর উপরভাগ ছিল আকাশে। এর উপরিভাগে ছিল একটি রজ্জু। তখন আমাকে বলা হল, তুমি এতে আরোহণ কর। আমি বললাম, আমি পারব না। এরপর একজন মিনসাফ (সেবক) আসলো। তিনি বলেন, ইবনু আউন (রহঃ) বলেন, মিনসাফ (মানে খাদিম)। তিনি বলেন, তিনি পিছন থেকে আমার কাপড় ধরলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, সে (খাদিম) তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পিছন থেকে তাকে তুলে দিল। আমি আরোহণ করলাম, এমনকি সেই স্তম্ভের চুড়ায় পৌঁছলাম, এরপর রজ্জুটি ধরলাম। তারপর আমাকে বলা হল, একে মজবুত করে ধর। যখন আমি জাগ্রত হলা, তখনও ঐ রজ্জুটি আমার হাতে। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, সেই বাগানটি হচ্ছে ইসলাম। আর সে স্তম্ভটি হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ এবং সেই রজ্জুটি হচ্ছে মজবুত দৃঢ় রজ্জু। তুমি আমৃত্যু ইসলামের উপরে থাকবে। রাবী বলেন, আর সেই ব্যাক্তই আবদুল্লাহ ইবনু সালামা (রাঃ)।

৬১৫৮। মুহাম্মদ ইবনু আমর ইবনু আব্বাদ ইবনু জাবালা ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহঃ) কায়স ইবনু উবাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সমাবেশে ছিলাম, সেখানে সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) ও ইবনু উমর (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) যাচ্ছিলেন। তারা বললেন, এই লোকটি জান্নাতীদের একজন। আমি দাড়িয়ে গেলাম এবং তাকে বললাম, তারা আপনাকে এরুপ এরুপ বলেছেন। তিনি বললেন, সুবহানআল্লাহ! তাদের এমন কথা বলা উচিৎ নয়, যে বিষয়ে তাদের (নিশ্চিত) জানা নেই। একবার (স্বপ্নে) আমি দেখতে পেলাম, যেন একটি সবুজ শ্যামল উদ্যানের মাঝখানে একটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে, এর চুড়ায় ছিল একটি রজ্জু। এর নিম্নভাগে একজন মিনসাফ (দণ্ডায়মান) ছিল। মিনসাফ (মানে খাদিম)। তখন আমাকে বলা হল, এতে আরোহণ কর। আমি তাতে আরোহণ করলাম। শেষপর্যন্ত রজ্জুটি দৃঢ়ভাবে ধরলাম। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তা বর্ণনা করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মজবুত রজ্জুটি আঁকড়ে ধরা অবস্থায় আবদুল্লাহ (রাঃ) ইন্তেকাল করবে।

৬১৫৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) খারাশা ইবনু হুরর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মদিনার মসজিদে একটি মজলিসে বসা ছিলাম। তিনি বলেন, সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন সুন্দর অবয়ব বিশিষ্ট একজন প্রবীণ ব্যাক্তি। তিনই আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)। তিনি (রাবী) বলেন, তিনি তাদের সামনে সুন্দর সুন্দর কথা বলছিলেন। তিনি (রাবী) বলেন, যখন তিনি মজলিস থেকে উঠে দাঁড়ালেন তখন লোকেরা বলল, যে ব্যাক্তি কোন জান্নাতিকে দেখে আনন্দিত হতে চায় সে যেন এই লোকটিকে দেখে। তিনি (খারাশা) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি তাঁর অনুসরন করব, যেন আমি তাঁর আবাসস্থল জেনে নিতে পারি। তিনি (রাবী) বললেন, তারপর আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি রওনা হলেন এবং মদিনা থেকে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি তাঁর ধরে প্রবেশ করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আমিও তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। তারপর বললেন হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমার কি প্রয়োজন? রাবী বলেন, আমি তাকে বললাম, যখন আপনি মজলিস থেকে উঠে আসছিলেন তখন আমি আপনার সম্পর্কে লোকদের বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি কোন জান্নাতিকে দেখে খুশী হতে চায়, সে যেন এই ব্যাক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করে। তখন আমার মনে আপনার সাহচর্য লাভের আগ্রহ জাগে। তিনি বললেন, জান্নাতিদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ই সম্যক জ্ঞাত আছেন। তবে লোকদের এই কথা বলার কারন আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি। একবার আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম, স্বপ্নে দেখালাম যে, এক ব্যাক্তি আমার কাছে এসেছে। সে আমাকে বলল, উঠ। তারপর সে আমার হাত ধরল। আমি তাঁর সঙ্গে রওনা করলাম। আমি আমার বাম দিকে কয়েকটি রাস্তা দেখতে পেলাম এবং আমি সে পথ ধরে চলতে চাইলাম। সে আমাকে বলল, ও পথে চলবে না। কেননা, এটা হচ্ছে বামপন্থিদের (জাহান্নামীদের) রাস্তা। তিনি বলেন, তারপর আমি আমার ডানদিকে কয়েকটি উজ্জল সরল পথ দেখতে পেলাম। তারপর সে বলল, এই পথে চল। তিনি বলেন, তারপর সে আমাকে একটি পাহাড়ের কাছে নিয়ে এল। এরপর আমাকে পাহাড়ে উঠতে বলল। আমি যখনই উঠতে চেষ্টা করছিলাম তখন (হোঁচট খেয়ে) পড়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বলেন, আমি বেশ ক’বার এরুপ চেষ্টা করলাম। তিনি বলেন, তারপর সে আমাকে নিয়ে রওনা হল এবং একটি স্তম্ভের কাছে পৌঁছল, যার মাথা ছিল আকাশে এবং নিম্নভাগ ভূপৃষ্ঠে নীচে। স্তম্ভটির চূড়ায় একটি কড়া ছিল, সে বলল, এর উপরে আরোহণ কর। তিনি বলেন, আমি বললাম, কিভাবে এতে আরোহণ করব? এর মাথা তো আকাশের উপরে। তিনি বলেন, তারপর সে আমার হাত ধরল এবং আমাকে উপরে নিক্ষেপ করল। হঠাৎ আমি দেখলাম যে, আমি কড়ার সাথে ঝুলন্ত আছি। তিনি বলেন তারপর সে স্তম্ভের উপর আঘাত হানল এবং তা পড়ে গেল। তিনি বলেন, আর আমি কড়ার সাথে ঝুলন্ত রয়ে গেলাম। এভাবে আমার প্রভাত হল। তিনি বলেন, এরপর আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, তুমি তোমার বাম দিকে যে রাস্তাগুলি দেখছ, তা হচ্ছে বামপন্থীদের (কাফিরদের) পথ এবং তোমার ডানদিকে যে সব রাস্তা দেখেছ, তো হচ্ছে আসহাবুল ইয়ামীন (বা জান্নাতিগণের) রাস্তা। তুমি যে পাহাড়টি দেখেছিলে তা হচ্ছে শহীদগনের বাসস্থান, তা তুমি পাবে না। তুমি যে স্তম্ভটি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের স্তম্ভ। যে কড়াটি তুমি দেখেছিলে সেটা হচ্ছে ইসলামের কড়া। আর তুমি মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

৬১৬০। আমর নাকিদ, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা উমর (রাঃ) হাসৃসান (রাঃ)-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। উমর (রাঃ) তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। তখন তিনি বললেন, আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম এমন অবস্হায়, যখন মসজিদে আপনার চাইতে উত্তম ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এরপর তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর কসম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, তুমি আমার পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা সাহায্য কর। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, “ইয়া আল্লাহ! হ্যা।”

৬১৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনুল মূসায়্যাব (রহঃ) থেকে – বর্ণিত যে, একবার হাসসান (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) সহ সাহাবীদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, হে আবূ হুরায়রা, আল্লাহর কসম! আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছে? এরপর তিনি উপরোক্ত হাদীসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬১৬২। আবদুল্লাহ ইবনু আবদর রহমান দারিমী আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ)-কে আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে সাক্ষী করে বলতে শুনেছেন যে, হে আবূ হুরায়রা! আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, হে হাসসান! তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে জবাব দাও। হে আল্লাহ্‌! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা মদদ করুন। তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, হ্যা।

৬১৬৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসসান ইবনু ছাবিতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তুমি তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনা কর, অথবা বলেছেন, তুমি তাদের ব্যাঙ্গ কবিতার উত্তর দাও। জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার সঙ্গে রয়েছেন। জুহায়র ইবনু হারব, আবূ বাকর ইবনু নাফি, ইবনু বাশশার (রহঃ) ভিন্ন ভিন্নরূপে শু’বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১৬৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) সেসব লোকের মধ্যে শামিল ছিলেন, যারা আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছিলেন। তাই আমি তাকে গালাগালি করেছিলাম। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমর ভগ্নিপুত্র! তাকে ছেড়ে দাও। কেননা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কাফিরদের বিরুদ্ধে (ব্যাঙ্গ) কবিতা দ্বারা প্রতিরোধ করতেন।

৬১৬৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৬১৬৬। বিশর ইবনু খালিক (রহঃ) মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গেলাম। তখন তাঁর কাছে হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি সে সময় তাঁর জন্য কবিতা আবৃতি করে শোনাচ্ছিলেন এবং তাঁর কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি দ্বারা (নাবীর) স্তুতিকাব্য আবৃতি করছিলেন। তিনি বলছিলেন, “তিনি সতী (আত্মা)! বুদ্ধিমতী, কোন সন্দেহ দ্বারা তাকে অপবাদ দেয়া যাবে না। তিনি উদাসীনদের গোশত থেকে অভুক্ত থেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় শয্যা ত্যাগ করেন (কারো গিবত করেন না)” তখন আয়িশা (রাঃ) তাকে বললেন, কিন্তু আপনি তো এমন নন। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি তাকে (আয়িশাকে) বললাম, আপনি তাকে আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি দেন কেন? অথচ আল্লাহ বলেছেন- “এবং তাএর মধ্যে যে এ ব্যাপারে (আয়িশা [রাঃ]) –র দুর্নাম করার ব্যাপারে প্রধান ভুমিকা গ্রহন করেছেম তাঁর জন্য রয়েছে মহাশাস্তি” (২৪-১১) তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, এর চাইতে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে যে, সে অন্ধ হয়ে গিয়েছে? এরপর তিনি বললেন, তিনি তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে কবিতা দ্বারা প্রতিহত (যুদ্ধ) করতেন অথবা ব্যাঙ্গ কবিতার দ্বারা বাকযুদ্ধ করতেন।

৬১৬৭। ইবনু মূসান্না (রহঃ) শু’বা (রহঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতেন। তবে তিনি বর্ণনায় ‘হাসানু’ ও ‘রাজানু’ উল্লেখ করেননি।

৬১৬৮। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হাসসান (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে আবূ সুফিয়ানের ইবনুল হারিস ইবনু আব্দুল মুত্তালিব) বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনার অনুমতি দিন। তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা অবস্থায় তা কিভাবে (করবে)? তখন তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, আটার খামির থেকে যেভাবে চুল সন্তপর্ণে বের করে নেওয়া হয়, আমি আপনাকে সেভাবে তাদের ভিতর থেকে বের করে নেব। এরপর হাসসান (রাঃ) বললেনঃ “মান সম্মান ও আভিজাত্যের শীর্ষ চূড়া বানু হাশিমের বংশধরদের মধ্যে বিনতে মাখযুমের সন্তানদের জন্য। আর তোমার বাপ তো গোলাম ছিল।“ এই হচ্ছে তাঁর কাসীদাহ।

৬১৬৯। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম ইবনু উরওয়া (রাঃ) এর সুত্রে এই সনদে বর্ণিত যে, আয়িশা (রাঃ) বলেন, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনার অনুমতি চাইলেন। তবে তাঁর এই বর্ণনায় আবূ সুফিয়ানের কথা উল্লেখ করেননি। আবদার বর্ণনায় “আলখামির” এর স্থলে “আলআজ্বীনা” রয়েছে।

৬১৭০। আবদুল মালিক ইনব শু’আয়ব ইবনু লাইস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়শদের বিরুদ্ধে তোমরা ব্যাঙ্গাত্তক কবিতা রচনা কর। কেননা, তা তাদের বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইনব রাওয়াহ (রাঃ) এর কাছে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, ওদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্তক ব্যাঙ্গাত্তক কবিতা রচনা কর। তিনি ব্যাঙ্গ কবিতা আবৃতি করলেন, কিন্তু তিনি তাতে খুশী হলেন না। তখন তিনি কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে পাঠালেন। এরপর তিনি হাসসান ইবনু সাবিতের কাছে লোক পাঠালেন। সে যখন তাঁর কাছে গেল তখন হাসসান (রাঃ) বললেন, তোমাদের জন্য সঠিক সময় এসেছে যে, তোমরা সেই পশুরাজ সিংহকে ডেকে পাঠিয়েছ, যে তাঁর লেজ দ্বারা সাবাড় করে দেয়। এরপর তিনি তাঁর জিহবা বের করে নাড়াতে লাগলেন। এরপর বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছনে, আমি আমার জিহবা দ্বারা ওদেরকে ফেড়ে টুকরো টুকরো করে দেব, যেমনিভাবে হিংস্র বাঘ তার থাবা দিয়ে চামড়া খসিয়ে ফেলে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে হাসসান! তুমি তড়িঘড়ি করো না। কেননা,আবূ বকর (রাঃ) কুরায়শদের বংশলতিকা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন। কারণ, তাদের মধ্যে আমারও আত্নীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং তিনি এসে আমার বংশ তোমাকে পৃথক করে বাতলে দিবেন। এরপর হাসসান (রাঃ) তাঁর (আবূ বকর [রা:]) এর কাছে গেলেন এবং (বংশলতিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে) ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি আপনার বংশপঞ্জী সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেছেন। সেই মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনাকে তাদের মধ্য থেকে এমন সুকৌশলে বের করে আনব, যেমনিভাবে অটার মণ্ড থেকে সূক্ষ্ম কেশাগ্র বের করা হয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাসসান সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে, যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে কাফিরদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত ‘রুহুল কুদ্দুস’ অর্থাৎ জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সারাক্ষণ তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন। আর তিনি (আয়িশা [রা:]) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, হাসসান তাদের (বিরুদ্ধে) নিন্দাবাদ করলেন। তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দিলেন এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করলেন। হাসসান (রাঃ) বললেনঃ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিন্দাবাদ করছ, আর আমি তার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছি এতে আছে আল্লাহর কাছে পুরষ্কার ও প্রতিদান। তুমি ব্যাঙ্গ করেছ এমন মুহাম্মদকে, যিনি পুন্যবান, একনিষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার, তিনি হচ্ছে আল্লাহর রাসুল, যার চরিত্র মাধুর্য অনুপম। আমার পিতা ও তাঁর পিতা, আমার ইজ্জত আব্রু মুহাম্মদের সম্মানের জন্য রক্ষাকবচ (অতন্দ্র প্রহরী)। আমি কসম করে বলছি, কাদা (পার্বত্য ঘাঁটি)-র দুই প্রান্তে (মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর) বিজয় ধুলি উড়বে তা তোমরা দেখতে পাবে, নতুবা আমার জন্য মতম করা হবে (আমি ধ্বংস হয়ে যাব) যুদ্ধাভিযানকালে সে অশ্বারোহী বাহিনীর লাগামের সাথে দৌড় পাল্লা দেয় (অথবা বললাম নিয়ে ঠোকাঠুকি করে) আর তাদের কাঁধের উপরে রয়েছে রক্তের তৃষ্ণার্ত বর্শা (অথবা ক্ষুধার্ত সিংহ) আমাদের অশ্বারোহীরা ছুটে চলে দ্রুতবেগে দুরন্ত। আর মহিলারা আদর ও সম্মান করে নিজেদের ওড়না দিয়ে তাদের (ঘোড়াদের) মুছে দেয়। তমা যদি আমাদের (ইসলামের) বিমুখ হও, (জনশূন্যকর) তাহলেও আমরা উমরা পালন করবই এবং ইসলামের বিজয় নিশান উড়বে আর আবরণ উন্মুক্ত হয়ে যাবে (অন্ধকার চিরদিনের জন্য বিদূরিত হয়ে যাবে)। নতুবা তোমরা প্রতিক্ষায় থাক ঐ সময়ের, যে দিন (মুসলমানদের সাথে কাফিরদের) মুকাবিলা হবে; আর সেদিন আল্লাহ যাকে চান বিজয় মাল্য পরিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, আমি আমার বান্দাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছি; যিনি সত্য বলেন (সর্বদা লোকদের সত্যের দিকে আহবান জানান) যার মধ্যে নেই কোন কপটতা, অস্পষ্টতা। আল্লাহ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন, আমি এমন এক বাহিনী তৈরি করেছি যারা আনসার। যাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শত্রু মুকাবিলা করা (প্রতহ্য তারা শত্রু মুকাবিলায় থাকে সতত প্রস্তুত) প্রতিদিন আমাদের ভাগ্যে জুটে মা’আদ (কুরায়শ গোষ্ঠী) এর পক্ষ থেকে কখনো বা গাল মণ্ড, যুদ্ধ বিগ্রহ অথবা নিন্দাবাদ। তোমাদের মধ্যে যে, আল্লাহর রাসুলের নিন্দাবাদ করে; অথবা তাঁর, প্রশংসা ও সাহায্য সহায়তা করে এ দুইই সমান। (কেননা) জিবরাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরবাচিত সম্মানিত বাণীবাহক (দূত) এবং তিনি রুহুল কুদ্দুস (পবিত্র আত্মা) যার মত কেউ নেই।

৬১৭১। আমর নাকিদ (রহঃ) আবূ কাসীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যেন, আমি আমার মা’কে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতাম, তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। একদিন আমি তাকে ইসলাম কবুলের জন্য আহবান জানালাম। তখন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আমাকে এমন এক কথা শোনালেন যা আমার কাছে খুবই অপ্রিয় ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম। আর তিনি অস্বীকার করে আসছিলেন। এরপর আমি তাকে আজ দাওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শোনালেন, যা আমি পছন্দ করি না। সুতরাং আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আবূ হুরায়রার মা’কে হিদায়াত দান করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আবূ হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান কর”। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’আর কারনে আমি খুশি মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি (ঘরের) দরজায় পৌঁছলাম তখন তা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! একটু দাড়াও (থাম)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং গায়ে চাঁদর পরলেন। আর তড়িঘড়ি করে দোপাট্টা ও ওড়না জড়িয়ে নিলেন, এরপর ঘরের দরজা খুলে দিলেন। এরপর বললেন, “হে আবূ হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যাতিত কোন ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল”। তিনি বলেন, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে রওনা হলাম। এরপর তাঁর কাছে গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! সুসংবাদ গ্রহন করুন। আল্লাহ্‌ আপনার দু’আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরায়রার মা’কে হিদায়াত দান করেছেন। তখন তিনি আল্লাহ্‌র শুকুর আদায় করলেন ও তাঁর প্রশংসা করলেন এবং ভাল ভাল (কথা) বললেন। তিনি বলেন, এরপর আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন, তিনি যেন আমাকে এবং আমার মাকে মু’মিন বান্দাদের কাছে প্রিয় করেন এবং তাদের ভালবাসা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তোমার এই বান্দা (আবূ হুরায়রা) কে এবং তাঁর মা’কে মুমিন বান্দাদের কাছে প্রিয়ভাজন করে দাও এবং তাদের কাছেও মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দাও”। এরপর এমন কোন মুমিন বান্দা সৃষ্টি হয়নি, যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে অথচ আমাকে ভালোবাসেনি।

৬১৭২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ,আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহাযুর ইবনু হারব আরাজ থেকে বর্ণিত। বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বৃলতে শুনেছি যে, তোমরা ধারণা করছ যে,আবূ হুরায়রা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশী হাদীস বর্ননা করেছে। এর হিসাব নিকাশ আল্লাহ্‌র কাছেই হবে। আমি ছিলাম একজন গরীব লোক। আমি কোন রকমে পেত পুরে খেয়ে না খেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করতাম (তাঁর সাহচর্যে থাকতাম)। তখন মুহাজিরগণ বাজারে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মশগূল থাকতেন এবং আনসারগণ তাঁদের ধন-সম্পদের (ক্ষেত খামারে) রক্ষণাবেক্ষণ ও হিফাযতে ব্যস্ত থাকতেন। এরপর একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার কাপড়ের আচল বিছিয়ে দেবে সে আমার কাছ থেকে যা কিছু শুনবে তা ভুলবে না। আমি আমার কাপড়ের আচল বিছিয়ে দিলাম এবং তিনি হাদীস বর্ণনা করলেন। এরপর আমি সেই কাপড়টা আমার বুকের সংগে মিলিয়ে নিলাম। তখন থেকে আমি তাঁর নিকট হতে যা কিছু শুনেছি তার কিছুই ভুলিনি।

৬১৭৩। আবদুল্লাহ ইবনু জাফর ইবনু ইগ্নাহুইয়া ইবনু খালিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আ’রাজ (রহঃ) সুত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) এর হাদিস আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর বক্তব্য পর্যন্ত শেষ হয়েছে এবং তিনি তাঁর হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে “যে তার কাপড় বিছাবে” শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেননি।

৬১৭৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া তুজীবী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (হে উরওয়া) তোমার কাছে কি আশ্চর্য বলে মনে হয় না যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমার হুজরার এক পাশে বসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করলেন এবং তা আমাকে শোনাতে লাগলেন কিন্তু আমি সে সময় তাসবীহ পাঠে মশগূল ছিলাম। আর আমার ফারিগ হওয়ার পুর্বেই সে উঠে চলে গেল। আমি যদি তখন তাঁকে পেতাম তাহলে তাকে প্রতিবাদ জানাতাম। কেননা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রকম তড়িঘড়ি কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না যেমন তোমরা করছ। ইবনু শিহাব ও ইবনু মূসায়্যাব (রহঃ) বলেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, লোকেরা বলাবলি করে যে, আবূ হুরায়রা অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেন আর আল্লাহই (এর প্রামাণ্যতা সম্পর্কে) সম্যক জ্ঞাত। তিনি বলেন যে, লোকেরা এই মর্মে আরও অভিযোগ করত যে, মুহাজির ও আনসারগণ আবূ হুরায়রার মত বেশী বেশী হার্দীস বর্ণনা করেননি কেন? এর জবাবে আমি তোমাদের কাছে বলতে চাই যে, আমার আনসার ভাইয়েরা তাদের জমিজমার (কৃষি) কাজে ব্যস্ত থাকতো আর আমার মুহাজির ভাইয়েরা হাট-বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে বেচা-কেনার কাজে ব্যাস্ত থাকতেন। আর আমি রাসুলুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুহবত আমার জন্য অপরিহার্য করে নিতাম এবং খেয়ে না খেয়ে তাঁর সাহচর্যে থাকতাম। তাঁরা যখন অনুপস্থিত থাকতেন তখন আমি হাযির থাকতাম এবং তাঁরা ভুলে যেতেন আমি মুখস্হ করতাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে তাঁর কাপড়ের আচল বিছিয়ে দেবে আর আমার হাদীস গ্রহণ করবে? এরপর তা (কাপড়) নিজের বুকে মিলিয়ে নিলে সে যা শুনবে কখনও ভুলবে না। আমি আমার চাঁদর পেতে দিলাম এবং তিনি তাঁর হাদিস বর্ণনার সমাপ্তি টানলেন। এরপর আমি চাঁদরখানি আমার বুকে মিলিয়ে নিলাম। সেদিন হতে আমি কোন বিষয়ি বিস্মৃত হইনি যা তিনি বলেছেন (সবটুকুই স্মরণে আছে)। আল্লাহ্‌ তাঁর কিতাবে দুটি আয়াত যদি নাযিল না করতেন তাহলে আমি কখনও হাদিস বর্ণনা করতাম না। আয়াত দুই এইঃ অর্থাৎ “আমি যে স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য, কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ্‌ তাদেরকে লানত দেন এবং অভিশাপকারীরাও অভিশাপ দেয়; কিন্তু যারা তাওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর (সত্যকে) স্পষ্টভাবে ব্যাক্ত করে, এ সকল লোক তারাই যাদের তাওবা আমি কবুল করি। (কারন) আমি তো তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু” (২: ১৫৯-১৬০)।

৬১৭৫। আবদুল্লাহ ইবনু আব্দুর রহমান দারিমী (রহঃ) সাঈদ ইবনু মূসাইয়্যাব ও আবূ সালামা ইবনুুন আব্দুর রহমান (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, তোমরা বলাবলি করছ যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেন। হাদিসের বাকি অংশ তাদের বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ।

৬১৭৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আমর নাকিদ, যুহায়র ইবনু হারব, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আলী (রাঃ)-এর কাতিব উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার এবং যুবায়র, মিকদাদ (রাঃ)-কে (বিশেষ কাজে) পাঠালেন এবং বললেনঃ তোমরা রাওযাযে খাখ (মদ্বীনার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম) যাও। সেখানে উটের পিঠে আরোহি এক মহিলা আছে। তার কাছে একখানা গোপন চিঠি আছে। তোমরা তার কাছ থেকে সেটা নিয়ে এসো। আমরা ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে ছুটে চললাম। সেখানে আমরা এক মহিলাকে দেখতে পেলাম। আমরা তাকে বললাম, চিঠি বের করে দাও সে বলল, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। আমরা বললাম, তোমাকে চিঠি বের করতেই হবে, অন্যথায় তোমার পোশাকাদি খুলে ফেলেতে হবে। এরপর সে তার চুলের বেনীর মধ্য থেকে তা বের করে দিল। তখন আমরা তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। চিঠিতে দেখা গেল যে, হাতিব ইবনু আবূ বালতা (রাঃ০ এর পক্ষ থেকে মক্কার কতক মুশরিকের প্রতি লেখা ছিল। তিনি (এই চিঠিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতিপয় বিষয় সম্পর্কে তাদের অবহিত করছিলেন (গুরুত্বপূর্ণ কাজের গোপন তথ্য ফাল করে দিয়েছিলেন)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে হাতিব! তুমি একি কাজ করলে? সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন না। আমি কুরায়শ সংযুক্ত একজন লোক। সুফয়ান (রহঃ) বলেন, তিনি তাদের (চুক্তিবদ্ধ) মিত্র ছিলেন, তাদের গোত্রভুক্ত ছিলেন না। আর আপনার মুহাজির সাহাবীদের অনেকের আত্মীয় স্বজন সেখানে রয়েছে, যাদের বদৌলতে তাদের পরিবার পরিজনের নিরপত্তা নিশ্চিত হচ্ছিল। তাই আমি মনস্থ করলাম যে, করায়শের শঙ্গে যখন আমার কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই তখন তাদের প্রতি এমন কোন (কাজ) উপকার করি যার কারনে তারা আমার পরিবার পরিজন রক্ষা করবে। আমি এ কাজটি এজন্য করিনি যে, আমি কাফির হয়ে গেছি কিংবা দ্বীন থেকে মুরতাদ হয়েছি। আমি ইসলাম গ্রহনের পরে কফরের প্রতি আসক্তও হইনি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্যই বলেছ। উমর (রাঃ) বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে অনুমতি দ্বীন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই। তখন তিনি বললেন, সে তো বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিল এবং তুমি কি জান যে (এমন হতে পারে যে) আল্লাহ্‌ বদরী (সাহাবী) –দের প্রতি দর্শন দিয়ে বলেছেনঃ অর্থাৎ “তোমরা যা খুশী করতে পার, আমি তোমাদের (অগ্রিম) ক্ষমা করে দিয়েছি”। এরপর আল্লাহ্‌ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন, অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরুপে গ্রহন কর না”। (সূরা মুমতাহানাঃ ১)। আবূ বকর ও যুহায়র বর্ণিত হাদিসে আয়াতের উল্লেখ নেই। আর ইসহাক তাঁর বর্ণনায় আয়তটিকে সুফিয়ানের তিলাওয়াত হিসাবে গণ্য করেছেন।

৬১৭৭। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবূ মারসা’দ গানাবী ও জুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) কে পাঠালেন। আমরা সবাই অশ্বারোহী ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা ‘রাওয়া খাখ’- এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাও। সেখানে এক মুশরিক নারীকে পাবে। তাঁর কাছে হাতিবের পক্ষ থেকে মুশরিকদের কাছে লেখা একখানা চিঠি আছে। এরপর তিনি (বর্ণনাকারী) আলী (রাঃ) থেকে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬১৭৮। কতায়বা ইবনু সাঈদ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাতিবের এক গোলাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করল। সে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! হাতিব অবশ্যই জাহান্নামে যাবে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, সে সেখানে যাবে না, কেননা সে বদর ও হুদায়বিয়ায় শরীক হয়েছিল।

৬১৭৯। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, আমাকে উম্মু মুবাশশির (রাঃ) অবহিত করেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাফসা (রাঃ) এর কাছে বলতে শুনেছেন, ইনশা আল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ চাহে) তো (হুদায়বিয়ায় বাবলা) গাছের নিচে বায়য়াত (রিদওয়ানে) অংশগ্রহণকারীদের কেউই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তিনি (হাফসা) বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! (কেন যাবে না?)। তখন তিনি তাকে ধমক দিলেন। হাফসা (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তাতে (জাহান্নামে) অবতরন না করবে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্‌ তো এও বলেছেনঃ অতঃপর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে আমি তাদের নাজাদ দেব এবং যালিমদের অধমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।

৬১৮০। আবূ আমির আশআরী ও আবূ করায়ব (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে ছিলাম। সে সময় তিনি মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী জইররানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিলাল (রাঃ) ও ছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক আরব বেদুঈন এল। সে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আপনি আমাকে যে পতিস্রুতি দিয়েছেন তা কি পুরন করবেন না? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ “তুমি সুসংবাদ গ্রহন কর”। তখন সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, আপনি তো অনেকবারই বলেছেনঃ “সুসংবাদ গ্রহন কর”। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবূ মূসা ও বিলাল (রাঃ) এর প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, দেখ এই ব্যাক্তি সুসংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং তোমরা দুইজন তা গ্রহন কর। তখন তারা দুইজনে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কবুল করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানি ভর্তি পেয়ালা আনালেন। তিনি তাঁর দুই হাত ও মুখমণ্ডল ধুইলেন এবং তাতে কুলি করলেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা দুইজনে এ থেকে পানি পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডলে ও বক্ষদেশে ঢেলে দাও, আর তোমরা সুসংবাদ গ্রহন কর। তারা দুইজনে পেয়ালাটি গ্রহন করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশ মোতাবেক কাজ করলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন উম্মু সালামা (রাঃ) পর্দার আড়াল থেকে তাদের ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্য তোমাদের পাত্রে কিন্তু পানি রেখে দাও। তখন তারা তাঁর জন্য সামান্য পরিমান উদ্বৃত্ত রাখলেন।

৬১৮১। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনুল আল (রহঃ) আবূ বরদাহ (রাঃ) এর পিতার সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হুনায়ন যুদ্ধ সম্পন্ন করেন তখন আবূ আমির (রাঃ) কে একটি বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করা ‘আওতাস’ অভিযানে প্রেরণ করেন। তিনি দুরায়দ ইবনু সিম্মাহ এর মুখোমুখি হলে। দুরায়দ নিহত হল এবং আল্লাহ্‌ তাঁর বাহিনীকে পরাস্থ করলেন। এরপর আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আবূ আমিরের সঙ্গে পাঠিয়ে ছিলেন। আবূ আমিরের হাঁটুতে তীরের আঘাত লেগেছিল। জুছাম গোত্রের জনৈক ব্যাক্তি সেই তীরটি নিক্ষেপ করেছিল। এই তীরটি তাঁর ঘাড়ে বিদ্ধ হয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, চাচাজান! কে আপনাকে তীর বিদ্ধ করেছে? তখন আবূ আমির ইশারায় আবূ মূসা (রাঃ) কে জানালেন, ঐ আমার ঘাতক যাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ, সেই আমাকে তীরবিদ্ধ করেছে। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে আক্রমন করে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি তাঁর মুখোমুখি হলাম, সে আমাকে দেখে পালিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে ধাওয়া করলাম এবং বলছিলাম, হে বেহায়া, বেশরম! পালাচ্ছ কেন? তুমি কি আরবী নও? বীরত্ব আছে তো দাড়িয়ে যাও, ভাগছ কেন? তখন সে থামল। এরপর সে ও আমি কাছাকাছি হলাম। আমরা পরস্পরে দুইবার আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ করলাম। আমি তাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করে ধরাশায়ী করলাম এবং শেষাবধী হত্যা করলাম। এরপর আমি আবূ আমির (রাঃ) এর কাছে ফিরে এলাম এবং তাকে বললাম, আল্লাহ্‌ আপনার ঘাতককে হত্যা করেছেন। তখন আবূ আমির (রাঃ) বললেন, এই তীরটি বের করে নাও। আমি সেটি তুলে ফেললাম। তখন তা থেকে পানি বের হচ্ছিল। এরপর তিনি বললেন, হে আমার ভাতুস্পুত্র! তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দিও। আর তাঁর কাছে গিয়ে আরয করবে, আবূ আমির আপনাকে তাঁর জন্য মাগফিরাতের দু’আ চেয়েছেন। তিনি (আবূ মূসা) বলেন, আবূ আমির আমাকে লোকের উপর কর্মকর্তা শাসক (আমিল) নিয়োগ করলেন এবং কিছু সময় এ অবস্থায় থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম এবং তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি চাটাইপাতা খাটের উপর ছিলেন এবং ঐ খাটের উপর চাঁদর বিছানো ছিল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে ও পাজরে চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। এরপর আমি তাঁর কাছে আমাদের ও আবূ আমিরের খবর দিলাম এবং আমি তাকে বললাম, তিনি (আবূ আমির) বলেছেন, তাঁর জন্য আপনাকে মাগফিরাতের দু’আ করতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনালেন এবং তা দিয়ে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর দু’হাত দুলে বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! উবায়দ আবূ আমিরকে ক্ষমা করে দাও” (হাত উচু করার কারনে) তখন আমি তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখছিলাম। পুনরায় তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তাকে কিয়ামতের দিন তোমার মাখলূকের অনেকের উপরে অথবা অনেক মানুষের উপরে স্থান দিও”। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জন্যও মাগফিরাতের দু’আ করুন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আবদুল্লাহ ইবনু কায়েসের গোনাহ ক্ষমা করে দাও এবং তাকে কিয়ামত দিবসে সম্মানজনক জান্নাতে প্রবেশ করাও।“ আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, একটি দু’আ আবূ আমিরের জন্য এবং অন্যটি আবূ মূসা আশআরীর জন্য।

৬১৮২। আবূ করায়ব মুহাম্মদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি অবশ্যই আশআরী বন্ধুদের কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ চিনতে পারি যখন তারা রাতে প্রবেশ করে। আর রাতের বেলা তাদের কুরআন পাঠের কণ্ঠস্বর দ্বারা তাদের চিনে ফেলি যদিও দিনের বেলা আমি তাদের আবাসসমুহ দেখিনি। তাদের মধ্যে রয়েছে একজন প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী ব্যাক্তি। যখন সে অশ্বারোহী কিংবা (তিনি বলেছেন) শত্রুর সাক্ষাৎ লাভ করে তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলে আমাদের লোকজন তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, একটু অপেক্ষা কর।

৬১৮৩। আবূ আমির আশআরী ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আশআরী গোত্রের লোকজন যখন যুদ্ধের ময়দানে সমবেত হয় অথবা বলা হয়েছে মদ্বীনাতে তাদের পরিবার-পরিজনের যখন খাদ্য সংকট দেখা দেয় তখন তাঁদের কাছে যা কিছু থাকে তা এক কাপড়ে জড়ো করে নেয়। এরপর তা নিজেদের একটি পাত্র দ্বারা সমানভাবে বন্টন করে দেয়। তখন তিনি বললেন তাঁরা আমার থেকে এবং আমি তাঁদের থেকে। অর্থাৎ আমি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট।

৬১৮৪। আব্বাস ইবনু আব্দুল আযীয আল আম্বারী (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, মুসলমানরা আবূ সুফিয়ানের দিকে তাকাতেন না এবং তাঁর সঙ্গে উঠাবসা করতেন না। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ। তিনটি জিনিস আমাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যা। তিনি (আবূ সুফিয়ান) বললেনঃ আমার কাছে আরবের সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সুন্দরী উম্মে হাবীবা বিনতে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) ছিল, যাকে আমি আপনার সংগে বিয়ে দিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যা। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) আবার বললেন, আমার পুত্র মুআবিয়া যাকে আপনি ওহী লিখক নিযুক্ত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা। আবূ সুফিয়ান (রাঃ) বললেন, আমাকে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিন, যেমন আমি (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলাম। তিনি বললেন, বেশ তো, হ্যা। আবূ যুমায়ল (রাঃ) বলেন, যদি তিনি এই সব বিষযে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে প্রশ্ন না করতেন তাহলেতিনি তা দিতেন না। কেননা, আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তাঁর কাছে যা চাইতেন তিনি হ্যা বলতেন এবং কবুল করতেন।

৬১৮৫। আবদুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা আল হামদানী (রহঃ) আবূ মূসা আশ আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, যখন আমাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হিজরতের খবর পৌছল তখন আমরা ইয়ামানে ছিলাম। এরপর আমি ও আমার দুই ভাই তার কাছে হিজরত করার জন্য রওনা হলাম। আমি ছিলাম সে দুইজনের ছোট। তাঁদের একজনের নাম ছিল আবূ বুরদাহ (রাঃ) অপরজন ছিলেন আবূ রুহম (রাঃ)। তিনি হয়ত বলেছেন, তখন তিপ্পান্ন জন কিংবা বায়ান্নজন লোক আমাদের গোত্রে ছিল। আমরা একটি নৌকায় আরোহণ করলাম। নৌকাটি আমাদের নিয়ে আবিসিনিয়ায় গিয়ে উপনীত হল, যেখানের বাদশাহ ছিলেন নাজ্জাশী। তখন আমরা তার কাছে জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) ও তাঁর সঙ্গীদের দেখা পেলাম। এরপর জাফর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। এবং এখানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আপনারা আমাদের সংগে অবস্হান করুন। তিনি বলেন, আমরা তার সংগে থাকতে লাগলাম, অবশেষে আমরা সবাই একত্রে মদ্বীনা ফিরে এলাম। তিনি বলেন, এরপর খায়বর বিজয়ের প্রাক্কালে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে মিলিত হলাম। তিনি আমাদেরও গনীমতের মালের অংশ দিলেন অথবা তিনি বলেছেন, তিনি তা থেকে আমাদেরও দান করেছেন। তিনি তাঁর সংগে যারা যুদ্ধের মগ্নদানে উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের ব্যতীত কাউকে গনীমতের হিসসা দেননি। তবে জাফর ও তাঁর সংগীদের সংগে আমাদের নৌকায় আরোহী সাথীদেরও তাঁদের সংগে হিসসা প্রদান করেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকদের কেউ কেউ আমাদের অর্থাৎ নৌকা আরোহীদের বলে বেড়াত যে, আমরা অগ্রগামী হিজরতকারী। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমাদের নৌকায় সফর সংগিনী আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিনা হাফসা (রাঃ)-এর সংগে দেখা করার জন্য গমন করেন। যাঁরা নাজ্জাশীর কাছে হিজরত করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতমা। ইত্যবসরে উমর (রাঃ) হাফসার কাছে এলেন। আসমা বিনত উমায়স (রাঃ) তখন তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন। তখন উমর (রাঃ) আসমাকে দেখে বললেন, ইনি কে? হাফসা (রাঃ) বললেন, ইনি আসমা বিনত উমায়স। এই কি হাবশায় না, নৌকায় আরোহণ কারিনা? তখন আসমা (রাঃ) বললেন, হিজরতের দৃষ্টিকোণে আমরা তোমাদের চাইতে অগ্রগামী। সূতরাং তোমাদের তুলনায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ব্যাপারে অধিকতর হকদার। তখন আসমা (রাঃ) রাগাম্বিত হলেন এবং বললেন, হে উমর। কথাটি সঠিক নয়। কখনো সঠিক হতে পারে না। আল্লাহর কসম! তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহচর্যে ছিলে। তিনি তোমাদের ক্ষুধার্তদের আহার দান করতেন, জ্ঞানহীনদের জ্ঞানের আলো বিলাতেন। আর আমরা আবিসিনিয়ায় প্রবাসে প্রতিকুল পরিবেশে অবস্থান করছিলাম। এটা ছিল কেবল আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টির জন্যই। আল্লাহর কসম! তুমি যা বলেছ তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে আলোচনা না করা পর্যন্ত আমি কোন আহার গ্রহণ করব না এবং পানীয় দ্রব্য স্পর্শ করব না। আমরা (বিদেশ বিভূইয়ে) সারাক্ষণ বিপদ ও ভয়ভীতির মধ্যে থাকতাম। আমি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে পেশ করব এবং জিজ্ঞাসা করব। আল্লাহর কসম! আমি মিথ্যা বলব না, কোন কিছু বিকৃত করব না এবং প্রকৃত ঘটনার চাইতে বাড়িয়ে বলব না। বর্ণনাকারী বলেন, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন তখন আসমা (রাঃ) বললেন, ইয়া নাবীয়াল্লাহ! উমর (রাঃ) এই এই বলেছেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমার প্রতি তোমাদের চেয়ে তার হক বেশী নেই। কেননা তার ও তার সংগীদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র হিজরত। আর তোমাদের নৌকা আরোহীদের জন্য রয়েছে দুটি হিজরত। আসমা (রাঃ) বলেন, আমি আবূ মূসা (রাঃ) ও নৌকা আরোহীদের দলে দলে এসে আমার কাছে এই হাদীস খানি জিজ্ঞাসা করতে দেখেছি। তাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তাঁদের কাছে এর চাইতে অধিকতর আনন্দদায়ক ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কোন বিষয় দুনিয়াতে ছিল না। আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি আবূ মূসা (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি আমার কাছ থেকে এই হাদীসখানি বারংবার দোহরাতেন।

৬১৮৬। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আয়িয ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,আবূ সুফিয়ান (রাঃ) একদল লোকের সাথে সালমান ফারসী (রাঃ), সূহায়ব (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ)-এর কাছে এলেন। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর তরবারীসহ আল্লাহর দুশমনদের গর্দানে যথাসময়ে তার লক্ষ্যস্হলে আঘাত করেনি। বর্ণনাকারী বলেন,আবূ বকর (রাঃ) বললেন, তোমরা কি একজন প্রবীণ কুরায়শ নেতাকে এমন কথা বলছ? এরপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে তাকে বিষয়টি অবহিত করলেন। তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ বকর! তুমি বোধ হয় তাদের রাগিয়েছ। যদি তুমি তাদের রাগিয়ে থাক তাহলে তুমি তাদের রবকেই রাগিয়েছ। এরপর আবূ বকর (রাঃ) তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, হে ভাই সকল! আমি তোমাদের রাগিয়েছি, তাই না? তারা বললেন, না, হে ভাই! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিন।

৬১৮৭। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী ও আহমাদ ইবনু আবদা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “তোমাদের দু-টি গোত্র যখন পলায়ন করতে যাচ্ছিল, আর আল্লাহই তাদের অভিভাবক”। এই আয়াত আমাদের অর্থাৎ বানূ সালিমাহ ও বানূ হারিসাহ সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। আর আমরা চাইতাম না যে, এই আয়াতটি নাযিল না হোক। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ এদের উভয়ের পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক।”

৬১৮৮। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) যায়িদ ইবনু আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আনসারদের ক্ষমা করুন, ক্ষমা করে দিন তাদের পূত্র ও পৌপত্রকে। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) সূত্রে শুবা (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত।

৬১৮৯। আবূ মা’আন রাকাশী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু তালহার পুত্র ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আনাস (রাঃ) তাকে হাদিস শুনিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের জন্য মাগফিরাত কামনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি মনে করি যে, তিনি বলেছেনঃ আনসারদের সন্তান সন্ততি ও তাএর ‘মাওলা’ (আযাদকৃত গোলাম) দের জন্য আশ্রিত ব্যাক্তিবর্গের মাগফিরাতের দু’আ করেছেন। আমি তাতে কোন সন্দেহ পোষণ করছি না।

৬১৯০। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতক বালক ও মহিলাকে কোন এক উৎসব অনুষ্ঠান থেকে আসতে দেখেন। তখন তিনি দাড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর কসম! তোমরা (আনসাররা) আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ, তোমরা আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ।

৬১৯১। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনুল বাশশার (রহঃ) হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, এক আনসারী মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে নির্জনে আলাপ করলেন এবং বললেন, যার হাটে আমার জীবন সেই সত্তার কসম, তোমরা আমরা কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ। তিনি এই কথাটি তিনবার বলেন। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) অন্য সুত্রে বাকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ করায়ব (রহঃ) শু’বার সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১৯২। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারিগন আমার পাকস্থলী ও সিন্দুক তুল্য। আমার একান্ত ও বিশিষ্ট জন। আর মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়বে এবং তাদের (আনসারদের) সংখ্যা হরাস পেতে থাকবে। সতরাং তাদের ভালো আচরণকারীদের গ্রহন করবে এবং তাদের মন্দ আচরণকারীদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।

৬১৯৩। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ উসায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসার গোত্রসমুহের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্র হচ্চে বনু নাজ্জার, এরপর বনু আশহাল, এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ, এরপর হচ্ছে বনু সাইদাহ গোত্র। আনসারীদের সকল গোত্রের কল্যান নিহিত আছে। সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উপর অন্যদের প্রাধ্যান্য দিয়েছেন। (তাকে) বলা হল, তোমাদেরকেও অনেকের উপর মর্যাদা দিয়েছেন।

৬১৯৪। ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে।

৬১৯৫। কুতায়বা ও ইবনু রুমহ, অন্য সুত্রে কুতায়বা, অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আনাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তাঁর বর্ণিত হাদিসে সা’দ (রাঃ) এর কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬১৯৬। মুহাম্মদ ইবনুল আব্বাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান (রহঃ) ইবরাহিম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ উসায়দ (রাঃ) কে ইবনু উতবার কাছে ভাষণ দিতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারদের ঘরসমুহের মধ্যে উত্তম গোত্র হচ্ছে বনু নাজ্জার, বনু আবদুল আশহাল, বনু হারিছ ইবনু খাযরাজ এবং বনু সাইদাহ। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যদি এই বিষয়ে কাউকে (মর্যাদার) প্রাধান্য দিতাম তাহলে আমার গোত্রকে অগ্রাধিকার দিতাম।

৬১৯৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী (রহঃ) আবূ সালাম (রহঃ) সাক্ষ্য দেন যে, তিনি আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) কে সাক্ষ্য দিতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আনসারীদের গোত্রসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে বনু নাজ্জার, এরপর বনু আবদুল আশহাল, এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ, এরপর বনু সাঈদার ঘর। এ ছাড়া প্রত্যেক আনসারীর ঘরেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আবূ সালাম (রহঃ) বলেন, আবূ উসায়দ (রাঃ) বলেছেন, যদি আমি মিথ্যাবাদী হতাম তাহলে আমি আমার গোত্র বনু সাইদাহ দিয়ে শুরু করতাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপের অভিযোগে অভিযুক্ত হব? বিষয়টি সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) এর নিকট পৌছলে তিনি মনকষ্ট পেলেন এবং তিনি বললেন, আমাদের পেছনে রাখা হয়েছে। আমা চার জনে মধ্যে শেষ স্থানে (পড়ে গেছি)? আমার গাধার পীঠে গদি লাগাও। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাব। তখন তাঁর সঙ্গে আমার ভাইপো সাহল কথা বলল। সে বলল, আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রতিবাদ জানানোর জন্য যাবেন, অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক জ্ঞাত। চার জনের মধ্যে চতুর্থ হওয়া কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? তখন তিনি থামলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল সর্বাধিক জ্ঞাত। এরপর তিনি তাঁর গাধার জ্বীন খুলতে নির্দেশ দিলেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন।

৬১৯৮। আমর ইবনু আলী ইবনু বাহর (রহঃ) আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, খাইরুল আনসার “সর্বোত্তম আনসার” অথবা খাইরুররই আল আনসার “আনসারদের সর্বোত্তম গোত্র” আররুরি উল্লেখ করার ক্ষেত্রে তাদের বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ। তবে তিনি তাঁর বর্ণনায় সা’দ ইবনু উবাদার ঘটনা উল্লেখ করেননি।

৬১৯৯। আমর নাকিদ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ সালাম ও উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসউদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের একটি বিরাত গনজমায়েতে বললেনঃ আমি কি তোমাদের কাছে আনসারদের সর্বাপেক্ষা উত্তম গোত্র সম্পর্কে বর্ণনা করব? তখন তারা বললেন, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বনু আবদুল আশাহাল। তারা বললেন, এরপর কারা ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেন এরপর বনু নাজ্জার। তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, এরপর কারা? তিনি বললেনঃ এরপর বনু হারিস ইবনু খাযরাজ। তারা বললেন, এরপর কারা ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেনঃ বনু সাইদাহ। তারা বললেন, এরপর কারা? তখন তিনি বললেন, আনসারীদের প্রত্যেক গোত্রেই কল্যাণ নিহিত আছে। তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, আমরা কি চারের মধ্যে সর্বশেষ? যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করলেন তখন তিনি তাঁর সাথে কথা বলার ইচ্ছা করছিলেন। তখন তাঁর গোত্রের কতিপয় ব্যাক্তি তাকে বলল, আপনি বসে পড়ুন। আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে চারটি গোত্রের কথা বলেছেন তাঁর মধ্যে আপনার গোত্রকে স্থান দিয়েছেন? এমন অনেক ঘরই রয়েছে, যাদের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। তখন সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কে জিজ্ঞাসা করা) এর কথা বলা থেকে বিরত থাকলেন।

৬২০০। নাসর ইবনু আলী জাহযামী, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ)-এর সংগে এক সফরে বের হলাম। এই সফরে তিনি আমার খিদমত আঞ্জাম দিতেন। তখন আমি তাকে বললাম- এরুপ করবে না। তিনি বললেন- আমি নিশ্চিত দেখেছি যে, আনসারগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে এরুপ খিদমত আঞ্জাম দিতেন। তখন আমি কসম করেছি যে, যখন আমি আননারদের ক্যরো সাথী হব তখন তাঁর খিদমত করব। ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার তাদের বর্ণিত হাদীসে বাড়িয়ে বলেছেন, অর্থাৎ জারীর আনাসের চাইতে বড় ছিলেন। আর ইবনু বলেছেন, তিনি আনাসের তুলনায় প্রবীণ ও অধিক বয়স্ক ছিলেন।

৬২০১। হাদ্দাব ইবনু খালিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ যার (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আসলাম গোত্রকে আল্লাহ জন্য নিরাপত্তা ও শান্তি প্রদান করেছেন।

৬২০২। উবায়দুল্লাহ আল কাওয়ারীরী, মুহাম্মাদ ইবনুল মুনান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ তুমি তোমার গোত্রের কাছে যাও এবং বলে দাও যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা দান করেছেন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।

৬২০৩। ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) শুবার সূত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত।

৬২০৪। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না, ইবনু বাশশার, সূয়াইদ ইবনু সাঈদ ও ইবনু আবূ উমর (রহঃ) অন্য সূত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) আরেক সুত্রে ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) অন্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আরেক সুত্রে সালামা ইবনু শাবীব (রহঃ) জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা আসলাম গোত্রের নিরাপত্তা বিধান করেছেন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।

৬২০৫। হুসায়ন ইবনু হুরায়স (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তা দান করেছেন এবং গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবে এ কথা আমি বলিনি বরং আল্লাহ তাঁআলাই ইরশাদ করেছেন।

৬২০৬। আবূ তাহির (রহঃ) খাফফাফ ইবনু ঈমা আল গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সালাতের দুআয় বলেছেনঃ হে আল্লাহ! বানূ লিহয়ান, যাকওয়ান ও উসায়্যাহ গোত্রের উপর লানত বর্ষণ কর। কেননা, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নাফরমানী করেছে। আর গিফারকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এবং আসলামকে নিরাপত্তা দান করেছেন।

৬২০৭। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, ইবনু আইউব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গিফার গোত্রকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন, আসলাম গোত্রকে নিরাপত্তা দান করেছেন। আর উসায়্যাহ গোত্র আল্লাহ ও তার রাসুলের নাফরমানী করেছে।

৬২০৮। ইবনুল মূসান্না (রহঃ) অন্য সুত্রে আমর ইবনু সাওয়াদ (রহঃ) আরেক সুত্রে যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু উযাব (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুত্রে অনুরুপ বর্নিত। তবে সালিহ ও উসামা বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ পূর্বক এই কথা বলেছেন। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আবূ সালামা (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন যে, ইবনু উমর (রাঃ) উপরোক্ত ব্যক্তি বর্গের বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন।

৬২০৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ আয়্যুব (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাম, গিফার, মুযায়না, জুহায়না, আশজা এবং বানূ আবদুল্লাহ আমার বন্ধুলোক, অন্যরা নয়। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এদের অভিভাবক।

৬২১০। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরায়শ, আনসার, মুযায়না, জুহায়না, আসলাম, গিফার, আশজা’ আমার বন্ধুলোক। আর আল্লাহ তাআলা ও তার রাসূল ব্যতিরেকে তাদের কোন অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক নেই।

৬২১১। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) সা’দ ইবনু ইবরাহীম (রাঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে সা’দ তাঁর বর্ণিত হাদীসে কোন কোন সময় বলেছেন, “আমার জানা মতে।”

৬২১২। মুহাম্মদ ইববুল মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আসলাম, গিফার, মুযায়না এবং যারা জুহায়নার অন্তর্ভুক্ত অথবা জুহায়না গোত্র বানূ তামীম, বানূ আমির এবং তাদের দুমিত্র আসা’দ ও গাতফানের চাইতে উত্তম।

৬২১৩। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) অন্য সুত্রে আমর নাকিদ, হাসান আল হুলওয়ানী ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আরাজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেই সত্তার কসম যার নিয়ন্ত্রণে মুহাম্মাদের জীবন! গিফার, আসলাম, মূযায়না এবং যারা জুহায়নার অন্তর্ভুক্ত তাঁরা আল্লাহর নিকট কিয়ামত দিবসে উত্তম বলে বিবেচিত হবেন আসা’দ, তাঈ ও গাতফান গোত্র থেকে।

৬২১৪। যুহায়র ইবনু হারব ও ইয়াকুব আদ দাওরাকী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আসলাম, গিফার, মূযায়না ও জুহায়নার কিছু অংশ অথবা জুহায়না ও মূযায়নার কতিপয় লোক আল্লাহর নিকট-বর্ণনাকারী বলেন যে, আমার মনে হয় বলেছেন, কিয়ামত দিবসে আসা’দ, গাতফান, হাওয়াযিন ও তামীম গোত্রের চাইতে উত্তম বলে গণ্য হবে।

৬২১৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) অন্য সুত্রে মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ), আবূ বাকারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আকরা ইবনু হাবিস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। এরপর তিনি বললেন, আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহন করেছেন। হাজীদের মাল সামান চুরিতে অভস্ত্য আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়নার লোকেরা (জুহায়নার উল্লেখের ব্যাপারে রাবী মুহাম্মদের সন্দেহ)। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে কর? যদি আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়না (নামটি উল্লেখে রাবীর সন্দেহ) ও বনূ তামীম, বনূ আমির, আসা’দ ও গাতফানের চাইতে উত্তম হলে (কেমন হয়)। আর তাহলে এরা লোকসানের সম্মুখীন হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে? তখন তিনি (আবার) বললেন, হ্যাঁ। এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সেই সত্তার কসম যার নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, নিশ্চয়ই এরা তাদের তুলনায় উত্তম। তবে ইবনু আবূ শায়বার হাদিসে রাবী মুহাম্মদের সন্দেহের কথাটির উল্লেখ নেই।

৬২১৬। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) বনূ তামীম গোত্রের দলপতি মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াকুব দাবীয়া (রহঃ) এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় রাবী ওয়া জুহায়না (এবং জুহায়না নিশ্চিত রুপে বলেছেন) এবং আহছিবু (আমি মনে করি) বলেন নি।

৬২১৭। নাসর ইবনু আলী আল জাহযামী (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) সুত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আসলাম, গিফার, মুযায়না ও জুহায়না গোত্র, বনূ তামীম, বনূ আমির এবং তাদের দুই মিত্র আসা’দ ও গাতফানের চাইতে উত্তম।

৬২১৮। মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) অন্য সুত্রে আমর নাকিদ (রহঃ), আবূ বিশর (রহঃ) এর সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬২১৯। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বলত, যে যদি জুহায়না, আসলাম, গিফার গোত্র বনূ তামীম, বনূ আবদুল্লাহ ইবনু গাতফান ও আমির ইবনু সা’সা’আহ এর চাইতে উত্তম হয়। (এ কথা বলার সময়) তিনি তাঁর আওয়াজ বুলন্দ করলেন। তখন তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তবে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই এরা তাদের চাইতে উত্তম। তবে আবূ কুরায়ব (রহঃ) এর বর্ণিত হাদিসে “তোমরা বলতো যে যদি জুহায়না, মুযায়না, আসলাম, ও গিফার” – এভাবে কথাটির উল্লেখ রয়েছে।

৬২২০। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর কাছে এলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, প্রথম যে সাদাকা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের চেহারা (আনন্দে) উজ্জল করেছিল তা হচ্ছে তাঈ গোত্রের সাদাকা- যা আমি নিজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে এসেছিলাম অথবা যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল।

৬২২১। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফায়ল ও তাঁর সঙ্গিরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! দাওস গোত্রের কুফরী (ইখতিয়ার) করেছে এবং (ইসলাম গ্রহনে) অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। সুতরাং আপনি তাদের বিরুদ্ধে বদ দু’আ করুন। তখন বল হল, দাওস নিপাত হয়ে গেল। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌ দাওসকে হিদায়াত নসীব করুন এবং তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে আসুন”।

৬২২২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ যুরআ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি তিনটি কারনে বনূ তামীমকে ভালবাসতে থাকব। যা (তিনটি বিষয়ে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, এরা আমার উম্মাতের মধ্যে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। বর্ণনাকারী বলেন, যখন তাদের সাদাকা এল তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা আমাদের সম্প্রদায়ের সাদাকা। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের গোত্রের কোন বন্দিনী আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্তি দাও! কেননা, সে ইসমাঈল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বংশধর। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনূ তামীম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তিনটি কথা শোনার পর আমি তাদের ভালবাসতে থাকি। এরপর তিনি অনুরুপ উল্লেখ করেন।

৬২২৩। হামিদ ইবনু উমর আল-বাকরাবী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বনূ তামীম সম্পর্কে তিনটি বিশিষ্টের কথা শুনেছি। এরপর থেকে আমি তাদের ভালবাসতে শুরু করি। এরপর তিনি এই উপরোক্ত অর্থযুক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। তবে এই বর্ণনায় দাজ্জালের কথা উল্লেখ করেননি। এর স্থলে বলেছেনঃ তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা দুর্ধর্ষ লড়াকু।

৬২২৪। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের মৌলিক গুনাবলী সম্পন্ন (খনিজ ও গুপ্তধনের মত) দেখতে পাবে। সুতরাং যারা জাহিলিয়াত যুগে উত্তম ছিল তারা ইসলামেও উত্তম হবে, যখন তাঁরা দ্বীনে সমঝদার হবে। অথবা তোমরা এই বিষয়ে অর্থাৎ ইসলামে উত্তম লোক দেখতে পাবে যারা এতে প্রবিষ্ট হওয়ার আগে চরম ইসলাম বিদ্বেষী ছিল, আর তোমরা সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক হিসাবে দেখতে পাবে সে সব মানুষকে, যারা দু’মুখো এর এই দলের কাছে একমুখে কথা বলে আবার আরেক দলের কাছে এসে আরেক মুখে কথা বলে।

৬২২৫। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের মৌলিক গুনাবলী ভূষিত (খনির মত) পাবে। এরপর যুহরীর হাদিসের অনুরুপ। তবে আবূ যুর’আ ও আ’রাজের বর্ণিত হাদিসঃ অর্থাৎ তোমরা এ (ইসলামের) বিষয়ে উত্তম লোকদের মধ্যে পাবে তাদের যারা এতে প্রবিষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এর প্রতি অতিশয় বিদ্বেষ পোষণকারী।

৬২২৬। ইবনু আবূ উমর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বোত্তম নারী যারা উটে সওয়ার হয়। বর্ণনাকারী একজন বলেন, কুরায়শী পুণ্যবতী মহিলারা। অন্য জন বলেন, কুরায়শী মহিলারা যারা ইয়াতিমের প্রতি তাদের শৈশব অত্যন্ত মায়াবতী এবং যারা তাদের স্বামীর ধন-সম্পদের অত্যন্ত হিফাযতকারিনী।

৬২২৭। আমর নাকিদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে (অর্থাৎ মারফু করেছেন) এবং ইবনু তাউস (রহঃ) থেকে যা তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন (মারফু করেছেন)। তবে এই বর্ণনায় এইটুকু পার্থক্য রয়েছেঃ অর্থাৎ তারা তাদের শিশুদের প্রতি অতন্ত্য দয়াশীল, তাদের শৈশবে” এবং তিনি “ইয়াতিম” শব্দটি বলেন নি।

৬২২৮। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, কুরায়শী মহিলারা সর্বোত্তম মহিলা। তারা উটের পিঠে সাওয়ার হয়ে থাকেন। তারা শিশুদের প্রতি মেহেরবান এবং স্বামীর ধন-সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নেগাহবান। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) এভাবেই বলতেন। আর মারযাম বিনত ইমরান (রাঃ) কখনো উটের পিঠে আরোহণ করেননি।

৬২২৯। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মে হানীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার সন্তান সন্ততি আছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি সর্বাপেক্ষা উত্তম রমনী। এরপর মামার ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেন। তরে তার বর্ণনায় এতে পার্থক্য যে, তিনি বলেন, অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি মেহেরবান ও যত্নশীল হয়ে থাকেন।

৬২৩০। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ উত্তম মহিলা হচ্ছে তারাই যারা উটে সাওয়ার হয়ে থাকে। কুরায়শী মহিলারাই নেককার। তারা তাদের সন্তানদের প্রতি শৈশবে যত্নবান এবং স্বামীর ধন-সস্পদের প্রতি নেগাহবান।

৬২৩১। আহমাদ ইবনু উসমান ইবনু হাকীম আল আরদী (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মামার -এর হাদীসের অনুরুপ।

৬২৩২। হাজ্জাজ ইবনু শাঈর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) ও আবূ তালহা (রাঃ)-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্হাপন করে দিয়েছিলেন।

৬২৩৩। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) আসিম ইবনুল আহওয়াল (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কাছে এ মর্মে রেওয়ায়াত করেছেন কি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে কোন হলফ-মৈত্রী বন্ধন নেই? তখন আনাস (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ ও আনসারদের মধ্যে তাঁর ঘরে বসেই মৈত্রী স্হাপন করেছিলেন।

৬২৩৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়শ ও আনসারদের মধ্যে মদ্বীনাতে তার ঘরে বসেই মৈত্রী বন্ধন স্হাপন করে ছিলেন।

৬২৩৫। আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইসলামে কোন হলফ নেই। তবে জাহিলিয়া যুগে ভাল কাজের জন্য যে সহলফ করা হয়েছে তা ইসলামে আরও দূঢ় ও মযবুত হয়েছে।

৬২৩৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আবান (রহঃ) আবূ বুরদাহ (রাঃ)-এর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংগে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। এরপর আমরা বললাম- যদি আমরা তাঁর সংগে ইশার সালাত আদায় করা পর্যন্ত বসতে পারতাম (তাহলে ভাল হত। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বসে থাকলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। এরপর বললেনঃ তোমরা এখানে কতক্ষণ পর্যন্ত বসে আছ? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা আপনার সংগে মাগরিবের সালাত আদায় করেছি। এরপর আমরা বললাম যে, ইশার সালাত আপনার সংগে আদায় করার জন্যে বসে আছি। তিনি বললেনঃ তোমরা বেশ ভাল করেছ অথবা তোমরা ঠিকই করেছ। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আসমানের দিকে মাথা উত্তোলন করলেন এবং তিনি অনেকক্ষণ ধরে তাঁর মাথা আসমানের দিকে তুলে রাখছিলেন। এরপর বললেনঃ তারকারাজি আসমানের জন্য রক্ষাকবচ স্বরুপ। যখন তারকারাজি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তখন আসমানের জন্য প্রতিশ্রুত বিপদ আসন্ন হবে (অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হবে)। আর আমি আমার সাহাবীদের জন্য রক্ষাকবচ স্বরুপ। যখন আমি বিদায় নেব তখন আমার সাহাবীদের উপর প্রতিশ্রুত সময় সমুপস্হিত হবে (অর্থাৎ ফিতনা-ফাসা’দ ও যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়ে যাবে)। আর আমার সাহাবীগণ সমগ্র উম্মাতের জন্য রক্ষাকবচ স্বরুপ। যখন আমার সাহাবীগণ বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উম্মাতের উপর প্রতিশ্রুত সময় উপস্থিত হবে (অর্থাৎ শিরক, বিদঁআত ছড়িয়ে পড়বে, ফিতনা-ফাসা’দ সৃষ্টি হবে, শয়তানের শিং উদয় হবে, নাসারাদের রাজত্ব কায়েম হবে, মক্কা ও মদ্বীনার অবমাননা করা হবে ইত্যাদি)।

৬২৩৭। আবূ খায়সামা যুহায়র ইবনু হারব ও আহমাদ ইবনু আবদা আদ-দাবিয়্যু (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে, যখন তাদের একদল জিহাদ করতে থাকবে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন? তারা বলবে, জ্বি হ্যা। তখন তাঁরা বিজয় লাভ করবে। এরপর মানুষের মধ্য থেকে একদল যুদ্ধ করতে থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন ব্যক্তি আছেন, যিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণকে দেখেছো? তারা বলবে, জি হ্যা। তখন তারা বিজয় লাভ করবে। এরপর মানুষের আরেকটি দল জিহাদ করতে থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে।, যিনি সাহাবীদের সাহচর্য লাভকারী অর্থাৎ তাবিঈকে দেখেছেন? তখন লোকেরা বলবে, জি হ্যা। তখন বিজয় তাদের মুঠোয় এসে যাবে। এরপর আরেকদল যুদ্ধরত থাকবে। তখন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তাবিঈনের সাহচর্য লাভকারী অর্থাৎ তাবি-তাবিঈকে দেখেছেন? লোকেরা বলবে, জি হ্যা। তখন তাঁদের হাতেই বিজয় মাল্য আসবে।

৬২৩৮। সাঈদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ উমাবী জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মনে করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের উপর এমন যুগ আসবে, যখন তাদের মধ্য থেকে কোন অভিযাত্রী দল প্রেরণ করা হবে। এরপর লোকেরা বলাবলি করবে, খুঁজে দেখ, তোমাদের মধ্যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের কাউকে পাও কি না। তখন একজন সাহাবী পাওয়া যাবে। এরপর তাঁর বদৌলতে তাদের বিজয় অর্জিত হবে। এরপর তিনি সেনাদল পাঠানো হবে। তখন লোকেরা বলবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন ব্যক্তি আছেন, যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের দেখেছেন? তখন একজন (তাবিঈ)-কে পাওয়া যাবে। এরপর তাদের বিজয় অর্জিত হবে। এরপর তৃতীয় সেনাদল পাঠানো হবে। তখন জিজ্ঞাসা করা হবে, অনুসন্ধান করে দেখ, এদের মধ্যে তাদের কাউকে দেখতে পাও কি না, যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের সাহাচর্যলাভকারী অর্থাৎ তাবিঈদের অন্তভূক্ত এরপর চতুর্থ সেনাদলের পালা। তখন বলা হবে দেখ, তোমরা এদের মধ্যে এমন কাউকে পাও কি-না, যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীদের সাহচর্য লাভকারীদের সাহচর্য লাভকারী অর্থাৎ কোন তাবে-তাবিঈকে দেখেছেই তখন এক ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে। এরপর তার বদৌলতে তাদের বিজয় অর্জিত হবে।

৬২৩৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও হান্নাদ ইবনু সাররী (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা আমার যুগের সংযুক্ত (অর্থাৎ সাহাবীগন), এরপর তাদের নিকটবর্তী সন্নিহিত যুগ (অর্থাৎ তাবিঈগন), এরপর তাদের সন্নিহিত যুগ (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈন)। এরপর এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে যারা কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে। আর হান্নাদ তাঁর হাদিসে আলকারনু (অর্থাৎ যুগ বা সময়) শব্দটি উল্লেখ করেননি এবং কুতায়বা বলেছেন সুম্মা ইয়াজিউ আকওয়াম অর্থাৎ অনেক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে।

৬২৪০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম আল-হানযালী (রহঃ) আবদুল্লাহ এবন মাসঊদ (রাল) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ কারা? তিনি বললেন, আমার যুগ। এরপর তাদের নিকটবর্তী যুগ, এরপর তাদের নিকটবর্তী যুগ। এরপর এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে, যাদের কসম সাক্ষ্যের আগেই ত্বরান্বিত হবে এবং সাক্ষ্য কসমের আগেই সংঘটিত হবে। ইবরাহীম বলেছেন, আমাদের শৈশবে তারা (মুরুব্বিগণ) আমাদের কথায় কথায় সাক্ষ্যদান থেকে নিষেধ করতেন।

৬২৪১। মুহাম্মদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূল আহওয়াস ও জারীর (রহঃ) এর সনদে মানসুর (রহঃ) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে তাদের দুই জনের হাদিসেঃ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল” এটার উল্লেখ নেই।

৬২৪২। হাসান ইবনু আলী আল-হুলওয়ানী (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ আমার যুগ (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবীঈগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈগন)। এরপর তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সম্পর্কে। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তাদের পরবর্তী এমন লোক আসবে, যাদের কেউ কেউ কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে।

৬২৪৩। ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা চাল মানুষ তারা, যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়েছি (অর্থাৎ সাহাবীগণ)। এরপর তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজন (অর্থাৎ তাবীঈগণ)। আর আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত যে, এরপর তিনি তৃতীয়টি উল্লেখ করেছেন কি করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর এমন এক জাতির উদ্ভব হবে, যারা মোটাতাজা হওয়া (বিলাসিতাপূর্ণ) পানাহার ও জীবন যাপন পছন্দ করবে এবং সাক্ষ্য চাওয়ার পূর্বেই সাক্ষ্য দান করবে।

৬২৪৪। ভিন্ন ভিন্ন সনদে মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) আবূ বকর ইবনু নাফি (রহঃ) এজাজ ইবনু শাইর (রহঃ) আবূ বিশর (রহঃ) থেকে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। তবে শু’বা বর্ণিত হাদিসে এতটুকু পার্থক্য রয়েছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, আমি জানি না যে, তিনি দু’বার কিংবা তিনবার বলেছেন।

৬২৪৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম আমার যুগের লোকেরা। এরপর তারা যারা তাদের সন্নিহিত। এরপর যারা তাদের সন্নিহিত যুগ। এরপর তারা যারা তাদের সন্নিহিত যুগ। ইমরান (রাঃ) বলেন, আমি জানি না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর যুগের পর দু’বার না কি তিনবার উল্লেখ করেছেন। এরপর তাদের পরবর্তী এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হবে যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। আর তারা খিয়ানত করবে এবং তাদের আমানতদার মনে করা হবে না। তারা মানত করবে অথচ তা পুরন করবে না। আর তাদের মধ্যে স্থুলতা (বিলাসিতা) প্রকাশ পাবে।

৬২৪৬। ভিন্ন ভিন্ন সনদে মুহাম্মদ ইবনু হাতিম (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনু বিশর আবদী (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) শু’বা (রাঃ) সুত্রে এই সনদে অনুরুপ বর্ণিত আছে। আর তাদের (অর্থাৎ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ, বাহয ও শাবাবাহ) বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেছেনঃ “আমি জানি না যে, তিনি কি তাঁর যুগের পড়ে দু’যুগ অথবা তিন যুগের কথা উল্লেখ করেছেন, শাবাবাহ বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেছেন, আমি যাহদাম ইবনু মুদাররাব থেকে শুনেছি, তিনি আমার কাছে ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করে কোন প্রয়োজনে এসেছিলেন। এরপর তিনি আমাকে হাদিস শোনান যে, তিনি ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে শুনেছেন। আর ইয়াহহিয়া ও বাহয বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছেঃ তারা মানত করবে কিন্তু তা পুরন করবে না। আর বাহয বর্ণিত হাদিসে ইবনু জাফর এর বর্ণনা অনুযায়ী “ইয়উফুনু” শব্দ আছে।

৬২৪৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল মালিক উমাবী (রহঃ) ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই হাদিসটি বর্ণিত। এই বর্ণনায় আছে, এই উম্মাতের সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে সে যুগ, যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়ছি (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর তারা যারা এদের সন্নিহিত। আবূ আওয়ানা বর্ণিত হাদিসে অধিক আছে যে, তিনি বলেন, আল্লাহই ভালো জানেন, তিনি তৃতীয়টি উল্লেখ করেছেন কি না? ইমরান (রহঃ) থেকে যাহদাম (রহঃ) বর্ণিত হাদিসের অনুরুপ। কাতাদা (রহঃ) এর সুত্রে হিশাম বর্ণিত হাদিসে এতটুকু বেশি আছে যেঃ অর্থাৎ তারা হলফ করবে অথচ তাদের কাছে হলফ চাওয়া হবে না।

৬২৪৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও শুজা ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করল, সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ কে? তিনি বললেনঃ সেই যুগ, যাতে আমি প্রিরিত হয়েছি। এরপর দ্বিতীয় যুগ, এরপর তৃতীয় যুগ।

৬২৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ প্রান্তে একরাতে আমাদের সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করলেন। তিনি সালাম শেষে দাড়িয়ে বললেনঃ তোমরা এই রাত সম্পর্কে লক্ষ্য করেছ? (শোন) এর একশ বছরের মাথায়, আজ যারা পৃথিবীর পৃষ্ঠে বিদ্যমান আছে তাদের কেউ জীবিত থাকবে না। ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তখন লোকেরা একশ বছর সংক্রান্ত এই সব হাদিসের বর্ণনায় ভ্রান্তিতে পড়ে গেল। মুলতঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আজ যারা পৃথিবী পৃষ্ঠে বর্তমান আছে তাদের কেউ বাকী থাকবে না” অর্থাৎ এই যুগের পরিসমাপ্তির কথা বুঝাতে চেয়েছেন।

৬২৫০। আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান দারিমী (রাঃ) থেকে যুহুরী (রহঃ) থেকে মা’মার (রহঃ) তাঁর সনদে অনুরুপ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

৬২৫১। হারুন ইবনু আবদুল্লাহ ও হাজ্জাজ ইবনু শায়ির জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে তাঁর ইন্তেকালের এক মাস পুর্বে বলতে শুনেছি যে, তোমরা আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ, অথচ তার জ্ঞান তো আল্লাহরই কাছে। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণবন্ত জীব নেই, যার উপর একশ- বছর পূর্ণ হবে। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ইবনু শুরায়জের সুত্রে এই সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার ওফাতের এক মাস পূর্বে- কথাটি উল্লেখ করেননি।

৬২৫২। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)- সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর ইন্তেকালের একমাস পূর্বে বা অনুরুপ সময়ে বলেছেন যে, যেসব প্রানী আজ জীবিত আছে, তাদের উপর একশ- বছর অতিবাহিত হতেই তারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। ‘সিকায়া’- গ্রন্থাকার আব্দুর রহমান (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরুপ বর্ণিত। আবদুর-রহমান (রহঃ) আয়ুহরাস পাবে বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

৬২৫৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও সুলায়মান তাইমী (রহঃ) সকলেই তাঁর অনুরুপ বর্ণনা করেন।

৬২৫৪। ইবনু নুমায়র (রহঃ) অন্য সুত্রে আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক অভিযান থেকে ফিরে এলে লোকেরা তাঁকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একশ বছর অতিক্রান্ত হলে এখনকার- কোন ব্যক্তি জীবিত থাকবে না।

৬২৫৫। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন জীবন (ব্যক্তি) শতবর্ষ পর্যন্ত পৌছবে না। তখন সালিম (রহঃ) বললেন, আমরা বিষয়টি তাঁর (জাবির) নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, এই কথা দ্বারা আজকের নবজাতক সকলকে বুঝানো হয়েছে।

৬২৫৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামিমী, আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও মুহাম্মাদ ইবনুল আলা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করো না। তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ করবে না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদের সমান হবে না।

৬২৫৭। আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) অন্য সুত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) আরেক সুত্রে ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে জারীর ও আবূ মুআবিয়ার সনদে তাদের হাদীসের অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। তবে শুবা ও ওয়াকী -এর হাদীসে আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই।

৬২৫৮। আবূ সাঈদ আশাজ্জ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) অন্য সূত্রে উবায়দুল্লাহ ইবনু মুয়ায (রহঃ) আরেক সূত্রে ইবনুল মূসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে জারীর ও আবূ মুয়াবিয়ার সনদে তাঁদের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে শু’বা ও ওয়াকী – এর হাদীসে আব্দুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ) ও খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) – এর উল্লেখ নেই।

৬২৫৯। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুফার একটি প্রতিনিধি দল উমর (রাঃ)-এর কাছে এলো। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও ছিল, যে উওয়াস (রহঃ)-কে উপহাস করত। তখন উমর (রাঃ) বললেন, এখানে করনী গোত্রের কোন লোক আছে কি? তখন সেই লোকটি এলো। এরপর উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে ইয়ামন থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যে উওয়াস নামে পরিচিত। ইয়ামানে তাঁর মা ব্যতীত কেউ থাকবে না। তার শ্বেতরোগ হয়েছিল। সে আল্লাহর কাছে দূআ করার বদৌলতে আল্লাহ তাকে শ্বেত রোগ মুক্ত করে দেন। তবে কেবল মাত্র এক দ্বীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্হান বাকী থাকে। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর সাক্ষাৎ পায় সে যেন নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনা করে।

৬২৬০। যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে উওয়াস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছে এবং তার শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দুআ করে।

৬২৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম হানযালী, মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল, যখন ইয়ামনের কোন সাহায্যকারী দল তার কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উওয়াস ইবনু আমির আছে? অবশেষে তিনি উওয়াসকে পান। তখন তিনি বললেন, তুমি কি উওয়াস ইবনু আমির? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, মুরাদ গোত্রের কারান বংশের? বললেন, হাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে, কেবলমাত্র এক দিরহাম স্হান ব্যতীত? তিনি বললেন, হ্যা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা কি আছেন? তিনি বললেন, হ্যা। তখন উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ “তোমাদের কাছে মুরাদ গোত্রের কারান বংশের উওয়াস ইবনু আমির ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তাঁর ছিল শ্বেত রোগ। পরে তা নিরাময় হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র এক দিরহাম ব্যতিরেকে। তার মা রয়েছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ন। এমন ব্যক্তি আল্লাহর উপর কসম করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। কাজেই যদি তুমি তোমার জন্য তার কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনার সুযোগ পাও তাহলে তা করবে।” সূতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন। তখন উওয়াস (রহঃ) তার মাগফিরাতের জন্য দুআ করলেন। এরপর উমার (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? তিনি বললেন, কুফা এলাকায়। উমার (রাঃ) বললেন, আমি কি তোমার জন্য কুফার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি অখ্যাত গরীব লোকদের মধ্যে থাকাই পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছরে তাদের অতিজাত লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাজ্জ করতে এলো এবং উমার (রাঃ)-এর সংগে তার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি তাকে উওয়াস কারানী (রহঃ)-এর অবস্হা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি তাঁকে জীর্ণ গৃহে সম্পদহীন অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কাছে কারান বংশের মূরাদ গোত্রের উওয়াস ইবনু আমির (রাঃ) ইয়ামানের একদল সাহায্যকারীর সঙ্গে আসবে। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে তা থেকে আরোগ্য লাভ করে, এক দিরহাম পরিমাণ স্হান ব্যতীত। তাঁর মা রয়েছেন, সে তার অতি সেবাপরায়ণ। যদি সে আল্লাহর নামে কসম খায় তবে আল্লাহ তা’আলা তা পূর্ণ করে দেন। তোমরা নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ চাওয়ার সুযোগ পেলে তা করবে। সে ব্যক্তি উওয়াসের কাছে এল এবং বলল, আমার জন্য মাগফিরাত-এর দুআ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর থেকে।

৬১৬২। আবদুল্লাহ ইবনু রহমান দারিমী (রহঃ) আবূ সালামা ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি হাসসান ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) কে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে সাক্ষী করে বলতে শুনেছেন যে, যে আবূ হুরায়রা! আমি আপনাকে আল্লহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, হে হাসসান! তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে জবাব দাও, হে আল্লাহ্‌! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা মদদ করুন? তখন আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ।

৬১৬৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাসসান ইবনু ছাবিতের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তুমি তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা রচনা কর, অথবা বলেছেন, তুমি তাদের ব্যাঙ্গ কবিতার উত্তর দাও। জিবরীল (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার সঙ্গে রয়েছেন। যুহায়র ইবনু হারব, আবূ বাকর ইবনু নাফি, ইবনু বাশশার (রহঃ) ভিন্ন ভিন্নরূপে শু’বা (রহঃ) থেকে উক্ত সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬১৬৪। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) হিশাম (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণনা করেন যে, হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) সেসব লোকের মধ্যে শামিল ছিলেন যারা আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছিলেন। তাই আমি তাকে গালাগালি করেছিলাম। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমার ভগ্নিপুত্র! তাকে ছেড়ে দাও। কেননা তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কাফিরদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ কবিতা দ্বারা প্রতিরোধ করতেন।

৬১৬৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন।

৬২৬৬। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যদি দ্বীন আসমানের দূরবর্তী সূরায়য়া নক্ষত্ররাজির কাছে থাকত তাহলে পারস্যের যে কোন ব্যক্তি তা নিয়ে আসত; অথবা তিনি বলেছেন কোন পারসিক সন্তান তা অর্জন করত।

৬২৬৭। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসা ছিলা। তখন তার উপর সূরা জুমুআ নাযিল হল। যখন তিনি এই আয়াত পড়লেন ‘অ আখিরিনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকুনা বিহিম’ তখন জনৈক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এরা কারা? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কোন উত্তর দিলেন না। এমন কি সে একবার অথবা দু”বার কিংবা তিনবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করল। রাবী বলেন তখন আমাদের মধ্যে সালমাল ফারসী (রাঃ) ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত সালমান (রাঃ)-এর উপর রাখলের; এরপর বললেন, যদি ঈমান সূরায়য়া তারকার কাছে (অর্থাৎ বহু দুরে) থাকত তাহলে অবশ্যই তার গোত্রের লোকেরা সেখান পর্যন্ত পৌছত।

৬২৬৮। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি- ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লোকদের পাবে সেরুপ একশ- উটের মত, যার মধ্যে একজন ভার বহলকারী (দায়িত্ববান) মানুষ পাবে না।

 

নাম

আর্টিকেল,25,ডাউনলোড,1,বুখারী,81,মাসায়ালা,16,মুসলিম,54,
ltr
item
সহী আকীদা: সাহাবী(রাঃ)গণের ফযীলত
সাহাবী(রাঃ)গণের ফযীলত
সহী আকীদা
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/Virtuescompanions.html
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/
http://soheeaqida.blogspot.com/2020/11/Virtuescompanions.html
true
2725583972515071055
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy